বিশ্বব্যাপী মুজাহিদদের তৎপরতা ও মুসলিম বিশ্ব সংবাদ
বার্মার বিভিন্ন এলাকায় বৌদ্ধ ও মুসলমানদের মধ্যে সংঘর্ষ
গত ১৫ই মার্চ ১৯৯৭ইং হতে বার্মার বিভিন্ন এলাকার বৌদ্ধ ও মুসলমানদের মধ্যে সংঘর্ষ অব্যাহত রয়েছে। এই দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে ধর্মীয় উত্তেজনার সূত্রপাত হয় মান্ডালের দুর্ঘটনার পর থেকে ।
এ সংঘর্ষের ফলে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানসহ কম পক্ষে ১৮টি মসজিদ ধ্বংস প্রাপ্ত হয়। প্রায় একশ’ দুস্কৃতকারী দ্বারা ঘটনা সংঘটিত হয় যদিও এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ আগাম সতকর্তা ঘোষণা করেছিল। বার্মার ৫টি বড় বড় শহরে রেঙ্গুন আরকানের আকিয়াব সহ ১৮ই মার্চ থেকে সন্ধ্যা আইন জারী রয়েছে।
সম্প্রতি কূটনৈতিক সূত্রের মাধ্যমে প্রাপ্ত খবর অনুসারে বার্মার রাজধানী রেঙ্গুনে প্রায় ৭টি মসজিদ ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে এবং পবিত্র কুরআনের শত শত কপি গত ২২শে মার্চ ভষ্মিভূত করা হয়। এ ঘটনার প্রেক্ষাপটে সম্পত্তি ও প্রতিষ্ঠান রক্ষা করতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে প্রশাসন। এমন কি কর্তৃপক্ষ তামেয়ু জামিয়া মসজিদ পাহারারত কিছু সংখ্যক মুসলমানকেও মসজিদ প্রাঙ্গণ ত্যাগ করতে. আদেশ দেয়, যাতে জামেয়া মস্জিদটি দু্স্কৃতকারী বৌদ্ধদের আক্রমণের শিকার হয়। গত ২৬শে মার্চ ১৯৯৭ বাঙ্গালী ওয়ার্ড জামেয়া মসজিদ কতিপয় বৌদ্ধ ভিক্ষুর নেতৃত্বাধীন দুষ্কৃতকারী দ্বারা আক্রান্ত হয় যারা পিস্তল এবং ওয়ারলেস বহন করছিল ।
এভাবে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা দ্রুতগতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বড় বড় শহর যেমন তাংজিয়, প্রুম, জ্যাগিয়ান, টানগু, মলমিন, মিকটিলনা, মিট কিয়ানা, পিয়েমনা প্রভৃতি শহর গুলোতেও : দাঙ্গার বিষবাষ্প বিস্ফোরণমুখী হয়ে রয়েছে।
বার্মায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ফলে এ পর্যন্ত ২৩টি মসজিদ ধ্বংস এবং মিলিয়ন ডলার মূল্যের সম্পত্তি নষ্ট হয়েছে।
বর্মী কর্তৃপক্ষ আরাকানে একটি পুরানো মসজিদ ধ্বংস করেছে
আরকানের কর্তৃপক্ষ পুরানো শহর মুরক ওয়ো’ ( যা বর্তমানে মরুহাঙ্গ নামে পরিচিত) শহরে একটি ঐতিহাসিক মসজিদে ভেঙ্গে ফেলার আদেশ জারী করেছে। মসজিদটি সানদিখান মসজিদ নামে পরিচিত, যেটি ৬০০ বছরের পুরানো এবং মুসলিম রাজার শাসনকালে নির্মিত হয়েছিল। বার্মার সামরিক জান্তা নির্লজ্জ ভাবে দাবী করে আসছে যে আরকানের ইতিহাসে কোন মুসলিম শাসক ছিল না। তাই ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন গুলো ধ্বংসের পরিকল্পনায় লিপ্ত হয়েছে, বিশেষ করে মুসলমানদের সাথে সম্পৃক্ত নিদর্শন গুলো। উল্লেখ্য যে বর্মী সামরিক জান্তা ১৯৯৭ সালকে বর্মী পর্যটন বছর হিসাবে ঘোষণা করেছে এবং অর্ধ মিলিয়ন পর্যটক বার্মা সফরে আসবে বলে আশা করছে। তাই.জান্তা মনে করে যে, পর্যটকরা আরকানে মুসলমানদের প্রভাবের কোন চিহ্ন না দেখাই শ্রেয়। এ উদ্দেশ্যে সানদিকান মসজিদ পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করা হয়।
প্রত্যাগত একজন রোহিঙ্গা শরনার্থী এম আই কর্তৃক নিহত
গত ১২ই ফেব্রুয়ারী ১৯৯৭ সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার ১৮ নং ইউনিট ১৮ বছরের এক যুবক আমির হোসেন পিতা গোলাম কবিরকে গ্রেফতার করে। উক্ত আমির হোসেন বুচিদং শহরের পশ্চিম ওয়ার্ডের বাসিন্দা, তাকে এম আই এর প্রধান কার্যালয়ে প্রেরণ করা হয় এবং কাওয়ার বিলে নাসাকার.. হেডকোয়াটারে নির্মমভাবে অত্যাচার করা হয়। বার বার জিজ্ঞাসা করা হয় যে, সে দেশদ্রোহী কোন রোহিঙ্গা সংগঠনের সাথে যোগাযোগ রাখে কিনা? পরবর্তীতে নাসাকা তাহাকে পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে গুলি করে হত্যা করে। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কর্তৃপক্ষ মৃত ব্যক্তির লাশ তার আত্মীয় স্বজনের কাছে হস্তান্তর করেনি। উল্লেখ্য যে, আমির হোসেন গত ১২ই জানুয়ারী ১৯৯৭ইং বাংলাদেশ থেকে বার্মায় প্রত্যাবর্তন করেছে মাত্র। সে বাংলাদেশে মোহচনী শরণার্থী শিবিরে বাস করতো ।
একইভাবে বাহারছরা গ্রামের মংডু শহরের জনৈক মাওলানাকে ৮ নং নাসাকা ব্যাটালিয়ন কমান্ডার হেয়ালী করে গ্রেফতার করেছে গত ৬ই ফেব্রুয়ারী ১৯৯৭। তাকে নাসাকা অফিসে স্বল্প সময়ের জন্য রাখা হয়েছিল কিন্তু পরবর্তী সময়ে অজ্ঞাত স্থানে হস্তান্তর করা হয়। এ পর্যন্ত তার ভাগ্যে কি ঘটেছে এবং কি অবস্থায় আছে তা জানা যায়নি। এলাকার জনসাধারণ যারা কাস্টডি থেকে মুসলিম নিখোঁজের অভিজ্ঞতায় পরিপক্ক, তাদের ধারণা বর্মী সৈন্যরা উক্ত মাওলানার জীবনের যবনিকাপাত ঘটিয়েছে।
২৩টি মসজিদ ধ্বংস
বার্মায় ধর্মীয় উত্তেজনা তীব্রতর হচ্ছে
বার্মার দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মানডালাতে সম্প্রতি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ফলে ডজনেরও বেশী সংখ্যক মুসলমান হতাহত হয়েছে এবং কোটি কোটি ডলার মূল্যের মুসলমানদের সম্পত্তি ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করা হয়েছে। স্লর্কের প্রশাসন যন্ত্রের তদারকীতে এ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার নেতৃত্ব দিয়েছে বার্মার উগ্রবাদী গোড়া ভিক্ষুরা।
স্লর্কের সদস্যরা গোপনে সন্যাসী বেশে গত ১৫ই মার্চ ১৯৯৭ইং এ মুসলিম বিরোধী দাঙ্গার সূত্রপাত করে এবং মুসলিম অধ্যুষিত জনবসতি এলাকাকে ভীত ও সন্ত্রস্ত এলাকায় পরিণত করে। তারা দুটি বিখ্যাত মসজিদে অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে ভস্মীভূত করে এবং অপর ২১টি ধ্বংস করে ফেলে। সম্প্রতি আরাকানের কর্তৃপক্ষ মরুহাং শহরের ৬০০ বছরের পুরানো অথচ ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ সানদিকান মসজিদটিও বিধ্বস্ত করে ফেলেছে। মরুহাং শহর আকিয়াব থেকে ৯০ কিঃ মিঃ দূরে অবস্থিত । "
এ অবস্থার প্রতিক্রিয়ায় রেঙ্গুনসহ দেশের বিভিন্ন বড় বড় শহরেও মুসলিম ও বৌদ্ধিষ্ঠ এর মধ্যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বিস্তার লাভ করছে। বার্মায় নিয়োজিত কূটনৈতিক সূত্রের মতে, রেঙ্গুনে ২২শে মার্চ ৫টি মসজিদ ধ্বংস করা হয়েছে এবং শত শত পবিত্র কুরআন শরীফ রাজপথে অগ্নিদগ্ধ করা হয়েছে! মুসলমানরা তাদের প্রাণপ্রিয় মসজিদ রক্ষার জন্য দিনরাত- মসজিদে অবস্থান করার মাধ্যমে পাহারারত রয়েছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ মসজিদ ত্যাগ করার নির্দেশ জারী করেছে এবং ঘর থেকে মুসলমানদেরকে বের না হবার আদেশ, প্রদান করেছে। বর্তমানে রেঙ্গুনের পরিস্থিতি খুবই নাজুক ও থমথমে এবং দাঙ্গা পুলিশ রাস্তায় টহলরত রয়েছে।
এটা ক্ষমতাসীন জান্তার নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপারে পরিণত হয়েছে যে, যখন জান্তা জনগণের কঠোর ক্রুদ্ধ প্রতিবাদের সম্মুখীন হয় তখন উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে মুসলিম বৌদ্ধিষ্ঠ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করে এবং স্লর্ক এই অভিপ্রায়ে দা্ঙ্গা বিস্তারের সহায়ক হয়ে নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে, যাতে জনগণের দীর্ঘদিনের সুপ্ত ক্ষোভ ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার মাধ্যমে স্বস্তি লাভ করতে পারে।