JustPaste.it

প্রিয় নবীর (সঃ)মি'রাজ গমনঃ কুরআন ও হাদীসের আলোকে

========================================================================

 

        কুরআন মজীদের সূরা আল-ইসরার প্রথম আয়াতটিতে আল্লাহ্‌ তা'আলা ইরশাদ করেন।

 

        'মহান আল্লাহ্‌ তা'আলা তাঁর বান্দাদেরকে রাত্রিকালে কা'বা শরীফ থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত পরিভ্রমন করেছেন, তিনি অতীব মহান ও পবিত্র। এই মসজিদের চতুষ্পার্শ্ব  আমরা বরকত দিয়ে ভরে দিয়েছি- পরিভ্রমণের উদ্দ্যশ হল' আমরা তাঁকে আমাদের নিদর্শনাদি  প্রদর্শন করাবো। সে আল্লাহ্‌ নিশ্চয়ই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।'

 

        এ আয়াতে রাত্রিকালে মক্কার হারাম শরীফ থেকে বাওয়তুল মুকাদ্দাসে অবস্থিত মসজিদে আকসা পর্যন্ত এবং সেখানে থেকে অনন্ত অসীম  মহাশূন্যে  অবস্থিত সিদ্রাতুল মুনতাহা পর্যন্ত হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর পরিভ্রমনের কথা অত্যন্ত মর্মস্পর্শী ভাষায় ও হৃদয়গ্রাহী ভংগী বলা হয়েছে।

 

        আয়াতটিতে মক্কা থেকে বায়তুল মুকাআদ্দাস যাওয়ার এবং সেখান থেকে উর্ধ্বলোকে সিদ্রাতুল মুনতাহা পর্যন্ত পরিভ্রমন করার অর্থ্যাত ইসরা এবং মি'রাজ এই দুইটির কথাই এক সঙ্গে বলা হয়েছে। কেননা এই দু'টি  ঘটনা একই যাত্রায় ও একই রাত্রে সংঘটিত  হয়েছিল এবং  দু'টি ক্ষেত্রেই আল্লাহর বিশেষ  নিদর্শনাদি  দেখানোই ছিলো মুখ্য উদ্দ্যেশ্য। উর্ধ্বলোক অদৃশ্য জগত , আমরা সাধারণ মানুষেরা সেই জগত সম্প্ররকে কিছুই জানি না। এ সম্প্ররকে বহু সংখ্যক হাদীসে বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে।

 

        ঠিক কোন স্থান থেকে রাসূলে কারীমের যাত্রা শুরু হয়েছিল, এই পর্যায়ে দুটি কথা বর্ণিত হয়েছে। একটি বর্ণনা মতে সে স্থান্টি হচ্ছে মূল মসজিদে হারাম-গোটা হারাম শরীফ। এই বর্ণনায় উদ্ধৃত হয়েছে নবী কারীম (সাঃ) নিজেই বলেছেনঃ

 

        "নবী কারীম (সাঃ)-কে আবু তালেম কন্যা উম্মে হানীর ঘর থেকে মি'রাজে নিয়ে যাওয়া হয়েছিলো।"

        প্রথমোক্ত হাদীসে 'মসজিদে হারাম' বলতে সমগ্র হারাম শরীফ কে বুঝানো হয়েছে। কেননা এই এলাকাটি আল্লাহর ঘর পরিবেষ্টিত করে রেখেছে, তাঁর সাথে মিলিতহয়ে রয়েছে। হযরত ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেন,' হারাম সম্পূর্ণটাই মসজিদ'। উম্মে হানীর ঘর যেখানে ছিল, বর্তমানে সেই স্থান্টি হারাম শরিফের মধ্যেই শামিল। তিনি ছিলেন নবী করীম(সাঃ) ফুফি আম্মা।

 

        মিরাজের এই যাত্রা রাত্রিকালে হয়েছিলো। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, রাত্রিকালে কেনো? জওয়াবে বলা যায় রাসূলের পূর্ণ্মাত্রার মর্জাদা ও স্বাগতম জানাবার উত্তম ব্যবস্থার জন্য রাত্রিকালে হয়েছে। কেননা একান্ত নৈকট্য, নির্জনয়া ও আন্তরিকতা প্রকাশের উপযুক্ত সময়ই হচ্ছে রাত্রিকাল। তবে তা জাগ্রতাবস্থায় হয়েছিল। তা সুবহানা শব্দ  দ্বারাই প্রমাণিত। কেননা তা কোন স্বপ্ন হলে তা বিশেষ কোন আশ্চর্যজনক ঘটনা হয় না। সবনে তো অনেক অঘটন ঘটে থাকে। তা কোন বিস্ময়কর  ব্যাপার নয়। আর এই শব্দটি ব্যবহৃত হয় কোন বিস্ময়কর ঘটনার বর্ণনা প্রসঙ্গে।

 

        একটি হাদীসে বলা হয়েছে, নবী করীম (সাঃ) রাত্রে এশার নামঅ্যা পড়ার পরে উম্মে হানীর ঘরে নিদ্রাগমন করেছিলেন। এখান থেকেই তেকে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেই রাত্রিতেই তিনি সবস্থানে ফিরে আসেন। ত্নি উম্মে হানীর নিকট সমস্ত  ভ্রমণবৃতান্ত বর্ণনা করেন। বলেন ' আমার নিকট নবীগণকে উপস্থিত করা হয়। অতঃপর আমি তাঁদের নিয়ে নামায পড়েছি। এ কথা বলার পর তিনি মসজিদের দিকে রওয়ানা হলেন। তখন উম্মে হানী তাঁর কাপড় টেনে ধরলেন। কি ব্যাপার, জিজ্ঞেস করায় তিনি বললেন,

 

 " তুমি যদি তোমার এই পরিভ্রমণেরবৃতান্ত লোকদের নিকট প্রকাশ কর, তা'হলে তারা তোমাকে মিথ্যাবাদী বলবে বলে আমার ভয় হচ্ছে।" জবাবে নবী করীম (সাঃ) বললেন, ' মাই তো বলবোই। লোকেরা যদি আমকে মিথ্যাবাদী বলে, অবিশ্বাস করে, তবুও।'

 

        মসজিদে গেলে পথে আবু জাহেলের সাথে সাক্ষাত হল। তিই তাঁকে মি'রাজের সমস্ত বিবরণ বললেন। আবু জাহেল লোকদের ডেকে  বলল, ও লোকেরা তোমরা শুনে যাও মুহাম্মাদ কি বলছে! লোকেরা তা শুনে কেউ মাথায় হাত দিল, কেউ হাতে তালি বাজালো। অনেকে বিস্ময় প্রকাশ করল, অনেকে অসত্য বলে উড়িয়ে দিতে চাইল। মি'রাজের এই বিবরণ শুনে বহু ঈমানদার লোক বেঈমান হয়ে গেল। কোন কোন লোক দৌড়ে গিয়ে হযরত আবু বকর  সিদ্দীক (রাঃ)- কে এই সংবাদ দিল। তিনি এই খবর শুনে বললেন,

 

        আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, ত্নি যদি এই কথা বলেই , তা'হলে তিনি নিশ্চয় সত্য বলেছেন।

 

        লোকেরা বলল একই রাত্রে সিরিয়া গিয়ে সকাল হওয়ার পূর্বেই মক্কায় ফিরে এসেছেন। এমন কথা বললেও তুমি তাঁকে সত্যবাদী বলে বিশাস করবে? তিনি বললেন,

 

        হ্যাঁ, আমি তাঁকে সত্যবাদী বলে মানি; বিশ্বাস করি এর চাইতেও অধিক দূরবর্তী- অধিক অসম্ভব ধরনের কথাও। আকাশমণ্ডলের যে খবর তিনি দিচ্ছেন, তাও সত্য জানি।'...... এথেকেই তিনি 'সিদ্দীক'নামে অভিহিত হতে লাগলেন। 

 

        রাসূলের নিকট এই সময় যেসব লোক সমবেত হয়েছিল, তাঁদের মধ্যে এমন সব লোক ছিলো, যারা পূর্বে বায়তুল মুকাদ্দাস সফর করেছিল এবং নিজেদের চক্ষে মসজিদে আকসা দেখেছিওল। তারা বলল, আপনি যদি মসজিদে আকসা দেখে এসে থাকেন তাহলে তার বর্নণা দির্ণনা দিন। সেই বর্ণনা শুনেই আমরা আপনার এই কথার সত্যাসত্য বুঝতে পারব। কেননা ইতিপূর্বে আপনি আর কখনোই বায়তুল মুকাদ্দাস দেখেন নি, তা তো আমাদের জানাই আছে। তাঁদের এই কথা শুনে তিনি খুবই বিব্রত হয়ে পড়লেন। কেননা তিনি বায়তুল মুকাদ্দাস দেখেছেন তো বটে, কিন্তু খুব ভাল করেসুক্ষ্ম দীইষ্টিতে দেখেছেন এবং তা সব মুখস্ত করেছেন- এমন তো নয়। তখন মহান আল্লাহ্‌ তা'আলা তাঁকে প্রত্যক্ষ ভাবে সাহায্য কলেন। তিনি বায়তুল মুকাদ্দাস্কে ঠিক সেই মুহুর্তে তার চোখের সামনে সমুদ্ভাসিত করে তুললেন এবং রাসূলে করীম (সাঃ) তা দেখে দেখে অদের প্রত্যেকটি প্রশ্নের জবাব দিতে লাগলেন। এই পর্যায়ে স্বয়ং রাসূলে করীমের (সাঃ) একটি কথা বুখারী গ্রন্থে উদ্ধৃত হয়েছে। তিনি বলেন,

 

        " কুরাইশের লোকেরা যখন মিরাজে যাওয়ার বিবরণ শুনে আমকে মিথ্যাবাদী বলে সন্দেহ করল, তখন আমি হেজরে মধ্যে দাঁড়িয়েছিলাম। তখন আল্লাহ্‌ তা'আলা আমার চোখের সম্মুখে বায়তুল মুকাদ্দাসকে উদ্ভাসিত করে তুলে ধরেন। তখন আমি তার দিকে নজর রেখে ও তা দেখে দেখে তাদের প্রত্যেক্টি প্রশ্নের জবাব দিচ্ছিলাম তার নিদর্শনাদির বর্ণনা দিতে লাগলাম।"

 

        মি'রাজের এই সফর নিদ্রতাবস্থায় হয়েছিল কিংবা জাগ্রতাবস্থায় এপর্যায়ে দু'টি মতের পক্ষেই দলিলাদি উপস্থাপিত করা হয়েছে। হযরত আয়েশা (রাঃ)থেকে বর্ণিত আছে,তিনি বলেছেন,

 

        'রাসূলে করীমের দেহাবয়ব হারিয়ে যায় নি; তাঁর মি'রাজ হয়েছিল আত্মিক।' আর  হযরত হাসান (রাঃ) বলেছেন, 'তিনি নিদ্রিতবস্থায় ছিলেন এবং এটি একটি স্বপ্ন(যা তিনি দেখেছিলেন)।'

 

        অপর একটি অর্ণনায় বলা হয়েছেঃ মি'রাজের এই যাত্রা ছিল দেহ ও আত্মার সমন্বয়ে। তিনি তাঁর শয্যা ত্যাগ করে চলে গিয়েছিলেন এবং ঠন্ডা হওয়ার পূর্বেই তিনি তথায় ফিরে এসেছিলেন।

 

        এ পর্যায়ে সব বর্ণনা  একত্রিত করলে জানা যায়, রাসুলে করীম (সাঃ) প্রথমে উম্মে হানীর ঘরেই শয়ন করেছিলেন। পরে সেখান থেকে তিনি উঠে মসজিদে হারামে চলে আসেন। এখানে নিদ্রা জাগরণের মধ্যবর্তী অবস্থায় শুয়ে থাকাকালে  তাঁকে তুলে বায়তুল মুকাদ্দাসে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখান থেকেই তাঁর স্বশরীরে মি'রাজ হয়। এইখানে প্রশ্ন জাগে এই সফরের মূল লক্ষ্য যদি উর্দ্ধলোকে  গমন তথা মি'রাজ-ই ছিল, তাহলে সেজন্য মক্কা থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত যাওয়ার এবং সেখান থেকে উর্দ্ধে যাত্রা করার কি প্রয়োজন ছিল? তিনি তো মক্কা থেকেই উর্ধলোকে রওয়ানা হয়ে যেতে পারতেন? প্রশ্নটি নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ এবং তাঁর জওয়াব হওয়া আবশ্যক। এ ইসরা ও মি'রাজ্জের উদ্দেশ্য কি ছিল? আয়াতেই বলা হয়েছেঃ

 

        মি'রাজের ঘটনাটি বস্তুত একটি আসাধারণ মু'জিযা।  এই মু'জিযা ঠিক কবে সংঘটিত হয়েছিল? নির্ভরযোগ্য বর্ণনার ভিত্তিতে বলা যায়, নবুয়ত লাভের দশম বর্ষে কিংবা হিজ্রতের আঠারো মাস পূর্বে মি'রাজ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই ঘটনার বিস্থারিত বিবরণ বুখারী, মুসলিম ও অন্যান্য প্রামাণ্য হাদীসগ্রন্থ্যসমূহে উদ্ধৃত হয়েছে ।যেসব সাহাআবী থেকে এই হাদীসসমূহ বর্ণিত , তাঁদের সংক্যা পঁচিশ পর্যন্ত পৌছেছে। হযরত আনাস ইবনে মালেক, হযরত মালেক ইবনে ছা'দীয়া, হযরত আবু যর  গিফারী ও হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে এ পর্যায়ের সর্বাধিক বিস্তারিত হাদীসসমূহ বর্ণিত হয়েছে। এঁদের ছাড়া হযরত উমর, হযরত আলী, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে  মাসউদ, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস, হযরত আবু সায়ীদ খুদরী, হযরত হুযায়ফা ইবনুল আয়মান, হযরত আয়েশা এবং আরও কয়েকজন সাহাবী (রাঃ) থেকেও  এই দীর্ঘ বিবরণীর কিছু কিছু অংশ বর্নিত হয়েছে।কুরআন মজীদে এই দীর্ঘ মহাসফরের মাত্র একটি পর্যায়ের কথাই বলা হয়েছে। তাঁর অধিক কোন বিস্তারিত বিবরণ তাতে দেয়া হয় নি। হাদীসসমূহে সফরের যে বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়, তাঁর সারনির্যাস হচ্ছে এই যে, হযরত জিব্রাইল (আঃ) নবী করিম (সাঃ)-কে  নিদ্রা থেকে জাগ্রত করে মসজিদে আকসা পর্যন্ত বুরাকে বসিয়ে নিয়ে যাআন। তথায় তিনি অন্যান্য নবীগণের সাথে একত্রে নামায আদায় করেন। হযরত জিব্রাঈলের নির্দেশে তিনিই নামাযে ইমামতি করেন। অতঃপর তাঁর সম্মুখে দু'টি বা তিনটি পানপাত্র হাজির করা হয়। তাঁকে উর্দ্ধলোকে নিয়ে যাওয়া হয় । সেখানে বিভিন্ন মহামান্য নবীগণের সহিত তাঁর সাক্ষাৎ হয়। সর্বশেষে তিনি চূড়ান্ত উচ্চতায় উপনীত হয়ে মহান আল্লাহ্‌র নিকট হাজির হন। এই সময় অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ হেদায়েতের বিধান ছাড়াও পাঁচ ওয়াক্ত নামায ফরজ হওয়ার  বিধান তাঁকে দেওয়া হয়। তারপর তিনি বায়তুল মুকাদ্দাস হয়ে কা'বা ঘরে ফিরে আসেন। বহু কয়েকটি নির্ভরযোগ্য বর্ণনা থেকে জানা যায়, এই সফর ব্যপদেশে তাঁকে জান্নাত ও জাহান্নামও দেখিয়ে দেয়া হয়।

 

         হাদীসে মি'রাজের যে বিস্তারিত বিবরণ উদ্ধৃত রয়েছে, তা কুরআনের কথার অন্ত্ররভুক্ত এবং তা জকোঙ্ক্রমেই কুরআন বিরোধী নয়।  তা কুরআনের সংক্ষিপ্ত কতাহ্রই বিস্থারিত রূপ বা ব্যাআখ্যা মাত্র। কাজেই তা বিশ্বাস করা ঈমানের ঐকান্তিক দাবী। অন্তত কুরআনের কথাটুকু অবিশ্বাস করা যে যে সুস্পষ্ট কুফরী, তাতে কোন সংশয় বা দ্বিমত নেই। আর এই আয়াতটি যে বাস্তবিকই অসাধারণ ও অস্বাভাবিক ধরণের ছিল, তাঁর প্রমাণ কুরআনের উপরোদ্ধৃত আয়াতের ভাষাতেই বিদ্যমান।এই ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল মহান আল্লাহ্‌ তা'আলার নিজস্ব অসীম অনন্ত উদরাতের বলে।এটা সাধারণ স্বপ্নে দেখার কোন ঘটনা নয়। কোন আধ্যাত্মিক পর্যায়ের ও কাহশফযোগে দেখার কোন ব্যাপারও নয় এটা। কেননা স্বপ্নে দেকাহ্র এত বড় গুরুত্ব হতে পারে না, যার বর্ণনা এইরূপ ভাষায় শুরু করতে হবে। মূল ঘটনার উল্লেখ করার পূর্বে এই ধারণা দেওয়া হয়েছে যে, আল্লাহ্‌ তাআ'আলা মহান, সর্ব প্রকারের দোষত্রুটি ও দূর্ব্লতা থেকে মুক্ত ও পবিত্র। সেই মহান আল্লাহ্‌ই তাঁর অসীম কুদরতে তাঁর প্রিয় বান্দাকে এইরূপ স্বপ্ন দেখিয়েছেন বা আধ্যাত্মিক জোরে এই 'কাশফ' করিয়েছেন-এইরূপ বলার কোনই অর্থ হতে পারে না। কেননা স্বপ্ন দেখা তো সাধারণ ব্যাপার।কত মানুষই দিন রাতে স্বপ্নযোগে কত বড় বড় ব্যাপার দেখে থাকে। তাঁর বর্ণনায় এরূপ ভংগী গ্রহণ করার কোনই প্রয়োজন হয় না। মুলত ব্যাপারটি অত্যন্ত সাধারণ ও অস্বাভাবিক ছিল বলেই এইরূপ ভাষায় কথাটি বলা হয়েছে। তাছাড়া'একরাত্রে তিনি তাঁর বান্দাকে নিয়ে গেলেন' কথাটি থেকেই স্পষ্ট বোঝা যায়, এটা পুরোপুরি স্বশরীরের সফর ছিল, কোন স্বপ্ন ছিল না, আত্মিক আশফ ছিল না। কেননা তাঁর বর্ণনায় এরূপ ভাষা ব্যবহৃত হওয়া কোনক্রমেই স্বাভাবিক নয়। কাজেই এট যে কোন আধ্যাত্মিক অভিজ্ঞতা ছিল না, ছিল দৈহিক প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষ্ণ পর্যায়ের এবং নিদ্রিতাবস্থায় নয় পূর্ণ জাগ্রত ও সচেৎন অবস্থায় হয়েছিল, আল্লাহ্‌ তা'আলা স্বীয় কুদরতে  দৈহিক ও শারীরিক ভাবে এরূপ পর্যবেক্ষণ করিয়েছেন, তাতে আর কোনই সন্দেহ থাকতে পারে না।

 

        মি'রাজের ঘটনার বর্ণনা থেকে একটা ধারণা জন্মিতে পারে। আর তা হচ্ছে আল্লাহ্‌ বুঝি বিশেষ কোন এথানে  বা এলাকায় অবস্থান করছেন এবং সেখানেই তিনি তাঁর বান্দাকে নিয়ে গিয়েছিলেন। আর সফর বর্ণনায় রাসূলে করীম (সাঃ)-কে জান্নাত ও জাহান্নাম এবং জাহান্নামের কতক  লোককে আযাব পেতে দেকাহ্নো হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, জান্নাত জাহান্নাম তো কেয়ামতের পরবর্তী ব্যাপার এবং তখনই কাউকে আজান্নাতী সুখ ও জাহান্নামী আযাব দেওয়ার ব্যাপার ঘটতে পারে। ভবিষ্যতে অনুষ্ঠিতব্য সেই ব্যাপার আগাম দেখানো কিরূপে সম্ভবপর হতে পারল? আর এতে বাস্তবতাই বা কতখানি?

 

        আসলে চিন্তাশক্তির সব্লপ্তা ও সংকীর্ণতার দরুনই এই ধরনের চিন্তার উদ্রেক হয়ে থাকে। কেননা মহান আল্লাহ্‌র তো কোন নির্দিষ্ট অবস্থান নেই। কিন্তু সৃষ্টির তা আছে, মানুষ তো সীমাবদ্ধ স্থান ও পরিবেশ নির্ভর।

 

        বিশ্বনবী হযরত রাসূলে করীম(সাঃ) আলোচ্য মি'রাজও এই ধরনেরই এক প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণমূলক অন্তরীক্ষ পরিক্রমা। এই পরিক্রমা কোনরূপ বস্তুগত বাহন ব্যতীতই সুসম্পন্ন হয়েছিল। মক্কা থেকে বায়তুল মুকাদ্দাস পর্যন্ত পরিক্রমার কথা কুরআন মজীদে আল্লাহ্‌র নিজ ভাষায়ই স্পষ্টভাবে বলে দেয়া হয়েছে। আর তাঁর পরবর্তী অনন্ত ঊর্ধ্বলোক  পরিক্রমার কথা কুরআনে  বলা হয়নি, বলা হয়েছে হাদীসে। এই পরিক্রমাও কোনরূপ বস্তুুগত যান-বাহন-উড়োজাহাজ বা রকেট ছাড়াই সম্পন্ন হয়েছে। কুরআন ও হাদীসে ে কথা বলা হয়নি যে, হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) নিজ শক্তিবলে এই পরিক্রমা করেছেন। বলা হয়েছে, আল্লাহ্‌ নিজেই তাঁকে এই পরিক্রমাইয় নিয়ে গিয়েছেন,পরিক্রমাআ করিয়েছেন। হাদীসে যান-বাহন রূপে 'বুরাক'- ের উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু এই বুরাক বস্তুতই কি জিনিস, কি তার রূপ, আকার আকৃতি, তা স্পষ্ট করে বলা হয়নি। তবে তা অতি প্রাকৃতিক ধরেন বাহন।  (সমাপ্ত)

 

*****