JustPaste.it

হাকীমুল উম্মত রহঃ এর মনোনীত কাহিনী

-অনুবাদঃ মাঃ আঃ মাহদী

==============================================================

একজন মুরিদের স্বপ্ন:

          জৈনক মুরিদ তার পীরকে বলেন আমি স্বপ্নে দেখেছি যে আপনার আঙ্গুলগুলো মধু মাখা, এবং আমার আঙ্গুলগুলো ময়লাভরা!

          অপেক্ষা না করে পীরসাহেব তাকে বললেন! ঠিক দেখেছো আমিতো এমনই! আর তুমি তো অমন! (তোমার আত্মা যে ক্লেদাক্ত একথা তারই ইঙ্গিত বহন করে।)

          মুরিদ বললেন হুজুর! আমার স্বপ্ন বলা এখনো শেষ হয়নি। অতঃপর দেখি যে আপনি আমার ময়লাভরা ক্লেদাক্ত আঙ্গুলগুলো চেটে খাচ্ছেন! আর আমি আপনার মধুমাখা আঙ্গুলগুলো চুষে খাচ্ছি!

          একথা শুনে পীরসাহেব রাগতঃস্বরে মুরিদকে বললেনঃ খবিশ বের হও এখান থেকে! মুরিদ পীর সাহেবকে বললেন হুজুর বের হয়েতো যাবো! কিন্তু, আমি মিথ্যা বলিনি, যা দেখেছি হুবহু তাই বলেছি!

ইব্রাহিম ইবনে আদহাম এর ঘটনা:

          হযরত ইব্রাহিম ইবনে আদহাম র. বাদশাহী ত্যাগ করে লোকালয় ছেড়ে নির্জনে চলে গেলে, দেশের মন্ত্রী পরিষদ এক জরুরি সভা ডেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করল, যে কোনভাবে তাকে এ রাজত্ব পরিচালনার জন্য ফিরিয়ে আনতে হবে। তাকে ফিরিয়ে আনার জন্য প্রথমে গেলেন প্রধানমন্ত্রী, তিনি যেয়ে দেখেন সম্রাট ইব্রাহিম ইবনে আদহাম ধুলো-ময়লা শরীরে বসে আছেন। প্রধানমন্ত্রী তাকে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বললেনঃ হুজুর! আপনার অনুস্থিতিতে রাজত্বের চরম অরাজকতা ও অস্থিরতা অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। হুজুর আপনি (দেশ ও জনগণের স্বার্থে) পুনরায় রাজদণ্ড হাতে তুলে নিন। তিনি তাকে বললেন এই রাজত্ব ও সাম্রাজ্য তোমাদের জন্য প্রযোজ্য! আমি তোমাদের মঙ্গল কামনা করি। আমাকে আল্লাহতালার আলাদা এক বৃহৎ সাম্রাজ্য দান করেছেন। এ কথা বলেন তিনি তার ছেড়া ময়লা পোশাক এর মধ্য থেকে একটা সুইচ বের করে নদীতে ছুড়ে মারেন। অতঃপর মন্ত্রীকে বললেন আমার এই সুইচটি নদী থেকে তুলে দাও। মন্ত্রী অসংখ্য লোককে সুইচটি তুলে আনার জন্য নদীতে নামিয়ে দেন। বিরাট নদীর বক্ষ থেকে হাজার লোকে ডুবিয়েও সুইচ তুলে আনা সম্ভব কি!? মন্ত্রী সাহেব তুলে আনতে ব্যর্থ হন। ফলে তিনি মন্ত্রী কে বললেন আচ্ছা এবার আমার রাজত্ব অবলোকন কর! এ কথা বলে তিনি সব মাছকে ডেকে বললেন হে মৎছ দল! আমার সুইচটি তুলে দাও!? হাজার হাজার মাছের কেউ স্বর্ণের সুইচ! কেউ রূপ্যের সুইচ নিয়ে হাজির হন। তিনি তাদেরকে বললেন এসব নয়! আমার লোহার সুইচটি খুজে আন! এরই মধ্যে একটি মাছ লোহার সুঁচটি তুলে এনে উপস্থিত হয়। তিনি তার সুইচটি মাছটির মুখ থেকে তুলে এনে মন্ত্রীর সামনে রেখে বললেন দেখেছ এবার আমার রাজত্ব!? ফিরে যাও এবং তোমরা তোমাদের রাজত্ব ও প্রজা পরিষদ নিয়ে সুখে থাকো।

বক্তাদের গল্প রাজি:

          অনেক বক্তা বক্তৃতা করার সময় বহু অলীক কাহিনী ফেঁদে বসেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সম্পর্কেও তারা এরূপ অযৌক্তিক বে-বুনিয়াদ ঘটনার অবতারণা করেন। যা দুঃখজনক!

          জৈনক বক্তা সাহেব কোন এক বক্তৃতায় গাউসুল আজম আব্দুল কাদের জিলানী রঃ সম্পর্কে শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে বলেনঃ জৈনকা বৃদ্ধা গাউসুল আযানের নিকট এসে তাকে অনুরোধ করেন। আমার ছেলেটি মারা গেছে তাকে জীবিত করে দিন। তিনি বললেন সে জীবিত হবেনা। তার হায়াত শেষ হয়ে গেছে বলে সে মারা গেছে।

          বৃদ্ধা বলেন তার হায়াত শেষ না হয়ে গেলে আপনার নিকট আসার কি প্রয়োজন ছিল!? হায়াত শেষ হয়ে যাওয়ার কারনে মরে গেছে বলেই তো তাকে জীবিত করার জন্য আপনাকে অনুরোধ করছি। আব্দুল কাদের জিলানী বঃ এ ব্যাপারে আল্লাহর দরবারে দরখাস্ত করলে সেখান থেকেও এই কথা বলা হয় যে সে আর জীবিত হবে না। তার বয়স শেষ হয়ে গিয়েছিল বলে মৃত্যুবরণ করেছে। তবুও তিনি তাকে পুনর্বার জীবিত করে দেয়ার জন্য অনুরোধ জানান। কিন্তু তার অনুরোধ প্রত্যাখ্যাত হয়। এদিকে বিদ্রোহ কোন কথা শুনতে রাজি নয়! সে তার পুত্রকে জীবিত দেখতে চায়।

          কোন উপায় না দেখে গাউসুল আজম আজরাইলের হাত থেকে মৃতদেহ সমূহের রুহ এর থলেটি ছিনিয়ে আনেন এবং সেটি খুলে ফেলেন। ফলে সব রুহ একে একে দৌড়ে যেতে থাকে এবং সকল মৃত্যু ব্যক্তি পুনর্জীবন লাভ করে।

অতঃপর তিনি আজরাইলকে বলেন একটি রূহ চেয়েছিলাম দাওনি বলে এরূপ করতে আমি বাধ্য হয়েছি। এছাড়া আমার গত্যন্তর ছিল না।

          এক পর্যায়ে আজরাইল আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর নিকট এ অঘটন সম্পর্কে অভিযোগ করলে আল্লাহ তাকে বলেন আমার বন্ধু একটা কাজ করে ফেলেছে আমি তাকে কি বলতে পারি!? সে যা করেছে ঠিকই আছে!

          সুপ্রিয় পাঠক! একেই বলে আজগুবি অলীক কাহিনী।

দৃষ্টি উম্মোচন:

          একজন প্রগতিবাদী মুক্তমনের কবির কথা। তার কথা ও কবিতার ভাষায় তাকে বুজুর্গ বলে মনে হয়।

          জৈনক ব্যক্তি তার কবিতা পড়ে তার নিকট অত্যাত্তিক দীক্ষা গ্রহণের জন্য কবির দেশ ইরানে রওয়ানা করেন। এসে দেখেন ধারালো খুর দিয়ে নাপিত তার দাড়ি মুন্ডাচ্ছে। এ ঘটনা দেখে আগন্তুক চিৎকার করে কবিকে বললেন আপনি দাঁড়ি মুণ্ডচ্ছেন!? জবাবে কবি বলেন দাড়ী মুন্ডন করি বটে! কিন্তু কারো মনে আগাদ দেইনা! মহাপাপ হল কারো মনে আঘাত দেয়া।

          তার এ কথার জবাবে আগন্তুক তাকে বললেন আরে আপনি তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মনে ব্যথা দিচ্ছেন!

          অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন অবহিত হন যে অমুক ব্যক্তি তার সুন্নতের খেলাফ করছে তখন তিনি অবশ্যই ব্যথিত হন!

          কথাটি কবির মনে গভীরভাবে রেখাপাত করে। তিনি তাঁর ভ্রান্ত্রি বুঝতে পারেন। তার আত্মদৃষ্টি উম্মোচিত হয়। এবং তার মুখ দিয়ে কবিতার ভাষায় "স্বতঃস্ফূর্ত উচ্চারিত হয়

জাঝাকাল্লাহু কে চশমাম বা জে করদি,

মুরাবা জানে জাঁ হামরাজে করদি।

          অর্থাৎ আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিফল দান করুন আমি অন্ধ ছিলাম আজ বুঝেছি আমার কাজ দ্বারা আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হৃদয়ে অনেক ব্যাথা দিয়েছি।

বাদশা আলমগীর এবং এক ভন্ড বহুরূপি:

          বাদশা আলমগীর র. তার ক্ষমতা গ্রহণ অনুষ্ঠানের দিন প্রজাসাধারণ কে নিজ হাতে অর্থ দান করেছিলেন। এক বহুরূপী লোক এসে দান গ্রহণের জন্য তার নিকট হস্ত প্রসারিত করে। কিন্তু বাদশাহ আলমগীর দ্বীনদার আলেম ছিলেন বিধায় ভাবছিলেন একে দান করা মোটেই ঠিক হবে না। আবার রাজদরবারের নিয়ম অনুযায়ী তাকে সরাসরি না দেয়ার কথাও বলা যায়না। তাই তিনি তাকে লক্ষ্য করে বললেন ভালো লোকদেরকেই কেবল দান করা যায়! তোমাকে দান গ্রহণ করতে হলে তোমার বহুরূপী হিসেবে পরিচিত আদল খানা পাল্টাতে হবে।

          এ কথার পরে সে পোশাক পাল্টিয়ে আসলেও বাদশাহ তাকে চিনতে পারেন এবং তাকে বলেন ঐদিন তুমি উপহার বা অনুদান গ্রহণের উপযুক্ত বিবেচিত হবে যেদিন তোমার বহুরূপে মানুষ বিভ্রান্ত হবে না। ফলে সে চলে যায়।

          একবার হঠাৎ করে বাদশাকে বিশেষ প্রয়োজনে দক্ষিণ ভারতে সফর করতে হয় ওই বহুরূপীও ঐ এলাকায় এসে দাড়ি রেখে পুরোপুরি বুযুর্গ সেজে আস্তানা গেড়ে বসে এবং অল্প দিনের মধ্যে চতুর্দিকে তার কৃত্তিম বুযুর্গের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। আলমগীরের র. নীতি ছিল তিনি যে এলাকায় যেতেন সে এলাকার আমির ফকির আলীম বুযূর্গ সকলের সাথে সাক্ষাত করতেন। সকলের খোঁজখবর নিতেন! সেখানে পৌঁছার পর তিনি প্রথমে লোকের মুখে ঐ বহুরূপী বুযুর্গের সুনাম শুনে তৎক্ষণাৎ মন্ত্রীকে তার সাথে সাক্ষাত করার জন্য প্রেরণ করেন। মন্ত্রী তাঁর নিকট যেয়ে তাকে আত্মাতিক বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করলো সে তার সুন্দর জবাব দেয়।

          আসলে ঐ লোকটি মানুষকে ধোকা দেওয়ার উদ্দেশ্যে এর মধ্যে তাসাউফের উপর অধ্যায়ন করে এ বিষয়ে অনেক কিছু জেনে নেয়।

          ঠিক ঠিক উত্তর পাওয়ায় মন্ত্রী যেয়ে তার সম্পর্কে শাদশাহর নিকট ভূয়সী প্রশংসা করেন। ফলে বাদশাহও আগ্রহী হয়ে তার সাথে সাক্ষাৎ করতে আসেন। পরস্পরে অনেক কথা হয়। বাদশাহ্ মনে মনে ভাবলেন লোকটি আসলেই কামিল বহু বড় বুজুর্গ। বিদায় নেয়ার পূর্বে বাদশাহ্ তাকে খুশি হয়ে এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা উপহার দেন। লোকটি তা লাথি মেরে পেলে দেয় এবং বাদশাহ্ কে লক্ষ্য করে বলেন আপনি কি নিজের মতো আমাকেও দুনিয়াদার অর্থলোভী মনে করেছেন!? এতে লোকটির বুযুর্গের প্রতি বাদশাহর  আস্থা আরও বেড়ে যায়। নির্লোভ আসলেই প্রশংসার বিষয়! এ গুন লাভ করা কোনো সহজ সাধারণ কাজ নয়! নির্লোভ হতে পারা একটি অসাধারণ ব্যাপার।

          অতঃপর বাদশাহ্ আলমগীর সেনাছাউনিতে চলে আসলে তার পিছনে পিছনে ঐ লোকটিও এসে উপস্থিত হয় এবং বাদশাকে বলে দিন আপনার উপহার। বাদশাহ তাকে মামুলি ধরনের কিছু উপহার দিয়ে বলেন তখন তো উপহার এর পরিমাণ অনেক বেশি এবং মূল্যবান ছিল তা গ্রহণ করেননি কেন? লোকটি বলল তখন তা গ্রহণ করলে আমার অভিনয় ও কৃত্রিমতা আপনার নিকট অপ্রকাশিত থাকতো! দ্বিতীয় ঐ সময় আমার বেশ ছিল বুজুর্গ লোকের আর বুজুর্গ লোকেরা কখনো কোনো দুনিয়াদার বাদশাহর উপহার বহন করেনা। [ক্রমশ] সংকলন -আবুল হাসান আজমী। অনুবাদ -ম, আ, মাহদী।