JustPaste.it
User avatar
@anonymous · Oct 27, 2022

জীবন পাথেয়

জীবনের লক্ষ্য

 

আপনার বয়স কত?

জীবনে কি আপনি কখনো গভীরভাবে এ কথা ভেবে দেখেছেন, আপনার এই জীবনের লক্ষ্য কী?

ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, বিজ্ঞানী, লেখক, রাজনীতিক ইত্যাদি হওয়া-এসব কি জীবনের পরম লক্ষ্য হতে পারে?

বাবা-মা তাদের সন্তানকে শৈশবে শিক্ষা দেয় যে, বড় হয়ে তুমি বিজ্ঞানী হবে। কিন্তু বিজ্ঞানী হওয়াই কি জীবনের সব কিছু?

              এক ব্যক্তি কোনো একটি প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে। সে উক্ত প্রতিষ্ঠানের ডাইরেক্টর হওয়ার আশা রাখে। এই পদের জন্য সে যোগ্যও বটে। এই পদ লাভ করার জন্য সে দিনরাত-সারাক্ষণ প্রতিষ্ঠানের জন্য মন খুলে কাজ করে। কিন্তু এই ডাইরেক্টর হয়ে যাওয়া-ই কি তার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হতে পারে?এসব একজন মানুষের জীবনের পরম লক্ষ্য নয়, হতে পারে না। মানুষের জীবন বড় মূল্যবান। এই জীবনকে সার্বক্ষণিকভাবে পার্থিব জীবনে স্বাচ্ছন্দ্য লাভের উদ্দেশ্যে ব্যয় করা মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ নয়।

একজন মানুষের জীবনের চরম লক্ষ্য হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি। মানব জীবনের শেষ মনযিল জান্নাত। তাই এই জগতে একজন মানুষের জীবনের মূল কাজ আল্লাহর ইবাদত। কেননা আল্লাহ বলেছেনঃ

“জিন ও মানব জাতিকে আমি আমার ইবাদাত ব্যতীত অন্য কিছুর জন্য সৃষ্টি করি নি।”

 

আর নয় টেলিভিশন

কিছুদিন আগে আমেরিকার খ্যাতনামা ম্যাগাজিন ‘রিডার্জ ডাইজেস্ট'-এ একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়েছিল। মার্কিন অভিভাবক পরিষদের পক্ষ থেকে প্রকাশিত উক্ত বিজ্ঞপ্তির শেষে একটি কুপন সংযোজন করে আমেরিকার সমস্ত অভিভাবক তথা পিতা-মাতার নিকট আবেদন করা হয়েছিল,যেন তারা টেলিভিশন সম্পর্কে নিজ নিজ  মতামত উল্লেখ করে কুপনটি পূরণ করে পরিষদের অফিসে পাঠিয়ে দেয়, যাতে এ সব কুপনের উপর ভিত্তি করে অভিভাবক পরিষদ আমেরিকার ফিল্ম প্রস্তুতকারক কোম্পানীগুলোর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারে।

মার্কিন অভিভাবক পরিষদের ভাষ্য হলো, টেলিভিশনে যেসব ফিল্ম দেখাতো হয়, তা অত্যন্ত অশ্লীল, অবাস্তব ও চরিত্র বিধ্বংসী ।তাদের শিশুরা এসব ফিল্ম দেখে ফিল্মী দৃশ্যের অভিনয় করতে শুরু করে এবং ধীরে ধীরে তারা অপরাধের প্রতি ঝুঁকে পড়ে। ফলে অতি তীব্র গতিতে তারা অধঃপতনে নিপতিত হয়।

বিস্ময়ের ব্যাপার হলো, আজ থেকে চৌদ্দশত বছর আগে ইসলাম হালাল-হারামের নামে হিতকর ও ক্ষতিকর বস্তুসমূহের যে তালিকা প্রদান করেছিল, বর্তমান পরিস্থিতি ও অভিজ্ঞতা তার সত্যতা ও বাস্তবতা দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট করে প্রমাণ করছে।

বস্তুত, ইহলৌকিক ও পারলৌকিক উভয় জগতের জন্য যা হিতকর, ইসলামে তা হালাল। আর যা ক্ষতিকর, ইসলামে তা হারাম। মানুষের বিন্দু মাত্র ক্ষতি করতে পারে, এমন কোনো বিষয়কে ইসলাম অনুমোদন করে না-বৈধ বলে না। আমেরিকার সচেতন পিতা-মাতা আজ এ সত্য গভীরভাবে উপলদ্ধি করতে শুরু করেছে।

 

মানুষের গর্ব

১৯১২ সালের ১৪ এপ্রিলের ঘটনা। বৃটেনের টাইটানিক নামক বিশাল একটি জাহাজ সমুদ্রে ডুবে যায়। জাহাজটিকে বিশ্বের সর্বাধিক বিলাসবহুল ও নিরাপদ মনে করা হতো। মানুষের ধারণা ছিল, এই জাহাজ কখনো পানিতে ডুবতে পারে না। জাহাজটি নিয়ে প্রস্তুতকারকের গর্বেরও সীমা ছিল না।

ঘটনাচক্রে ১৯১২ সালের ১৪ এপ্রিলের মধ্য রাতে চলন্ত অবস্থায় একটি আইচ বার্গের সাথে ধাক্কা খেয়ে জাহাজটি দুর্ঘটনার শিকার হয়। তখন জাহাজটির গতি ছিল ঘন্টায় ২১ নট। দুর্ঘটনায় পতিত হয়ে জাহাজ থেকে কন্ট্রোল টাওয়ার এবং আশেপাশের অনেক কেন্দ্রে সিগন্যাল পাঠাতো হয়। কিন্তু কোনো ফল হলো না। রাত দু'টা বিশ মিনিটের সময় জাহাজটি সম্পূর্ণ ডুবে গেলো। জাহাজের ১৪২২ জন আরোহীর সলিল সমাধি ঘটলো। মাত্র ৭০৫ জন লোক প্রাণে রক্ষা পেতে সমর্থ হয়। এই দুর্ঘটনাকে সামুদ্রিক জাহাজের সর্বাপেক্ষা ভয়াবহ দুর্ঘটনা হিসাবে আখ্যা দেওয়া হয়।

কখনো ডুবতে পারে না এমন জাহাজটি ডুবলো কি করে? সংক্ষিপ্ত জবাব, ডুবেছে আল্লাহর ইচ্ছার অধীনে। টাইটানিক একটি বিশাল জাহাজ-ই ছিল না-মানুষের গর্ব অহংকারের জঘন্যতম পরিণতির বাস্তব উদাহরণও ছিল। মানুষের গর্বের মাথা আল্লাহ এ ভাবেই নীচু করে দেন।

 

সূরাতুল ফাতিহা

পবিত্র কুরআনের সর্বপ্রথম সূরা সূরাতুল ফাতিহা। সূরাটি সাত আয়াত বিশিষ্ট এবং মক্কী। অর্থাৎ নবীজির মদীনা হিজরতের আগে এর অবতরণ। নবী কারীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর উপর সম্পূর্ণ নাযিল হওয়া প্রথম সূরা এই সূরাতুল ফাতিহা। ফাতিহা অর্থ উন্মুক্তকারী বা আরম্ভ। এটি পবিত্র কুরআনের সর্বপ্রথম সূরা বলে এর নাম ফাতিহা। এই সূরাটির আরো কয়েকটি নাম আছে। উম্মুল কুরআন, উম্মুল কিতাব, সাব'য়ে মাছানী, শিফা, কানয ও আল-হামদ প্রভৃতি। সূরাতুল ফাতিহা পবিত্র কুরআনের একমাত্র সূরা, যা প্রত্যেক নামাযে পাঠ করা একান্ত আবশ্যক, যা ব্যতীত কোনো নামায-ই শুদ্ধ হয় না। হাদীসের ভাষায় সূরাতুল ফাতিহার মর্যাদা ও ওজন পবিত্র কুরআনের দুই তৃতীয়াংশের সমান এবং সব রোগের ঔষধ।

সূরাতুল ফাতিহা মূলতঃ একটি দু’আ এবং এমন একটি অভিব্যক্তি যে, কিছু চাইতে যদি হয় আল্লাহর নিকট-ই চাইতে হবে। এই সূরায় আল্লাহ তা'আলা সর্বপ্রথম নিজের প্রশংসা করে মানুষকে এ কথা বুঝিয়েছেন যে, একমাত্র তিনি-ই প্রার্থনার উপযুক্ত। অতঃপর তার নিকট হিদায়াতের দু'আ করতে শিখিয়েছেন, যা পেয়ে গেলে মানুষ দুনিয়া-আখিরাত উভয় জগতের কল্যাণ লাভ করতে সমর্থ হয়। আর না পেলে উভয় জগতে মানুষ ব্যর্থ হতে বাধ্য।

-আবূ তাসনীম