JustPaste.it

UM-3-Tader Janno Kono Ovinondon Nei

um3.jpg

 

তাদের জন্য কোনো অভিনন্দন নেই!

 

(উম্মাতুন ওয়াহিদাহ ম্যাগাজিনের ১ম সংখ্যা থেকে অনূদিত)

 

 

সালিম আশ-শরীফ

 

 

 

 

 

 

 

. শ্রদ্ধার স্তম্ভগুলো ভেঙ্গে ফেলা, সীমালঙ্ঘন করা, আহলে ইলমদের ব্যাপারে অসৌজন্যমূলক কথা বলা, তাঁদেরকে কারারুদ্ধ করা, ফাঁসির ইঙ্গিত দেওয়া, যা গোপন রাখার বিষয় তা নির্লজ্জভাবে প্রকাশ করে গর্ববোধ করা, অশ্লীলতা ও প্রকাশ্য পাপাচার ছড়ানো ইসলামের তীর্থভূমি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভূমিতে ইসলামের বিরুদ্ধে পরিষ্কার যুদ্ধ- আর এসবই  ইহুদী-খৃষ্টানদের দুই বড় কর্মচারি ইবনে সালমান ও ইবনে যায়েদের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে।

এটা ইসলামের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধের ধারাবাহিক হামলাসমূহের মধ্যে একটি হামলা। ইসলামের রক্তক্ষরণ করা হচ্ছে,তার পক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তোলার মতো কোনো নেতৃত্ব নেই। কোনো দূর্গ বা ঘাঁটিও নেই। যুদ্ধ পরিচালিত হচ্ছে ভেতর থেকেই। ওই সকল শাসকশ্রেণীর মাধ্যমে, যাদেরকে বৃটেন ও আমেরিকার সহযোগীতায় ইহুদীরা ক্ষমতায় বসিয়েছে। আমাদের নিকট বার্তা স্পষ্ট হয়ে গেছে। যার কিছুটা ইঙ্গিত বহন করে সম্প্রতি ক্যাথলিক পোপ ও অর্থোডক্স আম্পা’র হারামাইনের দেশ ভ্রমণের ঘটনা।

তাই ক্রুসেডারদের সামরিক হামলা অথবা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কূটনৈতিক হামলা বন্ধ হয়নি, আর তা কখনো বন্ধ হবেও না।

. একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে মুসলিম উম্মাহর গুটিকয়েক ঈমানদার যুবক আমেরিকার হৃদপিণ্ডে গিয়ে হামলা করেছিল। এটি ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী একটি পাল্টা গেরিলা হামলা। এ গেরিলা হামলার উদ্দেশ্য ছিল, ইতিহাসের চলমান ধাপে সারা বিশ্বে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধের পতাকা বহনকারী আমেরিকার প্রভাব শেষ করে দেওয়া।

আর অচিরেই আমেরিকা তার পূর্ববর্তীদের সাথে যুক্ত হবে।  যারা বাতিলের প্রসার ঘটাতে এবং হককে দাফন করতে চায় তাদের ক্ষেত্রে  এটাই আল্লাহ তায়ালার নীতি।

এই মোবারক হামলার ফল এই হল যে, বিশ্বের আত্মমর্যাদাশীল লোকগুলো আমেরিকার বিরুদ্ধে দুঃসাহসী হয়ে উঠল। এমনকি এক যুবক তো আমেরিকার প্রেসিডেন্টের উপর জুতা নিক্ষেপ করল। এর চেয়ে আরো গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল, বিশ্বব্যাপী আমেরিকার কর্তৃত্ব চর্চার সাম্রাজ্যবাদী নীতি মুখ থুবড়ে পড়ল। একটি আন্তর্জাতিক নীতির পতন ঘটে আরেকটি আন্তর্জাতিক নীতির অভ্যুদয় হল, যে আন্তর্জাতিক নীতিতে মুসলিমদেরই অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।

. জনগণের অনুভূতি নিয়ে খেলা হলশাসকশ্রেণীর নিজেদের ইচ্ছামত আইন প্রণয়ন ও নীতি চালু করার জন্য বহুল প্রচলিত একটি কৌশল। একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশক প্রলম্বিত হওয়ার সাথে সাথে অনেক পিলে চমকানো তথ্য বেরিয়ে এসেছে। ইহুদী গোষ্ঠী, সৌদ পরিবার ও যায়েদ পরিবার সম্মিলিতভাবে ওই সকল বিপ্লবগুলোকে মাটিতে দাফন করার ঘোষণা দিল, যেগুলো শত্রুদের এজেন্টদের বিরুদ্ধে এবং তাদের স্বেচ্ছাচারী  শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে জনগণের মাঝে গড়ে উঠেছিল।         

প্রকৃতপক্ষে, রিয়াদের যুবরাজ বিন সালমানের উপর কতগুলো দায়িত্ব আরোপিত হয়েছে। আর তার বক্তব্য একথার প্রতি ইঙ্গিত করে যে, সে এই দায়িত্ব গ্রহণও করে নিয়েছে। এবং সে তা কার্যকর করার জন্য সর্বসাধ্য চেষ্টা করবে। তার কাঁধেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, পবিত্র ভূখণ্ডে  অশ্লীলতা প্রসার করার এবং ইসলাম ও মুসলিমদের সম্মানহানি করার।

. বিন সালমান ও ইবনে যায়েদ হারামাইনের দেশে খৃষ্টীয় নৈশভোজের অনুমতি প্রদান ক্রেছে। আর এটি হল ইসলামের জন্মভূমিতে খৃষ্টধর্মের প্রতি আহ্বান, খৃষ্টবাদকে বৈধতা প্রদান এবং তাকে গ্রহণ করে নেওয়ার এক অহংকারী প্রতিযোগিতা। এটি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মুসলিম ও বিশ্বের অন্যান্য কাফেরদেরকে খৃষ্টবাদে প্রবেশ করার প্রতি উৎসাহ দান এবং খৃষ্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের ইসলামে প্রবেশে বাঁধা প্রদানের একটি অংশ।  সেও তার পূর্বসূরীদের ন্যায় ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে এবং যেকোনো ঈমানদার মানুষকে শেষ করে দেওয়ার যুদ্ধে প্রকাশ্যে অংশগ্রহণ করছে।

বিশ্ব কুফরী শক্তি অপেক্ষা করতে করতে বিরক্ত হয়ে গেছে।এখন তারা মুহাম্মদ ﷺ এর ভূমিতে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক যাত্রা করতে আগ্রহী।

. কোনো ধরণের বিনয়-নম্রতা ব্যতিত কা’বার ছাদে আরোহন করা ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্য নষ্ট করার পদক্ষেপ ব্যতিত কিছুই নয়। এ তো সেই নির্বোধ, যে ইতর ও পাপিষ্ঠদেরকে আপ্যায়ন করেছে, তাদের আনুষ্ঠানিক মর্যাদা দিয়েছে। সর্বপ্রকার নির্লজ্জতার সাথে পৃথিবীর বুকে ইসলাম ধর্মের সবচেয়ে পবিত্রতম প্রতীকের উপর বসেছে উঁচু আসনে বসে সরাসরি কাজ-কর্ম পরিদর্শন করার অজুাহতে।

হে নিকৃষ্ট পাপিষ্ঠ বিন সালমান! কা’বা হল ইবাদতের জন্য। এটা কাজ পরিদর্শনের উঁচু আসন নয়। তাই তুমি যদি তোমার কাজের মাধ্যমে একথা বুঝাতে চাও যে: “তোমাদের কেবলা আমার পায়ের নীচে”, তাহলে তুমি তোমার কাজের পরিণতির জন্য অপেক্ষা করো !

হে আল্লাহ! এই ঘরের মর্যাদা, সম্মান ও ভাবগাম্ভীর্য আরো বৃদ্ধি করে দিন। হে আল্লাহ! যে তার অসম্মান করেছে বা তার মর্যাদা খাটো করেছে, আপনি তাকে অসম্মানিত করুন। 

. জনগণের অনুভূতি নিয়ে খেলার আরেকটি বিষয় হল: পতনোন্মুখ গর্তের কিনারায় কুফরের ভীত নির্মাণের জন্য অতীত ও বর্তমানের ব্যাপারে মিথ্যাচার করা। নানা বিকৃত কল্প-কাহিনীর উৎস ও সীমালঙ্ঘনের কেন্দ্রবিন্দু গীর্জা কোনো দিনও শান্তির বার্তা বহনকারী ছিল না। কখনোই তা মানবতার জন্য আলোকবর্তিকা ছিল না। আর এই সীমালঙ্ঘনে তাদের সাথে অংশীদার ছিল বৌদ্ধগোষ্ঠীর ধর্মীয় নেতা ও তার অনুসারীরাও।

যদি এমনটাই হয়, তাহলে সারা বিশ্বব্যাপী মানবসভ্যতার সাথে যে লাইসেন্সকৃত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, সেখানে কি কোনো মানবীয় ভ্রাতৃত্ববোধ ছিল না? সেখানে কি ভালবাসার ধর্ম ছিল না?

আসলে, এটা আল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ। বিশ্বব্যাপী ধর্মীয় ও গোষ্ঠীগত কারণে যে সকল হত্যা ও উচ্ছেদ হয়েছে, তখন কোথায় ছিল পূর্ব-পশ্চিমের পোপরা? কোথায় ছিল দালায়লামা? আফগানিস্তান, ফিলিস্তিন, মায়ানমার, পূর্ব তুর্কিস্তান, ইয়েমেন, ইরাক, বসনিয়া, পূর্ব তিমুর, ভারত, লিবিয়া, মালি, সিরিয়া ইত্যাদি দেশে গনহত্যা তারা কি দেখছে না ? এ সকল যুদ্ধের টার্গেট একটাই। তা হল, ইসলাম ও সর্বাস্থানের মুসলিমগণ।

ইবনে যায়েদ যখন লিবিয়ান বিপ্লবী ও মুজাহিদদের বিরুদ্ধে হাফতারকে সমর্থন করছিল, অর্থায়ন করছিল  এবং মালির মুসলিমদের বিরুদ্ধে ফ্রান্সের যুদ্ধে সহযোগীতার জন্য তাদের সেনাবাহিনীর সাথে অংশগ্রহণ করছিল, তখন কোথায় ছিল মানবাধিকার?

ইবনে যায়েদ ও তার নিকৃষ্ট সঙ্গী ইবনে সালমান ইয়েমেনের ভূখণ্ড ও তার জনগণের সাথে যা করেছে, তখন তাদের মানবাধিকার কোথায় গিয়েছিল? যুদ্ধ, রোগ-ব্যাধি ও ক্ষুধার মাধ্যমে ধ্বংস করে দেওয়ার উদ্দেশ্যে বিগত শতাব্দীর দীর্ঘসময় ধরে তাদেরকে যে লাঞ্ছিত করা হয়েছিল, তা কি তাদের জন্য যথেষ্ট হয়নি?

আসলে এ সবকিছুই আদনে আবইয়ান থেকে ১২ হাজার সৈন্যবিশিষ্ট বাহিনীর আবির্ভাব ঠেকানোর জন্য। তবে তারা অচিরেই বের হবে  ইনশা আল্লাহ। সুনির্দিষ্ট সময়ে তোমাদেরকে তোমাদের শাসন থেকে অবশ্যই অপসারণ করা হবে। আমাদের মনে এব্যাপারে একচুলও সন্দেহ নেই।

. ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধের উত্তপ্ত প্রতিযোগীতা চলছে। আসলে এগুলো বিভিন্ন ধাপ পূর্ণ করার অংশ। রিয়াদ অর্থোডক্স আম্পাকে আপ্যায়ন করে। আবুধাবি ক্যাথলিককে আপ্যায়ন করে। আর উপসাগরীয় অন্য রাষ্ট্রগুলো গীর্জার সমাবেশ ঘটায়। কাতারের দোহায় উপসাগরীয় অঞ্চলগুলোর সর্ববৃহৎ গীর্জা বিদ্যমান। জাযীরাতুল আরবের আকাশে ৩০ এরও অধিক গীর্জার ঘন্টা ধ্বনি বাজে। আর শায়খুল আযহারের উপস্থিতি আসন্ন আগমনকে স্বাগতম জানানো এবং ইসলামের ভবিষ্যৎ নিয়ে দর কষাকষির ইঙ্গিত বহন করে। তারা একটি লক্ষ্যের দিকেই দ্রুত পদক্ষেপে আগাচ্ছে। তা হল একটি নতুন ধর্ম। যার পতাকাতলে সকল ধর্মের বিশ্বাসগুলো একত্রিত হয়ে যাবে। সব ধর্মের সাথে আপোস করাই হল তাদের কথিত ভালবাসার ধর্ম। যেটা হল মানসুর হাল্লাজের ধর্ম। লালনশাহর ধর্ম। মুহিউদ্দীন ইবনুল আরাবী ও তার শীষ্য জালালুদ্দীন রূমীর ধর্ম।

তারা বিভিন্ন পদ্ধতিতে জনগণের আবেগ-অনুভূতি নিয়ে খেলা করার মাধ্যমে এটা বাস্তবায়ন করতে চায়। আর প্রত্যেককেই যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, সে সেটা স্বতস্ফুর্তভাবে পালন করছে।

আজ গীর্জার প্রধানদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছেতো, আগামীকাল দালায়লামা ও মন্দিরের প্রধানদেরকে আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে। তারপর ইহুদী ধর্মগুরুদেরকে আমন্ত্রণ জানানো তো একেবারে সহজ। আর ইহুদী নেতৃবৃন্দকে আমন্ত্রণ জানানো তো এমন বিষয় হয়ে গেছে, যা উপসাগরীয় অঞ্চলের প্রতিটি রাষ্ট্রই প্রকাশ্যে বা গোপনে করছে।

. জনগণের আবেগ-অনুভূতি নিয়ে খেলা করার জন্য তাদের আরেকটি পদ্ধতি হল, বিভিন্ন প্রকার শারীরিক কসরত আমদানি করার মাধ্যমে জনগণকে উদাসীন করে ফেলা। যেমন ফুটবল প্রতিযোগীতাকে জিহাদ ও বিজয়াভিযানের বিকল্প হিসাবে কাজে লাগানো। ফুটবলকে, মুসলিম উম্মাহর উপর ক্রুসেডার-ইহুদী-হিন্দু-বৌদ্ধ গোষ্ঠীর পক্ষ থেকে ধারাবাহিক নির্যাতন, আঘাত ও হামলার শিকার হওয়ার কারণে উম্মাহর হৃদয়ে যে ক্রোধ ও প্রতিশোধস্পৃহা জেগে উঠে, তা থেকে অন্তরকে পরিস্কার করার মাধ্যম বানানো।

আরেকটি পদ্ধতি হল, বিনোদনের নামে যিনা ও পাপাচারের আড্ডাখানা নির্মাণ করা এবং নাইটক্লাব প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে সকল প্রকার কুপ্রবৃত্তির দরজা খুলে দেওয়া!!

প্রশ্ন হল, এ সকল নাইটক্লাবগুলো কি কখনো বৈধ নৈশালাপের পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থেকেছে, নাকি এগুলো প্রকাশ্য নাফরমানীর ব্যবস্থা, যাকে সরকারী শক্তির মাধ্যমে নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে?

বাহরাইন কি উপসাগরীয় দেশসমূহের এমন বেশ্যালয়ে পরিণত হয়নি, যার একার নাফরমানী ও আল্লাহ-বিরোধী কর্মকাণ্ড-ই গোটা আরব অঞ্চলের ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট?

কুয়েত কি তার স্বাধীনতার আগে ও পরে পশ্চিমায়ন ও পশ্চিমা সভ্যতা প্রচার-প্রসারের বড় বড় পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করেনি?

তাদের প্রত্যেকটি দেশেই কি আমেরিকা ও বৃটেনের সামরিক ঘাটিসমূহ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে নেই? যেন প্রথমত: ক্রুসেডাররা অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক স্বার্থগুলো রক্ষা করতে পারে।এবংতারপর তাদের পোষ্য শাসকশ্রেণীকে আরব জনগণ থেকে রক্ষা করতে পারে?

বর্তমানে উপসাগরীয় অঞ্চলের সিংহভাগ শাসক এবং তাদের পূর্বসূরীরাই কি ক্রুশের প্রতীক বহন করছে না?

আমেরিকান বাহিনী তালেবানদের হাতে মার খেয়ে এবং কাবুলের ব্যাপারে বিরক্ত হয়ে চলে যাবার পর কাবুলের শাসকের যে পরিণতি হবে, আরবের এ সকল শাসকদের ভবিষ্যৎ পরিণতিও হুবহু তাই হবে। বরং জাযীরাতুল আরবের ভিতরে-বাইরে মুসলিমদের সাথে অতি নিকৃষ্ট আচরণের কারণে তাদের অবস্থা আরো শোচনীয় হবে।

. কতিপয় আহলে ইলম এখনও মুসলিম দেশগুলোর শাসকশ্রেণী এবং খৃষ্টানদের বড় বড় নেতা ও শাসকদের বক্তব্যসমূহের উপর আস্থা রাখে। তারা এর দ্বারা প্রতারিত হচ্ছে এবং এগুলোকে সত্য বলে মেনে নিচ্ছে। অথচ এ সকল শাসকরা হল শত্রুর পরিকল্পনা বাস্তবায়ন কমিটির একেকজন সক্রিয় সদস্য। কারণ শত্রুরা অতি উচ্চস্তরের ধোঁকাবাজ। আর কূট-কৌশলের ময়দান যুদ্ধের ময়দানের চেয়েও ব্যাপক। তারা মানবাধিকারের কথা শোনায় একটি মনস্তাত্ত্বিক পরিবেশ তৈরীর জন্য। মিথ্যা আশ্বাস দেয়ার জন্য। নমনীয়তা ও সমঝোতার প্রতি আগ্রহী করে তোলার জন্য এবং সকলকে সমান করে দেওয়ার জন্য। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তাদের এই আগ্রহের কোনো লাগাম নেই। বরং তারা পরিপূর্ণভাবে চেষ্টা করে, উম্মাহকে তাদের দ্বীন ও আত্মরক্ষা থেকে মুক্ত করার জন্য।

শক্তিশালী শত্রুর সাথে আন্তরিকতাপূর্ণ সমাধানের আলোচনা ধ্বংস ছাড়া কিছুই নিয়ে আসে না। কোনো জ্ঞানীই বিশ্বাস করবে না যে, ক্রুসেডাররা তাদের মেনে নেওয়া শর্তগুলো পূরণ করবে এবং সন্ধিকৃত সীমা কিছুতেই লঙ্ঘন করবে না। আসলে শক্তিশালীরা কোনো লাল রেখা চিনে না। তারা কোনো বিকল্প গ্রহণ করে না। তারা অচিরেই তাদের কোমলতার শক্তি দিয়ে অথবা প্রয়োজনের সময় কঠোরতার শক্তি দিয়ে তোমাদের দরজায় প্রবেশ করবেই এবং তাদের পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করবেই। পরিশেষে তোমাদের নিঃশর্ত আনুগত্য ব্যতিত কিছুই গ্রহণ করবে না। তখন সেই জায়নবাদী ও ক্রুসেড হামলার মুখে ইসলাম ব্যতিত কিছুই দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না। একারণেই সারা বিশ্বের কুফর ও নাস্তিক্যবাদের সকল শাখাগুলো ইসলামের বিরুদ্ধে একত্রিত হয়েছে। রাসূল ﷺ বলেন:

«يُوشِكُ أَنْ تَدَاعَى عَلَيْكُمُ الْأُمَمُ كَمَا تَدَاعَى الْقَوْمُ إِلَى قَصْعَتِهِمْ» قَالَ: قِيلَ: مِنْ قِلَّةٍ؟ قَالَ: «لَا وَلَكِنَّهُ غُثَاءٌ كَغُثَاءِ السَّيْلِ يُجْعَلُ الْوَهَنُ فِي قُلُوبِكُمْ، وَيُنْزَعُ الرُّعْبُ مِنْ قُلُوبِ عَدُوِّكُمْ لِحُبِّكُمُ الدُّنْيَا وَكَرَاهِيَتِكُمُ الْمَوْتَ»

“শীঘ্রই এমন হবে যে, সমস্ত জাতিগোষ্ঠী একে অপরকে তোমাদের বিরুদ্ধে আহ্বান করবে, যেমনিভাবে আহারকারীরা একে অপরকে খাবার পাত্রের দিকে আহ্বান করতে থাকে। বলা হল: এমনটা কি সেসময় আমাদের সংখ্যা স্বল্পতার কারণে হবে? তিনিবললেন: ‘না, বরং তোমরা তখন অনেক থাকবে। কিন্তু তোমরা স্রোতে ভেসে যাওয়া লতাগুল্মের ন্যায় হবে। শত্রুরঅন্তরথেকেতোমাদের ভয় উঠিয়ে নেওয়া হবে এবং তোমাদের অন্তরে ‘ওয়াহান’ ঢেলে দেওয়া হবে। সাহাবীরা (রা.) বললেন: ওয়াহন কী? রাসূলুল্লাহﷺবললেন: দুনিয়ার ভালবাসা ও মৃত্যুর ভয় [1]।”

১০. প্রতিটি জাতিরই একটি সীমানা আছে এবং তার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি নিরাপত্তাবলয় আছে। তেমনিভাবে বাইতুল্লাহরও একটি সীমানা ও নিরাপত্তাবলয় আছে। আল্লাহর ঘরের সীমানা ও নিরাপত্তাবলয় হল জাযীরাতুল আরব। তাই, সেখানে দুই ধর্ম একত্রিত হতে পারে না। জাযীরাতুল আরব, উত্তরে ইরাকের পল্লী এলাকা ও শামের মরূ অঞ্চল থেকে শুরু করে দক্ষিণে আরব সাগর পর্যন্ত। অপরদিকে পূর্বে পারস্য ও ওমান উপসাগর থেকে শুরু করে পশ্চিমে লোহিত সাগর পর্যন্ত।

যে দেশ জিহাদের মাধ্যমে বিজিত হয়, সেখানে গীর্জা বানানো হারাম হওয়ার ব্যাপারে সকল আহলে ইলম একমত। তাহলে, রাসূলুল্লাল্লাহ ﷺ এর দেশের ব্যাপারে আপনি কী বলবেন?  সেখানে কোনো কুফরের কর্মীকে আমন্ত্রণ করা নিষেধ। সেখানে কোনো গীর্জা মন্দির বানানো নিষেধ। কিন্তু উপসাগরীয় দেশগুলোর শাসকরা শুধু কুফরের কর্মীদেরকে আমন্ত্রণ করে এবং মুসলিমদের ভূমি তাদেরকে প্রদান করেই ক্ষান্ত হয়নি, বরং তারা নিজেরাই মুসলিমদের সম্পদ দিয়ে গীর্জা ও মন্দির বানিয়ে দিচ্ছে।

যায়েদ পরিবার তাদের আকিদা অনুযায়ী এবং তাদের নবী ইবনুল আরবীর অনুসরণ করত: গত বছরের শুরুর দিকে আবুধাবিতে হিন্দুদের জন্য মন্দির করে দিয়েছে। কয়েকদিন পূর্বে ভ্যাটিকান সিটির পোপকে আমন্ত্রণ জানিয়েছে এবং মুসলিমদের ভূমিতে তাকে নৈশভোজ পার্টি করার সুযোগ দিয়েছে।

আহলে ইলমদের নিকট প্রশ্ন: যে  হিন্দু ও খৃষ্টানদেরকে মন্দির ও গীর্জা বানাতে জমি হাদিয়া প্রদান করে, তার হুকুম কী? অথবা যে মুসলিমদের দেশে, রাসূলুল্লাহ ﷺ এর ভূমিতে নিজে গীর্জা, মন্দির বানায় বা এতে অংশগ্রহণ করে, তার হুকুম কী? আর যে এমনটা করে, তার ক্ষেত্রে কর্তব্য কী?

বাইতুল্লাহর নিরাপত্তাবলয়ের আরেকটি সীমা হল লোহিত সাগর। তাই, আজ মুসলিম শাসকদের কর্তব্য ছিল শত্রুদের জাহাজগুলো সেখান দিয়ে পারাপার হতে বাঁধা দেওয়া। যেন তার দুই তীরের মাঝে মুসলিমদের জাহাজগুলো ব্যতিত অন্য কোনো জাহাজ আসা-যাওয়া করতে না পারে বাইতুল্লাহর সংরক্ষণের জন্য এবং তার নিরাপত্তা রক্ষার জন্য। যেন কাফেরদের জাহাজগুলো উপকূলের নিকটবর্তী হয়ে সীমান্তবর্তী এলাকাসমূহের তথ্য সংগ্রহ করে ফেলতে না পারে।

কিন্তু আজ মুসলিমদের শাসক কারা? আর কিভাবে তারা মুসলিমদের উপর চেপে বসেছে? কারা তাদেরকে সাহায্য করছে ও তাদের পরিকল্পনা তৈরী করে দিচ্ছে? আর তাদেরকে সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে ‘স্যান্ডহার্স্ট’ এর মত সামরিক একাডেমিগুলোর ভূমিকা কী?

এ প্রশ্নগুলো প্রতিটি মুসলিমের করা উচিত। এগুলো নিয়ে সুক্ষ্মভাবে চিন্তা উচিত এবং আল্লাহর পথে জিহাদকারী একনিষ্ঠ আহলে ইলমদের নিকট  উত্তর জিজ্ঞেস করা উচিত। সরকারি উলামা সংগঠনের নিকট নয়।

১১. জর্দানের বাদশা প্যারিসের একটি মিছিলে অংশগ্রহণ করেছিল।আর এই মিছিল রাসূলুল্লাহর ﷺ কটুক্তিকারীদের সমর্থনে এবং তাদের উপর হামলকারীদের বিরুদ্ধে সংঘটিত হয়েছিল! মুসলিম দেশগুলোর শাসকগোষ্ঠীর অধঃপতনের পরিমাণ এবং শয়তান তাদের কোন পর্যন্ত পৌঁছেছে, তা উপলব্ধি করার জন্য আমরা এই মিছিলের দৃশ্যটি দেখতে পারি।এটা এমন একটি দৃশ্য, যেখানে রামাল্লার শাসক ও ইহুদী শাসক এক কাতারে কাতারবদ্ধ হয়েছে।

শরীফ ও সায়ীদ নামক দুই বীর মুজাহিদ আল্লাহর দ্বীনের নিরাপত্তার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। তাই তাঁরা পশ্চিমা বিশ্ব কর্তৃক ইসলামের সর্ববৃহৎ সম্মানের প্রতীকের অবমাননা সহ্য করতে পারলেন না। তাঁরা উক্ত পত্রিকা(চার্লি হেব্দো) ও যে দেশ (ফ্রান্স) থেকে পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়, তাদেরকে শাস্তি দিলেন।

আর এখান থেকেই আমরা বুঝতে পারলাম যে, পশ্চিমা বিশ্ব কেন এই দুই বাহাদুরের অভিযানের প্রতিক্রিয়ায় একটি অভূতপূর্ব মিছিলে তাদের ৫০ জন নেতা ও দায়িত্বশীল এবং প্রায় ৩৭ লক্ষ জনগণকে একত্রিত করেছিল?

এই কাতারে শরিক হওয়া একথারই ইঙ্গিত বহন করে যে, উক্ত পত্রিকা যা করেছে, তারা তাকে সমর্থন করে এবং এটা ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তাদের অবস্থানেরও সুস্পষ্ট বর্ণনা দেয়।

তাই, কেউ যেন তাদের মধুময় কথা দ্বারা প্রতারিত না হয়। কেউ যেন তাদের প্রতি ভাল ধারণা না রাখে। আর তাদেরকে বলছি, তারাও যেন উম্মাহর সন্তানদের পাল্টা আঘাতের অপেক্ষায় থাকে। এমনিভাবে, যাদের মন তাদেরকে ইসলামের সীমাসমূহ লঙ্ঘন করতে ফুসলায়, তাদেরকেও বলছি, তারা যেন নিজেদের গর্দানগুলোর খোঁজ-খবর রাখে আর নিজেদের কাজের পরিণতির অপেক্ষায় থাকে।

পরিশেষে,

মুহাম্মদ ﷺ এর উম্মতের মুজাহিদ সন্তানদের পক্ষ থেকে (আল্লাহ তাঁদেরকে সাহায্য ও শাক্তিশালী করুন!)-ইবনে সালমান ও ইবনে যায়েদের প্রতি! (আল্লাহ তাদের লাঞ্চিত ও অপমানিত করুন!)

তোমাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী বিগত সত্তর দশকে তোমরা তোমাদের মনিব আমেরিকার আনুগত্য করেছ। এখনও তাদের আদেশ-নিষেধ আঁকড়ে ধরেছ। আর আমরা আল্লাহর আদেশ আঁকড়ে ধরেছি। তাই তোমরা অপেক্ষায় থাক।

قُلْ هَلْ تَرَبَّصُونَ بِنَا إِلَّا إِحْدَى الْحُسْنَيَيْنِ وَنَحْنُ نَتَرَبَّصُ بِكُمْ أَنْ يُصِيبَكُمُ اللَّهُ بِعَذَابٍ مِنْ عِنْدِهِ أَوْ بِأَيْدِينَا فَتَرَبَّصُوا إِنَّا مَعَكُمْ مُتَرَبِّصُونَ

“বলে দাও, তোমরা আমাদের জন্য যে জিনিসের অপেক্ষায় আছো, তা তো এছাড়া কিছুই নয় যে, দু’টি মঙ্গলের একটি না একটি আমরা লাভ করব। আর আমরা তোমাদের ব্যাপারে এই অপেক্ষায় আছি যে, আল্লাহ নিজের পক্ষ হতে অথবা আমাদের হাতে তোমাদেরকে শাস্তি দান করবেন। সুতরাং তোমরা অপেক্ষা কর, আমরাও তোমাদের সাথে অপেক্ষায় আছি[2]।”

قُلْ كُلٌّ مُتَرَبِّصٌ فَتَرَبَّصُوا فَسَتَعْلَمُونَ مَنْ أَصْحَابُ الصِّرَاطِ السَّوِيِّ وَمَنِ اهْتَدَى

“(হে নবী! তাদেরকে) বলে দাও, (আমাদের) সকলেই প্রতীক্ষা করছে। সুতরাং, তোমরাও প্রতীক্ষা করো। কেননা, তোমরা অচিরেই জানতে পারবে, কারা সরল পথের অনুসারী এবং কারা হিদায়াতপ্রাপ্ত [3]?”

আমরা তোমাদেরকে আল্লাহর এ আয়াতের মাধ্যমে সুসংবাদ দিচ্ছি:

هَذَا فَوْجٌ مُقْتَحِمٌ مَعَكُمْ لَا مَرْحَبًا بِهِمْ إِنَّهُمْ صَالُو النَّارِ

“এই তো আরেকটি দল, যারা তোমাদের সঙ্গে প্রবেশ করছে। তাদের জন্য অভিনন্দন নেই। তারা তো জাহান্নামে প্রবেশ করবে[4]।”

**************

 

মুসনাদেআহমদ, আবুদাউদ

সূরাতাওবা,৯ :৫২

সূরাত্বহা,২০: ১৩৫

সূরাসোয়াদ, ৩৮:৫৯