“ইবাদত” এর ব্যাপারে নসীহত – শাইখ আবু মুহাম্মদ আসিম আল-মাকদিসী
(কারাগারের চার দেয়ালের মাঝে বন্দীরত অবস্থায় লিখিত এবং প্রিয় ভাইদের প্রতি স্মরণিকা, উপদেশ ও সমর্থন হিসেবে প্রেরিত)
লেখক: শাইখ আবু মুহাম্মদ আসিম আল-মাকদিসী
ইংরেজি অনুবাদ: আত-তিবইয়ান পাবলিকেশন্স (রবিউল আউয়াল, ১৪২৬)
বাংলা অনুবাদ: বালাকোট মিডিয়া (রবিউল আউয়াল, ১৪৩৫)
“আওরাক মিন দফতর সাজীন” এর ৬ষ্ঠ পত্র হতে গৃহীত
ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রঃ) এর কিতাব “আলওয়াবিল আসসাইয়্যিব” এবং “ইগাসাত আললাহফান” এর কিছু বক্তব্যের ব্যাখ্যা স্বরূপ রচিত
فَاقْتُلُوا الْمُشْرِكِينَ حَيْثُ وَجَدتُّمُوهُمْ وَخُذُوهُمْ وَاحْصُرُوهُمْ وَاقْعُدُوا لَهُمْ كُلَّ مَرْصَدٍ
…মুশরিকদেরকে যেখানে পাও (বধ) হত্যা করো, তাদেরকে গ্রেফতার করো, তাদেরকে অবরোধ করে রাখো এবং প্রত্যেক ঘাঁটিস্থলে তাদের সন্ধানে অবস্থান করো…(১)
সকল প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তাআলার জন্য এবং সালাম ও সালাত বর্ষিত হোক রাসূলুল্লাহ, তাঁর পরিবার ও তাঁর সাহাবীগণের প্রতি এবং যারা তাঁদেরকে বন্ধু হিসেবে নিয়েছেন তাদের প্রতি।
আমি আল্লাহ আল আলিয়্যুল কাদীর (মহাভিজাত্যে সমুন্নত, সর্বশক্তিমান) এর কাছে দোয়া করি যেন তিনি আপনাদেরকে তাদের দলভুক্ত করেন যাদের উপর অনুগ্রহ করা হলে তারা কৃতজ্ঞ থাকে, দুঃখ–কষ্টের মাধ্যমে পরীক্ষা করা হলে যারা ধৈর্যের সাথে সহ্য করে এবং যারা মন্দকাজ করে ফেললে তাওবা করে।
অবশ্যই এই তিনটি বিষয় আল্লাহর বান্দাদের জন্য আনন্দ ও প্রশান্তির চাবিকাঠি এবং এগুলো দুনিয়া ও আখিরাতে সাফল্যের চিহ্নস্বরূপ।
আল্লাহর বান্দারা সব সময় এই তিনটি বিষয়ের মধ্যে থাকে:
প্রথমত:
আল্লাহর অনুগ্রহসমূহ, যা তিনি তাঁর বান্দাদের প্রতি বর্ষণ করেন।
আর এজন্য বান্দার উপর যা অবধারিত তা হলো “শোকর” (ধন্যবাদপূর্ণতা, কৃতজ্ঞতা, স্বীকৃতি)। এবং এটা তিনটি ভিত্তির উপর স্থাপিত:
১। অন্তর থেকে অনুগ্রহসমূহ স্বীকার করা
২। প্রকাশ্যে এগুলোর ব্যাপারে কথা বলা
৩। যিনি এগুলোর অধিকারী এবং যিনি এগুলো প্রদান করেছেন তাঁকে সন্তুষ্ট করার জন্য এগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করা(২)
দ্বিতীয়ত:
দুঃখ-কষ্ট, যার মাধ্যমে আল্লাহ তাঁর বান্দাকে পরীক্ষা করেন।
এক্ষেত্রে যা আবশ্যক তা হলো “সবর” (ধৈর্য, সহিষ্ণুতা)। আর এটাও তিনটি মূলভিত্তির উপর স্থাপিত:
১। নিজ ভাগ্যে যা লিখা ছিল, তার ব্যাপারে অসন্তুষ্ট না হওয়া
২। অভিযোগ করা থেকে জিহ্বাকে সংযত রাখা
৩। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে আল্লাহর অবাধ্যতায় ব্যবহার না করা
তাই বান্দা যখন এই মূল বিষয়গুলো পালন করবে, তখন দুঃখ-কষ্ট তার জন্য সুমিষ্ট মধুর রূপ নেবে, কঠিন পরীক্ষা তখন রূপ নেবে আশীর্বাদে, আর অপ্রিয় বস্তু হয়ে যাবে প্রিয়।
এটা মনে রাখতে হবে যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তাঁর বান্দাকে ধ্বংস করার জন্য তাকে দুঃখ-কষ্টে আপতিত করেন না। বরং, তিনি তাকে এজন্য দুঃখ-কষ্টে আপতিত করেন যাতে তিনি তার “সবর” (ধৈর্য, সহিষ্ণুতা) ও “ইবাদত” (দাসত্ব, আনুগত্য, বন্দেগী) এর পরীক্ষা করতে পারেন।
কারণ এটা স্পষ্ট যে, আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ বান্দার ইবাদত দুই প্রকারের, দাররা (দুঃখ, দুর্দশা) এর সময় ইবাদত এবং সাররা (সুখ, সমৃদ্ধি) এর সময় ইবাদত।
যেসব বিষয়ে বান্দা অসন্তুষ্ট ও অতৃপ্ত সেখানেও অবশ্যই তাকে আল্লাহর প্রতি ইবাদত (দাসত্ব, আনুগত্য, বন্দেগী) পূর্ণমাত্রায় পালন করতে হবে, ঠিক যেমন তাকে তা পূর্ণ করতে হবে তার সন্তুষ্টি ও স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয়ের ক্ষেত্রে।
কিন্তু অধিকাংশ মানুষ শুধুমাত্র সেসব বিষয়েই ইবাদত (দাসত্ব, আনুগত্য, বন্দেগী) পূর্ণ করে থাকে যেসব বিষয়ে তারা সন্তুষ্ট…… কিন্তু প্রকৃত পরীক্ষা হলো সেই সকল বিষয়ে পূর্ণ কৃতজ্ঞতার সাথে ইবাদত (দাসত্ব, আনুগত্য, বন্দেগী) পালন করা যেসব বিষয়ে সে অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।
প্রচন্ড গরমের সময় ঠান্ডা পানি দিয়ে ওযু করা – এটা ইবাদত,
এবং আপনার সুন্দরী স্ত্রীর সাথে অন্তরঙ্গ সম্পর্ক রাখা – এটা ইবাদত,
এবং তার প্রয়োজন পূরণে খরচ করাও ইবাদত।
অপরদিকে… প্রচন্ড ঠান্ডার সময় ঠান্ডা পানি দিয়ে ওযু করা – সেটা ইবাদত,
এবং যখন নিজের নফসের আকাঙ্ক্ষা মনকে এমন নারীর প্রতি প্রলুব্ধ করে যে নারী তার জন্য বৈধ নয়, তখন – অবশ্যই মানুষের ভয়ে নয়, বরং আল্লাহকে ভয় করে – এমন কাজকে পরিত্যাগ করা, সেটা ইবাদত।
এবং নিজের অভাব ও দারিদ্রের সময় দরিদ্রকে দান করা – সেটা ইবাদত।
কিন্তু এই দুই ধরনের ইবাদতের মধ্যে পার্থক্য অনেক ব্যাপক। আর সেক্ষেত্রে, বান্দাদের একে অপরের মধ্যে পার্থক্য স্পষ্ট হয় – আর এর দ্বারা তাদের প্রতিপালকের দৃষ্টিতে তাদের মর্যাদা স্থির হয়।
আল্লাহর যে বান্দা উভয় অবস্থাতেই (স্বাচ্ছন্দ্য ও অস্বাচ্ছন্দ্য) আল্লাহর অধিকারসমূহ পূর্ণ করে, তবে সেই হলো এমন বান্দা যে আল্লাহর এই বাণীর সত্যতায় উপনীত হয়েছে,
أَلَيْسَ اللَّهُ بِكَافٍ عَبْدَهُ
আল্লাহ কি তাঁর বান্দার জন্য যথেষ্ট নন?…(৩)
আর আল্লাহ তখনই তাঁর বান্দার জন্য সম্পূর্ণরূপে যথেষ্ট হন যখন বান্দা পূর্ণ দাসত্ব, আনুগত্য ও বন্দেগী সহকারে তার রবের দরবারে হাজির হয়; আর বান্দার এই ইবাদত যদি পূর্ণতা লাভ না করে তাহলে আল্লাহর যথেষ্ট হওয়াও অপূর্ণ রয়ে যায়।
সুতরাং, কেউ যদি কল্যাণ লাভ করে তবে সে যেন আল্লাহর প্রশংসা করে এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে; আর কেউ যদি কল্যাণ ব্যতীত অন্য কিছু লাভ করে তবে সে যেন এর জন্য নিজেকেই দোষী সাব্যস্ত করে।
আর এরাই হলো আল্লাহর সেই সকল বান্দা যাদের উপর তাদের শত্রুদের কোনো কর্তৃত্ব বিরাজ করতে পারে না। আল্লাহ তাআলা ঘোষণা দেন (শয়তানের প্রতি),
إِنَّ عِبَادِي لَيْسَ لَكَ عَلَيْهِمْ سُلْطَانٌ
“নিশ্চয়ই আমার বান্দাদের উপর তোমার কোনো ক্ষমতা বা কর্তৃত্ব থাকবে না…”(৪)
এবং আল্লাহ তাআলা তাঁর দ্বীন, তাঁর হিজ্*ব (দল), এবং তাঁর আউলিয়াদের (যারা ইল্*ম বা জ্ঞান এবং আমল বা কর্ম – উভয়ের সমন্বয়ে আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠা করতে উঠে দাঁড়ায়) কে সাহায্য ও বিজয় প্রদানের অঙ্গীকার করেছেন।
মহামর্যাদাবান আল্লাহ বলেন,
وَإِنَّكُمْ لَتَمُرُّونَ عَلَيْهِم مُّصْبِحِينَ
নিশ্চয়ই আমার বাহিনী অবশ্যই হবে বিজয়ী।(৫)
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,
كَتَبَ اللَّهُ لَأَغْلِبَنَّ أَنَا وَرُسُلِي
আল্লাহ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছেন: আমি এবং আমার রাসূল অবশ্যই বিজয়ী হবো।…(৬)
তিনি আরও বলেন,
وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِينَ
…শুভ পরিণাম ও শেষ সাফল্য তো মুত্তাকী (যারা আল্লাহকে ভয় এবং আনুগত্য করে) বান্দাদের জন্যই।(৭)
কিন্তু, বান্দা এই ওয়াদায় তার অংশ পাবে তার ঈমান (আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআত অনুসারে যা হলো কথা এবং আমল বা কাজ) এবং তাকওয়া(৮) (আল্লাহর ভীতি ও তাঁর আনুগত্য) অনুসারে।
মহান আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَأَنتُمُ الْأَعْلَوْنَ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ
…যদি তোমরা বিশ্বাসী হও, তবে তোমরাই জয়ী হবে।(৯)
সুতরাং, বান্দা যে পরিমাণ ঈমান ধারণ করে সে অনুযায়ী শ্রেষ্ঠত্ব লাভ করবে।
আল্লাহ আরও বলেন,
وَلِلَّهِ الْعِزَّةُ وَلِرَسُولِهِ وَلِلْمُؤْمِنِينَ
…সম্মান, ক্ষমতা ও গৌরব তো শুধুমাত্র আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুমিনদের জন্যই…(১০)
তাই বান্দা যে পরিমাণ ঈমান অর্জন করে এবং তার সঠিক বাস্তবায়ন (আমলের ক্ষেত্রে) করে, সে অনুযায়ী সে “ইজ্জত” (সম্মান, ক্ষমতা ও গৌরব) লাভ করে।
সুতরাং, যদি সে “ইজ্জত” থেকে বঞ্চিত হয় – তাহলে এটা হলো তার কথা ও কাজে, প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে, ঈমানের সঠিক বাস্তবায়নে গাফলতির ফলাফল।
একইভাবে বান্দার নিরাপত্তা (অথবা ক্ষতি থেকে বেঁচে থাকা) – এটাও তার ঈমান অনুসারে।
কারণ আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّ اللَّهَ يُدَافِعُ عَنِ الَّذِينَ آمَنُوا ۗ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ خَوَّانٍ كَفُورٍ
“নিশ্চয়ই আল্লাহ মুমিনদের পক্ষ হতে প্রতিহত করেন (তাদের দুশমন হতে)। তিনি কোনো বিশ্বাসঘাতক, অকৃতজ্ঞকে পছন্দ করেন না।”(১১)
অনুরূপভাবে, বান্দার জন্য আল্লাহ যথেষ্ট হয়ে যাওয়া, এটাও বান্দার ঈমানের স্তর অনুযায়ী নির্ধারিত হয়, আর আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ حَسْبُكَ اللَّهُ وَمَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ
হে নবী! তোমার জন্যে ও তোমার অনুসারী মুমিনদের জন্যে (সর্বক্ষেত্রে) আল্লাহই যথেষ্ট।(১২)
অর্থাৎ, আল্লাহ তাঁর নবীকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলছেন, আল্লাহই তোমার জন্য এবং তোমার অনুসারীদের জন্য যথেষ্ট, এখানে তাঁর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অনুসারীদের জন্য তিনি যথেষ্ট হওয়া – এটা রাসূলের প্রতি তাদের অনুসরণ এবং আল্লাহর প্রতি তাদের আত্মসমর্পণ ও আনুগত্যের বাস্তবায়নের দ্বারা নিরূপিত হয়। তাই যে এটা (আত্মসমর্পণ ও আনুগত্য) পরিত্যাগ করে, সে এই আয়াতসমূহের ওয়াদা হতে ততটাই পিছিয়ে থাকবে।
আর এটাই হলো আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের মাজহাব যেখানে ঈমানের বৃদ্ধি ও হ্রাস পাওয়া একটি বাস্তবতা। আর এভাবেই, বান্দার প্রতি আল্লাহর “ওয়ালাইয়াহ” (নিরাপত্তা ও সাহায্য) তার ঈমানের অবস্থা অনুযায়ী নির্ধারিত হয়।
মহামর্যাদাবান আল্লাহ তাআলা উল্লেখ করেছেন,
وَاللَّهُ وَلِيُّ الْمُؤْمِنِينَ
…আর আল্লাহ তাআলা বিশ্বাসীগণের ওয়ালী (রক্ষাকারী, সাহায্যকারী, অভিভাবক)।(১৩)
এবং তিনি আরো বলেন,
اللَّهُ وَلِيُّ الَّذِينَ آمَنُوا
আল্লাহই হচ্ছেন মুমিনদের অভিভাবক…(১৪)
সুতরাং যেভাবে বান্দার ঈমান বাড়ে ও কমে – তার ঈমানের সেই অবস্থা অনুযায়ী তার জন্য আল্লাহর নিরাপত্তা এবং তাঁর বিশেষ “মাইয়াহ” (আল্লাহর ইলাহী বৈশিষ্ট্যের গুণে আপন বান্দার “সাথে থাকা” এবং বান্দাকে সাহায্য করা) প্রদান করা হয়। একইভাবে বিজয় ও পরিপূর্ণ সাহায্য কেবলমাত্র বিশুদ্ধ ও পরিপূর্ণ ঈমানের মানুষদের জন্যই প্রযোজ্য। আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّا لَنَنصُرُ رُسُلَنَا وَالَّذِينَ آمَنُوا فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَيَوْمَ يَقُومُ الْأَشْهَادُ
নিশ্চয়ই আমি আমার রাসূলদের ও মুমিনদের সাহায্য করবো পার্থিব জীবনে এবং যেদিন সাক্ষীগণ দন্ডায়মান হবে সেদিন।(১৫)
এবং তিনি আরও বলেন,
فَأَيَّدْنَا الَّذِينَ آمَنُوا عَلَىٰ عَدُوِّهِمْ فَأَصْبَحُوا ظَاهِرِينَ
…পরে আমি মুমিনদেরকে তাদের শত্রুদের মোকাবেলায় শক্তিশালী করলাম; ফলে তারা বিজয়ী হলো।(১৬)
সুতরাং, যার ঈমান হ্রাস পায়, একই অনুপাতে তার জন্য নির্ধারিত বিজয় ও সাহায্যের পরিমাণও হ্রাস পাবে।
আর এটা এজন্য যে, যখন কোনো বান্দার উপরে বিপদ আপতিত হয়, হোক তা নিজের জীবনের উপর অথবা তার সম্পদের উপর অথবা শত্রুর দ্বারা আক্রান্ত হওয়া – এটা শুধুমাত্র আল্লাহর আদেশের প্রতি তার অবাধ্যতার কারণেই হয়ে থাকে, হতে পারে সে কোনো ওয়াজিব (বাধ্যতামূলক) পালন করে নি অথবা সে এমন কোনো কিছু করেছে যা হারাম (নিষিদ্ধ)। আর এটাই হলো ঈমানের হ্রাস পাওয়া।
আর কিছু মানুষ নিম্নোক্ত আয়াতটির ব্যাপারে ভুল বুঝেন,
وَلَن يَجْعَلَ اللَّهُ لِلْكَافِرِينَ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ سَبِيلًا
…এবং কখনোও আল্লাহ মুমিনদের প্রতিপক্ষে কাফেরদেরকে বিজয়ী করবেন না।(১৭)
কিছু মানুষ বলেন যে, আল্লাহ তাআলা আখিরাতে কাফেরদের পরাজিত করবেন; আবার কেউ কেউ বলেন যে, আল্লাহ তাদেরকে পরাজিত করবেন “হুজ্জাহ” (প্রমাণসমূহ) এর ক্ষেত্রে।
কিন্তু গবেষণা ও অনুসন্ধানের পর দেখা যায় যে, এই আয়াতও অন্যান্য আয়াতের মতোই স্পষ্ট; আর তা এই যে, নির্ভেজাল ঈমানের মানুষদেরকে কাফেররা কোনো ক্ষতিই করতে পারবে না, তাদের উপর বিজয়ীও হতে পারবে না। এবং যদি বান্দাদের ঈমান দুর্বল হয়, তাহলে শত্রুরা সেই বান্দাদের উপর ততটাই কর্তৃত্ব লাভ করতে পারবে যতটা ঈমান বান্দারা হারিয়েছে। এভাবে বান্দা নিজেই আল্লাহর প্রতি তার আনুগত্যের কিছুটা কমতির কারণে শত্রুদের সামনে রাস্তা খুলে দেয়।
সুতরাং, প্রকৃত সত্য হলো এই যে, একজন ঈমানদার বান্দা সত্যিই সম্মানিত, বিজয়ী, সাহায্যপ্রাপ্ত, আল্লাহর অভিভাবকত্ব দ্বারা আচ্ছাদিত, বিপদ ও ক্ষয়-ক্ষতি হতে রক্ষাকৃত হয়, তা সে যেখানেই থাকুক না কেন – এমনকি যদি আল্লাহর শত্রুরা জলে, স্থলে ও আকাশে তার বিরুদ্ধে সমবেত হয় এরপরেও! – কিন্তু শর্ত হলো, এগুলো বান্দার জন্য ততক্ষণই প্রযোজ্য থাকবে যতক্ষণ সে প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে, বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণভাবে ঈমানের সত্য রূপকে প্রতীয়মান করবে এবং ঈমানের দ্বারা যে সকল আমল বা কর্ম বাধ্যতামূলক হয়ে পড়ে সেগুলোর সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন করে যাবে।
মহান আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلَا تَهِنُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَنتُمُ الْأَعْلَوْنَ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ
আর তোমরা দুর্বল হয়ো না ও বিষণ্ণ হয়ো না এবং যদি তোমরা ঈমানদার হও, তবে তোমরাই জয়ী হবে।(১৮)
এবং তিনি আরো বলেন,
وَأَنتُمُ الْأَعْلَوْنَ وَاللَّهُ مَعَكُمْ وَلَن يَتِرَكُمْ أَعْمَالَكُمْ
…তোমরাই বিজয়ী; আল্লাহ তোমাদের সঙ্গে আছেন (আরশের উপর হতে পর্যবেক্ষণ ও সাহায্য করার দিক দিয়ে), তিনি তোমাদের কর্মফল কখনো বিনষ্ট করবেন না।(১৯)
সুতরাং, এটা হলো এক ওয়াদা যা কেবলমাত্র ঈমান ও সৎকর্মের দ্বারাই পরিপূর্ণ হয়। আর এটা (সৎকর্ম) হলো আল্লাহ তাআলার সৈন্যবাহিনীর(২০) মধ্য হতে একটি সৈন্য যার দ্বারা তিনি তাঁর বান্দাদের পাহারা ও প্রতিরক্ষা প্রদান করেন(২১) এবং তা থেকে বিন্দুমাত্রও হ্রাস করেন না, তবে যদি তা বাতিল হয়ে যায় – যেমন কাফের ও মুনাফিকেরা তাদের কর্মসমূহকে ধ্বংস করেছে – তখন আর সেই পাহারা ও প্রতিরক্ষা থাকবে না। আর সম্মান, ক্ষমতা ও মর্যাদা শুধুমাত্র আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুমিনদের জন্যই।
আর যখন আল্লাহর শত্রু, সেই অভিশপ্ত ইবলিশ জানতে পারলো যে, আল্লাহ স্বীয় বান্দাদেরকে তার ফাঁদে পড়তে দেবেন না, এমনকি তাদের উপর ইবলিশের কোনো কর্তৃত্বও দেবেন না, তখন
ইবলিশ বললো,
قَالَ فَبِعِزَّتِكَ لَأُغْوِيَنَّهُمْ أَجْمَعِينَ
إِلَّا عِبَادَكَ مِنْهُمُ الْمُخْلَصِينَ
…“আপনার ইজ্জতের শপথ! আমি তাদের সবাইকে পথভ্রষ্ট করবো, তবে তাদের মধ্যে আপনার একনিষ্ঠ বান্দাদেরকে নয়।”(২২)
সুতরাং, আল্লাহর নিষ্ঠাবান বান্দাদের উপর তাদের শত্রুদের কোনো আধিপত্য নেই, তা এ কারণে যে, তারা আল্লাহর আশ্রয়ে আছে, তারা আছে তাঁর পাহারা ও নিরাপত্তায়। আর যদি আল্লাহর শত্রুরা অলক্ষিত চোরের মতো কোনো এক বান্দার সন্নিকটে আসে – যেমন একটা চোর অসাবধান ব্যক্তি থেকে চুরি করে – তাহলে এটা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। কারণ অবশ্যই প্রত্যেক বান্দাকেই পরীক্ষা করা হবে, আর তার রয়েছে অসাবধানতা, কামনা-বাসনা ও রাগ। আর ইবলিশ এই তিনটি দরজা দিয়েই প্রবেশ করবে। বান্দা যতই চেষ্টা করুক না কেন, সে এই অসাবধানতা, কামনা-বাসনা ও রাগ এড়িয়ে চলতে পারবে না। ***
অবশ্যই মানবজাতির পিতা আদম (আলাইহিস সালাম) ছিলেন সৃষ্টির মাঝে সবচেয়ে সহ্যশীল এবং সবচেয়ে জ্ঞানী এবং সর্বাপেক্ষা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তারপরও আল্লাহর শত্রু তাঁর (আলাইহিস সালাম) বিরুদ্ধে চেষ্টা অব্যাহত রেখেছিল, যতক্ষণ না তিনি (আলাইহিস সালাম) তাঁর কর্মের মধ্যে হোঁচট খান। তাহলে তাদের ব্যাপারে আপনি কি মনে করেন যাদের কামনা-বাসনা আরও অনেক প্রবল এবং যাদের বুদ্ধিমত্তা – পিতা আদম (আলাইহিস সালাম) এর তুলনায় – সমুদ্রের মাঝে এক বিন্দু পানির ন্যায়?
কিন্তু আল্লাহর শত্রুরা অলক্ষিত চোরের ন্যায় বান্দার অসাবধানতার সুযোগ নিয়ে প্রতারণামূলক পদ্ধতির ব্যবহার করা ব্যতীত কখনোই মুমিনদের প্রলুব্ধ করতে পারে না। আর ইবলিশ যদি তাকে এভাবে হোঁচট খাইয়ে ফেলে দেয়, তাহলে ইবলিশ মনে করে যে, সে তাকে আক্রমণ করে ধ্বংস করতে পেরেছে।
কিন্ত আল্লাহর করুণা, তাঁর দয়া, তাঁর ক্ষমা ও তাঁর মার্জনা বান্দাকে পরিত্যাগ করে না, আর যদি আল্লাহ তাঁর বান্দার ভালো চান, তবে তিনি তার জন্য অনুশোচনা ও তাওবার দরজা খুলে দেন এবং তার হৃদয়কে বিনয়ে বিদীর্ণ(২৩) করে দেন, আর তখন সে বুঝবে আল্লাহকে তার কতই না প্রয়োজন, এবং সে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবে, একান্ত আন্তরিকভাবে আশ্রয় কামনা করবে এবং সর্বদা বিনয়ে অবনত হয়ে আল্লাহর কাছে চাইবে, কাকুতি-মিনতি করবে এবং যেকোনো উপায়ে সে প্রত্যেক সৎকর্মের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য কামনা করবে…… আর এভাবে বান্দা এরূপে আগাতে থাকবে যে, এক পর্যায়ে তার সেই কৃত পাপই তাকে আল্লাহর অনুগ্রহের দ্বারে পৌঁছে দিবে। আর সম্ভবতঃ আল্লাহর শত্রুরা বলবে, “হায়! আমার প্রতি ধিক্কার! আমি যদি তাকে ছেড়ে দিতাম এবং তাকে বিপথগামী না করতাম!” আর এটাই হলো তৃতীয় বিষয়।
তৃতীয়ত:
যখন সে পাপকাজ করে ফেলে, সে অনুতপ্ত হয় এবং আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে।
আর এটাই হলো কিছু সলফে সালেহীনদের (আল্লাহ তাঁদের প্রতি রহম করুন) সেই কথার ব্যাখ্যা: “নিশ্চয়ই, আল্লাহর একজন বান্দা হয়তো একটি পাপকাজ করে ফেলে এবং পরবর্তীতে সেটার দ্বারাই সে জান্নাতের বাগিচাসমূহে প্রবেশ করে। অপরদিকে, হতে পারে কোনো বান্দা একটি সৎকাজ করে এবং সেটার দ্বারাই সে পরবর্তীতে জাহান্নামের অগ্নিতে নিক্ষিপ্ত হয়।”
কিছু মানুষ তাঁদের (আল্লাহ তাঁদের প্রতি রহম করুন) জিজ্ঞেস করেন, “সেটা কিভাবে?”
তাঁরা (আল্লাহ তাঁদের প্রতি রহম করুন) উত্তর দেন, “কারণ সেই গুনাহের জন্য সেই বান্দার দুই চোখ আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন হতে বিরত হয় না। বরং সে একাকিত্বে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়, ভয়ে ও অনুশোচনায় তার প্রতিপালকের সামনে বিনয়াবনত হয়, লজ্জায় তার মাথা নত হয়ে যায়, তার রবের দরবারে তার অন্তর বিদীর্ণ হয়ে পড়ে…… এভাবে তার পাপকার্য এবং তার এই বিনীত অবস্থা তার অন্য বহু সৎকর্মের চেয়ে উত্তম প্রতিদান বয়ে আনে। আর এইসব বিনম্র অবস্থার মধ্য দিয়ে বান্দার অতিক্রম করা তার জন্য বয়ে আনে আনন্দ ও প্রশান্তি এবং সাফল্য…… আর অবশেষে তার এই গুনাহই তার জন্য এভাবে জান্নাতে যাবার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
আবার হতে পারে কোনো বান্দা একটি সৎকাজ করলো, অতঃপর সে ঐ কাজটি নিয়ে গর্ববোধ করতে থাকলো এবং নিজের ব্যাপারে অহংকার করা শুরু করলো। এমনকি কাজটি দেখে সে বিস্ময়ে অভিভূত হলো ও তা নিয়ে সীমা অতিক্রম করলো। আর সে বলে বেড়ালো, ‘আমি এটা করেছি, সেটা করেছি……’, আর এভাবে তার মধ্যে জন্ম নেয় অহংকার, ঔদ্ধত্য এবং নিজেকে নিয়ে মুগ্ধতা। আর সে এটাকে বৃদ্ধি করতে থাকে যতক্ষণ না এটা তার ধ্বংসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।”
এখন যদি আল্লাহ এই “মিসকীন” (নগণ্য বান্দা) এর জন্য ভালো চান, তাহলে তিনি তাকে এমন দুর্ভোগ দিয়ে পরীক্ষা করবেন যার বোঝা সে বইতে পারবে না এবং সে নিজের দৃষ্টিতে নিজেকে হীন মনে করবে। কিন্তু যদি আল্লাহ তার জন্য ভালো ব্যতীত অন্য কিছু নির্ধারণ করেন, তাহলে তিনি তাকে তার নিজ অবস্থানেই ছেড়ে দেন এবং পরিত্যাগ করেন, আর সে নিজেকে নিয়ে গর্বে মত্ত থাকে – আর এটাই হলো সেই পরিত্যাগ যা তার ধ্বংস নিশ্চিত করে।
আর বাস্তবিকই “আরিফীন” (“যারা সতর্ক থাকেন” – কঠোর আত্মনিয়োগী উলামাগণ) ব্যক্তিদের ইজমা হলো, “তাওফীক” (সফলতা) হচ্ছে আল্লাহ কর্তৃক আপনাকে আপনার নিজ হাতে ছেড়ে না দেয়া; আর নিকৃষ্টতম পরিত্যাগ হচ্ছে তিনি (পরম করুণাময়) যখন আপনাকে আপনার হাতেই ছেড়ে দেন।
সুতরাং, আল্লাহ যার কল্যাণ চান তিনি তার জন্য বিনয়ের দরজা খুলে দেন, আর উপহার দেন এমন হৃদয় যা বিনম্র, যা সর্বদা তাঁরই আশ্রয়ের দিকে ফিরে আসে, এবং তাঁর কাছেই ক্ষমা ভিক্ষা করে, এবং সর্বদা তার নিজের দুর্বলতা, নিজের অজ্ঞতা ও সীমালঙ্ঘনের প্রতি সতর্ক থাকে, এবং তার প্রতিপালকের সীমাহীন নেয়ামতসমূহকে স্মরণ করে এবং সেই সাথে স্মরণ করে তাঁর দয়া, অনুগ্রহ ও করুণার কথা(২৪) এবং সেগুলোর সাক্ষ্য প্রদান করে।
একজন “আরিফ” বান্দা এই দু’টোর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলার দিকে অগ্রসর হয়, আর এই দু’টোর উভয়টি ছাড়া কখনোই আল্লাহর দিকে অগ্রসর হওয়া সম্ভব নয়। আর যখন সে এদের একটি হারায়, তখন তার অবস্থা সেই পাখির সদৃশ হয়ে পড়ে যে তার একটি পাখা হারিয়েছে।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়াহ (তাঁর উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক) বলেন, “আল্লাহর নেয়ামতসমূহকে পর্যবেক্ষণ (এবং সর্বদা স্মরণ) করার মাধ্যমে এবং নিজের অবাধ্যতা (এবং দুর্বলতা) সমূহের ব্যাপারে গভীরভাবে চিন্তা করার মাধ্যমে একজন ‘আরিফ’ বান্দা আল্লাহর দিকে অগ্রসর হয়।”
আর এটাই হলো রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সেই বাণীর ব্যাখ্যা যা “সাইয়্যিদ আল ইসতেগফার” (ক্ষমা চাওয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থা) এ বর্ণিত হয়েছে,
“….আমি আমার প্রতি আপনার সকল নেয়ামতের স্বীকৃতি প্রদান করছি, এবং আমি আমার সকল গুনাহসমূহ আপনার নিকট স্বীকার করছি…”(২৫)
সুতরাং, এটা হলো আল্লাহর নেয়ামতসমূহের সাক্ষ্য প্রদান এবং নিজের ভুল-ত্রুটি স্বীকার – এ দুয়ের সম্মিলন।
এভাবেই তাঁর নেয়ামতসমূহের সাক্ষ্য দেয়া এবং তাঁকে স্মরণ করার জন্য আবশ্যিক হলো, যিনি এই করুণা ও উদারতা করেছেন তাঁকে ভালোবাসা, তাঁর গুণকীর্তন ও কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপন করা।
আর নিজের পাপকর্মসমূহ ও কাজের মধ্যে ভুলভ্রান্তি স্বীকার করার জন্য দরকার বিনয়, নম্রতা ও সর্বদা স্বীয় প্রতিপালকের সাহায্য পাবার চেষ্টা করা, এবং প্রত্যেক মুহূর্তে তাঁরই দিকে অনুতাপের সাথে ফিরে যাওয়া; আর সর্বদা নিজেকে এমন মনে করা যেন সে নিজে কিছুই না…… কারণ একজন বান্দা আল্লাহর সবচাইতে নিকটতম যে দরজা দিয়ে তাঁর দিকে প্রবেশ করতে পারে তা হলো দরিদ্রতা ও অভাবগ্রস্ততা। তাই সে আল্লাহর দিকে প্রবেশ করার জন্য কোনো অবস্থা, মর্যাদা অথবা উপায় (ওয়াসীলাহ) দেখতে পায় না; বরং সে কেবলমাত্র দরিদ্রতা ও সম্পূর্ণ বিনম্রতার দরজা দিয়েই আল্লাহর দিকে প্রবেশ করে…… সে প্রবেশ করে অনুগত ভিখারীর ন্যায় যার হৃদয় বিনয়ে পরিপূর্ণ, আর এভাবে নম্রতা তার হৃদয়ের সবচাইতে গভীরতম স্থানে মজবুতভাবে গেঁথে যায় এবং এটা তাকে সর্বদিক থেকে পরিবেষ্টন করে রাখে, এবং সে নিজের পরিপূর্ণ দরিদ্রতা এবং তার অসীম ক্ষমাশীল প্রতিপালকের সাহায্য পাবার জন্য নিজের তীব্র ব্যাকুলতার সাক্ষ্য দেয়…… আর এভাবে সে উপলব্ধি করে যে, এক পলকের জন্যও যদি সে তার প্রতিপালকের আনুগত্য থেকে বিরত থাকে তাহলে সে ধ্বংসের মুখে পতিত হবে এবং তার এমন ক্ষতি হবে যা কখনোই পূরণ হবার নয়।
সুতরাং আল্লাহর নৈকট্যের লাভের জন্য পরম ইবাদত (দাসত্ব, আনুগত্য, বন্দেগী)(২৬) এর চেয়ে উত্তম কোনো রাস্তাই নেই। আর এই চিন্তার চেয়ে খারাপ প্রতিবন্ধক এই রাস্তায় আর কিছুই নেই, “আমি অমুক, আমি তমুক, আমি এটা করেছি, সেটা করেছি…… আমি পূর্বে অমুক ছিলাম, তমুক ছিলাম……”
তাই “ইবাদত” দু’টি মূলনীতির উপর স্থাপিত, আর এই দু’টিই তার মূলভিত্তি: পরম ভালোবাসা এবং পরিপূর্ণ বিনয়।
আর এই দু’টি মূলনীতি পূর্বের উল্লেখকৃত দু’টি স্তম্ভমূলের উপর দাঁড়িয়ে থাকে: আল্লাহর করুণা ও উদারতা সমূহ স্বীকার করে নেয়া – আর এটা জন্ম দেবে ভালোবাসার; এবং নিজের দুর্বলতা ও ত্রুটি সমূহ স্বীকার করে নেয়া – যা জন্ম দেয় বিনয়।
আর বান্দা যদি তার প্রতিপালকের দিকে তার যাত্রাপথ এই দু’টি মূলনীতির উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত করে – তাহলে তার শত্রুরা তার উপর বিজয়ী হতে পারবে না, শুধুমাত্র অপ্রত্যাশিত ধোঁকা ছাড়া…
আর আল্লাহ কত দ্রুতই না তাকে পথ দেখিয়ে ফিরিয়ে আনেন, এবং তাকে রক্ষা করেন, এবং তাঁর করুণার দ্বারা বান্দাকে সংশোধন করেন…
………………………………………….. ………………………………………….. ……..
(১) সূরা তাওবা, আয়াত: ৫
(২) উলামাগণ “হামদ” (আল্লাহর প্রশংসা) ও “শোকর” (আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপন) এর মাঝে পার্থক্য উল্লেখ করেছেন, আর তা হলো, “হামদ” কথার মাধ্যমে হয়ে থাকে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَقُلِ الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي لَمْ يَتَّخِذْ وَلَدًا وَلَمْ يَكُن لَّهُ شَرِيكٌ فِي الْمُلْكِ وَلَمْ يَكُن لَّهُ وَلِيٌّ مِّنَ الذُّلِّ ۖ وَكَبِّرْهُ تَكْبِيرًا
বলো, প্রশংসা আল্লাহরই, যিনি সন্তান গ্রহণ করেন নি, তাঁর সার্বভৌমত্বে কোনো অংশীদার নেই এবং যিনি দুর্দশাগ্রস্ত হন না, যে কারণে তাঁর অভিভাবকের প্রয়োজন হতে পারে। সুতরাং সম্ভ্রমে তাঁর মহত্ত্ব ঘোষণা করো। (সূরা বনী ইসরাঈল, আয়াত: ১১১)
অন্যদিকে “শোকর” এর ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন,
يَعْمَلُونَ لَهُ مَا يَشَاءُ مِن مَّحَارِيبَ وَتَمَاثِيلَ وَجِفَانٍ كَالْجَوَابِ وَقُدُورٍ رَّاسِيَاتٍ ۚ اعْمَلُوا آلَ دَاوُودَ شُكْرًا ۚ وَقَلِيلٌ مِّنْ عِبَادِيَ الشَّكُورُ
হে দাঊদ পরিবার! কৃতজ্ঞতার সাথে তোমরা কাজ করতে থাকো। আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পই কৃতজ্ঞ।
(সূরা সাবা, আয়াত: ১৩)
সুতরাং, আল্লাহর (দ্বীনের) জন্যই আল্লাহর দেয়া অনুগ্রহ ও নেয়ামত সমূহকে কাজে লাগানো হলো মহান প্রতিপালকের অনুগ্রহ ও উদারতার প্রতি কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপন করা। আর সেগুলোকে আল্লাহর সন্তুষ্টির কাজে ব্যবহার না করে তার বিপরীতে আল্লাহর অবাধ্যতায় ব্যবহার করা হলো “কুফর” (অকৃতজ্ঞতা, অনুগ্রহসমূহকে অস্বীকার করা)।
আল্লাহ তাআলা সুলাইমান (আলাইহিস সালাম) সম্পর্কে বলেন,
قَالَ الَّذِي عِندَهُ عِلْمٌ مِّنَ الْكِتَابِ أَنَا آتِيكَ بِهِ قَبْلَ أَن يَرْتَدَّ إِلَيْكَ طَرْفُكَ ۚ فَلَمَّا رَآهُ مُسْتَقِرًّا عِندَهُ قَالَ هَٰذَا مِن فَضْلِ رَبِّي لِيَبْلُوَنِي أَأَشْكُرُ أَمْ أَكْفُرُ ۖ وَمَن شَكَرَ فَإِنَّمَا يَشْكُرُ لِنَفْسِهِ ۖ وَمَن كَفَرَ فَإِنَّ رَبِّي غَنِيٌّ كَرِيمٌ
সুলাইমান যখন ওটা সামনে রক্ষিত অবস্থায় দেখলেন তখন তিনি বললেন, “এটা আমার প্রতিপালকের অনুগ্রহ, যাতে তিনি আমাকে পরীক্ষা করতে পারেন, আমি কৃতজ্ঞ নাকি অকৃতজ্ঞ; যে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে, সে তা করে নিজের কল্যাণের জন্য এবং যে অকৃতজ্ঞ হয়, সে জেনে রাখুক যে, আমার প্রতিপালক অভাবমুক্ত, মহানুভব।” (সূরা নামল, আয়াত: ৪০)
এবং আল্লাহ তাআলা ইবরাহীম (আলাইহিস সালাম) সম্পর্কে বলেন,
إِنَّ إِبْرَاهِيمَ كَانَ أُمَّةً قَانِتًا لِّلَّهِ حَنِيفًا وَلَمْ يَكُ مِنَ الْمُشْرِكِينَ
شَاكِرًا لِّأَنْعُمِهِ ۚ اجْتَبَاهُ وَهَدَاهُ إِلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ
নিশ্চয়ই ইবরাহীম ছিলেন (একাই) এক উম্মত, (একটি জাতির জীবন্ত প্রতীক) আল্লাহর অনুগত, একনিষ্ঠ এবং তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না। তিনি ছিলেন আল্লাহর অনুগ্রহের প্রতি কৃতজ্ঞ; আল্লাহ তাঁকে মনোনীত করেছিলেন এবং তাঁকে পরিচালিত করেছিলেন সরল পথে। (সূরা নাহল: ১২০, ১২১)
আল্লাহর প্রতি সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ ও দাসত্ব বরণ করাই হলো শোকর, যেমনটি আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
بَلِ اللَّهَ فَاعْبُدْ وَكُن مِّنَ الشَّاكِرِينَ
অতএব তুমি আল্লাহরই ইবাদত করো এবং কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হও। (সূরা যুমার, আয়াত: ৬৬)
এবং আমাদের মহান প্রতিপালকের ওয়াদা,
وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكُمْ لَئِن شَكَرْتُمْ لَأَزِيدَنَّكُمْ ۖ وَلَئِن كَفَرْتُمْ إِنَّ عَذَابِي لَشَدِيدٌ
যখন তোমাদের প্রতিপালক ঘোষণা করেন, তোমরা কৃতজ্ঞ হলে তোমাদেরকে অবশ্যই অধিক দিবো, আর তোমরা অকৃতজ্ঞ হলে অবশ্যই আমার শাস্তি হবে কঠোর। (সূরা ইবরাহীম, আয়াত: ৭)
(৩) সূরা যুমার, আয়াত: ৩৬
(৪) সূরা হিজর, আয়াত: ৪২
(৫) সূরা সাফ্*ফাত, আয়াত: ১৭৩
(৬) সূরা মুজাদালাহ, আয়াত: ২১
(৭) সূরা আরাফ, আয়াত: ১২৮
(৮) মহামহিমান্বিত আল্লাহ তাআলা বলেন,
…আর আল্লাহকে যে ভয় করে আল্লাহ তার কাজ-কর্ম তার জন্য সহজ করে দিবেন। (সূরা তালাক, আয়াত: ৪)
(৯) সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৯
(১০) সূরা মুনাফিকূন, আয়াত: ৮
(১১) সূরা হাজ্জ, আয়াত: ৩৮
(১২) সূরা আনফাল, আয়াত: ৬৪
(১৩) সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ৬৮
এই আয়াতের অর্থ অপর এক আয়াতের দ্বারা আরো স্পষ্ট হয়:
আর আল্লাহ তো মুত্তাকীদের বন্ধু। (সূরা জাসিয়াহ, আয়াত: ১৯)
(১৪) সূরা বাকারাহ, আয়াত: ২৫৭
(১৫) সূরা মুমিন, আয়াত: ৫১
(১৬) সূরা সাফ্*ফ, আয়াত: ১৪
(১৭) সূরা নিসা, আয়াত: ১৪১
(১৮) সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৩৯
(১৯) সূরা মুহাম্মাদ, আয়াত: ৩৫
(২০) মহামর্যাদাবান আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَمَا يَعْلَمُ جُنُودَ رَبِّكَ إِلَّا هُوَ
…তোমার প্রতিপালকের বাহিনী সম্পর্কে একমাত্র তিনিই জানেন… (সূরা মুদ্দাস্*সির, আয়াত: ৩১)
এবং তিনি আরো বলেন,
وَمَن يَتَّقِ اللَّهَ يَجْعَل لَّهُ مَخْرَجًا
وَيَرْزُقْهُ مِنْ حَيْثُ لَا يَحْتَسِبُ ۚ وَمَن يَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ فَهُوَ حَسْبُهُ ۚ إِنَّ اللَّهَ بَالِغُ أَمْرِهِ ۚ قَدْ جَعَلَ اللَّهُ لِكُلِّ شَيْءٍ قَدْرًا
…যে আল্লাহকে ভয় করে আল্লাহ তার পথ করে দেবেন। আর তাকে তার ধারণাতীত উৎস হতে দান করবেন রিযিক; যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর নির্ভর করে তার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট, আল্লাহ তার উদ্দেশ্য পূরণ করবেনই, আল্লাহ সবকিছুর জন্যে স্থির করেছেন নির্দিষ্ট মাত্রা। (সূরা তালাক, আয়াত: ২, ৩)
(২১) যেমনটি হাদীসে বর্ণিত আছে, “আল্লাহর অধিকারসমূহ সংরক্ষণ করো (তার আদেশ মান্য করার মাধ্যমে), আল্লাহ তোমাকে রক্ষা করবেন; আল্লাহর আধিকারসমূহ সংরক্ষণ করো, তুমি তাঁকে তোমার সামনে পাবে (তিনি তোমাকে পথ দেখাবেন)। যখন তুমি চাও, তখন আল্লাহর কাছেই চাও এবং যখন তুমি সাহায্য চাইবে, তখন তা আল্লাহর কাছেই চাইবে। কলম শুকিয়ে গেছে, (লিখার পর) যা হবার তা অবশ্যম্ভাবী। আর যদি সমগ্র মানবজাতি তোমার কোনো উপকার করতে চায় যা আল্লাহ লিখে রাখেন নি, তবে তারা তা করতে পারবে না; আর যদি তারা তোমার কোনো ক্ষতি করতে চায় যা আল্লাহ তোমার জন্য লিখে রাখেন নি, তবে তারা তা করতে সক্ষম হবে না। আর জেনে রেখো, ধৈর্যের সাথে কোনো কিছু সহ্য করা যা তুমি অপছন্দ করো, সেখানে অনেক কল্যাণ আছে – এবং ‘নাসর’ (বিজয়) আছে ‘সবর’ (ধৈর্য) এর সাথে, ‘ফারাজ’ (স্বস্তি) আছে ‘কারব’ (যন্ত্রণা) এর সাথে, এবং অবশ্যই ‘উসর’ (কষ্ট) এর সাথেই রয়েছে ‘ইউসর’ (স্বস্তি)।” হাদীসটি জামিউল উলূম ওয়াল হিকাম (১/৪৫৯) এ ইবনে রজব (রঃ) এর দ্বারা “হাসান জাইয়্যিদ” হিসেবে সাব্যস্ত হয়েছে। এবং অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, “…জেনে রাখো, সমস্ত মানুষ যদি তোমার কোনো উপকার করতে চায় তবে আল্লাহ তোমার জন্য যা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন, তা ব্যতীত আর কোনো উপকারই তারা করতে পারবে না। আর যদি সমস্ত মানুষ তোমার কোনো অনিষ্ট করতে চায় তবে আল্লাহ তোমার জন্য যা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন তা ব্যতীত আর কোনো অনিষ্টই তারা করতে পারবে না। কলম তুলে নেয়া হয়েছে এবং পৃষ্ঠা শুকিয়ে গেছে।” হাদীসটি উল্লেখকৃত হয়েছে সহীহ তিরমিজী (২০৪৩) এ।
(২২) সূরা সোয়াদ, আয়াত: ৮২, ৮৩
(২৩) সলফে সালেহীনদের (আল্লাহ তাঁদের উপর রহম করুন) অনেকেই বলতেন, “তুমি কত ক্ষুদ্র পরিমাণের অবাধ্য হয়েছো সেদিকে তাকিও না, বরং তুমি যার অবাধ্য হয়েছো তাঁর মহাশক্তিময় রাজকীয় ক্ষমতার দিকে তাকাও।”
(২৪) মহামর্যাদাবান আল্লাহ তাআলা বলেন,
إِنَّ الْمُتَّقِينَ فِي جَنَّاتٍ وَنَهَرٍ
فِي مَقْعَدِ صِدْقٍ عِندَ مَلِيكٍ مُّقْتَدِرٍ
মুত্তাকীরা থাকবে জান্নাতে ও নহরসমূহে। প্রকৃত সম্মানের আসনে, সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহর সান্নিধ্যে। (সূরা কামার, আয়াত: ৫৪, ৫৫)
(২৫) পূর্ণ দোয়াটি হাদীসে বর্ণিত আছে, “‘সাইয়্যিদ আল ইসতেগফার’ হলো, যখন বান্দা বলে, ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক, তুমি ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোনো উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছো আর আমি হচ্ছি তোমার বান্দা এবং আমি আমার সাধ্যমতো (তোমার প্রতি) আমার ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতিতে অঙ্গীকারবদ্ধ রয়েছি, আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট হতে তোমার আশ্রয় ভিক্ষা করি, আমি আমার প্রতি তোমার সকল নেয়ামতের স্বীকৃতি প্রদান করছি, আর আমি আমার গুনাহ খাতা স্বীকার করছি। অতএব তুমি আমাকে মাফ করে দাও, নিশ্চয়ই তুমি ভিন্ন আর কেহই গুনাহসমূহের মার্জনাকারী নেই।’” রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই দোয়াটি সম্পর্কে বলেন, “যে ব্যক্তি নিশ্চিত বিশ্বাসের সাথে সকালে এই দোয়াটি পড়ে এবং সন্ধ্যার পূর্বে মারা যায়, সে জান্নাতীদের একজন হবে, আর যে ব্যক্তি নিশ্চিত বিশ্বাসের সাথে সন্ধ্যায় এই দোয়াটি পড়ে, সে সকাল আসার পূর্বে মারা গেলে জান্নাতীদের একজন হবে।” হাদীসটি উল্লেখকৃত হয়েছে বুখারী (৬৩০৬), আল বাগায়ী এর শরহ আস সুন্নাহ (৩/১০৯), ইবনে তাইমিয়ার মাজমু আল ফাতওয়া (৮/১১৪, ১১/৩৮৮) এ।
(২৬) হাদীসে বর্ণিত আছে,
“একদা ফেরেশতা জিবরীল (আলাইহিস সালাম) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর নিকট এসে বসলেন। তিনি আকাশের দিকে তাকালেন এবং একজন ফেরেশতাকে দেখতে পেলেন। সুতরাং জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তাঁকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘এই ফেরেশতার সৃষ্টি হবার পর থেকে আজকের পূর্ব পর্যন্ত তা কখনোই অবতীর্ণ হয় নি।’ সুতরাং যখন সেই ফেরেশতা অবতরণ করলেন, তিনি বললেন, ‘হে মুহাম্মাদ! আমি আপনার প্রতিপালকের কাছ থেকে প্রেরিত হয়েছি (অনুসন্ধান করতে) যে, আপনি কোনটি হতে চান, একজন নবী ও রাজা নাকি একজন বান্দা ও রাসূল?’ জিবরীল (আলাইহিস সালাম) তাঁকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘আপনার রবের প্রতি বিনীত হোন, হে মুহাম্মাদ!’ আর এভাবে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, ‘না, বরং একজন বান্দা ও রাসূল।’” হাদীসটি উল্লেখকৃত হয়েছে আস সিলসিলাহ আস সহীহাহ্ (১০০২) এবং ইমাম আহমদের মুসনাদ (২/২৩১) এ।