JustPaste.it

মুহররম ও অন্যান্য মাস সম্পর্কিত ভুল ধারণার সংশোধন

হাকিমুল উম্মৎ আশরাফ আলী থানুভী (রাঃ)

=======================================================================

 

       মাসাআলাঃ অনেকে মনে করে, মুহররমের দশ তারিখ রোযা রাখা ঠিক নয়। কারণ ইয়াযীদের মা এই দিন রোজা রেখেছিল। এটা সম্পূর্ণ ভুল কথা।

 

       মাসআলাঃ অনেক মূর্খ লোক মুহররম মাসে কবরে তাজা মাটি দেয়া জরুরী মনে করে। এর কোন ভিত্তি নেই।

 

       মাসআলাঃ অনেকে মুহররম মাসে জন্মগ্রহণকারী শিশুকে হতভাগা মনে করে। এটাও ঠিক নয়।

 

       মাসআলাঃ অনেকে মুহররম মাসে বিবাহ ইত্যাদি নাজায়েজ বলে মনে করে। এটাও নিতান্ত ভুল ধারণা।

 

       মাসআলাঃ অনেকে মনে করে, মুহররম মাসে কারবালা শহীদদের আত্মাসমূহ পৃথিবীতে আগমন করে। আর এজন্য তারা তাযিয়ার উপর নৈবেদ্য উৎসর্গ করে এবং তার সামনে মাথা নত করে। এসব কাজ শিরক এর অন্তর্ভুক্ত ।

 

       মাসআলাঃ অনেকের বিশ্বাস, তাযিরায় ওপর হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) শুভাগমন করেন।আর এ কারণেই তারা তাতে নযর নেয়ায রেখে দেয়। এটা নাজায়েয এবং এই নযর নিয়ায খাওয়া সম্পূর্ণ হারাম।

 

       মাসআলাঃ তাযিয়ার সামনে মানুষ হাতবেধে দাড়িয়ে থাকে। কখনো সেদিকে পিঠ দেয় না। তারা তাযিয়া দেখাকে হোসাইন(রাঃ)-এর যিয়ারত মনে করে এবং আরো নানা ধরণের এমন বাজে আচরণ করে যা সুস্পষ্ট শিরক। এসব দৃষ্টিকোণ থেকে তাযিয়া হলো পৌত্তলিকদের মত মনগড়া দেবতা পূজা করার সমতুল্য। যে প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেছেনঃ “তোমরা কি মনগড়া দেবতার পুজা করছ?”

 

       মাসআলাঃ অনেকে মুহররম উপলক্ষে শাহাদাত নামা পাঠ করে। কিন্তু স্মরণ রাখতে হবে, যদি তাতে কোন ভুল বর্ণনা থাকে তবে তা পড়া স্পষ্ট নিষিদ্ধ। আর যদি বর্ণনা নির্ভুলও হয় তবুও যেহেতু সকলের এই উদ্দেশ্য থাকে যে, শাহাদাত নামা শুনে মানুষ কাঁদবে। আর বিপদের সময় তা পড়ে ভান করবে কাঁদবে। যা শরীয়াতে জায়েয নেই বিধায় এভাবে শাহাদাত নামা পাঠ করাও দূরস্ত নয়।

 

       মাসআলাঃ অনেক লোক এই মাসে শোক পালন করে থাকে। এটাও ভুল। মুহররম মাসে ইচ্ছাকৃত ভাবে শোক মাতমের আয়োজন করা এবং ছোট শিশুদেরকে বিশেষ পোষাকে সাজানো ইত্যাদি সবই বিদআত ও গুনাহের কাজ।

 

       মাসআলাঃ অনেক লোক মুহররমের শুরু হতে শেষ পর্যন্ত পুরো মাস বিশেষ করে প্রথম দশদিন গানের সুরে হযরত হুসাইন (রাঃ)-এর মর্ছিয়া গেয়ে বেড়ায় এবং একে ছওয়াবের কাজ মনে করা হয়। বলা বাহুল্য যে, এসব কাজ করতে হাদীসে নিষেধ করা হয়েছে। এক হাদীসে রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “দুটি আওয়াজ দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য অভিশাপ ডেকে আনে। একটি হলো আনন্দের সময় গানবাদ্য করা, অপরটি হলো বিপদের সময় বিলাপ করা।

 

       মাসআলাঃ ইসলামের শক্ররা হযরত হুসাইন (রাঃ)-এর শাহাদাতকে এমনভাবে পেশ করে যার ফলে সাধারণ মানুষ শুধু মাত্রই মহররম নয় বরং গোটা মাসকেই ব্যথা ও শোকের মাস বলে ধারণা করে। অথচ শাহাদাতের মর্তবা এতই উঁচু যে, স্বয়ং মুহাম্মদ (সাঃ) ও এই আকাংখা করেছিলেন, মনে চায় যে আমি শহীদ হয়ে যাই, আবার জীবিত হই, আবার শহীদ হই। সুতরাং হযরত হুসাইন (রাঃ) এর জন্য মুহররাম মাসটি মূলতঃ বরকতের মাস। শোকরের মাস নয়।

 

       মাসআলাঃ অনেক অফিস আদালতে দশই মহাররম ছুটি দেয়া হয়। এটা ঠিক নয়। এতে কয়েকটা অসুবিধা রয়েছে। প্রথমতঃ এতে শীয়াদের সাথে সাদৃশ্য সৃষ্টি হয় এবং প্রকারান্তরে তাদের সমর্থন করা হয়। এই দিনে শীয়ারা নিজেদের ধর্মের জন্য প্রাণপন কষ্ট ও মেহনতের কছরত প্রদর্শন করে থাকে। তাই আমাদের পক্ষে তাদের কাজের সাথে মিল রেখে দ্বীনি ও দুনিয়াবী কাজ কর্ম বন্ধ রেখে তথাকথিত সহমর্মিতা প্রদর্শন করা নিতান্তই ভুল এবং একেবারে অযৌক্তিক। তাছাড়া ছুটি পেয়ে বহু মুসলমান ওই দিন শীয়াদের তাযিয়ার শোভা যাত্রা ও শোক অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করে। যাতে নানা ধরণের গুনাহ রয়েছে।

 

তাযিয়া ও শোভা যাত্রা

        প্রশ্নঃ আমি যে শহরে বাস করি সেখানকার অধিকাংশ লোকই শীয়া। তারা মুহররম মাসে তাযিয়া তৈরী করে, মেহেদী ব্যবহার করে এবং বিশেষ ধরণের পতাকা উত্তোলন করে। এই তাবিয়া বানানো এবং এ উপলক্ষে চাঁদা দেয়া জায়েষ হবে কি? অনেকে মনে করে যে, তাযিয়া হলো হযরত হুসাইন (রাঃ)-এর রওযার প্রতিকৃতি। আর এসব নিদর্শনের প্রতিকৃতি তৈরী করা নাজায়েজ নয়। এ ধারণা সঠিক কিনা জানালে উপকৃত হবো।

 

       উত্তরঃ প্রানহীন বস্তুর প্রতিকৃতি অংকন করা জায়েয হবে তখন যখন তাকে কেন্দ্র করে কোনো অন্যায় কাজ সংঘটিত হবে না। অন্যথায় তাও হারাম। আর তাযিয়াকে কেন্দ্র করে যে সব কাজ করা হয় তার সবই গুনাহ ও বিদআত বরং কোনো কোনোটি কুফর এবং শিরকের পর্যায়ে এসে দাড়ায়।

 

        এ কারণে তাযিয়া বানানো নিঃসন্দেহে নাজায়েয। আর যেহেতু অন্যায় কাজে সহযোগিতা করাও অন্যায় তাই এ উপলক্ষে চাঁদা প্রদান করা এবং অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করাও জারিয নয়। যে তাযিয়া নির্মাণ করবে ও করাবে এবং এতে যারা সহযোগিতা করবে উভয় পক্ষই গুনাহগার হবে।

 

        আজকাল বহু সংখ্যক মুসলমান শোক মজলিসে এবং তাযিয়ার মিছিলে তামাশা দেখার জন্য সমবেত হয়। এতে কয়েকটি গুনাহ রয়েছেঃ

 

        (১) প্রথম গুনাহ হলো, এতে সাহাবা ও কুরআনের শক্রদের আচার অনুষ্ঠানে নিজেরকে উপস্থিত ও সম্পৃক্ত করা হয়। তখন তাকে শীয়াদের সাদৃশ্য মনে হয়। হাদীসে উল্লেখিত হয়েছে যে লোক যে জাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করবে সে সেই জাতির অন্তর্ভুক্ত বলেই বিবেচিত হবে।

 

        (২) দ্বিতীয় গুনাহ হলো, এতে ইসলামের শত্রুদের শোভা বৃদ্ধি পায়। আর শত্রুর শোভা-জৌলুস বৃদ্ধি করা মারাত্মক অন্যায়। নবী করীম (সাঃ) বলেছেনঃ কেউ কোনো জাতির শোভাবৃদ্ধি করলে সে তাদের বলেই পরিগণিত হবে।

 

        (৩) তৃতীয় গুনাহ হলো, ইবাদতের কাজ দেখা যেমন ইবাদাত তেমনি গুনাহের কাজ দেখাও একটা গুনাহ। যেখানে পাপের কারণে আল্লাহর আযাব গযব নাযিল হয় সেখানে যাওয়াও মারাত্মক অন্যায়। মোট কথা হযরত হুসাইন (রাঃ) এর শাহাদত উপলক্ষে মাতম করা, কাপড় ছিড়ে মর্ছিয়া পড়া ও শুনা এবং নিছক তামাশা দেখার জন্যে হলেও তাতে অংশ গ্রহণ করা সবই নাজায়েয ও হারাম।

 

       মাসআলাঃ অনেকে যিলকদ মাসে বিবাহ শাদী ইত্যাদি করাকে অশুভ মনে করে। এটা সম্পূর্ণ ভুল। কোনো মাস বা দিনকে অশুভ মনে করা ঠিক নয়।

 

       মাসআলাঃ অনেকে সফর মাসকেও অশুভ মনে করে। এটাও ঠিক নয়।

 

       মাসআলাঃ অনেক মুর্খ লোক জুমার দিন ঈদ হওয়াকে অশুভ মনে করে। এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। বরং এমন হলে এ দিনটিতে দুই বরকতের সমাবেশ হয়েছে বলে মনে করতে হবে।

 

  

 ═──────────────═