দরসঃ নিরাপত্তা সম্পর্কে
আমরা যেই আলোচনা টি করতে যাচ্ছি তা শায়খ আবু মুহাম্মাদ আসিম আল মাকদেসী হাফিঃ আলোচনা করেছেন । আশাকরি আমাদের জন্য অনেক মুফিদ হবে ইংশাল্লাহ
الحمد لله الذي يقول:{ يا ايهاالَّذِينَ آمَنُوا اصْبِرُوا وَصَابِرُوا وَرَابِطُوا وَاتَّقُوا اللّهَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ} اصبروا على ما أصابكم من الشدائد وما نزل بكم من الضراء، اصبروا على الطاعة وتجنّب المعصية صابروا وتحمّلوا الأذية الجماعية، وليصبّر بعضكم بعضاً، ولا يكن عدوُّكم أشدَّ منكم صبراً، ورابطوا وأقيموا على جهاد عدوِّ الله وعدوِّكم، ولازموا ثغورَكم مستعدّين للقتال والجهاد، واتقوا الله وخافوه ولا تخالفوه في جميع أحوالكم، ولم تؤمروا بالجهاد من غير تقوى، لكي تسعدوا في الدنيا والآخرة. والصلاة والسلام على النبي الأمين الهادي البشير، الذي قال: "استعينوا على قضاء حوائجكم بالكتمان"، وعلى آله وصحبه والتابعين أما بعد:
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম
সতর্কতার মধ্যম পন্থা
আল্লাহ রব্বুল আলামীন ঈমানদারদেরকে আদেশ দিয়ে বলছেন-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا خُذُوا حِذْرَكُمْ فَانفِرُوا ثُبَاتٍ أَوْ انفِرُوا جَمِيعًا
হে ঈমানদাররা! তোমরা তোমাদের সতর্কতা অবলম্বন করো, অতঃপর হয় দলে দলে বিভক্ত হয়ে কিংবা সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে অভিযানে বেরিয়ে পড়। (সূরা আন নিসা, আয়াত ৭১)
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা আরও বলেন-
وَخُذُوا حِذْرَكُمْ إِنَّ اللَّهَ أَعَدَّ لِلْكَافِرِينَ عَذَابًا مُهِينًا
তোমরা সতর্কতা অবলম্বন করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তায়ালা কাফেরদের জন্য লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন। (সূরা আন নিসা, আয়াত ১০২)
অতএব আল কুরআনের এ সব আয়াত সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করে যে, সতর্কতামুলক উপায় অবলম্বন করা, সতর্ক পদক্ষেপ নেয়া, সাবধান থাকা এবং সতর্কতামুলক পদক্ষেপ হিসেবে প্রয়োজনে বিশেষ কোন তথ্য অন্যের কাছ থেকে গোপন রাখা অবশ্যই শরিয়াহ সম্মত; বরং কোন কোন ক্ষেত্রে তা ফরয বা আবশ্যক হয়ে দাড়ায় । আর একারণে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও আমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যে কোন প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে গোপনীয়তা বজায় রাখার, এমন কি তা সামরিক বিষয়াদি না হলেও। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
) استعينوا على قضاء الحوائج بالكتمان، فإن كل ذي نعمة محسود(
তোমরা গোপনীয়তার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য প্রার্থনা করো, কেননা যে ব্যক্তিই কোন অনুগ্রহ লাভে ধন্য হয় তাকেই ঈর্ষার পাত্র হতে হয়।
রসুলল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর শত্রুদের ব্যপারে সতর্কীকরণের ক্ষেত্রে যে সব শব্দাবলী ব্যবহার করেছেন এক্ষেত্রে তাও বিশেষভাবে লক্ষণীয়। তিনি تمويه তামওয়ীহ শব্দ ব্যবহার করেছেন যার অর্থ হল, মেকি, মিথ্যা ঘটনা সাজানো, জালিয়াতি; তিনি ব্যবহার করেছেন مخادعة মুখাদা’য়াহ যার অর্থ হল বোকা বানানো, ধোঁকা দেয়া, প্রতারণা করা ইত্যাদি। আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সতর্কতা বলতে নিছক স্পর্শকাতর তথ্য গোপন করাকেই বুঝাননি বরং এসব শব্দ তিনি প্রয়োগ করেছেন আগ বাড়িয়ে পরিকল্পিতভাবে শত্রু সেনাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব কলহ, মতবিরোধ ও বিভক্তি তৈরী, ফাটল ধরানো, বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতা সৃষ্টি করার নির্দেশ দান প্রসঙ্গে। এর প্রধান উদ্দেশ্য শত্রু সেনা ও তাদের গোয়েন্দাদেরকে বিভ্রান্ত করা।
তাবুক যুদ্ধে দুই সাহাবীর অংশ্রগ্রহণ না করা সম্পর্কিত ঘটনা প্রসঙ্গে সহীহ আল বুখারীর বর্ণনায় কা’ব বিন মালেক রাঃ বলেন:
(ولم يكن رسول الله صلى الله عليه وسلم يريد غزوة إلا ورّى بغيرها .. )
‘রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখনই কোন সেনা অভিযান প্রেরণ করতেন তখন (কোন অঞ্চলে বা কোন সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অভিযান প্রেরণ করবেন সে সম্পর্কে) অভিযান শুরু হওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তিনি সব সময় ভুল তথ্য দিয়ে রাখতেন’।
তিনি তার সাহাবীদের মিশন এবং তার সেনা অভিযানের সফলতার লক্ষে যে সকল বিষয়ের উপর সর্বাধিক গুরুত্ব দিতেন তার মধ্যে অন্যতম হল কিতমান বা গোপনীয়তা রক্ষা। যেমন অনেক সময় তিনি কোন দিকে সেনা অভিযান প্রেরণ করতেন কিন্তু স্বয়ং সেই বাহিনীকেও বলতেন না যে তাদের গন্তব্যস্থান কোথায় ও লক্ষবস্তু কি, তিনি তাদেরকে একটি চিঠিতে তাদের গন্তব্য ও লক্ষবস্তুর কথা লিখে দিয়ে নির্দেশ দিতেন যে অমুক স্থানে না গিয়ে বা কোন নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হওয়ার পূর্বে যেন চিঠিটি না খোলা হয়।
রাত ১০:৫০
এমনই একটি সেনা অভিযান ছিল আব্দুল্লাহ ইবনে জাহাশ রাঃ এর নেতৃত্বে পরিচালিত সেই অভিযান যে অভিযানে আল হাদরামী নিহত হয়। এ ঘটনা আমাদেরকে স্পর্শকাতর সামরিক তথ্য গোপন রাখার বিষয়ে সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেয়। এবং শুধু সাধারণ জনগণ নয় বরং স্বয়ং মুজাহিদদের থেকেও অপারেশন বা যুদ্ধ আরম্ভ হওয়ার পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত তথ্য গোপন রাখার প্রমাণ রয়েছে।
এর উদ্দেশ্য হল, মুজাহিদদের কেউ যদি দুর্বল হয়ে পড়ে, কিংবা কেউ যদি কাফেরদের হাতে বন্দি হয়ে যায় তাহলে সে যেন তাদের কাছে কোন তথ্য ফাস করে না দিতে পারে , এমনকি তাকে যদি কেটে টুকরো টুকরো করে ফেলা হয় তবুও ।
এমন আর একটি ঘটনা হল রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হিজরতের ঘটনা। যে ঘটনার সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণের সারসংক্ষেপ বিশ্লেষণ হল এমন যে
রাত ১০:৫৩
তিনি এমন সময় আবু বকর রাঃ এর কাছে এসেছিলেন যে সময়ে তিনি সাধারনতঃ কখনো আসতেন না।
২) তিনি মুখ ঢেকে আসেন।
৩) সাহাবীদেরকে তার নিজের হিজরতের পূর্বে হিজরত করার নির্দেশ প্রদান; অথচ আবু বকর রাঃ অনুযোগ করে বলেছিলেন ‘তারা আপনার অনুসারী! (কিভাবে তারা আপনাকে এই বিপদের মধ্যে রেখে চলে যাবে?)
৪) আবু বকর রাঃ এর পুত্র আব্দুল্লাহ রাতে তাদের সাথে সেই গোপন স্থানে থাকলেও দিন শুরুর পূর্বেই তাদেরকে রেখে আবার মক্কায় চলে আসতেন, যাতে কুরায়শরা ভাবে যে তিনি রাতেও মক্কাতেই ছিলেন। এবং কাফিররা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও আবু বকর রাঃ এর বিরুদ্ধে কি ষড়যন্ত্র করে সে তথ্য সংগ্রহের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতেন। আর রাতের আঁধার নেমে আসার সাথে সাথে তিনি চলে যেতেন সেই পাহাড়ের গুহায় যেখানে তারা লুকিয়ে থাকতেন এবং তাদেরকে সকল বিষয়ে অবহিত করতেন ।
উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রাঃ এর বর্ণনায় সহীহ বুখারীতে ৩৯০৫ নং হাদিসে হিজরতের যে বিস্তারিত ঘটনা বর্ণীত রয়েছে সেখানে আমাদের এখানে আলোচিত প্রত্যেকটি বিষয় পাওয়া যাবে । সে বর্ণনায় এও রয়েছে যে পথিমধ্যে সুরাকার সাথে দেখা হলে রসুলল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে বলেন :
) أخفِي عنّا(
‘আমাদের বিষয়টি অন্যদের থেকে গোপন রেখো’।
সহীহ বুখারীতে ‘যুদ্ধ মানেই ধোঁকা’ শিরোনামে একটি স্বতন্ত্র অধ্যায়ই রয়েছে; আর উল্লেখিত এ হাদিসটি সে অধ্যায়েই সংকলিত । হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী এ হাদিসে উল্লেখিত ধোঁকার ব্যাখ্যায় বলেন :
)وأصل الخدع إظهار أمر وإضمار خلافه، وفيه التحريض على أخذ الحذر في الحرب والندب إلى خداع الكفار، وإن لم يتيقظ لذلك لم يأمن أن ينعكس الأمر عليه) اهـ.
‘ধোঁকা অর্থ হল কোন এক জিনিস প্রকাশ করে তার অন্তরালে অন্য জিনিস গোপন রাখা। এ হাদিসে যুদ্ধে সতর্কতামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ এবং কাফিরদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্য প্রতারণামূলক কাজ করতে উৎসাহ দেয়া হয়েছে। আর যে ব্যক্তি তার শত্রুদেরকে বিভ্রান্ত করার জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান রাখে না এবং যে এ বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন নয় সে তার চারপাশের ঘটনা প্রবাহ তার বিরুদ্ধে চলে যাওয়া থেকে মোটেই নিরাপদ নয়।
এখানে উল্লেখিত এবং এমন অন্য আরও অনেক ঘটনা প্রমাণ করে যে, সাবধানতা অবলম্বন, সতর্কতা মুলক পদক্ষেপ গ্রহণ, গোপনীয়তা বজায় রাখা, আল্লাহর শত্রুদের কাছে বানোয়াট ঘটনা সাজানো, তাদেরকে প্রতারিত ও বিভ্রান্ত করা, তাদের দুষ্কৃতি থেকে নিজেদেরকে রক্ষার জন্য মিথ্যা কথা বলা সম্পূর্ণভাবে শরিয়াহ সম্মত হালাল ও বৈধ এবং একারণে কোন মুসলমানকে কিছুতেই দোষারোপ কিংবা ভর্তসনা করা যাবে না।
এখানে উল্লেখিত এবং এমন অন্য আরও অনেক ঘটনা প্রমাণ করে যে, সাবধানতা অবলম্বন, সতর্কতা মুলক পদক্ষেপ গ্রহণ, গোপনীয়তা বজায় রাখা, আল্লাহর শত্রুদের কাছে বানোয়াট ঘটনা সাজানো, তাদেরকে প্রতারিত ও বিভ্রান্ত করা, তাদের দুষ্কৃতি থেকে নিজেদেরকে রক্ষার জন্য মিথ্যা কথা বলা সম্পূর্ণভাবে শরিয়াহ সম্মত হালাল ও বৈধ এবং একারণে কোন মুসলমানকে কিছুতেই দোষারোপ কিংবা ভর্তসনা করা যাবে না।
আর একথা অনস্বীকার্য সত্য যে আল্লাহ্র পক্ষ থেকে হালাল করে দেয়া এ সুযোগকে যথাযথভাবে ব্যবহার না করা, সাবধানতা অবলম্বনের এসব পদক্ষেপকে অবহেলা আল্লাহ্র শত্রুদেরকে দ্বীনের দায়ী ও মুজাহিদদের উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দেবে এবং কঠোর পরিশ্রম সত্ত্বেও তাদের যাবতীয় কর্মকাণ্ডকে নস্যাত করে দেবে, তাদের জান মাল কোরবানি করে পরিচালিত জিহাদকে বিফল করে দেবে।
শর’য়ী দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টির
শর’য়ী দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টির বৈধতা প্রমানিত হওয়ার পর এখন আমরা এর বাস্তব প্রয়োগের ব্যপারে কিছু আলোচনা করবো।
সাবধানতা অবলম্বনের ব্যপারে লোকেরা উভয় দিকেই প্রান্তিকতার শিকার; একদল হয়তো সতর্কতার ব্যপারে এমন মারাত্নক উদাসীন যে বিষয়টিকে মোটেই গুরুত্ব দেয় না; অন্য দিকে একদল সতর্কতার নামে এমন বাড়াবাড়ি আরম্ভ করেছে যে সব কাজকর্ম ছেড়ে দিয়ে একেবারে স্থবির হয়ে বসে আছে, ভীতি তাদের অন্তরে এমনভাবে ছেয়ে গেছে যে তারা তাদের নিজ ছায়া দেখেও ভয়ে কেপে ওঠে, তারা মনে করে আশপাশের সব কিছু বুঝি শুধু তারই বিরুদ্ধে কাজ করছে। কাজ আরম্ভ করার প্রথম দিকে নিরাপত্তামুলক ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টিকে অবহেলা হেতু তাদের উপর আপতিত বিপদ মুসীবতের কারণে তারা দাওয়াহ ও জিহাদের কাজ ছেড়ে দিয়ে ঘরের কোণে ঘাপটি মেরে অলস হয়ে বসে থাকে। এবং মানসিক দিক থেকে এমনভাবে ভেঙ্গে পড়ে যে তারা মনে করে তাদের সকল গোপন তথ্য বুঝি আল্লাহ্র শত্রুদের জানা। আল্লাহ্র শত্রুদের আড়ি পাতা, দলের মধ্যে গোপন অনুপ্রবেশ, গোপন পর্যবেক্ষণ, তাদের অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ইত্যাদির ভয়ে সে এমনভাবে কুঁচকে যায় যে সে ফোন, কম্পিউটার বা অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার একেবারেই ছেড়ে দেয়। তার অবস্থা এমন হয়ে দাড়ায় যে সে যদি যোগাযোগের জন্য বার্তাবাহক হিসেবে কবুতর ব্যবহার করতে পারতো তাহলে অন্য কিছুই ব্যবহার করতো না।
অথচ এসব তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করা সত্ত্বেও নিজেকে এর ক্ষতিকারক দিক থেকে নিরাপদ রাখার জন্য এমন কোন মহা পণ্ডিত হওয়ার প্রয়োজন নেই, সামান্য একটু সচেতনতাই এত্থেকে আপনাকে নিরাপদ রাখতে পারতো। এজন্য আল্লাহ্র শত্রুদের বিভ্রান্ত করার কিছু পদ্ধতি জানা, নিপুন কভার স্টোরি তৈরি করতে শেখা, তথ্য গোপন রাখার প্রযুক্তিগত আধুনিক কিছু টেকনিক শিখে নেয়া প্রতিটি মুজাহিদ ভাইয়েরই একান্ত কর্তব্য। এর ফলে দেখা যাবে আল্লাহ্র ইচ্ছায় যাদুকর তার নিজ যাদুতেই আক্রান্ত হয়ে পড়বে।
‘সব কিছুই তাদের পর্যবেক্ষণের আওতাধীন’
এমন কথা বলে কিংবা তাদের ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে আধুনিক এসব উপায় উপকরণসমুহকে দাওয়াহ ও জিহাদের কাজে ব্যবহার বন্ধ করে দেয়া, যৌক্তিক কোন বৈধ কারণ ছাড়া আধুনিক এসব যোগাযোগ মাধ্যমসমুহকে উপেক্ষা করা সেচ্ছায় পরাজয় বরণ করা ও আত্নপ্রবঞ্চনা বৈ কিছুই নয়। এর অর্থ দাঁড়াবে আল্লাহ্র শত্রুদের বোগাস সব প্রযুক্তির সামনে অকারণ ভেংগে পড়া এবং আল্লাহ্র শত্রুদের ‘ক্ষমতাকে’ বাড়াবাড়ি পর্যায়ে অতি মুল্যায়ন করা।
জেলের কষ্টকর জীবন থেকে সদ্য মুক্তি পাওয়া কয়েকজন যুবকের সাথে আমি দেখা করেছিলাম যারা জেলে থাকা অবস্থায় জিজ্ঞাসাবাদের সময় একে অপরের বিরুদ্ধে জবানবন্দি দিয়েছে। এদের এক জনের সাথে কথা বলার জন্য যখন আমি বসলাম তখন সে উঠে গিয়ে রেডিওর একটি চ্যানেল ছেড়ে দিল যাতে শুধু উচ্চস্বরে বিরক্তিকর শব্দ হচ্ছিল, আমি তাকে বললাম, তুমি রেডিও ছাড়ছো কেন, ওটা বন্ধ করে দাও, শব্দে তো কিছু শোনা যাচ্ছে না! সে বলল, না এটা বন্ধ করা যাবে না, আমাদের কথোপকথনকে অবোধগম্য করার জন্য এর প্রয়োজন আছে, যদি কেউ আমাদের কথাবার্তায় আড়ি পাতে? আমি তাকে বললাম, এটা তোমার নিজের ঘর, আর আমাদের কথাবার্তা একান্তই সাধারণ সামাজিক কথাবার্তা, আমরা না দাওয়াহর বিষয়ে কথা বলছি না জিহাদের, না নিরাপত্তা বিষয়ক কোন ব্যপারে; আমার তো মনে হয় তোমার এই রেডিওর অপ্রাসঙ্গিক শব্দ বরং অন্যদের মধ্যে সন্দেহের উদ্রেক করা ছাড়া অন্য কোন উপকারে আসবে
এদের অনেককে দেখা যায় এরা কারো সাথে ফোনে কথা বলার সময় কোন প্রয়োজন ছাড়াই এমন সব বিকৃত ও সাংকেতিক শব্দ ব্যবহার করে যে শুনে মনে হয় যে সে অন্য কোন ভাষায় কথা বলছে, অনেক সময় দেখবেন আপনি বুঝতেই পারবেন না এরা কি বলছে; অথচ তাদের আলোচনার বিষয় বস্তু হয়তো ছিল এমন একান্তই সাধারণ যেক্ষেত্রে এরকম সন্দেহজনক আচরণের কোনই প্রয়োজন ছিল না। আল্লাহ্র শত্রুরা যদি সত্যিই তাদের এসব সন্দেহজনক সাংকেতিক কথাবার্তা আড়ি পেতে শুনে থাকে তাহলে তারাও হয়তো বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে নিবে, হয়তো ভাববে যে এই সাংকেতিক কথাবার্তার পেছনে নিশ্চই নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ার আক্রমনের চেয়েও ভয়াবহ কোন আক্রমনের পরিকল্পনা লুকিয়ে আছে।
আমাদের বুঝা উচিত যে সন্দেহজনক ভঙ্গিতে কথা না বলে স্পষ্ট ভাষায় কথা বলাই উত্তম; অকারণ সন্দেহ সৃষ্টি করা মোটেই ঠিক নয়। এতদসত্ত্বেও কিছু লোক আছে যারা বিনা কারণেই এমন সন্দেহজনক আচরণ করতে পছন্দ করে। দেখা যায় এদের কেউ হয়তো আপনাকে ফোন করে বললো যে ‘আপনার কাছে আমার একটা আমানত আছে’ কিংবা বললো, ‘আপনি আজ অবশ্যই আসবেন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ আছে’। হয়তো দেখা যাবে গুরুত্বপূর্ণ আমানতটি হল এক প্যাকেট চকলেট বা কোন কাপড় চোপড়, বা এক জোড়া সানগ্লাস যেটা তার থেকে আপনি হয়তো ধার নিয়েছিলেন; আর মহা গুরুত্বপূর্ণ সেই কাজটি হল এক সাথে আনন্দ করে লাঞ্চ বা ডিনার করা।
এরা অকারণ অস্পষ্টতা ও নাটকীয়তা পছন্দ করে। এই বোকারা অনুধাবন করেনা যে বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে এই স্থুল নাটকীয়তা কত ভয়াবহ পরিণতি বয়ে আনতে পারে। বিশেষ করে যাদের সাথে এভাবে কথা বলছে তারা যদি এমন ব্যক্তি হন যাদেরকে সরকারী গোয়েন্দারা পর্যবেক্ষণ করছে, যাদেরকে আল্লাহ্র শত্রুরা মনিটর করছে।
এরা যদি কখনো কারাবন্দি হয় তাহলে শত কসম করে বললেও আল্লাহ্র শত্রুরা কিছুতেই বিশ্বাস করবে না যে সেই আমানতটি ছিল একান্তই তুচ্ছ কোন জিনিস, আর সেই গুরুত্বপূর্ণ কাজটা ছিল নিছক লাঞ্চ বা ডিনার। তারা একথা বললে কিছুতেই তাদেরকে ছাড়বে না, তারা তাদের শরীর ক্ষত বিক্ষত করবে, তাদের নখ উপড়ে ফেলবে যতক্ষন না তারা ‘স্বীকার’ করবে যে তাদের অস্ত্রসস্ত্র ও গোলা বারুদের মজুদ কোথায় লুকানো আছে; যতক্ষণ না তারা ‘গোপন সামরিক মিটিং’ কিংবা ‘সংগঠনের’ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দেয়ার ব্যপারে জবানবন্দি দিতে সম্মত হয় যা সেই সাংকেতিক কথার আড়ালে লুকিয়ে আছে।
কিছু লোক আছে যারা সামান্য নির্যাতনের মুখোমুখি হওয়ার আগেই আল্লাহ্র শত্রুদের কাছে সব কথা গড়গড় করে বলে দেয়, সবার কন্টাক্ট নাম্বার দিয়ে দেয় এবং অজুহাত দেয় যে তারা শুনেছে নতুন এক ধরণের প্রযুক্তি এসেছে যার সাহায্যে মানুষের কণ্ঠস্বর সনাক্ত করা যায়, মিথ্যা শনাক্তকারী মেশীনের সাহায্যে কেউ মিথ্যা বললে তাও ধরে ফেলা যায় এবং আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে দুনিয়ার সকল ফোনের কথোপকথন রেকর্ড করা হয়... ইত্যাদি ইত্যাদি। কথা শুনে মনে হয় যেন তারা ব্যপক গন বিধ্বংসী অস্ত্রের বিষয়ে কথাবার্তা বলছিল। এসব হাইপোথেটিক চিন্তা করে গোয়েন্দাদের কাছে তারা মিথ্যা কথা বলাকে সমীচীন মনে করে না।
আমি বুঝি না এর চেয়ে ভয়াবহ ক্ষতি আর কি হতে পারে যে আল্লাহ্র শত্রুরা তাকে শনাক্ত করতে পেরেছে এবং তারা এও বুঝতে পেরেছে যে সে তাদের কাছে মিথ্যা বলছে। নাকি সে তাদের থেকে নিরীহ সাধারণ ও অমায়িক ভদ্রলোক হওয়ার সার্টিফিকেট চায়! নাকি সে মিথ্যা বলতে লজ্জাবোধ করছে সেই সব লোকদের কাছে যারা সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিশ্বাসঘাতক ও পথভ্রষ্টকারী! অথচ তার এই মিথ্যা হয়তো আল্লাহ্র দ্বীনের দাওয়াহ ও জিহাদকে আল্লাহ্র শত্রুদের ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করতে পারতো, তাকে ও তার দ্বীনী ভাইদেরকে তাদের যুলুম অত্যাচার থেকে বাঁচাতে পারতো।
পক্ষান্তরে আল্লাহ্র শত্রুদের এই জঘন্য মিথ্যাচার তো দ্বীনের দাওয়াহকে বন্ধ ও জিহাদকে উৎখাত করার জন্য; তার দ্বীনী ভাইদের উপর দমন পীড়ন ও যুলুম নির্যাতন চালানোর জন্য।
এই হল আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ও আল্লাহ্র শত্রুদের ক্ষমতা সম্পর্কে অতিরঞ্জিত ধারণা পোষণ করা, তাদেরকে খুব ভয় করা এবং তাদেরকে ধোঁকা দেয়ার উদ্দেশ্যে বোকার মতো অপ্রয়োজন অতি বাড়াবাড়ি করার পরিণাম।
এতো গেল আমাদের এক শ্রেনীর ভাইদের অবস্থা, অন্য দিকে রয়েছে আমাদের সে সব ভাইয়েরা যারা সাবধানতা অবলম্বন ও নিরাপত্তা ইস্যুকে মোটেই গুরুত্ব দেয় না।
দেখা যায় যে তারা তাদের গুরুত্বপূর্ণ গোপন তথ্য, গুরুত্বপূর্ণ তারিখ ও স্থানের নাম, সংগঠনের সদস্যদের নাম ঠিকানা, তাদের পরিকল্পনা, তাদের অর্থের উৎস, খরচের খাত ইত্যাদি সব কোন রকম সিকিউরিটি কোড ছাড়াই প্রকাশ্যে ও সাধারণ বোধ্য ভাষায় বিস্তারিত লিখে রাখে; অথচ আমরা তথ্য প্রযুক্তির এমন উন্নতির যুগে বাস করছি যেখানে তথ্য গোপন রাখার অনেক রকম নিরাপদ ও আধুনিক পদ্ধতি আমাদের হাতের নাগালে রয়েছে।
এসব ভাইদেরকে দেখা যায় সাংগঠনিক, নিরাপত্তা সংক্রান্ত বা গুরুত্বপূর্ণ কোন বার্তা তার কাছে আসার পর সে সেটিকে দিনের পর দিন সপ্তাহের পর সপ্তাহ পকেটে নিয়ে ঘুরছে, কিংবা তার ঘরে হয়তো মাসের পর মাস বসরের পর বসর ধরে পড়ে আছে অথচ সে তা নষ্ট রে ফেলছে না। যেন সে অপেক্ষা করছে কখন আল্লাহ্র শত্রুরা আকস্মিক তার বাড়িতে হানা দেবে আর দাবি করবে যে ‘ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা’ তারা নস্যাত করে দিয়েছে; আর সেও সেই অরক্ষিত অবহেলায় ফেলে রাখা তথ্যটির কারণে জিজ্ঞাসাবাদের সময় তা অস্বীকার করার সুযোগ পাবে না, আর এটিই তার বিরুদ্ধে ভয়াবহ সন্ত্রাসী কাজে সম্পৃক্ততার প্রমাণ হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
আমি জানি না তার মধ্যে কেমন প্রতিক্রিয়া হতো যদি সে আফগানিস্তানের সেই দৃশ্য দেখত যখন সাপের গর্তে ভরা এবং দুজন মানুষের জন্য জায়গা হয় না এমন সংকীর্ণ গুহার মধ্য তার অনেক মুজাহিদ ভাইদেরকে লুকিয়ে থাকতে হয়েছে।
সত্যিই এমন ব্যক্তিকে ভর্তসনা করাটা কোন অন্যায় নয় যে দুর্দশায় পতিত হওয়ার একমাত্র কারণ হল আল্লাহ্র রসুলের জীবনী সম্পর্কে তার অসচেতনতা, আরাম আয়েশের মধ্যে ডুবে যাওয়া, আল্লাহ্র দ্বীনের জন্য একজন সত্যিকার মুজাহিদ হিসেবে সৈনিক সুলভ জীবন যাপন থেকে দূরে থাকা এবং দুনিয়াদার সাধারণ মানুষদের মতো তাগুতদের প্রচারিত তথাকথিত নিরাপদ জীবনের কুহেলিকায় ডুবে থাকা।
কঠোর পরিশ্রম, ত্যগ তিতিক্ষা ও সাধনা করে সফলতার দ্বার প্রান্তে আনা অনেক পরিকল্পনা কেবল এই অসতর্কতা, অসাবধানতা ও বেখেয়ালীপনার কারণে ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে এবং মুসলিমদেরকে হতাশার মধ্যে ফেলেছে; একই সাথে আল্লাহ্র শত্রুদের জন্য এ ঘটনা বয়ে এনেছে এক মহা আনন্দ বার্তা, তারা এটাকে ‘সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে’ তাদের নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার বিরাট সাফল্য হিসেবে জনগণের সামনে তুলে ধরছে। অথচ বাস্তবে বিষয়টি হয়তো মোটেই তা নয়, এই ব্যর্থতা আল্লাহ্র শত্রুদের গোয়েন্দাদের কোন সফলতা ছিল না, বরং এটা ছিল ভাইদের অসতর্কতা, অসাবধানতা ও নিরাপত্তা ইস্যুকে যথাযথ গুরুত্ব না দেয়ার অবশ্যম্ভাবী পরিণতি।
আমার সত্যি কষ্ট হয় যখন দেখি অনেক যুবকেরা এ বিষয়ে উপদেশ গায়ে মাখে না, অন্যদের ভুল থেকে শিক্ষা নেয় না এবং একই ভুল বারবার করতে থাকে; আর একারণে একই পরিণতির শিকার হয়। এদের কেউ যখন জিহাদে অংশগ্রহণ করার নিয়ত করে এবং এ উদ্দেশ্যে যদি কিছু অস্ত্রশস্ত্র এদের হস্তগত হয় তাহলে সে অন্যদের কাছে কেবল অস্ত্রের কথা বলেই ক্ষান্ত হয় না বরং তার লক্ষ উদ্দেশ্য ও জিহাদের পরিকল্পনা ইত্যাদি বলতে গর্ব বোধ করে। তারপর যখন আকস্মিকভাবে তাকে তুলে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় কিংবা তার বাড়ি রেইড দেয়া হয় তখন সে ভাবে কিভাবে তার পরিকল্পনা তারা জেনে গেলো!
এটা সত্যিই দুঃখজনক যে আমরা দ্বীনী বিষয়ে যে নিয়ম শৃঙ্খলা পালন করতে পারি না, দেখা যায় দুনিয়াবী বিভিন্ন সন্ত্রাসী সংগঠন সে নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলে। সশস্ত্র সংগঠনের নিয়ম শৃঙ্খলা মেনে চলা, গোপন সংগঠনের মৌলিক নীতিমালা অনুসরণ করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে
তারা অনেক সচেতন।
আপনি দেখবেন কোন অপারেশন চালানোর ক্ষেত্রে তারাও চূড়ান্ত গোপনীয়তা বজায় রাখে, তারা কাউকে কিছু জানায় না, এমনকি স্বয়ং যারা অপারেশন চালাবে তাদেরকেও প্রয়োজনের চেয়ে বেশী কিছুই বুঝতে দেয়া হয় না। অপারেশনে ব্যবহৃত অস্ত্রশস্ত্র সম্পর্কেও কাউকে কিছু টের পেতে দেয় না, এমন কি কোথায় অপারেশন চালাবে তাও জানানো হয় কেবল অপারেশনের একান্ত পূর্ব মুহূর্তে। যারা অপারেশন চালায় তারা পর্যন্ত প্রয়োজনের চেয়ে বেশী কিছুই জানে না, অপারেশন বাস্তবায়নের জন্য ঠিক যতটুকু না জানলেই নয় ঠিক ততটুকুই কেবল জানে। তারা জানে না অর্থায়ন কে করে, অস্ত্র কোত্থেকে আসে, অস্ত্রের মজুদ কোথায়, কে এটা আমদানি করেছে, কে বহন করে এনে দিয়েছে, অন্য সদস্যরা অন্য কোথাও আক্রমনের প্রস্তুতি নিচ্ছে কি না। এ ধরণের প্রতিটি স্তর হল একেকটা নিরাপত্তা চাদর; এসব বিশেষ তথ্যের ব্যপারে সংগঠনের কোন সদস্যের উচিত নয় অযাচিত প্রশ্ন করা কিংবা অনধিকার চর্চা করা। যে ব্যক্তি তার নিজ সামরিক কার্যক্রমের প্রতি শ্রদ্ধা রাখে সে কিছুতেই এ ধরণের স্পর্শকাতর তথ্য যাকে না জানালেই নয় তাকে ছাড়া অন্য কাউকে দিতে পারে না। একারণে দেখা যায় এই ধরণের কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করে যেসব অপারেশন পরিচালনা করা হয় তার ব্যর্থতার আনুপাতিক হার খুবই কম।
অন্য দিকে দেখা যায় সশস্ত্র সংগঠনের নিয়ম শৃঙ্খলার কঠোরতা সম্পর্কে কোন রকম ধারণা না নিয়ে দরবেশ গোছের বোকা ও নির্বোধ লোকেরা এসব দিয়ে এমন ভয়াবহ রকম আত্নঘাতি ভুল করে বসে যে তার কারণে গোটা সংগঠনের কার্যক্রম ও এর সদস্যদের জীবন হুমকির মুখে পড়ে যায়। অথচ নিয়ম শৃঙ্খলা রক্ষা, সতর্ক পদক্ষেপ গ্রহণ, সাবধানতা অবলম্বন ও গোপনীয়তা বজায় রাখা ইত্যাদি ক্ষেত্রে গোটা মানবজাতির সামনে মুসলিমদের হওয়া উচিত ছিল অনুসরনীয় আদর্শ। কেননা তাদের মহান আদর্শ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার সাহাবীদের জীবনে এ বিষয়ের উপর শিক্ষণীয় এতো উদাহরণ রয়েছে যা গুনে শেষ করা যাবে না; যার কয়েকটি আমরা ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি।
ভাই! আমরা সকলে হাজিরা দেই ইনশাআল্লাহ।
মুহতারাম ভাইয়েরা! আপনাদের মধ্যে যারা পরে ক্লাসরুমে ঢুকতে পেরেছেন,তারা উপরের দিকে টেনে টেনে পুরো ক্লাসের লিখাগুলো পড়ে নিবেন ইংশাআল্লাহ।
আসলে আল্লাহর পথে জিহাদের জন্য প্রয়োজন চিতাবাঘের মতো ক্ষিপ্র ও বাজ পাখির মতো দূরদৃষ্টি সম্পন্ন মানুষের; সুফী দরবেশ আর তোতা পাখির কোন প্রয়োজন এখানে নেই।-- কথাটী মুখস্থ করে নেই।
অসাবধানতার আর একটি উদাহরণ হল জাহেলী সময়ের মতো অস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়ানো। অনেক যুবককে আল্লাহ্ তায়ালা তাকে হেদায়াত দান করার পরও দেখা যায় জাহেলী সময়ে সে যেমন অস্ত্রের বরাই দেখিয়ে বেড়াতো তেমনি এখনো সে একই রকম আচরণ করে যাচ্ছে। আগেও যেমন প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াতো এখনো তেমনি করে চলছে। সে জানে না তার পূর্বেকার জীবনের সাথে এই জীবনের কতো বিস্তর ফারাক রয়েছে, সে জানে না আল্লাহ্র শত্রুরা তাকে আগে যে দৃষ্টিতে দেখত এখন তার মুখে দাড়ি গজানোর পর কিন্তু আর সেই একই দৃষ্টিতে দেখবে না। সে নতুন যে সব লোকের সাথে এখন চলা ফেরা করে, যাদের সাথে যোগাযোগ রাখে তাদের সংস্পর্শে আসার পর আল্লাহ্র শত্রুদের দৃষ্টিভঙ্গি তার ব্যপারে সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়ে যাবে। অথচ এদেরকে যদি সাবধানতা অবলম্বনের উপদেশ দেয়া হয় এরা সাবধানতাকে কাপুরুষতা ও দুর্বলতা বলে উড়িয়ে দেয়। এরপর এই অসাবধানতার কারণে যখন সে জেলে যায়, রিমান্ডের মুখোমুখি হয় তখন আর বিষয়টা সাধারণ থাকে না; এ ধরণের লোকেরা যখন একবার বিপদে পড়ে তখন মানসিক দিক থেকে একেবারে ভেঙ্গে পড়ে। এরপর এই ‘দুঃসাহসী বীর বাহাদুররা’ তাদের নিজ ছায়াকেও ভয় পেতে শুরু করে, জিজ্ঞাসাবাদের আধুনিক প্রযুক্তির সামনে একাবারে ভেঙ্গে পড়ে, আল্লাহ্র শত্রুদের চতুর গোয়েন্দা সংস্থা ও তাদের ক্ষমতার সামনে সে একেবারে কুঁচকে যায়। সে তার নিজের অসাবধানতা ও বোকামির কথা ঢাকতে গিয়ে আল্লাহ্র শত্রুদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা, তাদের গোয়েন্দা সংস্থার চতুরতা ও ক্ষমতার গুণকীর্তন আরম্ভ করে দেয়।
চূড়ান্ত কথা হল সতর্কতা ও সাবধানতা অবলম্বনকে যেমন মোটেই উপেক্ষা করার সুযোগ নেই তেমনি অতি সতর্কতার নামে আল্লাহ্র পথে জিহাদ ছেড়ে দিয়ে স্থবির হয়ে বসে থাকারও কোন সুযোগ নেই। বরং সকল ক্ষেত্রে যুক্তিযুক্ত মধ্যম পন্থা অবলম্বনই বাঞ্ছনীয়। এ পথের সঙ্গীদেরকে জিহাদের রক্ত পিচ্ছিল পথ পাড়ি দিতেই হবে;
অতএব তাদের শত্রুদের পরিকল্পনা ও কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে সচেতন হয়ে শিথিলতা ও বাড়াবাড়ির উভয় প্রান্তিকতাকে পরিহার করে যথাযথ নিরাপত্তামুলক সতর্কতা ও সাবধানতা অবলম্বনের কোন বিকল্প নেই।
অতএব তাদের শত্রুদের পরিকল্পনা ও কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে সচেতন হয়ে শিথিলতা ও বাড়াবাড়ির উভয় প্রান্তিকতাকে পরিহার করে যথাযথ নিরাপত্তামুলক সতর্কতা ও সাবধানতা অবলম্বনের কোন বিকল্প নেই।
আল্লাহর কাছে দোয়া করি যেন তিনি তার বন্ধুদের বিজয় দান করেন এবং তা শত্রুদের লাঞ্ছিত করেন।
وَاللَّهُ غَالِبٌ عَلَى أَمْرِهِ وَلَكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لاَ يَعْلَمُونَ
আল্লাহ্ তায়ালা তাঁর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সব সময়ই বিজয়ী, যদিও অধিকাংশ মানুষই তা জানে না।
(সুরা ইউসুফ, আয়াত ২১
⛔⛔⛔⛔⛔⛔⛔⛔⛔⛔⛔⛔⛔⛔⛔⛔⛔⛔⛔⛔
➡️আমানিয়্যাহ চেক লিস্ট
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
আমরা জানি, কাজের ক্ষেত্রে আমানিয়্যাহ চেক দেওয়া অত্যন্ত জরুরি একটি বিষয়। কিন্তু আমরা অনেকেই জানি না; আমানিয়্যাহ কিভাবে চেক দিতে হয়। তাই নিম্নে কিছু পয়েন্ট উল্লেখ করা হলো, যেন আমরা এই পয়েন্টগুলো যাচাইয়ের মাধ্যমে সহজেই আমাদের আমানিয়্যাহ চেক দিতে পারি ইনশাআল্লাহ্।
1. মোবাইল ব্যাবহার নীতিমালা পুর্ণ অনুসরণ করছেন কিনা ?
• মোবাইল চালু থাকা অবস্থায় কাজের এরিয়ায় যাচ্ছেন কিনা ?
• সাথীদের সাথে পরস্পর ফোনে যোগযোগ আছে কি ? যাতে যে কোন প্রয়োজনে তাকে পাওয়া যায়।
• মোবাইলে খোলামেলা ফাইল বা অডিও-ভিডিও বহন করছেন ?
• চ্যাট হিস্ট্রি মোবাইলে রয়ে গেছে তো ?
• রাস্তায় ঘুরতে-ফিরতে বা সর্বাবস্থায় চ্যাট চালু থাকে কি ?
• প্রয়োজনে সাথীর ফোন দিয়ে নিজ বাসায় যোগাযোগ করেন তো ?
• অন্য সকল ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ফাইল অনুসরন করা হয় কি ?
2. ফাইল সংরক্ষণের ক্ষেত্রে নীতিমালা অনুসরণ করা হচ্ছে কিনা ?
• কাজের সুবিধার্থে ফাইলগুলো নিজ মোবাইলে রেখেছি তো ?
• কাজের বিভিন্ন ফাইল অনলাইন-অফলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছি কি ?
• নিজ ল্যপটপে/মোবাইলে রিসালা সহ প্রয়োজনীয় সকল রিসোর্স সংরক্ষণ করেছি তো?
==== 3. যোগাযোগের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নীতিমালা
• পূর্ববর্তী এরিয়ার সকলের সাথে যোগাযোগ আছে তো ?
• কাজের সাথী কিন্তু ব্যক্তিগতভাবেও পরিচিত, তাদের ওখানে নিয়মিত যাতায়াত ও খোঁজখবর রাখছি তো ?
• যাদের হ্যান্ডওভার করা হয়েছে, এক্টিভ মাসউলও সেট দেওয়া হয়েছে তাদের সাথে যোগাযোগ রেখে নিয়মিত আপডেট নিচ্ছি তো ?
• আমাদের নির্ধারিত পন্থা ছাড়াও বিকল্প পদ্ধতিতে যোগাযোগ রাখছি তো? যাতে তাকে প্রয়োজনে পাওয়া যায়।
• মেসেজে/চ্যাটে কথা বলার সময় সালামের কোডের কোন পরোয়া করছি না, তাই না?
4. অবস্থানের ক্ষেত্রে নিরাপত্তা নীতিমালা
• নিজ কথা-বার্তায় এমন ভাব প্রকাশ করছি তো, যাতে নিজ এরিয়া সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায়। তেমনিভাবে অন্য ভাইদের সাথে মজলিসে বসলে তাঁর পরিচয় ফাঁস হয় এমন কথা বলছি তাই না ?
• নিজের অবস্থান কোথায় নিচ্ছি সে সম্পর্কে নিজ মাসউলকে সাফ জানাচ্ছি তো?
5. সফর ও রিসিভ নিরাপত্তা
• রিসিভের সময় যদিও খুব ঘুরিয়ে রিসিভ করছি, কিন্তু আউটটা সহজ করে দিচ্ছি তো?
• সফরে আমার যত সামানা আছে, চাই প্রয়োজন হোক বা না হোক সব সাথে নিয়েছি কিনা ?
• বাসায় অথবা আনসার হাউজে ফিরার সময় শত্রুকে অনুসরনের সুযোগ দিচ্ছি তো ?
⛔⛔⛔⛔⛔⛔⛔⛔⛔⛔⛔⛔⛔⛔⛔⛔⛔⛔⛔⛔
➡️মোবাইল ও কম্পিউটার ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু মূলনীতি
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
প্রযুক্তি যেমন আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ করে দিয়েছে, তেমনি এটি মানব সভ্যতাকে বিশেষত; তরুণ সমাজকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে। এটি দু-ধারি তলোয়ারের ন্যায়, এর সঠিক ও যথাযথ ব্যবহার না করতে পারলে এটি ব্যবহারকারীকেই কেটে ফেলবে। আমরা এর দ্বারা মৌলিকভাবে দুই দিক থেকে আক্রান্ত হচ্ছি:-
প্রথমত বাহ্যিকঃ শত্রুরা আমাদের অজ্ঞতা বা গাফলতির সুযোগ নিয়ে, এই প্রযুক্তিকে আমাদের ধ্বংসের কাজে ব্যবহার করে যাচ্ছে। তারা প্রযুক্তির বিভিন্ন ফাঁদ পেতে মুজাহিদদের ধরার জন্য ওঁত পেতে বসে আছে।
দ্বিতীয়ত আত্মিকঃ এটি সবচেয়ে মারাত্মক আগ্রাসন, যা গোটা মানবজাতিকে আক্রান্ত করে ফেলেছে। একজন মুমিন, বিশেষত একজন মুজাহিদ বা আল্লাহর সৈনিকের মূল শক্তি বা পুঁজি হচ্ছে ঈমান-আমল। অথচ অনলাইন ভিত্তিক গুনাহ ও খেয়ানতের মাধ্যমে গোটা মুসলিম মিল্লাত আজ তাদের ঈমানের পবিত্রতাকে কলুষিত করে ফেলেছে এবং ঈমানের শক্তি হারিয়ে মানসিকভাবে পরাজিত ও নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। তাই সময়ের দাবি হচ্ছে, জরুরি ভিত্তিতে আমাদের ভাইদের জন্য এ সম্পর্কে একটি মূলনীতি ফরম্যাট প্রণয়ন করা।
পিসি (কম্পিউটার/ল্যাপটপ) ব্যবহারে প্রাথমিক নীতিমালা
১। পিসি, পেনড্রাইভ বা এক্স-হার্ডডিস্কে অফিসিয়াল কোন ফাইল রাখা নিষিদ্ধ। চাই তা ভেরাক্রিপ্টের ভিতরেই হোক না কেন।
২। একমাত্র লক করে নেটে আপলোড অথবা মেমোরিতে ভেরাক্রিপ্টের ভিতর ফাইল রাখতে হবে।
৩। পিসিকে একদম ক্লিন ও নিরাপদ রাখতে হবে। এই ক্ষেত্রে “রিবোট রিস্টোর” ও প্রক্সি ফায়ার সেটআপ দেয়া যেতে পারে।
৪। ইরেজার, সি ক্লিনার, টর ব্রাউজারের আপডেট ভার্সন ব্যবহার, ভেরাক্রিপ্ট ও ভালো এন্টিভাইরাস ব্যবহার করতে হবে।
৫। শরীয়াহ অনুমোদন করে না এমন কোন কিছুই পিসিতে বা অন্য কোন ডিভাইসে রাখা থেকে বিরত থাকতে হবে। জিহাদ ও মুজাহিদদের ভাবমূর্তি নষ্ট করে এমন কোনও কিছু না রাখা।
৬। পিসি ব্যবহারের একটা কভার স্টোরি রাখা। এমনকি দীর্ঘ সময় অনলাইনে থাকারও একটা কভার স্টোরি থাকা।
৭। মোডেম ব্যবহার করলে নির্দিষ্ট এরিয়ার বাহিরে ব্যবহার করা যাবে না। অন্য এরিয়াতে অন্য মোডেম ও সিম ব্যবহার করতে হবে।
৮। পিসির হার্ড ডিস্ককে জিহাদী কোন কাজে ব্যবহার করা যাবে না। পূর্বে ব্যবহার করে থাকলে সব ফাইল ডিলেট করে ড্রাইভগুলো ইরেজার দিয়ে ক্লিন করে নিতে হবে।
৯। ইমারার কোন ফাইল সাধারণভাবে ডিলেট করা যাবে না। বরং ৭ বার বা ৩৫ বার ইরেজ করতে হবে।
১০। জিহাদী কোন ফাইল ডাউনলোড করলে তা হার্ড ডিস্কে না করে সরাসরি মেমোরিতে করা।
১১। ভেরাক্রিপ্ট/চ্যাট সফট/আমাদের অফিসিয়াল ফাইল ওপেন রেখে বাহিরে ব্যক্তিগত অথবা অফিসিয়াল কোন কাজে যাওয়া যাবে না। এমতাবস্থায় বাসায় কে এসেছে নিশ্চিত না হয়ে গেটও খোলা যাবে না।
১২। অনলাইনে ভাইদের দেওয়া কোন লিঙ্ক অথবা একান্ত প্রয়োজন না হলে ভেরিফাইড কোন লিঙ্ক ছাড়া ক্লিক না করা, কারণ এর মাধ্যমে ভাইরাস ঢুকিয়ে দিতে পারে এবং আমাদের অবস্থান সনাক্ত করে ফেলতে পারে।
১৩। নিজের পিসিতে কী কী ফাইল আছে, সে সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান থাকা, শিরোনামহীন অগুছালো কোন ফাইল যেন না থাকে।
১৪। ভেরাক্রিপ্ট ফাইলটি কোনো ভিডিও ফরম্যাটে বানানো এবং মেমোরিটি এ জাতীয় আরো অনেক লোকাল ভিডিও ফাইলের দিয়ে ভরপুর করে রাখা।
১৫। ভেরাক্রিপ্ট সফটটি কোন রার ফোল্ডারের ভিতরে পাসওয়ার্ড দিয়ে রাখা। রার ফাইলের এক্সট্রেনশন চেঞ্জ করে কোন গজলের নামে রাখা এবং মেমোরিটি এমন অনেক গজল দিয়ে ভরপুর করে রাখা।
১৬। গুরুত্বপূর্ণ মাসউলগণ ল্যাপটপের হার্ডডিস্কে আনুমানিক ১০০ এমবির একটি ভেরাক্রিপ্ট ফোল্ডার করে নিবেন এবং তার ভিতরে ফেক আইডি এড করে পিডজিন, টর ব্রাউজারের নরমাল সফট সংরক্ষণ করা, যাতে প্রয়োজনে তাদেরকে দেখানে যায়, যে এগুলো দিয়েই আমার কাজ। এর বেশি কিছু আমার কাছে নেই। এর বেশি রাখতে নিষেধ করা হয়েছে। সেখানে একটি নোড প্যাডে নিজ মাসউলের সাথে একটি ফেক পিটি লিখে রাখবেন।
১৭। রাতে ঘুমানোর সময় পিসি বন্ধ করে, মেমোরী খুলে নিরাপদ জায়গায় সংরক্ষণ করে তারপর ঘুমাতে যাওয়া।
১৮। গুরুত্বপূর্ণ ফাইলগুলোর অনলাইন ব্যাকআপ রাখা, যাতে হারিয়ে না যায়।
মোবাইল ব্যবহারের প্রাথমিক মূলনীতি
• কেন মোবাইল ব্যবহার করব?
মোবাইল আমাদের নিত্য প্রয়োজনীয় একটি সামগ্রী। হতে পারে দ্বীনী প্রয়োজন বা দুনিয়াবী প্রয়োজন। এই প্রয়োজনকে আমাদের একটি নীতির ভিতরে রাখতে হবে। এর চেয়ে বেশি ব্যবহার কখনোই কাম্য নয়। বর্তমানে এটা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, আমরা প্রয়োজনীয় কাজের চেয়ে অপ্রয়োজনীয় কাজেই মোবাইল বেশি ব্যবহার করি। তাই মোবাইলের ব্যবহার আমরা একটি নীতির আওতায় রাখবো, যেন ধ্বংসের পথ থেকে আমাদের নিজেদেরকে বাঁচাতে পারি এবং দ্বীনের পথে এটাকে কাজে লাগাতে সক্ষম হই। মোবাইল যেন হয় শত্রুর বিরুদ্ধে আমার ব্যবহৃত প্রথম অস্ত্র।
• কী ধরনের মোবাইল ব্যবহার করা যাবে?
• স্বাভাবিক যোগাযোগের জন্য বাটন মোবাইল ব্যবহার করতে হবে। অথবা অনলাইন অডিও কল ব্যবহার করতে পারবে।
• দ্বীনী কাজের জন্য আলাদা এন্ড্রোয়েড মোবাইল রাখবে। ভালো ব্র্যান্ডের দামী মোবাইল না হওয়া ভালো। ভালো ব্র্যান্ডের হলে ইতিবাচক দিকের চাইতে নেতিবাচক দিক বেশি থাকে। ৫ থেকে ৭ হাজারের মধ্যে হলে উত্তম।
• এটাচ ব্যাটারী মোবাইল হতে পারবে না।
• ফেক রেজিস্টার করা সিম ব্যবহার করবে।
• এই সিম দিয়ে কারো সাথে কথা বলবে না।
• যোগাযোগের ক্ষেত্রে নীতিমালাঃ
১। দ্বীনী ভাইদের সাথে যোগাযোগ রাখা।
• অবশ্যই দৈনিক নিম্নে একবার, নির্ধারিত সময়ে ভাইদের সাথে যোগাযোগ করা।
• দ্বীনী ওয়েবসাইট নিরাপত্তার সাথে নিয়মিত ভিজিট করা।
• নিয়মিত হক্কানী উলামায়ে কেরামের বয়ান শোনা।
• দ্বীনী ভাইদের প্রকাশিত ভিডিও মনোযোগ সহকারে দেখা।
• পত্রিকা, ম্যাগাজিন ও সিলেবাসের কিতাব স্টাডি করা।
২। পিতা-মাতা, ভাই-বোন ও নিকটবর্তী আত্মীয়-স্বজনের সাথে যোগাযোগ।
• প্রয়োজন হলে কথা বলা। এমনিতেই খোঁজ নেওয়ার জন্য ‘যোগাযোগ রাখার’ মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসা।
• পর্যায়ক্রমে এটাকে কমিয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করা, যেন দীর্ঘ গ্যাপ গেলেও তারা পেরেশান না হয়।
• যারা দূরে থাকেন, তাদের জন্য দুই সপ্তাহে একবার কথা বলার চেষ্টা করা।
• যারা এক জায়গায় বসবাস করেন, তাদের জন্য দুইদিনে একবার; প্রয়োজন হলে কথা বলা।
৩। দূরবর্তী আত্মীয়স্বজনের সাথে যোগাযোগ:
• তাদের সাথে যোগাযোগ নিজের পরিবারের উপর ছেড়ে দেওয়া।
• নিজেই পরিবারের দায়িত্বশীল হলে, মাসে একবার যোগাযোগ করা।
৪। বন্ধু-বান্ধবের সাথে যোগাযোগঃ
• নিতান্ত প্রয়োজনীয় বন্ধুদের সাথে প্রয়োজনের সময়ই কেবল যোগাযোগ করা। কভার স্টোরি ঠিক রাখার জন্য যতটুকু প্রয়োজন হয়। এর দ্বারা অপ্রয়োজনীয় বন্ধু কমে যাবে।
• শুধুমাত্র বন্ধুত্বের জন্য যোগাযোগ সম্পূর্ণরূপে পরিহার করা।
• বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া সহপাঠীদের সাথে যোগাযোগ না করা।
• কার কার সাথে কী ধরনের কথা বলতে হবে?
• পরিবার আত্মীয়দের সাথে পারিবারিক বিষয়ে আলোচনা করতে হবে।
• কারো সাথে জিহাদ সংক্রান্ত কোন কথা বলা যাবে না। বলতে দেওয়া যাবে না।
• এ ধরনের কথা বলার প্রবণতা কারো থাকলে, তার সাথে কথা বলা সম্পূর্ণ বন্ধ রাখতে হবে।
• একান্ত নিরাপত্তাজনিত বিষয় হলে, কোড ব্যবহার করে বলতে হবে।
• কোন সাথীর সাথে মোবাইলে কথা বলার বিশেষ প্রয়োজন হলে, আগে থেকে কোড নির্ধারণ করে রাখবে। ব্যক্তিগত মোবাইল দিয়ে কথা বলবে না।
• মোবাইল/পিসি ব্যবহারের সাধারণ নিয়মঃ-
• ইন্টারনেটে অহেতুক সময় ব্যয় করা যাবে না। কারণ এটি ফাহেশার দিকে নিয়ে যায়।
• মোবাইল/পিসিতে কাজের কোন ফাইল রাখা যাবে না।
• ফাইল/জিহাদ রিলেটেড সকল কিছু বিশেষ ইনক্রিপ্ট মেমোরিতে রাখতে হবে।
• গুরুত্বপূর্ণ ফাইল কখনো খোলা রেখে দেওয়া যাবে না।
• ইন্টারনেটে ফাইল সহ যাবতীয় সব কিছু তুলে রাখার অভ্যাস করতে হবে।
• দ্বীনী সফরে বের হওয়ার সময় মোবাইল সম্পর্কে করনীয় কী?
• কাজে ব্যবহৃত মেমোরী পিসি/মোবাইলে লাগিয়ে সফরে বের হওয়া যাবে না।
• টর, অরবোট, মেসেঞ্জার ইত্যাদি সফটওয়ার হাইড আছে কিনা চেক দিতে হবে।
• মোবাইলে চ্যাট শেষ হলে মেসেঞ্জারের ডাটা ক্লিয়ার দিয়ে বের হতে হবে এবং আইডিগুলো রিমুভ করে নিতে হবে। (এটি শুধু সফরে নয়, বরং সর্বাবস্থায় প্রযোজ্য। )
• মেমোরী রাখার জন্য বিশেষ স্থান ব্যবহার করবে।
• কোন কোন এপস্ ব্যবহার করা যাবে না?
• প্রয়োজনের বাহিরে কোন এপস্ ইনস্টল দেওয়া যাবে না।
• বেশিরভাগ মানুষ ব্যবহার করে এর উপর ভিত্তি করে নিম্নে কিছু এপসের কথা বলা হচ্ছে, এগুলো থেকে বিরত থাকতে হবে। Vidmate, Opera browser without VPN, Opera News, UC browser, youtube, tubemate, etc... একেবারে ফ্রেশ থাকলে সন্দেহ হতে পারে বিধায়, কিতাবাদি বা এ্যারাবিক বিভিন্ন এপস ইন্সটল করে রাখা যেতে পারে। তবে ওগুলো যেন সময় নষ্ট করবে এমন কিছু না হয়।
• খারাপ বা অশ্লীল এ্যাড আসে এমন কোন এপস বা ব্রাউজার ইন্সটল করে রাখা যাবে না। যেমন, (shareIt, UC-browser etc.)
• কোন কোন সাইট ভিজিট করা যাবে?
• আমাদের নির্ধারিত যে দাওয়াতী ও নিউজ সাইটগুলো আছে, তা ব্যতীত অন্য কোন সাইট ভিজিট করা যাবে না। যেমনঃ- PT, Mail, Dawahilallah.com gazwah.net , alfirdaws.org etc…..
• অনলাইন পত্রিকা পড়ার জন্য এই সাইট ব্যবহার করতে হবে http://www.allbanglanewspaper.xyz
এখানে সকল পত্রিকা পাওয়া যাবে। অথবা "All bangla news এমন এপস্ও ব্যবহার করা যাবে।
• অটোমেটিক আপডেট নিউজ আসে এমন মাধ্যম ব্যবহার করা যাবে না।
• দৈনিক কতক্ষণ আউট সাইট ভিজিট করতে পারবে।
• আউট সাইটে/ফেসবুকে ১ ঘণ্টার বেশি সময় থাকা যাবে না।
• বারবার প্রবেশ না করে একবারে সকল কাজ শেষ করে নিবে।
• রাতে ঘুমানোর আগে নিউজ দেখবে না। অন্য সময় দেখবে।
• সোস্যাল সাইট ব্যবহারের নিয়ম।
• Facebook , messenger , imo , whatsup, viber এগুলো ব্যবহার করা যাবে না।
• ফেইসবুক ব্যবহার করতে হলে, নির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে মাসুল ভাই থেকে অনুমতি নিতে হবে।
• আগে থেকে ফেসবুক আইডি থাকলে, সেখান থেকে ছবি সহ সকল ডকুমেন্ট সরিয়ে বন্ধ করে দিতে হবে।
• অনুমতি সাপেক্ষ কেউ ব্যবহার করলে; লাইক, কমেন্ট ও শেয়ার থেকে বিরত থাকতে হবে। এই ক্ষেত্রে এফবি ব্যবহার নীতিমালা জেনে নিতে হবে।
• নিজের ছবি অন্য কারো আইডিতে থাকলে মুছে ফেলার ব্যবস্থা করতে হবে।
• বিশেষ কিছু করণীয়ঃ
• সেটের প্লে স্টোর login না করা। প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার ডাউনলোডের জন্য aptoide ব্যবহার করবে।
• Youtube এ login না করা।
• যে কোন ব্রাউজারে Gmail account login না করা।
• বিশেষ প্রয়োজন হলে, কাজ শেষ হওয়ার সাথে সাথে ডাটা ক্লিয়ার দিয়ে দেওয়া। এই ক্ষেত্রে রিসেট দেওয়া সবচেয়ে ভালো। কারণ ডাটা ক্লিয়ার দেওয়ার পরও অনেক সময় Logout হয় না।
• কিছুদিন পর পর সম্পূর্ণ সেট রিসেট দিবে। প্রয়োজনে পুনরায় আপডেট করে নিবে। এর দ্বারা হিস্টোরি জমা থাকে না। সেট ফাস্ট হয়।
সারাংশঃ
• মোটকথা, ইমারার কাজে যোগাযোগ ও নিউজ পড়া ছাড়া অযথা নেটে থাকা যাবে না।
• নেট ও মেমোরি ছাড়া অন্য কোথাও ফাইল রাখা যাবে না।
• ইমারার নির্দেশিত পদ্ধতি ছাড়া নেট ও ডিভাইস ব্যবহার যাবে না।
• যারা ইমারার সাথী বলে দাবি করেন, আশা করি, তারা ইমারার সকল নির্দেশনা গুরুত্ব সহকারে মানবেন।
• নীতিমালা বহির্ভূত কোন কারণ পাওয়া গেলে ইমারার দেওয়া যে কোন শাস্তি/পদক্ষেপ মেনে নিতে হবে।
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সবার জন্য উপরোক্ত মূলনীতিগুলোর উপর আমল করা সহজ করে দিন। আমীন।
⛔⛔⛔⛔⛔⛔⛔⛔⛔⛔⛔⛔⛔⛔⛔⛔⛔⛔⛔⛔
➡️• নুন্যতম যে সকল কাজ করলে কোন ভাই এই শু’বার সাথী হিসেবে বিবেচিত হবেন,চাই তার দাওরা হোক বা না হোক ,তার চতুর্থ মারহালা শেষ হলেই হল ।তবে যাদের দাওরা হয়ে গেছে তাদেরকে বলা হবে সাথী এবং দাঈ আলিফ। আর যাদের দাওরা হয়নি কিন্তু চতুর্থ মারহালা শেষ হয়েছে তাদেরকে বলা হবে সাথি ও দাঈ - বা- ।। কাজগুলো নিম্রুপ--
• দৈনন্দিন সকাল-বিকাল ২ বার অফিসিয়াল টাইমে মেসেঞ্জারে এসে ভাইদের সাথে যোগাযোগ করা। (একান্ত সমস্যা হলে অন্তত একবার আসা বাধ্যতামূলক)
• দৈনিক হাজিরার ৯ টি পয়েন্ট জমা দেওয়া।
• তাজনিদের ভাইগণ প্রতিদিন ইমারার কাজে নুন্যতম ৩ ঘন্টা সময় দেওয়া, আনসার ও ডোনার হলে সে শু’বার মানদন্ড অনুপাতে একটিভ থাকা।
• ইমারা বা নিজ মাসউলের যে কোন নির্দেশনা মানতে সদা প্রস্তুত থাকা (কোন হালাকা, দাওরা বা অন্য কোন কাজের তাকাযা দিলে নির্দ্বিধায় সময় দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকা। ইতা’আতের ক্ষেত্রে আন্তরিক থাকা)
• নিম্নোক্ত গুণাবলী ভাইয়ের মধ্যে বিদ্যমান থাকাঃ
- আল্লাহ তায়ালার সাথে উত্তম সম্পর্ক।
- আল্লাহ তায়ালার ব্যাপারে সুধারণা রাখা।
- তাওয়াক্কুল বা আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসা।
- ইয়াক্বীন ও সবর।
- তথ্য গোপন করা।
- উম্মাহের জন্য কল্যাণকামী হওয়া।--
দেখুন আপনার কাজ কয়টা ও কি কি,এবং আপনার মধ্যে গুণাবলী কয়টি ও কি কি থাকতে হবে।
এগুলো কাজ ছাড়াও আপনার আরও কিছু কাজ আছে সেগুলো আপনি আপনার দৈনিক রিপোর্ট ও সাপ্তাহিক রিপোর্ট এবং মাসিক রিপোর্ট থেকে দেখে নিবেন এবং মুখস্থ রাখবেন।কারণ, ইমারাহ থেকে আপনাকে আপনার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন এবং আদায় করতেছেন কিনা তাও জিজ্ঞেস করবেন।জি কাজগুলো মুখস্থ রাখুন ও করুন।
দিচ্ছি।
তাওজিহাত
بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
তায়েফা মাসউলদের মাঝে যে সকল যোগ্যতা থাকা জরুরিঃ
• শুধুমাত্র একটিভ ভাইয়েরাই তায়েফা মাসউল হবেন। একটিভ না হলে কোন ভাইকে তায়েফার জিম্মাদারী দেওয়া যাবে না।
• সবাইকে সাথে নিয়ে মিলেমিশে কাজ করার যোগ্যতা থাকা ।
• কোন কিছু সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার যোগ্যতা থাকা।
• কাজ অনুযায়ী উত্তমভাবে রিপোর্টিং করতে পারা।
• প্র্যক্টিক্যাল দাওয়াতুল ফারদিয়্যাহ আত্মস্থ থাকা ও দাঈর আবশ্যকীয় গুণাবলী বিদ্যমান থাকা।
• অঙ্গীকার বা ওয়াদা পূর্ণ করা।
• নিজ দায়িত্বের ব্যাপারে ইলম ও সক্ষমতা থাকা।
• দানশীলতা ও সাহসিকতা থাকা।
• তাওয়াযু’ বা বিনয় থাকা এবং অহংকার মুক্ত থাকা।
• সততা (যে কোন ব্যাপারে আল্লাহর সাথে সততা রক্ষা করে চলা, কোন বিষয়ে লুকোচুরি না করা।)
তায়েফা মাসউলদের দায়িত্বসমূহঃ
(প্রত্যেক তায়েফা মাসউল তায়েফার সাথীদের কাজগুলো নিজেও করবেন। এখানে তার অতিরিক্ত দায়িত্বগুলো উল্লেখ করা হচ্ছে।)।
• KDI এর নিরাপত্তা মূলনীতি সামনে রেখে পুরো তায়েফার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
• মাজমূয়া মাসউল ভাইয়ের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করা।
• সাথীদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করে তাদেরকে দিক নির্দেশনা দেওয়া।
• উপরস্থ মাসউলকে দৈনিক, সাপ্তাহিক ও মাসিক রিপোর্ট প্রদান করা।
• সাপ্তাহিক হালাকাগুলো বাস্তবায়ন করা।
• ইলমী হালাকার বিষয়বস্তু নির্ধারণ করে দেওয়া।
• উপযুক্ত বিষয় নির্ধারণ করে হালাকাতে আলোচনা করা ও ভাইদের আলোচনা শোনা।
• সিলেবাস থেকে ভাইদের জন্য উপযুক্ত কিতাব নির্ধারণ করে দেয়া।
• ইমতেহানী হালাকাতে নিম্নোক্ত বিষয়ে পরিক্ষা গ্রহণ করাঃ-
▪ সিলেবাসের যে কিতাব ভাইয়েরা শেষ করেছেন তার পরিক্ষা।
▪ শারীরিক ব্যায়ামের পরিক্ষা।
▪ সকাল-সন্ধ্যার আযকার পরিক্ষা।
▪ নামাজের পরের আযকার পরিক্ষা।
◦ ইস্তেখবারী হালাকাতে এককভাবে ভাইদের সাথে বসে বিস্তারিতভাবে মাসিক রিপোর্ট ফাইল অনুসারে কাজের রিপোর্ট গ্রহণ করা।
◦ তায়েফার ভাইদের হাতে তৃতীয় ও চতুর্থ মারহালার যে মাদ’উ ভাইয়েরা আছেন, তাদের জন্য কিতাব নির্ধারণ করে দেয়া এবং তাদের ব্যাপারে দিকনির্দেশনা দেয়া।
◦ মাসে একবার সাথীদেরকে নিয়ে ফিকরী মজলিস করা।
◦ তায়েফার প্রতিটি সাথীর কাজের ব্যাপারে সম্মক ধারনা থাকা।
◦ নিজের টাস্কলিস্ট আপডেট রাখা, ও অধীনস্থ ভাইদের টাস্কলিস্ট চেক দেওয়া।
◦ কোন ভাই চতুর্থ মারহালা অতিক্রম করলে মেম্বারশীপ ফরম পুরণ করে তাকে তায়েফাভুক্ত করা।
◦ সাথীদেরকে মাসিক রিসালা প্রদান করা।
◦ সদাকা উত্তোলন করা ও প্রদান করা।
◦ ইমারা থেকে প্রদত্ত অন্য সকল কাজ আনজাম দেয়া।
মুখস্থ করুন।
এগুলো কাজ ছাড়াও আরও কাজ আছে,যা আপনার দৈনিক রিপোর্ট ও সাপ্তাহিক রিপোর্ট এবং মাসিক রিপোর্ট থেকে জেনে নিবেন।আর মাসিক এজেন্ডা তো আছেই।এগুলো সব ক্লিয়ার রাখবেন।যাতে মুখস্থ বলতে বললে বলতে পারেন।