আমেরিকার জনগণের প্রতি বার্তা
রামাদান, ১৪২৩ হিজরি
নভেম্বর, ২০০২ ইংরেজি
শায়খ উসামা বিন লাদেন (রহিমাহুল্লাহ)
_____________________________________________________________________
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمنِ الرَّحِيم
أُذِنَ لِلَّذِينَ يُقَاتَلُونَ بِأَنَّهُمْ ظُلِمُوا ۚ وَإِنَّ اللَّهَ عَلَىٰ نَصْرِهِمْ لَقَدِيرٌ ﴿٣٩﴾
অর্থঃ "[কাফিরদের বিরুদ্ধে] যুদ্ধের অনুমতি দেয়া হলো তাদেরকে [মুমিনদেরকে]; যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হচ্ছে; কেননা তাদের প্রতি জুলুম করা হয়েছে। আল্লাহ নিশ্চয়ই তাদেরকে (মুমিনদেরকে) সাহায্য করতে সক্ষম। (আল-কুরআন ২২:৩৯)
الَّذِينَ آمَنُوا يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ۖ وَالَّذِينَ كَفَرُوا يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ الطَّاغُوتِ فَقَاتِلُوا أَوْلِيَاءَ الشَّيْطَانِ ۖ إِنَّ كَيْدَ الشَّيْطَانِ كَانَ ضَعِيفًا ﴿٧٦﴾
অর্থঃ "যারা ঈমান এনেছে তারা আল্লাহর রাস্তায় যুদ্ধ করে, আর যারা কুফরি করেছে তারা যুদ্ধ করে তাগুতের পথে। সুতরাং তোমরা শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো। নিশ্চয় শয়তানের চক্রান্ত দুর্বল"। (আল-কুরআন ৪:৭৬)
কিছু আমেরিকান লেখক "আমরা (আল-কায়েদা) কেন যুদ্ধ করছি" শিরোনামে বেশ কিছু আর্টিকেল প্রকাশ করেছে। সেগুলোর জবাবে বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রতিক্রিয়াও জানানো হয়েছে। এগুলোর মধ্যে কিছু কিছু লেখায় প্রকৃত সত্য উঠে এসেছে। এগুলো ইসলামী শরীয়াহর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে লেখা। আবার কিছু লেখা আছে যেগুলো এমন সত্যনিষ্ঠ নয়। এই বার্তায় আমরা আমাদের কাজগুলোর ব্যাখ্যা এবং আমেরিকানদের প্রতি সতর্কসঙ্কেত হিসেবে বাস্তবতাগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরতে চাই। এর বিনিময়ে আমরা আল্লাহ তাআলার কাছে উত্তম প্রতিদানের আশা করি। নিশ্চয়ই সাহায্য এবং বিজয় একমাত্র তাঁর কাছ থেকে।
আমেরিকানদের উদ্দেশ্যে আমাদের জবাব তুলে ধরার জন্য আমরা মৌলিক দুইটি প্রশ্নের উত্তর তুলে ধরছি:
প্রথম মৌলিক প্রশ্ন: কেন আমরা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছি? কেন তোমাদের সঙ্গে আমাদের দ্বন্দ্ব?
দ্বিতীয় মৌলিক প্রশ্ন: তোমাদের প্রতি আমাদের আহ্বান কী এবং তোমাদের কাছে আমরা কী চাই?!
প্রথম প্রশ্নের জবাব খুবই সহজ। আমরা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করছি -
(১) কারণ তোমরা আমাদের উপর হামলা করেছো। বারবার আমাদের উপর হামলা করে যাচ্ছ।
(ক) তোমরা ফিলিস্তিনে আমাদের উপর হামলা করেছো।
(i) ফিলিস্তিন ৮০ বছরের অধিককাল যাবত সামরিক আগ্রাসনের শিকার। ইংরেজরা তোমাদের সাহায্য ও সমর্থন নিয়ে, ইহুদীদের কাছে ফিলিস্তিন বুঝিয়ে দিয়েছিল। ৫০ বছরের অধিককাল যাবত ইহুদীরা ফিলিস্তিন জবরদখল করে রেখেছে। এই দীর্ঘ সময় তারা তাদের অন্যায়, অনাচার, হত্যা, উচ্ছেদ, রক্তপাতসহ সব রকম অনৈতিকতা জারি রেখেছে।
ইসরাইল প্রতিষ্ঠা এবং এই রাষ্ট্র টিকে থাকাটাই সবচেয়ে জঘন্যতম অপরাধগুলোর একটি। তোমরা ইহুদি অপরাধীদের লিডার। ইজরায়েলের প্রতি মার্কিন সমর্থনের মাত্রা ব্যাখ্যা করে বুঝানোর কোন প্রয়োজন দেখছি না। নিশ্চয়ই ইসরাইল প্রতিষ্ঠা একটি অপরাধ। এই অপরাধ দূর করতে হবে। এই অপরাধে যারা অংশগ্রহণ করেছে এবং নিজেদের হাত অপবিত্র করেছে তাদেরকে অবশ্যই এর চড়া মূল্য দিতে হবে।
(ii) আমরা একই সাথে হাসি এবং কাঁদি যখন দেখি - তোমরা বরাবরের মতোই নিজেদের সুসজ্জিত মিথ্যাচার চালিয়ে যাচ্ছ। তোমরা বল যে, ফিলিস্তিনে ইহুদিদের ঐতিহাসিক অধিকার রয়েছে। ইহুদিদের দাবি - তাওরাতে তাদেরকে এই প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। কেউ এই কথিত দাবি নিয়ে তাদের সাথে বিতর্ক করলে তাকে ‘অ্যান্টি-সেমিটিক’ বলে আখ্যা দেয়া হয়। ইতিহাসে আর কোন ভ্রান্ত ধারণা এমন ব্যাপকভাবে প্রচারিত হয়েছে বলে আমাদের জানা নেই।
ফিলিস্তিনের জনগণ খাঁটি আরব এবং আদি সেমিটিক। মুসলিমরাই মুসা আলাইহিস সালামের প্রকৃত উত্তরাধিকারী। মুসলিমরা সেই প্রকৃত তাওরাতের উত্তরাধিকারী যেটা ছিলো অবিকৃত,। মুসলিমরা ইব্রাহীম, মুসা, ঈসা আলাইহিমুস সালাম ও মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামসহ সকল নবীদের প্রতি বিশ্বাসী (তাদের সকলের উপর আল্লাহর শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক)। যদি তাওরাতে মুসা আলাইহিমুস সালামের অনুসারীদের ফিলিস্তিন-অধিকারের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়, তবে মুসলিমরাই সেই প্রতিশ্রুতির সবচেয়ে বড় হকদার।
যে মুহূর্তে মুসলিমরা ফিলিস্তিন জয় করে এবং রোমানদের বিতাড়িত করে, তখন থেকে ফিলিস্তিন ও জেরুজালেম ইসলাম ও মুসলিমদের। সকল নবীর (তাদের সকলের উপর আল্লাহর শান্তি ও রহমত বর্ষিত হোক) দ্বীন ছিল এই ‘ইসলাম’। অতএব, ফিলিস্তিনের ঐতিহাসিক অধিকারের আহ্বান মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে উত্থাপিত হতে পারে না। কারণ আমরা আল্লাহর সকল নবীকে বিশ্বাস করি এবং তাদের মধ্যে কোন পার্থক্য করি না।
(iii) ফিলিস্তিনে যে পরিমাণ রক্ত ঝরেছে, তার সমান প্রতিশোধ নিতে হবে। তোমাদের জানা থাকা উচিত, ফিলিস্তিনিরা একা কাঁদে না। তাদের নারীরা একা বিধবা হয় না। তাদের ছেলেরাও একা এতিম হয় না। তাদের কষ্ট সমানভাবে আমরাও অনুভব করি।
(খ) তোমরা সোমালিয়ায় আমাদের উপর আক্রমণ করেছো। চেচনিয়ায় আমাদের বিরুদ্ধে রাশিয়ার নৃশংসতাকে সমর্থন দিয়েছ। কাশ্মীরে আমাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় নিপীড়ক বাহিনী এবং লেবাননে আমাদের বিরুদ্ধে ইহুদি আগ্রাসনকে সমর্থন করেছো।
(গ) তোমাদের তত্ত্বাবধানে, সম্মতিতে ও আদেশের অধীনে আমাদের দেশের সরকার, যারা প্রকৃতপক্ষে তোমাদের এজেন্ট হিসাবে কাজ করছে, প্রতিদিন আমাদের উপর আক্রমণ করে।
(i) এই সরকারগুলি আমাদের জনগণের ইসলামী শরীয়া প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করে। প্রয়োজনে সহিংসতা ও মিথ্যাচারের আশ্রয় নেয়।
(ii) এই সরকারগুলি আমাদেরকে অপমানিত করে। ভয়-ভীতি এবং কঠোরতার এক বিরাট কারাগারে আমাদেরকে বেঁধে রাখার চেষ্টা করে।
(iii) এই সরকারগুলি আমাদের উম্মাহর সম্পদ চুরি করে। অতঃপর নগণ্য মূল্যে তা তোমাদের কাছে বিক্রি করে।
(iv) এই সরকারগুলি ইহুদিদের কাছে আত্মসমর্পণ করে বসে আছে। তাদের নিজেদের জনগণের ছিন্নভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের উপর প্রতিষ্ঠিত এই রাষ্ট্রের (ইসরাইলের) অস্তিত্ব স্বীকার করে নিয়েছে এবং ফিলিস্তিনের অধিকাংশ ইহুদিদের কাছে হস্তান্তর করেছে।
(v) উম্মাহর স্বাধীনতা রক্ষার প্রয়োজনে এই সরকারগুলির অপসারণ আমাদের উপর দায়িত্ব হয়ে আছে। আমাদের শরীয়াহকে সর্বোচ্চ আইন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা ও ফিলিস্তিনকে পুনরুদ্ধার করার জন্য – আমাদের লড়াই সময়ের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ। এই সরকারগুলোর বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই, তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই থেকে আলাদা কিছু নয়।
(ঘ) তোমরা তোমাদের আন্তর্জাতিক প্রভাব ব্যবহার করে এবং সামরিক সক্ষমতার হুমকি দিয়ে, নগণ্য মূল্যে আমাদের সম্পদ ও তেল চুরি করছো। পৃথিবীর ইতিহাসে মানব সভ্যতার দেখা সবচেয়ে বড় চুরি এটি।
(ঙ) তোমাদের বাহিনী আমাদের দেশ দখল করে আছে। সর্বত্র তোমাদের সামরিক ঘাঁটি ছড়িয়ে রেখেছ। আমাদের ভূমি কলুষিত করেছো। আমাদের পবিত্র স্থান অবরোধ করেছো। ইহুদিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এবং আমাদের ধন-সম্পদ বরাবরের মতো লুট করতে তোমাদের আয়োজন অব্যাহত রেখেছ।
(চ) তোমরা ইরাকের মুসলিমদের ক্ষুধার্ত রেখেছ। সেখানে প্রতিদিন শিশুরা মারা যাচ্ছে। আশ্চর্যের বিষয় হলো, তোমাদের দেওয়া নিষেধাজ্ঞার ফলে ১.৫ মিলিয়নেরও বেশি ইরাকি শিশু মারা গেছে। তবুও তোমাদের মধ্যে কোন উদ্বেগ দেখা যায়নি। অথচ এখন যখন তোমাদের ৩০০০ জন মারা গেছে, তখন পুরো বিশ্ব জেগে উঠেছে। তোমাদের মায়াকান্না শুরু হয়েছে—এখনো তার রেশ কাটেনি।
(ছ) তোমরা ইহুদিদের এই দাবিকে সমর্থন করেছ যে, জেরুজালেমই তাদের চিরন্তন রাজধানী। সেখানে তোমাদের দূতাবাস স্থানান্তর করতে রাজি হয়েছ। তোমাদের সাহায্যে ও সুরক্ষায় ইসরায়েলিরা আল-আকসা মসজিদ ধ্বংস করার পরিকল্পনা করছে। তোমাদের অস্ত্রের সুরক্ষায় শ্যারন আল-আকসা মসজিদ ধ্বংসের প্রস্তুতি হিসেবে, তাতে প্রবেশ করে এই পবিত্র স্থানকে কলুষিত করেছে।
(২) এইসব বিপর্যয় ও বিপদ আপদ আমাদের প্রতি তোমাদের অত্যাচার ও আগ্রাসনের কয়েকটি উদাহরণ মাত্র। আমাদের দ্বীন ও যুক্তিবোধ মজলুম হিসেবে জালিমদেরকে আগ্রাসনের জবাব দেবার অধিকার দিয়েছে। তাই তোমাদের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে জিহাদ, প্রতিরোধ ও প্রতিশোধ ছাড়া আর কিছু আশা করা উচিত হবে না। অর্ধশতাব্দীরও বেশি সময় ধরে আমেরিকা আমাদের আক্রমণ করার পর, আমরা তাকে নিরাপত্তা ও শান্তিতে বসবাস করার জন্য ছেড়ে দেব - এই আশা কি কোনভাবে যুক্তিযুক্ত?!!
(৩) তোমরা চাইলে বিতর্ক করতে পারো যে, উপরে বর্ণিত সকল অনাচার অন্যায় তোমাদের বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের ন্যায্যতা দেয় কি না? তারা যে অপরাধ করেনি এবং যে অপরাধে তারা অংশ নেয়নি, তার জন্য তারা শাস্তি পেতে পারে কি না:
(ক) এই বিতর্ক তোমাদের বারংবার বলা এই দাবির বিরোধিতা করে যে, আমেরিকা স্বাধীনতার দেশ এবং এই বিশ্বে স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার মূল শক্তি। আমেরিকার জনগণ তাদের স্বাধীন ইচ্ছার মাধ্যমে তাদের সরকার বেছে নেয়। মার্কিন রাজনীতির প্রতি তাদের আনুকূল্য ও সমর্থন থেকেই এই স্বাধীনতার উৎপত্তি। একইভাবে আমেরিকার জনগণ ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলের নিপীড়ন, তাদের ভূমি দখল, ক্রমাগত হত্যা, নির্যাতন, শাস্তি এবং ফিলিস্তিনিদেরকে বহিষ্কারের প্রতি জোরালো সমর্থন দিয়েই নিজেদের সরকার বেছে নেয়। নিজেদের সরকারের নীতি প্রত্যাখ্যান করার ক্ষমতা ও ইচ্ছে মার্কিন জনগণের আছে। এমনকি তারা চাইলে সরকারি নীতি পরিবর্তনও করতে পারে।
(খ) আমেরিকান জনগণের পরিশোধকৃত ট্যাক্স দিয়েই আফগানিস্তানে আমাদের উপর বোমা বর্ষণকারী বিমান, ফিলিস্তিনে আমাদের বাড়িঘর ধ্বংসকারী ট্যাঙ্ক, আরব উপসাগরে আমাদের ভূমি দখলকারী সেনা এবং ইরাকের ওপর অবরোধ আরোপকারী নৌবহরের খরচ চলে। ট্যাক্সের এই সমস্ত ডলার আমাদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে আমাদের ভূমিতে অনুপ্রবেশের জন্য ইসরাইলকে দেওয়া হয়। সুতরাং আমেরিকান জনগণই আমাদের ওপর হামলার অর্থায়নকারী। তারাই প্রার্থীদেরকে বাছাই করার মাধ্যমে নিজেদের পছন্দসই উপরোক্ত খাতগুলোতে তাদের ট্যাক্সের ডলার ব্যয় হচ্ছে কিনা সেটা তদারকি করে।
(গ) এছাড়াও আমেরিকান সেনাবাহিনী আমেরিকান জনগণের অংশ। এরাই নির্লজ্জভাবে আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইহুদিদেরকে সহায়তা করছে।
(ঘ) আমেরিকান জনগণই নিজেদের ছেলে মেয়েদেরকে আমাদের ওপর হামলাকারী মার্কিন বাহিনীতে ভর্তি করায়।
(ঙ) এসকল কারণে আমেরিকার জনগণ আমাদের বিরুদ্ধে আমেরিকা এবং ইহুদিদের দ্বারা সংঘটিত সমস্ত অপরাধের দায় এড়াতে পারেনা।
(চ) সর্বশক্তিমান আল্লাহ আমাদেরকে প্রতিশোধ গ্রহণের অনুমতি দিয়েছেন। তাই আমাদের উপর আক্রমণ করা হলে, আমাদেরও পাল্টা আক্রমণ করার অধিকার রয়েছে। যে কেউ আমাদের গ্রাম ও শহর ধ্বংস করেছে, আমাদের অধিকার আছে তাদের গ্রাম ও শহর ধ্বংস করার। যারা আমাদের সম্পদ চুরি করেছে, তাদের অর্থনীতি ধ্বংস করার অধিকার আমাদের আছে। আর যে আমাদের বেসামরিক মানুষকে হত্যা করেছে, তাদের হত্যা করার অধিকার আমাদের আছে।
আমেরিকান সরকার এবং প্রেস এখনও এই প্রশ্নের উত্তর দিতে অস্বীকার করে:
কেন তারা (আল কায়েদা) নিউইয়র্ক এবং ওয়াশিংটনে আমাদের উপর আক্রমণ করেছিল?
বুশের চোখে শ্যারন যদি শান্তির মানুষ হয়, তাহলে আমরাও শান্তির মানুষ!!! আমেরিকা শিষ্টাচার ও নীতির ভাষা বুঝে না। তাই তারা যে ভাষা বুঝে, তা আমাদের ব্যবহার করতে হয়েছে।
দ্বিতীয় মৌলিক প্রশ্ন: তোমাদের প্রতি আমাদের আহ্বান কী এবং তোমাদের কাছে আমরা কী চাই?! - এ প্রশ্নের উত্তরে আমরা বলব:
(১) আমরা তোমাদেরকে সর্বপ্রথম যে বিষয়ের দিকে আহ্বান করছি তা হল - ইসলাম।
(ক) আল্লাহর একত্ববাদের দ্বীন। আল্লাহর সঙ্গে শরীক স্থাপন করা থেকে বিরত থাকা এবং শিরক প্রত্যাখ্যান করা। এটি হলো আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার প্রতি পুরোপুরি ভালোবাসা এবং তার আইন-কানুনের প্রতি পূর্ণাঙ্গ আনুগত্যের দ্বীন। ইসলামবিরোধী সকল ধর্ম, দৃষ্টিভঙ্গি ও আদেশ-নিষেধ প্রত্যাখ্যানের দ্বীন হলো ইসলাম, যা নবীজি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর অবতীর্ণ হয়েছে। ইসলাম সকল নবীর দ্বীন। এ বিষয়ে তাদের মাঝে কোন পার্থক্য নেই। তাদের সকলের উপর আল্লাহর রহমত ও শান্তি বর্ষিত হোক!!
এই দ্বীনের দিকেই আমরা তোমাদেরকে আহ্বান করি। এই শরীয়তের মাধ্যমে পূর্ববর্তী সকল শরীয়ত রহিত হয়ে গিয়েছে। এটা আল্লাহর তাওহীদের দ্বীন। আন্তরিকতা, সর্বোত্তম আচরণ, ন্যায়পরায়ণতা, করুণা, সম্মান, পবিত্রতা, তাকওয়া, অন্যের প্রতি দয়া দেখানো, মানুষের মধ্যে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, তাদের অধিকার নিশ্চিত করা, মজলুম ও নিপীড়িতদের পাশে দাঁড়ানো, হাত, জিহ্বা ও অন্তর দিয়ে ভালো কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ করাই হলো - ইসলাম। আল্লাহর বাণী ও দ্বীনের শাসন নিশ্চিত করার জন্য জিহাদকে ইসলামে উৎসাহিত করা হয়েছে। সকলে মিলে আল্লাহর আনুগত্য করা এবং বর্ণ, লিঙ্গ বা ভাষা নির্বিশেষে সকল মানুষের মাঝে ইনসাফ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে ইসলামে।
(খ) এই ধর্মের ধর্মীয় গ্রন্থ 'আল কুরআন' পুরোপুরি সংরক্ষিত। তাতে কোন প্রকার পরিবর্তন বা পরিবর্ধন সাধিত হয় নি। সামনে হবেও না। অথচ অন্যান্য ঐশী গ্রন্থ ও বাণী পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে। কুরআন কেয়ামত পর্যন্ত অলৌকিক ঘটনা। আল্লাহ চ্যালেঞ্জ করেছেন, কেউ পারলে কুরআনের মত একটি কিতাব বা এর মত দশটি আয়াত নিয়ে আসুক।
(২) দ্বিতীয়ত, আমরা তোমাদেরকে আহবান করছি - তোমাদের মাঝে ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়া নিপীড়ন, মিথ্যা, অনৈতিকতা এবং যথেচ্ছা ব্যভিচার বন্ধ করো।
(ক) আমরা তোমাদেরকে উত্তম চরিত্র, আদর্শ, আত্মসম্মান ও পবিত্রতার উপর ভিত্তি করে নিজেদেরকে গড়ে তোলার আহবান জানাচ্ছি। সেইসাথে অনৈতিক কাজ, ব্যভিচার, সমকামিতা, মাদক গ্রহণ, জুয়া খেলা এবং সুদ ভিত্তিক ব্যবসার মত সব ধরনের খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকার আহবান জানাচ্ছি।
আমরা তোমাদেরকে সেই সব বিষয়ের দিকে আহবান করছি, যেগুলো থেকে মানুষ হিসেবে তোমাদের মুক্ত থাকার কথা ছিল। কিন্তু আজ এগুলো তোমাদেরকে আষ্টে-পৃষ্টে ঘিরে রেখেছে।
আমরা আরও আহবান জানাই, নিজেদেরকে "এক মহান জাতি" মনে করার বিভ্রান্তি থেকে বের হয়ে এসো। নিঃসন্দেহে এটি মিথ্যা। তোমাদের নেতারা তোমাদেরকে ধোঁকা দেয়ার জন্য ক্রমাগত এই মিথ্যা বলে যাচ্ছে। অধঃপতনের যে অতলে তোমরা পৌঁছেছ, সেটা ঢেকে রাখার জন্যই তারা এই মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছে।
(খ) বলতে খারাপ লাগছে যে, তোমাদের বর্তমান অবস্থা, তোমাদেরকে মানবজাতির ইতিহাসের সবচেয়ে নিকৃষ্ট জাতির অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছে।
(i) তোমরা হলে সেই জাতি যারা আল্লাহর দেয়া শরিয়ত দ্বারা জীবন পরিচালনার পরিবর্তে, নিজেদের ইচ্ছা ও কামনাকে ‘জীবনবিধান’ বানিয়ে নিয়েছো। তোমরা তোমাদের রব ও স্রষ্টা প্রদত্ত বিশুদ্ধ মানব প্রকৃতিকে উপেক্ষা করে, ধর্মকে নিজেদের জীবনযাপনের নীতি নৈতিকতা থেকে আলাদা করে রেখেছ।
তোমাদেরকে করা সবচেয়ে লজ্জাজনক প্রশ্ন থেকে তোমরা পালিয়ে বেড়াচ্ছ -
সর্বশক্তিমান আল্লাহ মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন। বাকি সব সৃষ্টি ও জমিনের উপর তাদেরকে কর্তৃত্ব দিয়েছেন। বেঁচে থাকার সব উপকরণ প্রদান করেছেন। এসব কিছুর পর যে বিষয়টি এই মানবজাতির সবচেয়ে বেশি দরকার সেটি হল - জীবন যাপনের জন্য ঐশী বিধান। এটা তাদের দৈনন্দিন জীবন পরিচালনার জন্য খুবই প্রয়োজন। এটা কিভাবে সম্ভব যে, উপরোক্ত এতকিছু দেবার পর, এই জীবন বিধান সর্বশক্তিমান আল্লাহ দিবেন না?
(ii) তোমরাই হলে সেই জাতি, যারা সুদকে বৈধতা দিয়েছে। অথচ এটা সব ধর্মেই নিষিদ্ধ ছিল। এরপর সুদের উপর ভিত্তি করে নিজেদের অর্থনীতি দাড় করিয়েছ। সুদে ব্যাপক হারে বিনিয়োগ করেছো। ফলশ্রুতিতে, অর্থনীতিকে যত দিক থেকে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, তার প্রায় সকল দিক থেকে ইয়াহুদীরা তোমাদের অর্থনীতির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে। এরপর অর্থনীতির মাধ্যমে তোমাদের মিডিয়ার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। আর এখন তোমাদের জীবনের সবগুলো ক্ষেত্রই ওরা নিয়ন্ত্রণ করছে। তোমাদেরকে গোলাম বানিয়ে রেখেছে। তোমাদের অর্থের দ্বারা তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিল করছে। বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন এবিষয়ে তোমাদেরকে আগেই সতর্ক করেছিল।
(iii) তোমরাই হলে সেই জাতি যারা সব ধরনের নেশা জাতীয় দ্রব্যের উৎপাদন, কেনাবেচা এবং সেবনের বৈধতা দিয়ে রেখেছে। তোমরা মাদকদ্রব্য বহনের ব্যাপারে শাস্তির ব্যবস্থা রেখে, সেবনের অনুমতি দিয়ে রেখেছ। তোমাদের দেশের অধিবাসীরাই সবচেয়ে বেশি মাদক গ্রহণ করে থাকে।
(iv) তোমরা এমন জাতি - যারা অনৈতিক কর্মকাণ্ডগুলোকে বৈধতা দিয়েছ। এসকল কর্মকাণ্ডকে তোমরা 'ব্যক্তি স্বাধীনতা'র নাম দিয়ে সমাজে ছড়িয়ে দিয়েছ। নিজেদেরকে ধাপে ধাপে এত নিচে নামিয়ে এনেছ যে, নিজের আত্মীয় স্বজনের সাথে যৌন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়তে তোমাদের আত্মসম্মানে বাঁধে না! এমনকি দেশের আইনও এতে বাঁধা দেয় না!!
তোমাদের প্রেসিডেন্ট ক্লিনটন, নিজের ওভাল অফিসে যে অশালীন কাজ করেছিলে, সেকথা কে ভুলে যাবে? এরপর তোমরা তার "ভুল হয়ে গিয়েছে" টাইপ কথা মেনে নিয়েছো। বাড়তি কোন জবাবদিহিতা করোনি। অথচ এই ঘটনা তোমাদের জাতির ইতিহাসের পাতায় 'সবচেয়ে ন্যক্কারজনক ঘটনা' হিসেবে প্রতিষ্ঠিত থাকবে।
(v) তোমরা এমন এক জাতি যারা সব ধরনের জুয়াকে নিজেদের জন্য বৈধ করে নিয়েছো।। এমনকি কোম্পানিগুলোও এ ধরনের কাজে জড়িত। বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিনিয়ত জুয়ায় লিপ্ত। ফলে অপরাধীরাই দিনকে দিন ধনী হচ্ছে।
(vi) তোমরা এমনই এক জাতি, যারা নারীদেরকে ভোগ্য পণ্য বা বিজ্ঞাপনের মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছো। তোমরা তোমাদের দেশে আসা পর্যটক, দর্শনার্থী এবং অন্যান্যদের সেবা প্রদানের জন্য মহিলাদেরকে ব্যবহার করছো। নিজেরদের প্রফিট মার্জিন বাড়ানোর কাজে নারীদেরকে প্রতিনিয়ত ব্যবহার করছো। এত কিছুর পরও তোমরা বলে বেড়াও, একমাত্র তোমরাই নারীর পূর্ণ স্বাধীনতায় বিশ্বাসী।
(vii) তোমরা এমনই এক জাতি, যারা যৌন ব্যবসার যত ধরন ও প্রকার আছে সবগুলোই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে চালু রেখেছ। যৌন ব্যবসার উপর ভিত্তি করে অনেক বড় বড় কর্পোরেশন ও প্রতিষ্ঠান তোমাদের এখানে গড়ে উঠেছে। শিল্প, বিনোদন, ট্যুরিজম, ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং এ ধরনের বিভিন্ন ধোঁকাবাজি নাম দিয়ে এই কর্পোরেশন এবং প্রতিষ্ঠানগুলো দাঁড়িয়ে আছে।
(viii) এবং এই সবগুলো বিষয়ের কারণে, তোমাদেরকে ইতিহাস এমন এক জাতি হিসেবে জানবে, যারা এমনসব রোগ ব্যধির কারণ হয়েছে, যার অস্তিত্ব আগে কখনো ছিল না। এগিয়ে যাও এবং সমগ্র মানবজাতির সামনে নিজেদেরকে এইডস এর আবিষ্কারক হিসেবে পরিচয় দিয়ে গর্ববোধ করতে থাকো।
(xi) তোমরা ইতিহাসের অন্য যে কোনো জাতির তুলনায়, শিল্প বর্জ্য ও দূষিত গ্যাস নিঃসরণের মাধ্যমে অবিরাম পরিবেশের ক্ষতি করছো। পরিবেশ ধ্বংসের ক্ষেত্রে তোমাদের ছাড়িয়ে যাবার মত কোন প্রতিদ্বন্দ্বী ইতিহাসে পাওয়া যায় না। এরপরও তোমরা 'কিটো চুক্তিতে (Kyoto agreement)' সাক্ষর করতে নারাজ। তোমরা তোমাদের লোভী কোম্পানি এবং শিল্প কারখানাগুলোর অবাধ মুনাফার নহর নিরাপদ রাখতেই বেশি আগ্রহী।
(x) তোমাদের আইন-কানুনগুলো ধনী ও বিত্তবানদের সুবিধার্থে প্রণীত। এরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে বিপুল প্রভাব বিস্তার করে রাখে এবং তাদের নির্বাচনী প্রচারণাগুলোতে অর্থায়ন করে। এদের প্রত্যেকের পেছনে রয়েছে ইহুদিরা, যারা তোমাদের পলিসি, মিডিয়া ও অর্থনীতি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।
(xi) ইতিহাসে যে বিষয়টি তোমাদেরকে বাকি সবার থেকে পৃথক করে রাখবে সেটা হল, মানব জাতিকে যুদ্ধের মাধ্যমে ধ্বংস করার ক্ষেত্রে, তোমরা বাকি সব জাতির থেকে অনেক অনেক এগিয়ে। আর এসব যুদ্ধ কোনো আদর্শ বা মূল্যবোধের প্রতিরক্ষার জন্য হয়নি। বরং শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থ আর মুনাফা নিশ্চিত করার জন্য এসকল যুদ্ধ পরিচালিত হয়েছে। তোমরা জাপানের উপর নিউক্লিয়ার বোমা ফেলেছিলে, যদিও জাপান তখন যুদ্ধ বন্ধের জন্যে আলোচনার টেবিলে বসেছিল।
হে স্বাধীনতার ফেরিওয়ালারা! তোমরা কত শত অত্যাচার, সীমালঙ্ঘন, আর অবিচার করেছ, তার কি কোনো সীমা আছে?
(xii) আমরা যেন তোমাদের প্রধান বৈশিষ্ট্যটি ভুলে না যাই। সেটা হল - আচরণ এবং মূল্যবোধ - উভয় ক্ষেত্রেই তোমাদের দ্বৈত-নীতি এবং শিষ্টাচার ও নীতি-নৈতিকতার ক্ষেত্রে তোমাদের ভণ্ডামি। সব ধরনের শিষ্টাচার, নীতি এবং মূল্যবোধের ক্ষেত্রে তোমাদের দুটি স্কেল আছে। একটি তোমাদের নিজেদের জন্য, আরেকটি অন্যদের জন্য।
(খ) তোমরা যে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের দিকে অন্যদের আহবান করো, সেটা শুধু তোমাদের জন্য এবং শ্বেতাঙ্গ জাতির জন্য। বাকি বিশ্বের উপর তোমাদের দানবীয়, ধ্বংসাত্মক নীতি এবং সরকারগুলো চাপিয়ে দিয়েছ। এদেরকে তোমরা 'আমেরিকান বন্ধু' বলে আখ্যায়িত করো। এরপরও তোমরা তাদের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে বাধা দাও।
আলজেরিয়ার ইসলামী দল যখন গণতন্ত্র চর্চা করতে চেয়েছিল এবং নির্বাচনে জিতেছিল, তখন তোমরা আলজেরিয়ার সেনাবাহিনীতে থাকা তোমাদের এজেন্টদেরকে আলজেরিয়ার মুসলিমপন্থীদের উপর লেলিয়ে দিয়েছিলে। তারা ট্যাঙ্ক ও বন্দুকের ভয় দেখিয়ে তাদের উপর আক্রমণ চালায়, তাদেরকে বন্দী করে এবং নির্যাতন করে। এ সবই "মার্কিন গণতন্ত্র বই"তে এক নতুন সংযোজন।
(গ) বিশ্ব শান্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গণবিধ্বংসী অস্ত্রগুলিকে নিষিদ্ধ এবং জোরপূর্বক অপসারণের বিষয়ে তোমাদের নীতি হল, তোমরা যে দেশকে এই গণবিধ্বংসী অস্ত্র রাখার অনুমতি দিবে, শুধু তারাই রাখতে পারবে, বাকিরা পারবে না। যেমন ইসরায়েল; তাদেরকে নিরাপত্তা রক্ষার জন্য এই ধরনের অস্ত্র রাখার এবং ব্যবহার করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাকিদের ক্ষেত্রে তোমরা শুধু সন্দেহের ভিত্তিতেই প্রচার করে বেড়াচ্ছ যে, তারা এই ধরনের অস্ত্র বানাচ্ছে। অতঃপর তাদেরকে অপরাধী সাব্যস্ত করে, সামরিক পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করছো না।
(ঘ) আন্তর্জাতিক রেজোল্যুশন এবং নীতিগুলিকে সম্মান করার ক্ষেত্রে তোমাদের অবস্থান সবার শেষে। কিন্তু তোমাদের আকাঙ্ক্ষা হল, আর কেউ তোমাদের মতো কাজ করলে তাকে খুঁজে বের করে শাস্তি দিতে হবে। এর সবচেয়ে উত্তম উদাহরণ হল - বিগত ৫০ বছর ধরে ইজরায়েল আমেরিকার পূর্ণ সমর্থনে জাতিসঙ্ঘের সব রেজোল্যুশন এবং নিয়ম-কানুনগুলোকে অবজ্ঞা করে যাচ্ছে।
(ঙ) আর যারা যুদ্ধাপরাধ করে তাদেরকে তোমরা নিন্দা জানাও এবং বিচারের জন্য আদালত গঠন কর। অথচ নিজেদের যুদ্ধাপরাধের ক্ষেত্রে নির্লজ্জভাবে নিজেদের নির্দোষ বলে দাবি কর। মুসলিম বিশ্ব সহ পুরো বিশ্বের বিরুদ্ধে তোমরা যেসব গর্হিত যুদ্ধাপরাধ সংঘঠিত করেছো, তার ইতিহাস কখনো ভোলা হবে না। জাপান, আফগানিস্তান, সোমালিয়া, লেবানন এবং ইরাকে নির্বিচারে সাধারণ মানুষ হত্যার কলঙ্ক থেকে তোমরা কখনোই মুক্তি পাবে না। এক্ষেত্রে আফগানিস্তানে হওয়া সাম্প্রতিক যুদ্ধাপরাধের ঘটনা মনে করিয়ে দেয়াই যথেষ্ট হবে। সেখানে তোমরা ঘন-জনবসতির উপর বোমা ফেলেছ। তাদের গ্রামগুলো ধ্বংস করে দিয়েছ। এমনকি মসজিদে নামাজরত মুসল্লিদের উপর ছাদ ধ্বসিয়ে দেয়ার মত ঘটনা ঘটেছে।
তোমরাই সেই ব্যক্তি যারা কুন্দুজ ত্যাগ করার সময় মুজাহিদদের সাথে করা চুক্তি ভঙ্গ করেছিলে। তাদের জঙ্গি দুর্গে বোমাবর্ষণ করেছিলে। বদ্ধ জায়গায় আটকে রাখার কারণে দমবন্ধ হয়ে এবং তৃষ্ণায় ১,০০০ এরও বেশি বন্দি শহীদ হয়েছিলেন। তোমাদের এবং তোমাদের দালালদের হাতে কত মানুষ যে মারা গেছে, তা একমাত্র আল্লাহই ভালো জানেন। তোমাদের বিমানগুলি আফগান আকাশে সবসময় নজরদারীতে থাকে আর সন্দেহভাজনদেরকে খুঁজে বেড়ায়।
(চ) তোমরা নিজেদেরকে মানবাধিকারের ধারক বাহক বলে দাবি কর। তোমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতিবছর কোন দেশে কি কি মানবাধিকার লঙ্ঘন হল তার বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। আর যখন মুজাহিদরা তোমাদের উপর হামলে পড়ে, তখন ঐ সকল মানবাধিকার লংঘঙ্ঘনকারী রাষ্ট্র যে সকল অপরাধ করেছে, তার সবগুলোই মুজাহিদদের উপর প্রয়োগ করা শুরু কর। অথচ পূর্বে এসকল অপরাধের বিরুদ্ধে নিজেরাই ছিলে সোচ্চার!
এই আমেরিকাতে, তোমরা কোন কারণ, বিচার বা নাম প্রকাশের তোয়াক্কা না করে হাজার হাজার মুসলিম ও আরবকে বন্দী করেছো। তাদের উপর নতুন নতুন কঠোর আইন জারি করেছো।
গুয়ান্তানামতে যা ঘটছে, তা আমেরিকা এবং তার মূল্যবোধের জন্য একটি ঐতিহাসিক লজ্জা। একাজ তোমাদের মুখের উপর চিৎকার করে বলছে - "হে ভণ্ড! তোমাদের সাক্ষর, চুক্তি বা সমঝোতা পত্রের আর কীইবা মূল্য রইলো?"
(৩) তৃতীয়ত আমরা তোমাদেরকে যে বিষয়ের দিকে আহ্বান করি তা হল - নিজেরা একটি সৎ অবস্থান গ্রহণ করো। যদিও আমাদের সন্দেহ আছে তোমরা তা করবে কিনা। বস্তুত তোমরা নীতি বা আদব বিবর্জিত একটি জাতি। তোমাদের কাছে মূল্যবোধ ও নীতি হচ্ছে এমন কিছু - যা তোমরা অন্যদের কাছ থেকে চাও, কিন্তু নিজেদের জন্য তা আবশ্যক মনে কর না।
(৪) আমরা তোমাদেরকে আরও উপদেশ দিচ্ছি - ইসরায়েলকে সমর্থন করা বন্ধ করো। কাশ্মীরে ভারতীয়দের, চেচেনদের বিরুদ্ধে রাশিয়ানদের এবং দক্ষিণ ফিলিপাইনের মুসলিমদের বিরুদ্ধে ম্যানিলা সরকারকে সমর্থন করা বন্ধ করতেও উপদেশ দিচ্ছি।
(৫) আমরা তোমাদেরকে আরও উপদেশ দিচ্ছি - জিনিসপত্র গুছিয়ে আমাদের ভূমিসমূহ থেকে বেরিয়ে যাও। আমরা তোমাদের জন্য কল্যাণ, হেদায়েত এবং ধার্মিকতা কামনা করি। আমাদেরকে বাধ্য করো না কফিনে ভরে তোমাদেরকে ফেরত পাঠাতে।
(৬) ষষ্ঠত, আমরা তোমাদেরকে আহ্বান জানাচ্ছি - আমাদের দেশের দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাদের সমর্থন করা বন্ধ কর। আমাদের রাজনীতি ও শিক্ষা পদ্ধতিতে হস্তক্ষেপ করবে না। আমাদেরকে আমাদের মত থাকতে দাও। অন্যথায় নিউইয়র্ক এবং ওয়াশিংটনে আমাদের জন্য অপেক্ষা করো।
(৭) আমরা তোমাদেরকে আরও আহ্বান জানাই - দমন-পীড়ন, চুরি ও দখলদারিত্বের নীতির পরিবর্তে, দ্বৈত স্বার্থ ও উপকার এর ভিত্তিতে আমাদের সাথে মুয়ামালা করার। ইহুদিদের সমর্থন করার নীতি থেকে সরে এসো। অন্যথায় তোমাদের উপর বিপর্যয় আরো বাড়বে।
তোমরা যদি উপরে উল্লেখিত বিষয়ের প্রতিকারে সচেষ্ট না হও, তাহলে তোমাদের জন্য উচিত হবে - মুসলিম জাতির সাথে লড়াইয়ের জন্য তৈরি হয়ে যাওয়া। আমরা এক জাতি - যারা আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা রাখি এবং তাকে ছাড়া আর কাউকে ভয় করি না। এ হল ঐ জাতি যাদেরকে কুরআনে নিচের আয়াতে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে-
أَلَا تُقَاتِلُونَ قَوْمًا نَّكَثُوا أَيْمَانَهُمْ وَهَمُّوا بِإِخْرَاجِ الرَّسُولِ وَهُم بَدَءُوكُمْ أَوَّلَ مَرَّةٍ ۚ أَتَخْشَوْنَهُمْ ۚ فَاللَّهُ أَحَقُّ أَن تَخْشَوْهُ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ ﴿١٣﴾ قَاتِلُوهُمْ يُعَذِّبْهُمُ اللَّهُ بِأَيْدِيكُمْ وَيُخْزِهِمْ وَيَنصُرْكُمْ عَلَيْهِمْ وَيَشْفِ صُدُورَ قَوْمٍ مُّؤْمِنِينَ ﴿١٤﴾
অর্থঃ “তোমরা কি সেই দলের সাথে যুদ্ধ করবে না; যারা ভঙ্গ করেছে নিজেদের শপথ এবং সঙ্কল্প নিয়েছে রসূলকে বহিষ্কারের? আর এরাই প্রথম তোমাদের সাথে বিবাদের সূত্রপাত করেছে। তোমরা কি তাদের ভয় কর? অথচ তোমাদের ভয়ের অধিকতর যোগ্য হলেন আল্লাহ, যদি তোমরা মুমিন হও। যুদ্ধ কর ওদের সাথে, আল্লাহ তোমাদের হস্তে তাদের শাস্তি দেবেন। তাদের লাঞ্ছিত করবেন, তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের জয়ী করবেন এবং মুসলমানদের অন্তরসমূহ শান্ত করবেন”। (সূরা আত তাওবাহ ৯:১৩-১৪)
আমরা ইজ্জত ও সম্মানের জাতি। কুরআনে বলা হয়েছে,
يَقُولُونَ لَئِن رَّجَعْنَا إِلَى الْمَدِينَةِ لَيُخْرِجَنَّ الْأَعَزُّ مِنْهَا الْأَذَلَّ ۚ وَلِلَّهِ الْعِزَّةُ وَلِرَسُولِهِ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَلَٰكِنَّ الْمُنَافِقِينَ لَا يَعْلَمُونَ ﴿٨﴾
অর্থঃ “তারাই বলেঃ আমরা যদি মদিনায় প্রত্যাবর্তন করি তবে সেখান থেকে সম্মানিতজন অবশ্যই লাঞ্চিতজনকে বহিষ্কৃত করবে। সম্মান তো আল্লাহ তাঁর রসূল ও মুমিনদেরই কিন্তু মুনাফিকরা তা জানে না”। (সূরা মুনাফিকুন ৬৩:৮)
وَلَا تَهِنُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَنتُمُ الْأَعْلَوْنَ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ ﴿١٣٩﴾
অর্থঃ "আর তোমরা নিরাশ হয়ো না এবং দুঃখ করো না। যদি তোমরা মুমিন হও তবে, তোমরাই জয়ী হবে”। (সূরা আল ইমরান ৩:১৩৯)
আমরা শাহাদাত প্রত্যাশী জাতি। এমন জাতি যারা জীবন থেকে মৃত্যুকে বেশি ভালোবাসে।
وَلَا تَحْسَبَنَّ الَّذِينَ قُتِلُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتًا ۚ بَلْ أَحْيَاءٌ عِندَ رَبِّهِمْ يُرْزَقُونَ ﴿١٦٩﴾
অর্থঃ “আর যারা আল্লাহর রাহে নিহত হয়, তাদেরকে তুমি কখনো মৃত মনে করো না। বরং তারা নিজেদের পালনকর্তার নিকট জীবিত ও জীবিকাপ্রাপ্ত”। (সূরা আল ইমরান ৩:১৬৯)
فَرِحِينَ بِمَا آتَاهُمُ اللَّهُ مِن فَضْلِهِ وَيَسْتَبْشِرُونَ بِالَّذِينَ لَمْ يَلْحَقُوا بِهِم مِّنْ خَلْفِهِمْ أَلَّا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ ﴿١٧٠﴾
অর্থঃ “আল্লাহ নিজের অনুগ্রহ থেকে যা দান করেছেন তার প্রেক্ষিতে তারা আনন্দ উদযাপন করছে। আর যারা এখনও তাদের কাছে এসে পৌঁছেনি তাদের পেছনে তাদের জন্যে আনন্দ প্রকাশ করে। কারণ, তাদের কোন ভয় ভীতিও নেই এবং কোন চিন্তা ভাবনাও নেই”। (সূরা আল ইমরান ৩:১৭০)
আমরাই সেই জাতি যারা শেষ পরিণামে সফল ও বিজয়ী হবে। এই ওয়াদা আল্লাহ করেছেন।
هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَىٰ وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ ﴿٩﴾
অর্থঃ "তিনি তাঁর রসূলকে পথ নির্দেশ ও সত্যধর্ম নিয়ে প্রেরণ করেছেন, যাতে একে সবধর্মের উপর প্রবল করে দেন যদিও মুশরিকরা তা অপছন্দ করে”। (সূরা সফ ৬১:৯)
كَتَبَ اللَّهُ لَأَغْلِبَنَّ أَنَا وَرُسُلِي ۚ إِنَّ اللَّهَ قَوِيٌّ عَزِيزٌ ﴿٢١﴾
অর্থঃ "আল্লাহ লিখে দিয়েছেনঃ আমি এবং আমার রসূলগণ অবশ্যই বিজয়ী হব। নিশ্চয় আল্লাহ শক্তিধর, পরাক্রমশালী"। (সূরা মুজাদালাহ ৫৮:২১)
যে মুসলিম জাতি তোমাদের মত পূর্ববর্তী নিকৃষ্ট সাম্রাজ্যগুলোকে অগ্রাহ্য ও ধ্বংস করতে সক্ষম হয়েছিল; সেই জাতি আজ তোমাদের আক্রমণ প্রতিহত করছে। তোমাদের মধ্যে থাকা মন্দগুলো দূর করতে চাচ্ছে। প্রয়োজনে তোমাদের সাথে লড়াই করতেও প্রস্তুত। তোমরা ভাল করে জেনে রাখো, মুসলিম জাতি তার অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে তোমাদের অহমিকা ও অহংকারকে ঘৃণা করে।
আমেরিকানরা যদি আমাদের পরামর্শ, নির্দেশনা এবং আমরা তাদের যে কল্যাণ এবং ন্যায়পরায়ণতার প্রতি আহ্বান জানাই তা শুনতে অস্বীকার করে, তবে জেনে রেখো- বুশের দ্বারা শুরু হওয়া এই ক্রুসেডটি তোমরা হারবে। ঠিক আগের অন্যান্য ক্রুসেডগুলির মতো, যেখানে তোমরা মুজাহিদদের হাতে অপমানিত হয়েছিলে। তোমাদের বাড়িতে পালিয়ে গিয়েছিলে - নীরবতা এবং অপমানকে সঙ্গী করে। আমেরিকানরা যদি সাড়া না দেয়, তাহলে তাদের পরিণতি হবে সোভিয়েতদের মতো। সোভিয়েতরা তাদের সামরিক পরাজয়, রাজনৈতিক ভাঙ্গন, আদর্শিক পতন এবং অর্থনৈতিক দেউলিয়াত্ব মোকাবেলা করার জন্য আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে গিয়েছিল।
এই হচ্ছে উত্থাপিত প্রশ্নের জবাব হিসেবে আমেরিকানদের প্রতি আমাদের বার্তা। আশা করছি এখন তারা বুঝবে, কেন আমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করি। এটাও বুঝবে, তাদের কোন ধরনের অজ্ঞতার কারণে আল্লাহর তাওফিকে আমরা বিজয়ী হবো।
**********
روابط بي دي اب
PDF (386 KB)
পিডিএফ ডাউনলোড করুন [৩৮৬ কিলোবাইট]
https://archive.org/download/letter-to-america-november-2002/Letter-To-America-%20november%202002.pdf
https://www.file-upload.org/io0mcginqpm4
https://lettertoamerica0.files.wordpress.com/2023/11/letter-to-america-november-2002.pdf
https://www.mediafire.com/file/1mojuvbltipuhft/Letter-To-America-+november+2002.pdf/file
https://mega.nz/file/dQIRnSLI#8Fop9HUkx6yQaMUpP3hBvRKxSSR1QjgFdZkipvc81lc
روابط ورد
Word (285 KB)
ওয়ার্ড [২৮৫ কিলোবাইট]
https://archive.org/download/letter-to-america-november-2002/Letter-To-America-%20november%202002.docx
https://www.file-upload.org/0c60c4xa5s59
https://lettertoamerica0.files.wordpress.com/2023/11/letter-to-america-november-2002.docx
https://www.mediafire.com/file/q5mpi5e8ih0fjwk/Letter-To-America-+november+2002.docx/file
https://mega.nz/file/BA5FBagZ#eWqY4_ALCLNOrlotK-ABCgrFoQgCtcHQKU1hY3mwa78
روابط الغلاف- ١
book Banner [194 KB]
বুক ব্যানার ডাউনলোড করুন [১৯৪ কিলোবাইট]
https://justpaste.it/img/338e4b232ca7058e1ae0c0f5e5bcb8d9.jpg
https://www.file-upload.org/3x8z4i3fpzon
https://justpaste.it/img/eb918d6551ba9ee04b9bf2be612e4b4d.jpg
https://www.mediafire.com/file/qejdl08hbqo56qc/Letter-To-America-+november+2002+Cover.jpeg/file
https://mega.nz/file/NNgmAaYQ#c61LDZHESVtk6d3Eqo_SS1XZNXkEF4kOdl8rfFr9ZUs
روابط الغلاف- ٢
Banner [171 KB]
ব্যানার ডাউনলোড করুন [১৭১ কিলোবাইট]
https://justpaste.it/img/7bd8ab4b3486181d982ace264f81368e.jpg
https://www.file-upload.org/cxz0on2fc2z0
https://justpaste.it/img/3c1543735bf941cc088a2a2fb459a8b6.jpg
https://www.mediafire.com/file/6tnwvmhhct3emya/Letter-To-America-+november+2002+Banner.jpeg/file
https://mega.nz/file/AIgD3DZR#g4tbftR9kqq0Raron8GLJm8gIBNsRDPSX8FSemGcrzE
مع تحيّات إخوانكم
في مؤسسة النصر للإنتاج الإعلامي
قاعدة الجهاد في شبه القارة الهندية
আপনাদের দোয়ায় মুজাহিদ ভাইদের ভুলবেন না!
আন নাসর মিডিয়া
আল কায়েদা উপমহাদেশ
In your dua remember your brothers of
An Nasr Media
Al-Qaidah in the Subcontinent