JustPaste.it

10 forid-uddin-masud

কথপোকথন

ফরীদ উদ্দীন মাসউদ সাহেবের ভক্ত এক আলেমের সাথে কয়েক মুহূর্ত

উস্তায মুগীরা সামেত

 

তিনি ফরীদ মাসউদ সাহেবের একজন ছাত্র। কয়েকদিন তার কাছে পড়েছেনও। আমার সাথে সম্পর্কও ভালো। সম্পর্ক যাতে তিক্ত না হয় এজন্য উভয়ই সম্পর্কচ্ছেদন বাক্য থেকে বিরত থাকি। একদিন হলো কি! আমি অন্য একজন আলেমের সাথে শাতিমে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বিরুদ্ধে চালিত অপারেশন সম্পর্কে আলোচনা করছিলাম, এমন সময় তিনি উপস্থিত, কোনো ধরনের রাখ-ঢাক ছাড়াই আমাদের কথা কেড়ে নিলেন। আর আমাকে বেকায়দায় ফেলার লক্ষ্যে উপর্যুপরি প্রশ্ন শুরু করলেন। আমি প্রথমে বিব্রতকর মুহূর্তে পড়লেও পরে খুব শীঘ্রই নিজেকে সামলে নেই। অনেক সময় আলোচনা হয়, শেষ পর্যন্ত তিনি নীরব হয়ে যান সেখানে নিম্নোক্ত বিষয় নিয়ে কথোপকথন হয়। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পয়েন্ট তুলে ধরলাম।

তিনি:- নাস্তিক বা শাতিমদেরকে শাস্তি দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের, তাহলে আল-কায়েদা কেনো আইন নিজ হাতে তুলে নিচ্ছে?

আমি:- আল-কায়েদার এসব অপারেশন হুদুদ (ইসলামি দণ্ডবিধি) নয়, এগুলো হচ্ছে জিহাদ। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কা'ব বিন আশরাফকে হত্যার জন্যে মুহাম্মদ বিন মাসলামা রাযি. ও তাঁর সাথীদেরকে পাঠিয়েছিলেন। পরে এঁরা কা'বকে হত্যা করেন। কা'ব কিন্তু রাসুলুল্লাহর শাসনাধীন এলাকায় ছিলো না। তাই তাকে হত্যা করার জন্যে বাহিনী পাঠাতে হয়েছে। পরে এই বাহিনী কোনো ধরনের বিচারিক পদ্ধতি ছাড়াই কা’বকে হত্যা করেন। যদি এটা হুদুদ হত তাহলে কেনো আল্লাহর রাসুল কা’বকে কাঠগড়ায় দাঁড় করান নি? ইতিহাসের পাতায় এই অভিযানের নাম দেওয়া হয়েছে সারিয়্যাতু মুহাম্মদ বিন মাসলামা রাযি.। তাছাড়া হাদীসের কিতাবে এটাকে কিতাবুল হুদুদে স্থান না দিয়ে কিতাবুল মাগাযীতে স্থান দেওয়া হয়েছে।

তিনি:- যদি আল-কায়েদার এই অপারেশন জিহাদ হয়ে থাকে তাহলে জিহাদ ফরজ হওয়ার জন্যে শর্ত হচ্ছে মুসলিম সুলতান আমীরুল মুমিনীন কর্তৃক ঘোষণা হওয়া, তথা নফীরে আম হওয়া। এখানে কোন আমীরুল মুমিনীন এদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে নির্দেশ দিয়েছেন?

আমি:- জিহাদ ফরজ হওয়ার জন্যে কি শুধু নফীর আমই শর্ত? জিহাদ ফরজ হওয়ার জন্যে তো আরো শর্ত আছে। যেমন- মুসলিম ভূমি কাফেরদের দখলে চলে যাওয়া, কোনো মুসলিম কাফিরের হাতে বন্দী হওয়া, মুসলিম ভূমির সীমান্তে কাফিরদের সৈন্য মোতায়েন করা। বর্তমানে এর সবগুলিতো বিদ্যমান। যেমন- উপমহাদেশ মুসলিমদের ভূমি ছিলো, এখন কাফিররা দখল করে নিয়েছে। বিভিন্ন মুসলিসদেশ বর্তমানে কাফিরদের দখলে চলে গেছে, আমাদের নিকটবর্তী আরাকান, আসামে মুসলিমরা নির্যাতিত হচ্ছে। কাফিরদের হাতে অনেক মুসলিম বন্দি, যেমন গুয়েন্তানামো বে, কারাগার ইত্যাদি। জিহাদ ফরজ হওয়ার জন্যে এগুলিইতো যথেষ্ট। এরপরও যদি আমীরুল মুমিনীনের ঘোষণা চান, তাহলে জেনে রাখুন, আল - কায়েদা ইমারাতে ইসলামিয়্যাহ আফগানিস্তানের অধীনে পরিচালিত একটি সংগঠন। আর আমীরুল মুমিনীন মোল্লা উমর অনেক পুর্বেই জিহাদ ঘোষণা করেছেন।

তিনি:- মোল্লা উমর তো আফগানিস্তানের লোক। আর বাংলাদেশে ঘোষণার দায়িত্ব হচ্ছে এদেশের সরকারের। সরকার যদি ঘোষণা না দেয় তাহলে তো অন্য কারো ঘোষণা দেওয়া জায়েয হবে না।

আমি:- সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ রহ. যখন জিহাদের ঘোষণা দেন। তখন দিল্লীতে মুঘল শাসন চলছিলো, আর মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপ - আফ্রিকার অনেক দেশে উসমানি খেলাফতের শাসন চলছিল। এখন প্রশ্ন হচ্ছে যে, উসমানী খলীফা এবং দিল্লী সম্রাটের উপস্থিতিতেই। তাদের অনুমতি ব্যতীত সাইয়্যিদ আহমদ শহীদ কর্তৃক এই জিহাদকে কী বলবেন? আপনি ওইটাকে জায়েয বললে এটাকে কেনো না জায়েয বলেন? তা ছাড়া কুফরি সংবিধান দ্বারা পরিচালিত বাংলাদেশ সরকার কীভাবে ইসলামি হয়?

তিনি:- আল - কায়েদার এসব অপারেশন দ্বারা অনেক নিরীহ মানুষ মারা যায়! আমি - বাংলাদেশে আল - কায়েদা কর্তৃক দু/একজন নিরীহ নিরপরাধ মানুষ হত্যার প্রমাণ দেন?

তিনি:- (প্রথমে লা - জবাব) একটু থেমে বলেন, পাকিস্তানের পেশোয়ারের আর্মি স্কুলে!

আমি:- আর্মি স্কুলে আল - কায়েদা হামল করে নি , বরং আল - কায়েদা এই হামলার নিন্দা করেছে। আমি শুধু আল - কায়েদা তালেবানের হয়ে কথা বলবো। অন্যকোনো দলের হয়ে নয়।

তিনি:- আফগানিস্তানে হামিদ কারজাঈ একজন মুসলিম শাসক। তালেবনিদের অপারেশনে তো কালেমা পাঠকারী অনেক মুসলিম সৈন্য মারা যাচ্ছে। এটা তো জায়েয নয়।

আমি:- ইংরেজদের অধীনে চাকুরীরত মুসলিম সৈন্যদের ব্যাপারে শায়খুল ইসলাম হোসাইন আহমদ মাদানী রহ. এর ফতোয়া হচ্ছে যে, এরা নিকৃষ্ট মুরতাদ। বর্তমানে আফগান সৈন্য হচ্ছে আমেরিকার অধীনে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত মুরতাদ।

তিনি:- আল - কায়েদা অপারেশন করছে, তাহলে সরকার কেনো অন্যদের অহেতুক হয়রানি করছে?

আমি:- এর জন্যে সরকার দায়ী। তারা কেনো একজনের জন্যে অন্যজনকে নির্যাতন করে?

তিনি:- আল - কায়েদার কি উচিৎ নয়, এগুলো সম্পর্কে সচেতন করা?

আমি:- জি, আল - কায়েদা এসম্পর্কে বার বার নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করছে, তারপরও এই জালিমরা এরকম করে যাচ্ছে। যাইহোক একপর্যায়ে তার ঝুলিতে যত অভিযোগ ছিলো, সব শেষ হয়ে যায়। একেবারে নিশ্চুপ হয়ে যান। আমার থেকে পালানোর পথ খুঁজতে থাকেন। আমি তার সাথে বার বার আলোচনার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখি। কিন্তু দেখি স্থান ত্যাগ করে চলে যান। আর পরবর্তী আর কোনোদিন এ বিষয়ে আলোচনায় জড়াননি।

 আল বালাগ

ম্যাগাজিন ইস্যু-১