সম্পাদকীয়
শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্যে চাই সর্বোচ্চ সহনশীলতা
জুলাইয়ের ১৫ তারিখ পূর্ণদিবস হরতাল পালিত হলো।বাংলাদেশে এটি কোন নতুন আনুখা জিনিস নয়। বর্তমান সরকারই ক্ষমতায় আসার আগে নির্বাচিত গণতান্ত্রিক একটি সরকারের বিরুদ্ধে ১৭০ দিনের মতো হরতাল করেছে। ঢাকায় শিক্ষামন্ত্রীর উপস্থিতিতে শিক্ষা কমিশনের এক সভায় ইসলামী শিক্ষা ও ইসলামের মহানবী হযরত (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে অনেক বক্তাই বিরূপ মন্তব্য করেন। হযরত নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সম্পর্কে বিষোদগার'ও করা হয়। এর প্রতিবাদ করে দোষী ব্যক্তিদের শাস্তি দাবি করে অনেকগুলো রাজনৈতিক দল হরতাল" আহবান করে। এতে জনগণের অনুভূতির ছোঁয়া লক্ষ্য করেই অন্যান্য প্রায় সকল দল এ হরতালের প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করে। হরতাল পালিত হয়, স্মরণকালের সফলতম হরতাল রূপে।
কিন্তু এ জনগণ অনুভূতিঋদ্ধ গভীর বিশ্বাস ও ভালোবাসার প্রতিবাদে, প্রতীকি হরতালে বর্তমান সরকার একাকার হতে পারে নি। হলে কিন্তু সব ল্যাঠাই চুকে যায়। কিন্তু চুকেই যদি যাবে তাহলে আর ল্যাঠা' বলবে কাকে?
এক শ্রেণীর সাংবাদিক বুদ্ধিজীবীও এ জনগণমন ঘনিষ্ঠ বিষয়টিকে সঠিক পথে সহজ গ্রহণযোগ্যতায় নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। এই বাংলাদেশে একদিনের হরতালের বিপক্ষে জনমত গঠনের লক্ষ্যে একাধিক টিভি প্রোগ্রাম যেমন ছিল কল্পনাতীত তেমনি হরতালের দিন শান্তিপূর্ণ শোভাযাত্রায় পুলিশের অহেতুক নির্যাতনও ছিল চরম অস্বাভাবিক। অবশ্য ঘটনার সূর্যপ্রমাণ বাস্তবতায় এবং কর্মসূচীর শতকরা ১০০ ভাগ সাফল্যের জালায় সংবাদপত্র গুলো হরতালের বিষয়টিকে হজম করে ফেলতে পারে নি। যেমন তাদের অনেকেই এ দেশের ধর্মীয় আন্দোলন ও ইসলামী পুনর্জাগরণবাদী প্রতি গণসংগ্রামকে বেমালুম গায়েব করে দিয়ে থাকে তাদের বুদ্ধিবৃত্তি, গবেষণা ও সাংবাদিতা থেকে।
আর হরতালের পর শুরু হয়ে যায় একশ্রেণীর লোকের লাগামহীন বাগাড়ম্বর। যেন তারা এ দেশে কোন গৃহযুদ্ধ বাধাতে আদাজল খেয়ে নেমেছে। এক পর্যায়ে পরিস্থিতি যখন সুসহনীয়, তখনই সংঘটিত হলে রাষ্ট্রপতি-খতিব ট্রাজেডি। ধর্মপ্রতিমন্ত্রী, ধর্মসচিব, ইসলামী ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ, আওয়ামীলীগ, বাম রাজনৈতিক শক্তি, গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্ৰীমন্ডলী, আওয়ামী ঘেষা মুক্তিযোদ্ধা থেকে নিয়ে মুখচেনা সকল কলামিষ্ট ও সংবাদপত্রী কোমর বেঁধে নেমে পড়লেন একজন মাত্র খতীবের বিরুদ্ধে। অথচ রাষ্ট্রপতির উপস্থিতিতে সংঘটিত এমন ঘটনাও এদেশে নতুন নয় আর এর সাথে খতীব সাহেব বা অন্যান্য ইসলামী ব্যক্তিত্ব জড়িত হওয়ার বিষয় প্রমাণিত নয়।
ধর্মপ্রতিমন্ত্রী অভিযোগ করলেন, খতীব সাহেবের ইঙ্গিতে রাষ্ট্রপতির অনুষ্ঠান পণ্ড হয়েছে। খতীব বলছেন, এ অভিযোগ সত্য নয়। দেশে সরকার আছে, আইন আছে, আদালত আছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। মন্ত্রীবর্গ উপস্থিত থেকে দলীয় কর্মীদের অনুপ্রাণিত করলেন ব্যক্তি খতীবকে প্রতিহত করতে । এক অত্যাশ্চর্য রাজনৈতিক অনিয়ম ও অবোধগম্য বালখিল্যতা। অথচ নিয়মতান্ত্রিক পন্থা অবলম্বনই ছিল শাসকদলের মর্যাদাগত অবস্থানের দাবি।
কেউ বললেন, মৌলবাদীদের ঝাড়ে-বংশে নিপাত করতে হবে ।কেউ বললেন, এই মসজিদকে ইহুদীমুক্ত করতে হবে। কেউ বললেন, কাকরাইল ও বায়তুল মোকাররম মসজিদ সন্ত্রাসী ও খুনীদের আস্তানা। ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়তে হয়,বাংলাদেশের নাগরিক ও সরকারের মধ্যকার সম্পর্ক কী করে এমন দুঃসহ পর্যায়ে চলে যেতে পারলো! দেশের কোটি মানুষের শ্রদ্ধেয় আলেম-ওলামা, খতীর, পীর-মাশায়েখ ও রাজনীতিকদের এক তুড়িতে মৌলবাদী, সন্ত্রাসী, খুনী ও ইহুদীবাদী আখ্যা দেয়ার মতো দুমতি কেমনে হলো দেশ, রাষ্ট্র ও সরকারের কর্ণধারদের?
সরকারী দায়িত্বে নিয়োজিত উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের বিবেক বুদ্ধিও কি অতি সাধারণ মোটা বুদ্ধির লোকজনের চেয়ে উন্নত হওয়া উচিত নয়? তারা কি জানেন না, দেশে অশান্তি সৃষ্টি করা সহজ কিন্তু শান্তি, স্থিতি, সহযোগিতা ও সম্প্রীতি সৃষ্টি করা খুবই দুঃসাধ্য? আল্লাহ তুমি মানুষের অন্তরের মালিক। তুমিই আমাদের সকলকে সুমতি দিতে পার।
একশ্রেণীর সংৰাদপত্র ও সরকার নিয়ন্ত্রিত প্রচার মাধ্যম এ বিষয়কে বিকৃত ও বিস্তৃত করে গোটা জাতির মাঝে ঘৃণা, বিদ্ধেষ ও ফাটল তৈরির যে উদ্ধত ভূমিকা নিয়েছে তা কোন স্বাধীন,উন্নয়নকামী ও স্থিতিপ্রত্যাশী জনগোষ্ঠীর পক্ষে কখনোই কাম্য হতে পারে না।সংবাদপত্র, রাজনীতিবিদ ও দায়িত্বশীলদের অতি সতর্ক ও উচ্চ বিবেচনাপ্রসূত দূরদর্শী প্রজ্ঞাপূর্ণ এবং আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতার সদ্ব্যবহারের চেতনায় সমৃদ্ধ সিদ্ধান্ত এ মুহূর্তে জাতি আশা করে। আর আন্দোলনকারী প্রতিটি গণতান্ত্রিক শক্তির নিকটও আশা করে শিষ্ট, সুবিবেচিত ও মঙ্গলময় কর্মসূচী। ঐতিহাসিক এক যুগসন্ধিক্ষণ আর সংবেদনশীল পরিস্থিতির দাবিতেই আমাদের সকলকেই আজ সহনশীল হতে হবে। ক্ষেত্র প্রভেদে সহনশীল ও দায়িত্বশীল না হলে আমাদের ভাগ্য বিপর্যয় কেউ রুখতে পারবে না। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।