****************************************************
কিতাবুত্ তাহরীদ্ ‘আলাল ক্বিতাল
চতুর্থ পর্ব:
তোমাকেই শুধু চাই, হে শাহাদাত!
মুস‘আব ইলদিরিম
****************************************************
সূচিপত্র
জান্নাতের স্বপ্নিল ভুবন ৫
হুরে ঈ’নের প্রেমিকরা কোথায়? ১২
আল-কুরআন: মানবজাতির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ১৭
হুরে ঈ’ন এর বর্ণনা ২১
কোথায় আমার মুসলিম যুবক ভাইয়েরা??? ৩৪
জান্নাতের সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত ৩৮
কবে হবে মিলন আমাদের প্রিয়তমদের সাথে? কিছু হতাশা!!! ৪৩
প্রিয়তমদের সাথে মিলিত হওয়ার সহজ উপায়; আর নয় হতাশা!!! ৬২
নবীজী -ﷺ এর শহীদী তামান্না ৮২
জীবনের প্রকৃত সফলতা কী? ৮৪
সাহাবায়ে কেরামের শহীদী তামান্না ৯১
কী রহস্য ছিল, সাহাবায়ে কেরামের এই বীরত্বের? ৯৯
সর্বশেষ কথা ১০৪
জান্নাতের স্বপ্নিল ভুবন
চলো বন্ধু! মুমিনের প্রতিশ্রুত ঠিকানা জান্নাতের গল্প শুনা যাক।...........
জান্নাত অবশ্যই মানব কল্পনার উর্ধ্বে। তার সৌন্দর্য বর্ণনাতীত। সেই সৌন্দর্যের কল্পনা মানব চিন্তা শক্তির বহু উপরে। জান্নাতের একটি খড়কুটো রাখার পরিমাণ স্থান লাভ করাও দুনিয়া ও তন্মধ্যকার সকল বস্তু অপেক্ষা উত্তম।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
فَلَا تَعۡلَمُ نَفۡسٞ مَّآ أُخۡفِيَ لَهُم مِّن قُرَّةِ أَعۡيُنٖ جَزَآءَۢ بِمَا كَانُواْ يَعۡمَلُونَ ١٧
“কেউই জানে না তাদের জন্য নয়নপ্রীতিকর কী লুকায়িত রাখা হয়েছে তাদের কৃতকমের্র পুরস্কারস্বরূপ।” (সূরা সাজদাহ ৩২:১৭)
বন্ধুরা! হাদীসে কুদসীতে এসেছে, আল্লাহ্ পাক বলেছেন,
أعدت لعبادى الصالحين ما لاعين رأت ولا أذن سمعت ولا خطرعلى قلب بشر
“আমি আমার নেককার বান্দাদের জন্য জান্নাতে এমন সব বস্তু প্রস্তুত রেখেছি, যা কোনো চোখ কখনো দেখেনি, কোনো কান কোনোদিন শুনেনি, যার কল্পনা কোনো মানব হৃদয়ে কোনোদিন উদিত হয়নি।” (বুখারী খন্ড ১, পৃ.৪৬০, মুসলিম খ. ২, পৃ. ৩৭৮)
সুব্হানাল্লাহ!!!
জান্নাত লাভের প্রস্তুতি গ্রহণকারী কেউ কি নেই?...................
জান্নাত তো এমন স্থান, যাতে কোনো বিপদের আশংকা নেই।
কাবার প্রভুর শপথ! জান্নাতে রয়েছে প্রদীপ্ত জ্যোতি, প্রবহমান নদী, সুরভি বিচ্ছুুুুুুরণকারী ফুল, পাকা ফল ও অপরূপা, সুদর্শনা, সুন্দরী রমণী, আছে বস্ত্র-সম্ভার, সবুজ শ্যামল নকশী চাদর, চিরস্থায়ী নিবাস, শান্তিময় ও নিরাপদ আবাস, সুরম্য মযবুত অট্টালিকা, আরো কতো নিয়ামতরাজি! জান্নাতের জন্য মর্যাদার বিষয় হলো, তা পেতে হলে ‘জান্নাতের একমাত্র মালিক’ আল্লাহর কাছেই হাত পাততে হয়। কত মর্যাদাবান ও মহিমান্বিত সে স্থান, যেখানে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর হাত মুবারক দ্বারা গাছ রোপণ করেছেন এবং যা তাঁর বন্ধুদের অবস্থানস্থল হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। তাঁর রহমত, দয়া, করুণা ও সন্তুষ্টি দ্বারা পূর্ণ করে দিয়েছেন।
প্রিয় বন্ধু! জান্নাত লাভ করা অত্যন্ত কল্যাণ ও সৌভাগ্যের বিষয়। সুতরাং যদি তোমার জীবনে কোন কিছু চাওয়া-পাওয়ার থাকে, যদি তুমি কোন কিছুর জন্য সাধনা করতে চাও, যদি তুমি কোন কিছুর জন্য প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হও, যদি কোন কিছু তোমার চিন্তা-চেতনাকে আচ্ছন্ন করে, যদি কোন কিছু তোমার নিদ্রাকে বিদূরিত করে দেয়, যদি কোন কিছু তোমার কল্পনা ও স্বপ্নের জগতকে সদা-সর্বদা আন্দোলিত করে, তা যেন হয় অনন্ত-অশেষ নেয়ামতরাজির জান্নাত।
সেখানে যে একবার প্রবেশ করবে অনন্তকালের জন্য, চিরদিনের জন্য প্রবেশ করবে। তার রাজত্ব হলো বিশাল রাজত্ব। সকল প্রকার কল্যাণ ও মঙ্গল তাতে গচ্ছিত রাখা হয়েছে এবং সকল প্রকার দোষ-ত্রুটি ও বিপদ-আপদ হতে তাকে পবিত্র রাখা হয়েছে।
বন্ধু! যদি তুমি তার মাটি সম্পর্কে জানতে চাও, তবে জেনে নাও, তার মাটি হবে কস্তুরির ও যাফরানের।
যদি তার ছাদ সম্পর্কে জানতে চাও, তবে জেনে রাখ, তার ছাদ হবে আল্লাহর আরশ।
যদি তুমি তার বিছানা সম্পর্কে জানতে চাও, তবে জেনে নাও, তার বিছানা হল সুবাস ছড়ানো কস্তুরি।
যদি তার পাথর কণা সম্পর্কে জানতে চাও, তবে জেনে নাও, তা হলো মুক্তা।
যদি তার অট্টালিকা সম্পর্কে জানতে চাও, তবে জেনে নাও, তার একটি ইট হবে স্বর্ণের, আরেকটি ইট হবে রৌপ্যের।
যদি তার তাঁবু ও গম্ভুজ সম্পর্কে জানতে চাও, তবে জেনে নাও, তার তাঁবু হবে ষাট মাইল দীর্ঘ ফাঁপা, মুক্তা দ্বারা নির্মিত।
যদি তার গাছ সম্পর্কে জানতে চাও, তবে জেনে নাও, তার প্রত্যেকটি গাছের কাণ্ড হবে স্বর্ণ ও রৌপ্যের, কাঠের নয়।
যদি তার ফল সম্পর্কে জানতে চাও, তবে জেনে নাও, তার ফল হবে মটকার ন্যায় বৃহদাকারের ও পনীর অপেক্ষা অধিক কোমল এবং অমৃত অপেক্ষা অধিক মিষ্ট।
যদি তার পাতা সম্পর্কে জানতে চাও, তবে জেনে নাও, তার পাতা হবে সূক্ষ্ম কাপড়ের জোড়া হতেও অত্যাধিক সুন্দর।
যদি প্রবাহিত মৃদু সমীরণের ফলে বৃক্ষের পল্লব হতে সৃষ্ট সুর সম্পর্কে জানতে চাও, তবে জেনে নাও, তা হবে সুমিষ্ট সুরেলা আওয়ায, যা শ্রোতাদের বিমুগ্ধ ও আবিষ্ট করবে।
যদি তার গাছের ছায়া সম্পর্কে জানতে চাও, তবে জেনে নাও, সেখানে এমন সব গাছ রয়েছে, যার ছায়ায় দ্রুতগামী আরোহী একশত বছরে ভ্রমন করেও তা অতিক্রম করতে সক্ষম হবে না।
যদি তার নদীসমূহ সম্পর্কে জানতে চাও, তবে জেনে নাও, তাতে এমন দুধের নহর রয়েছে, যার স্বাদ কখনো বিকৃত হবেনা। এছাড়াও আছে মধুর নহর। এমন খাঁটি শরাবের নহর রয়েছে, যা পানে পানকারী পরিতৃপ্ত হয়, কখনো মাতাল হয়না। ও তাতে স্বচ্ছ অমৃতের নহর রয়েছে। তুমি যখন যেদিকে ইচ্ছা তাদেরকে প্রবহমান করতে পারবে।
যদি তার খাদ্য সম্পর্কে জানতে চাও, তবে জেনে নাও, তা হবে জান্নাতীদের নিজস্ব পছন্দমত ফল ও তাদের রুচিসম্মত পাখির গোশত। সেখানে তোমাকে রান্না করতে হবে না। উড়ন্ত পাখি দেখে তোমার আহারের চাহিদা হলেই তা ভুনা হয়ে তোমার সামনে উপস্থিত হবে। সেখানে তোমার মলমূত্রের ঝামেলা নেই। একটি ঢেকুর তুললেই সব হজম হয়ে যাবে।
যদি তার পানীয় সম্পর্কে জানতে চাও, তবে জেনে নাও, তার পানীয় হবে অমৃত সুধা, আদ্রক ও কর্পূরের।
যদি তার বাসন পত্র সম্পর্কে জানতে চাও, তবে জেনে নাও, তা হবে আরশির ন্যায় স্বচ্ছ স্বর্ণ-রৌপ্যের।
যদি তার দরজার প্রশস্ততা সম্পর্কে জানতে চাও, তবে জেনে নাও, তার দরজার দু’কপাটের মধ্যে চল্লিশ বছরের দূরত্বসম ব্যবধান থাকবে। তবে এমন একদিন আসবে, যেদিন প্রচণ্ড ভীড়ের দরুন তাকে রুদ্ধ দ্বারের ন্যায় মনে হবে।
যদি তার প্রশস্ততা সম্পর্কে জানতে চাও, তবে জেনে নাও, তার সর্বনিম্ন স্তরের ব্যক্তির লাভকৃত স্থানের পরিধিও দশ দুনিয়ার সমান হবে এবং তা এ পরিমাণ বিশাল হবে যে, তার রাজত্ব, সিংহাসন, প্রাসাদ ও উদ্যানে দ্রুতগামী আরোহী দু’হাজার বছর ভ্রমন করেও তা অতিক্রম করতে সক্ষম হবে না।
যদি তার উচ্চতা সম্পর্কে জানতে চাও, তাহলে আকাশের প্রান্তে উদিত বা অস্তমিত নক্ষত্রের প্রতি দৃষ্টি দাও, যা দৃষ্টিসীমার বহু উর্ধ্বে।
যদি তার অধিবাসীদের পোশাক সম্পর্কে জানতে চাও, তবে জেনে নাও, তা হবে রেশম ও স্বর্ণ দ্বারা তৈরী।
যদি তার বিছানা সম্পর্কে জানতে চাও, তবে জেনে নাও, তার বিছানার চাদর হবে পুরু রেশমের, যা উঁচু স্থানে বিছানো থাকবে।
যদি তার খাট সম্পর্কে জানতে চাও, তবে জেনে নাও, তার খাট হবে রাজকীয় খাট, তার উপর স্বণের্র বোতাম বিশিষ্ট মশারি থাকবে। যাতে কোনো ছিদ্র থাকবে না।
সেখানে তোমার চেহারা কেমন হবে যদি সে সম্পর্কে জানতে চাও, তবে জেনে নাও, তোমার মুখমণ্ডল হবে পূর্ণিমার রাতের চাঁদের মতো। তাছাড়া সেখানে একটি বাজার আছে, সেখানে অনেক সুন্দর, সুদর্শন চেহারার ছবি থাকবে, তুমি যেমনটি চাবে তোমার চেহারা তেমনি করে দেয়া হবে।
যদি তুমি সেখানে তোমার বয়স কেমন হবে সে সম্পর্কে জানতে চাও, তবে জেনে নাও, সেখানে তুমি হবে ৩৩ বছরের তরুণ এবং তোমার অবয়ব হবে আদি পিতা হযরত আদম আলাইহিস্ সালামের অবয়বের ন্যায়।
যদি তার সঙ্গীত সম্পর্কে জানতে চাও, তবে জেনে নাও, সেখানে হূরে ঈ’ন সংগীত গাবে। ফিরিশতা ও আম্বিয়ায়ে কিরামের সুর আরো সুমিষ্ট হবে আর আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতীদেরকে যে সম্বোধন করবেন, তা পূর্বের সবকিছু অপেক্ষা অধিক সুমিষ্ট হবে।
যদি তুমি জান্নাতীদের বাহন সম্পর্কে জানতে চাও, যার উপর আরোহণ করে তারা পরস্পরে সাক্ষাৎ করবে, তবে জেনে নাও, তা হবে অত্যন্ত উন্নত জাতের অশ্ব। যেখানে তারা চাইবে সেগুলো তাদেরকে চোখের পলকে সেখানে নিয়ে যাবে।
যদি তাদের অলংকার সম্পর্কে জানতে চাও, তবে জেনে নাও, তাদের অলংকার হবে মুক্তাখচিত স্বর্ণের কংকণ আর তাদের মাথায় মুকুট থাকবে।
যদি তাদের সেবার জন্য নিয়োজিত সেবকদের সম্পর্কে জানতে চাও, তবে জেনে নাও, তাদের সেবক হবে বিক্ষিপ্ত মুক্তা সদৃশ চির কিশোর।
তুমি কি জান, জান্নাতে যে বাজার থাকবে সেখানে সকল জান্নাতীরা একে অন্যের সাথে সাক্ষাত করবে, কুশল বিনিময় করবে।
কেমন হবে সেদিন, যেদিন জান্নাতে প্রিয় হাবীব ﷺ-এর সাথে দেখা হবে, সাহাবায়ে কেরামের সাথে দেখা হবে, দেখা হবে অন্যান্য নবী-রাসূলগণের সাথে?
সেদিন কেমন লাগবে, যেদিন প্রিয় হাবীব ﷺ ‘ইয়া উম্মাতী!’ (হে আমার উম্মত!) সম্বোধন করে বুকে টেনে নিবেন?..............
সুব্হানাল্লাহ!!!
(আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে রাসূলুল্লাহ ﷺ- এর শাফায়াত নসীব করুন। আমীন।)
[সূত্র: ইমাম কায়্যিম জাওযিয়্যাহ রহ. রচিত حادي الأرواح الى بلاد الأفراح কিতাব (বঙ্গানুবাদ: ‘জান্নাতের স্বপ্নিল ভুবন’) হতে সংকলিত
হুরে ঈ’নের প্রেমিকরা কোথায়?
বন্ধুরা! আপনাদেরকে এখন নিয়ে যাবো জান্নাতের পরম রোমান্টিক এক জগতে। প্রত্যেক যুবকেরই যার আশা করা উচিত এবং এর জন্য জীবন দিয়ে হলেও প্রতিযোগিতায় নেমে পড়া উচিত।
তার আগে.....................
প্রথমতঃ যে সত্তা আমাদেরকে এর সুসংবাদ দিয়েছেন তাঁর বড়ত্ব, মহত্ত্ব, সত্যবাদিতার ব্যাপারে চিন্তা করে দেখুন।.........
তিনি তো এমন এক সত্তা, যার স্তুতগীতি লিখতে গিয়ে সমুদ্রের কালি শেষ হয়ে গিয়েছে, তবুও তার স্তুতি-গান লিখা শেষ হয়নি। তাঁর প্রশংসা করতে গিয়ে আকল ও বুদ্ধি হয়রান হয়ে গিয়েছে, কোনো কূল-কিনারা পায়নি। তাঁর মাহাত্ম্য ভাবতে গিয়ে জ্ঞানীরা হতবুদ্ধি হয়ে পড়েছে, কোনো সীমাপরিসীমা পায়নি। অনন্তকাল যাবৎ যদি তাঁর প্রশংসা করা হয়, তবুও তা হবে তাঁর শানে নিতান্তই অপ্রতুল, নেহায়েত কম। সেই মহান রব্বে কারীম, জান্নাতের মালিক আল্লাহ তা‘আলার চেয়ে অধিক সত্যবাদী আর কেউ আছে কি? তাঁর চেয়ে অধিক ওয়াদা রক্ষাকারী আর কেউ আছে কি? তাঁর সত্যবাদিতার সাক্ষ্য তিনি নিজেই দিচ্ছেন-
وَعْدَ اللَّهِ حَقّاً وَمَنْ أَصْدَقُ مِنَ اللَّهِ قِيلاً
“আল্লাহ্র প্রতিশ্রুতি সত্য। আর কে আছে আল্লাহর চেয়ে অধিক সত্যবাদী?” (সূরা নিসা ৪:১২২)
وَمَنْ أَصْدَقُ مِنَ اللَّهِ حَدِيثًا
“আর কথায় আল্লাহর চেয়ে অধিক সত্যবাদী আর কে?” (সূরা নিসা ৪:৮৭)
وَمَنْ أَوْفٰى بِعَهْدِهٖ مِنَ اللهِ
“আর নিজ ওয়াদা পূরণে আল্লাহর চেয়ে অধিক সত্যবাদী আর কে হতে পারে?” (সূরা তাওবাহ ৯:১১১)
সুব্হানাল্লাহ!!!
প্রিয় ভাই!
এমনি ভাবে দ্বিতীয়তঃ সে সত্যবাদী সত্তার কথাও চিন্তা করুন, যাকে আমাদের নিকট এ সুসংবাদ দিয়ে প্রেরণ করেছেন।........
সবর্শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি তিনি! সর্বোত্তম আখলাকের অধিকারী তিনি! আল্লাহর কাছে সবচেয়ে সম্মানিত ব্যক্তি তিনি! তিনিই জগদ্বাসীর জন্য সর্বশেষ আসমানী পয়গামকে স্বাগত জানিয়েছেন। তাঁর সীরাত লিখতে লিখতে কলম ক্লান্ত হয়ে গেছে। কলম যা লিখেছে তা অত্যন্ত মুগ্ধকর। কিন্তু বাস্তবতার সমুদ্রে তা এক ফোঁটার বেশি নয়। নবীজী ﷺ-এর প্রশংসা করে ইতিহাস তাঁকে ধন্য করেনি, বরং তাঁর আলোচনায় ইতিহাস ধন্য হয়েছে।
মানুষের মাঝে সবচেয়ে উত্তম তিনি। বিভিন্ন উম্মতের মাঝে যে রাসূল প্রেরিত হয়েছেন তাঁদের মধ্যে সর্বোত্তম; যারা ইনসাফ করেছেন; তাঁদের মধ্যেও তিনি উত্তম। কঙ্কর তাঁর পবিত্র হাতে তাসবীহ পাঠ করেছে। পাথর তাঁকে সালাম জানিয়েছে। উট তাঁর কাছে অভিযোগ করেছে। বকরি তাঁর বিচ্ছেদে কেঁদেছে। তাঁর আঙুল থেকে পানি প্রবাহিত হয়েছে। বাঘ তাঁর রিসালাতের সাক্ষ্য দিয়েছে। তাঁর বরকতে খাবার বৃদ্ধি পেয়েছে। বিষমাখা বকরির গোশত তাঁকে বিষের ব্যাপারে সতর্ক করেছে। মেঘ তাঁকে ছায়া দিয়েছে। পাখিরা তাঁর সঙ্গে কথা বলেছে। দোলনায় চাঁদ তাঁর সাথে খেলেছে। তাঁর আঙুলের ইশারায় চাঁদ দ্বিখণ্ডিত হয়েছে। তিনিই পৃথিবীর একমাত্র মানব যিনি এক রাতে সাত আসমান পরিভ্রমণ করেছেন, জান্নাত-জাহান্নাম প্রত্যক্ষ করেছেন, পরম বন্ধু আল্লাহ তা‘আলার মেহমান হয়ে আরশে আযীমে গমন করেছেন। তিনি তো সেরাদের সেরা, অভাবী ও দরিদ্রদের বন্ধু, আল্লাহ তাঁর বক্ষ উন্মুক্ত করেছেন। তাঁর আলোচনা সমুন্নত করেছেন। তাঁর মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন। তিনিতো নবীদের ইমাম। শ্রেষ্ঠতম দানশীল। সর্বশ্রেষ্ঠ সত্যবাদী।
واكرم منك لم ترقط عينى ـ واجمل منك لم تلد النساء
خلقت مبرأً من كل عيب ـ كأنك قد خلقت كما تشاء
“আমার চোখ কখনো আপনার মতো সম্ভ্রান্ত কাউকে দেখেনি
কোনো মা আপনার চাইতে সুন্দর কোনো সন্তান জন্ম দেয়নি
আপনাকে সৃষ্টি করা হয়েছে সব ধরণের দোষ থেকে মুক্ত করে
যেন আপনি সৃষ্টি হয়েছেন আপনারই ইচ্ছানুসারে।”
স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা তাঁর মন-মস্তিষ্কের প্রশংসা করেছেন-
مَا ضَلَّ صَاحِبُكُمْ وَمَا غَوٰى
“তোমাদের সাথী পথভ্রষ্ট হননি এবং বিপথগামীও হননি।” (৫৩ সূরা নাজম:২)
তার যবানের সত্যবাদিতার প্রশংসা করেছেন-
وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوٰى
“তিনি প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না।” (৫৩ সূরা নজম:৩)
তাঁর অন্তরের সত্যবাদিতার প্রশংসা করেছেন-
مَا كَذَبَ الْفُؤَامدُ مَا رَأٰىٰ
“রাসূল যা দেখেছেন সে ব্যাপারে তাঁর অন্তর মিথ্যা বলেনি।”
(৫৩ সূরা নজম: ১১)
তাঁর দৃষ্টির সত্যবাদিতার প্রশংসা করেছেন-
مَا زَاغَ ٱلۡبَصَرُ وَمَا طَغىٰ
“তার দৃষ্টি বিভ্রম হয়নি এবং সীমালঙ্ঘনও করেনি।” (৫৩ সূরা নজম: ১৭)
তাঁর বক্ষের প্রশংসা করেছেন-
أَلَمْ نَشْرَحْ لَكَ صَدْرَكَ
“আমি কি আপনার সিনাকে প্রশস্ত করে দেই নি?” (৯৪ সূরা ইনশিরাহ:১)
তাঁর সবকিছুরই প্রশংসা করেছেন,
وَإِنَّكَ لَعَلٰى خُلُقٍ عَظِيْمٍ
“নিশ্চয় আপনি মহান চরিত্রের অধিকারী।” (৬৮ সূরা কলম: ৪)
রাসূল ﷺ-এর মাঝে সমাবেশ ঘটেছিল সব নবী-রাসূলের গুণাবলি।
তাঁর সবকিছু ছিল সর্বোত্তম এবং তাঁর সাথে সম্পর্কিত সবকিছুই সর্বোত্তম।
তিনিই হচ্ছেন দু’জাহানের সরদার। সাইয়্যেদুল কাউনাইন। হযরত মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিব আল-হাশেমী ﷺ। আমাদের প্রাণপ্রিয় নবীজী ﷺ। তাঁর শানে লাখো কোটি দরূদ ও সালাম।
তাঁর জন্য আমাদের জীবন, আমাদের পিতা-মাতা, আমাদের স্ত্রী ও সন্তান সন্ততি- দুনিয়ার সকল কিছু কুরবান হোক!!!
তৃতীয়তঃ আল্লাহ্ রাব্বুল ‘আলামীন আমাদেরকে যে বস্তুর সংবাদ দিয়েছেন তার পরিমাণের ব্যাপারেও চিন্তা করে দেখুন, আল্লাহ তা‘আলা সামান্য বস্তুর বিনিময়েই আমাদের জন্য এ মহান নিয়ামত লাভের ব্যবস্থা করেছেন। কে আছে তাঁর নেয়ামতসমূহ গণনা করবে? কে আছে তাঁর দয়া ও উদারতা পরিমাপ করবে?
চতুর্থতঃ আরো একটু চিন্তা করুন! জান্নাত ও তার নেয়ামতরাজির এই সুসংবাদ কোথায় দেয়া হয়েছে? কুরআন কারীমে। আর কুরআন কারীমের সত্যতার উপর কারো কোনো সন্দেহ থাকতে পারে কি?
আল-কুরআন: মানবজাতির জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ
যেই চ্যালেঞ্জ মানবজাতিকে ছুড়ে দেয়া হয়েছিল ১৪০০ বছর পূর্বে-
قُل لَّئِنِ ٱجۡتَمَعَتِ ٱلۡإِنسُ وَٱلۡجِنُّ عَلَىٰٓ أَن يَأۡتُواْ بِمِثۡلِ هَٰذَا ٱلۡقُرۡءَانِ لَا يَأۡتُونَ بِمِثۡلِهِۦ وَلَوۡ كَانَ بَعۡضُهُمۡ لِبَعۡضٖ ظَهِيرٗا ٨٨
“(হে মুহাম্মাদ) বল, যদি এই কুরআনের অনুরূপ গ্রন্থ রচনার উদ্দেশ্যে মানবকুল ও জ্বীন জাতি সমবেত হয় পরস্পর পরস্পরের সহযোগিতায়, তবুও তারা তা সম্ভব করতে পারবে না।” (১৭ সূরা বনী ইসরাঈল :৮৮)
قُل لَّوۡ كَانَ ٱلۡبَحۡرُ مِدَادٗا لِّكَلِمَٰتِ رَبِّي لَنَفِدَ ٱلۡبَحۡرُ قَبۡلَ أَن تَنفَدَ كَلِمَٰتُ رَبِّي وَلَوۡ جِئۡنَا بِمِثۡلِهِۦ مَدَدٗا ١٠٩
“বল, আমার প্রভুর বাণীসমূহ লিখার জন্য সমুদ্র যদি কালি হয়, তবুও আমার প্রভুর বাণীসমূহ শেষ হওয়ার পূর্বে সমুদ্র শেষ হয়ে যাবে, যদিও অনুরূপ আরো অন্যান্য সমুদ্রকে সাহায্যের জন্য আনয়ন করা হয়।” (১৮ সূরা কাহাফ: ১০৯)
وَلَوۡ أَنَّمَا فِي ٱلۡأَرۡضِ مِن شَجَرَةٍ أَقۡلَٰمٞ وَٱلۡبَحۡرُ يَمُدُّهُۥ مِنۢ بَعۡدِهِۦ سَبۡعَةُ أَبۡحُرٖ مَّا نَفِدَتۡ كَلِمَٰتُ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٞ
“পৃথিবীতে যত বৃক্ষ আছে, সবই যদি কলম হয় এবং সমুদ্রের সাথেও সাত সমদ্র যুক্ত হয়ে যদি কালি হয়, তবুও তাঁর বাক্যাবলী লিখে শেষ করা যাবে না। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” (৩১ সূরা লোক্বমান: ২৭)
যদি কুরআনের অনুরূপ একটি কিতাব আনয়ন করতে না পার, তবে চ্যালেঞ্জকে তোমাদের জন্য সহজ করে দেয়া হল-
أَمۡ يَقُولُونَ ٱفۡتَرَىٰهُۖ قُلۡ فَأۡتُواْ بِعَشۡرِ سُوَرٖ مِّثۡلِهِۦ مُفۡتَرَيَٰتٖ وَٱدۡعُواْ مَنِ ٱسۡتَطَعۡتُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ إِن كُنتُمۡ صَٰدِقِينَ ١٣
“(হে মুহাম্মাদ!) তারা কী বলে? এ কুরআন তুমি রচনা করেছ? তুমি বল, তবে তোমরাও অনুরূপ দশটি সূরা তৈরী করে নিয়ে আস এবং আল্লাহ্ ছাড়া যাকে পার ডেকে নাও, যদি তোমাদের কথা সত্য হয়ে থাকে।” (১১ সূরা হূদ:১৩)
তাও যদি না পার, তবে আরো সহজ করে দেয়া হল-
وَإِن كُنتُمۡ فِي رَيۡبٖ مِّمَّا نَزَّلۡنَا عَلَىٰ عَبۡدِنَا فَأۡتُواْ بِسُورَةٖ مِّن مِّثۡلِهِۦ وَٱدۡعُواْ شُهَدَآءَكُم مِّن دُونِ ٱللَّهِ إِن كُنتُمۡ صَٰدِقِينَ ٢٣ فَإِن لَّمۡ تَفۡعَلُواْ وَلَن تَفۡعَلُواْ فَٱتَّقُواْ ٱلنَّارَ ٱلَّتِي وَقُودُهَا ٱلنَّاسُ وَٱلۡحِجَارَةُۖ أُعِدَّتۡ لِلۡكَٰفِرِينَ ٢٤
“২৩. এতদসম্পর্কে যদি তোমাদের কোন সন্দেহ থাকে যা আমি আমার বান্দার (মুহাম্মাদ ﷺ) প্রতি অবতীর্ণ করেছি, তাহলে এর মত একটি সূরা রচনা করে নিয়ে এস। তোমাদের সেসব সাহায্যকারীদেরকেও সঙ্গে নাও- এক আল্লাহকে ছাড়া, যদি তোমরা সত্যবাদী হয়ে থাকে। ২৪. আর যদি তা না পার- অবশ্য তা তোমরা কখনোও পারবে না, তাহলে সে দোযখের আগুন থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা কর, যার জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর। যা প্রস্তুত করা হয়েছে কাফেরদের জন্য।” (০২ সূরা বাকারা :২৩-২৪)
এ তো এক উন্মুক্ত চ্যালেঞ্জ! এতে না আছে কোন অস্পষ্টতা আর না আছে কোন বক্রতা! কে আছে এ চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করবে? কে আছে কোরআনের এ বাণীকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে? জ্বীন-ইনসানের কেউ কি পেরেছে এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে? কেয়ামত পর্যন্ত কেউ কি পারবে? পারবে কি কুরআনের সবচেয়ে ছোট্ট সূরার সমপরিমান তিনটি আয়াত রচনা করতে?
কুরআন কারীমের উন্মুক্ত চ্যালেঞ্জ: আসমান যমীনের এমন কে আছে, যে এই ছোট্ট তিনটি আয়াতের অনুরূপ তিনটি বাক্য রচনা করে নিয়ে আসতে পারে?
কোথায় বে-দ্বীনরা? কোথায় হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-আর ইহুদীরা? কোথায় তাদের তেত্রিশ কোটি দেবতা, কোথায় বাতিল রবেরা? কোথায় রাম-রাজত্বের স্বপ্নদ্রষ্টারা? কোথায় নাস্তিক-মুরতাদ আর ইসলাম বিদ্বেষীরা? কোথায় আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের দুশমনরা? কেন তারা এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে না???
কোরআন তো অহর্নিশি তাদেরকে আহ্বান করেই যাচ্ছে? কেন তাদের নীরবতা? কেন তারা কোরআনকে মিথ্যা প্রমাণ করে না? কেন তারা নিজেদেরকে সত্যবাদী প্রমাণ করে না? কোথায় সারা দুনিয়ার বিজ্ঞানীরা? কোথায় তাদের সুপার কম্পিউটারগুলো? কোথায় সারা বিশ্বের কবি-সাহিত্যিকরা? কোথায় বুদ্ধিজীবীরা? কোথায় চেতনার ফেরিওয়ালারা? তাদের বুদ্ধি কি আজ অকেজো প্রমাণিত হয়নি? তাদের জ্ঞান কি আজ ভোঁতা হয়ে যায়নি? পেরেছে কি তারা কুরআন কারীমের চ্যালেঞ্জের সামনে টিকতে?
তাহলে, কেন তারা এ কুরআন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করে না? কেন তারা ঈমান আনছে না? জাহান্নাম থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে না? তারা কি দেখে না, নাকি তাদের অন্তরসমূহ তালাবদ্ধ হয়ে গেছে?..........
প্রকৃতপক্ষে, একমাত্র সেই এই কুরআনকে অস্বীকার করতে পারে যে একগুঁয়ে, গোয়ার ও হঠকারী; যে জেনে-শুনে সত্যকে অস্বীকার করে, অহংকারী ও যে আত্মম্ভরিতায় লিপ্ত; উপরন্তু যে মানসিক বৈকল্য ও কলুষতার অধিকারী।
হুরে ঈ’ন এর বর্ণনা
বন্ধুরা! পূর্বের আলোচনায় ফিরে যাওয়া যাক!
আসমানী এই কিতাবে, আমাদের সত্য প্রভুর সত্য কিতাবে মুমিনদের জন্য রব্বে কারীমের সুসংবাদ শুন-
وَبَشِّرِ ٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ أَنَّ لَهُمۡ جَنَّٰتٖ تَجۡرِي مِن تَحۡتِهَا ٱلۡأَنۡهَٰرُۖ كُلَّمَا رُزِقُواْ مِنۡهَا مِن ثَمَرَةٖ رِّزۡقٗا قَالُواْ هَٰذَا ٱلَّذِي رُزِقۡنَا مِن قَبۡلُۖ وَأُتُواْ بِهِۦ مُتَشَٰبِهٗاۖ وَلَهُمۡ فِيهَآ أَزۡوَٰجٞ مُّطَهَّرَةٞۖ وَهُمۡ فِيهَا خَٰلِدُونَ ٢٥
“যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে তাদেরকে সুসংবাদ দাও, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত। যখনই তাদেরকে ফলমূল খেতে দেয়া হবে, তখনই তারা বলবে, আমাদেরকে পূর্বে জীবিকা রূপে যা দেওয়া হতো এ তো তাই; তাদেরকে অনুরূপ ফলই দেয়া হবে। সেখানে তাদের জন্য পবিত্র সঙ্গিনী থাকবে। তারা সেখানে স্থায়ী হবে।” (সূরা বাকারা ২:২৫)
إِنَّ ٱلۡمُتَّقِينَ فِي مَقَامٍ أَمِينٖ ٥١ فِي جَنَّٰتٖ وَعُيُونٖ ٥٢ يَلۡبَسُونَ مِن سُندُسٖ وَإِسۡتَبۡرَقٖ مُّتَقَٰبِلِينَ ٥٣ كَذَٰلِكَ وَزَوَّجۡنَٰهُم بِحُورٍ عِينٖ ٥٤
“মুত্তাকীরা থাকবে নিরাপদ স্থানে, উদ্যান ও ঝর্ণার মাঝে। তারা পরিধান করবে মিহি ও পুরু রেশমী বস্ত্র এবং মুখোমুখি হয়ে বসবে। এরূপই ঘটবে; আমি তাদেরকে সঙ্গিনী দান করব আয়তলোচনা হূর।” (সূরা দুখান ৪৪:৫১-৫৪)
فِيهِنَّ قَٰصِرَٰتُ ٱلطَّرۡفِ لَمۡ يَطۡمِثۡهُنَّ إِنسٞ قَبۡلَهُمۡ وَلَا جَآنّٞ ٥٦ فَبِأَيِّ ءَالَآءِ رَبِّكُمَا تُكَذِّبَانِ٥٧ كَأَنَّهُنَّ ٱلۡيَاقُوتُ وَٱلۡمَرۡجَانُ ٥٨
“(জান্নাতের নেয়ামতরাজির মধ্যে) রয়েছে বহু আনত নয়না হুর, যাদেরকে পূর্বে কোনো মানুষ বা জিন স্পর্শ করেনি। সুতরাং তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন্ কোন্ অনুগ্রহকে অস্বীকার করবে। প্রবাল ও পদ্মরাগ সদৃশ রমণীগণ।” (সূরা আর রহমান ৫৫: ৫৬-৫৮)
وَحُورٌ عِينٞ ٢٢ كَأَمۡثَٰلِ ٱللُّؤۡلُوِٕ ٱلۡمَكۡنُونِ ٢٣
“তথায় (জান্নাতে) থাকবে আনতনয়না হুরগণ, আবরণে রক্ষিত মোতির ন্যায়।” (সূরা ওয়াকিয়াহ ৫৬: ২২-২৩)
وَعِندَهُمۡ قَٰصِرَٰتُ ٱلطَّرۡفِ عِينٞ ٤٨ كَأَنَّهُنَّ بَيۡضٞ مَّكۡنُونٞ ٤٩
“তাদের কাছে থাকবে নত, আয়তলোচনা তরুণীগণ। যেন তারা সুরক্ষিত ডিম।” (সূরা আস্সাফ্ফাত ৩৭:৪৮-৪৯)
فِيهِنَّ خَيۡرَٰتٌ حِسَانٞ ٧٠........ حُورٞ مَّقۡصُورَٰتٞ فِي ٱلۡخِيَامِ ٧٢
“সেখানে থাকবে সচ্চরিত্রা সুন্দরী রমণীগণ।...তাবুতে অবস্থানকারিণী হুরগণ। (সূরা আর রহমান ৫৫: ৭০,৭২)
إِنَّآ أَنشَأۡنَٰهُنَّ إِنشَآءٗ ٣٥ فَجَعَلۡنَٰهُنَّ أَبۡكَارًا ٣٦ عُرُبًا أَتۡرَابٗا ٣٧
“আমি জান্নাতী রমণীগণকে বিশেষরূপে সৃষ্টি করেছি। অতঃপর তাদেরকে করেছি চিরকুমারী। কামিনী, সমবয়স্কা।” (সূরা ওয়াকিয়াহ ৫৬: ৩৫-৩৭)
إِنَّ لِلۡمُتَّقِينَ مَفَازًا ٣١ حَدَآئِقَ وَأَعۡنَٰبٗا ٣٢ وَكَوَاعِبَ أَتۡرَابٗا ٣٣
“পরহেযগারদের জন্য রয়েছে সাফল্য, উদ্যান, আঙ্গুর; স্ফীত বক্ষ বিশিষ্ট, পূর্ণযৌবনা তরুণী।” (সূরা নাবা ৭৮: ৩১-৩২)
إِنَّ ٱلۡأَبۡرَارَ لَفِي نَعِيمٍ ٢٢ عَلَى ٱلۡأَرَآئِكِ يَنظُرُونَ ٢٣ تَعۡرِفُ فِي وُجُوهِهِمۡ نَضۡرَةَ ٱلنَّعِيمِ ٢٤ يُسۡقَوۡنَ مِن رَّحِيقٖ مَّخۡتُومٍ ٢٥ خِتَٰمُهُۥ مِسۡكٞۚ وَفِي ذَٰلِكَ فَلۡيَتَنَافَسِ ٱلۡمُتَنَٰفِسُونَ ٢٦
“নিশ্চয় নেককাররাই থাকবে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের মধ্যে। সুসজ্জিত আসনে বসে তারা দেখতে থাকবে। তুমি তাদের চেহারাসমূহে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের লাবণ্যতা দেখতে পাবে। তাদেরকে সীলমোহর করা বিশুদ্ধ পানীয় থেকে পান করানো হবে। তার মোহর হবে মিসক। আর প্রতিযোগিতাকারীদের উচিৎ এ বিষয়ে প্রতিযোগিতা করা। (সূরাতুল মুত্বাফ্ফিফীন ৮৩: ২২-২৬)
তাহলে, চল বন্ধু! কুরআন কারীমের বিভিন্ন আয়াত, অসংখ্য হাদীস এর উদ্ধৃতি হতে হূরের যে সকল বর্ণনা পাওয়া যায়, সেগুলো নিয়ে এখন আলোচনা করা যাক-
বন্ধু! তুমি কি হূরে ঈ’ন সম্পর্কে জানতে চাও?
- “হুরে ঈ’ন” বলা হয় সেই সকল সমবয়স্কা জান্নাতী স্ত্রীদের, যারা হবে সুন্দরী, রূপবতী, শুভ্র মুখাবয়ব বিশিষ্টা, কাজল কালো ডাগর ডাগর চক্ষুওয়ালা, যাদেরকে আল্লাহ তাআলা মুমিন পুরুষদের জন্য যাফরান দ্বারা বিশেষভাবে জান্নাতের অভ্যন্তরেই সৃষ্টি করেছেন।
- জান্নাতে তাদের সাথে তোমাকে বিবাহ দেয়া হবে, যাদেরকে দেখলে দৃষ্টি স্তম্ভিত হয়ে পড়ে, যার মুখমণ্ডলের আলোক, ঔজ্জ্বল্য ও বিভার দরুন তাদের চেহারার প্রতি (পার্থিব চক্ষু দ্বারা) দৃষ্টি দেওয়া যাবে না। যাদের চোখের সাদা অংশ পূর্ণরূপে সাদা এবং কালো অংশ পূর্ণরূপে কালো থাকবে। তাদের স্বচ্ছতা হবে শঙ্খের খোলসে অবস্থিত মুক্তার মত, যাকে কেউ স্পর্শ করেনি। তাদের শরীরের বর্ণ হবে পদ্মরাগ মণি ও প্রবাল সাদৃশ্য।
- তুমি যখন ঘোমটা দেওয়া অবস্থায় তাদের চেহারার দিকে দৃষ্টি দিবে দেখবে তাদের মুখ আয়না হতেও অধিক স্বচ্ছ। তাদের শরীরে যেসব অলংকার থাকবে তার ভিতর সবচেয়ে কম মানের রত্নটিও পূর্ব পশ্চিম আলোকিত করতে সক্ষম।
- তাদের গায়ের সত্তর জোড়া রেশমী পোশাকের অভ্যন্তর হতেও তাদের পায়ের গোড়ালির মজ্জা পরিলক্ষিত হবে।
- তারা হবে গোলাকৃতির ফুলে উঠা, স্ফীত বক্ষবিশিষ্ট তরুনী, তাদের স্তন পুষ্ট আনারের ন্যায় উদ্ভিন্ন থাকবে, নিজের দিকে ঝুলন্ত থাকবে না।
- তাদের কোমল ত্বক ও রূপ-লাবণ্যের দরুন দৃষ্টি মুগ্ধ ও আবিষ্ট হয়ে পড়বে। তুমি যখন তাদের দিকে তাকাবে তখন তাদের হৃদয়ে তোমার আপন ছবিই দেখতে পাবে, যেমনিভাবে আয়নায় দেখতে পাও। তুমি তার গণ্ডদেশে তাকালে তাতে নিজ মুখমণ্ডল আয়নার চেয়েও পরিষ্কার দেখতে পাবে।
- জান্নাতী নারীরা হবে ডিমের খোসার নিচে যে পাতলা পর্দা থাকে সেই পর্দার মত কমল ও নমনীয়।
- তারা হবে উত্তম গুণাবলিসম্পন্না, উন্নত চরিত্রওয়ালী, সুশীলা এবং কমনীয়া নারী, যারা একমাত্র তোমার দিকেই আপন দৃষ্টিকে নিবদ্ধ রাখবে। তারা তাদের হৃদয়ের মনিকোঠায় একমাত্র তোমার জন্য আসন নির্ধারিত করে রাখবে, তোমার জন্যই সংরক্ষিতা থাকবে, তারা তোমাকে ছাড়া অন্য কারো প্রত্যাশা করবে না এবং তুমি ব্যতিত অন্য কারো প্রতি দৃষ্টি নিক্ষেপ করবে না।
- তারা যখন এক প্রাসাদ হতে আরেক প্রাসাদে স্থানান্তরিত হবে, তখন মনে হবে, এক রবি আকাশের কক্ষপথে স্থানান্তরিত হচ্ছে।
- যদি কোনো জান্নাতী হূর পৃথিবীর দিকে ঝুঁকে দেখত কিংবা আকাশের নিচে তার হাত প্রসারিত করতো, তবে সমগ্র দুনিয়া সুগন্ধিতে সুরভিত হয়ে যেত, সমগ্র পৃথিবী আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে যেত এবং সকল মানুষ সংজ্ঞা হারিয়ে ফেলত। সূর্য তার আভার সামনে ঠিক তেমনি মনে হতো যেমনিভাবে সূযের্র কিরণের সামনে চেরাগ/কুপিবাতি হয়। তার মাথায় ব্যবহৃত ওড়না দুনিয়া ও দুনিয়ার সকল বস্তু হতে উত্তম।
- জান্নাতের হুর যদি সাত সমুদ্রেও একবার থুথু নিক্ষেপ করে, তবে তার মুখের মধুরতায় সমগ্র সমুদ্রের পানি মিষ্ট হয়ে যাবে।
- জান্নাতে এক প্রলম্বিত আলোকরশ্মি উদ্ভাসিত হলে জান্নাতীগণ মাথা উঠিয়ে দেখবে, তখন অনুসন্ধান করে তারা জানতে পারবে, এ হচ্ছে সে হূরের দাঁতের আলোকরশ্মি, যে আপন স্বামীর সাথে হাসছে।
- মহান আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতুল আদন তৈরি করার পর সাইয়্যিদুল মালায়িকা হযরত জিবরাঈল আ.-কে ডেকে বললেন, আমি আমার বান্দাদের জন্য যেসব নেয়ামত সৃষ্টি করেছি সেগুলো একবার দেখে এস। তখন তিনি মহন আল্লাহর নির্দেশে সমস্ত বেহেশতের বিভিন্ন স্থান ঘুরে ফিরে দেখছিলেন। এরইমধ্যে হঠাৎ এক স্বর্গীয় অপ্সরী তাঁকে দেখে হেসে ওঠে। তার পরিচ্ছন্ন দন্তপাটির ঝলকানিতে সমগ্র জান্নাতুল আদন আলোকিত হয়ে গেল। তার এই ঈষৎ মুচকি হাসির দরুন পরিপাটি দন্তের দ্যুতিতে হযরত জিবরাঈল আ. আল্লাহ্র নূর মনে করে তাৎক্ষণিক এ ধারণা করে সিজদায় লুটিয়ে পড়লেন যে, এটি হয়ত মহান আল্লাহর (তাজাল্লি) নূর।
পরিস্থিতি আঁচ করতে পেরে হূরটি উচ্চঃস্বরে বলল, হে আমিনুল্লাহ (জিবরাঈল আ.)! মাথা উত্তোলন করে দেখুন। অতঃপর তিনি মাথা উত্তোলন করে তার দিকে দৃষ্টিপাত করে বললেন, সুবহানাল্লাহ! অর্থাৎ যিনি তোমাকে এরূপ অপরূপা সৌন্দর্যমণ্ডিত করে সৃষ্টি করেছেন আমি সে আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা করছি। জান্নাতী হূর পুনরায় বলল, আমিনুল্লাহ (আল্লাহর বিশ্বস্ত জিবরাঈল আ.!) আপনি জানেন কি, আল্লাহ তা‘আলা আমাকে কার জন্য সৃষ্টি করেছেন? তদুত্তরে জিবরাঈল বললেন, না। অতঃপর সে হূরটি বলল, আমাকে সে ব্যক্তির জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে যে নিজের যাবতীয় ইচ্ছা ও কামনা-বাসনার ওপর আল্লাহর ইচ্ছা ও তাঁর সন্তুষ্টিকে প্রাধান্য দেয়। (দাকায়েকুল হাকায়েক-ইমাম ফখরুদ্দিন রাযী রহ.)
- হূরে ‘ঈনদেরকে জীন ও মানুষের কেউ কখনো ইতোপূর্বে সম্ভোগ করেনি।
- তারা মুক্তামালার তাঁবুতে অবস্থান করবে। তাদের প্রত্যেকের ভিন্ন ভিন্ন তাঁবু থাকবে। প্রত্যেক তাঁবুর চারটি দরজা থাকবে। প্রত্যহ প্রত্যেক দরযা দিয়ে ফিরিশতাগণ এমন সব উপহার ও সম্মাননা নিয়ে প্রবেশ করবে যা সে ইতোপূর্বে লাভ করেনি।
বলতো বন্ধু! একটি মেয়েকে কখন বেশি সুন্দর লাগে?
জান্নাতের হুরদের মাঝে সৌন্দর্যের পরিপূর্ণতা শতভাগ বিদ্যমান থাকবে। যেমন:
ক. নারীদের চারটি অঙ্গের সংকীর্ণতা পছন্দনীয়: মুখ, নাকের ছিদ্র, কানের ছিদ্র ও লজ্জাস্থান।
খ. আর চারটি অঙ্গের প্রশস্ততা পছন্দনীয়: মুখমণ্ডল, বক্ষস্থল, উভয় কাঁধের মধ্যবর্তী স্থল ও কপাল।
গ. আর চারটি অঙ্গের শুভ্রতা পছন্দনীয়: বর্ণ, মাথার সিঁথি, দন্ত এবং চোখের সাদা অংশ অত্যন্ত সাদা হওয়া।
ঘ. আর চারটি অঙ্গের কৃষ্ণতা পছন্দনীয়: চোখের কালো অংশ অত্যন্ত কালো হওয়া, চোখের ভ্রু, চোখের পলক ও চুল।
ঙ. আর চারটি অঙ্গের দীর্ঘতা পছন্দীয়: দেহের উচ্চতা, ঘাড়ের দীর্ঘতা, চুলের দীর্ঘতা এবং আঙ্গুলের দীর্ঘতা।
চ. আর চারটি অঙ্গের ন্যূনতা অর্থাৎ ছোট হওয়া পছন্দীয় (এটা বাহ্যিকতার দিক থেকে নয়, বরং তাৎপযর্তার দিক হতে): যবান (স্বল্পভাষী হওয়া), হাত (স্বামীর অপছন্দীয় বস্তু না স্পর্শ করা), পা (ঘর হতে বাহির না হওয়া/পর্দা করা) ও চোখ (কোনো কিছুর প্রতি লোলূপ দৃষ্টি না দেয়া/ অল্পেতুষ্টি)।
ছ. আর চারটি অঙ্গের ক্ষীণতা (চিকন হওয়া) পছন্দনীয়: কোমর, মাথার সিঁথি, ভ্রু এবং নাসিকা।
বলতো বন্ধু! সৌন্দর্যের এই পূর্ণতা পৃথিবীর কোনো নারীর মাঝে পাওয়া যাবে কি? সুতরাং এই সৌন্দর্য কোনো পার্থিব নারীর মাঝে তালাশ করা নিরর্থক ও বোকামী নয় কি?
বন্ধু, তুমি কি জান, হূরে ঈ’নগণ হবে সকল অপবিত্রতা হতে মুক্ত?
- সে সকল রমণীরা কখনো অস্থির ও চিন্তাক্লিষ্ট হবে না। (যেন তুমি তাদেরকে দেখে চিন্তা ক্লিষ্ট ও অস্থির না হয়ে পড়ে।) তাদের দীর্ঘ কথা বিরক্তিকর হবেনা, তুমি তাদের কথা সংক্ষিপ্ত করতে বলবেনা। বরং এমন স্বাদ ও তৃপ্তিময় কথা, গীত-সংগীত তুমি শুধু শুনতেই চাইবে। তাদের শরীর কখনো দুর্গন্ধযুক্ত হবে না এবং তাদের মুখ হতেও দুর্গন্ধ বের হবে না। তারা মাসিক ঋতুস্রাব, প্রসূতি পরবর্তী রক্তস্রাব, প্রস্রাব-পায়খানা, নাকের শ্লেষ্মা, থুথু ইত্যাদি সকল প্রকার ময়লা থেকে পবিত্র হবে এবং যাবতীয় মেয়েলী দোষ-ত্রুটি, কুস্বভাবসমূহ থেকে মুক্ত হবে। তাদের বীর্য স্খলিত হবে না, মযীও বের হবে না। তারা সন্তানও জন্ম দিবে না। এক কথায় তারা হবে অনিন্দ্য সুন্দরী ও গুণবতী জান্নাতী স্ত্রী। তাদের পোশাক কখনো মলিন হবে না, তাদের রূপ-লাবণ্য কখনো হ্রাস পাবেনা। তাদের রূপে জান্নাতের প্রাসাদসমূহও আলোকোজ্জ্বল হয়ে যাবে। তাদের রূপ-সৌন্দর্য কখনো মলীন বা ম্লান হবে না, বরং উত্তোরোত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
বন্ধু! তুমি কি হূরে ঈ’ন অপেক্ষা সুন্দরী হূর চাও?
- জান্নাতে লূ’বা নামের কিছু হূর রয়েছে, যাদের সৌন্দর্যতা ও কমনীয়তা দেখে জান্নাতের অন্য সকল হূর বিস্ময়াভিভূত হয়ে পড়ে। তার রূপসৌন্দর্য নিয়ে অন্যান্য জান্নাতবাসী গৌরব করে থাকে। যদি জান্নাতবাসীদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলার এমন ফয়সালা না হত যে, তারা কখনো মৃত্যুবরণ করবে না, তবে তার সৌন্দর্যের ঔজ্জ্বল্য সহ্য করতে না পেরে অন্যরা মৃত্যুমুখে পতিত হতো।
- তাছাড়া হূরে মার্জিয়া নামের আরেক ধরনের অনিন্দ্য সুন্দরী হুর রয়েছে।
বন্ধু! হূরে ঈ’নগণতো আমাদের জন্যই অপেক্ষা করছে....
হূর জান্নাতের দ্বারে স্বীয় স্বামীদের সাথে সাক্ষাৎ করবে এবং বলবে, বহুকাল অতিবাহিত হয়ে গেল আমরা তোমার প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছিলাম। আমরা সর্বদাই তোমার প্রতি সন্তুষ্ট থাকব, কখনো অসন্তুষ্ট হবো না। এবং সর্বদা এখানে অবস্থান করবো, কখনো এখান হতে অন্য কোথায়ও যাবো না এবং আমরা চিরকাল থাকব, কখনো মৃত্যুবরণ করবো না। তোমরা যত প্রকার স্বর শুনেছ তাদের স্বর তন্মধ্যে সর্বাপেক্ষা মিষ্ট হবে। সে বলবে, তুমি আমার প্রিয় আর আমি তোমার প্রেয়সী।
তুমি কি জান্নাতী রমণীদের গান-বাদ্য ও নৃত্য উপভোগ করতে চাও না?
- দুনিয়ার যেসব নারীরা জান্নাতে যাবে, তাদের মযার্দা ও সৌন্দর্য হবে জান্নাতের হুরদের চেয়ে বেশি। যেমনিভাবে আবরণী বস্ত্র অপেক্ষা আবরণীর বস্তুগুলো উত্তম। কেননা, দুনিয়াতে তারা নামায, রোযা, পর্দা, স্বামীর খেদমত করেছে, আপন গর্ভে স্বামীর সন্তানকে ধারণ করেছে, প্রসব বেদনা সহ্য করেছে, সন্তান পরিচর্যা ও পরিবারের জন্য মাসের পর মাস, বছরের পর বছর কষ্ট ভোগ করেছে, স্বামী আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের জন্য বের হলে ধৈর্য ধারণ করেছে। জান্নাতে তাদের শরীরের বর্ণ হবে শুভ্র, রেশমী পোশাক হবে সবুজ, অলংকার হবে হলদে, সুগন্ধিময় ধোঁয়া নির্গত হবে (কাঠের পরিবর্তে) মুক্তা হতে এবং তাদের কাঁকন হবে স্বর্ণের। তারা এবং অন্যান্য হূরেরা গাইতে থাকবে-
نَحْنُ الْخَالِدَاتُ فَلَا لَبِيْدُ
وَنَحْنُ النَّاعِمَاتُ فَلَا نَبْأَسُ
وَنَحْنُ الرَّاضِيَاُت فَلَا نَسْخَطُ
طُوْبٰى لِمَنْ كَانَ لَنَا وَكُنَّا لَهُ
“আমরা চিরস্থায়ী; আমরা মৃত্যুবরণ করবো না।
আমরা ঐশ্বর্যশালী; আমরা কখনো দুরবস্থা ও দুঃখ দুদর্শার শিকার হবো না।
আমরা সদা অবস্থান কারিনী; কখনো আমরা স্থানান্তরিত হবো না।
আমরা সদা উৎফুল্ল ও সন্তুষ্ট থাকব, কখনো বিমর্ষ ও অসন্তুষ্ট হবো না।
সৌভাগ্যবান সেই ব্যক্তি যার জন্য আমরা হবো আর যে হবে আমাদের জন্যে।” (তিরমিযী)
- জান্নাতে একটি দীর্ঘ নদী রয়েছে, যার উভয় পার্শ্বে কুমারী মেয়েরা দাঁড়িয়ে থাকবে। তারা সুরেলা কণ্ঠে গীত গাইবে। মানুষ যখন শুনবে, তারা তখন তাতে এমন স্বাদ ও তৃপ্তি পাবে, যা তারা জান্নাতের অন্য কোনো বস্তুতে পায়নি।
হূরে ঈ’নদের সাথে মিলনের মুহূর্তটি কেমন হবে বলতো বন্ধু?
- তারা হবে স্বামী সোহাগিনী, সহবাসের সময় স্বামীর সামনে উত্তম ভঙ্গিতে শয়নকারিনী ও নম্রতা প্রদর্শনকারিনী। প্রত্যেক স্ত্রীর যোনি হবে অত্যন্ত কামোত্তেজনাপূর্ণ। তারা হবে স্বামীর প্রতি আসক্ত, অনুরক্ত, আদরিনী, চিত্তমুগ্ধকারিনী, মিষ্টভাষী, সাজ-সজ্জাকারিনী, তারা হবে মনমোহিনী, অত্যন্ত কামোদ্দীপ্ত ও কামিনী। তাদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে যৌনরস ধাবমান থাকবে। যখন সে আলিঙ্গন করবে তখন সে দৃশ্য কতই না চমৎকার হবে; যখন সে চুম্বন করবে, তখন তাদের কাছে সে চুম্বন অপেক্ষা তৃপ্তিদায়ক ও উপভোগ্য আর কিছুই হবে না।
- জান্নাতী ব্যক্তির অন্যতম মধুরতম প্রত্যাশা হবে সে সকল রমণীদের মিলন। তারা কুমারী হুরদের সাথে স্ত্রী-সহবাস করবে এবং ধাক্কা দেওয়ার ন্যায় লাফিয়ে লাফিয়ে, পশ্চাতে সরে সরে পূর্ণ শক্তিতে সহবাস করবে। সে ব্যক্তি যখন হূরের নিকট হতে চলে আসবে তখন সে হূর পূর্বের ন্যায় পবিত্র ও কুমারী হয়ে যাবে। জান্নাতী পুরুষরা এমন পুরুষাঙ্গ দ্বারা সহবাস করবে যাতে কোনো প্রকার নিস্তেজভাব থাকবে না এবং ক্লান্তি আসবে না এবং কামভাব এমন হবে যা কখনো দমে যাবে না, শেষ হবে না। স্বামী ও স্ত্রী কারোরই বীর্যপাত হবে না। ফলে তাদের গোসল ও পবিত্রতার প্রয়োজন হবে না। কামোত্তেজনা তাদের শরীরে সত্তর বছর পর্যন্ত ঘূর্ণন করবে এবং এর দ্বারা সে তৃপ্তি উপভোগ করবে। একেকজন হূরের সাথে সে সত্তর বছর শয়ন করে থাকবে ও সঙ্গম উপভোগ করবে। সঙ্গম তার একমাত্র স্বাদ ও তৃপ্তি লাভের জন্যই হবে। এটি এমন এক নিয়ামত, যাতে কখনো বিপদ আসবে না। আল্লাহ পাক এই নেয়ামত তার জন্যই রেখেছেন যে মানুষের মধ্যে সফলকাম এবং পুণ্যবান, যে এ পার্থিব জগতে নিজেকে হারাম থেকে বাঁচিয়ে রাখতে সক্ষম হবে, নিচের চোখের হেফাযত করবে, গুনাহ করবে না, আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য যা হালাল করেছে তা নিয়ে সে সন্তুষ্ট থাকবে।
- প্রত্যেক পুরুষকে একশজন পুরুষের যৌনশক্তি দেয়া হবে, তার পুরুষাঙ্গ নিস্তেজহীন অবিরাম শক্তিধর হবে। ফলে একজন জান্নাতী দিনে কমপক্ষে একশতবার কুমারী সহবাস করতে পারবে। প্রতিবার সহবাসের পর পরই স্ত্রীর যোনি কুমারীর ন্যায় হয়ে যাবে।
তুমি কতজন হূর চাও বন্ধু?
- প্রত্যেক জান্নাতীকে দুই থেকে বাহাত্তর বা তদোর্ধ্ব সংখ্যক হুর দেয়া হবে। এদের মধ্যে দুই জন হবেন দুনিয়ার স্ত্রীলোক, বাকীরা হবেন জান্নাতী হুর। এক হাদীসে এসেছে, প্রত্যেক জান্নাতী চার হাজার কুমারী, আট হাজার বিধবা ও এক শত হূরে-ঈ’ন বিবাহ করবে। (সুব্হানাল্লাহ্)
- একটি মেঘমালা জান্নাতীদের নিকট দিয়ে অতিক্রম করবে এবং জান্নাতীদের লক্ষ্য করে বলবে, তোমরা কে কোন্ বস্তুর বৃষ্টি চাও? তখন তারা যে বস্তুর বৃষ্টি প্রত্যাশা করবে সে বস্তুর বৃষ্টিই বর্ষিত হবে। তখন অনেক জান্নাতী মেঘমালাকে সুদর্শনা, সুসজ্জিতা, কমনীয়া কুমারী বর্ষণ করতে বলবে।
- জান্নাতে ‘বাইদাখ’ নামক এক নদী আছে। তার উপরে পদ্মরাগমণির গম্বুজ রয়েছে এবং তার তলদেশের মৃত্তিকা হতে হূর সৃষ্টি করা হয়। জান্নাতীগণ বলবে, আমাদেরকে বাইদাখ নদীর কাছে নিয়ে চল। তখন তারা সেখানে এসে সে সকল কুমারীর প্রতি অত্যন্ত গভীর দৃষ্টি দিবে। তাদের কারো সে কুমারীদের কাউকে পছন্দ হলে তার হাতের কব্জি স্পর্শ করলেই তার পেছনে পেছনে চলে আসবে।
[সূত্র: ইমাম কায়্যিম জাওযিয়্যাহ রহ. রচিত حادي الأرواح الى بلاد الأفراح কিতাব (বঙ্গানুবাদ: ‘জান্নাতের স্বপ্নিল ভুবন’) হতে সংকলিত। লিংক- https://bit.ly/hadiarwah]
(বি.দ্র: যারা হুরে ঈ’নের বর্ণনা আরো বিস্তৃতভাবে দলীলভিত্তিক পেতে চান, তারা নিচের কিতাবটি পড়তে পারেন, ইনশাআল্লাহ-
“কারা জান্নাতী কুমারীদেরকে ভালোবাসে?”- ড. আব্দুল্লাহ আয্যাম রাহি.
লিংক ০১- https://bit.ly/hoor2)
কোথায় আমার মুসলিম যুবক ভাইয়েরা???
‘মুসলিম যুবশক্তি’ ইসলামের একটি বড় শক্তি, বিশাল বাহুবল। মুসলিম যুবসমাজ যতদিন আল্লাহ তা‘আলাকে চিনেছে, দুনিয়াকে চিনেছে, জীবন- মৃত্যুর হাকীকত অনুধাবন করেছে, আল্লাহ তা‘আলাকে সন্তুষ্টি করতে শাহাদাতের তামান্না নিয়ে হূরে ঈ’নের আশেক হয়ে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, নিজের বুকের তাজা রক্ত আল্লাহর রাহে ঢেলে দিয়েছে, ততোদিন পর্যন্ত ইসলাম পৃথিবীতে কর্তৃত্ব করেছে। মুসলমানদের দিকে কেউ কখনো চোখ তুলে তাকাতে সাহস পায়নি। বাতিল বারবার হতাশ হয়ে ঘরে ফিরে গিয়েছে। কারণ তারা বুঝতে পেরেছিল, একজন মুসলিম নারীকে উত্যক্ত করার ফলাফল দাঁড়াবে, লাখো মুহাম্মাদ বিন কাসিমের আবির্ভাব!!! একজন মুসলিমের দিকে চোখ তুলে তাকাবার জবাবে কুফ্ফারের চোখ উপড়িয়ে ফেলা হবে! একজন মুসলিমকে কটুক্তি করার জবাবে ওদের সবকটি দাঁত উপড়ে ফেলা হবে!
ঈমানী শক্তিতে বলীয়ান একজন মুসলিম নওজোয়ান বাতিলের কাছে পারমানবিক বোমার চেয়েও ভয়ানক; কেননা সে মৃত্যুকে ভালোবাসে, সে শাহাদাত পিয়াসী, সে আল্লাহর রাস্তায় জীবন দেয়াকে তদপেক্ষা ভালোবাসে যতটা ভালোবাসা একজন কাফের কোন এক রমনী কিংবা মদপানকে ভালোবাসে।
একটি পারমানবিক বোমা হয়ত একটি মাত্র শহর হিরোশিমাকে ধ্বংস করতে পারে, কিন্তু একটি সাম্রাজ্যকে ধ্বংস করতে পারে না। অথচ একজন আব্দুল্লাহ আয্যামের (রহ.) অভ্যুদয়, রাশিয়া নামক সুপার পাওয়ারের ধ্বংসের কারণ হতে পারে!
একটি পারমানবিক বোমা হয়ত কেবল নাগাসাকিকে ধ্বংস করতে পারে, কিন্তু একটি সভ্যতাকে ধ্বংস করতে পারে না। অথচ একজন মাত্র ওসামা বিন লাদেনের (রহ.) আবির্ভাব, আমেরিকা নামক বিশ্ব মোড়লের পতনের উসীলা হতে পারে!!
একই ভাবে, একটি পারমানবিক বোমা কখনোই একসাথে একটি দেশের সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করতে পারে না, কিন্তু একজন সালাহ উদ্দিন আউয়ুবীর (রহ.) দ্বারা আল্লাহ পাক গোটা ইউরোপের সমন্বিত ক্রুসেডার শক্তিকে ধ্বংস করেছেন, একজন মাত্র সাইফুদ্দিন কুত্য (রহ.) দ্বারা অপরাজেয় শক্তি তাতারীদের ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছেন, বাতিলের অহংকারকে চিরদিনের জন্য দাফন করে দিয়েছেন !!!
এই হল মুসলিম উম্মাহর যৌবনের শক্তি! এই হল মুসলিম উম্মাহর একজন যুবকের ঈমানী শক্তি!! এই হল মুসলিম তারুণ্যের নেতৃত্বের শক্তি!!!
কিন্তু হায়! আজ মুসলিম যুবকরা কোথায়? আজ কোথায় মুহাম্মাদ আল ফাতিহ্ আর মুহাম্মাদ বিন কাসিম?? কোথায় তারিক বিন যিয়াদ আর ইউসুফ বিন তাশফিন??
কোথায় আমার মুসলিম যুবক ভাইয়েরা?? তারা আজ কোথায় হারিয়ে গেলো? তাদের ঈমানী চেতনা আজ কোথায়? কোন্ জিনিস তাদেরকে গলা টিপে হত্যা করেছে? কোন্ জিনিস তাদেরকে নারীর চেয়েও কাপুরুষ বানিয়ে ফেলেছে? কোন্ জিনিসের পিছনে সে তার জীবন, যৌবন আর মূল্যবান সময় ও অর্থ নষ্ট করছে? কোন্ জিনিসের কারণে সে আজ শাহাদাতের পরিবর্তে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে? কোন্ জিনিস তাকে কূপমুণ্ডুক আর অপদার্থ বানিয়ে কুফ্ফারদের মানসিক দাসে পরিণত করেছে?
কেন সে রব্বে কারীমের ইবাদত বাদ দিয়ে খেলাধুলা আর গান-বাজনায় আকন্ঠ নিমজ্জিত? কেন আজ মুসলিম যুবকরা মাদকের নেশায় বুদ হয়ে পড়ে থাকে? কেন সে সারারাত জেগে মোবাইলে নিমগ্ন থাকে? ফেইসবুক, ব্লু-ফিল্ম আর পর্ণগ্রাফী দেখে? কোন্ জিনিসের কারণে জান্নাতী হূরদের চিন্তা ছেড়ে পশ্চিমা নাপাক নগ্ন নারীদের দেখে তৃপ্তি লাভ করছে? কিসের কারণে তারা প্রেম ও ভালোবাসার নামে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে যাচ্ছে? কেন তারা নিজের ঘরে স্ত্রী রেখে পরকীয়া প্রেমে লিপ্ত হচ্ছে? কিসের কারণে তারা আজ অসীম নিয়ামতের জান্নাত থেকে দূরে সরে গিয়ে জাহান্নামের অতল গহ্বরে হারিয়ে যাচ্ছে???
কারণ একটাই। নারীর ফেতনা!
বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের কর্তৃত্ব ধ্বংস করতে ত্বগুতী শক্তি সুকৌশলে সর্বপ্রথম যে হাতিয়ার গ্রহণ করে তা আর কিছুই নয়, এই “নারীর ফেতনা”! ইলেকট্রনিক্স ও প্রিন্ট মিডিয়া এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখছে। তাই আজ সময় এসেছে, মুসলমান যুবকদেরকে দুনিয়ার গান্ধা-পঁচা পশ্চিমা পতিতাদের হাত হতে উদ্ধার করে চিরস্থায়ী জান্নাতী হূরদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার।
হে মুসলিম যুবক ভাইয়েরা! না, তোমরা এমন কাজ করো না, যার কারণে তোমাদেরকে জান্নাতী হূরদের হারাতে হয়। তারা আমাদের প্রতীক্ষায় প্রহর গুণছে আর আমরা নাকি..............!!!!
প্রিয় ভাই আমার!
আল্লাহকে ভয় কর! আল্লাহকে ভয় কর!! আল্লাহকে ভয় কর!!!
আল্লাহর কসম, কুরআন সত্য, কুরআনের প্রতিটি আয়াত সত্য, জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য, হূর সত্য, হূরের যে বর্ণনা দেয়া হয়েছে, তা অক্ষরে অক্ষরে সত্য।
আল্লাহর চেয়ে অধিক সত্যবাদী আর কে? আল্লাহর চেয়ে অধিক ওয়াদা পালনকারী আর কে? আল্লাহর রাসূলের চেয়ে অধিক সত্যবাদী আর কে? কুরআনের চেয়ে অধিক সত্য বাণী আর কী আছে?
তাই স্মার্ট-ফোন ছাড়, কুরআন ধর, বাতিলের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধর, শাহাদাতের অমীয় সুধা পান কর। তোমার জন্যে, হ্যাঁ, শুধু তোমার জন্যেই অপেক্ষা করছে হূরে ঈ’ন, হূরে লু’বা, হূরে মার্জিয়া! তোমাকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্যে জান্নাতের দ্বারে অপেক্ষমান রয়েছে তারা! তাই আর চোখের গুনাহ নয়, মনের অশ্লীল কল্পনা নয়, যৌনাঙ্গের হেফাযত করে চলো সবাই শাহাদাতের তামান্না নিয়ে ময়দানে।
লিল্লাহি তাকবীর! আল্লাহু আকবার!
জান্নাতের সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত
বন্ধু! তুমি কি জান, জান্নাতের সবচেয়ে বড় ও মহান নিয়ামতটি কি? সবচেয়ে উপভোগ্য ও আনন্দের বিষয়টি কি? হ্যাঁ, সেটি হলো আমাদের মহান প্রভু আল্লাহ রাব্বুল ‘আলামীনের দীদার (দর্শন)। জান্নাত প্রত্যাশীদের এটিই চূড়ান্ত লক্ষ্য। জান্নাত প্রত্যাশাকারীদের এটিই প্রত্যাশা করা উচিত। অগ্রগামীদের এরই প্রতি অগ্রগামী হওয়া উচিত। আমলকারীদের এ উদ্দেশ্যেই আমল করা চাই। মহান প্রভুর দীদারের আনন্দ ও মজার সামনে জান্নাতের অপরাপর নিয়ামতের কোনো তুলনাই চলে না। এ নিআমত থেকে বঞ্চিত হওয়াই জাহান্নামীদের সর্বাপেক্ষা কঠিন শাস্তি। জান্নাতীরা এ নিআমত লাভ করার পর জান্নাতের অন্য সকল নিআমতের কথা বিলকুল ভুলেই যাবে। সুব্হানাল্লাহি আল্লাহু আকবার!!!
که گر آفتاب است یک ذره نیست
وگر هفت دریاست یک قطره نیست
چو سلطان عزت علم بر کشد
جهان سر به جیب عدم درکشد
“যখন সূর্য উদিত হয়, তখন এক কণা (ছোট প্রদীপের) কোন দাম থাকে না;
আর যখন সমুদ্র থাকে তখন এক ফোটা পানির দিকে দৃষ্টি দেয়া হয় না। যখন সম্মান ও ইয্যতের বাদশাহ (আল্লাহ তা‘আলা) প্রকাশিত হন,
তখন সারা বিশ্বজাহান বিলীন হয়ে যায়।”
(বোস্তা-শেখ সাদী রহঃ)
বন্ধু! একটু চিন্তা কর তো, সেদিন কার দীদার হবে?
সেদিন দীদার হবে, আমাদের রব, আমাদের মালিক, বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা, আমাদের রিযিকদাতা, বিধানদাতা, আমাদের মহান প্রভু, আল্লাহ তা‘আলার। তিনিই প্রেমময়, অনন্ত, অসীম সৌন্দর্য ও গুণের অধিকারী, সর্বশক্তিমান আল্লাহ। যার এক হুকুমে আসমান যমীন সৃষ্টি হয়েছে, যিনিই প্রথম, যিনিই শেষ, যিনি আমার হায়াত দাতা, তিনিই আমার মওত দাতা; যিনি আমাকে প্রথমবার শূন্য থেকে সৃষ্টি করেছেন সর্বোত্তম সুরতে, পুনরায় মৃত্যুর পর পুনরুত্থিত করবেন। তিনি আমাকে মহাদৌলত ঈমান দিয়েছেন, ইসলাম দিয়েছেন, সর্বশ্রেষ্ঠ গ্রন্থ আল কুরআন দিয়েছেন, আর বানিয়েছেন সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূলের সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত; আমাদেরকে বানিয়েছেন সর্বশ্রেষ্ঠ জান্নাত- জান্নাতুল ফিরদাউসের উত্তরাধিকারী। আমার জীবন, আমার মরণ, আমার নামায, আমার কুরবানী- সব কিছুই তার জন্য নিবেদিত।
সেদিন তাঁর দীদার হবে, যিনি আমাদের মাওলা। যার মাওলা আছে তার তো সব আছে। আমার তো মালিক আছে, অভিভাবক আছে; অশ্রু ফেলার জায়গা আছে, কৃতজ্ঞতা প্রকাশের ক্ষেত্র আছে।
তিনি তো এমন একজন, যাঁকে নিবেদন করা যায় সর্বোচ্চ ভক্তি, মনের সবটুকু ভালোবাসা ও চ‚ড়ান্ত আনুগত্য। সুখে-দুঃখে যাঁকে সর্বাবস্থায় ডাকা যায়, যাঁর নাম দিবানিশি জপা যায়, যাকে সিজদা করা যায়, যাঁর জন্য জীবনের বাজি লাগানো যায়; অশ্রু ও ঘাম, রক্ত ও প্রাণ বিসর্জন দেয়া যায়। যাকে পাবার জন্য কামান আর বোমার সামনে বুক টান করে দাঁড়ানো যায়।
এমন মাওলা যার আছে তার তো সব আছে। আর যার নেই- হায়! তার তো কিছুই নেই। তার তো জীবনজুড়ে এক সর্বব্যাপী শূন্যতার হাহাকার! সে কোথায় যাবে? কার কাছে যাবে? কী করবে? কেন করবে? কেন তার জীবন? আর কেনই বা মৃত্যু? জীবনের অথৈ সাগরে তার অবলম্বনহীন যাত্রা!
সেদিন তাঁর দীদার হবে, দুনিয়াতে যিনি আমার পরম সাথী, যিনি এক মুহূর্তের জন্যও আমা হতে পৃথক হন না, আমাকে কখনো ভুলে যান না, আমার গ্রীবাস্থিত ধমনীরও যিনি আমার নিকটবর্তী; মৃত্যুর পর কবরে যিনি আমার একমাত্র সাথী, হাশরের কঠিন মুসিবতে যিনি আমার একমাত্র ভরসা, পুলসিরাত পেরিয়ে যে জান্নাতে যেতে চাই তার একমাত্র সৃষ্টিকর্তা ও মালিক; মহান আরশের অধিপতি আমাদের আল্লাহ তা‘আলা।
দুনিয়াতে যতদিন বেঁচে আছি, তিনিই আমার সবচেয়ে পরম বন্ধু; কেননা সুখে-দুঃখে আমি তাঁকেই কাছে পাই। তাঁর কাছেই আমার মনের আকুতি জানাই। কে আছে আমার আনন্দ ও গৌরব পরিমাপ করে? আমি তো ‘ছুরাইয়া’ তারকাকেও ভেদ করে উঠে যেতে চাই! ওগো আল্লাহ! তুমি যে ডেকেছ “ইয়া ‘আব্দী” (হে আমার বান্দা!) বলে! আর আমিও যে ডাকতে পারি “ইয়া রাব্বী” (ওগো আমার রব!)!
আমার মতো তৃপ্তি কার আছে এ ধরার বুকে! কে আছে আমার মতো এতো সুখী! সুখে-সংকটে যার অনুভব জুড়ে তিনি, যার অন্তরে তাঁর সান্নিধ্যের অনুভূতি, তার মতো নির্ভার এই পৃথিবীতে আর কে আছে?
প্রিয় বন্ধু! সেদিন কেমন হবে, যেদিন একজন ঘোষক ঘোষণা করবে, হে জান্নাতবাসীরা! তোমাদের প্রভু তোমাদেরকে দর্শন দিবেন, সুতরাং তোমরা তার দর্শন লাভে এসো। তারা বলবে, আমরা শুনলাম ও আনুগত্য করলাম। তারা ক্ষিপ্রগতিতে আল্লাহ তা‘আলার দর্শন লাভের জন্য প্রস্তুত হবে। তারা অত্যন্ত দ্রুত গতিসম্পন্ন ঘোড়ায় চড়ে ‘আফীহ’ প্রান্তরে পৌঁছবে আর সেখানেই তারা সকলে সমবেত হবে। আল্লাহ তা‘আলা তখন কুরসী রাখার নির্দেশ দিবেন। তা তখন সেখানে রাখা হবে। জান্নাতীদের জন্য সেখানে নূরের মুক্তার পোখরাজ ও স্বর্ণের মিম্বর স্থাপন করা হবে। সর্বনিম্ন স্তরের জান্নাতী ব্যক্তিও সেদিন কস্তুরির টিলায় বসবে। সে অন্যদেরকে নিজের তুলনায় অধিক নেআমত লাভকারী মনে করবে না; স্বস্তির সাথে বসবে।
তারা সে হালতে থাকা অবস্থায়ই একটি নূর প্রলম্বিত হতে দেখবে। তখন তারা মাথা উঠিয়ে দেখবে, আল্লাহ তা‘আলা উপর থেকে জান্নাতীদেরকে ঝুঁকে দেখছেন (তাঁর শান মোতাবেক)। সুব্হানাল্লাহি আল্লাহু আকবার!!
এরপর বলবেন, হে জান্নাতীরা! তোমাদের প্রতি শান্তি! জান্নাতীরাও এমন ভাষায় জবাব দিবে, যার চেয়ে সুন্দর আর জবাব হতে পারে না-
اللهم انت السلام و منك السلام- تباركت ذا الجلال والإكرام
“হে আল্লাহ! আপনিই শান্তি, শান্তি আপনার পক্ষ হতেই। হে মহৎ ও মহান! তোমার সত্তা কতইনা মহান।”
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর বড়ত্বের পর্দা সরিয়ে তাদের সামনে হাস্যোজ্জ্বল অবস্থায় দৃশ্যমান হবেন। আজ হলো ইয়াওমুল মাযীদ (অতিরিক্ত প্রতিদান প্রাপ্তির দিন)। সেদিন আল্লাহ তা‘আলার নূর জান্নাতীদেরকে আচ্ছন্ন করে রাখবে। যদি তাদেরকে ভস্মীভূত না করার ফয়সালা হত, তবে সকলে ভস্মীভূত হয়ে যেত। আহ্! সেদিন কী শ্রুতিমধুর বাক্যালাপ ও মধুময় আলোচনা হবে আমার রবের সাথে! মহান প্রভুর দীদার আর তাঁর সাথে কথোপকথনে তনু-মনে সে কী আলোড়ন সৃষ্টি হবে! আফসোস সে সকল লোকদের জন্য, যারা লাঞ্ছানাময় ক্ষতিগ্রস্ততার সওদা নিয়ে প্রভু মহানের দরবারে উপস্থিত হবে।
وُجُوهٞ يَوۡمَئِذٖ نَّاضِرَةٌ ٢٢ إِلَىٰ رَبِّهَا نَاظِرَةٞ ٢٣ وَوُجُوهٞ يَوۡمَئِذِۢ بَاسِرَةٞ ٢٤ تَظُنُّ أَن يُفۡعَلَ بِهَا فَاقِرَةٞ ٢٥
“সেদিন কিছু মুখমণ্ডল উজ্জ্বল হবে, তারা তাদের প্রতিপালকের দিকে তাকিয়ে থাকবে। আর কিছু মুখমণ্ডল বিবর্ণ হয়ে পড়বে, আশংকা করবে যে, এক ধ্বংসকারী বিপর্যয় তাদের উপর আপতিত হবে।” (সূরা কিয়ামাহ: ২২-২৫)
এসো হে বন্ধু! এসো তুমি চিরস্থায়ী উদ্যানে, এটাই তোমার উত্তম গন্তব্য, তাতে রয়েছে তোমার প্রভুর দীদার আর তাঁবুতে অপেক্ষমান সুরক্ষিতা হূর। কিন্তু আমরা তো হলাম শত্রুর বন্দিশালায় আবদ্ধ, তবে কি তুমি মনে কর, আমরা শয়তানের কারাগার হতে মুক্ত হয়ে গন্তব্যে পৌঁছতে পারবো?
কবে হবে মিলন আমাদের প্রিয়তমদের সাথে? কিছু হতাশা!!!
কঠিন প্রশ্ন করেছ বন্ধু!!
এটি তো কারো কারো জন্য বহু দূরের এবং কঠিন বিষয় হবে! কেননা, মৃত্যু থেকে শুরু করে জান্নাত পর্যন্ত অনেক স্তর পার হতে হবে আর প্রতিটি স্তরেই একদিন, দুই দিন নয়, হাজার হাজার বছর অতিবাহিত হয়ে যাবে। স্বাভাবিকভাবে মৃত্যুর পর হতে পুনরুত্থান পর্যন্ত দীর্ঘ সময় বরযখে থাকতে হবে। এরপর হাশরের ময়দানে হাজার হাজার বছর অতিবাহিত করতে হবে। অতঃপর পুলসিরাত পার হতে কত সময় লাগবে তাও তার আমলের উপর নির্ভর করবে! এরপর হয় জান্নাত, না হয় জাহান্নাম। যদি গোনাহের কারণে জাহান্নামে যেতে হয়, সেখান হতে মুক্তি যে কবে মিলবে তা আল্লাহ তা‘আলাই ভালো জানেন। এরপর যদি মুক্তি মিলে তাহলে জান্নাতে যাওয়া হবে, হূরে ঈ’নদের দেখা মিলবে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে সাক্ষাৎ হবে, আর জান্নাতের সর্বশ্রেষ্ঠ নিয়ামত রব্বে কারীম আল্লাহ তা‘আলার দীদার নসীব হবে। তাই না??
প্রিয় ভাই, আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, জান্নাতে যেতে কার কতদিন লাগবে তা ব্যক্তি বিশেষে ভিন্ন ভিন্ন হবে। কার জন্য কতদিন লাগবে সেটা আল্লাহ্ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন। তবে কুরআন হাদীসের স্বাভাবিক আলোচনা থেকে যেমনটি বুঝে আসে, তেমন কিছু আলোচনা তুলে ধরা হল। বাকী, আল্লাহ্ তা‘আলাই সর্বজ্ঞাত।
বরযখে আমাদেরকে কতদিন থাকতে হবে?
ইসরাফীল (আঃ) এর প্রথম শিঙ্গায় ফুৎকার দেয়ার মাধ্যমে সব কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। কোন মানুষতো দূরে থাক আসমান জমিনও থাকবে না, সবই ধ্বংস হয়ে যাবে। এভাবে চলবে ৪০ বছর। সেই হিসেবে কিয়ামতের আগে মৃত্যুবরণ কারী ব্যক্তি কমপক্ষে ৪০ বছর কবরে থাকবে।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ্রمَا بَيْنَ النَّفْخَتَيْنِ أَرْبَعُونَ قَالَ: أَرْبَعُونَ يَوْمًا؟ قَالَ: أَبَيْتُ، قَالَ: أَرْبَعُونَ شَهْرًا؟ قَالَ: أَبَيْتُ، قَالَ: أَرْبَعُونَ سَنَةً؟ قَالَ: أَبَيْتُ، قَالَ: ্রثُمَّ يُنْزِلُ اللَّهُ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَيَنْبُتُونَ كَمَا يَنْبُتُ البَقْلُ، لَيْسَ مِنَ الإِنْسَانِ شَيْءٌ إِلَّا يَبْلَى، إِلَّا عَظْمًا وَاحِدًا وَهُوَ عَجْبُ الذَّنَبِ، وَمِنْهُ يُرَكَّبُ الخَلْقُ يَوْمَ القِيَامَةِ
হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল ﷺ বলেছেন, দুই ফুৎকারের মাঝে বিরতিকাল চল্লিশ। সাহাবীরা জিজ্ঞাসা করলেন, হে আবু হুরায়রা! চল্লিশ দিন? তিনি বললেন, আমি সন্দিহান। তারা জিজ্ঞাসা করলেন, চল্লিশ মাস? তিনি বলেন, এ ব্যাপারে আমি সন্দিগ্ধ। তারা জিজ্ঞাসা করলেন, চল্লিশ বছর? তিনি বললেন, আমি সন্দিহান। কোনটাই নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না’। তারপর আসমান থেকে বৃষ্টিপাত হবে পরক্ষণেই মানুষ যমিন ভেদ করে এভাবে উঠতে থাকবে যেরূপ উদ্ভিদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। তিনি আরো বলেন, সাধারণ মানুষের মাঝে এমন কোন মানুষ নেই পঁচে বিনষ্ট হবে না। সবই মিশে যাবে কেবল একটা হাড় যা নিতম্বের প্রান্তে থাকে, তা মিশে যাবে না। কিয়ামতের দিন তা থেকে মানুষের বাকি অংশগুলো জোড়া হবে। (সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৪৯৩৫, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং-২৯৫৫)
وقد روي ابن المبارك ্রعن الحسن قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: بين النفختين أربعون سنة- الأولى: يميت الله تعالى بها كل حي. والأخرى: يحيى الله بها كل ميت
ইবনুল মুবরাক রহঃ বর্ণনা করেন, “হাসান বসরী রহঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল ﷺ ইরশাদ করেছেন, দুই ফুৎকারের মাঝে বিরতিকাল হল চল্লিশ বছর। প্রথম ফুৎকারের সময় আল্লাহ তা‘আলা প্রতিটি জীবিতকে মৃত্যু দান করবেন। আর দ্বিতীয় ফুৎকারের সময় প্রতিটি মৃতকে জীবন দান করবেন।
আল্লামা হালীমী বলেন বর্ণনাগুলো এ বিষয়ে ঐক্যমত্ব যে, দুই ফুৎকারের মাঝে সময়সীমা হল চল্লিশ বছর। (আততাযকিরাহ লিলকুরতুবী-১৬৫)
কিন্তু, এ চল্লিশ বছর হবে আখিরাতের চল্লিশ বছর, দুনিয়ার নয়। আর আখিরাতের এক দিন সার্বক্ষণিকভাবে দুনিয়ার এক হাজার বছরের সমান হওয়ার পক্ষে কুরআন ও হাদীসে কিছু সাক্ষ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়। যেমন: পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে,
يُدَبِّرُ ٱلۡأَمۡرَ مِنَ ٱلسَّمَآءِ إِلَى ٱلۡأَرۡضِ ثُمَّ يَعۡرُجُ إِلَيۡهِ فِي يَوۡمٖ كَانَ مِقۡدَارُهُۥٓ أَلۡفَ سَنَةٖ مِّمَّا تَعُدُّونَ ٥
‘তিনি আকাশ থেকে পৃথিবী পর্যন্ত সমস্ত কর্ম পরিচালনা করেন, অতঃপর তা তাঁর কাছে পৌঁছবে এমন এক দিনে, যার পরিমাণ তোমাদের গণনায় হাজার বছরের সমান।’ (৩২ সুরা সাজদা: ৫)।
আরও বর্ণিত হয়েছে,
وَيَسۡتَعۡجِلُونَكَ بِٱلۡعَذَابِ وَلَن يُخۡلِفَ ٱللَّهُ وَعۡدَهُۥۚ وَإِنَّ يَوۡمًا عِندَ رَبِّكَ كَأَلۡفِ سَنَةٖ مِّمَّا تَعُدُّونَ ٤٧
‘অবিশ্বাসীরা আপনাকে আজাব ত্বরান্বিত করতে বলে। অথচ আল্লাহ কখনও তাঁর অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন না। তোমার প্রভুর কাছে এক দিন তোমাদের গণনার হাজার বছরের সমান।’ (সূরা হজ্ব ২২: ৪৭)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " يَدْخُلُ الْفُقَرَاءُ الْجَنَّةَ قَبْلَ الأَغْنِيَاءِ بِخَمْسِمِائَةِ عَامٍ نِصْفِ يَوْمٍ "
আল্লাহর রাসুল ﷺ বলেন, ‘দরিদ্র মুসলমানরা ধনীদের থেকে অর্ধেক দিন অর্থাৎ ৫০০ বছর আগে জান্নাতে যাবে।’ (তিরমিজি : ২৩৫৩)।
আয়াত ও হাদিস থেকে বুঝে আসে, পৃথিবীতে আমাদের হিসাবে এক হাজার বছর সমান পরকালের এক দিন।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির : সুরা হজ ৪৭ আয়াতের তাফসির)।
সুতরাং বুঝা যায়, কেয়ামতের পর থেকে হাশর কায়েম হওয়া পর্যন্ত প্রায় চল্লিশ হাজার বছর মানুষ কবরের অন্ধকার জগতে অতিবাহিত করবে। (এই বিষয়ে আল্লাহ্ তা‘আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।)
হাশরের ময়দানে আমাদেরকে কতদিন অবস্থান করতে হবে?
প্রিয় ভাই! হাশরের ময়দানে আমাদেরকে দুনিয়ার বছর অনুপাতে পঞ্চাশ হাজার বছর দাঁড়িয়ে থাকতে হবে।
تَعْرُجُ الْمَلَائِكَةُ وَالرُّوحُ إِلَيْهِ فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ
“ফেরেশতাগণ এবং রূহ আল্লাহ তা’আলার দিকে উর্ধ্বগামী হয় এমন এক দিনে, যার পরিমাণ (তোমাদের গণনায়) পঞ্চাশ হাজার বছর।” (সূরা মা‘আরিজ-৪)
(এহইয়াউ ঊলুমিদ্দীন খন্ড ৫, পৃ: ৩২৮, https://bit.ly/ehya5 ; মরণের আগে ও পরে -ইমাম গায্যালী রহ. পৃ. ২১০ লিংক: https://bit.ly/moron13 ; মাওলানা আশেক ইলাহী বুলন্দশহরী লিখিত “মরণের পরে কী হবে?” পৃ.-৯৮)
পুলসিরাত পার হতে আমাদের কতদিন সময় লাগবে?
পুলসিরাত পার হতে কার কতদিন সময় লাগবে সেটি তার ঈমান ও আমলের উপর নির্ভরশীল হবে। পুলসিরাতটি হবে জাহান্নামের উপর। নেককারগণ এক নিমিষে তা পার হয়ে যাবেন। কিছু ব্যক্তি বিদ্যুৎ গতিতে তা অতিক্রম করবেন। কিছু ব্যক্তি বাতাসের গতিতে অতিক্রম করবেন। কিছু ব্যক্তি পাখির উড়ার গতিতে অতিক্রম করবে। কিছু ব্যক্তি উত্তম ঘোড়ার দৌঁড়ের গতিতে অতিক্রম হবে। কেউবা হেটে, কেউবা দৌঁড়ে, কেউবা হোঁচট খেতে খেতে। কেউবা বুক দিয়ে ছেঁচড়ে ছেঁচড়ে। প্রতিটি ব্যক্তি তার ঈমান ও আমল হিসেবে পুলটি অতিক্রম করবে। আর জাহান্নামীরা পুলসিরাতের তীক্ষè শলাকায় ফেঁসে গিয়ে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে। (নাউযুবিল্লাহ্)
এখন চিন্তার বিষয় হল-
হাদীসে বর্ণিত বিভিন্ন ফযীলত অর্জন ব্যতীত মৃত্যুবরণকারীর জন্য বরযখের যিন্দেগীটা অনেক দীর্ঘ ও কষ্টকর হবে। হায়! তাহলে আমার কী হবে? আমি বরযখে কতকাল থাকব? হাশরে পঞ্চাশ হাজার বছর আমাকে অবস্থান করতে হবে, আর পুলসিরাত পার হতে আমার যে কত সময় লেগে যাবে!! আল্লাহ্ না করুন, আল্লাহ্ না করুন, যদি আমার কোনো গুনাহের দরুন জাহান্নামে যেতে হয়, তাহলে সেখানে যে কত বছর জাহান্নামে থাকতে হবে? (নাউযুবিল্লাহ্ মিন যালিক!) এর পর জান্নাত মিললেও তা কতকাল পর মিলবে???
আহ্! কেম্নে কী? এত দীর্ঘ সময় পর প্রিয়তমদের সাথে সাক্ষাৎ মিলবে, তা কিভাবে মানা যায়? মন যে আর মানছে না? মন যে তাদের সাথে মিলনের জন্য ব্যাকুল হয়ে আছে! কিভাবে এতকাল ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করব? শুধুই কি সময়ের দীর্ঘতা, আবার প্রতিটি স্তরেই রয়েছে ভয়াবহ সব বিপদ আর মুসীবত! এতো বিপদাপদ পেরিয়ে প্রিয়তমদের সাথে সাক্ষাৎ লাভ কি আদৌ সম্ভব হবে আমার পক্ষে?????
মৃত্যুর ভয়াবহতা/মৃত্যু কষ্ট, কবরের ভয়াবহতা/কবরের আযাব, হাশরের ময়দানের বিভীষিকা ও দীর্ঘতা, পুলসিরাতের ভয়াবহতা, সবশেষে যে পরিমাণ গুনাহ করেছি জীবনে (যেখানে একটি কবীরা গুনাহ্ই জাহান্নামে নেয়ার জন্য যথেষ্ট সেখানে) আমার গুনাহের তো কোন হিসেবই নেই; গুনাহের দিকে তাকালে জাহান্নামের আগুন ছাড়াতো কিছুই চোখে পড়েনা; এত বিশাল, ভয়াল আর বিপদসঙ্কুল রাস্তা পেরিয়ে প্রিয়তমদের সাথে সাক্ষাৎ!!! সেটা আমার দ্বারা কিভাবে সম্ভব??
আহ! আমার মালিকের সামনে, জান্নাতের অধিপতির সামনে কত নাফরমানী করেছি, তাঁর দেয়া নেয়ামতের (চোখ, কান ইত্যাদির) কত যে খেয়ানত করেছি, কিভাবে আমি আশা করব যে আমি সবচেয়ে বড় জান্নাত, জান্নাতুল ফেরদৌসের অধিকারী হব? কিভাবে আমি হূরদের স্বামী হব? কিভাবে আমি আমার প্রতিপালকের প্রতিবেশী হব? কিভাবে আমি তাঁর সামনে দাঁড়াব? কিভাবে আমি তাঁর দীদারে আমার দু’চক্ষু শীতল করব? কিভাবে??
আহ্! আরো গভীরভাবে চিন্তা করলে তো আমার সামনে অন্ধকার ছাড়া কিছুই দেখি না!
হায়! আমার সামনে আছে মৃত্যু!! মৃত্যু একটি ভয়াবহ মসীবতের নাম। মৃত্যুর কষ্ট (সাকরাতুল মাওত) তো অবশ্যই আসবে। স্বয়ং রাসূলুল্লাহ ﷺ মৃত্যু-যন্ত্রনা হইতে পানাহ চাইতেন। কেমন হবে একজন মানুষের মৃত্যুযন্ত্রণা? তা হবে তরবারির তিনশত আঘাতের যন্ত্রনার সমতুল্য। যদি জীবন্ত কোন মোরগকে চামড়া খসিয়ে পা বেঁধে তপ্ত কড়াই এর মধ্যে ভাজা হয়, আর সে উড়ে পালাতে পারছে না, প্রাণও বাহির হচ্ছে না যে, যন্ত্রণার হাত হতে অব্যাহতি পেতে পারে, মৃত্যুর কষ্টও ঠিক তদ্রুপ, বরং তার চেয়েও ভয়াবহ। আহ্! কিভাবে আমি মৃত্যুর কষ্ট সহ্য করব!!!
মৃত্যুর পর আমাকে অন্ধকার কবরে রাখা হবে! কবরের আযাব অবশ্যই সত্য, কোনো সন্দেহ নেই। রাসূলুল্লাহ ﷺ যখনই নামায পড়তেন, আল্লাহ তা‘আলার নিকট কবরের আযাব হতে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন।
কবরে পৌঁছার সাথে সাথে প্রথম বিপদ হলো কবরে তিনটি প্রশ্ন করার জন্য মুনকার নাকীর ফেরেশতার আগমন। উক্ত ফেরেশতাদ্বয় হবেন ভীষণাকৃতির, তাদের আওয়ায হবে শত বজ্রকঠোর, ভয়ঙ্কর, চোখ দুটি হবে বিদ্যুচ্ছটার ন্যায় ভীষণোজ্জ্বল। তাদের ঘন কালো ও রুক্ষ চুল মাটি পর্যন্ত আলুলায়িত, লম্বা লম্বা তীক্ষèধার দাঁত দ্বারা কবরের মাটি ওলট-পালট করতে করতে আগমন করে হাত দ্বারা নাড়াচাড়া করে আমাকে নানা প্রশ্ন করবে। আমি কি সেদিন তাদের প্রশ্নের উত্তর ঠিক ঠিক দিতে পারব?
কবরের দ্বিতীয় বিপদ হলো, মৃত ব্যক্তিকে কবরের মাটি চাপ; আর চাপ এমন হবে যে, এক দিকের পাঁজরের হাড় অন্যদিকের পাঁজরের হাড়ের মাঝে ঢুকে যাবে। হায়! আমাকে যদি এমন চাপ দেয়া হয় তাহলে এই ব্যথা আমি সইব কিভাবে!!!
এছাড়াও গোনাহগারদের শাস্তি দেয়ার জন্য কবরে নিয়োজিত থাকবে নিরানব্বইটি অজগর সাপ। কিয়ামত পর্যন্ত এরা তাকে দংশন করতে থাকবে। সেগুলো এতই বিষাক্ত যে, তাদের একটিও যদি একবার পৃথিবীর দিকে ফোঁস করে, তাহলে তার বিষক্রিয়ায় পৃথিবীতে আর একটি ঘাসও জন্মাবে না। গুণাহগার ব্যক্তির নীচে আগুনের বিছানা বিছিয়ে দেয়া হবে, আগুনের তৈরি পোশাক পরিয়ে দেয়া হবে এবং দোযখের দিকে একটি দরজা খুলে দেয়া হবে। এর মাধ্যমে দোযখের তাপ এবং প্রচণ্ড উত্তপ্ত বায়ু তার কবরে আসতে থাকবে। তাছাড়া কবরবাসীদের শাস্তির জন্য একজন অন্ধ ও বধির ফেরেশতা নিয়োজিত করে দেয়া হবে (যেন যাকে শাস্তি দেয়া হবে তার চিৎকার ও আর্তনাদ শুনে, তার অবস্থা দেখে ফেরেশতার হৃদয়ে দয়ার উদ্রেক না হয়)। তার হাতে লোহার গুর্য বা মুগুর থাকবে, যদি তা দ্বারা কোনো পাহাড়ে আঘাত করা হয়, পাহাড়টি মুহূতের্র মাঝে মাটির সাথে মিশে যাবে। ফিরিশতা একবার সেই মুগুর দ্বারা লোকটিকে আঘাত করলে লোকটি মাটির সাথে মিশে যাবে, যার আওয়ায মানুষ ছাড়া সকল মাখলূক শুনতে পাবে। এরপর পুনরায় তাকে পূর্বের ন্যায় জীবিত করে দেয়া হবে। হায়! এগুলোর কোন একটি দ্বারা যদি আমি গ্রেপ্তার হই, তাহলে আমার অবস্থা কী হবে!!!
এরপর যেদিন কেয়ামত হবে, যেদিন আমি পুনরুত্থিত হব, সেদিন আমি কী অবস্থায় পুনর্জীবিত হব??? আল্লাহ তা‘আলা যে বলেছেন:
يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ ٱتَّقُواْ رَبَّكُمۡۚ إِنَّ زَلۡزَلَةَ ٱلسَّاعَةِ شَيۡءٌ عَظِيمٞ ١ يَوۡمَ تَرَوۡنَهَا تَذۡهَلُ كُلُّ مُرۡضِعَةٍ عَمَّآ أَرۡضَعَتۡ وَتَضَعُ كُلُّ ذَاتِ حَمۡلٍ حَمۡلَهَا وَتَرَى ٱلنَّاسَ سُكَٰرَىٰ وَمَا هُم بِسُكَٰرَىٰ وَلَٰكِنَّ عَذَابَ ٱللَّهِ شَدِيدٞ ٢
“হে মানুষ! তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর। নিশ্চয় কিয়ামতের প্রকম্পন একটি ভয়ংকর ব্যাপার। সেদিন তোমরা দেখবে প্রত্যেক দুগ্ধদানকারী মাতা তার স্তন্যপায়ী শিশুকে ভুলে যাবে এবং গর্ভবতী তার গর্ভপাত করে ফেলবে। মানুষকে দেখবে মাতালের ন্যায়; আসলে তারা মাতাল নয়। বস্তুতঃ আল্লাহর শাস্তি বড়ই কঠিন।” (২২ সূরা হজ্জ: ১-২)
فَإِذَا بَرِقَ ٱلۡبَصَرُ ٧
যখন দৃষ্টি চমকে যাবে, (সূরা ক্বিয়ামাহ্ ৭৫:৭)
......... يَوۡمٗا يَجۡعَلُ ٱلۡوِلۡدَٰنَ شِيبًا ١٧
সেদিনের ভয়াবহতা কিশোরকে বৃদ্ধে পরিণত করে দিবে, (সূরা মুয্যাম্মিল ৭৩:১৭)।
مَا يَنظُرُونَ إِلَّا صَيۡحَةٗ وَٰحِدَةٗ......
তারা কেবল একটি ভয়ংকর শব্দের অপেক্ষা করছে.....(সূরা ইয়াসীন ৩৬:৪৯),
فَإِذَا نُفِخَ فِي ٱلصُّورِ....
যেদিন শিঙায় ফুৎকার দেয়া হবে....., (সূরা হাক্কাহ্ ৬৯:১৩)
(ফলে ভয়ংকর শব্দ হবে-)
فَيَوۡمَئِذٖ وَقَعَتِ ٱلۡوَاقِعَةُ ١٥
সেদিন কেয়ামত সংগঠিত হবে- (সূরা হাক্কাহ্ ৬৯:১৫)
إِذَا ٱلسَّمَآءُ ٱنفَطَرَتۡ ١ وَإِذَا ٱلۡكَوَاكِبُ ٱنتَثَرَتۡ ٢
যখন আকাশ বিদীর্ণ হবে (মাথার উপর আকাশ ঘুরতে ঘুরতে ফেটে পড়বে) এবং নক্ষত্রসমূহ ঝরে পড়বে। (সূরা ইনফিত্বার ৮২:১-২)
وَخَسَفَ ٱلۡقَمَرُ ٨ وَجُمِعَ ٱلشَّمۡسُ وَٱلۡقَمَرُ ٩
যেদিন চন্দ্র জ্যোতিহীন হয়ে যাবে এবং সূর্য ও চন্দ্রকে একত্রিত করা হবে। (সূরা কিয়ামাহ ৭৫:৭-৮)
إِذَا ٱلشَّمۡسُ كُوِّرَتۡ ١ وَإِذَا ٱلنُّجُومُ ٱنكَدَرَتۡ ٢
যখন সূর্য আলোহীন হয়ে যাবে, নক্ষত্রসমূহ যখন মলীন হয়ে যাবে। (সূরা তাকভীর ৮১:১-২)
إِذَا زُلۡزِلَتِ ٱلۡأَرۡضُ زِلۡزَالَهَا ١
যখন পৃথিবী প্রচণ্ড কম্পনে প্রকম্পিত হবে, (সূরা যিলযাল ৯৯:১)
وَأَخرَجَتِ الأَرضُ أَثقالَها
আর যমিন তার বোঝা বের করে দিবে, (সূরা যিলযাল ৯৯:২)
يَوۡمَئِذٖ تُحَدِّثُ أَخۡبَارَهَا ٤
সেদিন যমিন তার বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে, (সূরা যিলযাল ৯৯:৪)
يَوۡمَ تَرۡجُفُ ٱلۡأَرۡضُ وَٱلۡجِبَالُ وَكَانَتِ ٱلۡجِبَالُ كَثِيبٗا مَّهِيلًا ١٤
যেদিন পৃথিবী ও পর্বতমালা প্রকম্পিত হবে এবং পর্বতমালা হয়ে যাবে বহমান বালুকাস্তুপ। (সূরা মুয্যাম্মিল ৭৩:১৪)
وَتَكُونُ ٱلۡجِبَالُ كَٱلۡعِهۡنِ ٱلۡمَنفُوشِ ٥
পাহাড়গুলো হয়ে যাবে ধুনিত রঙ্গীন পশমের মতো। (সূরাতুল ক্বারিয়াহ ১০১:৫)
وَإِذَا ٱلۡبِحَارُ سُجِّرَتۡ ٦
যখন সমুদ্রকে উত্তাল করে দেয়া হবে, (সূরা তাকভীর ৮১:৬, সূরা ইনফিত্বার ৮২:৩)
وَإِذَا ٱلۡوُحُوشُ حُشِرَتۡ ٥
যখন বন্য পশুরা একত্রিত হয়ে যাবে, (সূরা তাকভীর ৮১:৫)
وَإِذَا ٱلۡقُبُورُ بُعۡثِرَتۡ ٤
এবং যখন কবরসমূহকে উন্মোচিত করা হবে, (সূরা ইনফিত্বার ৮২:৪)
يَوۡمَ يَكُونُ ٱلنَّاسُ كَٱلۡفَرَاشِ ٱلۡمَبۡثُوثِ ٤
يَوۡمَئِذٖ تُعۡرَضُونَ لَا تَخۡفَىٰ مِنكُمۡ خَافِيَةٞ ١٨
সেদিন তোমাদেরকে উপস্থিত করা হবে। তোমাদের কোনো কিছু গোপন থাকবে না।” (সূরা হাক্কাহ ৬৯:১৮)
يَٰبُنَيَّ إِنَّهَآ إِن تَكُ مِثۡقَالَ حَبَّةٖ مِّنۡ خَرۡدَلٖ فَتَكُن فِي صَخۡرَةٍ أَوۡ فِي ٱلسَّمَٰوَٰتِ أَوۡ فِي ٱلۡأَرۡضِ يَأۡتِ بِهَا ٱللَّهُۚ إِنَّ ٱللَّهَ لَطِيفٌ خَبِيرٞ ١٦
“হে বৎস! কোনো বস্তু যদি সরিষার দানা পরিমাণও হয়, অতঃপর তা যদি থাকে প্রস্তর গর্ভে অথবা আকাশে অথবা ভ‚-গর্ভে, তবে আল্লাহ্ তাও উপস্থিত করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ্ গোপন ভেদ জানেন, সবকিছুর খবর রাখেন।” (সূরা লোকমান ৩১: ১৬)
(আর, সেদিন আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা করবেন,)
لِّمَنِ ٱلۡمُلۡكُ ٱلۡيَوۡمَۖ لِلَّهِ ٱلۡوَٰحِدِ ٱلۡقَهَّارِ ١٦
“আজ রাজত্ব কার? (সেদিন রাজত্ব ও ক্ষমতা হবে) এক প্রবল পরাক্রান্ত আল্লাহর (ওয়াহিদুল কাহ্হার)!” (সূরা মু’মিন ৪০:১৬)
হায়! কিয়ামতের এই বিভীষিকা মানুষকে উপভোগ করতেই হবে! হায়! সেদিন আমি কোথায় থাকব? কী হবে আমার অবস্থা??
এরপর হাশরের ময়দান কায়েম হবে। সেখানে ফেরেশতা, জিন, মানব, শয়তান, বন্য জন্তু সকলেই সমবেত হবে। এত ভিড় হবে যে, মানুষ পায়ের আঙুলের উপর ভর করে দাঁড়াবে, একজনের কাঁধ অন্য জনের কাঁধের সাথে মিলে যাবে। মানুষকে খালি পায়ে, খালি গায়ে, খতনা বিহীন, উলঙ্গ অবস্থায় পুনরুত্থিত করা হবে। তা সত্তে¡ও ময়দানের ভয়াবহতা এরূপ হবে যে, একজন আরেকজনের দিকে তাকানোর সময় পাবে না, কুচিন্তার ফুরসত পাবে না। সে ময়দান হবে সমতল, যাতে লুকানোর মত কোন উঁচু টিলা ও নিচু গর্ত থাকবে না। সেদিন সূর্য মানুষের মাথা থেকে মাত্র দু’ধনুক দূরে থাকবে এবং প্রচণ্ড তাপ বিকিরণ করতে থাকবে। আল্লাহ পাকের আরশের ছায়া ব্যতীত সেদিন আর কোনো ছায়া থাকবে না এবং নৈকট্যশীলরা (নবী-রাসূল, সিদ্দিক, শহীদ, আউলিয়া, নেককার আলেম ও আবেদগণ) ব্যতীত অন্য কেউ তাতে স্থান পাবেনা। হায়! সেদিন কি আমি আল্লাহ পাকের আরশে আযীমের নিচে একটুখানি ঠাঁই পাব??
সূর্যের উত্তাপ, শ্বাস-প্রশ্বাসের উত্তাপ আর নিজের কৃতকর্মের জন্য অন্তর্জ¦ালা এক ভয়াবহ মসীবত সৃষ্টি করবে। ঘামের দরুন মানুষের কষ্ট আরো বেড়ে যাবে। মানুষের বদ আমল অনুপাতে মানুষ ঘামে নিমজ্জিত হবে। সে হিসেবে কেউ কেউ ঘামে উরু পর্যন্ত, কারো কোমর পর্যন্ত, কারো কান পর্যন্ত ডুবে যাবে, কারো ঘাম হবে গলার লাগাম এবং কেউ কেউ সম্পূর্ণরূপে নিমজ্জিত হয়ে যাবে।
সুতরাং হে নিঃস্ব! হাশরবাসীদের দুঃখ-দুর্দশার কথা চিন্তা কর। এ কষ্টে পড়ে অনেকেই আরয করবে, প্রভু! আমাদেরকে হাশরের ময়দানের ভোগান্তি ও অপেক্ষার কষ্ট থেকে নাজাত দিন যদিও আমরা জাহান্নামে যাই। আর সেটি হবে হিসাব নিকাশ ও আযাবের আগের কষ্ট। এরকম পরিস্থিতিতে মানুষের উপর দিয়ে পঞ্চাশ হাজার বছর অতিবাহিত হবে, তথাপি আল্লাহ তা‘আলা মানুষের দিকে তাকাবেন না। হিসাব নিকাশ শুরু করবেন না। বন্ধু হে! তুমি সেদিনের কথা স্মরণ কর, যেদিন অবশ্যই আসবে, যেদিন মানুষ পায়ের উপর ৫০,০০০ বছর দণ্ডায়মান থাকবে। এ সময়ে তারা কোনো খাদ্য পাবেনা এবং এক ঢোক পানিও পান করতে পারবেনা। হায়! সেদিন হাশরের কোন স্থানে আমি দাঁড়াব? কোথায় আমার জায়গা হবে? আমার অবস্থা কেমন হবে???
কেমন হবে আমার সেদিনের ক্ষুধা ও তৃষ্ণার যন্ত্রণা! চিন্তা করা যায় কি? অথচ এমনই ঘটবে, এমনই ঘটতে যাচ্ছে।
সেদিন সকল মানুষ এমনকি সকল নবী-রাসূলগণও ‘ইয়া নাফসী, ইয়া নাফসী’ বলতে থাকবে। সেদিন কেউ আল্লাহ তা‘আলার সামনে দাঁড়াবার সাহস করবেন না। কেবল আমাদের প্রিয় নবীজী ﷺ। তিনি তাঁর গুনাহগার উম্মতের জন্য শাফায়াত করবেন। বিচার কাজ শুরু হলে একদল লোককে বিনা হিসাবে জান্নাতে দেয়া হবে, আর সকল কাফের, মুশরিক, বেঈমান, নাস্তিক, মুরতাদ, ইহুদী, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান সকলকে একযোগে বিনা হিসেবে জাহান্নামের আগুনে চিরদিনের জন্য নিক্ষেপ করা হবে। তাদের কোনো হিসাব নেই। হিসাব হবে কেবল গুনাহগার মুসলমানদের। মীযানের পাল্লায় একপাশে নেক আমল, অপরপাশে বদ আমল তুলে ওজন করা হবে। অণু পরিমাণ নেক কিংবা বদীও সেদিন বাদ পড়বে না। নেকীর পাল্লা ভারী হলে আমলনামা ডানহাতে সামনের দিক হতে দেয়া হবে, এরাই হবে জান্নাতী। আর বদীর পাল্লা ভারী হলে পিছন দিক হতে বাম হাতে দেয়া হবে, এরাই ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে, এরাই হবে জাহান্নামী। যাদের ব্যাপারে জাহান্নামের ফয়সালা হবে, আমাদের দয়াল নবী রাসূলুল্লাহ ﷺ তাদের মুক্তির জন্য শাফায়াত (সুপারিশ) করবেন। হায়! জানি না, সেদিন আমার গোনাহের পাল্লা না ভারী হয়ে যায়! হায়! আমি কি সেদিন আমার প্রিয় হাবীবের ﷺ শাফায়াত লাভ করব?? সেদিন কি আমি আমার হাবীবের ﷺ হাতে হাউজে কাউসারের পানি পান করতে পারবো?
কিয়ামতের দিন আমাদের সামনে জাহান্নামকে টেনে উপস্থিত করা হবে। তার সত্তর হাজার লাগাম থাকবে এবং প্রত্যেক লাগামের জন্য সত্তর হাজার ফেরেশতা নিয়োজিত থাকবে। জাহান্নামের উপর পুলসিরাত কায়েম করা হবে। যা হবে চুলের চেয়েও চিকন, তরবারির চেয়েও ধারালো। যা ত্রিশ হাজার বছরের রাস্তা। এটি পেরিয়ে আমাকে জান্নাতে যেতে হবে। নেককারগণ বিদ্যুতের গতিতে পার হয়ে যাবে। পুলসিরাত পেরিয়ে এ উম্মত সবর্প্রথম জান্নাতে প্রবেশ করবে। জান্নাতের চাবি থাকবে আমাদের প্রিয়নবী ﷺ এর হাতে। তিনিই জান্নাতে তাঁর উম্মতকে নিয়ে সর্বপ্রথম প্রবেশ করবেন। অন্যদিকে, সেদিন পুলসিরাতের উপর দিয়ে যাওয়ার সময় গুনাহগারদের শরীর দু’ টুকরা হয়ে জাহান্নামে পতিত হবে। হায়! আমি জানি না, আমি কি পুলসিরাত পার হতে পারবো, নাকি দু’টুকরা হয়ে জাহান্নামের অতল গহীনে আগুনের মাঝে পড়ে যাবো!!! (আল্লাহ্ পাক আমাদের সকলকে হেফাযত করুন। আমীন।)
জাহান্নামের গভীরতার কোনো সীমা নেই। যদি একটি পাথর দোযখে নিক্ষেপ করা হয় তবে পাথরটি দোযখের তলদেশে পৌঁছতে সত্তর বছর সময় লাগবে। জাহান্নামের সাতটি স্তর রয়েছে। দোযখ চারটি দেয়াল দ্বারা পরিবেষ্টিত এবং তার প্রতিটি দেয়ালের পুরুত্ব এত বেশি যে, তা অতিক্রম করতে চল্লিশ বছর সময় লেগে যাবে। দোযখের ভিতর কোনো আলো নেই, সেখানকার আগুনও কালো। সে আগুনের তেজ দুনিয়ার আগুনের তুলনায় সত্তর গুণ বেশি। যদি কোনো দোযখীকে দুনিয়ার আগুনে এনে পুড়ানো হয়, তাহলে সে ঘুমিয়ে পড়বে। তার কাছে দুনিয়ার আগুন অনেক আরামদায়ক লাগবে। সেখানে সবচেয়ে কম যে শাস্তি দেয়া হবে, তা হলো দোযখীকে এক জোড়া আগুনের জুতা পরিয়ে দেয়া হবে, যার উত্তাপে পাতিলের ফুটন্ত পানির ন্যায় তার মগজ টগবগ করতে থাকবে। কিন্তু সে মনে করবে তাকেই বুঝি সবচেয়ে বেশি শাস্তি দেয়া হচ্ছে। দোযখের ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। দোযখের আগুন এতটাই ভয়াবহ যে, তা মানুষের হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছবে এবং তাকেও গ্রাস করে ফেলবে। সেখানে মৃত্যু নেই, যতই শাস্তি দেয়া হোক মরবে না। দোযখের দায়িত্বে নিয়োজিত আছে নির্মম হৃদয় ও কঠোর স্বভাবের উনিশজন ফিরিশতা (যদিও সকল মানব ও জিনদের শাস্তি দেয়ার জন্য একজনই যথেষ্ট ছিল); তাঁরা আল্লাহর আদেশ অমান্য করেন না এবং যা আদেশ করা হয় তাই করেন। মানুষদেরকে যখন টেনে হিচড়ে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে, দূর থেকে জাহান্নামের আগুন তাদের দেখে ফেলবে এবং ক্রুদ্ধ হয়ে গর্জন ও চিৎকার শুরু করে দিবে। গুনাহগারদের সেখানে শৃংখলাবদ্ধ করে, (যদিও দোযখ প্রশস্ত জায়গা, তথাপি শাস্তি দেওয়ার জন্য) দোযখের সংকীর্ণ, অন্ধকারময় কোনো স্থানে নিক্ষেপ করে অনন্ত/সুদীর্ঘকাল পুড়ানো হবে। সেখানে ধৈর্য ধারণ করা আর না করা উভয়েই সমান। দোযখীদের পোশাক হবে গন্ধকের, যেন দ্রুত আগুন লেগে যায়।
দোযখীদের বিশাল দেহ দেয়া হবে যেন ভালোভাবে শাস্তি দেয়া যায়। তাদের জিহ্বা হবে দুই মাইল সমান। দুই কাঁধের স্থান দ্র্রুতগামী অশ্বারোহীর দুই দিনের পথের সমান দীর্ঘ হবে। চোয়াল হবে ওহুদ পাহাড়ের ন্যায় এবং তাদের চামড়া তিনদিনের পথের সমান মোটা ও পুরু হবে। কোন কোন দোযখীদের এত বড় দেহ দেয়া হবে যে, তাদের কানের লতি থেকে কাঁধ পর্যন্ত সত্তর বছরের রাস্তা হবে। তাতে রক্ত ও পূঁজের নালা প্রবাহিত হবে। দোযখীদের দংশন করার জন্য উটের ন্যায় ঘাড় বিশিষ্ট ভয়াবহ সাপ এবং মালপত্র বোঝাই করা খচ্চরের ন্যায় উঁচু বিচ্ছু থাকবে। তারা একবার দংশন করলে চল্লিশ বছর তার ব্যথা অনুভূত হবে। ক্ষুধা নিবারণ করার জন্য কণ্টকময় বৃক্ষ ছাড়া তাদের আর কোনো খাবার থাকবে না, যা তাদেরকে পুষ্ট করবে না এবং ক্ষুধাও নিবারণ করবে না, উপরন্তু তা তাদের গলায় আটকে যাবে। ফলে তারা পানি চাইবে। তাদেরকে অত্যন্ত গরম ফুটন্ত পানি পান করানো হবে, যা তাদের নাঁড়িভুঁড়ি ছিন্ন-ভিন্ন করে দিবে। সেদিন সেখানে তাদের কোন সুহৃদ ও বন্ধু থাকবে না; সকলেই হারিয়ে যাবে। সেদিন তারা এতই ক্ষুধার্ত থাকবে যে, তাদেরকে অন্য কোনো শাস্তি না দেয়া হলেও ক্ষুধার কষ্টই শাস্তি হিসেবে যথেষ্ট হবে। তাদেরকে খেতে দেয়া হবে দোযখীদের ক্ষত নিঃসৃত পূঁজ (গাস্সাক)। এটি এতই দুর্গন্ধময় যে, এক বালতি গাস্সাক তথা পূঁজ যদি দুনিয়ায় নিক্ষেপ করা হতো তাহলে সমস্ত পৃথিবী পঁচে গলে যেতো। আরো খাদ্য হবে যাক্কুম বৃক্ষ, যা তারা তৃষ্ণার্ত উটের ন্যায় গিলতে থাকবে, কিন্তু সেই খাদ্য গলিত তামার ন্যায় ফুটন্ত পানির মতো দোযখীদের পেটে ফুটতে থাকবে। এছাড়াও তাদের মাথার উপর ঢালা হবে ফুটন্ত পানি, ফলে তাদের চামড়া বিগলিত হয়ে যাবে। পুড়ে যাওয়া কিংবা বিগলিত হওয়া চামড়াকে আবার আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হবে, যেন শাস্তি পুরোপুরি ভোগ করতে পারে। আরো আছে আগুনের শিকল, লোহার মুগুর, জাহান্নামের যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ হয়ে বের হতে চাইলে তাদেরকে মুগুর মেরে ফেরত পাঠানো হবে। আর এই মুগুর কেমন ভারী হবে? সমস্ত মানব ও জিন জাতি যদি তা উঠাতে চেষ্টা করে তাহলেও তা উঠাতে সক্ষম হবে না। এসব ছাড়াও আছে আগুনের বেড়ী। যে মুনাফেকী করবে, বুকে বে-ঈমানী, মুখে ঈমানের কথা বলবে, উম্মতের সাথে গাদ্দারী করবে, উম্মতের বিরুদ্ধে গোয়েন্দাগিরি করে, তাদেরকে জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে নিক্ষেপ করা হবে। এদের শাস্তি হবে সবচেয়ে মর্মান্তিক। তাদেরকে পাঠানো হবে “যুব্বুল হুযন” (চিন্তার কূপ) নামক স্থানে। এটি এমনই ভয়ংকর যে, খোদ জাহান্নামই এর মসীবত থেকে আল্লাহর কাছে দিনে শতবার পানাহ চায়। সুতরাং উম্মতের গাদ্দাররা সাবধান!
সন্দেহ নেই! জাহান্নাম এমনই হবে। সন্দেহ নেই, কোনো সন্দেহ নেই। আল্লাহ তা‘আলার জন্য এটি সহজ, খুব সহজ।
হায়! জাহান্নামে তো আমার মতো রক্ত-মাংসে গড়া মানুষেরাই যাবে। হায়! আমিও যদি তাদের মত এরকম আযাবে গ্রেপ্তার হয়ে যাই! সেদিন আমার কী হবে? আমি কোথায় যাব? আমায় কে রক্ষা করবে? এমন হলে তো আমি ধ্বংস হয়ে যাব?
হায়!.................
প্রিয়তমদের সাথে মিলিত হওয়ার সহজ উপায়; আর নয় হতাশা!!!
প্রিয় ভাই!
উপরের আলোচনা হতে আমরা বুঝতে পারলাম, আমাদের সামনে কী পরিমাণ কঠিন পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে। কিন্তু আফসোসের বিষয় হচ্ছে, আমরা এ সম্পর্কে চরম পর্যায়ের গাফেল (অমনোযোগী)। আমাদের অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, আমাদের মৃত্যু নেই, কবরের আযাব, হাশর, পুলসিরাত, জান্নাত, জাহান্নাম এগুলো রূপকথার গাল-গল্প বৈ নয়! নবী রাসূলগণ এগুলো এমনি এমনি (বানিয়ে) বলেছেন! আমাদের ভাবখানা এমন, দুনিয়াতে নগদে যত পারি মাস্তি করি, মৃত্যুর পর যা হবার হবে, কুচ্ পরোয়া নেহি! আল্লাহ, পরকাল থাকলে ভালো; না থাকলে আরো ভালো! এসব নিয়ে চিন্তা করার সময় নেই। এসব চিন্তা প্রগতি ও আধুনিকতা বিরোধী! আর আমরা যারা মুমিন তথা বিশ্বাসী, তাদেরও বিশ্বাস ‘দৃঢ় বিশ্বাস’ এ রূপ নেয় না, আমাদের ‘ঈমান’ তো ‘একীন’ এ পরিণত হচ্ছে না!!
কিন্তু হায়! এগুলো এমনই চিরসত্য, যা ঘটবেই, এতে কোনো সন্দেহ নেই। কেননা আল্লাহ তা‘আলার চেয়ে অধিক সত্যবাদী আর কে? আল্লাহ তা‘আলার চেয়ে অধিক ওয়াদা বাস্তবায়নকারী আর কে? তিনি কি আসমান যমীন ‘কুন ফায়াকুন’ এর দ্বারা মুহূর্তের মাঝেই সৃৃষ্টি করেননি? তিনি কি পুনরায় এগুলো ধ্বংস করে আবার সৃষ্টি করতে সক্ষম নন? লক্ষাধিক নবী-রাসূলগণ কি ভুল বলে গিয়েছেন? কুরআন কারীম কি আমাদেরকে পরকালের এই সকল মহা বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করেনি??
বন্ধু হে! আবারো বলছি, মৃত্যুর কষ্ট সত্য, কবরের আযাব সত্য, পুনরুত্থান সত্য, হাশরের বিভীষিকা সত্য, পুলসিরাত সত্য, জাহান্নাম সত্য, জান্নাত সত্য, আল্লাহ তা‘আলার দীদার সত্য, হূরে ঈন, হূরে লূ’বা প্রাপ্তি সত্য।
প্রিয় ভাই!
যেহেতু এগুলো ঘটবেই, তাই জান্নাত প্রাপ্তি আর জাহান্নাম হতে বাঁচার চেষ্টা করাই কি বুদ্ধিমানের কাজ নয়?
দুনিয়ার গোলামীতে লিপ্ত থাকাটাই কি চরম বোকামী নয়??
আখিরাতকে ভুলে দুনিয়ার মোহে পড়ে সংক্ষিপ্ত এই যিন্দেগীকে বরবাদ করাটা কি মূর্খতা নয়?
সেই কি বুদ্ধিমান নয়, যে মৃত্যুর আগে মৃত্যুর জন্য প্রস্তুতি নেয়?
সেই কি প্রকৃত টেলেন্ট নয়, যে সময় থাকতে তাওবা করে তাঁর রবের দিকে ফিরে আসে?
সেই কি আসল বিচক্ষণ নয়, যে পরকালে তার হিসাব নেয়ার আগে দুনিয়াতে নিজেই নিজের হিসাব নেয়?
أَلَمۡ يَأۡنِ لِلَّذِينَ ءَامَنُوٓاْ أَن تَخۡشَعَ قُلُوبُهُمۡ لِذِكۡرِ ٱللَّهِ وَمَا نَزَلَ مِنَ ٱلۡحَقِّ
“যারা মুমিন, তাদের জন্য এখনো কি আল্লাহর স্মরণে এবং যে সত্য অবতীর্ণ হয়েছে, তার কারণে হৃদয় বিগলিত হওয়ার সময় আসেনি?
(৫৭ সূরা হাদীদ: ১৬)
প্রিয় ভাই! এখনো কি আমাদের সময় আসেনি, আমাদের মহান রবের দিকে রাস্তা খোঁজার?
আমাদের কি এখনো সময় আসেনি, গান শুনা আর নীল ম্যুভি দেখা ছেড়ে দেয়ার?
আমাদের কি এখনো সময় আসেনি, দুনিয়ার পঁচা-গান্ধা হারাম রিলেশনগুলোকে বাদ দিয়ে চিরস্থায়ী জান্নাতী সঙ্গিনীদের খোঁজে বের হবার?
আমাদের কি এখনো সময় আসেনি, নিজের যিন্দেগীকে ইসলামের রঙে রাঙিয়ে তোলার?
আমাদের কি এখনো সময় আসেনি, পরম করুণাময়ের সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার?
আমাদের কি এখনো সময় আসেনি, আযরাঈলের (আ.) সঙ্গে সাক্ষাতের আগেই নিজেকে সংশোধন করে নেয়ার?
বলুন, ভাই!
সেই কি প্রকৃত সৌভাগ্যবান নয়, যার মৃত্যুর সময় কোন কষ্টই হবে না? মৃত্যুর পর কোন হিসাব হবে না? কিয়ামতের বিভীষিকা হতে যাকে দূরে রাখা হবে? হাশরের ময়দানে আল্লাহ তা‘আলার মেহমান হয়ে আরশের ডান দিকে অবস্থান করবে? আর যাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে চিরকালের জন্য সবচেয়ে বড় ও উঁচু জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে? সবচেয়ে সুন্দরী ও সর্বাধিক সংখ্যক হূর দেয়া হবে?
প্রিয় ভাই!
উপরের আলোচনা হতে বুঝা যায়, যদিও জান্নাত প্রাপ্তি, আল্লাহ তা‘আলার দীদার লাভ, প্রিয় নবীজীর সাক্ষাৎ, হূরে ঈনের সাথে মিলন সত্য, কিন্তু তা কতকাল পর ঘটবে কারোরই জানা নেই। (যার জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ্ সুব্হানাহু ওয়া তা‘আলারই আছে)। আমলের তারতম্য ও মর্তবার পার্থক্যের দরুন একেকজন মুমিনের জন্য একেক রকম সময় লাগবে। তথাপি প্রতি পদে পদে ভয়াবহতা ও বিভীষিকায় শিকার হওয়ার সম্ভাবনা! সাকরাতুল মাওত তথা মৃত্যুর কষ্টের ভয়, কবরের চাপের ভয়, কবরে হিসাব নিকাশের ভয়, কিয়ামতের বিভীষিকা, হাশরের ময়দানে পঞ্চাশ হাজার বছর হিসাবের জন্য অপেক্ষা, মীযানের পাল্লায় আমলনামা উঠানো, নেকীর পাল্লা হালকা হওয়া ও বদীর পাল্লা ভারী হওয়ার ভয়, পুলসিরাতের উপর দিয়ে পার হওয়া ও জাহান্নামে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা, এরপর জান্নাত কিংবা জাহান্নাম!! অনেক বেশি নেক আমল বা নেকী না থাকলে বড় জান্নাত পাওয়া যাবে না, অধিক নায-নেয়ামত মিলবে না, আল্লাহ তা‘আলার দীদারও কম সময় হবে। যদিও এগুলো পাওয়া যায়, তা কত দীর্ঘ সময় পর মিলবে একমাত্র আল্লাহ্ পাকই ভালো জানেন!!!
প্রিয় ভাই! একটু ভেবে বলুনতো-
কেমন হবে ব্যাপারটি- যদি মৃত্যুর সময় আমাদের কোনো কষ্টই না হয়! কবরের হিসাব কিংবা আযাব, কিয়ামত, হাশর, মীযান, পুলসিরাত সবকিছুকে পাশ কাটিয়ে (বাইপাস করে) মৃত্যুর সাথে সাথেই সরাসরি জান্নাতে চলে যাই!! মৃত্যুর পরও দুনিয়ার মত রিযিক পেয়ে যাই!! দুনিয়ায় যেমন জীবিত আছি, মৃত্যুর পরও তেমনি জীবিতই থাকতে পাই!! যদি মৃত্যুর সাথে সাথেই আমাদের প্রিয়তমা হূরে ‘ঈনদের সাথে মিলিত হয়ে যাই!! মৃত্যুর দিনই আমার প্রিয় রফীকে আ‘লা রব্বে কারীমের দরবারে যেতে চাই!! তাহলে আমাকে কী করতে হবে???
অতি সহজ ও সংক্ষিপ্ত কোনো রাস্তা আছে কি?.............
[জলদি বলুন ভাই, আর যে দেরী সইছে না; আর যে মন মানছে না; একটি খেঁজুর কিংবা এক টুকরা গোশত খাওয়ার সময়টুকুও যেন অনেক দীর্ঘ মনে হচ্ছে!!..........]
তাহলে শুনুন ভাই- শাহাদাত, হ্যাঁ ভাই, আল্লাহর রাস্তায় শাহাদাত-ই এর সর্বোত্তম সমাধান। জান্নাতে যাবার জন্য এটি অতি সংক্ষিপ্ত ও সহজ রাস্তা। মৃত্যুর কষ্ট থেকে বাঁচার, কবরের আযাব থেকে বাঁচার, কিয়ামতের বিভীষিকা থেকে রক্ষা পাবার এটিই সর্বোত্তম রাস্তা; মৃত্যুর সাথে সাথে প্রিয়তমা হূরে ‘ঈন, হূরে লু’বা, হূরে মার্জিয়াদের সাথে সাক্ষাতের অতি সংক্ষিপ্ত পথ শাহাদাত ফী সাবীলিল্লাহ!! দুনিয়া ত্যাগ করার দিনই মাওলায়ে পাকের দরবারে গমন করার অতি সহজ রাস্তা শাহাদাত ফী সাবীলিল্লাহ!!!
প্রিয় ভাই! এ পর্যায়ে, চলুন, এ সম্পর্কে আমাদের প্রাণপ্রিয়, সত্যবাদী রাসূল ﷺ-এর মুখনিঃসৃত কিছু হাদীস শুনে দীল ও মন ঠান্ডা করি!
*** শহীদদের মৃত্যুকষ্টের ভয় নেই:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ্রالشَّهِيدُ لَا يَجِدُ مَسَّ الْقَتْلِ إِلَّا كَمَا يَجِدُ أَحَدُكُمُ الْقَرْصَةَ يُقْرَصُهَا
রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন, “একজন শহীদের নিহত হওয়ার কষ্ট তোমাদের কেউ পিপীলিকার কামড়ের কষ্টের চাইতে বেশি অনুভব করবে না।” (সহীহ, মিশকাত, সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৩১৬১)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَا يَجِدُ الشَّهِيدُ مِنْ مَسِّ الْقَتْلِ إِلاَّ كَمَا يَجِدُ أَحَدُكُمْ مِنْ مَسِّ الْقَرْصَةِ "
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেন, “একজন শহীদ মৃত্যুর কষ্ট শুধু ততটকুই অনুভব করে, তোমাদের কাউকে একবার চিমটি কাটলে সে যতটুকু কষ্ট অনুভব করে।” (হাসান সহীহ্, ইবনু মা-জাহ (২৮০২), জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১৬৬৮)
عَنْ اَنَسٍ بْنِ مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ: إِذَا الْتَقى لزَّحْفَانِ وَنَزَلَ الصُّبْرِ، كَانَ الْقَتْلُ أَهْوَنُ عَلى الشَّهِيْدِ مِنَ الْمَاءِ الْبَارِدِ فِىْ الْيَوْمِ الصَّائِفِ ـ شفء الصدور، مشارع الاشواق
হযরত আনাস ইবনে মালেক রাদি. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন, “যখন যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় আসমান থেকে সাকীনা নাযিল হতে থাকে, তখন মুজাহিদগণের শাহাদাত নসীব হওয়া প্রচণ্ড গরমের দিন ঠাণ্ডা পানি পান করার চেয়েও অধিক সহজ হয়ে যায়।” (শিফাউস্ ছুদুর, মাশারিউল আশওয়াক্ব)
*** শহীদের সকল গোনাহ মাফ করে দেয়া হবে:
عَنْ سَهْلِ بْنِ اَبِيْ اُمَامَةَ بْنِ سَهْلٍ عَنْ اَبِيْهِ عَنْ جَدِّهِ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ قَالَ : اِنَّ اَوَّلَ مَا يُهْرَاقُ مِنْ دَمِ الشَّهِيْدِ تُغْفَرُ لَهُ ذُنُوْبُهُ ـ )السنن الكبرى للبيهقى كتاب السير باب فضل الشهادة في سبيل الله، مشارع الاشواق ৭৪১-১১৫২(
রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন, “শহীদগণের রক্তের প্রথম ফোটা যমীনে পড়ার পূর্বেই তার সমস্ত গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।” (সুনানুল কুবরা লিল বাইহাক্বী, মাশারিউল আশ্ওয়াক্ব)
عَنْ أَنَسٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " الْقَتْلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ يُكَفِّرُ كُلَّ خَطِيئَةٍ " . فَقَالَ جِبْرِيلُ إِلاَّ الدَّيْنَ . فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " إِلاَّ الدَّيْنَ " .
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “আল্লাহ্ তা’আলার পথে মৃত্যুবরণ করা সকল পাপের কাফফারা হয়ে যায়।” তখন জিবরাঈল (আঃ) বললেন, ঋণ ব্যতীত (তা ক্ষমা করা হয় না)। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, ঋণ ব্যতীত।
(সহীহ্, জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১৬৪০)
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍ وَبْنِ الْعَاصِ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ: يُغْفَرُ لِلشَّهِيْدِ كُلُّ ذَنْبٍ إِلَّا الدَّيْنَ، وَفِيْ رِوَايَةٍ قَالَ الْقَتْلُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ يُكَفِّرُ كُلَّ شَيْءٍ إِلَّا الدَّيْنَ
রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন, “ঋণ ব্যতীত আল্লাহ তা‘আলা শহীদের সব কিছু (পাপ) মাফ করে দিবেন।” অন্য রেওয়ায়েতে আছে, “আল্লাহ্র রাস্তায় শহীদ হলে সকল গুনাহ মাফ হয়ে যায়।” (মুসলিমÑ ১৮৮৬)
*** শাহাদাতের সাথে সাথেই হুরে ঈনের সাথে সাক্ষাত মিলবে:
وَعَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: ذُكِرَ الشُّهَدَاءُ عِنْدَ رَسُوْلِ اللهِ فَقَالَ: لَا تَجُفُّ الْأَرْضُ مِنْ دَمِ الشَّهِيْدِ حَتّٰى تَبْتَدِرُهُ زَوْجَتَاهُ كَأَنَهُمَا ظَئْرَنِ اَضَلَّتَا فَصِيْلَيْهِمَا فِيْ بَرَاحٍ مِّنَ الْأَرْضِ، وَفِي يَدِ كُلِّ وَاحِدةٍ مِّنْهَا حُلَّةٌ خَيْرٌ مِّنَ الدُّنِيَا وَمَا فِيْهَا- مصنف عبد الرزاق، مشارع الأشواق ٧٤٦-١١٥٦
হযরত আবূ হুরাইরা (রা.) বর্ণনা করেন যে, একদা রাসূলুলাহ ﷺ-এর সম্মুখে শহীদদের আলোচনা করা হল, তখন রাসূলুলাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন, “যমীনে শহীদের রক্ত শুকানোর পূর্বেই তার দু’ জন স্ত্রী (হুরে ঈন) তার প্রতি এমনভাবে দৌড়িয়ে আগমন করে যেমন চাটিয়াল ময়দানে দুধ ওয়ালী উটনি তার বাচ্চার প্রতি দৌঁড়িয়ে যায় এবং তাদের প্রত্যেকের হাতে একটি করে এমন জোড়া থাকবে যা দুনিয়া ও তার মাঝে থাকা সমস্ত বস্তু অপেক্ষা উত্তম।” (ইবনে মাজাহ)
وعن بعض الصحابه رضى الله تعالى عنهم أنه قال: السيوف مفاتيح الجنة. قال: وإذا التقى الصفان في سبيل الله تزين الحور العين فاطّلعن، فإذا أقبل الرجل قلن: اللهم انصره اللهم ثبّته، اللهم.... ، فإذا أدبر احتجبن عنه ، وقلن: اللهم اغفر له وإذا قتل غفر الله له بأول قطرة تخرج من دمه كل ذنب هو له، وتنزل عليه اثنتان من الحور العين تمسحان الغبار عن وجهه .
জনৈক সাহাবী হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, “তরবারি হল জান্নাতের চাবি।” তিনি আরো বলেন, “যখন মুজাহিদ বাহিনী শত্রু বাহিনীর মুখোমুখি হয়, তখন ডাগরনয়না হূররা সুসজ্জিত হয়ে উঁকি মেরে দেখতে থাকে। যখন কোনো মুজাহিদ সামনে অগ্রসর হয়, তখন বলে, হে আল্লাহ! তাকে সাহায্য কর। তাকে সহায়তা কর। আর যখন পশ্চাতে ফিরে আসে, তখন আত্মগোপন করে বলে, হে আল্লাহ! তাকে ক্ষমা কর। আর যখন নিহত হয়, তখন তার রক্তের প্রথম ফোঁটা ঝরার সাথে সাথে আল্লাহ তা‘আলা তাকে ক্ষমা করে দেন। তার নিকট দুটি ডাগরনয়না হূর নেমে আসে এবং তার চেহারা থেকে ধূলি মুছে দেয়।” (তাম্বীহুল গাফেলীন, পৃ: ৩৮৯)
অন্য হাদীসের বর্ণনা মতে, শহীদ মাটিতে পড়ার সাথে সাথে জান্নাত হতে দুইজন হূরে ঈ’ন আগমন করেন, তার শরীর মুছে দেন এবং তাকে জান্নাতী খুশবু লাগিয়ে দেন ও পোশাক পরিধান করিয়ে দেন।
*** শাহাদাতের দিনই মাওলায়ে পাকের দরবারে যাওয়া হবে এবং জান্নাত মিলবে:
وَعَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍ ورَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ: إِذَا قُتِلَ الْعَبْدُ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَأَوَّلُ قَطْرَةٍ تَقَعُ عَلٰى الْأَرْضِ مِنْ دَمِهِ يَغْفِرُ اللهُ لَهُ ذُنُوْبَهُ كُلَّهَا، ثُمَّ يُرْسِلُ أِلَيْهِ بَرِيْطَةً مِنَ الْجًنَّةِ فَتُقْبَضُ فِيْهَا نَفْسَهُ وَبِجَسَدٍ مِنَ الُجَنَّةِ حَتّٰى تُرْكَبُ فِيْهِ رُوْحِهِ، ثُمّ يَعْرُجُ الْمَلاَئِكَةُ كَأنَّهُ كَانَ مَعَهُمْ مَنْذُ خَلَقَهُ اللهُ حَتّٰى يُؤْتَ بِهِ إِلىٰ السَّمَاءِ فَلَا يَمُرُّ بِبَابٍ إِلا فُتِحَ لَهُ، وَلَا عَلىٰ مَلَكٍ إِلا صَلَّى عَلَيْهِ وَاسْتَغْفَرَ لَهُ، حَتّٰى يُؤْتٰى بِهِ الرَّحْمٰنُ عَزَّ وَجَلَّ، فَيَسْجُدُ قَبْلَ الْمَلَائِكَةِ ثُمَّ تَسْجُدُ الْمَلَائِكَةُ بَعْدَهُ، ثُمَّ يُغْفَرُ لَهُ وَيُطَهَّرُ ثُمَّ يُئْمَرُبِهِ إِلَى الشُّهَدَاءِ فَيَجِدُهُمْ فِيْ رِيَاضِ خُضْرٍ وَقِبَابٍ مِنْ حَرِيْرٍ عِنْدَهُمْ حُوْتُ وَثَوْرٌ يَلْعَبَانِ لَهُمْ كُلَّ يَوْمٍ لُعْبَةً لَمْ يَلْعَبَا بِهَا الْأَمْسَ....... يَنْظُرُوْنَ إِلىٰ مَنَازِلِهِمْ فِيْ الْجَنَّةِ يَدْعُوْنَ اللهَ تَبَارَكَ وَتَعَالىٰ بِقِيَامِ السَّاعَةِ ـ مجمع الزوائد، مشارع الاشواق ـ٧٤٥ـ١١٥٥
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন কোন ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার রাহে শাহাদাতবরণ করে তখন তার রক্তের প্রথম ফোটা যমীনে পড়ার পূর্বেই তার সমস্ত গুনাহকে ক্ষমা করে দেয়া হয়। তার জন্য জান্নাত থেকে রুমাল প্রেরণ করা হয় এবং শহীদের রূহকে তার দ্বারা আবৃত করে একটি জীবন্ত দেহে প্রবেশ করিয়ে দেয়া হয় অতঃপর সে ফিরিশতাদের সাথে তাদের মতই উপরের দিকে আরোহন করতে থাকে কেমন যেন তার জন্মই ফিরিশতাদের সাথে। অতঃপর তাকে আসমানের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। আসমানের যে দরজা দিয়েই সে প্রবেশ করতে চাইবে সে দরজাই তার জন্য খুলে দেয়া হবে এবং যে ফিরিশতার নিকট দিয়ে গমন করবে সে ফিরিশতাই তার জন্য রহমতের দু‘আ ও ইসতিগফার করতে থাকবে; এমতাবস্থায় সে আল্লাহ তা‘আলার নিকট উপস্থিত হয়ে যাবে। শহীদ সেথায় পৌঁছে ফিরিশতাদের পূর্বেই আল্লাহ তা‘আলার সামনে সিজদায় অবনত হবে, পরে ফিরিশতাগণও সিজদা করবে। আল্লাহ
তা‘আলার পক্ষ হতে পুনরায় তাকে ক্ষমা ও পবিত্রতার ঘোষণা প্রদান করা হবে। অতঃপর তাকে অন্যান্য শহীদগণের নিকট নিয়ে যাওয়া হবে। ঐ সকল শহীদগণকে একটি তরুতাজা সবুজ শ্যামল বাগানের মাঝে সকলকে সবুজ পোষক পরিহিত অবস্থায় দেখবে।
ঐ সকল শহীদগণের নিকট একটি গাভী ও মসলী দেখতে পাবে যা নিয়ে
তারা খেলা করছে, তাদেরকে প্রত্যেকদিনের খেলার জন্য নতুন নতুন বস্তু
দেয়া হবে। ............. শহীদ তার আসল স্থানকে দেখতে থাকে এবং আল্লাহ তা‘আলার নিকট কিয়ামত কায়েম করার জন্য অনুরোধ করতে থাকে। (মাজমুয়া জাওয়ায়েদ, মাশারিউল আশওয়াক)
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ أَبِيْ أَوْفَى أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ ﷺ قَالَ: وَاعْلَمُوْا أَنَّ الْجَنَّةَ تَحْتَ ظِلاَلِ السُّيُوْفِ
রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন, “জেনে রাখ, জান্নাত তরবারির ছায়াতলে অবস্থিত।” (সহীহ বুখারী ২৮১৮)
*** শহীদের জন্য রয়েছে বিশেষ ছয়টি পুরস্কার:
عَنِ الْمِقْدَامِ بْنِ مَعْدِيكَرِبَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " لِلشَّهِيدِ عِنْدَ اللَّهِ سِتُّ خِصَالٍ يُغْفَرُ لَهُ فِي أَوَّلِ دَفْعَةٍ وَيَرَى مَقْعَدَهُ مِنَ الْجَنَّةِ وَيُجَارُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ وَيَأْمَنُ مِنَ الْفَزَعِ الأَكْبَرِ وَيُوضَعُ عَلَى رَأْسِهِ تَاجُ الْوَقَارِ الْيَاقُوتَةُ مِنْهَا خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا وَيُزَوَّجُ اثْنَتَيْنِ وَسَبْعِينَ زَوْجَةً مِنَ الْحُورِ الْعِينِ وَيُشَفَّعُ فِي سَبْعِينَ مِنْ أَقَارِبِهِ "
রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন, “আল্লাহ তা‘আলা শহীদকে ছয়টি পুরস্কার দান করবেন। ১. রক্তের প্রথম ফোটাটি মাটিতে পড়ার সাথে সাথে তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয় এবং যে জান্নাত তার ঠিকানা, তা তাকে দেখিয়ে দেয়া হয়। ২. তাকে কবরের আযাব থেকে রক্ষা করা হয়। ৩. (কিয়ামতের) প্রচণ্ড ভীতি থেকে সে নিরাপদ থাকবে। ৪. তার মাথায় মর্যাদার মুকুট পরানো হবে, যার এক একটি ইয়াকুত দুনিয়া ও দুনিয়ার সমুদয় বস্তু হতে মূল্যবান। ৫. স্ত্রী রূপে তাকে বাহাত্তর জন ডাগর চক্ষু বিশিষ্ট হূর দেয়া হবে। ৬. তার সুপারিশে তার সত্তরজন আত্মীয়কে জান্নাত দান করা হবে। (তিরমিযী-১৬৬৩ ও ইবনে মাজাহ শরীফ)
عَنْ اَبِيْ الدَّرْدَاءِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ يَقُوْلُ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ: يُشَفَّعُ الشَّهِيْدُ فِيْ سَبْعِيُنَ مِنْ أَهْلِ بَيْتِهِ ـ ابو داود كتاب الجهاد باب في الشهيد يشفع، البيهقى كتاب السير باب الشهيد يشفع، مشارع الاشواق ৭৩৯-১১৪৮
হযরত আবূ দারদা রাদি. বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন, “শহীদ নিজ পরিবারভূক্ত সত্তরজনের জন্য সুপারিশ করবে।” (আবু দাউদ, বাইহাক্বী, মাশারিউল আশওয়াক্ব)
*** শহীদদের জন্য পরকালের আযাব মাফ:
عَنْ جَابِرٍ يَبْلُغُ بِهِ النَّبِيَّ ﷺ قَالَ: مَنْ قَتَلَ يَلْتَمِسُ وَجْهَ اللهِ لَمْ يُعَذِّبْهُ اللهُ ـ مجمع الزوائد، مشارع الاشواق ٧٢٤ـ ١١٣٠
হযরত যাবের রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন,“যে ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য শাহাদাতবরণ করবে, আল্লাহ তা‘আলা তাকে কোনো প্রকার আজাব প্রদান করবেন না।” (মাজমুয়া যাওয়ায়েদ, মাশারিউল আশওয়াক্ব)
*** শহীদরা মৃত নয়, জীবিত; তারা রিযিকপ্রাপ্ত হন:
যারা আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হন, তারা তো মৃত নয়, বরং জীবিত। আল্লাহ তা‘আলার ইরশাদ,
وَلَا تَقُولُواْ لِمَن يُقۡتَلُ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ أَمۡوَٰتُۢۚ بَلۡ أَحۡيَآءٞ وَلَٰكِن لَّا تَشۡعُرُونَ ١٥٤
“যারা আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়, তাদেরকে তোমরা মৃত বলো না, বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা বুঝ না।” (২ সূরা বাকারা: ১৫৪)
وَلَا تَحۡسَبَنَّ ٱلَّذِينَ قُتِلُواْ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ أَمۡوَٰتَۢاۚ بَلۡ أَحۡيَآءٌ عِندَ رَبِّهِمۡ يُرۡزَقُونَ
“যারা আল্লাহর রাস্তায় শহীদ হয়, তাদেরকে তোমরা মৃত মনে করো না, বরং তারা জীবিত, তাদের প্রতিপালকের নিকট হতে তার জীবিকা প্রাপ্ত হন।” (৩ সূরা আলে ইমরান: ১৬৯)
রাসূলুল্লাহ ﷺ এর হাদীসের আলোকে শহীদদের পাঁচটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কথা তাফসীরের কিতাবে পাওয়া যায়। বৈশিষ্ট্যগুলো হল:
১. শহীদদের রূহ আল্লাহ তা‘আলা নিজ কুদরতের মাধ্যমে কবজ করবেন, তাদের জান কবজের জন্য মালাকুল মাউত নির্ধারণ করেন নি।
২. শহীদকে গোসল প্রদান করা হবে না এবং শহীদ দুনিয়ার কোন বস্তুর প্রতি মুহতাজ নয়।
৩. শহীদদেরকে কাফন দেয়া হবে না; তাদেরকে রক্তমাখা কাপড়সহই দাফন করা হবে।
৪. শহীদগণকে শাহাদাতের পর মৃত বলা যাবে না।
৫. শহীদগণ প্রতিদিন যে কোন ব্যক্তির জন্য শাফা‘আত করতে পারবে।
(তাফসীরে কুরতুবী, সূরা আলে ইমরানের ১৭১ নং আয়াতের ব্যাখ্যাধীন)
*** শহীদরা জান্নাতে ‘সবুজ পাখি’ হয়ে উড়ে বেড়ায়:
عَنِ ابْنِ كَعْبِ بْنِ مَالِكٍ، عَنْ أَبِيهِ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ " إِنَّ أَرْوَاحَ الشُّهَدَاءِ فِي طَيْرٍ خُضْرٍ تَعْلُقُ مِنْ ثَمَرَةِ الْجَنَّةِ أَوْ شَجَرِ الْجَنَّةِ " . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ .
রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন, “সবুজ পাখির মধ্যে শহীদদের রূহ্ অবস্থান করে। তারা জান্নাতের বৃক্ষসমূহের ফল ভক্ষণ করে।” (সহীহ্, ইবনু মাজাহ-৪২৭১, জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১৬৪১)
عَنْ كَعْبِ بن مَالِكٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ قَالَ : اَرْوَاحُ الشُّهَدَاءِ فِيْ صُوَرِ طَيْرٍ خُضْرٍمُعَلَّقَةٌ فِيْ قَنَادِيْلَ حَتَّى يَرْجِعَهَا اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ـ مصنف ابن عبد الرزاق كتاب الجهاد باب اجيالشهادة ، ترمذى كتاب فضائل الجهاد باب ماجاء في ثواب الشهداء مشارع الاشواق ৭২৯-১১৪১
হযরত কা‘আব ইবনে মালেক রাদি. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন, “শহীদগণের রূহকে সবুজ পাখির আকৃতি দান করা হবে এবং আশ্রয়স্থল হিসেবে জান্নাতে ঝুলন্ত স্বর্ণের কিন্দিলা (বাতি) প্রদান করা হবে। পরিশেষে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা তাদের ফিরিয়ে আনবেন।” (মুসান্নাফে ইবনে আব্দুর রাজ্জাক, তিরমিযি, মাশারিউল আশওয়াক্ব)
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم : " لَمَّا أُصِيبَ إِخْوَانُكُمْ بِأُحُدٍ جَعَلَ اللَّهُ أَرْوَاحَهُمْ فِي جَوْفِ طَيْرٍ خُضْرٍ تَرِدُ أَنْهَارَ الْجَنَّةِ، تَأْكُلُ مِنْ ثِمَارِهَا، وَتَأْوِي إِلَى قَنَادِيلَ مِنْ ذَهَبٍ مُعَلَّقَةٍ فِي ظِلِّ الْعَرْشِ، فَلَمَّا وَجَدُوا طِيبَ مَأْكَلِهِمْ وَمَشْرَبِهِمْ وَمَقِيلِهِمْ قَالُوا : مَنْ يُبَلِّغُ إِخْوَانَنَا عَنَّا أَنَّا أَحْيَاءٌ فِي الْجَنَّةِ نُرْزَقُ لِئَلاَّ يَزْهَدُوا فِي الْجِهَادِ وَلاَ يَنْكُلُوا عِنْدَ الْحَرْبِ فَقَالَ اللَّهُ سُبْحَانَهُ : أَنَا أُبَلِّغُهُمْ عَنْكُمْ . قَالَ : فَأَنْزَلَ اللَّهُ { وَلاَ تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتًا } " . إِلَى آخِرِ الآيَةِ .
ইবনু ‘আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেনঃ উহুদ যুদ্ধের দিন যখন তোমাদের ভাইয়েরা শহীদ হন, মহান আল্লাহ্ তাদের রুহগুলোকে সবুজ রঙের পাখির মধ্যে স্থাপন করলেন। তারা জান্নাতের ঝর্ণা সমূহের উপর দিয়ে যাতায়াত করে, সেখানকার ফলমূল খায় এবং ‘আরশের ছায়ায় ঝুলানো সোনার ফানুসে বসবাস করে। তারা যখন নিজেদের মনঃপূত খাবার, পানীয় ও বাসস্থান পেলো, তখন বললো, কে আমাদের এ সংবাদ আমাদের ভাইদের নিকট পৌঁছে দিবে, আমরা জান্নাতে জীবিত আছি, এখানে আমাদেরকে নিয়মিত রিযিক দেয়া হচ্ছে! (এটা জানতে পারলে) তারা জিহাদে অমনোযোগী হবে না এবং যুদ্ধের ব্যাপারে অলসতা করবে না। অতঃপর মহান আল্লাহ্ বললেনঃ আমি তাদের নিকট তোমাদের এ সংবাদ পৌঁছে দিবো। বর্ণনাকারী বলেন, মহান আল্লাহ্ এ আয়াত অবতীর্ণ করলেনঃ “যারা আল্লাহ্র পথে নিহত হয়েছে তোমরা তাদেরকে মৃত মনে করো না। প্রকৃতপক্ষে তারা জীবিত, তারা তাদের রবের নিকট নিয়মিত রিযিক পাচ্ছে”। (সূরাঃ আল-ইমরানঃ ১৬৯) (হাসান, সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ২৫২০)
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ ﷺ ـ رَأَيْتُ جَعْفَرَ بْنَ اَبِيْ طَالِبٍ مَلَكًا يَّطِيْرُ فِيْ الْجَنَّةِ ذَا جَنَاحَيْنِ يَطِيْرُ مِنْهَا حَيْثُ شَاءَ، مَقْصُوْصَةٌ قَوَادِمُهُ بِالدِّمَاءِـ طبراني، الترغيب والترهيب، مشارع الأشواق ٧٢٧ـ ١١٣٧
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন, “আমি জা‘ফর ইবনে আবী তালিবকে দুটি পাখার উপর ভর করা ফেরেশতাদের ন্যায় দেখেছি জান্নাতের যেথায় ইচ্ছা বিচরণ করছে এবং তার পাখার অগ্রভাগে রক্ত মিশ্রিত।” (তাবারানী, আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব, মাশারিউল আশওয়াক্ব)
*** একমাত্র শহীদরাই পৃথিবীতে আবারো ফিরে আসতে চাইবে:
عَنْ مَسْرُوقٍ، قَالَ سَأَلْنَا عَبْدَ اللَّهِ عَنْ هَذِهِ الآيَةِ، { وَلاَ تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتًا بَلْ أَحْيَاءٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ} قَالَ أَمَا إِنَّا قَدْ سَأَلْنَا عَنْ ذَلِكَ فَقَالَ " أَرْوَاحُهُمْ فِي جَوْفِ طَيْرٍ خُضْرٍ لَهَا قَنَادِيلُ مُعَلَّقَةٌ بِالْعَرْشِ تَسْرَحُ مِنَ الْجَنَّةِ حَيْثُ شَاءَتْ ثُمَّ تَأْوِي إِلَى تِلْكَ الْقَنَادِيلِ فَاطَّلَعَ إِلَيْهِمْ رَبُّهُمُ اطِّلاَعَةً فَقَالَ هَلْ تَشْتَهُونَ شَيْئًا قَالُوا أَىَّ شَىْءٍ نَشْتَهِي وَنَحْنُ نَسْرَحُ مِنَ الْجَنَّةِ حَيْثُ شِئْنَا فَفَعَلَ ذَلِكَ بِهِمْ ثَلاَثَ مَرَّاتٍ فَلَمَّا رَأَوْا أَنَّهُمْ لَنْ يُتْرَكُوا مِنْ أَنْ يُسْأَلُوا قَالُوا يَا رَبِّ نُرِيدُ أَنْ تَرُدَّ أَرْوَاحَنَا فِي أَجْسَادِنَا حَتَّى نُقْتَلَ فِي سَبِيلِكَ مَرَّةً أُخْرَى . فَلَمَّا رَأَى أَنْ لَيْسَ لَهُمْ حَاجَةٌ تُرِكُوا " .
মাসরূক (রহঃ) থেকে বর্ণিত, আমি ‘আবদুল্লাহ (ইবনু মাস’ঊদ) (রাঃ)-কে এ আয়াতটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলাম যাতে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ “যাঁরা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়েছে তাদেরকে কখনো তোমরা মৃত মনে করো না বরং তাঁরা জীবিত, তাঁদের প্রতিপালকের নিকট থেকে তারা জীবিকাপ্রাপ্ত”- (সূরা আলে ‘ইমরান ৩ : ১৬৯)। ‘আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, আমি এ আয়াত সম্পর্কে (রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে) জিজ্ঞেস করেছিলাম তখন তিনি বললেন, শহীদদের আত্মাসমূহ সবুজ বর্ণের পাখির আকৃতিতে রাখা হয়। আল্লাহ তা‘আলার আরশের নীচে তাদের জন্য ঝাড়-লণ্ঠন ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। জান্নাতের সর্বত্র তারা যেখানে চায় সেখানে বিচরণ করে। অবশেষে সে লন্ঠনগুলোতে ফিরে আসে। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, তোমরা আমার নিকট কিছু চাও কি? উত্তরে তারা বলে, আমরা জান্নাতের মধ্যে যেখানে খুশি ঘুরাফেরা করে বেড়াই, এর চেয়ে বেশি আর কি চাইতে পারি? আল্লাহ তা‘আলা তিনবার এই প্রশ্ন করেন আর প্রতিবার তারা একই উত্তর প্রদান করে। অবশেষে যখন তারা বুঝতে পারে যে, আসলে কোনো কিছু না চাওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা জিজ্ঞাসা করতেই থাকবেন তখন তারা বলবে, ইয়া আল্লাহ! আমাদের একটি মাত্র আরয, আমাদের রূহগুলো পুনরায় আমাদের দেহের মধ্যে ফিরিয়ে দাও আমরা আবারও তোমার পথে লড়াই করে শহীদ হয়ে আসি! কিন্তু মৃত্যুর পর পুনরায় দুনিয়াতে আসা আল্লাহর নিয়মের পরিপন্থী বিধায় এই আবদার গ্রহণ করা হয় না। (সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৪৭৭৯)
অর্থাৎ শহীদদেরকে আল্লাহ পাক এই পরিমাণ নেয়ামত দান করবেন, যার জন্য তারা পুনরায় দুনিয়াতে ফিরে আসার এবং আবারো শহীদ হওয়ার আকাক্সক্ষা করবে, যা অন্য কোনো জান্নাতী করবে না।
عَنْ أَنَسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم أَنَّهُ قَالَ " مَا مِنْ عَبْدٍ يَمُوتُ لَهُ عِنْدَ اللَّهِ خَيْرٌ يُحِبُّ أَنْ يَرْجِعَ إِلَى الدُّنْيَا وَأَنَّ لَهُ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا إِلاَّ الشَّهِيدُ لِمَا يَرَى مِنْ فَضْلِ الشَّهَادَةِ فَإِنَّهُ يُحِبُّ أَنْ يَرْجِعَ إِلَى الدُّنْيَا فَيُقْتَلَ مَرَّةً أُخْرَى "
রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “আল্লাহ্ তা’আলার নিকট সঞ্চিত সাওয়াবের অধিকারী যে কোন বান্দার মৃত্যুর পর তাকে পৃথিবী এবং এর সকল কিছু দিলেও সে আবার পৃথিবীতে চলে আসা পছন্দ করবে না। কিন্তু শহীদ ব্যতীত, যখন শহীদ শাহাদাত লাভের ফযিলত ও মর্যাদা প্রত্যক্ষভাবে দেখতে পাবে তখন সে আবার দুনিয়াতে আসতে আগ্রহী হবে, যাতে সে আবার আল্লাহ তা’আলার পথে শহীদ হতে পারে।” (সহীহ্, বুখারী, হাদিস নং ২৭৯৫, নাসা-ঈ, জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১৬৪৩)
عَنْ قَتَادَةَ، حَدَّثَنَا أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَا مِنْ أَحَدٍ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ يَسُرُّهُ أَنْ يَرْجِعَ إِلَى الدُّنْيَا غَيْرُ الشَّهِيدِ فَإِنَّهُ يُحِبُّ أَنْ يَرْجِعَ إِلَى الدُّنْيَا يَقُولُ حَتَّى أُقْتَلَ عَشْرَ مَرَّاتٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ مِمَّا يَرَى مِمَّا أَعْطَاهُ اللَّهُ مِنَ الْكَرَامَةِ "
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, “জান্নাতে বসবাসকারীদের মধ্যে শহীদ ব্যক্তি ব্যতীত আর কেউই (মৃত্যুর ভয়াবহতার কারণে) পৃথিবীতে ফিরে আসার উৎসাহ বোধ করবে না। শহীদ ব্যক্তিই আবার পৃথিবীতে ফিরে আসতে চাইবে (কেননা মৃত্যু থেকে শুরু করে জান্নাত পর্যন্ত শাহাদাতের মযার্দা অবলোকন করেছেন) । আল্লাহ্ তা’আলা তাকে যেসব নিয়ামত ও মর্যাদা দিবেন তা দেখে সে বলবে, আমি দশবার আল্লাহর রাস্তায় নিহত হব।” (সহীহ্, নাসা-ঈ, জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১৬৬১)
عَنْ أَنَسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " يُؤْتَى بِالرَّجُلِ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ، فَيَقُولُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ: يَا ابْنَ آدَمَ، كَيْفَ وَجَدْتَ مَنْزِلَكَ؟ فَيَقُولُ: أَيْ رَبِّ خَيْرَ مَنْزِلٍ، فَيَقُولُ: سَلْ وَتَمَنَّ، فَيَقُولُ: أَسْأَلُكَ أَنْ تَرُدَّنِي إِلَى الدُّنْيَا فَأُقْتَلَ فِي سَبِيلِكِ عَشْرَ مَرَّاتٍ، لِمَا يَرَى مِنْ فَضْلِ الشَّهَادَةِ "
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন, “জান্নাতীদের মধ্যে হতে এক ব্যক্তিকে আনা হবে। মহান মহীয়ান আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁকে বলবেনঃ হে আদম সন্তান! তোমার বাসস্থান কেমন পেলে? সে বলবেঃ হে আমার প্রতিপালক! সর্বোত্তম স্থান। তিনি বলবেনঃ আরও কিছু চাও এবং আকাক্সক্ষা কর। তখন সে ব্যক্তি বলবেঃ ‘হে আল্লাহ্! আমি চাই, আপনি আমাকে পুনরায় পৃথিবীতে পাঠিয়ে দিন। আমি আপনার রাস্তায় দশবার শহীদ হই।’ কেননা সে শাহাদাতের মর্যাদা দেখতে পেয়েছে। (সহীহ, সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৩১৬০)
*** শহীদদের লাশ কবরেও অক্ষত থাকে:
* এছাড়াও হাদীসে পাক হতে শহীদদের আরো কয়েকটি বিশেষ ফাযায়েল পাওয়া যায়, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- আম্বিয়ায়ে কেরাম এবং শহীদগণ যেহেতু কবরে জীবিত, সেহেতু কবরের মাটির জন্য তাঁদের দেহ ভক্ষণ করা হারাম করে দেয়া হয়েছে।
عَنْ عَبْدِ الرَّحْمنِ بْنِ أَبِىْ صَعْصَعَةَ، أَنَّهُ بَلَغَهُ أَنَّ عَمْرَو بْنَ الْجَمُوْحِ وَعَبْدَ اللهِ بْنِ عَمْرٍو الأَنْصَارِيَّيْنِ ثُمَّ السَّلَمِيَّيْنِ كَانَا قَدْ حَفَرَ السَّيْلُ قَبْرَهُمَا مِمَّا يَلِيْ السَّيْلُ، وَكَانَا فِيْ قَبْرٍ وَاحِدٍ وَهُمَا مِمَّنِ اسْتُشْهِدَ يَوْمَ أُحُدٍ فَحُفِرَ عَنْهُمَا لِيُغَيِّرَ مِنْ مَكَانِهِمَا، فَوُجِدَا لَمْ يَتَغَيَّرَا كَأَنَّهُمَا مَاتَا بِالْأَمْسِ، وَكَانَ أَحَدُهُمَا قَدْ جُرِحَ فَوَضَعَ يَدَهُ عَلَى جُرْحِهِ، فَدُفِنَ وَهُوَ كَذَلِكَ، فَأُمِيْطَتْ يَدُهُ عَنْ جُرْحِهِ، ثُمَّ أُرْسِلَتْ فَرَجَعَتْ كَمَا كَانَتْ، وَكَانَ بَيْنَ أُحُدٍ وَبَيْنَ يَوْمَ حُفِرَ عَنْهُمَا سِتٌّ وَأَرْبَعُوْنَ سَنَةً- المطأ مالك ، مشارع الأشواق : ٧٠١-١١١٣
* হযরত ইবনে মালেক রাহিমাহুল্লাহ বর্ণনা করেন, হযরত আমর বিন জামূহ ও হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা এর কবর বন্যার তোড়ে ভেঙ্গে গিয়েছিল। উনারা দুজন ছিলেন উহুদের যুদ্ধে শাহাদাত বরণকারী আনসারী সাহাবী। দু’জনকে একই কবরে দাফন করা হয়েছিল। কবরটি ভেঙ্গে যাওয়ায় অন্যত্র তাদেরকে দাফন করার জন্য কবরটি ভালোভাবে খনন করতে গিয়ে দেখা গেল, তাঁদের দেহে লেশমাত্র পরিবর্তন আসেনি। মনে হলো যেন গতকালই শহীদ হয়েছেন মাত্র। ইহা উহুদ যুদ্ধের ৪৬ বৎসর পরের ঘটনা। (মুআত্তায়ে ইবনে মালেক রাহি., মাশারিউল আশওয়াক্ব)
عَنْ أَبِيْ الزُبَيْرِ قَالَ: سَمِعْتُ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللهِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا يَقُوْلُ: لَمَّا أَرَادَ مُعَاوِيَةُ أَنْ يُجْرِيَ الْكَظَامَةَ قَالَ: قِيْلَ مَنْ كَانَ لَهُ قَتِيْلٌ فَلْيَأْتِ قَتِيْلَهُ يَعْنِيْ قَتْلَى أُحُدٍ قَالَ: فَأَخْرَجْنَاهُمْ رِطَابًا يَتَثَنُّوْنَ، قَالَ فَأَصَابَتِ الْمِسْحَاةُ أُصْبُعَ رَجُلٍ مِنْهُمْ، فَانْفَطَرَتْ دَمًاـ كتاب الجهاد لإبن المبارك، مصنف عبد الرزاق، مشارع الأشواق ٧٠١-١١١٤
হযরত আবী যুবাইর (রা.) বর্ণনা করেন, হযরত যাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.)-কে বলতে শুনেছি তিনি বলেন, যখন হযরত আমীরে মুআবীয়া (রা.) মদীনায় নহর ক্ষণন কাজের ইচ্ছা করলেন। তখন ঘোষণা করে দিলেন যে, যদি কারো কোন পরিচিত শহীদদের লাশ নজরে পড়ে তারা যেন তা বুঝে নেয়। অতঃপর কিছুসংখ্যক এমন শহীদের লাশ পাওয়া গেছে যা সম্পূর্ণই অক্ষত। লাশগুলো বিন্দুমাত্রও পরিবর্তন হয়নি। এমনকি ক্ষণন কাজ সম্পাদনের সময় এক শহীদের পায়ে কোদালের আঘাতের সাথে সাথে রক্ত প্রবাহিত হতে থাকে। (এই ঘটনাটি উহুদ যুদ্ধের পঞ্চাশ বছর পরের।) (কিতাবুল জিহাদ, আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক; মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, মাশারিউল আশওয়াক্ব)
* শুহাদায়ে উহুদ ছাড়াও আকাবিরে উম্মত সম্পর্কে সীরাত ও ইতিহাসের বিভিন্ন কিতাবে প্রমাণ পাওয়া যায় যে, দাফন করার দীর্ঘ কয়েক বছর পরও তাদের দেহে কোনো পরিবর্তন আসেনি।
বর্তমান যামানায়ও আফগানিস্তান, ইরাক ও সিরিয়ার যুদ্ধে এমন বহু নিদশর্ন পাওয়া যায়, সেখানে শহীদানের লাশ পঁচে না এবং লাশ হতে অপার্থিব খুশবু বের হয়। শাহাদাতের সময় শহীদকে জান্নাতে তার স্থান দেখানো হয়। ফলে সে আনন্দে আত্মহারা হয়ে উঠে এবং হাসতে থাকে। আলহামদুলিল্লাহ! হযরত ড. আব্দুল্লাহ আয্যাম রচিত “আয়াতুর রহমান ফী জিহাদিল আফগান” (আফগানিস্তানে আমার দেখা আল্লাহর নিদর্শন) কিতাবটিতে এরকম বহু নিদর্শন বর্ণিত হয়েছে।
কিতাবের লিংক:- https://archive.org/details/allahor-nidorshon
জিহাদ ও শাহাদাতের আরো ফাযায়েল জানতে ‘ফাযায়েলে জিহাদ’ কিতাবটি পড়ুন। কিতাবের লিংক: https://archive.org/details/fazael-e-jihad
নবীজী -ﷺ এর শহীদী তামান্না
রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ ফরমান,
والذي نفسي بيده لوددت أني أقتل في سبيل الله، ثم أحيا، ثم أقتل، ثم أحيا، ثم أقتل، ثم أحيا ثم أقتل
“সে সত্তার শপথ যাঁর হাতে মুহাম্মাদের জান! অবশ্যই আমি আশা করি: আমি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে যাব এবং এতে শহীদ হয়ে যাব, এরপর আবার জিহাদে যাব এবং আবার শহীদ হবো, এরপর আবার জিহাদে যাব এবং আবার শহীদ হয়ে যাবো।” (বুখারী-৩১২৩ এবং মুসলিম-১৮৭৬)
عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِيِّ قَالَ: وَلَوَدِدْتُ أَنِّيْ قُتِلْتُ فَيْ سَبِيْلِ اللهِ ثُمَّ أُحْيِيْتُ ثُمَّ قُتِلْتُ ثُمَّ أُحْيِيْتُ ثُمَّ قُتِلْتُ ـ البخاري، المشارع الأشواق ٦٦٥ـ ١٠٨٨
হযরত আবূ হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুলাহ ﷺ ইরশাদ করেন- আমি পছন্দ করি যে, আল্লাহ তা‘আলার রাহে জিহাদ করে শহীদ হব। অতঃপর পুনরায় জীবিত করা হবে, আবার শহীদ হবো, আবার জীবিত করা হবে, আবার শহীদ হব, আবার জীবিত করা হবে আবার শহীদ হব। (সহীহ বুখারী, মাশারিউল আশওয়াক্ব)
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: ্রلَوْلَا أَنْ أَشُقَّ عَلَى أُمَّتِي لَمْ أَتَخَلَّفْ عَنْ سَرِيَّةٍ، وَلَكِنْ لَا يَجِدُونَ حَمُولَةً، وَلَا أَجِدُ مَا أَحْمِلُهُمْ عَلَيْهِ، وَيَشُقُّ عَلَيْهِمْ أَنْ يَتَخَلَّفُوا عَنِّي، وَلَوَدِدْتُ أَنِّي قُتِلْتُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ، ثُمَّ أُحْيِيتُ، ثُمَّ قُتِلْتُ، ثُمَّ أُحْيِيتُ، ثُمَّ قُتِلْتُগ্ধ ثَلَاثًا
“যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্টসাধ্য না হতো, তাহলে আমি কোন যুদ্ধে গমন হতে অনুপস্থিত থাকতাম না। তারা কোন বাহন পায় না, আর আমিও তাদের জন্য বাহনের ব্যবস্থা করতে পারি না। আর যদি আমার সঙ্গে যাওয়া হতে অনুপস্থিত থাকা তাদের জন্য কষ্টকর না হতো, তবে আমার বাসনা হয় যে, আমি আল্লাহ্র রাস্তায় শহীদ হই, পুনরায় জীবিত হই, পুনরায় শহীদ হই, পুনরায় জীবিত হই, পুনরায় শহীদ হই। (তিনি) তিনবার (এরূপ বললেন)।” (সহীহ, সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৩১৫১)
قَالَ ابْنُ أَبِي عَمِيرَةَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ্রوَلَأَنْ أُقْتَلَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ، أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ أَنْ يَكُونَ لِي أَهْلُ الْوَبَرِ وَالْمَدَرِ
ইব্নে আবূ আমীরা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেন, “শহরবাসী এবং গ্রামবাসী (অর্থাৎ পৃথিবী ও তন্মধ্যস্থিত যা আছে সব কিছু) আমার জন্য হোক, তা হতে আল্লাহ্র রাস্তায় শহীদ হওয়া আমার নিকট অধিক প্রিয়।” (হাসান, সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৩১৫৩)
জীবনের প্রকৃত সফলতা কী?
প্রিয় ভাই! সেই স্তরের ব্যাপারে গভীরভাবে চিন্তা করুন, যার জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ মানব রাসূলুল্লাহ ﷺ প্রত্যাশা করে গিয়েছেন।
সন্দেহ নেই, কোথায় জীবনের প্রকৃত সফলতা নিহিত, আসমান যমীনের প্রতিপালক প্রিয় নবী ﷺ-কে ওহি করে তা জানিয়েছেন!! আর এজন্যই তিনি ﷺ বারবার শহীদ হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেছেন।
সেই প্রকৃত সফলকাম হবে যাকে আল্লাহ সুব. শহীদ হিসেবে কবুুল করবেন। তাই আমাদের জীবনের মূল আকাঙ্ক্ষা সেটাই হওয়া চাই, যার তামান্না স্বয়ং প্রিয় নবীজী ﷺ বারবার প্রকাশ করে গিয়েছেন। আর এটিই জীবনের প্রকৃত সফলতা।
প্রিয় ভাই!
জীবনের সফলতার অর্থ যদি টাকা-পয়সা উপার্জন করা হয়, তাহলে শহীদকে যে ধন-সম্পদ দেয়া হবে তার তুলনায় দুনিয়ার সমস্ত সম্পদ মাছির পাখার সমানও নয়।
যদি সফলতা উন্নতমানের খাবার-দাবারের নাম হয়ে থাকে, তবে শহীদের মেহমানদারি জান্নাতের সর্বোন্নত মাছ দিয়ে করা হবে।
যদি সফলতা সুন্দর সুন্দর ঘর-বাড়ি বানানোর মধ্যে হয়ে থাকে, তাহলে ভাই শুনে নিন-
حَدَّثَنَا مُحَمَّدٌ قَالَ: حَدَّثَنَا ابْنُ رَحْمَةَ، قَالَ: سَمِعْتُ ابْنُ المُبَارَكِ، عَنِ الْأَوْزَاعِيِّ قَالَ: حَدَّثَنِي الْمُطَّلِبُ بْنُ حَنْطَبٍ قَالَ: ্রإِنَّ لِلشَّهِيدِ غُرْفَةٌ كَمَا بَيْنَ صَنْعَاءَ وَالْجَابِيَةِ، أَعْلَاهَا الدُّرُّ وَالْيَاقُوتُ، وَجَوْفُهَا الْمِسْكُ وَالْكَافُورُ قَالَ: فَتَدْخُلُ عَلَيْهِ الْمَلَائِكَةُ بِهَدِيَّةٍ مِنْ رَبِّهِ تَبَارَكَ وَتَعَالَى، فَمَا تَخْرُجُ حَتَّى يَدْخُلُ عَلَيْهِ مَلَائِكَةٌ آخَرُونَ مِنْ بَابٍ آخَرَ بِهَدِيَّةٍ مِنْ رَبِّهِمْগ্ধ
الجهاد لابن المبارك - المجلد ১ - الصفحة ৪০ - جامع الكتب الإسلامية
ابن المبارك، الجهاد لابن المبارك، مجلد ১، صفحة ৪০، تونس، الدار التونسية - تونس
মুত্তালিব ইবনে হানতাব বর্ণনা করেন,“শহীদের জন্য এমন প্রাসাদ রয়েছে, যার প্রশস্ততা ইয়ামানের শহর সানা থেকে শামের শহর জাবিয়াহ পর্যন্ত বিস্তৃত। যেটা বানানো হয়েছে বাহিরে হীরা ও ইয়াকুত দিয়ে এবং ভিতরে মিস্ক ও কাফুর দিয়ে।”
যদি সফলতা সুন্দরী রমনীকে বিয়ে করা হয়ে থাকে, তবে এক্ষেত্রেও কি শহীদের মোকাবেলা কোনো দুনিয়াদার ব্যক্তি করতে পারবে? যে কেউ শহীদ হওয়ার সাথে সাথেই জান্নাতের দুইজন হুর জান্নাত থেকে একশত জোড়া পোশাক নিয়ে শহীদের কাছে পৌঁছে যায় এবং তার চেহারায় হাত বুলিয়ে তার আগমনের শুভ সংবাদ শুনায়। এমন হুর যাদের সৌন্দর্যের সামনে দুনিয়ার সব সৌন্দর্য ¤øান হয়ে যাবে, যাকে দেখে পূর্ণিমার চাঁদও লজ্জা পাবে। প্রিয় নবী ইরশাদ করেন-
وَلَوْ أَنَّ امْرَأَةً مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ اطَّلَعَتْ إِلَى أَهْلِ الأَرْضِ لأَضَاءَتْ مَا بَيْنَهُمَا وَلَمَلأَتْهُ رِيحًا، وَلَنَصِيفُهَا عَلَى رَأْسِهَا خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا
“জান্নাতী কোন হুর যদি দুনিয়াবাসীদের প্রতি উঁকি দিত, তাহলে আসমান ও যমীনের মাঝের সব কিছু আলোকিত এবং সুরভিত হয়ে যেত। আর তার মাথার ওড়না দুনিয়া ও তার সবকিছু চেয়ে উত্তম।” (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৭৯৬)
প্রিয় ভাই! আপনি জানেন কি, জান্নাতে একজন শহীদ কতজন হূর পাবে?
عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عَمْرٍ وَقَالَ فِيْ الْجَنَّةِ قَصْرٌ، يُقَالَ لَهُ عَدَنٌ، فِيْهِ خَمْسَةُ اٰلَافِ بَابٍ عَلٰى كُلِّ باَبٍ خَمْسَةُ اٰلَافِ حِبَرة قَالَ يَعْلَ أَحْسَبُهُ، قَالَ : لَا يَدْخُلُهُ إِلَّا نَبِيٌّ ، أَوْ صِدِّيْقٌ، أَوْ شَهِيْدٌ ـ مصنف ابن أبي شيبة كتاب الجهاد، مشارع الاشواق ٧٢٤ـ ١١٣١
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদি. বর্ণনা করেন, জান্নাতে একটি প্রাসাদ আছে যার নাম ‘আদন’। তাতে পাঁচ হাজার দরজা রয়েছে, আবার প্রত্যেক দরজায় পাঁচ হাজার করে হূর রয়েছে। এতে কেবল নবী, সিদ্দিক ও শহীদগণ প্রবেশ করবেন।” (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ, মাশারিউল আশওয়াক্ব)
সুব্হানাল্লাহ!
যদি সফলতা এটাকে বলা হয়ে থাকে যে, সন্তান পিতা-মাতা, নিজ পরিবার ও আত্মীয়স্বজনের উপকারে আসবে, তবে শহীদ কেয়ামতের দিনে নিজের পিতা-মাতা এবং আত্মীয়স্বজনের উপকারে আসবে যেদিন কেউ কাউকে জিজ্ঞাসাও করবে না; যেদিন পিতা-মাতা সন্তান হতে আর সন্তান পিতা-মাতা হতে পালাবে; স্বামী স্ত্রী হতে আর স্ত্রী তার স্বামী হতে পালাবে। মানুষ নিজের ঘামে ডুবে একটি নেকির সন্ধানে নিজের আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের কাছে ধরনা দিতে থাকবে।
ঐদিন শহীদ সেসব আত্মীয়-স্বজনের উপকারে আসবে যাদের ব্যাপারে জাহান্নাম নির্ধারিত হয়ে গিয়েছে।
عَنْ اَبِيْ الدَّرْدَاءِ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ يَقُوْلُ : قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ: يُشَفَّعُ الشَّهِيْدُ فِيْ سَبْعِيُنَ مِنْ أَهْلِ بَيْتِهِ ـ ابو داود كتاب الجهاد باب في الشهيد يشفع، البيهقى كتاب السير باب الشهيد يشفع، مشارع الاشواق ৭৩৯-১১৪৮
হযরত আবূ দারদা রাদি. বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করেছেন, “শহীদ নিজ পরিবারভ‚ক্ত সত্তরজনের জন্য সুপারিশ করবে।” (আবু দাউদ, বাইহাক্বী, মাশারিউল আশওয়াক্ব)
প্রিয় ভাই, জীবনের সফলতা আসলে কী?
আমরা তো প্রকৃত সফলতার দিকে তখন অগ্রসর হতে থাকব, যখন আমাদের অন্তরগুলো শাহাদাত লাভের জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হবে, আমাদের অন্তরগুলো ছোট ছোট জিনিসের মধ্যে আটকে থাকবে না, আমরা সব কিছুকে পিছনে রেখে সবচেয়ে উঁচু জিনিসের নির্বাচন করব। না দুনিয়ার ধন-সম্পদ আমাদের দৃষ্টি কাড়বে, না দুনিয়ার যশ-খ্যাতি আমাদের প্রভাবিত করবে, না আমাদের মনে বেপরোয়া রূপের আকর্ষণ প্রভাব বিস্তার করবে, আর না দুনিয়ার কোনো মোহ আমাদের প্রলুব্ধ করতে পারবে।
বরঞ্চ, আমাদের অন্তরগুলো চিরস্থায়ী জান্নাতের নেয়ামতসমূহের প্রতি লেগে থাকবে, যা আমরা শাহাদাতের সাথে সাথে লাভ করব, যার ওয়াদা মহান প্রতিপালক দিয়েছেন-
وَٱلَّذِينَ قُتِلُواْ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ فَلَن يُضِلَّ أَعۡمَٰلَهُمۡ ٤ سَيَهۡدِيهِمۡ وَيُصۡلِحُ بَالَهُمۡ ٥ وَيُدۡخِلُهُمُ ٱلۡجَنَّةَ عَرَّفَهَا لَهُمۡ ٦
“যে আল্লাহ্র রাহে শাহাদাত লাভ করে তার আমলসমূহ কস্মিনকালেও বিনষ্ট করা হবে না। তিনি তাদেরকে সৎপথে পরিচালিত করবেন, (পরকালে তাদের) অবস্থা ভাল করে দিবেন এবং তিনি তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন যা তাদেরকে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন।” (সূরা মুহাম্মাদ ৪৭: ৪-৬)
প্রিয় ভাই!
জান্নাতে একজন শহীদকে যে সম্মান দেয়া হবে, কখনোই তার তুলনা হতে পারে না; তাকে এই পরিমাণ সম্মানিত করা হবে যে, সে দশবার দুনিয়াতে ফিরে এসে আল্লাহ্র রাস্তায় যুদ্ধ করে পুনরায় শহীদ হতে চাইবে যাতে করে আবারো তাকে একইভাবে সম্মানিত করা হয়; অথচ অন্য কোনো জান্নাতী কস্মিনকালেও এমনটি আকাঙ্ক্ষা করবে না।
আর শহীদের জান্নাতের সৌন্দর্য কখনও মলিন হবে না; যেখানে জীবনের স্থায়িত্ব সর্বদা যৌবনের শীর্ষে থাকবে, না কোনো দুঃখ-দুর্দশা আমাদের স্পর্শ করবে; সেখানে সব কিছু থাকবে যা কোনো অন্তর তামান্না করতে পারবে; সেখানে সব মনোবাসনা পূর্ণ করা হবে যা কোনো অন্তর চাইতে পারে, সমস্ত চাহাদগুলো সেখানে বাস্তবতার রূপ ধারণ করবে।
জগতসমূহের প্রতিপালক ইরশাদ করেন,
وَلَكُمۡ فِيهَا مَا تَشۡتَهِيٓ أَنفُسُكُمۡ وَلَكُمۡ فِيهَا مَا تَدَّعُونَ ٣١
“সেখানে তোমাদের জন্য আছে যা তোমাদের মন চায় এবং সেখানে তোমাদের জন্য আছে যা তোমরা দাবী করবে।” (সূরা হা-মীম-সিজদাহ ৪১: )
তাহলে ভাই, আপনিই চিন্তা করুন, যাদের কাছে সাফল্যের মাপকাঠি এতটা উঁচু, তাদের কাছে দুনিয়াদারদের জীবনের সাফল্যের স্থান কোথায়, যা কিনা মাছির ডানার বরাবরও নয়!
আমার প্রিয় ভাই! আপনিই সিদ্ধান্ত নিন,
কারা জীবনের ব্যাপারে উত্তম পরিকল্পনা করেছেন?
কারা নিজেদের বোধশক্তিকে সবচেয়ে বেশি কাজে লাগিয়েছেন?
কাদের সংকল্প ও অভিপ্রায় দূরদৃষ্টি সম্পন্ন?
কারা জীবনকে বহু দূর পর্যন্ত গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করেছেন?
কারা জীবনের প্রকৃত সফলতায় পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছেন?
.........কারা????
.........আর এটাই মহাসাফল্য!!
إِنَّ ٱللَّهَ ٱشۡتَرَىٰ مِنَ ٱلۡمُؤۡمِنِينَ أَنفُسَهُمۡ وَأَمۡوَٰلَهُم بِأَنَّ لَهُمُ ٱلۡجَنَّةَۚ يُقَٰتِلُونَ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ فَيَقۡتُلُونَ وَيُقۡتَلُونَۖ وَعۡدًا عَلَيۡهِ حَقّٗا فِي ٱلتَّوۡرَىٰةِ وَٱلۡإِنجِيلِ وَٱلۡقُرۡءَانِۚ وَمَنۡ أَوۡفَىٰ بِعَهۡدِهِۦ مِنَ ٱللَّهِۚ فَٱسۡتَبۡشِرُواْ بِبَيۡعِكُمُ ٱلَّذِي بَايَعۡتُم بِهِۦۚ وَذَٰلِكَ هُوَ ٱلۡفَوۡزُ ٱلۡعَظِيمُ ١١١
“আল্লাহ ক্রয় করে নিয়েছেন মুসলমানদের থেকে তাদের জান ও মাল এই মূল্যে যে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত। তারা যুদ্ধ করে আল্লাহর রাহে, অতঃপর মারে ও মরে। তাওরাত, ইঞ্জিল ও কুরআনে তিনি এ সত্য প্রতিশ্রুতিতে অবিচল। আর আল্লাহর চেয়ে প্রতিশ্রুতি রক্ষায় কে অধিক (সত্যবাদী)? সুতরাং তোমরা আনন্দিত হও সে লেনদেনের উপর, যা তোমরা করছ তাঁর সাথে। আর এ হল মহান সাফল্য।” (৯ সূরা তাওবা: ১১১)
সুব্হানাল্লাহ্!
فَليُقاتِل في سَبيلِ اللَّهِ الَّذينَ يَشرونَ الحَياةَ الدُّنيا بِالآخِرَةِ وَمَن يُقاتِل في سَبيلِ اللَّهِ فَيُقتَل أَو يَغلِب فَسَوفَ نُؤتيهِ أَجرًا عَظيمًا
“সুতরাং যারা আখিরাতের বিনিময়ে দুনিয়ার জীবন বিক্রয় করে তারা যেন আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করে। আর যে আল্লাহর রাস্তায় লড়াই করবে অতঃপর সে নিহত হোক কিংবা বিজয়ী, অচিরেই আমি তাকে দেব মহা পুরস্কার।” (সূরা নিসা ৪:৭৬)
প্রিয় ভাই! জীবনের প্রকৃত এই সফলতার দিকটি সবচেয়ে বেশি অনুধাবন করেছিলেন রাসূলুল্লাহ্ ﷺ-এর নিজ হাতে গড়া সাহাবায়ে কেরামগণ! চলুন দেখা যাক, কেমন ছিল সাহাবায়ে কেরামের শহীদী তামান্না!!
সাহাবায়ে কেরামের শহীদী তামান্না
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، ....................فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " قُومُوا إِلَى جَنَّةٍ عَرْضُهَا السَّمَوَاتُ وَالأَرْضُ " . قَالَ يَقُولُ عُمَيْرُ بْنُ الْحُمَامِ الأَنْصَارِيُّ يَا رَسُولَ اللَّهِ جَنَّةٌ عَرْضُهَا السَّمَوَاتُ وَالأَرْضُ قَالَ " نَعَمْ " . قَالَ بَخٍ بَخٍ . فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " مَا يَحْمِلُكَ عَلَى قَوْلِكَ بَخٍ بَخٍ " . قَالَ لاَ وَاللَّهِ يَا رَسُولَ اللَّهِ إِلاَّ رَجَاءَةَ أَنْ أَكُونَ مِنْ أَهْلِهَا . قَالَ " فَإِنَّكَ مِنْ أَهْلِهَا " . فَأَخْرَجَ تَمَرَاتٍ مِنْ قَرْنِهِ فَجَعَلَ يَأْكُلُ مِنْهُنَّ ثُمَّ قَالَ لَئِنْ أَنَا حَيِيتُ حَتَّى آكُلَ تَمَرَاتِي هَذِهِ إِنَّهَا لَحَيَاةٌ طَوِيلَةٌ - قَالَ - فَرَمَى بِمَا كَانَ مَعَهُ مِنَ التَّمْرِ . ثُمَّ قَاتَلَهُمْ حَتَّى قُتِلَ .
** হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদি. হতে বর্ণিত,........... বদরের ময়দানে রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেন, “এবার প্রস্তুত হয়ে যাও জান্নাতে যাওয়ার জন্য, যে জান্নাতের বিস্তৃতি আকাশ ও পৃথিবীর সমান।” হযরত উমাইর ইবনুল হুমাম আনসারী রাদিয়াল্লাহু আনহু নবীজীর কথাটি শুনলেন। তিনি খেজুর খাচ্ছিলেন। এরপর বলতে থাকেন: “যদি আমি এই খেজুরগুলো খেয়ে শেষ করা পর্যন্ত জীবিত থাকতে চাই তাহলে তো (জান্নাতে যেতে) অনেক দেরী হয়ে যাবে।” তাঁর কাছে যা খেজুর ছিল সব দূরে ছুড়ে ফেলে দিয়ে কাফিরদের সাথে লড়াইয়ে লিপ্ত হয়ে শহীদ হয়ে গেলেন। (মুসলিম-৪৮০৯, আবু দাউদ-২৬১৮)
عَنْ عَمْرٍو، قَالَ: سَمِعْتُ جَابِرًا، يَقُولُ: قَالَ رَجُلٌ يَوْمَ أُحُدٍ: أَرَأَيْتَ إِنْ قُتِلْتُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ، فَأَيْنَ أَنَا؟ قَالَ: ্রفِي الْجَنَّةِ فَأَلْقَى تَمَرَاتٍ فِي يَدِهِ، ثُمَّ قَاتَلَ حَتَّى قُتِلَ
** উহুদ যুদ্ধের দিন এক ব্যক্তি নবী ﷺ-কে বলল: আমি যদি আল্লাহ্র রাস্তায় শহীদ হয়ে যাই, তাহলে আমি কোথায় থামব? তা আমাকে বলুন। তিনি ﷺ বললেনঃ জান্নাতে। তারপর সে ব্যক্তি তার হাতের খেজুর ফেলে দিয়ে যুদ্ধে যোগদান করলো এবং শহীদ হয়ে গেল। (সহীহ, সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৩১৫৪)
عَنْ أَنَسٍ ـ رضى الله عنه ـ قَالَ غَابَ عَمِّي أَنَسُ بْنُ النَّضْرِ عَنْ قِتَالِ بَدْرٍ فَقَالَ يَا رَسُولَ اللَّهِ، غِبْتُ عَنْ أَوَّلِ قِتَالٍ قَاتَلْتَ الْمُشْرِكِينَ، لَئِنِ اللَّهُ أَشْهَدَنِي قِتَالَ الْمُشْرِكِينَ لَيَرَيَنَّ اللَّهُ مَا أَصْنَعُ، فَلَمَّا كَانَ يَوْمُ أُحُدٍ وَانْكَشَفَ الْمُسْلِمُونَ قَالَ " اللَّهُمَّ إِنِّي أَعْتَذِرُ إِلَيْكَ مِمَّا صَنَعَ هَؤُلاَءِ ـ يَعْنِي أَصْحَابَهُ ـ وَأَبْرَأُ إِلَيْكَ مِمَّا صَنَعَ هَؤُلاَءِ " ـ يَعْنِي الْمُشْرِكِينَ ـ ثُمَّ تَقَدَّمَ، فَاسْتَقْبَلَهُ سَعْدُ بْنُ مُعَاذٍ، فَقَالَ يَا سَعْدُ بْنَ مُعَاذٍ، الْجَنَّةَ، وَرَبِّ النَّضْرِ إِنِّي أَجِدُ رِيحَهَا مِنْ دُونِ أُحُدٍ. قَالَ سَعْدٌ فَمَا اسْتَطَعْتُ يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا صَنَعَ. قَالَ أَنَسٌ فَوَجَدْنَا بِهِ بِضْعًا وَثَمَانِينَ ضَرْبَةً بِالسَّيْفِ أَوْ طَعْنَةً بِرُمْحٍ أَوْ رَمْيَةً بِسَهْمٍ، وَوَجَدْنَاهُ قَدْ قُتِلَ وَقَدْ مَثَّلَ بِهِ الْمُشْرِكُونَ، فَمَا عَرَفَهُ أَحَدٌ إِلاَّ أُخْتُهُ بِبَنَانِهِ. قَالَ أَنَسٌ كُنَّا نَرَى أَوْ نَظُنُّ أَنَّ هَذِهِ الآيَةَ نَزَلَتْ فِيهِ وَفِي أَشْبَاهِهِ {مِنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللَّهَ عَلَيْهِ} إِلَى آخِرِ الآيَةِ. وَقَالَ إِنَّ أُخْتَهُ وَهْىَ تُسَمَّى الرُّبَيِّعَ كَسَرَتْ ثَنِيَّةَ امْرَأَةٍ فَأَمَرَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم بِالْقِصَاصِ، فَقَالَ أَنَسٌ يَا رَسُولَ اللَّهِ، وَالَّذِي بَعَثَكَ بِالْحَقِّ لاَ تُكْسَرُ ثَنِيَّتُهَا. فَرَضُوا بِالأَرْشِ وَتَرَكُوا الْقِصَاصَ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِنَّ مِنْ عِبَادِ اللَّهِ مَنْ لَوْ أَقْسَمَ عَلَى اللَّهِ لأَبَرَّهُ ".
** হযরত আনাস ইবনে নদর রাদিয়াল্লাহু আনহু বদরের লড়াইয়ে শরীক হতে পারেন নি। তাই তিনি নিবেদন করেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি মুশরিকদের সাথে যে প্রথম লড়াই করেছেন তাতে আমি শরীক হতে পারিনি। আগামীতে মুশরিকদের সাথে যে লড়াই হবে তাতে যদি আমি শরীক হতে পারি, তাহলে আল্লাহ পাক দেখে নিবেন আমি কী করি। এরপর যখন ওহুদের যুদ্ধ সংগঠিত হলো এবং মুসলমানরা বাহ্যত পরাজিত হলো তখন তিনি বলতে থাকেন, “হে আল্লাহ! এরা (মুশরিকরা) যা কিছু করেছে তা থেকে নিজেকে দায়মুক্ত ঘোষণা করছি। একথা বলে তিনি সামনে সা’দ ইবনে মুআয রাদিয়াল্লাহু আনহুর কাছে চলে আসেন। তখন বলতে থাকেন: “হে সা’দ ইবনে মুআয! নদরের রবের শপথ! উহুদের পাহাড়ের কাছ থেকে আমি জান্নাতের খুশবু পাচ্ছি।” এরপর তিনি দুশমনের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। হযরত আনাস রাদিয়াল্লহু আনহু বলেন,“আমরা তাঁর (হযরত আনাস ইবনে নদর রদিয়াল্লহু আনহুর) গায়ে আশিটিরও অধিক তলোয়ার, বর্শা ও তীরের আঘাত দেখতে পাই এবং আমরা তাঁকে এমন অবস্থায় পেয়েছিলাম তখন তিনি শহীদ হয়ে গিয়েছেন এবং মুশরিকরা তাঁর চেহারা মুবারক বিকৃত করে দিয়েছিল। ফলে তাঁর বোন ব্যতীত কেউ তাঁকে চিনতে পারেননি এবং তিনিও তাঁকে চিনেছিলেন তাঁর আঙুলের অগ্রপ্রান্তগুলো দেখে।” হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমরা মনে করি এবং আমাদের মত হচ্ছে এটাই যে নি¤েœাক্ত আয়াতটি তাঁর এবং তাঁর মত লোকদের ব্যাপারেই অবতীর্ণ হয়েছে: “মুমিনদের মাঝে এমন কিছু লোক রয়েছে, যারা আল্লাহর সাথে তাদের কৃত ওয়াদাকে সত্য প্রমাণ করেছে। আবার তাদের মধ্যে এমন কয়েকজন আছে যারা তাদের লক্ষ্যে পৌঁছেছে।” আয়াতের শেষ পর্যন্ত। (বুখারী-২৭০৩,২৮০৬, মুসলিম-১৯০৩, নাসায়ী-৪৭৫৫)
** ওহুদের যুদ্ধে সকল ছাহাবায়ে কেরাম শাহাদাতের এমন তামান্না, এমন অসাধারণ বীরত্ব ও আত্মত্যাগের পরিচয় দিয়েছিলেন, যার দৃষ্টান্ত ইতিহাসে আর কখনোও কোথাও পাওয়া যায় না। হযরত আবু তালহা রদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর সামনে বুক টান করে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সাধারণ মুসলমানরা পরাজিত হয়ে প্রিয় নবী ﷺ- এর কাছে না এসে এদিক সেদিক ছুটাছুটি করছিলেন। তাঁর কাছে কেউ ছিল না, কেবল হযরত আবু তালহা রাদিয়াল্লাহু আনহু নিজের শরীরকে ঢাল বানিয়ে নবীজী -ﷺ এর সম্মুখে প্রতিরোধ ব্যুহ হয়ে দাঁড়ালেন। এভাবে নবীজী -ﷺ এর দিকে কোনো তীর আসলে তিনি তাঁর বুক দিয়ে তা ফিরাতে লাগলেন। একসময় তিনি ঢলে পড়লেন, ইতোমধ্যেই হযরত আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ও অন্য কয়েকজন সাহাবী চলে আসলেন। নবীজী ﷺ বললেন, তোমাদের ভাই আবু তালহাকে সামলাও। সে তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব করে নিয়েছে। তিনি শহীদ হলে দেখা গেল, তাঁর শরীরে আশিটিরও অধিক আঘাত ছিল। একই ভাবে হযরত আবু দোজানা রাদিয়াল্লাহু আনহুও নবী করীম -ﷺ এর দিকে মুখ করে দাঁড়ালেন এবং নিজের পিঠকে ঢাল স্বরূপ পেতে দিলেন। তাঁর পিঠে এসে শত্রুদের নিক্ষিপ্ত তীর বিঁধছিল, তিনি একটুও নড়ছিলেন না। হযরত মুস‘আব ইবনে উমায়ের রাদিয়াল্লাহু আনহু অসাধারণ বীরত্ব ও সাহসিকতার পরিচয় দেন। তিনি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর প্রতি ইবনে কোম্মা ও অন্যদের আঘাত প্রতিরোধ করছিলেন। তাঁর হাতেই ছিলো ইসলামের পতাকা। শত্রু সৈন্যরা তাঁর ডান হাতে এমন আঘাত করে যে, তাঁর হাত কেটে যায়। তিনি তখন তাঁর বাম হাতে ইসলামের পতাকা তুলে ধরেন। কিন্তু শত্রুদের হামলায় তার বাম হাতও কেটে যায়। তিনি তখন ইসলামের পতাকা তাঁর দুই বাহু দিয়ে বুকের সাথে জড়িয়ে উর্ধ্বে তুলে ধরেন। এরপর এই অবস্থায় দুশমনের আঘাতে তিনি শহীদ হয়ে যান। (আর রাহীকুল মাখতুম)
** বিশ্বাসঘাতক, মিথ্যাবাদী কাফেররা যখন হযরত হারাম রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বর্শা বিদ্ধ করল এবং বর্শাটি তাঁকে এফোঁড় ওফোঁড় করল, তখন তিনি বলতে লাগলেন,
فُزْتُ وَرَبِّ الْكَعْبَةِ
“কা’বার রবের শপথ! আমি তো সফলকাম হয়ে গেছি।” (বুখারী, মুসলিম, নাসায়ী, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)
** মুতার যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে এক ভয়াবহ অসম যুদ্ধ। এই যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ ﷺ তিনজন সেনাপতি নির্বাচন করে দিয়েছিলেন এই শর্তে যে, একজন শহীদ হলে আরেকজন পতাকা তুলে নিবেন। মুতার যুদ্ধে মাত্র তিন হাজার মুসলিম সৈন্য দুই লক্ষাধিক রোমান-আরব সম্মিলিত বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। মুসলমানরা এই বিশাল সংখ্যক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের ব্যাপারে প্রস্তুত ছিলেন না। আসলে তারা কল্পনাও করেননি, কাফেরদের বাহিনী এত বিশাল হবে। তাই সিদ্ধান্ত হলো, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর কাছে পত্র পাঠিয়ে শত্রুর লোক লস্করের সংখ্যা জানাবেন। তিনি হয় আরো সৈন্য পাঠাবেন, নচেত যা ভালো মনে করেন নির্দেশ দিবেন। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা রাদিয়াল্লাহু আনহু দাঁড়িয়ে গেলেন এবং মুসলমানদের উৎসাহিত করে বললেন,
يَا قَوْمِ، وَاَللَّهِ إنَّ الَّتِي تَكْرَهُونَ، لَلَّتِي خَرَجْتُمْ تَطْلُبُونَ الشَّهَادَةُ، وَمَا نُقَاتِلُ النَّاسَ بِعَدَدِ وَلَا قُوَّةٍ وَلَا كَثْرَةٍ، مَا نُقَاتِلُهُمْ إلَّا بِهَذَا الدِّينِ الَّذِي أَكْرَمَنَا اللَّهُ بِهِ، فَانْطَلِقُوا فَإِنَّمَا هِيَ إحْدَى الْحُسْنَيَيْنِ إمَّا ظُهُورٌ وَإِمَّا شَهَادَةٌ
“হে মুসলমানগণ! আল্লাহর কসম, আজ তোমরা যা অপছন্দ করছ সেটাই তোমরা কামনা করছিলে। আর তা হলো শাহাদাত। আমরা সংখ্যা-শক্তি বা সংখ্যাধিক্যের জোরে লড়াই করি না। যে জীবনব্যবস্থার দ্বারা আল্লাহ আমাদেরকে সম্মানিত করেছেন তার জন্য আমরা লড়াই করি। অতএব এগিয়ে যাও, বিজয় বা শাহাদাত এ দুটো উত্তম জিনিসের যে কোন একটা অবশ্যই আমাদের জন্য নির্ধারিত আছে।” (সীরাতে ইবনে হিশাম, পৃ:২৬২)
** মুতার যুদ্ধের প্রধান ও প্রথম সেনাপতি হযরত যায়িদ রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ ﷺ এর পতাকা বহনরত অবস্থায় প্রাণপণ যুদ্ধ করে শাহাদাত বরণ করেন। অতঃপর দ্বিতীয় সেনাপতি হযরত যাফর রাদিয়াল্লাহু আনহু পতাকা তুলে নেন। তিনি প্রথমে ডান হাতে পতাকা তুলে ধরেন। শত্রুর তরবারিতে ডান হাত কাটা গেলে বাম হাতে পতাকা তুলে ধরেন। এরপর সে হাতও কাটা পড়ল। তখন তিনি তা দুই ডানা দিয়ে চেপে ধরলেন। এরপর শত্রুর আঘাতে তিনি শাহাদাত বরণ করলেন। আল্লাহ তাঁর উপর সন্তুষ্ট হোন। এসময় তাঁর বয়স ছিল তেত্রিশ বছর। আল্লাহ তা‘আলা জান্নাতে তাকে দুই খানা ডানা দেন, যা দিয়ে তিনি যেখানে খুশী উড়ে বেড়াতে থাকেন। কথিত আছে, একজন রোমক সৈন্য তাঁকে তরবারীর আঘাতে দ্বিখন্ডিত করে ফেলেছিল। (সীরাতে ইবনে হিশাম, পৃ: ২৬৩)
হযরত জাফর রাদিয়াল্লহু আনহু শহীদ হওয়ার পর দেখা যায়, তাঁর দেহে তীর ও তলোয়ারের পঞ্চাশটি (আরেক বর্ণনা অনুযায়ী নব্বইটি) আঘাত ছিল। এসব আঘাতের একটিও পিছনের দিকে ছিল না। (ফতহুল বারী, ৭ম খন্ড, পৃ: ৫১২)
** তাবুক যুদ্ধে যোগদান করার জন্য আনসার ও অন্যান্যদের মধ্য থেকে সাতজন মুসলমান রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর নিকট এসে সওয়ারী জানোয়ার চাইলেন। তাঁরা ছিলেন অত্যন্ত দরিদ্র। নবীজী তাঁদেরকে সওয়ারী বাহন দিতে অক্ষমতা প্রকাশ করলেন। ফলে তাঁরা জিহাদে যেতে না পেরে কাঁদতে কাঁদতে ফিরে যান। ইতিহাসে এরা ‘বাকুন’ অর্থাৎ ক্রন্দনকারী নামে পরিচিত। এঁরা হলেন: হযরত সালেম ইবনে উমায়ের, হযরত উলবা ইবনে যায়িদ, হযরত আবু লায়লা আব্দুর রহমান, হযরত আমর ইবনে হুমাম, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাগাফ্ফাল মুযানী রাদিয়াল্লাহু আনহুম আযমাঈন। এঁদের মধ্যে দু’জন হযরত আবু লায়লা আব্দুর রহমান ও হযরত আব্দুল্লাহ বিন মুগাফ্ফাল রাদিয়াল্লাহু আনহুমাকে কাঁদতে দেখে হযরত ইবনে ইয়ামীন ইবনে উমায়ের রাদিয়াল্লাহু আনহু জিজ্ঞেস করেন, “তোমরা কাঁদছ কেন?” তাঁরা বললেন, “আমরা রাসূলুল্লাহ -ﷺ এর কাছে গিয়েছিলাম তাবুক অভিযানে যাওয়ার জন্য সওয়ারী চাইতে। কিন্তু তিনি দিতে পারেননি। আমাদের কাছেও এমন কিছু নেই যা দ্বারা তাঁর সাথে অভিযানে যেতে পারি।” তখন ইবনে ইয়ামীন তাদেরকে একটি উট এবং কিছু খোরমা দিলেন। তাঁরা ঐ সওয়ারীতে চড়ে রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর সাথে অভিযানে চলে গেলেন।
حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، حَدَّثَنَا جَعْفَرُ بْنُ سُلَيْمَانَ الضُّبَعِيُّ، عَنْ أَبِي عِمْرَانَ الْجَوْنِيِّ، عَنْ أَبِي بَكْرِ بْنِ أَبِي مُوسَى الأَشْعَرِيِّ، قَالَ سَمِعْتُ أَبِي بِحَضْرَةِ الْعَدُوِّ، يَقُولُ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم " إِنَّ أَبْوَابَ الْجَنَّةِ تَحْتَ ظِلاَلِ السُّيُوفِ " . فَقَالَ رَجُلٌ مِنَ الْقَوْمِ رَثُّ الْهَيْئَةِ أَأَنْتَ سَمِعْتَ هَذَا مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَذْكُرُهُ قَالَ نَعَمْ . فَرَجَعَ إِلَى أَصْحَابِهِ فَقَالَ أَقْرَأُ عَلَيْكُمُ السَّلاَمَ . وَكَسَرَ جَفْنَ سَيْفِهِ فَضَرَبَ بِهِ حَتَّى قُتِلَ . قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ لاَ نَعْرِفُهُ إِلاَّ مِنْ حَدِيثِ جَعْفَرِ بْنِ سُلَيْمَانَ الضُّبَعِيِّ . وَأَبُو عِمْرَانَ الْجَوْنِيُّ اسْمُهُ عَبْدُ الْمَلِكِ بْنُ حَبِيبٍ وَأَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي مُوسَى قَالَ أَحْمَدُ بْنُ حَنْبَلٍ هُوَ اسْمُهُ
** আবূ বাক্র ইবনু আবূ মূসা আল-আশআরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, শত্রুর মোকাবিলায় আমি আমার বাবাকে (যুদ্ধক্ষেত্রে) বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন, তলোয়ারের ছায়াতলে জান্নাতের দরজাসমূহ। দলের উস্কখুস্ক একজন লোক বললেন, আপনি রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে কি তা বলতে শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বর্ণনাকারী বলেন, লোকটি তার সঙ্গীদের নিকট ফিরে গিয়ে বললেন, আমি তোমাদের বিদায়ী সালাম জানাচ্ছি। এই বলে তিনি নিজ তলোয়ারের খাপ ভেঙ্গে ফেললেন এবং তলোয়ার দ্বারা (শত্রুর প্রতি) আঘাত হানতে থাকেন। অবশেষে তিনি শহীদ হন। (সহীহ্, মুসলিম, জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ১৬৫৯)
কী রহস্য ছিল, সাহাবায়ে কেরামের এই বীরত্বের?
কী রহস্য ছিল, সাহাবায়ে কেরামের এই বীরত্বের? কেন তারা মৃত্যুকে এভাবে ভালোবাসতে পেরেছিলেন? কেন তারা শাহাদাতের জন্য উতলা হয়ে থাকতেন? কেন তারা দুনিয়ার সব সুখ, চাওয়া-পাওয়া, স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি ইত্যাদি বিসজর্ন দিতে পেরেছিলেন দ্বীন ইসলামের জন্য? এসব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় নিম্নের দুটি উদাহরণ হতে-
** শাহাদাত বরণের প্রাক্কালে হযরত জাফর ইবনে আবী তালিব রাদিয়াল্লাহু আনহু এই কবিতা আবৃত্তি করলেন:
يا حبّذا الجنّة واقترابها
طيّبةً وبارداً شرابُها
والروم روم قد دنا عذابُها
كافرةٌ بعيدةٌ أنسابُها
عليَّ إذْ لاقيتُها ضرابُها
“আহ্! কী চমৎকার জান্নাত এবং তার সান্নিধ্য লাভ!
জান্নাত যেমন অতি উত্তম ও পবিত্র, তার পানীয়ও তেমনি।
রোমকদের আযাব ঘনিয়ে এসেছে,
তারা কাফির এবং আমার তুলনায় অনেক নিকৃষ্ট,
তাদের সাথে মিলিত হওয়ার সময় তাদেরকে আঘাত করা আমার উপর আবশ্যক।”
(সীরাতে ইবনে হিশাম, মূতার যুদ্ধ অধ্যায়)
** মুতার যুদ্ধে হযরত জাফর রাদিয়াল্লহু আনহুর পর পতাকা তুলে নেন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে রাওয়াহা এবং ঘোড়ায় সওয়ার হয়ে সামনে অগ্রসর হলেন। তিনি ঘোড়া হতে নেমে লড়াইতে অংশগ্রহণ করবেন কিনা ভাবতে ও কিছুটা ইতস্ততঃ করতে লাগলেন। অতঃপর স্বগতভাবে বললেন,
أقسمتُ يا نفسُ لَتَنْزِلنّهْ لتنزِلَنْ أو لَتُكْرَهِنَّهْ
إن أجلب الناس وشدُّوا الرَّنَّهْ ماليِ أراكِ تكرهين الجنّهْ
قد طال ما قد كنتِ مطمئنّهْ هل أنتِ إِلَّا نُطْفةٌ فِي شَنَّهْ
يا نفسُ إلاَّ تُقْتَلِي تموتيِ هذا حمامُ الموت قد صليت
وما تمنَّيْتِ فقد أُعْطِيْتِ إن تفعلي فِعْلَهُمَا هُدِيْتِ
“কসম খেয়ে বলছি, হে ইবনে রাওয়াহা, এই ময়দানে তোমাকে নামতেই হবে, হয় তোমাকে নামতেই হবে, নচেত তোমাকে অপছন্দ করতে হবে। সকল মানুষ যদি রণহুঙ্কার দিয়ে জমায়েত হয়ে থাকে এবং তাদের মধ্যে কান্নার রোলও পড়ে থাকে, তোমাকে কেন জান্নাত সম্পর্কে নিস্পৃহ দেখছি? সুখে শান্তিতে অনেকদিন তো কাটিয়েছো, অথচ তুমি তো আসলে একটি পুরনো পাত্রে এক ফোটা পানি ছাড়া আর কিছুই ছিলে না।
হে আমার আত্মা, আজ যদি নিহত না হও তাহলেও তোমাকে একদিন মরতেই হবে। এটা (রণাঙ্গন) মৃত্যুর ঘর যাতে তুমি প্রবেশ করেছো। তুমি এ যাবৎ যা চেয়েছো পেয়েছো। এখন যদি ঐ দু’জনের মতো (যায়িদ ও জাফর) কাজ কর তাহলে সঠিক পথে চালিত হবে।”
এরপর তিনি তরবারী হাতে অগ্রসর হলেন এবং যুদ্ধ করতে করতে শহীদ হয়ে গেলেন। (সীরাতে ইবনে হিশাম, মূতার যুদ্ধ অধ্যায়)
(আল্লাহ তাআলা আমাদেরকেও সাহাবায়ে কেরামের পরিপূর্ণ অনুসারী বানান। আমীন।
******************************************************
যেই বিষয়গুলো সাহাবায়ে কেরামকে জিহাদে অংশগ্রহণ করা ও তাতে বীরত্ব প্রদর্শনে উদ্বুদ্ধ করত তা হলো-
১. আল্লাহর একটি ‘ফরয হুকুম’ লঙ্ঘনের ভয়
২. আল্লাহ তা‘আলার সামনে দাঁড়ানো ও জবাবদিহিতার ভয়
৩. নিফাকের ভয়
৪. দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ীত্বের হাকীকত অনুধাবন
৫. শাহাদাতের ফাযায়েল এবং জান্নাতের নায-নেয়ামত লাভের তীব্র আকাঙ্ক্ষা।
******************************************************
জান্নাতুল ফিরদাউসে পৌঁছার অতি সহজ ও সংক্ষিপ্ত রাস্তার মানচিত্র।
******************************************************
অতএব, হে ভাই!
এমন কেউ কি আছে, যে নিজের জীবন কে ভালোবাসে, যে মরতে চায় না, অনন্ত জীবন আশা করে?.........
তাহলে, আমাদের উচিত শাহাদাতের তামান্না রাখা।
এমন কেউ কি আছে, যে নিজের দেহকে ভালোবাসে, যেন তার দেহ কবরেও না পঁচে, পোকা-মাকড়ের আহার্যে পরিণত না হয়?..........
তাহলে আমাদের উচিত শাহাদাতের পথে অগ্রসর হওয়া।
এমন কেউ কি আছে, যে চায় তার মৃত্যু কষ্ট না হোক?..............
তাহলে আমাদের উচিত আল্লাহ তা‘আলার কাছে শাহাদাত প্রার্থনা করে।
এমন কেউ কি আছে, যে চায় তার কবরে হিসাব না হোক, কবরের আযাব না হোক?................
তাহলে আমাদের উচিত শহীদী তামান্না নিয়ে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
এমন কেউ কি আছে, যে কামনা করে রূহ দেহত্যাগ করার সাথে সাথেই হূরে ঈ’নের সাথে মিলিত হতে এবং জান্নাতে সবুজ পাখি হয়ে যথেচ্ছা ঘুরে বেড়াতে?.............
তাহলে আমাদের জন্য অতি সংক্ষিপ্ত রাস্তা হলো শাহাদাত।
এমন কেউ কি আছে, যে চায় কিয়ামতের মহা বিভীষিকা হতে নিরাপদ থাকতে, হাশরের ময়দানে আরশের নিচে ছায়া পেতে?.................
তাহলেও আমাদের জন্য একটি সহজ রাস্তা ‘শাহাদাত’।
এমন কেউ কি আছে, যে চায় বিনা হিসেবে জান্নাতুল ফিরদাউস লাভ করতে?..............
ওহে বন্ধু! ‘জান্নাতুল ফিরদাউসে’ পৌঁছার জন্য অতি সহজ ও সংক্ষিপ্ত রাস্তা ‘শাহাদাত’।
সর্বশেষ কথা
প্রিয় ভাই! নিচের কথাগুলো একটু ভালোভাবে চিন্তা করি,
আল্লাহ্ সুব্হানাহু ওয়া তা‘আলা, আমাদের মহান, মহীয়ান প্রতিপালক, আমাদের জন্য জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ্ ফরয করেছেন। স্বাভাবিকভাবে জিহাদ ফরযে কিফায়া। কিন্তু বিশেষ অবস্থায়, যেমন বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে জিহাদ করা অবশ্যই সক্ষম সকল মুসলমানের উপর ফরযে আইন, যেমনভাবে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায ও রমযান মাসের রোযা রাখা ফরযে আইন।
আল্লাহ্ তা‘আলা আমাদের উপর কেন জিহাদ ফরযে আইন করেছেন??
......যেন আমরা আল্লাহর যমিনে আল্লাহর দুশমনদের হটিয়ে আল্লাহর বিধান কায়েম করি;
.......সমস্ত বাতিল মতবাদ আর জীবনাদর্শকে মিটিয়ে দিয়ে যেন আল্লাহর কালিমাকে বুলন্দ করি;
......যেন মজলুম মুসলমানের বুকফাটা কান্নার আওয়াজ শুনে আমরাও ছটফট করি;
.......যেন তাদের জুলুম নির্যাতন থেকে উদ্ধার করতে বীরদর্পে ময়দানে ঝাঁপিয়ে পড়ি;
.......সারা জাহানের মুসলিম মিল্লাতের সকল মা-বোনের ইজ্জতকে নিজের আপন মা-বোনের মত হেফাযত করি;
.......দুনিয়ার সকল প্রকারের শিরকী, কুফুরি আর দাজ্জালি ফিতনার মূল উৎপাটন করে অন্যায় ও পাপাচার মুক্ত একটি ‘আদল্ ও ইন্সাফের সাম্রাজ্য কায়েম করি;
.......এককথায়, পৃথিবীর বুকে আল্লাহ্ তা‘আলার খলিফা (তথা প্রতিনিধি) হিসেবে সারা বিশ্বব্যাপী তাঁরই বিধান অনুযায়ী ‘নবুওয়তের আদলে খিলাফত’ কায়েম করি।
এই জন্যই জিহাদ। এজন্যই আল্লাহ্ পাক আমাদের উপর জিহাদ ফরযে আইন করেছেন। কিন্তু........
জিহাদ কোনো ছেলে-খেলা নয়! আল্লাহ্ সুব্হানাহু তা‘আলার সকল হুকুমের মধ্যে বান্দার জন্য জিহাদ সর্বাপেক্ষা কঠিন ও ভারী হুকুম। অবশ্য তিনি যার জন্য সহজ করেন তার কথা স্বতন্ত্র।
জিহাদ যেন অশ্রু, ঘাম আর রক্তের হোলিখেলা। জিহাদ মানে সতত ত্রস্ততা, ভয় আর সীমাহীন আশংকা। জিহাদ মানে বাতিলের অন্ধকার কারাগারে নির্যাতনের স্টীমরোলার আর ধুঁকে ধুঁকে মরা। জিহাদ মানে দিবানিশি মৃত্যুর হাতছানি আর জীবন হারানোর আশংকা। জিহাদ মানে বুলেটের বিদীর্ণ আঘাতে জমিনে লুটিয়ে পড়া; বোমার আঘাতে ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন ও টুকরো-টুকরো হওয়া।
তাছাড়া, জিহাদ মানে নিন্দুকের নিন্দা, আর সমাজ থেকে বয়কট হওয়া। জিহাদ মানে পরিবার-পরিজন হারানো আর ক্যারিয়ার ধ্বংস হওয়া। এককথায়, জিহাদ মানে দুনিয়ার সর্বস্ব খোয়ানো; সর্বোচ্চ ক্ষয়-ক্ষতি আর দুঃখ-যাতনার সম্মুখীন হওয়া। এ এক ঈমানের ভয়ানক ও চরম পরীক্ষা!
প্রিয় ভাই! আল্লাহ্ তা‘আলা কেবল জিহাদ ফরজই করেননি, জিহাদকে দুনিয়ার সকল কিছুর চেয়ে বেশি ভালোবাসতে হুকুম করেছেন। আবার কেবল হুকুমই করেননি, জিহাদকে দুনিয়ার সবকিছুর চেয়ে বেশি ভালোবাসতে না পারলে তার পরিণতির ব্যাপারে ধমকি আর হুমকিও দিয়েছেন।
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,
قُلۡ إِن كَانَ ءَابَآؤُكُمۡ وَأَبۡنَآؤُكُمۡ وَإِخۡوَٰنُكُمۡ وَأَزۡوَٰجُكُمۡ وَعَشِيرَتُكُمۡ وَأَمۡوَٰلٌ ٱقۡتَرَفۡتُمُوهَا وَتِجَٰرَةٞ تَخۡشَوۡنَ كَسَادَهَا وَمَسَٰكِنُ تَرۡضَوۡنَهَآ أَحَبَّ إِلَيۡكُم مِّنَ ٱللَّهِ وَرَسُولِهِۦ وَجِهَادٖ فِي سَبِيلِهِۦ فَتَرَبَّصُواْ حَتَّىٰ يَأۡتِيَ ٱللَّهُ بِأَمۡرِهِۦۗ وَٱللَّهُ لَا يَهۡدِي ٱلۡقَوۡمَ ٱلۡفَٰسِقِينَ ٢٤
“বল, তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের ভাই, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের গোত্র, তোমাদের অর্জিত ধন সম্পদ, তোমাদের ব্যবসা যা (ক্ষতি বা) বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর, এবং তোমাদের বাসস্থান যাকে তোমরা পছন্দ কর- আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও তাঁর রাহে জিহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় হয়, তবে অপেক্ষা কর, আল্লাহ্র বিধান আসা পর্যন্ত (দেখ, তোমাদের পরিণতি কি হতে যাচ্ছে), আর আল্লাহ তা‘আলা ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেন না।” (০৯ সূরা তাওবাহ: ২৪)
অদ্ভূত বিষয়! জিহাদের মতো এমন একটি কঠিন আমলকে দুনিয়ার সবকিছু থেকে এমনকি নিজের জীবনের চেয়েও ভালোবাসতে হবে; এটি কী করে সম্ভব, যার প্রতিটি পরতে পরতে রয়েছে দুঃখ-কষ্টের অমোঘ পঙক্তিমালা???
আবার রাসূলুল্লাহ ﷺ, তাঁর নিজ হাতে গড়া সাহাবায়ে কেরাম এবং পরবর্তী সলফে সালেহীনদের সীরাতের দিকে তাকালে অবাক হতে হয়, কিভাবে তারা জিহাদকে এত ভালোবেসেছেন?? কিভাবে জিহাদ প্রেমে তাঁরা তাদের সর্বস্ব উজাড় করে দিয়েছেন?? কিভাবে তারা এত শাহাদাত প্রেমিক ছিলেন?? কিভাবে তারা আল্লাহ্র রাহে জীবন দেয়াকে ‘নারী ও মদের’ চেয়েও বেশি ভালোবাসতেন?? এটা কিভাবে সম্ভবপর হয়েছে??? কী তার রহস্য???......
জ্বী ভাই! এটা তখনই সম্ভব-
........... যখন আমরা আল্লাহর হুকুম পালনের ব্যাপারে সত্যবাদী হব;
........... যখন আমরা জিহাদের গুরুত্ব উপলব্ধি করব;
........... যখন আমরা জিহাদকে ততটুকু গুরুত্ব দিব যতটুকু গুরুত্ব আল্লাহ্ তা‘আলা ও তাঁর প্রিয় হাবীব ﷺ দিয়েছেন;
........... যখন আমরা সত্যিকার অর্থে উম্মতের ব্যথায় ব্যথিত হব;
........... যখন আমাদের অন্তরে ‘মুনাফিক হয়ে যাওয়ার ভয়’ প্রবেশ করবে;
........... যখন আমরা নিজেদেরকে আমলের নামে নিজেরাই ধোঁকা দিব না;
........... যখন আমাদের সামনে জিহাদের ফযীলত ও ফাযায়েলসমূহ থাকবে;
........... যখন আমাদের সামনে জীবন-মৃত্যুর হাকীকত সুস্পষ্ট হয়ে যাবে;
........... যখন আমাদের অন্তর থেকে ‘মৃত্যুর ভয়’ দূর হয়ে তার স্থানে ‘শাহাদাতের তামান্না’ জায়গা করে নিবে;
........... যখন আমরা বুঝব পরকালীন সাফল্যের জন্য শাহাদাতের কতটুকু প্রয়োজনীয়তা রয়েছে;
...........যখন আমাদের অন্তর থেকে ‘দুনিয়ার মহব্বত’ দূর হয়ে তার স্থানে ‘জান্নাত লাভের তীব্র আকাক্সক্ষা’ জায়গা করে নিবে;
........... যখন আমরা অনুধাবন করব যে, দুনিয়ার একটু ক্ষতি, কষ্ট আর বিরহের বিনিময়ে পরকালে আমাদের জন্য নয়ন-প্রীতিকর কী কী নিয়ামত লুকায়িত রয়েছে;
........... যখন আমাদের অন্তরে প্রকৃত ‘আল্লাহ্র ভয়’ পয়দা হবে;
........... যখন আমরা জাহান্নামের ভয় করব;
........... যখন আমাদের অন্তরসমূহ হতে ‘ওয়াহন’ বিদায় নিবে;
কেবল তখনই আমরা জান্নাতের বিনিময়ে আমাদের নিজেদের জান ও মাল আল্লাহ্র কাছে বিক্রি করে করে দিতে পারব।
........... এককথায়, জিহাদ আল্লাহ্ পাকের ফরয হুকুম- এই কথাটি, আর পাশাপাশি এই দুনিয়ার নশ্বরতা এবং পরকালের চিরস্থায়িত্ব ও জান্নাতের অফুরন্ত ও চিরন্তন নায-নেয়ামতসমূহ যদি আমাদের সামনে থাকে, তাহলে ইনশাআল্লাহ্ আশা করা যায়- ‘জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ্’র মেহনত করা আমাদের জন্য অনেক, অনেক সহজ হয়ে যাবে। ছুম্মা ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহ্ সুব্হানাহু ওয়া তা‘আলা আমাদের সকলকে জিহাদের গুরুত্ব বুঝার, এবং তাঁর কালিমা বুলন্দ করার মেহনত ‘জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ্’য় জুড়ার তাওফীক দান করুন। আমাদেরকে শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করার তাওফীক দান করুন। তাঁর সত্যবাদী বান্দাদের কাফেলায় আমাদেরকে অন্তর্ভূক্ত করে নিন। আমীন। ইয়া রব্বাল ‘আলামীন।
******************************************************
اَلّهُمَّ اِنِّىْ اَسْاَلُكَ شَهَادَةً فِىْ سَبِيْلِكَ وَوَفَاةً بِبِلَدِ رَسُوْلِكَ
“হে আমার প্রতিপালক! আমাকে আপনার রাহে শাহাদাত দান করুন এবং আপনার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শহরে শাহাদাত দান করুন।”
-হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু (মুয়াত্তায়ে মালেক)
হে আল্লাহ! হে আল্লাহ! তুমি আমাদেরকেও তোমার রাস্তায় শাহাদাতের জন্য কবুল কর এবং তোমার হাবীবের কদম মোবারকের পাশে (বাকীয়ে গারকাদ্-এ) একটু ঠাঁই দাও। তোমার সত্যবাদী বান্দাদের অন্তভর্‚ক্ত কর। আল্লাহুম্মা আমীন।
******************************************************
কিতাবুত্ তাহরীদ্ ‘আলাল ক্বিতাল
চতুর্থ পর্ব:
তোমাকেই শুধু চাই, হে শাহাদাত!
মুস‘আব ইলদিরিম
******************************************************
*************************************************************
মুস‘আব ইলদিরিম ভাইয়ের লিখিত “কিতাবুত তাহরীদ” (পূর্ববর্তী পর্বগুলো) পড়ুন নিচের লিংকে (অবশ্যই Tor Browser ব্যবহার করুন)-
পর্ব-১: আগ্নেয়গিরি হতে অগ্নুৎপাত:
‘দাওয়াহ্ ইলাল্লাহ্’ ফোরাম পোস্ট লিংক- https://bit.ly/tahrid1
পিডিএফ লিংক: https://archive.org/details/kitabuttahrid1
....................................
পর্ব 02: তাওহীদ ও জিহাদ
‘দাওয়াহ্ ইলাল্লাহ্’ ফোরাম পোস্ট লিংক- https://bit.ly/tahrid2
পিডিএফ লিংক: https://archive.org/details/kitabuttahrid2
....................................
পর্ব ০৩: ভালোবাসি তোমায় হে জিহাদ!
‘দাওয়াহ্ ইলাল্লাহ্’ ফোরাম পোস্ট লিংক- https://bit.ly/tahrid3
পিডিএফ লিংক: https://archive.org/details/tahrid3
************************************************************
*************************************************************
ইসলামের সোনালি অতীত, উম্মাহর বর্তমান পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যত বিজয়গাঁথা নিয়ে মুস‘আব ইলদিরিম ভাইয়ের লিখিত একটি অনবদ্য কিতাব-
“কালজয়ী ইসলাম”
দাওয়াহ্ ইলাল্লাহ্ পোস্ট লিংক: https://bit.ly/kaljoyi-islam
পিডিএফ লিংক: https://bit.ly/kaljoie-islam
জাযাকুমুল্লাহু খাইরান।
************************************************************