JustPaste.it

 

আত্মশুদ্ধি – ১১

গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি

দোয়া ও তার ফযিলত

 

মাওলানা সালেহ মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহ

 

 

মাওলানা সালেহ মাহমুদ হাফিজাহুল্লাহঃ আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আলামীন, ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা সাইয়িদিল আম্বিয়া-ই ওয়াল-মুরসালীন, ওয়া আলা আলিহী, ওয়া আসহাবিহী আজমাঈন। আম্মা বা’দ

আমরা সকলেই প্রথমে দুরূদ শরীফ পড়ে নিই।   

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ

আলহামদুলিল্লাহ বেশ কিছুদিন পর আবার আমরা আরেকটি তাযকিয়া মজলিসে হাজির হতে পেরেছি, এ জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার শুকরিয়া আদায় করি আলহামদুলিল্লাহ।

একটি দোয়া 

গত মজলিসে বলেছিলাম, হাদীসে যেসব দোয়া এসেছে ওগুলো দুই ধরণের। কিছু দোয়া এমন যেগুলো নির্ধারিত কোন সময়ের সাথে বাঁধা নয়। যে কোনো সময়ই পড়া যায়। আর কিছু দোয়া আছে এমন যেগুলো পড়ার জন্য সময় নির্ধারণ করে দেয়া আছে। যেমন, ফরয নামাজের পরবর্তী দোয়া, সকল-সন্ধ্যার দোয়া, ঘুম থেকে জাগ্রত হবার দোয়া, ঘুমানোর দোয়া, সফরের দোয়া ইত্যাদি।

গত মজলিসে আমরা প্রথম প্রকারের একটি দোয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছিলাম। আজকে আমরা দ্বিতীয় প্রকারের কয়েকটি দোয়া নিয়ে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ  

প্রথমেই আমি এ সংক্রান্ত একটি হাদীস পেশ করছি, যে হাদীসে এমন একটি দোয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। হাদীসটি হল, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

مَا مِنْ عَبْدٍ مُسْلِمٍ يَقُولُ حِينَ يُصْبِحُ وَحِينَ يُمْسِي ثَلَاثَ مَرَّاتٍ: رَضِيتُ بِاللَّهِ رَبًّا، وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا، وَبِمُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَبِيًّا، إِلَّا كَانَ حَقًّا عَلَى اللَّهِ أَنْ يُرْضِيَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ

কোন মুসলমান সকাল-সন্ধ্যায় তিন তিনবার নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়লে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাকে অবশ্যই সন্তুষ্ট করে দেবেন। দোয়াটি হল,

رَضِيتُ بِاللَّهِ رَبًّا، وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا، وَبِمُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَبِيًّا

আমি আল্লাহকে রব, ইসলামকে দ্বীন এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নবী হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট। মুসনাদে আহমাদ : ১৮৬৭১

দোয়াটিতে মোট তিনটি অংশ রয়েছে। চলুন, প্রতিটি অংশ নিয়েই সামান্য কিছু আলোচনা করি ইনশাআল্লাহ, যেন দোয়াটির মর্ম আমাদের আত্মস্থ হয়ে যায়।  

দোয়ার প্রথম অংশ

দোয়ার প্রথম অংশ হল, رَضِيتُ بِاللهِ رَبا  আমি আল্লাহকে রব হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট। এর অর্থ হল, আলহামদুলিল্লাহ আমি সন্তুষ্ট এই জন্য যে, আমার রব হলেন আল্লাহ। আমি আমার রবকে চিনতে পেরেছি। তাঁর ওপর ঈমান আনতে পেরেছি। তিনি আমাকে তাঁর পরিচয় জানিয়েছেন। তাঁর রুবুবিয়্যাতের ওপর ঈমান আনার তাওফিক দিয়েছেন। তাঁর রুবুবিয়্যাতের হক কী, তা আমাকে জানিয়েছেন। আমি কীভাবে তাঁর শোকর আদায় করব সে পদ্ধতি আমাকে শিখিয়ে দিয়েছেন। আলহামদুলিল্লাহ সুম্মা আলহামদুলিল্লাহ।

দোয়ার দ্বিতীয় অংশ

দোয়ার দ্বিতীয় অংশ হল, وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا  আমি ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট। আলহামদুলিল্লাহ আমি সন্তুষ্ট এই জন্য যে, ইসলাম আমার দ্বীন। ইসলাম আমার ঈমান ও আকিদা। ইসলাম আমার শরিয়ত ও জীবনব্যবস্থা। আমার রব আমাকে ইসলামের হেদায়েত দিয়েছেন। ইসলাম যে পূর্ণাঙ্গ দ্বীন ও পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা তা আমাকে বুঝার তাওফিক দান করেছেন। আমি মৃত্যু পর্যন্ত ইসলামের উপর অটল অবিচল থাকবো। ইসলামের উপরই বাঁচবো। ইসলামের উপরই মরবো। আমার ছোট বড় সকল আমল, আমার জীবন, আমার মরণ সব কিছুই আল্লাহর জন্য, আল্লাহর দ্বীনের জন্য, ইসলামের জন্য। কুরআনে কারীমের ভাষায়,

إِنّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ لَا شَرِيكَ لَه وَبِذلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ

আমার নামায, আমার ইবাদত, আমার জীবন, আমার মরণ সবই একমাত্র আল্লাহর জন্য, যিনি জগতসমূহের প্রতিপালক। তাঁর কোনও শরিক নেই। আমাকে এই নির্দেশই দেওয়া হয়েছে এবং আমি মুসলিমদের তথা আল্লাহর সামনে আত্মসমর্পণকারীদের একজন। (সূরা আনআম : ১৬২)

দোয়ার তৃতীয় অংশ

দোয়ার তৃতীয় এবং শেষ অংশ হল, وَبِمُحَمّدٍ نَبِيا  আমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নবী হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট। আলহামদুলিল্লাহ আমি সন্তুষ্ট এই জন্য যে, আমার নবী হলেন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আল্লাহ তাআলা আমাকে তাঁর উম্মতের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। আমাকে তাঁর উপর ঈমান আনার তাওফিক দিয়েছেন। তাঁর উপর নাযিলকৃত শরিয়তের শিক্ষা অনুযায়ী জীবন পরিচালিত করার তাওফিক দিয়েছেন। তাঁর ছোট বড় প্রতিটি সুন্নাহ ও আদর্শ আমার সামনে সুস্পষ্ট করে দিয়েছেন। তাঁর শরিয়তের ছোট বড় প্রতিটি বিধান, ঈমান ও আকিদা থেকে নিয়ে নফল ও মুস্তাহাব পর্যন্ত সব কিছু সম্পূর্ণ অবিকৃত অবস্থায় সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছেন এবং কেয়ামত পর্যন্ত সংরক্ষণ করার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন,   

إِنَّا نَحْنُ نَزَّلْنَا الذِّكْرَ وَإِنَّا لَهُ لَحَافِظُونَ

এ উপদেশগ্রন্থ আমিই নাজিল করেছি এবং আমিই এর রক্ষণাবেক্ষণকারী। সুরা হিজর : ৯

 

দোয়াটি করার সময় দোয়ার এই মর্মগুলো আমরা অন্তরে হাজির রাখার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। এ দোয়াটির মতো হাদীসে এমন আরও অনেক দোয়া ও আযকার এসেছে যা নির্দিষ্ট সময়ের সাথে বাঁধা। 

ওই সব দোয়া ও আযকারের মধ্য থেকে সকাল ও সন্ধ্যায় পড়তে হয় এমন বিশেষ কয়েকটি দোয়া ফযিলতসহ পেশ করছি। এ দোয়াগুলো আমাদের জন্য খুবই উপকারী। দোয়াগুলো আমরা অবশ্যই পড়ব এবং পড়ার সময় ওগুলোর ফযিলতটাও অন্তরে হাজির রাখার চেষ্টা করব। তাহলে এ দোয়াগুলো আমাদের অন্তরে আলাদা একটা প্রভাব ফেলবে ইনশাআল্লাহ

আয়াতুল কুরসী

اَللّٰهُ لَا اِلٰهَ اِلَّا هُوَ اَلْـحَيُّ الْقَيُّوْمُ  لَا تَاْخُذُهُ سِـنَةٌ وَّلَا نَوْمٌ لَه مَا فِي السَّمٰوٰتِ وَمَا فِي الْاَرْضِ مَنْ ذَا الَّذِيْ يَشْفَعُ عِنْدَهُ اِلَّا بِاِذْنِه  يَعْلَمُ مَا بَيْنَ اَيْدِيْهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ وَلَا يُحِيْطُوْنَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِه اِلَّا بِمَا شَاءَ وَسِعَ كُرْسِـيُّهُ السَّمٰوٰتِ وَالْاَرْضَ  وَلَا يَـــــُٔـــوْدُه حِفْظُهُمَا  وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيْمُ

আল্লাহ তিনি যিনি ছাড়া কোনও ইলাহ নেই। তিনি চিরঞ্জীব, সব কিছুর নিয়ন্ত্রক। তাঁকে কখনও তন্দ্রা স্পর্শ করতে পারে না, নিদ্রাও নয়। আকাশমন্ডলে যা আছে এবং পৃথিবীতে যা আছে সব কিছু তাঁরই। কে আছে, যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর কাছে সুপারিশ করবে? তিনি সবার সামনে ও পিছনে যা কিছু আছে সবই জানেন। তারা তাঁর জ্ঞানের কোনো কিছুই নিজের আয়ত্বে নিতে পারে না, কেবল ততটুকু ছাড়া যা তিনি নিজে ইচ্ছা করেন। তাঁর ‘কুরসী’ আকাশমন্ডল ও পৃথিবীকে পরিবেষ্টন করে রেখেছে। এ দুটোর রক্ষণাবেক্ষণে তাঁর বিন্দু মাত্রও কষ্ট হয় না। তিনি সুউচ্চ সুমহান। (সূরা বাকারা : ২৫৫)

ফযিলত : রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

مَنْ قَالَها حِيْنَ يُصْبِحُ أُجِيْرَ مِنَ الْجِنِّ حَتَّى يُمْسِيَ وَمَنْ قَالَها حِيْنَ يُمْسِيْ أُجِيْرَ مِنْهُمْ حَتَّى يُصْبِحَ.

কেউ সকাল বেলা আয়াতুল কুরসি পড়লে সন্ধ্যা পর্যন্ত জিনদের হাত থেকে নিরাপদ থাকবে। সন্ধ্যাবেলা পড়লে সকাল পর্যন্ত নিরাপদ থাকবে। মুসতাদরাকে হাকেম : ১/৫৬২

অন্য হাদীসে এসেছে, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

مَنْ قَرَأَ آيةَ الكُرْسِيِّ دُبُرَ كُلِّ صَلاةٍ لَمْ يَمْنَعْه مِنْ دُخُولِ الجَنَّةِ إلَّا أنْ يَمُوْتَ .

কেউ প্রত্যেক (ফরয) নামাযের পর আয়াতুল কুরসি পড়লে তার জান্নাতে প্রবেশের জন্য মৃত্যু ছাড়া আর কোনও বাধা থাকে না। নাসায়ী, আমালুল ইয়াওম ওয়াল লাইলাহ : ১০০

সূরা ইখলাস, সূরা ফালাক ও সূরা নাস

بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ 

قُلْ هُوَ اللّٰهُ اَحَدٌ  اَللّٰهُ الصَّمَدُ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُوْلَدْ  وَلَمْ يَكُنْ لَّه كُفُوًا اَحَدٌ.

বলুন, তিনি আল্লাহ, এক-অদ্বিতীয়। আল্লাহ হচ্ছেন সামাদ। (তিনি কারও মুখাপেক্ষী নন, সবাই তাঁর মুখাপেক্ষী) তিনি কাউকেও জন্ম দেন নি এবং তাঁকেও কারও থেকে জন্ম নেন নি। তাঁর সমতুল্য কেউই নেই। (সূরা ইখলাস ১-)

 

بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ

قُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ  مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ  وَمِنْ شَرِّ غَاسِقٍ اِذَا وَقَبَ  وَمِنْ شَرِّ النَّفّٰثٰتِ فِي الْعُقَدِ  وَمِنْ شَرِّ حَاسِدٍ اِذَا حَسَدَ.

বলুন, আমি আশ্রয় কামনা করছি ঊষার রবের। তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট  থেকে এবং অন্ধকার রাতের অনিষ্ট থেকে যখন তা ছেয়ে যায় এবং সে সমস্ত নারীদের অনিষ্ট থেকে যারা (সূতার) গিরায় ফুঁ দেয় এবং হিংসুকের অনিষ্ট থেকে যখন সে হিংসা করে। (সূরা ফালাক ১-)

بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ

قُلْ اَعُوْذُ بِرَبِّ النَّاسِ مَلِكِ النَّاسِ اِلٰهِ النَّاسِ مِنْ شَرِّ الْوَسْوَاسِ الْخَنَّاسِ الَّذِيْ يُوَسْوِسُ فِيْ صُدُوْرِ النَّاسِ مِنَ الْجِنَّةِ وَالنَّاسِ.

বলুন, আমি মানুষের রব, মানুষের অধিপতি, মানুষের ইলাহের নিকট আশ্রয় কামনা করছি, আত্মগোপনকারী কুমন্ত্রণাদাতার অনিষ্ট হতে; যে মানুষের অন্তরে কুমন্ত্রণা দেয়, সে জিনদের মধ্য থেকে হোক বা মানুষের মধ্য থেকে। (সূরা নাস ১-) - সুনানে আবূ দাউদ : ১৫২৩; জামে তিরমিযী : ২৯০৩

ফযিলত : রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

مَنْ قَالَها ثَلَاثَ مَرَاتٍ حِيْنَ يُصْبِحُ وَحِيْنَ يُمْسِي كَفَتْهُ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ .

কেউ সকাল-সন্ধ্যা তিন তিন বার এ তিনটি সূরা পড়লে এ সুরাগুলো তার জন্য সবকিছুর অনিষ্ট থেকে যথেষ্ট হবে। সুনানে আবূ দাউদ : ৫০৮২; জামে তিরমিযী : ৩৫৭৫

সব কিছুর ক্ষতি থেকে নিরাপত্তা

بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلاَ فِي السّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ .

ফযিলত : রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

مَنْ قَالَها ثَلَاثًا إِذَا أَصْبَحَ، وَثَلَاثًا إِذَا أَمْسَى لَمْ يَضُرَّهُ شَيْءٌ .

কেউ সকালে তিন বার এবং সন্ধ্যায় তিন বার এ দোয়া পড়লে কোনও কিছুই তার ক্ষতি করতে পারবে না। সুনানে আবূ দাউদ : ৫০৮৮; জামে তিরমিযী : ৩৩৮৮; মুসনাদে আহমদ : ৪৪৬

সাইয়িদুল ইস্তিগফার

اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلاَّ أَنْتَ، خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وَأَبُوءُ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنوبَ إِلاَّ أَنْتَ.

হে আল্লাহ্‌! আপনি আমার রব। আপনি ছাড়া আর কোনও ইলাহ নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। আমি আপনার বান্দা। আমি আমার সাধ্যমতো আপনার (তাওহীদের) অঙ্গীকার ও (জান্নাতের) প্রতিশ্রুতির উপর রয়েছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে আপনার নিকট আশ্রয় চাই। আপনি আমাকে যে সব নিয়ামত দিয়েছেন তা স্বীকার করছি। আর আমি নিজের অপরাধ স্বীকার করছি। অতএব আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন। আপনি ছাড়া আর তো কেউ গুনাহ মাফ করতে পারে না।

ফযিলত : রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

مَنْ قَالَها مُوْقِنًا بِهَا حِيْنَ يُمْسِي فَمَاتَ مِنْ لَيْلَتِهِ دَخَلَ الْجَنَّةَ وكَذَالِكَ إِذَا أَصْبَحَ .

কেউ পূর্ণ একিনের সাথে সন্ধ্যায় এটি পড়লে ওই রাতে মারা গেলে অবশ্যই জান্নাতে যাবে। সকালে পড়লে ওই দিন মারা গেলে অবশ্যই জান্নাতে যাবে। সহী বুখারী : ৬৩০৬

 

দুনিয়া ও আখিরাতে ক্ষমা ও নিরাপত্তা

اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِي الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ، اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِي دِينِي وَدُنْيَايَ وَأَهْلِي وَمَالِي، اللَّهُمَّ اسْتُرْ عَوْرَاتِي، وَآمِنْ رَوْعَاتِي، اللَّهُمَّ احْفَظْنِي مِنْ بَينِ يَدَيَّ، وَمِنْ خَلْفِي، وَعَنْ يَمِينِي، وَعَنْ شِمَالِي، وَمِنْ فَوْقِي، وَأَعُوذُ بِعَظَمَتِكَ أَنْ أُغْتَالَ مِنْ تَحْتِي .

হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট দুনিয়া ও আখেরাতে ক্ষমা ও নিরাপত্তা কামনা করি। হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট ক্ষমা এবং আমার দ্বীন, দুনিয়া, পরিবার ও অর্থ-সম্পদের নিরাপত্তা কামনা করি। হে আল্লাহ! আপনি আমার গোপন দোষগুলো ঢেকে রাখুন। আমার ভীত সন্ত্রস্ততাকে নিরাপত্তায় পরিণত করুন। হে আল্লাহ! আপনি আমাকে সামনের দিক থেকে, পিছনের দিক থেকে, ডান দিক থেকে, বাম দিক থেকে, উপরের দিক থেকে (মোটকথা সব দিক থেকে) রক্ষা করুন। আর আমি আপনার বড়ত্বের ওসিলায় নিচের দিক থেকে হঠাৎ আক্রান্ত হওয়া থেকে আশ্রয় চাই।  

হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এ দোয়াটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকাল-সন্ধ্যায় পড়তেন। সুনানে আবূ দাউদ : ৫০৭৪; সুনানে ইবনে মাজাহ : ৩৮৭১

বিষধর প্রাণীর ক্ষতি থেকে নিরাপত্তা

أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ .

আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালিমাসমূহের ওসিলায় তাঁর নিকট তাঁর সকল মাখলুকের ক্ষতি থেকে আশ্রয় কামনা করছি।

ফযিলত : রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

مَنْ قَالَ حِيْنَ يُمْسِيْ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ : أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ، لَمْ تَضُرَّهُ حُمَةٌ تِلْكَ اللَّيْلَةَ .

কেউ সন্ধ্যায় তিন বার এ দোয়াটি পড়লে ওই রাতে কোনো কিছুর বিষ তার কোনও ক্ষতি করবে না। মুসনাদে আহমদ : ৭৮৯৮ নাসায়ী, আমালুল ইয়াওমি ওয়াল লাইলাহ : ৫৯০

হযরত খাওলা বিনতে হাকীম আস-সুলামিয়াহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কেউ কোথাও অবতরণ করে উপরের দোয়াটি পড়লে সেই জায়গা ত্যাগ করা পর্যন্ত কোন কিছুই তার ক্ষতি করতে পারবে না। জামে তিরমিজী : ৩৪৩৭; সুনানে মাজাহ : ৩৫৪৭

দশটি দাসমুক্তির সওয়াব

لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ.

এক আল্লাহ ছাড়া আর কোনও ইলাহ নেই, তাঁর কোনও শরীক নেই, রাজত্ব তাঁরই, সমস্ত প্রশংসাও তাঁরই, আর তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান।

ফযিলত : রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,  

مَنْ قَالَهَا فِيْ يَوْمٍ مِائَةَ مَرَّةٍ، كَانَتْ لَهُ عَدْلَ عَشْرِ رِقَابٍ، وَكُتِبَتْ لَهُ مِائَةُ حَسَنَةٍ، وَمُحِيَتْ عَنْهُ مِائَةُ سَيِّئَةٍ، وكَانَتْ لَهُ حِرْزًا مِنَ الشَّيْطَانِ يَوْمَه ذَلِكَ حَتَّى يُمْسِيَ، وَلَمْ يَأْتِ أَحَدٌ بِأَفْضَلَ مِمَّا جَاءَ بِهِ إلَّا رَجُلٌ عَمِلَ أَكْثَرَ مِنْهُ.

কেউ দিনের বেলা একশ বার এ দোয়াটি পড়লে দশটি দাস মুক্ত করার সমপরিমাণ সওয়াব পাবে। তার নামে একশটি সওয়াব লেখা হবে। একশটি গোনাহ ক্ষমা করা হবে। সে দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত শয়তানের হাত থেকে নিরাপদ থাকবে। (কেয়ামতের দিন) তার চেয়ে উত্তম আমল নিয়ে আর কেউ আসবে না। যদি না কেউ এ দোআটি তার চেয়ে বেশি পড়ে। সহী বুখারী : ৩২৯৩; সহী মুসলিম : ২৬৯১  

সকাল সন্ধায় পড়ার জন্য এমন আরও অনেক দোয়া বিভিন্ন হাদীসে এসেছে। এ বিষয়ে বিভিন্ন কিতাবও আছে। ‘হিসনুস মুসলিম’ নামে বাজারে একটি কিতাব পাবেন। ওই কিতাবে থাকা সবগুলো দোয়াই নির্ভরযোগ্য। এ ছাড়া ‘হাদিসে বর্ণিত সকাল-সন্ধ্যার মাসনূন যিকির’ এ নামে ছোট একটি বইও আছে। তো সকাল সন্ধার সবগুলো দোয়াই আমরা পড়ব এবং পড়ার সময় অবশ্যই দোয়ার অর্থ ও মর্মের প্রতি লক্ষ্য রেখে পড়ার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। তাহলেই এ দোয়াগুলোর মাধ্যমে আমরা অন্তরে অন্য রকম এক ঈমানি তৃপ্তি ও স্বাদ অনুভব করব ইনশাআল্লাহ। হাদীসে এসেছে, 

عَنِ الْعَبَّاسِ بْنِ عَبْدِ الْمُطَّلِبِ رضي الله عنه أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ: «ذَاقَ طَعْمَ الإِيمَانِ، مَنْ رَضِيَ بِالله رَبًّا، وَبِالإِسْلامَ دِيناً، وَبِمُحَمَّدٍ رَسُولاً». رواه مسلم.

হযরত আব্বাস বিন আব্দুল মুত্তালিব রাযি. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, ওই ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ পায়, যে আল্লাহকে রব, ইসলামকে দ্বীন এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নবী হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট। সহী মুসলিম।

হাদীসটি থেকে বুঝা যায়, ঈমানেরও স্বাদ আছে, মজা আছে, মিষ্টতা আছে, যা শুধু সত্যিকারের মুমিনরাই অনুভব করতে পারে। পাশাপাশি এও বুঝা যায় যে, ঈমানের স্বাদ ও মিষ্টতা একমাত্র সে-ই অনুভব করতে পারে যে আল্লাহকে রব, ইসলামকে দ্বীন এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নবী হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট

আজকে আমরা যে হাদীসটি দিয়ে আমাদের আলোচনা শুরু করেছিলাম সেই হাদীসটি আবার একটু স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

مَا مِنْ عَبْدٍ مُسْلِمٍ يَقُولُ حِينَ يُصْبِحُ وَحِينَ يُمْسِي ثَلَاثَ مَرَّاتٍ: رَضِيتُ بِاللَّهِ رَبًّا، وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا، وَبِمُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَبِيًّا، إِلَّا كَانَ حَقًّا عَلَى اللَّهِ أَنْ يُرْضِيَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ

কোন মুসলমান সকাল-সন্ধ্যা তিন তিনবার নিম্নোক্ত দোয়াটি পড়লে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাকে অবশ্যই সন্তুষ্ট করে দেবেন। দোয়াটি হল,

رَضِيتُ بِاللَّهِ رَبًّا، وَبِالْإِسْلَامِ دِينًا، وَبِمُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَبِيًّا

আমি আল্লাহকে রব, ইসলামকে দ্বীন এবং মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নবী হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট। মুসনাদে আহমাদ : ১৮৬৭১

দোয়াটি পড়ার সময় এর যে সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা উপরে পেশ করা হয়েছে তা আমরা অন্তরে হাজির রাখার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।  

মুহতারাম ভাইয়েরা! আজকের আলোচনা এখানেই শেষ করছি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে তাঁর দ্বীনের জন্য কবুল করুন এবং ইখলাসের সাথে জিহাদ ও শাহাদাতের পথে অবিচল থাকার তাওফিক দান করুন।

আমরা সকলে মজলিস থেকে উঠার দোয়াটা পড়ে নিই।

سبحانك اللهم وبحمدك، أشهد أن لا إله إلا أنت، أستغفرك وأتوب إليك

وصلى الله تعالى على خير خلقه محمد وآله واصحابه اجمعين

وآخر دعوانا ان الحمد لله رب العالمين

 

*******************