হে আল্লাহ! ঈমানকে আমাদের কাছে প্রিয় বানিয়ে দিন…
মাওলানা সালেহ মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ
মাওলানা সালেহ মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহঃ আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন, ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা সাইয়িদিল আম্বিয়া-ই ওয়াল-মুরসালীন, ওয়া আলা আলিহী, ওয়া আসহাবিহী আজমাঈন। আম্মা বা’দ-
আমরা সকলেই প্রথমে দুরূদ শরীফ পড়ে নিই।
اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ
আলহামদুলিল্লাহ বেশ কিছুদিন পর আবার আমরা আরেকটি তাযকিয়া মজলিসে হাজির হতে পেরেছি, এ জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার শুকরিয়া আদায় করি আলহামদুলিল্লাহ।
একটি দোয়া
আজকে আমরা হাদীসে বর্ণিত খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি দোয়া নিয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। মুসনাদে আহমাদ ও মুসতাদরাকে হাকেম গ্রন্থে দোয়াটি এসেছে। দোয়াটি হল,
اللّٰهُمَّ حَبِّبْ إِلَيْنَا الْإِيمَانَ وَزَيِّنْهُ فِيْ قُلُوْبِنَا، وَكَرِّهْ إِلَيْنَا الْكُفْرَ، وَالْفُسُوْقَ، وَالْعِصْيَانَ، وَاجْعَلْنَا مِنَ الرَّاشِدِيْنَ
হে আল্লাহ! ঈমানকে আমাদের কাছে প্রিয় বানিয়ে দিন এবং তা আমাদের অন্তরে সুশোভিত করে দিন। কুফর, পাপাচার ও নাফরমানিকে আমাদের কাছে ঘৃণিত বানিয়ে দিন এবং আমাদেরকে হেদায়েতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করুন। (মুসনাদে আহমাদ : ১৫৪৯২; মুসতাদরাকে হাকেম : ১৮৬৮)
হাদীসে বর্ণিত দোয়াগুলো দুই ধরণের
বিভিন্ন হাদীসে যেসব দোয়া এসেছে ওগুলো দুই ধরণের,
এক। কিছু দোয়া আছে এমন যেগুলো নির্ধারিত কোন সময়ের সাথে বাঁধা নয়। যে কোনো সময়ই পড়া যায়।
দুই। কিছু দোয়া আছে এমন যেগুলো পড়ার জন্য সময় নির্ধারণ করে দেয়া আছে। যেমন, সকাল সন্ধ্যার দোয়া, ফরয নামায পরবর্তী দোয়া, ঘুমানোর দোয়া, ঘুম থেকে জাগ্রত হওয়ার দোয়া, সফরের দোয়া ইত্যাদি।
উপরের দোয়াটি প্রথম প্রকারের দোয়ার অন্তর্ভূক্ত। ২য় প্রকারের কিছু দোয়া নিয়ে আরেকদিন আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।
প্রথম প্রকারের যত দোয়া হাদীসের কিতাবে এসেছে তার মধ্যে উল্লেখিত দোয়াটি খুবই প্রসিদ্ধ একটি দোয়া।
এ দোয়ার উৎস হল সূরা হুজুরাতের একটি আয়াত। যে আয়াতে আল্লাহ তাআলা সাহাবায়ে কেরাম রাযি.কে সম্বোধন করে বলেছেন,
وَاعْلَمُوا أَنَّ فِيكُمْ رَسُولَ اللَّهِ لَوْ يُطِيعُكُمْ فِي كَثِيرٍ مِّنَ الْأَمْرِ لَعَنِتُّمْ وَلَكِنَّ اللَّهَ حَبَّبَ إِلَيْكُمُ الْإِيمَانَ وَزَيَّنَهُ فِي قُلُوبِكُمْ وَكَرَّهَ إِلَيْكُمُ الْكُفْرَ وَالْفُسُوقَ وَالْعِصْيَانَ أُوْلَئِكَ هُمُ الرَّاشِدُونَ
তোমরা জেনে রাখো, তোমাদের মধ্যে রয়েছেন আল্লাহর রসূল। তিনি যদি অনেক বিষয়ে তোমাদের আবদার মেনে নেন, তবে তোমরাই কষ্ট পাবে। কিন্তু আল্লাহ তোমাদের অন্তরে ঈমানকে প্রিয় বানিয়ে দিয়েছেন এবং তা তোমাদের অন্তরে সুশোভিত করে দিয়েছেন। কুফর, পাপাচার ও নাফরমানিকে তোমাদের কাছে ঘৃণিত বানিয়ে দিয়েছেন। (আর যারা এমন) তারাই হল হেদায়েতপ্রাপ্ত। (সুরা হুজুরাত ৪৯:৭)
এবার এই আয়াতের সামান্য একটু ব্যাখ্যা পেশ করি। একজন সত্যিকারের মুমিনের কাছে সবচেয়ে প্রিয় জিনিস কী ভাই?
সবচেয়ে প্রিয় জিনিস হচ্ছে, ঈমান। ঈমান নিয়ে ফিকির করা, ঈমানকে তাজা রাখা, ঈমানের দাওয়াত দেয়া, ঈমানকে কিভাবে হেফাজত করা যায়, ঈমানের দাবীগুলো কিভাবে পূরণ করা যায়, এই ফিকিরে থাকাটাই তার কাছে সবচেয়ে আনন্দের বিষয়। আল্লাহ তা’আলা সাহাবায়ে কেরামের এই অবস্থাটার কথাই আয়াতে উল্লেখ করেছেন,
حَبَّب إِلَيْكم الْإِيمَانَ
আল্লাহ তোমাদের অন্তরে ঈমানকে প্রিয় বানিয়ে দিয়েছেন।
ঈমানকে তোমাদের অন্তরে সবচেয়ে সুন্দর, সবচেয়ে পছন্দনীয় বস্তু বানিয়ে দিয়েছেন। আয়াতের পরের অংশে বলছেন,
وَزَیَّنَه فِیْ قُلُوْبِكُمْ
ঈমানকে তিনি তোমাদের অন্তরে সুন্দর, সুশোভিত ও আকর্ষণীয় করে দিয়েছেন।
ঈমান ও ঈমানের সাথে সংশ্লিষ্ট সব কিছু এখন তোমাদের কাছে সুন্দর ও আকর্ষণীয় মনে হয়। ঈমানের বিপরীত জিনিসগুলোর কথা আল্লাহ তাআলা আয়াতের পরের অংশে বলছেন,
وَ كَرَّهَ اِلَیْكُمُ الْكُفْرَ وَ الْفُسُوْقَ وَ الْعِصْیَانَ
তিনি কুফর, পাপাচার ও নাফরমানিকে তোমাদের কাছে ঘৃণিত বানিয়ে দিয়েছেন।
কুফর, শিরক, ফাসেকী, নাফরমানিসহ যত রকমের পাপাচার আছে সবগুলোকে আল্লাহ তাআলা তাদের দৃষ্টিতে ঘৃণ্য থেকে ঘৃণ্যতর বানিয়ে দিয়েছেন। ফলে কোনো গুনাহ, কোনো পাপাচার, কোনো অপরাধ এখন আর তাদের কাছে ভালো লাগে না। যত ছোট অপরাধ হোক কিংবা যত বড় অপরাধই হোক। সবই এখন তাঁদের দৃষ্টিতে ঘৃণার বস্তু। কুফর, শিরকের লিপ্ত হওয়া তো অনেক দূরের কথা। আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়াটা যতটুকু অপছন্দের, কোনো ধরণের কুফর ও শিরকে লিপ্ত হওয়াটা তাঁদের কাছে এর চেয়ে অনেক অনেক বেশি অপছন্দের, অনেক অনেক বেশি ঘৃণার।
যাদের মধ্যে মহা মূল্যবান এই গুণগুলো রয়েছে, আয়াতের শেষাংশে তাদের ব্যাপারে বলা হচ্ছে -
اُولٰٓىِٕكَ هُمُ الرّٰشِدُوْنَ
তারাই হচ্ছে হেদায়েতপ্রাপ্ত।
আয়াত থেকে শিক্ষা
উক্ত আয়াত থেকে আমরা বেশ কিছু শিক্ষা পাই। তার মধ্যে কয়েকটি হল,
১। আমাদের প্রত্যেকের উচিৎ ঈমানকে নিজেদের অন্তরে সবচেয়ে প্রিয় বস্তু বানানো।
২। ঈমানের দাবীগুলো পূরণ করার মাধ্যমে অন্তরকে সুসজ্জিত করা। শরিয়তের করণীয়-বর্জনীয় ছোট বড় সকল বিধিবিধান পালন করা।
৩। কুফর, শিরকসহ ছোট বড় যাবতীয় পাপাচারকে অন্তর থেকে ঘৃণা করা এবং ওগুলো থেকে সম্পূর্ণরূপে দূরে থাকা।
৪। এই গুণগুলো অর্জনের জন্য সব সময় আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকা।
এবার চলুন আমরা দোয়াটি সম্পর্কে কিছু আলোচনা করি। সূরা হুজরাতের এ আয়াত থেকেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দোয়াটি নিয়েছেন। যা তিনি নিজেও পড়তেন, সাহাবীদেরকেও পড়ার নির্দেশ দিতেন।
এখানে একটি বিষয় একটু জানার আছে। তা হল, দোয়াটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে পড়তেন মূলত আমাদেরকে শিখানোর জন্য, এটি তো বুঝাই যায়। কিন্তু সাহাবীদেরকে কেন পড়তে বলতেন? আয়াতে তো তাঁদের ব্যাপারেই এগুণগুলোর কথা এসেছে। গুণগুলো তো তাঁদের মধ্যে আছেই তারপরও কেন তিনি তাঁদেরকেও দোয়াটি পড়তে বলতেন? এর উত্তর হল, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে এ দোয়াটি এ জন্যই করতে বলতেন যেন, এই গুণগুলো তাঁদের মাঝে আরও বৃদ্ধি পায়। গুণগুলো যেন কখনোই তাঁদের হাতছাড়া না হয়।
আমাদেরও উচিৎ, দোয়াটি অনেক বেশি করে পড়া। যেহেতু এটি পড়ার নির্ধারিত কোন সময় নেই তাই যে কোন সময়ই আমরা পড়তে পারি। হাদীসে এমন আরও একটি দোয়া এসেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেটিও বেশি বেশি পড়তেন। দোয়াটি হল,
يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِينِكَ
হে অন্তরপরিবর্তকারী রব! আমার অন্তরকে আপনার দ্বীনের উপর অবিচল রাখুন।
(জামে তিরমিযী ২১৪০; মুসনাদে আহমাদ ১২১০৭)
এ দোয়াটিও আমরা বেশি বেশি করে পড়ব ইনশাআল্লাহ।
এবার প্রথম দোয়াটির সাথে সংশ্লিষ্ট আরও কিছু বিষয় আলোচনা করি।
দেখুন ভাই, ঈমান ও ঈমান সংশ্লিষ্ট কাজের প্রতি মুহাব্বত থাকা, এগুণটির মাধ্যমে ঈমানদার ও বেঈমানের মাঝে পার্থক্য বুঝা যায়। কারো অন্তরে যদি ঈমান না থাকে তাহলে তার কাছে ঈমানের কথা শুনতে ভালো লাগবে না। ঈমান সংশ্লিষ্ট কোনো কাজ করতে ভালো লাগবে না। অন্য কাউকে করতে দেখলে তাও ভালো লাগবে না। কিছু কাজ হয়তো তার কাছে ভালো লাগতে পারে বা অন্যরা করলে তাও ভালো লাগতে পারে কিন্তু অন্তরে ঈমান না থাকলে ঈমান সংশ্লিষ্ট সকল কাজ তার কাছে ভালো লাগবে না। কারো কাছে যদি এমন মাত্র একটি কাজও খারাপ লাগে, কাজটিকে তার কাছে ঘৃণিত কাজ মনে হয় তাহলে এটিই প্রমাণ যে তার অন্তরে ঈমান নেই। যেমন, আমাদের সমাজে এমন কত কত লোক আছে যারা নিজেরা নামায রোযা হজ ইত্যাদি না করলেও অন্যরা করলে তাদের কাছে ভালো, কোন কোন সময় তারা নিজেরাও করে। কিন্তু এসব লোকের কাছে শরীয়া শাসনব্যবস্থা ভালো লাগে না। জিহাদ ভালো লাগে না। সুদ, ঘুষ, জুয়া, মদ, ব্যভিচার এসব হারাম হওয়ার বিধানগুলো লাগে না। এগুলো তাদের কাছে সেকেলে মনে হয়। আধুনিক যুগের সাথে বেনানান মনে হয়। মনে রাখবেন ভাই, ঈমান সংশ্লিষ্ট কোন একটি কাজের প্রতিও যদি কারো অন্তরে সামান্যতম ঘৃণা বা অনিহাভাব থাকে তাহলে এমন ব্যক্তি ঈমানদার নয়। সে সুস্পষ্ট বৈঈমান।
এর বিপরীত একজন ঈমানদারের অবস্থা হল তার কাছে ঈমান ও ঈমান সংশ্লিষ্ট ছোট বড় সমস্ত কাজগুলো শুধু ভালো লাগে না বরং এর জন্য সে নিজের জান কোরবান করতেও প্রস্তুত থাকে।
এই তারতম্যের কথাটাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য একটি হাদীসে সুস্পষ্টভাবে বলেছেন। হাদীসটি হল,
عن أبي أمامة رضى الله عنه قال : قال رجل : يا رسول الله ما الإيمان؟ قال إذا سرتك حسنتك و ساءتك سيئتك فأنت مؤمن
হযরত আবু উমামা রাযি. বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! ঈমান কী? (অর্থাৎ কারো অন্তরে ঈমান থাকার লক্ষণ কী?) উত্তরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যখন তোমার নেকআমল তোমাকে আনন্দিত করবে আর বদআমল তোমাকে কষ্ট দেবে তখন বুঝবে তুমি মু’মিন। (মুসনাদে আহমাদ ৫/২৫১; সহী ইবনে হিব্বান ১০৩)
বুঝা গেল, মন্দ কাজ, পাপের কাজ ঈমানদারের কাছে কখনোই ভালো লাগবে না বরং খারাপ লাগবে। পক্ষান্তরে যার অন্তরে ঈমান থাকবে না তার কাছে তার পাপকাজগুলো খারাপ লাগবে না বরং ওগুলো তার কাছে ভালো লাগবে। এজন্যই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে দোয়া শিখাচ্ছেন, আমরা যেন আল্লাহর কাছে দোয়া করি, আমাদের অবস্থা যেন বেঈমানদের মতো না হয়। ঈমান ও ঈমান সংশ্লিষ্ট কাজগুলো যেন আমাদের কাছে ভালো লাগে এবং কুফর ও কুফর সংশ্লিষ্ট কাজগুলো যেন আমাদের কাছে খারাপ লাগে।
দেখুন ভাই, ‘ভালো লাগা’ বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কোনো খারাপ জিনিস যদি কারো কাছে ভালো লাগতে শুরু করে, তাহলে এর চেয়ে বড় দুর্ভাগ্যের আর কিছু হতে পারে না।
আপনি কাউকে কোন খারাপ কাজের ব্যাপারে সতর্ক করে বললেন, ভাই এটি খারাপ কাজ তুমি এটা করো না। কিন্তু তার কাছে যদি ওই খারাপ কাজটাই ভালো লাগে, ওটার বিপরীত ভালোটা তার কাছে খারাপ লাগে তখন আপনি কী করবেন? তার কাছে খারাপটাই ভালো লাগে, ভালোটা খারাপ লাগে। এটি খুব কঠিন এক রোগ। তো দোয়াতে বলা হচ্ছে, হে আল্লাহ! এ রোগ যেন আমাদের মাঝে না আসে। ভালোটাই যেন আমাদের কাছে ভালো লাগে, খারাপটাই যেন আমাদের কাছে খারাপ লাগে। সুন্দরটাকে যেন আমরা সুন্দর হিসেবে দেখি। অসুন্দরটাকে যেন অসুন্দর হিসেবে দেখি।
বর্তমানে যুবক-তরুণদের অবস্থা দেখুন। সারাক্ষণ তারা মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকে। যতরকমের অশ্লীলতা আছে সবই তাদের কাছে ভালো লাগে। গান শোনা, সিনেমা দেখা আরও কত কি! এর বিপরীত ভালো কাজগুলো তাদের কাছে ভালো লাগে না। মসজিদে যেতে ভালো লাগে না, নামায পড়তে ভালো লাগে না। এর অর্থই হল, ঈমান তাদের কাছে প্রিয় জিনিস নয়। তা না হলে তাদের অবস্থা এমন হত না।
তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে দোয়া শিখাচ্ছেন, আমরা যেন আল্লাহর কাছে এই বলে দোয়া করি, হে আল্লাহ, ঈমান ও ঈমান সংশ্লিষ্ট সবকিছু যেন আমাদের কাছে ভালো লাগে আর খারাপ জিনিসগুলো যেন আমাদের কাছে খারাপ লাগে। সুন্নত যেন আমাদের কাছে ভালো লাগে, বিদআত যেন খারাপ লাগে। কুফর শিরক সহ ছোট বড় সব ধরণের গুনাহ ও পাপাচার যেন আমাদের কাছে খারাপ লাগে। দোয়ার শেষাংশে বলা হচ্ছে,
وَاجْعَلْنَا مِنَ الرَّاشِدِينَ
হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে হেদায়েতপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করেন, যাদের মধ্যে এই মূল্যবান গুণগুলো আছে, আমাদেরকে তাদের দলভূক্ত করুন। দোয়াটি করার সময় আমরা যদি এ কথাগুলো মনে রাখি তাহলে দোয়ার আছরটাই অন্য রকম হবে ইনশাআল্লাহ।
শুরুতেই বলেছি, দোয়া দুই ধরণের, কিছু দোয়া আছে এমন যা নির্ধারিত সময় সাথে বাঁধা আর কিছু দোয়া আছে এমন যা যে কোন সময় পড়া যায়। এই দোয়াটি যেহেতু দ্বিতীয় প্রকারের দোয়া তাই এটিকে আমরা যে কোন সময়ই পড়তে পারব। নামাযের আগে, পরে, হাঁটতে, চলতে, শুয়ে, বসে সর্বাবস্থায়ই দোয়াটি পড়া যাবে। দোয়ার কথাগুলো যদি কেউ নিজ ভাষায় বলে তাহলেও হবে তবে অর্থের প্রতি খেয়াল করে আরবিতে বলতে পারলে সবচেয়ে ভালো হবে। কারণ, এই শব্দগুলো তো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শেখানো শব্দ।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে এ দোয়াটি বেশি বেশি করার এবং দোয়ায় উল্লেখিত গুণগুলো দ্বারা নিজেদেরকে গুণান্বিত করার তাওফিক দান করেন আমীন।
মুহতারাম ভাইয়েরা! আজকের আলোচনা এখানেই শেষ করছি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাঁর দ্বীনের জন্য কবুল করুন এবং ইখলাসের সাথে জিহাদ ও শাহাদাতের পথে অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন।
আমরা সকলে মজলিস থেকে উঠার দোয়াটা পড়ে নিই।
سبحانك اللهم وبحمدك، أشهد أن لا إله إلا أنت، أستغفرك وأتوب إليك
وصلى الله تعالى على خير خلقه محمد وآله واصحابه اجمعين
وآخر دعوانا ان الحمد لله رب العالمين
************