JustPaste.it

প্রশ্নোত্তর

হোসাইন মুহাঃ জাকির

 

    প্রশ্নঃ প্রিয় নবী (সাঃ) আরবের কোন এলাকা দখল করার সময় কালো পাগড়ি পরিধান করোছিলেন?

    উত্তরঃ জন্মভূমি মক্কা বিজয়ের প্রাক্কালে কালো পাগড়ি পরিধান করে তিনি বিজয়ী বেশে মাক্কায় প্রবেশ করেছিলেন।

মোঃ আবু বকর সিদ্দীক

    প্রশ্নঃ আমাদের এলাকার কিছু লোক ফেরাডন খাইয়ে পাখি শিকার করে থাকে। ফেরাডন খাওয়া মরণাপন্ন পাখিকে তারা যবেহ করে ভক্ষণ করে। এ পক্রিয়ায় পাখি শিকার করা ও খাওয়া কি জায়িয হবে?

    উত্তরঃ ‘ফেরাডন’ এক প্রকারের বিষাক্ত দ্রব্য। বিষাক্ত দ্রব্য দ্বারা কোন নিরীহ প্রাণী তো বটেই ক্ষতিকর কোন প্রাণীকে বধ করা ঠিক নয়। পাখি শিকার করা ও তা খাওয়ার বৈধ প্রক্রিয়া রয়েছে। প্রশ্নে উল্লেখিত প্রক্রিয়ায় শিকার করা পাখি খাওয়া বৈধ বটে, তবে শিকারের প্রক্রিয়া অবশ্যই অবৈধ হবে। তাছাড়া বিষ খাওয়া পাখি ভক্ষণ করা স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এবং ভীষণ অরুচীকর ব্যাপার। কাজেই তা ভক্ষণ করা একান্তভাবেই অনুচিত। উপরন্তু বাংলাদেশ সরকারের পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের এক সার্কুলার অনুযায়ী এভাবে পাখি শিকার করা দণ্ডনীয় অপরাধ। অতএব, যারা উপরোক্ত প্রক্রিয়ায় পাখি শিকার করছে, তারা শরীয়তের বিধান বর্তমান সরকার উভয়ের দৃষ্টিতে অপরাধী সাব্যস্ত হচ্ছে। সামাজিকভাবে এদের প্রতি চাপ সৃষ্টি করুন প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট সরকারী অফিসকে এ বিষয়ে অবিহিত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে উদ্যোগী হোন।

এস, এম, আলমগীর

    প্রশ্নঃ খাতনা করান সুন্নাত এবং ফরয তরক করা কবীরা ওনাহ। এ  প্রেক্ষিতে জানতে চাচ্ছি যে, কোনো বালিগ ব্যাক্তির পক্ষে খাতনা করান জায়িয হবে কি?

    উত্তরঃ খাতনা করান কেবল সুন্নাত নয়, শি’য়ারে ইসলামও বটে। যা সুসলমানের অন্যতম চিহ্ন ও ব্যতিক্রমী পরিচয়। বালেগ হওয়ার পূর্বে কারণবশতঃ কেউ খাতনা না করিয়ে থাকলে বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়ার পরে হলেও তাকে অবশ্যই খাতনা করাতে হবে। এ ক্ষেত্রে ফরয তরকের বিষয়টি শীথিলযোগ্য বিবেচিত হবে। কেননা, খাতনার সাথে পাক-পবিত্রতার বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জড়িত রয়েছে। দেখা যাবে, খাতনা না করানোর ফলে কোন অসতর্ক মুহূর্তে তার ফরয গোসলই অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। যার ফলে একাধারে বহু ওয়াক্ত নামায বাতিল হয়ে যাওয়ার আশংকা থাকে। তাই বহু গুরুত্বপূর্ণ কারণে প্রত্যেক মুসলিম পুরুষের জন্যে খাতনা অবশ্য পালনীয়, বিষয় হিসাবে নির্ধারিত করা হয়েছে।

মোঃ নুরুল আলম (মহিন)

    প্রশ্নঃ জামায়াতে ইসলামীর এক সদস্যের সাথে দাড়ি রাখার বিষয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ওহুদ যুদ্ধের ঘোষণা হলে কাফিররা বললো, এবার মুসলমানদেরকে দাড়ি ধরে মাঠে মাঠে হেছড়ে টানব। এ কথা জানার পর হযুর (সাঃ) নাকি সাহাবীদেরকে বললেন, তোমরা সকলে দাড়ি কেটে ফেল। দাড়ি কামান জায়েয হওয়ার পক্ষে এটাই নাকি বড় দলীল। লোকটির এই বক্তব্য কি সঠিক?

    উত্তরঃ এ ধরনের কথা নির্জলা মিথ্যাচার ছাড়া কিছুই নয়। লোককে দেখিয়ে দিতে বলুন, সে কোন কিতাবে এই হাদীস পেয়েছে? মুনাফিক ছাড়া কোন মুসলমান এই ধরনের মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে হারামকে হালাল করার ধৃষ্টতা দেখাতে পারে বলে আমার বিশ্বাস হয় না।

হাসনা খানম (মিনি)

    প্রশ্নঃ এরোমেটিক কসমেটিকস্ কোম্পানী এরোমেটিক নামে এক হালাল সাবান বাজারজাত করেছে। তারা বলছে, এটিই একমাত্র হালাল সাবান। তারা এতে শূকরজাত কোন বস্তু ব্যবহার করছে না। আর হিন্দুদেরও এ সাবানটি ব্যবহারে সমস্যা নেই। এতে গরুজাত কোন দ্রব্যও ব্যবহৃত হয় না। বাজারের অন্যসব সাবান তৈরীতে নাকি শূকরসহ বিভিন্ন প্রানীর চর্বি ব্যবহার করা হয়। এরোমেটিকের এই বিজ্ঞাপন পড়ে আমি আঁতকে উঠোছি তবে কি এতদিন আমরা হারাম সাবান ব্যবহার করোছি?

    উত্তরঃ বিষয়টা সর্ব মহলে ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। এরোমেটিক কোম্পানীর দাবী যে সত্য, সে কথা তারা দৃঢ়তার সাথে প্রমাণ করতে পেরেছে। এরোমেটিক সাবানের বিজ্ঞাপন টিভিতে বন্ধ করে দেয়ার প্রেক্ষিতে তারা আদালতে মামলা করেছিল, এই বলে যে, কেন তাদের বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেয় হলো। আদালত জানতে চেয়েছিল যে, একমাত্র এরোমেটিক সাবান যে হালাল সাবান এবং অন্য সব সাবান যে হারাম তার প্রমান কি? আদালতকে তারা সন্তোষজনক জবাব দিয়ে তাদের দাবীর সত্যতা প্রমাণ করেছে এবং আদালত তাদের পক্ষে রায় দিয়ে পুনরায় তাদের বিজ্ঞাপন প্রচারের নির্দেশ দিয়েছে।

    প্রসঙ্গে আমারও প্রশ্ন, তবে সরকার ও বিচারকমণ্ডলী বাজার থেকে হারাম সাবানগুলো তুলে নিতে বলছেন না কেন? সব কিছু জেনে-শুনে এখনো তারা দশ কোটি মুসলমানকে শুকরের চর্বি দ্বারা তৈরী হারাম সাবান ব্যবহারে বাধ্য করছেন কেন? আমরা মনে করি, সরকারের এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিত এবং জনদাবির পক্ষে কঠিন পদক্ষেপ হণ করা জরুরী। না হয় হারাম বস্তু ব্যবহারে জনগণকে বাধ্য করার জন্য সরকারকেই দায়ী থাকতে হবে। একে ভিত্তি করে ধীরে ধীরে জনরোষও বৃদ্ধি পেতে পারে। বৃটিশ শাসনের সময় ভারতে যৌথ সেনাদের মাঝে এই শুকরের চর্বি কেন্দ্র করেই কিন্তু সংঘটিত হয়েছিল সিপাহী যুদ্ধ। তবে এ দেশেও কি এখন হারাম ও হালাল সাবানকে কেন্দ্র করে আরেকটি যুদ্ধের দিকে জাতিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে! সরকার যদি দেশ থেকে হারাম সাবান তৈরী, বিতরণ, বিপণন বন্ধ না করে, তবে ভয়াবহ কোন দুর্ঘটনার জন্য সরকারকেই দায়ী থাকতে হবে। আশা করি সরকার সতর্ক হবে এবং যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে দ্রুত এগিয়ে আসবে। গণঅসন্তোষ দ্রুত বিস্ফোরণন্মুখ হচ্ছে! সরকার সাবধান!

কাজী মোঃ আমানতুল্লাহ

    প্রশ্নঃ একটি গরু সাতভাগে কুরবানী দেওয়া হবে। মোট শরীক তিনজন। একজনের দু’অংশ কুরবানীর নিয়াতে, অপর ভাগীর দু’অংশ আকিকার নিয়াতে। বাকী তৃতীয় অংশীদারের তিনভাগ ওয়ালীমার নিয়াতে। এই অবস্থায় কুরবানী হবে কি?

    উত্তরঃ নিছক গোস্ত খাওয়ার উদ্দেশ্যে কুরবানী শুদ্ধ হয় না। এইরূপ নিয়াতে কুরবানীর পশুতে কোন ভাগীদার হলে অন্যান্য সকল ভাগীদারের কুরবানীও পণ্ড হয়ে যাবে। কারো কুরবানীই গ্রহণযোগ্য হবে না। যেহেতু ওয়ালীমার উদ্দেশ্যে কেবল খাওয়া-দাওয়া-ভোজন করা, সেহেতু কেউ ওয়ালীমার উদ্দেশ্যে কুরবানীর পশুতে ভাগীদার হলে কারো কুরবানী সহীহ হবে না। তাই কুরবানীর পশুতে ওয়ালীমার নিয়াতে শরীক হওয়া যাবে না।

মোঃ আঃ ওয়াদুদ

     প্রশ্নঃ ফজর নামাযের আযানের পরে আমাদের দেশের অনেক মসাজিদে মাইকে বলা হয় যে, জামাতের ১০-১২ মিনিট বাকী আছে, এরূপ বলা কি ঠিক? অনেকে বলে, এতে আযানের গুরুত্ব কমে হায়। আসলে কি তাই?

     উত্তরঃ হ্যাঁ, আসলেই তাই। নামাযের জামাতের জন্য আযান দেওয়ার পরে দ্বিতীয়বার ডাকার কোন নিয়ম শরীয়াতে সমর্থিত নয়। যাদের মনে নামাযের গুরুত্ব আছে, যারা পাবন্দির সাথে জামাতে নামায আদায় করেন, তারা আযানের সাথে সাথেই মসজিদে হাজির হয়ে যান। যারা গাফিল তারা পিছনে থাকবে সর্বক্ষেত্রে এমনটা হয়ে থাকে। বহু মসজিদে ফজর নামায সহ অন্যান্য নামাযের আযানের পরও দ্বিতীয়বার ডাকা হয়ে থাকে। দুঃখজনক বিষয় হলো, নামাযের আযান হবে, আবার বেচা-কেনাও চলবে, দোকান-পাটও খোলা থাকবে তা চলতে পারে না। আসলে যা চলতে পারে না, তা সবই চলছে। যা হওয়া উচিত নয়, তা সবই হচ্ছে এবং যে দেশের নিয়ম হলো অনিয়ম, সে দেশে আযানের পরেও যে বাংলা আযান দিতে হবে বা হচ্ছে, এতে আর আশ্চর্যের কি আছে!

    মুসলিম দেশের প্রশাসনের দায়িত্ব হলো, আযানের পরে বেচা-কেনা ও লেন-দেন বন্ধ রাখা। প্রিয় নবী (সাঃ)-এর সময় থেকে নিয়ে আরব দেশে এ নিয়ম এখনো চালু রয়েছে। নামাযের সময় বাইরে ঘোরা-ফেরা করলে, দোকান খোলা রাখলে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। আমাদের দেশেও যদি এ নিয়ম চালু করা হয়, দেখা যাবে আযানের আগেই মুসল্লিরা মসজিদে আসতে শুরু করেছে। মূল সমস্যা হলো, এ দেশের সরকার মনে করে, ধর্ম একটি ব্যক্তিগত বিষয়, যার ইচ্ছা পালন করবে, যার ইচ্ছা নামায আদায় করবে, যার ইচ্ছা জামাতের সময় মদপান করবে, নিষিদ্ধ পল্লীতে ফূর্তি করবে, সব একই সময় চলবে-এই হলো যে দেশের নৈতিক ও সামাজিক অবস্থা, সে দেশের সরকার যে পুলিশ বাহিনী দ্বারা জামাত তরককারীদের তাড়িয়ে মসজিদে উপস্থিত করাবে, কিভাবে সে আশা করা যেতে পারে? যে দেশের রাষ্ট্রযন্ত্র ও সরকার কাঠামো পরিচালিত হচ্ছে আল্লাহর নিয়ম ও ইচ্ছার পরিপন্থী বিধান দিয়ে, সে দেশে এখনো যে মানুষ নামায পড়ে, মসজিদে আযান হচ্ছে, মাদ্রাসা চলছে, সে তো অনেক বড় কথা।

    ইসলামের বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সরকার কাঠামোয় জড়িত রয়েছে। তাই ইসলামের প্রতিটি বিষয় আল্লাহর ইচ্ছা ও রাসূলের সুন্নাত অনুযায়ী পালন করতে হলে ইসলামী সরকার প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। এবার সময় এসেছে, ডাক পড়েছে। আসুন দ্বীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জিহাদে নেমে পড়ে আল্লাহর নিকট কৃত লেন-দেন-চুক্তি চুকিয়ে ফেলি। নতুবা অভিযোগ করে লাভ হবে না, শুধু ফতুয়া কোন কাজ দিবে না, মানুষ সঠিক ধারণা পাবে না, অনিয়ম চলবে, ভুল ব্যাখ্যা থাকবে, কাদিয়ানীরা মুসলমান পরিচয়ে ঈমান নষ্ট করতে আরো তৎপর হবে। মসজিদের পাশেই গণিকালয় চলবে। ইসলাম, আল্লাহ, রাসূল, কুরআন, হাদীস নিয়ে কাপালিকেরা কটাক্ষ বিদ্রুপ করবে, টুপি দাড়ি ওয়ালাদেরকে সাম্প্রদায়িক ও কামুক বলবে। তারা নিজেদেরকে মুসলিম হিসাবে দাবী করবে। তারাই আবার বলবে, এ যুগে ইসলাম অচল হয়ে গেছে। আল্লাহর পথের মুজাহিদ কাফেলাকে ওরা সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করবে, পর্দাকে ওরা নারী অবরোধ বলবে, বসনিয়ায় গণ-ধর্ষণের সংবাদে নারীবাদী দুশ্চরিত্রেরা পুলকিত হবে, কাবুলে ধর্ষণ চলেনি বলে ওরা কষ্ট পাচ্ছে। ওরা কষ্ট পাচ্ছে এ কারণেও যে, কেন পর্দা বাধ্যতামূল্যক করে বেশ্যাবৃত্তি এবং ধর্ষণ ও পীড়ন গ্রহণের পথ বন্ধ করে দেয়া হলো।

    এই যে দেশের হাল-হাকিকাত, যে দেশে ইসলাম-বিরোধীতা প্রতি মুহূর্তের ব্যাপার, সে দেশে যে নিয়মের নামে অনিয়ম নিয়ম হয়ে চলবে, তাতে আশ্চর্য হওয়ার কি আছে। এতে আমি মোটেও অবাক নই। অবাক হই তখন যখন দেখি বিবেকবান মানুষেরা অনিয়মের প্রতিবাদ না করে আয়েশী বিছানায় এখনো ঘুমিয়ে আছে। এই ঘুমের পাড়া জাগবে কবে? গাছের গোড়ায় পানি না ঢেলে আগায় পানি দিলে লাভ কি হবে। সত্যের বিজয় ঘটাতে হবে। ইসলামকে প্রতিষ্ঠিত করতে হরে। তবেই, কেবল তবেই নিয়ম অনুযায়ী সবকিছু চলবে। নতুবা মানুষ প্রতিদিন বিভ্রান্ত হবে, আকিদা বিশ্বাস ক্রমেই নষ্ট হতে থাকবে। অতএব জেগে উঠুন, কোটি জীবনের বিনিময়ে দ্বীনকে বিজয়ী করুন তা না করে শুধু অভিযোগ করে লাভ কি?

ফরজেহ আহমাদ চৌধুরী

    প্রশ্নঃ তারাবীহ নামাযের গুরুত্ব বেশী না ফরয নামাযের কাজা আদায় করার গুরুত্ব বেশী? এবং সুন্নাতে মুয়াক্কাদা নামায আদায় না করলে কি পরিমাণ পাপ হবে? বিস্তারিত জানালে খুশী হব।

    উত্তরঃ নামায কাযা করা মানে তার সবটুকু গুরুত্ব শেষ করে দেয়া। কাযা নামায আদায় করার নিয়ম থাকলেও তা আর কখনো ওয়াক্ত অনুযায়ী আদায় করার মত ওজনদার হয় না। তাছাড়া কাযা নামায যে কোন সময় আদায় করা যায়। তাই কাযা আদায় করতে যেয়ে তারাবীহ ছেড়ে দেয়া ঠিক হবে না। ধারাবাহিকভাবে যখন যে নামাযের সময় উপস্থিত হয়, তখন তাই আদায় করার নিয়ম। এর ব্যতিক্রম করা যাবে না।

    সুন্নাতে মুয়াক্কাদা মানে যে সুন্নাত অবশ্যই আদায় করতে হয়। আবশ্যকীয় কোন ইবাদাত ত্যাগ করা যে জঘন্য অপরাধ, তাতে কোন সন্দেহ আছে কি? তবে এর পাপের পরিমাণ সম্পর্কিত কোন হাদীস এখনো আমার নযরে পড়েনি। তাই এর পাপের পরিমাণ কত তা জানাতে পারলাম না বলে দুঃখিত।

    দ্বিতীয় আর এক প্রশ্নে আপনি জানতে চেয়েছেন যে, ‘কাবা’ ঘরের কোন দরজা আছে কিনা।

    হ্যাঁ, ‘কাবা’ ঘরের একটি দরোজা আছে। সেই দরোজা দিয়ে কাবার ভিতরে প্রবেশ করার ব্যবস্থা রয়েছে। মহাসম্মানিত ব্যক্তিগণ সে দরোজা দিয়ে ঢুকে কাবার ভিতরে নামায পড়ার সুযোগ পেয়ে থাকে।

মোঃ আজিজুল গনি (৮)

    প্রশ্নঃ তারাবীহ নামাযের মত আর কোন সুন্নাত নামায জামায়াতে আদায় করার অনুমাতি আছে কি? বেতের নামায ফরয নামাযের সাথে ওয়াজিব হয়েছে না পরে এবং কখন তা ওয়াজিব হয়েছে?

উত্তরঃ হানাফী মাযহাব মতে তারাবীহ বাদে অন্য কোন সুন্নাত নামায জামায়াতে আদায় করা জায়েয নয়। ফরয নামাযের পরে তবে কখন ওয়াজিব হয়েছে, সুনির্দিষ্ট সে দিন-ক্ষণ আপনাকে জানাতে পারলাম না বলে দুঃখিত।

ডাঃ মোঃ মোশাররফ হোসেন সরকার

      প্রশ্নঃ জনৈকা মাহিলা তার স্বামীর সাথে সব সময় খারাপ ব্যবহার করে থাকে। স্ত্রীর দুর্ব্যহারে স্বামীর অন্তর ক্ষতবিক্ষত। মানসম্মানের ভয়ে স্বামী সব যন্ত্রণা নীরবে সয়ে যাচ্ছে স্ত্রীর দুর্ব্যহার থেকে রক্ষার জন্য স্বামী সব সময় তার সাথে ভাল ব্যবহার করার চেষ্টা করে আসছে। তবুও স্ত্রীর মন এতটুকু গলছেনা, সে এখনো বেপরোয়া। স্বামীকে যখন তখন যা তা বলে ফেলে। একদিন খেতে বসে তর্ক শুরু হলে স্ত্রী রোগে উঠে স্বামীকে বলে, ভাত স্পর্শ করে বলছি, আজ থেকে তোমার দেয়া কাপড় ও পোষাক ব্যবহার করা আমার জন্য হারাম থাকবে। তারা স্বামী-স্ত্রী হিসাবে এখনো বসবাস করছে। অতএব, আমি জানতে চাচ্ছি, এই অবস্থায় স্বামী তার স্ত্রীকে কাপড়-চোপড় দিতে পারবে কি?

    উত্তরঃ যে সকল মহিলা স্বামীর বাধ্য নয়, স্বামীও তাকে খোর-পোষ দিতে বাধ্য নয়। তবে আপনার প্রশ্ন পড়ে অনুমিত হচ্ছে উল্লেখিত লোকটির তার স্ত্রীর প্রতি হয়ত কোন কারণে দুর্বলতা রয়েছে। তার দুর্বলতার সুযোগে স্ত্রীর স্পর্ধা দিন দিন বাড়ছে। স্বামী-স্ত্রীর এইরূপ সম্পর্ক অনভিপ্রেত। স্বামী বেচারার ধৈর্যের বাধ ছিড়ে গেলে যে কোন সময় তাদের বৈবাহিক সম্পর্কের ইতি ঘটতে পারে। স্ত্রীকে বুঝতে হবে যে, স্বামীকে সম্মান ও আনুগত্য করা তার প্রতি ফরয। সে প্রতিদিন তার স্বামীর সাথে দুর্ব্যবহারের মাধ্যমে জঘন্য পাপ করে যাচ্ছে। বুঝে শুনে যাকে স্বামী হিসাবে গ্রহণ করতে পেরেছে, এখন তার আনুগত্যের ব্যাপারে সমস্যা কিসের? আমরা আশা করব, তারা উভয়ে অত্যন্ত হৃদ্যতার সাথে একে অপরকে গ্রহণ করে নিবে। পরস্পরে ইসলামের সীমানা মেনে চলবে। নতুবা ইহ-পর উভয় জীবনে অশান্তি ভোগ করতে হবে। আল্লাহ সকলকে সুমতি দান করুন। শান্তিতে সংসার করার তওফিক দিন।

    তবে আসল কথা হচ্ছে, মহিলার কসম কার্যকরী হয়ে গেছে। এখন তাকে স্বামীর দেয়া কাপড় বা যে কোন পোষাক ব্যবহার করার পূর্বে কসম ভেঙ্গে কাফফারা আদায় করে নিতে হবে। নতুবা স্বামীর দেয়া যে কোন ধরনের পোষাক তার জন্য ব্যবহার করা জায়িয হবে না।

মোসাম্মাৎ মন্নুজান নেসা

    প্রশ্নঃ আমার জন্মের সপ্তমদিনে আমার পিতা-মাতা আমার নাম নিধার্রণ ও আকীকা করেছিলেন কিনা জানি না। আমার তিন চার বছর বয়সকালে আমার পিতা মারা যান। মায়ের সাথে মামার বাড়ীতে আমি বড় হয়েছি। আমার মাও মারা গেছেন বেশ কিছুদিন আগে। আমার আকীকা করা হয়েছিল কি না তারা কেউ আমাকে তা জানাননি। এ বিষয়ে আমি সংশয়ের মধ্যে আছি। এই সংশয় দূর করার নিমিতে এখন আমি আমার আকীকা আদায় করতে চাচ্ছি। আর একটি বিষয় জানতে চাচ্ছি, আকীকার গোশত দ্বারা বিয়ে বাড়ীর বর যাত্রীদের আপ্যায়িত করা যাবে কি?

    উত্তরঃ সন্তান জন্মের সপ্তম দিনে সন্তানের নাম রাখা ও তার আকীকা করা সুন্নাত এবং তা পালন করা পিতার দায়িত্ব। এ দায়িত্ব কখনো সন্তানের উপর বর্তায় না। উপরন্তু সপ্তম দিন অতিক্রম হওয়ার পর এটি আর সুন্নাত থাকেনা, নফল বিষয় হয়ে দাড়ায় এবং ইচ্ছামত তা যে কোন সময় আদায় করা যায়। এতে সামান্যতম বাধ্যবাধকতা নেই। আর আপনার নামতো নিদিষ্ট হয়ে গেছে। এবং কারো নির্দিষ্ট নাম কেবল তখনই পরিবর্তন করা উচিত। নতুবা বয়সকালে নাম পাল্টানো ঠিক নয়। পাশ্চাত্য সমাজ ছাড়া ইসলামী সংস্কৃতিতে বার বার নাম পরিবর্তন করার নিয়ম অনুমোদিত নয়।

    তবে ‘মন্নুজান নেছা’ নামটি অর্থবোধক নয় বলে অনুমিত হয়। তাই এটি পাল্টিয়ে সুন্দর অর্থবোধক আরবী নাম রাখা উচিত এবং এটাই ইসলামী সংস্কৃতির দাবী।

    আকীকার গোশত দ্বারা সব ধরনের মেহমানদারী করা যাবে। তবে গোশত খাওয়ার নিয়তে আকীকা দিলে তা শুদ্ধ হবে না। আকিকা দিতে হবে আল্লাহর ওয়াস্তে। অতঃপর এর গোশত আপন-পর সকলে খাওয়া যাবে। নিয়াতে গোলমাল থাকলে সবকিছু পণ্ড হয়ে যাবে।

মোঃ মোহসিন আলী

    প্রশ্নঃ এক ইমাম সাহেব সব সময় ফরজ নামায শেষ করার পর পিছনে না এসে সামান্য ডান দিকে সরে বাকী নামায আদায় করতেন। যার প্রেক্ষিতে এক মাওলানা সাহেব তাকে ডান দিকে না সরে বাম দিকে সরে নামায পড়তে বলেন। মাওলানা সাহেব কি ঠিক বলেছেন?

    উত্তরঃ ইমামের জন্য ফরয নামায বাদে এবং যে কোন মুসল্লির পক্ষে নামাযের জন্য মসজিদের কোন স্থানকে নির্দিষ্ট করে নেয়া ঠিক নয়। ফিকাহবিদগণ একে মাকরুহ বলেছেন। তাই ইমাম সাহেবগণ জামায়াত শেষে ডান বামে বা পিছনে সরেও নামায আদায় করতে পারেন এবং ইমামতীর স্থানে থেকেও বাকী নামায আদায় করতে পারেন। এতে কোন দোষ নেই। দোষ হলো স্থান পরিবর্তন না করে সব সময় এক স্থানে নামায পড়ার নিয়ম করে নেয়া। কেননা এটা দৃষ্টিকটু এবং পবিত্র মসজিদের বিশেষ কোন স্থানকে অধিক গুরুত্ব দেয়ার নামান্তর। অতএব এমন নিয়ম ও অভ্যাস থেকে বিরত থাকা একান্তই ভালো।

মোঃ মঈনুদ্দীন

    প্রশ্নঃ বিশেষ এক শ্রেণীর আলিম ও তাদের অনুসারীগণ বলে থাকেন, প্রিয় নবী (সাঃ) মিরাজ গমনের সময় নাকি আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ)-এর সাহায্য নিয়েছিলেন। অর্থাৎ আব্দুল কাদের জিলানীর কাঁধে চড়ে নাকি তিনি মেরাজ পৌঁছেন। উপরোক্ত কথা কি সঠিক?

    উত্তরঃ আব্দুল কাদের জিলানী (রহঃ) একজন বিশিষ্ট আলিম ও আল্লাহওয়ালা বুযুর্গ ব্যক্তি ছিলেন। তিনি কোন ফেরেশতা বা অতিমানবও ছিলেন না। যারা ফেরেশতা বা অতিমানব নন, তারা ঊর্দ্ধর জগতের কোন খবর রাখেন না। তারা জন্মের আগে ও মৃত্যুর পরে কাউকে কোন প্রকার সাহায্য করতে পারেন না। একথা আমাদের আকিদা ও বিশ্বাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। যারা এ আকিদায় বিশ্বাস করে না, তাদের ঈমানে গোলমাল আছে। আব্দুল কাদের জিলানীকে নিয়েও এই ধরনের গোলমেলে বিশ্বাসের কিছু লোক কয়েক শতাব্দি থেকে তাকে অতিমানব প্রমাণের ব্যর্থ চেষ্টা করে আসছে। যা সত্যই গোমরাহী ও স্পষ্ট কুফরী।

    মিথ্যাচারেরও একটা সীমা আছে। যারা বলে, আব্দুল কাদের জিলানীর কাঁধে চড়ে প্রিয় নবী মিরাজে গিয়েছিলেন, তারা যেন তাদের দাবীর সপক্ষে একটি হাদীস বা কোন সাহাবীর বক্তব্য তুলে ধরেন। বিশ্বাস করি, এই ভন্ডরা তা পারবে না। কেননা হাদীসে ও সাহাবীদের কথায় এর কোন উল্লেখ নেই। অথচ নবী জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ কথা হাদীসে উল্লেখ থাকবেনা এ কেমন কথা! এবার আন্দাজ করুন, কত জঘন্য মিথ্যাবাদী এরা। এদের সংসর্গ থেকে দূরে থাকুন।

মোঃ নাসিরুদ্দীন আকন্দ

    প্রশ্নঃ জনৈক আলিম ব্যক্তি আমাদের মসাজিদে ইমামতী করছেন। কিন্তু তিনি অত্যত আপত্তিকর আকীদা ও আমলের দাবীদার। তার আকীদা ও জঘন্য আমলের পরিপ্রেক্ষিতে দেশের ৩ টি বৃহত্তম দারুল ইফতা থেকে পরিষ্কার সিদ্ধান্ত আমাদেরকে জানান হয়েছে যে, উক্ত ইমামের পিছনে নামাযের এক্তেদা জায়েয নয়। কিন্তু তিনি ইমামতী ত্যাগ করতে রাজী নন। বরং তিনি বলছেন, আমার পিছনে নামায পড়া যদি সহীহ না হয়, তবে সে জন্য আল্লাহর নিকট আমি কৈফিয়ত দিব, আপনাদের নামায হওয়া না হওয়ার দায়িত্ব আমার। আল্লাহর সাথে এ ব্যাপারে আমি বুঝাপড়া করব। ইমাম সাহেবের এই কথার পর এখন তার পিছনে নামায আদায় করা জায়েয হবে কি?

    উত্তরঃ ইমাম সাহেবের এই ধরনের কথা আল্লাহর সাথে ধৃষ্টতার সামিল। যার আকীদা-বিশ্বাসে গণ্ডগোল, সে কেয়ামাতের দিন নিজেই তো বামপন্থীদের দলভুক্ত থাকবে। আর বামপন্থীরা নিশ্চিত জাহান্নামে যাবে। অতএব যে জাহান্নামের ইন্ধন হবে, সে অন্যের ব্যাপারে আল্লাহর সাথে কী বুঝাপড়া করবে? দেশের তিনটি বৃহত্তম দারুল ইফতার ফতুয়ার পরও জিজ্ঞেস করছেন, এর পিছনে নামায সহীহ হবে কি? যতদিন তার ভ্রান্ত আকীদা ও আমল সংশোধিত না হবে, ততদিন তার পিছনে এক্তেদা করলে নামায বাতিল হয়ে যাবে। আর যে ইমামের পিছনে নামায বাতিল হয়ে যাবে, তাকে এখনো ইমামতীর দায়িত্বে বহাল রাখা জায়েয হচ্ছে কি? দেরী না করে আজই ইমাম পরিবর্তন করুন। নামাযের মত সবোত্তম ইবাদত আর কতদিন নষ্ট করতে থাকবেন?

মোঃ নজরুল ইসলাম,

    প্রশ্নঃ কোন এক লোক বিবাহ করেছে। বিবাহ করার পর তার একটি সান্তান হয়েছে। এর কিছুদিন পর লোকটি বিদেশে চলে যায়। আজ দশ-বার বছর হয়ে গেছে তার কোন খবর নেই। ঐ লোকের স্ত্রীর পিতা-মাতা মনে করেছে যে, তার মেয়ের স্বামী বিদেশে যুদ্ধের সময় মারা গেছে। পরে তারা তাকে নিশ্চিত মৃত মনে করে তার ছোট ভাইয়ের সাথে মহিলাকে বিয়ে দিয়ে দেয়। কিছুদিন পর এ সংসারেও একটি সন্তান জন্মগ্রহণ করে। কিন্তু এর কিছুদিন পর ঐ মাহিলার নিখোঁজ স্বামী বিদেশ থেকে বাড়ী ফিরে আসে। প্রশ্ন হলো, এখন এই মহিলা কার স্ত্রী হবে। সন্তান দু’টির ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত কি? বিস্তারিত জানালে অত্যন্ত উপকৃত হব।

    উত্তরঃ এ প্রসংগে প্রয়াশেঃ ইমাম মালেক (রহ) এর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হচ্ছে। লাগাতার চার বছর পর্যন্ত কোন স্বামী নিখোঁজ থাকলে স্ত্রী ইদ্দত পালন শেষে নতুন স্বামী গ্রহণ করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে ফকীহগণ আদালতের বিচারকের ফয়সালা শর্ত করেছেন। আদালত বিচার-বিশ্লেষণ, গভীর চিন্তা-ভাবনা ও ব্যাপক যুক্তিতর্কের পরে নিরুদ্দেশ ব্যক্তিকে মৃত ঘোষণা না করা পর্যন্ত সে নতুন স্বামী গ্রহণ করতে পারবে না। এ ক্ষেত্রে আদালতের সিদ্ধান্ত ব্যতীত ইচ্ছাকৃত কিছুই করা জায়িয হবে না।

    আর নিরুদ্দেশ ব্যক্তিকে মৃত ঘোষনার পর তার স্ত্রীর যদি অন্যত্র বিয়ে হয়ে যায়, অতপর সে যদি সহীহ সালামতে ফিরে আসে, তবে তার স্ত্রীর দ্বিতীয় বিবাহ বাতিল হয়ে যাবে। এবং এই মহিলাকে ইদ্দত শেষ করে প্রথম স্বামীর ঘরে ফিরে আসতে হবে। অবশ্য দ্বিতীয় স্বামীর সন্তান দ্বিতীয় স্বামীই পাবে।

আবিদুর রহমান

    প্রশ্নঃ জনৈক ব্যাক্তি পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করে। কিন্তু মাকে ধমক দেয়, তার রুচি বিরুদ্ধ কিছু ঘটলে মার সাথে খারাপ বাবহার করে, কখনও ধমকের সুরে মাকে তার সম্মুখ থেকে চলে যাওয়ার জন্য হুকুম দেয়। লোকটি মিথ্যা কথা বলে। বড়দের সাথে খারাপ ব্যবহার তো করেই উপরন্ত সংশ্রিষ্ট পরিবারভুক্ত লোকদের সাথে একাধারে কথাবার্তা বর্জন করে চলে। এই লোকের ইমামতীতে নামায আদায় করা জায়িয হবে কি?

    উত্তরঃ মায়ের সাথে খারাপ ব্যাবহার সহ একাধিক কবীরা গুনাহে লিপ্ত বলে লোকটি ফাসিকের পর্যায়ভুক্ত হিসাবে অনুমিত হচ্ছে। এই ধরনের জঘন্য চরিত্রের লোকদের ইমামতী মাকরুহে তাহরিমী। অর্থাৎ তাদের পিছনে এক্তেদা করলে সে নামায মাকরুহ তাহরিমীর সাথে আদায় হবে। তাই এসব লোক ইমামতীর অযোগ্য। এদের পিছনে এক্তেদা করা মোটেই উচিত নয়। এদেরকে ইমামতীর সুযোগ দেয়াও অন্যায়।

এইচ এম সালেহউদ্দীন (জাহাঙ্গির)

    প্রশ্নঃ আমার ভাই একটি স্বর্ণের চেইন ব্যবহার করে। আমি তাকে, বললাম, ভাইয়া, পুরুষদের জন্য স্বর্ণ ব্যবহার করা হারাম। তিনি আমাকে বললেন, মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত। পৃথিবীর সব কিছু মানুষের খেদমত ও উপকারে নিয়োজিত। অতএব স্বর্ণ ব্যবহার করা হারাম হবে কেন? ভাইয়া আমার বড়। তার সাথে তর্ক করার ইচ্ছা আমার নেই। তাই ভাইয়াকে বুঝিয়ে বলার দায়িত্ব আপনার কাঁধে সোপর্দ করলাম।

    উত্তরঃ শুধু স্বর্ণ নয়, রেশমী পোষাক ব্যবহারও পুরুষের জন্য হারাম করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হলো, তাদের অতি উত্তম নৈতিক প্রশিক্ষণ দান। কেননা, ইসলাম হলো জিহাদ ও শক্তি প্রদর্শনের দ্বীন। তাই সর্ব প্রকার নৈতিক দুর্বলতা, উচ্ছৃংখলতা ও চারিত্রিক পতন থেকে পৌরুষকে রক্ষা করা ইসলামের লক্ষ্য। আল্লাহ তাআলা পুরুষকে এক বিশেষ ধরনের অংগ সৌষ্ঠব ও গঠন কাঠামো দান করেছেন এবং তা নারী থেকে ভিন্নতর বটে। কাজেই পুরুষদের উচিত নয় সুন্দরী নারীদের সংগে প্রতিযোগিতার সাথে মূল্যবান অলংকারাদি, চাকচিক্যময় জাঁকজমকপূর্ণ পোষাক ব্যবহার করা।

    ইসলাম বিলাসিতা, আরাম-আয়েশ, জাঁকজমকের মুকাবিলায় লড়াই করেছে। পুরুষদের জন্য স্বর্ণালংকার ও রেশমী পোশাক হারাম করা এ সংগ্রামেরই একটি বিশেষ অংশ। কেননা, বিলাসিতা ও আরাম-আয়েশ কুরআনে জাতীয় ধ্বংস ও সামগ্রিক বিপর্যয়ের কারণ বলে উল্লেখিত হয়েছে। যা সামষ্টিক জুলুম ও শোষণের কারণ হয়ে দাঁড়ায় বটে। কেননা মুষ্টিমেয় সংখ্যক লোক বিপুল সংখ্যক লোককে এবং ধনি শ্রেণী দরিদ্রদের শোষণ করেই বিলাসিতার পাহাড়সম উপকরণ জমা করে এবং সীমাহীন আরাম-আয়েশ উপভোগ করে। আর এ শ্রেণীর লোকেরাই চিরকাল যে কোন সামাজিক সংশোধন ও সামষ্টিক কল্যাণ প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলে। এ পর্যায়ে পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত হয়েছেঃ

    “যখন আমি কোন জনপদকে ধ্বংস করার ইচ্ছা করি তখন তার অবস্থাপন্ন লোকদেরকে উদ্ধুদ্ধ করি অতঃপর তারা পাপাচারে মেতে উঠে। তখন সে জনগোষ্টীর উপর আদেশ অবধারিত হয়ে যায়। অতঃপর আমি তাকে উঠিয়ে আছাড় দেই।” (বনী-ইসরাঈলঃ ১৬)

    পবিত্র কুরআনের অপর এক স্থানে বলা হয়েছেঃ

    “আমি যে-কোন জনপদে কোন সতর্ককারী (নবী) পাঠিয়েছি, তার বিত্তশালী লোকেরা বলেছে, তোমরা যে বার্তাসহ প্রেরিত হয়েছ আমরা তা প্রত্যাখ্যান করি।” (সূরা সাবাঃ-৩৪)

    কুরআনের এ ভাবধারা ও দৃষ্টিকোণের সাথে সামঞ্জস্য রক্ষা করেই নবী করীম (সাঃ) যাবতীয় বিলাসিতা ও আরাম আয়েশের সামগ্রী মুসলিম জীবনে হারাম করে দিয়েছেন। তাই দেখতে পাই, একদিকে পুরুষের জন্য যেমন স্বর্ণালংকার ও রেশমী কাপড় হারাম করা হয়েছে, অপর দিকে ঠিক তেমনি পুরুষ-নারী উভয়ের জন্য হারাম করে দিয়েছেন যাবতীয় স্বর্ণ ও রৌপ্যের তৈজসপত্রাদি।

    ছাড়া এ ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক কারণও নিহিত রয়েছে। কেননা, স্বর্ণ নগদ সম্পদ হিসেবে আন্তর্জাতিক ব্যবস্থাপনায় সংরক্ষিত মূলধনরূপে গণ্য। কাজেই তা পুরুষদের পক্ষে অলংকার বা পুরুষ নারী নির্বিশেষে কারো পক্ষে পাত্র হিসেবে ব্যবহৃত হওয়া কোন ক্রমেই বাঞ্ছনীয় নয়।

    পর্যায়ে কারো মনে প্রশ্ন হতে পারে, তবে তা স্বর্ণালংকার মহিলাদের জন্যও হারাম করা হলো না কেন? এখন সে কথাই বলছি। মহিলাদের জন্য স্বর্ণালংকার ও রেশমী পোষাক ব্যবহার হারাম না করে মহিলাদের বিশেষ দিকগুলোর প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। নারী-প্রকৃতি স্বভাবতই সৌন্দর্যপ্রবণ। রূপচর্চা, প্রসাধন ও অলংকারাদি ব্যবহারের প্রতি একটা স্বাভাবিক দাবী রয়েছে নারী চরিত্রে। তাই প্রিয় নবী (সাঃ) বলেছেন, ‘আমার উম্মতের নারীদের জন্য স্বর্ণ ও রেশম হালাল করা হয়েছে। আর পুরুষদের জন্য তা হারাম করা হয়েছে'।

    এবার আপনার ভাইয়াকে বুঝিয়ে বলুন অথবা তাকে এ উত্তরটি পড়তে দিন। আশা করি তার বালখিল্যতা দূর হবে এরং এ বিষয়ে তার মনে সঠিক ধারণা সৃষ্টি হবে। আমাকে যে দায়িত্ব আপনি অর্পন করেছিলেন, সাধ্যমত আমি তা পালন করার চেষ্টা করেছি। বাকী আল্লাহই ভালো জানেন।

জয়নাব খাতুন (তন্নী)

    প্রশ্নঃ হায়েযে ভিজা কাপড় রশিতে শুকাতে দেয়া হয়োছিল। শুকানোর পর কাপড়টি তুলে নেয়া হয়েছে; এখন ঐ রশিতে পাক কাপড় শুকাতে দিলে সে কাপড় নাপাক হবে কি?

    উত্তরঃ অপবিত্র কাপড়ের অপবিত্র বস্তু যদি রশিটিতে লেগে থাকে এবং যদি অপর কোন পবিত্র কাপড়ে লাগে, তবে তো সে কাপড় অপবিত্র হবেই। বাকী কথা হবে, কতটুকু জায়গায় নাপাকি লেগেছে তার উপর ভিত্তি করে। আপনি তা উল্লেখ করেননি। অতএব আমি আর কি বলতে পারি?

তবে মনে রাখবেন, এ ধরনের গলীয নাপাকী যদি এক দেরহাম পরিমাণ কাপড়ে লাগে, তবে তা পরিধান করে নামায পড়লে নামায আদায় হয়ে যাবে বটে, তবে মাকরূহ হবে। আর এক দেরহামের বেশী পরিমাণ নাপাকী লাগলে সে কাপড় পরে নামায পড়া আদৌ জায়েয হবে না।

সাবিনা ইয়াসমিন (সুমা)

    প্রশ্নঃ কোন এক পরহেজগার ব্যক্তি বিবাহ করে এবং তার দু’টি সন্তান হয়। একটি ছেলে একটি মেয়ে। কয়েক বছর পর তার স্ত্রীর মৃত্যু ঘটে। অতঃপর সে দ্বিতীয় বিবাহ করে। দ্বিতীয় স্ত্রীর পক্ষের ছেলে-মেয়েরা শরীয়াতের বিধান অনুযায়ী চলে না, যা ইচ্ছা করে থাকে। এ পার্যায়ে ঐ লোক যদি তার প্রথম পক্ষের স্ত্রীর ছেলে-মেয়েদের খোঁজ-খবর না নেয়-তাহলে কি সে আল্লাহ্‌র নিকট অপরাধী সাব্যস্ত হবে?

    উত্তরঃ ছেলে-মেয়ে বয়ঃপ্রাপ্ত ও কর্মক্ষম না হওয়া পর্যন্ত তাদের সকল ব্যয়ভার বহন করা পিতা বা অভিভাবকের উপর বর্তাবে। পিতা-মাতা সন্তানকে দ্বীনি শিক্ষা দান করতে এবং উত্তম চরিত্রমাধূর্যে মন্ডিত করে তুলতে আপ্রাণ চেষ্টা করবে। শত চেষ্টার পরও যদি সন্তানকে সুপথে চালাতে পিতা অপরাগ হয়, তবে আর সে প্রাপ্তবয়স্ক অবাধ্য সন্তানকে দেখা শুনার কোন দায়িত্ব পিতার উপর বর্তায় না। আপনার প্রশ্নে উল্লেখিত বিষয়টি যদি এমন হয়ে থাকে, তবে পিতা অবশ্যই কোন অপরাধ করছেন না। উপরন্তু বলতে হবে তিনি উচিত কাজ করছেন।

কানিজ ফাতেমা (রিতা)

     প্রশ্নঃ আমরা জানি, আত্মীয় সম্পর্ক ছিন্নকারী ব্যক্তি বেহেশতে প্রবেশাধিকার পাবে না। কিন্তু যদি কোন নিকটাত্মীয় এমন হয় যে, সে নামায পড়ে না, বেপর্দায় টিভি ভিসিআর দেখে, তার সাথে সম্পর্ক  ছিন্ন করা কি জায়েয হবে?

    উত্তরঃ প্রথমে তাকে বুঝাবার চেষ্টা করতে হবে। শতবার বুঝাতে হবে। তারপরও যদি সে শরীয়াত বিরোধী কাজ ত্যাগ না করে, তখন তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা জায়েয হবে। তবে এ ক্ষেত্রে সম্পর্ক ছিন্ন না করে ইসলামের সৌন্দর্য তার সামনে তুলে ধরলে বেশী কাজ হবে। আপনার মেহনতের ফলে আপনার ঐ আত্মীয়ের হেদায়াত নসীব হতে পারে।

উত্তর প্রদান গ্রন্থনাঃ  মনযূর আহমাদ