JustPaste.it

এনজিওদের অপ-তৎপরতা চালানোর কৌশল

 

আব্দুল্লাহ আল ফারুক

=======================================================================   

 

এনজিওদের তৎপরতা চালানোর কৌশলঃ

        বাংলাদেশ একটি দরিদ্র দেশ। শতকরা ৮০ জন লোক দরিদ্র সীমার নিচে বাস করে। অশিক্ষা, পুষ্টিহীনতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আর চরম দারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত এদেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠী। এদেশের মানুষের এই অসহায় অবস্থা ও দারিদ্রের সুযোগ নিয়ে তাদের সেবা করার নামে গ্রামে গ্রামে ছড়িয়ে পড়েছে বিপুল সংখ্যক এনজিও সংস্থা। এরা গ্রামের সাধারণ ও সরল মানুষদের কাছে গিয়ে প্রথমে ডাক ঢোল পিটিয়ে সরকারী প্রতিষ্ঠানের অদক্ষতা, আমলাতান্ত্রিক পদ্ধতি, গরিমসি,দুর্নীতি, শৈথিল্য এবং স্বজনপ্রীতির কথা বলে তাদের বোঝায় যে, সরকারকে দিয়ে উন্নয়নের কাজ সম্ভব নয়-কেবল এনজিওই পারে জনগণের সমস্যা সমাধান করতে। সরকারী প্রতিষ্ঠানের জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অযোগ্যতা ও ব্যর্থতার দরুন ভুক্তভোগী জনগণ এসব এনজিওর বিভ্রান্তিকর প্রচারণায় প্রভাবিত হয়ে পড়ে এবং তাদের অর্থবান হওয়ার গল্প অনুযায়ী ঋণ এবং অন্যান্য সহায়তা গ্রহণ করে এনজিওদের শিকারে পরিণত হয়।

 

        এনজিওরা স্থান-কাল-পাত্র ভেদে বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে। শহর ও গ্রামের শিক্ষিত লোকদের এরা সমাজ বদল করার শ্লোগান শোনায়। শিক্ষিত ক্যারিয়ারিষ্ট তরুণ যুবকদের মোটা অংকের বেতন ও অশিক্ষিত লোকদের অর্থবান এবং শিক্ষিত হওয়ার প্রলোভণ দেখায়। শিক্ষিত মেয়েদের বলে নারী স্বাধীনতার গল্প। দরিদ্র ঘরের মেয়েদের নিজের পায়ে দাড়ার মন্ত্র শোনায়। শিশুদের অবাস্তব কাহিনী শিক্ষা দিয়ে ধর্মহীন ও প্রগতিবান করে গড়ে তোলে। যেখানে ধর্মের কথা বলা দরকার হয় সেখানে ধর্ম ভিত্তিক এনজিওরা উপস্থিত হয়ে ধর্মের কথা শোনায়। এরা প্রত্যন্ত অঞ্চলের যে সমস্ত মানুষ একেবারেই অশিক্ষিত, দরিদ্র তাদেরকে বেছে নেয় এবং অর্থ সাহায্য, ঋণদান, বিনামূল্যে চিকিৎসা করে তাদের মন জয় করে। অবশেষে তাদের খৃষ্ট ধর্ম গ্রহণে আহ্বান জানায়। এসব লোক আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার স্বার্থে তখন নিজ ধর্ম বিসর্জন দিয়ে খৃষ্টধর্ম গ্রহণ করে।

 

        এনজিও গোষ্ঠী গ্রাম অঞ্চলে সরাকারের অযোগ্যতার দোহাই দিয়ে নিজেদের সকল উন্নয়নের মালিক মোক্তারে পরিণত করছে। ভাব দেখাচ্ছে যে, বেসরকারী প্রতিষ্ঠান থাকতে আবার উন্নয়ন কর্মকান্ডে সরকারের কি প্রয়োজন? এভাবে গ্রাম অঞ্চলে এনজিও গোষ্ঠী তাদের একচেটিয়া প্রভাব বিস্তার এবং সরকারের বিকল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে সরকারের প্রতি চ্যালেঞ্জ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করছে।

 

        গ্রাম অঞ্চলে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেই এনজিও গোষ্ঠী বসে নেই। তারা এখন দেশের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষা, অর্থনৈতিক প্রভৃতি সেক্টরেও নিজেদের তাবেদার সৃষ্টিতে তৎপর রয়েছে। বিদেশের বিভিন্ন দাতা সংস্থার নিকট থেকে প্রাপ্ত টাকা থেকে তারা এখন দেশের রাজনৈতিক, শিল্পী, সংস্কৃতিক, কর্মী, অর্থনীতিবিদ,গবেষক,বুদ্ধিজীবী, ভার্সিটির শিক্ষক, সাংবাদিক, প্রভৃতির মাথা কনে সর্বত্র নিজেদের তাবেদার সৃষ্টি করে দেশের সার্বিক কর্মকান্ড নিজেদের অনুকুলএ বা নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জন্য কোমর বেধে নেমেছে। এ উদ্দেশ্যে তারা সংশ্লিষ্ট সেক্টরের নেতা কর্মীদের হাতে প্রথমে অঢেল টাকা পয়সা তুলে দিয়ে লোভী করে তুলেছে, তাদের নৈতিকতাকে ধ্বংস করছে, দেশ প্রেম ও বুদ্ধিবৃত্তি চর্চা নষ্ট করে দিচ্ছে। এনজিওরা বিভিন্ন নামে সংগঠন দাড় করায়। সেমিনার, কর্ম শিবির ও সিম্পজিয়ামের আয়োজন করে এবং গবেষণামূলক প্রবন্ধ তৈরিতে টার্গেটকৃত নেতা কর্মী এবং বুদ্ধিজীবীদের আমন্ত্রণ জানায়। প্রথম প্রথম একটু ভালো খাওয়ায়, পার্টিতে ফূর্তি করার জন্য ঘন ঘন আমন্ত্রণ জানায়, অর্থ সাহায্য দেয়, গণতন্ত্রের নামে বাহিরের সেমিনারে যোগ দেয়ার জন্য বিনা খরচে বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ করে দেয় এবং এক সময় মোটা বেতনে এনজিও প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করার প্রস্তাব দেয়।

 

         এভাবে জাতির বিবেক বলে বিবেচিত, যারা দেশের ভাল-মন্দ নিয়ে চিন্তা করে তাদেরকে পক্ষে আনার নীরব নীল ককশ বাস্তবায়িত হয়ে যাচ্ছে। দেশের মেধাবী গবেষক,শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, সাংস্কৃতিক সেবক প্রমুখ নির্বাচন তদারকের নামে, ডাটা ও তথ্য সংগ্রহের নামে, মানবাধিকার রক্ষা, দারিদ্র বিমোচন, গবেষণা কার্য পরিচালনা, আইনের নামে পরিবেশ ও বিজ্ঞানের নামে উপদেষ্টা হিসেবে লেখক সাহিত্যিক হিসেবে, সাংবাদিক হিসেবে, আবার কেউ সাংস্কৃতিক সেবী হিসেবে মোটা বেতনের বিনিময়ে কোন না কোন এনজিওর জালে জড়িয়ে পড়ছে। ফলে দেশের ভয়ঙ্কর ক্ষতি সাধিত হচ্ছে বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চার ক্ষেত্রে। দেশের মেধাবী মাথার সিংহভাগ এনজিও গোষ্ঠী জিনে নেয়ার ফলে এবং তারা এনজিওদের ইচ্ছা মাফিক দেশপ্রেম, দেশের ভালো-মন্দের ভাবনা, ন্যায়-নীতি পরিহার করায় সমাজ ও রাষ্ট্রের ভালো মন্দের চিন্তা করার কেউ থাকছে না। এনজিওরা এখন তাদের এই মিশন নিয়ে বহুদূর এগিয়ে গেছে।

 

        সমাজের সকল স্তরে তাদের রাবেদার এবং কেনা গোলাম থাকায় তাআরা এখন দেশের রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা ব্যবস্থা, উন্নয়ন পরিকল্পনা, ব্যবসা-বাণিজ্য। সংস্কৃতি চর্চা সর্বোপরি সরকারের নীতি নির্ধারণে নাক গলাতে শুরু করেছে। এভাবে চলতে থাকলে সরকার এক সময় এনজিওদের হাতে জিম্মি হয়ে পড়বে, প্রকৃত সরকার হবে এনজিওরা, সরকার হবে বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এবং ইচ্ছে করলে ইস্ট ইন্ডিয়া  কোম্পানীর ন্যায় সরকারের পতন ঘটনো হবে। তারা পুতুল সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারবে বলে বিশেষ মহল আশংকাও করছে।

 

ডাকাতদের আবার মানব সেবার

        বর্তমান বিশ্বে বাংলাদেশ একটি চরম গরীব দেশ বলে বিবেচিত। কিন্তু আমরা কোন দিন এমন গরীব ছিলাম না। এই সেদিনও বঙ্গদেশ ছিল বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধশালী দেশ। এদেশে টাকায় ৮ মন চাউল কেনা যেত। এদেশে মস্লিন কাপড় ছিল পৃথিবীর বিখ্যাত। মসলিন কাপড় না পড়তে পারলে তৎকালীন রাজকুমারীরা মনে শান্তি পেত না। ইংল্যান্ডের রাণী পর্যন্ত মসলিন কাপড়ের ভক্ত ছিল। এদেশ চাল, লবন, মাছ, চামড়া নিয়ে জাহাজ সুদূর চীন, আরবে গমন করতো। মোটকথা এদেশের ধন-সম্পদের প্রাচুর্যের কথা তখন ছিল পৃথিবীর সর্বত্র সুবিদিত।

 

        একথা জানতে পেরেই কলম্বাস বাণিজ্য করার উদ্দেশ্যে ভারত উপমহাদেশে আসার জলপথ খোঁজার জন্য অভিযান চালায় এবং ভুল করে ওয়েষ্ট ইন্ডিজে পৌছায়। পরবর্তিতে এই কলম্বাসের আবিষ্কৃত জলপথ ধরে এদেশে আগমন করে পর্তুগীজ, ফ্রান্স, স্পেনিস, ইংরেজ, ডাচদের বিভিন্ন বাণিজ্য কোম্পানী। তারা ব্যবসার নাম করে সুদীর্ঘ কাল এদেশে জলদস্যুতা, লুন্ঠন, অগ্নি সংযোগ প্রভৃতি তৎপরতা চালিয়ে জান-মালের মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতি সাধন করে। সর্বশেষে ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী এদেশের রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে দুইশ বছর যাবত শোষণ, উৎপীড়ন ও লুন্ঠন চালিয়ে জাহাজ বোঝাই করে আমাদের সকল সম্পদ নিয়ে যায়। আমাদের সকল সোনা, দানা,হীরা, মনি, মুক্তা, টাকা-পয়সা নিয়ে গিয়ে দেশে জমা করে আমাদের ধনী থেকে মিসকিনে পরিণত করে রেখে চলে যায়। আমাদের সে লুট করা সম্পদ নিয়ে বেনিয়া  ডাকাতরা পরে ধনী রাষ্ট্রে পরিণত হয়।

 

        লুট করা সম্পদ ফুরিয়ে যাবার উপক্রম হয়ায় সেই বেনিয়া ডাকাত ইংরেজ, ফ্রান্স, স্পেনিস, পর্তুগীজ, ডেনিস, ও মার্কিনীদের বিংশধরেরা আবার এদেশে লুটপাট করতে এসেছে। সেবার ওরা এসেছিল কোম্পানী গঠন করে বাণিজ্য  করতে, এবার এসেছে এনজিও গঠন করে সেবা(?) করতে। ওরা এদেশে এসেই আমাদের অর্থ সম্পদ কৌশলে লুট করে গুলশান, বনানীতে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বিলাসপূর্ণ বাড়ি, অফিস, দামী গাড়ি ব্যাবহার করছে, আমাদের টেক্কা মেরে মোটা বেতন হাতিয়ে আয়েশ আরাম করে বেড়াচ্ছে আর আমাদের গরীব গরীব বলে নাম ছিটাচ্ছে। কথায় কথায় এদেশ দরিদ্র বলে আমাদের জাতীয় সত্ত্বাকে অপমানিত করছে। যে ডাকাতেরা আমাদের দারিদ্র, ক্ষুধা, রোগ-ব্যাধি, দুর্ভিক্ষ, দুঃখ-বেদনার জন্য দায়ী সেই ডাকাতের বংশধররা কিনা আমাদের সেবা করতে এসেছে, আমাদের চিকিৎসা করবে বলে হাসপাতাল স্তাহপুন করছে; আমাদের দারিদ্র দূর করবে বলে ঋণ দিচ্ছে, অর্থ সাহায্য প্রদান করছে! আমাদের যে এখন আনন্দ বগল বাজাবার সময়! ডাকাতরা কিনা মানবতার সেবা করার জন্য পেরেশান জয়ে এতদূর ছুটে এসেছে! আহারে, মানবতাবাদী-রে!

 

ত্রাণ নাও,ইসলাম ছাড়, খৃষ্টান হওঃ

        দুর্গত মানুষকে ত্রাণ সাহায্য প্রদানের নামে মানুষ ঈমান, আকিদা, ধর্ম বিশাস তাঁর ইজ্জত আব্রু লুটে নিতে এনজিও সংস্থা কম পাকা নয়। সেবার ছদ্মবরণে এরা এদেশে এসেছে এদেশের মানুষের দারিদ্র, দুঃখ, দুর্দশা, রোগ, বার্ধক্যকে পুঁজি করে তাদের অর্থ, ত্রাণ ও উন্নত চিকিৎসার প্রলোভন দেখিয়ে খৃস্ট ধর্মে দীক্ষিত করার গোপন মিশন নিয়ে। তারা কোন মানসিকতা নিয়ে আমাদের সেবা করতে এসেছে তার পরিচয় পাওয়া যায় এ ঘটনায়-

 

         "১৯৯১ সনের জলোচ্ছাস কবলিত চট্টগ্রামসহ কুতব্দিয়া এলাকাও বিরাণভূমিতে পরিণত হয়ে যায়। মারা যায় হাজার হাজার বনি আদম। যারা প্রাণে রক্ষা পায়, তাদের মাঝে সাহায্যের ঝুরি নিয়ে যায় ' ওয়ার্ল্ড ভিশন'সহ বহু সংখ্যক এনজিও প্রতিষ্ঠান। ওয়ার্ল্ড ভিশন সাহায্যদানে শর্ত আরোপ করে বসে খৃষ্ট ধর্ম গ্রহণের। তাদের এ অন্যায় আবদারে মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে কিছু সংখ্যক হিন্দু ব্যক্তি শুধুমাত্র প্রাণ রক্ষা পাওয়ার আশায় পৈত্রিক ধর্মবিশ্বাস  বিসর্জন দিয়ে খৃষ্ট ধর্ম গ্রহণ করে। ঘটনা জানা জানি হয়ে গেলে স্থানীয় সচেতন জনগণ প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠে।

 

        বিক্ষুদ্ধ জনগণ সেদিন ওয়ার্ল্ড ভিশন-এর কার্যকলাপের বিরুদ্ধে মিছিল নিয়ে জেলা প্রশাসকের নিকট স্মারকলিপি প্রদান করে। অবস্থা বেগতিক দেখে ওয়ার্ল্ড ভিশনের লোকজন সেদিন কুতুবদিয়া থেকে পালিয়ে আসে। এদের কার্যকলাপ এত জঘন্যরূপে প্রকাশ পায় যে, দুর্গত মানুষের আহাজারীর মধ্যেও ধর্ম নিয়ে টানাটানি করতে তাদের বিবেকে একটুও বাধেনি। তাদের মূল উদ্দেশ্য যে সাহায্য- সেবা নয়, খৃষ্ট ধর্ম প্রচার তা দিবালোকের মত স্পষ্ট।"(দৈনিক ইনকিলাব, ১৩ই সেপ্টেম্বর, ১৯৯২)

 

        এনজিওদের ত্রাণ সামগ্রীর বিনময়ে খৃষ্ট ধর্ম প্রচার সম্পর্কে দৈনিক ইনকিলাব(৩রা দিসেম্বর ৯৩ সংখ্যা)আরও একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। রিপোর্টে বলা হয়ঃ

 

        কচুয়াতে খাদ্যের বিনিময়ে খ্রীস্টধর্ম প্রচারঃ প্রতিবাদ মিছিলঃ বিদেশী প্রহৃত কচুয়া (চাঁদপুর), ২ ডিসেম্বর।-" আজ চাঁদপুর জেলার কচুয়া থানা সদরে প্রায় ১০ হাজার লোক কচুয়া সমন্বিত উন্নয়ন কর্মচূচী (কেয়াইডিপি) নামক একটি এনজিও কতৃক খাদ্যের মিনিময়ে খৃস্টধর্ম প্রচার কর্মসূচীর প্রতিবাদ করে মিছিল বের করে। মিছিলকারীরা এনজিওটির উপদেষ্টা ও এনজিওর চেয়ারপার্সন তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সরকারের দৃষ্টি আকর্ষন করে।

 

        উল্লেখ্য, এনজিওটি কচুয়া থানার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটি ৪৫ জন ছাত্র-ছাত্রীকে বিনামূল্যে দুধ ও গম বিতরণ করে আসছে। এসব সামগ্রী বিতরণকালে ছাত্র-ছাত্রীদের খৃষ্টান ধর্মে দীক্ষিত হওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করা হয় বলে মিছিলকারীরা অভিযোগ।

 

        এনজিওটির রহেন কার্যকলাপ মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাটির ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে একটি বিরাট আঘাত। এ ধরনের প্রত্যক্ষ ঘটনার প্রেক্ষিতে এলাকার জনসাধরণ আজ এনজিওটির একজন বিদেশী কর্মীকে প্রহার করে।

 মিছিলাকারীরা অবিলম্বে উক্ত কর্মসূচী প্রত্যাহার ও এ বিষয়ে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করে।

 

        এনজিওটির বিদেশী কর্মীকে প্রহার করায় এনজিওটির পক্ষ থতকে কচুয়া থানায় একটি নিয়মিত মামলা হয়েছে। এনিয়ে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।"

 

        মরেও এনজিওর খপ্পর থেকে রেহাই নেই, লাশ দাফনেও এনজিওরা নাক গলাচ্ছেঃ

 

        ঋণ প্রদান করে শোষণ করা, খৃস্ট ধর্মে দীক্ষা দেয়া, ছলনা, প্রতারণা পর্যন্তই এনজিওর ঘৃণ্য তৎপরতা থেমে নেই। এদের মন-মানসিকতা এত কদাকার যে, স্বার্থের জন্য দুনিয়ার জঘন্যতম কার্যে লিপ্ত হতেও এতটুকু লজ্জা বোধ করে না, বিবেকের নিকট প্রশ্নের সম্মুখিন হয় না। ইয়াই এনজিওর হোতাদের দেখা যায় ভদ্রবেশ ধারণ করেও অবলিলাক্রমে যে কোন জঘন্যতম কর্মকান্ডে লিপ্ত হচ্ছে। এমনি একটি লোমহর্ষক ঘটনার কথা প্রকাশ করেছে "সাপ্তাহিক মুসলিম জাহান"(১৬-২২ জুন'৯৩ সংখ্যা)

 

        "চাঁদপুর এলাকা থেকে এক মর্দে মুমিন গত সপ্তাহে আমাদের কাছে একটা পত্র প্রেরণ করেছেন। পত্র তিনি তার এলাকায় ব্রাক স্কুলের এক ছোট্ট ছাত্রীর কাহিনী লিখেছেন।       ১০/১২ বছর বয়সের এ মেয়েটি হঠাৎ করেই মারা যায়। মৃত্যুর পর দাফনের জন্য তার লাশ নিয়ে যাওয়ার সময় স্থানীয় একটি বিদেশী এনজিওর কর্মকর্তারা এসে মেয়েটির পিতাকে পরামর্শ দেয়, তিনি তার মেয়েটির শরীর থেকে  সাদা কাফন খুলে নিয়ে যেন কালো কাপড়বৃত করে মেয়েটিকে পূর্ব-পশ্চিম দিকে লম্বালম্বি একটি গর্তে অমুসলিমদের কায়দায় পুঁতে রাখেন। এ কাজটি করলে এই দরিদ্র ব্যক্তিটিকে দশ হাজার টাকা দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়।মেয়েটির গরীব পিতা অবশ্য ইসলামী কায়দায়ই তার মেয়েকে দাফন করেন এবং চরম দারিদ্রের কষাঘাত সত্ত্বেও এই ধশ হাজার টাকার ফাঁদে তিনি পা দেন নি। এর কিছুদিন পরে পাশের গ্রামে ব্যাক্তির গরীব আত্মীয়রা ে প্রস্তাব মেন নেয়ায় সে সংস্থার পক্ষ থেকে তাদের বিশ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। বৈদেশিক মুদ্রা হিসেবে এ টাকা মাত্র ২৫০ ও ৫০০ মার্কিন ডলার। দেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকেও এ ধরনের সংবাদ আমাদের কানে আসছে। ময়মনসিংহ অঞ্চলে জৈনক সাংবাদিক জানিয়েছেন যে, এভাবে অর্থের বিনিময়ে খৃস্টান কায়দায় সমাহিত করতে পারলে নাকি এ সংস্থাটি তার বিদেশী মুরব্বীদের পক্ষ থেকে বিশেষ পুরষ্কার পেয়ে থাকে। এসব কবরের গায়ে ক্রুশ চিহ্ন লাগিয়ে ভিডিও ফিল্মে ধারণ করে রাখা হয় এবং পাশ্চাত্য বিশ্বে এগুলো প্রদর্শন করে সংস্থার অর্থ যোগানদার চক্রকে কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে ধারণা দেয়া হয়।"

 

        উল্লেখ্য, এনজিওদের লাশ নিয়ে এই ঘৃণ্য তৎপরতা সম্পর্কে জাগো মুজাহিদে (অক্টবর ৯৩) সংখ্যায় সংক্ষিপ্ত আকারে আলোচনা করা হয়েছিল। তখন অনিচ্ছাকৃতভাবে তথ্যসূত্র উল্লেখিত না হওয়ায় আমাদের সে রিপোর্ট নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে 'ব্রাক' স্কুল কর্তৃপক্ষ ও মুমিন মুসলমানদের মধ্যে এক অবাঞ্চিত বিতর্কের সূত্রপাত হয়। ঘটনা সম্পর্কে আরো বিস্তারিত তথ্য পাওয়ার জন্য অনেক সত্যের সৈনিক মুসলমানের নিকট থেকে আমাদের নিকট চিঠি আসে। তাই আমরা রিপোর্টটি  প্রকাশকারী মুসলিম জাহান পত্রিকার তথ্য ভান্ডারের সহায়তা নেই। জানা যায় ঘটনাটি সম্পর্কে যিনি চিঠি লিখেছেন তিনি নিতান্ত একজন গরীব মানুষ। এলাকায় ব্রাকের প্রভাব প্রতিপত্তিকর কারণে তিনি তার নাম প্রকাশ না করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করেন। তার চিঠির মাধ্যমে জানা যায় ঘটনাটি ঘটেছে চাঁদপুরের মতলব থানার উত্তর উপাদী নামক গ্রামে। এই সূত্র ধরে আমরা সরেজমিনে গোপনে তদন্তে যাই।

 

        কিন্তু প্রশাসন ও ব্রাক কর্তৃপক্ষের চাপের কারণে গ্রামের লোকজনের নিকট ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তারা রহস্য জনক নিরবতা পালন করে। ঘটনা যদি নাই ঘটতো তবে স্বাভাবিকভাবে সবাই তা অস্বীকার করতো। কিন্তু কেউই এ ঘটনা এ গ্রামে ঘটেনি এমন কোন জবাব দেয় নি। তাই ধরে নেয়া যায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে, পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার পর দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়ার ব্রাক কতৃপক্ষ এবং উর্ধ্বতন প্রশাসন গ্রামবাসীদের এ ব্যপারে মুখ খুলতে নিষেধ করায় তারা নীরবতা পালন করছে। তা ছাড়া আশ্চর্য্যের ব্যাপার, ঘটনা সম্পর্কে মুসলিম জাহান ৬ মাস পূর্বে রিপোর্ট করার পরেও ব্র্যাক থেকে এর কোন প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পায় নি। জাগো মুজাহিদদের রিপোর্টও ৩ মাস পুর্বে প্রকাশিত হয়েছে কিন্তু তারও কোন প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তাই স্বাভাবিকভাবে ধরে নেয়া যায় ঘটনাটি সত্য ও বাস্তব।

 

এনজিও ধর্ম প্রচারের আরও একটি দলিলঃ

        দেশে কর্মরত এনজিওর মধ্যেকার রাঘব-বোয়াল হিসেবে পরিচিত 'ব্র্যাক' নামক সংস্থাটি ফেশে মিরক্ষরতা দূরীকরণের জন্য অসংখ্য স্কুল খুলেছে। 'ব্র্যাকের' তৎপরতা সম্পর্কে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রচুর লেখালেখির পর সংস্থাটির পক্ষ থেকে দৈনিক ইসকিলাব পত্রিকায় (২৮ শে নভেম্ব্র,৯৩) কিছু বক্তব্য প্রকাশিত হয়। উক্ত বক্তব্যমালা থেকে জানা যায় যে,বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ব্র্যাকের ১৭ হাজার স্কুল রয়েছে। এতে পড়ুয়ার সংখ্যা ৫ লক্ষ যার অধিকাংশ অর্থ্যাৎ ৭০%ই মেয়ে। কিন্তু ব্র্যাক এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আমাদের ভবিষ্যত নাগরিকদের কি শিক্ষা প্রদান করছে। সম্প্রতি মধুপুর পড় থেকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি পত্র মারফত ব্র্যাকের শিক্ষা কোর্স সমাপনী পরীক্ষার একটি প্রশ্নপত্র আমাদের ঠিকানায় প্রেরণ করেছেন। তিনি চিঠিতে উল্লেখ করেছেন যে, স্কুল কর্তৃপক্ষ অত্যন্ত গোপনীয়তার মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের মধুপুর পাহাড়ের অভ্যন্তরে ব্র্যাকের কেন্দ্রে এই পরীক্ষা নেয়।

 

        এই পরীক্ষায় যারা গনয় করা হয়। কিন্তু প্রশ্নপত্রটির প্রশ্নের ধরণ দেখে হতবাক হতে হয়। স্বাধীন দেশে গণতান্ত্রিক সরকারের নাকের ডগায় এহ্ম তৎপরতা চলছে দেখে হতবাক না হয়ে উপায় কি? প্রশ্নপত্রের আগাগোড়া খৃস্ট ধর্ম সম্পর্কিত প্রশ্নে ঠাসা। মনে হয় যেন কোন খৃস্ট ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা নিয়ে যাচাই করা হচ্ছে যে, তারা কতখানি খৃস্ট ধর্ম সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করছে। আশ্চর্য হতে হয় এই ভেবে যে, একটি মুসলিম দেশে মুসলমান নাগরিকদের অবুঝ সন্তানদের সুকৌশলে খৃস্টান ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করে ইসলামে সম্পর্কে অজ্ঞ করে গড়ে তোলার অধিকার এসব এনজিওদের কে দিয়েছে। নিম্নে ব্র্যাকের প্রশ্ন পত্রটি হুবহু তুলে ধরা হলোঃ

                                                                                 

 

                                                                       তারিখঃ..................

 

(ক) যীশুর মায়ের নাম কি ছিল?

=

(খ) যীশু কত বছর বয়সে বড় উপাসনা ঘরে গিয়েছিলেন?

=

(গ) বড় উপাসনা ঘরটি কোথায় ছিল?

=

(ঘ) তারা যীশুকে কোথায় খুঁজে পেলেন?

=

(ঙ) যিশু ঈশ্বরকে কি বলে ডাকতেন?

=

 

(২) খালি জায়গায় লিখুনঃ

(ক)যিশুর উপর______________________________________দয়া ছিল।

(খ) তাদের সংগে অনেক ______________________ও গ্রামের লোকেরা ছিল।

(গ)সেই উপাসনা ঘরে অনেক _______________________ছিলেন।

(ঘ)যীশু একজন__________________________________মত কথা বলছিলেন।

(ঙ)যীশু জ্ঞানে ও বয়সে ________________________________দয়ায় বড় হতে লাগলেন।

 

(৩) বাক্য রচনা করুনঃ

(ক) বড় উপাসনা ঘর________________________

(খ) আত্মীয়স্বজন_________________________

(গ) পবিত্র___________________________________

(ঘ) শিক্ষা___________________________________

(ঙ) বাক্য___________________________________

 

(৪) ঘটনাটি পড়ে কি শিক্ষা পেলেন তা নিজের কথায় লিখুনঃ

______________________________________________________________________________________

 

(৫) পদটি মুখস্ত করুনঃ

যীশু জ্ঞানে, বয়সে এবং ঈশ্বর ও মানুষের ভালবাসায় বেড়ে উঠতে লাগলেন।

                                  -মাথি ২ঃ৫২

 

(৬) গত পাঠের পদটি লিখুনঃ

         সম্প্রতি দৈনিক ইনকিলাব (২৪শে নভেম্বর,৯৩) ব্রাকের শিক্ষাদান সম্পর্কে এক চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়ঃ

 

ব্রাকের স্কুল নাস্তিকতা শিক্ষা চকলেট কে দিতে পারে আল্লাহ্‌ না আপা

        এনজিও-ব্রাক শিক্ষার নামে কোমলমতি মুসলিম শিশুদের নাস্তিকতার দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। ব্রাকের এই সুকৌশলে নাস্তিক্যবাদী প্রচারণার প্রমাণ মিলেছে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া ও কুতুবদিয়া থানায় শিক্ষাদান কার্যক্রম।

 

        সম্প্রতি এক স্কুলে একজন শিক্ষিকা ক্লাসে ঢুকে ছাত্র-ছাত্রীদের চোখ বন্ধ করে আল্লাহ্‌র কাছে চকোলেট চাইতে বলে। কিছুক্ষণ পরে চোখ খোলার নির্দেশ দিয়ে তারা চকোলেত পেয়েছে কি-না জিজ্ঞাসা তারা চকোলেট পেয়েছে কি-না জিজ্ঞাসা করে। শিশুরা জানায়, তারা চকোলেট পায়নি এরপর শিক্ষিকা আবার সবাইকে চোখ বন্ধ করতে বলে। তারপর সে সবার হাতে একটি করে চকোলেট গুজে দেয়। তারপর চোখ খুলতে বলে জিজ্ঞাসা করে, তারা চকোলেট পেয়েছে কি-না, শিশুরা জানায় পেয়েছে। তখন শিক্ষিকা জিজ্ঞাসা করে চকোলেট কে দিতে পারে, আল্লাহ্‌ না আপা? তখন ছাত্র-ছাত্রীরা সমস্বরে বলে দেয় আপা। এভাবে ব্রাক পরিচালিত স্কুলগুলোতে শিশুদের নাস্তিকতায় দীক্ষা দেয়া হচ্ছে বলে জনসাধারণ অভিযোগ করেছেন।

 

        ব্রাকের অন্যান্য কর্মসূচীর পাশাপাশি উপ-আনুষ্ঠানিক প্রাথমিক শিক্ষা কর্মসূচী অন্যতম। এ কর্মসূচীর অধীনে চকরিয়া ও কুতুবদিয়া থানার গ্রামে গঞ্জে শতাধিক স্কুল খুলে কোমলমতি হাজার হাজার মুসলিম শিশুর মনে আল্লাহ্‌ সম্পর্কে ভ্রান্তির বীজ ছড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। একজন মাত্র শিক্ষিকা ৫০/৬০ জন ছাত্র-ছাত্রীকে পাঠ দান করে। ফলে, তারা যথাযথ শিক্ষা পাচ্ছে আন তো বটেই, উপরন্তু নাস্তিকতায় দীক্ষিত হচ্ছে। ব্রাকের স্কুলগুলোতে নাস্তিকতা সম্পর্কিত শিক্ষাদানের কথা জানতে পেরে অভিভাবকদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই ছেলে-মেয়েদের ব্রাকের স্কুলে পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে।"

 

জমিদাররাও লজ্জা পাবেঃ

        উপমহাদেশে সাম্রাজ্যবাদী ইংরেজরাও জেকে বসার সময় এক অদ্ভুত শোষণ পদ্ধতি ব্যবহার করেছিল। তারা এ দেশবাসীকে শোষণ করার জন্য সৃষ্টি করেছিল তাদের তাবেদার জমিদার শ্রেণী। এসব জমিদার এদেশের মানুষ হলেও বেনিয়াদের স্বার্থ রক্ষা করত। তারা সাধারণ মানুষের ওপর জুলুম নির্যাতন চালাতো। বাৎসরিক নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদানের শর্তে জমিদাররা বিভিন্ন এলাকার মালিকানা লাভ করত। জমিদারের ইচ্ছাই হতো ঐ এলাকার প্রশাসনিক আইন। জমিদার ইচ্ছামত এলাকা থেকে খাজনা আদায় করত। এর একটা অংশ বেনিয়াদের রাজকোষে জমা দিলেই সে 'প্রভুভক্ত' দিসেবে গণ্য হতো। ইংরেজ প্রশাসন জমিদারের খাজনা আদায়ের তৎপরতার প্রতি ভ্রূক্ষেপ করার প্রয়োজন বোধ করতো না। ফলে জমিদাররা সীমাহীন জুলুম, উৎপীড়ন চালাতো খাজনা আদায়ের নামে। রাজকোষে জমা দেয়ার পর বাকী অর্থ ভোগ বিলাসে ব্যায় করত। প্রজাদের নিকট থেকে জোর করে আদায় করা অর্থে দেশীয় লোকদের লাঠিয়াল হিসেবে পুষত এদেশীয় প্রজাদের জুলুমের বিরুদ্ধে সকল প্রকার বিদ্রোহ প্রতিবাদকে দমন করার জন্য।

 

        ঋণের নামে ব্রাক, গ্রামীণ ব্যাঙ্কসহ এনজিওরা ঋণ সম্রাজ্য স্থাপন করে প্রাচীন জমিদারী প্রথাকেও হার মানিয়েছে। এরা গ্রামের সরল ও অসহায় লোকজনকে শোষণ নির্যাতন চালিয়ে টাকার পাহাড় গড়ে তুলছে। এদের শোষণ এবং নির্যাতনের কৌশল দেখলে মধ্যযুগের জমিদার এবং কাবুলিয়ালারাও লজ্জা পাবে। এরা নিজেদের দুর্গতের সেবক এবং 'ভাগ্যোন্নয়োনের দূত' বলে নাম ফাটায়। এরা প্রথমে দুর্গতদের সাহায্য দিলেও এখন গ্রামের লোকজনের ভাগ্যকে 'স্বর্ণের পাত দিয়ে মুড়িয়ে দেয়ার' মত উন্নয়ন কর্মকান্ড চালাচ্ছে বলে প্রচার করে। তারা প্রচার করে বেড়ায় যে, তাদের ঋণ প্রদান এবং তা পরিশোধের শর্ত এত সহজ ও সুন্দর প্রক্রিয়া যে, তাদের ঋণ আদায়ের হার প্রায় একশ'ভাগ। এভাবে তারা প্রচার প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে গ্রামে একটা ভাবমূর্তি তৈরি করছে। তাদের প্রচারণা এবং ঋণ আদায় ও প্রদানের মধ্যে এমন একটা সূহ্ম প্রতারনার আশ্রয় নেয় যা গ্রামের লোকজন বুঝতে না পেরে তাদের প্রশংসায় মেতে ওঠে। তারা যদি বুঝতে পারত যে, এনজিওরা তাদের কাবুলিওয়ালাদের চেয়েও জঘন্য উপায়ে শোষণ করছে তবে এনজিও ওয়ালাদের কিলিয়ে ভুত ছাড়িয়ে দিত।

 

        মূলত এনজিওদের ঋণ স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আদায় না হলে তারা ভয় ভীতি, হুমকি ধমকি দিয়ে তা আদায় করে নিতে কসুর করে না। প্রয়োজন তারা শারিরীক নির্যাতন বা সমাজে তাকে মানসিকভাবে অপদস্ত করেও ঋণ আদায় করে নেয়। এমনি একটি ঘটনা নিম্নে তুলে ধরা হলোঃ

 

        "নিতাই পাল নামে এক ব্যক্তি গ্রামীণ ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নেয়। মাঝপথে এসে ঋণের কিস্তি শোধ দেয়া তার পক্ষে দুসাধ্য হয়ে পড়ে। আসলে তার ব্যবসা অলাভজনক হয়ে পড়ে। ঋণ বিতরণকারী কর্মীকে তার এই সমস্যার কথা বললে সে কোন পরামর্শ না দিয়েই বলে, আপনি কি করবেন আমি জানি না। কিস্তি আমার নিয়মিত চাই। চাপের মুখে পড়ে নিতাই মূলধন  থেকেই কিস্তি শোধ করতে থাকে। এক সময় মূলধনও শেষ হয়ে যায় কিন্তু কিস্তি শেষ হয় না। দুধাল গাবী বিক্রি করে কিছু কিস্তি শোধ করে এবং অভাব অনটনের মধ্যে দিয়েই সংসার চালায়। অথচ এই অভাব থেকে বাঁচার জন্যই সে গ্রামীণ ব্যাঙ্কের ঋণ নিয়েছিল। অবশেষে তার কয়েক কিস্তি বাকীই থেকে যায়। কিস্তি শোধ করতে ব্যর্থ হলে তাকে কেন্দ্রে ধরে আনা হয়। অপমানজনকভাবে বেধে রাখা হয়। বিভিন্ন গ্রুপের ঋণ গ্রহীতারা যেন দেখে এবং ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হলে নিতাইয়ের মত অবস্থা হবে এমন একতা ইঙ্গিত দেয়া হয়। নিতাইকে জিম্মি করে রাখা হয় যাতে তার আত্মিয় স্বজনেরা এসে টাকা শোধ করে নিয়ে যায়। অবশ্য পরে আত্মীয়রা এসে টাকা শোধ করে দিয়ে তাকে মুক্ত করে নিয়ে যায়। পরে রাত্রের অন্ধকারে ক্ষোভে আর অপমানে সে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। (এটি একটি গবেষণা টিমের অপ্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে পাওয়া  যা লন্ডন থেকে প্রকাশের প্রস্তুতি চলছে)

(সাপ্তাহিক খবরের কাগজ,২১ শে সেপ্টেম্বর, ১৯৯৩)

 

        এনজিও ওয়ালার বিদেশী হোক আর স্বদেশী হোক তারা এই রক্ত চোষণ ও নির্যাতনের জন্য ব্যবহার করে এই দেশেরই মানুষদেরকে এবং সেটা অত্যন্ত সুকৌশলে। তারা প্রথমে সংস্থা থেকে ঋণ নিতে আগ্রহী এমন লোকদের নিয়ে গ্রুপ করে এবং প্রত্যেক গ্রুপের একজন নেতা নির্বাচন করে। নেতা নির্বাচনের সময় তারা গ্রামের প্রভাবশালী এবং গোয়াড় টাইপের লোকদের মধ্য থেকে। এই গ্রুপ্নেতা এবং কেন্দ্র প্রধানও নির্বাচন করে এলাকার লোকদের মধ্যে থেকে। এই গ্রুপনেতা এবং কেন্দ্র নেতা বেতন ভোগী বা সংস্থার কর্মী না হলেও তাদের সাথে একটু খাতির যত্ন করে আপন করে নেয়, যাতে তারা এলাকার লোক হলেও গ্রামের লোকদের স্বার্থ না দেখে সংস্থার স্বার্থ রক্ষা করে। কোন ঋন গ্রহীতা যদি ঋণ পরিশোধে বা কিস্তি শোধ করতে ব্যর্থ হয় তবে এরাই লাঠিয়ালের ন্যায় উক্ত ঋণ গ্রহীতাকে হুমকি দেয়। প্রয়জনে কেন্দ্রে ধরে এনে জিম্মি করে, শারিরিক নির্যাতন চালায়। এছাড়া সংস্থার যে সমস্ত মাঠকর্মী গ্রামে গ্রামে ঘুরে লোকজনের ঋণের জন্য প্রলুব্ধ করে তারাও এদেশের নাগরিক। যে কর্মী সংস্থার যত বেশী টাকা খাটিয়ে বেশী সুদসহ আসল আদায় করতে পারে সংস্থার কাছে সে তত বেশী প্রিয়ভাজন,তার চাকুরী তত বেশী "প্রোটেকট" হয়।

 

        পক্ষান্তরে ঋণের টাকা বকেয়া থাকলে ঋণ বিতরণকারী কর্মীর চাকুরীর স্থায়ীত্ব ঝুকির সম্মুখিন হয়। তাই বেকারত্বের এই যুগে কেউ সহজে রুজি রোজগারের ঝুকি নিতে চায় না। তারা চায় না তাদের বেতন-ভাতা পাওয়ার এই পথটুকুও বন্ধ হয়ে থাক। এ জন্যই এই মাঠ কর্মীরা গ্রুপ নেতা এবং কেন্দ্র নেতাদের ব্যবহার করে চরম বর্বরতার মাধ্যমে অনাদায়ী ঋণ আদায় করে থাকে। এভাবেই  এনজিও গোষ্ঠী এদেশের নাগরিকদের লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহার করে এদেশের মানুষকে শোষণ করার মাধ্যমে নিজেদের আখের গোছাচ্ছে। গ্রামের মানুষের ওপর চালাচ্ছে নির্যাতন, নিপীড়ন ার শহরে এরা ভদ্রলোক। শতকরা একশ ভাগ ঋণ আদায় করার 'সাফল্য' দেখিয়ে বিদেশী দাতা সংস্থার প্রশংসা কুড়াচ্ছে। পুরষ্কার লুফে নিচ্ছে। অথচ এর পেছনে রয়েছে ড্রাকুলার রক্ত চোষার ন্যায় মানুষকে শোষণ করার জিঘাংসার মনবৃত্তি।

 

ওদের সাথে এমন আচরণ হচ্ছে কেন, ওরা দাস নাকি?

        কেনা দাস না হলেও এনজিওতে কর্মরত সাধারণ কর্মীদের সাথে দাসের মতই ব্যবহার করা হয়। বেকারত্বের সুযোগ নিয়ে কর্মীদের কর্মকর্তারা ইচ্ছে মত কাজে খাটায়। প্রতিবাদ বা আদেশ অমান্য করার কোন সুযোগ নেই, চাকুরীর গ্যারান্টি নেই। এমনটি কেউ করলে সাথে সাথে তার চাকুরী চলে যাবে এটা সবাই বুঝে। তার স্থানে বসরা নতুন লোক নিয়োগ করবে। এদেশে তো আর বেকার যুবকের অভাব নেই। তাই সকল কর্মীই বসদের তোষণ-তোয়াজ করে চলে। তাদের একান্ত অনুগত হয়ে থাকে। বস-শ্রেণী এই অন্যায় আনুগত্যকে কাজে লাগিয়ে সাথে প্রভু সুলভ আচরণ করে। কর্মকর্তা কর্মচারীদের নধ্যে এভাবেই একটা দাস প্রভু সম্পর্ক গড়ে ওঠে। শোষিত, বঞ্চিত ও নিপীড়িত হয় এদেশেরই যুব সমাজ। এনজিওরা এদেশে শ্রম-শোষন করে নিজেদের ভবিষ্যত গুছিয়ে নিচ্ছে, এ জাতির সন্তানদের গোলামী মানসিকতা নিয়ে বেঁচে থাকতে বাধ্য করছে। এনজিওর এই দাস বানানোর প্রকল্প সম্পর্কে বিস্তারিত আলোকপাত করেছে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকা।

 

        "দাতা সংস্থাকে বুঝানো হয়, এনজিওতে কর্মরত কর্মীরা সকলেই সেচ্ছেসেবী। উন্নয়নের জন্য এরা নিবেদিত। যারা এনজিওদের এই তথাকথিত উন্নয়নে নিবেদিত তারা বসদের কর্তৃক সবচেয়ে বেশী শোষণের শিকার। এদের ওপর চলে সংস্থার স্টীম রোলার। ন্যায় অন্যায়ের প্রতিবাদ করার সামর্থ কর্মীদের নেই। বেকারত্বের সুযোগ নিয়ে কর্মীদের সঙ্গে চাকুরীর নাম করে এক ধরনের দাস প্রভুর সম্পর্ক সৃষ্টি করা হয়েছে। এনজিওতে প্রথমত চাকুরীর নূন্যতম কোন স্থায়ীত্ব নেই, বসের ইচ্ছা হলে এক ঘন্টার মধ্যে চাকুরী নট হয়ে যেতে পারে। কারণ দর্শানোর বিষয় নেই। চাকুরী যাওয়ার ক্ষেত্রে অভিযোগ দায়েরই যথেষ্ট। এ ক্ষেত্রে একজন গার্মেন্টস শ্রমিকের যতটুকু অধিকার আছে এনজিও কর্মীদের তাও নেই। দেখা গেছে একজন কর্মীদের তাও নেই। দেখা গেছে একজন কর্মী মাঠে নির্দিষ্ট দায়িত্ব নিয়ে কাজে গেছে, এসে শুনলো তার চাকুরী নেই। মানবাধিকারের সবচেয়ে বড় লংঘন করছে এনজিওগুলো। কম বেশী সব এনজিও সামাজিক শোষণের কথা বলে। কিভাবে শোষিত হচ্ছে তাও সমিতির সদস্যদের বুঝানোর কাজে নিয়োজিত তারা নিজেরাই সংস্থা কর্তৃক নির্মমভাবে শোষিত হচ্ছে।

 

        অনেক এনজিও আছে যারা গার্মেন্টসের শ্রমিকদের সংগঠিত করে। গণসাহায্য সংস্থা এদের মধ্যে অন্যতম। অথচ নিজেরাই গার্মেন্টসের চেয়ে বেশী নিজে কর্মীদের শোষণ করছে। এরা নিজের শোষণ নির্যাতন আড়াল করার জন্য নতুন প্রহসন শুরু করেছে। এক্ষেত্রে একদল টাউট ট্রেড ইউনিয়ন নেতা এনজিওদের ক্রয়কৃত 'গরুতে' পরিণত হয়েছে। এরা এখন এনজিওদের গৃহপালিত ট্রেড-ইউনিয়ন নেতা। এনজিওরা এদের কে মাসহারা দেয়। গণসাহায্য সংস্থা "গার্মেন্টস" নামে একটি পত্রিকাও বের করে নিজেদের সততা প্রমাণের অপচেষ্টায় যদিও এর পেছনে আর এক ধরনের খারাপ উদ্দেশ্য নিহিত রয়েছে। এই জাতীয় প্রকাশনা কমবেশি সব এনজিওরই আছে। এমন অনেক অভিযোগ আছে যে, বিজ্ঞাপনে বেতন কাঠামো যেভাবে উল্লেখ করা হয়, চাকুরী চুড়ান্ত হলে কম বেতনের কথা বলা হয়।

 

        বেকারত্বের দেশে বাধ্য হয়ে চাকুরিতে নতুন (কম) বেতন সম্মত হতে হয় আবার কথিত প্রভিশন কাল নামে বছর অধিককাল ধরে কম বেতন দেয়ার একটা রেওয়াজ এনজিওগুলোতে চলে আসছে। কোথাও কোথাও শারীরিক নির্যাতন, কোথাও কোথাও মানসিক নির্যাতন তো আছেই। শারীরিক নির্যাতনে বহু অচিযোগ পাওয়া গেছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র নামে এককালীন বামপন্থী বর্তমানে সেকুলার জৈনক জাফরুল্লাহ চৌধুরীর এনজিওতে। আর মানসিক নির্যাতন সব এনজিওতে বাধ্যতামূলক বিষয়ে পরিণত হয়েছে। অধিকাংশ কর্মীর অভিযোগ-সরকারী চাকুরী পাওয়ার বয়সসীমা পার হয়ে গেলে নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায়। কর্মীদের ওপর জোর জুলুম করা হয় বলে সেই শোধ তারা তলে গ্রুপগুলোর ওপর। 'স্যার' ডাকার নিয়ম নেই কিন্তু বস সুলভ মানসিকতা প্রচন্ড। চাকুরী রক্ষার জন্য বসকে তয়াজ করে চলতে হয়। গণ সাহায্য সংস্থার একটি অমানবিক আচরণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। মাঠে কর্মীরা যদি অসুস্থ্য হয়ে পড়ে এবং কাজে না যেতে পারে তা হলে তাকে ছুটিও দেয়া হয় না আবার বেতনও দেয়া হয় না। এটি মানিবাধিকার পরিপন্থী। যদিও এই এনজিওটি মানিবাধিকারের প্রশ্নে ওপরে বেশ চিৎকার করে।" (খবরের কাগজঃ ২১শে সেঃ '৯৩ সংখ্যা)

 

        "নারী ও শিশু শ্রমের বেলায় বিধি নিষেধ থাকলেও এনজিওরা এর কোন ধার ধারে না। কুটির শিল্প, হস্ত শিল্প, স্বনির্ভর কর্মসূচী ইত্যাদি নামে নারী শিশুদের বেতন ও পারিশ্রমিকও নাম মাত্র দেওয়া হয়। অধিকাংশ এনজিওতে চাকুরীর নিয়ম নীতির কোন বালাই নেই। কর্তাব্যক্তিদের ইচ্ছাই এখানে চূড়ান্ত।"

(সাপ্তাহিক পূর্ণিমা ২৫শে নভেম্বর,৯২)

 

মোট অংকের বেতন ভাতাঃ প্রতারণার আরেক কৌশলঃ

        এনজিও সংস্থা জনমনে এমন একটা বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে যে, মানুষ প্রথমেই এনজিওতে চাকুরী মোটা অংকের বেতন ভাতার কথা স্মরণ করে। কিন্তু যে একবার চাকুরী করেছে তার অভিজ্ঞতার ঝুলি বেশ অনেকখানি ভারী হয়েছে, হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে মোটা বেতন ভাতা 'কাহাকে' বলে, উহা কত প্রকার ও কি কি। এনজিওদের মোটা বেতন ভাতার প্রলোভনও প্রতারণার একটা সুক্ষ্ম কৌশল মাত্র। হ্যাঁ, এনজিওতে মোটা অংকের বেতন ভাতার ব্যবস্থা আছে তবে তা' সাধারণ কর্মীদের জন্য নয়। এ ব্যবস্থা তাদের জন্য যারা এনজিও সংস্থার মালিক মোক্তার বস বা কর্মকর্তাদের জন্য। এরা সাধারণ কর্মীদের নাম মাত্র বেতন ভাতা প্রদান করে জনগণকে শোষনে নিযুক্ত করে এবং শোষিত অর্থের একটা মোটা অংক নিজেদের বেতন ভাতা খাতে হাতিয়ে নেয়। কোন কোন এনজিওতে দেখা যায়, কর্মকর্তার গোটা পরিবার বা একই ব্যক্তি একই সংস্থার বিভিন্ন প্রকল্পের সাথেও জড়িত রয়েছে। ফলে সে সংস্থা থেকে একটি পরিবারের বেতন ১৫/১৮ ঘন্টা কাজ করতে হয়। এরপরও বসরা কর্মীদের প্রতি গরু ছাগলের মত ব্যবহার করে।

 

        বেতন দেয়া হয় অর্ধেক আর কাজ করে নেয়া হয় দ্বিগুণ সময় ধরে। ১৮ ঘণ্টা পরিশ্রম করেও কর্মী মাসে বেতন পায় ১৫'শ থেকে ২৫'শ টাকা পর্যন্ত অথচ ঐ পরিমাণ সময় যদি গার্মেন্টসে একজন ম্যাট্রিক পাশ লোক কাজ করে তারাও এনজিওর মাষ্টারর্স ডিগ্রি ধারীর চেয়েও বেশী বেতন পায়। অথচ এইসব এনজিওরা গার্মেন্টসের শোষণ নিয়ে তোলপার করে, কিন্তু নিজেদের কর্মীদেরকে গার্মেন্টসের চেয়ে বেশী শোষণ করে। একই যোগ্যতায় দু'হাজার টাকা পাচ্ছে ১৮ ঘণ্টা পরিশ্রম করে অথচ সরাকারি পর্যায়ে ৮ ঘণ্টা পরিশ্রম করে বেতন পেতো ৪ হাজার টাকা। এনজিওদের এই শোষণে অতিষ্ট কর্মীরা। অথচ বস শ্রেনীরা নিজেদের জন্য কায়েম করেছে এক বিলাস বহুল জীবন। এদের অধিকাংশের সূযোগ সুবিধা ও বেতন মিলিয়ে ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা মাসে পাচ্ছে। অর্থ্যাৎ কর্মীদের ২০ থেকে ৩০ গুন বেশী। এদের অফিস ভাড়া বাবদ মাসে ৫০ হাজার থেকে শুরু করে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত রয়েছে। এ প্রসঙ্গে একজন মাঠকর্মীর ভাষ্য হলো কর্তার শুধু ল্যাট্রিনের ভাড়ার পেছনে ব্যয় মাসে ১০ হাজার টাকা।"

 

        মোটা বেতনে ভাতা সম্পর্কে এনজিওদের প্রচার-প্রোপাগান্ডা সম্পর্কে পূর্ণিমা (২৫শে নভেম্বর ১৯৯২ সংখ্যা) এক অনুসন্ধানী রিপোর্ট প্রকাশ করে। তাতে উল্লেখ করা হয়ঃ

 

        " যারা প্রতিশ্রুতিশীল ভালো পাশ দেয়া ছাত্র, ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার এদের সামনে ঝুলানো হয় বাহারী সাইজের মূলো। হ্যান্ডস্যাম বেতনের লোভে চাকুরী প্রত্যাশী এহেন বেচারাদের এনজিওতে ঢূকে আপসোস, আক্রোশ এবং প্রানান্তকর পরিশ্রমের ভোগান্তি ছাড়া আর কিছুই থাকে না। ধরা যাক একটি ভাল পাশ দেয়া ছেলেকে ৫ হাজার টাকা বেতন দেয়া হলো। চাকুরীর সঙ্গে সঙ্গে তার হাতে ৩০ হাজার টাকার একটা মোটর সাইকেল দেয়া হয়। একটা কোয়ার্টারও দেয়া হয়। এখন প্রতিমাসে ঐ চাকুরের মোটর সাইকেল ও কোয়ার্টার বাবদ দেয় থেকে দু'হাজার টাকা কর্তন করে রাখা হয়। আবার ট্রেনিং এর সময় বেতন হার কম। ট্রেনিং এ সফল হতে পারলেও প্রতিশ্রুতি মোতাবেক বেতন মিলে না। কিন্তু ঐ মোটর সাইকেল এবং কোয়ার্টার খরচ প্রকল্প পাশের সময় প্রকল্প বরাদ্দের মধ্যে থাকে। এই মোটর সাইকেল বা কোয়ার্টার বিনা পয়সায় পাওয়ার কথা। কিন্তু এরও টাকা কাটা হয়। আবার ঐ কাটা টাকা কোথায় যায় তার হদিসও মিলে না।"

 

 একী, এনজিওদের সেবার ঠ্যালায় আমরা শুধু গরীবই হচ্ছি কেন?

        হ্যাঁ, আমরা শুধু গরীবই হচ্ছি, আমাদের কোনই উন্নতি ঘটছে না। এনজিওরা গত ২০ বৎসর ধরে এদেশে 'দারিদ্র বিমোচন' তৎপরতা চালাচ্ছে। তারা নিরক্ষরতা দূরীকরণ, দরিদ্রদের আয় বৃদ্ধি, ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান, টিকাদান কর্মসূচী, রাস্তাঘাট নির্মাণ, স্কুল, হাসপাতাল, মাতৃসদন, শিশু সদন প্রতিষ্ঠা, কৃষি, শিল্প, বনায়ন, শিক্ষা সংস্কৃতি, মৎস উন্নয়ন, পশু পালন প্রভৃতি প্রকল্পের নামে প্রতি বৎসর বিদেশী দাতা সংস্থার নিকট ২ হাজার কোটি টাকা গ্রহণ করে। কিন্তু বিশ বৎসর কাজ করার পরও তারা আমাদের কতখানি উন্নতি সাধন করেছে। দেশের দারিদ্র কি হ্রাস পেয়েছে না বৃদ্ধি পেয়েছে? মানুষের সামাজিক চেতনা কতটুকু বিকশিত হয়েছে? শিশুরা কি এখনও ব্যাপকহারে পুষ্টিহীনতা, অন্ধ্যত্বের শীকার হচ্ছে না? ডায়রিয়া কি এখনও মহামারী আকারে জনজীবনকে আতঙ্কগ্রস্থ করে তোলে না? তাহলে এতদিন তারা কাদের উন্নতির জন্য কাজ করেছে, এখনও কাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য দেশব্যাপী তোলপাড় করে বেড়াচ্ছে এনজিওরা? এনজিওরা যতই বলুক, তারা দারিদ্র বিমোচনের কাজ করছে, বাস্তবে তাদের তৎপরতা ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের।

 

        তারা গ্রামের লোকদের দরিদ্র বিমোচন করেছে না বরং কৌশলে ১০০ টাকায় ১ বছরে ৪৮৬ টাকা সুদ আদায় করে গ্রামের লোকদের আরো গরীব হওয়ারই ব্যবস্থা করছে। এরা এনজিও নামক শোষণের যন্ত্র স্থাপন করে নিজেদের গুটিকতকের ভাগ্য উন্নয়নের তোড় জোর করে যাচ্ছে। গত বৎসর বিআইডিসির এক গ্রামীণ জরিপে দেখানো হয়, বাংলাদেশের গ্রামীণ জনসাধারণের ২ ভাগ মানুষ অর্থ্যাৎ ২০ লাখ লোক প্রতি বৎসর দরিদ্র সীমায় নেমে যাচ্ছে। গরীব মানুষের সেবার জন্য এত প্রচার, প্রচারণা তার পরও এ ভিন্ন চিত্র কেন?  এর মানে এটাই নয় কি যে, দারিদ্র বিমোচনের জন্য এনজিওরা যা করছে তা কেবল প্রচারণা সর্বস্ব। এনজিওরা এখন সাহায্য সংস্থা হিসেবে এবং দারিদ্র বিমোচনের জন্য তৎপরতা শুরু করে তখন এদেশে ভূমিহীন মানুষের সংখ্যা ছিল ৩৭ ভাগ, এখন তা সরকারী হিসেবে ৫৮ ভাগ বেসরকারী হিসেবে ৬৫ ভাগ। এরপরও কি আমাদের দারিদ্র বিমোচনের জন্য এনজিও গোষ্ঠির কোন দরদ আছে, আছে কোন উন্নয়ন পরিকল্পনা? (সমাপ্ত)

 

*****