মানহাযী দিকনির্দেশনা: বাড়াবাড়ি পরিত্যাগ করুন;
তাওহীদের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ হোন
শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরি হাফিজাহুল্লাহ্
আরব বসন্তের চাকচিক্যে যারা প্রবঞ্চিত হয়েছিল তাদের আর বুঝতে বাকী নেই যে, এই বসন্ত নির্যাতন, নিপীড়ন ও গোলযোগের নতুন দ্বার উন্মুক্ত করেছে। যার গতি-প্রকৃতি পূর্বের চেয়ে বহুগুণে তীব্র ও কুৎসিত। অশুভ শক্তির বিজয়কে ত্বরান্বিত করে এই বসন্তের পরিসমাপ্তি ঘটেছে। অথচ উম্মাহ এই আপদ থেকে মুক্তিই কামনা করেছিল।
মুসলিম জাতি আজ চরম বাস্তবতার মুখোমুখি। তারা দেখতে পাচ্ছে যে, যে সকল ইসলামী দল মুক্তির আশায় সেকুলারিজম, প্রজাতন্ত্র ও স্বৈরাতন্ত্রকে আদরশরূপে গ্রহণ করেছিল, যারা আঞ্চলিক জাতীয়তাবাদের সাথে নিজেদের ভাগ্য জুড়ে দিয়েছিল তারা দ্বীন ও দুনিয়া দুটোই হারিয়েছে। উম্মাহর কাছে আজ স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, সত্যিকার মুজাহিদ ও দাঈগণ যে সতর্ক বার্তা উচ্চারিত করেছিলেন তা যথার্থই ছিল। তারা বলেছিলেন যে, দাওয়াত ও জিহাদের পথই হচ্ছে মুক্তির পথ। কোরআন-সুন্নাহ বর্ণিত পথ। বাস্তবতা ও ঐতিহাসিক দৃষ্টিকোণ থেকে স্বীকৃত পথ। তাই সত্যিকার মুজাহিদ ও দাঈগণের কর্তব্য হচ্ছে, উম্মাহর সামনে কোরআন-সুন্নাহর আলোকে বিষয়টি যথাযথভাবে বর্ণনা করা। যাতে মানুষ পূর্ণ আত্মবিশ্বাসের সাথে মুক্তির পথে পরিচালিত হতে পারে। কর্তব্যের তাগিদেই মুজাহিদ ও দাঈগণকে আরো দুটি বিষয় উম্মতের সামনে বর্ণনা করতে হবে।
১। যেসকল তানযীম দাওয়াত ও জিহাদের মাধ্যমে আল্লাহর দ্বীনকে সমুন্নত করতে চায় তারা সর্বসাধারণকে নির্বিচারে তাকফীর করে না এবং তাকফীর করার জন্য অজুহাত খুঁজে বেড়ায় না।
২। জিহাদী তানযীম সর্বদা নবুয়্যতের আদলে খিলাফাহ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে। এমন কোন শাসককে ক্ষমতায় বসানোর জন্য কাজ করে না, যিনি মুসলমানদের রক্তের বন্যা বইয়ে তাদের লাশের উপর দাড়িয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন, যিনি যে কোন মূল্যে ক্ষমতার মসনদ আঁকড়ে থাকতে চান।
আমার বক্তব্য পরিষ্কার, আমরা আমরা খুলাফায়ে রাশেদার অনুরূপ শাসন চাই। যাকে আঁকড়ে থাকার আদেশ করেছেন স্বয়ং নবী করীম ﷺ। তিনি বলেন,
“আমি তোমাদেরকে তাকওয়ার উপদেশ দিচ্ছি এবং ইসলামী নেতৃত্বের শ্রবন ও আনুগত্য করার উপদেশ দিচ্ছি, যদি কোন হাবশী গোলামও (তোমাদের আমীর নিযুক্ত) হয়। কেননা তোমাদের মধ্যে যারা (ভবিষ্যতে) জীবিত থাকবে তারা অসংখ্য ব্যাপারে মতবিরোধ দেখতে পাবে। সুতরাং তোমাদের যে কেউ সেই যুগ পাবে সে যেন আমার সুন্নাহ ও হেদায়াতের দিশারী খোলাফায়ে রাশেদার সুন্নাহ দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে।”(মুসনাদে আহমদ- ১৭১৮৫)
আমরা খোলাফায়ে রাশেদার আদলে হুকুমত চাই। কারণ, খোলাফায়ে রাশেদার উপর সন্তুষ্ট থেকে রাসুল ﷺ দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। হাজ্জাজ বিন ইউসুফ ও আবু মুসলিম খোরাসানীকে আদর্শরূপে গ্রহণ করতে চাই না।
আমরা এমন শাসক চাই না যার অনুসারীরা ঝকঝকে তরবারী উঁচু করে বলে ইনি আমীরুল মু’মিনিন। তার মৃত্যুর পর আমীরুল মু’মিনিন হবে জনাব অমুক সাহেব। যে ব্যক্তি মানবে না তার জন্য রয়েছে এই তরবারী। আমরা এমন শাসক চাই না যার অনুসারীরা বলে, যে ব্যক্তি এই জামা’আহ (শাসনক্ষমতা) নিয়ে আমাদের সাথে দ্বন্দ্ব করবে তাকে তরবারীর আঘাতে দ্বিখণ্ডিত করা হবে। আমরা এমন শাসক চাই না যিনি বলেন, বিচক্ষণতা ও সাহসিকতা আমার হাতের চাবুক ছিনিয়ে নিয়েছে। বিনিময়ে দিয়ে গেছে ধারালো তরবারী। যার বাঁট আমার হস্তে, ফিতা আমার স্কন্ধে, আর ধারালো অংশ বিরুদ্ধাচারীর গলে। আমরা এমন শাসকও চাই না, যিনি বলবেন, আমরা এই খিলাফাহ অধিকার করেছি শক্তির মাধ্যমে, জ্বালাও-পোড়াও ও ভাঙচুরের মাধ্যমে। দাঈগণের কর্তব্য হচ্ছে, উম্মাহকে বুঝানো যে, ইসলামী শরিয়াহ শুরা ভিত্তিক হুকুমত প্রতিষ্ঠার পক্ষপাতি। পাশাপাশি উম্মাহর এই অধিকার রয়েছে যে, তারা নিজেদের খলিফা নির্বাচন করবেন এবং খলিফার কাছে জবাবদিহিতা তলব করবেন। দাঈগণের আরো একটি কর্তব্য হচ্ছে, বাড়াবাড়ি ও শৈথিল্য প্রদর্শন; এই দুই প্রান্তিকতা সম্পর্কে সতর্ক করা। শৈথিল্যবাদীরা শরীয়ত বিরোধী পন্থায় ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠার দিবাস্বপ্ন দেখে। যেমন- মুসলিম ব্রাদারহুড এবং সিসির আশীর্বাদধন্য সালাফী আন্দোলন। আর যারা বাড়াবাড়িতে লিপ্ত তারা কতক অপরিচিত ব্যক্তির গোপন বাইয়াতের মাধ্যমে খিলাফাহ প্রতিষ্ঠার দাবী করেছে। তারা খলিফা বানিয়েছে এমন একজনকে যাকে উম্মাহ নির্বাচন করেনি এবং তিনি তাদের সন্তুষ্টিভাজনও নন। তারা আকস্মিকভাবে একজন খলিফা আবির্ভাবের সংবাদ পরিবেশন করল। তারা বলল তিনি আত্মপ্রকাশ করেছেন এমন লোকদের মাধ্যমে যাদের তোমরা জান না এবং কল্পনাও করতে পার না। তোমাদের দায়িত্ব হল তাদেরকে মেনে নেয়া এবং আনুগত্য করা। আনুগত্য করতে ব্যর্থদের- সে যেই হোক- প্রাপ্য হচ্ছে- একঝাঁক তাজা বুলেট, যা বিদ্ধ হবে তার মস্তকে। এমন কথা কেবল ঐ সকল লোকের মুখেই শোভা পায় যারা ক্ষমতা দখল করেছে বুলেটের মাধ্যমে। জ্বালাও-পোড়াও ও ধ্বংসযজ্ঞের মাধ্যমে।
মুজাহিদ, দাঈ ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ নির্বিশেষে প্রত্যেকের দায়িত্ব হল, প্রচার মাধ্যমের প্রতি লক্ষ্য রাখা। এর মাধ্যমে তারা তাদের আমীরকে চিনে নিবেন। তার আদেশ নিষেধ জেনে নিবেন। তার পক্ষ থেকে নিযুক্ত গভর্নরের পরিচয় লাভ করবেন। আর যারা প্রচার মাধ্যমের প্রতি সার্বক্ষনিক দৃষ্টি রাখল না- ফলে করনীয় বিষয় সম্পর্কে অজ্ঞ থাকল শাস্তির মুখোমুখি হলে তারা যেনপ অন্যকে দোষারোপ না করে। এর জন্য সে নিজেই দায়ী।
দাঈগণের দায়িত্ব হল তারা নবুয়্যতের আদলে প্রতিষ্ঠিত খিলাফাহ এবং বংশীয় শাসনের মধ্যকার পার্থক্য সর্বসাধারণকে ভালভাবে বুঝিয়ে দিবেন। বংশীয় শাসন সম্পর্কে রাসুল ﷺ বলেন,
“সর্বপ্রথম যে আমার সুন্নাহকে বিকৃত করবে সে উমাইয়্যার লোক।”(শায়েখ আলবানী রহ.। তিনি এই হাদিসটিকে হাসান আখ্যা দিয়েছেন। ছিলছিলাতুস সাহীহাহ; খণ্ড- ৪, পৃষ্ঠা- ৬৪৮)
প্রখ্যাত এক আলিম বলেন, সম্ভবত হাদিসের উদ্দেশ্য হচ্ছে খলিফা নির্বাচনের পদ্ধতিগত পরিবর্তনের দিকে ইঙ্গিত করা এবং উত্তরাধিকারের ভিত্তিতে খলিফা নির্বাচন করা।
হাদিসটিতে রাসুল ﷺ বলপূর্বক খলিফা হওয়ার দাবীদারকে সুন্নাহ বিকৃতকারী আখ্যা দিয়েছেন। সুতরাং ঐ ব্যক্তির জন্য কি গর্ব করা সাজে যিনি জোরপূর্বক নিজেকে খলিফা দাবী করেছেন? প্রভাব বিস্তার ও জবরদখল- আল মুলকুল আদূদ তথা বংশীয় শাসনের বৈশিষ্ট্য। আর এই ব্যবস্থা ‘খিলাফাহ আ’লা মিনহাজুন নুবুয়্যাহ’ ভেঙ্গে পড়ার কারণ। আল্লাহ যদি চান তাহলে পরবর্তী কোন পর্বে খিলাফাতুন নুবুয়্যাহ সম্পর্কে কিছু মৌলিক আলোচনা করব। আমাদেরকে অবশ্যই জানতে হবে কি কারণে খিলাফাহ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছিল।
খিলাফাহ ব্যবস্থার পুনঃপ্রতিষ্ঠিত দেখার প্রত্যাশায় আমরা এই মাত্র ধড়ফড় করে ঘুম থেকে জেগে উঠিনি। অথচ প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জোট সেনাদের হামলার মুখে খিলাফতের পতন ঘটেছিল। এটি ছিল বংশীয় শাসনের কুফল। যা উইপোকার ন্যায় উম্মাহর হাড়-মাংস খেয়ে ফেলেছিল এবং একসময় তা বিধ্বস্ত হয়েছিল। যদি আলিম ও আল্লাহ ওয়ালাগণ না থাকতেন, মুজাহিদ ও নেককারগণ না থাকতেন তাহলে অল্প সময়ের ব্যবধানে এই উম্মাহ পরাজিত হত এবং কিছুতেই চৌদ্দশত বছর টিকে থাকতে পারত না। ইতোপূর্বে খিলাফাহ বড় বড় শক্তির মুখোমুখি হয়েছে। সেই শক্তি বর্তমান কুফরি শক্তির তুলনায় নিতান্তই দুর্বল ছিল। কিন্তু আমরা ইতিহাসের কঠিনতম ক্রুসেডীয় আক্রমণের শিকার। আজ আমরা যাদের মোকাবেলা করছি তারা অস্ত্রে-শস্ত্রে আমাদের চেয়ে হাজারগুণ বেশি শক্তিশালী। এমনিভাবে ঈমান আমল ও জিহাদের ময়দানে আমরা পূর্ববর্তীগণের চেয়ে অনেক পিছিয়ে। সুতরাং যে সকল কারণে পূর্ব খিলাফাহ ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছিল যদি সেগুলোর প্রতিকারে আমরা সচেষ্ট না হই তাহলে পূর্বের চেয়ে বড় পরাজয়ের মুখোমুখি হতে হবে। ‘আলমুলকুল আদূদ’ তথা বংশীয় শাসনের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে- বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের মতামত গ্রহণ না করা। স্বেচ্ছার, জুলুম ও মুসলমানদের সম্ভ্রমে আঘাত করা। নেক কাজে আদেশ ও অন্যায় কাজে বাধা প্রদান নিষিদ্ধ করা। রাসুল ﷺ বলেছেন,
“ইসলামের বিধানগুলোকে একটি একটি করে ধংস করা হবে। যখনই একটি বিধান ভেঙ্গে দেয়া হবে মানুষ অন্যটি ধরে রাখার চেষ্টা করবে। এভাবে প্রথম যে বিধানটি ভেঙ্গে দেয়া হবে তা হচ্ছে কোরানী শাসনব্যবস্থা এবং সর্বশেষ বিধানটি হচ্ছে নামাজ।”(আল জামেউ সাগীর- ৯২০৬)
নবুয়্যতের আদলে খিলাফাহ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সুসংবাদ শুনাতে এবং জুলুম ও ফাসাদ নির্ভর রাজত্বের ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করতে একে একে ইনশাআল্লাহ জেনে নিব মুসলিম বিশ্বের হালচাল। মুসলিম উম্মাহ আজ এমন একটি যুগ পার করছে যখন দ্রুত গতিতে জিহাদের উত্থান ঘটছে। সুযোগ পেলেই তাতে ফুঁকে দেয়া হচ্ছে নতুন প্রাণ, ভিন্ন জীবন। উম্মাহ মুছে ফেলছে লাঞ্ছনা-বঞ্চনার দীর্ঘ ইতিহাস- রচনা করছে ইনসাফ ও শুরা ভিত্তিক শরিয়াহ প্রতিষ্ঠার ইতিহাস। মুসলিম ভূখণ্ডগুলোকে স্বাধীন করারা ইতিহাস। মানব জাতির বিকাশ ও উন্নতির পথে এবং একটি সুস্থ মানবসমাজ বিনির্মাণে রয়েছে অনেক বাধা-বিপত্তি। এ বাধাগুলোর রূপ ধাপে ধাপে পরিবর্তিত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় নিকট অতীতে আমরা অর্জন করেছি কিছু নৈরাশ্যকর অভিজ্ঞতা। মুসলিম উম্মাহর পরামর্শ ছাড়া খিলাফতের অযৌক্তিক দাবীর কারণে শামে সংঘটিত হয়েছে ভ্রাত্রিঘাতি যুদ্ধ। এত কিছু সত্বেও সার্বিক বিবেচনায় মুসলিম উম্মাহর উন্নতি ও অগ্রগতির পাল্লা আজ অনেক ভারী।
ঐতিহাসিক বাস্তবতা হচ্ছে, মুসলিম উম্মাহ যখনই হোঁচট খেয়েছে তখনই নব উদ্দমে জেগে উঠেছে। আর তাইতো গৃহযুদ্ধের পর আফগানিস্তানে ইসলামী ইমারাহ কায়েম হয়েছিল। আলজেরিয়ায় সশস্ত্র ইসলামী দল অস্ত্র ত্যাগের পর জামা’আতে সালাফিয়্যাহ দা ’ওয়াহ ও কিতালের ঝাণ্ডা উঁচু করেছে এবং মুজাহিদগণের বরকতময় কাফেলার সাথে একীভূত হয়েছে। যা আজ তানযীম আল-কায়েদা বিলাদিল মাগরিব নামে পরিচিত। আল্লাহর ইচ্ছায় শামের ফিতনা নির্মূল হওয়ার পর শামের জিহাদ নতুন মাত্রা লাভ করবে। সঠিক চিন্তা-চেতনা ও দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে শুরা ও ইনসাফ ভিত্তিক খিলাফাহ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাবে। বিভিন্ন দেশে ইসলামের উত্থান প্রসঙ্গে আলোচনার পূর্বে ইরাক ও শামের উপর ক্রুসেডীয় বাহিনীর হামলা সম্পর্কে কয়েকটি কথা না বলে পারছি না।
আমার প্রাণপ্রিয় ভাইয়েরা! ইরাক ও শামের উপর খৃষ্টানদের চলমান হামলা তদের ধারাবাহিক হামলারই অংশ। যার পরিধি ফিলিপাইন থেকে পশ্চিম আফ্রিকা, চেচনিয়া থেকে সোমালিয়া ও মধ্য-আফ্রিকা পর্যন্ত এবং পূর্ব-তুর্কিস্তান থেকে ওয়াজিরিস্তান ও আফগানিস্তান পর্যন্ত বিস্তৃত। এটি হচ্ছে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, যাকে নাম দেয়া হয়েছে ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’। এমনকি আজ শাম ও ইরাকে খৃষ্টানরা যেই হামলা শুরু করেছে তা নির্দিষ্ট কোন দলের বিরুদ্ধে পরিচালিত হচ্ছে না। তার মূল লক্ষ্য হচ্ছে- জিহাদের উত্থানকে ব্যর্থ করে দেয়া। উক্ত হামলাকে এই দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখতে হবে এবং এর মোকাবেলা করতে হবে। এই হামলাকে সফল করতে শত্রুরা মতবিরোধ দূরে ঠেলে দিয়েছে। তাই এই হামলা মোকাবেলা করার জন্য আমদেরকেও ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
ইরাক ও শামের মুজাহিদগণকে পরস্পর সহযোগিতা বিনিময়ের একটি প্রস্তাব আমি পেশ করব। তবে তার আগে অতি গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় পরিষ্কার করতে চাই। যদিও আমরা বাগদাদীর খিলাফাহকে স্বীকৃতি দেই না এবং তাকে খিলাফতের উপযুক্ত মনে করি না তবুও তার বিভিন্ন পদক্ষেপ ও সিদ্ধান্তকে সমর্থন করি। তাই যদি তারা ইসলামী বিচার ব্যবস্থা কায়েম করে তাহলে আমরা তাদের এই সিদ্ধান্ত ও কাজের সমর্থন করব; কিন্তু যদি তারা তাদের এবং অপরাপর জিহাদী তানযীমসমূহের মাঝে বিরোধ নিরসনে শরীয়তের দ্বারস্থ হতে অস্বীকৃতি জানায় তাহলে আমরা তাদেরকে সমর্থন করি না।
যখন তারা কাফির নেতৃবৃন্দকে হত্যা করবে তখন আমরা তাদের পক্ষে। কিন্তু যখন তারা আবু খালেদ আস-সূরীকে হত্যা করে তখন আমরা তাদের বিপক্ষে। যখন তারা খৃষ্টান, রাফেযী ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তখন তাদের যুদ্ধকে আমরা সমর্থন করি। কিন্তু যখন তারা মুজাহিদগণের ঘাঁটি দখলের নামে বা বোমা মেরে উড়িয়ে দেয় তখন আমরা তাদেরকে সমর্থন করি না। এমনিভাবে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তি দখলে নিতে চাইলে আমরা তাদেরকে সমর্থন করি না। যখন তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবে অথবা আমর বিল মা’রুফ ও নাহি আনিল মুনকারের জন্য সংগঠিত হবে তখন আমরা তদের পক্ষে; কিন্তু তারা যখন মুজাহিদ ভাইদের উপর অপবাদ আরোপ করবে এবং দুর্নাম রটাবে তখন আমরা তদের বিপক্ষে। এমনিভাবে যখন তারা আমাদেরকে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী বলে সাইকস পিকস এগ্রিমেন্টের সাথে সমঝোতাকারী বলে আখ্যা দেয় এবং আমাদেরকে সেই ব্যভিচারিণীর সাথে তুলনা করে যে নয় মাসের গর্ভ লুকিয়ে রাখতে চায় তখন আমরা তাদের বিপক্ষে। যখন তারা মুসলিম বন্দীগণকে মুক্ত করে এবং জেল থেকে বের করে আনে তখন আমরা তাদের পক্ষে। কিন্তু যখন কোন কাফির বন্দীকে ইসলাম গ্রহণের পরও হত্যা করে তখন আমরা তাদের বিপক্ষে। যখন তারা আমীরুল মু’মিনিন মোল্লা মোহাম্মাদ ওমর মুজাহিদকে মান্য করে তখন আমরা তাদের পক্ষে; কিন্তু যখন তারা তানযীম আল-কায়েদা ও মোল্লা মোহাম্মাদ ওমর মুজাহিদের বাইয়াত ভংগ করে, আবু হামযা মুহাজির রহ. এর উপর মিথ্যা আরোপ করে এবং বলে যে, আল-কায়েদা এবং মোল্লা মোহাম্মাদ ওমর মুজাহিদের বাইয়াত গ্রহণের মত কোন ঘটনা পূর্বে ঘটেনি তখন আমরা তাদের বিপক্ষে। যখন তারা কোন ভূখণ্ডে মুসলিম ভাইদের দিকে সাহায্যের হাত প্রসারিত করে তখন আমরা তাদের পক্ষে। কিন্তু যখন তারা শরীয়ত বহির্ভূত পন্থায় খিলাফা ঘোষণার মাধ্যমে মুজাহিদগণের মাঝে বিভেদ সৃষ্টির পাঁয়তারা করে তখন আমরা তাদের বিপক্ষে। যদি তারা শুরা ভিত্তিক খিলাফাহ প্রতিষ্ঠা করতে চায় তাহলে আমরা তাদের পক্ষে। কিন্তু যদি নির্যাতন, নিপীড়ন ও হত্যার মাধ্যমে জোরপূর্বক কোন খিলাফাহ মুসলিম উম্মাহর ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে চায় তাহলে আমরা তাদের বিপক্ষে। আমরা তাদের সাথে ইনসাফ পূর্ণ আচরণ করব যদিও তারা জুলুম করে। আমরা আল্লাহর আনুগত্য করব, যদিও তারা আমাদের সাথে চাল-চলন ও আচরনে আল্লাহর নাফরমানী করে।
এতসব সমস্যা সত্বেও ইরাক ও শামের মুজাহিদগণকে বলব, যেন তারা পরস্পরের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন এবং সমন্বিতভাবে চলমান ক্রুসেডীয় হামলার মোকাবেলা করেন। যদিও বাগদাদীর সাথে তাদের মতপার্থক্য রয়েছে এবং যদিও তারা বাগদাদীর খিলাফাহকে স্বীকৃতি দেয়নি। খিলাফাহ প্রতিষ্ঠার দাবী করা এবং একে স্বীকৃতি না দেয়ার বিতর্ক এখানে মুখ্য নয়। কারণ, মুসলিম উম্মাহ এখন খৃষ্টানদের আক্রমণের শিকার। তাই এই হামলা রুখে দিতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আমি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বলতে চাই, যখন খৃষ্টান, সাফাবী ও ধর্ম নিরপেক্ষতাবাদীরা মুজাহিদগণের যে কোন দলের বিরুদ্ধে- যার মধ্যে বাগদাদীর দলও আছে- যুদ্ধ ঘোষণা করে তাহলে আমরা মুজাহিদগণের সাথে থাকব। যদি তারা আমাদের উপর জুলুম করে, আমদের উপর মিথ্যা অপবাদ দেয়, প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে, খলীফা নির্বাচনের ক্ষেত্রে মুসলিম উম্মাহ ও মুজাহিদগণের মতামত না নেয় এবং এ ক্ষেত্রে শরয়ী ফয়সালা মেনে নিতে প্রস্তুত না থাকে তবুও আমাদের অবস্থান ও আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হবে না। আল্লাহার মেহেরবানীতে আমরা মুসলিমগণকে এবং মুজাহিদগণকে সহযোগিতার কথা পূর্বেও বলেছি, এখনো বলছি।
ক্রুসেডার, সাফাবী ও ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের বিরুদ্ধে যখন বাগদাদী ও তার অনুসারীদেরকে সহযোগিতা করতে বলি তখন এই দৃষ্টিকোণ থেকে বলি না যে, তিনি খলিফাতুল মুসলিমিন বা তিনি এবং তার অনুসারীগণ খেলাফতে রাশেদার প্রতিনিধিত্ব করছেন। কারণ, এই দাবী অবাস্তব। প্রমাণিত নয়। মূলত ইসলাম ও মুসলমানদের শত্রুকে প্রতিহত করার স্বার্থে আমরা তাদেরকে সাহায্য করার পক্ষপাতি।
আমরা যখন জাবহাতুন নুসরার ভাইদেরকে সাহায্য করি তখন এই দৃষ্টিকোণ থেকে সাহায্য করি না যে, তারা আমাদের ভাই এবং তানযীম আল-কায়েদার বাইয়াত গ্রহণকারী; বরং তাদেরকে সাহায্য করি; কারণ তারা মুসলমান, তারা মুজাহিদ। যখন শাম ও ইরাকে মুজাহিদগণকে সাহায্য করারা আহ্বান জানাই তখন তার উদ্দেশ্য এই হয় না যে, তাদের সাথে আমাদের মতের মিল রয়েছে বা মতবিরোধ রয়েছে। বরং তাদেরকে সাহায্য করারা আহ্বান জানাই শরীয়তের বাধ্যবাধকতার কারণে। আল্লাহ তা’আ’লা বলেন,
“আর মুশরিকদের সাথে তোমরা যুদ্ধ করা সমবেতভাবে, যে মন তারাও তোমাদের সাথে যুদ্ধ করে যাচ্ছে সমবেতভাবে। আর মনে রেখ আল্লাহ মুত্তাকিন্দের সাথে রয়েছেন।”(সূরা তাওবা- ৩৬)
আমাদের অবস্থানে কোন অস্পষ্টতা নেই। আমরা ইরাক ও শামের সকল মুজাহিদের পাশে আছি। ইসলামের শত্রুদের মোকাবেলায় তুর্কিস্তান থেকে মালি পর্যন্ত, ককেশাসের পর্বতচূড়া থেকে আফ্রিকার বনভূমি পর্যন্ত এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে নাইজেরিয়া পর্যন্ত বসবাসকারী প্রত্যেক মুসলিম ও মুজাহিদের পাশে আছি। আমরা তাদেরকে সাহায্য করব, তাদের শক্তি যোগাব। তাতে আমাদের সাথে তাদের আচরণ ভাল হোক বা মন্দ। তারা আমাদের সাথে জুলুম করুক বা ইনসাফপূর্ণ আচরণ করুক। মোটকথা, কোন অবস্থাতেই আমাদের এই অবস্থান পরিবর্তন হবে না। কিন্তু শরয়ী ফয়সালাকে পাশ কাটানো, মুসলমানদের নির্বিচারে তাকফীর করা, তাদের উপর মিথ্যা অপবাদ দেয়া, অঙ্গীকার ভঙ্গ করা, মুজাহিদগণের ঐক্য বিনষ্ট করা এবং মুসলমানদের পবিত্রতা এবং মান-সম্ভ্রমে আঘাত করার ক্ষেত্রে আমরা তাদেরকে সমর্থন দেব না।
শাম ও ইরাকে অধিকাংশ মুজাহিদ এবং সাড়া বিশ্বের মুজাহিদগণের ব্যাপারে আমরা ভালো ধারণা পোষণ করি। আমাদের বিশ্বাস তারা ঘর থেকে বের হয়েছেন আল্লাহর দ্বীনকে বিজয়ী করার লক্ষ্যে, শরিয়াহ ও খিলাফাহ আ’লা মিনহাজুন নুবুয়্যাহ পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে। দো’আ করি আল্লাহ তা’আ’লা তাদের নেক আমলসমূহ কবুল করুন। তাদের গুনাহ মাফ করুন এবং তাদেরকে দান করুন দুনিয়ার মর্যাদা এবং আখিরাতের সফলতা।
এমনিভাবে আমরা মনে করি যে, যে সকল জিহাদী তানযীমের মাধ্যমে ফাসাদ সৃষ্টি হচ্ছে তাদের সকলেই এর জন্য দায়ী নয়। বরং গুটিকতক মানুষ এর জন্য দায়ী, যারা সত্য-মিথ্যাকে গুলিয়ে ফেলেছে। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যেন তিনি আমাদের এবং তাদের পাপসমূহ ক্ষমা করেন। সরলপথে পরিচালিত করেন এবং ঐক্যবদ্ধ করে দেন।
আল বালাগ
ম্যাগাজিন ইস্যু-১