JustPaste.it

বিশেষ নিবন্ধ

 

ঈদুল ফিতরের শিক্ষা
'সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে'
কাজী আবু হোরায়রা


ঈদ সারা মুসলমানদের এক সার্বজনীন আনন্দ-উৎসব। এ উৎসব বিশ্ব মুসলমানের ঘরে ঘরে আনে আনন্দের সওগাত। ধনী-গরীব,  সাদা-কালো, ভালো-মন্দ, ছোট-বড় সকলেই ঈদের আনন্দ-উৎসবে শরীক হয়। শাওয়াল মাসের পয়লা তারিখ ঈদুল ফিতর উদযাপিত হয়। গরীবদের প্রতি  ধনীদের সহানুভূতির হাত প্রশস্ত করে ফিতরা দানের মাধ্যমেও ঈদ উদযাপিত হয় বিধায় একে ঈদুল ফিতর বলা হয়। 
হিজরতের পূর্বে মুসলমানদের মধ্যে ঈদের প্রথা ছিল না।  এর আগে মদীনার আনসারগণ যে সব  উৎসব পালন করতেন সেগুলো ইসলামসম্মত ছিল না। তাই রাসূল (সাঃ) মুসলমানদের জন্য আল্লাহ্ তা'আলার নির্দেশে বৎসরে দু'টি উৎসবের প্রচলন করেন। তার একটি ঈদুল ফিতর ও অন্যটি ঈদুল আযহা। এ দুটি উৎসবের উদ্দেশ্য শুধু নিছক আনন্দ-উল্লাস নয়, বরং ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার মূল উদ্দেশ্য হলো ত্যাগের মহিমায় সমুজ্জল হওয়া। কেননা এক মাস সিয়াম সাধনার পর ঈদ আসে, আর সিয়াম সাধনার প্রধান উদ্দেশ্যই হলো সংযম ও ত্যাগের শিক্ষা। অপরদিকে ঈদুল আযহারও শিক্ষা হলো ত্যাগ ও কুরবানী।
মাহে রমযানের সিয়াম সাধনার সাথে ঈদুল ফিতর উদযাপনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক এবং যোগসূত্র রয়েছে। আমরা এক মাস সিয়াম সাধনার পর ঈদুল ফিতর উদযাপনের জন্য প্রস্তুত হয়েছি। এ দু'য়ের মাঝে যে ঘনিষ্ঠ যোগসূত্র রয়েছে, তা কিরূপ? যেমন ধরা যাক মানুষের জীবন উন্নত করার জন্য শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকে। সে শিক্ষা-প্রশিক্ষণের জন্য একটি পরিকল্পিত পাঠ্যক্রম ও পাঠ্য-সূচীও তৈরী করা হয়। প্রণীত পাঠ্যক্রমের সিলেবাসের অধীনে প্রথমে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। নির্ধারিত কোর্স সমাপ্তির পর পরীক্ষা বা মূল্যায়নেরও ব্যবস্থা থাকে। মূল্যায়নে যে যত বেশী ভাল করতে পারে, তার ফলাফলও হয় তত বেশী চমৎকার। পরিণামে তার খুশী ও আনন্দও অন্যান্যদের তুলনায় অনেক বেশী। তার ভবিষ্যৎ জীবন হয় উজ্জ্বল। পরবর্তীতে সে সর্বত্র অগ্রাধিকার পায়। ঠিক অনুরূপভাবে আল্লাহ্ তা'আলা তার অনুগত বান্দাদেরকে পার্থিব জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ ও মোহ থেকে এবং দেহের ষড়রিপুর কুপ্রবৃত্তি থেকে মুক্ত করে খোদামুখী ও পরকালমুখী করার জন্য এক মাস প্রশিক্ষণ কোর্সের পাঠ্যসূচী কি? খোদাভীতি অর্জন, ধৈর্য ও সংযমের অনুশীলন, আল-কুরআনের বিধানাবলীর সংগে নিজেকে সম্পৃক্তকরণ, রিপু তথা কাম, ক্রোধ, লোভ ও মোহ ইত্যাদির দমন এবং পানাহার ত্যাগের মাধ্যমে গরীবের দুঃখ-দুর্দশা অনুধাবন করে সহানুভূতিশীলতার সংগে ভ্রাতৃত্ববোধ প্রতিষ্ঠা। সর্বোপরি আল্লাহ্ তা'আলার নৈকট্য লাভ ইত্যাদি বিষয় হল এক মাসের সিয়াম সাধনার প্রশিক্ষণ কোর্সের সিলেবাস বা পাঠ্যসূচী। সিয়াম সাধনার এ প্রশিক্ষণ কোর্স শুধু গতানুগতিক বা তাত্ত্বিক নয়। এ কোর্সের প্রতিটি বিধানই অত্যন্ত যুক্তিসংগত, নির্ধারিত এবং বাস্তবভিত্তিক অনুশীলন। যেমন আল্লাহ্ তা'আলা রমজানের প্রথম দশ দিন নির্ধারিত করেছেন রহমত ও বরকতের জন্য, মাঝের দশ দিন মাগফিরাতের জন্য এবং শেষের দশ দিন মুক্তির বা নাজাতের জন্য বিশেষভাবে নির্ধারিত করেছেন। এছাড়াও সাহরী খাওয়া থেকে তারাবীহর নামায পর্যন্ত দিবা-রাত্রি একটি নির্ধারিত নিয়ম ও রুটিনের আওতাধীন চলতে হয়। আর ঈদুল ফিতর হলো সিয়াম সাধনা তথা প্রশিক্ষণ শেষে সমাপনী অনুষ্ঠান বা সার্টিফিকেট বিতরণের মাধ্যমে পুরুস্কৃত করা।
এক মাসের সিয়াম সাধনার পর ঈদুল ফিতর প্রতিটি মুসলমানের জীবনে বয়ে আনে আনন্দ। এ শুধু নিছক আনন্দ নয়, এ আনন্দের মাঝে অনেক শিক্ষণীয়  বিষয় রয়েছে, যা ব্যক্তি জীবন থেকে সামাজিক এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবন পর্যন্ত পরিব্যপ্ত। মুসলমানরা সিয়াম পালনের মাধ্যমে সংযমের এবং ভাতৃত্ববোধের শিক্ষা পেয়েছে আর ঈদুল ফিতরের দিন উদারতার শিক্ষা পেয়ে থাকে। সংযমেরই আর এক শিক্ষা উদারতা। এ দু'য়ের সমন্বেয়েই অর্জিত হয় ভ্রাতৃত্ব। 
ঈদের জামাত যত বড় হয় ততই সওয়াব বেশী। অর্থ্যাৎ যত বেশী লোক একত্রিত হয়ে নামায আদায় করবে, ততবেশী ভ্রাতৃত্ব ও সামাজিক বন্ধন সুদৃঢ় হবে। ভ্রাতৃত্বের বন্ধন এবং আনন্দ সোহাগ ও সৌহার্দ্যের টানেই শত শত মাইল দূর থেকে মানুষ ছুটে যায় আপনজনের কাছে। গরীবের সারা বছরের দুঃখ-দুর্দশার যে শিক্ষা ধনী ব্যক্তিরা পানাহার ত্যাগ করে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে পেয়েছে তারই বাস্তবায়ন করছে এ দিনে যাকাত-ফিতরা দানের মাধ্যমে। এজন্যই মাহে রমজান ও ঈদুল ফিতরের যোগসূত্র এবং উভয়ের শিক্ষা অভিন্ন।
এখন প্রশ্ন হলো, ঈদের দিনে মুমিনগণ কিভাবে এক মাসের সিয়াম সাধনার ফলাফল লাভ করে? এ ফলাফল প্রতিশ্রুত ফলাফল। মুমিন বান্দাহ এ ফলাফল অবশ্যই লাভ করবে যদি সে সত্যিকার সিয়াম সাধনা করে এবং তার শিক্ষা জীবনে প্রতিফলিত করে। এজন্যই রাসূল (সাঃ) এর মহান বাণী ঘোষিত হয়েছে যে, ঈদের খুশী সত্যিকারের সিয়াম সাধনাকারীর জন্যই। তিনি ইরশাদ করেছেন "ঐ ব্যক্তির জন্য ঈদের খুশী নেই, যে গরীবদের পাওনা আদায় করেনি, অর্থ্যাৎ যাকাত-ফিতরা দান করেনি।" হাদীসের উক্ত বাণী থেকে একথাই প্রমাণিত হয় যে, যারা সত্যিকার সিয়াম সাধনা করে পুতঃপবিত্র হতে পেরেছে, সিয়াম সাধনাকারীগণ ঈদের দিনে তাদের সাধনার ফলাফল পাবে। এ কথার মধ্যে যে কোন সন্দেহই নেই, তার প্রমাণ হিসাবে দু'টি উহাদরণই যথেষ্ট। প্রথমত সিয়াম সাধনার প্রশিক্ষণ কোর্সের ফলাফল মূল্যায়ন করবেন স্বয়ং আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন দ্বিতীয়ত, রোযা স্বয়ং রোযাদার সম্পর্কে ভাল-মন্দ সাক্ষ্য দেবে। সুতরাং মুমিন বান্দাগণ ঈদের খুশীর দিনে নিছক খুশী বা আনন্দে মাতোয়ারা না হয়ে সত্যিকার অর্থে তার কৃতকার্যতা অকৃতকার্যতার চিন্তায় মনের আকুতি নিয়ে আল্লাহ্ তা'আলার স্মরণে থাকা উচিৎ। প্রত্যেক মুমিন বান্দাহর আল্লাহ্ তা'আলার দরবারে এ প্রার্থণাই থাকা উচিৎ যে, সে কি পাপমুক্ত হতে পেরেছে? সে কি নেককারদের অন্তর্ভুক্ত-না এখনও বদকারই রয়েছে। এ কথার বড় উদাহরণ আমারা পাই আমিরুল মুমেনীন হযরত ওমর ফারুক (রাঃ) এর নিকট থেকে। তিনি একবার মাহে রমযান শেষে ঈদুল ফিতরের দিন হাসিখুশী ত্যাগ করে শুধু গুমরিয়ে কান্নাকাটি করছেন। সাথীরা জিজ্ঞাসা করল, আজ ঈদের খুশীর দিনে আপনি এভাবে কান্নাকাটি করছেন কেন? হযরত উমর (রাঃ) উত্তরে বললেন, আজ আমি জানতে পারছি না যে, মাহে রমযানের মত বড় নেয়ামত ও অপরাধ মার্জনার মহান সুযোগ পাওয়ার পরও আমি কি পাপমুক্ত হতে পেরেছি-না এখনও আমি গুনাহগারই রয়ে গেলাম। এ উদাহরণ থেকে ঈদ উপভোগকারী এবং সিয়াম সাধনার ফলাফল প্রত্যাশীদের অনেক কিছু শিক্ষণীয় রয়েছে। আজ বলতে গেলে আমাদের মধ্যে সে চিন্তা-চেতনার একান্তই অভাব। যারা রোযার হক পরিপূর্ণভাবে আদায়ের চেষ্টা করে রোযা পালন করেছে, তাদের জন্যই যেখানে ঈদের খুশীর কথা ইসলাম ঘোষণা দিয়েছে, সেখানে ঈদের খুশীর ধুমধাম পড়ে বে-রোযাদারদের কাছে। এ যেন একটা রুসুম বা পর্ব। এখানে আমরা দেখি তীব্র প্রতিযোগিতা চলে কেনাকাটার আর ঈদের জামাতে আগের কাতারে বসার। শত প্রকারের শিরনী-সেমাই ও নানা রকমের খাবার তৈরীর। পক্ষান্তরে ঈদ আসে ত্যাগের আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য। মুসলমানের ঈদের আনন্দ হতে হবে স্বার্থ ত্যাগের মাধ্যমে প্রাপ্ত আনন্দ এবং অভাবী নিরন্নকে সাহায্য করার মাধ্যমে প্রাপ্ত আনন্দ। দুঃখের বিষয়, আমাদের ঈদ উৎসব এখন বিকৃতরূপ লাভ করেছে। ত্যাগের উৎসব এখন পরিণত হয়েছে ভোগের উৎসবে। আমাদের সামাজতান্ত্রিক সমাজে ঈদের বৈশিষ্ট্য হলো, বেশী বেশী বাজার করা এবং বেশী বেশী খাওয়া বা ভোগ করা। সাহাবায়ে কিরাম ঈদের দিনে সবচেয়ে বেশী দান করতেন। তারা দীর্ঘ সময় মসজিদে কাটাতেন, যে যত বেশী পারতেন দান খয়রাত করতেন। আমাদের ঈদের উৎসব ত্যাগটা এখন গৌণ হয়ে ভোগ ও ভোজনই মূখ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। 
এখানে আর একটি কথাও বলা প্রয়োজন, তা হল শিক্ষা বা প্রশিক্ষণ চলাকালীন সময়ে এর সুফল কেউ আশা করতে পারে না। এর সুফল অবশ্যই পরে পায়। রমযানে এবং ঈদুল ফিতরের দিনে যে শিক্ষা আমরা পেয়ে থাকি, তা বাকী এগার মাসে আমাদের জীবনে প্রতিফলিত না হলে ঈদের দিনের ভ্রাতৃত্ব নিছক আনুষ্ঠানিকতায় পরিণত হবে। বাস্তবিকপক্ষে আমরা আজ তাই প্রত্যক্ষ করেছি। আল-কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, "হে মুমিনগণ! তোমরা এমন কথা কেন বল, যা তোমরা কর নাআ, এমন কথা আল্লাহর নিকট খুবই অপছন্দনীয়।" একজন মুমিনের দায়িত্ব গরমিল দূর করা। মুমিন ও মুনাফিকের সহাবস্থান হতে পারে না। ইসলামের স্বর্ণযুগে মুসলমানরা কথার চেয়ে কাজ করতেন বেশী। আর আজকের মুসলমানরা কর্মের চেয়ে আনুষ্ঠানিকতাকে প্রাধান্য দিচ্ছে বেশী। সুতরাং সিয়াম সাধনা ও ঈদের শিক্ষা আমাদের জীবনের সর্বাবস্থায় বয়ে আনুক কর্মের ও আমলের প্রেরণা। আজিকার দিনে একজন মুমিনের এ কামনাই হওয়া উচিৎ। 
ঈদুল ফিতরের দিনের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ গরীবদের দান করা। এখন এ ফিতরা দান সম্পর্কে কিছু আলোচনা করা যাক। মুসলমান হিসেবে আমাদের সমাজে অনেক ধনী ব্যক্তি যাকাত প্রদান করে থাকেন। আর প্রায় সকলেই ফিতরা দান করেন এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু যাকাত দানের ব্যাপারে যে সব ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়, তা অনেক ক্ষেত্রেই ইসলাম সম্মত নয়। যেমন অনেক ধনী ব্যক্তি বৎসরের সমুদয় অর্থ সম্পদের হিসেব না করেই লামছাম একটা এমাউন্ট যাকাত দিয়ে থাকেন। এটা শরীয়তসম্মত নয়। তার এ দান সদকা হতে পারে, কিন্তু এতে যাকাত আদায় হবে না । যাকাতের একটি নির্ধারিত বিধি রয়েছে এবং এর খরচের খাতও কুরআনে  সুসস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। ঠিক সেভাবেই যাকাত আদায় করতে হবে। খেয়াল-খুশীমত করলে তা হবে না। 
আমরা আজকাল লক্ষ্য করি, যাকাত প্রদানের ঢাক-ঢোল বাজানো হয়। এক শ্রেণীর ব্যবসায়ী যাকাতের কাপড়, শাড়ী, লুঙ্গি ইত্যাদি প্রস্তুত করে রাখেন । গুণে ও মানে খুব নীচু  এসব  দ্রব্যাদি। আর যাকাত প্রদানকারীগণও এসব কাপড় সামনে খরিদ করে গরীবদের মধ্যে বিতরণ করেন। এ যেন এক করুণার প্রতিচ্ছবি। অপরদিকে ফিতরা দানের বেলায়ও ঠিক একই ব্যাপার লক্ষ্য করা যায়। ফিতরা ধরা হয় রেশন কার্ডের দ্রব্যের মুল্য হারে। কিন্তু রেশন তো আমাদের দেশে গরীবদের পরিবর্তে ধনীরাই বেশী খায়।  গরীবদের জন্যে রেশনের নিশ্চয়তা নেই তাদের অনেকের রেশন কার্ড নেই। কিন্তু ফিতরা দেয়া হলো রেশন কার্ডের মূল্যের সমান মূল্য ধরে। ফলে গরীবরা রেশন কার্ড না থাকার কারণে ঐ মূল্যে খরিদ করার সুযোগ পাচ্ছে না। আবার একজনের ফিতরাকে কয়েকজনের মধ্যে বন্টন করা হচ্ছে। পরিণামে কিছু কিছু করে করে সংগ্রহ করে একজন গরীব ২-৪ দিনের খাবাআর যোগাড় করতে পারে বড়জোড়। এর বেশী কিছু করার যেমন সামর্থ্য নেই, তেমনি পরিকল্পনাও নেই। আসল কথা হচ্ছে সার্বিক ব্যবস্থাটিই অপরিকল্পিত। ইসলামের শিক্ষানুযায়ী কেউ পরিকল্পনা মাফিক যাকাত দিচ্ছে, না আর গ্রহণও করছে না। ইসলামের শাশ্বত বিধান ছিল, যে সকল গরীবকে যাকাত প্রদান করা হবে, তারাই এক সময় যাকাতদাতা হিসেবে পরিগণিত হবেন। ইসলামের প্রথম যুগে তা-ই হয়েছিল। আমরা দেখি, রাসূল (সাঃ) এর নিকট জৈনক গরীব ব্যক্তি ভিক্ষা চাইলে তিনি তাকে ভিক্ষা না দিয়ে তার হাতে আয়ের উৎস হিসেবে কাজের উপকরণ বা হাতিয়ার তুলে দিয়েছিলেন। সে উদাহরণ যে কোন মুসলিম সমাজে  যে কোন সময়েই গ্রহনযোগ্য। বাংলাদেশের কথাই ধরা যাক, এখানে সুপরিকল্পিতভাবে যাকাত-ফিতরা আদায় করে উৎপাদনমূলক কাজে গরীবদের জন্য ব্যয় করা হলে কয়েক বছরের মধ্যে ভিক্ষাবৃত্তি রোধ করা যায়। এটা সরকারী কিংবা বেসরকারী উদ্যোগেও হতে পারে। আমরা মনে করি, বাংলাদেশে মুসলমানদের ২ লক্ষ ২৭ হাজার মসজিদ বা কমিউনিটি সেন্টার আছে। প্রতিটি মসজিদে এলাকার ধনী ব্যক্তিগণ নিজ নিজ এলাকার গরীব লোকদের তালিকা প্রস্তুত করে তাদের এক বৎসরের যাকাত ফিতরা একত্রিত করে একটি উৎপাদনমূলক কাজে ব্যয় কররতে পারেন। আর সেখানে গরীব পরিবারের এক বা একাধিক ব্যক্তির কর্মসংস্থান  করতে পারলে তারা পরিশ্রমের মাধ্যমে স্বনির্ভর হবার সুযোগ পাবে। অনেক গরীব পরিবার আছে, যারা সামান্য উপকরণের অভাবেই একটা কিছু করতে পারছে না। তাদেরকে যাকাত ফিতরা ভিক্ষার মত না দিয়ে উপকরণ ক্রয় করে দেয়া যায়। কিন্তু তা হচ্ছে না কেন? আমার দৃষ্টিতে এর প্রধান কারণ হলো, দু'টি।
প্রথমত, আমাদের দেশে যে যাকাত ফিতরা দেয়া হয়, তা দায়সারা গোছের। অর্থ্যাৎ এটাকে ধনীরা গরীবদের প্রতি করুণা বলে মনে করে। আর গরীবদেরকে মনে করা হয় করুণার পাত্র। আসলে তারা তো করুণার পাত্র নয়। কেননা ধনীর ধনে গরীবের হক নির্ধারিত রয়েছে। ধনী ব্যক্তি যাকাত-ফিতরা দিয়ে সে দায়িত্ব মুক্ত হচ্ছে মাত্র। আর যাকাত-ফিতরা আদায় না করলে সে নিজেকে দায়িত্বমুক্ত করতে পারেনি বলে দোষী সাব্যস্ত হবে। সুতরাং যাকাত-ফিতরা বা দান-সাদাকা এগুলো করুণার বিষয় নয়, এগুলো হক্কুল এবাদ। সেচ্ছায়  আদায় না করলে ইসলামী রাষ্ট্রের  বিধানমতে এগুলো আইনের মাধ্যমে আদায় করার কথা। হযরত  আবু বকর (রাঃ) যাকাত প্রদানে অস্বীকারকারীদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছিলেন। 
দ্বিতীয় কারণ হলো, শুধু গতানুগতিকভাবে দান খয়রাত নয়, পরিকল্পিতভাবে দান করলেই গরীব আর গরীব থাকবে না। ভিক্ষাবৃত্তিও বন্ধ হয়ে যাবে। সমাজে এ প্রথা চালু হতে পারে কেবল উদ্যোগ গ্রহণ করলে। পারস্পারিক সহযোগিতা ও সহমর্মিতার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমরা ধনী-গরীবের ব্যবধান দূর করতে পারি। ঈদুল ফিতরের সে শিক্ষাই আমাদের কামনা হওয়া উচিৎ। আমাদের শ্লোগান হোক 'সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।' সাম্য-মৈত্রী ও ভ্রাতৃত্বের সমুজ্জল আলোকে উদ্ভাসিত হয়ে সারা জাহান ঈদগাহে পরিণত হোক মহান আল্লাহর নিকট এ প্রার্থণাই করি।