JustPaste.it

ত্বাগূত কারা ? [ত্বাগূতের সঙ্গা]

.

ত্বাগূত-এর পরিচয় : الطاغوت  (তাগূত) শব্দটি আরবী الطغيان  (তুগইয়ান) শব্দ থেকে নির্গত। ত্বাগূত (الطَّاغُوتَ)-এর শাব্দিক অর্থ বিপদগামী, সীমালঙ্ঘনকারী, আল্লাহদ্রোহী, অবাধ্য, পথভ্রষ্ট, মূর্তি, শয়তান, দেবতা। 

.

প্রসিদ্ধ আরবী অভিধান লিসানুল আরব-এ বলা হয়েছে,

 كلُّ مُجَاوِزٍ حدَّه فِي العِصْيانِ طَاغٍ-

 ‘যে বা যারা আনুগত্যের ক্ষেত্রে সীমালংঘন করে তারাই ত্বাগূত’। [লিসানুল আরব ১৫/৮ পৃ.।]

 

.

পারিভাষিক অর্থ বর্ণনায় যুজাজ (রহঃ) বলেন,

 كُلُّ مَا عُبِدَ مِنْ دُوْنِ اللهِ  

‘আল্লাহ ব্যতীত যারই ইবাদত করা হয়, তাই ত্বাগূত’।[তাজুল আরূস মিন জাওয়াহিরিল কামূস ৩৮/৪৯৬ পৃঃ।]

.

ইবনুল ক্বাইয়িম (রহঃ) বলেন,

الطاغوت كل ما تجاوز به العبد حده من معبود أو متبوع أو مُطَاعٍ  

‘ত্বাগূত্ব হ’ল, বান্দার ঐ সকল সীমালংঘন, যা সে মা‘বূদ, অনুসরণীয় ব্যক্তি এবং আনুগত্যের অধিকারী ব্যক্তির ক্ষেত্রে করে থাকে’।[ ইবনুল ক্বাইয়িম, ই‘লামুল মুওয়াক্কি‘ঈন ১/৯২ পৃঃ।]

.

তাগূত’ বলতে ‘আল্লাহ ছাড়া যা কিছু ইবাদত করা হয়’ বুঝানো হয়েছে। পরবর্তী যুগের অনেক মুফাসসির এ প্রকারের ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। 

.

ইমাম মালেক (রহঃ) বলেন,

 الطَّاغُوتَ كلُّ مَا عُبِدَ مِنْ دُوْنِ اللهِ- 

 আল্লাহ ব্যতীত অন্য যারই ইবাদত করা হয় তাকেই ‘ত্বাগূত’ বলা হয়’।[ফাতহুল মাজীদ শারহু কিতাবুত তাওহীদ পৃ. ৪৪]

 

আবু ইসহাক বলেন,

 كلُّ معبودٍ مِنْ دُونِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ جِبْتٌ وطاغُوْتٌ-

 আল্লাহ ব্যতীত অন্য যারই ইবাদত করা হয় সেটিই ‘জিবত’ ও ‘ত্বাগূত’।[লিসানুল আরব ১৫/৯ পৃ.]

.

কোনো কোনো মুফাসসির বলেন, ‘‘আল্লাহ ছাড়া যার ইবাদত করা হয় অথবা আল্লাহর বিরোধিতায় যার আনুগত্য করা হয় সেই তাগূত।’’[কুরতুবী, তাফসীর ৫/২৪৮-২৪৯।]

.

আবার যে ব্যক্তি আল্লাহর বিধানকে বাদ দিয়ে নিজের মন মত বিধান রচনা করে সেও ত্বাগূত হিসাবে পরিগণিত হবে। আর যারা মানব রচিত আইন মেনে চলে তারা ত্বাগূতের অনুসারী।

.

ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (৬৬১-৭২৮ হিঃ) বলেন,

 

فالمعبود من دون الله اذا لم يكن كارها لذالك طاغوب ولهذا سمي النبي صلي الله عليه وسلم الاصنام طواغيت-

 

‘আল্লাহ  ছাড়া যাদের ইবাদত করা হয় তারা যদি এতে অসন্তুষ্ট না হয় তবে তারাই ত্বাগূত। এজন্যই রাসূল (ছাঃ) মূর্তিগুলিকে ত্বাগূত নামকরণ করেছিলেন’। [ফাতাওয়া ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) ২৮/২০০।]

.

মুহাম্মাদ ইবনু আব্দুল ওয়াহ্হাব বলেন,

 

الطاغوت عام في كل ما عبد من دون الله رضي بالعبادة من معبود او متبوع او مطاع في غير طاعت الله و رسوله فهو طاغوت -

 

‘ত্বাগূত হ’ল ঐ সকল মা‘বূদ অনুকরণীয়, অনুসরণীয় ব্যক্তি বা বস্ত্ত আল্লাহ ব্যতীত যাদের ইবাদত করা হয় আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্যের বিপরীতে এবং তারা এতে সন্তুষ্টি থাকে’।[মাজমু‘ আত-তাওহীদ পৃ. ৯।]

.

সাইয়্যেদ কুতুব বলেন,

 

كل ما يطغي علي الوعي و يجوز علي الحق ويتجاوز الحدود التي رسمها الله للعبادة، ولا يكون له ضابط من العقيدة في الله من الشريعة التي يسنها الله -

 

‘যারা সত্যকে অমান্য করে আল্লাহর দেওয়া সীমারেখা ইবাদতের ক্ষেত্রে অতিক্রম করে, আল্লাহর দেওয়া শরী‘আতের কোন পরোয়া করে না। ইসলামী আক্বীদার কোন গুরুত্ব রাখে না। এরা সবাই ত্বাগূত’।[তাফসীর ফী যিলালিল কুরআন ১/২৯২ পৃ.।]

.

ইবনে আবি হাতিমের বর্ণনায় রয়েছে

 ওমর ইবনুল খাত্ত্বাব (রাঃ) বলেন, 

 

الطاغوتُ الشيطانُ 

 

ত্বাগূত হ’ল শয়তান’।

.

জাবির (রাঃ) বলেন,

 

الطَّاغُوتَ : كهان كانت عليهم الشياطين-

 

‘ত্বাগূত হ’ল জ্যোতিষী যার উপর শয়তান অবতরণ করে’। [ফাতহুল মাজীদ ১/১৬ পৃ.।]

.

বর্তমান যুগের বাংলাদেশের দুজন আলেমের দেয়া ত্বাগূতের সঙ্গা: 

 

মাওলানা আব্দুল মালেক ( মারকাযুদ দাওয়াহ আল ইসলামিয়া উস্তাদ  এবং মাসিক আলকাউসারের তত্ত্বাবধায়ক) বলেন: 

.

তাগূতের অর্থ আল্লাহর ঐ বিদ্রোহী বান্দা , যে আল্লাহর মোকাবেলায় নিজেকে বিধানদাতা মনে করে এবং মানুষের উপর তা কার্যকর করতে চায়। [বই : ইমান সবার আগে]

.

শাইখ ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া বলেন: 

.

তাগুত  এমন বান্দাকে বলা হয়, যে বন্দেগী ও দাসত্বের সীমা অতিক্রম করে নিজেই প্রভূ ও ইলাহ হবার দাবীদার সাজে এবং আল্লাহ্‌র বান্দাদেরকে নিজের বন্দেগী ও দাসত্বে নিযুক্ত করে।  [তাফসিরে যাকারিয়া -(২/২৫৬)]

.

সংশয় নিরসন :

.

এখানে লক্ষণীয় যে, আল্লাহ ছাড়া যাদের ইবাদত করা হয়েছে এবং হচ্ছে তাদের মধ্যে রয়েছেন ঈসা, উযাইর, ইয়াগূস, ইয়াউক, নসর ও অন্যান্য নবী, ওলী ও ফিরিশতাগণ। এদেরকে তো তাগূত বলা যায় না। 

.

তাহলে মুফাসসিরদের এ ব্যাখ্যা কিভাবে গ্রহণ করা যাবে? এক্ষেত্রে তারা বলেছেন যে, যারা ইবাদত গ্রহণে তুষ্ঠ তাদেরকেই তাগূত বলা হবে; কারণ তারা আল্লাহর অবাধ্যতায় মহা-সীমালঙ্ঘনকারী । অথবা ইবাদতকারীদের কর্মের ভিত্তিতে তাদেরকে তাগূত বলা হবে। অর্থাৎ ইবাদতকারীগণ তাদের ইবাদত করে মহা-সীমালঙ্ঘনকারীতে পরিণত হয়েছে।  [উসাইমিন, মুহাম্মাদ ইবনু সালিহ, আল-কাওলুল মুফীদ ১/৩০।]

 

.

সারসংক্ষেপ : উপরের বিভিন্ন উলামাদের সঙ্গার মাধ্যমে আমরা যা জানতে পারলাম - ‘‘ত্বাগূত হলো সেই ব্যক্তি বা সত্ত্বা যে আল্লাহর বিপরিতে নিজের ইবাদতের জন্য মানুষকে ডাকে, অথবা মানুষকে তার ইবাদত করতে বাধ্য করে অথবা মানুষ ইবাদত করলে সে সন্তুষ্ট হয় ’’

.

অর্থাৎ

    • ঐ ব্যক্তি তাগুত যে মানুষকে নিজের ইবাদতের দিকে ডাকে। যেমন শয়তান, ভন্ডপীর 
    • ঐ ব্যক্তি তাগুত যে নিজেকে বিধানদাতা মনে করে এবং নিজের আইন কানুন মানুষকে মানতে বাধ্য করে।  যেমন - ফেরাউন
  • ঐ ব্যক্তিও তাগুত যে মানুষকে তার ইবাদতের দিকে ডাকে না কিংবা কাউকে তার আইন-বিধান  মানতেও বাধ্য করে না - কিন্তু লোকে তার ইবাদত করলে বা আল্লাহর বিপরিতে তার আইন কানুন মানলে সে সন্তুষ্ট হয়- বা খুসি হয়। 
  • কিন্তু ঐ ব্যক্তি তাগুত নয় যে মানুষকে তার ইবাদত করার জন্য বলে নাই এবং লোকে ইবাদত করলে তাতেও সে সন্তুষ্ট হয় না বরং লোকদের এই ইবাদত করাকেই আল্লাহর অবাধ্যতা মনে করে।যেমন ঈসা (আ.) সহ যত বুজুর্গদের ইবাদত করা হয়।