JustPaste.it

কালেক্টেড

()

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

# এক

 

::: আল্লাহকে পেতে মাধ্যম ধরা বা ওলী বা পীর ধরা কুরআন ও সহীহ হাদীসের আলোকে কতটুকু যুক্তিসঙ্গত :::

 

ওলী বা পীর ফার্সি শব্দ যার অর্থ বৃদ্ধ, বুজুর্গ, শিক্ষক। ইসলামে আল্লাহর নৈকট্য ও ভালবাসা পেতে উকিলের মতো মাধ্যম ধরা বা পীর ধরার কোন অস্তিত্ব নাই। আল্লাহর নৈকট্য ও ভালবাসা পেতে এই মাধ্যম ধরত মক্কার পৌত্তলিক মুর্তিপুজারীরা।

আল্লাহ বলেন, সূরা যুমার-৩> যারা আল্লাহ্ ব্যতীত অপরকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করে রেখেছে এবং বলে যে, আমরা তাদের (মুর্তিসমূহ) ইবাদাত এ জন্যেই করি, যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহ্র নিকটবর্তী করে দেয়। এ সম্বন্ধে বিস্তারিবতভাবে বলা যায় যে, -

ওলী শব্দের অনেকগুলি অর্থ্ হয়, যেমন- বন্ধু, অভিভাবক, সাহায্যকারী, সুহৃদ, কর্তা, মালিক, পৃষ্ঠপোষক। ওলী শব্দের বহুবচন হল আওলিয়া।

إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ إِخْوَةٌ নিশ্চয় মুমিনরা পরস্পর ভাই-ভাই। হুজরাত, ৪৯/১০

الأخِلاءُ يَوْمَئِذٍ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ إِلا الْمُتَّقِينَ

সেইদিন বন্ধুগণ হবে একে অপরের শত্রু তবে মুত্তাকীরা (আল্লাহভীরুরা) ছাড়া। যুখরুফ, ৪৩/৬৭

وَإِنَّ الظَّالِمِينَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَاللَّهُ وَلِيُّ الْمُتَّقِينَ

আর নিশ্চয় যালেমরা একে অপরের বন্ধু আর আল্লাহ হলেন মুত্তাকীদের (আল্লাহভীরুদের) বন্ধু। জাসিয়া, ৪৫/১৯

يَوْمَ لا يُغْنِي مَوْلًى عَنْ مَوْلًى شَيْئًا وَلا هُمْ يُنْصَرُونَ

সেদিন কোন বন্ধু অপর বন্ধুর কোনই কাজে আসবে না আর তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে না। আদ-দুখান, ৪৪/৪১

مَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ حَمِيمٍ وَلا شَفِيعٍ يُطَاعُ

পাপিষ্ঠদের জন্য কোন অন্তরঙ্গ বন্ধু থাকবে না আর কোন সুপারিশকারীর সুপারিশ গ্রহণ করা হবে না। মুমিন, ৪০/১৮

وَلا يَسْأَلُ حَمِيمٌ حَمِيمًا

আর (সেইদিন) অন্তরঙ্গ বন্ধু অন্তরঙ্গ বন্ধুকে জিজ্ঞাসা করবে না। মা‘আরিজ, ৭০/১০

== == অসীলাহ মানে কি 'পীর বুযুর্গ ধরা'? == ==

এ প্রসঙ্গে প্রথম কথা হল, দোয়া হচ্ছে ইবাদত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, 'দোয়া হচ্ছে ইবাদত।' (মিশকাতঃ দোয়া অধ্যায়)। তিনি আরো বলেন, 'দোয়া হলো ইবাদতের মস্তিষ্ক'(অর্থাৎ মূল)। (মিশকাত)

সুতরাং যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যদের কাছে দোয়া প্রার্থনা করে, ফরিয়াদ করে এবং যা আল্লাহর কাছে চাওয়ার তা তাদের কাছে চায়, তারা সরাসরি শিরকে লিপ্ত। তারা অন্যদেরকে আল্লাহর সমকক্ষ বানাচ্ছে এবং তাদের ইবাদত করছে। ওয়াবতাগু ইলাইহিল ওসিলার অর্থ পীর বুযুর্গ ধরতে হবে, এমন কথা যারা বলে, তারা কুর'আন সম্পর্কে অজ্ঞ এবং কুর'আনকে নিজেদের দুনিয়াবি স্বার্থে ব্যবহার করে।

উসিলা শব্দটি কুর'আন মাজিদে দুই জায়গায় উল্লেখ আছে। তা হলোঃ-

"হে ঈমানদার লোকেরা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং তাঁর নৈকট্য লাভের উসিলা (উপায়) অন্বেষণ করো, আর তাঁর পথে জিহাদ করো, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পারো।" (সূরা আল মায়িদা ৩৫)

এ আয়াতে উল্লেখিত 'উসিলা অন্বেষণ করো' অর্থ কি? এ প্রসঙ্গে বিখ্যাত সাহাবী ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, "উসিলা মানে নৈকট্য"। (তাফসীর ইবনে কাসীর)

প্রখ্যাত তাবেয়ী কাতাদা (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, "উসিলা অন্বেষণ করা মানে; আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করো তার আনুগত্যের মাধ্যমে এবং এমন উত্তম আমলের মাধ্যমে, যে ধরণের আমল দ্বারা তিনি সন্তুষ্ট হন।" (তাফসীর ইবনে কাসির)

উসিলা শব্দটি সূরা বনী ইসরাইলেও এসেছে। সেখানে আল্লাহ পাক বলেন, "হে নবী ! তাদের বলোঃ 'তোমরা আল্লাহ ছাড়া আর যাদের কাছে (বিপদ মুসিবত ও দুঃখ কষ্ট দূর করার জন্যে) দোয়া প্রার্থনা-ফরিয়াদ করো, দুঃখ কষ্ট ও বিপদ মুসিবত দূর করার কোনো ক্ষমতা তাদের নাই। এরা যাদের কাছে প্রার্থনা করে তারা নিজেরাই তো তাদের প্রভূর নৈকট্য লাভের উসিলা করে, এ উদ্দেশ্যে যে, কে তাঁর কতো নৈকট্যে যেতে পারে, তারাও তাঁরই রহমত প্রত্যাশা করে এবং তাঁর শাস্তির ভয়ে ভীত থাকে। কারণ তাঁর শাস্তি যে অতিশয় ভয়াবহ।" (সূরা বনী ইসরাইল ৫৬-৫৭)

এ আয়াতগুলোতে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্যে এবং বিপদ মুসিবত ও দুঃখ কষ্ট দূর করার জন্যে মরা বা জীবিত ব্যক্তিদের উসিলা বানাতে কুর'আন সুস্পষ্টভাবে নিষেধ করেছে। বলা হয়েছে;

১ তারা আল্লাহ ছাড়া অন্যদেরকে আল্লাহর শরিক ও সমকক্ষ বানাচ্ছে

২ তারা যাদেরকে উসিলা বানায়, বিপদ মুসিবত ও দুঃখ কষ্ট দূর করতে তারা সম্পূর্ণ অক্ষম ও অসহায়

৩ তারা নিজেরাই আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য উসিলা খোঁজে

৪ উসিলা মানে আল্লাহর আনুগত্য ও নেক আমল, যা আল্লাহর নৈকট্য ও দয়া লাভের উপায়

>>> ওলী বা বন্ধুর বৈশিষ্ট্য <<<

وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُقِيمُونَ الصَّلاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَيُطِيعُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ أُولَئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللَّهُ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ

আর মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারী তারা একে অপরের বন্ধু, তারা ভাল কাজের আদেশ দেয় ও অন্যায় কাজ হতে নিষেধ করে, আর তারা সালাত প্রতিষ্ঠা করে আর যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করে, তাদের উপর আল্লাহ শীঘ্রই দয়া করবেন, নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়। তাওবা, ৯/৭১

إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ وَمَنْ يَتَوَلَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا فَإِنَّ حِزْبَ اللَّهِ هُمُ الْغَالِبُونَ

তোমাদের বন্ধু কেবলমাত্র আল্লাহ ও তাঁর রসূল আর মুমিনগণ যারা সালাত কায়েম করে, যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহর কাছে অবনত হয়। আর যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল আর মুমিনদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, তবে নিশ্চয় সেটি আল্লাহর দল আর তারাই বিজয়ী হবে। মায়েদা, ৫/৫৫-৫৬

أَلا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللَّهِ لا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلا هُمْ يَحْزَنُونَ الَّذِينَ آمَنُوا وَكَانُوا يَتَّقُونَ

জেনে রাখ, নিশ্চয় আল্লাহর বন্ধুদের কোন ভয় নেই আর তারা চিন্তিত হবে না। তারা হলো যারা ঈমান এনেছে ও তাকওয়া অবলম্বন করেছে। ইউনুস, ১০/৬২-৬৩

>>>> যে যে অসিলা খোঁজা নিষেধ ও দ্বীনের মধ্যে যার মূল্য নেই - তার শ্রেণী বিভাগ <<<<

১) মৃতদের মাধ্যমে অসিলা খোঁজাঃ তাদের কাছে কোন প্রয়োজনীয় জিনিস চাওয়া, সাহায্য চাওয়া যেটা আজ দেখা যাচ্ছে। একে মানুষ অসিলা মনে করে, কিন্তু মূলতঃ তা নয়। কারণ, অসিলার অর্থ হল আল্লাহ নিকটবর্তী হওয়া; যা ঈমানের দ্বারা এবং নেক কাজের দ্বারা সম্ভব। অন্যদিকে মৃতদের কাছে দোয়া করা আল্লাহ হতে মুখ ফিরানোর নামান্তর। তা বড় শিরকের অন্তর্ভুক্ত। কারণ আল্লাহ (সুব) বলেনঃ “আল্লাহ ছাড়া এমন অন্যের কাছে দোয়া কর না যারা না পারে তোমার উপকার করতে, আর না পারে তোমার ক্ষতি করতে। যদি তা কর তবে নিশ্চয়ই তুমি মোশরেকদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (সূরা ইউনুস ১০; ১০৬)

২) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) -এর সম্মানের অসিলা খোঁজাঃ যেমন বলা, হে আমার রব রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর অসিলায় আমাকে রোগমুক্ত কর। এটা বেদ’আত। কারণ সাহাবীরা কেউ এটা করেন নাই। কারণ খলীফা ওমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর চাচা আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু)-এর অসিলায় দোয়া করেছিলেন তার জীবিত অবস্থায় এবং রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মৃত্যুর তাঁর অসিলায় বৃষ্টির জন্য দোয়া করেননি। আর যে হাদীসে বলা হয় “আমাকে অসিলা করে দোয়া কর” সেটা মূলে হাদীসই নয়- যা শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন। আর এই বেদ’আতী অসিলা মানুষকে র্শিকে পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয় যখন এই ধারণা করা হয় যে, আল্লাহ (সুব) কোন মাধ্যম ছাড়া করতে পারেন না। যেমন আমীর ও বিচারকগণ। এতে আল্লাহকে সৃষ্টির সাথে তুলনা করা হয়। ইমাম আবু হানিফা (রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ আমি আল্লাহ ছাড়া অন্যের অসিলা করে আল্লাহর কাছে চাওয়াকে, অপছন্দ করি।

৩) নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর মৃত্যুর পর তাঁর কাছে দোয়া করাঃ যেমন বলা, হে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দোয়া করুন। এটা জায়েয নয়। কারণ সাহাবীরা এটা কেউ করেননি। কারণ, আ্ললাহর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “যখন মানুষ মারা যায় তখন তার আমলনামা তিনটি ক্ষেত্র ছাড়া বন্ধ হয়ে যায়ঃ সাদাকায়ে জারিয়া করে থাকলে এবং ঐ উপকারী ইলম যা সে শিখিয়েছে এবং নেক সন্তান যে পিতা-মাতার জন্য দোয়া করে।” (সহীহ মুসলিম)। এই সমস্ত আমলগুলোর সওয়াব সে কবরেও পেতে থাকে।

>>>> মুর্তিপুজারী তথা পীর পূজারীরা মুশরিক <<<<

মুর্তিপুজারীরা মুশরিক কারণ তারা আল্লাহর ভালবাসা পাওয়ার জন্য মাধ্যম হিসেবে মুর্তিকে ধরে। ঠিক তেমনি যারা আল্লাহকে পাওয়ার জন্য মাধ্যম হিসেবে কোন ব্যক্তিকে ধরে তারা কি মুশরিক না? মুর্তিপুজারীদের উদ্দেশ্য সৎ ছিল। তারা আল্লাহর ভালবাসা, নৈকট্য পাওয়ার জন্যই এ মাধ্যম ধরেছিল। ঠিক তেমনি বর্তমানেও যারা আল্লাহর ভালবাসা নৈকট্য পাওয়ার জন্য কোন ব্যক্তিকে মাধ্যম ধরে তারাও মুশরিক হবে। তবে কাউকে মুশরিক বলার আগে জানতে হবে তার কাছে সত্যের বাণী পৌছেছে কি না। যদি কেউ জেনে শুনে মুর্তিপুজারীদের মতো আল্লাহকে পাওয়ার জন্য মাধ্যম ধরে তবে সেও মুশরিক হবে।

যারা আল্লাহর ভালবাসা, নৈকট্য তথা আল্লাহকে পাওয়ার জন্য মাধ্যম/উসিলা ধরার কথা বলেন তাদের দলিলের খন্ডন?

সূরা মায়িদাহ-৫:৩৫> হে ইমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং উসিলা তালাশ কর এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ কর যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।

=> পৃথিবীর সব পীরের মুরিদরাই এবং পীর নিজেও এই আয়াত দিয়ে পীর ধরার পক্ষে দলিল দেয়। এখানে উসিলা তালাশ মানে কি পীর ধরা?

আসুন দেখে নেই নবীর সাহাবারা এ আয়াত পড়ে কি শিক্ষা নিয়েছেন। তারা কি পীর ধরার শিক্ষা নিয়েছেন নাকি অন্য কিছু। এখানে উসিলা খোজা বলতে আল্লাহভীতি ও সংযমশীলতার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। সাহাবী ইবনে আব্বাস (রাঃ) এই উসিলা বলতে আল্লাহর নৈকট্য বা সন্তুষ্টি অর্জনকে বুঝেছেন।

কাতাদাহ (রাঃ) বলেন যে, উসিলার অর্থ হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার আনুগত্য স্বীকার করে এবং আল্লাহর আদেশ নিষেধ মুতাবেক আমল করে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা। (তাফসীর ইবনে কাসির, ৪র্থ, ৫ম, ৬ষ্ঠ ও ৭ম খন্ড এক সাথে, পৃষ্ঠা নং-৮১৫) তারা কেউই বলেন নাই উসিলা খোজা মানে পীর ধরা, বুজুর্গ ধরা। বরং তারা বুঝেছিলেন উসিলা খুজা মানে নৈকট্য ও সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য আল্লাহর আদেশ নিষেধ মোতাবেক আমল করা।

>>>> উসিলা কিভাবে ধরতে হয় <<<<

প্রথমতঃ আল্লাহর নামের উসিলায় দু’আ

আল্লাহ আমাদের শিখিয়েছেন তার মহান নামসমূহের উসিলায় দু’আ করতে।

সূরা আরাফ-৭:১৮০> আর আল্লাহ্র জন্য রয়েছে সব উত্তম নাম। কাজেই সে নাম ধরেই তাঁকে ডাক।

তিনি আমাদের শিখিয়েছেন তার নামের উসিলায় দু’আ করতে।

আমরা মুসলিমরা প্রতিদিনই আল্লাহর নামের উসিলায় আল্লাহর নিকট দু’আ করি। যেমন

সূরা আল ইমরান-৩:৮> হে আমাদের রব! সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্যলংঘনে প্রবৃত্ত করোনা এবং তোমার নিকট থেকে আমাদিগকে অনুগ্রহ দান কর। তুমিই ওয়াহহাব (সব কিছুর দাতা)।

উপরোক্ত আয়াতে আমরা আল্লাহর দুটি মহান নামের উসিলায় দু’আ করেছি। একটি হলো রব এবং অন্যটি ওয়াহহাব। এ দুটিই আল্লাহর নাম।

সূরা মুমিনুন-১০৯> হে আমাদের রব! আমরা বিশ্বাস স্থাপন করেছি। অতএব তুমি আমাদেরকে ক্ষমা কর ও আমাদের প্রতি রহম কর। তুমি তো দয়ালুদের মধ্যে শ্রেন্ঠ দয়ালু।

উপরোক্ত আয়াতেও আমরা আল্লাহর নিকট দু’আ করেছি রব ও রাহিম নামক দুটি নামের উসিলা দিয়ে।

রাসূল (সাঃ) ও আমাদের শিখিয়েছেন কিভাবে উসিলা ধরতে হয়। ইস্তিখারার সময়ের দুআতে তিনি দুআ করেছেন, হে আল্লাহ, তোমার জ্ঞানের উসিলায় আমি তোমার নিকট কল্যাণ প্রার্থনা করছি এবং তোমার কুদরত বা ক্ষমতার উসিলায় আমি কাজে সক্ষম হতে চাই। আর আমি আপনার মহান অনুগ্রহ প্রার্থনা করি। (বুখারী, ৫ম খন্ড, দু’আ অধ্যায়, হাদিস নং-৫৯৪০, ই:ফা)। অতএব রাসূল (সাঃ)ও আল্লাহর জ্ঞানের উসিলায় প্রার্থনা করেছেন। সুতরাং বুঝা গেল উসিলা হিসেবে আমরা আল্লাহর নাম সমূহ ব্যবহার করে থাকি এবং করব।

দ্বিতীয়তঃ আল্লাহর নিকট সৎ আমলের দ্বারা ওয়াসিলাহ ধরা

আমরা আমাদের সৎ আমলের ওয়াসিলা দিয়ে আল্লাহর নৈকট্য লাভের দু’আ করতে পারি।

আল ইমরান-৫৩> হে আমাদের পালনকর্তা! আমরা সে বিষয়ের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছি যা তুমি নাযিল করেছ, আমরা রসূলের অনুগত হয়েছি। অতএব, আমাদিগকে সাক্ষী হিসেবে তালিকাভুক্ত করে নাও।

উপরোক্ত আয়াতে আমরা ৩টি ওয়াসিলাহ দিয়ে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেছি।

প্রথমটি হলো নামের ওয়াসিলাহ। তারপর দুইটি সৎ আমল হিসেবে ঈমান আনার ও রাসুলের আনুগত্যের ওয়াসিলাহ দিয়ে আল্লাহর নিকট দু’আ করেছি।

সূরা আরাফ-৭:২৩> হে আমাদের রব (পালনকর্তা) আমরা নিজেদের প্রতি জুলম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি অনুগ্রহ না করেন, তবে আমরা অবশ্যই অবশ্যই ধ্বংস হয়ে যাব।

উপরোক্ত আয়াতে আমরা নিজেদের উপর জুলুমের স্বীকারুক্তি দিয়েছি, আল্লাহর ক্ষমার ও অনুগ্রহের ওয়াসিলাহ দিয়ে ক্ষমা ও দয়ার জন্য দু’আ করেছি।

সূরা মায়িদাহ-৮৩> হে আমাদের রব, আমরা ঈমান এনেছি। অতএব, আমাদেরকেও সাক্ষীগণের তালিকাভুক্ত করে নিন।

সূরা ফাতিহাতে আমরা বলি- সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি জগৎসমূহের পালনকর্তা। যিনি বিচার দিনের মালিক। আমরা তোমার ইবাদাত করি, তোমারই নিকট সাহায্য প্রার্থনা করি। তুমি আমাদের সহজ সরল পথে পরিচালিত কর।

উপরোক্ত ৪টি আয়াতে আমরা প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা করলাম, তারপর পালনকর্তা হিসেবে স্বীকৃতি দিলাম, তারপর বিচার দিনের মালিক হিসেবেও স্বীকৃতি দান করলাম। তারপর আল্লাহকে আমরা শুধুমাত্র তারই ইবাদাত করা ও সাহায্য প্রার্থনার করার কথা জানালাম। সর্বশেষে এ সবগুলো বিষয়ের ওয়াসিলাহ দিয়ে সহজ সরল পথ এর জন্য আবেদন করলাম। এটা হলো সৎ আমলের দ্বারা ওয়াসিলাহর নমুনা। আল্লাহ বলেছেন ওয়াসিলাহ তালাশ কর। তাই আমাদের আল্লাহর নাম সমূহের ওয়াসিলা ও সৎ আমলের ওয়াসিলাহ দিয়ে আল্লাহর নৈকট্য তালাশ করতে হবে।

তৃতীয়তঃ আল্লাহর নিকট সৎ ব্যক্তির দু’আ হিসেবে ওয়াসিলাহ গ্রহণ

সৎ ব্যক্তির দু’আর দ্বারা ওয়াসিলাহ মানে হলো কোন ভাল ব্যক্তিকে দু’আর জন্য বলা। যেমনঃ-

আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত এক পল্লীবাসী নাবী সাঃ এর মিম্বরে খুৎবা দানকালে মসজিদে প্রবেশ করে বলল হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের সম্পদ নষ্ট হয়ে গেল, রাস্তাঘাট বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল, অতএব আপনি আল্লাহর নিকট দু’আ করুন, তিনি যেন আমাদের বৃষ্টি দান করেন। এছাড়াও ওমর রাঃ এর সময় বৃষ্টির জন্য সকলে নবীর চাচা আব্বাস বিন আব্দুল মোত্তালিব এর মাধ্যমে দু’আ চাইতেন।

===>>>>> নবীর যুগে, সাহাবাদের যুগে এবং তাবেয়ীদের যুগেও পীরদের কোন অস্তিত্ব ছিল না। অনেক পরে এই প্রথা শুরু হইছে। এটা টাকা ইনকামের একধরনের ব্যবসা। যেহেতু নবীর সময় ছিল না, সাহাবাদের সময় ছিল না, তাবেয়ীদের সময় ছিল না। তাই বর্তমানেও মুসলিমরা কোন পীর ধরে না। হ্যা খ্রিষ্টানরা তাদের ধর্মীয় গুরুদের রবের আসনে বসিয়ে ছিল। আল্লাহ কোরআনের সূরা তাওবাহ এর ৩১ নং বলেছেন ইহুদী খ্রিষ্টানরা তাদের ধর্মীয় গুরু তথা আলেমদের রবের আসনে বসিয়েছে। হযরত আদি ইবনে হাতেম (রাঃ) আল্লাহর রাসুলকে বলেছিলেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ, আমরা তো আমাদের ধর্মীয় গুরুদের রবের আসনে বসাই নাই। রাসূল সাঃ বললেন, তারা যেটা হালাল/বৈধ বলত, তোমরা কি সেটা মানতে না, তিনি বললেন, জি মানতাম। রাসুল সাঃ আবার বললেন, তারা যেটা হারাম/অবৈধ বলত, তোমরা কি সেটা হারাম মনে করতে না, তিনি বললেন, জি করতাম। রাসূল সাঃ বললেন, কোন দলিল ছাড়া এভাবে কোন ব্যক্তির আনুগত্য করাই হলো রবের আসনে বসানো।

===>>> তাই আজও দেখা যায় পীরদের দরগায় সিজদা জায়েজ, পীরের মুরিদ হলে নামাজ রোজা লাগে না, পীরের কলব এর সাথে কলব মিলানো, পীরের মাজার পরিদর্শণ ইত্যাদি হারাম কাজ মুসলিমরা করে। যেমন সহীহ হাদিসে কবর পাকা করা নিষেধ, কবরে গিলাফ লাগানো নিষেধ, কবরের উপর ঘর নির্মাণ নিষেধ, কবরের নিকট উৎসব করা নিষেধ, কবরে বাতি জ্বালানো নিষেধ ইত্যাদি সহীহ হাদিসের নিষেধ করা কাজগুলোই মুসলমানরা করে থাকে। হাদিসে যতগুলো বিষয় নিষেধ করেছেন নবীজি সাঃ, সেই সবগুলো কাজই পীরদের মাজার ও দরগায় করা হয়ে থাকে। আগে উসিলার বিধান জানতে হবে? নিজে জানা না থাকলে যারা জানে তাদের কাছে দলিল সহকারে জিজ্ঞেস করতে হবে।

সূরা মায়িদাহ-৩৫> হে মুমিনগণ! আল্লাহ্কে ভয় কর, তাঁর নৈকট্য পাওয়ার উসিলা তালাশ কর এবং তাঁর পথে জেহাদ কর যাতে তোমরা সফলকাম হও।

সূরা বানী ইস্রাইল-১৭:৫৭> যাদেরকে তারা আহবান করে (অর্থ্যাৎ কোন ব্যক্তি যেমন ঈসা আঃ, কোন বড় পীর ইত্যাদি), তারা নিজেরাই তো তাদের পালনকর্তার নৈকট্য লাভের জন্য ““উসিলা”” তালাশ করে যে, তাদের মধ্যে কে নৈকট্যশীল। তারা তাঁর রহমতের আশা করে এবং তাঁর শাস্তিকে ভয় করে। নিশ্চয় আপনার পালনকর্তার শাস্তি ভয়াবহ।

>>>> আমরা জানি না কে সৎ পথে আছে, আর কে পথভ্রষ্ট <<<<

সূরা নাজম-৩০> নিশ্চয় আপনার পালনকর্তা ভাল জানেন, কে তাঁর পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে এবং তিনিই ভাল জানেন কে সুপথপ্রাপ্ত হয়েছে।

নবী (সাঃ) কি কারো ভাল করার ক্ষমতা রাখতেন যেমনভাবে বর্তমানের পীররা ভাল করার ক্ষমতা রাখে?

সূরা আরাফ-৭:১৮৮> আপনি বলে দিন, আমি আমার নিজের উপকার এবং অপকার করার ক্ষমতা রাখি না, কিন্তূ যা আল্লাহ্্ চান।

সূরা ইব্রাহিম-১২> আমাদের আল্লাহ্র উপর ভরসা না করার কি কারণ থাকতে পারে, অথচ তিনি আমাদেরকে আমাদের পথ বলে দিয়েছেন।

নবী (সাঃ) যেখানে নিজের ভাল বা মন্দ করার ক্ষমতা রাখেন না সেখানে বর্তমানের পীরগণ মুরিদদের যাবতীয় সমস্যার সমাধান দিয়ে থাকেন।

সূরা ইউনুস-১০৬> (হে রাসুল! আপনি বলে দিন) আমার প্রতি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তোমরা আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কারো নিকট দু’আ/প্রার্থনা করবে না, যে তোমার ভালও করবে না, মšদও করবে না। বস্তূুত: তুমি যদি এমন কাজ কর, তাহলে তখন তুমিও জালেমদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।

>>>> নবী (সাঃ) কি কাউকে হেদায়েত দিতে পারতেন যেভাবে পীরগণ দিয়ে থাকেন <<<<

সূরা ক্বসাস-৫৬> (হে নবী) তুমি যাকে ভালবাসে, তুমি চাইলেই তাকে হেদায়েত দিতে পারবে না, তবে আল্লাহ্ তা'আলাই যাকে ইচছা হেদায়েত দেন। কে সৎপথে আসবে, সে স¤পর্কে তিনিই ভাল জানেন।

নবী (সাঃ) যেখানে নিজের ভালবাসার পাত্র/প্রিয়জনকে হেদায়েত দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন না সেখানে বর্তমানের পীরগণ হেদায়েত দিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নেয়।

নবী (সাঃ) এর কাজ হলোঃ-

সূরা মায়িদাহ-৫:৬৭> হে রসূল, পৌছে দিন আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে (অর্থ্যাৎ কোরআন ও সহীহ হাদিস)।

সূরা আলা-৯-১২> উপদেশ ফলপ্রসু হলে উপদেশ দান করুন, যে ভয় করে, সে উপদেশ গ্রহণ করবে, আর যে, হতভাগা, সে তা উপেক্ষা করবে।

তবে বর্তমানের পীরগণ জান্নাতের সুসংবাদও দিয়ে দেয়।

নবী (সাঃ) জানেন না উনার সাথে কি ব্যবহার করা হবে?

সূরা আহকাফ-৯> (হে নবী, বলুন) আমি জানি না আমার সাথে কি ব্যবহার করা হবে এবং আমি জানি না তোমাদের সাথে কি ব্যবহার করা হবে। আমি কেবল তারই অনুসরণ করি, যা আমার প্রতি ওহী করা হয় (অর্থ্যাৎ কোরআন ও সহীহ হাদিস)। যেভাবে নবী (সাঃ) নিজেই জানেন না তার সাথে কিরূপ ব্যবহার করা হবে সেখানে বর্তমানের পীরগণ নিজেদের স্বপক্ষে জান্নাতের সুসংবাদ তো দেয়ই বরং মুরীদদের ব্যাপারেও জান্নাতের সুসংবাদ দিয়ে থাকে। আর মুরিদরাও এমন আক্বিদা রাখে যে তাদের পীর জান্নাতি।

>>>> যারা বলে নবী (সাঃ) সর্বত্র বিরাজমান তাদের দলিল হলো <<<<

সূরা আহযাব-৪৫> হে নবী! আমি আপনাকে সাক্ষীরূপে, সুসংবাদ দাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি।

এ আয়াত দিয়ে মাযহাবপন্থী বিদআতীরা বলে যে চোখে না দেখলে স্বাক্ষী হয় কিভাবে?

নবী সর্বত্র বিরাজমান এবং সবকিছূ দেখেন বলেই তিনি স্বাক্ষীরূপে আমাদের জন্য স্বাক্ষ্য দিবেন।

তাদের এই বক্তব্য যৌক্তিক। তবে এই ব্যাখ্যাটা মিথ্যা ও নিজ মনগড়া। কারণ আল্লাহ কোরআনে শুধু নবী (সাঃ) কেই স্বাক্ষী বলেন নাই বরং আমাদেরকেও স্বাক্ষী বলেছেন।

সূরা হাজ্জ-৭৮> রসূল তোমাদের জন্যে সাক্ষী এবং তোমরা সাক্ষী মানবজাতির জন্যে।

রাসূল (সাঃ) স্বাক্ষী হওয়ার জন্য যদি সর্বত্র বিরাজমান হতে হয়, তবে নিয়মমাফিক আমরাও তো সর্বত্র বিরাজমান হওয়ার কথা। আমরা প্রতিটা ব্যক্তি কি সর্বত্র বিরাজমান। কখনোই না। আমরা এক জায়গায় থাকলে জানি না অন্য জায়গায় কি হচ্ছে।

এখন প্রশ্ন জাগে আল্লাহ কেন বললেন যে নবী (সাঃ) স্বাক্ষী এবং আমরা মুমিনরাও স্বাক্ষী?

নিচের হাদীসে এর উত্তর উপস্থাপন করা হলোঃ-

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাঃ বলেছেন, কিয়ামতের দিন নূহ আঃ কে ডাকা হবে। তখন তিনি উত্তর দিবেন এ বলে যে, হে আমাদের রব, আমি আপনার পবিত্র দরবারে উপস্থিত। তখন আল্লাহ জিজ্ঞেস করবেন, তুমি কি আমার বাণী লোকদের নিকট পৌছে দিয়েছিলে। নূহ আঃ উত্তর দিবেন, হ্যা। এরপর আল্লাহ তায়ালা নূহ আঃ এর উম্মতদেরকে জিজ্ঞেস করা হবে, নূহ আঃ কি তোমাদের নিকট আমার বাণী পৌছে দিয়েছে। তারা তখন বলবে, আমাদের কাছে কোন সতর্ককারী আসে নাই। তখন আল্লাহ তায়ালা নূহ (আঃ) কে বলবেন, তোমার দাবীর পক্ষে স্বাক্ষী কে? তিনি বললেন, মুহাম্মদ (সাঃ) ও তার উম্মত গণ। তখন তারা (অর্থ্যাৎ মুহাম্মদ সাঃ ও তার উম্মত) স্বাক্ষী দিবে যে নূহ আঃ তার উম্মতের নিকট আল্লাহর বাণী প্রচার করেছেন এবং রাসূল সাঃ তোমাদের প্রতি স্বাক্ষী হবেন। (বুখারী-৭ম খন্ড, ইফা, তাফসীর অধ্যায়, হাদিস নং-৪১৩৫)

এ পর্যায়ে বিদআতীরা বলে উঠে যে নবী (সাঃ) এর জন্ম যদিও পরে, তবে তিনি নূহ (আঃ) সময় উপস্থিত ছিলেন এবং দেখেছেন? কিন্তু তাদের যুক্তিও বাতিল। কারণ আল্লাহ বলেন-

সূরা আল ইমরান-৪৪> আর আপনি তো তাদের কাছে ছিলেন না, যখন প্রতিযোগিতা করছিল যে, কে প্রতিপালন করবে মারইয়ামকে এবং আপনি তাদের কাছে ছিলেন না, যখন তারা ঝগড়া করছিলো।

সূরা ক্বসাস-৪৪> মূসাকে যখন আমি নির্দেশনামা দিয়েছিলাম, তখন আপনি পশ্চিম প্রান্তে ছিলেন না এবং আপনি প্রত্যক্ষদর্শীও ছিলেন না।

সূরা ক্বসাস-৪৫> আপনি মাদইয়ানবাসীদের মধ্যে ছিলেন না যে, তাদের কাছে আমার আয়াতসমূহ পাঠ করতেন।

সূরা ক্বসাস-৪৬> আমি যখন মূসাকে আওয়াজ দিয়েছিলাম, তখন আপনি তুর পর্বতের পার্শ্বে ছিলেন না।

মূলত আল্লাহর রাসুল সাঃ আল্লাহর থেকে প্রাপ্ত ওয়াহী দ্বারাই এই স্বাক্ষী দিবেন এবং আমরাও যখন নূহ আঃ এর পক্ষে স্বাক্ষী দিব, তখন সেটাও হবে কোরআনের ওয়াহীর দ্বারা প্রাপ্ত বাণী।

>>> আল্লাহ হলেন মুমিনের অভিভাবক/বন্ধু/ওলী <<<

وَاللَّهُ وَلِيُّ الْمُؤْمِنِينَ

আর আল্লাহ হলেন মুমিনদের অভিভাবক/বন্ধু/ওলী। আলে-ইমরান, ৩/৬৮

إِنَّ وَلِيِّيَ اللَّهُ الَّذِي نَزَّلَ الْكِتَابَ وَهُوَ يَتَوَلَّى الصَّالِحِينَ

নিশ্চয় আমার অভিভাবক আল্লাহ, যিনি কিতাব অবতীর্ণ করেছেন আর তিনি নেকলোকদের অভিভাবকত্ব করেন। আরাফ, ৭/১৯৬

ذَلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ مَوْلَى الَّذِينَ آمَنُوا وَأَنَّ الْكَافِرِينَ لا مَوْلَى لَهُمْ

এটা এজন্যে যে, নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের অভিভাবক এবং কাফেরদের কোন অভিভাবক নেই। মুহাম্মদ, ৪৭/১১

وَمَا لَكُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ مِنْ أَوْلِيَاءَ ثُمَّ لا تُنْصَرُونَ

আর আল্লাহ ছাড়া তোমাদের কোন অভিভাবক/বন্ধু থাকবে না, অতঃপর তোমরা সাহায্যপ্রাপ্ত হবে না। হুদ, ১১/১১৩

لَهُمْ دَارُ السَّلامِ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَهُوَ وَلِيُّهُمْ بِمَا كَانُوا يَعْمَلُونَ

তাদের জন্যে তাদের রবের নিকট রয়েছে শান্তির আবাস আর তারা যে আমল করত তার কারণে তিনি তাদের বন্ধু। আনআম, ৬/১২৭

>>>> শয়তানের বন্ধুগণ <<<<

إِنَّا جَعَلْنَا الشَّيَاطِينَ أَوْلِيَاءَ لِلَّذِينَ لا يُؤْمِنُونَ

নিশ্চয় আমি শয়তানদেরকে তাদের বন্ধু বানিয়েছি তাদের জন্য যারা ঈমান আনে না। আরাফ, ৭/২৭

إِنَّهُ لَيْسَ لَهُ سُلْطَانٌ عَلَى الَّذِينَ آمَنُوا وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ إِنَّمَا سُلْطَانُهُ عَلَى الَّذِينَ يَتَوَلَّوْنَهُ وَالَّذِينَ هُمْ بِهِ مُشْرِكُونَ

নিশ্চয় তাঁর (শয়তানের) আধিপত্য নেই যারা ঈমান এনেছে তাদের উপর আর তাদের রবের উপর তারা ভরসা করে। প্রকৃতপক্ষে তার (শয়তানের) আধিপত্য তাদের উপর যারা তাকে বন্ধু বানিয়েছে আর যারা আল্লাহর সাথে শরীক করে। নাহল, ১৬/৯৯-১০০

وَمَنْ يَتَّخِذِ الشَّيْطَانَ وَلِيًّا مِنْ دُونِ اللَّهِ فَقَدْ خَسِرَ خُسْرَانًا مُبِينًا يَعِدُهُمْ وَيُمَنِّيهِمْ وَمَا يَعِدُهُمُ الشَّيْطَانُ إِلا غُرُورًا

আর যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে শয়তানকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে অবশ্যই সে স্পষ্ট ক্ষতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হল। সে তাদের প্রতিশ্রুতি দেয় ও তাদের আশা দেয় আর শয়তান তাদের যে প্রতিশ্রুতি দেয় তা প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। আন-নিসা, ৪/১১৯-১২০

فَرِيقًا هَدَى وَفَرِيقًا حَقَّ عَلَيْهِمُ الضَّلالَةُ إِنَّهُمُ اتَّخَذُوا الشَّيَاطِينَ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُونِ اللَّهِ وَيَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ مُهْتَدُونَ

একদলকে তিনি হেদায়াত দিয়েছেন এবং আরেক দলের জন্য পথভ্রষ্টতা অবধারিত হয়েছে, নিশ্চয় তারা আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছে আর তার মনে করে যে, তারা সঠিক পথপ্রাপ্ত। আরাফ, ৭/৩০

>>>> মুমিনদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করতে হবে <<<<<

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لا تَتَّخِذُوا آبَاءَكُمْ وَإِخْوَانَكُمْ أَوْلِيَاءَ إِنِ اسْتَحَبُّوا الْكُفْرَ عَلَى الإيمَانِ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَأُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ

হে মুমিনগণ! তোমরা তোমাদের পিতা ও ভাইদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, যদি তারা ঈমান অপেক্ষা কুফরীকে অধিক ভালবাসে আর তোমাদের মধ্যে যারা তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে তারাই যালিম। তওবা, ৯/২৩

فَإِنْ تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ فَإِخْوَانُكُمْ فِي الدِّينِ وَنُفَصِّلُ الآيَاتِ لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ

তবে যদি তারা তাওবা করে ও সালাত প্রতিষ্ঠা করে আর যাকাত প্রদান করে তবে তারা তোমাদের দ্বীনী ভাই, আর জ্ঞানী লোকদের জন্য আমি বিধানবলী বিস্তারিত বর্ণনা করছি। তওবা, ৯/১১

>>>> কাফেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করা যাবে না <<<<

لا يَتَّخِذِ الْمُؤْمِنُونَ الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُونِ الْمُؤْمِنِينَ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَلِكَ فَلَيْسَ مِنَ اللَّهِ فِي شَيْءٍ

মুমিনগন যেন অন্য মুমিনদেরকে বাদ দিয়ে কোন কাফেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ না করে আর যে এরূপ করবে আল্লাহর সাথে তার কেন সম্পর্ক নেই। আলে-ইমরান, ৩/২৮

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لا تَتَّخِذُوا الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُونِ الْمُؤْمِنِينَ أَتُرِيدُونَ أَنْ تَجْعَلُوا لِلَّهِ عَلَيْكُمْ سُلْطَانًا مُبِينًا

হে মুমিনগণ! তোমরা মুমিনদেরকে বাদ দিয়ে কাফেরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না, তোমরা কি আল্লাহর কাছে তোমাদের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট দলীল-প্রমাণ পেশ করতে চাও। আন-নিসা, ৪/১৪৪

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لا تَتَّخِذُوا الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى أَوْلِيَاءَ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللَّهَ لا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ

হে মুমিণগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না, তারা একে অপরের বন্ধু, আর তোমাদের মধ্যে যে তাদেরকে বন্ধু বানাবে, তবে নিশ্চয় সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত, নিশ্চয় আল্লাহ যালিম সম্প্রদায়কে পথ দেখান না। মায়েদা, ৫/৫১

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لا تَتَّخِذُوا الَّذِينَ اتَّخَذُوا دِينَكُمْ هُزُوًا وَلَعِبًا مِنَ الَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِنْ قَبْلِكُمْ وَالْكُفَّارَ أَوْلِيَاءَ وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ

হে মুমিনগণ, তোমাদের পূর্বে যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছে তাদের মধ্যে যারা তোমাদের দ্বীনকে বিদ্রুপ ও খেলার বস্তুরূপে গ্রহণ করেছে তাদেরকে এবং ও কাফিরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না আর আল্লাহকে ভয় কর যদি তোমরা মুমিন হও। মায়েদা, ৫/৫৭

الَّذِينَ يَتَّخِذُونَ الْكَافِرِينَ أَوْلِيَاءَ مِنْ دُونِ الْمُؤْمِنِينَ أَيَبْتَغُونَ عِنْدَهُمُ الْعِزَّةَ فَإِنَّ الْعِزَّةَ لِلَّهِ جَمِيعًا

যারা মুমিনদেরকে বাদ দিয়ে কাফেরদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে এবং তারা কি তাদের কাছে সম্মান তালাশ করে? অথচ যাবতীয় সম্মান শুধুমাত্র আল্লাহরই জন্য। আন-নিসা, ৪/১৩৯

وَلَوْ كَانُوا يُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالنَّبِيِّ وَمَا أُنْزِلَ إِلَيْهِ مَا اتَّخَذُوهُمْ أَوْلِيَاءَ وَلَكِنَّ كَثِيرًا مِنْهُمْ فَاسِقُونَ

আর যদি তারা আল্লাহর প্রতি ও নবীর প্রতি আর যা তার নিকট নাযিল করা হয়েছে তার প্রতি ঈমান আনত তাহলে তাদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করত না কিন্তু তাদের মধ্যে অনেকেই ফাসিক। মায়েদা, ৫/৮১

অতএব, উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, সুতরাং মুমিনদের অভিভাবক হল আল্লাহ। আর মুমিনদের বন্ধু হল মুমিনগণ যারা ভাল কাজের আদেশ দেয় ও অন্যায় কাজ হতে নিষেধ করে, সালাত প্রতিষ্ঠা করে আর যাকাত প্রদান করে এবং আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করে। তারাই আল্লাহর দল আর তারা আল্লাহর নিকট হতে সাহায্যপ্রাপ্ত হয়ে বিজয়ী হবে; তাদের কোন ভয় নেই আর চিন্তিত হবে না। আল্লাহ আমাদের সত্য বুঝার ও আমল করার তৌফিক দান করুন, আমীন।

 

কালেক্টেড ফ্রমঃ https://www.facebook.com/MuslimLesson/posts/1122329714446095

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

# দুই

 

জেনা করা, মদ পান করা, চুরি করা, ডাকাতি করা, কার গচ্ছিত সম্পদ খেয়ানত করার সময় একজন ব্যক্তি মুসলিম থাকে না। তওবা না করলে তার এই গুনাহ আর ক্ষমা হবে না। একবার ভাবুন, এই কাজগুলা করার সময় যদি আপনার মৃত্যু হয় তাহলে ?

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

# তিন

 

বিদআত কি ?

 

বিদআত হচ্ছে ইসলামে ভীতর 'আমল মনে করে কোন নতুন কাজ করা যেটা রাসুল (সঃ) থেকে অনুমদিত নয়।' অথবা কুরআন হাদিসের কোথাও পাওয়া যায় না এমন আমল করা সওয়াবের আশায়। নিচে এমন কয়েকটা উধাহরন হিসেবে বিদআত পেষ করা হল।

 

- মিলাদ কিয়াম করা ও পড়া বিদআত

- প্রত্যেক ফরয নামাজের পর সম্মেলিত মুনাজাত করা বিদআত

- তাজবিহ দানায় তাজবিহ গননা করা বিদআত (রাসুল সঃ হাতের আঙ্গুলে তাজবিহ গুনার আদেশ করেছেন)

- মাগরিবের সলাতের পরে ৬ রাকআত সালাতুল আওয়াবিন পড়া বিদআত

- রাসুল সঃ এর নাম শুনে দুই চোখে আঙ্গুল দিয়ে মোছা বিদআত

- দুই হাতে মুছাফাহ করা (হাত মিলানো) বিদআত

- হাত মিলানোর পরে হাত বুকে লাগানো বিদআতা

 

কয়েকটা বিদআত বললাম, সমাজে এমন শত শত বিদআত চালু আছে। জেনেশুনে আজকেই বর্জন করুন নয়তো কোন ফরয ও নফল ইবাদাত কবুল হবে না। এবং রাসুল (সঃ) বলেছেন বিদআত যারা করবে তারা জাহান্নামে যাবে। কারন তারা রাসুল (সঃ) এর রেখে জাওয়াত দ্বীন পরিবর্তন করে ফেলেছে।

বিঃদ্রঃ অনেকেই বিদআত কি সেটা বুঝতে ভুল করে। এর মদ্ধে অনেক আলেমগণও বিদআত এর বিষয়টা বুঝতে পারেনা। তাই তারা বলে থাকে, প্লেন এ হজ্জ করতে চাওয়াও তো তাহলে বিদআত, কারন এইটা রাসুলের (সঃ) সময় ছিল না। তেমনি মাইকে আজান দেয়াও তাহলে বিদাত,কারন আগে মাইক ছিল না, এমন নতুন সব কিছুি তাহলে বিদআত ? যারা এমন মনে করে তাদের এইটা মনে রাখতে হবে বিদআত মানে আসলে নতুন কিছু নয়। বরং বিদআত হচ্ছে এমন নতুন আমল যা সওয়াবের আশায় আমল মনে করে করা হয়। যেমন মাইকে আজান দেয়ার সময় কিন্তু কেউ এইটা মনে করেনা যে আমি মাইকে আজান দিচ্ছি বলে এত নেকি হবে ! অথবা কেউ প্লেন এ হাজ্জ করতে গেলে এইটা মনে করেনা যে প্লেন এ জাচ্ছি বলে এত নেকি হবে ! তাইনা ? কিন্তু যদি এমন মনে করে যে প্লেন এ হজ্জ করতে জাচ্ছি বলে এত এত নেকি হবে , তাহলে বিদআত হবে। কন্তু এইটা কেউ মনে করেনা। আপনি ফেসবুকে দ্বীন প্রচার করছেন , এইটাও নতুন, কিন্তু এইটা বিদআত নয়। বিদআত হবে তখনই যখন আপনি মনে করবেন যে ফেসবুকে দ্বীন প্রচার করা নেকির কাজ। তাহলেই বিদআত হবে। কিন্তু কেউ এমন মনে করেনা যে ফেসবুকে দ্বীন প্রচার মানে আলাদা একটা নেকি হবে ! বরং আমরা মনে করি দ্বীন প্রচারের কারনে আমাদের ইনশা আল্লাহ্‌ নেকি হবে। ফেসবুক সুধুই একটা মাদ্ধম। তেমনি প্লেন, মাইক একটা মাধ্যম, এর বেশী কিছু নয়। কিন্তু যারা তাজবিহ দানায় তাজবিহ গননা করে তারা এইটাকেই ইসলাম এর একটা নিয়ম মনে করে তাই এইটা বিদআত হবে, আর যেহেতু এই ব্যাপারে রাসুল (সঃ) আদেশ করেছেন যে আঙ্গুলে তাজবিহ গুনতে হবে তাই এইটা অনেক বড় একটা বিদআত এবং গুনাহের কাজ। কারন এইটা রাসুল (সঃ) কে অবমাননা করা হচ্ছে। তেমনি যারা মিলাদ কিয়াম করে তারাও এইটাকে সওয়াব মনে করে থাকে। এইটাকে আমল মনে করে। তাই নতুন দোকান চালু করলে মিলাদ পরে, নতুন বাড়িতে মিলাদ পরে। এগুলা সবই ধর্মের বিভর নতুন সৃষ্টি আমল বিদআত। বিদআত যারা করে তাদেরকে বলছি, তারা কি ইসলামে নতুন আমল করে এইটা প্রমান করছে না যে রাসুল (সঃ) আমাদের কাছে পরিপূর্ণ দ্বীন পৌঁছে দেয়নি ? অবশ্যই দিয়েছেন। কারন হাদিসে আছে রাসুল সঃ বলেছেন, জান্নাতে যেতে পারে এমন সব কিছু আমি তোমাদের বলে দিয়েছি এবং জাহান্নাম থেকে বাচতে কিভাবে পারবে এমন সব কিছু আমি তোমাদের বলে দিয়েছি। সুতরাং যারা ইসলাম এর ভীতর এইসব নতুন নতুন আমল প্রবেশ করাবে তারা রাসুল (সঃ) কে অপমান করছে। আর বিদআত করার ব্যাপারে রাসুল (সঃ) এর অনেক হাদিস আছে যাতে বলা হয়েছে বিদআত যারা করবে তারা রাসুল সঃ এর সাফায়াত পাবে না, এবং তারা জাহান্নামে যাবে। তারা হাউজে কাওছার এর পানি পান করতে পারবে না। লিখা বড় হবে বলে আর হাদিসগুলা দিলাম না।

 

- আজকে থেকে এইসব নোংরা বিদআত কাজ পরিবর্তন করুন এবং তওবা করুন। খবরদার বাপদাদার দোহাই দিবেন না।

 

ওহী পেইজ থেকে সংগ্রহীত

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

# চার

 

ফর্সা মেয়ে বিয়ে করতে চান না। উচ্চতা নিয়ে চিন্তাভাবনা নেই। ছবি নয়, পাত্রীর বায়োডাটার দ্বীন সম্পর্কিত লেখা কথাগুলো আপনাকে আকৃষ্ট করে। আল্লাহর কাছে দোয়া করেন, যেন দ্বীন কে প্রাধান্য দিয়ে বিয়ে করতে পারেন। আল্লাহর কাছে দোয়া করেন, ফর্সা কালো কোন বিষয় নয়, হৃদয় প্রশান্তকারী কাউকে যেন আল্লাহ সহজ করে দেন।

 

৪'১০"/ ৪'৭"/৪'১১" উচ্চতা নিয়ে যাদের ভীতি নেই। বয়স ৩০ হয়ে গেছে!!! ওরে বাবা। মেয়ে তো বুড়ি। এরকম মানসিকতা রাখেন না। অন্য দ্বীনি ভাইদের থেকে অনেক বেশি সাহসী। সাহস করে মেয়ে দেখেন, যদি দেখে ভাল লেগে যায়।মনে মনে ভাবেন, কে জানে ঐ খাট মেয়েটাকেই ভাল লাগল। ৪'১০" দেখে উত্তর পাঠান না "স্কিপ প্লিজ"। বয়স ৩০ দেখে ইনিয়ে বিনিয়ে বলেন না যে, আমার মা আরেকটু কম বয়সী মেয়ে চায়"। অন্য প্রোপোজাল দেখান।

আমরা এরকম সাহসী, প্রচলিত চাহিদার বাইরে যারা নিজের জন্য ভাল কিছু চিন্তা করেন তাদেরকে খুঁজছি।

 

সবাই আমাদের দ্বীন পালনকারী দ্বীনি ভাই। সবার জন্য কাজ করব। কিন্ত উচ্চতা, বয়স, গায়ের রঙ এর জন্য যেসব বোনদের জন্য আমরা বারবার না শুনি তাদের কাজ তো ফেলে রাখতে পারি না।

তাই আল্লাহর জন্য পছন্দের চার্ট তা হেরফের করতে দ্বিমত নেই এরকম ভাইয়েরা যোগাযোগ করুন। আননুর আপনাদের কাজ করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।

 

আর একটা কথা। অনেকেই তেড়ে ফুঁড়ে উঠবে, মেয়েদের চাহিদা কি কম? মোটেই কম না। আপনি ভাল পড়াশোনা করেছেন, ভাল চাকরি করেন। মেয়েরা আপনাকে দাম দিবে। সবচ্ছল জীবনের প্রত্যাশা সবার। যার উলটা পাল্টা মন্তব্য করার সময় হয়, অন্যের দোষ ধরার সময় হয়। সে বা তারা আর যাই হোক টাকা থাকলেও পাত্রী হৃদয় জয় করতে পারবে না। ধামাধরা মানুষদের কেউ পছদ করে না।

 

দ্বীন মুসলিমের জন্য বাধ্যতামুলক। আর ব্যাক্তিত্ব সম্পন্ন, সবছল পাত্র সকলেরই কাম্য। কারো কাছে ২০ হাজার টাকায় সবচ্ছলতা, আর কারো কাছে ২ লক্ষ টাকায়। এটা সম্পূর্ণ নির্ভর করে আর্থ সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষিতে। তাই বলে টাকার অভাবে কারো বিয়ে বন্ধ হয়ে আছে এমনটা কম্মিন কালেও শুনিনি। তবে এটাও উপলক্ষ হতে পারে।

 

সে যাই হোক, একটু বেশি সাহসী দ্বীনদার ভাইয়েরা আওয়াজ দিন। নাম না জানা আপনি, তুমি ভাইয়ারা অনেক বোনের দোয়ায় প্রত্যাশায় আছেন।

বোনগুলোর দোয়ার জবাব খুঁজছি।

 

@দিশা আপা

ম্যারেজ কাউন্সেলর, আন নূর ইসলামিক ম্যারেজ মিডিয়া ।

 

 

 

 

 

 

 

 

# পাঁচ

 

 

একটি ইসলামী সংস্থার প্রধানকে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘আপনারা একটি ম্যারেজ ব্যুরো খোলেন না কেন?’

.

তিনি জানালেন, ‘আমরা খুলেছিলাম কিন্তু পরে বন্ধ করে দিতে হয়েছে। সে অনেক মর্মন্তুদ কাহিনী ... ’।

.

উৎসুক জনতা প্রশ্ন করল, ‘কেন, কেন?’

.

তিনি দীর্ঘশ্বাস ফেলে জানালেন, ‘প্রার্থীদের ৬০-৭০ হলেন নারী, পুরুষদের সংখ্যা ৩০-৪০%। তন্মধ্যে বোনদের প্রায় ৬০% এর তাকওয়া এবং চর্চার মান ৬০-৭০% বলা যায় যেখানে এই লেভেলের চর্চা আছে এমন ভাইয়ের সংখ্যা টেনেটুনে ৩%। ইসলাম চর্চার এমন বেহাল অবস্থা যার, এমন একটা ছেলের সাথে কিভাবে জেনেশুনে এমন একটা মেয়ের বিয়ে দেয়া যায় যে একটি ইসলামী জীবন যাপন করতে চায় এবং সে পথে অনেকখানি এগিয়ে রয়েছে?’

.

উপস্থিত জনতা ঘাড় নাড়লেন, ‘তাইতো, তাইতো’।

.

বক্তা বলে চললেন, ‘উপরন্তু যদিবা তাকওয়া এবং চর্চার দিকে থেক সবকিছু মিলানো যায়, ভাইরা চান ইসলামী ঐশ্বরিয়া রাই আর বোনরা চান ইসলামী শাহরুখ খান। এখানে এসে আমাদের আর করার কিছু থাকেনা। তাই একসময় মনোবেদনা সইতে না পেরে ম্যরেজ ব্যুরো বন্ধ করে দিলাম’।

.

উপস্থিত জনতার দীর্ঘশ্বাসে একটা ছোটখাট ঝড় বয়ে গেল কারণ এদের সবারই পরিচিত পরিধির মাঝেই অনেক ভাল মেয়ে রয়েছে - কুমারী, তালাকপ্রাপ্তা, বিধবা - কিন্তু কেবল পাঁচ ওয়াক্ত নিয়মিত সালাত পড়ে, হারাম হালাল বুঝে এতটুকু যোগ্যতাসম্পন্ন ছেলে খুঁজতে হিমসিম খাচ্ছেন। অনেক কিছু ছাড় দিয়ে যদিবা রাজী হলেন, তখন ছেলে নায়িকা খুঁজে বসে কিংবা মেয়ে নায়ক। ব্যাস, আর মিলানো গেলনা!

 

-রেহনুমা বিনতে আনিস

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

# ছয়

 

আমরা সবাই আল্লাহ্‌র কাছে তওবা করি ইন শা আল্লাহ্‌ আল্লাহ্‌ আমাদের তওবা কবুল করবেন। তওবা করার সব থেকে সহিহ যে দুয়াটি আছে সেটা শেয়ার করলাম। সবাই ইন শা আল্লাহ্‌ দুয়াটা মুখস্ত করে নিলে সব সময় পরলে ইন শা আল্লাহ্‌ আল্লাহ্‌ আমাদের ক্ষমা করবেন।

 

দুয়াটি সবাই মুখস্ত করে অর্থ সহ বুঝে পরবেন।

 

"আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ(রা) থেকে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ(সা) ইরশাদ করেন,যে ব্যক্তি বলেন, "আস্তাগফিরূল্লাহিল্লাজী লা-ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল ক্বাইয়ুম ওয়া আতূবু ইলাইহি অর্তাৎ আমি ক্ষমা প্রার্থনা করছি আল্লাহর কাছে যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই;তিনি চিরন্জীব ও চিরস্থায়ী;আমি তারই কাছে তওবা করছি '' তার পাপসমূহ মাফ করে দেয়া হয় এমনকি সে রণক্ষেত্র হতে পলায়ন করার মতো পাপ করলেও। (আবু দাউদ,তিরমিযী ঃ১৮৭৬ঃরিয়াদুস সালেহীন)।

 

#ওহী

 

 

 

 

 

 

 

# সাত

 

বিনা হিসাবে যারা জান্নাতে যাবে -

 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আমার উম্মতের মধ্যে সত্তর হাজার লোক হিসাব-নিকাশ ব্যতিরেকেই বেহেশতে প্রবেশ করবে। তারা হলো, মন্ত্রতন্ত্র দ্বারা যারা ঝাড়-ফুঁক করায় না, অশুভ লক্ষণাদিতে বিশ্বাস করে না এবং তারা শুধু তাদের প্রতিপালকের ওপরই ভরসা করে। (বুখারি ও মুসলিম)।

 

আরশের ছায়ায় যারা আশ্রয় পাবে –

 

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, "সাত ধরনের ব্যক্তিকে আল্লাহ তাঁর আরশের ছায়াতলে আশ্রয় দেবেন, যেদিন আল্লাহ-র আরশের ছায়া ব্যতিত আর কোনো ছায়া থাকবে না। তারা হলেনঃ

১) ন্যায়পরায়ণ শাসক।

(২) সেই যুবক যার যৌবন আল্লাহর ইবাদতে অতিবাহিত হয়

(৩) সেই ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদসমূহের সাথে লটকে থাকে (মসজিদের প্রতি তার মন সদা আকৃষ্ট থাকে।)

(৪) সেই দুই ব্যক্তি যারা আল্লাহর সন্তুষ্টিলাভের উদ্দেশ্যে বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা স্থাপন করে; যারা এই ভালোবাসার উপর মিলিত হয় এবং এই ভালোবাসার উপরেই চিরবিচ্ছিন্ন হয়।

(৫) এমন ব্যক্তি যাকে কোনো সুন্দরী নারী (খারাপ কাজে) আহ্বান করেছে, কিন্তু সে তাকে এই বলে প্রত্যাখ্যান করে যে আমি আল্লাহকে ভয় করি।

(৬) এমন ব্যক্তি যে এত গোপনে দান-সদকা করেছে যে তার ডান হাত কী দান করেছে তার বাম হাতও তা জানতে পারেনি।

(৭) যে ব্যক্তি নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং দু’চোখ দিয়ে তার অশ্রু প্রবাহিত হয়।

(বুখারী, মুসলিম)

 

মেশকের টিলার উপর আনন্দ করবে যারা –

 

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন – তিন ধরণের ব্যক্তি মিশকের টিলার উপর থাকবে ১) ঐ গোলাম যে তার রবের এবং তার মনিবের হক পুরোপুরি আদায় করেছে ২) ঐ ইমাম যে এমন ভাবে ইমামতি করেছে যে মুসুল্লিগণ তার প্রতি সন্তুষ্ট ছিল ৩) ঐ ব্যক্তি যে দিনে রাতে পাঁচবার মানুষকে নামাজের দিকে আহবান করতো।

 

(সুনান আত তিরমিযি, আল-মুজামুল আওসাত লিল ইমাম আততাবারানি)

 

#ওহী

 

 

 

 

 

 

# আট

 

সবাই তো আমরা জানতে চাই ইসলামে কি হালাল কি হারাম। সকল প্রকার নেশা জাতীয় জিনিষ হারাম। হোক সেটা সিগারেট, হোক সেটা মদ, হোক সেটা অন্য কিছু। এক কথায় শেষ সকল নেশা জাতীয় দ্রব্য হারাম। এর পরেও যদি কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে না মানেন সেটা তার ইচ্ছা। তাহলে আল্লাহ্‌র সাথে নাফরমানী করার শাস্তি তাকে ভোগ করতে হবে।

 

আল্লাহ্‌ বলেন,

"যে আল্লাহ্‌ ও রাসুলের সাথে নাফরমানী করে তার থাকার জায়গা হবে জাহান্নাম। সেখানে সে চিরকাল থাকবে।"

(নিসা-১৪)

 

এখনো সময় আছে তওবা করার। আল্লাহ্‌ কোরআনে অনেক জায়গায় বলেছেন যে, তিনি অনেক তওবা কবুলকারী। ইন শা আল্লাহ্‌ আমরা যদি জীবত অবস্থায় তওবা করি তাহলে অবশ্যই তিনি আমাদের তওবা কবুল করবেন আশা রাখি।

 

তওবা প্রসিদ্ধ দুয়াঃ

 

"আসতাগফিরুল্লা- হাল আ’যীমাল্লাযী লা- ইলা- হা ইল্লা হুওয়াল হা’ইয়ুল ক্বাইয়ূমু ওয়া আতুবু ইলাইহি।"

 

অর্থঃ আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

যিনি ছাড়া ইবাদতের আর কোন যোগ্য উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী। আমি তাঁর কাছে তোওবা করছি।

 

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ

 

যেই ব্যক্তি এই দোয়া পড়বে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন, যদিও সে জিহাদের ময়দান থেকে পলাতক আসামী হয়”। (অর্থাৎ, সে যদি বড়

রকমের গুনাহগার হয়, তবুও আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন।)

তিরমিযী ৪/৬৯,

আবুদাঊদ ২/৮৫,

মিশকাত হা/২৩৫৩,

হাদীসটি সহীহঃ সিলসিলা ছহীহাহ

হা/২৭২৭।

হিসনুল মুসলিমের ২৮৬ নাম্বার পৃষ্ঠা।

 

#ওহী

 

 

 

 

 

# নয়

 

সবাই তো আমরা জানতে চাই ইসলামে কি হালাল কি হারাম। সকল প্রকার নেশা জাতীয় জিনিষ হারাম। হোক সেটা সিগারেট, হোক সেটা মদ, হোক সেটা অন্য কিছু। এক কথায় শেষ সকল নেশা জাতীয় দ্রব্য হারাম। এর পরেও যদি কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে না মানেন সেটা তার ইচ্ছা। তাহলে আল্লাহ্‌র সাথে নাফরমানী করার শাস্তি তাকে ভোগ করতে হবে।

 

আল্লাহ্‌ বলেন,

"যে আল্লাহ্‌ ও রাসুলের সাথে নাফরমানী করে তার থাকার জায়গা হবে জাহান্নাম। সেখানে সে চিরকাল থাকবে।"

(নিসা-১৪)

 

এখনো সময় আছে তওবা করার। আল্লাহ্‌ কোরআনে অনেক জায়গায় বলেছেন যে, তিনি অনেক তওবা কবুলকারী। ইন শা আল্লাহ্‌ আমরা যদি জীবত অবস্থায় তওবা করি তাহলে অবশ্যই তিনি আমাদের তওবা কবুল করবেন আশা রাখি।

 

তওবা প্রসিদ্ধ দুয়াঃ

 

"আসতাগফিরুল্লা- হাল আ’যীমাল্লাযী লা- ইলা- হা ইল্লা হুওয়াল হা’ইয়ুল ক্বাইয়ূমু ওয়া আতুবু ইলাইহি।"

 

অর্থঃ আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

যিনি ছাড়া ইবাদতের আর কোন যোগ্য উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী। আমি তাঁর কাছে তোওবা করছি।

 

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ

 

যেই ব্যক্তি এই দোয়া পড়বে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন, যদিও সে জিহাদের ময়দান থেকে পলাতক আসামী হয়”। (অর্থাৎ, সে যদি বড়

রকমের গুনাহগার হয়, তবুও আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন।)

তিরমিযী ৪/৬৯,

আবুদাঊদ ২/৮৫,

মিশকাত হা/২৩৫৩,

হাদীসটি সহীহঃ সিলসিলা ছহীহাহ

হা/২৭২৭।

হিসনুল মুসলিমের ২৮৬ নাম্বার পৃষ্ঠা।

 

 

 

 

 

 

 

# দশ

 

"আমার ছোট বোন মডেল কলেজে পড়ে। তার কাছ থেকে জেনে ডে বাই ডে কাহিনীগুলো লিখলাম।

.

১২/৩/১৬ঃ অভিভাবক মিটিং এ গভর্নিং বডির সভাপতি আওলাদ অভিভাবকদের বলে, " ইদানিং সবাই ধার্মিক হয়ে যাচ্ছে।"

মিটিং শেষে ক্লাসে ক্লাসে ঘুরতে থাকে। এক পর্যায়ে আমার ছোট বোনের ক্লাসে গিয়ে দেখে অনেকেই হিজাব পরিহিত অবস্থায় আছে।

তখন সে বলেঃ "এটা কি কলেজ নাকি মাদ্রাসা? কলেজে হিজাব কেন? কলেজে এমন থাকলে মাদ্রাসায় শিফট করে দেয়া হবে।"

এক সময়ে সামনের বেঞ্চে বসে থাকা হিজাব পরিহিতা এক মেয়েকে সবার সামনে হিজাব খুলতে বলে। মেয়েটি ইতস্তত করলে এক ম্যাডাম এসে আওলাদকে বলেন যে "সবার সামনে খোলার দরকার নেই। পরবর্তীতে আর আসবে না।"

ক্লাস শেষে সবাইকে বলে দেওয়া হয় যে শুধুমাত্র ধার্মিক পরিবারের মেয়েরাই কলেজে হিজাব করতে পারবে।

.

১৩/৩/১৬ঃ ক্লাস চলাকালীন সময়ে একজন স্যার আর একজন ম্যাডাম সব ক্লাসে ক্লাসে গিয়ে মৌখিকভাবে নোটিশ দেন যে "কাল থেকে কলেজে হিজাব পড়ে আসা যাবে না।"

.

১৪/৩/১৬ঃ সেদিন পরীক্ষা ছিল। সেদিন থেকেই গেট থেকে 'হিজাব চেকিং' শুরু হয়। তবুও কয়েকজন হিজাব করায় পরীক্ষার হলে আওলাদ সবাইকে বলে "এভাবে চলবে না। দরকার হলে কলেজ বন্ধ করে দেয়া হবে।" এরপর থেকে কলেজ অভ্যন্তরে মাথায় ওড়না দেয়াও নিষেধ হয়ে যায়।

.

১৫/৩/১৬/ঃ এদিন থেকে সবাইকে হিজাব ছাড়াই কলেজে আসতে বাধ্য করা হয়। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে হঠাত গার্ড শিক্ষক সবাইকে বলেন "চেয়ারম্যান স্যার আসতেসে, সবাই মাথা থেকে ওড়না সরাও।"

.

১৬/৩/১৬ঃ আমার বোন সবসময় সব জায়গায় হিজাব করেই যায়। কিন্তু কলেজের গ্যারাকলে পড়ে হিজাব ছাড়া শুধু ওড়না ভালমতো পেঁচিয়ে কলেজে যায়।

কিন্তু গেট দিয়ে ঢোকার পর একজন ম্যাডাম "ভিতরে সবাই আমরা আমরাই তো" বলে নিজ হাতে মাথা থেকে ওড়না সড়িয়ে দেন। টিফিন পিরিয়ডে মাথায় ওড়না দিয়ে হাটতে থাকলে একজন স্যার ডেকে মাথা থেকে ওড়না সড়াতে বাধ্য করেন। ক্লাসের মধ্যেও কেউ ওড়না মাথায় দিয়ে থাকতে পারে না।"

.

.

.

আজও আমাদের কাছে খেলা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ভয় হচ্ছে খুব। আল্লাহ তা'আলার ভয়াবহ আযাব কি আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে? আল্লাহ তা'আলার দ্বীনকে কুলাঙ্গাররা এভাবে অপমান করছে, আর আমরা বসে আছি! আমাদের কি আজ কোন অভিভাবক নেই? যে আমাদের করণীয় কি তার নির্দেশ দিবে?

.

.

তারপরেও বলবো হাসবুনাল্লাহ ওয়া নি'মাল ওয়াকিল। অন্ধকার রাতের শেষ হতে বেশি বাকি নেই।

 

- সংগ্রহীত পোস্ট

 

https://www.facebook.com/bhuiyanrani.munni/posts/1171711056224024

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

# এগারো

 

একটা সময় স্পিকার নু'মান আলী খানের ব্যাপারে অভিযোগ উঠেছিল যে, তিনি সাহাবাদের শানে খুব হালকা শব্দ ব্যবহার করে কথা বলছেন। আমরিকায় মানুষরা যেমন ক্যাসুয়ালি কথা বলে, উনি সাহাবাদের কোন ঘটনা সেই ক্যাসুয়াল ভাষায় রূপান্তরিত করে বলছেন, যেন মানুষ ব্যাপারগুলো রিলেট করতে পারে কিংবা সহজে বুঝতে পারে।

 

.

 

তার সমর্থকরা বলেছিল যে এটা তেমন কিছু না। বরং এটাই সঠিক এ্যাপ্রোচ। মানুষ যে ভাষায় বুঝে সে ভাষায়ই তাকে বুঝান‌ো, এটাই তো বরং প্রগতির চিহ্ন। এবং মানুষও যখন দেখছে, ও আচ্ছা বক্তা তো আমার ভাষায়, আমার চেনা ভাষায়ই কথা বলছে, সে তখন সাচ্ছন্দ্য বোধ করবে। এবং হুজুর কিংবা ধর্মীয় লোকদের বাকিরা যে এলিয়েন মনে করে, এই স্টেরিও টাইপটা ভেঙে তারা জনগণের আরো কাছে যেতে পারবে, যদি তারা জনগণের ভাষা ব্যবহার করে।

 

.

 

আমিও বলবো তার কোন খারাপ উদ্দেশ্য ছিল না যে তিনি এভাবে বলে বলে সাহাবাদের যে 'ওয়েট' আছে সেটা লঘু করে দিতে চান। কিন্তু এভাবে বলতে থাকলে আসলেই তাদের মর্যাদার যে ওয়েট সেটা লঘু হতে থাকে। একবার না, দুইবার না বারবার যখন সাহাবা থেকে শুরু করে নবীজী (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এরপর এমনকি যখন আল্লাহ তা'আলার পর্যন্ত এই রেঞ্জে চলে আসে, তখন বিষয়টা মারাত্মক পর্য়ায়ের দিকেই। আপনারা মানেন আর না মানেন, কাটছাট করা কিংবা আউট অব কন্টেক্সট যাই বলুন না কেন, সব জায়গায় একই বুলি কাজ হবে না। এবং এর দ্বারা বাস্তবতা পাল্টায় না।

 

.

 

আপনারা যারা তার এসব কথায় জাস্টিফিকেশন খুঁজছেন, ব্যক্তি হিসেবে তার জন্য খুঁজতে পারেন, কিন্তু ওই রকম কাজের জন্য খুঁজতে পারেন না। এর পরিণতি কি হতে পারে এর চরম একটা উদাহরণ নু'মান আলী খান নিজেই হতে পারেন। একটা সময় যারা ওনার পক্ষে ছিল, কোন ইনসিডেন্টের কারণে তাদের অনেকে ওনার বিরুদ্ধে এমন ভাবে গিয়েছিল যে ওনাকে যারা ঘৃণা করে আসছিল এত দিন তারাও ততটা যায় নি। অথচ যেই ইনসিডেন্টগুলো অভিযোগ তোলা হয়েছিল, সেগুলোর রাস্তা নু'মান আলী খান নিজেই এতদিন তার বক্তব্যগুলোতে বাতলে দিচ্ছিলেন। তখন কিন্তু তার বক্তব্যের বিরোধিতা করা হয় নি। বরং যারা বিরোধিতা করেছে, তাদের বিরোধিতা করা হয়েছিল।

 

.

 

তারপর বলা যায় ড. ইউসুফ আল-কারযাভীর কথা। তার ব্যাপারেও অভিয‌োগ আছে যে উনি কোন নির্বাচারনের সাথে তুলনা দিতে গিয়ে নাকি বলেছেন আল্লাহও এত ভোট পেত না। আমিও বলবো না যে ওনার উদ্দেশ্য খারাপ ছিল। হয়ত বুঝাতে চাচ্ছিলেন যে আমরা যেভাবে আজকাল কুফরের এবং কাফিরদের পক্ষে সাফাই গাই, তাদের ভোট দিয়ে, আনুগত্য দিয়ে টিকিয়ে রাখছি, এর অর্থ তো তাহলে এইটা। কিন্তু আল্লাহর কি ভোটের প্রয়োজন আছে? নির্বাচনের প্রয়োজন আছে? সবচেয়ে বড় কথা হল যে এই কথা বলারই বা প্রয়োজন কি ছিল? উদ্দেশ্য যাই হোক, এটা বলারই কোন প্রয়োজন ছিল না।

 

.

 

আপনি হয়ত বলতে পারেন, আপনি নিজেই তো কথাটা রিফিউট করতে কথাটা তুলে ধরলেন। এর উত্তর হচ্ছে, আমি রিফিউট করতে যতটুকু যেই টোনে তুলে ধরলাম ততটুকু সেই টোনে করলে তো আমাদের বিরোধিতার নৈতিক ভিত্তি থাকত না। বরং আমরা আত্মবিশ্বাসের সাথে বিরোধিতা করছি যে উনি যেই টোনে যেভাবে কথাগুলো বলছেন, সেটা রিফিউটেশনের জন্য হোক, আসর জমানোর জন্য হোক আর যেই কারণেই হোক, সেগুলো এক্সেপ্টেবল না। এবং ওনার এভাবে কথা বলা বন্ধ করতে হবে। ওয়াজের টপিকের কি এত অভাব পড়েছে যে এত এত ডিগ্রী ধারী বক্তাকে এভাবে বক্তব্য দিতে হচ্ছে? বারবার এবং বারবার!?

 

.

 

এখন যদি বলেন জনগণের ভাষায় জনগণকে বুঝানোর জন্য বলছেন, তাহলে বলবো, আমরা কি জনগণের ভাষায় ইসলামকে ভাসিয়ে দিতে এসেছি নাকি ইসলামে ভাষায় জনগণকে ভাসিয়ে নেয়াটা উচিত। জনগণের সব ভাষাই কি ব্যবহার যোগ্য? এর কি কোন লিমিট নেই? এবং অনলাইনে কিছু (ফেরোআ) মহিলাকেও দেখা যায় যে তারা উম্মুল মু'মিনীনদের শানেও এরকম ক্যাসুয়াল কথা বলেছেন। এবং ঘুরে ফিরে যতগুলো অভিযোগ বললাম যেমন নু'মান আলী খান, ইউসুফ কারযাবী কিংবা অনলাইনের ওইসব (ফেরোআ) মহিলা -তাদের কাজকে জাস্টিফাই করা লোকগুলো একই এবং একই ঘরাণার।

 

.

 

যদি তাকে আল্লাহর জন্য ভালোবাসেন, তাহলে এভাবে বলতে মানা করুন, এসব জাস্টিফাই করা বন্ধ করুন। আর যদি দুনিয়ার যশ-খ্যাডি, ডিগ্রী, নিজদের ঘরাণার জন্য ভালোবাসেন, তাহলে আরো ভালো করে এসব কাজে উৎসাহিত করতে থাকুন। নিজেরা এবং সাথে সাথে ওনারও বারোটা বাজানোর চেষ্টা করতে থাকুন। আশা করবো যে মুশরিকদের মত আমরাও না আবার আল্লাহ নিয়ে জোক্স বলাও জাস্টফাই না করে ফেলি। তবে এভাবে আগাইতে থাকলে, জনগণকে বুঝানোর অজুহাত দিতে থাকলে, জোক্সে আর কি আসে যায়, তাই না? যদিও অনেক কিছু আসে যায়। সেটা বুঝতে পারছেন না বলেই তো এমন করছেন।

 

- ইবনু মাজহার

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

# বারো

 

-_-

 

সেকুলাঙ্গাররা আমাদের দ্বিমুখীতাগুলো দেখিয়ে তাদের সেকুলাঙ্গারিসম জাস্টিফাই করতেই থাকবে, যতক্ষণনা আমরা এইসব তাগুতদের মাননীয়, শ্রদ্ধেয় ডাকা বন্ধ না করি। আইমিন কুফর বিত তাগুত না করি। ফেরাউন আর তার লোকেরা নিশ্চয়ি সম্মানিত কিংবা শ্রদ্ধেয় ছিল না। হ্যাঁ আমরা তাগুতদের নম্র ভাষায়, সহজ-সরল, সুন্দর ভাষায় দাওয়াত দিব। কিন্তু নতজানু হয়ে নয়, বরং চোখে চোখ রেখে, সীনা টান টান করে দাওয়াহ দিবো। কারণ দাওয়াহ ইলাল্লাহ হচ্ছে হক্ব, এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। দাওয়াহ ইলাল্লাহর সাথে যদি আপনি ইলাদ দুনিয়া ইলা "আস-সুবিধা" ঢুকান, তখন আর চোখে চোখ রেখে সীনা টানটান করে বলতে পারবেন না। কারণ আল্লাহই আপনাকে দূর্বল করে দিবেন, কারণ আপনি নিজেই দূর্বল হতে চাচ্ছেন, দূর্বল থাকতে চাচ্ছেন।

 

 

- ইবনু মাজহার

 

 

 

 

 

 

 

# তেরো

 

“আরে তুই এত ভুলা, তোরে তো ছুড়ি বইলা বুড়ি ধরাই দিবে!” কোন একটা প্রেক্ষিতে আমার এক আত্মীয়া আমাকে কথা বললেন সেদিন! কথাটা নিয়ে ভাবলাম অনেক। আমি যদি কোন বুড়িকেও বিয়ে করি, তাতে সমস্যা কি? বুড়িকে বিয়ে করা কি অপরাধ? মানে উনি যেই অর্থে বুড়ি বুঝিয়েছেন। বয়স্ক কিংবা আমার চেয়ে বড়।

 

.

 

ধরুন আমি এমন এক তথাকথিত ‘বুড়ি’ বিয়ে করলাম। এরপর আমার বন্ধু-বান্ধব কি ব্যাপারটা নিয়ে কটুক্তি করবে? হয়ত করবে। কিন্তু আমি নিশ্চিত না। তারা যদি করেও থাকে, তবে এমনভাবে করবে যেন আমার কানে না আসে। কিন্তু আমার আত্মীয়-স্বজনরা? বিশেষ করে আত্মীয়ারা? আমি মোটামুটি নিশ্চিত যে তারা কটুক্তি করবে। আমার বউকে শুনিয়ে শুনিয়ে করবে। এ নিয়ে মজা নিবে। তাকে অপদস্থ করার চেষ্টা করবে। কারণ সে ‘বুড়ি’! আমাকে ফাসিয়ে বিয়ে করেছে। যাদু করেছে। এমনিতে এরকম বিয়ে এসব না করলে নাকি হয় না!

 

.

 

ধরে নিলাম আমি আমার পরিবারের লোকদের মানিয়ে নিলাম। কিন্তু বাকিরা? না, তাদের কথায় ত‌ো আমি কাকে বিয়ে করবো না করবো সেই সিদ্ধান্ত নিবো না। আমার ভয় হয়, তারা তো আত্মীয়। তাদের সাথে যোগযোগ রাখতে হবে। আমাকে কটু কথা বললে আমি সেটার জবাব দিয়ে দিতে পারব‌ো বি'ইযনিল্লাহ, এই আত্মবিশ্বাস আছে। কিন্তু ওনাকে কিছু বললে? ওনার বয়স নিয়ে? কিংবা ওনার সৌন্দর্য? কিংবা পরিবার? কিংবা পূর্বের কোন বিষয়? উনি কিভাবে সহ্য করবেন?!

 

.

 

এবং আমি এরকম কথা আমার আত্মীয়াদের থেকেই বেশী শুনি। তাদের নিয়েই আমার যত ভয়। কারণ তারা নিজেরা একটা এক্সপেক্টশন দাড় করিয়ে রেখেছে। এবং সেটা ফুলফিল করা আমার জন্য একটা বার্ডেন। আবার না করাও বার্ডেন। কারণ আমি তাদেরকে আমার থেকে শুধু একারণেই মাইনাস করতে পারি না, কিংবা পারছি না, কিংবা এরকম করা উচিত না।

 

.

 

তাহলে বয়স্কা বোনদের কিভাবে বিয়ে হবে? তাদেরকে কারো দ্বিতীয়া হতে বলাকে অপমানজনক মনে করা হয়। অর্থাৎ তাদের প্রথমা হওয়ার যোগ্যতা আছে। কেন কারো প্রথমা হওয়ার জন্য মানুষ বলে না? কেন তাদের প্রথমা বানানোর সাহস কম মানুষের হয়? যারা সাহস দেখায় আমরা কি তাদের উর্ধ্বে তুলে ধরেছি, এ্যাপ্রিশিয়েট করি?

.

 

পরিবার থেকে সাপোর্ট না পাওয়ার ভয়ে অনেকে ভাইয়ের নিজের পক্ষ থেকে রাজী থেকেও কিছু করতে পারেন না। কারণ কনফিডেন্স পান না, পরবর্তি সমস্যা হ্যান্ডেল করার। সমস্যা খুব বড় না। আবার ছোটও না। কারণ মানসিক শান্তি খুব গুরুত্বপূর্ণ। লোকের কথাকে গ্রাহ্য না করার ক্ষমতা সকলের তো থাকে না।

 

.

 

তবে এখানে একটা চরম দ্বিমুখীতা দেখা যায়। সেটা হল দ্বিতীয়ার কথা আসলেই কিছু মানুষ বলে যে কোন বিধবা, বয়স্কাকে যেন বিয়ে করা হয়, যেন এটা তার প্রতি একটা করুণা। অথচ বিষয়টা তা হওয়ার কথা ছিল না। অথচ তা তেমনি হয়ে গেছে, কারণ আমরাই এধরণের বিয়ে এ্যাপ্রিশিয়েট করি না। অন্যের ক্ষেত্রে হয়ত অনেকে করি। কিন্তু নিজের ভাইয়ের ক্ষেত্রে? এবং বিশেষ করে আপুদের বলছি, আপনার যে বান্ধবীটার বয়সের বেশী হবার কারণে বিয়ে হচ্ছে না, অথবা অন্য কোন কারণে, তার জন্য কি নিজের ছোট ভাইকে কখনো রিকমেন্ডেড করেছেন? না করলে কেন? অথচ এই কিছু মানুষেরাই আবার দ্বিতীয়া হওয়াটাকে অপমানজনকও মনে করে। একটু সূক্ষ্ন দৃষ্টি দিন ধরতে পারবেন নিশ্চয়ই!

 

.

 

এই যে আমার আত্মীয়া আমাকে ছুড়ি বলে বুড়ি ধরিয়ে দেয়ার কথা বললেন, আমরা কি এর প্রতিবাদ করছি? আমি নিজেই করি নি। কারণ কোন ভাষায় কি বলে তার করবো সেটাই বুঝতে পারছিলাম না। বলা যায় যে সেটার রিএ্যাকশনেই এই লেখাটা। কেন বুড়িকে ছুড়ি বলে ধরিয়ে দেয়ার কথা আসে? বুড়িকে বুড়ি হিসেবে কেন ধরিয়ে দেয়া যায় না? কেন যায় না? ছেলেরা খালি কুমরী, সুন্দরী চায় এগুলো বলার আগে আমাদের ভাবা উচিত যে ছেলের পরিবারে কি শুধু ছেলেরাই থাকে কিনা? কোন মেয়ে কি চায় না তার ছেলে কিংবা ভাইয়ের বউ সুন্দরী কুমারী হউক? নাকি তারাই সুন্দরী কুমারী ছাড়া অন্য কিছুতে উৎসাহিত করে না, বরং কটুক্তি করে? এ বিষয়ে কি নজর দেয়ার সময় আসে নি এখনো?

 

- ইবনু মাজহার

 

 

 

 

# চৌদ্দ

 

 

অনলাইন আর অফলাইন বিহেভিয়ার এর একটা বড় পার্থক্য হচ্ছে লিডারশিপ। দেখা যায় কারো অনলাইনে লেখালেখির কারণে ত্রিশ, চল্লিশ বা পঞ্চাশ হাজার ফলোয়ার আছে কিন্তু অফলাইনে দুই-তিন জনের একটা টিমকে নেতৃত্ব দেবার দক্ষতা নেই। এটা কোন খারাপ বিষয় না, হাসসান বিন সাবিত (রাঃ) কবি হিসেবে তুখোড় ছিলেন, কিন্তু যোদ্ধা বা নেতা হিসেবে না। সবার দরকার আছে, সবার কন্ট্রিবিউশনের আলাদা স্কোপ এবং জায়গাও আছে, ইসলাম ব্যাপারটা এভাবে দেখে।

 

.

 

কিন্তু আমাদের সবসময় মনে রাখতে হবে, অনলাইনে বিখ্যাত কেউ নট নেসেসারিলি অফলাইনে নেতৃত্ব দেবার ক্ষমতা রাখে যদিও সাবকনশাসলি আমাদের একটা এক্সপেকটেশন তৈরি হয়ে যায় তাদের প্রতি। একটা ছেলে যে তাবলীগে তিন চিল্লা দিয়েছে, সফলতার সাথে আমির হয়েছে, কয়েকবার জিম্মাদার হয়েছে, সে নেতৃত্বের ক্ষেত্রে একজন অনলাইন সেলিব্রেটির চেয়ে অনেক বেশি উপযুক্ত বলে আমার বিশ্বাস।

 

.

 

আমাদের এখনকার মেয়েদের/মায়েদের আচরণ হচ্ছে বাচ্চাদের এই বলে বড় করা "কোন ঝামেলায় জড়াবে না", আসলে হওয়া উচিত ছিল - "কোন ঝামেলা দেখলে যদি তোমার ক্ষমতা থাকে তা সলভ করবে"। এরকম ছাপোষা নীতির কারণে পুরা জেনারেশন নেতৃত্বের প্র্যাকটিস ছাড়াই গড়ে উঠছে। কমিউনিটি লিডারশিপ, ইয়োথ লিডারশিপ নিয়ে সেক্যুলারদের অফিশিয়ালি অনেক প্রোগ্রাম/ট্রেনিং এদিক ওদিক হয়, কিন্তু আমাদের নেই। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নীতি ছিল একাধিক নেতা গড়ে তোলা, প্ল্যান-এ, বি, সি। মুতার যুদ্ধে তিনজন সেনাপতি নিয়োগ করা হয়েছিল, যাইদ বিন হারিসা, জাফর বিন আবু তালিব এবং আবদুল্লাহ বিন রাওয়াহা (রাদিয়াল্লাহু আনহুম)। একে একে তিনজনই শাদাদাত লাভ করেন, এর পর খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ) কে নেতা বানিয়ে দেয়া হয় এবং তিনি সফলভাবেই তার দায়িত্ব পালন করেন। কোন এক মিশনে কোন সাহাবা সফলতার সাথে শেষ করলে সেরকম একই মিশনে আরেকজনকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে যাতে একাধিক নেতা গড়ে তোলা যায়। যেমনঃ কা'ব ইবন আশরাফ কে গুপ্তহত্যার জন্য মুহাম্মাদ বিন মাসলামার (রাঃ) নেতৃত্বে এক টিমকে পাঠানো হয়েছিল কিন্তু আবু রাফেকে গুপ্ত হত্যা করতে পাঠানো হয়েছিল আবদুল্লাহ বিন আতিকের (রাঃ) নেতৃত্বে এক দল।

 

.

 

এখন আমাদের অনেকেই অনলাইনে হাতি-ঘোড়া মারলেও দেখা যায় পরিবারে প্রোফাইল সুবিধার না, অর্থাৎ তাদের কথা বৃহত্তর পরিবারের সবাই ভালভাবে গুরুত্ব দেয় না। কারো যদি পরিবারে নেতৃত্বের পজিশন ভাল না হয়, তাহলে এটা মোটামুটি অসম্ভব যে বাইরের লোকজন তার নেতৃত্ব ভালভাবে নিবে (ব্যতিক্রম থাকতেই পারে)। আমাদের উচিত প্রথমে পরিবারে নেতৃত্ব প্র্যাকটিস করা। তবে নেতৃত্ব দেবার জন্য অবশ্য আগে দায়িত্বশীল হতে হয়, সেটা পালন করা যে জরুরী, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কোর ফ্যামিলিতে অবস্থান হবে অনেকটা সুপারহিরোর মত - যাকে দিয়ে প্রায় সব কাজ হয়, বা যে কাজটা ম্যানেজ করে দিতে পারে, যার উপর ভরসা করা যায়। এরপর আসে কর্মক্ষেত্র। এখানেও ক্রমশ নেতৃত্বের ছাপ দেখাতে হবে, তা ছোট কোন টিম হলেও।

 

.

 

ইমাম ইবনুল জাওযী (রহ) উল্লেখ করেন যে "একজন বাচ্চার মধ্যে নেতৃত্ব আছে কিনা তা ছোটবেলায় প্রকাশ পায়। কেউ বলে আমি কার টিমে খেলবো, কেউ বলে আমার টিমে কে খেলবে।" শিশুদের নেতৃত্ব শেখার স্কোপ দিতে হবে, পরিবেশ দিতে হবে। আর এক শায়খ বলেছিলেন দরকার হলে আপনার বাচ্চাকে জুমআর নামাজের পর সবাই চলে গেলে মিম্বারে বক্তৃতা দেবার প্র্যাকটিস করান, এই ধারণা দেন তুমি এই উম্মাহর ভবিষ্যৎ নেতা। পাবলিক অ্যাড্রেসিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ এক দক্ষতা।

 

.

 

আমাদের টিপিক্যাল প্রত্যাশা হচ্ছে - কোন এক নেতা এসে আমাদের নেতৃত্ব দেবে এবং আমরা সবাই তার ডাকে সাড়া দিব, তার অধীনে কাজ করবো। কিন্তু নেতা বানানোর দক্ষতা বা ইচ্ছা আমাদের মধ্যে সিসটেমেটিক্যালি ধ্বংস করে দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন স্কেয়ার ট্যাকটিক্স দ্বারা। এ অবস্থা আমরা যতদিন নিজেরা পরিবর্তন করতে সচেষ্ট হবো, ততদিন মুসলিমরা মার খেতেই থাকবে। আল্লাহ বুঝ দিন।

 

 

২৫/৫/২০১৯

এম মাহবুবুর রহমান

 

 

 

 

 

# পনেরো

 

"শেষের ভালো যার, সব ভালো তার"

 

দেখতে দেখতে রামাদ্বান শেষ হতে চলল। যা গত তা নিয়ে শত ভাবনার দ্বার খুলেও কোন লাভ নেই এখন আর। তার চাইতে বরং সামনের দিনগুলি নিয়ে ভাবাটাই আর তদ্বানুযায়ী আমল করাটাই এখন বুদ্ধিমানের কাজ। গুনাহ থেকে মুক্তির আশা, ভাগ্য রজনী লাইলাতুল ক্বদরের তালাশে দশ-দশটা রহমতের রাত তো রয়েছেই হাতে। (আলহামদুলিল্লাহ্‌)

.

 

বিশ্বাস করুন, সময় এখনো ফুরিয়ে যায় নি; সময় আর সুযোগের সদ্বব্যবহার করার মোক্ষম সময় ঠিক এখন। ঠিক এই মুহুর্তে।

.

 

রসুল (সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, কোন ব্যক্তি এমন আমল করে যা দেখে মানুষ মনে করে যে - সে জান্নাতবাসী হবে, অথচ সে জাহান্নামী ৷ আবার কোন কোন মানুষের আমল দেখে মানুষ মনে করে যে - সে জাহান্নামী হবে, অথচ সে জান্নাতী ৷ কেননা সর্বশেষ আমলের উপরই ফলাফল নির্ভরশীল ৷

 

[সহীহ বুখারী, হাদীস নং ৬৪৯৩, শারহুস সুন্নাহ, হাদীস নং ৭৯]

বর্ণনাকারী: সাহল ইবনে সা'দ (রাদ্বিয়াল্লাহু তাআলা আনহু)

.

 

ইবন আল-যাওজি (রহ:) বলেছেন: "যখন রেসের ঘোড়া বুঝতে পারে আর অল্পক্ষণ বাদেই পথ শেষ হয়ে যাবে তখন সে তার সর্বশক্তি দিয়ে রেস জিততে উদ্যত হয়; রেসের ঘোড়া যেন তোমার চাইতে চালাক না হয়; প্রকৃতপক্ষে, আমল বিচার করা হয় তা কিভাবে শেষ হয় তার মাধ্যমে; সুতরাং যদি ভালোভাবে রামাদ্বান শুরু নাও করতে পারো শেষদিকেরটা যেন ভালোয় ভালোয় বিদায় করতে পারো"।

 

.

ইবনে তাইমিয়্যাহ (রহ:) বলেছেন, "কোন জিনিসের শেষ কত পরিপূর্ণভাবে হয়েছে সেটাতেই রয়েছে শিক্ষা, শুরুর ভুল-ত্রুটির মধ্যে কোন শিক্ষা নেই"।

 

.

হাসান আল-বাসরী (রহ:) একই কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, "যতটুকু (সময়) বাকী আছে তার মধ্যে তোমার আমল বাড়াও এবং তোমাকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে যতটুকু (সময়) গত হয়েছে তার জন্য; কাজেই যতটুকু সময় পাও তার জন্য জীবন ঢেলে দাও কারণ তুমি জান না কখন তোমার আত্না আল্লাহর রহমতের দিকে ধাবিত হবে"।

.

 

সুতরাং এই মুহুর্তে উচিৎ রামাদ্বানের প্রতিটি দিনকে গুরুত্ব দেয়া এবং প্রতিটি দিনকে জীবনের শেষ দিন মনে করে আল্লাহর নাফরমানী থেকে দুরে থাকা এবং নিজেকে সৎআমলের দিকে তাক করে রাখা। শপিং-এ ব্যস্ত না থেকে নিজেকে ন্যস্ত করি রবের দিকে। মাত্র দশটা দিন, দশটা রাত।।দিন বদলের রাত।

 

.

আসুন শেষ দশ দিন, এমন আমলে ভরুক প্রতিদিন:

 

-স্বলাহ (ফরদ্ব, সুন্নাহ ও ক্বিয়ামুল লাইল)

-কুর'আন তিলাওয়াত

-তাসবীহ, তাহলীল আর তাহমীদ

-দরূদ

-সদাক্বা (বেশী বেশী)

-ঘর কোণা হওয়া। বেহুদা ঘোরাফেরা না করা

-ইফতার ও সাহরী করা

-সামনের কাতারে ফরদ্ব স্বালাত আদায়

-খোশ গল্প, দুনিয়াবী আড্ডা ত্যাগ

-দুনিয়াবিমুখ হওয়া

-অনলাইনে বেহুদা সময় না কাটানো

-দু'য়া করা

-ইস্তিগফার (বেশী বেশী)

 

.

আল্লাহর নিকট সবসময় দু‘আ করি যেন তিনি রামাদ্বানের বাকী দিনগুলিতে বেশী বেশী আমলে সালেহ করার তাঊফিক দেন। সেই সাথে মৃত্যুর পূর্বে বেশি বেশি নেক আমল করার ফুরসৎ দান করেন। রবের সন্তুষ্টি নিয়ে প্রত্যাবর্তন করার ব্যবস্থা করে দেন। (আমীন)

 

.

 

#ইন্নামা_আ_মালু_বিল_খাওয়াতীম

 

-রাজিব হাসান

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

# ষোল

 

"Every born Muslim must be reconverted to Islam sometimes during his life; Islam can not be inherent "

 

" প্রত্যেক জন্মগত মুসলিমকে জীবনের কোন সময়ে নতুন করে ইসলামে প্রবেশ করা উচিত। ইসলাম উত্তারধিকার সূত্রে পাওয়া যাবে না।"

 

--মুরাদ উইলফ্রেড হফম্যান

( জার্মান মুসলিম দার্শনিক)

সূত্র- উত্তর আধুনিক মুসলিম মন, ফাহমিদ উর রহমান

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

# সতেরো

 

সামান্য একটা মাসআলায় মতবিরোধের কারণে ভিন্নমতের দমনের জন্য সাহাবিদের উপর কত বড় অপবাদ দিয়ে দিতে পারে হকের ঠিকাদাররা! অবেক্ষমাণ প্রুফরিডার ভাইয়ের এ লেখাটা পড়েন-

 

‘সাহাবীদের বগলে মূর্তি নিয়ে নামায ঠেকাতে নবীজী রফে ইয়াদাঈন করাতেন’(নাউযুবিল্লাহ)

 

কথিত আছে, সাহাবীগণ মূর্তির ভালোবাসা সহজে ছাড়তে পারেন নি। তাই নামায পড়তে গিয়েও বগলে মূর্তি রাখতেন। নবীজী [সল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] যেহেতু হেকমতওয়ালা ছিলেন, তাই মুখে কিছু না বলে প্রতিবার রুকু-সিজদার আগে-পরে দুই হাত উত্তোলন (রফে ইয়াদাঈন) করতেন। দুই হাত উঁচু করার কারণে মূর্তি পড়ে যেত।...

 

নিজের বিবেকে না মানলেও নিশ্চিত হওয়ার জন্য মাওলানা যাকারিয়া আব্দুল্লাহ সাহেবকে (হাফিযাহুল্লহ) এ বিষয়ক প্রশ্ন করার পর তিনি অত্যন্ত দুঃখের সাথে বললেন, (সংক্ষেপে) লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ। এসব কথা শোনাও তো উচিত না। এসব কিছু মুর্খলোকের বানানো কাহিনী। কত বড় অপবাদ!

 

 

 

 

 

 

# আঠারো

 

আমার বন্ধুর খুব কষ্ট। সে পরিবারের অমতে বিয়ে করতে চায় না। এমনিতে পরিবারের হাল না ধরেও সে বিয়ে করতে চায় না। কিন্তু সে চায় পরিবার যেন তার এই কষ্টকে, ত্যাগকে, লয়েলিটিকে এ্যাপ্রিশিয়েট করুক।

 

.

 

সে বলে, যদি পরিবার বলে তুই বিয়ে করে ফেল, তবে আমি বলবো, না! আগে ভালো জব করা শুরু করি, ইস্টাবলিশ হই, পরিবারের হাল ধরি, তারপর বিয়ে করবো। কিন্তু উল্টো পরিবারই বলে, ওই তুই আবার ওর মত বিয়ে করে ফেলিশ না। আগে ভালো জব কর, ইস্টাবলিশ হ, পরিবারের হাল ধর, তারপর দেখা যাবে।

 

.

 

তো আমার বন্ধুর এ জন্য খুব কষ্ট হয়। সে পরিবারের জন্য ত্যাগ-তিতিক্ষা সহ্য করতে, বিয়ে না করতে রাজি আছে। কিন্তু এর বিপরীতে সে পরিবার থেকে একটু সান্তনা চায়। তার ত্যাগ-তিতিক্ষা, এবং ধৈর্য্য ধারণের ক্ষেত্রে উৎসাহ চায়, খানিকটা এ্যাপ্রিসিয়েশন চায়।

 

.

 

আমি বরং বলবো যে শুধু সে-ই না, তার মত বাকি আট-দশটা ছেলের ক্ষেত্রেও তা অনুরূপ। কিন্তু পরিবার যখন তাকে জাস্ট একটা মাংসের টুকরার মেশিন মনে করে, যখন তার আশা-আকাঙ্ক্ষাকে গুরুত্ব দেয় না, তখন তার জন্য বেঁচে থাকা খানিকটা হলেও কঠিন হয়। আমি বলছি না তাদের ধরে ধরে বিয়ে দিয়ে দিতে হবে। কিন্তু পরিবার থেকেই যদি ছেলের বিয়ে নিয়ে খুনসুটি করা হয়, ছেলেগুলো একটু সান্তনা পায়। তাদের মন প্রফুল্ল থাকে। তারা উদ্দীপনা পায়। কেন তবে বিয়ে করতে পারবি না, এসব বলে তাদের মন খারাপ করে দেয়া হয়?

 

.

 

ভাবলাম, অনেক ভাবলাম। তারপর একটা উদাহরণ বের করার চেষ্টা করলাম। পরিবারগুলো মনে করে যে, ছেলেগুলোর জন্য বউ হচ্ছে জন্মদিনের কেক এর মত। এটা জরুরী কোন বিষয় নয়। জন্মদিনে কেক কাটলে কাঁটা যায়, না কাঁটলেও এমন কি আর হবে! কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে যে বউরা হচ্ছে সেহরীর মত। সেহরী ছাড়াও র‌োজা হবে। কিন্তু সেহেরী ছাড়া কি শান্তিতে রোজা রাখা যায়?

 

.

 

তবুও ছেলেগুলো রাজি আছে যে পরিবারের জন্য হলেও সেহেরী ছাড়া রোজা রাখতে। কিন্তু তারা এর জন্য একটু বাহবা চায়, তাদের ত্যাগ-তিতিক্ষার একটু কদর চায়, যেন সে আরো ধৈর্য্য ধরতে পারে। তারা চায়, কেউ তাদের পিঠ চাপড়ে বলুক, আর এই তো কিছু সময় বাকি, এরপরেই আসবে সুখের সময়। কিন্তু কারো কোন খেয়াল নেই কিভাবে সে একাকি ছটফট করে চোখ শীতল করা একজনের জন্য। তাদের আবেগ, আহলাদ তো বাকিদের কাছে ন্যাকামি ঠ্যেকে!

 

.

 

তাদের কষ্টের কোন দাম দেয়া হয় না। তাদের মত ছেলেরা ছাড়া আর কেউ তাদের পক্ষে কথা বলে না। তখন তারা হতাশার অকূল দরিয়ায় মাঝে হারিয়ে যায়। তাদের স্বাভাবিক জীবন বাধাগ্রস্ত হয়। তার চোখের কোনে জমা হয় অশ্রুর ফোঁটা। সে তা লুকিয়ে রাখতে চায়। কিন্তু রব্বুল 'আলামীনের কাছ থেকে লুকোতে পারে না।

 

- ইবনু মাজহার

- বেক্রুন ডট কম

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

# উনিশ

 

আমি আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি না৷ আপনার বয়েস, পেশা কিংবা অভিরূচি কোনোটাই আমি জানি না। কারণ আমি আপনার সাথে কখনও সফরে যাই নি, কোনো লেনদেন কখনও করিনি এমনকি দেখাও করি নি সামনাসামনি। তাহলে আপনার সাথে আমার পরিচয়টা ফেইসবুকে। আপনার প্রোফাইলের কাজকর্মের মাধ্যমে আপনার পরিচয়টা আমার কাছে আসবে। আপনি কুর'আন - হাদিসের কিছু আয়াত শেয়ার করলেন, আমার প্রথমেই ধারণা হবে আপনি ইবাদাতগুজার মানুষ। আবার মাঝে মাঝে সিনেমা, সিরিয়াল, গান ইত্যাদি শুনছেন বলেও নিজের অনুভূতি শেয়ার করলেন, এর সাথে দিলেন কিছু সিনেমার রিভিউ। আপনার সম্বন্ধে আমার ধারণা হবে আপনি বেশ আমুদে আর বিনোদন জগতে আপনার বেশ ভালো বিচরণ। এখন, এই যে একই সাথে কুর'আনের আয়াত আবার জনৈকা অভিনেত্রীর ছবি শেয়ার করছে, তাতে করে সামগ্রিকভাবে আপনার উপর আমার কিংবা আর দশজন মানুষের কী ধারণা হওয়া উচিত? উত্তরটা নিজের কাছে রাখুন আপাতত। পরে এই ব্যাপারে বলছি।

.

.

অথবা মনে করুন আপনি অফলাইনেই একজন সুন্নাতের লেবাসে চলাফেরা করছেন এমন একজন লোক। নতুনভাবে দ্বীনের পথে এসছে এমন একজন ভাইয়ের সাথে মসজিদে কিংবা অন্য কোথাও আপনার সাথে দেখা। সে আপনার ফেইসবুক আইডি চাইলো, দিলেন। কিন্তু, আপনার প্রোফাইলে গিয়ে দেখলো কেবল হাসিঠাট্টামূলক ট্রল পৌস্টে ভরপুর। এতে করে নতুন দ্বীনের পথে আসা ভাইটিও একটি প্রচ্ছন্ন ধারণা পেয়ে যাবেন যে এই ধরণের ট্রলগুলোই বোধহয় তথাকথিত দ্বীনি-ভাইয়েরা করে থাকেন, মতান্তরে এটাই এই যুগের ইসলামের হালচাল।

.

আপনি যখন ইসলাম নিয়ে নিজে দুটি কথা লিখবেন, না লিখলেও নিদেনপক্ষে আরেকজনের কথাগুলো শেয়ার করছেন তখন আপনাকে না দেখেই একজন মানুষ আপনার প্রতিবিম্ব আঁকতে চাইবে, ইসলামের একটা আদল সেই আঙ্গিকে নিজের মনের ঘরে বসিয়ে জায়গা করে নেবে। এটা যে সে ইচ্ছে করে করছে তা নয়, সম্পূর্ণ সাবকনশাস মাইন্ডে এই প্রক্রিয়াটা চলছে৷

.

আমরা এখন অনলাইনে হয়তো দেখছি অনেক ভাই তাঁদের প্রোফাইল সাজিয়ে রেখেছেন কেবল ফান, ট্রল আর বিভিন্ন কৌতুকের ছবিতে, কারো প্রোফাইলে গত ২০ টা পৌস্টের মধ্যেই আছে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং, কোথায় লাঞ্চ - ডিনার করেছেন, ইফতার করেছেন, ভাইব্রাদার মিলে কোথায় বেড়াতে গিয়েছেন ইত্যাদি দিয়ে৷ খুব দুঃখের সাথেই বলতে হচ্ছে এখন এটাই বাস্তবতা। আবার কিছু ভাই হয়তো বিবাহ, বহুবিবাহ ইত্যাদি নিয়ে করা পৌস্টগুলোতে খুব মজা হিসেবে নিচ্ছেন। যিন অবিবাহিত আপনি তার জায়গায় নেই, তার পারিপার্শ্বিকতাও আপনি জানেন না। যিনি বহুবিবাহ করছেন না, তার ওজরও আপনি জানেন না। এই ব্যাপারগুলো নিয়ে ফান করাটা কি এখন ট্রেন্ড হয়ে গেলো?

.

তাহলে, সামগ্রিকভাবে এসব কী প্রতিচ্ছবি দাঁড় করাচ্ছে ভাবা উচিত। আপনার ফ্রেন্ড এবং ফলোয়ার লিস্ট মিলিয়ে থাকা এতো মানুষের কাছে ইসলামের কোন দিকটি আপনি তুলে ধরছেন?

.

তাহলে প্রশ্ন হলো, আমাদের কি ব্যক্তিগত জীবন থাকবে না? অবশ্যই থাকবে। কিন্তু, সেই জীবনটাও সুন্নাহ কেন্দ্রিক হলে তো সমস্যা থাকে না। আপনি আপনার ব্যবসা, ঘোরাঘুরি, মজা শেয়ার করুন, কিন্তু প্রতি ১০ টা পোস্টের ৮ টাই এমন হলে সেটা কি ইসলামের একজন দা'ঈ হিসেবে আপনাকে রেপ্রেজেন্ট করছে?

.

এছাড়াও অধিক হাসিতে অন্তর ম'রে যায়- এতো আমাদের জানা কথা। মুসলিম উম্মাহের অবস্থাও তো খুব একটা ভালো না। আপনি নিজেই ভাবুন, ২০০০ সালের আগে আমরা কয়টা মুসলিম দেশের হতাহতের কথা পড়তাম খবরের কাগজে? কেবল ফিলিস্তিনের কথা দেখতাম অধিকাংশ সময়। এখন নিউজ দেখুন। মনে কি হচ্ছে না সংখ্যাটা বেড়েছে? আগেও কম বেশি নির্যাতন হত মুসলিমদের প্রতি। কিন্তু, তা কি আগের চেয়ে অল্প হলেও বর্তমানে একটু বেশিই নয়?

.

অনিচ্ছাকৃত ভাবে আমার নিজেরও অনেকসময় এইসব সস্তা জিনিসের প্রতি সময় ব্যয় হয়ে যায়, আল্লাহ ক্ষমা করুন আমায়৷ নিজের ভুল স্বীকার করতে আমার আপত্তি নেই। এটা আসলেই ভাবার বিষয়- আপনি কোথায় যাচ্ছেন, কী কেনাকাটা করছেন, কাকে নিয়ে মজা করছেন এসব জানার জন্যে আসলেই কেউ মুখিয়ে নেই৷ টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া যেতে অথবা দুবাই থেকে নিউইয়র্কে যেতে প্রতি ঘন্টার চেক ইন দেখতে, ম্যাকডোনাল্ডের খাবার দেখতে কেউ বসে নেই।

.

ঈমানের ক্ষেত্রে ধ্রুব বলে কোনো শব্দ নেই। গত ৫ বছর আগে আপনার যে ঈমান ছিলো, আজ হয় তার চেয়ে বেড়েছে নয় কমেছে। এটা আপনি নিজেই অনুভব করতে পারবেন। সবাইকে ফাঁকি দিলেও নিজের কাছে নিজেকে সবাই-ই চেনে। সে আগে কী ছিলো আর এখন কী হয়েছে একথা আর কেউ না জানলেও সে জানে, আল্লাহ জানেন। আপনার স্ত্রী, সন্তান, জীবিকা যদি আপনাকে দ্বীনের কাজ থেকে সরিয়ে নেয়, তবে বুঝে নিন আপনি এক পরীক্ষার ভেতর যাচ্ছেন। সুতরাং, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে যদি মনে হয় আগের চেয়ে ভালো আছি, তবে ভালো। তবে এর বিপরীত হলে আসলেই এটা অশনিসংকেত। কারণ, এখন সেই শেষ জমানা চলছে যখন নিজের ঈমান ধরে রাখা জ্বলন্ত কয়লা হাতের মুঠোয় চেপে ধরে রাখাই কঠিন। প্রতি মুহূর্তেই নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করা লাগছে। আর দ্বীনের কাজ আপনি না করতে চাইলে, আল্লাহ আরেকজনকে দিয়ে সেই কাজ করিয়ে নেবেন। শঙ্কার জায়গাটা এখানেই৷

.

.

আপনি যদি অনেক পুরোনো ফেইসবুকার হয়ে থাকেন আর তখন থেকেই ইসলামিক লিখাগুলোর সাথে পরিচিত হয়ে থাকেন, তবে দেখবেন সেই সময়ের অনেক সক্রিয় মানুষজন এখন বেশ আটপৌরে জীবনে নিজেদের আঁটিয়ে নিয়েছেন। কেউ ব্যস্ত নিজের দুনিয়া কামাতে, কেউ ব্যস্ত সস্তা মজা করে সময় পার করতে আবার কেউ ব্যস্ত অসাড় কথা নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা বাহাস করা নিয়ে। তবে সাথে এও দেখে থাকবেন, অনেক নতুন ছেলে ইদানীং লিখছে, অফলাইনে কাজ করছে। এরা কোত্থেকে এলো? এরা হলো আগের ব্যাচের রিপ্লেইসমেন্ট। আল্লাহ এখন এই নতুন দ্বীনের পথে আসা ছেলেগুলো দিয়েই কাজ করিয়ে নিচ্ছেন। এরাও দ্বীনের কাজে কখনও নিজেদের মাহরুম করলে আল্লাহ আবার আরেকদল মানুষ পাঠিয়ে দেবেন। যুগ যুগ ধরে তাই তো হয়ে আসছে। আমাদের চোখের সামনেই তো তার জ্বলন্ত প্রমাণ আছে৷

 

- মিসবাহ মাহিন

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

# বিশ

 

 

জীবনী গ্রন্থ : আব্দুল্লাহ ইউসুফ আযযাম

মূল : ড. আবু মুজাহিদ

অনুবাদ : আবিদ হাসান

সম্পাদনা : Ali Hasan Osama

প্রকাশনায় : দারুল ফিকর

.

শীঘ্রই আসছে ইনশাআল্লাহ

...

অনুবাদকের অনুভূতি

 

সকল প্রশংসা আল্লাহ রব্বুল আলামীনের। সালাম ও রহমত বর্ষিত হোক প্রিয় নবীজির উপর।

.

মুসলিমগণ একবারের জন্যও যে ভূমিটি বিজয় করেন। সে ভূমিটি ইসলামী দেশ হয়ে যায়। প্রতিটি মুসলিমকে নিজ প্রাণ দিয়ে রক্ষা করতে হয় ইসলামী ভূখণ্ডকে। এমনকি ঈমান আনার পর প্রথম ফরজ হচ্ছে মুসলিম ভূমির প্রতিরক্ষা—আলেমদের থেকে এভাবেই মাসআলাটি বর্ণিত হয়ে আসছে।

 

ইতিহাস পড়ে আমরা অনেক কিছুই জানতে পারি। ইতিহাস পড়ে অর্জিত জ্ঞানের একটি অংশ হচ্ছে, মুসলিমদের দেশ বিজয় ও জিহাদের গৌরবময় কারনামা। মুসলিম উম্মাহকে রক্ষা করা ও ইসলামী ভূখণ্ডের প্রতিরক্ষা জিহাদের অন্যতম কারণও বটে। কিন্তু পূর্বসূরিদের মহৎ সে পথ ছেড়ে আজ আমরা গোলামীর জিঞ্জিরে আবদ্ধ!

 

কেউ যদি মুসলিম ভূখণ্ডের প্রতিরক্ষায় অস্ত্র নিয়ে এগিয়ে আসে, তবে বিধর্মীদের গোলামরা তাদের বিরুদ্ধে কামানের সবকটি গোলা দেগে দেয়। কেবল এতটুকুতেই ক্ষান্ত নয়। বিষয়টি এরচে ভয়াবহ। শত্রু রাতো আছেই, বর্তমানে অনেক নামধারী মুসলিমরাও শত্রুদের দলে। পরাজয়ের কালিমা যেদিন এ জাতির কপালে লেগেছে, সেদিন থেকে মুসলিম জাতি একে একে হারিয়ে আসছে তাদের আকিদা ও মূল্যবোধ।

 

যেখানে মুসলিমরা মুসলিমদের সাহায্য করবে। সেখানে আজ অনেক নামধারী মুসলিম কাফের ও কাফেরদের চেলাদের প্রতি সাহায্য-সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। তাদের গোলামী করছে অকুণ্ঠচিত্তে।

 

মুসলিম উম্মাহ আজ ঘুমন্ত। তাদের মাঝে ঈমানের অঙ্গার সুপ্ত হয়ে আছে। উসামানী খেলাফতের পতনের পর থেকে মুসলিম উম্মাহ ঘুমিয়ে আছে বেঘোরে। যেন তাদের জাগানোর মতো কেউ নেই। কিন্তু অনেক বছরের ঘুমের পর। আফগানে যখন হামলে পড়লো রুশ ভল্লুকরা তখনই বুঝি মুসলিমদের নব জাগরণের সূচনা ঘটলো।

বৈশ্বিক কুফরী শক্তির বিরুদ্ধে আফগান মুসলিমগণ যেভাবে জেগে উঠেছেন। একইভাবে যেন সারা বিশ্বের সকল মুসলিম জেগে উঠেন ঈমানের জোরে। এমনই প্রত্যাশা ছিল শাইখ আব্দুল্লাহ আযযাম রহ.-র। মুসলিম জাগরণের একটি সুযোগ দেখলেন তিনি। সে সুযোগ কাজেও লাগালেন যথার্থভাবে। শত্রুদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা কতটা অপরিহার্য বুঝিয়ে গেলেন মুসলিম উম্মাহকে।

 

কখনো লেখনি দিয়ে, কখনো বক্তৃতা দিয়ে, কখনোবা সশরীরে কিতালে অংশ নিয়ে মুসলিম জাগরণের এক মহৎ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখলেন। সফলও হলেন। দলে দলে জিহাদে যোগ দিতে লাগলো পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আগত মুসলিমগণ।

 

ইসলামের নিভু নিভু করা একটি ফরজের গুরুত্ব বোঝালেন তিনি। মুসলিমদের জাগরণের পেছনে কাজ করে গেলেন। আজ তার কাজের ফলাফল আমরা স্বচক্ষে অবলোকন করছি।

 

আলহামদুলিল্লাহ। এভাবেই মুসলিমরা এক সময় জাগবে সকলে। শত্রুদের মোকাবেলায় রুখে দাঁড়াবে। সেদিন আর নয় বেশি দূরে। যেদিন কালিমার পতাকা সমগ্র পৃথিবী জুড়ে পতপত করে উড়বে।

 

বিংশ শতাব্দীর মুসলিম জাগরণের অগ্রনায়ক শাইখ আব্দুল্লাহ আযযাম রহ.। তাঁর জীবনের উপরে কাজ হওয়ার দরকার ছিল বহু আগেই। কিন্তু বিষয়টিতে কেউ হাত দেয়নি দেখে আমি বিস্মিত ও দুঃখিত হয়েছি। ...

 

শাইখের এ জীবনিটি রচনার ক্ষেত্রে মূল অবলম্বন হিসেবে গ্রহণ করেছি আরবী একটি জীবনি গ্রন্থকে। গ্রন্থটি শাইখের এক আত্মীয়ের লিখিত। নাম ড. আবু মুজাহিদ। গ্রন্থটি মারকাযুশ শহিদ আযযাম আল-ইলামি থেকে প্রাকশিত হয়। ... এ ছাড়া শাইখের অন্যান্য কিতাবগুলো ঘেঁটে জরুরী কিছু তথ্য যোগ করলাম। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সারসংক্ষেপ আনলাম। অবশেষে গ্রন্থটি একটি পূর্ণরূপে এলো।

 

 

আবিদ হাসান

লেখক, অনুবাদক

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

# একুশ

 

কে দেখেছ বন্ধুকে মোর

ছিন্ন কাপড় গায়ে,

ভগ্ন শরীর, হলদেটে মুখ

জুতাবিহীন পায়ে!

 

মুখ-মাঝারে দুখের সারি

টপকে যেন বয়,

রাত গভীরে প্রভুর পানে

প্রার্থনাতে রয়।

 

দু হাত তুলে বলে কেঁদে—

ওগো মনের মালিক,

ক্ষমা করো তুমি মহান—

তুমিই আমার খালিক।

 

অশ্রুজলে যায় যে ভেসে

গণ্ডদেশের পাশ,

এই না বুঝি গেল হয়ে

জীবনটা তার লাশ!

 

জান্নাতী সুখ চাইতে থাকে

মহান রবের কাছে,

তার অধীনেই সকল কিছুর

উপস্থিতি আছে।

 

তাঁবুর ভেতর সুপ্ত-থাকা

জান্নাতী হুর চায়,

চমকপ্রদ সুন্দরী খুব—

কুমারী যেন পায়।

 

পোশাক যাদের হবে রেশম

দেখলে হবে সুখ,

কব্জিদ্বয়ে পরবে চুড়ি

সৌম্য শান্ত মুখ।

 

পানীয় হবে খাঁটি মধু

দুধের নহর র’বে,

নেশাবিহীন মদ্য পানের

সুযোগ পাবে সবে।

 

কে দেখেছ বন্ধুকে মোর

ছিন্ন কাপড় গায়ে,

ভগ্ন শরীর, হলদেটে মুখ,

জুতাবিহীন পায়ে!

 

========================

 

এটি একটি আরবী কবিতার কাব্যানুবাদ। মাকতাবাতুল আসলাফ থেকে প্রকাশিতব্য বই 'গুরাবা'তে এটি পাবেন। এমন আরও বহু কবিতা আছে তাতে। কাব্যানুবাদগুলো আমার করা। এই কবিতার শানে নুযুল হলো :

 

হুসাইন ইবনু আহমাদ আল আযদী রহিমাহুল্লাহু বলেন, ‘মুছাইছা নামক স্থানে একজন নেককার যুবক এলো। সে কাঠুরে আসাদের মসজিদে অবস্থান করতে লাগল। যুবকটি সেখানে বিভিন্ন লোকজনের থেকে নানান কথাবার্তা শুনত। সে ছিল একেবারে হালকা গড়নের। পোশাকআশাকও ছিল ছেঁড়া। আসাদ যুবকের ইবাদত-বন্দেগিতে ব্যয় করা কঠোর শ্রমের বিষয়টি জেনে ফেলল। তাই সে তাকে খুব আপন করে নিল। তার সাথে কথাবার্তা বলা শুরু করলো। এ অবস্থা অবলোকন করে যুবক সেখান থেকে অন্য জায়গায় নীরবে সটকে পড়ল। আসাদ যুবকটিকে বহুত খোঁজাখুঁজি করেও কোনো পাত্তা পেল না। তখন সে ঐ যুবকের বিরহ-বেদনায় ভগ্ন হৃদয়ে কিছু কবিতা আবৃত্তি করল—

 

يَا مَنْ رَأَى لِي غَرِيبًا ... ثِيَابُهُ أَطْمَارُ

الْجِسْمُ مِنْهُ نَحِيلٌ ... وَالْوَجْهُ فِيهِ اصْفِرَارُ

عَلَيْهِ آثَارُ حُزْنٍ ... بِوَجْهِهِ وَاغْبِرَارُ

يَقُومُ فِي جَوْفِ لَيْلٍ ... يُنَاجِي الْجَبَّارَ

يَقُولُ يَاسُؤَلَ قَلْبِي ... يَا مَاجِدٌ غَفَّارُ

فَالدَّمْعُ يَجْرِي بِحُزْنٍ ... فَدَمْعُهُ مِدْرَارُ

يَبْغِي جِنَانَ نَعِيمٍ ... يَا حُسْنَ دَارِ الْقَرَارِ

فِيهَا جَوَارٍ حِسَانٌ ... يَا حُسْنَ تِلْكَ الْجِوَارِ

عَرَائِسُ فِي خِيَامٍ ... مِنَ اللَّآلِئِ الْكِبَارِ

كَوَاعِبُ غَنِجَاتٌ ... نَوَاهِدُ أَبْكَارُ

لِبَاسُهُنَّ حَرِيرٌ ... يُحَيِّرُ الْأَبْصَارَ

وَفِي الذِّرَاعِ سِوَارٌ ... يَا حُسْنَهُ مِنْ سِوَارٍ

شَرَابُهُنَّ رَحِيقٌ ... يُفَجِّرُ الْأَنْهَارَ

وَسَلْسَبِيلٌ وَخَمْرٌ ... تَبَارَكَ الْجَبَّارُ

يَا مَنْ رَأَى لِي غَرِيبًا ... ثِيَابُهُ أَطْمَارُ

 

- আব্দুল্লাহ আল মাসউদ

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

# বাইশ

 

হাসান বাসরি (রহ.) বলেন, “জান্নাতে মুমিন ব্যক্তি যখন মধুর নহরের পাশে হেলান দিয়ে বসে থাকবে, তখন বেহেশতের হুর তাঁর দিকে একটি পাত্র এগিয়ে দিতে দিতে বলবে, “আহ! কি উত্তম দিন আজ! হে আল্লাহর হাবিব! আপনি কি জানেন, আপনার সাথে আমার রব আমাকে কখন বিয়ে দিয়েছেন?

.

— না তো!

.

— গ্রীষ্মকালে, প্রচন্ড গরমের দিনে আল্লাহ্ তাআলা আপনার দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিলেন। দেখলেন আপনি প্রচণ্ড পিপাসার্ত। তখন তিনি ফেরেশতাদের ডেকে বললেন, “দেখ! আমার অমুক বান্দাকে দেখ! সে তাঁর স্ত্রীকে ভুলে গেছে। খাদ্য, পানীয় ছেড়ে দিয়েছে। স্বাদ ত্যাগ করেছে। মনের ইচ্ছাকে কুরবানি করেছে। শুধু আমার কারণে। আমার কাছে যা আছে তার প্রতি প্রবল আগ্রহে। তোমরা সাক্ষী থাকো, আমি আমার এই বান্দাকে মাফ করে দিলাম।”

.

সেদিন আল্লাহ তাআলা আপনাকে মাফ করে দিয়েছিলেন এবং আপনার সাথে আমাকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন।”

▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂

.

লেখাঃ ইমাম ইবনু আবিদ দুনইয়া (রহ.) (আল্লাহ্‌ তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন!)

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

# তেইশ

 

মসজিদুল হারামে গতকাল তাহাজ্জুদের নামাজ যেই দুজন ইমাম সাহেব পড়িয়েছেন, তারা সেখানে প্রায় ৩০বছরের বেশি সময় ধরে নামাজ পড়ান। অন্যান্য ইমামরা মাঝে মাঝে তিলাওয়াতে করতে গিয়ে ঠেকে গেলেও এই দুজনের সাধারণত তেমন হয় না।

 

অথচ গতকাল এ দুজনেরই একজন সুরা বাকারার ২য় আয়াতটা মনে করতে পারছিলেন না। “হুদাল লিল মুত্তাকীনের” জায়গায় বারবার “হুদাল লিল আলামিন” পড়ছিলেন। যেই আয়াতটি প্রায় অধিকাংশ মুসলিমেরই মুখস্থ, সেই আয়াতটাই মনে পড়ছিল না এত বড় একজন ইমামের!

 

এই সমস্ত টুকরো ঘটনা এটাই মনে করিয়ে দেয়, কুরআনে কারীম, আল্লাহর কালাম। আর দশটা কালাম থেকে সম্পুর্ণ সতন্ত্র। এই কালাম মুখস্থ করতে পারা, সুন্দর ও শুদ্ধভাবে তিলাওয়াত করা কারো নিজের কামাই না, বরং কেবল তাঁরই অনুগ্রহ। তিনি চাইলে যে কারো মুখস্থ অংশ তার থেকে হারিয়ে যেতে পারে। তিনি চাইলে অনেক ঠেকে কুরআন পড়নে ওয়ালাও পারে হাফেযদের কাতারে দাড়িয়ে যেতে।

 

হিফয কালীন সময়ে নিজেও এরকম বেশ কয়েকজন সাথী পেয়েছিলাম, যাদের মুখস্থ শক্তি দেখে ঈর্ষা হতো। কয়েক পৃষ্ঠা মাত্র দুই তিনবার তিলাওয়াত করলেই মুখস্থ হয়ে যেত। অথচ তাদের অনেকেই এখন দেখে দেখেও দুটি আয়াত তিলাওয়াত করতে পারে না। আবার অনেক তুলনামুলক মেধাহীনকেও দেখেছি, সারাদিন তিলাওয়াত করার পর হয়তো মাত্র তিন চারটি আয়াত মুখস্থ করতে পারতেন। তাদেরকে আল্লাহ হাফিয হিসেবে শুধু কবুল করেন নি, বরং তাদের পুরো জীবন এই কুরআনের খেদমতেই কেটেছে।

 

আল্লাহর কাছে চেষ্টার আর খালেস নিয়তের অনেক মুল্য। এ দুটো জিনিসই একজনকে আসমানসম উচ্চতায় নিয়ে যায়, এ দুটোর অভাবই হয়তো অনেককে ধসিয়ে দেয়।

 

- রিজওয়ানুল কবির

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

# চব্বিশ

 

মহিলাদের এতেকাফ----

.

.

১/ হজরত মুহাম্মদ সা. এর সহধর্মিণীরা এতেকাফ করতেন। হজরত আয়শা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, হজরত নবী করিম (সা.) তার ইন্তেকাল পর্যন্ত রমজানের শেষ ১০ দিন এতেকাফ করতেন। অতঃপর তাঁর ইন্তেকালের পর তাঁর স্ত্রীরা এতেকাফ করেছেন। (বুখারি, হাদিস নং ২০২৬)

 

.

 

#নারীদের এতেকাফের নিয়ম:

 

২/ নারীরা ঘরের নামাজ ও অন্যান্য ইবাদতের জন্য নির্ধারিত স্থানে এতেকাফ করবেন। যদি পূর্ব থেকে ঘরে নামাজের জন্য এমন কোনো স্থান নির্ধারিত না থাকে তাহলে এতেকাফের জন্য একটি স্থান নির্ধারিত করে সেখানেই এতেকাফ করবেন। (মাবসূত, সারাখসী ৩/১১৯; আলবিনায়াহ ৪/৩৮৬; আলমুহীতুল বুরহানী ৩/৩৭৯; তাবয়ীনুল হাকায়েক ২/২২৬; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/২১১; আদ্দুররুল মুখতার ২/৪৪১)

 

৩/ রমজানের শেষ দশকের এতেকাফ পুরুষের জন্য সুন্নাতে মুয়াক্কাদা আলাল কিফায়া হলেও নারীদের জন্য তা মুস্তাহাব।

.

 

#বিবাহিত নারীদের এতেকাফ:

 

৪/ বিবাহিতা মহিলারা রমজানের শেষ দশকের এতেকাফ বা অন্য সময়ের নফল এতেকাফের জন্য স্বামীর অনুমতি নিতে হবে। বিবাহিতা মহিলা স্বামীর অনুমতি ছাড়া এতেকাফ করা অনুচিত। স্বামীর অনুমতি নিয়ে মহিলারা এতেকাফ করতে পারবেন। আর স্বামীদের উচিত যুক্তিসঙ্গত, গ্রহণযোগ্য কারণ ছাড়া স্ত্রীদের এতেকাফ বারণ না করা, তাদের এতেকাফের সওয়াব থেকে বঞ্চিত না করা। (বাদায়ে ২/২৭৪।

 

৫/ স্বামী স্ত্রীকে এতেকাফের জন্য অনুমতি দেয়ার পর তাকে আর এতেকাফে বাধা দিতে পারবে না। যদি বাধা দেয় তাহলে সে বাধা মানা স্ত্রীর কর্তব্য নয়। (শামী ৩/৪২৯, আলমগীরি ১/২১১)।

 

.

 

#এতেকাফ অবস্থায় স্বামী স্ত্রীর মিলন:

 

৬/ এতেকাফ অবস্থায় দিন-রাতে কোনো সময়ই স্বামী-স্ত্রী মেলামেশা করা যাবে না। করলে এতেকাফ ভেঙ্গে যাবে। (সূরা বাকারা আয়াত ১৮৭, বাদায়ে ২/২৮৫, শামী ৩/৪৪২, হেদায়া ১/২৩১)।

স্বামী স্ত্রীকে এতেকাফের জন্য অনুমতি দেয়ার পর তার সঙ্গে সহবাস করতে পারবে না। (শামী, ৩/৪২৯)।

.

 

#পিরিয়ডের সময় এতেকাফ নয়:

 

৭/ মহিলাদের এতেকাফের জন্য হায়েজ, নেফাস থেকে পবিত্র হওয়া শর্ত। হায়েজ নেফাসের অবস্থায় এতেকাফ সহি হয় না। (বাদায়ে ২/২৭৪, আলমগীরি ১/২১১, শামী ৩/৪৩০)।

 

৮/ মহিলাদের সুন্নাত এতেকাফে বসার আগেই হায়েজ-নেফাসের দিন-তারিখের হিসাব-নিকাশ করে বসাই উচিত। যাতে এতেকাফ শুরু করার পর হায়েজ পিরিয়ড শুরু হয়ে না যায়। তবে কারও যদি রমজানের শেষ দশকে হায়েজ হওয়ার নিয়ম থাকে তাহলে তিনি হায়েজ শুরু হওয়া পর্যন্ত নফল এতেকাফ করতে পারেন। হায়েজ শুরু হওয়ার আগেই ওষুধ-বড়ি খেয়ে হায়েজ পিরিয়ড বন্ধ রেখে রোজা রাখলে এতেকাফ করলে রোজা ও এতেকাফ সহি হবে। কোনো মহিলা এতেকাফ শুরু করার পর যদি তার হায়েজ পিরিয়ড শুরু হয়ে যায় তাহলে তার এতেকাফ ভঙ্গ হয়ে যাবে এবং পরে শুধু একদিনের এতেকাফ রোজাসহ কাজা করতে হবে। (আহসানুল কাতাওয়া ৪/৫০২)।

 

৯/ মহিলারা ঘরের যে স্থান এতেকাফের জন্য নির্ধারণ করবে এতেকাফ অবস্থায়, তা পুরুষের ক্ষেত্রে মসজিদের মতো গণ্য হবে। অর্থাৎ মানবিক প্রয়োজন ছাড়া সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে পারবে না। মানবিক প্রয়োজন ছাড়া সে স্থানের বাইরে গেলে এতেকাফ নষ্ট হয়ে যাবে। (আলমগীরি ১/২১১, বাদায়ে ২/২৮২)।

 

১০/ মানবিক প্রয়োজন বলতে বোঝায় প্রস্রাব-পায়খানা। মহিলারা এতেকাফ অবস্থায় ঘরের নামাজের জন্য নির্ধারিত স্থান থেকে শুরু কেবল প্রস্রাব-পায়খানার জন্য বের হতে পারবেন। অজুর জন্যও বাইরে যেতে পারবেন। খাবার পৌঁছে দেয়ার লোক না থাকলে খাবার আনার জন্য বাইরে যেতে পারবেন। (বাদায়ে ২/২৮২, হেদায়া /২৩০, শামী ৩/৪৩৫)।

 

১১/ পানাহার এতেকাফের জায়গায় অর্থাৎ নামাজের জন্য নির্ধারিত স্থানে করতে হবে। বাইরে করা যাবে না। (হেদায়া ১/২৩০)।

 

১২/ এতেকাফের জায়গায় থেকে অন্যদের সাংসারিক কাজের ব্যাপারে নির্দেশনা দেয়া যাবে। বাইরে যাওয়া যাবে না। রান্না-বান্নার লোক না থাকলে এতেকাফের স্থান থেকে রান্না-বান্নার কাজ সম্ভব হলে করা যাবে। (মাহমুদিয়া ১৫/৩৩৪)।

 

১৩/ কোনো মহিলার স্বামী যদি মাজুর হয় তার সেবা-যত্নের প্রয়োজন হয়, তাহলে সে মহিলার উচিত হচ্ছে এতেকাফে না বসে বরং স্বামীর সেবা-যত্ন, দেখাশোনা করা। কারণ সওয়াবের নিয়তে স্বামীর খিদমত সেবা-যত্ন করলে এতেকাফের চেয়ে অধিক সওয়াব পাওয়া যাবে। যে মহিলার ছোট ছোট সন্তান আছে এবং তাদের লালন-পালন ও দেখাশোনার কেউ নেই এমন মহিলারও উচিত এতেকাফে না বসে সন্তানের লালন-পালন ও দেখাশোনা করা। যে মহিলার সাবালগ মেয়ে আছে। তাদের দেখাশোনার জন্য কেউ নেই। সে মহিলারও উচিত এতেকাফে না বসে বরং সাবালগ মেয়ের দেখাশোনা করা। (আহকামে রমজান ও জাকাত, ৬৪)।

 

-- বর্তমানে মহিলারা খুব কমই এতেকাফ করেন। অথচ এতেকাফ অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। আর মহিলাদের জন্য এতেকাফ তো সহজও বটে। ১০ দিনের এতেকাফ সম্ভব না হলে , আংশিক করা উচিত।

 

 

 

 

 

 

# পঁচিশ

 

লাইলাতুল ক্বদরের রাতটা কেমন এটা ভালোভাবে বুঝার জন্যে একটা চমৎকার উদাহরণ আছে। ধরুন, আপনার বস্‌ আপনাকে বললো আগামী দশদিনের মধ্যে একটা স্পেশাল দিন আছে। যেই কি না সেই দিনটিতে অফিসে এসে ঠিকমত কাজ করে যাবে, আমি তাকে ৮৩ বছর ধরে কাজ করার মতন বেতন দিয়ে দিব!

 

কেউ কি সেই দিন মিস্‌ করতে চাইবে?

 

আল্লাহ্‌ তা’আলা কুর’আনে বলেছেন, “লাইলাতুল ক্বদরি খইরুম মিন আলফি শাহ্‌র” – অর্থাৎ লাইলাতুল কদরের রাত ১০০০ মাসের চেয়েও উত্তম! এই একরাতে ইবাদাত করলে ৮৩ বছর ধরে ইবাদাত করার সওয়াব পাওয়া যাবে! This is amazing! এভারেজ মানুষ বাঁচেই জীবনে ষাট কি সত্তর বছর। সেখানে আল্লাহ্‌ তা’আলা আপনাকে, আমাকে ৮৩ বছর ধরে তাঁর ইবাদাত করার পুরস্কার দিবার অফার দিচ্ছেন! ইন ফ্যাক্ট, এটা ৮৩ বছরের চেয়েও উত্তম! মানে, আপনি সারাজীবন বেঁচে থেকেও যত ইবাদাত করতে পারতেন, একরাতে কেবল পাঁচ কি দশ ঘন্টা ইবাদাত করেই সেটা পেয়ে যাচ্ছেন! সুবহানআল্লাহ্‌! This is the Ultimate Offer!

 

আমদের লাইলাতুল ক্বদর রাতের গুরুত্ব সম্পর্কে ভালোভাবে জ্ঞান না থাকার কারণেই আমরা এই রাতে ইবাদাত করা নিয়ে গাফেল থাকি। কেউ যদি নাই জানে যে এই রাত টা মিস্‌ করার মাধ্যমে সে কত ধন-রত্ম হারিয়ে ফেলছে, তাহলে সে কিভাবে ইবাদাত করবে?

 

লাইলাতুল ক্বদর রোজার শেষ দশ দিনের যে কোনরাতেই হতে পারে, বেজোড় রাত গুলি হবার সম্ভাবনা বেশি আর কিছু হাদীস অনুযায়ী ২৭ তারিখে হবারও সম্ভাবনা আছে। কিন্তু স্কলাররা এটাই উপদেশ দেন যে, শেষ দশ রাতের প্রতিটা রাতকে লাইলাতুল ক্বদর ভেবে যে ইবাদাত করবে, সে অবশ্যই লাইলাতুল ক্বদর পেয়ে যাবে। আমাদের মহানবী(সাঃ) রোজার শেষ দশ দিন চলে আসলে কোমড় বেঁধে ইবাদাত করতে লেগে যেতেন, তিনি এই লাস্ট দশ দিন ধরেই টানা ই’তিকাফ করতেন, ২৭ রোজা আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতেন না। এটা নিয়ে বিস্তারিত হাদীসের বর্ণনা আর শরীয়াহ্‌র প্রমাণ পেতে এই Lesson টা শুনে দেখতে পারেন -

 

Video thumb

 

কিছু প্র্যাক্টিকাল টিপ্‌সঃ

 

- রোজার শেষ দশ রাতের প্রতিদিন এক টাকা হলেও দান করুন। তাহলে আপনার দান লাইলাতুল কদরের মধ্যে পড়লে আপনি ৮৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে দান করার সওয়াব পাবেন।

 

- রোজার শেষ দশ রাতে প্রতিদিন অন্তত দুই রাকাত করে নফল নামাজ পড়ুন। আপনার নামাজ লাইলাতুল কদরের মধ্যে পড়লে আপনি ৮৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে নামাজ পড়ার সওয়াব পাবেন।

 

- রোজার শেষ দশ রাতে প্রতিদিন কুরআন পড়ুন। তাহলে আপনার কুরআন পড়া লাইলাতুল কদরের রাতের মধ্যে পড়লে আপনি ৮৩ বছরেরও বেশি সময় ধরে কুরআন পড়ার সওয়াব পাবেন।

 

- কুরআন বুঝে পরার চেষ্টা করুন যতটুকু পারেন। আল্লাহ্‌ এই লাইলাতুল ক্বদরেই কুরআনকে পাঠিয়েছেন আপনার আমার জন্যে গাইডেন্স হিসেবে। কুরআন শুধু কিছু না বুঝেই আরবি পড়ে খতম দেয়ার জিনিস না। কুরআন হচ্ছে আল্লাহ্‌র কাছ থেকে আসা গাইডেন্স আর পথনির্দেশক। আপনার লাইফের সমস্ত সমস্যার সমাধান আছে কুরআনে! অর্থ সহ একটু পড়ে বুঝার চেষ্টা করুন আল্লাহ্‌ তা’আলা আপনাকে কি বলছেন কুরআনে।

 

- আল্লাহ্‌র সাথে কথা বলুন! আল্লাহ্‌র সাথে সম্পর্ক গড়ুন! আল্লাহ্‌ কে আপনার বেস্ট ফ্রেন্ড ভেবে কথা বলুন, সবকিছু শেয়ার করুন, গাইডেন্স চান এবং আল্লাহ্‌র উপর ভরসা রাখুন। দুনিয়ার সবাই আপনাকে ছেড়ে চলে যাবে, কিন্তু আল্লাহ্‌ তা'আলা যাবেন না!

 

- একটা দুয়ার লিস্ট বানিয়ে বেশি বেশি দুয়া করুন। দুয়াগুলি শেষ দশ রাতে পড়তে থাকুন। লাইলাতুল ক্বদরের রাতে আল্লাহ্‌ তা’আলা আপনার ভাগ্যে আগামী বছরের সমস্ত খুঁটি-নাটী ঘটনা নির্ধারণ করেন। আপনি এইরাতে আন্তরিক দুয়ার মাধ্যমে আপনার ভাগ্য পাল্টে দিতে পারেন। যেমন ধরুন, কেউ যদি দুয়া করে, “ইয়া আল্লাহ্‌! আগামী বছরের মধ্যে আমার এই চাকরি টা যেন হয়ে যায়” – সে যদি আন্তরিকতা এবং ঈমানের সাথে আল্লাহ্‌র কাছে লাইলাতুল ক্বদরে এটা চায়, তাহলে আল্লাহ্‌ তা’আলা তার আগামী বছরের ভাগ্য নির্ধারণের সময় চাকরি টার কথা লিখে দিবেন! এজন্যেই লাইলাতুল ক্বদরের আরেক নাম ভাগ্য রজনী! সুবহানআল্লাহ্‌! আল্লাহ্‌র কাছে মন খুলে চান এবং আল্লাহ্‌কে নিয়ে ভালো চিন্তা করুন যে, আল্লাহ্‌ অবশ্যই আপনার দুয়া কবুল করে নিবেন এবং আপনাকে অবশ্যই সবচেয়ে ভালো কিছুই দিবেন।

 

- নিজেদের মত করে ছোট-বড় সবরকমের ভালো কাজ করতে থাকুন! বাসার সবার জন্যে সেহ্‌রী বানিয়ে দিন, বাসন গুলো ধুয়ে দিন, অনেকদিন যার সাথে কথা হয়না তাকে ফোন করে খোঁজ খবর নিন, কারো প্রতি রাগ থেকে থাকলে সেটা ঝেড়ে ফেলুন, ক্ষমা করে দিন, কিছু টাকা জমিয়ে এতিম খানায় দিয়ে আসুন, গরিব বস্তির একটা ফ্যামিলিকে একবেলা ভালো খাইয়ে দিন, আপনার বাসায় কাজ করে মেয়েটার সাথে শুধু শুধু খারাপ ব্যবহার করা বন্ধ করে দিন, ওকে সুন্দর একটা ঈদের জামা কিনে দিন – ইত্যাদি ইত্যাদি যেখানে যেই ভালো কাজ করারই সুযোগ পান, সেটা লুফে নিয়ে করে ফেলুন এই নিয়তে যে, এটা করার মাধ্যমে আপনি আল্লাহ্‌কে খুশি করবেন। আপনার কাজ টা যদি লাইলাতুল ক্বদরের রাতের মধ্যে পরে যায়, ব্যস! ৮৩ বছর ধরে সেই ভালো কাজ করার সওয়াব পেয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ্‌!

 

শেষমেশ একটা হাদিস দিয়ে শেষ করি! একবার আমাদের মহানবী(সাঃ) মস্‌জিদের মিম্বারে উঠার সময় তিনবার “আমিন” বললেন। সাহাবী রা জিজ্ঞেস করলেন, “হে আল্লাহ্‌র রসূল(সাঃ)! আপনি আমিন বললেন কেন?”। তিনি উত্তর দিলেন যে, ফেরেস্তা জিব্রাইল(আঃ) মাত্র আমার কাছে আসলো এবং সে বললো, “যে ব্যক্তি বেঁচে থাকা অবস্থায় রমাদান মাস পেলো, অথচ সে তার জীবনের সমস্ত গুণাহ্‌ ক্ষমা করিয়ে নিতে না পারলো, সে ব্যক্তি ধ্বংস হয়ে যাক।“ তারপর জিব্রাইল(আঃ) বললেন আমিন। এবং মহানবী(সাঃ)-ও বললেন আমিন। ভয়ঙ্কর হাদিস, কারণ মহানবী(সাঃ) এবং ফেরেস্তা জিব্রাইল(আঃ) এর বদ-দুয়া অবশ্যই কবুল হবে। একই সাথে এটা আশা জাগানীয়া হাদিস কারণ, রমাদানের এখনো কিছু দিন বাকি আছে, আল্লাহ্‌র ক্ষমা, ভালোবাসা আর জান্নাত অর্জন করে নিবার সময় এখন শেষ হয়ে যায়নি ইনশাআল্লাহ্‌! নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, কিন্তু আমাদের চাইতে হবে! খুঁজতে হবে! আল্লাহ্‌ আমাদের সেই তাওফিক দিন! আমিন।

 

- শারিন শাফি

 

 

 

 

 

 

 

 

 

# ছাব্বিশ

 

গো-রক্ষা সমাচার অথবা মিথ্যে আবেগের সমাহার

 

  • •••••

 

লোকসভা ভোটের ফল বেরতে না বেরতেই ফের শুরু হয়ে গেল গোরক্ষকদের তাণ্ডব। মধ্যপ্রদেশের সিওনিতে গোপাচারের অভিযোগে এক মহিলা-সহ তিন মুসলিমকে এক এক করে বেধড়ক পিটিয়েছে গোরক্ষকরা। পরে তাঁদের মাটিতে ফেলেও প্রচণ্ড মারধর করা হয়। ধৃতদের দিয়েই মহিলাকে বেধড়ক জুতাপেটা করতে বাধ্য করা হয়। এই ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। [আনন্দবাজার, টাইমস অফ ইন্ডিয়া]

 

এই চিত্র নতুন নয়, বহু বছর ধরেই কট্টর - উগ্র - সহিংস সাম্প্রদায়িক মানুষদের দ্বারা এমন ঘটনা ঘটে আসছে। ভারতের প্রশাসন নিরব হয়ে দেখে আসছে, মনে মনে যবনদের মার খাওয়া দেখে খুশি হচ্ছে। যারা ভারতে গো-মাংশ রপ্তানি করে বিশ্বে ১ নাম্বারে চলে আসলো সেইসব ভারতীয় প্রতিষ্ঠানের কেউ কখনোও মার খেয়েছে তা শোনা যায় নি। মার খায় শুধু গরিব মুসলিম - কেন খায় তা আন্দাজ করা কঠিন নয়।

 

তো যেই গরুকে পবিত্র মনে করে দরিদ্র মুসলিমদের নির্মমভাবে পেটানো, কাউকে আবার হত্যা করা হচ্ছে সেই গরুর পবিত্রতার বিষয়টি কি আসলেই সনাতন নিয়ম? উত্তর হলো না। হিন্দুপণ্ডিতদের মতে বেদ বা হিন্দুদের যে-কোনো ধর্মগ্রন্থই মানবরচিত। এগুলো একটাও খোদাপ্রেরিত নয়। তাই এখানকার বিধান খোদাপ্রেরিত বলে নিশ্চিত দাবি করা যায় না।

 

তা ছাড়া হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ ও পণ্ডিতদের বক্তব্য পড়লে দেখা যায়, একসময় গোমাংস হিন্দুদের কাছে নিষিদ্ধ ছিল না, বরং বেশ প্রিয়ই ছিল বলা যায়। গোমাংস না খেলে এককালে ব্রাহ্মণের ব্রাহ্মণত্বই থাকত না! তাদের মাঝে খাদ্য হিসেবে গো, মহিষ ও অশ্বের মাংস জনপ্রিয় ছিল।

 

বাল্মীকি বিরচিত রামায়ণের আদি ও অযোধ্যাকাণ্ডে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, রাম গোমাংস ভক্ষণ করতেন। তা ছাড়া মহাভারত, ঋকবেদ, বৃহদারণ্যকোপনিষদ, বিভিন্ন স্মৃতিশাস্ত্র (যেমন বশিষ্ঠস্মৃতি, মনুস্মৃতি), অর্থশাস্ত্র, বিষ্ণুপুরাণ ইত্যাদিসহ আরও গ্রন্থে হিন্দুদের গোমাংস ভক্ষণের প্রমাণ পাওয়া যায়।

 

স্বামী বিবেকানন্দ জানিয়েছেন, “এই ভারতেই এমন সময় ছিল, যখন গোমাংস ভোজন না করিলে কোন ব্রাহ্মণের ব্রাহ্মণত্ব থাকিত না । বেদপাঠ করিলে দেখিতে পাইবে, কোন বড় সন্ন্যাসী বা রাজা

বা অন্য কোন বড়লোক আসিলে ছাগ ও গোহত্যা করিয়া তাঁহাদিগকে ভোজন করানোর প্রথা ছিল ।”

 

অহিংস আন্দোলনের নেতা মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী The Essence of Hinduism গ্রন্থে বলেন:

 

“আমি জানি পণ্ডিতদের একাংশ আমাদের বলেছেন বেদে গো-উৎসর্গকরার কথা উল্লেখ আছে । আমার মনে পড়ে, হাইস্কুলে থাকতে আমাদের সংস্কৃত পাঠ্য

বইয়ে এমন পড়েছি যে, পূর্বেব্রাহ্মণরা গোমাংস ভক্ষণ করতেন।”

 

বহুকাল পরে অর্থনৈতিক কারণে গোহত্যা বর্জন করার পরিকল্পনার ছক আকা হয়, আর তাতে ধর্মের ফ্লেভার দিয়ে প্রচার করা হয়। হিন্দুসমাজ সহজেই মেনে নিলো, কারণ তাদের বিশ্বাসের কোন স্থির মানদণ্ড নেই। সুতরাং গোহত্যা মহাপাপ বলে যে প্রলাপ বকা হয় তা ভিত্তিহীন। যাদের কাছে মানবপ্রাণের চেয়ে গরুর প্রাণ বেশি মূল্যবান তারা আর যাই হোক, মানুষ নয়। হিংস্র গরু হতে পারে।

 

রেফারেন্স এর জন্য দেখুন: অবিশ্বাসী কাঠগড়ায়, পৃ. ১২৭-১৩০ (২য় সংস্করণ ২০১৯)

 

- রাফান আহমেদ

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

# সাতাইশ

 

#সালমান_আল_আওদা

 

নিম্নের উক্তিগুলো সালমান আল আওদার, যাকে সৌদি সরকার ঈদের পরপর হত্যা করার পরিকল্পনা নিয়েছে। আমরা এ জুলুমের প্রতিবাদ জানাচ্ছি, জালিমের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করছি; দোয়া করছি যেন আল্লাহ তাআলা এ মজলুম আলিমের প্রতি খাস রহমত নাযিল করেন, প্রশান্তিতে তাঁর হদয় পরিতৃপ্ত করেন। আমাদের আর কিই বা করার সামর্থ্য আছে! আমরা তাঁর চিন্তার শুভ্রতাকে বাংলাভাষী মানুষের নিকট পৌঁছে দিতে চাই। তারিক মাহমুদ ভাই প্রচ্ছদ প্রকাশন থেকে সালমান আল আওদার “কাইফা নাখতালিফু” (মতপার্থক্যের সৌন্দর্য) বইটির অনুবাদ নিয়ে শ্রীঘ্রই আপনাদের সামনে হাজির হচ্ছেন ইনশাআল্লাহ। আগস্টের মধ্যে তাঁর "My Enemies, I Thank You" বইয়ের অনুবাদও প্রচ্ছদ প্রকাশন থেকে প্রকাশিত হবে ইনশাআল্লাহ। আমি কিছু কোটেশন ইংরেজি থেকে অনুবাদ করে দিলাম।

 

১। মানুষকে বন্ধু কিংবা শত্রু মনে করা ঠিক নয়, যেন তুমি বিশ্বের কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছ; অথচ অনেকে তোমার অস্তিত্ব সম্পর্কে জানেই না। (My Enemies, I Thank You)

 

২। তুমিই আমাকে ধৈর্যশীল হতে প্রশিক্ষণ দিয়েছ; মন্দের বিনিময়ে উত্তম জবাব এবং উত্তম দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করা সম্পর্কে।(My Enemies, I Thank You)

 

৩। এটা অনুতাপযোগ্য; কেউ তার জীবন যুদ্ধে অতিবাহিত করলো, কিন্তু প্রথম যুদ্ধে না জিতল, না হারল। তা পুষিয়ে নিতে সে আরেকটি যুদ্ধে অবর্তীর্ণ হল এবং হেরে গেলো। অবশেষে তুতীয় যুদ্ধে সে তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে জয় লাভ করলো।( My Enemies, I Thank You)

 

৪। আমি সেসব কলমের প্রতি কৃতজ্ঞ যা তরবারির কিনারার ন্যায় ধারালো; তারা আমাকে শিখিয়েছে কিভাবে শান্ত থাকতে হয় এবং কিভাবে হাসতে হয়।( My Enemies, I Thank You)

 

৫। আপনি ততক্ষণ পর্যন্ত নিজেকে ধৈর্যশীল বলতে পারেন না, যতক্ষণ না আপনি সেই বিষয়টি বহন করতে ইচ্ছুক ও সক্ষম হবেন যা আপনি বহন করতে চান না।

 

৬। হে আল্লাহ, আমি যদি কখনো তোমার হুকুমের হেকমত বুঝতে সক্ষম না হই, তবে দয়া করে আমাকে অন্তত তা গ্রহণ করার ও তার উপর সন্তুষ্ট থাকার প্রজ্ঞা দিও।

 

৭। আল্লাহ তায়ালার পরিকল্পনা তোমার স্বপ্নের থেকে উত্তম।

 

৮। সালাম বিনিময়ের অনেক অর্থ আছে। তার একটি অর্থ হল আপনি যাকে সালাম দিচ্ছেন সে আপনার থেকে নিরাপদ (আপনার মুখ, হৃদয় এবং আপনার হাত থেকে) এবং আপনার কথা ও কাজ সে ব্যক্তির বিরুদ্ধে সীমালঙ্গন করবে না। এই অভিবাদন হল শান্তি, নিরাপত্তা, দয়া ও অনুগ্রহের জন্য প্রার্থনা করা। আমাদের এসব মহৎ অর্থ গ্রহণ করা উচিৎ। যেসব মহৎ কথা প্রায়শ আমরা মুখে বলি সেসব মানুষের সাথে মুয়ামালাতে আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে।

 

৯। কুরআন মাজীদ বলছে, “যারা কঠিন সময়ে তাকে অনুসরণ করেছে।” কতইনা সুন্দর কুরআনের প্রকাশভঙ্গি। এটা কঠিন সময়কে এমন একটি মুহূর্ত হিসেবে বর্ণনা করেছে যা অতি দ্রুত অতিবাহিত হয়ে যায়। কঠিন সময় কারো জীবনব্যাপী প্লাবিত হয় না।

 

-saifullah

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

# আঠাইশ

 

মুসলিম পরিবার থেকে মূলত ৪টি কারণে নাস্তিক হয়:

১. ছাত্রজীবনে বাম রাজনীতির সাথে জড়িয়ে পড়ে (মুসলিম নামধারী নাস্তিকদের ৯৫ ভাগেরও বেশি ছাত্রজীবন থেকেই মার্ক্সবাদী/বাম/কম্যুনিস্ট)।

২. ইসলামিক লাইনে পড়ে বিজ্ঞান সম্পর্কে কোনো ধারণা না থাকাতে।

৩. সেক্যুলার লাইনে পড়ে ইসলাম সম্পর্কে সম্যক ধারণা না থাকাতে।

৪. ইসলাম ও বিজ্ঞান উভয় বিষয়েই কোনো জ্ঞান না থাকাতে (কলাবিভাগ)।

যারা ছাত্রজীবন থেকে ইসলাম ও বিজ্ঞান উভয় বিষয়ে সম্যক জ্ঞান নিয়ে বড় হয় তারা সাধারণত নাস্তিক কিংবা অন্য কোনো ধর্মে ধর্মান্তরিত হয় না। কাজেই মুসলিম পিতা-মাতার উচিত তাদের সন্তানদেরকে ছোট বেলা থেকেই ইসলাম ও বিজ্ঞান উভয় বিষয়েই জানার সুযোগ করে দেওয়া।

 

- amatullah library

 

 

 

 

 

 

 

 

# ঊনত্রিশ

 

রমাদানের ২১ তম রাত চলছে। আজকের রাতটিও হতে পারে লাইলাতুল কদর। নবীজির সময়ে একবার ২১ তম রাতে হয়েছিলো লাইলাতুল কদর।

.

আবূ সা’ঈদ আল খুদরী (রাঃ) বর্ণনা করেছেন

 

তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমাযান মাসের প্রথম দশকে ই’তিকাফ করলেন। এরপর তিনি মাঝের দশকেও একটি তুকী তাঁবুর মধ্যে ই’তিকাফ করলেনে এবং তাঁবুর দরজায় একটি চাটাই ঝুলানো ছিল। রাবী বলেন, তিনি নিজ হাতে চাটাই ধরে তা তাঁবুর কোণে রাখলেন, এরপর নিজের মাথা বাইরে এনে লোকদের সাথে কথা বললেন এবং তারাও তাঁর নিকট এগিয়ে এলো। তিনি বললেন, এ রাতের অনুসন্ধানকল্পে আমি (রমাযানের) প্রথম দশকে ই’তিকাফ করলাম। অতঃপর মাঝের দশকে ই’তিকাফ করলাম। এরপর আমার নিকট একজন আগন্তুক (লোক) এসে আমাকে বলল, ‘লায়লাতুল ক্বদর্ শেষ দশকে নিহিত আছে। অতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি ই’তিকাফ করতে চায় সে যেন ই’তিকাফ করে। লোকেরা তাঁর সঙ্গে (শেষ দশকে) ই’তিকাফ করল। রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরও বললেন, স্বপ্নে আমাকে তা কোন এক বেজোড় রাতে দেখানো হয়েছে এবং আমি যেন সে রাতে কাদা ও পানির মধ্যে ফজরের সাজ্দাহ্ করছি। (রাবী বলেন), তিনি ♦২১ তম রাতের ভোরে উপনীত হয়ে ফাজ্‍রের সলাতে দাঁড়ালেন এবং আসমান থেকে বৃষ্টি বর্ষিত হল।♦ ফলে ছাঁদ থেকে মাসজিদে পানি বর্ষিত হল এবং আমি স্বচক্ষে কাদা ও পানি দেখতে পেলাম। তিনি ফজরের সলাত শেষে যখন বের হয়ে এলেন, তখন তাঁর কপাল ও নাকের ডগা সিক্ত ও কর্দমাক্ত ছিল। ♦আর তা ছিল রমাযানের শেষ দশকের ২১তম রাত♦। (ই.ফা. ২৬৩৮, ই.সে. ২৬৩৭)

 

সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ২৬৬১

 

- নাসিহাহ অফিসিয়াল

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

# ত্রিশ

 

আব্দুল্লাহ জোবাইরঃ হুলুল বা মানবশরীরে স্রষ্টার আগমন এবং ইত্তিহাদ বা স্রষ্টা ও সৃষ্টি এক হয়ে যাওয়া- এমন ভজগটপূর্ণ আকীদা কোন সুফি রাখেন না। কেউ রেখে নিজেকে সুফি বললে সে ভণ্ড।

মানুসর হাল্লাজকে নিয়ে এত সমালোচনা। তিনি বলেছেন, স্রষ্টা কাদীম বা অনাদি হিসেবে সৃষ্টি থেকে পৃথক, ঠিক যেভাবে সৃষ্টি হাদিস বা নশ্বর হিসেবে স্রষ্টা থেকে পৃথক।

অর্থাৎ স্রষ্টা ও সৃষ্টির হাকিকত সম্পূর্ণ আলাদা। সুফিগণ এটা মনেপ্রাণেই বিশ্বাস করেন। তাওহিদে তারা ছাড় দেননি।

আজকে বায়তুল মোকাররমে একটি বইমেলায় সুফিদের নামে অপবাদওয়ালা একটা বই দেখে খুব খারাপ লাগলো। সুফিদের তাওহিদ নিয়ে ইনশাআল্লাহ একদিন লেখবো। যারা জেনেশুনে বিভ্রান্ত করছেন, বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন- ফলাফল আখেরে ভালো হবে বলে মনে হয় না।

 

মিযান হারুনঃ হোসাইন ইবনে মনসূর ছাড়া কি সুফিদের তালিকা পূর্ণ হয় না? আমাদের আকাবিরে তাসাওউফের তালিকা তো এত লম্বা যে সেখান থেকে শত ইবনে হাল্লাজ, ইবনে আরাবীকে বাদ দিলে টেরই পাওয়া যাবে না। ইবনে হাল্লাজকে সালাফীরাই বিতর্কিত করেছে এমন নয়, তার জীবদ্দশা থেকেই এমন।

তাই উম্মাহর ঐকমত্যে যারা প্রকৃত বুযুর্গ তাদেরকে সামনে আনা দরকার। বিতর্কিত ব্যক্তিদের বর্জন করা দরকার।

 

আব্দুল্লাহ জোবাইরঃ ভাই দুঃখ লাগে সুফিদের আলোচনা হলেই সালাফীরা হাল্লাজকে সামনে টেনে এনে বলবে দেখেভা সুফিদের এই হলো আকীদা তারা নিজেতেরকে আল্লাহ মনে করে। তখন খুব মেজাজ খারাপ হয়।

সুফিগণও এই নীতি নিয়েছিলেন। ইমাম কুশায়রি হাল্লাজের জীবনী বইয়ে আনেননি। কালাবাযি তার নামটাও আনেননি। জনৈক বুযুর্গ বলে তার কওল নকল করেছেন। কিন্তু সমালোচনার জন্য এরা বিষয়টা নিয়ে বাড়াবাড়ি করে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

# একত্রিশ

 

রমাদানের শেষ দশ রাতে কিছু সহজ আমল করা যায়। লাইলাতুল কদর নসিব হলে এই সহজ, ছোট আমলগুলোই পাহাড় সমান হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ্।

.

(১) মাগরিব অথবা তারাবির পর ২/৪ রাকাত নফল নামায আর অবশ্যই সাহরি খাওয়ার পূর্বে ৪/৬ রাকাত তাহাজ্জুদের নামায।

(২) অল্প কিছু টাকা- যেমন ১০/২০ টাকা হলেও কোনো গরিব-মিসকিনকে দান করা।

(৩) ২/৪ পৃষ্ঠা কুরআন তিলাওয়াত করা। সম্ভব হলে আরো বেশি।

(৪) বিভিন্ন তাসবিহ (যেমন: সুবহানাল্লাহি ওয়ালহামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার/ সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি সুবহানাল্লাহিল আযিম ইত্যাদি) পড়া অগণিতবার।

(৫) নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর দরুদ পড়া। সহজ কিছু দরুদ হলো: ♦ সল্লাল্লাহু আলা নাবিয়্যিনা মুহাম্মাদিন ♦ আল্লাহুম্মা সল্লি আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলা আলি মুহাম্মাদ ইত্যাদি। এগুলো সহিহ হাদিসে এসেছে।

(৬) ইসতিগফার করা। সবচেয়ে সহজ ও সংক্ষিপ্ত ইসতিগফার হলো: আসতাগফিরুল্লাহ। আর একটু বড় পড়তে চাইলে "আসতাগফিরুল্লাহাল্লাযি লা ইলাহা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল কাইয়ুমু ওয়া আতূবু ইলাইহি।"

(৭) আন্তরিক দু'আ। প্রথমে অযু করে নিবেন। সম্ভব হলে দুই রাকাত তাওবাহর নামায পড়ে নিবেন সাধারণ নফল নামাযের মতই। এরপর কিছু সময় জায়নামাযে বসে মনোযোগ ঠিক করবেন, কিছু যিকর করবেন। এরপর কিবলার দিকে মুখ করে নামাযের বৈঠকের সুরতে বসবেন। দু'আ এভাবে করবেন: আল্লাহর প্রশংসাসূচক কোনো বাক্য বলতে বলতে হাত তুলবেন (বুক বরাবর)। সূরা ফাতিহার প্রথম আয়াতটি দিয়েও শুরু করা যায়। এরপর উপরে বর্ণিত কোনো দরুদ বা আমাদের নামাযে পঠিত দরুদ (ইব্রাহিমি) পড়বেন। এরপর প্রথমে নিজের জন্য দু'আ করবেন। এরপর সবকিছুর জন্য। দু'আর মধ্যে মাঝে মধ্যে বলবেন ইয়া হাইয়ু! ইয়া কাইয়ুমু!, লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনায যোয়ালিমিন। অবশ্যই নির্যাতিত মুসলিম জনপদ উইঘুর, কাশ্মির, ফিলিস্তিন, সোমালিয়া, ইয়েমেন, আরাকান (মিয়ানমার), মিশর ইত্যাদির মুসলিমদের জন্য মাগফিরাত, সবর এবং আল্লাহর সাহায্যের দু'আ করবেন। আল্লাহর কাছে চাওয়া শেষ। এবার ঠিক আগের মতই আবারো আল্লাহর প্রশংসা এবং নবীজির উপর দরুদ পড়বেন। এরপর "আমীন" অথবা "ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকরাম" বলে দু'আ শেষ করবেন। দু'আ শেষে মুখে হাত মোছা জায়েয, তবে এটার সপক্ষে খুব একটা দলিলাদি নেই। মোছতেও পারেন আবার নাও মোছতে পারেন। এই হলো সহিহ হাদিসসম্মত দু'আর পদ্ধতি।

(৮) লাইলাতুল কদরে পড়ার জন্য একটি স্পেশাল দু'আ শিখিয়ে গেছেন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। সেটি হলো-

َاللهم إِنَّكَ عَفُوٌّ كريم، تُحِبُّ الْعَفْو فَعْفُ عَنِّي

আল্লাহুম্মা ইন্নাকা 'আফুউ-উন কারীম, তুহিব্বুল 'আফওয়া ফা'ফু আন্নি।

.

আপাতত এ পর্যন্তই। রামাদানের শেষ দশ দিনের যেকোনো দিনেই হতে পারে লাইলাদুল কদর। অতএব, প্রতিটা রাতকেই গুরুত্ব দিতে হবে।

 

- দাওয়াহ

 

 

 

 

 

 

 

 

# বত্রিশ

 

জিজিয়া দেয়া কাফির কিংবা আমানপ্রাপ্ত কাফিরদের জন্য তাদের ধর্ম মুসলিমদের মাঝে প্রচার করার অনুমতি থাকে না। ইসলাম ব্যতীত অন্য সকল ধর্ম, দ্বীন হচ্ছে কুফর, এতে কোন সন্দেহ নেই। অর্থা( কোন আমানপ্রাপ্ত কাফির যদি মুসলিমদের মাঝে কুফর প্রচার করে, তবে সে তার আমান ভেঙে ফেললো।

 

.

 

প্রশ্ন হচ্ছে, প্রচলিত ভিসা কি কাফিরদের মুসলিমদের মাঝে কাফিরদের ধর্ম, আদর্শ প্রচার করার অনুমতি দেয়?

 

.

 

এর উত্তর দুইটা।

 

.

 

১. যদি বলা হয়, দেয়। তাহলে প্রমাণিত হল যে ভিসা শরঈ আমান নয়। কারণ এতে আমান ভঙ্গ হয় এমন কাজের অনুমতি দেয়া হচ্ছে। ঠিক সেই সদ্য ভূমিষ্ট শিশুর মত যে, জন্মানোর সাথে সাথে মারা গেলো, কিংবা মৃত অবস্থায় জন্মগ্রহণ করলো। কাফিরদের তাদের কুফর মুসলিমদের মাঝে প্রচারের অনুমতি দেয় এমন ভিসা আমান হিসেবে সেই মৃত শিশুর মত, মৃত আমান। এই আমান রক্ষা করা মুসলিমদের জন্য ওয়াজিব নয়। বরং এই রকম কাফিরদের তাদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দেয়া ওয়াজিব, যারা কিনা মুসলিমদের মাঝে কুফর প্রচার করে।

 

.

 

২. যদি বলা হয়, দেয় না। কারণ ভিসা কেবল ঢোকার অনুমতি। এখানে আর কোন কিছুর চাপিয়ে কিংবা সরিয়ে নেয়া হয় না। এক্সেক্টলি! ভিসা কোন মুসলিমকে হয়রানি থেকে বাঁচাতে পারে নি। ভিসাকে ঢাল বানিয়ে কোন মুসলিম নিজেকে কাফিরদের থেকে ডিফেন্ড করতে পারে নি। ভিসা কেবল থাকার অনুমতি। বাকি বিষয়গুলো স্পষ্ট করা থাকে না। বরং উরফ তা সাব্যস্ত করে নেয়। তাহলে তো হলই উরফ যদি হয় কাফিররা ভিসা নিয়ে এসেও মুসলিমদের মাঝে আক্রমণ চালায়, মুসলিমরা সেটার বিপরীতে প্রতিশোধ নেয়ার অধিকার পাবে। কারণ ভিসাতে বিষয়গুলো সু্স্পষ্ট নয়। সুস্পষ্টতা ছাড়া ওয়াদা ভঙ্গের অভিযোগ আসছে কোথা থেকে?

 

- ইবনু মাজহার

 

 

 

 

 

 

 

 

# তেত্রিশ

 

-বিয়েকে জন্মদিনের কেক কাঁটার উৎসব মনে করো না, বিয়ে হচ্ছে সাহরীর মত!

 

-ধূর মিঞা কি কন! বিয়ে হইতেসে গিয়া ইফতারের মত!

 

বাণীতে মাজহার কাকুর পোলা

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

# চৌত্রিশ

 

অখণ্ড ভারত বা পাকিস্তানের যৌক্তিকতা নিয়ে আমি আজও সন্দিহান। আদর্শিকভাবে উস্তাদ মাওদুদি রহ এর শুরুর দিকের অবস্থায় আমার কাছে অধিক হক মনে হয়। মুসলমান খিলাফত ছাড়া আর কিছুর দাওয়াত দিতে পারেনা। মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানি রহ নিজেও খিলাফত আন্দোলনের জন্য যে কুরবানি করেছেন তা সমকালীন ইতিহাসে অনেক উঁচু মর্যাদার স্থান দখল করে আছে। এমনকি তিনি ত্রিশের দশকে বাদশাহ আব্দুল আযিযকে খেলাফত ঘোষণা করতেও অনুরোধ করেন এবং ভারত থেকে বায়াত সংগ্রহের আশ্বাস দেন। সূত্রঃ মাওলানা ভাসানি, লেখক সৈয়দ আবুল মকসুদ।

 

হক আর বাতিলের মধ্যে পার্থক্য করা সহজ তবে অপেক্ষাকৃত ভাল এবং অপেক্ষাকৃত কম মন্দের পার্থক্য নিরূপণ সর্বদা সহজ না। সমস্যা হচ্ছে আদর্শবাদ আর সময়ের মাসলাহাত বিবেচনায় সিদ্ধান্ত সর্বদা সরল রৈখিক না। তৎকালীন মাসলাহাত বিবেচনায় আমি অখণ্ড ভারতের পক্ষে কিছু যুক্তি উপস্থাপন মানে পাকিস্তান ধারণার অকাট বিরুদ্ধে তা নয়। আমি ব্যাক্তিগতভাবে থানভি বা মাদানি মাসলাক না। বরং মূল শাহ ওয়ালিউল্লাহ্ রহ এর খান্দানের মাসলাক অনুসরণ করি আমার বুঝ অনুযায়ী। সেখানে থানভী মাদানি দুই গুরুত্বপূর্ণ শাখা। আমি মাদানি রহ এর কাজের যৌক্তিকতা তুলে ধরতে গিয়ে যখন পাকিস্তানের সীমাবদ্ধতার কথা বলি, তখন তার মানে এটা না যে পাকিস্তানের দ্বারা কোন কল্যান অর্জিত হয়নি। তর্ক আমি শিখেছিলাম। তাই তর্ক আগাতে পারতাম। কিন্তু গোঁড়ামি এবং প্রতিক্রিয়াশীলতা আমাদের বিপদগ্রস্ত করে। এক খাদ থেকে আরেক খাদে ফেলে। আমি যদি দাবি করি পাকিস্তানের দ্বারা কল্যান হয়নি তবে থানভি রহ এর ব্যাপারে নিন্দা করার জায়গা তৈরি করা। আমার শত্রু আপনি একা না। অত গুরুত্ব আমি আপনাকে দেইনা যে আপনার কারণে আমি সত্যকে কলুষিত করবো। চিন্তার একজন মুজতাহিদ হিসাবে আমার চিন্তা লালন করেনা এমন সবাই আমার সম্ভাব্য শত্রু। এমনকি আমি নিজেও। কারণ হয়তো চিন্তার দুনিয়ায় কোন বদ্ধমূল ধারণার শিকল আমাকে আগাতে দিবেনা।

 

যাইহোক আমার কথা হচ্ছে, আপনি যদি সাম্প্রদায়িক ও রাজনৈতিক ডগমাসর্বস্ব আলাপের উর্ধ্বে উঠতে পারেন তাহলে মাওলানা মাদানির রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত সঠিক ছিলো কিনা, তাতে মুসলমানদের লাভ হয়েছে না ক্ষতি হয়েছে তা নিয়ে আলোচনা চলতে পারে। তবে তার সিদ্ধান্তের পেছনে উম্মাহর কল্যাণের কোন যৌক্তিক সম্ভাবনা তার কাছেও ছিলোনা, শুধু তিনি কংগ্রেসী মোল্লা, জাতীয়তাবাদী আলিম, গোষ্ঠীগত বা পারিবারিক স্বার্থে, সংকীর্ণ মানষিকতার কারণে তিনি তার তার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন বলে যারা মনে করেন তারা মাওলানা মাদানি রহ এর সাথে নিকৃষ্ট জুলুম করেছেন বলেই মনে করি। কারণ তা তার সারাজীবন এর ইলম, আমল, আখলাক, কুরবানি এবং যুহদের সাথে যায়না।

 

- মীর সালমান

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

# পঁয়ত্রিশ

 

আমি প্রথম ইসলামের দাওয়াত পেয়েছি সেমি বেরেলভি ১০০ শতাংশ অরাজনৈতিক একটি সুফি ধারার কাছ থেকে। তারপর বিদয়াত প্রত্যাখ্যান এবং সুন্নাহর আনুগত্যের দাওয়াত পেয়েছি দাওয়াতে তাবলিগের মেহেনত থেকে।

 

আমি যদি এসব অরাজনৈতিক ধারা থেকে দাওয়াত না পেতাম তাহলে সম্ভবত মেধাবি পড়ুয়া নাস্তিক হতাম। কারণ কোন রাজনৈতিক ইসলামি গোষ্ঠীর পক্ষে আমাকে দাওয়াত দেওয়া সম্ভব হতো না।

 

জামাত ও অন্যান্য রাজনৈতিক ইসলামপন্থী ভাইদের কাছে প্রশ্ন, ভাই আমি খুব বড় কোন লাঠুরাম হইনি। একজন পাপাচারী, জাহিল মানুষ। তবু ইমানহারা নই এটুকু দাবি অবশ্যই করবো। এখন আমার ক্ষেত্রে তাবলীগের অবদান আপনাদের রাজনৈতিক কর্মসূচির ও গ্রান্ড স্কিমের জন্য উপকারী হয়েছে না ক্ষতিকর?

 

প্লিজ উত্তর না দিয়ে যাবেননা। হাহা।

 

- মীর্ভাই

 

 

 

 

# ছত্রিশ

 

রাতে ঘুমানোর আগে সবাইকে ক্ষমা করে দিন।

.

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার একজন ব্যক্তিকে "জান্নাতি" বলেছিলেন। তাঁর অতিরিক্ত খুব একটা আমল ছিলো না, কেবল এটা ব্যতীত যে, তিনি ঘুমোতে যাওয়ার আগে সবাইকে ক্ষমা করে দিতেন এবং তিনি তাঁর মনে মুমিন ভাইদের প্রতি কোনো হিংসা-বিদ্বেষ, রাগ-অভিমান পুষে রাখতেন না।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

# সাইত্রিশ

 

জঘন্য পাপগুলোর একটি হলো যখন একজন মানুষ তার অপর ভাইকে বলে,

“আল্লাহকে ভয় করো”

এবং সে তার জবাবে বলে, “তোমার নিজেকে নিয়ে চিন্তা করো।"

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

# আটত্রিশ

 

এখন আমি যে লেখাটা লিখবো এটাকে নিঃসন্দেহে একটা ঐতিহাসিক লেখা বলা যায়। আমি সুস্থ মস্তিষ্কে এবং ভেবে চিন্তেই বলছি। আমরা মুসলিমরা নিজেদেরকে নানা দলে গণ্য করছি। কেউ নিজেদের বলছি আহলে হাদিস, কেউবা দেওবন্দি, কেউ জামায়াত সমর্থন করছি আবার কেউ তাবলীগের সাথী। সবাই কোনো না কোনো দলে আছি। সবাই নিজের দলকে হক মনে করছি। অনেকে নিজের দল বাদে সবাইকে বাতিল মনে করি। আবার কেউবা এতো দলান্ধ না, তাই নিজের দল বাদে অন্যদেরকেও মুসলমান ভাই মনে করে, কিন্তু নিজের দলের প্রতি ভালোবাসার দরুন কেউ তার দলের বিরুদ্ধে গেলে তিনি রেগে যান, ভেবে দেখেন না কেন বিরুদ্ধে বলছে বা আসলেই তার কথা সঠিক কিনা!

 

এটা বর্তমানে মুসলিম উম্মাহর কমন সমস্যা। আমরা সবাই নিজেকে কোনো না কোনো দলে আবদ্ধ করে ফেলেছি, আমরা নিজেদের দলের অন্ধ অনুসরণ করছি, নিজের দলের সব কর্মকাণ্ডকে বিনা অনুসন্ধানে হক মনে করছি। আমরা এভাবে নিজেদের দলে দলে বিভক্ত করছি, মুসলিম উম্মাহকে বিভক্ত করছি, সামান্য মাসালা নিয়ে ঝগড়া ঝাটিতে লিপ্ত হচ্ছি।

 

আমাদের এজন্য সবার আগে যে কাজটা করণীয় তা হচ্ছে সমস্ত দল থেকে সমস্ত মতবাদ থেকে নিজেদের খারিজ করা, আমি সিরিয়াস। নিজেদেরকে খারিজ করে ঘোষণা দেয়া আজ থেকে আমি অমুক দল থেকে নিজেকে খারিজ ঘোষণা করলাম এবং ইসলাম নামক দলে যোগ দিলাম। এই ঘোষণা শুধু যেন কথায় না হয়, কাজেও যেন হয়। ইসলাম হবে আমার দল, আমার একমাত্র দল, কোনো উপদলের লেজ ধরবো না, কোনো শাখাদলে যোগ দিব। আমি ইসলাম নামক দলের সদস্য, যারাই মুসলিম তারাই আমার ভাই। আমি ইসলাম অনুসরণ করি, এবং যারা ইসলামের উপর থাকে তাদের ভালোবাসি।

 

এখানে প্রশ্ন আসতে পারে, কোনো দলকে হক মনে করা এবং তাদের সাথে যোগ দেয়া কি ভুল? আমি বলব, এটা ভুলের মতোই। কারণ আপনি যেটাকে হক বলছেন অন্য মুসলমানের কাছে সেটা হক না, এতে ঝগড়া শুরু হয় হক আর না-হক নিয়ে। এজন্য আমাদের এমন একটা অবস্থা গ্রহণ করতে হবে যেন আমরা কোনো দলের নই ইসলাম বাদে। আমরা সব দলের পজেটিভ দিকগুলো খুঁজবো, নেগেটিভ দিকগুলো জানবো, এবং বেঁচে থাকার চেষ্টা করব, কিন্তু নেগেটিভ দিক নিয়ে মাতামাতি করব না, বিশেষ করে যে দলকে হক মনে করি সে দলের নেগেটিভ দিকগুলো বের করার চেষ্টা করব যেন দলীয় অন্ধত্ব দূর হয়। এভাবে সকল দলের প্রতি ভালোবাসা রাখবো, ভালো দিকগুলো নিব, আলোচনা করব, সুন্নতী উপায়ে সমালোচনা করব। সকল দলের আলিমদের আলোচনা শুনবো, যারটা বেশি হক মনে হয় তারটা মানব কিন্তু এজন্য সেই দলে যোগ দেয়া জরুরী না।

 

এভাবে আশা করা যায় দলহীনতার সংস্কৃতি মুসলিম উম্মাহকে বিচ্ছিন্নতা থেকে রক্ষা করবে, আমাদেরকে এক দল ইসলামে আবদ্ধ করতে সহায়ক হবে ইনশাআল্লাহ।

 

- হাসান ভাই।

 

 

 

 

 

 

 

 

# ঊনচল্লিশ

 

যে বুয়াটা আপনার ঘর মোছে, কাপড় কাচে, তার কাছে আপনার বাড়িটা একটা রাজপ্রাসাদ। তার চোখে আপনার মতো লাইফ লীড করা এক দূরবর্তী স্বপ্ন। সে মুখ বুঁজে আপনার দামী দামী ফার্নিচার মোছে, কপালের ঘাম মোছে, গোপনে চোখও মোছে। আপনাদের সুখের জীবন তার কাছে বিরাট দীর্ঘশ্বাস।

 

সে তো জানেনা এই সুখের জীবন নিয়ে আপনি, আপনার স্ত্রী আর সন্তানদের কতো অভিযোগ!

 

ঐ বুয়ার আফসোস আসলে আমাদের চেয়ে কম। তাকে যদি প্রশ্ন করেন জীবনে কী কী চাই? সে কখনও সুইজারল্যান্ডে বেড়াতে যাবার কথা বলবেনা, হোটেল হলিডে ইন, পার্কভিউ ইডেন, র‌্যাডিসন, হিল্টন বা শেরাটনের নাম সে জীবনে শোনেনাই। ন্যান্দুজ, কেএফসি, পিজা হাট, চায়নীজ, টার্কিশ, ম্যাক্সিক্যান খানাদানা সম্পর্কে তার কোনো আইডিয়া নাই। নিত্যনতুন গ্যাজেটস, হাজারটা ব্র্যান্ড, সনা, জাকুজি, পেডিকিউর, ম্যানিকিউর কাকে বলে সে জানেনা।

সুতরাং তার চাহিদা কম। তারচেয়েও বড় কথা সে ফেইম চায়না, সেলেব্রিটি হওয়ার বিন্দুমাত্র খায়েশ তার নাই। সে কাউকে ইমপ্রেস করার ধার ধারেনা। স্বামী, সন্তান আর নিজের পেটকে লাভ, লাইক আর হাহা দিতে পারলেই সে খুশি।

 

যতোদিন পর্যন্ত আপনি যা আছে তাই নিয়ে সন্তুষ্ট ও কৃতজ্ঞ হতে না পারবেন, যতোদিন চাহিদার ঘোড়াকে লাগাম টেনে নিয়ন্ত্রণে না রাখবেন, ততোদিন সুখি হতে পারবেননা।

 

বস্তু নিজে কখনও অভাব নয়, এর প্রতি চাহিদাই হলো অভাব। তাই প্রয়োজনের অতিরিক্ত চাহিদাকে শাসন করতে শিখুন।

 

- মাহমুদুর রহমান সাসা

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

# চল্লিশ

 

আমেরিকা, চীনের মতো সন্তান কম নেওয়ার রীতি বাংলাদেশ চালু করে বাংলাদেশও সাফার করবে একটা সময়ে। কীভাবে? বলছি।

.

এই মুহূর্তে পৃথিবীর সব উন্নত দেশগুলোর দিকে তাকান৷ আমেরিকা, জার্মান, জাপান, চীন, সাউথ কোরিয়া, ব্রিটেইন, রাশা ইত্যাদি। এরা পানির মতো প্রতি বছর বাহির থেকে লোক নিচ্ছে৷ এর নাম দিয়েছে ট্যালেন্ট হান্ট টাইপের কিছু একটা। তাদের দেশে ডক্টর, এঞ্জিনিয়ার, এডভোকেট, বায়োকেমিস্ট ইত্যাদি লাগছে৷ প্রথম বার শুনে মনে হতে পারে মানুষের জন্যে একেকটা দেশ দয়ার ভাণ্ডার হয়ে নিজের দেশের দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছে। বাস্তবে তা নয়৷ প্রতিটা দেশের জনসংখ্যার একটা গোল্ডেন পিরিয়ড থাকে৷ আই মিন, কর্মক্ষম লোকের সংখ্যা৷ এই উন্নত দেশ যাদের নাম করলাম এখানে এদের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে দিন দিন তা কমছে। অন্যভাবে বলতে গেলে বৃদ্ধের সংখ্যা বাড়ছে। এই বুড়োদের আবার ওল্ড হোম ফেসিলিটিসে রেখে কেয়ার করতে সরকারের একটা খরচ আছে৷

.

আবার নিজের দেশের কর্মক্ষম লোক কমতে থাকায় অন্যান্য দেশের সাথে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার একটা শঙ্কাও আছে৷ সেজন্যে বাহিরের দেশ থেকে লোক ভাড়া করে আনে। সেজন্যে বাংলাদেশের মতো বিশ্বজুড়ে যত খয়রাতি দেশ আছে সবাই সেখানে ভীড় করছে৷ এখন বাংলাদেশের সমস্যা কী? বাংলাদেশ তাদের থেকে খারাপটাই নিয়েছে৷ ভালো কিছু নেয় নাই৷ যেমনঃ এখানে বাল্যবিবাহ নিষিদ্ধ, অধিক পড়াশুনার দোহাই দিয়ে আবার ১৮ হলেও মেয়েদের বিয়ে দিচ্ছে না, ক্যারিয়ারে নারী-পুরুষ সমানাধিকরণের কথা বলে নারীদের কর্মক্ষেত্রে এনে বিয়ে এবং বাচ্চা নিতে পরোক্ষভাবে অনুৎসাহিত করে, বহুবিবাহ নাই কিন্তু পরকীয়া আছে। বিয়ে কম বয়সে না হলেও বিয়ের আগে প্রেম করা যাচ্ছে৷ এই পরকীয়া কিংবা বিয়ের আগের রিলেশানে এক্সিডেন্টালি বাচ্চা আসলে সেটা গর্ভপাত করে নষ্ট করা হচ্ছে। আর যদি এতিমখানাতে বড়োও হয়, তাহলে একটা দেশের কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী হিসেবে এদের বড়ো করা যায় না৷ পরবর্তীতে অসামাজিক কাজেই এরা ইনভলভড থাকে।

.

বিয়েকে একটা "খুব কঠিন" কাজ করে উপস্থিত করার মাধ্যমে বিবাহ বহির্ভূত রিলেশানকে এনকারেইজ করা হচ্ছে। কিন্তু সাময়িক আনন্দ ছাড়া এটা কোনো প্রোডাক্টিভ কাজের মধ্যে পড়ছে না। এটার সাথে জড়িত গিফটের দোকান, সেক্স প্রোডাক্টস, এনজিও, পর্ণ, রিসোর্ট ইত্যাদি বিজনেস বুম করছে৷ কিন্তু, দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে কোনো কাজে আসছে না। উপরন্তু, এসবের কারণে সামাজিক অস্থিরতা বাড়ছে৷ ডিভোর্স রেইট, রেইপ, গ্যাং রেইপ, ইভ টিজিং, ইনসেস্ট, গে-লেসবিয়ান, পেডোফিলিয়া ইত্যাদি বেড়েছে যেমনটা বেড়েছে উন্নত দেশে।

.

এভাবে চলতে থাকলে বাংলাদেশেও একটা সময় বুড়ো বাড়বে আর নতুন বাচ্চা না থাকায় জব সেক্টরে একটা ভ্যাকুয়াম ক্রিয়েট হবে৷ কিন্তু সেই খালি জায়গা ভর্তি করতে উপযুক্ত এবং দক্ষ লোক এদেশে নাই৷ পাশের দেশের ইন্ডিয়া, শ্রীলংকা থেকে একটা ঢল এদেশের জবে নামবে। এদের সাথে লোকালদের একটা কনফ্লিকশান থাকবে। যেমনটা আমেরিকাতে এখন ইমিগ্রেন্টদের রিপাবলিকানরা সহ্যই করতে পারছে না। কারণ, তাদের জব সেক্টর বাহিরের লোকজন দিয়ে ভর্তি। তারা নেটিভ হয়েও বাদাম ভাজা ছাড়া কাজ নেই।

.

.

এখন দেখুন আপনি ফার্স্টপ্লেইসেই ইসলামের বিধান মানলে এই সমস্যাগুলো আসতো না৷ একজন মেয়ে বালেগা হলে, মোটামুটি মানসিক বিকাশ হলে বিয়ের ব্যবস্থা করে দিন। কম বয়সে বিয়ে হলে যেসব জটিলতার কথা বলা হয়, এটা একটা অসাড় যুক্তি মনে হয়৷ কারণ, এই বাংলাতেই মেয়েদের কম বয়সে মা হওয়ার ঘটনা আছে অহরহ৷ বরং ৩০ এর পরে মা হতে নানা জটিলতা সৃষ্টি হয়। আরেকটা ব্যাপার হলো বহুবিবাহকে সহজ করা। এই দুইটা নিয়ম সহজ করলে এক লাফেই উপরের সমস্যাগুলো কমে যাচ্ছে৷

.

যেমন অনেক ছেলে আছে একাধিক মেয়ের সাথে প্রেমের অভিনয় করে বিয়ের পরেও। সেক্ষেত্রে বহুবিবাহের অপশান থাকলে সরাসরি বিয়ে করা যায়। আর বিয়ে না করলে তো বাদ। ব্যাপারটা লিখার মতো এত সহজ না, ঠিক৷ আবার খুব কঠিনও না৷ সাহাবাদের সময় এই প্রথা ছিলো। সবজায়গায় ইসলাম আনতে না চাইলেও ইসলাম চলে আসে৷

.

.

.

বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ এই লিখা অনেক বোনদের মধ্যে বিরক্তির কারণ হতে পারে কিছু বিশেষ কারণে। তাঁদের উদ্দেশ্যেঃ আল্লাহর একটা হুকুম পালন করতে আপনি অপারগ হতে পারেন, সেই ওজর আল্লাহ ক্ষমা করে দিতে পারেন ইচ্ছে হলেই। কিন্তু, সেই বিধান নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করা, তামাশা করা, সেকেলে ইসলাম বলে তাচ্ছিল্য করা আপনাকে ইসলামের গন্ডি থেকে মুহূর্তেই বের করে দিতে যথেষ্ট। সুতরাং, বর্তমান অবস্থায় যদি আপনি কোনো একটি সুন্নত যদি পালন নাও করতে পারেন মনে সেজন্যে কোনো তামাশা, বিদ্বেষ কিংবা কঠোর মনোভাব পোষণ করবেন না। কারণ, আল্লাহ জানেন, আমরা জানি না। আল্লাহ যা আদেশ করেছেন, তার হিকমাহ আমাদের অজানা থাকতে পারে, আল্লাহর নয়।

 

- মিসবাহ মাহিন

 

 

 

 

 

 

 

 

# একচল্লিশ

 

মাসজিদুল হারামের ইমাম শাইখ মাহির রমাদানের শেষ দশ দিনের জন্য এক চমৎকার আমলের ফর্মুলা দিয়েছেন:

.

১) প্রতিদিন এক দিরহাম (এক টাকা) দান করুন, যদি দিনটি লাইলাতুল ক্বদরের মাঝে পড়ে, তবে আপনি ৮৪ বছর (১০০০ মাস) পর্যন্ত প্রতিদিন এক টাকা দান করার সাওয়াব পাবেন।

.

২) প্রতিদিন দু' রাকা'আত নফল সালাত আদায় করুন, যদি দিনটি লাইলাতুল ক্বদরের মাঝে পড়ে তবে আপনি ৮৪ বছর পর্যন্ত প্রতিদিন দু' রাকা'আত সালাতের সাওয়াব পাবেন।

.

৩) প্রতিদিন তিন বার সূরা ইখলাস পাঠ করুন, যদি দিনটি লাইলাতুল ক্বদরের মাঝে পড়ে, তবে আপনি ৮৪ বছর পর্যন্ত প্রতিদিন এক খতম ক্বুর'আন পাঠের সাওয়াব পাবেন ।

.

তিনি আরও বলেন, উপরের কথাগুলো মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিন, যারা আপনার কথা শুনে এ আমল করবে, আপনিও তাদের আমলের সমান সাওয়াব পাবেন ইন শা আল্লাহ্।

.

কারণ রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "ভালো কাজের পথ প্রদর্শনকারী আমলকারীর সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে, কিন্তু আমলকারীর সাওয়াবে কোনো ঘাটতি হবে না..." [সহীহ মুসলিম, ২৬৭৪]

▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂

.

_

#ওহী (Seeking The Way To Jannah)

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

# বিয়াল্লিশ

 

রমাদানে জানাযার নামাজ এ সুযোগ পেলে তা না পড়ে চলে আসার মত বোকামি আর হতে পারে না। যেহেতু সব কিছুকে ৭০-৭০০ গুন পর্যন্ত মাল্টিপ্লাই করে দেয়া হবে, সেহেতু একটা জানাযা পড়লে ৭০-৭০০টা উহুদ পরিমাণ নেকি পাবার কথা।

 

.

 

রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, "যে ব্যক্তি কোন মুসলমানের জানাযায় শরীক হয়ে নামায পড়ে এবং তাকে কবরও দেয় সে দু’কীরাত নেকী পায়। প্রত্যেক কীরাত উহুদ পাহাড় সমান নেকী। আর যে ব্যক্তি শুধু জানাযার নামায পড়ে এবং মাটি দেয় না সে এক কীরাত নেকী পাবে।"

 

( সহীহ বুখারী ও মুসলিম)

 

- এম মাহবুবুর রহমান

 

 

 

 

 

 

# তেতাল্লিশ

 

ইসলামের জন্যে যারা কাজ করতে চায়, তাদের মধ্যে অধিকাংশই অভিযোগ করে থাকেন যে দ্বীনের জন্যে করবে এমন কাজ খুঁজে পাচ্ছেন না। আসলেই কি তাই?

.

প্রথমে অন্যভাবে শুরু করছি৷ দেখুন এই যে আমার লিখাটা আপনি পড়ছেন, ফেইসবুক লগারিদম ব্যাপারটা এমন ভাবে সেট করে দিয়েছে যে আপনি হয় আমার সরাসরি ফ্রেন্ড লিস্টে আছেন অথবা আমার ফ্রেন্ডলিস্টে যারা আছেন তাদের ফ্রেন্ড লিস্টে আপনি আছেন। সহজ কথা আপনি আমার ফ্রেন্ডস অফ ফ্রেন্ডস। এর বাহিরে যারা পড়ছেন তাদের সংখ্যাটা হাতে গোনা ৮% ও না। হয়তো আপনার পুরো ফ্রেন্ডলিস্ট গানবাজ বন্ধুতে ভর্তি, কিংবা থিয়েটারের মানুষে ভর্তি অথবা কোনো আবৃত্তি সংঘের মানুষের ভর্তি।

.

তো মনে করুন, কোনোভাবে এই লিখা আপনার চোখে পড়ার সুবাদে আপনি শেয়ার কিংবা কপি-পেস্ট করতে পেরেছেন বলে পড়তে পারছে আপনার ঘরানার আরো কিছু মানুষ৷ কিন্তু, আমি লিখছি অনেক বড়ো অডিয়েন্সকে লক্ষ্য করে। যেই ছেলেটা নিয়মিত নেশা করে সেই ছেলেকেও উদ্দেশ্য করে লিখছি। যেই ছেলেটা পাড়ার গ্যাং এ যুক্ত হয়ে ছিনতাই করে সেও তো ফেইসবুক চালায়, আমি চাই সেও এই লিখা পড়ুক। আমি চাই ছাত্রলীগ বা ছাত্রদলের ছেলেরাও এই লিখা পড়ুক। কিন্তু, আমি চাইলেই তা হবে না৷ কারণ, ফেইসবুকের ডেটা লগারিদমই এমনভাবে সেট করা যে তা আপনার কেবল একটা সার্কেলেই ঘুরপাক খাবে৷ মানুষ আপনার লিখা শেয়ার করে ছড়িয়ে দেবে৷ আপনার মনে হবে সবার কাছে সেই মেসেজ পৌঁছেছে। বাস্তবে তা নয়।

.

টুইটারের হ্যাশট্যাগ আবার বেশ কার্যকর ফেইসবুকের তুলনায়৷ যাক সে কথা। দ্বীনের কাজের কথা বলছিলাম। সম্প্রতি আমরা দেখছি কলেজ - বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া এক শ্রেণির মানুষের মাঝেও দ্বীনের পথে আসতে শুরু করেছে। অন্তত ১৫ বছর আগের সাথে এখন অনেক পার্থক্য দেখতে পাই। আগে সুন্নতি দাঁড়ি কেবল হুজুর আর বৃদ্ধ লোক এবং বোরখা কেবল হুজুরের স্ত্রী আর বৃদ্ধা মহিলাদের মাঝে দেখা যেতো। এখন কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে যান৷ দেখবেন এদের অনেক সুন্নাতের উপর আছে। এই বাহ্যিক পরিবর্তন এক কথায় অভাবনীয়। তার মানে এখানে বিভিন্ন ইনফ্লুয়েন্সার যেমন জাফর, শাহরিয়ার, মুনতাসির এবং নানা এনজিওগুলো যেমন স্ট্রাকচারড ভাবে সেকুলার মেন্টালিটির ছেলেমেয়ে তৈরি করতে চেয়েছিলো তাতে বড়ো একটা হোঁচট খেয়েছে এখন।

.

তারা যেটা চেয়েছিলো তা হলো ইসলামকে কেবল নিজের ভেতর রাখো- এই নীতি এপ্লাই করা। অর্থাৎ তুমি নিজে সালাত, সাওম করো। মানুষকে বলার দরকার নেই৷ অথবা এসব না করলেও আপত্তি নেই। মানবধর্মটাই আসল। সব মানুষকে ভালোবাসা লাগবে। তবে এরাই আবার শিখায় বাংলাদেশী বাদে পাকিস্তানিদের ঘৃণা করো। অন্য দেশকেও ক্রিকেট খেলার সময় ঘৃণা করো। অর্থাৎ সেকুলারিজম তথা ধর্মনিরপেক্ষতার সাথে সাথে নিজ জাতিকেই সুপ্রিম আর বাকিদের হীনভাবে দেখার একটা অভ্যেস গড়ে তুলতে হবে৷ আবার আমেরিকাকে সম্মানের চোখে দেখবে কিন্তু উগান্ডা কালো- গরিবের দেশ বলে তাদের নিয়ে মজা করবে। এখানে সেকুলারিজম- ন্যাশনালিজম - রেইসিজম (ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদ- জাতীয়তাবাদ - বর্ণবাদ) এর একটা ত্রিমুখী দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে যার ফাঁদে তারা নিজেরাই কালেভদ্রে ফেঁসে যায়। আর এই গোমরটা অনেক জেনারেল লাইনের ছেলে যারা অল্প একটু চিন্তা করে মাথা খাটায়, তারা ধরে ফেলেছে। এখান থেকে একটা ইনফ্লাক্স দ্বীনের পথে আসার পথ খুঁজে পেয়েছে৷

.

আরেকটা উল্লেখযোগ্য কারণ হলো মানবধর্ম ডিপ্রেশানের কোনো ভালো সল্যুশান দিতে পারেনি। গার্লফ্রেন্ড, জাস্টফ্রেন্ড, আড্ডা, গান কোনোটাই ইয়াং জেনারেশানের ডিপ্রেশানের কোনো সমাধান দিতে পারে নি৷ এদিক থেকে ইসলাম আবার ভিন্নভাবে চিন্তা করতে শেখায়৷ যেই জীবনে আপনি অল্প সময়ে থাকবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু তো নেই। আর অতীতের ঘটনাটা তকদিরের উপর ছেড়ে দেওয়াতে কিছুটা বোঝা বুক থেকে নেমে যায় অটোমেটিক্যালি। আর প্রতিটা ঘটনাকেই মুমিনের জন্যে পরীক্ষা হিসেবে নিলেও দুশ্চিন্তার ভার কমে যায়৷ এই সম্পূর্ণ ব্যাপারটা হিদায়াত আর ঈমানের উপর দাঁড়িয়ে আছে। যেই ছেলে সেকুলারদের দেখানো সব পদ্ধতি এপ্লাই করে ব্যর্থ হয়েছে সে ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে শুরু করলো এবং এদিকে বেশ ভালো একটা ফলও দিলো। এখান থেকে ইসলামে আরেকটি বেশ বড়ো অংশ এসেছে।

.

.

এরপর আসছে কাজের ক্ষেত্রে আমাদের এখন কী করা দরকার। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, যেই ভাইয়েরা কিংবা তরুণ আলেমরা যারা এখনকার তরুণদের মন বুঝতে পারেন তাদের উপযোগী করে অনেক বই লিখছেন। এটা বেশ ভালো উদ্যোগ। একুশে বইমেলা কিংবা রকমারীর মতো বড়ো প্লাটফর্মে এখন এই বইগুলো যাচ্ছে। এতে প্রথমে যে বললাম, ফেইসবুকে লগারিদমের কারণে সার্কেলটা থেকে আমরা বেরোতে পারি না- সেই বাঁধা টপকে দিয়েছে এই বই। তারপরেও যদি নিজের গান, আড্ডা, গার্লফ্রেন্ড, জাস্টফ্রেন্ডের ঘরানার বাহিরেও একটা মামুলি উপদেশমূলক ইসলামী পৌস্ট চলে আসে, তা শেয়ার করে দিন৷

.

যা বলছিলাম, এই বইমেলা বা অনলাইনে সাধারণ একজন ছেলেও ইসলামিক বই কিনছে। সে অনেকক্ষেত্রে জানেও না যে সে একটা ইসলামিক বই কিনছে। কারণ, বইয়ের শিরোনামে তা যে বোঝার উপায় নেই। এবং এই ছদ্মবেশটাই ভালো একারণে যে, সে তার সাধারণ চিন্তাধারার সাথে ইসলামের চিন্তাধারার সরাসরি যোগসূত্র স্থাপন করতে পারবে। এভাবে, সে যেই বিষয়গুলোতে আগ্রহী, ইসলাম নিয়ে তার যা যা জানার আছে তার উত্তরও সম্পূরকভাবে সে এখানে পেয়ে যাচ্ছে। এই বড়ো প্লাটফরমে ভাইয়েরা কাজ করছেন, প্রতি বছর অংশগ্রহণের আকার বাড়ছে৷ তো যাদের এই ব্যাপারে কাজের অভিজ্ঞতা আছে তারা টুকটাক সাহায্য করুন।

.

বই লিখাটাই শেষ কথা নয়। পাঠকের কাছে যাওয়ার আগ পর্যন্ত নানা ধাপ আছে, সেই ধাপগুলোতেও আপনি কাজ করতে পারেন। ইসলামের খেদমত করতে চাইলে এই একটা উপায় বাতলে দিলাম।

.

পরের উপায়টাও এই বই সম্পর্কিত-ই। পাঠক হিসেবে কোনো বই পড়লে তার তিন চার লাইনের একটা এক্সপ্রেশান লিখে ফেলুন। মানে বইটি পড়ে কেমন লাগছে? নতুন কী জানলেন যেটা এই বই পড়ার আগে জানতেন না, এভাবে সহজ ভাষায় লিখে ফেলুন চট করে৷ ক্লাসে বা অফিসে গেলেও আলাপ করতে পারেন অমুক বইয়ের এই ব্যাপারটা চমৎকার হয়েছে। রিভিউ লিখতে বললে অনেকে ভয় পেয়ে যায়। অত তাত্ত্বিক আর বড়ো না লিখলেও চলবে। কয়েকটা লাইনেই লিখুন বইয়ের বেসিক কী তথ্যটা দিয়েছে। এতে আরেকজন আগ্রহী হলে আপনারও একটা নেকী হয়ে গেলো।

.

অনেকে আছেন টেক নলেজে ভালো জ্ঞান রাখেন। তারা বিভিন্ন ইসলামিক ওয়েবসাইটের ডেভলপমেন্ট, এপ্স ইত্যাদিতে কাজ করতে পারেন৷ আপনি বলতে পারেন সব তো হয়ে গেছে, আর কী করা? আচ্ছা দেখুন ফেইসবুক থাকার পরেও টুইটার, ইনস্টা, হোয়াটস এপ, ইমো, ভাইবার এসছে না? অথচ সবার পার্পাস এক। কিন্তু ইউজার এক্সপেরিয়েন্সের উপর বেইস করে সেবার ধরণ কিঞ্চিৎ আলাদা। সেজন্যে টেক সাইডেও ইসলামের কাজ ফুরিয়ে যায় নি৷ আরো সহজ করে সবার সামনে উপস্থাপন করুন। ভাইয়েরা কাজের সময় দক্ষ লোক পান না। তাদের নিজে থেকে যেচে গিয়ে হেল্প করুন৷ টাকা দিলে নিবেন, না-হলে দ্বীনের খাতিরে একটা কাজ ফ্রি তে করে দিলেন আপন ভাই মনে করে।

.

আরেকটা বড়ো খাত হলো ট্রান্সলেইশান। ইংরেজি থেকে বাংলা অনেক কিতাব অনুবাদ করতে পারেন। অনুবাদ করা যেতে পারে বিদেশী হকপন্থী আলেমদের দেওয়া লেকচারগুলো। পরে সেগুলো তাদের লেকচারের নিচে সাবটাইটেল হিসেবে যুক্ত হবে৷ যাদের বাংলায় দক্ষতা ভালো তারা এই সাবটাইটেল দেখে সহজেই দাওয়াহ পেল দ্বীনের৷ আরবিতে যাদের দক্ষতা ভালো, আলেমদের সাথে পরামর্শ করে তারাও বাংলায় অনুবাদ আনতে পারেন। উর্দু থেকেও বাংলা করা যায়৷ আবার আমাদের ভাইদের সম্প্রতি বের হওয়া অনেক বাংলা বই আছে যেগুলো ইংলিশ মিডিয়ামের ভাইদের কাছে যেতে পারছে না এই ভাষাগত বাঁধা না টপকানোর ফলেই। এই বাংলা বইগুলোর ইংলিশ ভার্সন বের করা সম্ভব হলে সেখানে শ্রম দিন৷ এভাবে আরেকটা সেক্টরের সন্ধান পাওয়া গেলো।

.

আর বাকি থাকলো দান সদকার ব্যাপার৷ যারা সময় বা দক্ষতার কারণে উপরের কোনোটাই করতে অপারগ তারা দানের ব্যাপারে মন দিন। একজন দ্বীন মানতে চাওয়া ভাইকে হেল্প করুন আর্থিকভাবে। যারা ঋণগ্রস্ত, নিজের পকেট থেকে টাকা দিয়ে তাদের ঋণ পরিশোধ করে দিন৷ যাদের আরো বেশি টাকা আছে, তারা মাদ্রাসাগুলোতে সদকা করুন। অনেক মাদ্রাসা আছে যেগুলো মাত্র ২০ হাজার টাকা খরচ দিয়ে চলতে পারছে না৷ শিক্ষকদের বেতন দিতে পারছে না৷ ছাত্ররা উপোস করে৷ এই মাদ্রাসা নিজ উদ্যোগে বের করে তাতে দান করুন। নিজে ব্যবসা করে থাকলে নিজ প্রতিষ্ঠানে নামাজী লোককে অগ্রাধিকার দিন। এভাবেও ইসলামের সেবা করা যায়৷

.

ফেইসবুকে যদি আপনার ফ্রেন্ডরা সবাই জেনারেল হয়ে থাকে তবে সবচেয়ে বড়ো সুবিধা। আপনি একটা ইসলামিক পৌস্ট পেলেও সেটা শেয়ার করুন। তাহলে এই যে লগারিদমের দুষ্টচক্র ভেদ করে নতুন আরেকটা সার্কেলে মেসেজটা পৌঁছে গেলো। এভাবে সেটা আরও নতুন সার্কেল খুঁজে নেবে নিজে থেকেই।

.

.

সেজন্যে কেউ যদি বলে ইসলামের জন্যে কাজ করতে চাইলেও কাজ খুঁজে পায় না, সে আসলে অজ্ঞতা থেকেই এই কথা বলে। প্রয়োজন কেবল অনুসন্ধিৎসু মন আর মনের ভেতর থেকেই পরিবর্তন করার তাগাদা। কারণ, আপনিই হয়ে উঠতে পারেন সেই বৃহৎ পরিবর্তনের ক্ষুদ্র একজন ভলান্টিয়ার।

 

- মিসবাহ মাহিন

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

# চুয়াল্লিশ

 

উমার ইবনুল খাত্তাব রাযি. বলেন, 'তাওবা-কারিদের মজলিসে বসো। কেননা তারা সবচেয়ে নরম হৃদয়ের মানুষ।' [হিলইয়াতুল আওলিয়া, ৫১/২]

.

নেক সোহবত কতটা উপকারী এটা নিয়ে অসাধারণ একটি ঘটনা ইবনু মুফলিহ রহ. আদাবুশ শারঈয়াহ গ্রন্থে উল্লেখ করেন,

 

একবার আবূ উবাইদ আল-কাসিম ইবনু সাল্লাম রহ. ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বাল রহ.-এর বাড়ি গেলেন তাঁর সাথে দেখা করতে। পরে তিনি নিজেই পুরো ঘটনার বৃত্তান্ত দিয়েছেন,

.

'আমি ইমাম আহমাদের বাড়ি গেলাম। তিনি আমাকে দেখতে পেয়ে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং স্বাগত জানালেন। আমাকে বুকে জড়ালেন। এরপর বললেন, "এখানে বসো, আমার ঘরের মাঝখানে বসো।"' মূলত এই স্থানে নিমন্ত্রণকারী বসে। এটাই রীতি। কিন্তু ইমাম আহমাদ রহ. বলছেন, 'তুমি এখানে বসো।'

 

তাই আবূ উবাইদ অবাক হলেন এবং বললেন, 'না ইমাম, আমি না! আপনি এখানে বসুন। এটা কি নিমন্ত্রণকারীর বসার জায়গা নয়? এটা তো তারই প্রাপ্য।'

 

ইমাম আহমাদ রহ. বলেন, 'হাঁ, তা ঠিক। তবে সে চাইলে তো অতিথিকেও তার জায়গায় বসাতে পারে।'

 

এ কথা শুনে আবূ উবাইদ নিজেকে মনে মনে বললেন, 'হাঁ! এ হলো আজকের সাক্ষাতের প্রথম বরকত!'

.

এরপর তারা অন্য কথায় ব্যস্ত হয়ে গেল। কথা প্রসঙ্গে আবূ উবাইদ ইমাম আহমাদকে বলেন, 'ও ইমাম আহমাদ! সর্বোত্তম বৈঠকের কথা যদি বলি, তাহলে বলতে হয় আপনি এতটা উত্তম ব্যক্তি যে আমার ইচ্ছে হয় আপনার সাথে প্রতিদিন দেখা করি! আপনি এরই যোগ্য। আপনি কতই না নেককার, ইলমের অধিকারী!'

 

ইমাম আহমাদ বলেন, 'এমনটা বলো না আবূ উবাইদ। আল্লাহ জানেন, এমন অনেক মানুষই আছে আমার জীবনে, যাদের সাথে বছরে একবার সাক্ষাৎ হয় আমার। কিন্তু তাদেরকে আমি ওই ব্যক্তিদের চেয়ে বেশি পছন্দ করি, যাদের সাথে প্রায়সই দেখা হয়।'

 

আবার আবূ উবাইদ মনে মনে বলেন, 'হাঁ! এ হলো আজকের সাক্ষাতের দ্বিতীয় বরকত!'

.

দেখুন, কীভাবে নেক সোহবত থেকে তিনি বরকত হাসিল করছেন!

.

এক পর্যায় আলোচনা শেষ হলো, বিদায়ের সময়ও ঘনিয়ে এলো; আবূ উবাইদ বিদায়ের জন্য অনুমতি চাইলেন। এবারও ইমাম আহমাদ উঠে দাঁড়ান, আবূ উবাইদের হাত ধরেন এবং বের হবার পথ পর্যন্ত তার সাথে যান। ইমাম আহমাদের এই কাণ্ড দেখে আবূ উবাইদ বলেন, 'না না! ঠিকাছে শায়খ! আপনি শান্ত হোন, আমি নিজেই যেতে পারবো। এমন রাজকীয় সম্মানের প্রয়োজন নেই।'

 

ইমাম আহমাদ রহ. বলেন, 'না, তুমি এর প্রাপ্য। কারণ, তাবীঈ আমীর আশ-শা'বী রহ. বলেছেন, "অতিথিতির হাত ধরে গেটের বাহির পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া এবং তার পশুর দড়ি ধরে এগিয়ে দিয়ে আসা। যতক্ষণ না অতিথি অদৃশ্য হয়ে যায়—এগুলো করা অতিথিপরায়ণেরই অংশ।"

 

আবূ উবাইদ প্রশ্ন করলেন, 'এটা কে বর্ণনা করেছে?'

 

ইমাম আহমাদ বলেন, 'অবশ্যই আমি তোমাকে বর্ণনা সূত্র বলব। ইবনু যায়িদা এটা শুনেছেন মুজালিদ রহ.-এর কাছে। আর মুজালিদ রহ. শুনেছেন ইমাম আশ-শা'বী রহ.-এর কাছে।'

 

সবশেষে আবূ উবাইদ আবার মনে মনে বলেন, 'হাঁ! এ হলো আজকের সাক্ষাতের তৃতীয় বরকত!'

.

#নেক_সোহবত

 

—উস্তাদ আলী হাম্মুদা

 

[অনুবাদ এবং পরিমার্জনায়: কলামিস্ট হুজুর]

 

মূল ভিডিও লিংক: https://bit.ly/2YLMzXl

 

 

# পঁয়তাল্লিশ

 

ইবরাহীম ইবন আদহাম হাঁটছেন। হঠাৎ এক সৈনিকের সাথে দেখা।

‘কাছাকাছি জনবসতি কোথায়?’ সৈনিক জিজ্ঞেস করলো।

ইবরাহীম কাছের একটা গোরস্তান দেখিয়ে দিলেন।

সৈনিক ক্ষেপে গিয়ে কঠিন মার দিলো তাঁকে। মাথা ফেটে রক্ত পড়তে লাগলো।

সৈনিকটি কিছুদূর যাবার পর লোকজন বলল, করেছো কী? খুরাসানের বিখ্যাত যাহিদকে মারপিট করে এসেছো।

সৈনিক এসে ক্ষমা চাইলো তাঁর কাছে। তিনি বললেন, তুমি যখন মারছিলে, আল্লাহর কাছে তোমার জন্য ক্ষমা চেয়েছি।’

‘কেন?’ সৈনিক বিস্মিত, হতবাক।

‘তুমি আমাকে মেরেছো। আমি জানি আল্লাহ আমাকে এজন্য প্রতিদান দেবেন। আমি চাইনি যার কারণে আমার কল্যাণ হলো, তার কোনো অকল্যাণ হোক।’

[আর রিসালাতুল কুশায়রিয়্যাহ থেকে]

গোরস্তানে কত মানুষ শুয়ে আছেন। তারা আমাদের মতোই হাঁটতেন, গল্পগুজব করতেন, ঝগড়া করতেন। এতজন মানুষ নিস্তব্ধ হয়ে স্থায়ীভাবে একটি জায়গায় আছেন। অথচ আমরা ক্ষণস্থায়ী ঘর-বাড়িকে জনবসতি বলি...।

 

- আব্দুল্লাহ জোবাইর

 

 

 

# ছেচল্লিশ

 

দোয়া করুন, দোয়া শুনুন, দোয়ায় জীবন ধন্য করুন

দোয়ায় মুক্তি, দোয়ায় শান্তি, দোয়ায় সুখের জীবন গড়ুন

 

দোয়া মু'মিনের বড় সম্পদ। জীবনে সমস্যার অন্ত নেই, ঝামেলার শেষ নেই। আমাদের নানা রকম অভাব লেগেই থাকে। এসব নিয়েই জীবন। কোনো অবস্থায়ই হাল ছাড়ার কোনো সুযোগ নেই। যার আল্লাহ আছেন, তার সব আছে। তাই আল্লাহকে চিনতে হবে, সব সময় তাকে ডাকতে হবে, তার সাথে জোরালো সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে। গভীর ভালোবাসা নিয়ে আন্তরিকভাবে তাকে ডাকলে তিনি আমাদের ডাকে সাড়া দিবেন। যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন, সেই মহান আল্লাহই আমাদের সমস্যা সম্পর্কে বেশি জানেন। তিনিই জানেন কোন দোয়াগুলো আমাদের বেশি প্রয়োজন। মহান দয়াময় মায়াময় আল্লাহ তায়ালা তাই আমাদেরকে পবিত্র কুরআনে অনেক দোয়া শিখিয়েছেন। আরও শিখেয়েছেন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাধ্যমে। তাই কুরআন-হাদিসের দোয়াগুলো আয়ত্ত করতে পারলেই সবচেয়ে ভালো। যারা আরবী জানেন না তারা দোয়াগুলোর অনুবাদ জেনে নিয়ে নিজের কথা, নিজের ব্যথা, নিজের ভাষায় ফুটিয়ে তুলতে পারেন।

 

- শহীদুল হক

 

 

 

 

 

# সাতচল্লিশ

 

শহিদ জাকির মুসা রহঃ কাশ্মিরের প্রথম মুজাহিদ যিনি জিহাদরত অবস্থায় পূর্ন কুরআন মুখস্থ করেন!

 

- মেহেদি হাসান মুরাদ ভাইয়ের ওয়াল থেকে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

# আটচল্লিশ

 

তাওহীদ ইসলামের সবচেয়ে মৌলিক আকিদা। তাই কেউ এর খেলাফ হাদিস বা আসার আনলে আমাদের বক্তব্য

 

১) আকিদা প্রমানিত হতে মুতাওয়াতির হাদিস দরকার। কোন জয়িফ বা খবরে আহাদ না। তাছাড়া রাসুলুল্লাহ সা এর শেষ বক্তব্য দলিল।

 

২) তাওহীদের খেলাফ হাদিস বা আসার আসলে তা সাজ।

 

৩) স্বপ্ন শরীয়তের দলিল না।

 

৪) সাহাবাদের আমল মৌলিক দলিল না, বরং সহায়ক ব্যাখ্যা। তবে তারা মাসুম না। আবু বকর, উমার, উসমান, আলী বা উম্মাহাতুল মুমিনিন কেউ মাসুম না। মাসুম শুধু নবীরা।

 

৫) রাসুলুল্লাহ জীবিত না মৃত তা নিয়ে বিতর্ক আছে। তবে এক হাদিসে আছে আমার কবরে এসে কেউ সালাম দিলে আমি তার জবাব দেই। তবে কেউ রাসুলুল্লাহ সা এর কাছেও সাহায্য চায় তবে তার কাছে হুজ্জত প্রতিষ্ঠা করতে হবে যে তা শিরক। না মানলে হিন্দুদের মতো মুশরিক।

 

"আমরা শুধু আল্লাহর কাছে সাহায্য চাই শুধু তারই ইবাদত করি"। - সুরাতুল ফাতিহা

 

৬) স্বপ্ন বা ইলহামের মাধ্যমে রাসুলুল্লাহ সা কাউকে কোন পরামর্শ দেওয়া কাউকে আল্লাহর মতো সাহায্য করা বোঝায় না। এটা কোন ফিজিক্যাল বা বস্তুগত সহায়তা না।

 

- মীর সালমান

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

# ঊনপঞ্চাশ

 

বর্তমানের ইখওয়ানি আর জামাতিরা ইসলামের সব চেয়ে বড় অপব্যাখ্যাকারী।এরাই মডারেট ইসলামের জন্ম দিয়েছিল।এদের একটা বিশ্বস্ত বড় কুকুরের নাম তারিক রামাদান।কুকুরটা একটা ফ্রেঞ্চ মেয়ের সাথে স্বেচ্ছায়/উভয়পক্ষের সমোঝোতায় সেক্স করেছিল।মেয়েটার ছলনায় কুকুরটা ফেঁসে গিয়েছিল। কেস খেয়ে জেল পর্যন্ত গিয়েছিল।কুকুরটার অপকর্মে অবস্থা বেগতিক দেখে নিজেদের ইজ্জত বাঁচাতে দেশীয় জামাতিরা নানা গল্প ফেঁদে ছিল।কিন্তু দুঃখজনক ব্যাপার হলো কুকুরটা নিজেই অপরাধ স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছিল।আফসোস স্বদেশী ইসলামি সেকুলাঙ্গারদের জন্য।

 

তবে আমাদের বঙ্গ দেশীয় জামাতিদের চরিত্র অবশ্যই তারিক রামাদান আল কালবিদের চেয়ে অনেক উন্নত।

এর যথেষ্ট কারণ ও আছে বৈকি।এদেশে যারা জামাতের কাজ শুরু করেছিল তাদের প্রায় সবারই ইসলামের হাতে খড়ি হয়েছিল কওমি উস্তাদদের হাত ধরে।তাই জামাতের ভেতরে এক সময় ব্যাপক সংখ্যক মোত্তাকি লোকজনের উপস্থিতি দেখা যেতো।

 

আব্বাস আলি খান,অধ্যাপক গোলাম আজম,সাইদি, মাওলানা নিজামি এনাদের সকলেরই প্রাথমিক প্রেরণা বা ইসলামি বুনিয়াদ যারা গেঁথে দিয়েছিলেন তারা ছিলেন পিউর কওমিয়ান।যার কারণে কদিম জামাত আর জাদিদ জামাতের ভেতর কিছুটা হলেও চিন্তাগত কিছু মৌলিক পার্থক্য খুঁজে পাবেন।

 

ইসলামি ছাত্র শিবির ২০০৩ সালের আগে কখনোই কোন বেগানা নারীদের সংবর্ধনা দেয়নি।যে কিছিমেরই প্রোগ্রাম হোক সেটা।শিবিরের ইতিহাসে এরকম কোন রেকর্ড এর আগে ছিল না।২০০১ সালে আমেরিকার টুইনটাওয়ারে আল কায়দা তালেবান কর্তৃক হামলার পর বিশ্বব্যাপি মডারেট ইসলামের যে নবধারা সৃষ্টি হয়েছিল তাতে সবার আগে যারা সাড়া দিয়েছিল তারা ছিল ইখওয়ানি জামাতিরা।তারা ভেবেছিলআমেরিকার চাপে দুনিয়ার সকল মুসলিম এই কথিত নবধারায় মিলে মিশে একাকার হয়ে সবাই জামাতি ইখওয়ানি আকিদ— মানহাজের অনুসারী হয়ে যাবে।সে লক্ষ্যে তারা তাদের কদিম ইসলামি নেসাব পর্যন্ত চেঞ্জ করে ফেলেছিল!

 

বিএনপির সাথে জোট করে এদেশে তারা নতুন এক ভাবাদর্শের জন্ম দিয়েছিল।একে ডানপন্থী ইসলামি সেকুলারিজম বললেও কমই বলা হবে।কিন্তু খেলায় তো প্রতিপক্ষ থাকতেই হয়।প্রতিপক্ষ যে তাদের চেয়েও সেয়ানা হতে পারে সেটা তখনকার ইসলামি সেকুলারিজম প্রোমোটকারীদের মাথায় ছিল না।সত্যি কথা বলতে একই কাজের ধারা আজো অব্যাহত আছে।

 

- সাদিদ আহমাদ

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

# পঞ্চাশ

 

মাদরাসা থেকে শিক্ষক বেরিয়ে আসেন। এসে নতুন মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেন। এক মাদরাসা ভেঙে আরেক মাদরাসা হয়। এটাকে আমার কাছে খারাপ ব্যাপার মনে হয় না। এভাবে মাদরাসার সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিটা মাদরাসায় ছাত্রসংখ্যাও থাকছে আগের মতো; বরং অনেক ক্ষেত্রে তারচেও বেশি।

 

আদিব হুজুর নুরিয়া থেকে এসে মাদরাসাতুল মাদিনাহ করলেন। উম্মাহ পেল এক তাজদিদি কারনামা। এরপর একপর্যায়ে বাইতুস সালামে চালু হলো মাদানি নেসাব। বাইতুস সালাম থেকে ডেমরা হুজুর গিয়ে করলেন মাদরাসাতুল ইহসান। এক ইহসানের আবার হলো অনেকগুলো শাখা। প্রতিটাতে প্রায় ৫০০/৬০০+ ছাত্র। ঢাকা হুজুর বেরিয়ে গিয়ে প্রথমে করলেন মাদরাসাতুল ফাতাহ। আর এখন সংশ্লিষ্ট হলেন জামিয়া দারুল উলুম ফুরকানিয়ায়। গাজীপুরী হুজুর এবং মাওলানা শরিফ সাহেব প্রতিষ্ঠিত করলেন মারকাযুল ইলমি ওয়াদ দাওয়াহ। সর্বশেষ বাইতুস সালাম থেকে আটজন শিক্ষক বেরিয়ে গিয়ে প্রতিষ্ঠিত করলেন জামিয়াতুস সালাম আল-আরাবিয়া। মাদরাসাতুল মাদিনাহ থেকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন শিক্ষক বেরিয়েও ভালো মানের প্রতিষ্ঠান করেছেন। সর্বশেষ হাতিয়ার হুজুরের মারকাজুল কুরআন এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ।

 

মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জি, শাইখ শামসুল হক ফরিদপুরী এবং হজরত পীরজী হুজুর (রহ.) জামিয়া ইউনুসিয়া থেকে এসে প্রতিষ্ঠিত করলেন বড় বড় মাদরাসা। ঢাকার বড়কাটারা মাদরাসাও সে সময় প্রতিষ্ঠিত হয়। লালবাগ মাদরাসা এককালে ছিল সবার শীর্ষে। লালবাগ থেকে হলো মুহাম্মাদিয়া। তা থেকে রহমানিয়া। এক রহমানিয়া ভেঙে বেরোল আরেক রহমানিয়া। মুফতি আবদুর রহমান সাহেব চট্টগ্রামের পটিয়া থেকে বের হয়ে প্রতিষ্ঠা করলেন বসুন্ধরা মাদরাসা। বসুন্ধরা মাদরাসা থেকে মুফতি মিজান সাহেব বেরিয়ে এসে করলেন মারকাযুশ শায়খ যাকারিয়া। মাওলানা তারেকুজ্জামান সাহেব সেখান থেকে বেরিয়ে প্রতিষ্ঠা করতে যাচ্ছেন মারকাযুল মাআরিফ আল-ইসলামিয়া। এভাবে ভাঙা-গড়া চলতেই থাকে। সাময়িকভাবে একটু পেরেশানি আসলেও পরিণামে ভালো বৈ মন্দ হয় না।

 

আলিমরা তো আলোকবর্তিকা। যেখানে থাকেন, আলো বিকিরণ করতে থাকেন। একবার মাওলানা রহমাতুল্লাহ সাহেব সুন্দর বলেছিলেন, আমার জামাই আরিফ হক্কানি (ঢাকা হুজুর)-কে গাছতলায় বসিয়ে দিলে সেখানেও কয়েক শ ছাত্র একত্রিত হয়ে যাবে এবং রাতারাতি একটা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে।

 

মারকাযুদ দাওয়াহ একপ্রকার বিশেষ চিন্তাধারা লালন করে। মারকাযের শিক্ষার্থীরাও সেই অভিন্ন চিন্তাধারার ধারক না হলে মারকায তাদেরকে নিজের প্রকৃত উত্তরসূরি হিসেবে বিবেচনা করে না। মাওলানা যুবায়ের সাহেব মারকায থেকে চলে গিয়ে ধীরে ধীরে আলাদা চিন্তাধারা লালন করলেন এবং তার প্রচারেও রত হলেন। যা মূলত তার বিচ্ছিন্ন চিন্তা নয়; বরং আকাবিরের আকাবির মহান সালাফে সালেহিনেরই চিন্তা। হ্যাঁ, এ নিয়ে কারও শাখাগত মতভিন্নতা থাকতে পারে। তার রচনার উপস্থাপনাও অধিকাংশের ভালো না লাগতে পারে। তবে সার্বিক বিচারে উম্মাহ উপকৃত বৈ অপকৃত হয়নি। একেক ফুলের ঘ্রাণ আলাদা। বাগানে যখন ফুল ফুটন্ত থাকবে, যার যে ফুল ভালো লাগবে, সে তার ঘ্রাণ শুঁকবে।

 

হ্যাঁ, এগুলোকে যদি বিবাদ, বিভেদ ও বিভাজনের উপকরণ বানিয়ে ফেলা হয় তবে হিতে বিপরীত হয়। ইখতিলাফ তখন রহমত হওয়ার পরিবর্তে যহমত হয়।

 

- আলি হাসান উসামা

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

# একান্ন

শাইখ উস্তাদ ইয়াসিরের জীবনীঃ
শাইখ মুহাম্মাদ ইয়াসির। উস্তাদ ইয়াসির নামে পরিচিত।
১৯৫৩ ইংরেজি সাল আর ১৩৭৫ হিজরিতে কাবুলে জন্ম।
১৩৯৪ হিজরিতে কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে উত্তীর্ণ হন।
পাকিস্তানে হিজরত করেন ১৩৯৪ হিজরিতে।
একই বছরে তিনি মদিনার ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ে গৃহীত হন এবং ১৩৯৯
হিজরিতে স্নাতক হন।
আফগান জিহাদে একজন নেতা হিসেবে অংশগ্রহণ করেন, যা ১৩৯৫ হিজরিতে তাঁর শিক্ষাজীবনে শুরু হয়েছিল।
আফগান জিহাদের সময় ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে তিনি কাজ করেন।
জিহাদ চলাকালীন ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দাওয়াহ এবং সাংগঠনিক কমিটির
সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
জিহাদের সময় ইসলামিক ইউনিয়নের রাজনৈতিক কমিটির সভাপতি হিসেবেও তিনি দায়িত্ব পালন করেন।
আহমেদ শাহ মাসুদ সরকারের আমলে তথ্য মন্ত্রি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মুজাদ্দিদি সরকারের আমলে উন্নয়ন মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
রব্বানী সরকারের আমলে উন্নয়ন মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
বিভিন্ন মহলের আভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে তিনি মন্ত্রি পদ থেকে পদত্যাগ করেন।
পেশাওয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের আক্বীদা বিভাগে দাওয়াহ এবং জিহাদ
বিষয়ে শিক্ষকতা করেন।
তালিবান আন্দোলন গঠনের পর তার সমর্থন করেন।
ম্যানহাটন আক্রমণের পর তিনি তালিবানদের সাথে যোগ দেন এবং জিহাদের বাধ্যবাধকতার জন্য অন্য সবকিছু ত্যাগ করেন।
ইসলামিক রাষ্ট্রের সাংস্কৃতিক কমিটির প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
দাওয়াহর উপর তাঁর শত শত অডিও বক্তৃতা আছে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

নাম জানা-অজানা সকল লেখককে আল্লাহ উত্তম প্রতিদান দিন।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

কালেক্টেড

()

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

ইকরামা ইবন আবু জাহেল (রাঃ) এর জীবনী (দুশমন থেকে দোস্ত)

 

রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সাহাবা হবার সৌভাগ্য যারা লাভ করেছেন কুরআনে বর্ণিত আয়াতের প্রেক্ষিতে তাদের নামের সাথে একটি বিশেষণ তৎপরবর্তি কালের স্কলারগণ যুক্ত করেছেন যা হলো ‘রাদিআল্লাহু আনহু’, যে কথাটার অর্থ হলো আল্লাহ্ যার উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন। এই বিশেষণটি যে একদিন ইকরামার জন্য প্রযোজ্য হবে তা ছিল অসম্ভব কল্পনার মতো। তার বাবার নাম হলো আবু জাহল্, যে লোকটি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ছিলো ইসলামের প্রধান শত্রু। বাবার মতোই ইসলাম ও মুসলিমদের সাথে শত্রুতায় আর সকলের চেয়েই অগ্রগামী ছিলো ইকরামা (কিংবা ইকরিমা, দুটিই তাকে ডাকা হতো)- যার অত্যাচারে মুসলিমদের ক্রন্দন অবিশ্বাসীদের মনেও কাঁপন ধরিয়েছে, যে ব্যক্তিটির জন্য মুসলিম বাহিনী উহুদ যুদ্ধে পরাজিত হয়েছে, যার ঘোর শত্রুতা ও ইসলাম বিরোধিতার জন্য মক্কা বিজয়ের পরও তাকে ক্ষমার জন্য অযোগ্য ঘোষনা করা হয়েছিলো, একদিন সে ব্যক্তিটিই তার জীবন ও সম্পদের সবটুকুই ইসলামের জন্য উৎসর্গ করেছিলেন এবং প্রমাণ করেছিলেন আল্লাহ্ যাকে চান তাকে হিদায়াত দান করেন।

 

ইকরিমার বয়স যখন সবেমাত্র ত্রিশ পেরিয়েছে, তখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) প্রকাশ্যে ইসলামের দাওয়াত দেয়া শুরু করেছেন। আরবের বিশাল অঞ্চল জুড়ে যে কয়েকটি বড় গোত্র বংশ, সম্মান ও মর্যাদায় সবার উপর ছিল তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ ছিল কুরাইশ। এই কুরাইশের ভেতরেও ছিলো আরো বেশ কয়েকটি উপগোত্র। সমস্ত কুরাইশ গোত্রের নেতৃস্থানীয় যে দু-তিনটি উপগোত্র ছিলো, ইকরামা ছিলো তেমনই একটি গোত্রের সন্তান। একই ভাবে ধন সম্পদের দিক থেকেও ইকরিমার পরিবার ছিল বিখ্যাত। ইকরিমার মতই উচ্চবংশ ও উচ্চমর্যাদার যে সকল তরুণ মক্কায় ছিল, তাদের মধ্যে সা’দ ইবন্ আবি ওয়াক্কাস্, মুসআ’ব ইবন্ উমাইর এর মত অনেকেই ইসলাম গ্রহণ করেছিল। ইকরিমাও হয়ত এ বন্ধুদের মত শুরুতেই ইসলামে প্রবেশ করতে পারতো, কিন্তু পারেনি তার বাবা আবু জাহল্ বলেই। আবু জাহলের অত্যাচার প্রথম দিককার মুসলিমদের ভীষণ পরীক্ষায় ফেলেছিল এবং অবর্ণনীয় কষ্ট সহ্য করে তারা সে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিল। যে লোকটি ইসলামের প্রথম শত্রু ছিল, তার সাথে সাথেই ইসলাম বিরোধিতার মধ্যে দিয়ে ইকরিমা বিন আবি জাহলের তারুণ্যের দিনগুলো কাটতে লাগলো। ইসলামের বিস্ময়কর উত্থান তার এবং তার বাবার নেতৃত্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছিলো, সেজন্য ইসলামের অগ্রযাত্রা রোধ করার জন্য ইকরিমা সর্বশক্তি নিয়োগ করল। বাবা এবং ইসলামের অন্যান্য শত্রুদের সাথে মিলে দুর্বল ও অসহায় নব্য মুসলিমদের প্রতি অত্যাচার তার প্রতিদিনকার কর্ম হয়ে দাঁড়ালো।

 

আল্লাহর নির্দেশে রাসুল (সাঃ) একদিন এদেরই অত্যাচারে মক্কা থেকে মদিনায় হিজরত করলেন। অবশেষে একদিন বদর প্রন্তরে মক্কার মুশরিকদের সাথে কোন প্রথম কোন যুদ্ধে অবতীর্ণ হলেন। আবু জাহল তখন মুশরিক দলের নেতৃত্বে। লাত, মানাত, উজ্জা ও আর সকল দেব দেবীর নামে সে শপথ করলো, মুসলিমদের সমূলে ধ্বংস না করে সে মক্কায় ফিরবে না। বদর প্রন্তরেই সে এসব দেব-দেবীর নামে তিনটি উট বলীদান করল। আকন্ঠ্য সুরাপান আর নারীদের গান আর নাচের মাধ্যমে সে তার সেনাদলকে উদ্দীপ্ত করে চলল।

যুদ্ধ শুরু হলো। আবু জাহল কিছুক্ষণের ভেতরই মুয়াজ ও মুওয়াইবিজ নামের অল্পবয়স্ক দুজন আনসারী মুসলিম তরুণের হাতে ধরাশায়ী হয়ে মৃত্যুবরণ করলো। ইকরিমা দূর থেকে বাবার এ করুণ পরিণতি দেখেছিলো। মৃত্যুকালে তার বাবার শেষ চীৎকার তার অন্তরকে বিদ্ধ করলো, যদিও প্রচন্ড যুদ্ধের মধ্যে তার কিছুই করার ছিল না। পরাজয় আর পিতা হারানোর বেদনা নিয়ে মক্কায় ফিরে এল ইকরিমা।

সেদিন থেকেই পরাজয় আর পিতৃহত্যার প্রতিশোধের ভীষণ আগুন ইকরিমার মনে জ্বলতে শুরু করেছিলো। ইকরিমার মত আর যারা মক্কায় তাদের পিতা বা নিকটাত্বীয়কে হারিয়েছিল, তারাও রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধের জন্য প্রস্তুতি নিতে লাগলো। এভাবেই একদিন মুসলিমদের সাথে কাফিরদের দ্বিতীয় যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠল এবং দুপক্ষ মুখোমুখী হলো উহুদ প্রান্তরে।

 

উহুদের যুদ্ধে ইকরিমা একটি বিরাট অশ্বারোহী দলের নেতৃত্বে ছিলো। এ যুদ্ধে ইকরিমাকে সঙ্গ দেবার জন্য সাথে ছিলো তার স্ত্রী উম্মু হাকীম এবং অন্যান্য মহিলাদের সাথে মিলে সউম্মু হাকীম কুরাইশ সেনাদলকে বাদ্য বাজিয়ে, চীৎকার করে উত্তেজিত করে চলছিলো।

কুরাইশ বাহিনীর ডান বাহুর নেতৃত্বে ছিলো খালিদ বিন ওয়ালিদ এবং বাম বাহুর নেতৃত্বে ছিলো ইকরিমা। যুদ্ধের প্রথম পর্যায়ে মুসলিমদের প্রবল আক্রমনের মুখে কুরাইশ বাহিনী পিছু হটে গেল এবং ছত্রভঙ্গ হয়ে ছড়িয়ে পড়লো। মুসলিমদের একটি দলকে রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) অনড় থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভ্যালী পাহারা দেবার জন্য নিয়োজিত করেছিলেন এবং কোন অবস্থাতেই সে স্থান ত্যাগ না করার জন্য আদেশ করেছিলেন। কুরাইশ বাহিনী পিছু হটে যাবার পর যুদ্ধলব্ধ সম্পদ লাভের আশায় এ দলটির অধিকাংশ সদস্য রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) এর নির্দেশ ভুলে গিয়ে স্থান ত্যাগ করলো। আরবের বিখ্যাত সমর কুশলী এবং ঘনিষ্ঠ দুই বন্ধু ইকরিমা এবং খালিদ মুসলিমদের এ স্থানচ্যুতির সুযোগে পেছন থেকে অশ্বারোহী বাহিনী নিয়ে আক্রমন করে বসলো এবং মুষ্টিমেয় যে কজন মুসলিম রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) এর নির্দেশ মেনে সে স্থানটি পাহারা দিচ্ছিল তাদের হত্যা করে মুসলিম বাহিনীকে অপ্রত্যাশিত আক্রমনে বিপর্যস্ত করে ফেললো। তার ফলেই কুরাইশ বাহিনী প্রতিআক্রমন করলো মুসলিম বাহিনীকে এবং বিপুল সংখ্যক অকুতোভয় সাহাবী দৃঢ়পদ থেকে যুদ্ধ করে শাহাদাত বরণ করলেন। মুসলিমদের এ পরাজয় বদর যুদ্ধের প্রতিশোধ হিসাবে ধরে নিয়ে কুরাইশ বাহিনী মক্কায় ফিরে এল।

 

উহুদের পর মুসলিমদের শেষ দেখে নেবার জন্য আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে বিশাল বাহিনী নিয়ে কুরাইশ সেনাদল ইহুদীদের সহায়তা নিয়ে মদিনা আক্রমন করতে এগিয়ে এলো। রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) তাদের যুদ্ধ প্রস্তুতির খবর পেয়ে সালমান আল ফারসী নামের অনারব পার্শিয়ান সাহাবীর পরামর্শে আগেই মদীনার প্রবেশমুখে বিশাল পরিখা খনন করে কুরাইশ বাহিনীকে অত্যন্ত হতচকিত করেন ও চমকে দেন। মদীনার প্রবেশমুখে বাধা পেয়ে মুশরিক সেনাদল মদিনা অবরোধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। এ অবরোধ দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়। মুশরিক বাহিনীর রসদ ও মনোবল ধীরে ধীরে ক্ষয়ে আসা শুরু হয়। সেনাদলের এ অবস্থা দেখে সুচতুর ইকরামা পরিখার একটি যায়গায় একটি সরু পথ খুঁজে বের করেন। দুঃসাহসিক এক প্রচেষ্টার মাধ্যমে তিনি একদিন ওই স্থানটি দিয়ে পরিখা অতিক্রম করে বসেন। কুরাইশদের একটি ক্ষুদ্র দল এ অভিযানে তার অনুগামী হয়। অচিরেই অকুতোভয় এবং অদম্য মনোবলের মুসলিম একদল রক্ষীর হাতে এ দলটির একজন প্রাণ হারায়, কিন্তু ইকরিমা দ্রুতই নিজের প্রাণ বাঁচিয়ে সে স্থান ত্যাগ করতে সক্ষম হন।

 

সময় বয়ে যায়। মানুষ বুঝতে পারে সত্য দ্বীন এসে গেছে, আর বসে থাকা যায় না। একে একে ইকরিমার ঘনিষ্ট বন্ধু খালিদ বিন ওয়ালিদ, আমর ইবনুল আস্ সহ অধিকাংশই মক্কা ত্যাগ করে রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) এর কাছে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করলো, কিন্তু ইকরিমা তার লক্ষ্যে অবিচল। যেভাবেই হোক জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়েও মুহুম্মাদের শেষ সে দেখে ছাড়বে।

 

হিজরতের নয় বছর পর রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) দশ হাজার জানবাজ মুসলিমের বিরাট বাহিনী নিয়ে অত্যন্ত সন্তর্পণে মক্কা বিজয়ের জন্য মক্কার দ্বারপ্রন্তে উপস্থিত হলেন। কুরাইশ দলের প্রধান নেতা আবু সুফিয়ান অবস্থা বেগতিক দেখে বিচলিত হয়ে পড়লেন এবং অপ্রস্তুত অবস্থায় মুসলিম টহল দলের হাতে ধরা পড়লেন। ধরা পড়ার পর তাকে হত্যা কিংবা জিম্মি না করে ক্ষমা করে দেয়ায় তিনি নিজেই ইসলাম গ্রহণের ঘোষনা দিয়ে রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) এর সাথে মিলে গেলেন। রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) তাঁর সেনাদলকে অত্যন্ত সতর্কভাবে সাধারণ কুরাইশ, নারী ও শিশু, এছাড়া আর যারা যুদ্ধ হতে পেছনে থাকবে তাদের একজনকেও আক্রমন না করতে আদেশ করলেন। এ ছিলো পৃথিবীর সমর ইতিহাসে একটি একক ও অনন্য ঘটনা। মক্কার বিভিন্ন প্রবেশপথে রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) বিভিন্ন কৌশলী সাহাবীর নেতৃত্বে সেনাদল পাঠালেন আর এমনি এক সেনাদলের নেতৃত্বে ছিল খালিদ ইবন্ ওয়ালিদ, যে কিছুদিন আগেই ইসলাম গ্রহণ করেছে। যদিও মক্কার অধিকাংশ লোক এবং যোদ্ধা রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) এর আগমন নিরবে মেনে নিল, তবু ইকরিমা সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি মুসলিমদের যেভাবেই হোক প্রতিহত করবেন। বিশ্বস্ত কিছু সৈন্য সাথে নিয়ে কুরাইশদের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে ইকরিমা মুসলিম বাহিনীর বিরোধিতায় অটল থাকলেন। ক্ষুদ্র সে বাহিনী নিয়ে মুখোমুখি হলেন খালিদের নেতৃত্ব দেয়া মুসলিম বাহিনীর । একসময় যে দুজন ছিলেন অন্তরঙ্গ বন্ধু, একসাথে যুদ্ধ করেছেন মুসলিমদের বিরুদ্ধে, আজ সেই খালিদের বিরুদ্ধে তিনি অস্ত্র ধরলেন। অন্যদিকে খালিদ বিন ওয়ালিদ, যাঁকে রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) সাইফুল্লাহ বা আল্লাহর তলোয়ার উপাধীতে ভূষিত করেছিলেন, তাঁর নেতৃত্ব দেয়া মুসলিম বাহিনী অল্পক্ষনের মধ্যেই পরাজিত করলো ইকরিমার বাহিনীকে। মুশরিকদলের অনেকে নিহত হলো এবং বাকীরা কোনক্রমে প্রাণ নিয়ে পালিয়ে বাঁচলো। যারা পালিয়ে গিয়েছিলো, তাদের মধ্যে একজন হলেন ইকরিমা।

 

মক্কা বিজয়ের দিন রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) এর ঐতিহাসিক অভিযানে একমাত্র ইকরিমার সেনাদলের সাথেই মুসলিমদের সংঘাত ও রক্তপাত হয়েছিল। বাকী সব অংশ দিয়ে আল্লাহর রাসুল সাঃ নির্বিঘ্নে প্রবেশ করলেন। একদিন যে মাটি থেকে তাঁকে তাঁর নিজ বংশীয় লোকজন অমানুষিক অত্যাচার করে বিতাড়িত করেছিল, বার বার যে লোকগুলো তাঁর বিরুদ্ধে অস্ত্র তুলে নিয়েছিলো, তাঁর মাথার মূল্য নির্ধারণ করে দিয়ে দুর্ধর্ষ খুনিদের লেলিয়ে দিয়েছিলো, আজ তাদেরই মাঝে তিনি বিজয়ীর বেশে উপস্থিত। রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) পৃথিবীর সমর ইতিহাসে সেরা ক্ষমা ও দয়ার নজির প্রদর্শন করলেন। তিনি ঘোষনা করলেন, সকল নারী ও শিশু নিরাপদ, যারা নিজ ঘরে অথবা কাবাগৃহে আশ্রয় নিয়েছে তারা নিরাপদ, যারা আবু সুফিয়ান এর গৃহে আশ্রয় নিয়েছে তারা নিরাপদ। এভাবে তাঁর ঘোষনার মাধ্যমে প্রায় সমস্ত মক্কাবাসী নিরাপত্তা লাভ করল। তবে সাধারাণ ক্ষমার মধ্যে থেকেও তিনি কয়েকজন চিহ্নিত লোকের নাম বললেন, যাদের ক্ষমার অযোগ্য ঘোষনা দিয়েছিলেন, এবং এই এর শীর্ষ ব্যক্তিটির নাম ছিল ইকরিমা ইবন্ আবু জাহল। ইকরিমার কানে যখন এ ঘোষণা পৌঁছাল তখন তিনি দ্রুত মক্কার সীমানা অতিক্রম করে ইয়ামেনের দিকে পালানোর জন্য ঘোড়া ছুটালেন।

 

ইতিমধ্যে ইকরিমার স্ত্রী উম্মু হাকীম আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দা, যে কিনা উহুদ যুদ্ধে রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) এর চাচা হামযার কলিজা চিবিয়ে কুখ্যাত ছিলেন, অন্য আরো প্রায় দশজন মহিলার সাথে রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) এর ক্যাম্পে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য উপস্থিত হল। ক্যাম্পে রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) এর দুজন স্ত্রী, তাঁর মেয়ে ফাতিমা এবং আবদুল মুত্তালিব এর পরিবারের কয়েকজন মহিলা তখন রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) এর সাথে ছিল। উপস্থিত মহিলাদের দলটির মধ্যে কেবল হিন্দাই কথা বলবে বলে স্থির করে তারা এসেছিলো। উহুদের সেই মর্মান্তিক ঘটনার জন্য হিন্দা অত্যন্ত লজ্জিত ও ব্যথিত ছিলো। রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) এর কাছে সে নিজের মুখ ঢেকে হাজির হল।

নিজেকে আড়াল রেখে হিন্দা বলে চলল- ”আল্লাহর রাসুল, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি ইসলামকে নিজের মনোনীত দীন হিসাবে নির্বাচিত করেছেন। আপনি সম্পর্কের দিক থেকে আমার নিকটাত্মীয়। আমি আপনার কাছে এজন্য ক্ষমা ও উত্তম ব্যবহারের আশা করছি। আজ থেকে আমি নিজেকে বিশ্বাসী মুমিনদের একজন বলে ঘোষনা করছি, যে আল্লাহ্ যে সত্য মিশন সহ আপনাকে পাঠিয়েছেন, তা দৃঢ়চিত্তে বিশ্বাস করে।”

 

এ কথা বলার পর হিন্দা নিজের মুখ থেকে নিকাব সরিয়ে ফেলে বলল “আমি হিন্দা বিনত্ উৎবা ইয়া রাসুলুল্লাহ্”।

রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) তাকে ক্ষমা করে দিলেন এবং বললেন, ”তোমাকে স্বাগতম।”

 

হিন্দা বলে চলল ”আল্লাহর শপথ হে আল্লাহর রাসুল, আজকের আগে পৃথিবীর কোন ঘর আমার কাছে আপনার ঘরের চেয়ে অপছন্দনীয় ছিল না, আর আজ এখন থেকে পৃথিবীর কোন ঘর আপনার ঘরের চেয়ে প্রিয় আর মর্যাদাপূর্ণ নেই।”

এবার আকস্মিকভাবেই উম্মু হাকীম উঠে দাঁড়ালেন এবং নিজের পরিচয় দিয়ে ইসলামে প্রবেশের ঘোষনা দিয়ে বললেন, ”ইয়া রাসুলুল্লাহ্, আপনি তাকে পেলে হত্যা করবেন এই ভয়ে ইকরামা মক্কা থেকে পালিয়ে ইয়েমেন এর দিকে চলে গেছে। আপনি তাকে নিরাপত্তা দিন, তাহলে আল্লাহ্ও আপনাকে নিরাপত্তা দেবেন।”

 

”সে নিরাপদ”, রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) অঙ্গীকার করলেন।

 

উম্মু হাকীম এক মুহূর্তও দেরী করলেন না, তখনই বেরিয়ে পড়লেন ইকরিমার খোঁজে ইয়ামেনের পথে। তার সাথে একজন গ্রীক কৃতদাসকে সঙ্গে নিলেন নিজ নিরাপত্তার জন্য। পথিমধ্যে তাঁরা যখন নির্জন এলাকা দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন সে দাসটি জোর করে তাকে শ্লীলতাহানী করতে চাইলো। কিন্তু উম্মু হাকীম কৌশলে তাকে কোন আরব লোকালয়ে পৌঁছানো পর্যন্ত ঠেকিয়ে রাখতে সক্ষম হলেন। লোকালয়ে পৌঁছানোর পরই উম্মু হাকীম সেখানকার অধিবাসীদের সব জানিয়ে সাহায্য চাইলেন। তারা দ্রুত তাঁর সাহায্যে এগিয়ে এল এবং গ্রীক কৃতদাসটিকে বেঁধে ফেলে তাদের কাছে বন্দী করে রেখে দিল। উম্মু হাকীম এবার একাই বেরিয়ে পড়লেন ইয়ামেনের পথে ইকরিমার খোঁজে। ভু দূরের পথ, রাত আর দিন দ্রুত ঘোড়া ছুটিয়ে অবশেষে তিনি লোহিত সাগরের তীরে তিহামা নামের একটি এলাকায় ইকরিমাকে ধরতে পারলেন। ইকরিমা তখন সাগর পাড়ি দেবার জন্য একজন মুসলিম নাবিকের সাথে বাদানুবাদ করছিলেন। নাবিকটি বলছিল, ”আগে আপনি পবিত্র হয়ে আসুন, তবেই আমি আপনাকে নিয়ে সাগরে নামব।”

 

”কিন্তু আমি কিভাবে পবিত্র হব?”

 

”আপনি এ কথার সাক্ষ্যদান করুন যে, আল্লাহ্ ছাড়া কোন উপাস্য নাই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসুল।”

 

”আমি তো এর জন্যই এখানে পালিয়ে এসেছি।”

 

ইতিমধ্যেই দুজনের মধ্যে এসে উপস্থিত হলেন উম্মু হাকীম। বললেন, ”আমার চাচাতো ভাই (আত্মীয়তার দিক দিয়ে এরা দুজন চাচাতো ভাই-বোন ছিলেন), আজ আমি আপনার কাছে এসেছি সেই অনন্য সাধারণ, সবচেয়ে সঠিক পথের দিশারী আর সব মানুষের মধ্যে শ্রেষ্ঠ মানুষ মুহাম্মাদ ইবন্ আদুল্লাহর কাছ থেকে। আমি তাঁর কাছে আপনার জন্য নিরাপত্তা চেয়েছি, তিনি তা দিয়েছেন। এখন আপনি আর নিজেকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দেবেন না।”

 

ইকরিমা অত্যন্ত আশ্চর্য হয়ে গেলেন। এতদূরে তাঁর স্ত্রীর একাকী উপস্থিতিতে। মুহম্মাদ, যাঁর সাথে তার এত শত্রুতা, যিনি তাকে ক্ষমার অযোগ্য ঘোষনা করেছেন তার পক্ষ থেকে নিরাপত্তা; তিনি নিজের কানকেই যেন বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। তিনি স্ত্রীকে বললেন, ”তুমি কি নিজে তাঁর সাথে কথা বলেছ?” উম্মু হাকীম উত্তর করলেন, ”হ্যাঁ, আমি নিজে তাঁর সাথে কথা বলেছি এবং তিনি নিজেই আপনাকে নিরাপত্তা দিয়েছেন।” ইকরিমা ফিরে চললেন মক্কার পথে। পথে উম্মু হাকীম সেই গৃক ভৃত্যের কথা স্বামীকে জানালেন। ভয়াবহ ক্রোধে জ্বলে উঠলেন ইকরিমা, সরাসরি সে এলাকায় চলে গেলেন যেখানে ভৃত্যটি আটক অবস্থায় ছিল। ইকরিমা তাকে সেখানে হত্যা করলেন এবং আবার এগিয়ে চললেন মক্কার পথে। পথিমধ্যে যেখানে তারা বিশ্রামের জন্য থেমেছিলেন, সেখানে এক রাতে স্ত্রীকে একান্তে পেতে চাইলেন। উম্মু হাকীম ছিটকে সরে এলেন এবং তার সাথে মিলিত হতে অস্বীকার করলেন। বললেন, ”আপনি আমার সাথে মিলিত হতে পারবেন না, কারণ আমি মুসলিমা আর আপনি হলেন মুশরিক।”

 

ইকরিমা বিস্ময়ে হতবাক হয়ে পড়লেন। তাঁর স্ত্রী মুসলিম হয়েছে একেবারেই সেদিন, আর তাঁরা দুজন মিলিত হলে আর তো কেউ দেখছে না, ঈমান তাকে এতটুকু পরিবর্তন করেছে? বললেন, ”এ তো কোন সহজ বিষয় নয় যা তোমার আর আমার মিলন আর এতদিনের সম্পর্কের মধ্যে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে”। ইকরিমা মক্কায় প্রবেশ করলেন।

 

রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) তার মক্কায় প্রবেশের আগেই সাহাবীদের ডেকে ঘোষণা দিলেন, ”ইকরিমাহ্ ইবন্ আবী জাহল তোমাদের মধ্যে মুসলিম এবং মুহাজির হয়ে আসছে। তোমরা তার পিতাকে গাল দিও না, কেননা মৃতকে গাল দিলে তা তাদের কাছে পৌঁছায় না।”

কিছুক্ষনের মধ্যে ইকরিমা সেখানে প্রবেশ করলেন যেখানে রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) বসে ছিলেন। নবী, তাঁর উপর আল্লাহর শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক, উঠে দাড়ালেন এবং উষ্ণ আলিঙ্গনে ইকরিমাকে স্বাগত জানালেন।

 

“মুহাম্মাদ”, ইকরিমা বললেন, “উম্মু হাকীম আমাকে জানিয়েছে যে আপনি আমাকে নিরাপত্তা দিয়েছেন।”

 

“হ্যাঁ, সে সত্য বলেছে।” রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) বললেন, “তুমি নিরাপদ।”

 

“আপনি মানুষকে কিসের দিকে ডাকছেন?”

 

“আমি তোমাকে আহ্বান জানাচ্ছি আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ্ নাই এবং আমি আল্লাহর বান্দা ও রাসুল এ কথার সাক্ষ্য দেবার জন্য, সালাত কায়েম করার জন্য, যাকাত আদায় করার জন্য এবং ইসলামের অন্যান্য বিধিনিষেধগুলো মেনে চলার জন্য।”

 

“আল্লাহর শপথ”, ইকরিমা বলে চললেন, “আপনি কেবলমাত্র তার দিকেই ডেকেছেন যা সত্য এবং আপনি কেবলমাত্র সৎকাজেরই আদেশ দান করেছেন। আপনার মিশন শুরু করার আগেও আপনি আমাদেরই মাঝে ছিলেন এবং তখন আপনি কথায় ছিলেন সবচেয়ে সত্যবাদী এবং কাজে ছিলেন সবচেয়ে সঠিক।” ইকরিমা রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) এর দিকে তার হাত প্রসারিত করে দিলেন এবং বলে চললেন, “আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ্ নাই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর বান্দা ও রাসুল”। এরপর বললেন,

“ইয়া রাসুলুল্লাহ্ , আপনি আল্লাহর কাছে আমার জন্য প্রার্থনা করুন, তিনি যেন আমাকে ইসলামের বিরুদ্ধে আমার সকল শত্রুতা ক্ষমা করে দেন এবং আপনার উপস্থিত ও অনুপস্থিত অবস্থায় আমি আপনার নামে যে সকল নিন্দা করেছি আর কুৎসা রটনা করেছি সেগুলো যেন তিনি ক্ষমা করে দেন।”

 

রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) আল্লাহর কাছে এ বলে প্রার্থনা করলেন যে, “হে প্রতিপালক, আমার বিরুদ্ধে যত শত্রুতা সে করেছে এবং তোমার আলোকে নিভিয়ে দেবার যত চেষ্টা সে করেছে তার জন্য তাকে ক্ষমা করে দাও। আমার সামনে বা পেছনে আমার সম্মানহানীর জন্য যা কিছু সে বলেছে তার জন্যও তাকে ক্ষমা করে দাও।”

ইকরিমার মুখ গভীর আনন্দে উদ্ভাসিত হয়ে উঠল। তিনি বললেন, “আল্লাহর শপথ ইয়া রাসুলুল্লাহ্, আমি শপথ করছি, যা কিছু আমি আল্লাহর পথের শত্র“তার জন্য ব্যয় করেছি, তার দ্বিগুন আমি ব্যয় করব আল্লাহর পথে, এবং ইসলামের বিরুদ্ধে যত যুদ্ধ আমি করেছি তার দ্বিগুন আমি আল্লাহর পথে যুদ্ধ করব।”

 

সেদিন থেকে ইকরিমা একনিষ্ঠভাবে ইসলামের প্রবেশ করলেন। মুসলিম হিসাবে প্রতিটি যুদ্ধে তিনি জীবন বাজী রেখে অংশ নিতে লাগলেন এবং তাঁর দ্রুতগামী ঘোড়া অবিশ্বাসীদের হৃদয়ে কাঁপন ধরিয়ে তুলতে লাগল। যুদ্ধ ময়দানে না থাকলে অধিকাংশ দিন তাঁর দিনের বেলা কাটত রোজা রেখে, মসজিদে ও কুরআন অধ্যয়ন করে, আর রাত কাটত নিভৃতে আল্লাহর কাছে কেঁদে কেঁদে। তখন কুরআন কোন বই আকারে ছিল না, তা ছিল চামড়া, বড় উটের হাড়, উপযুক্ত কোন পাথর ইত্যাদিতে লিখিত অবস্থায়। কুরআনের সে সংরক্ষিত অংশগুলোকে বলা হয় মুসাফ। ইকরিমা প্রয়ই এ মুসাফগুলোকে নিজের চুমু খেয়ে, মুখের উপর রেখে অঝোর ধারায় কাঁদতেন আর বলতেন, ”কিতাবু রাব্বী, কালামু রাব্বী”, ”এ আমার রবের কিতাব, এ আমার রবের ভাষা”।

 

ইসলাম গ্রহণের সময় ইকরিমা যে ওয়াদা রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) এর সাথে করেছিলেন, তার প্রতিটি অক্ষরে অক্ষরে পালন করার জন্য তিনি ভীষণ কঠোর ও দৃঢ় ছিলেন। তার ইসলাম গ্রহণের পর যতগুলো যুদ্ধ মুসলিম বাহিনী অংশগ্রহণ করেছে তার প্রতিটিতেই তিনি ছিলেন সেনাবাহিনীর অকুতোভয় প্রথম সারির যোদ্ধা।

 

রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) এর ইন্তেকালের পর হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। সে সময় দিকে দিকে ধর্মত্যাগীদের ফিতনা দাউ দাউ করে ছড়িয়ে পড়ে। কোমল হৃদয় আবু বকর আল্লাহর কৃপায় তা অসাধারণ কঠোর হাতে দমন করেন। এ সময় আরবের অধিকাংশ অঞ্চলে এদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইকরিমা ছিলেন মুসলিম সেনাদলের অন্যতম সমরবিদ ও যোদ্ধা। আবু বকরের পর উমর এর খিলাফত শুরু হল। এককালের প্রবল পরাক্রান্ত রোমান আর পার্শিয়ান সম্রাজ্য তখন মুসলিমদের হাতে নাস্তানাবুদ অবস্থা। সে সময় রোমান সাম্রাজ্যের সাথে মুসলিমদের যে ভয়াবহতম ঐতিহাসিক যুদ্ধ সংগঠিত হয় তা ছিল ইয়ারমুকের যুদ্ধ। এ যুদ্ধে ইকরিমার কথা বর্ণনা করার আগে এর ঐতিহাসিক কিছু প্রেক্ষাপট আলোচনা করা জরুরী।

 

নব্বই দশক পর্যন্ত যেমন এ পৃথিবী আমেরিকা ও সোভিয়েত এ দুটি সুপার পাওয়ারে বিভক্ত ছিল, ঠিক তেমনি রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) যখন এ পৃথিবীতে ইসলামের বার্তা নিয়ে আসেন তখন পৃথিবী রোমান এবং পারস্য এ দুটি সাম্রাজ্যের সুপার পাওয়ারে বিভক্ত ছিল। বিশাল সিরিয়ান অঞ্চল, যা রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) এর সময় শাম নামে পরিচিত ছিল তা ছিল রোমান সাম্রাজ্যের অধীন এবং ইরাকের কিছু অংশ এবং ইরান ও এর সংলগ্ন এলাকাগুলো ছিল পারস্য সাম্রাজ্যের অধীন। এ দুটি শক্তি দীর্ঘকাল ধরে যুদ্ধ করে যাচ্ছিল এবং বর্তমান পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক অংশ এ দুটি সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রনাধীন ছিল। সম্পদ, মর্যাদা, সামরিক শক্তি, ক্ষমতা সবদিক থেকে এ জাতি দুটো ছিলো সবার চেয়ে অগ্রগামী। এ দুটি সাম্রাজ্যের শাসিত অঞ্চলগুলো ছিল প্রাকৃতিক সম্পদ ও সৌন্দর্য়ে অতুলনীয়। আরব জাতি ছিলো ভৌগলিকভাবে এ দুটো জাতিরই প্রতিবেশী। রোমানরা এবং পারসিকরা আরব জাতিকে অসভ্য একটি জাতি হিসাবে জানত, আরবীয়দের সাথে তারা মিশতে চাইতো না এবং তাদের রাজসভায় আরবীয়দের প্রবেশাধিকার অত্যন্ত নিয়ন্ত্রিত ছিল। আরবীয়রাও এ দুটি সাম্রাজ্যের শাসকগোষ্ঠী এবং তাদের ক্ষমতাকে অত্যন্ত সমীহ করে চলত। আরবীয় কয়েকটি গোষ্ঠীর রাজা এবং স্থানীয় শাসকবর্গ রোমান অথবা পারসিকদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে তাদের শাসন মেনে ও কর দিয়ে চলতো। এহেন অবস্থায় রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) এর আগমন ঘটল এ পৃথিবীতে। ইসলামের প্রচারের প্রথমদিকে তিনি মানুষকে আল্লাহর দিকে ডেকে ডেকে বলতেন, “তোমরা ইসলামের ছায়াতলে এসে আল্লাহর সার্বভৌমত্যকে মেনে নাও। আল্লাহর শপথ, একদিন পারসিক ও রোমানদের সম্পদ আল্লাহ্ তোমাদের হাতে তুলে দেবেন।”। তাঁর কথা শুনে অবিশ্বাসীরা হাসত, কেউ কেউ আরবের সবচেয়ে বিশ্বস্ত ও সত্যবাদী লোকটি কেন এমন কথা বলছে তা ভেবে বিস্মিত হতো। ধীরে ধীরে ইসলামের আলো বিকশিত হতে লাগল, রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) দূত পাঠিয়ে সকলকে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছাতে লাগলেন। এভাবে একদিন রোমান এবং পারসিক সম্রাটের কাছেও তাঁর দূত পৌঁছে গেলো। যে আরবদের তারা ঘৃনা করে সে আরবদের এমন ঔদ্ধত্য তারা মেনে নিতে পারে নি। রাসুলুল্লাহ্ (সাঃ) এর মৃত্যুর পর আবু বকর (রাঃ) এর খিলাফতকালে মুসলিম মুজাহিদরা অত্যাচারিত জনপদের লোকদের আহবানে সাড়া দিয়ে যুগপতভাবে পারস্য ও রোম সাম্রাজ্যে আক্রমন শুরু করলো। প্রথমদিকে পারস্য অঞ্চলের যুদ্ধে মুসলিমবাহিনীর সর্বাধিনায়ক ছিলেন খালিদ ইবন্ ওয়ালিদ (রাঃ)। এরপর তিনি মুসান্না ইবন্ হারিসার হাতে মুসলিম কমান্ড ন্যাস্ত করে চলে আসেন রোমানদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য এবং সেখানে তাঁর কাছ থেকে মুসলিম বাহিনীর কমান্ড গ্রহণ করেন আবু উবায়দা ইবনুল জাররা। একের পর এক যুদ্ধ হতে লাগল এবং যৎসামান্ন রসদ, স্বল্প সেনাদল নিয়েও মুসলিমরা এ দুটি সাম্রজ্যের অধীন রাষ্ট্রগুলো জয় করতে লাগল। পারস্য সাম্রজ্যের বিরুদ্ধে মুসলিমদের সবচেয়ে বড় যে যুদ্ধটি হয়েছিল তা ছিল কাদেসিয়ার যুদ্ধ এবং রোমানদের বিরুদ্ধে মুসলিমদের ভয়ংকরতম যুদ্ধটি ছিল ইতিহাস বিখ্যাত ইয়ারমুকের যুদ্ধ।

 

ইয়ারমুকের যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হবার আগে মুসলিম সেনাদল রোমানদের রাজ্য একে একে জয় করছিলো। ইসলামের এ বিজয় যখন আর রোধ করা যাচ্ছে না, তখন সুবিশাল রোমান সাম্রজ্যের সকল অংশ থেকে সেনাদল নিয়ে এসে জড়ো করা হল ইয়ারমুকের প্রান্তরে। প্রায় দেড় লাখ আধুনিক অস্ত্র সজ্জিত রোমান সেনা মাত্র তেত্রিশ হাজার মুসলিমের বাহিনী মোকাবেলা করার জন্য হাজির হল। ইসলামের ইতিহাসে কঠিনতম সে যুদ্ধে নেতৃত্বদানের জন্য বীর মুসলিম মুজাহিদ কমান্ডার খালিদ ইবন্ ওয়ালিদ কমান্ড গ্রহণ করলেন আবু উবায়দা ইবনুল জাররার কাছ থেকে। ইকরিমা এ যুদ্ধে ছিলেন মুসলিম বাহিনীর একজন কমান্ডার। মরুভূমিতে পানিবিহীন পথচলার পর পথিক যেভাবে পানির জন্য ক্ষিপ্র হয়ে ছুটে চলে, এ যুদ্ধে ইকরিমাও তেমনি বার বার তার সেনাদল নিয়ে রোমানদের আক্রমন করে যাচ্ছিলেন। যুদ্ধের এক পর্যয়ে রোমান সেনাদল আক্রমন করে মুসলিম বাহিনীকে পর্যুদস্ত করে ফেলল। তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন সুরক্ষিত রোমান বাহিনীর একেবারে ভেতরে প্রবেশ করবেন এবং নিজের মৃত্যু পর্যন্ত তাদের সর্বোচ্চ ক্ষতি করবেন। ইকরিমার এ সংকল্পের কথা শুনে খালিদ দ্রুত তাকে বাধা দিয়ে বললেন, “একাজ তুমি করো না ইকরিমা, তোমার মৃত্যু হবে মুসলিমদের জন্য একটা বড় আঘাত”। ইকরিমা বললেন,”আমাকে যেতে দাও খালিদ, আল্লাহর রাসুলের সাথে থাকার এবং তার সাথে যুদ্ধ করার সুযোগ তুমি পেয়েছো। আমার বাবা আর আমি ছিলাম তার সবচেয়ে ঘৃণ্য শত্রু। যে পাপ আমি করেছি তার শোধ দেবার সুযোগ তুমি আমাকে দাও। আল্লাহর নবীর বিরুদ্ধে আমি অনেকগুলো যুদ্ধ করেছি, আর আজ আমি এ রোমানদের দেখে পালিয়ে যাব তা কিছুতেই হতে দেয়া যায় না।”

 

ইকরিমা তখন বাহিনীর লোকদের ডেকে বললেন, “কে কে আছো যে মৃত্যুর জন্য বায়াত করবে আমার হাতে”। তার এই আহ্বানে আল হারিস ইবন্ হিশাম, আইয়াশ ইবন্ রাবিয়া সহ চারশো মুজাহিদ তাকবীর ধ্বনি দিতে দিতে এগিয়ে এলো। অত্যন্ত দ্রুতগতিতে এ দলটি সবাইকে ছাড়িয়ে ঢুকে পড়ল রোমান বাহিনীর একেবারে ভেতরে এবং বীরের মত যুদ্ধ করল প্রতিটি লোক নিজের মৃত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত। এ দলটির দ্বারা রোমান বাহিনীর যে ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছিল তা আর তারা কাটিয়ে উঠতে পারেনি।

 

সেদিন যুদ্ধ শেষ হয়ে যাবার পর দেখা গেল, মুসলিমদের মধ্যে যারা শাহাদাত বরণ করেছে তাদের মধ্যে তিনজন মুমূর্ষু অবস্থায় কাতরাচ্ছেন। এই তিনজন ছিলেন আল হারিস ইবন্ হিশাম, আইয়াশ ইবন্ রাবিয়া এবং ইকরিমা ইবন্ আবু জাহল। ইকরিমার খোঁজ পেয়ে খালিদ বিন ওয়ালিদ তার মাথা নিজ কোলে তুলে নিলেন। তাঁর দুচোখ বেয়ে ক্রমাগত অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিলো। ইকরিমা এবং আল হারিস পানির জন্য ডাকছিলেন। তাঁদের জন্য দ্রুত পানির ব্যবস্থা করা হল। পানি আনার পর আইয়াশ তাঁদের দিকে তাকালেন। তারা বললেন, “এ পানি আইয়াশকে দাও।” আইয়াশের কাছে পানি নিয়ে যাবার পর দেখা গেল তিনি ততক্ষনে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে ফেলেছেন। আবার পানি যখন ইকরিমা এবং আল হারিসের দিকে নিয়ে যাওয়া হল, তখন দেখা গেল তাঁরা দুজনও ততক্ষনে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে নিয়েছেন।

 

উপস্থিত মুসলিমদের চোখ আবেগে অশ্র“সজল হয়ে উঠল। তাদের মনে পড়লো ইকরামার অবিশ্বাস্য পরিবর্তনের কথা। একদিন যে লোকটির হাত আল্লাহর কথাকে স্তব্ধ করে দেবার জন্য রক্ত ঝরাতো, আজ তার দেহের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে সে দিয়ে গেছে আল্লাহর জন্য।

 

রেফারেন্সঃ

আসহাবে রাসুলের জীবনকথাঃ ডঃ আবদুল মা’বুদ

সাহাবীদের জীবনীঃ তালিব আল হাশিমি

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

#

বাংলার ১০০ উলামায়ে দেওবন্দের নাম সমূহঃ-

:

যাঁদের জীবন মুহাম্মদী উম্মতের তরে উৎসর্গ করেছেন।।

ওনাদের প্রতি হাজার সালাম এবং ওনাদের শ্রদ্ধেয় জননীদের প্রতিও কৃতজ্ঞ এই বাংলার মাটি।।

:

১) বালার্টের গাজী মাওলানা নূর মুহাম্মদ নিজামপুরী রহ

২) মাওলানা ইমামুদ্দীন গাজী রহ

৩) মাওলানা আব্দুল ওয়াহেদ বাঙ্গালী রহ

৪) মাওলানা যমীরুদ্দীন রহ

৫) মাওলানা ক্বারী ইব্রাহিম উজানি রহ

৬) মাওলানা হাবীবুল্লাহ কুরাইশী রহ

৭) মাওলানা সূফী আযীযুর রহমান রহ

৮) মাওলানা শাহ মোখলেসুর রহমান রহ( ডলুকুর, সাতকানিয়া)

৯) মাওলানা শামছুল হুদা পাঁচবাগী রহ

১০) মাওলানা রমীয আহমদ হালধরী রহ

১১) মাওলানা মুহাম্মদ রামুভী রহ

১২) মাওলানা আব্দুল হামীদ রহ

১৩) মাওলানা আব্দুল বারী রহ

১৪) মাওলানা নূর বখশ রহ

১৫) মাওলানা গাজী মোয়াজ্জম হোসাইন নিজামপুরী রহ

১৬) মাওলানা আব্দুল আজিজ ( জনাব ওয়ালা) রহ

১৭) মাওলানা অলি আহমদ নিজামপুরী রহ

১৮) আল্লামা ফজলুর রহমান রহ

১৯) হাফেজ মাওলানা আফায উদ্দীন রহ

২০) হাফেজ মাওলানা জহুরুল হক রহ

২১) মাওলানা সাঈদ আহমদ সন্ধীপী রহ

২২) মাওলানা আহমদ হাসান রহ

২৩) মাওলানা সিরাজুল ইসলাম রহ

২৪) মাওলানা আব্দুল ওয়াদুদ সন্ধীপী রহ

২৫) মুফতি আযম আল্লামা মুফতি ফয়জুল্লাহ

২৬) মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল ওয়াহহাব রহ

২৭) মাওলানা আতাহার আলীরহ

২৮) মাওলানা আব্দুল খালেক চাঁদপুরী রহ

২৯) মুফতি শাহ মাকসূদুল্লাহ রহ

৩০) মাওলানা আব্দুল ওয়াহহাব ( পীরজী হুজুর) রহ

৩১) মাওলানা বশীর আহমদ

৩২) মাওলানা সৈয়দ ফয়জুর রহমান রহ

৩৩)মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী রহ

৩৪) মাওলানা মুহাম্মদুল্লাহ হাফিজ্জি হুজুর রহ

৩৫) মাওলানা ইয়াসীন বেগ রহ

৩৬) ফখরে বাঙ্গাল আল্লামা তাজুল ইসলাম রহ

৩৭) সৈয়দ মাওলানা আব্দুল খালেক সৈয়দপুরী রহ

৩৮) শায়খুল হাদিস মাওলানা ইয়াকুব রহ

৩৯) মাওলানা নূর মুহাম্মদ আজমী রহ

৪০) মুফতি দ্বীন মুহাম্মদ খাঁন রহ

৪১) মাওলানা আব্দুল করিম রহ

৪২) মাওলানা কেব্বাদ রহ

৪৩) মাওলানা শাহ মুহাম্মদ হারুন বাবুনগরী রহ

৪৪) মাওলানা হাফিজুর রহমান

৪৫) মুফতি আযীযুল হক রহ

৪৬) খতীবে আযম আল্লামা সিদ্দিক আহমদ রহ

৪৭) মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন রহ

৪৮) মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ ইসহাক ( মরহুম পীর সাহেব চরমোনাই) রহ

৪৯) আল্লামা শাহ মুহাম্মদ ইউনুছ রহ

৫০) মাওলানা আব্দুল আযীয রহ

৫১) আল্লামা মুশাহিদ বাইয়মপুরী রহ

৫২) মাওলানা মনযুরুল হক রহ

৫৩) মাওলানা মুহাম্মদ হিদায়াতুল্লাহ

৫৪) মাওলানা আরিফ রব্বানী রহ

৫৫) আল্লামা আমীর হুসাইন মীর সাহেব রহ

৫৬)মাওলানা মুহিব্বুর রহমান সিলেটি রহ

৫৭) মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম রহ

৫৮) মাওলানা আব্দুল হালীম হোসাইনী রহ

৫৯) মাওলানা শাহ আব্দুল আযীয রহ

৬০) মাওলানা রহ বুরহান উদ্দীন রহ

৬১) মুফতি ইউসুফ ইসলামাবাদী রহ

৬২) মুফতিয়ে আযম মুফতি আহমদুল হক রহ

৬৩) আল্লামা ইসহাক রহ

৬৪) আল্লামা ইসহাক গাজী রহ

৬৫) মাওলানা নেছার উদ্দীন( হাজী সাহেব হুজুর) রহ

৬৬) মুফতি ইব্রাহিম রহ

৬৭) মাওলানা লুৎফর রহমান বর্ণভী রহ

৬৮) আল্লামা আবুল হাসান রহ

৬৯) মাওলানা আব্দুল মান্নান ( সদর সাহেব হুজুর) রহ

৭০) মাওলানা আমীন উদ্দীন রহ শায়েখে কার্তিয়া রহ

৭১) আল্লামা আবুল হাসান যশোরী রহ

৭২) মাওলানা কোরবান আলী রহ

৭৩) মাওলানা আব্দুল হালীম ( ওলামা বাজার) রহ

৭৪) মুফতি নুরুল হক রহ

৭৫) আল্লামা আলী আহমদ বোয়ালবী রহ ( বোয়ালি সাহেব হুজুর) রহ

৭৬) শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ

৭৭) মুফতি আব্দুল মুঈয রহ

৭৮) হাফেজ মাওলানা শাহ শামসুদ্দীন রহ

৭৯). হাফেজ মাওলানা হামেদ রহ

৮০) মাওলানা আকবর আলী রহ

৮১) মাওলানা সালাহ উদ্দীন রহ

৮২) মাওলানা শামসুদ্দীন কাসেমি রহ

৮৩) মাওলানা নুর উদ্দীন আহমদ গহরপুরী রহ

৮৪) মাওলানা ওবায়দুল হক কাসেমি জালালাবাদী রহ

৮৫) মাওলানা আশরাফ আলী বিশ্বনাথী রহ

৮৬) ফকীহুল মিল্লাত আবদুর রহমান রহঃ

৮৭) মাওলানা মুহাম্মদমদ ইদরীস সন্ধীপী রহ

৮৮) মুফতি সাইফুল ইসলাম রহ

৮৯) মাওলানা সুলতান আহমদ শাহ( পুকুরিয়াবী)

৯০) মাওলানা আমীনুল ইসলাম রহ

৯১) মাওলানা সুলতান আহমদ নানুপুরী

৯২) মাওলানা মুহিদ্দীন খান রহ

৯৩) শায়খুল হাদিস মাওলানা আব্দুল্লাহ রহ

৯৪) মাওলানা সৈয়দ মুহাম্মদ ফজলুল করিম ( পীর সাহেব চরমোনাই) রহ

৯৫) মাওলানা শাহ জমিরুদ্দীন রহ

৯৬) আল্লামা হারুন ইসলামাবাদী রহ

৯৭) মুফতি ফজলুল হক আমিনি রহ

৯৮) মাওলানা আতাউর রহমান খান রহ

৯৯) মাওলানা হাবীবুল্লাহ মেছব্হ রহ

১০০) মাওলানা ইউসুফ নিজামী রহ

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

বিশ্বের বৃহত্তম ব্যাক্তিগত ইসলামিক লাইব্রেরীঃ কান্দালা লাইব্রেরী (মাওলানা সাদ এর বাড়ী)

 

কান্ধালার সুবিশাল গ্রন্থাগার, পৃথিবীর দুর্লভ এক সংগ্রহশালা

 

তাবলীগের বিশ্ব আমীর, শায়খুল ইসলাম হযরতজী সাদ কান্ধলভীর পৈতৃক বাড়ী ভারতের কান্ধালায় তাদের নিজ ভিটায় দুনিয়া বিখ্যাত এই গ্রন্থাগারটি প্রতিষ্ঠিত। কেবল ভারত উপমহাদেশ নয়, গোটা দুনিয়াতে দুর্লভ ও দুস্প্রাপ্য কিতাবের লাইব্রেরি আর দ্বিতীয় আরেকটি নেই।

 

তিন তলা বাড়ির পুরোটি জুড়ে সুবিশাল কান্ধালার কুতুবখানার কথাশুনে আপনি চমকে উঠবেন।

 

প্রাচীন দুনিয়ার দুর্লোভ ও দুষ্প্রাপ্য অগণিত পাণ্ডলিপির সমাহার। যার অস্তিত্ব দুনিয়ার আর কোথাও নেই।

দুনিয়া বিখ্যাত ভারতীয় শায়েখ আলী মিয়া নদভী থেকে শুরু করে আরব শায়েখ মিশরের সুপন্ডিত ড. আল্লামা ইউসুফ কারযাভীর লেখায় এই গ্রন্থাগারের কথা এসেছে। আজকের শায়খুল ইসলাম মুফতী ত্বকী উসমানী থেকে শুরু করে সৌদির বিখ্যাত আলেম হামিদ বিন আকরামসহ মুসলিম দুনিয়ার কে না এসেছেন এই কান্ধালার কুতুবখানায়?

 

শায়েখ আরিফী থেকে কাতারের পন্ডিত আদনান এয়ামিনীর পা-ও পড়েছে এই পাঠাগারে।

আর কেনই বা দুনিয়ার এলেম পিপাসুরা এখানে ছুটে আসেন? একদিকে মাশায়েখে কান্ধালারা সারা দুনিয়ার মুসলমানের ঈমান ও এলেমের পিপাসা মিটিয়েছেন দাপটের সাথে নেতৃত্ব দিয়ে। অপরদিকে সমগ্র পৃথিবী দাওয়াতের মেহনত নিয়ে ঘুরে সকল দুর্লভ এলেম তারা জমা করে নিয়ে এসেছেন কান্দালায়। এখানে হাতে লেখা এমন সব প্রচীন দুস্পাপ্য কিতাব রয়েছে যার দ্বিতীয় কপি দুনিয়াতে আর কোন এলেমওয়ালার কাছে নেই। এখানে ইসলামের ইতিহাসের দুর্লভ এমন কিছু দলীল, রেফারেন্স ও উৎস আছে, যা গোটা দুনিয়ার আর কারো কাছে নেই।

 

এমনকি খোদ ভারতীয় উপমহাদেশের এলমি মারকাজ দেওবন্দ এই কুতুবখানার কাছে এলমি যোগ্যতা প্রমাণে অসহায়। দারুল উলুম দেওবন্দের সকল রেজুলেশন ও দলীল তাদের কাছে নেই কিন্তু কান্ধালার এই লাইব্রেরিতে আছে। শাহ ওয়ালী উল্লাহর খান্দানের, ও মাদরাসায়ে রহিমীয়ার সকল দলীল এখানে বিদ্যমান।

 

১৮৫৭সালের আযাদী আন্দোলন ও তার পরবর্তী ইংরেজ আমলের সকল দলীল ও গ্রন্থ এখানে আছে। মোগল পরিবারের বাদশাহদের সকল দ্বীনী কিতাব, দলীল দস্তাবেদ এখানে সংগ্রহিত। ফলে ভারতবর্ষের সকল ইতিহাসবিদ ও পুরাতত্বের গবেষক এই কান্ধালায় আসতে বাধ্য।

 

দুনিয়াবিখ্যাত দুর্লোভ কিতাবের অনন্য সমাহার

কান্ধালায় মাওলানা ইলিয়াছ রহ. এর ভিটায় এই লাইব্রেরিতে আছে ৭০হাজারের বেশি কিতাব এবং ১১০০০ এর বেশি বিভিন্ন কিতাবের মূল হাতে লেখা একমাত্র পান্ডুলিপি । এই দুর্লভ গ্রন্থাশালা দেখার জন্যই পূর্বে বেশ কয়েকবার ভারতে আসার নিয়ত করেছিলাম। উপমহাদেশে ব্যাক্তিগত উদ্দ্যোগে এত বড় লাইব্রেরী দ্বীতিয় আরেকটি নেই। মন চাচ্ছিল, এই কিতাবগুলো হাতানোর জন্য যদি এখানে পড়ে থাকার সৌভাগ্য হত।

 

এই লাইবেরীর মূল পরিচালক মাওলানা নূরুল হাসান রাশেদ কান্ধালভী নিজেও লেখক। তার লেখা বিখ্যাত কিতাবের মধ্যে ‘আহলে রেওয়াতে বুখারি’,’আহলে উলামায়ে হানাফিয়্যা অন্যতম, লিখেছেন ৩৫টি আরবী কিতাবডহ ১শতাধিক গ্রন্থ। মাওলানা ইদ্রিস কান্ধলভী থেকে শুরু করে দুর্লভ হায়াতুস সাহাবার লেখক মাওলানা ইউসুফ কান্ধালভীর লেখালেখি ও এলমি দলীলের উৎস এই লাইব্রেরী।

 আজকের হযরতজী মাওলানা সাদ কান্ধলভীর গভীর এলেমের দলীলগুলো এখান থেকেই নেয়া। তারা যেসব কিতাব নিয়মিত পড়েন, দুনিয়ার বড়বড় আলেম এমনকি আরব অনেক পন্ডিতও এসবের নামই কখনো শুনেন নি। তাদের না জানাটি কখনো জমহুরিয়তের খেলাফ বলার দলীল হতে পারে না। আজকের অনেক জ্ঞানপাপীদের অজ্ঞতার মূলে এটিই সমস্যা।

 

ইমাম বুখারীর হাতে লেখা বুখারী শরীফের পান্ডুলিপি

কান্ধালার এই কুতুবখানায় ইমাম বোখারীর লেখা সহী বোখারীর মূল হাতে লেখা পান্ডুলিপি সহ ৬ষ্ট শতাব্দী থেকে সারা দুনিয়ার বহু ইতিহাসবিদ, হাদীস বিশারদ ও ফকীহদের হাতে লেখা পান্ডুলিপি এখানে আছে। ফেকাহের বহু কিতাবের একমাত্র মূল কপি এখানে আছে। যেসব কিতাবের দ্বিতীয় কপি পৃথিবীর আর কোথাও নেই। এমন কিছু তাফসিরুল কুরআানুল কারিম আছে যার নাম আজকের দুনিয়ায় তাফসিরের তালিকায় নেই। নামও শুনেন নি অনেক বড়বড় বাহরুল উলুমগন।

 

স্বয়ং মুফতী তাক্বী উসমানী সাহেব হাফিযাহুল্লাহ তাঁর পান্ডিত্য ও মাকতাবা দেখে নিজ সফর নামায় লিখেছিলেন

 

    “হিন্দুস্তান সফরে উনার মাকতাবার মত দুর্লভ  কিতাবের দ্বারা সমৃদ্ধশীল এমন মাকতাবা আমি পৃথিবীতে আর কোথাও দেখি নাই”।

 

আরব আজম, ইউরোপ, রাশিয়া’র পন্ডিত গবেষকরা তাদের নিজেদের এলেমের চার্চ দিতে বহুপথ পাড়ি দিয়ে এখানে আাসেন। দারুল উলুৃম দেওবন্দের বর্তমান শায়খুল হাদীস সাঈদ আহমদ পালনপুরী ছাত্রদেরকে ক্লাসে প্রায়ই বলেন, তোমরা এই জামানায় যদি কোন আহলে এলেমকে দেখতে চাও তাহলে নুরুল হাসান রাশেদ কান্ধালভী ও তার মাকতাবায় দেখে আসবে।

প্রায় প্রতি শুক্রবার জুমআর পর থেকে মাওলানা সাদ কান্ধলভী এই মাকতাবায় আসেন। এখান থেকেই এলেমে ওহীর মধু আহরণ করে উম্মতের মাঝে ছড়িয়ে দেন।

 

- মাওলানা সৈয়দ আনোয়ার আবদুল্লাহ।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

কেমন হবে একজন গুরাবা?

 

যখন একজন জ্ঞানী মুমিন, যাকে আল্লাহ তাআলা দ্বীনের বুঝ দিয়েছেন এবং নিজের দোষ-ত্রুটি দেখার সুযোগ দিয়েছেন ও তার সামনে মানুষের সার্বিক অবস্থা তুলে ধরেছেন, হক-বাতিল ও সুন্দর-অসুন্দরের মধ্যকার পার্থক্য করার শক্তি দিয়েছেন;...... সত্য সম্পর্কে অজ্ঞ ও প্রবৃত্তিপূজারি এবং দুনিয়ার স্বার্থে পরকালের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শনকারী ব্যক্তিদের সামনে সঠিক বিষয়ে আমল করাকে সে নিজের জন্য আবশ্যক করে নেবে।

 

এ-সব অজ্ঞ ও প্রবৃত্তিপূজারি লোকেরা যখন দেখবে, কেউ তাদের কাজকর্মের বিপরীতে হাঁটছে, তখন সেটি তাদের জন্য কষ্টের কারণ হবে—ফলে তারা তার বিরোধিতায় উঠেপড়ে লাগবে, তার ছিদ্রান্বেষণে মত্ত হবে।

সেই লোকের নিজের পরিবারের লোকেরাও তাকে নিয়ে চেঁচামেচি করবে, তার ভাই-বেরাদারেরা তাকে নিয়ে উৎকণ্ঠিত হবে; মানুষজন তার সাথে লেনদেন করতে আগ্রহবোধ করবে না; প্রবৃত্তিপূজারি ও অসৎ লোকজন তার বিরোধিতায় নিমগ্ন হবে।

 

যেহেতু সে-সময় অধিকাংশ মানুষজনই ফিতনাগ্রস্ত ও গোমরাহিতে নিমজ্জিত হয়ে থাকবে, ফলে দ্বীন পালন করার স্বার্থে তাকে নিঃসঙ্গ হয়ে যেতে হবে; সমাজের বেশিরভাগ মানুষের জীবনাচার নষ্ট হয়ে যাবার কারণে লেনদেনের ক্ষেত্রে সেই ব্যক্তি একাকী হয়ে পড়বে; মানুষের ভ্রাতৃত্ববোধ ও সঙ্গ বিনষ্ট হবার দরুন লোকদের সাথে মিলেমিশে বসবাস করার ক্ষেত্রে সে অসহায়ত্বের শিকার হবে—মোটকথা ইহজাগতিক ও পরকালীন প্রতিটি বিষয়ে নিঃসঙ্গ ও অসহায় হয়ে যাবে; চলার পথে সে এমন কোনো সহমর্মীকে খুজে পাবে না, যে তার দুঃখ বুঝবে; এমন কোনো সহযোগীর দেখা পাবে না, যার কাছে গিয়ে প্রাণ শীতল করবে—এমন ব্যক্তিই হলো গুরাবাদের অন্তর্ভুক্ত।

কারণ, সে হবে অসৎ লোকদের ভিড়ে সততা অবলম্বনকারী, অজ্ঞ লোকদের মাঝে জ্ঞানের ঝাণ্ডাধারী, মূর্খ লোকদের ভেতর সহিষ্ণুতা ধারণকারী; সে হবে দুঃখ-ভারাক্রান্ত—খুব কমই আনন্দ-ফুর্তিতে লিপ্ত; কেমন যেন সে কারাবন্দি কোনো কয়েদি—অত্যধিক ক্রন্দনে ডুবে-থাকা ব্যক্তি; সে হবে অপরিচিত সেই মুসাফিরের মতো, যাকে কেউ চেনে না; কেউ তাকে সহমর্মিতা জানাতে আসে না, অচেনা লোকে তাকে দেখে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে না।

 

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে বলেছিলেন—  

 

    “নিশ্চয় ইসলাম নিঃসঙ্গ ও অপরিচিত অবস্থায় শুরু হয়েছিল, আবার অচিরেই তা নিঃসঙ্গ ও অপরিচিত হয়ে যাবে। সুতরাং গুরাবাদের (তথা নিঃসঙ্গ ও অপরিচিতদের) জন্য সুসংবাদ।”

 

—মূলত এটাই হলো তার মর্মার্থ।

এই বিষয়ে আল্লাহই সর্বাধিক জ্ঞাত।

 

মাকতাবাতুল আসলাফ থেকে প্রকাশিতব্য 'গুরাবা ' বই এর কিছু অংশ।

লেখক - আবূ বকর আল-আজুররী রহ. (মৃত্যু ৩৬০ হি.)

 

posted by সাজ্জাদ হোসেন রাকিব

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

বইপাই ডটকম ইসলামি বই গ্রুপ রিভিউ প্রতিযোগিতা মে ২০১৯

 

আফিয়া সিদ্দিকীঃ গ্রে লেডি অব বাগরাম

সংকলনঃ টিম প্রজন্ম

পৃষ্ঠাঃ ১৬৭

অনুবাদ ও সম্পাদনাঃ আফিয়া মুভমেন্ট বাংলা

প্রচ্ছদঃ ওয়াহিদ তুষার

প্রকাশনীঃ প্রজন্ম প্রকাশনী

সর্বোচ্চ বিক্রয় মূল্যঃ ২২০ টাকা

 

"......আমার বোন আফিয়া আমার ভাবনায়, আমার চিন্তায় জুড়ে থাকে সারাটাদিন আর যতদিন সে বেঁচে আছে বাদামী বাক্সটা তার জন্য অপেক্ষা করবে। যাতে করে একদিন সে ফিরে এসে শেষ করতে পারে তার সেই শেষ না করা চিঠিগুলো, আধলেখা কবিতাগুলো আর রয়ে যাওয়া অল্প একটু চা।"

 

বোনের জন্য একজন ভাইয়ের অপেক্ষা। এ অপেক্ষা আরো অনেকের। এ অপেক্ষা আমাদের সেই বোনের জন্য, যাঁকে ভুলে গেছে এই উম্মাহর অধিকাংশই। "ওয়ার অন টেরর" এর নির্মম বলি হতে হয়েছে যে মানুষটিকে, তারপরও আরো নিষ্ঠুর বলি খেলার শিকার হতে হয়েছে নিকৃষ্ট বিশ্বরাজনীতির। তিনি হলেন আফিয়া সিদ্দিকী, পাকিস্তানের "জাতির কন্যা"। নিপীড়িত, নির্যাতিত, নিষ্পেষিত এই উম্মাহর প্রতীক। ছোটখাট আকারের কিন্তু বিশাল হৃদয়ের এই মহিয়সীকে নিয়ে, তাঁর উপর চালানো জুলুমের টর্নেডো নিয়ে এবং অল্পস্বল্প কিছু প্রতিরোধের ফিরিস্তি সহ আরো বেশ কিছু ঘটনার সমন্বিত রূপ "আফিয়া সিদ্দিকীঃ গ্রে লেডি অব বাগরাম" বইটি। পাঠক, আমি আপনাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি কষ্ট, অপমান আর কান্নার জগতে। যদি এখনো আপনার অন্তর মরে না যায়, তাহলে এই বইটির পাতায় পাতায় আপনি অনুভব করবেন তীব্র জ্বালা, নিদারুণ অপমান আর অসহায় ছটফটে কষ্টের স্বাদ! আমন্ত্রণ আপনাকে!

 

বই নিয়ে কিছু কথাঃ

 

ড. আফিয়া সিদ্দিকী। একজন পাকিস্তানী মুসলিম নারী। উচ্চশিক্ষিত, সম্মানিত এক পরিবারে জন্ম তাঁর। একজন বিজ্ঞানী, স্বাপ্নিক, অত্যন্ত মেধাবী একজন মুসলিমা। কুর'আনের হাফিজা। উম্মাহর জন্য নিবেদিতপ্রাণ একজন কর্মী। ৯/১১ এর পর আমেরিকার সন্দেহের তালিকায় তাঁর নাম উঠে আসে। এরপর ২০০৩ এর মার্চে ইসলামাবাদ যাবার পথে তাঁর তিনটে ছোট ছোট বাচ্চাকে সহ নাটকীয় ভাবে অপহরণ করা হয় তাঁকে। তারপর সুদীর্ঘ পাঁচ বছর নিখোঁজ থাকার পর আরেক নাটকের অবতারণা করা হয়। আফগানিস্তানের গজনী প্রদেশে তাঁকে পাওয়া যায় আলুথালু বেশে। তাঁকে অভিযুক্ত করা হয় জঙ্গী হামলাকারী হিসেবে, গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যাবার পর জিজ্ঞাসাবাদের নাটক মঞ্চস্থ করা হয়। থানাতেই তাঁকে গুলি করে গুরুতর আহত করা হয় এবং অবৈধভাবে আমেরিকায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। দু'বছর পুরোপুরি বিচারহীনভাবে আটক রাখার পর উল্টো তাঁর বিরুদ্ধেই অভিযোগ দায়ের করা হয় হত্যাপ্রচেষ্টার। জঘন্যতম প্রহসনমূলক এক বিচারের পর চরম অমানবিক শাস্তি দেওয়া হয় সাত বছ যাবত অসংখ্যবার ধর্ষিতা, চরমভাবে নির্যাতিতা এই মুসলিমাকে - ৮৬ বছরের কারাদণ্ড! এই হচ্ছে আমেরিকা, শান্তি, প্রগতির রোল মডেল!

 

আলোচ্য সংকলনের প্রবন্ধগুলো নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য উৎস থেকে। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে "আফিয়া সিদ্দিকীঃ আদার ভয়েসেস" বইটি। এটির সংকলক হচ্ছেন তারিক মেহান্না হাফিযাহুল্লাহ, যিনি নিজেও আমেরিকার রাষ্ট্রীয় জুলুমের শিকার। এছাড়াও পায়াম-ই-হায়া, মুসলিমম্যাটারস ডট অর্গ, আফিয়া মুভমেন্ট ডট কম, আফিয়া ডট অর্গ থেকেও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে তথ্য নেওয়া হয়েছে।

 

"আসলে আফিয়ার অপরাধটা কি ছিল" শিরোনামের লেখাটি আফিয়া সিদ্দিকীর বড় বোন ফাওজিয়া সিদ্দিকীর লেখা। এর শেষাংশটুকু আমি এক নিঃশ্বাসে পড়তে পারি নি। আসলে এটা সম্ভব না, কোনক্রমেই না। আমি সীমাহীন লজ্জা, বেদনা আর অপমানের অনুভূতিতে আক্রান্ত হয়েছি এই লেখাটা পড়ে। আফিয়ার উপর যা করা হয়েছে সেটা আমি এখানে লেখার সাহস রাখি না। পাঠক, বইয়ের পাতাতেই আপনারা না হয় সেটা দেখে নেবেন।

 

"একটি বাদামী বাক্সের গল্প"। আফিয়া সিদ্দিকীর বড় ভাই মুহাম্মাদ সিদ্দিকীর লেখা। একটা বাদামী বাক্সে করে তার কাছে আসে এমন কিছু ছোটখাটো জিনিস, যেগুলো কারাগারে বসে জমিয়েছিলেন তার প্রিয় বোন। এই বাদামী বাক্সকে নিয়েই এক মর্মস্পর্শী লেখা, নিজের বোনের প্রতি একজন ভাইয়ের অন্তরের আকুতি।

 

"যে আফিয়াকে আমি দেখেছি"। সম্ভবত এই বইয়ের সবচেয়ে অসাধারণ প্রবন্ধ। লিখেছেন তারিক মেহান্না, তাঁর লেখার হাত সম্পর্কে মোটামুটি ধারণা আমাদের অনেকেরই আছে। তাঁর লেখা থেকে আমি জানতে পেরেছি দ্বীনের মধ্যে আমার অবস্থান কোথায়। আমরা ছাপোষা, নিরীহ দ্বীন পালনে অভ্যস্ত। আমরা দ্বীন আল আ'রাবের অনুসারী। আর আফিয়ারা হচ্ছেন দ্বীন আল মুহাজিরীনের অনুসারী। তারিক মেহান্না তাঁর লেখার শব্দে শব্দে ফুটিয়ে তুলেছেন আমাদের দ্বিমুখীতা, বিচার চলাকালীন আমেরিকার মুসলিম কমিউনিটির নিষ্ক্রিয়তা আর দ্বীনের জন্য আফিয়ার আত্মত্যাগ। আমাদের ভেতরে যদি ন্যূনতম লজ্জা আর গাইরাহ থেকে থাকে, তাহলে তারিক মেহান্নার এই লেখাটা আমাদের ঝাঁকুনি দেবে, তীব্রভাবে!

 

১৯৯৯ সালে ডক্টর আফিয়ার দেওয়া একটি বক্তব্যও উঠে এসেছে সংকলনটিতে। "ইসলামে নারীর অধিকার" বিষয়ের উপর সারগর্ভ এক বক্তৃতা রেখেছিলে আফিয়া। একজন মুসলিমাহর দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হওয়া উচিত, এটা তার প্রমাণ।

 

এছাড়াও "আগামীর চ্যালেঞ্জঃ নীরবতার দায়", "মুসলিমরা কেন নীরব?", "ওবামার সময়ের অবিচার", "২৩ সেপ্টেম্বরের নোট, "তিন অভিযুক্ত নারীর গল্প" - এই প্রতিটি প্রবন্ধই একেকটি মাস্টারপিস। এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলার মত।

 

১৯২৪ সালে খিলাফাহর পতনের পর থেকে উম্মাহ নির্যাতিত। কিন্তু তথাকথিত "সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ" এর জের ধরে উম্মাহর ওপর নির্যাতনের যে নতুন অধ্যায় শুরু হয়েছে সেটার এক দুঃসহ চিত্রের খন্ডাংশ উঠে এসেছে এ বইতে। একই সাথে আমরা দেখব মুসলিম নামধারী শাসকদের বেঈমানি আর মুনাফিক্বীর জঘন্য প্রদর্শনী ধোঁকা আর প্রতারণার ছড়াছড়ি। "মুসলিম" হবার মত ভয়াবহ (!) অপরাধের শাস্তি।

 

বইটিতে বানান ভুল বেশ কিছু চোখে পড়েছে। এছাড়াও বাম দিকের পৃষ্ঠাগুলোর পেইজ নাম্বার দেওয়া হয়েছে উপরে ডান দিকে। এটা দৃষ্টিকটু লেগেছে। এছাড়া কিছু কিছু জায়গায় অনুবাদে হালকা অসম্পূর্ণতা অনুভব হয়েছে। কোন জায়গায় এরকম মনে হয়েছে যে বাক্যটা এরকম না হয়ে ওরকম হলে ভালো হতো। অথবা একটা শব্দ বা অক্ষর যুক্ত হলে বাক্যটা পরিপূর্ণতা পেতো। এগুলো বাদ দিলে পৃষ্ঠাসজ্জা, কাগজের মান, ফন্ট, কাভার, প্রচ্ছদ সবদিক থেকেই বইটা ফুল মার্কস পাবার যোগ্য। আল্লাহ প্রজন্ম প্রকাশনীকে উত্তম বদলা দিন এই বইটা প্রকাশ করবার জন্যে। প্রকাশক, প্রচ্ছদশিল্পী, অনুবাদক সহ আরো যারা যারা সংশ্লিষ্ট আছেন সবাইকে আল্লাহ জাযায়ে খায়র দান করুন। আর সর্বোপরি আল্লাহ সুব'হানাহু ওয়া তা'আলা আমাদের বোন আফিয়া সিদ্দিকী সহ সকল মাজলুম মুসলিমদের জালিমের কারাগার থেকে মুক্ত করুন। তাঁদের কল্যাণময় মুক্তি ত্বরান্বিত করুন। আমরা যেন আমাদের একান্ত দু'আয় এই মাজলুমাকে কখনো ভুলে না যাই। আল্লাহ আমাদের জন্য সহজ করুন। আল্লাহ উম্মাহকে নির্যাতনের এই শিকল থেকে মুক্তি দান করুন। আমীন।

 

#ইসলামি_বই_গ্রুপ_রিভিউ_প্রতিযোগিতা_মে_২০১৯

 

- মুহাম্মাদ নাফিস নাওয়ার

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

মাওলানা আব্দুল ওয়াহহাব রহ. তিনি প্রখ্যাত আলেম ও আধ্যাত্মিক নেতা ছিলেন। পীরজী হুজুর নামে তিনি প্রসিদ্ধ ছিলেন। জন্ম: ১৮৯০ ঈসায়ী সনে তিনি কুমিল্লা জেলার হোমনা থানার অন্তর্গত রামকৃষ্ণপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মুনশী আহসানুল্লাহ একজন ধর্মভীরু লোক ছিলেন।

 

শিক্ষা: নিজ গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা অর্জনের পর ঢাকার মুহসিনিয়া মাদরাসায় অধ্যয়ন করেন। অতঃপর উচ্চ শিক্ষা অর্জন করার লক্ষ্যে ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দে গমন করেন। এবং হাদিস ও অন্যান্য শাস্ত্রে শিক্ষা লাভ করেন।

 

উস্তাদ: প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী রাহ. এর নিকট হাদীস এবং প্রখ্যাত কারী আবদুল ওয়াহেদ এলাহবাদীর নিকট ইলমে কিরাত শিক্ষা লাভ করেন। শরীয়তের ইলম অর্জনের পাশাপাশি তিনি মারেফাতের ইলম অর্জনেও ব্রতী হন। এ ক্ষেত্রে তার শায়খ ছিলেন আল্লামা জাফর আহমাদ উছমানী রাহ.। তাঁর মাধ্যমে তিনি উপমহাদেশের বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন হযরত আশরাফ আলী থানবী রাহ. হতেও পত্র বিনিময়ের মাধ্যমে ইলমে মারেফাত অর্জন করেন।

 

কর্মজীবন: প্রথমে কিছুদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জামেয়া ইউনুছিয়ায় অধ্যাপনা করেন। অতঃপর বাংলা ১৩৩৯ সনে তাঁর প্রচেষ্টায় ঢাকার বড় কাটরা হুসাইনিয়া আশরাফুল উলুম মাদরাসা প্রতিষ্ঠা লাভ করলে তিনি সেখানে মুহতামিম (অধ্যক্ষ) এর পদ অলঙ্কৃত করেন। বিদআত, সামাজিক কুসংস্কার ও কুপ্রথা উচ্ছেদে তাঁর যথেষ্ট অবদান রয়েছে। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি সুন্নাহর অনুসরণে অত্যন্ত নিষ্ঠাবান ছিলেন।

 

পারিবারিক জীবন: স্ত্রী সন্তান নিয়ে তিনি একটা অনাড়ম্বর আদর্শময় জীবন যাবন করেছেন।

 

ইন্তেকাল: ১৯৭৬ ঈসায়ী সনের ২৯ সেপ্টেম্বর ঢাকায় তিনি ইন্তেকাল করেন। তাঁকে ঢাকার আজিম গোরস্থানে দাফন করা হয়।

 

সুত্র: ইসলামী বিশ্বকোষ ১ম খণ্ড /পৃ: ৬৮৬ ইফাবা প্রকাশনা: ১২৩৮/২ দ্বিতীয় সংস্করণ

 

 

 

 

 

 

 

 

 

রামাদানের শেষ দশদিন রাসূল (সাঃ) একটি দুআ বেশি বেশি করতে বলেছেন। দুআটা আমরা কমবেশি সবাই জানি-- “আল্লাহুম্মা ইন্নাকা ‘আফুউন তুহিব্বুল ‘আফওয়া, ফা’ফু আন্নি।” অর্থাৎ “হে আল্লাহ, নিশ্চয়ই আপনি পরম ক্ষমাশীল এবং ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন।” 

.

কিন্তু এই দু'আর যে একটা বিশেষ দিক আছে সেটা হয়ত আমরা অনেকেই জানি না। এই দুআটি অন্য দুআগুলোর চেয়ে আলাদা, স্পেশাল। এখানে ‘ক্ষমা করা’ অর্থে ‘গাফুর’ শব্দটি ব্যবহার না করে ‘আফুউ’ ব্যবহার করা হয়েছে। যদিও শব্দ দুটির অর্থ একই। তাহলে ‘আফুউ’ ব্যবহার করার কারণ কী? অর্থগত বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখি যে, আরবরা সাধারণত ‘মুছে ফেলা’ অর্থে ‘আফুউ’ শব্দটি ব্যবহার করে থাকে। যেমন- মরুভূমি থেকে পায়ের চিহ্ন চলে গেলে তারা বলে- আফাত আসারাল ক্বাওম, মানে এটা তো মুছে গেছে। এ থেকেই আফুউ শব্দের অর্থ সহজভাবে বোঝা যায়।

.

উলামারা এই দুটি শব্দের মধ্যে অনেক পার্থক্য উল্লেখ করেছেন। কেউ কেউ বলেন যে, ফরজ ইবাদাত ছেড়ে দেওয়ার পর যদি ক্ষমা করা হয় তখন ‘আফুউ’ ব্যবহার করা হয় আর হারাম কাজ করার পর ক্ষমা করলে তখন ‘গাফুর’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। আবার কারো কারো মতে আল্লাহ তাআলার মাগফিরাতের অর্থ হচ্ছে আল্লাহ তাআলা আপনাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন, কিন্তু আপনার গুনাহগুলো তারপরও লিপিবদ্ধ হয়ে থাকবে এবং বিচার দিবসে আপনাকে এর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। অর্থাৎ আপনাকে মাফ করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু বিচার দিবসের আগ পর্যন্ত সেগুলো মুছে ফেলা হবে না। বুখারিতে বর্ণিত একটি হাদীসে এই ধরণের একটি কথা উল্লেখ আছে। হাদীসটিতে বলা হয়েছে, আল্লাহ্ তাঁর এক বান্দাকে নিজের সান্নিধ্যে আনতে থাকেন। তাকে প্রশ্ন করতে থাকেন, তুমি কি নিজের অমুক গুনাহর কথা মনে করতে পারো? বান্দা বলবে, হ্যাঁ পারি। এরপর আল্লাহ আবার জিজ্ঞেস করবেন, তুমি কি তোমার তমুক গুনাহর কথা মনে করতে পারো? বান্দা আবারো বলবে, হ্যাঁ পারি। এভাবে বান্দা যখন নিজের সকল গুনাহর কথা স্বীকার করে নেবে, তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, ‘আমি ইহকালে তোমার এই গুনাহগুলোকে গোপন রেখেছিলাম আর তারপর ক্ষমা করে দিয়েছি।’

.

উলামারা বলেন এটা হলো ‘মাগফিরাহ’।

.

তাহলে ‘আফুউ’ কী? ‘আফুউ’ এর থেকেও অধিক মর্যাদাসম্পন্ন ক্ষমা। ‘আফুউ’ হলো যখন আল্লাহ তাআলা আপনার গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেবার পর তা পুরোপুরি মুছে ফেলেন। এমনকি বিচার দিবসেও সে সম্পর্কে কিছুই জিজ্ঞেস করা হবে না। আল্লাহ তাআলা বান্দা এবং ফেরেশতাদেরকেও এই গুনাহগুলোর কথা ভুলিয়ে দেন, যেন বিচার দিবসে আপনাকে এসব গুনাহর জন্য অপমানিত হতে না হয়। মানুষ তার পাপ কর্মের জন্য যখন একেবারে মন থেকে ক্ষমা চায়, তখন আল্লাহ অত্যন্ত খুশি হয়ে এই ধরণের ক্ষমা করে থাকেন।

.

‘আফুউ’ শব্দটি কুরআনে অনেকবার এসেছে, এর মধ্যে পাঁচবার শব্দটি উল্লেখ করা হয়েছে আল্লাহ সর্বশক্তিমান কথাটির সাথে। আল্লাহ চাইলেই শাস্তি দিতে পারেন, কিন্তু তবুও তিনি ক্ষমা করে দেন।

.

“ভালো কাজ তোমরা প্রকাশ্যে করো কিংবা গোপনে করো, অথবা কোনো মন্দ কাজের জন্য যদি তোমরা ক্ষমা করে দাও, তাহলে (তোমরাও দেখতে পাবে,) আল্লাহ তাআলা অতি ক্ষমাশীল ও প্রবল শক্তিমান।” (সূরাহ আন নিসা: আয়াত ১৪৯)

.

ধূলিমলিন উপহার: রামাদান

শাইখ আহমাদ মূসা জিবরিল

সীরাত পাবলিকেশন

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুতবা দিচ্ছিলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম । তিনি (সাঃ) বলছিলেন, “ কিয়ামতের দিন আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’লা সমস্ত আকাশ মন্ডলী ও জমিন সমুহ কে ভাঁজ করবেন । অতঃপর সেগুলো কে ডান হাতে নিয়ে বলবেন - আমিই প্রতাপশালী, পরাক্রমশালী ; আমিই বাদশা, রাজাধিরাজ । দুনিয়ার জালিম অহংকারীরা আজ কোথায় ? “

 

[ ভাবার্থ , সহীহ মুসলিম ]

 

আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা এ হাদীস বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন খুতবাতে এ কথাগুলো বলছিলেন তখন এতটাই ভীত ও প্রকম্পিত হয়ে পড়ছিলেন মনে হচ্ছিলো কম্পনের কারনে তিনি মিম্বর থেকে পড়ে যাবেন ।

 

“ আমিই প্রতাপশালী, পরাক্রমশালী ; আমিই বাদশা, রাজাধিরাজ । দুনিয়ার জালিম অহংকারীরা আজ কোথায় ? “

 

আল্লাহর কসম ! এটি নিঃসন্দেহে সবচেয়ে ভীতিকর একটি আহবান হবে সেইদিন, যেদিন তাঁর (সুবহানাহু ওয়া তা’লা) আশ্রয় ছাড়া আর কোন আশ্রয় থাকবেনা, যেদিন তিনি অপমানিত ও অসম্মানিত করলে পালানোর আর কোন জায়গা থাকবেনা ।

 

একটু ভাবুন, একটু চিন্তা করুন ।

 

- নুসরাত জাহান

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

হজের সংক্ষিপ্ত নির্দেশিকা

 

 

 


প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়েছেন মাওলানা কাসেম শরীফ

 এমন ভুল যেন না হয়

►  মিনায় ১২ বা ১৩ তারিখ পর্যন্ত থাকতে হয়। এর মধ্যে যদি কোনো দিন শুক্রবার হয়, তাহলে মিনায় জুমার নামাজ পড়তে হবে। (তাতারখানিয়া, পৃ. ৫৫৩)

►  হজে গিয়ে অনেক নারী চেহারা খোলা রাখেন। অথচ মাসআলা হলো, চেহারা দেখানো যাবে না, তবে বোরকার নেকাব চেহারার সঙ্গে লাগিয়ে রাখবে না। এর জন্য এমন কিছু ব্যবহার করতে হবে, যাতে করে নেকাব চেহারার সঙ্গে না লেগে থাকে।

►  অনেক নারী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে মসজিদুল হারামে গিয়ে থাকেন। এতে ভিড় বেশি হয়। ফলে তারা হাজারো পুরুষের ধাক্কা খাচ্ছে, ধাক্কা দিচ্ছে। মহানবী (সা.) বলেছেন, নারীরা মসজিদে নামাজ পড়ার চেয়ে ঘরে নামাজ পড়া উত্তম। এ থেকে বোঝা যায়, কোনো মহিলা হজ বা ওমরাহে এসে ঘরে নামাজ পড়লে এক লাখের চেয়ে বেশি সাওয়াব পাবে। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৬৫৯৮, ২৬৬২৬)

►  এক শ্রেণির হাজি আছে, যারা সারা দিন মোবাইল ফোন বা ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলতে থাকে। অথচ প্রাণির ছবি তোলা হারাম কাজ। (বুখারি শরীফ, হাদিস : ৫৯৫০)

►  অনেক পুরুষ ইহরাম খোলার সময় দাড়ি মুণ্ডায়। এমন লোকেরা ১০০ বার হজ করলেও তাঁদের হজ কবুল হবে না।

►  ‘তালবিয়া’ ব্যক্তিগত আমল। সবাই যার যার ‘তালবিয়া’ পড়বে। দেখা যায়, অনেকে লিডারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে তালবিয়া পড়তে থাকে। অথচ এর কোনো প্রমাণ নেই।

►  আরাফা ও মুজদালিফার মধ্যখানে ৫ কিলোমিটার প্রশস্ত একটি ময়দান আছে, যেখানে অনেক টয়লেট ও গাছপালা আছে। এসব দেখে অনেকে এটাকে মুজদালিফা মনে করে এখানে অবস্থান করে। অথচ এটা আরাফার মধ্যে দাখিল নয় এবং মুজদালিফার মধ্যেও দাখিল নয়। এটা ভিন্ন একটা ময়দান। এখানে হজের কোনো কাজ নেই। এখানে মাগরিব ও এশা একত্রে পড়া জায়েজ নেই এবং রাত্রে অবস্থান করাও জায়েজ নেই। বাদ ফজর এখানে অবস্থান করলে উকুফে মুজদালিফাও আদায় হবে না। যারা পায়দল আরাফা থেকে মুজদালিফায় যায়, তাদের অনেকে এ ভুল করে। এতে তাদের ওপর ‘দম’ ওয়াজিব হয়ে যায়, কিন্তু তারা তা না জানার কারণে আদায় করে না। ফলে তাদের হজ হয় না।

►  ব্যাংকের মাধ্যমে কোরবানি করানো উচিত নয়। কারণ এতে কখনো কখনো ১০ তারিখে বড় শয়তানকে কংকর মারার আগে কোরবানি হয়ে যায়। আবার কখনো কোরবানি সম্পন্ন হওয়ার আগে মাথা মুণ্ডানো হয়ে যায়। আর এ উভয় ভুলের দরুন তামাত্তু ও কিরানকারীর ওপর দম ওয়াজিব হয়ে যায়। কারণ তাদের জন্য ১০ তারিখে এই তিনটি কাজে ধারাবাহিকতা রক্ষা করা জরুরি—এক. বড় শয়তানকে কংকর মারা। দুই. কোরবানি করা। তিন. মাথা মুণ্ডানো। এ জন্য নিজেরা বা বিশ্বস্ত লোক পাঠিয়ে কোরবানির ব্যবস্থা করা জরুরি।

শেষ সময়ের প্রস্তুতি

►  প্রথম কাজ হলো, পাসপোর্ট, বিমানের টিকিট ও তারিখ জেনে নেওয়া। এরপর ম্যানিনজাইটিস টিকা বা অন্যান্য ভ্যাকসিন নিতে হবে। ক্রয় করতে হবে প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র। কিছু বৈদেশিক মূদ্রা সংগ্রহ করতে হবে। বেশি মালপত্র বোঝা বাড়াবে। যা না হলেই নয়, তা সংগ্রহ করবে। যেমন—পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট, টাকা রাখার জন্য গলায় ঝোলানো ছোট ব্যাগ, পুরুষের জন্য ইহরামের কমপক্ষে দুই সেট কাপড় (আড়াই হাত হরের আড়াই গজ এক টুকরা কাপড় আর গায়ের চাদরের জন্য একই বহরের তিন গজ এক টুকরা কাপড়) বাংলাদেশ থেকেই সংগ্রহ করতে হবে। এদেশ থেকে জিনিসপত্র নেওয়ার আগে একটু সতর্কতার সঙ্গে নিতে হবে। ইহরামের দুই জোড়া কাপড় ছাড়া যাবতীয় জিনিসপত্র মক্কা মদিনায় আরো কম দামে পাওয়া যায়। এক জোড়া জুতা নিলেই ভালো হয়। সঠিক সময়ে ঘুম থেকে জেগে ওঠার জন্য একটা এলার্ম ঘড়ি নেওয়া উচিত। সঙ্গে কিছু শুকনা খাবার এ দেশ থেকে নেওয়া যায়। অনাহৃত মালপত্রের বোঝা না বাড়ানোই বুদ্ধিমানের কাজ, তবে অন্তত একটা করে পিঠে ঝুলানো স্কুল ব্যাগ নেওয়া যায়। এটি বিভিন্ন স্থানে চলাফেরার সময় খুবই প্রয়োজন। নারীরা বোরখা ও জরুরি জিনিসপত্র সঙ্গে নেবেন। এছাড়া নিত্য প্রয়োজনীয় বস্তু, পোশাক ও ওষুধপত্র সঙ্গে নিতে হবে।

►  হজ একটা পরিশ্রমের কাজ, যার জন্য মানসিক ও শারীরিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে, তবে তা মাত্র ৫-৬ দিন।

►  বিমানে উড্ডয়নকালে হাতব্যাগে ছুরি, কাঁচি, দড়ি নেওয়া যাবে না। নিবন্ধিত চিকিত্সকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়া কোনো ওষুধ নিতে পারবেন না। চাল, ডাল, শুঁটকি, গুড় ইত্যাদিসহ পচনশীল খাদ্যদ্রব্য, যেমন—রান্না করা খাবার, তরিতরকারি, ফলমূল, পান, সুপারি ইত্যাদি সৌদি আরবে নেওয়া যাবে না।

►  গন্তব্য ঢাকা থেকে মক্কায়, নাকি মদিনায়—প্রথমে তা জেনে নিতে হবে। যদি মদিনায় হয়, তাহলে ঢাকায় ইহরাম নয়। মদিনা থেকে মক্কায় গেলে ইহরাম বাঁধতে হবে। বেশির ভাগ হজযাত্রী আগে মক্কায় যান। যদি মক্কায় যেতে হয়, তাহলে ঢাকা থেকে বিমানে ওঠার আগেই ইহরাম বাঁধতে হবে। ইহরাম গ্রহণের পর পার্থিব কাজকর্ম নিষিদ্ধ। যেমন—সহবাস, পুরুষদের জন্য কোনো সেলাই করা জামা, পায়জামা ইত্যাদি পরা নিষিদ্ধ। কাউকে কষ্ট দেওয়া যাবে না। নখ, চুল, দাড়ি-গোঁফ ও শরীরের একটি পশমও কাটা বা ছেঁড়া যাবে না। কোনো ধরনের সুগন্ধি লাগানো যাবে না। কোনো ধরনের শিকার করা যাবে না। ক্ষতি করে না—এমন কোনো প্রাণি মারা যাবে না।

►  বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া পরিচয়পত্র, বিমানের টিকিট, টিকা দেওয়ার কার্ড, অন্য কাগজপত্র, টাকা, বিমানে পড়ার জন্য ধর্মীয় বই ইত্যাদি গলায় ঝোলানোর ব্যাগে যত্নসহকারে রাখতে হবে।

►  বিমান থেকে নামার পর একটি হলঘরে বসার ব্যবস্থা করা আছে। এই হলঘরের পাশেই ইমিগ্রেশন কাউন্টার। ইমিগ্রেশন পুলিশ ভিসা দেখে (ছবি ও আঙুলের ছাপ নিয়ে) পাসপোর্টের নির্দিষ্ট পাতায় সিল দেবেন। তারপর লাল-সবুজ পতাকা অনুসরণ করে ‘বাংলাদেশ প্লাজায়’ যেতে হবে। সেখান থেকে মোয়াল্লেমের গাড়ি মক্কায় যার যার নির্ধারিত বাড়ি পৌঁছে দেবে। মোয়াল্লেমের নম্বর (আরবিতে লেখা) হাতে পরে নিতে হবে। আর বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া পরিচয়পত্র গলায় ঝোলিয়ে রাখতে হবে।

জেনে রাখা ভালো

►  ১০০০ ডলারের সমপরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহ করে সঙ্গে রাখা ভালো।

►  পুরুষ হজযাত্রীদের জন্য কমপক্ষে ২ সেট ইহরামের কাপড়, ২ সেট পাজামা-পাঞ্জাবি, ২টি লুঙ্গি, ২টি টুপি, ২টি গেঞ্জি, ২ জোড়া স্যান্ডেল, ২টি তোয়ালে/গামছা, ১টি খাবার প্লেট, ১টি পানির গ্লাস, ওষুধ, ২টি রিডিং চশমা, একটি ছোট কাঁচি, টুথ ব্রাশ, পেস্ট, নাইলনের রশি আর নারী হজ যাত্রীদের জন্য প্রয়োজনীয় সালোয়ার-কামিজ, ওড়না, বোরকা ও অন্যান্য ব্যবহার্য কাপড় সঙ্গে নিতে হবে।

►  হজ যাত্রার তারিখের তিন দিন আগে হজযাত্রীদের আশকোনা হজ ক্যাম্পে আসতে হবে।

►  যে হজযাত্রীরা সরাসরি মক্কায় যাবেন, তাঁরা যাত্রার ৬ ঘণ্টা আগে ইহরামের কাপড় পরবেন।

►  হাত ব্যাগে ৭ কেজির বেশি মাল বহন করা যাবে না।

►  মক্কা-মদিনা পৌঁছার পর লিখিত অনুমতি ছাড়া কোনো আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে থাকার নিয়ম নেই। হোটেল বা কারো বাড়িতে রান্না ও কাপড় ইস্ত্রি করা যাবে না।

►  বাইরে যাওয়ার সময় একা যাওয়া অনুচিত। সব সময় দলবদ্ধভাবে চলাফেরা করুন।

►  তাওয়াফ/সাঈ ও শয়তানেক পাথর মারার সময় বেশি টাকা পয়সা সঙ্গে নিবেন না।

►  সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। খালি পায়ে হাঁটা যাবে না। এতে পায়ে ফোসকা পরতে পারে। রোদ ঠেকাতে ছাতা ব্যবহার করুন। প্রচুর পানি বা ফলের রস পান করবেন। ডাস্টবিন ছাড়া অন্য কোথাও ময়লা-আবর্জনা ফেলবেন না।

►  শারীরিক অসুস্থতা অনুভব করলে বাংলাদেশ হজ অফিসের পরিচালিত ক্লিনিকে যোগাযোগ করুন। সেখানে সার্বক্ষণিক চিকিত্সক নিয়োজিত আছেন।

►  জিলহজ মাসের ৭ তারিখ রাতে অথবা ৮ তারিখ সকালে মোয়াল্লেমের বাসে মিনা যেতে হবে। সঙ্গে হালকা কাপড়-চোপড় ও প্রয়োজনীয় টাকা-পয়সা নেবেন। নিরাপত্তার স্বার্থে বাকি টাকা-পয়সা মোয়াল্লেমের অফিসে রেখে রসিদ নেবেন।

►  মক্কা থেকে পায়ে হেঁটে মিনা আরাফায় যাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কারণ এতে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন।

►  শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করার সময় দলবদ্ধভাবে যাবেন। পাথর মারার সময় কখনো স্যান্ডেল খুলে গেলে বা পাথর হাত থেকে পড়ে গেলে কোনো অবস্থাতেই ওঠানোর চেষ্টা করবেন না। সঙ্গে কিছু অতিরিক্ত পাথর রাখবেন।

►  সৌদি আরবে রাস্তা পারাপারের সময় দৌড়াবেন না। ডান-বাম দেখে রাস্তা পার হবেন। সৌদি আরবে গাড়ি ডান দিক থেকে চলে।

►  দেশে ফেরার সময় ৩৬ ঘণ্টা আগে টিকিট ও পাসপোর্ট জমা করে বিমানের আসন নিশ্চিত করতে হবে।

►  সৌদি আরবে অবস্থানকালে কোনো ধরনের রাজনৈতিক আলোচনা থেকে বিরত থাকুন।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

#পাঠপ্রতিক্রিয়া

বই : তারাফুল

লেখক : আব্দুল্লাহ মাহমুদ নজীব

পৃষ্ঠা সংখ্যা : ১৫৩

প্রকাশনী : সমকালীন

 

............

 

'তারাফুল' লেখকের আরেকটি প্রবন্ধগল্পের বই। প্রথমত এর কন্টেন্ট নিয়ে বলা যাক। এখানে লেখক ইসলামী নানান শিক্ষার কথা ব্যবহারিকভাবে তুলে ধরেছেন। ইসলামী শিক্ষাগুলোর যে আমরা কী পরিমাণ মুখাপেক্ষী, এসবের পেছনে যে মানসিক ব্যাপারগুলো কাজ করে, ভালোবাসার মাপকাঠি দিয়ে ইসলামী রীতিনীতিগুলো মাপলে যে সেগুলো মানা আমাদের পক্ষে শুধু সহজ হয় না বরং বেশ উপভোগ্য হয় — এসবই যেন লেখকের একেকটি প্রবন্ধে প্রতীয়মান হয়েছে। একজন মুসলিম হিসেবে শিশুকে যথাযথভাবে গড়ে তোলার জন্যে গার্ডিয়ান যেভাবে প্রভাব ফেলতে পারেন তার এক অভিনব পাঠ গার্ডিয়ানরা পাবেন বলে বিশ্বাস করি। যাপিত জীবনের নানান চড়াই-উতরাই পার করা একজন মুসলিম কীভাবে তাঁর রবের কাছে ধরনা দিতে পারেন, কীভাবে তাঁর হৃদয়-বাগিচায় রাসূল (সাঃ)-কে স্হান দিতে পারেন — এসব নিয়ে পাঠক ভাবতে বাধ্য হবেন। লেখকের বারবার শৈশবকে ধারণ করার সুতীব্র ইচ্ছাগুলোও সংক্রামক হলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

.

এই বইয়ের ব্যাপারে আলাদা করে বলার মতো অনেক কিছুই আছে। লেখক নিজে একজন কবি এবং কবিতানুরাগী হওয়ায় এখানে নানান সময়ে আরবি, ইংরেজি কিংবা বাংলা কবিতার সরব উপস্থিতি লক্ষণীয়। বিদেশি কবিতার ব্যাপারে ভয়ের সুযোগ নেই। কেননা লেখকের করা কাব্যিক অনুবাদগুলোও বেশ উপভোগ্য। এছাড়াও আরেক বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখ না করলে বোধ করি লেখক এবং বইয়ের ব্যাপারে অন্যায় হয়ে যাবে। তা হচ্ছে লেখকের ভাষা শৈলী। এই ব্যাপারে আমি বলার যোগ্যতা রাখি না। তবে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠায় লেখক যেভাবে মুহুর্মুহু অনুপ্রাস ব্যবহার করেছেন, একেকটা বাক্যের যে নিখুঁত গাঁথুনি, প্রতিটা শব্দের সাথে লেখকের যে পরিমাণ দরদ মিশে আছে — খুব সম্ভবত এসব একজন পাঠকের দৃষ্টিগোচর এবং হৃদয়গোচর না হয়ে থাকতে পারবে না।

.

সর্বশেষ বই থেকে সামান্য কিছু লাইন তুলে ধরি —

" ক্যাম্পাসের অসুস্থ পরিবেশে প্রতিনিয়তই সুলাইমানের কথা মনে হয়। রুম থেকে বেরোলেই কে যেন কানে কানে বলে যায়, ' এই চোখ দিয়ে আল্লাহকে দেখতে হবে, এই চোখে কি হারাম কিছু দেখা যায়?' "

 

- জাবের মুস্তাফা আমিন

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

সে অনেক যুগ আগের কথা..

 

যখন হজ্বে যাওয়ার জন্য বোম্বাই থেকে জাহাজ ছাড়ত। লোকজন বছরের খোরাকি নিয়ে বোম্বাই যেত জাহাজ ধরার জন্য।তবে সবাই সেই হেজাজ মুখী জাহাজে ওঠার সৌভাগ্য অর্জন করতো না।

জাহাজে উঠতে না পারা এই হেজাজ মুখী লোকেরা তখনই বাড়ি ফিরত না। তারা অপেক্ষায় থাকতো সেই জাহাজ আবার কবে ফিরবে। যখন হেজাজ থেকে জাহাজ ফিরত তখন তারা হাজী সাহেবদের সাথে দেশে আসতো…. হেজাজে যেতে না পারা এই লোকোরা এলাকায় পরিচিত হত বোম্বাই হাজী হিসাবে……

এখন সেই বোম্বাই জাহাজও নাই আর বোম্বাই হাজীও নাই…

 

তবে...এখন আছে বোম্বাই হাজীদের মত আজহারী, মাদানী, কাসেমী……

 

- বদরুদ্দোজা টিটু

 

 

 

 

 

হাসান বাসরি রহ. বলেন,

 

“জান্নাতে মুমিন ব্যক্তি যখন মধুর নহরের পাশে হেলান দিয়ে বসে থাকবে, তখন বেহেশতের হুর তাঁর দিকে একটি পাত্র এগিয়ে দিতে দিতে বলবে, “আহ! কি উত্তম দিন আজ! হে আল্লাহর হাবিব! আপনি কি জানেন, আপনার সাথে আমার রব আমাকে কখন বিয়ে দিয়েছেন?

 

:না তো!

 

: গ্রীষ্মকালে, প্রচন্ড গরমের দিনে আল্লাহ্ তাআলা আপনার দিকে বিশেষ দৃষ্টি দিলেন। দেখলেন আপনি প্রচণ্ড পিপাসার্ত। তখন তিনি ফেরেশতাদের ডেকে বললেন, “দেখ! আমার অমুক বান্দাকে দেখ! সে তাঁর স্ত্রীকে ভুলে গেছে। খাদ্য, পানীয় ছেড়ে দিয়েছে। স্বাদ ত্যাগ করেছে। মনের ইচ্ছাকে কুরবানি করেছে। শুধু আমার কারণে। আমার কাছে যা আছে তার প্রতি প্রবল আগ্রহে। তোমরা সাক্ষী

থাকো, আমি আমার এই বান্দাকে মাফ করে দিলাম।”

 

সেদিন আল্লাহ তাআলা আপনাকে মাফ করে দিয়েছিলেন এবং আপনার সাথে আমাকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করেছেন।”

.

বই: সালাফদের ক্ষুধা

লেখক: ইমাম ইবনু আবিদ দুনইয়া রহ.

প্রকাশনী: সীরাত পাবলিকেশন

মূল্য: ২৬% ছাড়ে ১৮৫৳

অর্ডার করতে ভিজিট করুন: https://bit.ly/2DXIF5t

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

"লাইলাতুল ক্বদর হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম" - এই হাজার মাস আসলে লিটেরালি হাজার মাস নয়। এই ব্যাপারটা এরকম যে, এই এক রাতের ইবাদত জীবনভর ইবাদতের চাইতেও উত্তম! এবং

 

"শান্তিই শান্তি, বিরাজ করে ফজর পর্যন্ত" - এই 'ফজর' ফজরের আজান দেয়ার সাথে সাথেই সমাপ্ত হয়ে যায় না। বরং, যে আরবি শব্দ এখানে ব্যবহার করা হয়েছে তার ব্যাখ্যায় সময়টা সূর্যোদয়ের আগ পর্যন্ত সময়কে বোঝায়।

 

এখন, লাইলাতুল ক্বদরের এক রাতকে লিটেরালি হাজার মাসের সমান ধরে হিসাব করলে দাঁড়ায় যে, এই রাতের

 

এক সেকেন্ডের ইবাদত - তেইশ ঘণ্টার ইবাদতের চেয়েও বেশি।

 

এক মিনিটের ইবাদত - আটান্ন দিনের ইবাদতের চেয়েও বেশি।

 

এক ঘন্টার ইবাদত - ৯.৮ বছরের ইবাদতের সমান।

 

এক রাতের ইবাদত - তিরাশি বছরেরও বেশি সময়ের ইবাদতের চেয়ে উত্তম।

 

সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী!

 

আমরা শেষ দশ রাতের একটা মুহূর্ত সময় নষ্ট করার আগে যেন উপরের হিসাবটার কথা মনে রাখি।

 

আল্লাহ তাউফিক দেন। ওয়া মা তাউফিক ইল্লাহ বিল্লাহ।

cltd (shawly israt)

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

কুরআনের একটি আয়াত আমাকে আবেগাক্রান্ত করে দেয়। আয়াতটিতে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা বলেন, "তোমরা কি চাও না যে, আল্লাহ্ তোমাদের ক্ষমা করুন?" [সূরাতুন নূর: ২২]

.

সুবহানাল্লাহ! কে না চায় যে, আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা করে দিন!?

.

আয়াতটি অবতীর্ণের প্রেক্ষাপটটি খুব চমৎকার এবং শিক্ষণীয়।

.

সায়্যিদুনা আবু বকর (রা.) অনেক নিঃস্ব, অসহায় মুসলিমকে সচ্ছলতার পথ দেখিয়েছেন, অনেককে নিজেই দেখাশোনা করেছেন। হযরত মিসতাহ্ (রা.) ছিলেন তাদেরই একজন। তিনি ছিলেন একাধারে একজন মুহাজির এবং আবু বকরের দুরসম্পর্কের আত্মীয়। এই দরিদ্র সাহাবিকে আবু বকর (রা.) নিয়মিতই অর্থ দিয়ে সাহায্য করতেন। ইফক (আম্মাজান আয়িশা রা.-এর উপর যিনার অপবাদ)-এর ঘটনায় মুনাফিকদের পাশাপাশি কয়েকজন মুসলিমও আম্মাজান আয়িশা (রা.)-এর ব্যাপারে বিরূপ কথাবার্তা বলেছিলেন। হযরত মিসতাহ্ (রা.) ছিলেন সেই কয়েকজন মুসলিমের একজন। এটা জানার পর আবু বকর (রা.) ভীষণ রকম মর্মাহত হন। এমনকি মনের দুঃখে তিনি শপথ করে বসেন যে, ভবিষ্যতে আর মিসতাহকে কোনো সাহায্য করবেন না।

.

আবু বকরের মত মহান সাহাবির এই শপথের ব্যাপারে আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা'আলা চুপ থাকেননি। তিনি হৃদয়গ্রাহী ভাষায় আয়াত নাযিল করেন-

"তোমাদের মধ্যে ঐশ্বর্য ও প্রাচুর্যের অধিকারীরা যেন আত্মীয়দের, নিঃস্বদের এবং আল্লাহর পথে হিজরতকারীদের দান না করার ব্যাপারে শপথ না করে। তারা যেন ক্ষমা করে এবং (দোষ-ত্রুটি) উপেক্ষা করে। তোমরা কি চাও না যে, আল্লাহ্ তোমাদের ক্ষমা করুন? আল্লাহ্ তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।" [সূরাতুন নূর: ২২]

 

© Al Mujahid Arman Bhai

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

নবুওয়াতের একেবারে প্রথম পর্যায়। মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ﷺ নিকটাত্নীয়দের নিকট গোপনে ইসলামের দাওয়াহ দিচ্ছিলেন। কিন্তু তা একেবারে গোপন থাকে নি। রাসূলুল্লাহর ﷺ দাওয়াহর যে মৃদু গুঞ্জন মক্কায় ছড়িয়েছিল, তাতে নেতৃস্থানীয়রাসহ বাকিরা ভেবেছিল তাদের চিরচেনা বিশ্বস্ত মুহাম্মাদ ﷺ হয়তো স্রষ্টা ও স্রষ্টার প্রাপ্য সম্পর্কে আহ্বান করা উমাইয়া ইবনু আবিস, কুস ইবনু সায়িদা বা আমর ইবনু নুফাইল প্রমুখের মতোই একজন হয়ে উঠেছে। সেই সময় রাসূলুল্লাহ ﷺ ও ইসলাম গ্রহণ করা সাহাবারা লুকিয়ে লুকিয়ে ফজর আর মাগরিবের ওয়াক্তে সলাতও আদায় করতেন।

.

রাসূলুল্লাহ ﷺ ও সাহাবাদের নিরলস দাওয়াহ কার্যক্রমে মক্কার কাফিররা ক্রমান্বয়ে চিন্তিত হয়ে এলেও বিরোধিতার কোনো কারণ ওদের কাছে ছিল না। কেননা তখনও আল্লাহর সাথে শির্ক, প্রতিমাপূজার বিরোধিতা তথা কাফিরদের দ্বীনের বিরুদ্ধে স্পষ্ট দাওয়াহ শুরু হয়নি। এভাবে করে চলেছিল নবুওয়াতের প্রায় প্রথম তিন বছর।

.

অতঃপর স্বয়ং আল্লাহর আয়াত (২৬ঃ২১৪) দ্বারা আদেশপ্রাপ্ত হয়ে দাওয়াতের প্রকাশ্য পর্যায় যখন শুরু হল, শুরু হল কাফিরদের দ্বীনের মূলোৎপাটন আর জাহান্নামের ভয় দেখানো - তখন থেকেই যেন আল্লাহর রাসূলের ﷺ দাওয়াহ, অ্যাক্টিভিটি কাফিরদের 'গ্রহণযোগ্য সীমা' অতিক্রম করলো। সীরাতগ্রন্থগুলোর পাতায় পাতায় সাফার পাদদেশে মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর ﷺ স্পষ্ট আহ্বান আর এর ফলস্বরূপ মক্কার কাফির মুশরিকদের প্রতিক্রিয়ার ইতিহাস গাঁথা হয়েছে। মুশরিকদের প্রতিক্রিয়ার জবাব হিসেবে ওয়াহীও নাযিল হয়েছিল,

.

فَٱصۡدَعۡ بِمَا تُؤۡمَرُ وَأَعۡرِضۡ عَنِ ٱلۡمُشۡرِكِينَ (٩٤)

.

"আপনাকে যা আদেশ করা হয়েছে তা স্পষ্টরূপে ব্যক্ত করুন এবং আপনি মুশরিকদের পরোয়া করবেন না" [সূরাহ আল-হিজর, ৯৪]

.

ওরা বিরোধিতা শুরু করেছিল যখন আল্লহর দ্বীনের দাওয়াহ, অ্যাক্টিভিটি ওদের দৃষ্টিতে 'গ্রহণযোগ্য সীমা' অতিক্রম করল তখন। এরপর মক্কার কাফির মুশরিকরা মুসলিমদের উপর কেমন অকথ্য অত্যাচার শুরু করেছিল, তা সীরাত অধ্যয়ন করলেই স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়। সীরাতের এই ঘটনাপ্রবাহ আজকের যুগের কাফির মুশরিক সাম্রাজ্যগুলো আর বিভিন্ন অঞ্চলের স্থানীয় মুরতাদ শাসকগোষ্ঠীর বেঁধে দেওয়া 'গ্রহণযোগ্য ইসলাম', 'অগ্রহণযোগ্য ইসলাম' এর প্রেক্ষাপটের সাথে যেন হুবহু মিলে যায়।

.

আজকে আমেরিকা, চীন, ভারত থেকে শুরু করে গোটা বিশ্বে 'র‍্যাডিকেল মুসলিম ইন্ডীকেটর' বা 'জঙ্গি সনাক্তকরণ চিহ্ন' এর যে আবর্জনা দেখা যাচ্ছে, এছাড়া দেশে দেশে যে ইসলামোফোবিয়া, হেইট ক্রাইম - এর সবই যেন আল্লাহর শরীয়াহকে পূর্ণাঙ্গরূপে মেনে নেওয়া মুসলিমদের উপর মক্কার সেই কাফিরদের আচরণ। এছাড়া ব্যক্তিগত পর্যায়ের সলাত সিয়ামের ইবাদাতগুলোতেই সীমাবদ্ধ থেকে আর কোনো অ্যাক্টিভিটিতে না জড়ানো আজকের কাফিরদেরও গ্রহণযোগ্য সীমা। 'মডারেট মুসলিম হওয়া আর ইন্টারফেইথের কুফরি আকিদাহ লালন করা গ্রহণযোগ্য সীমা।

.

আর সেইযুগের মতো আজকের যুগেও গণতন্ত্র বা সেক্যুলারিজমের মূর্তিকে ভেঙ্গে একমাত্র আল্লাহর ইবাদাতের দাওয়াহ, এমনকি ভাবাও অপরাধ। কাফির সাম্রাজ্যের থিঙ্কট্যাংক র‍্যান্ড কর্পোরেশন থেকে শুরু করে স্থানীয় তাগুতেরা পর্যন্ত এভাবেই 'গ্রহণযোগ্য ইসলাম' এর সীমারেখা নির্ধারণ করে দেয়। এর বাহিরে গেলেই বান্দার উপর একইরকম জুলুম, আগ্রাসন চলে আসবে, যা ১৪০০ বছর আগে রাসূলুল্লাহ ﷺ ও তাঁর সাহাবাদের উপর এসে চড়েছিল।

.

আশ্চর্যজনক বাস্তবতা হল, সেইসময়ে মুমিনরা যেমন্টা দৃঢ়চেতা, অটল ছিল আজকের যুগে তেমন বান্দা খুঁজে পাওয়া যায় না। বরং আজ সহসাই এমনসব হতভাগা মুসলিমদের পাওয়া যায় যারা কাফিরদের গ্রহণযোগ্যতার মাপকাঠিতে নিজেদের দ্বীনকে ফিট করতে ব্যস্ত। দিনশেষে নিজেদের দ্বীন বিক্রি করে হলেও কাফিরদের সমর্থন আর গ্রহণযোগ্যতা খুটে বেড়ায়। প্রতিরোধ আর সবরবিহীন সহজ পথ খুঁজতে খুঁজতে এইসব মিসকিনেরা কখন যে পিতা ইবরাহিমের (আলাইহিস সালাম) মিল্লাত, নেতা মুহাম্মাদের ﷺ আদর্শ জলাঞ্জলি দেয় তা টেরও পায় না।

.

অথচ প্রথম তিন বছর একরকম বিনাবাধায় ইসলাম প্রচারের পরও 'প্রকাশ্য ও স্পষ্টরূপে ইসলাম' প্রচারমাত্রই যে বাধাবিঘ্ন আর অত্যাচার নেমে এসেছিল, সেটা ছাড়াই তো আল্লাহ আযযাওয়াজাল দ্বীনের বিজয় দিয়ে দিতে পারতেন। আল্লাহ আযযাওয়াজাল তা করেন নি, বরং তিনি সুবহানাহুতা'লা মুমিনদের প্রস্তুত করছিলেন এমন এক মূল্য দেওয়ার জন্য যার বিনিময়ে রয়েছে জান্নাত।

.

ভাগ্যিস আজকের যুগেও অল্পকিছু বান্দারা কাফিরদের বেঁধে দেওয়া 'গ্রহণযোগ্য সীমা' অতিক্রম করে একমাত্র আল্লাহর কাছেই আত্নসমর্পণ করে। তারা তাদের রব্বের সাথে কৃত ওয়াদা পূরণে শত অত্যাচার সয়েও নিরলস কাজ করে যায় এবং একসময় গিয়ে মিলিত হয় বিজয়ী কাফেলায়।

.

.

রেফারেন্সঃ

.

[১] সীরাত ইবনু হিশাম, ১ম খন্ড

[২] ফিকহুস সিরাত, পৃষ্ঠা ৭৬

[৩] আর রাহীকুল মাখুতূম

.

#সীরাত_ভাবনা

 

 

 

 

 

 

 

❒ জনৈক বাবার বক্তব্য:

.

“…সেদিন আমার ছেলেটা খাওয়ার সময় প্লেট হাতে নিয়ে চেয়ার টানাটানি করতে গিয়ে খাবারের একটা টুকরো মাটিতে পড়ে যাওয়ায় আমি একটু বেশিই রেগে গেলাম। আমি সবকিছু নিয়মমাফিক ধীরস্থিরভাবে করার ব্যাপারে একটু বেশি সতর্ক, এ ব্যাপারে নিজের সম্পর্কে কিছুটা উচ্চ-ধারণাও রাখি। বাচ্চাদের ডিসিপ্লিনের দিকটা কড়াকড়িভাবে দেখি। দুদিন পর আমার হাত থেকে সব খাবার সহ খাবারের গোটা প্লেট পড়ে যায়। আমার মত একটা পূর্ণবয়স্ক ‘সদা-সতর্ক’ ও ‘নিয়মতান্ত্রিক’ মানুষের হাত থেকে কিভাবে তা পড়ল? তাৎক্ষনিকভাবে আমি এর পিছনে বিভিন্ন তত্ত্ব দাঁড় করালাম, যেমন যেখানে প্লেট রেখেছিলাম সেই সারফেসটা ঢালু হওয়া ইত্যাদি… কিন্তু কিছুক্ষণ পরেই আমার মধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ উপলব্ধি জন্ম নিল: আমরা নিজেদের জন্য অজুহাত খাড়া করতে পটু কিন্তু অন্যদেরকে কোন ছাড় দিতে চাই না…”

.

মসজিদে একবার একটি ১০-১২ বছরের ছেলেকে ফরয নামায শেষে হুড়মুড় করে বের হয়ে আসতে দেখে আমার পাশের চল্লিশোর্ধ্ব মুসল্লী চোখে-মুখে ঘৃণা নিয়ে বলে উঠল: “শয়তান!” আমি তাকে বললাম: ছেলেটি নামায পড়তে এসেছে সে কারণে তাকে উৎসাহ দেয়া উচিৎ। লোকটি আমাকে বিস্মিত করে দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে বলে উঠল: “এই নামাযের কোন দরকার নাই!” আমি হতবাক অবস্থায় শুধু এতটুকুই স্বগতোক্তি করতে পারলাম: “আমরা এই বয়সে কতই না ফেরেশতা ছিলাম!”

.

নিজেকে অন্যের আসনে বসিয়ে দেখতে পারা সন্তান প্রতিপালন, পারিবরিক সম্পর্ক এবং মানুষকে কোন কিছু শেখানোর ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরী বিষয়।

.

মানুষের স্বভাব বড় বিচিত্র। আমরা নিজেদের বড় বড় অন্যায় কাজকে যাবতীয় অজুহাতের মোড়কে কতই না হালকা করে দেখি, কিন্তু অন্যের ছোটখাট অপরাধ ক্ষমা করতে পারি না! হোক সে সন্তান, স্ত্রী, কর্মচারী বা কাজের লোক।

.

.

❒ জনৈক স্বামীর বক্তব্য:

.

“আমি সব কাজ ঘড়ির কাটায় করার চেষ্টা করি। যেমন ৮টার সময় বের হওয়ার কথা থাকলে ঠিক ৮টায় পরিবারের সবার রেডি থাকা চাই। যদি বের হওয়ার মুহূর্তে কেউ টয়লেট বা পানি খাওয়া কিংবা অন্য কোন কাজের কথা বলে, তবে আমার ভীষণ রাগের উদ্রেক হয় এবং আমি ‘উচিৎ কথা’ শুনিয়ে দিতে দেরী করি না। কিন্তু একদিন যখন আমার বের হওয়ার মুহূর্তে অদম্য প্রাকৃতিক বেগ আসায় ২-৪ মিনিট নয়, ১৫ মিনিট দেরী হয়ে গেল – সেদিন আমি বুঝতে পারলাম যে ‘মিস্টার পারফেক্ট’ হওয়ার শ্রেষ্ঠত্ববোধ মূলত এক ধরনের অহংকার যা থেকে আমার অবশ্যই নিজেকে মুক্ত করতে হবে।”

.

আমাদের মনে রাখা উচিৎ মানুষ খাঁটি ফেরেশতা কিংবা খাঁটি শয়তান নয়। বরং আমরা সবাই ভাল ও মন্দের মিশ্রণ। তাই প্রান্তিক দৃষ্টিভঙ্গী ক্ষতিকর। আসুন আমরা নিচের কয়েকটি পদক্ষেপে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গী শুধরে নিই:

.

প্রথমতঃ নিজেদের অপরাধকে বড় করে দেখতে অভ্যস্ত হওয়া উচিৎ। অবশ্য সেটাও মাত্রাতিরিক্ত হওয়া ঠিক নয়। কেননা নিজেকেও কখনও অজুহাত দেয়ার প্রয়োজন আছে। তবে সাধারণভাবে নিজের দোষের বেলায় দৃষ্টিভঙ্গী হবে: আমি অন্যায় করেছি, কিন্তু আমি ভবিষ্যতে নিজেকে সংশোধন করে নেব, ফলে আমি আল্লাহর ক্ষমা ও সাহায্যের প্রত্যাশী।

.

দ্বিতীয়তঃ অন্যের বেলায় অজুহাত বের করতে শিখি। নিশ্চয়ই সে অমুক কারণে এই অন্যায়টা করে ফেলেছে, কিংবা তার অনেক অপরাধ থাকলেও বেশ কিছু ভাল দিকও আছে, অথবা এই পরিস্থিতিতে আমি হলে আরও বড় ধরনের অন্যায় করে ফেলতাম – ইত্যাদি। এর অর্থ উপদেশ দেয়া বন্ধ করা নয়, বরং অন্যের অজুহাত দেখার প্রবণতা আমাদের উপদেশ-বাক্য থেকে অন্তরের বিদ্বেষ-প্রসূত উত্তাপকে বের করে একে করবে শীতল, কোমল ও মর্মস্পর্শী।

.

তৃতীয়তঃ আমাদের সবসময় স্মরণ করা উচিৎ যে আমার জীবনে এমন একটি দিন আসবে যেদিন আমি আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে অপার ক্ষমা ও উপেক্ষার মুখাপেক্ষী হব। সেদিন আল্লাহর কাছ থেকে যে আচরণ আমি আশা করি, আজ আমার কি উচিৎ নয় ছোট মাত্রায় হলেও সৃষ্টির সাথে এর অনুরূপ আচরণ করা?

.

আমরা মানুষের সাথে যেমন আচরণ করব, আল্লাহ তাআলাও আমাদের সাথে অনুরূপ আচরণ করবেন – আল্লাহ তাআলার এই রীতি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে দুএকটা হাদীস দেখা যাক। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

.

যে কোন মুমিনের দুনিয়াবী বিপদের মধ্যে কোন একটি বিপদ দূর করে দেবে, আল্লাহ তার কিয়ামতের দিনের বিপদের মধ্যে একটি বিপদ দূর করবেন। যে ঋণগ্রস্তের ঋণ আদায়কে সহজ করে দেবে, আল্লাহ তার দুনিয়া ও আখিরাতের বিষয়াদি সহজ করে দেবেন। যে কোন মুসলিমের দোষ ঢেকে রাখবে, আল্লাহ দুনিয়া ও আখিরাতে তার দোষ গোপন রাখবেন। যতক্ষণ বান্দা তার ভাইয়ের সাহায্য করতে থাকে, ততক্ষণ আল্লাহ তার সাহায্য করতে থাকেন… [মুসলিম, ২৬৯৯]

.

আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, অতীতে এক লোক মানুষকে ঋণ প্রদান করত। সে তার কর্মচারীকে বলে দিত, তুমি কোন অভাবগ্রস্তের নিকট টাকা আদায় করতে গেলে তাকে মাফ করে দিও। হয়ত আল্লাহ এ কারণে আমাদেরকে ক্ষমা করবেন। তিনি [নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম] বললেন, এরপর যখন সে আল্লাহর সাক্ষাৎ লাভ করল, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিলেন। [বুখারী, ৩৪৮০ ও মুসলিম, ১৫৬২]

.

চতুর্থতঃ সন্তানদের সাথে সহজতার মুহূর্তে নিজের দোষগুলো কিংবা এর একাংশ স্বীকার করা উচিৎ। তেমনি সন্তানদের প্রতি অন্যায় আচরণ করে থাকলে অন্তত দুঃখ প্রকাশ করা উচিৎ, যেন তাদের মনে ক্ষোভ সঞ্চিত হওয়ার সুযোগ না পায়। মনে রাখতে হবে, যারা আমাদের চেয়ে ছোট বা অধীনস্ত, তারা তাদের আপত্তি স্পষ্টভাবে জানাতে না পারার কারণে তাদের অন্তরে ক্ষোভ সঞ্চিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যা দীর্ঘ সময় পরে আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের মত অনাকাঙ্ক্ষিত কোন পন্থায় বিস্ফোরিত হলে এর পরিণতি আমাদের কারও জন্যই ভাল নয়।

▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂

.

লেখাঃ মুহাম্মাদ নাসীল শাহরুখ (আল্লাহ্‌ তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন!)

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

#রিভিউ

- স্কুল থেকে মাইশা ওর আম্মুর সাথে বাসায় ফেরার সময় দেখলো রাস্তায় এক মহিলা তার মেয়েকে পান্তা ভাত খাওয়াচ্ছে শুধু মরিচ দিয়ে , গায়ে জামা নেই ৷ মাইশা‘র এটা দেখে খুব কষ্ট হয়, ওর আম্মুকে বলে ,আম্মু ওদের খুব কষ্ট তাইনা?

>হ্যা, মা ৷ অনেক কষ্ট ! আচ্ছা মা তুমি কি চাও এখন তোমার জন্মদিনে অনেকগুলো টাকা নষ্ট করি?

  • না আম্মু লাগবে না ৷ তুমি জন্মদিন পালন করার টাকা গুলো ওদের কে দিয়ে দেও ৷

[অথচ মেয়ে মাইশা একটু আগেই জন্মদিন পালনের জন্য কতো বায়না ধরলো ৷ ওর মা ওকে স্পষ্ট ভাবে বুঝিয়ে দিল আমরা জন্মদিন পালন করি, কতো টাকা নষ্ট করি আর কেউ কেউ খেতে পায় না ৷ এই যে দেখ ‘আলহামদুলিল্লাহ্ ‘ তুমি সুস্থ আছো সব ঠিক-ঠাক আছে ৷ তার জন্য ‘আল্লাহ‘র কাছে আমাদের গ্রেটফুল থাকা উচিত ৷ কেক কাটা কি এতোটা জরুরী আম্মু? ]

 

-আমরা কার জন্য আল্লাহ্’র নিকট দোয়া করি?কার জন্য চোখের পানি আসে? মা-বাবা, ভাই-বোন,স্বামী, বউ ,সন্তান এক কথায় ভালোবাসার মানুষগুলোর জন্য ৷ অথচ,হাজার বছর আগে একজন মানুষ আমাদের প্রত্যেকের জন্য বুক ভাসিয়ে কেঁদেছেন,দিনে ও রাতে ৷ আল্লাহ্ তায়ালার কাছে দোয়া করেছেন ৷ তার কান্না, অস্থিরতা, দুঃখকাতরতা দেখে স্বয়ং আল্লাহ্ তায়ালা নিজে বলেছেন---

[মনে হচ্ছে, তারা ইমান আনছে না বলে তুমি কষ্টে নিজের জান খতমই করে ফেলবে!]

 

- রাহাত এর বিয়ে হয়েছে গত দু-মাস ৷ কিন্ত বউ মনের মতো হয়নি ৷ রসিকতা বোঝে না , কেমন যেনো বাচ্চা-বাচ্চা আরও কতো কি ৷ এই নিয়ে রাহাতের মনে ক্ষোভ অনেক ৷ শফিক ভাইকে নিজের শত্রু ভাবে ৷ সেই বিয়েটা ঠিক করে দিয়েছিল ৷ এভাবে আর পারা যায় না,বউয়ের সাথে কথা বলার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে ৷ শফিক ভাইকে জানানো উচিত ৷ যাওয়া হলো শফিক ভাই,র কাছে সব বলা হলো ৷ সব শোনার পর শফিক ভাই বললো, শোন রাহাত দুজন মানুষের চলতে হলে এতো কিছু লাগে না ৷ যদি থাকে সেটাই বোনাস ৷ আলহামদুলিল্লাহ্ ৷

রাহাত চুপ ! জানো সাজ্জাদের ডিভোর্স হয়েছে?

>রাহাত আঁতকে উঠলো ৷ কেনো?

  • সাধারন ব্যাপার ৷ সাজ্জাদ এর বউ ভেবেছিল সাজ্জাদ অনেক বুদ্ধিমান হবে ৷ কিন্ত না, এ দেখি বউর থেকেও কম জানে ৷ এই থেকেই শুরু পরে ডিভোর্স! শফিক ভাই রাগান্বিত কন্ঠে বলা শুরু করলো, জানো রাহাত ---

[আল্লাহ্’র অসংখ্য নিয়ামতে ডুবে থাকলে যা হয় ৷ মানুষ কি পেয়েছে তা না ভেবে,কী পেলাম সেটা ভাবতে ভাবতে অকৃতজ্ঞের মতো জীবন কাটায় ৷ অথচ নিয়ামতের একটু শোকর করলে আরও বেশী পেতো]

 

- নিলা কখনো বোরকা নিকাব ছাড়া বের হয় না ৷ এক কথায় অনেক পর্দা করে ৷ কিন্ত ফ্রেন্ডদের মধ্যে কেউ এটা পছন্দ করে না ৷ পছন্দ করুক বা না করুক আল্লাহ্ কে ভয় করে ও এটা করে ৷ স্কুল থেকে একসাথে পড়ে আসতেছে নিলয় এর সাথে ভালোই বন্ধুত্ব ওদের ৷ দুজন দুজনকে পছন্দ করে বলতে গেলে ৷ প্রায়‘ই নিলা কে বোরকা ছাড়া আসতে বলে কিন্ত ও শোনে না ৷ এজন্য নিলয় রাগ করে একমাস কথাও বলেনি ৷ এবার অনেক জোর করেতেছে বোরকা ছাড়া যাওয়ার জন্য, মন রাখতে হলেও যাওয়া উচিত ৷ একদিন বোরকা না পরলে আর কি হবে? একদিন ই তো ৷ বোরকা ছাড়াই বের হলো নিলা দেখা করার জন্য, কথা ছিলো কোন এক ফুসকার দোকানে দেখা করবে ৷ নিলা ফুসকার দোকানে যাওয়া মাত্রই ওর বান্ধবীরা নিলয়,নিলয় এর বন্ধুরা সবাই হাসা করলো ৷ পাস থেকে সাদিয়া ডাক দিয়ে বললো নিলয় তুই জিতেছেন! নিলা কে বোরকা ছাড়া বের করেছিস ৷ তুই তোর ট্রিট পেয়ে যাবি ৷ কথা গুলো শুনে নিলার চোখ দিয়ে অশ্রু ঝরতে লাগলো ৷

নিলা , নিলয় কে একটা কথাই বলে আসছিলো

>নিলয় জানো? বড় কোন পাপ চক্রের শুরু কোথা থেকে?

[আমি কো বড় কিছু করছি না ৷ এইটুকুই তো ৷ একবারই তো ৷ কি অার হবে ৷ এই ভাবনাটা]

 

- খাদিজা স্কুলের প্রত্যেকটি বাচ্চা কে তার নিজের মতো সন্তানদের মতো ভাবে ৷ তার কোন সন্তান নেই ৷ তার আফসোস হয় ৷ কিন্ত তাও আল্লাহ্‘র কাছে শোকর করে ৷ আল্লাহ্ তায়ালা রাব্বুল আলামীন যেমন চান, দোয়া করে তার কাছে ৷ সেদিন এক বাচ্চার মা তার বাচ্চাকে নিতে স্কুলে আসছে ৷ কোলে নিয়ে গেইট পার হবে এমন সময় খাদিজা মনে মনে ভাবে ‘আল্লাহ্ কাউকে কোল ভরে সন্তান দেন আবার কাউকে দেন না ৷ হঠাৎ নিজের হুস ফিরে পেলো খাদিজা, না আফসোস করা যাবে না ৷ সাথে সাথে তাওবাহ করে নিলেন আর দোয়া করলেন ---

[হে আল্লাহ্ আপনি তার সন্তানদের আরএ বারাকাহ দান করুন , আর তাদের প্রত্যেককে করুন সঠিক পথের অনুসারী ও চক্ষু শীতলকারী ৷ ]

মুহূর্তে তার চোখ ভিজে গেলো তার , কিন্ত সে শুনতে পেলো না ফেরেশতাগণ তার জন্য দোয়া করতেছিল ---

[তোমার জন্যও তাই হোক! তোমার জন্যও তাই হোক]

 

- বিয়ের রাতে আয়েশা তার দেনমোহরের পঞ্চাশ হাজার টাকা তার স্বামীর হাতে দিয়ে বললো যদি কখনো সম্ভব হয় এই টাকা দিয়ে আমাকে হজ্জে নিবেন ৷ হ্যা সূচক মাথা নাড়লো সাজিদ ৷ সাজিদ মাত্র পঞ্চাশ হাজার টাকা দেনমোহর দিবে তা আয়েশা হাসি মুখেই মেনে নিয়েছিল ৷

আয়েশা জানে সংসার টেকার জন্য অনেক টাকার দেনমোহরের প্রয়োজন নেই বা সবাইকে দেখানোর জন্যও অনেকগুলো শুন্য, সংখ্যার প্রয়োজন নেই ৷ সংসার টেকার জন্য আল্লাহ্‌র রহমত যথেষ্ট ৷ তাই তিনি সবসময় আল্লাহ্’র কাছে দোয়া করেন ৷

 

- সন্তান হয় না রহিম সাহেবের ৷ এ নিয়ে বেশ চিন্তিত ৷ কত ডাক্তার দেখানো হয়েছ কোন লাভ হয় নি ৷ সর্বশেষ গিয়েছিল সিঙ্গাপুর, সেখানে ডাক্তার তাকে অদ্ভুত প্রশ্ন ---

> are you muslim?

হ্যা, বলতেই, ডাক্তারের উওর, তাহলে টেনশন কিসের? তোমাদের কোরআনে তো লেখা আছে,বৃদ্ধ বয়সে ইবরাহীমকে সন্তান দিয়েছেল তোমার গড ৷ তার কাছে চেয়ে নেও ৷

ওখান থেকে উঠে যায় রহিম সাহেব ৷ বাসায় এসে কথাগুলো ভাবে ৷ অথচ এতোদিন এসব কথা মাথায় একটি বারের জন্য আসে নি ৷ ভাবতে ভাবতে অজু করতে গেলো, তার স্ত্রী জায়নামাজ নিয়ে আগেই বসে আসে খাটে ৷ ইশার আজান হচ্ছে ... আল্লাহু আকবার আল্লাহ্............

 

- গতকাল রাতে একসাথে শপিং শেষ করে যে যার বাসায় ফিরেছে আদিবা ও সাদিয়া ৷ প্লান কাল পহেলা বৈশাখ একসাথে ঘুরতে যাবে ৷ খাওয়া দাওয়া শেষ করে যে যার মতো ঘুমোতে গেলো ! ঘুমো ঘুমো চোখে কান্নার আওয়াজ আসছে আদিবা‘র কানে ৷ কান্নার আওয়াজ বাড়তেই আছে ৷ কিছু বুঝতে পারলো না ৷ চোখ কচলাতে কচলাতে নিচের ফ্লাটে গিয়ে যা দেখলো তা দেখে বিশ্বাস করতে পারছিলো না ৷ সাদিয়া‘র মা চিৎকার করো কাঁদছে সাদিয়া আর নেই হতাম, রাতে নাকি হার্ট এ্যাটাকে মারা গেছে ৷ মুহূর্তে আদিবা‘র চোখ ভিজে গেলো ৷ দৌড়ে বাসায় এসে কাঁদতে লাগলো ৷

এই প্রথমবার মৃত্যুর কথা এমন ভাবে ভাবতেছে ,যে কাল একসাথে কতো কি করতাম ৷ কতো প্লান ৷ আর আজ কোথায়? মাফ চাওয়ার সময়টুকু পেলো না ৷ ওর জায়গায় যদি আমি হতাম ? এগুলো ভাবছে প্রথমবারের মতো এমন ভাবে ভাবছে যে মৃত্যু যে কোন সময় আসতে পারে..

 

- সাইদ সাহেবের ছোট দুই মেয়ে ৷ মেয়ে হয়ে সে অনেক খুশি ৷ কারন মেয়েরা নাকি ঘরের লক্ষী ৷ মেয়ের বাবারা নাকি তাড়াতারি জান্নাত পায়.

অথচ, গতকাল তার দুই মেয়ে স্কুল থেকে নাচ-গান দিয়ে পুরস্কার পেয়েছেন! বাবা নিজেও সেখানে ছিলেন ৷ যে কি গর্ব বাবার, পুরষ্কার পাওয়ায় ৷ তবে কি এই মেয়ের বাবা জান্নাত পাওয়ার যোগ্য ? নাকি সেই মেয়ের কথা বলা হয়েছে যে আল্লাহ দেখানো পথে চলে, বিবি ফাতেমা (রাঃ) পথ অনুসরন করে চলে তাদের কথা বলা হয়েছে? সাইদ সাহেব বুঝলো না...

 

বই: মেঘ রোদ্দুর বৃষ্টি

-------রৌদময়ীরা-----

 

বি দ্র: প্রথম বার কোন বইয়ের রিভিউ লিখলাম ৷ ভুল-ত্রুটি হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন ৷ - AR Rimon

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

এই দশ দিন দশ রাত কেবল আল্লাহর ই জন্য!!

 

আমার মত যারা ইতেকাফ করতে পারছেন না, আসুন আমরা দিন রাত্রির মাঝে অবসর সময়গুলিকে কাজে লাগাই। শুধু অবসর কেন? কাজের ফাকে ফাকেও জিকির করতে থাকি।

ফেইসবুক, মেসেঞ্জার বা অন্য কোনো সোশাল সাইটে অযথা সময় নষ্ট না করি। একটু একটু করে অনেকটা সময় পার হয়ে যায় এভাবে।

তাই এক্ষুনি সমস্ত সোশাল সাইট গুলি আনইন্সটল দেন আর খালেস নিয়তে আল্লাহর ইবাদাতে লেগে যান। আগামি রামাদ্বান আমরা নাও পেতে পারি। তাই অন্তত শেষ দশকে যাতে আল্লাহর ক্ষমা ও রহমত হাসিল করতে পারি সেই চেস্টাই করি।

 

কি ইবাদাত করব?

বেশি বেশি নফল নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, জিকির,দান সাদকা।

রান্না করতে করতে ও তিলাওয়াত বা লেকচার শুনতে পারেন। নিজ পরিবারকে নিয়ে তালিম করতে পারেন।

 

ইবাদাত করতে চাইলে নেক নিয়ত ই যথেষ্ট, কবুলের মালিক আল্লাহ।

#mumtaz_mily

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

আহমেদ আফগানী ভাইয়ের দৃষ্টিতে সংস্কারপন্থীদের বিবর্তন

 

প্রথমে ইসলামপন্থীদের মধ্যে একদল সংস্কারপন্থী কাম সমালোচনাকারীরা জামায়াত সম্পর্কে বলেছে, একাত্তর সমস্যা। একাত্তরের গ্লানি দূর করতে হবে। একাত্তরের জন্য ক্ষমা না চাইলে রাজনীতি করা যাবে না এদেশে। মানুষ ঘৃণার চোখে দেখবে।

 

এরপর তারা আমাদের বলেছে, জামায়াতের নেতৃত্বের সমস্যা। জামায়াতের নেতৃত্বে যারা আছে দূরদর্শী না। তারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তারা না বুঝে রাজনীতি, না বুঝে ইসলাম।

 

এরপর তারা বলা শুরু করেছে জামায়াতের দর্শনে সমস্যা। ইসলাম ও রাজনীতি আলাদা। ইসলামে কোন রাজনীতি নাই। সুতরাং জামায়াতকে হয় ইসলামী দল হতে হবে নয় রাজনৈতিক দল হতে হবে।

 

আর এখন বলা শুরু করেছে ইসলামই সমস্যা। ইসলামী রাষ্ট্রনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি, বিচারব্যবস্থা বলে কিছুই নাই। খুলাফায়ে রাশেদা কোন শাসনব্যবস্থা না। ইসলামী রাষ্ট্র এই টার্মটা ইহুদিদের সৃষ্টি। ইকামাতে দ্বীন বিদআত।

 

একসময় আওয়ামী লীগ ইসলামিক দল ছিলো। সেখানে এই টাইপের সংস্কারপন্থীদের দ্বারা দলটি বিবর্তিত হয়ে এখন ইসলামবিরোধী দলে পরিণত হয়েছে।

 

আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদকের লিখা বইগুলো যদি পড়েন তাহলে বুঝতে পারবেন তাঁরা খিলাফত রাষ্ট্রের ব্যাপারে কতটা আগ্রহী ছিলেন। আজ সে আওয়ামীলীগ বিচ্যুত হতে হতে কোথায় চলে গিয়েছে!

 

আল্লাহ তায়ালা জামায়াতকে সংস্কারবাদীদের হাত হতে রক্ষা করুন। আসুন এই রমাদান মাসে আমরা তাদের জন্য দোয়া করি আল্লাহ তায়ালা তাদের সুস্থতা দান করুন।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

অনেক দিনের পর্যবেক্ষণে মনে হলো, টিনএজার শুধু বয়সের ক্ষেত্রেই হয় না, দ্বীনের ক্ষেত্রেও হয়। টিনএজার কিশোর-কিশোরী যেমন আছে, টিনএজার দ্বীনদারও তেমন আছে।

...

আরেকটু খুলে বলছি। সাধারণত ১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সী ছেলে-মেয়েদেরকে টিনএজার বলা হয়। এ সময়টা হচ্ছে শৈশব ও যৌবনের মধ্যবর্তী সময়। জীবনের এ সময়ে এসে মস্তিষ্কের দ্রুত পরিবর্তন ঘটে। এ কারণে টিনএজকে দ্রুত cognitive development এর সময় বলা হয়। বাংলায় এটাকে বলা হয় বয়ঃসন্ধিকাল।

...

বয়ঃসন্ধিক্ষণের শুরুতে হরমোনের কারণে শরীরে লাবণ্যের জোয়ার আসে। আকস্মিক পরিবর্তন আসে দেহে-মনে। এ বয়সের ছেলে-মেয়েরা রাতারাতি বদলে যেতে থাকে। টিনএজার তখন চিনতে পারে না নিজের দেহ। তল পায় না অনুভূতির। অচেনা শৃঙ্খলে ক্রমাগত আবদ্ধ হতে থাকে।

এই টিনএজ বা বয়ঃসন্ধিকাল হচ্ছে রাগ, জেদ আর অভিমানের বয়স। এ সময় টিনএজারদের চোখে-মুখে থাকে নানা স্বপ্ন।

তবে এই সময়টা খুবই ভয়ঙ্করও বটে। এ বয়স খুবই স্পর্শকাতর। নিজেকে স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হয় না প্রায়শই। ফলে নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সাথে তাদের সম্পৃক্ততা তৈরি হয় উদ্বেগজনকভাবে। এ সময় বিদ্রোহী হয়ে ওঠে তারা। ‘বাধা দিলে বাঁধবে লড়াই’-এর লড়াইয়ে ঘরে ঘরে তৈরি হয় সংঘাত।

 

এতদিন যে মেয়েটি মায়ের আঁচল ধরে এ ঘর- ও ঘর ঘুরে বেড়াতো, এ বয়সে এসে তার কাছে মনে হয়, মা তাকে নিজের মতো করে বড় হতে দিচ্ছে না। মা তার স্বাধীনতা খর্ব করছে।

এ বয়সের ছেলেদের কাছে মনে হয়, বাবার সিদ্ধান্তগুলো একপেশে। সে প্রতিটি ক্ষেত্রে বাবার পরামর্শের চেয়ে সমবয়সী বন্ধুদের পরামর্শের প্রতি অধিক মনোযোগী হয়।

এ বয়সের অধিকাংশ ছেলে-মেয়ে একটা মোহের মধ্যে আবদ্ধ থাকে। বেশি আবেগপ্রবণ হয়ে ওঠে। এই বয়সে প্রেমের একটা বড় ধরনের ঝুঁকি থাকে। অনেকে না বুঝে শারীরিক সম্পর্কেও জড়িয়ে পড়ে।

...

যারা নাস্তিক্যতাবাদ বা সংশয়বাদে প্রভাবিত হওয়ার কারণে দ্বীন থেকে দূরে ছিল, বা এমনিতেই পারিবারিক বলয়ের কারণে দ্বীন সম্পর্কে গাফেল ছিল, তারা যখন ঈমানের ছোঁয়া পেয়ে ইসলামের প্যাক্টিস শুরু করে, তারাও কিন্তু দ্বীন সম্পর্কে পড়াশুনা করার সময় বা দ্বীন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করার সময় একটা পর্যায়ে এই বয়ঃসন্ধিকালে উপনীত হয়।

এ সময় তাদের চেখে-মুখে দ্বীন কায়েমের নানা স্বপ্ন দানা বাধতে শুরু করে। চারপাশের অবস্থা দেখে তাদের মাঝে জেদ, অভিমান ও ক্রোধ জমে ওঠে। টিনএজার কিশোর-কিশোরীর পক্ষে যেমন নিজেকে স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হয় না, তেমনই টিনএজার মুমিনের পক্ষেও নিজেকে স্থিতিশীল রাখা সম্ভব হয় না।

টিনএজারের মনে যেমন বাবা-মার প্রতি ক্ষোভ জন্মায়, বাবা-মায়ের পর্যবেক্ষণকে দখলদারিত্ব মনে হয়, টিনএজার দ্বীনদারের মনেও উলামায়ে কেরামের প্রতি এক ধরনের ক্ষোভ জন্মায় এবং তাদের বিশ্লেষণকে একপেশে মনে হয়।

সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার আগে, ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর এবং সন্তানের শৈশবে-কৈশরে এই বাবা-মা-ই কিন্তু সংসারের মহীরুহ হয়ে ছিলেন। তারাই কিন্তু পাখির মতো একটু একটু করে তৃণলতা কুড়িয়ে এনে ভালোবাসার আলয় গড়েছেন। অথচ টিনএজারদের কাছে মনে হবে, সেই বাবা-মা-ই ঘরের পরিবেশ নষ্ট করছেন। বিস্ময়ের বিষয় হলো, অল্প কদিন ধরে ইসলামের অনুশীলন শুরু করা এই টিনএজার দ্বীনদারের কাছেও মনে হতে শুরু করে যে, উলামায়ে কেরাম ইসলামের যথাযথ প্রতিনিধিত্ব করতে ব্যর্থ হচ্ছেন, বা তারা তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করছেন না, বা তারা মুখলিস হওয়া সত্ত্বে জেনে-না জেনে কায়েমি শক্তির লেজুড়বৃত্তি করছেন।

...

টিনএজারদের চোখ থেকে মোহ ও আবেগের সেই চশমা একসময় পড়ে যায়। বাস্তবতা একসময় তাদেরকে দেখিয়ে দেয়, কোনটি কাগজের ফুল আর কোনটি বাগানের ফুল। তখন তারা নিজেদের চৈন্তিক স্খলনের কথা বুঝতে পারে। তবে এই উপলব্ধিটা সবার জীবনে একই সময়ে আসে না। কারো আসে চরম ভুল করার পর। আর কারো আসে ভুলের শিকার হওয়ার আগমুহূর্তে।

টিনএজার ঈমানদাররাও তাদের ভুল বুঝতে পারে। হয়তো আমলনামা ও বাস্তব জীবনের অনেক কিছু খোয়ানোর পর, বা অল্প ক্ষতির শুরুতেই।

 

- আব্দুল্লাহ আল ফারুক

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

"যে ব্যক্তি রমাদান পেয়েও তার গুনাহ্ ক্ষমা করিয়ে নিতে পারলো না, সে ধ্বংস হোক।"

 

এই দুয়াটা করেছিলেন জিবরীল (আলাইহিস সালাম) আর, আমীন বলেছিলেন স্বয়ং রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)।

 

রমাজান তো শেষের দিকে। আমরা কি আমাদের গুনাহ মাফ করায়ে নিতে পারতেছি?

 

কাবিরাহ গুনাহগুলো থেকে তাওবাহ কি করা হচ্ছে? কখনো সালাত ছেড়ে দিব না এমন ওয়াদাহ কি করতে পারতেছি? কখনো সুদ-ঘুষ বা হারাম উপার্জন করবো না - এমনটা কি মনঃস্থির করতে পারছি?

 

চেকলিস্টে যা কিছু হারাম তাই বাদ দিতে হবে আর যা কিছু ফরজ-ওয়াজিব তার সবই আদায় করতে হবে। এটাই রমাজানের দাবী। এই দাবী রক্ষা করতে না পারলে, আমাদের জন্য ধ্বংস অপেক্ষা করছে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে মাফ করুক।

 

- আহমাদ শাফি

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 খিলাফত বা খলিফার প্রাথমিক করণীয়

 

বিসমিল্লাহহির রহমানির রহিম। আমার এই লেখাটি অনেকের কাছে অতি সাধারন একটি লেখা হতেই পারে। আসলেই হয়ত তাই। কিন্তু ছোট বেলা থেকেই আমি যখনি কোন জন সংশ্লিস্ট সমস্যা বা হালতে দেখেছি , আমি চিন্তা করেছি এটার সমাধান কি হতে পারে। এবং শুধু চিন্তা আমি তা নিয়ে অনেক দিন যাবৎ গবেষণা করেই একটি সিদ্বান্তে উপনিত হতাম। যাই হোক অনেক দিন আগে একবার কাকরাইলে বয়ান শুনছিলাম। যুবায়ের সাহেব বয়ানে বলছিল সারা দুনিয়ার সকল হালত ঠিক হয়ে যাবে যদি ইমান /কলমা ঠিক হয়ে যায়। এই কথাটি শুনতে ভাল হলেও মেনে নিতে পারছিলাম না। কিন্তু কয়েক মাস ব্যাক্তিগন তাহকিক করে ফলাফল পেলাম। আলহামদুলিল্লাহ। আসলেই সব সমাষ্যার সমাধান ইমান ঠিক হওয়া। আর এর জন্য চাই আল্লার রাস্তায় বের হওয়া। আরও সঠিক ভাবে বলতে গেলে কোন এলাকা বা উম্মাতের একটা অংশ এমন হতেই হবে যারা সর্ব হালতে আল্লাহর রাস্তায় নিজের জান, নিজের মাল, নিজের সময় লাগাতে লাগাতে এমন একটা অবস্থায় পৌছবে যে, তারা আল্লাহ ও তার রাসুলের যে কোন নির্দেশ বা সুন্নাহ হুবুহু ইজতেমাইয়্যাত, ইছতেকামাত, ইস্তেখলাস, ইতায়াত ও ইবরাত এর সাথে মেনে নিবে।

 

বাকি আমি এখানে আসন্ন খিলাফত রাস্ট্রের আমীরদের জন্য ইমানের শাখা ভিত্তিক(শেষ থেকেই শুরু করলাম) কয়েকটা অগ্রাধিকার মূলক কর্মপন্থা লিখলাম।

 

৭৭·রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিস সরিয়ে দেয়া। -মুসলিম শরীফঃ ১/৪৭

 

    সকল রাস্তা থেকে সকল বাধা অপসারন করা।

    রাস্তায় গাড়ি পার্কিং বা বাধা সৃষ্টি কারী সকল অবস্থা পরিহার। ১ মিনিটের অধিক রাস্তায় চলাচল বিঘ্ন করলেই  শাস্তি(১)।

    সকল পরিবহলে ৫০ কিমি অধিক যাত্রার যাত্রীদের আসনের ব্যাবস্থা। সকল ট্রেনে, বাসে, লঞ্চে বা অন্যান্য বাহনে এই নিয়ম কার্যকর করা। প্রয়োজনে অতিরিক্ত রেল বগি ও বাস নামানো।  (শাস্তি-২)। আন্তনগর বাস বা ট্রেনে স্ট্যান্ডিং টিকেট বন্ধ করা।

    রাস্তা বানানো, মেরামত, রক্ষনাবেক্ষন এর জন্য জিলা ভিত্তিক ৫-১০ বছরের জন্য এক বা একাধিক অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠান কে নির্ধারন করা। যারা সমস্যা সমাধান করবে এবং রক্ষনাবেক্ষন এর প্রয়োজনে জরিমানা বা নিয়ন্ত্রন করবে। রাস্তায় কাজ করতে হলে এদের মাধ্যমে করতে হবে।

    রাস্তা ছোট হউক বা বড়, বানানোর সময় অবশ্যই ড্রেন(যে কোন একপাশে সহজ ব্যাবহার/উম্মোচন যোগ্য), কেবল/পাইপ লেন(যে কোন একপাশে সহজ ব্যাবহার যোগ্য), টার্নিং, পার্কিং ও লোড-আনলোড এর ব্যাবস্থা রাখা। প্রতি ১০-৫০ গজ পর পর রাস্তার দুই পাশে সংযোগকারী আন্ডার পাইপ রাখা।

    সকল ট্রেন, বাস, নৌযান বা অন্যান্য পরিবহনে সিট এর জন্য নির্দিস্ট স্বাস্থ্যকর ডিজাইন (একাধিক) নির্ধারণ করে দেয়া। এবং সাথে ছোট বালিশ দেয়া। সিট কভার ও ডেকারেশন ধুলা মুক্ত করা, প্রয়োজনে রেক্সিন এ মোড়ানো।  যানবাহন বানানো, মেরামত, রক্ষনাবেক্ষন এর জন্য অঞ্চল/বিভাগ ভিত্তিক ৫-১০ বছরের জন্য এক বা একাধিক অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠান কে নির্ধারন করা।

    বাজার বা দোকান রাস্তা থেকে দূরে বানানো।  জিলা সড়ক এর ক্ষেত্রে ১০০ গজ দূরে। হাইওয়ে এর ক্ষেত্রে ১৫০ গজ দূরে। থানা সড়ক এর ক্ষেত্রে ৫০ গজ দূরে। প্রধান সড়ক (হাইওয়ে/জিলা) এর সাথে সংযোগ সড়ক না বানানো।  প্রয়োজনে গাড়ি U-টার্ণ  এর জন্য বড় জায়গা নেয়া বা ফ্লাই ওভার বানানো। হাইওয়েতে কোন সংযোগ সড়ক যুক্ত না করা। টার্নিং পয়েন্ট বন্ধ করে প্রতি ২০-৫০ কিমি পর পর Uটার্ণ পয়েন্ট বা ফ্লাইওভার বানানো।

 

৭৬· ইসলামে অবৈধ খেলাধুলা ও হাসি ঠাট্টা না করা। -সূরা মায়িদাঃ ৯০

- সময় নস্টকারী খেলাধুলা নিষিদ্ব করা। তবে শারিরীক ও মানসিক ব্যায়াম হয় এমন খেলা ধুনা অলাভজনক ভাবে চালু রাখা।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Sayyid Shaykh Muhammad al-Yaqoubi has over 2,000 students from more than 100 countries, some of them are:

 

Shaykh Amjad Mahmud, UK

Shaykh Muhammad Yaseen, UK

Shaykh Waseem Ahmed, UK

Shaykh Asrar Rashid, UK

Shaykh Adnan Raja, UK

Shaykh Mufti Monawwar Ateeq, UK

Shaykh Mufti Abdul Qadeer Khairabadi, UK

Shaykh Mufti Wajid Iqbal, UK

Shaykh Dr. Daniel Jackson, UK

Shaykh Dr. Ridhwan Saleem, UK

Shaykh Sjaad Hussain, UK

Shaykh Thaqib Mahmood, UK

Shaykh Saqib Ishtiaq, UK

Shaykh Tanweer Hussayn, UK

Shaykh Baber Prevez, UK

Shaykh Sadaqat Hussain, UK

Shaykh Naveed Jamil, UK

Shaykh Shadee al-Masry, USA

Shaykh Muhammad Mendes, USA

Shaykh Hamza Yusuf, USA

Shaykh Zameer Sattaur, USA

Shaykh Luqman al-Andalusi, USA

Shaykh Muhammad Shareef, USA

Shaykh Faisal Abd al-Razak, Canada

Shaykh Isa Johansson, Sweden

Shaykh Mahmud Kellner, Germany

Shaykh Gabriele Lungo, Italy

Shaykh Ramy Najmeddine, Australia

Shaykh Isam al-Siboui, Tunisia

Shaykh Hassan Abu al-Arkoub, Jordan

Shaykh Gibril Fouad Haddad, Lebanon

Shaykh Hassan Moraib, Lebanon

Shaykh Abd al-Matin Balkanlıoğlu, Turkey

Shaykh Ashraf Sa’ad al-Azhari, Egypt

Shaykh Adam Shakhidov, Chechnya

Shaykh Ajan al-Hadid, Iraq

Shaykh Khalid Mardini, Syria

Shaykh Abd al-Halim Taweel, Syria

Shaykh Ahmad Maeno, Japan

Shaykh Saif al-Din Amsir, Indonesia

Shaykha Safia Shahid, UK

Shaykha Noshin Gul, UK

Shaykha Misba Khan, UK

Shaykha Umm Ayman, Sweden

Shaykha Asra Adiba al-Bukhari, USA

Shaykha Uzma Hussayni, USA

Shaykha Mona El-Zankaly, USA

Shaykha Linda Ayyash, USA

 

collected from faqir muhammad

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

কে বেশি বুদ্ধিমান, ঘোড়া না আপনি?

.

সত্যিই, আপনার এবং আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ রমাদান হয়ত এখনও আসেনি। হয়ত এখনও খারাপ অভ্যাসগুলো নিয়ে আমরা ভুগছি, আমাদের অন্তর এখনও কঠিন পাথরের মতো শক্ত হয়ে আছে, হয়ত অলসতা কাটিয়ে উঠতে পারিনি আজও, চোখগুলো অশ্রুহীন থাকে দিনের পর দিন...এগুলো তো খারাপ, তবে এর চেয়েও খারাপ বিষয় হচ্ছে,

 

যে সুবর্ণ সুযোগটি আপনার সামনে রয়েছে—তাকেও হেলায় নষ্ট হতে দেয়া। এ এমন এক সুযোগ, যাকে কাজে লাগিয়ে শুধু আপনি যে একাই উপকৃত হবেন—তা নয় না, বরং আলোকিত করতে পারবেন আশে-পাশের সবাইকে, শামিল হতে পারবেন আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের কাতারে।

.

ইমাম ইবনুল-জাওযী রহ. বলেন,

ﺇﻥ ﺍﻟﺨﻴﻞ ﺇﺫﺍ ﺷﺎﺭﻓﺖ ﻧﻬﺎﻳﺔ ﺍﻟﻤﻀﻤﺎﺭ ﺑﺬﻟﺖ ﻗﺼﺎﺭﻯ ﺟﻬﺪﻫﺎ ﻟﺘﻔﻮﺯ ﺑﺎﻟﺴﺒﺎﻕ .. ﻓﻼ ﺗﻜﻦ ﺍﻟﺨﻴﻞ ﺃﻓﻄﻦ ﻣﻨﻚ !ﻓﺈﻧﻤﺎ ﺍﻷﻋﻤﺎﻝ ﺑﺎﻟﺨﻮﺍﺗﻴﻢ ..ﻓﺈﻧﻚ ﺇﺫﺍ ﻟﻢ ﺗﺤﺴﻦ ﺍﻻﺳﺘﻘﺒﺎﻝ ﻟﻌﻠﻚ ﺗﺤﺴﻦ ﺍﻟﻮﺩﺍﻉ

'দৌড় প্রতিযোগিতায় ঘোড়া যখন গন্তব্যের কাছাকাছি চলে আসে, তখন জেতার জন্য গতি বাড়িয়ে দেয়। কাজেই ঘোড়াকে আপনার চেয়ে বুদ্ধিমান হতে দেবেন না। (মনে রাখবেন) শেষ কর্মই চূড়ান্ত ফলাফল বয়ে আনে। আর তাই আপনার শুরুটা যদি ভাল নাও হয়, আশা করা যায় শেষ সুযোগটা কাজে লাগাবেন।'

.

রমাদানের শেষ দশ রাত আপনার সম্মুখে, অর্থাৎ গন্তব্যের খুব কাছাকাছি আপনিও চলে এসেছেন। আর এটাই মোক্ষম সুযোগ শক্ত হয়ে যাওয়া অন্তরকে আল্লাহর দুয়ারে ভেঙ্গে চুরমার করার—অতীতে যা সম্ভব হয়নি। আল্লাহর সাথে সৎ হয়ে থাকলে অন্ততপক্ষে এটা নিশ্চিত করুন, শুরুটা ধীরগতিতে হলেও শেষটা হেলায় যেতে দেবেন না।

 

ইবনু তাইমিয়াহ রহ. বলেন,

ﺍﻟﻌﺒﺮﺓ ﺑﻜﻤﺎﻝ ﺍﻟﻨﻬﺎﻳﺎﺕ ﻻ ﺑﻨﻘﺺ ﺍﻟﺒﺪﺍﻳﺎﺕ

'শুরুটা কেমন ছিল তা নয়, বরং বিবেচ্য বিষয় হচ্ছে শেষটা কেমন।'

.

আর এক্ষেত্রে আমাদের নবিজি ﷺ-ই সর্বোত্তম উদাহরণ; রমাদানের প্রথম ২০ দিনের আমলের সাথে তাঁর শেষ ১০ দিনে আমলের মাঝে ব্যাপক পার্থক্য সূচিত হতো। তাঁর প্রিয়তমা আয়িশা রাযি. বলেন,

كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يجتهد في رمضان ما لا يجتهد في غيره، وفي العشر الأواخر منه، ما لا يجتهد في غيره

'অন্য যে কোনো সময়ের তুলনায় রাসূলুল্লাহ ﷺ রমাদানে সবচেয়ে বেশি (আমলে) পরিশ্রম করতেন। আর রমাদানের শেষ দশ দিন অন্য যে কোনো দিনের চেয়ে বেশি পরিশ্রম করতেন।' [সহীহ মুসলিম]

.

সুতরাং কেন নিজেকে আপনি পেছনের কাতারেই ফেলে রাখবেন?

 

কেন আল্লাহর উন্মুক্ত দরজা নিজের জন্য বন্ধ করে দিতে চাচ্ছেন?

 

কেন নিজেকে ব্যর্থ ভাবছেন, অথচ আল্লাহ আপনাকে এখনও সাফল্যের দিকে ডেকে যাচ্ছেন?

 

ও আল্লাহ, আমাদের জীবনের শেষ আমলকে সর্বোত্তম আমল বানিয়ে দাও, এবং জীবনের সর্বোত্তম দিনটিকে তোমার সাথে সাক্ষাতের দিন করে দাও!

.

—উস্তাদ আলী হাম্মুদা

 

[অনুবাদ এবং পরিমার্জনায়: কলামিস্ট হুজুর]

 

 

 

 

 

 

 

 

 

"ইউনিভার্সিটির ক্যান্টিনে"

 

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য। দরুদ ও সালাম তার প্রিয় রাসূল হযরত মুহাম্মদ (স:) এর উপর।

 

বইটি এক কথায় অসাধারন।

 

কিছু অনুভূতি......

 

নারী তুমি সুন্দর!

তুমি স্নিগ্ধময়ী!

তুমি অপরুপ!

তোমাকে দিয়ে দিয়ে পৃথিবী এতো সুন্দর, এতো মায়াবী, এতো মধুরতম। তুমি ছাড়া সুন্দর পৃথিবী অপূর্ণ।

 

হে নবী!

আপনি আপনার পত্নীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু।

(সুরা আল-আহযাব 33:59)

 

পৃথিবীর সবকিছুই পর্দা করে।

 

পর্দা নারীর লজ্জার ভূষণ।

এটি নারী লাজুকতা ও কোমলতা পূর্ণতা আনে।

সমীরণের চাদরে ঢাকা ভূপৃষ্ঠের ঘূর্ণন।

তাজা ফল-ফলাদিতে আছে বাকলের আবরণ।

কলমের বডিতে ঢাকা থাকে কালি।

অমূল্য চোখের সুরক্ষায় আছে পাপড়ির ছাউনি।

 

নারী হলো সুবাসিত ফুল। সবাই চায় তার ঘ্রাণ নিতে।তাই তাদের পর্দাবৃত হয়ে থাকতে হবে।

 

ফলের বাকল ফেলে দিলে তা নষ্ট হয়ে যায়।

আবরণ মুক্ত কলা কালো হয়ে যায়।

 

পরিশেষে বলা যায় ।

অসাধারণ একটি বই।বইটি খুবই দরদ মাখা কথাগুলো এবং উপভোগ্য ভঙ্গিতে পর্দার আদ্যোপান্ত ও মা-বোনদের মুখাবয়ব ঢেকে রাখার বিষয়টি শরিয়তের অকাট্য যুক্তি ও প্রমাণাদি ও শিক্ষনীয় ঘটানার বর্ণনাসহ তুলে ধরা হয়েছে। বইটির আরেকটি সুন্দর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে শব্দের অলংকার ব্যবহার, হৃদয়গ্রাহী ও গতিময় গদ্যে উপস্হাপিত রয়েছে রচনার প্রতিটি ছত্র।

 

বইঃ- ইউনিভার্সিটির ক্যান্টিনে

মূলঃ- ড. মুহাম্মদ বিন আব্দুর রহমান আরিফি

প্রভাষক, কিং সঊদ ইউনিভার্সিটি, রিয়াদ,সৌদিআরব

ভাষান্তরঃ- মাওলানা মাহমুদুল হাসান

মুদ্রিত মূল্যঃ ২৪০ টাকা

পৃষ্ঠাঃ ১২৮

প্রকাশনঃ- হুদহুদ প্রকাশনী।

 

- মোঃ আরমান হোসেন

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

পানিপড়া এবং রুকইয়াহ শারইয়াহ

--------------

[ক]

কুরআন পড়ে পানিপড়া তৈরি করা পূর্বের এবং বর্তমানের বিরাট সংখ্যক আলেমগণের মতে বৈধ। উপরন্তু অনেকে এব্যাপারে পরামর্শ দিয়েছেন, উৎসাহিত করেছেন। এক্ষেত্রে অনেকেই প্রমাণ হিসেবে সুন্নাহ থেকে দলীল দেন, অথবা রুকইয়ার মূলনীতি সংক্রান্ত হাদিস উল্লেখ করেন, আবার অনেকেই সাবিত ইবনে কায়িস রা. এর হাদিসটি উল্লেখ করেন। তবে এ হাদিসটিকে অনেক মুহাদ্দিস দুর্বল বলেছেন।

সাধারণ মূলনীতি হল বিভিন্ন প্রকার রুকইয়াহ বৈধ হবে যতক্ষণ পর্যন্ত এতে কোন শিরক অথবা হারাম বিষয় না থাকে।

[খ]

সহীহ মুসলিমে আ’ওফ ইবনে মালিক রা. বলেছেন, “জাহেলিয়্যাতের সময় আমরা বিভিন্ন রুকইয়াহ করতাম। একদিন রাসুলুল্লাহ ﷺ কে এটা সম্পর্কে জিজ্ঞেস করায় তিনি বললেন, ‘আমাকে তোমাদের রুকইয়ার পদ্ধতি দেখাও। এতে শিরক না থাকলে কোন সমস্যা নেই।’” [Hadith no. 5544]

এই বিষয় সম্পর্কিত বর্ণনা থেকে পাওয়া যায়:

যাবির রা. বলেন, “রাসুলুল্লাহ ﷺ রুকইয়াহ নিষেধ করেছিলেন। তারপর আ’মর ইবনে হাজম রা.এর পরিবার রাসুলুল্লাহ ﷺ এর কাছে আসলেন এবং বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল, আগে আমরা বিচ্ছুর দংশনে এটা দিয়ে রুকইয়াহ করতাম, কিন্তু আপনি রুকইয়াহ নিষেধ করেছেন।’ তারপর তাঁরা রাসুলুল্লাহ ﷺ কে সেটা (রুকইয়ার বাক্যগুলো) দেখালে তিনি বললেন, ‘আমি এটাতে ক্ষতির কিছু দেখছিনা। তোমাদের কেউ তার কোন ভাইকে এর মাধ্যমে সাহায্য করতে পারলে সে যেন তা করে।’” [Narrated by Ahmad and Muslim.]

আলী রা. বর্ণনা করেন, “এক বিচ্ছু রাসুলুল্লাহ ﷺ কে নামাজরত অবস্থায় হুল ফুটালো। নামাজ শেষ করে তিনি বললেন, “বিচ্ছুর উপর অভিশাপ। এটা নামাজরত ব্যক্তিকেও ছাড় দেয় না।” তারপর তিনি পানি আর লবণ আনতে বললেন এবং কুল ইয়া আইয্যু হাল কাফিরুন, কুল আউযুবি রাব্বিল ফালাক, কুল আউযুবি রাব্বিন নাস পড়তে লাগলেন আর আহত স্থানে লবণ-পানি দ্বারা ঘষতে লাগলেন।”

[At-Tabarani reported it in al-Mu'jam as-Sagheer 2/32 and al-Haythami said in Majma' az-Zawaa'id, 5/114 "Its chain is fair" and al-Albaani said, "It is an authentic hadeeth" in as-Saheehah no. 548.]

মুহাম্মাদ ইবনে ইউসুফ ইবনে সাবিত ইবনে কায়িস ইবনে শাম্মাস তাঁর পিতা এবং তাঁর দাদা থেকে বর্ণনা করেন, “রাসুলুল্লাহ ﷺ সাবিত ইবনে কায়িস রা. এর ঘরে যান (ইমাম আহমদ বলেছেন উনি অসুস্থ থাকা অবস্থায়) এবং এই বলে দোয়া করেন, ‘হে মানুষের প্রভু, সাবিত ইবনে কায়িস ইবনে শাম্মাস থেকে অসুস্থতা উঠিয়ে নিন।’ তারপর তিনি বাতহান (উপত্যকার) কিছু ধুলা একটি পাত্রে নিলেন, এটাতে পানি মিশিয়ে তাতে ফুঁ দিয়ে তাঁর গায়ে ছিটিয়ে দিলেন।”

[Narrated in Sunan Abi Dawud quoted from 'Awn al-Ma'bood - the Book of Medicine - the Chapter of Ruqaa 10/370, no. 3867. Also narrated by an-Nasaa'i in 'Amal al-Yawmi wal-Laylah p. 557, and al-Bukhari in at-Taareekh al-Kabeer 8/377, and Saheeh Ibn Hibban 7/623. and al-Albaani said, It has a weak chain.]

সহীহ বুখারিতে পাওয়া যায় পানি হল জ্বরের আরোগ্য। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “জ্বর জাহান্নামের উত্তাপ থেকে হয়। কাজেই তাকে পানি দিয়ে নিভাও।” [Hadith no. 5723]

যেমনটা বদনজরের জন্য রাসুলুল্লাহ ﷺ যেভাবে যার নজর লেগেছে তাকে গোসল করিয়ে আক্রান্ত ব্যক্তিকে চিকিৎসা করার নির্দেশ দেন সেভাবেই করতে হবে। [Saheeh Muslim no. 2188.]

.

শাইখ আব্দুল মুহসিন আল আব্বাদ রহ. সুনান আবু দাউদের উক্ত হাদিসের আলোচনায় বলেন,

“আবু দাউদে আছে সাবিত ইবনে কায়িস ইবনে শাম্মাস রা. বর্ণনা করেন, “রাসুলুল্লাহ ﷺ একবার উনার কাছে আসেন এবং এই বলে দোয়া করেন, ‘হে মানুষের প্রভু, সাবিত ইবনে কায়িস ইবনে শাম্মাস থেকে অসুস্থতা উঠিয়ে নিন।’ তারপর তিনি মদীনার বাথান (উপত্যকা) থেকে কিছু ধুলা নিয়ে একটি পাত্রে নিলেন, এটাতে পানি মিশিয়ে তাতে ফুঁ দিয়ে তার গায়ে ছিটিয়ে দিলেন।” এই হাদীসে ‘তিনি পানিতে ফুঁ দিলেন’ এটা অসুস্থ রোগীদের জন্য এবং রুকইয়ার জন্য পানি পড়ার দলীল। এই হাদিসের সনদ দুর্বল কারণ এতে ইউসুফ ইবনে মুহাম্মাদকে ‘মাক্ববুল’ হিসেবে ধরা হয়। আয়েশা রা. হতে নির্ভরযোগ্য সূত্রে মুহাম্মাদ ইবনে আবী শাইবাহ হতে বর্ণিত, আয়েশা রা. পানিতে কোরআন পড়ে নেয়া এবং এটা অসুস্থ ব্যক্তিকে খেতে দেয়া অথবা এটা তার গায়ে ঢেলে দেয়াকে ক্ষতিকর হিসেবে দেখেননি। পানিতে ধুলো নেয়া এটা শুধু ইউসুফ ইবনে মুহাম্মাদের বর্ণনাতেই পাওয়া যায়। তাই ধুলো ব্যবহার করাটা সহীহ না। আয়েশা রা. থেকে নির্ভরযোগ্য সূত্রে বর্ণনা পাওয়া যায় যে এভাবে আয়াত পড়ে পানিতে ফুঁ দেয়া এবং এটা অসুস্থকে খেতে দেয়া অথবা তার গায়ে ঢেলে দেয়াকে তিনি বৈধ মনে করতেন। ড. ফাহাদ আশ-সুহাইমি উল্লেখিত আয়েশা রা.এর বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন, এই বর্ণনায় মা’শার ইবনে যিয়াদ ইবনে কুলাইব আল-হান্দালী সম্পর্কে ইবনে হাজার বলেন, তিনি ছয় নাম্বার নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের একজন। ছয় নাম্বার বর্ণনাকারীদের সম্পর্কে তিনি বলেন, একদল মানুষ যারা পঞ্চম দলের মানুষদের সমসাময়িক ছিলেন। কিন্তু কোন সাহাবীর সাথে তাদের দেখা হয়েছে এমন কোন প্রমাণ নেই। এটা সত্যি হলে উপরোক্ত হাদীসের সনদে একটি ত্রুটি আছে।

[গ]

রুকইয়াহ বৈধ হওয়ার ক্ষেত্রে আলেমগণ নিম্নোক্ত কিছু শর্তের কথা উল্লেখ করেন:

১. রুকইয়াহ হতে হবে মহান আল্লাহর বাণী দিয়ে অথবা আল্লাহর গুণবাচক নাম,প্রশংসা দিয়ে অথবা রাসুলুল্লাহ ﷺ থেকে সহীহ সনদে পাওয়া যায় এমন কিছু দিয়ে অথবা সাধারণভাবে আল্লাহর স্মরণের মাধ্যমে।

২. রুকইয়াতে ব্যবহৃত শব্দ এমন হতে হবে যার মানে বুঝা যায়।

৩. যেসব প্রতীক-চিহ্ন বুঝা যায় না সেগুলো ব্যবহার করা যাবে না।

৪. যিনি রুকইয়াহ করবেন এবং যার জন্য করা হবে দুজনকে অবশ্যই বিশ্বাস রাখতে হবে যে, আল্লাহর অনুমতি এবং হুকুম ব্যতীত রুকইয়ার নিজস্ব কোন ক্ষমতা নেই।

৫. রুকইয়াতে আল্লাহর প্রতি অবাধ্যতা অথবা আল্লাহর সাথে শরীক প্রকাশ পায় এমন কোন কিছু থাকা যাবেনা।

[Refer to the Fatwa ash-Shami 6/363, and also narreted from Imam Al-Nawawi in Fath al-Bari by Ibn Hajar al-'Asqalani rh.],

[ঘ]

পূর্ববর্তী আলেমগণের মতে পানি পড়া:

মুহাম্মাদ ইবনে মুফলিহ বলেছেন, “আব্দুল্লাহ (ইবনে আহমদ ইবনে হাম্বল) বর্ণনা করেন যে তিনি তাঁর বাবাকে পানিতে “আউযুবিল্লাহ…” পড়ে কুরআন পড়ে নিয়ে তারপর সে পানি পান করতে এবং নিজের উপর ছিটিয়ে দিতে দেখেছেন।”

ইমাম আহমদ রহ.এর ছেলে সালিহ বলেছেন, “একবার আমি অসুস্থ হয়ে ছিলাম। তখন আমার বাবা আমার জন্য পানিতে পড়ে সেটাতে ফুঁ দিয়ে তারপর সেটা আমার উপর ছিটিয়ে দিলেন আর আমাকে পান করতে ও সেটা দিয়ে আমার মাথা ধুতে বললেন।” [al-Aadaab ash-Shar'iyyah 2/441]

ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেন, “মক্কায় থাকা অবস্থায় একবার আমি অসুস্থ হলাম। কাছে কোন ডাক্তার কিংবা ওষুধের ব্যবস্থা ছিল না। তখন সূরা ফাতিহা দিয়ে আমি নিজের চিকিৎসা করেছি। আমি জমজমের পানি নিয়ে কিছুটা পান করে এতে বারবার সূরা ফাতিহা পড়তে থাকলাম। তারপর এটা পান করলাম। এভাবে আমি সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেলাম। তারপর থেকে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় আমি এই পদ্ধতি ব্যবহার করেছি এবং সবচেয়ে ভালো ফলাফল পেয়েছি।” [Zaad al-Ma'aad 3/188]

[ঙ]

এ বিষয়ে বর্তমান সময়ের আলেমগণের মতামত:

শাইখ মোহাম্মদ ইবনে ইবরাহীম আল আশ শাইখ রহ. কে একবার কুরআন দিয়ে পানি পড়ার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলো। তিনি বলেন, “এটা অনুমোদিত এবং কোন সমস্যা নাই। বরং আলেমগণ এতে উৎসাহিত করেন।” [Majmoo' Fataawaa wa Rasaa'il 1/92.]

শাইখ সালিহ আল-ফাউযান রহ. বলেন, “একজন মুসলিমের জন্য এটাই সবচেয়ে ভালো যে সে তার ভাইকে আয়াত পড়ে শরীরে অথবা ব্যথার জায়গায় ফুঁ দিলো। এটা রুকইয়াহ শারইয়্যাহ, সে যদি পানিতে পড়ে নেয় এবং এটা পান করে সেটাও একই।” [al-Muntaqaa 1/72 no. 131.]

তিনি আরও বলেন, “যেহেতু রাসূল ﷺ নিজে রুকইয়াহ করেছেন, নিজের উপরও রুকইয়াহ করেছেন এবং এটার অনুমোদন দিয়েছেন তাই যেভাবে ফুঁ আর পানি পড়ে রুকইয়াহ বর্ণিত আছে সেভাবে অসুস্থ ব্যক্তিকে কোরআন পড়ে শরীরে অথবা ব্যথার জায়গায় ফুঁ দিয়ে, পানি পান করিয়ে রুকইয়াহ করলে সেটা অনুমোদিত এবং বিধিবদ্ধ।” [al-Muntaqaa 2/141]

শাইখ সালিহ ইবনে আব্দুল আযিয আলে-শাইখ বলেন, “অসুস্থ ব্যক্তিকে কোরআন পড়ে ফুঁ দেয়া অথবা পানিতে পড়ে ফুঁ দিয়ে সেটা তাকে খেতে দেয়া রুকইয়ার অংশ। এতে কোন ভুল নেই কারণ সালাফ (পূর্বসূরি আলেমগণ) এটা করেছেন। এটা সমালোচনারও কোন সুযোগ নেই কারণ এটা সুন্নাহ সম্মত আমল। রুকইয়ায় যত কম জিনিসপত্র ব্যবহার করা হবে এটা তত ভালো হবে। এই কারণে আমার দাদা শাইখ মুহাম্মাদ ইবনে ইব্রাহীম (আল্লাহ উনার উপর দয়া করুন এবং জান্নাতে উনার মর্যাদা বৃদ্ধি করুন) বলেন, “অসুস্থ হবার পর যত দ্রুত রুকইয়াহ করা যাবে এবং এর মধ্যে যত কম জিনিসপত্র ব্যবহার করা হবে এটা তত উপকারী হবে।” [ad-Da'wah magazine p. 22, no. 1683 from Dhul-Qi'dah 1419 AH.]

.

শাইখ বিন বাজ রহ. তাঁর শরহে ফাতহুল মাজিদে বলেন, পবিত্র কোরআন এবং বরই পাতার গোসলের মাধ্যমে আরোগ্য কামনা করা বৈধ। এটা কোন বিদআত নয় বরং এটা বৈধ ওষুধ। রাসূল ﷺ বলেন, “হে আল্লাহর বান্দাগণ, তোমরা আরোগ্য কামনা করো এবং হারাম উপায়ে আরোগ্য কামনা করো না।” সুনান আবু দাউদে সহীহ সূত্রে বর্ণিত আছে যে রাসূল ﷺ একটি পাত্রের পানিতে পড়ে নিয়ে সেটা অসুস্থ একজনের উপর ঢেলে দিয়েছিলেন। এ থেকে আমরা বলতে পারি যে অসুস্থতায় আরোগ্য লাভের জন্য পানি এবং মধুতে পড়ে নিয়ে ব্যবহার করা বৈধ এবং এতে ততক্ষণ পর্যন্ত কোন ভুল নেই যতক্ষণ পর্যন্ত যা পড়া হবে এবং যার উপর পড়া হবে (যেমন: মধু, পানি, ওষুধ ইত্যাদি) তাতে শরিয়তের দৃষ্টিতে কোন ভুল না থাকে।

শাইখ ইবনে জিবরিন রহ.কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল- ‘অলিভ অয়েলের ওপর রুকইয়াহ করে ব্যবহার করা যাবে কি? আর একটা বোতলের মাঝে একাধিক ব্যক্তির জন্য রুকইয়াহ জন্য পানি পড়া বৈধ কি?’

তিনি বলেছেন- কোরআনের আয়াত বা দোয়া পানির ওপর পড়া হবে, যেমন জমজমের পানি এতে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। কিংবা অলিভ অয়েলের ওপর পড়ে সেটা অসুস্থ ব্যক্তির শরীরে ব্যবহার করা হবে, এতেও কোন সমস্যা নেই। একইভাবে একটি পাত্রে একাধিক লোকের জন্য রুকইয়া করতেও সমস্যা নেই। [Al-Lu’lu’ al-Makeen min Fataawaa Ibn Jibreen. islamqa,info fatwa no. 7872]

দারুল উলুম হাটহাজারির দারুল ইফতায় এবিষয়ে প্রশ্ন করা হলে উত্তরে বলা হয়েছিল - পানি, তেল বা এমন পবিত্র জিনিসের ওপর কোরআন এর আয়াত পড়ে ফু দিয়ে সুস্থতার জন্য খাওয়া বা ব্যবহার করা জায়েজ আছে। (৩০ জুমাদাল উলা ১৪৩৯এর মাঝে সেই ফাতওয়াতে মুফতি আযম আব্দুস সালাম হাফিযাহুল্লাহু সহ ৩জন প্রবীণ মুফতি সাহেব সাক্ষর করেছেন)

দারুল উলুম দেওবন্দে এবিষয়ে ইস্তিফতা (ফাতওয়া চেয়ে আবেদন) করা হয়েছে, ফাতওয়া আসলে এই লেখায় যুক্ত করে দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ।

.

পরিশেষে আমরা এটাই বলতে পারি, যারা "পানি পান করার সময় পানিতে নিঃশ্বাস ফেলা যাবে না" এই হাদিস দেখিয়ে রুকইয়ার পানি পড়ার বিরোধিতা করেন, তাদের না হাদিস সম্পর্কে ধারনা আছে, না অতীতের বা বর্তমান সময়ের বিজ্ঞ আলেমদের ফাতওয়া সম্পর্কে ধারনা আছে। আর না রুকইয়াহ সম্পর্কে তাদের কোন জ্ঞান আছে।

আল্লাহ আমাদের হিদায়াতের পথে অটল রাখুন, ভ্রান্তি থেকে হিফাজত করুন, আমিন!

---------

উৎস: প্রথমাংশ উস্তায মুহাম্মাদ তিম হাম্বলের প্রবন্ধ এবং লেকচার থেকে সংগৃহীত, অনুদিত এবং পরিমার্জিত। পরবর্তীতে শেষের অংশ সংযোজিত হয়েছে।

 

- আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ (রাকি)

 

 

 

 

 

 

 

 

 

রামাদানের শেষ দশদিন রাসূল (সাঃ) একটি দুআ বেশি বেশি করতে বলেছেন। দুআটা আমরা কমবেশি সবাই জানি-- “আল্লাহুম্মা ইন্নাকা ‘আফুউন তুহিব্বুল ‘আফওয়া, ফা’ফু আন্নি।” অর্থাৎ “হে আল্লাহ, নিশ্চয়ই আপনি পরম ক্ষমাশীল এবং ক্ষমা করতে ভালোবাসেন, সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন।”

.

কিন্তু এই দু'আর যে একটা বিশেষ দিক আছে সেটা হয়ত আমরা অনেকেই জানি না। এই দুআটি অন্য দুআগুলোর চেয়ে আলাদা, স্পেশাল। এখানে ‘ক্ষমা করা’ অর্থে ‘গাফুর’ শব্দটি ব্যবহার না করে ‘আফুউ’ ব্যবহার করা হয়েছে। যদিও শব্দ দুটির অর্থ একই। তাহলে ‘আফুউ’ ব্যবহার করার কারণ কী? অর্থগত বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখি যে, আরবরা সাধারণত ‘মুছে ফেলা’ অর্থে ‘আফুউ’ শব্দটি ব্যবহার করে থাকে। যেমন- মরুভূমি থেকে পায়ের চিহ্ন চলে গেলে তারা বলে- আফাত আসারাল ক্বাওম, মানে এটা তো মুছে গেছে। এ থেকেই আফুউ শব্দের অর্থ সহজভাবে বোঝা যায়।

.

উলামারা এই দুটি শব্দের মধ্যে অনেক পার্থক্য উল্লেখ করেছেন। কেউ কেউ বলেন যে, ফরজ ইবাদাত ছেড়ে দেওয়ার পর যদি ক্ষমা করা হয় তখন ‘আফুউ’ ব্যবহার করা হয় আর হারাম কাজ করার পর ক্ষমা করলে তখন ‘গাফুর’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। আবার কারো কারো মতে আল্লাহ তাআলার মাগফিরাতের অর্থ হচ্ছে আল্লাহ তাআলা আপনাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন, কিন্তু আপনার গুনাহগুলো তারপরও লিপিবদ্ধ হয়ে থাকবে এবং বিচার দিবসে আপনাকে এর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে। অর্থাৎ আপনাকে মাফ করা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু বিচার দিবসের আগ পর্যন্ত সেগুলো মুছে ফেলা হবে না। বুখারিতে বর্ণিত একটি হাদীসে এই ধরণের একটি কথা উল্লেখ আছে। হাদীসটিতে বলা হয়েছে, আল্লাহ্ তাঁর এক বান্দাকে নিজের সান্নিধ্যে আনতে থাকেন। তাকে প্রশ্ন করতে থাকেন, তুমি কি নিজের অমুক গুনাহর কথা মনে করতে পারো? বান্দা বলবে, হ্যাঁ পারি। এরপর আল্লাহ আবার জিজ্ঞেস করবেন, তুমি কি তোমার তমুক গুনাহর কথা মনে করতে পারো? বান্দা আবারো বলবে, হ্যাঁ পারি। এভাবে বান্দা যখন নিজের সকল গুনাহর কথা স্বীকার করে নেবে, তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, ‘আমি ইহকালে তোমার এই গুনাহগুলোকে গোপন রেখেছিলাম আর তারপর ক্ষমা করে দিয়েছি।’

.

উলামারা বলেন এটা হলো ‘মাগফিরাহ’।

.

তাহলে ‘আফুউ’ কী? ‘আফুউ’ এর থেকেও অধিক মর্যাদাসম্পন্ন ক্ষমা। ‘আফুউ’ হলো যখন আল্লাহ তাআলা আপনার গুনাহগুলো ক্ষমা করে দেবার পর তা পুরোপুরি মুছে ফেলেন। এমনকি বিচার দিবসেও সে সম্পর্কে কিছুই জিজ্ঞেস করা হবে না। আল্লাহ তাআলা বান্দা এবং ফেরেশতাদেরকেও এই গুনাহগুলোর কথা ভুলিয়ে দেন, যেন বিচার দিবসে আপনাকে এসব গুনাহর জন্য অপমানিত হতে না হয়। মানুষ তার পাপ কর্মের জন্য যখন একেবারে মন থেকে ক্ষমা চায়, তখন আল্লাহ অত্যন্ত খুশি হয়ে এই ধরণের ক্ষমা করে থাকেন।

.

‘আফুউ’ শব্দটি কুরআনে অনেকবার এসেছে, এর মধ্যে পাঁচবার শব্দটি উল্লেখ করা হয়েছে আল্লাহ সর্বশক্তিমান কথাটির সাথে। আল্লাহ চাইলেই শাস্তি দিতে পারেন, কিন্তু তবুও তিনি ক্ষমা করে দেন।

.

“ভালো কাজ তোমরা প্রকাশ্যে করো কিংবা গোপনে করো, অথবা কোনো মন্দ কাজের জন্য যদি তোমরা ক্ষমা করে দাও, তাহলে (তোমরাও দেখতে পাবে,) আল্লাহ তাআলা অতি ক্ষমাশীল ও প্রবল শক্তিমান।” (সূরাহ আন নিসা: আয়াত ১৪৯)

 

- সাজিদ ইসলাম

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

যে স্লোগান আড়ালে আবডালে দেয়া হতো,

জাকির মূসার লাশ নিয়ে এই স্লোগান এখন রাজপথে।

যে পতাকা আড়ালে আবডালে উড়তো,

সেই পতাকা এখন রাজপথে প্রকাশ্যেই উড়ছে।

 

- তুফায়েল খান

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

মাটির পৃথিবীতে জান্নাতী মানুষ (মোবারক করিম (রহ:) পীর সাহেব উজানীর সংক্ষিপ্ত জীবনী)

 

 

 

লেখকঃ শামসুল আবরার

 

 

 

 

মানবতা দীপ্ত, ঐতিহ্যানুসারী, প্রাগ্রসর চেতনাসম্পন্ন, মুরশীদে কামেল, আলহাজ্ব হযরত মাওলানা মোবারক করিম (রহঃ) প্রতিভার ঔজ্জ্বল্যে, নিষ্ঠার ঐকান্তিকতায়, মননশীল গবেষণায়, সমকালের মূল্যবোধে ও পীড়িত সমাজ প্রেক্ষাপটে এক ব্যতিক্রমী ব্যক্তিত্ব। শৈশব কাল হতেই তাঁর কাজ-কর্মে ভবিষ্যতে এক মহা মনীষীতে রূপান্তরিত হওয়ার পূর্বাভাস দেখা দিয়েছিলো। বিশেষ করে ক্বারী ইব্রাহীম (রহঃ)-এর বিশেষ সুদৃষ্টি ও আশীর্বাদপুষ্ট ছিলেন।

তাঁর জন্ম তারিখ সম্বন্ধে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। প্রাথমিক শিক্ষা হতে শুরু করে শেষ পর্যন্ত উজানী মাদ্রাসাতেই পড়াশোনা সমাপ্ত করেন। তাঁর চাচা মাওঃ ইসমাইল (রহঃ)-এর সাথে বিভিন্ন মাহফিলে যেতেন এবং ওয়াজ-বক্তৃতা করতেন। এভাবেই এক সময় সারাদেশে খ্যাতিমান আলেমে দ্বীন হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন।

তাঁর পিতা মাওঃ শামসুল হক (রহঃ) তাঁকে মারফতের সবক প্রদান করেন এবং তাঁর মৃত্যুর এক বছর পূর্বে তাঁকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করে যান। শামছুল হক (রহঃ) ক্বারী ইব্রাহীম (রহঃ)-এর নিকট হতে খিলাফত প্রাপ্ত ছিলেন। তিনি এমন ব্যক্তিত্ব ছিলেন তাঁকে সালাম ও সম্মান করতে সবাই এগিয়ে যেত। নিরহঙ্কারী ও বিনয়ী এ মানুষটি কারো সালামে মুগ্ধ হতেন না বরং আরো বিনয়ে নুয়ে পড়তেন।

তাঁর চারিত্রিক সুষমা, বিনয়, নম্রতা, সকলের সাথে সুসম্পর্ক ও সৌহার্দ্য যেন তাঁর জন্মগত বৈশিষ্ট্য ছিলো। অতিথি আপ্যায়নে বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তাঁর চারিত্রিক মাধুর্যতায় অমুসলিমরা পর্যন্ত মুগ্ধ ছিলো। কারণ তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক, সংখালঘুদের সাথেও তিনি কোমল আচরণ করতেন। আলেম-উলামা, মন্ত্রী, এমপি, জাগতিক শিক্ষায় শিক্ষিত প্রত্যেক শ্রেণীর পেশাজীবীকে তিনি যথাযোগ্য মর্যাদা দান করতেন। অত্যন্ত হেকমতের সাথে তাদেরকে আমল ও সুন্নতের প্রতি যত্নবান হবার এবং নিষ্ঠার সাথে দেশ ও জাতির সেবা করার উপদেশ দিতেন। মোট কথা তাঁর এলেম, আমল, ইখলাস, পরিশ্রম ও সাধনা সব কিছুই একত্রে তাঁর মাঝে স্বাতন্ত্র্য গড়ে তুলেছিলো। তিনি ছিলেন নববী চরিত্রের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।

আধ্যাত্মিক জগতের এ মহান সাধক ক্বারী ইব্রাহীম (রহঃ)-এর সুযোগ্য পুত্র শামছুল হক (রহঃ)-এর জ্যেষ্ঠ পুত্র ও খলিফা ছিলেন। এ পথের পথিকদের মধ্যে তিনি ছিলেন সর্বাগ্রে। ইলমে মারেফতের চর্চায় তিনি ছিলেন জগত বিখ্যাত। যার ফলে দেশ ও বিদেশে তাঁর ৪-৫ লক্ষ ভক্ত মুরিদ ছড়িয়ে আছে। তিনি যে শুধু একজন সাধক ও আধ্যাত্মিক রাহবার ছিলেন তা-ই নয়, বরং প্রচলিত সামাজিক দুর্নীতি ও কুপমণ্ডুকতার শিকড় উপড়ে ফেলে ন্যায় ভিত্তিক মানব সমাজ গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। মানুষে মানুষে হানাহানি- সংঘাত বন্ধে ও সমাজের সর্বস্তরের মানুষের মাঝে ঐক্যের বন্ধন সৃষ্টি করতে প্রাণন্ত প্রয়াস চালান। সন্ত্রাস, নৈরাজ্য, মদ ও জুয়া বন্ধ করতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। তাঁর সুমধুর কণ্ঠে কোরআন ও হাদীসের বাণী শুনে দিক হারা মানুষ পেয়েছে পথের দিশা, সন্ত্রাস বর্জন করে বেছে নিয়েছে ইবাদতের পথ, মদের বোতল ছেড়েছে বহু মদ্যপ।

নারীকে পর্দায় থাকার পাশাপাশি পুরুষরা যেন নারীর যথাযথ অধিকার রক্ষা করে এবং তাদেরকে উপযুক্ত আসনে সমাসীন করে সেজন্যেও আহবান করতেন। অনৈতিক নিয়মনীতি বর্জন করে সুন্নতের আদলে ও সঠিক নীতিতে ব্যবসা বাণিজ্য করতে উদ্বুদ্ধ করতেন। তিনি বলতেন, মানুষকে মানবিক গুণাবলির সমন্বয়ে মানুষ হতে হবে। শুধুমাত্র দৈহিক অবয়বে মানুষ হলে চলবে না। তাঁর ভাষায় 'হুঁশ. হুঁশের নাম মানুষ, বেহুঁশের নাম পাগল।' সমাজে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সাধন, অথনৈতিক স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠা এবং সমাজ হতে জোর জুলুম বিদায় করতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। গরিব-দুঃখীদের দেদারচে দান সদ্কা করতেন।

তিনি ছিলেন শিক্ষানুরাগী ব্যক্তি। ১৯৮২ সন থেকে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত উজানী মাদ্রাসায় মোহতামীম (প্রিন্সিপাল) ও সেক্রেটারীর পদে নিয়োজিত ছিলেন। তাঁর আমলে মাদ্রাসা সর্ব দিকে উন্নতি লাভ করে। শিক্ষার সকল উপকরণ ত্বরিৎ গতিতে ব্যবস্থা করতেন। তাঁর মতে, শিক্ষাহীন জাতি হলো অন্ধের ন্যায়। মাদ্রাসার ছাত্র ও শিক্ষকদের সুবিধার জন্য মাদ্রাসাকে আধুনিকতার সাথে ঢেলে সাজান। তাঁর এ সময়ে মাদ্রাসায় বাংলা, ইংরেজির অনুপ্রবেশ ঘটে। বাংলা ও আরবী সাহিত্যে ব্যাপক চর্চা শুরু হয়। তিনি উন্নত রুচিশীল ও আধুনিক মানুষ হলেও আধুনিকতার নামে অশস্নীলতা ও বেলেল্লাপনা মোটেও পছন্দ করতেন না।

ছাত্র-শিক্ষক কাউকে তিনি অবজ্ঞা করতেন না। সকলেই ছিলো তাঁর স্নেহের ভিখারী। একবার মাদ্রাসার অর্থ সঙ্কট দেখা দিয়েছিল, ওস্তাদদের বেতন দেয়ার মত সমার্থ্য ছিলো না। তিনি নিজের ধান বিক্রি করে ওস্তাদদের বেতন পরিশোধ করেন। তিনি কখনো স্কুল, কলেজে পড়তে নিষেধ করতেন না। বরং তাঁর ভাষ্য ছিলো 'ইরেজি পড়, ইংরেজ হইও না।' ইসলামের সীমায় থেকে জাগতিক শিক্ষা অর্জনের প্রতি উৎসাহিত করতেন। স্কুল-কলেজের ছাত্ররা তাঁর কাছে দোয়ার জন্য আসলে তাদের জন্য প্রাণ ভরে দোয়া করতেন এবং কোরআন-হাদীস শিক্ষার প্রতি তাগিদ দিতেন। এছাড়াও হাজারো গুণাবলি দ্বারা তিনি সর্বস্তরের জনগণের হৃদয়ের গহীনে স্থান করে নিয়েছিলেন।

মানবীয় সকল গুণের আঁধারে এ শুকতারাটিও যে একদিন হারিয়ে যাবে হয়তো জগৎবাসী তেমনভাবে তা' চিন্তা করেনি। কিন্তু সব প্রাণীই যে একদিন মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে আল্লাহর এ অমোঘ বিধানে আমাদের হযরত গত ১১ এপ্রিল দিবাগত রাত ১০টা ৩০মিনিট তাঁর নিজস্ব বাসভবনে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুর সময় তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৮ বছর। ১২ এপ্রিল শুক্রবার দুপুর ৩টায় তাঁর জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হয় । এতে প্রায় ৬ লাখ লোকের সমাগম হয়। জানাজায় ইমামতি করেন তাঁর সুযোগ্য বড় সাহেবজাদা, বর্তমান গদিনশিন পীর ও মোহতামীম, মাওঃ ফজলে এলাহি সাহেব। তাঁকে মাকবারায়ে ইব্রাহীমিতে চিরতরে শায়িত করা হয়। দাফনের পর হতে তাঁর কবর হতে এক প্রকার সুগন্ধ ছড়াচ্ছিল, যা জনমনে তাঁর প্রতি ভক্তি ও আবেগ আরও বাড়িয়ে দিল। তিনি তিন ছেলে, সাত মেয়ে, অসংখ্য গুণগ্রাহী ও লাখ লাখ ভক্ত মুরীদ রেখে যান। কবির ভাষায় :

দুই দুয়ারী পান্থশালা,

হেথায় মোদের ক্ষণিক স্থিতি

বিদায় নিলে ফিরব না আর,

অন্তহীন এ বিদায় নীতি

লেখক : শামসুল আবরার, ছাত্র, জামেয়া ইসলামিয়া ইব্রাহীমিয়া উজানী মাদ্রাসা।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

খারেজীদের আক্বীদা ও ইতিহাস

 

লেখকঃ মীযানুর রহমান। এম.এ, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সঊদী আরব।‎

 

আভিধানিক অর্থে ‘খারেজী’ শব্দটি আরবী ‘খুরূজ’ (الخروج) শব্দ হ’তে নির্গত, যার অর্থ ‘বের হওয়া বা বেরিয়ে যাওয়া’। বহুবচনে ‘খাওয়ারিজ’ ব্যবহৃত হয়। পারিভাষিক অর্থে শাহরাস্তানী (মৃঃ ৫৪৮ হিঃ) এর মতে খারেজী হ’ল- ‘প্রত্যেক এমন ব্যক্তি যে এমন হক ইমামের (শাসক) বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে, যাকে লোকেরা ইমাম হিসাবে স্বীকার করে নিয়েছে। চাই এই বিদ্রোহ ছাহাবীগণের যুগে হেদায়াতপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদার বিরুদ্ধে হোক বা তাদের পরবর্তী তাবেঈনে এযামের যুগে কিংবা তৎপরবর্তী যে কোন শাসকের যুগে হোক’।

 

ইবনু হাযম আন্দালুসী (রহঃ)-এর সংজ্ঞা অনুযায়ী ‘খারেজী বলতে প্রত্যেক এমন সম্প্রদায়কে বুঝায় যারা চতুর্থ খলীফা আলী (রাঃ)-এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহকারীদের মতামত কিংবা তাদের রায় অবলম্বনকারী, তা যেকোন যুগেই হোক না কেন’। ড. নাছির আল-আক্বল বলেন, ‘খারেজী হচ্ছে, যারা গোনাহের কারণে অন্য মুসলমানকে কাফের বলে এবং মুসলিম শাসক ও সাধারণ লোকজনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে’। তিনি আরো বলেন, ‘খারেজী’ নামটি যেমন পূর্বের খারেজীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, তেমনি প্রত্যেক এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, যে তাদের নীতি গ্রহণ করে এবং তাদের পন্থা অবলম্বন করে। উপরোক্ত সংজ্ঞা অনুযায়ী তাদের প্রধান দু’টি আলামত বা লক্ষণ হ’ল, তারা কবীরা গোনাহগারকে কাফের বলে এবং মুসলিম শাসকের বিরদ্ধে বিদ্রোহ করে। তাদেরকে ‘খারেজী’ বলা হয় এজন্য যে, তারা দ্বীন অথবা জামা‘আত অথবা আলী (রাঃ)-এর আনুগত্য থেকে বের হয়ে গিয়েছিল।

 

রাসূল (ছাঃ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী ও খারেজীদের উত্থান :

 

ইসলামের প্রথম বাতিল দল হ’ল ‘খারেজী’। অনেকে মনে করেন খারেজীদের উত্থান রাসূল (ছাঃ)-এর যুগেই হয়েছিল। কিন্তু তা ছিল ব্যক্তি পর্যায়ের ঘটনা। এর প্রমাণ স্বরূপ তারা ‘যুল খুওয়াইছারা’র ঘটনা উল্লেখ করেন। আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন,

 

بَيْنَمَا نَحْنُ عِنْدَ رَسُوْلِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وَهْوَ يَقْسِمُ قَسْمًا أَتَاهُ ذُو الْخُوَيْصِرَةِ، وَهْوَ ‏رَجُلٌ ‏مِنْ بَنِي تَمِيْمٍ، فَقَالَ يَا ‏رَسُولَ اللَّهِ اعْدِلْ. فَقَالَ وَيْلَكَ، وَمَنْ يَعْدِلُ إِذَا لَمْ ‏أَعْدِلْ قَدْ ‏خِبْتَ وَخَسِرْتَ إِنْ لَمْ أَكُنْ أَعْدِلُ فَقَالَ ‏عُمَرُ يَا رَسُولَ اللهِ ائْذَنْ لِي ‏فِيهِ، ‏فَأَضْرِبَ عُنُقَهُ. فَقَالَ دَعْهُ فَإِنَّ لَهُ أَصْحَابًا، يَحْقِرُ أَحَدُكُمْ صَلاَتَهُ ‏مَعَ ‏صَلاَتِهِمْ ‏وَصِيَامَهُ مَعَ صِيَامِهِمْ، يَقْرَءُونَ الْقُرْآنَ لاَ يُجَاوِزُ تَرَاقِيَهُمْ،  يَمْرُقُونَ ‏مِنَ الدِّينِ كَمَا ‏يَمْرُقُ السَّهْمُ مِنَ ‏الرَّمِيَّةِ، يُنْظَرُ إِلَى نَصْلِهِ فَلاَ يُوجَدُ فِيهِ شَىْءٌ، ‏ثُمَّ يُنْظَرُ إِلَى ‏رِصَافِهِ فَمَا يُوجَدُ فِيهِ شَىْءٌ، ثُمَّ يُنْظَرُ إِلَى نَضِيِّهِ، ‏وَهُوَ قِدْحُهُ، ‏فَلاَ يُوجَدُ فِيهِ ‏شَىْءٌ، ثُمَّ يُنْظَرُ إِلَى قُذَذِهِ فَلاَ يُوجَدُ فِيهِ شَىْءٌ، قَدْ سَبَقَ الْفَرْثَ ‏وَالدَّمَ، آيَتُهُمْ ‏رَجُلٌ ‏أَسْوَدُ إِحْدَى عَضُدَيْهِ مِثْلُ ثَدْىِ الْمَرْأَةِ، أَوْ مِثْلُ الْبَضْعَةِ ‏تَدَرْدَرُ وَيَخْرُجُونَ عَلَى ‏حِينِ فُرْقَةٍ مِنَ النَّاسِ-

 

    ‘আমরা রাসূল (ছাঃ)-এর নিকটে উপস্থিত ছিলাম। তিনি কিছু গণীমতের মাল বণ্টন করছিলেন। তখন বনু তামীম গোত্রের ‘যুল খুওয়াইছারা’ নামক এক ব্যক্তি এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি ইনছাফ করুন’। তখন রাসূল (ছাঃ) বললেন, তোমার দুর্ভাগ্য! আমি যদি ইনছাফ না করি, তাহ’লে কে ইনছাফ করবে? আমি যদি ইনছাফ না করি, তাহ’লে তো তুমি ক্ষতিগ্রস্ত ও নিষ্ফল হব। ওমর (রাঃ) বললেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ) ! আপনি আমাকে অনুমতি দিন, আমি ওর গর্দান উড়িয়ে দেই। তিনি বললেন, ‘ওকে যেতে দাও। তার কিছু সঙ্গী-সাথী রয়েছে। তোমাদের কেউ তাদের ছালাতের তুলনায় নিজের ছালাত এবং তাদের ছিয়ামের তুলনায় নিজের ছিয়ামকে তুচ্ছ মনে করবে। এরা কুরআন পাঠ করে, কিন্তু কুরআন তাদের কণ্ঠনালীর নিম্নদেশে প্রবেশ করে না। এরা দ্বীন থেকে এত দ্রুত বেরিয়ে যাবে, যেমন তীর শিকার ভেদ করে বেরিয়ে যায়। তীরের অগ্রভাগের লোহা দেখা যাবে, কিন্তু (শিকারের) চিহ্ন দেখা যাবে না। কাঠের অংশটুকু দেখলে তাতেও কোন কিছুর দেখা মিলবে না। মধ্যবর্তী অংশটুকু দেখলে তাতেও কিছু পাওয়া যাবে না। তার পালক দেখলে তাতেও কোন চিহ্ন পাওয়া যাবে না। অথচ তীরটি শিকারের নাড়িভুঁড়ি ভেদ করে রক্ত-মাংস অতিক্রম করে বেরিয়ে গেছে। এদের নিদর্শন হ’ল এমন একজন কালো মানুষ, যার একটি বাহু নারীর স্তনের ন্যায় অথবা গোশতের টুকরার ন্যায় নড়াচড়া করবে। তারা মানুষের মধ্যে বিরোধ কালে আত্মপ্রকাশ করবে।[1]

 

 

অন্য বর্ণনায় এসেছে,

 

فَلَمَّا وَلَّى قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم إِنَّ مِنْ ضِئْضِئِ هَذَا قَوْمًا يَقْرَءُونَ الْقُرْآنَ لاَ ‏يُجَاوِزُ ‏حَنَاجِرَهُمْ، يَمْرُقُونَ مِنَ ‏الإِسْلاَمِ مُرُوقَ السَّهْمِ مِنَ الرَّمِيَّةِ، يَقْتُلُونَ أَهْلَ ‏الإِسْلاَمِ ‏وَيَدَعُونَ أَهْلَ الأَوْثَانِ، لَئِنْ أَدْرَكْتُهُمْ لأَقْتُلَنَّهُمْ قَتْلَ ‏عَادٍ-

 

    ‘লোকটি চলে যাওয়ার পর রাসূল (ছাঃ) বললেন, ঐ ব্যক্তির বংশ থেকে এমন কিছু লোক আসবে যারা কুরআন পড়বে, কিন্তু কুরআন তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা ইসলাম থেকে এমনভাবে বের হয়ে যাবে যেমন শিকারের দেহ ভেদ করে তীর বের হয়ে যায়। তারা মূর্তিপূজারীদেরকে ছেড়ে দিবে এবং মুসলমানদেরক হত্যা করবে। যদি আমি তাদেরকে পাই তাহ’লে ‘আদ’ জাতির মত তাদেরকে হত্যা করব’।[2]

 

অন্য বর্ণনায় এসেছে, জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, এক ব্যক্তি রাসূল (ছাঃ)-এর কাছে ‘জি‘রানা’ নামক স্থানে দেখা করে। এটি সেই স্থান যেখানে রাসূল (ছাঃ) হুনায়নের যুদ্ধে প্রাপ্ত গণীমতের মাল বণ্টন করছিলেন। ছাহাবী বিলাল (রাঃ)-এর কাপড়ের ওপর রূপার টুকরাগুলো রাখা ছিল। রাসূল (ছাঃ) মুষ্ঠিবদ্ধভাবে মানুষকে দান করছিলেন। তখন উপস্থিত ঐ লোকটি বলল, ‘হে মুহাম্মাদ! আপনি আল্লাহ্কে ভয় করুন ও ইনছাফ করুন! রাসূল (ছাঃ) বললেন, ‘ধ্বংস তোমার জন্য। আমি যদি ইনছাফ না করি তবে কে ইনছাফ করবে? আল্লাহর কসম! আমার পরে তোমরা এমন কোন লোক পাবে না, যে আমার চেয়ে অধিক ন্যায়পরায়ণ হবে’। সঙ্গে সঙ্গে ওমর (রাঃ) বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! আমাকে অনুমতি দিন, আমি এই মুনাফিকের গর্দান উড়িয়ে দেই’। তিনি বললেন, ‘না, আমি আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাই, যদি এমন কর, তবে লোকেরা বলবে, আমি আমার সাথীদের হত্যা করি...’।[3] এই ব্যক্তিই ছিল প্রথম ‘খারেজী’ যে নবী করীম (ছাঃ)-এর বণ্টনের ব্যাপারে প্রশ্ন তোলে এবং নিজ প্রবৃত্তির রায়কে প্রাধান্য দেয়।

 

অন্যদিকে ওছমান (রাঃ)-এর হত্যার ষড়যন্ত্রকারী এবং পরে অন্যায়ভাবে তাঁকে হত্যাকারী উচ্ছৃঙ্খল জনতাকেও ত্বাবারী ও ইবনু কাছীর (রহঃ) ‘খারেজী’ বলে অভিহিত করেছেন। তবে তখনও ‘খারেজী’ একটি পৃথক দল ও মতবাদ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেনি। এই ব্যক্তির বংশধর ও অনুসারীরাই ‘খারেজী’। এরা কেমন হবে? কি করবে? রাসূল (ছাঃ) এ সম্পর্কে বিস্তারিত ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। তিনি বলেন,

 

سَيَخْرُجُ قَوْمٌ فِى آخِرِ الزَّمَانِ، حُدَّاثُ الأَسْنَانِ، سُفَهَاءُ الأَحْلاَمِ، يَقُولُونَ مِنْ خَيْرِ قَوْلِ الْبَرِيَّةِ، لاَ يُجَاوِزُ إِيمَانُهُمْ حَنَاجِرَهُمْ-

 

‘শেষ যামানায় এমন এক সম্প্রদায়ের আবির্ভাব ঘটবে যারা হবে অল্পবয়স্ক যুবক ও নির্বোধ। তারা সৃষ্টির শ্রেষ্ঠতম কথা থেকে আবৃত্তি করবে। অথচ তাদের ঈমান তাদের গলদেশ অতিক্রম করবে না...’।[4]

 

আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) অন্যত্র বলেন,

 

يَخْرُجُ نَاسٌ مِنْ قِبَلِ الْمَشْرِقِ وَيَقْرَءُونَ الْقُرْآنَ لاَ يُجَاوِزُ تَرَاقِيَهُمْ، يَمْرُقُونَ مِنَ الدِّينِ كَمَا يَمْرُقُ السَّهْمُ مِنَ الرَّمِيَّةِ، ثُمَّ لاَ يَعُودُونَ فِيهِ حَتَّى يَعُودَ السَّهْمُ إِلَى فُوقِهِ. قِيلَ مَا سِيمَاهُمْ. قَالَ سِيمَاهُمُ التَّحْلِيقُ. أَوْ قَالَ التَّسْبِيد-‏

 

    ‘পূর্বাঞ্চল থেকে একদল লোকের আবির্ভাব ঘটবে। তারা কুরআন পাঠ করবে, কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে বেরিয়ে যাবে, যেভাবে ধনুক শিকার ভেদ করে বেরিয়ে যায়। তারা আর দ্বীনের মধ্যে ফিরে আসবে না, যেমনভাবে ধনুক ছিলায় ফিরে আসে না। বলা হ’ল, তাদের আলামত কি? তিনি বললেন, ‘তাদের আলামত হচ্ছে মাথা মুন্ডন করা’।[5]

 

 

মুসলিম উম্মাহকে সতর্ক করে রাসূল (ছাঃ) আরো বলেন, ‘অদূর ভবিষ্যতে আমার উম্মতের মধ্যে মতানৈক্য ও ফিরক্বা সৃষ্টি হবে। এমতাবস্থায় এমন এক সম্প্রদায় বের হবে, যারা সুন্দর ও ভাল কথা বলবে আর কাজ করবে মন্দ। তারা কুরআন পাঠ করবে, কিন্তু তা তাদের কণ্ঠনালী অতিক্রম করবে না। তারা দ্বীন থেকে এমনভাবে বের হয়ে যাবে, যেমনভাবে তীর শিকার ভেদ করে বেরিয়ে যায়। তারা সৃষ্টির সবচেয়ে নিকৃষ্ট। ঐ ব্যক্তির জন্য সুসংবাদ, যে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে এবং যুদ্ধে তাদের দ্বারা শাহাদত বরণ করবে। তারা মানুষকে আল্লাহর কিতাবের দিকে ডাকবে অথচ তারা আমার কোন আদর্শের উপরে প্রতিষ্ঠিত নয়। যে ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে, সে অপরাপর উম্মতের তুলনায় আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয় হবে’। ছাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসূল (ছাঃ)! তাদের আলামত কী? তিনি বললেন, ‘অধিক মাথা মুন্ডন করা’।[6]

খারেজী মতবাদ সৃষ্টির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট :

রাসূল (ছাঃ)-এর ইন্তিকালের পর তাঁর সকল ভবিষ্যদ্বাণী সত্য প্রমাণিত হয় এবং শেষ পর্যন্ত খারেজীরা আত্মপ্রকাশ করে। হিজরী ৩৭ সালে একটি ঘটনার মাধ্যমে তাদের সম্পর্কে সকল ধারণা স্পষ্ট হয়ে যায়। আলী (রাঃ)-এর শাসনামলে খলীফা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মুনাফিক ও খারেজীদের চক্রান্তে মুসলমানরা দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। এক দল আলী (রাঃ)-এর এবং অন্য দল মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর পক্ষাবলম্বন করে। ক্রমে অবস্থা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের দিকে এগিয়ে যায়। অবশেষে ৬৫৭ সালের জুলাই মাসে ‘ছিফ্ফীন’ নামক স্থানে আলী (রাঃ)-এর সাথে মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধকালে সমস্যার সমাধানের লক্ষে দু’জন বিচারক নির্ধারণ করা হয় এই মর্মে যে, তারা দু’জনে মুসলিম উম্মাহর কল্যাণের জন্য যে সিদ্ধান্ত দিবেন তা উভয় পক্ষ মেনে নিবে। আলী (রাঃ)-এর পক্ষ থেকে আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) এবং মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর পক্ষ থেকে আমর ইবনুল আছ (রাঃ)-কে নির্ধারণ করা হয়। ঘটনাটি ইসলামের ইতিহাসে ‘তাহকীম’ বা সালিস নির্ধারণ নামে পরিচিত। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর শাম ও ইরাকের সকল ছাহাবীর ঐক্যমতে বিচার ব্যবস্থা পৃথকীকরণ এবং আলী (রাঃ)-এর কুফায় ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এই সিদ্ধান্তকে অমান্য করে তখনই আলী (রাঃ)-এর দল থেকে কিছু লোক বের হয়ে যায় এবং ‘হারুরা’ নামক প্রান্তরে এসে অবস্থান করে। তাদের সংখ্যা মতান্তরে ৬, ৮, ১২ অথবা ১৬ হাযার হবে। বিচ্ছিন্নতার সংবাদ পেয়ে আলী (রাঃ) দূরদর্শী ছাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রাঃ)-কে তাদের নিকট প্রেরণ করেন। তিনি তাদের সংশয়গুলিকে বিচক্ষণতার সাথে খন্ডন করায় বেরিয়ে যাওয়াদের মধ্য থেকে প্রায় ৪ অথবা ৬ হাযার লোক আলী (রাঃ)-এর আনুগত্যে ফিরে আসেন। অতঃপর আলী (রাঃ) কুফার মসজিদে দাঁড়িয়ে ভাষণ দিলে মসজিদের এক কোনায় ‘লা হুকমা ইল্লা লিল্লাহ’ ‘আল্লাহর হুকুম ছাড়া কারো হুকুম মানি না’ স্লোগানে তারা মসজিদ প্রকম্পিত করে তুলে। তারা আলী (রাঃ)-কে উদ্দেশ্য করে বলে যে, আপনি বিচার ব্যবস্থা মানুষের হাতে তুলে দিয়েছেন! অথচ বিচারের মালিক হচ্ছেন আল্লাহ্। আপনি সূরা আন‘আমের ৫৭নং আয়াত (ان الحكم الا لله) ‘আল্লাহ ব্যতীত কারো ফায়ছালা গ্রহণযোগ্য নয়’-এর হুকুম ভঙ্গ করেছেন। আল্লাহর বিধানের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শনের দরুন আপনি মুশরিক হয়ে গেছেন ইত্যাদি।

 

তাদের মতে আলী, মু‘আবিয়া, আমর ইবনুল আছ সহ তাহকীমকে সমর্থনকারী সকল ছাহাবী কুফরী করেছেন এবং কাফের হয়ে গেছেন। অথচ সত্য হ’ল, মানুষের ফায়ছালার জন্য মানুষকেই বিচারক হ’তে হবে। আর ফায়ছালা হবে আল্লাহর আইন অনুসারে।

 

খারেজীরা নিজেদের এই নির্বুদ্ধিতাকে ধর্মীয় গোঁড়ামিতে রূপ দান করে এবং মুসলমানদের মাঝে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সূচনা করে। আলী (রাঃ) তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তোমাদের ব্যাপারে আমরা তিনটি সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ১. তোমাদেরকে মসজিদে আসতে আমরা নিষেধ করব না ২. রাষ্ট্রীয় সম্পদ হ’তে আমরা তোমাদের বঞ্চিত করব না ৩. তোমরা আগে ভাগে কিছু না করলে আমরা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব না।

 

কিছুদিন পর তারা সাধারণ মুসলমানদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করতে শুরু করে। তখন আব্দুল্লাহ বিন খাববাব (রাঃ) রাসূল (ছাঃ)-এর ফিৎনা সংক্রান্ত হাদীছ শুনালে তারা তাঁকে হত্যা করে। তাঁর গর্ভবতী স্ত্রীর পেট ফেড়ে বাচ্চা বের করে ফেলে দেয় এবং দু’টুকরো করে তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করে। আলী (রাঃ) জিজ্ঞেস করেন, ‘আব্দুল্লাহ্কে কে হত্যা করেছে? জবাবে তারা ঔদ্ধত্য প্রদর্শন করে বলে, আমরা সবাই মিলে হত্যা করেছি। এরপর আলী (রাঃ) তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্ত্ততি নেন। যুদ্ধের আগে তিনি নিজে ইবনু আববাস ও আবু আইয়ূব (রাঃ) সহ তাদের সাথে কয়েক দফা আলোচনা করেন এবং তাদের সংশয়গুলিকে দূর করতঃ সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেন।

 

আলী (রাঃ)-এর পক্ষ থেকে খারেজীদের সংশয় সমূহের যথার্থ জবাব :

খারেজীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার পূর্বে আলী (রাঃ) তাদের বেরিয়ে যওয়ার কারণগুলি জানতে চাইলে তারা কিছু সংশয় উপস্থাপন করে এবং তিনি প্রত্যেকটির যথার্থ জবাব দেন। তাদের সংশয়গুলির সংক্ষিপ্ত জবাব নিমণরূপ-

 

প্রথম সংশয় : উষ্ট্রের যুদ্ধে তাদের জন্য নারী ও শিশুদেরকে যুদ্ধবন্দী ও ক্রীতদাস হিসাবে গ্রহণ করার বৈধতা কেন দেওয়া হয়নি, যেমন দেওয়া হয়েছিল অর্থ-সম্পদের ক্ষেত্রে? আলী (রাঃ) জবাব দেন কয়েকটি দিক থেকে, (১) ত্বালহা ও যুবায়র (রাঃ) বায়তুল মাল থেকে যে সামান্য অর্থ নিয়েছিলেন তার বিনিময়ে তাদের জন্য মাল নেয়ার বৈধতা দেওয়া হয়েছিল। তাছাড়াও তা ছিল খুবই সামান্য সম্পদ। (২) নারী ও শিশুরা তো যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেনি। তাছাড়াও তারা ইসলামী ভূমিতে বসবাসকারী মুসলিম। তারা মুরতাদ হয়েও যায়নি যে, তাদেরকে ক্রীতদাস হিসাবে গ্রহণ করা জায়েয হবে। (৩) তিনি তাদেরকে বলেন, ‘আমি যদি নারী ও শিশুদেরকে ক্রীতদাস হিসাবে গ্রহণ করা বৈধ করতাম তাহ’লে তোমাদের মধ্যে কে আছে যে (উম্মুল মুমিনীন) আয়েশা (রাঃ)-কে নিজের অংশে ক্রীতদাস হিসাবে গ্রহণ করার যোগ্যতা রাখ?! তখন নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে তাদের মধ্যে অনেকেই সঠিক পথে ফিরে এসে আলী (রাঃ)-এর আনুগত্য মেনে নেয়।

 

দ্বিতীয় সংশয় : আলী (রাঃ) কেন মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর সাথে ছিফ্ফীনের সন্ধি চুক্তি লেখার সময় নিজের নামের প্রথমে ‘আমীরুল মুমিনীন’ কথাটি মুছে ফেলেন এবং তাঁর কথা মেনে নিলেন? তিনি জবাব দেন এই বলে যে, ‘আমি তো তাই করেছি যা স্বয়ং রাসূল (ছাঃ) হুদায়বিয়ার সন্ধিতে করেছিলেন। তিনি নিজের নামের প্রথম থেকে ‘রাসূলুল্লাহ’ শব্দটি কাফেরদের দাবী অনুযায়ী মুছে ফেলেন’।

 

তৃতীয় সংশয় : তিনি হকের পথে থাকার পরেও কেন তাহকীম বা শালিস নিয়োগ করলেন? এর জবাবে তিনি বলেন, ‘হক্বের পথে থাকার পরেও রাসূল (ছাঃ) বানু কুরায়যা-এর ক্ষেত্রে সা‘দ বিন মু‘আয (রাঃ)-কে শালিস নিয়োগ করেছিলেন’।

 

চতুর্থ সংশয় : আলী (রাঃ) বলেছিলেন, ‘আমি যদি খেলাফতের হকদার হয়ে থাকি, তাহ’লে তারা আমাকে খলীফা নির্বাচন করবে’। খারেজীদের দাবী তিনি নিজের খলীফা হওয়ার যোগ্যতার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করেছেন। এর জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা ছিল মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর প্রতি ইনছাফ করা। যেমন রাসূল (ছাঃ) নাজরানের নাছারাদেরকে মুবাহালার জন্য আহবান করেছিলেন তাদের প্রতি ইনছাফ প্রদর্শনের জন্য। এরপর তাদের অনেকেই নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে ফিরে আসে এবং তাঁর আনুগত্য মেনে নেয়। আর বাকীদের বিরুদ্ধে তিনি যুদ্ধ করেন, যা ‘নাহরাওয়ান’ যুদ্ধ নামে পরিচিত। এতে তারা নয় জন ব্যতীত সকলেই নিহত হয়। পক্ষান্তরে আলী (রাঃ)-এর পক্ষের নয় জন শাহাদত বরণ করেন। এই যুদ্ধেই খারেজী নেতা আব্দুল্লাহ বিন ওহাব রাসবী নিহত হয়। যুদ্ধ সমাপ্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে খারেজীরা পরাজিত হয় এবং তাদের ফিৎনাও সাময়িকভাবে বন্ধ হয়ে যায়। বলা হয়, সেদিন বেঁচে যাওয়া নয়জন খারেজীই বিভিন্ন দেশে তাদের বীজ বপন করে। পরাজিত খারেজীদের বংশধর ও অনুসারীরা এর পরেও বিভিন্ন সময় আত্মপ্রকাশ করে এবং ফিৎনা-ফাসাদ বাধানোর চেষ্টা করে। যদিও রাসূল (ছাঃ)-এর সময়ে ও পরবর্তীতে আবুবকর, ওমর ও ওছমান (রাঃ)-এর যুগে কিছু খারেজী আক্বীদার লোক ছিল, কিন্তু তাদের ফিৎনা সবচাইতে মারাত্মক আকার ধারণ করে আলী (রাঃ)-এর খিলাফতকালে। সেই থেকে যুগে যুগে বিভিন্ন নামে-বেনামে খারেজী দল বা ব্যক্তির আবির্ভাব হয়েছে।

 

খারেজীদের কিছু বৈশিষ্ট্য ও আলামত :

১. তারা হবে নবীন, তরুণ ও নির্বোধ, অথচ নিজেদেরকে অনেক জ্ঞানী ভাববে।[7]

২. তারা সর্বোত্তম কথা বলবে, কিন্ত সবচেয়ে নিকৃষ্ট কাজ করবে।[8]

৩. বাহ্যিকভাবে সুন্দর কথা বলবে।[9]

৪. মুখে ঈমানের কথা বললেও তাদের অন্তরে ঈমানের লেশমাত্র থাকবে না।[10]

৫. তাদের ঈমান ও ছালাত তাদের গ্রীবাদেশ অতিক্রম করবে না।[11]

৬. পথভ্রষ্ট হওয়ার পর এরা আর ঈমানের দিকে ফিরে আসবে না। যেমন তীর আর ধনুকের ছিলাতে ফিরে আসে না।[12]

৭. তারা হবে ইবাদতে অন্যদের চেয়ে অগ্রগামী কিন্তু নিজেদের ইবাদতের জন্য হবে অহংকারী। লোকেরা তাদের ইবাদত দেখে অবাক হবে।[13]

৮. তাদের নিদর্শন হ’ল, তাদের মাথা থাকবে ন্যাড়া।[14] (ব্যাখ্যাঃ টুপি বিহীন মাথাকেও অনেকে ন্যাড়া মাথা বলে। অথ্যাৎ এরা ধার্মিক দাবী করা স্বত্তেও নিজেদের মাথাকে অন্য মুসলিমদের মত ঢেকে রাখবে না। আল্লাহু আলম )

৯. তারা মুসলমানদের হত্যা করবে আর কাফের, মুশরিক ও মূর্তিপূজারীদের ছেড়ে দিবে।[15]

১০. তারা দ্বীনদারিতার ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি করবে, এমনকি দ্বীন থেকে বেরিয়ে যাবে।[16]

১১. তারা মুসলিম শাসকদের নিন্দা করে, অপবাদ দেয় এবং তাদেরকে পথভ্রষ্ট ও কাফির বলে দাবী করে। যেমনটি খুওয়াইছারা রাসূল (ছাঃ)-এর সাথে করেছিল।

১২. তারা মানুষকে কিতাবুল্লাহর দিকে আহবান করবে। কিন্তু সে বিষয়ে তাদের কোন জ্ঞানই থাকবে না। অর্থাৎ কিতাবুল্লাহ দিয়ে দলীল গ্রহণ করবে। কিন্তু না বুঝার কারণে দলীল গ্রহণের ক্ষেত্রে ভুল করবে।[17]

১৩. তারা ইবাদতের ক্ষেত্রে কঠোরতা আরোপ করবে।[18]

১৪. তারা সর্বোত্তম দলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে। যেমন আলী ও মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর বিরুদ্ধে করেছিল।[19]

১৫. তারা তাদের নিহতদেরকে জান্নাতী মনে করে। যেমন তারা নাহ্রাওয়ানের যুদ্ধের ময়দানে পরস্পরকে ‘জান্নাতমুখী’ ‘জান্নাতমুখী’ বলে ডাকছিল’।[20]

১৬. ওরা এমন জাতি যাদের অন্তরে রয়েছে বক্রতা।[21]

১৭. মতভেদ ও মতানৈক্যের সময় এদের আবির্ভাব হবে।[22]

১৮. তাদের উৎপত্তি পূর্ব দিক (ইরাক ও তৎসংলগ্ন) থেকে হবে।[23]

১৯. যেসব আয়াত কাফেরের জন্য প্রযোজ্য তারা সেগুলিকে মুমিনদের উপর প্রয়োগ করবে।[24]

২০. তাদের আগমন ঘটবে শেষ যামানায়।[25]

২১. তারাও কুরআন ও সুন্নাহ দিয়েই কথা বলবে কিন্তু অপব্যাখ্যা করবে।[26] ফলে তারা আলেমদের সাথে সবচেয়ে বেশী শত্রুতা পোষণকারী হবে। প্রতিপক্ষের বিরোধিতা করতে গিয়ে জাল হাদীছ পর্যন্ত রচনা করে।[27]

২২. সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজের নিষেধের নামে এ সম্পর্কিত শরী‘আতের দলীলগুলিকে শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও যুদ্ধ করার ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে থাকে।

২৩. তারা কেবল ভীতি প্রদর্শন সংক্রান্ত আয়াতগুলি দিয়ে দলীল গ্রহণ করে। কিন্তু ভাল কাজের পুরস্কার বা উৎসাহমূলক আয়াতগুলিকে পরিত্যাগ করে।

২৪. তারা আলেমগণকে মূল্যায়ন করবে না। নিজেদেরকেই বড় জ্ঞানী মনে করবে। যেমন খারেজীরা নিজেদেরকে আলী, ইবনু আববাস সহ সকল ছাহাবী (রাঃ)-এর চেয়ে জ্ঞানী দাবী করেছিল।

২৫. ওরা হুকুম লাগানোর ক্ষেত্রে তড়িঘড়ি করে।[28]

২৬. তারাই সর্বপ্রথম মুসলিমদের জামা‘আত হ’তে বেরিয়ে গেছে এবং তাদেরকে পাপের কারণে কাফের সাব্যস্ত করেছে।[29] ২৭. তারা ক্বিয়াস (ধারণা বা অনুমান) ভিত্তিক কাজে বেশী বিশ্বাসী।[30] ২৮. তারা মনে করে যালেম শাসকের শাসন জায়েয নয়।[31]

২৯. ওরা মুখে আহলে ইল্মদের কথার বকওয়ায করে কিন্তু তার মর্মাথ বুঝে না।[32]

৩০. ওরা লোকদেরকে মুসলিম সমাজ হ’তে বিচ্ছিন্ন হওয়ার আহবান জানায়। ফলে তারা নিজেরা মাদরাসা, শিক্ষা ইন্সটিটিউট, বিশববিদ্যালয়, সরকারী চাকুরী এবং মুসলমানদের সাথে বসবাস করা পরিহার করে।[33]

৩১. তারা আত্মহত্যার মাধ্যমে এবং অন্যকে হত্যার মাধ্যমে সীমালংঘন করতঃ রক্তপাত ঘটাবে।

৩২. যতবারই তাদের আবির্ভাব হবে, ততবারই তারা ধ্বংস হবে। এভাবে রাসূল (ছাঃ) বিশ বার বলেন।[34]

৩৪. ভূপৃষ্ঠে সর্বদাই খারেজী আক্বীদার লোক থাকবে এবং সর্বশেষ এদের মাঝেই দাজ্জালের আবির্ভাব হবে।[35]

৩৫. তারা হবে সর্বনিকৃষ্ট সৃষ্টি।[36]

খারেজীদের বিষাক্ত ছোবলে কলংকিত ইসলামের ইতিহাস :

খলীফা আবুবকর ও ওমর (রাঃ)-এর সময় খারেজীরা মাথাচাড়া দিতে পারেনি। কিন্তু আবু লু’লু নামক জনৈক অগ্নিপূজক বাহ্যিকভাবে ইসলাম গ্রহণ করে গোপনে মদীনায় প্রবেশ করে। ২৩ হিজরীর ২৬শে যিলহজ্জ তারিখে ওমর (রাঃ) ফজরের ছালাতে ইমামতি করছিলেন, এমন সময় সে ছদ্মবেশে প্রথম কাতারে অবস্থান নেয়। অতঃপর সুযোগ বুঝে তীক্ষ্ণ তরবারী দ্বারা তিন অথবা ছয়বার তাঁর কোমরে আঘাত করে। তিনদিন পর তিনি শাহাদত বরণ করেন। ফলে চরমপন্থী তৎপরতার পুনরুত্থান ঘটে। উল্লেখ্য, ঐ দিন সে আরো ১৩ জন ছাহাবীকে আঘাত করে। তন্মধ্যে ৯ জন শাহাদত বরণ করেন। ঐ ঘাতক পালিয়ে যেতে না পেরে নিজের অস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করে।

 

ইহুদী আব্দুল্লাহ বিন সাবার ষড়যন্ত্রে খারেজী চরমপন্থীদের হাতেই ৩৫ হিজরীর ১৮ই যিলহজ্জ তারিখ জুম‘আর দিন রাসূল (ছাঃ)-এর জামাতা ৮২ বছর বয়সী ওছমান (রাঃ) নির্মমভাবে শাহাদত বরণ করেন। নাহরাওয়ানের যুদ্ধে বেঁচে যাওয়া খারেজীরা প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন যাবৎ প্রস্ত্ততি গ্রহণ করে। অতঃপর তারা আলী (রাঃ)-কে হত্যা করার জন্য গোপনে আব্দুর রহমান বিন মুলজামকে ঠিক করে। অনুরূপভাবে মু‘আবিয়া (রাঃ)-এর কে হত্যা করার জন্য বারাক বিন আব্দুল্লাহকে এবং আমর ইবনুল আছ (রাঃ)-কে হত্যা করার জন্য আমর বিন বাকরকে নির্বাচন করে। এভাবে তারা একই দিনে হত্যা করার জন্য অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়ে বেরিয়ে পড়ে। আব্দুর রহমান বিন মুলজাম তার দু’জন সহযোগী ওরদান ও শাবীবকে সঙ্গে নিয়ে ৪০ হিজরীর ১৭ই রামাযান জুম‘আর রাতে কূফায় গমন করে। ফজরের সময় আলী (রাঃ)-এর বাড়ীর দরজার আড়ালে অস্ত্র নিয়ে ওঁৎ পেতে থাকে। তিনি বাড়ী থেকে বের হয়ে যখন ‘ছালাত’ ‘ছালাত’ বলে মানুষকে ডাকতে ডাকতে মসজিদের দিকে যাচ্ছিলেন, তখনই তারা আলী (রাঃ)-এর মাথায় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। এতে তাঁর দাড়ি রক্তে রঞ্জিত হয়ে যায়। তৎক্ষণাৎ তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। এ সময় আলী (রাঃ)-কে লক্ষ্য করে ঐ রক্তপিপাসু বলেছিল,لا حكم إلا لله ليس لك يا علي ولا لأصحابك، ‘হে আলী! আল্লাহ ছাড়া কারো বিধান নেই। তোমার জন্যও নেই এবং তোমার সাথীদের জন্যও নেই হে আলী’। তাকে হত্যা করার কারণ জিজ্ঞেস করলে সে বলে উঠে,شحذته أربعين صباحا وسألت الله أن أقتل به شر خلقه ‘আমি চল্লিশ দিন যাবৎ তরবারিকে ধার দিয়েছি এবং আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করেছি, আমি যেন এই অস্ত্র দ্বারা তাঁর সৃষ্টির মধ্যে সর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তিকে হত্যা করতে পারি’ (নাঊযুবিল্লাহ্)।

 

আলী (রাঃ) বলেছিলেন, আমি মারা গেলে তোমরা তাকে হত্যা করবে। আর বেঁচে থাকলে আমিই যা করার করব। কিন্তু তিনদিন পর ৪০ হিজরীর ২১শে রামাযান ৬৩ বা ৬৪ বছর বয়সে তিনি শাহাদত বরণ করেন। ঐ দিন একই সময় মু‘আবিয়া (রাঃ)-কে আঘাত করলে তিনি প্রাণে বেঁচে যান। আমর ইবনুল আছ (রাঃ) ভীষণ অসুস্থ থাকায় তিনি সেদিন মসজিদে আসতে পারেননি। ফলে তিনি বেঁচে যান। তবে তাঁর স্থলাভিষিক্ত ইমাম খারেজাহ ইবনু আবী হাবীবাকে ঐ ঘাতক হত্যা করে। এভাবেই খারেজীরা খুলাফায়ে রাশেদার মত জান্নাতী ও বিশিষ্ট ছাহাবীগণের প্রাণনাশ ঘটিয়ে ইসলামের সোনালী ইতিহাসকে কলংকিত করে।

খারেজীদের অপব্যাখ্যা ও তার জবাব :

খারেজীদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য কুরআন ও হাদীছ বুঝার ক্ষেত্রে সালাফে ছালেহীন-এর বুঝকে উপেক্ষা করে নিজেদের মনগড়া ব্যাখ্যা করা। নিম্নে তাদের অপব্যাখ্যার কিছু নমুনা জবাব সহ আলোচিত হ’ল।-

 

এক : আল্লাহ বলেন, هُوَ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ فَمِنْكُمْ كَافِرٌ وَمِنْكُمْ مُؤْمِنٌ ‘তিনিই তোমাদের সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তোমাদের কেউ কাফির এবং কেউ মুমিন’ (তাগাবুন ৬৪/২)। অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা মানুষকে কাফির ও মুমিন দু’ভাগে সীমাবদ্ধ করেছেন। আর ফাসিকরা মুমিন নয়। সুতরাং তারা কাফির।

 

জবাব : এ আয়াত দ্বারা মানুষকে কেবল দু’ভাগের মাঝে সীমাবদ্ধ করা হয়নি। কেননা আরও এক প্রকার মানুষ রয়েছে, তারা হ’ল পাপী। আর দু’প্রকার উল্লেখ করার কারণে বাকিগুলিকে অস্বীকার করা বুঝায় না। তাছাড়া এখানে বলা হয়েছে, কিছু মানুষ কাফির আর কিছু মুমিন। এর বাস্তবতা নিয়েও কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু এটা বুঝায় না যে, পাপী মুমিনেরা কাফির যেমন দাবী করেছে খারেজীরা।

 

দুই : রাসূল (ছাঃ) বলেন,

 

لاَ يَزْنِى الزَّانِىْ حِيْنَ يَزْنِى وَهْوَ مُؤْمِنٌ، وَلاَ يَشْرَبُ الْخَمْرَ حِيْنَ يَشْرَبُ وَهْوَ مُؤْمِنٌ، وَلاَ يَسْرِقُ حِيْنَ يَسْرِقُ وَهْوَ مُؤْمِنٌ، وَلاَ يَنْتَهِبُ نُهْبَةً يَرْفَعُ النَّاسُ إِلَيْهِ فِيْهَا أَبْصَارَهُمْ وَهْوَ مُؤْمِنٌ ‘কোন ব্যভিচারী যখন ব্যভিচারে লিপ্ত হয়, তখন সে মুমিন থাকে না। সে মুমিন থাকা অবস্থায় মদ পান করতে পারে না। সে মুমিন থাকা অবস্থায় চুরি করতে পারে না। ছিনতাইকারী যখন প্রকাশ্যে ছিনতাই করে, আর লোক অসহায় ও নিরূপায় হয়ে তার দিকে শুধু তাকিয়ে থাকে, তখন সে মুমিন থাকে না’।[37]

 

তারা এ হাদীছটি দ্বারা কবীরা গোনাহকারীকে ঈমান থেকে পুরোপুরি খারিজ দাবী করে।

 

জবাব : বিদ্বানগণ এ হাদীছের ব্যাখ্যায় বলেন, এখানে যে ব্যক্তি উল্লিখিত পাপগুলিকে হালাল মনে করে করবে তার ক্ষেত্রে এটি বলা হয়েছে। অথবা হাদীছে ঈমান দ্বারা পরিপূর্ণ ঈমানদার নয় বুঝানো হয়েছে। এ হাদীছে উল্লিখিত পাপের কারণে যদি দ্বীন থেকে খারিজ উদ্দেশ্য হ’ত, তাহ’লে তার জন্য শুধু ‘হদ’ জারি করাই যথেষ্ট মনে করা হ’ত না। এজন্যই যুহরী (রহঃ) এ ধরনের হাদীছ সম্পর্কে বলেন, ‘তোমরা এগুলিকে প্রয়োগ কর যেভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীগণ প্রয়োগ করতেন। অন্য হাদীছে এসেছে, আবু যার (রাঃ) হ’তে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘যদি কোন বান্দা বলে, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং এর উপরেই মৃত্যুবরণ করে, তাহ’লে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আমি বললাম, যদি সে যেনা করে এবং চুরি করে তবুও? তিনি বললেন, যদিও সে যেনা করে এবং চুরি করে। এভাবে আমি তিন বার বললাম, প্রত্যেকবার তিনি একই উত্তর দিলেন। চতুর্থবার বললেন, ‘যদিও আবু যারের নাক ভূলুণ্ঠিত হয়...’।[38]

 

তিন : মহান আল্লাহ বলেন,وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا أَنْزَلَ اللهُ فَأُولَئِكَ هُمُ الْكَافِرُوْنَ ‘যে সব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তদনুযায়ী ফায়ছালা করে না তারা কাফির’ (মায়েদা ৫/৪৪)। তাদের দাবী এ আয়াত সকল প্রকার পাপীকে অন্তর্ভুক্ত করে। কেননা তারা আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন তদনুযায়ী ফায়ছালা করে না। সুতরাং তাদের কাফের হওয়া ওয়াজিব হয়ে যায়।

 

জবাবঃ অত্র আয়াতটি তাদের জন্য প্রযোজ্য, যারা আল্লাহর বিধানকে অস্বীকার করে এবং গায়রুল্লাহর বিধান দিয়ে ফায়ছালা করাকে বৈধ মনে করে। কিন্তু যে আল্লাহর প্রতি ঈমান রাখে এবং স্বীকার করে যে, তাঁর বিধান সত্য, তাহ’লে সে কাফির নয়, সে পাপী হিসাবে গণ্য হবে কুফরীর সুস্পষ্ট প্রমাণ না পাওয়া পর্যন্ত। সারা পৃথিবীতে যখন মুসলিম উম্মাহ বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত। নেতৃত্বসহ নানাবিধ বিষয় নিয়ে শতধাবিভক্ত। এমনি করুণ মুহূর্তে এ বিদ‘আতী খারেজী দলের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। মুসলিম শাসকদের দোষ-ত্রুটির কারণে তাদেরকে কাফের, মুরতাদ ফৎওয়া দেওয়া এবং তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা খারেজীদের ধর্ম। এই বিষয়টি এত ধ্বংসাত্মক যে, আপনি প্রত্যেকটা আক্বীদার কিতাব খুলে দেখুন মুসলিম শাসকদের অন্যায় বা যুলুম-অত্যাচার সত্ত্বেও সৎকাজে তাদের প্রতি অনুগত থাকা এবং কোন মতেই বিদ্রোহ না করার কথা বলা হয়েছে।

 

চারঃ মহান আল্লাহ বলেন, ان الحكم إلا لله ‘আল্লাহ ছাড়া কারো হুকুম নেই’ (উইসুফ ৪০/৬৭)। খারেজীরা অজ্ঞতাহেতু এ আয়াতের অপব্যাখ্যা করে বলে, মানুষকে শালিস নিয়োগ করা কুরআন পরিপন্থী এবং কুফরী। এর জবাবে আলী (রাঃ) বলেছিলেন, كلمة حق أريد بها باطل ‘কথা সত্য, কিন্তু উদ্দেশ্য খারাপ’। কেননা মানুষের ফায়ছালা মানুষই করবে, আর তা হবে আল্লাহর বিধান অনুযায়ী (নিসা ৪/৩৫; মায়েদা ৫/৯৫)।

 

খারেজী আক্বীদা বনাম আহলেহাদীছদের আক্বীদা :

কবীরা গোনাহগার সম্পর্কে : খারেজীদের মতে, মানুষ হয় মুমিন, নয় কাফির। একই বান্দার মাঝে ছওয়াব ও শাস্তি জমা হ’তে পারে না। তাই প্রত্যেক কবীরা গোনাহ কুফরী। আর কবীরা গোনাহগার কাফির। যে কোন মুসলিম কবীরা গোনাহ করলে তার সমস্ত নেক আমল বরবাদ হয়ে যায় এবং সে মুরতাদ হয়ে যায় ও কুফরীতে প্রবেশ করে। এ অবস্থায় অথবা একবার মিথ্যা বলে ছগীরা গোনাহ করে তওবা না করে মারা গেলে সে মুশরিক ও চিরস্থায়ী জাহান্নামী। যারা কবীরা গোনাহ করে তওবা করে না, তাদেরকে হত্যা করা তারা বৈধ মনে করে।

 

আহলেহাদীছদের আক্বীদা : কবীরা গোনাহগার কাফের নয়। সে চিরস্থায়ী জাহান্নামীও নয়। তাকে হত্যা করাও জায়েয নয়। যদি সে তওবা না করে মারা যায়, তাহ’লে আল্লাহর ইচ্ছাধীন। তিনি তাকে ক্ষমাও করতে পারেন, আবার শাস্তিও দিতে পারেন। সে চিরস্থায়ী জাহান্নামীও নয়। বরং অপরাধের শাস্তি ভোগ করার পর আল্লাহর দয়ায় আবার সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। সে কবীরা গোনাহের কারণে অসম্পূর্ণ মুমিন অথবা ফাসেক। কিন্তু ঈমানের কারণে সে মুমিন। এটিই খারেজীদের চরমপন্থা এবং মু‘তাযিলা ও মুরজিয়াদের চরম শিথিলতার বিপরীতে মধ্যমপন্থী আক্বীদা। মহান আল্লাহ্ কবীরা গোনাহকারীদেরকে মুমিন হিসাবে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন,وَإِنْ طَائِفَتَانِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ اقْتَتَلُوا فَأَصْلِحُوا بَيْنَهُمَا ‘যদি মুমিনদের দুই দল যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তাহ’লে তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিবে’ (হুজুরাত ৪৯/৯)। এ আয়াতের তাফসীরে হাফেয ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন,

 

فسماهم مؤمنين مع الاقتتال، وبهذا استدل البخاري وغيره على أنه لايخرج عن الإيمان بالمعصية وإن عظمت، لا كما يقوله الخوارج ومن تابعهم.

 

‘পরস্পরে যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া সত্ত্বেও আল্লাহ তাদেরকে মুমিন নামকরণ করেছেন। এ আয়াত দ্বারা ইমাম বুখারী ও অন্যান্য বিদ্বানগণ দলীল গ্রহণ করেছেন যে, পাপের কারণে সে ঈমান থেকে বের হয়ে যায় না, যদিও পাপ বড় হয়। বিষয়টি এমন নয় যেমন খারেজী ও তাদের দোসররা বলে’।

 

ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন,

 

فسمى الله هؤلاء مؤمنين مع مع ما وقع بينهم من القتال الذي يعد من أكبر الكبائر، ومن بين أنهم لم يحرجوا من الإيمان بالكلية.

 

‘তারা পরস্পরে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে যা সবচেয়ে বড় গোনাহের অন্তর্ভুক্ত, তবুও আল্লাহ তাদেরকে মুমিন নামকরণ করেছেন। এতদসত্ত্বেও তারা ঈমান থেকে পুরোপুরি বের হয়ে যায়নি। এজন্যই ইমাম মালেক (রহঃ) বলতেন,أهل الذنوب أي الكبائر مؤمنون مذنبون ‘কবীরা গোনাহকারীরা পাপী মুমিন’।

 

শাসক ও বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে : খারেজীদের মতে, কোন মুসলিম শাসক যদি তাদের মানহাজ না মানে অথবা ফাসেকী ও যুলুম করে, তাহ’লে তার জন্য ক্ষমতায় থাকা বৈধ নয়। এমন শাসকের আনুগত্য করাও জায়েয নয়। তার বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ করা ওয়াজিব। তার অধীনে সরকারী চাকুরী, সরকারী বাসভবনে বসবাস, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করা জায়েয নয়। তার অধীনস্থ রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা কর্মী ও আইন-শৃংখলা বাহিনীকে হত্যা করা জায়েয। তাদের মতে কোন মুসলিম বিচারক যদি আল্লাহর বিধান মতে বিচার না করেন, তাহ’লে তিনি অবশ্যই কাফের। তাকে হত্যা করা জায়েয, যদি তিনি তওবা না করেন।

 

আহলেহাদীছদের আক্বীদা : ইমাম ত্বাহাবী (রহঃ) বলেন, ‘আমীর ও শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করাকে আমরা জায়েয মনে করি না, যদিও তারা যুলুম করে। আমরা তাদের অভিশাপও করি না, আনুগত্য হ’তে হাত গুটিয়ে নেই না। তাদের আনুগত্য আল্লাহর আনুগত্য সাপেক্ষে ফরয, যতক্ষণ না তারা আল্লাহর অবাধ্যতার আদেশ দেয়। আমরা তাদের মঙ্গল ও কল্যাণের জন্য দো‘আ করব’।

 

কুরআন-সুন্নাহ সম্পর্কে : যে সকল সুন্নাত তাদের দাবী অনুযায়ী কুরআনের বাহ্যিক অর্থ বিরোধী মনে হয়, তারা তা অস্বীকার করে। ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বলেন, ‘তারা কুরআনের অপব্যাখ্যা করে’। তারা সুন্নাতকে প্রত্যাখ্যান করতঃ ব্যভিচারীকে রজম করার বিধান অস্বীকার করে।

 

আহলেহাদীছদের আক্বীদা : কুরআন-সুন্নাহ দু’টিই অহী। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ألا إني أوتيت القرآن ومثله معه...‏ ‘জেনে রাখো! আমি কুরআন প্রাপ্ত হয়েছি ও তার ন্যায় আরেকটি বস্ত্ত’...।[39] হাদীছ কুরআনের ব্যাখ্যা স্বরূপ। মহান আল্লাহ্ বলেন,‎ وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُوْنَ‏ ‘আমরা আপনার নিকটে ‘যিকর’ নাযিল করেছি, যাতে আপনি লোকদের উদ্দেশ্যে নাযিলকৃত বিষয়গুলি তাদের নিকট ব্যাখ্যা করে দেন এবং যাতে তারা চিন্তা-গবেষণা করে’ (নাহ্ল ১৬/৪৪)। সুতরাং এ দু’য়ের মাঝে কোন বৈপরীত্য নেই।

 

নবী-রাসূলগণ সম্পর্কে :

খারেজীদের কোন কোন দল নবী-রাসূলগণের দ্বারাও ছগীরা ও কবীরা গোনাহ সংঘটিত হওয়াকে জায়েয মনে করে। তাই তাদের মতে কোন নবীকেও কবীরা গোনাহের কারণে কাফের বলা যায়। যতক্ষণ না তিনি তওবা করে ফিরে আসেন (নাঊযুবিল্লাহ)। ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, ‘খারেজীরা রাসূল (ছাঃ)-এর ক্ষেত্রে যুলুম এবং তিনি তাঁর সুন্নাতের ক্ষেত্রে ভ্রষ্ট এমন অপবাদ আরোপ করা জায়েয করেছে। আর তাঁর আনুগত্য ও ইত্তেবা করা ওয়াজিব মনে করত না’। নবী-রাসূলগণ সম্পর্কে খারেজীদের এমন আক্বীদা কুফরীর শামিল।

ছাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে :

তাদের মতে ছাহাবায়ে কেরাম (রাঃ) কবীরা গোনাহ ও কুফরী করেছেন। তারা ওছমান (রাঃ)-কে কাফের ও মুরতাদ মনে করত এবং তাকে হত্যাকারীদের প্রশংসা করত। যেমন তারা আলী, মু‘আবিয়া, আমর ইবনুল আছ, আবু মূসা আশ‘আরী (রাঃ) সহ যে সকল ছাহাবী শালিস নিয়োগ করাকে সমর্থন করেছেন তাদেরকে কাফের ও মুরতাদ ঘোষণা করতঃ তাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র যুদ্ধ করেছিল।

 

আহলেহাদীছদের আক্বীদা : ছাহাবায়ে কেরাম সম্পর্কে খারেজীদের যে আক্বীদা তা স্পষ্টত ফাসেকী। কেননা, ‘আল্লাহ তাদের উপর সন্তষ্ট তারাও তাঁর উপর সন্তুষ্ট’ (মায়েদা ৫/১১৯)। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘তোমরা আমার ছাহাবীগণকে গালি দিও না। সেই সত্ত্বার কসম যার হাতে আমার প্রাণ, তোমাদের কেউ যদি ওহোদ পাহাড় সমপরিমাণ স্বর্ণ দান করে তবুও তা তাদের এক অঞ্জলি বা অর্ধাঞ্জলি দানের সমতুল্য হবে না।

 

পরকালে শাফা‘আত সম্পর্কে : তারা কবীরা গোনাহকারীর জন্য শাফা‘আতকে অস্বীকার করে। তাদের দাবী শাফা‘আত কেবল মুত্তাক্বীদের জন্য। তাদের মতে যাকে একবার জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে সে চিরস্থায়ী জাহান্নামী থাকবে।

 

আহলেহাদীছদের আক্বীদা : খারেজীদের এমন আক্বীদা স্পষ্ট সুন্নাহ বিরোধী। কেননা রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘আমার শাফা‘আত আমার উম্মতের মধ্যে যারা কবীরা গোনাহগার তাদের জন্য’।[40]

 

খারেজীদের বিধান :

 

দুনিয়াবী বিধান : খারেজীদের হুকুম সম্পর্কে বিদ্বানগণের ভিন্ন ভিন্ন মত পাওয়া যায়। অনেকেই মনে করেন তারা কাফের। তাদের দলীল- যুল খুওয়াইছারার ঘটনা, তাদের দ্বীন থেকে বের হয়ে যাওয়া মর্মে বর্ণিত হাদীছ সমূহ এবং আলী, মু‘আবিয়া সহ প্রমুখ বিশিষ্ট ছাহাবীগণের সাথে তাদের ন্যক্কারজনক আচরণ। আবার অনেকেই বলেন, তারা ফাসিক ও বিদ‘আতী। কারণ কাউকে ইসলাম বহির্ভূত বলা সহজ বিষয় নয়। তবে স্পষ্ট কুফরী প্রমাণিত হ’লে তা ভিন্ন কথা। মোদ্দাকথা হ’ল, তাদের কথা, কর্ম ও আক্বীদার ভিত্তিতে তাদের ওপর হুকুম প্রযোজ্য হবে। শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, ‘তারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত হ’তে বহির্ভূত’। ইমাম শাতেবী (রহঃ) বলেন, ‘ফিরক্বা নাজিয়া ও আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের বিরোধিতা করায় তাদেরকে ভ্রষ্ট দল হিসাবে ধরা হয়’। সালাফে ছালেহীন যদিও তাদেরকে কাফের বলেন না। তবে তাদেরকে হাদীছে বর্ণিত ৭২টি ভ্রান্ত দলের একটি গণ্য করেন।

 

পরকালীন বিধান : রাসূল (ছাঃ) বলেন, ‘খারেজীরা জাহান্নামের কুকুর’।[41]

 

উপসংহার : খারেজীদের সম্পর্কে ইবনু কাছীর (রহঃ) বলেন,

 

إذ لو قووا هؤلاء لأفسدوا الأرض كلها عراقا وشاما، ولم يتركوا طفلا ولا ‏طفلة ولا رجلا ولا امرأة : لأن ‏الناس ‏عندهم قد فسدوا فسادا لا ‏يصلحهم ‏إلا القتل جملة.‏

 

‘যদি খারেজীরা শক্তিশালী হয় তথা ক্ষমতা পায়, তখন তারা ইরাক ও শামের সর্বত্র ফাসাদ সৃষ্টি (মুসলমানদেরকে তাকফীর ও হত্যা...ইত্যাদি) করে বেড়াবে। তারা কোন ছেলে শিশু, মেয়ে শিশু এবং নারী-পুরুষ কাউকে রেহাই দিবে না। কেননা তাদের আক্বীদা হ’ল, মানুষ এমনভাবে ফাসাদে লিপ্ত হয়েছে যে, তাদেরকে সামগ্রিকভাবে হত্যা করা ব্যতীত তারা সংশোধিত হবে না। খারেজীদের ভয়ানক রূপ সম্পর্কে ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেন,

 

لم يكن أحد شرا على المسلمين منهم، لا اليهود ولا النصارى، فإنهم كانوا مجتهدين في قتل كل مسلم لم يوافقهم، مستحلين لدماء المسلمين وأموالهم، وقتل أولادهم، مكفرين لهم، وكانوا متدينين بذلك لعظم جهلهم وبدعتهم المضلة.

 

‘মুসলমানদের জন্য তাদের চাইতে ক্ষতিকর আর কেউ ছিল না। ইহুদীও নয়, নাছারাও নয়। কেননা যেসকল মুসলিম তাদেরকে সমর্থন করেনি, তারা তাদেরকে হত্যা করতে সদা তৎপর  ছিল।  মুসলমানদের  রক্ত  ও  সম্পদ  এবং  তাদের সন্তানদেরকে হত্যা করা হালাল মনে করে তাদেরকে কাফের গণ্য করে। এরপরেও তাদের ব্যাপক অজ্ঞতা ও ভ্রষ্ট বিদ‘আত সত্ত্বেও তারা নিজেদেরকে দ্বীনদার মনে করত।

 

অতএব পথভ্রষ্ট খারেজী দল ও তাদের ভ্রান্ত আক্বীদা সমূহ থেকে বিরত থাকা প্রত্যেক মুমিনের জন্য আবশ্যক আল্লাহ আমাদের হেফাযত করুণ-আমীন!

 

 

[1]. বুখারী হা/৩৬১০; মুসলিম হা/১০৬৪; মিশকাত হা/৫৮৯৪।

 

[2]. বুখারী হা/৭৪৩২; মুসলিম হা/১০৬৪; মিশকাত হা/৫৮৯৪।

 

[3]. মুসলিম হা/১০৬৩; ছহীহুল জামে‘ হা/৫৮৭৮।

 

[4]. বুখারী হা/৬৯৩০; মিশকাত হা/৩৫৩৫।

 

[5]. বুখারী হা/৭৫৬২।

 

[6]. আবু দাউদ হা/৪৭৬৫; মিশকাত হা/৩৫৪৩, সনদ ছহীহ।

 

[7]. বুখারী হা/৩৬১১, ৫০৫৭, ৬৯৩৪; মুসলিম হা/২৪৬২, ২৪৬৯।

 

[8]. মুসলিম হা/২৪৬২; আবুদাঊদ হা/৪৭৬৭; আহমাদ হা/২০৪৪৬।

 

[9]. বুখারী হা/৫০৫৭।

 

[10]. বুখারী হা/৩৪১৫।

 

[11]. মুসলিম হা/২৪৬২।

 

[12]. বুখারী হা/২৪৬২।

 

[13]. আহমাদ হা/১২৯৭২; ইবনু আবী আছিম, আস-সুন্নাহ হা/৯৪৫; আলবানী একে ছহীহ বলেছেন, যিলালুল জান্নাহ হা/৯৪৫।

 

[14]. বুখারী হা/৩৬১০; মুসলিম হা/২৪৫১; ইবনু মাজাহ হা/১৫৭।

 

[15]. বুখারী হা/৩৬১০; মুসলিম হা/২৪৫১।

 

[16]. বুখারী হা/৩৬১০; মুসলিম হা/২৪৫১; আহমাদ হা/৭০৩৮; ইবনু আবী আছিম, আস-সুন্নাহ, হা/৯২৯-৯৩০।

 

[17]. আবুদাঊদ হা/৪৭৬৫; আহমাদ হা/১৩৩৩৮; মিশকাত হা/৩৫৪৩; আলবানী ছহীহ বলেছেন, ছহীহুল জামে‘ হা/৩৬৬৮।

 

[18]. আহমাদ হা/১২৯৭২; বায়হাক্বী, মাজমা যাওয়ায়েদ ২২৯/৬; আলবানী ছহীহ বলেছেন, যিলালুল জান্নাহ হা/৯৪৫।

 

[19]. আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া ৭/৩০৫।

 

[20]. আল-বিদায়া ১০/৫৮৭।

 

[21]. আলে-ইমরান ১০৬ নং আয়াতের তাফসীর, মুসনাদে আহমাদ হা/২২৩১৩।

 

[22]. বুখারী হা/৬৯৩৩।

 

[23]. বুখারী হা/৭১২৩।

 

[24]. বুখারী, হুজ্জাত কায়েম হওয়ার পর খাওয়ারেজ ও মুলহিদদের হত্যা করা অধ্যায়, ইবনু ওমর (রাঃ) হ’তে বর্ণিত।

 

[25]. আবুদাঊদ হা/৪৭৬৯।

 

[26]. বুখারী হা/৩৪১৫।

 

[27]. আল-খাওয়ারিজ আক্বীদাতান ওয়া ফিকরান ৫৪-৬৮ পৃঃ।

 

[28]. আল-খাওয়ারিজ আউয়ালুল ফিরাক্ব ফী তারীখিল ইসলাম পৃঃ ৩৭-৩৮ ও ১৪৬।

 

[29]. ইবনু তায়মিয়াহ, মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২৭৯/৩৪৯, ৭/৩।

 

[30]. আল-মিলাল ওয়ান-নিহাল ১১৬/১।

 

[31]. মাকালাতুল ইসলামমিয়্যন ২০৪/১।

 

[32]. আশ-শারী‘আহ ২৮ পৃঃ।

 

[33]. দিরাসাতুন আনিল ফিরাক্ব ওয়া তারীখিল মুসলিমীন পৃঃ ১৩৪।

 

[34]. ইবনু মাজাহ হা/১৭৪; আলবানী হাসান বলেছেন, ছহীহুল জামে‘ হা/৮১৭২; আরনাঊত্ব ছহীহ বলেছেন, মুসনাদ ৩৯৮/৯।

 

[35]. ইবনু মাজাহ হা/১৭৪; আলবানী একে হাসান বলেছেন, ছহীহা হা/২৪৫৫।

 

[36]. মুসলিম হা/২৪৬৯, ২৪৫৭।

 

[37]. বুখারী হা/৬৭৭২; মুসলিম হা/৫৭; মিশকাত হা/৫৩।

 

[38]. বুখারী হা/৫৮২৭; মুসলিম হা/৯৪; মিশকাত হা/২৬।

 

[39]. আহমাদ হা/১৭২১৩।

 

[40]. আবু দাউদ হা/৪৭৩৯; ইবনু মাজাহ হা/৪৩১০; মিশকাত হা/৫৫৯৯, সনদ ছহীহ।

 

[41]. ইবনু মাজাহ হা/১৭৩, সনদ ছহীহ।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

দ্বীন প্রতিষ্ঠায় আলেমদের ঐক্য ফরজ, বিভক্তি হারাম

 

মাওলানা নকীব আরসালান

লেখক, শিক্ষক ও কুরআন গবেষক

 

মুসলিম জাতি ধ্বংসের প্রধান কারণ হলো পরস্পর দলাদলি ও বিভক্তি। কিন্তু এই দলাদলি ও ফেরকার বিধান কি তা আমাদের অধিকাংশেরই অজানা। ফিরকার বিধান ভালোভাবে জানলে এত শত ফিরকার জন্ম হতে পারত না।

 

এই না জানার কারণ আমাদের দুর্বলতা নয় বরং মাদরাসার পাঠ্যভুক্ত ফেকাহ গ্রন্থগুলিতে এ জাতীয় অধ্যায়ের সঙ্কট। তাছাড়া কওমি মাদরাসা বোর্ড, আলিয়া মাদরাসা বোর্ড ও কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ ইত্যাদিতে ফিরকা সংক্রান্ত কোন প্রশ্ন করা হয় না।

 

এখন প্রশ্ন হলো তাহলে কি কুরআনেও নেই এসব বিষয়? নাকি আছে আমরা বাদ দিয়ে দিয়েছি? বিষয়টা অনুসন্ধান ও গবেষণার কুরুক্ষেত্র।

 

কুরআনে অনুসন্ধান করলে আমরা দেখতে পাই- আল্লাহ তা’আলা বলেন- (মূল টেক্সট ব্যতিত কোনো বিষয় ঠিকমত হৃদয়ঙ্গম হয় না বিধায় বর্নিত আয়াতগুলি কোরান থেকে দেখে নেয়ার অনুরোধ থাকল)।

 

১. হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিৎ ঠিক তেমনিভাবে ভয় করতে থাক এবং অবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না। (আল-ইমরান/১০২)

 

তোমরা সবাই মিলে আল্লাহর রুজ্জু মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরো এবং দলাদলি করে বিভক্ত হয়ো না৷  আল্লাহ তোমাদের প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন সে কথা স্মরণ রেখো৷ তোমরা ছিলে পরস্পরের শক্র৷ তিনি তোমাদের হৃদয়গুলো জুড়ে দিয়েছেন৷ ফলে তাঁর অনুগ্রহ ও মেহেরবানিতে তোমরা ভাই ভাই হয়ে গেছো৷ তোমরা একটি অগ্নিকুণ্ডের কিনারে দাঁড়িয়ে ছিলে৷ আল্লাহ সেখান থেকে তোমাদের বাঁচিয়ে নিয়েছেন। এভাবেই আল্লাহ তাঁর নির্দশনসমূহ তোমাদের সামনে সুস্পষ্ট করে তুলেন ৷ হয়তো এই নিদর্শনগুলোর মাধ্যমে তোমরা নিজেদের কল্যাণের সোজা সরল পথ দেখতে পাবে। (আল-ইমরান/১০৩)

 

আর তোমাদের মধ্যে এমন একটা দল থাকা উচিত যারা আহবান জানাবে সৎকর্মের প্রতি, নির্দেশ দেবে ভাল কাজের এবং বারণ করবে অন্যায় কাজ থেকে, আর তারাই হলো সফলকাম। (আল-ইমরান/১০৪)

 

আর তাদের মতো হয়ো না যারা বিভক্ত হয়েছিল আর মতভেদ করেছিল তাদের কাছে সুস্পষ্ট নির্দেশাবলী আসার পরেও। আর এদেরই জন্য আছে কঠোর শাস্তি (৩: ১০৫)।

 

সেদিন কিছু লোকের মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠবে এবং কিছু লোকের মুখ কালো হয়ে যাবে৷ তাদের বলা হবে, ঈমানের নিয়ামত লাভ করার পরও তোমরা কুফরি করেছিলে? ঠিক আছে, তাহলে এখন এ নিয়ামত অস্বীকৃতির বিনিময়ে আযাবের স্বাদ গ্রহণ করো৷ (৩/১০৬)

 

যোগসূত্র ও ব্যাখ্যা: সুরা আল-ইমরানের ১০২ নং আয়াতে আল্লাহ তায়ালা তাকে যথোপযুক্ত ভয় করার নির্দেশ দিয়েছেন। ১০৩ নং আয়াতে ভয়ের প্রধান বিষয় হিসাবে বিভক্ত না হয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।

 

১০৪ নং আয়াতে বিভক্তির সম্ভাবনাকে চূড়ান্তভাবে অপনোদন করার লক্ষে উম্মতের দায়ী অংশের ওপর ফরয (কেফায়া) করে দিয়েছেন যে, তারা সৎকাজের আদেশ করবে আর অসৎ কাজে বাধা দিবে। অর্থাৎ ঐক্য প্রতিষ্ঠিত রাখবে এবং বিভক্তিতে বাধা দেবে।

 

এত কিছুর পরেও যারা বিভক্তি ও ফিরকায় লিপ্ত থাকবে আল্লাহ তায়ালা তাদের ১০৫ নং আয়াতে ইহুদি-খৃস্টানের সাথে তুলনা করে কঠোর শাস্তির সংবাদ দিয়েছেন। এরপরেও যারা ফিরকাবাজি করবে আল্লাহ তা’লা তাদের ১০৬ নং আয়াতে কাফের বলে ঘোষণা দিয়েছেন।

 

উল্লেখ্য, অত্র আয়াত দ্বারা কাফের মুশরিক ইহুদি নাসারা উদ্দেশ্য নয়, মুসলমান উদ্দেশ্য। কারণ আয়াতে স্পষ্ট উল্লেখ আছে ‘আকাফারতুম বা’দা ইমানিকুম’ অর্থাৎ ঈমানের পর কুফরি করেছিলে?

 

বস্তুত ঐক্য ফরজ বিভক্তি হারাম। কাজেই যারা এই ফরজিয়্যত ও হুরমত অস্বীকার করে ফিরকায় লিপ্ত হবে তারা কাফের বলে গণ্য হবে যেমন নামাজ রোজার ফরজিয়্যত অস্বীকারকারী কাফের হয়ে যায়। তবে এই কুফুরি কুফরে জাহেদ নয়, এরা শাস্তির পর মুক্তি পাবে।

 

তাফসীর: (ক) ইবনে আব্বাস রা. বলেন, ‘হুম আহলুল বিদআ’ অর্থাৎ কিয়ামতের দিন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের চেহারা স্বেতবর্ণ হবে আর বিদাতিদের চেহারা কৃষ্ণবর্ণ হবে।

 

(. وَالْأَحَادِيثُ فِي هَذَا الْمَعْنَى كَثِيرَةٌ. فَمَنْ بَدَّلَ أَوْ غَيَّرَ أَوِ ابْتَدَعَ فِي دِينِ الله مالا يَرْضَاهُ اللَّهُ وَلَمْ يَأْذَنْ بِهِ اللَّهُ فَهُوَ مِنَ الْمَطْرُودِينَ عَنِ الْحَوْضِ الْمُبْتَعِدِينَ مِنْهُ الْمُسَوَّدِي الْوُجُوهِ، وَأَشَدُّهُمْ طَرْدًا وَإِبْعَادًا مَنْ خَالَفَ جَمَاعَةَ الْمُسْلِمِينَ وَفَارَقَ سَبِيلَهُمْ، كَالْخَوَارِجِ عَلَى اخْتِلَافِ فِرَقِهَا، وَالرَّوَافِضِ عَلَى تَبَايُنِ ضَلَالِهَا، وَالْمُعْتَزِلَةِ عَلَى أَصْنَافِ أَهْوَائِهَا، فَهَؤُلَاءِ كُلُّهُمْ مُبَدِّلُونَ وَمُبْتَدِعُونَ،

وَكَذَلِكَ الظَّلَمَةُ الْمُسْرِفُونَ فِي الْجَوْرِ وَالظُّلْمِ وَطَمْسِ الْحَقِّ وَقَتْلِ أَهْلِهِ وَإِذْلَالِهِمْ، وَالْمُعْلِنُونَ بِالْكَبَائِرِ الْمُسْتَخِفُّونَ بِالْمَعَاصِي، وَجَمَاعَةُ أَهْلِ الزَّيْغِ وَالْأَهْوَاءِ وَالْبِدَعِ، كُلٌّ يُخَافُ، عَلَيْهِمْ أن يكونوا عنوا بالآية، والحبر كَمَا بَيَّنَّا، وَلَا يُخَلَّدُ فِي النَّارِ إِلَّا كَافِرٌ جَاحِدٌ لَيْسَ فِي قَلْبِهِ مِثْقَالُ حَبَّةِ خَرْدَلٍ مِنْ إِيمَانٍ

 

খ. ইমাম কুরতুবি বিভিন্ন এখতেলাফসহ অত্র আয়াতের বিস্তারিত ব্যখ্যা করেছেন। তারপর হাউজে কাওসার সংক্রান্ত একাধিক হাদিস উল্লেখ পূর্বক বলেন, যে বা যারা দ্বীনের মধ্যে এমন পরিবর্তন পরিবর্ধন করবে অথবা বিদাত সৃষ্টি করবে যে বিষয়ে আল্লাহ সন্তুষ্ট নন এবং অনুমতি দেননি তারাই হাউজে কাউসার থেকে বিতারিত হবে, দূরে নিক্ষিপ্ত হবে এবং তাদের চেহারা কালো হয়ে যাবে।

 

বিশেষত যারাই মুসলিম জামাত (ঐক্য) এর খেলাফ করবে এবং তাদের থেকে পৃথক হয়ে যাবে তারাই চূড়ান্তভাবে প্রত্যাখ্যাত হবে এবং দূরে নিক্ষিপ্ত হবে। যেমন খারেজিরা এখতেলাফ করে পৃথক ফিরকা হয়ে গেছে, রাফেজিরা স্পষ্ট গুমরাহিতে লিপ্ত রয়েছে, মু’তাজিলারা প্রবৃত্তির অনুসরণ করেছে। এরা প্রত্যেকেই দ্বীন পরিবর্তনকারী এবং বিদাত সৃষ্টিকারী।

 

দ্বীনের মধ্যে প্রত্যেক বক্রতা সন্ধানকারী দল, প্রবৃত্তির অনুসারী দল ও বিদাত সৃষ্টিকারীদের ওপরই এ আয়াত প্রযোজ্য হতে পারে। তবে এরা স্থায়ী জাহান্নামী হবে না, স্থায়ী জাহান্নামী হবে কাফেরে জাহেদ- যার অন্তরে সরিষা দানা পরিমাণ ঈমানও নাই।

 

(বর্তমানের প্রত্যেক ইসলামি দল ও ফিরকাকে ভাবতে হবে, আমরা এ আয়াতের হুকুমের আওতায় পড়ে যাই কিনা)।

 

২. এ ছাড়াও তাঁর নির্দেশ হচ্ছে এই: এটিই আমার সোজা পথ৷ তোমরা এ পথ অবলম্বন কর, ভিন্ন ভিন্ন মত-পথ অবলম্বন করো না তাহলে তোমরা বিভক্ত হয়ে যাবে। এ হেদায়াত তোমাদের রব তোমাদের দিয়েছেন, সম্ভবত তোমরা বাঁকা পথ অবলম্বন করা থেকে বাঁচতে পারবে৷ (আনআম/১৫৩)

 

৩. এবং মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না, যারা তাদের ধর্মে বিভেদ সৃষ্টি করেছে এবং অনেক দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদে সন্তুষ্ট। (রুম/৩২)

 

৪. তিনি তোমাদের জন্য সেই ধর্ম থেকে বিধান দিচ্ছেন যার দ্বারা তিনি নূহকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, আর যা আমরা তোমার কাছে প্রত্যাদেশ করছি, আর যার দ্বারা আমরা ইব্রাহীম, মূসা ও ঈসাকে নির্দেশ দিয়েছিলাম এই বলে- ‘দ্বীন কায়েম করো, আর এতে পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। মুশরিকদের জন্য এ বড় কঠিন ব্যাপার যার প্রতি তুমি তাদের আহ্‌বান করছ! আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা করেন তাকে তাঁর কারণে নির্বাচিত করেন, আর তাঁর দিকে পরিচালিত করেন তাকে যে ফেরে। (৪২: ১৩)

 

বিধান: আয়াতে ‘কায়েম কর’ অনুজ্ঞা, আর ‘বিভক্ত হয়ো না’ নিষেধাজ্ঞা। আর কুরানের অনুজ্ঞা দ্বারা ফরজ, নিষেধাজ্ঞা দ্বারা হারাম সাব্যস্ত হয়- এই সূত্রানুসারে ঐক্যবদ্ধভাবে দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলন ফরজ, আর বিভক্ত হওয়া- বিচ্ছিন্ন হওয়া হারাম।

 

৫. মানুষের কাছে যখন জ্ঞান এসে গিয়েছিল তারপরই তাদের মধ্যে বিভেদ দেখা দিয়েছে৷ আর তার কারণ পরস্পর হিংসা বিদ্বেষ। একটি নিদিষ্ট সময় পর্যন্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত মূলতবি রাখা হবে একথা যদি তোমর রব পূর্বেই ঘোষণা না করতেন তাহলে তাদের বিবাদের চূড়ান্ত ফায়সালা করে দেয়া হতো৷

 

প্রকৃত ব্যাপার হচ্ছে, পূর্ববর্তীদের পরে যাদের কিতাবের উত্তরাধিকারী করা হয়েছে তারা সে ব্যাপারে বড় অস্বস্তিকর সন্দেহের মধ্যে পড়ে আছে৷ (শুরা/ ১৪)

 

৬. তারা আল্লাহ্‌কে ছেড়ে দিয়ে তাদের আহবার ও রুহবানদের (আলেম ও পুরোহিতদের) প্রভুরূপে গ্রহণ করেছে, আর মরিয়ম-পুত্র মসীহ্‌কেও। অথচ শুধু এক উপাস্যের উপাসনা করা ছাড়া অন্য নির্দেশ তাদের দেয়া হয়নি। তিনি ছাড়া অন্য উপাস্য নেই। তাঁরই সব মহিমা- তারা যেসব অংশী দাঁড় করায় সে-সব থেকে তিনি মুক্ত? (তওবা: ৩১)

 

তাফসিরকারকদের মতামত: এখানে ইহুদি নাসারারা তাদের পুরোহিত রাব্বাইদের রব হিসাবে গ্রহণ করার অর্থ এ নয় যে তারা ধর্মগুরুদের উদ্দেশ্যে নামাজ রোজা উপাসনা করত, পূজা করত বরং এর অর্থ হল আল্লাহ যা হালাল করেছেন পুরোহিতরা তা হারাম করত আর অনুসারীরাও তা মেনে নিত।

 

আর আল্লাহ যা হারাম করেছেন ধর্মগুরুরা তা হালাল করত আর তারাও তা মেনে নিত। এ সম্পর্কে একাধিক সনদে বর্ণিত হাদিস–

 

ক. আদি বিন হাতেম রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা আমি রাসুল সা. এর কাছে গেলাম, তখন আমার গলায় স্বর্ণ নির্মিত একটি ক্রুশ ঝুলানো ছিল। তিনি বললেন, ‘হে আদি তোমার গলা থেকে এ মূর্তি দূরে নিক্ষেপ কর। আমি তা নিক্ষেপ করলাম। আমি পৌঁছার সময় তিনি উক্ত আয়াতটি পাঠ করছিলেন।

 

তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল আমরা তো আমাদের আলেমদের ইবাদত করি না, অন্য

বর্ণনায় এসেছে, আমরা তো তাদের উদ্দ্যেশ্যে নামাজ পড়ি না। তখন রাসূল সা. বললেন ‘ঠিকই বলেছ। কিন্তু আল্লাহ যা হালাল করেছেন তারা যখন তা হারাম করে তখন কি তোমরা তা মেনে নাও না, আবার আল্লাহ যা হারাম করেছেন তারা যখন তা হালাল করে তখন কি তোমরা তা হালাল হিসাবে মেনে নাও না? তখন আমি বললাম ‘জী হাঁ। রাসূল সা. বললেন ‘তাদের ইবাদতের অর্থ এটাই।

 

খ. হযরত হুযায়ফা রা. কে জিজ্ঞেস করা হল যে, ইহুদি খৃষ্টানরা কি তাদের আলেমদের ইবাদত করত? উত্তরে তিনি বললেন, না বরং তাদের আলেমরা যা হারাম করত তারাও তা হারাম হিসেবে মেনে নিত আর যা হালাল করত তারাও তা মেনে নিত।

 

অন্য বর্ণনায় এসেছে, আল্লাহর অবাধ্যতায় তারা আলেমদের আনুগত্য করত।

 

গ. ইবনে আব্বাস রা. বলেন, তাদের আলেমরা নিজেদের সিজদা করার হুকুম করত না বরং তারা আল্লাহর অবাধ্যতার নির্দেশ দিত আর অনুসারীরাও তা মেনে নিত এবং আলেমদের আনুগত্যে আত্মপ্রসাদ লাভ করত।

 

বাস্তব শিক্ষা: আল্লাহ তা’লা ঐক্য ফরজ ও বিভক্তি হারাম করেছেন। এখন চিন্তার বিষয় হল, আমাদের মুরুব্বি ও আলেমরা তো এসব নিয়ে কথা বলছেন না, তাহলে কি তারা এসব বিভক্তিকে ইতিবাচক বা জায়েজ হিসেবে নিচ্ছেন? আর আমরাও তা মেনে নিয়েছি?

 

৭. প্রথমে যাদেরকে কিতাব দেয়া হয়েছিল তাদের মধ্যে তো বিভেদ সৃষ্টি হলো তাদের কাছে (সত্য পথের ) সুস্পষ্ট প্রমাণ এসে যাওয়ার পর। (বায়্যিনা/ ৪)

 

৮. বলুন, হে আহলে-কিতাবগণ! একটি বিষয়ের দিকে আস-যা আমাদের মধ্যে ও তোমাদের মধ্যে সমান-যে, আমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করব না, তাঁর সাথে কোন শরীক সাব্যস্ত করব না এবং একমাত্র আল্লাহকে ছাড়া কাউকে পালনকর্তা বানাব না। তারপর যদি তারা স্বীকার না করে, তাহলে বলে দাও যে, সাক্ষী থাক আমরা তো অনুগত। (আলে ইমরান:৬৪)

 

তাফসীর: ঈমাম কুরতুবি ‘আমরা আল্লাহকে ছাড়া একে অন্যকে রব হিসাবে গ্রহণ করব না’ এর ব্যাখ্যায় বলেন, ‘আমরা কোন জিনিস হালাল ও হারাম করণের ক্ষেত্রে একমাত্র আল্লাহ্‌র বিধান ছাড়া অন্য কাউকে অনুসরণ করব না।

 

অর্থাৎ ইহুদি নাসারারা যেমন তাদের ধর্মগুরুদের হালাল ও হারামকৃত বিষয়গুলি মেনে নিয়ে তাদের ধর্মগুরুদের রবের স্থলে অধিষ্ঠিত করেছিল- আমরা তেমনটা করব না।

 

অর্থাৎ আমাদের আলেমরা আল্লাহ প্রদত্ত হালালকে হারাম এবং হারামকে হালাল করলে আমরা তা মেনে নেব না, যেমন মুসলমানদের মধ্যে দলাদলি ফিরকাবাজি ইত্যাদি ক্ষেত্রে।

 

ইমাম তাবারির মতে- এর অর্থ হল আল্লাহ্‌র অবাধ্যতার বিষয়ে কেউ হুকুম করলে আমরা তার আনুগত্য করি না, আল্লাহকে যেভাবে সিজদা করা হয়, সেভাবে আমরা কাউকে (মাযারে) সিজদা করি না।

 

ইবনে জুরাইজ বলেন, আল্লাহ্‌র অবাধ্যতায় আমরা একে অন্যের আনুগত্য করি না। আর রব হিসাবে গ্রহণ করা অর্থ তাদের উদ্দেশ্যে নামায পড়া নয় বরং ইবাদতের বাইরে অন্যান্য ক্ষেত্রে নেতা ও সর্দারদের আনুগত্য করা।

 

৯. বলুন, আমি কি তোমাদেরকে সেসব লোকের সংবাদ দেব, যারা কর্মের দিক দিয়ে খুবই ক্ষতিগ্রস্ত। তারাই সে লোক, যাদের প্রচেষ্টা পার্থিব জীবনে ব্যর্থ হয়েছে, অথচ তারা মনে করে যে, তারা উত্তম কর্মই সম্পাদন করেছে (কাহফ-১০৩ ও ১০৪)

 

তাফসির: ইমাম তাবারি বলেন, আমাদের কাছে সঠিক মনে হচ্ছে, অত্র আয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য এমন প্রত্যেক আমলকারী যে স্বীয় আমলকে সঠিক মনে করে এবং স্বীয় আমল দ্বারা আল্লাহর আনুগত্যকারী এবং আল্লাহকে সন্তুষ্টকারী মনে করে।

 

অথচ তার সেই কর্ম দ্বারা সে আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করে। (ফিরকাও এর অন্তর্ভুক্ত)

 

বাস্তব শিক্ষা: ইসলামের নামে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে আমরা মুসলমানদের মধ্যে দলাদলি ও ফিরকা সৃষ্টি করছি। ফলে আমাদের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছে, ইসলাম ও উম্মাহ ধ্বংস হচ্ছে আর আমরা আল্লাহর বিরাগভাজন হচ্ছি।

 

১০. আপনাদের এই উম্মত সব তো একই ধর্মের অনুসারী এবং আমি আপনাদের পালনকর্তা; অতএব আমাকে ভয় করুন। অতঃপর মানুষ কিতাবাদির (যুবুর) ভিত্তিতে তাদের বিষয়কে (ধর্ম) বহুধা বিভক্ত করে দিয়েছে, প্রত্যেক দল নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে সন্তুষ্ট। অতএব কিছু কালের জন্যে তাদের অজ্ঞানতায় নিমজ্জিত থাকতে দিন। (মুমিনুন- ৫২, ৫৩, ৫৪)

 

মুফাসসিরীনে কেরামের মতামত

 

ক. ইমাম ইবনে জারির তাবারি এ আয়াতের দ্বিতীয় ব্যাখ্যায় বলেন, وقال آخرون من أهل هذه القراءة: إنما معنى الكلام: فتفرقوا دينهم بينهم كتبا أحدثوها يحتجون فيها لمذهبهم.

 

আয়াতটি সম্পর্কে অন্যদের অভিমত হল, তারা দ্বীনকে নিজেদের মধ্যে বিভক্ত করল কিতাবাদির ভিত্তিতে- যেগুলি তারা নিজেদের মযহাব প্রতিষ্ঠার জন্য দলীল আদিল্লা হিসাবে রচনা করেছে।

 

খ. ইমাম কুরতুবি উক্ত আয়াতের চতুর্থ ব্যাখ্যায় ৭২ ফিরকার হাদিস এনে প্রমাণ করেছেন, এ আয়াত দ্বারা উদ্দেশ্য মুসলমানগণ যারা মযহাবি কিতাবাদির ভিত্তিতে দ্বীনকে বিভক্ত করেছে।

 

১১. নিঃসন্দেহে যারা তাদের ধর্মকে বিভক্ত করেছে এবং বিভিন্ন দল হয়ে গেছে, তাদের জন্য তোমার (রাসুলের) কোনো দায়দায়িত্ব নেই। নিঃসন্দেহে তাদের ব্যাপার আল্লাহ্‌র কাছে, তিনিই পরকালে তাদের জানাবেন যে তারা কী করেছিল। (আনআম: ১৫৯)

 

মুফাসসিরীনে কেরামের মতামত

 

ক. আবু হুরায়রা রা. বলেন, উক্ত আয়াত এ উম্মতের উদ্দেশ্যে নাযিল হয়েছে।

 

খ. আবু জাফর বলেন, সঠিক কথা হচ্ছে আল্লাহ তার নবীকে জানিয়ে দিচ্ছের, যে বা যারা দ্বীনের মধ্যে বিভক্তি আনবে, বিভিন্ন ফিরকায় বিভক্ত হবে রাসূল তাদের থেকে দায়মুক্ত আর তারাও রাসূল থেকে দায়মুক্ত।

 

গ. হযরত আবু হুরায়রা এবং হযরত উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা. হযরত আয়েশা রা. কে বলেন- উক্ত আয়াত দ্বারা এ উম্মতের বিদাতী, প্রবৃত্তির অনুসারী ও গুমরাহ লোকেরা উদ্দেশ্য।

 

হে আয়েশা, প্রত্যেক গুনাহগারের তাওবা আছে কিন্তু বিদাতী ও প্রবৃত্তির অনুসারীদের কোন তাওবা নাই অর্থাৎ তাদের তাওবা কবুল করা হয় না। আমি তাদের থেকে দায়মুক্ত তারাও আমার থেকে মুক্ত, বিচ্ছিন্ন। (কুরতুবি)

 

আলোচনা: উল্লেখিত আয়াত সমূহের আলোকে বুঝা গেল ইসলামের বিধান সমূহের মধ্যে মুসলমানদের মধ্যে দলাদলি ও ফেরকাবাজির বিধান হল সবচেয়ে কঠিন এবং কঠোর।

 

যেমন সূরা নিসার ১০৬ নং আয়াতে আল্লাহ তা’আলা ফিরকাবাজদের কাফের বলে ঘোষণা দিয়েছেন এবং তারা হাউজে কাউসার থেকে বিতাড়িত হবে।

 

সুরা আনআম-এর ১৫৯ নং আয়াতে রাসূলের সাথে তাদের সম্পর্ক ছিন্নের ঘোষণা দিয়েছেন। অথচ নামাজ রোজা হজ যাকাত ইত্যাদি অন্য যে কোনো বিধানের ক্ষেত্রে এত কঠোর হুকুম আসেনি। এই কঠোরতার কারণ হলো কেউ নামাজ রোজা ইত্যাদি আদায় না করলে তার নিজের ক্ষতি হয় কিন্তু ইসলাম ও উম্মাহর তেমন ক্ষতি হয় না। কিন্তু মুসলমানদের মধ্যে দলাদলি ও ফেরকাবাজি থাকলে ইসলাম ও উম্মাহর ক্ষতি হয়, কাফেররা প্রাধান্য পেয়ে যায়।

 

মুসলিম বিশ্বের বর্তমান অবস্থাই এর জ্বলন্ত প্রমাণ। অথচ এসব বিধান সম্পর্কে আমরা জানি না, এই না জানার কারণ মাদরাসায় পাঠ্যভুক্ত ফিকাহ গ্রন্থগুলিতে ফেরকা সংক্রান্ত কোন অধ্যায় নেই, আমাদের ওস্তাদরাও পৃথকভাবে এ বিষয়ে আমাদের জ্ঞানদান করেন না।

 

মাদরাসা বোর্ড, আরবি ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগেও কোন দিন এ জাতীয় প্রশ্ন করা হয় না। সঙ্গত কারণেই ফেরকার বিধান আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব হয় না।

 

এখানেই প্রশ্নটা, আমাদের উস্তাদ, মুরুব্বি ও আলেম সমাজের কাছে প্রশ্ন হলো-

 

১. আপনারা কি কুরআনের এসব আয়াত বাদ দিয়ে দিলেন? বাদ না দিলে এগুলির বিধান কেন শিক্ষা দেয়া হচ্ছে না? এসব কঠোর বিধান জানা থাকলে আমরা কখনোই বিভক্ত হতাম না, সমগ্র উম্মাহ ঐক্যবদ্ধ থাকতাম।

 

২. সূরা মুমিনুন-এর ৫৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে ‘তারা মাযহাবী কিতাবের ভিত্তিতে দ্বীনকে বিভক্ত করেছে’ তাহলে আমরা কি স্ব স্ব মাযহাবী কিতাবের ভিত্তিতে দ্বীনকে বিভক্ত করি নাই? না করলে আমাদের মধ্যে এত দল ফিরকা কেন?

 

ওলামায়ে কেরামের কাছে জিজ্ঞাসা, আমরা ফিকহী কিতাবের অনুসরণ করতে গিয়ে কুরআনের বিধান লঙ্ঘন করছি কিনা?

 

৩. কুরআন কি মানবজাতি বিশেষত মুসলমানদের ঐক্যের জন্য নাজিল হয়েছিল নাকি বিভক্তির জন্য? কাজেই উম্মাহর ইহকাল ও পরকাল রক্ষার্থে সময়ের দাবী হল, ফিরকা সংক্রান্ত কুরআন-হাদীসের নসগুলির ভিত্তিতে লিখিত একশ নম্বরের বিষয় পাঠ্যভুক্ত করা হোক, মাদরাসা বোর্ডগুলি থেকে বেশি বেশি এ জাতীয় প্রশ্ন করা হোক এবং উম্মাহর বিভিন্ন দল ও ফিরকার মধ্যে ঐক্য স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হোক। আর এসব দায়িত্ব আলেমদেরই বহন করতে হবে।

 

Source: http://ourislam24.com/2018/08/11/দ্বীন-প্রতিষ্ঠায়-আলেমদের/

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

সন্দেহ যুক্ত খাবার

 

অন্তত একবার নিজেকে রক্ষা করার জন্য হলেও পড়েন, নিজেকে ও পরিবারকে বাঁচানো আপনারই দায়িত্ব ৷

 

বাংলাদেশের কোন কোন খাবারে শুকরের চর্বি থাকার সম্ভাবনা আছে!  এবং কিভাবে আছে তার বর্ননা নিম্নে দেওয়া হল।

শূকরের মাংস ইউরোপ জুড়ে তাদের প্রোটিন বা আমিষ সরবরাহের অন্যতম একটা মাধ্যম। এক হিসেবে দেখা গেছে যে, একমাত্র ফ্রান্সেই প্রায় বিয়াল্লিশ হাজারেরও বেশী শূকরের খামার রয়েছে। ইংল্যন্ডরও আনাচে কানাচে রয়েছে শূকরের খামার। বাণিজ্যিকভাবে এইসব খামারগুলো পুরো ইংল্যন্ড জুড়েই শূকরের মাংস সরবরাহ করে আসছে। আর ইংল্যন্ডে বসবাস করার কারণে নিত্যদিন চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছি ইংরেজদের খাদ্য তালিকায় শূকরের মাংস একটি অতি আবশ্যকীয় ও উপাদেয় তালিকা। কেবল ইংল্যন্ডই নয় বরং পুরো ইউরোপ, আমেরিকা আর প্রাচ্য, অর্থাৎ পুরো খৃষ্ট বিশ্বেই প্রকৃত অবস্থাটি এমনই। এমনকি মুসলিম বিশ্বের কোথাও কোথাও, বিশেষ করে, মুসলিম দেশসমুহে বসবাসকারী অমুসলিম ধর্মালম্বীদের কাছে শূকরের মাংস অতি কাংক্ষিত একটি খাদ্য মাধ্যম।

এই মাধ্যমটি যে আজ নতুন সৃষ্টি হয়েছে তা নয় বরং সেই মধ্যযুগের কিংবা তারও আগে থেকেই এটি বিদ্যমান। শূকরের দেহে সবচেয়ে বেশী চর্বি থাকে এবং সেই চর্বির মধ্যে মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর চর্বিও রয়েছে। বস্তুুতান্ত্রিক চিন্তা চেতনায় উজ্জীবিত ইউরোপ জ্ঞান বিজ্ঞানের অগ্রগতির সাথে এইসব চর্বিকে বিভিন্নভাবে প্রক্রিয়াজাতের মাধ্যমে এ থেকে ব্যবহার্য বা খাদ্য জাতিয় বিভিন্ন প্রকার উপকরণ যেমন উদ্ভাবন করেছে তেমনি তা সারা বিশ্ব জুড়েই বাজারজাতও করেছে। আজকাল পুরো ইউরোপ, আমেরিকা আর পশ্চিমা বিশ্ব, এমনকি সমগ্র বিশ্বব্যাপি স্বাস্থ সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে মানুষ খাদ্যে অতিরিক্ত ফ্যাট নিয়ে বড় বেশী চিন্তিত এবং সজাগ। খাদ্যে চর্বির আধিক্যই হৃদরোগের প্রধান কারণ, সেটা বিশ্ববাসী খুব ভালো করেই জেনে গেছে বিজ্ঞানের সুবাদে। শূকরের দেহে সবচেয়ে বেশী চর্বিই কেবল থাকে না বরং সেই চর্বির মধ্যে ক্ষতিকারক উপাদানটির আধিক্যও সবচেয়ে বেশী। ফলে ইউরোপের সচেতন মানুষ শূকরের মাংস খেলেও এর চর্বিকে সব সময় যথাসম্ভব এড়িয়ে চলে বা চলার চেষ্টা করে। এর ফলে শূকর ব্যবসায়ী ও তার মাংস সরবরাহকারীদের একটা বড় অংশই অপচয় হবার সম্ভাবনা দেখা দেয়।

এইসব অপচয় থেকে বাঁচার জন্যই ইউরোপ শূকরের চর্বির বিকল্প ব্যবহার উদ্ভাবন করেছে। শূকরের চর্বিকে তারা বিভিন্নভাবে বাজারজাত করেছে। এর বহুবিধ ব্যবহারকে নিশ্চিত করেছে প্রসাধনী সামগ্রীর কাঁচামাল, ঔষধের মাধ্যম বা ঔষধ হিসেবে ব্যবহার, শল্য চিকিৎসায় ব্যবহার্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি নির্মাণ এবং সবচেয়ে বড় কথা হলো মনুষ্য ও পশু খাদ্য সামগ্রির বিভিন্ন উপাদান হিসেবে এই ক্ষতিকারক বস্তুটিকে ব্যবহার করছে। প্রথমে শূকরের চর্বি দিয়ে সাবান বানানো হয় এবং তা জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এর পরে একইভাবে ঐ চর্বিকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন রকম তরল প্রসাধনী, ক্রিম ইত্যাদি উৎপাদন এবং বাজারজাত করা হয়, এটাও ব্যবসায়িক সফলতা পায়। বন্দুকের কার্তুজে এই শূকরের চর্বি ব্যবহার শুরু হয় সর্বপ্রথমে, উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি কিংবা তারও আগে।

যা হোক, ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানীগুলোও তাদের উৎপাদিত ঔষধ ও চিকিৎসা সামগ্রীতে এর ব্যবহার শুরু করে। সর্বপ্রথমে শরীরের অভ্যন্তরে সেলাই করার জন্য এমন এক ধরনের সুতোর দরকার পড়ে, যা ক্ষত শুকোনোর পরে খূলে ফেলার প্রয়োজন পড়বে না, এবং শরীরের ভেতরে হবার কারণে তা সম্ভবও নয়, বরং সেলাই কাজে ব্যবহৃত এই সুতো আপনা আপনিই মানুষের মাংসের সাথে মিশে যাবে। এ চিন্তা থেকেই চিকিৎসকরা বেড়ালের অন্ত্রের চর্বি দিয়ে তৈরী করেন এক বিশেষ ধরনের সুতো, যা দিয়ে মানুষের দেশে অস্ত্রোপচারের সময় আভ্যন্তরীণ ক্ষত জোড়া দিতে ব্যবহার করা যাবে। শল্য চিকিৎসক বা সার্জনরা মানুষের শরীরে এরকম যে সুতোর ব্যবহার করেন তাকে ‘ক্যটগাট’ বলা হয়। বেড়ালের চেয়ে শূকরের প্রচলন বেশী এবং শূকরের মাংস ও চর্বি সহজ লভ্য হবার সুবাদে ইউরোপের শূকর খামার ব্যবসায়ী ও চিকিৎসকরা এগিয়ে আসেন এই সুতো নির্মাণে বেড়ালের পরিবর্তে শূকরের চর্বি ব্যবহারে। এবং তারা তা শুরুও করেন।

কিন্তু কিছু সচেতন মুসলমান ইউরোপীয় পণ্যসামগ্রীর গা’এ লিপিবব্ধ উপাদানের তালিকায় pig fat শব্দটি দেখে আঁতকে উঠেন। কারণ যে কোন মুসলমানের কাছে এই pig fat বা শূকরের চর্বি, তার মাংস বা রক্ত সকল কিছুই হারাম, এর যে কোন ধরনের পরোক্ষ ব্যবহারও হারাম। তারা তাদের ভাষণে-বিবৃতিতে, লেখা-লেখনীতে এ ব্যপারে জনগণকে যেমন সতর্ক করেন, তেমনি সরকারের কাছেও দাবী জানাতে থাকেন এইসব ইউরোপীয় পণ্য দেশে আমদানী করারা অনুমতি না দেবার। এর ফলে ইউরোপীয়রা তাদের পণ্যতে pig fat শব্দটির পরিবর্তে 'animal fat' শব্দটি ব্যবহার শুরু করে।

ফলে ইউরোপীয়ান বাবস্যায়ীরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের বাজার হারাতে বসে। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতেই তারা বিকল্প পন্থা উদ্ভাবন করে। আর এই বিকল্প পন্থাটইি হলো উৎপাদিত কোন বস্তু, তা খাদ্য সামগ্রী হোক বা ঔষধ পথ্য কিংবা প্রসাধনী কিংবা অন্য কিছু, তার গা’এ ইউরোপীয়ান আঈন অনুযায়ী উপাদান সমুহের নাম লেখা হবে বটে তবে সেই সব নামগুলো লেখা থাকবে বৈজ্ঞানিক কোন টার্ম কিংবা সাংকেতিক নাম ব্যবহার করে যেন সাধারণ জনগণ সেই সব নাম, সেইসব টার্ম পড়ে বুঝে উঠতে না পারে, আসলে এই জিনিসগুলো কী?

করপোরেট বাণিজ্যের এই বিশ্বে ব্যবসাীয় মহলের চাপে নতী স্বীকার করে সরকার উৎপাদকদের সাথে আপোষ করে এবং উৎপাদিত পণ্যের গা’এ সাংকেতিক ভাষায় উপাদানসমুহের নাম লিপিবদ্ধ করার অনুমিত দেয়। সেই থেকে শিল্পকারখানায় উৎপাদিত পণ্য, বিশেষ করে, খাদ্য সামগ্রী কিংবা তা প্রস্তুতে ব্যবহৃত উপাদানসমুহে, প্রসাধনী, ঔষধ কিংবা পথ্যের উৎপাদনে সাংকেতিক ভাষায় বিশেষ নাম বা E-Codes ব্যবহার করা হয়, যা আমাদের মত সাধারণ মানুষের কাছে দুর্বোধ্য একটি বিষয়।

এরকমই একজন মুসলিম টেকনিশিয়ান কাজ করতেন ফ্রান্সের Pegal শহরে অবস্থিত Departments of Food Administration এর মান নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে বা ল্যবরেটরিতে। তিনি অনূসন্ধিৎষূ মন নিয়ে দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টায় বের করেছেন বেশ ক’টি E-Codes যার প্রত্যেকটিই শূকরের চর্বিকে ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে। একটি ওয়েব সাইটে Are we eating Pork? শিরোণামে মুসলমানদের উদ্দেশ্যে এক পাকিস্থানী বিজ্ঞানী ড: এম আমজাদ খান কর্তৃক প্রচারিত উক্ত তালিকায় শুকরের চর্বি থেকে প্রস্তুত E-Codes এর তালিকা নিম্নরুপ:

E100, E110, E120, E 140, E141, E153, E210, E213, E214, E216, E234, E252, E270, E280, E325, E326, E327, E334, E335, E336, E337, E422, E430, E431, E432, E433, E434, E435, E436, E440, E470, E471, E472, E473, E474, E475, E476, E477, E478, E481, E482, E483, E491, E492, E493, E494, E495, E542, E570, E572, E631, E635, E904. I

উক্ত তালিকায় উল্লেখিত E-Codes গুলোর বেশ ক’টি আমাদের দেশে প্রাত্যহিক ও দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত জনপ্রিয় খাদ্যতালিকায় উপস্থিত দেখতে পাওয়া যায়। তার দু‘একটা নমুণা দেখুন, যেমন; নিচে উল্লেখিত তালিকায় খাদ্য দ্রব্যের নামের পাশে তাতে ব্যবহৃত E-Codes ও তুলে দেয়া হলো:

1 Cadburrys chocolate - E476

2 Igloo Ice Cream -E471,E433

3 Baskin Robbins Ice Cream E471

4 Foster Clarks Custard Powder-E110

5 Fadeco Ice Cream-E471

6 Nova Chewing Gum -E422

7 Demah Fresh -E422

8 Big Babool Chewing Gum

বলা বাহুল্য, উপরের তালিকায় উল্লেখিত প্রায় সবকটিই আমাদের দেশসহ প্রায় সকল মুসলিম দেশে ছেলে বুড়ো'সহ সকলের কাছেই খুবই প্রিয়।

আল কুরআনে অন্তত চারটি জায়গায় মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন শূকরের মাংস এবং মৃত জন্তু জানোয়ার আর সেইসব জানোয়ার যা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নাম নিয়ে জবাই করা হয়েছে, মুসলমানদের জন্য হারাম করেছেন। তারই একটি আয়াত দেখুন:

তিনি তোমাদের উপরে হারাম করেছেন, ‪#‎মৃত জীব, রক্ত ‪#‎শূকর মাংশ এবং সেসব জীব জন্তু যা আল্লাহ ব্যতিত অপর কারো নামে উৎসর্গ করা হয়। অবশ্য যে লোক অনন্যোপায় হয়ে পড়ে এবং না-ফরমানী ও সীমালংঘনকারী না হয়, তার জন্য কোন পাপ নেই। নি:সন্দেহে আল্লাহ মহান ক্ষমাশীল, অত্যন্ত দয়ালু (সুরা আল বাক্বারা- ১৭৩)

এটা মোটমুটি অমুসলিম ব্যবসায়ীরা জানে, অন্তত তাদের সরকার ও জনগোষ্ঠির সচেতন অংশটি খুব ভালো করেই জানে, কিন্তু তারপরেও তারা ভিন্ন কৌশলে মুসলমানদেরকে আকর্ষণীয় উপস্থাপনায় সেই হারাম বস্তু খাওয়াতে মনে হয় উঠে পড়ে লেগেছে। এর পেছনে কেবল যে তাদের আর্থিক ও ব্যবসায়িক স্বার্থই আছে তাই নয় বরং এর পেছনে রয়েছে ধর্মীয় বিদ্বেষজনিত এক আগ্রাসী মনোভাব, যার মিল রয়েছে একমাত্র ক্রসেডের সাথেই।

Prof. Dr Mohammad Nurul Huq

Head of the Department of Pediatrics

Bangladesh Medical College and Hospital

R 14A, DRA, Dhaka 1209

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

প্রভিডেন্ট ফান্ডে প্রদত্ত সুদ বাদ দিবেন কিভাবে?

 

 

আপনি যদি অভিজ্ঞ কোন অ্যাকাউন্টেট এর দ্বারা প্রভিডেন্ট ফান্ড থেকে সব সূদ কে বাকি টাকা থেকে আলাদা করতে পারেন তাহলে তা হালাল হতে পারে। তবে এর জন্য ভাল কোন আলেম এর সাথে

যোগাযোগ বাঞ্ছনীয়।

সূদ কিভাবে PF থেকে আলাদা করবেন তার উদাহরনঃ

চাকুরীতে যোগদান এর সালঃ    ২০১৫ সাল

মূল/বেসিক বেতনঃ            ২০,০০০ টাকা

PF এ আপনার অংশঃ               ১০   %

PF এ কোম্পানির অংশঃ            ১০   %

বাৎসরিক মূল বেতন বৃদ্ধিঃ          ১০   %

অবসরের সময় (সম্ভাব্য)ঃ      ২০২৫  সাল /১০ বছর

PF এ প্রদত্ত সূদঃ                    ১০   %         অথবা' ০%

---------------------------------------------

১০ বছর পর প্রভিডেন্ট ফান্ড এ প্রাপ্য(১০% সূদে)        ১২,৪৪,৯৯৬ টাকা

----------------------------------------------

১০ বছর পর প্রভিডেন্ট ফান্ড এ প্রাপ্য(০% সূদে)          ৭,৬৪,৯৯৬ টাকা

----------------------------------------------

১০ বছর পর সূদ বাদ দিতে হবে                            ৪,৮০,০০০ টাকা

 

http://www.moneycontrol.com/personal-finance/tools/provident-fund-calculator.html

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

বিয়ে পূর্ব ১০ টি উপদেশ।

 

ইমাম দ্বীনদার হেকমত ওয়ালা ব্যাক্তির ছেলের বিয়ের সব ঠিকঠাক। একদিন ফাঁক করে পুত্রকে ডেকে পাশে বসালেন।আন্তরিক ভঙ্গিতে বলতে শুরু করলেন,

--- ওয়ালাদী! তুমি কি সুখী হতে চাও?

--- না‘আম ইয়া আবী!

--- তাহলে তোমাকে তোমার হবু জীবনসঙ্গীনির জন্যে দশটা বিষয় নিয়ে যেতে হবে।

-কী সেগুলো? কোথায় পাওয়া যাবে?

-তোমাকে কোথাও যেতে হবে না। কিনতেও হবে না। আমার কাছে, তোমার কাছে, সবার কাছেই সেগুলো আছে। সবাই ব্যবহার করতে পারে না, এই যা। চলো দেখা যাক, অমূল্য সেই দশটা বিষয় কী?

 

প্রথম ও দ্বিতীয়: নারীরা সাধারণত রোমান্টিকতা পছন্দ করে। খুনসুটি-রসিকতা পছন্দ করে। নখরা-ন্যাকা তাদের স্বভাবজাত। তারা ভালোবাসার স্পষ্ট প্রকাশকে খুবই পছন্দ করে।

তুমি একান্তে তোমার স্ত্রীর কাছে এসব প্রকাশে কখনোই কার্পণ্য করবে না। তাকে বেশি বেশি ভালোবাসার কথা বলবে।

যদি এসবে কার্পন্য করো, তাহলে দেখবে কিছুদিন পরই তোমার আর তার মাঝে একটা অদৃশ্য পর্দা ঝুলে গেছে। এরপর দিনদিন পরস্পরের সম্পর্কে শুষ্কতা আসতে শুরু করবে। ভালোবাসা জানালা দিয়ে পালাবার পথ খুঁজবে।

-----------

তৃতীয়: নারীরা কঠোর-কর্কশ-রূঢ়-বদমেজাযী-রুক্ষ্ণ স্বভাবের পুরুষকে একদম পছন্দ করে না। তুমি তোমার মধ্যে যদি এমন কিছু থেকে থাকে এখনই ঝেড়ে ফেল।

কারণ তারা সুশীল, ভদ্র, উদার পুরুষ পছন্দ করে। তুমি তার ভালোবাসা অর্জনের জন্যে, তাকে আশ্বস্ত করার জন্যে হলেও গুণগুলো অর্জন করো।

 

চতুর্থ: এটা খুব ভাল করে মনে রাখবে, তুমি তোমার স্ত্রীকে যেমন পরিচ্ছন্ন-সুন্দর-পরিপাটি-গোছালো-সুরুচিপূর্ণ-সুগন্ধিময় দেখতে চাও, তোমার স্ত্রীও কিন্তু তোমাকে ঠিক তেমনটাই চায়।

তাই সাবধান থাকবে, তার চাহিদা পূরণে যেন, কোনও অবস্থাতেই, তোমার পক্ষ থেকে বিন্দুমাত্র অবহেলা না হয়।

--------

পঞ্চম: ঘর হলো নারীদের রাজ্য। একজন নারী নিজেকে সব সময় সেই রাজ্যের সিংহাসনে আসীন দেখতে খুবই পছন্দ করে। সে কল্পনায়, স্বপ্নে, বাস্তবে এই রাজ্য নিয়ে ভাবে। সাজায়। রচনা করে।

তুমি খুবই সাবধান থাকবে! কখনোই তোমার স্ত্রীর এই সুখময় রাজত্বকে ভেঙে দিতে যেওনা। এমনকি তাকে তার সিংহাসন থেকে নামিয়ে দেয়ার প্রয়াসও চালাবে না।

তুমি তো জানোই, আল্লাহ তা‘আলার কাছে, সবচেয়ে অপছন্দীয় বিষয় কী?

--- তার সাথে কোনও কিছুকে শরীক করা।

--- হ্যাঁ, ঠিক বলেছো। একজন রাজার কাছেও সবচেয়ে ঘৃণিত বিষয় কী?

--- তার রাজ্যে অন্য কেউ হস্তক্ষেপ করা।

----

ষষ্ঠ: নারীরা তার স্বামীকে মনেপ্রাণে-সর্বান্তঃকরণে প্রবলভাবে কাছে পেতে চায়। পাশাপাশি তার বাপের বাড়িকেও হারাতে চায় না।

হুশিয়ার থেকো বাবা! তুমি ভুলেও নিজেকে আর স্ত্রীর পরিবারকে এক পাল্লায় তুলে মাপতে শুরু করে দিওনা। তুমি এ অন্যায় দাবীও করে বসো না:

--- হয় আমাকে বেছে নাও, নাহলে তোমার বাবা-মাকে।

তুমি এ বিষয়টা এমনকি চিন্তাতেও স্থান দিও না। যদি তুমি তাকে এমনটা করতে বাধ্য করোও, সে হয়তো চাপে পড়ে মেনে নিবে, কিন্তু তার মনের গহীনে কোথাও একটা চাপা-বোবা কান্না গুমরে মরতে থাকবে। তোমার প্রতি এক ধরনের সুপ্ত অশ্রদ্ধা তার কোমল মনে চারিয়ে উঠবে।

------------

সপ্তম: তুমি জান, অনেক শুনেছ, পড়েছ: নারীকে সৃষ্টি করা হয়েছে বাহু (বা পাঁজরের) বাঁকা হাড় থেকে।

এই বক্রতা কিন্তু তার দোষ নয়, সৌন্দর্য। তুমি চোখের ভ্রু লক্ষ করে দেখেছো? সেটার সৌন্দর্যটা কেথায়?

-বক্রতায়।

--- একদম ঠিক কথা। বক্রতাই ভ্রুকে সুন্দর করে তোলে। ভ্রুটা যদি সোজা হতো, দেখতে সুন্দর লাগতো না।

যদি তোমার স্ত্রী কোনও ভুল করে ফেলে, সাথে সাথেই অস্থির হয়ে, রেগেমেগে তাকে হামলা করে বসো না। উত্তেজিত অবস্থায় তাকে সোজা করতে যেয়ো না, তাহলে অতিরিক্ত চাপে ভেঙে যেতে পারে। আর ভাঙা মানে বোঝোইতো: তালাক।

আবার সে অনবরত ভুল করে যেতে থাকলে, কিছু না বলে, ভেঙে যাওয়ার ভয়ে, লাগামহীন ছেড়েও দিও না। তাহলে তার বক্রতা আরও বেড়ে যাবে। সে নিজের ভেতরে গুটিয়ে যাবে। তোমার প্রতি তার আচরণ উদ্ধত হয়ে যাবে। তোমার কথায় কান দিবে না।

--- আমি তাহলে কী করবো?

--- তুমি মাঝামাঝি অবস্থানে থাকবে।

-----------

অষ্টম: তুমি হাদীসটা পড়ো নি?

-কোনটা আব্বাজান?

--- ঐ যে, যার ভাবার্থ হলো:

= নারীদেরকে সৃষ্টি করা হয়েছে এমনভাবে যে, তারা স্বামীর প্রতি অকৃতজ্ঞ হয়। তার প্রতি অতীতে কৃত সদ্ব্যবহার-সদাচার ভুলে যায়।

তুমি যদি তার প্রতি যুগ-যুগান্তরও সুন্দর আচরণ করো, হঠাৎ একদিন কোনোক্রমে একটু রূঢ় আচরণ করে ফেলেছো, ব্যস অমনিই সে নাকের জল চোখের জল এক করে বলবে:

--- আমি তোমার কাছ থেকে কখনোই ভালো কিছু পাইনি।

দেখো বাছা! তুমি তার এই আচরণে রুষ্ট হয়ো না। তার এই চপল স্বভাবের প্রতিক্রিয়ায় তার প্রতি মনে বিতৃষ্ণা এনো না।

তার এই স্বভাবকে তুমি অপছন্দ করলেও, তার মধ্যে তুমি অনেক এমন কিছু পাবে যা তুমি শুধু পছন্দই করো না, তার জন্যে তুমি জানও লড়িয়ে দিতে পারো।

---------------

নবম: নারীদের শরীর-মনের অবস্থা সবসময় এক রকম থাকে না। এক সময় এক রকম থাকে। প্রতি মাসে নির্দিষ্ট একটা সময় তাদের শারীরিক দুর্বলতা থাকে। অনেক সময় মানসিক অস্থিরতাও বিরাজ করে। তাদের এই দুর্বলতা, অসহায় অবস্থার কথা বিবেচনা করে আল্লাহ তা‘আলা তাদের নির্দিষ্ট সময়ের নামায মাফ করে দিয়েছেন। রোযাকে পিছিয়ে দিয়েছেন, তার স্বাস্থ্য ও মেজায ঠিক হওয়া পর্যন্ত।

তুমি তো রাব্বে কারীমের বান্দা। তুমিও তোমার রবের গুণে গুণান্বিত হও। রব্বানী হও। তুমি তোমার স্ত্রীর দুর্বল মুহূর্তগুলোতে তার প্রতি কোমল হবে। তোমার আব্দার-আবেগ শমে রেখো। তোমার রবও খুশি হবেন, তোমার রাব্বাহও খুশি হবে, কৃতজ্ঞ হবে।

-----------

দশম: সব সময় মনে রেখো, তোমার স্ত্রী তোমার কাছে অনেকটা দায়বদ্ধ, বিভিন্নভাবে তোমার মুখাপেক্ষী। তোমার সুন্দর আচরণের কাঙাল। তুমি তার প্রতি যত্নবান হবে, তার প্রতি অনেক বশি মনোযোগ দিবে, তাকে আপন করে নিবে। তাহলে সে তোমার জন্যে শ্রেষ্ঠ সম্পদে পরিণত হবে। তাকে অনুপম সঙ্গী হিসেবে পাবে।

_______

আল্লাহ তায়ালা এই পোষ্টের লেখক,পাঠক ও প্রচারক সবাইকে কবুল করুন,সকলের জন্যই অতিউত্তম ফায়সালা করুন!

Source: Facebook

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

সিঙ্গা লাগানো /হিজামা/ Cupping চিকিৎসা

 সিঙ্গা লাগানো /হিজামা/ Cupping চিকিৎসাঃ একটি আজব চিকিৎসা ব্যাবস্থা। এ সম্পর্কে আমি খুব কমই জানি। এক জায়গায় কিছু লেখা পেলাম তাই পোস্ট করলাম।

 সিঙ্গা লাগানো (হিজামা) – ডক্টর ইব্রাহিম দ্রেমালি (একটি ইসলামিক চিকিৎসা ব্যবস্থা)

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন “ জীব্রাইল আলাইসাল্লাম পুনরায় আমাকে ব্যাপক ভাবে সিঙ্গা লাগানোর ব্যাপারে তাগিত দিলেন এটা আমার উপর ফরজ করা হয়। (জামুল ওয়ারসাই, পৃঃ ১৭৯)

 

রাসুল্লুল্লাহ (সাঃ) একজন ব্যাক্তিকে উৎসাহ দিলেন যিনি সিঙ্গা লাগান, বললেন এটা রক্ত বদল করে, পিঠ আলোকিত করে এবং চোখের জ্যোতি বাড়ায়। (জামুল ওয়ারসাই, পৃঃ ১৭৯)।

 

আরোগ্যতার সবচেয়ে ভালো উপায় হল সিঙ্গা লাগানো।

 

আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “তোমাদের মাঝে প্রতিকারের সবচেয়ে ভালো উপায় হল সিঙ্গা লাগানো ।

 

আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যদি আর কিছু থাকে যা প্রতিকারের জন্য উত্তম ভাবে ব্যবহৃত তা হল সিঙ্গা লাগানো। (আবু দাউদঃ ৩৮৫৭, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৪৭৬)

ফেরেস্তারাও সিঙ্গা লাগানোর জন্য বলতেন।

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, রাসুল্লুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “রাত্রি ভ্রমনে আমি কোন ফেরেস্তাকে অন্য ফেরেস্তা হতে যেতে দেখেনি যে তারা আমাকে বলেনি হে মুহাম্মদ(সাঃ) আপনি সিঙ্গা লাগান”। (সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৪৭৭)।

 

বর্ণনাটি বর্নিত হয়েছে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসু’দ (রাঃ) হতে, ফেরেস্তারা বললেন “ ওহে মুহম্মদ (সাঃ) আপনার উম্মতকে সিঙ্গা লাগাতে আদেশ দিন। (সুনানে তিরমিজীঃ ৩৪৭৮)।

সিঙ্গা লাগানোতেই আছে শেফাঃ

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ননা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “আরোগ্যতা আছে তিনটি জিনিসেঃ কাটা জায়গায় সিঙ্গা লাগানো, মধু পান, উত্তপ্ত লোহা দারা ছেকা দেওয়া, কিন্তু আমি আমার উম্মাহকে উত্তপ্ত লোহা দ্বারা ছেকা দিতে নিষেধ করেছি। (সাহিহ বুখারিঃ ৫৬৮১, সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৪৯১)

 

যাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) বর্ননা করেছন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “বস্তুত, সিঙ্গা লাগানোতেই আছে শেফা”। (সাহিহ মুসলিমঃ ৫৭০৬)

সিং লাগানো একই সময়ে সর্ব রোগের ঔষধঃ

আবু হুরাইরা (রাঃ) বর্ননা করেছন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ১৭তম, ১৯তম, ২১তম দিনে সিঙ্গা লাগাবে(ইসলামিক মাস) তারপর ইহা হবে সর্ব রোগের ঔষধ”। ( সুনদে ইবনে দাউদঃ ৩৮৬১)

সিঙ্গা লাগানো যায়ঃ

মাথা ব্যথায়ঃ সালমা (রাঃ) বর্ননা করেছন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যখন কেউ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে এসে মাথা ব্যথার কথা বলত, তিনি (সাঃ) তাদের সিঙ্গা লাগানোর কথা বলতেন”। (সুনানে আবি দাউদঃ ৩৮৫৮)

 

যাদুঃ ইবনুল কাইয়্যূম (রঃ) মন্তব্য করেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যখন যাদু দ্বারা পীড়িত হন তখন তিনি মাথায় সিঙ্গা লাগান এবং এটাই সবচেয়ে উত্তম ঔষধ যদি সঠিকভাবে করা হয়।( যাদ আল মায়’দঃ ৪/১২৫-১২৬)

 

বিষঃ আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ননা করেছেন যে এক ঈহুদী মহিলা রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে বিষ যুক্ত গোস্ত খেতে দিয়েছিল, তাই তিনি তাকে সংবাদ পাঠিয়ে বললেন “কেন তুমি তা করলে?” মহিলাটি উত্তরে বলল, “যদি তুমি সত্যিই আল্লাহর বার্তা বাহক হও তবে আল্লাহ তোমাকে জানিয়ে দিবেন এবং তুমি যদি তাঁর বার্তা বাহক না হও তবে আমি মানুষকে তোমার থেকে নিরাপদ রাখতাম”! যখন আল্লাহর রাসুল (সাঃ) এর যন্ত্রনা আনুভব করতে লাগলেন, তিনি সিঙ্গা ব্যবহার করলেন। একদা ইহরাম আবস্তায় তিনি ভ্রমনে বের হলেন এবং ঐ বিষের যন্ত্রনা বোধ করলেন তখন তিনি সিঙ্গা ব্যবহার করলেন। ( আহমেদ ১/৩০৫, হাদিসটি হাসানা পর্যায়ের।)

 

জ্ঞান এবং সৃতি বর্ধকঃ ইবনে উমার (রাঃ) বর্ননা করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “খালি পেটে সিঙ্গা লাগানো উত্তম। ইহাতে আছে শেফা এবং আশীর্বাদ স্বরূপ। ইহা জ্ঞান এবং সৃতি শক্তি বৃদ্ধি করে। তাই আল্লাহর ইচ্ছায় তোমরা বৃহস্পতিবার সিঙ্গালাগাও। বুধবার - শুক্রবার সিঙ্গালাগানো থেকে বিরত থাক। তবে শনিবার ও রবিবার এটা নিরাপদ। সোমবার এবং মঙ্গলবার সিঙ্গা লাগাও এই জন্যে যে, এই দিনে আল্লাহ আইয়্যূব (আঃ) কে পরীক্ষা থেকে নিরাপদ করেছিলেন। আর তিনি পরীক্ষায় পতিত হন বুধবারে। তুমি কোন কুষ্ঠ রোগীকে পাবেনা তারা ছাড়া যারা বুধবার অথবা বুধবার রাতে সিঙ্গা লাগায়। (সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৪৪৮৭)

সিংগা লাগানোর সবচেয়ে ভাল দিন

১৭তম, ১৯তম, ২১তম দিনে(আরবী মাস) যা সোমবার, মঙ্গলবার অথবা বৃহস্পতিবারের সাথে একই থাকে। আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) বর্ননা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি সিঙ্গালাগাতে চায়, সে যেন ১৭,১৯,২১তম দিনের জন্য অপেক্ষা করে।(সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৪৮৬)

 

ইবনে উমার (রাঃ) বর্ননা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “খালি পেটে সিঙ্গা লাগানো সবচেয়ে উত্তম, এটা জ্ঞান বৃদ্ধি করে এবং সৃতি শক্তি বাড়ায়। তাই কেউ যদি সিঙ্গা লাগাতে যায় সে যেনো আল্লাহর নামে তা বৃহস্পতিবার করে। শুক্র, শনি, রবিবার সিঙ্গা লাগানো থেকে বিরত থাকো। সোমবার বা মঙ্গলবার সিঙ্গালাগাও। বুধবার সিঙ্গালাগাইওনা এই জন্যে যে, এই দিনে আল্লাহ আইয়্যূব (আঃ) পরীক্ষায় পতিত হন। তুমি কোন কুষ্ঠ রোগীকে পাবেনা তারা ছাড়া যারা বুধবার অথবা বুধবার রাতে সিঙ্গা লাগায়। (সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৪৮৮)

 

ইসলামি দিবস ও রাতের ব্যাপার হল, রাত শুরু হয় দিনের আগে। তাই মঙ্গলবারের সূর্য ডুবলেই বুধবার রাত শুরু হয়। সিঙ্গা লাগানোর ভালো সময় হল দিনের বেলা; সূর্য উঠা ও ডুবার মধ্যবর্তি সময়। কেউ যদি ১৭,১৯,২১ তম(যা সোম, মঙ্গল, বৃহস্পতিবারের সাথে মিলে যায়) দিনে সিঙ্গালাগাতে না পারে তবে তা যেন করে নেয় ঐ মাসের যেকোন সোম, মঙ্গল, বৃহস্পতিবার।

সিয়াম অথবা ইহরাম বাধা অবস্থায় সিঙ্গা লাগানোঃ

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ননা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যখন ইহরাম অবস্থা, তখন একগুঁইয়ে মাথা ব্যাথার জন্য সিঙ্গা ব্যবহার করেন। (আল-বুখারীঃ ৫৭০১)

 

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ননা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সিয়াম অবস্থায় সিঙ্গা লাগিয়াছিলেন। ( আল-বুখারীঃ ৫৬৯৪)

সিঙ্গা করার স্থান

আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) বর্ননা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) হাটুর পাশের ও সর্ব নিচের অংশের শিরায় তিন বার সিঙ্গা লাগিয়েছিলেন। (সুনানে ইবনে দাউদঃ ৩৮৬০, ইবনে মাজাহঃ ৩৪৮৩)

 

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বর্ননা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর মাথায় সিঙ্গা লাগিয়েছিলেন। (আল-বুখারীঃ ৫৬৯৯)

 

আব্দুল্লাহ ইবনে উমার (রাঃ) বর্ননা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) তাঁর মাথায় সিঙ্গা লাগাতেন এবং ইহাকে বলতেন ( মাথার উপরের স্থান) উম মুঘীত। ( সাহীহ আল-জামিঃ ৪৮০৪)

 

জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) বর্ননা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কোমরের নিচের অংশে ব্যাথার কারনে সিঙ্গা লাগাতেন।(সুনানে আবি দাউদঃ ৩৮৬৩)

 

আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) বর্ননা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইহরাম বাধা অবস্থায় পায়ের তলার সবচেয়ে সামনে ব্যাথার কারনে সিঙ্গা লাগাতেন। (সুনানে আবি দাউদঃ ১৮৩৬)

 

ইবনে আল কাইয়্যূম (রঃ) বলেছেন, “ দাঁতে, মুখে এবং গলায় ব্যাথা হলে থুতুনির নিচে সিঙ্গা লাগালে উপকার পাওয়া যায় যদি তা সঠিক সময়ে করা হয়। ইহা মাথা ও চোয়াল শোধন করে।

 

পায়ের সাফিনায় (যা গোরালির বড় শিরা) পাংচারিং করার পরিবর্তে পায়ের পাতার সম্মুখে সিঙ্গা লাগানো যেতে পারে। থাই এবং পায়ের পিছনের মাংসের আলসারের চিকিৎসায় ইহা উপকারি। তা ছাড়া রজঃস্রাবে বাধা ও অন্ড কোষের চামড়ায় ক্ষয়ে তা ব্যবহার যোগ্য।

 

উরুতে ব্যাথা, চুলকানী ও খোঁসপাঁচরার চিকিৎসা হিসেবে বুকের নিচে সিঙ্গা লাগানো উপকারী। ইহা পিঠের গেঁটে বাত, অর্শ, গোদ রোগ, খোসপাঁচড়ার বিরুদ্ধে সাহায্য করে”। (যাদ আল- মা’দ ৪/৫৮)

মহিলাদের জন্য সিঙ্গাঃ

জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) বর্ননা করেছেন, উম্মে সালামা (রাঃ) রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে সিঙ্গা করার জন্য অনুমতি চাইলেন। তাই রাসুল (সাঃ) আবু তীবা (রাঃ)কে আদেশ দিলেন তাকে(উম্মে সালামা রাঃ) সিঙ্গা লাগাতে। জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) বললেন, “আমি মনে করি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এটা বলেছেন যে আবু তীবা হলো তার(উম্মে সালামা) দুধ ভাই অথবা একজন ছুটো বালক যে এখনো বয়ঃসন্ধিকালে পৌঁছেনি। (সাহীহ মুসলিমঃ ৫৭০৮, আবু দাউদঃ ৪১০২, সাহীহ ইবনে মাজাহঃ ৩৪৮০)

 

 

 

 

 

 

 

 

 

'‘ইবনু কাইয়্যাম’’ সহীহ মুসলিমের মাঝেও জাল হাদীসের দাবী করেছেন!!

'‘ইবনু কাইয়্যাম আল জাওযীইয়া (রহ.)’’ সহীহ মুসলিমের মাঝেও জাল হাদীসের দাবী করেছেন!! এ বিষয়ে বর্তমান কথিত আহলে হাদীসদের মতামত জানতে চাই

 

❖বর্তমানে কথিত আহলে হাদীস ভাইদেরকে দেখা যাচ্ছে, ‘‘আল্লামা ইবনে তাইমিয়্যা (রহ.)’’ ও তার বিখ্যাত ছাত্র ‘‘ইবনু কাইয়্যাম আল জাওযীইয়া (রহ.) কে নিয়ে অসংখ্য জায়গায় বাড়াবাড়ি করতে ও তাদের মতামত গ্রহণ করতে। তাই আজ আমি নিম্মে এমন একটি হাদীস উল্লেখ করবো যাকে ‘‘ইবনু কাইয়্যাম আল জাওযীইয়া (রহ.) ‘’ ভুল বলেছেন। অথচ সেটি হলো সহীহ মুসলিম এর বর্ণনা (যেই কিতাবের সমস্ত হাদীস সহীহ বলে উম্মতের বিখ্যাত মুহাদ্দীসগণ ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন)। তাই আমার জানার বিষয় হলো উক্ত হাদীস সম্পর্কে আপনাদের মতামত কি? দেখুন নিম্মে....

✏ সহীহ মুসলিমের বর্ণনা-

صحيح مسلم (4/ 1945)

168 - (2501) حَدَّثَنِي عَبَّاسُ بْنُ عَبْدِ الْعَظِيمِ الْعَنْبَرِيُّ، وَأَحْمَدُ بْنُ جَعْفَرٍ الْمَعْقِرِيُّ، قَالَا: حَدَّثَنَا النَّضْرُ وَهُوَ ابْنُ مُحَمَّدٍ الْيَمَامِيُّ، حَدَّثَنَا عِكْرِمَةُ، حَدَّثَنَا أَبُو زُمَيْلٍ، حَدَّثَنِي ابْنُ عَبَّاسٍ، قَالَ: كَانَ الْمُسْلِمُونَ لَا يَنْظُرُونَ إِلَى أَبِي سُفْيَانَ وَلَا يُقَاعِدُونَهُ، فَقَالَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَا نَبِيَّ اللهِ ثَلَاثٌ أَعْطِنِيهِنَّ، قَالَ: «نَعَمْ» قَالَ: عِنْدِي أَحْسَنُ الْعَرَبِ وَأَجْمَلُهُ، أُمُّ حَبِيبَةَ بِنْتُ أَبِي سُفْيَانَ، أُزَوِّجُكَهَا، قَالَ: «نَعَمْ» قَالَ: وَمُعَاوِيَةُ، تَجْعَلُهُ كَاتِبًا بَيْنَ يَدَيْكَ، قَالَ: «نَعَمْ» قَالَ: وَتُؤَمِّرُنِي حَتَّى أُقَاتِلَ الْكُفَّارَ، كَمَا كُنْتُ أُقَاتِلُ الْمُسْلِمِينَ، قَالَ: «نَعَمْ» قَالَ أَبُو زُمَيْلٍ: وَلَوْلَا أَنَّهُ طَلَبَ ذَلِكَ مِنَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا أَعْطَاهُ ذَلِكَ، لِأَنَّهُ لَمْ يَكُنْ يُسْأَلُ شَيْئًا إِلَّا قَالَ: «نَعَمْ»

অর্থ : ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, মুসলমানরা আবু সুফিয়ানের প্রতি ভ্রুক্ষেপও করতো না এবং তার কাছে বসতোও না। একবার সে নবী (সা.) কে বললো, হে আল্লাহর নবী! তিনটি জিনিস আমাকে দিন। তিনি বললেন : আচ্ছা! সে বলল, আমার কাছে আরবদের সর্বোৎকৃষ্ট ও সর্বাধিক সুন্দরী মহিলা রয়েছে ‘‘উম্মু হাবীবা বিনতে আবু সুফিয়ান (রা.)।’’ তাকে আপনার সাথে বিবাহ দিব। তিনি বললেন : আচ্ছা! সে বলল, মু‘আবিয়াকে আপনার সেক্রেটারী নিযুক্ত করুন। তিন বললেন : আচ্ছা! সে বলল, আমাকে নির্দেশ দিন আমি কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব যেভাবে মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলাম। তিনি বললেন : আচ্ছা! আবূ যুমাইল বলেন, আবূ সুফিয়ান (রা.) যদি নবী (সা.) এর নিকট এগুলো না চাইতেন তাহলে তিনি তাকে এগুলো দিতেন না। কেননা তিনি তার কাছে যা চাইতেন তিনি শুধু হ্যাঁ বলতেন। সহীহ মুসলিম-৪/১৯৪৫, হাদীস-২৫০১।

❀ এখন দেখুন ‘‘ইবনু কাইয়্যাম আল জাওযীইয়া (রহ. ‘’ এর কিতাব থেকে উক্ত হাদীস সম্পর্কে মন্তব্য-

جلاء الأفهام في فضل الصلاة على محمد خير الأنام (ص: 252)

فَالصَّوَاب أَن الحَدِيث غير مَحْفُوظ بل وَقع فِيهِ تَخْلِيط وَالله أعلم

অর্থ : সঠিক কথা হলো উক্ত হাদীসটি সংরক্ষিত নয়! বরং তার মাঝে অনেক গোলমাল হয়েছে..। জালাউল আফহাম-২৫২।

❐ উল্লেখ্য যে ইবনু হাযম (রহ.) উক্ত হাদীসটির সূত্রে বর্ণনাকারী ‘‘ইকরামা ইবনে আম্মার’’ এর কারণে হাদীসটিকে সরাসরী জাল তথা মাওজু বলেছেন। দেখুন আরো বিস্তারিত আল হাদীসুস যয়ীফ হুকমুহু ওয়া ফাওয়ায়েদুহু লি মুহাম্মাদ উবায়দুল্লাহ আল আসয়াদী-৩১-৩২।

✔ অতএব উক্ত বিষয়ে আহলে হাদীস ভাইগণ নিজেদের মন্তব্য জানিয়ে বাধিত করবেন।

✍ ইতি মুফতী মো. ছানা উল্লাহ

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

ক্রেডিট কার্ড হারাম হওয়ার ব্যাপারে একটি পৌস্ট (https://bit.ly/2VPqgy4) দেওয়া পরে সেখানে আসিফ আদনান (Asif Adnan) ভাইয়ের কমেন্টটি এখানে আলাদাভাবে উল্লেখ করা প্রাসঙ্গিক মনে করছি। এর ঠিক পরেই আছে, “ভুল প্রশ্নের ভুল উত্তর” (মূল লেখকঃ মুহাম্মাদ যাহিদ সিদ্দিক মুঘল) বই এর অনুবাদক ইফতেখার সিফাত (Iftekhar Sifat) ভাইয়ের কমেন্টটি। আল্লাহ আমাদের সঠিক পথে থাকার তৌফিক দান করুন।

.

.

.

আমার মনে হয় ক্রেডিট কার্ডকে কেন হারাম বলা হচ্ছে, সেটা বোঝাটা এখানে গুরুত্বপূর্ণ।

.

একদম সিম্পলি বললে, ক্রেডিট কার্ড হল ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে খরচ করা। আপনি ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কিছু কিনলে সেটা ব্যাংক পে করে দেবে, পরে আপনি ব্যাংককে পে-ব্যাক করবেন। পে-ব্যাক করার একটা নির্দিষ্ট টাইম লিমিট থাকবে, এর মধ্যে পে করলে সুদ দিতে হবে না। আর সেই টাইম লিমিট পার হয়ে গেলে সুদ দিতে হবে। আবার ক্রেডিট কার্ড দিয়ে ক্যাশ টাকাও ওঠানো যায়, এক্ষেত্রে সর্বাবস্থায় সুদ দিতে হয়।

.

এখানে ইন্টারেস্টিং একটা বিষয় হল, ক্রেডিট কার্ডের এই শর্ত – নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঋণ ফিরিয়ে দিলে সুদ নেই, সময়ের বেশি লাগলে সুদ দিতে হবে – এটা হুবহু জাহিলিয়্যাহর যুগের রিবার মতো। রিবার অনেক ফর্ম আছে, কিন্তু এটা একেবারে সেই ফর্মটাই যেটা কুরাইশ ও অন্যান্যরা জাহিলিয়্যাহতে বেশি ব্যবহার করতো।

.

যারা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার শর্তসাপেক্ষে হালাল বলেছেন, তাদের যুক্তি হল – যদি আপনি এই নিয়্যাতে ক্রেডিট কার্ড নেন যে টাইম লিমিট শেষ হবার আগেই আপনি ব্যাংককে টাকা ফিরিয়ে দেবেন, তাহলে সেটা জায়েজ হতে পারে। অর্থাৎ আপনার নিয়্যাত থাকবে যে আপনি সুদ দেবেন না, ধরেন ২০ দিন সময় আছে, আপনি ২০ দিনের মধ্যেই ব্যাংকের লোন ফিরিয়ে দিবেন।

.

কিন্তু যারা হারাম বলেছেন তাঁদের বক্তব্য হল – কেউ যখন ক্রেডিট কার্ড নিচ্ছে সে দুটো হারাম কাজ করছে,

.

১) সে রিবার শর্তে একটা চুক্তি করছে। সে মেনে নিচ্ছে যে অমুক সময় পার হয়ে গেলে আমি রিবা দেবো। এটা হারাম

.

২) মিনিমাম টাইম লিমিটের মধ্যে টাকা ফেরত দিতে না পারলে, সে ব্যাংককে সুদ দিচ্ছে। যেটা হারাম।

.

অর্থাৎ এখানে হারাম দুটো। একটা হল সুদের শর্তে চুক্তি করা, আরেকটা হল সুদ দেয়া। দুটোই রিবার ক্বাতী হুকুমের আওতায় পড়ে।

টাইম লিমিট শেষ হবার আগে ঋণ ফিরিয়ে দেবো, এই শর্তেও ক্রেডিট কার্ড জায়েজ না, এটাই বর্তমানের অধিকাংশের বা জমহুরের মত। এর মধ্যে আছে আল-লাজনাহ আদ-দায়িমাহ (নির্দিষ্ট ফতোয়া আছে, স্বাক্ষরকারী শাইখ বিন বায, শাইখ বাকর আবু যাইদ, শাইখ সালিহ আল-ফাওযান, আব্দুল আযীয আলে শাইখ), আনত্ররজাতিক ইসলামিক ফিকহ অ্যাকাডেমি, AAOIFI, ইসলামিক ফিকহ কাউন্সিল ইন্ডিয়াসহ আরো অনেকে।

.

এবং তাদের সবার বক্তব্য মোটামুটি এক – রিবার না দেয়ার ইচ্ছা থাকলেও এটা জাহেলী রিবা। জাহেলি রিবার শর্ত ছিল, এখন আদায় কর, অথবা অতিরিক্ত টাকা দেয়ার শর্তে সময় নাও। ক্রেডিট কার্ড হুবহু তাই। জাহেলি যুগে যারা এমন চুক্তি করতো, তাদের অনেকে তো নির্ধারিত সময়ের আগে টাকা ফিরিয়ে দিতো। অর্থাৎ অনেক গ্রাহককে রিবা দিতে হতো না। কিন্তু কুরআনের হুকুমে এক্সসেপশান করা হয়নি। বরং ইন জেনারেল এই প্র্যাকটিসকে হারাম বলা হয়েছে। রিবার শর্তে চুক্তি করা হারাম, সেটা আপনার দিতে হোক বা না হোক।

.

এমনকি যারা এই শর্তে ক্রেডিট কার্ডকে জায়েজ বলেছেন তারাও অনেক শর্ত দিয়েছেন। যেমন মাওলানা তাকী উসমানী বলেছেন –

 

ডেবিট কার্ডের যদি ব্যবস্থা না হয়…আবার এদিকে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের তীব্র প্রয়োজনীয়তাও দেখা দেয় তাহলে আশা করা যায়, মিনিমাম ডিউতে বিল শোধ করে দিবে এ নিয়তে উক্ত চুক্তিতে আবদ্ধ হয়ে ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ করলে আল্লাহর নিকট সে মাযুর হিসাবে গণ্য হবে। এটি তখনি হবে যখন সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হবে যেন সুদ দিতে না হয়। (কিতাবুল বুয়ূ, পৃ. ৪৬৩)

.

দেখুন উনিও বেশ কয়েকটা শর্ত দিয়েছেন –

১) ডেবিট কার্ড পাওয়া যাচ্ছে না

২) তীব্র প্রয়োজনীয়তা

৩) সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন

.

যারা এসব ফতোয়াকে ঢাল বানিয়ে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে তাদের কয়জন এগুলো মানে? এবং মাওলানা তাকী উসমানীর ভাষা খেয়াল করুন, ‘জায়েজ হতে পারে’, ‘আশা করা যায়…সে আল্লাহর নিকট মাযূর গণ্য হবে।‘ অর্থাৎ আপনার ওজর স্পষ্ট, বাস্তব এবং শক্ত হতে হবে।

.

এখন তীব্র প্রয়োজন কী কন্সটিউট করে, এটা আগে একটা স্পষ্ট বিষয় ছিল, এখন এটা ঘোলাটে হয়ে গেছে। তীব্র প্রয়োজন দেখা দিলে মদও খাওয়া যায়, শূকরের মাংসও খাওয়া যায়। কিন্তু সেটা কোন ধরণের প্রয়োজনীয়তা এটা বোঝা দরকার।

.

এসি কেনা, গাড়ি কেনা, বাড়ি কেনা – এগুলোও এখন তীব্র প্রয়োজনীয়তা বানিয়ে ফেলা হয়েছে। যদিও ক্লাসিকাল সেন্সে এগুলো কোন ভাবেই তীব্র প্রয়োজনের ভেতরে পড়ে না।

.

এমন হাউস হোল্ড আছে, যাদের মাসিক ইনকাম হল ৭৫ হাজার টাকা, কিন্তু ২টা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে তারা দিব্যি মাসে ১ লাখ টাকা খরচ করছে। বেতনের টাকা দিয়ে এক ক্রেডিট কার্ডের ডিউ শোধ করে, এ ক্রেডিট কার্ডের টাকা দিয়ে আরেক ক্রেডিট কার্ডের ডিউ শোধ করে। এখানে তীব্র প্রয়োজনীয়তা কিভাবে আসে?

.

বাংলাদেশের মতো দেশে ক্রেডিট কার্ড কোন অর্থেই তীব্র প্রয়োজনীয়তার মধ্যে পড়ে বলে সুস্থ মস্তিস্কে আরগু করা যায় না।

.

আর যারা স্বেচ্ছায় কুফফারের দেশে গিয়ে থাকে তাদের ক্ষেত্রেও তীব্র প্রয়োজনীয়তার অজুহাত দেয়া নিজের বর্তমানকে জায়েজ করার হাস্যকর প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছু হয় না। কারণ ইন দা ফার্স্ট প্লেইস ওখানে যাওয়াই তো জায়েজ না, কেবল শর্তসাপেক্ষে সাময়িকভাবে জায়েজ হতে পারে। এদের অজুহাতগুলো ঐসব ছেলেদের মতো যারা ক্লাস টেনে ওঠেও রোযা রাখতো না আর বলতো পরীক্ষা আছে তাই আম্মু রোযা রাখতে দেয়নি। বা আমার আজকে খেলা আছে তাই রোযা রাখিনি। তারপর সে বুঝাতো যে খেলার জন্য কেন রোযা রাখা সমস্যা।

.

আর যারা আইনি কিংবা এরকম বিভিন্ন জটিলতার কারণে যেতে বাধ্য হয়েছে তাঁদের কথা আলাদা। কার্ড ব্যবহার করা আবশ্যিক হয়ে দাড়ালে ডেবিট কার্ড ব্যবহার করা যেতে পারে। ওয়েস্টে ডেবিট কার্ডও আছে। তবু ক্রেডিট কার্ড কেন নিতে হবে? কারণ ডেবিট কার্ডে খরচ করা হয় নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে, অ্যাডিশানাল বেনেফিট হল কার্ড ফ্যাসিলিটি। আর ক্রেডিট কার্ডে আপনি অ্যাডিশানাল টাকা পাচ্ছেন। ঋণ পাচ্ছেন। আপনার কনসাম্পশানের সামর্থ্য বাড়ছে। মানে হারাম বললে আরাম নাই। মূল ইস্যুটা এ জায়গায়। বাংলাদেশী বলেন আর ফিরিঙ্গিদের সাথে থাকে দেশী বলেন।

.

সুদ না দেয়ার নিয়্যাতে চুক্তি করার ব্যাপারটা সম্পর্কে আরেকটু বলা যাক।

আমাদের কাছে তো আজকাল রিবা হালকা হয়ে গেছে, তাই আমি একটা উদাহরণ দেই যাতে করে বিষয়টা বোঝা সহজ হয়। ক্রেডিট কার্ডের পেছনের শর্তটা এভাবে লেখা যায় –

 

‘তুমি নির্ধারিট টাইম লিমিটের মধ্যে টাকা ফেরত দিবে নইলে তোমাকে X করতে হবে’।

.

এই চুক্তিতে X হল সুদ দেয়া। এখন এখানে X হিসেবে সুদের জায়গায় অন্য কোন হারাম কাজ বসিয়ে চিন্তা করেন, যে এটা জায়েজ বলা যায় কি না। কিছু ক্রুড এক্স্যাম্পল দেই যাতে জিনিষটা বুঝতে কোন অস্পষ্টতা না থাকে।

.

আপনাকে শর্ত দেয়া হল,

.

‘তুমি নির্ধারিট টাইম লিমিটের মধ্যে টাকা ফেরত দিবে নইলে আমাকে তোমার স্ত্রীর সাথে যিনা করতে দিতে হবে’

.

‘তুমি নির্ধারিট টাইম লিমিটের মধ্যে টাকা ফেরত দিবে নইলে তোমাকে তোমার মা-র সাথে যিনা করতে হবে’

.

‘তুমি নির্ধারিট টাইম লিমিটের মধ্যে টাকা ফেরত দিবে নইলে তোমার মেয়ে আমার চেনা এক লোকের সাথে যিনা করতে পাঠাতে হবে’

.

চিন্তা করে দেখুন যে ওপরের শর্তে কারো কাছ থেকে ঋণের চুক্তি করা জায়েজ হয় কি না। ধরুন আপনার নিয়্যাত আছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকা ফিরিয়ে দেয়ার, সেই ক্ষেত্রেও কি এমন চুক্তি করা জায়েজ হবে কি না।

.

আপনি অন্য যেকোন কবীরা গুনাহর কথা বসিয়ে চিন্তা করতে পারেন। এবং মাথায় রাখেন যে ওপরের যেকোন গুনাহর চেয়ে রিবা আরো বেশি গুরুতর। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা যেভাবে রিবার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন সেটা অন্য গুনাহর ক্ষেত্রে করেননি-

.

হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যা অবশিষ্ট আছে, তা পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা মুমিন হও। কিন্তু যদি তোমরা তা না কর তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা নাও… (আল বাক্বার, ২৭৮, ২৭৯, তরজমা)

.

এই যুদ্ধের ঘোষণা মাথায় রেখে আবার চিন্তা করুন।

 

(আসিফ আদনান ভাইয়ের কমেন্ট এখানেই শেষ)

 

.

.

.

.

এরপর ইফতেখার সিফাত ভাইয়ের কমেন্ট এখানে...

.

প্রথমত মুসলিমদের পলিসি হবে এমন যে, শরীয়াহ কী চায়? এটা কোনভাবে বৈধ কি না এটা মুসলিমদেরর স্বাভাবিক পলিসি হতে পারে না। হারাম না হলেই সব কাজ আমভাবে করা হবে এটা ভুল দর্শন। ইমাম গাজ্জালি এ ব্যাপারে খুব সুন্দর বলেছেন। তালাক ও কিন্তু বৈধ, কিন্তু কাম্য না শরীয়তে। এরকম আরো অনেক দৃষ্টান্ত দেয়া যাবে।

.

বর্তমান অর্থনীতি সংশ্লিষ্ট অনেক কিছুর ব্যপারে ক্লাসিকাল হারামের ফতোয়া লাগানো মুশকিল। তবে হারামের ফতোয়া না জানলেও আমাদের বাস্তবতা অনুধাবন করতে হবে। কোন সিস্টেম সমাজে কীসের প্রচলন করছে ব্যাপকভাবে? উক্ত সিস্টেমের আওতায় অধিকাংশ মুয়ামালা কেমন হচ্ছে? এর উদ্দেশ্য কী? নানান বিষয় মুসলমানদের ভালভাবে বুঝতে হবে। এটা তো কারেন্সী, সহ কিছু বিষয়ের ক্ষেত্রে প্রজোয্য। কিন্তু ক্রেডিট কার্ড তো এর থেকেও আলাদা যে, এর ব্যাপারে ক্লাসিক্যাল ফতোয়াও আছে। অল্প কয়েকজন যে বৈধতার ফতোয়া দিয়েছেন তাঁরাও নানান শর্ত দিয়েছেন। এটাকে জেনারেল করা শরীয়ার সীমা বিনষ্ট করা।

.

ফিকহের প্রসিদ্ধ মূলনীতি হল, للأكثر حكم الكل তথা অধিকাংশের ফলাফলের ভিত্তিতেই হুকুম প্রদান করা হবে। তো ক্রেডিট কার্ডের সার্বজনীন ফলাফল এটাই যে, সুদের প্রচলন হওয়া। এটাই বাস্তবতা। এই বাস্তবতা বুঝতে আমাকে লাল চামড়ার দেশে থাকতে হবে না।

.

ইসলামের চাহিদা হল, শুধু সুদের টাকা না খাওয়া না, কোনভাবেই সুদের সাথে না জড়ানো। যেই সুদের বিরুদ্ধে আল্লাহ যুদ্ধ ঘোষণা দিয়েছেন, সেখানে পার্থিব উন্নতি আর খাহেশাত পূরণের জন্য সুদী সিস্টেমকে ডেভেলপ করা কতটা মারাত্মক। বিলাস বহুল জীবন যাবন, খাহেশাত পূরণ, টাকা সামান্য বেশি খরচ হওয়া শর'য়ী ওজর না। যারা বৈধ বলেছেন, তারাও একান্ত বাধ্য হলে ব্যবহার করলে বৈধতার আশা প্রকাশ করেছেন। এখন বাধ্যতার সেই সীমা ঠিক করবে শরীয়ত,আপনার নফস না।

.

মোদ্দা কথা, গঠনগত এবং মূলগতভাবেই এই কার্ড হারাম যেমন শুয়োর হারাম। কিন্তু মারা যাওয়ার আশংকা হলে যেমন শুয়োর খাওয়া যায়, এরকম বাধ্য যদি হয়েই পড়েন তখন এই কার্ড ব্যবহার করা যেতে পারে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

আহলে হাদিসদের প্রশ্ন ও উত্তর

লা-মাজহাবী / আহলে হাদিস লিডারদের ৪১টি প্রশ্নের. দাঁতভাঙ্গা জবাব !!!!

 

 

১। মাযহাব কাকে বলে???

 

উত্তর : মাজহাবের সংগা !

২। মাযহাবের শাব্দিক অর্থ কি??????

উত্তর : মাজহাব মানে মতামত, বিশ্বাস, ধর্ম, আদর্শ, পন্থা, মতবাদ, উৎস।

মিসবাহুল লুগাত (থানবী লাইব্রেরী-২৬২ পৃষ্ঠা)

 

৩।প্রচলিত চার মাযহাব মান্য করা কি ফরয?

 

 উত্তর : প্রচলিত ৪ মাজহাবের এক মাজহাব মানা ওয়াজিব !

৪। যদি ফরয হয়ে থাকে তা হলে এই ফরযটি উদ্ভাবন করল কে?

 

উত্তর : মহা গ্রন্থ আল কুরআন ! বিস্তারিত লিঙ্কে দেখুন , তাকলীদ করা ওয়াজিব কিভাবে? https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=523150701164307&substory_index=0&id=269835689829144

 

৫। ইহা কি সকলের জন্যই?

 

উত্তর : না সকলের জন্য নয় , বরং যার মাঝে ইজতেহাদ করার যোগ্যতা নাই তার জন্য তাকলিদ করা ওয়াজিব !

বিস্তারিত 1নং উত্তরে দেখুন !

 

৬। না কিছু লোকের জন্য?

উত্তর : ১ নং ও ৫ নং প্রশ্নে জবাব দেওয়া হয়েছে !

৭। যারা চার মাযহাব মানে না, তারা কি মুসলমান নয়?

উত্তর : যার যে ইজতেহাদের যোগ্যতা না থাকা সত্তেও এই ৪ মাজহাব মানে না সে গুমরাহ !

 

৮। হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী হাম্বলী এই চার মাযহাব কখন সৃষ্টি হয়েছে?

উত্তর : ১০০ হিজরীর পরে !

 

৯। কে সৃষ্টি করেছে?

 

উতর :: সৃষ্টি হওয়ার জন্য ظرف / مظروف এর প্রয়জন যেহেতু মাজহাব কুনো ظرف / مظروف নয় বরং মুজতাহিদ ইমামগণের মত তাই এটা কে সৃষ্টি করেছে এই রকম প্রশ্ন মুর্খ ছাড়া আর কেউ করতে পারে না !

১০। কেন করেছে?

 

উত্তর : মাযহাব পালনের কথা এই জন্য বলা হয় যে, যেহেতু কুরআন সুন্নাহ সম্পর্কে আলেম খুবই নগণ্য। যারাও আছে তারা কুরআনে কারীমের কোন আয়াতের হুকুম রহিত হয়ে গেছে, কোন আয়াতের হুকুম বহাল আছে, কোন আয়াত কোন প্রেক্ষিতে নাজিল হয়েছে, কোন আয়াত কাদের উদ্দেশ্য করে নাজিল হয়েছে। কোন আয়াতাংশের প্রকৃত অর্থ কি? আরবী ব্যাকরণের কোন নীতিতে পড়েছে এই বাক্যটি? এই আয়াত বা হাদীসে কী কী অলংকারশাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে? ইত্যাদী সম্পর্কে বিজ্ঞ হন না। সেই সাথে কোনটি সহীহ হাদীস কোনটি দুর্বল হাদীস? কোন হাদীস কি কারণে দুর্বল? কোন হাদীস কী কারণে শক্তিশালী? হাদীসের বর্ণনাকারীদের জীবনী একদম নখদর্পনে থাকা আলেম এখন নাই। অথচ হাদীসের বর্ণনাকারী শক্তিশালী না হলে তার দ্বারা শরয়ী হুকুম প্রমাণিত হয়না।

এই সকল বিষয়ে প্রাজ্ঞ ব্যক্তি পাওয়া যাওয়া দুস্কর। একেতু অধিকাংশ মানুষই আলেম না। আর মুষ্টিমেয় যারা আলেম তারাও উল্লেখিত সকল বিষয় সম্পর্কে প্রাজ্ঞ নয়। তাই আমাদের পক্ষে কুরআন সুন্নাহ থেকে সঠিক মাসআলা বের করা অসম্ভব।

 

১১। ইহা করা এবং মানার জন্য কি আল্লাহএবং রসুলের নির্দেশ আছে?

 

উত্তর : বিস্তারিত লিঙ্কে দেখুন !

 

১২। যাদের নামে মাযহাব সৃষ্টি করা হয়েছে তারা কি এই মাযহাবগুলি বানিয়ে নিতে বলেছেন?

 

উত্তর : মাজহাব অর্থ মত , আর কুরআন হাদিসের ইখ্তেলাফী মাসাইল গুলির সঠিক সমাধান তারা নিজেদের জীবনে অনেক মুযাহেদা করে দিয়ে গেছেন তাই এই মত গুলি ই তাদের বানানো , যার পিছনে রয়েছে মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিনের বিশেষ মেহেরবানী !

 

১৩। রাসূল (সঃ) এবং তার সাহাবীগনের মাযহাব কি ছিল?

 

উত্তর : মাযহাব কি রাসূল,সাহাবী এবং তাবেঈ কারো মানার দলীল আছে?

তবে সকল সাধারন সাহাবী পুরানো আর উচু সাহাবীদের অনুসরন করে গেছেন। নিজ নিজ ধারনা তৈরি করেন নাই।

 

১৪। উহা কি এখনও প্রচলিত আছে? নাকি বন্ধ হয়ে গেছে?

উত্তর : প্রশ্ন কারী কি ভাত খায় নাকি অন্য কিছু খায় ?

 

১৫। বন্ধ হলে কে বন্ধ করল?

উত্তর : বুদ্ধিমানের জন্য ইশারায় যতেষ্ঠ

১৬। কেন করল?

উত্তর : করা দীন বন্ধ কারী ?

 

https://www.facebook.com/permalink.php?story_fbid=466859336793444&id=269835689829144&substory_index=0

 

১৭। বন্ধ করার অধিকার কে দিল?

 

উত্তর : নিচের লিঙ্কের বক্তার কাছ থেকে জেনে আসুন যে দিনকে বন্ধ করার ও নতুন ধর্মে আবিস্কারের অধিকার তাকে কে দিলো?

https://m.facebook.com/groups/213856132105898?view=permalink&id=312818718876305

 

১৮। আর যদি বন্ধ না হয়ে থাকে, তবে অন্যের নামে মাযহাব সৃষ্টি করার প্রয়োজন কি?

উত্তর : মাযহাব ও তার অপরিহার্যতা https://www.facebook.com/permalink.php?story_fbid=159729777544745&id=139546676229722&substory_index=0

 

১৯। চার মাযহাব মান্য করা ফরয হলে যারা চার মাযহাব মানেন না অথবা চার মাযহাব সৃষ্টি হওয়ার আগে যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের উপায় কি?

জবাব : ছিহাহ ছিত্তাহ অর্থাত বুখারী ,মুসলিম ,আবুদাউদ ,তিরমিজি ,নাসায়ী ,ইবনে মাজাহ না মানলে যদি কেউ কাফির হয়ে যায় তাহলে এই কিতাব গুলি লিখার আগে যারা মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের উপায় কি?এই প্রশ্নের যেই জবাব উপরের প্রশ্নের একই জবাব !

 

২০। (নাউযুবিল্লাহ) তারা কি দোযখী হবেন?

 

উত্তর : নাউজুবিল্লাহ যারা সিহাহ সিত্তাহ পায় নাই তারা কি দুজখী ?

এই প্রশ্নের যেই জবাব উপরের প্রশ্নের একই জবাব !

 

২১। ইমাম চার জন কোন মাযহাব মানতেন?

উত্তর : বিস্তারিত লিঙ্কে দেখুন !

 

https://www.facebook.com/permalink.php?story_fbid=334849963327716&id=269835689829144&substory_index=0

 

২২। তাদের পিতা-মাতা, ওস্তাদ মণ্ডলি ওপূর্বপুরুষগণ কার মাযহাব মেনে চলতেন?

 

উত্তর :ছিহাহ ছিত্তা লিখনে ওয়ালাদের বাপদাদা ওস্তাদ মণ্ডলি ও পূর্ব পুরুষরা কুন হাদিস পড়তেন ?

এই প্রশ্নের যেই জবাব উপরের প্রশ্নের একই জবাব !

 

২৩। সেই মাযহাব কি এখন মানা যায় না?

 

উত্তর : বুখারী মুসলিম ও হাদিসের কিতাবগুলি না মেনে যদি আগের যুগের মনিষীদের মত চলি তাহলে কি হবে না ?  এই প্রশ্নের যেই জবাব উপরের প্রশ্নের একই জবাব !

 

২৪। ঈমানদারীতে ও কুরআন হাদীসের বিদ্যার চার ইমাম শ্রেষ্ঠ ছিলেন না চার খলীফা?

 

উত্তর : চার খলীফা শ্রেষ্ঠ ছিলেন !

২৫। যদি খলীফাগণ শ্রেষ্ঠ হয়ে থাকেন তবে তাদের নামে মাযহাব হল না কেন?

 

উত্তর : বিস্তারিত লিঙ্কে দেখুন !

https://www.facebook.com/permalink.php?story_fbid=277952025700230&id=169120376583396&substory_index=0

 

২৬। তারা কি ঈমামগণ অপেক্ষা কম জ্ঞানীরা যোগ্য ছিলেন?

 

উত্তর : কখনও নয় !

 

২৭। নবীর নামে কালেমা পড়বে, ইমামদের নামে মাযহাব মানবে আর পীর-ফকিরদের তরিকা মত চলবে এই নির্দেশ কুরআন হাদীসের কোথায় আছে?

 

উত্তর : নবীর কালিমা ও নবীর আনীত দিনের নামই হচ্ছে মাজহাব ! লিঙ্ক দেখুন।

 

২৮। আল্লাহর নবীর কি মাযহাব বা তরীকা নাই?

 

উত্তর : আল্লাহর নবীর তরিকাই হচ্ছে মাজহাব বিস্তারিত লিঙ্কে দেখুন !

 

http://www.alkawsar.com/article/338

 

http://www.alkawsar.com/article/87

 

২৯। সেই মাযহাব বা তরীকা কি যথেষ্ট নয়?

 

উত্তর : উপরের লিংক দুটি পড়ে এবার আপনি বলুন নবীর আনীত সেই দিন ও মাজহাব কেন যতেষ্ট হবে না !

 

৩০। নবীর প্রতি ইসলাম কি পরিপূর্ণ করাহয় নাই?

 

৩১। রাসুলুল্লা (সঃ) কি কামেল নবী নন?

 

৩২। ইসলাম কি মুকাম্মাল ধর্ম নয়?

উত্তর : উপরের ৩ টি প্রশ্নের (30-31-32) আকিদা একমাত্র ফির্কায়ে আহলে হাদিস ও শিয়ারা ছাড়া কুনো মুসলমান রাখে না !

 

৩৩। ইসলাম পূর্ন পরিনত এবং নবী মুহাম্মাদ (সঃ) কামেল হয়ে থাকলে অন্যের মত ও পথ মান্য করার অবকাশ কোথায়?

 

উত্তর : চার মাজহাব আলাদা কুনো পথ বা মতের নাম নয় বরং ৪ মাজহাব হচ্ছে কুরআন হাদিস ভিত্তিক একটি পথ !

বিস্তারিত দেখুন লিঙ্কে !

https://www.facebook.com/permalink.php?story_fbid=159914050859651&id=139546676229722&substory_index=0

 

৩৪। যারা পূর্ণ পরিনত ইসলাম এবং কামেল নবীকে অসুম্পূর্ণ প্রমান করে অন্যের দ্বারা তা পূর্ণ করার স্বপ্ন

দেখেছে, তারা কি কুরআন ও হাদীসের বিরোধিতা করছে না?

 

উত্তর : কামেল দীন ও নবী আ: কে উপেক্ষা করে কারা কুরআন হাদিসের বিরুধিতা করছে ?

 

দেখে আসুন লিঙ্কে !

বাতিল ফিরকা নামধারী আহলে হাদিস খালাফীদের কুরআন হাদিস বিরুধী ভ্রান্ত আকিদা !

 

৩৫। যে দলটি মুক্তি পাবে বলে নবী (সঃ) সুস্পষ্টভাবে ঘোষনা করেছেন- সেই নাযাত প্রাপ্ত দল চার মাযহাবের কোনটি?

 

উত্তর : তাহলে আসুন আমরা দেখি হাদিসে বর্ণিত ما انا عليه واصحابي সেই দল কারা ?

 

আহলে ছুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারী কারা ?

 

https://www.facebook.com/permalink.php?story_fbid=482566408556070&id=269835689829144&substory_index=0

 

 

নামদারী আহলে হাদিসরা যে কারনে নিজেদের আহলে সুন্নাহ বলে দাবী করতে পারবেনা !

 

https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=317082498453849&substory_index=0&id=169120376583396

 

৩৬। বেহেস্তের পথ বা সিরাতুল মুস্তাকীম বুঝাবার জন্য নবী (সঃ) একটি সরল রেখা অঙ্কন করে বললেন, ইহা আল্লাহর পথ। তোমরাইহার অনুসরণ কর। তৎপর ঐ সরল রেখাটির ডানে ও বামে কতকগুলি রেখা আঁকলেনএবং বললেন, এই পথ গুলির প্রত্যেকটির একটি করে শয়তান আছে। তারা নিজ নিজ পথের দিকে ডাকছে। তোমরা ঐ পথ গুলির অনুসরণ করিও না। যদি কর, তা হলে তারা তোমাদিগকে সরল পথ হতে বিভ্রান্ত করে ফেলবে-(মিশকাত)।এই হাদিস অনুযায়ী রসুলের (সঃ)পথ সিরাতুল মুস্তাকীম ব্যতীত অন্য পথগুলি কি শয়তানের পথ নয়?

 

>>উত্তর: সেই রেখা টানা সিরাতুল মুস্তাকিমের অনুসারী কারা ???????

বিস্তারিত লিঙ্কে দেখুন !

https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=524074291071948&substory_index=0&id=269835689829144

 

৩৭। কালেমা পড়া হয় নবী (সঃ) এর নামে, কবরে রাখা হয় নবীর(সঃ) তরীকায়, কবরে জিজ্ঞাসা করা হবে নবীর (সঃ) কথা, হাশর ময়দানেও নবীর(সঃ) শাফায়াত করবেন- সেই মহা নবী (সঃ)এর তরীকা বাদ দিয়ে অন্যের তরিকা মানলে নাজাত পাওয়া যাবে কি?

উত্তর : কারা রাসুল স: এর তরিকা বাদ দিয়ে কাফিরদের তরিকা অনুসরণ করে একটু দেখে আসুন !

 

 

Part (2)

 

http://www.facebook.com/groups/213856132105898/permalink/243219615836216/

 

৩৮। বাংলাদেশে মাযহাব ও পীরের অন্ত নাই; যত পীর তত তরীকা। পীর সাহেবরা আজকাল কেবলা বানিয়ে নিয়েছে। মানুষ কি মানুষের কেবলা হতে পারে?

 

উত্তর : বাংলাদেশের বেদাতি মাজার পুজারী বেরলভী ও অস্থানাদারী ভন্ড পীরদের সাথে হানাফি মাজহাবের কুনো সম্পর্ক নাই !

বিস্তারিত লিঙ্কে দেখুন !

 

https://m.facebook.com/photo.php?fbid=490999211031720&id=100003649353268&set=a.102153639916281.1601.100003649353268

 

৩৯। তারা তাদের আস্তানাগুলিকে দায়রাশরীফ, খানকা শরীফ, মাযার শরীফ, ওরশ শরীফ, উরসেকুল প্রভৃতি নাম দিয়ে মুসলমানদের তীর্থস্থান মক্কা শরীফ ও মদীনা শরীফের অবমাননার অপচেষ্টায় মেতে উঠেছে।

 

উত্তর : ওরস শরীফ , মাজার শরীফ , খানকা শরীফ , দরবার শরীফ বানিয়ে ভন্ডরা যে ভাবে মুসলমানদের মক্ষা মদিনা থেকে দুরে রাখছে !

একই ভাবে ফির্কায়ে আহলে হাদিসরাও মসজিদের নামে নিজেদের ধর্মীয় উপাসনালয় বানিয়ে মসজিদের সাইন লাগিয়ে মানুষকে ধুকা দিচ্ছে !

প্রমান দেখুন লিংকে !

https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=317699295058836&id=169120376583396

 

৪০। এগুলি কি দ্বীন ও শরিয়তের নামে ভণ্ডামি নয়?

 

উত্তর : ১০০% ভন্ডামি , তবে ফির্কায়ে আহলে হাদিসের এই ধুকাবাজি মুনাফিকীর সমান !

কারণ ভন্ডরা মসজিদের নাম প্রতারণা করছে না যেভাবে করছে ফির্কায়ে আহলে হাদিস !

প্রমান উপরের লিংকে দেখুন !

 

৪১। মুসলমানদের আল্লাহ এক, নবী এক, কুরআন এক, কেবলা এক এবং একই তাদের ধর্মকর্ম রীতি-নীতি। সুতরাং তাদের মুক্তি ও কল্যাণের পথ হচ্ছে মাত্র একটিই। যা ইসলাম, সিরাতে মুস্তাকীম বা তরিকায়ে মুহাম্মাদী। >>উত্তর : ১০০% right কিন্তূ এই সিরাতে মুস্তাকিম থেকে বের হয়ে ফির্কায়ে আহলে হাদিস ১৬৪ ফিরকার ভাগ হয়ে আজ দুনিয়ার মুসলমানদের ইমান নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে !

 

https://www.facebook.com/permalink.php? story_fbid=179259792258410&id=139546676229722&substory_index=0

 

আল্লাহ এইসব ফিতনাবাজ আহলে হাদিস নামক দাজ্জাল ও কাজ্জাবদের হাত থেকে মুসলিম উম্মাহকে হেফাজত করুন !

 

امين يا رب العالمين

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

বছরখানেক পূর্বে আমরা কজন একটি মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণ করেছিলাম। তো সঞ্চালক উপস্থিত সকলকে ধারাবাহিকভাবে অনুরোধ করছিলেন সংশ্লিষ্ট বিষয়ে তাদের অভিমত উপস্থাপন করতে।

 

উপস্থিত অধিকাংশ লোক দাঁড়িয়ে বিনয়ের নামে যে ভনিতার আতিশয্য দেখালেন তা ছিল সত্যিই অত্যন্ত বিরক্তিকর। উপস্থিতদের মধ্যে কজন জ্ঞানীগুণী ব্যক্তিও ছিলেন। বাকিরা ছিলেন তাদের অনুসারী কিংবা শাগরেদ শ্রেণির।

 

সঞ্চালক বারবার বক্তব্য সংক্ষিপ্ত করার তাগাদা দিচ্ছিলেন। কিন্তু প্রায় সকলেই উঠে কথা শুরু করার পূর্বে বেশ কিছু সময় ব্যায় করলেন এ বিষয়ে তার কথা বলার অযোগ্যতা এবং উপস্থিত গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সামনে তার বক্তব্য দেওয়া যে একেবারেই ধৃষ্ঠতা তা প্রকাশ করার জন্য। এবং তারপর শুরু করলেন অল্প কথাকে টেনে লম্বা করার অদ্ভুত প্রদর্শনী। পনের সেকেন্ডে কহনযোগ্য বক্তব্যকে কি চমৎকারভাবে তারা পনের মিনিটের বক্তব্যে পর্যবসিত করলেন তা অনুপস্থিতদের পক্ষে বোঝা অসম্ভব।

 

বক্তব্য উপস্থাপনের এই রীতি অনুসরণের পেছনে যে জিনিসটি অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে তা হলো তাদের বিনয়। তারা মনে করেন এভাবে কথা বলাটা একটা বিনয় প্রদর্শন।

 

আলোচিত বক্তাগণই কেবল নন, আমাদের অনেক ইসলামি ধারার লোকদের মধ্যে বিনয়ের ব্যাপারে এমন একটা ন্যারেটিভ তৈরি হয়েছে যেটাকে সত্যিকার অর্থে বিনয় নয়, বরং ভণিতা বলেই সাব্যস্ত করা উচিত।

 

পক্ষান্তরে অন্য অনেক শ্রেণির মধ্যে গড়ে উঠেছে স্পষ্টবাদিতার নামে আদবহীনতা। সত্য প্রকাশ, সত্য প্রচার, সমাজ সংস্কারের নামে চলছে ভয়ানক আদবহীনতার এক অশুভ চর্চা। এর মাধ্যমে উম্মাহর মধ্যে এমন একটি প্রজন্ম গড়ে উঠছে যারা ইলমের নয় কিছু তথ্যের ধারক। আদব-আখলাকের ঘাটতি, উত্তম চরিত্র, উত্তম ব্যবহার ও দরদহীনতার অভাবে ‘দীন’ তাদের কল্যাণে দিনদিন দীন হয়ে যাচ্ছে।

 

উম্মাহর শ্রেষ্ঠ প্রজন্ম আল্লাহর রাসূলের সাহাবিদের চরিত্র-বৈশিষ্ট্যের ব্যাপারে আবদুল্লাহ ইবন মাস‘ঊদ (রা.) তার মুল্যায়নে যে কালজয়ী মন্তব্য করেছিলেন তাতে তিনি বলেছিলেন, “তাদের অন্তর ছিল পরিচ্ছন্ন, জ্ঞান ছিল গভীর, ভণিতা ছিল কম।” আমরা ঠিক যেন এর উল্টোটাকেই আদর্শ বানিয়েছি। আমাদের অন্তরগুলোর অবস্থা আল্লাহই ভালো জানেন; জ্ঞানের অবস্থা তথৈবচ, ভণিতায় আমাদের জুড়ি মেলা ভার।

 

আমরা আজ যেন কোনো ব্যাপারেই মধ্যমপন্থা অবলম্বন করতে পারছি না; হয় ইফরাত নয় তাফরিত। বাড়াবাড়ি, নয় ছাড়াছাড়ি। আমরা স্পষ্টবাদিতা আর বেয়াদবির পার্থক্য করতে পারি না। আমরা বিনয় আর ভণিতার তফাৎ বুঝি না। আমরা আত্মবিশ্বাস আর অহংকারের সূক্ষ্মতা ধরতে পারি না। আমরা উচ্ছ্বলতা আর উচ্ছৃঙ্খলতার ফারাক জানি না।

 

আমরা যদি সত্যিই নিজেদের এই পরাজিত, লাঞ্ছিত জীবন থেকে বের করে আনতে চাই, বিজয়ী জাতি হিসেবে পুনরায় জেগে উঠতে চাই তাহলে এসব ব্যাপারে আমাদের অবশ্যই আরও সচেতন হতে হবে।

 

আল্লাহ আমাদের সকলের ভুলত্রুটিগুলো সনাক্তকরণ ও শোধরানোর তাওফিক দান করুন।

 

- সিয়ানের ফেসবুক পেজ

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

বিয়ে, রিজিক লাভ, ডিপ্রেশন থেকে মুক্তি"

.

আমি তখন জালালাইন জামাতের ছাত্র। জালালাইন (একটি তাফসীরগ্রন্থ) এর দারসে আমাদের উস্তাদে মুহতারাম মুফতী শাফিকুল ইসলাম একটি ঘটনা শেয়ার করলেন তার নিজের জীবন থেকে। দীর্ঘদিন তার সন্তান হয় না। (তিনি সময়টা বলেছিলেন সম্ভবত ১৭ বছর) একদিন তিনি হাদিসে পেলেন এস্তেগফার এর ফজীলত। আমল শুরু করলেন। দীর্ঘকাল পর যখন স্বামী স্ত্রী প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলেন সকল চেষ্টা-প্রচেষ্টার পর, তাদের হয়ত সন্তান হবেই না। তখন এই আমলের বরকতে তাদের কোলজুড়ে সন্তান এলো।

.

আমি আমার ব্যক্তিজীবনের নানা পেরেশানি ও মুসিবত থেকে মুক্তি পেয়েছি এই এস্তেগফার এর সুবাদেই। এতো গেলো একজন গোণাহগারের জীবনের কথা। এবার শুনুন সোনালি যুগের (সাহাবী ও তাবেয়ীনদের যুগ) এর একটি ঘটনা।

.

একবার হাসান বসরী রাহ. এর কাছে এক ব্যক্তি জানালো “ আমার ফসলে খরা লেগেছে। আমাকে আমল দিন” হাসান বসরী তাকে বললেন এস্তেগফার করো। কিছুক্ষণ পর আরেক ব্যক্তি এসে অভিযোগ পেশ করল “আমি গরীব। আমাকে রিজক এর আমল দিন” হাসান রহ. তাকেও বললেন, "এস্তেগফার করো"। এমনিভাবে অপর এক ব্যক্তি এসে সন্তান হওয়ার আমল চাইলে তিনি বললেন, "এস্তেগফার করো।" উপস্থিত ছাত্ররা জিজ্ঞেস করল, “সবাইকে এক পরামর্শই দিলেন যে?” বিখ্যাত তাবেয়ী হাসান বসরী রহ. বললেন “আমি নিজের পক্ষ থেকে কিছুই বলিনি। এটা বরং আল্লাহ তায়ালা তার কুরআনে শিখিয়েছেন । তারপর তিনি সুরা নুহ এর আয়াতটি তেলাওয়াত করলেন। (তাফসীরে কুরতুবী ১৮/৩০৩)

.

فَقُلْتُ اسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ إِنَّهُ كَانَ غَفَّارًا. يُرْسِلِ السَّمَاءَ عَلَيْكُمْ مِدْرَارًا. وَيُمْدِدْكُمْ بِأَمْوَالٍ وَبَنِينَ وَيَجْعَلْ لَكُمْ جَنَّاتٍ وَيَجْعَلْ لَكُمْ أَنْهَارًا

.

নুহ আ. বললেন “তোমরা তোমাদের রবের কাছে এস্তেগফার করো। ( ক্ষমা চাও) নিশ্চয় তিনি অতি ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অজস্র বারিধারা বর্ষণ করবেন। তিনি তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বৃদ্ধির মাধ্যমে তোমাদের সাহায্য করবেন। তোমাদের জন্যে উদ্যান তৈরি করবেন, তোমাদের জন্যে নদীনালা প্রবাহিত করবেন।” (সুরা নূহ- ১০-১২)

.

এই আয়াতের দ্বারা আমরা এস্তেগফার এর যেসব উপকারিতা জানতে পারলাম। তার মধ্যে দুটি হচ্ছে ১- রিজক বৃদ্ধি ২- সন্তান লাভ। যেহেতু সন্তান বিয়ের মাধ্যমেই হয়। সুতরাং এস্তেগফারের দ্বারা বিয়ের ব্যবস্থাও আল্লাহ করে দিবেন।

.

এছাড়া অন্য আয়াতে বলেন, لَوْلَا تَسْتَغْفِرُونَ اللَّهَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ

.

সালেহ আ. বলেন “তোমরা আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কেন করছ না, যাতে করে তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হও।’’ (সুরা নমল-৪৬)

.

أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ

আমি আল্লাহ্‌র কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁর নিকটই তাওবা করছি

আস্তাগফিরুল্লাহ ওয়া আতূবু ইলাইহি

বুখারী (ফাতহুল বারীসহ) ১১/১০১, নং ৬৩০৭; মুসলিম ৪/২০৭৫, নং ২৭০২)

.

যারা পেরেশানি, হতাশা, ডিপ্রেশন, sadness, loneliness ইত্যাদি নানা সমস্যার সম্মুখীন, তারা এস্তেগফারকে ‘লাযেম’ করে নিন। লাযেম মানে হচ্ছে, আপনি দিনে রাতে যথাসম্ভব এস্তেগফারকে নিজের অবিচ্ছেদ্য অংশ বানিয়ে নিন। উঠতে বসতে এস্তেগফার করতে থাকুন। আল্লাহ তায়ালা সকল পেরেশানি ও মানসিক কষ্ট দূর করে দিবেন ইনশা আল্লাহ।

.

ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সা। বলেন “যে ব্যক্তি নিজের জন্যে এস্তেগফারকে লাযেম করে নিল, আল্লাহ তায়ালা তাকে যে কোন সংকটে পথ দেখাবেন। যে কোন ধরনের পেরেশানী ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত করবেন। এবং তাকে এমন উৎস থেকে রিযিক দান করবেন, যা সে কল্পনাও করতে পারবে না।"

.

- শায়খ Abdullah Al Mahmud

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

সাদক্বাতুল ফিতর নিয়ে এ পর্যন্ত সবচেয়ে কম্প্রিহেন্সিভ লেখা। আল্লাহ শায়খকে উত্তম জাযা দান করুন।

 

tldr; ইমাম আবু হানীফার (রহ) অবস্থান সবচেয়ে যুগোপযোগী।

 

========================================

 

টাকা দিয়ে সাদক্বাতুল ফিতর (ফিতরা) আদায় করা কি বৈধ?

----

 

সাদক্বাতুল ফিতর আদায় করা খুবই জরুরি। এর হুকুম নিয়ে মতানৈক্য থাকলেও মোটামোটা ভাবে হাদীস গুলো পড়লে মনে হবে এটা আল্লাহ তাআলা আবশ্যক করে দিয়েছেন। ইবনে উমারের (রা) এর হাদীসে "ফারাদ্বা রাসূলুল্লাহ" শব্দটা অনেক শক্ত, ফলে অধিকাংশ উলামার এইটাকে ফরয বলার পেছনে অনেক সুন্দর যুক্তি মেলে।

 

আমাদের নবী (সা) এটা আদায় করতে যে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন তাতে খাদ্য দ্রব্যের নাম নিয়েছেন। সেখানে আটা, খেজুর, গম ইত্যাদির কথা বলেছেন।

 

এখন এই সাদাক্বাহ আদায় করতে যেয়ে খাদ্যের দাম দিলে আদায় হবে কিনা এই নিয়ে আলিমগণের মাঝে দ্বিমত চলে আসছে সেই সালাফের যুগ থেকেই। এ সম্পর্কে ৩টি মতই প্রসিদ্ধঃ

 

১- খাদ্য দ্রব্যই দিতে হবে, এর মূল্য দিলে আদায় হবে না। এই মতটা অধিকাংশ ফাক্বীহগণের সিদ্ধান্ত। এই ব্যপারে মালেকি, শাফেঈ ও হানবালী আলিমগণ মোটামুটি একমত।

 

২- খাদ্য দ্রব্য দেয়া ভালো। তবে এর অর্থ দিলেও আদায় হবে। এটা হানাফী মাযহাবের সর্বসাকুল্য রায়। এমনকি ইমাম শাফেঈ থেকেও এমন একটা মত আছে। ইমাম আহমদের ও একটা মত এমন ছিলো।

 

৩- এই দুই প্রান্তিকতার মাঝখানে আছেন ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ। তিনি বলেছেন, খাদ্য দ্রব্য দিয়ে সাদক্বাতুল ফিতর আদায় করাই হলো মৌলিক নির্দেশ। তবে যদি কোন প্রয়োজন দেখা দেয়, অথবা টাকা দিলে ভালো মনে হয় তাহলে টাকা দিলেও আদায় হবে।

 

আমাদের শুয়ুখগণ মদীনাহ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম মতটাই গ্রহন করে অন্য কোন মতের দিকে দৃষ্টি দেননি। অনেক শুয়ুখ তো বলেই দিয়েছেন যে, যদি কেও টাকা দিয়ে সাদক্বাতুল ফিতর আদায় করে তাহলে তা আদায় হবে না।

 

আমার মনে আছে, মদীনায় এই মাসআলাটা বিদায়াতুল মুজতাহিদ পড়ানোর সময় আমাদের শায়খ খুব বিপদে পড়েছিলেন। প্রায় ৯০% ছাত্ররা ছিলো টাকা দেয়া উত্তমের পক্ষে। তখন যে সব কথা গুলো এসেছিলো তা আমার বেশ ভালো লাগে।

 

১- আমাদের নবী (সা) সাদাক্বাতুল ফিতর আদায় করার জন্য কিছু খাদ্যের নাম বলেছিলেন। যেমন, যব, গম, আটা, কিসমিস, খেজুর ইত্যাদি। এখন যদি আপনি বলেন যেহেতু আমাদের নবী (সা) খাদ্যের নাম করেছেন, তাই খাদ্যই দিতে হবে অর্থ নয়, তা হলে দুইটা প্রশ্ন আসবেঃ

 

এক- তিনি তো সব খাদ্যের নাম বলেননি, মাত্র কয়েকটির নাম বলেছেন। এখন কোন দেশে ঐ খাদ্য যদি না খাওয়া হয়, অথবা খেলেও যদি সম্মানিতদের খাদ্য মনে করা না হয়, তখন কি করা হবে?

 

আমরা বাংলাদেশের ছেলেরা বলেছিলাম, আমাদের দেশে ঈদের দিনে কেও গম, যব, বা আটার চেয়ে ভাত খেতে পছন্দ করে। আমাদের উস্তায বলেছিলেন, হাঁ, ভাত (উরুযয) এর মধ্যে আসবে। তখন এক মুখরা ছাত্র বলে উঠলো, তা কেন? ভাতের কথা তো হাদীসে নেই। তাহলে বাংলাদেশের এক লোক যদি গম পাওয়ার পর তা বিক্রী করে চাউল কেনে, এটা জায়েয হবে কিনা? উস্তায বললেন, হাঁ। তখন শুরু হয় হট্টোগোল তাই তো করা হয় টাকাতে। একজনকে বলা হয় এবারের ফিতরার মূল এইটা হয়, তুমি এইটাকা দিয়ে খাদ্য কিনে নিয়ো।

 

তখন আরেক প্রশ্ন দেখা দেয়, মদীনায় ঈদের দিনে দেখতাম গরিব ছেলেমেয়েরা বসে আছে, আর সৌদীরা গম কিনে তাদের কাছে দিচ্ছে, অমনি তারা ছুটে যেয়ে পাশের হকার দোকানদারের কাছে দিয়ে আসতো। কারণ অতো গম ওর লাগবেনা। কাজেই সে বিক্রি করে টাকা বানাতো। এটা ছিলো মানুষের সামনে ঘটা বিষয়।

 

উস্তায চুপ করে গেলেন, কারণ প্রকারন্তরে তাদের তো টাকাই দেয়া হলো।

 

দুই- আরেকটা বিষয় ছিলো হাদীসে সাদক্বাতুল ফিতর দেয়ার সময় আমাদের নবী (সা) অর্থ দিলে হবেনা, এই কথা বলেন নি। কাজেই এটা যদি হারাম হয়, বা টাকা দিলে আদায় না হয় তা হলে তো নিশ্চয় বলা হতো। বলা যেহেতু হয়নি কাজেই দিলে আদায় হয়ে যেতে পারে।

 

২- যদি এই কথা আসে যে, যেহেতু খাদ্যের কথা বলা হয়েছে, কাজেই তার বাইরে দিলে আদায় হবেনা। তাহলে কিছু কিছু সালাফের একটা আমল এই কথার বিপরীতে চলে যায়। যখন ইসলাম বিভিন্ন দেশে চলে যায়, সেখানে এমন কিছু খাদ্য তারা দেখতে পায় যে গুলো এই হাদীসগুলোতে নেই। সেই ক্ষেত্রে তারা দুইটা কাজ করেনঃ

 

এক- ইমাম বুখারী "তা'লীক্বান" (সনদ সবটা উল্লেখ না করে) বর্ণনা করেছেন যে, মুয়ায (রা) ইয়েমেনে সাদাক্বাতুল ফিতর এ গম বা আটার পরিবর্তে কাপড় জাতীয় জিনিষ দিতে বলেছেন, কারণ এইটা তাদের জন্য সহজ, এবং মদীনায় সাহাবীদের জন্য ভালো।

 

ইবন হাজার আসক্বালনী ইবন রাশীদের একটা বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন, তিনি বলেন, ইমাম বুখারী অনেক মাসআলায় ইমাম আবু হানীফার বিরোধিতা করলেও এই মাসআলায় তিনি ঐকমত্য দেখিয়েছেন। টাকা দিয়েও সাদাক্বাতুল ফিতর আদায় করা যাবে।

 

দুই - যেহেতু খাদ্য সমূহের পরিমান নির্ধারণ করতে যেয়ে মহানবী (সা) খাদ্যের মূল্যের দিকে নযর রেখেছেন, যেমনঃ তিনি কিছু খাদ্যে এক সা' দিতে বলেছেন, আর কিছু খাদ্যে দিতে বলেছেন অর্ধ সা', কাজেই এ থেকে সহজেই অনুমান করা যায় খাদ্য বস্তুর মত টাকা ফিতরায় ধর্তব্য। বুখারীতে উল্লেখ করা হয়েছে, (১৫০৮), আমীর মুয়াওয়িয়া একবার মক্কায় এলে বলেন, আমার মনে হয় সিরিয়ার গমের দুই মুদ্দ খেজুরের এক সা' এর সমান হবে। তার এই বক্তব্য সাধারণ্যে গৃহিত হয়। এতে দেখা যাচ্ছে খাদ্যের মূল্যমান ও সাহাবাগণের নজরে থাকতো। এতে করে খাদ্যের পরিবর্তে টাকা দিলে আদায় হবে তা সন্দেহ থাকেনা।

 

৩- টাকা দেয়ার ব্যাপারে শুধু আবু হানীফা ইতিবাচক মত দিয়েছেন এমন না। বরং প্রসিদ্ধ তাবেঈ আতা, হাসান বসরী, সাওরী প্রমুখ ও টাকা দিলে আদায় হবে এই মতের পক্ষে। মুসান্নাফে ইবন আবী শায়বাহ তে অনেক গুলো আসার বর্ণিত হয়েছে, যেখানে আমরা সালাফের বেশ কয়েকজন প্রসিদ্ধ জনকে এই মতের অনুকুলে দেখি।

 

আবু ইসহাক আস সুবাইয়ি বলেন, আমি ঐ সব তাবেঈনদের দেখেছি, রামাদানে তারা খাদ্যের মূল্যে টাকা দিতেন।

 

হাসান বসরী বলতেন, সাদাক্বাতুল ফিতরে তুমি দিরহাম দিলে সমস্যা নেই। উমার ইবন আব্দুল আযীয যখন খলীফা ছিলেন, সে সময় বসরায় তার গভর্ণরের কাছে চিঠি লিখেন, তাতে টাকার কথা উল্লেখ আছে।

 

৪- সাদাক্বাতুল ফিতরে ঈদের দিনে মুসলমানদের স্বচ্ছল করাই থাকে মূল লক্ষ্য। দাঈফ হলেও একটা হাদীসে এই ধরণের ইংগিত দেয়া আছে। তাছাড়া গরীবদের খাইতে দেয়াও থাকে উদ্দেশ্য। মনে রাখতে হবে গরীবদের খাইতে দিলে ভালো মানের খাওয়া দেয়াও এর মধ্যে শামিল হয়। খাইতে দিলে শধু চাউল আর আটা খেয়ে কেও দিন কাটায় না। তরিতরকারীও কিন্তু দরকার হয়, যা শুধু খাদ্য দ্রব্য দিলে হয়না। তখন ওই গরীবটাকে তার খাদ্য বিক্রী করে অন্যান্য সামগ্রী কিনতে হয়।

 

আমার মনে হয় এই সব কথা মনে করে ইমাম ইবনে তাইমিয়্যার কথাই আমার কাছে বেশি যুক্তি যুক্ত মনে হয়। তিনি বলেছেনঃ

 

"وأما إخراج القيمة في الزكاة والكفارة ونحو ذلك، فالمعروف من مذهب مالك والشافعي أنه لا يجوز، وعند أبي حنيفة يجوز، وأحمد ـ رحمه الله ـ قد منع القيمة في مواضع، وجوزها في مواضع، فمن أصحابه من أقر النص، ومنهم من جعلها على روايتين. والأظهر في هذا: أن إخراج القيمة لغير حاجة ولا مصلحة راجحة ممنوع منه... إلى أن قال رحمه الله: "وأما إخراج القيمة للحاجة، أو المصلحة، أو العدل فلا بأس به" أ هـ.

আলমাজমূ' ২৫/৮২, যাকাত কাফফারা ইত্যাদির ব্যাপারে প্রসিদ্ধ মত হলো ইমাম মালেক ও শাফেঈ এর মতে অর্থ দিয়ে আদায় করা জায়েজ নেই। ইমাম আবু হানীফার মতে জায়েয আছে। ইমাম আহমাদ কিছু স্থানে মত দেন নি, কিছু স্থানে মত দিয়েছেন। তার অনুসারীরা সেই কথাই টিকিয়ে রেখেছেন, কেও কেও আবার দুই মত ই গ্রহন করেছেন। বেশি ভালো হলো, কোন প্রয়োজন ছাড়া কিংবা অবস্থার আলোকে ছাড়া টাকায় দিয়ে আদায় করলে তা হবেনা। তবে প্রয়োজন হলে এবং অবস্থার আলোকে কিংবা ইনসাফের জন্য টাকা দিয়ে আদায় করলে জায়েয হবে।

 

গত বছর আমার এক বন্ধু বড় বড় দুটা বস্তা বোঝায় করে গম নিয়ে আসে আমাদের মসজিদে। আমাকে বললো, শায়খ বস্তা দু'টা একটু নামায়ে নিন। আমি বললাম, ঐটা কি। বললো, গম। সাদাক্বাতুল ফিতরের জন্য নিয়ে এসেছি। আমি হতভম্ব হলাম, লন্ডনে মানুষ গম কিভাবে খাবে? কে বা খাবে। বন্ধু মন খারাপ করলো, বললো, আমাদের শায়খগণ বলেছেন, এই সব ছাড়া টাকা দিলে আদায় হবেনা, কাজেই এই গুলোই আমি দেবো। আমি বললাম, দাও, তো সেন্টারে কেন? বললো, এখানে অনেক গরিব লোক আসে তাদের দিও। আমি বললাম, তোমার গম নেয়ার মত গরিব তো আল্লাহ এই দেশে রাখেন নি। পরে বন্ধু অনেকদিন পর্যন্ত আমার সাথে কথা বলেননি। কারণ আমি তার গম নিয়ে সাদক্বাহ আদায়ে সাহায্য করিনি। এই সব দেশের অবস্থা অনুযায়ী আমার তো মনে হয় ইবনে তাইমিয়্যাহ, ইমাম বুখারী সর্বোপরি ইমাম আবুহানীফার মতটাই বেশি গ্রহনযোগ্য।

 

---

From : Dr M Abdus Salam Azadi

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

ব্যক্তিজীবনে হজের প্রভাব

 

পবিত্র হজব্রত পালন আল্লাহ তাআলার একটি বিশেষ বিধান। কোরআন শরিফে আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করেছেন, ‘আল্লাহর তরফ থেকে সেসব মানুষের জন্য হজ ফরজ করে দেওয়া হয়েছে, যারা তা আদায়ের সামর্থ্য রাখে।’ (সুরা-৩ আলে ইমরান; আয়াত: ৯৭)। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: প্রকৃত হজের পুরস্কার বেহেশত ব্যতীত অন্য কিছুই হতে পারে না। সৎ উদ্দেশ্য নিয়ে যাঁরা হজ পালন করবেন, আল্লাহ তাঁদের হজ কবুল করবেন এবং তাঁদের জন্য অফুরন্ত রহমত ও বরকত অবধারিত। নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, হজ ও ওমরাহর জন্য গমনকারী ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার বিশেষ মেহমান। আল্লাহ তাআলা তাঁর দোয়া কবুল করেন। কবুল হজের মাধ্যমে মানুষ নিষ্পাপ হয়ে যায়। (মুসলিম, তিরমিজি, মিশকাত)। যাঁর হজ কবুল হবে, হজের পরও চল্লিশ দিন পর্যন্ত তাঁর দোয়া কবুল হবে; এমনকি যত দিন তিনি গুনাহে লিপ্ত না হবেন, তত দিন তাঁর সব দোয়া কবুল হতেই থাকবে। ইনশা আল্লাহ!


হজ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সুবিদিত মাসসমূহে হজব্রত সম্পাদিত হয়। অতঃপর যে কেউ এই মাসগুলোতে হজ করা স্থির করে, তার জন্য অশ্লীলতা, কুৎসা, অন্যায় আচরণ, ঝগড়া ও কলহ-বিবাদ বিধেয় নয়।’ (সুরা-২ বাকারা; আয়াত: ১৯৭)। তাই হজের সফরে সর্বদা তর্ক-বিতর্ক ও ঝগড়া-বিবাদ পরিহার করে চলতে হয়। কারও ব্যবহার পছন্দ না হলেও রাগ করা যায় না বা কটু কথা বলা যায় না, কারও মনে কষ্ট দেওয়া যায় না। কারও দ্বারা যদি কারও কোনো ক্ষতি হয়, তবে সঙ্গে সঙ্গে তার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়ে নিতে হয়। অন্যের বিপদে সর্বদা সাহায্য করার চেষ্টা করতে হয়। খেদমত করাকে সৌভাগ্য ও গৌরবজনক মনে করতে হয়। নিজের স্বার্থ আগে উদ্ধার করার মানসিকতা পরিহার করতে হয়। নিজের ওপর অন্যকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ভোগের ইচ্ছা পরিত্যাগ করতে হয়। ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার পরম পরাকাষ্ঠা দেখাতে হয়। উদ্দেশ্য হলো হজ-পরবর্তী জীবনে নিজেকে সৎ গুণাবলিতে গুণান্বিত ও সুশোভিত করা।


পৃথিবীর সব মানুষ একই পিতা-মাতার সন্তান। মানুষের পরিচয় একটাই, সে মানুষ। তাই মানুষে মানুষে কোনো প্রকার ভেদাভেদ নেই, পদ-পদবি ও অবস্থানগত পার্থক্য মানুষের মধ্যে যে অদৃশ্য দেয়াল তৈরি করে, হজের মাধ্যমে তা দূর হয়। তাই হজকে মানবতার প্রশিক্ষণ বলা যায়। হজের ছয় দিন (৮ জিলহজ থেকে ১৩ জিলহজ পর্যন্ত) এই প্রশিক্ষণ কোর্সের মেয়াদকাল। ৭ জিলহজ তারিখে সব হাজি মিনার তাঁবুতে গণবিছানায় গিয়ে একাত্মতার ঘোষণা দেন। ৯ জিলহজ তারিখে হাজিরা আরাফাতের ময়দানে গিয়ে ঐক্যের অনন্য দৃষ্টান্ত তৈরি করেন; মিলিত হন আন্তর্জাতিক মহাসম্মেলনে। ৯ জিলহজ দিবাগত সন্ধ্যা, ১০ জিলহজের রাতে হাজিরা মুজদালিফায় গিয়ে সব কৃত্রিমতার অবসানের মাধ্যমে মানবতার পূর্ণতা ও আদি আসল প্রকৃত মানবরূপ লাভ করেন। সবার পায়ের নিচে মাটি, মাথার ওপরে খোলা আকাশ, সবার পরনে একই কাফনের কাপড়। পোশাকে বাহুল্য নেই, খোলা মাথা—পাগড়ি, টুপি ও লম্বা চুলের আড়ম্বর নেই; সঙ্গে সেবক-কর্মচারী নেই, গন্তব্য এক হলেও রাস্তা জানা নেই—চেনা রাস্তাই যেন অচেনা, নিজের শক্তি-সামর্থ্য ও জ্ঞান-গরিমার প্রকাশ নেই, বুদ্ধি-বিবেচনা ও কৌশল প্রয়োগের সুযোগ নেই; শুধুই আল্লাহর ওপর ভরসা করা। এটিই মানবতার পূর্ণতা, এটিই হজের প্রকৃত উদ্দেশ্য ও আসল শিক্ষা।


শয়তানকে পাথর মারা একটি প্রতীকী বিষয়। শয়তানের প্ররোচনা ও তাড়না থেকে নিজেকে রক্ষা করা এবং মনোজগতে শয়তানি শৃঙ্খল বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়ার ও সকল প্রকার শয়তানি ভাব ও প্রভাব মুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে একমাত্র বিবেকের অনুসরণে মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলার ইবাদত তথা আনুগত্য করাই হলো শয়তানকে পাথর মারার মূল রহস্য।


হজ ঐক্য ও উদারতা শেখায়। সব দেশের, সব বর্ণের, সব পেশার, সব শ্রেণির, সব মতের মানুষ একই ইমামের পেছনে নামাজ আদায় করেন। এত ভিন্নমতসহ ঐক্যের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ সহাবস্থান করেন বলে ভাষার দূরত্ব দূর হয়ে মনের নৈকট্য অর্জন হয় এবং প্রকৃত মানবিক অনুভূতি জাগ্রত হয়। মনের সংকীর্ণতা দূর হয়; দৃষ্টিভঙ্গি প্রসারিত হয়, চিন্তার বিকাশ সাধিত হয়। একদেশদর্শী মনোভাব দূর হয়ে দূরদর্শিতা লাভ হয়। যাঁরা হজকে জীবন পরিবর্তনের অপূর্ব সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করেন এবং হজ-পরবর্তী জীবনে হজের শিক্ষা বজায় রেখে জীবন পরিচালনা করেন, তাঁরাই প্রকৃত হাজি। এ রকম হাজির সংখ্যা বাড়লে দেশ ও জাতির মঙ্গল সাধিত হবে, জনমানুষের কল্যাণ হবে; অন্যথায় অর্থের অপচয়, সময়ের অপচয়, শক্তি-সামর্থ্যের অপব্যবহার ও নফসের গোলামি বা আত্মপূজাই সার হবে। হজ শুধুই ইবাদত।

এটি কোনো সার্টিফিকেট কোর্স নয় বা অর্জিত পদ-পদবিও নয়। তাই হজ করার পর নিজ থেকেই নামের সঙ্গে হাজি বিশেষণ যোগ করা সমীচীন নয়। অন্য কেউ তা বললে অসুবিধা নেই। হজ কবুল হওয়া বা না হওয়ার নিরিখে তিন প্রকার। যথা: হজে মাবরুর, হজে মাকবুল ও হজে মারদুদ। হজে মাবরুর মানে হলো সর্বোত্তম হজ। হজে মাবরুর হলো যে হজ সব মানদণ্ডে শতভাগ মানোত্তীর্ণ হয়; হজে মাকবুল মানে হলো যে হজ কবুল হয়েছে বা কবুল হজ। হজে মাকবুল এটিও মানোত্তীর্ণ হজ। হজে মারদুদ মানে হলো রদ তথা পরিত্যাজ্য বা পরিত্যক্ত তথা বাতিলকৃত হজ, অর্থাৎ যে হজ কবুল হয়নি বা বাতিল হয়েছে। হজ বাতিল হতে পারে নিয়ত বিশুদ্ধ না হলে বা উদ্দেশ্য সঠিক না থাকলে। হজের অর্থ হালাল না হলে বা বৈধ উপার্জন না হলে। হজের ফরজ, ওয়াজিব তথা আরকান-আহকাম সঠিকভাবে আদায় করা না হলে। হজের সময় নিষিদ্ধ কোনো কর্ম সম্পাদন করলে। সর্বোপরি হজের শিক্ষা অর্জন না করলে বা হজের উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ হলে। হজ কবুল হলো কি হলো না তা শুধু আল্লাহ তাআলাই জানেন। তবে হজ কবুলের কিছু বাহ্যিক আলামত বা নিদর্শন রয়েছে। যেমন: যাঁরা হজের পরে কাজে-কর্মে, আমলে-আখলাকে, চিন্তাচেতনায় পরিশুদ্ধি অর্জন করবেন বা পূর্বাপেক্ষা উন্নতি লাভ করবেন, তাঁরাই হলেন প্রকৃত হাজি। কিন্তু যাঁরা হজ করার পরও কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন বা উন্নতি সাধনে ব্যর্থতার পরিচয় দেবেন, তাঁরা হলেন হজে মারদুদ সম্পাদনকারী। হজ করা বড় কথা নয়; জীবনব্যাপী হজ ধারণ করাই আসল সার্থকতা।

লেখকঃ মুফতি মাওলানা শাঈখ মুহাম্মাদ উছমান গনী: যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ জাতীয় ইমাম সমিতি, সহকারী অধ্যাপক, আহ্ছানিয়া ইনস্টিটিউট অব সুফিজম।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

কাবার গিলাফটা মুঠো করে আঁকড়ে ধরলেন আবু জাহেল। তীব্র কন্ঠের দুআ-- “হে কাবা ঘরের রব্ব! যদি মুহাম্মদের ধর্ম মিথ্যা হয়ে থাকে তবে তাদের ধ্বংস করে দাও অথবা আমরা যদি মিথ্যার উপর থাকি তবে আমাদের ধ্বংস করে দাও।"

 

যুদ্ধ শুরু হলো। ভয়ংকর এক যুদ্ধ। স্থান মক্কা থেকে ১২০ আর মদিনা থেকে প্রায় ৮০ মাইল দূরের মধ্যবর্তী একটি স্থান, বদর। মুসলিমদের পক্ষ থেকে যুদ্ধ পরিচালনা করছেন সরাসরি মুহাম্মাদ(সা.)। তাঁর সাথে সৈন্য সংখ্যা ৩১৩। উট ৭০ এবং ঘোড়া মাত্র দুটি। অপরদিকে অমুসলিমদের সেনাপতি উতবা বিন রাবিআ। তাদের সৈন্য সংখ্যা এক হাজার। ঘোড়া ১০০, ৬০০ লোহার বর্ম আর অসংখ্য উট।

 

আল আরিসা নামের একটি পাহাড়ের নিচে মুসলিমরা ঘাঁটি গাঁড়লেন। পানির কূপগুলো এর কাছাকাছি হওয়ায় তার নিয়ন্ত্রণও পেয়ে গেলেন তারা। সেনা সমাবেশের জন্য মুহাম্মাদ(সা.) এমন একটি জায়গা বাছাই করলেন যেখানে সূর্যোদয়ের পর যুদ্ধ হলে কোনো মুসলিম সেনার চোখে সূর্যের আলো পড়বে না।

 

১৭ রামাদান, দ্বিতীয় হিজরি। ৩১৩ জন সাহাবা রাত কাটাচ্ছেন ‘আল আরিসার’ পাদদেশে। কেউ কেউ তাবুতে, কেউ কেউ খোলা আকাশের নিচে। চারদিকে রাতের মরুভূমির হিম শীতল পরিবেশ। এই মুসলিমদের ব্যাপার- স্যাপারটা একটু অন্য রকম। সামনে ভয়াবহ যুদ্ধ। হেরে গে্লে আয়-রোজগার, দেশ, বংশ, অস্তিত্ব সবই শেষ। তবু তারা কেমন যেন নিশ্চিন্ত মুখে ঘুরে বেড়াচ্ছে। রাত বেড়ে আসতেই চাদর টেনে ঘুমোতেও চলে গেলো সবাই।

 

শুধু জেগে রইলেন একজন। মুহাম্মাদ(সা.)। সারা রাত কখনও সিজদায়, কখনও দাঁড়িয়ে কাঁদতে লাগলেন ব্যাকুল কন্ঠে। কখনও সালাতে দাঁড়াচ্ছেন। কখনও শুন্যে হাত তুলে ধরছেন। একটা সময় সর্বশক্তিমানের হাতে নিজেকে সপে দিয়ে কান্নার দমকে অস্থির কণ্ঠে দুয়া করতে লাগলে--

 

"হে আকাশ ও জমিনের মালিক, তুমি দেখেছো, এই জালিম সেনাবাহিনীর অত্যাচার । তাদের জুলুমের সাক্ষী তুমি। তারা আমাদেরকে আমাদের দেশ থেকে বের করে দিয়েছে, আজ এসেছে আমাদেরকে সমূলে শেষ করে দিতে ।

হে দয়ালু সত্তা, আমাদের অপরাধ তো কেবল এইটুকুই যে, আমরা শুধু তোমার উপর ঈমান এনেছি ।

আজ যদি এই মরুভূমিতে এই দলটি হেরে যায়, ধ্বংস হয়ে যায়, তাহলে এই পৃথিবীতে তোমার নাম নেয়ার মত আর কেউ বাকী থাকবে না ।

এই মানুষগুলো শুধু তোমার উপর ভরসা করে এখানে আমার সাথে চলে এসেছে । এদেরকে তুমি নিরাশ করো না । আজ তোমার সাহায্য ছাড়া, তোমার দয়া ছাড়া এই যুদ্ধে আমরা টিকতে পারবো না। আমরা তোমার সাহায্যের দিকেই তাকিয়ে আছি।"

 

অস্থির, ব্যাকুল কন্ঠে চিৎকার করে চলেছেন আল্লাহর রাসুল(সা.)। তাঁর গায়ের চাদরটা খুলে পরে যাচ্ছে বারবার। তাঁর এই অবস্থা দেখে ছুটে আসলেন রাসুলের(সা) এর সবসময়কার সাথী আবু বাকর(রা.)। শান্তনা দিলেন-- “হে আল্লাহর রাসুল(সা.), আপনি শান্ত হোন । নিশ্চয়ই, আপনার রব আপনাকে ত্যাগ করবেন না।”

 

তাঁর রব তাকে ত্যাগ করলেন না। তাঁর রব দুয়া কবুল করলেন। আবু জাহেল এবং রাসুল(সা.) দুজনেরই দুয়া। ৭০ জন নিহত এবং ৭০ জন কে বন্দী করার মধ্যে দিয়ে বিজয় আসলো ৩১৩ জনের ছোট্ট মুসলিম দলটির।

 

১৭ ই রমাদানের দিনটিকে বলা হল ইয়ামুল ফুরকান বা সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারীর দিন। এরপর কেটে গেছে অনেকগুলো রমাদান। অনেকগুলো ১৭ তারিখ। স্রেফ হাসি তামাশা আর ইফতার পার্টিতে ব্যস্ত মুসলিমরা সবাই আছে ঠিকঠাক। শুধু নেই দৃঢ়তাটুকু, সত্যকে সত্য আর মিথ্যাকে মিথ্যা বলতে পারার সাহসটুকু। নেই একটা কন্ঠ। একটা আওয়াজ!

 

অনেক দূরে হেবরন কিংবা ইদলিবে রক্ত বয়ে যায়। সস্তা রক্ত। লোকে বলে মুসলিমদের নাকি সেসব। আমরা দূরে বসে ছবি-ভিডিও দেখি। মাঝে মাঝে আক্ষেপের দীর্ঘশ্বাস ফেলি। ব্যাকুল কন্ঠে দুয়াটুকু করার মত পবিত্র মানুষটাও হতে পারলাম না...আফসোস...

 

- আরমান ইবনে সুলাইমান

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

আমার ভালোবাসার মানুষ, শ্রদ্ধেয় মুফতি Tarekuzzaman Tarek সাহেবের একটি অনবদ্য রচনা ইসলামি জীবনব্যবস্থা। ইসলামের মৌলিক বিষয়াদি নিয়ে সম্ভবত বাংলায় এই প্রথম এক মলাটে একটি সমৃদ্ধ বই রচিত হয়েছে। বইটিতে এমন সব বিষয়ের আলোচনা স্থান পেয়েছে, যে বিষয়গুলো আজকাল খুবই বুদ্ধিমত্তার সাথে জ্ঞানী সমাজ এড়িয়ে যান।

 

লেখকের সাহসিকতা, স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে হকের উচ্চারণ, স্পষ্টভাষায় সত্যকে বর্ণনা দেখে আপনি হয়ত অবাক হবেন! বিষয়বস্তুর বৈচিত্র্য আপনাকে মুগ্ধ করবে। সত্যের অনুসন্ধানী প্রত্যেকের অন্তরে প্রশান্তির প্রলেপ ঢেলে দিবে কিতাবের আলোচনা।

 

বইটিতে যেভাবে লেখকের আপোষহীনতার গুণ প্রকাশ পেয়েছে, সেভাবে প্রকাশিত হয়েছে ইলমে দ্বীনের গভীরতা! রুসূখ ফিল ইলম ও তাফাক্কুহ ফিদ দ্বীনের সমন্বয় দেখতে পাবেন– বইয়ের প্রতিটি অধ্যায়ে, প্রতিটি পরিচ্ছেদে। ইনশাআল্লাহ।

 

বইয়ের ভাষা খুবই সহজ-সরল ও সাবলীল। যেকোনো ক্যাটাগরির পাঠকরা বই থেকে সহজেই উপকৃত হতে পারবেন।

 

বাংলাভাষায় এযাবৎ যত বই পড়ে আমি মুগ্ধ হয়েছি ও উপকৃত হয়েছি, তারমধ্যে অন্যতম বই ‘ইসলামি জীবনব্যবস্থা’।

 

আমার যদি সামর্থ্য থাকতো, প্রত্যেকটি মসজিদ ও মাদরাসার কুতুবখানায় ইসলামি জীবনব্যবস্থার একটি করে কপি আমি দিতাম। পরিচিত ভাইবোনদের সবাইকে আমি বইটি হাদিয়া দিতাম। কিন্তু আল্লাহ আমাকে কিছু সীমাবদ্ধতা দিয়েছেন। এজন্য নিয়ত থাকার পরেও অনেক কাজ সম্ভব হয়না।

 

এই পর্যন্ত সাধ্যের সর্বোচ্চ দিয়ে ইসলামি জীবনব্যবস্থা বইটি প্রচারের কাজে সহযোগী হয়েছি। আল্লাহ চাইলে এই ধারা অব্যাহত থাকবে।

সময়ে সময়ে রুহামা পাবলিকেশন থেকে ইসলামি জীবনব্যবস্থা বইটি কিনেছি। ইনশাআল্লাহ সামনে আরো কিনবো। আল্লাহ আপনাদের যাদের তাওফিক দিয়েছেন, আপনারাও এই গুরুত্বপূর্ণ বই ও বইয়ের বার্তা পৌঁছানোর কাজে অংশগ্রহণ করতে পারেন।

 

ছাহিবে কিতাবের জন্য আমার সবসময় ভালোবাসা ও দুআ তো থাকবেই, রুহামা পাবলিকেশনকেও ‘স্পেশাল ভালোবাসা’ জানাতে চাই। উম্মাহর ক্রান্তিলগ্নে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ উপহার দেয়ায় আপনাদের জন্য অনেক ভালোবাসা রইলো!

 

এই বইটি এখনো যারা সংগ্রহ করেন নি, তারা নিঃসন্দেহে অনেক কিছু মিস করছেন। আপনারা প্রয়োজনে অন্যান্য কেনাকাটা স্থগিত করে এই বইটি সংগ্রহ করে পড়তে শুরু করুন। উপকারী ইলম অর্জনে পিছিয়ে থাকার কোন মানে নেই।

 

- শোয়াইব আহমাদ

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

অনেক সময় মহিলাদের কেবল নেসাব পরিমাণ স্বর্ণ/রৌপ্য থাকে আর যাকাত দেওয়ার মত বাড়তি টাকা থাকে না। এবং এই ধরনের উদাহরণ কিন্তু অনেক। এক্ষত্রে ওই মহিলা কি করবে?

 

উত্তর হলো ওই স্বর্ণ/রৌপ্য থেকে আড়াই শতাংশ যাকাত দিবে। অথবা বিক্রি করে তার বাজার মুল্য থেকে দেবে। কিন্তু সত্যি বলতে এর উদাহরণ খুবই কম। মহিলারা এটা সাধারণত করে না। তাহলে?

 

আর কি! স্বামী কিংবা ছেলে থেকে হাদিয়া নেবে! প্রায়ই যেটা আসলে হয়। এতে যে যাকাতের অর্থ হাদিয়া দিচ্ছে তার কিন্তু বেশ ভারী সাদাকার সাওয়াব হবে। কারন ফরজ ইবাদতে সাহায্য করার বিষয় এটা। সুতরাং সামর্থ্য থাকলে স্বামী, ছেলে কিংবা ভাইদের খুশি খুশি মনে এক ঢিলে দুই পাখি মারার সুযোগ নষ্ট করা উচিত নয়।

 

তবে বছর বছর এটা না হলেই ভালো। নারীদেরও নিজেদের ভালোবাসা থেকে দান করা শিখতে হবে।

 

- এস এম নাহিদ হাসান

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

❒ ফিতরা কাকে বলে?

___________

.

ফিতরাকে শরীয়তে ‘যাকাতুল ফিতর এবং সাদাকাতুল ফিতর’ বলা হয়েছে। অর্থাৎ ফিতরের যাকাত বা ফিতরের সদকা। ফিতর বা ফাতূর বলা হয় সেই আহারকে যা দ্বারা রোযাদার রোযা ভঙ্গ করে। [আল মুজাম আল ওয়াসীত/৬৯৪]

.

আর যাকাতুল ফিতর বলা হয় ঐ জরুরী দানকে যা, রোযাদারেরা ঈদুল ফিতর উপলক্ষে অভাবীদের দিয়ে থাকে। [প্রাগুক্ত]

যেহেতু দীর্ঘ দিন রোযা অর্থাৎ পানাহার থেকে বিরত থাকার পর ইফতার বা আহার শুরু করা হয় সে কারণে এটাকে ফিতরের তথা আাহারের যাকাত বলা হয়। [ ফাতহুল বারী ৩/৪৬৩]

.

.

❒ ফিতরার হুকুম (বিধান)

___________

.

ফিতরা দেয়ার সামর্থ্য রাখে এরকম প্রত্যেক ব্যক্তিকে নিজের ও পরিবারের ঐ সমস্ত সদস্যদের পক্ষ থেকে ফিতরা আদায় করা ফরয যাদের লালন-পালনের দায়িত্ব শরীয়ত কর্তৃক তার উপরে অর্পিত হয়েছে। [আল মুগনী, ৪/৩০৭, বুখারী হাদীস নং ১৫০৩]

অবশ্য সেই ব্যক্তি এই আদেশের বাইরে যার নিকট এক দুই বেলার খাবার ব্যতীত অন্য কিছু নেই। [সউদী ফাতাওয়া বোর্ড, ৯/৩৮৭]

.

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে কি দ্বারা এবং কি পরিমাণ ফিতরা দেওয়া হত?

.

বুখারী শরীফে ইবনে উমর (রাযিঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন: ‘‘আল্লাহর রাসূল যাকাতুল ফিতর স্বরূপ এক সা খেজুর কিংবা এক সা যব ফরয করেছেন মুসলিম দাস ও স্বাধীন, পুরুষ ও নারী এবং ছোট ও বড়র প্রতি। আর তা লোকদের নামাযে বের হওয়ার পূর্বে আদায় করে দিতে আদেশ করেছেন’’। [বুখারী, অধ্যায়: যাকাত হাদীস নং ১৫০৩/ মুসলিম নং ২২৭৫]

.

উক্ত হাদীসে দুটি খাদ্য দ্রব্যের নাম পাওয়া গেল যা, দ্বারা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে ফিতরা দেওয়া হত। একটি হচ্ছে খেজুর অপরটি যব। এবার নিম্নে আর একটি হাদীস পাঠ করুন।

.

আবু সাঈদ খুদরী (রাযিঃ) বলেন: আমরা-নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে যাকাতুল ফিতর বের করতাম এক সা খাদ্য দ্রব্য কিংবা এক সা যব কিংবা এক সা খেজুর কিংবা এক সা পনীর কিংবা এক সা কিশমিশ।” [বুখারী- ১৫০৬ মুসলিম-২২৮১]

.

এই হাদীসে খেজুর ও যব ছাড়া আরও যে কয়েকটি বস্তুর নাম পাওয়া গেল তা হল: কিশমিশ, পনীর এবং খাদ্য দ্রব্য। উল্লেখ থাকে যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বিগত হওয়ার পরে মুআবীয়া (রাযিঃ) এর খেলাফতে অনেকে গম দ্বারাও ফিতরাদিতেন। [বুখারী হাদীস নং ১৫০৮ মুসলিম ২২৮১]

.

প্রমাণিত হল যে, নবীজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে যে সব দ্রব্যাদি দ্বারা ফিতরা দেওয়া হয়েছিল তা হল, খেজুর, যব, কিশমিশ, পনীর এবং খাদ্য দ্রব্য। এবং এটাও প্রমাণিত হল যে ফিতরার পরিমাণ ছিল এক সা। যদি নবীজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাদ্য দ্রব্য শব্দটি না বলতেন তো আমাদের প্রতি খেজুর, যব, কিশমিশ এবং পনীর দ্বারাই ফিতরা দেওয়া নির্ধারিত হত। কিন্তু আমাদের প্রতি আল্লাহর রহমত দেখুন এবং ইসলামের বিশ্বজনীনতা লক্ষ্য করুন যে খাদ্য দ্রব্য শব্দটি উল্লেখ হয়েছে বলেই উপরোল্লিখিত দ্রব্যাদি যাদের খাবার নয় তারাও নিজ খাবার দ্বারা ফিতরাআদায় করতে পারবেন। আর এখান থেকেই প্রশ্ন আসে যে, ধান দ্বারা ফিতরা দিতে হবে না চাল দ্বারা? দুটিই কি খাদ্যের অন্তর্ভুক্ত?

▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂

.

লেখাঃ শাইখ আব্দুর রাকিব (আল্লাহ্‌ তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন!)

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

"ইয়া আল্লাহ, আপনার তো অনেক বান্দা আছে, কিন্ত আমার তো আপনি ছাড়া আর কেউ নাই, কেবল মাত্র ভালোরাই যদি আপনাকে ডাকার অধিকার রাখে তাহলে পাপীরা যাবে কার কাছে?"

.

দুয়ার সময় এরকম কিছু বাক্য ব্যাবহার করতে পারেন, একই বাক্য অন্তত দশবার উচ্চারণ করুণ মন থেকে কাকুতি মিনতির সহকারে, এতে চোখে পানি আসবে ইনশাআল্লাহ । আল্লাহর সামনে নিজেকে খুবই ছোট, অপরাধী, নগন্য দাস এবং ভিক্ষুক হিসেবে প্রেজেন্ট করুন, নিজের অপরাধের স্বীকৃতি দিন।বিরাট অপরাধ করে ফেলার পরে ফাসীর আদেশ হয়ে গেছে এমন অপরাধী বিচারক এর পা ধরে যেরকম কান্না করেনা ওই কান্নাটা করুন, ওই ভাবটা ধরুন, এরকম ভিক্ষা শুধু আল্লাহর কাছেই চাওয়া উচিত, আল্লাহই একমাত্র হকদার এরুপ কাকুতি মিনতির।

.

যে দুয়াটা হাত তুলে করতেন সেটাই সেজদায় পড়ে করুণ।

.

নিয়মিত এরকম করুন, দুয়ার ফল ইমিডিয়েট পান বা নাই পান যাস্ট এই সামান্য কাজটুকুর জন্য আল্লাহ আপনাকে কিয়ামতের দিন মাফ করে দিতে পারেন, মনে রাখবেন দুয়া স্রেফ চাওয়া না দুয়া একটা 'ইবাদত' বান্দা ও তার মালিকের মধ্যে সম্পর্কের সেতুবন্ধন।যারা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উপাসনা করে তারা তো তাদের মিথ্যা উপাস্যকে ডাকার সময় কাকুতি মিনতি বিনয় কম দেখায় না, তো আপনি আপনার সত্য রব এর সামনে কম বিনয় দেখাবেন ক্যান?

.

নিয়মিত এরকম করুণ, যথাসম্ভব গোপনে করুণ,

আল্লাহর খুব কাছের বান্দায় পরিণত হয়ে যাবেন ইনশাল্লাহ।

▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂

.

লেখাঃ আমিনুল ইসলাম রিফাত (আল্লাহ্‌ তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন!)

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

নারীদের "ঈদ বোনাস" বুঝিয়ে দিন

 

সাহারীর সময় সাহারী খাওয়ার জন্য ডাকের পর ডাক অথবা এলার্মের পর এলার্ম। তারপরও চোখদুটো খুলতে চায় না। অনেক কষ্ট করে চোখদুটো খুললেও রাজ্যের সব আলসেমি যেন শরীরে ভর করে আছে। বিছানাটা শরীরে আষ্টেপৃষ্ঠে লেগে রয়েছে। এসব অনেক বাধাবিপত্তি ঠেলে আপনি সাহারীতে যোগ দেন। কিন্তু এর কয়েকঘন্টা আগেই তারা সব আলসেমি ত্যাগ করে আপনার সাহারীর আয়োজন করেছে। আপনার জন্য টেবিলে সব সাজিয়ে রেখেছে।

 

বিকালবেলা ক্ষুধার জ্বালায় আপনার উদর চোঁ-চাঁ করছে। রাক্ষুসে ক্ষুধা যেন নাড়িভুঁড়ি সব খেয়ে সাবাড় করে ফেলছে। তৃষ্ণায় আপনি একেবারেই কাতর। প্রাণ যেন ওষ্ঠাগত। গরম আপনাকে একদম বিষিয়ে তুলেছে। শরীরটা একেবারেই নেতিয়ে পড়েছে। সামান্যও আর চলছে না। এমন কঠিন মুহূর্তে তারা আগুন, তাপ, গরম, শরীরে মেখে যাচ্ছে। শরীর বেয়ে ঘাম চুয়ে চুয়ে পড়ছে। আর পাশে ছোট বাচ্চা থাকলে তো কথাই নেই। তাদের যেন ক্ষুধা, তৃষ্ণা, গরম নেই। তাদের এতোকিছু কিন্তু আপনার জন্য। আপনার তৃপ্তির খোরাক জোগানোর জন্য। আপনার ইফতারের জন্য।

 

তাই তাদের ব্যাপারে হাড়কিপটে হবেন না। তাদের মুখেও একচিলতে হাসি ফোটাতে কসুর করবেন না। তাদের মার্কেটে নিয়ে গিয়ে অথবা আপনি নিজে নিয়ে এসে কিছু গিফট করুন।

 

- আব্দুল্লাহ মাহমুদ

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

Ameri-canibalism

.

এই তো গত ২৩শে মে, ২০১৯ এ ইউএস আর্মির অফিসিয়াল টুইটার থেকে একটি প্রশ্ন ছুঁড়ে দেওয়া হয় - "How has serving impacted you?" অর্থাৎ, আমেরিকান সেনাবাহিনীতে কাজ করা তোমাদের জীবনে কীভাবে প্রভাব ফেলেছে?

.

এর জবাবে আমেরিকান সেনাবাহিনীতে কাজ করা সৈন্য আর তাদের কাছের মানুষদের থেকে যেসব উত্তর আসে তা ছিল বিস্ময়কর বাস্তবতা। কোনো এক গায়েবি কারণে বেশিরভাগের জীবনেই আমেরিকান সেনাবাহিনীতে কাজ করা কোনো কল্যাণ তো বয়ে আনেই নি। বরং আমেরিকানরা দেখছে একসময় সেনাবাহিনীতে কাজ করা কাছের মানুষরা কেউ PTSD (Post Traumatic Stress Disorder) তে ভুগে শেষ হয়ে গিয়েছে, কেউ আত্নহত্যা করেছে।

.

আবার কিছু মানুষ দেখেছে সহায় সম্বলহীন পরিবারের ছেলেদেরকে স্কুল বয়স থেকে টাকার লোভ দেখিয়ে দেনাবাহিনীতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, কিন্তু পরে আর তাদের খোঁজ পাওয়া যায়নি। কোনো কোনো মহিলা আবার আর্মির ট্রেইনিংকালে যৌন হয়রানির স্বীকার হয়ে ট্রমা নিয়ে ফিরে এসেছে। আবার কেউ ফিরে এসে দেখেছে স্ত্রী পরকিয়ায় লিপ্ত। এমনই সব গল্প উঠে এসেছে সেই টুইটের উত্তরে।

.

.

কী সেই গায়েবি কারণ যা এত বড় সাম্রাজ্যবাদের দাবিদারদের ব্যক্তিগত জীবনগুলো পিষে পিষে মারছে? সেই উত্তর বিশ্বাসীদের কাছে স্পষ্ট। যুদ্ধ যখন আসমান জমিনের রব্বের সাথে শুরু করেছো, যুদ্ধ যখন মানবতার বিরুদ্ধে শুরু করেছো, তখন এমনটা তো বাঞ্চনীয়ই ছিল - আখিরাতের আগে দুনিয়ায় থাকাকালীনই মর্মান্তিক শাস্তি।

 

- তানভির আহমেদ

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

উস্তাদ সাইয়িদ কুতুব রাহিমাহুল্লাহ এর নাম জানেন না, এমন লোক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তাঁর “তাফসীর ফি জিলালিল কুর’আন” এর কথা একটা সময় খুব অল্প কিছু মানুষ জানতো। শাইখের যখন ফাঁসি হয়ে গেলো, এরপর তা এক্সপোনেন্সিয়ালি পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে গেলো। এমনকি তখনকার খৃস্টান প্রেসের দোকানগুলোও যখন ব্যবসা মন্দার আশঙ্কা করতো, তখন তাফসীর ফি জিলালিল কুর’আন ছাপাতো। এমন ঘটনা ইতিহাসে অসংখ্য যেখানে মৃত্যু, কারাভোগের মাধ্যমে একটি আদর্শ কখনও হারিয়ে যায় না, বরং তা আরো অধিক শক্তি নিয়ে সবার কাছে পৌঁছে যায়। সৌদির প্রখ্যাত তিন আলেমকে [ডক্টর সালমান আল আওদাহ, শাইখ আওয়াদ আল-কারনী এবং শাইখ ডক্টর আলী আল উমারী] আল্লাহ হিফাজত করুন। রামাদানের পরে যদি তাঁদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়েও যায়, দৃঢ়ভাবে বলতে পারি, উম্মাহর জন্যে তাঁদের অবদান আরো বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে। যারা তাঁদের চিনতেন না, তারাও আগ্রহী হবেন।

 

- মিসবাহ মাহিন

 

 

 

 

 

 

 

আসলে সারাদিন না খেয়ে থাকাটা খুব কঠিন কিছু না। যারা অন্যান্য নফল রোজা রাখেন তারা ভালো বুঝতে পারবেন ব্যাপারটা। কঠিন হলো মিথ্যা কথা ও কাজ, পরনিন্দা আর অন্যান্য অশ্লীল কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখা।

.

রাসুলুল্লাহ (স:) বলেন, যে ব্যাক্তি সিয়াম রেখে মিথ্যা কথা, মিথ্যা কাজ আর মূর্খতা ত্যাগ করতে পারলো না, তার এই উপোস আল্লাহর কোন দরকার নেই। (বুখারি ৬০৫৭)

.

খেয়াল করে দেখুন, নবিজী (স:) বলেননি তার "সিয়াম" আল্লাহর দরকার নেই। বলেছেন এসব কাজ করলে তার "উপোস" করে থাকা আল্লাহর দরকার নেই।

.

অর্থাৎ, এসব কাজ করলে রোজা আর রোজা থাকে না। নিতান্তই না খেয়ে উপোস করে থাকা হয় যার কোন মুল্যই নেই। আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন।

 

- খন্দকার সাহিল রিদওয়ান

 

 

 

 

আমাদের অনেকেরই ২৭ রমাজান পর্যন্ত চাকুরির জন্য আটকে থাকতে হয়। তবে, আমরাও ইচ্ছা করলে ইতি'কাফ করতে পারি।

 

তিনদিন, একদিন বা দিনের কিছু অংশের জন্যও ইতি'কাফ করা যায়। কিংবা, লাইলাতুল কদর পাওয়ার জন্য বিজোড় রাতগুলোতে ইতি'কাফ করা যেতে পারে।

 

ইতি'কাফের জন্য নিয়ত করে মাসজিদে প্রবেশ করতে হবে আর, ইতি'কাফের নিয়মাবলী অনুসরণ করতে হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফিক দান করুক।

 

- আহমেদ শাফি

 

 

 

 

 

 

 

 

 

শবে কদর; সাতাশ রমজানের রাতই কি সেই রাত?

মে ২৮, ২০১৯

 

তারেক সাঈদ: শরতের পূর্ণিমায় পৃথিবীতে যেভাবে জ্যোৎস্নার প্লাবন নামে, তেমনি শবে কদরেও শান্তি-প্রশান্তির অপার্থিব বন্যায় প্লাবিত হয় বিশ্বজাহান।

 

আসমানের ফেরেশতারা নেমে আসেন পৃথিবীতে আর চারদিকে আলোর উৎসবে শামিল হন এই রাতে। ফেরেশতাদের নেতৃত্বে থাকেন হযরত জিব্রাঈল আ., যিনি নবি-রাসুলগণের কাছে আল্লাহর সংবাদ ও ওহি আনার মহান দায়িত্ব পালন করেছেন সৃষ্টির শুরু থেকে।

 

কুরআনে করিমে আল্লাহ তায়ালা বলেন, নিঃসন্দেহে আমি লাইলাতুল কদরে কুরআন নাজিল করেছি। আপনি জানেন লাইলাতুল কদর কী? লাইলাতুল কদর হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এই রাতে ফেরেশতাগন ও জিবরাইল প্রভুর অনুমতিক্রমে মঙ্গলময় বস্তু নিয়ে পৃথিবীতে আসেন। এই রাত জুড়ে কল্যাণ বয়ে যায় সূর্যোদ্বয় পর্যন্ত। (সুরা কদর)

 

এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তফসীরে কুরতুবীতে বলা হয়েছে, শবে কদর অর্থ ভাগ্য নির্ধারণ রজনী। এ রাতে পরবর্তী এক বছরের অবধারিত বিধিলিপি সংশ্লিষ্ট ফেরেশতা ব্যবস্থাপকের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

 

আগামী বছর মানুষের জীবন, মরন, খাদ্য, বৃষ্টির পরিমাণ ইত্যাদি লিখে দেওয়া হয়। চলতি বছর কে হজ করবেন তাও লেখা হয়ে থাকে। ইবনে আব্বাস বলেন, এ কাজের জন্য জিবরাইল, ইসরাফিল, মিকাইল ও আজরাইল চার ফেরেশতা নিযুক্ত থাকেন।

 

রাসুল সা. শবে কদরের গুরুত্ব সম্পর্কে বলেছেন, যে ব্যক্তি মহিমান্বিত রজনী শবে কদরে পূর্ণমনোযোগ ও বিশ্বাসের সঙ্গে ইবাদত করবে আল্লাহ তার গত জীবনের সব অপরাধ ক্ষমা করে দিবেন। (বুখারি, মুসলিম)

 

অনেকের মনে এই ভুল ধারণা রয়েছে যে, সাতাশের রাতই হচ্ছে শবে কদর। এ ধারণা ঠিক নয়। সহীহ হাদীসে এসেছে যে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে লাইলাতুল কদর কোন রাত তা জানানো হয়েছিল। তিনি তা সাহাবীদেরকে জানানোর জন্য আসছিলেন, কিন্তু ঘটনাক্রমে সেখানে দুই ব্যক্তি ঝগড়া করছিল।

 

তাদের ওই ঝগড়ার কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট থেকে সে রাতের ইলম উঠিয়ে নেওয়া হয়। এ কথাগুলো সাহাবীদেরকে জানানোর পর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন- হতে পারে, এতেই তোমাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে। এখন তোমরা এ রাত (অর্থাৎ তার বরকত ও ফযীলত) রমযানের শেষ দশকে অন্বেষণ কর। সহীহ বুখারি হাদিস নং ২০২০, সহিহ মুসলিম ১১৬৫/২০৯।

 

অন্য হাদিসে বিশেষভাবে বেজোড় রাতগুলোতে শবে কদর তালাশ করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। -সহিহ মুসলিম, হাদিস ১১৬৫। তাই সাতাশের রাতকেই সুনির্দিষ্টভাবে লাইলাতুল কদর বলা উচিত নয়। খুব বেশি হলে এটুকু বলা যায় যে, এ রাতে লাইলাতুল কদর হওয়ার অধিক সম্ভবনা রয়েছে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

শনিবার রাতে পবিত্র মক্কাতুল মোকাররমায় ক্বিয়ামুল লাইলের ইমামতি করছিলেন পৃথিবীব্যাপি বিখ্যাত এবং প্রসিদ্ধ পবিত্র মক্কার সনামধন্য ইমাম ও খতীব শায়খ শুরাইম হাফিজাহুল্লাহ। তিনি প্রথমে সুরা ফাতিহা সমাপ্ত করে সুরা বাক্বারা আরম্ভ করেন। সুরা বাক্বারার প্রারম্ভে তিনি 'আলিফ লাম মীম' পড়ে 'জা-লিকাল কিতা-বু লা- রইবা ফীহ' পর্যন্ত পড়ে ফের শুরু থেকে পড়তে থাকেন। অর্থাৎ তিনি তিলাওয়াতের মধ্যে কিছুটা সন্দেহ অনুভব করেন। এমতাবস্থায় তিনি যখন ফের শুরু থেকে পড়ে প্রথম আয়াত সমাপ্ত করতে যাচ্ছিলেন ঠিক তখনই ভুল তিলাওয়াত করে বসলেন। অর্থাৎ 'হুদাল লিল মুত্তাক্বীন' এর জায়গায় তিনি 'হুদাল লিল আ'লামীন' পড়লেন। তার তিলাওয়াত শুনে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিল তিনি আসলে সন্দেহবশত এমনটা করছিলেন। অর্থাৎ তিনি নিশ্চিত হতে পারছিলেন না এখানে 'আ'লামীন' নাকি মুত্তাক্বীন। পরে দ্বিতীয় বার পড়লে তখনও ঠিক একই ভুল করেন।

 

দ্বিতীয়বার ভুল করার পর পিছন থেকে কোনো একজন শায়খ লোকমা দিলেন। লোকমা দেওয়ার পর শাইখ শুরাইম হাফিজাহুল্লাহ সঠিকভাবে তথা আ'লামীন এর জায়গায় মুত্তাক্বীন পড়ে সামনে আগালেন। এই ঘটনা থেকে আমাদের সম্মানিত হুফফাজে কোরআন এবং ইমামদের অনেককিছু শেখার আছে। শায়খ শুরাইম হাফিজাহুল্লাহ গোটা পৃথিবীব্যাপি প্রসিদ্ধ সম্মানিত এবং অনেকদিনের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পবিত্র মক্কার এক জ্যেষ্ঠ ইমাম। তিনি যখন থেকে পবিত্র মক্কায় ইমামতি আরম্ভ করেন তখন সম্ভবত আমরা আমাদের মায়ের কোলে। কারণ আমরা যখন হিফজখানায় পড়ি তখন আমাদের অনেকের আইডল ছিলেন শায়খ সুদাইস এবং শায়খ শুরাইম হাফিজাহুল্লাহুম। তখন পৃথিবীর প্রান্তে-প্রান্তে, ঘরে-ঘরে মার্কেটে-মার্কেটে অবিরাম বাজতো এই দুই সম্মানিত শায়খের সুললিত কন্ঠের পবিত্র কোরআনের তিলাওয়াত। সেই থেকে আজ পর্যন্ত তারা মক্কার ইমাম।

 

তাদেরকে যদি পৃথিবী বিখ্যাত হাফিজে কোরআন বলা হয় মোটেও ভুল হবে না। কারণ তারা পৃথিবীর সর্ববৃহৎ এবং সর্বাধিক পরিচিত ইসলামের পবিত্র নিদর্শন এবং মুসলিম জাতির সর্বোচ্চ অনুভূতির অনন্য এক জায়গা পবিত্র মক্কাতুল মোকাররমার দীর্ঘদিনের বহুমাত্রিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন প্রতিভাধর সম্মানিত ইমাম ও খতীব। তাদের যদি নামাজে তিলাওয়াতে ভুলত্রুটি হতে পারে আমার আপনার ভুল হওয়া অসম্ভব কিছু তো নয়৷ এবং এতে লজ্জিত হবার মত কিছু দেখছিনা। অথচ আপনি খেয়াল করলে দেখবেন হাফিজ সাহেব ও ইমাম সাহেব যদি বেখেয়ালি নামাজের মধ্যে সামান্য ভুলত্রুটি করেন সেগুলো নিয়ে মূর্খ মুসল্লীরা নানান মন্তব্য করে বসে। এবং বলে থাকে এই হাফিজ সাহেবের পড়া ইয়াদ নেই অমুকের পড়া সুন্দর নেই ইত্যাদি। যদিও তারা জানে না ইমামের জায়গায় দায়িত্ব নিয়ে দাঁড়িয়ে তিলাওয়াত করা কতোটা কঠিনসাধ্য। আর তা যদি হয় পবিত্র মক্কায়...?

 

সেদিনের শায়খ শুরাইম হাফিজাহুল্লাহ'র তিলাওয়াতের ভুল থেকে বুঝা যায় যে কারো ভুল হতেই পারে। এবং হচ্ছেও৷ পবিত্র মক্কা-মদিনায় যেসমস্ত শায়খরা ইমামতি করেন তারা প্রত্যেকে নিঃসন্দেহে পৃথিবীবিখ্যাত হাফিজ আলিম। অসংখ্য হাফিজ এবং আলিম থেকে বাছাই করে তাদেরকে নিয়োগ দেওয়া হয়৷ অথচ মক্কা-মদিনায় নামাজ পড়লে দেখা যায় প্রায় সেই বিখ্যাত শায়খরা নামাজে তিলাওয়াতে ভুল করছেন। এবং পরে শুধরিয়ে নিচ্ছেন। পিছন থেকে মাঝেমধ্যে দু-য়েকটা লোকমাও দিচ্ছেন অন্যন্য শায়খরা৷ কিন্তু এতে করে কেউ লজ্জিত হচ্ছেন না। এবং কোনো মুসল্লী টু-শব্দ পর্যন্ত করছেনা। অথচ আমাদের দেশের হাফিজদের অনেকে এমনও আছেন যাদেরকে লোকমা দেওয়া মহা অপরাধ। তারা ভুল পড়বে কিন্তু লোকমা দিতে পারবেন না। আবার কেউ কেউ একদিনের ভুল তিলাওয়াত অন্যদিন নাকি টেনে দিয়ে থাকেন।যা কোনো সিস্টেমের মধ্যে পড়ে না।

 

মনে রাখবেন। মানুষ মাত্রই ভুল।কেউ ভুলের উর্ধ্বে নয়।

.

- আলি আজম

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

এক বোন জানতে চেয়েছেন, বিদায়ের সময় 'ফি আমানিল্লাহ' বলার কোনো হাদিস আছে কিনা। উত্তরটা এখানেও; যেন আমরা সবাই আমল করতে পারি—

 

বিদায়ের সময় অনেকেই 'ফি আমানিল্লাহ' খোদা হাফেজ বলেন। হাদিসে বিদায়ের সময় হুবহু এমন কোনো দুআর কথা নেই। দুআ হিসেবে 'ফি আমানিল্লাহ' বলা গেলেও এটাকে সুন্নাহ মনে করে আমল করা মারাত্মক ভুল।

 

যেহেতু বিদেয়ের সময়ের দুআ সহিহ হাদিসে আছে, তাহলে আমরা কেন সেটাই বলব না, যা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন!

'খোদা হাফেজ' ও 'ফি আমানিল্লাহর' পরিবর্তে আমরা যদি এমন কোনো দুআ বলি যাতে দুআ হবে, সুন্নাহও আদায় হবে এবং সাওয়াব পেয়ে যাব, তবে কতই না ভালো হবে!

 

আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিদায় দেয়ার সময় বলতেন—أَسْتَوْدِعُ اللَّهَ دِينَكَ وَأَمَانَتَكَ وَآخِرَ عَمَلِكَ

'আস্তাউদিউল্লাহা দ্বী-নাকা, ওয়া আমা-নাতাকা, ওয়া আখিরা আমালীকা।' [ তিরমিজি, দুআ অধ্যায়]

অর্থ : 'তোমার দ্বীন, তোমার আমানত ও তোমার সর্বশেষ আমালের ব্যাপারে আমি আল্লাহ তাআলাকে আমানতদার নিযুক্ত করলাম।'

 

সফরে দ্বীন, আমানত ও আমল; সবকিছুর নিরাপত্তা প্রয়োজন। আর সবকিছুর দুআ একসাথে। কত্ত সুন্দর দুআ।

 

- মাজিদা রিফা

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

রোজাই বাড়তি শক্তি দেয় আমলাকে

 

ক্রিকেট খেলা এমনিতেই কষ্টকর কাজ। সাড়ে সাত ঘণ্টা মাঠে থাকা তো আর চাট্টিখানি কথা নয়। তবে সেই ক্রিকেটই যদি কেউ রোজা রেখে খেলে, তবে? অনেকের জন্য ব্যাপারটা কল্পনা করাও কষ্টকর। দক্ষিণ আফ্রিকার হাশিম আমলা অবশ্য মনে করেন, রোজা রাখেন বলেই এখনো ফিট থাকতে পারছেন।

 

২০১২ সালের কথা। লর্ডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩১১ রানের এক মহাকাব্যিক ইনিংস খেলেছিলেন হাশিম আমলা। পরে জানা গেল, ইনিংসটি তিনি রোজা রেখে খেলেছেন। এবার ইংল্যান্ড বিশ্বকাপেও রোজা রেখেই ম্যাচ খেলবেন বলে জানিয়েছেন আমলা। তিনি বলেন, ‘এটা আমাকে ফিট থাকতে সাহায্য করে। আমি মনে করি, এ মাস বছরের সেরা মাস। আমার মনে হয় রোজা মানসিক ও আধ্যাত্মিকভাবে নিজেকে উন্নত করার সবচেয়ে ভালো উপায়।’

 

রোজা রেখে ম্যাচ খেলা হাশিম আমলার জন্য নতুন কিছু নয়। এসব ম্যাচে আমলার সাফল্যের পরিমাণটা চোখে পড়ার মতো। তবে রোজা রেখে খেললেই যে ব্যাটে রান বেশি আসে, এমনটা মনে করেন না তিনি। তাঁর কাছে ব্যাপারটা কাকতালীয়। ‘রান করা সব সময়ই গুরুত্বপূর্ণ, আমি যখনই খেলি না কেন আমি যতটুকু পারি ঠিক ততটুকুই করার চেষ্টা করি। এটা স্বাভাবিকভাবেই হয়। এমন না যে আমি জোর করে ভালো করার চেষ্টা করি।’

 

পত্রিকা থেকে

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

সহীহ বুখারীর হাদিস!!

হযরত আয়েশা রাযি. মৃত্যুর পর অল্প কিছু জিনিস রেখে গিয়েছিলেন।এগুলোর মধ্যে একটি জমিও ছিলো।এটা হযরত আসমা রাযি.(উনার বোন) এর ভাগে পরে।আমীর মুআবিয়া রাযি. বরকতের উদ্দেশ্যে জমিটি অনেক চড়া মূল্যে (এক লক্ষ দিরহাম) কিনে নিয়েছিলেন।

 

হযরত আসমা রাযি. অত মুদ্রা কী করেছিলেন জানেন?

প্রিয়জনদের মধ্যে বিতরণ করে দিয়েছিলেন।

 

হাদিসটি পড়ে দুটি কথা মাথায় আসলোঃ-

 

১.আমার মৃত্যু হলে কি কি রেখে যাবো?আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম অনেক কিছুই।পুরো একটা গোছালো সংসার,কতো জামা কাপড়,ব্যবহারিক জিনিস,কিছু সম্পত্তি!!!ভয় হতে লাগলো,,,নিঃসন্দেহে আর যাই হোক কেউ এসব ই সাদাকা করে দিবেনা।দুনিয়ার এতো জিনিস তিলে তিলে করা,এক নিমিষেই চুরমার হয়ে যাবে।

রেখে যাওয়া একমাত্র বইগুলোই হয়তো আমার এবং আমার সন্তানের জন্য কল্যাণকর। বাকি সব মরিচিকা!!!

সাথে সাথে এ হাদিসটি মনে পরলো,

"দুনিয়ায় জীবন যাপন করো আগুন্তক অথবা কোনো মুসাফিরের ন্যায়" [সহিহ-বুখারি]

এ হাদিসটির সাথে যখন নিজেকে মিলাতে পারবো কেবল তখন ই মনে হবে যে সফলতার দিকে যাচ্ছি!!

অন্তরের কাঁপুনি আরেকটু প্রবল হলো!!

 

২.আমার বোনের মৃত্যুর পর তার সম্পদ পেলে আমিতো দান করে দিতাম না!!অল্প কিছু করলেও বাকিটা নিজের বা নিজের সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য রেখে দিতাম।

এখনো ওইরকম মন মানষিকতা কেন করতে পারলাম না?কেন চোখ বুজে নিজের সর্বস্ব সাদাকা করার সাহস পাইনা জানা নেই।

আমরা সাদাকা করলেও হিসাব করে দেই।যা থাকে সব দিয়ে দিতে পারিনা।অথচ আল্লাহ্ তার রহমত কম দিয়ে ভাসিয়ে দেননা!!

সর্বাবস্থায় কোনো না কোনো ভাবে রক্ষা করেন!!!

 

আমরা রব্বের ওপর আস্থা করতে চাই,তবুও মন থেকে পেরে উঠিনা!!নিজের ভালো থাকার স্থান,ভালো খাবার,ভালো পোশাক সব সব সব লাগবে।

আর আমল যেভাব সেভাবে করে পার করছি!!কেমন হবে হিসাবটা ওয়াল্লাহু আলাম!!!

 

বিদ্রঃ- ভালো থাকা গুনাহ্ নয়।তবে হিসাবটা হয়তো বেশি।আবার এটাও ঠিক উত্তম তাকওয়াপূর্ণ হতে হলে সাদামাটা জীবন যাপন করার কোনো বিকল্প নেই।নবীজির সবটায় আদর্শ ফলো করা উচিত।দুনিয়ার সকল জিনিসের প্রতি যখন দেখবেন একদম ই চাওয়া নেই,কেবল তখনই ভাববেন হয়তো আল্লাহ্ র কাছাকাছি যাওয়ার রাস্তা সুগম হচ্ছে ইংশাআল্লাহ্!!

 

- Ayra Tehreem Ushmi

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

ক্রমাগত আল্লাহর নাফরমানি করার ফলে দুনিয়াতেই কিছু যন্ত্রণা ভোগ করতে হয়। যেমন:

 

১. চেহারার নূর(উজ্জলতা) নষ্ট হয়ে যায়।

২. ইবাদাতে প্রশান্তি আসে না।

৩. ইলমে(জ্ঞানে) বরকত থাকে না।

৪. মেজাজ খিটমিটে হয়ে যায়।

৫. অন্তর পাথরের মত শক্ত হয়ে যায়, ফলে দু'আর মধ্যে কান্না আসে না।

 

প্রমাণ হিসেবে আমরা নিজেদের দিকে তাকালেই বুঝতে পারব।

 

-জনৈক

 

 

 

 

 

 

হাদিসে আছ লাইলাতুল কদর তালাশ করতে বলা হয়েছে শেষ দশ রোজার বেজোড় রাতগুলোতে।তাই রমজান মাসে আরব দেশগুলোতে বিশ রোজার পরে থেকে শুরু করে প্রতিদিন কিয়ামুল লাইল বা রাতের নামাজ পড়া শুরু করে রাতের মধ্যভাগ থেকে।প্রায় মসজিদে রাত বারটা অথবা সাড়ে বারটা থেকে পড়ানো হয়।শেষ হয় সেহেরির ঘন্টাখানের আগে যাতে সবাই গিয়ে খাওয়া দাওয়া করে নিতে পারে।গত তিনদিন ধরে আমরা বাসা থেকে দূরে একটা মসজিদে যাচ্ছি কিয়ামুল আদায় করতে।দেশে থাকতে কখনো এরকম নামাজ পড়ার সুযোগ হয়নি।বাকি রাতগুলোর মত ইশার পরেই কিয়ামুল লাইল পড়ে বের হয়ে যেতাম।সাতাশ তারিখে হুজুর একটু অন্যদিনের চাইতে লম্বা করতেন কারণ তখন এই রাতকেই কদরের রাত মনে করা হতো। কিন্তু তাও দুই ঘন্টার উপরে পড়াতেন না।বিশ রাকাত তারাবি আর বাকি মিলাদ! কিয়াম! মিলে দুই ঘন্টায় শেষ করে দিতেন।এরপরেও অনেকে রিকুয়েষ্ট করতো তাড়াতাড়ি শেষ করে দিতে।এইখানে আট রাকাত কিয়ামুল লাইল পড়ানো হয়।কখনো দুই রাকাত ছাব্বিশ মিনিটে, কখনো বিতরের এক রাকাত তেইশ মিনিট লাগায় পড়তে।সত্তর, আশি বছরের বয়ষ্ক মানুষ দাঁড়িয়ে থাকে।এমন তিলাওয়াত যেন মন চায় প্রতিদিন এরকম সবাই মিলে রাতের নামাজ আদায় করি।অনেক মহিলারা আসেন নামাজ পড়তে যেহেতু আরব দেশে মহিলাদের জন্য প্রতিটি মসজিদে আলাদা নামাজের ব্যবস্থা আছে।কিন্তু কোন ফিতনা সৃষ্টি হতে দেখিনি সেখানে।কোন পুরুষকেও মসজিদে মনে হয়নি উপভোগ করতে আসে, কারণ সালাতে তাদের শুধু কান্নার আওয়াজ শুনেছি।

 

- ওমর ফারুক রায়হান

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

কবিতাঃ

চলছে রোযা

কমছে বোঝা

উদ্ধত সব পাপের,

শুদ্ধ মানব

রাখছে সাওম

করছে না ভয় তাপের।

 

ঝরছে আগুন

নয় তো ফাগুন,

ঝরছে আগুন রোদের,

বাড়ছে দ্বিগুণ

আমল ও গুণ,

জাগছে হৃদয় বোধের।

 

#সাওম

 

- মাহমুদ সিদ্দিকি

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

এক.

 

ইশরাতের বাসায় আজকে ওর ইউনিভার্সিটির বান্ধবীদের দাওয়াত। নাদিয়া, মুন ইশরাতের কাছের বান্ধবী। কাছের বান্ধবী হলেও কিছু ব্যাপারে তাদের মধ্যে মত বিরোধ থাকেই সবসময়। যেমন, ওদের মধ্যে মুন একটু ধার্মিক। বাকিদের গান বাজনা, মুভি, প্রেমের গল্প এসব নিয়ে কথা উঠলেই মুন এড়িয়ে যায়, চুপচাপ থাকে যা অন্যদের পছন্দ না। মাঝেমাঝে বোঝানোর চেষ্টা করে ওদের।

 

ইশরাতের সাথে নাদিয়ার সবসময় একটা খুনসুঁটি লেগেই থাকে। ইশরাতের স্বভাব হচ্ছে সে অন্য সব দোষ সবাইকে বলে বেড়াবে নাহয় সবার সামনে তাকে খোঁটা দিয়ে কথা বলবে। তারপর বলবে, "যা বলেছি সত্যিই তো বলেছি।" নাদিয়ার আজকাল খুব মন খারাপ থাকে। খুব কঠিন এক সময় পার করছে সে। ইশরাত জানে সে এখন কঠিন সময় পার করছে এবং নিজের কিছু ভুলের জন্য ডিপ্রেশনে ভুগছে।

 

মুন আসার সাথে সাথে ইশরাতকে পরোক্ষভাবে বুঝিতে চাইলো, "বুঝলি ইশরাত, ফেইসবুকের চেয়ে বড় ফিতনার জায়গা আর নাই। নাসিহা দেয়ার নামে মানুষকে অপমান করার কারখানা হয়ে গেছে। খোঁটা দিয়ে কথা বলবে, নাহয় অন্যের দোষ গুনাবে আর নিজেকে ত্রুটিমুক্ত প্রমাণ করতে চাইবে।

 

একটা হাদিসে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "মুমিনগণ খোঁটাদানকারী, অভিশাপকারী, নির্লজ্জ ও অশ্লীলভাষী হয় না। আরেকটা হাদিসে আছে, যে ব্যক্তি অন্যের গুনাহ এই দুনিয়াতে গোপন করবে, আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা সেই ব্যক্তির গুনাহ হাশরের ময়দানে গোপন করবেন এবং মাফ করে দিবেন। কিন্তু মুনের নসীহা ইশরাতকে চুপ করাতে পারলো না।

 

ইশরাতের পরিকল্পনাই ছিলো নাদিয়াকে অপমান করা। সুযোগ বুঝে দু'চারটা চরম সত্য কথা শোনালো নাদিয়াকে। সে ভুল করেছে, গুনাহ করেছে, এখন সে অনুতপ্ত। নাদিয়া কথা গুলো শুনেই গেলো পালটা কোন উত্তর দিলো না। মুন ইশরাতকে বললো, "তোর উচিৎ ছিলো নাদিয়ার কথা দ্বারা স্বান্তনা দেয়া। সে যেন একা না হয়ে যায়, আরো বড় ভুল না করে বসে।" ইশরাত বলে উঠল, "মুন, আমি যা বলেছি সত্যিই তো বলেছি। তুই না এত ধার্মিক, আমাকে মিথ্যা বলতে বলছিস নাকি!" আর সে মনে মনে বেজায় খুশি হল, "আজকে শোনালাম ইচ্ছামত! খুব ভালো হচ্ছে তোর সাথে যা হচ্ছে!"

 

ওয়াসিলাহ্ ইবনুল আসক্বা (রাঃ) থেকে বর্নিত আছে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: তোমার ভাইয়ের বিপদে আনন্দিত হয়ো না। কেননা এতে আল্লাহ তার প্রতি করুণা করবেন এবং ঐ তোমাকে বিপদে নিমজ্জিত করবেন। [রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ১৫৮৫]

 

দুই.

 

তিথিদের বাসায় আজকে রাবেয়া খালা এসেছে। তিথির মার বড় বোন রাবেয়া খাতুন। তিথির মা তার বড় বোনের কথার উপর একটা কথাও বলতে পারে না। ছেলে মেয়ে সব ওয়েল স্ট্যাবলিশড, গাড়ি বাড়ি সব দিকে সুখে আছেন তাই তার হুকুমে চলে তিথির নানার বংশে সবাই। রাবেয়া খাতুন যখনই আসে তার ছেলের রেফারেন্সে তিথির ভাইয়ের চাকরি হয়েছে এটা দুই তিনবার অবশ্যই শোনাবেন আর তিথির বিয়ে নিয়ে কথা তো তুলবেনই।

 

তিথি ড্রইং রুমে এসে সালাম দিয়ে বসতে না বসতেই রাবেয়া বেগম বললেন, "কিরে তোর জন্য কি মংগল গ্রহ থেকে ছেলে খুঁজে আনবে তোর বাবা মা? কারণ এইদেশের ছেলে তো তোর পছন্দ হচ্ছে না।" তিথি চুপচাপ মাথা নিচু করে শুনছে। মাও চুপ।

 

রাবেয়া বেগম আবার বললেন, "এই তুই আর বড় ভাইয়ের মেয়ে শীলা, তোরা কি বিয়ে করবি না এই জীবনে! কি চাচ্ছিস তোরা।" তিথি এবার বললো, "খালা, শীলা কি চায় আমি কি করে বলবো। আমি তো আর ওকে..." তিথি কথা শেষ করার আগেই তিথির মা ওর হাত চেপে ধরে ধমকের সুরে বললেন, "তিথি তর্ক করে না খালার সাথে।"

 

খালা আবার বলতে শুরু করলেন, "শীলার নাহয় বাবার টাকা আছে। বয়স হয়ে গেলেও ওর বাবার টাকা আর সম্পত্তি দেখে বিয়ে করে নিয়ে যাবে। কিন্তু তোকে কি দেখে বিয়ে করবে?" তিথি করুন মুখে ওর মার দিকে তাকালো। মা মাথা নিচু করে চোখের কোনা মুছে নিলো। তিথি বুঝে গেছে ওর মা এই কথাতে খুব কষ্ট পেয়েছে।

 

তিথি বড় খালাকে বলল, "খালা, আমি আপনি দুনিয়াতে আসার ৫০ হাজার বছরেরও আগে আমাদের জোড়া আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা নির্ধারণ করে রেখেছেন। যার সাথে বিয়ে হওয়ার হয়ে যাবে। সেই সময়েই হবে যে সময়ে আল্লাহ হুকুম দিবেন।" বলে, উঠে চলে গেলো।

 

রাবেয়া বেগম চেচিয়ে তার বোনকে বললেন, "শুনেছিস তোর মেয়ে কি বলে গেলো, শুনেছিস! আমি কি তোর মেয়ের ভালো মন্দের ব্যাপারে কথা বলতে পারবো না নাকি! আর আসবো না এখানে। দেখি কোন ঘরে বিয়ে দিস তোর মেয়েকে।" মা চুপ করে শুনে যাচ্ছে কিছু বলার ক্ষমতা নাই কারন বোনের অনেক টাকা কিছু বললে বংশের বাকিরা তাকে বয়কট করতে পারে।

 

তিন.

 

রিনির পাশে ফ্ল্যাটে নতুন ভাড়াটিয়া লুনা। পরিচিত হতে এসে লুনা। রিনির বিয়ের চার বছর আর এখনো কোন বাচ্চা হয়নি শুনে লুনা বলল, "ট্রাই করতেছেন না, ভাবি? ডাক্তার কার সমস্যা বলছে?" রিনি খুব ইতস্তত বোধ করছে। রিনি যতই কথা এড়িয়ে যেতে চায় ততই লুনা ইনিয়ে বিনিয়ে একই প্রসংগে কথা বলতে চায় যায়। আরো কত্ত প্রশ্ন এই প্রসঙ্গের সাথে জুড়িয়ে দিচ্ছে।

 

"জামাইয়ের সাথে সম্পর্ক কেমন? "বাচ্চা নাই দেখে জামাই রাগ করে নাকি? শশুড়বাড়ির মানুষ বংশ রক্ষার জন্য জামাইকে দ্বিতীয় বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে নাকি!" রিনির এত দিনে এইধরনের প্রশ্নে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ার কথা। প্রতিদিন শ্বাশুড়ি ফোনে একই কথা জিজ্ঞেস করে, "ডাক্তার দেখিয়েছো? ঢাকায় থাকো, বড় কোন গাইনী ডাক্তার দেখাও। আমাদের সময় এত ডাক্তার লাগতো না বাবা। বিয়ের পরপরই বাচ্চা পেটে আসছে। আমার ডায়বেটিসও বাড়ে কমে, প্রেশারও হাই। একটা নাতি দেখার নসিব হবে কি না আল্লাহ্ই জানেন।"

 

রিনির চোখে পানি চলে আসে কিন্তু শব্দ করে কাঁদতে পারে না। শুধু চুপ করে শুনে যাচ্ছে আজ চারটা বছর। বাবার বাড়ির আত্মীয় -স্বজন, রিনির বান্ধবীরা, আশেপাশের মানুষজন, এমনকি কাজের বুয়াও কয়দিন আগে এক কবিরাজের ঠিকানা দিয়ে গেলো। প্রতিটা দিন চুপ করে কারো না কারো কথা শুনে যায় রিনি।

 

আজ নতুন প্রতিবেশী লুনা, যার সাথে আধা ঘন্টাও হলো না পরিচয় হয়েছে তার প্রতিটা প্রশ্ন রিনি ভিতরটা জ্বালিয়ে দিচ্ছে। এইসব প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার কোন উপায় যে নেই। চুপ করে শুনে যেতে হবে। আল্লাহ্ একটা সন্তান দান না করা পর্যন্ত প্রতিদিন কেউ না কেউ এইসব প্রশ্ন করেই যাবে। .

 

চার.

 

দুনিয়াতে প্রতিটি জীবের রিযক্ব আর-রাজ্জাক এর নির্ধারণ করা। কারো উপার্জনের ব্যবস্থা, খাবার ব্যবস্থা আল্লাহই করে রেখেছেন। চাকরি যেমন রিযক্ব তেমনি বিয়ে আর সন্তানও। আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা আমানাহ হিসেবে তাঁর বান্দাকে সন্তান দান করেন। কেউ চাইলেই সন্তান নিতে পারে না।

 

আমাদের সমাজে প্রচলিত একটা কথা আছে, "বাচ্চার জন্য ট্রাই করছো না!" বিয়ের কিছু সময় পর থেকে দম্পতিদের বিশেষ করে মেয়েদের এই কথাটা শুনতে হয়। এই কথাটার অর্থ কেউ কি ভেবে দেখেছেন? মানে, "তোমরা হাসব্যান্ড ওয়াইফ একসাথে সময় কাটাচ্ছো না!" একটা মেয়ের জন্য এটা কতটা বিব্রতকর। কিন্তু অদ্ভুত ব্যপারে হচ্ছে মেয়েরাই মেয়েদের এই প্রশ্ন করে।

 

যাদের একটা বাচ্চা আছে, তারা আরেকটা বাচ্চা নিচ্ছেন না কেন? যাদের দুইটা বাচ্চা আছে, তারা আরেকটা কেন নিবে? তিনটা বাচ্চা! এই যুগে এত বাচ্চা কেউ নেয়! কারো প্রথম সন্তান মেয়ে, "আহারে ছেলে হলে ভালো হতো, এরপর না হয় মেয়ে হতো!" এ যেন সব আমার নিজেরাই নির্ধারণ করি, কার ছেলে আগে হবে, কার মেয়ে, কার দুইটা বাচ্চা হতে হবে, কার তিনটা।

 

--------------------------------------------------------

 

আপনার পরিচিত কারো চাকরি হচ্ছে না বা চাকরি চলে গেলো, বিয়ে হচ্ছে না বা সে বিয়ে করতে চাচ্ছে না, বাচ্চা হচ্ছে না, একটা বাচ্চা হওয়ার পর দ্বিতীয় বাচ্চা নিচ্ছে না বা খুব কম গ্যাপে দুইটা তিনটা বাচ্চা হয়ে গেলো, বা কারো তালাক হয়ে গেলো, কারো পারিবারিক ব্যাপার এবং সে এসব ব্যাপারে কথা বলতে পছন্দ করছে না কিন্তু আপনাকে কথা গুলো জানতেই হবে।

 

আপনি তাকে প্রশ্নের উপর প্রশ্ন করেই যাচ্ছেন। কিন্তু এই প্রশ্নের উত্তর যেনে আপনার কোন লাভ নেই কোন ক্ষতিও নেই। হয়ত আপনি এটা নিয়ে অন্য কোথাও "গপ্প" জুড়িয়ে দিবেন। এছাড়া এই জেনারেল নলেজ গেইন করে আপনার কোন উপকার বা অপকার হবে না।

 

আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্নিত,

তিনি বলেন-রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ

 

“অনর্থক অপ্রয়োজনীয় বিষয় ত্যাগ করাই একজন ব্যক্তির উত্তম ইসলাম।”

‌‌‌‌__________________________________

 

আমাদের সবারই কিছু না কিছু খারাপ অভ্যাস আছে। কিছু খারাপ অভ্যাস এমন যা অন্যদের কষ্ট দিয়ে বসে, আবার কখনো আমাদের নিজেদের দুনিয়া এবং আখিরাতের ক্ষতির কারণ হয়ে যায়। আমরা হয়তো সেই খারাপ অভ্যাসটা নিয়ে চিন্তা করি না বা এতটা পাত্তা দেই না।

 

আমরা আমাদের বড় বড় গুনাহ গুলো থেকে বাঁচার চেষ্টা করি কিন্তু ছোট ছোট গুনাহ গুলো ভুলে যাই। যেমন- কাউকে কষ্ট বা খোঁটা দিয়ে কথা বলা, কারো কাজকে ছোট করা ইত্যাদি। যে মানুষের জীবন পরীক্ষা মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে তাকে নতুন করে কষ্ট দেয়া তার উপর জুলুম হয়ে যায়।

 

আমরা মুসলিম। আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মাহ। আমরা পানি পান করার সুন্নাহ, জুতো পরা ও খোলার সুন্নাহ, আরো অনেক সুন্নাহ পালন করি কিন্তু মুসলিম ভাই বোনদের ছোট করে কথা বলা, প্রতিবেশীদের কষ্ট দেয়া, কারো দুঃখ-কষ্টের সময়ও কাউকে দুটো কটুবাক্য শোনাতে আমরা ছাড় দেই না। এটা তো আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাহ থেকে শিক্ষা পাই না।

 

আবূ হুরাইরা (রাঃ), নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ভাল কথা বলাও সাদকাহ। (বুখারী ও মুসলিম)

 

________________________________

 

এই মহিমান্বিত মাসে আমরা কি নিজেদেরকে একটু পরিবর্তন করতে পারি না? আমরা যেন অহেতুক কারো ব্যাপারে কৌতুহল না প্রকাশ করি। আমরা কি নিজেদেরকে অন্যের জন্য, নিজের পরিচিত, কাছের মানুষদের জন্য সেই জায়গাটা হতে পারি না, যাতে সে মন খুলে সব কথা নির্দ্বিধায় বলতে পারে।

 

কারো খুশির কারণ না হতে পারলেও অন্তত জেনে বুঝে কাউকে কষ্ট দেবেন না। কেউ না চাওয়া পর্যন্ত তার ব্যাক্তিগত ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবেন না। কারো কষ্ট দেখে খুশি হবেন না, তাকে খোঁটা দিয়ে কথা বলবেন না। সুখও মানুষকে আল্লাহর রাস্তা থেকে দূরে সরিয়ে নিতে পারে। কারো কষ্ট হতে পারে তার হেদায়েতের উসিলা। আর আপনার উত্তম আদব এবং আখলাক হতে পারে কারো জন্য ইসলামের পথে আসার উত্তম দাওয়াত।

 

আবূ হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্নিত,

 

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি আল্লাহ ও শেষ দিনের প্রতি বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভাল কথা বলে; নচেৎ চুপ থাকে।”

 

রিয়াদুস সলেহিন, হাদিস নং ১৫১৯

হাদিসের মান: সহিহ হাদিস।

 

আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা এবং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআন ও হাদিসে আমাদের কতবার সাবধান করে দিয়েছেন ভালো কথা বলার ব্যপারে, অন্যের সাথে উত্তম ব্যবহার করার ব্যপারে, অহংকার না করার ব্যাপারে, যা আমাদের জাহান্নাম যাওয়ার কারণ হবে। আল্লাহ্ আমাদের তৌফিক দান করুন মানুষের সাথে উত্তম কথা বলার এবং অনর্থক ও কাউকে কষ্ট দিয়ে কথা থেকে বিরত থাকার।

 

-------------

নিষ্প্রদীপ হৃদয়

আদিনা আমাতুল্লাহ

 

#রৌদ্রময়ী_রামাদান_উৎসব

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

হলিউডের মুভিগুলোতে প্রায়ই দেখা যায় হিরো একাই ১০/১২ জনকে কাবু করে ফেলছে। বাস্তবে তা কিন্তু কোথাও দেখা যায় না। আসলে এটা বিশাল সাহস আর শক্তির ব্যাপার। একাই ১০ জনের বিরুদ্ধে দাঁড়ান সহজ কথা না। একজন সাহাবী কিন্তু তা করে দেখিয়েছিলেন।

.

সালামা বিন ইকওয়া হতে বর্ণিত-- একবার তিনি ও আরও কয়েকজন সাহাবী মদিনাতে ফিরছিলেন। পথিমধ্যে তাঁরা এক জায়গায় থেমেছিলেন যেখানে পাহাড়ের অপর পাশে ছিল বনু নাহিয়ান গোত্র। তারা ছিল মূর্তিপূজারি। পাহাড়ের উপর রাসূল (স) এর কিছু উট চড়ে বেড়াচ্ছিল। কয়েকজন বেদুঈন সেগুলো লুট করে পালিয়ে যায়। সালামা বিন ইকওয়া তাদেরকে ধাওয়া করেন এবং পিছন থেকে অবিরত তীর ছুঁড়তে লাগলেন। তিনি তাদের ঘোড়াগুলোকেও আঘাত করতে লাগলেন। এভাবে বেদুইনরা একটা সরু উপত্যকায় গিয়ে পৌঁছলে সালামা বিন ইকওয়া উপর থেকে পাথর নিক্ষেপ করতে লাগলেন এভাবে তিনি সবগুলো উট উদ্ধার করলেন। কিন্তু তারপরও তাদের পিছু ছাড়লেন না। বেদুঈনরা হালকা হওয়ার জন্য তাদের অস্ত্রশস্ত্র ফেলে দিতে লাগল। সালামা বিন ইকওয়া ছিলেন সাহাবীদের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুতগামী। প্রচলিত ছিল যে তিনি উটের সাথে পাল্লা দিয়ে দৌড়াতে পারতেন। এক জায়গায় এসে তারা থামল এবং আল ফাজারি নামের আরেক বেদুঈন এসে তাদের সাথে যোগদান করল। সে তার সঙ্গীদের জিজ্ঞেস করল "ঐ লোকটি কে?" তারা বলল "এই লোকটি আমাদের সর্বনাশ করে ছেড়েছে এবং সন্ধ্যা থেকে আমাদের পিছনে লেগে রয়েছে।" আল ফাজারি তাদের বললেন "তোমরা চারজন মিলে তো তাকে মেরে ফেলতে পারতে।" সালামা বিন ইকওয়া তখন তাদের কাছে গেলেন এবং বললেন "তোমরা কি আমার পরিচয় জান? আমি হচ্ছি সালামা বিন ইকওয়া এবং আমি তোমারদের চারজনকেই মেরে ফেলতে পারি কিন্তু তোমরা আমার কিছু করতে পারবে না।" তাদের মধ্যে একজন বলল "আমার মনে হয় সে ঠিকই বলছে।" তারপর তারা দ্রুত প্রস্থান করল। অবশেষে সালামা বিন ইকওয়া তাদের সবাইকে একটি ঝর্নায় পানি খাওয়ার সময় ধরে ফেলেন এবং তাদের ঘোড়াগুলো ক্লান্ত হয়ে যাওয়ার কারনে তারা আর পালাতে পারল না। সালামা বিন ইকওয়া সবাইকে ধরে রাসূল (স) এর নিকট হাজির করলেন।

.

আমরা মুভিতে হিরোদের বীরত্ব দেখে শিহরিত হই কিন্তু ইসলামদের হিরোরা তা বাস্তবে করে দেখিয়েছেন। ওয়াল্লাহি তাঁদের জীবনী বা রাসূল (স) এর সীরাত পড়ে দেখুন, কল্পকাহিনীকেও হার মানাবে তাঁদের বীরত্ব।

.

#KnowYourHeroes

#SalamaRA

 

Know Your Heroes - উম্মাহর নক্ষত্ররাজি

 

 

 

 

 

 

মাসজিদুল হারামের ইমাম শাইখ মাহির রমাদানের শেষ দশ দিনের জন্য এক চমৎকার আমলের ফর্মুলা দিয়েছেন:

.

১) প্রতিদিন এক দিরহাম (এক টাকা) দান করুন, যদি দিনটি লাইলাতুল ক্বদরের মাঝে পড়ে, তবে আপনি ৮৪ বছর (১০০০ মাস) পর্যন্ত প্রতিদিন এক টাকা দান করার সাওয়াব পাবেন।

.

২) প্রতিদিন দু' রাকা'আত নফল সালাত আদায় করুন, যদি দিনটি লাইলাতুল ক্বদরের মাঝে পড়ে তবে আপনি ৮৪ বছর পর্যন্ত প্রতিদিন দু' রাকা'আত সালাতের সাওয়াব পাবেন।

.

৩) প্রতিদিন তিন বার সূরা ইখলাস পাঠ করুন, যদি দিনটি লাইলাতুল ক্বদরের মাঝে পড়ে, তবে আপনি ৮৪ বছর পর্যন্ত প্রতিদিন এক খতম ক্বুর'আন পাঠের সাওয়াব পাবেন ।

.

তিনি আরও বলেন, উপরের কথাগুলো মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিন, যারা আপনার কথা শুনে এ আমল করবে, আপনিও তাদের আমলের সমান সাওয়াব পাবেন ইন শা আল্লাহ্।

.

কারণ রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, "ভালো কাজের পথ প্রদর্শনকারী আমলকারীর সমপরিমাণ সাওয়াব পাবে, কিন্তু আমলকারীর সাওয়াবে কোনো ঘাটতি হবে না..." [সহীহ মুসলিম, ২৬৭৪]

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

কালেক্টেড

()

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

অনেকদিন ধরেই পশ্চিমা সভ্যতার ইতিহাস বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত অথচ পূর্ণ বই খুঁজছিলাম মনে মনে যা পড়ে যেকেউ পশ্চিমা সভ্যতা সম্পর্কে একটি মৌলিক ধারণা পেতে পারে কিন্তু ইংরেজদের বই এসব বিষয়ে তেমন কাজে দিচ্ছিলো না (আমার জানাশোনা এমনিতেই অত্যন্ত কম থাকতে পারে আমার জানাশোনাতে না থাকাটাই স্বাভাবিক)। আলহামদুলিল্লাহ! এক্ষেত্রে মুহাম্মাদ হাসান আসকারীর (রাহিমাহুল্লাহ) “জাদিদিয়্যাত’ বইটি আমার খুব ভালো লেগেছে। আলহামদুলিল্লাহ! সম্পূর্ণ পড়ে শেষ করলাম। লেখকের পশ্চিমা সভ্যতা সম্পর্কে ইলম খুব গভীর এবং বিস্তৃত। এর অবশ্য কারণ আছে। লেখক উর্দু সাহিত্যের একজন কিংবদন্তী। তিনি আধুনিক উর্দু গদ্যের বিষয়ে অনেক কাজ করে গিয়েছেন। তিনি একাধারে সফল অনুবাদক ও লেখক। লেখকের প্রথমজীবনে তিনি পাশ্চাত্য সভ্যতার অনেক ক্লাসিক্যাল বইই অনুবাদ করেছেন। তিনি একাধারে উর্দু, ফ্রেঞ্চ, জার্মান, রাশিয়ান ভাষায় দক্ষতা রাখতেন, এবং অনুবাদও করেছেন সব্যসাচী হয়ে। তিনি জীবনের প্রথমদিকে যিন্দিক মুলহিদ টাইপের লোক ছিলেন, ২২ বছর যৌবনের জোশ যখন তার শরীরে প্রবাহিত তখন তিনি তার এক চিঠিতে লিখেন,

.

“আমি নিজেকে ধর্ম, নৈতিকতা ও কথিত সামাজিক দায়বদ্ধতার বন্ধন থেকে মুক্ত ঘোষণা করলাম, এতে আমি নিজেকে এক ধুন্ধুমারের মধ্যে ফেলে দিয়েছি, নিজেকে নিয়ে গেছি অজস্র প্রশ্নবোধক চিহ্নের জগতে। এখন আর পুরানো কোনো কিছুকেই আমি মেনে নিতে পারি না। তবে নতুন কোনো নিয়ম তৈরী করতেও আমি সক্ষম নই। যদি পারতাম তো নিজেকে শুধুমাত্র একজন সাম্যবাদী ও প্রগতিশীল বলতাম, মানুষ আমাকে অবশ্য প্রগতিবাদীই মনে করে আর আমি ও নিজের সম্পর্কে এমন পরিচয়ই দেই। তবে আমি আসলে দ্বিধাচিত্ত এবং ক্ষয়িষ্ণুতার পথে অগ্রসরমান.........” (Towards a Prose of Ideas: An introduction to the critical Thought of Muhammad Hasan Askari (Mehr Ahsan Farooqi, The Annual of Urdu Studies, pg-180)

.

তিনি জীবনে বিভিন্ন পর্যায় পার করে একসময় মাওলানা আশরাফ আলী থানভী(রাহি) ও বিশেষত রেনে জ্যা ম্যারি গেনো বা শায়খ আব্দুল ওয়াহিদ ইয়াহইয়ার(রাহি) প্রভাবে আগের চিন্তাধারা ছেড়ে মুসলিম হয়ে যান এবং শেষ দিন পর্যন্ত অটল থাকার চেষ্টা করেন। তিনি মাওলানা শফি উছমানীর (রাহিমাহুল্লাহ) সোহবতে ছিলেন এবং তাঁর তাফসীর ‘মাআরিফুল কুরআন’ এর ইংরেজী অনুবাদ করছিলেন, তবে শেষ করার আগেই ইন্তেকাল করেন। শেষের দিকে তিনি পূর্বেকার মতন সাহিত্য চর্চার সাথে সেই অর্থে জড়িত ছিলেন না। শেষের দিকে পাশ্চাত্য সভ্যতার ঘোর বিরোধী হয়ে গিয়েছিলেন। আর ‘জাদিদিয়্যাত’ বইটি তাঁর শেষের দিকেই লেখা বলে মনে হয়। বইটির পুরো নাম ‘জাদিদিয়্যাত ইয়া মাগরিবি গোমরাহিয়ো কা তারিখ কা খাকাহ’। তাঁর জানাযা পড়ান মাওলানা তাকী উছমানী(হাফি.)। আল্লাহ লেখককে মাফ করুন, তাঁর খেদমতকে কবুল করুন, তাঁকে জান্নাতে উঁচু মাকাম দান করুন, আমীন। আর খুশির সংবাদ হলো বইটির বাংলা অনুবাদ শেষ হয়ে গিয়েছে। আল্লাহ ইচ্ছা করলে বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের কাছে বইটি তুলে দিতে পারবো। আল্লাহই তাওফীকদাতা।

 

- হোসাইন শাকিল

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

সাইন্স, টেকনোলজি বনাম ইসলামী জাগরণ:

 

অনেকের ধারণা বর্তমান পশ্চিমা বিশ্ব উন্নতির শীর্ষে থাকার একমাত্র কারণ হল, সাইন্স, টেকনোলোজিতে তাদের উন্নতি। এখন মুসলিমরাও যদি উন্নতি করতে চায়, তাদের অবশ্যই প্রযুক্তিতে উন্নতি সাধন করতে হবে। আর যেহেতু বর্তমান প্রযুক্তির নেতৃত্ব পশ্চিমাদের হাতে, তাই মুসলমানরা তাদের অনুসরণ করতে বাধ্য। আরো সুস্পষ্ট করে বললে, মুসলমানরা সাইন্স ও টেকনোলজির মাধ্যমেই পৃথিবীতে উন্নতি সাধণ করেছে। আর বর্তমানে পশ্চিমারাও সেই নীতি অনুসরণ করে উন্নতি সাধণ করছে। এখন আমাদের ও তাদের অনুসরণ করতে হবে।

 

এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। বরং উন্নতির রহস্য ভিন্ন কিছু। সেই রহস্যের দিকে যাওয়ার আগে আমাদের আরেকটা বিষয় পরিষ্কার হওয়া চাই। সেটা হল, উন্নতির পশ্চিমা ধারণা এবং ইসলামী ধারণার মাঝে পার্থক্য আছে।

★ ইসলাম আখিরাত এবং দুনিয়ার উভয় জগতের উন্নতিতে বিশ্বাসী। পক্ষান্তরে পাশ্চাত্যবাদ শুধু দুনিয়াবি উন্নতিতে বিশ্বাসী।

★ ইসলাম আখেরাতের উন্নতিকে পার্থিব উন্নতিরর উপর প্রাধান্য দেয়। পক্ষান্তরে পশ্চিমা দর্শন পার্থিব উন্নতিকে আখিরাতের উপর প্রাধান্য দেয়।

★ ইসলাম আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্যের মধ্য দিয়ে পার্থিব উন্নতির সবক দেয়। আর পশ্চিমা বিশ্ব তাঁদের বিরোধীতা করে উন্নতির শিক্ষা দেয়।

 

উপরের পার্থক্যগুলো থেকে একদম সুস্পষ্ট যে, উন্নতির ইসলামী মডেল আর পাশ্চাত্য মডের সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী। এজন্য মুসলমানরা পাশ্চাত্যের অনুসরণ করে কখনোই উন্নতি সাধণ করতে পারবে না। বরং তখন তারা ইসলাম থেকে আরো দূরে সড়ে আসবে।

 

এবার সাইন্স, টেকনোলোজি নিয়ে কথা বলা যাক:

 

প্রথমত এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল যে, সাইন্স আর টেকনোলজিই জাতিগত উন্নতির একমাত্র কারণ। যার প্রমাণ মুসলমানদের এক হাজার বছরের শাসন। তখন তাদের ধর্ম সমস্ত ধর্মের উপর বিজয়ী ছিল। জ্ঞান-বিজ্ঞান, রাজনীতি, অর্থনীতি, সমরনীতি সহ জীবনের প্রতিটি শাখাতেই পুরো বিশ্ব থেকে এগিয়ে ছিল। কিন্তু এই উন্নতির ভিত্তি সাইন্স আর টেকনোলোজি ছিল না। মুসলিম সভ্যতার বিজয় এর মূল কারণ।

 

দ্বিতীয়ত এটা বলাও ভুল যে, পশ্চিমা বিশ্বের উন্নতির কারণ এই সাইন্স, টেকনোলোজি। যদিও বাহ্যিক দৃষ্টিতে এটা মনে হয়; কিন্তু একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে বাস্তবতা সামনে চলে আসবে। কোন জাতি কিংবা সভ্যতার উন্নতির প্রধান রহস্য হল, স্বীয় আদর্শ ও স্বকীয়তা আঁকড়ে ধরা।

 

চিন্তা করুন, প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানে উন্নতি সাধনের জন্য উচ্চতর শিক্ষার প্রয়োজন। এর জন্য আবার উচ্চতর প্রতিষ্ঠান প্রয়োজন। আর এগুলো তখনই সম্ভব হবে, যখন কোন জাতি বিজয়ী থাকবে। এখন কোন জাতি বিজয়ী হতে হলে স্বীয় মতাদর্শকে পরিপূর্ণ আঁকড়ে ধরতে হবে এবং এর জন্য জান-মাল-সময়-মেধা কুরবানি করতে হবে। অর্থাৎ উন্নতির পুরো ব্যাপারটা মতাদর্শের সাথে সংশ্লিষ্ট। উন্নতির একমাত্র মাধ্যম নিজ বিশ্বাসে আবদ্ধ সভ্যতাকে প্রতিষ্ঠিত করা। এর বাইরে উন্নতির কল্পনা করা অসম্ভব।

 

এখন ফলাফল দাঁড়াল, সাইন্স, টেকনোলজিতে উন্নতি লাভ করার পূর্ব শর্ত হল, স্বীয় মতাদর্শ প্রতিষ্ঠা থাকা। পশ্চিমা বিশ্ব কিংবা মুসলমান কোন জাতির উন্নতিই এসবের মাধ্যমে হয়নি। প্রত্যেকেই স্বীয় জীবনব্যবস্থার অধীনে প্রযুক্তি-বিজ্ঞানে উন্নতি লাভ করতে পারবে। এক সভ্যতার ভিতরে আরেক সভ্যতা উন্নতি লাভ করতে পারেরে না। বরং সেই সভ্যতা অপর সভ্যতার অনুসরণে বিলীন হয়ে যায়।

 

পশ্চিমা মতাদর্শ ( হিউমেনিজম, সেকুলারিজম, লিবারিলিজম) আর মুসলমানদের মতাদর্শ ( তাওহিদ,রিসালাত, আখেরাত) পরস্পর পরিপূর্ণ সাংঘর্ষিক। এজন্য যেসব নীতিমালার ভিত্তিতে তারা নানান প্রতিষ্ঠান দাঁড় করাবে এবং উন্নতি লাভ করবে, মুসলমানরা সেসব প্রতিষ্ঠান ও নীতিমালার মাধ্যমে উন্নতি লাভ করতে পারবে না। উদাহরণ স্বরূপ, তাদের অর্থনীতির ভিত্তি হল, পুঁজিবাদ, সুদ। রাজনৈতিক ব্যবস্থা হল, ডেমোক্রেসি, সেকুলারিজম। আর শিক্ষার ভিত্তি হল, আকল,অভিজ্ঞতা। ওহীর কোন স্থান নেই। এখন এসব নীতিমালার আলোকে ঐতিহাসিকভাবে যেসব প্রতিষ্ঠান ও দৃষ্টিভঙ্গি জন্ম নিয়েছে সেগুলোর মাধ্যমে মুসলমানরা কোনকভাবেই উন্নতি লাভ করতে পারবে।

 

এখানে মনে রাখা চাই, উন্নতি তো লাভ করতে পারবে। কিন্তু সেটা পশ্চিমা ধারণায় উন্নতি, ইসলামী ধারণায় না। এতে করে পশ্চিমারাই লাভবান হবে, মুসলমানরা না। বরং এমন বিপরীতমুখী অনুকরণের ফলে মুসলমানদের সীমাবদ্ধতা, লাঞ্ছনা, দূর্বলতা আরো বৃদ্ধি পাবে। ইসলামী পরিবেশ আরো সংকীর্ণ হতে থাকবে। এজন্য প্রত্যেক মুসলমানের এটা ভালভাবে বুঝে নেয়া জরুরী যে, মুসলমানদের উন্নতির পথ একটাই। তাকে প্রকৃত মুসলমান বনে যেতে হবে। উন্নতির জন্য পাশ্চাত্যের অনুসরণ আরো অবনতি হবে।

 

দুনিয়ার মধ্যে যত জাতি এবং সভ্যতা উন্নতি সাধণ করেছে তাদের অবস্থা এবং কুর আন সুন্নাহর শিক্ষা অধ্যয়নের পর আমাদের সামনে স্পষ্ট হয়, উন্নতির এককাত্র সোপান হল পুরো জাতি এবং সমাজ একটি বিশ্বাসকে আঁকড়ে ধরে আবশ্যিকভাবে তাঁর অনুসরণ করবে, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে সেই বিশ্বাসের প্রতিফলন ঘটাবে, এর জন্য কুরবানি করতে প্রস্তুত থাকবে। এতেই স্বীয় জাতির উন্নতি ঘটবে।

 

[ ইসলাম আওর তাহযীবে মাগরীব কী কাশমাকাশ- ৬৯-৮৩, ড. মুহাম্মাদ আমিন।]

সংক্ষেপিত, পরিমার্জিত, সংযোজিত। - ইফতেখার সিফাত

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

আমাদের কথা জিজ্ঞেস করো বসরার খেজুর বাগানকে, ইরাকের গ্রামাঞ্চলকে, সিরিয়ার মসজিদের মিনারকে। অথবা জিজ্ঞেস করো আন্দালুসের শহরতলীকে, মিসরের উপত্যকাকে কিংবা আলজেরিয়ার ধূসর মরুকে। জিজ্ঞেস করো এই পৃথিবীকে, জিজ্ঞেস করো পৃথিবীতে যারা আছে তাদেরকে।

 

আফ্রিকার ঘন বনাঞ্চল, দানিয়ুবের উপত্যকা, ফ্রান্সের সবুজ পাহাড়, রোমানিয়ার ফসলি জমি, সিসিলির প্রাচীন গ্রাম, ইরানের পাথুরে ভূমি, সবাইকে জিজ্ঞেস করো আমাদের কথা। জিজ্ঞেস করো আসমানের এই বিশাল শামিয়ানার নিচে যারা আছে সবাইকে।

 

সবাই জানে আমাদের সাহসিকতা ও বীরত্ব, ন্যায়বিচার ও আদর্শ, জ্ঞানচর্চা ও সততার কথা। সবাই এক নামে চেনে আমাদের।

 

আমরা মুসলমান !

 

 

 

বলো, আমরা ছাড়া আর কে আছে যারা তাওহিদ প্রতিষ্ঠার জন্য রক্তে ভিজিয়েছে এই পৃথিবী। বলো, আর কারা আছে যারা মজলুমের ডাকে সাড়া দিতে ছুটে বেড়িয়েছে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত। আমরা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করেছি, যখন সর্বত্র প্রতিষ্ঠিত ছিল জুলুম। ঘন অন্ধকারে আমরাই জ্বেলেছি জ্ঞানের মশাল। আমরা মানুষকে মুক্ত করেছি মানুষের পূজা থেকে। স্মরণ করো রিবয়ি ইবনু আমেরের কথা। রুস্তমের দরবারে দাঁড়িয়ে তিনি বলেছিলেন, আমরা এসেছি মানুষকে মানুষের পূজা থেকে মুক্ত করে আল্লাহর আনুগত্যের দিকে নিয়ে যেতে। আমরা তাদেরকে মুক্তি দিব দুনিয়ার সংকীর্ণতা থেকে, আহবান করবো আখিরাতের প্রশস্ততার দিকে।

 

আমরা ঈমানের মাধ্যমে হ্নদয়গুলোকে করেছি আলোকিত, ইলমের দিয়ে আকলকে করেছি প্রশস্ত, সাদা-কালো আর ধনী গরিবের ভেদাভেদ ভুলে মানুষের মাঝে গড়ে দিয়েছি ভালোবাসার মেলবন্ধন।

 

আমরা মুসলমান !

 

 

 

কুফা, বসরা, কায়রো, বাগদাদ, কর্ডোভা, কাইরাওয়ান, ফুসতাত, কাবুল আর দিল্লি, তিলে তিলে গড়ে তুলেছি আমরা। আমরাই প্রতিষ্ঠা করেছি বাইতুল হিকমাহ, জামেয়া নিজামিয়া, জামেয়া আজহার, জামেয়া কাইরাওয়ান, দারুল হাদিস নুরিয়া, জামেয়া মুস্তানসিরিয়া, জামেয়া কর্ডোভা।

 

আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি দামেশকের জামে উমাভী, সুররা মান রআ, সুলতান আহমাদ মসজিদ, লাহোরের শাহী মসজিদ, জামে আমর ইবনুল আস, জামে আয যাইতুনা।

 

পৃথিবীর বাসিন্দাদের আমরা শিক্ষা দিয়েছি। আমরা ছিলাম শিক্ষক, তারা ছিল ছাত্র।

 

আমরা মুসলমান !

 

তাকাও আমাদের এই কাফেলার দিকে। স্মরণ করো আবু বকর সিদ্দিক (রা) এর কথা। স্মরণ করো তার সেই দৃঢ় কন্ঠের ভাষ্য, তারা দ্বীনের মধ্যে হ্রাস করবে আর আমি জীবিত থাকবো?

 

এই কাফেলার আরেক সদস্য উমার ইবনুল খাত্তাব (রা)। যিনি পত্র লিখেছিলেন নীলনদের কাছে। বলেছিলেন, যদি তুমি আল্লাহর আদেশে প্রবাহিত হও, তাহলে প্রবাহিত হও।

 

খালিদ ইবনুল ওয়ালিদ, আবু উবাইদা ইবনুল জাররাহ, মুসান্না ইবনুল হারিসা, সাদ ইবনু আবি ওয়াক্কাস, সবাই আমাদের কাফেলার সদস্য।

 

উকবা বিন নাফে, তিনি গোড়াপত্তন করেছিলেন কাইরাওয়ান শহরের, তারপর পৌছে গিয়েছিলেন আটলান্টিকের কিনারে, সমুদ্রের পানিতে নেমে বলেছিলেন, হে আল্লাহ, যদি সমুদ্র বাঁধা না হতো তাহলে আমি আরো সামনে এগিয়ে যেতাম।

 

সুলতান সালাহুদ্দিন আইয়ুবী আমাদের, যার সামনে বারবার থমকে গেছে ক্রুসেডারদের আক্রমন। মনে পড়ে আসকালানের স্মৃতি। ক্রুসেডারদের হাত থেকে এই শহরকে রক্ষা করার পথ না পেয়ে শহরবাসীকে বের করে দিয়েছিলেন সুলতান। তারপর পুড়িয়ে দিয়েছিলেন এই শহর। সেই প্রথম রিচার্ড উপলব্ধি করেছিলেন, অসাধারণ দৃঢ়তার অধিকারী এক সেনানায়কের মুখোমুখি হয়েছেন তিনি।

 

মনে পড়ে রুকনুদ্দিন বাইবার্সের কথা। তার সম্পর্কে সবচেয়ে সুন্দর বক্তব্যটি সম্ভবত হ্যারল্ড ল্যাম্বের। ‘কোনো রকম পাহারা ছাড়াই ঘোড়ায় চেপে উধাও হয়ে যেতেন, তারপর পরদিন উদয় হতেন প্যালেস্টাইনে, পরদিন আরবীয় মরুভূমিতে। গ্যারিসন যখন ভাবতো নীল নদের পাড়ে ভোজে মত্ত তিনি, ঠিক সেই সময় আলেপ্পোর ধূসর দুর্গের গেটে হাজির হতেন তিনি। কেউ জানতো না তার পরিকল্পনার কথা। সমস্ত পরিকল্পনা নিজের ভেতর চেপে রাখতেন তিনি। ১২৬৮ সালের মার্চে তিনি ছিলেন জাফফায়, এপ্রিলে হামলে পড়েন বানিয়াসে, ১ মে তাকে দেখা গেল এন্টিয়ক দখল করতে। এন্টিয়ক থেকে জাফফার দূরত্ব ৫০০ মাইল। বাইবার্স জাফফা দখল করেন ১২ ঘন্টায়, এন্টিয়ক ত্রিশ ঘন্টায়’ লিখেছেন হ্যারল্ড ল্যাম্ব।

(চলবে)

 

- ইমরান রাইহান ভাই 💝

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

' ভালো রেজাল্ট করলে বাইক কিনে দেবো । '

এসএসসি পরীক্ষার্থী ছেলেকে বাবা কথা দিয়েছিল । পুত্রবৎসল পিতা কথা রেখেছে । ছেলেটির স্বপ্ন ছিল - প্রথম দিন কলেজ যাবে বাবার দেওয়া উপহারে চেপে । তার এ স্বপ্ন আর কোনদিনই পূরণ হবে না । আতুরের গন্ধ নিয়ে ঝকঝকে দামী বাইকটি ঘরে পড়ে আছে । কিন্তু বাইকের মালিক আজ নেই ।

আগেরদিন বিপুল আনন্দ - উৎসাহে ঈদ শপিং করেছিল ; জুতা , জামা , প্যান্ট, পাঞ্জাবী - ঈদের দিন পোশাকগুলোর ভাঁজ খোলার কথা ছিল যার সে আর নেই ।

 

গতকাল ইফতারের পর , সন্ধ্যা উতরানো পশ্চিমাকাশে ঘন কালো মেঘ জমেছিল । ছেলেটির বাবা মাগরীবের পর বাড়িতে বিশ্রাম করছিল তখন । এরই ফাঁকে কখন বাড়ির বাইরে যায় ছেলেটি । না , খুব বেশী দূর যায়নি সে । দুজন বন্ধুর সাথে ঘুরতে বেরিয়েছিল বাড়ির আশেপাশে , প্রতিদিন যেমন বের হয় । হঠাৎ বৃষ্টি , সাথে ঝড়ো হাওয়া ..... ' দৌঁড় দে ..... ' বলেই দে ছুট ! ছুটতে ছুটতে মোড়টা পার হয় তারা । পলকেই অর্ধেক পথ পেরিয়ে যায় । আর মাত্র একশ গজ মতো বাকি ..... কিন্তু এটুকু পথ পেরিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে .... জীবিত অবস্থায় বাড়িতে আর ফেরা হলো না তার । ছুটন্ত তিনজনের সবচে পিছে পড়া মাহিম আমাদের জানায় , ' রুদ্র মুখ থুবড়ে পড়ে গেল , আর উঠলো না । '

 

মৃত্যু এতো আকস্মিক ! জানি , কিন্তু দেখেও বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় । জীবন ও মৃত্যু কত কাছাকাছি ! এলাকার পরিচিত মুখ , সদা হাস্য উজ্জ্বল , উচ্ছল , জামানা বিচারে বিস্ময়কর ভদ্র - নম্র অথচ উচ্ছ্বাসে ভরা তরতাজা প্রাণটি ঝরে যাওয়ার খবর নিমিষেই ছড়িয়ে পড়ে । বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে পথে নেমে আসে হতবিহ্বল মানুষরা । হৃদয় বিদারক খবরটি মিথ্যা হলেই যেন সবাই সুখি হই । অবিশ্বাস্য খবর অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিশ্বাস করে ছুটেছিলাম প্রতিবেশীর বাড়ি অভিমুখে । পথে অনেক মানুষ , প্রায় সবারই চোখে - মুখে জিজ্ঞাসা , কী হলো ? কেমন করে হলো ? এও কী সম্ভব !

 

ছেলেটির বাবা । আমার ছোট ভাইয়ের অন্তরঙ্গ বন্ধু । সদ্য প্রিয় পুত্র হারানো শোকার্ত পিতার মুখটি কল্পনা করার চেষ্টা করি আর আৎকে উঠে থমকে দাঁড়াই । খানিকক্ষণ দাঁড়িয়ে হতভাগা পিতার সামনে যাওয়ার সাহস সঞ্চয় করি । মানসপটে ভেসে ওঠে আমার বড় ছেলের মুখখানাও .....

সারাক্ষণ দলবেঁধে ঘুরত ওরা । আমার ছেলে দলে জ্যেষ্ঠতার মর্যাদা পেত । সকাল , বিকাল ..... যখন তখন ..... ' ও চয়ন মামা ! ' বলে আমার ছেলেকে ডাকতো। আর ফোন কল তো আছেই । ছেলের ফোনে রিংটোন বাজলেই আমি কিংবা ওর আম্মু জিজ্ঞেস করি , ' কে রে ? '

' রুদ্র ! ' শুনে হাসতাম । মনে মনে বলি , ' মানিকজোড় ! '

 

হৈ - হুল্লোড় করে ওরা পাড়া মাতিয়ে রাখে । আর সুঠাম - সুদর্শন রুদ্র আমুদে ও হুল্লোড়ে দলের একজন অন্যতম প্রধান তারকা । কদাচিৎ ও অনুপস্থিত থাকত । পাড়া - মহল্লাবাসীর স্বস্তি যে ছেলেগুলো বখে যায়নি । যা একটু আধটু - তা শুধু তারুণ্যের নির্জলা দূরন্তপনা । অতি স্বাভাবিক । মাঝে মধ্যে বাড়ির সামনে বসে বসে ওদের গতিবিধি লক্ষ্য করি । আমার ভালো লাগে । এই দেখা গেল , ওরা অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছে .... পরক্ষণেই একদম চুপ । দলের কারো হয়ত নজরে পড়ে গেছে যে বয়স্ক কেউ ওদের ওপর নজর রাখছে আর অমনি সে সবার কাছে সতর্ক সংকেত পৌঁছে দিয়েছে । আমি ওদের দেখি ..... প্রাণভরে দেখি আর নিজের হৃত তারুণ্যের স্মৃতি রোমন্থন করি । বিশেষভাবে রুদ্রকে দেখতাম । কখনও পথের বিপরীত দিক থেকে এসে সালাম দিয়ে আমাকে অতিক্রম করে গেলে ওর অগোচরে পিছন ফিরে কত দেখেছি । কেন জানি না , দেখতাম ও-কে । ওর নিথর নিস্পন্দিত দেহখানি আর আলোয় উদ্ভাসিত মুখাবয়ব দেখলাম যখন , বুঝলাম , পুত্রতুল্য ছেলেটিকে মনে মনে কত ভালোবেসেছি ।

 

ছেলেটির সেজো চাচা আমার বন্ধু । ভ্রাতুষ্পুত্রের মৃত্যু শোকে পাথর প্রায় চাচার পাশে ছিলাম সারা রাত । গভীর রাতে , গাঢ় অন্ধকারে দীর্ঘক্ষণ চুপচাপ বসে থাকতে থাকতে ব্যাথার বিস্ফোরণে সগতোক্তি করে , ' সোহাগ ( ছেলেটির আর এক নাম) কী শুধু আমার ছোটভাইয়ের ছেলে ! ও আমাদের পাঁচ ভাইয়েরই ছেলে ছিল ! ' বাষ্পরুদ্ধ কণ্ঠে বলেছিলাম , ' জানি , মামু ! ও তোমাদের কত প্রিয় ! '

 

আজ সকাল দশটায় জানাযা হলো । প্রশস্ত পারিবারিক গোরস্তানে দাফন সম্পন্ন হয় । পরিষ্কার তকতকে গোরস্তানটি । গতকাল ওরা সবাই মিলে বৃষ্টির পানিতে তরতরিয়ে বেড়ে ওঠা আগাছা পরিস্কার করেছে । বাপ - চাচাদের সাথে রুদ্রও হাত লাগিয়েছিল । দাফন শেষে একটু দেরি করেই ফিরছিলাম । রাস্তার পাশে বড় বটগাছের ছায়ায় একগাদা ছেলেপিলে বসে । ওরা যেন বসে নেই । ওরা যেন কেউ রুদ্রর প্রাণোচ্ছল সাথী নয় । আজ ওদেরকে খুব অচেনা মনে হলো । যেন এক একজন ধ্যানমগ্ন তরুণ দরবেশ । ওদের পাশ দিয়ে আসার সময় মনে মনে বলছিলাম , ভাবো ! ভাবো হে বৎসরা ! জীবন কত তুচ্ছ ! কত মিথ্যা ! আর মৃত্যু কত সত্যি ! কত নিকটে !

হে বৎসগণ ! তোমাদের প্রিয় সাথী হারানো বেদনায় সন্তপ্ত চিত্তে তোমরা উপলব্ধির চেষ্টা কর , যেকোন সময় নিভে যেতে পারে যে কারো বর্ণাঢ্য জীবনের প্রদীপ ; মুছে যেতে পারে সকল রঙিন পরিচয় ।

 

তাহলে সে-ই ভালো আমরা হামেশা এমন প্রস্তুতি নিই যেন মহান রবের দরবারে আমাদের আত্মা পূত - পবিত্র অবস্থায় পৌঁছতে পারে ।

 

- সাব্বির আহমেদ

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

" সেই কওমের লোকেরা কী করে গোমরাহ্ হবে যাদের মাঝে রয়েছেন হাসান বসরীর মতো মনীষী। "

 

হযরত হাসান বসরী (রহঃ) সম্পর্কে মাসলামাহ ইবনে আবদুল মালিকের (রহঃ) উপরোক্ত মন্তব্য প্রমাণ করে হাসান বসরী (রহঃ) কত উঁচু মর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তি ছিলেন। বহু সংখ্যক সাহাবীর (রাঃ) জীবদ্দশায়ই তাঁর জ্ঞান, মেধা, প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা, আল্লাহভীরুতা, আপোষহীনতা, সাহসীকতার মত মহান গুণাবলীর সৌরভ চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে। মানুষেরা দলে দলে এসে তাঁর নিকট ভীড় করত এবং ইলমের এই মশাল হতে নিজেদের প্রদীপ জ্বেলে নিত।

 

হযতর হাসান বসরী (রহঃ) একজন বিখ্যাত তাবেঈ। তিনি এমনই ভাগ্যবান যে তাঁর " হাসান " নামটি উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালামা রাযিয়াল্লাহ্ আনহার দেওয়া। হযরত হাসান বসরী (রহঃ) এদিক থেকেও ভাগ্যবান যে উম্মে সালামা (রাঃ) তাঁর দুধ মা!

 

হযরত হাসান বসরীর (রহঃ) নাম শোনেনি এমন মুসলিম পাওয়া ভার। কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয়, তাসাউফ বা সূফীমতাবলম্বী অন্য কথায় তথাকথিত মারিফতপন্থী লেখক, আলোচকদের মনগড়া বর্ণনায় হাসান বসরী (রহঃ) চরিত্রটির যথেষ্ট বিকৃতি ঘটেছে। এতদাঞ্চলের মানুষের নিকট তিনি একজন সংসার ত্যাগী, দুনিয়ার ঝুট-ঝামেলামুক্ত সাধু-দরবেশ প্রকৃতির মানুষ হিসাবে পরিচিত। কিন্তু প্রকৃত ব্যাপার তা নয়।

 

হযরত হাসান বসরী (রহঃ) যেমন ইলমে দ্বীনের দিক হতে জামানার অন্যতম শ্রেষ্ঠস্থানীয় হিসাবে গণ্য হতেন, তেমনি ছিলেন অকুতভয়। জীবনে বহুবার শাসকগোষ্ঠীর মুখোমুখী দাঁড়াতে হয়েছে তাঁকে। হক প্রকাশে তিনি কখনো পিছ পা হননি, দ্বিধান্বিতও হননি। এমনকি সত্যকে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে বলতেও চেষ্টা করেননি। বরং তিনি সব সময় সত্যকে সোজাসুজি বলেছেন নির্দ্বিধায়। দ্বীনের ব্যাপারে তিনি আপোষ করতেন না।

 

বন্ধুরা! আসুন, মহান এই মানুষটির অদম্য সাহসিকতার একটা গল্প শুনি।

 

* * *

 

অসংখ্য মানুষের রক্তে যার হাত রঞ্জিত, পাষাণ হৃদয় হাজ্জাজের নাম অনেকেরই জানা......

উমাইয়া খিলাফত আমলে হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ যখন ইরাকের শাসক নিযুক্ত হলেন এবং সেখানে জুলুম, স্বেচ্ছাচারিতা ও সীমালঙ্ঘন করতে লাগলেন......

তখন এই প্রবল অত্যাচারী শাসকের বিরুদ্ধে সামান্য যে কয়জন মানুষ রুখে দাঁড়িয়েছিলেন হাসান বসরী (রহঃ) ছিলেন তাদের অন্যতম। তিনি মানুষের কাছে হাজ্জাজের অন্যায় অপকর্মগুলোর তীব্র সমালোচনা করতেন, জালিমের মুখের ওপর চিত্কার করে হকের উচ্চারণ করতে বিন্দুমাত্র পরোয়া করতেন না।

 

বসরা ও কুফা নগরীর মধ্যবর্তী শহর ওয়াসেত। হাজ্জাজ এই শহরে এক রাজকীয় বাসভবন গড়লেন। নির্মানকাজ সম্পন্ন হলে শহরে নির্দেশ জারি করা হলো---

' মহামান্য শাসকের নতুন বাসভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সকলকে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। '

হাসান বসরী চিন্তা করলেন, বহু মানুষের এই সমাবেশ তার জন্য এক সোনালি সুযোগ, কিছুতেই এটা হাতছাড়া করা উচিত নয়।

অতএব তিনি সকলকে নসীহত করতে, আল্লাহ্ ও রসূলের (সঃ) কথা স্মরণ করাতে, পার্থিব জীবনের ভোগবিলাস থেকে সাবধান করে তাদের আখিরাতের অনন্ত জীবন ও জান্নাতের অফুরন্ত নেয়ামতের প্রতি উত্সাহিত করার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লেন।

সেখানে পৌঁছার পর তিনি দেখলেন -----

 

বিশাল আঙিনা ভরা মানুষ মুগ্ধদৃষ্টিতে হাজ্জাজের রাজকীয় প্রাসাদটির চারিদিকে ঘুরে ঘুরে দেখছে। তারা প্রাসাদের চমত্কার নির্মাণশৈলী দেখে বিস্মিত, বিশাল আঙিনা দেখে হতবাক, সার্বিক সৌন্দর্যের অভিনবত্বে অভিভূত হয়ে পড়েছে সকলে।

 

হাসান বসরী এক জায়গায় দাঁড়িয়ে বিক্ষিপ্ত জনতার দৃষ্টি আকর্ষণ করলেন এরপর অগ্নিঝরা বক্তৃতায় বললেন ----

 

' এই জালিম ও খবিশ হাজ্জাজ যে আলীশান রাজপ্রাসাদ তৈরী করেছে তা দেখে আমার মনে পড়ছে এক আল্লাহদ্রোহী ফেরাউনের কথা, যে ইতিপূর্বে এর চেয়েও বৃহত্ এবং জাঁকজমকপূর্ণ রাজপ্রাসাদ বানিয়ে ছিল। কিন্তু ফেরআউন আল্লাহর আযাব থেকে বাঁচতে পারেনি, তাকে আল্লাহ্ ধ্বংস করে দিয়েছেন আর ধূলোয় মিশিয়ে দিয়েছেন তার সেই গর্বিত মহলকে।

হায়! হাজ্জাজ যদি বুঝতে পারত আসমানওয়ালা তাকে কত ঘৃণা করে.....

হায়! সে যদি জানতে পারত জমিনবাসীরা তাকে কতখানী প্রবঞ্চিত করেছে....

 

এই অগ্নিঝরা ক্ষোভের ভাষায় শঙ্কিত হয়ে পড়লেন এক শ্রোতা। হাজ্জাজের জুলুম না জানি এখানেই শুরু হয়ে যায়! এই ভয়ে তিনি হাসান বসরীকে নিবৃত্ত করতে বলে উঠলেন ----

 

' ব্যস হে আবু সাঈদ! ব্যস..... '

 

জবাবে হাসান বসরী বললেন ----

 

' আল্লাহ্ ইলমওয়ালাদের থেকে অঙ্গিকার নিয়েছেন, তারা যেন (কারও ভয়ে) সত্য গোপন না করে এবং স্পষ্ট ভাষায় হক প্রকাশ করে। '

 

প্রিয় পাঠক, হযরত হাসান বসরীর (রহঃ) শেষোক্ত বক্তব্যটি বিশেষভাবে চিন্তা করুন। তাঁর এ বক্তব্য সর্বকালের সর্বস্থানের হক আলেম এবং দরবারী ও কারবারী আলেমদের মধ্যে পার্থক্য সূচক একটি মানদণ্ড। বক্তব্যটি আমরা আবারও পড়ি ----

 

' আল্লাহ্ ইলমওয়ালাদের থেকে অঙ্গিকার নিয়েছেন, তারা যেন (কারও ভয়ে) সত্য গোপন না করে এবং স্পষ্ট ভাষায় হক প্রকাশ করে। '

 

* * *

 

হাজ্জাজের নব নির্মিত প্রাসাদ প্রাঙ্গনে জনতার সন্মুখে হাসান বসরী (রহঃ) কর্তৃক প্রকাশ্যে সমালোচিত হয়ে হাজ্জাজ ভীষণ ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ হোন। তিনি এই অকুতভয় তাবেঈকে হত্যার সীদ্ধান্ত নেন, এবং এ জন্য সকল আয়োজন সম্পন্ন করেন। লোকেরা মনে করেছিল, হাসান বসরীর মৃত্যু নিশ্চিত। কিন্তু এ যাত্রায় হাসান বসরীর (রহঃ) মৃত্যু হয়নি।

 

না, তিনি পালিয়ে যাননি, হাজ্জাজের ভয়ে আত্মগোপনও করেছিলেন না। বরং দুর্দমনীয় সাহসীকতার সাথে তিনি হাজ্জাজের মুখোমুখী হয়েছিলেন.......

 

বন্ধুরা, সেই শ্বাসরুদ্ধকর ঘটনা নিয়ে হাজির হব অন্য কোন একদিন। ততক্ষণে আপনাদের উপর বর্ষিত হোক আল্লাহ্ সুবহানুওয়া তায়ালার করুণাধারা।

 

----------------------------------------------------

 

তথ্যসূত্র : তাবেঈদের ঈমানদীপ্ত জীবন

 

 

- সাব্বির আহমেদ

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

এক .

 

সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভীর (রহঃ) লেখা পড়েছিলাম , কোন এলাকায় (হিন্দুস্তানের) মুসলিম পুলিশ অফিসার বদলি হয়ে আসলে সংশ্লিষ্ট এলাকার মুসলিমরা খুশি হয়ে যায় । তারা এই ভেবে স্বস্তি পায় যে , অন্তত কিছুদিনের জন্য জুলুম থেকে নাজাত পাওয়া যাবে ।

 

বিংশ শতাব্দীর বরেণ্য আলেমে দ্বীন নদভীকে (রহঃ) যারা জানেন তারা একথাটিকে অবশ্যই গূরুত্ব দিবেন । ত্বগূতের অধীনে চাকরী , অমুসলিম রাষ্ট্রের সেবা - এসব ভিন্ন আলাপ । সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভীর (রহঃ) উদ্দেশ্য - হিন্দু প্রধান দেশটিতে বৈরীতার শিকার মুসলিম মানসকে তুলে ধরা । উল্লেখ্য তিনি একথা যখন বলেছেন তখন বিজেপি ক্ষমতায় ছিল না ।

 

উদ্ধৃতি উল্লেখ করলাম এ জন্য যে , হিন্দুস্তানের নির্বাচনে বিজেপি জয়লাভ করায় , মুসলিম প্রধান রাষ্ট্র নায়করা মোদীকে অভিনন্দন বার্তা পাঠাচ্ছেন । হয়ত রাষ্ট্রীয় প্রটোকল অনুযায়ী তারা এটা করছেন । প্রচলিত ধারার ইসলামী(!) রাজনৈতিক সংগঠনগুলোও অভিনন্দন বার্তা পাঠাচ্ছেন । ( অবশ্য এবার এমনটা হয়েছে কিনা তা এখনও আমার নজরে পড়েনি । তবে গতবার অভিনন্দন বার্তা পাঠানো হয়েছিল।) এছাড়া অনেকেই বলছেন , মোদী জিতেছে ভালো হয়েছে । ভারতের মুসলমানদের আরও শিক্ষা হওয়ার দরকার আছে । যারা এমনটা বলছেন , কেন বলছেন তা ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই । শুধু বলব , জালিমের শাসন কামনা করা , জালিমের ক্ষমতা আরোহণে অভিনন্দন জানানো উচিত নয় ।

 

অন্যদের কথা বাদ দিলাম , ইসলামপন্থীরা কীভাবে মোদীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাতে পারেন , অথবা হিন্দুস্তানের মুসলিমদের ওপর ক্ষোভ থেকে একথা কীভাবে বলতে পারেন যে , ' মোদী জিতেছে ঠিক হয়েছে ! ' না , ভাই ! মুসলিমদের ওপর জুলুম কামনা করা হারাম । তা যে উদ্দেশ্যেই হোক না কেন । হ্যাঁ , একথা ঠিক যে , হিন্দুস্তানী মুসলিমদের অনেক সমস্যা আছে । ইসলামী দৃষ্টিকোন থেকে দেখলে তাদের ঘাটতি - কমতি অনেক । তারা অসাম্প্রদায়িক , হিন্দুতোষণকারী ইত্যাদি ইত্যাদি । সব ঠিক আছে । এজন্য তাদের প্রতি আমার অভিযোগ - অনুযোগও কম নয় । হিন্দুস্তানী মুসলিমদের যথপোযুক্ত সমালোচনার সুযোগ রয়েছে আর তা করা চলেও । তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে তা মোটেও নয় ।

 

হিন্দুস্তানী মুসলিমদের ওপর মুশরিকদের জুলুম কামনার আগে বাস্তব পরিস্থিতি তো বিবেচনা করা উচিত । এরকম অসাম্প্রদায়িক ও তোষণকারী তো খোদ বাংলাদেশেও নেহায়েত কম নেই । আমরা তো নিজ চোখেই দেখছি , এদেশেই জুলুমের শাসন - প্রশাসনের হাত থেকে নিস্তার পেতে কতজন আপোষকামী আর তোষামোদকারীতে পরিণত হয়ে যাচ্ছে । তাহলে হিন্দুস্তানের মুসলিমদের কি করার থাকতে পারে ! আমি আপোষকামীতা ও তোষামোদীর সাফাই গাচ্ছি না । শুধু বলতে চাইছি , আমরা যেন মুসলিমদের ওপর জুলুম কামনা না করি । কেউ হয়ত মনে করতে পারেন , জুলুম মুসলিমদের জাগ্রত করবে । এমনটা নাও হতে পারে । এমন হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে । বরং , জুলুম - নির্যাতন উল্টো অর্থাৎ আরও বেশী নতজানু , আরও হীননণ্যতার শিকার , আরও বেশী কাপুরুষ বানিয়ে দিতে পারে । এমনকি এর ফলে দলে দলে দ্বীন - ধর্ম ত্যাগ করাও বিচিত্র নয় । এমনটাই হয়েছিল স্পেনে যখন খ্রীস্টানদের কাছে আটশ বছরের মুসলিম শাসনের পতন হয়েছিল ।

 

কে না জানে যে , হিন্দুত্ববাদী বিজেপি হলো ইসলাম ও মুসলিমদের নিকৃষ্ট দুশমন । আর মোদী হলো এই দুশমন শিবিরের সিপাহসালার । মোদীর নেতৃত্বে হিন্দুস্তানী হতভাগা মুসলিমদের ওপর চালানো জুলুমের ফিরিস্তি তো সকলের জানা । নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরপরই বিভিন্ন জায়গায় মুসলিমদের ওপর হামলা - নির্যাতন শুরু হয়ে গেছে । যারা এসব জুলুমের শিকার কেবল তারাই জানে এরকম পরিস্থিতিতে নির্যাতিতদের মানসিক অবস্থা কেমন থাকে । যারা নিরাপদে আছে তারা কখনো জানবে না ঐসব হতভাগাদের মনের অবস্থা । আমাদের উচিত সঠিকভাবে উপলব্ধির চেষ্টা করা আর আল্লাহর নিকট দোয়া করা ।

 

দুই .

 

হিন্দুস্তানের নির্বাচনী ফল আবারও প্রমাণ করল যে , বিশ্বে ধর্মীয় ভিত্তিতেই মেরুকরণ হয় । ভণ্ডামীপূর্ণ এই আধুনিক যুগে কিছু সময় এটা তেমন খোলাখুলি না হলেও বর্তমানে একেবারেই স্পষ্ট যে , বিশ্ব দুটি শিবিরে বিভক্ত । আগামী পৃথিবীর নেতৃত্ব এই দুই শিবিরের মধ্যে কারা দিবে , বিশ্বের বাগডোর কাদের হাতে থাকবে তা নির্ধারণের জন্য ভয়াবহ ও বিভীষিকাময় এক লড়াইয়ের পথে বিশ্ব দ্রুত ধাবিত হচ্ছে । চূড়ান্ত লড়াইয়ের পূর্বে এখন ওয়ার্ম আপ লড়াই চলছে । আর এ লড়াইয়ের গূরুত্বপূর্ণ একটা পার্ট মনস্তাত্ত্বিক লড়াই যা জারী আছে পূর্ণরুপে । কিন্তু দূর্ভাগ্যের বিষয় , মনস্তাত্ত্বিক লড়াই সম্পর্কে সকল জাতি - গোষ্ঠী সচেতন থাকলেও মুসলিমরা এখনও বেখবর ।

 

মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ের অংশ হিসাবে কুফ্ফাররা বিভিন্ন চটকদার স্লোগান চালু করেছে । চাতুর্যপূর্ণ শ্লোগানের মধ্যে ' অসাম্প্রদায়িকতা ' বা ' সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ' অন্যতম । এ এমন এক বিষ যা মানুষকে বিবশ করে দেয় । শ্লোগানের উদ্যোক্তারা ' অসাম্প্রদায়িকতার ' ঝাণ্ডা ছুঁড়ে ফেলছে । একে একে তারা ' সম্প্রীতির ' আলখেল্লা খুলে ফেলছে এবং স্বরুপে আত্মপ্রকাশ করছে । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্রুশ পূজারীরা ইতিমধ্যেই ধর্মীয় সহনশীলতার মুখোশ খুলে ফেলেছে । ইহুদীবাদীদের কথা না'ই বা বললাম । ইউরোপীয়রাও পরিকল্পনা মতো একই পথে হাঁটছে । এশিয়ার চীনাদের কথা আর কি বলব । হিন্দুস্তানী হিন্দুরা তো ' অসাম্প্রদায়িকতাকে ' কখনই গ্রহণ করেনি । আর এখন তারা পরিস্কারভাবেই তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে ।

 

অথচ মুসলিমরা আজও ' অসাম্প্রদায়িকতার ' নোংরা চাদর আরও টেনেটুনে গায়ে চড়াচ্ছে। যারা এমনটা করছে তারা বুঝতে পারছে না এর ফল কতটা মারাত্মক হতে পারে । ' অসাম্প্রদায়িকতার ' ধারনা এমন মারণাস্ত্র যে তা দিয়ে শত্রুরা এমন ধারনাপোষণকারীদের বিরুদ্ধে অর্ধেক যুদ্ধ জয়ী হতে পারে । শত্রুকে শত্রু মনে না করা , শত্রুকে চিনতে না পারা , শত্রুকে বিশ্বাস করা , শত্রুর সাথে বন্ধুসুলভ আচরণ করা - এসবই সম্ভব হয় ' অসাম্প্রদায়িক ' চেতনায় । এ চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে প্রতিপক্ষকে দাঁত - নখহীন বাঘে পরিণত করা সম্ভব । আর পরিকল্পিত ভাবে একাজটিই করা হচ্ছে খুব জোরেশোরে মুসলিমদের বিরুদ্ধে ।

 

পরিতাপের বিষয় , খুব কম সংখ্যক বাদে কুফ্ফারদের পরিচালিত মনস্তাত্ত্বিক লড়াইয়ে চিন্তার দিক থেকে বিপর্যস্ত এবং আক্বিদাগত বিকৃতির শিকার মুসলিমরা আগামী বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়া তো পরের কথা টিকে থাকা বা আত্মরক্ষার লড়াইয়েরও অযোগ্য বিবেচিত হচ্ছে । সুতরাং , মনস্তাত্ত্বিক লড়াইকে গূরুত্ব দিয়ে মুসলিমদের আক্বিদার সংশোধন এবং চিন্তার পুনর্গঠনের কাজকে সর্বাধিক গূরুত্ব দেওয়া কর্তব্য ।

 

-সাব্বির আহমেদ

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

আধুনিক জাহিলিয়াত পূর্বের যে কোন সময়ের জাহিলিয়াতের তুলনায় জটিল ও কুটিল। পূর্বের জাহিলিয়াত ছিল সাদামাটা ধরণের, তার উপর বুদ্ধিবৃত্তিক গোলকধাঁধাঁর কারিশমা ছিল না বললেই চলে। কিন্তু আধুনিক জাহিলিয়াত বিজ্ঞান নামের এক প্রভূ তৈরী করেছে আর এই প্রভূর প্রতি মানব জাতির ঈমান এমনই পোক্ত করিয়ে নিয়েছে যে মানবতা বিধ্বংসী এমন কোন জাহিলি উপাদান নেই যা বিজ্ঞানের দোহায় দিয়ে চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে না।

 

আধুনিক জাহিলিয়াত বিজ্ঞানের নামে ও বিজ্ঞানের সহযোগিতায় মানুষের মগজকে বিবশ করে নিজ আয়ত্তে নিতে সক্ষম হয়েছে এবং তা জাহিলিয়াতকে গ্রহণের জন্য প্রস্তুত করে তুলেছে। এ রকম ' ঊর্বর ' মস্তিষ্কে জাহিলিয়াতের যে বীজই বপন করা হচ্ছে তাই অঙ্কুরিত হয়ে তরতরিয়ে বেড়ে ফুলে ফলে সুশোভিত হয়ে উঠছে।

 

বড়ই কঠিন ও ভয়ংকর ও মারাত্মক আজকের আধুনিক যুগের জাহিলিয়াত! এর থেকে রেহাই পাওয়া খুবই শক্ত এবং অল্প সংখ্যক মানুষই আধুনিক জাহিলিয়াতের ফাঁদ থেকে মুক্তি পাচ্ছে।

 

- সাব্বির আহমেদ

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

মিসবাহ মাহিন ভাইয়ের পোস্টঃ

 

অনলাইন পোলঃ (পাবলিক কমেন্ট অন করে দিয়েছি। যেকেউ কমেন্ট করতে পারবেন)

.

অনেক ভাই এবং বোন যারা বাহিরের বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলোতে আছেন যেখানে মূলত কাফির-মুশরিকদের সংখ্যাই বেশি, তারা কেউ কেউ দাবি করে থাকেন যে সেখানে ভালো মুসলিম কমিউনিটি আছে। এই কমিউনিটির সাথে থাকলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম একটা ইসলামিক পরিবেশে বেড়ে উঠতে পারবে। তাদের আরেকটা যুক্তি হলো দেশে যে খুব ভালো ইসলামিক পরিবেশ আছে তাও নয়। এখানেও দেখা যাচ্ছে ইদানীং দাঁড়ি-হিজাবের কারণে কর্মক্ষেত্র, শিক্ষাক্ষেত্রে হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে। কিন্তু, বাহিরের কাফিরদের মধ্যেও যেখানে মুসলিম কমিউনিটি আছে সেখানে তুলনামূলক ভালো পরিবেশ আছে। মসজিদ আছে, ইসলামিক স্কুল আছে। তবে আমেরিকা, ইউরোপের বেশিরভাগ জায়গাতেই আমাদের দেশের মতো এত ঘনঘন মসজিদ নেই, চাইলেই সালাত আদায় করা গেলো। পার্ক, লাইব্রেরী কিংবা অফিসের এক কোণায় একাকী সালাত আদায় করা লাগে। জুম্মাতে ছুটি পাওয়া যায় না বলে জুম্না মিস করা খুব স্বাভাবিক। সব স্টেইটে অবশ্য এক অবস্থা না।

.

আবার শাইখ আব্দুল্লাহ আযযাম (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর তাফসীরে সুরা তাওবা বইতে বলেছেন বাহিরের কাফির অধ্যুষিত দেশে থাকলে নিজেরা কোনো রকমে ঈমান নিয়ে বাঁচতে পারলেও পরবর্তী প্রজন্ম ইসলামের উপর থাকবে কিনা সন্দেহ আছে৷ আমেরিকায় এমন অনেক পরিবার আছে যারা কেবল নামে মাত্র মুসলিম। কিন্তু, জীবনে সালাত, সাওম, যাকাতের নামও হয়তো শুনে নি, পালন করা তো পরের কথা। তাদের তিন / চার প্রজন্ম আগে হয়তো কেউ আমেরিকা এসেছিলো, তিনি যথেষ্ট প্র‍্যাক্টিসিং মুসলিমও ছিলেন। আর বর্তমানে তাদের বংশধরদের এই হালত। IslamQA এর ওয়েবসাইটেও, বাহিরের কাফির দেশে স্থায়ীভাবে সেটেল হতে নিষেধ করা আছে। হিজরত যদি করতেই হয়, তবে অপেক্ষাকৃত ভালো যেখানে ইসলাম পালন করা যায় সেখানেই করা উচিত। "বিলাসিতা" কে "প্রয়োজনীয়তা" বানিয়ে সেখানে বসবাস করা জায়েজ না। পশ্চিমের বিভিন্ন শাইখদেরও দেখা যায় দেশ, সময় আর পরিস্থিতির দোহাই দিয়ে অনেক শরীয়াতের অনেক বিষয়ে কাটছাঁট করতে।

.

অনেক ভাই আবার বাহিরে দীর্ঘ সময় থেকে দেশে ফিরে এসেছেন, যেকোনো কারণে। তাদের কথাও শুনতে চাই। কী কারণে সেখান থেকে চলে আসা।

.

.

এই যে দুইটি পক্ষের দুইরকম স্টেইটমেন্ট- যারা সেখানে থেকে এসেছেন বা কাছ থেকে দেখে এসেছেন তাদের অভিজ্ঞতা জানতে চাই। অন্যান্যরাও কমেন্ট করতে পারেন ইন শা আল্লাহ।

 

 

শাহনেওয়াজ শামিমের কমেন্টঃ তুরস্ক যদিও সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশ এখানের সংস্কৃতিতে পাশ্চাত্যের প্রভাবই বেশী। তবে 'আপাততঃ' ইসলামি ধারাগুলো স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে। তবে ইন-জেনারেল পাশ্চাত্যপ্রভাবিত হওয়ায় নিজেদের নিয়ন্ত্রণ অথবা সন্তানদের মানুষ করতে চাইলে ইসলামি স্কুল আর বিভিন্ন জামায়াতের সাথে কানেক্টেড রাখতে হবে। লিডারশীপ বাই ব্লাডও একটা ফ্যাক্ট।

 

আপাততঃ তুর্কিকে এগিয়ে রাখবো দেশের চেয়ে, তবে সবার জন্য বা সর্বাবস্থায় নয়।

 

Muhammad Shakirul Jawad এর রিপ্লাইঃ How about the work experiences and economic system bhai?

 

শা শা ভাইয়ের উত্তরঃ কমপ্লিকেটেড, আর ইকোনমি এরশাদ-ট্রাম্পের ভাষণের ন্যায় নড়াচড়া করে। যদিও বাংলাদেশের চেয়ে অনেক স্ট্রং।

  

Misbah Mahin এর প্রশ্নঃ মসজিদ, মাদ্রাসা, ইসলামী অনুশাসন পালন কতটা সহনীয় পর্যায়ে আছে?

 

শা শা এর উত্তরঃ মসজিদ, মাদ্রাসা, সরকারী অফিস যেহেতু সরকারী নিয়ন্ত্রণে তাই কোন সমস্যা নাই।

সরকারী ডর্মে কুরআন-হাদীস, তাফসীর-ফিকহ, ইতিহাস-ওসমানী ভাষা, তাসাউফ মিউজিক (অটোমান সংস্কৃতির অংশ) সবই নিয়মিত ক্লাস হয়। প্রতিটা ডর্মে এক/দুইজন ইসলামী পথ প্রদর্শক (হুজুর আর কি) থাকেন।

 

ট্রাস্টি প্রতিষ্ঠান খুব বেশি, যারা মূলত দাওয়াহ-সংস্কারের সাথে জড়িত।

 

সমস্যা হচ্ছে ফাণ্ডিং হিউজ, যোগ্য (ইলমি) মানুষ কম।

 

মি মা ভাইয়ের আবার প্রশ্নঃ ইলমি মানুষ পাচ্ছে না? নাকি অন্য কোনো সমস্যার কারণে নিয়োগ দেয় না?

 

শা শা ভাইয়ের উত্তরঃ কিছু সমস্যা থাকলেও আসল সমস্যা হচ্ছে সাপ্লাই নাই। কামালিজম প্রভাব।

 

 

 

 

এম মাহবুবুর রহমানের কমেন্টঃ It's complicated. I still adhere to the opinion of Sh. Abdullah Azzam (Rh) but there are edge cases.

 

 

 

 

 

জাকারিয়া রাব্বীর কমেন্টঃ নর্থ আমেরিকায় যা দেখছি, এটা স্পষ্ট যে, বেশিরভাগ মুসলিমরা হারামের সাথে

কম্প্রমাইস করে চলে। অনেকে দেশে থাকতেই এভাবে চলতো, তাদের জীবন যাত্রায় খুব একটা হেরফের হয় না। তবে, যারা দেশে ঠিকঠাক চলতো, তারা পারে না। সরকারি স্কুল ফ্রি, ইস্লামিক স্কুল এ খরচ বেশি, তাই দিতে পারে না। এখানকার হাইস্কুলে পড়লে মনোজগত এদের কাছাকাছি হয়ে যায়, অনেক হাইস্কুল এর ছাত্ররা জুমার নামাজ পরতে পারে না, ইউনিভার্সিটি তে অবশ্য পরা যায়। মুসলিম স্টুডেন্ট এসোসিয়েশন গুলোও অদ্ভুত, ফ্রি মিক্সিং কে প্রোমোট করে, কিছু কিছু প্রোগ্রাম এ মিউজিক এর তালে ছেলেমেয়েরা হাল্কা নাচও দেয়। অনেক কিছু মেনে চলা ভাইটাও ইন্সুইরেন্স, ক্রেডিট ক্রেডিট কার্ড এর পাল্লা থেকে বের হতে পারে না। এক বৃদ্ধ মসজিদে আফসোস করে বলেন, "আমার ছেলে এদেশি খ্রিস্টান একজনকে বিয়ে করেছে", এই বৃদ্ধদের সংখা বাড়ছেই। পরের জেনারেশন যে আস্তে আস্তে এখানকার কালচার এ অভ্যস্ত হয় তা নিজে দেখা। তারপরও অনেকে মসজিদ এ যায়, নামাজ পরে নিয়িমিত, দান করে নিয়মিত, ছেলে মেয়েদের কুরান শিখায়। বেশির ভাগ মানুষ কেমন জানি একটা দ্বৈত সত্তা ধারন করে। একি সাথে এদেশের সাপেক্ষে কালচারাল আবার ইস্লামিক। সোজা কথায় মডার্ন ইস্লাম। অনেকেই মনে করে এটাই সঠিক ইসলাম, দেশে সব ভন্ড। আমি শুনে যাই। আমি তীব্র ভাবেই মনে করি এসব দেশে না থাকাই উত্তম। এখানের এক ভাই বলেন, " আমার উপর এদের নজর নাই, তবে আমার সন্তান যাতে এদের মত হয়, তার সব প্রচেষ্টাই এরা করছে।"

 

আমি নিজেও সব মেনে চলতে পারছি না, তাই লং টার্ম এ সেটেল হওয়ার চিন্তা আনতে চাই না।

 

তবে বাংলাদেশের অবস্থাও সুবিধার নয়। সঠিক ঈমান নিয়ে চলা মুসলমানদের জন্য পৃথিবী সংকুচিত হয়ে আসছে, হওয়ারই কথা।

 

আরও কিছু ঘটনা বলার আছে, সময় পেলে আপডেট করবো ইনশাআল্লাহ।

 

 

 

শাহরিয়ার কাওসার তৌহিদের কমেন্টঃ জাপানের অভিজ্ঞতা বলি। সরকারিভাবে কোন ধর্ম পালনেই ওরা বাধা দেয় না। তবে স্কুলে রিলিজিয়াস রিচ্যুয়াল পালনের সুযোগ খুবই সীমিত। ইউনিভার্সিটিতে নিয়মিত সালাত আদায় করা যায়। মুসলিম কমিউনিটিগুলো মূলতঃ বড় শহর কেন্দ্রিক, কিন্তু কিছু অকেশনে এরা ফ্রি মিক্সিং এলাও করে। ইয়াং জেনারেশনের যারা ওখানেই জন্মেছে, তারা পুরোপুরি জাপানিজ কালচার আত্নস্থ করে ফেলে। অবশ্য জাপানিজরা গড়পড়তায় পশ্চিমাদের মত এত খুল্লাম-খুল্লা না। পোশাক আর আচরণে এখনো সংযত ভাবটা দেখা যায়। সেক্সুয়াল লাইফ নিয়ে আলোচনাও খুব আনকমন, তবে কেউ কেউ লিভ টুগেদারের মত ব্যাপারে জড়াচ্ছে ইদানীং। বলে রাখা ভাল, জাপানিজদের মধ্যে বিয়ে বা ফিজিক্যাল রিলেশনের হার খুবই কম। রোবোটিক লাইফ। তবে এলকোহল খুবই কমন। ইসলাম সেখানে স্রেফ পার্সোনাল বা ফ্যামিলি ইনপুট হতে পারে, তবে কোনোভাবেই সোশ্যাল ইনপুট না। মসজিদ খুব একটা এভেইলেবল না, বেশ দূরে দূরে। দাড়ি-টুপি-জুব্বা নিয়ে অবশ্য এদের কোনো এলার্জি নেই। হিজাব-নিকাব নিয়েও কাউকে সমস্যায় পড়তে দেখি নি৷

 

মোদ্দাকথা, ব্যক্তিগত ভাবে ইসলামের হুকুম-আহকাম মেনে চলা অসম্ভব না। তবে বাঙালি মুসলিমরা সোশ্যাল টাচ টা মিস করে, যেটা আবার ইন্দোনেশিয়া-মালয়েশিয়ান কমিউনিটিতে বেশ ভাইব্রেন্ট।

 

 

 

 

সাইফুদ্দিন রায়হান ইফতির কমেন্টঃ কয়েকদিন আগে একজন ভাইয়ের সাথে পরিচিত হয়েছিলাম যিনি নিউ ইয়র্কে ব্যবসা করেন। উনার দুই মেয়েকে দেশে নিয়ে এসেছেন এই জন্য যে যাতে এই দেশের পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে পারে। উনি বললেন ঐখানে মুসলিম কমিউনিটি গুলোর অবস্থাও এতো ভালো না। উনার কয়েকজন পরিচিত বাংগালিদের কথা বললেন যাদের সন্তানরা রাত বিরাতে ঘর থেকে বের হয়ে যায় এমনকি বয়ফ্রেন্ড নিয়েও নাকি বাসায় নিয়ে আসে। সন্তানকে নাকি বাবা মা শাসন ও করতে পারে না কারন ক্লাস টিচার নাকি প্রশ্ন করে এই বিষয়ে। যদি কোনো দোষ পায় তাহলে নাকি ব্যবস্থা গ্রহন করে। একটা কথা আমাকে খুব নাড়া দিয়েছিলো উনি বললেন ঐখানে যে মহিলা মাদরাসাগুলো আছে তার একটিতে উনার মেয়েকে নাকি ভর্তি করাতে নিয়ে গিয়েছিলেন। উনি নাকি কয়েকজন হিযাব পড়া মেয়েকে দেখেছিলেন যারা মাদরাসা থেকে বের হয়ে হিযাব খুলে তাদের বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে এসেছিলো। এই অবস্থা দেখে উনার মেয়েকে আর ভর্তি করান নি। Emon আর কিছু কি মনে আছে তোর, থাকলে এখানে বল।

আসলে এই সব দেশে না যাওয়াই ভালো। কারন ইসলামের বিধান গুলোকে মডারেটরা পুরাই পরিবর্তন করে ফেলে generation by generation.

 

 

 

 

 

মাহমুদুল হাসান ভাইয়ের কমেন্টঃ কাফির-মুশরিক মেজরিটি ওসব দেশে লং রানে সেটেলমেন্টের জন্য থাকা অনুচিত।

 

বাংলাদেশের মত দেশে এক মূহুর্তেও কারো থাকা অনুচিত (এন্ড আই মিন ইট)

 

বেটার মিডল ইস্ট-মালয়েশিয়া টাইপ দেশে সেটেল হওয়া।

 

 

Muhammad Shakirul Jawad- মালয়েশিয়া বেস্ট হবে এই ক্ষেত্রে 💖

 

 

Tawsif Ahmed Siddique- মালয়েশিয়াতেও সব করা যায়, ভাই। :(

 

 

Muhammad Shakirul Jawad- ভাই আমিতো ভাবসিলাম এশিয়াতে এটলিস্ট মালয়েশিয়ায় শান্তিমত থাকা যাবে,এখন দেখি এখানেও প্যাঁচাল 😣

 

 

Farhan Sadek- পোস্টের মূলভাব তো ধর্মীয় দিক থেকে, কিন্তু আপনি যে বাংলাদেশের কথা বললেন সেটা অন্য দিক থেকে। পোস্টের সাথে যায় না আমার মতে।

 

Farhan Sadek- আর মালয়েশিয়ায় দ্বীনের অবস্থা বাংলাদেশের চেয়েও করুণ

 

Farhan Sadek- মিডল ইস্টে যাওয়া যেতে পারে তবে ফ্যামিলি নিয়ে থাকা খুবই এক্সপেনসিভ।

 

 

Mhamudul Hasan- আমার মতে বাংলাদেশে ধর্মীয় এমন কিছু নেই যেটা মিডল ইস্টে বা মালয়েশিয়া-মালদ্বীপ-ইন্দোনেশিয়া ইভেন তুরষ্কে পালন করা যাবে না৷

কারো সুযোগ থাকলে শত অন্যায়-জুলুম-দূর্নিতি-ভেজাল-জ্যাম-বাজে রোডঘাট-অনুন্নত জীবন ব্যাবস্থার এই দেশে পরে থাকার কোন লজিকই নেই।

 

যারা আছে জন্মেছে তাই আছে। অন্যান্য দেশে নতুন করে শুরু করা হ্যাসেল তাই আছে৷ এমন না ইসলাম পালনের সুবিধা তাই দেশে পরে আছে৷

 

আর ইনকামের এগেইনেস্টে জীবন যাত্রার স্টান্ডার্ড ধরলে মিডল ইস্ট থেকে ঢাকাই তো বেশী এক্সপেন্সিভ হবার কথা। এখানে একজন গ্রাজুয়েট এর স্যালারি ১২/১৫ হাজার স্টার্টিং৷ মিডল ইস্টে অনেক বেশী৷

 

 

Tawsif Ahmed Siddique- মিডল ইস্টও মালয়েশিয়ার মতই, ওইখানেও সবই আছে। হালাল/হারাম সব, আপনার ইচ্ছা হলে হালালভাবে থাকবেন, ইচ্ছা হলে হারামভাবে!

 

 

Tawsif Ahmed Siddique - বাংলাদেশের সাথে তুলনা করলে মালয়েশিয়া বেটার অপশন।

 

 

Tawsif Ahmed Siddique- মালয়েশিয়া দ্বীনের দিকে বাংলাদেশ থেকে ভালো, তারা মুসলিম মানেই বুঝে যে ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে হবে, আর বাংলাদেশিরা বুঝে যে মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করলেই কখনো না কখনো জান্নাতে যাবেই! ওদের মধ্যেও সমস্যা আছে, কিন্তু তাই বলে বাংলাদেশের সাথে তুলনা করাটা পুরাই বোকামি

 

 

Farhan Sadek- সেখানে নাকি মাথায় হিজাব আর নিচে হাফপ্যান্ট পড়া 'মুসলিম' বোনদেরও দেখা যায়। মালয়েশিয়ায় থাকা এক ভাইয়ের কাছে শুনেছিলাম মেবী

 

 

Farhan Sadek- বাংলাদেশের মতো মসজিদ, মাদ্রাসা, দ্বীনি কিতাবাদি, হক্বপন্থী আলেমদের সংখ্যা বেশী হলে মালয়েশিয়ার মতো দেশে থাকাই যায়, তবে কুফফার অধ্যুষিত কান্ট্রিতে থাকা কোনভাবেই বাংলাদেশের চেয়ে বেটার অপশন হতে পারে না নিজের দ্বীনের জন্য৷

 

 

Tawsif Ahmed Siddique -  একটু বেশিই বলে ফেলছেন উনি, টাইট কাপড় বা প্যান্ট-শার্ট পড়া হিজাবি মেয়ের সংখ্যা বেশি, তা ঠিক। কিন্তু এইসবই আমলের অভাব, জ্ঞানের অভাব নয়। কিন্তু, তাদের নামাজ, রোযা, যাকাত, সততা, ব্যবহার এইসব অনেক উচ্চ পর্যায়ের, যা বাংলাদেশিদের মধ্যে নাই বললেই চলে। আর ইসলাম নিয়ে কিছু মিসকন্সেপশন আছে ঠিক। তবে আমি ইসলাম পালনে বাংলাদেশ থেকে ওইখানেই শান্তি পাইছি বেশি। ওদের মধ্যে দাড়ি, টুপি, জুব্বার প্রতি বিদ্বেষ তো দূরে থাক, উলটা সম্মান করে। হিজাব স্কুলে নিষিদ্ধ হওয়াতো দূরের কথা, ওইটা স্কুল ইউনিফর্ম এরই একটা অংশ। এইরকম অজস্র কিছু বলতে পারব।

 

 

Mhamudul Hasan - বাংলাদেশের মত দেশে থাকার আমি কোন যুক্তিই দেখতে পাচ্ছি না। অন্য কোন দেশের সাথে তুলনা করাই বোকামি। বাংলাদেশে হক্কপন্থী আলেম কি খুব বেশী নাকি? আর এই দেশে থাকাটা বেহেশতে যাবার কোন টিকেটও না।

 

যাই হোক, অযথা কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। ট্রু হচ্ছে ভিসা ওপেন করে দিনে ১ মাসে বাংলাদেশে ফাকা হয়ে যাবে। কেউই থাকবে না। মাসজিদের গিয়ে দেখবেন ইমাম নাই। বিদেশ গেসে গা 😂

 

 

Farhan Sadek- আপনি বলতে চাইছেন এদেশে থাকার চেয়ে ইউরোপ - আমেরিকার মতো কাফির দেশে থাকাও উত্তম??

 

Farhan Sadek- সবাই সুযোগসন্ধানী না ভাই। এদেশে প্রকৃত দ্বীনদারের সংখ্যাও কম না। এদেশে থাকা বেহেশতের টিকেট না হলেও মন্দের ভালো বলা যায়।

 

 

Farhan Sadek- আসলে যারা আসলেই ইসলাম মানতে চায় তারা মালয়েশিয়া, তুরস্কের মতো দেশে না গিয়ে খোরাসানের ইসলামি ইমারতে গিয়ে বাস করবে। আর যারা দ্বীন-দুনিয়া দুইটাই চায় তারা দেখবে কোথায় গেলে পেটও বাঁচবে, দ্বীনও কোনরকমে টিকে রাখা যাবে।

 

Farhan Sadek - দাড়ি, টুপির প্রতি এদেশের মানুষেরও বিদ্বেষ নাই। যাই হোক মডারেট ইসলাম পালন না করে প্রকৃতভাবে স্ট্রিক্টলি ইসলাম পালন করতে পারলে তো অবশ্যই বেটার

 

 

Mhamudul Hasan - বাংলাদেশ ইসলামিক রুলিং এ চলে না। আইন-কানুন সবই সেকুলার। আপনার সাথে একমত হতে পারছি না।

আর দেশে ফাকা হয়ে যাবে আমি কনফিডেন্টলি বলতে পারি। ১ কোটি লোকও থাকবে না যদি বর্ডার ওপেন করে দেয়া হয়।

দেশে হক্কপন্থী আলেম জনসংখ্যার % অনুযায়ী কমই বলা চলে।

 

Farhan Sadek- ইউরোপ আমেরিকার আইন কানুন কি ইসলামিক?? দুইটা দেশের দ্বীন পালনের সুযোগ সুবিধার কথা চিন্তা করলে ঐসব কাফির অধ্যুষিত কান্ট্রি কক্ষনোই বাংলাদেশের চেয়ে বেটার হতে পারে না।

 

 

Farhan Sadek- হ্যাঁ আপনার কথাও এক দিক থেকে ঠিক, ফাঁকা হয়ে যাওয়ারও সম্ভাবনা আছে। সো কল্ড হুজুর সমাজের কেউ কেউও লজিক দেখাতে পারে এদেশে ইসলাম নাই, সেক্যুলার আইন, এই সেই ইত্যাদি ইত্যাদি।

 

 

Farhan Sadek- //বাংলাদেশে ইসলামিক রুলিং চলে না। আইন-কানুন সবই সেকুলার//

.

ভাই মালয়েশিয়া, তুরস্কেও শারঈয়াহ আইন নাই, সেগুলোও সেক্যুলার আইন দিয়ে চলে ।

 

 

Mhamudul Hasan - হ্যা। সো যেখানে জীবনযাত্রার মান ভালো/ সিকিউরিটি ভালো সেখানে থাকাটা বেটার নয় কি?

দেশে ছাত্রলীগের পোলাপান আপনাকে ধরে মার দিলো কিংবা আমার বোনকে রেইপ করলো বিচার তো কিছুই হবে না৷ তো এই দেশে থাকার লজিক আছে কোন!

 

 

Farhan Sadek - যার মাইন্ডসেট যেমন। কেউ দেখবে কোথায় গেলে আরামে জীবন কাটাতে পারবো, অস্থির লাইফ লীড করতে পারবো, আবার কেউ দেখবে অন্তত দ্বীনটা বাঁচিয়ে রাখতে পারবো। Priority varies.

 

Mhamudul Hasan - আপনি মালয়েশিয়া জন্মালে জীবনেও বাংলাদেশে দ্বীন পালন করতে আসতেন না ভাই। ভাবতেনও না।

 

সো কেউ এই দেশ ছেড়ে গেলেও আমি খুব একটা অপরাধ মনে করি না৷ ইসলাম পালন দুই দেশেই মোর-লেস সমানই হবার কথা।

 

ধরুন ঢাকা-চিটাগাং টাইপ শহর থেকে গ্রামে হয়ত ফিতনা কম। কিন্তু সেখানে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নেই। তাই অনেকেই গ্রাম ছেড়ে শহরে থাকছে। তাদের দোষারোপ করার তো কিছু নেই! তেমন বাংলাদেশটাকেই গ্রাম ধরলে বাইরে সেটেল হওয়া জাস্টিফাইড৷

 

 

 

 

নাঈম ফাইসালের কমেন্টঃ এখানে যুক্তি আসবে কেন? শরীয়া কী বলে সেটাই ফাইনাল। পশ্চিমা দেশে গিয়ে তাদের চাকচিক্যের মোহে পড়ে নানান অপযুক্তি দাঁড় করিয়ে নফসকে বুঝ দেওয়ার লোকের অভাব হবেনা। কীসব পশ্চিমা মুসলিম কমিউনিটির কথা বলা হচ্ছে! এই মুসলিম কমিউনিটিগুলো কী আকিদা লালন করে আমরা দেখি না? এর চেয়ে তো সিরিয়ায় গিয়ে বোমা খেয়ে মরে যাওয়া ভালো। শুধু নামসর্বস্ব মুসলিম হয়ে পাশ্চাত্যের রঙিন জীবন কাটানোর চেয়ে ইসলামের মানদণ্ডে সেটা অনেক বেশি প্রেফারেবল।

 

 

মোহাম্মদ আখেরের কমেন্টঃ বংশধর বংগদেশেও ধ্বংস হতে পারে।

তবে বিদেশে থাকার দরুন এই বলতে পারি, প্যারেন্টস যদি একটু বেখায়ালি হন তাহলেই বংশধর রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাবে।

আবার মুসলিম মাইনোরিটির জন্য আশপাশে যদি মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা না থাকে আমাদের অনেক মুসলিম ভাইয়েরা তাদের বাচ্চাদের লোকাল স্কুলে দেন।তারপর যা হয় আরকি।😓

লোকাল স্কুল ড্রেস কোড সবার জন্য সমান।

সেক্ষেত্রে মেয়েদের ঝামেলা হয়।

কষ্টের বিষয় হল শপিং এ মায়েদের হিজাব বাবাদের দাড়ি থাকলেও বাচ্চারা যা ইচ্ছে তাই পরে আসে।

 

 

মুহাম্মাদ শাকিরুল জাওয়াদের কমেন্টঃ আমার মতে থাকা অনুচিত,পরিবেশ তো ইসলাম পালন করার অনুকূল নয়।তাই এক সময়ে ইসলাম তাদের মধ্য থেকে হারিয়া যাওয়াই স্বাভাবিক। কিন্তু বেশ কিছু ভাই বলেন,পড়ালেখা পারপাসে যাওয়া যাইতে পারে আবার দেশে ফিরে আসার উদ্দেশ্যে। কারণ হিসেবে তারা দেখান যে,যে জ্ঞ্যান নিজ দেশে নাই কিন্তু অন্য দেশে আছে তা ঐ দেশ থেকে শিখে এসে নিজ দেশে ইম্পলিমেন্ট করা জায়েজ। এই জায়গায় আমার একটু সন্দেহ আছে,রেফারেন্স টা একচুয়ালি কি অথবা এই ফতোয়ার ব্যাপারে আলিমদের অবস্থান কি এটাই হচ্ছে মুখ্য বিষয়।

 

 

 

মোঃ নিজামুল হকের কমেন্টঃ Maximum e end of the day duniabi demad puroner jonno je jar obosthan theke justify korbe etai savabik

 

 

 

গাজি কাওসার আহমেদের কমেন্টঃ  যেখানে মুসলিম দেশে গেলেই মানুষ ইসলামিক রুলস মানছেনা আর যেইসব দেশে সব জায়েজ ওইসব দেশে কি করে ভালো মুসলিম হওয়া যায়?

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

কওমি মাদরাসার ছাত্ররা দিনদিন কিতাবের প্রতি অনীহ হয়ে পড়ছে। কেন অনীহ হয়ে পড়ছে, এটার কারণ কি চিহ্নিত করা হচ্ছে?

বরং বলা যায় কওমি শিক্ষা থেকেই অনীহ হয়ে পড়ছে। উস্তাদ শাগরেদের যে অনুপম ঐতিহ্য ছিল কওমি মাদরাসায়, সেটা কি আগের মতো আছে? কেন নেই?

আগে জেনারেল থেকে ছাত্ররা চলে আসত কওমিতে পড়তে, এখন উল্টো কওমির ছাত্ররা আলিয়া থেকে পরীক্ষা দেয়, স্কুল থেকে দেয়, দিনেদিনে এর প্রবণতা বেড়ে চলেছে, কেন?

 

এইসব অসঙ্গতির জবাব আমরা এখন খুঁজে দেখব।

১. আমাদের উস্তাদেরা যে কিতাবগুলো পড়েছেন, আমাদেরও সেগুলো পড়াচ্ছেন। আমরা পড়ছি, বছর শেষে যখন জিগ্যেস করা হয়, 'শরহে আকায়েদ' কোন ফনের কিতাব? ছাত্ররা গড়ে হরিবল দিয়ে বলে মান্তেকের।

শরহে জামী পড়েছ, তা হলে তো নাহুর কোনো মারপ্যাঁচই তোমার আয়ত্তের বাইরে নেই! শরহে জামীর কোন বিষয়টা তোমোর সবচেয়ে ভালো লেগেছে?

কিছুই ভালো লাগেনি, একটা বছর সময় নষ্ট। বসে বসে ইবারতের মাঝে সুয়ালে মুকাদ্দারের জওয়াব খোঁজে, কায়দা না শিখে ইজরা না করে আপনি সুয়ালের মুকাদ্দারের জওয়াব দিয়ে কী করবেন?

 

আমি দুটি কিতাব দিয়ে উদাহরণ দিলাম। ম্যাক্সিমাম কিতাবেই এই জিনিশ দেখা যায়, কেন?

ক. হয়তো শিক্ষকদের পড়ানোর পদ্ধতি ভুল। (আমি অযোগ্যতা বলিনি।)

খ. এই ফনের এই কিতাবটা এখন সময়োপযোগী না। ছাত্রদের রুচি মাফিক একই ফনের অধিকতর মুফিদ কোনো কিতাব দেওয়ার প্রয়োজনটাও মনে করা হচ্ছে না। যেমন ভাষা একটা গতিশীল প্রক্রিয়া। "মাকামাতুল হারিরি"র গদ্যরীতি আর গল্পগুলো কি সময়োপযোগী? একজন মানুষের ভেল্কিবাজির তরিকা শেখানো হচ্ছে, রাসুলের সিরাত, সাহাবাদের জিন্দেগি, বুযুর্গদের মালফুজাত পাঠ্যসূচিতে নেই বললেই চলে, এর দায় কার? মাকামাতের পরিবর্তে "সুয়ারুম্মিন হায়াতিস সাহাবাহ" সিলেবাসভুক্ত হলে সমস্যাটা কোথায়? উস্তাদরা যেটা পড়েছে, ছাত্রদের সেটাই গেলাতে হবে, এ জবরদস্তি অযৌক্তিক।

 

স্কুলে এই জিনিশটা দেখা যায়, তাদের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত বইগুলো নিয়মিত সংস্কার হচ্ছে। অধিকতর উপযোগী করে তোলা হচ্ছে। তাদের শিক্ষকদের পরিমার্জিত বই পড়াতে বেগ পোহাতে হচ্ছে না, আমাদের শিক্ষকদের যদি কাফিয়ার পরিবর্তে আরেকটা কিতাব দেওয়া হয়, কী করবেন? অথচ কাফিয়া পড়াতে গিয়ে একেকজনের কী পরিমাণ ঘাম ছুটে যায়, সেই এক দেখার বিষয়।

 

২. ছাত্ররা স্কুল ও আলিয়ার প্রতি ঝুঁকছে। কেন? কয়েকটা কারণ,

ক. যে মহীরুহ উস্তাদেরা আমাদের নির্লোভ, নিরহঙ্কার হতে বলেছেন, তারাই বেফাকের সহসভাপতিসহ অন্যান্য পদ হাতড়ানোর জন্য..., হাইয়্যাতুল উলইয়ার মাধ্যমে তারাও এখন একই সার্টিফিকেটের পেছনে..., তারপর প্রশ্নফাঁস, অর্থ আত্মসাৎ, শিক্ষকে শিক্ষকে বিতণ্ডা, ছাত্র বলাৎকারসহ কত কুৎসিত কাজ হচ্ছে!

পদের কথাই বলি, রাজনীতি ঢুকে এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা নানান মতবাদে বিভক্ত হয়ে গেছে। বেফাকের গত দশম উমুমি জলসায় যা দেখলাম, বেফাক ছাড়া অন্য যে বোর্ডগুলো আছে, তারাও চাচ্ছে তাদের একজন বেফাকের প্রধান থাকবে। মানে একটা প্রতিষ্ঠানে ৮-১০ জন প্রধান! হাউ ফানি! এখান থেকেও আমাদের অনেক উস্তাদের ওপর থেকে ভক্তি উঠে গেছে। দ্বিতীয়ত ভেতরগত অন্য কারণগুলো না হয় বলা বাদই দিলাম। এই যে ইসলামি রাজনীতির নামে ছাত্রদের ভেতর বিভক্তি সৃষ্টি, এগুলোর দায় কার? (বাংলাদেশে চলমান ইসলামি রাজনীর মাধ্যমে কখনোই ক্ষমতা পাওয়া সম্ভব নয়, থাক তো খেলাফত প্রতিষ্ঠা। "এ পথে জয় সম্ভব নয়" শিরোনামে আমি কয়দিন আগে এ বিষয়ে লিখেছি।)

খ. কওমি ছাত্ররা আলিয় পরীক্ষা দিচ্ছে। কারণ, তারা এতদিন ইলমে দ্বিন হাসিল করছিল আল্লাহর উদ্দেশ্যে। সরকারি চাকুরি এখানে অগ্রহণযোগ্য বিষয়। কিন্তু এখন সনদ! সনদের পরিণাম!

মক্তবে শিক্ষকতা করতে গেলেও সনদ চাইবে। স্কুলের সার্টিফিকেটের সঙ্গে বস্তায় বস্তায় ঘুষ ঢেলেও সরকারি চাকুরি পাওয়া যায় না, মসজিদের ইমামতিও আলিয়া ফারেগদের সঙ্গে কম্পিটিশনে যেতে হয়, এরচেয়ে তো সরাসরি ওখানে পড়াই ভালো!

 

৩. এখন যুগ প্রযুক্তির। আগে একটা চিঠি আদানপ্রদানে যেখানে এক সপ্তাহ থেকে শুরু করে কয়েক মাস পর্যন্ত লেগে যেত, এখন পৃথিবীর সূর্যাস্তের দেশ থেকে সূর্যোদয়ের দেশ পর্যন্ত চিঠি আদানপ্রদানে লাগে মাত্র কয়েক সেকেন্ড।

কওমি শিক্ষা এই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি শিক্ষাকে তো কেয়ার করেই না, বরং একে অস্বীকার করে।

এখানে একটা জিনিশ বুঝতে হবে, প্রত্যেক যুগের মানুষকে আল্লাহ কিছু যোগ্যতা দিয়েই পৃথিবীতে পাঠান। একে আপনি অস্বীকার করতে পারবেন না। মুসা আ.-এর যুগে যেমন ছিল যাদুবিদ্যা, আমাদের নবীজির যুগে সাহিত্য, এখন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি। আল্লাহর এই নিয়ম অস্বীকার করাটা স্পর্ধা হিসেবেই বিবেচিত হওয়ার কথা।

 

শিক্ষকদের ওপর ছাত্ররা বিরাগভাজন হয়ে পড়ার আরও অনেকগুলো কারণ আছে। কিছু বিষয় আছে মানসিকতার সঙ্গে যুক্ত, স্পর্শকাতর। মনোবিজ্ঞান সেটাকে ব্যাখ্যা করবে। শিক্ষকের উচিত, তার কোনো জিনিশ ছাত্রদের অপছন্দ কিনা, এটা চিহ্নিত করে পরিহার করা।

এখন আমার জিজ্ঞাসা হলো, এই যে অসঙ্গতিগুলো, অসহিষ্ণুতার ইঙ্গিত, আমাদের কওমির নীতিনির্ধারকেরা কি কখনো এগুলো একটু চিন্তা করারও সময় পাবেন না? যেখানে গোটা উম্মাহর ভবিষ্যতের প্রশ্ন, একটা শিক্ষাধারার অস্তিত্বের বিষয়, আদর্শের সুমহান বলয়, অনেক তরুণের জীবন উৎসর্গিত, সেখানে তারা কীভাবে নির্বিকার থাকেন? আল্লাহ মালুম।

বললে আরও অনেক কথাই বলা যায়। শুধু বাংলা শিখতে আমার কত বেগ পোহাতে হয়েছে, বললে বিশাল দাস্তান হয়ে যাবে। 'হালাকিয়াত'-এর ভয়ে আপাতত এখানেই স্টপ গেলাম।

.

বি.দ্র. : আমি জানি, বরাবরের মতোই আমার এই কথাগুলো যেকোনো মাধ্যমেই বড় কারও কানে যাবে। সেখানে যেন কথাগুলোর সঠিক উপস্থাপন হয়, এতটুকু কামনা থাকবে।

 

- ওমর আলী আশরাফ

২৯ মে, ১৮ ঈ.

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

আমাদের এলাকার মাসজিদে এক হুজুর ছিলেন ইমাম। দীর্ঘ দিন ধরে ছিলেন। রবিউল আউয়াল মাসে সিরিয়াল মিলাদ পড়তেন। মিলাদ, কিয়াম, তিনদিনা, চল্লিশা, কুলখানি, তাবিজ-কবজ, জিন-তাড়ানো, তদবীর যত রকম বিদ'আত আছে এগুলো ছিলো তার দু'নাম্বারি ইনকামের আসল উৎস।

 

তার এই ব্যবসার খুটি ছিলেন এলাকার সূদখোর, ঘুষখোর পয়সাওয়ালা ব্যক্তি, যিনি যুগপৎ মসজিদের মুরব্বি ও সভাপতি।

 

সময়ের সাথে সাথে মানুষ সচেতন হচ্ছে। একসময় হুজুরের দু নাম্বারি আস্তে আস্তে ফাঁস হয়ে যায়। এমনকি ধরা পড়ে যে, হুজুর নিজেও গোপনে সূদে টাকা লাগাতেন। জনগণ হুজ্ররকে বিতাড়িত করে এলাকা ছাড়া করে।

 

একজন ভালো ইমাম নিয়ে আসেন যুবকেরা। তিনি সত্যবাদী, সত্য উচ্চারণে আপোষহীন। বিদ'আত আর হারামখুরির ধারে-কাছে যান না।

 

আস্তে আস্তে হুজুর সূদ-ঘুষ হারামের বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করলেন। হারামখোর সভাপতি পড়ে গেলো মহা সমস্যায়। লোকজন তাকে পেছনে পেছনে সূদখোর শুকর বলে ডাকে। অল্পবয়সী ছেলেপেলেরাও নানাভাবে উত্যক্ত করে দৌড়ে পালায়।

 

সভাপতি লাগলেন, নতুন ইমামের পেছনে। তাকে মাসজিদ থেকে তাড়াতে হবে। সবাই বললেন, এত ভালো ইমাম, কেন তাকে আমরা তাড়াবো? কিছুতে হবে না।

 

সভাপতি বললেন, আপনারা বড় হুজুরকে নিয়ে আসেন, এই ইমামের পড়া শুদ্ধ না। তার পেছনে নামাজ হয় না। (বড় হুজুর হোলো এলাকার মাজার মসজিদের ইমাম--আরও প্রকট শ্রেণির ধান্দাবাজ)।

 

বড় হুজুরকে আনা হোলো। নামাজের পর সভাপতি দাঁড়িয়ে বললেন, ভাইসাব আমাদের এই ইমামের কেরাত শুদ্ধ নয়; তার পেছনে নামাজ হবে না।

 

জনগণ জিজ্ঞেস করলেন, কেরাত শুদ্ধ হয় না মানে কী?

 

সভাপতি বললেন, এই হুজুর "এও" করে না। আমাদের আগের হুজুর সব সময় "এও" করত। "এও" না করলে আমরা সেই হুজুররে রাখতাম না।

 

ধান্দাবাজ বড় হুজুরকে আগে থেকেই সব শেখানো ছিলো। তিনিও সভাপতির কথার সমর্থন দিলেন। কিন্তু বাধ সাধলো এলাকার ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলেটি। সে ভার্সিটিতে পড়লেও ইজাযাওয়ালা 'আলিমের তত্ত্বাবধানে শুদ্ধভাবে কুরআন পড়া শিখেছে।

 

সে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করল। সত্যটা তুলে ধরল এবং তাদের গোমর ফাঁস করে দিলো। অতঃপর এলাকার লোকজন সভাপতি আর ধান্দাবাজ বড় হুজুরকে আচ্ছা রকম গনধোলাই দিলো।

 

এমন ধান্দাবাজ আপনাদের এলাকায়ও থাকতে পারে। এদেরকে চিহ্নিত করুন এবং গনধোলাই দিন। আল্লাহর ঘর ও আল্লাহর দীনকে ধান্দাবাজদের হাত থেকে মুক্ত করুন।

 

বিঃ দ্রঃ

(সূরা কুরাইশ পড়ার সময়ে আগের হুজুর পড়তেন ............ আল্লাযী আত'আমাহুম মিন জু"এও" ওয়া আ-মানাহুম মিন খাওফ। আর নতুন হুজুর সুন্নাহ অনুযায়ি আয়াতে আয়াতে থেমে পড়েন ... আল্লাযী আত'আমাহুম মিন জূ'। ওয়া আ-মানাহুম হুম মিন খাওফ)

 

- সিয়ান

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

দাম্পত্য জীবনে বিভিন্ন রকম পরীক্ষা আসে।

 

সবারই আসে, দ্বীনদার পরিবারেও আসে। কারোর কম, কারোর বা বেশি। যৌথ ফ্যামিলিতে সমস্যা গুলো একটু সেন্সেটিভ হয় তবে আলহামদুলিল্লাহ সব সমস্যার শরীয়াহ ভিত্তিক সুন্দর সমাধানও রয়েছে।

.

আল্লাহ'র কাছে পারিবারিক শান্তি বজায় রাখতে অনবরত দুয়া করে যাওয়া এবং অত:পর নিজস্ব কিছু টেকনিক এপ্লাই করে চললে সব দিক ম্যানেজ করে স্বাভাবিক সুখী দাম্পত্য ও পারিবারিক জীবন প্যারালেলিই লিড করা সম্ভব, আলহামদুলিল্লাহ।

 

.

অথচ তথাকথিত অনেক ইসলামিক (?) সেলিব্রিটি ভাই বোন এই মনগড়া ফতোয়া দেন যে 'দাম্পত্য জীবন’ (এর দ্বারা তারা বুঝায় কেবল স্বামী স্ত্রী) এবং 'পারিবারিক জীবন’ (নিজেরাও ছাড়া বাকী সবাইকে নিয়ে) একসাথে চলা সম্ভব না।

 

.

আপনারা আসলে বুঝবেন না। স্বার্থপর রা বুঝেনা যে, সকল দুঃখ কষ্ট, মান অভিমান, ভুল বুঝাবুঝি, মনোমালিন্য শেষে দিনশেষে বাবা মা বউ বাচ্চা সবাই একসাথে থাকার নামই পরিবার। পারিবারিক শান্তি, সম্প্রীতি, দয়া মানেই পৃথিবীর বুকে এক টুকরো জান্নাত।

 

.

অনেক দ্বীনি ভাইয়া বা আপু যারা ফেসবুকে বা বাস্তবে অপরকে অনবরত সাধারণদের ফ্যামিলি টিপস দিয়ে যাচ্ছেন, আর তাদের অনুসারীরা ভাবছে আরে ভাইয়া/ আপু যেহেতু এটা বলছে তাহলে এটাই সঠিক।

 

অথচ খোঁজ নিয়ে দেখবেন, তারা নিজেরাই যৌথ ফ্যামিলিতে না থেকে আলাদা থাকে। তাদের টোনাটুনির সংসার।

 

.

আমি এটাতে দোষ ধরছিনা, অনেক কেই হয়ত সিচুয়েশনের স্বীকার হয়ে আলাদা থাকতে হয় তবে, বুঝাতে চাচ্ছি যে তারা কি করে বুঝবে আপনার স্ট্রাগল? কিভাবে অনুভব করবে আপনার সমস্যা?

 

তাদেরকে তো অনেক কিছুই মাথায় রেখে চলা লাগেনা, যা আপনাকে আমাকে মাথায় রেখে চলতে হয় যৌথ পরিবারে থেকে। আপনার সমস্যাগুলো ভালভাবে সেই বুঝবে যে তা ফেইস করেছে। বাকীরা জাস্ট বড় বড় লেকচারই দিতে পারবে।

 

.

পরিবার থেকে দূরে থেকে সমস্যা ফেইস করা আর একই পরিবারের ভেতরে থেকে সমস্যা ফেইস করে তা সলভ করার মধ্যে আকাশ পাতাল পার্থক্য।

 

ইনাদের থেকে দাম্পত্য টিপস নিতে পারেন, তবে পরিবারিক শান্তি বজায় রক্ষার্থে করনীয় কি টিপস নিবেন না, কখনই নয়। কারণ এরা নিজের মত করে সল্যুশন দেয়।

 

.

আমি আমার সাতাশ বছরে জীবনে, দ্বীনি ট্যাগে যাদেরকে চিনে এসেছি ওয়াল্লাহি সত্যিকার অর্থে পিউর ফেমিনিজম বিমুখ দ্বীনি মেয়ে কমই দেখেছি। এমনকি দ্বীনি সার্কেলে যারা টপে রয়েছেন, চেনা মুখ, তাদের ব্যাপারেও ফেসবুকের বাইরে ব্যক্তিগত ভাবে জানি। এরা কিছুটা হলেও ফেমিনিজম আদর্শ লালন করেন।

 

.

অনলাইনে যেসব দ্বীনি সেলিব্রিটি বোনরা পারিবারিক টিপস দেন (আমার লিস্টে নেই), বিশ্বাস করুন এমন পঞ্চাশ জনের মধ্যে হাতে গোণা ২/৩ জনকে পিউর দ্বীনদার জানি যারা সত্যকার অর্থেই এন্টি-ফেমিনিস্ট। ফেমিনিজম তাদের পক্ষে (?) বললেও তারা ফেমিনিজম এর বিপক্ষে। মাশাআল্লাহ।

 

এবং তারা খুবই সাধারণ মেয়ে, অনলাইনে তেমন কোন পরিচিত মুখ না। আর বাকীরা যারা দ্বীনি হিসেবে খ্যাত ও পরিচিত তাদের 'অনেকেই' নিজের স্বার্থটুকু বজায় রেখে তারপর গা দ্বীন মানে। দ্বীনের অসুবিধেমূলক (নিজের অসুবিধে করবে এমন) কিছু অংশ তারাও খুব সাবধানে এড়িয়ে যায়।

 

.

আর যেসব ভাইরা দ্বীনি সেলিব্রিটি আপুদের হাজবেন্ড, বিশ্বাস না হলেও সত্য যে, অধিকাংশ (সবাই নয়) ভাই (যদি গোড়া সহীহ দ্বীনি ভাই হয়, স্ত্রীর মত তথাকথিত দ্বীনি না হয়ে) পারিবারিক জীবনে কোন না কোন দিক দিয়ে অসুখী এই তথাকথিত সেলিব্রিটি স্ত্রী নিয়ে। জাস্ট প্রকাশ করেন না। ইমেজ নষ্ট হবে।

 

অনেক সেলেব্রিটি আপু এতই লেখালেখিতে ব্যস্ত থাকেন (শুনেছি), যে স্বামী বা পরিবারের উপর দায়িত্ব পালনে কোন হুশ নেই, ফরজ কাজেই সময়ে ঘাটতি পড়ে যায়।

.

অনেকে আবার দ্বীনি এই সেন্সে যে নামাজ কালাম পড়েন, পর্দা (পর্দা কি কেবল শারীরিক?) করেন কিন্তু দিনশেষে ফেমিনিস্ট ও ক্যারিয়ারিস্ট মনোভাব পোষণ করেন। এগুলোর সাথে স্যাক্রিফাইস নেই !!

 

.

অনেক ভাই ই আফসোস করেন তাদের স্ত্রীদের নিয়ে।

 

দেখুন, স্ত্রীর ক্যারিয়ারিস্ট হওয়া অপ্রয়োজনীয় হলেও, ক্যারিয়ার গড়াটা হয়ত দোষের না, তবে কোন সীমারেখায় সেটা দোষের পর্যায়ে পড়ে অতীতে অনেক পোস্ট করেছি তাই আজ পোস্টের দীর্ঘতা বাড়াব না।

 

আর বর্তমান যামানায় এটা কঠিন নয়, বরং প্রায়ই অসম্ভব যে একজন মেয়ে শরীয়তের সকল শর্তে পা বন্দি রেখে ক্যারিয়ার বিল্ডআপ করতে পারবে।

 

.

তথাকথিত দ্বীনি মানসিকতার অনেক আপুর বিয়ের পর পরই স্বামীকে নিয়ে আলাদা হয়ে যাবার একটা টেন্ডেন্সি থাকেই থাকে, অনেকেই তা বাস্তবায়নও করেন এবং এরা এই ব্যাপারে, এসবের পক্ষে নিজেদের মনগড়া ফতোয়া দিয়ে এটাকে জাস্টিফাই করতে, জায়েজ করতে লেখালেখি করে।

 

এরা মূলত একটা কমফোর্ট জোন থেকে দ্বীন মানার চেষ্টা করেন। নিজে যেটা গোঁ ধরে বসে থাকে সেটাকে যেমন করেই হোক "এটাই ইসলাম বলে, এছাড়া বাকি সব সমাধান ভুল" এটা প্রতিষ্ঠিত করেই ছাড়বে এই ধরণের মনোভাব লালন করার।

 

.

তবে একজন বড় দ্বীনি আপু কে দেখেছি তিনি আসলেই দ্বীনদার। স্বামী শ্বশুর শ্বাশুড়ি নিয়ে যৌথ পরিবারেই ভাল আছেন, সুখে আছেন মাশাআল্লাহ।

সমস্যা গুলো তিনার পরহেজগারিতা ও টেকনিকের ধারে কাছেও ঘেষতে পারেনা। আল্লাহ উনার ইহকাল ও পরকালের জীবনেও যেন বরকত দেন। আমীন।

 

ইনার বাইরেও অনেক দ্বীনি আপুরা অবশ্যই ভাল আছেন হয়ত, তবে আমার জানা নেই। আর কেবলমাত্র কারোর ফেইসবুক এক্টিভিটি, ফেসবুকে খুব স্বামী সংসার নিয়ে লেখালেখি দেখেই অনুমান করতে পারব না যে মুলত তিনি কেমন বউ এবং বউমা।

 

.

প্রকাশ্যে কারোরই নাম নিব না। তবে ইংগিত দিলাম, যে বড় আপুর কথা বললাম, তিনি একটা গ্রুপের এডমিন। পরিবার নিয়ে অনেক সিরিজ লেখা আছে উনার। বোনেরা পারিবারিক কোন টিপস নিলে উনার থেকেই নিতে পারেন।

.

উনি স্ত্রী হিসেবে নিজের স্বার্থের সাথে সামঞ্জস্য রেখে ফতোয়াবাজি করেন না বরং নিজেকে শ্বাশুড়ির অবস্থানে রেখে (তিনিও ভবিষ্যত শ্বাশুড়ি এটা মাথায় রেখে), স্বামীর দিক থেকে নিজের ভবিষ্যত সন্তান চিন্তা করে (মানে স্বামী তার শ্বাশুড়ির সন্তান) তার সন্তান থেকে তিনি কেমন প্রত্যাশা করেন, খুব যৌক্তিক ভাবেই শরীয়াহ ভিত্তিক পরামর্শ দেন।

 

(উনি আমার ফ্রেন্ডলিস্টে নেই, ফলোয়ার লিস্টেও নেই। কিছুতেই নেই। উনি আমাকে একদমই চেনেন না তবে উনার দাম্পত্য পরিবার সম্পর্কে আমি জানি। ভাববেন না কাউকে প্রমোট করছি, আপনারা না দেখলেও আল্লাহ তায়ালা আমার অন্তরের খবর রাখেন)

 

.

এই পোস্ট অধিকাংশ বোনদের অপছন্দ হবে। সমস্যা নেই। কোন সেলেব্রিটির সমালোচনা নয়, বরং তাদের অনুসারী সাধারণদের সাবধান করাই উদ্দেশ্য।

 

অনলাইনে ইসলামিক লেখালেখি করলেই কাউকে দ্বীনদার ভাবার, তার থেকে পরামর্শ নেবার কোন সুযোগ নেই। তবে তার পরামর্শ পূর্ণ শরীয়াহ ভিত্তিক হলে ঠিক আছে।

 

.

কিন্তু শরীয়াহ ভিত্তিক নয়, তবে তার দেওয়া পরামর্শ আপনার পছন্দসই, মনমত হচ্ছে তাই নিয়ে নিলেন এমন যেন না হয়। তাহলে, আল্লাহ তায়ালার কাছে দুইজনকেই জবাবদিহি করা লাগবে।

 

- শাহ মোহাম্মদ তন্ময়

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

"রমাদ্বানের শেষের দশ রাতে গোসল"।

 

ঈমাম ইবনে জারীর (রহ.) বলেন, রমাদ্বানের শেষ দশের প্রতি রাতে মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ে গোসল করা মুস্তাহাব।

 

ঈমাম ইব্রাহী আন-নাখাই (রহ.) রমদ্বানের শেষ দশরাতে মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ে গোসল করতেন।

 

হাফিয ইবনু রজব হাম্বলী (রহ.) বলতেন, রমাদ্বানের মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ে গোসল করা মুস্তাহাব। তিনি আরো বলেন এই দশ রাতে শুধু গোসলই নয়, উত্তম পোষাক, আতর লাগানোও জুমু'আবার ও ঈদের দিনের মত মুস্তাহাব। কেননা এই দশ রাতের যে কোন রাতে লাইলাতুল ক্বদর হয়ে যেতে পারে।

.

 

ঈমাম ইবনে আবি আসিম (রহ.) বলেন, রাসূল (সাঃ) রমাদ্বানের শেষ দশ রাতে মাগরিব ও ইশার মধ্যবর্তী সময়ে গোসল করতেন।

 

- এই হাদীসের সনদের ব্যাপারে মুক্বারিব বা গ্রহণযোগ্য বলেছেন।

 

® Rajib Hasan

#হারানো_সুন্নাহ

কৃতজ্ঞতাস্বীকারঃ #১মিনিটের_মাদ্রাসা

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

মহাকালের মহাসত্য—

 

আমেরিকায় অবস্থানকালে সাইয়্যেদ কুতুব আমেরিকার জীবন ও সমাজব্যবস্থা, তাদের বস্তুবাদী ও ভোগবাদী দর্শনের দুরাবস্থা নিয়ে—আমরিকা আল্লাতি রাআইতু—এই প্রবন্ধে লিখেছেন,

 

"তারা এমন এক জাতি যারা জ্ঞান-বিজ্ঞান, উন্নতি ও অগ্রগতিতে পৃথিবীর নেতৃত্ব দিচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে—তাদের মানবিক অবস্থা ও সমাজব্যবস্থা এতো হীন যে, তা মানবিক অবস্থার প্রাথমিক স্তরেও নেই। আর কিছু কিছু ক্ষেত্রে তো তা আরো ঘৃণ্য পর্যায়ে। অধঃপতিত।"

 

 

 

 

 

 

 

 

 

ক্ষমা ও মুক্তির মাসে ক্ষমার একটি সুন্দর গল্প :

 

মদিনার খলিফা মনে মনে অপেক্ষা করছেন কারো। মনের ভেতর আকুতি। তাকে যদি পাওয়া যেত! যদি তার সাথে দেখা হতো! যখনই ইয়ামামা থেকে কোনো যুদ্ধের কাফেলা মদিনায় আসে মহান খলিফা উমার ইবনুল খাত্তাব অধীর আগ্রহে জিজ্ঞেস করেন, 'তোমাদের মধ্যে ওয়াইস বিন আমের আলকারনি নামে কোনো লোক আছে?'

লোকজনের উত্তরে কি হতাশ হন খলিফা? মনে হয় না। কারণ তাঁকে আবারো জিজ্ঞেস করতে দেখা যায় একই প্রশ্ন।

 

কে এই 'ওয়াইস বিন আমের' যার অপেক্ষায় আছেন উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর মতো মহাব্যস্ত খলিফা!

একদিন খলিফার অপেক্ষার অবসান ঘটে। তিনি জানতে পারেন 'ওয়াইস বিন আমের' নামে এক ব্যক্তির আগমন মদিনায় ঘটেছে। তিনি তার কাছে চলে যান। জিজ্ঞেস করেন, 'আপনি কি ওয়াইস বিন আমের?'

ওয়াইস বিন আমের বললেন, জি।

'আপনি কি কারন গোত্রের মুরাদ শাখার লোক?'

'জি'

'আপনার কি শ্বেত রোগ ছিল, যা থেকে আপনি সুস্থ হয়েছেন কিন্তু সামান্য স্থানে এর চিহ্ন রয়ে গেছে?' জানতে চান খলিফা।

'জি।' জবাব দেন রহস্যময় মানব।

'আপনার আম্মা বেঁচে আছেন?' আবারো জানতে চান খলিফা।

তিনি আগের মতোই উত্তর দেন 'জি'।

 

উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু এবার ওয়াইস বিন আমেরের রহস্য উন্মোচন করেন। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি অদূর ভবিষ্যতে তোমাদের মধ্যে 'ওয়াইস বিন আমের' নামে একজন লোক আগমন করবে। তার ছিল শ্বেত রোগ। সামান্য স্থান ব্যতীত তার শরীরের চামড়া ভালো হয়ে গেছে। সে তার মায়ের খেদমতে নিয়োজিত রয়েছে। সে তাঁর মায়ের প্রতি খুবই সদাচারী ও আনুগত্যশীল। সম্ভবত এ কারণেই সে আমার কাছে আসতে পারছে না। সে যদি আল্লাহর নামে কোনো শপথ করে আল্লাহ তা পূর্ণ করার ব্যবস্থা করে দিন। তোমরা যদি তাকে পাও তবে তার কাছে নিজের জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনার আবেদন করো।'

উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু এরপর বলেন, সুতরাং আমার জন্য আপনি ক্ষমা প্রার্থনা করুন।

 

ওয়াইস বিন আমের খলিফা উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন। উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আপনি এখন কোথায় যাবেন?

ওয়াইস বিন আমের বলেন, কুফার দিকে।

উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, কুফার গভর্নরের কাছে আপনার জন্য কিছু লিখে দিব কি?

ওয়াইস বিন আমের বিনয়ের সাথে বলেন, 'না, কিছু লেখার প্রয়োজন নেই। আমি দারিদ্র হালতে ফকির মিসকিনদের সাথে বসবাস পছন্দ করি।'

 

চলে যান ওয়াইস বিন আমের। পরের বছর কুফা থেকে এক ব্যক্তি হজ করতে এলে খলিফা তাকে ওয়াইস আল কারনি সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন। লোকটি বলল, 'আমি তাকে পুরাতন একটি ঘরে অসহায় অবস্থায় বসবাস করতে দেখে এসেছি।' উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু লোকটিকে ওয়াইস আল কারনির ব্যাপারে রাসূলের বলা কথাগুলো বললেন এবং তাকেও তাঁর কাছে গিয়ে ক্ষমা চাইতে বললেন।

লোকটি ফিরে গিয়ে তাঁর কাছে ক্ষমা চাওয়ার আবেদন করলে প্রথমে তিনি এই বলে প্রত্যাখ্যান করলেন যে, 'আপনি হজের সফর থেকে এসেছেন, সুতরাং আপনিই আমার জন্য দুআ করুন।' কথাটি কয়েকবার বলার পর ওয়াইস জানতে চাইলেন, আপনার কি উমারের সাথে দেখা হয়েছে? কুফাবাসী লোকটি বললেন, 'হ্যাঁ।'

ওয়াইস বিন আমের লোকটির জন্য দুআ করলেন।

 

আর এর কিছুদিন পর তাঁর রহস্য লোকজনের কাছে প্রকাশ হয়ে পড়লে লোকালয় ছেড়ে অদৃশ্য হয়ে গেলেন তিনি।

 

সুত্র : সাল্লাবি রচিত 'উমার'।

 

গল্পটা পড়ে অনেকগুলো শিক্ষা পেয়েছি। গুরুত্বপূর্ণ তিনটি শিক্ষা হলো :

এক. ক্ষমার জন্য উমারের মতো ব্যক্তির এত আকুলতা হলে আমাদের কেমন আকুলতা হওয়া উচিত? নবীজি বলেছেন, তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো, ব্যস তিনিও ব্যাকুল!

আমাদের কাছে ওয়াইস আল কারনি নেই। কিন্তু নবীজির উচ্চারিত দুআ আছে। রমজানের শেষ দশকে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেশি বেশি পড়তেন,

اللَّهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي

হে আল্লাহ, আপনি ক্ষমাশীল, ক্ষমাকে ভালোবাসেন, অতএব আমাকে ক্ষমা করুন।

 

দুই. পিতামাতার খেদমত এমন এক বিষয় যে, শুধু আল্লাহর ক্ষমা লাভই নয়, বরং অন্যের ক্ষামার ওসিলা হওয়ার মতো সম্মানিত হয়ে যায়। কোথাকার কোন এক ব্যক্তি, কত দূর থেকেও নবীজি তাঁকে চিনেছেন, পবিত্র মুখে তাঁর নাম নিয়েছেন, আর এভাবে তিনি এত বিশিষ্ট হয়েছেন যে, উমারের মতো মানুষও তার কাছে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য আব্দার জানাচ্ছেন!

আল্লাহ আমাদের পিতামাতার খেদমত করার তাওফিক দিন। আল্লাহ আমাদেরও ক্ষমা করুন। আমিন।

 

তিন. আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত নিজের বিশেষত্ব লুকিয়ে রাখা। আমলে ইখলাস থাকা। খ্যাতিকে ভয় করা। তিনি হারিয়ে গিয়েছেন লোকালয় ছেড়ে। আর আমরা তো কত অধম! আমি এই, আমি সেই, এই প্রমাণ করতে ব্যস্ত সারাদিন! আল্লাহ মাফ করুন আমাদের নির্বুদ্ধিতা। আল্লাহ মিটিয়ে দিন আমাদের অন্তরের দৈন্যতা।

 

- মাজিদা রিফা

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

সাবধান!

"আলেমরা নিশ্চিত করেছেন..."- কোন আলেমরা?

"গবেষণায় দেখা গেছে..."- কোন গবেষণা?

"অধিকারকর্মীরা বলেছেন..."- কোন অধিকারকর্মীরা?

"বিশ্বস্ত সূত্ররা নিশ্চিত করেছে..."- কোন বিশ্বস্ত সূত্ররা?

"প্রত্যক্ষদর্শীরা নিশ্চিত করেছে..."- কোন প্রত্যক্ষদর্শীরা?

"গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে..."- সত্যতা যাচাই করুন।

.

-Shaykh Muhammad Al-Munajjid (Hafizahullah)

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

একটি অনর্থক আলাপ দ্বি-জাতি তত্ত্ব ভূল/শুদ্ধ। রাজনৈতিক বিবেচনায় কায়েদে আজমই ঠিক ছিলেন, দুরদর্শি ছিলেন।

 

উচিত হলো ইতিহাসের পাঠ নিয়ে বর্তমানে রাজনৈতিক প্রজ্ঞা বৃদ্ধি করা। এ দেশে ইসলামপন্থিরা এখনো রাষ্ট্র পরিচালনায় উপযুক্ত নাহ, আমাদের প্রচুর রাজনৈতিক জ্ঞান অর্জন প্রয়োজন।

 

আমি বুঝে গেছি এ ভূখন্ডে মুসলিমদের মুক্তির দরজাই কাশ্মির, পথই ভারতের আধিপত্যবাদ রুখে দেওয়া। তাহলেই চারপাশে সকল অনিয়মের হোতাগুলো মুখ থুবড়ে পরবে। এ জন্য ইসলামপন্থিদের এই একটাই রাজনৈতিক লক্ষ্য।

 

আমরা দেখি ঘোষিত আল কায়েদার চীফ শহিদ জাকির মুসা রহঃ কে কিভাবে শিখ সম্প্রদায় আশ্রয় দিয়েছিল, সাহায্য- সমর্থন যুগিয়েছিল। তার বিদায়ের পর ব্যানার টানিয়ে সহমর্মিতা প্রকাশ করছে এখনো। 'শিখ' ধর্মালম্বীরা কি জানে না আল কায়েদা জিহাদি সংগঠন, তারা জমিনে শুধুই আল্লাহর সার্বভৌমত্ব কায়েমের লক্ষ্য নিয়ে এগুচ্ছে। তারা কি দেখেনি উত্তোলিত পতাকা, শুনেনি জাকির মুসাদের কাশ্মিরে হিস্যা টা কি!?

 

ঠিক এখানেই রাজনৈতিক দুরদর্শিতা। আল কায়েদা বুঝাতে সক্ষম হয়েছে তারা মানবতার জন্য হুমকি নাহ, তার সকল ন্যায্যতার পক্ষে। শত্রুর শত্রুর আমার বন্ধু নীতি অপেক্ষাকৃত দুর্বলদের জন্য নাহ, যে কোন বিচক্ষণ রাজনীতিবিদের দর্শন।

 

এ দেশে তো বৈদেশিক ও দেশজ রাজনৈতিক স্বার্থে ইসলামপন্থিদের ভিতরই শত্রু-মিত্র নির্ধারন হয়। আশ্চর্য লাগে তারা এখনো বুঝতেই পারে না মাদখালিজম সম্পূর্ণ রাজনৈতিক এজেন্ডা, তারা ব্যাখ্যা করে মাসআলাগত বিরোধ নামক বাকওয়াস আলাপ।

 

তাই ইসলামের এ ভূখন্ডে আগমনী বার্তা ধারন হবে আমাদের প্রধান রাজনৈতিক এজেন্ডা। এ পথের নিকট অতীত প্রয়োগ দেখা যাক, হাজী শরিয়তউল্লাহ একজন সফল প্রয়োগকৃত ব্যাক্তি। যিনি প্রথমে সালাফিজম প্রচার করে ভাত পান নাই, পরে মানবতার লক্ষ্যে এমন স্ট্যান্ডার্ড দাড় করাতে সক্ষম হন যে হিন্দুরা দলে দলে যোগদান করে।

 

লিখে অত বলা সম্ভব নাহ," ভারতীয় আধিপত্যবাদ'' একটা মূর্তি যার ভাঙ্গনেই আমাদের মুক্তি। এই মন্ত্রটা গেঁথে নেন। এরপর যারা যারা এই ভাঙ্গনে অংশগ্রহণ করতে উদ্রীব তাদের সাথে জোটগঠন, সম্ভাব্য সুবিধাজনক অবস্থানে থেকে ভাঙ্গা শুরুই কাজ।

 

শত্রুরা কিন্তু এই মূর্তি অক্ষত রেখে, পূজারি/ আসনবিস্তৃতি লক্ষ্য নিয়েই এগুচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতা জামাতের বড় বড় নেতাদের হত্যা,শিবির দমন একই সূত্রে গাঁথা। জামাতের কর্মী-সমর্থকরা যতদ্রুত এইটা অনুধাবন করবে ততদ্রুত আমাদের সাথে শামিল হবে।

 

ঠিক এই মূর্তি ভাঙ্গব বলেই শিখরা আল কায়েদাকে সমর্থন দিতে পারল, সুতরাং আমরাও যদি মানুষের সামনে এই রাজনৈতিক রুপরেখা দিতে পারি তারাও দলে দলে যোগদান করবে বলে বিশ্বাস। একাজে প্রস্তুত মাওবাদীরা আমাদের সঙ্গ দিবে, নমশুদ্র হিন্দুরাও হবে( উত্তরখন্ডে আভাস দিয়েছে)।

 

কাজ হবে এই মূর্তির ভাঙ্গন রোধকারী,পূজারিদের টার্গেট লিস্ট করা। তাদের সম্ভাব্য উত্তম উপায়ে প্রতিহত করা, যার সর্বোচ্চ পর্যায় হবে আদর্শকে কুঠারাঘাত দেওয়া।

 

- মেহেদি হাসান মুরাদ

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

#শেখ_আবুল_কাসেম_মিঠুন ছিলেন সংস্কৃতি অঙ্গনের একজন সিপাহসালার -তৌহিদুর রহমান

 

পলাশীর বিপর্যয়ের পর ভারত উপমহাদেশে মুসলমান জাতির ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণরূপে অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। মুসলমানদের জীবনে নেমে আসে চরম দুর্দিন। উপমহাদেশের শাসনব্যবস্থায় দেখা দেয় বিশৃঙ্খলা। বিশেষ করে ঘোর অমানিশায় ঢেকে যায় মুসলমানদের রাজনৈতিক জীবন। অর্থনৈতিকভাবেও মুসলমানরা হয়ে যায় দেউলিয়া। তাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য ও ধর্মীয় জীবন ক্রমান্বয়ে তলিয়ে যায় অতল গহব্বরে। প্রচলিত পৌত্তলিক সংস্কৃতির সাথে খুব সহজেই তা আবার একাকার হতে শুরু করে। নিজস্ব নৈতিক কাঠামো ও শিক্ষা ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকে অপসংস্কৃতি ও পৌত্তলিকতার মাঝে। তাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় মূল্যবোধে প্রবেশ করে নানা কুসংস্কার। তাদের জীবন হয়ে পড়ে অতীব সঙ্গিন। অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে তারা কুলি, মজুর ও বিত্তহীন কৃষক সম্প্রদায়ে পরিণত হয়। এরপর খুব দ্রুতই তারা হিন্দু জমিদার ও ইংরেজ নীলকরদের অত্যাচারে একেবারে নিঃস্ব- সহজ কথায় বলতে গেলে বলতে হয়, পথের ফকিরে পরিণত হয়।

 

যে মুসলমানরা সম্পূর্ণ নির্মোহ ও নিরপেক্ষতার সাথে প্রায় আটশো বছর এই উপমহাদেশ শাসন করেছে, নতুন সভ্যতায় আলোকিত করে তুলেছে অসংখ্য অচ্ছ্যুৎ দলিত মথিত মানবসন্তানকে, যারা উঁচু-নিচু ভেদাভেদ ভুলিয়ে মানুষকে মানুষের কাতারে দাঁড় করিয়েছে- কালের পরিক্রমায় তারাই পরিণত হয় নির্মমতার সহজ শিকারে। কদিন আগেও যারা ছিল রাজা, বাদশা, উজির, নাজির, আমির, ওমরা- সময়ের ব্যবধানে তারাই আজ পথে পথে ভিখ মাগে। আর্থিক এই অসচ্ছলতার দরুন মুসলমান জাতি এই উপমহাদেশে যে প্রকট শিক্ষা সংকটে পড়ে মূলত তারই ফলশ্রুতিতে তাদের সমাজজীবনে ও ধর্মীয়জীবনে দেখা দেয় বিভিন্ন কুসংস্কার ও অনৈসলামিক রীতিনীতি। কবরপূজা, পীরপূজা, দরগাপূজা, ওরস ইত্যাদি রসম রেওয়াজ মুসলিম সমাজে প্রবেশ করে। মূলত দরিদ্রতার চরম জাঁতাকলে নিষ্পেষিত হয়ে তারা ভিক্ষাবৃত্তির এসব নব কৌশল আবিষ্কার করে।

 

এভাবেই মুসলমানদের ধর্মীয়, আদর্শিক, নৈতিক এবং সর্বোপরি সামাজিক জীবনের প্রথা বৈশিষ্ট্যসমূহ ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হতে থাকে। বলাবাহুল্য এই উপমহাদেশে মুসলমানরা সেই দৈনতা আজও কাটিয়ে উঠতে পারেনি। ইংরেজদের শেখানো ডিভাইড অ্যান্ড রুল অর্থাৎ ভাগ কর এবং শাসন কর- হিংস্র এই নীতি বলা যায় মুসলমানদের রক্তের সাথেও যেন মিশে গেছে। এর ফলে মুসলমানরা তাদের নিজস্ব মৌলিক নীতি আদর্শে আর ফিরে যেতে পারছে না। এ কথা বললে অত্যুক্তি হবে না, যে মুসলমান জাতি দুনিয়ায় সর্বশ্রেষ্ঠ একটি আদর্শের ধারক, বাহক- কিন্তু এই উপমহাদেশে এটা তারা তাদের অভিধান থেকে সম্পূর্ণরূপে মুছে ফেলেছে।

 

মাত্র দুইশো বছরের ইংরেজ শাসনেই তাদের এই বিভ্রম ঘটেছে। এখন অবস্থা এতটাই সঙ্গিন যে মুসলমানদের সেই মহান আদর্শ তারা নিজেরাই ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছে। উল্টো কবরপূজা, পীরপূজা, দরগাপূজা, ওরস ইত্যাদি রসম-রেওয়াজকেই আজ মুসলমানদের প্রকৃতধর্ম হিসাবে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করার বহুবিধ প্রচেষ্টা নিরন্তর চলছে। এ সবের কারণে খুব সহজেই মুসলমানদের সোনালি ইতিহাস আজ চাপা পড়তে বসেছে। যদিও প্রায় একশো বছর হতে চলল মুষ্টিমেয় কিছু মুসলমান ইসলামী আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ইসলামী আদর্শকে একমাত্র জীবনবিধান হিসাবে গ্রহণ করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে- তবুও এ কথা বলতেই হয়, সেই ধারা এখনো খুবই ক্ষীণ।

 

শেখ আবুল কাসেম মিঠুন এই ধারারই একজন সাহসী সিপাহসালার হিসেবে সংস্কৃতি অঙ্গনে প্রবেশ করেছিলেন। জীবনের কিছু ঋণ পরিশোধের ব্রত নিয়ে তিনি এগিয়ে এসেছিলেন নিজের অতীত জীবনকে বিচক্ষণতার সাথে পেছনে ফেলে ‘হেরার রাজতোরণ’-এর পথে। যদিও সে পথটা ছিল না মসৃণ, কোমল, ছায়া সুশীতল।

 

আবুল কাসেম মিঠুনের চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করাটা ছিল চরম কঠিন একটা কাজ। সমাজ সংসার, মা-বাবা, আত্মীয়-স্বজনের প্রবল আপত্তি ও বাধার মুখে তিনি পা রেখেছিলেন চলচ্চিত্র অঙ্গনে। এখানে তিনি অত্যন্ত দৃঢ় ও শক্ত করে পা রেখেছিলেন একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবে। এখানে যারা পা রাখে তাদের পা ফসকাতে বেশি একটা সময় লাগে না। রূপালি পর্দার আড়ালে যে রূপের আগুন থাকে তা যেকোনো ঈমানদারকে অতি সহজে পুড়িয়ে ছারখার করে দিতে পারে নিমেষে। কিন্তু আবুল কাসেম মিঠুনের ঈমানের জোর ছিল অনেক অনেক বেশি। তাই তিনি নিজের ঈমানকে বাঁচিয়ে চলচ্চিত্র অঙ্গনের পরিবেশকে সুস্থ সুন্দর ও মননশীল করার ব্রত নিয়ে কাজ করেছিলেন।

 

তিনি লিখেছেন, ‘আমার চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করাটা গ্রামের প্রায় কেউই ভালোভাবে গ্রহণ করেনি। বাপ-মা’র প্রচণ্ড বিরোধিতার মুখে পড়ি। চলচ্চিত্রের ওপর তাদের খারাপ ধারণাটা আমি দূর করবোই, প্রতিজ্ঞা করলাম। নৈতিক চরিত্র ঠিক রেখে সকল প্রলোভনকে জয় করবো। পিতা-মাতা, শিক্ষকবৃন্দ ও গ্রামের সকল মুরব্বির সম্মান রক্ষার জন্য আমার আচার-ব্যবহার ও কাজকর্মে উন্নতভাব ফুটিয়ে তুলবো। সে তৌফিক আল্লাহ দিয়েছেন। কোনো প্রলোভন আমাকে ভ্রান্ত পথে নিতে পারেনি। কখনো জুয়া-মদের আসরে বসিনি, কখনো অবৈধ নারী সংসর্গে যাইনি। কাজ শেষে ঘরে ফিরে নামাজ পড়েছি। আব্বা-মা প্রদত্ত একটিমাত্র স্মৃতি বা নিদর্শন পবিত্র কোরআন শরিফ যা এখনো আমার কাছে রক্ষিত আছে, সেটা পড়েছি। আল্লাহর কাছে সবার জন্য দোয়া চেয়েছি।

 

অনেক পরিচালক-প্রযোজক বলেছেন জুয়া-মদের আসরে না বসলে হিরো হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে না। মৃদু হাসি দিয়ে জবাব দিয়েছি। প্রবল শক্তি জুগিয়েছে মুরব্বিদের উন্নত বৈশিষ্ট্য ও দোয়া। পুরো ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে আমার নৈতিক চরিত্র ও অন্যান্য গুণের জন্য সবার আন্তরিক শ্রদ্ধা ও প্রশংসা পেয়েছি। এমনও ঘটেছে, ঢাকার দূরে শুটিংয়ে দুর্বৃত্তদের হাত থেকে রক্ষার জন্য নতুন নায়িকা সসম্মানে আমার রুমে আশ্রয় নিয়েছে। চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কতটুকু বিশ্বাস উৎপাদনে এটা সম্ভব! মুরব্বিরাই এই কৃতিত্বের দাবিদার। আমার সৌভাগ্য এ গ্রামে জন্মগ্রহণ করতে পেরে। আল্লাহর দরবারে হাজার শুকরিয়া।’ (পল্লীকথা, পৃ: ২১)

 

সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনে পথ চলা সম্পর্কে আবুল কাসেম মিঠুন বলেন, ‘১৯৬৯-এ খুলনা সিটি কলেজে ভর্তি হয়েই দেয়াল পত্রিকা ‘সঙ্গোপন’-এর সম্পাদক হই। সাহিত্যে হাতেখড়ি তখন। ছাত্র অবস্থাতেই সাপ্তাহিক কালান্তরে সাংবাদিকতা, পরে কালান্তরের সাপ্তাহিক ও দৈনিকের নির্বাহী সম্পাদক। খুলনার জন্মভূমি, পূর্বাঞ্চল, প্রবাসী ইত্যাদি পত্রিকায় আমার লেখা অসংখ্য গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়। সাপ্তাহিক প্রবাসীর বার্তা সম্পাদক ছিলাম দীর্ঘদিন। ’৭৩ ’৭৪-এ খুলনাসহ দেশের সব বেতার কেন্দ্রের গীতিকার ও নাট্যকার হিসেবে তালিকাভুক্ত হই। এ কাজে তেমন অর্থ না থাকলেও সম্মান ছিল। বাস্তবে হারমোনিয়াম দেখিনি। তা সত্ত্বেও আমার সুরের গান জনপ্রিয় হয়। আমার লেখা ও সুরে গান গেয়ে শাম্মী আখতার, প্রণব ঘোষ, মলিনা দাস, শেখ আব্দুস সালাম প্রমুখ শিল্পী জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। গানের কথা ও সুর শুনে সঙ্গীতবোদ্ধারা অবাক ও বিস্মিত হতেন। ঢাকা থেকে আগত ‘সিনেপল ফিল্ম সোসাইটি’ আয়োজিত চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য রচনার কোর্স করি।’ (পল্লীকথা, পৃ: ২৪)।

 

এ সবই ছিল তার প্রবল আগ্রহ ও একনিষ্ঠতার প্রমাণ। একাগ্রতা থাকলে মানুষ অনেক কিছুই করতে পারে আবুল কাসেম মিঠুন তার বাস্তব উদাহরণ। কাজ করেছেন প্রচুর কিন্তু শিকড়কে কখনো ভুলে জাননি। আদর্শিক চেতনা সব সময় তাকে সতর্ক করেছে।

 

তিনি তৈরি করেছেন বেশ কয়েকটি টেলিফিল্ম, নাটক ও গানের ভিসিডি। প্রচুর লিখেছেন চলচ্চিত্র, নাটক, সংস্কৃতি, মিডিয়াসহ বহুবিধ বিষয়ে। অর্থাৎ তিনি ছিলেন সকল সময় কর্মব্যস্ত একজন মানুষ। কাজই ছিলো তাঁর নেশা। এত কাজের মধ্যে তাঁর মূল আকর্ষণ ছিলো চলচ্চিত্রের চিত্রনাট্য রচনা করা। তিনি অসম্ভব সংগ্রাম করে চলচ্চিত্র জগতে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলেন। অসংখ্য ছবির চিত্রনাট্য বা স্ক্রিপ্ট তিনি রচনা করেছেন অথচ লেখক হিসেবে তার নাম ব্যবহার করা হয়নি। এমনকি তাকে উপযুক্ত পারিশ্রমিকও দেয়া হয়নি। এ সম্পর্কে তিনি তার একটি স্মৃতিচারণে লিখেছেন, ‘তরুলতা মুক্তির পর ‘৮১-র মাঝামাঝি আর কোনো অফার আসেনি। প্রতিদিনই যাই বেঙ্গল স্টুডিও, এফডিসিতে।

 

প্র্যাকটিস করি শরীরর্চ্চা, আবৃত্তি, অভিনয়। অন্যদিকে বেকার জীবন, প্রচণ্ড অর্থাভাব। হঠাৎ বিখ্যাত পরিচালক শেখ নজরুল ইসলাম থেকে অফার এলো, অভিনয়ের জন্য নয়, স্ক্রিপ্ট লেখার। খুলনার কোর্সটি কাজে লাগলো। লিখলাম ‘আশা’ ছবিটি। আমার আইডেন্টটিটি কী হবে? নায়ক, না লেখক? ঘনিষ্ঠজনদের সাথে পরামর্শক্রমে সিদ্ধান্ত হলো লেখক হিসেবে পর্দায় আমার নাম থাকবে না। শুধু লেখার সম্মানীটা পাবো। অনেক কাহিনী চিত্রনাট্য সংলাপ রচনা করলাম। ছবিগুলো সুপার হিট হলো। পর্দায় আমার নাম না থাকলেও ফিল্মের লোক জেনে যায় ছবিটি কার লেখা। অলিখিত চিত্রনাট্যকার হিসেবে স্বীকৃতি পেলাম। প্রশংসা ছড়িয়ে পড়লো। এরপর বিখ্যাত প্রডাকশন হাউজ ও মধুমিতা সিনেমা হলের মালিকদের ছবি ‘মাসুম’ লিখলাম। ‘ঈদ মোবারক’ লিখলাম। লেখক হিসেবে ভীষণ প্রশংসা পেলাম। সাথে তারা আমাকে সে ছবির নায়কও করলেন। ‘৮২-তে মুক্তি পেল। সুটিংয়ে আমার অভিনয় দেখে বিখ্যাত পরিচালক কামাল আহমেদ তার ‘গৃহলক্ষ্মী’ এবং জনপ্রিয় পরিচালক এফ কবির চৌধুরী ‘নরম-গরম’ ছবিতে আমাকে কাস্ট করেন। সবগুলো ছবিই সুপার হিট হলো।’

 

একটি আদর্শিক দলের পতনের কারণ সম্পর্কে তার একটি মূল্যবান আলোচনা শুনে একদা তার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলাম। সেই থেকে মনের মণিকোঠায় শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় তাকে ঠাঁই দিয়েছিলাম। তিনি বলেছিলেন, ‘অভিনয় করবেন নৈতিক চরিত্র ধ্বংস করে নয়। ব্যবসা করতে গিয়ে নিজের ঈমান বিক্রি করে যেন মুনাফা করতে না হয়। কাদায় নামবেন কিন্তু ভাবতে হবে বাইম মাছের মতো গায়ে যেন কাদা না লাগে। যেখানেই আপনি কাজ করেন না কেন আল্লাহর রজ্জুটা যেন গলায় থাকে। সবদিকে খেয়াল রাখতে হবে যেন সাদা কাপড়ে দাগ না লাগে।’

আবুল কাসেম মিঠুনের এই আলোচনা সেদিন মন্ত্রমুগ্ধের মতো গোগ্রাসে গিলেছিলাম। তিনি এত ভালোভাবে এটা বুঝিয়েছিলেন যা কল্পনারও অতীত।

 

তিনি ছিলেন একটা আদর্শিক পরিবারের সন্তান। সেই কারণেই তার পক্ষে সম্ভব হয়েছিল দীর্ঘদিন ধরে চলচ্চিত্র জগতের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকার পরেও নিজের চরিত্র কালিমা মুক্ত রাখা। কাদায় নামার পরেও তিনি কখনো গায়ে কাদা লাগতে দেননি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরো বলেছিলেন, ‘একটা আদর্শের পতন তখন হয় যখন তার নৈতিক পরাজয় হয়। বিপরীত আদর্শের সাথে ক্ষমতার অংশীদারিত্বে যাওয়াটা সঠিক বা বেঠিক সময়ই তা নির্ধারণ করবে। মনে রাখতে হবে, যখন আপনি বৃহৎ শক্তির সাথে সমঝোতা করবেন তখন তার কর্মের কিছু না কিছু আপনার মাধ্যমে প্রতিফলিত হবে। পানিতে ডুব দিয়ে চুল না ভেজানো অসম্ভব একটি কাজ!’

 

আসলে হত্যা, নির্যাতন, গুম করে কখনো আদর্শকে খতম করা যায় না। আদর্শ শেষ হয়ে যায় তার জনশক্তির নৈতিক অবক্ষয়ের কারণে। প্রখ্যাত দার্শনিক ও লেখক বার্ট্রান্ড রাসেল বলেছেন, ‘আদর্শপরায়ণতার নামে যা চলছে তার বেশিরভাগই হয় ছদ্মাবরণে ঘৃণা আর না হয় ছদ্মাবরণে ক্ষমতানুরাগ। বিপুল জনসাধারণকে যখন আপনারা কোনো মহৎ অনুপ্রেরণার নামে আন্দোলিত হতে দেখেন, তখন আপনাদের কর্তব্য হবে একটু গভীরে দৃষ্টি দিয়ে নিজ নিজ অন্তরকে জিজ্ঞেস করা- এই অনুপ্রেরণার পেছনে আসল কারণটা কী? মহত্ত্বের এতই আকর্ষণ যে, তার মুখোশ দেখলেই জনগণ তার দিকে ধাবিত হয়।’

 

আবুল কাসেম মিঠুন মানুষের মুখোশকে খুবই ভয় করতেন। তিনি মুখোশধারী মানুষকে মোটেই সহ্য করতে পারতেন না।

আবুল কাসেম মিঠুন ছিলেন একজন নির্লোভ মানুষ। চলচ্চিত্র জগতের একজন প্রভাবশালী অভিনেতা ও নেতা ছিলেন আবুল কাশেম মিঠুন। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে তিনি চলচ্চিত্র অঙ্গনের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছেন। বৃহৎ পরিবারের সন্তান হিসাবে তিনি ছিলেন অসচ্ছল। তবুও টাকা-পয়সা কখনো তার কাছে মুখ্য ছিল না। তারপরও খুবই সাধারণ জীবনযাপন করতেন আবুল কাসেম মিঠুন। এত বড় একজন নায়ক বা অভিনেতা অথচ সামান্য অহংকার তার মধ্যে দেখিনি। এমন অমায়িক ভালো মানুষ চলচ্চিত্র অঙ্গনে খুব কমই দেখা যায়।

 

শেষ দিকে এসে হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। আমার আর তার অসুস্থতা ছিল প্রায় একই ধরনের। সে জন্য প্রতিদিনই শারীরিক সমস্যা নিয়ে আলাপ হতো। তিনিই ফোন দিতেন। শেষ দেখার সময় রাস্তায় দাঁড়িয়ে অসুস্থতা নিয়ে প্রায় আরো আধা ঘণ্টা কথা হলো। বললেন, আম্মা অসুস্থ কাল বাড়ি যাবো। দোয়া চাই। ক’দিনের মধ্যে আমার সাথে এত আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তা এখন ভাবতে বসে কষ্ট পাই। সাহিত্য সংস্কৃতি অঙ্গনের যাদের সাথে আমার অন্তরঙ্গ সম্পর্ক রয়েছে তারা আমার জন্য হৃদয়ের গভীরে দরদ অনুভব করেন। ড. এস এম লুৎফর রহমান স্যার এখনো আমাকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটি করেন।

 

শাহ আবদুল হান্নান প্রতিবার বিদায়ের সময় আমার কপালে চুমু দিয়ে বিদায় দেন। প্রখ্যাত নজরুল গবেষক শাহাবুদ্দীন আহমদের সহধর্মিণী নূরজাহান ভাবী প্রায়ই বলেন, আমার সন্তানদের পাশে আর একটি নাম তিনি লিখে রেখে গেছেন, তা হলো তৌহিদ। দশ দিন দেখা না হলেই কবি আল মাহমুদ ভাই অস্থির হয়ে যান। একই সাথে কথাশিল্পী মাহবুবুল হক, কবি সোলায়মান আহসান, ড. হুমায়ূন কবীর, কবি মোশাররফ হোসেন খান, ড. মুহাম্মদ সিদ্দিক, লেখক বদরে আলম প্রমুখ।

 

আবুল কাসেম মিঠুনের ব্যক্তিগত তথ্য সম্পর্কে যা জানা গেছে তা হচ্ছে এরকম। সাতক্ষীরা জেলার আশাশুনি উপজেলার দরগাহপুর গ্রামে সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন শেখ আবুল কাসেম মিঠুন ১৯৫১ সালের ১৮ এপ্রিল। তার পিতার নাম শেখ আবুল হোসেন এবং মায়ের নাম হাফিজা খাতুন। এই বংশের অধিকাংশ সদস্যই জ্ঞানী-গুণী, সংস্কৃতিবান ও ঐতিহ্য সচেতন ব্যক্তি ছিলেন। সেই আমলে বুখারি শরিফের বাংলা অনুবাদ করেন শেখ বজলুর রহমান দরগাহপুরী। প্রখ্যাত পণ্ডিত শেখ বজলুর রহমান দরগাহপুরী এই বংশেরই লোক। শেখ বজলুর রহমান শুধুমাত্র একজন জ্ঞানী ব্যক্তিই ছিলেন না, তিনি ছিলেন পশ্চিম বাংলার বিধানসভার নির্বাচিত একজন সদস্য।

 

কিছুকাল আগে লুপ্ত শিশু-কিশোর পত্রিকা ‘গুলবাগিচা’র সম্পাদক ছিলেন এই বংশের আরেক উজ্জ্বল নক্ষত্র মাওলানা আবদুল ওহাব সিদ্দিকী। এ ছাড়া কারী শেখ মাহমুদ আলী, ঔপন্যাসিক আনিস সিদ্দিকী, মনোয়ারা বেগম, নিগার সুলতানা নার্গিসÑ এই পরিবারের এক একজন অলোকবর্তিকা! তাঁরা সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে রেখে গেছেন অনেক অবদান। ইতিহাস ঐতিহ্য সচেতন এই পরিবারের প্রত্যেক সদস্যই কাজ করে গেছেন মানবকল্যাণে।

স্বনামখ্যাত এই পরিবারেরই অধস্তন সন্তান শেখ আবুল কাসেম মিঠুন। তিনি ছোটকাল থেকেই ছিলেন খুবই নম্র, ভদ্র এবং শান্ত স্বভাবের। তার ফলে সবাই তাঁকে যথেষ্ট আদর ও সোহাগ করতেন। তাই পারিবারিক সূত্রে তিনি গড়ে ওঠেন একজন উদার মনের মানুষ হিসেবে। সদা হাস্যোজ্জ্বল, মিষ্টভাষী, কোমল স্বভাবের এই মানুষটি পক্ষ বিপক্ষ সবার কাছেই ছিলেন গ্রহণীয়।

 

শেখ আবুল কাসেম মিঠুনের পড়ালেখা শুরু নিজ গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রাথমিক শিক্ষা সমাপ্তির পর তিনি রাড়–লি হাইস্কুলে ভর্তি হন। ১৯৬৯ সালে দরগাহপুর হাইস্কুল থেকে তিনি এসএসসি পাস করে খুলনা সিটি কলেজে ভর্তি হন। পরবর্তীতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন।

 

রক্তের ধারা অনুসারে ছোটকাল থেকেই তিনি মানবকল্যাণের স্বপ্ন দেখতেন। কিভাবে অসহায় মানুষের পাশে এসে দাঁড়ানো যায়, সেবা করা যায় তা নিয়ে ভাবতেন। তা ছাড়া কিশোর বয়স থেকেই তার লেখালেখির প্রতি ঝোঁক, প্রবণতা ছিল। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার নিয়েই তিনি একসময় এগিয়ে আসেন সাংবাদিকতায়।

 

মূলত সাংবাদিকতা ছিল তাঁর পূর্ব পুরুষের ধারা। সেই ধারাকে অব্যাহত রাখার জন্যই তিনি কর্মক্ষেত্রের শুরুতেই প্রবেশ করেন সাংবাদিকতার অঙ্গনে। বলা যায় সাংবাদিকতা ছিল তার নেশা। একপর্যায়ে তা হয়ে দাঁড়ায় তার পেশা। তিনি জীবনের সর্বপর্যায়েই পেশার প্রতি ছিলেন অসম্ভব আন্তরিক। কোনো কাজকেই তিনি ছোট মনে করতেন না। তাই সাংবাদিকতা পেশাকেও তিনি কখনো হালকাভাবে নেননি। এই পেশার তাকিদে তাকে চলে আসতে হয় সাতক্ষীরার আশাশুনি থেকে খুলনায়। খুলনা থেকে প্রকাশিত দৈনিক কালান্তর পত্রিকার মাধ্যমে সাংবাদিকতা ও লেখালেখি কাজ শুরু করেন শেখ আবুল কাসেম মিঠুন। নিজস্ব গতিতে চলতে থাকে তাঁর লেখালেখি ও সাংবাদিকতার সব ধরনের কাজ।

 

একসময় পত্রিকার সকল কাজই তাকে দেখাশোনা করতে হতো। তখন থেকেই তিনি একজন বড় সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। পেশার প্রতি আন্তরিক ও দায়িত্ববোধের কারণে নিজেকে একজন সফল সাংবাদিক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন তিনি। সাংবাদিকতায় তিনি যথেষ্ট সফলতা লাভ করেছিলেন। সাংবাদিকতার পথ ধরেই তিনি এগিয়ে যাচ্ছিলেন সামনে। দেশের একজন বড় সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্ন তিনি মনের মধ্যে সব সময় লালন করতেন। তার সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছিল। আন্তরিক হলে মানুষের প্রতি সবকিছুই করা সম্ভব। শেখ আবুল কাসেম মিঠুন ১৯৭৮ সাল থেকে খুলনার আঞ্চলিক দৈনিক পত্রিকা কালান্তরে কাজ করেছেন। এরপর কালান্তর ছেড়ে দিয়ে সাপ্তাহিক ইত্তেহাদ পত্রিকার সাহিত্য সম্পাদকের দায়িত্ব নেন। তারপর দৈনিক আবর্তন পত্রিকার সহ-সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। আরো বড় সাংবাদিক হওয়ার আশায় একসময় তিনি খুলনা ছেড়ে চলে আসেন ঢাকায়।

 

বাংলাসাহিত্যের অন্যতম কবি, কথাশিল্পী, সাংবাদিক মোশাররফ হোসেন খান তার সম্পর্কে লিখেছেন, ‘শেখ আবুল কাসেম মিঠুন ছিলেন ব্যক্তিগতভাবে যেমন নম্র, ভদ্র এবং সৎ মানুষ, তেমনি চেহারায়ও ছিলেন অনেকটা রাজপুত্রের মতো। যেমন স্বাস্থ্য তেমন উচ্চতা আর তেমনি ছিলো তাঁর চেহারার উজ্জ্বলতা। সব মিলে এক দশাসই সুন্দর ব্যক্তি ছিলেন তিনি। ঢাকায় এসে শেখ আবুল কাসেম মিঠুন বিনোদন সাংবাদিক হিসেবে এফডিসিতে সংবাদ সংগ্রহ করতে যান। সেই সময় তাঁর সুদর্শন চেহারা দেখে মুগ্ধ হন চিত্রপরিচালক হাফিজ উদ্দিন ও আলমগীর কুমকুম। তাঁদের আমন্ত্রণে শেষ পর্যন্ত অভিনয়ে প্রবেশ করেন শেখ আবুল কাসেম মিঠুন। শুরু হয় শেখ আবুল কাসেম মিঠুনের অন্য এক বিচিত্র জীবনপ্রবাহ।

 

সাংবাদিক থেকে নায়ক! সে কী কম কথা! তাও আবার রূপ কথার রূপালি পর্দার! ১৯৮০ সালে বজলুর রহমান পরিচালিত ‘তরুলতা’ নামক চলচ্চিত্রে তিনি প্রথম অভিনয় করেন। এরপর তিনি অভিনয় করেন বহু সুপারহিট চলচ্চিত্রে। ১৯৮২ সালে শেখ নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘ঈদ মোবারক’ চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে অভিনয় করেন। পরে ‘ভেজা চোখ’, ‘গৃহলক্ষ্মী’, ‘নরম-গরম’, ‘সারেন্ডার’, ‘নিঃস্বার্থ’, ‘বারা কেন চাকর’, ‘বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না’, ‘নিকাহ’, ‘গাড়িয়াল ভাই’, ‘রঙ্গিলা’, ‘ভাগ্যবতী’, ‘ধনবান’, ‘কুসুম কলি’, ‘অর্জন’, ‘ত্যাগ’, ‘বাদশাহ ভাই’, ‘জেলহাজত’, ‘ত্যাজ্যপুত্র’ ইত্যাদি।

শুধু অভিনয় নয়, অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি গানও লিখতেন। একজন ভালো গীতিকার হিসেবে চলচ্চিত্র জগতে পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন। ‘তরুলতা’ নামক চলচ্চিত্রে তিনি গীতিকার হিসেবে গান রচনা করেন। তা ছাড়া তিনি খুলনায় থাকতেই খুলনা বেতারে নিয়মিত গীতিকার হিসেবে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেন।’ (সংস্কৃতির তিন নকীব, পৃ: ৪০)।

 

‘অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ-পৃথিবীতে আজ,

যারা অন্ধ- সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দ্যাখে তারা

যাদের হৃদয়ে কোনো প্রেম নেই-প্রীতি নেই-

করুণার আলোড়ন নেই

পৃথিবী অচল আজ তাদের সুপরামর্শ ছাড়া।

 

যাদের গভীরে আস্থা আছে আজো মানুষের প্রতি

এখনো যাদের কাছে স্বাভাবিক বলে মনে হয়

মহৎ সত্য বা রীতি, কিংবা শিল্প অথবা সাধনা,

শকুন ও শেয়ালের খাদ্য আজ তাদের হৃদয়।’

 

আজ থেকে প্রায় পঁচাশি বছর আগে জীবনানন্দ দাস লিখেছেন এই অসম্ভব রকমের বাস্তব কবিতাটা। চারদিকে চোখ মেলে তাকালে দেখা যায় সত্যিই তো যারা আজ অন্ধ, চোখে দেখে না মোটেই তারাই আজ সবচেয়ে বেশি চোখে দেখছে। অন্ধদের একচোখা নীতি আজ পৃথিবীকে চষছে শাসন-ত্রাসনে। যাদের অভিধানে কোনো দয়ামায়া নেই, ভালোবাসা নেই, মানবাধিকারের লেশমাত্র নেই, তাদের ছাড়া পৃথিবী আজ অচল। অথচ একদিন যারা পৃথিবীকে মানুষের বাসযোগ্য করে তুলেছিল, বিশ্বকে মানবাধিকার শিখিয়ে ছিল, যুদ্ধের ময়দানেও যারা মানবিকতার চরম পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে ছিল, তাদের দেহ আজ শেয়াল শকুনে ছিঁড়ে খুঁড়ে খুবলে খুবলে খাচ্ছে।

 

আসলেই শয়তানি শক্তির দাপটে আজ সারা দুনিয়ার মানুষের বিবেক স্তব্ধ। শয়তান, দাগাবাজ, ক্ষমতাবাজদের উৎপীড়নে আজ মানবতা ভূলুণ্ঠিত। তাবৎ অপশক্তি অপকৌশলে আজ মুসলিম জনপদকে বানিয়েছে যুদ্ধক্ষেত্র। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে দুনিয়াতে যে যত মুসলিম নির্যাতন করতে পারবে, শান্তিতে নোবেল পাওয়ার সম্ভাবনা তার তত প্রবল হবে।

বর্তমান ঠাণ্ডাযুদ্ধের বাজারে দেখা যাচ্ছে, আমেরিকার ক্ষোভ রাশিয়ার ওপর, একইভাবে রাশিয়ার আক্রোশ আমেরিকার ওপর, অথচ একে অন্যের ওপর কখনো হামলা করে না তারা।

 

তারা এবং তাদের মিত্রশক্তি উভয়ে হামলা করছে সিরিয়ায়, হত্যা করছে নিরীহ মুসলমানকে। যত কথায় বলুক, তারা কখনো হামলা করবে না মিয়ানমার, ইসরাইল, উত্তর কোরিয়া, চীন কিংবা ভারতে। কাশ্মিরে মানবাধিকারের চরম অবমাননাকর পরিস্থিতির পরেও তাদের কানে পানি ঢুকছে না ষাট বছর ধরে। অথচ সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট অজুহাতে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করছে আফগানিস্তান, সিরিয়া, ইরাকসহ পৃথিবীর প্রায় ডজনখানেক মুসলিম দেশে। মানবিকতার বুলি তাদের একটা মুখোশ। মুখোশের আড়ালে মূলত পশ্চিমা বিশ্ব, ন্যাটো, রাশিয়া, আমেরিকা, চীন, ভারত মুসলমানদের হত্যাকারী ও সহযোগী। আইএস, দায়েস, তালেবান, জঙ্গি সবই তাদের সৃষ্টি।

 

মুসলমানদের হত্যা করার জন্য তারা কৌশলে প্রতিপক্ষ তৈরি করে নিচ্ছে। তাদের প্রশিক্ষিত কিছু লোক মুসলমান নাম ধারণ করে এই অশুভ কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছে। কিছু অশিক্ষিত নিডি মুসলমান টাকার লোভে তাদের ফাঁদে পা দিচ্ছে। মুসলিম বিদ্বেষী পরাশক্তি, তাদের দোসর এবং তাদের পাতানো ফাঁদে পা দেয়া কিছু কুলাঙ্গার মিলে শুধুমাত্র মুসলমানদেরই হত্যা করছে।

 

আমরা বলতে চাই, ‘Fight me logically with your pen, I can’t fight you physically against your strength.’ অর্থাৎ আমার সঙ্গে যুক্তিসঙ্গতভাবে লেখনীর যুদ্ধে এসো। আমি তোমার শক্তির বিরুদ্ধে শারীরিকভাবে যুদ্ধ করে পারব না।

 

আবুল কাসেম মিঠুন এই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক লড়াই চালিয়ে গেছেন আমৃত্যু। তিনি অশুভ শক্তির মোকাবেলায় লিখেছেন, অভিনয় করেছেন, সংগঠন করেছেন। চিন্তা-চেতনায়, মগজে-মননে তিনি লড়ে গেছেন প্রাণপণ অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে।

 

আবুল কাসেম মিঠুনের সংস্কৃতির সকল অঙ্গনের প্রায় সবার সাথে মধুর সম্পর্ক ছিল। মিষ্টভাষী এই মধুর মানুষটি অতিসহজেই মানুষের মনের মাঝে জায়গা করে নিতে পারতেন। সেঁধিয়ে যেতে পারতেন একদম হৃদয়ের গভীরে। মানুষের সাথে কাজ করতে করতে তিনি মানুষের মনের অলিগলি খুব সহজেই চিনতে পারতেন। তার মধ্যে ছিল না কোনো প্রকার কৃত্রিমতা।

 

আবুল কাসেম মিঠুনের ব্যক্তিত্ব অনেক প্রকার গুণে পরিবেষ্টিত ছিল। তিনি ছিলেন নায়ক তথা বড় মাপের একজন অভিনেতা। ছিলেন গায়ক, গীতিকার, লেখক, সাংবাদিক। ছিলেন সুদক্ষ সংগঠক। ছিলেন মিষ্টভাষী একজন কথক। সর্বোপরি তিনি ছিলেন একজন বড় মনের মানুষ।

 

‘ইসলামী চলচ্চিত্র ও নাটক’ প্রসঙ্গে একটি প্রবন্ধে আবুল কাসেম মিঠুন লিখেছেন, ‘কোন বিষয়ে ভাসা ভাসা জ্ঞান নিয়ে চর্চা করলে সেই বিষয়টি যখন সাংস্কৃতিক বিষয় হয় তখন তা বিকৃত হয়ে পড়ে। দ্বিতীয়ত, সাংস্কৃতিক চর্চার ক্ষেত্রে কোনোভাবেই আপস করা চলবে না। জাতে ওঠার নামে জাহেলিয়াতির চাকচিক্যতায় কোনোভাবেই নিজের চোখ ঝলসানো উচিত নয়। অথবা জাহেলিয়াতের কোন নামকরা লোককে কাছে এনে নিজেকে সম্মানিত করে তোলার মিথ্যা ভণ্ডামিতেও যেন নিজেকে নিমগ্ন না করি।

 

রাসূল সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোন বিদায়াতপন্থী ব্যক্তিকে কোনো সম্মান ও মর্যাদা দান করে সে আসলে ইসলামেরই প্রাসাদ চূর্ণ করে দেবার কাজে সাহায্য করে।’ তাই জাহেলিয়াতের সিঁড়িতে পা রেখে নিজেকে ভাগ্যবানের বদলে গোনাহগার যে ভাবতে পারে সেই তো ইসলামের প্রাসাদ সুদৃঢ় করে। তাবুক যুদ্ধে হজরত কাযাব ইবনে মালিক রা.-এর মত। গাসসান বাদশা রেশমি কাপড়ে মোড়া চিঠিতে লিখেছিল, ‘তোমাদের মনিব তোমার ওপর জুলুম করছে, আমার কাছে চলে এসো, তোমাকে উপযুক্ত মর্যাদা দেবো।’ কাযাব রা. চিঠিখানি আগুনে পুড়িয়ে সিজদায় পড়ে গেলেন। ‘ইয়া আল্লাহ আমি কত বড় গোনাহগার, এ কত বড় মুসিবত যে আজ কাফেররা আমাকে সম্মান দেয়ার জন্য ডাকছে।’

 

আমরা জানি সূর্যের দিকে পিঠ ফিরিয়ে আমরা ছায়াকে অনুসরণ করি। কিন্তু বিষয়টা যদি এমন দৃষ্টিতে আমরা দেখি যে, আমরা ছায়াকে ধরতে চাচ্ছি কিন্তু সে পালিয়ে পালিয়ে আমাদেরকে তার পিছনে ছুটতে বাধ্য করছে। জাহেলিয়াতও তেমনি, একজন মুমিনের কাছে সে ছায়া সমতুল্য। জীবনপাত হয়ে যাবে, ছায়ার পিছনে দৌড়ানোর নেশা ফুরাবে না। তাই খাঁটি মুমিন জাহেলিয়াত নামক ছায়ার পিছনে দৌড়ায় না।’

 

তার এই বোধ ও উপলব্ধি কতটা স্বচ্ছ, কতটা নির্মোহ ছিল এই উদাহরণ থেকেই তা পরিষ্কার বুঝা যায়। আসলে একজন অতি প্রতিভাধরের পক্ষেই এটা সম্ভব।

আবুল কাসেম মিঠুন ছিলেন অনন্য সাধারণ এক প্রতিভা। তিনি ছিলেন একজন নিবেদিতপ্রাণ মানবতাবাদী সংস্কৃতিসেবী। তার ইন্তেকালে সংস্কৃতি অঙ্গনে এক বিরাট শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি শুধু অভিনেতা, লেখক, সাংবাদিক, শিল্পী ও সংগঠক হিসেবেই বড় মাপের ছিলেন না, ব্যক্তি হিসেবেও ছিলেন অত্যন্ত উঁচুস্তরের। তার আজন্ম স্বপ্ন ছিল এদেশে আল্লাহপ্রদত্ত জীবনবিধান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানবতার মুক্তি। বলা যায়, তিনি ছিলেন একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক সংস্কৃতিকর্মী।

 

লেখক: কবি ও গবেষক

 

#AbulKashemMithun

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

তারা ভেবেছিল এক জাকির মুসা কে সরিয়ে দম নেবে, এখন গোটা ভ্যালিই মুসাময়। কলেজ-ভার্সিটির ক্যাপাসগুলো মুসা মুসা স্লোগানে মুখর, রাস্তায় দফায় দফায় সংঘর্ষ চলছে।

 

ইনশা আল্লাহ এ তো সেই পথ যেখানে, এক ওসামা চলে গেছে হাজারো ওসামার চলার পথ করে দিয়ে যায়।

 

এই বরকতময় সফর হচ্ছে আসহাবে উখদুদের মতন, একটি প্রাণের বিনিময়ে লাখো প্রাণে সেই আদর্শ সঞ্চালিত হয়।

 

- মেহেদি হাসান মুরাদ

 

 

 

 

 

 

 

 

আমাদের দেশে গুণী মানুষের কদর হয় না। গুণী মানুষেরও রাজনীতিকরণ করা হয়। তারপরও দেশের জন্য যারা কিছু না কিছু করেছেন তাদেরকে রাষ্ট্র মূল্যায়ন করতে চেষ্টা করে। ‘ইমিরেটাস প্রফেসর’, ‘জাতীয় অধ্যাপক’ ইত্যাদি বিভিন্নভাবে গুনীজনরা রাষ্ট্র থেকে মূল্যায়িত হন। হ্যান্ডসাম এমাউন্টের মাসিক সম্মানী পান। ভিআইপি প্রটোকল চাইলে নিতে পারেন। এটা ভালো।

আমার তৌফিক থাকলে সামগ্রিকভাবে আলিমে দ্বীনের জন্য টাকা পয়সা কামানের রাস্তাকে সহজ করতাম। যারা শুধুই ইলম নিয়ে ব্যস্ত থাকার নিয়ত করতেন তাদের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করতাম।

সামগ্রিক তো পারব না, ছেলেমেয়েদের জন্য ইনশাআল্লাহ করে যাওয়ার নিয়ত আছে। রাব্বে কারীম তাওফীকদাতা।

 

- আব্দুল হাই

 

 

 

 

 

ফাঁসি হওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী #আদনান_মেন্দেরেস-কে স্বরণীয় ও বরণীয় করে রাখতে যে উদ্যোগ নিচ্ছে তুরস্ক।

 

তুরস্কে কামালিজমের একদলীয় শাসনের ভীত নাড়িয়ে দিয়েছিলেন আদনান মেন্দেরেস। বহুদলীয় গণতন্ত্র তার হাত দিয়ে প্রতিষ্টা। আজানকে আরবীতে পুন:প্রচলন করেছিলেন, দিয়েছিলেন ধর্ম-কর্ম পালনের স্বাধীনতা যা একদলীয় সিএইচপি সরকার রদ করেছিল। কিন্তু ভালো মানুষের কি ঠাই আছে? সেক্যুলার সেনাবাহিনী ক্যু করে তাকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে কামালিস্ট স্টাবলিশমেন্টের (বিচার বিভাগ, সিভিল সোসাইটি) সহায়তায় ক্যাঙ্গারু ট্রাইবুনালের মাধ্যমে তার ফাঁসির আয়োজন করেছিল।

 

সেই ট্রাইবুনাল বসেছিল ইস্তান্বুলের অন্তর্গত মারমারা সাগরের জনমানবহীন এক ছোট্র দ্বীপে যেখানে তার ফাঁসিও হয়েছিল যাতে জনগনের সিম্পেথিও না পেতে পারে! সেটা ১৯৬০-৬১ সাল, স্বভাবতই তখন রাষ্ট্রীয় মিডিয়া ছাড়া তেমন কোন মিডিয়া থাকার কথা নয়, সোসাল মিডিয়াতো নাই.... তাতে জনগন মেন্দেরেসের ব্যাপারে অন্ধকারেই ছিল।

 

যাক, এভাবে ফাঁসি দিয়ে মেন্দেরেসের জীবন থামিয়ে দেওয়া গেলেও তার আদর্শকে থামানো যায়নি। ডান ও ইসলমিস্টরাই তুরস্ককে ডোমিনেন্ট করছে। আজকের তুরস্কে মেন্দেরেস অন্যতম আইডল।

 

মেন্দেরেসের ফাঁসি হওয়া দ্বীপকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরে তাকে স্বরণীয় ও বরণীয় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তুরস্ক সরকার। ২০১৩ সালে কাজ শুরু হওয়া সেই প্রজেক্টের কাজ একদম শেষ পর্যায়ে। তাতে থাকছে একটি মসজিদ (হুম, সেখানে আরবীতেই আজান হবে), একটি স্মৃতিস্তম্ভ, ৬০০ অতিথির ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টার, মিউজিয়াম, হোটেলসহ নানা নির্মাণ। আর দ্বীপের নাম পরিবর্তন হয়ে 'গণতন্ত্র ও স্বাধীনতা দ্বীপ' (Democracy and Freedom Island) হচ্ছে।

 

আজকে সেই ক্যুয়ের বর্ষপূর্তি। এ উপলক্ষে গতকাল প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান সেই দ্বীপ সফর করে নির্মান কাজের সর্বশেষ অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করেন। তার এক বক্তব্য আমার মনে ধরেছে;

 

"আমরা এখানে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্মেলনগুলোর আয়োজন করবো তাতে অংশগ্রহণকারীরা এই কালো ফাঁসি ও আদনান মেন্দেরেস সম্পর্কে খুব কাছ থেকে জানতে পারবে, জানতে পারবে সিএইচপির অতীত মস্তিষ্ক সম্পর্কেও"।

 

আসলেই কি অন্যায়ভাবে ফাঁসি দিয়ে কাউকে রুখা যায়? নাকি তাকে আরো স্বরণীয় করে তুলেন রাব্বুল আলামিন।

 

#আমার_দেখা_তুরস্ক

(Hafijur Rahman ভাই থেকে)

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

শহিদ জাকির মুসা রহঃ এর ছবি পোস্ট করলে টিকবে নাহ, আমার পূর্বের দুটি আইডি তার জন্যই বন্ধ হয়!

 

যে জন্য টানলাম কথাটা, আমরা ১৭ রমযান খুব করে বদরের ইতিহাস বলে গেলাম। কিন্তু বদরের শিক্ষা কি নিতে পেরেছি!?

 

দোআতে/বক্তব্যে বদরে অনুপ্রাণিত হওয়ার তাগিদ আসে, আকুলভাবে যুগের সালাহউদ্দিন,কুতুয রহঃ'দের আভির্বাবের আকাঙ্খা/প্রার্থনা করছি। খেয়াল করে দেখুন তো আমরা কি তাদের ভার বহনের সক্ষমতা অর্জন করতে পেরেছি!?

 

গাজওয়াতুল হিন্দ নিয়ে ফ্যান্টাসিতে ভোগার লোকও নেহাত কম নয়, আমরা কি তা তাত্ত্বিকভাবে অন্তত বুঝেছি!?

.

শহিদ জাকির মুসা রহঃ কে একাধারে এই তিনটি পয়েন্টের আলোকে দাড় করিয়ে দিলে উত্তরটা বেরিয়ে আসে।

.

উনার কি না ছিল- প্রিয় আইফোন,আইপ্যাড,ইয়ামাহা বাইক... উনার বাবা একজন ইঞ্জিনিয়ার। লাক্সারিয়াস লাইফ লিড করা আমবাদ ছিল, কেন?কোন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন ভেবে দেখিনি।

 

তাহলে হয়তো এমন একটি তারকার পতনে মাতম চলত গোটা মুসলিম শিবিরে, বদরের উত্তরসুরী হিসেবে উদাহরন টেনে টেনে সর্বস্তরের মুসলিমদের হৃদয়ে নতুন দিগন্ত দেয়া যেত যে- এখন অমন হওয়ার নতিজা দেখ-/উদ্ভুদ্ধ করা যেত।

 

না আমাদের অন্তরে ভয় এত জন্মেছে যে মোদীর মতন কুলাঙ্গারদের অভিনন্দন জানাতে পারি কিন্তু বরকতময় শহিদ ও শুহাদার গল্প আওয়ামদের কানে কানে তুলতে পারছি নাহ।

 

উচিত তো ছিল তার আদর্শ না পারি, বীরত্বগাঁথা অন্তত প্রচার করি।

এই আমরাই তাহলে কিভাবে আশা করি আয়ুবি/কুতুয রহঃ'দের আগমনের!? তাদের উত্তরসুরীদের তো আমাদের গ্রহণের যোগ্যতাই নাই, তাদের নামটা উচ্চারণ করতে পর্যন্ত ভয় পাই।

 

গাজওয়াতুল হিন্দ কোন মামুলি গেমস না যে সময় করে, গাইডেড হয়ে ইনস্টল দিলাম আর খেললাম। এইটা দীর্ঘ পক্রিয়াধীন সর্বগ্রাসী যুদ্ধ ডু/ডাই। তো সেই যুদ্ধের প্রথমসারির ফিল্ড কমান্ডারের নামটা নিতেই কলিজা কাঁপে যেই মুশরিকদের ভয়ে, তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে করব ব্যাপারটা হাইস্যকর। বরংচ তাদের দৃশ্যত শক্ত অবস্খান দেখে আপোষ করার হিড়িক পড়ারই ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

একটু নিজের অবস্থান নিয়ে ভাবা যাক!!!

 

- মেহেদি হাসান মুরাদ

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

ইউসুফ বিন তাশফীন

 

১২ রজব ৪৭৯ হিজরী।

 

২৩ অক্টোবর, ১০৮৬ খ্রিস্টাব্দ। শুক্রবার। বাদ ফজর। যাল্লাকা ময়দান।

 

বাতাস এখানে স্থির হয়ে আছে। ভ্যপসা গরম লাগছে। ইউসুফ বিন তাশফিন, মুরাবিতীনদের আমীর, কপালের ঘাম মুছলেন। ঘামের সাথে ধূলি মিশে চটচটে হয়ে গেছে। টিলার ওপাড়ে ধূলি উড়ছে। এতদূর থেকে শব্দ শোনা যাওয়ার কথা নয়, তবু ভালোভাবে কান পাতলে অস্ত্রের ঝনঝনানি ও যোদ্ধাদের চিৎকার শোনা যাচ্ছে। টিলার ওপাড়ে, মুতামিদ বিন আব্বাদের বাহিনী লড়ছে ষষ্ঠ আলফোন্সোর বিরুদ্ধে।

 

মুতামিদ বিন আব্বাদের বাহিনীর সাথে আছে ছোট একটি মুরাবিত বাহিনী। মুরাবিতদের মূল দল নিয়ে ইউসুফ বিন তাশফিন অপেক্ষা করছেন টিলার এপাশে। তিনি মাঠে নামবেন, যখন দুই বাহিনী লড়াই করে ক্লান্তির সীমানায় পৌছে যাবে তখন। তার বাহিনী পূর্ণ উদ্যমে হামলা চালাবে ষষ্ঠ আলফোন্সোর বাহিনীর উপর।

 

ইউসুফ বিন তাশফিন নিজের বাহিনীর দিকে তাকালেন। সৈন্যরা ঘোড়ার পিঠে বসে আছে। দুয়েকজন একত্র হয়ে গল্প করছে কিংবা অলস দৃষ্টিতে টিলার ওপাড়ে তাকিয়ে আছে। ইউসুফ বিন তাশফিন জানেন সামান্য ইংগিতে এই সৈন্যরা ক্ষিপ্র চিতার মত হামলে পড়বে শত্রুর ওপর। নাকে বসা একটা মাছি তাড়াতে গিয়ে ইউসুফ বিন তাশফীন আনমনা হয়ে গেলেন।

 

বড় ছেলের কথা মনে পড়লো। আসার সময় দেখেছিলেন ছেলে অসুস্থ, শয্যাশায়ী। জানা নেই ছেলে এখন কেমন আছে। টিলার ওপাশে তাকাতে তাকাতে ইউসুফ বিন তাশফিন ভাবলেন, চাইলে তিনি এখন মরক্কো থাকতেন। দীর্ঘ সমুদ্র পাড়ি দিয়ে এই অচেনা দেশে নিজের সৈন্যদের ঝুকিতে ফেলার কোনো দরকারই ছিল না। কিন্তু চাইলেই কী তিনি এ যাত্রা এড়িয়ে যেতে পারতেন? তাকে তো আসতেই হতো আন্দালুসে। মুসলিম ভাইদের আহবানে সাড়া দিতেই হতো। এছাড়া উপায় ছিল না।

ইউসুফ বিন তাশফিনের মনে পড়ে ৫ বছর আগের কথা। ৪৭৪ হিজরীতে প্রথম আন্দালুস থেকে আগত একটি প্রতিনিধিদল তার সাথে সাক্ষাত করে আন্দালুসের বিভিন্ন সমস্যার কথা জানায়। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল পার্শ্ববর্তী খ্রিস্টান রাষ্ট্র কর্তৃক মুসলিম আন্দালুসে হামলা ও নির্যাতনের কথা। ইউসুফ বিন তাশফিন আগ থেকেই আন্দালুসের খোজখবর রাখছিলেন।

 

তিনি জানতেন ৪২২ হিজরীতে কর্ডোভায় খেলাফতে উমাইয়ার পতনের পর থেকে আন্দালুস হয়ে উঠেছে বিভক্ত কিছু রাজ্যের সমষ্টি। রাজত্ব আর ক্ষমতার দ্বন্দ্ব নিয়ে মুসলিমরা লড়ছে একে অপরের বিরুদ্ধে। ভাইয়ের রক্তে ভাইয়ের হাত রঞ্জিত হচ্ছে। আর এই সুযোগ নিচ্ছে পার্শ্ববর্তী খ্রিস্টান রাজ্য। খ্রিস্টান সম্রাট ফার্ডিন্যান্ড কয়েকটি মুসলিম রাজ্য দখল করেন। তারপর ক্ষমতায় আসে ষষ্ঠ আলফোন্সো।

 

৪৭৮ হিজরীতে ষষ্ঠ আলফোন্সোর হাতে পতন হয় টলেডোর। এরপর আর কখনই টলেডো ইসলামী সাম্রাজ্যের আওতায় আসেনি। টলেডোর পর আলফোন্সো সেভিল অবরোধ করেন। এ সময় সেভিলের শাসক মুতামিদের সাথে তার পত্র চালাচালি হয়। মুতামিদ ছিলেন আত্মমর্যাদায় বলিয়ান একজন শাসক। চাইলেই তিনি অন্য মুসলিম রাজ্যগুলোর মত কর দিয়ে আলফোন্সোর বশ্যতা স্বীকার করতে পারতেন।

 

কিন্তু তিনি আলফোন্সোর প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। অবরোধ চলতে থাকে। আলফোন্সো মুতামিদের কাছে পত্র লিখে বলে, অবরোধ দীর্ঘ হচ্ছে। এখানে খুব গরম, আর মাছির বেশ উপদ্রব। আমার জন্য একটি পাখা পাঠাও। যেন বাতাসে জিরোতে পারি আর মাছি তাড়াতে পারি।

 

আলফোন্সো বুঝাতে চাচ্ছিল অবরোধ করতে তার আপত্তি নাই। মুসলিম বাহিনী নিয়েও সে চিন্তিত নয়। বরং এ মুহূর্তে মাছিই তাকে বেশি পেরেশান করছে। মুতামিদ এ পত্র পেয়ে পত্রের উলটো পিঠে লিখে দিলেন, তোমার পত্র পেয়েছি। শীঘ্রই আমি তোমার জন্য লামতি চামড়ার পাখা পাঠাবো। এ পাখা থাকবে মুরাবিতী সেনাদের হাতে। এ পাখার বাতাস আমাদেরকে তোমার হাত থেকে স্বস্তি দিবে কিন্তু তোমাকে কোনো স্বস্তি দিবে না।

 

মুতামিদ বিন আব্বাদ সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি মুরাবিতিনদের সাহায্য চাইবেন। মুরাবিতীনরা তখন উত্তর আফ্রিকা শাসন করছে। তাদের আমীর ইউসুফ বিন তাশফিন। তার শৌর্যবীর্যের গল্প শোনা যায় আন্দালুস থেকেও। মুতামিদ বিন আব্বাদ সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি ইউসুফ বিন তাশফিনকে পত্র লিখবেন।

 

তাকে বলবেন, একবার অন্তত আন্দালুসে এসে মুসলিম ভাইদের সাহায্য করতে। মুতামিদ তার সভাসদদের নিজের সিদ্ধান্ত জানালেন। কেউ কেউ তার সিদ্ধান্ত স্বাগত জানালেও অনেকে প্রতিবাদ করলো। বিশেষ করে বিভক্ত রাজ্যসমূহের শাসকরা তার সিদ্ধান্ত শুনে নাখোশ হলো। তারা বারবার তার সাতেহ দেখা করে তাকে বুঝাচ্ছিল, তিনি যেন ইউসুফ বিন তাশফিনের সাহায্য না চান।

 

তারা বলছিল, ইউসুফ বিন তাশফিন হয়তো আপনাকে সাহায্য করবেন, কিন্তু একইসাথে তিনি আপনাকে রাজ্য ছাড়া করে নিজেই এ রাজ্য করায়ত্ত করবেন। এসব কথার জবাবে মুতামিদ বিন আব্বাদ যা বলেছিলেন তা ইতিহাসের পাতায় স্বর্নাক্ষরে লেখা আছে। তিনি বলেছিলেন, শূকরের রাখাল হওয়ার চাইতে উট চড়ানো ভালো। অর্থাৎ আলফোন্সোর হাতে বন্দী হয়ে শূকর চড়ানোর চাইতে ইউসুফ বিন তাশফিনের গোলাম হয়ে উত্তর আফ্রিকায় উট চড়ানো উত্তম।

শাসকদের মধ্যে গ্রানাডার শাসক আবদুল্লাহ বিন বুলুক্কিন ও বাতালইয়ুস শাসক মুতাওয়াক্কিল বিন আফতাস, মুতামিদের সাথে একমত হন। ফলে সিদ্ধান্ত হলো গ্রান্ডা, সেভিল ও বাতালইয়ুস একত্রে মুরাবিতিন আমিরের কাছে সাহায্য চাইবে। মুতামিদ এবার প্রতিনিধিদল গঠন করেন।

 

এই দলে ছিলেন গ্রানাডার বিচারক আবু জাফর কালিয়ী, কর্ডোভার বিচারক আবু বকর বিন আদহাম, বাতলইয়ুসের বিচারক আবু ইসহাক বিন মুকানা। এই প্রতিনিধিদলের চতুর্থ সদস্য ছিলেন মুতামিদের উযির আবু বকর বিন যাইদুন। তিন বিচারকের দায়িত্ব ছিল তারা ইউসুফ বিন তাশফিনের সাথে আলোচনা করবেন। আর উযিরের দায়িত্ব ছিল কোনো চুক্তি করতে হলে তিনি তা সম্পাদন করবেন।

 

৪৭৮ হিজরীতে এই প্রতিনিধিদল ইউসুফ বিন তাশফিনের সাথে সাক্ষাত করে। তিনি মনোযোগ দিয়ে তাদের কথা শুনেন। ইউসুফ বিন তাশফিন তো আগ থেকেই ভাবছিলেন আন্দালুসের ভাইদের সাহায্য করার কথা। অভিযান নির্বিঘ্ন করার জন্যই তিনি সাক্কুত বারগুয়ারির হাত থেকে সিউটা নৌবন্দর দখল করেন।

 

তিনি অপেক্ষায় ছিলেন সেভিল কিংবা গ্রানাডা থেকে কোনো বার্তা আসে কিনা। কারন এই দুই রাজ্য অতিক্রম করা ছাড়া আন্দালুসে প্রবেশের উপায় ছিল না। এখন মুতামিদ বিন আব্বাদের প্রতিনিধিদল আসায় ইউসুফ বিন তাশফিনের কাজ সহজ হয়ে গেল। ইউসুফ বিন তাশফিন প্রতিনিধিদলকে কথা দেন শীঘ্রই তিনি আন্দালুস আসবেন।

রোদের তেজ বেড়েছে। চোখের উপর হাত দিয়ে সামনে তাকাতে হয়। ধুলি উড়া দেখে বোঝা যায় যুদ্ধক্ষেত্র বিস্তৃত হচ্ছে। যোদ্ধারা ছড়িয়ে পড়ছে।

 

ইউসুফ বিন তাশফিন আরো একবার অতীতে ফিরে তাকান।তার মনে পড়ে মুতামিদের প্রতিনিধিদল কে বিদায় জানিয়েই তিনি যুদ্ধের প্রস্তুতি শুরু করেন। বড় ছেলে তখন খুবই অসুস্থ। কিন্তু তবুও তিনি বিলম্ব করতে চাইছিলেন না। তার কানে ভেসে আসছিল আন্দালুসের মুসলমানদের আহবান। বারবার মনে পড়ছিল টলেডোর কথা। তিনি চাচ্ছিলেন না সেভিলের ভাগ্যেও নেমে আসুক টলেডোর সেই বিপর্যয়। ইতিমধ্যে আলফোন্সো তার আন্দালুস আগমনের সংবাদ পেয়ে দম্ভে ভরা একটি দীর্ঘ পত্র লিখে৷ পত্রের ভাষ্য ছিল,

 

……আপনাদের ধারনা, আল্লাহ আমাদের দশজনের বিরুদ্ধে আপনাদের একজনকে লড়তে বলেছেন। যান এটা আরো সহজ করে দিলাম। এখন আমাদের একজনের বিরুদ্ধে আপনাদের দশজন লড়লেই হবে।

…. শুনলাম আপনি নাকি সাগর পাড়ি দিতে পারছেন না। এক কাজ করুন। আমার জন্য কিছু নৌকা পাঠিয়ে দিন। আমি সমুদ্র অতিক্রম করে আপনার দেশে আসবো। তারপর আপনার পছন্দসই কোনো স্থানে আপনার সাথে লড়বো।

 

ইউসুফ বিন তাশফিন এই পত্রের কোনো জবাব না দিয়ে নিজের বাহিনী প্রস্তুতে মন দিলেন। অবশেষে তিনি আন্দালুসের পথ ধরেন। জিব্রাল্টার প্রনালী অতিক্রমকালে মুরাবিতদের বহনাকারী জাহাজগুলো সামদ্রিক ঝড়ের কবলে পড়ে। ইউসুফ বিন তাশফিন তখন হাত তুলে মুনাজাত ধরেন৷ তিনি দোয়ায় বলেন, হে আল্লাহ, যদি আমাদের এ সমুদ্র যাত্রায় মুসলমানদের কোনো কল্যাণ থাকে তাহলে এই সফর আমাদের জন্য সহজ করে দিন৷ আর যদি এতে কোনো কল্যান না থাকে তাহলে আমাদের জন্য এ সফর কঠিন করে দিন।

 

এই দোয়ার কিছুক্ষণ পর সমুদ্র শান্ত হয়ে যায়৷ ইউসুফ বিন তাশফিনের বাহিনী নিরাপদে সমুদ্র পাড়ি দেয়। আন্দালুসে পা রেখে ইউসুফ বিন তাশফিন সেজদায়ে শোকর আদায় করেন।

আন্দালুস নেমে ইউসুফ বিন তাশফিন সেভিলের পথ ধরেন৷ এ সময় আন্দালুসের মুসলমানরা তাকে স্বাগত জানায়। সেভিল থেকে তিনি বাতালইয়ুসের দিকে যাত্রা করেন৷ কারন ষষ্ঠ আলফোন্সো মুসলিম বাহিনীর মোকাবেলা করার জন্য যে যাল্লাকা ময়দানে শিবির স্থাপন করেছে তা বাতালইয়ুসের নিকটেই। পথে মুতামিদের সাথে সাক্ষাত হয়। মুতামিদ ছোট একটি বাহিনী নিয়ে এসেছেন। এছাড়া কর্ডোভা, সেভিল ও বাতালইয়ুস থেকে এসেছে স্বেচ্ছাসেবী যোদ্ধারা৷ এভাবে ইউসুফ বিন তাশফিনের সেনা সংখ্যা পৌছালো ত্রিশ হাজারে।

 

এবার ইউসুফ বিন তাশফিন আলফোন্সোর জবাব দিলেন। তিনি লিখলেন, তুমি সমুদ্র পাড়ি দিয়ে আমার সাথে লড়তে চেয়েছিলে। এখন আমিই তোমার কাছে চলে এসেছি। অপেক্ষা করো শীঘ্রই কোনো ময়দানে আমরা মুখোমুখি হবো।

 

এরপর তিনি আলফোন্সোকে ইসলাম গ্রহণ, জিযিয়া আদায় অথবা যুদ্ধ তিনটির কোনো একটি বেছে নিতে বলেন। এই পত্র পেয়ে আলফোন্সো রেগে যায়। আশি বছর ধরে তারা আন্দালুসের মুসলমানদের থেকে জিযিয়া আদায় করছে, আজ কেউ তাকে শক্ত চ্যালেঞ্জ করলো।

 

‘আমি যুদ্ধ বেছে নিলাম। তুমি কী ভাবছো?’ ফিরতি জবাব্ব লিখলো আলফোন্সো।

 

‘আমার জবাব তুমি চোখের সামনে দেখবে’ লিখলেন ইউসুফ বিন তাশফিন৷

 

ইউসুফ বিন তাশফিনের আগমনের সংবাদ পেয়েই আলফোন্সো তার পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলোতে যুদ্ধের ঘোষণা দেয়। দলে দলে সৈন্য যোগদান করে তার বাহিনীতে। পাদ্রী ও বিশপরা সাধারণ জনতাকে যুদ্ধের জন্য উত্তেজিত করতে থাকেন। এভাবে তার বাহিনী বিশালাকার ধারণ করে। ঐতিহাসিকদের মতে যাল্লাকার ময়দানে আলফোন্সোর সৈন্যসংখ্যা ছিল প্রায় তিন লাখ, যা কিনা মুসলিম বাহিনীর চেয়ে দশগুন বেশি।

 

আলফোন্সো মুসলিম বাহিনীকে ধোকা দেয়ার জন্য যুদ্ধের দিন নির্ধারণ করে দেয়। আলফোন্সো তার এক বার্তায় জানায়, আগামীকাল শুক্রবার। এদিন আপনাদের সাপ্তাহিক আনন্দের দিন। তাই এদিন লড়া ঠিক হবে না। পরদিন শনিবার। এদিন ইহুদিদের সাপ্তাহিক আনন্দের দিন। সেদিনও লড়া যাবে না। এরপর দিন রবিবার। আমাদের সাপ্তাহিক ধর্মীয় আচার পালনের দিন। তাই আমার মনে হয় সোমবারে আমাদের লড়াই হলেই ভালো।

এই বার্তা পেয়ে ইউসুফ বিন তাশফিন সোমবারের যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হন।

‘এটা হতো ভুল সিদ্ধান্ত’ নিজের সেনাদের দিকে তাকিয়ে ভাবলেন ইউসুফ বিন তাশফিন। তিনি আলফোন্সোর ধূর্ততা ধরতে পারেননি। তিনি ভেবেছিলেন সোমবারেই যুদ্ধ হবে। কিন্তু মুতামিদ বিন আব্বাদ আলফোন্সোর চাল ধরে ফেলেন। তিনি ইউসুফ বিন তাশফিনকে সতর্ক করেন। তিনি বলেন, আলফোন্সো সম্ভবত শুক্রবারেই হামলা করবে। একথা শুনে ইউসুফ বিন তাশফিন সতর্ক হন। নিজের সেনাপতিদেরকেও সতর্ক করে রাখেন।

 

‘সতর্ক না হলে আজকের যুদ্ধ কঠিন হতো’ ঘোড়ার কেশরে হাত বুলাতে বুলাতে ভাবলেন ইউসুফ বিন তাশফিন। গত বছর হিময়ার গোত্রের এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কিনেছেন ঘোড়াটি। গতরাতে খুব একটা ঘুমানোর সুযোগ হয়নি। সারারাত নফল ও মুনাজাত আদায় চলেছে। ফকিহরা সেনাদেরকে বারবার যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়নের শাস্তির কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন।

 

ঘোড়ার হ্রেষা ডাক শোনা যায়। ইউসুফ বিন তাশফিন ফিরে তাকালেন। একটু দূরে আবুল আব্বাস আহমাদ বিন রুমাইলাকে দেখা যাচ্ছে। ইউসুফ বিন তাশফিনের চেহারায় মুচকি হাসি ফুটে ওঠে। তার মনে পড়ে সকালেই ইবনে রুমাইলা তাকে একটি স্বপ্নের কথা শুনিয়েছেন।

 

গতরাতে ইবনে রুমাইলা স্বপ্নে দেখেছেন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলেছেন, ইবনে রুমাইলা, তোমরাই বিজয়ী হবে এবং তুমি আমার সাথে মিলিত হবে। ইউসুফ বিন তাশফিন আরো একবার আত্মবিশ্বাসে বলিয়ান হয়ে ওঠেন। এই স্বপ্ন সুসংবাদ। ইনশাআল্লাহ, আজ বিজয় মুসলমানদেরই হবে।

 

তবে এখনো বিজয়ের কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। মুতামিদ বিন আব্বাদের বাহিনী লড়ে চলছে আলফোন্সোর বাহিনীর বিরুদ্ধে। মুতামিদের কথামত ইউসুফ বিন তাশফিন আজকের লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত ছিলেন। তিনি বাহিনীকে তিন ভাগে বিভক্ত করেছিলেন। আন্দালুসের যোদ্ধারা থাকবে মুতামিদ বিন আব্বাদের নেতৃত্বে, রনাংগনের সামনের দিকে। তাদের সাথে থাকবে দাউদ বিন আয়েশার নেতৃত্বে মুরাবিতদের ছোট একটি বাহিনী।

 

মূল বাহিনী নিয়ে ইউসুফ বিন তাশফিন টিলার আড়ালে লুকিয়ে থাকবেন। এটি একটি যুদ্ধ কৌশল, যা ইউসুফ বিন তাশফিন ইতিহাস থেকে শিখেছেন। ইতিপূর্বে খালিদ ইবনে ওয়ালিদ (রা) ওয়ালাজার যুদ্ধে এই কৌশল অবলম্বন করেছিলেন।

 

এছাড়া নোমান বিন মুকাররিনও নিহাওয়ান্দের যুদ্ধে এই কৌশল অবলম্বন করে সাফল্য অর্জন করেন। গতরাতেই সেনাদের এভাবে সাজানো হয়। আশংকা ছিল সকালেই হয়তো আলফোন্সো ওয়াদা ভংগ করে হামলা চালাবে। আর বাস্তবে তাই হলো। সকালেই আলফোন্সো তার বাহিনী নিয়ে মুসলিম বাহিনীর উপর হামলে পড়ে।

 

টিলার আড়াল থেকে ইউসুফ বিন তাশফিন যুদ্ধের খবর রাখছিলেন। প্রথম থেকেই মুসলিম বাহিনী বীরত্বের সাথে লড়াই করে। কিন্তু আলফোন্সো তার সেনাধিক্যের কারনে এগিয়ে যায়। অনেক মুসলিম সেনা নিহত হন। এমনকি সেনাপতি মুতামিদও আহত হন। তিনবার তার ঘোড়া মারা যায়। খ্রিস্টান সেনারা মুসলিম বাহিনীর রক্ষনব্যুহ ভেংগে ফেলে।

 

মুসলিম সেনারা দৃঢ় থাকা সত্ত্বেও বিজয়ের পাল্লা খ্রিস্টান বাহিনীর দিকে ঝুকে পড়ে। ইউসুফ বিন তাশফিন বুঝলেন এখনই সময়। এখুনি খ্রিস্টান বাহিনীর উপর হামলা করতে হবে। তিনি নিজের কাছে থাকা বাহিনীকে দু ভাগ করলেন। সায়র বিন আবু বকরের নেতৃত্বে একটি দলকে পাঠালেন মুতামিদের বাহিনীকে সাহায্য করতে। অন্য দলটি নিয়ে তিনি ঘুরে ময়দানের শেষ দিকে চলে গেলেন। এখানেই আলফোন্সোর শিবির। সারী সারী তাবু। ভেতরে আলফোন্সোর বাহিনীর রসদ। শিবিরের প্রহরায় সামান্য কজন সৈন্য।

 

ইউসুফ বিন তাশফিনের জোরালো হামলায় তারা খড়কুটোর মতই ভেসে গেল। যারা বেচে গেল তারা প্রতিরধের পরিবর্তে পালিয়ে আলফোন্সোর বাহিনীর দিকে গেল। ইউসুফ বিন তাশফিন তাবুতে আগুন ধরিরে দিলেন। জ্বলতে থাকে আলফোন্সোর বাহিনীর রসদ৷ আগুনের লোলিহান শিখা জ্বলে ওঠে আলফোন্সোর শিবিরে। মুখে আগুনের উত্তাপ অনুভব করেন ইউসুফ বিন তাশফিন৷ নিজের বাহিনীকে এবার তিনি ময়দানের দিকে ঘুরিয়ে দেন৷

 

এদিকে আলফোন্সোর শিবিরের পলাতক প্রহরীরা তাকে শিবিরে হামলার কথা জানায়। আলফোন্সো তার বাহিনীর একাংশকে শিবিরের দিকে প্রেরণ করে। এই বাহিনী শিবিরের দিকে যাওয়ার আগেই ইউসুফ বিন তাশফিন তাদের উপর হামলে পড়েন৷ খ্রিস্টান বাহিনী এখন দুদিক থেকেই হামলার মুখোমুখি৷ তীব্র লড়াই হয়। দুপক্ষের যোদ্ধারা বীরত্বের সাথে লড়তে থাকে।

 

৭৯ বছর বয়সী ইউসুফ বিন তাশফিনও একজন সাধারণ যোদ্ধার মতই লড়েন৷ জয়ের পাল্লা স্থির হয়ে যায়। সন্ধ্যা পর্যন্ত একটানা লড়াই চলে। অবশেষে খ্রিস্টান বাহিনী পরাজিত হয়। একের পর এক খ্রিস্টান সেনার লাশ মাটিতে লুটিয়ে পড়তে থাকে৷ খ্রিস্টান বাহিনীর মধ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়৷ আলফোন্সো তার একান্ত সহচরদের সাথে পালাতে থাকে।

 

ইউসুফ বিন তাশফিন তার নেতৃত্বে থাকা সুদানী বাহিনীকে ইশারা দেন আলফোন্সোকে ধাওয়া করতে৷ এই বাহিনী আলফোন্সোর বাহিনীর উপর ঝাপিয়ে পড়ে। তুমুল লড়াই চলে। এ সময় ওক যোদ্ধার নিক্ষিপ্ত বর্শা আলফোন্সোর উরু ভেদ করে৷ আলফোন্সো মারাত্মক আহত হয়ে পলায়ন করে। এই আঘাতের ফলে সারাজীবন তাকে খুড়িয়ে চলতে হত। আলফোন্সো তার ৫০০ সেনাসহ পালিয়ে যায়।

 

এসময় মুতামিদের সাথে ইউসুফ বিন তাশফিনের মতের অমিল হয়। মুতামিদ চাচ্ছিলেন আলফোন্সোকে ধাওয়া করে হত্যা করতে। ইউসুফ বিন তাশফিনের বক্তব্য ছিল সারাদিনের যুদ্ধে মুসলিমরা ক্লান্ত। আর আলফোন্সোর দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে সে হয়তো নির্মমভাবে রুখে দাঁড়াবে। তাই তিনি ধাওয়া করতে চাচ্ছিলেন না। এভাবেই আলফোন্সো পালিয়ে যায়। আন্দালুসের পরবর্তী ইতিহাসের দিকে তাকালে মুতামিদের সিদ্ধান্তই সঠিক মনে হয়।

 

যুদ্ধলব্ধ সম্পদ একত্রিত করা হয়। প্রচুর গণিমত অর্জিত হয়। গণিমত ভাগের সময় মুরাবিতদেরকেও একটি ভাগ দেয়ার কথা হয়। ইউসুফ বিন তাশফিন সাফ জানিয়ে দেন, তিনি গণিমত নিবেন না৷ ৭৯ বছর বয়সে দীর্ঘ সমুদ্র পাড়ি দিয়ে এই অভিযানে তিনি গণিমতের জন্য আসেন নি। তিনি এসেছেন মুসলিম ভাইদের সাহায্য করতে। জিহাদের ফজিলত অর্জন করতে। তিনি এর প্রতিদান চান আল্লাহর কাছে। তাই তিনি পার্থিব কিছুই গ্রহণ করবেন না।

 

ইউসুফ বিন তাশফিন গণিমতের ভাগ গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকেন।

ইতিমধ্যে মরক্কো থেকে সংবাদ আসে ইউসুফ বিন তাশফিনের বড় ছেলে ইন্তেকাল করেছেন। এ সংবাদে ইউসুফ বিন তাশফিন ব্যথিত হন। তিনি সেনাবাহিনী সহ মরক্কো ফিরে যান। এদিকে আন্দালুসের প্রতিটি মসজিদের মিম্বর থেকে তখন ইউসুফ বিন তাশফিনের জন্য দোয়া করা হচ্ছে।

এক সহস্রাব্দ দূরে দাঁড়িয়ে ইতিহাসের এক নগন্য পাঠক যখন ভাবে ইউসুফ বিন তাশফিনের কথা, তখন তার কীর্তিগাথা বিস্ময়কর মনে হয়। ৭৯ বছর বয়সে তিনি দীর্ঘ সফরের ক্লান্তি উপেক্ষা করে ছুটে এসেছিলেন আন্দালুসে, কোনো পার্থিব স্বার্থ ছাড়া। কেবলই ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধের জায়গা থেকে। তার কারনেই আন্দালুসে মুসলিম শাসন টিকে ছিল আরো কয়েক শতাব্দী। যাল্লাকার যুদ্ধের পর আরো দুবার তিনি আন্দালুসে গমন করেন।

 

৪৮১ হিজরীতে দ্বিতীয়বার, ৪৮৩ হিজরীতে তৃতীয়বার। তিনি চাচ্ছিলেন মুসলিম শাসকদের সাহায্য করতে, মুসলিম শাসন টিকিয়ে রাখতে। কিন্তু মুসলিম শাসকরা নিজেদের পারস্পরিক দ্বন্দ্বে ক্রমেই দূর্বল হচ্ছিল, এমনকি তারা একে অপরের বিরুদ্ধে গোপনে হাত মিলাচ্ছিল খ্রিস্টানদের সাথে। এমনকি ইউসুফ বিন তাশফিনের হাতে এমন একটি পত্র আসে যাতে একজন মুসলিম শাসক ইউসুফ বিন তাশফিনের সাথে লড়াই করার জন্য খ্রিস্টানদের সাহায্য চেয়েছিল। এসব তিনি ইউসুফ বিন তাশফিন অত্যন্ত ব্যথিত হন। এতদিন তার রাজ্যজয়ের কোনো চিন্তা ছিল না।

 

কিন্তু এবার মনে হলো আন্দালুসের মুসলমানদের কল্যানের জন্যই এইসব অথর্ব শাসকদের হটানোর কোন বিকল্প নাই। তাই ৪৮৩ হিজরীতে ইউসুফ বিন তাশফিনের অভিযান ছিল রাজ্যজয়ের অভিযান। একেরপর পর এক আন্দালুসের শহরগুলো দখল করে নেন তিনি।

 

একে মুরাবিতি সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত করে নেন। তবে এ হামলার আগে তিনি আলেমদের কাছে পত্র লিখে আন্দালুসের বিস্তারিত অবস্থা জানান এবং হামলা চালানোর ব্যাপারে ফতোয়া জানতে চান। আলেমরা সবাই তাকে হামলা চালানোর বৈধতা দেন। যারা তাকে হামলা চালানোর বৈধতা দিয়েছেন তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন বাগদাদের একজন আলেম, ইতিহাস যাকে চেনে ইমাম গাজালি নামে।

ইউসুফ বিন তাশফিনের জন্ম ৪০০ হিজরীতে। ৪৫৩ হিজরীতে তিনি উত্তর সেনেগাল ও দক্ষিণ মৌরিতানিয়ার দায়িত্ব প্রাপ্ত হন। অল্পদিনের মধ্যেই তিনি মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনেসিয়া, পুরো সেনেগাল ও পুরো মৌরিতানিয়া কব্জা করে নেন। ৪৬৮ হিজরীতে দেখা যায় তার দলে অশ্বারোহী সেনা সংখ্যাই এক লক্ষ।

 

ততদিনে তিনি প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছেন মারাকিশ শহর। নিজের জন্য তিনি বেছে নেন আমিরুল মুসলিমীন উপাধি। নিজেকে পরিচয় দিতেন বাগদাদের খলিফার একজন নগন্য কর্মচারী বলে। অথচ ততদিনে বাগদাদের দূর্বল আব্বাসী সাম্রাজ্য থেকে মুরাবিতি সাম্রাজ্য হাজারগুন শক্তিশালী হয়ে উঠেছে। তার সাম্রাজ্যের প্রায় দুহাজার মসজিদে আব্বাসী খলিফার নামে খুতবা পাঠ করা হতো। ইউসুফ বিন তাশফিন ইন্তেকাল করেন ৫০০ হিজরীতে, ১০০ বছর বয়সে।

 

তথ্যসূত্র :

 

১. কিসসাতু আন্দালুস – ড. রাগেব সিরজানি

২. নাফহুত তিব– আল্লামা মাক্কারি

 

 

- ইমরান রাইহান

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

সৌদি আরব ইসলামের মানদণ্ড নয়।

বরং সৌদিতে ইসলামিক কিছু আইন দেখা যায়।।

 

কিন্তু আমাদের সমাজের মানুষের অবস্থা হয়ে গেছে

সেই সকল মুসলিমদের মত,

যারা কিনা ৫ ওয়াক্ত নামায পড়ে না

শুধু সপ্তাহে জুমু'আর নামায আর বছরের

২ টা ঈদের নামায পড়ে নিজেদের নামাযী ভাবে।।

আর নিজেদের বলে মডারেট মুসলিম।।

 

আমরাও এখন আহলে সৌদ হয়ে গেসি।।

অর্থাৎ ইসলামকে নয়, সৌদিকে পুজা করি।।

তাই সৌদির কোন ভুল হলে যদি সেটা প্রকাশ করা হয় তাহলে পারলে আমরা

হিন্দুদের মত জিহববায় কামড় দিয়ে

যেন বলি,

"মা কালি, সৌদির ভুল ধরতে নেই"(নাউযু বিল্লাহ)

 

আর অনেক মুসলমানতো বলেই ফেলে

এত বড় দেশ একটু আকটু ভুল হতেই পারে।

অর্থাৎ আপনি সৌদির পুজা করছেন।।

আমরা উমরের শাসন আমল,

উসমানের শাসন আমল ভুলেই গেছি।।(আল্লাহ সাহাবীদের মত আমাদের ইমান আনতে বলেছেন)

 

একজন মুসলমানের যেমন সম্পুর্ন ইসলাম

পালন করা আবশ্যক।।

তেমনি সৌদি শাশককে সম্পুর্ন ইসলাম মানতে

হবে। মড়ারেট ইসলামের কোন স্থান

আল্লাহর মনোনিত ইসলামে নাই।।

 

যারা অন্যান্য দেশের সাথে তুলনা করে বলে

"সেই হিসেবে সৌদি অনেক ভালো"

তাহলে যারা মদ খায় কিন্তু পতিতালয়ে যায় না।

তাদেরকে কি আপনি বলেন,

"সে অন্যান্যেদের চেয়ে অনেক ভালো মুসলিম,

কারন শুধু মদ টাই একটু খায় আর অন্যেরা

তো আরো কত পাপ করে"

 

না আপনি তা কখনই বলেন না।।

শুধু মদ খাওয়ার কারনেই তাকে আপনি ভালো মুসলিম বলেন না।

 

অর্থাৎ ভুলকে ভুল আর সত্যকেকে সত্য বলার মন মনমানসিকতা আল্লাহ আমাদের দান করুক।

 

আল্লাহ আমাদের সৌদি পুজা থেকে হিফাযত করুক।

 

- মোহাইমিন আল ইসলাম সিদ্দিক

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

প্রশ্নঃ

  • লাইলাতুল কদরের নামাজ কিভাবে পরবো?
  • নিয়তে কি বলবো?
  • নামাজের দুয়া টা কি?
  • সুরা কদর টা কি পড়তেই হবে?
  • নামাজে সুরাহ কদর পড়ার নিয়ম কি?
  • কদরের দুয়া ও মুনাজাত কি?

 

উত্তরঃ

  • লাইলাতুল কদরের আলাদা কোন নামাজ নেই।ইশার পর তারাবি ও মাঝ রাতে তাহাজ্জুদ পড়বেন। ২/২ রাকাত করে যত খুশি তত। বিতর নামাজ পরে নিবেন সবার শেষে।

 

  • কোন নিয়ত নেই “নাওয়াইতু আন উসল্লি ” এই রকম। মনে মনে ভাবলেই হবে আপনি এখন তারাবি বা তাহাজ্জুদ পড়ছেন।

 

  • নামাজের আলাদা কোন দুয়া বা মুনাজাত নেই।

 

  • সুরাহ আল কদর পড়া জরুরি না। না পড়লেও সমস্যা নেই। যেই সুরাহ গুলো জানেন সেগুলা দিয়েই নামাজ পড়বেন।

 

  • সুরাহ আল কদর পড়ার কোন নিয়ম নেই। অনেকে ৩ বার করে পড়েন। এইসব আমল সহিহ বা বাধ্যতামূলক নয়।

 

  • লাইলাতুল কদরের যেমন আলাদা কোন নামাজ নেই তেমন দুয়া ও মুনাজাত ও নেই।

নিজের মত করে দুয়া করবেন।

 

আর সারাদিন রাতই এই দুয়া করবেন বেশি বেশি

 

اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي

হে আল্লাহ্‌! নিশ্চয় আপনি ক্ষমাশীল। ক্ষমা করাটা আপনি পছন্দ করেন। সুতরাং আমাকে ক্ষমা করে দিন।

যারা এতোদিন ভুল জেনে আসছেন বা আমল করে আসছেন,তারা আজ থেকে ভুল শুধরাতে পারেন।

 

#Zain

- যাইনাব আল গাজি

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

তিন সময়ে মানুষের আসল চরিত্র প্রকাশ পেয়ে যায়:

 

১/ আর্থিক লেনদেনে,

২/ দীর্ঘ সফরে

৩/ রাগান্বিত মুহূর্তে

.

আবার তিন সময়ে মানুষের আসল চরিত্র ঢাকা পড়ে যায়:

 

১/ উত্তম লেবাসে

২/ ফেসবুক পোস্টে, আর

৩/ হাসি মুখে কথা বলার সময়

.

আর তাই যতক্ষণ পর্যন্ত এই ৬ সময়ে আমি কারো চারিত্রিক অবস্থা না দেখছি, ততক্ষণ পর্যন্ত সে আমার অপরিচিতই থাকে। :)

 

- কলামিস্ট হুজুর

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

কে এই শায়খ সালমান আউদা?

*****

সাম্প্রতিক সময়ে বহুল আলোচিত একজন সৌদী ইসলামপন্থী লেখক ও গবেষক হলেন শায়খ ডক্টর সালমান বিন ফাহাদ আলে-আউদা سلمان بن فهد آل عودة। পাঠকদের অনেকে আমার কাছে তাঁর সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। তাই এই লেখা।

 

ডক্টর সালমান আউদার জন্ম ১৯৫৬ সালে সৌদি আরবের আল-কাসিম প্রদেশের বুরাইদায়। তিনি আল-কাসিমস্থ শরীয়া ও ধর্মনীতি কলেজে كلية الشريعة وأصول الدين পড়াশোনা সমাপ্ত করেন। এরপর কিছুদিন স্থানীয় একটি ইনস্টিটিউটে শিক্ষকতা করেন। অতঃপ ওই কলেজে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি ১৯৯১ সালে সৌদি আরবে রাজনৈতিক সংস্কারের দাবিতে এবং সেখানে স্থাপিত মার্কিন সেনাঘাঁটির বিরুদ্ধে বিবৃতি দানকারী স্কলারদের অন্যতম ছিলেন। ১৯৯৩ সালে তিনি ও শায়খ সফর আল-হাওয়ালীসহ সংস্কারপন্থী অনেক লোকজনকে শিক্ষকতা ও মসজিদে খুতবা-দারস থেকে অব্যহতি দেওয়া হয়। এরপরের বছর (১৯৯৪) তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর শায়খ আউদার দুই ছেলে পিতাকে দেখে আসার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুবরণ করেন, যাকে অনেকে সৌদি সরকারের ষড়যন্ত্র বলে সন্দেহ করে। ১৯৯৯ সালে সৌদি সরকার কারাগারে ‘উদারপন্থা’য় দীক্ষিত হতে পারা সংস্কারপন্থী শায়খদের মুক্তি দেওয়া শুরু করে। এতে শায়খ আউদা ও শায়খ সফরসহ অনেকে মুক্তি পান। মুক্তির পর উসামা বিন লাদেনের স্থানীয় (সৌদী) প্রতিনিধিরা উনার সাথে গিয়ে সাক্ষাত করে এবং উনার কথায় হতাশ হয়ে ফিরে আসেন। ওই প্রতিনিধিদলের নেতা ও শায়খ আউদার ভায়রা (শালীর স্বামী) ইউসুফ ছালিহ আল-উয়াইরী (১৯৭৪-২০০৩) পরে এ নিয়ে مناصحة سلمان العودة بعد تغيير منهجه (নীতি পাল্টানোর পর সালমান আউদার কল্যাণকামনা) নামে একটি লেখা লিখেন। এতে তিনি শায়খ আউদাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, “আপনি না বলেছিলেন, আমাদেরকে কারাগারে দিন, তারপরও পরিস্থিতির উন্নতি করুন। কিন্তু এখন আপনি কারাগার থেকে বের হয়েছেন। কিন্তু পরিস্থিতির কি উন্নতি হয়েছে, না আরো খারাপ হয়েছে?” উসামা বিন লাদেনের লোকজন একইভাবে শায়খ সফর আল-হাওয়ালীর কাছে গিয়েও হতাশ হয়ে ফিরে আসেন। অদম্য মুমিন ইউসুফ আল-উয়াইরীকে সৌদি নিরাপত্তা বাহিনী ২০০৩ এর ২ জুন হায়েল শহরে গুলি ছুড়ে হত্যা করে। স্মর্তব্য, আমি এখানে যুবক উয়াইরীকে বৃদ্ধ সালমান আউদা বা সফর আল-হাওয়ালীর উপর প্রাধান্য দিচ্ছি না। কারণ, যুবক উয়াইরী ভুলের উর্ধ্বে নন। তাছাড়া শায়খ আউদা ও সফর তাঁদের নীতি পাল্টাননি; বরং কারাবাস ও বয়সের অভিজ্ঞতা থেকে নীতির উন্নতি করেছেন। আমি এখানে শুধু কাহিনীই বলছি।

 

২০০১ সালে শায়খ আউদা ‘ইসলাম টুডে কর্পোরেশন’ নামে একটি অনলাইন মিডিয়া/পোর্টাল প্রতিষ্ঠা করেন। অতঃপর তিনি বিভিন্ন টিভিতে ধর্মীয় ও সামাজিক টকশোতে অংশগ্রহণ করেন। ২০০৪ সালে তিনি ডক্টর ইউসুফর আল-কারজাবীর নেতৃত্বে ডাবলিনে প্রতিষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনার ইউনিয়ন অব মুসলিম স্কলারসের الاتحاد العالمي لعلماء المسلمين সদস্য ও জয়েন্ট সেক্রেটারি জেনারেল মনোনীত হন। ওই বছর (২০০৪) থেকে ২০০৯ পর্যন্ত প্রতি রমজান জুড়ে তিনি সৌদি এমবিসি টিভিতে কর্ণার স্টোন حجر الزاوية নামের একটি অনুষ্ঠানে একক অতিথি হিসেবে ধর্ম ও সমাজ বিষয়ে কথা বলেন। তাঁর এই অনুষ্ঠানের উপর ভিত্তি করে আল-আরাবিয় টিভির তুর্কী আদ-দাখীল تركي الدخيل নামের একজন সৌদি উপস্থাপক (লিবারেল সাংবাদিক) ২০১১ সালে তাঁকে নিয়ে কৃত তার মাস্টার্সের থিসিস বই আকারে প্রকাশ করেন। থিসিসটির নাম দেন سلمان العودة من السجن إلى التنوير (কারাগার থেকে আলোর পথে সালমান আওদা)। বইটি বহুল বিক্রিত সৌদি বইয়ের তালিকাভুক্ত হয়। ওই সাংবাদিক إضاءات নামের তার আল-আরাবিয়া টিভির একটি সাপ্তাহিক প্রোগ্রামেও শায়খ আউদাকে অতিথি করেন। এ ছাড়া আল-জাযীরাসহ আরো অনেক দেশী-বিদেশী আরব টিভির বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন শায়খ আউদা। ২০১১ সাল থেকে ২০১৫ পর্যন্ত লাগাতার চার বছর তাঁর বিদেশ সফরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার পর তিনি কাতারের রাজধানী দোহার একটি বড় মসজিদে গিয়ে খুতবা দেন। ২০১২ সালে রিয়াদের আন্তর্জাতিক বই মেলায় শায়খ আউদার বই أسئلة الثورة (গণজাগরণের প্রশ্নগুলো) বিক্রিতে সরকারী বাধা আসে। ২০১৩ সালে তিনি রাজবন্দীদের মুক্তিসহ সৌদি রাজনীতিতে সংস্কার আনার পক্ষে কথা বলেন। ২০১৭ এর জানুয়ারীতে তাঁর স্ত্রী হায়া আস-সায়ারী هيا السياري ও আরেক সন্তান হিশাম সড় দুর্ঘটনায় মারা যান। এতে জনগণের সাথে রাজ পরিবারের পক্ষ থেকেও তাঁকে সমবেদনা জানানো হয়। ফলে অনেকে এটিকেও সন্দেহের চোখে দেখে। ২০১৭ আগষ্ট মাসে তার নতুন বিয়ের খবর বের হয়। পরের মাসের (সেপ্টেম্বর) ১০ তারিখ তাঁকে গ্রেপ্তার করে সৌদি নিরাপত্তা বাহিনী। অতঃপর তাঁর সন্তান আবদুল্লাহর বিদেশ যাত্রার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। ২০১৮ এর ১৮ জানুয়ারী কারাগারে তিনি অসুস্থ হয়ে মারা যান বলে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। ২০১৮ এর সেপ্টেম্বরে সৌদি সরকারের প্রসিকিউশন তাঁর মৃত্যুদন্ড দাবি করেছে বলে খবর বের হয়। তাঁর বিরুদ্ধে আনীত ৩৭ অভিযোগের মধ্যে বাদশার জন্য পর্যাপ্ত দোয়া না করা ও ডক্টর ইউসুফ কারযাবীর বই বাসায় রাখার মত হাস্যকর বিষয়ও রয়েছে। অতঃপর গত সপ্তাহে বৃটেনের ‘মিডল ইস্ট আই’ নামের একটি পত্রিকা সরকারি কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানায়, ঈদের পর সৌদী সরকার শায়খ সালমান আউদা, শায়খ এওয়াজ আল-করনী (আয়েজ আরেকজন এবং বর্তমানে তিনি সরকার সমর্থক) ও ডক্টর আলী উমারী ও কিছু বিরোধী শিয়া স্কলারকে শিরচ্ছেদ করতে পারে।

-

আগামীতে মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী ও শায়খ আউদার মৃত্যুদন্ড নিয়ে আমার পর্যবেক্ষণ তুলে ধরবো ইনশা-আল্লাহ।

-

আল্লাহ আমাদেরকে জালিমদের অনিষ্টতা থেকে মুক্ত রাখুন।

-

আবুল হুসাইন আলেগাজী

সদর লোহাগাড়া, চট্টগ্রাম।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

আসিফ আদনানের 'চিন্তাপরাধ'এর রিভিউঃ

 

বইটি বের হবার সাথে সাথেই কেনার জন্য মন উশখুশ করছিলো। যেইমাত্র অনলাইনে অর্ডার করতে যাবো এক সুহৃদ জানালেন 'দারুন নাহদা' থেকে আমার জন্য একটা হাদিয়া আছে। হাদিয়াটা এতটাই পছন্দ হবে অবশ্যই ভাবি নি। প্রতীক্ষীত বইয়ের চেয়ে উত্তম কোন 'গিফট' হতেই পারে না।

 

বইটির লেখক মুহতারাম আসিফ আদনান ভাই। অনলাইনে সেরা তিন লেখকের একজন। উনার গবেষণাধর্মী শেকড়সন্ধানী লেখা বরাবরই অন্তরের মূলে করাঘাত করে, চিন্তার জগত আলোড়িত করে। লেখকের নাম থেকেই অনুমান করা যায় লেখার ক্লাস। যদি বাড়িয়ে না বলি, বহুদিন এত অসাধারণ বই আমি পড়ি নি। পশ্চিমাদের ধ্যান-জ্ঞান আমাদেরকে কতোটা আবিষ্ট করে রেখেছে বইটি পড়লে তা আপনার মগজে ঠাঁই পাবে। 'সহস্র সূর্যের চেয়ে উজ্জ্বল' শিরোনামের প্রথম লেখাটিই আপনার অন্তরজগতে নাড়া ফেলবে। এরপর আপনি প্রতিটা চমকপ্রদ শিরোনামে অবগাহন করে সেঁচে আনবেন হাতভর্তি হিরে-জহরত। এক এক করে আপনার চিন্তার জগত আলোকিত হতে থাকবে। আপনি টের পাবেন কীভাবে জেনে না-জেনে ফিরিঙ্গিদের পাতানো জালে জড়িয়ে গেছি আমি আপনি সবাই। পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণক্ষমতা হারানোর সাথে সাথে চিন্তাগত দাসত্বের শৃংখলে আমরা কতোটা আবদ্ধ হয়ে আছি, বইটির পাতায় পাতায় আপনি তার অনুভব পাবেন। বিজ্ঞান, সাহিত্য আর কাব্যপ্রকাশ প্রতিযোগিতার নামে আমরা কোন হেয়ালিপনায় জীবন কাটাচ্ছি, আপনি তা জানতে পারবেন। নিজেদের ইতিহাস ঐতিহ্য পদদলিত করে আমরা কীভাবে পদে পদে পুজিবাদ আর বিশ্বমোড়লদের ক্রীড়নকে পরিনত হয়েছি মুহতারাম লেখক এ বইয়ের ছত্রে ছত্রে তা এঁকে দিয়েছেন।

 

আল্লাহপাক লেখক, প্রকাশক এবং শুভানুধ্যায়ীদের ইখলাসপূর্ণ এ আমলকে কবুল করুন! জ্ঞান, প্রজ্ঞা এবং দীনের মগজোদ্ধারের মেজাজ দান করুন! আমার হাতে পৌঁছে দিতে যাদের চেষ্টা মেহনত জড়িত, দো-জাহানে আল্লাহ তাদের উত্তম বদলা দিন!

 

- sadik farhan

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

সব সমস্যা পয়েন্ট আউট করার সাথে সাথে সমাধানও বাতলে দিতে হবে - এটা একটা অবাস্তব ফ্যালাসি। যেমন কোন লেখকের লেখায় সমস্যা পয়েন্ট আউট করলে অনেকে বলে থাকে "আগে উনার মত একটা বই লিখে দেখান"।

 

.

 

আমরা সফটওয়্যার বানাবার পর যাদের টেস্ট করতে দেই তাদেরকে বলা হয় টেস্টার অথবা কিউএ এঞ্জিনিয়ার। তাদের কাজ হচ্ছে সফটওয়্যারের আশানুরূপ আচরণ করছে কিনা তা নিশ্চিত করা, সমস্যা পেলে সেটা রিপোর্ট করা। সমাধান করা প্রোগ্রামারের দায়িত্ব।

 

.

কোন সমস্যা সমাধানের জন্য "সমস্যা" যে একজিস্ট করে সেটার স্বীকৃতি দেয়া আগে জরুরী। আমরা এই স্টেজেই ইমোশন, আসাবিয়্যাহ আরও অনেক আনপ্রোডাকটিভ জিনিস দিয়ে আটকে যাই, সমাধানের পথে যেতেই পারি না। যদি বলা হয় বাংলাদেশে টাকা খরচ করেও উন্নত চিকিৎসা পাওয়া যাচ্ছে না, এজন্য মানুষ বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছে, তাহলে *একদল* ডাক্তার হামলে পড়ে এই বলে যে ডাক্তারদের জীবন কত চ্যালেঞ্জিং, কত কষ্ট করে এই পেশায় থাকতে হয়। অসততার ঘটনা আসলে কেউ বলে একজন ডাক্তার সেরকমভাবেই খারাপ হতে পারে যেমন একজন অ্যাভরেজ মানুষ খারাপ হতে পারে। কেন ভাই, তাহলে - মহৎ পেশা, উচ্চ শিক্ষা এগুলোর অবদান কই যাবে ? ডাক্তারী পেশায় দেশের প্রথম সারির ব্রিলিয়ান্ট সব ছাত্ররা পড়ার সুযোগ পায়, তাদের কাছে তো একটা অ্যাভরেজ মানুষের মত এক্সপেকটেশন থাকবে না, এটাই স্বাভাবিক। কথা হচ্ছে কেউ যদি ১০০০ টাকা ভিজিট দেয়, তাহলে আদর্শ একটা এক্সপেকটেশন হচ্ছে অন্ততঃ ৪-৫ মিনিট সময় দিয়ে অ্যাটেনশন দিবেন, যা অন্য দেশে পাওয়া যায়। কিন্তু এই ৪-৫ মিনিটের কথা বললেও অনেকে তেড়ে আসে, এসেছে। সমস্যাকে আমরা সমস্যা বলতেই নারাজ।

 

.

সিমিলারলি কোন আলিম তো আর ফেরেশতা না যে ভুল হবে না, অনেক ভুল আছে যেটা পয়েন্ট আউট করার জন্য আলিম হবার দরকার নেই। কিন্তু সেগুলোর উল্লেখ করলেই ভক্তকূল হামলে পড়ে নানারকম লো-লেভেলের যুক্তি নিয়ে, অ্যাজ ইফ বাই হুক অর ক্রুক সমর্থন করা ঈমানি দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এবং এও বলে আগে উনার মত আলিম হয়ে দেখান তার পর কথা বলেন, অথবা উনার মত খেদমত করে দেখান। সমস্যা চিহ্নিত করার পর গোড়াতেই কবর দিয়ে দেয়া হয়, সমাধান আর হয় না। অবশ্যই এদের মধ্যে ব্যতিক্রম আছে।

 

.

আপনার পেশার বা কাজ কর্মের বিপরীতে কোন অভিযোগ থাকলে আগে অভিযোগের অস্তিত্বকে স্বীকার করতে শিখুন, এতে ছোট হবার কিছু নেই, মানুষই ভুল করে, এজন্যই নাম "ইনসান"।

 

- এম মাহবুবুর রহমান

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

নিজের দরিদ্রতা কখনো কারো সামনে প্রকাশ করবেন না, কারণ এতে দুটি ক্ষতি :

১। যে নিজের দরিদ্রতাকে অন্যের সামনে প্রকাশ করে সে আল্লাহর যিম্মাদারী থেকে বের হয়ে যায় ।

২। যার কাছে আপনি আপনার দরিদ্রতা প্রকাশ করলেন তার কাছেও আপনার মূল্যায়ণ কমে যাবে ।

 

- জাবের কামাল

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীরা প্রেম করতে গিয়ে যে পরিমাণ প্রোডাক্টিভ সময় নষ্ট করে, তা কেউ আমলে নিয়েছেন কখনও?

 

আমি ধর্মীয় পারস্পেটিভ সামনে আনছি না। শুধুমাত্র প্রোডাক্টিভ সময়ের কথা ভাবুন। কৈশোর-যৌবনের সেরা সময়ে আমাদের আগামীর সম্ভাবনাময় তারুণ্য স্রেফ প্রেমের জন্য ক্রিয়েটিভিটি উজাড় করে দিচ্ছে।

 

যত ফিকির, উদ্ভাবনী চিন্তা, স্বপ্নের সীমানা- সব একজন মেয়ে অথবা ছেলেকে নিয়ে।

 

আহা!

 

পাড়ার সবচেয়ে হাবাগোবা ছেলেটা প্রতাপশালী বাবার কন্যা প্রেমিকার সাথে প্রেম করতে চাতুর্যের সাথে একের পর এক কৌশল প্রণয়ন করে যাচ্ছে। প্রতাপশালী বাবাকে ফাঁকি দিয়ে কণ্যাও হাবাগোবা ছেলের সাথে প্রেম চালিয়ে নিচ্ছে। এসব ক্রিয়েটিভিটি যদি কন্সট্রাক্টিভ কাজে ব্যয় হতো!

 

সেদিন শুনলাম, পারিবারিক প্রাইভেট গাড়ির ড্রাইভার হিসেবে প্রেমিকা তার প্রেমিককে কৌশলে এপয়েন্ট করাতে পেরেছে! হোয়াট এ প্ল্যান!

 

প্রেমিকার আগামীকাল বিয়ে। আগের রাতেই ছুটিয়ে নিয়ে আসতে হবে। আগের দিন বিয়েবাড়ি সাজানোর দায়িত্ব পাওয়া ডেকোরেটর প্রতিষ্ঠানের সাথে খেটেখুটে সন্ধ্যায় ফুট...

 

আমি প্রায়শই ভাবি, কোটি তরুণ-তরুণীদের এই সেরা সময়গুলোকে কোনোভাবে প্রেমের পেছনে অপব্যয় না করে যদি বাংলাদেশের প্রোডাক্টিভ কাজে ব্যবহার করা যেত!

 

এখানেই আবার ইসলামের অসাধারণ সমাধানের দিকে ফিরতে হয়।

 

প্রাপ্ত বয়স্কদের ইসলাম যত দ্রুত সম্ভব বিয়ে দেওয়াকে উৎসাহিত করে। ইসলামের আকাঙ্ক্ষা যথাসম্ভব দ্রুত বিয়ে সম্পন্ন করা।

 

এই আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত হলে তারুণ্যদ্বীপ্ত কোটি কোটি প্রোডাক্টিভ কর্মঘণ্টা জাতি পেতে পারত! প্রেমজনিত আনপ্রোডাক্টিভ সময়ের কথা ভেবে আঁতকে উঠি! ব্যাপারটা নিয়ে ভেবেছেন কখনও?

 

ব্যাপারটি খুব হালকা মনে হতে পারে; আমার কাছে খুবই চিন্তার ইস্যু।

 

- নূর মোহাম্মদ ভাই

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

পাইক্কারা যে আসলেই একটা বা*পাকনা জাতী সেইটা তিন বছরের পিচ্চি পির আহমদ শাহ আর হাম্মাদ সাফি নিয়া মাতামাতি দেইখাই বুঝা যায়।

 

এই বা*পাকনা জাতী দারুল ইসলামে বসে হিন্দুস্তান জয়ের হুংকার দেয়। বেলুচিস্তান, সোয়াত আর লালমসজিদের খুনি বাহিনী এদের কাছে মুজাহিদ বাহিনী। এক শায়খ যথার্থই বলেছিলেন, খোরাসানের কাফেলা হিন্দুস্তানে আঘাত আনার পথে সবচেয়ে বড় বাধাটা হলো কথিত এই দারুল ইসলাম, পাকেস্টান।

 

সংগৃহিত।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

আমার মনে হয় ক্রেডিট কার্ডকে কেন হারাম বলা হচ্ছে, সেটা বোঝাটা এখানে গুরুত্বপূর্ণ।

.

একদম সিম্পলি বললে, ক্রেডিট কার্ড হল ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে খরচ করা। আপনি ক্রেডিট কার্ড দিয়ে কিছু কিনলে সেটা ব্যাংক পে করে দেবে, পরে আপনি ব্যাংককে পে-ব্যাক করবেন। পে-ব্যাক করার একটা নির্দিষ্ট টাইম লিমিট থাকবে, এর মধ্যে পে করলে সুদ দিতে হবে না। আর সেই টাইম লিমিট পার হয়ে গেলে সুদ দিতে হবে। আবার ক্রেডিট কার্ড দিয়ে ক্যাশ টাকাও ওঠানো যায়, এক্ষেত্রে সর্বাবস্থায় সুদ দিতে হয়।

.

এখানে ইন্টারেস্টিং একটা বিষয় হল, ক্রেডিট কার্ডের এই শর্ত – নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঋণ ফিরিয়ে দিলে সুদ নেই, সময়ের বেশি লাগলে সুদ দিতে হবে – এটা হুবহু জাহিলিয়্যাহর যুগের রিবার মতো। রিবার অনেক ফর্ম আছে, কিন্তু এটা একেবারে সেই ফর্মটাই যেটা কুরাইশ ও অন্যান্যরা জাহিলিয়্যাহতে বেশি ব্যবহার করতো।

.

যারা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার শর্তসাপেক্ষে হালাল বলেছেন, তাদের যুক্তি হল – যদি আপনি এই নিয়্যাতে ক্রেডিট কার্ড নেন যে টাইম লিমিট শেষ হবার আগেই আপনি ব্যাংককে টাকা ফিরিয়ে দেবেন, তাহলে সেটা জায়েজ হতে পারে। অর্থাৎ আপনার নিয়্যাত থাকবে যে আপনি সুদ দেবেন না, ধরেন ২০ দিন সময় আছে, আপনি ২০ দিনের মধ্যেই ব্যাংকের লোন ফিরিয়ে দিবেন।

.

কিন্তু যারা হারাম বলেছেন তাঁদের বক্তব্য হল – কেউ যখন ক্রেডিট কার্ড নিচ্ছে সে দুটো হারাম কাজ করছে,

.

১) সে রিবার শর্তে একটা চুক্তি করছে। সে মেনে নিচ্ছে যে অমুক সময় পার হয়ে গেলে আমি রিবা দেবো। এটা হারাম

.

২) মিনিমাম টাইম লিমিটের মধ্যে টাকা ফেরত দিতে না পারলে, সে ব্যাংককে সুদ দিচ্ছে। যেটা হারাম।

.

অর্থাৎ এখানে হারাম দুটো। একটা হল সুদের শর্তে চুক্তি করা, আরেকটা হল সুদ দেয়া। দুটোই রিবার ক্বাতী হুকুমের আওতায় পড়ে।

টাইম লিমিট শেষ হবার আগে ঋণ ফিরিয়ে দেবো, এই শর্তেও ক্রেডিট কার্ড জায়েজ না, এটাই বর্তমানের অধিকাংশের বা জমহুরের মত। এর মধ্যে আছে আল-লাজনাহ আদ-দায়িমাহ (নির্দিষ্ট ফতোয়া আছে, স্বাক্ষরকারী শাইখ বিন বায, শাইখ বাকর আবু যাইদ, শাইখ সালিহ আল-ফাওযান, আব্দুল আযীয আলে শাইখ), আনত্ররজাতিক ইসলামিক ফিকহ অ্যাকাডেমি, AAOIFI, ইসলামিক ফিকহ কাউন্সিল ইন্ডিয়াসহ আরো অনেকে।

.

এবং তাদের সবার বক্তব্য মোটামুটি এক – রিবার না দেয়ার ইচ্ছা থাকলেও এটা জাহেলী রিবা। জাহেলি রিবার শর্ত ছিল, এখন আদায় কর, অথবা অতিরিক্ত টাকা দেয়ার শর্তে সময় নাও। ক্রেডিট কার্ড হুবহু তাই। জাহেলি যুগে যারা এমন চুক্তি করতো, তাদের অনেকে তো নির্ধারিত সময়ের আগে টাকা ফিরিয়ে দিতো। অর্থাৎ অনেক গ্রাহককে রিবা দিতে হতো না। কিন্তু কুরআনের হুকুমে এক্সসেপশান করা হয়নি। বরং ইন জেনারেল এই প্র্যাকটিসকে হারাম বলা হয়েছে। রিবার শর্তে চুক্তি করা হারাম, সেটা আপনার দিতে হোক বা না হোক।

.

এমনকি যারা এই শর্তে ক্রেডিট কার্ডকে জায়েজ বলেছেন তারাও অনেক শর্ত দিয়েছেন। যেমন মাওলানা তাকী উসমানী বলেছেন –

 

ডেবিট কার্ডের যদি ব্যবস্থা না হয়…আবার এদিকে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহারের তীব্র প্রয়োজনীয়তাও দেখা দেয় তাহলে আশা করা যায়, মিনিমাম ডিউতে বিল শোধ করে দিবে এ নিয়তে উক্ত চুক্তিতে আবদ্ধ হয়ে ক্রেডিট কার্ড গ্রহণ করলে আল্লাহর নিকট সে মাযুর হিসাবে গণ্য হবে। এটি তখনি হবে যখন সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হবে যেন সুদ দিতে না হয়। (কিতাবুল বুয়ূ, পৃ. ৪৬৩)

.

দেখুন উনিও বেশ কয়েকটা শর্ত দিয়েছেন –

১) ডেবিট কার্ড পাওয়া যাচ্ছে না

২) তীব্র প্রয়োজনীয়তা

৩) সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন

.

যারা এসব ফতোয়াকে ঢাল বানিয়ে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে তাদের কয়জন এগুলো মানে? এবং মাওলানা তাকী উসমানীর ভাষা খেয়াল করুন, ‘জায়েজ হতে পারে’, ‘আশা করা যায়…সে আল্লাহর নিকট মাযূর গণ্য হবে।‘ অর্থাৎ আপনার ওজর স্পষ্ট, বাস্তব এবং শক্ত হতে হবে।

.

এখন তীব্র প্রয়োজন কী কন্সটিউট করে, এটা আগে একটা স্পষ্ট বিষয় ছিল, এখন এটা ঘোলাটে হয়ে গেছে। তীব্র প্রয়োজন দেখা দিলে মদও খাওয়া যায়, শূকরের মাংসও খাওয়া যায়। কিন্তু সেটা কোন ধরণের প্রয়োজনীয়তা এটা বোঝা দরকার।

.

এসি কেনা, গাড়ি কেনা, বাড়ি কেনা – এগুলোও এখন তীব্র প্রয়োজনীয়তা বানিয়ে ফেলা হয়েছে। যদিও ক্লাসিকাল সেন্সে এগুলো কোন ভাবেই তীব্র প্রয়োজনের ভেতরে পড়ে না।

.

এমন হাউস হোল্ড আছে, যাদের মাসিক ইনকাম হল ৭৫ হাজার টাকা, কিন্তু ২টা ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে তারা দিব্যি মাসে ১ লাখ টাকা খরচ করছে। বেতনের টাকা দিয়ে এক ক্রেডিট কার্ডের ডিউ শোধ করে, এ ক্রেডিট কার্ডের টাকা দিয়ে আরেক ক্রেডিট কার্ডের ডিউ শোধ করে। এখানে তীব্র প্রয়োজনীয়তা কিভাবে আসে?

.

বাংলাদেশের মতো দেশে ক্রেডিট কার্ড কোন অর্থেই তীব্র প্রয়োজনীয়তার মধ্যে পড়ে বলে সুস্থ মস্তিস্কে আরগু করা যায় না।

.

আর যারা স্বেচ্ছায় কুফফারের দেশে গিয়ে থাকে তাদের ক্ষেত্রেও তীব্র প্রয়োজনীয়তার অজুহাত দেয়া নিজের বর্তমানকে জায়েজ করার হাস্যকর প্রচেষ্টা ছাড়া আর কিছু হয় না। কারণ ইন দা ফার্স্ট প্লেইস ওখানে যাওয়াই তো জায়েজ না, কেবল শর্তসাপেক্ষে সাময়িকভাবে জায়েজ হতে পারে। এদের অজুহাতগুলো ঐসব ছেলেদের মতো যারা ক্লাস টেনে ওঠেও রোযা রাখতো না আর বলতো পরীক্ষা আছে তাই আম্মু রোযা রাখতে দেয়নি। বা আমার আজকে খেলা আছে তাই রোযা রাখিনি। তারপর সে বুঝাতো যে খেলার জন্য কেন রোযা রাখা সমস্যা।

.

আর যারা আইনি কিংবা এরকম বিভিন্ন জটিলতার কারণে যেতে বাধ্য হয়েছে তাঁদের কথা আলাদা। কার্ড ব্যবহার করা আবশ্যিক হয়ে দাড়ালে ডেবিট কার্ড ব্যবহার করা যেতে পারে। ওয়েস্টে ডেবিট কার্ডও আছে। তবু ক্রেডিট কার্ড কেন নিতে হবে? কারণ ডেবিট কার্ডে খরচ করা হয় নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে, অ্যাডিশানাল বেনেফিট হল কার্ড ফ্যাসিলিটি। আর ক্রেডিট কার্ডে আপনি অ্যাডিশানাল টাকা পাচ্ছেন। ঋণ পাচ্ছেন। আপনার কনসাম্পশানের সামর্থ্য বাড়ছে। মানে হারাম বললে আরাম নাই। মূল ইস্যুটা এ জায়গায়। বাংলাদেশী বলেন আর ফিরিঙ্গিদের সাথে থাকে দেশী বলেন।

.

সুদ না দেয়ার নিয়্যাতে চুক্তি করার ব্যাপারটা সম্পর্কে আরেকটু বলা যাক।

আমাদের কাছে তো আজকাল রিবা হালকা হয়ে গেছে, তাই আমি একটা উদাহরণ দেই যাতে করে বিষয়টা বোঝা সহজ হয়। ক্রেডিট কার্ডের পেছনের শর্তটা এভাবে লেখা যায় –

 

‘তুমি নির্ধারিট টাইম লিমিটের মধ্যে টাকা ফেরত দিবে নইলে তোমাকে X করতে হবে’।

.

এই চুক্তিতে X হল সুদ দেয়া। এখন এখানে X হিসেবে সুদের জায়গায় অন্য কোন হারাম কাজ বসিয়ে চিন্তা করেন, যে এটা জায়েজ বলা যায় কি না। কিছু ক্রুড এক্স্যাম্পল দেই যাতে জিনিষটা বুঝতে কোন অস্পষ্টতা না থাকে।

.

আপনাকে শর্ত দেয়া হল,

.

‘তুমি নির্ধারিট টাইম লিমিটের মধ্যে টাকা ফেরত দিবে নইলে আমাকে তোমার স্ত্রীর সাথে যিনা করতে দিতে হবে’

.

‘তুমি নির্ধারিট টাইম লিমিটের মধ্যে টাকা ফেরত দিবে নইলে তোমাকে তোমার মা-র সাথে যিনা করতে হবে’

.

‘তুমি নির্ধারিট টাইম লিমিটের মধ্যে টাকা ফেরত দিবে নইলে তোমার মেয়ে আমার চেনা এক লোকের সাথে যিনা করতে পাঠাতে হবে’

.

চিন্তা করে দেখুন যে ওপরের শর্তে কারো কাছ থেকে ঋণের চুক্তি করা জায়েজ হয় কি না। ধরুন আপনার নিয়্যাত আছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকা ফিরিয়ে দেয়ার, সেই ক্ষেত্রেও কি এমন চুক্তি করা জায়েজ হবে কি না।

.

আপনি অন্য যেকোন কবীরা গুনাহর কথা বসিয়ে চিন্তা করতে পারেন। এবং মাথায় রাখেন যে ওপরের যেকোন গুনাহর চেয়ে রিবা আরো বেশি গুরুতর। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা যেভাবে রিবার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন সেটা অন্য গুনাহর ক্ষেত্রে করেননি-

.

হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যা অবশিষ্ট আছে, তা পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা মুমিন হও। কিন্তু যদি তোমরা তা না কর তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ থেকে যুদ্ধের ঘোষণা নাও… (আল বাক্বার, ২৭৮, ২৭৯, তরজমা)

.

এই যুদ্ধের ঘোষণা মাথায় রেখে আবার চিন্তা করুন।

 

.

 

(আসিফ আদনান ভাইয়ের কমেন্ট থেকে)

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

সেদিন এক দর্জির দোকানে দেখলাম মেয়েদের অন্তর্বাস সেলাই করছে।

হ্যাঁ, একজন নারী যখন সাজতে যায়, নারী বিউটি পার্লারেই যায়। ডাক্তারের প্রয়োজন হলে মহিলা ডাক্তার তালাশ করে। এমনকি অপরাধী নারীদের পাকড়াওর জন্য আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোতে নারী বিভাগ আছে।

এই নারীরা যখন নিজেদের অন্তর্বাস সেলাইয়ের জন্য নারী দর্জির কাছে না গিয়ে পুরুষের কাছে আসে, ব্যাপারটা কেমন কুৎসিত হয়! এখানে কতগুলো স্টেপ আছে-

ক. শরীর থেকে মাপ নেওয়া। সেটা সেলোয়ারের জন্য হোক কিংবা ব্লাউজের জন্য।

খ. সেলাইয়ের সময় দর্জির মনে সারাক্ষণ ওই নারীর...।

গ. যত পুরুষ ওই দোকানে এসে এগুলো দেখে, তাদের সবাই তো সুফি-সাধক না! দর্জির সঙ্গে রসিয়ে রসিয়ে গল্প করা তাদের জন্য অস্বাভাবিক না।

 

ছোটবেলা থেকে আমাদের ঘরের মহিলাদের দেখে এসেছি যারা পারে, নিজেরাই নিজেদের কাপড় সেলায়। যারা পারে না, মহিলা দর্জির কাছে দেয়। বোরকা বা এই ধরনের বড় পরিধেয়ের ক্ষেত্রে কেউ কেউ নারী দর্জি দিয়ে মাপ নিয়ে পুরুষ কাউকে দিয়ে দোকানে পাঠায়।

এখন যখন কোথাও দর্জির দোকানে নারীর ভেতরের কাপড়গুলো চোখে পড়ে, ওই নারীদের রুচি নিয়ে সন্দেহ জাগে। মডার্ন নারীদের কথা বাদ দিলাম, ধর্মের ভণিতা করা নারীদের এসব বখেমি সত্যি পীড়া দেয়।

 

এই ঈদের মরশুমে যে নারীরা তাদের অন্তর্বাস পুরুষ খলিফাকে সেলাইতে দিয়েছে, তাদের রমজান মাস রোযা পালনের জন্য, না ঈদ-উদযাপনের জন্য, আমি খুব সন্দিহান।

এই রুচি-বিবর্জিত নারীদের সোজা করার দায়িত্ব তাদের পুরুষের। সুতরাং আপনার ঘর কতটুকু সুরক্ষিত সংরক্ষিত ও সংযত আছে, তার খবরদারির দায়িত্ব আপনার।

 

- ওমর আলি আশরাফ

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

ইফতারের সময় কখন?

 

এটা কোনো প্রশ্ন হল? ইফতারের সময় তো সবাই জানে। সূর্য অস্ত গেলেই ইফতার করতে হয়। কিন্তু সূর্য অস্ত যাওয়ার ঠিক মুহূর্ত কখন, এটা বলা মুশকিল। তাই সতর্কতাবশত ৩/৪ মিনিট বিলম্ব করে ইফতার করা উচিত।

.

لا يَزَالُ النَّاسُ بِخَيْرٍ مَا عَجَّلُوا الْفِطْرَ

অর্থ : মানুষ ততক্ষণ পর্যন্ত কল্যাণের মাঝে থাকবে, যতক্ষণ পর্যন্ত দ্রুত ইফতার করে। (সহিহ বুখারী)

যারা এই হাদিস দিয়ে দলিল দিয়ে বলে ৩/৪ মিনিট সতর্কতাবশত বিলম্ব করা বিদআত তাদের রোযা না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ, তাদের উচিত ইফতার নিয়ে খালি মাঠে বা সাগরের পাড়ে কিংবা গাছের ওপর অথবা বাড়ির ছাদে উঠে বসে থাকা। সূর্যের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকবে, একহাতে খেজুর অপর হাতে পানির গ্লাস থাকবে-- সূর্য অস্ত যাওয়ার সাথেসাথে খেজুর বা পানি মুখে দিবে, যেন ১ সেকেন্ডও দেরি না হয়!

 

তাদের জন্য ক্যালেন্ডার দেখে ইফতার করাও বিদআত ও তাকলীদ করার নামান্তর। যারা ক্যালেন্ডার বানিয়েছে তাদের পরিচয় অজ্ঞাত ও মাজহুল। আর মাজহুল লোকের সংবাদ অগ্রহণযোগ্য।

.

ক্যালেন্ডার ও পত্রপত্রিকার সময়গুলোর মাঝেও ২/৩ মিনিট বেশকম হয়ে থাকে। এটাই স্বাভাবিক। যারা এটা মানে না তাদের রোযা হওয়া নিয়ে সন্দেহ আছে। একটা শ্রেণি হাদিস অনুসরণের নামে এভাবেই দীন থেকে সরে যাচ্ছে।

(কপি-পেস্ট)

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

যে নারীর মাসিক শুরু হয়েছে তিনি লাইলাতুল কদরে কী করবেন?

 

উত্তর : যে নারীর মাসিক শুরু হয়েছে তিনি শুধু নামায, রোজা, বায়তুল্লাহ তওয়াফ ও মসজিদে ইতিকাফ ব্যতীত বাকী সমস্ত ইবাদত করতে পারেন। (মোবাইল থেকে কুরানের যে কোন সুরা অক্ষর টাচ না করে ও পড়তে পারেন)।

 

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়েছে যে তিনি রমজানের শেষ দশকে রাত জাগতেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত: “শেষ দশক প্রবেশ করলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোমর বেঁধে নামতেন। তিনি নিজে রাত জাগতেন এবং তাঁর পরিবারবর্গকে জাগিয়ে দিতেন।”[সহীহ বুখারী (২০২৪) ও সহীহ মুসলিম (১১৭৪)]

 

ইহইয়াউল লাইল বা রাত জাগা শুধু নামাযের জন্য বিশিষ্ট নয়, বরং তা সকল ইবাদতের মাধ্যমে হতে পারে।

 

রমাজানের শেষ ১০ রাতে ঋতুবতী মহিলারা নিম্নের জিকির গুলো করতে পারেন।পাশাপাশি মোবাইল থেকে কুরানের যে কোন সুরা অক্ষর টাচ না করে ও পড়তে পারেন।

 

আয়েশা(রা) নবী(স)কে কদরের রাতে কি দুয়া পড়বে জিজ্ঞেস করলে বলেন

*আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আ'ফুউন তুহিব্বুল আ'ফওয়া ফাআ'ফু আ'ন্নী।*

(তিরমিযী, ইবনু মাজাহ )

‏(اللهم إنك عفو تحب العفو فاعفُ عني‏

উক্ত দোয়াটি বেশী বেশী পড়বেন।

 

1⃣ ১০০ বার *আস্তাগফিরুল্লাহ* পড়ে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া (মুস্লিম,তিরমিজী)। নবী(স) দিনে ৭০ বা ১০০ বার পড়তেন।

 

2⃣ ৩ বার *সুরাহ ইখলাস* পড়লে ১খতম কুরান পড়ার সমান।

 

3⃣ ১০ বার *সুরাহ ইখলাস* পড়লে তার জন্য জান্নাতে ১টি ঘর তৈরী হয়। ( মুসনাদে আহমদ)

 

4⃣ ১০০ বার *"সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি"*

(পড়িলে গুনাহসমূহ ক্ষমা করা হয়, তা সাগরের ফেনারাশির সমপর্যায় হলেও।(তিরমিজী-৩৪৬৬)

( *سُبحَانَ اللّهِ وَ بِحَمْدِهِ ، سُبحَانَ اللّهِ الْعَظِيمِ*

5⃣ ১০ বার পড়িলে *"লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহ লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আ'লা কুল্লি শাইইন কাদির!"*

*لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ وَحَدْهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ ُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِير*ٌ

(১০ বার পড়িলে সে ব্যক্তি ইসমাইলের বংশধরের চারজন দাস মুক্ত করার সমান সওয়াব লাভ করবে।” (বুখারী-মুসলিম)

 

6⃣ যদি কেউ ১০০ বার *লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহ লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আ'লা কুল্লি শাইইন কাদির!"*১০০ বার পড়ে তাহলে " সে একশ গোলাম আযাদ করার সাওয়াব অর্জন করবে এবং তার জন্য ১০০টি নেকী লেখা হবে, আর তার ১০০টি গুনাহ মিটিয়ে দেওয়া হবে। আর সে দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত এটা তার জন্য রক্ষা কবচে পরিণত হবে এবং তার চাইতে বেশী ফযীলত ওয়ালা আমল আর কারো হবে না,তবে যে ব্যাক্তি এ আমল তার চাইতেও বেশী করবে সে ছাড়া।(বুখারী ৫৯৬১।

 

7⃣ যে ব্যক্তি দিনে সকালে ১ বার দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ সায়্যিদুল ইসতিগফার *আল্লাহুম্মা আন্তা রব্বি লাইলাহা ইল্লা আন্ত,খালাক্বতানি ওয়া আনা আ'ব্দুক ওয়া আনা আ'লা আ'হদিকা ওয়া ওয়া'দিকা মাসতাতা'ত, আও'যু বিকা মিন শাররিমা সনায়া'ত, আবুওলাকা বিনি'মতিকা আলাই, ওয়া আবুওলাকা বিযাম্বি ফাগ্ ফিরলি ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ্জুনুবা ইল্লা আন্ত* ১ বার পড়বে আর সন্ধ্যা হবার আগেই সে মারা যাবে, সে জান্নাতী হবে। আর যে ব্যক্তি রাতে প্রথম ভাগে দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে এ দু‘আ ১ বার পড়ে নেবে আর সে ভোর হবার আগেই মারা যাবে সে জান্নাতী হবে। (সহীহ বুখারী ৬৩০৬)

*اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لاَ إِلٰهَ إِلاَّ أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلٰى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّه“ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ أَنْت*

8⃣ *"লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ"* -নবী(সঃ) বলেছেন, যে লোক ইহা ১০ বার পড়বে সে ঐ লোকের সমান হয়ে যাবে, যে লোক ইসমাঈল (আঃ)- এর বংশ থেকে একটা গোলাম মুক্ত করে দিয়েছে।

(সহীহ বুখারী -৬৪০৪)

 

*লা ইলাহা ইল্লল্লাহ* বেশী পড়তে পারেন, এটা সর্বোত্তম জিকির, ৭আসমান ও জমিন এক পাল্লায় রাখলে আর অন্যদিকে এই কালিমা এক পাল্লায় রাখলে এর ওজন ভারী হবে।

 

9⃣ যে ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় *‘সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি’* ১০০ বার পাঠ করবে, কিয়ামতের দিনে ওর চাইতে উত্তম আমল কেউ আনতে পারবে না। কিন্তু যদি কেউ তার সমান বা তার থেকে বেশি সংখ্যায় ঐ তাসবীহ পাঠ করে থাকে (তাহলে ভিন্ন কথা)।”

 

1⃣0⃣ নবী (স) বলেছেন, “দু’টি কলেমা (বাক্য) রয়েছে, যে দু’টি দয়াময় আল্লাহর কাছে অতি প্রিয়, জবানে (উচ্চারণে) খুবই সহজ, *আমলের পাল্লায় অত্যন্ত ভারী।*

তা হচ্ছে, *‘সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহী, সুবহানাল্লা হিল আ'যীম।’* অর্থাৎ আমরা আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা সহকারে তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করেছি, মহান আল্লাহ অতীব পবিত্র।”সহীহুল বুখারী ৬৪০৬, মুসলিম ২৬৯৪,

 

1⃣1⃣... নবী (স)বললেন আমি কি তোমাকে এমন একটি বস্তুর সন্ধান দেব না যে বাক্যটি *জান্নাতের রত্ন ভান্ডার?* সেটি থেকে একটি রত্নভাণ্ডার হল *লা হাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ।* --- বেশী বেশী পড়তে পারেন।

 

1⃣2⃣ ১০০ বার *সুবহানাল্লাহ* পড়া ...নবী(স) বললেন, সে একশ’ তাসবীহ ( *সুবহানাল্লাহ*) পাঠ করলে তার জন্যে এক হাজার পুণ্য লিখিত হবে এবং তার (আমলনামা) হতে ১,০০০ (এক হাজার) পাপ মুছে দেয়া হবে। (মুসলিম ৬৭৪৫)

 

1⃣3⃣ *‘‘লা- ইলা-হা ইল্লা- আন্তা সুবহা-নাকা ইন্নী কুনতু মিনায্ যোয়া-লিমীন’’* অর্থাৎ- ‘‘তুমি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা‘বূদ নেই। তুমি পবিত্র, আমি হচ্ছি যালিম বা অত্যাচারী অপরাধী’’- (সূরা ইউনুস ১০ : ৮৭)।

*যে কোন মুসলিমই যে কোন ব্যাপারে এ দু‘আ পাঠ করবে, তার দু‘আ নিশ্চয়ই গৃহীত হবে।* (তিরমিযী ৩৫০৫, আহমাদ ১৪৬২,

 

1⃣4⃣ *‘‘সুবহানাল্লাহি ওয়ালহামদু লিল্লাহি ওয়ালা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার’’* প্রতিবারে বিনিময়ে তোমার জন্য জান্নাতে একটি করে গাছ রোপিত হবে।

(সমস্ত পবিত্রতা আল্লাহর, সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর এবং আল্লাহ ব্যতীত আর কোন ইলাহ নাই, আল্লাহ মহান)। ইবনে মাজাহ 3807

 

1⃣5⃣ *যে ব্যক্তি রাত্রে সূরা বাকারার শেষ ২ আয়াত (২৮৫ ও ২৮৬ নং আয়াত) পাঠ করবে তা সে ব্যক্তির জন্য যথেষ্ট হয়ে যাবে।* আবু দাউদ ১২৬৩

 

1⃣6⃣ *সুরা মুলক (৬৭ নং সুরা) প্রতি রাতে পাঠ করলে আশা করা যায় যে,তা তিলাওয়াতকারীর জন্য কিয়ামতের দিন শাফা‘আত/সুপারিশ করবে, শেষে তাকে ক্ষমা করা হবে এবং ও কবরের আজাব থেকে রক্ষা করবে* (তিরমিযী, আবূ দাউদ,ইবনে মাজা)

1⃣7⃣ সৃষ্টির খারাবী থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সকালে ও সন্ধ্যায় ১ বার করে পাঠ করাঃ

 

এক লোক নাবী (সঃ)এর নিকট এসে বলল, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! গত রাতে একটি বিছু আমাকে দংশন করার কারণে আমি বড় কষ্ট পেয়েছি। তিনি বললেন, যদি তুমি সন্ধ্যায় এ দু’আটি পড়তে *"আউযু বিকালিমাতিল্লা-হিত তা-ম্মা-তি মিন শাররি মা- খ্বলাক্ব"*

( *أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ)*

অৰ্থাৎ- ‘আমি পূর্ণাঙ্গ কালিমাহ দ্বারা আল্লাহর নিকট তার সৃষ্টির খারাবী থেকে পানাহ চাই’। তাহলে সে তোমাকে ক্ষতি করতে পারত না/ মুসলিম ৬৭৭৩

 

1⃣8⃣ *বেশী বেশী দরুদ পড়া* ( চিন্তা,পেরেশানি দূর হবে ও গুনাহ মাফ হবে। তিরমিযী)

 

*জিকির কিভাবে করবেন?*

উত্তরঃ

➡ *আর স্মরণ করতে থাক স্বীয় পালনকর্তাকে আপন মনে ক্রন্দনরত ও ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় অনুচ্চস্বরে (বড় আওয়াজে নয়) সকালে ও সন্ধ্যায়। আর বে-খবর থেকে না* (আল আরাফ - ২০৫)

 

❌ *তাহলে বুঝা গেল সম্মিলিতভাবে উচু আওয়াজে তাড়াহুড়ো করে ভুল উচ্চারণে জিকির করারা যাবে না*

 

এবং কোয়ালিটি দেখবেন, ভুলভাল কোয়ান্টিটি বাড়িয়ে জিকির নয়, যা জিকির করবেন শুদ্ধ পড়বেন।

 

(Collected. Sharing as received.)

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

হস্তলিপি থেকে কম্পিউটার কম্পোজ : পাল্টে যাচ্ছে মাদরাসার পাঠ্যপুস্তক

মে ২৮, ২০১৯

 

রাগিব রব্বানি

 

কওমি মাদরাসার সিলেবাসভুক্ত আরবি-উর্দু-ফারসি কিতাবগুলো অদ্ভুত এক ফন্টে লেখা। ডিজিটাল এই যুগের অনেকেই হয়তো কিতাবগুলোর লিপি দেখে হতবাক হবেন, বলবেন, এ কেমন ফন্ট! তবে নিকট অতীতের ছাপাশিল্প সম্পর্কে যাঁদের খানিক ধারণা আছে, তাঁরা সহজে অনুমান করে নিতে পারবেন, এ লেখা কম্পিউটারে টাইপ করা কোনো ফন্ট নয়, এটা হস্তলিপিতে লিখিত। কম্পিউটার-কম্পোজকৃত আরবি পড়ে যাঁরা অভ্যস্ত, তাঁদেরকে এই লিপিতে লিখিত কিতাবগুলোর এবারত পড়তে বেশ বেগ পেতে হবে। বিশেষ করে হাশিয়া ও বাইনাস সুতুর (টীকা ও উপটীকা) তো একদম পড়তেই পারবেন না। এটা আরবি লেখা কি-না, সে-নিয়েই বরং সন্দেহের উদ্রেক হতে পারে। তবে কওমি মাদরাসার ছাত্র-উসতাদ অভ্যস্ততার কারণে অনর্গল এবং আশ্চর্যরকম দ্রুততার সঙ্গে পড়ে যেতে পারেন এসব কিতাবের এবারত।

 

ছোট ছোট কিতাবগুলোর কম্পোজ-সংস্করণ বেশ কিছুকাল আগে বাজারে এলেও মাঝারি ও বড় সাইজের কিতাবগুলো সেই হস্তলিপি ভার্সনেই পুনর্মুদ্রিত হয়ে আসছিল যুগ যুগ ধরে। একসময় বাংলাদেশের কোনো লাইব্রেরি এই কিতাবগুলো ছাপত না, ভারতের দেওবন্দের কয়েকটি প্রকাশনী থেকে আমদানি করা হতো যাবতীয় কিতাব। কালের পরিক্রমায় দেওবন্দের সেই হস্তলিপিতে ছাপা নুসখাগুলো কপি করে বাংলাদেশের কিছু প্রকাশনীও সংস্করণ বের করে। তবে সংস্করণের লিপি হস্তলিপিই থেকে যায়। ব্যতিক্রমের মধ্যে কেবল কিতাবগুলোর শুরুতে গুরুত্বপূর্ণ দু’একটা ভূমিকা কম্পিউটার ফন্টে লিখে সংযুক্ত করে দেওয়া হয়। আদতে খুব কোনো পরিবর্তন ছিল না। ভেতরের পৃষ্ঠাগুলো অভিন্নই থেকে যেত।

 

অনেকদিন আগের রেডিমেট হস্তলিপি ছেড়ে বড় বড় এ কিতাবগুলোর কম্পিউটার কম্পোজ-সংস্করণ বের করা অনেকটা কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং ছিল। কারণ, কিতাবগুলোতে এত পরিমাণ টীকা ও উপটীকা (হাশিয়া/বাইনাস সুতুর) সংযুক্ত, কম্পিউটার-কম্পোজে সেগুলোকে বিন্যস্ত করা অনেক ঝামেলাপূর্ণ ছিল।

 

কিন্তু বিগত তিন/চার বছর ধরে বাংলাদেশের নতুন কয়েকটি প্রকাশনী তুমুল ঝামেলাপূর্ণ ও চ্যালেঞ্জিং এই কাজটি আশ্চর্যরকম সফলতার সঙ্গে আঞ্জাম দেওয়া শুরু করেছে। মাকতাবাতুস সালাম, মাকতাবাতুল ইসলামসহ বেশ কয়েকটি প্রকাশনা-প্রতিষ্ঠানের চেষ্টায় ইতিমধ্যে হাদিসের শ্রেষ্ঠ ছয় কিতাব (সিহাহ সিত্তাহ)-সহ মেশকাত, হেদায়া, জালালাইন, মুখতাসারুল মাআনির মতো বড় বড় কিতাব তাঁরা কম্পিউটার-ফন্টে সুন্দর ও চমৎকার বিন্যাসে বাজারে নিয়ে এসেছে। কয়েকটা প্রকাশনী একসঙ্গে কাজ করায় এক্ষেত্রে একটা প্রতিযোগিতাও তৈরি হয়েছে পরস্পরের মধ্যে, যারফলে কম্পোজ, ছাপা, বিন্যাস, বাইন্ডিং—সবকিছুতে একটা মানসম্পন্নতা বজায় থাকছে।

 

হস্তলিপির সংস্করণগুলোতে বাইনাস সুতুরের (উপটীকা) সঙ্গে মূল এবারত একাকার হয়ে যেত, হাশিয়াগুলোও থাকত একদম অবিন্যস্ত ও অস্পষ্টভাবে। তাছাড়া শিরোনাম, উপশিরোনাম, অনুশিরোনাম সবকিছু ধারাবাহিকভাবে এবারতের লাইনে লাইনে থাকত, জায়গা বাঁচানোর জন্য এভাবে আরও নানা কিসিমের কায়দা ফলানো হতো হস্তলিপির সংস্করণগুলোতে। কম্পিউটার কম্পোজকৃত নতুন সংস্করণগুলোতে এইসব ঝামেলা থেকে রেহাই দেওয়া হয়েছে ছাত্রদেরকে। প্রতিটা শব্দ ও বাক্যে যথাযথ যতি চিহ্ন ব্যবহার, টীকা উপটীকাগুলোকে স্পষ্ট ও বিন্যস্তভাবে আনয়নের পাশাপাশি একাধিক কালারে মুদ্রিত নতুন এ সংস্করণগুলো শিক্ষার্থীদের অধ্যয়ন ও মুতালাআকে স্বস্তি ও আরামদায়ক করে দিয়েছে।

 

রাজধানীর যাত্রাবাড়ি বড় মাদরাসার মেশকাত জামাতের কয়েকজন শিক্ষার্থীর কাছে জানতে চেয়েছিলাম, নতুন এসব সংস্করণ নিয়ে তাদের অনুভূতির কথা। তাঁরা জানান, দরসি কিতাবের কম্পিউটার কম্পোজ সংস্করণ ছাত্রদের মধ্যে একধরনের প্রফুল্লতা এনে দিয়েছে। লেখার অস্পষ্টতা কিংবা হিজিবিজি ভাবের কারণে এখন আর তাদেরকে বিরক্ত হতে হয় না।

 

রাজধানীর ফরিদাবাদ মাদরাসায় সদ্য বিগত শিক্ষাবর্ষে মেশকাত পড়েছেন শহিদুল ইসলাম। তিনি জানান, মেশকাত শরিফ ও হেদায়া কিতাবের নতুন সংস্করণ কিনেছিলেন তিনি, কিতাবগুলোর ছাপা ও বিন্যাস বিশ্বমানের লেগেছে তাঁর কাছে। মুতালাআ করতেও স্বস্তি বোধ করেছেন সারা বছর।

 

তবে বড় মাদরাসাগুলোর কোনো কোনো উসতাদ এখনও হস্তলিপির নুসখার প্রতি ছাত্রদের উৎসাহিত করেন। হস্তলিখিত নুসখাগুলোতে আকাবের বুজুর্গদের একটা ছোঁয়া আছে বলে এতে আলাদা একটা বরকত পাবার আশাবাদ থাকে তাঁদের মধ্যে।

 

তবে রাজধানীর বাইরে দেশের কোনো কোনো অঞ্চলের মাদরাসায় উপরের জামাতগুলোতে বড় বড় কিতাব কেনার প্রচলন না থাকায় সেসব মাদরাসার ছাত্ররা হস্তলিপির বদলে নতুন এসব সংস্করণ যে বেরিয়েছে তার খবরই জানেন না। প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই মাদরাসাগুলোতে মাদরাসার কুতুবখানা বিভাগ থেকে এক বছরের জন্য ছাত্রদেরকে নামমাত্র ফির বিনিময়ে গণহারে কিতাব প্রদান করা হয়। যার দরুণ ওইসব মাদরাসার ছাত্ররা, ধনী হোক কিংবা গরিব, কিতাব কেনার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন না। মাদরাসার পুরনো কিতাব দিয়েই যুগ যুগ ধরে পড়াশোনা করে আসছেন ছাত্ররা। ফলে কিতাবের প্রতি রাজধানীর ছাত্রদের আলাদা যে আগ্রহ ও যত্ন পরিলক্ষিত হয়, প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছাত্রদের মধ্যে সেটা খুব একটা পাওয়া যায় না।

 

সিলেট, চট্টগ্রাম ও রাজশাহীর এমন একাধিক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে দেখা গেছে, তাঁরা বড় বড় কিতাবগুলোর নতুন সংস্করণের ব্যাপারে কিছুই জানেন না। জানার তেমন আগ্রহও পরিলক্ষিত হয়নি তাঁদের মধ্যে।

 

- ফাতেহ ২৪

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

শায়খুল হাদীস হযরত মাওলানা আবদুল্লাহ রাহিমাহুল্লাহু 'র সংক্ষিপ্ত জীবনীঃ

 

মহান আল্লাহ তায়ালা সর্বযুগে এমন কিছু মহামানব সৃষ্টি করেন যাঁরা মরেও অমর হয়ে থাকেন;যাঁদের বিয়োগে দুনিয়াবাসী কেঁদে ওঠে। আর তাঁরা হেসে হেসে আপন প্রমাষ্পদের সান্নিধ্যে চলে যান।যাঁদের বিরহ জ্বালায় মানুষ কাতর হয়ে পড়ে আর তাঁরা পরম আনন্দের কুল বিছানায় ঘুমিয়ে যান।

যাঁরা পুষ্পের মতো সৌরভ ছড়িয়ে

যান পৃথিবীর মাঝে যা নিঃশেষ হয়

না কখনো, রেখে যান মহৎ আদর্শ ও অমর কীর্তি।

তাঁরা আসলে মরেন না, স্মৃতির

আয়নায় তাঁরা হয়ে থাকেন

চিরভাস্বর ও অমর।তাঁদেরই মধ্যে

নির্ঘন্টে সোনার অক্ষরে লেখা

একটি নাম শায়খুল হাদীস আল্লামা আবদুল্লাহ রাহিমাহুল্লাহু তা'আলা (ছোটদেশী মুহাদ্দীস সাব হুজুর)

 

জন্ম ও প্রাথমিক শিক্ষাঃ

১৯২১ সালে সিলেট জেলার অন্তর্গত, পুন্যবানদের অন্যতম ঘাটিখ্যাত কানাইঘাট থানার

ছোটদেশ গ্রামের ছোটফৌদ মহল্লার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন, ক্ষণজন্মা এই প্রাজ্ঞ শায়খুল হাদীস।

 

পিতার নাম-

মাওঃ ক্বারী মুবাশ্বির আলী রাহ.

মাতার নাম -আসহামা বিবি।

 

শায়খ আবদুল্লাহ রহ.জন্মগতভাবেই প্রখর মেধার অধিকারী ছিলেন। শৈশবেই তাঁর মেধার বিভা ফুঁটে উঠে।

পারিবারিক পরিমণ্ডলে তাঁর শিক্ষাদীক্ষা শুরু হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁর শিক্ষা শুরু হয় গ্রামের প্রাত্যুষিক মকতবে।

এরপর ছোটদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত সেখানে অত্যন্ত কৃতিত্বের সঙ্গে লেখাপড়া করেন।

অপরুপ নিসর্গশোভা মায়াবী পরিবেশে শৈশবের সোনাঝরা দিনগুলো তিনি অতিক্রম করেন। মুক্ত আবহাওয়ায় বেড়ে উঠেছেন বলে বাল্যকাল থেকেই তাঁর চিন্তা চেতনা এক অসম ব্যাপ্তি লাভ করে। পিতা- মাতার স্নেহছায়ায় থেকে সত্য, ন্যায় ও ইনসাফের কঠিন পাঠগুলো সহজেই আত্মস্থ করে নেন। শিশুকাল থেকেই তাঁর সত্তায় লুকিয়ে ছিলো দ্বীনে ইলাহীর তীব্র তৃষ্ণা। আরাধ্য ইবাদতে ছিলেন অনুস্বরণীয়।

 

তাই প্রাথমিক শিক্ষার্জনের পর দ্বীনি ইলম অর্জনে পার্শ্ববর্তী উমরগনজ ইমদাদুল উলূম মাদ্রাসায় ভর্তি হয়ে সেখানে কাফিয়া পর্যন্ত অত্যন্ত কৃতিত্বের সাথে লেখা পড়া করেন।

 

উচ্চশিক্ষার জন্য নিজ এলাকা ত্যাগঃ

উমরগনজ মাদ্রাসায় কাফিয়া পর্যন্ত অধ্যয়ন করে উচ্চশিক্ষার্জনে তৎকালীন প্রসিদ্ধ বিদ্যানিকেতন গাছবাড়ী জামিউল উলূম কামিল মাদ্রাসায় ভর্তি হন। অতঃপর সেখানে থেকেই ১৯৫২ইং ১ম বিভাগে

কামিল সমাপ্ত করেন।

গাছাবাড়ী মাদ্রাসায় তাঁর উস্তাদদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলেন আল্লামা মুশাহিদ বায়মপুরী ও ফাজিল সাব রাহিমাহুমাল্লাহ প্রমুখ।

 

অতঃপর তাফাক্কুহ ফীদ – দ্বীন অর্জনের লক্ষ্যে নিজের আসাতেযায়ে কেরাম, আত্মীয়-স্বজন ও সহপাঠীদের পরামর্শক্রমে বিশ্বখ্যাত দ্বীনি প্রতিষ্ঠান দারুল উলূম দেওবন্দ মাদ্রাসায় ভর্তি হন। সেখানে ২ বছর শায়খুল ইসলাম হুসাইন আহমদ মাদানী রাঃ এর নিকট পড়াশুনার পর ১৯৫৪ সালে কৃতিত্বের সহিত ১ম বিভাগে দাওরায়ে হাদীসের সনদ অর্জন করেন। এ বছর ই পাকিস্থান গমন করে লাহুরে আল্লামা ইউসুফ বিন্নুরী রাহ. এর নিকট তাফসির অধ্যয়ন করে তাফসিরের ডিগ্রী অর্জন করেন। অতপর করাচী গমন করে দারুল উলুম করাচীতে মুফতি সাব্বির আহমদ উসমানী রাহ.এর তত্ত্বাবধানে ফতোয়া বিভাগে অধ্যয়ন করে ১৯৫৭ সালে মুফতি ডিগ্রী অর্জন করে বাড়ীতে ফিরে আসেন।

 

শিক্ষকতা জীবনঃ

১৯৫৭ সালের ডিসেম্বরে সিলেট সরকারী আলিয়া মাদরাসায় মুহাদ্দিস হিসাবে যোগদান করে ৬ মাস পর ইস্তেফা দিয়ে চলে আসেন।অতঃপর দিলগ্রাম বিয়ানিবাজার মাদ্রাসা ,মদীনাতুল উলুম খরিল হাট মাদ্রাসা ,দারুল উলুম হেমু মাদ্রাসা ,সৎপুর আলিয়া মাদ্রাসা ,বিশ্বনাথ মাদানিয়া মাদ্রাসা ,জামেয়া ইসলামিয়া রাজাগনজ মাদ্রাসা ,জামেয়া মাদানিয়া কাজির বাজার মাদ্রাসা ,বরায়া আলিয়া ছাতক মাদ্রাসা ,বালিংগা বিয়ানী বাজার মাদ্রাসা ,হাড়ী কান্দী জকিগন্জ মাদ্রাসা ,তালবাড়ী এবং ঢাকা দক্ষিন মাদরাসায় শায়খুল হাদীস হিসাবে মোট ৬০ বছর বোখারী শরীফসহ সিহাহ সিত্তার কিতাব সমুহের দারস প্রদান করেন।

 

সহপাঠীঃতাঁর সহপাঠীদের মধ্য থেকে অন্যতম হলেন শায়খুল হাদিস আল্লামা ফয়জুল বারী মহেষপুরী রাহিঃ।

 

ছাত্রঃতার ছাত্রদের মধ্যে অন্যতম

হলেন দারসে বুখারীর লেখক শায়খুল হাদীস আল্লামা ইসহাক রাহিঃ এবং মুফাসসিরে কুরআন মাওঃ আবু তায়্যিব সৎপুরী।

 

ওয়াজ নসিহতঃশায়খুল ইসলাম আল্লামা মুশাহিদ বায়মপুরী রাহ. এর জীবদ্দশায় দারুল উলুম কানাইঘাটের জলসায় তিনি বাদ জুহর বয়ান পেশ করতেন।শায়খ শহর উল্লাহ রাহিঃ এবং শায়খ ফয়জুল বারী রাহিঃ এর সময়ে নিয়মিত বাদ মাগরীব বয়ান পেশ করতেন।এছাড়াও তিনি বিভিন্ন মাদ্রাসার বার্ষিক ওয়াজ মাহফিলে শরিক হয়ে উম্মাহকে দিকনির্দেশনা দিতেন। তিনি ছোটদেশ শাহী ঈদগাহের সম্মানিত খতিব ও ইমাম ছিলেন।

 

তার বয়ানে ছিলো না কোন সূর । নেই কোন অতিরিক্ত টান। সাবলীল ভাষায় কুরআন ও হাদীসের বাণী প্রচার। বজ্র কণ্ঠে বাতিলের মুখোশ উন্মোচন করতেন তিনি।

কুরআন ও হাদীস নিংড়ানো পাহাড়সম ভারী দালীলিক বয়ানে উন্মোচিত হতো বাতীলের মুখোশ।

 

সিলেটের আঞ্চলিক ভাষা বাচন ভঙ্গিমা যার অবয়বজুড়ে ছিলো । বাঙ্গালির চিরচায়িত পোষাক লুঙ্গি , সেন্ডেল সাথে সেকাব্বন আর কিস্তি টুপি পড়া একজন সহজ সরল.নিরহংকার মানুষ ছিলেন তিনি । দেখতে একেবারে সাদামাটা এক মৌলভী । মুখে পানের খিলি আর সহজ সরল চলন বলনে এক সুফি দরবেশ ছিলেন তিনি । এতোটা সাদামাটা আমার চোঁখে আর কোন জনপ্রিয় ব্যক্তিকে দেখিনি । এই সাদামাট সহজ সরল মুখলেছ মানুষটিকে আল্লাহ তায়ালা এক খাছ নেয়ামত দান করেছেন যা হলো ইলমে হাদীসের ইলম।

এই বরেন্য আলেমের এলেমের রৌশনীতে আজ আলোকিত পুরো সিলেট।

তিনি কত বড় মাপের মানুষ ছিলেন । কত বিশাল হৃদয়ের মানুষ। যারা হযরতের কাছে গিয়েছেন। যারা হযরতের কথা শুনেছেন। তারা একথা অকপটে স্বীকার করার কথা।

তাঁর দীপ্ত চরিত্রের প্রচন্ড মোহময়তার চৌম্বক শক্তি যে কোন মানুষকে কাছে টেনে আপন করে নিত। তাঁর শান্ত, সৌম্য ও নিষ্কলুষ অবয়ব মুহূর্তেই যে কোন সাক্ষাতপ্রার্থীর হৃদয়ে শ্রদ্ধার উদ্রেক করে দিত। সমুদ্রসম ইলম, প্রজ্ঞা ও সজ্ঞার ধারক হওয়া সত্ত্বেও সহজাত বিনয়, নিরহংকার আচরণ, মার্জিত ব্যবহার, শালীন বাকরীতি শায়খুল হাদীস হযরত মাওলানা আব্দুল্লাহ ছোটদেশী রহ. সাহেবের কীর্তি ও খ্যাতির মুকুটে যোগ করেছে কনকশোভা।

 

আমরা যদি তাঁকে গ্রহণ করি চিন্তা -ও কর্মের

এবং পথের ও মঞ্জিলের রাহবারুপে

তাহলে ফিতনা- ফাসাদের এ যুগে

নিরাপদ হতে পারি সকল স্খলন ও

পদস্খলন থেকে।

 

ইন্তেকালঃ ক্ষণজন্মা এ কর্মবীর ও মুখলেস বুজুর্গ

১৮ রমযান ২৪ মে ২০১৯ রোজ শুক্রবার সকাল ১১ টা ৪৫ মিনিটে নিজ বাড়ীতে ইন্তেকাল করেন।

 

আল্লাহ পাক তাঁকে যেন জান্নাতুল ফিরদাউস দান করেন। আ-মীন।

 

- মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

#শহিদ_জাকির_মুসার_বাবার_বক্তব্যঃ

মুজাহিদিনগন আল্লাহর জন্য যুদ্ধ করে তাই তাদের অবশ্যই একজোট হতে হবে বলছেন, জাকির মুসা রহঃ'র বাবা!

 

আরও বলেন,মুসা সো-কল্ড 'আযাদী'র জন্য যুদ্ধ করেনি, সে যুদ্ধকরত খিলাফাহ প্রতিষ্ঠার জন্য। সে ছিল একজন আল্লাহর রাস্তায় লড়াইরত সৈনিক এবং তার সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য ছিল গাজওয়াতুল হিন্দ!

 

এটা কি উগ্রপন্থা!?

 

This is Zakir Musa’s father saying that all ‘Mujahid’ are fighting for Allah & that they must be united.

 

Musa never fought for this so-called “azadi”. He fought for the Caliphate. He was a soldier of Jihad & his stated aim was Ghazwa-e-Hind.

 

This is radicalisation. 👇

 

- মেহেদি হাসান মুরাদ

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

আজকে, শহিদ জাকির মুসা রহঃ'র বাবা যায়গায় যায়গায় সেমিনার করে যুবকদের জিহাদে যোগদানে উদ্ভুদ্ধ করছে!

 

- মেহেদি হাসান মুরাদ

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

মু'আয ইবনে জাবাল (রা) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সসাল্লাম আমাকে দশটি বিষয়ে উপদেশ দিয়েছেন । তিন বলেছেন:

-

(১) আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, যদিও তোমাকে নিহত করা হয় বা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়।

(২) তুমি তোমার পিতা-মাতার অবাধ্য হবে না, যদিও তারা তোমাকে তোমার পরিবার-পরিজন ও মাল-মাত্তা ছেড়ে যেতে বলেন।

(৩) ইচ্ছা করে কখনও ফরয সালাত ছাড়বে না। কেননা যে ইচ্ছা করে ফরয সালাত ছেড়ে দেয়, তার (হিফাজতের) পক্ষে আল্লাহর প্রদত্ত দায়িত্ব উঠে যায়।

(৪) কখনও শরাব পান করবে না। কেননা তা সসমস্ত অশ্লীলতার মূল।

(৫) সাবধান! গোনাহ হতে বেঁচে থাকবে। কেননা গোনাহ দ্বারা আল্লাহর ক্রোধ পৌঁছে থাকে।

(৬) খবরদার! জিহাদ হতে পলায়ন করবে না! যদিও সকল লোক ধ্বংস হয়ে যায়।

(৭) যখন লোকের মধ্যে মহামারী দেখা দিবে আর তুমি সেখানে থাকবে, তখন তথায় অবস্থান করবে (পলায়ন করবে না)।

(৮) তোমার সামর্থ্য অনুযায়ী তোমার পরিবারের জন্য ব্যয় করবে (কার্পণ্য করে তাদের ভরণ-পোষণে কষ্ট দিবে না)।

(৯) তাদের (পরিবারের লোকদের) আদব-কায়দা শিক্ষা দান ব্যাপারে শাসন হতে কখনও বিরত থাকবে না।

(১০) এবং আল্লাহ সম্পর্কে তাদের ভয় প্রদর্শন করতে থাকবে।

_____

[ আহমাদ, মিশকাত হা/ ৫৫ ]

 

salafi sufi

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

নিষ্ঠাবান রোজাদার কি শোলাকিয়া ঈদের জামাতে অংশ নিতে পারে?

 

কোন নিষ্ঠাবান রোজাদার মুমিন শোলাকিয়ার ইদের জামাতে অংশ নিতে পছন্দ করতে পারেন না । কারণ ওই জামাতের খতিব সেই আলেম (?) যিনি ধর্মনিরপেক্ষতাবাদিদের একনিষ্ঠ সহচর । আর ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ হলো তাগুতের সৃষ্ট আল্লাহর মনোনীত জীবনব্যবস্থার বিপরীত জীবন ব্যবস্থা।

 

আল্লাহপাক মানুষের সার্বিক কল্যানের জন্য যা কিছু সৃষ্টি করেছেন, শয়তান তার উল্টোটা করেছে। যেমন,

আল্লাহ পাক মনোনীত করেছেন রাষ্ট্রপরিচালনার জন্য ”খিলাফত” ব্যবস্থা,

শয়তান চালু করেছে মুলুকিয়াত- তথা রাজতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্র।

আল্লাহ পাক মনোনীত করেছেন সম্পদের সুষম বন্টন ও শান্তিপূন সমাজ গড়ার লক্ষ্যে যাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থা,

শয়তান চালু করেছে গরীব মানুষকে শোষন ও ধনীদেরকে তোষনের জন্য সুদভিত্তিক অর্থব্যবস্থা।

আল্লাহ পাক মনোনীত করেছেন সুশৃঙ্খল সমাজ গড়ার লক্ষ্যে পুনাংঙ্গ জীবন ব্যবস্থা”দ্বীন ইসলাম”,

শয়তান চালু করেছে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ বা ধর্মহীনতা।

 

- ইবনে নিজাম

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

দুইটি বিষয় নিয়ে তুলনা করবো। কারণ, মনে হয়েছে এই দুইটি ক্ষেত্রে আমরা চরম দ্বিমুখীতা অবলম্বন করে থাকি। এজন্য প্রথমে কিছু বিষয় নিয়ে একটু বলে নিতে চাই।

 

.

 

১. উরফ: মানে সমাজে যা প্রচলিত।

২. নস: যা কুরআন-হাদিসে উল্লেখিত।

 

.

 

.

 

১. নারীদের ঘরের কাজ: আমাদের সমাজের উরফ হল যে নারীরা তাদের ঘরের কাজ করবে। বিয়ের পর তার স্বামীর ঘরের কাজ করবে। এতটুকু ঠিক আছে। কিন্তু যখন বলা হয় যে স্বামীর পরিবারের লোকজনদেরও সেবা-যত্ন করবে, তখন প্রশ্ন আসে যে এটা কি ইসলামে ওয়াজিব? কারণ এর জন্য কোন নস কুরআন-হাদিসে পাওয়া যায় না। কিন্তু এটা সমাজের উরফ। সমাজের উরফ পরিবর্তন করা কিন্তু সহজ নয়।

 

.

 

তো এখানে একপক্ষ বলে যে, যেহেতু কুরআন-হাদিসের নস নেই, তাই এটা ওয়াজিব নয়। এরপরও যারা এরকম করতে বলবে, তারা স্বার্থান্বেষী। অনেকে জালিমও বলেন। এবং অপরপক্ষের লোকেরা বলেন যে, যেহেতু এটা সমাজের উরফ, এবং ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক না হলে উরফ পরিবর্তনের দরকারটা কি? কারণ এর দ্বারা পরিবারে পরিবারে যে বিদ্রোহের ডাক উঠছে তা ফিতনা-বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করছে।

 

.

.

 

২. একাধিক বিয়ে: এক্ষেত্রে বর্তমান সমাজের উরফ হল যে কাজটা ভালো না। কোন সমস্যা বা এক্সেপশনাল কেইস ছাড়া যারা এমন করে, বা এর পক্ষে কথা বলে, তারা সমাজ বহির্ভূত, এবং তাদের অনেকেই অপরাধী গণ্য করে থাকে। অথচ কুরআন-হাদিসে কিন্তু এ কাজকে অপরাধ সাব্যস্ত করে কোন নস নেই। তবুও তাদের কাছে বাকিরা সর্বদা জবাবদিহীতা দাবী করে। ইন্টারেস্টিং বিষয় হল যে এই যে এখানে যারা উরফের পক্ষে, তাদের অনেকে কিন্তু “শ্বশুর-শাশুড়ির খিদমাত” -এর ক্ষেত্রে উরফের বিরুদ্ধে। এবং যারা এখানে উরফের বিরুদ্ধে নসকে দাড় করায়, তাদের অনেকেই আবার প্রথমে উল্লেখিত বিষয়ে উরফের পক্ষে, এবং সেটাকে নসের বিরুদ্ধে মনে করে না।

 

.

 

অর্থাৎ উরফকে আমরা তখনই প্রাধান্য দিচ্ছি যখন সেটা আমাদের ইন্টারেস্টকে সার্ভ করছে, না করলেই সেটাকে কুরআন-হাদিসের নস নেই বলে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছি। এটাকে মূর্খতা এবং দ্বিমুখীতা মনে হয়। তবে নিজে যে অনেক একমুখী তেমনও না। দ্বিমুখীতা মানুষের একপ্রকার সৌন্দর্য, বৈচিত্রও বলা যায়। মাত্রাতিরিক্ত দ্বিমুখীতা না হলেই হল।

 

.

.

 

অনেকে তর্ক করতে পারেন যে আসলেই কি কুরআন-হাদিসের কোন নস ছাড়াই একাধিক বিয়ের ক্ষেত্রে কেবল উরফকে প্রাধান্য দেয়া হয়? কারণ আদল-ইনসাফ করার কথা তো নুসুস। এর প্রেক্ষিতে তো একাধিক বিয়েতে অনুৎসাহিত কিংবা বিরোধিতা করা হয়। এটাকে সম্পূর্ণ উরফ বলাটা কি উচিত?

 

.

 

এর উত্তরে বলবো, একাধিক বিয়েকে অনুৎসাহিত করা কিংবা বিরোধিতা মূলত উরফ থেকে উৎসরিত। এরপর সেটাকে জাস্টিফাই করতে কুরআন-হাদিসের নস খোঁজা হয়। এরপর বলা হয় যে আদল-ইনসাফ করতে পারবে না, তাই অনুৎসাহিত কিংবা বিরোধিতা করা হচ্ছে।

 

.

 

ঠিক এভাবে প্রথমে উল্লেখিত ব্যাপারেও বলা যায় যে, “শ্বশুর-শাশুড়ির খিদমাত” -এ উৎসাহিত করা কিংবা এর পক্ষে বলাটাও মূলত উরফ থেকে উৎসরিত। এরপর এর পক্ষে কুরআন-হাদিস থেকে নস খোঁজা হয় যে, স্বামীর আনুগত্য ওয়াজিব। স্বামী যদি এরকম আদেশ দেয়, তখন সেটা ওয়াজিব হয়ে যায়, ইত্যাদি।

 

.

 

এখনেই আমার পয়েন্ট অফ ফোকাস। শুরুতেই নস কিংবা উরফের প্রেক্ষিতে নস, যেটাই হোক না কেন, আমার এক এক ক্ষেত্রে এক একটাকে প্রাধান্য দিতে বলছি, এবং অপরপক্ষকে দোষারোপ করছি। এটা একটা উগ্রপন্থা, মূর্খতা এবং মাত্রাতিরিক্ত দ্বিমুখীতা।

 

.

 

আপনি যদি মনে করেন যে “শ্বশুর-শাশুড়ির খিদমাত” করতেই হবে, কারণ উরফ, তাহলে আপনাকে মানতেই হবে যে “একাধিক বিয়ে এই সমাজে অনুচিত” কারণ এটা উরফ। অপর দিক থেকে আপনি যদি মনে করেন “একাধিক বিয়ে এই সমাজে অনুচিত” কারণ এটা উরফ, তাহলে আপনাকে মানতেই হবে “শ্বশুর-শাশুড়ির খিদমাত” করতেই হবে, কারণ এটাও উরফ।

 

.

 

কিন্তু আপনার যদি “শ্বশুর-শাশুড়ির খিদমাত” করতে বলাকে বাড়াবাড়ি মনে হয়, কারণ নস নেই, তাহলে “একাধিক বিয়ে” করতে বলাকে বাড়াবাড়ি বলতে পারবেন না, কারণ এক্ষেত্রেও নস নেই। অপর দিক থেকে আপনি যদি মনে করেন “একাধিক বিয়ে” করতে উৎসাহিত করা উচিত, তাহলে “শ্বশুর-শাশুড়ির খিদমাত” করতে বলাকে যারা বাড়াবাড়ি বলছে, তাদের বিরোধিতা করার নৈতিক ভিত্তি আপনার কাছে থাকছে না। কারণ উভয় ক্ষেত্রেই নস নেই।

 

.

 

.

 

ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক না হলে, কিংবা কোন ক্ষতি না থাকলে উরফ মানতে ক্ষতি নেই। যেহেতু উরফ পরিবর্তন করা কঠিন তাই ইসলামের মূলনীতি প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে এরকম উরফ পরিবর্তন কখনোই প্রথম প্রায়োরিটি হতে পারে না। তাই, যদি নসের ভিত্তিতে কাজ করতে চান প্রতিটি ক্ষেত্রে তা করার চেষ্টা করে যান। কিন্তু যারা উরফকে নসের অনুগামী করে কাজ করতে চান, তাদের দোষারোপ করবেন না। কারণ খুঁজলে দেখা যাবে যে আপনি নিজেও কিছু কিংবা অনেক ক্ষেত্রে হয়ত উরফকে নসের অনুগামী করে ব্যাখ্যা করছেন, বা ব্যাখ্যা করতে বাধ্য হচ্ছেন, কারণ সেক্ষেত্রে উরফ আপনার আনুকূলে অথবা সেটা জরুরী। এগুলো যে নিশ্চিতভাবে ভুল, তা না। তাই প্রতিকূলে গেলেই আপনি সেটাকে নিশ্চিতভাবে কুরআন-হাদিসের নস বিরোধী বলে দিতে পারেন না।

 

- salafi sufi

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

একজন মজলুম মুসলিম

 

এতজন প্রতিভাবান, একটি স্বপ্নের মৃত্যু‼

 

জাকির নায়েক এর কুরআন পড়া!

 

সমাজে অনেকেই কুরআন পড়তে পারেনা, সেটা নিয়ে আমরা মাথা ঘামাই না, কিন্তু জাকির নায়েক এর কুরআন পড়া শুদ্ধ নাই এই নিয়ে আমাদের যত মাথাব্যথা।

 

কিছু বক্তা আছে তাদের নাম নিচ্ছিনা, জাকির নায়েক এর বিরুদ্ধে সেই বলা বলত। কত বক্তা তাঁকে কথায় কথায় কাফের বানাইতো৷ মাঝে মাঝে মনে মনে বলতাম একবার ঘুরে আসো মুম্বাই৷ দেখে এসো তাঁর দ্বারা কি হয়েছিল, আর এখন কি হচ্ছে।

 

আমিতো জাকির নায়েক এর জন্মস্থান মুম্বাই কয়েকবার গিয়েছি৷ সেখানে তাবলিগ ওয়ালা বলেন আর কওমি আলেম বলেন কেউ জাকির নায়েক এর বিরুদ্ধে বলে না। সাধারণ পাবলিক এর কথা না হয় বাদ দিলাম। তারা তাঁর জন্য আফসোস করে। তাঁর দ্বারা ইসলামের অনেক খেদমত হয়েছে সেই মুম্বাইতেই। অনেক ইসলামিক স্কুল ছিল মুম্বাইতে, সব বন্ধ করে দিয়েছে। অনেক ইসলামিক প্রতিষ্ঠান ছিল সব বন্ধ এখন।

 

অথচ এখন বাধ্য হয়ে সকলকেই অন্য স্কুলে পড়তে হচ্ছে।

 

আসলে ভুল ধরা, সমালোচনার ক্ষেত্রে কেউ ইনসাফ করে নাই।

 

জাকির নায়েক এর বিরুদ্ধে ওয়াজ করে তাঁর কাজ বন্ধ করেছেন। তাঁর দ্বারা যে ভাল কাজ কিছু হয়েছিল সেই গুলিও বন্ধ হয়েছে।

 

এখন সেই সব বক্তারা সেসব ভালকাজ গুলি করে না কেন?

 

জাকির নায়েক মাসুম নন, তিনি কিছু চরম ভুল করেছিলেন, তাঁর সব কথার সাথে আমি সহমত পোষণও করি না, কিন্তু তাকে কাফের মনে করি না, তাকে আল্লাহর জন্যেই ভালবাসি, কিন্তু তাঁর চেয়েও চরম চরম ভুল করে অনেকে নিজেদের লোক বলে মাপ পেয়ে যাচ্ছে হরহামেশাই‼

 

লিখেছেনঃ Tanbir Ahmad ভাই এবং কিছুটা পরিমার্জিত৷ - morshed sheikh

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

মেয়েদের ক্যারিয়ারের কথা আসলে সবাই দেখলাম কেবল খাদিজা রাদিয়াল্লাহু তা'আলা আনহার উদাহরণ দেন। তো তাঁর উদাহরণ যখন দেন, সেটা পুরোটা দেওয়া দরকার। আদ্দেক দিলে তো হলো না। এখন যেমন মেয়েরা লোকাল বাসে পর্দার তোয়াক্কা না করে পুরুষের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অপিস করছেন, ক্যারিয়ারের দোহাই দিয়ে দেরিতে বাচ্চা নিচ্ছেন কিংবা নিচ্ছেন-ই না, ছেলে কলিগদের সাথে অপ্রয়োজনে হাসাহাসি করছেন, বসের সাথে ফরেইন ট্যুর দিচ্ছেন ইত্যাদি এর কোনটা তিনি করেছেন? আর বিয়ের পরে তাঁর সমস্ত ব্যবসা যে স্বামীর কাছে হস্তান্তর করেছিলেন সেই কথাটা অনেকে মনে করতে চান না। এরা বরং এই উদাহরণকে এখন মিডিয়াতে কাজ করার জন্যেও জাস্টিফাইড করতে চান। তিনি যে একজন ভালো স্ত্রী ছিলেন, মা ছিলেন এই কথা কোথাও আসছে না কেন? রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওয়াহি পাবার পরে সবচেয়ে কষ্টের সময়গুলোতে যাকে পেয়েছেন, সেই খাদিজার কথা কেনো উঠে আসছে না?

 

- মিসবাহ মাহিন

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

মাওলানা হাফিজুর রহমান সিদ্দিক কুয়াকাটা সাহেবের বাসার ড্রয়িং রুমের জৌলুস নিয়ে যেই সমালোচনা করছেন অনেকে সেটা অবশ্যই ইতিবাচক।

হযরত ওমর ফারুক রাঃএর একটি বিখ্যাত দোয়া আছে যা তিনি নিজের জন্য করতেন, "ইয়া আল্লাহ্‌, আপনি আমার আমলকে আমার কথার সত্যায়নকারী বানিয়ে দিন।"

 

কিন্তু কথা হচ্ছে, যারা মাওলানা সাহেবের সমালোচনা করছেন, তারা যদি একটু কষ্ট করে নিজের বাসার ড্রয়িং রুমের ছবিটা কাউকে দিয়ে তুলিয়ে আপলোড দিয়ে তারপর সমালোচনায় নামতেন তাহলে মনে হয় বেশি ভালো হত, বা সেক্ষেত্রেই সেটা ইনসাফ হত।

 

কারণ আপনি মাওলানা সাহেবের বাসার ড্রয়িং রুমের রাজকীয় অপচয় নিয়ে প্রশ্ন উঠাচ্ছেন, হতে পারে আপনার বাসা আকবরের হেরেমের মত করে সাজানো।

 

আপনি মাওলানা সাহেবের অপচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন এটা অবশ্যই তুলুন, এসবের অপচয়ের কি মানে, কি হেতু, কি হেকমত সেটা আমাদেরও জানা দরকার, যাতে আমরাও সেই একই হেকমত অবলম্বন করে আপনাদের মত যুহদ তাকওয়ার সাথে বিলাসিতার সাথে জীবনযাপন করতে পারি এবং নিয়মিত যুহদ তাকওয়ার বয়ান করে যেতে পারি।

 

কিন্তু যেই আপনি সমালোচনার একহাত নাওয়ার জায়গায়, দুই হাত নিয়ে টানাটানি করছেন, সেই আপনি একই অপচয়ের ব্যধিতে আক্রান্ত কিনা? আপনি নিজে যে আত্মপ্রচারের ব্যধিতে আক্রান্ত নন, আপনি নিজে আত্মমুগ্ধতার দোষে দুষ্ট নন সেটা কীভাবে নিশ্চিত হওয়া যাবে?

 

সমালোচনাই যদি করতে চান, ইনসাফের বজায় রেখে সমালোচনা করুন।

 

- আহমেদ আরিফ খান

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

রমাদানে শরীরকে সুস্থ-সবল রাখতে স্বাস্থ্যকর খাবার দিয়ে ইফতার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সহজসাধ্যতার কথা ভেবে অনেকে ইফতারের জন্য বেছে নেয় ফাস্ট ফুড, আবার কেউ আছেন সারাদিনের না খেয়ে থাকাটা পুষিয়ে নিতে হরেক আইটেম দ্বারা ইফতয়ার করেন।

প্রথমমত ফাস্ট ফুড শ্রেণীর খাবারগুলো শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর, ভালোর চেয়ে খারাপই বেশি, তথাপি গলা উঁচু করে খাওয়ার পরে শরীর মনে মারাত্মক কুপ্রভাব ফেলে। সারাদিন সিয়াম রাখার পর আমাদের শরীরকে স্বাস্থ্যকর খাবার দ্বারা পরিপুষ্ট করাই কল্যাণকর, সাথে এটাও নিশ্চিত করতে হবে সংযমের মাসটা ইফতারের সময়ে এসে যেন ভোজোৎসবের মাসে পরিণত না হয়।

 

তাই ইফতারে কী খাবেন, কোন খাবার দিয়ে শুরু করা যেতে পারে, এ বিষয়ে ৭টি টিপস দেয়া হলো:

.

১. ইফতার শুরু করুন খেজুর এবং পানি দ্বারা

—ইফতারের জন্য খেজুর খুব স্বাস্থ্যকর খাবার এ জন্য যে, এতে রয়েছে শর্করা এবং এটা পুষ্টি উপাদানের পুঞ্জীভূত উৎসের মতো কাজ করে। তাছাড়া এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, খেজুর দিয়ে ইফতার করা রাসূল ﷺ-এর অভ্যাস ছিল।

রাসূলুল্লাহ্ ﷺ নামায পড়ার আগে কয়েকটি কাঁচা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। যদি কাঁচা খেজুর না থাকত তাহলে শুকনো খেজুর দিয়ে। যদি শুকনো খেজুরও না থাকত, তাহলে কয়েক ঢোক পানি দিয়ে।

[সুনানে আবু দাউদ (২৩৫৬), সুনানে তিরমিযি (৬৯৬), ‘ইরওয়াউল গালিল’ গ্রন্থে ৪/৪৫ হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলা হয়েছে]

 

২. শর্করা সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করুন

—গোটা শস্য এবং খাদ্য শস্য জাতীয় খাবার প্রয়োজনীয় ক্যালরি এবং শর্করার যোগান দেয় যা থেকে শরীর সারাদিন বঞ্চিত ছিল। স্যান্ডউইচ বানানোর জন্য লাল রুটি ব্যবহার করুন। তাছাড়া আরো খেতে পারেন পাস্তা, যদি সেটা বানানো সহজ হয়। এগুলোতে রয়েছে পুষ্টি ও প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, আর এগলো শস্যের ভালো উৎস। (যা অন্ত্রের গতি নিয়ন্ত্রন করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে।)

 

৩. ইফতারের সময় ভোজোৎসবে মেতে উঠবেন না

—সারাদিন ক্যালরি থেকে বঞ্চিত থাকার পর খাবার গ্রহণ করতে আপনার পরিপাকতন্ত্র কিছুটা সময় নেয়, তাই আস্তে আস্তে, সহজভাবে খাওয়ার ব্যাপারটা মাথায় রাখবেন। অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ সমস্যার উদ্রেক করতে পারে; আকস্মিক খাদ্য গ্রহণ গ্যাস্ট্রো ইন্টেস্টিনাল সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে; এটা পাকস্থলীকে হঠাৎ করে একসাথে প্রচুর এনজাইম নিঃসরণ করতে বাধ্য করবে, যা অস্বস্তির কারণ হবে। অতএব ধীরে ধীরে খাবার গ্রহণের কথা মনে রাখুন এবং খাবার ভালো করে চিবান। তাছাড়া প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খাওয়া ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকেও সমাচিন নয়।

 

৪. খাদ্য তালিকার মাঝে তরল খাবার রাখুন এবং প্রচুর পরিমাণে গ্রহণ করুন

—পানিশূন্যতা রোধে যথেষ্ট পরিমাণে পানি পান করুন। পানি বিষাক্ত পদার্থগুলোকে ধুয়ে বের করে দেয় এবং হজমে সাহায্য করে। তাছাড়া টাটকা ফলের রস শর্করা, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থের এক দারুণ উৎস। আপনি আরো খেতে পারেন মুরগীর স্যুপ বা ভাপে সিদ্ধ করার মুরগীর মাংস। এগুলো প্রোটিনে ভরপুর যা টিস্যু এবং পেশীতে শক্তি সঞ্চয়ে সাহায্য করে এবং শরীরকে সহজে ক্লান্ত হতে দেয় না। স্যুপ পুষ্টি এবং ইলেক্ট্রোলাইটের ভালো উৎস যা অবসাদগ্রস্ততা এবং পানিশূন্যতা প্রতিরোধে সাহায্য করে।

 

৫. তৈলাক্ত খাবার এবং ভাজা-পোড়া এড়িয়ে চলুন

—কারণ, এ ধরণের খাবার হজম হতে প্রচুর সময় নেয় এবং আপনাকে এমন একটা অনুভূতি দেয় যেন আপনার পেট ভরে গেছে, কিন্তু বাস্তবে এগুলো পুষ্টি চাহিদা মেটায় না বা আপনাকে পরিপুষ্ট করে না। এগুলো ইফতারের জন্য কোন আদর্শ মেন্যু নয়, এমনিতেও না। যাই হোক, যদি খেতেই হয় তবে রাতের খাবারের সময় অল্প একটু খেতে পারেন।

 

৬. সময় হওয়ার সাথে সাথে দ্রুত ইফতার করুন

—এটা কি দিয়ে ইফতার করবেন সে সংক্রান্ত কিছু নয়, বরং কখন ইফতার করবেন সেটা নিয়ে। সময়মত ইফতার করা রমাদানের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। কারণ, অকারণে ইফতার করতে বিলম্ব করা বাঞ্ছনীয় নয়।

সাহল ইবনে সাদ রাযি. বর্ণনা করেছেন যে, রাসূল ﷺ বলেছেনঃ “মানুষ কল্যাণের মাঝে থাকবে যতদিন তারা ইফতার করতে দ্রুততা অবলম্বন করে।” [বুখারী ও মুসলিম]

 

৭. ইফতার শেয়ার করুন

—ইফতারে বরকত বাড়াতে পারেন আপনার প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন, অভাবী এবং অন্য যে কোন সিয়ামরত মুসলিমের সাথে ইফতার শেয়ার করে। রাসূল ﷺ বলেছেন: যে কেউ একজন সিয়ামরত ব্যক্তির জন্য খাদ্যের ব্যবস্থা করে, তাহলে তার জন্যও সিয়ামরত ব্যক্তির অনুরূপ সওয়াব রয়েছে যদিও সিয়ামরত ব্যক্তির সওয়াবের কোনো কমতি হবে না। [ তিরমিযী ]

.

নফসকে নিয়ন্ত্রণ এবং হৃদয় ও আত্মাকে নিয়মানুবর্তী করার অসংখ্য সুযোগ আমাদের সামনে এনে দেয় রমাদান; আল্লাহর আরো অনুগত হতে সাহায্য করে। এটা আমাদের শরীরের যত্ন নেয়া এবং একে নিয়মানুবর্তী করার জন্যও উপযুক্ত সময়। এই শিক্ষাই আত্মস্থ করতে হবে, ইফতারের সময় অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণ থেকে বিরত থাকব, তবে একই সাথে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে আমাদের শরীর স্বাস্থ্যকর খাবার পর্যাপ্ত পরিমাণে পাচ্ছে, যাতে সারাদিনের ক্লান্তি, অবসাদ, অস্বস্তি এবং পানিশূন্যতা দূর হয়ে যায়।

আল্লাহ আমাদেরকে সুস্থ সুন্দর থেকে রমাদান মাসটা সর্বোচ্চ ব্যবহারের তাওফীক দিক।

 

- ওয়াফি লাইফ

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

আজ এক এতাআতি গ্রুপে 'আওয়ার ইসলাম' নামক থার্ডক্লাশ নিউজ পোর্টালের এই লেখাটির লিংক পেলাম। এর দ্বারা এতাআতিরা 'জুমহুর' আলিমদের বিরুদ্ধে ক্ষোভ ঝেড়েছে। তারা কী করল, সেটা মুখ্য নয়। এ দেশের কওমি অঙ্গনের বিষফোঁড়াগুলোর অবস্থা দেখলে খুব সহজেই বোধগম্য হয়, কেন ব্যাপকভাবে আমাদের আকাবিররা ছাত্রদের অবাধ কাব্যপ্রীতি ও সাহিত্যচর্চার লাগাম টেনে ধরেন।

 

এই কলমবাজরা যতক্ষণ কবি-সাহিত্যিকদের কথিত মূলধারার সঙ্গে মিলেমিশে সিগারেট টানে বা পশ্চিমা পোশাক পরে, তাদের মতো চুল কাটে ও দাড়ি ছাটে, ততক্ষণ তাদের ভণ্ডামি তো সবাই বোঝে। কিন্তু যখন নিজেদেরকে সবজান্তা ভেবে শরিয়াহর মৌলিক বিষয়াদি নিয়েও মন্তব্য ছুড়তে থাকে তখনই বাধে আসল ঝামেলা। কখনো করে ইরজার চাষ আর কখনো-বা মডার্নিজমের চাষ। দিনশেষে এরাই আবার কোন মুখ নিয়ে মাওলানা মওদুদি বা ড. জাকির নায়েকদের বিরুদ্ধে বিবৃতি ছোড়ে, তা আমার বুঝে আসে না! যে অপরাধে অন্যকে অভিযুক্ত করার চেষ্টা চালানো হয়, নিজেই যখন একই অপরাধে অপরাধী হয় তখন বিষয়টা কেমন হয়ে দাঁড়ায়?

 

এই অথর্বগুলোকে কান টেনে ধরে জিজ্ঞেস করা দরকার, শিয়াদের কাফির কারা ফাতওয়া দিয়েছিল? কাদিয়ানি গোষ্ঠীকে তোদের বাপ-দাদারা কেন কাফির ফাতওয়া দিয়েছিল? ইদানীং হেজবুত তাওহীদকেও তাকফির কারা করেছিল? তবে কি তারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অধিকার কেড়ে নিয়েছে? তারা কি খোদাদ্রোহী ও রাসুলদ্রোহী? নাকি নিজেদের আকাবিরকে এখন আর আকাবির মনে হয় না? ইরজার বিষ খেয়ে পশ্চিমা স্কলার আর মধ্যপ্রাচ্যের পা চাটা গোলামদের সন্তান হিসেবেই নিজেদেরকে পরিচয় দিতে ভালো লাগে?

 

চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে র‍্যান্ড মুফতি আর র‍্যান্ড মিডিয়া। মডারেট মুসলিম আর মডারেট কলামিস্ট। হ্যাঁ, মূর্খদের অবাধ পদচারণাও আজকাল চোখে পড়ার মতো। যার যে বিষয়ে ন্যূনতম জ্ঞানও নেই, সেও যায় সে বিষয়ে জ্ঞান ঝাড়তে। এই আর্টিকেলের লেখক কিছুদিন আগে শুরু করেছিল দারুল ইসলাম আর দারুল হারবের বিশ্লেষণ। এখন দেখি ঢুকেছে তাকফিরে। জানি না, এভাবে দৌড় কোথায় গিয়ে থামবে। আমরা তো একঝাঁক মিল্লাতে ইবরাহিমের অনুসারী চেয়েছিলাম। এসব নব্য কাদিয়ানিদের দিয়ে আমাদের হবেটা কী!

 

এদেরকে যদি কেউ মাফ করে তাহলে তার মাওলানা মওদুদি, ড. জাকির নায়েক, শাইখ কারযাবি, শাইখ আলবানি, শাইখ ইবনু উসাইমিন আর শাইখ বিন বাজকে নিয়েও মন্তব্য না করা উচিত। আরও ওপরে গিয়ে শিয়া-কাদিয়ানিদেরও ক্ষমা করে দেওয়া উচিত।

 

- আলি হাসান উসামা

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

যে তাতাররা ছিল মুসলিমদের নিকৃষ্ট দুশমন , যে তাতার তুফান ইসলামী সভ্যতার কেন্দ্রবিন্দু বাগদাদকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করে এবং যারা ইসলামী সভ্যতাকেই ধ্বংস গহ্বরের প্রান্তে ঠেলে দেয় , সেই তাতাররা এতো দ্রুত ইসলামে প্রত্যাবর্তন করল কীভাবে ? এর পিছে কোন দা'য়ীদের অবদান ? এসব প্রশ্নের সুনির্দিষ্ট উত্তর ইতিহাসবিদরা দিতে পারেন না । এতেই বুঝা যায় যে তাতারী ফিৎনা কত মারাত্মক ছিল । যে জাতির শত শত বছরের খুঁটনাটি ঘটনাবলী ইতিহাসে লিপিবদ্ধ অথচ সেই জাতির একটি যুগান্তরকারী ঘটনা অর্থাৎ তাতারদের মুসলিম হওয়ার কারণ ও নিয়ামক অনেকটাই অজ্ঞাত । ঐতিহাসিক তথ্য শূণ্যতার এটাই কারণ যে তাতারী ফিৎনা সে সময় সর্বশ্রেণীর মুসলিমদের একেবারে হতবিহ্বল করে দেয় । এমনকি তাতারী আতঙ্ক জ্ঞানী - গুণী , ইতিহাসবিদদের কলমের কালি পর্যন্ত শুকিয়ে দেয় । মানুষরা তখন আপন আপন জান রক্ষায় ব্যতিব্যস্ত থাকত । ফলে লিপিবদ্ধ ইতিহাসে তথ্য সংযোজনে একটা শূণ্যগর্ভ সৃষ্টি হয় ।

 

ধারণা করা হয় , অত্যন্ত নাজুক ও বিভিষীকাময় সেদিনগুলোয় সেই সকল সভ্রান্ত পরিবারের বিদূষী মুসলিম রমনীগণ তাতার শাসক ও আমীর - উমারাদের অন্দরে হেরার নূর প্রোজ্জ্বলন করতেন যাঁদেরকে তাতাররা জবরদস্তি স্ত্রী হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন । এই সকল দ্বীনদার মুসলিম বোনরা অতি সতর্কতা ও প্রজ্ঞা ও ধৈর্য্যের সাথে তাতার স্বামীদের সামনে ইসলাম পেশ করতেন । তাঁরা নিজ গর্ভে ধারণকৃত তাতার স্বামীর ঔরসজাত সন্তানদেরকে আল্লাহর দ্বীন শিক্ষা দিতেন । এভাবে ইসলামের অন্তর্নিহিত শক্তি ও সৌন্দর্য এবং আল্লাহর অনুগ্রহপ্রাপ্ত ঐসকল মুসলিম রমণীদের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও দাওয়াতে তাবলীগের মেহনতের বদৌলতে আল্লাহর ইচ্ছায় তাতার শাসক ও উমারাদের অন্তর ও অন্দর ইসলামের আলোয় রওশন হয়ে ওঠে । তাতাররা মুসলিম হলেন আর তাঁরাই দ্বীনের রক্ষকে পরিণত হলেন ।

 

আমি তাতারদের মুসলিম হয়ে ওঠার কারণ সম্পর্কিত উল্লেখিত ধারনার একজন জোরালো সমর্থক । প্রায় অসভ্য কিন্তু দুর্ধর্ষ ও বর্বর ও রক্তপিপাসু তাতাররা ইসলামের আলোয় আলোকিত হয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে বিশ্বের বুকে আল্লাহর দ্বীনকে বুলন্দ করতে গূরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন । যে দা'য়ীরা নিভৃতে - সন্তর্পনে দ্বীন ও উম্মাহর জন্য এতখানিক গূরুত্বপূর্ণ ও বিস্ময়কর অবদান রেখেছেন সে সকল দা'য়ীদের প্রতি আমার সালাম , শ্রদ্ধা ও ভালবাসা ।

 

- সাব্বির আহমেদ

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

রাত তখন প্রায় একটা। তাওয়াফ করতে গিয়ে চোখে পড়লো একজন অন্ধ মানুষকে। আরও হাজার হাজার সুস্থ মানুষের সাথে এই মানুষটিও ছিলেন তখন তাওয়াফরত। অবাক লাগছিলো, একা একা তিনি কিভাবে বুঝলেন কোথা থেকে তাওয়াফ শুরু করতে হবে। সাত চক্কর কখন শেষ, কীভাবে সম্ভব হবে সেটা অনুমান করা।

.

আল্লাহর ঘর দেখার সৌভাগ্য হয়তো তার হয়নি, কিন্তু সেই পবিত্র ঘরের চারদিকে ঘোরার তাওফিক তার ঠিকই ই হয়েছে। এই তাওয়াফেই দেখেছি আরেকজন মানুষকে যার দুই পা ই নেই। হাতের উপর ভর করে তার তাওয়াফ করার দৃশ্য দেখে আমি আর আমার সাথী কিছুক্ষনের জন্য স্থব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম।

.

উমরা এবং হজ্জপালনকারীদের বলা হয় “দুয়ুফুর রহমান”। অর্থাৎ মহাকরুণাময়ের মেহমান। আপনার ঘরে আপনি তাকেই মেহমান হিসেবে স্বাগত জানাবেন, যাকে আপনি পছন্দ করেন, ভালবাসেন। যাদেরকে আল্লাহ এই শহরে পছন্দ করে নিয়ে এসেছেন, তাদের জন্য রয়েছে চিন্তার খোরাক। সে কি পারছে, এই মহান অনুগ্রহের য়থাযথ মর্যাদা দিতে?

 

ভেবে দেখা প্রয়োজন তাদেরও, যাদেরকে আল্লাহ সুস্থতা এবং অর্থ সম্পদ উভয়টিই দিয়েছেন, বিশ্বের অন্য দেশগুলোতে ঘোরার সুয়োগও হয়তো তার প্রায়ই, কিন্ত আল্লাহর ঘরে আসার সৌভাগ্য কেন তার হয় না?

 

লেখাঃ রিযওয়ানুল কবির সানিন (আল্লাহ্‌ তাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন!)

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

আজকাল শুরু হয়েছে আরেক ট্রেন্ড। দু চিমটি চেতনা লালন করা শুরু করলেই অনেকে 'মানহাজি' নাম ধারণ করা শুরু করে। নারীদের ক্ষেত্রেও এর ঢের চর্চা দেখা যায়। বিয়ের পাত্র খোঁজার বিজ্ঞাপন টানালেও শর্ত হিসেবে লিখে দেয়, পাত্রকে সহিহ আকিদার অনুসারী ও মানহাজি হতে হবে। এরপর যদি এমন পাত্র পেয়ে যায়, যে সালাফি আকিদা লালন করে এবং কিছু লেকচার শোনে বা বইপত্র পড়ে কিংবা ফেবুতে বিশেষ ধরনের পোস্ট ফলো করে তাহলে ধরে নেওয়া হয়, উভয় শর্ত বিদ্যমান আছে।

 

চেতনা, আকিদা ও মানহাজ কী জিনিস, হে নারীরা, তা শিখতে চাইলে তাকাও জামিয়া হাফসার দিকে। একচুমুকে পড়ে নাও লাল মসজিদ ও জামিয়া হাফসার রক্তাক্ত উপাখ্যান। নারী কী জিনিস, নারীর চেতনার কী ধার, আকিদা ও মানহাজের কী প্রভাব - সবই একনিমিষে বোধগম্য হয়ে যাবে।

 

মানহাজি সাজতে চাইলেই সাজা যায় না। নাম ধারণ করলেই বাস্তবায়িত হয়ে যায় না। খানসার চেতনা বুকে ধারণ করতে হয়, এরপর বীরাঙ্গনার মতো কার্যে বাস্তবায়ন করতে হয় তখনই কেবল তা মূল্যায়নযোগ্য হয়; এপারে এবং ওপারে। এই যুগের দীনদার নারীদের জন্য জামিয়া হাফসা এমনই এক আদর্শ উপস্থাপন করেছে, যা আর কেউ পারেনি। একদিকে জামিয়া হক্কানিয়া, আরেক দিকে জামিয়া হাফসা, আর এর পাশাপাশি ধরা যায় বিন্নুর টাউন - এ যেন নীল আকাশের জ্বলজ্বল উজ্জ্বল শুভ্র তিন তারকা।

 

- আলি হাসান উসামা

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

দারুল উলুম দেওবন্দের স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে কিছু বিষয় ক্লিয়ার করা জরুরি বলে মনে করছি।

 

আমরা ফেবু একটিভিস্টরা বরাবরই ইস্যু প্রেমিক। তারই ধারায় বিগত কয়েকদিন যাবত বিভিন্ন পোস্ট সামনে পড়ছে এ নিয়ে। কেউ অমুকতমুকের সাথে যোগাযোগের কথা বলছেন। আবার কেউকেউ তাসদিকনামায় আরজাবাদ ও বারিধারা থেকে তাসদিকনামা নেওয়ার বিষয়টি প্রচার করছেন।

 

শুরুতে কিছু কথা বলে নিচ্ছি। দারুল উলুমে যেই তাসদিকনামা চাওয়া হয় সেটা দাখেলায় নাম আসার পর। এর আগে না।

 

মূলত কয়েকটা কাগজ কমন। সারপুরস্ত নামা(অভিভাবকের পক্ষ থেকে ছাড়পত্র), আর বিগত যেই মাদরাসা থেকে পড়ে এসেছে সেখানকার তাসদিকনামা।

ইন্ডিয়ান ছাত্রদের জন্য আইডেন্টিটি কার্ডের সাথে আরও দুইতিনটা কার্ড বর্তমানে যোগ হয়েছে আমাদের কারণে। এরমধ্যে যারা সীমান্তবর্তী এলাকার ছাত্র(কোলকাতা, আসাম, ত্রিপুরা ইত্যাদি) তাদের জন্য সেই এলাকার নির্দিষ্ট হযরতদের থেকে অতিরিক্ত তাসদিকনামার প্রয়োজন হয়। যেটা প্রমাণ করে সে হিন্দুস্তানি। কোলকাতা ইত্যাদি যেসব এলাকার আসাতিযা দারুল উলুমে আছেন তাদের ক্ষেত্রেতো দারুল উলুমের ওই আসাতিযা থেকেই সত্যায়ন হয়ে যায়, কিন্তু কেরালা, আফগানের মত এলাকার ক্ষেত্রে যাদের নাম দারুল উলুম থেকে প্রস্তাবিত তারাই শুধু তাসদিক করতে পারেন।

বাংলাদেশও এই ধারার মধ্যেই পড়ে।

 

আমার যতদুর মনে পড়ে বিগত ৪-৫ বছর আগেই আমি কাওয়ায়েদে দাখেলায় উক্ত দুই স্থান থেকে তাসদিকনামা নেওয়ার বিষয়টি দেখেছি। ২০১৪/১৫ শিক্ষাবর্ষে দারুল উলুমে দাওরায়ে হাদীসে অধ্যয়নরত ছিলাম। তখন থেকেই এই কানুন সম্পর্কে পরিজ্ঞাত। পরবর্তী বছর তাকমীলে উলুমে দাখেলা দিতে গিয়ে সম্পূর্ণ “কাওয়ায়েদে দাখেলা” পড়ার সৌভাগ্য হয়েছে। তখন উক্ত দুই জামিয়ার নাম দেখেছিলাম স্পষ্ট অক্ষরে। আল্লামা নূর হুসাইন কাসেমি দা.বা. এঁর নাম স্পষ্ট মনে আছে। আরজাবাদ থেকে হয়ত অন্য কারও নাম ছিল। ঠিক মনে করতে পারছি না।

 

এ বছর দুইতিনজনের ব্যাপারে খবর পেয়েছি তারা স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে এসেছে। পরে Mustakim Maknun ভাই থেকে খোঁজ নিলাম তাদের। স্পষ্ট বক্তব্য দেননি তারা। তবে বক্তব্যের সারাংশ হল, তারা ইনভাইটেশন লেটারের ব্যবস্থা করে দিতে পারবে ইন্ডিয়া থেকে(এশিয়ান ইউনিভার্সিটি বা এই জাতীয় কোন নাম বলেছিলো। ইন্ডিয়াতে এমন ভার্সিটির নাম অবশ্য শুনিনি এখনও।) এরজন্য ১৪ হাজারের মত টাকা খরচ হবে। বাকিটা দেশ থেকে কীভাবে এম্বাসিতে এপ্লাই করবে সেটা নিজের বিষয়। (মানে এখানেও আবার দালালচক্র।)

 

এই প্রক্রিয়াতে অনেক আগেও ছেলেরা এসেছে। (শুনেছি আলিগড় ইউনিভার্সিটি এজন্য ৮০ হাজার রুপি নিত আগে।) দুইতিন বছর আগেও এমন একজনের সাথে সাক্ষাৎ হয়েছিলো আমার। তবে তার দাখেলায় নাম এসেছিলো কিনা জানা নেই।

 

দারুল উলুমে আগে ট্যুরিস্ট ভিসা দিয়ে দাখেলা হতো। আমাদের বছর সম্ভবত তিনজনের নাম এসেছিলো। দুইজন ৬ মাসের। আরেকজন ১ বছরের। ছয়মাস ওয়ালাদের দাখেলা হয়নি। এক বছর ওয়ালারও সম্ভবত নাম কাটা গিয়েছিলো পরবর্তীতে।

 

অনেকে দারুল উলুম থেকে প্রদত্ত “এনওসি লেটার”কেই ইনভাইটেশন লেটার মনে করে ভুল করে থাকেন। এনওসি চাইলে দারুল উলুম সবাইকেই দিয়ে দেয়। কিন্তু সেটা দেখে এম্বাসি ভিসা দিবে কিনা এটার কোন নিশ্চয়তা নেই।

 

আমাদের এক সহপাঠী ইতালির সিটিজেন। ওই বছরই ইতালি থেকে ট্যুরিস্ট ৬ মাসের নিয়ে এসেছিলো। সে যখন এনওসি লেটার দেখিয়ে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য এপ্লাই করে তখন তারা বলে দেয়, “এই ভার্সিটির নাম আমাদের এম্বাসিতে লিস্টেড না।”

এর মানে হল, দারুল উলুম এমপিওভুক্ত না হওয়ায় সরকারিভাবে বহিরাগত ছাত্রদের জন্য ভিসার জন্য অনুমোদিত না।

সেই সহপাঠী অনেক কাঠখড়ি পুড়িয়েছিলো দাখেলার জন্য। শেষমেশ তাকেও নিষেধ করে দেওয়া হয়, ট্যুরিস্ট ভিসায় দাখেলা হবে না। অথচ এখনও দাখেলা ফর্মে ট্যুরিস্ট এবং স্টুডেন্ট দুইটা ভিসার জন্যই আলাদা আলাদা বক্স দেওয়া আছে ফিলআপ করার জন্য।

 

গত ২৬ তারিখে দেশ থেকে তিনজন ছেলে এক বছরের টুরিস্ট ভিসা নিয়ে আমার কাছে আসে পরামর্শের জন্য। বিস্তারিত সার্বিক পরিস্থিতি তুলে ধরে। যার সারাংশ হচ্ছে, কাসেমি সাব হুজুরের সাথে তাদের সম্পর্ক ভালো থাকার কারণে তারা সরাসরি ১০-১২ বার সাক্ষাৎ করেন। কিন্তু হুজুর তাসদিকনামা দিতে রাজি হননি। তারা কোন একজন উস্তাদের নাম উল্লেখ করে বলেন, তোমরা দেওবন্দ চলে যাও, যদি সেখান থেকে কোন উপায় বের হয় তাহলে আমরা তাসদিকনামা নিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করবো।

তারা এম্বাসিতে যখন এনওসি দিয়ে এপ্লাই করতে যায় তখন তারা ইনভাইটেশন লেটারের কথা বলে। এবং বলে দেয়, আপনারা ট্যুরিস্ট ভিসা নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা দিন। ওখান থেকে যদি ইনভাইটেশন লেটার আসে তাহলে আমরা স্টুডেন্ট ভিসা দিয়ে দেব।

 

আমি তাদেরকে বিস্তারিত সব বুঝিয়ে বললাম। তারাও এনওসিকে ইনভাইটেশন লেটার ভেবেছিলো শুরুতে। এখানে মৌলিক বিষয় হল এগুলো কাগুজে প্রক্রিয়া। আপনি যতকিছু করেই নিয়ে যান না কেন, বলে দিবে তাদের কাছে লিস্টেড না(এমপিওভুক্ত না হওয়ায়।) মূল বিষয় হল সরকারিভাবে যদি দুইপক্ষ একমত হয় তখনই ভিসা সম্ভব। (এছাড়াও যদি কোনভাবে আপনি স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে ফেলতে পারেন তাহলে দাখেলা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার শর্তে ভর্তিতে কোন সমস্যা নেই। আমার জানামতে গতবছর একজন ইফতা পড়েছিলেন এই ধরণের প্রক্রিয়ায়।)

 

তাদেরকে পরামর্শ দিলাম, যেহেতু মুহতামিম সাহেব হুজুর দারুল উলুমে নেই সেহেতু নায়েবে মুহতামিমদ্বয়ের কাছে যেতে পারেন। গিয়ে পরিস্থিতি বুঝিয়ে জিজ্ঞেস করবেন, “দাখেলা পরীক্ষা দিতে পারবেন কিনা এবং ইনভাইটেশন লেটার তাসদিকনামা পাওয়ার প্রক্রিয়া কী হবে?”

পরদিন অবশ্য H-m Mohammad Alauddin ভাই খোঁজ নিয়েছিলেন নায়েবে মুহতামিম সাহেব মাওলানা আব্দুল খালেক সাম্ভলী দা.বা. থেকে। তিনি ইন্ডিয়ার বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থার বিষয় উল্লেখ করে বলেছেন, এবছরও বাংলাদেশিদের ভর্তি অনিশ্চিত। এরপরও যদি তারা কথা বলতে চায় তাহলে আগামীকাল দুপুর ১২ টা নাগাদ দফতরে ইহতিমামে সাক্ষাৎ করুক। তখন মাওলানা আব্দুল খালেক মাদ্রাসী(অপর নায়েবে মুহতামিম) সাহেবও উপস্থিত থাকবেন।(এরপর আর সাক্ষাৎ হয়নি। তাই পরবর্তী কথাগুলো জানা হয়নি। অবশ্য Yahya Khan ভাই জানালো মাদ্রাসী সাহেব হুজুরের সাথে নাকি সাক্ষাৎ হয়েছিলো। তিনিও নাকি নিরাশ করেছেন।)

 

মোটকথা যারা তাসদিকনামা বা ৫০ জনের দাখেলা দেওয়ার বিষয়টি ফোকাস করে বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যম ধরিয়ে দিচ্ছেন, তার সাথে আদৌ দারুল উলুমের অফিশিয়ালভাবে দাখেলার বিষয়টি সম্পৃক্ত নয়। যারা যোগাযোগ করছেন, তারা বিস্তারিত জেনে বুঝে নিজ দায়িত্বে করবেন। এর বাইরে দারুল উলুম থেকে স্পষ্টভাষায় বা আমাদের দেশ থেকে এ বিষয়ে অফিশিয়াল বিবৃতি না আসা পর্যন্ত কোনকিছু প্রচার করা থেকে বিরত থাকবেন। দারুল উলুমে একটা জিনিস প্রসিদ্ধ আছে। এখানে যা-কিছু রটে, তার ৯০% ই বটে না। বাকি ১০% এর আসল কাহিনিও প্রচার পায় ভিন্নভাবে।

 

- কামরুল ইসলাম

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

  • তওবা(বিশেষ কোনো গুনাহ থেকে তওবা করে একেবারে ফিরে আসা)
  • ইস্তিগফার(জানা/অজানা সব ধরনের গুনাহ থেকে মাফ চাওয়া)
  • দুয়া
  • যিকির
  • তিলাওয়াত
  • নামায(ফরজের পাশাপাশি সুন্নত ও নফল-তারাবীহ/তাহাজ্জুদ)
  • অপরকে সাহায্য করা
  • উত্তম আখলাক প্রদর্শন করা
  • সাদাকা
  • খাবার(সাহুর/ইফতার) বিতরণ করা

 

ইত্যাদি আমল গুলো শেষ দশ দিন/রাত জারি রাখবেন। পিরিয়ড হলে শুধু নামাজ ও তিলাওয়াত থেকে বিরত থেকে বাকি সব গুলোয় মশগুল থাকবেন। সব ধরনের বিদয়াত/ইবাদতে অতিরঞ্জন হতে বিরত থাকবেন।কদরের রাত কে ঘিরে আলাদা স্পেশাল কোনো নিয়ত/নামায নেই,বরং সীমিত না থেকে সব ধরনের বিদয়াত মুক্ত ইবাদাতে মশগুল থাকবেন।

 

এই দুয়া পড়বেন বেশি বেশি।

🌸اللَّهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّي🌸

 

#Zain

 

- যাইনাব আল গাজি

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

বিশে বিষ!

.

আমরা স্বপরিবারে গ্রামে ফিরে যাই আজ থেকে প্রায় বিশ বছর আগে। আমার কৈশোরের দুরন্ত সময়গুলো কেটেছে গ্রামেই। গ্রামের পরিবেশটাই ছিল তখন অন্যরকম। যদিও কুসংস্কারের কিছুটা চর্চা ছিল, তারপরও প্রতিটি মানুষেরই হৃদয়ের গভীরে ছিল আল্লাহভীতি, নবিপ্রেম। নেকের প্রতি আগ্রহ ও পাপের প্রতি ঘৃণাবোধ ছিল প্রকটভাবে। যাকে বলা যায় আলওয়ালা ওয়াল বারার বাস্তব চর্চা।

.

পঞ্চম থেকে সপ্তম শ্রেণির বেশি মেয়েদের পড়াশোনা করানো হতো না। হলেও সর্বোচ্চ দশম শ্রেণি, মেট্রিক পর্যন্ত। কোনো প্রাপ্তবয়স্ক মেয়ে বেপর্দায় চললে সবাই ছিঃ ছিঃ করতো। বাপ-মাকে ডেকে সতর্ক করা হতো। বয়স হওয়ার সাথে সাথে বিয়ে দিয়ে দিত। সামাজিক অপরাধের মাত্রা ছিল শূন্যের কোটায়। যুবকরা প্রকাশ্যে সিগারেট খাওয়ার চিন্তাও করতো না। ধর্ষণ-ইভটিজিংয়ের কোনো ঘটনা ছিল না। ছিল না মাদকের কোনো অস্তিত্ব। তাদের দিনগুলো ছিল ভাবনাহীন, আনন্দঘন, কর্মমুখর। সারাদিন মাঠে গতর খেটে এসে দু’মুঠো ভাত খেতে পারলেই মহাসুখ।

.

আমাদের আশপাশের দশগ্রামের মধ্যে মাত্র একটা লোক ছিল সুদখোর। মানুষ তার বাড়ির সামনে দিয়ে যেত না, তাকে সালাম দিত না, তার সাথে আত্মীয়তা করত না। খারাপ মানুষের উদাহরণ দেয়া হতো তাকে দিয়ে। এমনকি একটা মিথ প্রচলিত ছিল যে, গরুর শরীরে পোকা হলে সুদখোরের নাম লিখে গলায় ঝুলিয়ে দিলে নাকি গরুর শরীরের পোকা পড়ে যেত! এটাকে আপনি স্রেফ একটা অমূলক ধারণা বা কুসংস্কার বলে উড়িয়ে দিতে পারেন। কিন্তু আমি এর মধ্যেও ইমানি দাবির বাস্তবায়ন দেখি। যদিও তারা শতভাগ বিশুদ্ধ ছিল না (আর উম্মাহর সর্বসাধারণের মাঝে শতভাগ বিশুদ্ধতা খুঁজতে যাওয়াটাও বোকামি) কিন্তু ইমানের মৌলিক দাবি পূরণে তারা ছিল সচেষ্ট।

.

কিন্তু আজ, মাত্র বিশটা বছরের ব্যবধান। আজকে ভাবাও যায় না সামাজিক অবস্থা কোন্ পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। ঘরে ঘরে সুদের মহামারি, নারীদের লাগামহীন চলাফেরা, পশ্চিমা সংস্কৃতির আগ্রাসন, ধর্ষণ, ইভটিজিং, যুবকদের উশৃঙ্খলতা, এমনকি গুনাহের প্রতি ঘৃণাবোধটুকু পর্যন্ত উঠে গেছে (দেখুন, গুনাহে লিপ্ত হওয়া এক জিনিস, আর গুনাহের প্রতি অন্তরে ঘৃণাবোধ না থাকা আরেক জিনিস। একটা ফিসক, আরেকটা কুফর)। এমনকি স্বভাবজাতভাবে (فطرة) মানুষের মধ্যে যে মানবতাবোধটুকু ছিল আজ সেটুকুও হারিয়ে গেছে। দিনকে দিন পরিস্থিতি ভয়াবহ থেকে আরও ভয়াবহতার দিকে যাচ্ছে।

.

হাদিসে এ বিষয়টার প্রতিই ইঙ্গিত করা হয়েছে—

حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ بْنُ مُسْلِمٍ، عَنِ ابْنِ جَابِرٍ، عَنْ مَكْحُولٍ، فِي قَوْلِهِ تَعَالى: ﴿لَتَرْكَبُنَّ طَبَقًا عَنْ طَبَقٍق﴾ قَالَ فِي كُلِّ عِشْرِينَ سَنَةً تَكُونُونَ فِي حَالٍ غَيْرِ الْحَالِ الَّتِي كُنْتُمْ عَلَيْهَا

আল্লাহ তায়ালার বাণী— لَتَرْكَبُنَّ طَبَقًا عَن طَبَقٍ ‘তোমরা এক সিঁড়ি থেকে আরেক সিঁড়িতে আরোহন করবে।’ [১] এই আয়াতের ব্যাখ্যায় মাকহুল (রহ.) বলেন, ‘প্রত্যেক বিশ বছরের মধ্যে তোমরা যে অবস্থাতে ছিলে, তার পরবর্তী বিশ বছরে পূর্বের চেয়ে আরও পরিবর্তন দেখতে পাবে!’[২]

.................................

[১] সূরা ইনশিকাক, ১৯

[২] হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম নুয়াইম ইবনু হাম্মাদ (রহ.) তার ‘আলফিতান’ গ্রন্থে। হাদিস নং-৪১। মাকতু হিসেবে বর্ণনাটি সহিহ। ইবনু জাবির হলেন আবদুর রহমান ইবনু ইয়াযিদ ইবনু জাবির আল-আযদি। তিনি সিকাহ রাবি।

 

- মুনিরুল ইসলাম ইবনে যাকির

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

জুব্বা পরার একাধিক অ্যাডভানটেজ আছে। সাধারণত বাচ্চাদের লোকজন পারলে পিছে পাঠিয়ে দেয়, কিন্তু আয়াজের জুব্বার কারণে জায়গা থাকলে টেনে সামনের কাতারে নিয়ে যায়।

 

এছাড়াও বাসার থ্রি কোয়ার্টার প্যান্টের উপর জুব্বা কুইকলি পরে মসজিদে রওনা দেয়া সহজ, প্রিপারেশন টাইম কম।

 

+ পাঞ্জাবী বলিউড ইন্সপায়ার্ড লামা কাট ছেলেগুলা + মুশরিকরা পরলেও, জুব্বা মোটামুটি মুসলিমদের এক্সক্লুসিভ পোশাক, এর জন্যও পরা উচিত।

 

- এম মাহবুবুর রহমান

 

 

 

 

 

 

 

 

সিয়াম আর উপবাস এর পার্থক্য যারা জানেন না...

 

আমাদের সমাজের কিছু সংখ্যক ব্যক্তি সাওম রাখে ঠিকই কিন্তু তারা মিথ্যাচার, অশ্লীলতা, মারামারি, গীবত, গালাগালি ইত্যাদি বর্জন করে না।

 

আরও কিছু সংখক মানুষ আছে রামাদান মাসেও প্রতারণা, চুরি, লটারির টিকেট ক্রয়, তামাক-সিগারেট-মদ প্রভৃতি বিক্রি ইত্যাদিসহ যাবতীয় হারাম কাজ বর্জন করে না।

 

অথচ মহান আল্লাহ আমাদের উপর সাওমের বিধান দিয়েছেন যেন আমরা তাকওয়া তথা পরহেজগারীতা অর্জন করতে পারি। মহান আল্লাহ বলেন,

 

-হে মানুষ, তোমরা যারা ঈমান এনেছো! তোমাদের ওপর সাওম ফরজ করা হয়েছে যেমনটি করা হয়েছিলো তোমাদের পূর্বপুরূষদের ওপর যাতে করে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো। [সূরা বাকারা ১৮৩]

 

সিয়াম - অর্থ হচ্ছে বিরত থাকা।

 

উপবাস সবাই থাকতে পারে, সিয়াম সবাই থাকতে পারে না। বিধর্মীরাও উপবাস থাকে।

 

যাবতীয় অপছন্দনীয় কাজ থেকে বিরত থাকার নাম হচ্ছে সিয়াম। আল্লাহ সুবহানা তায়ালার কাছে অপছন্দনীয় কাজগুলো থেকে বিরত না থাকলে সিয়াম পালন হয় কীভাবে?

 

ফরজ সলাত না পড়া/ ফরজ পর্দা না করা/ প্রেম নামক যেনা করা / মোবাইলে টিভিতে অশ্লীল নাচ-গান, নাটক, সিনেমা দেখা/ বিপরীত লিংগের জাস্ট ফ্রেন্ডদের সাথে ফ্রি মিক্সিং ও আড্ডা দেওয়া/ মেয়েদের পরিপূর্ণ পর্দা না করা/ ছেলেদের দৃষ্টির পর্দা না করা/ মিথ্যা বলা/ গীবত করা....

 

এসব করলে তা উপবাস হতে পারে, সিয়াম হতে পারে না।

আসুন, আমরা যাবতীয় অশ্লীল ও পাপ কাজ থেকে বিরত থেকে সিয়াম পালন করার চেষ্টা করি। সিয়ামের প্রকৃত উদ্দেশ্য তাকওয়া তথা আল্লাহভীতি অর্জন করার চেষ্টা করি।

 

- ড. উম্মে বুশরা সুমনা

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

আলেয়া আলোর মতোই , তবে আলো নয় । দুটোই আকর্ষণ করে । একটা পথ দেখায় অপরটা পথিককে বিভ্রান্ত করে । আলো - আঁধারের পার্থক্য স্পষ্ট কিন্তু আলেয়া বড় মারাত্মক , সহজে চেনা যায় না । অনেকেই আলেয়াকে আলো ভেবে ভুল করে । - সাবির আহমেদ

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

এতো বছর ঢাকায় আছি, কখনই বিষয়টি চোখে পড়েনি, কারো মুখে শুনিওনি। এদের বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া করেছি, এমন কি গুরুত্বপূর্ণ গ্রোগ্রামও করেছি এদের কিছু ব্রাঞ্চে, তাও কখনই জানতে পারিনি।

 

সেদিন অফিস যাবার পথে হঠাৎ বড় একটা সাটার-ডোরে 'বিশেষ বিজ্ঞপ্তিটি' চোখে পড়ে। বাংলাদেশে এমন প্রতিষ্ঠান আছে আমার কল্পনাতেই ছিলো না! এখন তো মনে হচ্ছে পৃথিবীতে কয়টা আছে, সেটাও গুনতে হবে!হয়তো একটু বেশিই অবাক হয়েছি, তাই বলে ফেললাম!

 

বিশেষ বিজ্ঞপ্তিটি পড়ে যা বুঝলেন আসলেও তাই! শুধু এই একটি ব্রাঞ্চ নয়। এনাদের গ্রুপের সবগুলি রেস্টুরেন্ট পুরো #রমাদান_মাস বন্ধ থাকে (Xiamen, Xindian, Xinxian, Golden Chimney আরো বেশ কয়েকটি ব্রাঞ্চ আছে বিভিন্ন নামে)। তারপরেও স্টাফরা বেতন পান, উপহার পান, এমন কি ঈদ বোনাসও পান। মাশাআল্লাহ্‌। এমন কি ওনাদের ওখানে কর্মরত কেউ যদি হাজ্জ উমরাহ্‌ করতে চায়, সেখানেও কোম্পানির সহযোগিতা থাকে। অন্যতম বৈশিষ্ট্য এই যে, সকল স্টাফদের অবশ্যই সলাত আদায় করতেই হয়।

 

রমাদান মাসে যেখানে কিনা অনেক ব্যবসায়ীরা ভেজাল ও নিম্নমানের খাবার পরিবেশন করে অধিক মুনাফা লাভের আশা করে, যেখানে কিনা ইফতার ও সাহরীর নামে দামী-দামী মেনু সাজায়, সেখানে এনারা একদম বন্ধই রাখেন স্টাফদের কষ্টের কথা চিন্তা করে, স্টাফদের ইবাদাতের কথা চিন্তা করে। (২৬ বছর ধরে এই প্রতিষ্ঠানে চাকরী করছেন এমন একজনের সাথে কথা বলে অনেক চমৎকার কিছু জানতে পারলাম।)

 

এ যেনো দুনিয়ার ব্যবসা নয়। এ যেনো আল্লাহ্‌র সাথে ব্যবসা করা!

 

- শিবলী মেহদি

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

হিজরতের সাতানব্বইতম বর্ষ। উমাইয়া খলীফা সুলাইমান ইবনে আব্দুল মালিকের মন ব্যাকুল পবিত্র ভূমিগুলোতে সফরের জন্য। সফরের প্রস্তুতিও সম্পন্ন হলো।

 

রাজকীয় বাহনগুলো দ্রুত ছুটে চলেছে উমাইয়াদের রাজধানী দামেস্ক থেকে মদীনা মুনওয়ারাহর উদ্দেশে।

 

খলীফার হৃদয়ে ছিল পবিত্র রওযায় দাঁড়িয়ে সলাত আদায়ের ব্যাকুল আকাঙ্ক্ষা.......

এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দরুদ ও সালাম পাঠের তীব্র আগ্রহ....

খলীফার এই কাফেলায় শরীক ছিলেন একদল হাফেজ, ক্বারী, মুহাদ্দিস, ফকীহ, আলিম, গভর্ণর ও জেনারেল।

 

এই কাফেলা যখন মদীনায় গিয়ে পৌছল, সেখানের গণ্যমান্য ও নেতৃস্থানীয় লোকেরা খলীফাকে স্বাগত জানানোর উদ্দেশ্যে ছুটে এলেন।

মদীনার কাজী, বিখ্যাত আলিম ও ইমাম সালামাহ ইবনে দীনার খলীফাকে স্বাগত জানাতে এলেন না।

 

* * *

 

খলীফা সুলাইমান ইবনে আবদুল মালিক সংবর্ধনা দানকারী দলটিকে বিদায় জানালেন এরপর তাঁর কয়েকজন সঙ্গীকে বললেন---

 

' খনিজ পদার্থের মতো মানবহৃদয়েও জং ধরে যায়, যদি না সেখানে মাঝে মাঝে আল্লাহ্ ও আখিরাতের স্মরণ জাগিয়ে তোলা যায়। সেজন্যই এমন আল্লাহওয়ালা লোকের সহবত জরুরী যিনি নসিহতের রেত দিয়ে পরিষ্কার করে দেন হৃদয়ের জং। '

 

এরপর তিনি তাদের কাছে জানতে চাইলেন-----

 

' আমাদের নসীহত করার মতো মদীনাতে কি এমন কোনো লোক নেই যিনি রাসূলুল্লাহ্ সল্লুল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবীদের সংস্পর্শ পেয়েছেন? '

 

তারা বলল----

 

' নিশ্চয় আছে হে আমীরুল মু'মিনীন! আমাদের এখানে রয়েছেন আবু হাযেম আয়াজ। '

 

' কে এই আবু হাযেম আয়াজ? '

 

' সালামাহ ইবনে দীনার। যিনি মদীনার বিখ্যাত আলিম ও সর্বজনশ্রদ্ধেয় ইমাম, তিনি সেই সকল তাবেঈদের একজন যাঁরা একদল সাহাবায়ে কিরামের সংস্পর্শ পেয়েছিলেন। '

 

' আদব ও বিনয়ের সঙ্গে তাঁকে ডেকে নিয়ে এসো। '

 

তারা গিয়ে ইজ্জতের সঙ্গে তাঁকে ডেকে নিয়ে এলেন।

 

* * *

 

খলীফা তাঁকে সাদর অভ্যর্থনা জানালেন..... তাঁকে একেবারে নিজের কাছের আসনে বসালেন এবং মৃদু ভর্ত্সনা করে বললেন -----

 

' আমার প্রতি কেন এ অনীহা হে আবু হাযেম!? '

 

' আমার পক্ষ থেকে কি এমন অনীহা দেখলেন হে আমীরুল মু'মিনীন? '

 

' এই যে নেতৃস্থানীয় সব লোক আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করলেন কিন্তু আপনি নিজে থেকে এলেন না! এটা কি উপেক্ষা নয় হে আবু হাজেম? '

 

' মাফ করবেন আমীরুল মু'মিনীন! উপেক্ষা কিংবা অনীহা কেবল পূর্বপরিচিতির পরেই সম্ভব.....

অথচ আজকের পূর্বে আপনি আমাকে চিনতেন না, আমার নামও জানতেন না এবং আমিও ইতিপূর্বে আপনাকে কখনো দেখিনি, এরপরও কি আমার সাক্ষাৎ না করাকে ' উপেক্ষা ' বলবেন? '

 

এরপর খলীফা মজলিসের অন্যান্য লোকদের বললেন ------

 

' সত্যিই, তাঁর কথাই ঠিক বরং খলীফার ভর্ত্সনাটাই ভুল। '

 

পুনরায় তিনি আবু হাযেমের প্রতি মনোযোগী হয়ে বললেন -----

 

' আমার মনে বেশ কিছু গূরুত্বপূর্ণ জিজ্ঞাসা রয়েছে যেগুলো আমি আপনার খেদমতে আরয করতে চাই, যদি আপনার অনুমতি পাই হে আবু হাযেম। '

 

' বলুন হে আমীরুল মু'মিনীন! আল্লাহই সাহায্যকারী। '

 

হে আবু হাযেম! আমরা মৃত্যুকে এত ভয় পাই কেন? কেন আমরা মরতে চাই না? '

 

' কেননা, আমরা দুনিয়াকে আবাদ করেছি আর আখিরাতকে বরবাদ করেছি.... ফলে আমরা আবাদ স্থান ছেড়ে বরবাদির দিকে যেতে চাই না। '

 

' যথার্থই বলেছেন.... ধন্যবাদ আপনাকে। হে আবু হাযেম! আমার জানতে ইচ্ছে হয় কিয়ামতের ময়দানে আমার কী অবস্থা হবে? '

 

' নিজ কৃতকর্মকে কিতাবুল্লাহর কাছে পেশ করুন, জবাব পেয়ে যাবেন। '

 

' কিতাবুল্লাহর কোথায় এটা পাওয়া যাবে? '

 

' সেটা পাবেন আল্লাহর এই বাণীতে.......

 

" নিশ্চয় নেককার (অনুগত) লোকেরা থাকবে জান্নাতে। আর বদকার (অবাধ্য) লোকেরা থাকবে জাহান্নামে। "

 

' তাহলে আল্লাহর রহমত থাকল কোথায়? ' খলীফার জিজ্ঞাসা।

 

আবু হাযেম বললেন ------

 

' পৃথিবীতে নেককার লোকদের সঙ্গে সঙ্গে বদকার লোকেরাও আল্লাহর প্রচুর রহমত লাভ করে, পরকালে সেটা অসম্ভব। সেখানে আল্লাহর রহমত শুধু নেক সজ্জনদের জন্যই। '

 

' আমার খুব জানতে ইচ্ছা হয় হাশরের ময়দানে আল্লাহর সামনে কীভাবে উপস্থিত করা হবে। '

 

' নেককার হলে খুশি মনে হাসতে হাসতে এগিয়ে যাবে, যেমনটি প্রবাস থেকে নিজ পরিবারের কাছে ফেরার মূহুর্তে মানুষ করে থাকে। আর পাপিষ্ঠ হলে তার অবস্থা হবে পলাতক ক্রীতদাসের মতো যাকে টেনে-হিঁচড়ে মনিবের সামনে হাজির করা হয়। '

 

এবার খলীফা কেঁদে ফেললেন। তাঁর সেই ভীষণ ক্রন্দন অন্যদেরকেও স্পর্শ করে।

 

গ্রন্থ : তাবেঈদের ঈমানদীপ্ত জীবন

গ্রন্থকার : ড. আবদুর রহমান রাফাত পাশা

অনুবাদ : মওলানা মাসউদুর রহমান

 

- সাব্বির আহমেদ

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

প্রসঙ্গঃ

মু্ল্য দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করলে কি হবে না?

 

প্রশ্নঃ

হযরতজ্বী! আমাদের সমাজে কিছু সংখক লোক বলছে গম জব খিজুর ইত্যাদির মু্ল্য দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করলে নাকি আদায় হবে না ৷ অথচ আমরা সারা জীবন মুল্য দ্বারা ই আদায় করে আসছি ৷ এ বিষয়ে দলিল সহ জানালে উপকৃত হব৷

 

উত্তরঃ

সদকাতুল ফিতর যেমনভাবে গম,জব, খিজুর, কিসমিস ইত্যাদি দ্বারা আদায় করা যায়, তেমনি তার মু্ল্য দ্বারাও আদায় করা যায় ৷ কারণ সদকাতুল ফিতরে নির্ধারিত বস্তু উদ্দেশ্য নয়৷ যেমন কুরবানীতে নির্দিষ্ট প্রানী উদ্দেশ্য৷ বরং খাদ্য উদ্দেশ্য ৷ কেননা আল্লাহ তায়ালা কফ্ফারা সম্পর্কে কুরআনে ইরশাদ করেন,

ﻣِﻦْﺃَﻭْﺳَﻂِ ﻣَﺎ ﺗُﻄْﻌِﻤُﻮﻥَ ﺃَﻫْﻠِﻴﻜُﻢ

 

অনুবাদ: যা তোমরা তোমাদের পরিজনদেরকে খেতে দাও৷

সূরা মায়েদা, আয়াত:৮৯৷

 

আর খাদ্য যেমনভাবে উল্যেখিত বস্তুও হতে পারে অন্য বস্তুও হতে পারে৷

 

অন্যত্রে ইরশাদ করেছেন,

ﺧُﺬْ ﻣِﻦْ ﺃَﻣْﻮَﺍﻟِﻬِﻢْ ﺻَﺪَﻗَﺔً ﺗُﻄَﻬِّﺮُﻫُﻢْ ﻭَﺗُﺰَﻛِّﻴﻬِﻢْ ﺑِﻬَﺎ

অনুবাদ: তুমি তাদের ধন-সম্পদ হতে সাদাকাহ গ্রহণ কর, যার দ্বারা তুমি তাদেরকে পবিত্র ও পরিশোধিত করে দেবে।

সূরা তওবা, আয়াত:১০৩৷

 

মাল বা ধন-সম্পদ দ্বারা শুধু গম, খিজুর ই নির্দিষ্ট নয়৷ বরং স্বর্ন-রুপা, টাকা পয়সা মাল, ধন-সম্পদ৷

 

হাদীস শরীফে নবী করীম সাঃ ইরশাদ করেছেন,

ﺃﻏﻨﻮﻫﻢ ﻋﻦ ﺍﻟﻤﺴﺄﻟﺔ ﻓﻲ ﻣﺜﻞ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻴﻮﻡ

এই দিনে (ঈদুল ফিতর) তাদেরকে অন্যের নিকট হাত পাতা থেকে অমুখাপেক্ষি করে দাও৷

সুনানে দারাকুতনি, ২/১৫২; নসবুর রায়া, ২/৪৩১৷

 

আর মানুষ তখনি অমুখাপেক্ষি হবে যখন তাকে এমন জিনিষ দেয়া হবে যা দিয়ে তার সর্ব প্রকার প্রয়োজন পুরন করতে পারবে ৷ যেমন টাকা-পয়সা ৷ টাকা-পয়সা দিয়ে মানুষ তার সবধরনের প্রয়োজন পুরন করতে পারে৷ খাদ্যের প্রয়জোন হলে খাদ্য কিনে খেতে পারবে৷ পোশাকের প্রয়োজন হলে, পোশাক কিনতে পারবে৷ বাসস্থানের প্রয়োজন হলে তারও ব্যবস্থা করতে পারবে৷

 

আতা রহঃ উমর রাঃ থেকে বর্ণনা করেন,

ﻋَﻦْ ﻋَﻄَﺎﺀٍ ؛ ﺃَﻥَّ ﻋُﻤَﺮَ ﻛَﺎﻥَ ﻳَﺄْﺧُﺬُ ﺍﻟْﻌُﺮُﻭﺽَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺼَّﺪَﻗَﺔِ ﻣِﻦَ ﺍﻟْﻮَﺭِﻕِ ﻭَﻏَﻴْﺮِﻫَﺎ

অনুবাদ: উমর রাঃ সদকার ক্ষেত্রে টাকা ইত্যাদি গ্রহণ করতেন।

মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদীস:১০৫৩৯৷

 

যোবায়ের রঃ থেকে বর্নিত তিনি বলেন, আমি আবু ইসহাককে বলতে শুনেছি,

ﺃﺩﺭﻛﺘﻬﻢ ﻭﻫﻢ ﻳﻌﻄﻮﻥ ﻓﻲ ﺻﺪﻗﺔ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺍﻟﺪﺭﺍﻫﻢ ﺑﻘﻴﻤﺔ ﺍﻟﻄﻌﺎﻡ

অনুবাদ: আমি সাহাবায়ে কেরামকে পেয়েছি, তারা রমযানের সদকাতে খাদ্যের মূল্য পরিমাণ দিরহাম আদায় করেছেন।

মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, হাদীস: ১০৪৭২৷

 

প্রসিদ্ধ তাবেয়ী হাসান বসরী রহঃ থেকে বর্নিত, তিনি বলেন:

ﻋﻦ ﺍﻟﺤﺴﻦ ﻗﺎﻝ ﻻ ﺑﺄﺱ ﺃﻥ ﺗﻌﻄﻰ ﺍﻟﺪﺭﺍﻫﻢ ﻓﻲ ﺻﺪﻗﺔ ﺍﻟﻔﻄﺮ

অনুবাদ: সদকায়ে ফিতর দিরহাম দ্বারা প্রদান করতে কোন সমস্যা নেই।

মুসান্নাফে ইবনে আবি শায়বা, ১০৪৭১৷

 

অতএব গম, জব খিজুর ইত্যাদি দিয়েই সদকা আদায় করা জরুরী নয়৷ তার মুল্য দিয়েও আদায় করা যাবে ৷

অবশ্য হাদীসে রাসুলুল্লাহ সাঃ যেসব বস্তু নির্ধারন করেছেন তা শুধু তাদের সহজতার জন্য ছিল৷ নির্দিষ্ট করার লক্ষে নয় ৷ তবে যেহেতু রাসুলুল্লাহ সাঃ গম খেজুর ইত্যাদির পরিমান নির্ধারন করেছেন ৷ মু্ল্যের কোনো পরিমান নির্ধারন করা হয় নি৷ তাই মু্ল্যের পরিমান নির্ধারন করার ক্ষেত্রে সেসব বস্তু দ্বারা নির্ধারন করতে হবে, যেসব বস্তু দ্বারা নবীজী সাঃ নির্ধারন করেছেন৷ যেমন গম, আটা জব খেজুর ইত্যাদি৷

 

-বাদায়েউস সানায়ে,২/২০৫; আল বাহরুর রায়েক, ২/৪৪৩; রদ্দুল মুহতার, ২/২৮৬; ফতহুল কদীর, ২/২১৯৷ ফতওয়া মাহমুদীয়া, ১৫/১৭১; ফতওয়া রহীমীয়া, ৬/৩০৬৷

 

উত্তর প্রদানে

মুফতী মেরাজ তাহসীন

মুফতীঃ জামিয়া দারুল উলুম দেবগ্রাম

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ৷

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

যারা সঙ্গীতের ফুটো পয়সাও মূল্য দেয় না তাদের কাছে মাইকেল জ্যাকসন কিংবা ম্যাডোনার কোন কদর নেই । মাইন্ড ইট ।

 

আপনি একটি সেক্যুলার সমাজের উপযুক্ত সদস্য হয়ে বেড়ে উঠেছেন । সেক্যুলার সমাজ আপনাকে মূল্যায়ন করে তাই নিজেকে খুব মূল্যবান ভাবছেন । বিশ্বাস করেন , নিরেট ইসলামী সমাজে আপনি অপাঙক্তেয় ও অযোগ্য বিবেচিত হবেন যেমন , দ্বীনদার , পরহেজগার ও ত্বলিবে ইলমরা আপনাদের সেক্যুলার সমাজে অযোগ্য - অপদার্থ বিবেচিত হয় । সেক্যুলার শিক্ষায় ও দীক্ষায় আকাশ ছুঁলেও আপনার মধ্যে ইসলাম না থাকলে ইসলামী সমাজে আপনার না থাকবে মান আর না থাকবে শান ।

কিন্তু আজ ইসলামী সমাজটাই নেই । না থাকলেও ইতস্তত বিক্ষিপ্ত ইসলামী মানুষ নিশ্চয় আছ ।

 

- সাব্বির আহমেদ

 

 

 

 

 

 

কেউ কী আছেন ? যিনি একটা কবিতা লিখবেন ?

কবিতাটি হতে হবে ছিপছিপে চাবুকের মত নির্দয় !

রাজপূজারী কবিরা কুর্ণিশ মাথা তুলবেন । শিখবেন -

কীভাবে জগতে শিরদাঁড়া সোজা করে বাঁচতে হয় ।

 

- সাব্বির আহমেদ

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

★ জেরুসালেমে স্থানান্তরিত হলো ইসরাঈলস্থ মার্কিন দূতাবাস !

 

★ অর্ধশতাধিক ফিলিস্তিনী মুসলিম নিহত , আহত সহস্রাধিক !

 

যারা জাতিসংঘের উপর আস্থা রাখেন , যারা তথাকথিত বিশ্বমোড়লদের বিশ্বাস করেন , যারা তথাকথিত মুসলিম শাসকদের উপর নির্ভরশীল , যারা মানবাধিকার সংস্থাসমূহকে বিশ্বাস করেন , এ পোস্ট তাদের জন্য নয় ।

 

আজও যে সকল মুসলিমরা জাতিসংঘকে দু'মুখো সাপ মনে করে তারা ভুল করে । বিষাক্ত সরীসৃপটার লেজটাকেও মুখ ভেবে অনেক মুসলিম বিভ্রান্ত হচ্ছে । কারণ , জাতিসংঘ তার লেজটা চমত্কার করে নাড়াতে পারে । জাতিসংঘের মুখ দুটো নয় , কখনই তা ছিল না । মুখ তার একটাই । আর সেই মুখের বিষাক্ত ছোবলে কেবল মুসলিমদের রক্ত নীল হয় ।

 

তথাকথিত বিশ্বমোড়ল । এদেরকে যে সকল মুসলিম ভাইয়েরা ভণ্ড বলে তারা বিভ্রান্তির শিকার । ভণ্ড তারা মোটেও নয় । তারা সঠিকভাবেই তাদের কাজ করছে । তাদের কাজ - শয়তানের এজেণ্ডা বাস্তবায়ন করা , মানুষকে জাহান্নামের উপযুক্ত করে গড়ে তোলা , আর বেয়াড়া মুসলিম খতম করা । বিশ্বমোড়লরা তাদের দায়িত্ব পালন করছে নিষ্ঠার সাথে । এখানে তারা কোনপ্রকার দ্বিচারিতার আশ্রয় নিচ্ছে না । তাদের শয়তানি কর্মকান্ড প্রকাশ্যেই চালিয়ে যাচ্ছে । বরং যারা তাদেরকে ভণ্ড বলে তাদের বসবাস বোকার স্বর্গে ।

 

রক্তাক্ত মুসলিম নারীর অপমানে , বোমার আগুনে ঝলসে যাওয়া মুসলিম শিশুর আর্তনাদে , গৃহহারা মুসলিমের আহাজারিতে অস্থির ও চঞ্চল হয়ে যে মুসলিমরা চিত্কার করে ধিক্কার জানায় , ' মানবাধিকার সংস্থা কোথায় ? '

আমি বলব , সে সকল ধিক্কার জানানো মুসলিমরা আজও মায়ের গর্ভে আছে । মানবাধিকার সংস্থাগুলোকে তুমি ধিক্কার জানাচ্ছ কেন ? তোমার ধিক্কারের আওয়াজ শুনে মনে হয় - তুমি বিশ্বাস কর যে , তারা সত্যিই মানুষের অধিকার সংরক্ষণে কাজ করে । অথচ তুমি জানো না যে , মানবাধিকার গোষ্ঠী মুসলিমদের মানুষই মনে করে না ।

 

এ জামানার তথাকথিত মুসলিম শাসকদেরকে যারা ফাসিক , জালিম , মুনাফিক ইত্যাকার বিশেষণে ভূষিত করে তাদের মতো আত্মপ্রবঞ্চক বোধহয় আর কেউ হতে পারে না । ফাসিক , জালিম , মুনাফিক - এগুলো তো আদুরে গালি ! অথচ তারা জানে না এসব শাসকরা আদুরে গালির স্তর অতিক্রম করে কুফরীতে কামালিয়াত হাসিল করে অনেক উঁচু মর্তবায় পৌঁছে গেছে । তারা কাফের সর্দারদের সাথে ফানা হয়ে গেছে যেভাবে চিনি পানির সাথে মিশে যায় । এরপরও এ ফানা ফীশ শয়তানের হাকিকত যারা বুঝতে অক্ষম তারা আত্মপ্রতারক ছাড়া আর কি-ই বা হতে পারে !

 

তাহলে ?

 

বাকি রইল ইতস্তত , বিক্ষিত উড়তে থাকা কিছু জোনাকি যাদের নিজের প্রয়োজন মেটানোর আলো আছে বটে , কিন্তু সে আলোয় না কাটে আঁধার আর না হতে পারে আগুন । যে আগুন দাবানল সৃষ্টি করে আল্লাহর জমিনে জমতে থাকা স্তুপিকৃত জঞ্জাল পুড়িয়ে পৃথিবীটাকে মানুষ বসবাসের উপযোগী করতে পারে ।

 

তবে , আমি হতাশ নই । দুনিয়ার বুকে একদিন কলেমার পতাকা উড়বেই ; পৃথিবী মনুষ্যজাতি বসবাসের উপযোগী হবেই ।

 

- সাব্বির আহমেদ

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

সেদিন খুব মজা পাইছি।

 

এক ভাইয়ের জিনের সমস্যা আছে অনেক পুরাতন। রাজশাহীর তাযকিয়া শপের ভাইদের সাথে গিয়েছি উনাকে দেখতে।

 

চাচ্ছিলাম ভালোয় ভালো কথাবার্তা বলে একদম বিদায় করতে। কিন্তু দেখি সবগুলা শয়তান নাই। একটা কি দুইটা আছে। তো শুরুতে নিজ আগ্রহেই এসেছে..। আমাদের সাথে নাকি কি কথা বলতে চায়!

.

শুরুতে খুব ভালো ভাব নিচ্ছিল। আমার থাপড়াইতে মুঞ্চাইলেও অনেক কষ্টে রাগ চেপে রেখে ভদ্র ভাষায় কথা বলছিলাম।

.

বলছিল- আমরা একদম ছোট থেকে ওকে দেখে শুনে রাখছি, ওর পরিবার তো কেয়ারই করে না। এই সেই ব্লা ব্লা... রমযান মাসে অন্যরা ছুটিতে আছে। আমি আর আরেকজন শুধু আছি।

.

জিগাইলাম কিসের ছুটি?

বলে- সারা বছর তো ওরা দেখাশোনা করে রমজান মাসটা একটু ছুটিতে থাকে।

.

জিজ্ঞেস করলাম অমুক অমুক অমুক কই? (কয়েকটা শয়তানের নাম বললাম যেগুলা বেশি অত্যাচার করে)

- সবাই ছুটিতে আছে!

.

তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম- "বাইন্ধা রাখছে তাই না"

- শয়তানটা কয়েক সেকেন্ড থেমে থাকার পর আস্তে করে বলে

"হ্যাঁ ওই রকমই!!" 😂

 

- রাকি আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ভাই

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

ঋদ্ধ সংলাপ বই নিয়ে বিতর্ক

 

 

‘ঋদ্ধ সংলাপ’ বইটির কন্টেন্ট প্রতারণা প্রসঙ্গে আমাদের বক্তব্য

 

 

গত ২৫ মে ২০১৯ তারিখে জনাব আলী আহমাদ মাবরুর ফেসবুকে ‘ঋদ্ধ সংলাপ’ নামে একটি অনুবাদ বই প্রকাশনার ঘোষণা দেন। ফেসবুকে বইটির সূচিপত্র ও একটি আর্টিকেলের প্রথম পৃষ্ঠার ছবি দেখে আমাদের সন্দেহ হয়। কিন্তু বইটি হাতে পাওয়ার আগ পর্যন্ত এ বিষয়ে চুপ থাকার সিদ্ধান্ত নেই। গতকাল দুপুরে বইটি হাতে এসে পৌঁছে।

 

অত্যন্ত হতাশা ও উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করি, বইটিতে সংকলিত ৬টি অনূদিত আর্টিকেলের ৩টিই ‘সমাজ ও সংস্কৃতি অধ্যয়ন কেন্দ্রের’ ওয়েবসাইট হতে নিয়ে ছাপানো হয়েছে। অথচ, এ ব্যাপারে বইটির প্রকাশক ‘নাফিয়ান পাবলিকেশন্স’ বা বইটির সম্পাদক হিসেবে নাম ছাপা হওয়া জনৈক নূরুল আলম– কেউই আমাদের নিকট হতে লিখিত বা মৌখিক অনুমতি নেয়নি। উল্টো, দুটো আর্টিকেলে আমাদের অনুবাদকদের পরিবর্তে আলী আহমাদ মাবরুরের নাম ছাপানো হয়েছে। যা স্রেফ চৌর্যবৃত্তি। নৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি অন্যায় এবং বিদ্যমান কপিরাইট আইনে এটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

 

এমতাবস্থায় আমরা গতকালই তাদেরকে ইমেইল করে আমাদের আপত্তি জানিয়েছি। আমাদের দাবি হলো: অবিলম্বে বইটি বাজার থেকে প্রত্যাহার করতে হবে, ক্ষমাপ্রার্থনা করতে হবে এবং আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কিন্তু ফিরতি মেইলে নাফিয়ান কর্তৃপক্ষ জানায়– তারা এতেকাফে ব্যস্ত রয়েছে। ঈদের পর আমাদের সাথে যোগাযোগ করবে। অথচ তাদের বই বিক্রির কার্যক্রম বহাল রয়েছে।

 

এমতাবস্থায় প্রাথমিকভাবে আমরা পাঠকদের দারস্থ হয়েছি। সচেতন পাঠকদের সামনে আমরা নাফিয়ান পাবলিকেশন্স ও আলী আহমাদ মাবরুরের চৌর্যবৃত্তি তুলে ধরতে চাই।

 

(১) আগামী দিনের ইসলাম:

 

গত ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে ‘আগামী দিনের ইসলাম’ শিরোনামে ড. তারিক আল সোয়াইদানের একটি বক্তৃতার অনুবাদ আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছি (অনুবাদটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন)। এটি অনুবাদ করেছেন আমাদের তৎকালীন গবেষণা সহকারী মো: হাবিবুর রহমান হাবীব। অথচ আলী আহমাদ মাবরুর এটি নিজের অনুবাদ হিসেবে ‘আগামীদিনের সম্ভাবনায় ইসলাম’ শিরোনামে বইটির ৭-৪৮ পৃষ্ঠা জুড়ে ছাপিয়েছেন।

 

কীভাবে বুঝবেন এটি নকল করা হয়েছে?

 

১। পাঠকদের বুঝার সুবিধার্থে অনুবাদটিতে আমরা প্রচুর উপশিরোনাম/পয়েন্ট ব্যবহার করেছি, যা ভিডিও বক্তব্যে নাই। ‘ঋদ্ধ সংলাপ’ বইটিতেও আমাদের ব্যবহৃত উপশিরোনামগুলোই যথাস্থানে ব্যবহৃত হয়েছে। কোনো কোনো জায়গায় আমাদের কিছু কিছু উপশিরোনাম তারা বাদ দিয়েছে বড়জোর।

 

২। আমরা রাসূলের (সা) নামের পর দরুদ লিখেছি সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে এভাবে– (সা)। তারা এটি পূর্ণাঙ্গ ফরম্যাটে ব্যবহার করেছে। এছাড়া কোনো কোনো বাক্যে তারা ক্রিয়াপদ, অব্যয় ইত্যাদি মাইনর যোজন-বিয়োজন করেছে। কোথাও বানান ঠিক করেছে, কোথাও বানান ঠিক করতে গিয়ে উল্টো ভুল বানান বসিয়েছে। এসব ছোট-খাটো বিষয় বাদে প্রতিটি তাদের প্রতিটি বাক্য আমাদের সাথে লাইন বাই লাইন মিলে যায়।

 

৩। এই আর্টিকেলটির অনুবাদক দাবিকারী আলী আহমাদ মাবরুর ফেসবুক স্ট্যাটাসে দাবি করেছেন, এটি তিনি দেড় থেকে দুই বছর আগে অনুবাদ করেছেন। অথচ, একই অনুবাদ আমরা ছাপিয়েছি দুই বছরেরও বেশি সময় আগে। তাহলে কে কাকে নকল করলো?

 

পাঠকদের বুঝার সুবিধার্থে এই আর্টিকেলটির তুলনামূলক দুটি চিত্র তুলে ধরছি:

 

 

(২) সফল নেতৃত্ব গঠনে সুন্নাহসম্মত বাস্তব কর্মপন্থা:

 

২৫ জুলাই ২০১৪ তারিখে ‘সফল নেতৃত্ব গঠনে সুন্নাহসম্মত বাস্তব কর্মপন্থা’ শিরোনামে ড. সোয়াইদানের আরেকটি বক্তৃতার অনুবাদ আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছি (অনুবাদটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন)। এটিও অনুবাদ করেছেন আমাদের তৎকালীন গবেষণা সহকারী মো: হাবিবুর রহমান হাবীব। অথচ আলী আহমাদ মাবরুর এটি নিজের অনুবাদ হিসেবে একই শিরোনামে বইটির ৭৩-৮৮ পৃষ্ঠা জুড়ে ছাপিয়েছেন।

 

কীভাবে বুঝবেন এটি নকল করা হয়েছে?

 

১। শুরুতেই অনুবাদটির শিরোনামের দিকে দৃষ্টিপাত করা যাক। মূল ভিডিও বক্তব্যটি ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে সর্বপ্রথম ইউটিউবে ‘Leadership Challenges For The New Millenium’ শিরোনামে আপলোড করে TVSUNNAH নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল। একই ভিডিও আমরা আমাদের ইউটিউব চ্যানেলে ১২ জুন ২০১৪ তারিখে ‘Leadership Challenges From Islamic Perspective’ শিরোনামে আপলোড করি। এর বাইরে ইউটিউবে আমরা এই ভিডিওটি পাইনি। খেয়াল করে দেখুন, আমরা ইংরেজি শিরোনামটির অনুবাদ বাংলায় রাখিনি। বরং কন্টেন্টের প্রাসঙ্গিকতা বিবেচনায় আমরা শিরোনাম দিয়েছি– ‘সফল নেতৃত্ব গঠনে সুন্নাহসম্মত বাস্তব কর্মপন্থা’। ‘ঋদ্ধ সংলাপ’ বইটিতেও একই বাংলা শিরোনাম ব্যবহৃত হয়েছে!

 

২। স্বভাবতই ভিডিও বক্তব্যটিতে মূল আলোচনার বাইরে কিছু অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা ছিলো। অসম্পূর্ণ বাক্য ছিলো। যা একটি স্বার্থক অনুবাদের অন্তরায়। এ কারণে বাংলা অনুবাদের আগে আমাদের অনুবাদক ইংরেজি বক্তৃতাটির একটি পরিমার্জিত ট্রান্সক্রিপ্ট তৈরি করেছিলেন (এটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন)। বুঝার সুবিধার্থে আলোচনাটিকে কয়েকটি সেকশনে ভাগ করা হয়। প্রতিটি সেকশনে আবার বেশ কিছু উপশিরোনাম ব্যবহার করা হয়। স্বভাবতই যা ভিডিও বক্তব্যে এভাবে সাজানো ছিলো না। সেই ট্রান্সক্রিপ্টটিই পরে তিনি বাংলায় অনুবাদ করেন। অবাক করা ব্যাপার হলো, আলী আহমাদ মাবরুরের দাবিকৃত অনুবাদটিও হুবহু সেইসব সেকশন ও উপশিরোনামসহ বইটিতে ছাপা হয়েছে! আমরা মিলিয়ে দেখেছি, দুয়েকটি বানান সংশোধন (তাও কোনো ক্ষেত্রে সঠিক বানানকে ‘সংশোধন’ করে ভুল বানানে লেখা হয়েছে) ছাড়া বইটির অনুবাদ হুবহু আমাদের সাথে মিলে যায়!

 

৩। এই লেকচারটিও আলী আহমাদ মাবরুর দেড় থেকে দুই বছর আগে অনুবাদ করেছেন বলে দাবি করেছেন। অথচ আমরা একই অনুবাদ ছাপিয়েছি প্রায় ৫ বছর আগে। তাহলে কে কার অনুবাদ নকল করলো?

 

পাঠকদের উদ্দেশ্যে আমরা এই অনুবাদটির দুটি তুলনামূলক চিত্র দিচ্ছি, যেখান থেকে তাদের প্রতারণার মাত্রা বুঝা যাবে।

 

 

 

(৩) সালাফী ইসলাম প্রসঙ্গে

 

১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখে ‘সালাফী ইসলাম প্রসঙ্গে’ শিরোনামে ড. ইয়াসির ক্বাদীর একটি আর্টিকেলের অনুবাদ আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছি (এটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন)। এটি অনুবাদ করেছেন সিএসসিএসের নির্বাহী পরিচালক মাসউদুল আলম। তারা এটি একই অনুবাদকের নামে ‘সালাফী প্রসঙ্গ’ শিরোনামে বইটির ১০১-১৩২ পৃষ্ঠা জুড়ে ছাপিয়েছে। কিন্তু কোথাও লেখাটির সূত্র উল্লেখ করেনি, কিংবা অনুবাদকের পরিচিতিও উল্লেখ করা হয়নি। কোনো পর্যায়েই তারা মূল অনুবাদটির প্রকাশক বা অনুবাদকের সাথে যোগাযোগ করেনি। এর মাধ্যমে তারা অনুবাদটি অবৈধ, অন্যায়ভাবে কপি করার মতো অনৈতিক কাজে নিজেদেরকে সংযুক্ত করলো।

 

***

 

এই নাতিদীর্ঘ বর্ণনা থেকেও কেউ যদি কনভিন্স হতে না পারেন, তাহলে তাদের জন্য আমরা ‘ঋদ্ধ সংলাপ’ বইটির একটি প্রিভিউ ভার্সন তৈরি করেছি। এই তিনটি আর্টিকেলের প্রথম ও শেষ দুই পৃষ্ঠা বই থেকে স্ক্যান করে আমরা এই পিডিএফ ফাইলে সংযুক্ত করেছি। আগ্রহী পাঠকগণ সেগুলো আমাদের মূল লেখার সাথে মিলিয়ে পড়লেই তাদের চৌর্যবৃত্তি সম্পর্কে সম্যক ধারণা পেয়ে যাবেন। প্রিভিউ কপিটি ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন।

 

আমরা হিসাব করে দেখেছি, ১৬০ পৃষ্ঠার বইটিতে আমাদের থেকে চুরি করা এই তিনটি আর্টিকেলের পরিমাণ ৯০ পৃষ্ঠা, যা বইটির মোট কন্টেন্টের ৫৬ শতাংশ।

 

এই কুম্ভীলকবৃত্তিকে জাস্টিফাই করার জন্য তারা আগেভাগেই বইটির ভূমিকার শেষদিকে লিখেছে– “জ্ঞান প্রচারের একটি উম্মুক্ত ঠিকানা থেকে সংগৃহীত বিধায় লেখাগুলোর উৎস-সম্মতির প্রয়োজন ছিলো না।” এটি ভুল ও অজ্ঞতাপ্রসূত ধারণা। বাংলাদেশের প্রচলিত কপিরাইট আইন অনুসারে, কারো বক্তৃতা অন্য কেউ ট্রান্সক্রিপ্ট করে ভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করলে সংশ্লিষ্ট অনুলেখক এবং অনুবাদক উক্ত কন্টেন্টের কপিরাইট লাভ করেন।

 

একই ভূমিকাতে তারা আবার লিখেছে– “ত্রিমুখী এ সংকটের মোকাবিলায় বুদ্ধিবৃত্তিক উত্তরণের কোনো বিকল্প নেই। আদর্শিক সংহতির জন্য জ্ঞান ও বুদ্ধিবৃত্তিক চেষ্টা প্রচেষ্টা অগ্রাধিকার পাওয়া প্রয়োজন।”

 

আমাদের প্রশ্ন হলো– বুদ্ধিবৃত্তিক অসততার মাধ্যমে কি এই সংকট মোকাবেলা করা যাবে? নাকি সংকট আরো ঘনীভূত হবে?

 

শেষ কথা:

 

আমরা প্রত্যেকটি আর্টিকেল দীর্ঘ সময় নিয়ে মনোযোগের সাথে অনুবাদ করেছি। তারপর খুঁটে খুঁটে সম্পাদনা করেছি। পুনরায় চূড়ান্ত সম্পাদনা শেষে আর্টিকেলটি ওয়েবসাইটে দিয়েছি। প্রত্যেকটি অনুবাদের সাথে মিশে আছে আমাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও সময়। ব্যয় হয়েছে প্রচুর অর্থ। আর সেই অনুবাদই যখন মাউসের কয়েকটি ক্লিকে কপি করে কেউ নিজের নামে বই ছাপিয়ে বাণিজ্য করতে নেমে যায়, তখন আমরা মর্মাহত হই।

 

ইসলামী মতাদর্শের আলোকে একটি সুন্দর সমাজ গঠনের লক্ষ্যে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলার যে স্বপ্ন আমরা দেখি, এগুলো হলো সেই আন্দোলনের প্রাথমিক ভিত্তি। নিছক বুদ্ধিবৃত্তি চর্চা করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়।

 

আপনারা জানেন, ‘সমাজ ও সংস্কৃতি অধ্যয়ন কেন্দ্র’ ব্যক্তি উদ্যোগে পরিচালিত একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। আমাদের চিন্তা ছিলো ওয়েবসাইটে প্রকাশিত কন্টেন্টগুলো বই আকারে প্রকাশ করতে পারলে প্রকাশনা আয় থেকে কেন্দ্র পরিচালনার কিছু ব্যয় নির্বাহ করা যাবে। কিন্তু নাফিয়ান পাবলিকেশন্স আমাদের কন্টেন্টগুলো চুরি করে বই ছাপিয়ে আমাদেরকে আর্থিক ক্ষতিরও সম্মুখীন করেছে। এটি সম্পূর্ণ বেআইনী ও পাঠকদের সাথে প্রতারণাপূর্ণ কাজ।

 

পাঠকদের নিকট আমাদের আহ্বান, আপনারা ‘ঋদ্ধ সংলাপ’ নামের এই বইটি বর্জন করুন। বইটির সাথে সংশ্লিষ্ট অনুবাদক, সম্পাদক ও প্রকাশকের নিকট জবাবদিহিতা দাবি করুন।

 

ইনশাআল্লাহ, শীঘ্রই আমাদের কন্টেন্টগুলো বই আকারে ছাপিয়ে পাঠকদের নিকট তুলে ধরবো। সে পর্যন্ত আপনারা ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করুন। আল্লাহ আমাদের সহায় হউন। আমীন।

 

২৯ মে, ২০১৯।

 

সিএসসিএস অ্যাডমিন

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

আলি আহমাদ মাবরুরের পোস্টঃ

 

ইউটিউব কনটেন্ট অনুবাদের যন্ত্রনা এবং একজন অনুবাদকের অসহায়ত্ব...

 

মাঝরাত থেকে সময়টা খুবই কষ্টে কেটেছে। আমি সাহরীর সময়টায় সাধারনত ফেসবুকে ঢুকিনা। ম্যাসেঞ্জারে পরিচিত কয়েকজন মানুষের বেশ কয়েকটি দৃষ্টি আকর্ষনী পাওয়ায় আজ ঢুকেই দেখলাম, আমাকে ট্যাগ করে এক ভাই একটি পোস্ট দিয়েছেন। সাম্প্রতিক সময়ে প্রকাশিত একটা বইতে আমার অনুদিত লেখনীগুলোর বিরুদ্ধে তার বিস্তর অভিযোগ। এগুলোতে নাম গেছে আমার কিন্তু কাজটা নাকি আমার নয়। যেহেতু একটা বিতর্ক উঠেছে তাই এই স্ট্যাটাসে আমি চেষ্টা করবো,কোন কিছুর নাম দিয়ে বিষয়টাকে আরো প্রোমোট না করার জন্য।

 

যা হোক, বইটি ৫দিন আগে, গত শুক্রবার বের হয়েছে। সেখানে ৬টি ইউটিউব লেকচারের অনুবাদ আছে। আমি ৩টি লেকাচরের অনুবাদ করেছি। দুটো শায়খ তারেক আল সোয়াইদানের। আর একটি ইয়াসির ক্বাদির। ইয়াসির ক্বাদির কলামের লেকচার নিয়ে কোন অভিযোগ নেই। অভিযোগ তারেক আল সোয়াইদানের লেকচার নিয়ে। সিএসসিএস নামের একটি বুদ্ধিবৃত্তিক প্রতিষ্ঠান এই কাজটি নাকি আগেই অনুবাদ করেছে। অভিযোগ এই অবধি থাকলে আমি পাত্তা দিতাম না। কেননা ইউটিউবের যাবতীয় কনটেন্ট পাবলিক কনটেন্ট। তাই একটি বিষয়ের অনুবাদ ১০ জনও করতে পারে। কিন্তু তাদের অভিযোগটি গুরুত্বের সাথে নিতে হয়েছে এই জন্য যে,তারা বলছেন এখানে আমার নামে যে অনুবাদদুটি প্রকাশিত হয়েছে সেগুলো হুবুহু নাকি তাদেরটাই করা।

 

অভিযোগটিকে আরও পাকাপোক্ত করার জন্য আমাকে কপি অনুবাদের দায়ে অভিযুক্ত করার পাশাপাশি ইসলামী আন্দোলনের একজন দায়িত্ববান ব্যক্তি বলা হয়েছে। আমি কোন দল বা সংগঠনের পদে নেই। তারপরও এভাবে পরিচয় করিয়ে দেয়ার কারনটা আমার বোধগম্য হয়নি। এটা তারা না করলেও পারতেন। আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাসকে এর মধ্যে টানার আমি কোন প্রয়োজন দেখিনা।

 

যাহোক, যিনি স্ট্যাটাসটি দিয়েছেন, তাকে আমি কল দিয়েছিলাম। আমার দিক থেকে সর্বোচ্চ পরিমান চেষ্টা করেছি যাতে ভাল ব্যবহার করা যায়। তিনিও সন্তুষ্ট হয়েছেন বলেই আমার মনে হয়েছে। আমি তার কষ্ট অনুভব করেছি এবং তাকে জানিয়েছি, ইয়াসীর ক্বাদির কাজটি আমি অতি সম্প্রতি করেছি। কিন্তু তারেক সোয়াইদানের কাজটি বোধ হয় দেড় দুই বছর আগের করা। আমার কাজটি মনে নেই। আমি সকালে চেক করে দেখবো যদি তাদের অভিযোগটি সত্য হয়, তাহলে আমি প্রকাশককে এই ব্যপারে জবাবদিহি করতে বাধ্য করবো। এখানে সকলের জ্ঞাতার্থে বলি, বইটি সম্পাদনা করার পর আমাকে দেখানো হয়নি, কারন রোজায় বইটি বের করার প্ল্যান ছিল বলে তাড়াহুড়ো করার একটি প্রবনতা ছিল। আর দ্বিতীয়ত, আমি নিজেও ব্যস্ততার কারনে এতদিন বইটি ভালভাবে দেখার সুযোগ পাইনি। বইটি হাতে পেয়েছি আমি কয়েকদিন পর। তাই হয়তো এই গ্যাপটা হয়েছে, এটা আমার অযোগ্যতা। আমি সেজন্য সংশ্লিষ্ট স্ট্যটাসদাতাকে ধন্যবাদ দিয়েছি বিষয়টা আমার নজরে নিয়ে আসার জন্য।

 

এখানে অনুবাদক হিসেবে আমার অক্ষমতা বলি। আমি কিন্তু শুধুই অনুবাদ করি। আর কিছু নয়। অনুবাদ প্রকাশ কিভাবে হবে, কিভাবে সম্পাদনা হবে, বা আমার কাজের সাথে আর কারও কাজ মিলিয়ে কোন কিছু করা হবে কিনা- এগুলো আমার জানার সুযোগ নেই। অনেক প্রকাশকের সাথে এখন কাজ করছি। আবার অনেক মানুষের সাথে কাজ করছি যারা পেশাদার প্রকাশক নন, কিন্তু হঠাৎ করে প্রকাশক বনে যাচ্ছেন। আবার এমনও কাজ করা হয়েছে, সেগুলো যে বই আকারে বের হবে তাই জানতাম না। হঠাৎ শুনি, সেগুলো নিয়ে বই হচ্ছে। এখানে আমার কিছু করার থাকেনা।

 

আল্লাহর রহমতে জীবনে প্রথম যে বই অনুবাদ করেছি সেটাই ৪৭২ পৃষ্ঠার, এখন আরো অনেক বড় বড় বই নিয়ে কাজ করছি। তাই কারও সামান্য কয়েক পৃষ্ঠার লেকচার অনুবাদ না করে কপি করে চালিয়ে দেবার প্রয়োজন দেখিনা।

 

তবে, এই বইটির ক্ষেত্রে আমি রীতিমতো বিস্মিত হয়েছি। এখানে আমার অনুবাদকে না দিয়ে অন্য একটি অনুবাদকে আমার নামে চালানো হয়েছে। এই ঘটনায় আমি হতাশায় ডুবে গেছি। এটা করার প্রয়োজন কেন পড়লো, তাও জানিনা। তারা কি আমার লেখা হারিয়ে ফেলেছিলেন, পরে লজ্জ্বায় অন্য লেখাকে ঢুকিয়ে দিয়েছেন কিনা তাও বুঝতে পারছিনা। যিনি বইটি প্রকাশ করেছেন, তাকে পাচ্ছিনা, কেননা আমার জানামতে তিনি ইতিকাফে বসেছেন।

 

এখানে উল্লেখ্য, বইটিতে সিএসসিএস ওয়েবসাইট থেকে আরো কলাম নেয়া হয়েছে। সেখানে তারা সিএসসিএস এর সংশ্লিষ্ট অনুবাদকের নামও উল্লেখ করে দিয়েছেন। অথচ আমারটার বেলায় নাম আমার দিয়েছেন, কিন্তু কনটেন্ট আমারটা দেননি।

 

পুরো ঘটনায় আমি লজ্জিত ও বিব্রত। যারা কষ্ট পেয়েছেন, তাদের কাছে ক্ষমা চাইছি। আর এই বই নিয়ে আমি আর কোন প্রচারনায় যেতে চাইনা। ঈদের পর প্রকাশককে পেলে আমি বিষয়টা নিয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থার সাথে আলাপ আলোচনার মাধ্যমে একটি সুন্দর সমাধানের উদ্যেগ নেবো। আশা করছি, এই দু:খজনক অভিজ্ঞতা আমার নিজের চলার পথকে সামনে আরো সহজ করবে ইনশাআল্লাহ। এই এক ঘটনায় আমি অনেক কিছু শিখলাম। সামনের সময়টাতেও ভুল ও দোষ থেকে আল্লাহ যেন আমাকে, আমাদেরকে মুক্ত রাখেন। আমিন

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

মাবরুর ভাইয়ের আবার পোস্টঃ ইউটিউব কনটেন্টের বাংলা অনুবাদ এবং এর কপিরাইট নিয়ে বেশ বিতর্ক শুরু হয়েছে। এই প্রেক্ষিতে একটি ঘোষনা দিতে চাই। এই ঘোষনা আরো পরে এবং অন্যভাবে দেয়ার পরিকল্পনা ছিল। তবে পরিস্থিতির প্রয়োজনে এখন দিয়ে দিচ্ছি। কেননা আমরা অনুবাদকের অনুমতি নিয়ে পেরেশানী থেকে নীতি নৈতিকতার অনেক প্রশ্ন তুললেও মুল যিনি লেকচারগুলো পরিবেশন করছেন তার অনুমতি নেয়ারই তোয়াক্বা করছিনা। এ ধরনের যে কাজগুলো এ পর্যন্ত করা হয়েছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মুল লেকচারারের বা সংশ্লিষ্ট অনলাইন চ্যানেলের অনুমতি নেয়া হয়নি।

 

সেই প্রেক্ষিতে সকলের অবগতির জন্য জানাচ্ছি, শায়খ ওমর সুলেইমান এবং তার প্রতিষ্ঠিত ইয়াকিন টিভির যে কোন লেকচার সিরিজ বাংলায় অনুবাদ করার অনুমতি আমাদের হাতে এসে পৌছেছে। তিনি একটি ইমেইলে আমাদেরকে এই অনুমতি দিয়েছেন।

 

একইভাবে খুব শীঘ্রই ইয়াসির ক্বাদির কাছ থেকেও এরকম একটি অনুমতি পত্র হাতে পেয়ে যাবো বলে আশা রাখছি।

 

ওস্তাদ নোমান আলী খানের বাইয়্যিনাহসহ আরও বেশ কয়েকটি ইসলামিক অনলাইন চ্যানেলের সাথে যোগাযোগ হচ্ছে। আপাতত সকলের অবগতির জন্য এতটুকু পর্যন্ত জানালাম।

 

সকলের কাছে দোয়া চাই, যাতে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সকল শায়খের লেকচারগুলো বাংলায় অনুবাদ করে আমরা দীনের খেদমতে অংশ নিতে পারি। আমিন।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

সিয়ান পাবলিকেশন্সের বই নিয়ে বিতর্ক

 

 

 

বিশুদ্ধ জ্ঞানের সাথে প্রতারণা: আস্থা হারাচ্ছে পাঠক

 

বাংলা ভাষায় ড. আলী সাল্লাবির বইপত্র অনুবাদের ধারা শুরু হয়েছে এটা ছিল আমাদের জন্য আনন্দের বিষয়। কিন্তু শুরু থেকেই সাল্লাবির বইগুলোর সাথে একের পর এক বিতর্ক শুরু হয়। প্রশ্ন উঠে বইগুলোর অনুবাদের মান ও অনুবাদকের সততা নিয়েও।

আমরা আশাবাদী হয়ে উঠি যখন জানতে পারি, সিয়ান থেকেও সাল্লাবীর বইগুলি প্রকাশিত হবে। সিয়ান বরাবরই নিজেদের নামের সাথে বিশ্বমান ও বিশুদ্ধ জ্ঞানের শ্লোগান বসিয়ে আসছে। এছাড়া তাদের সাবেক একজন কর্মকর্তা মাসুদ শরীফও বিভিন্ন জায়গায় ‘আরবী থেকে অনুবাদ করা হয়েছে’ ‘বিশ্বস্ত হাতের সম্পাদনা’ ইত্যাদী শব্দ ব্যবহার করছিলেন। ইতিমধ্যে সাল্লাবী রচিত সিরাত রউফুর রহিম নামে সিয়ান থেকে প্রকাশিত হয়। সিয়ান তাদের প্রচলিত ধারার বিপরীতে গিয়ে এই বইতেই সরাসরি আরবী থেকে অনুবাদের সাহস করে। এই বইয়ের অনুবাদক সম্পর্কে মাসুদ শরীফ বলেছিলেন, অনুবাদক লেখালেখিতে থিতু হলে আমরা আরেকজন যাইনুল আবেদিন বা নাজিমুদ্দিন পেতাম (শব্দের সামান্য এদিক সেদিক হলেও তার কথাটা এটাই ছিল)। মাসুদ শরীফের এই বক্তব্য অবশ্য আমরা খুব একটা গুরুত্বের সাথে নেইনি, কারণ পৃথিবীতে মূল্যায়ন করা হয় তাদেরকেই, যারা কিছু একটা হয়েছেন, অথবা যাদের কর্ম সামনে আছে যা দিয়ে তাদের যাচাই করা যায়। অন্যথায় নিছক দাবী দিয়ে কিছু প্রতিষ্ঠিত করা খুবই মুশকিল।

 

যাই হোক, রউফুর রহিম প্রকাশিত হলো। সম্পাদনায় আবু তাসমিয়া আহমেদ রফিক সাহেবের নামও দেখলাম। তার ব্যাপারে প্রসিদ্ধ তিনি ইংরেজি, আরবী, বাংলা তিন ভাষাতেই সমান পারদর্শী। আমরা তাই আশাবাদী হয়ে উঠি। বইটি প্রকাশের পর মাসুদ শরীফ দাবী করেন এটি বাংলাভাষায় রচিত শ্রেষ্ঠ সীরাত। কমেন্টে শায়খ আলী হাসান তৈয়ব তাকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তার জবাব ছিল এটি ভালো সীরাত কারণ এর প্রচ্ছদ, কাগজ ও বাঁধাই খুব ভালো।

বইটি সংগ্রহ করব করব করেও ব্যক্তিগত ব্যস্ততার কারণে পারছিলাম না। ইতিমধ্যে ফেসবুকের পরিচিত মুখ হাসান হাফিজ ভাইয়ের কল্যানে সীরাত বইটির প্রথম পৃষ্ঠা দেখা হলো। দেখেই চমকে গেলাম। টুকটাক আরবী জানার সুবাধে সাল্লাবীর বইগুলো অনেক আগেই নেড়েচেড়ে দেখা হয়েছে। সিয়ানের বাংলা অনুবাদে যা এসেছে তা মোটেই সাল্লাবীর ভাষার মতো নয়। দ্রুত আরবী থেকে চেক করে নিলাম। অবাক হয়ে গেলাম। হবু যাইনুল আবেদীন (মাসুদ শরীফের দাবী মতে) অনুবাদে মূল থেকে সরে গেছেন, কোথাও সাল্লাবীর কথা বাদ দিয়েছেন আবার কোথাও নিজের পক্ষ থেকে কিছু শব্দ সংযোজন করেছেন। দ্রুত বাংলা অনুবাদ সংগ্রহ করি। প্রায় পঞ্চাশ পৃষ্ঠা পর্যন্ত অনুবাদ চেক করি। প্রতি পৃষ্ঠাতেই অনুবাদক এই খেয়ানত করেছেন। সাল্লাবীর শব্দ বাদ দিয়ে নিজের কথা ঢুকিয়ে সাল্লাবীর নামে চালিয়ে দিয়েছেন। এক কথায় তিনি সততার পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়েছেন।

 

আমি এখানে শুধু প্রথম পৃষ্ঠার মূল আরবী ও অনুবাদের ছবি দিলাম। মার্কিং করা লাইনগুলো আপনারা চেক করে দেখুন আরবীর ওই অংশের বাংলা কোথায়? এবং বাংলার ঐ অংশের আরবী কোথায়? কোথাও বাদ গেছে, কোথাও আবার যা উঠে এসেছে তা সাল্লাবীর কথাই নয়।

 

চাইলে এমন মার্কিং করে পঞ্চাশ পৃষ্ঠা দিতে পারবো। সিয়ান কর্তৃপক্ষ যদি চান, তাহলে তাই করবো। এখন আমাদের প্রশ্ন কয়েকটি

 

১। মাসুদ শরীফের দাবী মতে বাংলা ভাষার সেরা সীরাতে কেন এমন খেয়ানত করা হলো? কেন পাঠকের সাথে প্রতারণা করা হলো? আর মাসুদ শরিফ নিজে আরবী না জেনে কী করে কোনো বই সম্পর্কে এমন পান্ডিত্যপূর্ন মতামত দেয়ার সাহস করে?

 

২। আবু তাসমিয়া আহমাদ রফিক সাহেব বইয়ের শুরুতে ভূমিকা লিখেছেন সম্পাদক হিসেবে। তিনি তাহলে কী সম্পাদনা করলেন? তিনি কি একবারও আরবীর সাথে মিলিয়ে দেখার সময় পাননি? এতই ব্যস্ততা তার?

 

৩। শুনলাম সিয়ানে নাকি কওমি পড়ুয়া কয়েকজনও কর্মরত আছেন। এই ভাইদের কাজটা আসলে কী? নিছক প্রুফ রিডিং, মকাপ তৈরী এসব ? নাকি বই প্রেসে যাওয়ার আগে একটু পড়ে চেক করে দেয়াও? এই বিষয়টা স্পষ্ট করে দেয়া দরকার। কারণ ইদানিং নতুন দুয়েকটি প্রকাশনী দেখছি দুয়েকজন কওমিয়ানকে প্রুফ রিডার বা গ্রাফিক্স ডিজাইনার নিয়োগ দিয়ে কাজ করায়। পরে বই নিয়ে বিতর্ক উঠলে বলে দেয় আমাদের এখানে কওমির শায়খ(!)রাও আছেন। তারাও এই বই চেক করেছেন। সর্বশেষ আরিফ আজাদের বই নিয়ে বিতর্ক উঠলে তখনও তারা এমন করেছিল।

 

শেষ কথা বলে নেই, এখানে শুধু আরবী জানা ব্যক্তিরাই কমেন্ট করবেন। যারা আরাবী জানেন না তারা সিদ্ধান্তমূলক কোনো কথা না বললেই ভাল হয়। নিশ্চয় যে বিষয়ে আপনার জ্ঞান নেই সে বিষয়ে কথা বললে জিজ্ঞাসিত হবেন। আরবী জানা আলেম এবং তালেবরাই বলুন, সিয়ানের এই অনুবাদে খেয়ানত হয়েছে কি হয়নি?

 

- আহমাদ আসেম

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

সিয়ান পাবলিকেশন-এর একটি বই আমি ১০০পৃষ্ঠা পড়েছি। কিন্তু কষ্টের বিষয় এ ১০০পৃষ্ঠাতে আমি ১০টি স্থানেরও অধিক জায়গায় অনুবাদ ছেড়ে দেওয়ার ত্রুটি দেখেছি।

#পাঠকদের_প্রতি

আপনার ভালো বই পড়ুন। এবং বই চয়নে খুব বেশি সচেতনতা অবলম্বন করুন। একটি বই আপনাকে যেমন সঠিক পথ দেখাবে, তদ্রুপ আপনাকে একটি বই সংশয়েও ফেলতে পারে। #so_be_careful

 

- আব্দুর রব কবির

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

সিয়ানের জবাব

 

সিয়ানে বর্তমানে অনুবাদ ও সম্পাদনা বিভাগে যারা কাজ করেন তাদের মধ্যে বেশ ক’জন আছেন কওমি থেকে লেখাপড়া করা। তাদের মধ্য থেকে সহ:সম্পাদক পদাধিকারী একজন এসে বলছিলেন যে, বাইরে থেকে সিয়ান সম্পর্কে যা শুনেছিলেন ভেতরে এসে নাকি দেখলেন সম্পূর্ণ অন্যরকম। বললাম, বাইরে কী শুনেছিলেন, আর ভেতরে কাজ করে বাস্তবে কী দেখলেন।

বললেন, বাইরে থেকে তো শুনেছেন, এটা বিশেষ ঘরানার, বিশেষ এজেন্ডা বাস্তবায়নে দিবানিশি কাজ করে যাচ্ছে; আর ভেতরে এসে দেখলেন যে, এখানে কেবলমাত্র ইসলামেরই চর্চার চেষ্টা করা হয়—অত্যন্ত সহনশীলভাবে। সিয়ানের একমাত্র ঘরানা ইসলাম। সিয়ানে কর্মরতদের কখনও কোনো ষঢ়যন্ত্র শেখানো হয় না; কোনো বিশেষ ঘরানার দালালি কিংবা কোনো বিশেষ ঘরানার প্রতি এখানে বিদ্বেষ পোষণ করা হয় না। যে যেখানে যতটুকু সত্যপন্থি সিয়ান সেখানে তার পক্ষে।

সিয়ান একটি কাজকে যতটা স্তরে যাচাই-বাছাই করা সম্ভব তা করতে কখনও কার্পন্য করে না। একারণে সকাল সন্ধ্যা গণ্ডায় গন্ডায় বই সিয়ান বেরও করতে পারে না; এবং একারণে বানিজ্যিকভাবে মারাত্মক ঝুকিও মোকাবেলা করতে হয় সিয়ানকে।

বইয়ের অনুবাদ-সম্পাদনার কাজের সাথে যারা জড়িত তারা জানেন, দ্বিতীয় ভাষা থেকে অনুদিত একটি বইকে চেক করার ক্ষেত্রে সবসময় মূল ভাষার শব্দে-শব্দে, বাক্যে-বাক্যে, প্যারায় প্যারায় মেলানো অত্যন্ত কঠিন কাজ। এটা করার চেয়ে নতুন করে অনুবাদ করা সহজ। খুব ক্রিটিক্যাল বিষয় ও সমস্যা না হলে সেটা সাধারণত করাও হয় না। সম্পাদকগণ কোথাও সমস্যা আঁচ করলেই কেবল শব্দ-বাক্য মিলিয়ে দেখে থাকেন।

সিয়ানে যারা কাজ করেন তারা সবজান্তা নন। তাদের দ্বারাও ভুলত্রুটি হওয়া অসম্ভব নয়। তবে এটাও সত্য যে খুব সিলি পর্যায়ের ভুল আলহামদুলিল্লাহ এখনও পর্যন্ত কোথাও তাদের থেকে প্রকাশ পায়নি।

একই সাথে এটাও প্রমানিত যে সিয়ানের যেকোনো কাজের ভুলত্রুটি কেউ আমাদের ধরিয়ে দিলে তা শোধরানোর মতো সৎসাহস আল্লাহ সিয়ান কর্তৃপক্ষকে দিয়েছেন আলহামদু লিল্লাহ।

আমরা আগেই বলেছি যে, আমরা সাল্লাবি সিরিজের আবু বাক্‌র, ‘উমার ও উসমানের জীবনী ইংরেজি থেকে অনুবাদ করিয়েছি। এরপর সম্পাদক মহোদয় সম্পাদনা করেছেন। অনেক জায়গায় মূল আরবির সাথে সামঞ্জস্য বিধানের জন্য সংশোধনীও এনেছেন।

উল্লেখ্য যে, সীরাতুন নাবী এবং এরপর আলী (রা.) থেকে আমরা আরবি থেকে করা শুরু করেছি।

এক ভাই ড. সাল্লাবির আবু বাক্‌র (রা.) এর জীবনীর একটি জায়গায় ইমাম আবু হানিফা রহিমাহুল্লাহর নাম উল্লেখ না করার একটি প্রসঙ্গের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। এখানে মূল যে বিষয়বস্তু এসেছে তাতে কোনো হেরফের হয়নি।

‘প্রথম ইসলাম গ্রহণকারী কে’ তা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন মতের মাঝে সমন্বয় সাধক হিসেবে ইমাম ইবনু কাসিরের নাম এসেছে। এ প্রসঙ্গে ইমাম ইবনু কাসীরের যে বক্তব্য এসেছে সেই বক্তব্যের মাঝে এ কথাটিও ছিলো যে, সমন্বয় সাধনের এ কাজটি ইমাম আবু হানিফা রহিমাহুল্লাহ করেছেন।

সমস্যাটা হোলো, দারুস সালামের যে ইংরেজি অনুবাদ থেকে আমরা বাংলা করেছি সেখানে ভুলক্রমে (নাকি ইচ্ছাকৃত আমরা জানি না; তবে আমরা কোনো মুসলিমের প্রতি আগেই কুধারণা থেকে বিরত থাকতে চাই; তাই এটাকে ভুলক্রমেই বলব) একাধিক মতের মধ্যে সমন্বয়কারি হিসেবে ইমাম ইবনে কাসিরের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। ইমাম ইবনে কাসীর যে ইমাম আবু হানিফাহর কথা উল্লেখ করেছেন, সে অংশটুকু ইংরেজি অনুবাদে আসেনি। স্বাভাবিক কারণে সিয়ানের অনুবাদেও আসেনি।

আর এটা এমনই একটি বিষয় যেটা সম্পাদক মহোদয়ের পক্ষে সহজে আঁচ করা সম্ভবও নয়; কারণ এমন অসংখ্য বিষয়ে ইমাম ইবনে কাসীর নিজে সমন্বয় সাধন করার দৃষ্টান্ত রয়েছে।

তারপরও বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিগোচর না হওয়ার কারণে আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। আমরা পরবর্তী মুদ্রনে মূল আরবি অনুযায়ী সংশোধন করে দেব ইনশা আল্লাহ।

যে ভাই বিষয়টি আমাদের দৃষ্টিতে এনেছেন তাকে আন্তরিক ধন্যবাদ। আরও কোনো বিষয়ে যে কেউ আমাদের কোনো ভুলত্রুটি আমাদের গোচরে আনবেন তাদের সকলকে আগাম ধন্যবাদ। সকলের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা। আমাদের যত বেশি ভুল তারা ধরিয়ে দেবেন আমাদের কৃতজ্ঞতার মাত্রা ততই বৃদ্ধি পাবে।

যে-কারও ধরিয়ে দেওয়া যেকোনো ভুল আমরা যাচাই সাপেক্ষে সংশোধন করে নিতে সিয়ান কর্তৃপক্ষ সবসময় প্রস্তুত ইনশা আল্লাহ।

(সংযুক্তি: মূল আরবির একটি কপি ও দারুস সালামের সংশ্লিষ্ট কপির স্ক্রিনশট)

 

  • আবদুল্লাহ আল ফারুক আমার একটা প্রশ্ন। বাংলাদেশে কি আরবি থেকে অনুবাদ করার লোক খুব কম? সে তুলনায় ইংরেজি থেকে সার্থক অনুবাদ করার লোক বেশি? যদি তেমনটি না হয়ে থাকে তাহলে কেন ইংরেজি থেকেই অনুবাদ করতে হবে?
    কোনো খাবার যদি আপনি সরাসরি সামনে থেকে খেতে পারেন তাহলে সেটা মাথার পেছন থেকে ঘুরিয়ে এনে খাওয়ার কী দরকার!
    কোনো বইয়ের আরবি ও ইংরেজি, দুটো সংস্করণই যেখানে সহজলভ্য, সেখানে এ ধরনের ঘুরতি পথ মাড়ানো আমার দৃষ্টিতে অযৌক্তিক ও প্রশ্নবিদ্ধ।
    মূল বই যদি সহজলভ্য হয়ে থাকে তাহলে ভায়া ভাষার বই অনুবাদের জন্যে চূড়ান্ত করা অনুচিত।

SEAN Publication কেন আমরা ইংরেজি থেকে অনুবাদের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম এবং কেন আবার সেখান থেকে আরবিতে রুজু করেছি সে ব্যাখ্যা সম্পাদক মহোদয় আবু বাক্‌রের জীবনীর সম্পাদকীয়তে দিয়েছেন। বাকি মানুষের কোনো সিদ্ধান্তই ঠিক-বেঠিক হওয়ার বাইরে নয়। আর কোনো আরবি বইয়ের অনুবাদ যারা আরবি থেকে করার দাবি করেন তাদের বড় একটা অংশ মূলত আরবি থেকে অনুবাদের দাবি করলেও বাস্তবে উর্দু দেখে অনুবাদ করেন। এটা আমাদের বাস্তব অভিজ্ঞতা। আর মানের দিক থেকে অধিকাংশ ক্ষেত্রে উর্দু অনুবাদের চেয়ে ইংরেজি অনুবাদ ভালো হয়ে থাকে। আর তিক্ত হলেও এটা সত্য যে, সত্যিই এদেশে মানসম্মত আরবি অনুবাদকের সংখ্যা কম। চলতি দশকে যদিও সংকট কিছুটা কেটেছে। যা-ই হোক, আমরা আপনার মতকে সমর্থন করছি। যেকোনো বই মূল ভাষা থেকে অনুবাদ হওয়াই শ্রেয়।

  • Sultan Mahmood প্রফেসর হজরতের কিতাব ছাপার প্রকাশনী মাকতাবাতুল ফুরকানও ইংরেজি অনুবাদ থেকে বাংলা করে । এটা তুলনামূলক অনির্ভরযোগ্য হয়ে পড়ে । অনুবাদের ক্ষেত্রে অনুবাদক যদি নিজ ঘরানার বিপরীত বা ভিন্ন ঘরানার পক্ষের কোন টপিক ইচ্ছা করে এড়িয়ে যায় বা মিথ্যা লিখে দেয় - সেটা চরম পর্যায়ের জালিয়াতি । প্রয়োজনে অনুবাদক বা সম্পাদক কর্তৃক টিকা সংযোজন হতে পারে ফুটনোটে । কিন্তু একেবারেই গায়েব করে দেওয়া হতাশাজনক । আর এদেশে এত বড় বড় শায়খ, মাওলানা, মুফতি, আদব বিভাগের উস্তাদ ছাত্র, মক্কা-মদিনা-আজহার ও অন্যান্য আরব বিশ্বে পড়াশোনা করা মানুষ থাকার পরেও কেন সরাসরি আরবি থেকে অনুবাদ করা যাবে না ? প্রয়োজনে কয়েকজন মিলে হোক, প্রয়োজনে ইংরেজি ও উর্দুর সাহায্যই নেওয়া হোক - কিন্তু মূল কপি থেকেই হোক - এটা কামনা করি ।

 

  • Amimul Ehsan SEAN Publication
    আলহামদুলিল্লাহ এখন আরবি হতে অনুবাদ করছেন অনেকে । আল্লাহ্ সকলের খেদমত কবুল করেন ।

 

আবদুল্লাহ আল ফারুক এদেশে আরবি থেকে মানসম্মত অনুবাদকের সংখ্যা ও মান ইংরেজি থেকে মানসম্মত অনুবাদকের চেয়ে অবশ্যই বেশি। বিশেষত, যাদেরকে এখন ইংরেজি থেকে অনুবাদ করতে দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন বিষয়ে তাদের কারো কারো সঙ্গে মতবিনিময় করার সময় মনে হয়েছে, তারা এখনো ধর্মীয় পড়াশুনাতেই যথেষ্ট পিছিয়ে আছেন। বিষয়টি নৈর্ব্যাক্তিক হিসেবে বললাম।
রাফাত পাশা, সাল্লাবি ও সিরজানির এমন অনেকগুলো বইয়ের অনুবাদ বেরিয়েছে, যেগুলোর উরদু অনুবাদ এখনো হয়নি। সালাফদের এমন ভুরি ভুরি বইয়ের অনুবাদ বেরিয়েছে, যেগুলো সরাসরি আরবি থেকে অনুবাদ। জিয়াউর রহমান মুনশী, আবদুল সাত্তার আইনী, আবদুল্লাহ আল মাসঊদ, আবু মুসআব উসমান সহ এমন অজস্র অনুবাদকের নাম বলতে পারব, যারা উরদুর তুলনায় আরবি থেকে অনুবাদ করতেই বেশি সাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। এবং তাদের পড়াশুনার ব্যপ্তি অনেক বিস্তৃত। আমি তো প্রতিষ্ঠিত কয়েকজন অনুবাদকের নাম বললাম। এর বাইরে প্রচুর যোগ্য অনুবাদক ইতোমধ্যে নিজেদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রাখতে শুরু করেছেন।
আপনারা যদি এই একবিংশ শতাব্দীতেও আরবি থেকে প্রাজ্ঞ অনুবাদক খুঁজে না পান তাহলে সেটা দুঃখের বিষয়।

 

Amimul Ehsan আবদুল্লাহ আল ফারুক
আরবি জানা অনুবাদক কম নয় । মূল আরবি হতে অনুবাদ না করলে ভুল হওয়া একেবারে স্বাভাবিক । আমাদের মাদানী কুতুবখানার অধিকাংশ বাংলা বই আরবি হতে অনূদিত ।
সমকালীন প্রকাশনীর একটি বইয়ে যয়িফ হাদিসকে দুর্বল হাদিস হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে । পারিভাষিক ও শাস্ত্রীয় জ্ঞানের অভাবে এমন হচ্ছে । ইংরেজি উর্দু হতে অনুবাদের আগে মূল টেক্সট দেখা জরুরি ।

Muhammad Saowabullah আবুল হাসান আলা নদভী রহি. বেশিরভাগ কিতাব উর্দু থেকে অনুবাদ হওয়া। অথচ তিনি বেশিরভাগ কিতাবই লিখে গেছেন আরবিতে। আনওয়ার শাহ কাশ্মিরীর কিতাবগুলো আরবিতে দেখে তা কওমি প্রতিষ্ঠানগুলো অনুবাদ করে না। সর্বসাকুল্য একটা মাত্র কিতাব অনুবাদ হয়েছে। কিন্ত তিনি যদি উর্দুতে লিখতেন তাহলে থানভী রহি. এর কিতাবের মত তার কিতাবও অনুবাদ হওয়া থেকে বাদ পরত না। সত্যিকার অর্থেই মানসম্মত আরবি থেকে বাংলা ভাষায় অনুবাদ করার মত লোক কম।

আবদুল্লাহ আল ফারুক Muhammad Saowabullah দারুল উলূম দেওবন্দের প্রতিষ্ঠাতা কাসেম নানুতুবি রহ. এর উরদু রিসালাগুলোও বাংলায় অনূদিত হয়নি। গাঙ্গুহি রহ. এর উরদু রিসালাগুলোও অনূদিত হয়নি। তো কী হলো!!
আর কাশ্মিরি রহ. এর বেশির ভাগ রিসালা তাঁর ছাত্রদের সংকলন করা।
আজ বিভিন্ন প্রকাশনীতে আরেফি, আওদাহ, সাল্লাবি, মুনাজ্জিদদের যেসব বই দেখতে পাচ্ছেন, তার 95% ভাগ কওমি ব্যাকগ্রাউন্ডের ছাত্রদের অনুবাদিত। সালেহ আল মুনাজ্জিদের অনুবাদ আজ থেকে 6 বছর আগে আযহার থেকে বেরিয়েছিল। নাম, ভুল সংশোধনের নবীজির শিক্ষা। তখন এসব প্রকাশনীর জন্মও হয়নি।
কথা বলা উচিত প্রমাণ সহকারে। মুখস্থ কথা বললে মূল্য কমে যায়।

 

মাসুদ শরীফ আবদুল্লাহ আল ফারুক ভাই, আপনি এই জগতের ভেতরের লোক। কিন্তু সিয়ানের ভেতরের লোক না। এজন্য অনেক কিছুই জানেন না। না জেনে মন্তব্য করা কি ঠিক?

সিয়ান সাল্লাবি সিরিজ কোন সালে শুরু করেছিল তা আপনি জানেন বলে মনে হচ্ছে না। তখন আপনিই বা কোথায় ছিলেন জানি না। ২০১৩/১৪ সালের দিকে ইসলামি সাহিত্য আজকের অবস্থানে ছিল না। পেছনের আরও অনেক কথা আছে। চাইলেই আপনি ইচ্ছেমতো একজন অনুবাদকের স্কিডিউল না-ও পেতে পারেন। যাহোক, এসব কিছু আপনার এখন ভালো জানার কথা। তারপরও এই ধরনের মন্তব্য যে কেন করেন বুঝে আসে না। আপনারা প্রকাশনার ভেতরের লোকে খামখেয়ালি মন্তব্য করলে সাধারণ পাঠক আরও বিভ্রান্ত হবে।

যেকজন অনুবাদকের নাম আপনি উল্লেখ করেছেন, এবং করেননি তাদের কাউকে কাউকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। কারও কারও কাজ দেখে চিনি। অজস্রের মধ্যে আমার ব্যক্তিগত বিবেচনায় ৯৯০ জনেরই সাহিত্যমান তথৈবচ। মুহাম্মাদ যাইনুল আবিদীনের সাহিত্যের ক্লাস বইতেও এর প্রমাণ আছে। এদের অনেকেই সম্ভবত ২০১৫ সালের দিকেও অত পরিচিত ছিলেন না। ভুল হওয়া অতি স্বাভাবিক হওয়ার পরও আপনারা জ্ঞানবান লোকেরা যা করছেন, তা লজ্জাজনক।

প্রত্যেকটা প্রকাশনীর নিজস্ব নীতিমালা মানদন্ড থাকে সাহিত্যমান বিবেচনার। হতে পারে তখন আরবি থেকে বাংলায় তাদের বিবেচনায় সাহিত্যমান উত্তীর্ণ অনুবাদক পায়নি। বা আরও অনেক কারণ থাকতে পারে। কিন্তু, একজন প্রকাশনা-সংশ্লিষ্ট লোক কীভাবে এরকম ধরনের একাধিক মন্তব্য করে যেতেই থাকেন, এটা বুঝতে পারছি না। নাকি সমস্যাটা অন্য কোথাও?

মাসুদ শরীফ আবদুল্লাহ আল ফারুক কোনো অপ্রাসঙ্গিকতা নেই৷ আপনিও জানেন, আপনার উত্তর পেয়েছেন৷ ধারণাপ্রসূত কিছু কথা বলে এখন সালাম দিয়ে বিদায় নিতে চাচ্ছেন৷ নেন৷ প্রকাশনা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি হিসেবে দায়িত্বপূর্ণ মন্তব্য আশা করব আপনার কাছ থেকে৷

  •  

মাসুদ শরীফ বিয়ের ৯ মাসের মাথায় তাসকিনের কীভাবে বাচ্চা হলো, সে-সম্বন্ধে তাসকিনের ব্যাখ্যার মতো হয়ে গেছে বিষয়টা।

অনুবাদ-সম্পাদনা সম্বন্ধে ধারণা না থাকা কারও পক্ষেই এমন প্যাঁচ বের করা সম্ভব। আর অনুবাদ কেন ইংরেজি থেকে করা হলো এটাও তাদের এক বিদ্বেষী মনোভাব থেকে করা মন্তব্য। কোনো সমস্যা না পেয়ে এটাই এখন তাদের সমস্যা হয়ে গেছে। দেশি-বিদেশি প্রকাশনা জগতে অনুবাদের হালচাল সম্বন্ধে যে এরা একেবারেই অজ্ঞ, তাও বোঝা যাচ্ছে।

 

 

  • Imran Raihan এই বইতে এমন মিসিং আরো আছে৷ সেগুলোর তালিকা দিবো নাকি এর আগেই আপনারা কোনো ব্যখ্যা হাজির করবেন?

 

  •  

MD Eyasin Arafat ৪৮০ পেজের একটা বই ৭৫০ টাকা... অকল্পনিয়!! আবেগ দিয়ে বেশি দিন ধরে রাখা যায় না...

SEAN Publication ৩০-৩৫% ছাড়ের কথা বেমালুল ভুলে গেলেন।

MD Eyasin Arafat SEAN Publication ভাইয়া তার পরেও ত ৫২৫ টাকা!!

Mahmudul Hasan Css MD Eyasin Arafat ৩০-৩৫% ছাড়ের পর যে বইয়ের দাম ৫২৫ টাকা সে বইয়ের কলেবর নিঃসন্দেহে বেশি।

 

  • Shahnewaj Rana ভাই এটা একমত যে দামটা অন‍্য প্রকাশনীর তুলনায় কিছুটা বেশি।বাট পেপার,বাইন্ডিং,এডিটিং,সরবোপরি বিশুদ্ধতা অন‍্য প্রকাশনীর থেকে কয়েককাঠি উপরে সিয়ান।সেই দিক থেকে বিচার করলে ঠিক আছে।

 

MD Eyasin Arafat Mahmudul Hasan Css ৪৮০ পেজ...

 

 

  •  

পাগলা ফকির সিয়ান এতো নীতিবাক্য বলেন যা আকর্ষনীয়। মেহেরবানী করে বলবেন কি দাম বাড়িয়ে ধরে ডিসকাউন্ট দেয়াটি শরিয়তের কোন ধরনের নীতিমালায় পড়ে ?
SEAN Publication

 

  •  

Umar Ibn Khattab ভাই আপনাদের এত সমস্যা থাকলে সিয়ানের বই পড়তে বলসে কে? নাকি সিয়ানের বই ছাড়া আর কোনো বই নাই বাজারে ? সিয়ানের বিশেষত্বই এখানে ,যে কেউ সিয়ানের বই দেখেই এটি পড়ার জন্য ভেতরে একটা আকর্ষণ অনুভব করে,তারপর বইটি পরে মুগধ হয়ে যায়। আমাদের বরং প্রাউড ফিল করা উচিত যে আমাদের যে ইসলামী বই গুলো বের হচ্ছে তার মান স্যেকুলারদের বই থেকে অনেক উত্তম