JustPaste.it

টুকরো টুকরো কথা

 

হারাম খোরীর যন্ত্রণা

 

সফলতা বলতে কী বুঝায়?

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ“এই কিতাব (কুরআন) পথের দিশা দেয় তাদের, যারা আল্লাহকে ভয় করে চলে, বিশ্বাস রাখে গায়েব এর প্রতি, সালাত কায়েম করে এবং আমি তাদের যা কিছু দিয়েছি, তা থেকে ব্যয় করে। এরা বিশ্বাস রাখে সেই কিতাবের উপর, যা আমি আপনার উপর নাযিল করেছি এবং সে সব কিতাবেরও উপর, যা নাযিল করেছি আপনার আগেকার নবীদের উপর। আরো বিশ্বাস রাখে আখিরাতের উপর। এরাই তাদের রব-এর পক্ষ থেকে পাওয়া পথে রয়েছে। এরাই আসলে ‘সফলকাম’।” (সূরাঃ বাকারা, আয়াতঃ১-)

প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের আগে যে আযান দেওয়া হয়, তাতেও ‘ফালাহ’ শব্দটি আছে, যার অর্থ ‘সফলতা’। প্রশ্ন হলো ইসলামে ‘সফলতা’বলতে কী বুঝায়?

পবিত্র কুরআনের যত জায়গায় ‘ফালাহ’ বা সফলতার কথা বলা হয়েছে, সব জায়গায়-ই সফলতা বলতে দুনিয়া-আখিরাত উভয় জগতের কল্যাণকে-ই বুঝানো হয়েছে।

ইমাম রাগিব লিখেছেন, দুনিয়াবী সফলতা হলো, এমন সব উৎকর্ষ সাধন করা, যা দুনিয়ার জীবনকে উন্নত করে তোলে। এর মধ্যে অমুখাপেক্ষিতা ও সম্মান অর্জন অন্যতম। আর পরকালীন সফলতায় রয়েছে চারটি বিষয় (১) এমন স্থায়িত্ব, যা কখনো বিলীন হবেনা, (২) এমন প্রাচুর্য, যাতে অভাবের লেশ মাত্র থাকবে না। (৪) এমন বিদ্যা, যাতে অজ্ঞতার ছোঁয়া থাকবে না। এর নাম প্রকৃত সফলতা।

 

আল্লাহর সঙ্গে প্রতিজ্ঞা

পৃথিবীর তাবৎ মানুষ আল্লাহ তা’আলার সঙ্গে একটি প্রতিজ্ঞা করেছিল। পবিত্র কুরআনের সূরা মায়িদার ১২ নং আয়াতে এ প্রতিজ্ঞার বিস্তারিত আলোচনা রয়েছে। তাতে যে কটি বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে, তন্মধ্যে প্রথমটি হলো, ইকামাতে সালাত তথা নামায কায়েম করা। তারপর যাকাত আদায় করা। এই প্রতিজ্ঞার তৃতীয় দফায় রয়েছে আল্লাহ তা‘আলার সকল নবী-রাসূলের প্রতি ঈমান আনয়ন করা ও তাদের সহযোগিতা করার কথা। চতুর্থ দফায় আছে আল্লাহ তা‘আলাকে উত্তম ঋণ দেওয়ার কথা। মোটকথা, এ হলো, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে শরীয়াতের বিধান মেনে চলার প্রতিজ্ঞা।

এই প্রতিজ্ঞার গুরুত্ব অপরিসীম। দুনিয়া ও আখিরাতের সব রকম সাফল্য নির্ভর করে এই প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী জীবন যাপনের উপর। এই প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করা দুনিয়ার অশান্তি ও আখিরাতের অনন্ত আযাবকে হাতছানি দিয়ে কাছে ডাকার নামান্তর। যেমনঃ উক্ত আয়াতের শেষাংশে আল্লাহ তা‘আলা দৃষ্টান্ত হিসেবে বনী ইসরাঈলের কথা উল্লেখ করেছেন যে, ওদের নিকট থেকেও অনুরূপ প্রতিজ্ঞা নেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তারা পদে পদে কৃত প্রতিজ্ঞা লংঘন করে। ফলে তাদের নানা রকম বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হয়।

অতএব, এই দুনিয়ার জীবনে সফলকাম হতে হলে আমাদের প্রয়োজন আল্লাহর সঙ্গে কৃত সব প্রতিজ্ঞা পূরণ করে চলা। অন্যথায় দুনিয়া আখিরাত দু-ই আমাদের বিফল হতে বাধ্য। পদে পদে আমরা প্রতিজ্ঞা ভংগ করছি, সে হুঁশ কি আমাদের আছে?

 

ইসলামের একটি সৌন্দর্য্য

বিখ্যাত হাদীস গ্রন্থ সুনানে আবু দাউদের সংকলক ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) তাঁর এই কিতাবের একস্থানে ইসলামী জীবন ব্যবস্থার মূলনীতি সম্পর্কিত চারটি মৌলিক হাদীস উল্লেখ করেছেন। তন্মধ্যে একটি হলো, “ইসলামের একটি সৌন্দর্য্য হচ্ছে অবাঞ্চিত কাজ বর্জন করা।”

নিজের জীবন থেকে অবাঞ্চিত ও অহেতুক আচরণ ও উচ্চারণ বর্জন করার অর্থ হলো, লোকটি সঠিক পদ্ধতিতে জীবন যাপন করতে জানে। মানুষের জীবনে যত অনাসৃষ্টি দেখা দেয়, তার অন্যতম কারণ হলো অহেতুক কাজে সময় ব্যয় করা। অহেতুক কাজে মানুষ যে সময়টুকু নষ্ট করছে, তা কল্যাণকর কাজে ব্যয় করে, জীবনে সাফল্য অর্জন করা যেতে পারে।

অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে যে, মানুষ জীবনে যত পাপে লিপ্ত হয়, তার অধিকাংশের-ই মূলে রয়েছে সময়ের অপব্যবহার। অলস ও অবসর মানুষকে শয়তান অতি অনায়াসে কাবু করতে পারে। অপরদিকে কর্মব্যস্ত মানুষ অনাকাংখিত বিষয়ের প্রতি ভ্রুক্ষেপ করার-ই সময় পায় না। আপনার জীবন থেকে আপনি অবাঞ্চিত, অহেতুক কর্মসমূহকে ছুড়ে ফেলুন; বহু পাপ থেকে এমনিতে রক্ষা পাবেন। তাই প্রিয় নবী (সাঃ) অবাঞ্চিত কাজ বর্জন করাকে ইসলামের সৌন্দর্য হিসাবে উল্লেখ করেছেন।

 

মর্যাদার মাপকাঠি

হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, নবী করীম (সাঃ) বলেছেন,“কিয়ামতের দিন এমন এক ব্যক্তিকে উপস্থিত করা হবে, দৈহিক দিক থেকে যে অনেক মোট-তাজা ও নাদুস-নুদুস হবে। কিন্তু আল্লাহর নিকট তার ওজন মাছির একটি পালকের সমানও হবে না।”

হাদীসটির মর্ম হলো, নিজের বাহ্যিক রূপ-সৌন্দর্য্য, শরীর-স্বাস্থ্য, শক্তি-সামর্থ, পদমর্যাদা ও ধন-দৌলত গৌরবের বিষয় নয়। আল্লাহর নিকট এসব মাছির পালকের চেয়েও তুচ্ছ। প্রকৃত দেখার বিষয় হলো নিজের কর্ম। দেখতে হবে, আমি আল্লাহর নির্দেশিত পথে চলছি কি না। মানুষের নেক আমল-ই কেবল আল্লাহর নিকট গুরুত্ব পায়। বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি, যে আল্লাহর কাছে মর্যাদাবান হওয়ার চেষ্টা করে।

 

ইসলামী অনৈসলামী বিবাহ

দু’টি ইবাদত এমন রয়েছে, যা হযরত আদম (আঃ) থেকে’ শুরু করে কিয়ামত পর্যন্ত এমনকি জান্নাতেও তার কার্যকারিতা অবশিষ্ট থাকবে।

ইবাদত দু’টি হলো, ঈমান ও বিবাহ।

আমাদের প্রিয়নবী (সাঃ) বলেছেন,“বিবাহ আমার আদর্শের একটি, (অর্থাৎ বিবাহ ইসলামের অবশ্য পালনীয় বিষয়।) যে লোক আমার আদর্শ থেকে বিমুখ হলো, সে আমার দলের লোক নয়।”

কিন্তু বিবাহ নামক নবীজির এই গুরুত্বপূর্ণ বরকতময় আদর্শের মধ্যে আমরা নানা রকম কুসংস্কার ঢুকিয়ে একে রীতিমত একটি মহাবিপদে পরিণত করে নিয়েছি। প্রিয়নবী (সাঃ) ও তার সাহাবাদের যুগে এটি একটি নিখুঁত নির্ভেজাল ইবাদতের-ই মর্যাদা পেত। এখনকার মতো এ সব বাজে প্রথা-প্রচলনের লেশও তখন ছিল না।

রাসূল (সাঃ) এর প্রতি সাহাবাগণের কী পরিমাণ প্রেম-ভালোবাসা ও আন্তরিকতা ছিল, তা কারো অজানা নয়। কিন্তু দেখুন, হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ (রাঃ) একজন প্রখ্যাত সাহাবী। সরাসরি জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্তদের একজন। নবীজির আত্মত্যাগী সহচর। কিন্তু নিজের বিবাহে নবীজি (সাঃ) কে দাওয়াত করা তো দূরের কথা, একটু খবর পর্যন্ত দিলেন না, দেওয়া প্রয়োজন মনে করলেন না। গায়ের পোষাকে ছুফরার (এক প্রকার সুগন্ধি দ্রব্য, যা সে যুগে বিয়ের সময় ব্যবহার করা হতো) দাগ দেখে নবীজি জিজ্ঞেস করলেন “কী আবদুর রহমান, বিয়ে করেছ বুঝি!” জবাবে তিনি অতি স্বাভাবিক স্বরে বললেন, জি হ্যাঁ, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি বিয়ে করে ফেলেছি। নবীজিকে না জানিয়ে বিয়েটা করে ফেলেছেন বলে তিনি এতটুকু ওজরখাহীও করলেন না।

মহানবীর মহান বাণীঃ “যে বিবাহের আড়ম্বর যত কম, সে বিবাহের বরকত তত বেশী।”

কিন্তু, দুঃখের বিষয় হলো, রসম-রেওয়াজ আর কুসংসকারের বেড়াজালে আবদ্ধ করে এই বরকতময় ইবাদতকে আমরা নিছক একটি বদদ্বীন অনুষ্ঠানে পরিণত করে রেখেছি। এক বিয়ের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে কতজনের কত নামায যে বরবাদ হয়, তার হিসাব নেই।

এখানেই শেষ নয় অযাচিত বিধি-নিষেধ আর কুসংস্কারের ফলে আজকাল বিবাহযোগ্য মেয়েদের দীর্ঘকাল ঘরে বসে থাকতে হয়। বিয়ের ব্যবস্থা হয় না। অনেক ক্ষেত্রে মেয়েদের বিবাহ দেওয়ার জন্য সুদে ঋণ নিতে হয়, যে সুদকে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার নামান্তর আখ্যা দেওয়া হয়েছে। বিবাহ-শাদী সহ জীবনের সকল ক্ষেত্রে কুসংস্কার থেকে আল্লাহ আমাদের রক্ষা করুন৷

 

হারামখোরীর যন্ত্রণা

‘ঘোষখোরের ভয়াবহ পরিণতি’ শিরোনামে পাকিস্তানের দৈনিক ‘জঙ্গ’ পত্রিকায় ছোট্ট একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল। নিবন্ধকার ডঃ মনজুর আহমাদ। তাতে তিনি লিখেছেনঃ আমার দশ বছরের চিকিৎসক জীবনে একটি বিষয় আমি গভীরভাবে লক্ষ্য করেছি। তা হলো, যে সব লোক ঘুষ খাওয়ায় অভ্যস্ত, তাদের মৃত্যু অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক হয়ে থাকে। তাদের দেহ থেকে আত্মা বের হওয়ার সময় যে কঠিন যন্ত্রণা সৃষ্টি হয়, তা দেখে অনেক সময় ডাক্তাররা পর্যন্ত শিহরিত হয়ে উঠেন। এ ধরনের মানুষ একই সাথে প্যারালাইসিস, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও ব্লাডপ্রেসারে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এ ধরনের রোগীদেরকে বড় শোচনীয় অবস্থায় আই সি ইউতে রাখা হয়। আমি বহুবার এমনও দেখেছি যে, ঘুষখোর রোগীদের ঔষধে কোনো ক্রিয়া করে না। অবশেষে রোগী অসয্য যন্ত্রণায় নিজেই দ্রুত মৃত্যু কামনা করে। এ ধরনের অনেক রোগীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে, বলতে পারবেন, আপনার এই করুণ দশা কেন হলো? কী করতেন আপনি? জবাবে তারা অনেকেই স্বীকার করেছে যে, তারা ঘুষ খাওয়ায় অভ্যস্ত ছিল।

এর বিপরীতে এমন রোগীও দেখেছি, অতি সহজে যাদের মৃত্যু হয়ে যায়। ডাক্তাররা অনেক সময় টেরই পাননা যে, কখন লোকটি ইহজগত থেকে বিদায় নিয়ে গেল। এরা ধার্মিক ও দ্বীনদার। হারামখোরী থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র। এ ধরনের রোগীদের দেখে আমাদের ঈর্ষা জাগে। মন থেকে দু’আ আসে-যেন আল্লাহ আমাকেও এমন সুন্দর মৃত্যু দেন। নেক লোকদের মৃত্যু দেখে ডাক্তারগণ অনুমান করতে পারেন যে, লোকটি সৎ ও ধার্মিক ছিলেন।

অনেকে অভিযোগ করেন যে, অমুক ডাক্তার ভালো নয়, অমুক হাসপাতালের ডাক্তাররা চিকিৎসা বুঝে না। এত টাকা খরচ করলাম, রোগীর অবস্থার এতটুকুও উন্নতি হলো না। কিন্তু আসলে ব্যাপারটা এমন নয়। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের চিকিৎসা নেওয়া সত্ত্বেও রোগীর অবস্থার উন্নতি না হওয়ার কারণ আর কিছু নয়-হারাম উপার্জন। হারাম পথে উপার্জিত অর্থ দ্বারা ক্রয় করা ঔষধ তর শরীরে ক্রিয়া করছেনা। এর জন্য ডাক্তারগণ দায়ী নন। একই ডাক্তার একই হাসপাতাল। শত চেষ্টা সত্ত্বেও একজনের অবস্থার কোনো উন্নতি হলো না। আর একজন সামান্য ক’টা ট্যাবলেট ক্যাপসুলেই সুস্থ হয়ে গেল। প্রথমজন হারামখোর আর দ্বিতীয়জনের উপার্জন হালাল। হালাল উপার্জনের মানুষ সরকারী হাসপাতালে সাধারণ চিকিৎসা নিয়েই সুস্থ হয়ে যায় আর হারামখোর প্রাইভেট হাসপাতালে হাজার হাজার টাকা ব্যয় করেও ফল পায় না। এমনও দেখা গেছে যে, হারামখোরের মৃত্যু এত যন্ত্রণাদায়ক হয় যে, ভীষণ কষ্টে তাদের মুখ আরষ্ট হয়ে যায়, তারা কালেমা পর্যন্ত পাঠ করতে পারে না। তো একদিকে মৃত্যুও হলো কষ্টদায়ক, অপরদিকে কালেমাও নসীব হলো না। তার উপার্জিত সম্পদের বিশাল অংশ বলি হলো চিকিৎসার পিছনে। পাপ ছাড়া জীবনে কিছুই অর্জন করতে পারল না। এই যদি হয় বাস্তব, তাহলে হারাম পথে উপার্জন করে লাভ কী? কী-ই বা লাভ ঘুষ খেয়ে? হারাম পথে শান্তি নেই। ইহ-পরকালে কোথাও শান্তি নেই হারাম খোরের। অতএব সাবধান!

-আবূ তাসনীম