আপনার জিজ্ঞাসা ও আমাদের জবাব?
?প্রশ্ন:
ইসলাম কি তরবারীর মাধ্যমে ছড়িয়েছে?
উত্তর: জিহাদ দুই প্রকার- ১. আক্রমণাত্মক জিহাদ ২. প্রতিরক্ষামূলক জিহাদ।
নিঃসন্দেহে ইসলাম প্রচার এবং দলেদলে মানুষ ইসলামে প্রবেশের ক্ষেত্রে আক্রমণাত্মক জিহাদের বড় প্রভাব রয়েছে। কেননা আক্রমণাত্মক জিহাদই মানুষের ঐ সকল প্রতিবন্ধকতা দূর করে যা মানুষকে ইসলামের সৌন্দর্য অবলোকন করতে এবং ইসলাম নিয়ে ভাবতে বাধা প্রদান করে। আর ইসলামের শত্রুদের অন্তর সর্বদাই আক্রমণাত্মক জিহাদের ভয়ে ভীত-সন্ত্রস্ত থাকে। একটি ইংরেজী ইসলামিক প্রত্রিকার এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, একটি ভয় সর্বদাই পশ্চিমাবিশ্বকে তাড়িয়ে বেড়ায়। তা হল, ইসলাম শুধুমাত্র একটি ধর্মের নাম নয়; বরং এর একটি গুরুত্বপূর্ণ রোকন হচ্ছে জিহাদ। এই জিহাদের কারণেই ইসলাম দিনদিন বিস্তার লাভ করছে। রবার্ট বেন বলেন, ইসলাম পূর্বে একবার সারা দুনিয়ার সাথে যুদ্ধ করেছে এবং দ্বিতীয় বার আবারও সারা দুনিয়ার সাথে যুদ্ধ করবে। একদিকে প্রাচ্যবিদদের কেউ কেউ ইসলামের প্রতি অপবাদের সুরে বলে, ‘আরে ইসলাম তো তরবারীর জোরে প্রসারিত হয়েছে।’ অন্য দিকে টমাস আর্নোলড একজন প্রাচ্যবিদ। তিনি মুসলমানদের অন্তর থেকে জিহাদী প্রেরণা শক্তিকে বিলুপ্ত করার জন্য ‘আদ দাওয়াত ইলাল ইসলাম’ এই বইটি লিখেন। এই বইয়ে ইসলামের প্রতি তার নিজস্ব মনগড়া একটি দাবি পেশ করে বলেন, ‘ইসলাম হল শান্তির ধর্ম। সুতরাং ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে তরবারীর কোন ভূমিকা নেই। বরং ইসলাম তো প্রসারিত হয়েছে শান্তিপূর্ণ দাওয়াতের মাধ্যমে’। এদিকে মুসলমানরাও তাদের পাতানো ফাঁদে ফেঁসে গেছে। সুতরাং তারা যখন প্রাচ্যবিদদের বলতে শোনে, ইসলাম তো তরবারীর মাধ্যমে প্রচার হয়েছে। তখন তারা বলে, তোমাদের এধরণের দাবি ঠিক না। এ দাবি মিথ্যা। কারণ তোমাদের দাবি তোমাদের কথা দ্বারাই মিথ্যা প্রমাণিত হয়। তোমরা কি দেখছো না টমাস কী বলে? সে তো এমন এমন বলে। পরাজয়ের মানসিকতাসম্পন্ন কিছু লোকের আত্মপ্রকাশ ঘটল যারা ইসলামকে সব ধরণের অপবাদ থেকে দূরে রাখতে চায়। সুতরাং তারা ইসলামকে এ অপবাদটি থেকেও মুক্ত করতে চাইল। তাই তারা ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে তরবারীর ভূমিকাকে একেবারে অস্বীকার করে বসল। এবং তারা বলতে লাগল, ‘ইসলামে আক্রমণাত্মক জিহাদ বলতে কিছু নেই; বরং ইসলাম শুধুমাত্র প্রতিরক্ষামূলক জিহাদের অনুমতি দেয়। আসলে ইসলামে এ ধরনের হাস্যকর, মনগড়া, ভ্রান্ত কথার কোন ভিত্তি নেই। তাদের এধরনের কথা কুরআনের খেলাফ হাদিসের খেলাফ। সালফে সালেহীনদের ইজমার খেলাফ এবং কিয়াসের খেলাফ। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, দীন একমাত্র আল্লাহ তাআলার জন্যই। তাই আল্লাহর কালিমাই উঁচু থাকবে। আর কালিমা শব্দটি আম (তথা ব্যাপক) এর মাধ্যমে পুরো কুরআনই উদ্দেশ্য। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন,
لَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنٰتِ وَأَنزَلْنَا مَعَهُمُ الْكِتٰبَ وَالْمِيزَانَ لِيَقُومَ النَّاسُ بِالْقِسْطِ ۖ وَأَنزَلْنَا الْحَدِيدَ فِيهِ بَأْسٌ شَدِيدٌ وَمَنٰفِعُ لِلنَّاسِ وَلِيَعْلَمَ اللَّهُ مَن يَنصُرُهُۥ وَرُسُلَهُۥ بِالْغَيْبِ ۚ إِنَّ اللَّهَ قَوِىٌّ عَزِيزٌ
‘আমি আমার রাসূলগণকে সুস্পষ্ট নিদর্শনসহ প্রেরণ করেছি এবং তাঁদের সাথে অবতীর্ণ করেছি কিতাব ও ন্যায়নীতি, যাতে মানুষ ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করে।’ (সুরা হাদীদ: আয়াত -২৫)
সুতরাং রাসূলগণের প্রেরণ এবং কিতাব নাজিলের উদ্দেশ্য হল-যাতে করে মানুষ হুকুকুল্লাহ এবং হুকুকুল ইবাদগুলো ইনসাফের সাথে আদায় করে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
لَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنٰتِ وَأَنزَلْنَا مَعَهُمُ الْكِتٰبَ وَالْمِيزَانَ لِيَقُومَ النَّاسُ بِالْقِسْطِ ۖ وَأَنزَلْنَا الْحَدِيدَ فِيهِ بَأْسٌ شَدِيدٌ وَمَنٰفِعُ لِلنَّاسِ وَلِيَعْلَمَ اللَّهُ مَن يَنصُرُهُۥ وَرُسُلَهُۥ بِالْغَيْبِ ۚ إِنَّ اللَّهَ قَوِىٌّ عَزِيزٌ
“আর আমি নাজিল করেছি লৌহ, যাতে রয়েছে প্রচন্ড রণশক্তি এবং মানুষের বহুবিধ উপকার। এটা এজন্য যে, আল্লাহ প্রকাশ করে দিবেন যে, কে না দেখে তাকে এবং তাঁর রাসূলগণকে সাহায্য করে। আল্লাহ শক্তিধর, পরাক্রমশালী।’ (সুরা হাদীদ আয়াত ২৫)
সুতরাং যে ব্যক্তি কিতাব থেকে বিমুখ হবে, তাকে হাদীদ তথা লোহার মাধ্যমে ঠিক করা হবে। একারণেই তো এই দীন টিকে থাকার ভিত্তি হচ্ছে কুরআন এবং তরবারী। হাদীস শরীফে এসেছে, জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ রাযি. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদের আদেশ করেছেন,
امرنا رسول الله صلي الله عليه وسلم أن نضرب بهذا يعني السيف من . عدل عن هذا يعني المصحف
যাতে করে আমরা ঐ ব্যক্তিকে এটা তথা-তরবারীর মাধ্যমে আঘাত করি যে এটা-তথা কুরআন থেকে বিমুখ থাকে। ইবনে কাইয়ুম রহ. বলেন, আল্লাহ তাআলা রাসূল ﷺ কে কিয়ামতের পূর্বে একটি পথ প্রদর্শনকারী কিতাব এবং সাহায্যকারী তরবারী দিয়ে প্রেরণ করেছেন, যাতে করে এক আল্লাহর ইবাদত করা হয়।
সুতরাং আল্লাহ তাআলা দীনকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন সুস্পষ্ট প্রমাণ (তথা কুরআন) এবং সাহায্যকারী তরবারীর মাধ্যমে, যাতে করে তাঁর সাথে কাউকে শরীক না করে একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা হয়। তাছাড়া আল্লাহ তাআলা রাসূল ﷺ এর রিজিক রেখেছেন তরবারীর নিচে। ইসলাম প্রচারের ক্ষেত্রে তরবারীর ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। আসুন দলিল দ্বারা তা বুঝে নিই। আল্লাহ তাআলা বলেন,
الَّذِينَ أُخْرِجُوا مِن دِيٰرِهِم بِغَيْرِ حَقٍّ إِلَّآ أَن يَقُولُوا رَبُّنَا اللَّهُ ۗ وَلَوْلَا دَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُم بِبَعْضٍ لَّهُدِّمَتْ صَوٰمِعُ وَبِيَعٌ وَصَلَوٰتٌ وَمَسٰجِدُ يُذْكَرُ فِيهَا اسْمُ اللَّهِ كَثِيرًا ۗ وَلَيَنصُرَنَّ اللَّهُ مَن يَنصُرُهُۥٓ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَقَوِىٌّ عَزِيزٌ
‘যাদেরকে তাদের ঘর-বাড়ী থেকে অন্যায়ভাবে বহিস্কার করা হয়েছে শুধু এই অপরাধে যে, তারা বলে আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ। আল্লাহ যদি মানবজাতির একদলকে অপর দল দ্বারা প্রতিহত করতেন, তবে (খ্রিষ্টানদের) নির্জন গির্জা, এবাদত খানা, (ইহুদী দের) উপাসনালয়ও বিধ্বস্ত হয়ে যেত। (যখন তারা সত্যের উপর ছিল) এবং মসজিদসমূহ-বিধ্বস্ত হয়ে যেত, যেগুলোতে আল্লাহর নাম অধিক পরিমাণে স্বরণ করা হয়। আল্লাহ নিশ্চয়ই তাদেরকে সাহায্য করবেন, যারা আল্লাহর সাহায্য করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী, শক্তিধর।’ (সুরা হজ, আয়াত: ৪০ )
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,
فَهَزَمُوهُم بِإِذْنِ اللَّهِ وَقَتَلَ دَاوُۥدُ جَالُوتَ وَءَاتٰىهُ اللَّهُ الْمُلْكَ وَالْحِكْمَةَ وَعَلَّمَهُۥ مِمَّا يَشَآءُ ۗ وَلَوْلَا دَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُم بِبَعْضٍ لَّفَسَدَتِ الْأَرْضُ وَلٰكِنَّ اللَّهَ ذُو فَضْلٍ عَلَى الْعٰلَمِينَ
‘তারপর ঈমানদাররা আল্লাহর হুকুমে জালুতের বাহিনীকে পরাজিত করে দিল এবং দাউদ জালূতকে হত্যা করল। আর আল্লাহ্ দাউদকে দান করলেন রাজ্য ও অভিজ্ঞতা। আর তাকে যা চাইলেন শিখালেন। আল্লাহ যদি একজনকে অপরজনের দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে গোটা দুনিয়া বিধ্বস্ত হয়ে যেতো। কিন্তু বিশ্ববাসীর প্রতি আল্লাহ্ একান্তই দয়ালু, করুণাম।’-(সুরা বাকারা আয়াত: ২৫১)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করার নিদের্শ দিয়ে বলেন,
وَأَعِدُّوا لَهُم مَّا اسْتَطَعْتُم مِّن قُوَّةٍ وَمِن رِّبَاطِ الْخَيْلِ تُرْهِبُونَ بِهِۦ عَدُوَّ اللَّهِ وَعَدُوَّكُمْ وَءَاخَرِينَ مِن دُونِهِمْ لَا تَعْلَمُونَهُمُ اللَّهُ يَعْلَمُهُمْ ۚ وَمَا تُنفِقُوا مِن شَىْءٍ فِى سَبِيلِ اللَّهِ يُوَفَّ إِلَيْكُمْ وَأَنتُمْ لَا تُظْلَمُونَ
‘আর প্রস্তুত কর তাদের সাথে যুদ্ধের জন্য যা-ই কিছু সংগ্রহ করতে পার নিজের শক্তি সামর্থ্যের মধ্যে থেকে এবং পালিত ঘোড়া থেকে, যেন প্রভাব পড়ে আল্লাহর শত্রুদের উপর এবং তোমাদের শত্রুদের। উপর আর তাদেরকে ছাড়া অন্যান্যদের উপরও যাদেরকে তোমরা জান; আল্লাহ তাদেরকে চেনেন। বস্তুতঃ যা কিছু তোমরা ব্যয় করবে আল্লাহর রাহে, তা তোমরা পরিপূর্ণভাবে ফিরে পাবে এবং তোমাদের কোন হক অপূর্ণ থাকবে না।’ (সুরা আনফাল আয়াত: ৬০)
সুতরাং ইসলাম যদি শুধু মাত্র শান্তিপূর্ণ দাওয়াতের মাধ্যমেই প্রচারিত হত; তাহলে কাফেররা কী দেখে ভয় পাবে। তারা কি শুধু মাত্র মুখ থেকে বের হওয়া কিছু কথাকে ভয় পাবে? রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন,
نصرت بالرعب مسيرة شهر
‘শুক্ররা আমাকে দেখে ভয় পায় যদিও আমি একমাসের দূরত্বে থাকি। কাফেররা কি শুধু এরকম কথা থেকেই ভয় পাবে, তাদেরকে বলা হবে তোমরা ইসলাম গ্রহণ কর। আর যদি না কর তাহলে তোমরা স্বাধীন! তোমরা যা ইচ্ছা তাই কর। নাকি তারা ভয় পাবে জিহাদকে এবং লাঞ্ছিত হয়ে জিযিয়া প্রদানকে। হ্যাঁ, এই লাঞ্ছনাই তাদেরকে ইসলাম গ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করবে। রাসূল ﷺ তরবারী সাথে নিয়ে মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দিতেন। এবং তিনি তার সেনাপতিদের এ আদেশ দিতেন, যাতে করে মুসলমানদের এ আচরণ দেখে (অর্থাৎ তারা শক্তি থাকা সত্ত্বেও তাদেরকে দাওয়াত দিচ্ছে) তাদের থেকে অবাধ্যতার পর্দা সরে যায়।
সাহল ইবনে সাদ রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, খায়বারের যুদ্ধের দিন রাসূল ﷺ বললেন, আগামী কাল এমন একজনের হাতে (যুদ্ধের) ঝান্ডা তুলে দিব যার হাতে এ দুর্গের বিজয় হবে। সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবাসে আর আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলও তাকে ভালবাসে। সকলে এটা ভেবে ভেবে রাত কাটাল যে, না জানি কার হাতে এটা তুলে দেওয়া হয়। আর প্রত্যেকেই কামনা করছিল যে, এটা যেন তাকে দেওয়া হয়। পর দিন সকালে তিনি বললেন, আলী কোথায়? তাঁকে বলা হল, সে চোখের ব্যথায় আক্রান্ত। তখন তিনি তার থুথু মুবারক তার দুচোখে লাগিয়ে দিলেন এবং তার জন্য দোআ করলেন। ফলে তিনি এমনভাবে সুস্থ হলেন যেন তার চোখে কোন ব্যথাই ছিল না। অতঃপর তার হতে ঝান্ডা তুলে দিলেন এবং বললেন, তারা আমাদের মতো হওয়া (অর্থাৎ ঈমান আনা) পর্যন্ত তাদের সাথে যুদ্ধ করবে। তুমি তাদের আঙ্গিনায় কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে তাদেরকে ইসলামের দাওয়াত দাও এবং তাদের করণীয় সম্পর্কে তাদের জানিয়ে দাও। আল্লাহর কসম! তোমার মাধ্যমে যদি একজন লোকও হেদায়াত প্রাপ্ত হয় তাহলে এটা তোমার জন্য লাল উট থেকেও অধিক উত্তম। অন্য হাদীসে এসেছে, বুরাইদা রাযি. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল ﷺ, যখন কাউকে কোন সৈন্য দলের আমীর নির্ধারণ করতেন তখন তাকে বিশেষ করে আল্লাহকে ভয় করা এবং সাথীদের সহযোদ্ধাদের সাথে ভাল ব্যবহার করার নির্দেশ দিতেন। অতঃপর বলতেন, তোমরা আল্লাহর নামে আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ কর। কাফেরদের সাথে যুদ্ধ কর। তোমরা যুদ্ধ করবে। গনিমতের মাল চুরি করবে না। প্রতারণা করবে না। হত্যার পর অঙ্গচ্ছেদন করবে না। শিশুদের হত্যা করবে। তুমি যখন মুশরিক শত্রুর মুখোমুখি হবে তখন তাদের তিনটি বিষয়ের দিকে আহ্বান করবে। তারা যেটা বেছে নিবে তাদের থেকে সেটা গ্রহণ করবে। এবং অন্যটি থেকে বিরত থাকবে। তাদেরকে ইসলামের দিকে ডাকবে তারা যদি গ্রহণ করে তাহলে তাদের থেকে তা গ্রহণ করবে এবং তাদের থেকে বিরত থাকবে। তারা যদি ইসলাম গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকে তাহলে তাদের কাছে জিযিয়া চাও। যদি তারা সম্মত হয় তাহলে তাদের থেকে তা গ্রহণ করবে এবং তাদের সাথে যুদ্ধ করা থেকে বিরত থাকবে। যদি তারা অস্বীকার করে তাহলে আল্লাহর সাহায্য চেয়ে তাদের সাথে যুদ্ধ শুরু করে দাও। হ্যাঁ, রাসূলুল্লাহ ﷺ তাঁর উমারাদের আদেশ করেছেন, তারা যেন তরবারী উচু করে ধরে কাফেরদের ইসলামের দিকে ডাকে। সুতরাং তারা যদি ইসলাম গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানায় তাহলে তারা লাঞ্ছিত হয়ে জিযিয়া প্রদান করবে। এতেও যদি তারা অস্বীকৃতি জানায় তাহলে তরবারী ব্যতীত আর কোন পথ নেই। অর্থাৎ তাদের সাথে যুদ্ধ কর। রাসূল ﷺ এর ভাষায়
هم أبوا استعن بالله وقاتلهم
‘যদি তারা অস্বীকৃতি জানায় (ইসলাম গ্রহণ করতে অথবা, জিজয়া দিতে) তাহলে আল্লাহর সাহায্য চেয়ে তাদের সাথে যুদ্ধ কর। এবং রাসূল ﷺ বলেন, আমাকে কিয়ামতের পূর্বে তরবারী দিয়ে প্রেরণ করা হয়েছে। যাতে করে একমাত্র আল্লাহর ইবাদাত-ই করা হয়। তার কোন শরীক নেই। এবং আমার রিজিক আমার তরবারীর নিচে রাখা হয়েছে এবং যারা আমার আদেশ অমান্য করবে তাদেরকে লাঞ্ছিত ও অপদস্থ করা হবে। আর যে ব্যক্তি যে কওমের সাথে সাদৃশ্য রাখল সে তাদের অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে।
শক্তি ও তরবারীই ইসলাম প্রচারের সবচেয়ে কার্যকরি এবং গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। একারণে কিন্তু ইসলাম কলুষিত হয় না; বরং এর মাধ্যমেই ইসলামের অসাধারণত্ব, বিশেষত্ব এবং সৌন্দর্য ফুটে ওঠে। এর কারণে মানুষ দুনিয়া ও আখেরাতের ক্ষতি ছেড়ে দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। বেশির ভাগ মানুষই তো বোকা ও নির্বোধ এবং ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ। এখন তাদেরকে যদি আপন অবস্থায় ছেড়ে দেওয়া হয় তাহলে তারা প্রবৃত্তির তাড়নায় হক থেকে দূরে থাকবে এবং দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হবে। সুতরাং এ সকল মানুষকে হক ও কল্যাণের দিকে নিয়ে আসার জন্যই আল্লাহ তাআলা জিহাদের বিধান দিয়েছেন। এতে কোন সন্দেহ নেই যে, বোকা ও নিবোধকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করা, কল্যাণের দিকে নিয়ে যাওয়াই হচ্ছে হিকমত বা তাৎপর্যপূর্ণ কাজ। হযরত আবু হুরায়রা রাযি. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,
کنتم خير أمة أخرجت للناس
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় রাসূল ﷺ বলেন, ‘তোমরাই হলে মানুষের জন্য সবচেয়ে বেশি কল্যাণকামী, তোমরা তাদের গলায় বেড়ি পরিয়ে নিয়ে আসবে, যাতে (কাছে থেকে ইসলামে সৌন্দর্য দেখে) তারা ইসলাম গ্রহণ করে।’ -ইবনে কাসির।
আচ্ছা বলুন তো, জিহাদ ব্যতীত অন্য কোন পন্থায় মানুষের গলায় বেড়ি পরিয়ে নিয়ে আসা যাবে? হ্যাঁ, জিহাদের কারণেই ইসলাম প্রশংসিত ও বিশেষিত হবে কলুষিত ও তিরস্কৃত নয়। পরাজিত মানসিকতা সম্পন্নদের বলছি, আপনারা এই দীনকে বিকৃত করার ক্ষেত্রে আল্লাহকে ভয় করুণ এবং ইসলাম ধর্ম-শান্তি ও নিরাপত্তার ধর্ম, একথা বলে জিহাদ নিয়ে ঠাট্টা করার ক্ষেত্রে আল্লাহকে ভয় করুণ। হ্যাঁ, আমরাও বলি ইসলাম শান্তি ও নিরাপত্তার ধর্ম। কিন্তু সেটা হল সকল মানুষকে গাইরুল্লাহর ইবাদত থেকে ফিরিয়ে এক আল্লাহর ইবাদত ও তার হুকুমের দিকে নিয়ে আসার ভিত্তিতে। এটাই আল্লাহর আদেশ। এটা কোন মানুষের বানানো মানহাজ নয়। এবং কোন বুদ্ধিজীবির বুদ্ধিও নয় যে, দায়ীগণ এ ঘোষণা করতে লজ্জা বোধ করবেন যে, তাদের চূড়ান্ত টার্গেট হল,
أن يكون الدين كله لله
দীনের পুরোটাই একমাত্র আল্লাহ তাআলার জন্য হবে। ‘ইসলাম হুজ্জাত ও বয়ানের মাধ্যমে প্রসারিত হয়েছে ঐ সকল লোকদের বেলায় যারা পৌছা মাত্র শুনেছে এবং গ্রহণ করে নিয়েছে। এবং তরবারী ও বল প্রয়োগের মাধ্যমে প্রসারিত হয়েছে ঐ সকল লোকের দিকে লক্ষ করে, যারা অহংকার ও অবাধ্য হয়ে ফিরে থেকেছে।
স্মর্তব্য: আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে মানুষকে ইসলামের দিকে ডাকা এবং পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে শিরকের চিহ্ন মুছে ফেলার অর্থ এই নয় যে, মানুষকে ইসলাম গ্রহণ করতে বাধ্য করা হবে। এমনটি কখনও নয়। কারণ আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَمَثَلُ الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوٰلَهُمُ ابْتِغَآءَ مَرْضَاتِ اللَّهِ وَتَثْبِيتًا مِّنْ أَنفُسِهِمْ كَمَثَلِ جَنَّةٍۭ بِرَبْوَةٍ أَصَابَهَا وَابِلٌ فَـَٔاتَتْ أُكُلَهَا ضِعْفَيْنِ فَإِن لَّمْ يُصِبْهَا وَابِلٌ فَطَلٌّ ۗ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ
“যারা আল্লাহর রাস্তায় স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয় করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে এবং নিজের মনকে সুদৃঢ় করার জন্যে, তাদের উদাহরণ টিলায় অবস্থিত বাগানের মত, যাতে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়; অতঃপর দ্বিগুণ ফসল দান করে। যদি এমন প্রবল বৃষ্টিপাত নাও হয়, তবে হালকা বর্ষণই যথেষ্ট। আল্লাহ তোমাদের কাজকর্ম প্রত্যক্ষ করেন। (সুরা বাকারা: ২৬৫)
আর একারণেই তো মুশরিকরা নিজেদের ধর্ম ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ না করতে চাইলে এ অধিকার তাদের আছে। কিন্তু এটা হবে একটা শর্তের উপর ভিত্তি করে। তা হল, জিম্মি অথবা জিযিয়া প্রদানের চুক্তি করে। সুতরাং ঐ চুক্তির ভিত্তিতে ইসলামী ভুখন্ডে ইহুদীরা ইহুদী অবস্থায় এবং নাসারারা নাসারা অবস্থায় থাকতে পারবে। ইতিহাস সাক্ষী, ইসলামী ভ‚-খন্ডে বিধর্মীরা নিরাপদে থেকেছে।
মুসলমানদের পক্ষ থেকে তারা নিজ ধর্ম ত্যাগের ব্যাপারে কোন প্রকারের বাধ্যবাদকতার স্বীকার হয় নি। বিষয়টি প্রাচ্যবিদরাও স্বীকার করতে বাধ্য। প্রাচ্যের ধর্মনিরপেক্ষ গবেষক উলরেশ হেরমান বলেন, ‘মধ্যযুগে বিধর্মীদের প্রতি মুসলমানদের সহিষ্ণুতা দেখে আমি অবাক না হয়ে পারি না। আমি এখানে একটি মাত্র উদাহরণ দিচ্ছি। এই তো সালাহ উদ্দিন আইউবী, তিনি খ্রিষ্টানদের সাথে অকল্পনীয় উদারতা এবং সহিষ্ণুতা দেখিয়েছেন।’ তিনি তার বক্তব্যের শেষের দিকে বলেন, ‘কিন্তু মুসলমানদের প্রতি’ খ্রিষ্টানদের আচরণ এর সম্পূর্ণ বিপরীত।
আমেরিকার দার্শনিক ও ঐতিহাসিক ওল ডিয়ুরান্থ বলেন, ‘উমাইয়া খোলাফতের যুগে ইহুদী, খ্রিষ্টানসহ অন্য সকল বিধর্মীরা এতটাই সৌহার্দ্যরে মধ্যে ছিল যে, অন্য কোথাও এটা খুঁজে পাওয়া যাবে না।’ লেবাননের খ্রিষ্টান গবেষক ড. জজ হিন্না বলেন, ‘আরব মুসলমানগণ খ্রিষ্টানদের সাথে অত্যাচার ও কঠোরতা কিভাবে করতে হয় জানতই না। তাঁরা খ্রিষ্টানদের থেকে ট্যাক্স গ্রহণ করে তাদের স্বাধীন ছেড়ে দিত। কিন্তু অতীত ও বর্তমানে খ্রিষ্টানরা সবসময়ই মুসলমানদের ধর্ম ত্যাগে বাধ্য করে আসছে। এবং তারা ধর্ম ত্যাগে অস্বীকৃতি জানালে তাদের কঠিন শাস্তি দেয় এবং তাদের হত্যা করে। আমরা আল্লাহ তাআলার কাছে প্রার্থনা করি তিনি যেন তার দীনকে সম্মানিত করেন এবং তার কালিমাকে উঁচু করেন, আমীন।
এসো কাফেলাবদ্ধ হই
আল-কায়েদা উপমহাদেশ
আল বালাগ
ম্যাগাজিন ইস্যু-১