JustPaste.it

 

মুজাহিদীনের উদ্দেশ্যে আমীরুল মু’মিনীনের উপদেশমালা-

নিয়ত ও তার গুরুত্ব

মূল

আমীরুল মুমিনীন শাইখুল হাদীস

মৌলবী হিবাতুল্লাহ আখুন্দযাদাহ হাফিযাহুল্লাহ

অনুবাদ

মুহাম্মাদ সালাহুদ্দীন

 

 

بسم الله الرحمن الرحيم.

اَلْحَمْدُ لِلّٰه رَبِّ الْعَالَمِيْنَ وَ الَّذِى بَعَثَ رَسُوْلَه بِالْخَلْقِ الْعَظِيْمِ وَ جَعَلَه قَائِداً لِلْمُجَاهِدِيْنَ وَ الْصَلَوٰةُ وَ الْسَلَمُ عَلى مَنْ اَتْمَمَ مَكَارِمَ الْاَخْلَاقِ وَ اَمَرَ بِهَا اِلٰى الحُكَّامِ وَ الْمُجَاهِدِيْنَ وَ عَلٰى آلِه‌ وَ اَصْحَابِه الذِيْنَ هُمْ قُدْوَةُ الْاُمَّةِ فِى اِعْلَاءِ كَلِمَةِ اللّٰه اِلٰى يَوْمِ الدِيْنِ.

আপনারা সবাই জানেন, আফগানিস্তানে দ্বীনের শত্রুদের বিরুদ্ধে মুজাহিদগনের যুদ্ধ শেষ পর্যায়ে৷ এমন পরিস্থিতে মুজাহিদদেরকে কুরআন সুন্নাহর দিব্যজ্ঞান দিয়ে জরুরি কিছু কথা বলতে চাই৷ আল্লাহ তা’আলা আমাদের সকলকে কথাগুলোর উপর আমল করার তওফীক দান করুন৷

শুধুমাত্র জিহাদ নয় বরং সকল ইবাদাতের ক্ষেত্রে নিয়তের তাৎপর্য অপরিসীম৷ আল্লাহ তা'আলা বলেন:-

وَ مَآ اُمِرُوْآ اِلَّا لِيَعْبُدُوْا اللّٰهَ مُخْلِصِيْنَ لَهُ الدِّيْنَ حُنَفَآءَ وَ يَقِيْمُوْا الصَّلَوٰة وَ يُؤْتُوْا الزَّكَوٰة وَ ذٰلِكَ دِيْنُ الْقَيِّمَةِ

তাদের প্রতি পূর্ববর্তী কিতাবসমূহে কেবল এই নির্দেশই হয়েছিল যে, আল্লাহ তা'আলার ইবাদাত এরূপে করে, ইবাদতকে যেন তারই জন্য নির্দিষ্ট রাখে, তাদেরকে এছাড়া কোন নির্দেশ করা হয়নি যে, তারা খাঁটি মনে একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর এবাদত করবে, নামায কায়েম করবে এবং যাকাত দেবে। এটাই সঠিক ধর্ম। [সূরা বাইয়্যিনাহ ৯৮:৫]

তাফসিরে মুনিরে ইখলাসের সংজ্ঞা এভাবে দেওয়া আছে:-

الاخلاص ان يأتي بالفعل خالصا لداعية واحدة و لايكون لغيرها من الدواعى تأثير فى الدعاء الى ذالك الفعل-و قوله: مخلصين تنبيه على ما يجب من تحصيل الاخلاص من ابتداء الفعل الى اتنهائه- و المخلصين هو الذى يأتى بالحسن لحسنه والواجب لوجوبه-فيأتى بالفعل مخلصا لربه-لايريد رياء و لاسمعة و لاغرضا آخر-بل قالوا :لايجعل طلب الجنة مقصودا و لاالنجاة عن النار مطلوبا و ان كان لابد من ذالك.

ইখলাস বলতে বুঝানো হচ্ছে - ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য ছাড়া একটা উদ্দেশ্যে আমল করা৷ مخلصين শব্দের আভিধানিক অর্থ:- কোনো কাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আন্তরিকতার সাথে সম্পন্ন করা৷ مخلص (শব্দের পারিভাষিক অর্থ) নেকির কাজকে নেকি মনে করে করা৷ এবং কোনো ওয়াজিবকে ওয়াজিব মনে করে করা৷ আর সকল কাজ কেবল আল্লাহকে রাজি করার জন্য করা৷ তার মধ্যে কোনো কৃত্রিমতা অথবা অন্য কোনো উদ্দেশ্য না রাখা৷

কিছু কিছু উলামায়ে কেরাম বলেন, নেক কাজের উদ্দেশ্যটা কেবল জান্নাত লাভ বা জাহান্নাম থেকে মুক্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে হবে না (যদিও এই দুটি ছাড়া উপায় নেই)। বরং নেক কাজের উদ্দেশ্য হবে কেবল আল্লাহকে রাজি করা৷

শরহে মুহাজ্জাবে লেখা আছে:-

و عن ذى النون رحمه الله قال ثلاثة من علامات الاخلاص,الاستواء المدح و المدح و الذم من العامة و نسيان روية الاعمال فى الاعمال و الاقتضاء ثواب العمل فى آخرة

و عن ابى عثمان رحمه الله قال الاخلاص نسيان روية الخلق بدوام النظر الى الخالق-

وعن حذيفة المرعشى رحمه الله قال الاخلاص ان‌تستوى افعال العبد فى الظاهر و الباطن

হযরত জুন্নুন মিশরী বলেন, মুখলিস ব্যক্তির নিদর্শন তিনটি৷

প্রথম নিদর্শন:- তার সামনে প্রশংসা করা এবং তিরস্কার করা উভয়টি সমান৷

দ্বিতীয় নিদর্শন:- নিজের আমলকে মানুষের সামনে প্রকাশ করার জন্য তার আমলের কথা কাউকে বলে না৷

তৃতীয় নিদর্শন:- আখিরাতের প্রতিদানের পরিবর্তে আল্লাহকে রাজি-খুশির জন্য আমল করে৷

আবু উসমান থেকে বর্ণিত, সর্বদা আল্লাহকে স্বরণ করার মাধ্যমে কপটতা ত্যাগ করা যায়, তাকে ইখলাস বলে৷

হুজাইফা মারওয়াসি বলেন, ইখলাস হল যখন তোমরা প্রকাশ্য এবং গোপন উভয় আমলে বরাবর হবে”৷ অপর এক স্থানে আল্লাহ বলেন:-

قُلْ أَمَرَ رَبِّي بِالْقِسْطِ وَأَقِيمُواْ وُجُوهَكُمْ عِندَ كُلِّ مَسْجِدٍ وَادْعُوهُ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ كَمَا بَدَأَكُمْ تَعُودُونَ

 

আপনি বলে দিনঃ আমার প্রতিপালক সুবিচারের নির্দেশ দিয়েছেন এবং তোমরা প্রত্যেক সেজদার সময় স্বীয় মুখমন্ডল সোজা রাখ এবং তাঁকে খাঁটি আনুগত্যশীল হয়ে ডাক। তোমাদেরকে প্রথমে যেমন সৃষ্টি করেছেন, পুনর্বারও সৃজিত হবে। [সূরা আরাফ ৭:২৯]

 

হযরত ওমর (রাজিয়াল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে বর্ণিত - আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বলতে শুনেছি:-

انما الاعمال بالنيات و لكل امري ما نوي فمن كانت هجرته الى الله،و الى رسوله و من كانت هجزته لدنيا يصيبها او إمرأة يتزوجها فهجرته ما هاجر اليه.

সকল কর্মই নিয়তের উপর নির্ভরশীল৷ আর প্রত্যেক মানুষের জন্য তাই রয়েছে যা সে নিয়ত করে৷ অতএব যার হিযরত আল্লাহ ও তার রাসূলের উদ্দেশ্যে হবে, তার হিযরত আল্লাহ ও তার রাসূলের উদ্দেশ্যেই পরিগনিত হবে৷ আর যার হিযরত দুনিয়া লাভের উদ্দেশ্যে কিংবা কোনো নারীকে বিবাহ করার উদ্দেশ্য হবে, তার হিযরত সে উদ্দেশ্যেই গণ্য হবে যে উদ্দেশ্যে সে হিজরত করেছে”৷ (বুখারী, মুসলিম)

আমরা বুঝতে পারলাম নিয়ত বিশুদ্ধ হওয়ার দ্বারা আমল উপকারি হয়, আর নিয়তকে কলুষিত করার দ্বারা আমল বরবাদ হয়৷ সুতরাং আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে যেন আমাদের প্রকাশ্য আমল ভালো এবং অভ্যন্তরীন গোপনীয় আমল যেন খারাপ না হয়৷ মনে রাখতে হবে আল্লাহ তা’আলা অন্তরের খবরও জানেন৷ হাদিসে এসেছে:-

حدثنا ابو موسى الاشعرى ان رجلا اعرابيااتى النبي صلى الله عليه وسلم فقال يا رسول الله!الرجل يقاتل للمغنم و الرجل يقاتل ليذكر و الرجل يقاتل ليرى مكانه فمن فى سبيل الله فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم من قاتل لتكون كلمة الله اعلى فهو فى سبيل الله.

আবু মুসা আশআরী রাজিয়াল্লাহু তাআলা আনহু বর্ণনা করেন, একজন গ্রাম্যলোক নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! এক ব্যক্তি গণীমতের মালের উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করে, আরেক ব্যক্তি খ্যাতি বা সুনাম অর্জনের জন্য যুদ্ধ করে অপর ব্যক্তি উচ্চ মর্যাদা লাভের জন্য লড়াই করে৷ এদের মধ্যে কে আল্লাহ তা’আলার পথে জিহাদ করছে? রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উত্তরে বলেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর বাণীকে সমুন্নত করার জন্য লড়াই করে সে-ই আল্লাহর পথে জিহাদ করে”(বুখারী, মুসলিম)

উলামায়ে কেরাম বলেন, কোনো ব্যক্তি আল্লাহর দ্বীনকে সমুন্নত করা ছাড়া অন্য কোনো নিয়তে যুদ্ধ করলে, তার কাজকে জিহাদ বলা হবে না৷ বরং তার কাজকে সাধারণ যুদ্ধ বলে৷ এবং সে আল্লাহর ওয়াদাকৃত পুরস্কার থেকে বঞ্চিত হবে৷ আল্লাহ বলেন:

يَآ اَيُّهَا الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا هَلْ اَدُلُّكُمْ عَلٰى تِجَارَةٍ تُنْجِيْكُمْ مِنْ عَذَابٍ اَلِيْمٍ-تُؤْمِنُوْنَ بِاللّٰهِ وَ رَسُوْلِه وَ تُجَاهِدُوْنَ فِى سَبِيْلِ اللّٰهِ بِاَمْوَالِكُمْ وَ اَنْفُسِكُمْ ذٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ اِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُوْنَ-يَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوْبَكُمُ وَ  يُدْخِلْكُمْ جَنّٰتٍ تَجْرِىْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهَارُ وَ مَسٰكِنَ طَيِّبَةً فِى جَنّٰتِ عَدْنٍ ذٰلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيْمُ

“হে মুমিনগণ! আমি কি তোমাদেরকে এমন ব্যবসার কথা বলে দিব, যা তোমাদেরকে এক যন্ত্রনাময় শাস্তি হতে রক্ষা করবে? (তা এই যে) তোমরা আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি ইমান আনয়ন কর এবং নিজেদের ধন-সম্পদ ও প্রাণ দ্বারা আল্লাহর তা’আলার রাস্তায় জিহাদ কর, এটা তোমাদের জন্য অতি উত্তম, যদি তোমরা কিছু জ্ঞান রাখ৷ আল্লাহ তোমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করবেন এবং তোমাদেরকে এমন উদ্যানসমূহে দাখিল করবেন, যার নিম্নদেশ দিয়ে নহরসমূহ বইতে থাকবে আর উত্তম গৃহসমূহে (দাখিল করবেন) যা সর্বদা অবস্থানের উদ্যানসমূহে হবে, এটা বিরাট সফলতা”৷ (সূরা আস-সফ - ১০-১২)

উপরে উল্লেখিত আয়াতের পুরস্কারসমূহ আল্লাহ নির্ধারণ করে রেখেছেন যারা একনিষ্ঠভাবে তার রাস্তায় যুদ্ধ করবে৷ এবং রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, মুজাহিদ ওই ব্যক্তিকে বলে যে শুধুমাত্র আল্লাহর দ্বীনকে সমুন্নত রাখার জন্য লড়াই করে৷

ফাতহুল বারীর মধ্যে আবু মূসা আশআরির বর্ণিত হাদিসের ব্যাখ্যায় ইবনে হাজার আসকালানী বলেন, এই হাদিসে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সাহিত্যিকের পরিচয় দিয়েছেন৷ কারণ যদি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বেদুইনের প্রশ্নের উত্তরে বলতেন, তুমি যেগুলো বলেছ সেগুলো আল্লাহর জন্য যুদ্ধ নয়৷ তাহলে এগুলোর বাহিরে অন্য কিছু হওয়ার সম্ভাবনা থাকত৷ কিন্তু বাস্তবতা এই রকম নয়৷ এই কারণে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নির্দিষ্ট না করে ব্যাপকতার সাথে বলেন, আল্লাহর কালিমাকে সমুন্নত করার উদ্দেশ্যে লড়াই করাকে জিহাদ বলে৷ এর দ্বারা একথা বুঝা যায় যে এই নিয়ত ছাড়া অন্য কোনো নিয়তে যুদ্ধ করলে, সেটাকে জিহাদ বলে না৷

ইবনে হাজার আসকালানী আরো বলেন, আল্লাহকে রাজি করে আল্লাহর থেকেই প্রতিদানের আশা রাখা এবং শত্রুকে দুর্বল করা এগুলোও আল্লাহর কালিমাকে সমুন্নত করার উদ্দেশ্যে হয়েছে বলে বিবেচিত হবে৷

وما علينا الا البلاغ المبين.

*************