JustPaste.it

03 allah-dhorjoshilder-sathe-acen

দারসুল কুরআন

আল্লাহ

ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন

      মুফতি হাসান আব্দুল বারী

 

وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُۥ وَلَا تَنٰزَعُوا فَتَفْشَلُوا وَتَذْهَبَ رِيحُكُمْ ۖ وَاصْبِرُوٓا ۚ إِنَّ اللَّهَ مَعَ الصّٰبِرِينَ

অর্থ: আর আল্লাহ তাআলার নির্দেশ মান্য কর এবং তাঁর রাসূলের। তাছাড়া তোমরা পরস্পরে বিবাদে লিপ্ত হয়ো না। অন্যথায় তোমরা কাপুরুষ হয়ে পড়বে এবং তোমাদের প্রভাব চলে যাবে। আর তোমরা ধৈর্র্যধারণ কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা রয়েছেন ধৈর্যর্ শীলদের সাথে।-আনফাল:৪৬

উল্লিখিত আয়াতে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা রয়েছে। সমাজবদ্ধ জীবনের পাশাপাশি জিহাদের ময়দানে এ বিষয়গুলোর তাৎপর্য বহুমাত্রিক।

. وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُۥ তোমরা আল্লাহ তাআলা ও তাঁর রাসূলের

নির্দেশ মান্য কর।

২. وَلَا تَنٰزَعُوا তামরা পরস্পরে বিবাদে জড়িয়ো না।

৩. وَاصْبِرُوٓا এবং তোমরা ধৈর্যধারণ কর।

আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য এ-তো যাবতীয় কল্যাণ ও সফলতার নিয়ামক শর্ত। এটা ছাড়া উত্থান নয়, ব্যর্থতা আর পতনই তরান্বিত হবে। এজন্য আল্লাহ তাআলা মুমিনদের নির্দেশ দিচ্ছেন, যেন যুদ্ধের ময়দানের প্রতিটি মুহূর্তে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নির্দেশাবলীর প্রতি সমর্পিত থাকে। কাফেলার সকলেই যখন নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ করে দিবে শরীয়াহর সিদ্ধান্তের উপর, তখন পারস্পরিক বিবাদের আর প্রশ্নই আসে না। কারণ বিবাদ সাধারণত দুই কারণে হয়–এক. নেতৃত্বের লালসা। দুই. খ্যাতির বাসনা। আর প্রবৃত্তির মায়াবী আকর্ষণ মূলত এসবের পিছনে কাজ করে। ফলে সে অবলীলায় অযাচিত কাজ করে বেড়ায়। আত্মম্ভরিতার এ-মোহে সে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। আর এভাবেই তার জিহাদ -যা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই সে শুরু করেছে অবশেষে তা দলান্ধতা, মতান্ধতার কাদাজলে মুখ থুবড়ে পড়ে। এ স্বেচ্ছাচারিতা তাকে শুধু নয়; পুরো বাহিনীকে পথচ্যুত করেই তবে ক্ষান্ত হয়। কুরআনে এর ফল বলা হয়েছে–ব্যর্থতা-কাপুরুষতা। মুফতী শফী রহ. একে দুভাগে ভাগ করেন–এক. দলীয়ভাবে দুর্বলতা ও কাপুরুষতা ছড়িয়ে পড়বে। দুই. শত্রুর দৃষ্টিতে হালকা ও তুচ্ছ হিসেবে পরিগণিত হবে। বস্তুত, একতা ও মান্যতাই মুমিনের যুদ্ধজয়ের শক্তি ও কৌশল। তবে হ্যাঁ, সবার রুচি, বোধ ও চিন্তাশক্তি এক হবে–এমনটা ভাবা ভুল। মনের অমিল হতে পারে, যৌক্তিক মতভেদ থাকতে পারে, থাকবেও–তবে তা যেন নিজের মত সবার ওপর চাপিয়ে দেয়ার উগ্রমানসিকতার বহিঃপ্রকাশ না হয়। এ জন্যই কুরআনে ولَا تَنٰزَعُوا শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে ولا تختلفوا  নয়।

আয়াতের শেষাংশে আল্লাহ তাআলা আনুগত্যের ও বিবাদ থেকে বাঁচার পদ্ধতি বাতলে দিয়েছেন। তোমরা ধৈর্যধারণ কর। কারণ, ব্যক্তিস্বার্থে কেউ জিহাদে অবতীর্ণ হয়নি; তাই মতের বিরুদ্ধে আমীর স্বিদ্ধান্ত দিলে তার অসুবিধে কোথায়? হ্যাঁ, একটু খারাপ লাগতে পারে–মানবিক দুর্বলতা বলে কথা। তাই আল্লাহ তাআলা ধৈর্যধারণ করতে বলেন। কারণ এর ফল সুমিষ্ট। আল্লাহ তাআলা নিজেই বলছেন–নিশ্চয়ই আমি ধৈর্যশীলদের সাথে আছি। আল্লাহ তাআলা বিশ্বের প্রান্তে প্রান্তে জিহাদরত আমাদের ভাইদের এ আয়াতের মর্ম অনুধাবন ও বাস্তবায়নের তওফিক দিন। ব্যক্তিস্বার্থ, দলস্বার্থের চেয়ে উম্মাহর স্বার্থ–সর্বোপরি মহান আলাহ তাআলার সন্তুষ্টি তথা, দীনের বিজয়কে তরান্বিত করার তাওফীক দিন। আমিন। [সূত্র: মাআরেফুল কুরআন ও তাফসীর ফী জিলালিল কুরআন]

 আল বালাগ

ম্যাগাজিন ইস্যু-২