JustPaste.it

12 arakaner-poristhiti

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষণ

আরাকানের পরিস্থিতি কি

স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে?

উমাইদ আল আইমা

 

মুসলিম উম্মাহর মাঝে এমন লোক হয়তো খুব কমই পাওয়া যাবে; যাদের সোশ্যাল মিডিয়ার সাথে সম্পৃক্ততা নেই। অথচ তারা আরাকানের নির্যাতিত মাজলুম মুসলিমদের কান্নার আওয়াজ শোনে নি; কিংবা তাদের প্রবাহিত রক্তের স্রোত দেখে নি। হ্যাঁ! এমন লোকও অনেক রয়েছে; যারা চায়–আপন অঙ্গনের খবরাখবর ছাড়া ভিন্ন কোন সংবাদ যেন তাদের কানে না আসে; যা তাদের নিজ নিজ কাজে বিঘ্নতার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। কিন্তু আরাকানের রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর বৌদ্ধ ন্যাড়া সন্ত্রাসীদের পাশবিকতা এতটাই চরম অবস্থায় উপনীত হয়েছে যে, বিশ্বের চলমান পরিস্থিতির প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে উদাসীন ও মিডিয়া বিমুখ লোকেরা পর্যন্ত কিছু বলা কিংবা করা থেকে গাফেল থাকতে পারে নি। আরাকানের মাজলুম মুসলিমদের ওপর বৌদ্ধ ন্যাড়া সন্ত্রাসীদের নৃশংসতা বন্ধের লক্ষ্যে পৃথিবীর নানা প্রান্তে বিক্ষুব্ধ মুসলিম জনতা নিজ নিজ ক্ষোভ প্রকাশ করে দেখিয়েছিল। কয়েক সপ্তাহ ধরে তো কোথাও না কোথাও চলছিল মিটিং-মিছিল, মানববন্ধন, লংমার্চসহ সম্ভাব্য সব ধরণের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন-কর্মসূচী; যাতে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর বৌদ্ধ ন্যাড়া সন্ত্রাসীদের এই পাশবিক হত্যাযজ্ঞ বন্ধ হয়ে আরাকানে একটি স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসে। আমরা দেখেছি- এই তো বিগত কয়েক মাসেও এসব মিটিং-মিছিল, মানববন্ধনসহ শান্তিপূর্ণ লংমার্চ, মাহফিল, সভা-সেমিনার, টকশোতে বৌদ্ধ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আর শ্লোগানের ঝড় ওঠেছিল। কিন্তু এখন আর সেই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চোখে পড়ে না। এখন আর আরাকান নিয়ে শ্লোগানও ওঠে না। লেখকদের কলমের কালিতে আজ নব নব ইস্যু চিত্রিত হচ্ছে; বক্তার বয়ানেও নতুন নতুন বিষয় ধ্বনিত হচ্ছে। খুব দ্রুতই পাল্টে যাচ্ছে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনগুলোর দৃশ্যপট। আরাকান-রোহিঙ্গা শব্দগুলো এখন পুরাতন পত্রিকার পাতায় শিরোনাম হয়েই চোখে ভাসছে। তাহলে,কি আরাকানের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে? আমরা যদি আমাদের নিকটতম আরেকটি মুসলিম ভূখন্ড কাশ্মীরের দিকে লক্ষ্য করি; আর আমাদের নিকট স্বাভাবিকতার স্বরূপ কি? তা বিশ্লেষণ করি। তাহলে, সেই প্রশ্নের উত্তর পাবো; যা আজ নিজেই নিজের কাছে বারবার জিজ্ঞাসিত হচ্ছি- আরাকানের পরিস্থিতি কি স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে? ইন্ডিয়ান গো-পূজারী হিংস্র সন্ত্রাসী বাহিনী কর্তৃক ‘বুরহান ওয়ানী’ নামক মুসলিম বীর নওজোয়ানকে হত্যা করার পর থেকে একটানা প্রায় ১৩০ দিনেই শতাধিক মুসলিম গো-বাহিনীর বুলেটে প্রাণ হারিয়েছিল; পেলেট আক্রমণে আহত হয়েছিল দশ হাজারেরও অধিক মানুষ। তখন মুসলিম ভূখন্ড গুলোতে ‘কাশ্মীর, কাশ্মীর’ শ্লোগান ওঠেছিল; প্ল্যাকার্ড আর ব্যানারে ‘কাশ্মীর, কাশ্মীর’ শব্দই বড় করে লেখা ছিল। তারপর যখন গো-পূজারীরা সাময়িকভাবে হত্যাযজ্ঞের ধরন বদলিয়ে ভিন্নভাবে নির্যাতন শুরু করল; আর কুফফার মিডিয়াগুলো থেকেও ‘কাশ্মীর’ শব্দের উচ্চারণ বন্ধ হয়ে গেল।

ঠিক তখনি নিস্তব্ধ হয়ে গেল মুসলিম শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের ‘কাশ্মীর, কাশ্মীর’ ধ্বনি; মুছে গেল প্ল্যাকার্ড আর ব্যানার থেকেও ‘কাশ্মীর’ শব্দটি। কারণ, এখন কাশ্মীরের অবস্থা স্বাভাবিক। প্রতিনিয়ত দু’একজন মুসলিমের রক্তক্ষরণের জন্য শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের প্রয়োজন পড়ে না। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন তখনই ডাকা

হবে; যখন ব্যাপকভাবে মুসলিম নিধন চলবে; আর কুফফার মিডিয়াতেও তা প্রচারিত হবে। তাগুত বিশ্বমোড়লরাও কিছু বিবৃতি দিয়ে নিন্দা জানাবে। আর এভাবেই মানুষের কাছে স্বাভাবিক হয়ে গেল কাশ্মীরের পরিস্থিতি; যদিও এখনও সেখানকার মুসলিমদের নাপাক মুশরিকদের কাছে নত হয়ে থাকতে হয়; তাদের কুফরি আইনের অধীনে জীবন যাপন করতে হয়। যদিও গো-পূজারীদের দ্বারা পবিত্র মসজিদসমূহ তালাবদ্ধ থাকে; মুসলিমদের তাড়িয়ে দেওয়া হয় ইবাদাতগাহ থেকে। কেন জানি, সব শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের একটাই লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কাফের-মুশরিকদের সাথে মিলেমিশে থাকার একটুখানি আকুতি। এটাই হলো স্বাভাবিক পরিস্থিতির ব্যাপারে বেশির ভাগ মুসলিমদের ভাবনা। আর শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীরা তো এতটাই শান্তির দূত যে, মুসলিমদের রক্ত স্রোতে দাঁড়িয়েও কাফের-মুশরিকদের বলতে পছন্দ করে- আমরা শান্তিপ্রিয়; আমাদের দ্বারা তোমাদের কোন রক্তপাত হবে না; তোমাদের কোন ক্ষতির আশঙ্কা নেই। হায় মুসলিম উম্মাহ! মুমিনের রক্তক্ষরণ নিজেদের কাছে স্বাভাবিক হয়ে গেল! অথচ যারা লক্ষ লক্ষ মুসলিমদের রক্ত ঝরায়; তাদের একটু নাপাক রক্ত ঝরলেই মায়াকান্না শুরু হয়ে যায়! এবার আরাকানের দিকে চেয়ে দেখি–তাও কি কাশ্মীরের মত অদ্ভুত এক স্বাভাবিকতার পুনরাবৃত্তি নয়? এখনও তো দক্ষিণা বাতাস থেকে আরাকানি মুসলিমদের পোড়া লাশের গন্ধ বয়ে আসে। শোনা যায়- ধর্ষিতা বোনদের করুণ আর্তনাদ। বিধবা নারীদের হাহাকার, আহাজারি। আমাদের মুসলিম শিশুদের কান্নার রোল। ক্লান্ত-শ্রান্ত নিথর দেহে বৃদ্ধ বাবার মলিন চেয়ে থাকা। এখনও তো নাফ নদীর স্রোতে রক্তের প্রবাহ বয়ে যায়। এখনও তো সত্যনিষ্ঠ সাংবাদিকদের কলমে বৌদ্ধ ন্যাড়া সন্ত্রাসীদের বর্বরোচিত হামলায় রোহিঙ্গা মুসলিমদের মৃ ত্যুর খবর প্রচারিত হয়। এখনও তো মুসলিমদের ঘরবাড়িতে আগুনের লেলিহান শিখা দাউদাউ করে ওঠে। এখনও তো আপন ভূমিতে বন্দীদশায় মৃত্যুমুখে পতিত হয়ে আছে অসংখ্য রোহিঙ্গা মুসলিম ভাই-বোন। এখনও তো মুসলিম নামধারী বাংলাদেশে উদ্ভাস্তুর মত মানবেতর জীবন যাপন করছে হাজার হাজার মুহাজির রোহিঙ্গা মুসলিম। এখনও তো একমুঠো খাবারের জন্য আমাদের আরাকানি মুসলিম ভাই-বোনদের ভিক্ষুকের মত পথে নামতে হয়।

হে মুসলিম! হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মাত! তাহলে কিভাবে স্বাভাবিক হয়ে গেল আরাকানের পরিস্থিতি? যদি স্বাভাবিক না-ই হয়ে থাকে; তাহলে কোথায় আজ সেই কথিত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন-কর্মসূচি? কোথায় আরাকান অভিমুখে লংমার্চ? কোথায় উম্মাহর জন্য মানববন্ধন? আফসোস তাদের জন্য! যারা ভাবছি; এক-দু’টা মিটিং-মিছিলে অংশগ্রহণ করে, কিছুক্ষণ মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে থেকে, আর কিছু ত্রাণ পাঠিয়েই আমরা নিজেদের দায়িত্ব আদায় করে ফেলেছি! রোহিঙ্গা মুসলিমদের জন্য আমাদের কি আর কোন কিছুই

করার নেই? প্রয়োজনের তুলনায় দু-একবারের এই সামান্য ত্রাণই কি যথেষ্ট হয়ে গেছে? হে মুসলিম! হে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মাত! এমতাবস্থায় কি করণীয়?- সে ব্যাপারে কি মহান রবের কোন বিধান নেই? যদি থেকে থাকে; তবে সেই বিধানের সাথে আমাদের কথিত শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কতটুকুই বা মিল? মহান আল্লাহ আমাদের যে দু’টি চোখ দিয়েছেন; তা দিয়ে পবিত্র কুরআনের সূরা নিসার ৭৫ নং আয়াতের প্রতি লক্ষ্য করে দেখি। তিনি আমাদের যে যবান দিয়েছেন; তা দিয়ে এ আয়াতখানা অন্তত আরও একবার তিলাওয়াত করি। তিনি আমাদের যে অন্তর দিয়েছেন; তা দিয়ে এই আয়াতের মর্ম উপলব্ধি করি। অর্থ না বুঝে আসলে; বাংলায় অনুবাদ দেখে নিই। তারপর নিজেকে জিজ্ঞেস করি- পরীক্ষা কি শুধু আরাকানি মুসলিমদের উপর দিয়েই চলছে? তাদেরকে জালিম সন্ত্রাসীদের কবল থেকে বাঁচানোর জন্য আমাদের উপর কি পরীক্ষা চলছে না? পরিশেষে আরও একবার মুসলিম উম্মাহর কাছে প্রশ্ন করছি- আরাকানের পরিস্থিতি কি স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছে?

 

 আল বালাগ

ম্যাগাজিন ইস্যু-২