বন্ধু নির্বাচনে সতর্ক হোন
কলমেঃ ইশরাক আবিদ
বন্ধু একটি আত্মবিশ্বাস, আস্থা ও ভালোবাসার নাম। পৃথিবীতে এমন কাউকে পাওয়া যাবে না যে তার জীবনে বন্ধু আসেনি বা তার কোনো বন্ধু নেই। সবাই কাউকে না কাউকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে। মানুষ বন্ধ ছাড়া একাকী জীবন কাটাতে পারে না। সমাজে বসবাস করতে গেলে প্রতিবেশীর পাশাপাশি ভালো বন্ধুর প্রয়োজন আছে। সুখে-দুঃখে একজন বন্ধু থাকা প্রয়োজন। হতে পারে আপনার একজন বন্ধু আপনাকে ঠকিয়া পালিয়ে গেছে আর না হয় নিজের ভেবে আগলে রেখেছে। আপনি এই দুই প্রকার বন্ধুর মধ্যে হয়ত একজন কে পেয়াছেন। অনেক বন্ধু আছে যে নিজের স্বার্থের জন্য বন্ধুত্ব স্থাপন করে। প্রয়োজন শেষে আবার বন্ধুত্বের বাধন ছিন্ন করে। এখন কথা হচ্ছে সবাই তো বন্ধু পেয়ে থাকে কিন্তু বন্ধু দ্বারা আপনি উপকৃত হন, নাকি ক্ষতিগ্রস্ত হন।
যদিও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়াটা আপনি তেমন ভাবে নিচ্ছেন না। কিন্তু এই ক্ষতিগ্রস্ত আপনাকে এক গভীর কুয়ার মধ্যে নিক্ষেপ করবে। আপনি কখনো সেখান থেকে বের হতে পারবেন না। আর যদি আপনি বুঝতে পারেন বন্ধু দ্বারা উপকৃত হন তাহলে অবশ্যই আপনি ভালো বন্ধু গ্রহণ করেছেন। একজন বন্ধু দ্বারা আপনি উপকৃত হবেন আর না হয় ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আমি আপনাকে দুনিয়ায়বি লাভ বা ক্ষতির কথাই শুধু বলছি না। দুনিয়ায় পাশাপাশি পরকালের জীবন নিয়েও লাভ বা ক্ষতির কথা বলছি। দুনিয়ায় জীবন তো স্থায়ী একদিন না একদিন শেষ হবে। পরকাল হলো অস্থায়ী যার শুরু আছে শেষ নেই। তাই বন্ধু হতে হবে দুনিয়ায়র চেয়েও বেশি আখিরাতমুখী। মানুষের কল্যাণকামী সবার প্রিয় ব্যক্তি।
বন্ধু নির্বাচন এর আগে আপনি কি করবেন? কি করলে ভালো বন্ধু পাবেন তার কয়েকটি পয়েন্ট নিয়ে আমি আজকে আমার ব্যক্তিগত মতামত দিবো যেগুলো দেখলে আপনি খারাপ বন্ধু থেকে দূরে থাকতে পারবেন এবং একজন প্রকৃত বন্ধুকে গ্রহণ করতে পারবেন “ইনশাআল্লাহ”
আমরা সকলেই আমাদের জামা-কাপর কিনতে গেলে যাচাই বাছাই করে কিনি, কোন কাপড়টা ভালো, কোন কাপড়টা ভালো, তা বাছাই করে নিই। সাধারণ ভাবেই আমরা কোনো খারাপ কাপড় কিনি না।
আমরা ভালো ও সুন্দর সুন্দর কাপড় কিনি এই কারণে ভালো কাপড় পড়লে আমার সম্মান বাড়বে আমার সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে। সকলে আমাদের কে রুচিসম্মত ব্যক্তি হিসেবে দেখবে ইত্যাদি। আমরা সব সময় আমাদের নিজেদের জন্য ভালো কিছু গ্রহণ করি। আর এটাই মানুষের স্বভাব। কেউ কোনো দিন নিজের ক্ষতি চাই না। সব সময় নিজের জন্য ভালো কিছু পাওয়ার প্রত্যাশা করে।
আমরা সব কিছুর ক্ষেত্রেই ভালোটা গ্রহণ করি ঠিকই কিন্তু কখনো বন্ধু নির্বাচনে সময় যাচাই-বাছাই করি না। যে আপনার জীবনের একটি অংশ হয়ে থাকবে সে ভালো নাকি খারাপ তা আমরা কখনো যাচাই করি না। অথচ একজন বন্ধু আপনার জীবনের কিছু অধ্যায় পরিবর্তন করে দিতে পারে।
আমি আপনাকে বলছি কখনো বন্ধু নির্বাচনে ভুল পদক্ষেপ নিবেন না। কারণ একটি ভুল নির্বাচন এর মাধ্যমে আপনার জীবন গভীর অন্ধকারে হারিয়ে যেতে পারে। হতে পারে সেখান থেকে বের হতে পারবেন না। অথবা বিকল্প কোনো রাস্তাও পাবেন না। কিছু কিছু ক্ষতি আছে যা মানুষের জীবনে একবার ঘটে গেলে আর কোনো দিনও ফিরে পাওয়া জায় না। তাই সাবধান!
বন্ধু নির্বাচন এর সময় যদি আপনি ভুল বন্ধুকে গ্রহণ করেন তাহলে আপনাকে সারাজীবন হয়ত আফসোস করতে হবে। একজন খারাপ বন্ধু আপনার দ্বীন দুনিয়ায় সব ধ্বংস করে দিবে। আপনি কখনো তার দ্বারা ভালো কিছু আশা করতে পারবেন না। একজন খারাপ বন্ধু আপনাকে নেশার দিকে আহ্বান করবে এমনকি জেনা- ব্যভিচার সহ নিকৃষ্ট পাপ কাজ করতে আপনাকে উদ্বুদ্ধ করবে। একজন খারাপ বন্ধু আপনার ইমান আমল সব কেড়ে নিবে। আপনাকে ধ্বংসের মুখে দ্বার করাবে। ঠিক তার উলটো একজন ভালো বন্ধু আপনাকে জাহান্নামে থেকে টেনে নিয়ে জান্নাতের পথ দেখাবে, আলোর পথ দেখাবে, সিরাতুল মুসতাকিম এর পথে দেখাবে। একজন প্রকৃত দিনদার মুত্তাকি বন্ধুই কিন্তু আপনাকে সব সময় ভালো কিছুর দিকে আহ্বান করবে এবং তারাই কিন্তু জান্নাতের মাধ্যম হতে পারে। মুত্তাকী বন্ধু জীবনের গতিই পালটে দিতে পারে। নানান রঙ্গে রাঙ্গিয়ে দিতে পারে আপনার পুরো জীবন। প্রবাদে আছে “সৎ সঙ্গে স্বর্গবাস অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ” একজন দিনদার মুত্তাকী বন্ধু আপনাকে ভালো কাজের আদেশ দিবে খারাপ কাজ থেকে নিষেধ করবে। আপনাকে ভালো পরামর্শ দিবে। আপনাকে তার নিজের আপন করে নিবে। এবং আপনাকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করবে। আপনাকে একজন চরিত্রবান মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। আপনার জন্য ত্যাগ স্বীকার করতেও রাজি থাকবে।
দেখুন তো আপনার ফ্রেন্ড সার্কেল এর মধ্যে এমন কোনো বন্ধু আছে কি না। যে আপনাকে ভালো কাজের দিকে আহ্বান করে, খারাপ অশ্লীল কাজ থেকে নিষেধ করে। আপনাকে কি কখনো নামাজের দিকে আহ্বান করেছে নাকি আপনার ক্ষতির হয় এমন কিছুর দিকে আহ্বান করেছে ভাবুন তো আপনার উপকার হয় এমন কোনো কাজ করেছে কিনা। আপনি যখন বিপদে ছিলেন আপনার ডাকে সে কি সাড়া দিয়েছে নাকি নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে। মনে রাখবেন যদি ফ্রেন্ড সার্কেল এর মধ্যে খারাপ বন্ধু থাকে তাহলে কিন্তু পুরো ফ্রেন্ড সার্কেলকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্য একজন খারাপ বন্ধুই যথেষ্ট। মাদক গ্রহণ আর নেশা দিয়ে আপনার জীবনেকে ধোঁয়াটে করে দিবে। আজকাল সমাজে একজন মানুষ ভালো বন্ধু না পাওয়ার কারণে। বিভিন্ন প্রকার খারাপ ও অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়তেছে। বেশির ভাগ মানুষ খারাপ হয় নেশা গ্রস্থ বন্ধুদের দ্বারা।
তাই প্রকৃত বন্ধুর খোজ করুন। প্রকৃত বন্ধু প্রয়োজনের সময় নিজেকে গুটিয়ে নেয় না। বরং প্রকৃত বন্ধু বিপদের সময় সবার আগে আপনার পাশে দাঁড়ায়। হাদিসে এসেছে
ভালো বন্ধুর উদাহরণ হচ্ছে আতর বিক্রেতার ন্যায় আর খারাপ বন্ধুর উদাহরণ হচ্ছে কামারের ন্যায়। (বুখাররী ও মুসলিম)
অর্থাৎ ভালো বন্ধুর কাছে গেলে সে আপনাকে আতর উপহার দিবে আর নাহয় তার কাছে গেলে সুঘ্রাণ পাবেন। আর কামারের নিকট গেলে তার কাছে থেকে উত্তাপ আর দু্রগন্ধ ছাড়া কিছুই পাবেন না।
একজন প্রকৃত বন্ধু নির্বাচনের সময় আপনি অন্ততপক্ষে যে কয়েকটি পয়েন্ট দেখবেন তা সংক্ষিপ্ত ভাবে নিচে তুলে ধরলাম।
=> বিধর্মীঃ একজন মুসলমানের জন্য এটা শোভনীয় নয় যে মুমিনদের রেখে সে বিধর্মীকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করবে। কুরআনে অনেক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বিধর্মীদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন। আর যদি বিধর্মীকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করি তাহলে আল্লাহ তায়ালা সাথে তার কোনো সম্পর্ক রাখে না। আল্লাহ তায়ালা সূরা আলে ইমরানের ২৮ নম্বর আয়াতের প্রথম অংশে বলেন-
لَّا يَتَّخِذِ ٱلْمُؤْمِنُونَ ٱلْكَٰفِرِينَ أَوْلِيَآءَ مِن دُونِ ٱلْمُؤْمِنِينَ ۖ وَمَن يَفْعَلْ ذَٰلِكَ فَلَيْسَ مِنَ ٱللَّهِ فِى شَىْءٍ.........
মুমিনরা যেন মুমিনদের ছাড়া কাফিরদেরকে বন্ধু না বানায়। আর যে কেউ এরূপ করবে, আল্লাহর সাথে তার কোন সম্পর্ক নেই। [সূরা আলে ইমরান ৩ঃ২৮]
বিধর্মীকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করলে তারা আপনার ক্ষতি করবে। তারা কখনো আপনার কল্যাণ কামন করবে না। নিম্নোক্ত আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা আমাদের সতর্ক করেছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
يَٰٓأَيُّهَا ٱلَّذِينَ ءَامَنُوا۟ لَا تَتَّخِذُوا۟ بِطَانَةً مِّن دُونِكُمْ لَا يَأْلُونَكُمْ خَبَالًا وَدُّوا۟ مَا عَنِتُّمْ قَدْ بَدَتِ ٱلْبَغْضَآءُ مِنْ أَفْوَٰهِهِمْ وَمَا تُخْفِى صُدُورُهُمْ أَكْبَرُ ۚ قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ ٱلْءَايَٰتِ ۖ إِن كُنتُمْ تَعْقِلُونَ
হে মুমিনগণ, তোমরা তোমাদের ছাড়া অন্য কাউকে অন্তরঙ্গ বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তারা তোমাদের সর্বনাশ করতে ত্রুটি করবে না। তারা তোমাদের মারাত্মক ক্ষতি কামনা করে। তাদের মুখ থেকে তো শত্রুতা প্রকাশ পেয়ে গিয়েছে। আর তাদের অন্তরসমূহ যা গোপন করে তা অধিক ভয়াবহ। অবশ্যই আমি তোমাদের জন্য আয়াতসমূহ স্পষ্ট বর্ণনা করেছি। যদি তোমরা উপলব্ধি করতে। [সূরা আলে ইমরান ৩ঃ১১৮]
একজন বন্ধু সাথে সঙ্গ দিলে সে তার স্বভাব গ্রহণ করে থাকে তাই হাদিসে এসেছে রাসুল (সা.) বিধর্মীদের বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করতে নিষেধ করেছেন।
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন মানুষ তার বন্ধুর রীতিনীতির অনুসারী হয়। কাজেই তোমাদের প্রত্যেকেই যেন লক্ষ্য করে, সে কার সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে। [সুনান আবূ দাউদ ৪৮৩৩,] তিরমিযী, আহমাদ।
=> দ্বীনদারঃ একজন দ্বীনদার-আল্লাহভীরু বন্ধু পরকালেও আপনার বন্ধু হিসেবে থাকবে এবং সে যদি জান্নাত লাভে ধন্য হয় তাহুলে আপনার জন্যও সে সুপারিশ করবে কখনো আপনাকে দূরে ঠেলে দিবে না। অর্থাৎ ইহকাল পরকাল উভয় আপনার জন্য উপকার করবে। পরকালেও আপনার সাথে থাকবে যেমনি ভাবে দুনিয়ায় আপনার সাথে থেকেছিল। উভয় জগতে এ বন্ধু অটুট থাকবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
الأَخِلّاءُ يَومَئِذٍ بَعضُهُم لِبَعضٍ عَدُوٌّ إِلَّا المُتَّقينَ
বন্ধুবর্গ সেদিন একে অপরের শত্রু হবে, তবে আল্লাহভীরুরা নয়। [আয্-যুখরুফ ৪৩:৬৭]
=> কৃপনঃ বন্ধু হতে পারে আপনার বিপদের দিনে একমাত্র সাহায্যকারী। যদি বন্ধুকে বিপদের দিনে পাশে পাওয়া না জায় তাহলে বুঝে নিবেন সে আপনার প্রকৃত বন্ধু না। বিপদের দিনে আপনি তাদের কখনো পাশে পাবেন না। সব সময় তারা বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে আপনার থেকে দূরে সরে যাবে। কৃপণ ব্যক্তিরা কারো বন্ধু হওয়ার যোগ্যতা রাখে না। আর কৃপণতা একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। আল্লাহ তায়ালা কৃপণ ব্যক্তিকে পছন্দ করে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন-
الَّذينَ يَبخَلونَ وَيَأمُرونَ النّاسَ بِالبُخلِ وَيَكتُمونَ ما آتاهُمُ اللَّهُ مِن فَضلِهِ وَأَعتَدنا لِلكافِرينَ عَذابًا مُهينًا
আর যারা নিজেরা কৃপণ এবং অন্যকে কৃপণতা করতে উৎসাহিত করে (বা দানে নিরুৎসাহিত করে) এবং আল্লাহর অনুগ্রহ-সম্পদ গোপন করে, আল্লাহ তাদেরও অপছন্দ করেন। এ ধরনের অকৃতজ্ঞদের জন্যে আমি অপমানজনক শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছি।’ (সূরা নিসা ৪ঃ৩৭)
প্রকৃত বন্ধু যেমন সুখের দিনে আপনার সঙ্গ দিবে তেমনি ভাবে বিপদের দিনেও সবার আগে এগিয়ে আসবে। তাই কৃপণ বন্ধু থেকে দূরে থাকুন।
=> বাচালঃ অতিরিক্ত কথা বললে কথার মধ্যে ভুলভ্রান্তি হয়। ভুল-ভ্রান্তি হলে অনেক সময় গুনাহের মধ্যে পতিত হওয়ার সম্ভবনা থাকে। যে বন্ধুরা মিথ্যা কথা বলে, প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে, তারা আপনাকে কখনো ভালো পরামর্শ দিবেন না। এর পরিবর্তে আপনার চিন্তা ভাবনা কে বিগড়ে দিবে। বিনা প্রয়োজনে যারা অতিরিক্ত কথা বলে তারা কথার মাঝে অনেক মিথ্যা কথা বলে। আর মিথ্যা কথা বলা নেফাকের একটির মধ্যে পরে। হাদিসে এসেছে
হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘লজ্জা, সম্ভ্রম ও অল্প কথা বলা ইমানের দুটি শাখা। অশ্লীলতা ও বাকপটুতা (বাচালতা) নিফাকের (মুনাফিকির) দুটি শাখা।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২০২৭)
বাক্পটু লোকদের কাছ থেকে তেমন কিছু আশা করা জায় না। তারা অতিরিক্ত সময় ব্যয় করে অপ্রজনিয় কথা মধ্যে, যে কথাগুলো থেকে শিক্ষা নেওয়ার মত কিছু নেই। কথায় আছে “খালি কলসি বাজে বেশি” বাক্পটু লোকেরা তেমন হয়। তাদের দেখবেন অতিরিক্ত কথা বলবে কিন্তু কাজের কথা একটাও বলবে না। আল্লাহ তায়া’লা বাচাল ব্যক্তিদের ভালোবাসেন না। এই সম্পর্কে একটি হাদিস পেশ করা হলো-
হজরত জাবের রা. থেকে বর্ণিত: রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: তোমাদের যে ব্যক্তির চরিত্র ও আচরণ সর্বোত্তম, সে-ই আমার নিকট সর্বাধিক প্রিয় এবং কিয়ামাত দিবসেও আমার খুবই নিকটে থাকবে। তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি আমার নিকট সবচেয়ে বেশি ঘৃণ্য সে ব্যক্তি কিয়ামাত দিবসে আমার নিকট হতে অনেক দূরে থাকবে। তারা হলো: বাচাল, ধৃষ্ট-নির্লজ্জ এবং অহংকারে মত্ত ব্যক্তিরা। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ২০১৮)
=> বোকাঃ বন্ধুদের দ্বারা কখনো উপকৃত হওয়া যায় না বরং পদে পদে বিপদের সম্মুখীন হতে হয়। বোকা লোকদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করলে। তাদের কাছ থেকে কোনো কিছু শেখা তো দূরের করা ভালো কোনো পরামর্শ তাদের কাজ থেকে আশা করা যায় না। বোকা ব্যক্তি ও জ্ঞানী ব্যক্তি এক হতে পারে না। জ্ঞানী ব্যক্তি তারাই যারা সময়ের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারে। সব পরিবেশের সাথে লড়াই করতে পারে। এবং ধৈর্য ধারণ করতে পারে। বিপদ আসলে সহজেই বুদ্ধিমত্তার সাথে বিকল্প পদ্ধতি বের করতে পারে। অন্য দিকে বোকা ব্যক্তিরা আপনার সব সময় পাশে থাকলেও আপনার কোনো দিক দিয়েই উপকার করতে পারবে না। তারা আপনার বিপদের সময় বিপদ কে আরো বেশি বাড়িয়ে দিবে। তারা বিপদের মোকাবিলা করতে পারে না। বিপদ তাদেরকে জড়িয়ে ধারে, তারা বিপদের সময় এক ধাঁধা মধ্যে পড়ে জায়। সেখান থেকে বের হওয়ার পথ বের করতে পারে না।
এ ছাড়াও বোকা ব্যক্তিরা বেশির ভাগ সময়ে বিপদের মধ্যে পরে তাই আপনাকেও তার সাথে বিপদে ফেলতে পারে। বোকা লোকদের কর্মকাণ্ড বেশির ভাগ সময় লোকদের হাসি ঠট্টার কারণ হয়ে দারায় তাই বোকা বন্ধুর সঙ্গ দিলে লোকে আপনাকে বোকা ভেবে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবে।
=> বদ মেজাজঃ অনেক সময় বন্ধুর মাঝে কিছু ছোট খাটো বিষয় নিয়ে কথা কাটা কাটি হতে পারে এটা স্বাভাবিক কোনো মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। কিন্তু সামান্য বিষয় নিয়ে বদ মেজাজের স্বভাবের লোকগুলো তিল কে তাল ভেবে নেয়। তাই সেটাকে পাহাড় পরিমাণ দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে রাগারাগি শুরু করে। সে ভুলে জায় যে সে আমার বন্ধু। বদমেজাজের স্বভাবের মানুষ গুলো বেশির ভাগ সময় তাদের দেখা যায় একগুঁয়ে হয়ে থাকে এবং অহংকারী হয়। বদ মেজাজে লোকদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করলে কখনো আপনাকে এমন পরিস্থিতি সুম্মুখিন হতে হবে যে তারা তখন আপনাকে অপমান করতে দ্বিধা করবে না। মুহূর্তের মধ্যে আপনাকে অপমান করতে পারে। শুধু মাত্র একটি ছোট খাটো ভুলের জন্য। প্রকৃত বন্ধু কখনো ছোট খাটো ভুলকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করে না বরং উলটো আপনাকে সান্ত্বনা দিবে। আপনি ভুল করেছেন বলে আপনাকে কখনো দূরে ঠেলে দিবে না। বরং ভুল হয়েছে বলে আপনাকে বুকে জড়িয়ে নেবে। এছাড়া বদমেজাজের লোকদের সাথে কেউ বন্ধত্বস্থাপন করে না। তাদের কাছে কেউ পরামর্শ নিতে কিংবা সময় কাটাতে চায় না। বরং তাদের থেকে দূরে থাকে। আল্লাহ তায়ালে বদ মেজাজের লোকদের ঘৃণা করে। আর তারা সবার কাছে অপছন্দনীয় লোক বলে চিহ্নিত থাকে।
আল্লাহ তাআলা বলেন, .....নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো দাম্ভিক অহংকারীকে পছন্দ করেন না।’ সুরা : লোকমান : ১৮)
বদ মেজাজে লোক জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এই ব্যপারে রাসুল (সা.) একটি হাদিস বর্ণনা করেন
হাদিসে এসেছে, হারিস ইবনে ওয়াহাব (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, কঠোর ও রুক্ষ স্বভাবের মানুষ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (আবু দাউদ, হাদিস :৪৮০১)
তিনি আরো বলেন, ‘আমি তোমাদের কি জাহান্নামিদের কথা বলব না? তারা হলো, যারা অনর্থক কথা নিয়ে বিবাদ করে, আর যারা বদমেজাজি অহংকারী।’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫১০৬)
একজন ইমানদার মানুষ ভদ্র হয়ে থাকে সহজ সরল হয়, চরিত্রবান হয় আর আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন। কিন্তু বদমেজাজের মানুষগুলো কখনো চরিত্রবান হয় না। তাই চরিত্রবান আর চরিত্রহীন এই ২ শ্রেনীর লোকদের ব্যাপারে হাদিসে এসেছে।
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ঈমানদার মানুষ সরল ও ভদ্র হয়। পক্ষান্তরে পাপী মানুষ ধূর্ত ও হীন চরিত্রের হয়।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৬৪)
এই কয়েকটি পয়েন্ট-ই আপনাকে একজন প্রকৃত সৎ, চরিত্রবান, উত্তম, ও ভালো বন্ধু নির্বাচনে সহায়তা করবে।এছাড়াও ভালো ও খারাপ বন্ধুর মধ্যে পার্থক্য করলে আরো অনেক গুলো বিষয় চলে আসতে পারে আপনি সুস্থ মস্তিষ্কের ব্যক্তি হয়ে থাকলে আপনি নিজেই যাচাই করতে পারবেন। কারা ভালো, কারা খারাপ। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে ভালো মন্দের পার্থক্য করার জন্য একটি মস্তিষ্ক দিয়েছেন। আমি শুধু কয়েকটি মৌলিক বিষয় তুলে ধরলাম। বিশেষ করে এই কয়েকটি পয়েন্ট নিয়ে যদি আপনি কোনো বন্ধুকে যাচাই করেন তাহলে খারাপ বন্ধুদের থেকে দূরে থালতে পারবেন এবং একজন প্রকৃত বন্ধু পেয়ে জাবেন। এর পরে একটি বিষয় আসে আমাদের নিয়ত, আমরা যদি নিয়ত করি যে আমি একজন ভালো ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করবো তাহলে আপনি তাই পাবেন। কারণ তখন আপনি ভালো বন্ধুকে খুঁজতে শুরু করবেন। আর ভালো বন্ধুকে খুঁজতে গেলে ব্যক্তির মাঝে ভালো ভালো গুন খুঁজবেন খুঁজবেন। আর যদি আপনার নিয়ত ভিন্ন রকম থাকে তাহলে সে রকম এ পাবেন নিয়ত সম্পর্কে রাসুল সা. বলেন, মানুষের কর্ম নিয়তের উপর নির্ভরশীল, এবং প্রত্যেকের কর্মফল হবে তার নিয়তের উপর।
তাই সর্বশেষে বলি, জীবন একটাই একবার মৃত্যু হলে দ্বিতীয়বার এই জীবন ফিরে পাবেন না। একজন খারাপ বন্ধুর পাল্লায় পরে নিজের জীবন কে নষ্ট করবেন না। বন্ধু একদিন চলে যাবে তবে প্রকৃত বন্ধু চলে গেলেও থেকে যাবে, সেটা আপনি বুঝতে পারবেন পরকালে। তাই একজন বন্ধু যেন আপনার আফসোসের কারণ না হয় দ্বারায়। আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকলকেই একজন ভালো বন্ধু দিয়ে আমাদের জীবনকে সুখময় করে তুলুন এবং খারাপ বন্ধুদের থেকে আমাদের দূরে রাখেন। (আমিন)