তাগুতকে বর্জন করার গুরুত্ব:
তাগুতকে বর্জন করাই হলো ইমানের প্রথম শর্ত। তাগুতকে বর্জন করা ছাড়া কারো ইমানই গ্রহনযোগ্য নয়। আল্লাহর প্রতি ইমান আনায়ন তখনই কাজে লাগবে যখন প্রথমে তাগুতকে বর্জন করে আল্লাহর প্রতি ইমান আনায়ন করা হবে। সেই ইমানই দুনিয়া ও আখিরাতে ব্যক্তির মুক্তির কারন হবে। আল্লাহর প্রতি ইমান আনায়নের পাশাপাশি তাগুতের প্রতি আনুগত্য থাকলে সেই ইমান কোনো কাজেই আসবে না।
.
তাওহীদের প্রথম রুকন হলো এই তাগুত বর্জন।
.
তাওহীদের রুকন :
.
রুকন হচ্ছে এমন বিষয়, যার অনুপস্থিতিতে অন্য একটি বিষয়ের অনুপস্থিতি অপরিহার্য হয়ে উঠে। রুকন অবশ্যই মূল বিষয়টির অন্তর্গত হওয়া চাই। যেহেতু রুকন কোন জিনিসের আভ্যন্তরীণ বা ভেতরের বিষয়, সেহেতু শুদ্ধ হওয়ার বিষয়টি এর উপর নির্ভরশীল। অতএব কোন জিনিসের রুকন ব্যতীত তা সহীহ বা শুদ্ধ হয় না।
.
রুকন কি জিনিস, এটা জানার পর আপনাকে অবশ্যই জানতে হবে যে, যে তাওহীদ আল্লাহ তায়ালা আপনার ওপর ওয়াজিব করে দিয়েছেন, সে তাওহীদেরও সালাতের মতোই রুকন আছে। সালাত যেমন তার রুকন যথা- তাকবীরে তাহরিমা,রুকু, সেজদা, শেষ বৈঠক ইত্যাদি আদায় করা ব্যতীত শুদ্ধ হয় না। কোনো ব্যক্তি যদি সালাতের কোনো রুকন বাদ দেয় তাহলে তার সালাত যেমন ভাবে বাতিল হয়ে যায়, তেমনি ভাবে কোনো ব্যক্তি যদি তাওহীদের কোনো একটি রুকন বাদ দেয়, তাহলে সে ব্যক্তিও আল্লাহর একত্বে বিশ্বাসী ব্যক্তিতে পরিণত হতে পারবে না। এমতাবস্থায় কলেমা ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ‘ তার কোনো কাজে আসবে না, সে আর মুসলিম থাকবে না বরং সে কাফেরে পরিণত হয়ে যাবে।
.
কালিমাতুত তাওহীদের অর্থ ও রোকনসমুহ:
.
لآ اِلَهَ اِلّا اللّهُ مُحَمَّدٌ رَسُوُل اللّهِ
‘‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ’’ এর অর্থ لآ اِلَهَ اِلّا اللّهُ অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোনো প্রকৃত মা'বুদ নেই।
.
‘ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ’ مُحَمَّدٌ رَسُوُل اللّهِ এর সাক্ষ্য দেওয়ার অর্থ হলো, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর রিসালাত স্বীকার করে নেওয়া, তাঁর আদিষ্ট বিষয়ে তাঁর আনুগত্য করা, তাঁর প্রদানকৃত সংবাদ সত্যায়ন করা, তাঁর নিষিদ্ধ বিষয় থেকে দূরে থাকা এবং তাঁর নির্দেশিত পন্থায় আল্লাহর ইবাদত করা।
.
কালিমাতুত তাওহীদের রুকন দুইটি :
১) না বাচক বা বর্জন করা অর্থাৎ لآ اِلَهَ (কোনো ইলাহ নেই)
২) হ্যা বাচক বা গ্রহন করা اِلّا اللّهُ (একমাত্র আল্লাহ ছাড়া)
.
আর এটাই হলো كُفْرٌ بِالطَّاغُوْتِ ( ত্বাগুতকে অস্বীকার করা ) এবং اِيْمَانٌ بِاللهِ (আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা)। আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:
.
﴿فَمَنْ يَّكْفُرْ بِالطَّاغُوْتِ وَيُؤْمِنْ ۢبِاللهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقٰىۗ لَا انْفِصَامَ لَهَاؕ وَاللهُ سَمِيْعٌ عَلِيْمٌ﴾
.
‘যে ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করবে এবং আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে, সে এমন এক মজবুত রশি ধারণ করল যা কখনো ছিঁড়ে যাবে না। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা ও মহাজ্ঞানী।’ [সুরা বাকারা, ২ : ২৫৬]
.
উপরোক্ত আয়াতে فَمَنْ يَّكْفُرْ بِالطَّاغُوْتِ (তাগুতকে অস্বীকার করে) এটা হলো প্রথম রুকন এবং وَيُؤْمِنْۢ بِاللهِ (আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে) এটা হলো দ্বিতীয় রুকন।
.
এ হিসেবে কালিমাতুত তাওহীদের রুকন দুইটি :
.
১) كُفْرٌ بِالطَّاغُوْتِ ত্বাগূতকে অস্বীকার করা ( লা ইলাহা কোনো ইলাহা নেই)
২) اِيْمَانٌ بِاللهِ আল্লাহর প্রতি ইমান ( ইল্লাল্লাহ - একমাত্র আল্লাহ ছাড়া)
.
আল্লাহ আমাদের উপর সর্বপ্রথম কি ফরয করেছেন?
শাইখ মুহাম্মাদ ইবন আব্দুল ওয়াহহাব রহ. বলেন:
.
আল্লাহর প্রতি ঈমান আনা এবং তাগুত (তথা আল্লাহ বিরোধী শক্তি)কে বর্জন করা বা তাগুতের সাথে কুফরী করা (তাগুতকে মানতে অস্বীকার করা)।
.
এর দলীল, আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
﴿ لَآ إِكۡرَاهَ فِي ٱلدِّينِۖ قَد تَّبَيَّنَ ٱلرُّشۡدُ مِنَ ٱلۡغَيِّۚ فَمَن يَكۡفُرۡ بِٱلطَّٰغُوتِ وَيُؤۡمِنۢ بِٱللَّهِ فَقَدِ ٱسۡتَمۡسَكَ بِٱلۡعُرۡوَةِ ٱلۡوُثۡقَىٰ لَا ٱنفِصَامَ لَهَاۗ وَٱللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ ٢٥٦ ﴾ [البقرة: ٢٥٦]
.
অর্থাৎ: দ্বীনের ব্যাপারে কোনো জবরদস্তি বা বাধ্য বাধকতা নেই। অবশ্যই হেদায়াত গোমরাহী থেকে পৃথক হয়ে গিয়েছে, অতএব, যে ব্যক্তি তাগুতের সাথে কুফরি করল এবং আল্লাহতে বিশ্বাস স্থাপন করল সে দৃঢ়তর রজ্জুকে আঁকড়িয়ে ধরল যা কখনো ছিন্ন হবার নয়। এবং আল্লাহ শ্রবনকারী মহাজ্ঞানী। [সূরা বাকারা ২৫৬]
.
উরওয়াতুল উসকা বা শক্ত রজ্জু কি?
.
তা হল: লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। লা ইলাহা অর্থ: কোনো মা‘বুদ নেই (রহিতকরণ) ইল্লাল্লাহ অর্থ: শুধু আল্লাহ (সাব্যস্তকরণ)
.
এখানে না এবং হ্যাঁ বা রহিতকরণ ও সাব্যস্তকরণ দ্বারা উদ্দেশ্য কি?
.
আল্লাহ ব্যতীত অন্য যা কিছুর ইবাদত বা উপাসনা করা হয় তা রহিত করা এবং বিনা শরীক এক আল্লাহর জন্য যাবতীয় ইবাদত সাব্যস্ত করা।
.
প্রমাণ হল আল্লাহর বাণী:
﴿ وَإِذۡ قَالَ إِبۡرَٰهِيمُ لِأَبِيهِ وَقَوۡمِهِۦٓ إِنَّنِي بَرَآءٞ مِّمَّا تَعۡبُدُونَ ٢٦ ﴾ [الزخرف: ٢٦]
অর্থাৎ: স্মরণ করুন, যখন ইব্রাহীম (আলাইহিস সালাম) তার পিতা এবং তার সম্প্রদায়কে বলেছিলেন: তোমরা যাদের পুজা কর তাদের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই। [সূরা যুখরুফ: ২৬] এটি রহিতকরণের প্রমাণ।
.
আর সাব্যস্তকরণের প্রমাণ হচ্ছে আল্লাহর বাণী,
﴿ إِلَّا ٱلَّذِي فَطَرَنِي فَإِنَّهُۥ سَيَهۡدِينِ ٢٧ ﴾ [الزخرف: ٢٧]
“তবে যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন তিনি ব্যতীত, তিনি আমাকে সঠিক পথ দেখাবেন। [সূরা যুখরুফ ২৭]
.
অতএব এ লেখা থেকে তো এটা স্পষ্ট হলো যে তাগুতকে বর্জন করা ব্যতিত আমাদের ইমান কোনো কাজেই লাগবে না।
.
এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হলো ‘‘তাগুত কি? তাগুত কারা?’’ তা চিহ্নিত করা এবং তাগুতকে বর্জন করার পদ্ধতি যেনে সেভাবে বর্জন করা।