JustPaste.it

শাইখ আইমান আল-যাওয়াহিরী হাফিঃ এর ‘ইসলামী বসন্ত’ বক্তব্যের বিরুদ্ধে ১০০ টি মিথ্যাচার ও নব্য খারিজী সমর্থকদের নতুন শরীয়ত প্রণয়ন। (৩য় পর্ব)


বিষয়-৩। মিথ্যাচার , প্রতারণা ও নতুন শরীয়তের সংমিশ্রণঃ

শাইখ আইমান আল-যাওয়াহিরী হাফিঃ ‘ইসলামী বসন্ত’ বক্তব্যে সোমালিয়ায় আল-কায়েদার শাখা আল-শাবাব এর আমীর শাইখ মুখতার আবু যুবাইর রাহিঃ শহীদ হওয়ায় উনার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার এক পর্যায়ে বলেন,

“১৪৩৪ হিঃ রমজান মাসে তিনি আমার কাছে একটি পত্র পাঠিয়েছিলেন। তাতে তিনি লেখেন আল্লাহ তাআলা দাউলার (ISIS) ভাইদের ক্ষমা করুন। তারা বিদ্রোহ করেছে এবং দাবী করছে যে, তারা যথার্থ কাজটিই করেছে। অন্ততঃ তাদের থেকে এমনটি আশা করছিলাম না। অথচ, আমরা দিবা-নিশি এমন একটি খিলাফাহ ব্যবস্থার কাজ করছি। গোটা দুনিয়ার মুসলিম একতাবদ্ধ হয়ে যার অধীনে থাকবে। আমরা শায়েখের (শায়েখ জাওয়াহিরী হাফি.)কাছে আশা করব যে, তিনি ধৈর্য ধারণ করবেন এবং তাদেরকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আর সংশোধনের চেষ্টা চালিয়ে যাবেন।” (ইসলামী বসন্ত,পৃষ্ঠা-১৩)

অথচ সেটিকে বিকৃত করে খারিজী আইএস সমর্থক #Abdul_Ahad কী লিখেছে দেখুন !
//৩। "WS"
ইসলামী বসন্ত ১ম পর্বের ১৩ পৃস্টায় আছে,
দাওলাহ যা করছে (খিলাফাহ ঘোষনা করে) অন্তত তাদের থেকে এমনটি আশা করছিলামনা। অথচ আমরা দিবানিশি এমন একটি খিলাফাহ ব্যবস্হার করছি, যেখানে গোটা দুনিয়ার মুসলিম একতাবদ্ধ হয়ে যার অধিনে থাকবে।।"//

প্রথমতঃ এই কথাটিও শাইখ আইমান আল-যাওয়াহিরী হাফিঃ এর নিজের নয় বরং শাইখ মুখতার আবু যুবাইর রাহিঃ এর চিঠির,যা বাংলা পড়তে পারে এমন যে কেউ বুঝার কথা। কিন্তু সে হয় তা বুঝেনি কিংবা জেনে বুঝে কথাটিকে শাইখ আইমান আল-যাওয়াহিরী হাফিঃ এর নামে চালিয়েছে। এই হচ্ছে তার বুঝ এবং সততা !!! আল্লাহ তা’আলা প্রত্যেক ধোঁকাবাজ থেকে উম্মাহকে হিফাযত করুন।

দ্বিতীয়তঃ শাইখ মুখতার আবু যুবাইর রাহিঃ উনার চিঠিতে কী বলেছিলেন আবার ভালোভাবে খেয়াল করুন........ “তাতে তিনি লেখেন আল্লাহ তাআলা দাউলার (ISIS) ভাইদের ক্ষমা করুন। তারা বিদ্রোহ করেছে এবং দাবী করছে যে, তারা যথার্থ কাজটিই করেছে। অন্ততঃ তাদের থেকে এমনটি আশা করছিলাম না। ”

শাইখ মুখতার আবু যুবাইর রাহিঃ বলেছেন, আইসিসের বিদ্রোহের কথা অর্থাৎ আল-কায়েদার নেতৃত্বের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের কথা বলেছেন।
অথচ এই মিথ্যাবাদী এখানে আল-কায়েদার নেতৃত্বের নির্দেশের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের কথাটি বাদ দিয়ে এখানে তাদের বাতিল খিলাফতের কথা ঢুকিয়ে দিয়েছে।

তৃতীয়তঃ আশ্চর্যের বিষয় কী জানেন ! প্রত্যেক মিথ্যাবাদী প্রতারক নিজের অজান্তেই এমন আলামত রেখে যায়, যার ফলে তা তার গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়ায় আলহামদুলিল্লাহ্‌। এই #Abdul_Ahad এর অবস্থাও তথৈবচ !

সে হয়তো তার ব্যাপক ফিকহী ও আরবী ব্যকরণের জ্ঞান দিয়ে আবর্জনা লিখে দাবি করতে চাইবে, এর দ্বারা তাদের বাতিল ও বাস্তুহারা খিলাফতের কথা বুঝানো হয়েছে !!!
কিন্তু না ! সে সুযোগ নেই, আলহামদুলিল্লাহ্।

নব্য খারিজী আইসিসের এই বাতিল খিলাফাহ ঘোষণা করা হয় ১৪৩৫ হিজরির রমযান মাসে অর্থাৎ ২০১৪ সালের ২৯ জুন। আর শাইখ মুখতার আবু যুবাইর রাহিঃ এই চিঠিটি পাঠিয়েছেন ১৪৩৪ হিজরির রমযান মাসে অর্থাৎ ২০১৩ সালের জুলাই মাসে। তাহলে তাদের বাতিল খিলাফত ঘোষণার এক বছর আগে কী তাদের খিলাফত ঘোষণা নিয়ে বলেছেন ??? নাকি আল-কায়েদার নির্দেশ লঙ্ঘন এবং গোপনে বাই’আত ভঙ্গের কথা বলেছেন ???

যে কেউ ইসলামী বসন্তের ১৩ পৃষ্ঠায় তা দেখে আসতে পারেন,
‘ইসলামী বসন্ত’ কিতাবের ডাউনলোড লিংক..... www.mediafire.com/file/is817ezcxj8fs94

অতঃপর #Abdul_Ahad তার এই মিথ্যাচার প্রমাণের জন্য এই কথার মধ্যে দু’টি শরীয়ত বহির্ভূত কথা খুঁজে পেয়েছে। একটি নাকি তাদের এই বাতিল খিলাফতের বিরোধিতা !
তাদের এই বাতিল খিলাফত ঘোষণার ১ বছর পূর্বে খারিজী নেতাদের আল-কায়েদার দায়িত্বশীলদের বিদ্রোহ এবং বাই’আত ভঙ্গের কথা বলাকে সে খিলাফতের বিরোধিতা বলে চালিয়ে দিয়েছে। সুবহানাল্লাহ !!

এধরণের মিথ্যাচার দাজ্জাল কিংবা তার অনুসারীদের থেকে হওয়ার কথা ! ইসলামের অতীব গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা খিলাফতের স্লোগানধারী কারো কাছ থেকে নয়।

অতঃপর সে খিলাফতের গুরুত্ব বুঝানোর জন্য এমন ৫ টি আয়াত ব্যবহার করেছে, যার একটিও রাষ্ট্রীয় খিলাফত বুঝানোর জন্য নাযিল হয়নি বরং মানুষ পৃথিবীতে আল্লাহর খলীফাহ এই প্রসঙ্গে অবতীর্ণ আয়াত।

তার সেই পোস্টের লিংক..... fb.com/312667945896062

অতঃপর #Abdul_Ahad লিখেছে,
//ইমাম কুরতুবী রহঃ বলেন, قوما يخلف بعضهم بعضا قرنا بعد قرن وجيلا بعد جيل ،
অর্থাৎ কোন বিরতি ছাড়াই একটি দল এটিকে প্রতিস্টার দায়িত্ব নিতেই হবে।।
দাওলাহ সে কাজটি করেই পুরো মুসলিম জাহানকে গুনাহগার হওয়া থেকে যেখানে বাচিয়েছে
সেখানে শাইখ জাওয়াহিরী বলেন, "তাদের থেকে এমনটি আশা করছিলামনা"
এটি একটি শরীয়ত বহির্ভূত কথা।।।//

এই বাক্যটি শাইখ মুখতার আবু যুবাইর রাহঃ এর ২০১৩ সালের তার প্রমাণতো উপরেই দিলাম।
ইমাম কুরতুবী রাহঃ এর নামে চালানো উপরোক্ত আরবী বাক্যটি ইমাম কুরতুবীর নয় বরং আল্লামা ইবনে কাছীর রাহঃ এর তাফসিরে ইবনে কাছীরের। এই বাক্যটির অর্থও সম্পূর্ণ বিকৃত করে মনগড়া চালিয়ে দিয়েছে।
( إني جاعل في الأرض خليفة ) أي : قوما يخلف بعضهم بعضا قرنا بعد قرن وجيلا بعد جيل
আল্লামা ইবনে কাছীর রাহঃ বলেন, “(নিশ্চয়ই আমি (আল্লাহ) পৃথিবীতে প্রতিনিধি প্রেরণকারী) অর্থাৎ এমন জাতি যাদের এক অংশ অপর অংশের পশ্চাতে আসবে, এক যুগের পর আরেক যুগ, এক জাতির পর আরেক জাতি।”

অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা মানুষকে পৃথিবীতে প্রতিনিধিত্ব করার জন্য একের পর এক জাতি-গোষ্ঠী প্রেরণ করবেন, এই আয়াতের তাফসীরে আল্লামা ইবনে কাছীর রাহঃ একথা বলেছেন। আর সে এটিকে খিলাফত প্রতিষ্ঠার দায়িত্বের নামে চালিয়েছে।
আমার ধারণা, ইবনে কাছীরে এই অংশের উপরে ইমাম কুরতুবী রাহঃ এর একটি বক্তব্য থাকায় এটিকেও হয়তো ইমাম কুরতুবীর মনে করে চালিয়ে দিয়েছে !!
যেখানে ইসলামী শরীয়ত কিংবা আরবী ভাষায় তার প্রাথমিক জ্ঞান নেই,সেখানে সে যদি তাফসিরের উদ্ধৃতি দেয়, তাহলে এরকমটি হওয়াই স্বাভাবিক।

এখনো যাদের আকল লোপ পায়নি তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, আইসিসের খিলাফত ঘোষণার ১ বছর পূর্বে আইসিস কর্তৃক আল-কায়েদার নেতৃত্বের নির্দেশ মানার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ এবং বাই’আত ভঙ্গ করা কী সঠিক কাজ নাকি শরীয়ত বহির্ভূত ???

যেহেতু আবু বকর বাগদাদী শাইখ আইমান আল-যাওয়াহিরী হাফিঃ কে নিজের উলুল আমর (আমীর) হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে এবং আল-কায়েদার নেতৃত্বের নির্দেশ মান্য করাকে নিজেই বাধ্যতামূলক বলে চিঠি পাঠিয়েছে, তাহলে আমরা জানতে চাই, উলুল আমরের বাধ্যতামূলক নির্দেশ অমান্য করা ইসলামী শরীয়ত বহির্ভূত নাকি ইসলামী শরীয়তে জায়েয ???

আবু বকর বাগদাদী শাইখ আইমান আল-যাওয়াহিরী হাফিঃ এর কাছে লেখা চিঠিতে কী বলেছিলো দেখুন……..
“আল্লাহকে সাক্ষী রাখছি যে, আপনারা আমাদের নির্দেশ দানের অধিকারী অর্থাৎ উলুল আমর। আমাদের বেঁচে থাকা পর্যন্ত আমাদের উপর আপনাদের কথা শোনা ও মানার হক্ব থাকবে। আর নিশ্চয়ই আমাদের উদ্দেশ্যে আপনাদের উপদেশ এবং নির্দেশনা আপনাদের উপর আমাদের অধিকারস্বরুপ। আর আপনাদের নির্দেশ আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক।”

বিস্তারিত প্রমাণসহ পড়ুন এখানে...... https://justpaste.it/bayat_is

মিথ্যাচার, প্রতারণা এবং মুসলিমদের রক্ত হালাল করার মধ্য দিয়ে আইসিসের দাবিকৃত নিশ্চিহ্ন হতে যাওয়া এই খিলাফতের নতুন শরীয়ত অনুযায়ী কী তাহলে উলুল আমরের বাধ্যতামূলক নির্দেশ অমান্য করা শরীয়তসিদ্ধ ???

এভাবেই খারিজী আইএসের নেতারা গ্লোবাল জিহাদের আমীর ও আলিমদের কথাকে বিকৃত করে নির্মম সব অপবাদ দিয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ্‌, তাদের এসব মিথ্যাচার, বিকৃতি ও নতুন শরীয়ত প্রত্যেক আকলবান ব্যক্তির কাছে প্রকাশ্য দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হয়ে গেছে।

.

বিঃদ্রঃ  জিহাদ ও আইএস সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু লেখা পড়তে মূল পেইজে যেতে পারেন। 

লিংক....   https://justpaste.it/Abdullah_Hasan