IS কতটুকু সঠিক?
#প্রশ্নঃ IS এর সম্পর্কে জানতে চাই। তাদের ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে পারবেন কি?
প্রশ্ন করেছেন মুহতারামা ফারজানা আক্তার।
২০০৩ সালে ইরাকে আমেরিকান আগ্রাসনের পর আমিরুল ইশতিশহাদি শায়খ আবু মুস’আব আজ জারকাউয়ি (রহ)’র নেতৃত্বে আল-কায়েদা ইরাক শাখা ঘোষিত হয়। আল্লাহ্ তা’আলার সাহায্যে আল-কায়েদা ইরাকের চূড়ান্ত প্রতিরোধের পর একে একে বিশাল, বিস্তৃত ভূখণ্ড মুসলিমদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
শায়খ জারকাউয়ি (রহ)’র শাহাদাতের পর দায়িত্বে আসেন শায়খ আবু হামজা আল মুহাজির (রহ)। অতঃপর ইরাকে ইসলামী ইমারাহ (ISI) ঘোষণা করা হলে তার আমির ঘোষিত হোন শায়খ আবু উমার আল বাগদাদী (রহ)।
শায়খ আবু উমার (রহ)’র শাহাদাতের পর দায়িত্ব পায় আবু বকর আল বাগদাদি যিনি বর্তমান IS’র আমির।
প্রাগুক্ত সকলেই আল-কায়েদা সেন্ট্রালের আমির শায়খ আইমান আজ জাওয়াহিরি (হাফি)’র কাছে বায়াহবদ্ধ ছিলেন।
২০১১ সালে সিরিয়ান বিপ্লবের পর জিহাদে শরীক হয় ISI. তখন বিভিন্ন মুজাহিদিন গ্রুপের সাথে মিলে জিহাদে শরীক থাকে তারা। কিন্তু পরবর্তীতে আরও বেশ কিছু অঞ্চল দখল হওয়ার পর ISI’র পদস্খলন শুরু হয়। বাগদাদি গং কেন্দ্রীয় নেতাদের কিছু না জানিয়ে ঘোষণা করে ISIS।
আল-কায়েদার বায়াহ ভঙ্গ করার পর সিরিয়া ও ইরাকে মুজাহিদিনদের উপর ঢালাও আক্রমণ ও হত্যাকান্ড চালানো শুরু করে ISIS। ফিতনা এড়াতে স্বাধীনকৃত ভূখণ্ডগুলো ISIS এর হাতে ছেড়ে দেন সিরিয়ার মুজাহিদিনরা।
এমনকি আইএসের রাজধানী ‘রাক্কা’ স্বাধীন করেছিলই সিরিয়ার মুজাহিদিনরা।
পরবর্তীতে দুনিয়ার প্রায় সকল ইসলামী সংগঠন ও অধিকাংশ উলামায়ে কেরামকে কাফির ঘোষণা করে আই-এস।
২০১৪ তে খিলাফাহ ঘোষণা করে আই এস। দুনিয়ার বিভিন্ন জায়গায় বিচ্ছিন্নভাবে কিছু জিহাদি গ্রুপ ‘খিলাফাহ’র মায়াজালে আটকে তাদের অনুসরণ শুরু করে।
এই খিলাফাহ অবৈধ খিলাফাহ। শার’ঈ ও যৌক্তিক বিশ্লেষণের জন্য নিম্নোক্ত বাংলা অডিও লেকচারগুলো শোনার আহ্বান রইলো –
IS এর অপরাধের বিষয়ে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ তিনটি ভিডিও –
১/
২/
৩/
আই এসের ব্যাপারে মুজাহিদিন উলামা-উমারাদের বক্তব্য সুস্পষ্ট। বৈশ্বিক জিহাদের মাঝে বিভাজন ধরানোর মত জঘন্য ফিতনা সৃষ্টি করেছে বায়াহ ভঙ্গকারী আই এস। এরচেয়েও জঘন্য বিষয় হচ্ছে তারা মুজাহিদিনদের হত্যা করেছে। মুসলমানদের তাকফির করার পর তাদের হত্যা করেছে। আল্লাহ্ তা’আলা তাদের হিদায়াত দিন।
#তবে আমেরিকা-ভারত ও তাদের ক্রুসেডার মিত্র, রাফেজি শিয়া ও মুরতাদ বাহিনীর বিরুদ্ধে আই এসের অবস্থান মুজাহিদিনরা সমর্থন করেন। অর্থাৎ, শার’ঈ ভাবে আই এস হালাল রক্ত প্রবাহিত করলে আমরা তা সমর্থন করি। যেমন – কুফরের কেন্দ্র আমেরিকায় অরল্যন্ডো আক্রমণ একটি চমৎকার আক্রমণ।
শায়খ আইমান আজ জাওয়াহিরি (হাফি) বলেন,
“আমরা বাগদাদীর খিলাফাতকে স্বীকৃতি দেই না এবং এটা নবুয়্যতের আদলে খিলাফাহ মনে করি না। এর অর্থ এই নয় যে, তার সমুদয় সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ আমরা অবৈধ মনে করি। তার যেমন রয়েছে পাহাড়সম ভুল তেমনি রয়েছে যথার্থ কিছু পদক্ষেপও।
তার ভুলের ফিরিস্তি যতই বড় হোক না কেন আমি যদি ইরাক বা শামে উপস্থিত থাকতাম; খৃষ্টান, ধর্মনিরেপেক্ষতাবাদী, সাফাবী ও নুসাইরীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই তার দিকে সাহায্যের হাত প্রসারিত করতাম। কারণ, বিষয়টি এসবের অনেক উর্ধ্বে। এটি হচ্ছে খৃস্টানদের হামলার মুখোমুখি মুসলিম উম্মাহর সমস্যা। তাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই হামলার মোকাবেলা করা সকল মুজাহিদের অপরিহার্য দায়িত্ব।”
(ইসলামী বসন্ত সিরিজ, ১ম পর্ব।)
এটাই চূড়ান্ত।
এবং আল্লাহ্ তা’আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন।
আর তাদের প্রতি ২টি নসীহাহ থাকবে-
.
১। “আপনারা এমনসব লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ করুন যার ব্যাপারে শরীয়াতের অনুমোদন আছে। কোন নও-মুসলিম কিংবা নাস্তিকতা-কুফরীর প্রমাণ নেই এমন কোন টার্গেটকে আক্রমণ করা উচিত হবে না। মুসলিম হওয়ার নূন্যতম সম্ভাবনা থাকলেও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকুন।
আমাদেরকে মনে রাখতে হবেঃ ইসলামি শারিয়াতে একজন মুসলিমের রক্ত ঝরানো অনেক বড় ব্যাপার। ভুলেও যেন একজন মুসলমানের রক্তও প্রবাহিত না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা অবশ্য কর্তব্য। এদেশে তো দীর্ঘদিন থেকে ইসলামের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান কাজ করে চলেছে। এসব ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানের জঘন্য অপরাধসমূহের ব্যাপারে সাধারণ মুসলিম ও মুজাহিদগণ সকলেই অবগত। এ সকল ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠানকে প্রথমে আক্রমণ করে মুসলিম জনগণকে জিহাদের চেতনায় উজ্জীবিত করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ”।
.
২। পাশাপাশি জিহাদের কৌশল প্রণয়ণে শরিয়াহ প্রদত্ত সীমারেখা, এই ভূমির ভৌগলিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট, মুসলিমদের আচরণগত বৈশিষ্ট্য, ইসলামের প্রতি তাদের আবেগ, ইসলামি দলগুলির মানহাজ, আলেম-উলামাদের সমর্থন, তাঁদের আকিদাহ্ ও ফিকহ্, সাধারণের সাথে ইসলাম ও উলামাদের সম্পর্কের উষ্ণতা, জিহাদের মানহাজের উলামা-তলাবা ও সাধারণের দৃষ্টিভঙ্গি, এই ভূমিতে জিহাদের মাধ্যমে শারিয়াহ্ প্রতিষ্ঠার ফরজিয়াতের ব্যাপারে সাধারণের সচেতনতা, তাগূতের সামর্থ্য, এর গোয়েন্দা বাহিনী, র্যাব, পুলিশের সামরিক সামর্থ্যের দৌঁড় এবং সামরিক বাহিনীকে প্রতিহত করার জন্য যথেষ্ট শক্তি সামর্থ্য অর্জন ইত্যাদি বিষয়গুলি খেয়াল রাখা দরকার।
আল্লাহ্ তা’আলা সহজ করুন। আমীন।