JustPaste.it

গণতন্ত্র কাফেরদের ধর্ম

শাইখ আবু হামজা আল-ইরাকী রহ.

 

(মেসোপটেমিয়ায় (ইরাকে) কায়েদাতুল জিহাদের শরিয়া বোর্ডের সদস্য শাইখ আবু হামজা আল ইরাকীর ভাষণ)

 

 

সূচীপত্র

ভূমিকা...............................................................................................4

প্রথম মূলনীতি-..................................................................................... 9

দ্বিতীয় মূলনীতিঃ.................................................................................. 12

অতএব হে মেসোপটেমিয়ার সুন্নীগণ!.......................................................... 15

ভাইয়েরা আমার!.................................................................................. 16

তৃতীয় মূলনীতি.................................................................................... 16

চতুর্থ মূলনীতি..................................................................................... 19

আমাদের মুহাজির ভাইগণ! .....................................................................23

মেসোপটেমিয়ায় কায়েদাতুল জিহাদের আমরা যারা আনসার-. ............................23

হে জাতীয়তাবাদী দলসমূহের প্রচারকগণ-.....................................................23

 

 

ভূমিকা

الحمد لله الذي أنزل على خاتم الأنبياء أكمل كتاب، فاستنارت بآياته قلوب أولي الألباب، وانكشفت به ظلمات الجهل وأسباب العذاب، وتهاوي تحت دلائله كل دستور كذاب، ومشرع مرتاب. والصلاة والسلام على من أخلص العبادة للعزيز الوهاب، الهازم للأحزاب، وصلى الله تعالى عليه، وعلى آله وأصحابه، والتابعين لهم بإحسان إلى يوم الحساب.

সমস্ত প্রশংসা সেই মহান সত্তার জন্য, যিনি সর্বশেষ নবীর ওপর নাযিল করেছেন শ্রেষ্ঠতম কিতাব। অতপর এই কিতাবের আয়াতসমূহের জ্যোতিতে আলোকিত হয়েছে জ্ঞানবানদের হৃদয়, দূর হয়েছে অজ্ঞতার নিকষকালো আঁধার ও আজাবের উপকরণসমূহ। এর দলিলের সামনে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে যাবতীয় অসার নীতিমালা ও মনুষ্য নির্মিত বিধানাবলী।

দুরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক সেই নেতার প্রতি, যিনি মহা পরাক্রমশালী, মহান দাতা আল্লাহ  সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার প্রতি একনিষ্ঠতার সাথে ইবাদত করেছেন এবং কাফেরদের জোটকে করেছেন লাঞ্ছিত৷ আল্লাহ তা‘আলা তার প্রতি, তার পরিবারবর্গ, সাহাবায়ে কেরাম এবং কেয়ামত পর্যন্ত তাদেরকে যারা অনুসরণ করবে তাদের সকলের প্রতি রহমত বর্ষণ করুন।

হামদ ও সালামের পর–

এতে কোন সন্দেহ নেই যে, আমেরিকার একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হল; (প্রতিটি রাষ্ট্রে) গাইরুল্লাহর কাছে বিচার চাওয়ার পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করা। সেক্ষেত্রে মুসলিম ভূমিগুলোতে তা কার্যকর করার জন্য তারা তাগুত শাসকদেরকে তাদের মনুষ্য নির্মিত সংবিধানের নীতিমালা বহন করার বাহন বানিয়েছে। আর এ ফেতনা থেকে একমাত্র সে সকল তাওহীদবাদী মুজাহিদীনরাই মুক্ত, যারা আল্লাহর রাহে জিহাদ করে যাচ্ছেন ও কোন তিরষ্কারকারীর তিরষ্কারে ভীত নন। এটি আল্লাহর অনুগ্রহ-তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন। আল্লাহ প্রাচুর্য দানকারী, মহাজ্ঞানী।

গণতন্ত্রের ফেতনায় প্রবেশ করা ও আইন প্রণয়নমূলক নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে রিদ্দার কালিমায় নিজেকে কলঙ্কিত করে নেয়ার আহবান একটি প্রাচীনতম দাওয়াত। যে দাওয়াত পূর্বেকার কাফেররা সে সময়কার মুমিন নারী-পুরুষদেরকে প্রদান করে বলতো: “তোমরা তোমাদের দ্বীন থেকে ফিরে এসো যেন তোমরা নিজেদের প্রাণ রক্ষা করতে পারো ও নিজেদের ছেলে-সন্তানদের মাঝে নিরাপদে জীবনযাপন করতে পারো।”

তাদের এ বিষয়টি আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে এভাবে বর্ণনা করেছেন -

وَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا لِرُسُلِهِمْ لَنُخْرِجَنَّكُمْ مِنْ أَرْضِنَا أَوْ لَتَعُودُنَّ فِي مِلَّتِنَا

অর্থঃ কাফেররা রাসূলগণকে বলেছিল, আমরা তোমাদেরকে দেশ থেকে বের করে দেব অথবা তোমরা আমাদের ধর্মে ফিরে আসবে। (সূরা ইবরাহীম: ১৩)

তখন সে সকল ধৈর্যশীল মুমিনদের একটাই উত্তর ছিল যে,

قَدِ افْتَرَيْنَا عَلَى اللَّهِ كَذِبًا إِنْ عُدْنَا فِي مِلَّتِكُمْ بَعْدَ إِذْ نَجَّانَا اللَّهُ مِنْهَا وَمَا يَكُونُ لَنَا أَنْ نَعُودَ فِيهَا إِلَّا أَنْ يَشَاءَ اللَّهُ رَبُّنَا وَسِعَ رَبُّنَا كُلَّ شَيْءٍ عِلْمًا عَلَى اللَّهِ تَوَكَّلْنَا رَبَّنَا افْتَحْ بَيْنَنَا وَبَيْنَ قَوْمِنَا بِالْحَقِّ وَأَنْتَ خَيْرُ الْفَاتِحِينَ

অর্থঃ আমরা আল্লাহর প্রতি মিথ্যা অপবাদকারী হয়ে যাব যদি আমরা তোমাদের ধর্মে প্রত্যাবর্তন করি, অথচ তিনি আমাদেরকে এ থেকে মুক্তি দিয়েছেন। আমাদের কাজ নয় এ ধর্মে প্রত্যাবর্তন করা, কিন্তু আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ যদি চান। আমাদের প্রতিপালক প্রত্যেক বস্তুকে স্বীয় জ্ঞান দ্বারা বেষ্টন করে আছেন। আল্লাহর প্রতিই আমরা ভরসা করেছি। হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের ও আমাদের সম্প্রদায়ের মাঝে ফয়সালা করে দিন যথার্থ ফয়সালা। আপনিই শ্রেষ্ঠতম ফয়সালাকারী। (সূরা আরাফ: ৮৯)

উখদুদের শুহাদায়ে কেরামদের বলা হয়েছিল – “তোমরা তোমাদের দ্বীন থেকে ফিরে এসো এবং ‘একটি বাক্যে’ তোমরা আমাদের সাথে সহমত পোষণ করো। তাহলে তোমরা তোমাদের ভূখণ্ডে নিরাপদে বসবাস করতে পারবে”।

তখন উখদুদের শুহাদায়ে কেরাম সেই কুফুরীকে অস্বীকার করেন ও তুচ্ছ বস্তুজগতের মায়াকে প্রত্যাখ্যান করে। তারা আল্লাহর দিকে তাকিয়ে শাস্তির সকল তীব্রতাকে মাথা পেতে সহ্য করে নেন। তাদের কাউকে তখন করাত দ্বারা দ্বিখন্ডিত করা হয়েছিল, কারো মস্তককে কাফেরদের তীর-বর্ষার নিশানা বানানো হয়েছিল, কাউকেবা আগুনে দগ্ধ করা হয়েছিল। তবুও তারা চুল পরিমাণ সরে আসেননি। ফলে তাদের শানে কুরআনুল কারীমের নিম্নোক্ত আয়াতগুলো নাযিল করা হয়, যা কেয়ামত পর্যন্ত তেলাওয়াত করা হবে৷ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন-

قُتِلَ أَصْحَابُ الْأُخْدُودِ (4) النَّارِ ذَاتِ الْوَقُودِ (5) إِذْ هُمْ عَلَيْهَا قُعُودٌ (6) وَهُمْ عَلَى مَا يَفْعَلُونَ بِالْمُؤْمِنِينَ شُهُودٌ (7) وَمَا نَقَمُوا مِنْهُمْ إِلَّا أَنْ يُؤْمِنُوا بِاللَّهِ الْعَزِيزِ الْحَمِيدِ (8)

অর্থঃ অভিশপ্ত হয়েছে গর্ত ওয়ালারা অর্থাৎ, অনেক ইন্ধনের অগ্নিসংযোগকারীরা; যখন তারা তার কিনারায় বসেছিল এবং তারা বিশ্বাসীদের সাথে যা করেছিল, তা নিরীক্ষণ করছিল। তারা তাদেরকে শাস্তি দিয়েছিল শুধু এ কারণে যে, তারা প্রশংসিত, পরাক্রান্ত আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করেছিল। (সূরা বুরুজ: ৪-৮)

এ সকল মুমিনদের পূর্বে ইউসুফ আলাইহিস সালামের সাথেও এরুপ আচরণ করা হয়েছিল। তাকে ব্যাভিচারের দিকে আহবান করা হয়েছিল। তিনি অস্বীকৃতি জানালেন ও সুদৃঢ় থাকলেন। আল্লাহ তা‘আলা তার ইখলাসের বদৌলতে তাকে রক্ষা করলেন। তাগুত তখন তার সামনে দুটি পথের একটি অবলম্বনের অবকাশ রেখেছিল; হয়তো ব্যাভিচারে লিপ্ত হওয়া নয়তো কারাগারের তিক্ততা ও অন্ধকার বন্দিশালার স্বাদ আস্বাদন করা। ব্যাভিচারের তুলনায় কারাবরণকেই তিনি তখন নিজের জন্য বেছে নিয়েছিলেন।

তাহলে ঐ ব্যক্তির কি করণীয়, যাকে গুনাহ ও কারাবরণ নয়; বরং কুফুরী ও বন্দিত্বের মাঝে একটিকে বেছে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে? আর ঐ ব্যক্তিরই বা কী হুকুম হবে, যে স্বেচ্ছায় কুফুরীকে বেছে নেয় এবং তাগুতদের শাসনে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে?

শাইখ সা‘দী রহ. "আল ফাওয়াইদুল মুসতাম্বিতাতু মিন কিসসাতি ইউসুফ" নামক প্রবন্ধে লিখেন: “ইউসুফ আলাইহিস সালামের ঘটনা থেকে শিক্ষা হচ্ছে-

ইউসুফ আলাইহিস সালাম গুনাহের উপড় কারাবরণকেই প্রাধান্য দিয়েছেন৷ এভাবে বান্দা যখন পাপাচারে লিপ্ত হওয়া ও পার্থিব শাস্তি ভোগ করা; এ দুয়ের পরীক্ষায় নিপতিত হবে, তখন তার উচিত হবে - পার্থিব শাস্তিকেই এমন গুনাহের ওপর প্রাধান্য দেওয়া, যে গুনাহের দ্বারা দুনিয়া ও আখেরাতে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে”। এ কারণেই ঈমানের লক্ষণগুলোর মধ্যে অন্যতম একটা লক্ষণ হচ্ছে - আল্লাহ তা‘আলা কোন বান্দাকে কুফুরী থেকে উদ্ধার করার পর কুফুরীতে ফিরে যাওয়া তার নিকট এমন অপছন্দ হবে, যেমন অপছন্দ হয় আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়া৷”

এ আলোচনায় আসন্ন নির্বাচনের হুকুমও পরিষ্কারভাবে উঠে এসেছে। এই নির্বাচন আসলে রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গরা খুশি হয়ে থাকে। অথচ তারা জানে যে, বিধান প্রণয়ন করা ঈমান ভঙ্গের একটি মৌলিক কারণ ও আল্লাহর দ্বীনের সাথে সাংঘর্ষিক। তারা (প্রণয়নকারীরা) নিজেদেরকে নভোমণ্ডল ভূমণ্ডলের একচ্ছত্র অধিপতি আল্লাহ তা‘আলার সমকক্ষ বানিয়ে নেয়৷ অথচ এ ধরণের জীবনবিধান রচনার অধিকার কোন মানুষের নেই৷ বিধান প্রণয়ন করা হচ্ছে প্রভুত্বের বৈশিষ্ট্য, যা শুধুমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার ইচ্ছাধীন। আর এই জালিমরা বিধান প্রণয়নের মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার সাথে প্রতিযোগিতায় নামতে চায়৷

একথা স্পষ্ট যে- কোন ব্যক্তি প্রাণ সৃষ্টি করা, রিজিক প্রদান করা, জীবন দান করা, প্রাণ হরণ করা ইত্যাদি বিষয়সমূহের ব্যবস্থাপনা করার দাবী করলে সে নিজেকে আল্লাহ তা‘আলার সমকক্ষ দাবি করছে বলে ধরা হবে। অনুরুপভাবে কোন ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার সাথে নিজেকেও বিধান প্রণয়নকারী বানিয়ে নিলে তার অপরাধ নমরুদ বা ফেরাউনের অপরাধের চাইতে কেন অংশে কম নয়। আল্লাহ তা‘আলা সূরা তাওবাহতে বলেনঃ

اتَّخَذُوا أَحْبَارَهُمْ وَرُهْبَانَهُمْ أَرْبَابًا مِنْ دُونِ اللَّهِ وَالْمَسِيحَ ابْنَ مَرْيَمَ وَمَا أُمِرُوا إِلَّا لِيَعْبُدُوا إِلَهًا وَاحِدًا لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ سُبْحَانَهُ عَمَّا يُشْرِكُونَ

অর্থঃ তারা তাদের পন্ডিত ও সংসার-বিরাগীদিগকে তাদের পালনকর্তারূপে গ্রহণ করেছে আল্লাহ ব্যতীত এবং মরিয়মের পুত্রকেও। অথচ তারা আদিষ্ট ছিল একমাত্র মাবুদের এবাদতের জন্য। তিনি ছাড়া কোন মাবুদ নেই, তারা তাঁর শরীক সাব্যস্ত করে, তার থেকে তিনি পবিত্র। (সূরা তাওবাহ, আয়াত: ৩১)

ইমাম কুরতুবী রহ. বলেনঃ “এর অর্থ হচ্ছে, তারা আল্লাহ তা‘আলা যা হারাম করেননি কিন্তু পণ্ডিতরা হারাম করেছে সেটাকে হারাম বলে মেনে নিয়েছে। আর আল্লাহ তা‘আলা যা হালাল করেছেন কিন্তু পণ্ডিতরা হারাম ঘোষণা করেছে, অতঃপর তারা সেই হারাম ঘোষণাকে মেনে নিয়েছে। এভাবে পণ্ডিতদের আদেশ মেনে নেওয়ার মাধ্যমে তাদেরকে রবের মর্যাদা প্রদান করেছে৷”

এ পর্যায়ে আমাদের উচিত কিছু মূলনীতি জেনে নেওয়া। এই মূলনীতিগুলো এমন যা থেকে মুজাহিদীনরা আলো গ্রহণ করবে। ইনশাআল্লাহ এই মূলনীতিগুলো এমন সুস্পষ্ট নিদর্শন হবে যার ওপর ভিত্তি করে একত্ববাদীরা পথ চলবে৷

প্রথম মূলনীতি-

ইসলামী শরীয়তই একমাত্র সঠিক ধর্ম। এটা ছাড়া বাকি সবই বাতিল ও বিবর্জিত। এই বাতিল ধর্মগুলোর মধ্যে গণতন্ত্র অন্যতম।

আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি যে, আল্লাহর নিকট মনোনীত ধর্ম হচ্ছে একমাত্র ইসলাম। আর এটাই সমস্ত নবী রাসুলদের ধর্ম৷ তাই আল্লাহ তা‘আলা ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্মকে মেনে নিবেন না ও তাঁর প্রদত্ত শরীয়ত ছাড়া অন্য শরীয়তে তিনি আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হবেন না। এ কারণেই আল্লাহ তা‘আলা ধার্য করে দিয়েছেন যে, বিশ্বময় একমাত্র ইসলাম ধর্মই হবে বিজয়ী ধর্ম, এছাড়া বাকি সকল ধর্ম হবে বশীভূত বা পরাভূত৷ আল্লাহ তা‘আলা বলেন-

هُوَ الَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدَى وَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَكَفَى بِاللَّهِ شَهِيدًا

অর্থঃ তিনিই তাই রাসূলকে হেদায়েত ও সত্য ধর্মসহ প্রেরণ করেছেন, যাতে একে অন্য সমস্ত ধর্মের ওপর জয়যুক্ত করেন। সত্য প্রতিষ্ঠারূপে আল্লাহ যথেষ্ট। (সূরা ফাতহ: ২৮)

আর এ ওয়াদা কিছুতেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না যতক্ষন না কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করা হয় এবং তাদেরকে আল্লাহর হুকুমের সামনে আত্মসমর্পণ করানোর জন্য তাদের হাতে হাতকড়া পড়ানো হয়।

ভাইয়েরা!

ইসলাম হচ্ছে মহান রাব্বুল আলামীনের শরীয়ত, যার জন্যে আমরা অস্ত্র ধরি এবং যা প্রতিরক্ষা ও বাস্তবায়ন করার জন্য আমরা জিহাদ করি।

যেহেতু গণতন্ত্র আল্লাহ তা‘আলার শরীয়তের সাথে সাংঘর্ষিক, তাই আমরা গণতন্ত্র ও গণতন্ত্রের শরীয়ত তথা সংবিধানকে ও তার সেই আইন-বিধিকে প্রত্যাখ্যান করার ব্যপারে আদেশপ্রাপ্ত। এই গণতন্ত্রের অধীনে আল্লাহর শরীয়তকে নিষ্ক্রিয় বা সম্পূর্ণরূপে রহিত করে দেওয়া হয় এবং মানুষকে আইন প্রণয়নের সুযোগ দিয়ে তাকে সৃষ্টিকর্তার মর্যাদায় অভিষিক্ত করা হয়।

আইন প্রণয়নে আল্লাহ তা‘আলার অংশীদার হওয়া একটি স্পষ্ট কুফুরী ও জঘন্য মাত্রার শিরক। যে বা যারা এই গণতান্ত্রিক আকিদা পোষণ করবে বা তার দিকে মানুষদের দাওয়াত দিবে বা তদনুযায়ী বিচার করবে সে মুরতাদ কাফের। যদি সে নামাজ পড়ে, রোজা রাখে ও নিজেকে মুসলমান বলে ধারণা করে তবুও সে মুরতাদ কাফের।

আল্লাহর পথে জিহাদ করা ছাড়া এ ফেতনার মূলোৎপাটনের আমরা আর কোন পথই দেখতে পাই না। নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও পার্লামেন্টে প্রবেশ করাও কোন পথ নয়। কারণ এই সাংসদরাই আল্লাহ তা‘আলা যা হালাল করেছেন তা হারাম করে ও আল্লাহ তা‘আলা যা হারাম করেছেন তা হালাল করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-

وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّى لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ كُلُّهُ لِلَّهِ فَإِنِ انْتَهَوْا فَإِنَّ اللَّهَ بِمَا يَعْمَلُونَ بَصِيرٌ

অর্থঃ আর তোমরা তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক যতক্ষণ না ভ্রান্তি শেষ হয়ে যায়; এবং আল্লাহর সমস্ত হুকুম প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। তারপর যদি তারা বিরত হয়ে যায়, তবে আল্লাহ তাদের কার্যকলাপ লক্ষ্য করেন। (সূরা আনফাল: ৩৯)

আয়াতে উল্লেখিত كله}} (সমস্ত) শব্দটি সে সকল লোকদের দাবিসমূহের খণ্ডন করে দেয়, যারা বলে যে, আমাদের সংবিধানের নীতিমালায় ও আমাদের আইন প্রণয়নে ইসলামের একটি বড় অংশ রয়েছে। আমাদের আইন প্রণয়নের উৎস সমূহের মধ্যে ইসলাম একটি অন্যতম উৎস।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেনঃ “যখন আল্লাহর কিছু হুকুম প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পাশাপাশি গাইরুল্লাহর হুকুম প্রতিষ্ঠিত থাকবে বা হবে, তখন লড়াই করা ওয়াজিব, যেন আল্লাহর সমস্ত হুকুম প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়।”

শাইখুল মুজাহিদীন শাইখ ওসামা বিন লাদেনও রহ. এ বিষয়টি স্থির করেছেন। তিনি বলেছেনঃ “যদি তর্কের খাতিরে আমরা মেনেও নিই যে, একশো ভাগের নব্বই ভাগ বিধি-বিধানের উৎস হচ্ছে ইসলাম ও একশো ভাগের দশ ভাগের উৎস হচ্ছে মানব-রচিত আইন, তবুও এ সংবিধান ইসলামের মানদণ্ডে কুফুরী সংবিধান বলেই পরিগণিত হবে। সে হিসেবে যে কেউই এ সকল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে সে আল্লাহর সাথে কুফুরী করে বসলো। ওয়া  লা হাউলা ওলা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। সে সকল প্রবঞ্চকদের প্রবঞ্চনা থেকে খুব সতর্ক অবস্থান গ্রহণ করতে হবে, যারা ইসলামি জোট ও সংগঠনের কথা বলে থাকে ও লোকদেরকে এ ধর্মহীনতায় অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করে থাকে।”

দ্বিতীয় মূলনীতিঃ

নির্বাচনই হচ্ছে বর্তমান সংকট থেকে সুন্নীদের রক্ষাকরণের উৎকৃষ্টতর উপায়–একটি ভ্রান্ত ও ভিত্তিহীন কথা।

বর্তমানে ইসলামের লেবাস পড়ে থাকে এমন কিছুসংখ্যক মানুষ প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে। তারা মহান রাব্বুল আলামীনের শরীয়তের প্রতি অপবাদ ও মিথ্যা চাপিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে আমাদের বিরোধিতা করে যাচ্ছে। তারা দাওয়াত প্রদান, রক্তপাত বন্ধকরণ, জাতীয় সংলাপকে গৌরবান্বিতকরণ ও কাফের শিয়াদের নীতিমালার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের স্বার্থে - কূটনৈতিক কর্মকাণ্ডকে দলীল বানিয়ে - সুন্নীদের জন্য শিরকি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার বৈধতা দিয়েছে। তারা বলে থাকে যে, সুন্নীরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা ব্যতীত দখলদার আমেরিকাকে বের করা যাবে না।

আমরা বিশ্বের সকল মানুষদের উদ্দেশ্য করে বলছি-

আমাদের আকিদা হচ্ছে- আমরা বিশ্বাস করি এ সকল ফেতনা থেকে বেরিয়ে আসার একটাই পথ। আর তা হচ্ছে, আল্লাহর পথে লড়াইয়ে অটল থাকা। তাই এ যুগে মুসলমানদের ইজ্জত পূনরায় ফিরিয়ে আনার সঠিক রাস্তা হচ্ছে- সকল তাগুতদের হত্যা করা, কাফেরদের সকল প্রতিমাকে ভেঙ্গে চূর্ণ-বিচূর্ণ করা। এই প্রতিমাগুলোর মধ্যে আছে- ন্যাশনাল এসোসিয়েশন, পার্লামেন্টারী পরিষদ, শিরকি নির্বাচনী সেন্টার সমূহ, পৌত্তলিকতার মন্দির সমূহ ইত্যাদি। এ সকল সমকালীন প্রতিমাদের সাথে আমাদের আচরণ কেমন হবে সে ব্যাপারে আমরা আমাদের জাতির পিতা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর অনুসারী। তিনি স্বজাতিকে বলেছিলেন-

وَتَاللَّهِ لَأَكِيدَنَّ أَصْنامَكُمْ بَعْدَ أَنْ تُوَلُّوا مُدْبِرِينَ

অর্থঃ আল্লাহর কসম, যখন তোমরা পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে চলে যাবে, তখন আমি তোমাদের মূর্তিগুলোর ব্যপারে একটা ব্যবস্থা অবলম্বন করব। (সূরা আম্বিয়া: ৫৭)

আর দাউদ আলাইহিস সালাম স্বহস্তে জালূতকে হত্যা করার পরই তাকে ক্ষমতা ও ইলম দান করা হয়েছিল। যেমনটি আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ

وَقَتَلَ دَاوُودُ جَالُوتَ وَآتَاهُ اللَّهُ الْمُلْكَ وَالْحِكْمَةَ وَعَلَّمَهُ مِمَّا يَشَاءُ وَلَوْلَا دَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُمْ بِبَعْضٍ لَفَسَدَتِ الْأَرْضُ وَلَكِنَّ اللَّهَ ذُو فَضْلٍ عَلَى الْعَالَمِينَ

অর্থঃ এবং দাউদ জালূতকে হত্যা করল। আর আল্লাহ দাউদকে দান করলেন রাজ্য ও অভিজ্ঞতা। আর তাকে যা চাইলেন শিখালেন। আল্লাহ যদি একজনকে অপরের দ্বারা প্রতিহত না করতেন, তাহলে গোটা দুনিয়া বিধ্বস্ত হয়ে যেত। কিন্তু বিশ্ববাসীর প্রতি আল্লাহ একান্তই দয়ালু, করুণাময়। (সূরা বাকারা: ২৫১)

সুতরাং মুসলমানগণ নির্বাচনের অন্তরালে কোন্ সম্মানের প্রতীক্ষায় বসে আছে? ভোট আদান-প্রদানের মাধ্যমে তারা কোন ক্রুসেডারদের পরাস্ত করবে? এই সকল নির্বাচিত নেতা ও নেত্রীবৃন্দ আবু গারিব ও অন্যান্য নির্জন বন্দিশালার সেলে আবদ্ধ কোন্ ইরাকি মুসলিম বোনকে মুক্তি দেবে?

আমেরিকা, আমেরিকান বাহিনী এবং ইরাকে তাদের অন্যতম সহযোগী শিয়াদেরকে দমন করতে হলে প্রাচীনকালের তরবারি ও সালফে সালেহীনদের দেখানো পথ - জিহাদ ছাড়া আর কোন পথ নেই। ইসলামি খেলাফত আনতে হলে আমাদেরকে নিজেদের মাথার খুলি স্বহস্তে অবলীলায় এ দ্বীনের পথে পেশ করতে হবে। আমাদের পূর্বপুরুষ তথা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সে সকল সাহাবীদের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে হবে যারা শহরের পর শহর, দেশের পর দেশ বিজয় করেছিলেন ও সেগুলোকে দ্বীনের সুমহান শিক্ষায় দীক্ষিত করেছিলেন। নিজেদের জান কুরবান ও সাহাবিদের অনুসরণ ব্যতিত ইসলামী খেলাফত কায়েম সম্ভব না। আল্লাহ তা‘আলা বলে

قَاتِلُوهُمْ يُعَذِّبْهُمُ اللَّهُ بِأَيْدِيكُمْ وَيُخْزِهِمْ وَيَنْصُرْكُمْ عَلَيْهِمْ وَيَشْفِ صُدُورَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ

অর্থঃ যুদ্ধ কর ওদের সাথে, আল্লাহ তোমাদের হস্তে তাদের শাস্তি দেবেন। তাদের লাঞ্ছিত করবেন, তাদের বিরুদ্ধে তোমাদের জয়ী করবেন এবং মুসলমানদের অন্তরসমূহ শান্ত করবেন। (সূরা তাওবাহ: ১৪)

অতএব হে মেসোপটেমিয়ার সুন্নীগণ!

এখন মূল কাজ হচ্ছে ক্রুসেডার আমেরিকা ও তাদের দোসর–পাপিষ্ঠ কাফের শিয়াদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য ধারালো তরবারি ধারণ করা। আল্লাহর কসম করে বলছি, নির্বাচনী কার্ড তাদের মনে কোন শঙ্কাই তৈরী করতে পারে না। মিনিস্টিরিয়াল পোর্টফোলিওর সাহায্যে তাদেরকে কিছুতেই তোমাদের ভূখণ্ড থেকে বের করতে পারবে না! শাহাদাত প্রত্যাশী মুজাহিদদের বজ্র হুংকার ও ক্রুসেডারদের আস্তানায় আক্রমণ একমাত্র তাদের মনে কাঁপুনির ঝড় তুলতে পারে।

ভাইয়েরা আমার!

এ বলিষ্ঠ আয়াতটি নিয়ে আরেকবার ভাবুন

قَاتِلُوهُمْ يُعَذِّبْهُمُ اللَّهُ بِأَيْدِيكُمْ وَيُخْزِهِمْ وَيَنْصُرْكُمْ عَلَيْهِمْ وَيَشْفِ صُدُورَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ

আয়াতটির একটি ভাষাগত সূক্ষ্মতা হচ্ছেঃ বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কালসূচক ক্রিয়া {يعذب} কে বদ্ধ উচ্চারণ চিহ্ন–জযম দেওয়া হয়েছে, কেননা তা আদেশসূচক ক্রিয়ার প্রত্যুত্তরে এসেছে। (অর্থাৎঃ এ ক্রিয়াটি তখনই অস্তিত্ব লাভ করবে, যখন আদিষ্ট ক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হবে)। আরেকটি বিষয় হল, জযম শব্দের অর্থই হচ্ছে নিশ্চিত বুঝানো।

সুতরাং কিতাল ও জিহাদ না থাকলে কাফেরদের পতাকা সমুন্নত হয়ে যাবে, নাউজুবিল্লাহ। কিতাল হচ্ছে আল্লাহ প্রদত্ত এমন একটি বিধান, যার একটি শরয়ী উদ্দেশ্য ও নির্দিষ্ট ভাষাগত অর্থ রয়েছে। তাই কুরআনে বর্ণিত কিতাল শব্দটিকে অন্য কোন নকল অর্থে ব্যবহার করার কোনই অবকাশ নেই। যেমনঃ ইরাকি দলগুলোর সাথে রাজনৈতিক সংলাপ করা, নির্বাচনে ভোট প্রদান করা বা ইরাকের স্বার্থ ও প্রতিরোধের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রয়োজনীয়তাকে কখনোই কিতাল বলে সাব্যস্ত করা যাবে না।

তৃতীয় মূলনীতি

প্রতিটি মুসলমানের দায়িত্ব হচ্ছে সংবিধানের নীতিমালা নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করা ও সেগুলোকে ইসলামের নিক্তিতে পরিমাপ করা।

যাদের দূরদৃষ্টি ও চিন্তাশক্তি এখনো ঠিক আছে তাদের জন্য এই সংবিধানে অনেক চিন্তার খোরাক রয়েছে। “আইন প্রণয়নের ক্ষমতা একমাত্র সংসদের” শুধুমাত্র এই ধারাটাই স্পষ্ট কুফুরী ও প্রকাশ্য শিরকের জন্য যথেষ্ট। কেননা আল্লাহর কিতাব–কুরআনুল কারীম ও রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত–হাদিসই হচ্ছে আল্লাহ তা‘আলার একমাত্র নাযিলকৃত ওহী। আর আইন প্রণয়ন করা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার বৈশিষ্ট্য। এ বিশিষ্টতায় আল্লাহ তা‘আলার সাথে অংশীদার হওয়া বিরাট কুফুরী ও মস্তবড় অপরাধ। আল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ

أَمْ لَهُمْ شُرَكَاءُ شَرَعُوا لَهُمْ مِنَ الدِّينِ مَا لَمْ يَأْذَنْ بِهِ اللَّهُ

অর্থঃ তাদের কি এমন শরীক দেবতা আছে, যারা তাদের জন্য সে ধর্ম সিদ্ধ করেছে, যার অনুমতি আল্লাহ দেননি? (সূরা শূরা: ২১)

অন্যত্র বলে

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ذَلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا

অর্থঃ হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা বিচারক তাদের। তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর-যদি তোমরা আল্লাহ ও কেয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক। আর এটাই কল্যাণকর এবং পরিণতির দিক দিয়ে উত্তম। (সূরা নিসা: ৫৯)

তারা আরেকটি কথা বলে থাকে সেটি হচ্ছে- “গণতন্ত্র সর্বোচ্চ ক্ষমতার মালিক। এর উপরে আর কোন ক্ষমতা নেই এবং গণতন্ত্রে সার্বভৌমত্ব চলে জনগণের”–এটাও দিবালোকের চাইতে অধিক সুস্পষ্ট কুফুরী। বাক্যটি আল্লাহ তা‘আলার এ আয়াতের সাথে সাংঘর্ষিক। তিনি বলেন-

وَهُوَ الْقَاهِرُ فَوْقَ عِبَادِهِ وَهُوَ الْحَكِيمُ الْخَبِيرُ

অর্থঃ তিনিই পরাক্রান্ত স্বীয় বান্দাদের ওপর। তিনিই জ্ঞানময়, সর্বজ্ঞ। (সূরা আনআম: ১৮)

অন্যত্র বলেন-

أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ تَبَارَكَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ

অর্থঃ শুনে রেখ, তাঁরই কাজ সৃষ্টি করা ও আদেশ দান করা। (সূরা আরাফ: ৫৪)

তাই বান্দার উপর কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা পরম প্রতাপশালী আল্লাহ তা‘আলার বৈশিষ্ট্য। সম্ভবত ইউসুফ আলাইহিস সালামের মুখে আল্লাহ তা‘আলার নাম القهار (পরম প্রতাপশালী) উচ্চারিত হওয়ার প্রকৃত কারণ এটাই ছিল। তিনি কারাবন্দী থাকাকালীন সময়ে কারাবন্দীদেরকে সে সময়কার বিধানদাতা দেবতাদের ইবাদতের ভয়াবহতা সম্পর্কে নসিহত করে বলেছিলেন-

يَا صَاحِبَيِ السِّجْنِ أَأَرْبَابٌ مُتَفَرِّقُونَ خَيْرٌ أَمِ اللَّهُ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ

অর্থঃ হে কারাগারের সঙ্গীরা! পৃথক পৃথক অনেক উপাস্য ভাল, না পরাক্রমশালী এক আল্লাহ? (সূরা ইউসুফ: ৩৯)

বর্তমান পৃথিবী গণতন্ত্র নামক এক ভয়াবহ ফেতনায় আক্রান্ত। আর এই ফেতনা প্রচারে সাহায্য করছে মুসলিম নামধারী এক শ্রেণীর লোক। তারা ভোট প্রদানকে হালাল ঘোষণা করেছে। তারা লোকদেরকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ ও পরবর্তীতে সংসদে সংবিধান রচনার মত কুফুরি কাজের দাওয়াত দিয়ে বেড়াচ্ছে। এরা জাহান্নামের দরজায় দাঁড়িয়ে ফেতনার দিকে লোকদের আহবান করছে এবং সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশ্রণ ঘটাচ্ছে। এরা জেনে-শুনে সত্যকে গোপন করছে।

চতুর্থ মূলনীতি

উম্মাহর বৃহত্তর মঙ্গলের স্বার্থে যদি কোন নিষিদ্ধ কাজের অনুমোদন প্রদান করা হয় তবে সে স্বার্থ অবশ্যই শরীয়ত কর্তৃক সমর্থিত হতে হবে; মানব বিবেক কর্তৃক নয়।

গণতন্ত্রকামীদের নিকট জনগণই সার্বভৌমত্বের মালিক। এ শাসনব্যবস্থায় জনগণ এমন এক মাবুদ যাকে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা প্রদান করা হয়। তাই গণতন্ত্রের বাস্তবতা হচ্ছে এই যে, তাতে আল্লাহ তা‘আলাকে বাদ দিয়ে মানুষদেরকে আইন প্রণয়নকারী রব নির্ধারণ করা হয়। সুতরাং এ কথা এখন প্রমাণিত যে, নির্বাচন হচ্ছে সেই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যম সমূহের একটি মাধ্যম এবং এটাতে অংশগ্রহণ যুগের সবচাইতে বড় শিরকের মধ্যে একটি। আমাদের জেনে রাখা উচিত যে, কোন অন্যায় বা গুনাহের কাজ যে মাধ্যমে করা হবে এবং মূল অন্যায় কাজ বা গুনাহের ক্ষেত্রে বিধান একই হয়ে থাকে। অর্থাৎ গুনাহের জন্য যে শাস্তির বিধান, গুনাহের মাধ্যমের জন্য শাস্তির বিধান একই। সে হিসেবে নির্বাচন অবশ্যই একটি বড় শিরক। বরংচ তা সে সমস্ত অকাট্য হারাম সমূহের একটি, যেগুলো আবশ্যক, অনাবশ্যক ও মঙ্গলের স্বার্থে ইত্যাদি কোন সময়ই বৈধতা লাভ করে না।

কিছু কিছু হারাম কাজ এমন রয়েছে, যেগুলোকে বিশেষ দলিলের ভিত্তিতে এক পরিস্থিতিতে বৈধতা দেওয়া হলেও অন্য পরিস্থিতিতে বৈধতা দেওয়া হয় না। কেননা কতিপয় গুনাহ কেবলমাত্র নেক নিয়তের দ্বারাই বৈধ হয়ে যায় না; বরং তা বৈধতা লাভ করতে বিশেষ শরয়ী দলিলের দরকার হয়।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. এ দু’প্রকারের মাঝে পার্থক্য বর্ণনা করেছেন। তিনি তার "মাজমূ‘উল ফাতাওয়া" কিতাবের চৌদ্দতম খণ্ডে বলেনঃ

“শরীয়তের হারাম ও নিষিদ্ধ কাজ সমূহ দু’ধরণের; এক হচ্ছে এমন কাজ, প্রয়োজন অপ্রয়োজন কোন অবস্থাতেই শরীয়ত যার বৈধতা দেয় না। যেমনঃ শিরক করা, অশ্লীল কর্মকাণ্ড করা, না জেনে আল্লাহর প্রতি কোন কথা আরোপ করা এবং অন্যায়-অত্যাচার করা। আর এগুলোর ব্যাপারে দলীল হচ্ছে কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াত-

قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالْإِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَأَنْ تُشْرِكُوا بِاللَّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِ سُلْطَانًا وَأَنْ تَقُولُوا عَلَى اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ

অর্থঃ আপনি বলে দিন, আমার পালনকর্তা কেবলমাত্র অশ্লীল বিষয়সমূহ হারাম করেছেন–যা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য এবং হারাম করেছেন গোনাহ, অন্যায়-অত্যাচার, আল্লাহর সাথে এমন বস্তুকে অংশীদার করা, তিনি যার কোন সনদ অবতীর্ণ করেননি এবং আল্লাহর প্রতি এমন কথা আরোপ করা, যা তোমরা জান না। (সূরা আরাফ: ৩৩)

এ চারটি কাজ সকল শরীয়তেই নিষিদ্ধ ছিল। আল্লাহ তা‘আলা সকল রাসূলদেরকেই এগুলোর নিষিদ্ধতার বিধান দিয়ে প্রেরণ করেছেন। এগুলোর একটিও কোনকালে এবং কোন অবস্থাতেই বৈধ ছিল না। এ কারণেই এ আয়াতটিকে নাযিল করা হয়েছে মাক্কি সূরার মাঝে।”

হে মুসলমানেরা! যারা সুন্নীদেরকে সংবিধানের ফেতনায় দীক্ষিত করানোর দাওয়াত দেওয়ার গুরুদায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছে, আমরা আমাদের এ ভাষণে তাদেরকে লক্ষ্য করে বলবো:

মেসোপটেমিয়ায় আমাদের এ জিহাদটি গোটা উম্মাহর জিহাদ। এটি আঞ্চলিক কোন জিহাদ নয়। আমরা এ পথকে বেছে নিয়েছি। আমরা আনসার, আমাদের সাথে রয়েছেন আমাদের মুহাজির ভাইগণ। আজ আমরা ইরাকে জিহাদ করছি। আগামীকাল জিহাদ করব সৌদিতে। পরশু মরক্কোতে। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছে

الجهاد ماض في وفي أمتي إلى قيام الساعة

অর্থঃ আমার ও আমা উম্মতের মাঝে জিহাদ কেয়ামত পর্যন্ত জারী থাকবে।

আমাদের শাইখ ও আমীর আবু মুসা‘আব আয-যারকাবী হাফিজাহুল্লাহ। তিনি আজ মেসোপটেমিয়ায় জিহাদের পতাকা উত্তোলন করেছেন। আল্লাহর ইচ্ছায় আমরা তার সাথে ধৈর্য্যসহকারে অটল রয়েছি। এখন যদি তিনি মারা যান বা শহীদ হয়ে যান তাহলে কিছুতেই আমরা পিছু হঠবো না ও তার অনুপস্থিতিতে জিহাদকে ছেড়ে দিব না; বরং আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থণা করি যে, তিনি যেন আমাদেরকে এ কাজে অবিচল রাখেন। কেননা আমরা বিশ্বাস করি যে, জিহাদ এমন একটি ইবাদত, আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে যার নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা সূরা আলে ইমরানে বলেছেন-

وَمَا مُحَمَّدٌ إِلَّا رَسُولٌ قَدْ خَلَتْ مِنْ قَبْلِهِ الرُّسُلُ أَفَإِنْ مَاتَ أَوْ قُتِلَ انْقَلَبْتُمْ عَلَى أَعْقَابِكُمْ وَمَنْ يَنْقَلِبْ عَلَى عَقِبَيْهِ فَلَنْ يَضُرَّ اللَّهَ شَيْئًا وَسَيَجْزِي اللَّهُ الشَّاكِرِينَ

অর্থঃ আর মুহাম্মদ একজন রসূল বৈ তো নয়! তাঁর পূর্বেও বহু রসূল অতিবাহিত হয়ে গেছেন। তিনি যদি মৃত্যুবরণ করেন অথবা নিহত হন, তবে কি তোমরা পশ্চাদপসরণ করবে? বস্তুতঃ কেউ যদি পশ্চাদপসরণ করে, তবে তাতে আল্লাহর কিছুই ক্ষতি-বৃদ্ধি হবে না। আর যারা কৃতজ্ঞ, আল্লাহ তাদের সওয়াব দান করবেন। (সূরা আল ইমরান: ১৪৪)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন যায়েদ বিন হারেছা রাযিয়াল্লাহু আনহুকে "মুতা" যুদ্ধে মুসলিম সেনাদলের আমির নিযুক্ত করলেন তখন তিনি তাদেরকে বলেছিলেন

فإن قتل زيد؛ فجعفر، وإن قتل جعفر؛ فعبد الله بن رواحة

অর্থঃ “যদি যায়েদ শহীদ হয়ে যায় তাহলে (আমির নিযুক্ত হবে) জা‘ফর, যদি জা‘ফর শহীদ হয়ে যায় তাহলে (আমির নিযুক্ত হবে) আব্দুল্লাহ বিন রাওয়াহা।”

আমাদের মুহাজির ভাইগণ!

তারা আমাদের দৃষ্টির সামনে থাকে। তাদের সাথে আমরা আমাদের জীবনকে ভাগাভাগি করে নিয়েছি। আমাদের হৃদয় তাদের বিশ্রামস্থল। তারা আমাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ, কেননা তারা হিজরতের মাধ্যমে আমাদের অগ্রগামী হয়ে গিয়েছেন। আমরা ও তারা পরস্পরে ইসলামের ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ। আমরা আমাদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি ও আমাদের এ জিহাদে আল্লাহ তা‘আলার ওপর তাওয়াক্কুল করেছি। আমাদের ও তাদের মাঝে কেউ বিভাজন তৈরী করতে পারবে না ইনশাআল্লাহ, যেমনটির কথা বলে থাকে জাতীয়তাবাদী প্রচারকগণ।

মেসোপটেমিয়ায় কায়েদাতুল জিহাদের আমরা যারা আনসার-

আমাদের ওপর একটি শরয়ী দায়িত্ব রয়েছে। আর তা হচ্ছে এ জিহাদের পথে ধৈর্যের সাথে মোকাবেলা করে অগ্রসর হওয়া এবং প্রত্যেক এমন ভাইকে স্বাগত জানানো, যিনি আপন ভূমি পরিত্যাগ করে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের দিকে হিজরত করে চলে এসেছেন। শাহাদাতকামী মুহাজির ভাইদের স্কোয়াড্রন ছাড়াও শাহাদাতকামী ইরাকি আনসার ভাইদেরও স্কোয়াড্রন তৈরী করা হয়েছে।

হে জাতীয়তাবাদী দলসমূহের প্রচারকগণ-

আল্লাহর ইচ্ছায় তোমরা কিছুতেই আমাদের (আল্লাহ প্রদত্ত) নুসরতের ফল ছিঁড়ে নিতে পারবে না। কেননা জিহাদ আমরা করছি; তোমরা নও। ইজ্জত আমাদের; তোমাদের নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-

وَلَيَنْصُرَنَّ اللَّهُ مَنْ يَنْصُرُهُ إِنَّ اللَّهَ لَقَوِيٌّ عَزِيزٌ

অর্থঃ আল্লাহ নিশ্চয়ই তাদেরকে সাহায্য করেন, যারা আল্লাহকে সাহায্য করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী শক্তিধর। (সূরা হজ্জ্ব: ৪০)

আমাদের প্রতিপালক তাঁর কথা সত্যে পরিণত করেছেন।

وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنْكُمْ وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُمْ فِي الْأَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِمْ وَلَيُمَكِّنَنَّ لَهُمْ دِينَهُمُ الَّذِي ارْتَضَى لَهُمْ وَلَيُبَدِّلَنَّهُمْ مِنْ بَعْدِ خَوْفِهِمْ أَمْنًا يَعْبُدُونَنِي لَا يُشْرِكُونَ بِي شَيْئًا وَمَنْ كَفَرَ بَعْدَ ذَلِكَ فَأُولَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ

অর্থঃ তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তাদেরকে অবশ্যই পৃথিবীতে শাসনকর্তৃত্ব দান করবেন। যেমন তিনি শাসনকর্তৃত্ব দান করেছেন তাদের পূর্ববর্তীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই সুদৃঢ় করবেন তাদের ধর্মকে, যা তিনি তাদের জন্য পছন্দ করেছেন এবং তাদের ভয়-ভীতির পরিবর্তে অবশ্যই তাদেরকে শান্তি দান করবেন। তারা আমার ইবাদত করবে এবং আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না। এরপর যারা অকৃতজ্ঞ হবে তারাই অবাধ্য। (সূরা নূর: ৫৫)

হে আল্লাহ! আপনি কল্যাণময় ও সম্মানিত এই জাতিকে শাসন করার ও নেতৃত্ব প্রদান করার তাওফীক দান করুন এবং মুসলমানদের ইজ্জত ও সম্মান পুনরায় ফিরিয়ে দিন।

হে আল্লাহ! কাফেরদের ষড়যন্ত্র, মুনাফিকদের প্রতারণা ও সংবিধানের প্রতি দাওয়াতদাতা-পথভ্রষ্টকারীদের ষড়যন্ত্রগুলো মুসলমানদের সামনে উন্মোচিত করে দিন ।

হে আল্লাহ! আপনি আপনার খাঁটি বান্দাদেরকে বিপথগামীদের ফেতনা থেকে হেফাজত করুন। মেসোপটেমিয়াসহ সকল ভূখণ্ডের সুন্নীদের সিরাতুল মুস্তাকীমের পথে পরিচালিত করুন ও সঠিক মানহাজের ওপর অটল রাখুন। আইন প্রণয়নকারী পাপিষ্ঠদের থেকে তাদেরকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে চলার তাওফিক দিন।

হে আল্লাহ! আপনি আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, তাঁর পরিবারবর্গ ও সাহাবায়ে কেরামের প্রতি বর্ষণ করুন অসংখ্য দুরুদ ও সালাম।

 

****************