✪---ভূ-গোলময় পৃথিবী ---
===================================
মোড়লদের অপ-ইংগিতে ঘটছে কি পৃথিবীটায়?
শরীফ মুহাম্মদ
------------------------★
✔এক অক্টোপাশের বজ্র আঁটুনির মধ্যে আজকের মুসলিম জাহান অসহায় ভাবে কাতরাছে। আন্তর্জাতিক ভদ্র শয়তানদের নীল পরিকল্পনা, মুসলিম নেতৃত্বের অসততা ও বিশ্বাস ঘাতকতার যৌথ আয়ােজনে মুসলিম জাহানের গাের যাত্রার ব্যবস্থা প্রায় পাকাপাকি। চোখ-কান খােলা সচেতন মুসলমানগণ এই চরম অসহায়ত্বটা বােধ করছেন পৃথিবীর দেশে-দেশে । কিন্তু তার পরও মুসলিম জাহানকে বিপন্নতার কূলহীন সমুদ্রে ঠেলে নামিয়ে দেয়া সম্ভব হচ্ছে না।কুদরতের চোখ রাঙানির সামনে হাত-পা ছেড়ে দিয়ে আরেক রকম অসহায়ত্বের যন্ত্রণায় কুঁকড়ে কুঁকড়ে যাচ্ছে দানব পৃথিবী ও অপ-সভ্যতা! সকল হিসাব-নিকাশ অতিক্রম করে, নীল পরিকল্পনা আর উজির নাজিরের দাবার চাল ভুল প্রমাণিত করে যা ঘটার ঘটেই চলেছে সময় মত! আল্লাহর ফয়সালা' ও 'আজাল কোন ক্যালকুলেটরের মায়াবী স্ক্রীনে আবদ্ধ হয় না-হয়নি কখনাে। অজেয় শক্তি কুদরতের সেভাবেই এগিয়ে চলেছে পৃথিবী।ইবলিসের ছল-চাতুরি বার বার মার খাচ্ছে, ধরা পড়ছে; কিন্তু তারপরও ইবলিসের গতি রুদ্ধ হচ্ছে না।কারণ এটিও কুদরতেরই সিদ্ধান্ত। ☞দুই গােটা মুসলিম দুনিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের ইহুদী ও মুসলিম শক্তি কেন্দ্রগুলিতে হঠাৎ করেই বেশ কিছু অস্থিরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে ! অশান্তির ভয়াল শকুন উড়াতে উড়াতে উপসাগর ডিঙিয়ে মার্কিন মােড়ল বিল ক্লিন্টন গেলেন জেরুজালেমে। ঐতিহ্য ও পবিত্র ভূমি জেরুজালেম এবং জাজিরাতুল আরবে গিয়ে তিনি কয়েকটি নিষ্প্রাণ সাদা কবুতর গিঁট মুক্ত করে শুন্যে সােপর্দ করলেন। ডিপ্লোমেটিক ঠোঁট নাড়ানাে উল্লাস আর হিংস্র করতালি দিয়ে পৃথিবী কাঁপিয়ে তুললেন। বুঝানাের চেষ্টা করলেন, 'তােমাদের বৈরাগী পি এল ও আর ঘাওড়া জর্দান কে তাে দালাল বানিয়ে ছাড়লুম। এবার হাফিজ-আল আসাদের সাথে করে গেলাম খৈভাজা গল্প । দরকষাকষি করেও সে আমাকে গলাতে পারেনি। সামনে তােমাদের ধরার দিন, হে বিলাসী রাজা-রাজড়ার দল।' একদিকে ইরাকের সীমান্তগামী সেনাদলের অন্যদিকে ইহুদীদের পথ মসৃন করার দাসখতের আয়ােজন নিয়ে ক্লিন্টন গিয়ে ছিলেন গত অক্টোবরে আরবের মরুভূমিতে। কুয়েত আর সৌদীকে হুকুম করেছেন ঝাঁক ঝাঁক মার্কিন শিয়ানাবাহিনীকে দুধ-কলা দিয়ে পােষার জন্য । ‘জো-হুকুম' ধ্বনীতে মুখরিত মরুর বাতাসে এরপর ভাসতে শুরু করেছে বিয়ার আর হুইস্কির তীব্র ঝাঁঝ । সেই ধোঁয়াটে মরুর বাতাসে মার্কিন কর্তা পরবর্তী হুকুম ঝাড়লেন,'ইজরাইলের সাথে এবার তাে কুয়েত আর সৌদী দোস্তি পাতিয়ে ফেললেই হয়। আর কোন ঝামেলা থাকেনা। মার্কিন কর্তার ধারণায় ছিলাে, এরপর আর কোন কায় কাসরতের প্রয়োজন হবে না। সৌদী-কুয়েতের সততা বিচ্ছিন্ন জুব্বাধারী শাসকেরা সহজেই কুপােকাৎ হয়ে যাবেন। কিন্তু বাস্তবে বিষয়টি তেমন ঘটলো না । সৌদী-কুয়েতের শাসকরা ধোঁয়াটে বাতাসের মাঝেও চেহারার বিগলন অক্ষুন্ন রেখেই বুঝিয়ে দিলেন, 'ও কম্মাে হবে না।' বিশ্ব দাবার ঘু'টি চালাচালিতে এই সামান্য বিঘ্নতা লক্ষ্য করে ক্লিন্টন ক্রুড় হাসির আড়ালে লুকিয়ে ফেললেন তার দেখা যাবে’ সূলভ হিংস্র অবয়ব। আকাশে উড়ে ছুটলেন আবার পৃথিবীর বিশালতম দ্বীপের ভূবন-আমেরিকায়। ☞তিন এর কিছুদিন পর একটি মানবাধিকার সংস্থা সৌদী আরবের কয়েক জন বন্দীর মানবাধিকার লংঘিত হচ্ছে বলে খবর উড়িয়ে দিলাে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার ঘন কুয়াশায়। খবরটি উড়তে লাগলাে । সৌদী প্রশাসন কৈফিয়ত দিলে মার্কিনীরা চিকন চিকন বুলি আওড়াতে শুরু করলাে। মিডিয়ার ঢােল-তবলার বাদ্য-বাজনা সৌদী প্রশাসন ও রাজতন্ত্রকে কাঠ গড়ায় দাড় করতে লাগলাে । অথচ অবাক ও লজ্জিত বিবেক মাথায় হাত দিয়ে দেখলাে, মিসরের জিন্দান খানায় শত শত শান্তিবাদী মুসলমানের প্রাণ উজাড় করা আর্তনাদে মার্কিনীরা উল্লাসিত হচ্ছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলি মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে। মেীলবাদের গন্ধ হাতরাতে হাতরাতে পৃথিবীর তাবৎ স্বাধীন আস্তিত্ববাদী, আত্মচেতনাসম্পন্ন মুসলমানকে পিশাচ,ড্রাকুলার প্রতীক হিসাবে উপস্থাপন করতে শুরু করেছে এরাই। আলজেরিয়ার বিজয় ইসলামী শক্তিকে পাহাড়ে-পর্বতে নির্বাসনে পাঠিয়ে বারুদের শাসন চালু করতে এরাই মদদ যুগিয়ে চলেছে। এমনকি এতদিন পর্যন্ত যেই সৌদী শাসকবর্গ দ্বীনদার ও প্রতিবাদী মহলকে কোনঠাসা করেছে, তার জন্য কোন সওয়াল জওয়াব না করে এখন তারাই সৌদী আরবের মানবাধিকার লংঘনের ধোঁয়া তুলছে। মােড়ল জগতের আরেক পিলার ফ্রান্সে এখন মুসলমান মেয়েদের স্কার্ফ ও ওড়না পরতে দেওয়া হচ্ছে না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলিতে নেমে এসেছে শালীনতার উপর বিধি-নিষেধের খড়গ। নারীর সভ্রম ও মর্যাদাকে কোন কৌশল ও ছল-চাতুরির আশ্রয় না নিয়ে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করছে। আবার এরাই একটি 'তসলিমাকীট' নিয়ে নারীর অধিকার' নাটকের মহড়া দিচ্ছে পৃথিবী জুড়ে। ফ্রান্স বহু মুসলমানকে কারা প্রকোষ্ঠে নিক্ষেপ করেছে। বহু বই-পত্র বাজেয়াপ্ত করেছে। জ্ঞান, চিন্তা, বুদ্ধিবৃত্তি ও সত্যের জোয়ার কালাে দুঃশাসনের ভাঙ্গা ব্যারিকেড দিয়ে ফেরানাের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অন্যদিকে, লেখকের স্বাধীনতা গেলাে' বলে চিৎকার দিয়ে উঠছে বিভিন্ন মুসলিম জনপদে। মুসলমানদের প্রাণশক্তির বিরুদ্ধে হায়েনার মত যেসব ডাকাত বুদ্ধি ব্যাপারী কলম চালিয়ে যাচ্ছে, তাদের পেট পুষছে। সারা পৃথিবীর বিবেক আর সচেতন হৃদয় কান্নাতুর চোখে এইসব ভেল্কিবাজী দেখছে। বিবর্তনবাদী মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতা,শান্তি আর সন্ত্রাসের যাবতীয় সংজ্ঞা ও যুক্তি এখন ওদের খোয়াড়ে বন্দী জীবন যাপন করছে। ন্যায়-অন্যায়ের শাশ্বত বিভাজন ওরা নতুন করে শিখাচ্ছে। হাসি আর কান্নার নতুন উপাদান তুলে দিচ্ছে পৃথিবীর সামনে। রসিক মানুষদের এই জান্তর হীংস্র ইন্তেজামের নাম দিয়েছে ‘ডাবল স্ট্যান্ডার্ড'। এই ডাবল স্ট্যান্ডার্ডের পাটাতনের উপর দাঁড়িয়েই ওরা খেলছে সব খেলা। গােলের পর গােল দিয়ে, উইকেটের পর উইকেট ধ্বসিয়ে ভাবছে, 'জয় হামুকা জয়।' একটি বারের জন্যও চিন্তা করে দেখছে না, ওদের এই খেলা না-খেলার, পাতানাে স্টেডিয়ামটাই একদিন ধ্বসে যেতে পারে। ☞চার অল্প ক' দিন ধরে স্যাটেলাইট টিভির স্ক্রীনে বসনিয় মুসলমান ভাইদের জয়ের পর জয় দেখে শুকরিয়ার সিজদায় পড়ছেন মুসলমানগণ; শান্তির বিজয় প্রত্যাশী মানুষ ফেলছেন সস্তির নিঃশ্বাস। কিন্তু আন্তর্জাতিক ধাপ্পাবাজী ও নষ্ট ডিপ্লোমেসীর গতি বিধি সম্পর্কে সচেতন মানুষ শংকামুক্ত হতে পারেননি। কিছু দিন পর আবার দেখা গেলাে, বসনিয়া ও সার্বদের সংকট কে জিইয়ে রাখার জন্যে, মানব রক্তের স্রোতের ভাটা ঠেকানাের জন্য মার্কিন কর্তারা পিছুটান দিয়ে বসেছে। খবর আসছে, বসনিয়ায় জিহাদরত বাংলাদেশী সৈনিক ভাইরা বিপদে আছেন। তাদের সাহায্যের পথ খােলা নেই। দু'দিন পর আবারই হয়তো আশাব্যাঞ্জক সংবাদ আসবে। কিন্তু যেখানে রক্তপাত বন্ধ করে খুব সহজেই সিদ্ধান্তের পথে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব, সেখানে একটি ক্রুড় ক্রুসেড চেতনার ফলে রক্ত ঝরছে, ঝরছে, ঝরেই চলেছে। মানবাধিকারের ইজারাদার মােড়লরা মুসলিম জনসাধারণের এই রক্ত বর্ষণ কে প্রগতি ও সভ্যতার বাগানে পানি বর্ষণ হিসাবে গ্রহণ করেছে। একদিকে আফগানিস্তানে চলছে ষড়যন্ত্রের হলি উৎসব। যুগব্যাপী জিহাদের পর আজ সেভূমির আকাশে দু’টি কপােত কেও ডানা মেলতে দিচ্ছে বিশ্ব পশু চক্র। অন্যদিকে, ওআইসির সম্মেলনে কাশ্মীর সংকট মােড়লদের ভয়ে ফাইল চাপা পড়ছে। জাতিচক্রের ধান্দাবাজী এখানে এসে মুখােশ খুলে ফেলেছে। ভাষাহীন বধিরে পরিণত হয়েছে বিশ্ব টাউট চক্র। সবাই সব বুঝছে তার পরও চোখে পর্দা, মুখে কুলুপ আঁটকে আছে। যেন কারোর কিছুই করার নেই। ছােট ছােট মুসলিম দেশগুলিতে অস্থিরতা, সংকট, অভাব দিন দিন বাড়ছে। বাড়ছে সাম্রাজ্যবাদী মােড়লদের হম্বি-তম্বি। ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণের পিঞ্জরে বেঁধে ফেলতে চাইছে ওরা মুসলিম পৃথিবীকে। নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা' নামের মার্কিন প্রেসক্রিপশান এখন সুস্থ মানুষদের রুগ্ন- বানানাের পর্যায়ে নেমে এসেছে। নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা প্রকল্পের মাঠকর্মীরা এখন সাংঘাতিক সক্রীয় । যেখানে যেই সিরিঞ্জ দরকার, পুশ করে পরক্ষণে মােড়লরা ওঝা হয়ে ঝাড়তে এগিয়ে আসছে। সরল মানুষের দল সবকিছু সহজেই গিলে চলেছেন : স্বাধীন দেশের রাজধানী ঢাকার একটি বাড়াতে একজন কুটনৈতিক রেফারী বাস করছেন বেশ কিছু দিন যাবৎ (১৫/১১/৯৪)। তিনি ষড়যন্ত্র ও কামড়াকামড়ি খেলায় নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় আছেন। বৃষ্টির নীচ থেকে কখন যে তিনি আমাদের কে পানির নালার নীচে দাঁড় করিয়ে দিবেন, কিছুই বুঝা যাচ্ছে না। আমাদের সারল্য ও অসহায়ত্ব এখানেই ! মুর্শিদাবাদের সিরাজকে হত্যাকরে মীর জাফর চক্র স্বাধীনতা বিক্রি করে দিলে ও আমরা দু'মাইল দূরে পরম আয়াশে জীবন-যাপন করি। কিছু বুঝতেও পারি না। যখন বুঝি তখন ঋণের পরিমাণ সুদে আসলে অনেক হয়ে যায়। ☞পাঁচ তথাপি হতাশার পথ আমাদের জন্য রুদ্ধ।আমরা বস্তু ও বাস্তবতা নিয়ে,হিসাব নিকাশ নিয়ে ভাবতে ভাবতে ভুলে যেতে বসি, আমাদের সকল সংকটের মীমাংসা হবে কুদরতের হাতে।কুদরত আমাদের অসহায় চোখে আঙ্গুল রেখে হঠাৎ হঠাৎ দেখিয়ে দেয় একটি সামান্য প্লেগ মহামারী কি নিয়ন্ত্রণহীন শক্তি হয়ে শক্তিমদমত্ত একটি উন্মাদ শক্তিকে থর থর করে কাঁপিয়ে দিতে পারে।একটি বুলেট কিংবা সামান্য বারুদেরও কোন প্রয়োজন হয় না। কুদরত আমাদের হাত ধরে নিয়ে যায় দুনিয়ার মাতব্বর জনপদগুলিতে।সেখানে মানুষেরা কীভাবে যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে,কীভাবে এইডসের মরণ ছোবলে উজাড় হয়ে যাচ্ছে ঘর-বাড়ির বসতি। আমরা সব দেখি।নিয়ন্ত্রণের চৌকিদাররাও আশ্চর্য, অসহায়, নিয়ন্ত্রণহীন,তাই হাবুডুবু খাচ্ছে। পালানোর পথ পর্যন্ত পাচ্ছে না। সে কারণেই সকল সংকট তার বজ্র আঁটুনির মধ্যেও আমরা নির্ভীক ও অবিচল থাকবো।শংকাহীন জীবনের নিশান তো আমাদেরই হাতে। শর্ত শুধু একটিই।আমাদের ঈমান ও আল্লাহ প্রেমের দাবী আমাদেরকেই পূরণ করতে হবে। অন্যথায় নয়।