JustPaste.it

আধুনিক সভ্যতার স্বর্ণ সোপান যাদের হাতে গড়া

মোঃ আঃ আহাদ

 

          আল্লাহ তা'আলা আমাদেরকে মহানবীর সুন্নত অনুসরণে জীবন গড়ার সুযোগ দান করুন।

          এই মূহুর্তে যদি কাউকে জিজ্ঞেস করা হয় যে, বর্তমান যুগের সভ্য জাতি কারা? সোজাসাপ্টা যে জবাবগুলি আসবে তা হলো বৃটিশ, মার্কিনী, ফ্রান্স ও জার্মান।সৌভাগ্যক্রমে দু'একটা ব্যতিক্রমধর্মী জবাবও পাওয়া যেতে পারে। বৃটিশ, মার্কিনীরা বর্তমান যুগের সভ্য হওয়ার কারণ তারা মহাশূন্যে, চাঁদে ও বিভিন্ন গ্রহে যাচ্ছে, কম্পিউটার, রোবট, টেলিভিশন প্রভৃতি আধুনিক যন্ত্রপাতি উদ্ভাবন করেছে। বলতে গেলে তারা পৃথিবীকে যান্ত্রিক পৃথিবীতে রূপান্তরিত করেছে। এছাড়া তারা শিল্পোন্নত, শিক্ষিত ও উন্নত জীবন যাপন করে থাকে। এসবই হল তাদের সভ্য হওয়ার পক্ষে মজবুত সার্টিফিকেট।

          আসলে আমরা নিজেদের জীবন বিধান ও ঐতিহ্যকে বিসর্জন দিয়ে শতাব্দী ধরে পশ্চিমাদের ধ্যান-ধারণা ও অনুকরণে জীবন যাপনে অভ্যস্ত হওয়ায় আমাদের মনে এমন একটা ধারণা বদ্ধমূল হয়ে গেছে যে, এখন আমরা পশ্চিমাদের যাবতীয় কীর্তি-কলাপকেই সভ্যতার উন্নতির পক্ষে ধরে নিচ্ছি। গোলামীর শৃঙ্খলে আবদ্ধ থাকতে থাকতে এবং পাশ্চাত্যের প্রচারণার সয়লাবে আমাদের চিন্তা-চেতনার এত অবনতি ঘটেছে যে, এখন আর কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ তা চিহ্নিত করতে পারছি না। এজন্যই পাশ্চাত্য জগত সভ্যতার নামে যে পাপাচার করে যাচ্ছে তার সবটাকে সভ্যতা বলে আখ্যায়িত করছি।

          সভ্য কাকে বলে?যার মধ্যে মানবীয় গুণ অর্থাৎ সত্যবাদীতা, ক্ষমা, শিষ্টাচার, ভদ্রতা, লজ্জা, কাম-রিপুতে সংযম, পরোপকার, ন্যায়পরায়ণতা আছে এবং যিনি নিরহংকারী, ধৈর্যশীল তাকেই আমরা সভ্য করে থাকি। তথাকথিত সভ্য জাতির মধ্যে এ সব গুণাবলীর ছিটেফোঁটাও কি আছে?কালো চামড়ার কারণে একই রক্ত মাংসের মানুষ সাদা চামড়াদের সাথে এক বাসে চড়তে পারে না, এক স্কুলে পড়তে পারে না কেন?তারা আজ বিলাসিতায় আকন্ঠ নিমজ্জিত।বিজ্ঞানীরা নিত্যনতুন বিলাস দ্রব্য আবিষ্কার করছে আর বাকিরা ন্যায়-অন্যায়ের তোয়াক্কা না করেই তার ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ছে।সভ্য মানুষ কি কখনও বিলাসিতার গোলাম হয়? অথচ অমিতব্যয়িতা, জাঁকজমক প্রিয়তা ও আরাম প্রিয়তা তাদের মজ্জাগত স্বভাবে পরিণত হওয়ায় জাপানের মতো উন্নত দেশের মানুষদেরও বিলাস দ্রব্য ক্রয়ের লালসায় পর্যাপ্ত অর্থ আয়ের জন্য রাত্র ১০ টা পর্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। আবার রাত্র শেষ হওয়ার পূর্বেই তারা ছুটতে থাকে রেল ষ্টেশনে রেল ধরার জন্য। অধিকাংশ গাড়িতেই দেখা যায় যাত্রীরা দাঁড়িয়ে থেকেও ঘুমাচ্ছে। অর্থাৎ পর্যাপ্ত ঘুমের সময় তারা পায় না। সপ্তাহের ছুটির দিনে অন্য ছয় দিনের উপার্জিত অর্থ নিয়ে তারা জড়ো হয় বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে। হাত উজাড় করে তারা এ দিনটা উপভোগ করে।পরবর্তী ছয় দিন আবার কঠোর পরিশ্রম। জাপানের ন্যায় তথাকথিত সভ্য জাতিরাও অনুরূপ বিলাসিতা নামক সংক্রামক ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে এক দূর্বিষহ জীবন যাপন করছে। একেই কি সভ্যতা বলে? এই সভ্য জাতিরা মানুষ মারার জন্য নিত্যনতুন মারণাস্ত্র তৈরি করছে যার শিকার হচ্ছে কোটি কোটি নিরস্ত্র মানুষ। সভ্যতার জন্য মারণাস্ত্র কি উপকারে আসবে?

          আর্থিক প্রাচুর্যতা হাসিলের জন্য সভ্যতার মানসপুত্ররা যত খারাপ পন্থাই হোক তা অবলম্বন করাকে দোষের মনে করে না।সুদ ও সুদীতন্ত্র তাওরাত ও ইঞ্জিলে নিষিদ্ধ ছিল।কিন্তু এখন তা ইহুদী ও খৃষ্টান সমাজে দোর্দণ্ড প্রতাপে চলছে।অবাধ যৌনতার কারণে ভয়ংকর ব্যধি এইডস এখন পাশ্চাত্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে।সেখানে মা-বোনেরা গণনারীতে পরিণত হয়েছে। রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে একজন চরিত্রবান লোকও সে সমাজে খুঁজে পাওয়া যাবে না।পৃথিবীর অন্যান্য জাতি সমূহের সাথে বিশ্বাসঘাতকতায় পাশ্চাত্য রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। ইহুদী প্রটোকলে লেখা আছে "সর্বত্র আমাদের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হলে সর্বত্র নৈতিক চরিত্রে ভাঙ্গন ও বিপর্যয় সৃষ্টির চেষ্টা করতে হবে"। ইহুদীরা এই উদ্দেশ্যকে সফল করতে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিয়েছে নাইট ক্লাব, প্রমোদ তরী, সাজঘর, রূপচর্চা কেন্দ্র,সিনেমা, ভিসিআর, বিমান বালা, কলগার্ল, মডেলিং প্রভৃতি। পাশ্চাত্যের রাজনীতি, অর্থনীতি ও যৌনতার সাথে নৈতিকতার কোন সম্পর্ক নেই। ব্যক্তিগত বা রাষ্ট্রীয় স্বার্থ হাসিলের জন্য যে কোন পন্থা অবলম্বন করাকে তারা দোষের মনে করে না। জীবন সম্পর্কে পশ্চিমা সংজ্ঞা হলো, " কেবল ভোগ, সম্ভোগ ও স্বাদ আস্বাদনই জীবন, মানুষ যতক্ষণ পর্যন্ত এই কাজে পূর্ণ মাত্রায় পরিতৃপ্ত না হয় ততক্ষণ পর্যন্ত সেই ভোগ সম্ভোগে নিমগ্ন থাকা উচিত। মানুষের জীবন ফিরে আসবে না। কাজেই তাকে যতবেশি ভোগপূর্ণ করা সম্ভব তা' তার অবশ্যই করা উচিত। এজন্য কোন বাধা নিষেধ বা পরাজয় মানা উচিত নয়'।

          ভোগের কোন শেষ নেই, তৃপ্তি নেই।মানুষ যত পায় তত চায় এই তার প্রকৃতি। পাশ্চাত্য জগতে এই চাওয়া পাওয়ার কোন সীমা না থাকায় সেখানে অবাধ যৌনাচার গৃহের চত্ত্বর পার হয়ে পার্ক, নদী-সমুদ্রের তীর, স্কুল কলেজের ক্লাসরুম পর্যন্ত পৌঁছেছে।ধর্ম বলতে পাশ্চাত্য সমাজ শূন্য ভান্ডার। ইহুদী ও খৃষ্টান ধর্ম অবাধ জীবন যাপনের ধারণার সাথে সংঘর্ষে পরাস্ত হয়ে বিলুপ্ত হয়েছে।

          উশৃঙখলতার পক্ষে কতগুলি মনগড়া বুলি নিয়ে ধর্ম নামক একটা মহা শয়তানি পাশ্চাত্য সমাজে রাজত্ব করেছে। কল্পিত দেবতার সাথে মানুষ ও বিজ্ঞানের সর্বদা একটা সাংঘর্ষিক চিত্র অংকন করে নিজেদেরকে নিজেরাই প্রতারণা করছে এই সভ্য জগত।এ-ই সংঘর্ষের মূল কথা হলো,

"দেবতা বিজ্ঞান বুঝেন না এবং পছন্দ করেন না।যা কিছু ভালো তা মানুষকে দেবতাদের সাথে যুদ্ধ করে ছিনিয়ে আনতে হয়।বিজ্ঞানও ছিনিয়ে আনা হয়েছে এবং দেবতারা চূড়ান্তভাবে পরাজিত হয়েছেন।সুতরাং ধর্মেরও মৃত্যু ঘটেছে।"

          আধুনিক তথাকথিত সভ্য জাতির এই হল মোটামুটি সংক্ষিপ্ত পরিচয়। তাদের এই সব গুণাবলীকে(?) কি সভ্যতার মাপকাঠি বলা যায়? প্রশ্ন হতে পারে, তারা মহাশূন্যযান আবিষ্কার করেছে, মহাশূন্যে যাচ্ছে, তারা নিত্যনতুন ফ্যাশন ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করছে, তারা তো মানবসভ্যতাকে চরম উৎকর্ষের দিকেই নিয়ে যাচ্ছে।তবুও তারা সভ্য নয় কেন? ভালো পোশাক, বিজ্ঞান, কারিগরি বিদ্যা ও মহাশূন্যযান সভ্যতার মাপকাঠি নয়।তাছাড়া এগুলোর উদ্ভাবক মানুষই চরম অসভ্যতার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। একটা হায়েনা যদি ভালো পোশাক পরে বা মহাশূন্যযানে চড়ে মহাশূন্যে যাত্রা করে তবে তাকে কি সভ্য বলা যাবে? বানর যদি উড়োজাহাজ চালায় তবে সে কি সভ্য বলে গণ্য হবে? পোশাক, যন্ত্রপাতি ও কারিগরি বিদ্যা সভ্যতার উপকরণ মাত্র।আর অসভ্য মানুষ সেই উপকরণকে নিয়ে মহাকান্ড বাধিয়ে দিচ্ছে আর আমরা তাদেরকে বাহবা দিচ্ছি "সভ্য" বলে।

          তবে চৌদ্দশত বছর পূর্বে ইসলাম পৃথিবীতে যে সভ্যতার বুনিয়াদ স্থাপন করে তার চেয়ে ভালো কোন সভ্যতা কোন জাতি বিনির্মাণ করতে পারে নি এবং ভবিষ্যতেও পারবে না। গত শতাব্দী পর্যন্ত পৃথিবীতে এই সভ্যতা মানবতাকে মুক্তির আলো দেখিয়ে আসছিল।এত দীর্ঘ সময় পৃথিবীতে কোন সভ্যতা টিকে থাকার নজির নেই।কিন্তু আমাদের অবহেলা, দুর্বলতা ও পাশ্চাত্যের সর্বাত্মক ষড়যন্ত্রের ফলে ইসলামের সরব পদচারণায় সাময়িকভাবে বিঘ্নতার সৃষ্টি হয়। এই সুযোগে পাশ্চাত্যের অসভ্যতা বিশ্বব্যাপী জেকে বসে।আসলে পাশ্চাত্য জগত আজ যে বিজ্ঞান ও কারিগরি বিদ্যার জোরে নিজেদের সভ্য জাতি বলে প্রতিপন্ন করতে চাইছে সে বিদ্যা সম্পূর্ণ মুসলিম জাতির নিকট থেকে ধার নেয়া।আমাদের জ্ঞান আমরা সদ্ব্যবহার  না করায় ওরা তা ব্যবহার করে সভ্য জাতি সেজেছে।বিজ্ঞানের জনক ছিল মুসলমানরা এবং প্রতিটি ক্ষেত্রে রয়েছে মুসলমান বিজ্ঞানীদের গৌরবোজ্জল অবদান। যেমনঃ সমর বিজ্ঞানের প্রয়োজনীয় উপাদান বারুদ, কামান-বন্দুকের ব্যবহার ইউরোপীয়রা মুসলমানদের নিকট থেকে শিখেছিল।মুসলমানদের ব্যবহারের তিনশত বছর পর ইউরোপ এগুলো ব্যবহার করে। যুদ্ধের উন্নত কৌশল ও বারুদ বা আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহারের ওপর লেখা প্রথম ও বিখ্যাত আরবী বই " আল ফুরুসিয়া ওয়াল মানাসিব আর হারাবিয়া" মুসলমানদের লেখা।ভৌগলিক গবেষণার সূত্রপাত করেছিলেন জনাব ইবনে ইউনুস। কম্পাস যন্ত্রের আবিষ্কারক ইবনে আহমাদ।জলের গভীরতা ও স্রোত মাপক যন্ত্রের আবিষ্কারক ইবনে আবদুল মজিদ। জনাব আলফিন্দি একাই বিজ্ঞানের গবেষণা মূলক ২৭৫ খানা বই লিখেছিলেন। বিজ্ঞানী হাসান, আহমদ ও মুহাম্মদ সম্মিলিতভাবে ১০০ প্রকারের যন্ত্র আবিষ্কার ও ব্যবহার বিধি সম্পর্কে একখানা বই লিখে গেছেন।চিনি আবিষ্কার করেছে মুসলমানরা।আজকের মহাকাশ নিয়ে গবেষণার সূত্রপাত করেন মুসলমানরা দামেস্ক, কর্ডোভা, সমরখন্দ ও কায়রোয় সর্বপ্রথম মান মন্দির স্থাপন করে। আহম্মদ আবদুল মজিদের লেখা সমুদ্র যাত্রার বইয়ের ওপর গবেষণা চালিয়ে পরবর্তীকালে পাশ্চাত্য বাণিজ্য সাম্রাজ্য গড়ে তোলে। ভাস্কো-ডা-গামার জাহাজের ক্যাপ্টেন ও পথপ্রদর্শক ছিলেন আহম্মদ ইবনে মাজেদী নামক একজন মুসলমান। পাটিগণিত ও দশমিক গণিত মালা মুসলমানরাই ইউরোপীয়দের শিক্ষা দিয়েছিল।আলকিন্দির এনসাক্লোপিডিয়ার ল্যাটিন অনুবাদ  পড়ে ইউরোপ মানুষ পথ খুঁজে পায়।৭০২ সালে  তুলা থেকে তুলট কাগজ বানান ইয়াকুব ইবনে আব্দুল্লাহ। এই দু'বছর পরে বাগদাদে কাগজের কল প্রতিষ্ঠিত হয়।জাবীর ইবনে হাইয়ান ইস্পাত তৈরি, ধাতু শোধন,  তরল, বাষ্পীয়করণ, কাপড় ও চামড়া রংকরণ, ওয়াটার প্রুফ তৈরি,  লোহার মরিচা প্রতিরোধক বার্ণিশ ও লেখার পাকা কালি তৈরী করে অমর হয়ে আছেন। আলরাজী ম্যাঙ্গানিজ ডাই অক্সাইড থেকে প্রথম কাঁচ তৈরী করেন। পানি জমিয়ে বরফ তৈরিও তার অমর কীর্তি। গণিতবীদ হিসেবে  ওমর খৈয়াম এক উজ্জ্বল ভাস্বর।

          রসায়ন বিজ্ঞানেও মুসলমানদের রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। স্পেন বিজয়ের পূর্ব ইউরোপ পটাশ, এমোনিয়া, নাইট্রিক এসিড, নাইট্রো হাইডোক্লোরিক এসিড কর্পূর সম্পর্কে কিছুই জানত না।ইউরোপের লোকেরা স্পেনের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসে মুসলমানদের নিকট থেকে এর ব্যবহার বিধি শিখে নেয়।

          ইতিহাস রচনায়ও সর্বপ্রথম মনোযোগী হয় মুসলমানরা। পরবর্তীতে ইংরেজরা তাদের লেখা অনুবাদ করেন।আল বিরুনী,ইবনে বতুতা, বাইহাকী, জিয়াউদ্দিন বারণী,আমীর খসরু, বাবর, আবুল ফজল, ফিরিস্তা, বাদাউনি, কাফি খা প্রমুখ পৃথিবীর ইতিহাস শাস্ত্রের উজ্জ্বল প্রতিভা।

চিকিৎসা শাস্ত্রে ইবনে সিনার নাম অবিস্মরণীয়। পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণের দ্বারা রোগ নির্ণয়ের বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির আবিষ্কারক আল বেরুনী। চক্ষুর পর্দায় পতিত আলোকরশ্মির প্রতিবিম্ব প্রতিফলিত হওয়ায় আমরা দেখতে পাই; ইবনুল হাসাম এ সূত্র আবিষ্কার করার পর ক্যামেরা আবিষ্কৃত হয়েছে। জাবের ইবনে হাইয়ান অস্ত্র পাচারের পূর্বে রোগীকে অজ্ঞান করার ঔষধ আবিষ্কার করেন।

          মুসলমানরা সর্বপ্রথম আবাসিক হাসপাতাল ও সামরিক বাহিনীর সাথে ভ্রাম্যমাণ হাসপাতাল স্থাপন করে। চশমাও মুসলমানদেরই আবিষ্কার। কারশি রক্ত প্রবাহের আবিষ্কারক।১৭১৭ সনে তুরস্কে ইংল্যান্ডের রাষ্ট্রদূতের পত্নী বসন্তের টিকা তুরস্ক থেকে নিয়ে প্রথম ইংল্যান্ডে প্রচলন করেন।

আলযুবকানী কপারনিকাসের বহু পূর্বেই পৃথিবী ও নক্ষত্রের আহ্নিক গতি প্রমাণ করেছিলেন। ঘড়ি আবিষ্কার করেছিলেন কুর্তুবী।পৃথিবীর নির্ভুল ক্যালেন্ডার আবিষ্কার করেন ওমর খৈয়াম। স্পেনের কর্ডোভার রাস্তায় সরকারি বাতি জ্বালানোর ৫০০ বছর পর লন্ডনের রাস্তায় সরকারি বাতি জ্বলেছিল।আধুনিক শিক্ষার নিয়মকানুন, লাইব্রেরি গঠন পরিকল্পনা, শ্রেণী বিভক্ত বিদ্যালয়, আবাসিক বিদ্যালয় প্রভৃতি স্পেন থেকে সমগ্র ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। সিসিলির সালেনো আর স্পেনের কর্ডোভা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুকরণে পরবর্তীতে প্যারী মল্ট পলিয়ে, অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে ওঠে। মুসলমানদের প্রতিষ্ঠিত আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয় আজও সমগ্র বিশ্বে  জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে।বীজ গণিতের জন্মদাতা খলিফা মামুনের লাইব্রেরিয়ান মুহাম্মদ ইবনে মুসা আল খারেজমী।তিনি অঙ্ক শাস্ত্রের শূণ্যে(০) এরও জন্মদাতা।

          কবিতা ও সাহিত্যকর্মেও মুসলমানরা সে যুগে বিখ্যাত ছিল।হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর বাণী (হাদিস) বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্য বলে বিবেচিত। এছাড়া আলী রাঃ, আল মামুন,ওমর খৈয়াম, রুমী, হাফিজ, শেখ সাদী, ফেরদৌসী প্রমুখ ছিলেন বিশ্বখ্যাত কবি ও সাহিত্যিক।

          মোটকথা, আধুনিক সভ্যতার ভিত্তি স্থাপন করেছিল মুসলিম জাতি।ইউরোপীয়রা মুসলমানদের নিকট থেকে যাবতীয় জ্ঞান আহরণ করেছিল শুধু ইসলাম গ্রহণ করে নি।পরবর্তীতে তারা মুসলমানদের অবদান অস্বীকার করে সভ্যতা নির্মাণের যাবতীয় কৃতিত্ব নিজেদের বলে দাবি করে।আর আমরা মুসলমানরা আমাদের অতীত ইতিহাস ভুলে গিয়ে পশ্চিমাদের তালে তালে বাজাচ্ছি। এই ব্যধি খুবই আশঙ্কাজনক।এর ফলে আমাদের সমাজ থেকে নিজস্ব সংস্কৃতি, সাহিত্য, ঐতিহ্য, কৃষ্টি সবকিছু মুছে যেতে পারে।আমাদের এক্ষুনি সচেতন হতে হবে। সভ্যতা নির্মাণে মুসলিম মনীষীদের অবদানের কথা স্মরণ করে আবার আমাদের গৌরব পুনোরুদ্ধারে ঝাপিয়ে পড়তে হবে।পাশ্চাত্যের নোংরামি ও অসভ্যতার মোকাবিলায় আমাদের পুনরায় শ্রেষ্ঠ সভ্যতা বিনির্মানের কঠোর সংগ্রামে এগিয়ে আসতে হবে। কোথায় এই সীসাঢালা প্রাচীর অতিক্রম করে জাতিকে স্বর্ণালী সোপানে পৌঁছে দেয়ার দুঃসাহসী সংগ্রামী সৈনিকগণ?