JustPaste.it

07 Soriat-Batito-juddho-fetna-boi-kicui-noy

শরীয়ত ব্যতীত যুদ্ধ; ফেতনা বৈ কিছু নয় ;

মাওলানা আসিম উমার হাফিজাহুল্লাহ্

হে আমার মুজাহিদ ভাইয়েরা! তোমরা যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালবেসে নিজেদের অতি মূল্যবান ও শ্রেষ্ঠ সম্পদ আল্লাহর রাস্তায় কুরবানি করছো এবং আখেরাতের জীবনকে দুনিয়ার জীবনের উপর প্রাধান্য দিচ্ছ। হে যুবক ভাইয়েরা! তোমরা যারা এই উম্মাহর সম্মান রক্ষার জন্য নিজেদের সবকিছু কুরবানি করার সংকল্প করেছো। কোন সন্দেহ নেই তোমরা যে পথে চলছো তা এক মহান-মর্যাদাপূর্ণ পথ এবং ইসলাম ও উম্মাহর সম্মান ও গৌরবের পথ, আর এটাই ইসলামের শীর্ষ চূড়া এবং চিরসুখের ঠিকানা জান্নাতের সংক্ষিপ্ত পথ। এটা শুধু মুসলমানদেরই নয় বরং কাফেরদের জন্যও হেদায়েতের পথ। এই ওয়াজিব আদায়ের মাধ্যমে শুধু মুসলমানরাই নয় বরং সমস্ত মানুষ এই নষ্ট শাসন-ব্যবস্থার অত্যাচার থেকে রক্ষা পাবে এবং ইসলামী শাসন-ব্যবস্থার মাধ্যমে সারা দুনিয়া নিরাপদ থাকবে। কিন্তু এখন প্রশ্ন হল; কেউ কি ইমামুল মুজাহিদীন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ ﷺ এর দেখানো পথ অনুসরণ না করে, শরীয়তের বিধিবিধানের কোন পরোয়া না করে, মন যেভাবে চায় সেভাবেই জিহাদ করতে পারবে? এবং নিজের চাহিদা মত মানুষের রক্ত ঝরাতে পারবে এবং মানুষ হত্যা করতে পারবে? আর এভাবে কি উম্মাহর সম্মান বৃদ্ধি পাবে? এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও জান্নাত লাভ করা সম্ভব হবে?

আমার প্রিয় ভাই! না, এভাবে সম্ভব না। কারণ জিহাদ একটি ইবাদত। আর এমন ইবাদতই আল্লাহ তাআলার নিকট গ্রহণ যোগ্য যা পরিপূর্ণভাবে শরীয়তের অনুসরণ করে হালাল-হারাম ও জায়েয-না জায়েযের রেয়ায়েত করে আদায় করা হয় অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর তরীকা মত আদায় করা হয়। বিষয়টি এমন নয় যে,

যুদ্ধের ময়দানে প্রত্যেক যোদ্ধা এবং আহত বা নিহত ব্যক্তিই মুজাহিদ!!

সুতরাং মনে রাখতে হবে প্রত্যেক মুসলমানের উপরই শরীয়তের উপর চলা ফরজ। কেউ এর বাইরে নেই এমনকি মুজাহিদগণও না। বরং তারাই এর বেশী হকদার। রাসূলুল্লাহ ﷺ এরশাদ করেন,

إن الحلال بين وان الحرام بين وبينهما مشتبهات لاكالراعى يرعى كثير من الناس فمن اتقى الشبهات استبرأ لدينه وعرضه ومن وقع في الشبهات وقع في الحرام كالراعى حول الحمى يوشك أن يرتع فيه ألا وإن لكل ملك حمى ألا وإن حمى الله محارمه

‘হালাল’ স্পষ্ট এবং ‘হারাম’ স্পষ্ট। এদুয়ের মাঝে রয়েছে মুশাব্বাহাত তথা সন্দেহ যুক্ত বিষয়। অনেক মানুষই তা জানে না। যে ব্যক্তি সন্দেহ যুক্ত বিষয় থেকে বেঁচে থাকল সে তার দ্বীন ও সম্মান হেফাজত করল। আর যে সন্দেহ যুক্ত বিষয়ে পতিত হল তার উপমা হল ঐ রাখালের মত যে রাখাল তার পশুকে ক্ষেতের আশপাশে চরাতে থাকে এবং খুব সম্ভাবনা আছে সেগুলো সীমানার ভেতরে ঢুকে পড়বে। মনে রাখবে প্রত্যেক মালিকেরই একটা সীমানা রয়েছে আর আল্লাহর সীমানা হল নিষিদ্ধ বিষয়সমূহ। সুতরাং হে মুজাহিদ ভাই! নিষিদ্ধ কাজ থেকে তখনই বেঁচে থাকা সম্ভব সন্দেহ পূর্ন বিষয় থেকে বেঁচে থাকবে বরং তার নিকটে যাওয়ারও চেষ্টা করবে না। কিন্তু যে ব্যক্তি তাবীল ও ভুল ব্যাখ্যার মাধ্যমে এর নিকটে যাওয়ার চেষ্টা করবে কোন এক দিন সে নিষিদ্ধ বিষয়েই পতিত হবে। চাই এর নাম জিহাদ অথবা এস্তেশহাদী দেওয়া হোক না কেন। মনে রাখবে! আল্লাহ তাআলা অমুখাপেক্ষী। তাঁর এমন জিহাদের কোনই প্রয়োজন নেই যেখানে নিষিদ্ধ কাজ করা হয় এবং হারাম রক্ত প্রবাহিত করা হয়।

হে মুজাহিদ ভাইয়েরা! আমাদের বুঝে আসুক বা না আসুক, আমরা মানতে পারি বা না পারি, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ﷺ জিহাদের ময়দানে যে সকল বিষয় নিষিদ্ধ করেছেন তা থেকে বেচে থাকার মধ্যেই জিহাদের কল্যান ও কামিয়াবি নিহিত রয়েছে।

শরীয়ত যেটাকে হক বলেছে সেটাই হক আর যেটাকে না-হক বলেছে। সেটাই না-হক এবং তা মানার মধ্যেই কামিয়াবি। তাবীল ও ভুল ব্যাখ্যার কোন সুযোগ নেই। যেমন, যে সকল নারী ও শিশু যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেনি তাদের হত্যা করতে রাসুলুল্লাহ ﷺ নিষেধ করেছেন। এখন কেউ যদি এই আদেশের বিপরীত তাবীল করে বলে যে, আমি যদি শত্রুর স্ত্রী-সন্তান এবং পরিবার-পরিজনকে হত্যা করি তাহলে শত্রু ভীত-সন্ত্রস্ত হবে, মানুষিক ভাবে ভেঙ্গে পড়বে এবং যুদ্ধ করার মত মনবল হারিয়ে ফেলবে। এবং একথা বলে নারী ও শিশু হত্যা শুরু করে তাহলে সে এটা করতে পারবে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এটাই তার নাকেছ আকল ও সল্প অভিজ্ঞতার প্রমান। মানুষের প্রকৃতি আর মানসিকতা সম্পর্কে তার সামান্য পরিমাণও ধারণা নেই। মনোবিজ্ঞান সম্পর্কে তোমার যদি সামান্য ধারণাও থকতো তাহলে বুঝতে পারতে যে, নারী ও শিশু হত্যার কতটা প্রভাব মানুষের মধ্যে পড়ে! এবং নবী ﷺ এর হাদীসের সত্যতা সম্পর্কে তোমার ঈমান আর বৃদ্ধি পেত এবং তুমি বুঝতে পারতে যে, যুদ্ধক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ ﷺ এর মূলনীতি বর্তমান আধুনিক যুদ্ধেও ঠিক ততখানিই কল্যানকর যত খানি কল্যাণকর ছিল চৌদ্দশত বছর আগে। একটু ভেবে দেখ কোন দৃশ্যটা তোমাকে বেশী কষ্ট দেয় এবং তোমার মধ্যে ক্রোধ ও ঘৃণা সৃষ্টি করে, কোন নিহতপুরুষের লাশের নাকি নারী ও শিশুর ক্ষতবিক্ষত দেহের দৃশ্য? মনে রখো! নারী ও শিশুর রক্তাক্তদেহ ও তাদের ক্ষতবিক্ষত লাশের দৃশ্য মানব হৃদয়ে ঘৃণা ও ক্রোধের আগুন জ্বেলে দেয়। এবং সবচেয়ে ভীতু আর কাপুরুষ লোকটাকেও প্রতিশোধের দৃঢ় সংকল্পী করে তোলে। তুমি কি দেখনি? অতিদুর্বল নারীও সন্তানের জন্য মহা বিপদে ঝাপ দেয়!! অবশ্যই নারী ও শিশুর রক্ত যুদ্ধেক্ষেত্রে শত্রুর সংখা বৃদ্ধি করে এবং যুদ্ধের প্রতি শত্রুর ইচ্ছাকে আরো প্রবল করে তোলে। সুতরাং তুমি যদি এটা বুঝে থাক যে, যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেনি এমন নারী-শিশুর রক্ত জনমনে ক্রোধ আর প্রতিশোধের আগুন জ্বালিয়ে দেয়। তাহলে অন্য একটি হাকীকতও বুঝে নাও যে, আল্লাহ তাআলা রাসূল ﷺ কে যুদ্ধের আদেশ দিয়েছেন, যাতে করে শত্রুর যুদ্ধ করার মনোবল হারিয়ে যায় এবং তার যুদ্ধের সংকল্প ভেঙ্গে পড়ে। আর একারণেই আল্লাহ তাআলা শত্রুর বড় বড় নেতৃস্থানীয়দের হত্যা করে তাদের মনবল ভেঙ্গে দেয়ার আদেশ দিয়েছেন। আল্লাহ তাআলা বলেন,

فقاتلوا أئمة الكفر

“সুতরাং তোমরা কাফেরদের নেতাদের হত্যা কর...”

অর্থাৎ তোমরা উচ্চপদস্থ কমন্ডারদের সাথে যুদ্ধ কর। অতপর এর উদ্দেশ্য বর্ণনা করে বলেছেন,

لعلهم ينتهون

“যাতে করে তারা বিরত থাকে।”

অর্থাৎ ইসলাম ও শরীয়তের বিরুদ্ধে যুদ্ধ থেকে বিরত থাকে। ইমাম আবু সাউদ রহ. এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন ‘কাফেরদের বিরুদ্ধে তোমাদের যুদ্ধের উদ্দেশ্য যেন হয় তাদেরকে কুফরি এবং বড়বড় অপরাধ থেকে বাঁচিয়ে রাখা।

তোমাদের উদ্দেশ্য যেন তাদেরকে কষ্ট দেওয়া বা তাদের ক্ষতি করা না হয়। অর্থাৎ তোমরা ঐ সব যোদ্ধাদের মত হয়ো না, যারা জাহেলি মনোভাবের কারণে শত্রুকে কষ্ট দেওয়ার চেষ্টা করে, শত্রুকে কষ্ট দেওয়া ব্যতিত তাদের আর কোন উদ্দেশ্য বা টার্গেট থাকে না। বরং তোমাদের যুদ্ধের উদ্দেশ্য যেন হয় সাহাবায়ে কেরাম রাযি. দের মত ‘শত্রুদের গর্দান কাটার মাধ্যমে তাঁদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল শরীয়ত কায়েমের প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করা ‘যাতে করে সাধারণ মানুষের সামনে হেদায়াতের দরজা খুলে যায় এবং তারা সন্তুষ্ট চিত্তে আল্লাহর দীনে প্রবেশ করতে পারে।”

সুতরাং আমরা কমান্ডার ও নেতৃবর্গের উপর ধারাবাহিক আক্রমণের মাধ্যমে শত্রুর যুদ্ধের ইচ্ছাকে শেষ করে দিব এবং তাদের শিকড় উপড়ে ফেলব। যাতে করে তাদের মনোবল ভেঙ্গে পড়ে এবং তারা যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে পালাতে শুরু করে আল্লাহর শোকর ইতিমধ্যেই আফগানিস্তানে আমরিকা ও তার মিত্রদের মনবল ভেঙ্গে পড়েছে। মনে রাখবে গেরিলা যোদ্ধা তার উদ্দেশ্যে তখনই সফল হয় যখন সে তার শত্রুর মনোবল ভেঙ্গে দিতে সক্ষম হয়। সমস্ত শত্রু হত্যার মাধ্যমে বিজয় অর্জন হয় না। বিজয় অর্জন হয় শত্রুর মনোবল ভেঙ্গে দেয়ার মাধ্যমে। আল্লাহর রাসুল ﷺ এর সিরাত দেখ, বদরের যুদ্ধে সকল কাফেরকে হত্যা করা হয়নি। বরং মক্কার বেশির ভাগ কাফেরই তো জীবিত ছিল। কিন্তু তারা পরাজিত হয়েছে, কারণ তাদের নেতা আর সর্দাররা নিহত হওয়ার মাধ্যমে তাদের ঐ মনোবল ভেঙ্গে গিয়েছিল যার গর্ব করে তারা মক্কা থেকে বের হয়ে ছিল। তোমরা রাসূল ﷺ এর সিরাত পড়ে দেখ। মক্কা বিজয়ের দিন আরবের সকল কাফেরকে হত্যা করা হয়নি বরং যোদ্ধা ও বিদ্রোহী প্রায় সকল কুরাইশই বাকি ছিল কিন্তু তাদের মনোবল ভেঙ্গে তারা পরাজিত হয়েছিল। অনুরুপ ভাবে আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়ন পরাজয়ের সময় তাদের সকল সৈন্য নিহত হয়নি বরং তাদের যুদ্ধরত সৈন্যদের মনোবল ভেঙ্গে পড়েছিল। বর্তমানেও আফগানিস্তানে আমরিকা ও তার মিত্ররা তাদের সকল ড্রোন ও জঙ্গিবিমান ধ্বংস হওয়া এবং তাদের সকল সৈন্য নিহত হওয়ার কারণে পরাজয় উপহার পায়নি। বরং আল্লাহর ইচ্ছায় তাঁর সিংহরা শত্রুর মনোবল ভেঙ্গে দিয়েছে এবং তাদেরকে কঠিন ক্ষতির মধ্যে ফেলেছে, ফলে তারা এখন এতটাই ভীত-সন্ত্রস্ত যে, তারা ক্যাম্প আর দূর্গের ভেতর থেকে ড্রোন আর বিমানের সাহায্যেও তালেবানদের সাথে যুদ্ধ করতে সাহস পায় না। সুতরাং বুঝা গেল যুদ্ধে বিজয় অর্জন হয় শত্রুর মনবল ভাঙ্গার মাধ্যমে। নারী-শিশু হত্যা করে শত্রুর মনোবল ভাঙ্গা যায় না বরং তা আরো বৃদ্ধি পায় এবং তার প্রতিশোধের সংকল্প দৃঢ় হয়। আর এটা শুধু শত্রুর ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ থাকে না বরং এ কারণে নিরপেক্ষ লোকগুলোও শত্রুর পক্ষে চলে যায়। এবং যুদ্ধে শত্রু সংখ্যা বৃদ্ধি পায়। অথচ রাসূল ﷺ যুদ্ধে শত্রুসংখ্যা কমাতে চেষ্টা করতেন। শত্রুর মাঝে বিভেদ সৃষ্টি করে তাদের দুর্বল করেছেন। তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করেননি।

হে আমার মুজাহিদ ভাইয়েরা! তোমরা প্রিয় নবী ﷺ ও তাঁর অনন্য সাধারণ সেনাপতিদের জিহাদ থেকে শিক্ষা গ্রহন করে সর্ব প্রথম নিজেদের টার্গেট ঠিক কর। যুদ্ধক্ষেত্রে সঠিক টার্গেট নির্ণয় সময়ের সৎ ব্যবহার আর প্রয়োজনীয় আসবাব গ্রহন যুদ্ধের ফলাফলে অনেক প্রভাব ফেলে। যুদ্ধে ঐ ব্যক্তিই বিজয় অর্জন করে যে যুদ্ধের চাকা নিজের হাতে রাখে। আর যুদ্ধের চাকা ঐ ব্যক্তির হাতেই থাকে যে আশপাশের যুদ্ধ দেখে প্রভাবিত না হয়ে নিজের টার্গেট অনুযায়ি আগে বাড়ে। কোন ‘বিদ্রোহ’ বল প্রয়োগ দ্বারা দমন হয় না। বল প্রয়োগ তো বিদ্রোহকে আর বাড়িয়ে দেয়। বরং তার ব্যাপারে ভয় হলো সে তার আসল টার্গেট থেকে সরে না যায়। ইতিহাস দেখ, কোন আন্দোলনই শক্তির মাধ্যমে দমানো যায়নি বরং দমানো হয়েছে মূল টার্গেট থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে। সুতরাং যুদ্ধের চাকা নিজের হাতে রাখতে হবে। যুদ্ধের চাকা নিজের হাতে থাকলে প্রয়োজন মত যুদ্ধকে যেদিক খুশি সেদিক নিতে পারবে। যখন প্রয়োজন পড়বে যুদ্ধের মাত্রা বাড়িয়ে দিবে আবার প্রয়োজন মত কমিয়ে দিবে। ফলে শত্রুর ইচ্ছা না থাকলেও তোমার পরিকল্পনা অনুযায়ী ময়দানে আসা যাওয়া করতে বাধ্য হবে। আর এভাবেই এক সময় তাদের মনোবল ভেঙ্গে পড়বে। বিজয়ী সেনাপতি শত্রুকে নিজ ইচ্ছা মত যুদ্ধের মইয়দানে টেনে আনে। কিন্তু যে সেনাপতি যুদ্ধের নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে সে যুদ্ধে বিজয়ী হবে তো দূরের কথা বরং শত্রুর হাতের খেলনায় পরিণত হবে। আল্লাহ তাআলা সূরা আনফালে সঠিক টার্গেট নির্ণয়, সময়ের সৎ ব্যবহার এবং মুনাসেব উপকরণ ব্যবহারের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন :

فَاضْرِبُوا فَوْقَ الْأَعْنَاقِ وَاضْرِبُوا مِنْهُمْ كُلَّ بَنَانٍ

তোমরা শত্রুর গর্দানে আঘাত কর এবং তাদের প্রত্যেক জোড়ায় জোড়ায় আঘাত কর। -সুরা আনফাল: ১২

উক্ত আয়াতে প্রথমে সঠিক টার্গেট নির্ণয়ের পর শত্রুর গর্দানে আঘাত করে তার ঘাড়ের রগ কাটার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাতে সময়ও বাঁচে এবং সরঞ্জামও কম খরচ হয়। কিন্তু শত্রু যদি শক্তিশালী হয় আর তার গর্দান পর্যন্ত পৌঁছা সম্ভব না হয়। তাহলে তুমি তার শরীরের এমন এক স্পর্শ কাতর স্থান নির্নয় কর যেখানে মাত্র একটি আঘাতেই সে ধরাশায়ী হয়ে যায়। তিনি বলেন,

وَاضْرِبُوا مِنْهُمْ كُلَّ بَنَانٍ

তোমরা তাদের জোড়ায় জোড়ায় আঘাত কর।-সুরা আনফাল : ১২

আর যদি তোমাদের টার্গেট হাত হয়ে থাকে তাহলে হাতের জোড়ায় আঘাত কর যাতে এক আঘাতেই তা অচল হয়ে পড়ে। আর যদি টার্গেট বাহু হয় তাহলে কাধের জোড়ায় আঘাত কর যাতে এক আঘাতেই তা অচল হয়ে পড়ে। আর এর মাধ্যমে তুমি অল্প কষ্টে এবং অল্প সময়ে সর্বোত্তম ফল লাভ করতে পারবে। সুতরাং যে ব্যক্তি নিজ সময় ও শক্তিকে সঠিক ভাবে কাজে লাগায় সে অল্প সময় এবং অল্প উপকরণেই নিজ টার্গেটে পৌঁছতে পারে। রহমাতুল্লিল আলামীন ﷺ এর সিরাত দেখ, ইসলামকে বিজয়ী করার জন্য তিনি সর্ব প্রথম আরবের সুপার পাওয়ার যাদের হাতে আরবের ধর্মীয়, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক নেতৃত্ব ছিল তাদের টার্গেট করেছেন। এবং অল্প সময় এবং কম উপকরনের মাধ্যমে নিজ টার্গেট সফল করেছেন অর্থাৎ জাযিরাতুল আরবের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় রাজনৈতিক এবং সামরিক শক্তির অধিকারী মক্কার কাফেরদের যুদ্ধের মনবল ভেঙ্গে দিয়েছেন। প্রিয় নবী ﷺ এর পদাঙ্ক অনুসরণ করে মুহসিনুল মিল্লাত মুজাদ্দেদুল জিহাদ শাইখ শহীদ উসামা রহ পৃথিবীর কুফরি শক্তিকে গুড়িয়ে দেওয়ার জন্য কুফরি নেজামের মোড়ল আমরিকাকে প্রথম ও প্রধান টার্গেট বানিয়ে ছিলেন এবং এই টার্গেট পূর্ণ করার জন্য সময় ও সরঞ্জামের সৎ ব্যবহার করেছেন। ফলে তিনি পেন্টাগন আর ওয়াল্ড ট্রেড সেন্টারে আক্রমণ করে, মহান আল্লাহর তাওফীকে কত কম সময় এবং কম সরঞ্জামের মাধ্যমে শুধু আমরিকার নয় বরং পুরা পৃথিবীর ইতিহাসই পাল্টে দিয়েছেন এবং সমগ্র পশ্চিমা বিশ্বের অহংকার মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছেন। শাইখ উসামা রহ. এর মানহাজ অনুসরণ করে শাইখ আইমান আয-জাওয়াহেরী হাফি. এর নেতৃত্বে সারা দুনিয়ার মুজাহিদীন আমরিকাকেই তাদের প্রধান টার্গেটে রেখেছে। আল্লাহর অনুগ্রহে যার ফলে পৃথিবীর ইতিহাসই আজ পাল্টে যাচ্ছে। ভেল্কিবাজ-জাদুকরদের হাত থেকে ক্ষমতার ডুরি ছুটে যাচ্ছে, বর্তমানে অবস্থা এই দাড়িয়েছে যে, তারা এশিয়ার ডুরি ধরতে চাইলে আফ্রিকার ডুরি হাত থেকে ছুটে যাচ্ছে। আফরিকাকে গুরুত্ব দিতে গেলে ইউরোপে মালির মত ছোট ছোট রাষ্ট্র আর্থিক লেনদেনের ক্ষেত্রে আমরিকাকে চোখ রাঙ্গানো শুরু করে। এটাতো সেই আমরিকা যার এক ধমকে পারমানবিক শক্তি সম্পন্ন জেনারেল পর্যন্ত অস্ত্র ফেলে দিত!! কিন্তু আজ সে পেরেশান। কি করবে ঠিক করতে পারছে না। সে কি আফ্রিকা যাবে আল-কায়েদার হাত থেকে আফ্রিকাকে রক্ষা করার জন্য? না ইয়েমেনে ছুটে আসবে তার অনুগত দাসদের হেফাজত করার জন্য। আর আজ আফগানিস্তানে আন্তর্জাতিক জোট শক্তি আধুনিক কালের সবচে নিকৃষ্ট পরাজয়ের সম্মুখিন। অন্যদিকে শুধুমাত্র যুদ্ধের আগুন প্রজ্বলিত করা ব্যতিত শামের জন্য তাদের কোন

পরিকল্পনাই বুঝে আসছে না। আল-জাযায়ের, মারাকেশ, লিবিয়া ও ভারত উপমহাদেশ নিয়ে তারা কিছু ভাবারই সুযোগ পাচ্ছে না। আমার প্রিয় মুজাহিদ ভাইয়েরা ! আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহে এটা ঐ পরিকল্পনারই ফল যা শাইখ শহীদ উসামা রহ. কুফরি শক্তিকে পরাজিত করার জন্য গ্রহন করে ছিলেন। আর শাইখের পর শাইখ আইমান আয-জাওয়াহিরী হাফি. হেকমতের সাথে এই পরিকল্পনাকে শুধু জারিই রাখেননি বরং এই মানহাজকে বিকৃতির হাত থেকেও রক্ষা করেছেন। আলহামদু লিল্লাহ আজ শুধু আমরিকাই নয় বরং পুরা পশ্চিমা বিশ্বই আজ নিষ্প্রাণ হয়ে পড়ছে। তাদের জীব-দর্শন ধ্বংস হতে শুরু করেছে। এখন তো পশ্চিমারাও এই পচা দুর্গন্ধময় জীবন-ব্যবস্থা ছুড়ে ফেলে মুহাম্মদ ﷺ এর জীবন-ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য নিজেদের জীবন পর্যন্ত বিলিয়ে দেওয়া শুরু করেছে। হে মুজাহিদ ভাইয়েরা! শরীয়ত প্রতিষ্ঠার এই জিহাদকে শরীয়তের পথ থেকে সরিয়ে দিবেন না। ভুলে যাবেন না, জিহাদের আসল ও প্রধান টার্গেট হল কুফরী-নেজাম ও তার রক্ষাকারীরা। একটু বুঝার ও জানার চেষ্টা করুন যে, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শাসন-ব্যবস্থা কিভাবে চলছে ? তার মুল ভিত্তি কোনটি? এর প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ সংগঠন কোনটি ? কারা এই শাসন-ব্যবস্থা পরিচালনা করছে ? এবং কার মূল্য এই শাসন-ব্যবস্থায় টিস্যু পেপারের চেয়ে সামান্যও বেশী নয়? এটা ভালভাবে জেনে তাদের জোড়ায় জোড়ায় এবং, গিরায় গিরায় আঘাত করুন।

এমন আঘাত করুন যেন গোপন মোর্চা থেকেও চিৎকারের  আওয়াজ শুনা যায়। বাজার, স্কুল কলেজ এবং সাধারণ মানুষের সমাবেশে আক্রমণ করে নিষ্পাপ রক্ত ঝরিয়ে শহীদানদের এই  পথকে কলুষিত করবেন না। জেনে রাখবেন, জিহাদ একটা এবাদত আর এবাদত যদি  রহমাতুল্লিল আলামীন ﷺ এর দেখানো পথ অনুযায়ী না হয় তাহলে দুনিয়াও বরবাদ, আখেরাতও বরবাদ। এক মাত্র আল্লাহ  তাআলার জন্য রাসূলে কারীম ﷺ এর জীবনি পড়ুন। শুরু থেকে  শেষ পর্যন্ত পড়ুন। শুধু কোন একটি ঘটনা শুনে তাঁর পুরা জীবনি মনে করে বসবেন না। এ বিষয়টা ভালভাবে বুঝার চেষ্টা করুন যে, রাসুল ﷺ কোন স্থানে কোন পন্থা অবলম্বন করেছেন। সম্মিলিত শক্তিকে কিভাবে প্রতিহত করা হয় এবং কখন ময়দান লাশে পূর্ণ করার মাধ্যমে উপকৃত হওয়া যায় ? এবং কখন এহসান ও  ক্ষমার মাধ্যমে চূড়ান্ত ফল অর্জন করা যায় ? আপনারা যদি  বিষয়টি আরও ভালভাবে এবং সহজভাবে বুঝতে চান তাহলে আপনাদের মার্কাজসমূহে ইমাম মুহাম্মদ রহ. এর বিখ্যাত কিতাব ‘আস-সিয়ারুল কাবীর’ পড়া শুরু করে দিন। বিশেষ করে এর ‘আমান’ অধ্যায়টা। কেননা এই অধ্যায়টি আপনাকে জিহাদের  খুলাছা এবং জিহাদের মাধ্যমে শরীয়তের মাকছাদ বুঝিয়ে দেবে। অনুরুপভাবে শাইখ আইমান আয-জাওয়াহিরী হাফি. এর কিতাব ‘ফুরসান তাহতা রায়াতিন নাবী ﷺ’ পড়া বাধ্যতামূলক করে দিন। এতে শাইখ তার জীবনের জিহাদী অভিজ্ঞতার সার সংক্ষেপ একত্র করেছেন যা দুনিয়ার সকল মুজাহিদের জন্যই অনেক বড়  পাথেয় সরূপ। আপনারা জিহাদের মাধ্যমে আপনাদের কাজ তথা  শরীয়ত প্রতিষ্ঠার এবং আল্লাহর কালিমাকে বুলন্দ করার দাওয়াতকে সুসজ্জিত করে তুলুন। জিহাদের মাধ্যমে আপনাদের  টার্গেট বাস্তবায়ন করুন। জিহাদকে বিকৃত করবেন না। আপনার মুখাতাব যেন আপনাদের এই মহান জিহাদের মাঝে এবং  দুনিয়ার প্রচলিত রাষ্ট্রে রাষ্ট্রে যুদ্ধের মাঝে পার্থক্য করতে পারে। দুইটাকে এক মনে করে না বসে। এমন কি আপনার আনসার যিনি সকল সমস্যায় আপনার পাশে থাকেন সে যেন এ প্রশ্ন  করতে বাধ্য না হয় যে, সাধারণ মানুষ এবং স্কুল কলেজের ছাত্রদের রক্ত প্রবাহিত করে আপনারা কোন শরীয়ত প্রতিষ্টা করতে  চাচ্ছেন?? আমার প্রিয় মুজাহিদ ভাই! এই জিহাদী আন্দোলন আমাদের  উত্তরাধীকারী সম্পত্তি নয় (যে, যেভাবে খুশি সেভাবে ব্যবহার করবো) বরং এটা আমাদের গর্দানের উপর হাজারও শহীদের  রক্তের আমানাত যাদেরকে শত্রুর বোমা ও মিসাইল ছিন্নভিন্ন করে দিয়েছে। এবং এটা আমাদের উপর ঐ সকল বন্দী মুজাহিদ ভাইদের আর্তনাদের ঋণ যা তাদের মুখ থেকে টর্চার সেলের গহীন  থেকে কষ্ট ও নির্যাতনের কারণে বের হয়েছে যে আর্তনাদের আওয়াজ আল্লাহ ব্যতীত আর কার কানে পৌঁছে না এবং এটা ঐ সকল বিধবা বোনদের ‘আহ’ শব্দের ঋণ যা পৃথিবীতে শরীয়ত  প্রতিষ্ঠার জন্য তাদের অন্তর থেকে বের হয়ে আবার সিনার মধ্যেই  দাফন হয়ে যায়। মনে রাখবেন এই জিহাদী আন্দোলন আমাদের  উপর ঐ সকল এতিম-অবুঝ শিশুদের নিষ্পাপের বোঝা যাদের  পিতারা এই আশা নিয়ে হাসতে হাসতে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে  নিয়েছে যে, তাদের মুজাহিদ সাথীরা এই জিহাদের মধ্যে কোন ধরণের ক্ষতি পৌঁছতে দিবে না এবং এর সাথে গাদ্দারি করবে না। আল্লাহর ওয়াস্তে একটু বুঝার চেষ্টা করুন।

আপনারা সোয়াত থেকে ওয়াজিরিস্তান পর্যন্ত মুহাজির মুজাহিদদের পরিত্যাক্ত এলাকাগুলো এবং তাদের ধ্বংসপ্রাপ্ত ঘর - বাড়ীগুলোর দিকে একটু লক্ষ করুন এবং শরীয়তের মোহাব্বতে আপনাদের সাথে হিজরত করা হাজার নারী - শিশুর দিকে একবার তাকান। আপনারা এই জিহাদকে নিজের হাতে ধ্বংস করবেন না , আল্লাহর ওয়াস্তে শহীদানের রক্তের সাথে গাদ্দারি করবেন না। দুশমন তো চায় যে , আপনাদের এমন টার্গেটের দিকে ফিরিয়ে দিবে যাতে জনসাধারণ আপনাদের বিপক্ষে চলে যায় এবং আপনাদের আনসারিগন এবং মুহিব্বীনগন আপনাদের অপছন্দ করা শুরু করে। হাকিমুল উম্মত শাইখ আইমান আয - জাওয়াহিরী হাফি. তার কিতাব ‘ফুরসান তাহতা রায়াতিন নাবী ﷺ বইয়ে বিষয়টিই উল্লেখ্য করেছেন ‘জন সাধারণের সমর্থন ও সাহায্য - সহযোগিতা ছাড়া গেরিলা যোদ্ধা ডাকাতে পরিণত হয় এবং সে বেশী দিন টিকতে পারে না।’ অর্থাৎ গেরিলা যোদ্ধা হতে হলে জন সাধারণকে পাশে রাখতে হবে অন্যথায় তার অবস্থা ঐ ডাকাতের মত হবে যে জন সাধারণ থেকে দূরে লুকিয়ে থাকতে বাধ্য হয় এবং এমন গেরিলা যোদ্ধা বেশী দিন টিকে থাকতে পারে না। কেননা গেরিলা যোদ্ধা সর্ব প্রথম এক জন দায়ী, সে মানুষের অনুভূতিকে জাগ্রত করবে এবং নিজ টার্গেটের প্রতি জনসমর্থন তৈরী করে লোক একত্র করবে। এবং জনসাধারণের অন্তরে বিদ্রোহের বীজ বপন করবে। আল্লাহ তাআলা এক দিকে রাসূল ﷺ কে এই আদেশ দিয়েছেন:

فَقٰتِلْ فِى سَبِيلِ اللَّهِ لَا تُكَلَّفُ إِلَّا نَفْسَكَ ۚ

“আপনি একাই আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করেন অন্য কারো দায়িত্ব আপনার নেই।”- সুরা নিসা: ৮৪

অর্থাৎ কেউ যুদ্ধের জন্য বের হোক বা না হোক, আপনাকে একাই যুদ্ধ করতে হবে। কিন্তু জিহাদকে জারি রাখার জন্য মুমিনদের জিহাদের দাওয়াত দিন এবং তাদের জিহাদের প্রতি উদ্বুদ্ধ করুন। আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَحَرِّضِ الْمُؤْمِنِينَ

মুমিনদেরকে জিহাদের প্রতি উদ্বুদ্ধ করুন। সুরা নিসা: ৮৪

সুতরাং ‘তাহরীদ’ তথা উদ্বুদ্ধ করা ব্যতীত জিহাদ হবে না। একারণেই আপনি যত বড় শক্তির অধিকারীই হোন না কেন, আপনার সালতানাত যত শক্তিশালীই হোক না কেন এবং আপনার কাছে যত বেশী যুদ্ধাস্ত্র থাক না কেন আপনি যদি আপনার মুখাতব তথা সাধারণ মুসলমান থেকে আপনার সম্পর্ক ছিন্ন করেন তাহলে আপনি সফল হতে পারবেন না। সুতরাং যুদ্ধ জারী রাখার জন্য জন সাধারণের পক্ষ থেকে সাহায্য সহযোগিতার কোন বিকল্প নেই। আর একারণেই গেরিলা যোদ্ধাদের মোকাবিলায় গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সর্ব প্রথম যে কাজটি করে তাহল ‘ গেরিলাদের মাধ্যমে এমন কোন কাজ করানো, যার উপর ভিত্তি করে সাধারণ জনগণকে তাদের থেকে বিচ্ছিন্ন করা যায়। অথবা তারা নিজেরাই এমন কোন কাজ করে যার অপবাদ গেরিলা মুজাহিদদের উপর দেওয়া যায়। আর জনসাধারণ এই আন্দোলনের প্রতি খারাপ ধারণা করতে শুরু করে। আমার প্রিয় ভাই! বিষয়টি বুঝার চেষ্টা করুন, মুজাহিদ তো শুধু একটি ব্যাথা, একটি চিন্তা এবং একটি ফিকির নিয়ে ঘর থেকে বের হয়েছে। আর তাহল নিজের জান কুরবানি করে মহান রবের সন্তুষ্টি অর্জন করবে। নিজের সম্মানকে বিলিয়ে দিয়ে নবী কারীম ﷺ এর দীনের সম্মান রক্ষা করবে। নিজেদের আরাম আয়েশকে বিলিয়ে দিয়ে উম্মাহর আরাম আয়েশের ব্যবস্থা করবে।

সুতরাং যে ব্যক্তি ‘আল্লাহর কালিমা' উঁচু করার জন্য যুদ্ধ করে সেই আল্লাহর রাস্তার মুজাহিদ। হ্যা শত্রুরা আপনাদের প্রতি যে জুলুম করেছে আপনাদের স্ত্রী-সন্তান আর মা-বোনদের উপর যে নির্যাতন চালিয়েছে এবং আপনারা যে বিপদ ও মুসিবতের সম্মুখিন হয়েছেন নিঃসন্দেহে তা যদি পাহাড়ের উপরও রাখা হত তাহলে পাহাড় ধসে পড়ত। তা সত্বেও নফসের খাহেশাত অনুযয়ী অন্তরের প্রতিশোধের আগুন নিভানোর নাম জিহাদ নয়। বরং উতলে উঠা জযবাকে শরীয়তের রশি দিয়ে বাঁধার নামই হচ্ছে জিহাদ। আপনারা শত্রুর নীচুতা এবং তার হীন ও নিকৃষ্ট মন মানসিকতার দিকে লক্ষ করবেন না যে, তারা আমাদের নিষ্পাপ শিশুদের হত্যা করে আমাদের ঘরে আক্রমণ করে আমাদের স্ত্রীদের গ্রেফতার করে এবং আমাদের ঐ সকল নিকট আত্মীয়দের জেলে ভরে রাখে জিহাদের ক্ষেত্রে আমাদের সাথে যাদের কোন সম্পর্কই ছিল না। এবং আমাদের সাথে যাদের সামান্য সম্পর্ক ছিল এমন লোকদেরও গ্রেফতার করে। কিন্তু আপনারা এরকম হতে পারবেন না। জিহাদ ও যুদ্ধের মাঝে এবং দুনিয়ার ধনসম্পদের জন্য নিজের জীবন ধ্বংসকারী এবং আল্লাহর শরীয়ত বাস্তবায়নের জন্য জীবন উতসর্গকারী মুজাহিদের মাঝে এটাই তো পার্থক্য। ইসলামের বিরুদ্ধে দেশ ও মাটির জন্য লড়াইকারী সৈন্যবাহীনি সর্বদাই৷ অপরাধ ও দুষ্কর্মে লিপ্ত হয় কিন্তু যে ব্যক্তি দ্বীন প্রতিষ্ঠা করতে চায় তার আখলাক যুদ্ধ চলাবস্থাতেও কোন পরিবর্তন হয় না। হে আমার মুজাহিদ সাথীরা! শত্রুরা জিহাদী দাওয়াতের প্রচার প্রসার থামাতে ব্যর্থ হয়ছে কিন্তু তারা থেমে নেই। তারা যে কোন উপায়ে জিহাদকে বিকৃত করতে চাচ্ছে। এর জন্য তারা বিভিন্ন দেশে মুজাহিদদের নামে এমন কিছু ঘটনা ঘটাচ্ছে যার কারণে মানুষ জিহাদ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এমন ঘটনা না শরীয়ত সেটাকে সমর্থন করে, না সুস্থ বিবেকবান কেউ সেটাকে মেনে নিতে পারে। সুতরাং আমাদের সতর্ক হতে হবে এবং জিহাদ ও তার ‘ছামারাকে’ রক্ষা করার ফিকির করতে হবে। জিহাদ তো জারী রাখতে হবে এবং সর্বাবস্থায় জারী রাখতে হবে। কিন্তু সেটা হতে হবে একেবারে স্পষ্ট পদ্ধতিতে যতটা স্পষ্ট ভাবে প্রিয় নবী ﷺ রেখে গেছেন। যার উপর সাহাবায়ে কেরাম রাযি. চলেছেন। তাঁরা কাফেরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন, মুরতাদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন এবং শরীয়ত অস্বীকার কারীদের বিরুদ্ধেও যুদ্ধ করেছেন। এক্ষেত্রে তারা অলস ও দুর্বল হয়ে পড়েননি এবং কোন ধরণের নতি স্বীকারও করেন নি। কিন্তু তারা স্পষ্ট ও মজবুত শরয়ী দলীল ব্যতীত কোন ধরনের তাবীল ও ভুল ব্যাখ্যা করে কারো জান-মাল হালাল করেননি। সাহাবা কেরাম রাযি. দের পদাঙ্কন অনুসরণ করে মুজাদ্দেদুল জিহাদ মুহসিনুল মিল্লাত শাইখ শহীদ ওসামা বিন লাদেন রহ. উম্মতে ইসলামিয়ার সামনে জিহাদী দাওয়াতকে স্পষ্ট ও উজ্জ্বল করে পেশ করেছেন এবং মুজাহিদীনের জিহাদের স্পষ্ট টার্গেট দিয়েছেন যার ফলে আল্লাহ তাআলা সারা দুনিয়াতে এই দাওয়াতকে এমন ভাবে কবুল করেছেন যে, আজ ইসলামী বিশ্বে জিহাদের আওয়াজ শুধু উঁচুই হচ্ছে। শাইখ উসামা রহ. এর এই দাওয়াত আফগানিস্তানের পাহাড় থেকে বের হয়ে ইয়ামান, শাম, ইরাক, সোমালিয়া, আল-জাযায়ের এবং মারাকিশ (মাগরিবুল ইসলাম) পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। হে ভাই! যদি এই জিহাদকে মাকবুল বানাতে চাও, জিহাদের আওয়াজকে যদি ছড়িয়ে দিতে চাও এবং শত্রæকে যদি ব্যর্থ ওপরাজিত করতে চাও তাহলে জিহাদের ঐ দাওয়াত ও মানহাজকে গ্রহণ কর যার উপর চলে আমদের পূর্ববর্তীগণ সফল হয়েছেন।

আল্লাহ তাআলা ইমারতে ইসলাম আফগানিস্তানকে সম্মিলিত কুফরী শক্তির বিরুদ্ধে বিজয় দান করেছেন। কিন্তু তারা না স্কুল কলেজ ধ্বংস করেছেন না বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া কোন সাধারণ মুসলমানের রক্তে নিজেদের হাত রঞ্জিত করেছেন। বরং নিজেদের দৃষ্টিকে সর্বদা স্পষ্ট টার্গেটের দিকে নিবদ্ধ রেখেছেন। এবং ঐসকল লোকদেরকে তাদের চুরান্ত টার্গেট বানিয়েছেন যাদেরকে কুরআন

জোড়ায় জোড়ায় এবং গিরায় গিরায় আঘাত করতে বলেছে। তাদের গলার রগ কেটে দিয়েছেন এবং আলহামদুলিল্লাহ এমন ভাবে আঘাত করেছেন যে, আফগানিস্তান ছড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছে। আল্লাহর শরীয়তের উপর চললেই আমাদের জিহাদ সফল হবে। আমরা শরীয়তের যে আওয়াজ তুলেছি সর্বপ্রথম ঐ শরীয়তকে আমাদের নিজেদের উপর বাস্তবায়ন করতে হবে। আমাদের মেশিনগান, কামান ও ফিদায়ী আক্রমণকে শরীয়তের তা’বে বানাতে হবে। কিন্তু আল্লাহ তাআলা যদি আমাদের কথা ও কাজের মধ্যে মিল না পান যেমন আমরা ইসলামাবাদ এবং দিল্লীতে ইসলাম প্রতিষ্ঠার শ্লোগান দেই অন্যদিকে নিজেদেরকেই ভুলে যাই। তাহলে এগুলো তো খুম থেকে কথার আকৃতিতে বের হওয়া কিছু শব্দ মাত্র। আমাদের হাত যদি সুম লমানদের রক্তে রঞ্জিত হয় তাহলে আল্লাহর সন্তুষ্টি তো দূরের কথা বরং তাঁর গজব আমাদের উপর পতিত হবে। হে আল্লাহ !আপনি আমাদেরকে আপনার সন্তুষ্টি অনুযায়ী জিহাদ করার তাওফিক দান করুন এবং আমাদের এই জিহাদকে সফল করুন এবং ব্যর্থ হওয়া থেকে রক্ষা করুন। আমিন ইয়া রাব্বাল আলামীন।

আল বালাগ

ম্যাগাজিন ইস্যু-১