JustPaste.it

জীবন পাথেয়ঃ

 

রাসূল -এর কতিপয় বরকতময় অভ্যাস

=================================================

        এখন রাসূলে আকরাম ﷺ -এর হাসি-কৌতুকের কয়েকটি ঘটনা লিপিবদ্ধ কটা হচ্ছে। এ থেকে আমরা হাসি-কৌতুকের সঠিক ধারণা কায়েম করতে সক্ষম হব। এরপর শিশুদের সাথে রাসুলুল্লাহ্ ﷺ-এর স্নেহ ও মহব্বাত সম্পর্কেও আমরা কেবল এমন ঘটনা বর্ণনা করব, যা দ্বারা অনুমান করা যাবে যে, শিশুদের সাথে তাঁর মহব্বতের তরিকা কি ছিল।

 

        জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ্ ﷺ-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে একটি সওয়ারী প্রার্থনা করল। তিনি বললেনঃ তোমাকে সওয়ারীর জন্যে একটি উষ্ট্রীর বাচ্চা দিব। লােকটি একটু বিচলিত হল। কেননা, উষ্ট্রীর বাচ্চা দ্বারা সওয়ারীর কাজ চলবে কি করে? সে আরয করলঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি উষ্ট্রীর বাচ্চা দিয়ে কি করব? তিনি বললেনঃ “আরে মিয়া এমন কোন উট আছে কি, যা উষ্ট্রীর বাচ্চা নয়?” – (খাসায়েলেনবভী)

 

        একবার জনৈকা বৃদ্ধা খেদমতে উপস্থিত হয়ে আরয করলঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার জন্যে দোয়া করুন ; যাতে আল্লাহ্ তা'আলা আমাকে জান্নাত নসীব করেন। রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বললেনঃ “বৃদ্ধা নারী জান্নাতে যাবে না।” একথা বলে তিনি নামাযের জন্যে মসজিদে চলে গেলেন। এ দিকে বৃদ্ধা তাঁর কথা শুনে অঝোরে কান্নাঁকাটি শুরু করে দিল। নামাযান্তে রাসূলুল্লাহ্ ﷺ গৃহে এলে, হযরত আয়েশা (রাঃ) আরয করলেনঃ ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি যেই বলেছেন যে, বৃদ্ধা নারী জান্নাতে যাবে না, ওমনি এই বৃদ্ধা কান্নাঁকাটি শুরু করেছে। রাসূলুল্লাহ্ ﷺ বললেনঃ তাকে বলে দাওঃ “বৃদ্ধারা জান্নাতে যাবে : কিন্তু বৃদ্ধাবস্থায় নয়, যুবতী হয়ে।”–(খাসায়েলে -- নবভী)

 

        রাসূলে আকরাম ﷺ -এর একজন গ্রাম্য বন্ধু ছিল। তার নাম ছিল যাহের। সে প্রায়ই হাদিয়া প্রেরণ করত। একদিন বাজারে সে যখন কোন দ্রব্য বিক্রয় করছিল, ঘটনাক্রমে রাসূলুল্লাহ ﷺ তার দিকে আগমন করলেন। গ্রাম্য বন্ধুকে দেখে রসিকতার ছলে তিনি পিছন দিক থেকে গিয়ে তাকে কোলে তুলে নিলেন এবং বললেনঃ “এই গোলামটিকে কেউ কিনবে কি?” এরপর সে মাথা ঘুরিয়েই রাসুলুল্লাহ ﷺ -কে দেখতে পেল। যাহের বল্লোঃ “ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার মত গোলামকে যে কিনবে, ক্ষতিগ্রস্থ হবে।”–(খাসায়েলে-নবভী)

 

       শিশুদের সাথে রসিকতাঃ নবী করীম ﷺ শিশুদেরকে অত্যধিক স্নেহ করতেন, ভালবাসতেন, মাথায় হাত বুলাতেন এবং তাদের জন্যে দোয়া করতেন। শিশুরা তাঁর কাছে এলে তিনি তাদেরকে কোলে তুলে নিতেন এবং আদর করে খাওয়াতেন ৷ তিনি কখনও শিশুর সামনে জিভ বের করতেন। এতে শিশু আনন্দিত ও উৎফুল্ল হত। শায়িত অবস্থায় শিশুকে পদযুগলের উপর বসিয়ে নিতেন এবং কখনও বুকের উপর বসিয়ে নিতেন। একাধিক শিশু এক জায়গায় একত্রিত হলে তিনি তাদেরকে এক কাতারে দাঁড় করিয়ে দিতেন এবং নিজে উভয় বাহু প্রসারিত করে দূরে বসে বলতেন, তোমরা সকলে দৌড়ে আমার কাছে এস। যে সকলের আগে আমাকে স্পর্শ করবে, তাকে এটা দিব, ওটা দিব। অতঃপর শিশুরা দৌড়ে তাঁর কাছে আসত এবং কেউ তাঁর পেটের উপর পড়ে যেত এবং কেউ বুকের উপর। তিনি তাদেরকে বুকে জড়িয়ে ধরতেন এবং আদর করতেন।–(খাসায়েলে-নবভী)

 

        হুযুরে আকরাম ﷺ শিশুদের কাছ দিয়ে যাবার সময় নিজেই তাদেরকে “আস্সালামু-আলাইকুম” বলতেন, তাদের মাথায় হাত বুলাতেন, ছোট শিশুদেরকে কোলে তুলে নিতেন। রাসূলে করীম ﷺ কোন জননীকে তার শিশুকে আদর করতে দেখলে খুবই মুগ্ধ হতেন। শিশুদের প্রতি জননীদের স্নেহ ও মমতার বিষয় আলােচনা হলে তিনি বলতেনঃ “আল্লাহ তাআলা যাকে সন্তান দেন, সে যদি সন্তানকে মহব্বত করে এবং তার হক আদায় করে ; তবে আল্লাহ্ তা'আলা তাকে দোযখের অগ্নি থেকে হেফাযতে রাখবেন।”

 

        সফর থেকে প্রত্যাবর্তন করার সময় তিনি পথিমধ্যে যেসব শিশুর দেখা পেতেন, তাদেরকে সস্নেহে নিজের আগে অথবা পশ্চাতে সওয়ারীতে বসিয়ে নিতেন। শিশুরাও তাঁকে অত্যাধিক মহব্বাত করত। যেখানেই তাঁকে দেখতে পেত দৌড়ে কাছে আসত। তিনি এক এক জনকে কোলে তুলে নিতেন, আদর করতেন এবং খাবার দিতেন-কখনও খেজুর, কখনও টাটকা ফল এবং কখনও অন্য কিছু।–(খাসায়েলে-নবভী)

 

       কাব্যের প্রতি কৌতুহলঃ হযরত জাবের ইবনে সামুরা (রাঃ) বলেনঃ আমি রাসূলুল্লাহ্ ﷺ -এর খেদমতে একশতেরও অধিক মজলিসে বসেছি, যেগুলােতে সাহাবায়ে কেরাম কবিতা আবৃত্তি করতেন। এবং জাহেলী যুগের কিসসা-কাহিনী নকল করতেন। রাসূলুল্লাহ ﷺ তাদেরকে নিষেধ করতেন না-চুপচাপ শুনতেন ; বরং মাঝে মাঝে তাদের সাথে হাসিতে শরীক হতেন।–(শামায়েলে তিরমিযী)

 

*****