শহীদের অস্ত্র বহন কর! -১
ওয়াদা পূর্ণকারী আমীর
(আমিরুল মুমিনিন মোল্লা মুহাম্মাদ উমর মুজাহিদ রহঃ এর স্মরণে)
হাকিমুল উম্মাহ শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরি (হাফিজাহুল্লাহ)
আস সাহাব মিডিয়া কর্তৃক পরিবেশিত ও আন নাসর মিডিয়া কর্তৃক বাংলায় অনূদিত
শাবান ১৪৩৭ হিজরি / মে ২০১৬ ইংরেজি
احمِلْ سِلاحِيَ يَا أَخِيْ لا تَسْلِبَنَّهْ
وَالجُرْحُ مِنِّي دَاوِهِ لا تَنْكَأَنَّهْ
وانْبِذْ وَسَاوِسَ مَنْ يُوَسْوِسُ كَفِّرَنَّهْ
وَفَحِيْحَ دَاعِي الشَّرِ سُبَّ وفَجِّرَنَّهْ
আমার অস্ত্রটা হস্তে ধারণ কর, ছিনিয়ে নিও না!
বন্ধু! আমার ক্ষত নিরাময় কর! আর আঘাত করো না!
কুমন্ত্রী কুমন্ত্রণা ছুড়ে ফেল,
অকল্যাণের প্রতি আহ্বানকারীকে নিন্দা কর!
***** *****
أَنَا مُسْلِمٌ وَمُرَابِطٌ فِي خَنْدَقِيْ
أَمْضَيْتُ فِيْهِ العُمْرَ أَحْمِلُ بُنْدُقِيْ
أَدْعُو إِلى حَقٍّ كَصُبْحٍ مُشْرِقِ
فانْبِذْ دُعَاةَ تَشَرْذُمٍ وَتَفَرُّقِ
আমি মুসলিম আমি খন্দকে প্রহরারত।
অস্ত্র কাঁধে এখানেই আমার জীবন কেটেছে।
তুমি জাজ্বল্যমান সত্যের দিকে অগ্রসর হও!
বিভেদ সৃষ্টিকারীদের পাতা ফাঁদে পা দিও না!
***** *****
القُدْسُ نَادَتْ يَا أَخِيْ فَاْنَهضْ وَقُمْ
نَصْطَّفُ مُتَّحِدِيْنَ نُوفِي بِالذِّمَمْ
وَنَصُدُّ كَالبُنْيَانِ مَسْعُورَ الِحمَمْ
فَتَحَالُفُ الشَّيْطانِ قَدْ حَشَدَ الأُمَمْ
বাইতুল মাকদিস আমাদের ডাকছে, সুতরাং হে বন্ধু!
এসো কর্তব্যের খাতিরে একতাবদ্ধ হই!
ইবলিসের জারজ সন্তানেরা জোট বেধেছে,
সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় তাদের প্রতিহত করি!
***** *****
احْمِلْ سِلَاحَكَ وَاقْتَفِ أَثَرَ الشَّهيِدْ
وَتَمُدُّنِي بِالدَّمِ إِنْ نَزَفَ الوَرِيدْ
نَصْطَفُّ مُتَّحِدِيْنَ فِيْ وَجْهِ اليَهوُدْ
القُدْسُ وِجْهَتُنَا بِهَا الفَتْحُ الـمَجِيدْ
অস্ত্র হাতে নাও, শহীদের পদাঙ্ক অনুসরণ কর!
আমার রক্ত নিঃশেষ হয়ে গেলে তুমি রক্ত দাও!
আমরা ইহুদীদের মোকাবেলায় ঐক্যবদ্ধ হবো!
বাইতুল মাকদিস আমাদের গন্তব্য, সেখানেই হবে মহা বিজয়।
***** *****
جَاوِبْ أَخِيْ دَاعِي التَّآخِيَ وَالصَّلاحِ
وَانْبِذْ دَعَاوَى كُلَّ فتَّانٍ مُلاحِي
بِدِمَايَ أُوْثِركُمْ وَإِنْ نَزَفَتْ جِرَاحِي
فَإِذَا سَقَطْتُ مُجَنْدَلًا فَاحْمِلْ سِلَاحِي
বন্ধু! ঐক্য ও কল্যাণের প্রতি আহ্বানকারীর ডাকে সাড়া দাও,
অনৈক্য ও ফিতনা সৃষ্টিকারীকে বর্জন কর।
আমার ক্ষত দেহের রক্ত নিঃশেষ হয়ে গেলেও আমি তোমাদেরকেই এগিয়ে রাখবো।
আমার নিথর দেহ যখন ভূলুণ্ঠিত হবে, তখন তুমি আমার অস্ত্র তুলে নিও!
***** *****
শাইখ আব্দুল্লাহ আজ্জাম (রহঃ) এর বাণী :
ইতিহাস কলমের কালিতে রচিত হয় না, ইতিহাস রচিত হয় উম্মাহর সন্তানদের রক্ত দিয়ে। তাঁদের ত্যাগের বিনিময়ে উম্মাহ দুনিয়ার বুকে অধিষ্ঠিত হয়, আদর্শ পুনর্জীবন লাভ করে; বিশ্বাসের বিজয় হয়।
শাইখ উসামা বিন লাদেন (রহঃ) এর বাণী :
আল্লাহর মেহেরবানিতে সামগ্রিকভাবে আমাদের চলমান অবস্থা খুবই সন্তোষজনক।
আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ আমাদেরকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশিত পথে চলার তাওফিক দিয়েছেন। সহীহাইনে বর্ণিত হয়েছে-
(والذي نفس محمد بيده لودِدتُ أن أغزو فأُقتل، ثم أغزو فأُقتل، ثم أغزو فأُقتل)
অর্থঃ সেই সত্ত্বার কসম, যার হাতে মুহাম্মদের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রাণ! আমি চাই যে, আমি যুদ্ধ করি অতঃপর নিহত হই, আবার যুদ্ধ করি এবং নিহত হই, আবার যুদ্ধ করি এবং নিহত হই।
শাহাদাতের তামান্না করছেন সেই রাসূল, যার পূর্বাপর সকল গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়েছে। যিনি সৃষ্টির সেরা, যিনি কিয়ামতের দিন উম্মতের নাজাতের জন্য সুপারিশ করবেন। সুতরাং ভাবুন! গভীরভাবে চিন্তা করুন! শাহাদাত কতবড় মর্যাদা ও সৌভাগ্যের বিষয় হলে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং বারবার তা কামনা করতে পারেন।
যার উপর ওহি নাযিল হয় সেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই কথাগুলো বলে নিজের বরকতময় ইহকালীন জীবনের ইতি টানতে চাচ্ছেন। জীবনের পরিবর্তে শাহাদাতের মর্যাদা কামনা করছেন। সুতরাং ভাগ্যবান তাঁরা, যাদেরকে আল্লাহ শহীদ হিসেবে কবুল করেছেন। দোয়া করি আল্লাহ যেন আমাদেরকে তাঁর দ্বীনের সাহায্যকারী হিসেবে কবুল করেন, শাহাদাত নসীব করেন এবং পৃষ্ট প্রদর্শন থেকে হেফজত করেন।
بِضْعٌ مِنَ الَّلحَظَاتِ يَهْزِمُ رَوْعُهَا هُوْجُ الرِّيَاحِ
يَهْوِي بِهَا حَمْدَانُ مِثْلَ الصَّقْرِ مَقْصُوصَ الجَنَاحِ
مِنْ بَعْدِ مَا اقْتَحَمَ الرَّدَى وَالقَصْفُ قَدْ غَمَرَ النَّوَاحِيْ
فَحَنَوْتُ أَلْثُمُ جُرْحَهُ الرَّعَّافَ، فَانْتَكَأَتْ جِرَاحِيْ
وَهَمَتْ عَلَى خَدِّي الدُّمُوعُ فَقُلْتُ يَا رُوْحِي وَرَاحِيْ
هَلَاَّ رَحِمْتَ قُلُوبَنَا وَعَدَلْتَ عَنْ هَذَا الرَّواحِ
فَأَجَابَنِي البَطَلُ الـمُسَجَّى هَازِئًا بِي، بِاقْتِرَاحِيْ
كَفْكِفْ دُمُوْعَكَ لَيْسَ فَي عَبَراتِكَ الحَرَّى ارْتِيَاحِيْ
هَذَا سَبِيْلٌ إِنْ صَدَقْتَ مَحبَّتَه، فَاحْمِلْ سِلَاحِيْ
লোকালয় যখন বোমার আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত, মৃত্যুর থাবা যখন সর্বত্র বিস্তৃত,
তখন কয়েক মুহূর্তের পাল্টা যুদ্ধে হামদান ডানাকাটা পাখির ন্যায় বিধ্বস্ত হয়।
যখন রক্তস্নাত চেহারায় চুম্বন করার জন্য মাথা নিচু করলাম তখন আমার ক্ষত থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হলো।
আমার কপোলে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। আমি আর্তনাদ করে উঠলাম, কোথায় গেল আমার মানসিক শান্তি!
হে আমার মন! আমার জন্য তোমার একটুও মায়া হয় না! তুমি কি আমাকে সরিয়ে নিতে পার না!
কাফনের কাপড়ে শায়িত দেহ তিরস্কার করে বলে উঠল, তোমার আর্তচিৎকার আর চোখের পানিতে আমার প্রশান্তি আসবে না,
যদি তোমার অন্তরে এই আদর্শের ভালোবাসা থেকে থাকে তাহলে আমার অস্ত্রটি হাতে তুলে নাও!
শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরী (হাফিজাহুল্লাহ) :
بسم الله، والحمد لله، والصلاة والسلام على رسول الله، وآله وصحبه ومن والاه
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।
ইচ্ছা ছিল “ইসলামী বসন্ত” শিরোনামে সিরিজ আলোচনা অব্যাহত রাখবো। কিন্তু যারা ধৈর্য ও অবিচলতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, সর্বাবস্থায় দ্বীনকে আঁকড়ে থাকার দীক্ষা দিয়েছেন, দ্বীনকে দুনিয়ার উপর প্রাধান্য দিয়েছেন, জিহাদ ও দাওয়াহ’র অঙ্গনে অসামান্য অবদান রেখেছেন অতঃপর মহান প্রভুর সান্নিধ্যে চলে গেছেন, তাদের জীবন ও কর্মতৎপরতা নিয়ে আলোচনার স্বার্থে সিরিজ আলোচনায় একটু বিরতি নিতে হচ্ছে। আল্লাহ তাঁদের উপর রহম করুন, তাঁদের কবুল করুন এবং আমাদেরকে তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে জান্নাতের পথে পরিচালিত করুন।
শাইখ আনোয়ার আল-আওলাকী (রহঃ) এর বাণী :
শাহাদাত বৃক্ষতুল্য, যাতে ফল উৎপন্ন হয়, পরিপক্ক হয় অতঃপর চয়নোপযোগী হয়। আল্লাহর মুমিন বান্দাগণও অনুরূপ কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করে অবশেষে শহীদ হিসেবে আল্লাহর সামনে হাজির হওয়ার পর্যায়ে পৌঁছান। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
{وَيَتَّخِذَ مِنْكُمْ شُهَدَاءَ}
“আর তিনি তোমাদের কিছু লোককে শহীদ হিসাবে গ্রহণ করতে চান”।
আল্লাহ যাকে শহীদ হিসেবে কবুল করেন সে মর্যাদার উচ্চাসনে অধিষ্ঠিত হয় এবং আল্লাহর বিশেষ করুণায় সিক্ত হয়। তাই শাহাদাত লাভে ধন্য হতে যথাযথ শিক্ষা ও প্রস্তুতি গ্রহণ করা প্রত্যেক মুসলিমের একান্ত কর্তব্য।
নিঃসন্দেহে শাহাদাত আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ ও দান। মোটেও এটি ‘সব হারানোর’ সমার্থক নয়।
শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরি (হাফিজাহুল্লাহ) :
আজ যাদের আলোচনা করবো তাঁদের একজন হলেন আমিরুল মুমিনীন মোল্লা মুহাম্মদ উমর রহঃ। যুদ্ধের ময়দানে সম্মুখ সমরে তার মৃত্যু হয়নি। কষ্টসাধ্য জীবন যাপন, অবিরত রিবাতে নিয়োজিত থাকা এবং সুচিকিৎসার অভাব ছিল তাঁর মৃত্যুর বাহ্যিক কারণ। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত শত বন্ধুর অতিক্রম করে ইসলামী ইতিহাসের সবচেয়ে বড় যুদ্ধের ময়দানে মুজাহিদগণের নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
(ما تعُدُّون الشهيد فيكم؟ قالوا: يا رسول الله من قتل في سبيل الله فهو شهيد، قال: إن شهداء أمتي إذًا لقليل، قالوا: فمن هم يا رسول الله؟ قال: من قتل في سبيل الله فهو شهيد ومن مات في سبيل الله فهو شهيد ومن مات في الطاعون فهو شهيد ومن مات في البطن فهو شهيد)
অর্থঃ তোমারা কাকে শহীদ মনে কর? তাঁরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহর রাস্তায় নিহত ব্যক্তি শহীদ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তবে তো আমার উম্মতের মাঝে শহীদের সংখ্যা খুবই কম হয়ে যাবে! তাঁরা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! তাহলে শহীদ কারা? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, আল্লাহর রাস্তায় নিহত ব্যক্তি শহীদ, আল্লাহর রাস্তায় মৃত্যুবরণকারী শহীদ, মহামারীতে মৃত্যুবরণকারী শহীদ এবং পেটের পীড়ায় মৃত্যুবরণকারী শহীদ। (সহিহ মুসলিম- ৩৫৪৬)
ইবনে মিকসাম বলেন, ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, এই হাদীসে আরও রয়েছে- والغريق شهيد
পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণকারী শহীদ’।
সুতরাং আশা করি, আল্লাহ আমিরুল মুমিনীনকে শাহাদাতের মর্যাদা ও প্রতিদান থেকে মাহরুম করবেন না। তিনি ছিলেন মুসলিম ও মুজাহিদগণের পথিকৃৎ। তিনি ছিলেন স্বাধীনচেতা মানুষের আদর্শ। অহংকারীদের সীমালঙ্ঘন ও ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের বাড়াবাড়ির বিরুদ্ধে জীবনভর সিনা টান করে লড়ে গেছেন।
শাইখ আবু কাতাদাহ আল-ফিলিস্তিনির বাণী :
হে আমার দ্বীনি ভাইগণ! সালাম জানাচ্ছি মুমিন ও মুজাহিদগণকে, যারা মুসলিমবিশ্ব ও তার সীমানা রক্ষায় এবং দ্বীন কায়েমের জন্য সর্বত্র তৎপর রয়েছেন। প্রীতি ও ভালোবাসা ব্যক্ত করছি আমিরুল মুমিনীন মোল্লা মুহাম্মদ ওমরের প্রতি। আল্লাহ তাঁকে মর্যাদার উচ্চ শিখরে পৌঁছে দিন। তাকে মানবজাতির জন্য হুজ্জত বানিয়ে দিন। আমীন!
তাঁকে মোবারকবাদ জানাই, কারণ আল্লাহ তাকে এই মহান কর্মের জন্য নির্বাচন করেছেন। মোবারকবাদ জানাই মুজাহিদ ভাইগণকে, যারা তাঁর দিকনির্দেশনা মেনে চলছেন এবং তাঁকে বাইআত দিয়েছেন। তাঁদের সকলের জন্য রইল আন্তরিক মোবারকবাদ ও ভালোবাসা। আল্লাহ সাক্ষী, আমার অভিব্যক্তির পেছনে তাঁদের সাক্ষাৎ লাভ, তাঁদের হাতে হাত রাখা ও তাঁদেরকে বুকে জড়িয়ে ছোঁয়া ছাড়া অন্য কোনো প্রেরণা আমার মাঝে কাজ করছে না।
আমিরুল মুমিনীন মোল্লা মুহাম্মদ উমর ধৈর্য ও অবিচলতার সাথে কমিউনিষ্টদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন, তারপর করেছেন ক্রুসেডারদের বিরুদ্ধে। তিনি তার সুদৃঢ় ঈমানের মাধ্যমে মুমিনের সামনে পার্থিব জগতের হীনতা, দীনতা ও মূল্যহীনতার এক স্বচ্ছ প্রতিচ্ছবি একেঁছেন।
আমি যেন তাঁকে দেখছি তিনি উক্ত আয়াতের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত হচ্ছেন-
{وَلَا تَهِنُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَنْتُمُ الْأَعْلَوْنَ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ}
অর্থঃ তোমরা হীনমন্য হয়ো না, চিন্তা করো না, তোমরাই বিজয়ী হবে, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক।
শাইখ আবু ইয়াহইয়া লিবি (রহঃ) এর বাণী :
আমরা আমিরুল মুমিনীন মোল্লা মুহাম্মদ উমরকে দ্ব্যর্থহীনভাবে জানাচ্ছি যে, আমরা আমাদের প্রুতিশ্রুতিতে অবিচল রয়েছি, আমরা আমাদের মানহাজ আঁকড়ে আছি। সুসংবাদ গ্রহণ করুন! আল্লাহ আপনাকে সাহায্য করবেন।
আরও সুসংবাদ গ্রহণ করুন! আল্লাহ আপনাকে পৃথিবীর বুকে অধিকতর কর্তৃত্ব দান করেছেন। আপনি যা হারিয়েছেন, উম্মাহর প্রাপ্তির তুলনায় তা তেমন কিছুই নয়। আল্লাহর মেহেরবানি মুমিনগণ আপনাকে যারপরনাই ভালোবাসেন। গভীর রজনীতে আপনার সফলতার জন্য দোয়া করেন।
শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরী (হাফিজাহুল্লাহ) :
দুনিয়ার বিত্ত-বৈভব মোল্লা উমরের (রহঃ) হাতের নাগালেই ছিল। তিনি তা ঝেড়ে ফেলেছেন। আল্লাহর উপর ভরসা রেখে জিহাদের পথে এগিয়ে গেছেন। অবশেষে আফগানিস্তানের অতি সাধারণ এক বাড়িতে তাঁর মৃত্যু হয়। দুনিয়া তাঁকে বদলাতে পারেনি, তিনি দুনিয়াকে বদলে দিয়েছেন। তাঁর এবং তাঁর জানবাজ মুজাহিদগণের ইস্পাত কঠিন প্রতিরোধের মুখে আমেরিকা পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে আফগানিস্তান থেকে পাততাড়ি গুটাতে বাধ্য হয়। তাদের স্থানীয় দোসররা এখন চরম পরিণতি ভোগের শঙ্কা নিয়ে দিনাতিপাত করছে।
মোল্লা মুহাম্মদ উমর আরও প্রমাণ করেছেন যে, এই উম্মতের মাঝে সর্বদাই এমন কিছু লোক থাকেন, যারা আল্লাহর উক্ত বাণীর বাস্তব নমুনা-
{مِنَ الْمُؤْمِنِينَ رِجَالٌ صَدَقُوا مَا عَاهَدُوا اللَّهَ عَلَيْهِ فَمِنْهُمْ مَنْ قَضَى نَحْبَهُ وَمِنْهُمْ مَنْ يَنْتَظِرُ وَمَا بَدَّلُوا تَبْدِيلًا}
অর্থ: মুমিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদা পূর্ণ করেছে। তাদের কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেছে এবং কেউ কেউ প্রতীক্ষা করছে। তাঁরা তাঁদের সংকল্প মোটেই পরিবর্তন করেনি। -সূরা আহযাব, আয়াত-২৩
এরা সেই সকল লোক, যারা ঈমান, স্বচ্ছতা ও ন্যায়-নিষ্ঠার মাধ্যমে রাজত্বের মোহ ও আধিপত্বের ফিতনা থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করবে। মোল্লা উমর ও তাঁর জানবাজ মুজাহিদগণ আল্লাহর পথে দুনিয়ার বিলাসিতা বিসর্জন দিয়েছেন, ফলে তাঁরা লাভ করেছেন সারা দুনিয়ার নিপীড়িত মুমিন-মুসলমানের দোয়া ও ভালোবাসা। তারপর আল্লাহ তাঁদের মাধ্যমে শত্রুকে শায়েস্তা করেছেন ও মুজাহিদগণকে বিজয় দিয়েছেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
{أَمْ حَسِبْتُمْ أَنْ تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ وَلَمَّا يَأْتِكُمْ مَثَلُ الَّذِينَ خَلَوْا مِنْ قَبْلِكُمْ مَسَّتْهُمُ الْبَأْسَاءُ وَالضَّرَّاءُ وَزُلْزِلُوا حَتَّى يَقُولَ الرَّسُولُ وَالَّذِينَ آَمَنُوا مَعَهُ مَتَى نَصْرُ اللَّهِ أَلَا إِنَّ نَصْرَ اللَّهِ قَرِيبٌ}
অর্থ : তোমার কি এই ধারণা কর যে, তোমার জান্নাতে চলে যাবে অথচ সে লোকদের অবস্থা অতিক্রম করনি, যারা তোমাদের পূর্বে অতীত হয়েছে। তাঁদের উপর এসেছে বিপদ ও কষ্ট। আর এমনিভাবে শিহরিত হতে হয়েছে, যাতে নবী ও তাঁর প্রতি যারা ঈমান এনেছিল তাঁদেরকে পর্যন্ত একথা বলতে হয়েছে যে, কখন আসবে আল্লাহর সাহায্য! তোমরা শোনে নাও, আল্লাহর সাহায্য একেবারেই নিকটবর্তী। -সূরা বাকারা, আয়াত-২১৪
শাইখ উসামা বিন লাদেন (রহঃ) এর বাণী :
ভাইদের উচিৎ দল ও দলের নেতৃবর্গের মাধ্যমে প্রতারিত ও বিভ্রান্ত না হওয়া। সাইয়াফ ছিল মুজাহিদগণের উচুঁ সারির নেতা। তার দলের নাম ছিল ‘আল ইত্তিহাদুল ইসলামী’। তার আনুগত্যের কোনো ত্রুটি ছিল না। কিন্তু দুনিয়ার মোহে পড়ে মুসলমানদের বিপক্ষে আমেরিকার সাথে হাত মিলিয়েছে। হাদীসের ভাষায় এটি ‘আল কুফরুল বাওয়াহ’ বা প্রকাশ্য কুফর।
আর আহমদ শাহ মাসউদ ইমারতে ইসলামী আফগানিস্তানের পতন ঘটানোর বাসনা নিয়ে ইউরোপিয়ান পার্লামেন্টে যোগ দিয়েছিল। তারপরেও নাকি কেউ কেউ তাকে শহীদ মনে করে। যদি আফগান নেতৃত্বে গুটি কতক বিচ্যুতি হয়েও থাকে তবে আল্লাহর রহমতে আরও অনেকেই নিষ্ঠার সাথে দাওয়াহ ও জিহাদের পথে অটল রয়েছেন। তাদের কয়েকজন হলেন, শাইখ ইউনুস খালেস (রহঃ), শাইখ জালালুদ্দিন হাক্কানী। তাদের উভয়ই আফগানিস্তানে আমেরিকার বিরুদ্ধে জিহাদ ফরজ হওয়ার ফতোয়া প্রদান করেছেন এবং স্বশরীরে জিহাদ করেছেন। গোটা দুনিয়ার মানুষ মোল্লা উমরকে (রহঃ) আন্তর্জাতিক কুফরি শক্তির বিরুদ্ধে লড়তে দেখেছে। বিশ্ববাসী আরও দেখেছে, আরব মুহাজিরগণকে আমেরিকার হাতে তুলে দেওয়ার শত চাপ উপেক্ষা করে তিনি কিভাবে শরীয়তের উপর অবিচল ছিলেন। দ্বীন রক্ষায় ইমারাহ ত্যাগ করেছেন; গদি রক্ষার জন্য দ্বীন ত্যাগ করেননি। শরীয়ত ও দ্বীনের জন্য তাঁর এই অসাধারণ ত্যাগ তাঁর মহান ব্যক্তিত্বের সাক্ষর বহন করছে।
মুসলিম ও মুনাফিক শাসকের মাঝে এই হলো পার্থক্য। মুসলিম দ্বীনের স্বার্থে রাজত্ব বিসর্জন দিতে মোটেও দ্বিধা করে না, আর মুনাফিক গদি রক্ষায় দ্বীন বিসর্জন দিতে কুণ্ঠাবোধ করে না। এটি মূলত ঈমান ও কুফরের পার্থক্য।
শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরী (হাফিজাহুল্লাহ) :
শাইখ উসামাকে আমেরিকার হাতে তুলে দেওয়ার জন্য সারা বিশ্বের পক্ষ থেকে ইমারতে ইসলামী’র উপর ব্যপক চাপ প্রয়োগ করা হয়েছিল। সৌদি এবং আমেরিকার আরব মিত্ররা চেষ্টার কোনো ত্রুটি করেনি। স্বয়ং সৌদির বাদশাহ তুর্কি আল ফয়সাল কান্দাহার এসেছিল শাইখ উসামা এবং তাঁর সঙ্গীগণকে নেওয়ার জন্য, সাথে এনেছিল মস্ত এক বিমান। আমিরুল মুমিনীনের সাথে সাক্ষাৎ করে তুর্কি বলল, ‘আপনি তো উসামাকে হস্তান্তর করবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, এখন প্রতিশ্রুতি পূরণের সময় হয়েছে। তাকে আমাদের হাতে তুলে দিন’। উক্ত বক্তব্য আমিরুল মুমিনীনের কাছে খুবই অবমাননাকর মনে হলো। তিনি তুর্কিকে বললেন, ‘আফ্রিকায় ঘটিত একটি বিষয় নিয়ে শাইখ উসামা ও আমেরিকার মাঝে বিরোধ হয়েছিল। এটা তো আপনার ব্যাপার না। আপনি এখানে এই মিশন নিয়ে কেন আসবেন? আপনার পিতৃপুরুষ সাহাবায়ে কেরাম নিয়াবাসীকে ইজ্জতের জিন্দেগী যাপনের শিক্ষা দিয়ে গেছেন, আর আপনি কিনা অমেরিকার স্বার্থে কাজ করতে এসেছেন!’
এই আলোচনার দুইদিন পর সৌদি সরকার ইমারতে ইসলামী’র সাথে কুটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে। তবে এর কারণে ইমারতে ইসলামী নিজের সিদ্ধান্তে বিন্দুমাত্রও পরিবর্তন আনেনি।
উল্লেখ্য, ইমারতে ইসলামী আফগানিস্তানকে স্বীকৃতি দানকারী মাত্র তিনটি রাষ্টের মধ্যে সৌদি ছিল অন্যতম।
হে মুসলিম জাতি! জেনে রাখুন, বর্তমান সময়ের মুজাহিদ নেতৃবৃন্দের মধ্য থেকে যারা মোল্লা উমরকে (রহঃ) বাইআত দিয়েছেন, তাঁদের কয়েকজন হলেন- শাইখ উসামা, আবু মুহাম্মদ তুর্কিস্তানী, বাইতুল্লাহ মেহসুদ, আবু মুসআব জারকাভী, আবু হামজা মুহাজির, মুখতার আবু জুবায়ের ও আবু বাসীর নাসের আল ওয়াহশী প্রমূখ। উনারা ছাড়াও অগ্রগামী সত্যবাদী আরও অনেকেই।
বলাই বাহুল্য, শাইখ উসামার হাতে বাইআত প্রদানকারীগণ আমিরুল মুমিনীনকে বাইআত প্রদানকারী বলে গণ্য হবে। সুতরাং জামাআতুল জিহাদ উক্ত বাইআতের আওতাধীন। শাইখ আবু হামজা মুহাজির ‘জামাআতুল জিহাদ’র সাথেই সম্পৃক্ত। আল-কায়দার সকল শাখা-প্রশাখাও উক্ত বাইআতের অন্তর্ভুক্ত। তেমনি দাওলাতুল ইরাক আল ইসলামিয়া আল-কায়দার শাখা। মোটকথা, শাইখ উসামাকে বাইআত দানকারী প্রত্যেকর জন্য মোল্লা মুহাম্মদ উমরকে আমিরে আজম হিসেবে মান্য করা আবশ্যক। এখন উক্ত বাইআতকে যারা অস্বীকার করবে, তারা অপরাধী বলে গণ্য হবে। যেমন বাগদাদীর দল। তারা আমৃত্যু আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা ভঙ্গ করেছে। আমরা তাদেরকে তাওবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। শাইখ আবু হামজা মুহাজির আমিরুল মুমিনীন মোল্লা মুহাম্মদ উমরের বাইআতকে খিলাফতের বাইআত বিবেচনা করতেন। তাঁর বিবেচনায় উক্ত বাইআত অস্বীকারকারী ব্যাভিচারী ও মদ্যপানকারীর চেয়েও বড় গুনাহগার।
শাইখ আতিয়্যা (রহঃ) ৩রা আগস্ট ২০০৬ ইং তারিখে আবু হামজা মুহাজিরের কাছে একটি পত্র প্রেরণ করেন। সেখানে তিনি শাইখ আবু হামজা মুহাজিরের এক বক্তব্যের প্রতিবাদ করেন। শাইখ আবু হামজা নির্দিষ্ট একটি দলের ক্ষেত্রে বলেছিলেন যে, “ঐক্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তারা জিনা ও মদপানের চেয়েও গুরুতর পাপে লিপ্ত হয়েছে”। এ প্রসঙ্গে শাইখ আতিয়্যা তাকে লেখেন ““তারা জিনা ও মদপানের চেয়েও গুরুতর কবিরা গুনাহে লিপ্ত হয়েছে” আপনার উক্ত বক্তব্যের সাথে আমি একমত নই। আমি একজন তালিবুল ইলম। তবে লোকেরা যেহেতু আমাকে শাইখ মনে করে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমার দিকনির্দেশনা চায়, তাই আপনার ভুল শুধরে দেওয়া আমার দায়িত্ব। আমি মনে করি, আপনার বক্তব্যটি সঠিক নয়। এখানে শরীয়তের বিধান বর্ণনায় অনেক কঠোরতা করা হয়েছে। হয়তো পরিস্থিতির নাজুকতা আপনাকে এতটা কঠোর হতে বাধ্য করেছে, আপনার কাছে হয়তো কোনো যুক্তিও থেকে থাকবে। তবে উত্তম হলো, আমরা মধ্যপন্থা অবলম্বন করব, ভারসাম্য রক্ষা করব। তাই আমি মনে করি, আপনার বক্তব্যে কিছুটা অতিরঞ্জন রয়েছে। এটি এমন মাসআলা যা নিয়ে আমরা সুদৃঢ়ভাবে কিছু বলতে পারি না। কারণ এটি শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত ফরজ বা হারামের স্তরে পড়ে না। সুতরাং শরীয়তের দৃষ্টিতে আমরা একে কবিরা গুনাহ বলতে পারি না। আমাদের কোনো শাইখ এমন বলেছেন বলে আমার জানা নেই। আমাদের মুজাহিদ নেতৃবৃন্দও এমনটি বলেন না। والله اعلم
তবে আমরা উক্ত ঐক্যের প্রতি লোদেরকে আহ্বান জানাই। আমাদের এবং এই জাতির কল্যাণ এতেই নিহিত। মানবীয় দূর্বলতা কমবেশি সকলের মধ্যেই আছে। তবে শাইখ উসামা গ্রহণযোগ্যতা, প্রসিদ্ধি, জ্ঞানগভীরতা, নেতৃত্বগুণ এবং বিশ্বস্ততাসহ আরও অনেক বৈশিষ্ঠে মণ্ডিত হওয়ায় তাঁর পতাকাতলে সমবেত হয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়া অনেক সহজ হবে। আমাদের ধারণা, এসকল গুণাবলী অন্যদের তুলনায় শাইখের মধ্যে অনেক বেশি রয়েছে।
তাই আমরা শাইখ উসামার পতাকাতলে সমবেত হওয়াকে মুস্তাহাব মনে করি। উক্ত ঐক্যের গুরুত্ব সম্পর্কে আমাদের হাতে যে সকল দলিল-প্রমাণ রয়েছে তা মুস্তাহাব হওয়ার প্রমাণ বহন করে। আমরা নিশ্চিত করে বলতে পারি না যে, এটি ফরজ। এও বলতে পারি না যে, আমাদের সাথে ঐক্যবদ্ধ না হওয়া কবিরা গুনাহ বা জিনায় লিপ্ত হওয়ার সমপর্যায়ের গুনাহ”।
শাইখ আবু হামজা মুহাজির (রহঃ) এর বক্তব্যের আসল কারণ ছিল বাইআত দেওয়ার পর তা ভঙ্গ করার ভিত্তিতে। আল-কায়েদা বা মজলিসে শুরায় যোগদান না করার ভিত্তিতে নয়।
এ প্রসঙ্গে ১লা সেপ্টেম্বর ২০০৬ ইং তারিখে শাইখ আতিয়্যার কাছে শাইখ মুহাজিরের পত্র পৌঁছে। তিনি তাতে লিখেন, “আমি যা বলেছি তা বুঝে-শোনেই বলেছি, কোনো সন্দেহের বশবর্তী হয়ে বলিনি। জামাআহ আঁকড়ে থাকার ব্যাপারে মুসলমানদের ঐক্যই আমার বক্তব্যের পক্ষে প্রমাণ হিসেবে যথেষ্ট। বিশেষত বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতিতে, যখন শত্রুরা আমাদের উপর চারদিক থেকে হামলা করছে। মুজাহিদগণের মজলিশে শূরা প্রতিষ্ঠা লাভের পর উক্ত দলটির বিভেদ সৃষ্টি এবং জামাআহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়।
অধিকন্তু তারা এখন এমন সব লোকদের সাথে যৌথ বিবৃতি প্রদান করছে, যারা ঈমানের চেয়ে কুফরের বেশি ঘনিষ্ট। আর কবিরা গুনাহ সংক্রান্ত বক্তব্যটি আমার একার নয়, বরং যে দলের বিরুদ্ধে উক্ত বক্তব্য প্রযোজ্য তাদের মতও এটিই। তারা মোল্লা মুহাম্মদ উমরকে আমিরুল মুমিনীন বলে জানতো। তাদের কেউই একথা বলেনি যে, তিনি অমুসলিম, তাগুত এবং তিনি শরীয়ত বহির্ভূতভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছেন। সেই সাথে তারা বাহ্যত আমিরুল মুমিনীনের বাইআতকে মুসলমানদের জন্য অপরিহার্য মনে করতো। কিন্তু আমরা যখন তাদের কছে গেলাম এবং তারা বুঝতে পারলো যে, তাদেরকে এখন আমাদের অনুগত হতে হবে এবং তারা আরও জানতে পারলো যে, আমিরুল মুমিনীন মোল্লা মুহাম্মদ উমর শাইখ উসামাকে আরব শাখার দায়িত্বভার অর্পন করেছেন, তখন তারা বলতে শুরু করলো, ‘আমিরুল মুমিনীনের আনুগত্য করা আমাদের জন্য আবশ্যক নয়’। সবের সাক্ষী আমি নিজে। আমিরুল মুমিনীনের ছেলে, মোল্লা দাদুল্লাহ (রহঃ) সহ আরও যারা উক্ত আলোচনায় উপস্থিত ছিলেন, তারা নিজেদের বিভিন্ন বক্তব্যে বিষয়টির বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন। কোনো কোনো আহলে ইলমের পক্ষ থেকে মোল্লা মুহাম্মদ উমরের বাইআত আবশ্যক না হওয়ার বক্তব্য পাওয়া গেলেও তার প্রমাণিক কোনো ভিত্তি নেই”।
তারপর তিনি প্রমাণ হিসেবে ইবনে আবদুল বার (রহঃ), কুরতুবী এবং ইমাম নববীর কিছু ভাষ্য পেশ করেন।
তিনি আরও বলেন, “আমাদের কারো-ই অজনা নয় যে, তারা মুসলমানদেরকে দূর্বল করে দিতে চায়। আমিরুল মুমিনীনের বাইআত ভঙ্গ করে নিজে খলীফা হতে চায়। একই সময়ে তারা আমিরুল মুমিনীনের নেতৃত্ব স্বীকারও করে। সুতরাং তাদের হুকুম কি হবে তা আপনার (শাইখ আতিয়্যা) অজানা থাকার কথা নয়”।
তিনি আরও বলেন, “আলোচনা আর দীর্ঘ করতে চাই না। আমি কেবল সন্দেহ অবসানের চেষ্টা করেছি। আবারও বলছি, আমি যা বলেছি তা জেনে-বুঝেই বলেছি। এখানে আমরা বাইআতে সুগরার কথা বলছি না। বাইআতে কুবরার কথা বলছি। তবে হ্যা, এমনও কেউ থাকতে পরে, যে ঐক্যের খাতিরে বাইআতে সুগরা প্রদান করে আমাদের সাথে থাকবে”।
উক্ত আলোচনা থেকে শাইখ আবু হামজা মুহাজির (রহঃ) সম্পর্কে আমরা যা জানতে পারলাম, তার কয়েকটি হচ্ছে-
-
আমিরুল মুমিনীন মোল্লা মুহাম্মদ ওমরের বাইআতকে তিনি খেলাফতের বাইআত গণ্য করেন।
-
উক্ত বাইআত মেনে নেওয়ার পর যারা তা অস্বীকার করবে তাদেরকে তিনি মদ্যপ ও জিনাকারীর চেয়ে গুরুতর পাপী বিবেচনা করেন।
-
দাওলার আত্মপ্রকাশের পূর্বে তিনি ইরাকে মোল্লা মুহাম্মদ উমরের পক্ষে বাইআত তথা বাইআতে আম্মাহ গ্রহণ করতেন।
সুতরাং আবু হামজা আল মুহাজিরের ভাষ্যমতে বাগদাদী ও তার অনুসারীরা ব্যভিচারী ও মদ্যপের চেয়েও বড় পাপী। উক্ত আলোচনা থেকে আমরা আরও জানতে পারি যে, বাগদাদী ও তার অনুসারীরা আবু হামজা (রহঃ) এর বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা চালিয়েছিল। তারা প্রচার করেছিল যে, তিনি শাইখ উসামা ও মোল্লা উমর (রহঃ) এর বাইআত ভঙ্গ করেছেন। ১৭ই জুমাদাল উলা, ১৪২৭ ইং তারিখে অর্থাৎ দাওলাতুল ইরাক আল-ইসলামিয়া প্রতিষ্ঠার প্রায় পাঁচ মাস পূর্বে শাইখ আবু হামজার একটি বক্তব্য প্রচারিত হয়। তাতে তিনি বলেন, “আমার বন্ধুগণ! জেনে রাখুন! আল্লাহ তা‘আলা একজন আমির নিযুক্ত করেছেন, এর মাধ্যমে আমিরকে মহিমান্বিত করেছেন এবং আপনাদেরকে পরীক্ষা করেছেন। তাঁর নেতৃত্বে মুজাহিদগণ নিজেদের অবস্থানকে সুদৃঢ় ও সুসংহত করে নিয়েছেন। ইনশাআল্লাহ! বিজয় অতি কাছে। সুতরাং ধৈর্য ধরুন এবং দৃঢ়তার সাথে অবিচল থাকুন!
হে আমিরুল মুমিনীনের প্রজারা! হে শাইখ উসামার সন্তানেরা! হে জাওয়াহিরীর ছাত্ররা! হে জারকাবীর সৈনিকেরা! তোমরা তোমাদের অস্ত্র হাতে রাখ; অন্তত একজন করে মার্কিনীকে হত্যা কর”!
এক পর্যায়ে তিনি বলেন, “সবশেষে মোল্লা উমর, শাইখ উসামা ও শাইখ জাওয়াহেরীকে বলছি, আমরা আমাদের আনুগত্যের প্রতিশ্রুতিতে আবিচল আছি এবং জিহাদের ময়দানে ছুটে চলছি। আমরা আপনাদেরই সৈনিক; আপনাদের তূণীরের-ই একটি তীর। সুতরাং আমাদেরকে আদেশ করুন! আমাদের একেকজনকে কেবল অনুগত সৈনিকই পাবেন”।
এখন নিজের মনকে জিজ্ঞেসা করুন, তার এই কথাগুলো কি মোল্লা উমর ও শাইখ উসামার বাইআত ভঙ্গ করার ধারণা দেয়?
শাইখ আতিয়্যাতুল্লাহ (রহঃ) এর বাণী :
মুজাহিদগণের ঐক্য, পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববন্ধন ও জামাআহ ছাড়া জিহাদ পূর্ণতা লাভ করতে পারে না। আর আনুগত্য, শরিয়াহ’র অনুসরণ, নিয়মানুবর্তিতা, হিকমত এবং সাংগঠনিক নিয়ম-কানুন ছাড়া জামাআহ হতে পারে না। এসকল বিষয় বাস্তবায়নের পরেই কেবল মুজাহিদগণ সীসাঢালা প্রাচীরে রূপান্তরিত হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
{إِنَّ اللَّهَ يُحِبُّ الَّذِينَ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِهِ صَفًّا كَأَنَّهُمْ بُنْيَانٌ مَرْصُوصٌ}
অর্থ : আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন, যারা তাঁর পথে সারিবদ্ধভাবে লড়াই করে, যেমন তারা সীসাগালানো প্রাচীর। -সূরা আসসাফ, আয়াত-৪
শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরী (হাফিজাহুল্লাহ) :
এ সকল কারণে শাইখ আবু হামজা শর্ত দিয়েছিলেন যে, আবু উমর বাগদাদীকে অবশ্যই শাইখ উসামাকে আমির হিসেবে স্বীকার করতে হবে। শাইখ আবু হামজা আমাদেরকে বিষয়টি গুরুত্বের সাথে জানিয়েছেন। “শাহাদাহ লিহাকনি দিমাইল মুসলিমীন ফিশশাম” শিরোনামে আলোচিত বক্তব্যে আমি জানিয়েছিলাম যে, দাওলাতুল ইরাক আল ইসলামিয়া’র ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বশীল শাইখ উসামার শাহাদাতের পর পত্র মারফত জানতে চেয়েছিলেন- ‘নতুন আমিরের বাইআত কি পূর্বের মতো গোপনীয় থাকবে, না প্রকাশ করা হবে? সেখানে আরও বলেছিলাম যে, উক্ত দায়িত্বশীল পত্রের শেষে লিখেছেন-
إلى شيخى و أميرى الد كتوار أيمن الظوا هرى
আমার শাইখ, আমার আমির ডক্টর আইমান আয যাওয়াহিরী এর প্রতি।
তাতে আরও বলেছিলাম যে, শাইখ উসামা আবু বকর বাগদাদীকে দাওলাতুল ইরাক আলইসলামিয়া’র সাময়িক বা খণ্ডকালীন আমির হিসেবে নিযুক্তির আদেশ দিয়েছিলেন। বাগদাদী এই সিদ্ধান্ত মেনেও নিয়েছিলেন। সুতরাং শাইখ উসামার নির্দেশ মতে আমির হিসেবে বাগদাদীর নিযুক্তি ছিল সাময়িক। আমি আমার সেই আলোচনায় যা কিছু বলেছি, বাগদাদীর মুখপাত্র তার সবগুলোর সত্যতা স্বীকার করে নিয়েছিলেন। আর বলা হয়ে থাকে, স্বীকারোক্তি সর্বাপেক্ষা বড় দলীল।
আমরা ইরাকী ভাইদের সাথে নম্রতা ও শিথিলতার পথ বেছে নিয়েছিলাম। তাদের সেই সময়কার সংকটাপন্ন পরিস্থিতি বিবেচনায় তাদের দাবি মাফিক আমির নিযুক্তির বিষয়টি গোপন রেখেছিলাম। অবশেষে এক মুক্ত আলোচনায় আমাকে প্রশ্ন করা হলো, ইমারতে ইসলামী আফগানিস্তানের সাথে দাওলাতুল ইরাক আল ইসলামিয়া’র সম্পর্ক কি? আমি সরাসরি উত্তর না দিয়ে পাশ কাটিয়ে গেলাম এবং ইমারতুল কাউকাজের (ককেশাস) প্রসঙ্গ টেনে নিয়ে আসলাম। যদিও প্রশ্নকারী ইমারতুল কাউকাজ (কাফকাজ/কাভকাজ) সম্পর্কে প্রশ্ন করেনি। আমি বললাম, এই তিন ইমারাহ এক হাকিমের আনুগত্য করছে না, একথা সত্য; এরা ভিন্ন দুই হাকিমের (শাসক) আনুগত্য করছে। ইমারতে ইসলামী আফগানিস্তান এবং দাওলাতুল ইরাক আল ইসলামিয়া মোল্লা মুহাম্মদ উমরের আনুগত্য করছে। ইমারতুল কাউকাজ উক্ত দুই ইমারার সাথে সম্পৃক্ত নয়। এ সকল কথা আমাকে বলতে হয়েছে আমার ইরাকী ভাইদের প্রশ্নের জবাবে। আবু হামজা মুহাজিরের (রহঃ) প্রতি শতভাগ আস্থা ছিল বলেই বলেছি। শাইখ উসামা (রহঃ) মোল্লা মুহাম্মদ ওমরকে বাইআত দিয়েছেন, কারণ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, বাইআত হচ্ছে মুসলমানদেরকে ঐক্যবদ্ধ করার এবং খেলাফত প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ।
শাইখ উসামা বিন লাদেন (রহঃ) এর বাণী :
আল্লাহর রহমতে আমরা মুসলিম বিশ্বকে এক পতাকাতলে সমবেত করার নতুন প্রয়াস পাচ্ছি। নির্যাতন, নিপীড়ন, দুর্নীতি ও ফেতনা-ফাসাদের অমানিশায় নিমজ্জিত চলমান বিশ্বের মুমিনদের জন্য নতুন ইতিহাস রচনা করছি। ভাগ্যবান সেই যে, তাওহীদের পতাকাতলে আশ্রয় নেবে।
শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরী (হাফিজাহুল্লাহ) :
শাইখ উসামা (রহঃ) জানতেন যে, মুসলমানদেরকে একতাবদ্ধ করা এবং খেলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথ হচ্ছে বাইআত। তাই তিনি মোল্লা উমরকে বাইআত দিয়েছিলেন। তিনি সব সময় ঐক্যের চেষ্টা করতেন এবং বিভক্তি না রাখার চেষ্টা করতেন, অধিকার পূর্ণ করতেন, ভঙ্গ করতেন না এবং শুরাভিত্তিক খেলাফত প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করতেন। তাই তিনি মুসলিম উম্মাহকে আমিরুল মুমিনীন মোল্লা মুহাম্মদ উমরের বাইআতের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতেন। ৫ই মুহাররম, ১৪২২ হি. তে পেশোয়ারে অনুষ্ঠিত উলামায়ে দেওবন্দেরমাবেশে তিনি এক ভিডিও বার্তা প্রেরণ করেন, যা কাতারভিত্তিক প্রভাবশালী টিভি চ্যানেল আলজাজিরা’য় প্রচার করা হয়। তিনি তাতে উলামায়ে দেওবন্দকেমারতে ইসলামী’র বৈধতা এবং একে সাহায্য করা ওয়জিব হওয়ার ব্যাপারে ফতোয়া প্রদানের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, “প্রিয় উলামায়ে কেরাম! আপনাদের কর্তব্য হচ্ছে সত্যকে প্রকাশ করা, বিভ্রান্ত মানবজাতিকে সঠিক পথের দিশা দেওয়া এবং আপনাদের সিদ্ধান্তের দিকে উন্মুখ হয়ে তাকিয়ে থাকা সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করা। তাদেরকে জানিয়ে দিন, জিহাদ ছাড়া না মর্যাদা পাওয়া সম্ভব আর না বিজয়লাভ করা সম্ভব। পূর্বসূরীদের বিজয় এসেছে জিহাদের মাধ্যমে। তাদেরকে বলে দিন, জিহাদের পূর্ণতা কেবল এমন একটি জামাআহ’র মাধ্যমে আসতে পারে, যারা হবে একজন মাত্র আমিরের অনুগত। এদের মাধ্যমে আল্লাহ মুসলমানদের ঐক্য এবং তাঁদের রাষ্ট্র টিকিয়ে রাখবেন। হযরত হারেস আমআরী (রা.) সূত্রে বর্ণিত হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
(وأنا آمركم بخمس أمرني الله بهن: الجماعة والسمع والطاعة والهجرة والجهاد في سبيل الله، فإنه من فارق الجماعة قيد شبر فقد خلع رِبقة الإسلام من عنقه إلا أن يرجع، ومن دعا بدعوة الجاهلية فإنه من جُثَا جهنم. قال رجل: يا رسول الله وإن صلى وصام؟ قال: وإن صام، فادعوا بدعوة الله التي سماكم بها المسلمين المؤمنين عباد الله)
অর্থঃ আমি তোমাদিগকে পাঁচটি বিষয়ের আদেশ করবো। এসব বিষয়ের আদেশ স্বয়ং আল্লাহ আমাকে করেছেন। তোমরা জামাআহ, আনুগত্য, হিজরত ও জিহাদকে আাঁকড়ে ধর। কারণ যে ব্যক্তি এক বিঘত পরিমাণ জামাআহ থেকে দূরে সরে পড়লো, সে তার গ্রীবা থেকে ইসলামের বন্ধন খুলে ফেলল, যতক্ষণ না সে ফিরে আসে। আর যে জাহেলিয়াতের রীতির প্রতি আহ্বান করবে সে জাহান্নামের ইন্ধন হবে। একলোক প্রশ্ন করল, যদি সে নামাজ পড়ে এবং রোজা রাখে তবুও কি (জাহান্নামের ইন্ধন হবে) ? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যদিও সে নামাজ পড়ে এবং রোজা রাখে (তবু জাহান্নামের ইন্ধন হবে)।
সুতরাং আল্লাহ যেভাবে ডেকেছেন তোমরা সেভাবে ডাক, তিনি তোমাদের নাম রেখেছেন মুসলিম, মুমিন, আল্লাহর বান্দা। -আহমদ, তিরমিজী
এমনিভাবে হুজাইফা (রা.) এর সূত্রে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন-
(تلزم جماعة المسلمين وإمامهم)
অর্থঃ তুমি মুসলমানদের জামাআহ এবং তাদের ইমামকে আঁকড়ে ধর। -বুখারী, মুসলিম।
সাহাবায়ে কেরামের একটি জামাআহ থেকে বর্ণিত,
(ثلاث لا يُغلُّ عليهم قلب امرئ مسلم؛ إخلاص العمل لله، والنصح لأئمة المسلمين ولزوم جماعتهم، فإن دعوتهم تحيط من ورائهم)
অর্থঃ তিন কাজ করে মুমিনের অন্তর প্রতারিত হয় না। যথা- নিষ্ঠার সহিত আল্লাহর ইবাদাত, মুসলিম শাসকগণের কল্যাণ কামনা এবং মুসলমানদের জামাআত আঁকড়ে ধরা। কারণ, তাদের দোয়া তাদেরকে (প্রতিক্ষার জন্য) ঘিরে রাখে। -তিরমিজী।
ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত-
(من مات وليس في عنقه بيعة مات ميتة جاهلية)
অর্থঃ যে ব্যক্তি বাইআত ছাড়া মৃত্যুবরণ করবে তার মৃত্যু জাহেলী যুগের বেঈমানদের মতো হবে। -মুসলিম।
হে উলামায়ে কেরাম! তাদেরকে আরও বলুন, জামাআহ ছাড়া ইসলাম হয় না, ইমারাহ ছাড়া জামাআহ হয় না আর আনুগত্য ছাড়া ইমারাহ হয় না। আপনারা জানেন যে, বর্তমান কঠিন সময়ে আল্লাহ তা‘আলা এই উম্মতের জন্য আফগানিস্তানে ইসলামী ইমারাহ প্রতিষ্ঠার সৌভাগ্য দান করেছেন। মোল্লা উমরের নেতৃত্বে সেখানে শরীয়তের বিধান কার্যকর হচ্ছে, তাওহীদের পতাকা উড্ডীন করা হয়েছে। তাই আপনাদের কর্তব্য হচ্ছে, উক্ত ইমারাহকে জান-মাল দিয়ে সাহায্য করতে এবং আন্তর্জাতিক কুফরি শক্তির বিরুদ্ধে ইসলামী ইমারাহকে সমর্থন দিতে সাধারণ জনগণকে উৎসাহিত করা।
আমরা আশা করবো, পেশোয়ারের এই সমাবেশ থেকে অন্যান্য বিষয়ের সাথে নিম্নোক্ত বিষয়সমূহের দিকনির্দেশনা দেওয়া হবে-
-
সম্ভব্য সকল উপায়ে ইমারতে ইসলামী’কে সাহায্য করা।
-
যুবকদের ই’দাদ গ্রহণ ও জিহাদের জন্য প্রস্তুত করা।
-
বিত্তবানদের আল্লাহর রাস্তায় অর্থ প্রদান ও যাকাত দানের আহ্বান জানানো।
-
উক্ত ইমারাহকে স্বীকৃতিদান, এর প্রতি সমর্থন জ্ঞাপন এবং এর আমিরের আনুগত্য ওয়াজিব হওয়ার ফতোয়া প্রদান করতে উলামায়ে কেরামকে আহ্বান জানানো।
উল্লেখ্য, জাজিরাতুল আরবসহ বিভিন্ন অঞ্চলের আলেমদের অনেকে ইমারতে ইসলামী আফগানিস্তানের বৈধতা উল্লেখ করে ফতোয়া দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন, শাইখ হামূদ বিন উকলা শুআইবী।
তাঁরা বলেছেন, বর্তমানে আফগানিস্তান-ই একমাত্র ইসলামী ইমারাহ, যেখনে ইসলামী শরীয়াহ কার্যকর আছে এবং বিভিন্ন নুসুসের উপর আমল হচ্ছে। যেমন হুজাইফা (রা.) এর সূত্রে বর্ণিত হাদীসে এসেছে-
(تلزم جماعة المسلمين وإمامهم)
অর্থঃ মুসলমানদের জামাআহ এবং তাঁদের ইমামকে আকড়ে ধর। -মুসলিম।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেন-
(من مات وليس في عنقه بيعة مات ميتة جاهلية)
অর্থঃ যে ব্যক্তি বাইআত না হয়ে মৃত্যুবরণ করল সে জাহেলী যুগের বেঈমানদের মতো মৃত্যুবরণ করল। -মুসলিম।
আফগানিস্তানে এখন এ সকল নুসুসের উপর আমল করা সম্ভব হচ্ছে।
এ সকল নুসুসের দিকে লক্ষ্য করে আমি দৃঢ়তার সাথে বলছি যে, মোল্লা উমরকে বাইআত দেওয়া ওয়াজিব। আমি নিজেও তাঁকে বাইআত দিয়েছি। কারণ, তিনিই হচ্ছেন সেই শাসক, যিনি বর্তমান সময়ে শরিয়াহ অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করছেন। বামিয়ানের মূর্তি সংহার করা, নেশাদ্রব্য চাষাবাদ নিষিদ্ধ করা, কুফরি শক্তির হামলার সামনে মাথা নত না করা তাঁর সততা, সাহসিকতা ও অবিচলতার সামান্য নিদর্শন মাত্র”।
ইমারাতে ইসলামী’র অনুগত হওয়া, তার আমিরকে ইমামে আজম হিসাবে বাইআত প্রদান করা, মাজলিসুল হাল ওয়াল আকদ প্রতিষ্ঠা করা এবং এই বিশ্বাস রাখা যে, আমির নিযুক্ত করা, তাঁর কাছে জবাবদিহিতা চাওয়া, প্রয়োজনে তাকে পদচ্যুত করার অধিকার জাতির রয়েছে।
এগুলোই শাইখ উসামার নীতি। তিনি তাঁর বক্তব্যসমূহে বারবার এ সকল বিষয় উল্লেখ করেছেন।
শাইখ উসামা (রহঃ) এর বাণী :
আলেম সমাজ ও প্রতিটি অঙ্গনের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের দায়িত্ব হচ্ছে এ সকল ধ্বংসাত্মক দলগুলোর প্রভাব বলয় থেকে বেরিয়ে দূরে কোথাও সমবেত হওয়া এবং ‘মাজলিসুল হাল ওয়াল আকদ’ প্রতিষ্ঠা করা। শরীয়তের দৃষ্টিতে এ সকল দলের বৈধতা রহিত হওয়ার কারণে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে তা পূরণ করবে উক্ত মাজলিসুল হাল ওয়াল আকদ। কারণ, ইমাম নির্বাচনের দায়িত্ব জাতির। ইমামের কোনো পদস্খলন পরিলক্ষিত হলে তাকে শোধরে দেওয়ার দায়িত্ব জাতির।
যদি তার থেকে এমন কিছু প্রকাশ পায়, যার কারণে তাকে বরখাস্ত করতে হয় যেমন- মুরতাদ হয়ে যাওয়া, খেয়ানত করা, তাহলে তাকে পদচ্যুত করার দায়িত্বও জাতির।
উক্ত সাময়িক ‘মাজলিসুল হাল ওয়াল আকদ’ আপাতত সর্বনিম্ন সংখ্যক সদস্য নিয়ে গঠিত হবে। কারণ, এই নাজুক পরিস্থিতিতে প্রতিটি জাতি থেকে যোগ্য ব্যক্তিগণকে খুঁজে নেওয়া সম্ভব হবে না। পরবর্তীতে পরিস্থিতির উন্নয়ন ঘটলে এই সংখ্যা বাড়িয়ে নেওয়া যাবে।
এই মজলিসের মানহাজ হবে কুরআন-সুন্নাহ। তারা কাজ করবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে। জাতিকে কালিমাতুত তাওহীদের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ করবে। যুবকদেরকে জিহাদের জন্য তৈরি করবে এবং তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে।
এখানে আমি স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, মুসলিম সমাজের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ কাজে পরামর্শ করার জন্য এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য মজলিসে শূরা প্রতিষ্ঠা করা ওয়াজিব।
বিজ্ঞজনদের অনেকে মুসলিম সমাজে প্রভাব বিস্তারকারী স্বৈরাচারী দলসমূহের মূলোৎপাটন করার পরামর্শ পূর্বেই দিয়েছিলেন। এখন এই মজলিসের কাজ হবে, স্বৈরশাসকদের প্রভাব বলয় থেকে দূরে থেকে দলসমূহের মুলোৎপাটনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা। ভারসাম্য রক্ষা করে পরিকল্পনা মাফিক মুসলিম উম্মাহর সামগ্রিক সমস্যার সমাধানের লক্ষে এবং তাগুতের অপসারণের জন্য যারা কাজ করছেন তাদেরকে এবং তাদের পরিবারকে রক্ষার কৌশল বের করতে ভিন্ন ভিন্ন শাখা গঠন করা।
এ ক্ষেত্রে বিজ্ঞজনদের মতামত গ্রহণ করা। যে সকল প্রতিষ্ঠান এ বিষয়ে গবেষণা করেছে, তাদের গবেষণা থেকে উপকৃত হওয়া। পাশাপাশি যারা নিজেদের শাসককে এবং তাদের কিছু কর্মকর্তাকে পদচ্যুত করতে সফল হয়েছে, তাদেরকে যথাযথ দিকনির্দেশনা দেওয়া এবং চূড়ান্ত লক্ষে পৌঁছা পর্যন্ত তাদেরকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা। তেমনিভাবে যে সকল সম্প্রদায় এখনো বিপ্লব শুরু করতে পারেনি তাদেরকে বিপ্লব শুরু করার জন্য মোক্ষম সময় বেছে নিতে এবং পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করতে সহযোগিতা করা। বিলম্বের কারণে যেমন সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার শঙ্কা থাকে, তেমনি সময়ের পূর্বে বিপ্লব শুরু করলে ব্যাপক প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির ভয় থাকে। আমি মনে করি, পুরো মুসলিম দুনিয়া আন্দোলিত হবে। তাই যুব সমাজের কাজ হলো প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করা। আর অবশ্যই জালেমদের পদলেহি চাটুকার শ্রেণী থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখবে এবং নিষ্ঠাবান বিজ্ঞজনদের পরামর্শ ছাড়া কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে না।
الرَأيُ قَبلَ شَجَاعَةِ الشُجعَانِ هُوَ أَوّلٌ وَهِيَ الـمَحلُّ الثّانِي
ভাবিয়া করিও কাজ, করিয়া ভাবিও না।
বিপ্লবী আরব জতিসমূহকে সাহায্য করা এবং তাদেরকে সঠিক পন্থায় চলতে উৎসাহিত করা -
হে মুসলিম উম্মাহ! আমরা আপনাদের সাথে থেকে ইতিহাসের এই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা (আরব বসন্ত) প্রত্যক্ষ করছি। আমরাও আপনাদের সুখ-দুঃখের অংশীদার। আপনাদের বিজয় মোবারক হোক। আপনাদের শহীদগণের উপর আল্লাহ রহম করুন। আপনাদের মধ্যে যারা আহত তাদেরকে দ্রুত সুস্থতা দান করুন এবং বন্দিগণকে মুক্তির সু-ব্যবস্থা করে দিন। -আমীন!
هَلّت بِمَجدِ بَنِي الإِسلامِ أَيّامُ وَاختَفَى عَن بِلَادِ العُربِ حُكّامُ
طَوت عُروشٌ حَتّى جَاءَنَا خَبَرٌ فِيهِ مَخَايِلُ لِلبُشرَى وَأَعلَامُ
মুসলিম জাতির মহিমা প্রকাশ পেয়েছে আরবের স্বৈরশাসকরা গা ঢাকা দিয়েছে।
তাদের সিংহাসন ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। শেষে আমাদের নিকট খুশির বার্তা এসেছে।
বিজয়ের প্রতিক্ষায় উম্মাহ দীর্ঘ সময় অতিক্রম করেছে। সহসা পশ্চিমা দিগন্তে বিজয়ের সোনালী সূর্যের উদয় ঘটেছে। সেই আলোয় তিউনিসিয়া আলোকিত হয়েছে। উম্মাহ বিজয়ের সাথে পরিচিত হয়েছে। আরব জাতিবর্গের চেহারা উজ্জল হয়েছে আর শাসকদের চেহারা মলিন হয়েছে। প্রতিশ্রুত বিজয় ঘনিয়ে আসায় ইহুদীদের হৃদকম্পন শুরু হয়েছে। শাসকদের পতনে দাসত্ব, লাঞ্চনা ও ভয়ভীতির অনুভূতি দূর হয়ে গেছে। মুক্তির বার্তা নিয়ে দিনবদলের হাওয়া প্রবাহিত হয়েছে। যে ঝড়ের সূচনা হয়েছিল তিউনিসিয়ায় তা এখন মিসরের তাহরির স্কয়ারে আছড়ে পড়েছে এবং এখন তা মহাবিপ্লবের রূপ ধারণ করেছে। এই বিপ্লব মিসরের এবং এই বিপ্লব পুরো উম্মাহর, যদি বিপ্লব হয় আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। এই বিপ্লব দুধ-কলার জন্য নয়। এটি ইজ্জতের বিপ্লব। উম্মাহর জন্য কিছু করার বিপ্লব। এই বিপ্লব ছড়িয়ে পড়ে শহরে বন্দরে এবং পাড়া মহল্লায়।
মুসলিম যুবকদেরকে হারানো মর্যাদা পুনরুদ্ধারের সুযোগ হাতছানি দিয়ে ডাকছে। তারা পূর্বসূরীদের সোনালী যুগ ফিরিয়ে আনার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছে। স্বৈরাচারীদেরকে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করতে তাহরির স্কয়ারের প্রেরণায় উজ্জীবিত হচ্ছে। পরস্পর প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে, ভয়ভীতি দূরে ঠেলে, অসম সাহস নিয়ে দূর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে।
বিপ্লবী মুসলিম ভাইয়েরা! সম্মুখপানে এগিয়ে চলুন। শত্রুদের সাথে শান্তি-আলোচনার পথ পরিহার করুন। মাঝপথে হক ও বাতিলের মাঝে আলোচনা-সমঝোতার সুযোগ নেই। মনে রাখবেন, আপনাদের শক্তি রয়েছে। আল্লাহ আপনাদেরকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের সুযোগ দিয়েছেন। জাতির স্থির দৃষ্টি আপনাদের দিকে নিবদ্ধ। সুতরাং সকল বাধা-বিপত্তি মাড়িয়ে গন্তব্যপানে এগিয়ে চলুন।
بَدَأَ المَسَيرُ إِلَى الهَدَف وَالحُرُّ فِي عَزمٍ زَحَفْ
وَالحُرُّ إِن بَدَأَ المَسِيرَ فَلَن يَكِلّ وَلَن يَقِفْ
দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বীরযোদ্ধা গন্তব্যপানে এগিয়ে চলছে, বীরযোদ্ধা মাঝপথে না ক্লান্ত হয়, আর না রণেভঙ্গ দিয়ে ফিরে আসে।
সুতরাং লক্ষ্যে না পৌঁছে ক্ষান্ত হবেন না! মনে রাখবেন! আপনাদের এই বিপ্লব বিশ্ব বিপ্লবের টার্নিং পয়েন্ট। আপনারা নির্যাতিত নিষ্পেষিত মানবতার বুকে আশার আলো জ্বেলেছেন। উম্মাহর অনেক সমস্যার সমাধান করেছেন। আল্লাহ আপনাদের সমস্যাগুলো দূর করে দিন। আপনারা তাদের অনেক চাহিদা পূরণ করেছেন। আল্লাহ আপনাদেরকে আপনাদের কাঙ্ক্ষিত বস্তু দান করুন। আমীন!
وَقَفَ السّبِيلُ بِكُم كَوقفَةِ طَارِقٍ اليَأسُ خَلفٌ وَالرَّجَاءُ أَمَامُ
وَتُرَدُّ بِالدّمِ عِزّةٌ أُخِذَت بِهِ وَيَمُوتُ دُونَ عَرِينِهِ الضّرغَامُ
مَن يَبذِل الرُّوحَ الكَرِيمَ لِربّهِ دَفعًا لِبَاطِلِهِم فَكَيفَ يُلَامُ؟!
আঁধার রাতের মুসাফিরের ন্যায় আপনাদের পথ রুদ্ধ হয়ে গেছে। পেছনে শুধুই হতাশা! আশার যা কিছু আছে তার সবই এগিয়ে চলার মাঝে।
হারানো সম্মান রক্তের বিনিময়ে উদ্ধার করতে হয়। আস্তানা রক্ষায় সিংহ আত্মহুতি দেয়, তাহলে বাতিল প্রতিরোধে জীবন বিলিয়ে দিলে কেন তিরস্কৃত হবে!!
শাইখ আতিয়্যাতুল্লাহ (রহঃ) এর বাণী :
আল্লাহর অনুগ্রহে আরব জাতিবর্গ জিহাদের মাধ্যমে ভয়ভীতির আবরণ ছিন্ন করে ফেলেছেন। তাই বলা চলে, আরব জাগরণ আল্লাহর মহা নিয়ামত। যদিও এই বিপ্লবের বর্তমান কর্মধারা ও গতিপ্রকৃতি কাঙ্ক্ষিত নয়, তবুও এর মাঝে কল্যাণকর বহু দিক রয়েছে। আল্লাহ এই জাগরণকে মুসলিম উম্মাহর জন্য শতভাগ কল্যাণকর সাব্যস্ত করুন।
শাইখ আবু ইয়াহইয়া লিবি (রহঃ) এর বাণী :
আলেমগণ বলেন, এমন দু’টি ব্যধি রয়েছে যেগুলো কখনো বিচ্ছিন্ন হয় না। যথা- দুনিয়ার ভালোবাসা ও মৃত্যুকে ঘৃণা করা। উক্ত ব্যধিদ্বয় কখনো একটি অপরটি থেকে আলাদা হয় না। যে ব্যক্তি পার্থিব জীবনকে ভালোবাসে সে মৃত্যুকে ঘৃণা করে। পার্থিব ভোগসামগ্রি অর্জনের লোভ এবং তা সঞ্চয়ের বাসনা মরণভীতি সৃষ্টি করে। তার মন দুনিয়া ছেড়ে যেতে চায় না।
উম্মাহর যুবকরা যখন ব্যধিদ্বয় সম্পর্কে সচেতন হলো, অন্তর থেকে তা ঝেড়ে ফেলল, তাগুতের মোকাবেলায় দাঁড়িয়ে গেল এবং বিড়ালের মতো হাজার বছরের চেয়ে সিংহের মতো এক মুহূর্ত বেঁচে থাকা শ্রেয় মনে করলো, তখন তারা বিশ্বকে বদলে দিতে শুরু করলো। হাতেগোনা কয়েক দিনের মধ্যে যুগের ফেরাউনদের শাহী তখত উল্টে দিল। আল্লাহর রহমতে এরই মধ্যে তিনজন তাগুতের পতন ঘটেছে।
এটা কোনো ছোট কথা নয়, তবে উম্মাহর সামনে এখনো রয়েছে দীর্ঘ পথ। তাদেরকে করতে হবে অনেক কিছু। এসব তাগুতদেরকে অপসারণ করাই চূড়ান্ত লক্ষ্য নয়। আমাদের চিন্তা হতে হবে আরও সুদূরপ্রসারী। শরিয়াহ প্রতিষ্ঠা-ই হবে মূল লক্ষ্য।
শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরি (হাফিজাহুল্লাহ) :
আমরা এমন অনেককে দেখছি, যারা নিজেদেরকে শাইখ উসামার অনুসারী দাবি করতো, এখন তারা বিনা পরামর্শে নিজেদেরকে খলিফা ঘোষণা করছে। অথচ তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকা মুসলিম বিশ্বের একটি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। তারা জোরগলায় প্রচার করছে, তারা শাইখ উসামার আদর্শের উপরই আছে! অথচ তারা একই সময়ে শাইখ উসামা ও মোল্লা উমরের (রহঃ) বাইআত ভঙ্গ করছে। এক পর্যায়ে তাদের মুখপাত্র ইরাকে খিলাফত প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয় আল-কায়েদা এবং ইমারতে ইসলামী’র সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে।
নাফরমানি কি গর্বের কারণ হতে পারে? এর নামই কি শাইখ উসামার আনুগত্য? তারা কি ভুলে গেছে একদা তারা উম্মাহর আশীর্বাদ ধন্য ইসলামী ইমারাহ’র অন্তর্ভুক্ত ছিল? তারা কি ভুলে গেছে ইমারতে ইসলামী’র সাথে সম্পৃক্ত থাকতে পেরে তারা গর্ববোধ করতো এবং তাদের থেকে প্রকাশিত বার্তাসমূহে লেখা থাকতো- أميرنا الملا محمّد عمر “আমাদের আমির মোল্লা মুহাম্মদ উমর।”
আমাদের সিদ্ধান্ত যখন তাদের মনঃপুত হলো না, তখন তারা বলতে শুরু করলো, ‘দাওলাতুল ইরাক আল ইসলামিয়া আল-কায়দার সাথে আনুগত্যের প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ নয়। জাওয়াহিরীর মধ্যে অনেক সমস্যা রয়েছে। আমরা অনেক ধৈর্য ধরেছি। এখন তারা (আল-কায়েদা) পুরোপুরি দ্বীন থেকে বিচ্যুত হয়েছে। তারা ঐ নারীর মতো, যে জিনার মাধ্যমে গর্ভধারণের নবম মাসে সতীত্ব দাবি করছে’। এখানেই শেষ নয়, তাদের মুখপাত্র ফিকহে ইসলামী’তে এক অভিনব বিষয় সংযোজন করেছেন। ‘শাহাদাহ লিহাকনি দিমাইল মুসলিমীন’ নামক বার্তায় আমি তাদের বিরুদ্ধে যে সকল প্রমাণ উপস্থাপন করেছি, তারা সেই সবগুলোকে সত্যায়ন করলো এবং মেনে নিল। তারপর সেই তারাই বাইআতকে হাসি-তামাশার বস্তুতে পরিণত করলো। তারা বলল, আল-কায়েদার সাথে আমাদের কৃত বাইআত আনুগত্যের বাইআত ছিল না, বরং তা ছিল শ্রদ্ধা ও ভালবাসার বাইআত!
এভাবে তারা শরীয়তের একটি অকাট্য বিধানকে উপহাস করলো। এর দৃষ্টান্ত ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যে শরীয়ত সম্মত কোনো নারীর সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলো। যখন তারা নির্জনে মিলিত হলো তখন স্ত্রী তার কাছে নাফাকাহ (খোরপোশ) দাবি করলো, সে বলল, না! এই বিবাহবন্ধন ছিল মূলত প্রেম-ভালবাসার একটি বন্ধন। অথবা তার দৃষ্টান্ত ঐ ব্যক্তি মতো, যে কোনো পণ্য বিক্রি করেছে এবং মূল্য গ্রহণ করেছে, তারপর ক্রেতা পণ্য পরিবহণের জন্য গাড়ি ডাকতে গেছে, যখন ক্রেতা গাড়ি নিয়ে ফিরে আসে তখন বিক্রেতা পণ্য হস্তান্তর করতে অস্বীকার করল এবং বলল, আমাদের পূর্বেকার আলোচনা মূলত একটি পারস্পারিক সহযোগিতামূলক আলোচনা ছিল। শরীয়তের দৃষ্টিতে অপরিহার্য বিক্রয় চুক্তি ছিল না।
এভাবে তারা শরীয়তের চুক্তিমূলক বিষয়সমূহে নিরর্থক করে ছেড়েছে। বাগদাদী আমাকে লিখেছিলেন, তিনি নাকি আমাকে আজীবনের জন্য আমির বলে বিশ্বাস করেন। ৭ই জিলহজ ১৪৩৩ হি. তে তিনি আমার কাছে এক পত্র লিখেন। পত্রের শুরুটা ছিল এমন –“আমার আমির ডক্টর, শাইখ আবু মুহাম্মদ আইমান আজ জাওয়াহেরীর প্রতি- আল্লাহ তাঁকে হিফাজত করুন। আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু”।
চিঠির এক পর্যায়ে তিনি লিখেন-
شيخنا المبارك، نود أم بين لكم و نعلن لحبنا بكم
انناجزأ منكم، وأننا منكم و لكم، وندين الله يأنكم ولاة أمورنا، ولكم علينا حق السمع والطاعة ماحيينا، وأن نصحكم وتذكيركم لنا ـقو حق لنا عليكم،...
“হে আমাদের শাইখ! আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলছি, আমরা আপনাদেরই একটি শাখা। আমরা আপনাদেরই মধ্য থেকে এবং আপনাদেরই জন্য। আল্লাহকে সাক্ষী রেখে বলছি, আপনারা আমাদের আমির। আজীবন আপনাদের আনুগত্য করা আমাদের উপর ওয়াজিব। আর আপনাদের কর্তব্য হচ্ছে আমাদেরকে উপদেশ ও দিকনির্দেশনা দেওয়া। আপনাদের আদেশ পালন আমাদের জন্য আবশ্যক। আমাদের বর্তমান পরিস্থিতি ও চলমান ঘটনা প্রবাহের ভিত্তিতে কিছু বিষয় আলোচনার দাবি রাখে বৈকি। আশা করবো উদারতার সহিত আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি শোনবেন আর অবশ্যই সর্বাবস্তায় কর্তৃত্ব আপনাদের। আমরা আপনাদের তূণীরের একেকটি তীর মাত্র”।
কিন্তু ক্ষমতার মোহের সামনে তিনি তার এ বক্তব্য সত্যে পরিণত করতে পারেননি। এ সকল আলোচনা থেকে নিম্নোক্ত বিষয়সমূহ প্রতিয়মান হয়-
-
আবু হামজা মুহাজির (রা.) ১৪২৭ হি. তে ঘোষণা দেন যে, শাইখ উসামা তার আমির এবং মোল্লা উমর আমিরে আজম।
-
দাওলাতুল ইরাক আল ইসলামিয়া’র মুখপাত্র ১৪৩১ হি. তে শাইখ আতিয়্যা’র কাছে লেখেন, আমাদের আমির ও শাইখগণকে অবগত করছি যে, আপনাদের দাওলাতুল ইরাক আল ইসলামিয়া এখন স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে।
-
১৪৩৩ হি. তে বাগদাদী এক পত্রে আল্লাহকে সাক্ষী রেখে উল্লেখ করেন যে, আমরা তার (বাগদাদীর) আমির এবং আমাদের আনুগত্য করা তার কর্তব্য।
-
১৪৩৪ হি. তে বাগদাদীর মুখপাত্র এক পত্রের উপসংহারে লেখেন, “১৪ই জুমাদাল উলা, ১৪৩৪ হি. তে অধম আবু মুহাম্মাদ আদনানী পত্রটি লিখেছে এবং ওজরখাহী করেছে আল্লাহর কাছে, মুসলিম উম্মাহর কাছে এবং তার (আদনানীর) আমির শাইখ জাওয়াহেরী ও আবু বকর বাগদাদীর কাছে”।
এসব কিছুর পরেও বাগদাদী এবং তার সঙ্গীরা কিভাবে দাবি করতে পারে যে, ১৪২৭ হি. থেকে নিয়ে আল-কায়েদার সাথে তারা বাইআতের বন্ধনে আবদ্ধ নয়?
বিষয়টি ছোটখাট কোনো মিথ্যা ও অঙ্গীকার ভঙ্গের বিষয় নয়। বরং এটি রীতিমতো মিথ্যা বলা ও অঙ্গীকার ভঙ্গ করার উপর অনড় থাকার নির্লজ্জ প্রয়াস।
-
বাগদাদী তার আমিরগণের অনুমোদন ছাড়া যা কিছু করেছেন তার সবই শরীয়তের দৃষ্টিতে অবৈধ।
-
মোল্লা মুহাম্মাদ ওমরের মৃত্যু বাগদাদীকে এই বৈধতা দেয়নি যে, তিনি আল-কায়েদার বিরুদ্ধে গিয়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন।
-
আল-কায়েদা মোল্লা আখতার মানসুরের বাইআত গ্রহণ করায় অনিবার্যভাবে তিনি বাগদাদীরও আমির, কারণ তারা এর স্বীকৃতি দিয়েছেন, বরং বাগদাদী তো আমৃত্যু আনুগত্যের শপথ করেছেন এবং এ বিষয়ে তিনি আল্লাহকে সাক্ষী রেখেছেন।
শুধু মিথ্যা বলা আর অঙ্গীকার ভঙ্গ করাই নয়, বরং শরয়ী ফায়সালা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া, মুসলিমকে তাকফির করা এবং তাঁর স্ত্রীকে জিনার অভিযোগ এনে পাথর মারা, মুসলিমের রক্তকে মুবাহ মনে করা, মুসলিমকে গালমন্দ করা, আমিরের অবাধ্য হওয়া এগুলোর প্রতিটিই আদালত তথা ন্যায়পরায়নতা বিরোধী, অথচ শরয়ী রাষ্ট্রের জন্য ন্যায়পরায়নতা শর্ত। বাগদাদী এবং তার অনুসারীদের মাঝে যেহেতু উপরোক্ত সব কয়টি সমস্যাই রয়েছে, তাই তারা কোনো ইসলামি রাষ্ট্র পরিচালনার যোগ্য নয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন-
{وَإِذِ ابْتَلَى إِبْرَاهِيمَ رَبُّهُ بِكَلِمَاتٍ فَأَتَمَّهُنَّ قَالَ إِنِّي جَاعِلُكَ لِلنَّاسِ إِمَامًا قَالَ وَمِنْ ذُرِّيَّتِي قَالَ لَا يَنَالُ عَهْدِي الظَّالِمِينَ}
অর্থঃ “অথচ যখন ইবরাহীমকে তাঁর পালনকর্তা কয়েকটি বিষয়ে পরীক্ষা করলেন, অতঃপর তিনি তা পূর্ণ করে দিলেন, তখন পালনকর্তা বললেন, আমি তোমাকে মানবজাতির নেতা করবো। তিনি বললেন, আমার বংশধর থেকেও? তিনি বললেন, আমার অঙ্গীকার অত্যাচারীদের পর্যন্ত পৌঁছাবে না।” -সূরা বাকারা, আয়াত-১২৪
মোল্লা উমরের মৃত্যুর পর আবু বকর বাগদাদী পাকিস্তানের উপজাতীয় এলাকায় এক প্রতিনিধি নিয়োগ দেন। তিনি ইমারতে ইসলামী’র সৈনিকগণকে বাইআত ভঙ্গের আহ্বান জানান। তিনি এক অডিও বার্তায় বলেন, ‘তালেবান নেতৃত্ব পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দাদের হাতে ধরা দিয়েছে। তারা শহীদগণের রক্তের সাথে গাদ্দারি করেছে। এখন কাফেরদের পূর্বে এই মুরতাদদের সাথে লড়াই করা ওয়াজিব।’ এসব কেমন কথা!!
পূর্বেও বাগদাদীর মুখপাত্র আল-কায়েদার নেতৃবৃন্দকে তাকফীর করেছে এবং তাদের ব্যাপারে অশালীন ভাষা ব্যবহার করেছে। অবশ্য এই তাকফীর করার ক্ষেত্রে তিনি কোনো ধরণের শরয়ী দলীল পেশ করার প্রয়োজন বোধ করেননি।
এটিই কি নববী কর্মধারা? বাগদাদীর দলের এসব মিথ্যাচার, অঙ্গীকার ভঙ্গকরণ ও বিশ্বাসঘাতকতার কারণ কি? শামে মুসলমানগনের মধ্যকার ফিতনা নির্মূলে আল-কায়দার নেতৃবৃন্দ তাদেরকে ইরাকে নিজেদের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ রাখার আদেশ করেছিল। তারা তা মানেনি। উল্টো ঢালাওভাবে তাকফীর করেছে। পরিণতি কি হয়েছে? মুসলমানদের মধ্যে হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বেড়েছে এবং অদ্যবধি বেড়েই চলেছে। আর শত্রুরা আমাদেরকে চিরতরে নিঃশেষ করতে ওঁৎ পেতে বসে আছে।
যারা প্রকাশ্যে ঘোষণা দিয়ে আমিরুল মুমিনীনের বাইআত ভঙ্গ করেছে, তারা নিজেদেরকে হীন ও অপদস্ত করেছে। মোল্লা উমরকে বাইআত দিয়ে মুমিনগণ গর্ববোধ করে।
শাইখ হামূদ উকলা, কারারুদ্ধ শাইখ সুলাইমান আল উলওয়ান এবং শাইখ আলী খুযাইর যৌথভাবে মোল্লা ওমরের কাছে একটি পত্র লিখেন। তাতে তাঁরা বলেন, “হে আমিরুল মুমিনীন! আপনাদের মর্যাদা হ্রাস করবেন না। আপনারা এ যুগের কিংবদন্তী। অচিরেই আমরা উম্মাহর জন্য বর্তমান সময়ের ইতিহাস রচনা করবো। আগত প্রজন্মের সামনে প্রমাণ করবো, পৃথিবীর সত্যিকার শাসক আপনারাই। যদি আপনারা শাহাদাতবরণ করেন তাহলে সোনালী হরফে আপনাদের জীবনচরিত রচিত হবে। আমরা আল্লাহর দরবারে সাক্ষী দেব, আপনারা উম্মাহর সত্যিকার কল্যাণকামী ছিলেন। এটাই আমাদের ধারণা। আল্লাহর সামনে কারো সাফাই গাওয়ার অধিকার আমাদের নেই। যখন অধিকাংশ মুসলমান কুফরি শক্তির সামনে মাথা নত করেছে, তখন আপনারা মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছেন।
দুনিয়ার রাজ-রাজারা যখন আমেরিকার চাহিদা পূরণে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত, তখন কেবল আপনারাই বারবার অসম্মতি জানিয়ে আসছেন। মুসলমানদের জন্য এটি অনেক বড় মর্যাদার বিষয়”।
পত্রে তাঁরা আরও লিখেন, “আপনাদের দেশে আশ্রয় গ্রহণকারী মুহাজিরগণকে হাতে পাওয়ার জন্য বিশ্বের কুফরি রাষ্ট্রসমূহ মরিয়া হয়ে আছে। ইহুদী, খ্রিস্টান, অগ্নিউপাসক, সমাজতন্ত্রী, জাতীয়তাবাদী, মুরতাদ ও মুনাফিক শক্তিগুলো আপনাদের মর্যাদা ধূলিসাৎ করতে জোটবদ্ধ হয়েছে। তাদের চোখ রাঙ্গানীকে পরোয়া না কারে আপনারা বিশ্ববাসীকে শিখিয়ে যাচ্ছেন বীরত্ব ও সাহসিকতার এক অবিশ্বাস্য সবক। কুফরি জোটের অত্যাধুনিক মারণাস্ত্রসমূহ আপনাদেরকে ভয় দেখাতে পারেনি। আপনারা অনড় থেকেছেন, ধৈর্য ধরেছেন, দাঁত কামড়ে লড়াই করেছেন সেই সংকটময় মুহূর্তে, যখন সকলেই সহযোগিতার হাত গুটিয়ে নিয়েছিল। মানুষ তার বিশ্বাস ও মূল্যবোধ বদলে ফেলেছিল। যারা নিজেদেরকে মুসলিম বলে দাবি করে তাদের অনেকের মাঝেই নাওয়াকিযুল ইসলাম (ইসলাম ভঙ্গের কারণ) প্রকাশ পেয়েছিল। কিন্তু আপনারা সুদৃঢ় পর্বতের ন্যায় মস্তক উঁচু করে নিজেদের মতপথে অবিচল ছিলেন। উম্মাহর প্রতিটি সন্তান আপনাদের জন্য গর্ববোধ করে। সারা পৃথিবীর কুফরি শক্তিসমূহ মুমিনদের এই ক্ষুদ্র দলটির বিরুদ্ধে নিজেদের শক্তির শেষটুকু পর্যন্ত প্রয়োগ করছে। একটি মাত্র রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এত বড় জামায়েত ও বিশাল আয়োজন হয়তো পৃথিবীর ইতিহাসে খুঁজে পাওয়া যাবে না। কিন্তু আপনারা ঈমান রক্ষায় জান দিয়েছেন, মাল দিয়েছেন এবং রাজত্ব ত্যাগ করেছেন। আপনাদের ঈমান ও আল্লাহর উপর ভরসা কাফেরদের সেই মহা জামায়েতের চেয়ে ঢের মজবুত ছিল।
হে আমিরুল মুমিনীন! আমরা জানি, যুদ্ধ এখানো শেষ হয়নি, তবুও আপনাকে বিজয়ের আগাম সুসংবাদ জানাচ্ছি। বিজয়ের নিদর্শন এখন সুস্পষ্ট। ইতিমধ্যে আপনাদের ধর্মমত ও আদর্শ শত্রুদের ধর্মমত ও আদর্শের উপর বিজয় অর্জন করেছে”।
উল্লেখযোগ্য আরও যারা আমিরুল মুমিনীন মোল্লা মুহাম্মদ উমরকে বাইআত দিয়েছেন তাদের একজন হলেন মুজাহিদ কমান্ডার আবু মুসআব আস-সূরী। ১৪২৫ হি. জিলকদ মাসে এক পত্রে তিনি লিখেন, ‘ইসলামী ইমারাহ প্রতিষ্ঠা লাভের পর আমি আফগানিস্তানে সফর করি। ইতঃপূর্বে ১৪২১ হি. মুহাররম মাসে মোল্লা মুহাম্মাদ ওমরকে (রহঃ) বাইআত প্রদান করি’।
পত্রের এক পর্যায়ে তিনি লিখেন, ‘নভেম্বরে শেষবারের মতো শাইখ উসামার সাথে সাক্ষাৎ করি, তখন আফগানিস্তানে প্রতিরক্ষা যুদ্ধ চলছিল। আমি শাইখ উসামার সাথে আমিরুল মুমিনীনের বাইআতের বিষয়টি পুনরুল্লেখ করি এবং সকল শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গিকার করি’।
এক আলোচনা শাইখ উসামা (রহঃ)ও এ বিষয়টি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, আফগানিস্তানে ক্রুসেডারদের হামলা শুরু হওয়ার পর শাইখ আবু মুসআব আস-সূরী বাইআত নবায়ন করেছেন।
মুজাহিদ নেতৃবৃন্দ পার্থিব স্বার্থের লালসায় মোল্লা মুহাম্মদ উমরকে বাইআত দেননি, বরং মোল্লা উমরের মাঝে কাঙ্ক্ষিত নেতৃত্বগুণ আছে বলেই তাকে বাইআত দিয়েছেন। ইসলাম ও মুসলমানদের বিজয়ের জন্য নিষ্ঠার সাথে নিরলস চেষ্টার কারণে তাকে বাইআত দিয়েছেন।
শাইখ উসামা (রহঃ)-এর বাণী :
আমরা আফগানিস্তানে বসবাসরত এবং বাহিরের মুসলমানগণের পরামর্শ দেব, যেন তারা তালেবানদের সাহায্যে এগিয়ে আসে। ইসলামী রাষ্ট্রের অনুপস্থিতিতে অনেক বিরাট প্রচেষ্টাও কাঙ্ক্ষিত ফল দিতে পারে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সুদীর্ঘ ১৩ বছর মানুষকে দ্বীনের প্রতি আহ্বান করেছেন। এই দীর্ঘ সময়ের প্রাণপণ মেহনতের ফলে কয়েকশ’ মানুষ ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তারা পরে হিজরত করেছিলেন। হিজরতের পর যখন মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হলো, তখন কল্যাণ প্রতিষ্ঠিত হলো, দলে দলে মানুষ ইসলামে দীক্ষিত হলো। রোম-পরস্যের বিশাল বাহিনী তাদের পথরোধ করতে পারেনি। জুবইয়ান, গাতফাত ইত্যাদি গোত্রের দূর্ধর্ষ যোদ্ধারা তাঁদের অগ্রযাত্রা ব্যহত করতে পারেনি।
আমরা মুসলমানগণের কাছে সুপরামর্শ, সামর্থনুযায়ী দান ও যাকাতের মাল দিয়ে সাহায্য করার আহবান জানাচ্ছি। আফগানিস্তান ইসলামের পতাকা সমুন্নত করেছে। এর উপর আক্রমণ মানে গোটা মুসলিম জাতির উপর আক্রমণ।
আলহামদুলিল্লাহ! আফগানিস্তানের সাথে আমাদের বন্ধন খুবই সুদৃঢ়। এটা বিশ্বাসের বন্ধন; আকিদার বন্ধন। রাজনৈতিক দলসমূহের পারস্পরিক বন্ধন বা ব্যবসায়ীক স্বার্থের বন্ধন নয়।
বিশ্বের অনেক দেশ ছলেবলে কৌশলে তালেবানদেরকে তাদের কর্ম থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করছে, কিন্তু আল্লাহর রহমতে তারা অনড় রয়েছেন।
আবার আপনাদের প্রশ্নে ফিরে আসছি। আমরা এখানে একটি রাষ্ট্র নিয়ে কাজ করছি। এই রাষ্ট্রের আমির আছেন। যতক্ষণ তিনি শরীয়ত মাফিক রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন, ততক্ষণ তার আনুগত্য করা আমরা আবশ্যক মনে করি। আমরা এই রাষ্ট্রের জন্য কাজ করছি এবং এর সাহায্যে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাচ্ছি। অথবা এখানে সতর্ক করে দিতে চাই যে, আমেরিকার ইচ্ছা হলো, যে কোনো অজুহাতে আফগানিস্তানে আক্রমণ করা। কিন্তু উম্মাহকে বিভক্ত করার কৌশলস্বরূপ (শাইখ) উসামাকে হস্তান্তরের বিষয়টি লাইম লাইটে নিয়ে এসেছে। যাই হোক, তাদের এসকল কূটকৌশল কাজে আসার কোনো সম্ভাবনা আপাতত দেখছি না। আমরা যে পথে বের হয়েছি, তার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত আমাদের চেনা। আমেরিকার ঐ ক্ষেপণাস্ত্র না আমাদেরকে ভীত করতে পারবে আর না আমাদেরকে বিচ্যূত করতে পারবে। আমরা তাদেরকে কেবল এই বলে সতর্ক করতে চাই যে, আফগানিস্তানে আক্রমণ আর মুসলিম উম্মাহর উপর আক্রমণের মাঝে তেমন কোনো তফাৎ নেই।
শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরী (হাফিজাহুল্লাহ) :
একবার আমি শাইখ উসামার সাথে ছিলাম। ইমারতে ইসলামী’র এক প্রতিনিধি দল মোল্লা মুহাম্মদ উমরের (রহঃ) পত্র নিয়ে তাঁর সাক্ষাতে এসেছিলেন। পত্রে তিনি লিখেছিলেন, ‘আফগানিস্তানের কঠিন প্রস্তর ও বৃক্ষরাজি যদি শত্রুদের আঘাতে আঘাতে ভস্মীভূত হয়ে যায় তবুও আপনাকে শত্রুদের হাতে তুলে দেওয়া হবে না’। তিনি তাঁর বক্তব্যের যথার্থতা প্রমাণ করেছিলেন। আমিরুল মুমিনীন মোল্লা মুহাম্মদ উমরের হিম্মত ছিল আকাশচুম্বী। যে সকল গুণাবলী তাঁর মধ্যে পূর্ণ মাত্রায় ছিল সেগুলোর মধ্যে তাঁর হিকমত ছিল সবচেয়ে বেশি।
একবার আরবের এক প্রতিনিধিদল আমিরুল মুমিনীনের সাক্ষাতে এসেছিল। তারা নিজ নিজ দেশে তাগুত শাসকদের দুঃশাসনের অভিযোগ করেন। তিনি তাদেরকে বলেন, এ বিষয়ে আপনাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার চেয়ে আমাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা মোটেও কম নয়। তবে আপনারা ধৈর্য ধরুন।
বিশ্বস্ত সূত্রে আমি জানতে পেরেছি যে, একবার চীনের রাষ্ট্রীয় এক প্রতিনিধিদল ইমারতে ইসলামী’র কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। চীনের প্রতিনিধিদল বলেছিল, আমরা জানি পূর্ব-তুর্কিস্তানের একটি ইসলামী দলের কয়েকজন সদস্য আপনাদের এখানে অবস্থান করছেন। আমরা এও জানি যে, আবু মুহাম্মদ তুর্কিস্তানী (রহঃ) আপনাদের মাঝেই রয়েছে। তাদেরকে আমাদের হাতে তুলে দেওয়ার দাবি নিয়ে আমরা আসিনি। তবে এতটুকু বলব যে, আফগানিস্তানের মাটিকে আমাদের বিরুদ্ধে ব্যবহারের সুযোগ তাদেরকে দেবেন না।
এ ঘটনা আমিরুল মুমিনীনের কানে পৌঁছালে তিনি তাঁর কয়েকজন সঙ্গীকে তাদের খুঁজে বের করতে বললেন। আফগানিস্তানে তার উপস্থিতির কথা তিনি জানতেন না। যখন আবু মুহাম্মদ তুর্কিস্তানী আমিরুল মুমিনীনের সাথে সাক্ষাত করলেন, তখন আমিরুল মুমিনীন তার সাথে অত্যন্ত আন্তরিক ও সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণ করলেন। তিনি তাকে বললেন, আপনি আফগানিস্তানে আছেন অথচ একটিবারের জন্য দেখা করলেন না? শাইখ আবু মুহাম্মদ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন এবং জানালেন, তিনি এবং তার সঙ্গীগণ এখানে সুখে-শান্তিতে ও নিরাপত্তার সাথে বসবাস করতে পারছেন। আমিরুল মুমিনীন তাদের জন্য প্রয়োজনীয় অস্ত্রশস্ত্র ও থাকার জায়গার সু-ব্যবস্থা করার আদেশ করলেন।
আমিরুল মুমিনীন মোল্লা মুহাম্মদ উমরের আরও একাটি কীর্তি হলো বামিয়ানের মূর্তি গুড়িয়ে দেওয়া। এ বিষয়ে তিনি আলেমগণের মতামত জানতে চেয়েছিলেন। তাঁরা ফতোয়া দেন যে, মূর্তি ভেঙ্গে ফেলা ওয়াজিব। সে মতে তিনি তা ভেঙ্গে ফেলতে মনস্ত করেন এবং তা ভাঙ্গতে একটি বাহিনী প্রেরণ করেন। তিনি দৈনিক দুইবার বাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করতেন এবং কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে খোঁজ নিতেন। এই কাজে আল-কায়েদার কয়েকজন ভাইও অংশ নিয়েছিলেন। তাঁদের কয়েকজন হলেন- শাইখ আব্দুল হাদী আল ইরাকী (আল্লাহ তাঁকে কারামুক্ত করুন), শহীদ আবু আব্দুর রহমান আল মুহাজির (রহঃ) এবং শাইখ হামজা আল-গামেদী।
মূর্তি ভাঙ্গার বিপক্ষে পুরো বিশ্ব সোচ্ছার ছিল। কাতারের পররাষ্ট মন্ত্রনালয়ের এক প্রতিনিধি দল এ বিষয়ে আলোচনা করতে আফগানিস্তানে এসেছিল। আর এসেছিল ইউসুফ কারজাবী, ফাহমী হুয়াইদী, মিসরের গ্র্যান্ড মুফতি শাইখ নসর ফরীদ ওয়াসেল। তারা মূর্তি না ভাঙ্গার শর্তে আফগানিস্তানকে ও.আই.সি-এর সদস্যপদ প্রদানের প্রস্তাবনা পেশ করেছিল। জাপান সরকার বিপুল অর্থের বিনিময়ে মূর্তিটি নিজেদের দেশে স্থানান্তরিত করার আশাবাদ ব্যাক্ত করেছিল। এসবের উত্তরে হিন্দ বিজেতা সুলতান মাহমুদ সুবক্তগীনের ভাষায় আমিরুল মুমিনীন দৃপ্ত কণ্ঠে উচ্চারণ করেছিলেন- “আমি মূর্তি ব্যবসায়ী হয়ে আল্লাহর সামনে হাজির হতে চাই না। আমি মূর্তি সংহারক হিসাবে আল্লাহর সামনে হাজির হতে চাই।”
মুজাহিদগণকে সহযোগিতার বিষয়ে আমিরুল মুমিনীন কখনো পিছপা হতেন না। তিনিই সর্বপ্রথম চেচনিয়াকে স্বীকৃতি প্রদান করেন এবং এর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শাইখ শহীদ জলীম খান ইয়ানদারবীর সাথে সাক্ষাৎ করেন।
শাইখ জলীম খান ইয়ানদারবী (রহঃ) এর বাণী :
ইমারতে ইসলামী’র কর্মকর্তাগণের সাথে এক আলোচনায় বলেছিলাম, চেচনিয়ার প্রতিরোধযুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া এবং মুজাহিদ সংগ্রহ করে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে দু’টি বা তিনটি সেনাশিবির প্রতিষ্ঠা করার ইচ্ছা আমার ছিল। কিন্তু অর্থ ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের যোগান দেবে কে?
তখন মোল্লা ওমর (রা.) বলেছিলেন, “ঠিক আছে, আপনি যখন বলবেন তখনই আপনার প্রয়োজনীয় অর্থ ও সাজ-সরঞ্জাম সরবরাহ করা হবে”।
শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরী (হাফিজাহুল্লাহ) :
ইমারতে ইসলামী মুহাজিরগণকে বাইআত না দিলে হত্যার হুমকি দেওয়া দূরের কথা, তাদের কাছে বাইআত দেওয়ার দাবিও জানায়নি। ময়দানের যুদ্ধে অবতীর্ণ হওয়ার আদেশও করেনি, বরং তাদেরকে যথাসম্ভব আবাসিক সেবা প্রদান করেছে। ইমারতে ইসলামী মুহাজিরগণকে আশ্রয় দেওয়ার পাশাপাশি মুজাহিদগণের প্রশিক্ষণের জন্য ভিন্ন ভিন্ন সেনাশিবির প্রতিষ্ঠার অনুমতি প্রদান করেছে। যেমন, আল-কায়েদার প্রশিক্ষণ শিবিরসমূহ, খালদুন প্রশিক্ষণ শিবির, জামাতুল জিহাদ প্রশিক্ষণ শিবির, (উক্ত দুই দল পরবর্তীতে আল-কায়েদায় যোগদান করে) আবু মুসআব জারকাবি প্রশিক্ষণ শিবির, শাইখ আবু খাব্বাব মিসরী প্রশিক্ষণ শিবির, শাইখ আবু মুসআব সূরী প্রশিক্ষণ শিবির ইত্যাদি। এসব প্রশিক্ষণ শিবির থেকে এমন মুজাহিদ তৈরি হয়েছিল, যারা কুফরি বিশ্বের হৃৎপিণ্ডে আঘাত হেনেছিল। যেমন, নিউইয়র্ক, ওয়াশিংটন এবং পেনসিলভেনিয়ার আক্রমণ, নাইরোবি ও দারুস সালামে মার্কিন দূতাবাসে আক্রমণ।
আমিরুল মুমিনীনের সাথে আরও একটি সাক্ষাতের কথা আমার মনে পড়ছে, আমি শাইখ উসামার সাথে তাঁর কাছে গিয়েছিলাম। শাইখ উসামা মসজিদে আকসা ও ফিলিস্তিনি মুসলিমদের উপর ইহুদীদের অমানুষিক নির্যাতনের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন, তখন আমিরুল মুমিনীন তাঁকে ইহুদীদের বিরুদ্ধে জিহাদ শুরু করার আদেশ দেন। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, আফগানিস্তানের অবস্থা স্থিতিশীল হয়ে গেলে ফিলিস্তিনের সীমান্ত এলাকায় জিহাদী ক্যাম্প প্রতিষ্ঠা করবেন। আলহামদুলিল্লাহ! আমিরুল মুমিনীনের সৈনিকেরা এখন বাইতুল মুকাদ্দাসের দ্বারপ্রান্তে।
অসাধুরা তাঁর বাইআত ভঙ্গ করলেও মুসলিম উম্মাহ এই মহামানবকে প্রাণভরে আপনজনের মতো ভালবাসেন।
ডক্টর আব্দুল্লাহ নাফিসীর বাণী :
আমি মোল্লা ওমর (রহঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ করেছি। তাঁর সাথে কথা বলার সুযোগ হয়েছে। এটা আমার জন্য মর্যাদার বিষয়। তিনি অনেক বড় মাপের মানুষ। তিনি পশ্চিমা প্রতিনিধিদলসমূহকে স্বাগত জানাতেন না। আল্লাহ বলেন-
إنماالمشركون نجس
“মুশরিকরা অপবিত্র।”
তিনি তাদেরকে বলতেন, কাবুল চলে যান, পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে রাজনৈতিক আলোচনা করুন। সেখানে গেলে আপনারা উপকৃত হবেন।
শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরী (হাফিজাহুল্লাহ) :
হে মুসলিম উম্মাহ! বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহ আমাদের বিরুদ্ধে জোট বেঁধেছে। আমরা তাদের মোকাবেলা করছি। এই যুদ্ধ গোটা মুসলিম জাতির যুদ্ধ। কুফরি শক্তিকে প্রতিহত করার যুদ্ধ। বাইতুল মাকদিস পুনঃদখলের যুদ্ধ। লক্ষ্যে পৌঁছাতে কাশগর থেকে আটলান্টিকের তীর পর্যন্ত এবং কাফকাজ থেকে মধ্য আফ্রিকা পর্যন্ত সকল মুসলিমকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এই ঐক্যের জন্যই শাইখ উসামা এবং মুজাহিদ নেতৃবৃন্দ মোল্লা মুহাম্মদ উমরকে বাইআত দিয়েছেন।
জাবহাতুন নুসরাহ’র ইসতেশহাদী মুজাহিদ আবু আনাসের অসিয়তঃ
আমার প্রথম পত্র মুজাহিদ নেতৃবৃন্দের প্রতি-
আমি তাঁদেরকে বলবো, তাঁরা যেন আল্লাহকে ভয় করেন। তাদেরকে স্মরণ করাব সেই আমানতের কথা, যা আল্লাহ তাঁদের কাছে রেখেছেন। আর বলবো, আল্লাহ তাদেরকে আমির বানিয়েছেন, তাই তারা যেন জিহাদে শিথিলতা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে আল্লাহকে ভয় করে। জিহাদ প্রতিষ্ঠার পথে অনেক রক্ত ঝরেছে, অনেক দেহ ঝাঁঝরা হয়েছে, অবশেষে জিহাদের মজবুত অবস্থান সৃষ্টি হয়েছে।
আমি তাঁদেরকে আরও বলবো, আল্লাহকে ভয় করুন! আল্লাহর সামনে আপনারা জিজ্ঞাসিত হবেন। আপনারা জিজ্ঞাসিত হবেন আপনাদের ভাইদের রক্ত সম্পর্কে, আপনাদের শাইখদের রক্ত সম্পর্কে। আজ তাঁদের রক্তের বিনিময়ে আমাদের কাছে জিহাদের দাওয়াত পৌঁছেছে এবং তা বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়েছে।
দ্বিতীয় পত্র আমার আকিদা ও মানহাজের সেই ভাইদের প্রতি, যাদের অধিকাংশই সামর্থবান হওয়া সত্ত্বেও নারী ও শিশুদের সাথে পেছনে পড়ে রয়েছেন এবং জিহাদে বের হচ্ছেন না। আমি তাদেরকে বলবো, মুজাহিদগণের সাহায্য করার জন্য যদি ময়দানে বের হতে না পারেন তবে অন্ততপক্ষে মুজাহিদগণের মাঝে সৃষ্ট বিভেদে জড়িয়ে পড়া থেকে নিজেকে দূরে রাখুন। আপনাদের কলম যা লিখবে এবং আপনাদের জবান যা বলবে, সে সম্পর্কে আল্লাহর সামনে জবাবদিহিতা করতে হবে।
তাদের অনেকে বাড়াবাড়ি করছে এবং ভাইদের মাঝে ফিতনার আগুন আরও উস্কে দিচ্ছে। অথচ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর এই বাণীর প্রতি মোটেও কর্ণপাত করছে না।
قل خيرًااو اصمت
“ভালো কিছু বলো অথবা চুপ থাক”।
আমি তাঁদেরকে আল্লাহ ও রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হকের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলবো, তারা যেন ময়দানে বেরিয়ে পড়ে এবং ফরজ বিধান পালন করে।
শাইখ আইমান আয যাওয়াহিরী (হাফিজাহুল্লাহ) :
এই নীতি মেনে নিয়ে ইমারতে ইসলামী’কে কেন্দ্র করে মুসলমানগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে আমরা মোল্লা উমরকে বাইআত দিয়েছি।
এই ঐক্যের স্বার্থেই আমরা ইরাক ও শামের ভাইদের বলবো, যেন তারা সর্বগ্রাসী এই ফিতনার লাগাম টেনে ধরেন। এই ফিতনা শুধু মুসলমানদের রক্ত ঝরানোর মাঝে সীমাবদ্ধ নয় বরং এখন মুজাহিদগণকে তাকফির করা হচ্ছে এবং তাদের স্ত্রীগণকে জিনার অপবাদ দিয়ে পাথর মারা হচ্ছে।
যারা ফিতনার মধ্যে জড়িয়ে পড়েছেন তাদেরকে বলবো, যতটুকু হয়েছে, হয়েছে। এখন তাওবা করে ভাইদের কাছে ফিরে আসুন এবং ঐক্যবদ্ধ কুফরি শক্তির বিরুদ্ধে আপনারাও ঐক্যবদ্ধ হোন।
আমি কি দাওয়াহ পৌঁছাতে পারলাম? আল্লাহ! আপনি সাক্ষী থাকুন!
আজ এ পর্যন্তই।
وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين، وصلى الله على سيدنا محمد وآله وصحبه وسلم.
والسلام عليكم ورحمة الله وبركاته