JustPaste.it

আল মালাহিম মিডিয়ার সাথে আনোয়ার বিন নাসির আল-আওলাকির প্রথম ও বিশেষ সাক্ষাৎকার (সম্পূর্ণ)

শাইখ এবং ইসলামের দা’য়ী আনোয়ার বিন নাসির আল-আওলাকি (রঃ) 
  • তিনি ইয়েমেনের শাবওয়াহ এলাকার আল-আওলাকি গোত্র থেকে এসেছেন।
  • শাইখ আনোয়ার আল-আওলাকি আমেরিকায় জন্মগ্রহন করেন এবং সেখানে ২১ বছর অবস্থান করেছিলেন।
  • তিনি কলারোডা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর উপর ডিগ্রী লাভ করেন।
  • তিনি সান ডিয়াগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে MBA শেষ করেন।
  • উপসাগরীয় দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের পর তিনি বিভিন্ন আলিমদের কাছে জ্ঞান আহরণের জন্য যেতে (চেষ্টা)শুরু করেন।
  • তিনি কলারোডা, ক্যালিফোর্নিয়া এবং ওয়াশিংটন ডিসির বিভিন্ন জায়গায় মসজিদের ইমাম ছিলেন। তাঁর লেকচারের মাধ্যমে তিনি বিভিন্ন জায়গাতে সুপরিচিত লাভ করেন।
  • ১১ই সেপ্টেম্বরের পরে যখন শাইখ আল-আওলকিকে আমেরিকার সরকার হয়রানি করার চেষ্টা করছিল তখন তিনি আমেরিকা ত্যাগ করেন।
  • তিনি সেখান থেকে এ্যারাবিয়ান পেনিনসূলায় আসেন অতপর ইয়েমেনে অবস্থান করতে থাকেন।
  • তিনি বিভিন্ন ইংরেজি লেকচারের মাধ্যমে তাঁর দাওয়াহর কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন এবং তা ইন্টারনেটের মাধ্যমে প্রকাশ করতে থাকেন যা আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্বে দারুনভাবে প্রভাব বিস্তার করেছিল।
  • শাইখ আনোয়ার আল- আওলাকিকে সানা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছিল এবং ১৮ মাস তাকে বন্দী রাখা হয়েছিল। তবে পরবর্তীতে তারা তাঁকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।
  • শাইখ আনোয়ার আল-আওলকি সবচেয়ে বেশি পরিচিত লাভ করেন মানুষকে মুসলিম ভূমিগুলির উপরে আগ্রাসনকারী ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে জিহাদে উদ্বুদ্ধ করার কারণে যা তিনি তাঁর ওয়েব সাইটের মাধ্যমে করতেন।
  • তাঁর উপর অভিযোগ আনা হয় যে, তিনি ভাই নিদাল হাসান এবং উমার ফারুককে (আল্লাহ্‌ সুবহানা তা’আলা তাঁদেরকে মুক্ত করুন) আক্রমণ চালানোর ক্ষেত্রে উদ্বুদ্ধ করেছেন।

 

 

শাইখ আনোয়ার আল-আওলকি বিরুদ্ধে মিডিয়ার ব্যাপক মিথ্যা প্রচারণা এবং পরবর্তীতে ইয়েমেনে আমেরিকার আগ্রাসন চালানোর পর আল মালাহিম মিডিয়া তাঁর সাথে একটি বিশেষ সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে। নিরাপত্তার শত শত বাধা অতিক্রম করে আল্লাহ্‌র অনুগ্রহে আমরা শাইখের কাছে পৌঁছুতে পারি এই সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্য যা আমরা আশা করি যে মুসলিম উম্মাহ এর থেকে উপকৃত হবে।

 

আল-মালাহিমঃ পরম করুনাময় অসীম দয়ালু আল্লাহ্‌র নামে শুরু করছি।

 

সকল প্রশংসা আল্লাহ্‌ তা’আলার জন্য এবং দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক আল্লাহ্‌র রসূলের(সাঃ) প্রতি। আল-মালাহিম প্রোডাকশন্স অত্যন্ত আনন্দের সাথে আপনাকে এই বিশেষ সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানটিতে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। আমরা সম্মানিত বোধ করছি এই কারণে যে, আপনি (শাইখ আনোয়ার আল-আওলকি) আমাদের অনুরোধ রাখতে এই সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠানটিতে উপস্থিত হয়েছেন।

সম্মানিত শাইখকে সাদর সদ্ভাসন জানাচ্ছি।

 

শাইখ আনোয়ার আল-আওলাকিঃ আপনাকেও আমন্ত্রণ এবং কৃতজ্ঞতা জানাই এ কারণে যে আপনিও অনেক কষ্ট করে এখানে এসে পৌঁছেছেন ।

 

আল-মালাহিমঃ জাযাকাল্লাহ খাইরান শাইখ।

আমরা সাক্ষাৎকারটি শুরু করতে চাই সাম্প্রতিক পশ্চিমা এবং আমেরিকান গণমাধ্যমে আপনাকে কেন্দ্র করে যে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে সে বিষয়টিকে নিয়ে।যেখানে আমেরিকা,কানাডা ও ব্রিটেনে আপনাকে ১৪টি মামলায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। এই অভিযোগ গুলোর সত্যতা কতটুকু যা তারা মিডিয়ার মাধ্যমে প্রচার করে আসছে এবং এই অভিযোগের কারণ কি বলে আপনি মনে করছেন?

 

শাইখ আনোয়ার আল-আওলাকিঃ এই অভিযোগের কারণ হচ্ছে আমি একজন মুসলিম এবং আমি ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছি।

(আমার বিরুদ্ধে)অভিযোগ হচ্ছে নিদাল হাসান ও উমর ফারুককে উৎসাহিত প্রদান করা এবং অন্যান্য মামলা যেগুলো উল্লেখ করেছেন সেখানেও মূল অভিযোগ হচ্ছে উৎসাহিত প্রদানের।

কিসের উৎসাহ? উৎসাহিত করা হচ্ছে ইসলামের দিকে,উৎসাহিত করা হচ্ছে জিহাদের দিকে,যা সর্বশক্তিমান আলাহ সুবহানা তা’আলা কুরআন ও তাঁর রসূলের সুন্নাহ্-তে উল্লেখ করেছেন এবং এটাই হচ্ছে (আমার বিরুদ্ধে)অভিযোগ ।

 

আজ আমেরিকানরা এমন ইসলাম চায় না যা মুসলিম উম্মাহকে আত্মরক্ষা করবে,তারা এমন ইসলাম চায় না যা তাদেরকে জিহাদের দিকে আহ্বান করবে,ইসলামী শারী’আহ বাস্তবায়ন করবে এবং ওয়ালা ওবারা’আর(আল্লাহ্‌র জন্য বন্ধুত্ব ও শত্রুতার)দিকে ডাকবে।তারা চায় না ইসলামের এই দরজাগুলো উন্মুক্ত হোক এবং মানুষ এ দরজাগুলো দিয়ে প্রবেশ করুক। তারা চায় একটি আমেরিকান উদারপন্থী,গণতান্ত্রিক,শান্তিকামী,ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ ইসলামে যেমনটি তারা বিভিন্ন বিবৃতিতে প্রচার এবং জনপ্রিয় করে আসছে-উদাহারণ স্বরূপ RAND এর প্রতিবেদন ।

একদিকে আমাদের কাছে আছে সেই নীতি যা গৌরব ও ন্যায়-বিচারের দিকে ডাকছে আর অপরদিকে আমাদের আরো রয়েছে সেই নীতি যা এনে দেবে অপমান ও পরাজয়।

 

একজন বিশিষ্ট CIA কর্মকর্তা বলেছিল, “যদি মোল্লা ওমর আমাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায় তাহলে আমরা তাঁর বিরুদ্ধে মোল্লা ব্র্যাডলিকে দাড় করাব।” সে যা বলতে চেয়েছে তাঁর অর্থ হচ্ছে, তোমাদের যদি সত্যের অনুসারী প্রচারক থাকে; তাহলে আমাদেরও আছে মিথ্যার প্রচারক,মোল্লা উমর যদি তোমাদের হয়ে দাড়ায়,মোল্লা ব্র্যাডলি আমাদের পক্ষ থেকে বলবে।

 

সুতরাং এটি হচ্ছে ইসলামিক বিশ্বে এক নিকৃষ্টতম আদর্শিক ও মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধ। আজ আমেরিকা তাদের মনগড়া ইসলামকে জনপ্রিয় করতে চাচ্ছে যেমনটি তাদের পূর্বপুরুষেরা- তারা খ্রিষ্ট ধর্মের পরিবর্তন করেছিল, ইহুদী ধর্মের পরিবর্তন করেছিল এবং এখন তারা ইসলামকেও পরিবর্তন করতে চাচ্ছে। কিন্তু সর্বশক্তিমান আল্লাহ্‌র এই দ্বীন (ধর্ম) সুরক্ষিত।

 

এখন আমাদের সম্মুখে গৌরবময় নীতি রয়েছে,কিছু দা’য়ী এই সত্যের দিকে আহবান করছে এবং কিছু ইসলামিক দল এর বনিয়াদে কাজ করে যাচ্ছে । যেমনঃ আপনাদের দল আল-কায়েদার যারা ইসলামের জন্য কাজ করছেন,এই পথে ডাকছেন। উদাহারণ স্বরূপ,ডঃ আইমান আল জাওয়াহিরী যখন ওবামাকে উদ্দেশ্য করে বক্তব্য দিয়েছিলেন, তখন তিনি কি বলেছিলেন? “হে ওবামা! হয়তবা আল্লাহ্‌ সুবহানা তা’আলা মুজাহিদিনদের হাতে আমেরিকানদের পতন লিখে রেখেছেন,যাতে করে আমরা সবাই স্বস্থি পাই এবং সমগ্র বিশ্ব তোমাদের এই যুলুম থেকে রক্ষা পেতে পারে।” এটি হচ্ছে গৌরবের সম্বোধন,এটি স্পষ্টভাবে আমেরিকানদের প্রতি মুসলিমদের মনোভাব প্রকাশ করে। বিশ্বের ওপর তোমাদের এই সীমালঙ্ঘন ও যুলুমের কারণে বিশ্ব তোমাদের এই অত্যাচারের কালো হাত থেকে রক্ষা পেতে চায়।

 

অপরদিকে আমরা দেখতে পাই,যখন ওবামা বিশ্বে ভ্রমণ করে এবং কায়রো হয়ে রিয়াদে প্রবেশ করে,তখন একজন আহবায়ক তাঁকে স্বাগতম জানিয়ে বলেন, “কি সৌভাগ্যের সময়,হে আবু হুসায়ন!”- সৌভাগ্যের সময়! এটি কি সৌভাগ্যের সময় যে ওবামা মুসলিম বিশ্বের কেন্দ্রে পা দিয়েছে? এ্যারাবিয়ান পেনিনসূলাতে (আরব উপদ্বীপে)? এটি কি সৌভাগ্যের সময় যে আমরা ওবামাকে স্বাগত জানাবো যে কিনা বর্তমান সময়ের ক্রুসেডের নেতা,ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নেতা, এবং এ যুগের ফিরাউন! এটিই হচ্ছে পরাজয় ও অপমানের নীতি।

 

ওবামা, যে শপথ নিয়েছে ইসরাইলকে নিরাপত্তা দেওয়ার।ওবামা, যে আফগানিস্থান ও পাকিস্থানের ওপর তাদের ড্রোন বিমান নিয়ে বোমা হামলা বৃদ্ধি করে চলেছে এবং যে এখন ইয়েমেনে প্রবেশ করেছে,সেই ওবামা যে সোমালিয়া ও ইয়েমেনে মুজাহিদীনদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে চায়,যে আমেরিকাকে নতুন যুদ্ধে নিয়ে যেতে চায়,তাঁকে আমরা এভাবে সম্বোধন জানাবো “কি সৌভাগ্যের সময়,হে আবু হুসায়ন!”-সৌভাগ্যের সময়! কি সৌভাগ্য আছে ওবামার পদার্পণে?

 

মক্কা,মাদীনা ও রসূল(সাঃ) –এর কবর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরত্বে সেই আরব উপদ্বীপ যার সম্পর্কে রসূল(সাঃ) বলেছেন, “মুশরিকদের এই ভূমি থেকে বের করে দাও।”-আমরা আজকে ওবামা কে সম্বোধন করছি এই বলে “কি সৌভাগ্যের সময়,হে আবু হুসায়ন।”-সৌভাগ্যের সময়?

 

এই সকল সম্বোধন আমেরিকাকে খুশি করে এবং এজন্যই স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলোতে এই নীতির মানুষের এরূপ বক্তব্য উঠে আসে।

অন্যদিকে ,ডঃ আইমান যেহেতু গৌরবের ও ইনসাফের নীতি তুলে ধরেন, তাঁর সাথে কি আচরন করা হয়?

তারা দুইভাবে তাঁকে আক্রমণ করবে, হয় তাঁকে হত্যা করবে তা নাহলে তাঁর ব্যক্তিত্বকে হত্যা করবে।

তারা প্রথমে তাঁকে হত্যা করার চেষ্টা করা কিন্তু সেটি সম্ভব না হলে তারা প্রচারাভিযান চালিয়ে তাঁর ভাবমূর্তিকে দুর্নাম করে তার ব্যক্তিত্বকে হত্যা করতে চাইবে। এটি হচ্ছে আজকে আমেরিকানদের কৌশল যা থেকে সতর্ক হতে হবে।

 

আল-মালাহিমঃ তাহলে প্রকৃত হচ্ছে একজন ইসলামের দা’য়ীর ব্যক্তিত্ব হনন করছে ,যিনি সত্য এবং সত্যের অধিকারের দিকে মানুষকে ডাকছেন,কিন্তু আমেরিকা আপনাকে অভিযুক্ত করেছে ভাই নিদাল হাসানের ফোর্ট হুডের অপারেশনের সাথে?

 

শাইখ আনোয়ার আল-আও্লাকিঃ হ্যাঁ, নিদাল হাসান আমার একজন ছাত্র এবং এটি আমার জন্য একটি গর্বের বিষয়। আমি সম্মানিত বোধ করি যে নিদাল হাসানের মত একজন,আমার ছাত্রদের অন্তর্ভুক্ত এবং সে যা করেছে তা ছিল একটি বীরত্বের কাজ, একটি দারুন অপারেশন  এবং আমরা আল্লাহ্‌র কাছে দু’আ করি যাতে তিনি তাঁকে দৃঢ়তা দান করেন, তাঁকে রক্ষা করেন এবং দ্রুত মুক্তি দান করেন এবং তিনি যা করেছেন,আমি তা সমর্থন করি এবং আমি তাদের সকলকে বলতে চাই যারা নিজেকে মুসলিম হিসেবে দাবী করেন এবং আমেরিকান সেনাবাহিনীতে কাজ করছেন-আপনারা নিদাল হাসানের পথ অনুসরণ করুন,কারন ভালো কাজ মন্দ কাজকে মুছে দেয় এবং আমি অন্যান্য মুসলিমদের উদ্দেশ্য করে বলছি,আপনারা এই একই পথ গ্রহণ করুন-হয় কথা দিয়ে না হয় হাত দিয়ে জিহাদ করুন এবং যেই উদাহরণ নিদাল হাসান দেখিয়েছেন সেটি হচ্ছে উত্তম পথ,আমি আল্লাহ্‌র কাছে দু’আ করি এটি যেন অনেক মুসলিমদের জন্য আরও অনুসরণ করার বিভিন্নপথ উন্মোচন করে দেয়।

 

আল-মালাহিমঃ আমাদের সম্মানিত শাইখ, আপনি এ ধরণের অপারেশন সমর্থন করেন কিন্তু আমেরিকার কিছু ইসলামিক প্রতিষ্ঠান এটিকে সন্ত্রাস এবং উস্কানিমূলক সহিংসতা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন যার সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই। উদাহারণ স্বরূপ এমন একটি প্রতিষ্ঠান বলেছে, “আমরা এই কাপুরুষচিত কাজকে ধিক্কার জানাই এবং বদ দু’আ করি যারা এই কাজটি করেছে তাদের আইন অনুযায়ী সবচেয়ে কঠিন শাস্তি হোক।”…… তারা আরও বলে…. “এটি এত বড় অপরাধ হওয়ার কারণ হচ্ছে এটি সেই স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীকে উদ্দেশ্য করে করা হয়েছে,যারা সর্বদা আমাদের দেশকে রক্ষা করে, আমেরিকান মুসলিমরা ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য দু’আয় জনগণের সাথে আছে এবং আহত ও নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করছে।”

এ সকল উদ্ধৃতি উত্তর এবং এই অবস্থানের কি কারণ বলে মনে করছেন?

 

শাইখ আনোয়ার আল- আওলাকিঃ আজকের এই সকল বক্তব্য হচ্ছে নোংরা ,নীচু এবং পরাজয়ের বক্তব্য কিন্তু আসুন ফিরে যাওয়া যাক কিছু সময় পূর্বে এই সকল আমেরিকার ইসলামিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো এক সময় আফগানিস্থানের জিহাদের সমর্থন জানিয়েছে, সমর্থন জানিয়েছে বসনিয়ায়,চেচনিয়ার এবং ফিলিস্থিনের জিহাদের এবং আমি যে সময় আমেরিকায় অবস্থান করছিলাম, আমরা মিম্বরের উপর দাঁড়িয়ে সে সময় ইসলামের সব বিষয় যেমন জিহাদ,খিলাফা প্রতিষ্ঠা,আল ওয়ালা আল বারা’আ  সম্পর্কে খোলামেলা ভাবে কথা বলতাম। আমেরিকা স্বাধীনতার ছাদ এসব কথা বলার জন্য খোলা ছিল  এবং এ সকল বিষয়ে কথা বলা ইসলামী বিশ্বের অনেক দেশের চেয়ে বেশী স্বাধীনতা ছিল। কিন্তু আমেরিকা সংকীর্ণ হতে থাকে কারণ এটি হচ্ছে প্রচারের সুন্নাহ যেমনটি মক্কায় দাওয়াতের শুরুতে রসূল(সাঃ)এর সাথে হয়েছিল। কুরাইশরা প্রথমদিকে তাঁকে গ্রাহ্য করেনি যতক্ষণ না তারা বিপদের আভাষ পেল। যখন তিনি প্রকাশ্যে ডাকা শুরু করেন লোকেরা তার বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। একই ভাবে আমেরিকা যখন মুসলিমদের দেওয়া বার্তার শঙ্কা বুঝতে পারে তখন তারা বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করে এবং আস্তে আস্তে এই বাঁধা এবং স্বাধীনতার ছাদ নীচে নামতে থাকে এবং ১১ই সেপ্টেম্বর আক্রমণের পর সেটি পৌঁছায় তার শেষ সীমায়, এবং মুসলিমদের বাঁধা দেওয়ার নতুন অভিযানের সূচনা হয় যতক্ষণ না আমেরিকায় বসবাস করা মুসলিমদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। একইভাবে কোন পরীক্ষায় সম্মুখীন না হয়ে সত্যকে তুলে ধরা কঠিন হয়ে পড়ে। তাই হিজরত অথবা কারাগার ছাড়া বেছে নেওয়ার আর কোন পথ থাকে না ।

 

এ সকল প্রতিষ্ঠানগুলো যাদের কথা আপনি বললেন,বক্তব্য দিচ্ছে এক শ্বাসরুদ্ধকর পরিবেশের ছায়াতলে যেখানে অনুভব হয় যে আপনি সবসময় দোষী এবং নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। যেমনটি হয়েছিল মুসলিমদের অবস্থা আন্দালুসিয়ায় গ্রানাডা পতনের পর। তারা বেঁচে থাকার জন্য আনুগত্য দেখানোর চেষ্টা করেছিল আর এজন্যই তাদের কথা গ্রহণযোগ্য নয়।

সকল প্রশংসা আল্লাহ্‌র, কিভাবে আমরা নিদাল হাসানের অপারেশনের মতো কোন অপারেশনের বিরোধিতা করতে পারি? তিনি আফগানিস্থানের ও ইরাকগামী সৈন্যদের হত্যা করেন, এ বিষয়ে কারা বিরোধিতা করবে? এ ব্যাপারে তো শুধু মানুষ অর্থাৎ আদম সন্তানের মধ্যেই নয়, বরং প্রাণী জগতের মধ্যেও ঐক্য আছে। আপনি যদি একটি বিড়ালের ঘরের এক কোণায় ঘিরে ফেলেন তখন আত্মরক্ষা করার জন্য তার লোম খাড়া হয়ে যাবে এবং নখ বেড়িয়ে আসবে। আজকে কি মুসলিমদের আত্মরক্ষা করারও অধিকার নেই?

 

ফিলিস্থিনি বংশোদ্ভুত নিদাল হাসান তার উম্মাহকে প্রতিরক্ষা করছেন। এ বিষয়টিকে তো প্রাণীজগতের মধ্যেই অগ্রহণযোগ্য রয়েছে, তাহলে এটা কি আরো বেশি অগ্রহণযোগ্য হওয়া উচিত নয় যখন তা উত্থাপন করা হয় এবং তা শারি’আতের চাদরে আচ্ছাদন করা হয়?! একজন মুসলিমকে কি এ কথা বলা বৈধ হবে যে, তার উম্মাহ-কে প্রতিরক্ষা করার তার কোন অধিকার নেই। তার নিজের প্রতিরক্ষা করার তার কোন অধিকার নেই । তার কোন অধিকার নেই আমেরিকান সৈন্যদের হত্যা করার যারা মুসলিমদের হত্যা করতে যাচ্ছে। এই কথাগুলো একেবারেই অগ্রহণযোগ্য । তাই নিদাল হাসান যেটি করেছেন সেটি বীরত্বের কাজ,এটি অসাধারণ কাজ। আমরা সর্বশক্তিমান আল্লাহ্‌র কাছে দু’আ করি তিনি যেন তাঁকেইস্তাক্বমাত (দৃঢ়তা)দান করুন।

 

আল-মালাহিমঃ কিন্তু তারা বলে এ ধরণের অপারেশন পাশ্চাত্যে এবং আমেরিকায় ইসলামের ভাবমূর্তি নষ্ট করে?

 

শাইখ আনোয়ার আল-আওলাকিঃ হ্যাঁ, এটি হচ্ছে তাদের অভিযোগের একটি। তারা বলে এ ধরণের অপারেশন আমেরিকান মুসলিমদের উপর চাপ সৃষ্টি করে এবং পাশ্চাত্যে মুসলিমদের ভাবমূর্তি নষ্ট করে, কিন্তু আমি তাদের কয়েকটি প্রশ্ন করতে চাই।

 

হাজার হাজার এমনকি লাখ লাখ মুসলিম যারা আমেরিকার মিসাইল আর বোমার শিকার হচ্ছে, তাদের থেকে কি আমেরিকায় মুসলিমদের ভাবমূর্তি রক্ষা করা বেশী গুরুত্বপূর্ণ ?

তাঁদেরকে আমরা বলতে চাই কিসের ভাবমূর্তি দেখাতে ও রক্ষা করতে চান?

 

যদি ভাবমূর্তি হয়ে থাকে এরকম যে মুসলিমরা অমায়িক ও ক্ষমাশীল এবং তাদের সৎগুণাবলী দিয়ে মানুষকে ইসলামের পথে ডাকে, তাহলে সেটি ভাল, বিশেষ করে আপনি যদি এক অমুসলিমকে দাওয়াত দেন যে ইসলামে প্রবেশ করবে বলে প্রত্যাশা করেন। কিন্তু এখন আমরা এক কাফের জাতির সম্মুখীন যারা আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। আমেরিকা হচ্ছে এমন একটি দেশ যারা আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাচ্ছে। আমরা সেই ভাবমূর্তি আমেরিকার কাছে পৌঁছাতে চাই যা হলো, “তোমরা যদি আমাদের ওপর সীমালঙ্ঘন কর, আমরাও তোমাদের ওপর সীমালঙ্ঘন করবো, যদি তোমরা আমাদেরকে হত্যা করো তাহলে আমরাও তোমাদেরকে হত্যা করবো” । এটা হচ্ছে সেই ভাবমূর্তি যা আমাদের তুলে ধরা উচিত।

 

 এই আমেরিকান সৈন্যরা যারা ইরাক ও আফগানিস্থান যাওয়ার পথে আছে,আমরা তাদের হত্যা করবো,সম্ভব হলে ফোর্ট হুডে,সম্ভব হলে আফগানিস্থান ও ইরাকে, “... হতে পারে আল্লাহ্‌ সুবহানতা’আলা কাফিরদের মন্দ কাজ দূর করে দিবেন ।”[সূরা নিসাঃ ৮৪] কাফেরদের মন্দ কাজ দূরীভূত করবো জিহাদ ও এর উৎসাহ প্রদানের মাধ্যমে,পরাজয় ও আনুগত্যের মাধ্যমে নয়।

 

আল-মালাহিমঃ বিশেষ করে যেহেতু আমেরিকানরা মুসলিম দেশগুলো দখল করেছে।

 

শাইখ আনোয়ার আল-আওলাকিঃ হ্যাঁ, আমরা এখন আমেরিকার আগ্রাসন দেখতে পাচ্ছি আফগানিস্থান,ইরাক এবং মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য স্থানে।

 

আল-মালাহিমঃ আপনি কি মনে করেন ইয়েমেন আমেরিকার দখলকৃত ?

 

শাইখ আনোয়ার আল-আওলাকিঃ  না, ইয়েমেন আমেরিকানদের দ্বারা দখলকৃত নয়। দুঃখজনক হচ্ছে ,পরিস্থিতি এর চেয়েও ভয়াবহ। এই দখলদারিত্ব,কার্যতঃ আমরা যখন দখলের কথা বলি, তখন আমরা বুঝি আমেরিকানদের ট্যাঙ্ক,সামরিক যান এবং সৈন্য নিয়ে প্রবেশ করা এবং ইয়েমেনের পাহাড়ে এবং মরুভূমিতে অবস্থান করে দখল নেয়া। এটি হচ্ছে দখলদারিত্ব। তারা তাদের নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করবে কিন্তু এখন যেটা হচ্ছে সেটা আরও খারাপ।এখন হচ্ছে তা হল , ইয়েমেনের সরকার আমেরিকানদের বলছে, “তোমরা আকাশ ও সমুদ্র দখলে রাখ, ভূমি দখলের জন্য আমরাই যথেষ্ট ।স্থলে গুপ্তচরের জন্য আমরা জনবল দেব,ইয়েমেনের লোকদের দ্বারাই মুসলিমদের উপর নজরদারি রাখব। তোমরা তোমাদের বিমান দিয়ে নজর রাখ,আমরা কোন বাঁধা দেব না। মুসলিমদের গোপনীয়তার উপর নজর রাখ,ইয়েমেনের এলাকাগুলোতে নজর রাখ এবং নৌ টাওয়ার গুলোকে ক্রুজ মিসাইল দিয়ে প্রস্তুত রাখ যাতে ইয়েমেনের মানুষের ওপর বোমার আক্রমণ করা যায়।এবং বিমান থেকে শেল বোমা নিক্ষেপ করো যেমনটি আবইয়ান ও শাবওয়াহে হয়েছিল। ভূমির জন্য আমরাই যথেষ্ট এবং তোমাদের জন্য আমরা ভূমি দখলে রাখব।”

 

আমেরিকানরা আজকে ইরাক এবং আফগানিস্থানের পর নতুন যুদ্ধে যেতে পারবে না ।আমেরিকানরা যদি ইয়েমেনে প্রবেশ করে তাহলে ইয়েমেনের পাহাড়ে,সমতলে,উপত্যকায়,মরুতে এবং খামারে আমেরিকান সৈন্যদেরকে হত্যা করা হবে। আর আমেরিকার কোষাগারের ইয়েমেনের মত দেশ যাকে বলা হয় দখলদারদের কবরস্থান,দখল করার মত সামর্থ্য নেই। আজকে আমেরিকার আর্থিক অবস্থা দুর্বল আর এই অসহায় অবস্থা থেকে ইয়েমেনের সরকার আমেরিকাকে নিস্তার দিচ্ছে। ‘আমরাই তোমাদের জন্য যথেষ্ট, তোমরা শুধুমাত্র আকাশ এবং সমুদ্রের পথকে দখল রাখো।’ অতএব, যা এখন চলছে তা হলো যদি আমেরিকা কাউকে উচ্ছেদ করতে চায় অথবা হত্যা করতে চায়, এর একটি উদাহারণ হচ্ছে শাইখ আব্দুল্লাহ আল মিহদার, আমেরিকার প্রশাসন ইয়েমেনের সেনাবাহিনীকে বললো যে এই মানুষটির (বেঁচে থাকার) প্রয়োজন নেই। আমেরিকানদের কি ইয়েমেনের সরকারের কাছে কোন প্রমাণ দেওয়ার দরকার আছে? না, কারও নাম ধরে বললেই হয় তাঁকে (আর এ ভূমিতে দেখতে)চাই না, এটুকুই যথেষ্ট ।

 

শাইখ আব্দুল্লাহ মিহদাহর একটি উপজাতির শাইখ এবং সামাজিকভাবে সুপরিচিত। ইয়েমেনের সরকার তাদের আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ আনেনি, এমনকি তাদের মানব রচিত আইনের দ্বারাও তার বিরুদ্ধে কোন রায় দেওয়া হয়নি। কিন্তু তারপরেও সেনাবাহিনী ও নিরাপত্তা বাহিনীর লোকেরা এসে শাইখ আব্দুল্লাহ আল মিহদারের বাড়ি ঘিরে ফেলে এবং আমেরিকার নির্দেশে বাড়ির সবাইকে মেরে ফেলা হয়। তারপর ইয়েমেনি সরকার আমেরিকানদের কাছে শাইখ আব্দুল্লাহ আল মিহদারের রক্ত মূল্যের চালান পেশ করে এটি হচ্ছে শাইখ আব্দুল্লাহ আল মিহদারের রক্তের মূল্য যেমনটি তারা আবইয়ানে বয়স্ক মহিলা, শিশু ও বাচ্চাদের হত্যা করে তাদের রক্ত মূল্যের চালান পেশ করেছিল। আমেরিকার বোমা হামলায় ছোট ছোট মেয়ে,শিশু,নারী মারা গেছে। অতঃপর সেই সন্ত্রাসীর দল পাশ্চাত্যের থেকে ঘুষ খায়। যত মৃতের সংখ্যা বাড়ে তাদের পাওয়া এই অর্থও বৃদ্ধি পায়। ইয়েমেনে মুসলিমদের ঝড়ানো রক্তের জন্য তাঁদেরকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে লাখ লাখ ডলারের।

 

আল-মালাহিমঃ প্রসঙ্গক্রমে,ইয়েমেনের শাইখগণ ফতোয়া দিয়েছেন যে যদি আমেরিকানরা ইয়েমেনে প্রবেশ করে তবে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার বাধ্যবাধকতার উপর। আপনি কি এই ধরণের ফতোয়া সমর্থন করেন ?

 

শাইখ আনোয়ার আল-আওলাকিঃ  নিঃসন্দেহে আলমদের দায়িত্ব হচ্ছে উম্মাহকে পথ দেখানো আর সেই দেখানো পথ হওয়া উচিত পারিপার্শ্বিক ঘটনার সাথে সম্পর্কিত । এই ঘটনা নিশ্চয়ই গুরুত্বের এবং শাইখদের এ বিষয়ে কথা বলা। আমেরিকানদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করার ফতোয়া প্রদান অবশ্যই প্রশংসনীয়,কিন্তু এই ফতোয়াতে একটি ব্যাপারে সুস্পস্ট থাকা দরকার ।

 

আজকে মুসলিম এবং আমেরিকানদের মধ্যে যুদ্ধ শুধু তেলের জন্য যুদ্ধ নয়, শুধু পানির জন্য যুদ্ধ নয়, শুধু জমি কিংবা সাগরের জন্য যুদ্ধ নয়, শুধু ফিলিস্থিন,আফগানিস্থান অথবা ইরাকের জন্য নয়। হ্যাঁ, এসব গুলোই সংঘাতের কারণের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত,কিন্তু এই যুদ্ধের মূল কারণ হচ্ছে তাওহীদ। এখন আমেরিকা সেই ইসলামকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে চায় যা রসূল (সাঃ)এর উপর অবতীর্ণ হয়েছিল এবং তারা এর পরিবর্তে স্থাপন করতে চায় তাদের মনগড়া ইসলাম যার কথা আমি ইতি মধ্যেই বলেছি। তাই এটি হচ্ছে তাওহীদের যুদ্ধ। আর এ কারণেই এই যুদ্ধকে খুব হালকা ভাবে অথবা দুনিয়াবি আর্থিক বিষয়ের জন্য (এ যুদ্ধ)করা হচ্ছে এ ধারণা করাও ঠিক হবে না। বরং এই যুদ্ধ তার চেয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এবং এজন্য আলিমদের অনেক বড় ভূমিকা রাখতে হবে।

 

আর এই ফতোয়াটির ব্যাখ্যা এবং বাস্তবায়ন প্রয়োজন।

এটির ব্যাখ্যা করা দরকার কারণ এর কিছু দিক আছে, যা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়নি এবং কিছু দিক পুরোপুরিভাবে অনুপস্থিত । উদাহারণস্বরূপঃ ফতোয়াটি ইয়েমেনি সরকারের অবস্থান সম্পর্কে কিছুই বলেনি যা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আলিমগণ বলেছেন, “যারা সরাসরিভাবে এ ধরণের অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত তাদের ব্যাপারে যে রায় প্রযোজ্য হয় তা একইভাবে তাদের উপরেও প্রযোজ্য হবে যারা তাদেরকে সহযোগীতা করবে ।”ইয়েমেনি সরকার আমেরিকানদের সহযোগী নয় বরং তারা সরাসরি এ ধরণের অপরাধের সাথে জড়িত। আমেরিকানদের ক্রুসেড অভিযানের সাথে ইয়েমেনি সরকার সরাসরি সংশ্লিষ্ট। যখন আমেরিকার বিমান আবইয়ান ও শাবওয়াহে বোমা বর্ষণ করেছিল একই সময়ে সরকারি সেনাবাহিনীগুলো আবইয়ানে আমাদের ভাইদের বাসাগুলোতে অভিযান চালচ্ছিল তখন তারা আমেরিকার এই অভিযানগুলোতে অংশগ্রহনকারী ছিল, কিন্তু ফতোয়াটিতে এই বিষয় বিবেচনা করেনি। এই ফতোয়াটিতে আরো বলা হয়নি আজকে এই দালাল এবং বিশ্বাসঘাতক সরকার যারা আমেরিকানদের সাথে কাজ করছে তাদের ব্যাপারে আমাদের কি করণীয় ?

 

এবং এর বাস্তবায়ন প্রয়োজন। আমরা রায়টি উল্লেখ করেছি যে, “আমেরিকানদের বিরুদ্ধে জিহাদ হওয়া উচিত।” ঠিক আছে, কিন্তু এখন মানুষ চায় যে, আপনারা এই ফতোয়াটির বাস্তবায়ন করে দেখান। আপনাদের বলতে হবে, যেসব বিমান আকাশের উপরে উড়ছে সেগুলো ভূপাতিত কর। এই বিমানগুলোতে ধ্বংস করার মত অস্ত্র ইয়েমেনের উপজাতিদের কাছে আছে, (দাশকা,শিকা এবং ২৩ এমএম) এ সকল অস্ত্র আছে ইয়েমেনের উপজাতিদের কাছে যা দিয়ে বিমানগুলো ভূপাতিত করা যাবে। এখন উপজাতিদেরকে এগুলো করতে আলমদের বলতে হবে, “এই বিমানগুলো ভূপাতিত করো, এগুলো কেন তোমাদের বাসার উপরে উড়ছে,জলসীমার মধ্যে অবস্থিত আমেরিকান টাওয়ারগুলোকে লক্ষ্যবস্তু কর।” আর এটাই হচ্ছে ফতোয়াটির বাস্তবায়ন এবং এর মধ্যে আলিমদের ভূমিকা আছে যা এ সময় পালন করতে হবে, কারণ আজকে শাসকরা সম্পূর্ণ বিপথগামী ও বাতিল এবং তারা কাউকে পথ দেখাতে পারছেনা। বাকি থাকে আলিমগণ যারা মানুষকে সঠিক পথ দেখাতে পারে।

 

আল-মালাহিমঃ আবইয়ান এবং শাবওয়াহে বোমা বিস্ফোরণের পর ,মুজাহিদ ওমর ফারুক অ্যামস্টারডাম থেকে আমেরিকান শহর ডেট্রয়েট অভিমুখী ডেল্টা কোম্পানির একটি বিমান উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। এবং এই অপারেশন ছিল ইয়েমেনে আমেরিকার নির্বিচার বোমা হামলার একটি প্রতিক্রিয়া। উমর ফারুকের সাথে আপনার কি সম্পর্ক ?

 

শাইখ আনোয়ার আল-আওলাকিঃ এই অপারেশনে মুজাহিদদের লক্ষ্য অর্জনে সক্ষম হয়েছে এবং আমেরিকানদের প্রতি এটি একটি দাঁতভাঙ্গা জবাব ও ভীতিকর অপারেশন হিসেবে বিবেচিত হয়েছে এবং এই অপারেশন আমেরিকান নিরাপত্তা ব্যবস্থার ত্রুটিগুলি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে ,হোক তা গুপ্তচরবৃত্তিতে অথবা নিরাপত্তা ব্যবস্থায়। আমেরিকানরা তাদের বিমানবন্দরগুলোতে ৪০ মিলিয়ন ডলারের চেয়েও বেশী অর্থ ব্যয় করছে। তা সত্ত্বেও মুজাহিদ ওমর ফারুক এসব নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দিতে সক্ষম হয়েছিল।

 

গোয়েন্দারা এ কথা স্বীকার করেছে যে তারা উমরের ওপর নজরদারি করছিল কিন্তু তারপরেও সে আমেরিকার কেন্দ্র,ডেট্রয়েটে পৌঁছাতে সমর্থ হয়েছিল।

বলার অপেক্ষা রাখে না যে এই অপারেশন বিশাল সাফল্য অর্জন করেছে যদিও এতে কাউকেই হত্যা করা যায়নি। তবুও এটি বিশাল সাফল্য অর্জন করেছে।

আর ভাই উমর ফারুক সম্পর্কে বলতে হলে – সেও আমার ছাত্র এবং আমি তাঁর ব্যাপারেও অত্যন্ত গর্বিত যে তাঁর মত একজন ব্যক্তি আমার ছাত্র আর সে যা করেছে তাতে আমার পূর্ণ সমর্থন রয়েছে।

আল-মালাহিমঃ  আপনি এরকম অপারেশন গুলিকে সমর্থন করেন যদিও এতে- যেমনটি মিডিয়া বলে- নিরপরাধ সাধারণ মানুষদেরকে আক্রমণ করা হয়। এ বিষয়ে আপনি কি বলবেন?

 

শাইখ আনোয়ার আল-আওলাকিঃ সাধারণ নাগরিকদের প্রসঙ্গটি ইদানীং প্রচুর ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের আলিমগণ যেভাবে এ প্রসঙ্গটি ব্যবহার করেন আমরা তাকেই প্রাধান্য দেব। তারা বলেন, সামরিক এবং বেসামরিক লোক।

সামরিক লোক হল সেই ব্যক্তি যে অস্ত্র বহন করে যদিও সে একজন নারী হয় এবং বেসামরিক লোক হল সেই যে যুদ্ধে হস্তক্ষেপ করে না ।

এখন আমেরিকার জনগণের কথা বলতে গেলে ,সামগ্রিকভাবে তারা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করছে, কেননা এই প্রশাসন তারাই নির্বাচিত করেছে এবং এই যুদ্ধের খরচ তারাই যুগিয়েছে। সাম্প্রতিক নির্বাচন ও পূর্ববর্তী নির্বাচনগুলোতেও আমেরিকার জনগণের জন্য অন্য প্রার্থীদের নির্বাচিত করার সুযোগ ছিল যারা যুদ্ধে অংশ গ্রহণে আগ্রহী ছিল না।কিন্তু তা সত্ত্বেও সে সব প্রার্থী সামান্য কিছু ভোটই পেয়েছে।

 

এরপর, অন্য কিছু নিয়ে কথা বলার আগে,আমাদের উচিত শারী’আহর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে এই ব্যাপারটি দেখা এবং এ ব্যাপারে শারী’আহ-ই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দেবে যে এটির অনুমোদন আছে কি নাই।

 

যদি আমাদের দুঃসাহসী মুজাহিদ ভাই উমর ফারুক শত শত সৈন্যকে লক্ষ্য করে আক্রমণ করতে পারত তবে তা খুবই ভালো হত, কিন্তু আমরা একটি বাস্তব যুদ্ধ নিয়ে কথা বলছি। আল্লাহ্‌র রসূল (সাঃ)যদি শুধুমাত্র দিনের বেলায় যুদ্ধ করতে পারতেন তবে তিনি তাই করতেন, কিন্তু এমন কিছু উদাহারণও আমাদের সামনে আছে যেখানে তিনি (সাঃ)রাতের বেলায় যোদ্ধাদের প্রেরণ করতেন এবং এই দলগুলো যাদেরকে আল্লাহ্‌র রসূল(সাঃ) পাঠাতেন,তারা রাতের অন্ধকারে নারী ও শিশুদেরকে হত্যা করে ফেলত। এ কারণেই সাহাবীগণ (রাঃ)ফিরে আসার পর আল্লাহ্‌র রসূল(সাঃ)-এর কাছে এই ব্যাপারে জানতে চাইলেন। তখন তিনি (সাঃ) তাদেরকে বললেন, “তারা তাদেরই অন্তর্ভুক্ত” যার অর্থ হলো তাদের ওপর সেই বিধানই প্রযোজ্য হবে যা তাদের পিতাদের ওপর প্রযোজ্য হয়েছে। অর্থাৎ রসূল সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম এই হত্যাযজ্ঞ অনুমোদন করেছিলেন।

এছাড়াও সীরাতে উল্লেখ করা কিছু ঘটনা থেকেও আমরা এটির বৈধতা পেশ করতে পারি । যেমনঃ তায়েফে প্রাচীর দিয়ে সুরক্ষিত ছাকীফ আক্রমণের সময় রসূল(সাঃ)ভারী পাথর নিক্ষেপের যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করেছিলেন এবং এসব যুদ্ধাস্ত্র নারী পুরুষ অথবা শিশুদেরকে পৃথক করে আক্রমণ করতে পারে না । আর এটিই হচ্ছে বাস্তবতা।

আজকে একমাত্র আমেরিকার কাছে এমন যুদ্ধাস্ত্র আছে যা লক্ষ্যবস্তুর মধ্যে পার্থক্য করতে পারে। তাদের অস্ত্রগুলি নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে গিয়ে আঘাত করতে সক্ষম। তারা যদি চায় তাহলে তারা লক্ষ্যবস্তু আলাদা করে নিতে পারে কিন্তু তা সত্ত্বেও তারা আক্রমণ চালায় বিয়ের অনুষ্ঠানে,জানাযায়,নিরীহ পরিবারের উপর এবং তারা নির্বিচারে নারী ও শিশুদের হত্যা করে।

 

আল-মালাহিমঃ যেমনটি তারা বেদুঈনদের হত্যা করেছে।

 

শাইখ আনোয়ার আল-আওলাকিঃ হ্যাঁ, বাকাযামে তারা বেদুঈনদের উপর,নারী,শিশু আর কৃষকদের উপর হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। এতেই প্রমাণিত হয় যে আমেরিকানরা নারী ও শিশুদের হত্যা করতে দ্বিধাবোধ করে না। আরও কথা হচ্ছে,৫০ বছর পর ধরে আমেরিকার সাহায্য আর অস্ত্র দিয়ে একটি সম্পূর্ণ মুসলিম জাতি- ফিলিস্থিনকে নিষ্পেষণ করা হচ্ছে। ২০ বছর ধরে অবরোধের পর ইরাক দখল করা হল। আর এখন আফগানিস্থান দখল করা হয়েছে।

 

এতকিছুর পর, কিছু আমেরিকান যারা বিমানে মারা যেতে পারত তাদের ব্যাপারে আমাদেরকে প্রশ্ন করা উচিত নয়। আমাদের আর আমেরিকানদের মধ্যে যে হিসাব-নিকাশ তালিকা রয়েছে, তাতে যত নারী ও শিশুদের হত্যা করেছে তাঁর সংখ্যা এক মিলিয়নের বেশি হয়ে গিয়েছে। আমরা এখানে পুরুষদের কথা বলছি না বরং আমাদের আর আমেরিকানদের মধ্যে যে হিসাব-নিকাশের তালিকা রয়েছে তা শুধুমাত্র মহিলা এবং শিশু যার সংখ্যা এক মিলিয়নেরও বেশি হয়ে গিয়েছে ।সুতরাং বিমানে যারা মারা যেত তারা হত সমদ্রে এক ফোটা পানির মত। আর তাদের সাথে আমাদের এই একই আচরণ সম্পূর্ণ বৈধ। তারা যেমন আমাদের ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করেছে, তেমনি আমরাও তাদের ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করব।

 

আল-মালাহিমঃ ইয়েমেনি সরকার দাবী করছে যে, গত সামরিক অভিযানে যে বোমা হামলা করা হয়েছিল তা ইয়েমেনি হামলা ছিল এবং আমেরিকানরা শুধুমাত্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা আর গোয়েন্দা ব্যবস্থা ছাড়া অন্য কিছুতে হস্তক্ষেপ করেনি।(তাদের দাবী অনুযায়ী)

 

শাইখ আনোয়ার আল-আওলাকিঃ না, এটি সত্যি নয়। আবইয়ানে যে বোমা হামলা হয়েছে তা ছিল বাকাযামে এবং তারা আমার গোত্রের সদস্য। শাবওয়াহে রাফদে যে বোমা হামলা হয়েছে তাও ছিল আমার গোত্রের উপরে। আমরা তাঁদেরকে চিনি এবং আক্রমণের পর আমরা তাদের সাথে কথা বলেছি। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছে যে তারা আমেরিকান ক্রুজ মিসাইল দেখেছে আর বোমা হামলার পর কিছু অবিস্ফোরিত শেল পড়েছিল যেগুলোর উপর লেখা ছিল যে এগুলো আমেরিকার তৈরি।সুতরাং তাদের দাবী একেবারেই সত্যি নয়। সেগুলো আমেরিকার বিমান ছিল আর আমেরিকার বিমান গুলিই আবইয়ান ও শাবওয়াহে বোমা হামলা করেছে।

 

আর যদি সরকারের দাবী সত্যি হয়েও থাকে তাহলে তাদের অজুহাত তাদের অপরোধের চেয়েও জঘন্য কেননা তারা স্বীকার করেছে যে, গোয়েন্দা ব্যবস্থায় আমেরিকানরা সহায়তা করে,যেন তারা বলতে চাচ্ছে যে আমরা আমেরিকানদের এখানে আসতে অনুমতি দিয়েছি যাতে তারা আমাদের গোপন বিষয়েও গুপ্তচরবৃত্তি করতে পারে এবং আমরা তাদের কাছ থেকে তথ্য নিয়েছি আর তাদের নির্দেশের উপর ভিত্তি করেই আমরা হামলা চালিয়েছি। বরং প্রকৃত অবস্থা হচ্ছে US এর সাথে সম্পৃক্ত ছিল, তা সবারই জানা এবং তাদের মিডিয়াগুলিতে প্রচার করা হচ্ছে যে, তারা এই হামলায় অংশগ্রহণ করেছিল। তাই সরকারের এ ধরণের দাবীর সাথে বাস্তবতার কোন মিল নেই।

 

আল-মালাহিমঃ আমেরিকান সরকার বলেছে যে, নিদাল হাসানের অপারেশনের পর তারা আপনার উপর চাপ প্রয়োগ করেছে, ইন্টারনেটে আপনার ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট বন্ধ করে দিয়েছে আর তারা আপনাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। এগুলো কি সত্যি ?

 

শাইখ আনোয়ার আল-আওলাকিঃ  হ্যাঁ, নিদাল হাসানের অপারেশনের পর তারা আমার ওয়েব সাইট বন্ধ করে দিয়েছে।নিদাল হাসান যা করেছে তা সমর্থন করে আমি ঐ ওয়েবসাইটে একটি নিবন্ধ লিখেছিলাম। এজন্য তারা ওয়েব সাইটটি বন্ধ করে দিয়েছে।

 

তারপর ওয়াশিংটন পোস্টের একটি নিবন্ধে আমি পড়েছি যে তারা আমার যোগাযোগগুলির উপর নজরদারি করছে। এতে আমি আমার যোগাযোগ বন্ধ করতে এবং ওই এলাকা ত্যাগ করতে বাধ্য হই আর এর পরপরই আমেরিকা ঐ এলাকার বোমা হামলা করেছে।কিন্তু আমি ফেরারি হয়ে ঘুরছি এই দাবী সত্যি নয়। আমি আমার গোত্রের মানুষদের মধ্যেই আছি আর ইয়েমেনের অন্যান্য জায়গাগুলিতেও যাচ্ছি। এর কারণ ইয়েমেনি জনগণ আমেরিকাকে ঘৃণা করে। ইয়েমেনি জনগণ হক্বকে, এর অনুসারীদের, মজলুমদের এবং নির্যাতিতদের সাহায্য করে। আমি আওলাকি গোত্রের মধ্যেই আছি আর এখানে ইয়েমেনি জনগণের বিশাল একটি অংশের সমর্থন আছে, তা আবিদাতে হোক,দাহামে হোক,ওয়াইলাহতে হোক,হাশিদে হোক,বাইকালে হোক,আর ক্ষাওলানেই হোক; তা হাদারামাউতে হোক,আবিয়ানে হোক,শাবওয়াহতে হোক, আদন অথবা সানাতেই হোক। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহরই কারণ এখানকার মানুষের মধ্যে অনেক ভাল গুণাবলী আছে, যদিও তারা জানে যে আমেরিকা যাদেরকে তাড়া করে ফিরছে তাঁদেরকে আশ্রয় দিয়ে তারা বিরাট ঝুঁকি নিচ্ছে। তা সত্ত্বেও তারা আমাকে সহানুভূতি আর আন্তরিকতার সাথে গ্রহণ করেছে, আর এটি আমার উপর এবং এই দেশের সত্যনিষ্ঠ মানুষদের উপর সর্বশক্তিমান আল্লাহরই পক্ষ থেকে অনুগ্রহ।

 

আল-মালাহিমঃ আমরা আল্লাহর কাছে দু’আ করি যেন তিনি আপনাকে নিরাপদে রাখেন আর সর্বোত্তম পুরস্কারে আপনাকে পুরস্কৃত করেন।আমাদের সম্মানিত শাইখ,আপনাকে আল্লাহ্‌ যেন রক্ষা করেন আর শত্রুদের ক্ষতিসাধন থেকে আপনাকে দূরে রাখেন। আমরা ইয়েমেনি সরকার নিয়ে কথা বলছিলাম-

ইয়েমেনি সরকার দাবী করেছিল যে তারা শাবওয়াহের সাঈদ জেলার রাফদ এলাকায় বিমান হামলা করে আপনাকে হত্যা করেছে যখন আপনি আল-কায়েদার নেতাদের সাথে বৈঠক করছিলেন। আপনি কি দাবীকৃত বৈঠকের সময় নিহত হয়েছিলেন? এসব বিভ্রান্তিকর মন্তব্যগুলি আপনি কিভাবে দেখেন?

 

শাইখ আনোয়ার আওলাকিঃ কোন ব্যক্তি অথবা কোন দলকে আলাদা করার জন্য কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে। উদাহারণ হিসেবে বলা যায়,কেউ একজন তাঁর বুদ্ধির জন্য বিশেষভাবে পরিচিত। এটি তাঁকে আলাদা করে চেনার জন্য বিশেষ একটি চিহ্ন হয়ে যায়। একটি জাতি সাহসী হিসেবে পরিচিত হতে পারে আর এটি ঐ জাতির বিশেষ একটি বৈশিষ্ট্য হয়ে যায়। একটি সরকার অত্যাচারী হিসেবে কুখ্যাত হতে পারে,যা ঐ সরকারের পার্থক্যকারী একটি বৈশিষ্ট্য হয়ে যায়। ইয়েমেনি সরকারের পার্থক্যকারী বিশেষ বৈশিষ্ট্যটি হচ্ছে মিথ্যা বলা। এটি একটি মিথ্যাবাদী সরকার ,যে মিথ্যা বলে নিজের জনগণের সাথে ,মিথ্যা বলে প্রতিবেশীদের সাথে এবং মিথ্যা বলে ভিতরে বাইরে। এজন্যই তারা বলে বেড়ায় যে তারা ওমুক ওমুক ব্যক্তিকে হত্যা করেছে, আর শেষে এটি পরিস্কার হয়ে যায় যে তারা মিথ্যাবাদী। আর মানুষ এই সরকারের উপর তাদের আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। এখন এই সরকারকে কেউ বিশ্বাস করে না। একারণেই তাদের এই দাবী একেবারেই মিথ্যা।

 

আল-মালাহিমঃ আমাদের শাইখ, ইয়েমেনি সরকার আপনাকে কারাবন্দী করেছিল, আর আপনি সানার রাজনৈতিক নিরাপত্তা কারাগারে বন্দী ছিলেন। আপনি কত সময় ধরে বন্দী ছিলেন আর তখনকার অবস্থাইবা কেমন ছিল?

 

শাইখ আনোয়ার আল-আওলাকিঃ আমি দেড় বছর ধরে কারাবন্দী ছিলাম এবং টা ছিল স্থানীয় একটি অভিযোগের কারণে,কিন্তু যখন আমেরিকা জানতে পারে আমি কারাগারে বন্দী তখন তারা আমাকে জেরা করতে চাইল। আর এটি করতে করতে তাদের দেরি হয়েছিল এবং অবশেষে তারা তা করতে পারেনি। কিন্তু ইয়েমেনি সরকার বলেছিল যে ব্যাপারটি তাদের আর হাতে নেই এবং তারা কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না। এজন্য আমাকে কারাগারেই থাকতে হচ্ছিল যতক্ষণ পর্যন্ত না গোত্রীয় চাপ প্রয়োগের কারণে তারা আমাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।

 

আল-মালাহিমঃ ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সাথে একটি সভায় জাতীয় প্রতিরক্ষার ব্যবস্থাপক আলী আল আনসি বলেছেন যে, আপনাকে আমেরিকার কাছে হস্তান্তর করার জন্য গোত্রীয় মধ্যস্থতাকারী আছে। এসব মধ্যস্থতাকারীদের ব্যাপারটি বাস্তবতা কি এবং আপনি কি নিজেকে আমেরিকার কাছে সমর্পণ করতে চান, যেহেতু আপনার আমেরিকার নাগরিকত্ব আছে?

 

শাইখ আনোয়ার আল-আওলাকিঃ  ইয়েমেনি সরকারের পক্ষ থেকে কিছু আলাপ-আলোচনা আগে হয়েছিল কিন্তু আমি অবশ্যই স্পষ্টভাবে ও বিস্তারিতভাবে তাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলাম কেননা আমি তো কোন ভাবেই অভিযুক্ত নই, এখানে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগটা কি? এটাই যে আমি সত্যের প্রতি মানুষকে আহবান করি? আমি আল্লহর জন্য জিহাদ করার আহবান জানাই? আমি উম্মাহ-কে রক্ষা করার পক্ষে কথা বলি?

আসলে যার দিকে অভিযোগের আঙ্গুল তোলা যায় তা হচ্ছে ইয়েমেনি সরকার। এই অভিযোগগুলো হচ্ছে প্রতারণা আর তাঁবেদারি করার, মুসলিমদের অর্থ আত্মসাৎ করার, পৃথিবীতে নৈরাজ্য সৃষ্টি করার। আর আমার বিরুদ্ধে এসবের কোন অভিযোগ নেই। আর এজন্যই আলাপ-আলোচনা করার কোন সুযোগই নেই। সত্য যেখানে প্রতিষ্ঠিত সেখানে আলাপ-আলোচনা চলেনা ।

আর আমেরিকানদের কথা বলতে গেলে আবার একই কথা বলব। আমি কিছুতেই তাদের কাছে আত্মসমর্পণ করব না। যদি তারা আমাকে চায় তাহলে আমার খোঁজ করুক আর আল্লাহই শ্রেষ্ঠ রক্ষাকারী ।যদি আল্লাহ্‌ তাদের থেকে আমাকে রক্ষা করতে চান তাহলে আমেরিকানরা পৃথিবীর সবকিছুর বিনিময়েও আমার নাগাল পাবে না। আল্লাহ্‌ সুবহান তা’আলা যদি তাদের অথবা আজ্ঞাবাহীদের হাতে আমার মৃত্যু লিখে রাখেন তাহলে আমি তো ওটাই চাই (অর্থাৎ শাহাদাহ)।

 

আল-মালাহিমঃ আলী আল আনসি বলেছেন যে,যদি এসব মধ্যস্থতাকারী সফল না হয়,যেমনটি তাঁর ধারণা,তাহলে তারা সেনাবাহিনী ব্যবহার করবে যাতে আপনি আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হন। এছাড়াও ইয়াহিয়া মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ সালেহ বলেছেন যে,ইয়েমেনি গোত্রগুলি খুবই লোভী এবং যারা তাদের সবচেয়ে বেশী অর্থ প্রদান করে তাদের পক্ষেই কাজ করে। এবং তিনি আরো বলেছেন,যারা সন্ত্রাসের সাথে জড়িত তাঁদেরকে তারা কখনোই নিরাপত্তা দিবে না,তার বর্ণনা অনুযায়ী।

 

শাইখ আনোয়ার আল-আওলাকিঃ আজকে আমেরিকানদের বিরুদ্ধে প্রকৃত যুদ্ধ মুজাহদীনদের ছাড়া আর কেউই করছে না,অন্য সব চিত্রগুলো

হচ্ছে যুদ্ধের একটি অংসবিশেষ।উদাহারণ হিসেবে বলা যায় চীনের সাথে আমেরিকার বিরোধ অর্থনীতিতে,রাশিয়ার সাথে আমেরিকার বিরোধ কিছু জায়গার প্রভাব খাটানো নিয়ে।কিন্ত একমাত্র মুজাহহিদদের দল ছাড়া আর কেউ পুরো পৃথিবী নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য আমেরিকানদের সাথে লড়ছে না। আর আজকে এই জিহাদের তত্ত্ববধায়নকারী হচ্ছে গোত্রগুলি।আফগানিস্থানে গোত্র,ইরাকে গোত্র,সোমালিয়ায় গোত্র, এমনকি পাকিস্থানেও গোত্রীয় ব্যাপারটি একই রকম। এবং আমরা দেখতে পাই গোত্রীয় এলাকাগুলিই জিহাদকে লালণ-পালণ করছে। একই কথা ইয়েমেনের ক্ষেত্রেও বলা যেতে পারে।

 

আমেরিকা গোত্রগুলির মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করতে চায়। আর আমেরিকার পরিকল্পনার মধ্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হচ্ছে, “গোত্রগুলির মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি করা।”তারা চায় গোত্রগুলির যে গুণাবলী আছে তা যেন আর বিদ্যমান না থাকে,যেমনঃসাহসী,আশ্রয়দানকারী,আত্মত্যাগী,পরোপকারী ইত্যাদি। এই প্রশংসনীয় ইসলামীক গুণাবলীগুলি যা আমেরিকানরা তা দেখতে চায়না-তারা দেখতে চস্য যে গোত্রগুলি দুর্নীতিগ্রস্থ,পাপাচারীতে লিপ্ত থাকুক এবং এ কারণেই তারা এসব গোত্রীয় জায়গাগুলিকে দুর্নীতিগ্রস্থ করার চেষ্টা করছে, উদাহারণ হিসেবে আমরা দেখছি যে গোত্রগুলির সন্তানদের কাছে দুর্নীতি আর নেশাদ্রব্য পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

 

আর গোত্রীয় এলাকাগুলোর সন্তানদের মধ্যে দুর্নীতি ছড়িয়ে দেওয়ার সবচেয়ে ভয়াবহ রূপ হচ্ছে তাদেরকে (আমেরিকান)সেনাবাহিনীতে যোগদান করতে উদ্বুদ্ধ করা। গোত্রীয় এলাকাগুলোর সন্তানরা যদি সেনাবাহিনীতে যোগদান করে তাহলে তাদের সমর্থন আমেরিকানদের প্রতি থাকবে। তারা হয়ত জানে না অথবা জানার বিষয়টিকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে কিন্তু বাস্তবতা এটিই যে আমেরিকানদের প্রশাসন থেকে দেওয়া নির্দেশ গুলিই তারা পালণ করছে। অবশ্য তা সরাসরি হয় না, প্রথমে তা ইয়েমেনের নিরাপত্তা আমলাদের কাছে আসে, তারপরে নিরাপত্তা বাহিনী এই সৈন্যদেরকে মুজাহিদীনদের বাড়ি-ঘরে হামলা করার নির্দেশ দেয়, এই দেশের ন্যায়নিষ্ঠ মানুষদের হত্যা করার নির্দেশ দেয় আর উম্মাহকে রক্ষা করার জন্য যারা নিজেদের জীবন আর সম্পত্তি ত্যাগ করে জিহাদে বেড়িয়েছে তাঁদেরকে হত্যা করার নির্দেশ দেয়।

 

মুজাহিদীনরা কি চায়? তারা কি দুনিয়ার সুখ খুঁজতে বেড়িয়েছে ?তারা দুনিয়া থেকে পালিয়ে এসেছে। সত্যি বলতে তাদের অনেকেরই দুনিয়াতে অনেক কিছু ছিল,কিন্তু তারা আল্লাহ্‌র জন্য তা ছেড়ে চলে এসেছে।তারা আমেরিকানদের বিরুদ্ধে আফগানিস্থানে,ইরাকে,ফিলিস্থিনে,ইয়েমেনে জিহাদ করতে চায়।বর্তমানে এ সরকারগুলি হচ্ছে তাদের অনুসারী।আর ইয়েমেনি সরকারও ঠিক একইভাবে তাদের অনুসরণ করছে এবং এই সেনাবাহিনী তাদের উদ্দেশ্যগুলি পূরণ করছে। এসব সৈন্যদেরকে বলছি ভালো করে জনে রাখুন যে, আপনাদের উপর যে নির্দেশ আসে তা আমেরিকাই পাঠায় আর এটি হচ্ছে গোত্রের সন্তানদের নষ্ট করার সবচেয়ে বিপদজনক পথ।

এটিই হচ্ছে আমেরিকার পরিকল্পনা আর জনগণকে এ ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত।

 

আল-মালাহিমঃ ইসলামী বিশ্বের একটি নির্দিষ্ট বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে কাজ করার জন্য প্যাট্রিয়স এসেছে। ইরাক আর আফগানিস্থানে আমেরিকান সেনাবাহিনী তিক্ত অভিজ্ঞতা অর্জন করার পর প্যাট্রিয়স এসেছে আমেরিকার এই অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে নতুন পরিকল্পনা পেশ করার জন্য। প্যাট্রিয়সের পরামর্শগুলির মধ্যে আছে মুজাহিদীনদের কিছু নির্দিষ্ট ঘটনার জন্য দায়ী করা। উদাহারণস্বরূপ, রাস্তাঘাটে বোমা হামলা করে মুসলিমদের হত্যা করে তাঁর দায়-দায়িত্ব মুজাহিদীনদের ঘাড়ে চাপানো অথবা কোন বিশেষ ব্যক্তিকে হত্যা করে বলা যে মুজাহিদীনরা এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। এর মধ্যে আরও আছে যে, কিছু বাহিনী তৈরি করা যাতে এই জাতির লোকেরা একে অন্যের সাথে লড়াই করতে লিপ্ত হয়। আর আমেরিকানরা বসে বসে তা উপভোগ করতে পারে। এরকম আমরা ইরাকে ঘটতে দেখেছি। তারা গোত্রীয় সন্তান আত তাঁদেরকে মুজাহিদীনদের বিপক্ষে ব্যবহার করছে। ব্রিটিশদের “বিভক্তি সৃষ্টি করে শাসন করা” নীতি সম্পর্কে আমরা যা শুনেছি এটি তাঁর মতোই ।এখন তারা ইসলামী বিশ্বে এই নীতি ব্যবহার করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।

 

আল-মালাহিমঃ আমেরিকানরা আপনার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে যে সোমালিয়ার মুজাহিদীনদের সাথে, বিশেষ করা আল-সাবাব আল-মুজাহিদীনদের  সাথে আপনার যোগাযোগ আছে,মূলত আপনার ওয়েব সাইটে আপনি যখন তাঁদেরকে তাদের বিজয় লাভের পর অভিনন্দন জানিয়ে একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন। আল-সাবাব আল-মুজাহিদীনদের সাথে আপনার সম্পর্কের বাস্তবতা কি? আর সোমালিয়ার জিহাদ ও মুজাহিদীন সম্পর্কে আপনার অভিমত কি?

 

শাইখ আনোয়ার আল-আওলাকিঃ সোমালিয়ার আল-সাবাব আল-মুজাহিদীনদেরকে অভিনন্দন জানিয়ে আমি একটি চিঠি লিখেছিলাম এবং তারাও অভিনন্দন জানিয়ে উত্তর দিয়েছিল। এরপর আমেরিকানরা এই কথা বলেছে।

 

সোমালিয়ায় জিহাদি অভিজ্ঞতা নিয়ে বলতে হবে এটি আসলেই একটি অভজ্ঞত। আমার মতে, এবং আল্লাহই ভাল জানেন,এ কারণেই ইসলামী আন্দোলন,আলিম আর ইসলামী দলগুলির সোমালিয়ায় দূত পাঠানো উচিত যাতে তারা এই মুজাহিদীনদের থেকে (জিহাদের)অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পারে এবং ফিরে গিয়ে এই অভিজ্ঞতাকে অন্যান্যদের মাঝে ছড়িয়ে দিতে পারে।

ইসলামী আন্দোলনগুলি এই উম্মাহর সমস্যার সমাধান খুঁজছে যেমনিভাবে আলিমগণও খুঁজছেন। এই ইসলামী আন্দোলনগুলি যে সমাধানগুলি গ্রহণযোগ্য মনে করে সেগুলো তুলে ধরে। এবং একইভাবে অনেক আলিম যে সমাধানগুলি গ্রহণযোগ্য মনে করেছিলেন সেগুলো তুলে ধরেছেন। এখন আমরা আমাদের চোখের সামনে সমাধান দেকগছি সোমালিয়ায়। এই মুজাহিদ দল সামান্য কিছু সামর্থ্য নিয়ে একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্টা করেছে যেখানে তারা সর্বশক্তিমান আল্লাহ্‌র আইন অনুসারে শাসন করতে পারছে। এখন তারা মানুষের সামনে সমাধান তুলে ধরেছে। এখন মুজাহিদীনদের নিয়ন্ত্রনাধীন এলাকাগুলোতে মানুষ শান্তিতে বসবাস করছে, অর্থনীতি উন্নতি সাধন করছে।কেননা যখন শান্তি প্রতিষ্টা হয় তখন ব্যবসা বাণিজ্য আর কৃষিতে সমৃদ্ধি অর্জন করা যায়। সুতরাং এই অভিজ্ঞতা পথ দেখাচ্ছে যে, অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের উপকৃত হওয়া উচিত। এখন তারা বাস্তবতার সাথে টিকে আছে আর ইসলামী শারী’আহ থেকে তারা এই সমাধানের বাস্তবতা তুলে ধরছে। এজন্যই আমি বলেছি এই অভিজ্ঞতা স্বতন্ত্র আর জাতিগুলোর উচিত এখান থেকে উপকৃত হওয়া।

 

আল-মালাহিমঃ আমাদের সম্মানিত শাইখ, আমেরিকা আর ইউরোপে বার বার এই আশঙ্কা করা হচ্ছে জে,মুজাহিদদের প্রতি আমেরিকা আর ইউরোপে জন্ম নেওয়া মুসলিম তরুণদের সহানুভূতি বেড়ে যাবে। ফলে তারা আমেরিকার বিরুদ্ধে আক্রমণ চালাবে এবং তারা বিভিন্ন সংঘটন,যেগুলো পশ্চিমা বিশ্ব সন্ত্রাসী মনে করে, তাতে  যোগ দেওয়ার জন্য ভিন্ন দেশে যাবে। আপনার মতে তরুণদেরকে এদিকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য কোন জিনিসটি কারণ হিসেবে কাজ করছে?

 

শাইখ আনোয়ার আল-আওলাকিঃ নিদাল হাসানের কথাই ধরুন । একসময় নিদাল হাসান সেই রকম মুসলিম ছিল যেই রকম মুসলিম আমেরিকা চায়। নিদাল হাসান সলাত(নামায)পড়তো,সাওম(রোজা)পালন করতো,দান করতো কিন্তু একই সাথে সে আমেরিকান সেনাবাহিনীর একজন সৈন্য ছিল এবং তাঁর আনুগত্য আমেরিকার প্রতি ছিল। কিন্তু আমেরিকার যুলুমের কারণে নিদাল হাসান আমেরিকা সৈন্য থেকে বদলে গিয়ে একজন মুজাহিদে পরিণত হয়েছে, নিদাল হাসান আকজন মুজাহিদে পরিণোত্ত হয়েছে যিনি তাঁর সাথে কাজ করা সৈন্যদেরকেই হত্যা করেছে।যদি আমেরিকার অপরাধ চলতেই থাকে, তাহলে আমরা আরও নিদাল হাসানকে দেখতে পাব।

এছাড়াও আফগানিস্থান ও ইরাকে পশ্চিমা বিশ্ব থেকে আসা মুজাহিদীনরাও রয়েছে এবং এ ঘটনা ঘটতেই থাকবে যতদিন আমেরিকা আর পসচিমারা ইসলামী বিশ্বে তাদের অপরাধ চালিয়ে যেতে থাকবে।

 

আল-মালাহিমঃ আমাদের সম্মানিত শাইখ আল্লাহ্‌ সুবহান তা’আলা আপনাকে পুরস্কৃত করুন, এই সাক্ষাতের শেষ পর্যায়ে মুসলিমদের সবার প্রতি এবং বিশেষ করে আরব উপদ্বীপের মানুষদের প্রতি আপনার সর্বশেষ কোন বক্তব্য আছে কি?

 

শাইখ আনোয়ার আল-আওলাকিঃ আমার বক্তব্য হচ্ছে মুসলিমদের সবার প্রতি এবং বিশেষ করে আরব উপদ্বীপের বাসিন্দাদের প্রতি-

আমেরিকার বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে অবশ্যই জিহাদের অংশগ্রহণ করতে হবে। আমেরিকা হচ্ছে সেই যে আজকে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী ক্রুসেডের নেতৃত্ব দিচ্ছে।বর্তমানে আমেরিকা হচ্ছে অতীতের ফেরাউন।সুতরাং আমাদের অবশ্যই অংশ গ্রহণ করতে হবে। এবং আফগানিস্থান,ইরাক আর সোমালিয়ার এই মুজাহিদীনদের উপর আমাদের আশা যে তারা আমেরিকান সৈন্যবাহিনীর মাথা নোট করিয়ে ছাড়বে।এই জিহাদের কারণেই আমেরিকার অর্থনীতি আজকে হোঁচট খেয়েছে। যদি এই সামান্য মুজাহিদ দল আমেরিকাকে পরাজিত করতে সফল হতে পারে,তাহলে যখন পুরো উম্মাহ জেগে ওঠবে তখন কি হবে? এই উম্মাহর মুখোমুখি হবার সাহস আমেরিকার নেই। আমেরিকার এত শক্তিও নেই। আমেরিকার ষড়যন্ত্র অত্যন্ত দুর্বল,মাকড়শার বাসার চেয়েও দুরবল।আমেরিকা এই উম্মাহর মোকাবেলা করতে পারবে না ।আমাদের অবশ্য এই মুজাহিদীন ভাইদের সাথে যোগ দেওয়া উচিত আর আমাদের মুখ,হাত এবং অর্থ যা দিয়েই তাদের সাহায্য করতে পারি তা করা উচিত। এটি আজকে আমাদের ওপর একটি অর্পিত (ফারদ)দায়িত্ব,কেননা আমেরিকা চায় ইসলাম ও মুসলিমদেরকে ধ্বংস করতে এবং সর্বশক্তিমান আল্লাহ্‌ সুবহান তা’আলা তাঁর দ্বীনকে রক্ষা করবেন,সর্বশক্তিমান আল্লাহ্‌ সুবহান তা’আলা এই মুজাহিদীনদের হাতে আমেরিকাকে পরাজিত করবেন এবং আমরা আল্লাহ্‌র কাছে দু’আ করি যেন তিনি আমাদেরকে এই পুরস্কারের ভাগীদার করেন।

 

আল-মালাহিমঃ হে আল্লাহ্‌! আপনি কবুল করুন। এই সাক্ষাতের শেষে,আমি শাইখ আনোয়ার আল আওলাকিকে আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি যিনি এই সাক্ষাৎকারের জন্য আমাদের অনুরোধ রক্ষা করেছেন এবং আমরা আল্লাহ্‌র কাছে দু’আ করি তিনি যেন আপনাকে রক্ষা করেন এবং আপনাকে দীর্ঘ জীবন দান করেন। আপনার উপর আল্লাহ্‌র পক্ষ হতে শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক।

 

শাইখ আনোয়ার আল-আওলাকিঃ আল্লাহ্‌ সুবহান তা’আলা আপনাকে উত্তম প্রতিদান করুন।

আমাদেরকে আপনার দু’আয় মনে রাখবেন।

 

আলহামদুলিল্লাহ্‌, সমাপ্ত।