স্মৃতিচারণ •
বেটা! শপথ কর–
“জিহাদের রাস্তা কখনও ছাড়বে না”
আমি জানি–শায়খ উসামা রহ. এর সন্তানরা তাঁর ব্যাক্তিত্বের সাথে সব ক্ষেত্রেই সম্পর্ক ও মিল রাখে। খুব কাছ থেকেই আমি তা দেখেছি–শায়খের পাশে তাঁর সন্তানরা এমনভাবে ঘিরে থাকত, যেভাবে সিংহকে ঘিরে থাকে সিংহ শাবকরা। ইনশাআল্লাহ! এমন কিছু স্মৃতিকথা নিয়ে পরে আলোচনা হবে। হৃদয়ের এ্যালবামে প্রিয় শায়খের অনেক স্মৃতিই তো চিত্রিত হয়ে আছে। আজ আলোচনা করব–শায়খ ও তাঁর সন্তানদের মাঝের স্মৃতিময় দুটি ঘটনা। প্রথমটি ঘটেছিল জালালাবাদে। যখন মুনাফিকরা জালালাবাদ দখল শুরু করল। আর আমরা তোরাবোরা পাহাড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম। শায়খের সাথে ছিল তাঁর আদরের ছোট তিন সন্তান। তাদের একজন খালেদ রহ.। যিনি শায়খের সাথেই শাহাদাতের সুমিষ্ট স্বাদ আস্বাদন করেছিলেন। আর তাদের মাঝে খালেদই ছিল তুলনামূলক বড়। আমরা ওখান থেকে বের হয়ে তোরাবোরায় মাগরিব পড়ার ইচ্ছে করলাম। আসর আর মাগরিবের মাঝামাঝি সময়; এক সাথী শায়খের বাচ্চাদের নিয়ে এলেন। তারা আপন পিতাকে সালাম করল। শায়খ ঐ ভাইকে কাজ দিলেন–প্রথমে বাচ্চাদেরকে কোন নিরাপদ জায়গায় নিয়ে যাওয়ার। তারপর যেন, তাদের নিজ পরিবারের কাছে পৌঁছে দেয়। আমি দূর থেকে এ দৃশ্যই দেখছিলাম! একজন পিতা নিজের ছোট তিন সন্তানকে আল-বিদা বলছে! তাঁর জানা নেই–পুনরায় কবে আবার সাক্ষাৎ হবে তাদের সাথে! এই দুনিয়ায় কি সাক্ষাৎ হবে? আর না জানা আছে–এ কি প্রথম বিদায়; না শেষ বিদায়? আমি শায়খকে বিদায় দিতে দেখেছি। দেখেছি–সালামের পর তিনি তাঁদের বুঝাচ্ছেন–তোমরা এই চাচ্চুর সাথে যাও; তিনি তোমাদেরকে ঘরে পৌঁছে দিবেন। বড় ছেলেটির চোখে অশ্রু ঝরঝর করছিল। শায়খ নিজেও ছিলেন আবেগে আপ্লুত। শায়খের ছোট ছেলে বলল–“বাবা আমি কাবুলে ব্যাগ ফেলে এসেছি। আমি ব্যাগ কোথায় পাব?” তাঁকে কে বুঝাবে?–কাবুল তখন শত্রুদের দখলে। শায়খ বললেন–“কোন সমস্যা নেই বাবা! তোমার চাচ্চু ব্যাগ নিয়ে দিবেন।” তারপর তাঁরা আলাদা হয়ে গেল। খুবই করুণ ছিল সেই দৃশ্য। ছেলে আর পিতা আলাদা হয়ে যাচ্ছে। কেউ জানে না–কবে, কখন, কোথায়, কিভাবে সাক্ষাৎ হবে? এমন আরেকটি ঘটনা। যার ফলে আমার অন্তরে তাঁর ভালবাসা গেঁথে গেছে। এটি ঐ সময়ের কথা; যখন আমরা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরিবর্তন হচ্ছিলাম। তাঁর কোন এক সন্তান আমাদের সাথে ছিল। আমরা আল্লাহর ওপর ভরসা করে রাতের আঁধারে গাড়িতে আরোহন করলাম। এক জায়গায় গাড়ি থামল। সেখানে শায়খের সন্তানকে তাঁর রাহবারের সাথে নিচে নামানো হল। তাঁরা ও আমরা ভিন্ন যায়গায় যাচ্ছি। তাকে বিদায় দেয়ার জন্য শায়খ নিচে নামলেন। কেউ জানে না দ্বিতীয় বার দেখা হবে কিনা? আমরা দেখছিলাম–এই মূহুর্তে তিনি তাঁর সন্তানদের কি বলেন? তিনি বলছিলেন–বেটা! শপথ কর–“জিহাদের রাস্তা কখনও ছাড়বে না।” এই মূহুর্তটি আমি কখনও ভুলব না। আল্লাহর তাওফিক দিলে পুনরায় শায়খ উসামা বিন লাদেন রহ. এর জীবনীর আলোচনা করব।
শায়খ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিজাহুল্লাহ-এর
আইয়্যামুন মাআল ইমাম হতে সংগৃহীত
আল বালাগ
ম্যাগাজিন ইস্যু-২