https://mega.nz/file/gAxDgLxL#mE2GseFVRNrgTC_ZeUY-qST39xmZYqPURuUR7hKmTQs
http://www.mediafire.com/file/3913oydxowj1by1/IslamiBosonto_10-2.docx/file
.
ইসলামী বসন্ত (দশম পর্ব)
দ্বিতীয় খণ্ড
পূর্ব আফ্রিকা
‘দক্ষিণে ইসলামের সুরক্ষিত সীমান্ত শহর‘
শাইখ আইমান আয–যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ
*************************
بسمِ الله والحمدُ للهِ والصلاةُ والسلامُ على رسولِ الله وآلِه وصحبِه ومن والاه.
সর্বস্তরের মুসলিম ভাইয়েরা-
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ.
হামদ ও সালাতের পর- আমার ধারাবাহিক আলোচনা শুরু করছি।
আমি এই পর্বের প্রথম খন্ডে পূর্ব আফ্রিকার মুসলমানদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস উল্লেখ করেছিলাম।
সেখানে আলোচনা করেছিলাম, ব্রিটেনের পক্ষ থেকে মিশরীয় বাহিনীকে আদেশ করা হয়েছে; তারা যেন পূর্ব আফ্রিকা থেকে তাদের চৌকিগুলি খালি করে নেয়। এখন সেখান থেকেই আলোচনা শুরু করছি।
অতঃপর যখন (জরাজীর্ণ উসমানী খেলাফত পতনের শেষ সময়ের দিকে) মিশরীয় বাহিনী পূর্ব আফ্রিকা থেকে বের হয়ে গেল। তখন আবিসিনিয়ার বাদশা দ্বিতীয় মেনালিকের নেতৃত্বে ইউরোপীয় কমিশন মুসলিম দেশগুলোর উপর হামলা শুরু করে এবং তাদের উপর জুলুম-নির্যাতনের ষ্ট্রীমরোলার চালানো আরম্ভ করে। যার ফলে হাররা, ওগাদেন ও সোমালিয়ার কিছু অঞ্চল তারা দখল করে নেয়। সোমালিমার বাকি অঞ্চলগুলো ইটালী, ফ্রান্স ও ব্রিটেনকে বণ্টন করে দিয়ে দেয়। অপরদিকে ব্রিটেন কেনিয়া ও জ্যানজবারের উপর দখল প্রতিষ্ঠা করে এবং জার্মানিরা ট্যাঙ্গানিকার উপর দখল প্রতিষ্ঠা করে।
পূর্ব আফ্রিকার অধিগ্রহণ সম্প্রসারণের সাথে সাথে আহবাশ এবং ক্রুসেডারদের একটি বৃহত্তর আন্দোলন শুরু হয়। এ সময় সোমালিয়ার অধিবাসীরা একটি বৃহদাকারের আন্দোলন শুরু করেন। তাদের জিহাদের পতাকা ধারণ করেন মুহাম্মাদ বিন আব্দুল্লাহ বিন হাসান। যাকে মরুসিংহ বলা হয়। অতঃপর তিনি খ্রিস্টান উপনিবেশের বিরোধিতা শুরু করেন এবং তাঁর আন্দোলন ২২ বছর যাবৎ অব্যাহত থাকে। এতে তাঁর মহান বীরত্ব-সাহসিকতার অনুপম প্রকাশ ঘটে, যা আজও প্রবাদতুল্য।
দ্বিতীয় মেনালিকের মৃত্যুর পর তার নাতি (লিজ ইয়াসূ) তার স্থলাভিষিক্ত হন। যিনি পরবর্তীতে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। এরপর তিনি মুহাম্মাদ বিন আবদুল্লাহ বিন হাসানের সাথে সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং পশ্চিমা বাহিনীর জোটের বিপরীতে মুসলমানদের মাঝে ঐক্য বজায় রাখার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। পাশাপাশি তিনি উসমানী সাম্রাজ্যের সাথে তার বন্ধুত্বকে আরো দৃঢ় করার প্রতি মনোনিবেশ করেন।
উক্ত পরিস্থিতিতে গির্যার পাদ্রীরা তাকে আবিসিনিয়ার ক্ষমতা থেকে অপসারণের সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। সাথে সাথে খৃষ্টান জনসাধারণ ও পশ্চিমা জোটভুক্ত রাষ্ট্রগুলোকে (যেমন ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং ইতালি) তাঁর বিরোধিতা করার জন্য উদ্বুদ্ব করে তোলে। ফলে রাজধানীতে আক্রমণ শুরু হয়ে যায়। পাশাপাশি চার্চ মেনালিকের মেয়ে জুদিতোকে সম্রাজ্ঞী হিসাবে নিযুক্ত করে এবং তার চাচাতো ভাই রাস তাফারী (যিনি হাইলা সায়লাসী নামে পরিচিত)কে অভিভাবক ও উত্তরাধিকারীরূপে নিযুক্ত করে। তারপর সে ( হাইলা সায়লাসী) সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হয় এবং লিজ ইয়াসূর পিছু নেয়। অবশেষে তাকে গ্রেফতার করে হত্যা করে।
হাইলা সায়লাসী ইসলামের ঘোর শত্রু ছিল। সে মুসলমানদের বিরুদ্ধে হাররা, আওজাদীন, আবিসিনিয়া ও ইরিত্রিয়াতে গণহত্যা চালায়। তার বক্তৃতার মাধ্যমেও এই শত্রুতা সুস্পষ্ট হয়ে উঠে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সমাপ্তির পর সোমালিয়ার বণ্টন প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়। তারপর ব্রিটেন আবিসিনিয়ার উপর জবরদখল প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। যাকে তথাকথিত ‘ব্রিটিশ সোমালিয়া’ নামে ডাকা হয়। ফ্রান্স জিবুতির উপর জবরদখল প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। আর ইরিত্রিয়া আন্তর্জাতিক দখলদার বাহিনী দ্বারা আক্রান্ত হয়।
সুদানে মুহাম্মাদ বিন আহমাদ বিন আব্দুল্লাহর নেতৃত্বে মাহদী আন্দোলন শুরু হয়। যে নিজেকে প্রতীক্ষিত মাহদী বলে ঘোষণা দেয়। পাশাপাশি তিনি ব্রিটিশদের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ করেন। ১৩০৩ হিজরী মোতাবেক ১৮৮৫ সালের ২৬ই জানুয়ারীতে তিনি খার্তুমে প্রবেশ করতে সক্ষম হন। সেখানে ইংরেজ গভর্নর জর্ডনকে হত্যা করেন, যাকে ব্রিটিশরা তাদের বীরদের মধ্যে গণ্য করত।
১৩১৪ হিজরী মোতাবেক ১৮৯৬ সালে ব্রিটেন সুদানকে পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এ জন্য লর্ড কিচেনারের নেতৃত্বে ব্রিটেন ও মিশরীয় সৈন্যদের সমন্বয়ে একটি যৌথ বাহিনী সেখানে পাঠায়। তারপর তাদের মাঝে ও মাহদী আন্দোলনের অনুসারীদের মাঝে কয়েকটি যুদ্ধ সংঘটিত হয়। সেখানে মাহদী আন্দোলনের অনুসারীগণ, তাদের চাইতে সরঞ্জাম ও অস্ত্রের দিক দিয়ে শক্তিশালী সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হয় এবং তারা সেখানে খুব বীরত্ব ও সাহসিকতার পরিচয় দেয়।
১৩১৬ হিজরী মোতাবেক ১৮৯৮ সালের ২রা সেপ্টেম্বর ব্রিটেনের পক্ষ থেকে প্রেরিত যৌথ বাহিনী উত্তর ওমদুরমানের কেরি যুদ্ধে অংশ নেয়। তারা মুহাম্মাদ বিন আহমাদ বিন আব্দুল্লাহর উত্তরাধিকারী আবদুল্লাহ আত-তা‘আসীকে পরাজিত করে। অবশেষে তারা মাহদী আন্দোলনের রাজধানী ওমদুরমানের নিয়ন্ত্রন নিয়ে নেয়। ব্রিটেনের পক্ষ থেকে প্রেরিত যৌথ বাহিনীর সংখ্যা ছিল মোট পঁচিশ হাজার, যাতে মিশরীয় সৈন্যও রয়েছে। যারা কামান, আধুনিক রাইফেলস, নিরাপত্তা আবরনী, ভারী অস্ত্র-সস্ত্র ও যুদ্ধ বিমান ইত্যাদি দ্বারা সুসজ্জিত ছিল। তারা মুহাম্মাদ বিন আহমাদ বিন আব্দুল্লাহর উত্তরাধিকারী আবদুল্লাহ আত-তা‘আসীর ৫০ হাজারের বাহিনীকে পরাজিত করে। যারা বর্শা, তলোয়ার ও পুরাতন রাইফেলস ইত্যাদি দ্বারা সজ্জিত ছিল। ফলে তারা সীমাহীন বীরত্ব প্রদর্শন করা সত্ত্বেও তাদের মধ্য থেকে ১১ হাজার নিহত, ১৬ হাজার আহত এবং ৪ হাজার বন্দি হয়। অপরপক্ষের (ব্রিটেন ও মিশরীয় যৌথ বাহিনীর) মধ্য থেকে মাত্র ৪৮ জন নিহত এবং ২৩৮ জন আহত হয়। অতঃপর সে (লর্ড কিচেনার) কেরী যুদ্ধে বিরতি দিল এবং বলল কেরী যুদ্ধে বিরতি দেয়া প্রয়োজন।
ওমদুরমানের কেরী যুদ্ধে যা কিছু ঘটেছিল, তার ধারাবাহিকতা আজও অব্যাহত রয়েছে। সুতরাং ইরাক অবরোধে কারা আমেরিকাকে সহযোগিতা করেছে? কারা ইরাকের উপর হামলা করার ক্ষেত্রে মদদ জুগিয়েছে? কারা আফগানিস্তানে আক্রমণ করার জন্য সাহায্য-সহযোগিতা করেছে? কারা গাজা শহরকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে? কারা মুজাহিদীনকে গ্রেফতার করে নির্যাতন করছে? কারা আমেরিকার হয়ে মুজাহিদীনকে বিভিন্ন ধরনের শাস্তি প্রদান করছে এবং হত্যা করছে? মধ্য প্রাচ্যের দেশসমূহের (মিসর, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইয়েমেন, ইরাক, জর্দান, পাকিস্তান, আলজিরিয়া এবং মালি প্রভৃতি) দুর্নীতিগ্রস্ত প্রশাসনগুলো কি আমেরিকাকে এই সবের পিছনে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে না? এই জাতীয় প্রশাসনগুলো কি “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ”নাম দিয়ে আমেরিকা ও পশ্চিমাদেরকে ইসলামের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলছে না? এরা কি তাদের নতুন ক্রুসেড যুদ্ধের ক্ষেত্রে সবধরনের সহায়তা প্রদান করে যাচ্ছে না? চেহারা এবং নামসমূহ পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তু ঘটনা, ট্রাজেডি এবং বিশ্বাসঘাতকতায় একটুও পরিবর্তন হয়নি। ব্রিটিশ লর্ড কিচেনার চলে গেছে, কিন্তু অনুরূপ অনেক লর্ড কিচেনার আমাদের মধ্য থেকে তৈরী হয়ে গেছে।
দ্বিতীয়ত:
কেরি যুদ্ধে যা ঘটেছিল, তার পুনরাবৃত্তি হয়েছে এবং প্রায় দুই শতাব্দীকাল ধরে আমাদের ইসলামিক সাম্রাজ্যেও তার পুনরাবৃত্তি হয়েছে। আক্রমণাত্মক ক্রুসেডার বাহিনীর ঔপনিবেশিক ক্রুসেডের কারণে ইসলামিক সাম্রাজ্য একটি বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়েছিল। কিন্তু অস্ত্রের বল থাকায় ক্রুসেডার আক্রমণকারীদের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়া সহজ ছিল।
এখন কথা হলো: কোন কারণে আমরা মার্শাল আর্ট বা যুদ্ধবিদ্যা ও তার জ্ঞান-বিজ্ঞানে পিছিয়ে আছি?! আর কি কারণেইবা তারা আমাদের থেকে অগ্রগামী হয়ে গেল?!
আমরা বহু কারণে পিছিয়ে আছি। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি কারণ হলো: আমাদের দুর্বলতা ও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা বিদ্যমান থাকা। যা আমাদের শক্তি-সামর্থকে অভ্যন্তরীণ যুদ্ধে শেষ করে দিয়েছে এবং আমাদের অর্থনীতিকেও ধ্বংস করে দিয়েছে। রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার কারণে আমরা তর্কশাস্ত্রের কুটিল প্রশ্নের জালে আটকা পড়ে গেছি। বিকৃত ও কুসংস্কারপন্থি সূফীবাদেও জড়িয়ে পড়েছি। যার কারণে আমরা প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে মনোযোগী হতে অবহেলা করেছি। আমরা পিছিয়ে পড়ার অন্যতম আরেকটি কারণ হলো: আমাদের ও আমাদের ধন-সম্পদের উপর পশ্চিমাদের কর্তৃত্ব বজায় থাকা। যার ফলে অগ্রগতি অর্জনের ক্ষেত্রে যথেষ্ঠ পরিমাণ শোষণের শিকার হয়েছি এবং নিজস্ব শক্তি-সামর্থ অর্জনের ক্ষেত্রে বঞ্চিত হয়েছি।
আর রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা শুরু হয়েছে ক্ষমতা জবরদখলের মাধ্যমে (যা শূরা বিহীন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ ও খোলাফায়ে রাশেদীনের শাসনব্যবস্থা পরিবর্তন এবং জুলুমের শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে করা হয়েছে) । এটাই হচ্ছে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা। যার মাধ্যমে অন্যান্য বিশৃঙ্খলার সূত্রপাত হয়েছে। এই বিষয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত নিচের হাদীসে সমর্থন পাওয়া যায়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন:
“لَتُنْقَضَنَّ عُرَى الإِسْلامِ، عُرْوَةً عُرْوَةً، فكَلما انْتَقَضَتْ عُرْوَةٌ، تَشَبَّثَ النَّاسُ بِالَّتِي تَلِيهَا، فَأَوَّلُهُنَّ نَقْضًا الْحُكْمُ، وَآخِرُهُنَّ الصَّلاةُ”.
অনুবাদ: “অবশ্যই মানুষ ইসলামের এক এক বন্ধন করে সকল বন্ধন পরিত্যাগ করবে, অতঃপর যখনই তারা কোন বন্ধন পরিত্যাগ করবে, তখনই তার পরবর্তী বন্ধন পরিত্যাগ করার পিছনে লাগবে। সর্বপ্রথম তারা শাসনব্যবস্থা পরিত্যাগ করবে এবং “সর্বশেষ তারা নামায পরিত্যাগ করবে” (আল-জামিউস সগীর ও যিয়াদাত, হাদীস নং-৯২০৬, খন্ড নং-১, পৃষ্ঠা নং-৯২১) (শাইখ আলবানী রহ. এই হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন)
আমার প্রিয় মুজাহিদ ও মুসলিম ভাইয়েরা-
আমি আপনাদেরকে মুসলিম মিল্লাতের বিজয়াভিযানের এবং জিহাদের ঘটনাসমূহ সংক্ষেপে বলার চেষ্টা করব। যাতে করে আমরা জানতে ও বুঝতে পারি যে, কিভাবে ও কি কারণে আমরা এই দুর্বলতার শিকার হয়েছি এবং ঐ পরাজয়ের মুখোমুখি হয়েছি।
মুসলিম জাতি শত্রুর মোকাবিলায় জিহাদ ও ক্বিতালের ক্ষেত্রে অনেকগুলো মারহালা/ধাপ অতিক্রম করেছে।
প্রথম মারহালা:
এ ধাপটি হচ্ছে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও খোলাফায়ে রাশেদীন রাযি. এর সময়ে অর্জিত বিজয়ের ধাপ। এই ধাপে ইসলামের বড় বড় বিজয়গুলো অর্জিত হয়।
দ্বিতীয় মারহালা:
এ ধাপটি হচ্ছে: বনু উমাইয়ার জুলুমের শাসনামলে অর্জিত বিজয়ের ধাপ। এ ধাপে খোলাফায়ে রাশেদীনের তুলনায় একটু বেশী বিজয় অর্জিত হয়। তখন স্পেনসহ প্রাচ্যের অনেকগুলো রাষ্ট্রও বিজিত হয়।
তৃতীয় মারহালা:
এ ধাপটি হচ্ছে: আব্বাসীয়া খেলাফতের প্রথম ভাগ। তখন বিজয়ের পরিমাণ খুব কমে যায়। রাষ্ট্রগুলোর মাঝে ভাঙ্গণ শুরু হয়। যার ফলে শুরুতেই স্পেন তার থেকে পৃথক হয়ে যায়।
চতুর্থ মারহালা:
এ ধাপটি হচ্ছে: আব্বাসীয়া খেলাফতের মধ্য ভাগ। তখন ভাঙ্গণের পরিমাণ আরো বৃদ্ধি পায়। সেলজুক ও ফাতেমী রাষ্ট্রগুলি আব্বাসী খলীফাদের উপর কর্তৃত্ব বিস্তার করে। এ সুযোগে ক্রুসেডার ও তাতারীরা মুসলমানদের উপর আক্রমণ আরম্ভ করে দেয়। তখন মুসলমানরা তাদের অধিকাংশ আক্রমণের সফল প্রতিরোধ করেছিলেন।
পঞ্চম মারহালা:
এ ধাপটি হচ্ছে: রাজকীয় আব্বাসীয়া খেলাফতের শেষ অংশ এবং উসমানী খেলাফতের শুরু অংশ। তখন ক্রুসেডারদের হাতে স্পেনের পতন ঘটে। অপরদিকে উসমানীরা কনস্ট্যান্টিনোপল ও পূর্ব ইউরোপের বেশ কিছু অংশ জয় করতে সক্ষম হন।
কিন্তু পূর্ব ইরাকের অধিকাংশ শহর উসমানী খেলাফতের হাতছাড়া হয়ে যায়। অন্যদিকে সাফাভিরা পর্তুগিজদের সহযোগিতায় মুসলমানদের কোমরে খঞ্জর দ্বারা আঘাত করা শুরু করে।
ষষ্ঠ মারহালা:
এ ধাপটি হচ্ছে: ইসলামী ভূখণ্ডে ক্রুসেডার-কমিউনিস্ট আক্রমণের ধাপ। যা উসমানী সাম্রাজ্যের পতনের মাধ্যমে শেষ হয়েছিল। তখন কাফিরদের হাতে ইসলামী সাম্রাজ্যের দেশগুলো টুকরা টুকরা হয়ে গিয়েছিল।
সপ্তম মারহালা:
এ ধাপটি হচ্ছে: স্বৈরশাসনের রাজত্ব প্রতিষ্ঠার ধাপ। যারা আক্রমণকারী যুদ্ধাদের প্রতিহত করে অধ:স্তন জাতীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে।
এই ধাপসমূহ নিয়ে কোন গবেষক গবেষণা করলে দেখতে পাবেন যে, দুর্বলতা, দুর্নীতি ও ইসলামী দেশগুলোতে শত্রুদের কর্তৃত্ব ইত্যাদি বিষয়াবলী মুসলিম দেশের রাজনৈতিক দুর্নীতির সাথে মিলে যায়।
যখনই কোন ফাসিক, স্বৈরাচারী, লুণ্ঠনকারী অস্ত্রের বলে জোরপূর্বক ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে, তখনই শূরা ব্যবস্থা বাতিল হয়েছে। অযোগ্য ব্যক্তিরা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত হয়েছে।
ফলে রাষ্ট্র গনীমতের মালে পরিণত হয়েছে, যা অস্ত্রের বলে লুণ্ঠন করা হয়। তাদের কেউ যেমনটি বলেছেন: বোমাবর্ষণ, বিস্ফোরণ ও চূর্ণ-বিচূর্ণ করার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা গ্রহন করা। যেখানে উম্মাহর কোন মান-মর্যাদাই থাকে না। পরবর্তীতে তারা তাদের সন্তানদের মধ্য থেকে এমন একজন উত্তরাধিকারী নির্বাচন করে, যে তার উপযুক্ত নয়। ফলশ্রুতিতে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ল। যা তাদেরকে প্রবৃত্তির অনুসরণ ও হারাম মালের লিপ্সায় নিমজ্জিত করেছে এবং শাসকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ করেছে। অতঃপর ক্রমান্বয়ে তারা জিহাদ থেকে বিমুখ হতে থাকল এবং বিজয়ের ধারাও সংকীর্ণ হয়ে আসল।
মুসলিম উম্মাহ জিহাদ থেকে দূরে থাকার কারণে বিভিন্ন বিতর্কে লিপ্ত হয়। যার কারণে তারা প্রাকৃতিক বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করা থেকে বিরত থাকে। এমনিভাবে তারা অহেতুক কাজে জড়িয়ে পড়ার কারণে বিকৃত সূফীবাদের আর্বিভাব ঘটে। যার ফলে তারা কুসংস্কার ও বিভিন্ন কুটিল প্রশ্নের মাঝে হারিয়ে যায়। যাকে আজ ক্রুসেডার বিদেশি যোদ্ধারা মুজাহিদীনের কিতালের বিরুদ্ধে কাজে লাগাচ্ছে। যেমনটি বর্তমানে শিশান(চেচনিয়া) ও পূর্ব আফ্রিকায় চলছে।
এ সকল কারণে বিজয়ের ধারা বন্ধ হয়ে যায়। শক্ররা মুসলমানদেরকে পরাজিত করতে থাকে। ফলে জিহাদের পটভূমি পরিবর্তন হয়ে যায়। ইকদামী (আক্রমণাত্মক) জিহাদ দিফায়ী (প্রতিরোধমূলক) জিহাদে রুপান্তরিত হয়। তারপর উসমানী খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়(আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে ইসলাম ও মুসলিমদের পক্ষ থেকে উত্তম প্রতিদান দান করুন, আমীন)। তারা গ্রানাডা পতনের ৪০ বছর আগে কনস্টান্টিনোপল বিজয় করেন এবং মুসলিম জাতির বড় অংশকে ঐক্যের অধীনে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়। ফলে ইসলামী সাম্রাজ্য থেকে ক্রুসেড যুদ্ধ পাঁচ শতাব্দি পর্যন্ত পিছিয়ে যায়। তারপর সেখানে জুলুম-অত্যাচার ও বিভেদ-বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়ে এবং ইউরোপীয় আইন প্রবর্তিত হয়। অতঃপর সেখানে জাতীয়তাবাদী ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী নেতৃত্বের উত্থান ঘটে। এ সকল কারণে শেষ পর্যন্ত উসমানী খেলাফতের পতন অনিবার্য হয়ে পড়ে। উসমানী খেলাফত ধ্বংসের পর আধুনিক ক্রুসেড যুদ্ধ আবার শুরু হয়।
এখানে এসব ইতিহাস বর্ণনা করার দ্বারা আমার উদ্দেশ্য হলো:: রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলার ভয়াবহতা ও অসারতা বর্ণনা করা। যা শুরু হয় ক্ষমতা জবরদখলের মাধ্যমে। সুতরাং এসব কিছু হঠাৎ করেই হয়ে যাইনি যে, আমরা রাতে ঘুমালাম আর সকালে উঠে দেখলাম খেলাফতের পতন ও ধর্মনিরপেক্ষ জবরদখলকারী শাসকদের ক্ষমতা দখল সম্পন্ন হয়ে গেছে। বরং আমরা যে শাস্তি ভোগ করছি, তা হচ্ছে: কয়েক শতাব্দির রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা ও দুর্নীতির ফসল। যেটি আরো বহু ধরনের বিশৃঙ্খলা ও দুর্নীতির জন্ম দিয়েছে।
হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাযি. এর উক্তিটি তার বাস্তব প্রতিফলন। যা তিনি এক মহিলার প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন। মহিলা প্রশ্ন করে ছিল যে, “আমরা এই সরল-সোজা পথের উপর দৃঢ় থাকার উপায় কি? যে পথের দিশা আল্লাহ তা‘আলা জাহিলিয়্যাতের পর আমাদেরকে দিয়েছেন”? তখন তিনি বলেন:“তোমরা এই রাস্তায় দৃঢ়পদ ততক্ষণই থাকতে পারবে, যতক্ষণ তোমাদের ইমাম-নেতা সঠিক পথের উপর দৃঢ়পদ থাকবেন”। তাঁর এই মহান উক্তিটি আমাদেরকে স্পষ্ট করে দেয় যে, রাজনৈতিক দুর্নীতি ও উম্মাহর পতনের মাঝে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে।
১২৯৭ হিজরী মোতাবেক ১৮৭৯ ঈসায়ী সনে আমীর রাবিহ ও তার ছেলে ফজলুল্লাহর নেতৃত্বে আফ্রিকার চাঁদ নামক দেশে একটি জিহাদী আন্দোলনের সূচনা হয়। তারা একটি ইসলামী ইমারাহ প্রতিষ্ঠা করেন, যার রাজধানী ছিল ডেকো। বেশ কয়েকটি যুদ্ধের পর ফরাসি কমান্ডার ল্যামিকে হত্যা করা হয়। এতে আমীর রাবিহ, ও তাঁর ছেলে ফজলুল্লাহ রাহিমাহুমাল্লাহ শাহাদাত বরণ করেন। ১৩২৭ হিজরী মোতাবেক ১৯০৯ ঈসায়ী সনে ফরাসিরা সেই কাঙ্খিত ইমারাহর রাজধানী জবরদখল করতে সক্ষম হয়।
ফরাসিরা প্রথমে ইসলামি সাম্রাজ্যের অবসান ঘটায়। তারপর ১৩৩৬ হিজরী মোতাবেক ১৯১৮ ঈসায়ী সনে ৪০০(চারশত) উলামায়ে কেরামকে একস্থানে একত্রিত করে কসাইয়ের ছুরি দ্বারা হত্যা করে। যা কাবকাবের গণহত্যা নামে পরিচিত।
কুসাইরি নামক শহরের প্রধান ফটকে ল্যামি ওরফে ফোর্ট ল্যামিকে হত্যা করা হয়েছিল। যেই শহরটিকে পরবর্তীতে ইনজামিনা বলা হত, আর তা ছিল চাঁদ দেশের রাজধানী।
এভাবেই পশ্চিমা ক্রুসেডার বাহিনী পূর্ব আফ্রিকার নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা হাতে নেয়, শুধু ইথিওপিয়া ব্যতীত। ১৯৩৫ হিজরী সালে ইটালী ইথিওপিয়াতে আক্রমণ করে। অতঃপর ইথিওপিয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে মিত্র দেশগুলোর সহায়তায় ইটালি থেকে মুক্ত হয়ে নিজস্ব স্বাধীনতা লাভ করে।
১৯৫০ দশকের সময় পশ্চিমা দেশগুলি তাদের উপনিবেশের রাষ্ট্রগুলোর স্বাধীনতা দিতে শুরু করে। ফলশ্রুতিতে তাদের পক্ষ থেকে ঐ সকল দেশে সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়। ১৯৬৩ সালে ব্রিটেনের পক্ষ থেকে কেনিয়া স্বাধীনতার স্বীকৃতি লাভ করে ও সরকার প্রতিষ্ঠা করে।
এই সকল শাসকেরা মুসলমানদের উপর জোর-জুলুম চালানো আরম্ভ করে । ফলশ্রুতিতে তারা সোমালিয়ার অঞ্চলগুলো দখলে নিতে দমন নীতির পন্থা অবলম্বন করে এবং হাজার হাজার মুসলমানের উপর গণহত্যা চালায়।
মুসলমানদের উপর অত্যাচার করার কারণে পূর্ব আফ্রিকা রাজনৈতিকভাবে একটি বিশৃঙ্খল অঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। পাশাপাশি তাদের উপর ধর্মনিরপেক্ষতার আইন বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হয়েছে। যেমনটি সোমালিয়া, কেনিয়া, ইথিওপিয়া, তানজানিয়া ও মধ্য আফ্রিকায় হয়েছিল।
এই অঞ্চলে নব্বই দশকের গোড়ার দিকে ইসলামী দাওয়াহ্ ও জিহাদী আন্দোলনের প্রচারণা শুরু হয়। তখন শাইখ উসামা বিন লাদেন রাহিমাহুল্লাহ তাঁর মুজাহিদ ভাইদেরকে সঙ্গে নিয়ে সুদানের দিকে যাত্রা করেন। এরপর তিনি পূর্ব আফ্রিকার দিকে মনোনিবেশ করেন। সেখানে তিনি শাইখ হাসান হিরসি রহ. সহ আরো অনেক মুজাহিদ নেতার সঙ্গে সাক্ষাত করেন। পাশাপাশি তিনি সিনিয়র ভাই শাইখ আবু উবাইদাহ আল-বানশিরী ও শাইখ আবু হাফস আল-কায়েদ রাহিমাহুমাল্লাহ সহ আরো অনেক সংখ্যক ভাইকে কেনিয়া, ওগাদেন এবং সোমালিয়ায় পাঠান।
আমেরিকা যখন সোমালিয়ায় আক্রমণ করে, তখন সোমালিয়ার মুজাহিদ ভাইদের সাথে মিলে শাইখ উসামা রহ. আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। অতঃপর সেখানে শরয়ী আদালত প্রতিষ্ঠা লাভ করে। পরবর্তীতে সোমালিয়ার এই যুদ্ধ ইথিওপিয়া পর্যন্ত গড়ায়।
সোমালিয়ায় শরয়ী আদালত প্রতিষ্ঠা লাভের পূর্বেই মুজাহিদীন হরকাতুশ্ শাবাব নামে একটি সংগঠনের ভিত্তি স্থাপন করেন। আল্লাহ তা‘আলা এই সংগঠনের মাধ্যমে তাদের বিজয়ের দ্বার উন্মোচন করেন। পাশাপাশি এর দ্বারা ক্রমাগত ক্রুসেড আক্রমণ ও তাদের এজেন্ট সরকারগুলির আক্রমণ প্রতিরোধ করা হয়েছিল। তারপর একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। তারা শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ. এর কাছে তাদের বাই‘আত প্রেরণ করেন। কিন্তু তাদেরকে বলা হয়; তারা যেন প্রাথমিকভাবে তা প্রকাশ না করে। অতঃপর শাইখ উসামা রাহিমাহুল্লাহ শাহাদাত বরণ করার পর তারা তাদের মুবারক বাই‘আত প্রকাশ্যভাবে আল-কায়েদার অধীনে ঘোষণা করেন।
কাতায়েব ফাইন্ডেশনের ভাইয়েরা এই মারহালার বিস্তারিত বিবরণ বেশ কয়েকটি ইস্যুতে নথিভুক্ত করেছেন। তার মধ্যে একটি ইস্যু ছিল ‘অবিচলতার মার্চ’ নামে।
এভাবেই পূর্ব আফ্রিকাতে মহান আল্লাহ তা‘আলার ফযল ও করমে জিহাদী রেনেসাঁ আরম্ভ হয়। তাছাড়া এটি চুক্তিমূলক আন্দোলনরূপে পরিচালিত হয়। যারা কালিমায়ে তাওহীদের সাহায্য করে এবং তার দিকে অন্যকে আহবান করে। মুসলমানদেরকে তার চারপাশে একত্রিত করে। পাশাপাশি তা ভারত উপকূল থেকে আটলান্টিক উপকূল পর্যন্ত সকল মুজাহিদ ভাইদের সাথে আমাদেরকে একত্রিত করে দেয়।
অবশেষে আল্লাহ তা‘আলার রহমতে ক্রুসেডারদের আক্রমণের ঢেউ, বিশ্বাসঘাতক ও এজেন্টদের চক্রান্তের প্রস্তরখন্ডকে ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়।
পূর্ব ও মধ্য আফ্রিকায় অবস্থানরত আমার সম্মানিত মুসলিম ভাইয়েরা!
আসুন!
আমরা দুনিয়াতে সম্মানের সাথে জীবন যাপন করি এবং পরকালীন সফলতার দিকে যাত্রা করি।
আসুন!
জিহাদের দিকে, যাতে আপনারা অবিচার, নির্যাতন, নিপীড়ন ও দুর্নীতি থেকে মুক্তি লাভ করতে পারেন। আজ আপনাদের মহাদেশের পূর্ব দিকে ইসলামের উজ্জল পতাকা উড্ডিন হয়েছে। তার জন্য একটি সুউচ্চ বাতিঘর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং একটি সুস্পষ্ট নীতিমালাও প্রণীত হয়েছে।
আসুন!
সোমালিয়ার মুজাহিদ ভাইদের সাথে একত্রিত হোন এবং তাদের সাথে এক সারিতে এসে আমাদের প্রতিপক্ষ ঐক্যবদ্ধ শক্রদের মোকাবিলা করুন।
আসুন!
আমরা পূর্ব আফ্রিকাকে ক্রুসেডারদের অপরাধ থেকে মুক্ত করি এবং একটি ইসলামী ইমারাহ্ প্রতিষ্ঠা করি, যেখানে চলবে শরীয়তের অনুশাসন, ন্যায়বিচার, শুরাব্যবস্থা ও মাযলুমদের সাহায্য-সহযোগিতা।
আসুন!
পূর্ব আফ্রিকায় ইসলাম ও জিহাদের মজবুত ভিত্তি স্থাপন করি। যাতে আমরা মুসলিম উম্মাহকে সর্ব-স্থানে সাহায্য-সহযোগিতা করতে পারি। পাশাপাশি মুসলিম উম্মাহর প্রতি জোর-জুলুমকারী ও আমাদের পবিত্র ভূমিগুলোর উপর আক্রমণকারীদের থেকে যেন প্রতিশোধ নিতে পারি।
আসুন!
আমরা মুজাহিদ ভাইদের সাথে মিলে শিশাঢালা প্রাচীরের ন্যায় মজবুত জিহাদের সারি তৈরী করি। যার পরিধি কাশগর থেকে টিম্বাকতু পর্যন্ত এবং গজনি থেকে মোগাদিসু পর্যন্ত বিস্তৃত হবে।
পূর্ব আফ্রিকার মুজাহিদ ভাইয়েরা আমার!
আপনাদের কাঁধে জিহাদের যে মহান দায়িত্ব রয়েছে, তার গুরুত্ব অনুধাবন করা আবশ্যক। তাই আপনারা নিজেরা পারস্পরিক গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়বেন না, বরং আপনাদেরকে লড়াই করতে হবে বর্তমান সময়ের ক্রুসেডারদের সাথে ও তার মিত্র ইসরাইলীদের সাথে। কেননা, তারা পূর্ব আফ্রিকা ও নীল নদের উপকূলীয় এলাকা সমূহের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে। পাশাপাশি তারা পূর্ব আফ্রিকাসহ পুরো দুনিয়ায় ইসলামী জিহাদের টুটি চেপে ধরার হীন ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছে।
আপনাদের জিহাদী রেনেসাঁ ইসরাইলীদের নিরাপত্তার জন্য হুমকি! ইথিওপিয়ার খৃষ্টানদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি! পূর্ব ও মধ্য আফ্রিকায় আমেরিকান-জায়নবাদীদের প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রেও হুমকি!!
প্রিয় মুজাহিদ ও মুসলিম ভাইয়েরা আমার!
আমরা পরস্পর বিচ্ছিন্ন থেকে এই বিশাল যুদ্ধে শরয়ীভাবে ও যু্ক্তির নিরিখে কিছুতেই সফলকাম হতে পারব না। সুতরাং ঐক্যের কাতার ভঙ্গ করা ও ওয়াদা নষ্ট করা থেকে পুরোপুরি বেঁচে থাকুন।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কালামে পাকে ইরশাদ করেছেন:
وَأَوْفُواْ بِعَهْدِ اللَّهِ إِذَا عَاهَدتُّمْ وَلاَ تَنقُضُواْ الأَيْمَانَ بَعْدَ تَوْكِيدِهَا
অনুবাদ: “আল্লাহর নামে অঙ্গীকার করার পর সে অঙ্গীকার পূর্ণ কর, এবং শপথ দৃঢ় করার পর তা ভঙ্গ করো না।” (সূরা নাহল-৯১)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীস শরীফে ইরশাদ করেছেন:
“لِكُلِّ غَادِرٍ لِوَاءٌ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يُرْفَعُ لَهُ بِقَدْرِ غَدْرِهِ أَلاَ وَلاَ غَادِرَ أَعْظَمُ غَدْرًا مِنْ أَمِيرِ عَامَّةٍ”.
অনুবাদ: “কেয়ামতের দিন প্রত্যেক বিশ্বাসঘাতকের জন্যে তার বিশ্বাসঘাতকতা পরিমাণ পতাকা উত্তোলিত হবে। শুনে রেখ! জনপ্রতিনিধি বা বিশ্বাসঘাতক রাষ্ট্রপ্রধানের চাইতে বড় বিশ্বাসঘাতক আর কোনটিই নেই।” (সহীহ মুসলিম-৪৩৮৮)
সুতরাং আল্লাহ তা’আলার নিকট প্রার্থনা করি, তিনি যেন শপথ ও বাইয়াহ্ পূর্ণকারীদের উপযুক্ত বদলা দান করেন। (আল্লাহুম্মা আমীন)
প্রিয় মুজাহিদ ও মুসলিম ভাইয়েরা আমার!
মহান আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে পবিত্র কুরআনে বিজয় ও সাহায্যের সুসংবাদ দিয়েছেন।
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা ইরশাদ করেছেন:
كَتَبَ اللَّهُ لأَغْلِبَنَّ أَنَا وَرُسُلِي إِنَّ اللَّهَ قَوِيٌّ عَزِيزٌ
অনুবাদ: “আল্লাহ তা‘আলা লিখে দিয়েছেন, আমি ও আমার রসূলগণ অবশ্যই বিজয়ী হব। নিশ্চয় আল্লাহ শক্তিধর, পরাক্রমশালী। (সূরা মুজাদালা-২১)
এমনিভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও আমাদেরকে নবুয়্যতের আদলে খেলাফতব্যবস্থা ফিরে আসার সুসংবাদ দিয়ে গেছেন। তিনি হাদীসে পাকে এই মর্মে ইরশাদ করেছেন:
“ثُمَّ تَكُونُ خِلاَفَةً عَلَى مِنْهَاجِ نُبُوَّةٍ” .
অনুবাদ: “অতঃপর নবুয়্যতের আদলে খেলাফতব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে।”
অতএব, আসুন!
আমরা আমাদের ভূমিগুলোকে স্বাধীন করার জন্য এবং খেলাফতব্যবস্থাকে ফিরিয়ে আনার জন্য এবং আমাদের শক্রদের থেকে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ঐক্যবদ্ধ হই।
আজ এই কথাগুলোর উপর আমার বক্তব্য শেষ করছি।
وآخر دعوانا أنِ الحمدُ للهِ ربِ العالمين، وصلى اللهُ على سيدِنا محمدٍ وآلِه وصحبِه وسلم.
والسلامُ عليكم ورحمةُ اللهِ وبركاتُه