JustPaste.it

পাশ্চাত্য ইসলাম বিরোধী ষড়যন্ত্র – শাইখ আব্দুল্লাহ আযযাম (রহঃ)

 

পশ্চিমাদের ষড়যন্ত্রের স্বরূপ


আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা বলেন-

وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا ۚ وَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنتُمْ أَعْدَاءً فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُم بِنِعْمَتِهِ إِخْوَانًا وَكُنتُمْ عَلَىٰ شَفَا حُفْرَةٍ مِّنَ النَّارِ فَأَنقَذَكُم مِّنْهَا ۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ آيَاتِهِ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ [٣:١٠٣]
وَلْتَكُن مِّنكُمْ أُمَّةٌ يَدْعُونَ إِلَى الْخَيْرِ وَيَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنكَرِ ۚ وَأُولَٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ [٣:١٠٤]
وَلَا تَكُونُوا كَالَّذِينَ تَفَرَّقُوا وَاخْتَلَفُوا مِن بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْبَيِّنَاتُ ۚ وَأُولَٰئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ [٣:١٠٥]
يَوْمَ تَبْيَضُّ وُجُوهٌ وَتَسْوَدُّ وُجُوهٌ ۚ فَأَمَّا الَّذِينَ اسْوَدَّتْ وُجُوهُهُمْ أَكَفَرْتُم بَعْدَ إِيمَانِكُمْ فَذُوقُوا الْعَذَابَ بِمَا كُنتُمْ تَكْفُرُونَ [٣:١٠٦]
وَأَمَّا الَّذِينَ ابْيَضَّتْ وُجُوهُهُمْ فَفِي رَحْمَةِ اللَّهِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ [٣:١٠٧]

“তোমরা আল্লাহ্র রজ্জুকে সম্মিলিত ভাবে আঁকড়ে ধর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। আর তোমাদের উপর কৃত আল্লাহ্র সে অনুগ্রহের কথা স্মরণ কর, যখন তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে। ফলে তোমরা তাঁর রহমতে পরস্পর ভাইয়ে পরিণত হয়েছিলে। আর তোমরা জাহান্নামের গর্তের নিকটবর্তী ছিলে, তিনি তা থেকে তোমাদের রক্ষা করেছেন। এভাবেই আল্লাহ্ নিজের নিদর্শন সমূহ তোমাদের রক্ষা করেছেন। এভাবেই আল্লাহ্ নিজের নিদর্শন সমূহ তোমাদের জন্য প্রকাশ করেন, যাতে তোমরা হিদায়াত প্রাপ্ত হতে পার। আর তোমদের মাঝে এমন একটি দল থাকা উচিত, যারা আহবান জানাবে কল্যাণের প্রতি এবং আদেশ করবে সৎকর্মের ও নিষেধ করবে মন্দ কাজ থেকে। আর তারাই হবে সফলকাম। আর তোমরা তাদের ন্যায় হয়ো না, যারা পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও তাদের নিকট সুস্পষ্ট নিদর্শন সমূহ আসার পরও বিরোধ করেছে। আর তাদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি। সেদিন কিছু চেহারা উজ্জ্বল হবে, আর কিছু চেহারা কালো হবে।  যাদের চেহারা কালো হবে, তাদেরকে বলা হবে, তোমরা কি ঈমান আনার পর কুফরী করেছ? অতএব, তোমরা তোমাদের কুফরীর শাস্তি আস্বাদন কর। আর যাদের চেহারা উজ্জ্বল হবে, তারা চিরকাল আল্লাহ্র রহমতে থাকবে।”[আলে ইমরানঃ১০৩-১০৭]।

ঐতিহাসিক সম্প্রীতি

ঐতিহাসিকদের বর্ণনা মতে আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়েছে আউস ও খাযরাজ গোত্রের ব্যাপারে। তারা জাহেলী যুগে একে অপরের চরম শত্রু ছিল। অতঃপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আসলেন এবং তাঁর হাতে আল্লাহ্ তাদের মাঝে সম্প্রীতি স্থাপন করে দিলেন। একদা আউস ও খাযরাজ গোত্রের লোকেরা পরস্পর কথা বলছিল। এ সময় কিছু ইয়াহুদী তাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আউস ও খাযরাজদের সৌহার্দ্যপূর্ণ অবস্থায় গল্প করতে দেখে হিংসায় তাদের অন্তর জ্বলে গেল। তখন এক ইয়াহুদী কোন কোন বর্ণনা মতে তাঁর নাম শাস বিন কাইস কথা বলতে আরম্ভ করল এবং বিআ’সের কবিতা আবৃত্তি করতে লাগল। বিআ’স হচ্ছে সে করুণ দিন, যেদিন আউস ও খাযরাজ গোত্রের মাঝে এক মর্মান্তিক যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। তাই ইয়াহুদীর এ কবিতা আবৃত্তি তাঁদেরকে প্রভাবিত করল।  ইয়াহুদী তাঁর কবিতা আবৃত্তি শেষ করতে না করতেই তারা পরস্পরকে মারার জন্য জুতা ও খেজুরের ডাল নিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এ খবর পৌঁছালে তিনি তাদের মাঝে এসে উপস্থিত হন এবং বললেন-
آَبِدَعْوَيْ الْجَهِلِيَّةِ وَآَنَا بَيْنَ آَظْهُرِ كُم

“আমি তোমাদের মাঝে উপস্থিত থাকাবস্থায় তোমরা কি জাহেলী যুগের দাবী নিয়ে এক অপরের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেছ”? অতঃপর আল্লাহ্ তা’আলা আয়াতগুলো অবতীর্ণ করেন। মুসলমানদের ব্যাপারে ইয়াহুদীদের এ ভূমিকা অস্বাভাবিক ছিল না। কারণ, বাণিজ্যিক ও রাজনৈতিক দিক দিয়ে মদীনাতে তাদের আধিপত্যই বিরাজমান ছিল।হঠাৎ করে যখন আল্লাহ্ তা’আলা মদীনার রাজনৈতিক, আর্থিক ও ধর্মীয় কর্তৃত্ব তাদের হাত থেকে ছিনিয়ে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে দিয়ে দিলেন, তখন এসব আধিপত্যকামী লোকদের জন্য তা মেনে নেয়া সম্ভব হচ্ছিল না। পৃথিবীর যে কোন প্রান্তেই এ ঘটনা ঘটুক না কেন পরাজিত দলের পক্ষে বিজয়ী দলকে সহ্য করা সহজ হয় না। বিজীত দলের ক্ষমতা তাদের হাতে পুনরায় ফিরে না আসা পর্যন্ত তারা বিজয়ী দলের উপর যতদূর সম্ভব আক্রমণ, অপবাদ ও তিরস্কার ইত্যাদি ছুড়ে মারতে থাকে।

সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্ব

সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্ব চিরকাল চলবে। সত্য মিথ্যার সংঘাত এক মুহূর্তের জন্যেও ক্ষান্ত হবে না। মানব জীবনের জন্য আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআলার এ এক অলংঘনীয় বিধান। প্রথম মানব ও মানবীর জান্নাত ত্যাগ করার পর থেকে শুরু হওয়া এ সংঘাত কেয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে ।

কুরআনের ঘোষণা-
قَالَ اهْبِطُوا بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ ۖ وَلَكُمْ فِي الْأَرْضِ مُسْتَقَرٌّ وَمَتَاعٌ إِلَىٰ حِينٍ [٧:٢٤]
“তোমরা পৃথিবীতে নেমে পড়। সেখানে তোমরা পরস্পরের শত্রু হয়ে থাকবে। আর পৃথিবীতে তোমাদের জন্য রয়েছে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবস্থান ও ভোগ করার সুযোগ।”[আ’রাফঃ২৪]।


ভাল ও মন্দের সংঘাত আল্লাহ্র রীতি সমূহের অন্যতম। আর এ সংঘাতের সমাপ্তি ঘটে মুমিনদের সফলতা লাভের মধ্য দিয়ে।

আল্লাহ্ বলেছেন- وَالْعَقِبَةُ لِلمُتَّقِينَ  “ভাল পরিণতি একমাত্র মুত্তাকীদের জন্যেই।”[আ’রাফঃ১২৮]।

  فَلَا عُدْوَانَ إِلَّا عَلَى الظَّالِمِينَ “একমাত্র জালিমরা ব্যতীত আর কারো সাথে যুদ্ধ করবে না। ”[বাকারাহঃ১৯৩]।


তাই যারা ভাল পরিণতির কামনা করে তাদের কর্তব্য হচ্ছে, জালিমদের সাথে যুদ্ধ করে পৃথিবীতে ইসলামকে পুনর্বার প্রতিষ্ঠিত করা। সত্যের সাথে মিথ্যার সহাবস্থান নেই। সত্যের সাথে মিথ্যার সংঘর্ষ সব সময় চলমান । তাই ইমাম শাফেয়ীকে যখন জিজ্ঞেস করা হল,  ‘পরীক্ষায় ফেলা ও প্রতিষ্ঠিত করার মধ্যে মানুষের জন্য কোনটা অধিক মঙ্গলজনক?’তিনি বলেন, –
‘পরীক্ষা ব্যতীত তাঁকে কখনও প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ দেয়া হবে না। শায়খ হাসান আলবান্নাকে আল্লাহ্ রহম করুন। এক সময় তাঁকে মিসরের একটি গ্রামে সংবর্ধনা দেয়া হচ্ছিল। বৃদ্ধ, যুবক ও শিশু বের হল ও আপনার জন্য সাধারণ সবাই সেখানে সমবেত হল। তার সহকর্মী বলেন, এ সময় আমরা তাঁকে খুঁজে পাচ্ছিলাম না। ইখওয়ানের অফিসে গিয়ে দেখতে পেলাম, তিনি দরজার পিছনে ক্রন্দনরত অবস্থায় বসে আছেন। আমরা তাঁকে বললাম, আজকেতো আল্লাহ্ ইসলামকে সম্মানিত করেছেন। তাই আমাদের উচিত আনন্দ প্রকাশ করা। তিনি বললেন, নবীদেরকে তো এভাবে সম্বর্ধনা জানানো হতো না। তাঁদেরকে জানানো হতো প্রত্যাখ্যান, নিন্দা ও আঘাতের মাধ্যমে। আমি তাদের পথ থেকে বিচ্যুত হওয়ার ভয় করছি। শায়খের মানসপটে ব্যাপারটা স্পষ্ট ছিল যে, সত্য ও মিথ্যার মধ্যে সংঘর্ষ অনিবার্য। তাই বললেন, এই গণসংবর্ধনাকে আমি কীভাবে গ্রহণ করতে পারি? তিনি আশংকা করতেন যে, দীর্ঘদিন পর হলেও সংঘর্ষ প্রকাশ্য রূপ নিবে। তাই তিনি মিসরে ইসলামী আন্দোলনের উপর দমন-নিপীড়ন আসার অনেক বছর আগ থেকে এ ব্যাপারে লেখালেখি করেছেন। তিনি তার সংগঠন ইখওয়ানুল মুসলিমীনের কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘ভাইয়েরা! অনেক মানুষের কাছে আপনাদের দাওয়াত এখনো পরিচিত হয়ে উঠেনি। যখন তাদের নিকট আপনাদের দাওয়াত পরিচিত হবে, তখন আপনাদেরকে তাড়িয়ে দেয়া হবে, আপনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হবে এবং আপনাদের জন্য জেলের দরজা উন্মুক্ত করে রাখা হবে। এমনকি গোটা দুনিয়া আপনাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিবে। আর সর্বপ্রথম যারা আপনাদের বিরোধিতা করতে যাবে, তারা হচ্ছে সুবিধাবাদী, স্বার্থপর ও সরকারের পা-চাটা আলেম’। তিনি এ কথা বলার দশ বছর পার হওয়ার পর তাগুত সরকার ও তার সমর্থনের পক্ষ থেকে ইখওয়ানুল মুসলিমীন যে দমন পীড়নের সম্মুখীন হয়েছে, তা নিকটবর্তী-দূরবর্তী ও সচেতন-উদাসীন কোন মানুষের অজানা নয়।

খেলাফত ধ্বংসকরণ

পশ্চিমারা মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের মাধ্যমে ইসলামের সাথে প্রকাশ্য যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। মোস্তফা কামাল সেদিন দম্ভ ভরে খেলাফত বিলুপ্তির ঘোষণা দেয়, খলীফা ও তার সভাসদকে ইস্তাম্বুল ও তুরস্ক থেকে বের করে দেয়, ইসলামের প্রতীকসমূহের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে, আরবী ভাষার আযান দেয়া নিষিদ্ধ করে। আরবীর স্থলে ল্যাটিন ভাষার আযান দিতে বাধ্য করে, প্রকাশ্যে হিজাব পরে চলতে বিধিনিষেধ আরোপ করে, সরকারী কোন প্রতিষ্ঠানে মাথা ঢেকে প্রবেশের অনুমতি দেয়নি, সরকারের পুলিশ বাহিনী হিজাব ও ওড়নাপরা মহিলাদের কাছে থেকে তাদের হিজাব ও ওড়না ছিনিয়ে নিত, অধিকন্তু ছিঁড়েও ফেলত, হজ্ব নিষিদ্ধ ঘোষিত হয় এবং এ নিষেধ ২৪ বছর বলবৎ থাকে। তুরস্কের লোকেরা হজ্ব করার অনুমতি পায় ১৯৪৬ এর পর। অর্থাৎ মুসলমান তুর্কীদের অন্তরে ইসলামী অনুভূতি আছে কিনা তা আমেরিকা পরীক্ষা করে দেখার পর।
মসজিদকে যাদুঘরে রুপান্তরিত করা হয়। তুরস্কের সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে অধিক সুন্দর মসজিদ ‘আয়া ছুফিয়া’কে যাদুঘরে রুপান্তরিত করা হয় এবং তাতে নামায নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। এ মসজিদ পৃথিবীতে ইসলামী স্থাপত্যকলার অন্যতম উপহার বলে বিবেচিত হত। এখনো পর্যন্ত এ মসজিদে নামায নিষিদ্ধ। এটাকে পূর্বের বাঘ পূজারী তুর্কীদের মাথার খুলি ও হাড্ডি  সংরক্ষণের জন্য যাদুঘরে রুপান্তরিত করা হয়েছে।
এ সময় মোস্তফা কামাল আলেমদের এক মহাসমাবেশের আহবান করে তাদের কাছে রাষ্ট্র থেকে দ্বীনকে পৃথকীকরণ ও খেলাফত বিলুপ্তির বিষয়টি পেশ করে। আলেমগণ তার এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। ফলে সে তাদের যাকে পায় হত্যা করে এবং যারা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় তারা পালিয়ে যায়।
ইসলামের প্রতি তার এ শত্রুতা যারা দ্বীনকে উপলব্ধি করে, তাদের সামনে সুস্পষ্ট থাকে। সে বাস্তবেই দ্বীনকে রাষ্ট্র থেকে বিচ্ছিন্ন রাখে এবং জামাআতে নামায পড়ার উপর পর্যন্ত বিধি নিষেধ আরোপ করে।

শেখ আমীন সিরাজের কথা

দু’দিন পূর্বে আমাদের মাঝে আল ফাতেহ মসজিদের তত্ত্বাবধায়ক আমীন সিরাজ উপস্থিত হয়েছিলেন। সত্তরের দশকে মুসলমানরা পার্লামেন্টে যাওয়ার জন্য তার উপর চাপ প্রয়োগ করতে থাকে। তাঁকে নির্বাচনের জন্য প্রার্থী করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। যখন সালামত পার্টির টিকিট নিয়ে নির্বাচন করার জন্য তার উপর মুসলমানদের চাপ বৃদ্ধি পেল, তখন তিনি বললেন, আমাকে ছাড়ুন, আমাকে সে দায়িত্ব পালনের জন্য ছাড়ুন, যার জন্য আমার পিতা আমাকে মানত করেছেন। আমার পিতা মানুষকে কুরআন শিক্ষা দেয়ার জন্য আমাকে হাফিয বানিয়েছেন। আমাকে হাফিয বানাতে গিয়ে আমার পিতা যে কষ্ট ও দুঃখ সহ্য করেছেন তা আপনারা জানেন না। তিনি আমাকে আমার মা ও ভাইদের সামনে কুরআন হিফয করাননি। মানুষ যখন রাত্রে নিদ্রায় বিভোর থাকতেন, তখন তিনি আমাকে আমার বিছানা থেকে জাগ্রত করে পাশের একটি কক্ষে নিয়ে যেতেন এবং কক্ষের দরজা বন্ধ করে আমাকে  কুরআনের আয়াত মুখস্থ করাতেন। কারণ, তখন তুরস্কে শিশুদের ধর্মীয় শিক্ষা নিষিদ্ধ ছিল।

ইবাদত হয়ে গেল রাজনৈতিক অপরাধ

এ তুরস্কে শিশুদের কুরআন মুখস্থ করানো রাজনৈতিক অপরাধ ছিল, যার জন্য গ্রেফতার হতে হত। সত্তরের দশকে সালামত পার্টির নেতা (যার বর্তমান নাম রিফাহ পার্টি)নজমুদ্দীন আরবাকানকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয়েছিল। তাঁকে সামরিক আদালতে বিচারের সম্মুখীন হয়ে হয়েছিল,শুধু মানুষের সামনে নামায পড়ার অপরাধে। কারণ, রাজনৈতিক নেতাদের জন্য জনসমক্ষে নামায পড়া আইনসিদ্ধ ছিল না।
১৯৬৯ সালে আমি ফিলিস্তিনী যুবকদের একটি প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে ছিলাম। প্রসিদ্ধ মুসলিম সাংবাদিক মুহাম্মদ শওকাত আমাদের সাথে দেখা করতে এসেছিলেন। ঐ সময় প্রেসিডেন্ট সুলাইমান ডেমরিল সৌদি আরবে গিয়েছিলেন একটি অর্থনৈতিক চুক্তি সম্পাদন করার জন্য। এ সময় সুলাইমান ডেমরিল গোপনে উমরা করতে চাইলেন। সৌদী সরকারের নিকট আবেদন জানালেন, যাতে তার এ উমরার কথা কেউ জানতে না পারে এবং কেউ যেন ইহরামের কাপড়ে তার কোন ছবি না তোলে। কারণ, তা রাজনৈতিক অপরাধ। প্রধানমন্ত্রীর কাছে তার জন্য জবাবদিহি করতে হবে। সাংবাদিক বললেন, কেউ যদি আমাকে সুলাইমান ডেমরিলের ইহরাম পরিহিত অবস্থায় ছবি দিতে পারে, তাহলে আমি তাঁকে যে পরিমাণ অর্থ চাইবে দান করব।
এ রকম অবস্থা বিরাজ করছিল তুরস্কে। ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধের এ লেলিহান শিখা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক সর্বক্ষেত্রে বিরামহীন ভাবে জ্বলছিল । টুপি ও পাগড়ি ছিল শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কারণ, তা যে তুর্কীদেরকে এ দ্বীন নিয়ে আসা আরবদের সাথে সদৃশ্য করে দেয়!

আতার্তুকের পরিণতি

জীবনের শেষ দিকে মোস্তফা কামাল আতাতুর্কের কর্মকান্ড এতটাই বেপরোয়া হয়েছিল যে, সে তার মুষ্ঠি দিয়ে আকাশের দিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহকে হুমকি দিচ্ছিল। কিন্তু আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআলা তাঁকে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অবকাশ দিয়েছিলেন। অতঃপর তাঁকে প্রমেহসহ বিভিন্নরোগে আক্রান্ত করেন। ফলে তার ওজন নব্বই কেজি থেকে আটচল্লিশ কেজিতে এসে পৌঁছে। সে যন্ত্রণার তীব্রতার কারণে ‘দুলমা বাগজায়’ কুকুরের মত চিৎকার করত। ‘দুলমা বাগজা’ ইস্তাম্বুলের সমুদ্র তীরের একটি বিলাসবহুল অবকাশ কেন্দ্র।তার এ আওয়াজ যাতে কেউ না শুনে সে জন্য একটি স্টীমার এনে রাখা হল। স্টীমারের আওয়াজ দেবতার ন্যায় পূজনীয় প্রেসিডেন্টের আওয়াজকে চাপা দিয়ে রাখত। এই কামালকেই পশ্চিমারা আতাতুর্ক ও ধূসর বাঘ নামে অভিহিত করে। আতাতুর্ক মানে হচ্ছে তুর্কীদের পিতা। ধূসর বাঘ আগেকার তুর্কীদের উপাস্য ছিল। কামাল আতাতুর্কের মাধ্যমেই পশ্চিমারা তুরস্কে হাজারো ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তার করে।

মিন্দরীসের ঘটনা

একবার তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী জাস্টিস পার্টি অব তুরস্ক-এর প্রধান আদনান মিন্দরীস বিমানযোগে কোথাও যাচ্ছিলেন। হঠাৎ করে বিমানের ইঞ্জিন অচল হয়ে গেল। ক্যাপ্টেন ঘোষণা দিলেন, বিমানের বিপর্যয় নিশ্চিত। সবাইকে জীবন রক্ষাকারী বা প্যারাসুট জ্যাকেট দেয়া হল। আদনানও জামা পরিধান করল এবং আল্লাহ্র কাছে এ বলে মানত করল যে, যদি তুমি আমাকে রক্ষা কর এবং তুরস্কের শাসন ক্ষমতা আমার হাতে থাকে, তাহলে আমি তুরস্কের বুকে পুনরায় ইসলাম প্রতিষ্ঠা করব। আল্লাহ্ এ ধরণের লোকদের ব্যাপারে বলেছেন-


حَتَّىٰ إِذَا كُنتُمْ فِي الْفُلْكِ وَجَرَيْنَ بِهِم بِرِيحٍ طَيِّبَةٍ وَفَرِحُوا بِهَا جَاءَتْهَا رِيحٌ عَاصِفٌ وَجَاءَهُمُ الْمَوْجُ مِن كُلِّ مَكَانٍ وَظَنُّوا أَنَّهُمْ أُحِيطَ بِهِمْ ۙ دَعَوُا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ لَئِنْ أَنجَيْتَنَا مِنْ هَٰذِهِ لَنَكُونَنَّ مِنَ الشَّاكِرِينَ [١٠:٢٢]
“তারা যখন নৌযানে আরোহণ করে এবং অনুকূল বাতাস তাঁদেরকে চালিয়ে নিয়ে যায় আর তারা এ নিয়ে আনন্দবোধ করে, এমন সময় হঠাৎ ঘূর্ণিঝড় আসে এবং চতুর্দিক থেকে ঢেউ আক্রমণ করে আর তারা মনে করে যে, তারা ধ্বংসের কবরে পতিত হয়েছে, তখন তারা আল্লাহকে শিরকমুক্ত ইবাদত সহকারে ডাকে।” [ইউনুসঃ২২]।


সে আল্লাহকে এভাবে ডাকল। বিমান বিধ্বস্ত হল। সকল যাত্রী পুড়ে মারা গেল। কিন্তু অত্যাশ্চর্যভাবে মিন্দরীস বেঁচে গেল। পরে মিন্দরীস নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করল। তার নির্বাচনী অঙ্গীকারগুলো এত নগণ্য ছিল যে, আমাদের আরব দেশে যদি কেউ কারো মুখ থেকে তা শুনে, তাহলে তার হাসি পাবে ও ঠাট্টা করবে।
মিন্দরীসের নির্বাচনী ইশতিহার ছিল, সে আরবী ভাষায় আযান দেয়ার অনুমতি দিবে, বিভিন্ন মক্তব পুনরায় চালু করবে এবং আয়া ছুফিয়া যাদু ঘরকে পুনরায় মসজিদে রুপান্তরিত করবে। নির্বাচন হল। নির্বাচনে কামাল আতাতুর্কের দলের ভরাডুবি হল। সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে মিন্দরীস মন্ত্রীসভা গঠন করল ও নিজে প্রধানমন্ত্রী হল।
তুর্কী জনগণের সাথে কৃত অঙ্গীকার পূরণের সময় হল। রমযানের প্রথম দিন মিন্দরীস তুরস্কবাসীকে আরবী ভাষায় আযান উপহার দেয়। মানুষ কান্নারত অবস্থায় বাজারের দিকে বের হয়। কন্সটানটিনপল বিজয়ের পর আজকের মত আনন্দের দিনের সাথে তারা আর কখনো পরিচিত হয়নি। আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবর ধ্বনি ইস্তাম্বুলের হাজারো মিনার থেকে এক যোগে বের হয়ে আকাশ-বাতাস মুখরিত করছে। আজ থেকে ২৬ বছরের অধিক কাল যাবত এ মিনার সমূহ থেকে আল্লাহু আকবর ধ্বনি বের হওয়া নিষিদ্ধ ছিল। মিন্দরীস জনগণের সাথে কৃত অঙ্গীকার পূর্ণ করায় পশ্চিমাদের অন্তরে অস্থিরতা শুরু হয়। ওয়াশিংটনে এ ব্যাপারে চাপ প্রয়োগের কথা উঠে এবং ফ্রীম্যাসনবাদীরা এর বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়ে উঠে। অতঃপর মিন্দরীসের বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানো হয় এবং তার এ কাজকে মহা বিশ্বাসঘাতকতা ও সংবিধান বিরোধী বলে অপবাদ দিয়ে তাঁকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।
তুরস্কের অভিজ্ঞতা একটি অদ্বিতীয় ও সফল অভিজ্ঞতা ছিল। তাই ইউরোপ ও মার্কিনীরা এ অভিজ্ঞতা থেকে ইসলামের উৎখাতের জন্য এমন এক পদ্ধতিতে কাজ করতে শিক্ষা অর্জন করে, যা আগের চেয়ে অধিক সহজ। তারা বলে যে , আজ থেকে ইসলামের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ ঘোষণা করা যাবে না। এমন লোকদের দিয়ে এ দ্বীন ধ্বংস করতে হবে, যারা তার অনুসারী, যারা আরবীতে কঠা বলে ও যারা বাহ্যিক ভাবে নামায পড়ে কিন্তু এ দ্বীনের মূলোৎপাটনের তারা আমাদের সাথে একমত।

ইসলামের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের নতুন পরিকল্পনা

ইসলামের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পাশ্চাত্যের নতুন পরিকল্পনা হল, এখন থেকে ইসলাম উৎখাতের লড়াই নেপথ্যে থেকে করতে হবে। প্রকাশ্যে এ দ্বীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা যাবে না। বলল, মুসলমানদের মসজিদ নির্মাণ ও মিনার উঁচু করছে, করতে অনুমতি দাও, শাসকদেরকে মসজিদ উদ্ধোধনের ফিতা কাটতে দাও, কল্যাণ ও সেবামূলক সংস্থা প্রতিষ্ঠা ও পরিচালনার সুযোগ দাও। কিন্তু সাথে সাথে ময়দান ও রাজ পথকে সর্ব প্রকার ইসলামী আন্দোলন থেকে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য তাঁদেরকে বাধ্য কর। ইসলামী আন্দোলনকে অঙ্কুরেই ধ্বংস করার জন্য পাশবিক যুলুম-অত্যাচারের ষ্টীম রোলার অপ্রতিহত গতিতে চালানোর জন্য শাসকদের প্রতি চাপ প্রয়োগ কর। এ পরিকল্পনা মাফিক কাজ করার জন্য তারা আরব বিশ্বের বিভিন্ন অংশে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটায়। ফলে দ্বীনকে পৃথিবীতে পুনরায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য যে সব ব্যক্তিবর্গ আত্মপ্রকাশ করেছেন, তাঁদেরকে বিভিন্ন অপবাদ দিয়ে হত্যা করা হয়েছে ও ইসলামী আন্দোলনের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টি করে একটির বিরুদ্ধে আরেকটিকে উসকে দেয়া হয়েছে।
এ ক্ষেত্রে তাদের প্রথম উদ্যোগ প্রকাশ পায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত দ্বারা আরব অঞ্চলে তাদের অনুগত দালাল সৃষ্টির মাধ্যমে। ১৯৪৯ এর মার্চ মাসের মার্কিন ইংগিতে অভ্যুত্থানের মধ্যে দিয়ে সিরিয়ার হুসনী যঈমের আত্মপ্রকাশ ঘটে। দেখুন ১৯৪৯-এর ফেব্রুয়ারীতে শায়খ হাসান আল বান্নাকে হত্যা করা হয় আর এর দু’দিন পর মিশর, সিরিয়া ও জর্ডানের ইসরাঈলের সাথে ‘রুডস’ চুক্তিতে স্বাক্ষর করে এবং ইয়াহুদীদের জন্য একটি নির্দিষ্ট সীমানার রাষ্ট্রের স্বীকৃতি প্রদান করে। অন্যদিকে জ্ঞান-বিজ্ঞানের রাজধানী কায়রোতে দু’বছর ধরে দমন নিপীড়নের পরেও ইসলামী আন্দোলনকে পরিপূর্ণ নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। তাই তারা ভাবল এ ইসলামী আন্দোলনকে নির্মূল করতে একজন জনপ্রিয় স্বদেশী বীর গাদ্দারের প্রয়োজন। ফলে তারা জেফার্সনের* মাধ্যমে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে নতুন সফল দালাল আবদুন নাসেরকে নিয়ে আসল। মাইলফ কোপলন্ড তার বই ‘জাতি সমূহের খেলা’তে উল্লেখ করেছেন, ‘আবদুন নাসের আমাদের খেলায় শতে নব্বই ভাগের চেয়ে বেশী সফলতা প্রদর্শন করেছে। আর সে ই হচ্ছে আমাদের উদ্দেশ্য সাধনে সবচেয়ে বেশী সফলকাম’। সে ইসলামী আন্দোলনকে দমন করেছে, কুরআন-সুন্নাহর শাসন থেকে দেশকে মুক্ত রেখেছে, আল আযহারকে তার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য থেকে দূরে রেখেছে, পাঠ্যসূচীতে পরিবর্তন এনেছে এবং ইসরাঈলের নিরাপত্তা বিধান করেছে।
তাবেদার আবদুন নাসের পাশ্চাত্যের ইচ্ছেমত দেশ শাসন করতে শুরু করে। নাসেরের পক্ষের লোকদের মাঝে বিতরণ করার জন্য আইজন হাওর আবদুন নাসেরের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে তিন মিলিয়ন ডলার হস্তান্তর করেছিল। আবদুন নাসের ষোল বছর ক্ষমতায় থেকে ইসলামের মূলোৎপাটন ও তার অনুসারীদের ধরপাকড়ে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছিল।
আর জনসাধারণ শ্লোগান দিত আবদুন নাসের জাতীয়তাবাদের বীর, আরববাদের বীর, সমাজবাদের বীর প্রভৃতি।

জিহাদের আকীদা পুনরুজ্জীবিতকরণ

বর্তমানে আমরা পেশোয়ারের জমীনে থেকে উম্মাহর হৃদয়ে জিহাদের আকীদাকে পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টা করছি। আল্লাহ্ আমাদেরকে এ ক্ষেত্রে ইখলাসের সাথে কাজ করার তাওফীক দান করুন। উম্মাহর অবস্থার প্রতি তাকিয়ে দেখলাম যে, তারা সব জায়গায় আজ মৃত। তাই আমরা বললাম, আফগানিস্থানই হোক ইসলামী বিশ্ব প্রতিষ্ঠা আন্দোলনের সূচনা ভূমি। তাই আমরা বলে আসছি, হে লোক সকল! পূর্বসুরী, উত্তরসুরী, মুহাদ্দিসীন, মুফতিইয়ীন ও মুফাসসিরীন সবার কথা মতে আফগানিস্থানের জিহাদে অংশগ্রহণ করা মুসলমানদের জন্য ফরযে আইন। এ ব্যাপারে আমরা একটি ফতওয়াও লিপিবদ্ধ করেছি ‘মুসলিম দেশ মুক্ত করা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ফরযে আইন’নামে। এ ফতওয়াটি আমি ইমাম ইবনে তাইমিয়ার কথা-
‘দ্বীন ও দুনিয়ার ক্ষতিকারক হানাদার শত্রুদের হটানোই ঈমানের পর সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ফরয কাজ’-এর উপর ভিত্তি করে লিখেছি।
অতএব, মুসলমানদের প্রথম কাজ ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ’ এর স্বীকৃতি দেয়া। অতঃপর হানাদার শত্রুকে হটানো। এ ফতওয়া আমি বড় বড় আলেমগণের নিকট পেশ করেছি। সর্ব প্রথম যার কাছে পেশ করেছি,  তিনি হলেন পিতৃতুল্য শায়খ আবদুল আযীয বিন বায। তিনি এ ফতওয়াকে সমর্থন করেন। ফতওয়ার বক্তব্যটি দীর্ঘ ছিল। তাই শায়খ বললেন, একে সংক্ষীপ্ত কর যাতে আমি এতে একটি ভূমিকা লিখে দিয়ে প্রচার করতে পারি। এরপর আমি সংক্ষীপ্ত করেছি। কিন্তু হজ্ব নিয়ে শায়খের কর্ম ব্যস্ততার দরুন তার কাছে তা পেশ করতে সক্ষম হইনি। এরপর আমারও আর সুযোগ হয়নি। তবে আমি ফতওয়াটি অনেক আলেমকে পড়ে শুনিয়েছি এবং এর প্রতি তাদের সমর্থনের উপর সাক্ষরও গ্রহণ করেছি।
অনেক উৎসাহী যুবক আমাদের কাছে বিভিন্ন ধরণের প্রশ্ন করেছে। কিন্তু আমরা বলেছি, বর্তমান এখানে আমরা পৃথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজের মুখোমুখি। এ কাজ এ ভূখন্ডে দ্বীন প্রতিষ্ঠারই কাজ। এ ব্যাপার পৃথিবীতে পুনরায় খেলাফত প্রতিষ্ঠার ব্যাপার। এটা সুবর্ণ ও স্বর্ণালী সুযোগ। তাই আমাদেরকে এ কেন্দ্রে থাকতে দাও। এ কেন্দ্র আফগান জিহাদের পরিচর্যা কেন্দ্র। তাই আমরা এখানে দলপ্রীতি, নেতাপ্রীতি, মতবিরোধ ও আঞ্চলিক গোঁড়ামি থেকে মুক্ত থাকতে চাই। আফগানরা যে বিরোধ ও কষ্টের সম্মুখীন তাদের জন্য যথেষ্ট। তোমরা এখানে আবার নতুন কষ্ট নিয়ে আগমন করো না, তাদের মাথার উপর নতুন বোঝা তুলে দিও না।
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআলা জানেন, প্রথম পদক্ষেপ থেকে এ পর্যন্ত এ পবিত্র জিহাদের সেবা ছাড়া আমাদের আগমনের আর কোন উদ্দেশ্য নেই। অতঃপর কিছু যুবক এসে এখানে জড়ো হল। আমাদের সবার হৃদয় এক ব্যক্তির হৃদয়ের মত। এ ব্যাপারে একটি ঘটনা উল্লেখ করছি, একবার শহীদ আবদুল্লাহ মুহাইবর পেশোয়ার থেকে ইসলামাবাদে আসলেন। তখন আমার নিকট কতিপয় ভাই উপস্থিত থাকায় আমি তাঁকে সময় দিতে না পারার জন্য দুঃখ প্রকাশ করলাম। তখন তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! আমি একমাত্র আপনাকে দেখার আগ্রহ পূরণের জন্যেই এখানে এসেছি। আপনাকে দেখলাম। এরপর তিনি পেশোয়ারে ফিরে যান।

শত্রুরা ওৎপেতে আছে

আমরা এখানে আসার কিছুদিন যেতে না যেতেই শত্রুরা আমাদের প্রতি তাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। কোন রাষ্ট্রই আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট নয়। পৃথিবীতে এমন কোন রাষ্ট্র নেই, যেটা আমাদের প্রতি বিরাগভাজন নয়। আবারও বলছি, এখানে (ইসলামাবাদে)এমন কোন দূতাবাস নেই, যেটা আমাদের ঐক্যে ফাটল সৃষ্টি করতে চায় না। মুসলিম বিশ্বের এমন কোন রাষ্ট্র নেই, যেখান থেকে এখানে কোন না কোন যুবক এসে শহীদ হয়েছে কিন্তু ওরা রাত-দিন আমাদের ঐক্যে ফাটল সৃষ্টি ও আমাদেরকে পরস্পর বিচ্ছিন্ন করতে চেষ্টা করে যাচ্ছে। মুসলিম বিশ্বে আজ ইসলামী সমাবেশ নিষিদ্ধ। এমনকি হেরেম শরীফের অভ্যন্তরেও চার জনের সমাবেশ নিষিদ্ধ।
নামাযের সময় ব্যতীত মসজিদগুলো আল্লাহ্র ইবাদতকারী ও আহ্বানকারী থেকে মুক্ত ও তালাবদ্ধ থাকে। ফরয নামায শেষে দীর্ঘ যিকরকারীকে বের করে দেয়া হয়। কারণ, মুআযযিনের তাড়াতাড়ি মসজিদ বন্ধ করে দিতে হয়। পৃথিবীর কোন ভূখন্ডে বিশেষ করে আরব বিশ্বে ইসলামের জন্য কোন অস্ত্র নড়াচড়া করা যায় না। গুলি ছোড়া এক মহা অপরাধ, যার জন্য সামরিক আদালতে বিচারের সম্মুখীন হতে হয়। অতএব আমরা বললাম, আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের অর্পিত ফরয দায়িত্ব (জ্বিহাদ) পালণের এটাই সুবর্ণ সুযোগ। তাই আমরা আফগান মুজাহিদগণের পাশে এসে দাঁড়ালাম। এর ফলে হয়তো আল্লাহ্ আমাদের চক্ষুসমূহ শীতল করবেন ও আমাদের বক্ষসমূহ উন্মুক্ত করবেন এবং আমরা আফগানিস্থানে আল্লাহ্র খেলাফত প্রতিষ্ঠিত দেখতে পাব। এরপর সবাই এ দ্বীনকে প্রতিষ্ঠা করার উদ্দেশ্যে বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়ব এবং আফগানিস্থান পরিণত হবে বিশ্বময় ইসলাম প্রতিষ্ঠা ও মুসলমান রক্ষার নিরাপদ সূচনাভূমি ও মজবুত দুর্গ।

সাজানো অপবাদ

আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে গেছে এবং আমাদের চতুষ্পার্শ্বে তা আমরা অনুভব করছি। প্রত্যেক দিন আমাদের বিরুদ্ধে নতুন নতুন ষড়যন্ত্র পাকানো হচ্ছে। আমাদের দোষ বের করার জন্য পাকিস্থানের গোয়েন্দা সংস্থার প্রতি তাদের প্রবল চাপ জিয়াউল হকই (রহঃ) বন্ধ করেছেন এবং গোয়েন্দাদের কালো হাত আমাদের উপর থেকে গুটিয়ে নিয়েছেন। নতুবা করাচিতে মার্কিন বোয়িং বিমান বিস্ফোরণের জন্য আমাদেরকেই দায়ী করা হত। তারা পাকিস্থানের একজন সরকারী ব্যক্তিকে অবহিত করল যে, আপনাদের আব্দুল্লাহ আযযামই বোয়িং বিমান বিস্ফোরণের পরিকল্পনা আঁটে এবং বিশজন পাকিস্থানীকে হত্যা করে। তিনি নির্দ্বিধায় সাথে সাথে তার প্রতিবাদ করে বললেন, ‘এ ছাড়া আব্দুল্লাহ আযযামের বিরুদ্ধে অন্য কোন অপবাদ রটাতে পার কি না দেখ। এ হচ্ছে নাস্তিক সমাজতন্ত্রীদের কাজ, যারা পত্রিকায় রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের সংবাদ উঠানোর জন্য মুসলমানকে হত্যা করে তাদের ঘাড়ে দোষ চাপানোর অপচেষ্টা করে’। আরো অনেক ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে, যার সামান্য কিছুই আমরা টের পাচ্ছি। এসব আমাদের বিরুদ্ধে অবিরাম চলছে। আমাদের বিরুদ্ধে হাঙ্গামা সৃষ্টির পাঁয়তারাকারী বিভিন্ন গুপ্তচরের গতিবিধি থেকে আমি আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের স্পষ্ট চিত্র দেখতে পাচ্ছি। মানুষ তার পথ চলায় ভুল করা স্বাভাবিক। যে কাজ করে তারই পদস্খলন হয়। যে বসে রয়েছে, তার পদস্খলন হবে কীভাবে? যিনি ময়দানে কাজ করছেন, পদস্খলন তাঁরই হয়। তার প্রচেষ্টা ও দ্রুততা যত বৃদ্ধি পাবে, তার পদস্খলনও তত বেশী হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওসীয়ত করেছেন-
“তোমরা ভাল লোকদের পদস্খলনকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখ। আল্লাহ্র কসম! তাদের কারো পদস্খলন হয়, অথচ আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআলা নিজ হাত দিয়ে তার হাত ধরে আছেন”।
জিহাদের রূপ আজ পরিবর্তন হয়ে গেছে। তাই আজ আফগানিস্থানে গিয়ে জিহাদ করার পরিবর্তে ইখওয়ানুল মুসলিমীন, সালাফিইয়ীন, জ্বিহাদ গ্রুপ ইত্যাদি নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে গেছে। পেশোয়ারে এ নিয়ে ধুম পড়ে গেল। আমি এদের প্রত্যেককে চিনি না এবং তাদের যাদেরকে এ নিয়ে ব্যস্ত হতে দেখেছি তাদের ব্যাপারে প্রত্যেককে অবহিতও করতে পারব না।
অনেক দূতাবাসের কাজই হচ্ছে আমার বিরুদ্ধে অপবাদ প্রচার করা। আমি নাকি টাকা-পয়সা নিয়ে পেশোয়ার থেকে চলে গেছি। আমি রমযানে যখন উমরা করতে গেলাম, তখন অনেক ভাল লোক পর্যন্ত মিথ্যুকের ফাঁদে পড়ে বলেছে যে, তিনি তার পরিবার নিয়ে সৌদি আরবে চলে গেছেন এবং মুজাহিদদের জন্য জমাকৃত সকল টাকা-পয়সা নিয়ে গেছেন, যাতে করে সেখানে অনায়াসে জীবন যাপন করতে পারেন।
আল্লাহ্র কসম! আমি কিছু দেশে আমার বিরুদ্ধে ক্যাসেট পর্যন্ত প্রচার করতে দেখেছি। আমার অপরাধ সমূহ তুলে ধরে সেগুলো বিশেষ ব্যক্তিবর্গকে শোনানো হয়। আর সাধারণ লোকদের শোনানোর জন্যেও কিছু ক্যাসেট তারা তৈরী করেছে। কিন্তু আমরা এখনো এ পথে আছি। কারা এসব করছে, তা আমাদের জানা আছে। কিন্তু হৃদয়ে আঘাত তখনই লাগে যখন আল্লাহ্র পথে বের হওয়া কিছু সৎ লোকের মুখ থেকে এসব কথাবার্তা শুনি। তারা মুখ দিয়ে নিজেদের অজান্তেই নিজেরদের কর্মের প্রতিদান নষ্ট করছে। এ বোধশক্তি তাদের মধ্যে সৃষ্টি হচ্ছে না যে, যাদেরকে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআলা জিহাদের ঝান্ডা বহনের জন্য নির্বাচিত করেছেন, তারাই সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ। তাই তাদের অনেককে দেখা যায় জিহাদের ময়দানে এসে শুধু এক মাস বা দু’মাস নয় বরং বছরের পর বছর পর্যন্ত কাটিয়েও আবার পূর্বাবস্থায় ফিরে যায়। এ থেকে নিজেদের কীভাবে রক্ষা করতে হয়, তা তারা জানে না।
তুরস্কে ইসলামি সাম্রাজ্যের পতনের পর যে সশন্ত্র জ্বিহাদ ও ইসলামী আন্দোলন পৃথিবীর বুকে দেখে দেয়, তা হচ্ছে আফগানিস্থানের এ জমায়েত যাকে গোটা পৃথিবী ভয় করছে । আমি জানি যে, আমেরিকান ও ইয়াহুদীরা আমাদের এ জমায়েতকে যে কোন পন্থায় টুকরো টুকরো করে দিতে সদা তৎপর। ইয়াহুদীরা জেনেভা সম্মেলনে দাবী করেছে পাকিস্থানের সামরিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলো বন্ধ করে দিতে, যাতে আরব ও অন্যান্য মুসলমানগণ যারা জিহাদের ফরয আদায় করতে এসেছে, তাদের পথ রুদ্ধ হয়ে যায়।
১৯২৪ এরপর বিশ্ব মুসলমানের রক্তমাখা প্রথম জ্বিহাদ এটাই। মালয়েশিয়ান, মিশরী, সৌদী, ফিলিস্থিনী ও জর্ডানিসহ সবার রক্তে রঞ্জিত এ জ্বিহাদ। তাই তারা ভেবে কুল পাচ্ছে না, কোন বস্তু এদেরকে এই ঐক্যবদ্ধ প্লাটফরমে নিয়ে এলো? কোন অক্ষে তারা সবাই ঘুরছে? তাই তারা ভাবছে, যদি এদের মধ্যে বিরোধ ঢুকিয়ে দেয়া যায়, তাহলে ভবিষ্যতে যুবকদের এ কাফেলা আর মাথা তুলে দাড়াতে পারবে না। ইখওয়ানুল মুসলিমীন, সালাফী দল ও জ্বিহাদ গ্রুপ প্রভৃতির বিরোধ যা এখন শোনা যাচ্ছে, আল্লাহ সাক্ষী আছেন, এখানে আসার পর থেকে এ পর্যন্ত এসবের কোন চিন্তা আমাদের অন্তরে কখনও জাগ্রত হয়নি। অতএব, আপনাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারীদের ব্যাপারে সতর্ক হোন, এসব থেকে দূরে থাকুন, যা আপনাদেরকে খেলনার লাঠিম বানাতে চায়, আপনাদের সৎকর্মের প্রতিদান নষ্ট করতে চায় এবং এ বরকতময় জমায়েতের সুফল ধ্বংস করতে চায়। এ জমায়েত নিয়ে আমাদের অনেক আশা-আকাঙ্ক্ষা রয়েছে।
ভাল; তুমি জিহাদের দায়িত্ব পালন করতে এসেছ, মজলুমানদের পাশে দাড়াতে এসেছ। হতে পারে আল্লাহ্ তোমাকে ইসলামের বিজয়ও দেখাতে পারেন। অনুরূপ তোমাকে অন্য রণাঙ্গনেও উপস্থিত হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। বিশ্বের অন্যান্য মুসলিম ভূখন্ডগুলোর কাফের বা ফাসিকের দখলদারিত্ব চলছে, সেগুলো মুক্তির জন্য তোমার অপেক্ষা করছে। ফিলিস্তিন আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে, দক্ষিণ ইয়ামান আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে, ফিলিপাইন আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। এভাবে ইরিত্রিয়া, সোমালিয়া ও রুমানিয়াসহ মুসলিম বিশ্বের অনেক ভূখন্ড পাশবিক জুলুম থেকে মুক্তির জন্য আমাদের পানে চেয়ে আছে। আমাদের রণাঙ্গন শুধু আফগানিস্থান নয়। যদি আপনারা রণাঙ্গনের বিশালতা ও রণাঙ্গনে ইসলামের শত্রুদের ষড়যন্ত্রের কুট- কৌশল উপলব্ধি করতে সক্ষম না হন, তাহলে আপনারা নিজেদের কর্মের প্রতিদানের প্রতি মনোনিবেশ করুন এবং নিজেদের যবানকে সংযত রাখুন। হয়তো আল্লাহ্ আপনাদের কর্মগুলোকে গ্রহণ করবেন এবং আপনাদেরকে তার জান্নাতে স্থান দিবেন।
ইসলামকে ধ্বংস করার এখন সহজ পদ্ধতি হচ্ছে ইসলামী আন্দোলনের মাঝে বিরোধ ঢুকিয়ে দিয়ে একের বিরুদ্ধে অপরকে নিয়োজিত করা। তারা উপলব্ধি করেছে যে, আমরা যদি তাদের একের বিরুদ্ধে অপরকে ব্যস্ত না রাখি, তাহলে তারা আমাদের নির্মূলে সর্বশক্তি নিয়োগ করবে। কী করতে হবে তা শত্রুরা ভাল করে জানে, কিন্তু আপনাদের অনেকেই জানে না।
আল্লাহ্ সে ব্যাক্তির প্রতি রহম করুন, যে তার দায়িত্ব চিনে তা পালনে ব্যস্ত হয়ে গেছে। নিজের উদ্দেশ্য ঠিক করুন। আপনি কেন এসেছেন ও কোথায় গিয়ে আপনার দায়িত্ব শেষ হবে, তা নিয়ে ভাবুন। কী আশ্চর্য! তুমি এমন বিষয় গুলো নিয়ে কেন ব্যস্ত, যা আখিরাত তোমার কর্মের প্রতিদান নষ্ট করবে?
আমরা আগেও বলেছি, এখনো বলছি, ইনশা আল্লাহ্ আমাদের এ পথে দৃঢ়পদ রাখবেন। মুসলিম বিশ্বের প্রসিদ্ধ কোন কোন ব্যক্তি এসে আমার কাছে বিভিন্ন প্রস্তাব পেশ করেন এবং দাবী করেন যে তিনি আমার কল্যাণ কামনা করেন ও আমাকে ভালবাসেন। বললেন, আমার ভয় হচ্ছে আপনার বিরুদ্ধে বড় ধরণের ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। তাই আমি আপনার কল্যাণার্থে বলছি যে আপনি আফগানিস্থান থেকে বাইরে চলে যান। বাস্তবেই তিনি আমার কল্যাণকামী। তাই আমি তাঁকে বললাম, তিন অবস্থা ছাড়া অন্য কোন অবস্থায় আমি আফগানিস্থান ত্যাগ করব না। হয়তো পেশোয়ারে নিহত হবো নতুবা আফগানিস্থানে নিহত হবো কিংবা পাকিস্থান আমাকে জোর করে বের করে দিবে। এ ছাড়া আমি এ ভূমি ছেড়ে কোথাও যাব না, যাতে আফগানিস্থানের জিহাদের ফলাফল দেখে আমার চক্ষু শীতল হয়।
গোয়েন্দাগিরি, হানাদারদের আক্রমণের তৎপরতা ইত্যাদি সবকিছু আমাদের বিরুদ্ধে দৈনন্দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমার আশে পাশের লোকেরা ওসীয়ত করছে বেনজিন ও ১৮০ তথা সর্বশেষ মডেলের গাড়ী ব্যবহারের জন্য। কারণ, জিহাদের প্রতি তিরস্কার বেড়ে গেছে।


আল্লাহ্ বলেছেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَن يَرْتَدَّ مِنكُمْ عَن دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتِي اللَّهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ يُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لَائِمٍ ۚ ذَٰلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَاءُ ۚ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ [٥:٥٤]

“হে মুমিনগণ! তোমাদের মধ্যে যারা স্বীয় দ্বীন থেকে দূরে সরে যাবে, তাদের পরিবর্তে আল্লাহ্ শীঘ্রই এমন একটি সম্প্রদায় নিয়ে আসবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসেন এবং তারাও তাঁকে ভালবাসবে। তারা মু’মিনদের প্রতি (নিজেরদের পরস্পরে) সহানুভূতিপরায়ণ ও কাফিরদের প্রতি কঠোর হবে এবং আল্লাহর পথে জ্বিহাদ করবে। আর এ ব্যাপারে কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারকে ভয় করবে না। এটা আল্লাহ্র একান্ত অনুগ্রহ্ যা তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন থাকেন।”
[আল মায়েদাঃ ৫৪]


গালি ও তিরস্কার সাধারণত আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের পক্ষ থেকে করা হয়ে থাকে। কারণ, শত্রুরা তিরস্কার করে না; শত্রুতা করে। তাই জিহাদের জন্য এমন লোকেরাই প্রয়োজন, যিনি তার লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাসী। আমরা লক্ষ্য-উদ্দেশ্য নির্ধারণ করেছি, আমরা চাচ্ছি একটি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে।
দুনিয়ার সকল প্রচার মাধ্যমই এই দ্বীনের প্রতি শত্রুতা পোষণ করে। যে সব প্রচার মাধ্যম নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য প্রকাশ্যে শত্রুতা ভাব দেখায় না, তারাও আমাদের বিরুদ্ধে যথাসম্ভব কৌশলে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।
আল্লাহ্র কাছে কামনা করি, যতদিন আমরা জীবিত থাকি, যতদিন আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাস বাকী থাকবে, ততদিন যেন তিনি আমাদেরকে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জিহাদের এ মহান পথে দৃঢ়পদ রাখেন। আল্লাহ্ না করুন, যদি আমরা এখান থেকে বিতাড়িত হই, তাহলে আমরা অন্য খানে চলে যাব। আমাদের কর্মক্ষেত্র কেবল আফগানিস্থান নয়, এখানে শুধু আমরা সাহায্য-সহযোগিতা দান করছি। আফগানিস্থানে আমাদের কাজ আল্লাহ্র দ্বীন আল্লাহ্র জমীনে প্রতিষ্ঠিত করা, যা তিনি সপ্তাকাশের উপর থেকে আমাদের জন্য ফরয করে দিয়েছেন।
আমাদের কাজ কেবল সেবা সংস্থার কাজ নয়। আর আমাদের কাজ রাজনৈতিক সমাধান পেশ করাও নয়। আমরা এমন এক বাহিনী, যাদেরকে রাব্বুল আলামীন এ দ্বীনের জন্য সৈনিকের দায়িত্ব পালণের নির্দেশ দিয়েছেন। দুনিয়ার যেখানেই হোক না কেন যারা আমাদের সাথে পথ চলতে চায়, তাঁদেরকে আমরা মাথায় তুলে নিতে প্রস্তুত। এ ক্ষেত্রে আমাদের জানা মতে যারা নিষ্ঠাবান, তাদের ভুল ভ্রান্তিগুলো আমরা সহ্য করে নিব। তবে যারা এ ধরণের নয়, তাদের যিম্মা আল্লাহর হাতে।


وَلَا يَحِيقُ الْمَكْرُ السَّيِّئُ إِلَّا بِأَهْلِهِ ۚ
“কুচক্রান্তের চূড়ান্ত স্বীকার কুচক্রীই”। [ফাতিরঃ৪৩]।


যে বিষয়টা নিয়ে আমাদের বেশী ভয় হচ্ছে তা হল নিষ্ঠা ও দৃঢ়তা। আল্লাহ্ আমাদের সবাইকে নিষ্ঠা ও দৃঢ়তার তাওফীক দান করুন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা যদি আমার উপর সন্তুষ্ট থাকেন, তাহলে দুনিয়ার কেউ আমাকে দুশ্চিন্তায় ফেলতে পারবে না। আমার দুশ্চিন্তা শুধু ইখলাস নিয়ে। ইখলাস ও দৃঢ়তা যদি বিদ্যমান থাকে, তাহলে আল্লাহ্ মুমিনদের সাহায্য করবেন, তাদের রক্ষা করবেন। তাই তিনি বলেছেন-


وَإِن تَصْبِرُوا وَتَتَّقُوا لَا يَضُرُّكُمْ كَيْدُهُمْ شَيْئًا ۗ إِنَّ اللَّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطٌ [٣:١٢٠]
“আর তোমরা যদি ধৈর্য্য ধারণ কর ও আল্লাহকে ভয় করে চল, তাহলে তাদের ষড়যন্ত্র তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। নিঃসন্দেহে তারা যা করছে সে ব্যাপারে আল্লাহ্ অবহিত।”[আলে ইমরানঃ১২০]।

 

আফগানিস্থান নিয়ে ষড়যন্ত্র

 

আল্লাহু সুবহানাহু ওয়াতাআলা বলেন-

فَلَمَّا فَصَلَ طَالُوتُ بِالْجُنُودِ قَالَ إِنَّ اللَّهَ مُبْتَلِيكُم بِنَهَرٍ فَمَن شَرِبَ مِنْهُ فَلَيْسَ مِنِّي وَمَن لَّمْ يَطْعَمْهُ فَإِنَّهُ مِنِّي إِلَّا مَنِ اغْتَرَفَ غُرْفَةً بِيَدِهِ ۚ فَشَرِبُوا مِنْهُ إِلَّا قَلِيلًا مِّنْهُمْ ۚ فَلَمَّا جَاوَزَهُ هُوَ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَهُ قَالُوا لَا طَاقَةَ لَنَا الْيَوْمَ بِجَالُوتَ وَجُنُودِهِ ۚ قَالَ الَّذِينَ يَظُنُّونَ أَنَّهُم مُّلَاقُو اللَّهِ كَم مِّن فِئَةٍ قَلِيلَةٍ غَلَبَتْ فِئَةً كَثِيرَةً بِإِذْنِ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ مَعَ الصَّابِرِينَ [٢:٢٤٩]
وَلَمَّا بَرَزُوا لِجَالُوتَ وَجُنُودِهِ قَالُوا رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ [٢:٢٥٠]
فَهَزَمُوهُم بِإِذْنِ اللَّهِ وَقَتَلَ دَاوُودُ جَالُوتَ وَآتَاهُ اللَّهُ الْمُلْكَ وَالْحِكْمَةَ وَعَلَّمَهُ مِمَّا يَشَاءُ ۗ وَلَوْلَا دَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُم بِبَعْضٍ لَّفَسَدَتِ الْأَرْضُ وَلَٰكِنَّ اللَّهَ ذُو فَضْلٍ عَلَى الْعَالَمِينَ [٢:٢٥١]

“যখন তিনি (তালূত) ও তার সাথে থাকা ঈমান আনয়নকারীরা তা (নদী) অতিক্রম করল, তখন তারা বলল, এখন জালূত ও তার সৈন্যের সাথে যুদ্ধ করার শক্তি আমাদের কাছে নেই। তবে যারা আল্লাহ্র সাক্ষাতের বিশ্বাস করত তারা বলল, আল্লাহর হুকুমে কত ছোট দল বড় দলের উপর বিজয় লাভ করেছে। আর আল্লাহ্ রয়েছেন ধৈর্য্যশীলদের সাথে। অতঃপর যখন তারা জালূত ও তার সৈন্যদের মোকাবিলায় মাঠে আসে, তখন বলল, ওহে আমাদের প্রভু! আমাদেরকে ধৈর্য্য দান করুন, আমাদেরকে দৃঢ়পদ রাখুন ও আমাদেরকে কাফিরের দলের উপর বিজয় দান করুন। ফলে তারা ওদেরকে (শত্রুদেরকে) পরাজিত করল এবং দাউদ জালূতকে হত্যা করল। আর আল্লাহ্ তাঁকে রাজ্য ও প্রজ্ঞা দান করলেন এবং তাঁকে যা চেয়েছেন, তা শিক্ষা দান করেছেন। আর আল্লাহ্ যদি মানুষের কতককে কতক দ্বারা দমন না করতেন, তাহলে নিশ্চয় পৃথিবী ধ্বংস হত । কিন্তু আল্লাহ্ বিশ্ববাসীর প্রতি দয়াপরায়ণ (ফলে তিনি তাদেরকে যুদ্ধের অনুমতি দেন)।”[বাকারাহঃ২৪৯-২৫১] ।


আল্লাহ্র রীতি ও নিয়ম আফগানিস্থানে শব্দের জগত থেকে কর্ম ও বাস্তবতার জগতে চলে এসেছে। ঈমানদারের ক্ষুদ্র একটি দল পৃথিবীর পরাশক্তির উপর বিজয় লাভ করেছে। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ তাগুত কম্যুনিজমের পরাজয় বিশ্বের হিসাব-নিকাশকে উলট-পালট করে দিয়েছে, আন্তর্জাতিক রাজনীতির সমীকরণকে ব্যর্থ করে দিয়েছে এবং বিশ্বের অপেক্ষমাণ সকল রাজনৈতিক অভিসন্দর্ভকে আশাহত করে গোটা দুনিয়াকে হতবাক করে দিয়েছে।
যে ক্ষুদ্র ঈমানদারের দলটিকে মাটির সাথে মিশে দেয়ার জন্য বিশ্ববাসী অবস্থান নিয়েছিল, তাকে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআলা তার করুণা ও দয়া দ্বারা সাহায্য করেছেন, দৃঢ়পদ রেখেছেন এবং
সে দলটি রক্তস্নাত ও কন্টকাকীর্ণ পথে কষ্ট সহ্য ও যন্ত্রণা হজম করে পনের বছর অবিরাম পথ চলেছে। এ পথে তাদের আলোকবর্তিকা শহীদের রক্ত। আল্লাহ্ এ ধরণের লোকদের ব্যাপারে বলেন-


فَمَا وَهَنُوا لِمَا أَصَابَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَمَا ضَعُفُوا وَمَا اسْتَكَانُوا ۗ وَاللَّهُ يُحِبُّ الصَّابِرِينَ [٣:١٤٦]
وَمَا كَانَ قَوْلَهُمْ إِلَّا أَن قَالُوا رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا ذُنُوبَنَا وَإِسْرَافَنَا فِي أَمْرِنَا وَثَبِّتْ أَقْدَامَنَا وَانصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ [٣:١٤٧]

“কিন্তু তারা আল্লাহ্র পথে যে কষ্টের সম্মুখীন হয়েছিল, তার জন্য মনভাঙ্গা কিংবা দুর্বল হয়নি এবং নতি স্বীকারও করেনি। আর আল্লাহ্ ধৈর্য্যশীলদেরকে ভাল বাসেন। আর যুদ্ধের কঠিন মুহূর্তে তাদের কথা কেবল এই ছিল যে,হে আমাদের পালনকর্তা! আমাদের অপরাধ ও আমাদের কর্মে আমাদের বাড়াবাড়িকে ক্ষমা করুন এবং আমাদেরকে কাফিরের দলের উপর বিজয় দান করুন।”[আলে ইমরানঃ১৪৬,১৪৭] ।


সমাজ বিপ্লব, জাতি গঠন ও সম্মান পুনরোদ্ধারের যে পথ নির্দেশ আমাদেরকে আফগানিস্থান দান করেছে, তার মর্মকথা হচ্ছে এই যে, বিপ্লবের জন্য একটি শুদ্ধি আন্দোলন অপরিহার্য, যা কাজ শুরু করবে তাওহীদ দিয়ে। অতঃপর জাহিলিয়াত তার সর্বশক্তি নিয়ে এ তাওহীদের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণ করবে। শুরু হবে উভয়ের মধ্যে বাক ও প্রচার যুদ্ধ। মুমিনরা ধৈর্য্য ধারণ করবে। অতঃপর এমন দিন আসবে, মুমিনের দল অস্ত্র হাতে নেবে ও তরবারী কোশমুক্ত করবে এবং তাদের প্রভুর ইচ্ছায় বজ্রের ন্যায় পথ চলে উম্মাহর শক্তি ও কল্যাণকে বিস্ফোরিত করবে, জনসাধারণ তাদের পক্ষ নেবে এবং মানুষ ও লোহা ভক্ষণকারী এ জলন্ত চুলায় (রণাঙ্গনে) ত্যাগ দিতে থাকবে এবং সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে। এ যুদ্ধের প্রধান উপকরণ ইসলামী আন্দোলনের বীর সৈনিকেরা। মাঝপথে দুর্বল ও কাপুরুষেরা ঝরে পড়তে থাকবে এবং দৃঢ়পদেরা পথ চলা অব্যাহত রাখবে। দীর্ঘ সংগ্রামের পর লড়াইয়ের উত্তাপে আত্মাগুলো পরিশুদ্ধ হবে এবং হৃদয়গুলো পরিচ্ছন্ন ও চকচকে হবে। আল্লাহ্ তাঁদেরকে তার সম্মানের আচ্ছাদন বানাবেন, তাদের বিজয়ের ফলগুলোকে হেফাজত করবেন ও তাঁদেরকে তার দ্বীনের বিশ্বস্ত সংরক্ষক বানাবেন এবং তাঁদেরকে  পৃথিবীতে কর্তৃত্ব দান করবেন।

আফগান জিহাদের ইতিবৃত্ত

আফগান জিহাদের ইতিবৃত্ত হচ্ছে কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্ষুদ্র একদল ঈমানদার যুবকের ইতিবৃত্ত । যারা জহির শাহ্র তত্ত্বাবধানে পরিচালিত সমাজতান্ত্রিক অভিযানকে রুখে দাঁড়িয়েছিল। জহির শাহ্ তার পরামর্শ পরিষদের ছত্রিশজন কম্যুনিস্টকে কম্যুনিজম প্রচারের জন্য অনুমতি প্রদান করে। তখন কম্যুনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা তারাকী ‘খালক’ ও বারবক কারমাল ‘পরচম’ নামক পত্রিকা বের করে।
ইসলামী আন্দোলন তখন শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায় পড়ে। অতঃপর যখন ইসলামী আন্দোলন কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে, বিজয় লাভ করে তখন রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত এ বিজয়ের উপর মন্তব্য করতে গিয়ে বলল, এ দেশের ভবিষ্যৎ এ যুবকদের হাতে। অতএব, এদেরকে নির্মূল করার জন্য সামরিক প্রশাসনের বিকল্প নেই।
সামরিক প্রশাসন সংস্কার আন্দোলনের শিকড় উপড়ে ফেলা, নীতি-নৈতিকতাকে পদপিষ্ট করা ও অচলাবস্থা সৃষ্টি করে দেশ ধবংসকরণে সব সময়ই সিদ্ধ হস্ত থাকে। আর সামরিক শাসকের আগমণ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে এবং রাতের অন্ধকারেই ঘটে থাকে । জনসাধারণ তাঁকে করতালি দিয়ে স্বাগত জানালেও তার অভ্যুত্থানের নেপথ্য নায়করা প্রতি ক্ষণে ক্ষণে তাঁকে এ সতর্কতা দিয়ে থাকে যে, আমরা যে নিয়ম-রেখা তোমার সামনে এঁকে দিয়েছি, তা থেকে যদি চুল পরিমাণ সরে যাও, তাহলে শীঘ্রই তুমি গদিচ্যুত হবে। অতঃপর যখন দমন-নিপীড়ন ও নির্যাতন-নিষ্পেষণের ষ্টীম রোলার শুরু হয়ে যায়, তখন দেশ মেধা শূন্য হয়ে দেশে শুধু চরিত্র ধ্বংস করণে নিয়োজিত বিপ্লবীদের আধিপত্যই সর্বক্ষেত্রে বিরাজ করে।
সকল মুসলিম দেশে সামরিক প্রশাসনের চিত্র আমরা এরকমই দেখেছি। তবে এ দ্বারা এ কথা বলা উদ্দেশ্য নয় যে, অন্যান্য প্রশাসনগুলো ভাল। তবে অন্ধের চেয়ে কানা অবশ্যই উত্তম। এ একই সমস্যা আফগানিস্থানেও। ইসলামী আন্দোলনের সন্তানদের খতম করে দেয়ার জন্য জেনারেল দাউদকে ক্ষমতায় বসানো হয়। তার শাসনকে প্রতিরোধ করার জন্য ইসলামী আন্দোলনের সৈনিকেরা বন্দুকের সাহায্য গ্রহণের সিন্ধান্ত গ্রহণ করে। প্রথমে তাদের নিকট শুধু একটি পিস্তলই ছিল। সাইয়াফ তাঁদেরকে একত্রিত করে বলল, দাউদের স্বৈরশাসনের মুখে আমরা কী করতে পারি?তারা বল সশস্ত্র প্রতিরোধ। তবে আমাদের একটি শর্ত  এবং তা হচ্ছে একটি পিস্তলের ব্যবস্থা করে দিতে হবে। সে থেকে লড়াই শুরু হল এবং আল্লাহর ইচ্ছায় তা অব্যাহত থাকে। তাদের সংগ্রাম খুবই কঠিন ছিল এবং তাদের ত্যাগ খুবই উন্নত ছিল।
কম্যুনিজম দেখতে পেল যে, দাউদ ইসলামী আন্দোলনকে খতম করতে সক্ষম হয়নি। ফলে সে তার নিয়ে আসা এ দাউদকে যবাই করে আরেকজনকে ক্ষমতায় বসাল। কারণ, কুকুর যখন পাহারদারিতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, তখন তাঁকে হত্যা করে তার চেয়ে আরো শক্ত বিষদাঁত ও অধিক হিংস্রতা সম্পন্ন একটিকে নিয়ে আসা হয়। তাই দাউদকে হত্যা করে তারাকীকে নিয়ে আসা হয়। তারাকী প্রকাশ্য কাফির ছিল এবং কমুউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা ছিল। তখন বিজ্ঞ আলেমরা ফতওয়া দিলেন যে, তারাফী কাফির ও এর বিরুদ্ধে লড়াই করা ফরয। ফলশ্রুতিতে গ্রামের লোকেরা তাদের আলিম বা সর্দারের অধীনে যুদ্ধ শুরু করে।
রাশিয়া বুঝতে পারে, মুজাহিদরা দিন দিন কাবুলের কাছে চলে আসছে। তখন কমিউনিস্টরা তারাকীকে যবাই করে হাফীযুল্লা আমীনকে ক্ষমতায় বসায়।
আর তাকে সুযোগ দেয় মাত্র তিন মাস। অতঃপর রাশিয়া তার সর্বশক্তি নিয়ে আফগানিস্থানে ঢুকে পড়ে হাফীযুল্লা আমীনকে হত্যা করে বাবরক কারমাল নামের নতুন এক নরপশুকে ক্ষমতায় বসায়। মনে করেছিল সে হয়ত আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের অভিযানের গতিরোধ করতে সক্ষম হবে। রাশিয়া মনে করেছিল আফগানিস্থানে তা অভিযাত্রা সফল, সহজ ও আনন্দদায়ক হবে। মনে করেছিল চেকোশ্লোভিয়া দখল করে নিতে তার আট ঘন্টা ব্যয় হলেও আফগানিস্থানে আটদিন বা তার অর্ধদিন লাগবে বেশী লাগবে। কিন্তু দেখা গেল আট দিন থেকে আট মাস ও আট মাস থেকে আট বছর পেরিয়ে যায়। এর পরেও তার সফলতা তো দূরের কথা; একের পর এক পরাজয় ও ক্ষতি তার দেহে প্রবেশ করে তাঁকে উজাড় করে দিচ্ছে। আফগানিস্থান পরিণত হয়েছে রাশিয়ার ট্যাংক ও অস্ত্র ধবংসাগারে।

আফগানদের সাথে পরিচয়

যেদিন আমি আফগানদেরকে দেখেছি, সে দিন থেকে আমি অনুভব করেছি মুসলমানই বিশ্বের সর্বাধিক প্রভাবশালী মানুষ যাকে পরাজিত করা অসম্ভব এবং মুসলমান এমন একটি উঁচু পাহাড়, যা কখনও স্বীয় জায়গা থেকে এদিক সেদিক দোলে না। এ কারণেই বিশ্ব সত্যিকারের মুসলিম মুজাহিদকে ভয় করে।
আমি একজন ফিলিস্তিনী, যে পরাজয়ের পর পরাজয়ের শিকার হয়েছে। আমার পরিবারকে দেখেছি তারা একের পর এক দেশ ত্যাগের যন্ত্রণা সহ্য করেছে। আমি আমার মাতৃভূমি থেকে বিতাড়িত হয়ে আমার দেশে* বিশ বছর কাটিয়েছি। আমি একটি গ্রামে বাস করতাম। ইয়াহুদীরা প্রায় রাত্রে আমাদের ঘরে হানা দিত। কিন্তু তাদের মুখে গুলি ছুঁড়বে এমন কাউকে পাওয়া যেত না। গুলি ছুড়লে তাঁকে পুলিশের কোয়াটারে নিয়ে কঠোর শাস্তি প্রদান করা হত।
আমি ফিলিস্তিনে বাস করেছি ও তার অবস্থা দেখেছি। ১৯৬৭ সালে আমি ফিলিস্তিনে। আমার সম্মুখ দিয়ে ইসরাঈলী ট্যাংক আমার গ্রামে প্রবেশ করেছে। কিন্তু তাদের দিকে গুলি ছোড়ার মত কেউ ছিল না। এ অবস্থায় একদিন আমি এমন এক মুসলিম জনগোষ্ঠীর মাঝে এসে পৌছালাম, যারা নিজেদের খাদ্য জোগাড় করতে সক্ষম নয়, তাদের পায়ে জুতা নেই, পেটে খাবার নেই ও পকেটে টাকা নেই। কিন্তু ইজ্জত ও সম্মান রক্ষায় তাদের শীর এত উন্নত যে, তা মেঘের সাথে টক্কর খাচ্ছে। তাদের প্রত্যেকেই যেন রাশিয়ার বিশাল বাহিনীর সম্মুখে এ কথা উচ্চারণ করছে-

 

مُسْلِمٌ يَا صِعَبُ لَنً تَقْهَرِيْنِيْ+صَرِمِيْ قَطِعٌ وَعَزْمِيْ حَدِيْدٌ
كُلُّ بَزْلٍ إزَا الْعَقِيْدَةُ رِيْعَتْ+دُوْنَ بَزْلِ النَُّفَُوْسِ نَزْرً زَهِيْدً

ওহে বাধার পাহাড়! পারবে না আমাকে তুমি করতে পরাজিত
আমি মুসলিম তরবারী আমার ধারাল, সংকল্প দৃঢ় লোহার মত।
আকীদায় আঘাত আসলে প্রাণ উৎসর্গ ব্যতীত
সকল ত্যাগই হল তুচ্ছ থেকে তুচ্ছতর।

 

আল্লাহ্র কসম ১৯৬৭ সালে ইয়াহুদীদের হাতে মসজিদুল আকসার পতন হওয়ার সমর পার্শ্ববর্তী আরব দেশ সমূহ থেকে আগত সৈন্যদের দশজনও নিহত হল না। মক্কা ও মদীনার পর মুসলমানদের সবচেয়ে পবিত্র ভূমিকে রক্ষার জন্য দশজন লোকও নিহত হল না। আমি ইসরাঈলী রেডিওতে শোনেছি, ‘জুনের পঞ্চম দিন ট্যাংক বহর গিয়ে আমাদের শহর দখল করে নিয়েছে।’ অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট আবদুর নাসের বাদশা হোসাইনকে সম্বোধন করে বলছে, আমরা শত্রুদের বিমানের এক তৃতীয়াংশ ভূপাতিত করেছি এখন আমাদের বিমানগুলো তেল আবিবের উপর। মাননীয় বাদশাহ শান্তি চুক্তির জন্য প্রস্তুত হোন।
মসজিদুল আকসায় প্রবেশের পর আমি ইয়াহুদীদেরকে বলতে শুনেছি, ‘মুহাম্মদ মারা গেছে, মুহাম্মদ মারা গেছে এবং কিছু মেয়ে রেখে গেছে।’ জর্ডানের সৈন্যদের প্রতিরোধের দ্বিতীয় সেক্টরে ফিরে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ার পর এক ইয়াহুদী জোয়ান মুসজিদুল আকসায় প্রবেশ করল এবং বলল, উরশিলিম (যেরুজালেম) থেকে ইয়াছরব (মদীনা) পর্যন্ত। ইসরাঈলী প্রধানমন্ত্রী বিনগোরীন বলল, ‘অঙ্গীকার ভূমিতে (ফিলিস্তিন) আসার পর এটাই আমার সবচেয়ে ভাল দিন।’ কারণ এটা সে দিন, যে দিন পবিত্র রাজধানীর উভয় অংশ একীভূত হয়েছে।

রাশিয়া পরাজিত

আমি ঐ তিক্ততা ও যন্ত্রণায় জীবন কাটিয়েছি। হঠাৎ আমি এমন এক মুসলিম জনগোষ্ঠীর মাঝে এসে পৌছলাম, যারা বন্দুক নিয়ে রাশিয়ার ট্যাংকের মোকাবেলা করছে। বিদ্যমান পরিস্থিতির চাপ ও প্রাচ্যবাদীদের ষড়যন্ত্রের আঘাতে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত আরব বিশ্বের লোকেরা আফগানরা যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, তা বিশ্বাসই করতে চাই না। আফগানিস্থানে আসার এক বছর পর আমি সৌদিআরবে গেলে শায়খ আবদুল মজীদ যান্দানীকে বললাম, বিজয়ের পাল্লা ভারি। তিনি বললেন, রুশ বাহিনীর? আমি বললাম, মুজাহিদ বাহিনীর। তিনি বললেন, শায়খ আবদুল্লাহ আযযাম আফগানদের প্রতি আপনার সীমাতিরিক্ত ভালবাসার কারণেই এ কল্পকথা বলছেন।
আমি বললাম হায়! যদি আমার দেশের লোকেরা আফগানদের এ বিজয়ের কথা জানত! আমি তাঁদেরকে বললাম, ওহে লোকেরা ওখানে এক সফল ব্যবসা শুরু হয়েছে। ওখানে অসম সমর ও তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ শুরু হয়েছে। তারপরও মুজাহিদরা বিজয় লাভ করছে। তারা বলল, রাশিয়া কি মুজাহিদদের প্রতিরোধকে দ্রুত গুড়িয়ে দিতে অক্ষম! রাশিয়া তো অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান ও ক্ষেপণাস্ত্রের অধিকারী। রাশিয়া ১৯৮৫ নাগাদ তার স্টককৃত সকল অস্ত্র আফগানিস্থানে ব্যবহার করেছে। এরপর সে নবনির্মিত অস্ত্র ব্যবহার শুরু করে। অস্ত্র ও বোমা তৈরির এক সপ্তাহ পর তা আফগানিস্থানে ব্যবহার করেছে। ১৯৮৫ সালে আমাদের উপর যে বোমাগুলো ফেলানো হয়েছে তাতে ১৯৮৫ লেখা ছিল। সে মিগ ২১,২৫,২৭ যুদ্ধ বিমান আফগানিস্থানে ব্যবহার করেছে। এখন মিগ ২৭ ব্যবহার করছে, যা ২৫০ কি.মি. দূর থেকে নির্ভুলভাবে নিশানায় আঘাত করছে। লোকজন বলছে, তিন সপ্তাহ হয়ে গেছে এখনও কি জালালাবাদের পতন হয়নি? অথচ তারা মুজাহিদদের মাথার উপর এসে পৌছা ক্ষেপণাস্ত্রের কথা ভুলে যাচ্ছে। এ ক্ষেপনাস্ত্র কাবুল থেকে ছোঁড়া হয়। এর ওজন সাড়ে পাঁচ টন ও দৈর্ঘ্য ১১ মিটার। এটা যেখানে গিয়ে পড়ে, সেখানে এক কিলোমিটার পর্যন্ত ধ্বংস করে। গতকাল বা আগের দিন এরকম নয়টি ক্ষেপনাস্ত্র মুজাহিদদের উপর ছোঁড়া হয়। এর একটি তোরখামে এসে পড়ে। তোরখাম হচ্ছে খাইবার যাওয়ার করিডোর। এ ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে অনেক মানুষ নিহত হয় ও অনেক মানুষ আহত হয়।
মানুষ জানে না যে, এখন কাবুলে কম্যুনিস্ট প্রশাসনের নাভিশ্বাস শুরু হয়েছে। এখন নজীব ও গর্বাচেভ চিৎকার করে বলছে কোথায় জাতিসংঘ ও কোথায় জেনেভা চুক্তি? কোথায় পর্যবেক্ষকরা? গর্বাচেভ এখন আফগান সমস্যার সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আহবান জানাচ্ছে। আমি বললাম, সুবহানাল্লাহ! গর্বাচেভ চিৎকার করছে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের জন্য, যাতে তাঁকে আফগানিস্থানে আটকে পড়া অবস্থা থেকে উদ্ধার করা যায়। আর অন্যদিকে আমরা নিজেরা আমাদের ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আবেদন জানাচ্ছি। চিন্তা করে দেখুন উভয়ের মাঝে কত পার্থক্য ! তবে মুজাহিদরা এমনি এ পর্যায়ে এসে পৌঁছেনি। তারা এ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে অনেক ত্যাগ ও দীর্ঘ রক্ত নদী অতিক্রম করে। এ যুদ্ধে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের একশ ভাগের নব্বই ভাগই শাহাদাত বরণ করেছে। আফগান মুহাজিরদের সংখ্যা এখন ১২ মিলিয়ন। তন্মধ্যে সাত মিলিয়ন আফগানিস্থানে। তারা ঘর-বাড়ি ছেড়ে বন-জঙ্গল ও পাহাড়ে আশ্রয় নিয়েছে। সাড়ে তিন মিলিয়ন পাকিস্থানে ও দেড় মিলিয়ন ইরানে। আকীদার কারনেই তাদের এ অবস্থা। নতুবা তারা গ্রাম ও শহরে বাস করতে পারত। নজীব* কয়েক বছর ধরে তাঁদেরকে পাকিস্থান থেকে ফিরে যাবার প্রস্তাব দিয়েছে। কিন্তু তারা যায়নি। কারণ, তারা দ্বীনদার ও আকীদাধারী। তাদের এ যুদ্ধ প্রথম দিন থেকে আকীদার উপর ভিত্তি করেই সংঘটিত হয়েছিল।
পশ্চিমা ও বামপন্থী মিডিয়া আরব বিশ্বে এ ধারণা ছড়িয়ে দিতে প্রাণপন চেষ্টা করছে যে, আফগানিস্থানের এ যুদ্ধ গৃহযুদ্ধ । হ্যাঁ! এ যুদ্ধ আফগানদের সাথে আফগানদের যুদ্ধ বটে। তবে তা দ্বীন ও আকীদা কেন্দ্রিক যুদ্ধ, মুসলিম ও কাফিরের যুদ্ধ, মুমিন ও মুরতাদের যুদ্ধ এবং আল্লাহ্র আইন প্রতিষ্ঠাকামী ও কম্যুনিস্টদের যুদ্ধ। পৃথিবীতে আল্লাহ্র আইন প্রতিষ্ঠার জন্য এদের সাথে যুদ্ধের বিকল্প নেই।
রাশিয়া আফগানিস্থানের পরাজয়ের জ্বালা সহ্য করতে না পেরে আমেরিকাকে বলল, আমরা আফগানিস্থান থেকে চলে আসতে চাই। তবে আফগানিস্থানে ক্ষমতার বসানোর জন্য বিকল্প একজনকে দেন। এ কট্টর মৌলবাদীরা আমাদের জন্যে যেমন ক্ষতিকর, তেমনি তোমাদের জন্যেও ক্ষতিকর। এরপর তারা জেনেভায় সম্মেলন করে চুক্তি করল যে, মুজাহিদদেরকে জিহাদের সকল ফল থেকে বঞ্চিত করা হবে।
তারা মাত্র এক বছর পূর্বে মুসলিম ও আরব বিশ্বে এসে বলেছে, এ আফগানদের ব্যাপারে আমাদের সহায়তা করুন। আফগান যুদ্ধ, উপসাগরীয় যুদ্ধ ও ফিলিস্তিন সমস্যা একই সুত্রে গাঁথা। তারা বলছে যদি আমাদেরকে আফগান যুদ্ধ বন্ধকরণে সাহায্য করেন, তাহলে আমরা উপসাগরীয় যুদ্ধ বন্ধ করব এবং ফিলিস্তিন সমস্যা সমাধানের জন্য একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন ডাকব। তারা জিয়াউল হকের কাছে একজন আরব শাসক পাঠাল যাতে সে তাঁকে জেনেভা চুক্তিতে স্বাক্ষর করাতে রাজী করতে পারে। সে এসে তিন ঘন্টা পর্যন্ত জিয়াউল হকের কাছে জেনেভা চুক্তিতে স্বাক্ষরের প্রয়োজনীয়তা তিন ঘন্টা পর্যন্ত ব্যাখা করে বুঝাল। জিয়াউল হক তাঁকে বললেন, এতদিন আপনারা কোথায় ছিলেন? শেষ মুহূর্তে এসে আফগান জিহাদকে লেবাননের লড়াই ও ইসরাঈলী গাড়ীর নীচে মাইন পুঁতে রাখার সাথে তুলনা করতে এসেছেন? আফগানিস্থানের জিহাদে দশ বছরের অধিক কাল ধরে চলে আসা একটি রক্তাক্ত যুদ্ধ এবং রাশিয়া এতে পরাজিত। সে বলল, রাশিয়া পরাজিত? জিয়াউল হক বললেন,হ্যাঁ ! রাশিয়া পরাজিত।
আমেরিকা ও পাকিস্থান মিডিয়ার রেকর্ডকৃত যুদ্ধের চিত্র ও ক্ষয়ক্ষতি আমাদেরকে হতবাক করেছে। ১৯৮৮ এর জানুয়ারী পর্যন্ত রেকর্ডকৃত হিসাব অনুযায়ী রাশিয়ার ৪১৬০টি যুদ্ধ বিমান ধবংস হয়েছে। ইসরাঈলী সেনাবাহিনীর তিনগুন সেনাবাহিনী রাশিয়া এ পর্যন্ত আফগানিস্থানে হারিয়েছে। ট্যাংক হারিয়েছে ২০৮০ টি । অস্ত্র হারিয়েছে ২১ হাজার। রাশিয়ার দাবী মতে নিহত ও আহত রাশিয়ান সৈন্যের সংখ্যা ৫০ হাজার। যুদ্ধে রাশিয়ান সৈন্যদের পিছনে প্রতিদিন ব্যয় হয়েছে ৪৫ মিলিয়ন রুপি। জিয়াউল হক তাঁকে বললেন, আপনি কী ভাবছেন? আফগানিস্থানের জিহাদকে কি আপনি ফিলিস্তিন সমস্যার মত মনে করেছেন?
১৯৭৮ থেকে ১৯৮৮ জ্বিহাদ বিরামহীনভাবে চলছে। কা’বার তাওয়াফের মত আফগানিস্থানে জ্বিহাদও এক মুহূর্তের জন্য বন্ধ হয়নি। দিন-রাত ও গরমকাল শীতকালে কা’বার তাওয়াফ এক মুহূর্তের জন্যেও বন্ধ হয় না। অনুরূপ আফগানিস্থানেও এক মুহূর্তের জন্যেও জ্বিহাদ বন্ধ হয়নি। কোন না কোন এলাকায় গুলি ছোঁড়া হচ্ছে। আমি মনে করি না এ দীর্ঘ চৌদ্দ বছরে এক মুহূর্তের জন্যে আফগানিস্থান লড়াই থেকে মুক্ত ছিল। তাই মনে করবেন না যে, রাশিয়া এমনিতে বের হয়ে গেছে। পত্রিকায় লেখা হচ্ছে যে, রাশিয়া আফগানিস্থান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নিয়েছে। রাশিয়া তার সৈন্যদের এমনিতে প্রত্যাহার করে নিচ্ছে না। সে লজ্জাকর পরাজয় বরণ ও নিজেকে ধ্বংস করার পর আফগানিস্থান থেকে বের হতে যাচ্ছে।

এক রাশিয়ার সৈন্যের স্বীকারোক্তি

কাবুল থেকে ফিরে যাওয়া একজন রাশিয়ান সৈন্যের নিকট রাশিয়ান টেলিভিশন প্রশ্ন করেছে আফগানিস্থানে তোমাদের দিন-কাল কেমন গেছে? সে বলল, ‘যখন আমরা আল্লাহু আকবর হুংকার শোনতাম, তখন আমরা কাপড়ের মধ্যে পেশাব করে দিতাম।’ এ কথা রাশিয়ান টেলিভিশন প্রচার করেছে।
আফগান জ্বিহাদ গর্বাচেভের অন্তরে কম্যুনিস্ট চিন্তাধারার পরিবর্তন ঘটিয়েছে। সে এখন কম্যুনিজমকে অস্বীকার করতে বসেছে। এ মাসের মধ্যেই তার থেকে কম্যুনিস্ট চিন্তা-ধারা বিদায় নিয়েছে। পত্রিকায় তাদের বিবৃতি পড়ে দেখুন। গর্বাচেভ এখন নতুনভাবে চিন্তা করতে শুরু করেছে। তারা বলেছিল ধর্ম মানুষের জন্য আফিম। কিন্তু দেখা গেল এখন ধর্মই পৃথিবীর সর্ববৃহৎ শক্তিকে পরাজিত করছে। তারা বলেছিল ধর্ম মানুষের রক্ত চোষণকারী জোঁক। কিন্তু দেখা গেল আফগানদের ধর্ম কম্যুনিজমের শক্তিধর বাহিনীকে পরাজিত করছে।

এক ফরাসী সাংবাদিকের ইসলাম গ্রহণ

আফগান সীমান্তে আমার সাথে একজন ফরাসী সাংবাদিকের সাথে দেখা হয়। সে যুদ্ধের সংবাদ সংগ্রহ করার জন্য এসেছে। আমি তাঁকে বললাম, তুমি কি আল্লাহ্র ঈমান রাখ? সে বলল, আমি শোনতাম যে, পৃথিবীর একজন সৃষ্টিকর্তা রয়েছেন । কিন্তু আফগানরা আমাকে আল্লাহ্র উপর ঈমান আনতে বাধ্য করেছে। আমি বললাম কীভাবে? বলল, যখন আফগানদেরকে দেখি তাদের দ্বারা বিশাল বিশাল ট্যাংক বহরকে পরাজিত করছে। এর মানে যুদ্ধের ময়দানে অদৃশ্য একটি শক্তির হাত রয়েছে, যাকে আমরা দেখছি না। আর তিনি হচ্ছেন আল্লাহ্। এটা ফরাসী সাংবাদিকের কথা । অতঃপর আমি তাঁকে বললাম, তুমি আফগানিস্থানে কতদিন অবস্থান করেছ? বলল, চার মাস। বললাম, তুমি কীভাবে মুজাহিদদের মত জীবন যাপন করলে? বলল, ‘এটা সহজ। সকালে একবার চা ও রুটি। দুপুরে আরেকবার চা ও রুটি। ‘তবে আপনারা মনে করবেন না যে, আফগানরা এত সহজে এ অবস্থায় এসে উপনীত হয়েছে।

আফগান জনগণের ট্রাজেডী

এখন আফগানিস্থানের প্রতিটি ঘর মাতম ও এতীম খানায় পরিণত। সবাই একে অপরের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করছে। বলছে আমার আব্বা কোথায়? বলা হচ্ছে তারাকীর আমলে নিহত হয়েছে। বলছে আমার বড় ভাই কোথায়? বলা হচ্ছে হাফীযুল্লা আমীনের আমলে নিহত হয়েছে। বলছে আমার বোন কোথায়? আমার মা কোথায়? বলা হচ্ছে অমুক জায়গায় লাশের সাথে দাফন করা হয়েছে। আমাদের এখানে মুস্তারী নামে একজন ড্রাইভার আছে। লোকজন বলল, শায়খ আবদুল্লাহ আপনি এর ঘটনা শুনেছেন? তখন আমি তাঁকে বললাম তার ঘটনা খুলে বলতে। সে বলল, আমাদের পরিবারের লোক সংখ্যা বার জন। আমি বাজারে গিয়েছিলাম। আমি যাওয়ার পর বিমান এসে আমাদের ঘরের উপর বোম ফেলে চলে যায়। আমি এসে দেখলাম ঘর ও লোকজন কেউ নেই। দেখলাম এদিক-সেদিক কিছু গোস্তের টুকরো ছড়িয়ে আছে। আমি মাটির উপর থেকে গোস্তের টুকরোগুলো নিয়ে একত্রিত করতে লাগলাম। এতে বার জন লোকের বার কেজির মত গোশত পাওয়া গেল।
কত মানুষ আফগান জিহাদের কারণে নিহত হয়েছে, তার ইয়ত্তা নেই। হেকমতিয়ারের ঘরে একজন এতীম শিশু রয়েছে। আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম এ কে? বললেন, এ ছেলের কোন আত্মীয় স্বজন পাওয়া যায়নি। তাই আমি তাঁকে নিয়ে এসে আমার ঘরে লালন-পালণ করছি।

উত্তর আফগানিস্থানে কিছু সময়

আমি উত্তর আফগানিস্থানের একটি পাহাড়ে উঠেছিলাম। পাহাড়টি চার হাজার মিটার উচু। পাহাড়টিতে বরফ জমেছে। পা রাখলে পিছলে যায়। আমাদের উঠতেই হবে। বাধ্য হয়ে আমি উভর পায়ের সাথে সাথে উভয় হাতও মাটিতে রেখে উপরে উঠতে লাগলাম। আফগানরা তাদের রসদ ও খাবার নিয়ে উপরে উঠছে, আমি আমার জ্যাকেটটিও সাথে নিতে পারলাম না। উঠার পথে কিছু মৃত ঘোড়া ও গাধা দেখতে পেলাম। এগুলো ক্লান্ত হয়ে পাহাড়ের উপর থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। তুমি উভর পা ও হাত দিয়ে উঠার সময় কোন মাটি চেপে ধরতে বা কোন মৃত গাধায় হেলান দিতে চাইবে । আমরা ফজরের নামায পড়ে রওয়ানা দিয়ে মাগরিবের আযান পর্যন্ত সময়ে পাহাড়ের চূড়ায় গিয়ে পৌছতে পারিনি। একজন লোককে দেখলাম সে তার গাধাসহ পাহাড় থেকে পড়ে যাচ্ছে। সে গাধাকে থামানোর অনেক চেষ্টা করল। না পেরে গাধা তার উপর থাকা মাল সামানা বাদ দিয়ে সে নিজে নিজে মৃত্যুমুখে পতিত হল । তোমরা কি বিশ্বাস করবে গাধা ও খচ্চর আত্মহত্যা করে? হ্যাঁ! আফগানিস্থানে অধিক ক্লান্তির দরুন গাধা খচ্চর ও ঘোড়া নিজেদের আর স্থির রাখতে না পেরে পাহাড় থেকে পড়ে গিয়ে আত্মহত্যা করে।
নব্বই থেকে একশ কেজি ওজনের এক আরব যুবক ক্লান্তির দরুন বলল,আমি আর উঠতে পারব না। আমাকে ছাড়ুন, আমি মরলে এখানে মরব। তারা তাঁকে ছেড়ে চলে গেলো । সে বরফের মাঝে ঘুমের ব্যাগের উপর শুয়ে মৃত্যুর অপেক্ষা করছে। রাত্রে সে অদৃশ্য থেকে আওয়াজ শুনতে পায়, আল্লাহ্ তোমার সাথে রয়েছে। ক্ষুধা ও ঠাণ্ডায় তিন দিন অতিক্রান্ত হওয়ার পর ঐ পথ দিয়ে যাওয়া একটি কাফেলা তাঁকে দেখতে পায়। তারা তাঁকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। কিন্তু তার পা বরফের কারণে অবশ হয়ে গিয়েছিল। ফলে হাসপাতালে নেয়ার পর তার পায়ের আঙ্গুল কেটে ফেলতে হয়। এ রকম কত মানুষ বরফের মধ্যে মরে গেছে তার হিসাব নেই। এমনকি ছয় মাস পর বরফ গলে যাওয়ার পরও অনেক মৃতদেহ মানুষের নজরে আসে। এক মহিলা তার শিশুপুত্রকে নিয়ে পাহাড়ের চূড়ায় উঠার সময় ক্লান্তির দরুন তাঁকে রেখে চলে যায়। কারণ, তাঁকে নিয়ে উঠতে গেলে উভয়ের মৃত্যু নিশ্চিত । তাই সে বাধ্য হয়ে তার ছেলেকে রেখে চলে যায়। আট দিন পর সে মুজাহিদদদের নিকট এসে বলল, পাহাড়ের অমুক জায়গায় বরফের নীচে আমার ছেলে রয়েছে। আপনারা তাঁকে খুঁজে এনে দাফন করলে ভাল হয়। মুজাহিদরা তার দেখানো জায়গায় গিয়ে বরফ উঠালে দেখতে পায় যে, তার ছেলে জীবিত।
বাস্তবেই আফগানিস্থানের কাহিনী খুব শোকাহত ও দুঃখজনক। সাথে সাথে যারা পরাধীনতা থেকে মুক্ত হতে চায়, তাদের জন্য তা গৌরব ও ইজ্জতের লড়াইও বটে।


আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআলা বলেন-
إِن تَكُونُوا تَأْلَمُونَ فَإِنَّهُمْ يَأْلَمُونَ كَمَا تَأْلَمُونَ ۖ وَتَرْجُونَ مِنَ اللَّهِ مَا لَا يَرْجُونَ ۗ وَكَانَ اللَّهُ عَلِيمًا حَكِيمًا [٤:١٠٤]
“তোমরা যদি কষ্টের সম্মুখীন হও, তাহলে তো ওরাই তোমাদের ন্যায় কষ্টের সম্মুখীন হচ্ছে এবং তারা আল্লাহ্র কাছে যা আশা করে না, তোমরা সেটার আশা করছ। ”[নিসাঃ১০৪]।

 

আফগানদের গুন

আমি আফগানদের সাথে আট বছর ধরে বাস করছি। দিন দিন তাদের প্রতি আমার বিশ্বাস ও ভক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছে। হ্যাঁ ! তারা পৃথিবীর অন্যান্য জনগোষ্ঠীর মত একটি জনগোষ্ঠী। তাদের মাঝে সকল প্রকার দোষও বিদ্যমান। আমি তাদের দোষের ব্যাপারে অবহিত। তবে তাদের গুন, তাদের দৃঢ়তা, তাদের আতিথেয়তা, তাদের বীরত্ব ও তাদের লজ্জাবোধ সকল দোষ-ত্রুটিকে ঢেকে রেখেছে। তাদের মাঝে চোর, মিথ্যুক ও মাদকসেবী রয়েছে। কিন্তু এসবের মাঝে একটি খাটি ও উন্নত জনগোষ্ঠীও রয়েছে। পৃথিবীর কোথাও এরকম একটি জনগোষ্ঠী আছে বলে আমার জানা নেই।

আফগান জ্বিহাদ আমাকে যা শেখাল

আফগানরা আমাকে অনেক অনেক কিছু শিখিয়েছে। তারা আমাকে শিখিয়েছে ফিলিস্তিনকে ইয়াহুদীদের হাত থেকে ফিরিয়া আনা সহজ ব্যাপার।
শুধু সহজ ব্যাপার না, ইনশাআল্লাহ্ খুবই সহজ। আমি এ ব্যাপারে পূর্ণ আশাবাদী। আমাদের কাছে যদি দু’হাজার ফিলিস্তিনী যুবক এসে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ও যুদ্ধের কৌশল শিখে নেয় এবং তাদের কাছ থেকে গোয়েন্দাদের ভয় দূর হয়ে যায়, তাহলে আমি নিশ্চিত যে, ফিলিস্তিনকে স্বাধীন করা সম্ভব। ফিলিস্তিনীরা যেখানে যায়, সেখানে গোয়েন্দাদের ভয়ে ভীত থাকে। আলহামদুলিল্লাহ এখানে আমাদের গোয়েন্দা ভীতি দূর হয়ে গেছে। জ্বিহাদ মানুষের মনকে রিজিক ও মৃত্যুর ভয় থেকে মুক্ত করে।
বিপদকে ভয় করা সাজে না কখনো আমার
কেননা আমি বিপদকে ভয় করে পাইনি কোন উপকার।
এখানে এসে আরব যুবকদের অন্তর পরিপক্ক হয়েছে ও তাদের হিম্মত উন্নত হয়েছে। বিশেষ করে ফিলিস্তিন ও জর্ডানের যুবকদের, যারা ইনশাআল্লাহ্ ফিলিস্তিন মুক্ত করার পবিত্র জিহাদের উপকরণ হবে বলে আশা করছি। আট বছর ধরে আমি এখানের এ কণ্টকাকীর্ণ ও মিষ্ট পথে অবস্থান করায় ফিলিস্তিনে আমার দেশবাসী বলাবলি করছে, ‘শায়খ আবদুল্লাহ আযযাম আফগান সমস্যা নিয়ে ব্যস্ত। আফগান সমস্যা কি ফিলিস্তিন সমস্যা থেকে গুরুত্বপূর্ণ?’

আফগানিস্থান থেকে ফিলিস্তিন

হিন্দুকুশে আহত হওয়া মুজাহিদদের রক্ত বাইতুল মাকদিস মুক্তকারী ফিলিস্তিনের যুবকদের জন্যেই প্রবাহিত হচ্ছে। আমি দেখছি হেলমন্দের আশে-পাশে আহত ও নিহত হওয়া শিশুরা গাজা, হাইফা, ইয়াফা, নাবলূস ও আলখলীলের* শিশু ও বিধবাদের আর্তচিৎকার পুনরাবৃত্তি করছে । তোমরা কি আমাকে পাথর মনে কর, যার কোন রক্ত নেই এবং দেশ, পরিবার, বাইতুল মাকদিস ও পবিত্র ভূমির প্রতি যার কোন টান নেই।
আমরা ও আফগানিস্থানে আসা প্রতিটি ফিলিস্তিনী ও জর্ডানি যুবকের চিন্তা জিহাদের এ উজ্জ্বল চিত্র মসজিদুল আকসা, আলখলীল ও বেথলহেমে ফুটিয়ে তোলা। আমরা আফগানিস্থানে এসেছি এখান থেকে আল্লাহ্ চাহে তো জিহাদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা অর্জন করে তা ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমিতে প্রয়োগ করার জন্য।
শাহাদাতের খোঁজে

হ্যাঁ ! অনেকে আমার কাছে এসে বলে যে, আমরা ফিলিস্তিনে জ্বিহাদ করতে চাই। কারন, তারা তাদের দুনিয়াকে বিক্রি করে দিয়েছে এবং আল্লাহ্র পথে মৃত্যু বরণ তাদের সর্বোচ্চ আকাঙ্ক্ষায় পরিণত হয়েছে। দুনিয়া নিয়ে তাদের কোন চিন্তা নেই। সকাল-সন্ধ্যায় তাদের প্রাণকে তারা হাতে নিয়ে আল্লাহ্র কাছে নিবেদন করছে যাতে তাঁকে তার পথে কবুল করে নেন। যার প্রাণকে আল্লাহ্ তার পথে কবুল করছেন না, সে পেরেশান।
আলহামদুলিল্লাহ বর্তমান আফগানিস্থানে এক হাজারেরও বেশী আরব মুজাহিদ রয়েছে। তাদের অধিকাংশই হারামাইনের দেশের (সৌদিআরব), যার দিকে ইসলাম পুনরায় ফিরে যাবে। এ পর্যন্ত এ দেশের চল্লিশজন মুজাহিদ শাহাদাত বরণ করেছে এবং কাবুল, কান্দাহার ও জালালাবাদের চতুষ্পার্শে তাদের পাঁচ শতাধিক যুবক পাহারারত রয়েছে।
গত সপ্তাহে তাদের বিশজন শাহাদাত বরণ করেছে। আমি তাদের একজনের কফিন বহন করেছি। কফিনে তার রক্ত পড়েছে। তার নাম খালিদ বিন মুআল্লা আল আহমদ আল হারবী। আল্লাহ্র কসম! তার রক্ত থেকে দাফন করার পূর্বে পাঁচ দিন পর্যন্ত মেশকের মত সুগন্ধি বের হয়েছে। তার কফিন যেখানে রাখা হয়, সেখানে সুগন্ধি ছড়িয়ে পড়ে । মানুষ তার রক্তের সুগন্ধি শোঁকার জন্য তার লাশ পাকিস্থান থেকে সৌদি আরবে নিয়ে যাওয়া হয়। এ যুবকরা তাদের জীবনকে আল্লাহ্র রাস্তার জন্য ওয়াকফ করে দিয়েছে। এদের মধ্যে মন্ত্রী ও ধনকুবের ছেলেরাও রয়েছে। তাদের অনেকেই বাপসহ চলে এসেছে। উসামা বিন লাদেন সে মধ্যে প্রাচ্যের সর্ববৃহৎ কোম্পানির মালিক। সে তার পিতার যাকাতের শত শত মিলিয়ন রিয়াল নিয়ে এসেছে। মসজিদে নববী সম্প্রসারণের আট হাজার মিলিয়ন রিয়ালের কাজ ফেলে এসেছে। সে এখন মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে জালালাবাদে পাহারা দিচ্ছে। সে একজন হাল্কা-পাতলা ও লম্বা যুবক। তার প্রেসারের রোগী ও তার নার্ভ দুর্বল। তার পকেট লবনে পূর্ণ। তার এক হাতে রয়েছে পানির বোতল। সে লবণ গিলে খায় এবং এর পরে পানি পান করে। এ করে সে প্রেসার দূর করার চেষ্টা করছে, যাতে জিহাদের ময়দানে সব সময় থাকতে সক্ষম হয়। তোমরা কি মনে কর আল্লাহ্র দ্বীন সহজেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে? এ যুবকের বয়স এখন উনত্রিশ কিংবা ত্রিশ। তার চারজন স্ত্রী রয়েছে। তাঁদেরকে ছেড়েই চলে এসেছে সে। জিহাদের জন্য সে তার ধন-সম্পদসহ সব কিছু ত্যাগ করে চলে এসেছে।

ধর্মনিরপেক্ষবাদীরা কী চায়?

কিছু লোক ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখে। তাদের বলতে চাই আমরা কি আমাদের সবচেয়ে মূল্যবান বস্তু প্রাণকে কি সামান্য ভূখন্ডের জন্য উৎসর্গ করব? ফিলিস্তিনের মাটি আর ফুজাইরার* মাটির মুল্যতে একই। ঘর তো আমার যেখানে ইচ্ছা সেখানে নির্মাণ করা সম্ভব। ব্যাপারতো জমি আর মাটির নয়। ব্যাপার হচ্ছে দ্বীনের, আকীদার, পবিত্র ভূমির, মসজিদুল আকসার ও সে সব লোকদের, যারা হুর ও জান্নাত লাভের প্রতিযোগীতায় নেমেছে। যদি জান্নাত ও হুর না পাই, তাহলে কেন আমি নিজের প্রাণ উৎসর্গ করব? যে সব বামপন্থীরা ফিলিস্তিনের প্রচার মাধ্যম দখল করে রেখেছে, তারা ফিলিস্তিনের পবিত্র সন্তানদের মাথার খুলিতে আরোহণ ছাড়া আর কিছুই করছে না।
আমি ১৯৬৯ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত ফিলিস্তিনের জিহাদে অংশগ্রহণ করেছিলাম। তখন তাদের রেডিওতে বলা হত যুবকরা ইমবিরিয়ালিয়ার (সাম্রাজ্যবাদ) বিরুদ্ধে তীব্র ভাবে লড়েছে।
অথচ যুবকরা ইমবিরিয়ালিয়া কি চিনে না। তাঁদেরকে যদি ইমবিরিয়ালিয়া কি জিজ্ঞেস করা হয়, তাহলে হয়তো সে ভাববে ইমবিরিয়ালিয়া রাশিয়ার একটি শহর। আমি কি আমার প্রাণ একটি ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য উৎসর্গ করব? যেমন তুরস্ক, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ ও সরকারী চাকুরী করতে গেলে হিজাব খুলে যেতে হয়। জর্জ হাবশ, রায়াহ গাদী ও নায়েফ হাওয়াতিমা** এখন আরব আমিরাতে। আমি জানি না এরা ফিলিস্তিনে কী করতে চায়? এরা ফিলিস্তিনের সন্তানদেরকে তাদের দ্বীন থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। এরা ফিলিস্তিনের নামে পৃথিবী ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমরা ১৯৬৯ সালে জ্বিহাদ করার সময় যখন আল্লাহু আকবর বলতাম, তখন নায়েফ হাওয়াতিমা গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট বলত-
আমাকে যদি জিজ্ঞেস কর আমার মূল্যবোধ কী?
তাহলে শোন আমি মার্কসবাদী, লেনিনবাদী ও জাতীয়তাবাদী।
এরা ফিলিস্তিনের যুবকদের নষ্ট করেছে। এখনো তারা ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদ, বামপন্থা ও সমাজবাদের নামে যুবকদের ধবংস করছে। রেডিওর প্রোগাম শুরু হয় এ বলে-
হে ভাই! আমি ঈমান এনেছি ধবংস ও বিতাড়নের স্বীকার জনগোষ্ঠীতে
এবং নিয়েছি অস্ত্র হাতে যাতে নিতে পারে পরবর্তী প্রজন্ম কাস্তে হাতে।
ফিলিস্তিনের লড়াই কি কম্যুনিজমের আন্তর্জাতিক প্রতীক কাস্তের জন্য? ওহে বস্তুবাদীরা তোমরা তোমাদের প্রাসাদে থেকে মনে করছ যে, ফিলিস্তিনের যুবকেরা তোমাদের পক্ষ নিয়েছে। তোমরা বোকার স্বর্গে বাস করছ। এ ফিলিস্তিনী যুবকদের আন্দোলিত করছে ইসলাম, মসজিদুল আকসা ও শাহাদাতস্পৃহা । নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র ইরশাদ-
“শহীদের জন্য তার প্রভুর কাছে সাতটি পুরস্কার রয়েছে। তার রক্ত প্রবাহিত হওয়ার সাথে সাথে তাঁকে ক্ষমা করা হবে, তার জান্নাতের আসন দেখানো হবে, কবরের আযাব থেকে তাঁকে রক্ষা করা হবে, কেয়ামতের বিভীষিকা থেকে নিরাপদ রাখা হবে, একটি সম্মানের তাজ পরানো হবে, যার একটি ইয়াকুত দুনিয়া ও তাতে যা কিছু আছে তার চেয়ে উত্তম, বাহাত্তরটি ডাগর চক্ষু বিশিষ্ট হুরের সাথে বিবাহ দেয়া হবে ও তার পরিবারের জাহান্নামে প্রবেশ যোগ্য সত্তরজনকে ক্ষমা করণে তার সুপারিশ গৃহীত হবে । ”[হাদীসটি সহীহ এবং ইমাম আহমদ,তিরমিযী ও ইবনে হাব্বান কর্তৃক বর্ণীত]।

ইসরাঈলকে ধ্বংস করতে প্রয়োজন দু’হাজার মুজাহিদের

আমি এখন এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে, যদি আমার হাতে আল্লাহ্র উপর ঈমান আনয়নকারী ও শাহাদাত
কামনাকারী দু’হাজার মুজাহিদ থাকে, তাহলে আল্লাহ্র ইচ্ছায় আমরা ইসরাঈলকে ধবংস করতে সক্ষম হব। প্রশ্ন আসতে পারে আমরা কীভাবে ইসরাঈল পর্যন্ত পৌছতে সক্ষম হব? এর উত্তর একটাই, যদি আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআলা আমাদের সততা ও নিষ্ঠা দেখেন, তাহলে তিনি অবশ্যই আমাদের জন্য পথ খুলে দিবেন, যেমন খুলে দিয়েছেন আফগানিস্থানে। চিরঞ্জীব আল্লাহ্ ব্যতীত আমাদের কোন কিছু করার ক্ষমতা নেই।

বিশ্বব্যাপী আফগান জিহাদের প্রভাব

আমি বলছি এখন আফগানিস্থান তার ত্যাগের বিনিময়ে গন্তব্যে পৌছে গেছে। মানুষ এখন আফগানিস্থান নিয়ে আশঙ্কায় ভুগছে। বিশ্বাস করুন রাশিয়া, আমেরিকা ও চীন থেকে শুরু করে গোটা পৃথিবী মুজাহিদদের হাতে ক্ষমতা না যাওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে । মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী কার্লচলীকে ন্যাটোর প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা এক বৈঠকে বলল, মনে হচ্ছে গর্বাচেভ পাশ্চাত্যের ব্যাপারে তার রাজনীতিতে পরিবর্তন আনছে। কারণ, তিনি ঘোষণা দিয়েছেন যে, পূর্ব ইউরোপ থেকে তিনি শিগগিরই ১০ লক্ষ সৈন্য ফিরিয়ে নিবেন। কার্লচলী বলল, আপনারা কি এটা বিশ্বাস করেন আফগানরা বিশ্ব নিয়ে গর্বাচেভের যে চিন্তাধারা ছিল তাতে পরিবর্তন এনে দিয়েছে?
রিগ্যান হেকমতিয়ারের সাথে সাক্ষাত করার জন্য কত চেষ্টা করেছে ! কিন্তু হেকমতিয়ার তা বার বার প্রত্যাখ্যান করেছেন। পাকিস্থানী রাষ্ট্রদূত বলল, আপনি কি পাগল? ৬০ জন রাষ্ট্র প্রধান রিগ্যানের সাথে সাক্ষাতের আবেদনের তালিকায় রয়েছে। কিন্তু রিগ্যান তাদের সমর পিছিয়ে দিচ্ছে এবং না করে দিচ্ছে। আর আপনার সাথে সাক্ষাত করতে চাওয়ার পরও আপনি তা প্রত্যাখ্যান করছেন! হেকমতিয়ার বললেন, হ্যাঁ! যদি তোমরা বেশী চাপাচাপি কর, তাহলে আমি এখনই আমেরিকা ছেড়ে চলে যাব। জাতিসংঘ প্রতিনিধি কর্ডফেজ ইউনুস খালিছের সাথে কতবার সাক্ষাত করতে চেয়েছে। কিন্তু তিনি অস্বীকৃতি জানিয়েছেন । রাশিয়ার পররাষ্ট্র প্রতিনিধি ফ্রান্টসফ গত অক্টোবরে জাতিসংঘের শেষ অধিবেশনে বলেছে, আমি রব্বানীর সাথে গোপনে সাক্ষাত করতে চাই। রব্বানী বললেন, না। সাক্ষাত করলে প্রকাশ্যে ও পৃথিবীর লোকেরা জানে মত করতে হবে। বলল ,তাহলে রাশিয়ায় হোক। রব্বানী বললেন, না, কোন ইসলামী রাষ্ট্র যেমন পাকিস্তান বা সৌদি আরবে হতে হবে। এ কথা বলে রব্বানী জাতিসংঘ থেকে সৌদি আরবে চলে আসলেন।সৌদি আরবে আসার পর টেলিফোন আসল যে, রাশিয়ানরা রব্বানীর সাথে সাক্ষাত করার জন্য সৌদি আরবে যেতে প্রস্তুত। কিন্তু কীভাবে আসবে? সৌদি আরবে তো তাদের দূতাবাস নেই! বাদশা ফাহদের কাছে অনুমতি চাও। রাশিয়া বাদশা ফয়সলের আমলে দূতাবাস খোলার অনুমতি চেয়ে ব্যর্থ হয়েছিল। তিনি বলেছিলেন, যারা আল্লাহকে চিনে না, তাঁদেরকে আমরাও চিনি না।
অনুমতি চাওয়ার পর বাদশা তাদের প্রবেশের অনুমতি দেন। ফ্রান্টসফ তার দল নিয়ে আসল। রব্বানী বললেন, আমাদের তিনটি শর্ত। প্রথমত সম্মেলন কক্ষে তোমাদের আগে প্রবেশ করতে হবে, যাতে আমরা প্রবেশ করলে তোমরা দাঁড়িয়ে আমাদেরকে সম্মান করতে পার।
তারা বলল, ঠিক আছে । দ্বিতীয়ত, আমরা তোমাদের সাথে করমর্দন করব না। তৃতীয়ত আফগানিস্তানের ভবিষ্যৎ সরকার গঠনে তোমরা কোন প্রভাব খাটাতে পারবে না। নজীবের সরকারই তোমাদের শেষ সরকার। আলোচনা শুরু হল। ফ্রান্টসফ শুধু একটি আবেদনই করল। আর তা হচ্ছে নজীবের সরকারে মুজাহিদদের পক্ষ থেকে তিনজন ক্ষমতাসীন হওয়া। যাতে আমরা বিশ্বকে বলতে পারি যে, আমরা মুজাহিদদের সাথে চুক্তি করে আফগানিস্তান থেকে বের হয়ে এসেছি। তার এ কথায় তাঁকে বলা হল, ইসলাম যেখানে মুরতাদকে বেঁচে থাকার অধিকার দেয় না, সেখানে আমরা কীভাবে কম্যুনিস্ট নজীবকে আমাদের সাথে দেশ শাসনের অধিকার প্রদান করতে পারি? আমরা একজন কম্যুনিস্টকেও আমাদের সরকারে গ্রহণ করব না। দেখুন ইসলামের সর্বোচ্চ চূড়াকে আকড়ে ধরে মুজাহিদরা মর্যাদার কত শীর্ষে আরোহণ করেছে।

জ্বিহাদ ও গৃহযুদ্ধ

জিহাদের প্রতি বিদ্বেষ ও ভয়ের কারণে বিশ্ব সম্প্রদায় এখন বলা শুরু করেছে যে, আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ চলছে । আমরা বলতে চাই, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আবূ জাহলের মধ্যে যে যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল, সেটাও তাহলে গৃহযুদ্ধ । কারণ, আবু জাহল ও রাসূলুল্লাহ  সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উভয়ে মক্কার অধিবাসী ছিলে। অতএব, বদর, উহুদ, খন্দকসহ প্রায় যুদ্ধই গৃহযুদ্ধ ছিল । এখন তাহলে মুসলমানরা এসব যুদ্ধকে কোন ধরণের যুদ্ধ হিসেবে গ্রহণ করবে? মূলত আমাদের দ্বীন গৃহযুদ্ধের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করেছে । তবে এ যুদ্ধ কেবল আকীদা ও দ্বীন কেন্দ্রীক যুদ্ধ।

কম্যুনিস্টরা ছাগলের মত বিক্রি হচ্ছে

আক্ষেপ! যদি আরব বিশ্বের বামপন্থীরা এসে আফগানিস্তানের কম্যুনিস্ট পার্টির পরিণাম দেখে যেত! রাশিয়া যখন তার সৈন্যদের ফিরিয়ে নেয়ার ঘোষণা দিল, তখন রুশ সৈন্যরা এসে মুজাহিদদের কাছে আফগান কম্যুনিস্টদের বিক্রি করার প্রস্তাব দেয়। একজন কম্যুনিস্টের মূল্য আড়াই ডলার পর্যন্ত পৌঁছেছে।
এরা তাঁদেরকে ছাগলের মত বিক্রি করে দেয়া শুরু করে। এরা যাওয়ার আগে মুজাহিদদের কাছে একজনকে পাঠিয়ে প্রস্তাব দিত যে অমুক কেন্দ্রে ১০০ জন কম্যুনিস্ট আছে। আড়াইশ ডলার দিয়ে ওদেরকে যা ইচ্ছা তাই করুন। প্রথমে আমি এটা বিশ্বাস করতাম না। কাবুলের মুজাহিদ নেতৃবৃন্দ, যাদের সাথে এ ঘটনা ঘটেছে, তারা যদি আমাকে সরাসরি না বলতেন, তাহলে এটাকে আমি কখনোই বিশ্বাস করতাম না। মুজাহিদরা কম্যুনিস্টদেরকে অর্থ দিয়ে কিনে হত্যা করছে। রুশ সৈন্যরা তিনটি মুরগীর বিনিময়ে কম্যুনিস্ট পার্টির অফিস বিক্রি করে দিয়েছে।
রাশিয়া আফগানিস্তানের কম্যুনিস্ট পার্টিকে মুজাহিদদের সামনে যে বাঘের সামনে ছাগল রেখে যাওয়ার ন্যায় রেখে চলে গেছে, তা যদি আরব বিশ্বকে ধবংসকারী কম্যুনিস্ট জর্জ হাবশ, মাহমুদ দরবেশ ও হেনা আলজাবেরীরা এসে প্রত্যক্ষ করে যেত!
মানুষ আফগানিস্তান নিয়ে শঙ্কা বোধ করছে যে, ভবিষ্যতে মুজাহিদদের মাঝে ক্ষমতা নিয়ে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হবে । আমি আপনাদেরকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, কোন দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হবে না। মুজাহিদরা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দ্বার প্রান্তে পৌছে গেছে। অবশ্যই এ নিয়ে পুরো বিশ্বে হৈ চৈ শুরু হয়ে গেছে। রাশিয়া ধবংস হওয়ার জন্য যে আমেরিকানরা এ জ্বিহাদ নিয়ে ছয়-সাত বছর ধরে আনন্দিত, তারা পর্যন্ত মুজাহিদদের ব্যাপারে আশঙ্কায় ভুগছে।

ইসলামী রাষ্ট্র নিয়ে ভীতি

কোন কোন লোক মুজাহিদ নেতৃবৃন্দকে এ বলে ভয় দেখাচ্ছে যে, আপনারা যে সরকারের ঘোষণা দিয়েছেন, তার প্রতি মার্কিনীরা সন্তুষ্ট নয়। মুজাহিদরা প্রথমে মুহাম্মদ নবীকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে ও আহমদ শাহকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিল। তখন সাইয়াফ তাঁদেরকে বললেন, আমরা সরকার গঠন করেছি আফগানিস্তানের জন্য; আমেরিকার জন্য নয়। তোমরা কি মনে করছ আমরা সরকার গঠন করেছি আমেরিকার জন্য! হেকমতিয়ার তাঁদেরকে বললেন, পশ্চিমারা কী চায়, তা আমরা বুঝার চেষ্টা করেছি, যাতে আমরা তাদের মতামতের উপর নজর রেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারি। বলল, পশ্চিমারা চাচ্ছে সাতজনের মধ্য থেকেই প্রেসিডেন্ট ও প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হোক। তারা মুহাম্মদ নবী,সাইয়াফ ও আহমদ শাহকে বিবেচনায় আনতে চায় না।
তাই আমি বিস্মিত হয়েছি যে, আফগানিস্তানই হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে দামী রাষ্ট্র, যার সরকার রক্ত সাগর ও শহীদের লাশের স্তুপের উপর গঠিত হয়েছে। যাকে একমাত্র সৌদিআরব ব্যতীত আর কেউ স্বীকৃতি দেয়নি। আল্লাহ্ তাঁদেরকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। অথচ ফিলিস্তিনের সরকারের পায়ের নীচে কোন মাটি না থাকা সত্ত্বেও তাঁকে একশটি রাষ্ট্র স্বীকৃতি দিয়েছে। কবি বলেন-
সবচেয়ে দামী রাষ্ট্র তাই, যা নির্মিত হয় তরবারী দ্বারা
যার প্রেমিকদের কাছে আঘাত মনে হয় মধুর ধারা।
এমনকি আমার কলম পর্যন্ত বলেছে এ কথা যে,
সম্মান তরবারীর জন্য,নয় সম্মান কলমের জন্যে।
আর কোন মুসলিম রাষ্ট্র আফগানিস্তানকে স্বীকৃতি দিচ্ছেন না। কোথায় আজ ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধ? কোথায় আজ দ্বীনের জন্য বন্ধুত্ব স্থাপন ও শত্রুতা পোষণের আকীদা ।

প্রথম লক্ষ্য মসজিদুল আকসা পুনরুদ্ধার

হ্যাঁ! আমেরিকা মুজাহিদদের প্রতি সন্তুষ্ট নয়। কারণ, তারা মৌলবাদী ও ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় অনড়। তারা তাদের রাষ্ট্রের সংবিধানের প্রথম ধারার উল্লেখ করছে যে, আমাদের রাষ্ট্র জিহাদের রাষ্ট্র, যার প্রথম করনীয় হচ্ছে মসজিদুল আকসাকে উদ্ধার করা। আমেরিকা সৌদি আরবকে বলেছে, মুজাহিদদের সরকারকে তোমরা কীভাবে স্বীকৃতি দান করলে, অথচ আমরা এখনো তাঁদেরকে স্বীকৃতি দেইনি! তোমরা এ মারাত্মক কাজ কীভাবে করলে?

জিহাদের প্রভাব

প্রায় এক বছর ধরে আমেরিকা মুজাহিদ নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে । সাইয়াফ আমেরিকান প্রতিনিধি লামকোষ্টকে বলেছেন, তোমরা পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দুষ্ট লোক । তোমরা ইসলামকে ঘৃণা কর। তোমরা রক্ত পিপাসু। তোমরা আমাদেরকে জিহাদের ফল থেকে বঞ্চিত রাখার ষড়যন্ত্র করছ।
মার্কিন পররাষ্ট্র প্রতিনিধি সাইয়াফকে বলেছে যে, তিনি জংলী লোক। সে বলেছে, আমি যে মার্কিন পররাষ্ট্র প্রতিনিধি তা সবাই জানে। কিন্তু এ লোক জানে না। সাইয়াফের কথায় তার চেহারা লাল হয়ে যায়। সাইয়াফ বললেন, আমরা ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করতে চাই। আমাদের কাছে তোমাদের প্রয়োজন নেই। তোমরা চলে যাও।
তাদের ষড়যন্ত্র বুমেরাং হোক। তারা বলছে, আগামীতে এদের উপর আমরা অর্থনৈতিক অবরোধ করব। কিন্তু আফগানরা অর্থনৈতিক অবরোধকে ভয় করে না। তারা রুটি ও চিনি ছাড়া চা খেয়ে থাকতে পারে। তাদের দেশে চা উৎপন্ন হয়। হ্যাঁ ! পশ্চিমা দেশগুলো গম, চাউল ও চিনি উৎপন্ন করে, যা আফগানদের প্রয়োজন মেটায়। এরপরও দুনিয়াকে তারা সালাম জানিয়ে দেশ পরিচালনা করতে পারবে। তাদের রাষ্ট্রীয় বাজেট কোন দেশের প্রতি মুখাপেক্ষী নয়। লোগারে তাদের কাছে তামার খনি আছে। রাশিয়া এ তামার মূল্য থেকে প্রতি বছর এক বিলিয়ন ডলার নিয়ে নিত। শিবরগানে তাদের গ্যাসের খনি আছে। তা থেকে বছরে সত্তর বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপন্ন হয়। রাশিয়া তা থেকে নিজের প্রয়োজন সেরে প্রতিবছর পশ্চিমা দেশগুলোকে পাঁচশ মিলিয়ন ডলারের মত বিক্রি করত। কান্দাহারে তাদের ইউরিনিয়ামের খনি আছে। পানজশীরে মরকত (মনি) উৎপন্ন হয়, যার অর্ধাঙ্গুল পরিমাণ একটি টুকরো বিক্রি হয় অর্ধ মিলিয়ন ডলারে। জাইয়ূন  নদীর তীরে স্বর্ণ উৎপন্ন হয়। বামিয়ানে* রয়েছে লোহার খনি। এ লোহা পৃথিবীর সবচেয়ে পরিস্কার লোহা । তাদের আর কিসের প্রয়োজন?

জ্বিহাদ ভীতি

কিন্তু গোটা পৃথিবী রণাঙ্গনে পরিপক্কতা লাভকারী ইসলামী আন্দোলনের এ যুবকদের ভয় করছে । আল্লাহ্ তাঁদেরকে আফগানিস্তানের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার জন্য জীবিত রাখুন, যাতে তারা মানুষের দ্বীন, সম্পদ ও ইজ্জতের নিরাপত্তাস্থল হতে পারে। পশ্চিমারা আফগানিস্তান পৃথিবীর মুসলমানদের জিহাদের ঘাটিতে পরিণত হওয়ার ভয় করছে। তারা ভয় করছে আফগানিস্তান বিভিন্ন দেশ থেকে বিতাড়িত ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের আশ্রয় কেন্দ্রে পরিণত হওয়ার। আমেরিকাতে লেখালেখি হচ্ছে যে, শিগগিরই মুজাহিদরা পূর্ব সোভিয়ত ইউনিয়নের ইসলামী অঞ্চলগুলোতে তাদের জ্বিহাদ ছড়িয়ে দিবে। অতঃপর সোভিয়ত ইউনিয়নকে টুকরো টুকরো করে ইউরোপ পর্যন্ত চলে আসবে এবং ইউরোপের অঞ্চলগুলো তাঁদেরকে আবার জীযয়া দিতে বাধ্য হবে, যেমন দিয়েছিল তুর্কীদেরকে। ইয়াহুদীরা পশ্চিমাদেরকে এসব বলে সতর্ক করছে। আমি কয়েক বছর ধরে উপলব্ধি করছি যে ইয়াহুদীরা ফিলিস্তিনের জিহাদকে প্রচন্ড ভয় করছে। তাদের ভাষায় ইন্তাফাদা নামের এ জ্বিহাদ ফিলিস্তিনীদের নতুন ভাবে জাগিয়ে তুলেছে। আলহামদুলিল্লাহ ফিলিস্তিনীরা এখন আল্লাহু আকবারের ধ্বনিতেই আন্দোলিত হচ্ছে। হামাস ইসলাম থেকে বিচ্যুত যুবকদের সিরাতুল মুস্তাকীমে ফিরিয়ে আনার কাজ শুরু করেছে। আমাদের উপর যে বিভিন্ন ভাবে চাপ আসতে শুরু করেছে তা আমি অবশ্যই টের পাচ্ছি। ইয়াহুদীরা জেনেভা সম্মেলনে পাকিস্তানের মুজাহিদ প্রশিক্ষণ ক্যাম্পগুলো বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে, যাতে কোন আরব সেখানে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে না পারে। অধিকৃত ভূমিতে আফগানিস্তানে প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত এক যুবকের অপারেশনে ইয়াহুদীরা হতবাক হয়ে গেছে।
বর্তমানে পাকিস্তানী ভিসার ব্যাপারে যে সব কড়াকড়ি পরিলক্ষিত হচ্ছে, তা আমেরিকান ও পশ্চিমা চাপের ফলে হচ্ছে। চার বছর আগেও পৃথিবীর যে কোন দেশ ও যে কোন ধর্মের লোক পাকিস্তানে ভিসা ছাড়া প্রবেশ করতে পারত। বর্তমান পেট্রো ডলারের দেশগুলোতে প্রবেশ করা পাকিস্তানে প্রবেশ করার চেয়ে অনেক সহজ। পাকিস্তানে প্রবেশের ব্যাপারে এসব কড়াকড়ি আন্তর্জাতিক চাপের ফলে করা হচ্ছে। এয়ার লাইন্স কোম্পানীগুলোর প্রতি নির্দেশ এসেছে, ভিসা ছাড়া কাউকে পাকিস্তানে নিয়ে যাবে না। যদি পাসপোর্ট চেক করার পর কারো ভিসা পাওয়া না যায়, তাহলে তাঁকে ফেরত পাঠাবে। অনেক যুবককে ভিসা না থাকার কারণে বিমান বন্দর থেকে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ফেরত পাঠানোর খবর শোনে কোন কোন যুবক জিহাদের প্রতি অত্যাধিক অনুরাগের ফলে বিমান বন্দরে বেহুঁশ পর্যন্ত হয়ে গেছে।
ভাইয়েরা! আফগানিস্তান একটি পূর্ণাঙ্গ শিক্ষালয়। যার প্রতি মনোযোগ দেয়া ও যার কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা সকল মুসলমানদের কর্তব্য। কথা অনেক দীর্ঘ। জিহাদের আলোচনা মনের কাছে খুব প্রিয়। কিন্তু সব এখানে বলে শেষ করা যাবে না। আমি জিহাদের ব্যাপারে মনকে এ কথা বলে প্রবোধ দেই-


তোমার ভালবাসা স্থান করে নিয়েছে আমার মনে
সে তোমাকে ছেড়ে দিচ্ছে না আমাকে কোথাও যেতে।
তোমার ভালোবাসার কারণে পাওয়া তিরস্কার আমাকে
উৎসাহিত করছে বার বার স্মরণ করতে তোমাকে।
অতএব, যার ইচ্ছা করুক তিরস্কার আমাকে
এ করে সে পারবে না আমাকে তোমায় ভুলাতে।

 

আমি এখন তোমাদের মাঝে উপস্থিত। কিন্তু আমার মন এখন আফগানিস্তানে, জালালাবাদে। আমি যখন ক্যাম্প থেকে পেশোয়ারে আমার পরিবারের সাথে দেখা করতে আসি, তখন আমার কষ্ট লাগে। অথচ আমি যাচ্ছি পরিবারের সাথে দেখা করতে। যদি আমাকে ইসলামাবাদে যেতে হয়, তাহলে পথের দূরত্বের কারণে আমার কষ্ট আরো বেড়ে যায়। এমনকি হজের সময় যখন বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করি, তখনও আমার অন্তর ঘুরে বেড়ায় আফগানিস্তানের মুজাহিদ ক্যাম্পে।

হেরেমের অবস্থানের চেয়ে জিহাদের পথে থাকা উত্তম

কারণ আমি জানি যে, আফগানিস্তানে রণাঙ্গনে অবস্থান করা হেরেমে অবস্থান করার চেয়ে উত্তম। যেমন আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
“আল্লাহর রাস্তায় কিছুক্ষণ পাহারাদির করা আমার কাছে লাইলাতুল কদরে হাজারে আসওয়াদকে সামনে নিয়ে ইবাদত করার চেয়ে অধিক প্রিয়।”[ইবনে হাব্বান]।
আল্লাহর রাস্তায় একদিন ব্যয় করা কেবল ইমারাত, জর্ডান ও কায়রো নয়; সারা দুনিয়া থেকেও উত্তম। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
“আল্লাহর রাস্তায় একদিন অবস্থান করা দুনিয়া ও তাতে যা কিছু আছে তা থেকে উত্তম।”[বুখারী]।

শাহাদত সৌভাগ্য

গৌরব ও বীর ভূমি আফগানিস্তানে শাহাদত বরণকারী যুবকদের কথা মনে পড়লে আমার নিজেকে ছোটই মনে হয়। কারণ, কয়েক বছর ধরে আমি শাহাদতের সন্ধান করছি। এসব যুবকদের কামনা তিনি পূরণ করছেন। কিন্তু আমার কামনা আল্লাহ্র কাছে এখনো প্রত্যাখ্যাত হয়ে আছে। তাই আমার মনে হয়, আমি এখনো আল্লাহ্র কাছে সম্মানের পাত্র হয়নি। যদি আমি তার কাছে সম্মানের পাত্র হতাম, তাহলে এ যুবকদের ন্যায় আমাকেও তিনি শাহাদতের জন্য নির্বাচিত করতেন।
ভাইয়েরা! মুজাহিদের অনেক কারামত প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু তারা কারামতের কারণে বিজয় অর্জন করেনি। তারা বিজয় অর্জন করেছে আল্লহর উপর তাওয়াক্কুল করার মধ্য দিয়ে। আফগানরা আল্লাহ্র উপর তাওয়াক্কুলের আকীদা মানুষের অন্তরে নতুন ভাবে জাগ্রত করেছে। তাঁদেরকে আল্লাহ্ মানুষের অন্তরে ঈমান পুন জাগ্রত করার জন্য নির্বাচিত করেছেন। তারা পৃথিবীর সবচেয়ে দুর্বল, পশ্চাৎপদ, দরিদ্র ও নিরক্ষর জনগোষ্ঠী। তাঁদেরকে আল্লাহ্ পৃথিবীর সর্বাধিক সেনাবাহিনীর রাষ্ট্র সোভিয়ত ইউনিয়নের মোকাবেলা করার জন্য নির্বাচিত করেছেন। আর আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআলা সোভিয়ত ইউনিয়নকে পরাজিত করে আমাদেরকে তার এ কথার সত্যতা দেখিয়ে দিয়েছেন-


كَم مِّن فِئَةٍ قَلِيلَةٍ غَلَبَتْ فِئَةً كَثِيرَةً بِإِذْنِ اللَّهِ ۗ وَاللَّهُ مَعَ الصَّابِرِينَ [٢:٢٤٩]
“আল্লাহ্র হুকুমে অনেক ক্ষুদ্র দল অনেক বড় দলের উপর বিজয় লাভ করেছে। আল্লাহ রয়েছেন ধৈর্য্যশীলদের সাথে।”[বাকারাহঃ২৪৯]।

 

মুজাহিদের কারামত

কথা অনেক দীর্ঘ। আমি এখন একজন যুবক মুজাহিদের কারামতের ঘটনা বলে আমার বক্তব্য শেষ করে দিব। যুবকটির নাম আহমাদ ফাইয। সে পাঞ্জশীরের রণক্ষেত্রে আহত হওয়ার খবর পেয়ে তার পরিবারের লোকজন এসে তাঁকে একটি গাছের খাটে তুলে নেয়। রাস্তা দুর্গম ও উঁচু নীচু হওয়ায় তারা তাঁকে রশি দিয়ে খাটের সাথে বেঁধে নেয় যাতে পড়ে না যায়। রুশ বাহিনী তাঁদেরকে দেখার পর গুলি করে সবাইকে হত্যা করে। ভাই আহমাদ ফাইয এবারসহ দু’বার গুলিবিদ্ধ হল। গুলিতে তার পেটে ছিদ্র হয়ে যায়। কিন্তু সে তখনো জীবিত। সে বলল, আমি চোখ খুললাম। চোখ খুলে দেখি আমি রশিতে বাঁধা। আমার পা ভেঙ্গে যাওয়ায় নড়াচড়া সম্ভব হচ্ছিল না। আর আমার শরীরে বাঁধা রশিগুলোও খোলা সম্ভব হয়নি। তখন আমি বললাম, আল্লাহ্ আপনি যে ভাবেই হোক আমাকে বাঁচান। বলল, আমি বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। অতঃপর জাগ্রত হয়ে দেখলাম রশিগুলো খুলে গেছে। তখন আমি চাইলাম নদীর ওপারে যেতে। নদী ছিল বড় ও প্রবাহমান। সুস্থ হলেও আমার পক্ষে এ নদী পার হওয়া সম্ভব ছিল না। আর এখন যেহেতু পেটে ভর দিয়ে ব্যতীত আমার পক্ষে নড়াচড়া করাও সম্ভব নয়, সেহেতু এ নদী পার হওয়াতো কল্পনাতীত ব্যাপার। তাই আমি আশাহত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর দেখি আমি নদীর ওপাড়ে। এরপর আমি তের দিন পেটে ভর দিয়ে চললাম। আমার কাছে কোন খাবার ছিল না। এ সময় ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার পর দেখতাম যে আমি এখনই খাওয়া শেষ করলাম। অতঃপর আমি আরেকটি নদীর সম্মুখীন হলাম। তখন আমি ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি নদীর ওপাড়ে। অতঃপর আরো তের দিন বুকে ভর দিয়ে চললাম। অতঃপর একটি পরিত্যক্ত ঘর দেখে তাতে প্রবেশ করলাম। সেখানে একটি দুধের থলি ব্যতীত আর কিছুই ছিল না। দুধের থলেটা যেন আমার জন্য অপেক্ষা করছিল। দুধগুলো পান করে নিলাম। রাত্রে মুজাহিদরা এ ঘরে ঢুকে একটি রক্তাক্ত ও কর্দমাক্ত আজব প্রকৃতির মানুষ দেখতে পেয়ে দৌড়ে পালিয়ে যায়। তখন আমি ডাক দিয়ে বললাম, আস আমি আহমাদ ফাইয। মুজাহিদরা আমাকে দেখে আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করল, তুমি কীভাবে বেঁচে গেলে? আমরা তো মনে করেছি তুমি মারা গেছ। অতঃপর সে তাঁদেরকে তার ঘটনা খুলে বলল। আহমাদ ফাইয এখন মুজাহিদদের সাথে জিহাদরত। যখনই সে তার মুজাহিদ ভাইদেরকে তার এ ঘটনা বলেছে, সেদিন রাত্রে অদৃশ্য থেকে একটি আওয়াজ আসে যে, তুমি এটা মানুষকে বলে বেড়াইও না। এটা আমার ও তোমার মধ্যকার গোপন ব্যাপার। আমি এ কথা বলে আমার বক্তব্য শেষ করছি এবং আমার ও তোমাদের জন্য আল্লাহ্র নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি, ওয়াস সালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু। (অতঃপর শহীদ আযযাম রহিমাতুল্লাহ এভাবে দু’আ করলেন)
‘হে আল্লাহ্ ! মুমিনদেরকে পৃথিবীতে কর্তৃত্ব দান করুন । হে আল্লাহ্ ! আমরা আপনার কাছে সর্বশ্রেষ্ঠ জান্নাত ফিরদাউস কামনা করছি। হে আল্লাহ্ ! আমাদেরকে আপনার স্মরণ, কৃতজ্ঞতা ও সুন্দরভাবে ইবাদত করার তাওফীক দিন। হে আল্লাহ্ ! আমাদেরকে পুন্যবান জীবন ও শহীদি মৃত্যু দান করুন এবং মুহাম্মদ মুস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দলের অন্তর্ভুক্ত করে পুনরুত্থিত করুন। হে আল্লাহ্ ! মুজাহিদদেরকে আফগানিস্তানে, ফিলিস্তিনে লেবাননে ও সকল স্থানে বিজয় দান করুন। হে আল্লাহ্ ! ইসলামের ঝান্ডাকে উন্নত রাখুন, কুরআনের রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে দিন এবং আমাদেরকে কুরআনের সৈন্যদের অন্তর্ভুক্ত করুন। হে আল্লাহ্ আমাদের নেতা মুহাম্মদ, তার পরিবার ও তার সাহাবীদের উপর রহমত ও শান্তি বর্ষণ করুন।’
(এরপর ইমাম আযযাম রহিমাতুল্লাহ শ্রোতাদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন)।

প্রশ্নোত্তর

প্রশ্নঃ শায়খ আমরা আপনাকে আল্লাহ্র জন্য ভালবাসি।
উত্তরঃ যে আল্লাহর জন্য আপনারা আমাকে ভালবাসেন, তিনি আপনাদেরকেও ভালবাসুন।
প্রশ্নঃ আফগানিস্তানে আল্লাহর পথে জ্বিহাদ করার জন্য যেতে চাই। আমরা কীভাবে যেতে পারি?
উত্তরঃ কেউ আফগানিস্তানে জ্বিহাদ করার জন্য আসতে চাইলে আমরা তাঁকে স্বাগত জানাই। চার-পাঁচ বছর পূর্বে আমরা পৃথিবীর মুসলমানদেরকে আফগানিস্তানে জিহাদে শরীক হওয়ার জন্য আহবান জানিয়েছিলাম। আমরা বলেছিলাম,আসুন, জ্বিহাদ করে কল্যাণ অর্জন করুন। কিন্তু আশানুরুপ সাড়া মেলেনি। তখন আমি ‘মুসলমানের দেশ রক্ষা করা সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ ফরযে আইন’ নামে একটি ফতওয়া লিখি। এটা ছাপিয়ে শায়খ বিন বায, শায়খ ইবনে উছাইমীন, শায়খ উমার সাইফ, শায়খ সাঈদ হিওয়া, শায়খ আবদুল্লাহ আলওয়ান, শায়খ মুহাম্মদ নজীব আল মতীঈর মত বড় বড় আলেমদের সম্মুখে পেশ করলাম। তারা সকলে এটার সপক্ষে মত দেন। অতঃপর আমি এর উপর তাদের কাছ থেকে স্বাক্ষর গ্রহণ করলাম। স্বাক্ষর গ্রহণ করার সময় এটা বিতরণ করলাম। এতে লেখা ছিল যে, আফগানিস্তানে ও ফিলিস্তিনসহ যে সব মুসলিম অঞ্চলে কাফিরদের দখলদারিত্ব চলছে, সেখানে জ্বিহাদ ফরযে আইন।
আর জ্বিহাদ বলতে সশস্ত্র সংগ্রামকেই বুঝায়। যেমন আল্লামা ইবনে রুশদ বলেছেন-
‘কুরআন ও হাদীসে যেখানেই জ্বিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ শব্দটি উল্লেখিত হয়েছে, সেখানে জ্বিহাদ মানে হচ্ছে কাফিরদের সাথে তরবারী (অস্ত্র) দ্বারা লড়াই করা, যতক্ষণ না তারা ইসলাম গ্রহণ করে বা লাঞ্চিত হয়ে জীযয়া আদায় করে ।’
চার মাযহাবের ইমাম ও চার মাযহাবের সকল যুগের আলেমরা জিহাদের অর্থ করেছেন তরবারী দ্বারা লড়াই করা। এর ফলে বক্তব্য ভাষণ সহ -যেমন আমার এখানে প্রদত্ত জ্বিহাদ বিষয়ক ভাষণ- সকল প্রকার আলোচনাকে জ্বিহাদ বলে অভিহিত করার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। অনুরুপ যে ঘরে বা অফিসে বসে জীবিকা উপার্জন করে, তার কর্মকে পরিবার বা জীবন-রক্ষার জ্বিহাদ নামে অভিহিত করা যাবে না। এমনিভাবে মসজিদে গিয়ে দু-চার কথা বলাকেও জ্বিহাদ বলে অভিহিত করা যাবে না। আলেমগণ বলেছেন, জ্বিহাদ নামায ও রোযার মত একটি পরিভাষা। নামায বলতে যেমন তাকবীর দ্বারা শুরু করে বিশেষ কিছু শব্দ উচ্চারণ ও কাজ করে সালাম ফিরিয়ে সম্পন্ন করা একটি ইবাদতকে বুঝানো হয়, তদ্রুপ জ্বিহাদ বলতেও বুঝানো হয় কাফিরদের সাথে তরবারী দ্বারা লড়াই করাকে। অতএব, ‘কলমের জ্বিহাদ’ ধরণের কোন কিছু বলা যাবে না।
‘কলমের জ্বিহাদ’ ও ‘নফসের সাথে জ্বিহাদ’ ধরণের শব্দগুলোকে জায়িয করার জন্য কিছু লোক একটি জঈফ হাদীসকে দলীল হিসেবে পেশ করে-
“আমরা ছোট জ্বিহাদ থেকে বড় জিহাদের দিকে ফিরে এসেছি”।
তরবারীর গুলি তার মাথায় এসে বিদ্ধ হচ্ছে-এটা ছোট জ্বিহাদ আর এয়ারকন্ডিশনের নীচে বসে রোযা রাখা বড় জ্বিহাদ হয়ে গেল? মানুষ তার চাকুরি ও স্ত্রী-পুত্রের ভালবাসাকে ঠিক রেখে নামায ও রোযা আদায় করতে পারে। এতে তার চাকুরি, পরিবার, ঘর ও গ্রাম কোন কিছুই ছাড়তে হয় না। যে কেউ তিন দিন ব্যয় করে হজ করতে পারে এবং টেলিফোনে বা বসে একটি চেক লিখে দিয়ে যাকাত আদায় করতে পারে। কিন্তু জ্বিহাদ করতে গেলে তার সন্তান, ঘর, গ্রাম চাকুরি ও বিশ্ববিদ্যালয় সব ত্যাগ করতে হয়। এ জন্য আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন তার এ কথা-


قُلْ إِن كَانَ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُم مِّنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَجِهَادٍ فِي سَبِيلِهِ فَتَرَبَّصُوا حَتَّىٰ يَأْتِيَ اللَّهُ بِأَمْرِهِ ۗ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ [٩:٢٤]
“বলুন, যদি তোমাদের মাতা-পিতা, ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোন, স্ত্রীবর্গ, আত্মীয়-স্বজন, উপার্জিত ধন-সম্পদ, ঐ ব্যবসা-বাণিজ্য যার মন্দার ভয় কর ও ঐসব ঘর-বাড়ী যাকে নিয়ে তোমরা সন্তুষ্ট-তোমাদের নিকট আল্লাহ্, তার রাসূল ও তার পথে জ্বিহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় হয়, তাহলে তোমরা আল্লাহ্ তোমাদের এ অপরাধের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের অপেক্ষায় থাক। আর আল্লাহ্ ফাসিকদের সঠিক পথে পরিচালিত করেন্ না।”[আততাওবাহঃ২৪] ।


আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআলা গোটা দুনিয়াকে এক পাল্লায় রাখলেন ও জিহাদকে আরেক পাল্লায় রাখলেন এবং বললেন, হয়তো জিহাদকে গ্রহণ কর নতুবা দুনিয়াকে গ্রহণ কর। যদি তুমি দুনিয়াকে গ্রহণ কর, তাহলে তুমি ফাসিক এবং আল্লাহ্র আযাবের অপেক্ষা কর। আর তোমার মত ফাসিককে আল্লাহ্ সঠিক পথে পরিচালিত করবেন না।
তো আমরা মানুষকে জিহাদের পথ গ্রহণ করার জন্য আহবান জানিয়েছিলাম। কিন্তু মানুষ আসেনি। ফলে আমরা জিহাদের পক্ষে ফতওয়া লিখে তাদের মাঝে বিতরণ করলাম। এমনকি তারা আমার মেয়ের স্বামীদের ব্যাপারে এ পর্যন্ত বলেছে যে, তিনি তাঁদেরকে তার মেয়ে বিয়ে দিয়ে মেরে ফেলতে নিয়ে গেছেন।
এখন আমরা জ্বিহাদ করার জন্য আসতে ইচ্ছুক সবাইকে স্বাগতম জানাই। শুরুতে আগত মুজাহিদদের খরচ বহন করা আমাদের পক্ষে সহজ ছিল। ভাই উসামা বিন লাদিন হাফিযাহুল্লাহ (আল্লাহ্ তাঁকে হেফাজত করুন) বলেছিলেন, আফগানিস্তানে আসতে ইচ্ছুক সকল আরবের বিমান খরচ, থাকা-খাওয়ার খরচ, পরিবারের খরচ, চলাচল করার খরচ ও আসবাব পত্রের খরচ আমি বহন করব। তখন আমরা কম ছিলাম। এখন আমাদের সংখ্যা হাজারে এসে পৌঁছেছে। তাই সঙ্গত কারণে এসব লোকদের সব কিছুর জিম্মাদারী গ্রহণ করা আমাদের পক্ষে এখন সম্ভব নয়। তাই আমরা এখন জিহাদের জন্য আগমনকারীদের কেবল থাকা খাওয়া ও চলাচল করার খরচই বহন করছি। যারা ফিলিস্তিনে জ্বিহাদ করার জন্য প্রস্তুতি ও প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে চায়, তাদের আসা যাওয়া ও পরিবারের খরচ বহনের দায়িত্ব তাদেরই গ্রহণ করা দরকার, যারা নিজেদের ভূমিকে পুনরুদ্ধার করতে চায় বা নিজেদের প্রভুকে সন্তুষ্ট করতে চায়।
প্রশ্ন: ফিলিস্তিনকে মুক্ত করার জন্য আফগানিস্তানের মত নিহত ও ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার চেয়ে আন্তর্জাতিক সম্মেলনের শরনাপন্ন হওয়া উত্তম নয় কি?
উত্তরঃ আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআলা বলছেন-
“আল্লাহ্ মুমিনদের কাছ থেকে তাদের জান ও মাল জান্নাতের বিনিময় ক্রয় করে নিয়েছেন। তারা আল্লাহ্র পথে লড়াই করবে। আর এতে মারবেও এবং মরবেও।”
তুমি কি মনে করছ যে, নিহত হওয়া ছাড়া ফিলিস্তিনকে পুনরুদ্ধার করতে পারবে? আল্লাহ্র কসম তুমি ফিলিস্তিনিকে মুক্ত করাতো দূরের কথা, মুক্ত করার ঘ্রাণও পাবে না। তোমার কথা শোনে ইয়াহুদীরা হাসবে। রিগ্যান* ও বেনগোরিন* বলেছে, ফিলিস্তিনের এক বিঘাত ভূমি ছেড়ে দেয়া তাওরাতকে অস্বীকার করার নামান্তর। তারা বলেছে তাদের রাষ্ট্র ইসরাঈলকে মৌখিক স্বীকৃতি দিলে চলবে না। ইসরাঈলকে স্বীকৃতি দান বিষয়ক প্রত্যেক কথা লিখিত হতে হবে। মার্কিনীরা আরবদের কাছ থেকে ইসরাঈলের প্রতি লিখিত স্বীকৃতি আদায় করে মার্কিন টিভিতে তা পড়ে শোনানোর পর ইয়াহুদীদেরকে বলল, তোমাদের রাষ্ট্র নিরাপদ হয়ে গেছে। ইয়াহুদীরা বলল, হ্যাঁ ! এখন ঠিক আছে।
তোমরা কি মনে কর ইয়াহুদীরা তোমাদের সাথে বৈঠক বসবে? বুশ বলেছে, আন্তর্জাতিক বৈঠক ফিলিস্তিন সমস্যাকে আন্দোলিত করার জন্য, সমাধান করার জন্য নয়। এসব আফগানদের হাত থেকে অস্ত্র পড়ে যেত, তাহলে আগফানিস্তানের পরিণতিও ফিলিস্তিনের ন্যায় হত। অতএব, কতল ও কিতালই উম্মাহর রক্ষকবচ। উম্মাহ (জাতি) হচ্ছে একটি বৃক্ষ, যা বৃদ্ধি ও বেঁচে থাকার পানি হচ্ছে রক্ত। যখনই এ বৃক্ষের রক্তদান বন্ধ হয়ে যাবে, তখনই মৃত্যু নিশ্চিত হয়ে যায়।
প্রশ্নঃ জালালাবাদের রণক্ষেত্রে শহীদ হওয়া আরব যুবকদের শাহাদাতের ঘটনা জানতে চাই?
উত্তরঃ এ ব্যাপারে অনেক কথা রয়েছে। আমরা এ শহীদদেরকে আল্লাহ্র কাছে আমাদের রক্ষিত আমানত বলে মনে করি। শায়খ তামীম বলেছেন, ‘আমি রমযানের ত্রিশতম দিনে জালালাবাদের ঐ রণক্ষেত্রে ছিলাম। শত্রুরা আমাদের দিকে যে ক্ষেপনাস্ত্রগুলো ছুঁড়ছিল, তা একটা একটা ছিল না, বরং এক সাথে একচল্লিশটি বের হত। এর উপর রয়েছে বিমান থেকে বোমা নিক্ষেপসহ আরো বিভিন্ন ভাবে আক্রমণ। শায়খ তামীম বলেন, তখন আমি একটি গাছের নীচে বসে কুরআন তিলাওয়াত করছিলাম এবং আল্লাহ্র কাছে শাহাদতের জন্য দুআ করছিলাম। এক পারা শেষ করার পর দেখলাম গুলি এসে আমার কানের পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে, গাছ ভেঙে যাচ্ছে ও গাছের ছালগুলো ঝরে পড়ছে। গাছটি এখন কেউ দেখলে মনে করবে না যে, ঐ সময় এ গাছের নীচে মানুষ জীবিত ছিল। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম পারা শেষ করার পর আসমানের দিকে তাকিয়ে বললাম, ইয়া রব ! আমি কি শুধু সামান্য আহতই হব, শহীদ হতে পারব না? অতঃপর ষষ্ঠ ও সপ্তম পারা শেষ করলাম। গোলাগুলির মধ্যে এভাবে সাড়ে চার ঘন্টা চলে যায়।’ শায়খ তামীম বলেন, এরপর আমি বুঝতে পারলাম যে, কারো পক্ষে তার মৃত্যুক্ষণ না আসার পূর্বে মৃত্যুবরণ করা সম্ভব নয়।
তাই আমি শায়খ তামীম থেকে দুঃসাহসী লোক আর দেখিনি। তো ওই সময় ওখানে একদল যুবক শাহাদাত বরণ করে। শাওয়ালের প্রথম দিন আমরা আবদুল্লাহ মিশরীকে হারিয়েছিলাম। আমরা তার লাশ পেয়েছিলাম যিল’কাদার দ্বিতীয় দিনে। দেখা গেল যেখানে কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে কম্যুনিস্টদের লাশ ফুলে গিয়ে পোকা বের হয়, সেখানে এক মাস পরও তার শরীর থেকে তাজা রক্ত বেয়ে পড়ছে। আল্লাহ্র কাছে জাহান্নামীদের অবস্থা থেকে আশ্রয় কামনা করছি। রুশ সৈন্যরা তাদের নেতাদেরকে বলেছে এসে দেখ, স্থানও এক, গুলিও এক এবং পরিবেশও এক। আমাদের দেহগুলো কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে ফুলে ফেটে যায় আর তাদের দেহগুলো দু’মাস পড়ে থাকলেও কিছু হয় না। অতএব, মার্কসবাদ ও সমাজতন্ত্রের আলোকে এটার রহস্য খুলে বলুন। এ কথা শোনে তারা লা-জওয়াব হয়ে গেল। শহীদের ঘটনাবলী শোনে তারা পরামর্শ দিল শহীদদের দেহে এসিড মার, যাতে করে তা কাল হয়ে যায় ও দেহের গোশতগুলো ছিড়ে পড়ে যায়।
আমাদের এক ভাই বলল, কম্যুনিস্টরা একজন শহীদের দেহে এসিড মারায় তা কাল হয়ে যায় ও গোশত ঝরে যায়। আমরা তাঁকে দাফন করলাম। কিছু দিন পর আমরা তার কবরটি খোড়তে বাধ্য হলাম, দেখলাম তার শরীর এসিড মারার আগে যে রকম ছিল, এ রকম হয়ে গেছে।
আবদুল্লাহ আলগামিদীর কবর থেকে দেড় বছর পর আল্লাহু আকবরের ধ্বনি শোনা গেছে। মাইন ফেটে খালিদ আলকুরদীর পা উড়ে যায় এবং পেট ফেটে গিয়ে নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে যায়। ড.সালিহ আললীবি এসে তার নাড়িভুঁড়ি একত্রিত করে পেটে ঢুকিয়ে দেন এবং তাঁকে একটি কম্বল দিয়ে মোড়িয়ে দেন। এ সময় তার চোখ দিয়ে অশ্রু চলে আসে। তখন খালিদ বলল, আপনি কাঁদছেন কেন আমি তো আমার হাতের পিঠে সামান্য আঘাত পেয়েছি। সে জানে না যে, তার পা উড়ে গেছে এবং পেট ফেটে গিয়ে নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে গেছে। সে তার সাথীদের সাথে দু’ঘন্টা পর্যন্ত কথা বলেছে। অথচ তার পা ও পেটের খবর ছিল না। অতঃপর তা প্রাণ বের হয়ে যায় এবং ওই এলাকায় মেশকের সুগন্ধি ছড়িয়ে পড়ে। তখন সবাই জানতে পারল যে, তার প্রাণ বের হয়ে গেছে। সাধারণত শহীদের প্রাণ বের হয়ে যাওয়ার আলামত ছিল তার শরীর থেকে সুগন্ধি বের হওয়া। হাদীসে আছে-
“হে পবিত্র দেহের পবিত্র রূহ ! তুমি দুনিয়াতে এ দেহকে পরিচালনা করতে। এখন তুমি শান্তি ও সুগন্ধি এবং তোমার প্রতি সন্তুষ্ট প্রভুর দিকে চল।”[আহমাদ,আবু দাউদ,নাসায়ী ও ইবনে মাজা]।
দু’মাস পূর্বে এখানে মুহাম্মদ ইয়াসির নামে একজন লোক আসে। তার একজন ভায়রা ছিল। তার নাম ড.মিয়াগুল। এ ড.মিয়াগুল দু’মাস পূর্বে শহীদ হন। তিনি বাগলান এলাকার কমান্ডার ছিলেন। তিনি কম্যুনিস্টদেরকে উচিত শিক্ষা দিয়েছিলেন। তাই কম্যুনিস্টরা তাদের ক্রোধ মিটানোর জন্য তার লাশের অবমাননা করতে আসে। কম্যুনিস্টদের কমান্ডার এসে তার পা দ্বারা শহীদ মিয়াগুলের মাথায় লাথি মারতে চাইল। কিন্তু লাথি মারার জন্য সে পা উঠাতে চাইলে সাথে সাথে তা অবশ হয়ে যায়। অতঃপর সৈন্যরা এসে তাঁকে ট্যাংকের সাথে বেধে বাগলানের রাস্তায় ঘুরতে চাইল। যাতে তারা এটা প্রচার করতে চেয়েছিল যে, আমরা কম্যুনিস্টরাই মিয়াগুলকে হত্যা করেছি। কিন্তু যখনই কম্যুনিস্টের দল তার লাশকে তুলে নেয়ার জন্যে কাছে আসতে চাইল, তখনই শহীদ মিয়াগুল বলে উঠল, ‘আমার অস্ত্রটি নিয়ে আস।’ এ কথা শোনে তারা পালিয়ে যায়। এভাবে তারা তার লাশের কাছে তিনবার আসতে চেয়ে তিনবার পালিয়ে যায়। অতঃপর এ কম্যুনিস্টরাই একটি মুল্যবান কাফনের কাপড় এনে এলাকার বয়স্ক লোকদের বলল, এটা দিয়ে মিয়াগুলকে কাফন দিন। এ রকম লোক আপনাদের মাঝে থাকলে আমাদের বিজয় অর্পিত হবে না। মিয়াগুলকে দাফন করার পরও তার কবর থেকে আল্লাহু আকবার ও লা ইলাহা ইল্লাল্লাহর ধ্বনি বের হয়। পেশোয়ারে তার বোনেরা তার জন্য খুব কান্নাকাটি করেছে। তিনি একজন ডক্টর, ইসলামী আন্দোলনের প্রথম সারির কর্মী ও বাগলান জেলার মুজাহিদদের কমান্ডার ছিলেন। অর্থাৎ, তিনি এমন একজন যুবক, যার মধ্যে সকল ভাল গুণের সমাবেশ ঘটেছে। তার বোনেরা খুব কান্নাকাটি করছিল। তাই তার ভাই রাত্রে উঠে আল্লাহ্র কাছে দুয়া করল, হে আল্লাহ্ ! যদি আমার ভাই শহীদ হয়, তাহলে আমাকে তার শাহাদাতের একটি আলামত দেখান। দুআর পর হঠাৎ ছাদ থেকে কী যেন পড়ছিল মনে হল। চেরাগ নিয়ে আসা হল। দেখা গেল একটি ফুলের তোড়া, সৌন্দর্যে যার তুলনা পৃথিবীর কোন ফুলের সাথে হয় না । তখন শীতকাল ছিল। গিয়ে তিনি তার বোনদের জাগ্রত করলেন এবং বললেন, আমার ভাইয়ের শহীদ হওয়ার আলামত দেখতে চাইল আস। তারা দেখার পর বললেন, মুহাম্মদ ইয়াসিরকেও ডাক। তারা বলল, রাত এখন দুটা। এখন তাঁকে আর কষ্ট না দেই। তাকে সকালে দেখানো হবে। এ কথা বলে তারা ফুলের তোড়াটিকে কুরআন শরীফের ভিতর রাখল। সকালে যখন কুরআন শরীফ খুলে দেখল, তখন ফুলের তোড়াটি আর পাওয়া গেল না।
বাস্তবেই শহীদের ঘটনাবলী বিস্ময়কর। কিছু দিন পূর্বে ইয়াসীন আবদুশ শাকূর আলহুমায়েদী নামের একজন জর্ডানি যুবক শহীদ হয়েছে। আমি তাঁকে নিজেই হাতে ধরে কবরে রাখলাম। মৃতদেহ দেখতে একটা ভয় লাগে। কিন্তু আল্লাহর কসম ! শহীদের লাশ দেখলে মনে চায় বক্ষে জড়িয়ে রাখতে। তোমার মন চাইবে না শহীদের কবর ছেড়ে চলে আসতে। আমরা তাঁকে এশার পর কবরে রেখেছি। কবরে রাখার সময় আমি এক পাশে ছিলাম এবং জর্ডানের আবু খালিদ আরেক পাশে ছিলেন। মৃতলোকের দেহ বলতেই ঠাণ্ডা থাকে। আমরা শীতকালে এশার পর তাঁকে কবরে রাখছিলাম। দেখা গেল তার শরীর গরম। আবু খালিদ আমাকে বললেন আপনি কি তার শরীরের গরম অনুভব করছেন। বললাম হ্যাঁ ! আমরা তাঁকে কবরে রাখলাম। মনে হচ্ছে সে ঘুমিয়ে আছে। অতঃপর কিবলার দিকে মুখ ফিরিয়ে দেয়ার জন্য আমি তার চেহারার কাপড় খুলে ফেললাম। দেখা গেল তার চেহারার বিস্ময়কর নূর ঝলমল করছে। মন চাচ্ছে না তার চেহারা থেকে চোখ ফিরিয়ে নিতে। বললাম, সুবহান্নাল্লাহ ! সুবহান্নাল্লাহ ! এক কাল হারবী যুবকের ঘটনা শুনুন। যখন একশজন আরব যুবক শাহাদাত বরণ করল, তখন যে কক্ষে তার লাশ পড়ে ছিল, তার পাশে যারা এসেছিল তারা সবাই জানালা দিয়ে আতরের সুগন্ধি আসতে দেখে। তার চেহারা অন্য রকম পরিচ্ছন্ন। বাইশ ঘন্টা পর যখন আমরা নাঙ্গাহার থেকে তার লাশ নিয়ে আসছিলাম, তখন মনে হচ্ছিল সে একজন ঘুমন্ত ব্যক্তি।
আপনাদের আর কী বলব? শহীদের ঘটনাবলী হৃদয় ও মনকে জীবিত করে তোলে। তাই আমাদের পক্ষে এসব জায়গা ছেড়ে দিয়ে চলে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এমনকি আমাদের বাচ্চা ও স্ত্রীদের মুখে মুখে শহীদ ও মুজাহিদদের ঘটনাবলী এখন চর্চা হচ্ছে । আলহামদুলিল্লাহ, এখন মুজাহিদদের হাতে কান্দাহার বিমান বন্দরের পতন হয়েছে।
শেষ পর্যায়ে আপনাদেরকে জালালাবাদ থেকে প্রাপ্ত কিছু সংবাদ শুনিয়ে আনন্দিত করতে চাই। তারা আজকেও টেলিফোন করে আমাকে আফগানিস্তানের খবরা খবর জানিয়েছে। মানুষ মনে করছে যে, মুজাহিদরা এখন সামনে আগ্রসর হতে পারছে না। মুজাহিদরা গত সপ্তাহেও জালালাবাদের আশেপাশের একশটি কম্যুনিস্ট ক্যাম্প দখল করে নিয়েছে। তারা জালালাবাদের আশেপাশের অনেক এলাকা দখল করে নিয়েছে। এখন জালালাবাদের গাযীআবাদেই যুদ্ধ চলছে। রাশিয়া থেকে পাওয়া অস্ত্র গনীমতের পরিধি তিন কিলোমটার। মুজাহিদরা গনীমত লাভ করার জন্যেই আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআলা রুশদের মাথায় অস্ত্র বানিয়ে স্টক করে রাখার বুদ্ধি ঢেলে দিয়েছেন।
আলহামদুলিল্লাহ প্রাপ্ত গনীমত দ্বারা মুজাহিদদের সরকার পাঁচ বছর চলে যেতে পারবে। আলহামদুলিল্লাহ গনীমত মুজাহিদদের জন্য অপেক্ষায় আছে । আফগানিস্তানের সকল জায়গার খবর ভাল। এখন জালালাবাদ শহরটি কম্যুনিস্টদের উৎপত্তিস্থলে পরিণত হয়েছে। রাশিয়ান কম্যুনিস্টদের চেয়ে আফগান কম্যুনিস্টরা এখন বেশী তৎপর। তারা মরা-বাচার যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছে। তাই ইনশাআল্লাহ্ শিগগিরই জালালাবাদের পতন ঘটবে। আর কাবুলের পতনের জন্য সময় লাগবে বেশীর থেকে বেশী ঈদুল আযহা পর্যন্ত। ইনশাআল্লাহ্ তোমরা ঈদুল আযহা উদযাপন করার জন্য কাবুলে যেতে পারবে এবং ইনশাআল্লাহ্ সকলেই শরীয়ত মতে বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলে একেকজন কম্যুনিস্টকে যবাই করে নিজের কুরবানী আদায় করতে পারবে। হেরাতে মুজাহিদরা এগারটি ট্যাংক ধবংস করেছে ও পাঁচজন বৈমানিককে বন্দী করেছে। আরেকটি স্থানে তিনশ’ পঞ্চাশজনকে আহত করেছে ও দু’শ জনকে হত্যা করেছে। অন্য একটি জায়গায় তিনটি ট্যাংক ধবংস করেছে ও একটি সামরিক ট্রাক ধবংস করে সবাইকে হত্যা করেছে। জালালাবাদ রক্ষা করার জন্য মাযারইশরীফ থেকে ৫৪টি কম্যুনিস্ট ক্যাম্প থেকে ১৮টি ডিভিশন আসছিল। মামারসালাঙ্গ পর্যন্ত এসে পৌছলে আহমাদ শাহ মাসউদ ১৬০ জন সৈন্য ও ৪০ জন অফিসারের সবাইকে বন্দী করে ফেলেন। এতে দশটি অক্ষত ট্যাংক, আঠারটি সামরিক ট্রাক ও চৌদ্দটি খাদ্য ভর্তি ট্রাক গনীমত পাওয়া যায়।
মুজাহিদরা জালালাবাদের নাঙ্গহার এলাকায় চল্লিশজন সৈন্যের একটি চেক পয়েন্ট দখল করে নিয়েছে এবং দুটি সামরিক ট্রাক ধবংস করেছে। জালালাবাদের পার্শ্বস্থ খাযদার ও নাঙ্গাহারের পোস্ট আহমদ এলাকার আরো তেরটি চেক পয়েন্ট দখল করে নিয়েছে মুজাহিদরা। এসব বিজয় গতকাল ও আজকেরই সংঘটিত হওয়া। কম্যুনিস্ট সৈন্যরা এসব এলাকাগুলো রক্ষা করতে এসে ১৪০ জন নিহত হয়েছে, ৯২ জন বন্দী হয়েছে ও বিপুল সংখ্যক আহত হয়েছে। মুজাহিদরা জালালাবাদ বিমান বন্দরের পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র ধবংস করেছে। শত্রুরা বিষাক্ত গ্যাস ব্যবহার করেছে। মুজাহিদরা জালালাবাদে ৫৭ জন হিন্দুকে হত্যা করেছে ও তাদের একটি মন্দির ধবংস করেছে। কাবুলের শহরতলীর নিকটস্থ জান্দারআব এলাকায় মুজাহিদরা ১৩৫ জন শত্রুসেনাকে বন্দী করেছে এবং আটটি ট্যাংক গনীমত পেয়েছে। আমাদের কাছে মুজাহিদদের বিজয়ের ঘটনাবলীর কিছুটা পৌঁছেছে মাত্র।
এখন জালালাবাদের রণক্ষেত্রে অবস্থান করা তোমাদের ভাইদের ভুলবে না রমযান দোর গোড়ায় এসে গেছে। মুজাহিদদেরকে যাকাত দেয়া জায়েজ; বরং সর্বোত্তম। আমাকে একজন জিজ্ঞেস করেছে মুজাহিদদের জন্য যাকাত হালাল কিনা। আমি বললাম-


إِنَّمَا الصَّدَقَاتُ لِلْفُقَرَاءِ وَالْمَسَاكِينِ وَالْعَامِلِينَ عَلَيْهَا وَالْمُؤَلَّفَةِ قُلُوبُهُمْ وَفِي الرِّقَابِ وَالْغَارِمِينَ وَفِي سَبِيلِ اللَّهِ وَابْنِ السَّبِيلِ
“নিশ্চয় যাকাতের অধিকারী হচ্ছে ফকীর, মিসকীন, যাকাত উত্তোলনকারী, ইসলামের দিকে আকৃষ্ট হতে ইচ্ছুক লোকজন, ক্রীতদাস, ঋণগ্রস্থ ব্যক্তি, জ্বিহাদের পথে থাকা লোকজনও মুসাফির।”[তাওবাহঃ৬০] ।


আয়াতে উল্লিখিত লোকদের প্রায় গুণাগুণ আফগানদের মধ্যে বিদ্যমান। তারা ফকীরও, মিসকীনও, আল্লাহ্র রাস্তায় জ্বিহাদের পথেও এবং ঋণগ্রস্থও। অতএব, আপনাদের দান তাঁদেরকে দিতে ভুলবেন না এবং পবিত্র ভূমি ফিলিস্তিনের হামাসকেও ভুলবেন না। যারা আগামীতে ফিলিস্তিনে ও বর্তমানে আফগানিস্থানে দান করতে ইচ্ছুক, তাদেরকে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআলা আমাদের ও সকল মুসলমানের পক্ষ থেকে উত্তম প্রতিদানে ভূষিত করুন। হাদীসে আছে-
“এক দিরহাম সওয়াব বৃদ্ধি পেয়ে এক লক্ষ দিরহামের সম পরিমাণ হয়ে যায়। ”[মুসলিম]।
“আল্লাহ্র কসম ! সদকা করার কারণে সম্পদ কমে যায় না।”[মুসলিম,তিরমিযী ও আহমদ] ।
আল্লাহ সুনহানাহু ওয়াতাআলা বলেছেন-


وَمَا أَنفَقْتُم مِّن شَيْءٍ فَهُوَ يُخْلِفُهُ ۖ وَهُوَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ [٣٤:٣٩]
“তোমরা যে বস্তুই ব্যয় কর না কেন, আল্লাহ তা পূর্ণ করে দিবেন। আর তিনি হচ্ছেন সর্বোশ্রেষ্ঠ জীবিকা দানকারী। ”[সাবাঃ৩৯]।

 

বিশ্ববাপী জিহাদ ভীতি

আল্লাহ্র রাস্তায় জিহাদ, পাহারাদারী ও অস্ত্র ধারণ আল্লাহর এক বিশেষ নেয়ামত। এ নেয়ামত আল্লাহ্ যাকে ভালবাসেন, তাকেই দান করেন, যাকে ভালবাসেন না, তাকে তিনি এ নেয়ামত দান করেন না।
তিনি বলেন-


وَلَوْ أَرَادُوا الْخُرُوجَ لَأَعَدُّوا لَهُ عُدَّةً وَلَٰكِن كَرِهَ اللَّهُ انبِعَاثَهُمْ فَثَبَّطَهُمْ وَقِيلَ اقْعُدُوا مَعَ الْقَاعِدِينَ [٩:٤٦]
“যদি তারা (আল্লাহর রাস্তায় জ্বিহাদের জন্য) বের হওয়ার ইচ্ছা করতো, তাহলে তারা জ্বিহাদের সরঞ্জাম প্রস্তুত করে রাখত। কিন্তু আল্লাহ্ তাদের জিহাদে যাওয়াকে পছন্দ করেননি। তাই তাঁদেরকে বিরত রাখলেন এবং তাঁদেরকে বল হল, তোমরা যারা (সঙ্গত বা অসঙ্গত কারনে) বসে আছে তাদের সাথে বসে থাক।”[তাওবাহঃ৪৬]।


জিহাদে যাওয়ার সুযোগ আল্লাহ্র পক্ষ থেকে বিশেষ একটি অনুগ্রহ। যখন তুমি জ্বিহাদের জন্য বের হয়ে তাতে দৃঢ়পদ থাকার নিয়ত করেছ, তাহলে যেখানে মরো ও যেভাবেই নিহত হও শহীদ হবে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
“যে আল্লাহ্র রাস্তায় বের হওয়ার জন্য তার বাহনে উঠার জন্য পা রাখা অবস্থায় বাহন তাঁকে ফেলে দেয়ায় মৃত্যুবরণ করেছে বা তাঁকে কোন সাপ কামড় দেয়ায় মৃত্যুবরণ করেছে কিংবা অন্য কোন ভাবে মৃত্যু বরণ করেছে, তাহলে সে শহীদ বলে গণ্য হবে এবং তার জন্যে রয়েছে জান্নাত।” [আবু দাউদ]।

তিনি আরো বলেছেন-
“শয়তান আদম সন্তানকে পথভ্রষ্ট করার জন্য তার সব ক’টি পথেই আগলে বসে থাকে। ইসলামের পথে বসে তাঁকে বলে, তুমি কি ইসলাম গ্রহণ করে বাপ দাদার ধর্ম ত্যাগ করছ ? কিন্তু সে তার কথা না শুনে ইসলাম গ্রহণ করেছে। অতঃপর সে তার হিজরতের পথে আগলে বসে এবং বলে, তুমি কি হিজরত করছ এবং তোমার ভূমি ও আকাশ ছেড়ে চলে যাচ্ছ ? কিন্তু সে তার কথা না শুনে হিজরত করল। অতঃপর সে তার জ্বিহাদের পথে বসে এবং বলে , তুমি কি নিহত হতে যাচ্ছ অথচ মানুষ অঢেল সম্পদ অর্জন করছে ও সুন্দরী রমনী বিবাহ করছে ? কিন্তু সে তার কোথায় কর্ণপাত না করে জিহাদ করেছে। আর যে ব্যক্তি জিহাদ করতে গিয়ে নিহত হবে, তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো আল্লাহ্র কর্তব্য। আর যে ব্যক্তি তা করতে গিয়ে ডুবে যাবে, তাকেও জান্নাতে প্রবেশ করানো আল্লাহ্র কর্তব্য। আর যে ব্যক্তি জিহাদ করতে গিয়ে অন্য কোন ভাবে মারা যাবে, তাকেও জান্নাতে প্রবেশ করানো আল্লাহ্র কর্তব্য।”[আল জামিউস সগীরঃ হাদীস নং৬১৫২]।
অতএব, এটা এক মহা নেয়ামত। এ নেয়ামত আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন যাকে দান করেন, সেই কেবল তা প্রাপ্ত হয়। আর এ নেয়ামতের স্বাদ কেবল সেই বুঝতে পারে সে তা আস্বাদন করে দেখেছে।

হিজরত ও জ্বিহাদের গুরুত্ব

জ্বিহাদের ন্যায় হিজরতও আল্লাহ্র একটি মহান নেয়ামত। তিনি বলেছেন-


وَالَّذِينَ هَاجَرُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ قُتِلُوا أَوْ مَاتُوا لَيَرْزُقَنَّهُمُ اللَّهُ رِزْقًا حَسَنًا ۚ وَإِنَّ اللَّهَ لَهُوَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ [٢٢:٥٨]
لَيُدْخِلَنَّهُم مُّدْخَلًا يَرْضَوْنَهُ ۗ وَإِنَّ اللَّهَ لَعَلِيمٌ حَلِيمٌ [٢٢:٥٩]
“যারা আল্লাহ্র পথে হিজরত করেছে অতঃপর নিহত হয়েছে বা মৃত্যুবরণ করেছে, আল্লাহ তাঁদেরকে অবশ্যই উত্তম  জীবিকা দান করবেন। আর নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ হচ্ছেন সর্বোত্তম জীবিকা দানকারী। তিনি তাঁদেরকে অবশ্যই তাদের সন্তোষজনক স্থানে (জান্নাতে) প্রবেশ করাবেন। আর নিশ্চয়ই আল্লাহ্ সর্বজ্ঞাত ও সহনশীল।”[হজঃ ৫৮-৫৯]।


অর্থাৎ, হিজরতের পথে নিহত ও মৃত্যুবরণ করা উভয়ই বরাবর । হযরত ফাযালা বিন উবাইদ রদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণীত আছে যে, তারা একটি সামুদ্রিক অভিযানে ছিলেন। এ সময় তাদের একজন মিনজানিকের (প্রাচীণ ক্ষেপনাস্ত্র বিশেষ) আঘাতে পড়ে নিহত হলেন এবং একজন স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করলেন । তারা তাঁদেরকে জানাযা নামায শেষে দাফন করলেন। অতঃপর ফাযালা বিন উবাইদ স্বাভাবিক মৃত্যুবরণকারীর মাথায় কাছে বসলেন। ফাযালা বিন উবাইদ একজন প্রসিদ্ধ মুজাহিদ সাহাবী ছিলেন। তখন লোকজন বললেন, আপনি শহীদকে বাদ দিয়ে মৃত্যুবরণকারীর মাথার পাশে গিয়ে কেন বসছেন ? তিনি বললেন, ‘আল্লাহ্র কসম আমি উভয়ের কবরের যে কারো কবর থেকে পুনরুত্থিত হওয়া সমান মনে করি। অর্থাৎ, হিজরতের পথে শাহাদাত বরণ ও মৃত্যুবরণ উভয়কে আমি সমান মনে করি । কারণ,আল্লাহ্ বলেছেন-
“যারা আল্লহর পথে হিজরত করেছে। অতঃপর নিহত হয়েছে বা মারা গেছে, তাঁদেরকে আল্লাহ্ অবশ্যই উত্তম জীবিকা দান করবেন এবং তাদের সন্তোষজনক স্থানে প্রবেশ করাবেন, আর নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ সর্বজ্ঞাত ও সহনশীল।”
অতএব, যদি আল্লাহ আমাকে উত্তম জীবিকা দান করেন এবং সন্তোষজনক স্থানে তথা জান্নাতে প্রবেশ করান, তাহলে আমার আর চাওয়া-পাওয়ার কী আছে। উভয় কবরের যে কোন কবর থেকে উত্থিত হলেই তো এটা পাওয়া যাচ্ছে।’
আর জ্বিহাদের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করা হচ্ছে নামাযের জন্য অজুর মত। আর জ্বিহাদের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ জিহাদে অবিচল থাকার নিয়ত থাকার প্রমাণ । কারন-
“যদি তারা জিহাদে বের হওয়ার ইচ্ছা করত, তাহলে তারা অবশ্যই তার জন্য কোন সরঞ্জাম প্রস্তুত করত।”
তা জ্বিহাদের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ জ্বিহাদের সত্যিকার সংকল্প থাকার প্রমাণ। তুমি এখন যে স্থানে রয়েছ, তা জ্বিহাদের প্রস্তুতি গ্রহণের সর্বোত্তম জায়গা। এখানে প্রস্তুতি গ্রহণে যে সময় ব্যয় হবে, তার প্রতিটি ক্ষণের জন্য তুমি সওয়াব পাবে এবং তোমার অভিজ্ঞতা অর্জিত হবে। অতএব, প্রস্তুতি গ্রহণ না করেই লড়াই করার জন্য দৌড়ে যেয়ো না।

পাহারাদারির মূল্য

আল্লাহ্ সুবাহানাহু ওয়াতাআলা আমাদেরকে নামায ও রোযার মত জ্বিহাদের প্রস্তুতি করারও আদেশ দিয়েছেন। বলেছেন-


وَأَعِدُّوا لَهُم مَّا اسْتَطَعْتُم مِّن قُوَّةٍ وَمِن رِّبَاطِ الْخَيْلِ تُرْهِبُونَ بِهِ عَدُوَّ اللَّهِ وَعَدُوَّكُمْ
“তোমরা যতটুকু সাধ্য নিক্ষেপণ সামগ্রী ও অশ্বপাল প্রস্তুত করো, যাতে তা দিয়ে আল্লাহ্র শত্রু ও তোমাদের শত্রুকে ভয় দেখাতে পার। ”[আনফালঃ৬০] ।


যুদ্ধের প্রস্তুতি শত্রুদের অন্তরে ভয়-ভীতি সৃষ্টি করে । তারা এ দেখে হীনমন হয়ে যায়। অতঃপর আসে পাহারাদারির ব্যাপার। পাহারাদারির ()অর্থ হচ্ছে তোমরা এমন এক খালি স্থানে দাঁড়াও, যেখানে তুমি আল্লাহ্র শত্রুদের ভয় করছ এবং আল্লাহর শত্রুরাও তোমাকে ভয় করছে এবং সাথে সাথে আল্লাহর শত্রুদের উপরও হামলা করার জন্য প্রস্তুত হয়ে আছ। অতএব, যারা এখানে আফগানিস্তানের সীমান্তে ভিতর রয়েছে তারা পাহারাদার() বলে গন্য হবে। আল্লাহ্র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
“আল্লাহর রাস্তায় একদিন পাহারাদারি করা যেখানে সূর্য উদিত হয় ও যেখানে সূর্য অস্ত গেছে, তা থেকে অনেক উত্তম।”[মুসলিম]।
অর্থাৎ, আল্লাহর রাস্তায় একদিন পাহারাদারি করা সানআ ও তাতে যা রয়েছে, তার চেয়ে অনেক শ্রেষ্ঠ, আম্মান ও তার ধন সম্পদের চেয়ে উত্তম, কায়রো ও তার ভবন সমূহ থেকে অধিক ভাল এবং রিয়াদ ও তার সম্পদরাজির চেয়ে বেশী দামী। অতএব, ভাই তুমি চার বা পাঁচ হাজার দিরহাম বেতনের যে চাকুরী ছেড়ে এসেছ তার জন্য আক্ষেপ করো না। আল্লাহর কসম ! তা আল্লাহর রাস্তায় এক মুহূর্তেরও সমান হবে না। চাকুরী কী? চাকুরী হচ্ছে কারো কাছে পূর্ণ মাস কাজ করা, যেখানে তুমি প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানী কর্তৃপক্ষকে অসন্তুষ্ট করে কোন সত্য কথা উচ্চারণ করতে পার না। অতঃপর এক মাস পূর্ণ হলে তোমাকে চার বা পাঁচ হাজার দিরহাম বেতন দিবে এতটুকুই। কিন্তু এখানে-
“আল্লাহ্র রাস্তায় এক সকাল বা এক বিকাল জ্বিহাদের জন্য গমন করা দুনিয়া ও তাতে যা কিছু রয়েছে, তার চেয়ে উত্তম।”[বুখারী ও মুসলিম]।
আল্লাহর কসম! তার চেয়ে অধিক বঞ্চিত আর কেউ হতে পারে না, যে জ্বিহাদের নেয়ামত থেকে বঞ্চিত। মুসলমানের জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ হচ্ছে ঈমান থেকে বঞ্চিত থাকা। আর ঈমানের পর তার জন্য সবচেয়ে বড় বিপদ হচ্ছে জ্বিহাদের স্বাদ গ্রহণ থেকে বঞ্চিত থাকা।
মানুষের অন্তরে প্রবিষ্ট ক্ষতিকর রোগ সমূহের মধ্যে সবচেয়ে বড় রোগ হচ্ছে, তার সম্পদ নষ্ট হতে দেখার পরও তা রক্ষা করতে না যাওয়া। তার সম্পদ, দেশ ও দ্বীন পদদলিত ও অসম্মানিত হতে দেখছে অথচ তার মাঝে কোন ক্রোধ নেই। এ বিপদের চেয়ে ক্ষতিকর বিপদ ভূপৃষ্ঠে আর নেই।
যে মরে শুয়ে আছে সে নয় মৃত
মৃত কেবল সেই যে জীবন থাকতেও মৃত ।
সকল নারীর ইজ্জত আব্রু আমাদেরই ইজ্জত আব্রু। সকল মুসলিম নারীর ইজ্জত-আব্রু এক ও অভিন্ন। কারণ, সকল মুসলিম নারী তোমার বোন, মা অথবা মেয়ে। যদি তোমার চেয়ে বড় হয়, তাহলে তোমার মা, যদি তোমার চেয়ে ছোট হয়, তাহলে তোমার মেয়ে । আর যদি তোমার সমবয়সী হয়, তাহলে তোমার বোন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ঘোষণা-
“সকল মুসলমানের রক্তের মুল্য সমান।”[আবু দাউদ]।
ফিলিস্তিনী বোনের ইজ্জতের মুল্য ইয়ামানী বোনের ইজ্জতের চেয়ে কোন ক্রমেই কম নয় আর সৌদী মুসলিম বোনের ইজ্জত কোন ভাবেই আফগানী মুসলিম বোনের ইজ্জতের চেয়ে অধিক মুল্যবান নয়। যেখানেই হোক না কেন মুসলমানের ইজ্জতের মুল্য সমান। ইমাম আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক বলেছেন-
কীভাবে স্থির, কীভাবে শান্ত থাকতে পারে মুসলিম-
যখন করে তার বোনকে লাঞ্চিত শত্রু অমুসলিম ।
যারা বলে লাঞ্ছনার ভয়ে ভীত হয়ে এ কঠিন কথা,
‘আক্ষেপ! যদি আমাদের মুখ না দেখত এ ধরা’।
যদি জাহেলী যুগের লোকেরা নিজের প্রতিবেশীর ইজ্জত রক্ষার জন্য নিজেদের প্রাণ উৎসর্গ করতে পারে, তাহলে আমরা কেন পারব না? তারা প্রতিবেশীর ইজ্জত রক্ষার জন্য মৃত্যুকে বরণ করে নিত, অথচ তাদের অন্তরে আখিরাতে কিছু পাওয়ার লোভ ছিল না। কেবল আত্মমর্যাদা, নির্ভীকতা ও পৌরুষের কারণেই তারা এসব নির্দ্বিধায় করত। আর তুমিতো আকাশ ও পৃথিবীসম বিশাল জান্নাতের লোভ পোষণ কর। অতএব, তুমি কেন তোমার প্রাণ উৎসর্গ করবে না?
যুদ্ধের আশঙ্কায় দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করার নামই পাহারাদারি। অনেক সময় মানুষ এক বছর পর্যন্ত পাহারাদারি করে অথচ শত্রুরা যুদ্ধ করতে আসে না। পাহারাদারি তথা দীর্ঘ অপেক্ষা সহ্য করা অবশ্যই কঠিন কাজ। ছয় মাস অতিক্রান্ত হয়ে গেছে, অথচ তুমি একটি গুলিও ছোড়ার সুযোগ পাওনি। তবে কখনোই এটা অনর্থক ও মুল্যহীন নয়। তুমি তোমার এ পাহারাদারির সওয়াব কেয়ামতের দিবসে অবশ্যই পাবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
“আল্লাহ্র রাস্তায় একদিন পাহারাদারি করা ঘরে বসে থাকা সেই হাজার দিনের চেয়ে উত্তম, যেগুলোর দিনে রোযা রাখা হয়েছে ও রাত্রে ইবাদত করা হয়েছে। ”[নাসাঈ ও তিরমি্যী]।
একদিন এক হাজারের সমান। একদিন পাহারাদারি করছ মানে এক হাজার দিন রোযা রাখছ ও এক হাজার রাত ইবাদত করছ। যখন তুমি ময়দানে মালাই ও মোরব্বা দিয়ে সকালের নাস্তা করছ এবং দুপুর ও রাত্রে ভাত, শিম বা অন্য কোন খাবার খাচ্ছ, রোযা রাখনি, খেলা,কৌতুক ও ব্যায়াম বা গুলি ছুড়ে সময় কাটাচ্ছ, তখন তা তোমার মক্কা, জিদ্দা, আম্মান, দেমেশক বা অন্য কোন স্থানে থেকে হাজার দিন রো্যা রাখা ও হাজার রাত ইবাদত করার চেয়ে অনেক উত্তম। এর চেয়ে বড় নেয়ামত আর কী হতে পারে। আর লড়াই-
“লড়াইর কাতারে কিছুক্ষণ দাঁড়ানো ষাট বছর ইবাদত করার চেয়ে উত্তম। ”[হাদিসটি ইমাম হাকিম বর্ণনা করেছেন এবং বলেছেন এটা ইমাম বুখারীর শর্তানুযায়ী সহীহ ]।
আর যদি তুমি পাহারাদারি করা অবস্থায়ও মারা যাও, তাহলে তোমার আমলের সওয়াব বন্ধ হবে না এবং কবরে তোমাকে প্রশ্ন ও আযাব দান করা হবেনা। সহীহ একটি হাদিসে আছে-
“মুহাজিরদের প্রথম দল জান্নাতের দরজায় গিয়ে পৌছাবে। তখন জান্নাত রক্ষীরা তাঁদেরকে জিজ্ঞেস করবে, আপনাদেরকে কি হিসাব নেয়া হয়েছে ? আপনাদের আমল কি পাল্লায় ওজন করা হয়েছে ? আপনারা তো জাহান্নামের উপর দিয়ে সেতু পার হয়ে এসেছেন। তখনকি আপনাদের ভাল ও মন্দ কর্মগুলোর হিসাব দিতে হয়েছে ? তখন তারা বলবে, আমাদের আবার কিসের হিসাব দিতে হবে ? আমরাতো আমাদের কাঁধে তরবারী বহন করেছি এবং লড়াই করেছি এবং এ অবস্থায় আল্লাহ্র কাছে ফিরে এসেছি। এরপর কি আমাদের আর কিছু অবশিষ্ট আছে, এরপরও কি আমাদের হিসাব নেয়া হবে ? নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তখন তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে এবং অন্যান্য লোকজন জান্নাতে আসার পূর্বে তারা সেখানে চল্লিশ বছর ঘুমাবে।”[তাবরানীঃ হাদিসটি হাসান]।
কাঁধে তরবারী ও ক্লাসিনকভ বহনকারী যেখানে আওয়াজ শুনেছে, সেখানে উড়ে গেছে। হ্যাঁ ! তোমার স্ত্রী ইয়ামানে। কিন্তু জ্বিহাদের ময়দানে তো তার চেয়ে সুন্দর রমনী ()তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। সন্তান, চাকুরী, জমি, দেশ জান্নাতের সামনে এসব কী আবার? আমার তো জান্নাতই বেশী প্রয়োজন। আমি তো জান্নাতেরই খোজ করব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞেস করা হল, শহীদ কি কবরে জিজ্ঞাসিত হবে? বললেন-“তার মাথার উপর তরবারীর ঝলকানিই তার প্রশ্নের সম্মুখীন হওয়ার জন্য যথেষ্ট।”[আল জামিউসগীরঃহাদীস নং ৪৪৮৩] ।
তোপের মুখোমুখি হওয়ার পরও মুনকার ও নকীরের প্রশ্নোত্তর ? ওটাই যথেষ্ট ! প্রতিটি তোপই মুনকার ও নকীরের প্রশ্নের উত্তর। তার মাথার উপর আসা প্রতিটি তোপ তার কাছে তুচ্ছ প্রমাণিত হয়েছে। লোহার যে গদা দিয়ে মুনকার ও নকীর পিটাবে, সেটাতো তারা দুনিয়াতেই মাথা পেতে নিয়েছে। রণাঙ্গনে একটন ওজনের বোমা তাদের মাথায় পড়েছে। মাথার উপর এসব পড়ার পরও তাদের লোহার গদার মার খেতে হবে?
কোন কোন রণাঙ্গনে আমাদের ভাইয়েরা প্রাকৃতিক প্রয়োজন পর্যন্ত সারতে পারেনি। আকাশ অগ্নিস্ফুলিংগ নিক্ষেপ করছে। যেদিকে সরতে চাচ্ছ সেদিকে মৃত্যু তাড়া করে ফিরছে। পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র এসব পাহাড়ের উপর। বোমারু বিমান, তোপ ও বিএম-৪১ প্রভৃতি পতিত হচ্ছে। চতুষ্পার্শের দুনিয়া ও বরফে ঢাকা এ উঁচু পাহাড়্গুলো আমাদের নিয়ে কম্পিত হচ্ছে, রাত-দিন বিকট শব্দ হচ্ছে ও বোমার আওয়াজে উপত্যকা ও তার অলি-গলি কেঁপে উঠছে। এ সবই কবরের প্রশ্নোত্তরের জন্য যথেষ্ট। আল্লাহর রাস্তায় পাহারাদার ছাড়া সকল মৃত্যুবরণকারীর কর্ম মৃত্যুর সাথে সাথে বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু পাহারাদানকারীর কাজ বন্ধ হবে না, কেয়ামত পর্যন্ত তা বর্ধিত হতে থাকবে। আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে পাহারাদারি ও আপনার পথে শহীদ করে মৃত্যু দান করুন।

দুর্ভাগ্যের নিদর্শন

তৃষ্ণার্ত হয়ে নদীতে পৌছে পিপাসিত অবস্থায় ফিরে আসার চেয়ে বড় দুর্ভাগ্য আর হতে পারেনা। আর এটা অবশ্যই তোমার প্রতি আল্লাহ্র সুনজর না থাকার প্রমাণ। তোমার দুর্ভাগ্যের নিদর্শন হচ্ছে আল্লাহ্র পক্ষ থেকে একজন কুপমন্ডুক বা নির্বোধ তোমার মাঝে সংশয় ছড়ানোর জন্য নিয়োজিত হওয়া। অনেক সময় সে সরলও হতে পারে বা সরল না হয়ে ইসলাম ও জ্বিহাদ বিদ্বেষীও হতে পারে। তুমি কয়েক বছর চেষ্টার পর কল্যাণ ও সওয়াবের এ জায়গায় এসে তিন বছর কাটানোর পর এ রকম এক জনের কবলে পড়েছ। সে তোমাকে তিন ঘন্টা বুঝিয়ে তোমার বোধ শক্তি নষ্ট করে দেয়। ফলে তুমি তোমার ইচ্ছা ও সংকল্প পাল্টিয়ে দেশে ফিরে গেলে। ভাই এটা দুর্ভাগ্যের নিদর্শন, তোমার প্রতি আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের অসন্তুষ্টির প্রমাণ।
আল্লাহ্র কসম ! জ্বিহাদের স্বাদ ও সওয়াব না নিয়ে এবং পাহারাদারি, গুলি ও তীর নিক্ষেপ না করে ফিরে যাওয়ার চেয়ে বড় দুর্ভাগ্য আর কিছু হতে পারে না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
“কেউ যদি আল্লাহ্র রাস্তায় কোন তীর নিক্ষেপ করে, সেটি লক্ষ্যে পৌছুক বা না পৌছুক, বিনিময়ে একটি গোলাম আযাদ করার সওয়াব পাবে”।
জ্বিহাদের প্রস্তুতি, জিহাদের ময়দান ও পাহারাদারির সময় তোমার একটি গুলি ছোঁড়া নামে একটি গোলাম আযাদ করা। এ সওয়াব থেকে বঞ্চিত হওয়ার চেয়ে বড় দুর্ভাগ্য আর কী হতে পারে। আগের যুগের মুসলমানরা ছেলের মৃত্যু ও জামাআত ছুটে যাওয়ার ব্যাপারে বলত-
শোক প্রকাশ তার তরে নয় যে হারাল প্রিয়জন
শোক প্রকাশ তার জন্যেই যে হারাল প্রতিদান।
হযরত মায়মূন বিন মাহরান বলেন, এক সময় আমার আসরের নামাযের জামাআত ছুটে গিয়েছিল। তখন আমি অপেক্ষা করলাম, যাতে মানুষ আমার জন্য শোক প্রকাশ করে। কিন্তু একজন দু’জন ছাড়া কেউ আমার জন্য শোক প্রকাশ করেনি। কারন, মানুষের কাছে দ্বীনের ক্ষতি দুনিয়ার ক্ষতির চেয়ে হাল্কা। তিনি বলেন, যদি আমার ছেলে মারা যেত, তাহলে হাজার হাজার মানুষ আমার কাছে এসে শোক প্রকাশ করতো। কেননা মানুষের কাছে দুনিয়াবী বিপদ দীনি বিপদের চেয়ে বড়।
হযরত উমর রদিয়াল্লাহু আনহু যখন কোন বিপদে পড়তেন, তখন বলতেন-
‘বিপদ যদি মহা না হয়, তাহলে এর জন্য আলহামদুলিল্লাহ, বিপদ যদি দ্বীনের ব্যাপারে না হয় তাহলেও আলহামদুলিল্লাহ। আর এ জন্যেও আলহামদুলিল্লাহ যে এর কারণে সওয়াব লেখা হবে।’
অতএব, জিহাদের এ নেয়ামতের জন্য আল্লাহ্র শোকর আদায় কর। আল্লাহর যথাযথ প্রশংসা করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আল্লাহ হযরত দাউদ আলাইহিসসালাম-এর বংশধরকে বলেছেন-
اعْمَلُوا آلَ دَاوُودَ شُكْرًا
“হে দাউদের বংশধরেরা তোমরা(আল্লাহ্র)শোকর আদায় কর।”[সূরা সাবা”১৩]।
যখন আল্লাহ্ তোমাকে কোন নেয়ামত দান করবেন, তখন এর জন্য তার একটি ইবাদত বৃদ্ধি কর। কারণ, ইবাদত নেয়ামতকে সংরক্ষন করে। আর আল্লাহ্র কাছে এ পথে দৃঢ়তা কামনা কর।
বর্তমানে তোমরা যে পথে (জিহাদে) আছ, তার চেয়ে মহান ও কল্যাণকর কোন পথের সন্ধান আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআলা আর কাউকে দেননি। আমার কসম করে বলতে ইচ্ছা করে, তবে কসম করছি না যে, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলার চালু করা জ্বিহাদ ও তার সন্তুষ্টি অর্জনের এ ব্যাবসাভূমিই হচ্ছে সে ভূমি, যেখানে আল্লাহ্র আউলিয়া পৃথিবীর সকল জায়গা থেকে বেশী এবং পৃথিবীতে যদি আল্লাহ্র আউলিয়া বলতে কিছু থাকে, তাহলে জ্বিহাদের ময়দানে অবস্থানকারীরাই আল্লাহ্র শ্রেষ্ঠতম আউলিয়া। আল্লাহ বলেছেন-
“যে আমার কোন ওলীর সাথে শত্রুতা করে, আমি তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে দাঁড়িয়ে যাই।”[সহীহুল বুখারীতে বর্ণীত হাদীসে কুদসীর একটি অংশ ]।
এখানে বলা হয়েছে একজন ওলীর সাথে শত্রুতা করার শাস্তি। অতএব, যারা আল্লাহ্র অনেক ওলীর সাথে শত্রুতা করে, তারা কেমন তা সহজে অনুমেয়। হে আল্লাহ ! আপনিই আমাদেরকে হেফাযত করুন। তার কী অবস্থা হবে, যে এ মহান ও পবিত্র জিহাদে সংশয়ের বীজ বপনের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে ? এর চেয়ে বড় বিপদ আর হতে পারে না। ভাইয়েরা ! আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআলা কুফরী ও তার পথ থেকে বিরত রাখার কথা এক সাথে উল্লেখ করেছেন। ‘ফী-সাবীলিল্লাহ (আল্লাহ্র পথে) ’ শব্দটি যখন সাধারণ ভাবে আসে, তখন এর অর্থ হয় জ্বিহাদ।আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআলা বলেছেন-


الَّذِينَ كَفَرُوا وَصَدُّوا عَن سَبِيلِ اللَّهِ أَضَلَّ أَعْمَالَهُمْ [٤٧:١]
“যারা কুফরী করে ও আল্লাহ্র পথ থেকে (মানুষকে) বিরত রাখে, তিনি তাদের কর্মসমূহ নষ্ট করে দেন।”[মুহাম্মদঃ ১]।


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে মানুষ যুদ্ধে যাবার জন্য তার নিকট হাতিয়ার চাওয়ার জন্য আসত। যখন তিনি বলতেন, তোমাদেরকে দেয়ার জন্য আমার কাছে হাতিয়ার নেই, তখন তারা আল্লাহ্র রাস্তায় খরচ করতে না পারার দুঃখে অশ্রুসিক্ত নয়নে ফিতে যেত। তাদেরকে শান্তনা দিয়ে বলা হয়-


لَّيْسَ عَلَى الضُّعَفَاءِ وَلَا عَلَى الْمَرْضَىٰ وَلَا عَلَى الَّذِينَ لَا يَجِدُونَ مَا يُنفِقُونَ حَرَجٌ إِذَا نَصَحُوا لِلَّهِ وَرَسُولِهِ ۚ مَا عَلَى الْمُحْسِنِينَ مِن سَبِيلٍ ۚ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ [٩:٩١]
وَلَا عَلَى الَّذِينَ إِذَا مَا أَتَوْكَ لِتَحْمِلَهُمْ قُلْتَ لَا أَجِدُ مَا أَحْمِلُكُمْ عَلَيْهِ تَوَلَّوا وَّأَعْيُنُهُمْ تَفِيضُ مِنَ الدَّمْعِ حَزَنًا أَلَّا يَجِدُوا مَا يُنفِقُونَ [٩:٩٢]
إِنَّمَا السَّبِيلُ عَلَى الَّذِينَ يَسْتَأْذِنُونَكَ وَهُمْ أَغْنِيَاءُ ۚ رَضُوا بِأَن يَكُونُوا مَعَ الْخَوَالِفِ وَطَبَعَ اللَّهُ عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ فَهُمْ لَا يَعْلَمُونَ [٩:٩٣]
“দুর্বল, রোগী ও সরঞ্জাম প্রস্তুত করতে অসমর্থ লোকরা যদি আল্লাহ্ ও রাসূলের মঙ্গলকামী হয়, তাহলে তাদের কোন দোষ নেই। এ রকম ভাল লোকদের বিরুদ্ধে যাওয়ারও কোন পথ নেই। আর আল্লাহ্ হচ্ছেন ক্ষমাশীল ও দয়াময়। আর তাদেরও কোন দোষ নেই, যারা আপনার কাছে যুদ্ধ সামগ্রী চেয়েছে, কিন্তু আপনি তাদের বলেছেন, আমার কাছেতো তোমাদেরকে দেয়ার মত কিছু নেই। ফলে তারা এমন অবস্থায় ফিরে যায় যে, আল্লাহর পথে ব্যয় করার জন্য কিছু না পাওয়ার দুঃখে তাদের চোখ দিয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। তবে কেবল তাদেরই বিরুদ্ধে যাওয়ার পথ রয়েছে, যারা সম্পদশালী হওয়া সত্ত্বেও আপনার কাছে যুদ্ধে না যাওয়ার অনুমতি কামনা করে। এরা পশ্চাৎবর্তীদের সাথে থেকে যাওয়াকেই পছন্দ করেছে। আল্লাহ তাদের অন্তরে মোহর মেরে দিয়েছেন। ফলে তারা (ভাল-মন্দ) আর জানতে পারছে না।”[ সূরা তাওবাহঃ ৯১-৯৩]।


তারা মহিলা ও শিশুদের সাথে থেকে যায়। এটা কত লজ্জার বিষয় !
আমাদের উপরে ফরয করা হয়েছে যুদ্ধ ও লড়া
আর গায়িকাদের কাজ আচল ধরে বসে থাকা।
মাথায় চকচকে ওয়েস্টাল ক্যাপ, গায়ে দামী জ্যাকেট ও পায়ে ঝলমলে জুতা পড়ে গাড়ী নিয়ে প্রতিদিন এদিক-সেদিক ঘুরাফেরা করাই কি তোমার কাজ ? মহিলাদের কাজ করাই কি তোমার মত লোকের কাজ ? এসবের ব্যাপারে অবতীর্ণ অন্য আয়াতগুলো হচ্ছে-


رَضُوا بِأَن يَكُونُوا مَعَ الْخَوَالِفِ وَطُبِعَ عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ فَهُمْ لَا يَفْقَهُونَ [٩:٨٧]
“তারা পশ্চাদবর্তীদের সাথে বসে থাকাকেই পছন্দ করেছে। ফলে তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেয়া হয়েছে। তাই তারা (ভাল-মন্দ কিছুই) বুঝতে সক্ষম হচ্ছে না। ”[তাওবাহঃ ৮৭]।
وَإِذَا أُنزِلَتْ سُورَةٌ أَنْ آمِنُوا بِاللَّهِ وَجَاهِدُوا مَعَ رَسُولِهِ اسْتَأْذَنَكَ أُولُو الطَّوْلِ مِنْهُمْ وَقَالُوا ذَرْنَا نَكُن مَّعَ الْقَاعِدِينَ [٩:٨٦]
“যখন এ মর্মে কোন সূরা অবতীর্ণ করা হয় যে, তোমরা আল্লাহ্র প্রতি ঈমান আন এবং তার রাসূলের সাথে গিয়ে জ্বিহাদ কর, তখন তাদের সম্পদশালীরা আপনার কাছে যুদ্ধে না যাওয়ার অনুমতি কামনা করে আর বলে আমাদেরকে বাদ দিন, আমরা যারা বসে আছে, তাদের সাথে থেকে যাব।”[তাওবাহঃ৮৬]।


জিহাদে অংশগ্রহণ না করার কারণে তাদের অন্তরে মোহর মেরে দেয়া হয়েছে। আল্লাহর কাছে এ থেকে রক্ষা কামনা করছি। কী অবস্থা ভাই তোমার ? তুমি যে বলছ আমি কোম্পানির ডিরেক্টর, আমি কীভাবে এ সব ছাড়ব, আমি কোথায় যাব ? আমি ছোট ছোট ছেলেদের সাথে ছাদায়* বা আফগানদের সাথে পাহাড়ে গুহায় গিয়ে বসে থাকতে পারব ? ওরাতো কুরআন হাদীস বুঝে না। আমি তো সব কিছু বুঝি। কিন্তু এ বুঝের লোকেরা যে একটি গুরুত্বপূর্ণ ফরয কাজ ছেড়ে দিয়ে বসে আছে, সেটা তাদের খবর নেই। আর আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআলা কেবল এ ফরয কাজ ছেড়ে দেয়ার কারণেই অন্তরে মোহর মেরে দেয়ার কথা বলেছেন।

গুহাবাসীরাই সবচেয়ে বড় ফকীহ

এসব লোকদের অন্তরে মোহর মেরে দেয়া মানে আল্লাহ্ এ কথা বলছেন যে, তারা বুঝেও না, জানেও না। অথচ এরপরও কিভাবে তুমি এমন লোকের নিকট জ্বিহাদের ব্যাপারে ফতওয়া তলব করতে যাচ্ছ, যে জ্বিহাদ পরিত্যাগকারী? যখন এসব লোকেরা জ্বিহাদের প্রয়োজনীয়তা প্রমাণকারী কোন ফতওয়া দেখতে পায়, তখন তারা এ ফতওয়াকে কাটানোর জন্য নিজেদেরকে মুফতী হিসেবে পেশ করে এবং এখান থেকে একটি, ওখান থেকে একটি দলীল এসে প্রচার করে যে, তাদেরই রয়েছে আসল ইলম। আর বলে, অমুক আলিম নয়, অমুক এমন, অমুক তেমন, ওদের কথা শোনা যাবে না ইত্যাদি।
কিন্তু এ ধরণের আলিমরা যখন বাগদাদ বা দেমশকে কোন জটিল ফিকহী বিষয়ের সমাধান দিতে পারত না, তখন তারা বৈঠক করে বলত, বিষয়টি গুহাবাসীর নিকট পাঠিয়ে দাও। কারণ, তারা জানত যে, গুহাবাসী আল্লাহ্র অধিক নিকটবর্তী। তাই আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআলা তাঁদেরকে সমাধান দেয়ার তাওফীক দিবেন। ফলে গুহাবাসীরা প্রাসাদবাসীদের নিকট সমাধান পাঠাতেন। ইবনে তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ বলেছেন-
“জ্বিহাদের ব্যাপারে কেবল সেসব সত্যিকারের আলিমদের কাছেই ফতওয়া তলব করতে হবে, যারা দুনিয়াবাসী কী অবস্থায় আছে, সে ব্যাপারে জ্ঞান রাখেন।”
অর্থাৎ,জিহাদের ব্যাপারে সেই সত্যিকারের আলিমের কাছেই ফতওয়া তলব করবে, যিনি রণাঙ্গনের প্রকৃতি ও তার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখেন। সে সব লোকদের ফতওয়া গ্রহণ করা যাবে না, যারা কেবল কুরআন হাদীসের ইবারত মুখস্ত করেন। আর সে সব আমলদার আলিমদের ফতওয়াও গ্রহণ করা যাবে না, যারা দুনিয়াবাসী কোন অবস্থায় আছে, সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা রাখেন না। জিহাদের ময়দানে অবস্থানকারী সত্যিকারের আলিমের কাছেই জ্বিহাদের ব্যাপারে ফতওয়া তলব করতে হবে। কারণ, যে আলিম জ্বিহাদের ময়দান থেকে দূরে তিনি কীভাবে রণাঙ্গনের গতি-প্রকৃতি বুঝবেন। আম্মানে বসে তুমি একজন আলিমের কাছে জিজ্ঞেস করছ যে,জিহাদ ফরযে আইন নাকি ফরযে কিফায়াহ ? তিনি বলছেন যে, জিহাদ ফরযে কিফায়াহ। কারন, জ্বিহাদের জন্য অনেক লোকের প্রয়োজন নেই। তিনি হয়তো বলছেন যে, আমি ১৯৮১ সালে হজের সময় মিনায় সাইয়াফকে বলতে শুনেছি, ‘আমাদের অর্থের প্রয়োজন, মানুষের প্রয়োজন নেই।’ ঠিক আছে, কিন্তু দুনিয়াতো আর এক অবস্থায় রয়ে যায়নি। রাত-দিনের পরিবর্তনের সাথে সাথে অবস্থারও পরিবর্তন হচ্ছে। তুমি এসে আমরা যারা জ্বিহাদের ময়দানে আছি, তাদেরকে জিজ্ঞেস কর জ্বিহাদের ব্যাপারে। রণাঙ্গনের অবস্থা প্রতি ঘন্টায় ঘন্টায় পরিবর্তন হচ্ছে। তুমি ফতওয়া দানকারী যে ভাইয়ের কাছে জ্বিহাদের ব্যাপারে জানতে চাচ্ছ, তিনি অবশ্যই বড় মুফতী। তবে বিভ্রান্ত ! আল্লাহ তোমাকে বিভ্রান্তদের অন্তর্ভুক্ত না করুন। জিহাদের আজ দশ বছর চলছে। কিন্তু তোমার এ মুফতী সাহেব তার বাৎসারিক ছুটির তিন/চার মাস কাটাতে চলে যায় মিশর কিংবা সুইজারল্যান্ডে। আমেরিকা, ব্রিটেন, সৌদিআরব, কুয়েত ও আবুধাবী-আবু-গাযালে* অনুষ্ঠিত হওয়া কোন সম্মেলনে ও সেমিনারে উপস্থিত না হয়ে তিনি থাকেননি। কিন্তু তিনি একবারের জন্যেও জ্বিহাদ দেখার জন্য তশরিফ আনেননি। আহ ! ভাই তুমি কীভাবে জ্বিহাদের ব্যাপারে ফতওয়া দেয়ার স্পর্ধা দেখাচ্ছ ?
আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ্ কবূল করুন। আমি আজ সাত বছর ধরে জিহাদের ময়দানে। ছোট বড় অনেক নেতা কর্মী ছাড়াও আফগানিস্তানের অনেক লোকের সাথে এখানে ও দেশের বাইরেও আমি উঠা-বসা করেছি, তাদের সাথে কথা বলেছি। প্রতিদিন তারা এখানে ভিতর থেকে আমাদের নিকট জ্বিহাদের খবর নিয়ে আসে। প্রতিদিন আমরা নতুন নতুন বিজয়ের সংবাদ পাচ্ছি। তুমি কীভাবে এ জ্বিহাদের ব্যাপারে ফতওয়া দিতে স্পর্ধা দেখাচ্ছ। তুমি কোন এতীম ও কোন আহতকে দেখতে আসনি। নিক্সন ও জিমি কার্টার সীমান্ত দেখতে এলেও তোমার পক্ষে এখনো আফগান সীমান্ত দেখার সুযোগ হয়নি।
আমেরিকা, সুইজারল্যান্ড ও ফ্রান্সের খৃষ্টান মিশনারী নারী পুরুষকে আফগানিস্তানের অনেক ভিতরে দেখতে পাওয়া যায়। তুমি যদি ঐ সেবাদানকারীদের সম্পর্কে বল যে, আমি আফগানিস্তানে ফ্রান্সের মহিলাদের দেখেছি, তখন তারা বলবে যে, ‘ওরা মিশনারী।’  ভাই ! তুমি তোমার দ্বীনের মিশনারী হতে পার না ? সে তো খৃষ্টান, সেতো কুফর প্রচারের মিশন নিয়ে এতো সব কষ্ট স্বীকার করে এসেছে, এতোসব ভোগান্তি সন্তুষ্টচিত্তে হজম করে নিচ্ছে। জনাব ! আপনি আল্লাহ্র পথে পেপসি কোলা ব্যাতীত আর কী হজম করেছেন ?
তুমি যদি বল যে, পেশোয়ারে ২২ টি খৃষ্টান সংস্থার অফিস রয়েছে, যারা আফগানিস্তানে কাজ করছে। পেশোয়ার শহরে গিয়ে যদি অবস্থা যাচাই কর, তাহলে বাইরের মুসলিম দেশ সমূহ থেকে আসা লোকদের চেয়ে আমেরিকানদের বেশী দেখা যাবে। তিনি বলবেন, ‘ওরা তো সিআইএ।’  ভাই ! সিআইএ যদি তাদের স্বার্থের জন্য এখানে এসে উপস্থিত হতে পারে, তাহলে তুমি মুসলমান হয়েও কেন ইসলামের সাহায্যের জন্য আসতে পারবে না ?
শয়তানের গোলামরা তাদের পরিকল্পনা নিয়ে এ জ্বিহাদের ফল চুরি করার জন্য আগমন করেছে। তুমি কেন এ পবিত্র জ্বিহাদের সাহায্যের জন্য আসতে পারবে না ? এদেরকে যখন তুমি বলবে যে, পেশোয়ার ও ইসলামাবাদের আমেরিকানরা বিপুল ভাবে গমনাগমন করছে, এমন কোন বিমানের আগমন ঘটে না, যেখানে কোন না কোন আমেরিকান নেই, তখন ভদ্র লোক তোমাকে বলবে, আমি কি তোমাকে বলিনি যে, এসব সিআইএ ও কেজিবির খেলা ?ভদ্র লোক ঘরে বসে ভাত খেতে খাতে পেটকে অর্ধমিটার উঁচু করে সব বুঝে ফেলেছেন !! এ ভদ্র লোকের পকেট টাকায় ভর্তি আর ভদ্র লোক সব সময় শুধু বেতন বৃদ্ধি, পদোন্নতি, গাড়ী, এয়ারকন্ডিশনার, ওয়াশিং মেশিন, ঘরের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, ফুলের বাগান ইত্যাদি নিয়ে চিন্তামগ্ন। এসব নিয়ে তার চিন্তা চেতনা ও কাজ কর্ম সীমাবদ্ধ। এরপরও ভদ্রলোক রাজনৈতিক সমাধান পেশ করে বলে যে, এসব সিআইএ ও কেজিবির স্বার্থের খেলা। আর যদি তুমি ফিলিস্তিনী হও তাহলে বলবে, এসব ফিলিস্তিন সমস্যাকে চাপা দিয়ে রাখার কৌশল। এদের পথভ্রষ্টতার ব্যাপারে আল্লাহর বানী-


فَإِنَّهَا لَا تَعْمَى الْأَبْصَارُ وَلَٰكِن تَعْمَى الْقُلُوبُ الَّتِي فِي الصُّدُورِ [٢٢:٤٦]
“কেননা চক্ষুসমূহ অন্ধ হয়না, বক্ষের ভিতরের অন্তরগুলোই অন্ধ হয় ।”[হজঃ ৪৬]।

 

মুজাহিদের যে সব গুন থাকা প্রয়োজন

ভাইয়েরা ! জিহাদ কতিপয় গুণের প্রতি মুখাপেক্ষী। আর তা হচ্ছে, (১) এমন সত্যিকারের সংকল্প, যা মানুষের সমালোচনা, তিরস্কার ও ভৎর্সনা পরোয়া করে না, (২) মুমিনদেরকে ভালবাসা ও তাদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া (৩) কাফিরদের প্রতি কঠোর হওয়া এবং (৪) অস্ত্র হাতে তুলে নেয়া। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা বলেন-


يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَن يَرْتَدَّ مِنكُمْ عَن دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتِي اللَّهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ يُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لَائِمٍ
“হে মুমিনগণ ! তোমাদের যারা স্বীয় দ্বীন থেকে ফিরে যাবে, তাদের পরিবর্তে আল্লাহ্ এমন এক দলকে নিয়ে আসবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারাও তাঁকে ভালবাসবে। তারা মুমিনদের প্রতি দয়াপরায়ণ হবে ও কাফিরদের প্রতি কঠোর হবে এবং আল্লাহ্র রাস্তায় জ্বিহাদ করবে। আর এ ক্ষেত্রে তারা কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারকে ভয় করবে না।”[আল মায়েদাঃ ৫৪]।
কার তিরস্কারের ভয়? আত্মীয়? বন্ধু? পরিবার? পাশের সৎলোক?এদের তিরস্কারের পরোয়া না করা আল্লাহ্র পক্ষ থেকে অনুগ্রহ। তাই তিনি এরপর বলছেন-
ذَٰلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَاءُ ۚ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ [٥:٥٤]
“ওটা আল্লাহ্র অনুগ্রহ। তিনি যাকে ইচ্ছা তাঁকে তা দান করেন। আর আল্লাহ্ সবকিছুকে বেষ্টনকারী ও সর্ববিষয়ে জ্ঞাত।”
তাই আমি সব সময় বলি, বেনজিন গাড়ীতে উঠে ১৫০কি.মি. গতি বেগে গাড়ী চালু করে এদিক-সেদিক না তাকিয়ে চলে এসো। তোমার কোন চিন্তা নেই। কারণ, “তারা কোন তিরস্কারকারীর তিরস্কারকে ভয় করে না।”[আল-মায়েদাঃ৫৪]।

 

আন্তর্জাতিক মিডিয়ার খবরদারি

আমি তোমাদেরকে কসম করে বলতে ইচ্ছা করি এবং এ কথা কসম করে বললে আমার কাফফারা দিতে হবে না যে, আল্লাহ্র শত্রুরা পৃথিবীর অন্য কোন অঞ্চলকে আফগানিস্তানের মত ভয় পায় এবং তারা পৃথিবীর অন্য কোন দেশের লোককেও আফগান ও তাদের দেশে জ্বিহাদ করতে আসা লোকদের মত আশঙ্কার দৃষ্টিতে দেখে না। তোমরা মনে করছ যে, তোমরা এখানে বসে আছ এবং পৃথিবীর লোকেরা তোমাদের ব্যাপারে বেখবর। কতিপয় বাদে পৃথিবীর সকল মিডিয়া পরিকল্পনা এঁটেছে কীভাবে জ্বিহাদ নির্মূল করা যায়, কীভাবে রণাঙ্গনে এ সকল যুবকদের মাঝে ফাটল সৃষ্টি করা যায়? এসব মিডিয়াগুলো রাত-দিন চিন্তায় মশগুল থাকে কীভাবে এ জ্বিহাদ ও তার ধারক-বাহকদের কলুষিত করা যায়? কীভাবে জ্বিহাদ করতে এগিয়ে আসা যুবকদের এ ফরয কাজের প্রতি বীতশ্রদ্ধ করে তোলা যায়? তাই মার্কিনীরা শুরুতে এ ভেবে আনন্দিত ছিল যে, রাশিয়া আফগানিস্তানে পরাভূত হয়ে গেছে। আর পরাভূত হওয়ার এ আঘাত রাশিয়াকে রক্তশূন্য করে ছাড়বে। যেমন গর্বাচেভ সম্প্রতি স্বীকার করেছে যে, আফগানিস্তান রাশিয়ার দেহে প্রবেশ করা সেই ক্যান্সার, যা তাঁকে খেয়ে নিঃশেষ করবে।
ফ্রান্স, ব্রিটেন ও আমেরিকা এ ভেবে আনন্দিত যে, তারা এ যুদ্ধের মাধ্যমে আফগানদের নিঃশেষ করে দিতে পারবে। আফগানরা পৃথিবীর সবচেয়ে মজবুত মুসলিম জনগোষ্ঠী, তারা কষ্ট ও কঠিনতা সবচেয়ে বেশী সহ্য করতে পারে এবং তারা যুদ্ধে তাদের কঠোরতা ও দৃঢ়তার জন্য খ্যাত। আর ওরা মনে করছে আফগানদের নিঃশেষ করে দেয়ার সাথে সাথে রাশিয়াকেও নিঃশেষ করে দেয়া যাবে। কিন্তু তারা দেখতে পেল যে, এ জ্বিহাদ পুরো মুসলিম উম্মাহকে প্রভাবিত করেছে।
জ্বিহাদ থেকে দুটি বস্তু বিচ্ছুরিত হয়। এক. আগুন । দুই. আলো । আগুন জালিমদেরকে ধবংস করে আর আলো মুমিনদের অন্তরকে আলোকিত করে। তাই আলো ছড়িয়ে পড়া শুরু করেছে আর আগুন তাদের ঘরের কাছে পৌছে যাচ্ছে। ফলে তারা চিৎকার করে বলছে, প্রতিদিন রাশিয়ার দু’টি করে বিমান ভূপাতিত হচ্ছে, দশটি করে ট্যাংক ধবংস হচ্ছে, পঞ্চাশজন করে সৈন্য নিহত হচ্ছে ইত্যাদি । রুশ ও আফগান কম্যুনিস্টরা নিহত হচ্ছে, পুড়ে মরছে, আহত হচ্ছে ও বন্দী হচ্ছে-আমেরিকার জন্য এটা ভাল। কারন, এতে রাশিয়ার দৈনিক প্রায় ৩৬ মিলিয়ন ডলার ব্যায় হওয়ার কারণে রাশিয়া গরীব হয়ে যাচ্ছে। আমেরিকার জন্য এটা বিরাট সাফল্য।
আমেরিকা থেকে আমদানি করা গমের টাকা রাশিয়া এখন গাদ্দাফীকে প্রদান করার জন্য বলছে। হ্যা ! গাদ্দাফী আমেরিকাকে গমের মূল্য পরিশোধ করবে। বিনিময়ে রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র পাবে। দেখুন আমেরিকাকে পর্যন্ত রাশিয়ার নিকট গম বিক্রি করতে হচ্ছে। রাশিয়ার কাছে এখন গম কেনার অর্থও নেই।
রাশিয়া নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। তাই তারা এ প্রকট সংকট থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছে। কিন্তু আমেরিকা দেখতে পেল যে, এ জ্বিহাদ মুমিনদের অন্তরে আল্লাহ্র প্রতি ভরসাকে দৃঢ় করেছে, মুসলিম উম্মাহর অন্তরে নব জীবনের সঞ্চার করেছে, আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসকে ফিরিয়ে এনেছে। এ জ্বিহাদের ময়দানে তোমাদের আগমন তাদের ভীতি আরো বৃদ্ধি করেছে। আর তারা যে (আরব) জনগোষ্ঠী সমূহকে ভোগ বিলাস ও অর্থ সম্পদে ডুবিয়ে রেখেছে বলে মনে করছে, তাদের একটি বড় অংশ জিহাদ ও ত্যাগের এ ভূমিতে চলে এসেছে। এর ফলে তাদের ভীতি আরো অনেক বেড়ে গেছে।

বিভ্রান্তি সৃষ্টির পাঁয়তারা

আমেরিকা মনে করছিল যে, সে আলজেরিয়া, সৌদিআরব প্রভৃতি দেশগুলোর যুবকদের মৃত বানিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে। তারা মজাদার খাবার, নারী ও গাড়ী নিয়ে ব্যস্ত। মনে করেছিল তাঁদেরকে সে ধবংস করে ফেলতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ যখন দেখল, ঐ যুবকরাই আফগানিস্তানের রণাঙ্গনে জান-মাল উৎসর্গ করতে চলে এসেছে, তখন সে নতুনভাবে হিসাব কষতে শুরু করল। চিন্তিত হল, পরিকল্পনা ভন্ডুল হয়ে গেল নাকি!! মার্কিনীরা বলল , আমরা তাদের জন্য ব্যংকক খুলে দিয়েছি। কিন্তু আরবরা সেখানে যাচ্ছে না, কারন কি? ব্যাংকককে মার্কিন সৈন্যরা পৃথিবীর যেনার আড্ডা খানা বানিয়েছে । ব্যাংককে তারা মেয়েদের নিয়ে যেনার আড্ডা খানা না খুললে ভিয়েতনামে তাদের এ অবস্থা হতো না। এরা অপরাধী, এরা রক্তপিপাসু। এরা ব্যাংকক, ম্যানিলা প্রভৃতি জায়গায় অপরাধের আড্ডা খানা খুলেছে এবং ওখানে যাওয়ার পথ সহজ করে প্রতিদিন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিচ্ছে, ‘ব্যাংকক সফরের জন্য বুকিং করুন’। এরা ভাবল, তারা ব্যাংককে কেন যায় না, কীভাবে তারা দুনিয়ার ভোগ বিলাস ও মজা ছেড়ে দিয়ে গুহা ও চূড়ার কঠিন জীবন যাপনকে বেছে নিচ্ছে? এর মানে পরিকল্পনায় কোন ভুল রয়ে গেছে। তাই তারা নতুন ভাবে উপলব্ধি করল যে, এ জ্বিহাদের ব্যাপারে জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টির বিকল্প নেই। তাই মার্কিন টিভি প্রতিদিন প্রচার করে বেড়াচ্ছে যে, জিহাদের জন্য আমেরিকার বার্ষিক সহায়তা ছয়শ মিলিয়ন ডলার। তাদের দেয়া ষ্টিংগার ক্ষেপনাস্ত্র বিমান ভূপাতিত করছে। অতএব, ষ্টিংগার ক্ষেপনাস্ত্রই এখন জ্বিহাদের সবকিছু।
এরপর তারা আফগানিস্তানে গিয়ে কতিপয় মাদকসেবীদের একত্রিত করছে। তাঁদেরকে বলছে তোমরা মাদক মুখে দিয়ে যাও এবং রাশিয়ানদের উপর হামলা কর। তারা একে ভিডিও রেকর্ড করে মার্কিন টিভিতে প্রচার করছে এটাই আফগান জিহাদ। দেখাচ্ছে কতিপয় মাদকসেবী ডাকাত তাদের মাদক ক্ষেতকে রক্ষার জন্য অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছে। ঠিক মুজাহিদদের হাতে ষ্টিংগার ক্ষেপনাস্ত্রই একমাত্র মার্কিন অস্ত্র। কিন্তু আমেরিকা এ অস্ত্রের কথা ফলাও করে প্রচার করলেও এ কথা বলতে ভুলে গেছে যে, আমরা প্রতিটি ষ্টিংগার ক্ষেপনাস্ত্রের বিনিময়ে মুসলমানদের কাছ থেকে ৭০ হাজার ডলার আদায় করছি। এ কথা তাদের প্রচার পত্রের দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় খুব ছোট করেই টিকা আকারে লেখা হয়েছে।
মার্কিনীদের নিকট আমাদের প্রশ্ন, যদি তোমাদের কথা মত আফগান জ্বিহাদ কতিপয় মাদকসেবীদের তৎপরতা হত, তাহলে তোমরা তিন বছর ধরে জহির শাহকে ফিরিয়ে আনার যে প্রস্তাব দিচ্ছ, তারা সেটা কেন মেনে নিচ্ছে না ? এতে করে তো তাদের সমস্যার সমাধান হয়ে যেত, তারা কেন জহির শাহদেরকে প্রত্যাখ্যান করছে ? মুজাহিদ নেতারা তোমাদের আমন্ত্রন সত্ত্বেও কেন তোমাদের সাথে দেখা করছে না ? মুজাহিদ নেতা সাইয়াফ মার্কিনীদের বলেছেন, আমরা জানি তোমরা পৃথিবীতে আল্লাহ্র শত্রু, মানবতার শত্রু এবং সর্ব নিকৃষ্ট জনগোষ্ঠী। তোমরা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে পছন্দ কর না। তোমাদের অপছন্দ সত্ত্বেও আমরা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করব। মার্কিন মুখপাত্র বলল, আমরা ইসলামী রাষ্ট্রকে ভালবাসি তবে ভয় করি। সাইয়াফ তাঁকে বললেন, আমরা আমাদের এক জন প্রভু আছেন, যিনি তোমাদেরকে পৃথিবীর তাগুত বলেন এবং তিনি তোমাদের চেয়ে অধিক শক্তিশালী ও অনেক বড়। আমরা তার উপরই ভরসা করি। দেখুন সাইয়াফের আকীদা কী রকম ? এটা কি আশআরীদের আকীদা যে, ‘আকাশে আমাদের একজন প্রভু আছেন ?’
কিছু লোক আছে যারা প্রচার করে যে, সাইয়াফ শিয়া। তার নামা আবদুর রাসূল। টাকার জন্য সৌদিদের সাথে সম্পর্ক করার পর নিজে নাম পরিবর্তন করে আবদুরাব্বির রাসূল রেখেছেন। অসহায় সাইয়াফ !! পশ্চিমারা পর্যন্ত আফফগানদের তার বিরুদ্ধে উসকে দেয়ার জন্য বলে বেড়াচ্ছে যে সাইয়াফ ওয়াহাবী !!

কাঙ্খিত সমাধান


আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআলা বলেন-
أَلَيْسَ اللَّهُ بِكَافٍ عَبْدَهُ ۖ وَيُخَوِّفُونَكَ بِالَّذِينَ مِن دُونِهِ ۚ وَمَن يُضْلِلِ اللَّهُ فَمَا لَهُ مِنْ هَادٍ [٣٩:٣٦]
وَمَن يَهْدِ اللَّهُ فَمَا لَهُ مِن مُّضِلٍّ ۗ أَلَيْسَ اللَّهُ بِعَزِيزٍ ذِي انتِقَامٍ [٣٩:٣٧]
وَلَئِن سَأَلْتَهُم مَّنْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ لَيَقُولُنَّ اللَّهُ ۚ قُلْ أَفَرَأَيْتُم مَّا تَدْعُونَ مِن دُونِ اللَّهِ إِنْ أَرَادَنِيَ اللَّهُ بِضُرٍّ هَلْ هُنَّ كَاشِفَاتُ ضُرِّهِ أَوْ أَرَادَنِي بِرَحْمَةٍ هَلْ هُنَّ مُمْسِكَاتُ رَحْمَتِهِ ۚ قُلْ حَسْبِيَ اللَّهُ ۖ عَلَيْهِ يَتَوَكَّلُ الْمُتَوَكِّلُونَ [٣٩:٣٨]
“আল্লাহ্ কি তার বান্দার জন্যে যথেষ্ট নয়? তারা আপনাকে তাদের কথিত উপাস্যদের ভয় দেখাচ্ছে। আল্লাহ যাকে পথ ভ্রষ্ট করেন, তাকে পথ দেখানোর কেউ নেই। আর আল্লাহ্ যাকে পথ দেখান, তাকে পথ ভ্রষ্ট করার কেউ নেই। আল্লাহ কি ক্ষমতাধর ও প্রতিশোধ গ্রহণকারী নন ? যদি আপনি তাঁদেরকে প্রশ্ন করেন যে, পৃথিবী ও আকাশ সমূহকে কে সৃষ্টি করেছে  ? তাহলে তাঁরা অবশ্যই বলবে, আল্লাহ। এখন তাঁদের বলুন যে, তোমরা আল্লাহকে ছাড়া যাদেরকে ডাক, তারা কি আল্লাহ্ আমার কোন ক্ষতি করতে চাইলে, সে ক্ষতি দূর করতে পারবে কিংবা যদি আল্লাহ্ আমার প্রতি কোন অনুগ্রহ করেন, তা কি তাঁরা প্রতিরোধ করতে পারবে ? আপনি বলুন, আমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। ভরসাকারীরা তাঁর উপরেই ভরসা করে।”[যুমারঃ৩৬-৩৮]।

 

কাঙ্খিত সমাধান কী?

তোমাদের পরিচয় হচ্ছে তোমরা কাঙ্খিত সমাধান কামনা করছ। সে কাঙ্খিত সমাধান কী যা মানুষ তোমাদের  মাধ্যমে পেতে চাচ্ছে? যার কথা ইসলামী আন্দোলন কর্মীরা মাঠে-ময়দানে বলে বেড়াচ্ছে? যার জন্য তোমার মন অধীর অপেক্ষা করছে? সংক্ষেপে সমাধান কি এই নয় যে, পৃথিবীতে আল্লাহর আইনের শাসন নতুন ভাবে ফিরিয়ে আনা, যার কথা শায়খ বান্না তাঁর দাওয়াতের প্রথম থেকে বলে এসেছেন? খেলাফতের পতনের চার বছর পর শায়খ বান্না সে তড়িত আন্তরিক প্রচেষ্টা শুরু করেছিলেন, তা খেলাফতের সে প্রাসাদ পুনঃনির্মাণের জন্য যা ধূসর বাঘ মোস্তফা কালাম আতাতুর্ক ১৯২৪ সালের ৪থা মার্চ ভেঙ্গে তছনছ করেছিল।
অতএব, আমাদের এ দলবদ্ধ হওয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য সে খেলাফতের প্রাসাদের পূর্ণনির্মাণই।
শায়খ বান্না বলতেন-
‘ভাইয়েরা ! তোমরা কোন রাজনৈতিক দল নও, তোমরা কোন সেবা সংঘঠনও নও এবং কোন দল বা কোন উদ্দেশ্যের জন্য গঠিত কোন সংস্থাও নও। তোমরা এ উম্মাহর মাঝে চলাচলকারী এক নতুন আলো, যা কুরআন দ্বারা এ উম্মাহকে জীবিত করবে এবং ইসলামের আলো দ্বারা জাহিলিয়াতের অন্ধকারকে দূরীভূত করবে’। অতএব, শহীদ বান্না ১৯২৮ সালে এ নতুন আলো যাকে ইসমাঈলিয়ায়* তাঁর পবিত্র আহবানের মাধ্যমে জ্বালিয়েছিলেন, তার লক্ষ্য ছিল চার বছর পূর্বে ধবংস করা খেলাফতের প্রাসাদকে পুনঃনির্মাণ করা।

খেলাফত কী?

আমরা ব্যক্তিগত ভাবে সবাই চাই নিজেকে রক্ষা করতে, জান্নাতে প্রবেশ করতে। অতএব, আমরা যে দু’উদ্দেশ্য তথা জাহান্নাম থেকে মুক্তি ও বেহেশতে প্রবেশ করার আশায় কাজ করছি, তার মত অন্যান্য মানবগোষ্ঠীও যাতে জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেয়ে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে, সে জন্য একটি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা।

অর্থাৎ, পৃথিবীর কোন ভূখন্ডে কিছু লোক একজন নেতার নেতৃত্বে আল্লাহ্র আইন প্রয়োগ করা । আর এটাই হচ্ছে খেলাফত তথা ইসলামী রাষ্ট্র।

কাঙ্খিত ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কয়েকটি ধাপ

এ ইসলামী রাষ্ট্র প্রথমে এভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মক্কায় দাঁড়িয়ে মানুষকে ডাক দিয়ে বলেছিলেন, “বল, আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বুদ নেই”। এ কথা বলে তিনি মানুষকে তাওহীদের দিকে আহবান করেছিলেন। এ তাওহীদ তিন প্রকার। এক. তাওহীদুর রুবূবীয়্যাহ ‘পৃথিবী সৃষ্টি ও পরিচালনায় আল্লাহকে একক জানা ‘। দুই. তাওহীদুল উলুহীয়্যাহ ‘ ইবাদত পাওয়ার অধিকার আল্লাহ্র একক বলে জানা’। তিন. তাওহীদুল আসমা ওয়াস্ সিফাত ‘ বিশেষ কিছু বিশেষণ ও গুণাবলীর অধিকারী একমাত্র আল্লাহই বলে বিশ্বাস করা ‘।
অতএব, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দাওয়াত যেমন তাওহীদ দিয়ে শুরু হয়েছিল, তদ্রুপ আমাদের দাওয়াতও শুরু হতে হবে তাওহীদের মাধ্যমে। ‘ তাওহীদুর রুবূবীয়্যাহ ‘ বলতে অন্তর ও মানসে স্থান লাভ করা চিন্তাগত তাওহীদকে বুঝায়। অর্থাৎ, তোমরা এ কথা স্বীকার করা যে, আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআলা সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা, রিযিকদাতা, জীবনদাতা ও মৃত্যুদাতা এবং সবকিছু তাঁরই ইচ্ছায় হয়, তিনিই সবকিছুর নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনাকারী, তিনি রক্ষা করেন এবং তাঁর কাছ থেকে রক্ষা করা যায় না ইত্যাদি। এ সবই হল চিন্তাগত তাওহীদ। এ তাওহীদ পূর্বের যুগের সকল কাফির ও মুশরিকদের মাঝে পাওয়া যেত।
যেমন আল্লাহ্ বলেন-


قُلْ مَن بِيَدِهِ مَلَكُوتُ كُلِّ شَيْءٍ وَهُوَ يُجِيرُ وَلَا يُجَارُ عَلَيْهِ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ [٢٣:٨٨]
سَيَقُولُونَ لِلَّهِ ۚ قُلْ فَأَنَّىٰ تُسْحَرُونَ [٢٣:٨٩]
“ বলুন, তোমাদের জানা থাকলে বল, কার হাতে সব কিছুর কর্তৃত্ব, যিনি রক্ষা করেন এবং যার কবল থেকে কেউ রক্ষা করতে পারে না? তারা অবশ্যই বলবে আল্লাহর। বলুন, তাহলে তোমাদের কোথা থেকে যাদু করা হচ্ছে। ”
অতএব, শুধু ‘ তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ’ র স্বীকৃতি দানের জন্য আল্লাহ্ মানুষকে সৃষ্টি করেননি এবং এ জন্য কোন সময় কোন নবী ও প্রেরণ করেননি। মানুষের অন্তরে প্রাকৃতিক ভাবে সে ‘তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহ’ লালিত থাকে, তাকে বাস্তব জগত তথা কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগ করার নামই ‘তাওহীদুল উলূহিয়াহ’। অতএব, ‘তাওহীদুল উলূহিয়াহ’ হচ্ছে কর্মগত তাওহীদ। প্রথম প্রকার তাওহীদ দ্বারা আল্লাহকে তাঁর কর্মের ক্ষেত্রে একক বলে জানা হয়। আর দ্বিতীয় প্রকার তাওহীদ দ্বারা আমাদের কর্মগুলো একমাত্র আল্লাহ্র জন্য এ কথার স্বীকৃতি দেয়া হয়। অতএব, আমরা নামায ও রোযা থেকে শুরু করে যে কোন কাজই করি না কেন তা একমাত্র আল্লাহ্র জন্যই করব।
এ বিষয়টিকে কুরআন চিত্রিত করেছে এভাবে-
قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ [٦:١٦٢]
لَا شَرِيكَ لَهُ ۖ وَبِذَٰلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ [٦:١٦٣]
“বলুন, আমার নামায, আমার কুরবানী এবং আমার জীবিত থাকা ও মৃত্যুবরণ (অর্থাৎ,সবকিছুই) আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীনের জন্য নিবেদিত। কোন ক্ষেত্রে তাঁর কোন অংশীদার নেই আর তাঁর জন্য অংশীদার সাব্যস্ত করা থেকে পবিত্র থাকার জন্যেই আমি আদিষ্ট এবং আমি সর্বপ্রথম মুসলিম। ”[আনআমঃ১৬২,১৬৩]।


তাওহীদুল আসমা ওয়াসসিফাতের অর্থ হচ্ছে কুরআন ও সহীহ হাদীসে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআলার যে সব সুন্দর নাম ও মহৎ গুণাবলীর কথা উল্লেখ হয়েছে, সেগুলো কোন প্রকার বিকৃতি, অস্বীকৃতি, অপব্যাখ্যা ও সৃষ্টির সাথে সাদৃশ্যকরণ ছাড়া মেনে নেয়া । কুরআনে বর্ণিত আল্লাহ্র নামগুলো দ্বারাই আমরা আল্লাহকে ডাকব। এতে কোন কিছু বৃদ্ধিও করব না, কমাবও না। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআলা নিজেকে জব্বার বলে অভিহিত করেছেন। অতএব, আমরা তাঁকে জাবের বলে অভিহিত করব না। আবদুল জব্বার নাম রাখা জায়েয। কিন্তু আবদুল জাবের নাম রাখা জায়েয নেই। কারণ, জাবের নামে আল্লাহ্র কোন নাম নেই। অনুরূপ হাদীসে এসেছে আল্লাহ্ সাতীর অর্থাৎ আল্লাহ্ (বান্দার গুনাহ) ঢেকে রাখেন। অতএব, আমরা আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কাউকে সাতীর নামে অভিহিত করব না।
অনুরূপ আমরা আল্লাহ্র জন্য নিজের পক্ষ থেকে নামও তৈরী করব না। যেমন ধরুন কুরআনে আছে “আল্লাহ্ আরশে উপবেশন করেছেন”। কিন্তু তাই বলে আমরা আল্লাহকে উপবেশনকারী নামে অভিহিত করতে পারি না। ইমাম ইবনে হাযম বলেছেন-
‘ সমগ্র উম্মাহ এ ব্যাপারে একমত যে, কারো জন্য কাউকে আবদুল মুস্তাবী নামে অভিহিত করা জায়েয নেই এবং এ কথা বলাও জায়েয নেই যে, হে মুস্তাবী আমাকে সাহায্য করুন’।
তাওহীদের এ দাওয়াতকে মক্কায় কিছু লোক গ্রহণ করেছিলেন। ফলে জাহিলিয়াত তাঁর সর্বশক্তি নিয়ে তাঁদের বিরুদ্ধে দাড়িয়েছিল, তাদেরকে বিতাড়িত করেছিল, দেশান্তর করেছিল, ক্ষুধার্ত রেখেছিল, শেষ পর্যায়ে মারধর করেছিল। এসবের সামনের যারা ঝরে পড়েছে, তারা ঝরে পড়েছে ও যারা মুরতাদ হয়েছে, তারা মুরতাদ হয়েছে। শেষ পর্যায়ে আল্লাহ্ অবশিষ্ট দৃঢ়পদ ও ধৈর্য্যধারণকারীদের জন্যই পথ খোলা রেখেছিলেন এবং তাদেরকে পৃথিবীর কর্তৃত্ব দান করেছিলেন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চারপাশে যখন দৃঢ়পদের একদল মানুষ সংগঠিত হল, তখন তিনি এমন একটি ভূখন্ড খোজা শুরু করলেন, যেখানে তিনি আল্লাহ্র দ্বীন প্রতিষ্ঠা করবেন এবং আল্লাহ্র দ্বীনকে বিজয়ী করবেন। এ উদ্দেশ্যে বিভিন্ন গোত্রের কাছে আবেদন জানালেন যে, কে আমাকে আল্লাহর দ্বীন প্রচারের জন্য জায়গা দিবেন? আল্লাহর হুকুমে মদীনার আওস ও খাযরাজ গোত্রের কিছু সর্দার তাঁর সাহায্যে এগিয়ে এলেন, যারা আকাবার রাত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাতে ইসলামের দীক্ষা গ্রহণ করেছিলেন। এ সাহায্য তিনি লাভ করেছেন তাঁর দাওয়াতী যিন্দেগীর বার বছর পর। আল্লাহর হুকুমে তিনি মদীনায় চলে গেলেন এবং সেখানে গিয়ে শুরু হল জিহাদ।
আল্লাহ এ ব্যাপারে বলেন-


أُذِنَ لِلَّذِينَ يُقَاتَلُونَ بِأَنَّهُمْ ظُلِمُوا ۚ وَإِنَّ اللَّهَ عَلَىٰ نَصْرِهِمْ لَقَدِيرٌ [٢٢:٣٩]
“যাদের সাথে যুদ্ধ বাঁধানো হচ্ছে, তাদেরকে যুদ্ধ করার অনুমতি দেওয়া হল। কারন, তারা নির্যাতিত। আর আল্লাহ্ তাঁদেরকে বিজয়ী করার ক্ষমতা রাখেন। ”[হজঃ৩৯] ।


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বীয় উদ্দেশ্য সফলকরণে একটি পরিকল্পনা আটলেন। আর তা হচ্ছে মহা মূর্তি তথা কুরাইশদের মূর্তিকে ধবংস করা। যখন কুরাইশদের মূর্তি ভেঙ্গে যাবে এবং তাঁদের প্রতিরোধ শেষ হয়ে যাবে, তখন মানুষ আল্লাহ্র দ্বীনে দলে দলে প্রবেশ করবে। তাই তিনি তাঁর চতুষ্পার্শ্বের ইয়াহুদীদের সাথে কতিপয় চুক্তি করলেন। এরপর তিনি কুরাইশকে প্রধান শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করলেন। অতঃপর কুরাইশদের সাথে তাঁর যুদ্ধ শুরু হয়। কুরাইশদের সাথে যুদ্ধের এ পথে তিনি বানু কাইনুকার উপর আঘাত হানলেন, বানু নাযীরকে দেশান্তর করলেন এবং বানু কুরাইযাকে হত্য করলেন। কিন্তু যে শত্রুকে মূল টার্গেট বানিয়েছেন এবং যাকে দমন করার জন্য রাত দ্বীন পরিকল্পনা করেছেন, সে হচ্ছে কুরাইশ। অতঃপর তিনি কুরাইশদের উপর বিজয় লাভ করলেন। এ সময় ইসলামী বিধি বিধান আল্লাহ্র পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হচ্ছিল এবং এগুলোকে পর্যায়ক্রমে মুসলিম সমাজে প্রয়োগ করছিলেন কুরআন অবতরণ শেষ হল এবং আল্লাহ্র দ্বীন প্রতিষ্ঠাকামী মানবতার জন্য আদর্শ হিসেবে পৃথিবীর একটি অঞ্চলে ইসলামী শাসন বাস্তবায়ন করে দেখানো সম্পন্ন হল। অতঃপর আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআলা তাঁকে নিজের কাছে নিয়ে গেলেন। পৃথিবীতে আল্লাহ্র দ্বীন পুনরায় প্রতিষ্ঠার যত আন্দোলন পরিচালনা করা হোক, তা ঐ পথের অনুসরণের মাধ্যমে করতে হবে, যে পথে আল্লাহ্র দ্বীন প্রথম বার কায়েম হয়েছিল।
তাওহীদের দিকে আহবান সাময়িক। তাওহীদের চতুষ্পার্শ্বে মানুষ সংগঠিত হওয়ার পর জ্বালানো হয়েছে জ্বিহাদের আগুন। অতঃপর মানুষ এ আগুনের চতুষ্পার্শ্বে ক্রমান্বয়ে জড়ো হওয়া শুরু করে। আর এ জ্বিহাদই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নেতৃত্বে পরিচালিত আন্দোলনের প্রধান বাহন হিসেবে রয়ে যায়। আন্দোলনের এ পথে তাঁর অনেক কর্মী শহীদ হন। এর নেতৃত্বে কিছু লোক দৃঢ়পদ থাকে।মানুষ আস্তে আস্তে তাদের কাছে এসে ইসলামের শিক্ষা গ্রহণ করতে থাকে। যখন তাঁরা বাতিলের উপর বিজয় লাভ করেন, তখন মানুষ আল্লহর দ্বীনে দলে দলে প্রবেশ করতে শুরু করে।
জ্বিহাদ যে ইসলামী আন্দোলনের অবকাঠামোর একটি অংশ ও স্তম্ভ সমূহের একটি স্তম্ভ না হবে, সে ইসলামী আন্দোলন ইসলামী আন্দোলন নয়; তা একটি সেবা সংস্থা, যা এতীম, বিধবা ও মিসকীনদের সাহায্য করে বা সচ্চরিত্র ও ধুমপান ত্যাগের প্রতি আহবান জানায়।
অতএব, জিহাদ ইসলামী আন্দোলনের অবকাঠামোর অন্যতম উপাদান ও স্তম্ভ হওয়া অপরিহার্য। নতুবা ইসলামী আন্দোলন অন্ধকারে থেকে যাবে এবং কোন দিন নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারবে না। কারণ, আল্লাহর শত্রুদের পক্ষে তো তোমাকে ক্ষমা করা সম্ভব নয়, তারা তোমার সাথে অবশ্যই লড়বে। অতএব, তুমি যদি শক্তিশালী না হও, তাহলে তোমাকে নেকড়ে খেয়ে বসবে।
আধুনিক যুগে আমরা শায়খ বান্নার ইসলামী আন্দোলনকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করতে পারি। দেখুন, তিনি কীভাবে ইসলামের বিধানকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করে গেছেন। প্রথমে তিনি তাওহীদের উপর প্রশিক্ষন দিয়েছেন। অতঃপর জ্বিহাদের আগুন জ্বেলেছেন। অতঃপর জনসাধারণ তাঁর দাওয়াতকে সমর্থন জানাল।
কারণ, জনগণের সমর্থন না পেলে ইসলামী আন্দোলনের পক্ষে একা ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। কারণ, রণাঙ্গন খুব দীর্ঘের এবং ত্যাগের প্রয়োজন অত্যাধিক আর ইসলামী আন্দোলনের সন্তানরা সংখ্যায় কম। আর ভাল জিনিস কমই থাকে। অতএব, যারা জ্বিহাদের চিন্তা বাদ দিয়ে ইসলামী আন্দোলনের কর্মী জনসংখ্যার শতকরা দশ ভাগ বা বিশ ভাগে পৌছার অপেক্ষা করে এবং বলে যে, শতকরা দশ কিংবা বিশ ভাগ জনগণ যখন ইসলামী আন্দোলনের কর্মী হবে, তখন ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করব, তারা সমাজের প্রকৃতি, দাওয়াতের নীতি ও পৃথিবীতে আল্লাহ্র রীতি ও নিয়ম উপলব্ধি করে না । ইসলামী আন্দোলনের কর্মী সংখ্যা জনসংখ্যার একশ ভাগের পাঁচ কিংবা দশ ভাগে এসে পৌঁছা কখনো সম্ভব না, এটা অবাস্তব স্বপ্ন কিছুই নয়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবীদের দিকে দেখুন। মক্কার তের বছরে তাঁদের সংখ্যা ছিল শতের কাছাকাছি। জিহাদের পথে অগ্রসর হওয়ার পর বদরে গিয়ে তাঁদের সংখ্যা দাঁড়াল ৩১৩ (তিনশ তের) জনে। উহুদে গিয়ে তাঁদের সংখ্যা দাঁড়াল ৭০০ (সাতশ) এ। হুদাইবিয়ার গিয়ে তাঁদের সংখ্যা এসে উপনীত হয় ১৪০০ (চৌদ্দশ) এ । মক্কা বিজয়ের দিন তাঁদের সংখ্যা এসে উপনীত হয় ১০০০০ (দশ হাজার) এ। কেন এত বিরাট পার্থক্য । ষষ্ঠ হিজরীতে হুদাইবিয়ার সন্ধির সময় সাহাবীদের সংখ্যা ছিল ১৪০০। কিন্তু মক্কা বিজয়ের দিন দশ হাজার হল। কীভাবে? এর কারণ, যুদ্ধে হেরে কুরাইশরা তাঁদের দম্ভ অহংকারকে খুইয়ে স্বীকার করে নিল যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই কর্তৃত্বের অধিকারী। তাই তাঁরা তাঁর হাতে কর্তৃত্বের চাবি তুলে দিতে বাধ্য হয়। হুদাইবিয়ার সন্ধি আরব দ্বীপে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর রাজনৈতিক প্রভাব বহুগুণে বৃদ্ধি করল। ফলে মানুষ আল্লাহ্র দ্বীনে দলে দলে প্রবেশ করা শুরু করল। কারণ, মানুষের ইসলাম গ্রহণে কুরাইশদের দম্ভ ও আল্লাহ্র দ্বীনের সাথে তাঁদের শত্রুতা বড় বাঁধা ছিল। অতঃপর যখন হুদাইবিয়ার সন্ধির মাধ্যমে কুরাইশরা তাঁদের দম্ভ অহংকার থেকে হটে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে চুক্তি করতে বাধ্য হল, তখন জনসাধারণ  মনে করল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিজয় অনিবার্য। ফলে তাঁরা ব্যাপক ভাবে ইসলামে দীক্ষিত হতে শুরু করে। অষ্টম হিজরীতে মক্কা বিজয় হল এবং কুরাইশরা পরাজয় স্বীকার করে নিল। মক্কা বিজয় রমযানে হয়েছিল। নবম হিজরীর জুমাদাল উখরা বা রজব মাসে তথা মক্কা বিজয়ের নয় মাস পর তাবূক অভিযান পরিচালিত হয়। মুসলমানদের সংখ্যা মক্কা বিজয়ের দিন দশ হাজার ছিল। কিন্তু তাবুক অভিযানের সময় মুসলমানদের সংখ্যা এসে দাঁড়ায় ত্রিশ হাজারে। বিপুলভাবে বর্ধমান এ সংখ্যা যুদ্ধ সমূহে মুসলমানদের বিজয়েরই ফল। দশম হিজরীর শেষের দিকে যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ করতে গিয়েছিলেন, তখন মুসলমানদের সংখ্যা এসে পৌঁছে এক লক্ষ চৌদ্দ হাজারে।
তুমি শক্তিশালী না হলে মানুষ তোমার পক্ষ নিবে না। দুর্বলতা ও কষ্টের সময় গণ মানুষের পক্ষে তোমার সাথে এসে দাঁড়ানো কল্পনাতীত ব্যাপার। কারণ, গণ মানুষ অবস্থা দেখেই ব্যবস্থা গ্রহণ করে। আল্লাহ বলেছেন-
“যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় এসে গেল, আর আপনি মানুষকে দেখছেন, তারা আল্লাহ্র দ্বীনে দলে দলে প্রবেশ করছে।”
আল্লাহ্র সাহায্য ও বিজয়ের পরই মানুষ আল্লাহ্র দ্বীনে গণহারে দীক্ষিত হয়। দুর্বলতা ও কঠিন পরিস্থিতির সময় কেবল সেসব দুর্লভ ও অনন্য সাধারণ লোকেরা তোমার পাশে থাকবে, যারা ত্যাগ ও মৃত্যুর জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকে ।

ইখওয়ানের অর্জিত অভিজ্ঞতা সমূহ

শায়খ বান্না এ নীতি কীভাবে প্রয়োগ করেছেন দেখুন। তিনি ফিলিস্তিনের মুসলমানদের উৎখাতের ষড়যন্ত্র দেখে সেখানে তিনি তাঁর পক্ষ থেকে কয়েকটি দল পাঠান। শহীদ বান্না তাঁর আন্দোলন নিয়ে প্রকাশ্যে মাঠে না আসার পূর্ব থেকে ইংরেজ ও ইয়াহুদীরা তাঁর আন্দোলন নিয়ে ভীষণ আশঙ্কায় ভুগছিল। যখন দেখা গেল তাঁর আন্দোলনের কর্মীরা অস্ত্রধারণ করে তাঁদের মুখোমুখি হচ্ছে, তখন গোটা পশ্চিমা বিশ্বে হৈচৈ শুরু হয়ে যায়।
আমেরিকার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যার নাম এখন আমার মনে আসছে না, কিছু পত্রিকা সংরক্ষিত আছে, যেগুলোতে শহীদ বান্নার নিহত হওয়ার ছবি আছে এবং নীচের ক্যাপশনে এ কথা লেখা আছে যে, আজ বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ংকর লোকটি নিহত হল। এ সংবাদ শুনেই সাইয়েদ কুতুব ইখওয়ানুল মুসলিমীনের আন্দোলনের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তাতে যোগদান করেন। বান্নার শাহাদাতে যখন আমেরিকাকে তিনি আনন্দ প্রকাশ করতে দেখলেন, তখন তিনি ভাবলেন, তার দাওয়াত অবশ্যই সত্যের উপর ছিল। না হলে তাঁকে নিয়ে বিশ্বের ইসলামের শত্রুদের এত মাথা ব্যথা কেন?
এ ইসলামী আন্দোলনই ফিলিস্তিনের বুকে সাড়া জাগানো একমাত্র আন্দোলন। এ আন্দোলন অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে ও উন্নত দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এমনকি ডায়ান পর্যন্ত মা’রূফ হাদারীকে বন্দী বিনিময়ের দিন এ কথা বলেছিল যে আজকে আমরা আপনাকে বিনিময় হিসেবে মিশরীয়দের কাছে হস্তান্তর করছি। মারূফ হাদারী ফিলিস্তিনে গ্রেফতাঁর হওয়া ইখওয়ান নেতা ছিলেন। মা’রূফ হাদারী তাঁকে বললেন, আমি আপনার কাছে একটি কথা জিজ্ঞেস করতে চাই যে, আপনারা সবার ক্যাম্পে হামলা চালালেও ইখওয়ানুল মুসলিমীনের ক্যাম্পে কেন হামলা চালাননি ? ডায়ান বলল, আমরা তো বাঁচার জন্য এসেছি। আর ইখওয়ানুল মুসলিমীন এসেছে মরার জন্য। যারা মরতে চায় তাঁদেরকে পরাজিত করা অসম্ভব। তাই আমরা তাঁদের ক্যাম্পে হামলা করিনি।
শায়খ বান্না ফিলিস্তিনে ইয়াহুদীদের উপর বিজয় লাভ ও তাতে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্যে মিশর থেকে দশ হাজার যুবক পাঠানোর ইচ্ছা করেছিলেন। এর ফলে আরব রাজা ও স্বৈরাচারীদের সিংহাসনগুলোর একের পর এক পতন হত। কিন্তু তিনি ভুলবশত আরব লীগের শীর্ষ বৈঠকে এ মর্মে টেলিগ্রাম পাঠান যে, আমি দশ হাজার যোদ্ধা নিয়ে ফিলিস্তিনে প্রবেশ করতে চাই। অতএব, আমাকে অনুমতি দিন। এরপর থেকে তাঁর বিরুদ্ধে অবিরাম ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে যায়। আমেরিকার প্রতিনিধিত্বকারী রাষ্ট্রদূতরা তথা আমেরিকা, ফ্রান্স ও ব্রিটেনের রাষ্ট্রদূত একত্রিত হয়ে ১৯৪৮ এর ৬ ডিসেম্ভর ইখওয়ানের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। অতঃপর ইখওয়ান কর্মীদের কারাগারে নিক্ষেপ শুরু হয় । শায়খ বান্নাকে বাইরে রাখা হয়। অতঃপর এর দু’মাস শেষে তাঁকে হত্যা করা হয়।
ওই সময় আমরা পরিস্থিতির সুযোগ গ্রহণ করে ফিলিস্তিনকে ইয়াহিদী মুক্ত করতে পারতাম। সে সময় ইসলামী আন্দোলন সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল। সে সময় মিশরের ইসলামী আন্দোলনের বীর সন্তানরা সানাই উপত্যকা অতিক্রম করে খান ইউনুসে পৌঁছে যেতে পারত এবং শত্রুদের পরাজিত করে গোটা ফিলিস্তিনের ইসলামী রাষ্ট্রে পরিণত করে যেত। কিন্তু ফিলিস্তিনের ব্যাপারে শায়খ বান্নার সিদ্ধান্ত গ্রহণ অনেক দেরী হয়ে যায়। ফলে আমরা সফলকাম হতে পারিনি। এরপরও আমরা কিছু মুজাহিদ ও কিছু শহীদদের পেশ করে আল্লাহ্র কাছে কৈফিয়ৎ দিয়েছি।
ফিলিস্তিন যাতে মুক্ত না হতে পারে, সে জন্য ইসলামী আন্দোলনের উপর দমন নিপীড়ন শুরু হয়ে যায়। শহীদ বান্নার নিহত হওয়ার দু’দিন পর রূডস চুক্তি সম্পন্ন হয় এবং মিশর ইয়াহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বীকৃতি দান করে।এর দশ দিন পর জর্ডান স্বীকৃতি দান করে। তার এক মাস পর সিরিয়াও স্বীকৃতি দেয়।
শায়খ বান্না থেকে বর্ণনা করে হয়েছে যে, তিনি প্রথমে মিশরেই ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চান। যখন ফারুক* ও তাঁর পেটুয়া বাহিনীর পক্ষ থেকে ইখওয়ানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয়, তখন তিনি ফিলিস্তিনে লোক পাঠানোর ব্যবস্থা করেন। যুদ্ধ বন্ধের জন্য নাফরাতীর চুক্তিতে স্বাক্ষর করার পর ১৯৪৮-এর ডিসেম্ভরে তিনি শেষবারের মত যুবকদের ফিলিস্তিনে প্রেরণ করেন। শায়খ বান্নার সেক্রেটারী আবদুল বদী সাকার বলেন, আমরা সর্বশেষ দলকে ফিলিস্তিনে পাঠালাম। শায়খ বান্না তাঁদেরকে খুব উৎসাহের সাথে বিদায় দেন। অতঃপর তিনি আমাকে হাতে ধরে ইখওয়ানের অফিসের একটি কক্ষে নিয়ে গেলেন এবং বললেন, ফিলিস্তিনতো শেষ হয়ে গেল। আমি বললাম, ফিলিস্তিনে পাঠানো এ যুবকদের রক্তের জন্য আল্লাহ্র কাছে আপনিই দায়ী থাকবেন। তখন তিনি বললেন, ওহে মিসকীন, আমি কোন যুবককে তাঁর ফরয দায়িত্ব পালন করতে যাওয়ায় বাঁধা দিতে পারি না। দ্বিতীয়ত আন্তর্জাতিক পরিকল্পনা বলছে যে, ফিলিস্তিনে যা হবার হয়ে গেছে। তবে হতে পারে এ যুবকরা আল্লাহ্র ইচ্ছায় আন্তর্জাতিক পরিকল্পনা বাতিলের ক্ষেত্রে একটি ভূমিকা পালন করতে পারে।
ফিলিস্তিনে পরীক্ষা শেষ হয়েছে। আমরা ফিলিস্তিনে সুযোগের যথাযথ সৎ ব্যবহার করতে পারিনি। এরপর আমাদের চলার পথ সংকুচিত হয়ে যায়। অবশ্যই প্রত্যেক ক্ষেত্রে আল্লাহ্র কোন না কোন হিকমত কার্যকর থাকে। এর কিছুদিন পর আরেকটি পরীক্ষা আসল সেটা ছিল সুয়েজ খালকে ঘিরে। ইখওয়ানরা সেখানে জ্বিহাদ করল এবং একমাত্র ইখওয়ানই ইংরেজদের সাথে দৃঢ়পদ থেকে যুদ্ধ করেছিল। কিন্তু তাতেও ইখওয়ানরা সুযোগের সৎ ব্যবহার করতে পারেনি। অতঃপর আবদুন নাসেরকে সৈন্যদের বিন্যাসের দায়িত্ব দেয়া হল। সে তাতে যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম হল না এবং এর জন্য তাঁর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাও নেয়া হয়নি। সে সৈন্যদের মাঝে অভ্যুত্থানের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করে এবং ইখওয়ানদের সাথে কুরআন শরীফ ধরে ওয়াদা করে যে, সে ক্ষমতায় আসলে কুরআন-সুন্নাহর বিধান বাস্তবায়ন করবে। একই সময় সে মার্কিন দূতের সাথে চুক্তিবদ্ধ হয় যে, সে ক্ষমতায় আসার পর ইখওয়ানকে দমন করবে, আল আযহারকে নিশ্চিহ্ন করবে ও ইসরাঈলের নিরাপত্তার গ্যারান্টি দিবে। অতঃপর সে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতায় আসে।
অভ্যুত্থানের জন্য ইখওয়ানুল মুসলিমীন তার দশ হাজার সশস্ত্র কর্মীকে মাঠে নামিয়েছিল এবং আবদুন নাসেরের পক্ষে রাজনৈতিক প্রচারণা চালিয়েছিল। তারা তাঁর ক্ষমতার খুঁটিকে গেড়ে দিল। কিন্তু যখন আবদুন নাসের তাঁর ক্ষমতার মসনদে ভাল ভাবে গেড়ে বসতে সক্ষম হল, তখন তাঁর সাঙ্গ-পাঙ্গকে নিয়ে ইখওয়ানকে যবাই করা শুরু করল। নেতৃত্ব যাদের হাতে থাকে, তাদের পরিশুদ্ধ ও বিশেষ গুণের অধিকারী হতে হয়। কারণ, তুমি তাঁদের হাতে মানুষের রক্ত, সম্মান ও সম্পদ তুলে দিচ্ছ। তাই এখানেও আমরা সফলকাম হলাম না। অভ্যুত্থান ইখওয়ানরাই ঘটিয়েছিল। অর্থাৎ, অভ্যুত্থানের নায়কদের পক্ষে প্রচারণা ও তাদেরকে জনপ্রিয় ইখওয়ানরাই করেছিল।
ফারুক তাঁর জীবনীতে লিখেছে যে, ইখওয়ানুল মুসলিমীনরাই তাঁর সিংহাসন উল্টিয়ে দিয়েছে। ঐ সময় বিদ্রোহের নেতারা তাঁদের হাতের পুতুল বৈ কিছু ছিল না। আমি যদি জাহাজের ক্যাপ্টেনকে নিষেধ না করতাম, তাহলে ইখওয়ানুল মুসলিমীন জাহাজকে সাগরের মাঝে নিয়ে আমাকে ফেলে দিত।
ইসলামী আন্দোলনকে দমন করা হল এবং পুরো মুসলিম বিশ্বে বরং গোটা বিশ্বে এ খবর ছড়িয়ে পড়ল। দমন, নির্যাতন ও হত্যার পর ইসলামী আন্দোলন আর উঠে দাঁড়াতে পারল না। কারণ, তার হৃদপিণ্ড ও মূল দেহ মিশরে ছিল। আর তাঁর কিছু কোণা জর্ডান ও সিরিয়া ইত্যাদিতে আন্দোলিত হচ্ছিল।কিন্তু যতক্ষণ হৃদপিণ্ড যিন্দা না থাকে ও দেহ শক্তিশালী না হয়, ততক্ষণ প্রত্যঙ্গের নড়াচড়া কোন কাজ হয় না। গোটা দেহ আন্দোলিত না হলে একটি দুটি আঙ্গুলের আন্দোলনে কী হবে ?
সিরিয়াতে ইখওয়ানরা তাগুতের বিরুদ্ধে একাই লড়েছে। জনগণ তাঁদেরকে যথাযথ সমর্থন দেয়নি। সিরিয়ায় ইসলামী আন্দোলনের সন্তানদের ত্যাগ নজিরবিহীন, তাদের বীরত্ব ছিল অনন্য।

আফগান রণাঙ্গন

অতঃপর আফগানিস্তানের পরীক্ষা শুরু হয়। আফগানিস্তানের ইসলামী আন্দোলনের এ পরীক্ষা এখনও পর্যন্ত ইসলামী আন্দোলনের জগতে অনন্য। এখানে রাজনৈতিক নেতৃত্বই প্রথমে গুলি ছুড়েছেন, তারাই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। এরা রব্বানী, সাইয়াফ, হেকমতিয়ার। হেকমতিয়ারই কাবুলে ইসলামী আন্দোলনের সামরিক শাখার যিম্মাদার ছিলেন। আন্দোলনের প্রধান যিম্মাদার ছিলেন রব্বানীর সহকারী। সংগঠনের নাম ছিল আলজমইয়াতুল ইসলামিয়া। সাইয়াফ ছিলেন রব্বানীর সহকারী। অতঃপর সামরিক শাখার প্রধান হন ইঞ্জিনিয়ার হাবীবুর রহমান। তিনি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকও। তিনি সামরিক অভ্যুত্থানের জন্য সেনা কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করা শুরু করেন। আলহামদুলিল্লাহ সামরিক অভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়েছে। মিশরে আব্দুন নাসের নিয়ে ইখওয়ানের অভিজ্ঞতার পুনরাবৃত্তি ঘটেনি। ইঞ্জিনিয়ার হাবীবুর রহমান সেনা কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করলেন। কিন্তু আল্লাহ্র সিদ্ধান্ত ও হিকমতের কারণে এ ঘটনা ফাস হয়ে যায়।ফলে ইঞ্জিনিয়ার হাবীবুর রহমানকে গ্রেফতার করে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। অতঃপর তাঁকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়। আহমাদ শাহ মাসউদই ইঞ্জিনিয়ার হাবীবুর রহমানের নিকট সেনা কর্মকর্তাদের উপস্থিত করতেন। কারন, পাঞ্জশীরের অনেক লোকই সেনা কর্মকর্তা ছিল। কারাগার থেকে ইঞ্জিনিয়ার হাবীবুর রহমান তাঁর কাছে পত্র দিয়ে জানিয়েছিলেন, হেকমতিয়ারের সাথে সেনাকর্মকর্তাদের সাক্ষাৎ করিয়ে দিতে। হেকমতিয়ার সেনাকর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করলেন। পরে তা ফাস হয়ে যায়। ফলে অভ্যুত্থান হতে পারেনি। পরে সরকার হেকমতিয়ারের পেছনে একজন সেনাকর্মকর্তা নিয়োগ করে। ফলে তাঁরা যখনই অভ্যুত্থান ঘটাতে চেয়েছেন তখনই ব্যর্থ হয়েছেন, কারণ, সরকার অভ্যুত্থানের জন্যে নির্ধারিত ব্রিগেডকে অভ্যুত্থানে সময়ের একদিন পূর্বেই কাবুল থেকে অন্যত্র স্থানান্তর করত। এভাবে হেকমতিয়ারের তিনটি অভ্যুত্থান পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। পরে হেকমতিয়ার সামরিক অপারেশন অব্যাহত রাখার উপর জোর দেন এবং আফগানিস্তানের কয়েকটি গ্রুপ পাঠান। ঐ গ্রুপে মওলবী হাবীবুর রহমান ড.মুহাম্মদ উমর ও আহমদ শাহ মাসউদ ছিলেন। ড.উমরকে পাঠানো হত বাদখশানে এবং আহমদ শাহ মাসউদকে পাঠানো হত পাঞ্জশীরে। আহমদ শাহ মাসউদই দাউদ সরকারের ট্যাংক পুড়িয়েছিলেন। ফলে ইসলামী আন্দোলনের সকল সন্তানদের ধরে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়। কিন্তু তাঁদের এ প্রচেষ্টাগুলো আন্তরিক ও নিষ্ঠাপূর্ণ ছিল। তবে সে সময়ে এ প্রচেষ্টা পূর্ণ অভিজ্ঞতা ও পরিপক্কতার আলোকে ছিল না। এতে যারা বেঁচে যায়, তারা বেঁচে যায় আর যারা ধরা পড়ে তাঁরা কারাগারে নিক্ষিপ্ত হয়। আন্দোলনের নেতাদের হত্যা অব্যাহত থাকে। তবে তা প্রকাশ্যে নয়; কৌশলে, লুকিয়ে। অতঃপর দাউদের অভ্যুত্থান ঘটল। দাউদের অভ্যুত্থানের পর গোলাম মুহাম্মদ নিয়াযী ও সাইয়াফকে কারারুদ্ধ করা হয়। গোলাম মুহাম্মদ আন্দোলনের আধ্যাত্মিক পিতা ও প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে বিবেচিত হতেন। সাইয়াফ রব্বানীর সহকারী ছিলেন। হেকমতিয়ার ও রব্বানী রক্ষা পেয়ে পেশোয়ারে চলে আসেন। আন্দোলনের অর্ধেক বা অধিকাংশ নেতৃবৃন্দ কারাগারে নিক্ষিপ্ত হলেন। রব্বানী ও হেকমতিয়ার পেশোয়ারে বসে কতিপয় যুবকদের নিয়ে চিন্তা ভাবনা করতে লাগলেন। অতঃপর যখন তারাকীর অভ্যুত্থান ঘটল, তখন আলেমরা ফতোয়া দিলেন যে, সে কাফির তাঁর বিরুদ্ধে জ্বিহাদ ফরয। তখন লোকজন বিদ্রোহ শুরু করে। গ্রামের আলিমরা জ্বিহাদ শুরু করেন এবং সাধারণ লোকেরা তাঁদের পক্ষে অস্ত্রধারণ করে।

অতঃপর তাঁরা হয়তো হেকমতিয়ারের আলহিযবুল ইসলামীয়ে যোগ দিত নতুবা রব্বানীর আলজমইয়াতুল ইসলামিয়ায় যোগ দিত। এ দু’দলই জ্বিহাদের ময়দানে মূলস্তম্ভ বলে বিবেচিত হতে থাকে । এরপর সে দলগুলো জন্ম লাভ করেছে, তার কোন একটাই এ দু’দলের সাথে পাল্লা দিয়ে চলতে পারেনি। বছরের পর বছর জ্বিহাদ উন্নতি অর্জন করতে থাকে। তিন বছর পূর্বে ১৯৮৪-১৯৮৫ এ এক বছর কিছুটা শূণ্যতার সৃষ্টি হয় । অতঃপর জ্বিহাদ তাঁর পূণ্যময় যাত্রা অব্যাহত রাখে। এরপর যখন জিহাদ মুসলিম উম্মাহকে নাড়া দেয়া শুরু করে, পৃথিবীর প্রত্যেক মুসলমানের জন্য তা একটি জীবন্ত দৃষ্টান্তে পরিণত হয় এবং মুসলমানরা তা দ্বারা প্রভাবিত হওয়া ও তাঁর দিকে দলে দলে আগমণ করা শুরু করে, সৌদিআরব, কুয়েত ও আরব আমিরাত থেকে ব্যবসায়ীরা মুজাহিদ নেতাদের হাতে স্বহস্তে অর্থ প্রদান করতে আগমণ করে, তখন পশ্চিমারা তাঁদের হিসাব পর্যালোচনা শুরু করে।

জ্বিহাদ নিয়ে আমেরিকার রাজনীতি

এক ইয়াহুদী তাঁদের নেতাদের নিয়ে What We have Done? “আমরা কী করেছি?” শিরোনামে একটি রিপোর্ট পেশ করে। তাতে সে উল্লেখ করে যে, আমরা আমাদের শত্রুদের জাগ্রত করেছি। আমেরিকাসহ পশ্চিমারা চেয়েছিল রাশিয়া ও আফগানদের যুদ্ধের আগুনে নিক্ষেপ করতে। তারা চেয়েছিল তাঁদের প্রকৃত শত্রু আফগানিস্তান ও গতানুগতিক শত্রু রাশিয়ার ক্ষতি হোক। তারা আফগানিস্তান সমস্যার মাধ্যমে রাশিয়াকে চাপিয়ে রাখতে চায়। তাঁরা চায়, সবকিছুর সূত্র তাঁদের হাতেই থাকুক। আফগানিস্তান নিয়ে তাঁদের পরিকল্পনা ছিল তিনটি। প্রথম পরিকল্পনা হচ্ছে, জিহাদ শুধু রাশিয়াকে ক্লান্ত করে রাখার উপর সীমাবদ্ধ থাকুক। দ্বিতীয় পরিকল্পনা হচ্ছে, সব কিছুর সূত্র আমেরিকার হাতেই থাকুক। তৃতীয় পরিকল্পনা হচ্ছে, মুজাহিদরা তাঁদের জিহাদের ফলাফলে না পৌঁছুক। কিন্তু সূতা তাঁদের হাত থেকে ছুটে যায়। তবে এর অনেক কারণ রয়েছে। তন্মধ্যে মুসলমানদের জাগরণ, মুসলিম বিশ্ব থেকে আগত অর্থ ও জিয়াউল হকের উপস্থিতি অন্যতম। জিয়াউল হক সে মযলূম ব্যক্তি, যার মত লোক এ যুগের রাজনৈতিক অঙ্গনে আর আত্মপ্রকাশ করেনি। জিয়াউল হক আমেরিকার হাত থেকে ছুটে গেছেন। আমরা পাকিস্তানের মুসলমানদেরকে বলেছিলাম, আপনারা এ ব্যক্তির পাশে দাঁড়ান। আপনারা আর কী চান ? তিনি তো পৃথিবীর মুসলমানদের সবচেয়ে বড় সমস্যা ও বিপদের পাশে তাঁর সব কিছু নিয়ে দাঁড়িয়েছেন। আফগানিস্তানে যখন ইসলামের বিজয় অর্জন হবে, তখন তা হবে আপনাদেরই বিজয় অর্জন। আর যদি আফগানিস্তানে ইসলামের পরাজয় ঘটে, তাহলে আপনারা পাকিস্তানীরাই পরবর্তী টার্গেট হবেন। আফগানিস্তানের জ্বিহাদের কারণেই কম্যুনিস্টরা পাকিস্তানে চুপ হয়ে বসে আছে। অতএব, আল্লাহ না করুন যদি মুজাহিদরা পরাজয় বরণ করে তাহলে কম্যুনিস্ট নেতারা আপনাদের লোক দিয়ে আপনাদের মাঝে নিশ্চিত বিপ্লব ঘটাবে। অতঃপর পাকিস্তানের মুসলমানরাই তাঁদের যবাইর স্বীকার হবে।
কিন্তু পাকিস্তানের মুসলমানরা জিয়াউল হকের মাধ্যমে উপকৃত হতে পারেনি। আক্ষেপের বিষয় তাঁরা পাশ্চাত্যের প্রচার মাধ্যমের প্রচারণা ও জনপ্রিয়তা কামনা করে। অর্থাৎ, দূর থেকে তাঁরা এ অপবাদের ভয় করছে যে, তারা জিয়াউল হকের দালালি করছে।
জিয়াউল হক তাঁর শাহাদাতের কয়েক মাস পূর্বেই তাঁকে হত্যার ষড়যন্ত্র টের পেয়েছিলেন। তিনি তাঁর একজন কাছের বন্ধুকে বলেছিলেন যে, মার্কিনীদের পক্ষ থেকে আমাকে হত্যার সিদ্ধান্তে স্বাক্ষর করা হয়ে গেছে। জিয়াউল হকের মুখ থেকে সরাসরি শোনা একজন রাজনীতিকের নিকট আমি নিজেই শোনেছি যে, তিনি বলেছেন, আমাকে হত্যার সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে।
হয়তো এ কারণেই জিয়াউল হক তাঁর প্রতিটি সফরে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তাঁর সাথে রাখতেন, যাতে মরলে সেসহ মরেন। এ দ্বারা যেন তিনি মার্কিনীদের বলেছেন, তোমরা কি তোমাদের লোককেও বলি দিতে চাও ! আমি তো মরবই, সাথে সাথে তোমাদের একজনও আমার সাথে মরুক।
বাস্তবে আফগান জনগণ উদার ও বিশ্বাসভাজন। আমি উত্তর আফগানিস্তানে গিয়েছিলাম। দেখলাম জনসাধারণ আমাদেরকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য ঘর থেকে বের হয়ে এসেছে। লোকজন ও শিশুরা জমিয়ত ইসলামীর প্রধান অধ্যাপক রব্বানীকে অভ্যর্থনা জানাতে এসেছে তাঁর ছবি হাতে নিয়ে। রব্বানীর ছবির পাশে শোভা পাচ্ছে জিয়াউল হকের ছবি। বাস্তবেই আফগানরা তাঁকে আফগান জ্বিহাদের শহীদ বলে গণ্য করে। আর জিয়াউল হক নিহত হয়েছেন একমাত্র আফগান জ্বিহাদের কারণে। এখন হয়তো আমেরিকা জুনেজুর মত একজন দুর্বল রাজনীতিক অথবা শুকরের ন্যায় একজন পুতুল ও নষ্টা মহিলাকে ক্ষমতায় বসিয়ে আফগান জ্বিহাদের উপর আবারো তাঁর থাবা বিস্তার করতে সক্ষম হবে। ঐ মহিলার নাম বে নজীর । অর্থাৎ, লজ্জাহীনতায় যার কোন সদৃশ্য নেই । ‘বে’ অর্থ হচ্ছে ‘না’ ।

গৌরবময় ভূমিকা

জেনেভা চুক্তির পর আফগান জিহাদ এখন কোন পর্যায় গিয়ে পৌছেছে ? জেনেভা চুক্তির পর আমরা ভয় করেছিলাম যে, আফগান জিহাদকে গলাটিপে হত্যা করা হবে। বাস্তবেই এ পাকিস্তানী রাজনীতিকরা খুবই নির্বোধ। মার্কিনীরা যখনই তাঁদের দিকে তাকিয়ে বলে যে, আফগান সমস্যার সমাধান আমাদের চাহিদা মতেই হবে, তখন তারাও বলে, আফগান সমস্যার সমাধান জেনেভা চুক্তির ধারা মতেই হবে। জুনেজু বলেছে, আমি জানি জিয়াউল হক এ চুক্তি গ্রহণ করবে না।অবশ্যই, তিনি যে গাছ রোপনে অংশগ্রহণ করেছেন, সে গাছের ফল নিয়ে অন্যরা কাড়াকাড়ি করবে তা হতে পারে না। জিয়াউল হকের সবচেয়ে সফল কাজ হচ্ছে যে, তিনি তাঁর সামরিক সহকর্মীদের নিয়ে আফগান জ্বিহাদের পাশে গৌরবময় ভূমিকা পালন করেছেন। এটা যদি তাঁর ইতিহাস থেকে বাদ দেয়া হয়, তাহলে তাঁর আর উল্লেখযোগ্য কোন কাজই পাওয়া যাবে না। তিনি পাকিস্তানে বেলুচী, সিন্দী, পশতুন ও পাঞ্জাবীদের শান্ত রাখতে কিছু প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। তবে এসব সাগরে লাঙ্গল চালানো ও আকাশে চাষ করার মত। হ্যা ! আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা তাঁকে সর্বশ্রেষ্ঠ যে কাজের তাওফীক দিয়েছেন, তা হচ্ছে আফগান মুজাহিদদের পাশে সফল অবস্থান গ্রহণ।
তাঁর নিয়ত সম্পর্কে আল্লাহই ভাল জানেন। তবে যেটা আমাদের কাছে স্পষ্ট, তা হচ্ছে তিনি নিষ্ঠাবান ও সত্যবাদী ছিলেন। তিনি ইসলামী জ্বিহাদের ব্যাপারে সত্যিকারের মুসলমানের ভূমিকা পালন করেছেন। জিহাদের পাশে অবস্থান গ্রহণ করে তিনি অনেক লাভবান হয়েছেন। আমি বিভিন্ন সেমিনার ও সমাবেশে তাঁর বক্তব্য কয়েকবার শুনেছি। তার কথা শোনার সময় তোমার মনে হবে যে, তিনি কোন রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নয়, তিনি একজন মিম্বরের খতীব ও একজন দাঈ। তার এ বক্তব্য লিখিত কোন বক্তব্য ছিল না, অন্তর থেকে বলতেন। তাই টেলিভিশনে প্রচারিত তাঁর অনেক বক্তব্য এমন ছিল যে, বড় বড় দাঈরা তাঁদের সঙ্কীর্ণ ও চাপপূর্ণ পরিবেশে থেকে ঐ ধরণের বক্তব্য দিতে সক্ষম হবেন না। জিয়াউল হক জুনেজুর সরকারের পতন ঘটিয়ে দ্বিতীয় বার ক্ষমতা গ্রহণের কয়েকদিন পূর্বে করাচীতে একটি ইসলামী সম্মেলনে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। সেখানে কথিত একজন ইসলামী দাঈ বক্তব্য রাখতে গিয়ে গর্বাচেভের প্রশংসা করলে এবং বলল, আমাদের উচিত গর্বাচেভের শুকরিয়া আদায় করা। কারণ,তিনি শান্তিপ্রিয় লোক বলেই আফগানিস্তান থেকে সৈন্যদের ফিরিয়ে নেয়ার দৃঢ় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন।
তাঁর বক্তব্যের পর জিয়াউল হক দাঁড়িয়ে বললন, ‘কেন আমরা গর্বাচেভের শুকরিয়া আদায় করবো ? সে তো একজন ডাকাত, যে ঘরে ঢুকে ঘরের আসবাবপত্র জ্বালিয়ে দিয়ে ও ঘরের মালিকে হত্যা করে বের হয়ে গেছে। এ রকম ডাকাত কি শুকরিয়া পাওয়ার যোগ্য নাকি লা’নত পাওয়ার যোগ্য?’ এটা কি কোন দেশের প্রেসিডেন্টের কথা ? না, এটা কোন দেশের প্রেসিডেন্টের কথা নয়, এটা একজন খতীবের কথা।
বাস্তবে তিনি তাঁর জীবনের শেষের তিন মাস সর্বাধিক স্বচ্ছ ও অকৃত্রিম জীবন যাপন করেছেন। আমাদের আশা আল্লাহ্ তাঁকে শহীদ হিসেবে কবুল করেছেন। তিনি আফগান জ্বিহাদের কারণেই নিহত হয়েছেন। আর তাঁকে হত্যা করেছে আমেরিকানরাই, রাশিয়া বা ভারত নয়। রাজনৈতিক রিপোর্টগুলোর শতকরা পঁচানব্বই ভাগেরও অধিক রিপোর্ট সাক্ষ্য দেয় যে, আমেরিকানরাই তাঁকে বহনকারী বিমানটি ধবংস করেছে। বিমানটি উড়ে যাওয়ার সাথে সাথেই চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যায়। কে জানে এটা কাদের মাধ্যমে করানো হয়েছে। শিয়া, ইসমাঈলিয়া গ্রুপ, বাহাঈ গ্রুপ নাকি কাদিয়ানীদের মাধ্যমে করানো হয়েছে- তা আমরা এখনো পর্যন্ত জানতে পারিনি। তবে এটা নিশ্চিত যে বিমানটি ধবংস করা হয়েছে সিআইএর ইঙ্গিতেই। তবে তাঁদের লোককে বলি দেওয়ার কারণ হল, জিয়াউল হক মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে সব সময় কাছে রাখতেন। যে মার্কিন রাষ্ট্রদূত তাঁর সাথে নিহত হয়েছে , তাঁর নাম রূহফিল। সে নামে খৃষ্টান হলেও বাস্তবে ইয়াহুদী। সে তুরস্ক, ইরান ও অতঃপর পাকিস্তানে দায়িত্ব পালন করে। জিয়াউল হককে হত্যা করার জন্য তাঁর মত লোককে বলি বানানো মার্কিনীদের জন্য কোন ব্যাপার নয়।
জেনেভা চুক্তির পর আফগান জ্বিহাদ এখন কোন পর্যায়ে এসে পৌছেছে ? জেনেভা চুক্তির পর জুনেজু চেয়েছিল তা বাস্তবায়ন করতে। কিন্তু জিয়াউল তা ভুলে যেতে চেয়েছেন। ফলে সে বলল, আমি জাতিসংঘ, রাশিয়া ও আমেরিকার কাছে রিপোর্ট দেব যে, তুমি জেনেভা চুক্তির ধারাগুলো প্রয়োগ করতে চাও না। জিয়াউল হক বললেন, আমি আজীবন লাঞ্চিত হয়ে বেঁচে থাকতে চাই না।আমরা ভয় করেছিলাম পাকিস্তান সীমান্ত বন্ধ হয়ে যাবে। কিন্তু আলহামদুলিল্লাহ বন্ধ হয়নি।

কন্টকাকীর্ণ পথ


সত্যের পথের অনুসারী যেখানেই আছে, সেখানে সত্যের বিজয় অবশ্যম্ভাবী। তবে তা কষ্ট, পরীক্ষা, শহীদের রক্ত প্রবাহ ও লাশ ক্ষত-বিক্ষত হওয়ার পর। এটা আল্লাহ্র চিরন্তন রীতি। এ রীতি ও নীতির কোন পরিবর্তন নেই। এটা সর্বদা স্থির, এদিক-সেদিক হবার নয়।

কণ্টকাকীর্ণ পথ

সত্যের পথের দাওয়াতের সূচনা হয় কষ্ট, বিপদ ও পরীক্ষার মধ্য দিয়ে। এতে করে সত্যের পথের যাত্রীদের কাতার পরিচ্ছন্ন হয়, অন্তর পরিশুদ্ধ হয়। কষ্ট ও বিপদের সুকঠিন পরীক্ষায় যারা দুর্বল তাঁরা ঝরে যায় ও যাদের ঈমান ও বিশ্বাস মজবুত দৃঢ়পদ থাকে। আর যারা দৃঢ়পদ থাকে, তাদের মাধ্যমেই আল্লাহ্ তাঁর দ্বীনকে সাহায্য করেন এবং তাঁদেরকে দান করেন পৃথিবীর কর্তৃত্ব ।

শুনুন আল্লাহর অঙ্গীকারের কথা-
وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنكُمْ وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِي الْأَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ وَلَيُمَكِّنَنَّ لَهُمْ دِينَهُمُ الَّذِي ارْتَضَىٰ لَهُمْ وَلَيُبَدِّلَنَّهُم مِّن بَعْدِ خَوْفِهِمْ أَمْنًا ۚ يَعْبُدُونَنِي لَا يُشْرِكُونَ بِي شَيْئًا ۚ وَمَن كَفَرَ بَعْدَ ذَٰلِكَ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ [٢٤:٥٥]
“তোমাদের যারা ঈমান এনেছে ও ভাল কাজ করছে, তাদেরকে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআলা ওয়াদা দিচ্ছে যে, তিনি তাঁদেরকে অবশ্যই পৃথিবীতে কর্তৃত্ব দান করবেন , যেমন কর্তৃত্ব দান করেছিলেন তিনি তাঁদের পূর্ববর্তীদেরকে এবং তিনি প্রতিষ্ঠিত করবেন তাঁদের দ্বীনকে, যা তিনি তাঁদের জন্য পছন্দ করেছেন। আর তাঁদের ভীতিকে নিরাপত্তা ও প্রশান্তিতে পরিবর্তন করে দিবেন। তারা আমারই ইবাদত করবে এবং আমার সাথে অন্য কোন কিছুকে (কোন দিক দিয়ে) শরীক করবে না।”[নূরঃ৫৫]।


সত্যের অনুসারীদের এ যাত্রা গৌরবের যাত্রা, এ যাত্রা মুসলিম উম্মাহর যাত্রা, যার সংগ্রামের সূচনাভূমি আফগানিস্তান, যার মধ্যে রেনেসাঁ ফিরে এসেছে আফগানিস্তানকে কেন্দ্র করে। এ সংগ্রামের পদ্ধতি ও কৌশল সত্যের সন্ধানী সকলের জন্য অদ্বিতীয় ও অতুলনীয় আদর্শ। পূণ্যময় এ সংগ্রামের প্রাথমিক পদক্ষেপ ও অবস্থা যারা দেখেছেন, তারা জানেন কী কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করে এ পথের বীর সেনানীরা সামনে এগিয়ে চলেছেন। অধ্যাপক বুরহানুদ্দীন রব্বানী জানেন, যখন তাঁরা পেশোয়ারে অবস্থান করছিলেন এবং ছাদবিহীন একটি কক্ষে কিছু যুবকদের নিয়ে থাকতেন। প্রতিদিন দুপুরের দিকে তিনি এসে কিছু আছে কি না জিজ্ঞেস করলে অধিকাংশ সময় না সূচক উত্তরই দিতে হত। ফলে সারাদিন সকলেই অনাহারে কাটাতেন। অধ্যাপক রব্বানী এবং প্রথম দিকের পরিস্থিতি প্রত্যক্ষকারী সকলেই জানেন কী যন্ত্রণাময় ছিল এ সংগ্রামের সূচনাকারীদের জীবন। তারা যখন তাঁদের সমস্যার কথা তুলে ধরতে সৌদিআরব যেতেন, তখন তাঁদের হোটেল ভাড়া সেয়ার সামর্থ্য ছিল না। বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে কোন ছাত্রের খাটেই তাঁরা রাত কাটাতেন।
অধ্যাপক রব্বানীই জানেন, যখন তাঁরা দাউদের সৈন্যদের বড় কোন ক্যাম্পে হামলা চালানোর জন্য একটি বা দু’টি বোমা দিয়ে ড. মুহাম্মদ উমরকে বাদাখসান, মৌলভী হাবীবুর রহমানকে লাগমান ও আহমাদ শাহ মাসউদকে পাঞ্জাশীরের দিকে পাঠাতেন, তখন তাঁরা তাঁদের ক্যাম্পগুলো পাহারা দেয়ার জন্য বন্দুক না পেয়ে লাঠি ও পাথর দিয়েই পাহারা দিতেন। তাদের ধৈর্য্য জ্বিহাদের দীর্ঘ এ পথে প্রদীপের কাজ দিয়েছে। এখন সে অবস্থা আর নেই।
আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআলা তাঁদের বিজয় দান করেছেন এবং পৃথিবী তাঁদের সম্মান করছে । সেদিন তাঁরা বলেছিলেন, আমরা এখানেই থাকব, আমরা মুসলমান এবং আমাদের মাথা রাব্বুল আলামীন ব্যতীত কারও সামনে নত করব না। তারা তাঁদের মাথা তুলে দাড়িয়েছিলেন। ফলে তাঁদের সাথে বিশ্বের আরো লক্ষ কোটি মুসলমানও মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিল। তাঁরা দৃঢ়পদে দাঁড়িয়েছিলেন। ফলে বিভিন্ন জায়গার মানুষের মাঝে এ চেতনা ছড়িয়ে পড়ে। ধীরে ধীরে তাঁরা এ পবিত্র জ্বিহাদের ব্যাপারে জানতে আগ্রহী হয়ে উঠে। ‘আল জ্বিহাদ’ ও ‘আলবুনয়ানুল মারছূছ’ সাময়িকী কবে বের হয়ে তাঁদের কাছে পৌছবে সে অপেক্ষায় থাকে। কোন মুজাহিদের ক্যাসেট, ফিল্ম কিংবা আফগানিস্তান থেকে আসা কোন মানুষের খবর পেলে তাঁরা দৌড়ে আসে। মুসলিম বিশ্ব তাঁদের পাশে এসে জড়ো হচ্ছে বরং কাফির মুসলিম সবাই তাঁদের খেদমত করতে চাচ্ছে ।কিছুদিন পূর্বেও পৃথিবীর কোথাও কোন সরকার তাঁদেরকে বিমান বন্দর , গেষ্ট হাউস কিংবা তাঁদের দফতরে আলোচনার জন্য স্বাগত জানায়নি। এখন পৃথিবীর সকল শক্তি তাঁদেরকে দেখার জন্য ও তাঁদের কথা শোনার জন্য আগ্রহী হয়ে উঠেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিগ্যান তাঁদের সাথে বৈঠক করার জন্য বহুবার চেষ্টা করেছে। কিন্তু তাঁরা কথিত এ বিশ্ব নেতার সাথে বৈঠকে বসতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তাদের সাথে সাংবাদিকের সাক্ষাতের পর স্থানীয় পত্রিকাসমূহ লিখেছে ‘ এরাই পৃথিবীর সর্বপ্রথম প্রতিনিধি দল,যারা রিগ্যানের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন ‘ ।
আল্লাহ্ তাঁদেরকে এখন বিজয় ও সাফল্য দান করেছেন। চূড়ান্ত সফলতা তাঁদের পদচুম্বন করতে অতি নিকটবর্তী। বিজয়ের ফল পরিপক্ক হয়ে তাঁদের নাগালে এসে পৌঁছেছে । আর গোটা পৃথিবী এ সুফল ভোগ করতে লোভাতুর হয়ে আছে। যদিও এর প্রকৃত মালিক মুজাহিদ ও তাঁদের সাহায্যকারীগণ এখনো এ ফল উপভোগ করতে পারেননি। মুসলিম উম্মাহর সকল সদস্য তাঁদের পাশে রয়েছে। কিন্তু মুসলিম দেশের শাসকরা কথিত (মার্কিন) বিশ্ব নেতার ভয়ে এ ব্যাপারে ভীত ও আতংকিত এবং উম্মাহর স্বার্থ বিরোধী ভূমিকায় লিপ্ত। তবে যে আল্লাহ্ দুর্বল থাকাবস্থায় আমাদের সাহায্য করেছেন, তিনি (যদি চান) আমাদেরকে শক্তিশালী হওয়ার পরও সাহায্য করবেন। আমাদের প্রভু আকাশ ও পৃথিবীরও প্রভু।


وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُعْجِزَهُ مِن شَيْءٍ فِي السَّمَاوَاتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ ۚ إِنَّهُ كَانَ عَلِيمًا قَدِيرًا [٣٥:٤٤]
“আকাশসমূহ ও পৃথিবীর কোন বস্তুই আল্লাহকে দুর্বল করার নয়। নিঃসন্দেহে তিনি সর্বজ্ঞাত ও সর্ব বিষয়ে ক্ষমতাবান। ”[আল-ফাতিরঃ৪৪]


ইসলামের শত্রুরা এ জ্বিহাদের ভয়াবহতা উপলব্ধি করেছে তখন, যখন তাঁরা এ জিহাদকে এমন একটি বিদ্যালয় রূপে দেখতে পেল, যাতে ছাত্র হয়ে প্রবেশ করছে মুসলিম বিশ্ব। তাঁরা এ জিহাদকে দেখতে পেল এমন একটি চূড়া ও আলোক স্তম্ভ বা লাইট হাউস রূপে, যা দেখে পথ চলছে মুসলিম উম্মাহর সকল সন্তানেরা । তারা দেখতে পেল একটি সম্প্রদায়ের লড়াই থেকে আফগানিস্তানের এ জ্বিহাদ বিশ্ব জিহাদে রুপান্তরিত হচ্ছে আর এ জ্বিহাদের প্রতিক্রিয়া গিয়ে প্রতিফলিত হচ্ছে পৃথিবীর নির্যাতিত জনগণের উপর। যার ফলে আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, পোল্যান্ড ও পবিত্র ভূমি ফিলিস্তিনে গণজাগরণ ও আন্দোলন শুরু হয়েছে। সুতরাং-
‘ইয়াহুদীরা ! খাইবার থেকে বিতাড়িত হওয়ার কথা স্মরণ কর। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দ্বীন পৃথিবীতে পুনরায় বিজয়ের পতাকা উড়বে ‘।

জ্বিহাদের প্রতি বিদ্বেষ ছড়ানো

হ্যাঁ ! এ জ্বিহাদের ব্যাপারে বিশ্বব্যাপী একটি আতংকও সৃষ্টি হয়েছে। তাই তাঁরা ইসলামের সন্তানেরা অন্তরে গ্রথিত জিহাদের এ পবিত্র শপথকে বিনাশ করার জন্য বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করেছে। ষ্টিংগার ক্ষেপণাস্ত্রের বিষয়টি গোটা বিশ্বের সাংবাদিকদের গল্পগুজবের বস্তু হয়ে দাড়িয়েছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে এসে দাড়িয়েছে যে, এ পবিত্র জ্বিহাদ সিআইএ কর্তৃক পরিচালিত একটি মার্কিন খেলায় পরিণত হয়েছে।
মুজাহিদদেরকে কলঙ্কিত করতে তাঁরা বিভিন্ন নেতিবাচক ছবি তুলে মুজাহিদদের নামে প্রচার করছে। এ উদ্দেশ্যে তাঁরা একটি ছবি তৈরী করেছে এভাবে যে, জনৈক আবদুল কাদীর নামের কান্দাহারের একজন ডাকাত মাদক সেবন করছে। এরপর সে একটি ক্যাম্পে হামলা করছে। ওরা আফগানিস্তানের জিহাদকে কতিপয় মাদকসেবী আবদুল কাদীর প্রমুখের ব্যাপারে পরিণত করেছে, যারা মাদক ক্ষেত ধবংস ও নিষিদ্ধ করতে আসা কম্যুনিজমের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এদের শিরা উপশিরায় চলাচল করা সুপ্ত জ্বিহাদ বিদ্বেষের ঘৃণ্য প্রকাশ ঘটেছে আই.আর.সির হাসপাতালে। এ হাসপাতালে চিকিৎসা গ্রহণ করতে যাওয়া মহিলাদের শতকরা সাইত্রিশ জনের জরায়ু কেটে ফেলা হয়েছে যাতে তাঁরা আর কখনো সন্তান জন্ম দিতে না পারে। উম্মাহর বীর সন্তানদের অন্তরে সৃষ্ট কিতালের ভালবাসার প্রতি খৃষ্টবাদীদের সুপ্ত বিদ্বেষ তখন দেখা গেছে, যখন তাঁরা কান্দাহারে আহত মুজাহিদদের সেবা করতে গিয়ে বলল, তোমরা তো বড্ড বোকা। রাশিয়ার বিরুদ্ধে কেন লড়াই করছ?এখন যে তোমার পা কেটে গেছে তাঁর জন্য তো তোমাকে আজীবন বেকার ও পরের বোঝা হয়ে থাকতে হবে !
আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের রূপ এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি। এ ষড়যন্ত্রকারীরা জার্মান ও জাপানের মত আফগানিস্তানকেও অস্ত্রমুক্ত করতে চায়। জার্মানরা যখন ১৯১৪ সনে প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করল এবং এরপর ২৫ বছরের ব্যবধানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করল, তখন তাঁরা বলল, জার্মানদের অন্তরে সৃষ্ট যুদ্ধের দাবানল নিভিয়ে ফেলার জন্য তাঁদেরকে খন্ড বিখন্ড করার বিকল্প নেই। তাঁরা জার্মানদেরকে দু’ভাগে ভাগ করে ফেলল। এক ভাগ রাশিয়ার ও আরেক ভাগ আমেরিকার। অতঃপর তাঁরা জার্মানদেরকে অর্থ ও কারিগরী কাজে ডুবিয়ে রাখে এবং অস্ত্র মুক্ত দেশে পরিণত করে। এভাবে তাঁরা সফল হলে আফগানিস্তানেও অর্থ ও শিল্প কাজে ডুবিয়ে রাখবে। আমি মনে করি ইনশাআল্লাহ্ তাঁরা সফলকাম হবে না। আল্লাহ তাঁদের ষড়যন্ত্র তাঁদের দিকেই ছুড়ে মারবেন।
وَاللَّهُ غَالِبٌ عَلَىٰ أَمْرِهِ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ [١٢:٢١]
“আল্লাহ্ তাঁর কাজে সফল। কিন্তু মানুষের অধিকাংশই তা জানে না।”[ইউসুফঃ২১]।
আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের (ওগঋ) নিকট তাঁরা প্রস্তাব রাখছে আফগানিস্তানকে অর্থ , কারিগরী ও চাষাবাদ প্রকল্পে ডুবিয়ে রাখতে এবং অস্ত্র মুক্ত করতে। ফলে আফগানিস্তান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়বিহীন দেহে পরিণত হবে। কারণ, তারা বিগত শত বছরে কয়েকবার আফগানদের হাতে মার খেয়েছে। এ যুদ্ধ ইউরোপিয়ানদের বিরুদ্ধে আফগানদের চতুর্থ যুদ্ধ। সকল যুদ্ধে তাঁরা আফগানদের হাতে পরাজিত হয়েছে।

আফগানদের প্রতিরোধ যুদ্ধসমূহ

১৮৪২ খ্রিস্টাব্দে আফগান মুসলিম জনতা ১৭ হাজারের ব্রিটিশ বাহিনীকে সম্পূর্ণ রূপে খতম করেছে। কেবল ডা. ব্রাইডান নামের একজনকে না মেরে জীবিত রেখেছিল, যাতে সে মানুষের কাছে তাঁদের নির্মম পরাজয়ের কথা প্রচার করতে পারে।
১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে চার হাজারের ব্রিটিশ বাহিনী কাবুলে খতম হওয়ার পর তাঁরা বুখারায় আশ্রয় গ্রহণকারী একজন বন্দী নেতা আবদুর রহমান খানকে আফগানিস্তানের ক্ষমতায় বসায়, যাতে সে ব্রিটিশদের ক্রীড়ানক হিসেবে কাজ করতে পারে। ১৯১৯ সালে যখন আফগান ইসলামী বাহিনী ভারতের সীমানা পার হয়ে ‘তিল’ পর্যন্ত পৌঁছে যায় এবং ইংরেজ সরকার তাঁদের দ্বিতীয়বার দিল্লী পৌঁছে যাওয়ার আশংকা করল, তখন টিসার্সেল লন্ডন থেকে আফগানিস্তানের স্বাধীনতা ঘোষণা করে।
অতঃপর ধর্মহীন একজন আমানুল্লাহ খানকে আফগানিস্তানের ক্ষমতায় বসায়, যে আফগানিস্তানকে কামাল আতাতুর্কের তুরস্কের পথে নিয়ে যেতে চেয়েছিল।

জোট সরকার কী?

এখন হেলমন্দ, কান্দাহার ও অন্যান্য অঞ্চল যখন শহীদের রক্তস্নাত হয়েছে ও শহীদের লাশ পড়তে পড়তে যখন আফগানিস্তানের মাটি লাশের স্তুপ থেকে লাশের পাহাড় বহন করে চলছে, তখন তাঁরা আবারো জ্বিহাদের পূর্বেকার অবস্থাকে স্বাগতম জানিয়ে আফগানিস্তানে প্রবেশ করতে চাচ্ছে। সেদিন জহির শাহ লাঞ্চিত ও অপদস্ত হয়ে আফগানিস্তান থেকে বের হয়ে গিয়েছিল। জহির শাহ এখন ইটালিতে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় আছে। তার নিরাপত্তা ব্যবস্থা এখন কাবুলে বাদশাহ থাকাকালীন নিরাপত্তা ব্যবস্থার চেয়ে আরো মজবুত করা হয়েছে। জহির শাহর নিরাপত্তা সহায়তার জন্য ইটালিতে যেতে চাইলে এখন কাউকে ভিসা দেয়া হয় না। এরা কেন জহির শাহ ও তাঁর সগোত্রীয়দের যেমন আবদুল হাকীম তবিবী আফগানিস্তানে ফিরিয়ে আনতে চায় ? এ আবদুল হাকীম তবিবী সম্পর্কে দু’জন মুজাহিদ নেতা বলেন ‘আমরা সুইজারল্যন্ডে একটি গাড়ীতে করে তাঁর সাথে যাচ্ছিলাম। যখন আমরা খৃষ্টানদের একটি কবরস্থান দিয়ে যাচ্ছিলাম, তখন তিনি সেদিকে তাকালেন এবং আমাদেরকে বললেন, দেখ কবরের উপর ফুলের তোড়া কেমন সুন্দর লাগছে ! আমরা বললাম এটা খৃষ্টান কবরস্থান। এখানে অভিশাপ পড়ছে এবং রাত দিন আল্লাহ্র আযাব অবতীর্ণ হচ্ছে। তিনি আবারো বললেন দেখ এসব ফুল ও সৌন্দর্যের দিকে ‘। হ্যাঁ ! ওরা আফগানিস্তানের ক্ষমতা গ্রহণের জন্য এ ধরণের লোকের নামই প্রস্তাব করছে !
ধর্মনিরপেক্ষবাদীদের অনেকে এখন বলছে জোট সরকার কায়েম কর। কোয়ালিশন সরকার কী?জোট সরকার মানে হচ্ছে মুজাহিদ ও কম্যুনিস্টদের যৌথ সরকার। এ সরকার যেন এমন, যার প্রেসিডেন্ট আবু জাহল, প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, স্বাস্থ্যমন্ত্রী আবু বকর রদিয়াল্লাহু আনহু ও শিক্ষামন্ত্রী আবু লাহাব। অর্থাৎ,জোট সরকার এমনই সরকার, যেখানে কুফর ও ইসলাম একাকার হয়ে যায়। হয়তো এরা একে ভবিষ্যতে কম্যুনিস্ট-ইসলামিক সরকার নামে অভিহিত করবে। নিরপেক্ষ সরকার মানে হচ্ছে ফুলের তোড়া দেখে খৃষ্টানদের কবরস্থানে দাফন হতে চাওয়া। আবদুল হাকীম তবিবীদেরকে দিয়ে সরকার গঠন করা, যাদের না আছে কোন আত্মমর্যাদাবোধ, না আছে পৌরুষ, না আছে তাঁদের দ্বীন-ধর্ম। দশটি বছর লাগাতার খুন ঝরেছে, লাশ পড়েছে ও ইজ্জত সম্মান লুণ্ঠিত হয়েছে। কিন্তু এ করুণ পরিস্থিতি তাঁদের কেশাগ্রও স্পর্শ করেনি। তাঁদের চোখে পানি আসেনি এবং শরীর থেকে এক ফোটা ঘামও ঝরেনি।
কারা ওরা? নিরপেক্ষা সরকার সেটা আবার কী? তৃতীয় পক্ষ আবার কোথাকার? এখানে কেবল দুটিই পক্ষ। একটি ইসলাম ও আরেকটি কুফর, একটি ঈমান ও আরেকটি নাস্তিকতা, একটি কম্যুনিস্ট ও আরেকটি মুসলিম। এখানে তৃতীয় পক্ষ বলতে কোন কিছু নেই। একটি শয়তানের দল ও আরেকটি রহমানের দল, একটি আল্লাহ্র বাহিনী ও আরেকটি লেনিন-ষ্টালিনের বাহিনী। এ দু’দলের মাঝে তৃতীয় কোন দল নেই। নিরপেক্ষতা ও তৃতীয়পক্ষ ইত্যাদি সব রাজনৈতিক পুতুল খেলা। জ্বিহাদ অবশ্যই চলতে হবে। পাকিস্তান এখন তাঁদের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু রব্বুল আলামীনের দরজা সব সময় উন্মুক্ত। মুসলিম রাষ্ট্রগুলো তাঁদের সাহায্য বন্ধ করে দিয়েছে, মুসলমানদের সাহায্যের হাত জ্বিহাদ থেকে গুটিয়ে নেয়া হয়েছে। কিন্তু আকাশ ও পৃথিবীর সব ধন আল্লাহ্র হাতে, তাঁর হাতেই সব কিছুর চাবিকাঠি ।


قُلِ اللَّهُمَّ مَالِكَ الْمُلْكِ تُؤْتِي الْمُلْكَ مَن تَشَاءُ وَتَنزِعُ الْمُلْكَ مِمَّن تَشَاءُ وَتُعِزُّ مَن تَشَاءُ وَتُذِلُّ مَن تَشَاءُ ۖ بِيَدِكَ الْخَيْرُ ۖ إِنَّكَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ [٣:٢٦]
“বলুন,হে যাবতীয় ক্ষমতার মালিক আল্লাহ্ ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা দান কর এবং যার কাছ থেকে ইচ্ছা ছিনিয়ে নাও; আর যাকে ইচ্ছা সম্মান দাও এবং যাকে ইচ্ছা অসম্মান কর। তোমার হাতেই কল্যাণের চাবিকাঠি এবং নিঃসন্দেহে তুমি সর্ববিষয়ে ক্ষমতাবান।”[আলে ইমরানঃ২৬]।
هُمُ الَّذِينَ يَقُولُونَ لَا تُنفِقُوا عَلَىٰ مَنْ عِندَ رَسُولِ اللَّهِ حَتَّىٰ يَنفَضُّوا ۗ وَلِلَّهِ خَزَائِنُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَلَٰكِنَّ الْمُنَافِقِينَ لَا يَفْقَهُونَ [٦٣:٧]
“তারাই বলেছে, আল্লাহর রসূলের নিকট যারা অবস্থান করছে তাঁদের জন্য ব্যয় করো না। এতে তাঁরা চলে যাবে। কিন্তু আকাশ সমূহ ও পৃথিবীর যাবতীয় কিছুর চাবিকাঠি যে আল্লাহ্র হাতে সে কথা মুনাফিকরা উপলব্ধি করতে পারছে না। ”[সূরা আল-মুনাফিকূনঃ৭]।


তাঁর হাতেই সাহায্য, সবকিছু তাঁর ইচ্ছায়ই হয়, তিনিই সবকিছু নাড়া-চাড়া করেন, তার ইচ্ছার পরিবর্তন ও বিরোধীতাকারী কেউ নেই।

হে আফগান নেতৃবৃন্দ

হে আফগান নেতৃবৃন্দ ! রক্তের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করুন। আল্লাহকে ভয় করুন অশ্রু ও খন্ড বিখন্ড লাশের ব্যাপারে। জিহাদ অব্যাহত রাখুন। ইনশাআল্লাহ্ ! আমরা আপনাদের সাথে আছি।আমরা আপনাদেরকে কখনো অসহযোগিতা করব না। আমরা সব সময় আপনাদের পাশেই থাকব ইনশাআল্লাহ্।
“মুসলমান পরস্পর ভাই। কেউ তাঁর ভাইকে শত্রুর হাতে ছেড়ে দেয় না ও তাঁর উপর যুলুম করে না।”[বুখারী ও মুসলিম]
আমরা আপনাদেরকে মধ্যপথে ছেড়ে চলে যাব না। আল্লাহর কাছে দৃঢ়তা কামনা করি।ইনশাআল্লাহ্, সবাই অস্ত্র ত্যাগ করলেও আমরা অস্ত্র হাত থেকে ফেলবো না। আল্লাহ্ বলছেন-


وَلَيَنصُرَنَّ اللَّهُ مَن يَنصُرُهُ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ [٢٢:٤٠]
“আল্লাহ্ তাঁকে অবশ্যই সাহায্য করবেন যে তাঁকে সাহায্য করে। নিঃসন্দেহে আল্লাহ্ শক্তিবান ও ক্ষমতাধর”[হজঃ৪০]।
আল্লাহ্র উপর তাওয়াক্কুল করুন এবং পূণ্যময় যাত্রা অব্যাহত রাখুন। কয়েক কদম সামনেই সাহায্য অপেক্ষা করছে।
আল্লাহ্ বলেছেন-
وَاللَّهُ مَعَكُمْ وَلَن يَتِرَكُمْ أَعْمَالَكُمْ [٤٧:٣٥]
“আল্লাহ্ তোমাদের সাথে রয়েছেন। তিনি কখনো তোমাদের কর্মের প্রতিদান হ্রাস করবেন না ”[মুহাম্মদঃ৩৫]
তিনি আরো বলেছেন-
أَلَيْسَ اللَّهُ بِكَافٍ عَبْدَهُ ۖ وَيُخَوِّفُونَكَ بِالَّذِينَ مِن دُونِهِ ۚ وَمَن يُضْلِلِ اللَّهُ فَمَا لَهُ مِنْ هَادٍ [٣٩:٣٦]
وَمَن يَهْدِ اللَّهُ فَمَا لَهُ مِن مُّضِلٍّ ۗ أَلَيْسَ اللَّهُ بِعَزِيزٍ ذِي انتِقَامٍ [٣٩:٣٧]
وَلَئِن سَأَلْتَهُم مَّنْ خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ لَيَقُولُنَّ اللَّهُ ۚ قُلْ أَفَرَأَيْتُم مَّا تَدْعُونَ مِن دُونِ اللَّهِ إِنْ أَرَادَنِيَ اللَّهُ بِضُرٍّ هَلْ هُنَّ كَاشِفَاتُ ضُرِّهِ أَوْ أَرَادَنِي بِرَحْمَةٍ هَلْ هُنَّ مُمْسِكَاتُ رَحْمَتِهِ ۚ قُلْ حَسْبِيَ اللَّهُ ۖ عَلَيْهِ يَتَوَكَّلُ الْمُتَوَكِّلُونَ [٣٩:٣٨]
“আল্লাহ্ কি তাঁর বান্দার জন্য যথেষ্ট নয় ? তাঁরা আপনাকে সৃষ্টির ভয় দেখাচ্ছে। আল্লাহ যাকে পথ ভ্রষ্ট করেন, তাকে পথ দেখানোর কেউ নেই। আর আল্লাহ্ যাকে পথ দেখান, তাকে পথভ্রষ্ট করার কেউ নেই। আল্লাহ্ কি শক্তিধর ও প্রতিশোধ গ্রহণকারী নন ? আর আপনি যদি তাঁদেরকে প্রশ্ন করেন, পৃথিবী ও আসমান সমূহকে কে সৃষ্টি করেছে  ? তাহলে তাঁরা নির্দ্বিধায় বলবে আল্লাহ।তাঁদেরকে বলুন, তোমরা কি ভেবে দেখেছ আল্লাহ ছাড়া যে সব বস্তুকে তোমরা ডাক তাঁরা কি আল্লাহ আমার কোন ক্ষতি করতে চাইলে সে ক্ষতি থেকে আমাকে বাঁচাতে পারবে ? অথবা যদি তিনি আমার উপর কোন অনুগ্রহ করতে চান, সে অনুগ্রহকে রোধ করে দিতে পারবে ? বলুন আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট। ভরসাকারীরা তাঁর উপরই ভরসা করে।”[সূরা যুমারঃ৩৬-৩৮]।


তাঁরা আল্লাহ্র অনুগ্রহকে রোধ করতে পারবে না এবং আল্লাহ্র ক্ষতি থেকে বাঁচাতে পারবে না।অতএব বলুন- ‘আমাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট’।
আর হে আরব যুবকেরা তোমরা দুনিয়াকে তালাক দিয়ে দাও। পথ চল এবং সীমান্ত অতিক্রম কর। তাহলে দু’কল্যাণের কোন একটি প্রাপ্ত হবে। হয়তো বিজয় নতুবা আল্লাহর ইচ্ছায় শাহাদাত বরণ। তোমাদের ভাইয়েরা তোমাদের অপেক্ষায় হিন্দুকুশের চূড়ায় প্রহর গুণছে।
হে আফগান নেতৃবৃন্দ ! এসব রক্ত, খন্ডিত লাশ, এসব বিধবা, এতীম এবং ড.মুহাম্মদ উমর, মৌলভী হাবীবুর রহমান, রব্বানী আতীস, ইঞ্জিনিয়ার হাবীবুর রহমান ও গোলাম মুহাম্মদ নিয়াযীর মত মনীষীদের রক্ত জহির শাহকে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রবাহিত হয়নি, জহির শাহর বিরুদ্ধেই হয়েছে।

আফগানরা আফগানী দাউদ, তারাকী, হাবীবুল্লাহ ও বাবরাকের বিরুদ্ধে লড়েছে। এ লড়াই কেবল রাশিয়ার বিরুদ্ধে হয়নি। এ দ্বন্দ্ব রাশিয়া ও নজীবকে নিয়ে নয়, এ দ্বন্দ্ব ইসলাম ও অনৈসলামের দ্বন্দ্ব । এ দ্বন্দ্ব আল্লাহ্র শাসন ও শয়তানের শাসন প্রতিষ্ঠা নিয়ে । এ দ্বন্দ্ব রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মতবাদ প্রতিষ্ঠা এবং পুঁজিবাদ ও মার্কস-লেলিন-স্টালিনবাদ প্রতিষ্ঠার। ভাইয়েরা আল্লাহকে ভয় করুন, পথ চলুন, আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করুন, ইনশাআল্লাহ আমরা আপনাদের সাথে আছি। আল্লাহ আমাদের সবাইকে দৃঢ়পদ রাখুন।

ট্রাজেডির যেন পুনরাবৃত্তি না ঘটে

আমরা বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর লোক এখানে সমবেত। আমি ফিলিস্তিনী। আল্লাহ্র কসম ! আমাদের সমস্যার সমাধান তখনই গায়েব হয়ে গেছে, যখন আমরা আমাদের সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব আরব রাষ্ট্র সমূহের ঘাড়ে তুলে দিয়েছি।
অতএব, আপনারা আপনাদের দায়িত্ব পাকিস্তান কিংবা অন্য কোন রাষ্ট্রের হাতে ছেড়ে দিয়ে ভুল করবেন না। ব্যাপার আপনাদেরই, আপনারাই তাঁর প্রতিনিধি এবং এর পেছনে কুরবানী ও ত্যাগ স্বীকার করেছেন আপনারাই।
১৯৪৮ সালে যখন ইয়াহুদীরা পরাজিত হল, তখন তাঁরা পশ্চিমা রাষ্ট্র সমূহের কাছে আবেদন জানায়, যাতে তাঁরা ফিলিস্তিনীদের উপর চাপ সৃষ্টি ও তাঁদেরকে যুদ্ধ বিরতিতে রাজী করানোর জন্য আরব রাষ্ট্রসমূহের উপর চাপ প্রয়োগ করে। ফিলিস্তিনীরা ধোকা খেল ও যুদ্ধ বিরতিতে রাজী হল। এতে করে অস্ত্র চালানের জাহাজ ইসরাঈলে এসে নোঙ্গর করল। তারা পুনরায় ফিলিস্তিনীন্দের বিতাড়ন ও হত্যার পথ গ্রহণ করে। সাত আরব রাষ্ট্র ইসরাঈলের প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করেই ফিলিস্তিন থেকে ফিরে এসেছে। ফিলিস্তিনে শান্তির মিশনে যাওয়া সাত আরব রাষ্ট্রের সৈন্যদের সেনাপতি ছিল ইংরেজ জুলুব পাশা। মিশর, সিরিয়া, ইরাক ও জর্ডান থেকে আগত ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা তাঁর জন্য সমস্যা হয়ে দাঁড়ায়। দুঃখজনক ! পশ্চিমাদের ষড়যন্ত্রে আরব রাষ্ট্র সমূহের ট্যাংকবহর আন্দোলনের কর্মীদের ঘিরে ফেলে এবং তাঁদেরকে আত্মসমর্পণ নতুবা মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকার জন্য প্রস্তাব দেয়। কারণ, ইসরাঈলের অগ্রগতির জন্য ইসলামী আন্দোলনকে দমিয়ে রাখার  যে বিকল্প নেই।
তাঁরা ইসলামী আন্দোলনকে দমানোর জন্য পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র সমূহের উপর চাপ প্রয়োগ করে। ১৯৫৫ সালে আবদুন নাসেরের মাধ্যমে ইসলামী আন্দোলনকে দমন করা হয়, যাতে ইসরাঈল উন্নতি অর্জন করতে পারে। ইসরাঈলের আশু উন্নতির জন্য ১৯৬৬ সালে সাইয়েদ কুতুব ও তাঁর সহকর্মীদের বিশ্বাসঘাতকতার অপবাদ দিয়ে ফাসির কাষ্ঠে ঝুলানো হয়। তারপর যখনই ইসরাঈলের সম্প্রসারণ কিংবা শান্তি চুক্তির প্রয়োজন হয়, তখন ইসরাঈলের পার্শ্ববর্তী আরব নেতাদের কাছে এ রিপোর্ট পাঠানো হয় যে, আপনাদের সেনাবাহিনীতে কিছু দাড়িওয়ালা চরমপন্থী রয়েছে। তাদের থেকে সেনাবাহিনীকে মুক্ত রাখুন। বাইরের বিষয় নিয়ে চিন্তাকারীদের সেনাবাহিনী থেকে দূরে রাখুন, মিডিয়া নিয়ন্ত্রিত করুন ও শিক্ষা ব্যাবস্থা সংস্কার করুন।
ওহে আফগানিস্তানের সন্তানেরা ! আপনাদের প্রতি অনুরোধ কোন দেশের হাতে আপনাদের সমস্যা ছেড়ে দিবেন না। সকল দেশ আন্তর্জাতিক চাপের কাছে নতিস্বীকারকারী। ইনশাআল্লাহ আপনারা সকল শর্ত ও চাপ থেকে মুক্ত। সারা দুনিয়া আপনাদেরকে সুনজরে না দেখলেও রব্বুল ইজ্জত আপনাদের প্রতি খেয়াল রাখবেন, আপনাদেরকে হেফাযত করবেন, আপনাদের সাহায্য করবেন। আল্লাহর রহমতের উপর ভরসা রেখে পথ চলুন, আল্লাহ আপনাদের সাথে রয়েছেন এবং আমরা আপনাদের পেছনে রয়েছি।

যুগ যুগ ধরে চলে আসা ষড়যন্ত্র

আল্লাহ তাআলা এ দ্বীনকে আমাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং আমাদের জন্য নবীকুল শিরোমণি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণ করেছেন। আর এ দ্বীনের কিছু প্রতীক ও বিধান দান করেছেন এবং একটি সংরক্ষক ঠিক করেছেন। আর তা (সংরক্ষক) হচ্ছে ‘জ্বিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ’ । জ্বিহাদ এ দ্বীনকে রক্ষাকারী একটি দুর্জয় দুর্গ এবং ইসলাম বিশ্বময় তাঁর প্রচার, প্রভাব প্রতিষ্ঠা ও আন্তরিক ধারক প্রাপ্তির আশায় সব সময় এ দুর্গেই ফিরে আসে। যাতে এ দ্বীন কিতাবের পাতার কতিপয় বাক্য ও শব্দের মধ্যে সীমাবদ্ধ না থাকে বাস্তব ক্ষেত্রে তাঁর প্রয়োগ ঘটাতে পারে। ‘জ্বিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ’ এটি এমন একটি প্রতীক, যার চতুষ্পার্শ্বে এ দ্বীন রক্ষা করার আন্দোলনকারীরা সমবেত হয় এবং এ দ্বীনের প্রচার ও প্রসারের জন্য ডান হাতে কুরআন ও বাম হাতে তরবারী নিয়ে পৃথিবীতে ঘুরে বেড়ায়। এ জ্বিহাদই হচ্ছে ইমাম ও খলীফার প্রতিচ্ছবি। তাই মদীনাতে ইসলামের কার্যকর প্রভাব প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বাতিল শক্তি ইসলামের মূলোৎপাটন করার জন্য সর্বশক্তি ব্যয় করেছে। এরপর থেকে তাঁরা ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখে। বিশেষ করে ইসলামের খেলাফতকে ধবংস করার নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে এসেছে।অতঃপর তাঁরা ইসলামের সর্বশেষ খলীফা সুলতান আবদুল হামীদ রহ.-এর পতন ঘটানোর মধ্য দিয়ে ইসলামের মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেয়। হ্যাঁ !  সুলতান আবদুল হামীদের পর তিনজন বা চারজন খলীফা এসেছে। তবে তাঁরা দুর্বল ছিল। খেলাফতের কার্যকর অস্তিত্ব সুলতান আবদুল হামীদের পতনের মধ্য দিয়ে ১৯০৯ সালেই লুপ্ত হয়ে যায়। আমরা সুলতান আবদুল হামীদ রহ.-এর সে দৃঢ় ভূমিকা সম্পর্কে অবগত আছি, যার কারণে বিশ্বের সমগ্র কুফরী শক্তি তাঁকে নির্মূল করার জন্য ধেয়ে এসেছে। ১৮৯৭ সালে ইয়াহুদীরা সুইজারল্যান্ডে একটি আন্তর্জাতিক ইয়াহুদী কনফারেন্সের আয়োজন করে। এ সম্মেলনে তাঁদের পরিকল্পনা প্রকাশিত হয়। এরপর ইয়াহুদী নেতা হার্টজল সম্মেলন কক্ষে দাঁড়িয়ে বলল, ‘সুধীবৃন্দ ! যদি আমি বলি যে, ইয়াহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে, তাহলে বিস্ময়ের কিছু নেই। ইয়াহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হতে হয়তো দশ বছর সময় লাগতে পারে। আর বেশী লাগবে সর্বোচ্চ পঞ্চাশ বছর।’
বাস্তবেই ১৮৯৭ থেকে ১৯৪৭ তথা পঞ্চাশ বছর পর ইয়াহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ইয়াহুদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা তাঁদের মানসিক সিদ্ধান্ত ছিল। এ সিদ্ধান্তকে বাস্তব রূপ দিতে তাঁদের অনেক বাঁধা অতিক্রম করতে হয়েছে। ১৭৮৯ সালে ফ্রান্সে বিপ্লব ঘটাতে সফলকাম হওয়ার পর তাঁরা ইউরোপে ক্যথলিকবাদের পতন ঘটায়। এরপর তাঁদের সামনে রাশিয়ার জার সাম্রাজ্য ও ইসলাম দ্বারা ফিলিস্তিনকে শাসনকারী উসমানী সাম্রাজ্য বাঁধা হিসেবে চিহ্নিত হয়। তাই তাঁরা উসমানী সাম্রাজ্যের পতন ও রাশিয়ায় বলশেভিক বিপ্লব ঘটানোর পরিকল্পনা হাতে নেয়। ১৯০৪ সালে যখন রাশিয়া জার্মানে অবস্থিত ইয়াহুদীদের আন্তর্জাতিক হেড কোয়াটারে লোক পাঠিয়ে বন্দুকের জোরে ইয়াহুদীদের গোপনীয় কাগজপত্র ছিনতাই করে নিয়ে আসল, তখন তাদের পরিকল্পনার কথা ফাঁস হয়ে যায়। ঐ গুলোর অনুবাদ হওয়ার পর রুশ অধ্যাপক লিলিচ বলল, ‘শিগগিরই উসমানী সাম্রাজ্য ও রুশ সাম্রাজ্যের পতন ঘটবে’। এ লক্ষ্য অর্জন করার জন্য ইয়াহুদীরা সুলতান আবদুল হামীদকে প্ররোচিত করার চেষ্টায় আত্মনিয়োগ করে। এ উদ্দেশ্যে হার্টজল ১৯০১ সালে সুলতান আবদুল হামীদের কাছে গিয়ে কিছু দাবী দাওয়া পেশ করে। সুলতান তাঁর এ স্পর্ধা দেখে হতভম্ব হয়ে গেলেন এবং প্রহরীকে বললেন, তুমি জান না এ কাফের কোন উদ্দেশ্যে এসেছে ?অতঃপর তিনি চিৎকার দিয়ে বললেন, ওহে নীচু জাতের লোক ! তুমি আমার সামনে থেকে সর। তাঁর সাথে কনস্টান্টিনপলের লীফিমোসীও ছিল। সুলতানের এ তাড়া খাওয়ার পরও হার্টজল আশাহত হয়নি। অতঃপর তুরস্কের অভ্যন্তরে ফ্রীম্যাসন বা জাতিয়তাবাদী আন্দোলন পরিচালনাকারী ইয়াহুদী এক আইনজীবীর সাথে হার্টজল সুলতানের দরবারে ১৯০২ সালে আবারো প্রবেশ করে। তাঁরা  সুলতানের কাছে এক লম্বা দাবী ও আবেদননামা পেশ করে এবং সুলতানের হাতে দেড়শত মিলিয়ন স্বর্ণমুদ্রা তুলে দিয়ে বলে, এ অর্থগুলো (উসমানী) সাম্রাজ্যের ঋণ পরিশোধ, নৌবহর নির্মাণ ও আলকুদসে (যেরুজালেমে) উসমানী সাম্রাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার জন্য। সাথে সাথে এ আবেদনও জানায় যে, সুলতান যেন ইউরোপ ও আমেরিকায় নিজের কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করেন। সত্যিই এসব লোভনীয় প্ররোচনা মানুষকে হতভম্ব করার জন্য যথেষ্ট ছিল। অনেক সম্পদ। সে সময় দেড়শত মিলিয়ন স্বর্ণমুদ্রা দিয়ে একটি শহর বা দেশ কেনা যেত। তাঁদের এসব আবেদন ও প্রস্তাবের মুখে সুলতান আবদুল হামীদ বললেন, তোমরা যে ফিলিস্তিনে হিজরত (পুনর্বাসন) করতে চাচ্ছ, তাঁকে মুসলমানরা রক্ত দিয়ে দখল করেছে। তা তাদের কাছ থেকে আবার দখল করে নেয়া বিনা রক্তপাতে সম্ভব হবে না। ছুরি দ্বারা আমার দেহের কোন অংশকে কেটে ফেলা আমার নিকট ফিলিস্তিন মুসলমানদের হাত থেকে ছুটে যাওয়ার চেয়ে অধিক প্রিয়। আমি ত্রিশ বছর ধরে মুসলিম উম্মাহর খেদমত করে আসছি।আমি আমার বাপ-দাদার ইতিহাসকে এ লজ্জাজনক অপমান দ্বারা কলুষিত করতে চাই না।অতঃপত শেষবারের মত হার্টজলের দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমার স্বর্ণমুদ্রা তোমার কাছে রাখ।আবদুল হামীদ চলে গেলে তোমরা ফিলিস্তিনকে বিনামূল্যে দখল করে নিতে পারবে। বাস্তবেই যখন সুলতান আবদুল হামীদ চলে গেলেন, তখন তাঁরা ফিলিস্তিনকে বিনামূল্যে দখল করে নিল।যে মসজিদে সুলতান জুমআর নামায আদায় করতেন সে মসজিদের কাছে তাঁর গাড়ীতে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ১৯০৪ সালে তাঁরা তাঁকে হত্যা করার চেষ্টা করল। কিন্তু আল্লাহ তাঁকে রক্ষা করেন। অতঃপর ‘ঐক্য সংস্থা’, ‘উন্নয়ন সংস্থা’ ও ‘তুর্কী যুবক’  নামের কতিপয় জাতীয়তাবাদী সংস্থার মাধ্যমে সুলতানকে হত্যার ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখে। আনোয়ার পাশা, জাভিদ পাশা ও তালআত পাশা এরা সবাই আন্তর্জাতিক ইয়াহুদীবাদের হাতের তৈরী লোক ছিল। ইয়াহুদী-খৃস্ট চক্র তাঁদেরকে সুলতান আবদুল হামীদের পতন ঘটানোর জন্য ব্যবহার করেছিল। বর্তমান যেমন পৃথিবীর সকল সংবাদপত্র পাশ্চাত্যের আজ্ঞাবহ, তৎকালীন সময়েও ইসলামী অঞ্চলের পত্রিকাগুলো পাশ্চাত্যের আজ্ঞাবহ ছিল। সকল সংবাদপত্র বাইরের ইঙ্গিতে পরিচালিত হত। এ সংবাদপত্রের লেখক সম্পাদকের অধিকাংশই চিন্তাগতভাবে ইয়াহুদী ছিল। কিন্তু তাঁদের নাম ছিল আহমদ, মুহাম্মদ, আলী,উমর ইত্যাদি। বর্তমানে মুসলিম বিশ্বের পত্র পত্রিকাগুলো দেখুন।আমেরিকা-ব্রিটেন যা বলে, তোতা পাখীর মত তারাও তাই বলছে। আপনাদের যারা চিড়িয়া খানায় গেছেন, তারা হয়তো দেখেছেন তোতা পাখীর অবস্থা। কেউ যদি তোতাপাখীকে বলে ইযিক, তখন সেও বলবে ইযিক। ওদের অবস্থাও এ রকম। আমেরিকা যদি বলে তোমার কী অবস্থা ? তারাও বলবে তোমার কী অবস্থা ? কারণ, তাঁরা যে আমেরিকা ও ব্রিটেনের হাতের গড়া !
তাঁরা ব্রিটেন ও আমেরিকার কোলে লালিত-পালিত হয়েছে এবং তাঁদের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতার দীক্ষা গ্রহণ করেছে বা সেখানকার কিংবা এখানকার ফ্রীম্যাসনবাদের ক্লাব সমূহে শিক্ষা অর্জন করেছে। অতঃপর এ সাপগুলোকে তাঁরা ইসলামী অঞ্চলের মূল্যবোধকে ধবংস করার কাজে লাগিয়ে দিয়েছে। ইয়াহুদীদের আন্তর্জাতিক ফ্রীম্যাসনবাদ ১৯০৯ সালের এপ্রিলে  রাতের অন্ধকারে সুলতান আবদুল হামীদকে ক্ষমতাচ্যুত করে। এ রাত্রে দু’টি কাজ সম্পন্ন হয়। প্রথমত বিশ্বের রাজনৈতিক মঞ্চ থেকে ইসলামের কার্যকর পতন। দ্বিতীয়ত ইয়াহুদীদের হাতে ফিলিস্তিনের পতন। ১৯০৯ সালের এপ্রিলের যে রাত্রে সুলতান হামীদের পতন হয়, কার্যত সে দিনই ইয়াহুদীদের হাতে ফিলিস্তিনের পতন হয় এবং বিশ্ব সভায় ইসলামের মেরুদন্ড সম্পূর্ণ রূপে ভেঙ্গে যায়। এরপর কয়েক বছর তুরস্ক কঠিন সময় অতিক্রম করে এবং প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে।আর বৃহৎ সিরিয়ার ফ্রীম্যাসনবাদের হাতে গড়া একজন লোককে তুর্কী বাহিনীর অধিনায়ক বানায়। সে বৃহৎ সিরিয়াকে ইংরেজদের হাতে তুলে দেয়। এ অভিশপ্তের নাম হচ্ছে মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক। সে গ্রীসের সাথে সাইপ্রাস দখল করার জন্যে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। আর মিত্র বাহিনীর দেশ ব্রিটেন, ফ্রান্স ও আমেরিকা তাঁর পাশে এসে দাঁড়ায়। তাঁর নামে জাতীয় সংগীত তৈরী ও সে জাতীয় বীর হওয়ার জন্যেই এ কাজটি করে। আর এতে তাঁর আরো একটি উদ্দেশ্য ছিল, সেটি হচ্ছে , ইংরেজদের পক্ষ থেকে খেলাফতের পতন ঘটানোর দায়িত্ব ও দেশের ক্ষমতা লাভ।অভিশপ্তের স্বপ্ন বাস্তবে পরিণত হল। খেলাফতের পতন ঘটিয়ে ১৯২৪ সালে ক্ষমতা লাভের পর থেকে সে প্রকাশ্যে এবং পাশ্চাত্যের চেয়ে আরো কার্যকর ইসলামের বিরুদ্ধে ভাবে যুদ্ধ শুরু করে।সে ১৯৩৪ সালে মরার পূর্ব পর্যন্ত দশ বছর তাঁর দলের প্রধান কাজ ছিল যেখানেই ইসলামের কোন কিছু পাওয়া যাবে, সেখানে গিয়ে তাঁকে নির্মূল করা। পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয় রাস্তায় কোন হিজাব পড়া মহিলা পেলে হিজাব ছিনিয়ে নেয়ার জন্য। কোন কোন হিজাবপরা মহিলাকে সরকারী কোন অফিস আদালত এমনকি বিমান বন্দরেও প্রবেশের অনুমতি দেয়া হত না। ষাটের দশকে তুরস্কে একটি সমস্যা দেখা দেয়। সমস্যাটির নাম রুমাল সমস্যা। ইস্তাম্বুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শরীয়াহ অনুষদে একজন মেয়ে মাথায় রুমাল দিয়ে যায়। তখন বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি ব্যাপারটা নিয়ে বৈঠকে বসে। কিন্তু তাঁরা কোন সিদ্ধান্তে পৌছতে সক্ষম হল না। তাই তাঁরা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের কাছে সমস্যাটার সমাধান কামনা করে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ও এ ব্যাপারে কোন সিদ্ধান্তে পৌছতে পারেনি। তাই তাঁরা সমস্যাটার কথা মন্ত্রীপরিষদের কাছে তুলে ধরে। মন্ত্রীপরিষদ ঘোষণা করে যে, শরীয়াহ অনুষদে মাথায় রুমাল দিয়ে প্রবেশ করা সংবিধান পরিপন্থী। অতএব, হয়তো ছাত্রীটিকে বহিষ্কার করতে হবে নতুবা রুমাল খুলে ফেলতে হবে।
ইসলামের বিরুদ্ধে এ প্রকাশ্য যুদ্ধের মাধ্যমে ইউরোপ অনেক কিছু অর্জন করেছে। তবে তাঁরা মুসলমানদেরকে ঘুমে রাখার জন্য ইসলামের লেবেল গায়ে না লাগিয়ে প্রকাশ্যে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য অনুতপ্ত হয়েছে। টাইম ম্যাগাজিন লিখেছে যে, মোস্তফা কামাল মৃত্যুশয্যায় ব্রিটেনের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে তাঁর কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব করেছিল। কারন, সংবিধান মতে প্রধানমন্ত্রী চাইলে যে কারও হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে পারে। কিন্তু ব্রিটেন ভয় করেছিল যে, এতে তাঁদের গোমর ফাঁস হয়ে যাবে। তাই ব্রিটেন রাষ্ট্রদূতকে কামাল আতাতুর্কের প্রস্তাবে সাড়া না দেয়ার নির্দেশ দিল। কার্যত তুরস্কের শাসক ছিল ব্রিটেনের রাষ্ট্রদূত। আতাতুর্ক ছিল তাঁর পুতুল। কামাল আতাতুর্কের জাহান্নামে পৌছার পর হেকমত ইনানু ক্ষমতায় আসল। সেও কামাল আতাতুর্কের অনুসরণ পূর্বক ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অব্যাহত রাখে। সে এসে ঘোষণা দেয় যে, মোস্তফা কামাল আতাতুর্ক তুর্কী জাতির বীর ও আধুনিক তুরস্কের স্থপতি। এ কথাই এখন ইতিহাস হয়ে গেছে।

তাগূতদের সর্বশ্রেষ্ঠ মডেল আতাতুর্ক

আরব বিশ্বে সামরিক অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতায় আরোহণকারী সকল তাগুতই বলেছে যে, আমাদের আতাতুর্কই আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ত্ব। এ কথা আবদুন নাসের, আনোয়ার সাদাত ও গাদ্দাফীসহ আরো অনেকের মুখ থেকে বের হয়েছে। তবে পশ্চিমারা বলল যে প্রাচ্যে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ তুরস্কের ন্যায় প্রকাশ্য করা যাবে না। দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর আমেরিকা বিশ্বের সবচেয়ে ধনী রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। কারণ, যুদ্ধের কারণে প্রায় দেশের অর্থনীতিতে ধ্বস নেমেছিল। তাই সে প্রাচ্যে ব্রিটেনের স্থান দখল করার চেষ্টা শুরু করল এবং এ অঞ্চলে নব্য আতাতুর্কদের খোঁজে বের হল।

এ অঞ্চলে তাঁর কাজের অভিজ্ঞতা শুরু হয় ১৯৪৯ সালের মার্চ মাসে সিরিয়ায় তাঁর রাষ্ট্রদূতের তত্ত্বাবধানে হুসনী জঈম দ্বারা সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে। হুসনী জঈম তাঁর মন্ত্রী পরিষদকে বলেছিল যে, আমেরিকা ও ইউরোপ ইসরাঈলের সাথে শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌছানোর জন্য ইসরাঈলের প্রধানমন্ত্রী বিন গোরীনের সাথে আলোচনায় বসতে আমাকে চাপ দিচ্ছে। অতঃপর ইউরোপ ও আমেরিকা যখন দেখতে পেল যে, তাঁর দ্বারা তাঁদের উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ অর্জন করা যাবে না , তখন তাঁরা হুসনীর বিকল্প খুঁজতে শুরু করল। অন্যদিকে সবাই বলাবলি করছিল যে শিগগিরই মধ্যপ্রাচ্যে ইসলাম আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে। তাই আমেরিকা সবখানেই দৃষ্টি নিবদ্ধ করল এবং ইসলামী আন্দোলনকে দমানোর জন্য লোক খুঁজতে শুরু করল।

ইউরোপ ও আমেরিকার সিদ্ধান্তকৃত দুটি বিষয়

ইউরোপ ও আমেরিকা দুটি ব্যাপার পারস্পরিক অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছে। এক. পৃথিবীর কোথাও তাঁরা ইসলামকে মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে দিবে না। দুই. ইসরাঈলের নিরাপত্তা ও তাঁকে টিকিয়ে রাখতেই হবে। এ দুটি বিষয় অনেক পূর্ব থেকেই সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে। ইসরাঈল টিকে থাকা আবশ্যক। আর (খেলাফতের পতনের পর) সে ইসলাম পৃথিবীতে দ্বিতীয়বার প্রতিষ্ঠিত হতে দেয়া যাবে না, যার নীতির আলোকে একজন শক্তিশালী ব্যক্তি (খলীফা) মুসলমানের কার্য নির্বাহ করবে (শাসন করবে) এবং যার সৈন্যরা তাঁদেরকে ভীত সন্ত্রস্ত করে রাখবে। এ উদ্দেশ্য সাধনে তাঁরা সুক্ষ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। মুসলিম দেশের সৈন্যদেরকে তাঁরা গার্ড অব অনার ও এক ব্যক্তির প্রহরার কাজে নিয়োজিত রেখেছে। প্রচার মাধ্যমকে ধবংস করেছে। প্রচার মাধ্যমের কর্মসূচী শুরু এবং শেষ হয় তাগুতের গুণকীর্তনের মধ্য দিয়ে। এর মাঝখানে সামান্য সময় তাসবীহ তাহলীল ও কুরআন তিলাওয়াত। শিক্ষা ব্যবস্থায় বস্তুবাদী ধ্যান ধারণা ঢুকিয়ে দিয়ে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধ্বংস করছে, মানুষ ও তার সৃষ্টিকর্তার মাঝখানে আবরণ ঢেলে দিচ্ছে। তারা প্রাচ্যকে পাশ্চাত্যের ন্যায় ধর্মহীন করতে যে পরিকল্পনা করেছে, তা বাস্তবায়নের সবচেয়ে বড় উপায় হচ্ছে শিক্ষা ব্যবস্থা ও প্রচার মাধ্যম। কিন্তু আন্দোলনের আত্মপ্রকাশ তাঁদের পথে কাটা হয়ে দেখা দেয়। তাই তাঁরা ইসলামী আন্দোলনকে দমানোর পরিকল্পনা গ্রহণ করে। কারণ, ইসলামী আন্দোলনের একমাত্র লক্ষ্য মানুষের বাস্তব জীবনে ইসলামের পূর্ণাঙ্গ অনুশীলন নবায়ন করা। এ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য সিরিয়ায় তাঁরা হুসনী জঈমকে ক্ষমতায় আনে। হুসনী জঈমকে ক্ষমতায় আনার এক মাস পূর্বে (১৯১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে) কায়রোর সর্ববৃহৎ সড়কে ইসলামী আন্দোলনের মহান নেতা হাসান আল বান্নাকে হত্যা করা হয়। এর বার দিন পর ইয়াহুদীদের সাথে রুডস চুক্তি সম্পাদিত হয়।
আমেরিকা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিল ১৯৫৫ সালে সে মিশরে ব্রিটেনের স্থান দখল করে নিবে। কিন্তু আবার বলল, যদি এত সময় ধৈর্য্য ধারণ করি, তাহলে মুসলমানরা ক্ষমতায় চলে আসবে। তাই সে কিছু সেনা অফিসারের সাথে যোগাযোগ করে যতদ্রুত সম্ভব তাঁর আজ্ঞাবহ একজনকে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আনার পরিকল্পনা গ্রহণ করল। তাঁদের মাধ্যমে সে (আমেরিকা) ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রে অগ্নিকান্ড ঘটিয়ে কায়রোকে ছয়মাস অন্ধকারে রাখে।জনসাধারণের জন্য রাতে ঘোরাফেরা নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়। এ ছয়মাসে সামরিক অফিসার ব্যতীত আর কাউকে বদলির সুযোগ দেয়া হ্য়নি। এ সময়ের মধ্যেই অভ্যুত্থান ষড়যন্ত্রের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়। যা পরবর্তীতে জুলাই অভ্যুত্থান ও স্বাধীন সেনা অফিসার অভ্যুত্থান নামে পরিচিত লাভ করে। নেপথ্য নায়ক আমেরিকা অভ্যূত্থানের পুতুলদেরকে তিনটি শর্তে আবদ্ধ করে।
এক. ইসলামী আন্দোলনকে দমন করা।
দুই. পাশ্চাত্যের সমর্থনপুষ্ট ইসরাঈলের নিরাপত্তায় আঘাত না হানা।
তিন. আল আযহারের অস্তিত্বকে বিলীন করা বা তাঁকে এমন এক প্রতিষ্ঠানে রুপান্তরিত করা, যার মাধ্যমে প্রকৃত ইসলামকে ধবংস করে আধুনিক ও প্রগতিশীল ইসলাম অন্য কথায় আমেরিকান ইসলাম প্রচার করা হবে। অর্থাৎ,এমন ইসলাম যেটা কম্যুনিজম ও নাস্তিকবাদের বিরোধীতা করবে কিন্তু আমেরিকাকে এ কথা বলবে না যে, ‘হে অত্যাচারী ! হে জাতিসমূহের রক্তচোষণকারী ! তুমি থাম’। আর ব্রিটেনকেও এ কথা বলবে না যে, ‘হে অনাচারী ! তোমার অবিচার ও অনর্থ সৃষ্টি আর নয়’। অভ্যুত্থান সফল। প্রতারিত হয়ে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীরা এ অভ্যুত্থানে সমর্থন ও সহযোগিতা যোগায়। ওরা দিনে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের কাছে এসে বলত আমরা তোমাদের সাথে রয়েছি। আর শেষ রাত্রে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেফার্সন সাফরীর কাছে গিয়ে সকল খবরাখবর পৌঁছে দিত। ১৯৫৪ সাকে জনসন ‘শূন্যতাপূরণ’ নামে যে রিপোর্ট তৈরী করে তাতে কীভাবে ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান হবে, তার কথাই বলা হয়। এতে জর্ডানের পানি ভাগকরণ, ফিলিস্তিনীদের বসবাসের জন্য একটি এলাকা প্রতিষ্ঠা এবং আরব ও ইয়াহুদীদের মাঝখানে একটি সীমান্ত প্রতিষ্ঠা যেখানে শান্তিকামী লোকজন বসবাস করবে প্রভৃতি উল্লেখ করা হয়। রিপোর্টের সর্বশেষে যে কথাটি উল্লেখ করা হয়, সেটা হচ্ছে মিসরে যতক্ষণ পর্যন্ত ইসলামী আন্দোলনের অস্তিত্ব থাকবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এ অঞ্চলে শান্তি আসবে না। এ রিপোর্ট পেশ করার কয়েকদিনের মধ্যে ইসলামী আন্দোলনের উপর দমন নিপীড়ন শুরু হয়ে যায়। তড়িঘড়ি করে ইসলামী আন্দোলনের নেতৃবৃন্দকে ফাঁসি দেয়া হয় এবং হাজার হাজার যুবককে কারাগারে নিক্ষেপ করা হয়।
আমাকে জর্ডান ইউনিভার্সিটির এক ছাত্র বলল, উস্তাদ আপনার ভাষণ আমাদের খুব ভাল লাগে।তবে আপনি ভাষণে যে কথায় কথায় আবদুন নাসেরের বদনাম করেন, তার কারণ কি? আমি তাঁর কথার কোন উত্তর দিলাম না। ক্লাস রুমে এসে লেকচার দেয়ার সময় ছাত্রদের বললাম, এক ছাত্র আমার কাছে এ ধরণের প্রশ্ন করেছে। কিন্তু আমি এ লোককে (আবদুন নাসের) ঘৃণা না করে পারি না। কেন জান ? আমি চেষ্টা করলেও তাঁকে ঘৃণা না করে থাকতে পারব না। কারণ, এ লোক আমাদের এ অঞ্চলকে ইসলামী শাসন থেকে বঞ্চিত করেছে। মিশরে যদি ইসলামী খেলাফত কায়েম হত, তাহলে এ অঞ্চলে ইয়াহুদীদের পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব হত না এবং এ অঞ্চল থেকে বরং পৃথিবীর দৃশ্যই ভিন্ন রকম হত । সবখানে ইসলাম ও মানবতার জয় হত। কিন্তু ক্ষমতার লোভে এ লোক পৃথিবীর মানুষকে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয় থেকে বঞ্চিত রাখল। কিভাবে আমার অন্তরে এ লোকের প্রতি বিন্দু মাত্র ভালোবাসা থাকতে পারে ? শত চেষ্টা করলেও এটা আমার পক্ষে সম্ভব না। এ লোকের হাতেই এ অঞ্চলে ইসলামের দুরাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। যেদিন থেকে মিশর মুসলিম শাসকদের হাত থেকে চলে গেছে, সেদিন থেকে এ অঞ্চলে (মধ্যপ্রাচ্যে) ইসলামের প্রভাব নিঃশেষ হয়ে গেছে। ১৯৪৯ সালে শায়খ বান্নাকে হত্যা ও ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের উপর অত্যাচারের ষ্টীম রোলার চালানো হয়েছে ইসরাঈল প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য। ১৯৫৫ সালে ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের আবার দমন করা হয়েছে ইসরাঈলের উন্নতি ও স্থিরতা অর্জন এবং সুয়েজ খাল পর্যন্ত অধিপত্য বিস্তারের জন্য। ১৯৬৬ সালে সাইয়েদ কুতুব ও তাঁর সহকর্মীদের ফাসির কাষ্ঠে ঝুলানো হয়েছে ইসরাঈলের নিরাপত্তার জন্য। অনুরূপ শুকরী মুস্তফা ও সালেহ সারিইয়া প্রমুখকেও মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়েছে একই উদ্দেশ্যে। মিশরে ইসলামী আন্দোলন নিষিদ্ধ করা হয়েছে ইসরাঈলের সাথে কথিত ‘শান্তি আলোচনা’ অব্যাহত রাখার জন্য। পৃথিবীর যেখানেই তাগুতরা কাফিরদের স্বপ্ন পূরণ করে মুসলিম উম্মাহর ক্ষতি সাধন করতে চায়, সেখানেই ইসলামী আন্দোলনের উপর নির্মম নির্যাতন বেড়ে যায়।
এখন আমি অন্য প্রসঙ্গে আলোচনা করব। সিরিয়া কিভাবে রাজতন্ত্র থেকে কম্যুনিস্ট একনায়কদের হাতে চলে গেল। মূলত ইয়াহুদীদের যোগসাজগেই সিরিয়ার রাষ্ট্র ক্ষমতা কম্যুনিস্ট নুসাইরী সম্প্রদায়ের হাতে চলে যায়। ইয়াহুদীরা পরোক্ষভাবে রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে মানুষকে ক্ষেপিয়ে তোলার চেষ্টা করে এবং রাজতন্ত্রের বিরুদ্ধে সামরিক অভ্যুত্থানের ইন্ধন যোগায়। ফ্রান্সে ইয়াহুদীদের ইন্ধনে রাজতন্ত্রের অবসান হয় এবং পুঁজিবাদী ব্যবস্থা চালু হয় । সে সময় ইহুদীরা স্লোগান তুলছিল- ‘আমরা সর্বশেষ পাদ্রির নাড়িভুড়ী দিয়ে সর্বশেষ রাজাকে ফাঁসিতে ঝুলাব।’ কারণ, রাজতন্ত্রে কিছু সমস্যা থাকলেও রাজারা কোন সময় মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করে না। কারণ, রাজাকে সব সময় মানুষের শ্রদ্ধাভাজন থাকতে হয়। না হয়  রাজতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা পায় না। ওপর দিকে সামরিক একনায়ক সরকারগুলো সম্পূর্ণ এর বিপরীত।এরা জনগণকে লাঠির জোরে শাসন করে। সম্মানিত ব্যক্তিকে অসম্মানিত করে এবং অসম্মানিত ব্যক্তিকে সম্মানিত করে। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
“কেয়ামতের পূর্বে প্রতারণার একটা সময় আসবে, যখন আমানতদারকে প্রতারক বলা হবে এবং প্রতারককে আমানতদার বলে গণ্য করা হবে, মিথ্যাবাদীকে সত্যবাদী বলা হবে এবং সত্যবাদীকে মিথ্যাবাদী বলা হবে। নিকৃষ্ট লোকেরা উপরে উঠে যাবে এবং শ্রেষ্ঠ লোকেরা নিঃশেষ হয়ে যাবে।”
অবিচারী ও নিম্নশ্রেণীর লোকেরা ক্ষমতায় আসবে। ভালো লোকদেরকে দেশদ্রোহীতা ও প্রতিক্রিয়াশীলতার অভিযোগে ফাঁসি দেয়া হবে। আরব রাষ্ট্র মিশর, সিরিয়া, জর্ডান, ইরাক, লিবিয়া, আলজেরিয়া ও তিউনেশিয়া প্রভৃতি রাষ্ট্রে বর্তমান এ অসৎ ও নিম্নশ্রেণীর লোকেরা ক্ষমতায়। ভালো লোকদের উপর সেখানে চলছে জুলুম নির্যাতন। ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের উপর চলছে পাশবিক নির্যাতন । তাদেরকে ফাসির কাষ্ঠে ঝুলানো হচ্ছে। তবে আমাদের আশা এ দেশগুলোর ভবিষ্যত একমাত্র ইসলামই।

পুনর্জাগরণ

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা বলেন-


يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلَىٰ تِجَارَةٍ تُنجِيكُم مِّنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ [٦١:١٠]
تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ [٦١:١١]
يَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَيُدْخِلْكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِي جَنَّاتِ عَدْنٍ ۚ ذَٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ [٦١:١٢]
وَأُخْرَىٰ تُحِبُّونَهَا ۖ نَصْرٌ مِّنَ اللَّهِ وَفَتْحٌ قَرِيبٌ ۗ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِينَ [٦١:١٣]
“হে মুমিনগণ ! আমি কি তোমাদেরকে এমন এক ব্যবসার সন্ধান দিব, যা তোমাদেরকে যন্ত্রণদায়ক শাস্তি থেকে মুক্তি দিবে। (আর তা হচ্ছে এই যে) তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি ঈমান আনবে এবং আল্লাহ্র পথে তোমাদের  জান ও মাল দ্বারা জ্বিহাদ করবে। তোমাদের এ কাজই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম যদি তোমরা জান। তিনি তোমাদের অপরাধসমূহ ক্ষমা করে দিবেন এবং তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন এমন জান্নাতে, যার তলদেশে দিয়ে প্রবাহিত হয় নদীসমূহ ও (তোমাদেরকে প্রবেশ করাবেন) স্থায়ী জান্নাত সমূহের উন্নত আবাসস্থলে। আর এটাই হচ্ছে মহা সফলতা। আর তোমরা তো আখেরাতকে ভালবাস।আল্লাহর পক্ষ থেকে সাহায্য সমাগত ও বিজয় নিকটবর্তী। আর আপনি মুমিনদেরকে সুসংবাদ দিন।”[আসসাফঃ ১০-১৩]।

 

সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যবসা

রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে নসীহত ও উপদেশ দিচ্ছেন। তাঁর উপদেশ যথাযথ, তার ওয়াদা সত্য ও তাঁর কথা সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী। কতইনা সুন্দর তাঁর কথা ‘আমি কি তোমাদের একটি ব্যবসার সন্ধান দিব?’ এটা সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যবসা। আল্লাহ ও বান্দার মাঝে সম্পাদিত ব্যবসা । ক্রেতা মহান আল্লাহ আর বিক্রেতা আপনি। অতএব আপনি অনেক উপরে উঠে গেলেন। আপনি রাব্বুল আলামীনের সাথে বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পাদিন করছেন। এর চেয়ে বড় সম্মানের বিষয় আর কী হতে পারে ? বলা হয় যে, অমুক সৌদি আরবে সিকো কোম্পানির এজেন্ট। অর্থাৎ , এ একটা বিশাল ব্যাপার। অতএব,যে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলার ব্যবসার এজেন্ট তাঁর কেমন মর্যাদা?সপ্তাকাশ, পৃথিবী ও উভয়ের মাঝখানে যা আছে সবকিছু তাঁরই মালিকানায়।
আমাকে একজন বলল , আমি আমার দেশে ফিরে যেতে চাই। বললাম, কেন ?বলল, সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্তির জন্য। বললাম, তুমি কি আল্লাহ্র সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত থেকে বাদ পড়ে তাগুতের সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হতে চাও ? ভাই তুমি এখানের সৈন্য তালিকায় নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত কর। আল্লাহ বলছেন- انفِرُوا خِفَافًا وَثِقَالًا  “তোমরা হালকা ও ভারি অস্ত্র নিয়ে অভিযানে বেড়িয়ে পড়।”[তাওবাহঃ৪১]।
এখানের সেনাবাহিনীতো আল্লাহ্র সেনাবাহিনী। তুমি ওখানে কয়েক বছর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে একটা সার্টিফিকেট পাবে। আর এখানে যে সার্টিফিকেট পাবে, তা হচ্ছে জান্নাতের সার্টিফিকেট। ঐ জান্নাতের প্রশস্ততা আসমান ও যমীনের প্রসস্ততার সমান। ওখানে তুমি বিশ বছর চাকুরী করে একটি ঘর তৈরী করবে এবং একটি সুন্দরী বিয়ে করবে আর কী। আর তুমি যদি এখানে আল্লাহর বাহিনীর অন্তর্ভুক্ত থাক, তাহলে বাহাত্তরটি ডাগর চক্ষু বিশিষ্ট হূরকে বিয়ে করতে পারবে ও অনেক প্রাসাদ লাভ করবে। প্রত্যেক প্রাসাদ মনিমুক্তা দ্বারা কারুকাজকৃত দৈর্ঘ্যে সত্তর মাইল এবং এর দরজা সবুজ মরকত (মণি) দ্বারা তৈরি।
তুমি এখানে হয়তো একজন সুন্দরী সৌদী বা জর্ডানী কিংবা ইয়েমেনী মেয়ে বিয়ে করবে। কিন্তু ওখানে যে মহিলা পাবে সে সত্তরটি পোশাকে সজ্জিত থাকবে। ঐ সত্তরটি কাপড় একটার উপর একটা পরবে। কিন্তু তারপরও তাঁদের পায়ের নলার মগজ দেখা যাবে। এ ব্যবসার চুক্তি সম্পাদনকারী ক্ষতিগ্রস্থ হয় না। কারণ, এ ব্যবসার ক্রয়-বিক্রয় আল্লাহ ও তোমার মাঝে হচ্ছে।তিনি ক্রয়কারী আর তুমি বিক্রয়কারী আর চুক্তি সম্পাদনকারী হচ্ছেন আমানতদার নবী সাল্লাল্লাহি আলাইহি ওয়াসাল্লাম। যে চুক্তি লিপিবদ্ধ করা হয়েছে সেটা কোন মুন্সির হাতে রক্ষিত নয়, সে চুক্তি তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআনেই রক্ষিত। কুরআন কখনো নষ্ট হবে না। তাই তোমার ভয়ের কোন কারণ নেই। এ কুরআন সরকারী রেজিষ্ট্রী বুক নয়, যা অনেক সময় সরকার পরিবর্তন হওয়ায় পুড়ে ফেলা হয়। তোমার চুক্তিনামা তো সম্পাদিত হয়েছে আল্লাহ্র সাথে। তাই এ চুক্তিনামা কখনো পরিবর্তিত হবে না, নষ্ট হবে না এবং পুড়েও যাবে না। আল্লাহর এ প্রতিশ্রুতির কথা সরাসরি তাঁর কাছ থেকে শুনুন-


إِنَّ اللَّهَ اشْتَرَىٰ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ أَنفُسَهُمْ وَأَمْوَالَهُم بِأَنَّ لَهُمُ الْجَنَّةَ ۚ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَيَقْتُلُونَ وَيُقْتَلُونَ ۖ وَعْدًا عَلَيْهِ حَقًّا فِي التَّوْرَاةِ وَالْإِنجِيلِ وَالْقُرْآنِ ۚ وَمَنْ أَوْفَىٰ بِعَهْدِهِ مِنَ اللَّهِ ۚ فَاسْتَبْشِرُوا بِبَيْعِكُمُ الَّذِي بَايَعْتُم بِهِ ۚ وَذَٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ [٩:١١١]
“আল্লাহ মুমিনদের কাছে থেকে তাঁদের সম্পদ ও প্রাণসমূহ জান্নাতের বিনিময়ে ক্রয় করে নিয়েছেন। তারা আল্লাহ্র পথে লড়াই করবে এবং এতে তাঁরা (শত্রুদের) মারবেও এবং (শত্রুদের হাতে) মরবেও। এ ব্যাপারে যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআনে, তাতে তিনি অবিচল। আর আল্লাহ্র চেয়ে বড় প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারী আর কে হতে পারে ? অতএব, তোমরা যে চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছ, তা নিয়ে আনন্দিত হও, আর এ হল মহা সাফল্য।”[আততাওবাহঃ১১১]।

 

জ্বিহাদ মানেই কিতাল

কুরআন ও হাদীসে যে সব জায়গায় জ্বিহাদ শব্দটি সাধারণ ভাবে এসেছে, সেখানে জ্বিহাদ মানে হচ্ছে কিতাল।আল্লামা ইবনে রুশদ বলেছেন-
‘যেখানে জ্বিহাদ শব্দটি সাধারণভাবে উল্লেখ হয়েছে, সেখানে জ্বিহাদের অর্থ কিতাল বিসসাইফ তথা তরবারী দ্বারা যুদ্ধ করা । আর কাফেরদের সাথে তরবারীর যুদ্ধ ততক্ষণ পর্যন্ত চলবে, যতক্ষণ না তাঁরা লাঞ্ছিত হয়ে স্বীয় হস্তে জিযয়া না দিবে।’
অতএব, অপব্যাখ্যা করে কুরআনের আয়াত ও আল্লাহর পরিভাষা সমূহের অর্থ বিকৃত করবেন না। জিহাদের অর্থের পরিবর্তন করবেন না। জিহাদ মানে শত্রুকে নিশ্চিহ্ন করা। এটাই জ্বিহাদের শরয়ী অর্থ। চেয়ারে বসে চা পান ও আপেল খেয়ে ইসলাম সম্পর্কে লেখালেখি করা বা মিম্বারে দাঁড়িয়ে খুতবা দেয়ার নাম জ্বিহাদ নয়। অনুরূপ কোন মসজিদে গিয়ে ঘন্টা দুয়েক সভা করাকেও আল্লাহ্র রাস্তায় বের হওয়া বলে আখ্যায়িত করা যায় না। ‘আল্লাহর রাস্তা’  বাক্যটি যখন সাধারণভাবে আসে তখন জ্বিহাদের ন্যায় তাঁর অর্থও হয় কিতাল।
হাদীসে যে আছে-“আল্লাহর রাস্তায় এক সকাল বা এক সন্ধ্যা” তাতে আল্লাহর রাস্তা থেকে উদ্দেশ্য কিতালই। তাই কুরআনের আয়াতের এমন অর্থ করা উচিত নয়, যা আমাদের জ্বিহাদ থেকে বিরত থেকে আমাদের ধবংসের পথে থাকার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। কেননা জ্বিহাদের অর্থ হচ্ছে কিতাল। আর ফী সাবীলিল্লাহর অর্থও কিতাল।
“তোমরা আল্লাহর রাস্তায় তোমাদের মাল ও প্রাণ দিয়ে জ্বিহাদ করবে। তোমাদের এ কাজ তোমাদের জন্য কল্যাণকর”। এ কাজ অমুকের সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার চেয়ে উত্তম, দেশী-বিদেশী কোম্পানীর সাথে ব্যবসা করার চেয়ে উত্তম।

শহীদের সবকিছু ক্ষমা করে হবে

আল্লাহ্র কথা “يَغْفِرْ لَكُمْ زُنُوبَكُمْ” “তিনি তোমাদের গুনাহ ক্ষমা করে দিবেন” এর অর্থ কী ?অবশ্যই সকল গুনাহ। কারণ, আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা  مِنْ زُنُوبِكُمْ  “তোমাদের কতিপয় গুনাহ” বলেনি। কুরআনে যে সকল স্থানে يَغْفِرْ لَكُمْ বলা হয়েছে, সেগুলির অধিকাংশের পরে مِنْ زُنُوبِكُمْ এসেছে। আর مِنْ زُنُوبِكُمْ আসলে অর্থ হয় কতিপয়। কিন্তু এখানে বলা হয়েছে শুধু زُنُوبَكُمْ । তাই এখানে অর্থ হবে সকল গুনাহ। কারণ, زُنُوبَ শব্দটি বহুবচন এবং তা كُمْ সর্বনামের সাথে সংযুক্ত। আর বহুবচন যখন সর্বনামের সাথে সংযুক্ত যুক্ত হয়, তখন ব্যাপকতার অর্থ প্রদান করে। অর্থাৎ, সকল গুনাহই ক্ষমা করা হবে এমনকি ঋণও। হ্যাঁ, যদি শিরক থেকে পূর্বে থেকে তাওবা না করে মারা যায়, তাহলে তা ক্ষমা করা হবে না।

ঋণ রেখে জিহাদে অংশগ্রহণ

শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াকে প্রশ্ন করা হল, একজন মানুষের ঋণ রয়েছে এবং তাঁর উপর জ্বিহাদের জন্য বের হওয়াও ফরয হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাহলে সে কী করবে ? বললেন, ‘তাঁর দু’অবস্থা হতে পারে। যদি তাঁর নিকট ঋণ পরিশোধ করার সম্পদ না থাকে, তাহলে সে জ্বিহাদের জন্য বের হয়ে পড়বে। অর্থাৎ সম্পদ উপার্জন করে ঋণ পরিশোধ করা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে না।’ কারণ, ঋণ রেখে যদি তুমি হজ করতে পার, তাহলে জ্বিহাদের মত গুরুত্বপূর্ণ কাজ কেন করতে পারবে না ? ঋণ পরিশোধের দায়িত্ব অন্য কাউকে দেয়া যায়। কিন্তু জ্বিহাদ সরাসরি নিজে গিয়ে করতে হয়। অতএব, তোমার কাছে ঋণ পরিশোধের টাকা না থাকলে জ্বিহাদের বের হয়ে পড়।তুমি শহীদ হলে আল্লাহ তোমার ঋণ পরিশোধ করে দিবেন। “শহীদের জন্য ঋণ ছাড়া বাকী সব ক্ষমা করা হবে ”-এ হাদীসের ব্যাখ্যায় আলেমগণ বলেছেন, এটা এমন ঋণের ব্যাপারে বলা হয়েছে যা পরিশোধের সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও ঋণ গ্রহীতা পরিশোধে টালবাহানা করে। তবে যদি তাঁর কাছে ঋণ পরিশোধের করার মত সম্পদ না থাকে কিন্তু পরিশোধ করা তাঁর পাক্কা নিয়ত থাকে, তাহলে তাঁর পক্ষ থেকে আল্লাহই সে ঋণ পরিশোধ করে দিবেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
“যে পরিশোধ করার নিয়্যতে মানুষ থেকে ঋণ নেয়, (সে পরিশোধ করতে না পারলে) আল্লাহ তাঁর পক্ষ থেকে পরিশোধ করে দিবেন”[বুখারী]।
অতঃপর কিয়ামতের দিন এ দেনাদারের প্রতি তাঁর পাওনাদারকে সন্তুষ্ট করিয়ে দিবেন।বলবেন, তোমাদের ভাইকে (দেনাদার) ক্ষমা করে দাও। তারা বলবে পারব না। তখন বলবেন তোমাদের পিছনে তাকাও। পিছনে তাকালে তাঁরা কিছু প্রাসাদ দেখতে পাবে। তারা বলবে, হে আল্লাহ ! এ প্রাসাদগুলো কাদের ? বলবেন, তোমাদের, যদি তোমাদের ভাইকে ক্ষমা করে দাও। একথা শুনে তাঁরা তাঁকে ক্ষমা করে দিবে। কারন, কিয়ামতের দিন সে আর টাকা নিয়ে কী করবে ? সে তো আর মার্সিডিস গাড়ী কিনতে পারবে না।
ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, ‘আর যদি ঋণ গ্রহীতার কাছে ঋণ পরিশোধ করার সামর্থ্য থাকে এবং তাঁর কাছে সে ঋণ পরিশোধ করার সময় হাতে আছে, তাহলে সে ভেবে দেখবে, পাওনাদার ঋণের টাকাগুলো জিহাদে ব্যয় করবে তাহলে ঋণ পরিশোধ করে দিবে। আর যদি দেখে সে টাকাগুলো পেয়ে প্রবৃত্তির চাহিদা ও ভোগ সামগ্রী ক্রয় করবে, তাহলে তাঁর ঋণ পরিশোধ করবে না।’ এটা আল্লামা ইবনে তাইমিয়ার কথা। এ কথাটা তাঁর ফতওয়া কুবরা-এর চতুর্থ খন্ডের ১৮০/১৮১ পৃষ্ঠায় দেখতে পাবেন।
ভাই একথা কেন বলা হল চিন্তা করুন। আল্লাহর দ্বীনকে পৃথিবী থেকে মুছে ফেলা হচ্ছে।মুসলমানের অধিকার পদদলিত করা হচ্ছে, তাদের রক্ত ঝরানো হচ্ছে। এমন মুসলমানও রয়েছে, টাকার অভাবে জুতা কিনতে না পেরে যাদের পা ছিড়ে যাচ্ছে। এ অবস্থায় তুমি হাজারো ঋণ গ্রহীতা হলেও এমন লোককে তোমার টাকা দেয়া জায়েয না হবে যে ৮১-৮৭ মডেলের মার্সিডিস গাড়ী কেনার জন্য পঞ্চাশ হাজার রিয়াল কিংবা পঞ্চাশ হাজার দিরহাম ব্যয় করে। এ টাকা দ্বারা মুজাহিদদের কয়েকটি ফ্রন্ট চালু করা যাবে। এ টাকা দিয়ে তুমি মুজাহিদদের জন্য জুতা ক্রয় কর।ইনশা আল্লাহ তুমি ক্ষমাপ্রাপ্ত হবে। এটা নির্বোধদের দেয়ার চেয়ে উত্তম। আল্লাহ বলেন-


وَلَا تُؤْتُوا السُّفَهَاءَ أَمْوَالَكُمُ الَّتِي جَعَلَ اللَّهُ لَكُمْ قِيَامًا
“আর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা যে সম্পদগুলোকে তোমাদের জীবন-যাত্রার অব্লম্বন করে দিয়েছেন তা নির্বোধদের হাতে তুলে দিওনা।”[সূরা নিসাঃ৫]।
ধন সম্পদ দিয়ে কী করতে হবে তাও তিনি বলেছেন-
وَجَاهِدُوا بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ
“তোমরা তোমাদের ধন-সম্পদ দিয়ে জ্বিহাদ কর।”[তাওবাহঃ৪১]

 

অন্যান্য ইবাদতের চেয়ে জ্বিহাদ শ্রেষ্ঠ

কুরআন ও হাদীসে জ্বিহাদের বড় গুরুত্ব রয়েছে। জিহাদের উপর কোন ইবাদত এমনকি নামাযকেও অগ্রাধিকার দেয়া যায় না। জিহাদ নামাযের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ইমাম ইবনে তাইমিয়া তাঁর ফতওয়ায় বলেছেন-
‘হানাদার যে শত্রু দ্বীন ও দুনিয়া উভয়ের ক্ষতি করে ঈমানের পর তাঁকে হঠানোর চেয়ে কোন বড় ফরয কাজ আর নেই ‘।
প্রথমে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ। এরপর হানাদার শত্রুকে হটানো, যারা মুসলমানের দ্বীন ও দুনিয়া উভয়ের উপর আঘাত করে তাঁর ক্ষতি সাধন করছে, যেমন রুশ, ইয়াহুদী ও অন্যান্যরা। তাই প্রথমে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ অতঃপর হানাদারকে হটানো। অতঃপর নামায, রোযা ও হজ। তাই আল্লামা ইবনে রুশদ বলেছেন-
‘জ্বিহাদ ফরয হওয়ার বিষয়টি যখন নিশ্চিত হয়ে যায়, তখন তাঁকে উম্মতের ঐক্যমতের ভিত্তিতে ফরয হজের উপর অগ্রাধিকার দিয়ে হয়।’
ভাই তুমি কিভাবে হজে যেতে চাচ্ছ অথচ মুসলমানদের হত্যা করা হচ্ছে। তুমি এতে পাঁচ থেকে ছয় হাজার দিরহাম ব্যয় করছ অথচ এ অর্থগুলো দিয়ে তুমি আফগানিস্তানে মুজাহিদদের একটি ফ্রন্ট চালু করতে পার। তুমি গিয়ে বলছ- ‘লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা’। তিনিইতো তোমাকে বলেছেন-
انفِرُوا خِفَافًا وَثِقَالًا
“তোমাদের জ্বিহাদের জন্য হাল্কা ও ভারি সরঞ্জাম নিয়ে বের হয়ে পড়। ”[তাওবাহঃ৪১] ।
তুমি আল্লাহ্র রাস্তায় বের হয়ে বল ‘ লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা’। তোমার তো ওখানে তালবিয়া বলা সহজ। তুমি তালবিয়া বলছো ওখানে বিমানে বসে, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত স্থান থেকে এমনকি আরাফাতেও ছায়া আপেল এবং ঠাণ্ডা পানির ব্যবস্থা রয়েছে। আর এখানে তো গরম, শুষ্কতা, শীত, বরফ, ক্লান্তি ও পিপাসার সম্মুখীন হতে হয়। ‘ লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক ‘ এর বাস্তবতা তো এখানেই অধিক বিদ্যমান।
সম্পদ দ্বারা জ্বিহাদ করার ব্যাপারে আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রহ.-কে প্রশ্ন করা হল, আমরা যদি জিহাদে যাই, তাহলে কিছু লোক অভাবের কারণে মারা যাবে। এ অবস্থায় আমরা কী করব ? তিনি বললেন, অভাবীরা মারা গেলেও জিহাদে যাও। কারণ, মুসলমানরা যদি পরাজিত হয়, তাহলে ধনী-গরীব সকলেই মারা যাবে এবং দ্বীন-দুনিয়া উভয়ই ধ্বংস হবে।

তোমাদের খাদ্য তোমাদের শত্রুর মুখে

কিন্তু জ্বিহাদ এ সকল আশঙ্কাকে দূরীভূত করে। মুসলমানরা বিজয়ী হলে গরীবরা ধনীতে পরিণত হয়। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
“আল্লাহু সুবহানাহু ওয়াতাআলা আমার রিযিক রেখেছেন আমার বর্শার ছায়াতলে।” [আলজামিউস সগীরঃহাদীস নং ২৮৩১]।
এখন আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে একটি দুর্গ রয়েছে যাকে আহমাদ শাহ মাসউদ জয় করার কাছাকাছি পৌঁছেছে। আল্লাহ এ ব্যাপারে তাঁকে সাহায্য করুন। এ সপ্তাহে আপনাদেরকে উত্তরাঞ্চলের একটি বড় বিজয় ও অনেক গনীমতের সুসংবাদ দিচ্ছি। আলহামদুলিল্লাহ অনেক গনীমত। আমার ধারণা সাড়ে তিনশতটি ক্লাসিনকভ। আমার নিকট আবদুল ওয়াহিদ এসে জানাল যে, তাঁরা অনেক গনীমত পেয়েছে। সে ঐ অঞ্চলের লোক। কিন্তু তা কোন জায়গায় পেয়েছে তা ভুলে গেছে। ঐ গণীমতে একশত টন খাদ্য ছিল। আমরা যদি ওখান থেকে বাদাখশানে ঐগুলো নিয়ে যেতে চাই, তাহলে একটি খচ্চরের উপর করে পঞ্চাশ কেজির অধিক নেয়া যাবে না। অর্থাৎ, এক টন নিতে গেলে বিশটি খচ্চরের প্রয়োজন আছে। আর একশত টন নিতে গেলে প্রায় দু’হাজার খচ্চরের প্রয়োজন।
মুজাহিদগণ কমান্ডারের নিকট এসে বলতো, আমাদের জুতার প্রয়োজন। তিনি বলেন, তোমরা যদি পুরুষ হও, তাহলে তোমাদের জুতা তোমাদের সামনেই আছে। ঐ যে জুতায়পূর্ণ শত্রু ক্যাম্প সামনে, ওদিকে অগ্রসর হও। ফলে তাঁরা তাতে আক্রমণ করে জয় করে নিত এবং জুতা ও অস্ত্র অর্জন করত।

মুসলমানদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার প্রসঙ্গে-

ইমাম ইবনে তাইমিয়া ‘ মানুষ অভাবের কারণে না খেয়ে মারা গেলেও জিহাদে যাওয়া ফরয ‘ কেন বললেন, তার প্রসঙ্গে বলেন, ‘শত্রুরা যদি দুর্বল ও কাপুরুষ মুসলমানের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে, তাহলে জ্বিহাদ চালিয়ে যাওয়ার স্বার্থে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা আমাদের জন্য ঐ সব মুসলমানদের হত্যা বৈধ করেছেন, যাতে আমরা ইসলাম ও মুসলমানের রক্ষার জন্য শত্রুর উপর বিজয় লাভ করতে পারি। অতএব, তাঁদেরকে শত্রুরা ঢাল হিসেবে ব্যবহারের সময় আমরা নিজেরা তাঁদের হত্যা করছি, আর অভাবের সময় তাঁরা আল্লাহ্র ইচ্ছায় মারা যাচ্ছে। আর ঢাল হিসেবে ব্যবহারের সময় তাঁদের হত্যার ব্যাপারটাতো ক্ষুধার কারণে মারা যাওয়ার চেয়ে আরো মারাত্তক। খাদ্যের অভাবতো এখন পৃথিবীর অনেক স্থানে বিরাজ করছে। আফ্রিকাতো ক্ষুধা ও খরার কবলে পতিত। এ থেকে আপনি তাঁদের কিভাবে রক্ষা করবেন। পৃথিবীর কোন অঞ্চলে স্থান করে বসুন এবং সেখানে আল্লাহ্র দ্বীন কায়েম করুন, মুজাহিদদের সাহায্য করুন। মুজাহিদরা আপনার জন্য পৃথিবীর কল্যাণসমূহ নিয়ে আসবে।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুসংবাদ

হযরত আদী বিন হাতেম রদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে আসলেন। এই আদী বিন হাতেমের আব্বা ত্বাই গোত্রের সর্দার ছিলেন। এ সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট একজন লোক এসে অভাবের অভিযোগ জানাল। এরপর আরেকজন এসে ডাকাতির অভিযোগ জানাল। আদী রদিয়াল্লাহি আনহু বড় লোক ছিলেন।আর বড়োলোকরা স্বভাবত শৌর্য বীর্য, টাকা পয়সা ও নিয়ম নীতি প্রিয় হয়। তাই তখন আদী রদিয়াল্লাহু আনহু-এর হাব ভাব দেখে বুঝা যাচ্ছিল যেন তিনি বলতে চাচ্ছেন, এ কেমন দ্বীন যাকে গ্রহণ করে তাঁরা সবাই ফকীর আর তাঁদের রাস্তা ঘাটগুলো চলার জন্য নিরাপদ নয়। এদের মাঝে নিরাপত্তা নেই, স্বচ্ছলতা নেই। আমরা রোমসহ সারা দুনিয়া বাদ দিয়েছি এদের জন্য ? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাঁর দিকে তাকালেন এবং তাঁর মনে যা ছিল, তা যেন জেনে ফেললেন। বললেন, তুমি কী হীরায়* গেছো ? বললেন, না তবে তাঁর নাম শুনেছি ও তাঁকে চিনি।বললেন, যদি তোমার হায়াত দীর্ঘ হয়, তাহলে দেখবে, হীরা থেকে মহিলারা একাকী সফর করে আসছে এবং বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করছে। তাদের অন্তরে আল্লাহ ছাড়া আর কারও ভয় থাকবে না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ালসাল্লাম সত্যই বলেছেন। আদী রদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি মনে মনে বললাম, তাহলে ত্বাই গোত্রের সন্ত্রাসীদের কী অবস্থা হবে এবং সাআলীক ডাকাতরা কোথায় পালাবে, যারা মানুষের পকেটের টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য নির্দ্বিধায় তাঁদের হত্যা করে।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওরাসাল্লাম বলেন-
“তোমার জীবন দীর্ঘ হলে তুমি অবশ্যই কিসরা সম্রাটের রাজকীয় কোষাগার জয় করবে।বললা, কিসরা মানে কি কিসরা বিন হরমুয? বললেন, হ্যা ! এবং তাঁর সম্পদগুলো আল্লাহ্র রাস্তায় ব্যয় করা হবে। আর তোমার জীবন দীর্ঘ হলে তুমি এটাও দেখতে পাবে যে, মানুষ তাঁর হাতের মুষ্ঠি ভরে স্বর্ণ রৌপ্য নিয়ে মানুষকে তা গ্রহণ করার জন্য ডাক দিবে। কিন্তু সবার স্বচ্ছলতার কারণে কেউ তা গ্রহণ করতে এগিয়ে আসবে না।”[বুখারী ও মুসলিম]।
সম্রাট কিসরা সে সময় বর্তমান সময়ের গর্বাচেভের মত ছিল। সে সময় যেমন বিশ্ব দু’ভাগে বিভক্ত ছিল । অর্থাৎ, একদিকে আহলে কিতাব রোমানরা ও অন্যদিকে অগ্নিপূজারী মাজুসরা, তেমনি বর্তমানেও বিশ্ব দু’ভাগে বিভক্ত। একদিকে নাস্তিক কম্যুনিস্ট ও অন্য দিকে খৃস্টীয় পাশ্চাত্য। আদী বিন হাতেম রদিয়াল্লাহু আনহু বলেন- ‘বাস্তবেই আমি মহিলাদেরকে হীরা থেকে একাকী সফর করে এসে বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করতে দেখেছি এবং আমি সেসব লোকদের একজন, যারা সম্রাট কিসরার কোষাগার জয় করেছে।’ এ ব্যাপারে দু বাজুবন্ধ- এর কিসসা ইতিহাস প্রসিদ্ধ, যার ওয়াদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওরাসাল্লাম সারাকা বিন মালেক বিন জা’শাম রদিয়াল্লাহু আনহুকে দিয়েছিলেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা হযরত সুরাকা রদিয়াল্লাহু আনহুকে ঐ সময় পর্যন্ত জীবিত রেখেছিলেন। হযরত উমর রদিয়াল্লাহু আনহু যখন ঐ দু’বাজুবন্ধ এর কাছে পৌছলেন, তখন কাঁদলেন এবং বললেন, কোথায় সারাকা বিন মালেক বিন জা’শাম ? তখন সারাকা কাছে গেলে উমর রদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘এ হচ্ছে তোমাকে দেয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুসংবাদ।’

আশাবাদ

যেমন ধরুন আমি আপনাকে বললাম, আগামীতে যখন আমরা মস্কো বিজয় করব, তখন ক্রেমলিন ভবন আপনাকে দেয়া হবে। তখন আপনি হয়তো বলবেন, আমার জন্য ক্রেমলিন ভবন, যে ছাদা ক্যাম্পে অবস্থান করে ? হ্যাঁ ! আপনি ছাদা ক্যাম্পে অবস্থানকারীর জন্যই ক্রেমলিন ভবন।ব্যাপারটা এখন আপনার কাছে সুদূর পরাহত মনে হচ্ছে। কিন্তু ইনশাআল্লাহ আমরা শীঘ্রই ক্রেমলিন জয় করে নিব। গর্বাচেভ হয়তো আপনাদের গৃহ পরিচালকের কাজ করবে, যদি আত্মহত্যা না করে বা মারা না যায়। আমি মনে করি ইনশাআল্লাহ সিকি শতাব্দীর মধ্যেই মুসলমানদের হাতে রাশিয়ার পতন ঘটবে। নতুবা রাশিয়া ও আমেরিকা থেকে শুরু করে পুরো বিশ্ব কেন আফগানদের প্রতি এত ভীত ? তারা মুসলমানদের প্রতি বিদ্বেষী মনোভাব নিয়ে করে যাচ্ছে। তারা চিকিৎসার নামে পর্যন্ত ফ্রান্স, জার্মান ও ডেনমার্ক থেকে আসছে।

খৃষ্টানদের বিদ্বেষ

জার্মান ও ফ্রান্সের অনেক চিকিৎসক চিকিৎসার নামে আফগান মহিলাদের জরায়ু কেটে ফেলে, যাতে তাঁরা গর্ভবতী হতে না পারে। মহিলারা বাচ্চা প্রসবের জন্য তাঁদের চিকিৎসালয়ে ফেলে বাচ্চা প্রসব শেষে তাঁদের জরায়ু কেটে ফেলা হয়। কারন, তারা আফগানদের বংশ বৃদ্ধিতে শঙ্কাগ্রস্ত। জন্ম নিয়ন্ত্রণের ট্যাবলেট আফগানিস্তানে খুব জোরেশোরে বিতরণ করা হচ্ছে। আফগান মহিলারা তাঁদের কাছে এসে মাথা ব্যাথার কথা বললে তাঁরা জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি খাইয়ে দেয়।
আমাদের ভাই ডাক্তার সালেহ মাজারশরীফ ও বলখে গিয়েছিলেন। তিনি বলছেন, আমি সেখানে যে জিনিসটি বেশী বিতরণ করতে দেখেছি, সেটা হচ্ছে জন্মনিয়ন্ত্রণ ও বন্ধ্যাকরণ ট্যাবলেট এবং মাদক।
পাশ্চাত্যের চিকিৎসকরা মুজাহিদদের মাঝে মাদক বিতরণ করছে। কেউ এসে পেটের ব্যাথার কথা জানালে তাঁরা তাঁকে মাদকের ট্যাবলেট খাইয়ে দেয়। কারণ, তাঁরা আফগানদের ইউরোপ দখল করার ভয় করছে।
জ্বিহাদ ভীতি

টাইমস ম্যাগাজিন লিখেছে, কয়েকদিন আগে তা আমি নিজেই পড়েছি যে, ‘রুশরা আফগানিস্তানে সামরিক পথের পরিবর্তে বন্ধ দরজা দিয়ে ঢুকে পড়ছে।’ অর্থাৎ, আফগান রণাঙ্গনে তাঁরা বিজয়ের ব্যাপারে নিরাশ হয়ে যাওয়ায় জহির শাহকে ফিরিয়ে আনার জন্য আমেরিকানদের সাথে চুক্তি করতে চাচ্ছে। তারা বলল, জহির শাহ বা তাঁর মেয়ে জামাই শাহ ওলীকে নিয়ে আসুন, আমরা আফগানিস্তান থেকে চলে যাব। এসব ফান্ডামেন্টালিষ্টদের ক্ষমতায় যাওয়ার সুযোগ দিবেন না।ফান্ডমেন্টালিষ্ট কারা ? অর্থাৎ, মৌলবাদী যারা মূলনীতিকে আকড়ে ধরে। এরা সাইয়েফ, হেকমতিয়ার, রব্বানী ও ইউনুস খালেস।
প্রথম দু’জন ষ্ট্রীম ফান্ডামেন্টালিষ্ট।অর্থাৎ, কট্টর মৌলবাদী। শেষের দু’জন একটু হালকা আর বাকীরা মডারেট তথা মধ্যপন্থী। মধ্যপন্থী মানে অসুবিধার কিছু নয়। ব্রিটিশ ও আমেরিকানদের মত তাদেরকেও পরস্পর সহযোগী হিসেবে পাওয়া যাবে।
তাই এক মার্কিন পন্ডিত তাঁর এক লেখায় উল্লেখ করেছে যে, ‘রাশিয়া শীঘ্রই আফগানিস্তানে পরাজিত হবে। আফগানদের হাতে রুশ সাম্রাজ্যের পতন অবশ্যম্ভাবী। এরা রাশিয়া ভেদ করে ইউরোপের গভীরে পৌঁছে যাবে। তাই হে মার্কিনীরা ! তোমরা সে সময় তোমাদের দিকে ধাবমান ইসলামী স্রোতকে রোধ করা জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগ করতে বাধ্য হবে। অতএব, এখন থেকে এ ক্যান্সারের বিস্তার বন্ধ কর।’
ম্যাট্রান অনেক দিন ধরে বলে আসছে যে, আফগানরা হচ্ছে ক্যান্সার, যা রুশ সাম্রাজ্যের দেহে ঢুকে পড়েছে। এ ক্যান্সার প্রতিদিন তাঁর দেহকে খেয়ে শেষ করে চলছে। এরা আফগানদের প্রচন্ড  ভয় করে।
আপনারা অবশ্যই জানেন ইয়াহুদীরা আফগানদের থেকে কত দূরে বাস করে। এ ইয়াহুদীরা আমেরিকার অভ্যন্তরে আফগানদের ইমিগ্রেশনের জন্য বিভিন্ন এজেন্সী গঠন করেছে। যে আফগান আমেরিকায় চলে যেতে চায়, তার জন্য পাসপোর্ট, ভিসা ও টিকেট সব কিছুর ব্যবস্থা করে এরা। কারণ, এরা দেখতে পাচ্ছে, জিহাদের চেতনা গোটা মুসলিম উম্মাহর শিরা-উপশিরায় চলাচল করছে। কেউ ফিলিপাইনী, কেউ মিশরী, কেউ সৌদী ও কেউ আলজেরী। এরা সবাই কেন আফগানিস্তানে এসেছে ? অবশ্যই আফগানিস্তানকে রক্ষা করার জন্য। কারন, আফগানিস্তান একটি ইসলামী ভূখন্ড। তো এরা আগামীতে তাঁদের দেশে ফিরে গিয়ে কী করবে ? এরা তাঁদের দেশে ফিরে গেলে পাশ্চাত্যের সকল স্বার্থ হুমকির সম্মুখীন হবে। এরা আফগানিস্তানে থাকলে রাশিয়া পরাজিত হবে। কিন্তু ভবিষ্যতে কি আমরা তাঁদের সম্মুখে দাঁড়াতে পারব ? এ ফিলিস্তিনী যুবক যে আফগানিস্তানকে কাফেরের থাবা থেকে মুক্ত করার জন্য লড়াই করছে , রক্ত দিচ্ছে , সে কি মসজিদে আকসাকে রক্ষা না করে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকবে ? বরং এর চেয়ে আরো বেশী ত্যাগ স্বীকার করবে। তাই মোসাদ তাঁদের পত্রিকায় লিখেছে, আমরা ক্ষান্ত হব না, শীঘ্রই পেশোয়ারের মুজাহিদ ক্যাম্পে হামলা চালানো হবে। কেন ? কারণ, তারা জেনেছে , যুবকরা এখান থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে ফিলিস্তিনে গিয়ে বিভিন্ন অপারেশনে অংশগ্রহণ করছে।
ইয়াহুদীদের পত্রিকায় তাঁরা লিখেছে, আমি নিজেই তা পড়েছি। আলমুজতামা পত্রিকা মুজাহিদদের উপর যে রিপোর্ট করেছে সেটা তাঁরা তাঁদের পত্রিকায় ছেপেছে। পরে জর্ডানের কতিপয় ভাই আমাদের সাথে যোগাযোগ করে সতর্ক করে বলেছে যে, এ ইয়াহুদী দুষ্ট, তাই সতর্ক থাকবেন। তাদের একজন আমাকে একথাও বলেছে যে, কোন কোন ইসরাঈলী পত্রিকা স্বয়ং আপনার নাম উল্লেখ করেছে, তাই সতর্ক থাকবেন। এর কারণ হচ্ছে এ জিহাদী চেতনা, বিশেষ করে এ আফগান জ্বিহাদের প্রভাব এবং ইসলামী পুনর্জাগরণ।
এক ভাই আমাকে বলল যে, আমরা আপনার কিতাব ‘ আয়াতুর রহমান ফী জিহাদিল আফগান ‘ ফটোস্ট্যাট করে গোপনে পশ্চিম তীরের বিভিন্ন লাইব্রেরীতে দেয়ার পর ইয়াহুদীরা সন্ধান চালিয়ে তা নিয়ে নেয় এবং পুড়িয়ে ফেলে। এ হচ্ছে জিহাদ ভীতির কারণে।
এখন কোন ফিলিস্তিনী পাকিস্তান থেকে পশ্চিম তীরে প্রবেশ করলে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইয়াহুদীরা ধরে নিয়ে যায়। শুধু পাকিস্তানে আসলেই তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়, যদিও তাঁরা পাঞ্জাব, সিন্ধু বা করাচীতে উচ্চ শিক্ষা লাভের জন্য আগমন করে।
অতএব, যতক্ষণ পর্যন্ত আমরা আল্লাহ্র সাথে থাকব, ততক্ষণ পর্যন্ত তিনি আমাদের শত্রুর হাতে ছেড়ে দিবেন না। গোটা বিশ্ব আমাদের বিরুদ্ধে । এমনকি মার্কিনীরাও আমাদের বিরুদ্ধে ।

মিথ্যা ধারণা

আরব বিশ্বের পত্র-পত্রিকা সমূহের কাছে ষ্টিংগার ক্ষেপণাস্ত্রের খবর পৌছাল, তখন তাঁরা ব্যাপারটি এভাবে তুলে ধরল, যেন আফগানিস্তানে ষ্টিংগার ক্ষেপণাস্ত্র ছাড়া আর কোন অস্ত্রই নেই। আমি তাঁদের বললাম, ষ্টিংগার ক্ষেপণাস্ত্র আফগানিস্তানের জ্বিহাদের জন্য কবে এসেছে ? মুজাহিদদের অধিকাংশ ফ্রন্টে এখনো ষ্টিংগার ক্ষেপণাস্ত্র পৌঁছেনি। বাস্তব কথা হচ্ছে আফগান জ্বিহাদের বদৌলতে মুসলিম উম্মাহর অন্তরে আল্লহর প্রতি যে ভরসা ও আস্থা সৃষ্টি হয়েছে, তা আমেরিকার কাছে খারাপ মনে হয়েছে। তাই তাঁরা এ ভরসা ও আস্থায় ফাটল সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে ষ্টিংগার ক্ষেপণাস্ত্রের কাহিনী প্রচার করা শুরু করেছে। যাতে মানুষের মাঝে এ ধারণার সৃষ্টি হয় যে, আমেরিকাই হচ্ছে আফগান জ্বিহাদের সহানুভূতিশীল জননী ও পরিচর্যাকারী। আর এ জ্বিহাদ ইসলামের জ্বিহাদ নয়, বরং তারকাদের লড়াই, দুই পরাশক্তি আমেরিকা ও রাশিয়ার সংঘাত।যেখানে যাচ্ছি সেখানে ষ্টিংগার ক্ষেপণাস্ত্রের কথাই শুনছি। আমি বললাম, আমেরিকা মুজাহিদদেরকে দেয়া প্রতিটি ষ্টিংগার ক্ষেপনাস্ত্রের বিনিময়ে মুসলমানদের কাছে সত্তর হাজার ডলার হাতিয়ে নিচ্ছে। আমি চ্যালেঞ্জ করছি যে, আমেরিকা আজ পর্যন্ত মুজাহিদদেরকে এক কাপ চাও দান করেনি।
হ্যা ! আমরা স্বীকার করি যে, আমেরিকা জাতিসংঘ ইত্যাদির মাধ্যমে আফগান মুহাজিরদেরকে সাহায্য দিয়ে যাচ্ছে। এটা ঠিক যে, পাকিস্তানে সাড়ে তিন মিলিয়ন আফগান মুহাজির রয়েছে।এদের জন্য প্রতিদিন দশ মিলিয়ন রুটির প্রয়োজন হয়, দশ মিলিয়ন রুটির দাম দশ মিলিয়ন রুপি। আমেরিকা, ব্রিটেন, জার্মানি প্রভৃতি দেশসমূহ ও ইন্টারন্যাশনাল চার্চ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান ইউনিসেফের মাধ্যমে এ সাহায্য দিচ্ছে এটা ঠিক। কিন্তু আমি চ্যালেঞ্জ করে বলব যে, আমেরিকা মুজাহিদদেরকে একটি অস্ত্রের টুকরোও দিয়েছে এ কথা কেউ প্রমাণ করতে পারবে না। এমনকি মুজাহিদদেরকে শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবার জন্যও তাঁরা কোন সাহায্য করেনি। একবার তাঁরা আফগানিস্তানে শিক্ষা খাটের জন্য ষাট মিলিয়ন ও চিকিৎসা খাটের জন্য একশ মিলিয়ন ডলার নিয়ে আসল এবং পেশোয়ারে মুজাহিদ নেতা রব্বানী, হেকমতিয়ার, সাইয়াফ ও ইউনুস খালেসের সাথে যোগাযোগ করল। কিন্তু তাঁরা এ সাহায্য প্রত্যাখ্যান করলেন।

জ্বিহাদের চিত্র বিকৃতিকরণ

আমেরিকানরা এ জ্বিহাদের চিত্রকে বিকৃত করতে চায়। অনুরূপ এ উদ্দেশ্যে ব্রিটিশরাও তাঁদের টেলিভিশনে আফগান জ্বিহাদের ফ্লিম প্রদর্শন করে। এতে মুজাহিদদেরকে দেখানো হয় মাদকদ্রব্য সেবনরত অবস্থায়। মাদকদ্রব্য সেবনের পর তাঁরা নৃত্য শুরু করে। আর নৃত্য শেষে তাঁরা তাঁদের সম্মুখেই শত্রু ঘাটিতেই আক্রমণ শুরু করে। আফগান জিহাদ যেন কতিপয় মাদকসেবীদের কাজ এটা প্রচারের উদ্দেশ্যেই তাঁরা এসব করছে।
ফ্রান্সের সাংবাদিক লুইস আফগানিস্তান নিয়ে রিপোর্ট তৈরি করে। তার পত্রিকার কভারে আফগানদের চিত্র এভাবে তুলে ধরা হয় যে, তারা মানুষ নাকি বানর তা বুঝাই যায় না।আফগানদের সম্মানের প্রতীক পাগড়ী নিয়ে তোলা কোন চিত্র তাঁদের পত্রিকায় দেখা যায় না। দেখা যায় তাঁরা খেলনা ও বাদ্যযন্ত্র নিয়ে বসে আছে। পাশ্চাত্যের এসব লোকেরা আফগানদের ঘৃণা করে। তাই তাঁরা তাঁদের চিত্র এভাবেই তুলে ধরে। তারা বলেছে, আমরা গোটা বিশ্বকে আমাদের সংস্কৃতির অনুসারী বানিয়েছি এবং বিশ্বাসী আমাদের আধিপত্য মেনে নিয়েছে। কেবল হিন্দুকুশ পর্বতমালার এসব ছাগলরাই এর বাইরে রয়ে গেছে। আমরা তাদেরকে আমাদের প্রতি দুর্বল বানাতে পারিনি। এরা আফগানদের পাহাড়ী ছাগল অথবা মরু এলাকার যাযাবর হিসেবে আখ্যায়িত করতে আরাম বোধ করে।

পুনর্জাগরণ

আমি বলব, শুষ্ক ভাঙ্গা লতাপাতায় যেমন আগুন ছড়িয়ে পড়ে, তেমনি এ জ্বিহাদের বহ্নিশিখাও মুসলিম উম্মাহর মাঝে ছড়িয়ে পড়ছে। আলহামদুলিল্লাহ, আপনারা এখানে দু’শ দশজন উপস্থিত আছেন। গত বছরের এমন সময়ে এখানে আমি আবু বুরহান ও আরেকজনসহ মোট তিনজনই উপস্থিত ছিলাম। কিন্তু এক বছরের মধ্যে পরিবর্তন কিভাবে এল ? আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা মানুষের বক্ষকে জ্বিহাদের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন এবং আফগানিস্তানের জিহাদকে এমন একটি ঘাটিতে রুপান্তরিত করেছেন, যেখানে মানুষ জ্বিহাদের জন্য একত্রিত হচ্ছে।
দু’দিন পূর্বে আমি সৌদিআরব থেকে প্রত্যাবর্তন করেছি। আমি সেখানে জ্বিহাদের প্রতি যুবকদের আসক্তি দেখে বিস্মিত হয়েছি। তারা বহুদূর থেকে জ্বিহাদের আলোচনা শোনার জন্য ছুটে এসেছে।ভুল তথ্য পেয়ে শায়খ বিন বায প্রথমে আফগান জ্বিহাদের বিপক্ষে ফতোয়া দিয়েছিলেন। তাই তাঁরা তাঁর কাছে গিয়ে তাঁর ফতোয়ার প্রতিবাদ জানাল। এটা একমাত্র জ্বিহাদের প্রতি ভালোবাসার ফল।
আমি আলকাছিমে গিয়েছিলাম। আলকাছিম একটি বিচ্ছিন্ন ও দূরবর্তী এলাকা। জিদ্দা, মদীনা, মক্কা বা রিয়াদের মত কোন শহর নয়। এটা বিশ্ব যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। জিহাদের তথ্যসমূহ সেখানে স্পষ্টরুপে পৌঁছে না। আমি শায়খ ইবনে উছাইমীনের সাথে সাক্ষাৎ করতে গেলাম। ঐ সময় দেখলাম পূর্বাঞ্চল থেকে দু’জন যুবক আসল শায়খের নিকট আফগান জ্বিহাদের বিধান জিজ্ঞেস করার জন্য। তাদের একজন আফগান জ্বিহাদ সম্পর্কে আজে বাজে কথা বলা শুরু করল। আমি তাঁদের সামনে ছিলাম। ইবনে উছাইমীন তাঁকে বললেন, তুমি তাঁদের ব্যাপারে কী জান বল ? সে অনেক কিছু বলল। তার কথা শেষে আমি শায়খের সামনে আফগান জ্বিহাদের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরলাম। ফলে ইবনে উছাইমীন তাঁকে বললেন, তুমি এ ব্যাপারে কোন কথা বলবে না। তুমি এসব বললে গোনাহগার হবে। কারণ, তুমি মানুষকে জ্বিহাদ থেকে বিরত রাখছ। সে বলল, আমি তা অমুকের নিকট শুনেছি।
উনাইযাতে ইশার পর আমি বক্তব্য রেখেছিলাম। শায়খ বললেন, আপনি আগামীকাল জুমার পরও বক্তব্য রাখবেন। যারা আফগানিস্তানের জিহাদ সম্পর্কে ভুল ধারণা ছড়াচ্ছিলেন তাঁদের কাছে বিষয়টি খারাপ লাগল। তাই তাঁরা পরদিন শায়খের নিকট সীলমোহরকৃত একটি কাগজের পৃষ্ঠা হস্তান্তর করলেন। আমি জানি না এরা এসব কোথায় পেলেন। সেখানে লেখা আছে যে, ‘বিন বায ও ইবনে উছাইমীন কাফের।’ তাঁদের পিছনে নামায পড়া জায়েয হবে না। আর তাতে আবদু রাব্বির রাসূলসহ সাত দলের নেতাদের স্বাক্ষর বিদ্যমান। শায়খ আমাদের বললেন, কাগজটা দেখুন শায়খ আব্দুল্লাহ। আমি তা দেখে বললাম, আল্লাহর কসম ! এটা  মিথ্যা, বানোয়াট। সেদিন শায়খের জুমার খুতবা ছিল জ্বিহাদ সম্পর্কে।

মাতা পিতার অনুমতি

নামায শেষে লোকজন বসলেন। আমি বক্তব্য রাখলাম। মসজিদ অর্ধেকের চেয়ে বেশী ভর্তি ছিল।প্রায় দেড় ঘন্টা বক্তব্য রাখলাম। কোন মানুষ উঠল না। অতঃপর শায়খের সাথে দুপুরের খাবার খেলাম। শায়খকে বললাম, আফগানিস্তানের জ্বিহাদের ব্যাপারে আপনার মতামত কী?বললেন, ওয়াজিব। অর্থাৎ ফরয। ওয়াজিব আর ফরয একই জিনিস। অতঃপর বললাম, এতে অংশগ্রহণ করার জন্য কি মাতা পিতার অনুমতি প্রয়োজন ? বললেন, ছেলে যদি একজন হয় এবং মাতা পিতা যদি তাঁর প্রতি মুখাপেক্ষী হয়, তাহলে অনুমতি নেয়া আবশ্যক। তা না হলে অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন নেই। এদিন বুরাইদার একটি মসজিদে মাগরিবের নামাযের পর আমার বক্তব্যের প্রোগ্রাম ঠিক করা হল। মসজিদ ভর্তি ছিল। মাগরিবের পর থেকে লাগাতার সোয়া তিন ঘন্টা বক্তব্য রাখলাম। মসজিদ ভর্তি। কেউ উঠেনি। অতঃপর আমি তাঁদের কাছে অযু করার জন্য অনুমতি চাইলাম। তারা বললেন, যান। আমি অযু করতে গেলাম। সবাই অপেক্ষা করল। কেউ বের হয়নি। আমি ফিরে এসে তাঁদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিলাম। পরের দিন রিয়াদের এক মসজিদে বাদ মাগরিব আমার বক্তব্যের প্রোগ্রাম ঠিক করা হল। আমি আসলাম। ইতোমধ্যেই ইমাম সাহেব নামায শুরু করে দিয়েছেন। আমি অযু করছিলাম। এতক্ষণে যুবকদের আগমণে পুরো মসজিদ এলাকা ভর্তি হয়ে গেল। আমি তাদেরকে ডিঙ্গিয়ে সামনে গেলাম। মসজিদের সাথে সংলগ্ন সকল রাস্তা গাড়ীতে ভর্তি হয়ে গেল। এ এলাকায় আর কোন গাড়ী চলাচল সম্ভব হচ্ছিল না। মসজিদের মানুষ জুমআর দিগুণ হল। পুরুষদের পাশাপাশি মহিলাদের আগমনও ঘটল।তাঁদের কেউ বসা, কেউ দাড়ানো। সাড়ে পাঁচটা থেকে সাড়ে নয়টা পর্যন্ত কথা চলল। মাঝখানে অবশ্যই ইশার নামায পড়েছি। অতঃপর চলে আসতে বের হতে চাইলাম।
ইমাম সাহেব বললেন, শায়খের চলে যাওয়ার পথ দেন, সালাম দেয়ার জন্য ভিড় করবেন না।  কিন্তু লোকজন সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করেনি। বাধ্য হয়ে ইমাম সাহেব মসজিদের পেছনের দরজা খুললেন। আমরা ঐ দরজা দিয়ে বের হলাম। কিন্তু ঐ দিকেও লোকজন এসে ভিড় জমাল।আমাদের পিছনে তাঁদের ভিড়ের কারণে আমার টুপি পড়ে গেল। আমি বাসায় গেলাম টুপিবিহীন অবস্থায়। গাড়ীতে উঠার সময়ও তাঁদের ভীড় থেকে রক্ষা পাইনি। সেখানেও তাঁরা এসে গাড়ী ধরে রাখল। কেবল সালাম করার জন্যই তাঁদের এতসব ভিড়।
আমার বক্তব্য শেষে ইমামা সাহেব বলেছিলেন, কেউ জ্বিহাদের জন্য কিছু দান করতে চাইলে করতে পারেন। এসব লোকেরা এসেছিলেন শুধু বক্তব্য শোনার জন্য। চাদার কথা কারও অন্তরে ছিল না। তারপরও তাঁরা যা ছিল দান করল। মসজিদের দরজায় একটি কার্টুন ছিল। শুধু এ একটি মাত্র কার্টুনে তাঁদের দান এসে জমা হল দু’ লক্ষ আটষট্টি হাজার রিয়েল।
মাদরাসাতুল যাবাত-এর পরিচালক আমার ব্যাপারে জানার পর বললেন, আমরা চাই আপনি আমাদের মাদ্রাসায় এসে কিছু বলুন। আমি তাঁদের মসজিদে বক্তব্য রাখার সময় যখন একজন শহীদের ঘটনা শোনালাম, তখন কান্নার আওয়াজে মসজিদ ভারি হয়ে উঠল। মানুষের হৃদয় গলে গেল। এটা অবশ্যই আমার জন্যে নয়। জিহাদের জন্য, জিহাদের ব্যাপারে কিছু শোনার জন্য।মহিলারা কাগজের টুকরায় লিখে পাঠাচ্ছে, আমরা জিহাদে যেতে চাই, কিভাবে আমরা জিহাদে যেতে পারি ? মোটকথা, একের পর এক সবাই জ্বিহাদের ব্যাপারে জানতে চাচ্ছে। সাংবাদিকরা এসে জ্বিহাদের ব্যাপারে জানতে চাচ্ছে। তারা আমার শয়নকক্ষে এসে আমার শায়িত অবস্থায় পর্যন্ত জিহাদের ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য পীড়াপীড়ি করছে। কারণ, তারা দেখতে পাচ্ছে জ্বিহাদের প্রতি মানুষের বিপুল সাড়া।
সোমবার তিনটা বাজে আমি রিয়াদ থেকে জেদ্দার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলাম। মাগরিবের আযানের সামান্য পূর্বে ওখানে গিয়ে পৌছালাম। দেখলাম, ওখানে যুবকরা একটি মসজিদে আমার বক্তব্যের প্রোগ্রাম ঠিক করে রাখল। ওখানে বক্তব্য রাখার পর একই দিন আরেকটি মসজিদেও বক্তব্য রাখতে হল ।

সেই বিষাক্ত নাগিনী ব্রিটেন

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা বলেন-
هَا أَنتُمْ أُولَاءِ تُحِبُّونَهُمْ وَلَا يُحِبُّونَكُمْ وَتُؤْمِنُونَ بِالْكِتَابِ كُلِّهِ وَإِذَا لَقُوكُمْ قَالُوا آمَنَّا وَإِذَا خَلَوْا عَضُّوا عَلَيْكُمُ الْأَنَامِلَ مِنَ الْغَيْظِ ۚ قُلْ مُوتُوا بِغَيْظِكُمْ ۗ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ [٣:١١٩]
إِن تَمْسَسْكُمْ حَسَنَةٌ تَسُؤْهُمْ وَإِن تُصِبْكُمْ سَيِّئَةٌ يَفْرَحُوا بِهَا ۖ وَإِن تَصْبِرُوا وَتَتَّقُوا لَا يَضُرُّكُمْ كَيْدُهُمْ شَيْئًا ۗ إِنَّ اللَّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ مُحِيطٌ [٣:١٢٠]
“হে মুমিনগণ ! তোমরা মুমিন ব্যতীত অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ রূপে গ্রহণ করো না। ওরা তোমাদের সর্বনাশ সাধনে ত্রুটি করে না। তোমরা কষ্টে পতিত হও এটাই তাঁরা কামনা করে। তাদের মুখ থেকেও তোমাদের প্রতি বিদ্বেষ প্রকাশ পেয়েছে। আর যা তাঁদের অন্তরে লুক্কায়িত আছে তা আরো মারাত্মক। যদি তোমরা উপলব্ধি করতে চাও, তাহলে এজন্য তোমাদের ব্যাপারটা সুস্পষ্ট করে বর্ণনা করেছি। দেখ, তোমরা তাদেরকে আন্তরিক ভালবাস, কিন্তু তাঁরা তোমাদের প্রতি মোটেই আন্তরিকতা রাখে না। আর তোমরা সকল কিতাবের উপর বিশ্বাস রাখ (কিন্তু তাঁরা তোমাদের কুরআনকে বিশ্বাস করে না)। তাঁরা যখন তোমাদের সাথে মিলিত হয়, তখন বলে আমরা (তোমাদের ন্যায়) ঈমান এনেছি। আর যখন তাঁরা তোমাদের কাছ থেকে আলাদা হয়, তখন তোমাদের প্রতি ক্ষোভে আঙ্গুল কামড়ায়। নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাঁদের অন্তরের বিষয় সমূহের ব্যাপারে অবগত আছেন। তোমাদের যদি কোন মঙ্গল হয়, তাহলে তাঁদের খারাপ লাগে। আর যদি তোমাদের কোন ক্ষতি হয়, তাহলে তাঁরা তা নিয়ে আনন্দবোধ করে। তবে যদি তোমরা ধৈর্য্য ধারণ কর এবং তাকওয়া অবলম্বন কর। তাহলে , তাঁদের ষড়যন্ত্র তোমাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না। তারা যা কিছু করছে, তা নিশ্চয়ই আল্লাহ্র আয়ত্বাধীনে রয়েছে।”[আলে ইমরানঃ১১৯-১২০]।


এ পবিত্র আয়াতগুলো আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি মদীনায় তাঁর ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক প্রচেষ্টার সময় অবতীর্ণ হয়েছিল। অর্থাৎ, বদর ও উহুদ যুদ্ধ সংঘটিত হওয়ার পর। উহুদ যুদ্ধ ইসলামী আন্দোলনের একটি অন্যতম শিক্ষনীয় ঘটনা ছিল, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের অন্তর ও চিন্তাধারায় পরিবর্তন এনে দিয়েছিল। যে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে ইচ্ছুক, তার উচিত হবে সাইয়েদ কুতুব রহ.-এর ‘ ফী যিলালিল কুরআন’ দেখে নেয়া। তিনি যুদ্ধের ঘটনাবলী এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন, যেন মনে হবে তিনি প্রতি মুহূর্তে প্রত্যক্ষ করা পূর্বক যুদ্ধের তাজা তাজা সংবাদ নিয়ে আসছেন।
এ আয়াতগুলো আমাদেরকে এমন কিছু লোকের ব্যাপারে সতর্ক করছে, যারা বসবাস করে আমাদের মাঝে, যাদের গায়ের রঙ আমাদের মত এবং যারা কথা বলে আমাদের মত ভাষায়। এরা মুসলমানদের পরাজয় ও দুর্ভোগ কামনা করে, তাদের অসহায়ত্ব ও পতনের প্রতীক্ষায় থাকে।আর তাঁরা তখনই আনন্দবোধ করে, যখন কুফরের ঝান্ডাকে সমুন্নত ও ইসলামের ঝান্ডাকে পতিত অবস্থায় দেখে। আমি যখন এ কথা বলছি, তখন আরবের বামপন্থী ও আফগানিস্তানের সুবিধাবাদীদের কথা আমার মনে পড়ছে।

সবার দৃষ্টি এখন আফগানিস্তানের প্রতি

ভাইয়েরা ! এখন গোটা দুনিয়ার দৃষ্টি, কণ্ঠ, মিডিয়া, কলম ও আলো পৃথিবীর যে ভূখন্ডকে নিয়ে ব্যস্ত, তার নাম আফগানিস্তান। আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে একটি বিশেষ বিভাগ খোলা হয়েছে। এর নাম আফগানিস্তান বিভাগ। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে মিশন নামে একটি শিক্ষাগার ছিল। ওটার নাম পরিবর্তন করে এখন নাম দেয়া হয়েছে আফগানিস্তান স্কুল। উদ্দেশ্য আফগানিস্তানের ঘটনাবলী সংগ্রহ করে পর্যালোচনা করা।
তাঁরা পৃথিবীতে ইসলাম পুনরায় বিজয় লাভ করায় বয়ে ভীত , কম্পমান। আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোর দিকে চেয়ে দেখুন এবং পত্র পত্রিকা ও সাময়িকীগুলো পড়ে দেখুন। দেখবেন আফগানিস্থানই এখন লেখার মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। কারণ, চলতি শতাব্দীর গোড়ার দিকে পশ্চিমারা ইসলামী খেলাফত ধ্বংস করার পর আফগানিস্তানই একমাত্র সেই দেশ, যেটা ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিতে সক্ষম হয়েছে।
যে  আফগানরা জ্বিহাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে, তারা এখনও রোম থেকে আফগানিস্তানে মমিকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এরা এবং আরব বিশ্বের বামপন্থীদের কথা আমরা ভুলিনি। কুয়েতের ‘ আসাসিয়াসাহ ‘ ও ‘ আলওয়াতান ‘ ও আমিরাতের ‘ আলখলীজ ‘ সহ অনেক পত্রিকা নোংরা ও তথাকথিত বাম চিন্তাধারা প্রচারের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। এ আলওয়াতানকে কুয়েতী ‘ আলওয়াতান’  না বলে সোভিয়েত বা রাশিয়ান ‘ আলওয়াতান ‘ বলা উচিত।
‘আলওয়াতান ‘লিখেছে , ‘আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ কার স্বার্থে অব্যাহত রয়েছে ?’ ‘উপসাগরীয় অর্থ ব্যয়ে আফগানিস্তানে রক্ত প্রবাহ অব্যাহত রয়েছে’  ইত্যাদি। সোভিয়েত ইউনিয়ন তাঁদের পার্লামেন্টে নাকি হাজী শাকূর নামে একজন মুসলমানকে বিসমিল্লাহ বলার অনুমতি দিয়েছে। তাই পত্রিকাটি সোভিয়েত ইউনিয়ন নিয়ে গর্ববোধ করছে। আল্লাহই ভাল জানেন লোকটি শাকূর ‘ কৃতজ্ঞ ‘ না কাফূর ‘ নাফরমান ‘। একজন মুসলমানকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পার্লামেন্টে বিসমিল্লাহ বলার অনুমতি প্রদান বিরল ও বিস্ময়কর ঘটনা।
আমাকে একজন টেলিফোন করে বলল, আমার চোখ দিয়ে অশ্রু বের হচ্ছে। বাস্তবেই কি নজীব ক্ষমতা হাত ছাড়া হবার পর খাইবারের পথে পুনরায় পৌঁছে যাচ্ছে ? আমি বললাম, ভাই নিশ্চিত থাকুন। মাত্র দু’দিন আগে নজীব রেডিওতে ঘোষণা দিয়েছে যে, আমরা একটি শর্তে জালালাবাদ ছেড়ে দিয়ে চলে আসতে পারি। আর তা হচ্ছে, আমাদের চলে আসার পথে মুজাহিদরা আমাদের উপর কোন প্রকার আক্রমণ চালাতে পারবে না। বলল, আপনি কি সত্য বলেছেন ? আমি বললাম, আল্লাহর কসম আমি সত্যই বলছি। বললাম, যারা বৃহৎ সোভিয়েত সাম্রাজ্যের উচ্ছিষ্ট খেয়ে জীবন ধারণ করছে, সে সব বামপন্থীদের কথা বিশ্বাস করবেন না। আফগানিস্তানে পশ্চিমা ও আন্তর্জাতিক কুচক্রী মহলের কিছু দালাল জহির শাহ নামের সে মমিকে আফগানিস্তানে ফিরিয়ে আনার অপচেষ্টায় মেতে উঠেছে, যে অপমানিত হয়ে আফগানিস্তান ত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিল।আমি ঈদের খুতবায় কান্দাহারের ষড়যন্ত্র সম্পর্কে আলোচনা করেছিলাম। কিছু লোক যারা এতীমের সম্পদ খেয়ে নিজেদের পেটকে মোটা তাজা করে আসছিল, তারা শুরু থেকে মুজাহিদদের জন্য জগদ্বল পাথরের ন্যায় কষ্টের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এসব লোকেরা কান্দাহার বিমান বন্দরের কাছে ফাকাগুলি ছুড়ে ঘোষণা দিল যে, বড় বড় বীররা সক্ষম না হলেও তাঁরা বিমান বন্দরের বাউণ্ডারী ভেদ করতে সক্ষম হয়েছে। অতঃপর কান্দাহারের গভর্নর মুজাহিদদের রক্ত নিয়ে ব্যবসাকারীদের কাছে আত্মসমর্পণের ঘোষণা দিল। অতঃপর এ রক্ত ব্যবসায়ীরা বিমান বন্দরে জহির আহহর আগমনের খবর দিল। তাকে এসব নির্বোধ মুহাজির ও পাশ্চাত্যের কাছ থেকে অর্থ লাভ করা লোকদের মাধ্যমে স্বাগতম ও অভ্যর্থনা জানিয়ে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় বসানোর ঘোষণাও দেয়া হল।

পর্দা নিয়ে যুদ্ধ

এখানে লক্ষণীয় যে, তাঁরা জহির শাহকে ফিরিয়ে আনার জন্য সেই কান্দাহারকে নির্বাচিত করেছে, যার লোকদের অন্তরের গভীরে জহির শাহর প্রতি বিদ্বেষ বিদ্যমান। মুসলিম নারীদের কাছ থেকে পর্দা ছিনিয়ে নেয়ার জন্য জহির শাহর পাঠানো সৈন্য ও তাঁদের কমান্ডার খান মুহাম্মদের কথা কান্দাহারের মানুষ এখনো ভুলতে পারেনি। সে সময় মুসলিম নারীরা কুরআন শরীফ মাথায় নিয়ে রাস্তায় বের হয়ে পুরুষদের কাছে সাহায্য চেয়ে বলেছিল, ওহে আল্লাহ্র সৈন্যরা এদেরকে প্রতিরোধ কর। সেদিন জহির শাহর এ অন্যায় সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করতে গিয়ে এক হাজার সাতশজন নারী-পুরুষ শহীদ হয়েছিল। তারা তাঁদের মা-বোনদের মুখ ঢাকার ছোট্ট একটি কাপড়ের টুকরা রক্ষা করার জন্য মাঠে নেমেছিল।
সামান্য কয়েকটি টাকার বিনিময়ে কম্যুনিজমের কাছে আফগানিস্তান বিক্রয়কারী এ দুষ্ট ও পাপিষ্ট কাফির জহির শাহর প্রতি সুপ্ত বিদ্বেষ মানুষের অন্তরে এখনও বিদ্যমান। পরে এ কম্যুনিজম মতবাদ পর্যায়ক্রমে প্রধানমন্ত্রী বাবরাক অতঃপর তারাকী, হাফীযুল্লাহ আমীন, ও নজীব প্রমুখের কোলে লালিত-পালিত হতে থাকে। চল্লিশ বছর শাসন করার পর সে যখন দেশ ছেড়ে যাচ্ছিল, তখন তাঁর জন্য কেউ আক্ষেপ করেনি। ব্রিটেন ও আমেরিকা এখন নারী ও মাদকাসক্ত এ পাপিষ্টকে আফগানিস্তানে আবার ফিরিয়ে আনার অপচেষ্টায় মেতে উঠেছে।

আফগানিস্তান নিয়ে ব্রিটেনের ষড়যন্ত্র

ব্রিটেন হচ্ছে সে বিষাক্ত নাগিনী, যে তাঁর বিষ দিয়ে মুসলিম অঞ্চলগুলোকে ধ্বংস করেছে। সে এখন জহির শাহকে ফিরিয়ে আনার ষড়যন্ত্রের বৃহৎ অংশীদার এবং জহির শাহও তাঁর পিতার ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটানোর স্বপ্ন দেখছে। এ জহির শাহর পিতা নাদির খানকে যেমন আফগানবাসী কাঁধে করে মিরানশাহ থেকে তারমানজিল এবং সেখানে থেকে পাকতিয়া হয়ে কাবুলে নিয়ে এসেছিল, তেমনি জহির শাহও স্বপ্ন দেখে আফগানবাসী তাঁকে আবার আফগানিস্তানে সেভাবে নিয়ে আসুক। এ নাদির খানকে ক্ষমতায় আনার ক্ষেত্র তৈরী করেছিল ব্রিটেন। কারণ, অভিশপ্ত কামাল আতাতুর্কের সাথে সাক্ষাৎ করে আফগান শাসক আমানুল্লাহ খান তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে মুসলিম নারীদের সম্ভ্রম রক্ষার প্রধান হাতিয়ার পর্দার বিধান বাতিল করে এবং একাধিক বিয়ে নিষিদ্ধ করে। ফলে আফগান গোত্রীয় নেতা বাচ্চা ও সাকা (প্রকৃত নাম হাবীবুল্লাহ) আফগানবাসীকে নিয়ে আমানুল্লাহ খানকে ক্ষমতাচ্যুত করেন। বাচ্চা ও সাকা ইসলাম প্রেমিক ও ব্রিটিশ বিদ্বেষী ছিলেন। তিনি বলতেন, ‘আমি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদকে ধ্বংস ও মস্কো বিজয় করা পর্যন্ত জ্বিহাদ চালিয়ে যাব।’ তাই ব্রিটেন তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য তাঁর মন্ত্রী মাসউদকে অর্থের বিনিময়ে হাত করে এবং নাদির খানকে ক্ষমতায় বসানোর জন্য আফগান গোত্রগুলোর মাঝে দেদারছে অর্থ ঢালে। ফলে আফগান গোত্রগুলো নাদির খানকে বরণ করে ক্ষমতায় বসায়। বিষাক্ত নাগিনী ব্রিটেন ইসলাম পন্থী বাচ্চা ও সাকাকে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষান্ত হয়নি। নাদির খানের মাধ্যমে তাঁকে হত্যাও করে। তিনি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর যখন তাঁর বাহিনী নিয়ে কাবুল ত্যাগ করেন, তখন নাদির খান চিঠি লিখে তাঁকে কাবুলে নিরাপত্তা দেয়ার অঙ্গীকার করেন। চিঠিটি কতিপয় আলেমের মাধ্যমে তাঁর নিকট পাঠানো হলে তিনি কাবুলে ফিরে আসেন। কাবুলে ফিরে আসলে তাঁকে বিশ্বাসঘাতকতা করে গ্রেফতার করা হয়। কারাগারের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে কিছুদিন রাখার পর প্রভু ব্রিটেনের নির্দেশে নাদির খান (জহির শাহর পিতা) তাঁকে মৃত্যুদন্ড দেয়। তাঁর শাহাদাতে আফগানিস্তান এক মুজাহিদ নেতা হারাল।

জ্বিহাদ বিলুপ্তির ব্রিটেনী ষড়যন্ত্র

ব্রিটেন কি জ্বিহাদ ও মুজাহিদের উপস্থিতি সহ্য করতে পারে ? সে এ অঞ্চলে জ্বিহাদ বিলুপ্তি করতে কিছু নতুন নতুন ধর্ম আবিস্কার করে। নবুওয়াতের দাবীদার মির্জা গোলাম আহমাস কাদিয়ানীর মাধ্যমে কাদিয়ানীবাদের জন্ম দিয়ে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আনীত জিহাদকে রহিত করার চেষ্টা চালিয়েছে। অনুরূপ বাবিয়া ও বাহাঈবাদেরও জন্ম দিয়েছে একই উদ্দেশ্যে।জিহাদ বিলুপ্ত করে ইসলামকে রক্ত শূন্য করার জন্য।
হাবীবুলাহকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হল । তিনি তাঁর প্রভুর নিকট চলে গেছেন। অতঃপর নাদির শাহকে হত্যা করার জন্য আল্লাহ একজনকে ঠিক করে দেন। এক যুবক একটি জনসভায় করমর্দন করতে গিয়ে তাকে হত্যা করে। অতঃপর তার ছেলে এ মমির (জহির শাহ) আগমন ঘটে। এখন ব্রিটেন তাকে আফগানিস্তানে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছে। কিন্তু তার সামনে এখন অনেক প্রতিবন্ধকতা তৈরী হয়েছে। এখন আফগানিস্তানে জিহাদের ঝাণ্ডা বহনকারী ও মুজাহিদ নেতারা রয়েছে, রয়েছে সত্যিকারের আলিম, সৎ জনসাধারণ ও ইসলামী আন্দোলনের বেগবান স্রোত। অতএব, সে এসব বাধা কীভাবে অতিক্রম করবে ।সব বাধা সে বাধার ন্যায় হাল্কা না, যা তার বাপকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার সময় অতিক্রম করতে হয়েছিল।
তাই এখন ব্রিটেনী ষড়যন্ত্রের নতুন ব্যবস্থাপত্র হচ্ছে পেশোয়ার ও আফগানিস্তানে অবস্থান করা মুজাহিদ নেতৃবৃন্দকে শেষ করে দেয়া । ব্রিটেনের গোয়েন্দা সংস্থা আমেরিকাসহ পাশ্চাত্যের অন্যান্য দেশের কাছে যে রিপোর্ট পেশ করছে , তা হচ্ছে , হেকমতিয়ার, রব্বানী, সাইয়াফ ও খালেসকে শেষ করে দেয়া অপরিহার্য। নতুবা জাহির শাহকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না। যহির শাহকে ফিরিয়ে আনার জন্য তারা সম্ভাব্য সব কিছু করে যাচ্ছে। তারা আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে সমস্যা সৃষ্টির পাঁয়তারা করছে , মুজাহিদদের দুর্নাম করছে, মুজাহিদদের মাঝে ভীতি ও  হতাশা ছড়িয়ে দিচ্ছে এবনহ নজীবকে বড় ও শক্তিশালী করে দেখাচ্ছে। অন্যদিকে তারা পেশোয়ার ও ইসলামাবাদে অবস্থান করা তাদের গোয়েন্দাদের আফগানিস্তানে পাঠিয়ে এতীম, বিধবা ও আহতদের কষ্ট ও আর্তচিৎকার দ্বারা সুবিধালাভকারী আফগান মুনাফিকদের মাধ্যমে তাদের বিষাক্ত ষড়যন্ত্রের থাবা বিস্তার করতে চাচ্ছে। এতে তাদের যে উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে, তা হচ্ছে ইঙ্গ মার্কিন ও পাশ্চাত্যের এসিডে বিলীন হয়ে যেতে অস্বীকার করা আফগান মুজাহিদ নেতৃবৃন্দকে হত্যা করা এবং আফগানদের মাঝে বিভেদের বীজ বপন করার মাধ্যমে তারা পৃথিবীর কোথাও ইসলামকে মাথা চাড়া দিয়ে উঠতে না দেয়ার জন্য পরস্পরে যে শপথাবদ্ধ হয়েছে, তা অটুট রাখা।

ইসলামের উপর কুফরি বিশ্বের ঐক্যবদ্ধ আক্রমণ

সুদানের নুমাইরীর সরকার যখন অধ্যাপক তুরাবীর ইসলামিক ফ্রন্টের সাথে মিলে ইসলামী  শাসন প্রয়োগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল, তখন তাদের উপর মিলে অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করা হল। তারা দাবী জানায় ইসলামিক ফ্রন্টকে সরকার থেকে বের করে দেয়ার জন্য।
ইসলামিক ফ্রন্টকে সরকার থেকে বের করে দেয়ায় তারা অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছে। তারা এখন বুদ্ধি ভিত্তিক আন্দোলন  থেকে সশস্ত্র পথে পা বাড়িয়েছে। এখন জ্বিহাদের বহ্নি শিখা শুধু আফগানিস্তানে নয়, ফিলিস্তিনের নিকটবর্তী সুদানেও ছড়িয়ে পড়ে শুরু করেছে। আফগানিস্তানের পর ওটাকে এখন দ্বিতীয় বিপদ হিসেবে গণ্য পড়া শুরু করেছে। কারণ, আফগানিস্তানের মুজাহিদরা এখন শাসনভার গ্রহণের দ্বার প্রান্তে এসে পৌঁছেছে। আরব বিশ্বের বামপন্থীরা দেখছে তাঁদের জননী সোভিয়েত ইউনিয়ন হিন্দুকুশ পর্বতমালায় তাঁর প্রভাব খুইয়ে বসছে। আফগানিস্তানে তাঁদের মায়ের এ করুণ দশা দেখে তাঁদের উচিত লজ্জায় আত্মগোপন করা।উপসাগরের তীরে বসে এ লাল ব্যঙ্গগুলো এখনো চিল্লাচিল্লি করছে যে, নজীব সরকার ময়দানে এখনো বিজয়ী রয়েছে। তাঁরা জানে না যে, এখন তাঁর নাভিশ্বাস শুরু হয়েছে এবং এ দিনগুলো তাঁর সরকারের শেষ দিন।
ইসলামের উত্থানকে ঠেকিয়ে রাখার জন্য ইসলামের শত্রুদের বর্তমান কৌশল হচ্ছে মুসলিম বিশ্ব ও জ্বিহাদের মাঝে সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে দেয়া। কারণ, ইসলামী খেলাফত ধ্বংস করার পর মুসলিম বিশ্বের কোথাও আফগানিস্তানের ন্যায় জ্বিহাদের আগুন জ্বলে উঠেনি এবং আফগান জ্বিহাদ নিয়ে মুসলিম বিশ্বে যতটুকু উৎসাহ উদ্দীপনার সৃষ্টির হয়েছে, তা অন্য কোন আন্দোলন নিয়ে হয়নি।আফগানিস্তানের পূর্বে এত বিপুল সংখ্যক মানুষ ও বিভিন্ন অঞ্চলের লোক ইসলামের জন্য অন্য কোন জায়গায় এত জান ও মাল উৎসর্গ করেনি, এত রক্ত প্রবাহিত করেনি ও এত ত্যাগ ও কষ্ট হাসিমুখে বরণ করেনি।

মিথ্যার বেসাতি

মিডিয়া ষড়যন্ত্রে ব্যর্থ হয়ে ইসলামের শত্রুরা এখন দরিদ্র আফগানদের অর্থের লোভ দেখিয়ে তাঁদের উদ্দেশ্য সাধন করতে যাচ্ছে। কিন্তু তাঁরা ইসলামী আন্দোলনের কোলে পালিত হওয়া মুজাহিদ নেতৃবৃন্দকে হাত করতে পারছে না। তারা আরব মুজাহিদদের বিরুদ্ধে অপ্রচারের সেই পুরাতন নোংরা কৌশলই গ্রহণ করেছে, যা ব্রিটেন সাইয়েদ আহমদ শহীদ ও ইসমাঈল শহীদের জিহাদী আন্দোলনকে নষ্ট করে দেয়ার জন্য গ্রহণ করেছিল। তাঁরা পেশোয়ারে কয়েক বছর ইসলামী শাসন পরিচালনা করেছিলেন। অতঃপর ওয়াহাবী অপবাদ দিয়ে ব্রিটিশরা জনগণকে তাঁদের বিরুদ্ধে উসকে দেয় এবং অর্থের লোভ দেখিয়ে তাদেরকে হত্যা করায়।
জহির শাহকে ফিরিয়ে আনা, মুজাহিদ নেতৃবৃন্দকে হত্যা করা, ওয়াহাবী অপবাদ দিয়ে জনগণকে উত্তেজিত করা ও উপসাগরীয় অঞ্চলে তোতাপাখিদের* দিয়ে চিল্লাচিল্লি করানোসহ অনেক ষড়যন্ত্র করানোসহ অনেক ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে। কিন্তু আল্লাহ বলছেন-
يُرِيدُونَ أَن يُطْفِئُوا نُورَ اللَّهِ بِأَفْوَاهِهِمْ وَيَأْبَى اللَّهُ إِلَّا أَن يُتِمَّ نُورَهُ وَلَوْ كَرِهَ الْكَافِرُونَ [٩:٣٢]
“তাঁরা চাচ্ছে আল্লাহ্র আলোকে ফুঁৎকার দিয়ে নিভিয়ে দিতে। কিন্তু কাফিরদের খারাপ লাগলেও আল্লাহ তাঁর আলোকে পূর্ণ করে ছাড়বেন।”[তাওবাহঃ৩২]।
আমি আপনাদেরকে সুসংবাদ শোনাতে চাই। মুজাহিদরা গতকাল ও আজকে জালালাবাদের নিকটবর্তী সারখাবাদের পথে পাঁচটি কম্যুনিস্ট কেন্দ্র ও একটি গ্রাম দখল করে নিয়েছে। এতে তাঁরা প্রচুর অস্ত্র গণীমত লাভ করে।এখন কম্যুনিস্ট সরকারের পক্ষে জালালাবাদের শহরতলীর বাইরে তাঁদের ট্যাংক চালানো কোন ভাবেই সম্ভব নয়। উপসাগরীয় পত্র-পত্রিকাগুলো এখনো ইচ্ছাকৃত ভাবে মিথ্যা প্রচার করে যাচ্ছে। যেমন হিটলারের তথ্যমন্ত্রী গোয়েবলস বলেছিল, একটি মিথ্যা বারবার বলতে থাক, যে পর্যন্ত না লোকজন তাঁকে সত্য বলে গ্রহণ করে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা বলেন-
وَاللَّهُ غَالِبٌ عَلَىٰ أَمْرِهِ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ [١٢:٢١]
“আল্লাহ তাঁর সিদ্ধান্তে সফলকাম। কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না।”[ইউসুফঃ২১]।

আফগানদের কাছে আরবদের মূল্য

ভাইয়েরা ! সম্প্রতি আমাদেরকে ওয়াহাবী বলে যে প্রচার করা হচ্ছে, তা আফগানদের নিজস্ব ষড়যন্ত্র নয়। বরং এটা একটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। এ শব্দটা কেবল সে সব রক্তব্যবসায়ীরা সুবিধাবাদী আফগানরাই ব্যবহার করছে, যারা এতীম ও বিধবাদের রক্ত শোষন ও আহত ও শহীদের সম্পদ খেতে খেতে পেটে রোগ টেনে এনেছে। এরা প্রকৃত হকদারদের কাছে সাহায্য পৌঁছতে দিত না । এদের সাথে মুজাহিদ নেতৃবৃন্দ, সত্যিকারের মুজাহিদ ও আরবদেরকে শ্রদ্ধাকারী আফগান জনগণের কোন সম্পর্ক নেই। তোমরা এমন অনেক ঘটনা শুনেছ যে, এসব সত্যিকারের মুজাহিদরা অনেক সময় আরব মুজাহিদকে বুকে জড়িয়ে ধরে কান্নারত হয়ে বলেছে, ‘ওহে নবীর বংশধর !’।অনেকে আরব মুজাহিদের হাতে চুমুও খেয়েছে।
সেদিন আমি কোয়েটার একটি খৃষ্টান হাসপাতালে যা দেখেছি , তা এখনো ভুলতে পারছি না। যখন আমরা সেখানে কি হচ্ছে না হচ্ছে তা দেখার জন্য কৌশলে সেখানে প্রবেশ করলাম, তখন কান্দাহারের একজন বৃদ্ধ তাঁর আহত ছেলেকে ফেলে আমাদের দিকে দৌড়ে আসে এবং আমাদেরকে বুকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করা শুরু করে। অথচ তাঁর ছেলের ক্ষতস্থান থেকে তখনও  রক্ত ঝরছিল।
ড. মুহাম্মদ উমর ইরাকীকে আফগান মিলিশিয়ারা আটক করেছিল। কিন্তু যখন তাঁরা জানল যে, তিনি আরব, তখন তাঁরা তাঁকে ছেড়ে দেয়।
হেরাতে যখন আবদুল্লাহ তাহির অবস্থান করেছিল, সে সময়ের ঘটনা। মিলিশিয়া ও মুজাহিদদের মাঝে যুদ্ধ চলছিল। তখন মুজাহিদরা মিলিশিয়াদের সাথে যোগাযোগ করে বলল, আমাদের সাথে একজন আরব মেহামান রয়েছে। তিনি নিহত হলে আমাদের ও তোমাদের উভয়ের লজ্জা হবে।অতএব, আমরা তাঁকে রণক্ষেত্র থেকে অন্য খানে স্থানান্তর করা পর্যন্ত যুদ্ধ বন্ধ থাক। মিলিশিয়ারা মুজাহিদদের এ কথায় সাড়া দিল। যখন আবদুল্লাহ তাহিরকে স্থানান্তর করা হল,তখন যুদ্ধ আবার শুরু হল।
আহমদ আলমুবারককে পরওয়ান এলাকা মিলিশিয়ারা আটক করার পর যখন জানতে পারল তিনি আরব, তখন তাঁরা তাঁকে কিছু অর্থ দিয়ে সম্মানের সহিত মুজাহিদদের ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেয়।ইউনুস খালিছ বলেছেন, ‘আরবদেরকে ভালবাসা আমাদের উপর ফরয এবং আমাদের দ্বীন ও ঈমানের অঙ্গ।’
তবে যারা আরবদের প্রতি এসব বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে, তারা আফগান নয়, আফগানদের শত্রু ! কাদের পক্ষে এসব কথা প্রচার করা সম্ভব যে, ‘ওয়াহাবীকে যে সালাম দেয় বা কথা বলে বা শাদী করে বা আপ্যায়ন করে সে মুরতাদ ও কাফির?’ জ্বিহাদের মাধ্যমে সুবিধা ভোগকারী কতিপয় আলিম নামধারী লোকেরাই এসব ফতওয়া ছড়াচ্ছে। আফগানরা এসব থেকে মুক্ত। যারা এসব করছে তাদেরকে তাঁরা কম্যুনিস্ট সরকার ও আমেরিকা ব্রিটেনের চর হিসেবে আখ্যায়িত করছে।
ভাইয়েরা ! আফগান জিহাদে আমাদের সাহায্য করা মানে হককে সাহায্য করা ইনশাআল্লাহ আমরা যদি ইখলাস নিয়ে আসি, তাহলে আমাদের জ্বিহাদ অবশ্যই সত্যিকারের ইসলামী জিহাদ।আল্লাহর নিকট কামনা করি, যেন তিনি আমাদের সওয়াব নষ্ট না করেন ও ইজ্জত রক্ষার জ্বিহাদের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত স্থাপনাকারী এ জনগোষ্ঠীর  (আফগান) ব্যাপারে আমাদের ধারণায় পরিবর্তন না আনেন।
ভাইয়েরা ! আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সতর্ক হও। সাবধান থেকো যেন তোমাদের অন্তর ও নিয়তের মধ্যে কোন পরিবর্তন না আসে। আর এখানে এসে যে ত্যাগ স্বীকার করেছো তাঁকে পন্ডশ্রম মনে করে অনুতপ্ত হওয়া থেকেও সাবধান থেকো। আলহামদুলিল্লাহ, একটি মুসলিম জনগোষ্ঠীর জ্বিহাদ থেকে আফগান জিহাদকে মুসলিম উম্মাহর আন্তর্জাতিক জিহাদে রুপান্তরিত করণে আমাদের উপস্থিতি অনেক বড় ভূমিকা পালন করেছে।

আফগানদের মাঝে আরবদের উপস্থিতির প্রভাব

তোমরা যারা জিহাদের বিভিন্ন ফ্রন্টে গিয়েছ, তারা অবশ্যই আফগান মুজতাহিদদেরকে আরবী ভাষা ও কুরআন মজীদ শিক্ষা দান এবং সাহায্যের প্রকৃত হকদারদের হাতে সাহায্য পৌছানো,তাদের কষ্ট লাঘব ও তাদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশের ক্ষেত্রে তোমাদের একটা বিরাট অবদান লক্ষ্য রয়েছে। আর সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে তোমাদের নিজেদের রণাঙ্গনে উপস্থিত থাকা, ইসলামী চেতনার উন্নতি ঘটানো এবং তাঁদের মাঝে ইসলামের মূলনীতি ও বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা। আল্লাহ বলেন-
إِنَّ هَٰذِهِ أُمَّتُكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً وَأَنَا رَبُّكُمْ فَاعْبُدُونِ [٢١:٩٢]
“নিশ্চয় এটা (মুসলমানরা) তোমাদের দল ও তা অভিন্ন দল। আর আমি তোমাদের পালনকর্তা।অতএব, তোমরা সবাই আমারই ইবাদত কর।”[আম্বিয়া”৯২]।
ইসলামে আফগানিস্তান ও মিশরের মাটি কিংবা ফিলিপাইন বা ফিলিস্তিনের মাটির মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। সবই ইসলামী ভূমি। সবটাকে আল্লাহর জন্য খাঁটি করতে হবে এবং তাতে আল্লাহ্র আইন প্রয়োগ ও সবার কথার উপর ‘লা ইলাহা ইল্লল্লাহ ‘ কথাটির প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করতে হবে।অতএব, এ যুদ্ধ ইসলামের যুদ্ধ, এ ঝান্ডা ইসলামের ঝান্ডা, এ ভূমি ইসলামী ভূমি ও তাঁর অধিবাসীরা মুসলিম এবং আমরাও মুসলিম। আল্লাহর কসম ! এসব সত্যনিষ্ঠ লোকেরা যাদের প্রভাব, আপোষহীনতা ও পৌরুষের চর্চা মানুষের মুখে মুখে চলছে, তাদের খেদমত করার তাওফীক দিয়ে আল্লাহ আমাদেরকে যে সওয়াব দান করেছেন ,তার জন্য আমরা কখনো অনুতপ্ত হব না। এখান থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা এক যুবককে প্রায় এক মাস পূর্বে পবিত্র নগরীতে (জেরুযালেম) গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁকে পাঁচজন ইয়াহুদি পুলিশ ধরতে চেয়েছিল। তার পকেটে ছিল একটি ছুরি ।সে ছুরিটি বের করে পাঁচজন পুলিশ সবাইকে আঘাত করে। সাথে সাথে দু’জন পুলিশ মারা যায় ও বাকী তিনজন আহত হয়। দুনিয়ার পত্র পত্রিকাগুলো বিস্ময় প্রকাশ করছে যে, অস্ত্রধারী পাঁচজন পুলিশকে কীভাবে একজন লোক ছুরি দিয়ে হতাহত করতে পারে?

মিথ্যার পরাজয়

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা বলেন-
أَنزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَسَالَتْ أَوْدِيَةٌ بِقَدَرِهَا فَاحْتَمَلَ السَّيْلُ زَبَدًا رَّابِيًا ۚ وَمِمَّا يُوقِدُونَ عَلَيْهِ فِي النَّارِ ابْتِغَاءَ حِلْيَةٍ أَوْ مَتَاعٍ زَبَدٌ مِّثْلُهُ ۚ كَذَٰلِكَ يَضْرِبُ اللَّهُ الْحَقَّ وَالْبَاطِلَ ۚ فَأَمَّا الزَّبَدُ فَيَذْهَبُ جُفَاءً ۖ وَأَمَّا مَا يَنفَعُ النَّاسَ فَيَمْكُثُ فِي الْأَرْضِ ۚ كَذَٰلِكَ يَضْرِبُ اللَّهُ الْأَمْثَالَ [١٣:١٧]
“তিনি আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন। অতঃপর তা নদীসমূহ দিয়ে পরিমাণ মত প্রবাহিত হয়।অতঃপর স্রোতধারা স্ফীত ফেনারাশি উপরে নিয়ে আসে। আর মানুষ অলঙ্কার অথবা যে বস্তুকে আগুনে উত্তপ্ত করে, তাতেও অনুরূপ ফেনা রাশি থাকে। আল্লাহ সত্য ও মিথ্যার দৃষ্টান্ত এভাবে পেশ করেন। অতঃপর ফেনা শুকিয়ে খতম হয়ে যায় এবং যা মানুষের উপকারে আসে, তা জমিতে রয়ে যায়। আল্লাহ এমনিভাবেই দৃষ্টান্ত সমূহ বর্ণনা করেন।”[রা’দঃ ১৭]।
সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্বের এটি চিরাচরিত নিয়মটা কখনো লুপ্ত হওয়ার নয়। সত্য স্থির, তাঁর শিকড় মাটির গভীরে, আর মিথ্যার অস্থির, ফেনার ন্যায় দ্রুত অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলে। আল্লাহ আরো বলেছেন-
أَلَمْ تَرَ كَيْفَ ضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا كَلِمَةً طَيِّبَةً كَشَجَرَةٍ طَيِّبَةٍ أَصْلُهَا ثَابِتٌ وَفَرْعُهَا فِي السَّمَاءِ [١٤:٢٤]
تُؤْتِي أُكُلَهَا كُلَّ حِينٍ بِإِذْنِ رَبِّهَا ۗ وَيَضْرِبُ اللَّهُ الْأَمْثَالَ لِلنَّاسِ لَعَلَّهُمْ يَتَذَكَّرُونَ [١٤:٢٥]
وَمَثَلُ كَلِمَةٍ خَبِيثَةٍ كَشَجَرَةٍ خَبِيثَةٍ اجْتُثَّتْ مِن فَوْقِ الْأَرْضِ مَا لَهَا مِن قَرَارٍ [١٤:٢٦]
يُثَبِّتُ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا بِالْقَوْلِ الثَّابِتِ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ ۖ وَيُضِلُّ اللَّهُ الظَّالِمِينَ ۚ وَيَفْعَلُ اللَّهُ مَا يَشَاءُ [١٤:٢٧]
“আপনি কি জানেন না, আল্লাহ কীভাবে কালেমা তাইয়িবার (ভাল কথা) উদাহারণ দিয়েছেন?কালেমা তাইয়িবা একটি ভাল গাছের ন্যায়, যার শিকড় মজবুত ও মাথা আকাশে। সেটা তাঁর প্রভুর হুকুমে সব সময় তাঁর ফল দিয়ে যাচ্ছে। আর আল্লাহ উদাহারণ এ জন্য পেশ করেন, যাতে মানুষ তা থেকে উপদেশ গ্রহণ করে। আর কালিমা খবীছার (খারাপ কথা) উদাহারণ হচ্ছে একটি খারাপ বৃক্ষ, যাকে মাটি থেকে উপড়ে ফেলা হয়েছে এবং তাঁর কোন দৃঢ়তা নেই। আল্লাহ মজবুত কথার দ্বারা মুমিনদেরকে দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জগতে দৃঢ়পদ রাখেন এবং অপরাধীদের পথচ্যুত করেন। আর আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করে থাকেন। ”[ইব্রাহীমঃ২৪-২৭]।

 

সত্য মূলসম্পন্ন ও সুদৃঢ়

দুনিয়ার জীবনে সত্য, সুদৃঢ়, প্রকৃতির সাথে লাগসই ও পৃথিবীর নিয়ম নীতির  অনুকূলে চলাচলকারী। কারণ, যিনি সত্য পাঠিয়েছেন, তিনি সত্য। তিনি মানুষের প্রকৃতিকে এমন ভাবে সৃষ্টি করেছেন, যাতে তাঁর পক্ষে দুনিয়ার প্রাকৃতিক নিয়ম নীতির অনুকূলে চলা সম্ভব হয়।
সত্যের সাথে প্রকৃতির কোন সংঘর্ষ নেই। আর সত্যের প্রকৃতি হচ্ছে সব সময় মিথ্যার উপর বিজয়ী থাকা। ইসলামের ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্বে মিথ্যার পরাজয় সুস্পষ্টরূপে দেখতে পাই। মুসলিম উম্মাহ যতদিন তাঁর দ্বীনকে আকড়ে ধরে থেকেছিল, ততদিন তাঁরা মিথ্যার অনুসারীদের উপর বিজয়ী ও প্রভাবধারী ছিল। কিন্তু যখনই তাঁরা সত্যের পথ থেকে দূরে সরতে আরম্ভ করে, তখনই তাঁরা লাঞ্চনা ও বঞ্চনার পাত্রে পরিণত হয়।

এ নীতির সত্যতা এখনও বিদ্যমান

সত্যকে আকড়ে ধরার ফলে যে মানুষ মিথ্যার উপর বিজয় লাভ করে, এটার প্রত্যক্ষ প্রমাণ দেখেছি আমরা আফগানিস্তানে। আল্লাহ জিয়াউল হককে রহম করুন। ‘ ইসলামের দৃষ্টিতে বিশ্ব শান্তি ‘ নামে করাচিতে অনুষ্ঠিত হওয়া একটি আন্তর্জাতিক সেমিনারে যখন একজন কথিত ইসলামী দাঈ গর্বাচেবের প্রশংসা করে চলেছিল যে, তিনি আফগানিস্তান থেকে সৈন্য ফিরিয়ে নিতে আন্তরিক এবং শান্তিকামী, তখন তিনি (জিয়াউল হক) দাঁড়িয়ে রাষ্ট্র প্রধান হওয়ার কথা ভুলে গিয়ে কোন গোষ্ঠীকে সতর্ক করার ন্যায় বললেন, ‘আমরা এমন এক জাতি, যার জন্য আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ নবীকে সর্বশ্রেষ্ঠ দ্বীন দিয়ে প্রেরণ করেছেন। যতদিন এ জাতি তাঁর প্রভুর রজ্জুকে আকড়ে ধরে তার বিধানকে দুনিয়াতে প্রতিষ্ঠা করার জন্য জ্বিহাদ করেছে, ততদিন তাদেরকে তিনি (আল্লাহ) সাহায্য করেছেন এবং তাঁরা মানবজাতির নেতৃত্ব দান করেছে।
অতঃপর সে পথ আমরা ছেড়ে দিলাম। ফলে আমরা লাঞ্চনার স্বীকার হলাম। অতঃপর যখন আল্লাহ তাআলা আমাদের সামনে একটি দৃষ্টান্ত পেশ করে আমাদের এ কথা জানিয়ে দিতে চাইলেন যে, যদি আমরা আমাদের দ্বীন ও জিহাদকে আকড়ে ধরি, তাহলে আমাদের পক্ষে আমাদের হারানোর গৌরব ও ইজ্জত পুনরুদ্ধার করা সম্ভব, তখন তিনি আফগানিস্তানের এ বিশাল ইস্যু সৃষ্টি করলেন এবং পৃথিবীর সবচেয়ে বিশাল শক্তি ও সর্বাধিক নৃশংস হিংস্রদের মোকাবেলা করার জন্য একটি অনুন্নত ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে নির্বাচিত করলেন। তাদের কাছে না আছে কোন কৌশল ও প্রযুক্তি এবং না আছে তাঁদের অক্ষর জ্ঞান। অতঃপর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা এ নিরস্ত্র দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মোকাবেলায় রাশিয়াকে পরাজিত করে আমাদের এ শিক্ষা দিলেন যে,এ (মুসলিম) উম্মাহ যতই দুর্বল, দরিদ্র, ক্ষুদ্র ও অক্ষর জ্ঞানহীন হোক না কেন, যদি তাঁরা তাঁদের দ্বীনকে আকড়ে ধরে, তাহলে তাঁরা আল্লাহ্র হুকুমে অবশ্যই বিজয়ী হবে।’ অতঃপর তিনি (তাঁকে আল্লাহ রহম করুন) বললেন, ‘গর্বাচেভ কীভাবে প্রশংসার যোগ্য হতে পারে, সেটা আমার বুঝে আসছে না। সে তো একজন ডাকাত, যে ঘরে প্রবেশ করে ঘরের আসবাবপত্র জ্বালিয়ে ঘরের মালিককে হত্যা করেছে । অতএব, সে কীভাবে প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা পাবার যোগ্য হতে পারে?’

আফগান জ্বিহাদ মানুষের ভুল ধারণা ভেঙ্গে দিয়েছে

পৃথিবীর মুসলমানরা ইসলামের বিজয় নিয়ে সবখানে হতাশায় অন্ধকারে দিন কাটাচ্ছিল, তখন তিনি এ জ্বিহাদের মাধ্যমে তাদেরকে আশার আলো দেখালেন। ইসলামী চিন্তাবিদ ও দাঈরা যখন মানুষকে বলছিল যে, আমরা ইসলামের বিধান প্রয়োগ করতে চাই, তখন মানুষ বলেছে আমরা আমেরিকা ও রাশিয়ার রোষানলে পড়ে এটা কীভাবে করতে পারি ? রাশিয়ার তো দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, রয়েছে সর্বাধুনিক যুদ্ধ বিমান ও মহাকাশ যান যা দিয়ে তাঁরা চাঁদে পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। এদের তোপের মুখে পড়ে কীভাবে ইসলামের বিধান বাস্তবায়ন করা সম্ভব ? কিন্তু আল্লাহ তাঁদের ভুল ধারণা ভেঙে দিলেন। ফলে আল্লাহ্র হুকুমে রাশিয়া দরিদ্র আফগানিস্তান থেকে লাঞ্চিত, অপদস্ত ও অপমানিত হয়ে বের হয়ে যেতে বাধ্য হয়।
আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে এ জনগোষ্ঠীর (আফগান) মাধ্যমে যে জীবন্ত দৃষ্টান্ত পেশ করেছেন, তা ইসলামের বিজয়কামী লোকদের জন্য অনুসরণীয় আদর্শ ও লক্ষ্যে পৌছার অমোঘ উপায়।আফগানিস্তানে ইসলামের এ বিজয় লাভের জন্য যে ত্যাগ ও কুরবানী দিতে হয়েছে, তা নজিরবিহীন। শহীদের সংখ্যা প্রায় তের লক্ষ। বিধবা, পঙ্গু ও এতীমের সংখ্যা কত তা বলা দুস্কর।এদের দুঃখ কষ্টের কথা যদি লেখা হয় তাহলে বিশাল বিশাল কয়েক খন্ড বই ভরে যাবে। কিন্তু এ সবের যে ফলাফল পাওয়া যায়, তা খুবই চমৎকার। এ জ্বিহাদের পূর্বে এ রকম ফলাফলের কল্পনাও করা খনো সম্ভব ছিল না। কোন মুসলমান বা আলিমের পক্ষে এ জ্বিহাদের পূর্বে মার্কিনীদের উপর ফিলিস্তিনীরা আগামীতে বিজয় লাভ করবে-এ রকম ধারণা করা কল্পনাতীত ব্যাপার ছিল। বরং তাঁদের অনেকে শুধু এতটুকু ধারণা করত যে, যদি জর্ডান বা সিরিয়ায় কেঁউ ইসলামে ফিরে গিয়ে ফিলিস্তিনের সাহায্যে এগিয়ে আসে, তাহলেই কেবল বিশাল সামরিক শক্তির অধিকারী ইসরাঈলের মুকাবিলা করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব হবে।
আফগান জ্বিহাদ পৃথিবীর সকল হিসাব নিকাশকে পালটে দিয়েছে। বরং গর্বাচেভের মন মানসিকতারও আমূল পরিবর্তন ঘটিয়েছে। গর্বাচেভ এখন বুঝতে পেরেছে যে, যে জাতির ধর্ম নেই, তাদের পক্ষে টিকে থাকা অসম্ভব। তারা শুধু লোহা ও আগুনের নীচে থেকে চেঁচামেচি করতে থাকবে। তাই এখন গর্বাচেভ তাঁর পূর্ব পুরুষ লেনিন ও ষ্টালিন প্রমুখরা যে নিয়ম-ব্যবস্থা গড়েছিল, তা এখন সে নিজের হাতে ধ্বংস করছে। ওরা বলত, ধর্ম জনগণের জন্য আফিমের ন্যায়, ধর্ম জনগণের রক্ত চোষণকারী একটি জোঁক এবং মানুষকে ঘুমন্ত রাখার একটি মাদকদ্রব্য।
এখন গর্বাচেভ দেখছে কম্যুনিজমই জনগণের রক্ত চোষণকারী জোঁক এবং কম্যুনিজমই সোভিয়েত ইউনিয়নের এ দুর্দশা ডেকে এনেছে। ফলে এখন তাঁকে আমেরিকা ও কানাডা থেকে আমদানী করা গমের অর্থ যোগাড় করার জন্য বহির্বিশ্বের কাছে হাত পাততে হচ্ছে।

পূর্ব ইউরোপে আফগান জ্বিহাদের প্রভাব

গর্বাচেভ রাশিয়ার জন্য বার্ষিক আমদানি করা ১৬ মিলিয়ন টন গমের অর্থ যোগাড় করার জন্য সরকারী কিছু জমি বন্ধক দিয়েছে। অথচ রাশিয়ার পক্ষে গম দ্বারা গোটা পাশ্চাত্যকে ডুবিয়ে রাখা সম্ভব ছিল। এখন গর্বাচেভ উপলব্ধি করছে যে, প্রকৃতিকে দীর্ঘ দিন যাবত দমিয়ে রাখা সম্ভব নয়।কিছু দিন তাঁকে দমিয়ে রাখা গেলেও শেষ পর্যন্ত সেই বিজয়ী। গর্বাচেভ বুঝতে পেরেছে যে, ধর্মীয় যে অনুভূতি মানবাত্মার গভীরে বিস্তৃত , তাঁকে সমাজতান্ত্রিক প্রপাগান্ডা ও নাটক দ্বারা নির্মূল করা সম্ভব নয়। সে এখন বাধ্য হয়ে তাজাকিস্তানে আরবী ভাষায় কুরআন প্রচার ও আরবীতে আযান দেয়ার অনুমতি দিয়েছে।
সোভিয়েত ইউনিয়নের এক মুসলিম প্রদেশে ইসলামের দাওয়াত পৌছার এগারশত বছর পূর্তি উপলক্ষে এক মাস পূর্বে একটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেখানে রাবেতা আল-আলামিল ইসলামীর মহাসচিবকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল এবং রাশিয়া তাঁকে সেখানের মুসলমানদের মাঝে দশ লক্ষ কুরআনের কপি বিতরণ করার অনুমতি দান করে। অথচ ইতোপূর্বে রাশিয়ায় কেঁউ কুরআন শরীফ সংগ্রহ করলে তাকে চার বছর কারাদন্ডে দন্ডিত করা হত।
তিন আল্লাহতে বিশ্বাসী বিকৃত খৃষ্ট ধর্মের ভ্রান্ত নীতি অনুযায়ী রুশরা আল্লাহ্র আরাধনা করার জন্য গির্জার দরজা সমূহ খুলে দিতে বাধ্য হয়েছে। অনুরূপ মুসলমানদের কিছু কিছু মসজিদের দরজাও খুলে দিতে বাধ্য হয়েছে। কারণ, তাঁরা খৃষ্টবাদ চর্চার সুযোগ দিয়ে দেয়ায় কিছু মসজিদের দরজা খুলে দেয়া ব্যতীত ষাট মিলিয়ন মুসলমানকে তাঁদের শাসনাধীনে রাখতে সক্ষম হবে না।


এখন গর্বাচেভের মা ও স্ত্রী পর্যন্ত গির্জার আসা যাওয়া করছে। কোথায় আজ সমাজতন্ত্র ? কোথায় আজ মার্কস, লেনীন ও ষ্টালিনের বুলীগুলো। সত্যি-
ۚ فَأَمَّا الزَّبَدُ فَيَذْهَبُ جُفَاءً ۖ وَأَمَّا مَا يَنفَعُ النَّاسَ فَيَمْكُثُ فِي الْأَرْضِ
“অতঃপর ফেনাগুলো আবর্জনা হিসেবে চলে যায়। আর যা মানুষের উপকারী, তা ভূমিতে থেকে যায়।”
فِطْرَتَ اللَّهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا ۚ لَا تَبْدِيلَ لِخَلْقِ اللَّهِ ۚ ذَٰلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ [٣٠:٣٠]
“এটা আল্লাহ্র সে প্রকৃতি যার উপর তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহর সৃষ্টিতে কোন পরিবর্তন নেই। ওটাই সঠিক ধর্ম। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না ।”[আররূমঃ৩০]।
প্রভুর দিকে ঝুঁকে পড়ার যে স্বভাবের উপর আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন , তা পরিবর্তন করা কখনো সম্ভব না । আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করার কেউ নেই ।

কোথায় ভিয়েতনাম কোথায় আফগানিস্তান?

ভিয়েতনামের যুদ্ধের সাথে আফগানিস্তানের জিহাদকে তুলনা করা মারাত্মক অন্যায়। যখন ইসলামকে আকড়ে ধারণকারী জনগোষ্ঠীর (আফগান) যুদ্ধ বিজয়ের কথা বলা হয়, তখন অনেকেই বলে, এরকমতো ভিয়েতনামেও হয়েছে। এদের জানা উচিত যে, ভিয়েতনামে রাশিয়া তাঁর অস্ত্রসম্ভার ও যুদ্ধ সামগ্রী পাঠিয়ে ঐ অঞ্চলকে অস্ত্রে ডুবিয়ে রেখেছিল। অন্য দিকে সবাই জানে যে, এ পবিত্র আফগান জ্বিহাদ কিভাবে লাঠি ও পাথর দিয়ে তাঁর যাত্রা শুরু করেছিল।
আরো একটি ব্যাপার এখানে লক্ষ্যণীয়, ভিয়তেনামে আমেরিকাকে অস্ত্র নিয়ে পৌছতে সাগর মহাসাগর পাড়ি দিয়ে যেতে হত। কিন্তু রাশিয়াকে তাঁর অস্ত্র কারখানা থেকে অস্ত্র নিয়ে আফগানিস্তানে প্রবেশ করার জন্য কেবল হিরতা সেতুটি পার হতে হয়েছে। অন্য দিকে রাশিয়ার যুদ্ধবিমানগুলো তিরমিয ও তাসকন্দ বিমান বন্দর থেকে উড়ে এসে আফগানিস্তানে এসে বোমা মেরে আবার সেখানে ফিরে যেতে পারত।
আর এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় রহস্য যেটা, তা হচ্ছে, বিভিন্ন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করার জন্য কিছু লোক রয়েছে। সেখানে রয়েছে কংগ্রেস, যার কাছে প্রেসিডেন্টকে জবাবদিহি করতে হয়। কংগ্রেসের কাছে ঘন্টার পর ঘন্টা দাঁড়িয়ে প্রেসিডেন্টকে যে কোন ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হয়। আর সেখানের জনগণ প্রচার মাধ্যম দ্বারা প্রেসিডেন্টের ব্যাপারে যা ইচ্ছা তা লিখে প্রচার করতে পারে। জবাবদিহিতার আশংকা প্রচার মাধ্যমের বিরোধীতার ফলে মার্কিন সরকার অনেক সময় তাঁর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়। তাই এ মার্কিন সরকার ও নিরংকুশ একনায়ক দ্বারা পরিচালিত সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে বিরাট পার্থক্য রয়েছে। এ সোভিয়েত ইউনিয়ন লোকজনকে এক প্রদেশ থেকে আরেক প্রদেশে যাওয়ার অনুমতি পত্র থেকেও বঞ্চিত করেছে। সোভিয়েত ইউনিয়নে কেঁউ পাসপোর্ট রাখতে পারে না।গর্বাচেভ পূর্ব বার্লিনের লোকদের উপর থেকে যখন বিধিনিষেধ কিছুটা উঠিয়ে নিল, তখন দেখা গেল পূর্ব বার্লিন থেকে হাজার হাজার পরিবার পশ্চিম বার্লিনে চলে যাচ্ছে।
আমি অনেক বার বলেছি যে, যদি সোভিয়েত ইউনিয়ন তাঁদের জনগণকে বিদেশে যাবার পাসপোর্ট দিত, তাহলে ৫ মিলিয়ন ছাড়া ২৭০ মিলিয়ন জনগণের সকলেই এক মাসের মধ্যে দেশ ছেড়ে চলে যেত। এ সোভিয়েত ইউনিয়নে কম্যুনিস্ট পার্টির লোক ছাড়া বাকী সকল লোক সম্মান ও সম্পদ থেকে বঞ্চিত। রাশিয়ার আফগানিস্তান থেকে বের হওয়ার সাথে আমেরিকার ভিয়েতনাম থেকে বের হওয়ার মধ্যে মিল খোজা একটি বড় অন্যায়। কারণ, রাশিয়া আফগানিস্তান থেকে লাঞ্চিত ও অপদস্ত হয়ে বের হওয়ার সময় তাঁর বাকী সম্মান রক্ষা করার জন্য মুজাহিদদের কাছে একটি স্বাক্ষরযুক্ত কাগজের আবেদন করেছিল, যাতে মানুষকে বলতে পারে যে, আমরা চুক্তির মাধ্যমে চলে এসেছি। কিন্তু মুজাহিদরা তা প্রত্যাখ্যান করে।আর আমেরিকা ভিয়েতনাম থেকে চলে এসেছে সংলাপ ও চুক্তি করে।

জ্বিহাদের বিরুদ্ধে তথ্য সন্ত্রাস

আফগানিস্তানে ইসলামের এ মহান বিজয় যা দ্বারা আল্লাহ তাআলা পৃথিবীর সকল মুসলমানকে সম্মানিত করেছেন, সেটা খেলোয়াড়দের খেলার পুতুলে পরিণত হয়েছে এবং হলুদ সাংবাদিকতা ও মূর্খদের দ্বারা ঘৃণা ও বিকৃতির খপ্পরে পড়েছে । এ জিহাদকে নিয়ে যার যা ইচ্ছা তা বলে বেড়াচ্ছে। জিহাদের প্রতি এটা কোন ধরণের অবিচার ? কোন বিষাক্ত খঞ্জর দিয়ে আমরা নিজেদের অজান্তে নিজেদের উপর আঘাত করছি ? না জেনে না বুঝে আমরা ইতিহাসকে কীভাবে বিকৃত করছি ?
সাংবাদিকরা যাই লিখুক না কেন, এ জ্বিহাদ নিঃসন্দেহে ইতিহাস পরিবর্তনের সূত্র বা পয়েন্ট হিসেবে বাকী থাকবে এবং আল্লাহ্র পথের যে সব সৈনিকরা মনজিলে মাকসুদে পৌছতে চায়, তাদের কাছে একটি জীবন্ত আদর্শ হিসেবে বিবেচিত হবে।
إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَعِبْرَةً لِّأُولِي الْأَبْصَارِ
“নিঃসন্দেহে এতে দৃষ্টি সম্পন্ন লোকদের জন্য শিক্ষনীয় রয়েছে ।”[আল ইমরানঃ১৩]।

বিংশ শতাব্দীর মু’জিযা

এই প্রথম বারের মত একটি মুসলিম জনগোষ্ঠীর (আফগান) কাছে লাল ফৌজের পরাজয় ও রাশিয়ার লাঞ্চনাকর প্রস্থান ইসলামের পথে অন্ধকার অনুভবকারী লোকদের জন্য কয়েক শতক পর্যন্ত একটি আলক স্তম্ভ হিসেবে বাকী থাকবে। আফগান কম্যুনিস্টদের সাথে যুদ্ধে মুজাহিদরা পেরে উঠুক বা না উঠুক, রাশিয়ার আফগানিস্তান থেকে লাঞ্চনাকর প্রত্যাবর্তন অবশ্যই বিগত দু যুগের সবচেয়ে বড় ঘটনা ও বিংশ শতাব্দীর মু’জিযা। এ জ্বিহাদ ও তাঁর বিজয় নিয়ে মুসলিম উম্মাহর সকল সদস্য গৌরব বোধ করবে। আমি নিশ্চিত যে, এ জ্বিহাদ আফগানিস্তানে বাকী কম্যুনিস্টদের এ ক্ষুদ্র দলের উপরও বিজয় লাভ করবে। পরাশক্তি নামের যে হিংস্র পশুকে মানুষ ভয় করত, সে ভয়ের প্রাচীর আফগান জ্বিহাদ চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছে। আফগান জ্বিহাদ প্রত্যেক মুসলমানকে অনিশ্চয়তা ও হতাশার অন্ধকার থেকে মুক্ত করে এ আশার আলোর দিকে নিয়ে এসেছে যে, এই উম্মাহ যখনই তাঁর দ্বীনকে আকড়ে ধরবে, তখনই বিজয় তাঁর পদচুম্বন করবে।
এ পর্যন্ত আফগানিস্তানের এ ঘটনা খৃস্টীয় শেষের তিন শতকের (১৮, ১৯, ২০)ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পরিবর্তন বলে বিবেচিত হচ্ছে। এ ঘটনা এখন বিশ্ব কাপানো এক বিশাল বিস্ফোরণ হিসেবে দেখা দিয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না। এ ব্যাপারে সবচেয়ে বেশী অজ্ঞতায় রিয়েছে মুসলমানরা। পশ্চিমারা কিন্তু ঠিকই এ ব্যাপারটা যথাযথ উপলদ্ধি করেছে।
তাই রাশিয়া চলে যাওয়ার পর থেকে তাঁরা তাঁদের মিডিয়াকে দু’টি কাজ সম্পাদনে নিয়োজিত রেখেছে। প্রথম কাজ মুসলমানদের মাঝে এ জ্বিহাদের যে প্রভাব ছড়িয়ে পড়েছে তাঁকে নষ্ট করা, জিহাদের চিত্র বিকৃত করা, জিহাদের নেতৃবৃন্দ ও ব্যক্তিবর্গের চরিত্র হনন ও তাঁদের প্রভাবকে খাটো করা। যাতে পৃথিবীতে এ দ্বীনকে বিজয়ী করতে যারা ইচ্ছুক, তাদের চলার পথে এ জ্বিহাদ উজ্জ্বল আদর্শ হিসেবে বাকী না থাকে। রাশিয়া চলে যাওয়ার পর থেকে আফগানদের মাঝে বর্ণ, গোত্র ও আঞ্চলিকতার বিভেদ উসকে দেয়া ও জ্বিহাদের চিত্র বিকৃতকরণ ছাড়া পাশ্চাত্য মিডিয়ার আর কোন কাজ নেই।

বিচ্ছিন্ন ঘটনা নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি

তাখারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক মিডিয়া তিনমাস পর্যন্ত ষড়যন্ত্রের বিষবাষ্প ছড়িয়ে আসছে। আজ রবিউল আউয়ালের সাত তারিখ। তাখারের ঘটনাটি ঘটেছে যিলহজের সাত তারিখ। এ দুর্ঘটনা যাকে তাঁরা ‘ তাখার হত্যাকান্ড ‘ নাম দিয়েছে তা ছাড়া তিন মাস ধরে ঢাক ঢোল পিটিয়ে প্রচার করার অন্য কোন সংবাদ তাঁদের কাছে আর নেই। ইসলামের ইতিহাসের এ উজ্জ্বল চিত্র (আফগান জ্বিহাদ) যাকে ধ্বংস করার জন্য পশ্চিমারা আগুন জ্বালাচ্ছে, দুঃখের বিষয় তাঁকে আরো তীব্র করার জন্য অনেক মুসলমান যুবক এমনকি আফগান মুজাহিদদের অনেক অপরিণামদর্শী যুবকও ফুঁৎকার দিচ্ছে।
এখন সকলের জিজ্ঞেসের বিষয় হয়ে গেছে তাখারের হত্যাকান্ড, রব্বানী হিকমতিয়ারের বিরোধ ও আফগানিস্তানের অভ্যন্তরীণ যুদ্ধ। অনেকে এর চেয়ে আরো নীচে গিয়ে জিজ্ঞাসা করছে, কোন কোন মুজাহিদের দুর্নাম সম্বলিত এ ক্যাসেট ও প্রচারপত্র বিতরণ করা হচ্ছে সেগুলোর ব্যাপারে জানতে চাই। আমি বললাম, যুদ্ধ ও গৌরব ভূমি (আফগানিস্তান) থেকে আসার সাথে সাথে তোমরা আমার কাছে মুজাহিদদের বিজয় ও অগ্রগতির কথা জিজ্ঞেস করার পরিবর্তে শুধু ইখতিলাফের কথাই জিজ্ঞেস করছ ? বিভিন্ন খানে তোমাদের কাছে যে ক্যাসেট পৌঁছেছে, তা আমার কাছে অনেক দিন যাবত পড়ে আছে। আমি এ ক্যাসেটের একটি অক্ষরও শুনিনি। এ মুহূর্তে এ সবের দিকে তাকানোর সময় আমার কাছে নেই। এখন যে ব্যাপারটি আমার হৃদয়, মন ও অনুভূতিকে গ্রাস করে নিয়েছে, সেটি হচ্ছে কীভাবে আমরা কাবুলের কম্যুনিস্ট প্রশাসনের কবর রচনা করব ও তাঁর শিকড়কে সম্পূর্ণ রূপে উপড়ে ফেলব?
অনুরূপ এ প্রচার পত্রও তোমাদের হাতে পৌছার পূর্ব থেকে আমার ব্যাগে পড়ে আছে। আমি এসব পড়িনি। কারণ, এসব বোকামিপূর্ণ কথাবার্তা পড়ার সময় আমার হাতে নেই। এসবের প্রতি তাকানো মানে ইসলামকে বিজয়ী করার এ জ্বিহাদ থেকে দূরে সরে যাওয়া।

গুযব সৃষ্টির অপচেষ্টা

তাখারে পাঁচজন কমান্ডার নিহত হয়েছে। আমি সাংবাদিকদের জিজ্ঞেস করতে চাই, তোমরা পাঁচজনকে কীভাবে আটত্রিশজন বানিয়ে ফেললে। নিহত হয়েছে পাঁচজন। আর তোমরা প্রচার করছ মাসউদের আটত্রিশজন কমান্ডার নিহত হয়েছে। আর পাঁচজনও যেখানে নিহত হয়নি, সেখানে তোমরা বলছ মাসউদ সাইয়্যেদ জামালের তিনশ সৈন্যকে হত্যা করেছে। এটা আমি শপথ করে বলতে পারি এবং এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। অতএব, বিশ্বের মুসলমানদের নিকট তোমরা জ্বিহাদের চিত্র যে বিকৃত করেছ, তা কি আবার সঠিক রূপে তুলে ধরতে পারবে ?
আমি তোমাদেরকে তিরস্কার করছি না; অপারগ মনে করছি। কারণ, তোমরা ওয়াশিংটন পোস্ট, নিউইয়র্ক টাইমস ও সংবাদ সংস্থা রয়টার্স প্রভৃতির কাছে যিম্মি। কারণ, তোমাদের নিজস্ব কোন আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যম নেই। দশ দিন পূর্বে আমি সিন্ধী টাইমস পত্রিকায় দেখলাম যে, ‘নাসিরাবাদের শরণার্থী ক্যাম্পের আট হাজার মহিলা আরব কামুকদের কুদৃষ্টির শিকার।’ এরা  জ্বিহাদ করতে আগমণ করা আরবদেরকে এভাবেই বিশ্বের সামনে তুলে ধরছে এবং এভাবেই তাঁরা আফগান জ্বিহাদের উপর কলঙ্ক লেপন করছে। আর আমরা মুসলমানরা যেন নির্বোধ তোতাপাখি।
অপবাদ ও মিথ্যা দ্বারা আচ্ছাদিত করে রাখা হয়েছে তাঁকে
আক্ষেপ সে তোতার জন্য যার বুদ্ধি তাঁর উভয় কানে।
আফগানিস্তানে গৃহযুদ্ধ, রক্তপাত আফগান মুজাহিদদের দুর্নাম-এ তিনটি বিষয়ই এখন ইয়াহুদী নিয়ন্ত্রিত আন্তর্জাতিক মিডিয়া ও পত্র পত্রিকার মূল আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এর একমাত্র লক্ষ্য দুনিয়ায় যা কিছু ভাল, সুন্দর ও শাশ্বত দ্বীন ‘ইসলাম’ নির্দেশিত বিষয় রয়েছে, তাকে ধ্বংস করে মানবতাকে সম্পূর্ণ রূপে পশুত্বে নিয়ে যাওয়া। আমি আফগান জিহাদের সত্যতার ব্যাপারে সন্দিহান লোকদের বললাম, আপনারা কেন আফগান জিহাদে সহযোগিতা করছেন না?
তারা বলল, ‘আমরা কি হেকমতিয়ারের বাহিনী দ্বারা রব্বানীর দলকে আর রব্বানীর দল দ্বারা হেকমতিয়ারের দলকে হত্যা করার জন্য আফগান জিহাদে সহযোগিতা করব ? বা কম্যুনিস্টদের কাছে দেশ বিক্রি করে দেওয়ার জন্য মাসউদকে সাহায্য করব ? সে তো ফ্রান্সের দালাল। ‘ এ ছাড়া তারা মুজাহিদদের ব্যাপারে আরও বিভিন্ন আপত্তিকর কথা বলেছে। এদের কথা শোনে আমি বললাম, সুবহানাল্লাহ ! এ ছাগলছানারা হাতীকে ধাক্কা দিচ্ছে ? তোমরা কীভাবে এদের দুর্নাম করছে, যাদের বীরত্বের সামনে গোটা পৃথিবী আন্দোলিত হচ্ছে ? তাদের ন্যায় ধৈর্য্য ও ত্যাগ কারা স্বীকার করেছে ?
তোমরা আমার কাছে তাদের ব্যাপারে জানতে চাইলে আমি বলব, তাদের সমালোচনা করার যোগ্য আমি এখনও হইনি। দুর্নামের আগুনে যাদেরকে এখন বেশী জ্বালানো হচ্ছে, তারা হচ্ছে মাসউদ, হেকমতিয়ার, রব্বানী ও সাইয়াফ। আমি তাদের বললাম, তোমরা আমাকে মাসউদের সাথে তুলনা করবে-এত বড় আমি এখনও হইনি। মাসউদের সমালোচনা করা আমার জন্য লজ্জার ব্যাপার বরং আমি আমার অন্তরে যা আছে, তা বলতে চাই যে, যখন মাসউদ বা হেকমতিয়ার বা জালালুদ্দিন হক্কানী বা শায়খ সাইয়াফ আমাকে তাদের পাশে বসার সুযোগ দেয়, তখন এর জন্য আমি গর্ববোধ করি। কারণ, তারা ইতিহাস রচনা করেছে রক্ত দিয়ে। আর আমি তাদের রক্ত মাখা ইতিহাস কালি দিয়ে লিখছি মাত্র। হয়তো আমি ভাল ভাবে বক্তব্য প্রদান ও লিখতে জানি। কিন্তু তারা যে কাজ, যে ধৈর্য্য ও যে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে , তা আমার পক্ষে করা তো দূরের কথা, কল্পনাও করা কঠিন। এটাই আমার আন্তরিক উপলব্ধি। কিন্তু যারা এদের দুর্নাম করে চলেছে, তারা ইসলামের ইতিহাসকেই ধ্বংস করছে। যদি এদের একেকজনকে একেকটি দোষ দিয়ে কলুষিত করা হয় এবং  জিহাদ সায়্যিদ জামাল ও সায়্যিদ মীর্জার কতিপয় ঘটনায় পরিণত হয়, তাহলে মানুষের জন্য অনুসরনীয় আদর্শ ও পথ নির্দেশকারী আলোকস্তম্ভ বলতে তো আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না ।
আমরা নিজেদের অজান্তে নিজেদেরকেই আঘাত করে চলেছি এবং নিজেদের হাতে নিজেদের ঘর ধ্বংস করছি । আমরা এখন উম্মাহর কাছে এ জিহাদকে বিকৃতরূপে তুলে ধরে তার ফলাফলকে ধ্বংস করার পরিকল্পনা গ্রহণকারী পশ্চিমাদের ফাঁদে পা দিতে যাচ্ছি। এ দ্বারা তাদের অভীষ্ট লক্ষ্য হচ্ছে, পৃথিবীর অন্য কোন অঞ্চলের জনগণ আমেরিকা কিংবা ব্রিটেনের মুখোমুখি হওয়ার সাহস না করুক ।
فَاعْتَبِرُوا يَا أُولِي الْأَبْصَارِ
“অতএব, হে চক্ষুমান লোকেরা তোমরা এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ কর।” [সূরা আলহাশরঃ ২]।
আফগান জিহাদ একটি জীবন্ত দৃষ্টান্ত , একটি পথ নির্দেশক অভিজ্ঞতা। হ্যাঁ ! চলার পথের মাঝখানে অনেক সময় বিকৃতি এসে প্রভাবিত করে। তবে যে পথ চলতে চায়, বা উপদেশ গ্রহণ করতে চায়, তার জন্য তা সব সময় উজ্জ্বল ও চমৎকার শিক্ষার বিষয় হিসেবে বাকী থাকে। মানুষ এখন আফগান জিহাদের সমালোচনা করা শুরু করেছে। যে আফগান জিহাদ সারা পৃথিবীর মুসলমানকে একত্রিত করেছে, সে আফগান জিহাদের প্রতি মানুষ বিরক্তি প্রকাশ করছে এবং তার নেতৃত্বের দুর্নাম করতে শান্তিবোধ  করছে। এটা পশ্চিমাদের তথ্য বিকৃতি ও পরিকল্পিতভাবে আফগান জিহাদের ফলাফল বিনাশ করার ষড়যন্ত্রের ফলেই হচ্ছে। পাশ্চাত্যের প্রচার মাধ্যমগুলো এখন শুধু একটি বৃত্তকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। আর তা হচ্ছে আফগান জিহাদকে বিকৃত করে উপস্থাপন ও মুজাহিদ নেতৃবৃন্দের গায়ে কলঙ্ক লেপন। এসব করে তারা, যে লক্ষ্য অর্জন করতে চাচ্ছে, তা হল মুসলমানদের অন্তর থেকে এ জিহাদের প্রভাব মুছে ফেলা এবং বছরের পর বছর ধরে এ জিহাদ তাদের অন্তরের গভীরে আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুলের যে দৃঢ় মানসিকতা তৈরী করেছে তাকে উপরে ফেলা। পাশ্চাত্য মিডিয়ার উদ্দেশ্যমূলক ভাবে বিকৃত তথ্য উপস্থাপনের দ্বিতীয় আরেকটি লক্ষ্য হচ্ছে, মুসলিম উম্মাহকে আফগানিস্তানের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করা থেকে  দূরে রাখা। যাতে তারাই আফগানিস্তানের রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে মূখ্য ভূমিকা পালনের সুযোগ পায়। এ দুটি লক্ষ্য সাধনের পেছনেই আজ বিশ্ব প্রচার মাধ্যম কাজ করে যাচ্ছে। তারা চাচ্ছে আফগানিস্তানের বিষয়টা একটি অভ্যন্তরীন বিষয় হিসেবেই থাকুক। তারা চায় না আফগানিস্তানের বিষয়টা একটি আন্তর্জাতিক ইসলামী বিষয় হিসেবে মর্যাদা পাক। যাতে তারা একে ইচ্ছেমত কামড়ে ছিঁড়ে নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারে। আর এর জন্য দুঃখবোধ করার কোন লোকও থাকবে না। অতএব, সাবধান ! এ মহা ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সবাই সাবধান হোন । কেউ যেন ভুলেও এ ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা না রাখেন, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন।

সমস্যা না জানার নয় না মানার

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা বলেছেন-
الَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَعْرِفُونَهُ كَمَا يَعْرِفُونَ أَبْنَاءَهُمْ
“আমি যাদেরকে কিতাব প্রদান করেছি তারা তাকে (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম )নিজেদের সন্তানের মতই চিনে।”[বাকারাহঃ১৪৬] ।
পশ্চিমারা কখনো ইসলাম নিয়ে অজ্ঞতায় ছিল না, বর্তমানেও নেই। তারা ইসলামকে ভালভাবে চেনে এবং কীভাবে তাকে ধরাশায়ী করতে হয়, তাও তারা ভাল জানে। তারা মুহাম্মদী ইসলামকে বস্তুবাদী ইসলামে রূপান্তরিত করার মাধ্যমে মুসলমানকে একটি পরাধীন ও ভীরু জাতিতে পরিণত করার জন্য সকল ষড়যন্ত্র ও কৌশল নিরলস ভাবে প্রয়োগ করে যাচ্ছে।
মুসলমনারা তাদের চেয়ে উন্নত কৌশল ও দ্রুত গতিতে কাজ চালিয়ে তাদেরকে নিজেদের অধীন ও ভীরু জনগোষ্ঠীতে পরিণত করাতো দূরের কথা, কাফেরদের ষড়যন্ত্রের স্বরূপটাও তারা উপলব্ধি করতে সক্ষম হচ্ছে না । পশ্চিমারা মুসলিম উম্মাহর মন মানস থেকে জিহাদের চিত্র নির্মূল করার জন্য লাগাতার তিন শতাব্দী পর্যন্ত কাজ করেছে। ফলে এখন জিহাদ বলতে সর্বোচ্চ যা মানুষ বুঝে, তা হচ্ছে গোয়েন্দা সংস্থার লোকের সামনে সাহস করে কোন কথা বলা বা কোন ওয়ায সমাবেশের আয়োজন করা।
যে সশস্ত্র লড়াইকে ইসলাম জিহাদ বলে অভিহিত করেছে, তা আজ অধিকাংশের ধারণায়ই আসে না । তারা সশস্ত্র জিহাদ যে করা সম্ভবতার কল্পনাও করে না। তাই তারা বলছে, তোমার অধিকারের কথা জাতিসংঘকে জানাও, নিরাপত্তা পরিষদকে বল এবং তোমার দাওয়াত পৌঁছানোর জন্য যুক্তি, কৌশল  ও  বুদ্ধি কাজে লাগাও। অস্ত্রধারণ করে জ্ঞান- বিজ্ঞান ও তথ্য-প্রযুক্তির উৎকর্ষের এ যুগে ইসলামের প্রচার-প্রচার কল্পনাতীত ব্যাপার।
জ্ঞান ও তথ্য প্রকাশের নামে সাংবাদিকরা এখন আফগান জিহাদের চিত্র বিক্রিতকরণে ব্যস্ত। আমি সর্বপ্রথম আরব মুসলিম, যে আফগান জিহাদের ব্যাপারে সঠিক ও নিশ্চিত ধারণা লাভ করেছি। তিন মাস ধরে যে সাংবাদিকরা আফগান জিহাদের চিত্র বিকৃত করছে, আমার চেয়ে বেশী কথা বলছে, তারা সরেজমিনে এসে অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে গেলেও তাদের পক্ষে আফগান জিহাদের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার আমাদের চেয়ে বেশী জানা সম্ভব হবে না। তাই মুসলমানদের কাছে আমরা আবেদন করছি এ রকম কোন ঘটনা ঘটলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করার জন্য।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা বলেন-
وَإِذَا جَاءَهُمْ أَمْرٌ مِّنَ الْأَمْنِ أَوِ الْخَوْفِ أَذَاعُوا بِهِ ۖ وَلَوْ رَدُّوهُ إِلَى الرَّسُولِ وَإِلَىٰ أُولِي الْأَمْرِ مِنْهُمْ لَعَلِمَهُ الَّذِينَ يَسْتَنبِطُونَهُ مِنْهُمْ ۗ وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ لَاتَّبَعْتُمُ الشَّيْطَانَ إِلَّا قَلِيلًا     [٤:٨٣]
“তাদের নিকট যদি আনন্দ বা দুঃখজনক কোন বিষয় এসে উপস্থিত হয়, তখন তারা তা প্রচার করে বেড়ায়। তবে যদি তারা তা রাসূল ও তাদের কর্তাব্যক্তিদের কাছে পেশ করত, তাহলে তাদের মধ্যকার যারা বিষয়টি জানতে আগ্রহী, তারা বিষয়টির বাস্তবতা জানতে পারত। ”[নিসাঃ ৮৩]।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِن جَاءَكُمْ فَاسِقٌ بِنَبَإٍ فَتَبَيَّنُوا

“হে মুমিনগণ, তোমাদের নিকট যদি কোন ফাসিক কোন সংবাদ নিয়ে আসে, তাহলে তোমরা যাচাই কর। ”[হুজুরাতঃ৬ ]।
এটা ব্যক্তিগত ব্যাপারে বলা হয়েছে। অতএব, যদি ব্যাপারটা গোটা উম্মাহ সংশ্লিষ্ট হয়, তাহলে সে ব্যাপারে মন্তব্য করতে যাচাই-বাছাইয়ের প্রয়োজন, তা সহজে অনুমেয়। যেখানে আপনারা দশ দিরহাম বা দশ রিয়াল সংশ্লিষ্ট ব্যাপার পর্যন্ত অনুসন্ধান করতে ত্রুটি করেন না, সেখানে যে ব্যাপারটা সমগ্র মুসলিম উম্মাহর নাড়ির সাথে সম্পর্কিত, সে ব্যাপারে কোন প্রকার অনুসন্ধান না করেই যেমন তেমন মন্তব্য করে চলছেন।
পশ্চিমারা এ জিহাদের প্রভাব ও গুরুত্ব টের পেয়েছে। কয়েক বছর ধরে আমেরিকা ও ইউরোপের বাজারে কিছু বই ছাড়া হয়েছে। ঐগুলোতে লেখা আছে যে, আফগান জিহাদ শিগগিরই সোভিয়েত ইউনিয়নকে পদানত করে সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত ইসলামী অঞ্চলগুলোর সাহায্যে ইউরোপে প্রবেশ করবে। অতঃপত ইউরোপ উসমানী বংশকে যেমন পাঁচশত বছর জিযয়া দিয়েছিল, তদ্রুপ আবারও তাকে মুসলমানদের হাতে জিযয়া তুলে দিতে হবে। তখন আমেরিকা ইসলামের ব্যাপারে ছাড় দিতে বাধ্য হবে। এ ছাড় আফগানিস্তানের মাটিতে নয়, ইউরোপের গভীরে। পাশ্চাত্যের গবেষকরা তাদের জনগণকে এ কথাগুলো বুঝায়। নিক্সনও সেদিন এ কথা বলেছে। সে বলেছে, এখন রাশিয়ার সাথে আমেরিকার বিরোধ মিটিয়ে ফেলা দরকার এবং যে সশস্ত্র ইসলামী অভিযান দিন দিন এগিয়ে চলছে তা বন্ধ করা দরকার।

পৃথিবী আফগান জিহাদের গুরুত্ব বুঝতে শুরু করেছে

আফগানিস্তানের জিহাদের দৈনন্দিন ঘটনাবলী বিশ্লেষণ ও আফগানিস্তান নিয়ে গবেষণা করার জন্য মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়  সমূহে কিছু পৃথক বিভাগ ও একাডেমী রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় সমূহে প্রতি মাসে বা সপ্তাহে মার্কিন গবেষকদের আমন্ত্রণ জানিয়ে আফগানিস্তান নিয়ে তাদের মতামত ব্যক্ত করার জন্য বিভিন্ন সেমিনারের আয়োজন করা হয়। আমরা মুসলমানরা যেন এতীম বাচ্চা, যারা পিতার রেখে যাওয়া ধনকে নিয়ে রাস্তায় খেলা করছে আর বিভিন্ন স্থান থেকে দুর্বৃত্তরা এসে ওই ধনকে কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে।
ভাইয়েরা ! এ মহান বিষয়টার ব্যাপারে সাবধান থাকবেন। রক্ত দিয়ে ইতিহাস তৈরীর এ বিষয়টাকে জ্বেলে পুড়ে নষ্ট করবেন না । ভাল খবর ব্যতীত অন্য কোন বিষয় মানুষের কাছে প্রচার করবেন না । অনেক সময় কম বোধশক্তি সম্পন্ন লোকদের কাছে সঠিক খবর বলা ঠিক নয়। কারণ, সে ওটার গভীরতা নিয়ে চিন্তা না করে ওই বিষয়ে তার সুধারণাকে নষ্ট করে ফেলতে পারে।
আর যদি সবকিছু সুস্পষ্ট ভাবে বলে বেড়ানো তোমার কাছে যুক্তিসম্পন্ন মনে হয়, তাহলে তুমি তোমার মা বাপের দোষ ত্রুটি ও ঝগড়া ঝাটির ব্যাপার বিস্তারিত জানা সত্ত্বেও কেন তা মানুষের সামনে প্রকাশ কর না ? নাকি তোমার মা বাপ তোমার কাছে এ মহান জিহাদের চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ, যা দ্বারা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা সারা পৃথিবীর সকল মুসলমানকে সম্মানিত করেছেন ? বাস্তবতা জনসম্মুখে স্পষ্ট করে তুলে ধরাতে যদি তুমি বিশ্বাসী হও, তাহলে তুমি ‘জনসম্মুখে বাস্তবতা তুলে ধরার নামে’ তোমার দীর্ঘ মাদরাসা জীবন ও আন্দোলনের জীবনের দোষ ত্রুটিগুলো কেন মানুষের কাছে প্রচার কর না ? নাকি ওইসব তোমার কাছে গোটা মুসলিম মর্যাদাদানকারী এ মহান জিহাদের চেয়ে অধিক গুরুত্বপূর্ণ। শুনুন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ     [٩:١١٩]
“হে মুমিনগণ ! তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও ”[তাওবাহঃ১১৯ ]।
وَيْلٌ لِّلْمُطَفِّفِينَ     [٨٣:١]
الَّذِينَ إِذَا اكْتَالُوا عَلَى النَّاسِ يَسْتَوْفُونَ     [٨٣:٢]
وَإِذَا كَالُوهُمْ أَو وَّزَنُوهُمْ يُخْسِرُونَ     [٨٣:٣]
“ওজনে কম প্রদানকারীর জন্য রয়েছে দুর্যোগ, যারা মানুষের কাছ থেকে যখন মেপে নেয়, তখন পরিপূর্ণ নেয়। আর যখন তারা মানুষকে মেপে বা ওজন করে দেয়, তখন কম দেয়। ”[আলমুতাফফেফীনঃ ১-৩ ]।
তোমাদের চিন্তা চেতনা, দাওয়াত, মাতৃভূমি ও গোত্রের প্রতি তোমাদের টান রয়েছে। আর আফগান জিহাদ ও তোমাদের দাওয়াতের সাথে অমিল যা কিছু রয়েছে, তা ইসলাম সম্মত হলেও সেগুলোর প্রতি তোমাদের কোন টান নেই। তাই এ ব্যাপারে পুঙ্খানুপুঙ্খ রূপে গবেষণা করে বাস্তবতাকে জনসমক্ষে তোমাদের তূলে ধরতেই হবে। আর নিজেদের বেলায় হলে এটার প্রয়োজন নেই। তাই না ? আল্লাহ তোমাদের এ দ্বিমুখীতাকে খণ্ডন করে বলছেন-
وَلَا يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآنُ قَوْمٍ عَلَىٰ أَلَّا تَعْدِلُوا ۚ اعْدِلُوا هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوَىٰ
“কোন সম্প্রদায়ের প্রতি ঘৃণা যেন তোমাদেরকে তাদের প্রতি অন্যায় করতে প্ররোচিত না করে ।তোমরা ন্যায়কে আঁকড়ে ধর। এটাই তাকওয়ার সর্বাধিক নিকটবর্তী।  ”[আল মায়েদাঃ ৮ ]।
দ্বীনদ্রোহী আন্দোলন

মুসলিম বিশ্বে ইসলাম বিরোধী তৎপরতা ও আন্দোলন কীভাবে মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে, আজ সে ব্যাপারেই আমি আলোচনা করব। ইসলাম বিরোধী এসব আন্দোলনের জন্ম মূলত ময়দানে ইসলামের অনুপস্থিতির সুযোগেই হয়েছে। পশ্চিমা প্রচার মাধ্যমের আধিপত্যের সামনে মুসলমানদের চিন্তার জগতে শূন্যতার সৃষ্টি হয়। ক্রুসেডের অভিজ্ঞতা থেকে ইউরোপ বুঝতে সক্ষম হল যে, যুদ্ধের মাধ্যমে এ উম্মাহকে বশে আনা সম্ভব নয় এবং যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহু আঁকবারের ধ্বনি তাদেরকে আন্দোলিত করবে, ঈমান যতক্ষণ পর্যন্ত তাদের অন্তর্জগতে আসন গেড়ে বসবে, ততক্ষন পর্যন্ত তাদেরকে কাবু করা সম্ভব পর নয়। মনসূরার দারে লুকমানে অবস্থান কালে ক্রুসেডের নেতৃত্বদানকারী ফরাসী সম্রাট নবম লুইস বিষয়টা নিয়ে খুব চিন্তা করল।
বলল, ইউরোপের অত্যাধুনিক অস্ত্রের সামনে কোন বস্তুটা এ নিরস্ত্র জনগোষ্ঠীকে মাথা তূলে দাঁড়াতে প্ররোচিত করে ? বিপুল অস্ত্রের অধিকারী খৃষ্টবাদের সৈন্যদেরকে হাল্কা অস্ত্রধারী এ লোকেরা কীভাবে পরাজিত করে ছাড়ে ? শেষ পর্যায়ে তার শয়তান এ ব্যাপারে তাকে সঠিক সিদ্ধান্ত দিল যে, এ উম্মাহর শক্তির উৎস তাদের দ্বীন ‘ইসলাম ‘।
অতএব, যদি এ ভূমি থেকে এ দ্বীনের মূলোৎপাটন করা যায় এবং মানুষের সাথে তার যে নাড়ির সম্পর্ক রয়েছে তাকে যদি কেটে দেয়া যায়, তাহলে এ অঞ্চলে খৃষ্টবাদের শক্তভাবে পা ফেলা কোন ব্যাপার নয়। এ অঞ্চলে আধিপত্য বিস্তার করার জন্য ইউরোপ আরেকবার শক্তি ব্যবহার করছিল। তখন নেপলিয়ানের সৈন্যরা আলআযহারে কদম রেখেছিল। কিন্তু ‘আল্লাহু আকবার ‘ ধ্বনি নেপোলিয়ান ও সৈন্যদের অন্তরকে প্রকম্পিত করে তুলেছিল এবং সে বুঝতে পারল যে, আগ্রাসীদের রুখে দাঁড়ানোর জন্য ইসলামী শিক্ষার উর্বর ঘাটি আলআযহারই এ জাতিকে আন্দোলিত করেছে। তাই ইউরোপ এ যুদ্ধ স্থাগিত রেখে অন্য এক যুদ্ধের প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু করল। এ যুদ্ধ সশস্ত্র কোন আগ্রাসন নয়, এটা সাংস্কৃতিক ও চৈন্তিক আগ্রাসন। এ আগ্রাসন সৈন্য, ট্যাংক ও যুদ্ধ বিমানের আগ্রাসনের চেয়ে লক্ষ্যার্জনে আরও অধিক কার্যকর এবং তার ফলাফল আরও দীর্ঘমেয়াদী । ইউরোপ বলল, এ যুদ্ধে ইসলামের অনুসারীদের সাথে পেরে উঠা সহজ হবে না ।
যতক্ষণ না এই  সাংস্কৃতিক আগ্রাসন মুসলমানদের মধ্য থেকে এমন লোকদের  দ্বারা পরিচালিত হবে, যারা হবে ধর্মীয় অনুশাসন পালনের দিক দিয়ে তাদের সগোত্রীয় এবং তাদের ভাষায় কথা বলবে ও তাদের মাঝেই বসবাস করবে। এ ক্ষেত্রে সাইয়েদ কুতুব রহিমাহুতুল্লাহ- এর একটি কথা আমার মনে পড়ছে। এক লোক এসে তাকে ‘জালা ‘চুক্তির সুসংবাদ শোনাল। তখন তিনি বললেন, ‘লাল চামড়ার ইংরেজরা তো চলে গেছে। এখন চাচ্ছি গুদুম বর্ণের ইংরেজরা চলে যাক। ‘এদের চাল-চলন সম্পূর্ণ ইউরোপের পরিকল্পনা মত। এ আগ্রাসনের নেপথ্যে যারা ভূমিকা পালন করে, তাদের অধিকাংশই ইয়াহুদী। তাদের বিভিন্ন নথিপত্রে এ বিষয়ের অনেকটা উল্লেখ রয়েছে। এ ছাড়া তাদের লেখা ও বক্তব্যও প্রমাণ করে যে, এর পিছনে ইয়াহুদীরাই খুব সক্রিয়। সাংস্কৃতিক আগ্রাসন বিস্তারকারী আন্দোলনগুলোর মধ্যে রয়েছে, কম্যুনিজম, জাতীয়তাবাদ ও ফ্রীম্যাসনবাদ।এ ছাড়া এদের সৃষ্ট ইসলাম বহির্ভূত আরো কতিপয় আন্দোলন রয়েছে। যেমন বাহাঈবাদ, কাদিয়ানীবাদ, নুসাইরিবাদ ও দারুয। এসব দলগুলো ইসলামের নামে আত্মপ্রকাশ করেছে। কিন্তু  বাস্তবে এগুলো হচ্ছে ইসলামের লেবেলে ইউরোপীয় পণ্য। এরা কাফির। এদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া, এদের যবাইকৃত পশুর গোশত খাওয়া, এদের সালামের উত্তর দেয়া ও মুসলমানদের কবরস্থানে এদেরকে দাফন করা সম্পূর্ণ হারাম। এসব আন্দোলন নিয়ে যারা গভীর ভাবে চিন্তা করবে, তারা অবশ্যই উপলব্ধি করতে পারবে যে, ইয়াহুদীদের হাত কত লম্বা এবং এটাও বুঝতে সক্ষম হবে যে, এসব হল বাস্তবতার মুখ দর্শনকারী বিকৃত তাওরাত ও তালমূদের বাণী সম্ভার। এসব বাস্তবায়িত হয়েছে ইসলামী নামে নাম ধারণকারী এ উম্মাহর সন্তানদের মাধ্যমেই । মুহাম্মদ, উমর, উসমান, আহমদ ও আলীরা ইসলাম নির্মূলে এমন ভূমিকা পালন করেছে, যার সামনে ক্রুসেড এবং খৃষ্টবাদ ও ইয়াহুদীবাদের সৈন্যবাদের ইসলাম বিরোধী সশস্ত্র আগ্রাসন কোন গুরুত্বই রাখে না।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কোন মহান হেকমতের কারণে কাফেরদের বন্ধু রূপে গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন, তা আমি পরিপূর্ণরূপে উপলব্ধি করতে পেরেছি। দীর্ঘক্ষণ আমি আল্লাহর এ কথাগুলো নিয়ে ভাবলাম-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا عَدُوِّي وَعَدُوَّكُمْ أَوْلِيَاءَ
“ওহে ঈমানদারেরা ! তোমরা আমার ও তোমাদের শত্রুদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। ”[মুমতাহিনাঃ১ ]।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَىٰ أَوْلِيَاءَ ۘ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ ۚ وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ ۗ إِنَّ  [٥:٥١]اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ
“হে ঈমানদারেরা ! তোমরা ইয়াহুদী ও খৃস্টানদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের যে তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করবে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ যালিমদেরকে সঠিক পথে পরিচালিত করেন না । ”[আলমায়েদাঃ৫১ ]।
এ আয়াতের দু’আয়াত পর আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা বলেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا مَن يَرْتَدَّ مِنكُمْ عَن دِينِهِ فَسَوْفَ يَأْتِي اللَّهُ بِقَوْمٍ يُحِبُّهُمْ وَيُحِبُّونَهُ أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ أَعِزَّةٍ عَلَى الْكَافِرِينَ يُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ وَلَا يَخَافُونَ لَوْمَةَ لَائِمٍ ۚ ذَٰلِكَ فَضْلُ اللَّهِ يُؤْتِيهِ مَن يَشَاءُ ۚ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ [٥:٥٤]
“হে মুমিনগণ ! তোমাদের যে স্বীয় দ্বীন পরিত্যাগ করবে, আল্লাহ তার পরিবর্তে এমন এক সম্প্রদায়কে নিয়ে আসবেন, যাদেরকে তিনি ভালবাসবেন এবং তারাও তাকে ভালবাসবে। তারা মুমিনদের প্রতি হবে সহানুভূতিশীল ও কাফিরদের প্রতি হবে কঠোর। তারা আল্লাহর পথে জিহাদ করবে এবং এ ক্ষেত্রে তিরস্কারকারীর তিরস্কারকে কোন পরোয়া করবে না।  ”[মায়েদাঃ৫৪ ]।
আল্লাহ রব্বুল ইজ্জত কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব করাকে ইরতিদাদ বলে উল্লেখ করেছেন। এখানেই এসে মানুষের পক্ষে মুমিন ও ইসলামের শত্রুদের মধ্যকার অনুভূতি ও চিন্তাগত পার্থক্যের বিষয়টা পরিপূর্ণরূপে বুঝা সম্ভব। আর সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এ কথাটি বুঝতেও সক্ষম হবে-
“কোন ব্যাপারে আহলে কিতাবদের কাছে জানতে চাইবে না। কারণ, তারা তোমাদেরকে হিদায়াত করতে পারবে না। তারা নিজেরাই পথ ভ্রষ্ট। আল্লাহর কসম ! যদি মুসা আলাইহিসসালামও তোমাদের মাঝে উপস্থিত থাকত, তাহলে আমার অনুসরণ ছাড়া তার জন্য অন্য কিছু করা জায়েয হত না। ”

ভ্রষ্ট মতবাদসমূহ

বর্তমানে দু’টি বড় মতবাদ এ উম্মাহর একটি অংশকে পথচ্যুত করছে। এ মতবাদ দু’টি হচ্ছে সমাজবাদ ও জাতীয়তাবাদ । তৃতীয় আরেকটি মতবাদ যেটা এ উম্মাহর কর্তাব্যক্তিদের মাধ্যমে এ উম্মাহর মেরুদণ্ডকে ভেঙ্গে দিচ্ছে, সেটা হচ্ছে ইয়াহুদীবাদ নিয়ন্ত্রিত ফ্রীম্যাসনবাদ।
আমি আগেও বলেছি কম্যুনিজম মতবাদটি তালমুদী চিন্তার বহিঃপ্রকাশ। পরমত বিদ্বেষী ইয়াহুদীরা যারা বাবেল শহরে বিতাড়িত  হয়েছিল, তারা এ তালমূদের প্রবর্তক। খৃষ্টানদের প্রথম ও দ্বিতীয় শতকে এ তালমুদী চিন্তাধারা পরিপূর্ণতা লাভ করে। ইয়াহুদীদের সম্পর্কে কুরআন বলছে-
وَلَتَجِدَنَّهُمْ أَحْرَصَ النَّاسِ عَلَىٰ حَيَاةٍ وَمِنَ الَّذِينَ أَشْرَكُوا ۚ يَوَدُّ أَحَدُهُمْ لَوْ يُعَمَّرُ أَلْفَ سَنَةٍ
“তুমি তাদেরকে (ইয়াহুদীরা) জীবনের সবচেয়ে বেশী লোভী দেখতে পাবে। অনুরূপ মুশরিকদেরকেও। তাদের কেউ কেউ এক হাজার বছর বাঁচতে চায়। ” [বাকারাঃ৯৬]।

وَقَالَ لَهُمْ نَبِيُّهُمْ إِنَّ اللَّهَ قَدْ بَعَثَ لَكُمْ طَالُوتَ مَلِكًا ۚ قَالُوا أَنَّىٰ يَكُونُ لَهُ الْمُلْكُ عَلَيْنَا وَنَحْنُ أَحَقُّ بِالْمُلْكِ مِنْهُ وَلَمْ يُؤْتَ سَعَةً مِّنَ الْمَالِ ۚ

“তাদের নবী তাদেরকে বললেন, আল্লাহ তোমাদের জন্য তালূতকে শাসক হিসেবে প্রেরণ করেছেন। তারা বলল, তিনি কীভাবে আমাদের শাসক হবেন ? আমরাতো শাসনভার পাওয়ার জন্য তার চেয়ে অধিক যোগ্য। আর তিনি তো আর্থিক ভাবেও সচ্ছল নন। ” [বাকারাহঃ ২৪৭] ।
সম্পদ হচ্ছে ইয়াহুদীদের গো বাছুর, তাদের স্বর্ণ ও তাদের সে প্রভু যাকে তারা পূজা করেছে। তাদের অন্তরে গো বাছুরের প্রতি আসক্তি সৃষ্টি করে দেয়া হয়েছিল। আর কম্যুনিজমের ভিত্তি দাঁড় করা হয়েছে সম্পদ প্রীতির উপর। ফরওয়েডের চিন্তাধারাও তাওরাতের দর্শন প্রসূত। এটা সে বিকৃত তাওরাত , যা আল্লাহর নবী আলাইহিমুসসালামগণের প্রতি যিনার অপবাদ দিয়েছে। হযরত লূত , দাউদ ও লাবী বিন ইয়াকুব প্রমুখের প্রতি তারা যিনার অপবাদ ছড়িয়েছে। এ বিষাক্ত ইয়াহুদী চিন্তাধারা ফরওয়েডের মাধ্যমে জ্ঞানের জগতে মানবিক চিন্তাধারা নামে পরিচিতি লাভ করেছে।

কম্যুনিজমের সাথে ইয়াহুদীদের মিত্রতা

কম্যুনিজমের বিস্তারের পরিকল্পনা ইয়াহুদীরাই করেছে। কারণ, তারা দেখেছে পুঁজিবাদ চিরকাল টিকে থাকতে পারবে না। পুঁজিবাদের এ নায়করা পুঁজিবাদের চয়ে মারাত্মক যে কুফরি মতবাদের জন্ম দিয়েছে, সেটি হল কম্যুনিজম। কারণ, তা বিকৃত খৃষ্টবাদের অতি সূক্ষ্ম মুখোশপরা পুঁজিবাদের চেয়ে আরো কঠোর ভাবে দ্বীন নির্মূলের যুদ্ধ চালিয়ে যেতে সক্ষম হবে। তাই ইয়াহুদীরা কম্যুনিস্টদের জন্য পথ করে দিয়েছে এবং মার্কসকে সহায়তা করেছে। তাকে কম্যুনিস্টরা তাদের প্রতিশ্রুত নবী, ত্রাণকর্তা ও মানবতার মুক্তিদূত বলে মনে করে।
মার্কসের মাতা পিতা উভয়ে ইয়াহুদী। তার দাদা মার্ডখায় মার্কস ছিল ইয়াহুদী পণ্ডিত। এ মার্কস তার পিতার মৃত্যুর পর মা ও বোনদের নিকট সমবেদনা প্রকাশ করে একটি চিঠিও পাঠায়নি। উত্তরাধিকার সম্পত্তি চেয়েই কেবল চিঠি পাঠিয়েছিল। মার্কসকে তার অন্তরঙ্গ বন্ধু ফ্রেডার্ক এঙ্গলস বলেছিল, ‘তোমার মত স্বার্থবাদী মানুষ আমি আর দেখিনি।’ এ মার্কস যে নাকি শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা করার কথা বলেছে, মালিক শ্রমিকদের মধ্যে সমতা প্রতিষ্ঠার আহবান জানিয়েছে, যে আজীবন তার মাতা ও বোনের কাছ থেকে খরচ নিয়ে চলেছে। অতঃপর বই বের করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিভিন্ন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে একাধিকবার অর্থ নিয়েছে। কিন্তু কোন পাণ্ডুলিপি তাদেরকে দেয়নি। তার বই ‘পূজি’ একই সঙ্গে দু’টি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে অর্থের বিনিময়ে ছাপাতে দিয়েছিল। এই সে মার্কস যে নাকি বিশ্বের শ্রমিকদের মুক্তিদূত।
মার্কসের চিন্তাধারা বাস্তবায়নকারী লেনিনও ইয়াহুদী। কুসরোল গোল্ডমান নামে এক জার্মান ইয়াহুদী পিতার ঔরসে তার জন্ম। তার মাও একজন জার্মান ইয়াহুদী। তার স্ত্রীও ইয়াহুদী। ১৯২০ সালে ফ্রান্সের এক পত্রিকা লিখেছে, ‘কোন প্রকার বাহুল্য ব্যতিরেকে আমরা বলতে পারি যে , রাশিয়ার যে মহা বিপ্লব ঘটেছে , তার পরিকল্পক ও বাস্তবায়নকারী ইয়াহুদীরাই। ‘

আরব জাতীয়াতাবাদ ও উসমানী সাম্রাজ্য

আমি আগেই বলেছি যে, জাতীয়তাবাদ ইউরোপের সৃষ্টি। তবে আরব বিশ্বে যারা একে প্রতিষ্ঠিত করেছে, তারা এতদাঞ্চলের পশ্চিমাবাদী খৃস্টান। আরব জাতীয়তাবাদ প্রচারের কাজ প্রথমে শুরু হয় ‘লিটারেচার এন্ড আর্টস এসোসিয়েশন’ এর মাধ্যমে। ১৮৪৭ সালে এ সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করে ইব্রাহীম আল ইয়াযিজী ও বুট্রোস আল বুসতানী নামের দু’ খৃস্টান।  অতঃপর ১৮৬৮ সালে এ সংগঠনটির নামে পরিবর্তন করে ‘সিরিয়ান নলেজ এসোসিয়েশন’ রাখা হয়। আমাদের স্কুল সমূহে ইব্রাহীম আলইয়াযিজীর এ কবিতা এখনও শিক্ষা দেয়া হয় –
সতর্ক হও এবং সচেতন হও ওহে আরব
স্রোত এত প্রচণ্ড যে, যাত্রীরা ডুবে গেল সব।
তোমাদের মান সম্মান তুর্কীদের চোখে গেল সব
তোমাদের মান সম্মান তুর্কীদের চোখে গেল সব
তোমাদের অধিকার তুর্কীদের সামনে লুণ্ঠিত আর তারা নীরব।
আরব জাতীয়তাবাদের প্রচারকরা যে ইসলামী খেলাফতের রাজধানী তুরস্ক থেকে মুক্তি কামনা করত, তার প্রমাণ তাদের নেতা এডওয়ার্ড আতিইয়ার মুখে শুনুন। সে বলেছে, ‘খৃস্টানরা তুর্কী নেতৃত্বকে ঘৃণা করতো এবং তুরস্ক থেকে স্বাধীন হবার স্বপ্ন দেখতো।’
লেবানন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাহিত্যকলা বিভাগের শিক্ষকদের রচিত ‘আরব সমাজ’ নামীয় বইতে বলা হয়েছে যে, ‘আরব বিশ্বে তুর্কী শাসন বিরোধী যে আন্দোলন গড়ে উঠেছে, তার মূল ভিত্তি ছিল আরববাদ ।’
বৈরুতে খৃস্টান যুবকদের পরিচালিত একটি গোপন সংগঠন ছিল , যার একমাত্র কাজ ছিল , আরব এবং তুর্কীদের মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করা। এ সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার পেছনে মূল প্রেরণা যোগিয়েছিল ‘যওক মেকাইল’ এলাকার এক লোক, যে লেবাননের আমেরিকান ইউনিভার্সিটিতে ফ্রান্স ভাষার শিক্ষক ছিল। ইব্রাহীম আলইয়াযেজী, ইয়াকুব সরুফ ও শাহীন মাকারিউস তার ছাত্র ছিল। ঐ লোক ইয়াহুদীদের ষড়যন্ত্রে সংগঠিত ‘ফ্রান্স বিপ্লব’ এর একজন ঘোর সমর্থক ছিল।

আরব জাতীয়তাবাদ যে পশ্চিমাদের তৈরী মতবাদ সে ব্যাপারে ফিলেব- এর কথা প্রণিধানযোগ্য। ফিলেব জাতীয়াতাবাদীদের বড় উস্তাদ এবং বার্থ পার্টির লোকেরা আমাদের ছেলেদের জন্য তাকে নিয়ে ইতিহাস লিখেছে। ফিলেব বলেছে , ‘সিরীয় দেশাত্মবোধ ও পশ্চিমা চিন্তাধারার সংমিশ্রণে সৃষ্টি হয়েছে আরব জাতীয়তাবাদের পরিপূর্ণ নিয়ম নীতি এবং তা (আরব জাতীয়তাবাদ) মার্কিন রাজনৈতিক চিন্তাধারা থেকে তার অধিকাংশ অনুপ্রেরণা গ্রহণ করেছে। এর বিপরীত হচ্ছে তুর্কী জাতীয়তাবাদ, যা আত্মপ্রকাশ করেছে আরব জাতীয়তাবাদের পর এবং তা অনুপ্রেরণা গ্রহণ করেছে ফ্রান্স বিপ্লব থেকে।’  ফিলেব আরো বলেছে, ‘আরব জাতীয়তাবাদের চিন্তাধারা উনবিংশ শতাব্দীর সত্তরের দশকে কতিপয় সিরীয় চিন্তাবিদের মাধ্যমেই আত্মপ্রকাশ করে, যাদের অধিকাংশই লেবাননের আমেরিকান শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সমূহে শিক্ষা প্রাপ্ত খৃস্টান। আর এ কথা নিঃসন্দেহে সত্য যে, জাতীয়তাবাদ হচ্ছে একটি পশ্চিমা পণ্য, যা বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের ন্যায় পূর্ব আরব অঞ্চলও আমদানী করেছে ‘। এ হচ্ছে আরব জাতীয়তাবাদের প্রবক্তাদের কথা।
লেবাননের খৃস্টান নজীব আযোরী যে প্যারিসে বসবাস করতো, সে এ শতকের (বিংশ) শুরুতে আরব জাতীয়তাবাদের সূক্ষ্ম ও সফল প্রচারণা চালায়। সে প্যারিসে আরব আঞ্চলিক পরিষদ নামে একটি সংগঠন দাঁড় করায়। ‘আরব জাতির জাগরণ’ নামে একটি বইও লিখে সে। ১৯০৭ সালে সে ‘আরব স্বাধীনতা’ নামে একটি পত্রিকা প্রকাশ করে।
সাতে’ আল হুছাইরী’র মতে আরব জাতীয়তাবাদের বিকাশ শুরু হয় নজীব আযোরীর মাধ্যমে, যে কাজ শুরু করে প্রথমে ফ্রান্সে অতঃপর ব্রিটেনে।
আরব অঞ্চলের ব্রিটিশ গোয়েন্দা প্রধান লরেন্স যাকে আরবরা মুকুটহীন আরব সম্রাট বলে অভিহিত করে, তার ‘প্রজ্ঞার সপ্তখুঁটি’ নামক বইয়ে বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে তুরস্ক  (উসমানী সাম্রাজ্য) ভেঙে টুকরো টুকরো হওয়ার পেছনে একমাত্র ভূমিকা পালনকারী হচ্ছে জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারা।’
আর জাতীয়তাবাদীরা যে ইসলামের স্থলে জাতীয়তাবাদকে একটা ধর্ম হিসেবে গ্রহণ করতে চায়, সে ব্যাপারে আরব জাতীয়াতাবাদী লেখক উমর ফাখোরী তার ‘আরবরা কিভাবে জাগবে?’ নামক বইতে বলেন, ‘আরবরা ততক্ষণ পর্যন্ত জেগে উঠতে সক্ষম হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত তারা আরববাদকে ততটুকু গুরুত্বের সহকারে গ্রহণ করবে না, যতটুকু গুরুত্বের সহিত মুসলমান কুরআনকে গ্রহণ করে।’
আরেক আরব জাতীয়তাবাদী লেখক মাহমূদ তাইমূর ‘আরব জাহান’ পত্রিকার ১৭১ সংখ্যায় লেখেন, ‘আর নিঃসন্দেহে আরব লেখকদের কাঁধে একটি যিম্মাদারী রয়েছে। তা হচ্ছে, এ সত্যিকারের নবুওয়াতের (আরব জাতীয়তাবাদ) পক্ষে কথা বলা ও এর সত্যতা তুলে ধরা। ‘
আরেক আরব জাতীয়াবাদী লেখক আলো নাসিরুদ্দিন তার ‘আরবদের সমস্যা’ নামক বইতে লিখেন, ‘মুসলিম ও খৃস্টান সম্প্রদায়ের আমরা যারাই আরব জাতীয়তাবাদে গভীরভাবে বিশ্বাসী , তাদের নিকট আরববাদ স্বয়ং একটি ধর্ম। যদি প্রত্যেক যুগে কোন না কোন নবুওয়াত বিদ্যমান থাকে, তাহলে এ যুগের নবুওয়াত হচ্ছে আরব জাতীয়তাবাদ। ‘
১৯৫৯ সালের ‘আরব জাহান’ পত্রিকার ২য় সংখ্যার ৯ম পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে , ‘মুমিনদের অন্তরে আল্লাহর একত্ববাদের প্রতি যেমন অগাধ বিশ্বাস রয়েছে, তেমনি আরবদেরও উচিত যেখানেই থাকুক না কেন আরব একত্ববাদে তেমনিভাবে বিশ্বাসী হওয়া।’
বার্থ পার্টির নেতা ইব্রাহীম খালাস ‘জনযোদ্ধা’ নামক এক সিরীয় ম্যাগাজিনে ২৫.০৪.১৯৬৭ সালে লিখেন, ‘আরব সভ্যতার উন্নতি ও আরব সমাজ বিনির্মাণের একমাত্র পথ হচ্ছে, এমন আরব সমাজবাদী লোক তৈরী করা, যারা বিশ্বাস করবে, আল্লাহ, ধর্ম, জমিদারী, পুঁজিবাদ, সাম্রাজ্যবাদসহ অন্যান্য যে সব নিয়ম নীতি সমাজে ইতোপূর্বে ছেয়ে বসেছে, তা সবই খেলার পুতুল যার স্থান হচ্ছে যাদুঘর।’ এ কথা সে বলেছিল ইসরাঈলের হাতে সিরিয়ার পরাজিত হওয়ার ৪৭ দিন পূর্বে।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলার ঘোষণা-
وَلَا تَحْسَبَنَّ اللَّهَ غَافِلًا عَمَّا يَعْمَلُ الظَّالِمُونَ
“অপরাধীরা যা করছে, সে ব্যাপারে আল্লাহকে অবহিত ধারণা করবেন না।” [ইব্রাহীমঃ৪২] ।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা অবকাশ দেন। কিন্তু অনবহিত এমন নয়।
ব্রিটেনের ‘দি ইকোনোমিষ্ট’ পত্রিকা ১৯৬২ সালে ‘জাতীয়তাবাদ বনাম ইসলাম’ শীর্ষক এক প্রবন্ধে লিখেছে যে, ‘প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের পর কাফের ইংরেজদের সাথে নিয়ে তুর্কীদের থেকে স্বাধীন হওয়ার জন্য যখন আরবরা লড়াই করে, তখন তারা জাতীয়তাবাদকে সব কিছুর উপর প্রাধান্য দেয়। ইখওয়ানুল মুসলিমীনের চিন্তাধারা তারা পরিত্যাগ করেছে। তাই এখন আরব বিশ্বে এমন কোন রাজনৈতিক দল নেই, যারা আরব জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারা ত্যাগ করে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। ‘
আরব জাতীয়তাবাদ যে পশ্চিমাদের পরিকল্পিত এবং তার কার্যকরকারীরা যে খৃস্টান , তার প্রমাণ হচ্ছে, আরব অঞ্চলের জাতীয়তাবাদী দলগুলো সৃষ্টি হয়েছে বার্থ পার্টির পথ ধরে এবং খৃস্টানদের কাছ থেকে সরাসরি শিক্ষা দীক্ষাপ্রাপ্ত লোকদের মাধ্যমে। আরব জাতীয়তাবাদীদের প্রথম দলের উৎপত্তি হয় লেবাননের আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ে। এর চ্যান্সেলর ডোডজ ও  কুস্টন্টিন জরীক ছাত্রদেরকে আরব  জাতীয়তাবাদী চিন্তাধারা ও মতামতের প্রতি উৎসাহিত করতো এবং তাদেরকে আরব জাতীয়তাবাদের নামে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে মিছিল করতে প্ররোচিত করতো। কুস্টন্টিন জরীক একজন যোগ্য শিষ্য তৈরী করতে সমর্থ হয়েছে, যে আরব জাতীয়তাবাদীদের নেতৃত্ব গ্রহণ করেছে। তার নাম জর্জ হাবশ।
আরব শ্যাশ্যলিষ্ট বার্থ পার্টির নেতা ছিল মিশেল আফলাক এবং তার সহকারী ঝিল যকী আরসূজী নুসাইরী আলাবী। মিশেল আফলাক পোপ থেকে পদক গ্রহণ করার সময় বলেছিল, ‘আমি এমন কাজ করতে সক্ষম হয়েছি, খৃস্টান মিশনারীরা যা তিনশত বছর ধরে করতে সক্ষম হয়নি ।’
সিরিয়ার জাতীয়তাবাদের নেতৃত্বে ছিল আনতোওয়ান সাআদাহ। সে নিহত হবার পর তার স্ত্রী তার স্থলাভিষিক্ত হয়। অতঃপর জাতীয়তাবাদের নেতৃত্বে আসে আসাদ আশকর এবং অতঃপর জর্জ আবদুল মসীহ।

ফ্রীম্যাসনবাদ ও ইয়াহুদী

সমাজবাদ ও জাতীয়তাবাদের পর তৃতীয় যে বিষয়টার প্রতি আসক্ত হয়ে আরব বিশ্বের নেতৃস্থানীয় লোকেরা ধ্বংস হচ্ছে, সেটা হল মাসূনিয়াহ (ফ্রীম্যাসনবাদ)। মাসূনিয়াহ ইংরেজী শব্দ গঅঝঙঘ-এর আরবি রূপ। গঅঝঙঘ অর্থ বানানো। যারা মাসূনিয়াহ-এর সাথে সম্পৃক্ত তাদেরকে মাসূনী বা ফ্রীম্যাসন্স (স্বাধীন নির্মাতা) বলা হয়। অর্থাৎ, যারা শিগগিরই মসজিদে আকসা ধ্বংস করে তাতে সোলেমানী কাঠামো নির্মাণ করবে। তাই তাদের প্রতীক হচ্ছে একটি গোল চিহ্ন, যার ভিতরে রয়েছে একটি ছয়কোণা বিশিষ্ট তারা। আর এ তারার ভিতর রয়েছে ইংরেজী অক্ষর এ। এ অক্ষর ইয়াহুদীদের সর্বশেষ রাজা গ্যকিনের প্রতি ইঙ্গিতে, যাকে নবুখযনসসর বন্দী করেছিল।
আর মাসূনিয়াহ (ফ্রীম্যাসনবাদ) হচ্ছে রক্তি খাটি ইয়াহুদী সংগঠন। আর এর সকল প্রতীক ও গোপন অক্ষর ও ইয়াহুদীবাদ সম্পর্কীয়। খ্রোকাস তার বই ‘ইয়াহুদী মানসিকতা’য় উল্লেখ করেছে যে, ‘পৃথিবী আজ জীবন-মৃত্যুর লড়াইয়ের সম্মুখীন । ইয়াহুদীবাদী ফ্রীম্যাসনবাদ সারা বিশ্বের জন্য ‘মৃত্যু’ পরিণতি সৃষ্টি করছে ‘।
ফ্রীম্যসনবাস যা গোপনে প্রতারণার মাধ্যমে পৃথিবীতে ইয়াহুদীবাদ প্রতিষ্ঠার জন্য নিবেদিত , এর ইতিহাস সম্পর্কে কেউ কেউ বলেছেন যে, এর সূচনা হয় ঈসা আলাইহিসসালামের এর যুগে। তবে আধুনিক ফ্রীম্যাসনবাদের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছে ১৭৭৭ সাল থেকে। এর প্রধান কার্যালয় লন্ডনে। একে তারা আমাদের মুসলমানদের কিবলা কা’বা এর মত মর্যাদা দেয়। ফ্রীম্যাসনবাদের লক্ষ্য উদ্দেশ্যের চতুর্থ, পঞ্চম, নবম ও এগারতম ধারায় উল্লেখ আছে যে, ‘ফ্রীম্যাসনবাদ আমাদের অন্ধ সেবা করে যাচ্ছে। শিগগিরই আমরা অইয়াহুদী পৃথিবীকে গোপন ফ্রীম্যাসবাদী সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান সমূহের মাধ্যমে ধ্বংস করব। অতঃপর সে সব ফ্রীম্যাসনবাদী সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান সমূহ ধ্বংস করব, যা জন্মগত ইয়াহুদীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়। যখন কোন গাধা- ইয়াহুদী ব্যতীত পৃথিবীর সকল লোককে তারা গাধা বলে অভিহিত করে- মারা যাবে, তখন আমরা অন্য গাধার উপর সওয়ার হবো। আমরা আল্লাহর নির্বাচিত জাতি। অন্যান্য জাতিসমূহকে আল্লাহ আমাদের সেবা করার জন্য সৃষ্টি করেছেন। গাধারা আমাদের গোপন সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান সমূহের ব্যাপারে কিছুই জানে না। তাদেরকে আমরা আমাদের সংগঠনে প্রবেশ করাতে সক্ষম হয়েছি। শিগগিরই আমরা আন্তর্জাতিক ও দেশীয় পুলিশদেরকে আমাদের ফ্রীম্যাসনবাদী প্রতিষ্ঠান সমূহে প্রবেশ করাবো, যাতে তাদেরকে আমাদের সেবায় নিয়োজিত করতে পারি এবং যাতে   তারা আমাদের পক্ষে গোয়েন্দাগিরী করে। ‘
এ হচ্ছে নির্ভেজাল ইয়াহুদীবাদী প্রতিষ্ঠান ফ্রীম্যাসনবাদের পরিকল্পনা। এ ফ্রীম্যসনবাদ পরিচালিত দু’টি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান হচ্ছে লায়ন্স ক্লাব ও রোটারী ক্লাব। দেশের প্রভাবশালী লোকদেরকে এসব ক্লাবের সদস্য করা হয়। (মিশরের আলাআযহার ও রাবেতা আল-আলামিন ইসলামীর পক্ষ থেকে ফ্রীম্যাসনবাদের সাথে সম্পর্ক রাখা ও তাদের নিয়ন্ত্রিত লায়ন্স ও রোটারী ক্লাবের সদস্য হওয়া মুসলমানদের জন্য হারাম বলে ফতওয়া দেয়া হয়েছে- অনুবাদক )।

ফ্রীম্যাসনবাদের স্তর সমূহ

ফ্রীম্যাসনবাদের তিনিটি স্তর রয়েছে। ১. প্রাথমিক স্তর। প্রাথমিক স্তরে ৩৩ পদ রয়েছে। যে ৩৩ পদ অর্জন করে তাকে গলায় একটি রশি এবং চোখে পট্টি বেঁধে ফ্রীম্যাসনবাদের প্রধান কার্যালয়ের একটি লাল অন্ধকার কক্ষে প্রবেশ করানো হয়, যেখানে রয়েছে মানুষের মাথার অনেক খুলি। সেখানে তাকে অশ্লীল কাজে লিপ্ত করা হয়। ১৯৬৫ সালে মিশরের ‘সশস্ত্র বাহিনী পত্রিকা’ এ ব্যাপারে লিখেছিল। অতঃপর তাকে সিংহাসনে অধিষ্টিত তিনজনের স্যামনে এনে এ শপথ করানো হয় যে, সে ফ্রীম্যাসনবাদের কাজে আন্তরিক হবে, যদিও তাকে তার ছেলে স্ত্রী ও নিকটাত্মীয়ের বিরোধিতা করতে হয়। আর তার কাছ থেকে এ অঙ্গিকারও নেয়া হয় যে, যদি সে ফ্রীম্যাসনবাদের গোপন বিষয়গুলো প্রকাশ করে, তাহলে তাকে হত্যা করা হবে। এ ব্যাপারে এত কড়াকড়ি করার কারণ হচ্ছে, কেউ কেউ ফ্রীম্যাসনাবাদের এ ব্যাপারটি প্রকাশ করে ফেললে আরব পত্র পত্রিকাগুলো তা ফলাও করে প্রচার করবে।
বলছিলাম ফ্রীম্যাসনবাদের সদস্যদের পদের কথা। যদি কেউ প্রথম স্তরের ৩৩টি পদ অর্জন করে, তখন তাকে উস্তাদে আযম (মহান শিক্ষক) উপাধি দেয়া হয়। ফ্রীম্যাসনবাদের দ্বিতীয় স্তরের জন্য আগে জন্মগত ইয়াহুদী ছাড়া কাউকে গ্রহণ করা হতো না। এখন এ কড়াকড়ি আর নেই। তবে শর্ত থাকে যে তাকে ইয়াহুদীদের জন্য বড় কোন অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক ফায়দা লুটিয়ে দিতে হবে। কেউ প্রথম স্তরের ৩৩ টি পদ অতিক্রম করে মহান শিক্ষক উপাধি নিয়ে দ্বিতীয় স্তরে পদার্পণ করতে যায়, তখন তাকে ফ্রীম্যাসনবাদের গোপন কথা সমূহ বলে দেয়া হয়। দ্বিতীয় স্তরে পদার্পণ করার পর তার কাছ থেকে আবার অঙ্গীকার নেয়া হয়। আগের মত তার উভয় চোখে পট্টি বেঁধে তাকে ফ্রীম্যাসনবাদের মূল প্রশ্ন করা হয় ‘তুমি কে’ ? সে উত্তরে বলে, ‘আমি একজন অন্ধকার জগতের লোক। আমি আলোর সন্ধান করছি। আমি জেনেছি যে ,আপনারা সোলেমানী কাঠামো তৈরী করবেন। তাই আপনাদেরকে সহায়তা করতে এসেছি।’ এ সময় তাকে বলা হয়, ‘আমরা জন্মগত ইয়াহুদী ছাড়া এ কাজে অন্য কাউকে গ্রহণ করি না ‘। সে তখন বলে, ‘আমি আপনাদের একজন এবং আপনাদের আত্মীয়’। অতঃপর তার চোখ খুলে দেয়া হয় এবং তাকে দু’টি মূর্তির সামনে আনা হয়। এ দু’টি মূর্তির একটি মুসা আলাইহিসসালাম ও আরেকটি হারুন আলাইহিসসালাম-এর। তাকে বলা হয়, ‘এ দু’জন হচ্ছেন মুসা আলাইহিসসালাম ও হারুন আলাইহিসসালাম। তুমি কি এ দু’জন ছাড়া অন্য কোন নবীকে বিশ্বাস কর’ ? তখন সে বলে ‘না’। অতঃপর তাকে অন্যান্য নবীগণকে লা’নত করতে বলা হয় (নাউযুবিল্লাহ)। এরপর তাকে তাওরাতের কাছে নিয়ে আসা হয় এবং বলা হয় ‘এটা হচ্ছে তাওরাত। তুমি কি এ ছাড়া অন্য কোন কিতাবকে বিশ্বাস কর’ ? সে বলে ‘না’। অতঃপর তাকে অন্যান্য আসমানি কিতাব সমূহকে গালমন্দ করতে বলা হয়।
ফ্রীম্যাসনবাদের তৃতীয় স্তরকে বলা হয় মহাজাগতিক বন্ধন। এটা কতিপয় ইয়াহুদী শয়তানের সমষ্টি। তাদেরকে হাকিম (প্রজ্ঞাবান) নামে অভিহিত করা হয়। এরা রাতদিন মানবতাকে কিভাবে ধ্বংস করা যায়, সে ব্যাপারে পরিকল্পনা তৈরীতে ব্যস্ত থাকে। এরা বাস করে নিউইয়র্কে। ফ্রীম্যাসনবাদ সম্প্রসারিত হলে আদ্দিস আবাবা ও সুইজারল্যান্ডের বেরনে এদের দু’টি শাখা খোলা হয়।
এ হচ্ছে ফ্রীম্যাসনবাদের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস যা আমদেরকে ইসলামী মূল্যবোধ থেকে দূরে সরিয়ে আমাদের সমাজকে ধ্বংস করছে। আমাদের সমাজের একটি অংশ এখনো এ ফ্রীম্যাসনাবাদের বলি হচ্ছে।

বাহাঈ মতবাদ

বাহাঈ মতবাদ প্রথমে বাবিয়া নামে পরিচিত ছিল। কারণ, তারা তাদের প্রধানকে প্রতিশ্রুত মাহদীর প্রতিশ্রুত বাব (দরজা) বলে অভিহিত করতো। তাদের প্রধান হচ্ছে আলী শিরাজী। সে ‘আলবয়ান’ নামে একটি বই লিখেছে এবং বলেছে তার এ বইটি কুরআনের চেয়ে বড় আর সে নাকি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেয়ে বড় (কতইনা মারাত্মক তার এসব কথা)। ১৮৪৮ সালে বাদাশত শহরে তাদের মহাসম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় এবং তাতে তাদের মূলনীতি ঘোষণা করা হয়। এ সম্মেলনের প্রধান আকর্ষণ ছিল রজীন তাজ নামের এক মহিলা। এ সম্মেলনে সে ঘোষণা দেয় যে আলবয়ান ইসলামী শরীআহকে রহিত করেছে।
ইরানের আলেমগণ এ প্রতিশ্রুত বাবের (আলী শিরাজী) বিরুদ্ধে গর্জে উঠলেন এবং বাদশাকে তাকে গ্রেফতারে বাধ্য করলেন। অতঃপর জনগণের পক্ষ থেকে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার জোর দাবী উঠলে সরকার তাকে মৃত্যুদণ্ড দিতে বাধ্য হয়। ইসলাম বিদ্বেষী পশ্চিমা রাষ্ট্র রাশিয়া ও ব্রিটেন তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। আলী শিরাজীর যে শিষ্যটির সাথে রজীন তাজের গভীর সম্পর্ক ছিল, তার নাম হুসাইন বিন আলী মাজান্দারানী। সে নিজের জন্য বাহাউল্লাহ উপাধি গ্রহণ করে। সেই বাহাঈ মতবাদ (যার পূর্ব নাম বাবিয়া) প্রচারের কাজ শুরু করে। আর এ বাহাঈ মতবাদ হচ্ছে ইস্পাহান, তেহরান ও হামদানের ইয়াহুদীদের পরিচালিত একটি ইয়াহুদী ষড়যন্ত্র। এ মতবাদ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ইরানের আলেম ও জনসাধারণ যখন এ মতবাদের বিরুদ্ধে গর্জে উঠেন, তখন ইরানের রাজতান্ত্রিক সরকার তাকে (বাহাউল্লাহ) গ্রেফতার করে। এবারও ব্রিটেন ও রাশিয়া তাকে বাঁচানোর জন্য মধ্যস্থতা শুরু করে। এবং ইরান সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করে। ফলে ইরান সরকার তাকে মৃত্যুদণ্ড না দিয়ে ইরাকে দেশান্তর করে। কিন্তু ওখানের লোকজনও তার বিরুদ্ধে গর্জে উঠেন। তাই ইরাক সরকারও তাকে গ্রেফতার করে। এখানেও ব্রিটেন তাকে বাঁচাবোর জন্য নাক গলায়। ফলে ইরাক সরকার তাকে শাস্তি না আককায়* দেশান্তর করে। সেখানে ব্রিটিশ সরকার তাকে লালনপালন করে। তার কবর এখনো বাহাঈদের তীর্থ ভূমি হিসেবে বিবেচিত হয়।
বাহাঊল্লাহ মনে করতো যে, আল্লাহর ছবি তার মধ্যে প্রবেশ করেছে। তাই যাতে ভক্তদেরকে কথিত আল্লাহর নূর পোড়াতে না পারে, সে জন্য সে তার মুখ সবসময় ঢেকে রাখতো। এ বাহাঈরা কাফের। তাদের যবাইকৃত পশু খাওয়া জায়েয নেই এবং তাদেরকে মুসলমানের কবরস্থানে দাফন করাও জায়েয নেই।

নুসাইরিয়া মতবাদ

নুসাইরিয়া মতবাদের অপর নাম আলবিয়া। নুসাইরী সম্প্রদায়ের বিশ্বাস যে আল্লাহ মানুষের আকৃতিতে আত্মপ্রকাশ করেন।  আর তিনি মানুষের আকৃতিতে সর্বশেষ আত্মপ্রকাশ করেছেন হযরত আলী রদিয়াল্লাহু আনহু-এর মাধ্যমে। আর হযরত আলী রদিয়াল্লাহু আনহু (তাদের বিশ্বাস মতে আল্লাহ-নাউযুবিল্লাহ) সৃষ্টি করেছেন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে । আর হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সৃষ্টি করেছেন সে পাঁচ ইয়াতীমকে , যারা বিশ্বজগত পরিচালনা করছেন। এ পাঁচ ইয়াতীম হচ্ছেন, (১) হযরত আবু যর রদিয়াল্লাহু আনহু যিনি বাতাস, বৃষ্টি ইত্যাদি প্রবাহিত করার কাজে লিপ্ত। (২) হযরত আব্দুল্লাহ বিন রওয়াহা রদিয়াল্লাহু আনহু যিনি প্রাণ দানের কাজে লিপ্ত। (৩) হযরত উসমান বিন মাযউন রদিয়াল্লাহু আনহু যিনি প্রাণ সংহারের কাজে লিপ্ত। (৪) কারান বিন কারান যিনি হযরত আলী রদিয়াল্লাহু আনহু-এর খাদেম ছিলেন। (৫) হযরত সালমান ফারসি রদিয়াল্লাহু আনহু যিনি জীবিকার কাজে লিপ্ত। নুসাইরীরা যা বলে, তা থেকে আল্লাহ পবিত্র ও অনেক ঊর্ধ্বে।
নুসাইরীর আকীদা হচ্ছে মাগরিবের নামায চার রাকআত। এ নুসাইরীরা সুলাইমান মুরশিদকে ইলাহ বলে বিশ্বাস করে। ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত তাকে ইলাহ দাবী করার পরামর্শ দেয় এবং বলে যে আপনি আপনার কাপড়ের ভিতর ইলেকট্রিক বোতাম লাগান। অতঃপর যখন ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত ও তার অনুসারীরা তার নিকট গমন করতো,  তখন তার পকেটে ইলাকেট্রিক তারের সংযোগ দেয়া হতো। ফলে বোতামগুলো জ্বলতো। তখন লোকজন সবাই তাকে সিজদা করতো। ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতও সিজদায় লুটে পড়তো এবং বলতো, হে রব আমাকে ক্ষমা করুন।
এভাবেই ফ্রান্স ইসলাম বিরোধী ভূমিকা পালন করেছে। অতঃপর ফ্রান্স সুলাইমান মুরশিদকে নুসাইরী সম্প্রদায় অধ্যুষিত পাহাড়ী এলাকার কর্তৃত্ব প্রধান করে এবং তার জন্য একটি বাহিনী তৈরী করে ও তাকে পার্লামেন্টের সদস্য বানায়। কি আশ্চর্য ! একটি লোককে কিভাবে মানুষ ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। অথচ সে ছিল এক সময় রাখাল। এ কথিত ইলা সুলাইমান মুরশিদের সুলাইমান মিদী নামের একজন নবীও ছিল। সে ছিল এক উট ব্যবসায়ী। এই হচ্ছে নুসাইরিয়া মতবাদ। (উল্লেখ্য, সিরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট বাসা আল আসাদ সংখ্যালঘু নুসাইরী সম্প্রদায়ের লোক-অনুবাদক)।

দারুয সম্প্রদায়

দারুয সম্প্রদায় নুসাইরীদের আরও মারাত্মক। হাকেম বিআমরিল্লাহ উপাধিধারী ফাতেমী শাসক আবু আলী মনসূরই এদের প্রধান গুরু। তার জন্ম ৩৭৫ হিঃ সনে। সে ৪১১ হিঃ সনে নিহত হয়। সে খুব নোংরা চিন্তাধারার লোক ছিল। তার প্রধান সহযোগী ছিল হামযা বিন আলী। সে আবু আলী মনসূরের সমবয়সী হলেও তার মৃত্যু ৪৩০ হিঃ সনে। সে ৪০৮ হিঃ সনে হাকেম বিআমরিল্লাহকে ইলাহ বলে ঘোষণা দেয়। সে তাদের নোংরা আকীদা বিষয়ে অনেক বইও লিখেছে মুসলমানদের নিকট হযরত মুহাম্মদ সালাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে রকম সম্মানিত দারুয সম্প্রদায়ের নিকট হামযা বিন আলীও সে রকম সম্মানিত। এই দারুযীরা সকল নবী রাসূলকে অস্বীকার করে এবং তাদেরকে ইবলিস বলে আখ্যায়িত করে (নাউযুবিল্লাহ)। এদের জন্ম মিশরে হলেও বর্তমান তাদের আবাসস্থল সিরিয়ায়। এরা সকল ধর্মাবলম্বীকে বিশেষ করে মুসলমানদের খুব ঘৃণা করে। বর্তমানে এরা সিরিয়া সরকারের বড় বড় পদে অধিষ্টিত। এদের সাথে কম্যুনিস্টদের খুব ভাল সম্পর্ক। এরা ইসলামের জন্য ইয়াহুদীদের মত মারাত্মক ক্ষতিকর।

পরিত্রাণের উপায়

এসব পথভ্রষ্টরা (জাতীয়াতাবাদ, সমাজবাদ, বাহাঈবাদ ও নুসাইরীবাদ ) থেকে পরিত্রাণের উপায় কি? এসব পথভ্রষ্টতা থেকে পরিত্রাণের একমাত্র পথ হচ্ছে , আমাদের দ্বীনকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরা এবং এসব চিন্তাধারা ও মতবাদ যা আমাদের সমাজকে ভেঙে চুরমার করেছে তার বিরুদ্ধে যুব সমাজকে জ্ঞান ও সচেতনতার অস্ত্রে সজ্জিত করা। এসব চিন্তাধারা অল্পদিনে বিস্তার লাভ করলেও আল্লাহর শোকর ইসলামই জাগরণের মুখে তা ভেঙে পরতে শুরু করেছে এবং তার মুখোশ খসে পড়ছে। আমাদের আরো দরকার আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলার কথা- “তোমাদের যে কেউ তাদের (ইয়াহুদী ও খ্রিস্টান) সাথে বন্ধুত্ব রাখবে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত ”-এর প্রতি গভীর দৃষ্টি দেয়া, তার উপর আমল করা। কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব রাখা কুফরী এবং তা মানুষকে ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয়। কোন এক সাহাবী কিংবা তাবেয়ী এ আয়াতের আলোকে বলতেন, ‘তোমাদের কেউ যেন নিজের অজান্তে ইয়াহুদী কিংবা খৃষ্টান না হয়ে যায় ।’ যারা ইয়াহুদী খৃষ্টানদের চিন্তাধারা লালন করে , তাদের সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। তাই আপনারা আপনাদের ছেলে মেয়েদেরকে  বার্থ পার্টি ও সমাজত্রান্ত্রিক পার্টির লোকদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করবেন না। বার্থ পার্টির লোকদের সাথে আত্মীয়তা করা মানে খৃষ্টান কিংবা মূর্তিপূজকদের সাথে আত্মীয়তা করা। বার্থ পার্টি, নুসাইরী ও কম্যুনিস্টদের যবাই করা পশু অগ্নি উপাসকদের যবাই করা পশুর ন্যায় ভক্ষণ করা হারাম। এ ব্যাপারে খুব সতর্ক থাকবেন। এদের সালামের উত্তর দিবেন না। এরা কাফের, ইসলামের শত্রু। এটা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঝাণ্ডা বাদ দিয়ে অন্য ঝাণ্ডা গ্রহণ করেছে। যারা না বুঝে বিষয়টাকে হাল্কা ভাবে গ্রহণ করছে, তাদেরকে বলে দিবেন যে, বিষয়টা কোন ক্ষমতার দ্বন্দ্বগত বিষয় নয়, এটা আকীদাগত ব্যাপারে। ঈমান ও কুফর এবং ইসলাম ও অনৈসলামের বিষয়। যারা এ ভূখণ্ডে পশ্চিমা সংস্কৃতি চালু করতে চায়, তাদের জানা উচিত একে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সৈন্যরা (সাহাবা) জয় করেছেন এবং কুফরের পঙ্কিলতা মুক্ত করেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যুশয্যায় ইয়াহুদী খৃষ্টানকে আরব দ্বীপ থেকে তাড়িয়ে দিতে ওসীয়ত করে গেছেন এবং বলেছেন-
“আরব দ্বীপে দু’টি ধর্ম একত্রিত হতে পারে না। ”
হযরত উমর রদিয়াল্লাহু আনহু এ ওসীয়ত বাস্তবায়ন করেছিলেন। তিনি সর্বশেষ ইয়াহুদীকে খাইবার থেকে বিতাড়িত করেছিলেন। তাই উপসাগর থেকে সাগর এবং উত্তরে ভারত মহাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত এ আরব দ্বীপে ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম প্রত্যাবর্তিত হতে পারে না। এখানে কোন গির্জা নির্মিত হতে পারে না এবং কোন ইয়াহুদী ফ্রীম্যাসনবাদী ক্লাব চলতে পারে না। ইসলামের চিত্র মুছে ফেলার চেষ্টা যতই করা হোক না কেন, এ ভূখণ্ডের সর্বশেষ পরিণতি ইসলামই। মুসলমানদের সন্তানদের দিয়ে ইসলামের বিরুদ্ধে যতই যুদ্ধ পরিচালনা করা হোক না কেন, ইসলাম এ ভূখণ্ডের মানুষের অন্তরে ও মাটির গভীরে তার শিকড় গাড়বেই। কারণ, প্রকৃতিকে স্থায়ীভাবে চেপে রাখা যায় না। এ প্রকৃতি একদিন জেগে উঠবেই। আবার বিজয়ের নিশান উড়বে প্রকৃতির ধর্ম ইসলামের।
যে বাধা অবশ্যম্ভাবী

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা বলেন-
لَوْلَا دَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُم بِبَعْضٍ لَّفَسَدَتِ الْأَرْضُ وَلَٰكِنَّ اللَّهَ ذُو فَضْلٍ عَلَى الْعَالَمِينَ [٢:٢٥١]
“আল্লাহ যদি মানুষের একাংশকে আরেকাংশের দ্বারা প্রতিরোধ না করতেন, তাহলে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যেত, কিন্তু আল্লাহ বিশ্ববাসীর প্রতি দয়াপরায়ণ (ফলে তিনি যুদ্ধের অনুমতি দেন)। ” [সূরা বাকারাঃ২৫১]।

প্রতিরোধ নীতি

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা কর্তৃক পৃথিবীর বুকের সমূহ কল্যাণ প্রতিষ্ঠার চিন্তা চিরন্তন নীতি ও আইন হল পৃথিবীর শান্তি অশান্তি ও স্থিরতা অস্থিরতা সত্য ও মিথ্যার এবং ভালো ও মন্দের পরস্পরের জয় পরাজয় ও দমন প্রতিরোধের উপর।
মিথ্যার উপর সত্য যতটুকু বিজয় লাভ করবে, পৃথিবীতে কল্যাণ ততটুকু প্রাধান্য বিস্তার করবে , মানবতা ততটুকু প্রশান্তি লাভ করবে, পশু পাখি ততটুকু আরাম বোধ করবে। মানুষ প্রতিরোধের এ নীতি থেকে যতটুকু সুরে সরে আসবে, দমনের এ আইনকে যতটুকু অমান্য করবে, তারা ততটুকু ধ্বংস হবে, তাদের অধিকার ততটুকু লঙ্ঘিত হবে।

শক্তির ভিত্তি

শক্তি বলতে এমন একটি বিষয়কে বুঝায়, যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআলা প্রত্যেক বস্তুকে তার নির্দিষ্ট নিয়ম ও নীতি অনুযায়ী দান করেন। এ শক্তি যখন সত্যের সংস্পর্শে আসে এবং প্রতিরোধ ন্যায়কে আঁকড়ে ধরে, তখন কল্যাণ সারা পৃথিবীর মাঝে প্রভুত্ব বিস্তার করে । কিন্তু শক্তি যখন কোন নিয়ম নীতি ও ভয় ভীতি ছাড়া পথ চলতে আরম্ভ করে, তখন মানুষ অসহনীয় ও নারকীয় পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়; সম্মান লুণ্ঠিত হয়,  নিরাপত্তা উধাও হয়, রক্ত প্রবাহিত হয়, নিয়ম ও শৃঙ্খলা উঠে যায় এবং তীর্থ ভূমি অপবিত্র হয় । শক্তি জন্ম লাভ করে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আদেশ পালন, তার দিকে আহবান এবং পৃথিবীতে আল্লাহর নির্দেশকে আইন হিসেবে প্রয়োগ করার মধ্য দিয়ে । আল্লাহ বলেছেন-
يَا يَحْيَىٰ خُذِ الْكِتَابَ بِقُوَّةٍ ۖ وَآتَيْنَاهُ الْحُكْمَ صَبِيًّا [١٩:١٢]
وَسَلَامٌ عَلَيْهِ يَوْمَ وُلِدَ وَيَوْمَ يَمُوتُ وَيَوْمَ يُبْعَثُ حَيًّا [١٩:١٥]
“হে ইয়াহইয়া তুমি কিতাবকে (প্রয়োগের মাধ্যমে) আঁকড়ে ধরো। আমি তাকে বাল্যবস্থায় আমার পক্ষ থেকে বিচার বুদ্ধি, কোমলতা ও পবিত্রতাবোধ দান করেছি। আর সে পরহেজগার ছিল। ” [সূরা মারয়ামঃ১২,১৫ ]।
অতএব কোমলতার সাথে শক্তির মিলনে কোন বাধা নে । কোমলতা আছে ঠিক তবে তার সাথে সাথে শক্তির উপস্থিতিও অপরিহার্য। এ জীবনের উপর দিয়ে চলার সময় শক্তি বিনয়ের সমর্থক হইয়া আবশ্যক, ঈমানী উচ্চ অভিলাষ, তাকওয়া ও পরহেযগারীর বন্ধনী সুদৃঢ় হওয়া অপরিহার্য। রব্বুল আলামীনের ঘোষণা –

وَكَتَبْنَا لَهُ فِي الْأَلْوَاحِ مِن كُلِّ شَيْءٍ مَّوْعِظَةً وَتَفْصِيلًا لِّكُلِّ شَيْءٍ فَخُذْهَا بِقُوَّةٍ وَأْمُرْ قَوْمَكَ يَأْخُذُوا بِأَحْسَنِهَا ۚ سَأُرِيكُمْ دَارَ الْفَاسِقِينَ[٧:١٤٥]
“আমি তার (মুসা আ.) জন্য পটে সর্ব বিষয়ে উপদেশ ও সকল বস্তুর বর্ণনা লিখে দিয়েছি। অতঃপর বললাম, তুমি একে শক্ত ভাবে ধর এবং তোমার লোকদেরকে এ ভাল বিষয়গুলোকে আঁকড়ে ধরার নির্দেশ দাও। শিগগিরই আমি তোমাদেরকে অবাধ্যদের দেশে কর্তৃত্ব দান করব।  ”[সূরা আ’রাফঃ ১৪৫]।
দ্বীনকে ব্যক্তি জীবনে আকড়ে ধরা শত তিরস্কার মুখ বুঝে সহ্য করা, কণ্টকাকীর্ণ পথে চলাচল করা এবং বাধা ও প্রতিকূল প্রতিস্থিতিকেও তুচ্ছ ভেবে অতিক্রম করার মধ্য দিয়েই শক্তি অর্জনের সূচনা হয়। এর মাধ্যমেই রাব্বুল আলামীনের নির্দেশিত ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুস্পষ্ট করে দেয়া গন্তব্যে পৌছা সম্ভব। ইবাদতের মধ্য দিয়ে রাত্রি যাপন ও সর্বাবস্থায় ধৈর্য্য ধারণ এ শক্তির অন্যতম উপাদান। যে সুন্দরীকে বিয়ে করতে চায় তাকে মোহর দিতেই হয়। আর যে উন্নতি কামনা করে তাকে রাত্রি জাগরণ করতেই হয়।
প্রবৃত্তি ও শয়তানের হও বিরোধী ও অবাধ্য।
যদি ও তারা তোমার মঙ্গল কামনা করে তার পরও বল সব মিথ্যা।
রাত্রি জাগরণের মাধ্যমে অন্তর শক্তিশালী হয়। আল্লাহ বলেন-
قُمِ اللَّيْلَ إِلَّا قَلِيلًا [٧٣:٢]
نِّصْفَهُ أَوِ انقُصْ مِنْهُ قَلِيلًا [٧٣:٣]
أَوْ زِدْ عَلَيْهِ وَرَتِّلِ الْقُرْآنَ تَرْتِيلًا [٧٣:٤]
إِنَّا سَنُلْقِي عَلَيْكَ قَوْلًا ثَقِيلًا [٧٣:٥]

“হে বস্ত্রাবৃত ! রাত্রের অর্ধেকাংশ বা তার চেয়ে বেশী জাগ্রত থাকুন এবং স্পষ্ট ও সুন্দর ভাবে কুরআন তেলাওয়াত করুন। শিগগিরই আমি আপনার উপর এক ভারী দায়িত্ব চাপিয়ে দেব। ” [মুযযাম্মিলঃ২-৫]
যার উপর থেকে আল্লাহর পক্ষ থেকে যত ভারী বোঝা ও কঠিন দায়িত্ব চাপিয়ে দেয়া হয়, তার মর্যাদা আল্লাহর কাছে তত বেশি। যখন আল্লাহর কাছে তোমার মর্যাদা কতটুকু তা অনুমান করতে চাও, তখন তুমি তোমার কাজ ও দায়িত্বের দিকে তাকাও। যে লোক পরিস্থিতি ও মানুষের দৃষ্টিকে বিবেচনায় আনে, তার এবং সে আল্লাহর সৈনিকের মধ্যে অনেক অনেক দূরত্ব বিদ্যমান, যাকে আল্লাহ তার কুরআনের ধারক-বাহক বানিয়েছেন এবং তার বিধান প্রয়োগের তাওফিক দিয়েছেন।
যখন তুমি প্রবৃত্তির উপর বিজয় অর্জন করলে এবং তাকে যন্ত্রণা সহ্য, তিক্ততা আস্বাদন ও কণ্টকের উপর দিয়ে চালিয়ে নিতে সক্ষম হলে, তখন মনে করবে তুমি (জান্নাতের) অর্ধেক বা তার চেয়ে বেশী পাড়ি দিতে সক্ষম হয়েছ। এর পরে তুমি বাস্তব জীবনে এসে মানুষের সাথে মিশতে গেলে তোমার ধৈর্য্য ধারণের বিকল্প নেই। কারণ মানুষ সহজে কল্যাণের পথে পরিচালিত হতে চায় না। বিশেষ করে যখন মানুষের রুচির বিকৃতি ঘটে এবং চোখে প্রদাহের সৃষ্টি হয়।

প্রদাহের ফলে চোখ রবিকে জানে আযাব
রোগের কারণে মুখ বলে পানি খারাপ।

যে বাধা অবশ্যম্ভাবী

যখন তুমি তোমার সত্য ও শক্তি নিয়ে ডানে বামে চলতে যাবে, তখন তোমাকে অবশ্যই উপলব্ধি করতে হবে যে, অনেক লোক বিশেষত যারা সমাজ ও রাষ্ট্র ক্ষমতার অধিকারী তারা তোমার সত্যতাকে স্বীকার  করে নিবে না, যতক্ষণ না তুমি ধারাল তরবারি দিয়ে তাদের শৌর্য বীর্য, বাধার পাহাড় ও অহংকারকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দিতে সক্ষম হবে।
তোমাকে অবশ্যই উপলব্ধি করতে হবে যে জাহিলিয়্যাত তোমার সত্যকে কখনো গ্রহণ করবে না এবং জাহিলিয়াত অস্ত্রসজ্জিত, বিভিন্ন সংগঠন দ্বারা সংগঠিত, তার রয়েছে শক্তি, প্রভাব, সৈন্য ও নিরাপত্তা। এসব কিছু সত্যের কণ্ঠরোধ ও তার আলোকে নিভিয়ে দেয়ার জন্য সদাজাগ্রত। সত্যকে বহন করে চলতে হলে তোমার শক্তি থাকা অপরিহার্য। এ শক্তি দিয়ে প্রবৃত্তির বিরোধিতা করে তাকে বশে আনতে হবে। অতঃপর এ শক্তি দিয়ে সত্যকে মানুষের কাছে পৌছাতে হবে। আর যাদের কাছে তুমি সত্যকে পৌঁছাবে, তাদের মাঝে তুমি এমন কিছু শয়তানের সম্মুখীন হবে, যারা তোমার কণ্ঠরোধ করার জন্য উঠে পড়ে লাগবে। তাদের হাতে থাকবে শক্তি ও সম্পদ, যা দ্বারা তারা দুর্বলমনাদের ধোঁকায় ফেলে রাখবে, রোগাক্রান্ত অন্তরওয়ালা ও সুবিধাবাদীদের প্রতারিত করবে।
অতএব, তুমি যে পথে চলছ ও যে যাত্রীদের পরিচালনা করছ, তাতে তোমাকে খুব সতর্ক থাকতে হবে। তোমার শত্রুদের শত্রুতা স্পষ্ট, তাতে কোন অস্পষ্টতা ও কোন দুর্বোধ্যতা নেই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনায় এ দ্বীনের প্রথম যে চারাগুলো উৎপন্ন করেছিলেন এবং পুষ্টিকর খাদ্য (তাকওয়া) দ্বারা সবল করেছিলেন, পরবর্তীকালে সেই তাদেরকে সত্য গ্রহণকারীদের নিকট সত্য পৌছাতে কত ঘাম ঝরাতে হয়েছে, কত রক্ত প্রবাহিত হয়েছে, কত প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়েছে ও কত অন্তরজ্বালা সহ্য করতে হয়েছে, তা কি ভেবে দেখেছ?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জিন্দেগীর দিকে তাকাও। যখনই তিনি কোন বিজয় সম্পন্ন করেছেন, তখনই ভিতরের সুবিধাবাদী চক্রের পক্ষ থেকে তিনি ষড়যন্ত্রের সম্মুখীন হয়েছে ,  যাদের কাজ ছিল গুজব ছড়ানো, আকাশ ধোয়াচ্ছন্ন করা যাতে সত্য ও আলো প্রকাশ পেতে না পারে। বদর প্রাঙ্গণে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিজয়ের প্রথম ধাপ অতিক্রম করার পর বনুকাইনুকার ইয়াহুদীদের কাছে গিয়ে ইসলামের দাওয়াত পেশ করলেন। অতঃপর তাদেরকে কুরাইশদের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। তখন বনুকাইনুকার লোকেরা বলল,  আমাদেরকে কুরাইশদের মত যুদ্ধানভিজ্ঞ মনে করবেন না। আমাদের সাথে লাগলে বুঝতে পারবেন আমরা কেমন ?
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বনুকাইনুকার লোকদেরকে দেশান্তর করলেন। এতে বাধা দিতে আসে একমাত্র সে মুনাফিক নেতা আব্দুল্লাহ বিন উবাই, যে প্রতি জুমুআয় প্রথম কাতারে অবস্থা করত। যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সামনে তার গোত্রের লোকেদের বলত, ‘হে খাজরাজের লোকেরা! তোমাদের মাঝে রাসূল্ললাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবস্থান করছেন। তাকে সাহায্য সহযোগিতা কর।’ বর্তমানেও মুনাফিকরা দুর্বল আলেমদের টেলিভিশন ও রেডিওতে কিছু বলার সুযোগ দিয়ে তাদের মুনাফেকী চরিতার্থ করছে-।
তো সে (আব্দুল্লাহ বিন উবাই ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে এসে নিজের জামার পকেটে হাত দিয়ে দাড়িয়ে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারে আবেদন জানাল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আমাকে ছাড়। কিন্তু সে ছাড়ল না। তৃতীয় বার বলার পরও জামা না ছাড়ায় রাগে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেহারা বিবর্ণ হয়ে গেল। কারণ ,  রাগ আসলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর চেহারা বিবর্ণ হয়ে যেত এবং খুশি হলে চেহারা চাঁদের মত উজ্জ্বল দেখাত। তিনি তাকে আবার বললেন, তোমার অকল্যাণ হোক তুমি আমাকে ছাড়। সে বলল, না। যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি আমার বন্ধুদের প্রতি অনুগ্রহ না করবেন ততক্ষণ ক্ষান্ত হব না। তারা দলে বৃহৎ এবং এ পর্যন্ত তারা আমার পক্ষে করছে। আজ একদিনে এ দলটি ধ্বংস হয়ে যাবে শুনে আমি ভবিষ্যতের ব্যাপারে ভীষণ শঙ্কিত। পরিশেষে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যাও সব কিছু তোমার জন্য হল।
এ মুনাফিক উহুদের দিন সেনাদের এক তৃতীয়াংশ নিয়ে পথের মাঝখান থেকে ফিরে এসেছিল। মুরাইসী অভিযানে মক্কার এক মুসলমানের সাথে খাযরাজ গোত্রের এক মুসলমানের ঝগড়া হলে সে খাযরাজের লোকদের বলল, ওহে খাযরাজের লোকেরা কুরাইশরা তো আমাদের পালিত কুকুর, এখন গায়ে শক্তি বেশি হওয়ায় মনিবকে খেতে ইচ্ছে করছে। অতঃপর সে বলল –
‘আল্লাহর কসম যদি আমরা মদিনায় ফিরে যেতে পারি, তাহলে অবশ্যই তার
উৎকৃষ্ট অধিবাসীরা দুর্বলদের (মুহাজির) বহিষ্কার করবে। ‘
এ অভিযানে হযরত আয়েশা রদিয়াল্লাহু আনহা-এর গলার হার হারিয়ে যাওয়ায় তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে পিছনে থেকে যান। পরে সর্বশেষ যাওয়া একজন সাহাবী একাকী দেখতে পেয়ে তাকে সাথে করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে নিয়ে আসেন। এ খবর মুনাফিক নেতা আবদুল্লাহ বিন উবাই জানতে পেরে অপবাদ রটিয়ে দিল যে ঐ সাহাবী আম্মাজান হযরত আয়শা রাদিয়াল্লাহু আনহা-এর সাথে তার সম্মতিতে খারাপ কাজে লিপ্ত হয়েছে।  মদিনায় ফিরে এসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেলেন। বিষয়টা নিয়ে মদিনায় শোর পড়ে গেল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ধৈর্য্য ধারণ করেন। অতঃপর হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লহু আনহা-এর পবিত্রতা ও মুনাফিকদের মুখোশ উন্মোচন করে কুরআনের আয়াত নাযিল হল।
খন্দক যুদ্ধে এ মুনাফিকরা বলেছিল-
إِنَّ بُيُوتَنَا عَوْرَةٌ وَمَا هِيَ بِعَوْرَةٍ ۖ إِن يُرِيدُونَ إِلَّا فِرَارًا [٣٣:١٣]
“নিশ্চয় আমাদের ঘরে কেউ নেই। অথচ তাদের ঘর খালি নয়।  এ বলে কেবল তারা যুদ্ধ থেকে পালাতে চাইছে।” [সূরা আহযাবঃ১৩]।
মুসলমানের বিপদের সময় এ মুনাফিকরা বলত, মুহাম্মদ আমাদেরকে কাইসার ও কিসরার প্রাসাদ বিজয়ের কথা বলে। অথচ আমাদের কেউ নিজেদের প্রয়োজনটুকু সারতে পারে না।
তাই ইসলামী আন্দোলনের কর্মীদের বাইরের শত্রুদের ব্যাপারে সতর্ক থাকার সাথে সাথে ভিতরের শত্রুদের ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে। ভিতরের শত্রুরা বেশ ভূষা ও নামায কালামে তোমার মতই। এরা তোমার দলেরই লোক। এদের মুখোশ যখনই ত্যাগের প্রশ্ন আসে, তখনই খসে পড়ে।
ইসলামী আন্দোলনকে যারা জান মালের অবিরাম কুরবানি দ্বারা এগিয়ে নেন, তারা ভোগ করেন কম। মুনাফিক এবং দুর্বল ঈমানদাররাই আন্দোলনের ফল ভোগ করে থাকে বেশী। মক্কায় মুসলমানের বিজয় লাভ এবং হুনাইনের যুদ্ধে গণিমত প্রাপ্তি শেষে নওমুসলিম হযরত আবু সুফয়ান রদিয়াল্লাহ আনহু -যিনি পরে ভাল মুসলমান হয়ে গিয়েছিলেন- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর কাছে এসে বললেন , ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ আমাকে গণিমত দিন। ‘
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে একশটি উট ও চল্লিশটি উকিয়া দেয়ার নির্দেশ দেন। বললেন, আমার ছেলে ইয়াযিদ রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্যেও একশটি উট ও চল্লিশটি উকিয়ার নির্দেশ দেন। বললেন, আমার ছেলে মুআবিয়া রয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্যও একশটি উট ও চল্লিশটি উকিয়ার নির্দেশ দেন।
অতঃপর আকরা’ বিন হাবিশসহ বিভিন্ন গোত্রের নওমুসলিম সর্দারগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম- এর কাছে এসে একশটি করে উট নিয়ে গেলেন। অতঃপর আসলেন নওমুসলিম সফওয়ান বিন উমাইয়া, যিনি কিছু দিন আগেও রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হত্যা করার জন্য একজন লোক পাঠিয়েছিল। হুনাইনের যুদ্ধে যাওয়ার সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার কাছে কিছু বর্ম চাইলে তিনি বলেছিলেন, কি জোর করে নিয়ে যেতে চান ? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না ধার হিসেবে। হুনাইনের যুদ্ধে বিপুল গণিমত লাভের পর যখন এ সফওয়ান বিন উমাইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে গণিমত চাইলেন, তখন তিনি তাকে দু’পাহাড়ের মাঝখানে যতগুলো ছাগল ছিল সব দিয়ে দিলেন। এ গণীমত পেয়ে সফওয়ান বললেন, কোন নবী ছাড়া এতগুলো সম্পদ আমাকে দিতে কারো মন রাজী হওয়ার কথা নয়।
পরে এ সফওয়ান আন্তরিক ভাবে ইসলাম পালন করতে শুরু করলেন। নওমুসলিম হাকিম বিন হিযাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর দেয়া একশটি উট পেয়ে বললেন-
আমি কি তার অবাধ্য হতে পারি যে আমাকে বাচাল প্রাণে
এবং দিল আমাকে একশটি উট আমার আবেদন শুনে।
অন্যদিকে যারা ইতিহাস সৃষ্টি করেছেন , বিভিন্ন প্রকার কষ্ট সহ্য করেছেন এবং দীর্ঘদিন ধরে জান মাল কুরবান করে লড়াই করে আসছেন , তারা কিছুই নিলেন না। তারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিয়েই ফিরে গেলেন।

বিরামহীন অপপ্রচার

বর্তমান আফগান জিহাদ আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় ষড়যন্ত্রের শিকার। এ অপপ্রচারে অনেক আফগান যুবক জিহাদ নিয়ে বিভ্রান্তিতে ভুগছে এবং দুঃখজনক ভাবে এ বিভ্রান্তি তারা বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে। তারা বিভ্রান্তি ছড়াতে সময় পায়, কিন্তু এখানে এসে বাস্তব অবস্থা দেখে যেতে পারে না।  এরা গোটা পৃথিবীকে হাতের তালুতে এবং আকাশকে সুচের ছিদ্র দিয়ে দেখতে চায় ? পৃথিবীতে কি বলছে , কিভাবে সমাজ বিপ্লব চলছে এবং পৃথিবীর অবস্থার কিভাবে পরিবর্তন ঘটছে সে খবর তারা রাখে না। ইসলামের শত্রুরা ও জিহাদের গুরুত্ব ও প্রভাব যতটুকু টের পাচ্ছে , তার সামান্য পরিমাণও এরা টের পাচ্ছে না। ব্রিটিশ প্রচার কেন্দ্র (ই.ই.ঈ) বিশ্ব পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে বলেছে, ‘ব্রিটেন আফগানিস্তানে প্রবেশ করে আফগানদের উপর জোর করে ক্ষমতা ব্যবহার করতে গিয়ে ভুল করেছে। ফলে তাকে সব কিছু হারিয়ে আফগানিস্তান থেকে পরাজিত হয়ে বের হয়ে আসতে হয়েছে। এখন মুজাহিদরা আফগানিস্তানে রুশ সৈন্যদের তাড়া করে ফিরছে। রুশরা ব্রিটেনের পরাজয় থেকে শিক্ষা নেয়নি। ফলে তারা আফগানদের উপর তাদের অপছন্দনীয় শাসক চাপিয়ে দেয়ার ব্যর্থ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং পশ্চিমা দেশগুলোও আফগানদের কামনা বিরোধী সরকার তাদের উপর চাপিয়ে দিয়ে তৃতীয় বার ভুল করতে যাচ্ছে। ‘
এ কাফিররা তাদের অভিজ্ঞতা অর্জন ও ভুলের খেসারত দিয়ে সত্য কথা বলতে বাধ্য হচ্ছে। ধরা পড়লে মিথ্যুকরাও সত্য কথা বলে। হাদীসে আছে –
“সে (শয়তান) তোমাকে সত্য কথা বলেছে, অথচ সে বড় মিথ্যুক। ” [বুখারী শরিফে বর্ণিত এক সাহাবীর হাতে শয়তান ধরা পরা বিষয়ক হাদীসের অংশবিশেষ]।
যে সব মুসলমান এ জিহাদের বিরুদ্ধে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে তারা যদি কাবুলে এসে কোন পরিবারের কাছে কম্যুনিস্টদের পাশবিকতার খবর শোনত। তারাকী ও হাফিযুল্লাহ আমীনের আমলে কাবুলে কেউ প্রকাশ্যে নামায পর্যন্ত পড়তে পারেনি। ইসলামী আন্দোলন তো দূরের কথা, যারা শুধু নামায পরার অপরাঁধ করত, তাদেরকেও হত্যা করত। ফাঁসি দিয়ে মারা এবং লাশ দাফনের সময় তাদের হাতে ছিল না। তাই তারা নামাযী মুসলমানদের রশি দিয়ে বেধে শোয়াত, অতঃপর বুলডোজার এসে তাদেরকে মাটির সাথে মিশিয়ে দিত। এভাবে একশজন থেকে দুশজনকে পর্যন্ত মৃত্যু দণ্ড দেয়া হত। পলায়নকারী এক গোয়েন্দা কর্মকর্তার মতে তারাকীর আমল থেকে এ পর্যন্ত (১৯৭৯-১৯৮৯) শুধু কাবুলের পিলচারখী কারাগারের এক লাখ ছিয়াশি হাজার বন্দীকে হত্যা করা হয়েছে।

জিহাদের প্রভাব

বরকতময় জিহাদের দশ বছরের মাথায় এখন কাবুলের কি অবস্থা ? যারা কুফর আর শিরকের ধ্বজা নিয়ে ঘুরত এবং ইসলাম ও আল্লাহর রাসূলের শাহে প্রকাশ্য শত্রুতা করত, তারা এখন কোথায় ? নজীব সরকারের মন্ত্রীরা এখন ঘরে ঘরে খতমে কুরআনের আয়োজন করছে। নজীব সরকারের সাম্প্রতিক একটি ফরমান হচ্ছে, যে লাগাতার তিনদিন জামায়াতে নামায ছেড়ে দিবে, তাকে চাকরীচ্যুত করা হবে। নজীব এখন লম্বা দাড়িওয়ালা কিছু মুনাফিককে আযান দিলে মানুষকে মসজিদে নিয়ে যাওয়ার জন্য নিয়োগ করেছে। মুয়াযযিন আযান দিলে তারা লাঠি নিয়ে বের হয়ে মানুষকে মসজিদে যেতে বাধ্য করে। কাবুলের যুবতীরা এখন জিহাদের গান গায়। তারা এখন মুজাহিদদেরকে তারকা মনে করে এবং তাদেরই সান্নিধ্য পেতে চায়। তারা এখন দেশ ও সম্মান বিক্রয়কারী নীতি-বিবেকহীন কম্যুনিস্টদের ঘৃণা করে । এ হচ্ছে কাবুলের অবস্থা। গ্রামের মহিলারাতো আরো ধার্মিক ও আত্মমর্যাদাবোধসম্পন্ন। প্রেসিডেন্ট নজীব বলছে, তাকে নজীব না বলে নজীবুল্লাহ নামেই অভিহিত করতে। সে কমান্ডার জালালুদ্দীন হক্কানির কাছে চিঠি পাঠিয়েছে। চিঠিটি আমি নিজেই পড়েছি। এতে সে লিখেছে , ‘শেখ জালাল আমি আপনার সাথে যে কোন জায়গায় সাক্ষাত করতে চাই যাতে আপনি জানতে পারবেন যে আমি একজন মুসলমান। কম্যুনিস্ট পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটিতে আমি এবং সীমান্ত মন্ত্রী সুলাইমান লায়েক ছাড়া আর কোন মুসলমান নেই। আমি আপনার সাথে দেখা করতে চাই। এ কম্যুনিস্টদেরকে আমি আমার ইচ্ছার কথা জানাতে পারছি না। ‘
শায়খ জালাল উদ্দীন হক্কানী বলেছেন-
لِمَ تَقُولُونَ مَا لَا تَفْعَلُونَ [٦١:٢]
كَبُرَ مَقْتًا عِندَ اللَّهِ أَن تَقُولُوا مَا لَا تَفْعَلُونَ [٦١:٣]
“তোমরা যা করবে না তা বল কেন। তোমরা যা করবে না তা বলে বেড়ানো আল্লাহর কাছে খুবই অসন্তুষ্টিজনক।  ”[আছছাফঃ ২, ৩]।
‘তোমার পরিণতি তোমার পূর্বসূরিদের মতই হবে। তুমি তোমার লোকদের হাতে হয়তো নিহত হবে অথবা কারাগারে নিক্ষিপ্ত হবে। তারাকীকে মুজাহিদরা হত্যা করেনি। তাকে হত্যা করেছে কম্যুনিস্টরাই। অনুরূপ হাফিযুল্লাহ আমিনীকেও। বারবাক কারমালকে বন্দী করেছিল কম্যুনিস্টরাই। তোমার পরিণতিও দু’টার একটা হবে। হয়তো দাউদ, তারাকী ও হাফিযুল্লাহর মত নিহত হবে অথবা তোমার পূর্বসূরি বারবাক কারমালের মত বন্দী হবে। ‘
মুজাহিদ কমান্ডারদের কাছে প্রায় প্রতিদিন রুশ এবং কম্যুনিস্ট কমান্ডারদের চিঠি আসছে। চিঠিতে তারা বলছে , ‘আমরা কিছুদিন বা এক কিংবা দু মাসের মধ্যে চলে যাব। আমাদেরকে মারবে না এবং আমরাও তোমাদেরকে মারব না। এ কম্যুনিস্টরা আপনাদেরই দেশের লোক। তাদেরকে চাইলে হত্যা করুন। আর যদি তাদের কাউকে ধরতে চান, তাহলে বলুন আমরা তাকে হাত পা বেধে আপনাদেরকে কাছে পাঠাব।’ উত্তরে আফগানিস্তানে একটি ঘটনা দেখেতো মানুষ হতবাক হয়েছে। দেখা গেল কিছু মুজাহিদ আর.পি.জি. ক্ষেপণাস্ত্র কাঁধে দাড়িয়ে আছে। রুশদের দুটি ট্যাংক আসছে। ট্যাংক থেকে মুজাহিদদের উপর গুলি ছুড়া হল না। মুজাহিদরাও কোন গুলি ছুড়ল না। মানুষ তাদের জিজ্ঞেস করল, আপনারা ট্যাংক দেখে চুপচাপ দাড়িয়ে আছেন কেন ? তারা বলল, আমরা এ অঞ্চলের এক কম্যুনিস্ট নেতাকে গ্রহণ করার জন্য অপেক্ষা করছি। রুশ সৈনিকরা তাকে আমাদের কাছে সত্তর হাজার রুপির বিনিময়ে বিক্রি করে দিয়েছে। রুপির বিনিময়ে কম্যুনিস্ট নেতাদের এভাবেই বিক্রি করে দেয়া হচ্ছে মুজাহিদদের কাছে। বর্তমানে কম্যুনিস্টদের কাছ থেকে মুজাহিদদের নিকট প্রতিদিন চিঠি আসছে। চিঠিতে তারা বলছে ,’আমরা কম্যুনিস্টদের সাথে চাই না ; আমরা আপনাদের কাছে চলে আসতে চাই। আমাদের জন্য  আপনাদের কাছে পৌছার পথ করে দিন। ‘
কিন্তু কিছু মুসলমানরা এসবের খবর রাখে না। পূর্ব ও পশ্চিমের নেতারা আফগানিস্তানে ইসলামী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাচ্ছে বলে যে আশংকা প্রকাশ করছে, তা তাদের কানে পৌছাচ্ছে না। বিবিসি ঐ সব নেতাদের এ কথাও প্রচার করছে যে, ‘মুজাহিদদের সরকার কারো কাছে গ্রহণ যোগ্য নয়। জনগণ ও মুজাহিদ কারো কাছে নয়। কারণ, তারা (মুজাহিদ সরকার) ওহাবী এবং মৌলবাদী। ‘ বিবিসির ভাষ্য মতে তারা ইখওয়ানুল মুসলিমীনের লোক। গোটা বিশ্ব ইসলামী সরকারকে ভয় করছে। কারণ, এ সরকার কুরআন সুন্নাহর আলোকেই তাদের কর্ম নির্ধারণ করবে। কুরআন সুন্নাহর  আলোকে পরিচালিত সরকারকে সহ্য করা বিশ্বের কোন শক্তির পক্ষেই সম্ভব নয়। এ ধরনের সরকার থেকে তারা নিরাপদ হয়েছে প্রায় সত্তর বছর আগে। এ ধরনের সরকারের (অর্থাৎ, উসমানী খেলাফত) ভয়ে তাদের নিদ্রা হত না। শেষ পর্যন্ত তারা ধূসর বাঘের (কামাল আতাতুর্ক) মাধ্যমে ইস্তাম্বুলের জমিনে তার পতন ঘটিয়ে স্বস্তি পেল। এরপরে কি তাদের পক্ষে কোন ইসলামী সরকারকে মেনে নেয়া সম্ভব ?
মুজাহিদদের সরকার গঠনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে দু’ মাস হল। রাজীব গান্ধী এ অঞ্চলে ইসলামী সরকারের ব্যাপারে আশঙ্কা  প্রকাশ করেছে। বলেছে , এতে গোটা অঞ্চল হুমকির মুখে পড়বে। হ্যাঁ ! হিন্দুরাও মুসলমানদের ক্ষমতায় যাওয়ার ভয় করছে। কারণ , তাদের সোমনাথ মূর্তি ধ্বংসকারী বীর সুলতান মাহমুদ গজনবীর কথা মনে পড়ছে। এ মূর্তি না ভাঙ্গার জন্য তারা তাকে অনেক প্রলোভন দেখিয়েছিল। কিন্তু তিনি তাদের  প্রলোভনে কান দিলেন না। এ হিন্দুরা নিকট অতীতে সৈন্য নিয়ে দিল্লি প্রবেশকারী আহমদ শাহ আব্দালীর কথাও স্মরণ করছে। আহমদ শাহ আব্দালীর রাজ্য উত্তর বুখারা, দক্ষিণে আরব সাগর, পূর্বে দিল্লী ও কাশ্মীর এবং পশ্চিমে নিশাপুর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। তিনি আফগান মুসলমানদের নিয়ে দিল্লিতে সাত বার অভিযান চালিয়েছিলেন। তার হাতে দিল্লির উপকণ্ঠে কত হিন্দু নিহত হয়েছে এবং পেশোয়ারে কত শিখ নিহত হয়েছে তাও তাদের জানা আছে। পেশোয়ার ছিল আহমদ শাহ আব্দালীর শীতকালীন রাজধানী ও কাবুল ছিল গ্রীষ্মকালীন রাজধানী।
তাই হিন্দুরা আফগান মুসলমানদের হাতে ক্ষমতা যাওয়ার ভয় করছে। রাশিয়াসহ সমগ্র পাশ্চাত্য আফগান জিহাদের আগুণ দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার মুসলিম অঞ্চল সমূহে ছড়িয়ে পড়ার ভয় করছে। পাকিস্তানের জাতীয়তাবাদীরাও মুজাহিদদের হাতে ক্ষমতা যাওয়ার ভয় করছে। দূরদৃষ্টি সম্পন্ন পাশ্চাত্য সমাজ বিজ্ঞানীরা বলছে, ‘আফগান জিহাদ এমন একটি অগ্নিস্ফুলিঙ্গ যেটা কোথাও থামবে না। শিগগিরই এ অগ্নিস্ফুলিঙ্গ ইউরোপে প্রবেশ করবে এবং এয়ে পৃথিবীর ইতিহাসই পালটে যাবে।’
নিরস্ত্র ও দুর্বল আফগানরা অস্ত্র হাতে নিয়ে যে সম্মান ও প্রভাব অর্জন করেছে তা দেখে কি কেউ শিক্ষা নিবে ? মুসলমানদের অস্ত্রধারণকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাফিরদের ত্রাস বলে উল্লেখ করেছেন। যেদিন অস্ত্র মুসলমাদের হাত থেকে পড়ে গেছে, সেদিন তাদের প্রভাবও শেষ হয়ে গেছে ।

শক্তি নিয়েই লঙ্ঘিতে হবে পথ

জাতি গঠিত হয় বীর দ্বারা। সম্মান ও প্রভাবের খুঁটি হচ্ছে এ বীরগণ। সত্যকে মানুষ তখনই দেখতে পায় যখন মিথ্যার সাথে সত্যের যুদ্ধ বাঁধে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিকমাত ও সদোপদেশ দ্বারা মক্কার লোকদেরকে ইসলামে প্রবেশ করানোর কত চেষ্টা করেছেন ? মক্কাতে তিনি দীর্ঘ তের বছর অবর্ণনীয় কষ্ট স্বীকার করে যে দাওয়াতের কাজ আঞ্জাম দিয়েছেন, তাতে কতজন লোক মুসলমান হয়েছে ? একশর সামান্য বেশি মাত্র। কিন্তু যেদিন তিনি অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করে মক্কার কাফিরদের দম্ভ চূর্ণ করে দিলেন, সেদিন থেকে মানুষ দলে দলে ইসলামে প্রবেশ করতে শুরু করে। মক্কা বিজয়ের দিন মুসলমানদের সংখ্যা ছিল দশ হাজার। কিন্তু তাবুক যুদ্ধের সময় এ সংখ্যা এসে দাঁড়ায় ত্রিশ হাজারে। বিশাল এ পার্থক্য মাত্র এক বছরেরও সময়ে। মক্কা বিজয় হয়েছিল নবম হিজরীর জমাদিউসসানীতে এবং তাবুক অভিযান হয়েছিল ঐ বছরের  রমাদানে । অর্থাৎ, মাত্র কয়েক মাসের ব্যাবধানে ইসলামের বাহিনী তিনগুণ বৃদ্ধি পায় ।
সপ্তম হিজরীতে হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় মুসলমানদের সংখ্যা ছিল মাত্র চৌদ্দশত। এ সন্ধির ফলে মানুষ বুঝতে পারল মক্কার নেতারা ইসলামের শক্তি স্বীকার করে নিয়েছে, তখন মানুষ ইসলামের গুরুত্ব বুঝতে শুরু করল। অতঃপর মক্কা বিজয়ের সময় তথা দু’বছরের কম সময়ের ব্যাবধানে মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দশ হাজারে উপনীত হয় ।
তাই আমি বলি, শক্তিই মানুষকে আল্লাহত দ্বীনে দলে দলে প্রবেশ করতে উদ্ধুদ্ধ করে। আগে ঈমান ও তাকওয়ার মাধ্যমে আমাদেরকে শক্তি অর্জন করতে হবে। অতঃপর যখন আমাদের এ শক্তির আলোতে বাতিলের অন্ধকার দূরীভূত হয়ে শুরু করবে, তখন আল্লাহর দ্বীনের জন্য মানুষের দৃষ্টি খুলে যাবে এবং তারা এসে তাতে দলে দলে প্রবেশ করবে। তাই হযরত  উমর রদিয়াল্লাহু আনহু যখন সাহাবীদের জিজ্ঞাসা করলেন আপনারা আল্লাহর কথা –

إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ [١١٠:١]
وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فِي دِينِ اللَّهِ أَفْوَاجًا [١١٠:٢]
“যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় এসে গেল, তখন আপনি মানুষকে আল্লাহর দ্বীনে দলে দলে প্রবেশ করতে দেখছেন ” থেকে কি বুঝলেন ? তখন হযরত আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস রদিয়াল্লাহু আনহু বললেন, ‘আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর ইন্তেকালের ঘোষণা বুঝেছি। কারণ, ইসলামের শক্তি কুফরের প্রভাবের উপর বিজয় লাভ করেছে। ফলে মানুষ আল্লাহর দ্বীনে দলে দলে প্রবেশ করেছে। আর এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -এর দায়িত্ব পালনও শেষ হল। অতঃপর তিনি প্রভুর কাছে চলে গেলেন। ‘

নতুন ইতিহাসের আভাষ

আফগানিস্তানের অভিজ্ঞতা থেকে এখন বিভিন্ন লোক শিক্ষা গ্রহণ করতে শুরু করেছে। গাদ্দাফীর কারাগার ধ্বংসের ঘোষণা আফগানিস্তান পরিস্থিতির প্রতিধ্বনির ভয় থেকেই এসেছে। মানুষের পক্ষে দীর্ঘ দিন জুলুম অত্যাচার সহ্য করা সম্ভব হয় না। অত্যাচারের এক পর্যায়ে তারা আগ্নেয়গিরির মত বিস্ফোরিত হয়। তাই গাদ্দাফী এ সত্য বুঝতে পেরে মানুষের উপর যুলুম কমাতে লাগল। সিরিয়া ও দক্ষিণ ইয়েমেনেও এ ধরণের পরিবর্তন শিগগিরই দেখা যাবে। হিন্দুকুশের এ প্রতিরোধ যুদ্ধ শিক্ষাগ্রহণকারীরদের জন্য মাথা তুলে দাড়িয়ে রয়েছে। যে বিপদে পড়ে শিক্ষা গ্রহণ করেছে সে হতভাগা। যে আরেকজনের বিপদ দেখে শিক্ষা গ্রহণ করেছে সে সৌভাগ্যবান। যে সব মুসলমানরা এখনো সমাজের পরিবর্তন উপলব্ধি করেছে না, তাদের চোখ আল্লাহ খুলে দিন এটাই কামনা করি।
আমাদের ধারনা আফগানিস্তানই হবে ইতিহাস পরিবর্তনের সূচনা ভূমি। হিন্দুকুশের পর্বতমালা থেকে ইসলামের যে আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে তাই পৃথিবীর নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করবে। কিন্তু কিছু লোক এখনো তার নেতৃত্বের প্রতি সন্ধিহান। আমাকে এক যুবক বলল, ‘আপনি কি মনে করেন এসব লোকদের হাতে আফগানিস্তানে একটি কার্যকর ইসলামী সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে ?’ অর্থাৎ সে বলতে চাচ্ছে দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞ এ লোকেরা কিভাবে ইসলামী সরকার পরিচালনা করবে ? আমি তাকে বললাম, হাফিজ আলাআসাদ, গাদ্দাফী, নুসাইরী, হুসনী মোবারক ও সাদ্দাম হোসেনের মত নিম্ন মেধার* লোকেরা যদি দশ-বিশ বছর ধরে একটি রাষ্ট্র চালাতে পারে ; ইরানের মোকাবিলা করতে পারে, তাহলে এসব আফগান যারা ইসলামী পরিবেশে লালিত পালিত হয়েছে এবং দশ বছর ধরে রণাঙ্গনে নেতৃত্ব দিচ্ছে ; সৈন্যদের পরিচালনা করছে তারা কি একটি রাষ্ট্র পরিচালনা করতে পারবে না ? এদের অভিজ্ঞতার সামনেতো ওই পুতুলদের** কোন অভিজ্ঞতাই নেই। নিম্ন মেধার অধিকারী মানেতো অর্ধপাগল কিংবা পূর্ণপাগল। ওরা দেশ চালাতে পারলে এসব পোড় খাওয়া নেতারা কেন পারবে না ? বিষয়টা একেবারে সহজ। এরা ক্ষমতায় গিয়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহণের দু’বছরে মাথায় আকীদার ক্ষেত্রে মক্কা, মদিনা ও রিয়াদের বিদ্ধানদের চেয়ে অধিক জ্ঞান ও যোগ্যতা অর্জন করতে পারবে। কারণ, টিভি, রেডিও ও পত্রিকা থেকে শুরু করে সবকিছুর দায়িত্ব তাদেরই হাতে থাকবে। তাদের আহবানে বিভিন্ন পেশার অভিজ্ঞ লোকজন সাড়া দিয়ে তাদের সহায়তায় এগিয়ে আসবে।