JustPaste.it

কোন জামা’আর সাথে জিহাদ করবো? বাংলাদেশে কি উপযুক্ত জামা’আ আছে যারা সঠিক ভাবে জিহাদ করছে?

এ প্রশ্নটি বহুল উচ্চারিত এবং একই সাথে যৌক্তিক ও গুরুত্বপূর্ণ। জিহাদের মতো একটি ইবাদাত কোন জামা’আর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে করা হবে তা অত্যন্ত গুরুতপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত যা নিয়ে প্রত্যেক মুসলিমের আন্তরিকতার সাথে গভীর ভাবে চিনাত করা উচিত। তবে একই সাথে এটাও মনে রাখতে হবে জিহাদের ফরয হবার হুকুমটি এ প্রশ্নটির উত্তরের উপর নির্ভর করে না। অর্থাৎ কোন দেশে যদি জিহাফ ফরয হয় এবং এমন একটিমাত্র মুসলিম জামা’আ থাকে যারা জিহাদ করছে তবে সে জামা’আর মধ্যে ভুল-ত্রুটি থাকলেও তাদের সাথে সম্পৃক্ত হয়েই জিহাদ করতে হবে। জামা’আর মধ্যে থাকা ভুলত্রুটির জন্য জিহাদ ছেড়ে দেওয়া যাবে না। যেমন ধরুন একজন ব্যক্তি ইসলাম গ্রহনের পর জানতে পারলো জুমু’আর সালাত ফরয। এখন দেখা গেল সে যেখানে থাকে সেটা হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা হবার কারনে সেখানে কোন মাসজিদ নেই। সবচেয়ে কাছাকাছি মাসজিদ হল দুই গ্রাম পরে। আবার সে মাসজিদের ইমামের তাজউয়ীদ পুরোপুরি সঠিক না, ক্বুর’আনের খুব বেশি অংশ তার হিফয করা নেই, মুসল্লীদেরও ‘ইলম-আমলের অবস্থা ভালো না। কিন্তু সেখানে জুমু’আর সালাত আদাইয়ের ফরয হুকুমটা আদায় হচ্ছে। এখন এ কমতি গুলোর জন্য এ নওমুসলিম ব্যক্তি এ জামাতের সাথে ফরয দায়িত্ব পালন থেকে বিরত থাকতে পারে? অবশ্যই না, বরং এই নওমুসলিমের জন্য ফরয হল এই জামাতের সাথেই জুমু’আর সালাত আদায় করা, এবং পাশপাশি সাধ্যমত জামাতের ‘ইলম-আমলের অবস্থা উন্নয়নের চেষ্টা করা। আর যদি এ জামাতের অবস্থা এতোই খারাপ হয়, তারা যদি দ্বীনের মৌলিক বিষয়ে এমনভাবে গোমরাহ হয় যে এদের সাথে ইবাদাত করা যাচ্ছেই না, তাহলে ওই ব্যক্তিকে নিজের একটি জামাত বানাতে হবে। কিন্তু ফরয ইবাদাত ছেড়ে দেওয়া যাবে না।

বরং সালাফদের মধ্যে, তাবেয়ী ও তাবে-তাব’ঈনদের মধ্যে এমন অনেকে ছিলেন যারা খারেজি নেতার অধীনে রাওয়াফিদের বিরুদ্ধে জিহাদ করেছেন। যখন তাদের এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হয়েছিল, “কেন আপনারা জাহান্নামের কুকুরদের অধীনে জিহাদ করছেন?”, তখন তাদের জবাব ছিল, “আমরা ইসলামের শত্রুদের অধীনের আল্লাহর শত্রুদের বিরুদ্ধে জিহাদ করছি।“ [বিস্তারিত জানতে দেখুন, “খাওয়ারিজ ও জিহাদঃ, শায়খ আবু হামযা আল-মাসরি ফাকাল্লাহু আসরাহ]। খাওয়ারিজরা আহলুস সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত না, তথাপি সালাফদের অবস্থান ছিল ফরয জিহাদ আদায় করতে হবে, দরকার হলে খাওয়ারিজের অধীনে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে আফগান জিহাদের সময় ওয়ার্ল্ড মুসলিম লীগের যে ফাতাওয়াতে আফগানিস্তানের জিহাদে অংশগ্রহন প্রত্যেক মুসলিম রাষ্ট্র ও ব্যক্তির জন্য বাধ্যতামূলক ঘোষণা করা হয়, যে ফাতাওয়াতে সাক্ষর করেছিলেন শায়খ বিন বায, আল-ফাওযান সহ আরো অনেক আলেম, সেখানেও কোন নির্দিষ্ট জামা’আর কথা বলা হয় নি, জিহাদে যোগদান আবশ্যক এ হুকুম তুলে ধরা হয়েছিল। যদিও এ সময় আফগানিস্তানে জিহাদরত জামা’আগুলোর মধ্যে এমন জামা’আ ছিল যারা কট্টর বেরলভী আক্বিদা পোষণ করতো, ছিল শি’আ আহমাদ শাহ মাসুদের দল, ছিল ইউরোপ, অ্যামেরিকা দ্বারা সরাসরি সমর্থিত ও অনেক ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রিত দল। কিন্তু এগুলোর কিছু জিহাদ ফরয হওয়া এবং জিহাদে যোগদান করার (কোন একটি জামা’আতের সাথে সম্পৃক্ত হবার মাধ্যমে, যদি সে জামা’আর ভুলও থাকে) ফাতাওয়ার উপর প্রভাব ফেলেনি। [বিস্তারিত দেখুন, রাবেতা আল আলাম আল ইসলামীর ১৪০৮ হিজরির ফাতাওয়া। পিডিএফের ৩৭ নম্বর পৃষ্ঠা http://bit.ly/28Ih3AS ]

বর্তমানে সময়েও শায়খ আবু মুহাম্মাদ আল মাকদিসি হাফিযাহুল্লাহ, শায়খ আবু ক্বাতাদা হাফিযাহুল্লাহসহ অনেক মুজাহিদ ‘আলিম, জামাতুল বাগদাদীকে খাওয়ারিজ কিংবা খাওয়ারিজের চাইত নিকৃষ্ট বললেও, ইরাকে রাওয়াফিদের বিরুদ্ধে তারা জামাতুল বাগদাদীকে সাহায্য করতে বলেছেন, প্রয়োজনে ইরাকে রাওয়াফিদের বিরুদ্ধে জিহাদের জন্য তাদের সাথে যোগ দিতেও বলেছেন (যদি কোন সুন্নী মুজাহিদ দল বা ত্বইফা খুজে না পাওয়া যায়]। একইভাবে হাকীম আল-উম্মাহ শায়খ ডঃ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ স্পষ্ট ভাবে বলেছেন জামাতুল বাগদাদীর পাহাড়সম ভুল থাকা সত্ত্বেও ক্রুসেডার-যায়নিস্ট, নুসাইরী, রাওয়াফিদের বিরুদ্ধে তিনি তাদের সমর্থন করেন, এবং সহযোগিতা করতে প্রস্তুত কারন এ বিষয়টি (এ কুফফারদের বিরুদ্ধে জিহাদ) অনেক বেশি ব্যাপক ও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় [“ইসলামী বসন্ত”, আস সাহাব]।

এ ব্যাপারে শায়খ আল-‘আল্লামা সুলাইমান বিন নাসিল আল-‘উলওয়ানের একটি ক্বওল বিষয়টিকে আরো পরিষ্কার করবে ইন শা আল্লাহ। শায়খ সুলাইমান আল ‘উলওয়ান বলেন – যদি কোন কাফির রামাদ্বানের কোন এক দিনে ইসলাম গ্রহন করে, তবে ঐ মূহুর্ত থেকে তাকে সিয়াম পালন করতে হবে, তবে (ঐ) রামাদ্বানের পূর্ববর্তী রোযাগুলো তাকে পালন করতে হবে না, কারন এর আগে তার উপর রোযা বাধ্যতামূলক ছিল না।

অর্থাৎ যদি আজ যুহরের সময় একজন মুশরিক ইসলাম গ্রহন করে, তবে ঐ মূহুর্ত থেকে তার উপর ইসলামের সকল ফরয বিধান আবশ্যক হয়ে যাবে। সুতরাং শাহাদাহ উচ্চারনের পর থেকেই তাকে রোযা পালন করতে হবে এবং মাগরিব আগ পর্যন্ত পানাহার তার জন্য হারাম হবে। আর সে যদি আজ ইসলাম গ্রহনের পর রোযা না রাখে, এবং আজ মারা যায় তবে সে এ ফরয ইবাদাত ছেড়ে দেবার জন্য জিজ্ঞাসিত হবে। সুতরাং ফরয ইবাদাতের সম্পর্কে অবহিত হওয়া মাত্র সে ইবাদাত ব্যক্তির উপর আবশ্যক হবে (যদি না গ্রহনযোগ্য ওজর থাকে)। একই কথা ফরয জিহাদ, ফরয সালাত, ফরয যাকাত, ফরয হাজ্জ্বের ক্ষেত্রে ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।

এবার আসা যাক বাংলাদেশে এ মূহুর্তে যোগ দেবার জন্য কোন কোন জামা’আ আছে, সে প্রশ্নে। এ মূহুর্তে বাংলাদেশের অপারেশানাল আছে এমন তিনটি জামা’আ হল আনসার আল ইসলাম [AQIS], জামাতুল বাগদাদী বা “আইএস” [জেএমবির একটি অংশ তাদের বা’ইয়াহ দিয়েছে], এবং জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ বা জেএমবি [সালাউদ্দীন গ্রুপ বা মূল জেএমবি]। এর মধ্যে প্রথম দুটি হল বৈশ্বিক জিহাদের সাথে যুক্ত থাকা দুটি প্রধান জামা’আর সাথে সরাসরি সংযুক্ত শাখা। বর্তমান বিশ্বে যত জিহাদী তানযীম আছে তার ৯০% এর বেশি এ দুটি জামা’আর যেকোন একটির সাথে বাইয়াহবদ্ধ বা সংযুক্ত। যারা বৈশ্বিক জিহাদকে সমর্থন দেন তারা সকলেই এ দুটি জামা’আর যেকোন একটিকে হাক্ব মনে করেন, অনেকে দুটি জামা’আকেই হাক্ব মনে করেন। মোট কথা এ দুটি জামা’আর [আল-ক্বা’ইদা ও জামাতুল বাগদাদী/”আইএস”] কমপক্ষে একটি জামা’আ যে বিশ্বব্যাপী সঠিক পদ্ধতিতে জিহাদ করে, এ দুটি জামা’আর যেকোন একটি জামা’আ যোগদান করার মত উপযুক্ত জামা’আ সেটি সকল “জিহাদ সমর্থক”-রাই স্বীকার করেন। সিরিয়াতে, কিংবা আফগানিস্তানে গেলে এ দুটী জামা’আর যেকোন একটিতে জিহাদ করার ইচ্ছার কথাই এ ভাইরা বলে থাকেন। সুতরাং এক্ষেত্রে উত্তর খুব সোজা, যেহেতু আপনি এদুটো দলের কোন একটাকে হাক্ব জামা’আ বলে মনে করেন, এবং বিশ্বজুড়ে তাদের জিহাদকে সমর্থন করেন, তাদের মানহাজকে সঠিক মনে করেন অতএব তাদের শাখা যেহেতু এ মূহুর্তে এ ভূখণ্ডে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে, অতএব আপনি এ দুটোর মাঝে যে জামা’আকে হাক্বের অধিকতর নিকটবর্তী মনে করেন সেটাতে যোগ দিন।

খুব সহজ সমাধান। সমস্যা হল এ সহজ সমাধান তাদের সামনে উত্থাপন করা হলে অনেক ভাই এ প্রশ্নটি করেন তা হল আনসার আল ইসলাম কি আসলেই আল-ক্বাইদার শাখা? বাংলাদেশে “আইএসের” নামে যে কাজ হচ্ছে এগুলো কি আসলেই “আইএস”-এর লোকজন করছে? যদিও এ ফোরামের ভাইদের কাছে এ প্রশ্নগুলো হাস্যকর মনে হতে পারে তবুও ব্যাপকভাবে “মানহাজের ভাই”-দের কাছ থেকে এ ধরনের প্রশ্ন উত্থাপিত হবার কারনে, এ প্রশ্নগুলোর দালীল প্রমান সহ জবাব দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছি। আসুন দেখা যাক, এ দলগুলো কি আসলেই আল-ক্বাইদা বা জামাতুল বাগদাদীর সাথে সম্পৃক্ত কি না।

আনসার আল ইসলাম কি আসলেই আল-ক্বাইদা, আনসার কি আসলেই AQIS?

প্রমানে যাবার আগে প্রথমে আমরা একটি প্রশ্ন দিয়ে শুরু করি। আমরা কিভাবে জানি ৯/১১ এর হামলা আল-ক্বাইদা করেছিল? আমরা কি এটা বুশের কথার ভিত্তিতে বিশ্বাস করি? কিংবা মার্কিন মিডিয়া বা মার্কিন কংগ্রেসের দাবির ভিত্তিতে? না আমরা বিশ্বাস করি, আল-ক্বাইদার দায় স্বীকার এবং তাদের পক্ষ থেকে উপস্থাপিত তথ্য প্রমানের কারনে। যেমন আমরা জানি শায়খ উসামা বিন লাদিন রাহিমাহুল্লাহ থেকে শায়খ আইমান হাফিযাহুল্লাহ, শায়খ আবু নাসীর আল উহায়শী রাহিমাহুল্লাহ, শায়খ আতিয়াতুল্লাহ আল লিব্বি রাহিমাহুল্লাহ, শায়খ আবু ইয়াহিয়া আল লিব্বী রাহিমাহুল্লাহ, শায়খ ইউসুফ আল-উয়ায়রী রাহিমাহুল্লাহ সহ তানযীম ক্বাইদাতুল জিহাদে উমারাহ ও ‘আলিমগণ অসংখ্যবার একথা স্বীকার করেছেন যে ৯/১১ এর হামলা তারাই করেছেন। বিশেষভাবে আস-সাহাব মিডিয়ার মাধ্যমে প্রকাশিত শায়খ উসামার বক্তব্য এবং এ বরকতময় হামলায় অংশগ্রহনকারী ভাইদের জবানবন্দীর মাধ্যমে সুনিশ্চিত ভাবে আমরা জেনেছি তানযীম ক্বাইদাতুল জিহাদই এ হামলা করেছে।

আচ্ছা শায়খ আবু মুস’আব আল-যারক্বাউয়ীর রাহিমাহুল্লাহ জামা’আ তাওহীদ ওয়াল জিহাদ, যে শায়ক উসামাকে বাইয়াহ দেয়ার মাধ্যমে আল-ক্বাইদা ইন ইরাকে-AQI পরিণত হয়েছিল এ তথ্য আমরা কিভাবে জানি? আমরা এটা জানি আল-ক্বাইদা ইন ইরাক এবং মূল আল-ক্বাইদার অফিশিয়াল মিডিয়া বক্তব্যের মাধ্যমে। একই ভাবে চিন্তা করুন শায়খ আনওয়ার আল-আওলাকী যে AQAP এর সদস্য এটা আমরা কিসের ভিত্তিতে বিশ্বাস করি? ওবামার কথার ভিত্তিতে কি? না, এটা আমরা বিশ্বাস করি AQAP এর অফিশিয়াল মিডিয়া আল-মালাহীমের মাধ্যমে প্রকাশিত শায়খ আওলাকীর বক্তব্য, AQAP এর অফিশিয়াল ম্যাগাযিন ইন্সপায়ারে তার লিখিত বক্তব্য ইত্যাদির মাধ্যমে। এ একই কথা জাবহাত আল-নুসরা, AQIM, আল-শাবাব, আল মুরাবিতুন [শায়খ মুখতার বেল মুখতার] – সবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। উভয় দিকের অফিশিয়াল বক্তব্যের মাধ্যমে তাদের দাবির সত্যতা সম্পর্কে আমরা নিশ্চিত হচ্ছি।

বিশেষ করে আস-সাহাব মিডিয়ার বক্তব্যের মাধ্যমে। কারন এটি হল আল-ক্বাইদার সর্বপ্রথম অফিশিয়াল মিডিয়া যেখান থেকে শায়খ উসামা বিন লাদিন রাহিমাহুল্লাহ, এবং শায়খ আইমান হাফিযাহুল্লাহর বক্তব্য প্রকাশিত হয়। সুতরাং আস-সাহাব মিডিয়া থেকে যখন কোন বক্তব্য প্রকাশিত হবে, তখন সেটা আল-ক্বাইদার বক্তব্য হিসেবেই আমরা গ্রহন করি। আর যদি আস-সাহাব মিডিয়াকে আমরা অবিশ্বাস করি, তাহলে ৯/১১ যে আসলেই আল-ক্বাইদা করেছে, শায়খ উসামা যে আসলেই আল-ক্বাইদার আমীর, উনি যে আসলেই আমীরুল মু’মীনীন মুল্লাহ মুহাম্মাদ উমার রাহিমাহুল্লাহকে বাইয়াহ দিয়েছেন, মিশরের জামাহ ইসলামিয়্যাহর বিভিন্ন নেতা যেমন শায়খ মুহাম্মাদ হাসান খালিল আল-হাকীম রাহিমাহুল্লাহ, শায়খ আহমেদ রেফা’ই তাহা রাহিমাহুল্লাহ যে আল-ক্বাইদাতে যোগ দিয়েছেন এরকম অসংখ্য তথ্য আমাদের তখন অস্বীকার করতে হবে। অফিশিয়াল মিডিয়াকে যদি আমরা অস্বীকার করি তাহলে শারলি এবদোর আক্রমন যে আল-ক্বাইদা করেছে, প্যারিস ও ব্রাসেলসের আক্রমন যে জামাতুল বাগদাদী করেছে এ প্রত্যাকটি বিষয় প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়বে।

যদি AQIS এর প্রসঙ্গ আসে, তাহলে প্রশ্ন হবে AQIS যে আসলেই আল-ক্বাইদার শাখা এর প্রমান কি? এর প্রমান হল শায়খ আইমান আয-যাওয়াহিরির বক্তব্য যা প্রকাশিত হয়েছে আস সাহাবের মাধ্যমে যেখানে তিনি আল-ক্বাইদার নতুন একটি উপমহাদেশীয় শাখার ঘোষণা দিয়েছেন যার নাম Jamā‘at Qā‘idat al-Jihād fī Shibh al-Qārrah al-Hindīyah বা AQIS. শায়খ আসীম উমার হাফিযাহুল্লাহ যে এ শাখার আমীর, উস্তাদ আহমেদ ফারুক রাহিমাহুল্লাহ যে এ শাখার প্রথম নায়েবে আমীর এটা আমরা কিভাবে জানি। একই উত্তর আস সাহাব মিডিয়ার বিভিন্ন রিলিযের মাধ্যমে এ তথ্যগুলো আমরা জানতে পেরেছি।

তাহলে এখন দেখা যাক আনসার আল ইসলামের ব্যাপারে কি তথ্য-প্রমান পাওয়া যায়।

১। From France to Bangladesh: The Dust Will Never Settle Down/ ফ্রান্স থেকে বাংলাদেশঃ এ ধূলো মিটবার নয় - আস সাহাব
২০১৫ সালের মে-র ২ তারিখ আস সাহাব মিডিয়া কতৃক প্রকাশিত From France to Bangladesh: The Dust Will Never Settle Down, শীর্ষক বক্তব্যে আল-ক্বাইদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখার আমীর শায়খ আসীম উমার হাফিযাহুল্লাহ সরাসরি বাংলাদেশে সংঘটিত আহমেদ হায়দার রাজীব (থাবা বাবা), রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের যিন্দীক একেএম শফিউল ইসলাম, মুক্তমনার অভিজিৎ রায়, এবং ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যা দায় স্বীকার করেন। [দেখুন, From France to Bangladesh: The Dust Will Never Settle Down, আস সাহাব মিডিয়া উপমহাদেশ,

Video thumb
৫.৫১-৬০৫ মিনিট, আন্তার্জাতিক জিহাদী ফোরাম আল-ফিদাতে আপলোড করা একই ভিডিওর কথা উল্লেখ করেছে জিহাদোলজি নামক, কাউন্টার টেরোরিযম ওয়েবসাইটটি - http://bit.ly/28OKcgJ

আবার এ একই ভিডিওতে শায়খ আসিম উমার হাফিযাহুল্লাহ বাংলাদেশী একজন মুজাহিদিনের নাম উল্লেখ করেছেন যিনি বাংলাদেশ থেকে হিজরাহ করে খুরাসানে যান এবং সেখানে আল-ক্বাইদাতে যোগদান করেন, এবং অতঃপর শাহাদাত বরন করেন। [দেখুন, From France to Bangladesh: The Dust Will Never Settle Down, আস সাহাব মিডিয়া উপমহাদেশ,
Video thumb
৬.২৮-৬.৪০ মিনিট]। পরবর্তীতে বাংলাদেশে খুরাসানে হিজরত করা মুজাহিদিনকে নিয়ে আস সাহাব মিডিয়া থেকে বের হয় বাংলা ভিডিও “আমাদের মারকায”, এবং “জীবনের সাফল্য” [জীবনের সাফল্য ভিডিওটির কথা জাবহাত আল-নুসরার .আল-রিসালাহ” ম্যাগাযিনের ২য় সংখ্যার ২৪ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়, এবং ২০১৫ সালের বাছাইকৃত শীর্ষ মুজাহিদিন ভিডিওর মধ্যে একটি বলে অভিহিত করা হয়।]

অর্থাৎ আল ক্বাইদার অফিশিয়াল মিডিয়া আস-সাহাবের মাধ্যমে প্রকাশিত বার্তায় AQIS এর আমীর নিজের মুখে দায় স্বীকার করে বলেছেন আনসার আল ইসলামের হামলাগুলো আল-ক্বাইদার মুজাহিদীন করেছেন। একই সাথে শায়খ আসীম উমার এটাও বলছেন শুধু যে বাংলাদেশে শুধু আল –ক্বাইদার মুজাহিদিন কাজ করছেন তাই না, বরং বাংলাদেশ থেকে মুজাহিদিনকে খুরাসানেও নিয়ে যাওয়া হচ্ছে/হয়েছে। অতএব এর মাধ্যেম প্রমানিত হয় আনসার আল ইসলাম আল-ক্বাইদার বিশেষ করে AQIS এর একটি শাখা, আনসার আল ইসলামের মুজাহিদিন আল-ক্বাইদার মুজাহিদিন এবং এ কথার সাক্ষী AQIS এর আমীর শায়খ আসিম উমার হাফিযাহুল্লাহ।

২) আল হাদীদ নিউয রিপোর্ট – আস সাহাব মিডিয়া
২০১৬ সালের ৮-ই মার্চ আস-সাহাব মিডিয়া থেকে প্রকাশিত হয় AQIS এর আল-হাদীদ নিউয রিপোর্ট। তিনটি অংশে বিভক্ত ও রিপোর্টে তুলে ধরা হয় গত প্রায় তিন বছরে AQIS এর বিভিন্ন হামলার বর্ণনা, এবং কোন কোন শ্রেণীর টার্গেটকে AQIS প্রাধান্য দিচ্ছে তার বিশ্লেষণ। একই সাথে এ ভিডিউতে তুলে হরা হয় পাকিস্তানের মুজাহিদিনে সাথে মুরতাদ পাকিস্তান সরকার ও সেনাবাহিনীর যুদ্ধের বাস্তবতা ও সামরিক-কৌশলগত বিশেষণ

তিনটি পর্বের লিঙ্ক [আন-নাসর মিডিয়া কতৃক বাংলা সাবটাইটেলকৃত] - http://bit.ly/28LnhR0

আল হাদীদ নিউয বুলেটিনের তৃতীয় পর্বের শুরুতে AQIS কোন কোন শ্রেণীর টার্গেটের উপর উপমহাদেশ ব্যাপী হামলা করেছে তার আলোচনায়, শাতেমে রাসূলদের নিয়ে হামলার বর্ণনায় শায়খ আসীম উমার হাফিযাহুল্লাহর From France To Bangladesh: The Dust Will Never Settle Down এর একটি ক্লিপ দেখানো হয় [লিঙ্ক ইতিপূর্বে উল্লেখিত হয়েছে]। ভিডিওটির ২.৩০ মিনিট থেকে শায়খ আসীম উমারের বক্তব্য শুরু হয় এবং ৩:০৮ মিনিটের দিকে বাংলাদেশের হামলার ব্যাপারে শায়খের দায় স্বীকারের অংশটি দেখানো হয়।
[দেখুন আন নাসর মিডিয়া কতৃক বাংলা সাবটাইটেলকৃত “আল হাদীদ নিউয রিপোর্ট” তৃতীয় পর্ব, আস সাহাব মিডিয়া - https://www.youtube.com/watch?v=3ZHX6attiFM,]

একই ভিডিওর ৪:৫৬ মিনিট থেকে আবারো থাবা বাবা, শফিউল ইসলাম, অভিজিৎ রায় ও ওয়াশিকুর বাবুর উপর আনসার আল ইসলামের হামলাগুলোর কথা উল্লেখ করে এগুলোকে সরাসরি আল-ক্বাইদা উপমহাদেশের বা AQIS এর মুজাহিদিনের বরকতময় হামলা বলে উল্লেখ করা হয়। একই ভিডিওর ৬:৩৯ মিনিট থেকে ৬:৪৭ মিনিট পর্যন্ত ওয়াশিকুর রাহমান বাবুর হত্যাকারী আনসার আল ইসলামের মুজাহিদীন ভাই আরিফুল ও যিকরুল্লাহকে দেখিয়ে আল-ক্বাইদা উপমহাদেশের বীর মুজাহিদীন বলে উল্লেখ করা হয় – আল্লাহ আমাদের এই দুই বীর সিংহের কল্যাণময় মুক্তি ত্বরান্বিত করুন।
[দেখুন আন নাসর মিডিয়া কতৃক বাংলা সাবটাইটেলকৃত “আল হাদীদ নিউয রিপোর্ট” তৃতীয় পর্ব, আস সাহাব মিডিয়া - https://www.youtube.com/watch?v=3ZHX6attiFM,]

দেখা যাচ্ছে আস সাহাব থেকে প্রকাশিত AQIS এর শায়খ আসিম উমারের হাফিযাহুল্লাহ “From France to Bangladesh: The Dust Will Never Settle Down” ভিডিওটির মতোই, আস সাহাব থেকে প্রকাশিত AQIS এর ভিডিও “আল-হাদীদ নিউয রিপোর্ট” – এও আনসার আল ইসলামের হামলাগুলোকে AQIS এর হামলা বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে এবং আনসার আল ইসলামের মুহাজিদিনকে AQIS এর মুজাহিদিন বলে গর্বের সাথে তুলে ধরা হয়েছে। এবং সকল প্রশংসা আল্লাহর।

৩) GIMF
GIMF বা Global Islamic Media Front হল আল-ক্বাইদার সাথে সম্পর্কিত একটি মিডিয়া যা আল-ক্বাইদার বিভিন্ন শাখার বক্তবগুলোকে ইংলিশ, জার্মান সহ অন্যান্য বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ করে থাকে। GIMF এর সূচনা হয় GIM [Global Islamic Media] নামের একটি ইয়াহু গ্রুপ থেকে। ২০০৩ সালের মার্চে GIM এর মাধ্যমে একটি কৌশলগত পরিকল্পনা প্রকাশ করা হয় যেখানে স্পেনে হামলার ব্যাপারে আলোচনা করা হয়। ৩ মাস পর মাদ্রিদে বোমা হামলা ঘটে। তখন থেকেই আল-ক্বাইদার বিভিন্ন বক্তব্যের অনুবাদ GIM এর মাধ্যমে প্রকাশিত হতো, এবং আস সাহাব ছাড়া GIM/GIMF আল ক্বাইদার বক্তব্যের একমাত্র গ্রহনযোগ্য উৎস হিসেবে বিবেচিত হতো। এমনকি আল-ক্বাইদার নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকেও সে সময় বলা হয়েছিল যেকোন বক্তব্য, বই, কৌশলগত পর্যালোচনা ইত্যাদি বৈধ/অফিশিয়াল হিসেবে বিবেচিত হবার জন্য GIM এর মাধ্যমে প্রকাশ হওয়া বাধ্যতামূলক। পরবর্তীতে GIM পরিণত হয় GIMF এ। বিভিন্ন প্রকাশন ও রিলিযের সত্যায়ন শুরু থেকেই GIMF এর কাজের একটি। বর্তমানেও আল শাবাব, আনসার আদ-দ্বীন (মালি), AQIM, তুর্কিস্তানী ইসলামী পার্টি ইত্যাদি আল-ক্বাইদা শাখার বিভিন্ন অপারেশানের এবং বিবৃতির অনুবাদ প্রকাশ হয় GIMF থেকে। এমনকি শায়খ আইমান হাফিযাহুল্লাহর সাম্প্রতিক বেশ কিছু বিবৃতির [“Killing of Mujahideen by the Al-Saud Regime”, “Sham A Trust Upon Your Necks, “The Sun of Victory Shines from Nusantara”, "Let's Unite for the Liberation of Al-Quds ইত্যাদি ] ইংরেজী,জার্মান, উর্দু, এবং ইন্দোনেশীয় ভাষায় অনুবাদ প্রকাশ হয়েছে GIMF থেকেই।

এ GIMF এর মাধ্যমে আনসার আল ইসলামের বেশ কিছু হামলার ব্যাপারে বার্তা অন্যান্য ভাষায় অনুদিত হয়েছ।

একটি উদাহরনের লিঙ্ক এখানে দেওয়া হল। নিলয় চৌধুরী নীলের হত্যাকান্ডের ব্যাপারে আনসার আল ইসলামের বিবৃতির আরবী অনুবাদ - https://dawahilallah.in/archive/index.php/t-423.html
GIMF এ বক্তব্যটি আরবী ও ইংরেজীতেও অনুবাদ করে তাদের টুইটার অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে প্রকাশ করেছিল। কিন্তু অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ডেড হয়ে যাবার কারন তার লিঙ্ক দেওয়া গেল না।

১৮/৮/২০১৫ এ GIMF ও আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ” Refuting News About the Role of Anṣār Allah Bangla Team In the Assassination of the Blasphemer Blogger Niloy Chowdhury Neel in Bangladesh” শীর্ষক যৌথ বিবৃতি প্রকাশিত হয় যেখানে বলা হয় আনসারুল্লাহ বাংলা টিম একটি মিডিয়া টিম মাত্র তবে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম এবং GIMF এর পক্ষ থেকে এ বিবৃতিতে ব্লগার নিলয় চৌধুরী নিল হত্যার জন্য AQIS এর বাংলাদেশ শাখার মুজাহিদিনের প্রশংসা করা হয়।

পরবর্তীতে ২০১৫ সালের ৩১শে ডিসেম্বর GIMF এর একটি বিবৃতির মাধ্যমে জানানো হয় আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামের মিডিয়াটি GIMF এর সাথে মার্জ (Merge) করেছে বা একীভূত হয়ে গেছে, যা এখন থেকে GBT [GIMF Bangla Team] নামে পরিচিত হবে। এখন থেকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম নামে কোন আলাদা মিডিয়া আর থাকবে না, বাংলাতে যে বিবৃতি তা বের হবে GBT এর মাধ্যমে। [দেখুন“The Creation of the GIMF Bangla Team Following the Merger of the Anṣār Allah Bangla Team” - http://bit.ly/28JcJSK]

২০১৫ সালে জাগৃতি ও শুদ্ধস্বর প্রকাশনীতে আনসার আল ইসলামের হামলার ব্যাপারে GIMF/GBT এর পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হয় বাংলা ভিডিও “চার্লি হেব্দ থেকে জাগৃতি/From Charlie Hebdo to Jagriti” [ https://justpaste.it/GBT-1]

২০১৬ এর জানুয়ারীতে GBT এর মাধ্যমে প্রকাশিত হয় ২০১৩ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত বাংলাদেশে আনসার আল ইসলামের বিভিন্ন বরকতময় হামলার ইনফোগ্রাফিক যেখানে থাবা বাবা থেকে শুরু করে জাগৃতি পর্যন্ত প্রতিটি হামলা উল্লেখ করা হয়
[দেখুনঃ /files/justpaste/d315/a12075290/vxgsfjx.jpg ইংরেজি, /files/justpaste/d315/a12075290/w70m2wp.jpg বাংলা]

২০১৬ এর মে-তে ঢাকায় সমকামীতার প্রচারক ও প্রসারক অ্যামেরিকান এজেন্ট জুলহাজ মান্নানের উপর বরকতময় হামলার কারনে আনসার আল ইসলামকে অভিনন্দন জানানো হয় GIMF এর অফিশিয়াল টুইটার থেকে। টুইটার অ্যাকাউন্ট সাসপেন্ডেড হবার কারনে লিঙ্ক দেওয়া গেল না, তবে দাওয়াহইলাল্লাহ ফোরামে GIMF এর অফিশিয়াল অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া পোষ্টের লিঙ্ক দেওয়া হল - http://bit.ly/28MuNOQ। এ বার্তাতে আনসার আল ইসলামকে সুনির্দিষ্ট ভাবে AQIS এর বাংলাদেশ শাখা বলে উল্লেখ করা হয় [GIMF Bangla Team (GBT) Congratulates the Blessed Operation by Ansar Al-Islam Bangladesh (AQIS, Bangladesh branch)]

উল্লেখ্য দাওয়াহইলাল্লাহ ফোরাম ছাড়া আর মাত্র দুটি ফোরামে GIMF এর অফিশিয়াল অ্যাকাউন্ট আছে, এবং এ ফোরাম দুটো হল https://alfidaa.info/vb এবং https://shamikh1.info/vb

এ ব্যাপারে অফিশিয়াল মেসেজটি পড়ুন - http://bit.ly/28KLiFv

আবার এ GIMF থেকেই আস-সাহাব মিডিয়া থেকে প্রকাশিত AQIS এর বিভিন্ন ভিডিও ইংরেজী সাবটাইটেল সহ রিলিয করা হয়েছে। যার মধ্যে অন্যতম হল “The Jihadi Memories” নামের সিরিযটি।

GIMF এর এধরনের আরো বিবৃতি খুজতে পারেন এখানে- http://bit.ly/28MRVuM

সুতরাং দেখা যাচ্ছে আনসার আল ইসলামের মুজাহিদিনের খবর প্রচার করছে, এবং সুনির্দিষ্টভাবে আনসার আল ইসলামকে AQIS এর শাখা হিসেবে আখ্যায়িত করছে AQIS সহ আল-ক্বাইদার বিভিন্ন শাখার এবং আল-ক্বাইদার সাথে সংযুক্ত বিভিন্ন মুজাহিদিন জামা’আর জন্য বিভিন্ন ভাষাতে ইন্টারনেটভিত্তিক প্রচারের কাজ করা GIMF - যা এক যুগেরও বেশি সময় ধরে আল-ক্বাইদার মুজাহিদিনের খবর প্রচার করে আসছে, যা ছিল এক সময় ইন্টারনেটে আল-ক্বাইদার বার্তা প্রকাশের একমাত্র অফিশিয়াল মাধ্যম, এবং যাকে খোদ আল-ক্বাইদার পক্ষ থেকে ভেরিফাই করা হয়েছে বা তাযকিয়্যাহ দেওয়া হয়েছে।

৪) ইন্সপায়ার ম্যাগাযিন সংখ্যা ১৪
২০১৫ এর সেপটেম্বরের ৯ তারিখে আল মালাহীম মিডিয়া থেকে প্রকাশিত হয় AQAP [Al Qa’idah in the Arabian Peninsula]-এর ইন্সপায়ার ম্যাগাযিনের ১৪ তম সংখ্য। গুপ্তহত্যা নিয়ে তৈরি এ সংখ্যার ২৫ তম পৃষ্ঠায় শাতেমে রাসূলদের উপর বিশ্বব্যাপি হামলার একটি টাইমলাইন তুলে ধরা হয়, যেখানে শার্লি এবদোর হামলা ২০০৪ থেকে ২০১০ পর্যন্ত ১০ দশটি হামলার কথা তুলে ধরা হয়। এ টাইমলাইনে স্থান পায় আনসার আল ইসলামের ৪টি হামলা [অভিজিৎ, ওয়াশিকুর, নিলয় নীল, অনন্ত বিজয়]। এ টাইমলাইনে স্থান পাওয়া দশটি হামলার মধ্যে দুটি হামলার ক্ষেত্রে হামলাকারীর নাম উল্লেখ করা হয় [মুহাম্মাদ বুয়েইরি, আমির আব্দুর রশীদ চিমা]। এছাড়া শার্লি এবদো সহ বাকি আটটি হামলার ক্ষেত্রে কোন/ব্যক্তি বা সংগঠনের কথা উল্লেখ করা হয় নি। অবশিষ্ট এ আটটি হামলার মধ্যে বাংলাদেশের চারটি হামলা বাদ দিয়ে বাকি চারটি হামলার দিকে যদি আমরা তাকাই তাহলে দেখা এগুলোর প্রতিটি করা হয়েছিল সরাসরি আল-ক্বাইদার কোন একটি শাখার তত্ত্বাবধানে [শার্লি এবদো, কার্ট ওয়েস্টারগার্ড], অথবা আল-ক্বাইদার নির্দেশনা অনুযায়ী কোন সেলের মাধ্যমে [লারস ভিলকস]। অর্থাৎ যে হামলাগুলোর সাথে আল-ক্বাইদা যুক্ত না সেগুলোর ক্ষেত্রে হামলাকারীদের নাম এ টাইমলাইনে উল্লেখ করা হয়ছে, আর যে হামলাগুলোর সাথে আল-ক্বাইদা জড়িত সেগুলোর ক্ষেত্রে কোন ব্যযাক্তি বা সংগঠনের নাম আলাদা করে উল্লেখ করা হয় নি। অর্থাৎ এ টাইমলাইনে শারলি এবদো এবদো বাংলাদেশের আনসার আল ইসলামের হামলাগুলোকে একই ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।


উপরোক্ত অফিশিয়াল রিলিয সমূহের আলোকে সুস্পষ্টভাবে প্রমান হয় AQIS এর পক্ষ থেকে একাধিকবার আনসার আল ইসলামকে আল-ক্বাইদার শাখা হিসেবে দাবি করা হয়েছে, খোদ AQIS এর আমীর আনসার আল ইসলামের মুজাহিদিনকে, “’আল-ক্বাইদার মুজাহিদিন” বলে উল্লেখ করেছেন। পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী আল-ক্বাইদার অনলাইন প্রচারনার কাজ করা GIMF এর পক্ষ থেকেও স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে আনসার আল ইসলাম হল AQIS এর বাংলাদেশ শাখা। এমনকি AQAP এর ইন্সপায়ার ম্যাগাযিন ও জাবহাত আল-নুসরার আর রিসালাহ ম্যাগাযিনেও ও তথ্য পরোক্ষ ভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। অন্যদিকে আনসার আল ইসলামের পক্ষ থেকেও তাদের একাধিক বিবৃতিতে বলা হয়েছে তারা আল-ক্বাইদা উপমহাদেশের বাংলাদেশ শাখা। অর্থাৎ আনসার আল ইসলামের পক্ষ থেকে এবং AQIS এর পক্ষ থেকে একই দাবি করা হয়েছে। সুতরাং মুজাহিদিন মিডিয়ার ব্যাপারে সাধারন পর্যায়ের ধারনা রাখেন এমন ব্যাক্তিদের জন্যও এ সত্য দিনের আলোর মতো পরিষ্কার যে আনসার আল ইসলাম, AQIS এর বাংলাদেশ শাখা, এবং আনসার, আল ইমাম ওয়াল মুজাদ্দিদ শায়খ উসামা বিন লাদিন রাহিমাহুল্লাহ কতৃক প্রতিষ্ঠিত তানযীম ক্বাইদাতুল জিহাদের একটি অংশ।

আর এ দাবিকে অস্বীকার করা হয়েছে কোন উৎস থেকে? যেখানে আল-ক্বাইদার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে আনসার আল ইসলাম আল-ক্বাইদার শাখা, সেখানে বাংলাদেশের তাগুতের বিভিন্ন বাহীনি কতৃক এবং বাংলাদেশের মিডিয়া এ কথাকে অস্বীকার করেছে। এখন প্রশ্ন হল যেসব “মানহাজের ভাই জিহাদ সমর্থক” নিজেরা বিশ্বাস করছেন এবং আত্ববিশ্বাসের সাথে অপরকে বলছেন তারা কিসের ভিত্তিতে এ কথা বলছেন? তারা কি মুসলিমদের কথার উপরে, মুজাহিদিনের অফিশিয়াল রিলিযের উপরে মুরতাদ বাহিনী ও বাংলাদেশের মিডিয়ার কথাকে স্থান দিচ্ছেন? নাকি তারা অফিশিয়াল মিডিয়া বলে যে আদৌ কিছু আছে তা সম্পর্কে জানেন না? অথচ এ বক্তব্য, বিবৃতি, প্রকাশনা গুলো অনালাইনে অ্যাভেইলেবল ১/২ ঘন্টা সময় নিয়ে একটু মনযোগ দিয়ে খুজলেই এ তথ্যগুলো অতি সহজে সত্যায়ন করা সম্ভব। নাকি তারা অফিশিয়াল মিডিয়া সম্পর্কে জানেন কিন্তু তা খুজে দেখার পরিশ্রমটুকু করার সময় তারা পাননি, আর তাই না জেনেই , জানার চেষ্টা ছাড়াই “অমুক ভাই” বা .তমুক ভাই”-এর কাছ থেকে শোনা কথার ভিত্তিতে এতো গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়ে “বিশেষজ্ঞ” মতামত প্রদান করছেন? যদি এর যেকোন একটি করা হয়, তবে কি তারা তথ্য সত্যায়নের যে মূলনীতি শরীয়াহতে দেখিয়ে দেওয়া হচ্ছে তার অনুসরন করছেন?


বাংলাদেশে “আইএস” এর নামে যে হামলাগুলোর দায় স্বীকার করা হচ্ছে এগুলো কি আসলে “আইএস” করছে?

আনসার আল ইসলামের ব্যাপারে আমরা যে মূলনীতিগুলো উল্লেখ করেছি তার আলোকে দেখা যায়, ইতিমধ্যে ‘আল-হায়াত মিডিয়া সেন্টার” থেকে প্রকাশিত “আইএস”-এর অফিশিয়াল ইংরেজী ম্যাগাযিন “দাবিক্ব”-এ একাধিকবার বাংলাদেশে চালানো হামলার ব্যাপারে দায় স্বীকার করা হয়েছে এবং বাংলাদেশে যারা “আইএস” এর ব্যানারে কাজ করছে তাদের স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তিনটি প্রমান এখানে তুলে ধরা হল।

১) দাবিক্ব ১২ – নভেম্বর ১৮, ২০১৫ তে প্রকাশিত “Just Terror” নামক এ সংখ্যাটিতে উপস্থাপন করা “The Revival of Jiahd in Bengal” নামের একটি আর্টিকেল। এ আর্টিকেলে হোশি কুনিও, সিযার তাভেলা এবং হোসেনী দালানে রাওয়াফিদের তাজিয়া মিছিলের উপর হামলার দায়স্বীকার করে বলা হয়, “খিলাফাহর অধীনস্ত” দুটি সেল “ক্রুসেডার সিযার তাভেল” ও “জাপানী নাগরিক হোশি কুনিও” –এর উপর হামলা চালায়। একইভাবে হোসেনী দালানের হামলারা ব্যাপারে বলা হয় “খিলাফাহর সৈন্যরা” এ হামলা চালায়। এ আর্টিকেলটিতে শায়খ আবদূর রাহমানের রাহিমাহুল্লাহ ও “তার ছাত্রদের” কথা প্রশংসার সাথে আলোচনা করা হয়, যা উদ্দেশ্য ছিল মূল জেএমবির (সালাউদ্দীন গ্রুপ) কাছ থেকে বা’ইয়াহ পাওয়া।

২) দাবিক্ব ১৪ – ১৩ই এপ্রিল ২০১৬ তে প্রকাশিত “ইখওয়ানুল মুরতাদ্দীন’ নামক সংখ্যায় “আইএস” –এর বাংলাদেশের আমীর আবু ইব্রাহীম আল হানিফের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করা হয়, যেখানে বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশে “আইএস” এর লক্ষ্য-উদ্দেশ্য এবং সম্ভাব্য উদ্দেশ্যসহ দীর্ঘ আলোচনা তুলে ধরা হয়। একই সাথে এ সংখ্যাতে আবু জানদাল আল-বাঙ্গালী নামে একজন বাংলাদেশী মুজাহিরের কথা তুলে ধরা হয়, যিনি উত্তর সিরিয়াতে “আইএস” এর হয়ে লড়াই করার সময় মৃত্যুবরন করেন। আমরা আশা করি যদিও জামা’আ হিসেবে জামাতুল বাগদাদী একটি খাওয়ারিজ জামা’আ তথাপি এ বাংলাদেশী মুহাজিরের নেক নিয়্যাতের ভিত্তিতে এবং তিনি যদি মুওয়াহিদিন ও মুজাহিদিন হত্যায় অংশগ্রহন না করে থাকেন তবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাকে শহীদ হিসেবে কবুল করবেন।

৩) আমাক্ব – এখন পর্যন্ত “আইএসের” নামে যতোগুলো হামলারা দায় স্বীকার করা হয়েছে, তার সবই হয়েছে আমাক্ব (Amaq) নিউয এজেন্সীর মাধ্যমে। সাধারনভাবে জামাতুল বাগদাদীর মিডিয়া নীতি হল সব অপারেশানের খবর প্রথমে আমাক্বের মাধ্যমে স্বীকার করা, এবং তারপর অন্যান্য অফিশিয়াল প্রকাশনার মাধ্যমে স্বীকার করা। এজন্য প্যারিস, ব্রাসেলস এবং মিশরীয় বিমান হামলা প্রতিটি ক্ষেত্রেই সর্বপ্রথম আমাক্ব নিউয এজেন্সীর মাধ্যমে দায় স্বীকার করা হয়।

অতএব দেখা যাচ্ছে আনসার আল ইসলামের মতো বাংলাদেশের “আইএসের” ক্ষেত্রেও দুই দিক থেকেই একই দাবি করা হচ্ছে, এবং দাবি অস্বীকার করা হচ্ছে মুরতাদ বাহিনী ও বাংলাদেশের মিডিয়া পক্ষ থেকে। সুতরাং এ বিষয়টি পরিষ্কার যে আল-ক্বাইদা এবং জামাতুল বাগদাদী উভয় জামাতের কাজ সক্রিয়ভাবে এখন বাংলাদেশে চলছে। সুতরাং বৈশ্বিক জিহাদকে সমর্থনকারী [যেহেতু এ দুটি জামা’আর অধীনেই বর্তমানে বিশ্বের ৯০% এর বেশি জিহাদী তানযীম কাজ করছে] এবং জিহাদকে ফারযুল আইন বলে যারা বিশ্বাস করেন, তাদের জন্য ঘরে বসে থাকার আর কোন অজুহাত থাকে না। কারন যেকোন বিচারে (আপনি আল-ক্বাইদাকে হাক্ব মনে করুন, কিংবা জামাতুল বাগদাদী/”আইএস” কে) হাক্ব জামা’আ এখন বাংলাদেশে বিদ্যমান আছে, আর এটা স্বীকৃতি খোদ আল-ক্বাইদা ও “আইএস”-ই দিচ্ছে।


আমার সম্মানিত মুসলিম ভাইয়েরা! দ্বীনের ফরয একটি বিধানের ব্যাপারে, ফারযুল আইন আমলের ব্যাপারে, হাক্ব জামা’আকে খুজে বের করার ব্যাপারে, ফরয পালনের জন্য এ জামা’আর সাথে আবদ্ধ হবার ব্যাপারে – এতোগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক প্রশ্নের ব্যাপারে সঠিক তথ্য সঠিক পদ্ধতিতে জানার প্রচেষ্টা ছাড়া এরকম অবস্থান নেওয়া, তা প্রচার করা এবং এ অবস্থানের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া কিভাবে মানবিক বুদ্ধিবৃত্তিক কিংবা শারীয়াহগত – কোন দিকে যৌক্তিক বা Justifiable হতে পারে?
সুবহান’আল্লাহ্, “তোমাদের কি হল? তোমরা কেমন সিদ্ধান্ত দিচ্ছ?” [আল-ক্বালাম, ৩৬]