JustPaste.it

ভারত কি বাংলাদেশকে অঙ্গরাজ্য মনে করে?

আবদুল্লাহ আল ফারুক

==============================================================

 

          জাতি সাপের লেজে পা পড়লে জাতি সাপ যেমনি ফোঁস করে ফণা ধরে, তেমনি বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ গত ২০শে জানুয়ারী এক দীর্ঘ আলোচনার পর বাবরী মসজিদ ধ্বংসের জন্য এক নিন্দা প্রস্তাব গ্রহণ করলে ভারত ওই সাপের মত ফোঁস করে উঠে। আন্তর্জাতিক সকল রীতি-নীতি ও ভদ্রতাকে উপেক্ষা করে আপত্তিকর ও অশালীন ভাষায় এদেশের সরকারকে হুমকি-ধমকি দেয় ভারতের নরসিমার ব্রাহ্মণ সরকার। বাংলাদেশ যে একটি স্বাধীন দেশ এবং এ দেশের সরকার যে সার্বভৌম , ক্ষমতার অধিকারী, চানক্যরা তা সম্পূর্ণ বেতোয়াক্কা করছে। লজ্জা-শরমের সকল পর্দা তুলে দিয়ে দাত বের করে জাহির করছে যে, আমি একখানা আগ্রাসী শক্তি, দক্ষিণ এশিয়ায় আমিই বড় মাতব্বর। আমার কাজের (তা যত ঘৃণিত হোক) কেউ সমালোচনা করতে পারবা না-- যেন উপমহাদেশের কারও এই বৈধ অধিকার নেই।। অবাধ্য হওয়ার চেষ্টা করলে তাকে ডাণ্ডা মেরে ঠাণ্ডা করে দেয়া হবে।

 

          বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ গত ২০শে জানুযারী বাবরী মসজিদ ধ্বংসের নিন্দা এবং তা পুনঃনির্মাণের দাবী সম্বলিত এক প্রস্তাব গ্রহণ করলে ২৩শে জানুয়ারী ভারত সরকারের এক বেনামী মুখপাত্রের বরাত দিয়ে একটা অপমানজনক বিবৃতি সংবাদপত্র ও সংবাদ সংস্থা সমূহে প্রেরণ করে। সে বিবৃতিতে বলা হয়, “অযোধ্যায় একটি বিতর্কিত ভবন ভেঙ্গে দেয়ার ব্যাপারে ২০শে জানুয়ারী ১৯৯৩ বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে যে প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে তা আমরা গভীর দুঃখের সাথে লক্ষ করেছি। আমরা সরাসরি এ প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করছি, আমাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে একটি পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য হস্তক্ষেপ। ”

 

          -আমাদের নীতি ও ব্যবস্থার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ক্ষমতাসীন বিএনপি সরকার প্রকাশ্যে নিন্দা জ্ঞাপন করে যে নাক গলাচ্ছে এবং যে সব বিষয়ে তার আইনগত অধিকার নেই সেসব বিষয়েও আমাদের উপদেশ দেয়ার মত ঔদ্ধত্য প্রকাশ করছে সে বিষয়গুলো আমরা অত্যন্ত বিরূপভাবে দেখছি।--

 

          -কথিত ঐ প্রস্তাবে বাংলাদেশে সংগঠিত সহিংস প্রতিক্রিয়ার দরুন যে শত শত মন্দির ধ্বংস হয়েছে এবং ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়ী-ঘর ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের যে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, সেসব বিষয়কে পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে। ১৯৯২- এর ৭ ডিসেম্বর থেকে সংঘটিত নিপীড়নমূলক এসব ঘটনাবলী অবর্ণনীয় দুর্ভোগ ও মারাত্মক নিরাপত্তাহীনতার জন্ম দিয়েছে। ..ভারত বাংলাদেশের সাথে শুধুমাত্র গ্রহণযোগ্য বিধি-নিয়ম ও নীতি অনুযায়ী সম্পর্ক বজায় রাখবে এবং বাংলাদেশ সরকারের ভবিষ্যত পদক্ষেপের ওপর মনোযোগের সঙ্গে নজর রাখবে।--- মৌলবাদী দেশগুলোর দ্বারা প্রভাবিত হয়েই বাংলাদেশ এবং অন্যান্য দেশ বাবরী মসজিদ ধ্বংসের নিন্দা করেছে-”

 

          বিবৃতিতে ভারত সরকার সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে বাবরী মসজিদকে একটা ‘বিতর্কিত ভবন’ বলে উল্লেখ করেছে। বক্তব্য পড়ে মনে হয়, তাদের দেশের একটা বিতর্কিত ভবন ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে তা নিয়ে তোমরা নাক গলাবার কে-ভারত সরকার এ মনোভাব প্রকাশ করতে চেয়েছে।

 

          বাবরী মসজিদ একটি ঐতিহাসিক মসজিদ। যে মসজিদের সাথে মুসলমানদের হৃদয়ের সম্পর্ক, সেই মসজিদকে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে, বিশ্ব মুসলিমের সাথে সাথে পাশ্চাত্যের খৃষ্ট সমাজ পর্যন্ত উগ্র হনুমানদের মুখে ঘৃণার থুক্কার নিক্ষেপ করেছে, অথচ তাকে একটা বিতর্কিত ভবন’ বলতে কাপালিকরা একটুও শরমবোধ করেনি। ওরা একতরফা ভাবে মুসলমানদের নিধন করবে, পুলিশ, সেনাবাহিনী লেলিয়ে দিয়ে শুধুমাত্র মুসলমানদের গুলি করে হত্যা করার নির্দেশ দেবে, ধর্মীয় এবাদতগাহ ভেঙ্গে ফেলবে, তৃতীয় শ্রেণীর নাগরিকের মর্যাদাটুকুও মুসলমানরা পাবে না, প্রশাসনে মুসলমান হওয়ার অপরাধে চাকুরী পাবে না, রাস্তায় দাড়ি রেখে টুপি পরে হাটতে পারবে না। তাহলে ‘নেড়ে’ গালি শুনতে হবে। ভারত সরকারের প্রত্যক্ষ মদদে স্পেনের স্টাইলে মুসলমানদের উৎখাত করে একটা নির্ভেজাল রাম রাজ্য কায়েম করার প্রক্রিয়া চলবে অথচ কেউ এর প্রতিবাদ করতে পারবে না, তাদের এ উলঙ্গ ও পশুসুলভ আচরণের কেউ নিন্দা জানাতে পারবে না।

 

          এটা করলে নাকি ওনাদের দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ হয়ে যায়! উগ্র আর্যরা বারবার ঘোষণা দিয়ে সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে বাবরী মসজিদ ভেঙ্গেছে, নরসিমা রাওয়ের সরকার ইচ্ছে করেই তাদের বাধা দিয়ে মসজিদ ভাঙ্গতে দিয়েছে। অথচ তারা এটাকে একটা ঘটনা বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করেছে। মসজিদ রক্ষার ব্যর্থতার জন্য একটুও ব্যথিত ও লজ্জিত না হয়ে উল্টো বাংলাদেশের কতিপয় ভারত মাতার তকমা অটা বাঈজী ভারতের স্বার্থ রক্ষার ঠিকাদারদের গলায় গলা মিলিয়ে দাবী করেছে যে, এদেশের সংখ্যালঘুদের জানমাল ও ধর্মীয় উপাসনালয়ের ক্ষতি করা হয়েছে, তাদের নিরাপত্তাহীনতার মুখে ঠেলে দেয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের কল্পিত বাংলাদেশে সংখ্যালঘুরা কোথায় কিভাবে নির্যাতিত হয়েছে তার কোন বিবরণ পেশ করার মুরোদ হয়নি। নরসিমার সরকার কয়েকমাস পূর্ব থেকে মসজিদ ভাঙ্গার প্রস্তুতি নিয়ে আসা কয়েক লক্ষ সন্ত্রাসী হিন্দুকে বাঁধা দিতে পারেনি, পারেনি ওদের মহা তান্ডবকে নিয়ন্ত্রণ করতে। মসজিদ ভাঙ্গার পর এদেশে ভাবাবেগ আক্রান্ত ১০ কোটি মুসলমানের মধ্য থেকে কিছু সংখ্যক উশৃঙ্খল সমাজ বিরোধী স্থানে স্থানে সংখ্যালঘুদের সম্পদের ক্ষতি করে, কিন্তু জনগণের হামলা বা পুলিশের গুলিতে শত শত কেন একজন হিন্দুও নিহত হয়নি।

 

          অথচ ওনাদের চোখে এটা নাকি ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করেছে। শক্তির জোড়ে কপালে ত্রিশুল আকা কাপালিকরা ভারতের মুসলমানদের দমন করে রেখেছে। প্রতিবেশী মুসলমানদেরও 'জ্বি-হুজুরে পরিণত করে রাখার পাঁয়তারা করছে। দুর্বলের ওপর চাবুক চালাতে চালাতে ওদের মন মেজাজ জানোয়ারে রূপান্তরিত হয়েছে। আর এরই প্রতিফলন ঘটিয়েছে একটা স্বাধীন দেশের সরকারকে ধমকের সুরে কথা বলে। আগে প্রতিবেশীদের সাথে এমন আগ্রাসী মনোভাব পোষণ করত একমাত্র ইহুদী রাষ্ট্র। সম্প্রতি ইসরাইলের সাথে গলাগলি বাঁধার পর ভারতও সেই পথ ধরেছে। ইসরাইল চায় একটা নিরঙ্কুষ ইহুদী রাষ্ট্র কায়েম করতে, ভারত চায় একটা রামরাজ্য কায়েম করতে। উভয়ের পথে বাঁধা সৃষ্টি করছে মুসলমানরা। তাই ইসরাইল ফিলিস্তিনীদের পুশব্যাক করছে প্রতিবেশী দেশে, প্রয়োজনে গুলি করে মারছে।

 

          ভারতও মুসলমানদের একবার প্রতিবেশী দেশে পুশব্যাক করার মহড়া দিয়েছে, গুলি চালিয়ে পাখির মত মেরেছে অসংখ্য মুসলমানকে। সর্বোপরি ভারত ও ইসরাইল রাষ্ট্রদ্বয়ের অভ্যুদ্বয় ঘটেছিল একই সময়ে বেনিয়া ইংরেজদের তত্ত্বাবধানে। সুতরাং যে ইসরাইল পারমানবিক জুজুর ভয় দেখিয়ে প্রতিবেশীদের প্রতিনিয়ত হুমকী দেয়, তার যোগ্য সহযোগী ভারতের কোচরে কয়েকখানা পারমানবিক অস্ত্র থাকতেও যে প্রতিবেশীদের অবাধ্যতা (?) নীরবে হজম করবে এমনটা কল্পনা করাও কষ্টকর নয় কি? কিন্তু তবুও ভারতের ঘৃণিত আর্য শাসকদের জেনে রাখা উচিত, পৃথিবীর সর্বত্র একই সময় একই ঋতু বয় না, একই চানক্য নীতির দ্বারা উভয় মেরুর মানুষকে দমিয়ে রাখা যায় না। এর প্রকৃষ্ট প্রমাণ আজকের সোভিয়েত ইউনিয়ন। সাম্রাজ্যবাদী শ্বেত ভল্লুকেরা রক্ত চক্ষু দেখিয়ে পুরো পূর্ব ইউরোপ দখল করলেও একই নীতির দ্বারা আফগান ভূমি দখল করতে এসেই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ পরাশক্তি পৃথিবীর সবচেয়ে সরলসহজ মানুষদের মোকাবিলায় চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে গেল, হারিয়ে ফেলে নিজেদের অস্তিত্ব পর্যন্ত।

 

          তাই দাদাবাবু ও ঠাকুর মশাইদের একটু ঠান্ডা মাথায় ইতিহাসের দিকে নজর দিতে বলছি। অতীতের পারস্য, রোম, মঙ্গল, তাতার সাম্রাজ্যের কথা না হয় বাদ দিলাম। চলতি শতকের জার্মান ও জাপান জাতি দুটি বিশ্ব মোড়ল সাজতে গিয়ে পর পর দুবার কি চ্যাংদোলাটা না খেলো। ভারতও যেন তেমন হিটলারী ভূতে আক্রান্ত হয়ে বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীফ ঠাউরে না বসে। বিশাল দেহীহাতি যখন উন্মত্ত হয়ে উঠে তখন সে শক্তির দম্ভে এত বেপরোয়া হয়ে ওঠে যে, ভাল-মন্দ বিবেচনা না করে সামনের সকল প্রতিপক্ষকে নির্মূল করতে মত্ত হয়। অবশেষে পাকা শিকারীর খুড়ে রাখা সামান্য একটা গর্তে পড়ে তার বাহাদুরীর ইতি ঘটে, তার জীবন লীলা সাঙ্গ হয়। দাদাবাবুরাও নিশ্চয় বুঝতে চেষ্টা করবেন, হাতির মত অতিরিক্ত উন্মত্ত হওয়া নিজের জন্য শুভ লক্ষণ নয়। আপনারা যে মৌলবাদীদের দু’চোখে দেখতে পারেন না। আফগানিস্তানের যে মৌলবাদী মোল্লাদের উথানকে রাশিয়ার সাথে মিতালী করে আদা জল খেয়ে চেষ্টা করেও ঠেকাতে পারেননি, কাশ্মীরী মৌলবাদীদের ঠেকাতে আপনাদের মাথা চিন্তায় হাটুতে গিয়ে ঠেকেছে! আপনাদের আনাড়ী পনার জন্য কিন্তু সেই মৌলবাদীদের উথান এদেশেও দ্রুত ঘটে গেলে শেষে কারবালার মাতম করেও শোধরাতে পারবেন না।

 

          আর জানেন তো, মৌলবাদীরা যখন জাগে তখন সমস্ত ইজম, তন্ত্র-মন্ত্রের তাবিজ-কবজ ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলে, থোরাই কেয়ার করে দাম্ভিক শক্তিকে। দেখলেন না আপনাদের তুলনায় কত ক্ষুদ্র, কত দরিদ্র, কত দুর্বল এই দেশ, তারপরও লংমার্চে লাখো লাখো মুজাহিদ শরীক হয়ে শাহাদাৎ আঙ্গুলী উচিয়ে আপনাদের কি বলে এলো? জানেন, ওদের বুকের পাটা কত লম্বা? আপনারা গজ-ফিতে নিয়ে মেপে ওদের বুকের পাটার পরিধি পরিমাপ করতে পারবেন না। এই লংমার্চ থেকে আপনাদের অনেক কিছু শেখার আছে। মনে রাখবেন, সুলতান মাহমুদ, মুহাম্মদ ঘোরী, আহম্মদ শাহ আবদালী, তৈমুর লং, চেঙ্গিস খানের বংশধর জহির উদ্দিন মোহাম্মদ বাবুরেরা শুধু পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে ধাবিত হয়েছিল বলেই সবকিছু শেষ হয়ে যায়নি। তাদের বিপ্লবী রক্তের ধারা পূর্ব দিক থেকেও প্রবহমান। প্রয়োজনে নব্য বাবর , মাহমুদ, আবদালীরা তাদের দুর্ধর্ষ ঘোড়াগুলিকে পূর্ব থেকে পশ্চিমেও ধাবিত করতে সক্ষম। এর ক্ষেত্র কিন্তু আপনারাই তৈরী করছেন। সেজন্য ধন্যবাদ।