বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তান: এক সমস্যা অভিন্ন সমাধান
মূল
শহীদ মুফতি মুহাম্মাদ ইশতিয়াক আ’যমী রহিমাহুল্লাহ
অনুবাদ
মুহাম্মাদ উমর হাফিজাহুল্লাহ
[লেখাটি মূলত আল-কায়েদা উপমহাদেশ শাখার শরীয়াহ বোর্ডের রোকন শহীদ মাওলানা মুফতি মুহাম্মাদ ইশতিয়াক আ’যমী রহিমাহুল্লাহ’র পক্ষ থেকে বাংলাদেশের এক আলেমে দ্বীনের নামে লেখা চিঠি৷ যেটি মাওলানা রহিমাহুল্লাহ ২০১৫ সালের জুন মাসে শাহাদাত বরণ করার কয়েকমাস পূর্বে লিখেছিলেন, তাই এই চিঠিতে কিছু ঘটনার বরাত ওই সময় হিসেবে দেয়া হয়েছে৷]
বিসমিল্লাহির রহমানির রহীম।
শ্রদ্ধেয় মাওলানা সাহেব!
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ৷
মহান রব্বুল আলামীনের দরবারে দুয়া করি, তিনি যেন আপনার ইলম ও আমলে বরকত দান করেন এবং আপনার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা থেকে উম্মাহকে উপকৃত হওয়ার সুযোগ দেন৷ আমীন৷
আশা করি, আপনি ও আপনার সাথে যারা সম্পৃক্ত সকলেই ভালো আছেন৷ আলহামদুলিল্লাহ! এখানেও আমরা ও আমাদের ভাইয়েরা সবাই ভালো আছি৷ আমরা আশাবাদী, আপনি আমাদেরকে আপনার নেক দোয়ায় স্মরণ রাখবেন৷
আমাদের এবং অন্যান্য সাথীদের আশা ছিল, আপনাদের মত বিজ্ঞ উলামাদের কাছ থেকে সরাসরি ইলম অর্জন করার; কিন্তু বর্তমান জমানার ফেরআউনতুল্য মূর্তিপূজারীরা আমাদের মাঝখানে প্রতিকূলতার এক প্রাচীর দাড় করিয়ে দিয়েছে৷ আল্লাহর কাছে দুয়া করি, তিনি যেন যুগের এই হুবালকে তার দোসরসহ দুর্বল বান্দাদের হাতে পর্যদুস্ত করে দেন, এবং পুরো বিশ্বে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর অবতীর্ণ পবিত্র বিধান বাস্তবায়ন করার তাওফিক দেন৷ আর আমাদেরকে যেন এই মহান সৌভাগ্য অর্জন করার জন্য কবুল করে নেন৷ আমীন৷
হযরত!
সমস্যা শুধু আমাদের মাঝে যে দূরত্ব রয়েছে তার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং তাগুতের দোসররা আমাদের এই দূরত্বকে বৃদ্ধি করা এবং দূরত্বের এই উপসাগরকে অধিকতর প্রশস্ত করার জন্য তাদের হাতে থাকা কোন কূটকৌশল ও ষড়যন্ত্র বাকি রাখেনি৷
وَقَدْ مَكَرُواْ مَكْرَهُمْ وَعِندَ اللّهِ مَكْرُهُمْ وَإِن كَانَ مَكْرُهُمْ لِتَزُولَ مِنْهُ الْجِبَالُ
তারা নিজেদের মধ্যে ভীষণ চক্রান্ত করে নিয়েছে এবং আল্লাহর সামনে রক্ষিত আছে তাদের কু-চক্রান্ত। তাদের কুটকৌশল পাহাড় টলিয়ে দেয়ার মত হবে না। [সুরা ইবরাহীম ১৪:৪৬]
তারা আমাদের মাঝে কুধারণার অন্তরায় সৃষ্টি করেছে৷ মুজাহিদিনের উপর মিথ্যা অপবাদ ও অভিযোগ আরোপ করার জন্য দালাল মিডিয়াগুলো উঠে-পড়ে লেগেছে। তাদের পূর্ণ শক্তি ব্যয় করেছে৷ মিডিয়াগুলোর এসকল ষড়যন্ত্র ও মিথ্যাচার আপনারা সকাল-সন্ধ্যা প্রত্যক্ষ করছেন৷ আপনারা নিশ্চিত থাকুন যে, মুজাহিদিনের ব্যাপারে কুৎসা রটনাকারী এই মিডিয়াগুলো সুযোগ পেলেই আমাদের মিম্বার ও মিহরাবের উপরও নজরদারী রাখে৷ সুতরাং একথা সত্য যে, উম্মাহ ও শরয়ী বিধানের প্রতিরক্ষকারীদের বিরুদ্ধে মিডিয়াগুলো যে বিষ ছড়াচ্ছে তা বাস্তবে ঐ সমস্ত উলামাদেরকেও ছাড়বে না যারা মসজিদ মাদ্রাসায় দ্বীন জীবিত করার কাজে ব্যস্ত৷ এই মিডিয়াগুলো অসৎ বিধান বাস্তবায়নের জন্য তাগুতের শক্তিশালী খুটি হিসেবে কাজ করে থাকে।
কুফফার ও তাগুত এই মিডিয়া ব্যাবহার করে তাদের তৈরি নিকৃষ্ট বিধানকে আমাদের উজ্জল শরীয়াহর প্রতিদ্বন্ধী হিসেবে দাড় করানোর চেষ্টা করছে। এখন কিছু নির্বোধ মুসলমান জোরপূর্বক এই নিকৃষ্ট বিধানে ইসলামের পোশাক পড়ানোর অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ অথচ পাকিস্থানের দীর্ঘ ৬৫ বছর এবং বাংলাদেশের দীর্ঘ ৪৫ বছরের চেষ্টার ফলাফল ব্যর্থ হওয়াতে এই কথাটি সবার বুঝা উচিত ছিল যে, ইহুদীরা যে সকল পন্থা অবলম্বনের কথা বলবে সেগুলো তাদের দেয়া বিধানকে ধ্বংস করার পরিবর্তে বরং সুদৃঢ় করবে৷ মিশর, আলজেরিয়া, তুরস্ক, ফিলিস্তিনের অভিজ্ঞতা আমাদের এমনটাই শিখিয়েছে।
সুতরাং আমাদের জন্য আবশ্যক হলো, উম্মতের এমন বিপর্যয়ের মূহুর্তে দাজ্জালী মিডিয়ার প্রতারণার শিকার হয়ে কারো পক্ষে বিপক্ষে রায় না দিয়ে একে অপরের হাতকে মজবুত করা। এই জাহেলি জীবনব্যবস্থার অসারতা উম্মাহর সামনে তুলে ধরা৷
হযরত!
আজকের মাসআলাতো আর এই বিষয়ে নয় যে, এই অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে হবে কি না? যেহেতু এর মূলোৎপাটন করার জন্য উম্মাহর সিংহপুরুষরা জেগে উঠেছে এবং ক্রমান্বয়ে এই ঈমানী জাগরণ বিস্তৃত হচ্ছে। এটি ইসলামী শরীয়াহ বাস্তবায়ন হওয়ার পূর্বমূহুর্ত পর্যন্ত দম নিবে না ইনশাআল্লাহ৷ যুবক ভাইয়েরা এই আন্দোলনে নিজেদের রক্ত উৎসর্গ করে যাচ্ছে। তাদের সামনে স্বীয় লক্ষ্যবস্তুও দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট৷ (তাদের হৃদয়ের উচ্চারণ হলো), ‘হয়তো শরীয়ত নয়তো শাহাদাত’।
সুতরাং এখন এটি আর আলোচনার বিষয়বস্তুই থাকলো না যে, আন্দোলন উঠবে কি উঠবে না, মোকাবেলার শক্তি আছে কি নেই৷ যেহেতু শাহাদাত পিপাসু ভাইয়েরা আমেরিকার পোষা বাহিনীকে এটা প্রমাণ করে দিয়েছেন যে, তোরা তোদের শাসনব্যবস্থাসহ আজ নয় কাল (দাফন হয়েই যাবি)৷ এবং তোরা আল্লাহর সাহায্যে আমাদের সাথে মোকাবেলার শক্তিও রাখবি না৷
আবার প্রশ্ন এটাও না যে আমাদের শক্তি আছে কি নাই? কেননা বিগত ১০ বছরের যুদ্ধই এই প্রশ্নের জবাব৷ যুদ্ধের আগুন তো দিনকে দিন বেড়েই চলেছে ৷
দাজ্জালের সহযোগীরা তাদের বিলাসীতা রক্ষার্থে "জযবে কিযব" অপারেশনও চালিয়েছে৷ আল্লাহর শুকর, আমাদের চুলও বাঁকা করতে পারেনি৷ এর প্রভাবে মুজাহিদীনের সংকল্পের দৃঢ়তায় সামান্য চিরও ধরেনি৷
এখনতো এই তাবেদার বাহিনীর কাছে ব্যয় করার মত কিছু নেই৷ অথচ আমাদের কাছে আল্লাহর নুসরতের উপর পূর্ণ আস্থাশীল ইসলামের জন্য আত্মোৎসর্গকারী বাহিনী রয়েছেন৷
সময়ও হাতে অনেক আছে, যতদিন পর্যন্ত এই দুর্গন্ধময় শাসনব্যবস্থা তার নিজ আবর্জনা নিয়ে সমুদ্রে পাড়ি না জমায়৷ এই শাসনব্যবস্থা শাসকদের অহংকারী বানিয়েছে, অসহায়দের নির্যাতনের যাতায় পিষ্ট করেছে এবং নির্যাতিত জনসাধারণকে অনাহারী দেও-দৈত্যের খোরাকে পরিণত করেছে ৷
মানবরচিত এই নীতি ধ্বংস করে শরয়ী বিধান বাস্তবায়ন করাই আমাদের মূল লক্ষ্য৷ এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য পর্যাপ্ত সময় এখনো আমাদের হাতে আছে৷ এর জন্য আমরা নিজেরাও লড়ব এবং আমাদের সন্তানদের শিরায় শিরায় আল্লাহ তায়ালার ও তাঁর পবিত্র বিধানের প্রতি ভালোবাসা এমনভাবে মিশ্রিত করে দিব যাতে তারা ও তাদের পরবর্তী প্রজন্মরা শরয়ী বিধান বাস্তবায়ন না করা পর্যন্ত ক্ষান্ত না হয়৷
এখন মাসআলা আন্দোলন দাড় করানো বা না করানো নিয়ে নয়, শক্তি রাখা বা না রাখা নিয়েও নয়৷ আন্দোলন তো শক্তি সামর্থ্য নিয়ে আল্লাহর ইচ্ছায় শুরু হয়ে গিয়েছে৷ এখন মাসআলা হলো এই আন্দোলনে আমাদের সম্মানিত উলামায়ে কেরামগণ যেন আমাদের সহযোগী হন, আমাদেরকে আপনজন মনে করে নেন৷ আমরাতো আপনাদের সুউচ্চ মর্যাদা রক্ষার্থেই যুদ্ধ করছি৷ যাতে নেতৃত্বের লাগাম উলামা ও নেককারদের হাতেই থাকে৷ শরয়ী বিধি-বিধানের গুরুত্ব, উপকারীতা ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আপনাদের চেয়ে আর কে বেশি জ্ঞাত?
অল্প একটু সময় নিয়ে হলেও একটু ভাবুন! পশ্চিমা সভ্যতা ছাড়া আর কিছু আছে কি, যা আমাদের মর্যাদা ও কর্তৃত্বকে ধ্বংস করেছে? মুসলিমদের অসচ্ছলতার অতল গহ্বরে নিক্ষিপ্ত হওয়া এবং পুরো উম্মাহ অর্থনৈতিকভাবে কাফেরদের হাতে জিম্মি হওয়ার একমাত্র কারণ পশ্চিমা অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নয় কি?
এটা এমন ঘাতক সভ্যতা যা ট্যাক্স ও খাজনার নামে উম্মাহর ঘাম ও রক্ত ঝরা উপার্জন কেড়ে নিচ্ছে। মানুষের প্রয়োজনীয় সামগ্রী তাদের হাত থেকে দূরে ঠেলে দিয়ে অসভ্য ও অশ্লীললতাপূর্ণ সামগ্রী তাদের হাতের নাগালে এনে দিয়েছে।
যে জাতির মাঝে আল্লাহর নাযিলকৃত পবিত্র বিধান নিজের প্রকৃত রুপ নিয়ে এখনও মজুদ রয়েছে, সে জাতি ইহুদী খৃষ্টানদের তৈরী করা পদ্ধতিতে ইসলামের জন্য জায়গা তালাশ করে!! আর এর জন্য ওজর পেশ করে যে, এখন আর ইসলামী জীবন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করার সামর্থ্য আমাদের নেই। আত্মোৎসর্গকারী কিছু মুজাহিদীন এ দাবীর অসত্যতাকে স্পষ্ট করে দিয়েছে।
আমরা ভালোভাবে জানতে পেরেছি যে, এই নির্লজ্জ শাসন ব্যবস্থা শিক্ষার নামে যে অশ্লীলতার বিষ আমাদের সমাজে বিস্তৃত করেছে, তার প্রভাব সম্ভবত আমরা দীর্ঘদিনেও মেটাতে পারবো না। (স্বাধীনতা ও মৌলিক অধিকারের নামে যে অবাধ্যতা ঘরে ঘরে প্রবেশ করছে এবং অশ্লীলতাপূর্ণ বিবাহের প্রচলন ব্যাপকতা লাভ করেছে) এর জন্য দায়ী ঐ দাজ্জালী মিডিয়া। তারা এ ঘৃণিত সভ্যতাকে সাধারণ মুসলমানদের কাছে প্রিয় ও গ্রহণযোগ্য করে তুলে ধরেছে।
এছাড়াও কুফফারদের সাথে মুসলিম বিরোধী চুক্তি ও তার ফলস্বরূপ মুসলমানদের রক্তপাত ঘটানোর কথা তো আছেই।
সুতরাং নিজের ও বংশের ঈমানের হেফাজতের খাতিরে এই সভ্যতার বিরুদ্ধে তুমু্ল লড়াই করা আবশ্যক। অন্যথায় এমন হবে যে, হিন্দু প্রভাবিত মিডিয়া, আমেরিকার রুটির টুকরায় পালিত (গোয়েন্দা), ইসলাম বিদ্বেষী সাংবাদিক এবং হৃদয়ের স্পন্দন রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও ইসলামের বিরুদ্ধে কটুক্তিকারী ব্লগারেরা আমাদের ঈমানের জন্য হুমকি হবে।
এরা তো ওই সমস্ত লোক যাদের সাথে রয়েছে ইসলাম বিরোধী হুকুমাতের শক্তি৷ ইসলাম বিদ্বেষী এই ক্ষমতালোভীদের সাথে ধোঁকাবাজ ইহুদিদের সুবিন্যস্ত বাহিনীর মদদতো আছেই।
এই অসভ্য শাসনব্যবস্থা রক্ষা করার জন্যই তাদেরকে তৈরী করা হয়েছে। যার দৃষ্টান্ত সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে মুসলমানদের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায়ে বিদ্যমান।
সুতরাং এই বাহিনী ও এরা যে সভ্যতার রক্ষক তাদের মুলোৎপাটন করা হলেই আমাদের বংশধরদের ঈমান হেফাজতে থাকবে।
আমাদের জন্য পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও ভারতের বাহিনীর মধ্যকার পার্থক্য করা উচিত হবে না। কেননা এরা সবাই ওই সভ্যতার পাহারাদার যেটাকে পশ্চিমারা উপমহাদেশের উপড় চাপিয়ে দিয়েছে। আপনারা পাকিস্তানে দেখেছেন - যে বাহিনী বাংলাদেশে মুসলমানদের নির্দ্বিধায় ব্যপকভাবে হত্যা করেছিল, সে বাহিনীর যখন গাভী পুজারীদের সঙ্গে যুদ্ধ সংঘটিত হলো তখন তারা সংখ্যায় নব্বই হাজার হওয়া সত্ত্বেও ওই গাভী পুজারীদের সামনে অস্ত্রসমর্পণ করেছিল। এটা বাংলাদেশের জয় ও পাকিস্তানের পরাজয়ের কিছুই ছিলনা। বরং পাশ্চাত্যের তাবেদাররা তাদের অভ্যাস অনুযায়ী কাজ করেছে। যখন ব্যাপকহারে মুসলিম নিধনের মাসআলা সামনে আসে তখন পশুত্বের সীমানা অতিক্রম করে যাওয়া এই ঘৃণিত বাহিনীর অন্যতম ঘৃণিত স্বভাব। আর যখন কাফেরদের সঙ্গে যুদ্ধ হয় তখন পশ্চিমা মনিবদের নির্দেশে হার মেনে নেওয়া তাদের স্বভাবের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
তাদের স্বভাব অনুযায়ী লাল মসজিদে শরিয়া বাস্তবায়নের দাবীর অপরাধে হাজারো পবিত্র বোনদের অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে। বিভিন্ন গোত্রীয় অঞ্চলসমূহে এবং মালাকান্ডে শরিয়াহ বাস্তবায়নের দাবীদার শিশুদের রেললাইনে দাঁড় করিয়ে বন্দুক চালিয়েছে। আমেরিকার নির্দেশে আকাশ থেকে বোমা নিক্ষেপ করে বিভিন্ন অঞ্চল ধ্বংস করেছে এবং মসজিদ মাদ্রাসাগুলো গুড়িয়ে দিয়েছে। মহিলা শিশু এবং বৃদ্ধদের গুলির লক্ষ্যবস্তু পূর্বে বানিয়েছে এবং এখনও বানাচ্ছে। আর এদিকে আমেরিকা ও বৃটিশদের সামনে সিজদারত হয়ে আছে। এভাবে বাংলাদেশের নামমাত্র স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকে নিয়ে এখন পর্যন্ত সংখ্যাগরিষ্ঠ আত্বমর্যাদাশীল মুসলমানদের সমর্থন থাকা সত্ত্বেও শান্তিপূর্ণ পদ্ধতিতে শরিয়াহ বাস্তবায়নের জবাবে মুসলমানদের ফাঁসিতে ঝুলানো হয়েছে। তাদের জানাযায় অংশগ্রহণকারীদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু নির্লজ্জ, বেহায়া কটুক্তিকারীদেরকে সেক্যুলার রাষ্ট্র ও তার রক্ষক বাহিনী পূর্ণ নিরাপত্তা দিয়েছে। এ বিষয়টি বুঝা সহজ যে, পাকিস্তানী বাহিনী, সেক্যুলার রাজনীতিবিদ, তাদের দফতরসমূহ এবং আল্লাহর বিধানের বিপরীত বিধান রচনাকারী পার্লামেন্ট কুফরি বিধান বাস্তবায়নকারী পশ্চিমাশক্তি আমেরিকা ও বৃটিশদের পা-চাটা গোলাম। আর এই বাহিনীগুলো বৃটিশদের প্রস্তুতকৃত রয়েল ইন্ডিয়ান আর্মিরই প্রচ্ছন্ন উত্তরসূরি।
এমনিভাবে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী ও বিধান রচনাকারী আদালত পশ্চিমাদের হুকুমের গোলাম এবং তাদের দেয়া বিধানের রক্ষক।
এজন্যইতো ভারত, পাকিস্থান ও বাংলাদেশের সেনাবাহিনীরা দেশ, পোশাক আর রঙে পার্থক্য থাকলেও মুসলিমদের বিরুদ্ধে সকলের কর্মকান্ডের ধরণ এক ও অভিন্ন।
কেননা তারা একই প্লাটফর্মে প্রতিপালিত। শরিয়াহ বাস্তবায়নে বাধা হওয়া এবং শরয়ী বিধান বাস্তবায়নে আন্দোলনকারী মুসলিমদের ব্যাপক হত্যা করার ক্ষেত্রে কেউ কারও থেকে পিছিয়ে নেই। এরা ওই বাহিনী যারা বাংলাদেশের উপর ভারতের পানীয় আগ্রাসন সত্ত্বেও শুধুমাত্র প্রভু আমেরিকার খুশির জন্য আগ্রাসী শত্রুকে নিকটতম সাথী ও বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেছে।
যখন সন্ত্রাসী বৌদ্ধরা বার্মার নির্যাতিত মুসলিমদের জন্য তাদের জমীনকে সংকীর্ণ করে দিয়েছে, তখন এই বাহিনীই ইহুদী ও মালাউনদের তৈরি করে দেয়া সীমান্ত রক্ষার জন্য তাদের উপর গুলি চালিয়েছে।
এরাই ফিরিঙ্গীদের সেই গোলাম, যারা পাকিস্তানকে নিজেদের শত্রু মনে করে৷ কিন্তু মুসলিমদের গ্রেফতার ও শহীদ করার ক্ষেত্রে ওই সেনাবাহিনীর জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। তারা ইসলাম ও মুসলিমদের বিরোধিতা করতে গিয়ে জাতীয়তাবাদের জাহেলি স্লোগানও ভুলে যায়। যেমনটা ইতিমধ্যে পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে বাঙালি মুজাহিদদের শহীদ করার সময় হয়েছে। এরাই সেই পাকিস্তানী শত্রুবাহিনী যারা পাকিস্তানে মুজাহিদদের বিরুদ্ধে পরিপূর্ণ একতাবদ্ধ হয়ে যুদ্ধ করছে।
সুতরাং এটা প্রমাণিত যে, নামে ভিন্নতা সত্ত্বেও ইসলামের শত্রুতায় এরা সবাই পশ্চিমা বাহিনীরই আদেশ পালন করে। তারা পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও ভারতে নিজেদের প্রভুদের নির্দেশে কাজ করছে।
অতএব প্রত্যেক মুসলমান, বিশেষত যারা নিজেদের ভূমিতে শরয়ী বিধান বাস্তবায়নের আশা রাখেন, তাদের জন্য ইহুদীদের বানানো সীমান্তগুলাকে পদদলিত করে অবিচ্ছেদ্যভাবে ফিরিঙ্গী তাবেদারদের সাথে যুদ্ধ করা আবশ্যক৷ এ ভূখন্ড - যেখানে দীর্ঘ আটশত বছর ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠিত ছিল, সেখানে এই জাহেলি শাসনের পরিবর্তে কুরআনের পবিত্র বিধান বাস্তবায়ন করতেই হবে৷
এই জাহেলি শাসন আমাদের চরিত্র, জীবন-যাপন ও শিক্ষা ব্যবস্থাসহ সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে।
হে আমার শ্রদ্ধেয় আসাতিযা ও উলামায়ে কেরাম!
বিষয়টি এত সহজ স্বাভাবিক নয়, যেভাবে বাহ্যিক দৃষ্টিতে আমাদেরকে দেখানো হয়। বিষয়টি শুধু মানবরচিত আইনের কিছু শাখাগত সংশোধন বা গুটিকয়েক মানুষের পরিবর্তনের মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়। আজকে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মুসলমানদেরকে এই ললিপপ ধরিয়ে দেয়া হচ্ছে যে, এগুলো নির্দিষ্ট কয়েকজন মানুষের কাজ এবং এই বিষয়গুলোর গ্রহণযোগ্য সমাধান নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা। বিষয়গুলো এত সহজ না।
এর প্রকৃত সমাধান ঐ শাসনব্যবস্থার পরিবর্তনেই রয়েছে, যে শাসনব্যবস্থায় এমন জটিলতা রাখা আছে যে, যদি শাসনভার কোন ভালো, দ্বীনদার ও জ্ঞানবিশারদদের হাতে আসে, তবুও সে আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান বাস্তবায়ন করতে পারবেন না। কেননা এই গণতন্ত্রের ভিত্তিই হলো শরিয়াহ সহ প্রত্যেক বিষয়ে জনগণের মতের উপর নির্ভর্শীল হওয়া৷ আল্লাহর নাযিলকৃত বিধানও রাষ্ট্রীয় আইন হিসেবে তখনই বিবেচিত হবে, যখন সংসদে উপস্থিত জনপ্রতিনিধিরা সেটাকে বিলের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করবো। নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক!
অন্যথায় আল্লাহ তায়ালার পবিত্র বিধান থাকা সত্ত্বেও বেহায়াপনা, নগ্নতা এবং ইসলাম বিদ্বেষী ব্লগার কলামিষ্টদের মুখে লাগাম লাগানো হচ্ছে না কেনো? অপরাধ বন্ধ করার জন্য কোরআনে বর্ণিত হুদুদের পরিবর্তে তাদের জন্য ইংরেজদের বানানো পদ্ধতি গ্রহন করা হচ্ছে কেন? পাকিস্থান ও হিন্দুস্থানসহ পুরো পৃথিবীতেই এ পদ্ধতি চালু আছে৷ নাউযুবিল্লাহ!
এর কারণ একটাই – সেটা হল আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান সংসদে জনপ্রতিনিধিদের পক্ষ হতে পাশ করা হয়নি?! এই কারণেই এই আইনগুলো প্রয়োগ করা হচ্ছে না।
فيا أسفي والي الله المشتكي
হায়, আফসোস তাদের জন্য৷ আল্লাহ! তোমার কাছেই অনুযোগ করছি৷
এই বাতিল শাসন এমন প্রতিটি সরু রাস্তাকেও পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে যা দিয়ে ইসলাম প্রবেশের সামান্যতমও সুযোগ ছিলো। তাই আসল সমাধান হলো সর্বোৎকৃষ্ট ফরজ বিধান খিলাফাহর পুনপ্রতিষ্ঠা করা।
আল্লাহর বিধান ব্যতীত অন্য বিধান দ্বারা বিচারকার্য পরিচালনাকারী এই বাতিল শাসনব্যাবস্থা ধ্বংস করাই হলো মূল কাজ। যার প্রত্যেকটা শাখা ইসলামের বিরুদ্ধে দাড় করানো হয়েছে। এই শাসন ইসলামের দেয়া মূলনীতি প্রত্যাখ্যান করে নিজেদের মনগড়া দূর্গন্ধযুক্ত মূলনিতীকে ভিত্তি হিসেবে স্থাপন করেছে। আর আমাদের উপড় তা চাপিয়ে দিয়েছে। তারা একাজটা করেছে মিডিয়ার মাধ্যমে। এই শাসন ইসলামী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বিপরীতে সুদভিত্তিক জীবনব্যাবস্থা আমাদের উপর চাপিয়ে দিয়েছে। যার সংরক্ষণ এই পশ্চিমা তাগুতি আদালতগুলো করে যাচ্ছে।
এই শাসন মুজাহিদীনদের বিরুদ্ধে এমন অসভ্য বাহিনীদের কাজে লাগাচ্ছে যারা প্রথম থেকেই হিন্দু ও ইংরেজদের গোলামী করে আসছে।
সুতরাং এখন সময় নিজের এবং নতুন প্রজন্মের ঈমান হেফাজত করার; মুসলিম উম্মাহর অস্তিত্ব রক্ষা করার; আমাদের ইজ্জত রক্ষা করার এবং মুসলিম ও ইসলামের প্রতিশ্রুত বিজয়ের বাস্তবায়ন করার।
কেননা, এ বিষয়টি সুনিশ্চিত যে, যতদিন এ শাসনব্যবস্থা আমাদের উপর চেপে বসে থাকবে ততদিন আমাদের উলামায়ে কেরাম ও ওয়ায়েজীনদের নসিহত তেমন কোন কাজে আসবে, উল্লেখযোগ্য কোন প্রভাবও পড়বে না। যতদিন এই শাসনব্যবস্থা থাকবে ততদিন নগ্নতার রক্ষকেরা স্বাধীনতার নাম দিয়ে বেহায়াপনা ও অশ্লীলতার প্রচার করতে থাকবে। এরফলে উলামায়ে কেরামদের নসিহত নির্দিষ্ট কিছু মানুষের মধ্যে হয়তোবা পরিবর্তন আনতে পারলেও আমভাবে পরিবর্তন আসবে না। এই সমাজব্যবস্থা ততদিন পর্যন্ত পরিবর্তন হবে না যতদিন না এই নির্লজ্জতায় ভরা জীবনব্যাবস্থার মুলোৎপাটন করা হয়।
কারণ আপনারা জানেন, ঘরের নসিহত ও তরবিয়াতের চেয়ে (পরিবেশের দাওয়াতের) প্রভাব অনেক বেশি। পক্ষান্তরে আমাদের ইসলামী শাসনব্যাবস্থায় নগ্নতার প্রচার প্রসারকে স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
আর যদি শুধু ওয়াজ নসিহতই যথেষ্ট হতো তো কুরআনের চেয়ে আর বড় নসিহতকারী, সাহাবায়ে কেরামগণ থেকে বড় দায়ী আর কে হতে পারে?
এই শাসন স্বাধীনতার নাম দিয়ে প্রত্যেক বেদ্বীন ও কাফেরদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই ক্ষান্ত হয়নি, বরং তাদেরকে নিজ ধর্মচ্যুতির উপর অটল থেকে তা প্রচার করার জন্য সহায়তা করে থাকে। এমতাবস্থায় আমাদের বংশধরদের শতকরা কত ভাগের ঈমান রক্ষার নিশ্চয়তা দেয়া যায়?
এখান আমরা জানি যে, এই পূর্ণ পরিকল্পিত ধর্মদ্রোহীতা অদৃশ্যপন্থায় ভালোভাবেই চলছে। এই শাসনব্যবস্থা এই পরিকল্পিত ধর্মদ্রোহীতাকে শুধুমাত্র সংরক্ষণের নিশ্চয়তা দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি বরং প্রশংসার মাধ্যমে তা বৃদ্ধিও করছে।
সুতরাং আমাদের সম্মানিত উলামায়ে কেরামগণের উপর দায়িত্ব হলো, তারা যেন নিজেদের ভাই বোনদের সহযোগিতা করেন। আমাদের ভুল-ত্রুটি চিহ্নিত করে দেন। আমাদেরকে সুদৃষ্টিতে দেখেন এবং আপন ভাবেন। মিডিয়ার প্রতারণার স্বীকার হয়ে যেন আমাদের বিরুদ্ধে মন্তব্য না করেন এবং বাড়াবাড়ি ছাড়াছাড়ি বাদ দিয়ে মধ্যম পন্থায় চলার ক্ষেত্রে নিজের ভাইদেরকে সাহায্য করেন।
কেননা, আপনারা যদি নিজ যিম্মাদারি অনুভব না করেন তাহলে ময়দানের মধ্যে ইফরাত এবং তফরিতকারী (বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির শিকার) আইএস এর মত ফেৎনার আবির্ভাব ঘটবে৷ আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এবং আমাদের ইরাকী ভাইদেরকে এধরণের ফেতনা থেকে হেফাজত করুন৷ আমীন৷ (আল্লাহ তায়ালা এই খারেজী ফেতনাকে ইরাক, শাম, ইয়ামান, পাকিস্থান ও আফগানিস্থান থেকে নিশ্চিহ্ন করে দিন এবং ইমারতে ইসলামিয়াহ আফগানিস্থানের মুজাহিদ ভাইদেরকে সাহায্য করুন৷ যারা নাঙ্গাহারে ইতিমধ্যেই খারেজিদের সাথে যুদ্ধরত অবস্থায় আছে।)
আপনি আমাদের সমস্ত মতের সাথে একমত নাও হতে পারেন৷ কিন্তু মুসলিম উম্মাহর চলমান সংকট নিরসণে আমাদের কোন বিরোধ নেই৷ আমাদের দুশমন তো অভিন্ন৷ ইসলামী শরীয়াহ বাস্তবায়নই আমাদের লক্ষ্য৷ সুতরাং সর্বস্বীকৃত বিষয়গুলোতে একে অপরের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন রাখা একেবারেই উচিত নয়৷ এমনিতেই দুশমন আমাদের পরস্পরের বিচ্ছিন্নতাকে প্রসস্ত করার জন্য সুযোগ খুঁজে থাকে৷ তাদের দীর্ঘ দিনের আকাঙ্খা ইলম এবং জিহাদের মধ্যে সম্পর্ক ছিন্ন করে দেয়া৷ সুতরাং আল্লাহর ওয়াস্তে দুশমনকে খুশি হওয়ার সুযোগ দিবেন না৷ (এই লেখাটি দুরত্বের কারণের এক উত্তম খোলা চিঠি।)
আমরা আপনার মতামত শ্রবণ, ঠান্ডা মাথায় চিন্তা-ফিকির করার এবং এর উপর আমল করার ব্যাপারে আশাবাদী৷ এটা নিশ্চিত যে, আপনার পরামর্শ ও আপনার মতামত আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ সুতরাং এই ধারাবাহিকতাকে কখনোই ব্যহত হতে দিবেন না৷ আপনার মূল্যবান কিছু সময় ব্যয় করে ইসলামী বিধান বাস্তবায়নের তামান্নায় মৃত্যুকে গলায় বেঁধে নেয়া ভাইদেরকে দিক নির্দেশনা দিবেন৷ আপনার খুতবা এবং বয়ানের মধ্যে এই জরুরী অথচ প্রত্যাখ্যাত বিষয়কে একটু যায়গা দিবেন৷ উম্মাহর সামনে এই অসত্য বিধানের (যেটা গণতন্ত্র নামে খ্যাত) অসারতা প্রকাশ করবেন৷ ইসলামী জীবনব্যবস্থার আদল ও ইনসাফ সম্পর্কে উম্মাহকে ওয়াকেফহাল করবেন৷ উম্মাহকে এই অসৎ জীবনব্যবস্থার ধূম্রজাল থেকে বের করার জন্য মুজাহিদদের সহযোগীতা করবেন৷ আপনার মূল্যবান সময় বের করার জন্য আল্লাহ তায়ালা আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুন৷ কোন কথা যদি তবিয়তে অপছন্দ মনে হয় তো অগ্রীম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি৷ আল্লাহ রব্বুল ইজ্জত সমস্ত অনিষ্টতা থেকে আপনাকে হেফাজত করুন৷ আমীন৷ আপনার নেক দোয়ায় আমাদেরকে অবশ্যই স্মরণ রাখবেন৷
মাআসসালাম
আপনার দ্বীনী ভাই
আবু মুহাম্মদ ইশতিয়াক আ’যমী
৩০ শে শাবান ১৪৩৬ হিজরী
১৮ ই জুন ২০১৫ ইংরেজি
রোজ বুধবার
*****************