JustPaste.it

চির মুসলিম দুশমন ইবনে সাবার উত্তরসূরী ইসমাইলিয়া আগাখানীদের মুখোশ উন্মোচন

মুহাম্মাদ মুহিউদ্দীন

==================================================

 

        গত ৫ই মে ইসমাঈলীয়া সম্প্রদায়ের কথিত ইমাম প্রিন্স করীম আগাখান ৪ দিনের এক শুভেচ্ছা সফরে ঢাকা এসেছিলেন। ঢাকা এসে পৌঁছলে সরকারীভাবে তাকে লাল গালিচা সম্বর্ধনা দেয়া হয়।

 

        কিন্তু বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের প্রশ্ন কে এই আগাখান ? কি তার পরিচয়? মুসলমানদের সাথে আগাখানীদের সম্পর্ক কি? ইসমাঈলীয়া সম্প্রদায় কি মুসলমান? বাংলাদেশ সরকার তাকে দাওয়াত করে এনে এত মর্যাদাই বা দিলেন কোন সূত্রে? এ প্রশ্ন গুলোর যথাযথ নিরপেক্ষ উত্তরদানের জন্যই বক্ষমান নিবন্ধের অবতারণা।

 

        আমরা প্রথমেই আগাখান তথা তার অনুসারী ঈসমাঈলীয়া সম্প্রদায়ের উৎপত্তি এবং তাদের তৎপরতার প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করব। নবম শতাব্দীর শেষ দিকে দক্ষিণ পারস্যের (বর্তমান ইরান) আবদুল্লাহ বিন মায়মুন নামে জনৈক ব্যক্তি ইসমাঈলীয়া মতবাদ উদ্ভাবন করেন। তিনি নবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ)-কে সর্বশেষ নবী বলে স্বীকার করতেন না। তার মতে ইসমাঈল ছিলেন সর্বশেষ নবী ও ঈমাম। আব্দুল্লাহ নিজেকে ইসমাঈলের সহকারী মনে করতেন এবং এই মতবাদ প্রচারের জন্য শিয়াদের “তাকিয়া” অর্থাৎ কপট নীতির ন্যায় গুপ্ততার নীতি উদ্ভাবন করেন।

 

        এই ইসমাঈলীয়া সম্প্রদায় ইসনা আসারিয়া অর্থাৎ শিয়াদের দ্বাদশ ঈমামের স্থলে সাতজন ঈমামে বিশ্বাসী। তারা মুসা-আপ-কাজিমকে সপ্তম ঈমাম বলে স্বীকার করে না। শিয়াদের বিশ্বাস অনুযায়ী জাফর-আস-সাদেক চারিত্রিক দোষের জন্য জ্যেষ্ঠ পুত্র ইসমাঈলকে তার  উত্তরাধিকারী নিযুক্ত করেননি। উপরন্তু তার মৃত্যুর পূর্বেই ইসমাঈলের মৃত্যু হওয়ায় দ্বিতীয় পুত্র মুসা-আল-কাজিম সপ্তম ঈমাম নিযুক্ত হয়। কিন্তু ইসমাঈলী সম্প্রদায় বিশ্বাস করে যে, যেহেতু ঈমাম মাছুম এবং সকল ভুল ভ্রান্তির উর্ধ্বে সেহেতু ইসমাঈল মদ্যপায়ী হলেও তাকে দোষারোপ করা যায় না। এভাবে সপ্তম ইমামে বিশ্বাসীদের কর্তৃক ইসমাঈল ঈমাম হিসেবে স্বীকৃতি পেলে এই সম্প্রদায়কে ইসমাঈলীয়া বলে আখ্যায়িত করা হয়। এ সম্প্রদায়ের নিকট সাত সংখ্যাটি খুবই পবিত্র। যেমন সাতজন ইমাম। তাদের বিশ্বাস মতে দুনিয়াতে শান্তি স্থাপনে কেবল সাতজন নবী আগমন করেছেন। যথাঃ আদম (আঃ), নূহ (আঃ), ইব্রাহীম (আঃ), মূসা (আঃ), ঈসা (আঃ), মুহাম্মদ (সঃ) ও ইসমাঈল। তাদের অন্তবর্তীকালে সাতজন নীরব (গুপ্তভাবে) ধর্মীয় ইমাম ছিলেন। এদের মধ্যে ইসমাঈল, আলী (রাঃ), আরন, পিটার অন্যতম। তাদের অন্যতম বিশ্বাস হল সপ্তম | ঈমাম ইসমাঈল ইমাম মাহদী রূপে ত্রাণ কর্তা হিসেবে পুনরায় পৃথিবীতে আগমন করবেন।

 

        এ মতবাদের উদ্ভাবক আব্দুল্লাহ ইবনে মায়মুন শুরু থেকেই আব্বাসীয় খেলাফত ধ্বংস এবং সুন্নী মুসলমানদের স্বার্থ বিরোধী গুপ্ত তৎপরতায় লিপ্ত ছিলেন। তার মতবাদকে গোপনে প্রচার করার জন্য একদল প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত গুপ্ত প্রচারককে আব্বাসীয় সাম্রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে প্রেরণ করে। বসরা এবং সালা– মিয়া ছিল তার মতবাদ প্রচারের অন্যতম ঘাটি। তার প্রচেষ্টায় কাঠার এবং কাতামা গোত্র এ মতবাদ ব্যাপকভাবে গ্রহণ করে। ৮৭৪ খৃস্টাব্দে আব্দুল্লাহর মৃত্যুর পর তার সুযোগ্য শিষ্য ইয়ামানের সানার অধিবাসী আবু আবদুল্লাহ্ আল-হুসাইন এ মতবাদের প্রচারণা আরও ব্যাপক জোরদার করেন এবং উত্তর আফ্রিকায় একটি শক্তিশালী দূর্গ নির্মাণ করেন। তারই প্রচেষ্টায় তিউনিশিয়ায় প্রথম ফাতেমী শিয়া খিলাফত স্থাপিত হয় (৯০৯ খৃঃ)। পরবর্তিতে এই ফাতেমীয় শিয়া বংশধর আল-মুইজের সময় ৯৬৯ খৃস্টাব্দে মিশরেও ফাতেমীয় শিয়া খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হয়।

 

        আব্দুল্লাহ ইবনে মায়মুন কর্তৃক প্রচারিত ইসমাঈলী মতবাদের অন্যতম অন্ধ ভক্ত পারস্যের আল-হাসান-আল সাব্বাহ কর্তৃক ১০৯০ খৃঃ প্রতিষ্ঠিত হয় ইসমাঈলীয়া সম্প্রদায়ের অন্যতম উপদল গুপ্তঘাতক সম্প্রদায়। সেলজুক সুলতান মালিক শাহের সময় এই সম্প্রদায় গুপ্ত হত্যা, লুণ্ঠন ও সন্ত্রাসী কার্যকলাপ চালিয়ে ইসলামের ইতিহাসে এক রক্তাক্ত অধ্যায়ের সৃষ্টি করে। গুপ্তঘাতক দলের প্রতিষ্ঠাতা হাসান-আল সাব্বাহ ইরানের উত্তর পশ্চিমে অবস্থিত আগামূত পর্বত শিখরে একটি সুরক্ষিত দূর্গ দখল করে শক্তি সঞ্চয় করে এই তৎপরতা চালাত।

 

        পরবর্তিতে সাব্বাহ এই দূর্গকে কেন্দ্র করে আশে পাশে আরও  বহু দূর্গ দখল করে নেয়। এই হাসান-আল- সাব্বাহ বিশ্বখ্যাত সেলজুক উজির নিজাম-উল-মূলকের সহপাঠী ছিল। জ্ঞান তাপস নিমাজ-উল-মূলক ১০৬৫-৬৭ সালে বাগদাদে মিশরের ফাতেমীয়দের কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত আলআজহারের প্রতিদ্বন্দ্বী ইসলামের সর্বপ্রথম বিশ্ববিদ্যালয় নিজামিয়া মাদ্রাসা স্থাপন করেন। (তবে যে উদ্দেশ্যে তারা আলআজহার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি কায়িম করেছিলো সে উদ্দেশ্য ব্যার্থ হয়। কেননা পরবর্তীতে এটি আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আকীদায় বিশ্বাসীদের দখলে চলে যায়।) নিজাম নিজে ছিলেন সুন্নী মতবালহী এবং তার প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসায় শিয়া মতবাদের তীব্র সমালোচনা করা হতো। ১০৯১ খৃস্টাব্দে নিজামের প্রভাব-প্রতিপত্তি  এবং সুন্নী প্রচারণায় ঈর্ষান্বিত হয়ে উগ্রপন্থী আল-হাসান- সাব্বাহ নির্দেশে একঙ্গন ইসমাঈলী গুপ্তঘাতক তাকে হত্যা করে। এ  হত্যাকাণ্ডে সমগ্র মুসলিম বিশ্বে আতঙ্ক ও ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়।

 

        প্রিয় উজীর এবং অন্তরঙ্গ বন্ধুর মৃত্যুর শোক সহ্য করতে না পেরে সুলতান মালিক শাহও সে বছরই মাত্র ৩৯ বছর বয়সে মারা যান। এ ঘটনা সেলজুক বংশের স্থায়িত্বে মারাত্মক আঘাত হানে। মালিক শাহ মৃত্যুর পূর্বে গুপ্তঘাতকদের আডডাস্থল আলমূত দূর্গ দখলের জন্য অভিযান প্রেরণ করলেও তা সফল হয়নি। কিন্তু ১২৫৬ খৃষ্টাব্দে মোগল সেনাপতি হালাকু খান এই দূর্গসহ | গুপ্তঘাতকদের সকল দূর্গ ধ্বংস করে দিলে গুপ্তঘাতকদের শক্তি ধ্বংস হয়ে যায়। তারা বিক্ষিপ্ত হয়ে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পরে। | গুপ্তঘাতকদের নেতা হাসান-আল- সাব্বাহ এর পরবর্তি বংশধরেরা প্রচার করতে থাকে যে, আল্লাহ্ সম্পর্কে কোন কিছু জানা যায় না, সুতরাং বিশেষ কোন ধর্মে (ইসলামে বিশ্বাস করা উচিত নয়।” (নাউযুবিল্লাহ। এজন্য সুন্নী মুসলিম জগতে এরা 'মোলহিদ বা অপচিত্র বিধর্মী হিসেবে পরিচিত।

 

        মোঙ্গলদের কর্তৃক ভাগ্য বিপর্যয়ের পর এ সম্প্রদায় দীর্ঘ আট শতাব্দী ধরে বিভিন্ন দেশে ছন্নছাড়া জীবন যাপন করে। উনবিংশ শতাব্দীতে এরা ইংরেজদের গোয়েন্দা পুলিশের এজেন্ট রূপে ধ্বংসাত্মক তৎপরতা চালানোর জন্য ইরানে প্রবেশ করে। কিছু দিন পর সরকার বিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগ এরা ইরান থেকে বহিষ্কৃত হয় এবং আফগানিস্তানে আশ্রয় নেয়। আফগানিস্তানেও এরা ইংরেজদের সহযোগিতায় একটি ইসমাঈলী রাষ্ট্র কায়েমের যড়যন্ত্র চালিয়ে যেতে থাকে। এই গুপ্তঘাতক ইসমাঈলীদের চক্রান্ত ও বিশ্বাসঘাতকতার জন্যই ভারত বর্ষের আজাদীর অন্যতম সিপাহসালার মাওঃ ওবায়তুল্লাহ সিন্ধি (রঃ) শহীদ হন।

        ইংরেজদের একনিষ্ঠ দালালীর পুরস্কার স্বরূপ এই সম্প্রদায় ইংরেজ শাসকদের পৃষ্ঠপোষকতায় আফগানিস্তান থেকে উপমহাদেশে এসে বসতি স্থাপন করতে থাকে এবং করাচী, বোম্বাই প্রভৃতি বাণিজ্যিক শহর গুলোতে ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক সুযোগ সুবিধা লাভ করে। পরবর্তিতে এর একটা ধনকুবের সম্প্রদায়ে পরিণত হয়। সেই গুপ্তঘাতক ইসমাঈলীয়া সম্প্রদায়ের উত্তরসুরী হলেন আজকের আলোচ্য ধনকুবের প্রিন্স করীম আগাখান।

 

        এই সম্প্রদায়ের উৎপত্তির শুরু থেকে সুন্নী মুসলমান এবং তাদের মতবাদের বিরোধীতাকারী সকল সম্প্রদায়কে গুপ্তহত্যার মাধ্যমে দমন করার নীতি গ্রহণ এবং তা' বৈধ ও ধর্মীয় পবিত্র কর্তব্য বলে বিশ্বাস করে। এ জন্য এরা সর্বদা মুসলমানদের স্বার্থের বিরোধী এবং তাদের ধ্বংস করার তৎপরতায় লিপ্ত ছিল। আজো পাকিস্তানে বসবাসরত এই ইসমাঈলীয়া শিয়ারা তাদের গুপ্ত ঘাতক চরিত্র আকড়ে ধরে আছে। বাংলাদেশেও এদের পদচারণা সবর হয়ে উছঠে। পাকিস্তানে অহরহ সংঘঠিত শিয়া-সুন্নী দাঙ্গার হোতা এই সম্প্রদায়। এরা প্রখ্যাত ইসলামী ব্যক্তিত্বদের হত্যা থেকে শুরু করে মসজিলে বয়োমা নিক্ষেপ করে মুসল্লীদের হত্যা, বাসে, ট্রেনে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে যাত্রীদের নির্বিচারে হত্যা করে জনমনে ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি প্রভৃতি অপরাধ সংঘটিত করে যাচ্ছে। পাকিস্তানের অন্যতম ধর্মীয় সংগঠন “সিপাহি সাহাবার" সভাপতি প্রখ্যাত আলেম ও চিন্তাবিদ হক নেওয়াজ জঙ্গী রহঃ তাদের এই গর্হিত তৎপরতার সমালোচনা করতেন বলে ইসমাঈলী গুপ্তঘাতকেরা এক সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে তাকে শহীদ করে দেয়। সাম্প্রতিক কালে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানে হস্তক্ষেপ করলে আগাখানের অনুসারী ইসমাঈলী শিয়ারা সোভিয়েত ইউনিয়নের পক্ষে এবং আফগান মুজাহিদদের বিরুদ্ধে ভূমিকা নেয়। আফগানিস্তানের দাখান অঞ্চলে এই ইসমাঈলীয়া সম্প্রদায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়ায় তারা সোভিয়েত বাহিনীকে এ এলাকায় প্রবেশ এবং ঘাটি স্থাপন করার সুযোগ করে দেয়। এই দাখান অঞ্চল আফগানিস্তানের একমাত্র এলাকা যা রুশ বাহিনী বিনা বাধায় দখল করে নেয়।

 

        এবং স্থানীয়দের সাহায্য লাভ করে। ভারতের উগ্র হিন্দু জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল বিজেপির সদস্যরা অযোধ্যার  ঐতিহাসিক বাবরী মসজিদ ভেঙ্গে ফেললে এই ইসমাঈলী সম্প্রদায় হিন্দুদের সমর্থন করে এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রচারযন্ত্রের মাধ্যমে বিষোদ্বগীরণ করতে থাকে। ১৯৪৭ সালে মুসলিম জাতিসত্বা রক্ষার মহান উদ্দেশ্যে ভারত বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান সৃষ্টি হলে আগাখান হিন্দুদের কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে পাকিস্তান সৃষ্টি ও জিন্নাহর দাবীর বিরোধিতা করে। মোটকথা এই সম্প্রদায়ের উৎপত্তি থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত ইসলাম ও মুসলমানদের শত্রতা এবং ক্ষতি সাধন করেই আসছে।

 

        এবারে আমরা ইসমাঈলীয়া সম্প্রদায়ের যুগ ইমাম বলে কথিত প্রিন্স করিম আগা খানের ধর্মীয় দৃষ্টি ভঙ্গীর প্রতি দৃষ্টিপাত করব। পাকিস্তানের করাচী থেকে ইসমাঈলীয়া এসোসিয়েশন থেকে প্রকাশিত এয়ার ল্যাংগ গাইডে আগা খান মন্তব্য করেছেন, "মুহাম্মাদ (সাঃ) এর বংশের সাথে আমার সম্পর্ক। দু'কোটিরও বেশী মুসলমান আমার অনুসারী। তারা আমাকে আধ্যাত্মিক নেতা বলে বিশ্বাস করে, আমাকে খাজনা দেয় ও আমার ইবাদত করে। একারণে যে, আমার ধমনীতে মুহাম্মাদ (সাঃ) এর রক্ত প্রবাহমান”।

        অর্থাৎ তিনি মনে করেন ধর্ম একটা জমিদারী তালুক। তার কাছে ধর্ম আমাদের দেশের ভণ্ড পীরদের ন্যায় একটা ব্যবসার মুলধন বিশেষ। কিছু লোকের মনে নিজেকে ধর্মের মহান পুরুষ এই বিশ্বাস ঢুকিয়ে দিয়ে নিজের পায়ের ওপর হুরমুর করে পড়ার ব্যবস্থা করতে হবে এবং এর বিনিময়ে ট্যাক্স আদায় করতে হবে। ব্যাস, তাহলেই আর কোন সম্পর্কের প্রয়োজন নেই মুহাম্মাদ (সাঃ)- এর সত্যিকার বংশধর বনে যাওয়া যাবে।

 

        এই গাইডের অন্য এক স্থানে আগাখান অন্যান্য মতাবল্বীদের কটাক্ষ করে বলেছেন, "হিন্দু মুসলমান সকলেই ক্রন্দন করবে। ব্রাহ্মণ-জ্যোতিষী, পুরান পাঠ করলেও ক্রন্দন করবে, মোল্লা-কাজী কুরআন পড়েও ক্রন্দন করবে। কারণ, এরা সত্য বাদশাহ তথা ঈমামের হেফাজত লাভ করতে পারেনি। এসব পথভ্রষ্ট লোক পীর তথা ঈমামের পরিচয় না পাওয়ার কারণে ক্রন্দন করবে। শুধু সেই ব্যক্তি যে ইমাম ও  আলীর সন্ধান পেয়েছে সে ক্রন্দন করবে না।” ভারতের বোম্বাই থেকে প্রকাশিত ইসমাঈলীয়া এসোসিয়েশন কর্তৃক প্রকাশিত ইসমাঈলীয়া কিতাব ‘ফালামে ইমামে মুবিনে" আগা খানের অনুসারীদের ধর্মমত সম্পর্কে বলা হয়েছে, “হযরত মাওলা মুরতজা আলীর মধ্যে আল্লাহর নূর থাকার কারণে এবং হযরত আলীর মোবারক নাম উচ্চারণ করলে আল্লাহর নূর অনুভূত হওয়ার কারণে আমরা কালেমার মধ্যে হযরত আলীর নাম ব্যবহার করি। আলী আল্লাহ। | তথা আল্লাহর মধ্যে আলী আছেন বা আলীর মধ্যে আল্লাহর নূর বিদ্যমান……”।

 

        “মুরশিদ তথা যুগ ইমাম সব কিছুই জানেন। তিনি যদি ঈমামের মূর্তির পরিবর্তে মদকে সেজদা করতে বলেন, তাহলে তাই করতে হবে। কারণ মুরশিদের আদেশ অলংঘনীয়।”

        “মুরতজা আলী মহান ব্যক্তি। তার নির্দেশ অবশ্যই পালন করতে হবে। তিনি স্বীয় শক্তি বলে পাপ মোচন করিয়ে মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যেতে পারেন……।

 

        “খলীফা ওসমান (রাঃ)-এর শাসনামলে কুরআনের কিছু অংশ রেখে বাকী অংশ বিলুপ্ত করে দেয়া হয়েছিল।” 

        “যুগ ঈমামের নিকট সব সময়ই একটি নতুন জিনিস থাকে যা তৎক্ষণাৎ বলা যায়। তিনি পরে তা আমাদের বলে দেবেন।”

        মহিলাদের জন্য রোরকা পরিধান করা মোটই ভালো নয়। অন্তরের চোখে লজ্জার পর্দা থাকাই যথেষ্ট। এতে তোমাদের অন্তরে কখনও কুচিন্তা আসবে না……”

 

        মানুষ কারবালায় গিয়ে কেন অনর্থক সময় নষ্ট করে? ইমাম হোসাইন তো এখন জামাত খানায়-ই থাকেন। কাজেই তোমরা এখানেই (জামাতি থানায়) এসো……”

 

“তোমরা এ যাবত যত গুনাহ করেছ আমি তা ক্ষমা করে দিলাম। তবে ভবিষ্যতে আর গুনাহ করবে না……”

        “আমাদের আধ্যাত্মিক সন্তানদের সর্ব প্রথম ধর্মীয় ও সামাজিক দায়িত্ব হলো পূর্ণ বিশ্বস্ততার সাথে বৃটিশ সরকারের সহযোগিতা করা। বৃটিশ সরকার আপনার ধর্ম ও স্বাধীনতা সব কিছুরই রক্ষা করবেন। তাই পূর্ণ নিষ্ঠা ও বিশ্বস্ততার সাথে সর্বশক্তি ব্যয় করে তাদের সেবা করে যাওয়া উচিত………”

 

        বোম্বাই থেকে প্রকাশিত অন্য আর এক কিতাব ‘কালামে এলাহী' তথা ফরাসীনে। ইমামে মুবেনে বলা হয়েছে “স্মরণ রাখতে হবে যে, যুগ ঈমামের আনুগত্য মূলতঃ আল্লাহরই আনুগত্য। ঈমামের নির্দেশ মান্য করা আল্লাহকে মান্য করার-ই নামান্তর”

        “আমরা ঈমামী ইসমাঈলী সম্প্রদায়। যুগ ঈমামের মুরীদ। আল্লাহর নূর যা যুগ ঈমামের মধ্যে বিদ্যমান। আমরা তাকে সেজদা করি...."

 

        “ইয়া আলী মদদ” আমাদের সালাম। মাওলা আলী মন আমাদের সালামের জবাব। উঠতে বসতে “ইয়া আলী মদদ” বলে ঘর থেকে বের হওয়ার সময় “ইয়া আলী মদদ” বল। ধর্মীয় শিক্ষাঙ্গণে যাওয়ার সময় “ইয়া আলী মদদ” বল। ঘরে প্রবেশ করার সময় “ইয়া আলী মদদ” বল। মা-বাপকে “ইয়া আলী মদদ” বলে সালাম কর। ভাই বোনকে “ইয়া আলী মদদ” বলে সালাম কর”

 

        “কুরআনের সঠিক জ্ঞান এবং এর লুকায়িত রহস্যাবলীর প্রকৃত অর্থ যুগ ঈমামের-ই-জানা আছে। যুগ ঈমাম হলেন জীবন্ত কুরআন। তার নির্দেশাবলী মেনে চলা | উচিত। এতে দুনিয়ার আলো নিহিত”

 

        “ঈমামের হাত খোদার হাতের সমান, ঈমামের চেহারা খোদার চেহারার সমান। পূর্ণ আস্থার সাথে ঈমামের সাথে সাক্ষাৎ করা স্বয়ং খোদার সাথে সাক্ষাতের নামান্তর……”।

 

        “কুরআন সর্বমোট চল্লিশ পারা। তার মধ্যে ত্রিশ পারা দুনিয়ার মানুষের নিকট আর অবশিষ্ট্য দশ পারা আছে ঈমামের ঘরে। এই দশ পাল্লাকে ‘ফতহারদীদ’ বলা হয়। এই দশপারা কুরআনই ঈমামের ভাষা।”

 

        “যে ব্যক্তি আন্তরিক ভাবে আলীর অনুসরণ করবে; তার সন্তান সন্ততি বৃদ্ধি পাবে এবং সে সফলতা অর্জন করতে পারবে। তাই তোমরা আলীর আনুগত্য ও ইবাদত করতে থাক। বস্তুত আমাদের এই আলী-ই হলেন প্রকৃত স্রষ্ট……।” নাউযুবিল্লাহ।

 

        এছাড়া এই সম্প্রদায় বিশ্বাস করে যে, অজু করার কোন প্রয়োজন নেই আমাদের অন্তর সর্বদাই অজুময় থাকে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের পরিবর্তে জামাত খানায় (মসল্লিদের পরিবর্তে ব্যবহারিত) গিয়ে তিন সময় দোয়া করা প্রতিটি আগাখানীর উপর ফরজ। রোযা ফরজ নয়। খানা পিনা বন্ধ করলেই রোযা হয় না। রোযার সম্পর্ক চোখ কান ও যবানের সাথে। যাকাতের পরিবর্তে তারা টাকা প্রতি দু'আনা জামাত খানায় দেয়া ফরজ মনে করে। ইত্যাদি।

 

        আগাখানীরা নিজেদের মুসলমান বলে দাবী করলেও তাদের মতাদর্শ থেকে স্পষ্টতই প্রতিয়মান হয় যে, তারা ইসলামের ফরজ বিধান পর্দা, যাকাত, পাঁচ ওয়াক্ত নামায, রোযা, অজুকে স্বীকার করে না অর্থাৎ তারা ইসলামের এই শ্রেষ্ঠ রুকন সমূহের অস্বীকারকারী। ইসলামী বিধান অনুযায়ী ফরজ অস্বীকারকারী কাফেরের অন্তর্ভুক্ত। এই সম্প্রদায় তাদের যুগ ইমামকে (বর্তমান করীম আগা খান) সিজদা করাকে অবৈধ বলে মনে করে না। অথচ ইসলাম একে শিরক এবং মহা পাপের কাজ বলে ঘোষণা করেছে। আলী (রাঃ) ইসলামের চতুর্থ খলিফা এবং রাসূল (সাঃ)-এর একজন সম্মানিত সাহাবী মাত্র। কিন্তু এই সম্প্রদায় তাঁকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আল্লাহর সাথে তুলনা করেছে। এদের বিশ্বাস অনুযায়ী তিনি মানুষের পাপ মোচন করে দিতে পারেন, সন্তান ও ধন-সম্পদ দিতে পারেন। অথচ এই ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহরই বলে স্বয়ং আল্লাহ্ কুরআনে ঘোষণা করেছেন। এরা কুরআন শরীফের বিশুদ্ধতার সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করে থাকে অথচ কুরআনের বিশুদ্ধতা সর্বজনস্বীকৃত এবং প্রমাণিত। যুগ ঈমামকেও আল্লাহর সাথে তুলনা করা হয়েছে। সবচেয়ে আশ্চর্যজনক ব্যাপার হল এটি পৃথিবীর এমন একটি ধর্মমত যার রক্ষক হিসেবে অন্য ধর্মাবলম্বী খৃস্টান ভূমি ইংল্যাণ্ডকে মনোনীত করা হয়েছে এবং এর বিনিময়ে প্রতিটি ইসমাঈলীয়াকে বৃটিশ সরকারের সহযোগিতার নামে গোলামী করাকে ধর্মীয় ও সামাজিক দায়িত্ব বলে স্বীকার করা হয়েছে।

 

        আগাখানীদের এমন উদ্ভট, ইসলাম। বিরোধী এবং বিভ্রান্তিকর মতাদর্শের কারণে বিশ্বের সকল বরেণ্য আলিম এদের অমুসলিম কাফের বলে ঘোষণা করেছেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য, এদেশের কোটি কোটি মুসলমানের প্রতিনিধিত্বকারী সরকার সম্প্রতি এই অমুসলিম সম্প্রদায়ের কথিত ইমাম আগা খানকে বিপুল সম্বর্ধনা ও সম্মান জানিয়ে তাকে একজন মুসলিম সম্প্রদায়ের ইমাম বলে সার্টিফিকেট প্রদান করেছেন। আমরা জানি না সরকার কোন দলিল সূত্রে সারা বিশ্বে অমুসলিম হিসেবে ঘোষিত এই সম্প্রদায়ের নেতাকে মুসলমান বলে ফতোয়া দিলেন। তবে যতদূর সম্ভব আমরা জানি সরকার এই ধনকুবেরকে এদেশে অর্থ বিনিয়োগে প্রলুদ্ধ করার জন্য এত বিপুল সম্মান দেখিয়েছেন, মুসলমান বলে আমাদের কাছে পরিচিত করতে চেষ্টা করেছেন। কিন্তু প্রশ্ন জাগে, আমরা কি এত কাঙ্গাল হয়ে পড়েছি যে বেঁচে থাকার জন্য আজীবন ইসলামের দুশমনদের অর্থ সাহায্যের জন্য ইসলামকে অপব্যবহার করতে হবে? ধর্মের চেয়ে ঈমানের চেয়ে টাকার মর্যাদা কি বেশী? সাপের মাথায় মনি আছে বলে তা প্রাপ্তির জন্য কি সাপের সাথে বন্ধুত্ব পাতানো বুদ্ধিমানের কাজ? আগা খানকে এবারই প্রথম নয়, এর পূর্বেই চারবার এদেশ সফরের সময় তাকে মুসলমান বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা হয়েছে। অবস্থা দেখে মনে হয়, ভবিষ্যতে বৈষয়িক প্রাপ্তির বিনিময়ে কেউ যদি একটা গাধাকেও স্যুট-টাই পরিয়ে, মুসলমানের রং লাগিয়ে তাকে ধর্মীয় ঈমাম বলে চালিয়ে দেয় তাহলে এদেশ থেকে মুসলিম বলে সাটিফিকেট পেতে সেটির কোন বেগ পেতে হবে না।

 

*****