ইসলামী বসন্ত (১)
শায়খ আইমান আজ জাওয়াহিরি (হাফিজাহুল্লাহ)
পর্ব ১
অনলাইনে পড়ুন-
পিডিএফ ডাউনলোড করুন [৭২৬ কেবি]
https://alfirdawsweb.files.wordpress.com/2017/10/islami-boshonto-1st-part-desktop-view1.pdf
https://archive.org/download/islami-boshonto-1st-part-desktop-view/islami-boshonto-1st-part-desktop-view.pdf
https://www.pdf-archive.com/2016/04/20/islami-boshonto-1st-part-desktop-view/
http://www.mediafire.com/file/17t2y896mn1ka2y/islami-boshonto-1st-part-desktop-view.pdf/file
https://archive.org/download/IslamiBosonto8_201906/islami-boshonto-1st-part-desktop-view.pdf
https://mega.nz/file/9JpzxBjY#0Znw1TZaQtGBSq10h0fqHh5pyKmPWRDcII-Gf99PmJU
———————-———————-———————-———————-———————-———————-
ইসলামী বসন্ত – শাইখ আইমান আল জাওয়াহিরী (হাফিযাহুল্লাহ)
[পর্ব – ১]
আমার প্রাণপ্রিয় মুসলমান ভাইয়েরা! আসসালামু আ’লাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। আল্লাহর ইচ্ছায় আজ আমরা ইসলামের আশুবিজয় সম্পর্কে আলোচনা করব। আজ ওয়াজিরিস্তান থেকে মালি পর্যন্ত প্রতিটি ইসলামীভূখণ্ড ক্রুসেডীয় বাহিনীর নির্মম আক্রমণের লক্ষবস্তু। ধর্মদ্রোহী শক্তিগুলো ক্ষত-বিক্ষত আরব মুজাহিদিনদের উত্থানকে ব্যর্থ করে দিতে বদ্ধ পরিকর। সেকুলারিজম ও জাতীয়তাবাদের কাঁধে ভর করে তথা শরিয়াহ অনুমোদিত পন্থাকে পাশ কাটিয়ে যে সকল ইসলামী দল শরিয়াহ প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল তাদের চেষ্টা আজ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। এতদসত্তেও দেখতে পাচ্ছি- কাঙ্ক্ষিত ইসলামী বসন্ত আজ উদয়ের দ্বারপ্রান্তে।
মূল আলোচনার পূর্বে কয়েকটি বিষয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইঃ
১। মধ্যপ্রাচ্যের বিষফোঁড়া ইসরাইল কর্তৃক মসজিদুল আকসাকে ইহুদিকরণের প্রচেষ্টা। আল্লাহ যদি চান তাহলে এই হীনপ্রয়াস ঘুমন্ত মুসলিমদের জাগিয়ে তুলবে। বিস্ফোরিত হবে তাদের সুপ্ত শৌর্যবীর্য। এটি আরো প্রমাণ করে যে, আলোচনা-পর্যালোচনা, আন্তর্জাতিক সালিশি ও বিশ্বাসঘাতক ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের সাথে আপোষ-রফার সকল প্রচেষ্টা আজ ব্যর্থতার ষোলকলা পূর্ণ করেছে। মুজাহিদগণ পূর্বেই সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছিলেন যে, যারা এসকল পথে অগ্রসর হচ্ছে তার সফলতার মুখ দেখতে পাবে না। কারণ, এসকল পথ ইসলামী আকিদা-বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক। উপরন্তু তাদের দ্বীন-দুনিয়া দুটোই খোয়াতে হবে।
ইহুদিদের ষড়যন্ত্রকে কেন্দ্র করে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। পরিহার করতে হবে সেইসকল বিবাদ-বিসংবাদ ও মতপার্থক্য যা কতিপয় লোক সম্পূর্ণ অযৌক্তিকভাবে প্রচার করে বেড়াচ্ছে। ইহুদি ও খৃষ্টান শত্রুদের বিরুদ্ধে আমাদের এক সারিতে আসতে হবে। তারা আজ সাফাবী, নুসাইরী ও আ’লাভীদের সাথে জোটবদ্ধ হচ্ছে। যা শামের জিহাদের অপরিহার্যতা প্রমাণ করছে। তাই আমদেরকে এ অঞ্চলে সকল প্রকার ফিৎনা-ফাসাদ ও আত্মকলহ থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ, শামের বিজয় আল্লাহর ইচ্ছায় বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয়ের পটভূমি তৈরি করবে।
ইনশাআল্লাহ পরবর্তী কোন পর্বে ইসরাইলের বিরুদ্ধে জিহাদ ও ফিলিস্তিন ইস্যুতে আলোচনার প্রয়াস পাব।
২। শায়েখ মুখতার আবু যোবায়ের রহ. এর পরলোক গমনে শোক প্রকাশ। মুসলিম উম্মাহ, সারা দুনিয়ার মুজাহিদগণ, বিশেষত পূর্ব-আফ্রিকার ও জর্ডানের মুজাহিদগণকে শায়েখ মুখতার আবু যোবায়েরের মৃত্যুতে ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে। আল্লাহ ত’আ’লা তাকে জান্নাতুল ফিরদাউসের সুউচ্চ মাকামে অধিষ্ঠিত করুন। নবী, সিদ্দীক, শহীদ ও নেককারগণের সঙ্গ নসীব করুন। আল্লাহ তা’আ’লা যেন এই অধমকেও জান্নাতুল ফিরদাউসের সুউচ্চ মাকামে তার সঙ্গী হওয়ার তাওফীক দান করেন।
(আরবী কবিতা)
কবিতার অনুবাদঃ
যদি আব্দুল্লাহ নিহত হয়ে থাকে তাহলে সকলের জনা থাকা উচিৎ যে, সে ভীরু, কাপুরুষ বা চপল ছিল না!!
সে ছিল দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তৎপর, চরম ধৈর্যশীল। দুর্গম ও বন্ধুর পথের পথিক অর্থাৎ দুর্দম সাহসী।
বিপদ-আপদ ও প্রতিকূলতার অভিযোগ তার ছিল না। সে ছিল ধৈর্যের মূর্তপ্রতীক।
তার কীর্তিসমূহ ছিল ত্রুটিমুক্ত ও সমালোচনার উর্ধ্বে।
তুমি তাকে দেখবে বুভুক্ষ অথচ আহার্যের সংকট তার ছিল না। সে বিচরণ করত সাধাসিধে ও জীর্ণ বস্ত্রে।
যখন সে অভাবগ্রস্থ হত তখন তার দানের হাত অধিক প্রসারিত হত। আল্লাহ যেন তোমাকে দূরে সরিয়ে না নেন।
তবে বাস্তবতা হচ্ছে কোন ভূখণ্ড যখন কাউকে উর্ধ্বে ধারন করে তখন সে দূরে সরে যায়।
আল্লাহ আপনার উপর রহম করুন হে আবু যোবায়ের! আপনি ছিলেন আমাদের হিতাকাঙ্ক্ষী, ভাই, অন্তরঙ্গ বন্ধু, উত্তম সহায়ক। আপনার কথা ও কাজ কখনো দুই রকম হত না।
১৪৩৪ হিঃ রমজান মাসে তিনি আমার কাছে একটি পত্র পাঠিয়েছিলেন। তাতে তিনি লেখেন- আল্লাহ তা’আ’লা দাউলার (ISIS) ভাইদের ক্ষমা করুন। তারা বিদ্রোহ করেছে এবং দাবী করেছে যে, তার যথার্থ কাজটিই করেছে। অন্তত তাদের থেকে এমনটি আশা করছিলাম না। অথচ, আমরা দিবা-নিশি এমন একটি খিলাফাহ ব্যবস্থার কাজ করছি। গোটা দুনিয়ার মুসলিম একতাবদ্ধ হয়ে যার অধীনে থাকবে। আমরা শায়েখের (শায়েখ জাওয়াহিরী হাফি.) কাছে আশা করব যে, তিনি ধৈর্যধারণ করবেন এবং তাদেরকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আর সংশোধনের চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।
১৪৩৫ হিজরীর জুমাদাল ঊলা মাসে আমি তার কাছে একটি পত্র পাঠিয়েছি। আমি তাতে লিখেছিলাম- শামে একের পর এক ঘটতে থাকা বিষয়গুলো নিয়ে আপনারা কতটা চিন্তিত তা আমি জানি। শাম আজ ফিতনার আগুনে জ্বলছে। শরীয়তের অমর্যাদা করা হচ্ছে। দাউলা তানজীম আল-কায়েদার বাইয়াত অস্বীকার করছে এবং এই নিয়ে প্রতিনিয়ত ছলচাতুরী ও প্রতারণা করে যাচ্ছে। প্রতিপক্ষকে ঢালাওভাবে তাকফীর করা হচ্ছে। এমনই সময়ে একটি অডিও বার্তা পেলাম, যা ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে। আমি অধমকে সেখানে তাকফীর করে নানা কথা বলা হয়েছে। এই রেকর্ডের সত্যাসত্য যাচাইয়ে না গিয়েও এ থেকে এতটুকু স্পষ্ট বুঝা যায় যে, এর মাধ্যমে ফিতনায় আটকে পড়াদের একটি চিত্র ফুটে উঠেছে। এতি দেখিয়ে দিচ্ছে যে, তাদের চিন্তা চেতনা কতটা নিচে নেমে গেছে।
যারা আমি অধমকে তাকফীর করতে পারে, আবু খালেদ আস-সূরীর দেহকে ছিন্নভিন্ন করে দিতে পারে তারা কোন সমালোচককেই তাকফীর করতে দ্বিধা করবে না। সুতরাং আপনাদের কাছে অনুরোধ যে, আপনারা অন্যদেরকে বুঝিয়ে দিন যেন তার চলমান এই ফিতনায় শরীক না হয়। ভাল কিছু বলা সম্ভব না হলে যেন অন্তত চুপ থাকে। আর দাউলা ও জাবহাতুন নুসরার ভাইদেরকে একথাটি বুঝিয়ে দিবেন যে, ঐক্য হচ্ছে আল্লাহর রহমত আর অনৈক্য হচ্ছে আল্লাহর আজাব।
ইতিপূর্বে আমি শায়েখ আবু মুহাম্মাদ আল-জাওলানীর কাছে বার্তা পাঠিয়েছি যেন তিনি মুজাহিদীনদের উপর কোন বাড়াবাড়িতে অংশ না নেন। এমনিভাবে আমি জাবহাতুন নুসরার সকল ভাইকে আদেশ করছি যেন তারা মুসলমান ও মুজাহিদগণের উপর কোন সীমালঙ্ঘনে অংশগ্রহণ না করেন। আর দাউলাকে বলেছি অনতি বিলম্বে ইরাকে ফিরে যেতে এবং পুনরায় ঐক্যের পথে ফিরে যেতে। দাউলা যদি আমার এ বক্তব্যকে জুলুম মনে করে তবুও তা মেনে নেয়া উচিৎ। কারণ, এর মাধ্যমে আত্মকলহ, খুনখারাবী ও গৃহযুদ্ধের পথ রুদ্ধ হবে।
আল্লাহ আপনার উপর রহম করুন হে আবু যোবায়ের! আপনার বিদায়ে যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা তিনি পূরণ করে দিন। আজ আমাদের সান্ত্বনা লাভের অনেক উপকরণই রয়েছে। কারণ ক্রুসেডারদের সাথে সম্মুখ-সমরে লড়াই করতে করতে তিনি শাহাদাতের ঈর্ষনীয় মাকাম অধিকার করেছেন; পৃষ্ঠ প্রদর্শন করেননি। দো’আ করি, আল্লাহ তা’আ’লা আপনার এবং আপনার দুই ভাইয়ের শাহাদাত কবুল করুন। বিচ্যুতিসমূহ মার্জনা করুন এবং আপনাদের মর্তবা বুলন্দ করুন। আমরা শুধু এমন কথা বলব যা আমাদের রবের সন্তুষ্টির কারণ হবে। তিনি অতিশয় দয়ালু।
(আরবী কবিতা)
কবিতার অর্থঃ
‘তিনিই যুগের নিয়ন্তা। যুগের চাকার সাথে আমাদের ভাগ্যের চাকাটাও অবিরাম ঘুরছে।
তাই কোন বিধি-নিষেধ যুগের রশি টেনে ধরতে পারে না।
তুমি ধৈর্য ধর। যদিও এই সংকটে আকাশ কাঁদে। জমিন বিলাপ করে। স্থল ও জল অশ্রু বর্ষণ করে।
পবিত্র সেই সত্তা যিনি নৈকট্যপ্রাপ্তদের মৃত্যুমুখে ঠেলে দেন।
বাহ্যদর্শীদের কাছে এটি প্রতিশোধ বলে মনে হতে পারে, বাস্তবে তো তা প্রতিশোধ নয়।
এর মাধ্যমে প্রজ্ঞাবান আল্লাহ প্রিয়জনকে নিজের কাছে টেনে নেন।
এরাই আমাদের সাথী। মুখে মুখে আলোচিত। সীমান্তে রয়েছে তাদের সমাধি।
তাদের কবর দুর্গম সীমান্তে, যেখানে নেই কারো পদচারণা।
নির্জন ভুমিতে এমন অনেক ব্যক্তি রয়েছেন, যারা ইহজগতে অখ্যাত; কিন্তু তারা উর্ধ্ব জগতে বিখ্যাত ও আলোচিত।
এখানে তাদের জন্য চোখের জল ফেলার লকের বড় অভাব; কিন্তু নিজ ভুমিতে তাদের জন্য ক্রন্দনকারীর অভাব নেই।
তাদের সমাধিগুলো জনমানবশূন্য অঞ্চলকে আবাদ করে অথচ লোকালয়ে তাদের বাসগৃহ একেবারে বিরান।
আরশ অধিপতি তাদের পান করিয়েছেন অসামান্য অমৃত সুধা।
এরা আমাদের সঙ্গী সাথী। কে দেখাতে পারবে তাদের সমকক্ষ?
তাদের উসিলায় নেমে আসে খোদায়ী সাহায্য। বর্ষিত হয় রহমতের বারি।’
পূর্ব-আফ্রিকার যেসকল ভাই বুকের তাজা রক্ত ঢেলে ইসলামী সীমানা পাহারা দিচ্ছেন আমি তাদেরকে বলব, হে প্রানপ্রিয় মুজাহিদ ভাইয়েরা! আপনারা নিজেদের আদর্শে অটল থাকুন। কারণ, এই আদর্শ এবং এই আদর্শের অবিচলতা খোদায়ী নুসরত লাভের পূর্বশর্ত। আল্লাহ তা’আ’লা বলেন,
“তোমরা কি মনে কর যে, তোমরা জান্নাতে চলে যাব, অথচ সে লোকদের অবস্থা অতিক্রম করনি যারা তমাদের পূর্বে অতিত হয়েছে। তাদের উপর এসেছে বিপদ ও কষ্ট। আর এমনিভাবে কম্পিত হতে হয়েছে যাতে নবী ও তাঁর প্রতি যারা ঈমান এনেছিল তাদেরকে পর্যন্ত একথা বলতে হয়েছে যে, কখন আসবে আল্লাহর সাহায্য! তোমরা শুনে নাও, আল্লাহর সাহায্য একান্ত নিকটবর্তী।”(সূরা বাক্বারা- ২১৪)
আমার দ্বীনি ভাই আবু উবাইদা আহমদ উমরকে তারা নিজেদের আমীর নির্বাচন করেছে। আমি উক্ত নির্বাচনকে স্বীকৃতি দিচ্ছি এবং এই সিদ্ধান্তের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করছি। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি, যেন তিনি তাকে দা’ওয়াহ ও জিহাদের এই গুরুদায়িত্ব সুচারুরূপে আঞ্জাম দেয়ার তাওফীক দান করেন।
আমি ভাই আবু উবাইদার কাছে আশা করব যে, তিনি পুর্ব আফ্রিকায় ইসলামী শরিয়াহ প্রতিষ্ঠার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালাবেন। মধ্য ও পূর্ব-আফ্রিকায় মুসলমানদের মান-সম্মান, শান্তি-নিরাপত্তা ও অধিকার সংরক্ষণে সামাধিক গুরুত্বারোপ করবেন। সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে, এমনকি জীবনের বিনিময়ে হলেও তাদের প্রতিরক্ষা-ব্যবস্থা সুসংহত করবেন। আল্লাহ আপনাকে সেই শক্তি ও সাহস দান করুন। আমীন।
আমি তার কাছে আশা করব যে, তিনি শরয়ী আদালতের প্রভাব ও গাম্ভীর্যতা সুদৃঢ় করবেন। দুর্বলের পূর্বে সবল ও প্রজার পূর্বে রাজার উপর নিজের ক্ষমতা প্রয়োগ করবেন। মুজাহিদ ভাইদের সাথে সৌহার্দ্যপুর্ণ আচরণ করবেন। তাদের ব্যয়ভার বহন করবেন। তারা ও তাদের পরিবার যেন স্বচ্ছ্যন্দে চলতে পারে সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখবেন। শহিদগণের বিধবাপত্নী ও সন্তান্দের ভরণ-পোষণের ব্যাপারে যত্নবান হবেন। কারারুদ্ধ ভাইদের পরিবারের সুখে-দুঃখে তাদের পাশে থাকবেন। তাদের প্রতি সহমর্মিতা ও সহযোগিতা করতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করবেন না।
আমি আরো আশা করব যে, তিনি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের যত্ন নিবেন। কারণ, এগুলো জিহাদের দুর্গ ও মুজাহিদ তৈরির মারকায। তাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসমূহের উত্তরোত্তর উন্নতি সাধনে সচেষ্ট হবেন। পথের দিশারী আলেমসমাজ ও দা’ঈগণের অভাব অনতনে পাশে থাকবেন। যাতে তারা নির্বিঘ্নে দা’ওয়াতী কাজে মনোনিবেশ করতে পারেন। পরামর্শ করাকে আবশ্যক মনে করবেন। ধৈর্য্য, সহনশীলতা ও ক্ষমার বিষয়ে যত্নবান হোন। কারণ, এগুলো শাসক ও আমীরের বিশ্বস্ত সহযোগী। অবশেষে বলব, আপনি সোমালিয়ার মুসলিমদের সাথে কল্যাণকামিতার সম্পর্ককে আরো সুদৃঢ় করুন। দুর্বলের উপর দয়া করুন। অভাবীদের সাহায্য করুন এবং তাদের ডাকে সাড়া দিন। জানি এ দায়িত্ব অনেক কঠিন। এ বোঝা অনেক ভারী। তাই বিচক্ষন ও বিশ্বস্ত শুভাকাঙ্ক্ষীদের সহযোগিতা প্রার্থনা করুন। আর এসবকিছুর পূর্বে নির্জনে আল্লাহর কাছে নিজের হীনতা, দীনতা ও অক্ষমতা প্রকাশ করুন এবং তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করুন।
“আর নূহ আমাকে ডেকেছিল। আর কি চমৎকারভাবে আমি তার ডাকে সাড়া দিয়েছিলাম।”(সূরা সাফফাত-৭৫)
আমি আরো একটি বিষয়ের উপর জোর দিচ্ছি যে, আমি, তিনি (শায়েখ আবু উবাইদা) এবং তানযীম আল-কায়েদার সকল আমীর ও দায়িত্বশীলগণ মোল্লা মোহাম্মাদ উমর মুজাহিদের একেকজন সৈনিক মাত্র। যতক্ষণ তিনি কোরআন সুন্নাহর আলোকে আমাদের নেতৃত্ব দিবেন ততক্ষণ আমরা তার আনুগত্য করব। তার আদেশের অন্যথা করব না। কোন অঙ্গীকার ভংগ করব না এবং বাইয়াত ভংগ করব না। আল্লাহ তা’আ’লা মাকে, আপনাকে ও সকল মুসলিমকে তার আনুগত্য করতে সাহায্য করুন।
৩। আমার মুজাহিদ ভাইয়েরা! দুঃখ ভারাক্রান্ত হয়ে জানাতে হচ্ছে যে, আনসারুশ শরিয়াহ লিবিয়ার আমীর মুহাম্মাদ যাহাবী (আল্লাহ তার উপর রহম করুন) শাহাদাত বরণ করেছেন। তার বিদায়ে এ শুন্যতা সৃষ্টি হয়েছে আল্লাহ তা পূরণ করে দিন। মুজাহিদ ভাইদেরকে আমীরের আনুগত্য ও জিহাদের ময়দানে অবিচল থাকার তাওফীক দান করুন যতক্ষণ না দ্বীনের বিজয় হয় এবং কুফর পরাজিত হয়ে সমগ্র লিবিয়ায় ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠা হয়।
৪। আলোচনার মুল পর্বে যাওয়ার পূর্বে আরো একটি বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। তানযীম আল-কায়েদার নায়েবে আমীর এবং তানযীম আল-কায়েদা ‘জাজিরাতুল আরব’ শাখার আমীর আবু নাসের উহাইশী এবং তানযীম আল-কায়েদা ‘বিলাদুল মাগরিব’ শাখার আমীর ভাই আবু মুসআব আব্দুল ওয়াদুদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তারা শাম ও ইরাকে গৃহযুদ্ধ বন্ধে অতি মূল্যবান বিবৃতি দিয়েছেন। মুসলমানদের মাঝে খুন-খারাবী রোধে এই মুবারক প্রচেষ্টার জন্য আল্লাহ তাদেরকে উত্তম বিনিময় দান করুন। ক্রুসেডার, সাফাবী ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের বিরুদ্ধে সকলকে একই সারিতে দাঁড় করানোর চেষ্টাও তারা করেছেন।
তারা তো তাদের ঐক্যপ্রচেষ্টার বদলা আল্লাহর কাছে পাবেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এর প্রতিউত্তরে বাগদাদী নিজে এবং তার অনুসারীরা যেভাবে বাইয়াত ভংগ করেছেন সেভাবে ইয়েমেন এবং আল-জাজিরায় মুজাহিদগণকে পূর্ব বাইয়াত ভংগ করে বাগদাদীর হাতে বাইয়াত গ্রহনের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। মনে হচ্ছে, বাইয়াত তার কাছে পরিধেয় বস্ত্রতুল্য, ইচ্ছে হলে খুলে ফেলা যায় আবার ক্রয়-বিক্রয়ও করা যায়। আমাদের এই দুই শায়েখ চেয়েছিলেন শামের ফিতনা নির্মূল করতে। আর বাগদাদী চাচ্ছেন শামের ফিতনা সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে দিতে।
(আরবী) “যদিও কাফিররা অপছন্দ করে” শিরোনামে আবু বকর আল-বাগদাদীর বিবৃতির জবাবে হারেস ইবনে গাযী আন নাযযারী রহ. যথাযথ বিবৃতি প্রদান করেছেন। তাই আমি তার কাছে ও তানযীমের সাথে জড়িত জাজিরাতুল আরবের ভাইদের কাছে কৃতজ্ঞ।
আল্লাহ তা’আ’লা হারেস আননাযযারীর উপর সন্তুষ্টি ও রহমতের বারী বর্ষণ করুন। তিনি শিক্ষার্থী ও আলিমসমাজের জন্য এক অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করে গেছেন। যারা ময়দানে জ্ঞানসাধকের দোয়াতের কালি ও বুকের তাজা রক্ত ঢেলে শাহাদাতের সৌভাগ্য লাভ করবেন এবং হুজ্জাত কায়েম করবেন সেসকল লোকের বিরুদ্ধে যারা মুসলিম ভূখণ্ডে খৃষ্টান, রাফেযী ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের আক্রমণ প্রতিহত করতে জিহাদে অংশগ্রহণ করছে না, আল্লাহ তা’আ’লা তার শুন্যতা পূরণ করে দ্বীন এবং তার শোক-সন্তপ্ত পরিবার ও তার বন্ধু-বান্ধবকে সবরে-জামীল নসীব করুন। আর আমাদেরকে তার সাথে মিলিত হওয়ার তাওফীক দান করুন। বাগদাদী ও তার অনুসারীরা যে ফিতনা উস্কে দিতে যাচ্ছে এবং মুজাহিদগণকে বাইয়াত ভাঙ্গার আমন্ত্রণ জানাচ্ছে ফিরে আসছি সে প্রসঙ্গে।
শাম ও ইরাকে ক্রুসেডারদের আক্রমণ শুরু হওয়ার কয়েকদিন পূর্বে সিরিজ আলোচনার একটি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিলাম। এরই ধারাবাহিকতায় শাম ও ইরাকে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলীকে বিস্তারিত শরয়ী দলীল-প্রমাণ ও বাস্তবতার নিরিখে বিশ্লেষণের কাজে হাত দিলাম। বিশেষ করে আবু বকর আল-বাগদাদীর খলিফা হওয়ার দাবী। অতঃপর দলীয় মুখপাত্র কর্তৃক সকল জিহাদী তানযীমকে বাইয়াত ভঙ্গের নির্দেশ ও তড়িঘড়ি করে বাগদাদীর হাতে বাইয়াত গ্রহন করার আমন্ত্রণ জানানোর বিষয়টি বিশ্লেষণ করার ইচ্ছা করলাম। ইতোমধ্যে বর একটি অংশের বিশ্লেষণ করেও ফেলেছিলাম এবং প্রকাশের দ্বারপ্রান্তে ছিল। কিন্তু ক্রুসেডারদের চলমান হামলা শুরু হওয়ার পর পূর্ব পরিকল্পিত আলোচনা মুলতবি করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করলাম। কিন্তু পরিতাপের বিষয়, যে মুহূর্তে আমি অধম দৌড়-ঝাঁপ দিচ্ছি সে সময় বাগদাদী (যদিও কাফিররা অপছন্দ করে) শিরোনামে তার বিবৃতি প্রচার করলেন এবং যথারীতি বাইয়াত ভঙ্গের ও তার হাতে বাইয়াত গ্রহণের আহ্বান জানালেন।
এতদসত্বেও চলমান ক্রুসেডীয় হামলার বিরুদ্ধে শাম ও ইরাকে মুজাহিদগণকে একতাবদ্ধ করার ব্যাপারে আমি এখনো আশাবাদী। এর একটা বিহিত করতে আমার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। আশাকরি, অভিজ্ঞ মহল এর মূল্যায়ন করবেন এবং আমাকে স্পর্শকাতর আলোচনায় প্রবৃত্ত হতে বাধ্য করবেন না। আশা করি আমার ভাইয়েরা ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পথে অগ্রসর হবেন এমনসব ইজতিহাদ থেকে নিবৃত হবেন যা করতে গিয়ে তারা অন্য সকল ভাইয়ের বিরোধিতায় লিপ্ত হয়েছেন। তানযীম আল-কায়েদার সকল ভাইয়ের কাছে আমি পূর্বেই বার্তা পাঠিয়েছি, যেন তারা কেবল এমন বাক্যই উচ্চারণ করেন যা শামের মুজাহিদগণের মধ্যকার চলমান সংঘাত বন্ধে সহায়ক হবে। তাদের কাছে এই বার্তাও পাঠিয়েছি যে, এই ফিতনা নির্মূলে তারা সাধ্যের সবকিছু করবেন। এমনিভাবে তানযীম আল-কায়েদার নায়েবে আমীর শায়েখ আবু নাসের উহাইশীকে দায়িত্ব দিয়েছি, যেন তিনি এ সংঘাত বন্ধে সাধ্যমত চেষ্টা-তদবীর অব্যাহত রাখেন।
আবু বকর আল-বাগদাদী ও তার অনুসারীদের অনেক জুলুম সহ্য করেছি এবং ফিতনার আগুন নির্বাপণের জন্য প্রচেষ্টাস্বরূপ সর্বনিম্ন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছি। সংশোধনকামীদের জন্য ক্ষেত্র তৈরির চেষ্টা করেছি; কিন্তু বাগদাদী আমাদের কোন সুযোগই দিলেন না। তিনি সাফ সাফ জানিয়ে দিলেন- সকল মুজাহিদকে বাইয়াত ভংগ করতে হবে এবং স্বঘোষিত খলিফাটির হাতে বাইয়াত গ্রহন করতে হবে। এখানেই শেষ নয়, তারা বিনা পরামর্শে নিজেদেরকে মুসলমানদের নেতা মনে করতে লাগলেন। অথচ মুসলমানদের দুঃখ-দুর্দশা দূরীকরণের পরিকল্পনা তাদের হাতে নেই। তাদের কাজ একটাই ধরে ধরে সকলকে বাইয়াত গ্রহণ করানো এবং অনৈক্যের ফাটল আরো প্রলম্বিত করা।
যে সময় সোমালিয়ার মুজাহিদ ভাইয়েরা আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক খৃষ্টশক্তির তীব্র আক্রমণের মুখোমুখি এবং তাদের নেতা মুখতার আবু যোবায়েরের শাহাদাতের শোকে মুহ্যমান, তখন হরকাতুশ শাবাবের মুজাহিদ ভাইদেরকে ইমারা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বাগদাদীর হাতে বাইয়াত গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়।
যে সময় মাগরিবুল ইসলামের মুজাহিদ ভাইয়েরা ফ্রান্স ও আমেরিকার যৌথ হামলার মুখোমুখি, প্রতিরোধ বুহ্য নির্মাণে ব্যস্ত; সে মুহূর্তে বাগদাদী ও তার অনুসারীরা তাদেরকে ইমারাহ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে বলল এবং তারা যাকে খলিফা বানিয়েছে তার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করতে বলল।
যে সময়ে জাজিরাতুল আরবে আমাদের ভাইয়েরা খৃষ্টান, সাফাবী ও ধর্মনিরেপেক্ষতাবাদীদের নির্মম আক্রমণের শিকার সে সময়ে তারা সেখানকার তানযীম আল-কায়েদার ভাইদের ইমারার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে তারা যাকে খলিফা বানিয়েছে তার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করানোর জন্য উঠে পড়ে লাগলো। এমনকি আবু বকর আল-বাগদাদী বলে বসল, ‘হুথীরা এমন কাউকে খুঁজে পাচ্ছে না যারা তাদের দিকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারে।’ ইসরায়েলী হায়েনাদের বোমার আঘাতে যখন গাজা ভূখণ্ড দাউ দাউ করে জ্বলছিল তখন তিনি টু শব্দটি পর্যন্ত করলেন না; বরং তখন তিনি অপেক্ষা করতে লাগলেন কখন মুজাহিদগণ দলে দলে তার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করবে।
বাগদাদী নিজেকে খলিফা ঘোষণার আনুমানিক বিশ দিন পূর্বে পাকিস্তান ও আমেরিকা পূর্ব-ঘোষণা মাফিক ওয়াজিরিস্তানে হামলা শুরু করল। তখন তাকে এব্যাপারে কোন কথা বলতে শুনা যায় নি। তার দৃষ্টি ছিল কখন মুজাহিদগণ তানযীম আল-কায়েদা থেকে বেরিয়ে এসে তার হাতে বাইয়াত হবে সেদিকে।
যে সময় আফগান মুজাহিদগণ নিজেদের মাটিতে ইসলামী ইতিহাসের এক দীর্ঘতম যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে এবং ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায় রচনা করছে, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন আমাদের, তাদের ও বাগদাদীর আমীর মোল্লা মোহাম্মাদ ওমর মুজাহিদ তখন এ নিয়ে তারা কোন মাথাব্যথা ছিল না। অথচ মুজাহিদগণ ন্যাটো ও আমেরিকার বোমারু বিমানগুলোর ছায়ায় দিনাতিপাত করছেন। আর পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের কারাগারগুলোতে বন্দী হয়ে আছেন হাজার হাজার মুজাহিদ। সে সময় বাগদাদী ব্যস্ত হয়ে পড়লেন নতুন নতুন বাইয়াত প্রত্যাশীর অপেক্ষায়, যারা মোল্লা মোহাম্মাদ উমর মুজাহিদের বাইয়াত ভংগ করে তার হাতে বাইয়াত গ্রহণ করতে ছুটে আসবে।
বাগদাদী ও তার অনুসারীরা চায়, আফগানিস্তান, পাকিস্তান, মধ্যএশিয়া, ভারতীয় উপমহাদেশের মুজাহিদগণ এবং মোল্লা মোহাম্মাদ উমর মুজাহিদের এর আরো যারা বাইয়াত গ্রহণ করেছেন তারা সকলে যেন বাইয়াত ভংগ করে বাগদাদীর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন। অথচ তিনি যাদের পরামর্শে নিজেকে খলিফা দাবী করছেন তাদের নাম, উপনাম ও ছদ্মনাম কোনটাই আমাদের জানা নেই।
আমি জিজ্ঞেস করতে চাই, যিনি মোল্লা মোহাম্মাদ ওমর মুজাহিদের বাইয়াত ভংগ করেছেন তিনি কোন শরয়ী দলীলের ভিত্তিতে তা করেছেন? ইমারাতে ইসলামিয়া কি এমন অপরাধ করেছে যার কারণে বাইয়াত ভংগ করতে হবে? যদি এ বিষয়ে কোন দলীল আপনাদের হাতে থাকে তাহলে তা প্রকাশ করুন। কারণ, আমরা ইমারাতে ইসলামিয়ার আমীর মোল্লা মোহাম্মাদ ওমর মুজাহিদের হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছি কোরান-সুন্নাহর উপর ভিত্তি করে। যদি ইমারাতে ইসলামিয়া বা এর আমীরের পক্ষ থেকে কোন শরিয়ত বিরোধিতা পরিলক্ষিত হয়- যার কারণে বাইয়াত ভংগ করা অপরাধ বলে গণ্য হবে না- তাহলে আমরা আমীরকে সংশোধনের আহ্বান জানাব। এতে সাড়া না দিলে তাকে বর্জন করব। কারণ দুনিয়ার কোন স্বার্থ বা শাসন ক্ষমতা লাভের জন্য আমরা বাইয়াত গ্রহণ করিনি।
এখন আমরা যদি দলীল ছাড়া বা শরয়ী বৈধতা ছাড়া বাইয়াত প্রত্যাহার করি তাহলে এটা হবে কোরান-সুন্নাহর প্রকাশ্য বিরোধিতা। বাইয়াত ভংগ করতে অনেকে দলীল হিসেবে বলেন যে, ‘মুসলমানদের সংকটকালে এবং তাদের সুরক্ষায় ইমারাতে ইসলামিয়ার অতীত অবস্থান পরিষ্কার নয়।’ এধরনের অভিযোগ উত্থাপনকারীরা ইতিহাস ও বাস্তবতা দুটোই অস্বীকার করেছেন। আমরা তানযীম আল-কায়েদার মুজাহিদগণ জীবন্ত সাক্ষী যে, ইমারাতে ইসলামিয়া মুহাজির ও মুজাহিদগণের সুরক্ষায় আমেরিকা, ইউরোপের খৃষ্টান ও তাদের মিত্রদের হুমকি-ধমকি ও হামলাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আসছে। মুহাজির ও মুজাহিদ ভাইদের বিশেষ করে তানযীম আল-কায়েদার মুজাহিদ ভাইদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাজত্ব, নেতৃত্ব সবই বিসর্জন দিয়েছেন। সুতরাং যিনি বলবেন, মুসলমানদের সংকটকালে ইমারাতে ইসলামিয়ার অবস্থান অস্পষ্ট- সন্দেহ নেই তিনি ইতিহাস ও বাস্তবতা দুটোই অস্বীকার করেছে।
‘রৌদ্রজ্জ্বল দিনকেও যদি দলীল প্রমাণের সাহায্যে সাব্যস্ত করতে হয় তাহলে বিবেকের কাছে আর কোন কিছুই বোধগম্য হবার কথা নয়।’
আমীরুল মু’মিনিন মোল্লা মোহাম্মাদ ওমর মুজাহিদ ফিলিস্তিন ও সারা দুনিয়ার নির্যাতিত মুসলমানদের প্রতি তার আবেগ ও সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন। অপর দিকে বাগদাদী গাজা, আফগানিস্তান, পাকিস্তান ও ওয়াজিরিস্তানের মুসলমানদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করা তো দুরের কথা টু শব্দটি পর্যন্ত করেননি। পক্ষান্তরে ইমারাতে ইসলামিয়ার বাচনিক ও কর্মগত অবস্থান সকলের কাছেই পরিষ্কার। আমীরুল মু’মিনিন মোল্লা মোহাম্মাদ ওমর মুজাহিদ নিজের প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার রক্ষার্থে রাজত্ব বিসর্জন দিয়েছেন। আর বাগদাদী রাজত্ব ও নেতৃত্ব লাভের নেশায় প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকারকে (বাইয়াতকে) বলি দিয়েছেন। দুজনের মাঝে পার্থক্যটা এখানেই।
মোল্লা মোহাম্মাদ ওমর মুজাহিদ ও তার সাথীবর্গের নীতি ও অবস্থানকে পরিষ্কার করতে একটি ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করব- সবেমাত্র আফগানিস্তানে ক্রুসেডারদের হামলা শুরু হয়েছে। ইমারাতে ইসলামিয়া স্থির করল যে, মুজাহিদগণ গতানুগতিক পদ্ধতিতে সম্মুখসমরে লড়বে না। ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে গেরিলা যুদ্ধ চালিয়ে যাবে। সে মতে নিজেদের বাহিনীগুলোকে গ্রামাঞ্চল ও পাহাড়-পর্বতে ছড়িয়ে দিল। এই পদ্ধতি অল্প সময়ের মধ্যে সফলতার মুখ দেখতে শুরু করল এবং আল্লাহর সাহায্যে এই কৌশল আফগানিস্তানে ক্রুসেড বাহিনীকে শোচনীয়ভাবে পরাজত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করল।
যখন ইমারাতে ইসলামিয়া এই যুগান্তকারী সিদ্ধান্তটি গ্রহণ করল তখন স্থির হল যে, মুজাহিদগণ কান্দাহার থেকে সরে পড়বে। তবে ক্রুসেডারদের হাতে এই গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলটি তুলে দেয়া হবে না। তাই সমঝোতার ভিত্তিতে অঞ্চলটি ছেড়ে দেয়ার লক্ষ্যে সাবেক মুজাহিদ মোল্লা নকীবকে নির্বাচন করা হয়। (তখন তিনি একটি ইসলামী দলের সাথে জড়িত ছিলেন) কারজাই উক্ত সমঝোতার সাথে ঐক্যমত পোষণ করেন। পরবর্তীতে আমেরিকা ঐ সমঝোতা প্রত্যাখ্যান করে। সমঝোতার সেই সময়গুলোতে কান্দাহারের উপর আমেরিকার বোমারু বিমানগুলো বৃষ্টির মত বোমা ফেলছিল। এমন সংকটময় মুহূর্তে মোল্লা মোহাম্মাদ ওমর মুজাহিদ কান্দাহারের ক্ষমতা হস্তান্তরে তিনদিন বিলম্ব করেন এবং কান্দাহার থেকে আরব পরিবারগুলোকে অন্যত্র সরে যাওয়ার সুযোগ করে দেন। অথচ, সমঝোতা হয়ে যাওয়ার পর ক্ষমতার হাত বিলম্বিত করা তার নিজের জীবনের জন্য এবং ইমারাতে ইসলামিয়ার কর্মচারী, কর্মকর্তা ও সৈনিকগণের জীবনের জন্য ছিল চরম হুমকিস্বরূপ। এই বিলম্বের ফলে পুরো সমঝোতা ভেঙ্গে যেতে পারত। যখন মোল্লা মোহাম্মাদ ওমর মুজাহিদ নিশ্চিত হলেন যে, আরব ও মুহাজিরগণ কান্দাহার থেকে বেরিয়ে গেছেন তখন তিনি ও মুজাহিদগণ কান্দাহার ত্যাগ করেন। এই মহান কিংবদন্তীর গোটা জীবন এধরনের ঘটনায় পরিপূর্ণ। আল্লাহ তাকে আমৃত্যু হক্বের উপর অবিচল থাকার তাওফীক দান করুন।
এই যখন অবস্থা তখন আবির্ভাব ঘটল এক অবাধ্য বিদ্রোহীর, যে কিনা আমীরুল মু’মিনিনের বাইয়াত অস্বীকার করল এবং অন্যদেরকে বাইয়াত ভংগ করতে বলল। যেমনটি সে নিজে করেছে। যে সময় কাশ্মীর, ভারত, বার্মা, বাংলাদেশের মুসলমানগণ নির্যাতন নিপীড়নে নিষ্পেষিত হচ্ছেন সে সময় তার এবং তার অনুসারীদের পক্ষ থেকে বাইয়াত ভঙ্গের আমন্ত্রণ আসে। আমাদের ককেশাসের ভাইয়েরা যখন রুশ হায়েনাদের শিকার, যা পাঁচ যুগ ধরে চলছে তখন বাগদাদী বাইয়াত ভঙ্গের আমন্ত্রণ জানানো ছাড়া ভিন্ন কিছু চিন্তা করারা ফুসরত পাননি।
অপর দিকে মোল্লা মোহাম্মাদ ওমর মুজাহিদের অবস্থান লক্ষ্য করুন। ইসলামী প্রজাতন্ত্র চেচনিয়াকে একমাত্র তিনিই স্বীকৃতি দিয়েছিলেন এবং এই প্রজাতন্ত্রের প্রতিনিধি শহীদ সালিম খান ইয়ানদারভীকে উষ্ণ সংবর্ধনা জানিয়ে বলেছিলেন, ‘সম্ভাব্য সব কিছু করতে আফগানিস্তান আপনাদের পাশে থাকবে এবং এর পক্ষ থেকে সব ধরনের সুযোগ সুবিধা আপনারা ভোগ করবেন।’ আমীরুল মু’মিনিন রহ. চেচনিয়াকে সহযোগিতা করার কোন সুযোগ হাতছাড়া করেননি। আর বাগদাদী ও তার অনুসারীরা ককেশাসের মুজাহিদগণকে বাইয়াত ভংগ করে তাদের অনুসরণ করতে বলেন। সুবহানাল্লাহ! মুজাহিদগণকে বিছিন্ন করারা এ কেমন প্রয়াস? কার স্বার্থেই বা এমন করা হচ্ছে? যিনি মুসলমানদের সন্তুষ্টি ও পরামর্শে খলিফা হবেন তার পক্ষে এধরনের কর্মকান্ড কিছুতেই বৈধ হতে পারে না। এর কারণ শত্রুর সাথে যুদ্ধরত মুজাহিদগণ দুর্বল হয়ে পড়তে পারেন।
সুতরাং এ ধরনের কর্মকান্ড ঐ ব্যক্তির জন্য কিভাবে বৈধ হতে পারে যিনি মুসলিম নেতৃবৃন্দের সাথে পরামর্শ না করে খলিফা হওয়ার হাস্যকর দাবী করছেন। আর যদি পরামর্শ করেও থাকেন তাহলে হয়তবা এমন কতিপয় লোকের সাথে করেছেন যাদের আমরা জানি না। মুসলমানদের ঐক্যকে অটুট রাখা এবং তাদের সীমান্ত সুরক্ষা কি একজন খলিফার দায়িত্বে পড়ে না?
যেসকল মুজাহিদ ভাই যুগের পর যুগ জিহাদের পথে কাটিয়ে দিলেন এবং আল্লাহর অনুগ্রহে শত বাধা মাড়িয়ে এখনও সে পথে পরিচালিত হচ্ছেন তিনি তো তাদেরকে সান্ত্বনা ও উৎসাহ প্রদান করতে দুটো শব্দ উচ্চারণ করার দায়িত্ব বোধ করলেন না। তিনি ভুলে থাকলেন মরক্কো, সোমালিয়া ও জাজিরাতুল আরবের মুজাহিদগণকে। ভুলে থাকলেন আফগানিস্তান, গাজা ও ভারতীয় উপমহাদেশের মুজাহিদগণকে। ভুলে থাকলেন চেচনিয়া, ফিলিপাইন ও ইন্দোনেশিয়ার মুজাহিদগণকে। না তাদেরকে স্মরণ করলেন আর না তদের প্রতি সাহায্যের হাত প্রসারিত করলেন। তিনি ও তার সাথীরা কেবল বাইয়াতের চিন্তায় বিভোর রইলেন।
আমি জিজ্ঞাসা করতে চাই, যে সকল অঞ্চলের কোন দল, উপদল বা শুধু কয়েকজন লোক বাগদাদীর হাতে বাইয়াত করেছেন তিনি সে অঞ্চলসমূহের ইসলামী দলগুলোকে বিলুপ্তির ঘোষণা করেছেন। কিন্তু কার স্বার্থে করেছেন? কাদের স্বার্থে করেছেন? অথচ তিনি নিজেকে খলিফা মনে করেন।
এই ঘোষণার পূর্বে তার দলীয় মুখপাত্র আরো একটি ফতওয়া জারী করেন। যাতে বলা হয়- মজলিসে শুরা বাগদাদীর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করার পর সকল ইসলামী দল বা ইমারাহ বৈধতা হারিয়েছে। যদিও ততাকথিত শুরা সদস্যের নাম-ঠিকানা ও মতিগতি সবই অজ্ঞাত। বাগদাদী কার স্বার্থে সব ইসলামী দল ইসলামী ইমারাকে বিলুপ্তির ঘোষণা দিলেন? অথচ এই দলগুলোর সাথে জড়িয়ে আছে মিলিয়নোর্ধ অনুসারী। যারা জিহাদ ও কিতালের পথে অভূতপূর্ব নজীর স্থাপন করেছে। তারা আফগানিস্তানে জিহাদ করেছেন। হামায় (সিরিয়ার প্রসিদ্ধ শহর) জিহাদ করেছেন। আনোয়ার সাদাতের বিরুদ্ধে জিহাদী আন্দোলনে শরীক হয়েছেন। বাগদাদী জিহাদের পথে পা বাড়ানোর কয়েকযুগ পূর্ব থেকে এ ধারাবাহিকতা শুরু হয়েছে। আল্লাহর মেহেরবানীতে আজও পর্যন্ত আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক কুফরি শক্তির বিরুদ্ধে বুক টান করে জিহাদ করে যাচ্ছেন। শাহাদাতের অমিয় সুধা পান করেছেন হাজার হাজার মুজাহিদ। আর কুফরি শক্তি তার স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক দোসরেরা আল্লাহর এই বান্দাগণকে নিঃশেষ করে দিতে বছরের পর বছর ধরে খরচ করেছে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার।
কোন সেই কিতাব আর কোন সেই শরীয়ত যার উপর ভিত্তি করে তিনি ইমারাতে ইসলামিয়াকে বিলপ্ত ঘোষণা করলেন? অথচ এই ইমারার বাইয়াত গ্রহণ করে আছে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত, মধ্য-এশিয়া, পূর্ব-তুর্কিস্তান, ইরান এবং আরো অনেক দেশের কয়েক মিলিয়ন মানুষ। অধিকন্তু আল-কায়েদা তার সকল শাখা-প্রশাখা সহ তার বাইয়াত গ্রহণ করে আছে। এর নেতৃত্বে ছিলেন শায়েখ উসামা বিন লাদেন রহ.। তিনি নিজে মোল্লা মোহাম্মাদ ওমর মুজাহিদের হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেছিলেন এবং তিনি জীবদ্দশায় তার হাতে বাইয়াত গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছিলেন। এমনকি বাগদাদী নিজেও ইমারাতে ইসলামিয়ার আমীর মোল্লা ওমরের হাতে বাইয়াত গ্রহণকারী ছিলেন। অতঃপর বিদ্রোহ করলেন এবং বাইয়াত ভংগ করলেন।
বাগদাদীর গৃহপালিত অজ্ঞাত, অখ্যাত মজলিসে শুরা তাকে খলিফা ঘোষণা করেছে বলেই কি তিনি ইমারাতে ইসলামিয়া ককেশাসকে বিলুপ্ত ঘোষণার স্পর্ধা দেখালেন? অথচ চেচেন মুজাহিদগণ দীর্ঘ চল্লিশ বছরের যুদ্ধের শেষ পর্বে উপনীত হয়েছিলেন। ইতিপূর্বে তারা রুশ সেনাদের বিরুদ্ধে প্রায় পাঁচ যুগ ব্যাপী এক ঐতিহাসিক যুদ্ধ করেছেন।
যিনি নিজে বিদ্রোহ করেছেন, বাইয়াত ভংগ করেছেন এবং আমীরের বিরুদ্ধাচরণ করেছেন, তিনি কিভাবে অজ্ঞাত দু’চার জন ব্যক্তিকে এই অধিকার দিতে পারেন যে, তারা তাকে খলিফা বানিয়ে দিবেন? আর যথারীতি তিনিও আদেশে জারি করবেন যে, যারা যুগের পর যুগ জিহাদের ময়দানে নেতৃত্ব দিয়েছেন তারা যেন নিজেদেরকে সেসকল দায় দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নেন। এ ধরনের কর্মকান্ডকে আমরা সংশোধন বলব নাকি বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টির অপপ্রয়াস বলব? এর মাধ্যমে উম্মাহ ঐক্যবদ্ধ হবে নাকি শতধা বিভক্ত হবে? একি ইনসাফ না জুলুম?
বাগদাদী মনে করেন এই অধিকার তার আছে। কারণ, তিনি নিজ ধারনায় একজন খলিফা। সকলের উপর তার আনুগত্য আবশ্যক। তার দুটো ধারনাই ভুল। না তিনি মুসলমানদের খলিফা আর না তিনি আনুগত্যের হকদার। তিনি নিজেই তো আনুগত্যের অঙ্গীকার (বাইয়াত) ভংগ করেছেন।
“তোমরা কি মানুষদের সৎকর্মের আদেশ দাও এবং নিজেরা নিজেদেরকে ভুলে যাও?”(সূরা বাক্বারা- ৪৪)
বাগদাদীকে খলিফা বানানোর এই পদ্ধতিটি যদি সঠিক হয় তাহলে প্রতিটি আদম সন্তানের সামনেই খলিফাতুল মুসলিমিন হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। কারণ, আবু অমুক আল হিমসী আর আবু অমুক আল মুসেলীরা খলিফা হওয়ার দাবী করবে এবং বলবে- আহলুল হাল্লি ওয়াল আ’কদ (বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ) আমাকে খলিফা নিযুক্ত করেছেন। আর আবু বকর আল বাগদাদীকে অপসারণ করেছেন। খলিফা নিযুক্ত করার যেমন বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের অধিকার রয়েছে, খলিফাকে অপসারণ করারা অধিকারও তাদের রয়েছে।
এখন যদি প্রশ্ন করা হয়, তোমাকে কারা খলিফা নিযুক্ত করেছে? তখন সে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিতে পারে, বাগদাদীকে কারা খলিফা নিযুক্ত করেছে? এ পর্যায়ে তরবারীই হবে ফয়সালার একমাত্র মাধ্যম। যেমনটি ঘটেছিল দামেস্কে। তরবারীর জোরে উমাইয়াদেরকে পরাজিত করে যখন আব্বাসীগণ দামেস্কে নিজেদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করল তখন আব্দুর রহমান আদ দাখেল স্পেনে পালিয়ে যান এবং তরবারীর জোরে স্পেনের শাসনক্ষমতা দখল করেন। ফলে মুসলিম জাহানে খলিফার সংখ্যা দুইয়ে উন্নিত হয়। এভাবে চলতে থাকলে শাসনক্ষমতার সর্বাপেক্ষা বেশি উপযুক্ত ঐ ব্যক্তি বিবেচিত হবেন যিনি জ্বালাও পোড়াও ও ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ড বেশি পরিচালনা করতে পারবে।
আরেকটি প্রশ্ন হচ্ছে, বর্তমানে শাম ও ইরাকে খৃষ্ট শক্তি ভয়াবহ আক্রমণ করছে। দেশ দুটির মুজাহিদবৃন্দ উক্ত হামলার প্রধান টার্গেট। এমনকি যদি বলা হয় ককেশাস থেকে মালি পর্যন্ত প্রতিটি ভূখণ্ড ক্রুসেডীয় বাহিনীর হামলার শিকার তাহলে অত্যুক্তি হবে না। এই পরিস্থিতিতে ইসলাম ও মুসলমানদের স্বার্থে কি করা উচিৎ? আপাতত সকল মতবিরোধ ত্যাগ করা নাকি খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মতবিরোধ সৃষ্টির নতুন দ্বার উন্মুক্ত করা?
যে সময় মার্কিনীদের বোমারু বিমানগুলো মুজাহিদগণের উপর উপর্যুপরি বোমা নিক্ষেপ করছে সে সময় স্ববিরোধী কয়েকটি দলীলের ভিত্তিতে শাম ও ইরাকের মুজাহিদগণকে বাইয়াত ভংগ করে বাগদাদীর হাতে বাইয়াত গ্রহণের আমন্ত্রণ জানানোর মধ্যে কি মাসলাহাত থাকতে পারে? মুজাহিগনকে বিদ্রোহী, অবাধ্য ও জামা’আহর অন্তর্ভুক্ত নয় বলে ঘোষণা দেয়ার মধ্যে কি উপযোগিতা থাকতে পারে? শত্রুর মোকাবেলায় যিনি আন্তরিকভাবে ঐক্য প্রত্যাশা করেন তার থেকে এধরনের আচরণ কি অপ্রত্যাশিত নয়?
বড় পরিতাপের বিষয় আমাকে আজ এ ব্যাপারে কথা বলতে হচ্ছে। কারণ, বাগদাদী ও তার অনুসারীরা আমাদের সামনে চুপ থাকার কোন পথ খোলা রাখেনি।
কবিতার অর্থঃ
‘আগন্তুক, তার সঙ্গী-সাথী ও সওদা গোত্রের লোকদেরকে সকলের উপস্থিতিতে বললাম;
তোমরা সমূহ অকল্যাণের জন্য প্রস্তুত হও। কারণ, যুদ্ধংদেহী বর্মধারী সরদারগণ আসছেন।
আমি আরো বললাম, মিত্ররা পর্দার আড়ালে চলে গেছে। সুতরাং ক্ষান্ত হও।
তখন তারা সমতল ও উঁচু ভূমিতে পঙ্গপালের ঝাঁকের ন্যায় উৎক্ষিপ্ত ধুলোবালি দেখতে পেল।
আমি যখন অশ্বারোহী বাহিনীকে ঝড়ের গতিতে ধাবমান দেখলাম তখন আমি তাদেরকে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দিলাম; কিন্তু যথাসময়ে তারা আমার উপদেশবাণী কানে নিল না।’
আরো একটি অতীব গুরুত্বপূর্ন বিষয় হচ্ছে, যে মুহূর্তে আমরা আমেরিকা জোটের হামলা মোকাবেলা করছি, সে মুহূর্তে বিরোধ উস্কে দেয়া কি যৌক্তিক? এর কারণে শত্রুরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না লাভবান হবে? তানযীম আল-কায়েদার বিরুদ্ধে বাগদাদী এবং তার অনুসারীরা বিদ্রোহ করা, বাইয়াত ভঙ্গের ঘোষণা দেয়া এবং তাদের আমীরের (বাগদাদীর) নির্দেশে সুস্পষ্ট অবাধ্যতায় লিপ্ত হওয়া মোল্লা মোহাম্মাদ ওমর মুজাহিদের নেতৃত্বকে অবৈধ ঘোষণা করা, কতিপয় অপরিচিত ব্যক্তির সমর্থনে নিজেকে খলিফা মনে করা এবং মুজাহিদগণকে জামা’আহ থেকে বেরিয়ে এসে বাগদাদীর হাতে বাইয়াত গ্রহণের আমন্ত্রণ জানানো এ সকল বিষয় প্রত্যক্ষ করে শত্রুরা ব্যথিত হবে নাকি আনন্দের বন্যায় ভাসবে? ‘হাসবুনাল্লাহ ওয়া নি’মাল ওয়াকীল’ ‘আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, আর তিনি কতই না উত্তম অভিভাবক।’
প্রিয় উম্মাহ! আমরা আপনাদেরকে গুরুত্বের সাথে অবগত করতে চাই যে, আমরা উক্ত খিলাফাহকে স্বীকৃতি দেই না এবং একে নবুয়্যতের আদলে খিলাফাহ বলে মনে করি না। এটি এমন ইমারাহ যা পরামর্শ ছাড়া শাসিত হচ্ছে। একে মেনে নেয়া এবং বাইয়াত গ্রহণ করা মুসলমানদের জন্য আবশ্যক নয়। তাছাড়া বাগদাদীকে আমরা খিলাফতের যোগ্য মনে করি না।
আমি আবারো বলছি যে, আমরা উক্ত খিলাফাহকে স্বীকৃতি দেই না এবং নবুয়্যতের আদলে প্রতিষ্ঠিত খিলাফাহ মনে করি না। এটি হচ্ছে বিনা পরামর্শে জবরদখলকৃত ইমারাহ। এর বাইয়াত গ্রহন করা মুসলমানের জন্য আবশ্যক নয় এবং বাগদাদী খিলাফতের যোগ্য নয়।
এ কথাগুলো আমার একার নয়; বরং সত্যের উপর অবিচল বিদগ্ধ আলেমগণ বিষয়গুলো নিশ্চিত করেছেন। তাদের কয়েকজন হলেন, শায়েখ আবু মুহাম্মাদ আল-মাকদিসী, শায়েখ আবু কাতাদাহ ফিলিস্তিনী, শায়েখ হানী আস-সিবায়ী, শায়েখ তারেক আব্দুল হালীম প্রমূখ। দাওয়াহ ও জিহাদের পথে তাদের প্রত্যেকেরই রয়েছে এমন এমন অবিস্মরণীয় ত্যাগ যা কল্পনাকেও হার মানায়।
এই পর্যায়ে মুসলিম উম্মাহর প্রতি আমার বার্তা হচ্ছে- বাগদাদী এবং তার অনুসারীদের গৃহীত নীতি সাধারণভাবে জিহাদে অংশগ্রহণকারী জামাআহ সমূহের এবং বিশেষভাবে তানযীম আল-কায়েদার দৃষ্টিভঙ্গি প্রতিনিধিত্ব করে না। কারণ, আমরা গোপন বাইয়াতের মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহকে শাসন করতে চাই না। নির্যাতন, নিপীড়ন, জ্বালাও-পোড়াও ও জবরদস্তিমূলক পন্থা প্রয়োগ করে শাসন ক্ষমতা করায়ত্ত করতে চাই না। এগুলো সেই পন্থা নয় যার জন্য যুগ যুগ ধরে মুজাহিদগণ জীবনের নজরানা পেশ করে আসছেন। তারা খিলাফতে রাশেদা পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষে জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন। তারা এত কিছু করেছেন এমন একটি খিলাফাহ রাষ্ট্রপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে; যার মাঝে খলিফার শরয়ী শর্তাবলী পূর্নমাত্রায় বিদ্যমান থাকবে। আর উক্ত খিলাফাহ প্রতিষ্ঠিত হবে ‘আহলুল হাল্লি ওয়াল আকদ’ তথা- বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের পরামর্শ ও সম্মতিক্রমে। তারা এত কিছু এজন্য করেননি যে, খিলাফাহকে ছিনতাই করা হবে।
হে মুসলিম জাতি! জেনে রাখুন, আমরা বাগদাদী ও তার দলকে প্রত্যাখ্যান করার কারণে কারো পক্ষে এমন মনে করা সমীচীন হবে না যে, এটি হচ্ছে দুটি তানযীমের মতপার্থক্য; বরং এ হচ্ছে ক্ষমতালোভী স্বৈরশাসক ও তার মদদদাতাদের সাথে খিলাফতে রাশেদা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সর্বস্ব বিলিয়ে মুসলিম উম্মাহর মতবিরোধ। আফসোস আজ আমাকে এসব কথাও বলতে হচ্ছে; কিন্তু বাগদাদী ও তার অনুসারীরা আমাকে বলতে বাধ্য করেছে।
আমরা বাগদাদীর খিলাফয়াহকে স্বীকৃতি দেই না এবং এটা নবুয়্যতের আদলে খিলাফাহ মনে করি না। এর অর্থ এই নয় যে, তার সমুদয় সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ আমরা অবৈধ মনে করি। তার যেমন রয়েছে পাহাড়সম ভুল তেমনি রয়েছে যথার্থ কিছু পদক্ষেপও।
তার ভুলের ফিরিস্তি যতই বড় হোক না কেন আমি যদি ইরাক বা শামে উপস্থিত থাকতাম; খৃষ্টান, ধর্মনিরেপেক্ষতাবাদী, সাফাবী ও নুসাইরীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই তার দিকে সাহায্যের হাত প্রসারিত করতাম। কারণ, বিষয়টি এসবের অনেক উর্ধ্বে। এটি হচ্ছে খৃস্টানদের হামলার মুখোমুখি মুসলিম উম্মাহর সমসসা। তাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই হামলার মোকাবেলা করা সকল মুজাহিদের অপরিহার্য দায়িত্ব।
ইরাক ও শামে খৃষ্টানদের হামলার মুখে আমাদের কর্মপন্থা কি হবে তার বিস্তারিত আলোচনায় পড়ে আসছি। তখন নবুয়্যতের আদলে খিলাফাহ-র মৌলিক আলোচনাও করা হবে।
৫। পাকিস্তান ও আমেরিকান নৌবহরের উপর সফল আক্রমণ পরিচালনা করা ভারত উপমহাদেশীয় তানযীম আল-কায়েদার ভাইদের জানাচ্ছি আন্তরিক অভিনন্দন। এ সম্পর্কে এক বার্তায় তারা জানিয়েছেন যে, কেন তারা আমেরিকাকে টার্গেট করেছেন। কারণ, তারা মুসলমানদের রক্ত ঝরাচ্ছে। সিরিয়া, ইরাক ও ইয়েমেনে রক্ত ঝরাচ্ছে। পাকিস্তান, আফগানিস্তানসহ গোটা মুসলিম বিশ্বে। দো’আ করি আল্লাহ তাদের প্রচেষ্টায় বরকত দান করুন এবং হিন্দুস্তানের মুসলমানদেরকে গোলামীর জিন্দেগী থেকে উদ্ধার করার তাওফীক দান করুন।
৬। ইমারাতে ইসলামিয়া ককেশাসের আমীর আবু মোহাম্মদ দাগেস্তানীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাছি। তিনি অতি মূল্যবান একটি পত্র পাঠিয়েছেন। পত্রটি তিনি উম্মাহর সকল আলিমগণকে সম্বোধন করে লিখেছেন। বিশেষভাবে যাদের কাছে পাঠিয়েছেন তাদের মধ্যে আমিও একজন। অন্য মহোদয়গণ হলেন- শায়েখ আবু মুহাম্মাদ আল-মাকদিসী, শায়েখ আবু কাতাদাহ ফিলিস্তিনী, শায়েখ হানী আস-সিবায়ী, শায়েখ তারেক আব্দুল হালীম ও শায়েখ আবু মুনযির আশ শানক্বিতী।
তিনি আমার কাছে মোট দুটি চিঠি পাঠিয়েছেন। এর জন্য আমি গর্ববোধ করি। তিনি আমার ব্যাপারে অনেক উঁচু ধারনা পোষণ করেন। আর দ্বিতীয় চিঠিতে তিনি উপরোক্ত বিদগ্ধ শায়েখ গণের সাথে আমাকেও স্মরণ করেছেন। অথচ আমি আলিমও নই মুতাআল্লিমও নই। তবে হ্যাঁ, আমি আলিম ও ইলমকে ভালবাসি।
শামের ভাইদের উদ্দেশ্যে তিনি যে তাৎপর্যপূর্ণ ভাষণ দিয়েছেন আমি তা মনোযোগের সাথে শুনেছি। তিনি মুজাহিদ ভাইদেরকে ফিতনা সম্পর্কে সতর্ক করেছেন। মুসলমানদের রক্ত ঝরানো ও তাদের মান-সম্মানে আঘাত করার ব্যাপারে সাবধান করেছেন। তিনি বলেছেন- ‘শুনে রাখুন, যতদিন পর্যন্ত আপনাদের মধ্যে পরস্পরকে ছাড় দেয়ার মানসিকতা তৈরি না হবে, যতদিন পর্যন্ত আপনারা সমঝোতার পথ বেছে নিতে না পারবেন এবং যতদিন পর্যন্ত শরীয় ফায়সালাকে বিনা বাক্যব্যয়ে মেনে নিতে এবং আমীরের অনুগত না হতে পারবেন ততদিন পর্যন্ত ফিতনা নির্বাপিত হবে না।’
তাই শায়েখের উদ্দেশ্যে আমি কেবল এটি বলতে পারি যে, আল্লাহ তা’আ’লা আপনাকে উত্তম বিনিময় দান করুন। আপনি আমার উপর যথেষ্ট আস্থা রেখেছেন। আল্লাহ আপনাকে আরো জাযা দান করুন। আপনি শামের মুজাহিদ ভাইদেরকে যথাযথ দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। এই ফিতনার সময় মুজাহিদগণের মাঝে সমঝোতার যে দৃষ্টান্তমূলক অবস্থান আপনি গ্রহণ করেছেন তা সবার জন্য অনুকরণীয়। আল্লাহ তাওফীক দিতেছেন বলেই আপনি এমন উদ্যোগ গ্রহণ করতে পেরেছেন। তাই বেশি বেশি শোকরিয়া আদায় করা উচিৎ। আপনাকে ও ককেশাসের মুজাহিদ ভাইদেরকে আমি কতটা ভালবাসি এবং এই মুসলিম ভূখণ্ডটি আমার হৃদয়ের কতটা গভীরে আসন পেতে আছে তা আল্লাহই ভাল জানেন। আপনি হয়ত জেনে থাকবেন যে, আমার জীবনের আনুমানিক ছয়টি মাস উত্তর ককেশাসের দাগেস্তান শহরে কেটেছে। চেচনিয়া যাওয়ার পথে আমাকে বন্দী করা হয়। তারপর পুরো সময়টা অন্ধকার কারাপ্রকোষ্ঠে কাটাতে হয়েছে। দো’আ করি দাগেস্তান ও ককেশাসে ইসলামের বিজয় সূচিত হোক।
দাগেস্তানের সেই দিনগুলোতে আমি কতিপয় গুণীজন ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের সাক্ষাৎ লাভ করেছি। আমার পক্ষ থেকে আল্লাহ তাদেরকে উত্তম জাযা দান করুন এবং তাদের কাছে পৌঁছে দিন আমার সালাম ও দো’আ।
আমার লিখিত ‘ফুরসানু তাহতা রইয়াতিন নাবী সাল্লাল্লাহু আ’লাহি ওয়াসাল্লাম’ কিতাবের দ্বিতীয় এডিশনে ‘দাগেস্তানঃ…………’ অধ্যায়ে ককেশাসের মুসলিম ভাইদের প্রতি আমার ভালবাসার কিছু অনুভূতি ব্যক্ত করেছি। আমি যেতে চেয়েছিলাম চেচনিয়ায়; কিন্তু আল্লাহ চেয়েছিলেন ভিন্ন কিছু। জেল থেকে মুক্তি পেয়ে আমি ফিরে আসি আফগানিস্তানে। এখানে শায়েখ উসামা রহ. আমাকে বুকে জড়িয়ে নেন। আল্লাহর ইচ্ছায় আমি বার বার শায়েখের সাক্ষাৎ লাভে ধন্য হই।
আপনার মূল্যবান পত্রে উপরোক্ত মহোদয়গণের সাথে আমাকেও স্মরণ করেছেন। এটিই প্রমাণ করে যে এ উম্মত একতাবদ্ধ। সুখে দুঃখে একে অপরের অংশীদার। ইসলামের শত্রুরা আমাদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টির হাজার চেষ্টা করেও সফল হয়নি। বরং ইসলামী ভ্রাতৃত্ব বরাবরের মতই অটুট আছে এবং থাকবে ইনশাআল্লাহ। আর কেনইবা এমনটি হবে না; অথচ ইসলামী ভ্রাতৃত্ব পুরোই আল্লাহ প্রদত্ত। আল্লাহ তা’আ’লা রাসুল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লামের উপর অনুগ্রহ প্রকাশ করে বলছেন-
“পক্ষান্তরে তারা যদি তোমার সাথে প্রতারণা করতে চায়, তবে তোমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, তিনিই তোমাকে শান্তি যুগিয়েছেন স্বীয় সাহায্যে ও মুসলমানদের মাধ্যমে। আর প্রীতি সঞ্চার করেছেন তাদের অন্তরে। যদি তুমি সেসব কিছু ব্যয় করে ফেলতে, যা কিছু জমিনের বুকে রয়েছে, তাদের মনে প্রীতি সঞ্চার করতে পারতে না। কিন্তু আল্লাহই তাদের মনে প্রীতি সঞ্চার করেছেন। নিঃসন্দেহে তিনি পরাক্রমশালী, সুকৌশলী।”(সূরা আনফাল- ৬২,৬৩)
তাই আশা করব, আমাকে এবং আমার ভাইদেরকে মূল্যবান পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দিতে কখনো কার্পণ্য করবেন না এবং দো’আর সময় আমকে ভুলবেন না। আপনাদেরকে আনন্দের সাথে জানাচ্ছি যে, আল্লাহর হুকুমে ইসলামের এক সোনালী অধ্যায় রচিত হতে যাচ্ছে। আমরা এক মহাবিজয়ের দোরগোড়ায় উপনীত হয়েছি। আশা করছি আল্লাহ তা’আ’লা আপনার সাথে সাক্ষাৎ নসীব করবেন এবং আপনার হিকমত ও কর্মপন্থা থেকে উপকৃত হওয়ার সুযোগ করে দিবেন। এটি আল্লাহ তা’আ’লার জন্য মোটেও কঠিন কিছু নয়।
৭। স্মরণ করছি বন্দী মুজাহিদ ভাইদেরকে। তারা ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর স্বার্থে কারাপ্রকোষ্ঠে নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করছেন। স্মরণ করছি সেই সকল বীরাঙ্গনা বোনদেরকে যারা বিশ্বের বিভিন্ন জেলে দুর্বিসহ যন্ত্রণার মাঝে কালাতিপাত করছেন। বিশেষভাবে স্মরণ করছি শায়েখ আবু হামজা রহ. এর বিধবা স্ত্রী হাসনা এবং তার অন্য বোনদেরকে; যারা ইরাকে বন্দী আছেন। এর স্মরণ করছি আমেরিকায় বন্দী আফিয়া সিদ্দিকীকে। জাজিরাতুল আরবে হায়লা আল-ক্বাসীর এবং তার বোনদেরকে।
মুজাহিদ ভাইদেরকে বলব, বন্দী বিনিময়ের সময় বোনদেরকে মুক্ত করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবেন। অনিবার্য কোন কারণ ছাড়া এই অবস্থান থেকে সরে আসবেন না। যদিও মুজাহিদদের হাত থেকে মুক্ত ব্যক্তি হাজার বছর বেঁচে থাকেন অথবা এক বোনের মুক্তির বিনিময়ে হাজারও ভাইকে বন্দী করার আশংকা হয়।
মোবারকবাদ জানাই খোরাসানী ভাইদেরকে। তারা আমেরিকার নাগরিক ওয়ান আইনষ্টাইনকে অবমুক্ত করার বিনিময়ে আফিয়া সিদ্দিকী ও শায়েখ আবু হামজা এর বিধবা স্ত্রীর মুক্তি দাবী করেছেন।
সশ্রদ্ধ মোবারকবাদ জানাই ‘জাবহাতুন নুসরার’ ভাইদেরকে। আল্লাহ তা’আ’লা তাদের মাধ্যমে তাঁর দ্বীনকে নুসরত (সাহায্য) করুন। তাদেরকে এবং তাদের ভাইদেরকে ‘খিলাফাহ আ’লা মিনহাজুন নুবুয়্যাহ’ প্রতিষ্ঠার তাওফীক দান করুন। যে খিলাফাহ প্রতিষ্ঠিত হবে দুর্বল-সবল, রাজা-প্রজা নির্বিশেষে সকলের উপর সমভাবে শরয়ী বিধিবিধান প্রয়োগের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। যে খিলাফাহ প্রতিষ্ঠিত হবে শুরার উপর ভিত্তি করে। সততা, আমানতদারী ও বিশুদ্ধ আকিদার উপর ভিত্তি করে। যেখানে মুসলমানদের জানের হিফাযত সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে। যে খিলাফতে শৈথল্যবাদীদের ছাড়াছাড়ি ও সীমালঙ্ঘনকারীদের বাড়াবাড়িকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না। ক্ষমতায় যাওয়ার পথ সুগম করতে এবং শাসকের লালসা পূরণ করতে খুনখারাবীর পথ বেছে নেয়া হবে না।
আল্লাহ তা’আ’লা জাবহাতুন নুসরাকে দীর্ঘজীবি করুন। তারা কয়েকজন সন্ন্যাসিনীর বিনিময়ে একশত বায়ান্নজন বোনকে ছাড়িয়ে এনেছেন। যাদের মধ্যে ছিলেন একজন দুঃখিনী মা এবং তার চার শিশু সন্তান। তারা সকলেই বন্দী ছিলেন নরপিশাচ বাশারের হাতে।
আল্লাহ তা’আ’লা জাবহাতুন নুসরাকে দীর্ঘজীবি করুন। তারা বন্দী বিনিময়ের আওতায় লেবানন সরকারের হাতে বন্দী বোনদেরকে অবমুক্ত করার লক্ষ্যে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন। আল্লাহ তা’আ’লা তাদেরকে ইসলাম ও মুসলমানদের পক্ষ থেকে উত্তম জাযা দান করুন এবং বন্দী ও বন্দিনীগণকে মুক্ত করার তাওফীক দান করুন। বন্দী বিনিময়ের ক্ষেত্রে তারা অনুপম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আল্লাহ তা’আ’লা তাদের কথা ও কাজে ইখলাস দান করুন। তাদের আমলসমূহ কবুল করুন এবং সুদৃঢ় করে দিন তাদের দ্বীনকে যা তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন।
মুজাহিদ ভাইদেরকে এবং সাড়া দুনিয়ার মুসলমানদেরকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই সেই অকুতোভয় সৈনিকের কথা যিনি আমেরিকার হাতে বন্দী হয়ে আছেন। তিনি হলেন, অসীম সাহসী ওমর আব্দুর রহমান। আল্লাহ তাকে হেফাজত করুন এবং বন্দীদশা থেকে মুক্তির ফায়সালা করুন। যখন আল্লাহর এই সৈনিককে আমেরিকার আদালতে হাজির করা হল এবং বাদীপক্ষ তার মৃত্যুদণ্ড কামনা করল তখন তিনি নূন্যতম বিচলিত হলেন না; বরং তার বজ্রহুংকারে কেঁপে উঠল সভাগৃহ, যেন তাগুতী প্রাসাদ এখনই মুখ থুবড়ে পড়বে। তিনি দৃপ্ত কণ্ঠে বলতে লাগলেন- ‘হে সুপ্রিমকোর্টের বিচারকমণ্ডলী! সত্য প্রকাশিত হয়েছে। চক্ষুষ্মানদের সামনে তার আলো উদ্ভাসিত হয়েছে। হুজ্জত কায়েম হয়েছে। সুতরাং আপনার কর্তব্য হল আল্লাহর আইন অনুযায়ী বিচারকার্য পরিচালনা করা এবং আল্লাহর বিধানের সাথে ঐক্যমত পোষণ করা। যদি এমনটি করতে ব্যর্থ হন আপনি কাফির, জালিম ও ফাসিকে পরিণত হবেন।’
আমি মুজাহিদ ভাইগণকে আরো স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, আমাদের ভাই খালেদ শায়েখ মুহাম্মাদের কথা। যিনি পেন্টাগন, ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার এবং পেনিসিলভেনিয়ায় ইস্তেশহাদী হামলার সমন্বয়ক।
আমি আরো স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, সাফাবী ও রাফেযীদের হাতে বন্দী ভাইদের কথা। মরক্কো, শাম ও ইরাকে বন্দী ভাইদের কথা। স্মরণ করিয়ে দিতে চাই সোমালিয়ায় বন্দী ভাইদের কথা এবং বিশ্বব্যাপী সকল মুসলিম বন্দী ভাইদের কথা।
হে মুজাহিদ ভাইয়েরা! বন্দী ভাই-বোনদের মুক্ত করার একমাত্র মাধ্যম হচ্ছে শক্তি। সুতরাং আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করুন এবং দুর্বলতা ও হীনমন্যতা ঝেড়ে ফেলে সম্মুখ পানে এগিয়ে চলুন।
আজ এ পর্যন্তই। আল্লাহর ইচ্ছা হলে পরবর্তী পর্বে আবারো কথা হবে।