JustPaste.it

কি কারণে আপনি তাদের সমর্থন করছেন, হে বিপথগামী পথিক??

বিভিন্ন জিহাদী গ্রুপের সদস্য “ইসলামিক স্টেট” এ যোগদান করছে, এর মানে এই নয় যে “ইসলামিক স্টেট” গ্রুপ হক্ব পথে আছে। কেননা পূর্বের যুগের “মুসলিমদের”একটি বড় অংশ মুসাইলামা ইব্‌ন কাযযাবের দলে যোগ দিয়েছিল, কিন্তু এটা মুসাইলামাকে হক্বে পরিণত করে নি। তেমনি পশ্চিমা দেশগুলোর মুসলিম যুবকরা “ইসলামিক স্টেট” গ্রুপে যোগ দেয়া প্রমাণ করে না যে তারা হক্ব পথে আছে। প্রকৃতপক্ষে কিছু ভিডিও আর স্টেটমেন্ট পড়েই তারা মনে করেছে যে তারা হক্বপন্থী মুজাহিদদের সাথে যোগদান করতে যাচ্ছে এবং তারা খুব মহৎ কাজ করতে যাচ্ছে; অথচ বাস্তবতা হচ্ছে যে তাদের অজ্ঞতার দরুণ তারা চরম ভ্রান্তির মাঝে নিপতিত হচ্ছে।

“ইসলামিক স্টেট” গ্রুপে অনেক বেশি যোদ্ধা আছে, এটাও তাদের হক্ব হওয়ার মাপকাঠি না, এবং কখনো ও ছিল না; যেহেতু আল্লাহ বলেন যে, যদি আমরা বেশির ভাগ লোকের মত অনুসরণ করি, তবে নিশ্চয়ই তারা আমাদের বিপথে নিয়ে ছাড়বে।

“ইসলামিক স্টেট” গ্রুপের সদস্যদের তাদের গ্রুপ, তাদের যোদ্ধা, তাদের নেতাদের নিয়ে ভালো ভালো স্বপ্ন দেখে, এমনকি এটাও তাদের হক্ব হওয়ার কোন প্রমাণ না। কেননা এক ব্যক্তি ইমাম আহমাদের কাছে এসে বলল, “আমি আপনাকে জান্নাতে দেখলাম (স্বপ্নে)।” ইমাম আহমাদ প্রতিত্তোরে বললেন, “(ভালো) স্বপ্ন মু’মিনদের প্রশান্তি দেয় কিন্তু বিপথগামী করে না। তবে এমনও লোক আছে যাদেরকে লোকে তুমি যেমনটা বললে, এমন স্বপ্নে দেখেছে (অর্থাৎ কেউ স্বপ্নে দেখেছে যে সেই ব্যক্তি জান্নাতে) , কিন্তু সেই ব্যক্তি আজকে খাওয়ারিজদের মানহাজে চলছে” [আস-সিয়্যার ১১/২২৭]

শরীয়াহর দিকে ডাকা এবং আল্লাহর রাহে যুদ্ধ করার দাবী করাও হক্ব হওয়ার জন্য যথেষ্ঠ না। কেননা খাওয়ারিজীরাও কিতাবুল্লাহর দিকেই ডাকত, এবং যুদ্ধের ব্যাপারেও তারা খুব সচেতন ছিল। কিন্তু তাদের ভ্রান্ত বিশ্বাসের কারণে ভুল ভাবে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তারা দ্বীন ইসলাম থেকে বেরিয়ে গেছে, অথচ তারা মনে করেছিল যে তারা খুব ভালো কাজই করছে।

ইরাক এবং সিরিয়ার বর্ডার ভাঙ্গা হক্ব হওয়ার জন্য যথেষ্ঠ না, কারণ আরো অনেকগুলো বর্ডার উম্মাহর মাঝে এখনো ও রয়ে গেছে। অবশ্যই সত্যিকারের খিলাফাহ সকল বর্ডার ভেঙে মুসলিমদের একটি রাষ্ট্রে ঐক্যবদ্ধ করবে।

কিছু ভ্রান্ত ধারণার নেতা, দা’ঈ এবং তাদের সমর্থকদের, “ইসলামিক স্টেট” গ্রুপকে খাওয়ারিজ বলা এটা প্রমাণ করে না যে, তারা (“ইসলামিক স্টেট”) হক্ব পথে রয়েছে। এমনকি মুর্যিয়া, মাদখালি, ইখওয়ানের শাইখ এবং নেতাদের আল-কায়িদাকে খাওয়ারিজ আখ্যায়িত করাও আল-কায়িদাকে হক্ব প্রমাণ করে না। একমাত্র খাওয়ারিজদের আকীদা, বৈশিষ্ট্যের সাথে আল-কায়িদার আকীদা এবং মানহাজ আমরা তুলনা করার পরই এই কথার মিথ্যা হওয়া (অর্থাৎ আল-কায়িদা খাওয়ারিজ এই দাবির মিথ্যা হওয়া) আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়।
বড় একটি অঞ্চল দখল করা আর এর উপর ক্ষমতা প্রতিষ্ঠা করাও হক্বের মাপকাঠি না। কেননা তাতাররাও মুসলিম বিশ্বের বড় একটি অংশ শাসন করেছিল, অথচ দ্বীন ইসলামের সাথে তাদের কোন দেনা-পাওনা ছিল না।

আরবী ভাষায় দক্ষতা, সুন্দর কুরআন তিলাওয়াত এবং বাকপটুতাও হক্বের মাপকাঠি না। নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ صلى الله عليه و سلم বলেছেন যে খাওয়ারিজরা হবে কিছু স্বল্প বুদ্ধির যুবক, যারা হবে বাকপটু এবং কথায় সবচেয়ে চিত্তাকর্ষক।

“ইসলামিক স্টেট” গ্রুপের অধীনে সুখী এবং নিরাপদ জীবনে বসবাস করলেও, সেটা তাদের হক্ব প্রমাণের জন্য যথেষ্ঠ না। তবে এটা আমাদের বিস্মিত করে না যে, প্রোপাগান্ডা ভিডিওগুলোতে, “ইসলামিক স্টেট” গ্রুপের অধীনে জনগণকে যেভাবে দেখানো হয়, বাস্তবতা সেটার চেয়ে অনেক ভিন্ন, এবং ভুক্তভোগীরাই এ ব্যাপারে সাক্ষ্য দেন।

মডারেট এবং বিপথগামী স্কলাররা তাদেরকে (“ইসলামিক স্টেট” গ্রুপ) “তাকফিরি, ইরাহাবি” বলার মানে এই না যে তারা হক্ব পথে আছে। কেননা “GIA এবং “তাকফির ওয়াল হিজরাহ” এর মত দলগুলোর ব্যাপারে একইভাবে খাওয়ারিজ বলা হত, এবং প্রকৃতপক্ষেই তারা ছিল আহলুস সুন্নাহর আকীদাহ এবং সত্য থেকে অনেক দূরে।

সিরিয়ার এবং সিরিয়ার বাইরের অঞ্চল থেকে বা’য়াহ পাওয়ায় তাদের হক্ব প্রমাণের জন্য যথেষ্ঠ না। এমনকি আফগান থেকে লিবিয়া, সোমালিয়া থেকে ফিলিপাইন, মুসলিম বিশ্বের অধিকাংশ অঞ্চল থেকেও যদি তাদের সমর্থন করা হয়, তবুও সেটা তাদের “স্টেট” এর ভ্যালিডিটি একবিন্দুও বাড়াবে না, এবং মুওয়াহিদিন এবং মুজাহিদিনদের বিরুদ্ধে তাদের অপরাধের দায়ও একবিন্দু কমাবে না।

তাদের চকচকে ভিডিওগুলোতে উপস্থাপিত যোদ্ধা, যাদেরকে কুরআনের বানী বলতে দেখা যায়, রাসূলুল্লাহ صلى الله عليه و سلم এর হাদিস বলতে শোনা যায়, সেটাও তাদের হক্ব প্রমাণের জন্য যথেষ্ঠ না। কেননা বর্তমান যামানর মুর্যিয়ারা, সুফীরা, বেরেলভীরা, ইখওয়ানীরা, আশ’আরীরা এবং হিজবুত তাহরীরসহ সকল বিভিন্ন মুসলিম দলগুলোকেই কুরআনের বাণী এবং রাসূলুল্লাহ صلى الله عليه و سلم এর হাদিসের মাধ্যমে তাদের মানহাজে লোক ভিড়াতে দেখা যায়, তাদের সকলের ক্ষেত্রে কি সেটা হক্ব প্রমাণের জন্য যথেষ্ঠ?

ইসলামী স্লোগান আর বেশভূষা তাদের হক্ব হবার প্রমাণ না। কারণ খাওয়ারিজদের স্লোগান ছিল “ইন্না হুকমু ইলা লিল্লাহ” [শাসন/আইন একমাত্র আল্লাহ-র] এবং তাদের ইবাদাত ছিল অসামান্য এবং খাওয়ারীজদের মুসলিমদের মধ্যে সবচাইতে ধর্মপ্রাণ মনে হত।

পশ্চিমা দেশগুলোতে যেসব দা’ঈ “হক্ব কথা বলে” এবং “তাগুতকে অস্বীকার” করে বলে পরিচিত, তারাও যদি তাদের সমর্থন করে, তবুও সেটা তাদের হক্ব প্রমাণের জন্য যথেষ্ঠ না। বস্তুতঃ, তাদের জিহ্বা থেকে জিহাদের মানহাজের কোন আলিম রক্ষা পান নি। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী জিহাদের মানহাজের আলিমরা এখন “বিভ্রান্ত” এবং “বিপথগামী” হয়ে গেছেন! পশ্চিমা যুবকেরা তাদের থেকেই ইলম আহরন করছে এবং তাদের কাছে এই দা’ঈদের গ্রহণযোগ্যতা থাকার অর্থ এই না যে এরাই একমাত্র সত্য পথের পথিক।

খিলাফাহ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সোচ্চার হওয়া, আল্লাহর শত্রুদের ভীত-সন্ত্রস্ত করা, শাহাদাহ এবং আল্লাহর সাক্ষাত –ইত্যাদি ব্যাপার নিয়ে নাশীদ তৈরি করাও “ইসলামিক স্টেট” গ্রুপকে হক্ব প্রমাণের জন্য যথেষ্ঠ না। কেননা ইসলামের আবেগ ধারণকারী যেকোন দলই এইরকম শ্লোগান এবং কথা দিয়ে অডিও-ভিডিও বানানোর ক্ষমতা রাখে।

যুদ্ধক্ষেত্রে তাদের মধ্যে মৃত কারো হাস্যজ্জ্বল মুখও তাদের হক্ব হওয়াকে প্রমাণ করে না। কেননা তারা যেসব মুজাহিদিনদের “মুরতাদ” এবং “সাহওয়াহ” বলে থাকে তাদের মৃতদের মধ্যেও এই রকম হাস্যজ্জ্বলদের দেখা যায়, তবুও এটা তাদের হক্ব হওয়ার জন্য যথেষ্ঠ না, আর না অনুমান করার জন্য যথেষ্ঠ যে তারা সত্যপন্থী দল।

বিভিন্ন দেশ জোট বেঁধে “ইসলামিক স্টেট” গ্রুপের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, এটাও তাদের হক্ব বলে প্রমাণ করে না। কেননা নৎসী বাহিনীকেও সারা বিশ্ব ঘৃণা করে, তাদের বিরুদ্ধে আমিরিকা, রাশিয়া, ব্রিটেন সকলে একাট্টা হয়ে যুদ্ধ করেছিল, তবুও কী সেটা তাদের সত্যপন্থী প্রমাণ করে দেয়?

নিয়ন্ত্রিত এলাকায় হুদুদ [ইসলামিক শাস্তি] কায়েম করাও, হক্ব হবার জন্য যথেষ্ঠ নয়। এমনকি আস-সুলুল-ও (তাগুত আল–সাউদ রাজপরিবার) এর জনগণদের উপর কিছু হুদুদ জারী রেখেছে, অথচ এটা কী তাদের হক্বপন্থী প্রমাণ করে?

হে সত্যান্বেষীরা, হে প্রিয় আন্তরিক ভাই-বোনেরা!! দ্বিধা-দন্দ্ব থেকে নিজেদের মুক্ত করুন। নিজেদের মুক্ত করুন “জামা’তিদ দাওলাহ” এর মিথ্যা, প্রতারণা, মনগড়া কথাবার্তা, অপবাদ আরোপ এবং বিপথগামীতা থেকে। তাদের ভিত্তিহীন মিথ্যা দাবীর কারণে বোকা বনে যাবেন না! ইলম অন্বেষণ করুন, আলিমদের কাছে আসুন, তাওহীদ এবং জিহাদের আলিমদের নিকট ফিরে আসুন। আবেগ অথবা প্রতারণা নয়, নিজের কল্যাণকে খুঁজে নিন।

ভাই আবু জুবাইর  হতে…