ধাপে ধাপে কর্তৃত্বের পথে
খলিল ওয়াসিল
আজ থেকে চৌদ্দ বছর পূর্বে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ ক্রুসেডের ঘোষনা দেয়। সদ্য প্রতিষ্ঠিত ইসলামি ইমারাহকে অংকুরেই নিঃশেষ করা ছিল তার লক্ষ্য। মার্কিন নেতৃত্বাধীন এই যুদ্ধে অংশগ্রহনের জন্য তিনি বিশ্বের সকল রাষ্ট্রকে আহবান জানান। চ্যালেঞ্জের সুরে বলেন “হয়ত আমাদের সাথে থাকবে নয়ত সন্ত্রাসীদের সাথে খাকবে।
খৃষ্টানরা তাদের সৈন্যসামন্ত ও অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে ইমারাতে ইসলামিয়ার উপর ঝাপিয়ে পড়ল। মিডিয়ার চিৎকার চেচামেচিতে অনেকেই মনে করেছিল যে, ইমারতে ইসলামিয়ার অন্তিম সময় এসে গেছে। পশ্চিমারা মুজাহিদগনকে পদতলে পিষ্ঠ করবে। তাদের কোন অস্তিত্বই রাখবে না।
যুদ্ধের সেই দিন গুলো ছিল অত্যন্ত কঠিন। মুজাহিদগনের উপর দিয়ে বয়ে গেছে অনেক ঝড়- তোফান। বিদেশীদের ঔদ্ধত্বের সাথে যোগ হয়ে পাড়া- প্রতিবেশির বিশ্বাস ঘাতকতা। শত্রæদের বর্বরতার সাথে যোগ হয়েছিল কাছের লোকদের অসহযোগিতা, তদুপরী দখলদাররা ব্যবহার করেছিল সবধরনের আত্যাধুনিক ও ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্রশস্ত্র। এটা তো সবারই জানা যে, মুজাহিদগন শহর থেকে সরে পড়ার পূর্ব পর্যন্ত ক্রুসেডাররা স্থলে অবতরন করেনি।
যুদ্ধের প্রাথমিক দিনগুলোতে এলোপাতাড়ি ভাবে শহর ও জনবহুল এলাকা সমুহে প্রচন্ড বিমান হামলা শুরু করে। বেসামরিক লোকদের মাঝে হতাহতের ঘটনা ব্যাপক হারে ঘটতে থাকে। ফলে মুজাহিদগন শহর ও জনবসতি থেকে সরে পড়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন । সে মতে সুশৃংখল ভাবে শহর ও জনাকীর্ণ এলাকা সমুহ ছেড়ে আসতে থাকেন।
যখন মুজাহিদগন লোকালয় থেকে নিজেদেরকে পুরোপুরি সরিয়ে নেন এবং তাদের নিয়ন্ত্রনে কেবল হাতে গুনা কয়েকটি অঞ্চল অবশিষ্ট থাকে তখন নির্বোধ আমেরিকা মনে করল যে, তারা মুজাহিদগনের কোমর ভেঙ্গে দিয়েছে। তখন কার মার্কিন প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ডোনাল্ড রামস ফেল্ড আত্মসর্ম্পনের জন্য আয়েশী বার্তা পাঠালেন, মার্কিন সংবাদ সংস্থা এন বি সি র সাথে পূর্ব নিধারিত আলোচনায় তিনি রাশভারী চালে বললেন, এখনো সময় আছে, আত্মসর্ম্পন কর, নচেৎ তোমাদেরকে হত্যা করা হবে। কিন্তু মুজাহিদগন আমরণ লড়াই করতে বদ্ধ পরিকর। এত বিপদ আপদ ও আঘাতের পরও তাদের মনোবলে এতটুকু চিড় ধরেনি।আত্মসর্ম্পনের আহবানকে তারা ঘৃনা ভরে প্রত্যাখান করলেন। তারা শায়েখ উমর মুখতার(রাঃ) এর বিখ্যাত বানীর প্রতিধ্বনি করলেন আমরা আত্মসর্ম্পন করব না। হয়ত বিজয় হবে নয়ত জীবন বিলিয়ে দেব।
এক সময় মুজাহিদগন লোকালয় থেকে পুরোপুরি সরে পড়লেন: পাহাড় পর্বতে অদৃশ্য হয়ে যান। যেন কিছুটা হলে বিশ্রাম গ্রহন করা যায়।
নির্বোধেরা মনে করল তারা যুদ্ধ জয় করে ফেলেছে। ইমারাতে ইসলামিয়া শেষ হয়ে গেছে। অথচ যুদ্ধ তখনো পর্যন্ত শুরুই হয়নি। এক পর্যায়ে ক্রুসেডাররা স্থলে অবতরন করল। মুজাহিদগন নিজেদেরকে নতুন ভাবে বিন্যস্ত করার দিকে মনোযোগ দিরেন। তখন অনেকেই তাদেরকে নিরুৎসাহিত করতে শুরু করল। তারা বলল, নিজেদের দেহকে একটু বিশ্রাম দাও। তোমরা এখন পাহাড়ে পর্বতে দুর্বিসহ জীবন যাপন করছ। এমন পরিস্থিতিতে এত বড় শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া অসম্ভব। কিন্তু এসকল কথা শুনার ফুরসত মুজাহিদগনের নেই। আল্লাহর উপর ভরসা করে যুদ্ধের জন্য সুদৃঢ় সংকল্প ব্যাক্ত করলেন। সিংহের গর্জনে দখলদারদের অন্তরাত্মা কেপে উঠল, এই তো একে একে চৌদ্দটি বছর পার হয়ে গেল। এখনো আল্লাহর সৈনিকগন দখলদারদেরকে এবং এবং তাদের দূসরদেরকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছেন। আঘাতে আঘাতে তাদেকে নাস্তানাবুদ করছেন। না অবসাদগ্রস্ত হচ্ছে না ক্লান্ত হচ্ছেন। লড়াই একটি শেষ হতে না হতে আরেকটি শুরু করছেন। বিপদসংকুল ক্ষেত্র সমূহে বীর বিক্রমে ঝাপিয়ে পড়ছেন। যুদ্ধের নতুন উপাখ্যান রচনা করছেন। একটির পর একটি বিজয় অর্জন করতে করতে চুড়ান্ত বিজয়ের দিকে অগ্রসর হচ্ছেন।
শেষের মাসগুলোতে বেশ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বিজয় অর্জিত হয়েছে। প্রচুর গনিমতের মাল হস্তগত হয়েছে। দখলদাররা মুজাহিদগনের অগ্রগতিতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে এবং নিজের উদ্ধেগের কথা প্রকাশ করছে।
কাবুল, কাপিসা, পাততিয়া, পাক্তিকা, ওরুজগন, জবোল, ফারিয়াব, সারেপোল, কুন্দুজ, বাগলন, তাখর, বাদাখশন, ভার্দাক, পারভন, হেরাত, কুহেস্তান, হেলমান্দ, কান্দাহার, লাগমান, নানগারহর, ফারহ, লোওগার, নুরেস্তান, কুনার, প্রভূতি প্রদেশ থেকে সন্তষজনক সংবাদ আসছে। প্রতিটি রনাঙ্গন থেকে প্রতিদিনই সুসংবাদ আসছে। এক দিক থেকে কোন জেলা বা প্রদেশ দখলের সংবাদ আসছে তো পরক্ষনেই অন্যদিক থেকে সংবাদ আসছে যে মুজাহিদগন অমুক অমুক ঘাটি দখল করে নিয়েছেন। কেউ সংবাদ নিয়ে আসছে কয়েক ডজন শত্রæসেনা আত্মসর্ম্পন করেছে। পরক্ষনে অন্য কেহ খবর দিচ্ছে, অমুক সেনা ছাউনির উপর নিñিদ্র অবরোধ আরোপ করা হয়েছে। রাজধানীতে ইসতেশহাদী হামলায় সাজোয়ান সহ সেনা কনবয় উড়ে গেছে তো অন্য কোথা ও তাদের তাদের যুদ্ধ বিমান ভূপাতিত হচ্ছে। মুজাহিদগনের কোন দল অঢেল গনীমত হস্তান্তর করেছে তো অন্য কোন দল জেল ভেঙ্গে মুসলিম নর- নারী ও মুজাহিদগনকে ছাড়িয়ে আনছে। কোথাও মারা পড়ছে ডজন ডজন শত্রæসেনা আবার কোথাও তাদের অনেকে বন্দীত্ব বরন করছে।
অপারেশন আজম( প্রত্যয়) চলাকালে মুজাহিদগন বেশ কিছু প্রদেশ দখলে নেন। কুন্দুজ দখলদার মুক্ত করার পর বিশের ও অধিক জেলা বিজিত হয়।
আল- হামদুলিল্লাহ! আফগানিস্তানের সিংহভাগ ভূখন্ড এখন তাদের নিয়ন্ত্রনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই সকল বিজয় এমনিতেই আসেনি। এর পেছনে রয়েছে অনেক কুরবানী, বীরত্বর অনেক কাহিনী।প্রায় দেড় যুগের চড়াই- উৎরাই বিপদ- আপদ, কষ্ট- ক্লেশ, ক্লান্তি- শ্রান্তি, ধৈর্য- সহিষ্ণুুতা ও ক্রমাগত চেষ্টা সাধনার পর এসকল বিজয় অর্জিত হচ্ছে। এর মূল্য পরিশোধ করতে হয়েছে রক্তের বন্যা বহিয়ে। শত সহ¯্র ছিন্ন দেহের নাজরানা পেশ করে। অনেককে বরন করতে হয়েছে কারা প্রকোষ্ঠের দুর্বিসহ জীবন। আল্লাহ তায়ালা বলেন,অর্থ আলিফ-লাম-মীম। মানুষ কি মনে করে যে, তারা একথা বলেই অব্যাহতি পেয়ে যাবে যে,আমরা বিশ্বাস করি এবং তাদেরকে পরিক্ষা করা হবে না? ইমারতে ইসলামিয়া বিশ্বের সবচে’ দুবির্নীত ও শক্তিধর রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে মোটামোটি খালি হাতে যুদ্ধে অবতির্ণ হয়েছিল। তখন মুজাহিদদের হাতে মরচে পড়া গুটি কতক বন্দুক ও বুলেট ছাড়া কিছুই ছিল না। তারা এক আল্লাহ উপর ভরসা করে নগ্নপদে ক্ষুৎপীড়িত অবস্থায় শত্রæর মোকাবেলায় বেরিয়ে পড়েছিল। অতপর আল্লাহর হুকুমে কত ছোট দল এত বড় দলের বিরুদ্ধে বিজয় লাভ করে থাকে। আজ যখন মুজাহিদগনকে সাজোয়া যানের বহর নিয়ে টহল দিতে দেখি, আর যখন দেখি, সেগুলোর উপর কালিমা খচিত পতাকা পত পত করে উড়ছে, তখন স্মৃতির পাতায় ভেসে উঠেযুদ্ধের প্রথম দিককার সেই অসহায়ত্বের দিনগুলোর কথা। আর মনে হয় আমরা তো আল্লাহর বানীর বাস্তব ব্যাখ্যা হয়ে জীবন যাপন করছি। আল্লাহ তায়ালা বলেন, অর্থ আর স্মরন কর, যখন তোমরা ছিলে অল্পপরাজিত অবস্থায় পড়েছিলে দেশে: ভীত- সন্ত্রস্ত ছিলে যে, তোমাদের না অন্যেরা ছোঁ মেরে নিয়ে যায়। অতঃপর তিনি তোমাদিগকে আশ্রয়ের ঠিকানা দিয়েছেন, ¯^ীয় সাহায্যের দ্বারা তোমাদিগকে শক্তি দান করেছেন এবং পরিচ্ছন্ন জীবিকা দিয়েছেন যাতে তোমরা শুকরিয়া আদায় কর।
এ সকল ধারাবাহিকতা ও ত্বরিৎ বিজয় জানান দিচ্ছে যে, মুজাহিদগন সকল পদক্ষেপে ক্রমে ক্রমে নেতৃত্ব ও কর্তৃতের পথে অগ্রসন হচ্ছেন। তারা শহর গ্রাম কিংবা সেনা ঘাটি যেখানেই আক্রমন করছেন, সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে তা দখল করে নিচ্ছেন।
সকলের জানা থাকা উচিৎ যে, ইমারতে ইসলামিয়া বর্তমান পরিস্থিতিতে শহরাঞ্চালে নিজেদের কতৃর্ত্ব সুসংহত করতে ততটা তৎপর হচ্ছে না এমনটি করতে গেলে পরক্ষনেই সেখান থেকে সরে পড়তে বাধ্য হচ্ছেন। কারন শত্রæদের হিংসার আগুন এখনো নিবাপিত হয়নি। মুজাহিদগন কোন পৌর এলাকায় নিজেদের কর্তৃত্ব সুদৃঢ় করলে সেখানে শত্রæরা এলোপাতাড়ি ভাবে বর্বরোচিত বোমা হামলা চালায় ফলে পুরো এলাকা ধ্বংসস্তুপে পরিনত হয়। বেসাময়িক নাগরিকদের প্রানহানি ঘটে। সর্বশেষ এমনটি দেখা গেছে কুন্দুজে। হিংসুটে শক্ররা হাসপাতালে উপর্যুপরী বোমা হামলা চালিয়েছে। নগরীর একাধিক স্থাপনা গুড়িয়ে দিয়েছে। এই সহিংস ও কাপুরোষিত আক্রমনের ফলে কুন্দুজে ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।বেসামরিন লোকদের প্রানহানী রোধে এক পর্যায়ে মুজাহিদগন কুন্দুজ ত্যাগ করেন।
দুআ করি, আল্লাহ তায়ালা মুজাহিদগনকে বিশ্বব্যাপী কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার তাওফিক দান করুন। দ্বীনের শত্রæদের ধ্বংস করে দিন। তাদের ষড়যন্ত্র তাদেরই গলে নিক্ষেপ করুন। নিশ্চয় তিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী এবং যথোচিত সাড়া দানকারী।