শিহাব আহমেদ তুহিন রচিত
“হারিয়ে যাওয়া মুক্তো” গ্রন্থের রিভিউ সংকলন
শিহাব আহমেদ তুহিনের কথা
ভার্সিটি লাইফে এসে উস্তাদ আলী হাম্মুদার লেকচারের সাথে পরিচয়। উস্তাদ লেখেনও বেশ ভালো। শুরু থেকেই তার ‘Daily Revivals’-সিরিজটি খুব ভালো লাগতো। তিনি সেখানে এমন চল্লিশটি বিষয় নিয়ে এসেছেন যা রাসূল (সা) ও সাহাবাদের মধ্যে প্রচলিত ছিলো, কিন্তু এখন হারিয়ে গেছে। সে সিরিজগুলো নিজের মতো করে লিখতে থাকি ‘হারিয়ে যাওয়া মুক্তো’ নামে। এমন কিছু কথা এখানে সংযুক্ত করেছি যা আমাদের দেশের ও সময়ের সাথে খুবই সঙ্গতপূর্ণ। আর এ সংযোজন উস্তাদের অনুমতি নিয়েই করেছি।
.
ইমাম নববী (রহ) ‘হাদিসুল আরবাইন’ বা ‘চল্লিশ হাদিস’ নামে একটি বই লিখেছিলেন। নাম চল্লিশ হাদিস হলেও সেখানে হাদিস ছিলো মোট ৪২টি। ইমাম নববী (রহ)-এর প্রতি ভালোবাসায় উস্তাদ আলী হাম্মুদার ৪০ পর্বের সাথে আরো ২টি পর্ব যুক্ত করে বানানো হয়েছে মোট ৪২টি পর্ব। সংযুক্ত করা হয়েছে আড়াইশোর মতো রেফারেন্স।
.
অনেকের কাছে সুন্নাহ্ মানেই কঠিন কিছু। যা করলে ভালো, না করলেও সমস্যা নেই। আশা করি এই বইটি পড়ে সবাই অন্যভাবে সুন্নাহ্কে দেখতে শিখবে। ভালোবাসতে শিখবে।
ইন শা আল্লাহ্, এই রমাদানেই আসছে। সমর্পণ প্রকাশনীর পক্ষ থেকে। শার’ঈ সম্পাদনা করছেন শায়খ আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া (হাফিঃ)।
অনুবাদক মাসুদ শরীফের প্রিভিউ
২০ মে, ২০১৮।
আবেশে জড়িয়ে আছি।
নাম দেখেই ঠাহর হয়েছিল ভেতরে বৈচিত্র অপেক্ষা করছে। সাধারণত এ বইয়ের নাম হতে পারত, হারিয়ে যাওয়া সুন্নাহ; কিন্তু ওভাবে না বলে নামটা দেওয়া হলো: হারিয়ে যাওয়া মুক্তো। সূচি পড়তে পড়তেই জিভে জল চলে আসছিল। দুটো লেখা পড়ে স্বাদটা চাখা গেছে। পারদ আরও উপরে উঠে গেছে। আপাতত লেখনীর স্বাদেই হারিয়ে থাকতে চাই। তাতে সিয়ামের ক্ষুধাকষ্ট কিছু হলেও কমবে।
নাফিস শাহরিয়ারের রিভিউ
২০ মে, ২০১৮।
বই: হারিয়ে যাওয়া মুক্তো
লেখক: শিহাব আহমেদ তুহিন
প্রকাশনী: সমর্পণ প্রকাশন
প্রকাশের আগেভাগেই হাতে পেয়ে গিয়েছি প্রিয় বন্ধুর লেখা বই। রিভিউ দিবো কি দিবো না চিন্তা করতে করতেই রিভিউ লিখতে বসা।
আমাদের অনেকেরই ধারণা সুন্নাহ খুবই কঠিন জিনিস। আমরা ভাই সাধারণ মানুষ, আমাদের দ্বারা কি এহেন কঠিন জিনিস সম্ভব? সুন্নাহ হতে পারে খুশিতে মহান রবের সিজদায় লুটিয়ে পড়া, নিজের হীনতা প্রকাশ করা, ইগোকে এক পাশে রেখে ‘আমি জানি না’ বলতে পারা। এমনকি ঝুম বৃষ্টিতে ভেজা, খাবারের দোষ না ধরা, বসে জুতা পরা, স্ত্রীর সাথে একসাথে হাঁটা এসবও হতে পারে সুন্নাহ। এই সহজ সুন্নাহগুলো আজ আমরা হারিয়ে ফেলেছি। বইটিতে এই হারিয়ে যাওয়া ‘মুক্তো’গুলোকে আবারও খুঁজে আনা হয়েছে। লেখককে আল্লাহ্ উত্তম প্রতিদান দিক, তাঁর কাজকে কবুল করে নিক।
লেখক বইটাতে একটা চমৎকার প্যাটার্ন অনুসরণ করেছেন। শুরু হয়েছে, বুখারির প্রথম হাদিস “নিয়ত” দিয়ে, আর বইটা শেষ হয়েছে “মৃত্যু” নিয়ে একটি অধ্যায় দিয়ে। এছাড়া রয়েছে ২০০ এর অধিক রেফারেন্স। বন্ধু যে প্রচুর খেটেছে, সেটি বেশ বোঝা যাচ্ছে।
.
রাসূল (সা) এর একটি চমৎকার সুন্নাহ যা বিবাহিতরা আজকেই অনুসরণ করতে পারেন- “ক্লান্ত দিন শেষে একদিন রাতের বেলা চেষ্টা করেই দেখুন না। টিভিটা বন্ধ করুন, মোবাইলটাও না হয় বাসাতেই রাখুন। প্রিয়তমাকে নিয়ে একটু হাঁটতে বের হোন। তার চোখে চোখ রেখে ভালোবাসার কথা বলুন। হাতে হাত রেখে হারিয়ে যান দূরে কোথাও।” [“নিশিতে দুজনে”, হারিয়ে যাওয়া মুক্তো]
হারিয়ে যাওয়া এই মুক্তোগুলো যেন আবারও হারিয়ে না যায়...
এ আর রহমানের রিভিউ
২০ মে, ২০১৮।
কিছু মানুষের লেখা পড়ে নতুন ভাবে ভাবতে শিখি।
যুগে যুগে উলামাগণ ইসলামি উত্তম আদর্শগুলো উম্মতের সামনে এনে দেখিয়েছেন কেমন ছিল আমাদের জীবনের গতি আর আজ কেমন!
বড় অবাক লাগল যখন দেখলাম ভার্সিটি পড়ুয়া তবে দীনি শিক্ষার তালেব এক ভাই এত সুন্দর করে কথা গুলো সাজিয়েছে।আমার কাছে মনে হয়েছে, লেখক মনের থেকে বড় দরদ নিয়ে লিখেছে।
প্রশংসা করা নিষেধ তাই করব না। শুধু বলব, এই লেখককে আমি কাছ থেকে দেখেছি, আমার খুবি প্রিয় এক মানুষ।আর আল্লাহ জন্য আপনাকে অনেক ভালোবাসি।
সায়মা সাজ্জাদ মৌসি’র রিভিউ
২১ মে, ২০১৮।
বুক রিভিউঃ হারিয়ে যাওয়া মুক্তো
লেখকঃ শিহাব আহমেদ তুহিন
রমাদ্বানে অন্য সব বই রেখে শুধু কুরআন পাঠে সময় দিবো ঠিক করেছিলাম তবে এই বইটি পড়ব ঠিক করেছিলাম কারন পরিচিতিতে পড়েছিলাম এই বইটি রাসূলের ﷺ হারিয়ে যাওয়া সুন্নাহ নিয়ে।আলহামদুলিল্লাহ্ বইটির প্রত্যেক পাতায় মুগ্ধতা!অসাধারণ একটি বই..
মুমিন বান্দা হতে হলে রাসূলকে ﷺ ভালোবাসতে হবে আর এরজন্য তাঁর ﷺ সুন্নাহ গুলোকে অবশ্যই আঁকড়ে ধরতে হবে।এই আধুনিক যুগে যে আমরা পছন্দের কাজগুলো করি অনেক কিছুই যে রাসূল ﷺ করতেন সেটা জানিনা।সুন্নাহ ভেবে করলে এই কাজগুলোর মাধ্যমেই যে সাওয়াব পেতে পারি। সেই গুলোও খুব সুন্দর ভাবে লেখক উপস্থাপন করেছেন।আমাদের দ্বীনের সৌন্দর্যকে ফুটিয়ে তুলেছেন।
কিছু জিনিস তাই বলতে ইচ্ছে করছে।যা দ্বীনের পথে এসে অনুভব করেছি যা এই বইতেও আরো সুন্দর ভাবে বলা হয়েছে।
১.
ছোটবেলা থেকেই আমার আকাশ খুব পছন্দ।আকাশ দেখা,মুঠোফোনে আকাশ মুহূর্তগুলো বন্দি করা ছিল আমার প্রিয় শখগুলোর একটি।দ্বীনের পথে এসে বুঝেছি মুসলিম হিসেবে আমাদের উচিত সবকিছু নিয়ে চিন্তা করা,আল্লাহর স্মরণে অন্তর সিক্ত করা।
আফসোস লেগেছিল এটা ভেবে প্রতিদিন কত শত বার আকাশে চোখ রেখেছি কিন্তু কখনো আল্লাহর এই নির্দশন নিয়ে ভাবিনি,তাঁর স্মরণে,চিন্তায় মুগ্ধ সময় পার করিনি।অথচ আকাশ দেখার প্রিয় শখটাকে,নিছক শখ না বানিয়ে রাসূলের ﷺ সুন্নত হিসেবে করে ইবাদতে পরিণত করতে পারতাম!
এই বইয়েও খুব সুন্দর ভাবে হারিয়ে যাওয়া সুন্নাহ নিয়ে বলা হয়েছে।তবে এই বইয়ে আমি এই সম্পর্কে কতগুলা হাদিস পড়লাম!অথচ কখনো প্রয়োগ করিনি জীবনে!আলহামদুলিল্লাহ্ এই বই থেকে জানতে পারলাম,আরো ভালো করে উপলব্ধি করলাম।আল্লাহ লেখক কে তাঁর প্রিয় বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুণ। আমিন।
বই থেকে হাদিসগুলো সহ কিছু অংশ না দিলেই নয়ঃ
রাসূলের ﷺ আরেকটি সুন্নাহ যা অনেকেই ভুলে গিয়েছে।যে সুন্নাহটি আমাদের জানিয়ে দেয় রাসূলের ﷺ অন্তর আসলে কোথায় জুড়ে ছিল।সব সময় কার স্মরণে ব্যস্ত থাকতো।রাসূল ﷺ বলেছেন,
"যে ব্যাক্তি পরিপূর্ণভাবে ওযু করবে,তারপর আকাশের দিকে তাকিয়ে বলবে,
'আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি,আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই,তাঁর কোন শরীক নেই।আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি,মুহাম্মদ ﷺ তাঁর বান্দা ও রাসূল'
জান্নাতের আটটি দরজা তার জন্য খুলে দেয়া হবে।ঐ ব্যক্তি যে দরজা দিয়ে ইচ্ছে করবে,সে দরজা দিয়েই প্রবেশ করতে পারবে"
-সুনানে নাসাঈ,হাদিস নংঃ১৪৯
প্রায়ই রাসূল ﷺ এ কাজটি করতেন।গভীর মনোযোগে আকাশের দিকে তাকাতেন।এক সাহাবির বর্ণনায়,
"আর তিনি (রাসূলﷺ)প্রায়ই আকাশের দিকে মাথা তুলতেন"
-সহীহ মুসলিম,হাদিস নংঃ২৫৩১
এমনকি রাসূল ﷺ বারবার আকাশের দিকে তাকানোর কথা আল্লাহ তা'আলা
কুরআনেও উল্লেখ করেছেনঃ
"নিশ্চয়ই আমি আপনাকে আকাশের দিকে তাকাতে দেখি"
কেউ কি কখনো খেয়াল করেছেন,পবিত্র কুরআনে যতবার 'আসমান ও জমিন'এর কথা বলা হয়েছে, প্রায় সব ক্ষেত্রেই আসমানেত কথা আগে বলা হয়েছে?
এটা মোটেও কোন কাকতালীয় ব্যপার না।ভালোভাবে খেয়াল করলে দেখা যায়,যেসব আয়াতে আমাদের চিন্তা ভাবনা করতে বলা হয়েছে, সেসব আয়াতে আসমানের কথা আগে উল্লেখ করা হয়েছে।এটার পিছনে কি আলাদা কোন কারন আছে?
হ্যাঁ!অবশ্যই রয়েছে।আমাদের উপরে যে আকাশ রয়েছে সেটা অবশ্যই বিশেষ কিছু!
এই বিস্তৃত আকাশ আপনাকে করুণাময় আল্লাহ তা'আলার কথা মনে করিয়ে দেবে।তাঁর স্মরণে অন্তরকে বিগলিত করে দেবে।তাই চোখ দুটিকে মুক্তভাবে আকাশের দিকে তাকাতে দিন।বিশেষ করে যখন কোন দু'আ করছেন,কুরআনের কোনো আয়াত নিয়ে চিন্তা ভাবনা করছেন।এমনকি এলোমেলো পায়ে যখন আপনি কাজ করতে যান,চলার পথে একটু আকাশের দিকে তাকিয়েই দেখুন না।দেখবেনঃ
-কীভাবে আল্লাহর প্রতি আপনার বিনয় বেড়ে যায়।
-কীভাবে আপনার ভেতরে মানুষকে বেশি সমীহ করার প্রবণতা কমে যায়
-কীভাবে আল্লাহ-ভীতি বেড়ে যায়
-কীভাবে মানুষকে ভয় পাওয়ার প্রবনতা কমে যায়
-কীভাবে শুধু আল্লাহর প্রতি নির্ভরতা এবং আনুগত্য বেড়ে যায়
-কীভাবে মানুষের প্রতি নির্ভরতা আর অনুগত্য কমে যায়
(বইটির 'দৃষ্টি যখন আকাশে' অধ্যায়ের অংশ বিশেষ)
২.
মন খারাপ বা বিষণ্ণতায় আমরা সবাই কম বেশি ভুগে থাকি।মন খারাপ হবে, বিষণ্ণ লাগবে এটাই স্বাভাবিক।কিন্ত যে মুমিন সে এই সময় আল্লাহ কে স্মরণ করবে।এই ক্ষেত্রে রাসূলের ﷺ একটি নসীহা আমাদের সাথে আছে।তিনি আমাদের বিষণ্ণতা দূর করার একটি ঔষুধের কথা বলে গেছেন।
হারিয়ে যাওয়া এই সুন্নাহ নিয়েই বলা হয়েছে 'মন ভালো নেই' অধ্যায়ে।অবশ্যই পড়া উচিত।এটা পড়ে মন খারাপ নিমিষেই উধাও হবে ইনশাআল্লাহ।
৩.
'গুনাহের পর দুই রাকাত সালাত'অধ্যায়টাতে তওবার তাৎপর্যের কথা বলা হয়েছে খুব সুন্দর ভাবে,যা আমাদের সবার লাইফেই খুব দরকার।কারন আমরা সবাই ই জেনে না জেনে পাপ করি।
৪.
স্যাকুলার লাইফে যখন ছিলাম,
একটা আচ্ছন্নতার নাম ছিল হূমায়ূন আহমেদ।বৃষ্টিবিলাস,জ্যোৎস্না দেখা, হিমুর খালি পায়ে হাঁটা এসবে ছিল মুগ্ধতা।যখন আল্লাহর অশেষ রহমতে এইসব অন্ধকার ছেড়ে দ্বীনের আলোয় হাঁটতে শুরু করেছি প্রথম কিছুদিন পরই রাসূলের ﷺ পছন্দ গুলো পড়ে অবাক হয়েছি।আমার রাসূল ﷺ খালি পায়ে হাঁটতেন,বৃষ্টিতে ভিজতেন,প্রিয়তমার সাথে জ্যোৎস্না রাতে হাঁটতেন।এসবই সুন্নাহ।অথচ কতটা বছর এই কাজগুলো ভালোবেসে করে এসেছি কিন্তু সুন্নাহ ভেবে তো করিনি!এত বিস্মিত হয়েছিলাম সেদিন!আফসোস হয়েছিল আর মুগ্ধতা কাজ করছিল আরো দ্বীনের প্রতি।আমার রাসূলের ﷺ প্রতি।
এই বইয়েও এমন হারিয়ে যাওয়া সব সুন্নাহ আলোচনা করে হয়েছেঃ
'ঝুম বৃষ্টিতে, 'নিশিতে দুজনে', খালি 'পায়ে হাঁটা' অধ্যায় গুলোতে,কিভাবে নিত্য দিনের এই কাজগুলোকে ইচ্ছে করলেই সুন্নাহ হিসেবে পালন করে ইবাদতে পরিনত করতে পারি।
৫.
বইয়ের শুরুতেই নিয়তের গুরুত্ব নিয়ে বলা হয়েছে,কিভাবে নিয়তের মাধ্যমেই আমরা একটু ছোট্ট কাজকেও সুন্নাহ দিয়ে সাজিয়ে ইবাদতে পরিনত করতে পারি 'মনের কথা' অধ্যায়ে।
৬.
" দু'আ " যে কত শক্তিশালী অস্ত্র,নিছক ঠোঁট নাড়ানোতেই যে দু'আ সীমাবদ্ধ নয় এবং সিরিয়া সহ বিভিন্ন দেশে আমাদের নির্যাতিত সকল মুসলিম ভাই বোনের জন্য দু'আ করা কতোটা জরুরি তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে 'সিরিয়ার জন্য' অধ্যায়ে।
৭.
শেষের দিকে একটি হারিয়ে যাওয়া সুন্নাহ যেটার সাথে আমি একদম অপরিচিত ছিলাম তা হচ্ছে অসীয়ত করে যাওয়া।রাসূল ﷺ বলেছেন,
"অসীয়তযোগ্য কিছু রয়েছে এমন কোমো মুসলিমের উচিত নয় যে,সে দুরাত কাটাবে অথচ তার কাছে অসীয়ত লিখিত থাকবে না"
-সহীহ বুখারী, হাদিস নংঃ২৭৩৮
সেই সাথে একটি নমুনা অসীয়তনামাও লেখক সংযুক্ত করে দিয়েছেন আমাদের সুবিধার জন্য। আল্লাহ লেখকের গুনাহ মাফ করুন,জান্নাতুল ফেরদাউস দান করুন।
এরকম আরো হারিয়ে যাওয়া সুন্নাহ দিয়ে মোট ৪১ টি সুন্নাহ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে এই বইয়ে। যা আমরা নিত্যদিন করতে পারি একটু খেয়াল করলেই,এতে আমাদের জীবন হবে সহজ আর বিষণ্ণতা মুক্ত।
বইটি পড়ে নিজের লাইফে যে সুন্নাহ গুলো পাওয়া যাবেনা সেগুলো সেই মুহূর্ত থেকেই জুড়ে দেয়া উচিত নিজের সঙ্গে। হারিয়ে যাওয়া এই সুন্নাহ গুলো
আপনার ও আমার জীবনে ভালোবেসে আঁকড়ে ধরে পুনরুজ্জীবিত করি চলুন।কারন আখিরাতের অনন্ত সুখ পেতে হলে,আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই রাসূলকে ﷺ সবচেয়ে বেশি ভালোবাসতে হবে।যে ব্যক্তি সবকিছুর চেয়েও বেশি রাসূলকে ﷺ ভালোবাসেনা সে মুমিন নয়।তাই রাসূলের ছোট বড় সব সুন্নাহকে ভালোবেসে আঁকড়ে ধরতে হবে।
কারন কিয়ামতের দিনের সেই উত্তপ্ত দিনে তিনিই ﷺ পান করাবেন বিশ্বাসীদেরকে হাউজে কাউসারের পানি!কী ভীষণ সুন্দর হবে সেই মুহূর্তটি!
এই মুহূর্তটি পেতে হলে অবশ্যই রাসূলকে ﷺ ভালোবাসতে হবে।তাঁর ﷺ প্রত্যেকটা সুন্নাহ পালন করতে হবে। হারিয়ে যাওয়া অনেক সুন্নাহ গুলো পড়ে নিজের জীবনে সেগুলো জুড়ে দেয়া উচিত আমাদের।
"হারিয়ে যাওয়া মুক্তো "বইটিতে আলোচিত সুন্নাহ গুলো তাই আমাদের দুনিয়া ও আখিরাত দুই জীবনের পাথেয়। খুব সুন্দর করে লেখক সুন্নাহর আলোয় সাজিয়েছেন বইটি।আল্লাহ তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন ও তাঁর প্রিয় বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন।
বইটি বের হয়েছে সমর্পণ প্রকাশনী থেকে।
প্রচ্ছদ মূল্য ২০০ টাকা।
আরিফুল ইসলামের রিভিউ
২২ মে, ২০১৮।
বই রিভিউ: হারিয়ে যাওয়া মুক্তো
লেখক : শিহাব আহমেদ তুহিন
(১)
একজন সুপারস্টার এর একটা মুভি রিলিজ হবে। মুভিটির ট্রেলার ও বের হয়েছে। মুভির ট্রেলার বের হবার পর বন্ধুমহলে হিড়িক পড়ে যেতো। হাঁটতে-বসতে মুভিটি নিয়ে আড্ডা হতো বন্ধুমহলে।
মুভি নিয়ে কোনোকালেই আমার অতি আগ্রহ ছিলো না, তাই এসব আড্ডায় অংশ নিতাম না, ওদের মাতামাতি শুনেই যেতাম কেবল।
আগ্রহ ছিলো খেলা নিয়ে। Bangladesh's tour to England, El Clasico, Super Clasico এসব খেলাগুলো দেখার জন্য দিনক্ষণ গুণতাম। 3 days to go, 10 hours to go, one hour to go...
বইমেলা শুরুর আগে পাঠকরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে তাদের প্রিয় লেখকের এবার কী বই আসবে। বর্তমানে জীবিত এমন কয়জন লেখক আছেন আমি জানিনা, যাদের 'নেক্সট বই' আসার অপেক্ষায় থাকেন পাঠকরা।
এই বইয়ের লেখকের কোনো বই পড়ার আগেই অপেক্ষায় আছি, লেখকের 'প্রথম বই' (আমার জানামতে লেখকের এটা প্রথম 'একক' বই) কবে হাতে পাবো!
বইয়ের 'ট্রেলার' যেদিন পড়লাম, আগ্রহের মাত্রা আরেকটু বেড়ে গেল।
আলহামদুলিল্লাহ, বইটি প্রকাশ হবার খুব সম্ভবত দুদিন পর বইটা পড়ার সৌভাগ্য হয়।
এই প্রথম কোনো বই প্রকাশ হবার পর সবচেয়ে কম সময়ে কোনো বই পড়লাম। 'সুপারস্টার' এর লেখা বলে কথা!
(২)
বইটি সাজানো হয়েছে 'হারিয়ে যাওয়া মুক্তো' দিয়ে।
কাজী নজরুল ইসলামের 'সংকল্প' কবিতার বীর ডুবুরির মতো।
"...কেমন করে বীর ডুবুরি
সিন্ধু সেঁচে মুক্তা আনে।..."
মুক্তো কী?
মূল্যবান সম্পদ।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের 'সুন্নাত' এর চেয়ে আমাদের কাছে আর কী এমন মূল্যবান হতে পারে?
বইটিতে লেখক ডুবুরির মতো সেই মূল্যবান মুক্তো দিয়ে বইটি সাজিয়েছেন।
(৩)
বেশিরভাগ অনুচ্ছেদ শুরু করার আগে লেখক প্রথমে আমাদের বাস্তবতার দিকে ইঙ্গিত করে বুঝানোর চেষ্টা করেছেন, এই সিচুয়েশনে আমরা কোন কাজটা করি, করতাম আর একই সিচুয়েশনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু কী করতেন।
আর কনক্লুশনে এসে লেখক বুঝাতে চেয়েছেন, এই সুন্নাতটা ফলো করা তো অসম্ভব না, আমরা একটু চেষ্টা করলে আর আল্লাহ সাহায্য করলে ইন-শা-আল্লাহ পারা সম্ভব।
'ওকে দেখছি না যে?' লেখাটির কনক্লুশনে লেখক লিখেছেন, "আমরা নিশ্চয়ই নবিদের চেয়ে বেশি ব্যস্ত না।"
মানুষের খোঁজখবর নেবার জন্য আমরা যে 'ব্যস্ততা' -র অজুহাত দেখাই লেখক এখানে ছোট্ট একটা উদাহরণের মাধ্যমে বুঝালেন, আমরা কী এমন ব্যস্ত, আমরা কি নবিদের চেয়েও ব্যস্ত?
লেখার এই এপ্রোচটা ভালো লাগছে।
প্রথমে, আমাদের অবস্থার কথা।
তারপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের কথা।
আর শেষে সবচেয়ে ইম্পর্টেন্ট, সেই সুন্নাতটা কিভাবে আমাদের জীবনে প্রয়োগ করতে পারি তার কথা।
(৪)
রঙ্গিন চশমা চোখে দিয়ে চাকচিক্যময় জীবন যাপন করতে গিয়ে আমরা হারিয়ে ফেলেছি আমাদের মুক্তো, সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাত।
হারিয়ে ফেলা এই মুক্তোগুলোই পারে জঞ্জালকে ছিন্ন করে নোংরা পৃথিবীতে আমাদের জীবনে এক চিলতে আলো এনে দিতে।
মুক্তোর সন্ধান পাবার পর হাতের ময়লা কয়লাখনি ফেলে দিতে আমাদের আর কোনো টালবাহানা থাকার কথা না।
বইটি প্রকাশ করেছে সমর্পণ প্রকাশন।
প্রচ্ছদমূল্য ২০০ টাকা।
তারেক আজিজের রিভিউ
২৩ মে, ২০১৮।
রাসূল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন "নির্দিষ্ট সময়ে পুরো ঋণ ফিরিয়ে দিতে হিমশিম খাচ্ছে এমন ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে যে দেনা ফিরিয়ে দেয়ার জন্য সময় দেয়, ওই ব্যক্তিকে এমন সওয়াব দেয়া হবে যেন সে প্রতিদিনই সমপরিমাণ টাকা সদকা করছে। আর যে সময় চলে যাওয়ার পরেও ঋণগ্রস্ত ব্যক্তিকে আরও সময় দেয়, তাকে অতক্রম হওয়া প্রতিদিনের জন্য এমন সওয়াব দেয়া হবে, যেন সে প্রতিদিন ধার দেয়া টাকার দ্বিগুন পরিমাণ টাকা সদকা করেছে।" (মুসনাদে আহমদ হাদিস নং ২৩০৪৬)
এ হাদিসে যে কী বিশাল সওয়াবের কথা বলা হয়েছে তা হয়তো অনেকেই ধরতে পারেন নি।
একটা উদাহারণ দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছি:
ধরা যাক, খালিদ করিমকে ২ হাজার টাকা ধার দিলো জানুয়ারি মাসের ১ তারিখে। তারা একমত হলো যে, জুলাই মাসের ১ তারিখে করিম সে টাকা ফেরত পাবে। তাহলে খালিদ এ ছয় মাসে কত টাকা সদকা দেয়ার সওয়াব পেল? এটা বের করতে রকেট সায়েন্টিস্ট হবার প্রয়োজন নেই।
৬ মাসে ১৮০ দিন। ওপরের হাদিস অনুযায়ী, খালিদ প্রতিদিনই ২০০০ টাকা সদকা দেয়ার সওয়াব পাচ্ছে। তাহলে ৬ মাসে সে পাচ্ছে (১৮০*২০০০) তিন লক্ষ ষাট হাজার টাকা সদকা করার সওয়াব।
কিন্তু কোনো কারণে করিম সে টাকা ৬ মাস পর ফেরত দিতে পারলনা। তাহলে এরপরের প্রতিদিনের জন্য খালিদ পাচ্ছে (দুই হাজার টাকার দ্বিগুণ) ৪০০০ টাকা সদকা করার সওয়াব। যদি আরও ৬ মাস পর করিম টাকা ফেরত দেয় তাহলে খালিদ এ ৬ মাসে আরও (১৮০*৪০০০) সাত লক্ষ বিশ হাজার টাকা সদকা করার সওয়াব পেয়ে গেল। খালিদ কিন্তু করিমকে দিয়েছিল মাত্র ২০০০ টাকা। দুনিয়ার হিসাব অনুযায়ী, তার ২০০০ টাকার পুরস্কারই পাওয়া উচিত।কিন্তু ইসলামে সে পাচ্ছে (৩৬০০০০+৭২০০০০) সর্বমোট দশ লক্ষ আশি হাজার টাকা সদকা করার সওয়াব।
একজন মধ্যবিত্ত মানুষ হয়তো সারাজীবনেও এত টাকা সদকা করতে পারবে না। কিন্তু তার ভাইকে ঋণ দেয়ার মাধ্যমে সে সহজেই সমপরিমাণ টাকা সদকা করার সওয়াব পেতে পারে।
"আর আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা করেন, তার জন্য বাড়িয়ে দেন" (২:২৬১)
শিহাব ভাইয়ের বইটাতে এইভাবেই হারিয়ে যাওয়া মনিমুক্তো গুলো লুকিয়ে আছে। এরপরেও কেন এই বই পড়বেন না?
চৌধুরী সাঈদুজ্জামানের রিভিউ
বই রিভিউ : হারিয়ে যাওয়া মুক্তো
লেখক : শিহাব আহমেদ তুহিন
বইটা যতই পড়ছিলাম,ততই অবাক হচ্ছিলাম।যেসব কাজ আমাদের প্রতিদিনই করতে হচ্ছে,সেসব যদি আল্লাহ তা'আলার সন্তুষ্টি ও সওয়াবের নিয়তে করি,তাহলে সেগুলো নেক আমলে পরিনত হয়ে যাচ্ছে!বইয়ের প্রথম গল্পটাই লেখক নিয়ত দিয়ে শুরু করেছেন।
এখন আমি বলি কোন বিষয়টা আমাকে সবথেকে বেশি টাচ করেছে এবং রিভিউ লিখতে বাধ্য করেছে,সেটি হচ্ছে ''ঝগড়া মিটিয়ে দেওয়া'' শিরোনামের লেখাটি।লেখাটি যখন পড়েছি,অনুশোচনায় মনটি ভরে গেছে।না,আমার সাথে কারও ঝগড়া নেই।কিন্তু আমারই আশেপাশের কিছু এমন মানুষ আছে,যারা পরস্পরে ঝগড়া বিবাদে লিপ্ত হয়ে এখন কথা বলেনা।আমি যখন তাদের ব্যাপারটা জেনেছিলাম,আমি কোনো পরামর্শই তাদের দেইনি।আমি ভেবেছি,তাদের নিজেদের ব্যাপার,মিটিয়ে ফেললে ফেলুক,না ফেললে নাই।কিন্তু ব্যাপারটা যে কত নীচু মানসিকতার,আর রাসুলের আদর্শের খেলাফ,এটা কখনও চিন্তাও করিনি।আল্লাহ এখন আমাকে বুঝ দিয়েছেন।বইটার ওসীলায় আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি।জানিনা,লেখককে কীভাবে শুকরিয়া জানাবো।আল্লাহুম্মাগফির লি-শিহাব,আল্লাহুম্মাগফির লি-শিহাব।
পরিশেষে বলব,সবারই এই বইটা পড়া উচিত।আপনারা বইটি কিনুন,পড়ুন,লেখাগুলো অনুধাবন করার চেষ্টা করুন। জীবনের একটি অন্যরকম দিককে আবিষ্কার করবেন ইনশাআল্লাহ।
মাহবুবা উপমার রিভিউ
'হারিয়ে যাওয়া মুক্তো'
লেখক: শিহাব আহমেদ তুহিন
সমর্পণ প্রকাশন
মূল্য: ২০০টাকা
.
'হারিয়ে যাওয়া মুক্তো' বইটার নাম শুনলে প্রথমেই আমার মাথায় আসে 'ঝুম বৃষ্টিতে ভেজা একটি সুন্নাহ্'।
অনলাইনে এই বইটি সম্পর্কে যতগুলো রিভিউ পড়েছি প্রায় প্রতিটাতেই ঝুম বৃষ্টিতে ভেজার কথাটা ছিল, তাই হয়তো এটা আমার মাথায় গেঁথে গিয়েছে। সে যাই হোক, আমিও কিনে ফেললাম অসাধারণ প্রচ্ছদের এই বইটি। ছবিতে যেমনটা দেখেছিলাম, বাস্তবে তার চেয়ে অনেক বেশি ভালো লেগেছে প্রচ্ছদটা।
প্রায় ১০০টা পৃষ্ঠা যখন পড়ে ফেলেছি, তখন আমার হাতে বইটা দেখে এক বোন জিজ্ঞেস করল, " 'হারিয়ে যাওয়া মুক্তো' বইটা আসলে কি নিয়ে লেখা?"
আমি বললাম, "এটাতে লেখক এমন ৪১টি সুন্নাহর কথা বলেছেন যেগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে, অথচ আমরা চাইলেই সেগুলো পালন করতে পারি।
যেমন-
★কাজ করার আগে ভালো নিয়ত করা।
এই যে তুমি দরজায় নক করলে, স্বাভাবিকভাবে আমার নিয়ত কী হবে? নিসা আসছে, তাই দরজা খুলতে যাচ্ছি।
কিন্তু আমি যদি সাথে এও নিয়ত করি- 'দরজা খুলে আমি তোমাকে হেল্প করব, সালাম বিনিময় করব, মুচকি হাসি দিয়ে সুন্নাহ্ পালন করব', তাহলে এসবের জন্যও আমি সওয়াব পাবো, ইনশাআল্লাহ্।
★বৃষ্টিতে ভেজা।
রাসূল (সা) একদিন বৃষ্টিতে শরীরের কিছু অংশ উন্মুক্ত করে বৃষ্টিকে অনুভব করলেন। সাহাবী (রা) তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, "এটা (বৃষ্টি) এক্ষুনি আমার রবের পক্ষ থেকে এসেছে"।
★হালাল খাবারের দোষ না ধরা।
★ নিজের অজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারা বা কিছু না জানলে 'আমি জানিনা' এটা বলতে পারা।
এটা কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার। দেখবে, অনেক মানুষ আছে যাদেরকে কোনো প্রশ্ন করলে উল্টাপাল্টা কথা বলে। সে যে প্রশ্নের উত্তর জানেনা, সেটা না বলে মানুষকে ভুল উত্তর দিয়ে কনফিউজড করে।
★ ধোঁয়া-ওঠা খাবার না খেয়ে খাবারটা ঠান্ডা হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা।
: এই কাজগুলো সুন্নাহ্? এসবের জন্য আমি সওয়াব পাবো?
: হ্যাঁ। আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়ার ইচ্ছায় করলে পাবে, ইনশাআল্লাহ্।
.
আমাদের কথোপকথনে বইটির সামান্য কিছু অংশই এসেছে, সবকিছু তো বলা সম্ভব নয়। আর আমি লেখকের মত সুন্দরভাবে গুছিয়ে বলতেও পারবো না। তাই বাকি মুক্তো গুলোর পরিচয় পেতে হলে বইটি পড়তে হবে। পড়লে বুঝতে পারবেন এমন সব কাজকে আমরা অবহেলা করি যেগুলোর প্রতি আরেকটু সচেতন হলেই হয়তো আমাদের আমলনামায় অগণিত সওয়াব যোগ করতে পারতাম। কিন্তু নিয়তের অভাবে সেই কাজগুলোকে সোনার মত বরং তার চেয়েও মূল্যবান করার সুযোগ থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। আবার কোনো কাজ হয়তো আমরা করি, কিন্তু জানিনা সেগুলো সুন্নাহ্। অথচ সুন্নাহ্ পালনের নিয়তে কাজগুলো করলে সেগুলোকে ইবাদাতে পরিণত করতে পারতাম!
নিয়ত এতটাই গুরুত্বপূর্ণ।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ্ (সা)। আল্লাহ্ তা'আলা একজন মানুষের মধ্যে যেসব গুণাবলী আশা করেন তার সবগুলোই রাসূল (সা) মধ্যে ছিল। তিনিই (সা) আমাদের আদর্শ। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে চাইলে তাঁকেই (সা) অনুসরণ করতে হবে। তাই তাঁর সম্পর্কে, তাঁর সুন্নাহ্ সম্পর্কে জানা প্রয়োজন। তাঁর একেকটি কথা-কাজ যেন একেকটি মণি-মুক্তো। আমাদের সালাফগণ দৃঢ়ভাবে এই মুক্তোগুলোকে নিজেদের কাছে রেখে দুনিয়া আর আখিরাতের জীবনকে সাজিয়েছিলেন, আর আজ আমরা সেগুলোকে হারাতে বসেছি। এমনই কতগুলো মুক্তোর কথা আমাদেরকে জানিয়ে দেওয়ায় আল্লাহ্ আযযা ওয়া জাল্লা বইটির সাথে সম্পৃক্ত সকল ব্যক্তিকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।
সিরাজুম মুনিরা মিমের রিভিউ
বিসমিল্লাহির রাহমানির রহীম
.
রুহামা পাবলিকেশন ইসলামি বই গ্রুপ রিভিউ প্রতিযোগিতা মে ২০১৮
.
বইঃ হারিয়ে যাওয়া মুক্তো
লেখকঃ শিহাব আহমেদ তুহিন
সম্পাদনাঃ শাইখ ড. আবু বকর মুহাম্মদ যাকারিয়া
প্রকাশকঃ সমর্পণ প্রকাশন
মুদ্রিত মূল্যঃ ২০০ টাকা
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ১৬০।
.
উস্তাদ আলী হাম্মুদা। পেশায় একজন আর্কিটেক্ট। ফিলিস্তিন বংশোদ্ভূত, তবে বেড়ে ওঠা পশ্চিমে। ইসলামী বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখালেখি করেন। একজন বক্তা হিসেবেও তিনি অনেক জনপ্রিয়। এই বইটি মূলত উস্তাদের "Daily Revivals" সিরিজ অবলম্বনে লেখা।
.
উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ) বলেন, আমরা ছিলাম দুনিয়ায় সবচেয়ে হীন জাতী। আল্লাহ ইসলামের মাধ্যমে আমাদের সন্মান দিয়েছেন। কেউ যদি ইসলাম ব্যতীত অন্যকিছুতে সন্মান খুঁজতে যায়, আল্লাহ পুনরায় তাকে হীনতায় নিক্ষেপ করবেন। বিদায় হজের ভাষণে মহানবী (সাঃ) দুইটি জিনিসকে আঁকড়ে ধরতে বলেছিলেন, কুরআন এবং সুন্নাহ। ভালভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, যে সময় আমরা আল্লাহর কিতাব এবং রাসূলের সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরেছিলাম, সেসময় আল্লাহ আমাদের উচ্চ মর্যাদায় উন্নীত করেছেন। আর যখন ইসলাম ছাড়া অন্য কিছুতে সন্মান খুঁজেছি, রাসূল (সা) এর সুন্নাহর চেয়ে অন্য কিছুকে শ্রেষ্ঠ ভেবেছি, তখন পদে পদে লাঞ্ছিত হয়েছি।
.
সাহাবায়ে আজমাইন সুন্নাহ মেনে চলার ব্যাপারে ছিলেন খুবই সতর্ক। বইয়ে এই সংক্রান্ত চমৎকার কিছু উদাহরণ দেয়া হয়েছে। আপাতত দৃষ্টিতে এমন অনুকরণকে কট্টরতা ভেবে অনেকেই ভুল বুঝতে পারেন। তবে তাঁরা এগুলো করতেন রাসূল (সাঃ) এর প্রতি ভালবাসা থেকে। আর যাকে ভালবাসি তাঁর প্রতিটি কাজ ভাল লাগবে এবং অনুকরণ করতে মন চাইবে, এটাই স্বাভাবিক :)
.
সাবলীল ভাষায় লিখা এই বইটিতে হারিয়ে যাওয়া বিভিন্ন সুন্নাহ নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। আমাদের দৈনন্দিন জিবনের প্রতিটি পরতে পরতে অনুকরণীয় কত যে সুন্নাহ লুকিয়ে আছে, তা এই বই না পড়লে জানা সম্ভব হত না। হৃদয় নিংড়িয়ে আল্লাহর নিকট দুয়া করা, বিশাল আকাশটার দিকে তাকিয়ে রবের নিদর্শন দেখা, ঝুম বৃষ্টিতে ভেজা, নিশিতে অর্ধাঙ্গিনীকে নিয়ে হাঁটা, প্রিয়জনদের খোঁজখবর নেয়া, অত্যন্ত খুশিতে সিজদায় লুটিয়ে পরা, আরো কত কি! ইমাম নববী (রঃ) এর প্রতি ভালবাসা থেকেই লেখকের ইচ্ছে ছিল ৪২ টি অধ্যায়ে বইটি সাজানো, তবে ৪১ অধ্যায় নিয়েই ক্ষান্ত হতে হয়েছে। পাঠকরা প্রতিটি অধ্যায়ের মাঝে খুঁজে পাবেন জ্ঞানের উৎস, নতুনত্ব এবং সুন্নাহ পালনের অনুপ্রেরণা।
.
বইয়ের প্রিন্টিং, বাইন্ডিং সবকিছু অত্যন্ত সুন্দর মনে হয়েছে। সমালোচনা বলতে দু-একটি ভুল পরিলক্ষিত হয়েছে, ব্যস এতটুকু। তবে এই কথা বলতেই হবে, বইটি পড়া শুরু করলে শেষ না করা পর্যন্ত উঠতে ইচ্ছে করবে না। ডুবুরিরা যেমন মুক্তো খুঁজতে সমুদ্রের অতলে নিজেদের হারিয়ে ফেলে, তেমনি পাঠকরাও বইয়ের মাঝে হারিয়ে যাবেন মুক্তো খুঁজতে। কোন মুক্তো?? "হারিয়ে যাওয়া মুক্তো।"
#ইসলামি_বই_রিভিউ_প্রতিযোগিতা_মে_২০১৮
ফারজানা আমাতুল্লাহ শৌখিনের রিভিউ
বইঃ 'হারিয়ে যাওয়া মুক্তো'
লেখকঃ শিহাব আহমেদ তুহিন
প্রকাশকঃ সমর্পণ প্রকাশন
শার'ঈ সম্পাদনাঃ ড. আবু বকর মুহাম্মদ জাকারিয়া
প্রচ্ছদ মূল্যঃ ২০০৳
.
রমাদানে অন্যান্য বই গুলোকে আপাতত লিস্ট থেকে বাদ দেয়া শ্রেয়। কিন্তু সে বই যদি আমার রমাদানের বাইরে আরেকটু সাওয়াব হাসিল করে, আরোগ্যর পথ বাতলে দেয়, দু'আ কবুলের সময়গুলো স্মরণ করিয়ে দেয়, গুনাহগুলো ঝড়ার মাধ্যমগুলোকে চিনিয়ে দেয় তবে টেবিলে শোভিত করা যেতে পারে। 'হারিয়ে যাওয়া মুক্তো' কে আর দুইটা বইয়ের মতই উপদেশ, কিছু শিক্ষা, কি করতে হবে এই টাইপেরই ভাবছিলাম, যদিও লেখকের বই নিয়ে কিছু বলাতে বুঝেছিলাম যে এতে রাসূলের সুন্নাহ গুলো রয়েছে! আর যে কারোই মনে এরূপ আসতে পারে যে, আরেহ রাসূলের সুন্নাহ! এতো জানিই, কত বই পড়েছি, শুনেছি, করে চলেছি। আসলেই কি আমরা সব সুন্নাহ জানি? কত ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র কাজ আছে যেটা করলেই আমি সাওয়াব পাবো আর তার সাথে রাসূলের সুন্নাহও আদায় হয়ে যাবে। আসলে, সুন্নাহ মানে শুধু যোহরের আগের চার রাকআত কিংবা মাগরিবের পর দুই রাকআত স্বলাত নয়। সুন্নাহ হতে পারে দুপুর বেলা ঝুম বৃষ্টিতে ভেজা। কোথায়ও পরিষ্কার মাটি দেখলে খালি পায়ে হাঁটা। সারাদিনের ক্লান্তি শেষে রাতের বেলা প্রিয়তমার সাথে হাঁটা। তার সাথে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলা (হারিয়ে যাওয়া মুক্তো)।
.
এরূপ কিছু ফেলে রাখা কাজও যে সুন্নাহ ; সেই ফেলনা কাজই মলাটবদ্ধ হয়েছে। এই মলাটেই আমি পেয়েছি আমার রুটিন, আমার ভুল, আমার আদব কোথায় পৌঁছাতে হবে তার গাইডলাইন।
সজহকথায় ছোটখাটো একটা দাওয়াহবুক!
.
আমি সর্বোচ্চ পরিমাণে লাইন কোডেড করেছি ইন্টারের Zoology আর Botany বইতে আর লাইন কোড করার দিক দিয়ে 'হারিয়ে যাওয়া মুক্তো'র অবস্থান দ্বিতীয়। আমার মনে হচ্ছিল প্রতিটা লাইনই আমার জন্য, প্রতিটা কাজই যে রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সল্লাম করেছেন। প্রতিটা কাজের জন্যই দরদ চলে আসে। আনাস(রাঃ) একদিন রসূল (সঃ) কে তরকারির মধ্য লাউয়ের টুকরোগুলোকে বেছেবেছে খেতে দেখেছিলেন। ব্যস, এটুকু দেখেই তিনি নিজের জন্য লাউ পছন্দ করিয়ে নিয়েছিলেন। অথচ না কখনো রসূল (সঃ) তাকে লাউ খাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন, না এর ফজিলত বর্ণনা করেছেন।
সালাফরা মেঘের গর্জন সম্বলিত বৃষ্টিকেও রহমত হিসেবে নিতেন। জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে এভাবে আল্লাহর নিদর্শন দেখতে পারাটা জানিয়ে দেয়, একজন মানুষের অন্তর কতটা নূরের আলোয় আলোকিত! মহান আল্লাহ তা'আলাকে স্মরণ করতে তার ইউটিউব ভিডিও দেখার প্রয়োজন নেই। ঘন্টায় ঘন্টায় ফেইসবুক স্ট্যাটাস পড়ার মুখাপেক্ষীও সে নয়। বরং জীবনে ঘটা প্রতিটা ঘটনা থেকে সে তার রবকে খুঁজে নেয়। মানুষকে তার স্রষ্টার অপার মহিমার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।→'সবখানেই তাঁর নিদর্শন দেখা'
.
'আমি জানি না' এই কথাটা আমি এখন সবার সামনে জানাবো ? আহা! সবাই নিশ্চই ভ্রু উঁচিয়ে তাকাবে আর হাসবে, আমার পাণ্ডিত্য কোথায় গিয়ে ঠেকবে! অতঃপর ভুলভাল যা পারি বলে যাই; হোক সঠিক আর বেঠিক, অথচ রসূল (সঃ) যিনি ছিলেন মানুষের মধ্য সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি। তারপরেও তিঁনি 'আমি জানি না' বলতে লজ্জা পেতেন না, তিঁনি বলেছেন-
আমি জানি না তুব্বা অভিশপ্ত কিনা। যুলকারনাইন নবি ছিলেন কিনা তাও আমার জানা নেই। আমার তো এটাও জানা নেই হুদের শাস্তি কারও গুনাহ ধুয়ে ফেলে কিনা। → 'আমি জানি না'
.
কোন কিছুর দিকে বারবার তাকানোর অর্থ হচ্ছে সে জিনিসটার প্রতি তার হৃদয়ে আলাদা টান রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে কখনো কখনো তাকানোর ফলেই হৃদয়ে আকর্ষণ সৃষ্টি হয়। যখন আপনি কাজ করতে যান, চলার পথে একটু আকাশের দিকে তাকিয়েই দেখুন না। এই বিস্তৃত আকাশ আপনাকে করুণাময় আল্লাহর কথা স্মরণ করিয়ে দিবে, অন্তরকে বিগলিত করে দিবে। দেখবেন কীভাবে আল্লাহর প্রতি আপনার বিনয় বেড়ে যায়। মানুষকে সমীহ করার প্রবণতা কমে যায়। আল্লাহভীতি বেড়ে যায়। তাই চোখদুটিকে মুক্তভাবে আকাশের দিকে তাকাতে দিন। →'দৃষ্টি যখন আকাশে'
.
একবার বড় এক আপুকে দেখলাম খুশির সংবাদ শুনে সিজদাহতে লুটিয়ে পড়লেন।এরপর থেকে খুশির সংবাদ শুনলেই সিজদাহতে আমার রবের সাথে কথা বিনিময় শুরু করলাম। অথচ এটাও নাকি সুন্নাহ আলহামদুলিল্লাহ্! →'খুব খুশি হলে'
.
আলাদা জিনিসের বৈচিত্র্যতাই অন্যরকম। একবার তার কাছ ঘেঁষতে ইচ্ছে হয়; দেখিতো কেমন! ঘরে একটা আলাদা মসজিদ তৈরি করুন। দেখবেন পরিবারের যে সদস্যরা স্বলাতে গড়িমসি করে তারাও এসে সামিল হবে। → 'বাড়িতে বাড়িতে মসজিদ'
.
এই বইয়ের শেষ মুগ্ধতা ছিল অসীয়তনামা। আলহামদুলিল্লাহ্ কিভাবে অসীয়ত করতে হয় জানতামই না। লেখক সেটাকে সুন্দরভাবে নমুনা আকারে উপস্থাপিত করেছেন 'নমুনা অসীয়তনামা' তে যাযাকাল্লাহু খইরন।
.
প্রশাংসার সাথে আপনার পবিত্রতা বর্ণনা করছি হে আল্লাহ, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আপনি ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই। আমি আপনার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি আর আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তন করছি। →'আলাপ শেষে'
আলমগীর হোসেন মানিকের রিভিউ
যিনি আমাদের মায়ের চেয়েও বেশি ভালোবাসেন, সকল প্রশংসা সেই মহান রবের। কিয়ামতের মতো কঠিন সময়েও যিনি আমাদের কথা ভুলে যাবেন না, দরূদ ও সালাম বর্ষিত হোক সেই নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর উপর।
একসময় মুসলিমরা ছিল সবার ওপরে।ভালোভাবে লক্ষ করলে দেখা যাবে, যে সময়ে আমরা আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাহ আঁকড়ে ধরেছিলাম, সে সময়ে আল্লাহ তা'আলা আমাদের সম্মানিত করেছেন।আর যখন আমরা ইসলাম ছাড়া অন্য কিছুতে সম্মান খুঁজেছি, রাসূলের সুন্নাহর চেয়ে অন্য কিছুকে শ্রেষ্ঠ ভেবেছি, তখন পদে পদে লাঞ্চিত হয়েছি।
সাহাবিদের জীবনে তাকালে দেখা যাবে, তার সুন্নাহ মেনে চলার ব্যাপারে ছিলেন খুবই সতর্ক।যতভাবে রাসূলের সুন্নাহকে মেনে চলা যায়, ততভাবেই তারা মানার চেষ্টা করেছেন।আনাস (রা) একদিন রাসুলকে (সা) তরকারির মধ্যে লাউয়ের টুকরোগুলো বেছে বেছে খেতে দেখেছিলেন। ব্যস, এতটুকু দেখেই তিনি নিজের জন্য লাউ পছন্দ করে নিয়েছিলেন।অথচ না কখনো রাসূল (সা) তাকে লাউ খাবার নির্দেশ দিয়েছেন, না এর কোনো ফযিলত বর্ননা করেছেন।
ভ্রমনের সময় আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) মক্কা ও মদিনার মধ্যবর্তী স্থানে যেতেন এবং দুপুরবেলা গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিতেন। কারন, তিনি রাসূলকে (সা) একই জায়গায় বিশ্রাম নিতে দেখেছেন। একদিন ভ্রমনের সময় রাসূল (সা) প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতে এক জায়গায় থেমেছিলেন। সফরে বের হলে আব্দুল্লাহ ইবনে উমরও (রা) সে জায়গায় প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দিতেন।
কুররা ইবনে ইয়াস (রা) যখন রাসূলের (সা) হাতে বাইয়াত নিতে এসেছিলেন, তখন তিনি লক্ষ করলেন রাসূলের (সা) জামার বোতাম খোলা রয়েছে। এজন্য শীতে কিংবা গরমে কখনো তিনি জামার বোতাম লাগাতেন না।
আমরা হয়তো এই উদাহরনগুলো কট্টরতা ভাবতে পারি। তবে সাহাবিরা এগুলো করতেন রাসূলের (সা) প্রতি ভালোবাসা থেকে। তাই তো দুনিয়া ও আখিরাতে আল্লাহ তা'আলা তাদের প্রতি সন্তুষ্ট, তারাও আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট।
৪১ টা ছোট কিছু সুন্দর প্রবন্ধ নিয়ে ১৫৭ পৃষ্ঠায় সাজানো বইটা। মন্ত্রমুগ্ধের মত পড়ুন আর খুঁজতে থাকুন "হারিয়ে যাওয়া মুক্তো"।।
মুহাম্মাদ শহীদুজ্জামানের রিভিউ
গতকাল এশার নামাজের পর থেকে "হারিয়ে যাওয়া মুক্তো নামে" একটি বই পড়া শুরু করেছিলাম, বইটি পড়া থেকে একটু সময় বিরতি দিয়েছিলাম তখন মনে হচ্ছিলো কি যেন একটা কাজ বাকি আছে, একপ্রকার শূন্যতা অনূভব করছিলাম। বইটি শেষ না করে ঘুমাতে পারিনি। বইটি আমার কাছে খুব ভালোলেগেছে। আসলেই আমি "হারিয়ে যাওয়া মুক্তো" ফিরে পেয়েছি!
.
হে আল্লাহ! প্রিয় শিহাব আহমেদ তুহিন ভাই এবং তার পিতা-মাতা ও পরিবারবর্গকে ইহকালে ও পরকালে সর্বোত্তম জাযা দান করুন- আমীন!
নুরুজ্জামান শুভ্রর রিভিউ
কিছু বই আছে যেগুলো পড়লে বুকে সুখের ব্যথা অনুভূত হয়, হারিয়ে যাওয়া মুক্তো তেমন একটি বই। বুকের মাঝে সুখের ব্যথা অনুভব করতে চাইলে বইটা পড়তে পারেন। এত সুন্দর একটা বই আমাদের উপহার দেবার জন্য তুহিন ভাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই। আল্লাহ লেখককে উত্তম প্রতিদান দান করুক।
রাজিব হাসান লিখেছেন
তিন দিন। হ্যাঁ গত তিন দিন।
খুঁজছিলাম বইটা, লিখেছে শিহাব আহমেদ তুহিন।
ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই নিলাম সহস্তে কুঁড়িয়ে;
মুক্তোর দানা যে গুলি প্রায় গিয়েছেই হারিয়ে।
সুতোয় গাথা, প্রতিটি কথায় হবে মূক্তোর মালা;
মুক্তোর মত সুন্নাহ যত চমকিত হবার পালা।
হারিয়ে যাওয়া মুক্তো
সুন্নাহয় হই সিক্ত!
ওহ হ্যাঁ! আমি অনুরক্ত......
আপনার লেখার ভক্ত....!
মোহাম্মদ আমজাদ হুসাইনের রিভিউ
বইঃ হারিয়ে যাওয়া মুক্তো।
লেখকঃশিহাব আহমেদ তুহিন।
শার'ঈ সম্পাদক
শায়খ ড. আবু বকর মুহাম্মদ যাকারিয়া।
মুদ্রিত মূল্য: ২০০ টাকা।
প্রকাশনি: সমর্পণ প্রকাশন।
বইটি সাজানো হয়েছে ৪১ টি অধ্যায়ে।
সমস্ত প্রশংসা সেই রাব্বুল ইজ্জাতের যিনি দুনিয়া ও আখিরাতের একচ্ছত্র অধিপতি। হামদ ও ছানা সর্বশেষ নবী ও রাসূল মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবা আজমাঈনদের উপর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে প্রেরণ করেছেন সর্বশ্রেষ্ঠ এবং উত্তম আদর্শ দিয়ে। আল্লাহ সুবাহানাহু তায়ালা দুই ধরনের ওহী দিয়ে রাসূলকে প্রেরণ করেছেন এক, ওহিয়ে মাতলু যা কোরআন আকৃতিতে উপস্হিত। দ্বিতীয় হচ্ছে ওহীয়ে গায়রে মাতলু যা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহ। দুইয়ের উপর ভিত্তি করে মুমিনের জীবন পরিচালিত হয়।
আজকে নামধারী মুসলিমজাতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাত কে ভুলতে বসেছি। কোরআন হাদিস কে নিয়ে গবেষণা না করার দরুন আমরা আজকে ইসলাম বিমুখ হয়ে পড়েছি। "হারিয়ে যাওয়া মুক্ত" বইয়ের প্রতিটি পাতায় পাতায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সেই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সুন্নাহ যেগুলো আজ ভূলতে বসেছি, সেই ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র সুন্নাহ গুলোকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক। একজন মুসলিম মাত্রই বইটা পাঠে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাহ এর সাথে পরিচিত লাভ করবে।
সুন্দরভাবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সুন্নাহ গুলোকে সুস্পষ্টভাবে সাধারণ মানুষের জন্য তুলে ধরা হয়েছে। যেমন, একজন মেহমান আপনার বাসায় আসলো তখন আপনি তার সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর ছোট ছোট কয়েকটি সুন্নাত একই সাথে আদায় করতে পারবেন।
১. আপনি তাকে সালাম দিলেন ।
২.তার সাথে মুসাফাহা করলেন।
৩. মুচকি হাসি দিয়ে কথা বললেন ।
৪.দরজাটা খুলে দিলেন তাকে সাহায্য করার জন্য।
৫. পাশে বসার জায়গা করে দিলেন.।
৬.তাকে মেহমানদারি করলেন।
এসবগুলিই রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহের অন্তর্ভুক্ত।
মরার বৃষ্টি আসার আর সময় পেলোনা!ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে আপনি তাড়াহুড়া করে বৃষ্টি থেকে দৌড়ে পালিয়ে বাচলেন। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কখনো বৃষ্টি থেকে দৌড়ে পালাতেন না। আপনি একটু বৃষ্টি বিলাস করুন। আপনার শরীরটাকে একটু বৃষ্টিতে ভিজিয়ে নিন।কারণ এই বৃষ্টি আসে রাহমানুর রাহিম আল্লাহর পক্ষ থেকে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত ও আদায় হয়ে গেলো।
ওয়াক থু!! এমন খাবার কি কেউ রান্না করে? আমার মা'র মতো কখনো তুমি রান্না করতে পারবে না! আপনি খেতে বসেছেন। খাবারেরর কখনো দোষ ধরবেন না। রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম কখনো খাবারের দোষ ধরেননি। কারণ আপনার ওয়াইফ কোন একটা স্পেশাল খাবার রান্না করেছে তখন আপনি যদি বলেন, এরকম খাবার কি কেউ রান্না করে? এতে করে হয়তো তার মন ছোট হয়ে যাবে । আপনার জন্য স্পেশাল কোন কিছু ভবিষ্যতে রান্না করার স্পৃহা সে হারিয়ে ফেলবে। আপনার দাম্পত্যজীবন নরকে পরিণত হবে।সু সিলি সিলি বিষয় গুলোতে আমরা যদি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাহের বাস্ববায়ন করি, তাহলে পৃথিবীতেই নেমে আসবে এক পসড়া জান্নাতি শান্তি।
হিমু হয়ে রাত্রিবেলা জোসনা বিলাস করতে চান! ওয়েল! তাও করেন রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাহ হয়ে যাবে। যদি আপনি নিয়তটা সহিহ করেন! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ায়া সাল্লাম আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার সাথে নিশীথে ঘোরতে বের হতেন। কখনো দৌড় প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন। এক নির্জন রাতে মোবাইল ফোনটা রেখে ওয়াইফকে নিয়ে সুনশান নিরভ রাস্তায় বেড়িয়ে পড়ুন। প্রিয়তমার হাতদুটো নিজ বাহুডোরে নিয়ে একটু ড্রাইভ দিয়ে আসুন। ১০০ঃ শিউর আপনাদের মাঝের যে বিস্তর ফারাক ছিল, নিমিষেই তা উবে যাবে।সেই সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত ও আদায় হয়ে গেলো।
আপনি কষ্টে আছেন। খুব মন খারাপ! করার কিছুই নেই কারণ কষ্টের পরেইতো সুখ আসে । "মুমিনের ব্যাপারটা খুবই আশ্চর্যজনক। যখন তার সাথে ভালো কিছু ঘটে, তখন সে কৃতজ্ঞ হয় আর এটাই তার জন্য উত্তম। আর যখন তার কোন ক্ষতি হয়, তখন সে সবর করে আর এটাও তার জন্য উত্তম। "তাই পাওয়া না পাওয়ার বিষয়গুলো নিয়ে দুঃখ করে লাভ নেই। আল্লাহ তাআলার যখন যে অবস্থায় রাখে সেই অবস্থাতেই তার শুকরিয়া আদায় করতে হবে। আর শুকরিয়া আদায় করার মাধ্যমে আল্লাহর আরো নৈকট্য লাভ করা যায়, এবং আল্লাহ তায়ালা নেয়ামতকে আরো বাড়িয়ে দেন।
কোন ভাই আর্থিকভাবে খুবই করুণ অবস্থায় দিনাতিপাত করতেছেন। অথবা তার এমন কোনো জরুরত হলো টাকার যা না হলেই নয়। আপনি চাইলেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একটা সুন্নাহ আদায় করতে পারেন। সুদমুক্ত ঋণ দেওয়া রাসূল সাল্লাল্লাহু ওয়া সাল্লাম এর আরো একটি সুন্নাত। আবু দারদা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
" কাউকে দুই দিনার ঋণ দেওয়া আমার কাছে এ দুটি দিনার কাউকে সদকা হিসেবে দিয়ে দেওয়ার চেয়েও বেশি প্রিয়।" ( ইবনে আবি শাইবা -২২৬৮২)
ওই মামা দুইটা গরম গরম সিংগারা আর তিনটা সমচা দিয়ে যান। জাস্ট ওয়েট!! ভাইয়া গরম গরম খাওয়ার দরুন হয়তো আপনার জিহ্বাটা পুড়ে যেতে পারে। হয়ত কয়েক বেলা কপাল থেকে রুজিও উঠে যেতে পারে। তাই একটু ওয়েট করে ঠান্ডা করেনিন, ঠান্ডা হয়ে যাওয়ার পর খান। তাতে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও খুশি।
বিবিএ পড়া মানে ৫ দিনের ৪ দিন ফরমাল হয়ে থাকা। ফরমাল মানেই সু পড়া। ইশ! দাড়িয়ে সু পরতে কতইনা কষ্ট হয়। দাড়ানোর দরকার নেই, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাড়িয়ে সু পড়তে নিষেধ করেছেন। রাসূল তো জানতেন কিসে মানুষের কস্ট লাগব হবে। জাবির রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
" কাউকে দাঁড়িয়ে জুতো পরতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়ায়া সাল্লাম নিষেধ করেছেন।"( আবু দাউদ-৪১৩৫)।
আহা! কী আনন্দ আজ আকাশে বাতাসে।খুব খুশি হলে, আমরা আনন্দে দুহাত আকাশে উচিয়ে ধরে উল্লাস প্রকাশ করি। আমাদের জীবনটা কাটে আনন্দ-বেদনার দোলাচলে। উল্লাসের পর পরই আসে বেদনায় মুষড়ে পড়ার মূহর্ত। সাহাবা আজমাঈনগণ খুব খুশি হলে রাসূূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দেখানো পন্থায় সিজদায় লুটিয়ে পড়তেন।
সমালোচনাঃ
প্রথম সংস্করণ সত্তেও বইটিতে তেমন কোনো বানান ভুলভ্রান্তি দৃষ্টিগোচর হয়নি। বইটি পড়া মাত্রই বুঝতে বাকি থাকেনা লেখক অনেক প্ররিশ্রম করেছেন।
তবে একটি লাইনে খটকা আছে। পৃষ্ঠা নম্বর ১৫। "স্যার আইজেক নিউটন, রবার্ট বয়েলের মতো বাঘা বাঘা বিজ্ঞানীরা এর পেছনে ঘন্টার পর ঘন্টা নষ্ট করেছেন।" এখনে প্রশ্ন জাগে কী ব্যায় করেছেন?
তারপর উত্তর মিলে সময় ব্যায় করেছেন। আশা করি সময় শব্দটি উল্লেখ করে দিলে আর প্রশ্ন করে উত্তর মেলাতে হবেনা।
আল্লাহ তায়ালা শিহাব আহম্মেদ তুহিন ভাইকে নেক হায়াত দান করুক। এবং সত্যের পথে তার কলমকে সর্বদা জারি রাখুক। সমর্পণ প্রকাশনকে অসংখ্য ধন্যবাদ এমন একটি মহা মূল্যবান বইকে প্রকাশনের জন্য। সবারই এই বইটির এক কপি সংগ্রহে রাখা উচিত। তাহলে হারিয়ে যাওয়া মুক্তো গুলোকে সহজেই আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করতে পারবো।
পরিশেষে, এই লেখায় যা কিছু ভালো তা মহান রবের পক্ষ থেকে। এবং যা কিছু মন্দ তা আমার এবং শয়তানের পক্ষ থেকে।