হিসাবাহ ফোরামে শাইখ আতিয়াতুল্লাহ আল লিবী রাহিমাহুল্লাহ’র একটি বিস্তৃত সাক্ষাৎকারের একটি অংশে ৯/১১ অপারেশনের ব্যাপারে শাইখের বিস্তারিত মূল্যায়ন এসেছে। তিনি এই যুদ্ধের ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক সম্পর্কে কয়েক পাতা ব্যাপী আলোচনা করেছেন। আমরা নিম্নে পুরো অংশের অনুবাদ তুলে দিচ্ছি-
এক ভাইয়ের প্রশ্ন: মাআল হক
১১ই সেম্পম্বরের আক্রমনকে আপনি কিভাবে মূল্যায়ন করেন? আপনি কি মনে করেন যে শাইখ উসামা হাফিজাহুল্লাহ এবং তাঁর অনুসারীগণ এ ব্যাপারে সঠিক করেছেন নাকি ভুল করেছেন, এ আক্রমনের পর ইতিবাচক এবং নেতিবাচক দিকগুলো কি, আর এর পরবর্তী সময়ে ইসলামী ইমারাহ আফগানিস্তান ও সাধারনত ইসলামী দলগুলো ও বিশেষভাবে মুসলিম রাষ্ট্রে জিহাদী দলগুলোর ব্যাপারে, আপনার দৃষ্টিতে এবং আপনার নিকট যে সংবাদ পৌছেছে ও আপনার অভিজ্ঞতার আলোকে বলবেন?
উত্তর:
হে সম্মানিত ভাই, কথা হলো ১১ই সেপ্টেম্বর নিয়ে, এবং এর মূল্যায়ন, এ বিষটি কঠিন, এবং বিস্তারিত আলোচনার দাবি রাখে। প্রধান প্রশ্ন হলো, শাইখ উসামা এ ব্যাপারে সঠিক এবং যথার্থ ছিলেন কিনা?
এ বিষয়টিকে দৃঢ়তার সাথে বলা আমাদের জন্য কঠিন, কারণ শাইখের সকল জ্ঞাত বিষয়, যোগ্যতা এবং অন্যান্য বিষয়গুলো আমাদের পূরোপুরি জানা নেই। আর এ হামলার পর আমরা শাইখকে বিশেষভাবে এ বিষয়ে কিছু বলতে দেখিনি এবং শোনেওনি। আর এটি ছিল একটি ঐতিহাসিক বড় হামলা, বরং এটি মানব ইতিহাসের টার্নিং পয়েন্ট ছিল। এর উপসর্গ এবং প্রভাব এখনও অব্যাহত রয়েছে, তবে আল্লাহ তা’য়ালা যত দিন চান (ততদিন থাকবে) এর ফলে এখনও যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে, আর এর উপর ভিত্তি করেই বর্তমানের কর্ম পরিকল্পনা তৈরি হচ্ছে।
অতঃপর আল্লাহ তা’য়ালা যদি আমার এবং আপনাদের হায়াতকে বাকি রাখেন, এ বিষয়টির বাস্তবতা এবং এর শিক্ষা জানা যাবে, যেমন সমস্ত ইতিহাস তার পরবর্তী সময়ে জানা গেছে। তারপরও আমরা সাধারণভাবে যা দেখেছি তা হলো, এই আক্রমনটি কল্যাণকর ছিল, এবং এটি একটি বিজয়। প্রশংসা ও অনুগ্রহ আল্লাহ তায়ালারই।
আর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যে সম্পর্কে আমি পুর্বেই ইশারা করিছি, অর্থাৎ আমরা আমাদের ভাইদের সাথে থাকব, চাই তারা সঠিক করুক বা ভুল করুক..! এবিষয়ে প্রতিষ্ঠিত ফিকাহ অনুযায়ী।
এ বিষয়ে মুলনীতি হলো, আল্লাহ তা’য়ালার বানী,
يَسْأَلُونَكَ عَنِ الشَّهْرِ الْحَرَامِ قِتَالٍ فِيهِ قُلْ قِتَالٌ فِيهِ كَبِيرٌ وَصَدٌّ عَن سَبِيلِ اللّهِ وَكُفْرٌ بِهِ وَالْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَإِخْرَاجُ أَهْلِهِ مِنْهُ أَكْبَرُ عِندَ اللّهِ وَالْفِتْنَةُ أَكْبَرُ مِنَ الْقَتْلِ وَلاَ يَزَالُونَ يُقَاتِلُونَكُمْ حَتَّىَ يَرُدُّوكُمْ عَن دِينِكُمْ إِنِ اسْتَطَاعُواْ وَمَن يَرْتَدِدْ مِنكُمْ عَن دِينِهِ فَيَمُتْ وَهُوَ كَافِرٌ فَأُوْلَـئِكَ حَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ فِي الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ وَأُوْلَـئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
অর্থঃ লোকে আপনাকে মর্যাদাপূর্ণ মাস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, তাতে যুদ্ধ করা মহাপাপ, কিন্তু মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে ফিরিয়ে রাখা, তার বিরুদ্ধে কুফুরী পন্থা অবলম্বন করা, মসজিদুল হারামে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা এবং তার বাসিন্দাদেরকে তা থেকে বের করে দেওয়া আল্লাহর নিকট আরো বড় পাপ। আর ফিতনা তো হত্যা অপেক্ষাও গুরুতর জিনিস। তারা (কাফিরগণ) ক্রমাগত তোমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকবে, এমনকি পারলে তারা তোমাদেরকে তোমাদের দ্বীন থেকে ফেরাতে চেষ্টা করবে। যদি তোমাদের মধ্যে কেউ নিজ দ্বীন পরিত্যাগ করে এবং কাফির অবস্থায় মারা যায়, তবে এরুপ লোকের কর্ম দুনিয়া ও আখিরাতে বৃথা যাবে। তারাই জাহান্নামী। তারা সেখানেই সর্বদা থাকবে। সূরা বাকারা ৩:২১৭
আর বর্তমানে আমাদের জিহাদ হচ্ছে ক্রসেডার এবং তাদের দোসরদের সম্মিলিত শক্তির বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে মোল্লা মুহাম্মদ ওমার হাফিযাহুল্লাহ এবং সাধারণ তালেবানদের অবস্থা বিবেচনা করুন, কারণ তারা এই মহান আক্রমনের কারণে এমন মসিবতে পড়েছে, যেমনটি অন্য কেউ কোন স্থানে পতিত হয়নি। তাদের উপর আপতিত হয়েছিল, দুর্দশা, ক্ষত, লাঞ্ছনা, বিপর্যয়, দুঃখ এবং পেরেশানি। এতকিছুর পরও আল্লাহ তা’য়ালা তাদের অন্তরকে আলোকিত করেছেন, এর উপর জমিয়ে দিয়েছেন এবং তাদের অন্তরসমূহে বর্ষন করেছেন, রহমত, দ্বীনি সঠিক জ্ঞান। ফলে তারা কোন আক্রমন সম্পর্কেই কোন প্রশ্ন উত্থাপন, আপত্তি বা অভিযোগ করেননি বিষয়টিকে ঘুরিয়ে দেননি বরং কাজ করে যাচ্ছেন। আমরা তাদের প্রতি এমনটাই ধারণা করি, আল্লাহ তা’য়ালাই তাদের জন্য যথেষ্ট।
আমরা আল্লাহ তা’য়ালার নিকট দু’আ করি তিনি যেন তাদেরকে সাহায্য করেন এবং তাদের সামর্থকে বাড়িয়ে দেন।
যদি কোন প্রশ্নকারী প্রশ্ন করেন “এটি ভুল সংশোধন করা এবং এব্যাপারে চুপ না থাকার মূলনীতির পরিপন্থী” এ কথার প্রবক্তা কিছু মানুষ।
এর উত্তর হলো, যদি তাদের কথা সঠিকও হয়, এক্ষেত্রে শাইখ এবং তার সাথীবর্গের জন্য অপারগতা মনে করার সুযোগ রয়েছে, বরং আমাদের জন্য এটা সহজ, আলহামদুলিল্লাহ।
শাইখ উসামা হাফিজাহুল্লাহ এবং তার পরাজয় ও বিজয় সম্পর্কে আপনার জানায় ত্রুটি থাকতে পারে, যে তিনি সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভুল করেছেন, এবং তার আমীর (আমীরুল মুমিনিন) এর নাফরমানী করেছেন। এবং তিনি এক্ষেত্রে পরামর্শ সভা গঠন করেননি।(এ সবগুলোর সম্ভবনা রয়েছে)
তারপরেও!
মনে করুন এটি আপনি জেনেছেন এবং বুজেছেন (আপনি কক্ষনো এটি নিশ্চিত করতে পারবেন না, বরং আপনার অনেক প্রশ্ন থেকে যাবে এবং আপনার অনেক পরস্পর বিরোধী ধারনা অথবা সন্দেহ থেকে যাবে।) এরপরও কি চাওয়ার থাকবে?
আপনি আমরিকার সাথে একাত্মতা ঘোষনা করবেন? এটি আন্তর্জাতিক জোটকে সমর্থন করে “সন্ত্রাসবাদের” বিরুদ্ধে? নাকি আপনার মুসলিম ভাইদের সাথে একাত্মতা ঘোষনা করবেন, এবং আল্লাহ তা’য়ালা ও মুসলিমদের শত্রুদের বিরুদ্ধে তাদের সাহায্যকারী ও সহযোগী হবেনা। আর আপনি আপনার সামর্থ অনুযায়ী আল্লাহর রাহে জিহাদে অংশ গ্রহণ করবেন। একই সাথে আমরা আপনাকে পরমর্শ দিব এবং গাইড করব, আপনার জন্য আবশ্যক আল্লাহ তা’য়ালার সকল আদেশের ব্যাপারে সচেষ্ট হওয়া, যেমন সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ করা, আমলের হিসাব নেয়া, সংশোধন করা, শিক্ষা দেয়া এবং আল্লাহর দিকে দাওয়াত দেয়া ?
যদি আপনি প্রথমটি পছন্দ করেন, তাহলে পরীক্ষায় ফেল করলেন, এবং আপনার ইতিহাসের জ্ঞান আপনার কোন উপকারী হলো না, সাদা-কালোর মাঝে কোন পার্থক্য করতে পারলেন না। বরং এ জ্ঞান আপনার জন্য ক্ষতিকর এবং অপকারী জ্ঞান, অচিরেই দুনিয়া ও আখিরাতের সুস্পষ্ট ক্ষতিগুলো জানতে পারবেন। এবং অচিরেই আপনি ইতিহাসের আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হবেন, যার মাধ্যমে আপনি ইতিহাসের পাতাকে কালো করবেন, ফলে আপনি বোকা এবং অজ্ঞ বলে বিবেচিত হবেন !
আর আমরা আপনাকে কুফর ও ইসলাম থেকে বের হওয়ার হুকুম দিব, এবং আপনাকে আমাদের শত্রুদের অন্তর্ভূক্ত মনে করব। এবং আপনার বিরুদ্ধে সেভাবেই যুদ্ধ করব যেভাবে অন্য সকল শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করি, আল্লাহ তা’য়ালা আমাদেরকে যেভাবে দেখিয়েছেন, এবং আমাদের জন্য যে পথ খুলেছেন।
আপনার অভিমত কি?
সুতরাং একজন মুসলিমের জন্য দ্বিতীয়টি অবলম্বন করা ছাড়া আর কোন পথ নেই।
এরপরও ঐ ব্যক্তির বিষয়টিতে আপনার প্রশ্ন থাকবে, আপনি তাকে ভুল মনে করবেন, এর চাইতে আশ্চর্য হতে পারেনা, আপনাকে এমনি আশ্চর্য করবে, সুতরাং এ বিষয়ে আমাদের কোন সামর্থ নেই। আর আমরা আপনার উপর কর্ম নিয়ন্ত্রক হিসাবে প্রেরিত হইনি, এটা আপনার বিষয়।
কিন্তু আপনার জন্য আবশ্যক হলো, মুমিনদের সাথে থাকা এবং কাফেরদের বিরোধী হওয়া।
আল ওয়ালা ওয়াল বারা (আল্লাহর জন্য বন্ধুত্ব, আল্লাহর জন্যই শত্রুতা)।
এটি বড় এবং একটি কঠিন পরীক্ষা যা ৯/১১ এর আক্রমনের সময় এবং এর পরবর্তীতে স্পষ্ট করে দিয়েছে কে সফল আর কে বিফল?
আল্লাহ তা’য়ালা মুমিনদের অভিভাবক. মহা মহিয়ান আল্লাহ তা’য়ালার সাহায্য ছাড়া আমার কোন শক্তি ও সামর্থ্য নেই।
আমরা প্রশ্নের দিকে ফিরে যাই, আমাদের ধারনা মতে এ আক্রমনের প্রভাব জিহাদী দলগুলোর উপর, তার অধিকাংশ অথবা অনেক বেশি পড়েছে। চাই তালেবান হোক অথবা অন্য কোন (আরবী বা আজমী) জিহাদী দল হোক। ভবিষ্যতে আপনার যদি মনে হয়, তাহলে আপনার সুযোগ আছে তা বিশ্বাস না করার আর যদি অপেক্ষা করেন তাহলে জানতে পারবেন খুব কমই এর উল্টো বা বিপরীত হয়।
আপনার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, তালেবান চাই রাষ্ট্র হোক বা অর্ধ রাষ্ট্র হোক, এর পতন হয়েছে..!
অন্যান্য দলগুলো হয়তো পরিপূর্ণ অথবা প্রায় পুরোটার পতন হয়েছে..!
এ ছাড়া নিহত হওয়া, বন্দি হওয়া, যা তাদের অন্যান্য সদস্যদেরকে পেরেশান করে তুলেছে, এরকম আরো অনেক বিষয় রয়েছে যা অতিসাম্প্রতিক সময়ে অতুলনীয়..!
এমনকি আমাদের ভাই শাইখ আবু মুসআব এর নাম দিয়েছেন, আল উখদুদ বা গর্ত!
কিন্তু দুরবর্তী সময়ে আমরা আশা করছি এটা উত্তম হিসাবে বিবেচিত হবে, যেমনটি আমি ইঙ্গিত করেছি, সামনেও এ আলোচনা আসছে ইনশাআল্লাহ।
অচিরেই আমি ইরাক, আল জাজিরা, সাহারা এবং অন্যান্য দেশ সম্পর্কে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। এমনিভাবে বর্তমানে তালেবান ও আফগানিস্তান সকল নিদর্শন ও মানদন্ড নিয়ে আলোচনা করব।
মোটকথা এটি একটি ঐতিহাসিক বিবর্তন, আর ঐতিহাসিক বিবর্তন অধিকাংশ সময় কঠিন হয়ে থাকে, এবং তাতে থাকে কাঠিন্য, এর আঘাতটাও বড় এবং নিষ্ঠুর হয়।
আল্লাহ তা’য়ালাই ভালো জানেন।
আল্লাহ তা’য়ালার কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করি, এবং তার নিকট তার দয়া ও রহমত কামনা করি।