ইসলামে খতমে নবুওয়ত আকীদা
‘খতমে নবুওয়ত’ ইসলামী মৌলিক আকীদা-বিশ্বাসের একটি পরিভাষা। যার অর্থ নবুওয়তের সমাপ্তি তথা আল্লাহতাআলার পক্ষ থেকে নবী-রাসূল প্রেরণের যে ধারা হযরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু হয়েছিলো, তা সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আগমনের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়েছে। নতুন করে কেউ নবী হবে না। শরীয়তধারী কিংবা শরীয়তবিহীন কোনো প্রকারের নবুওয়ত কেউ লাভ করবে না। বরং সর্বদিক থেকে হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বশেষ নবী। এটি ইসলামের এমন একটি আকীদা বা বিশ্বাস, যার ওপর ভিত্তি করেই ইসলাম কেয়ামত পর্যন্ত চিরন্তন হয়েছে। পক্ষান্তরে নতুন কোনো নবীর আগমন স্বীকার করলে ইসলাম কেয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে না।
'খতমে নবুওয়ত’ এর উপর্যুক্ত বিশ্বাসের ফলে আরও দুটি বিশ্বাস অনিবার্য হয়ে পড়ে। একটি আসমানি কিতাবের সমাপ্তি, অপরটি মুক্তি ও নাজাতের ধর্ম হিসেবে একমাত্র ইসলামই নির্দিষ্ট। সুতরাং খতমে নবুওয়তের ব্যাখ্যায় তিনটি কথা স্মরণ রাখা কর্তব্য। যথা
এক. নবী-রাসূলের ধারাবাহিকতায় হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদিক থেকে সর্বশেষ নবী; তাঁর পরে নতুন কোনো নবীর আগমন হবে না।
দুই. আল কোরআন সর্বশেষ আসমানী কিতাব; কোরআনের পরে আর কোনো অহী/আসমানী কিতাব নাযিল হবে না।
তিন. ইসলামই নাজাত ও মুক্তির একমাত্র ধর্ম; অন্য কোনো ধর্মে নাজাত বা মুক্তি মিলবে না ।
কাদিয়ানী ধর্মের বিশ্বাস
উপর্যুক্ত তিনটি আকিদা ইসলামের সর্বসম্মত মৌলিক বিশ্বাস। ইসলামের শুরু থেকে অদ্যাবধি সকল মুসলমানের কাছে তা স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত। পক্ষান্তরে উপর্যুক্ত তিনটি বিষয়েই কাদিয়ানীদের বিশ্বাস সম্পূর্ণ বিপরীত।
এক. কাদিয়ানীদের মতে নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদিক থেকে সর্বশেষ নবী নন। বরং মির্যানগোলাম আহমদ কাদিয়ানীও একজন নবী। (নাউজুবিল্লাহ!) কাদিয়ানীদের বিশ্বাসমতে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী আনুগত্য ও অনুসরণের ভিত্তিতে উম্মতি নবীর মর্যাদা লাভ করেছে এবং সে নিজেই মুহাম্মদ হওয়ার ভিত্তিতে যিল্লি ও বুরুজি নবী। আর এই যিল্লি নবুওয়ত কোনো ছোট স্তরের নবুওয়ত নয়; বরং তাদের বিশ্বাসমতে সকল নবুওয়তের মুকুট হলো এই যিল্লি নবুওয়ত । সকল নবী রাসূলদের ইমাম সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকেও মির্যা কাদিয়ানীর নবুওয়ত উচ্চ স্তরের। (নাউজুবিল্লাহ!)।
(একটি ভুল সংশোধন ৩, ৪, ৮ ; রুহানি খাজায়েন : ১৬/২৭১, ২৭২। কালিমাতুল ফসল : ১৫৮)।
দুই. কাদিয়ানীদের বিশ্বাসমতে মির্জা কাদিয়ানীর ওপরও অহী নাযিল হয়েছে এবং সে আল্লাহর পক্ষ থেকে অসংখ্য ইলহাম কাশ্ফ ও স্বপ্নপ্রাপ্ত হয়েছে। আর যেহেতু তার দাবীমতে সে একজন নবী, সেহেতু তার ইলহাম কাশ্ফ ও স্বপ্নগুলো ওহীর মতোই । কাদিয়ানীরা মির্যা কাদিয়ানীরত থাকথিত এ সকল ওহীর সংকলন 'তাজকিরা' গ্রন্থকে আসমানী কিতাবের মতোই বিশ্বাস করে। অতএব কাদিয়ানীদের মতে আল কোরআন সর্বশেষ আসমানী কিতাব নয়; বরং তথাকথিত ‘তাজকিরা’ও একটি আসমানী কিতাব । নাউজুবিল্লাহ! (রুহানি খাযায়েন : ২২/১৫৪)।
তিন. কাদিয়ানীদের বিশ্বাসমতে কেউ মুসলমান হলেই পরকালে নাজাত।পাবে না; বরং নাজাত পেতে হলে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে বিশ্বাস করে কাদিয়ানী/আহমদী হতে হবে। মির্জা কাদিয়ানীর ভাষ্যমতে যে তাকে মানবে না, সে বেশ্যার সস্তান, পাক্কা কাফের এবং নিশ্চিত জাহান্নামী। (কালিমাতুল ফসল : ১১০ ; রুহানি খাযায়েন : ৫/৫৪৭-৫৪৮; তাজকিরা : ২৮০)
❝কাদিয়ানীদের বিশ্বাসমতে ইসলামই মুক্তির একমাত্র ধর্ম নয়; বরং কাদিয়ানী ধর্মই প্রকৃত ইসলাম বা মুক্তির একমাত্র পথ। নাউজুবিল্লাহ!
সুতরাং প্রশ্ন হলো- তাহলে ইসলাম আর কাদিয়ানী ধর্ম এক হলো কি করে? অথবা কাদিয়ানীরা মুসলমান হয় কেমন করে?❞
কাদিয়ানী সমাচার
কাদিয়ানীরা যেহেতু মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে ইমাম মাহদী, প্রতিশ্রুত মসীহ এবং উম্মতি নবী বিশ্বাস করে, সেহেতু মির্যা গোলামের জীবনী ও তার স্বভাব-চরিত্র সম্পর্কে জেনে রাখা তাদের জন্য অবশ্য কর্তব্য। পক্ষান্তরে মুসলমানরা যেহেতু বিশ্বাস করে, সে একজন ভণ্ড-প্রতারক, ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রকারী ও ইহুদী খৃস্টানদের দালাল, সেহেতু সাবধানতার জন্য হলেও তার পরিচয় মুসলমানদের কাছে স্পষ্ট থাকা দরকার। তাই অতি সংক্ষেপে এখানে কাদিয়ানী সমাচার তুলে ধরা হলো। আশা করি কাদিয়ানী ও মুসলমান উভয়ে তা থেকে উপকৃত হতে পারবেন।
সাবধান!
তবে সাবধান! এই সমাচারটি কোরআন-হাদিস বা কোনো মুসলিম স্কলার-এর বয়ান-বক্তব্য কিংবা লিখনীগ্রন্থ থেকে সংগৃহীত নয়। বরং তার সবটাই মির্যা কাদিয়ানীর নিজস্ব লিখনি বা তার উত্তরসুরী পুত্র মির্যা বশির আহমদ এম এ রচিত মির্যা গোলাম-এর জীবনী সম্বলিত গ্রন্থ ‘সিরাতুল মাসীহ আল মাওউদ’ থেকে নেওয়া অথবা মির্যার বিশ্বস্ত অনুসারীদের লিখিত গ্রন্থ থেকে সংগৃহীত। আর হ্যাঁ, রেফারেন্স দেওয়া বই গুলো আমাদের কাছে বিদ্যমান আছে। কেউ চ্যালেঞ্জ করতে চাইলে বা দেখতে চাইলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।
[খতমে নবুওয়ত মারকায় ঢাকা
বাড়ি # ৬, রোড # ৩, ব্লক # এইচ (মেরাদিয়াহাট) বনশ্রী, রামপুরা, ঢাকা
মোবাইল : +৮৮ 01739 242 380# E-mail : mkndhaka@gmail.com]
মির্যা কাদিয়ানীর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি
•জন্ম ও বংশ
নাম : গোলাম আহমদ, পিতা: গোলাম মুরতাজা, দাদা : আতা মোহাম্মদ,
•পিতামহ : গুল মোহাম্মদ, মাতা : চেরাগ বিবি,
•বংশ : মোঘল বরলাস। (রুহানি খাযায়েন : ১৩/১৬২-১৬৩)।
•জন্মতারিখ ও স্থান
ভারতের পূর্ব পাঞ্জাব গুরুদাসপুর জেলার অন্তর্গত বাটালা থানার কাদিয়ান গ্রামে ১৮৩৯/৪০ খৃষ্টাব্দে তার জন্ম। ১৮৫৭ সালে তার বয়স ১৬/১৭ বছর (রুহানী খাযায়েন : ১৩/১৭৭)।
•বংশগত ঐতিহ্য
মির্যা কাদিয়ানী তার বংশগত ঐতিহ্যের বর্ণনা এভাবে দিয়েছে- 'আমি এমন এক খান্দানের সন্তান, যারা বৃটিশ গভর্নমেন্টের একনিষ্ঠ কল্যাণকামী ছিলো। আমার পিতা গোলাম মুর্তাজা বৃটিশ গভর্নমেন্টের দৃষ্টিতে একজন বিশ্বস্ত ও কল্যাণকামী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। গভর্নর হাউজে তার আসন গ্রহণের জন্য চেয়ারের ব্যবস্থা থাকতো। মিস্টার গ্রীফান “তারীখে রঈসানে পাঞ্জাব” গ্রন্থে তার আলোচনা করেছেন। ১৮৫৭ সালে তিনি (আমার পিতা) বৃটিশদেরকে নিজ সাধ্যের চেয়ে অনেক বেশি সহায়তা করেছিলেন। এই গাদ্দারির! সময়ে আমার পিতা যুদ্ধের সরঞ্জাম ও অশ্বারোহীসহ পঞ্চাশটি ঘোড়া ইংরেজ সরকারের খেদমতে পেশ করেছিলেন। এ সকল সেবা-যত্নের পুরস্কারস্বরূপ শাসকবর্গের পক্ষ থেকে পিতার যে সকল শুভেচ্ছা ও মানপত্র অর্জিত হয়েছিলো, আমার আফসোস, তার অধিকাংশই হারিয়ে গেছে। শুধু তিনটি শুভেচ্ছাপত্র বেশ কিছুদিন যাবত ছাপা হয়ে আসছে। যার ফটোকপি টিকায় দ্রষ্টব্য। অতঃপর আমার বড় ভাই মির্যা গোলাম কাদের পিতার মতোই ইংরেজ সরকারের সেবা দাসরূপে নিয়োজিত ছিলেন। আমার পিতা ও বড় ভাইয়ের পর যদিও আমি একজন ঘরকুনো মানুষ, তারপরও সতেরো বছর বয়স।থেকেই ইংরেজ সরকারের সহযোগিতায় নিজের কলম দ্বারা সেবা চালিয়ে যাচ্ছি।' (রুহানী খাযায়েন : ১৩/৪-৬)।
দৃষ্টি আকর্ষণ
সাম্রাজ্যবাদী বৃটিশ ছিলো ভারত উপমহাদেশের স্বাধীনতা হরণকারী ও ক্ষমতার জবর-দখলকারী। মুসলিম স্কলারগণ ফতোয়া দিয়েছিলেন, স্বাধীনতার জন্য তাদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা ফরজ। এই ফতোয়ায় সাড়া দিয়ে স্বাধীনতা ও মুক্তির জন্য অকাতরে প্রাণ বিলিয়েছেন অগণিত বীর মুসলমান। দেশ ও জাতির সঙ্গে গাদ্দারী করেছে মীর জাফর, ঘষেটি বেগম গং। জাতি তাদেরকে জাতীয় গাদ্দার ও বেঈমান হিসেবেই স্মরণ করে তাদের প্রতি অভিশাপ দেয়। তাহলে স্বঘোষিত গাদ্দার মির্যা গোলাম কাদিয়ানী ও তার খান্দান কেনো সেই তালিকায় যুক্ত হবে না? কেনো তারা জাতীয় গাদ্দার ও জাতীয় বেঈমান খেতাব পাবে না? কেনো?
• শিক্ষা ও কর্মজীবন
মির্যা কাদিয়ানী আপন শিক্ষাজীবন সম্পর্কে যা বর্ণনা করেছে, তার সারমর্ম হলো- তার বয়স যখন ৬/৭ বছর, তখন তার জন্য কয়েকজন গৃহশিক্ষক চাকররূপে রাখা হয়। তাদের কাছে সে প্রাথমিক শিক্ষা অর্জন করেছে এবং কিছু দর্শন ও হাকিমী বিদ্যাও তাদের থেকে সে শিখেছে। (রুহানী খাযায়েন : ১৩/১৭৯-১৮১)।
পরবর্তীতে উকীল হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ওকালতি পরীক্ষা দিলেও তাতে সে ফেল করে। (সীরাতুল মাহদী : রেওয়ায়েত ১৫০)।
নোট: সব সমাজে সবসময় শিক্ষক মর্যাদা ও সম্মানের পাত্র। শিক্ষককে ‘চাকর’ শব্দে উল্লেখ করা কতটা ভদ্রতা, তা সহজেই অনুমান করা যায়।
• বাবার পেনশনের টাকা নষ্ট করে তসীলদারির চাকরি
মির্যা ইমাম উদ্দীনের সঙ্গে পিতার পেনশনের টাকা তুলতে গিয়েছিলো মির্যা কাদিয়ানী। মির্যা ইমাম উদ্দীনের চালচলন ভালো ছিলো না। ইমাম উদ্দীন মির্যা কাদিয়ানিকে ফুসলিয়ে এদিক-সেদিক নিয়ে যায়। এভাবে ঘুরে বেড়িয়ে বাবার পেনশনের পুরো টাকাই (তৎকালীন সাতশত রুপি) উড়িয়ে নষ্ট করে ফেলে। এই লজ্জায় মির্যা কাদিয়ানী ঘরে না ফিরে শিয়ালকোট শহরে ডেপুটি কমিশনারের কাচারিতে সামান্য বেতনে তসীলদারির চাকরি করতে শুরু করে। ১৮৬৪ থেকে ১৮৬৭ পর্যন্ত সেখানে মির্যা কাদিয়ানী যৎসামান্য বেতনের চাকরি করা অবস্থায় উকীল হওয়ার শখ জাগে। অতঃপর আইনী বইপত্র অধ্যয়ন করে পরীক্ষা দেয়। কিন্তু তাতে সে ফেল করে।
(সীরাতুল মাহদী : রেওয়ায়েত ৪৯, ১৩২, ১৫০, ৪৬৭, ৭৫৯)
• বৈবাহিক অবস্থা
মির্যার দুজন স্ত্রী ছিলো। প্রথমজন তাকে নবী না মানা ও মুহাম্মদী বেগমকে বিয়ের ক্ষেত্রে সম্মতি না দেওয়ায় তাকে তালাক দিয়ে দেয় দ্বিতীয়জনকে কাদিয়ানীরা উম্মুল মুমিনীন বলে। দ্বিতীয় স্ত্রীর সঙ্গে হাকিম নুরুদ্দীনের পরকীয়ার বিষয়টি মির্যা নিজেই বর্ণনা করেছে। (রূহানী খাযায়েন : ১৪/১৯৭ ও ২০৩)
মির্যা তৃতীয় আরেকজন একজন স্ত্রীর কথা স্বীকার করেছে, যার সঙ্গে আসমানে তার বিয়ে হয়েছে বলে তার দাবী ছিলো। বৃদ্ধ বয়সে মির্যা কাদিয়ানী মোহাম্মদী বেগম নামের এক সুন্দরী তরুনীর প্রেমে পড়ে তাকে পাওয়ার জন্য আজীবন অনেক অলৌকিক ভবিষ্যদ্বাণী করেছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত জীবদ্দশায় মির্যার ভাগ্যে সে জোটেনি।
প্রকৃতি ও স্বভাব
মির্যা কাদিয়ানীর স্বভাবজুড়ে ছিলো নির্বুদ্ধিতা, ইতরামি ও নীচতা, গালিগালাজ, ধোঁকাবাজি, মিথ্যা, আর রোগব্যাধিতে ভরপুর । এক কথায় একজন অভদ্র ও চরিত্রহীন ইতর মানুষের যা যা স্বভাব থাকে, মির্যা কাদিয়ানীর মাঝে প্রায় তার সবই বিদ্যামান ছিলো । উল্টো জুতা পরা, সঠিক ঘাটে জামার বুতাম লাগাতে না পারা, মদ্যপান করা, থিয়েটার দেখা, পরনারীর সেবা নেওয়া, ইত্যাকার যাবতীয় বদস্বভাব তার জীবনীগ্রন্থে তারই সন্তান ও তার ভক্তবৃন্দ লিখে গেছে। এর কিঞ্চিৎ বর্ণনা তথ্যসূত্রসহ সামনে তুলে ধরা হলো।
মির্যা কাদিয়ানীর ‘মালিখোলিয়া’ বা ‘সিজোফ্রেনিয়া’ রোগ
সিজোফ্রেনিয়া রোগের লক্ষণ কেউ জানতে চাইলে তাকে মির্যা কাদিয়ানীর জীবনী অধ্যয়ন করতে হবে। মির্যা কাদিয়ানী সিজোফ্রেনিয়া রোগের উৎকৃষ্ট উদাহরণ। তার ভবিষ্যদ্বাণী, দাবীদাওয়া, চ্যালেঞ্জ, স্বপ্ন এবং তথাকথিত কাশ্ফ ও ইলহাম অধ্যয়ন করলে যে কেউ খুব সহজেই মির্যা কাদিয়ানীকে মালিখোলিয়া বা সিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত বলতে পারবে কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা বা প্রমাণপত্রের প্রয়োজন হবে না। তদুপরি মির্যা কাদিয়ানীর উপযুক্ত উত্তরসূরি মির্যা বশীর আহমদ এম, এ রচিত সীরাতুল মাহদীর বর্ণনা লক্ষ্যণীয়: গ্রন্থকার নিজ মাতা নুসরাত জাহানের সূত্রে বর্ণনা করেছে-
'আম্মাজান আমাকে বলেছেন, মসীহে মওউদ (মির্যা কাদিয়ানীর) সর্বপ্রথম মাথা চক্কর বা হিস্টিরিয়া দেখা দেয় তদীয় পুত্র প্রথম বশীর-এর মৃত্যুর কয়েকদিন পরে। রাতে ঘুমানোর সময় বিষম খেলেন (হিক্কা এলো)। এরপর শরীর খারাপ হয়ে যায়। তখন চক্কর খুব হালকা ছিলো। আম্মাজান বলেন, এরপর থেকে নিয়মিত চক্কর লাগা শুরু হয়ে যায়। অধম ( গ্রন্থকার) আম্মাজানকে জিজ্ঞেস করলাম, চক্করের সময় কেমন হতো? আম্মাজান বলেন, হাত পা ঠাণ্ডা হয়ে যেতো। শরীরে খিচুনি উঠতো। বিশেষত গর্দানের রগ ফুলে উঠতো এবং মাথায় চক্কর শুরু হয়ে যেতো। তখন তিনি (মির্যা কাদিয়ানী) নিজের শরীর নিয়ন্ত্রন করতে পারতেন না। প্রথম দিকে সমস্যা বড়ই পীড়াদায়ক ছিলো, পরবর্তীতে তা স্বাভাবিক অভ্যাসে পরিণত হয়ে যায়।
(সীরাতুল মাহদী : ১/১৬-১৭ রেওয়ায়েত : ১৯)
দৃষ্টি আকর্ষণ
‘মালিখোলিয়া’ (সিজোফ্রেনিয়া বা স্কিটসোফ্রিনিয়া SCHIZOPHRENIA) চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে ‘মালিখোলিয়া’ মস্তিস্কজনিত এমন একটি রোগ যা মানসিক চাপ, মাত্রাতিরিক্ত মদ্যপান ইত্যাদি কারণে হয়ে থাকে। এ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি সর্বদা কল্পনার জগতে উড়তে থাকে। নিজেকে অতিমানব ভাবতে থাকে এবং অহর্নিশ গায়েব বার্তা, ভবিষ্যদ্বাণী বলতে থাকে। নিজেকে ফেরেশতা, এমনকি খোদাও ভাবতে থাকে। (একসীরে আজম/ শরহুল আসবাব : ১/১৮৮, যাররী উসূল : ১৪)।
জুতা-স্যান্ডেল সোজা করে পরতে না পারা
সীরাতুল মাহদীর গ্রন্থকার লেখেন- ‘একবার কেউ জনাবকে (মির্যা কাদিয়ানীকে) বিশেষ পাদুকা/বুট জুতা উপহার দিলে জনাব তা পরলেন। কিন্তু ডান-বাম ঠিক করতে পারতেন না। বারবার উল্টো জুতা পায়ে দেওয়ার কারণে পড়ে যেতেন এবং কষ্ট পেয়ে বলতেন, এর কোনোটাই আমার জন্য ভালো নয়। আম্মাজান (কাদিয়ানীর স্ত্রী) বলেন, আমি হযরতের (মির্যা কাদিয়ানীর) উল্টো সদর চেনার জন্য চিহ্ন দিয়ে রেখেছিলাম। তারপরও তিনি উল্টোই পায়ে দিতেন।”
(সীরাতুল মাহদী : রেওয়ায়েত, ৪৪৭, ৪১৭)।
মোজা পরা ও বোতাম লাগানোর ধারণ
সীরাতুল মাহদীর গ্রন্থকার লিখেছেন, 'ডাক্তার মীর মোহাম্মদ ইসমাইল আমাকে বলেছেন, হুজুর (মির্যা কাদিয়ানী) কখনও কখনও মোজা পরতেন। বেখেয়ালে গোড়ালির অংশ পায়ের উপরিভাগে শোভা পেতো। বারবার.জামার বোতাম উল্টো ঘাটে লাগানো থাকতো। অনেক সময় ডান পায়ের মোজা বাম পায়ে, বাম পায়ের মোজা ডান পায়ে পরে থাকতেন। এমনিভাবে
খাবারের ব্যাপারেও বলতেন, কি খাচ্ছি তা টের.পাই না, যতোক্ষণ না দাঁতের নিচে পাথর পড়ে।
(সীরাতুল মাহদী : রেওয়ায়েত ৩৭৮, পৃষ্ঠা ৩৪৪)।
আঙ্গুল জবাই
‘ডাক্তার মীর মোহাম্মদ ইসমাঈল বর্ণনা করেন, একবার ঘরে মুরগির বাচ্চা জবাই করার প্রয়োজন হলো। সে সময় ঘরে অন্য কেউ ছিলো না। তাই হযরত (মির্যা কাদিয়ানী) নিজেই মুরগির বাচ্চা জবাই করতে গেলেন। কিন্তু মুরগির গলায় ছুরি না চালিয়ে নিজের আঙ্গুল কেটে ফেললেন। অনেক রক্ত ঝরেছিলো এবং তিনি 'তওবা তওবা’ বলে মুরগির বাচ্চা ছেড়ে দিলেন। পরে অন্য কেউ জবাই করছিলো।'
(সীরাতুল মাহদী : পৃষ্ঠা ২৮৫ রেওয়ায়েত ৩০৭)।
পাঁচ আর পঞ্চাশের পার্থক্য
মির্যা গোলাম কাদিয়ানী প্রথমদিকে ইসলামের একজন বড় আলেমরূপে নিজেকে জাহির করে এবং ঘোষণা করে, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খৃস্টানদের মোকাবেলায় ইসলামের সত্যতা প্রমাণ করে একটি বিখ্যাত গ্রন্থ রচনা করা হবে। যা পঞ্চাশ খণ্ডব্যাপী হবে। মুসলিম বিত্তবানদের কাছে এভাবে অনুদান চেয়ে লিফলেট প্রচার করে। অতঃপর দীর্ঘ দিন অতিবাহিত হলেও মাত্র পাঁচ খণ্ড লিখে সমাপ্ত করে । আর ৫০ খণ্ড না লেখার অজুহাত হিসেবে বর্ণনা করে, ৫ আর ৫০-এর মাঝে যেহেতু ব্যবধান শূন্যের, আর শূন্যের কোনো মূল্য নেই। সুতরাং ৫ খণ্ড লেখার দ্বারাই ৫০ খণ্ড লেখার ওয়াদা পূরণ হয়ে গেছে। (রুহানী খাযায়েন : ২১/৯)।
দৃষ্টি আকর্ষণ
৫ আর ৫০ এর পার্থক্য যে শূন্য নয়, বরং ৪৫, এ কথা তো লেখাপড়া না জানা সাধারণ মানুষও বোঝে। তাহলে মির্যা গোলাম কাদিয়ানী কেনো বুঝলো না? এটা কি তার জ্ঞানের কমতি নাকি ধোঁকাবাজি? তাছাড়া ৫ খণ্ডব্যাপী বারাহীনে আহমদিয়া নামক যে গ্রন্থটি সে রচনা করেছে, তাতে ইসলামের সত্যতার বর্ণনা তো দূরের কথা, ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক নিজেকে মাহদী, মসীহ, মুলহাম, ইত্যাকার উপাধিতে ভূষিত করার নিমিত্তে বানোয়াট দর্শন আর গাজাখোরী বক্তব্য ছাড়া তাতে কিছুই নেই।
ঘড়ির সময় দেখা
‘মিয়া আবদুল্লাহ সাহেব সনূরী বর্ণনা করেন, জনৈক ব্যক্তি হযরত (মির্যা কাদিয়ানী) সাহেবকে একটি পকেট ঘড়ি হাদিয়া দিয়েছিলো। হুজুর সেটা রুমালে বেঁধে পকেটে রাখতেন চেইন লাগাতেন না। সময় দেখার প্রয়োজন হলে পকেট থেকে ঘড়ি বের করে এক থেকে গণনা শুরু করতেন। ঘড়ি দেখে সময় চিনতেন না। মিয়া আবদুল্লাহ বলেন, হুজুরের (কাদিয়ানীর) এভাবে গুণে গুণে ঘড়ির সময় দেখা আমার কাছে অনেক ভালো লাগতো। (সীরাতুল মাহদী : পৃষ্ঠা ১৬৫ রেওয়ায়েত : ১৬৫)।
হজ ইতেকাফ ও জাকাত
‘ডাক্তার মীর মোহাম্মদ ইসমাঈল বর্ণনা করেন, হযরত মসীহে মওউদ (মির্যা কাদিয়ানী) হজ করেননি, ইতেকাফ করেননি, জাকাত দেননি এবং তাসবীহ ও রাখতেন না।' (সীরাতুল মাহদী : রেওয়ায়েত ৬৭২ পৃষ্ঠা ৬২৩)।
সিনেমা দেখা
মির্যা কাদিয়ানীর একান্ত ভক্ত মুফতী মোহাম্মদ সাদেক রচিত ‘জিকরে হাবীব নামক গ্রন্থে লিখেছেন- 'একবার মুন্সী জাফর আহমদ সাহেব মির্যা কাদিয়ানীর কাছে মোহাম্মদ খাঁন সম্পর্কে সিনেমা দেখার অভিযোগ করলে মির্যা কাদিয়ানী এ.ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে শুধু বললেন, আমিও একবার সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম।' (জিকরে হাবীব : ১৪)
বেগানা নারীর খেদমত নেওয়া
মির্যা কাদিয়ানী একদিকে যেমন ফতোয়া দিতো বেগানা নারীর দিকে বদনজরি করা, বৃদ্ধা মহিলার সাথে মুসাফাহ করা না জায়েজ ইত্যাদি। অপরদিকে সে নিজেই বেগানা নারী দ্বারা হাত পা টিপানো/ম্যাসেজ করানোর সেবা নিতো।
পরনারী থেকে পর্দা করার ব্যাপারে মির্যা কাদিয়ানীর ফতোয়া
• ‘মহিলাদের উচিত তারা যেন নিজ স্বামীর সম্পদ অপচয় না করে, পরপুরুষ থেকে নিজেদের ইজ্জত বাঁচায়। মনে রাখা উচিত, স্বামী ও যাদেরস ঙ্গে বিয়ে বৈধ নয়, এমন মাহরাম ছাড়া বাকি সকল পুরুষের থেকে নারীদের পর্দা করা জরুরী।”(মাজমুআয়ে ইশতিহারাত : ১/৮৬)।
• ‘ডাক্তার মীর মোহাম্মদ ইসমাঈল একবার মির্যা কাদিয়ানীর কাছে জানতে চাইলেন, দাওয়াখানায় একজন ইংরেজ বৃদ্ধা তার সঙ্গে কাজ করে। বৃদ্ধা অনেক ময় ডাক্তার সাহেবের সঙ্গে মুসাফাহা। এ ব্যাপারে কী হুকুম? মির্যা কাদিয়ানী বললো, এটা তো জায়েজ নেই। আপনার বলে দেওয়া প্রয়োজন, আমাদের ধর্মে এটা বৈধ নয়।
(সীরাতুল মাহদী : ২/৩৬২-৩৬৩ : রেওয়ায়েত : ৪০৪)।
❝মুদ্রার ওপিঠ❞
শাহ সাহেবের কন্যা জয়নব
‘ডাক্তার আব্দুস সাত্তার শাহ লিখিতভাবে আমাকে (গ্রন্থকার বশীর আহমদ এম, এ) কে বর্ণনা করেছেন, আমার মেয়ে জয়নব বলেছে, আমি তিন মাস যাবত হযরতের (কাদিয়ানীর) খেদমতে ছিলাম। গরমের সময় পাখা দিয়ে বাতাস করা ইত্যাদি খেদমত করতাম। কখনও এমন হতো, বাতাস করতে করতে রাতের অর্ধেক বা তার চেয়েও বেশি সময় পেরিয়ে যেতো। কিন্তু আমার কোন কষ্ট অনুভব হতো না; বরং খুশিতে মন ভরে যেত। দুইবার এমন হয়েছে, এশার পর থেকে ফজর পর্যন্ত খেদমত করেছি। কিন্তু আমার কোনো ঝিমটি বা ক্লান্তি আসেনি। হুজুর (কাদিয়ানী) বলতেন, জয়নব এতো খেদমত করে, আমার শরম লাগে।' (সীরাতুল মাহদী, রেওয়ায়েত : ৯১০)
মোসাম্মাৎ ভানু
‘ডাক্তার মীর মোহাম্মদ ইসমাঈল বর্ণনা করেন, উম্মুল মুমিনীন (কাদিয়ানীর স্ত্রী) শুনিয়েছেন, হুজুরের কাছে একজন বৃদ্ধা খেদমতরত ছিলো। প্রচণ্ড শীতের রাতে একবার সে হুজুরের খেদমত করতে লাগলো। লেপের ওপর দিয়ে ম্যাসেজ করার কারণে সে বুঝতে পারছিলো না, হুজুরের পা টিপছে নাকি খাটের তক্তা টিপছে। কিছুক্ষণ পর হুজুর বললেন- 'ভানু! আজ প্রচণ্ড ঠাণ্ডা পড়েছে।' ভানু জবাবে বললো- ‘এজন্যই তো আপনার পা কাঠের মতো লাগছে।'(সীরাতুল মাহদী, রেওয়ায়েত : ৭৮০)
বাপ বেটার ব্যভিচার!
তৎকালীন সময়ে কাদিয়ান থেকে প্রকাশিত আহমদীদের মুখপত্র ‘দৈনিক আল ফজল' পত্রিকার ১৯৩৮ সনের ৩১ আগস্ট সংখ্যায় লাহোরী গ্রুপের জনৈক ব্যক্তির অভিযোগ নিম্নোক্ত ভাষায় ছাপা হয়- 'হযরত মসীহে মওউদ আল্লাহর অলী ছিলেন। আল্লাহর অলীগণ কখনও কখনও ব্যভিচারে লিপ্ত হতে পারেন। সুতরাং তিনি যদি কখনও কখনও ব্যভিচার করে থাকেন, তাতে কোনো আপত্তি নেই। আমাদের আপত্তি বর্তমান খলীফার ওপর, যিনি সর্বদাই ব্যভিচারে লিপ্ত থাকেন।' উপর্যুক্ত চিঠিটি আহমদীদের দ্বিতীয় খলীফা মির্যা বশীর উদ্দিন মাহমুদ জুমার বক্তব্যে পড়ে শুনিয়েছে ঠিকই; কিন্তু কোনো প্রতিবাদ বা জবাব দেওয়ার সাহস তার হয়নি। (দৈনিক পত্রিকার ফটোকপিটি আমাদের কাছে বিদ্যমান আছে, কেউ দেখতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন)
মির্যা কাদিয়ানীর ভবিষ্যদ্বাণী
মির্যা কাদিয়ানী যেহেতু সিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত ছিলো, যার ফলে ভবিষ্যদ্বাণী করাটা তার একটা অভ্যাস হয়ে পড়েছিলো। তবে তার নিজের বক্তব্য হলো- এই ভবিষ্যদ্বাণীগুলোই প্রমাণ বহণ করে, সে সত্যবাদী। তার বক্তব্য লক্ষ্য করা যেতে পারে-
‘কু-ধারণা পোষণকারীদের কাছে এটা স্পষ্ট হওয়া দরকার, আমার সত্য-মিথ্যা যাচাই করার জন্য আমার ভবিষ্যদ্বাণীর চেয়ে আর কোনো বড় কষ্টি পাথর নেই।' (রুহানী খাযায়েন : ৫/২৮৮)।
মির্যা কাদিয়ানী তার ভবিষ্যদ্বাণীর আলোকেই মিথ্যা প্রমাণিত। কেননা তার দাবি অনুযায়ী প্রতিপক্ষের সামনে চ্যালেঞ্জ করে যতোগুলো ভবিষ্যদ্বাণী সে করেছে, তার একটিও বাস্তবায়িত হয়নি; বরং ঘটনা বিপরীত ঘটে যাওয়ার পর প্রতিটি ক্ষেত্রেই সে অপব্যাখ্যার আশ্রয় নিয়েছে। এই ছোট্ট কলেবরে শুধু তার ব্যক্তির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি ভবিষ্যদ্বাণী সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো।
তরুণী মুহাম্মদী বেগম ও মির্যা কাদিয়ানী
মির্যা কাদিয়ানীর জীবনে মুহাম্মদী বেগমের বিষয়টি একটি স্বতন্ত্র অধ্যায়। এ সংক্রান্ত ভবিষ্যদ্বাণী এতোটাই গুরুত্বপূর্ণ ছিলো, কাদিয়ানীর জীবদ্দশায় যখন তা বাস্তবায়ন হয়নি, তখন কোনো কোনো নেতৃস্থানীয় কাদিয়ানী তার কাদিয়ানী ধর্ম ছেড়ে দেওয়ার উপক্রম হয়েছিলো। তখন হাকীম নূরুদ্দীন বিভিন্ন কৌশলে তাদেরকে ধরে রাখতে সক্ষম হয়।
মুহাম্মদী বেগমের পরিচয়
মুহাম্মদী বেগমের বাবার নাম আহমদ বেগ। তিনি মির্যা কাদিয়ানীর মামাতো ভাই ছিলেন। তাদের গ্রাম ছিলো হুশিয়ারপুর। মুহাম্মদী বেগমের মা মির্যা কাদিয়ানীর চাচতো বোন ছিলো। সুতরাং মুহাম্মদী বেগম পিতার দিক থেকে মির্যার ভাতিজি এবং মাতার দিক থেকে তার ভাগ্নি ছিলো। তাছাড়া মির্যা কাদিয়ানীর প্রথম স্ত্রীর চাচাতো ভাই তথা মির্যা কাদিয়ানীর সম্বন্ধীর মেয়ে, আবার মির্যার ছেলে ফজল আহমদের স্ত্রীর মামাতো বোন ছিলো মুহাম্মদী বেগম। বিবিধ আত্মীয়তার সুবাদে মির্যা কাদিয়ানী পূর্ব থেকেই মুহাম্মদী বেগমকে চিনতো এবং তার সৌন্দর্যের প্রতি সে আকৃষ্ট ছিলো। অথচ মির্যার বক্তব্য অনুযায়ী তার বয়স যখন পঞ্চাশের অধিক, তখন মুহাম্মদী বেগম ছোকড়ী। (রুহানী খাযায়েন: ৫/৫৭৪)।
ঘটনার বিবরণ
মুহাম্মদী বেগমের পিতা আহমদ বেগের একটি জমি হেবা সংক্রান্ত দলিলে.মির্যা কাদিয়ানীর স্বাক্ষর নেওয়ার প্রয়োজন দেখা দেয়। কাগজপত্র নিয়ে আহমদবেগ মির্যা কাদিয়ানীর কাছে গেলে মির্যা কাদিয়ানী এটাকে সুবর্ণ সুযোগ হিসেবে কাজে লাগায়। সে বলে দেয়, ইস্তেখারা করে তারপর দস্তখত করবে। কিছুদিন পর আহমদবেগ পুনরায় বিষয়টি উত্থাপন করলে মির্যা কাদিয়ানী বললো, আমি স্বাক্ষর করতে পারি এই শর্তে, তোমার কন্যা মুহাম্মদী বেগমকে আমার সঙ্গে বিয়ে দিতে হবে। আহমদ বেগ এমন শর্ত শুনে প্রচণ্ড ক্রুদ্ধ হন এবং প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। অতঃপর মির্যা কাদিয়ানী একেরপর এক ভবিষ্যদ্বাণী ও তথাকথিত খোদা প্রদত্ত ইলহাম শোনাতে ততোই শক্ত হয়ে তার প্রতিবাদ করেন।
মির্যা কাদিয়ানী ১৮৮৮ সনের ২০ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে সর্বপ্রথম ভবিষ্যদ্বাণী করে এবং বানোয়াট খোদায়ী ইলহামের নামে একের পর একনইশতেহার ছড়িয়ে একটি মেয়ে ও তার পরিবারকে চরম বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়। কিন্তু আহমদ বেগ অত্যন্ত শক্ত মানুষ ছিলেন। ফলে কোনো অবস্থার তোয়াক্কা না করে ৪ বছর পর ১৮৯২ সনের ৭ এপ্রিল সুলতান আহমদ নামক এক ব্যক্তির সঙ্গে নিজ কন্যা মুহাম্মদী বেগমের বিয়ে দেন।
এই বিয়ের সংবাদ শুনে মির্যা কাদিয়ানী তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে। সে তখন তার বানোয়াট ইলহামের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। কথিত ইলহামের মাধ্যমে সে আহমদ বেগ-এর মৃত্যুর হুমকি এবং সুলতান আহমদের মৃত্যুর মাধ্যমে মুহাম্মদী বেগম বিধবা হওয়ার হুমকিও দিতে থাকে। সঙ্গে ভবিষ্যদ্বাণী করতে থাকে,
‘বিধবা অবস্থায় হলেও মুহাম্মদী বেগম তার স্ত্রী হয়ে আসবে অবশ্যই । এই বিয়ে হওয়ার পূর্বে মির্যা কাদিয়ানীর মৃত্যু হবে না। কেননা এই বিয়ে আসমানে হয়েছে এবং এটা তার সত্যতার অকাট্য প্রমাণ হবে। এগুলো সব কুদরতের ফয়সালা। এখানে কোনো মানুষের হাত নেই। সুতরাং এ বিয়ে অবশ্যই হবে । যদি আমি মিথ্যুক হই, তবে এই ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণ হবে না; বরং আমার মৃত্যু এসে যাবে। আর যদি আমি সত্য হই, তবে অবশ্যই আল্লাহ আমার এই ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণ করবেন, ইত্যাদি'। (রুহানী খাযায়েন : ১১/৩১, ৫/৩২৫, ৫/২৮৬-৮৭, ৬/৩৭৬)।
ঘটনাক্রমে মুহাম্মদী বেগমের বিয়ের ৫ মাসের মাথায় ৩০ সেপ্টেম্বর আহমদ বেগ মৃত্যুবরণ করেন। (ঝড়ে বক মরে আর ফকিরের কেরামতি বাড়ে) প্রবাদের মতোই মির্যা কাদিয়ানী তার ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণ হয়েছে বলে চিৎকার করতে শুরু করে । অথচ তার ভবিষ্যদ্বাণী মোতাবেক বিয়ের আড়াই বছরের মধ্যে মুহম্মদী বেগমের স্বামী সুলতান আহমদের মৃত্যু হওয়ার কথা। তা তো হয়ইনি; বরং মির্যা কাদিয়ানী দীর্ঘ ২০ বছর পর্যন্ত মুহাম্মদী বেগমের বিরহ যাতনায় কাঁদতে থাকলেও শেষ পর্যন্ত ১৯০৮ সনে কলেরা রোগে আক্রান্ত হয়ে জাহান্নামে পৌঁছেছে। আর মুহাম্মদী বেগম তার স্বামী সুলতান আহমদের জান্নাত হয়ে (কাদিয়ানীর মৃত্যুর পরে) ৪০ বছর পর্যন্ত তার শয্যাসঙ্গিনী থেকেছে। মুহাম্মদী বেগম মির্যা কাদিয়ানীর স্ত্রী হওয়া তো দূরের কথা; মির্যা কাদিয়ানীর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনও করেনি। এভাবেই আল্লাহতাআলা মির্যা কাদিয়ানীর মুখেই তাকে মিথ্যুক প্রমাণিত করেছেন। সুতরাং মিথ্যাবাদীদের ওপর আল্লাহর লানত অবধারিত।
চ্যালেঞ্জ.
❝কোনো কাদিয়ানীর কি এই সাহস আছে, সে প্রমাণ করবে মির্যা কাদিয়ানীর ভবিষ্যদ্বাণী মোতাবেক মুহাম্মদী বেগম তার স্ত্রী হয়েছিলো?❞
উপদেশমূলক
শেষ পরিণতি
মির্যা গোলাম কাদিয়ানীর শেষ পরিণতিও তার মিথ্যুক হওয়ার অকাট্য প্রমাণ। দাবি ও চ্যালেঞ্জরূপে কাদিয়ানী যে সকল ভবিষ্যদ্বাণী করেছে আল্লাহর ইচ্ছায় তার একটিও বাস্তবায়িত হয়নি। তবে প্রতিটি ঘটনাই ভবিষ্যদ্বাণীর উল্টো ঘটে যাওয়ার পর সে অপব্যাখ্যার আশ্রয় নিয়ে তার অনুসারীদের ধরে রাখার চেষ্টা করেছে। কিন্তু আল্লাহতাআলা তার বান্দাদের সঠিক পথের বুঝ দেওয়ার জন্য মির্যা কাদিয়ানীর।অন্তিম দুআ এমনভাবে কবুল করেছেন, সত্যের সন্ধানী হয়ে একটুখানি।চোখ খুললেই যে কেউ মির্যা কাদিয়ানীর ধোঁকা থেকে নিজেকে বাঁচাতে পারবে। না বুঝে সরলমনা যে সকল মুসলমান মির্যা কাদিয়ানীর ধোকায় পড়ে গেছেন, তাদের জন্য আল্লাহতাআলা মির্যা।কাদিয়ানীর অন্তিম দুআ ও তার মৃত্যুকে দিনের সূর্যের ন্যায় উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বানিয়ে রেখেছেন। এরপরও যদি কেউ সত্য গ্রহণ না করে, তাহলে নিজেকে ছাড়া আর কাকে তিরস্কার করবে?
অমৃতসরের মাওলানা সানাউল্লাহ রহ.- এর সঙ্গে মির্যা কাদিয়ানীর চূড়ান্ত ফয়সালা
দীর্ঘ আলোচনা না করে মির্যা কাদিয়ানীর ইশতেহার থেকে সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হলো- মির্যা কাদিয়ানী মাওলানা সানাউল্লাহ অমৃতসরীকে লিখেছিলো- ‘মৌলবী সানাউল্লাহর খেদমতে আসসালামু আলা মানিত্তাবাআল হুদা। দীর্ঘদিন যাবত আপনার পত্রিকা ‘পার্চায়ে আহলে হাদিস’-এ ধারাবাহিকভাবে আমাকে মিথ্যাবাদী ও ফাসেক আখ্যায়িত করা হচ্ছে। সর্বদা উক্ত পত্রিকায় আপনি আমাকে দাজ্জাল, কাজ্জাব ও মুফসেদ/ফাসাদী বলে আখ্যায়িত করে আসছেন। আমি আপনার পক্ষ থেকে অনেক কষ্ট সহ্য করেছি। আপনি যেভাবে প্রতিনিয়তই আমাকে কাজ্জাব ও মিথ্যারোপকারী হিসেবে উল্লেখ করেন, সত্যই যদি আমি তেমন হই, তাহলে আমি আপনার জীবদ্দশাতেই.হালাক ও ধ্বংস হয়ে যাবো। কিন্তু যদি আমি কাজ্জাব ও মিথ্যা অপবাদ আরোপকারী না হই; বরং আল্লাহর তরফ থেকে বার্তা ও সম্বোধন প্রাপ্তির.মাধ্যমে মর্যাদাবান ও প্রতিশ্রুত মসীহ হই, তাহলে আমি খোদার ফজলে আশা রাখি, আপনি আল্লাহর সুন্নত মোতাবেক মিথ্যা প্রতিপন্নকারীদের শাস্তি থেকে.পরিত্রান পাবেন না। সুতরাং যে সকল শাস্তি মানুষের হাতে নেই; বরং খোদার হাতেই তা সীমাবদ্ধ, যেমন মহামারী, কলেরা ইত্যাকার ধ্বংসকারী রোগব্যাধি আমার জীবদ্দশাতেই যদি আপনার ওপর আপতিত না হয়, তাহলে আমি আল্লাহতাআলার তরফ থেকে নই। এই কথাগুলো কোনো অহী বা ইলহামের ভিত্তিতে নয়; বরং শুধু দুআ হিসেবে আল্লাহতাআলার কাছে ফয়সালা চাচ্ছি।'
হে আমার প্রিয় মালিক ! আমি কাকুতি মিনতির সঙ্গে তোমার মহান দরবারে দুআ করছি, আমাকে মৌলবী সানাউল্লাহর জীবদ্দশায় ধ্বংস করে দাও এবং আমার মৃত্যুর মাধ্যমে তাকে ও তার জামাতকে খুশি করে দাও। আমীন!
অবশেষে মৌলবী সাহেবের কাছে দরখাস্ত, তিনি যেনো আমার এ বিষয়টি তার পত্রিকায় ছেপে দেন এবং ইচ্ছে করলে এর নিচে নিজের পক্ষ থেকে কিছু লিখে দিতে পারেন। ফয়সালা খোদার হাতে।
লেখক : মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী, তারিখ : ১ রবিউল আওয়াল ১৩২৫ হি: ১৫
এপ্রিল ১৯০৭ইং। (মজমুআয়ে ইশতেহারাত : ৩/৫৭৮)।
আল্লাহর ফয়সালা
আল্লাহতাআলা সর্বদা চূড়ান্ত ফয়সালা সত্যের পক্ষেই করে থাকেন। মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীকে আল্লাহতাআলা অনেক সুযোগ দিয়েছিলেন। ইতোপূর্বে তার কোনো ভবিষ্যদ্বার্ণ পূর্ণ না হওয়ার কারণেও তার সঠিক পথে ফিরে আসার সুযোগ ছিলো। কিন্তু তার ভাগ্যে যেহেতু হেদায়েত নেই, সেহেতু পরবর্তীদের জন্য আল্লাহতাআলা তার অন্তিম মুহূর্তকে সুস্পষ্ট নিদর্শন বানিয়ে রেখেছেন। মির্যা কাদিয়ানী উপর্যুক্ত ইশতেহার প্রকাশ করার ঠিক একবছর একমাস এগারো দিন পর ২৬ মে ১৯০৮ খৃস্টাব্দে কলেরা রোগের আযাবে পতিত হয়ে লাহোরে মৃত্যুবরণ করে। অপরদিকে মৌলবী সানাউল্লাহ সাহেব রহ. তার ধ্বংসের পরেও দীর্ঘ ৪০ বছর পর্যন্ত বেঁচে ছিলেন। অতঃপর ১৯৪৮ খৃস্টাব্দে সরগোধা এলাকায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন । সুতরাং মিথ্যাবাদীদের ওপর আল্লাহর অভিশাপ ও লানত অবধারিত।
কাদিয়ানীর কলেরা
কলেরা এমন একটি রোগ, যার কারণে একই সঙ্গে দাস্ত বা পাতলা পায়খানা এবং বমি দেখা দেয় । এ রোগের প্রাদুর্ভাব প্রায়শই বিভিন্ন এলাকায় দেখা যায় এবং তাতে অনেক লোকের মৃত্যুও হয়। কখনও তা মহামারীর রূপ নেয়। কিন্তু মির্যা কাদিয়ানীর কলেরা রোগে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি সাধারণ ছিলো না বরং যেহেতু সে দুআ করে এ ধরনের রোগ শাস্তি হিসেবে প্রার্থনা করেছে,.সুতরাং সকলে অপেক্ষা করছিলো, কী হয়? মৌলবী সানাউল্লাহ সাহেব সেই শাস্তির শিকার হন নাকি খোদ মির্যা কাদিয়ানী? এমতাবস্থায় যখন দেখা গেলো মির্যা নিজেই কলেরা রোগে আক্রান্ত হলো এবং তাতেই তার মৃত্যু হলো। অথচ মৌলবী সানাউল্লাহ সাহেব বহাল তবিয়তে আরও ৪০ বছর বেঁচে থাকলেন, তখন বিষয়টি সবার কাছেই স্পষ্ট হয়ে গেলো । বর্তমানে কাদিয়ানীরা মির্যা গোলামের কলেরা রোগে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করতে চায়। অথচ তারা মির্যার নিজস্ব উক্তিটি পড়ে দেখে না। মির্যা কাদিয়ানী নিজেই বলেছে, ‘মীর সাহাব! মুঝে ওয়াবায়ী হায়জা হোগায়া' অর্থ( মীর সহেব! আমার মহামারীর কলেরা হয়ে গেছে)। (হায়াতে নাসের : ১৪)।
নীচের রেফারেন্সটি লক্ষ্য করুন
সীরাতুল মাহদীর গ্রন্থকার লিখেছেন- 'আম্মাজান বলেছেন, মসীহে মওউদের (মির্যা কাদিয়ানীর) প্রথম দাস্ত শুরু হয় খানা খাওয়ার সময়। এর কিছুক্ষণ পর পর্যন্ত আমরা তার পা টিপতে থাকি এবং তিনি আরাম করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েন। আমিও ঘুমিয়ে পড়ি। অল্প কিছুক্ষণ পর হযরত আবার টয়লেটে.যাওয়ার প্রয়োজন অনুভব করেন। সম্ভবত একবার বা দু’বার তিনি টয়লেটে যান। কিন্তু এতেই তিনি খুব দুর্বল হয়ে পড়েন। ফলে হাত দিয়ে তিনি আমাকে জাগিয়ে তোলেন। আমি জেগে দেখি তিনি খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছেন । তিনি আমার খাটেই শুয়ে পড়লেন। আমি তার পা ম্যাসেজ করতে শুরু করলাম। অল্প কিছুক্ষণ পর তিনি আমাকে শুয়ে যেতে বললেন। আমি বললাম, অসুবিধা নেই। আমি আপনার পা টিপে দিচ্ছি। সে সময়ে তার আরও একবার দাস্ত হলো। কিন্তু দুর্বলতা এতোই বেশি ছিলো, টয়লেটে যাওয়ার শক্তি ছিলো না। এজন্য আমি খাটের পাশেই পায়খানা করার ব্যবস্থা করে দিই । (কোনো বালতি ইত্যাদি রেখে তাতেই জরুরত সারার ব্যবস্থা করা.হয়েছিলো) তিনি সেখানেই হাজত সেরে নিলেন। এরপর আবার শুয়ে পড়লেন। আমিও পা টিপতে শুরু করলাম। কিন্তু দুর্বলতা খুব বেশি ছিলো। এরপর আরও একবার দাস্ত হলো। তারপর বমিও হলো। বমি করা শেষ করতে না করতেই উল্টো দিকে তিনি খাটের ওপর পড়ে গেলেন। তার মাথা.খাটের তক্তার সঙ্গে গিয়ে আঘাতপ্রাপ্ত হলো, আর তখনই তার মৃত্যু হয়ে গেলো।' (সীরাতুল মাহদী : রেওয়ায়েত ১২, পৃষ্ঠা : ১০-১১)
সুতরাং যেকোনো সত্যসন্ধানী কাদিয়ানীর হেদায়েত পাওয়ার জন্য এই একটি ঘটনাই যথেষ্ট। আল্লাহই একমাত্র হেদায়েতের মালিক।
وصلى الله تعالى على النبي الخاتم الأمين
سیدنا محمد وعلى آله وصحبه أجمعين
.
Facebook ID 01: https://www.facebook.com/mdishrakabid
Facebook ID 02: https://www.facebook.com/ishrakabid75
Facebook Page: https://www.facebook.com/mdishrakabid75