সম্পাদকীয়
* দুনিয়াদার রাজনীতিকদের বালখিল্যতা।। একটি বদনসীব জাতির সীমাহীন দূর্ভোগ *
=====================================================================
বাংলাদেশের এখন সরকার ও বিরোধীদলের মধ্য একটি অহেতুক দরকষাকষি চলছে। সরকার বলছে, নির্বাচিত গণতান্ত্রিক সরকারের অধীনে সাংবিধানিক নিয়মে যথাসময়ে নির্বাচন হওয়ার কথা। সরকার আবার নির্বাচন কমিশনের ক্ষমতা বৃদ্ধি, নির্বাচন প্রক্রিয়ার উন্নয়ন এবং আরো সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করণে নতুন আইন-বিধি রচনারও পথ খোলা রেখে, বিরোধীদের সংসদে বসে আলাপ আলোচনা করে বিষয়টির সুরাহা করার আহবান জানাচ্ছে।
আর আওয়ামী লীগ, জামাত, জাতীয় পার্টি, গণফোরাম, ইসলামী ঐক্যজোট ইত্যাদি সকল দল মিলে বলছে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন বিল সংসদে পাশ না করলে আমরা আর সংসদেই বসব না। এ জন্যে সংবিধান পরিবর্তন করা প্রয়োজন। সংসদ ভেঙ্গে যেতে পারে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া রহিত হয়ে অন্য কোন ধারার শাসন জাতির উপর চেপে বসতে পারে। সাংবিধানিক সংকটের সুযোগে বিদেশী অপশক্তির অযাচিত হস্তক্ষেপ হতে পারে। রাজনৈতিক সহিংসতা ও গৃহযুদ্ধ দেখা দিতে পারে। এ সবকিছুই আমরা কবুল করতে পারি কিন্তু নির্বাচিত সরকারের অধীনে আর কোন নির্বাচন নয়। জামাতে ইসলামীর কথা হলোঃ কেয়ার টেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন আমীরে জামাত প্রফেসর গোলাম আযমের পদ্ধতি। বিগত ৯০ এর নির্বাচন এ পদ্ধতিতে হওয়ায় নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হয়েছে। এ পদ্ধতির বদৌলতেই আজ বিএনপি ক্ষমতায় আর আওয়ামীলীগ শক্তিশালী বিরোধী দল। অতএব পরীক্ষিত এ পদ্ধতিটি সবসময়ের জন্য গৃহীত হোক।
আর আওয়ামিলীগও কেয়ার টেকার সরকার দাবী করছে। বাংলার জমিনে কিয়ামত পর্যন্ত আর কোনদিন আওয়ামীলীগকে বাদ দিয়ে কোন নির্বাচন হবে না বলেও এর একজন বড় নেতা ঘোষণা দিয়েছেন। বর্তমান সরকারের অধীনে আর কোন নির্বাচনেই আওয়ামীলীগ অংশ নেবেনা বলে এর নেতারা পূর্বেই ঘোষণা দিয়েছিলেন। এ দল তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য সংসদ ভেঙ্গে গেলেও লড়াই অব্যাহত রাখার পক্ষপাতি। এ দলের নেত্রী আবার বলেছেন, সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার দায়িত্ব বা দোষের বোঝা নিজের কাঁধে নিতে চাই না। কেয়ার টেকার সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবীতে এখন তারা সরকার পতনের একদফা-একদাবীর আন্দোলনে নেমেছেন অথচ এরাই নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের নির্বাচনকে সুক্ষ্ম কারচুপির দোষে দুষ্ট করেছিলেন।
৮৬র সংসদ নির্বাচনে বিএনপি যায়নি। ওরা বলেছিলেন, এরশাদ সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে যাবনা। ওরা যায়ওনি। তারা এরশাদকে হটিয়ে তবে ৯১-এর নির্বাচন করেছে এবং ক্ষমতায়ও রয়েছে। অবশ্য জামাতের সাথে সমঝোতা করে। আওয়ামীলীগ তথা সকল রাম-বাম ও প্রগতি পন্থীদের চোখে যা ছিল সীমাহীন লজ্জাজনক ও মারাত্মক দোষের বিষয়।
আর আওয়ামীলীগ “এরশাদের অধীনে নির্বাচনে যাবেনা” এ ওয়াদা ভঙ্গ করে নির্বাচনে গিয়েছে এবং বিরোধী দলের আসনে বসে ১৮ মাসে সংসদের সুখানুভূতিও উপভোগ করেছে। এ সময় জামাতের দশজন সদস্য সংসদ সদস্যপদ থেকে ইস্তেফা দিলে সংসদ নড়বড়ে হয়ে পড়ে এবং প্রেসিডেন্ট এরশাদ সংসদ ভেঙ্গে দেন।
এবার আওয়ামীলীগ তার সংসদ বর্জন যুদ্ধে জামাতের সাথে গলায় গলায় ভাব জমিয়ে, একই থালায় ভাত খাওয়া পর্যন্ত শুরু করেছে। একই টেবিলে বসে, একই মাইক্রফোনে কথা বলেছেন শেখ হাসিনা ও মাওলানা নিজামী। মধ্যে আছেন ব্যরিষ্টার মওদূদ সাহেব। আওয়ামী লীগের নীতি, আদর্শ, কথা, পন্থা এসব বুঝে উঠা খুবই কষ্টকর বলে দেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এখন দম বন্ধ করে লেখা বা আলোচনা থামিয়ে রেখেছেন। কারণ তারা ভয় করছেন কোনদিন আবার শেখ হাসিনা কোন উপনির্বাচনে প্রফেসর গোলাম আযমকে পাশ করিয়ে এনে সংসদে বসিয়ে দেয়। কারণ, তাদের রীতিতে রাজপথে জামাতের সাথে কথাবলা বা দোস্তি করা সম্পূর্ণ হারাম কিন্তু সংসদের পবিত্রাঙ্গনে ওদের সাথে অঙ্গাঅঙ্গি করা হালকা মকরূহও নয়। তবে খালেদা জিয়া যদি সরকার গঠনে ওদের সহায়তা নেন তাহলে এটা মহাপাপ বলে সাব্যস্ত হয়। এবং খালেদা জিয়া রাজাকার হয়ে যান। এমনকি মুক্তিযুদ্ধের শক্তিশালী এবং অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ মরহুম জিয়ার মুক্তিযোদ্ধাত্ব নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। কি অদ্ভূত রাজনীতি! কত দুর্বোধ্য এদেশের রাজনীতিকদের মতি গতি!!
যে বিএনপি “বিসমিল্লাহ্” ব্যবহার করে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। যে দলের সাবেক প্রধানমন্ত্রী সহ কয়েকজন কেবিনেটমন্ত্রী এবং অসংখ্য এমপি সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেন। বর্তমানে যে দলের নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে রাজাকার বলা হচ্ছে। যে দলের মনোনীত ডেপুটি স্পীকার ১৯৭৭ সালের পূর্ব পর্যন্ত পাকিস্তানের নাগরিক এবং কূটনীতিক ছিলেন। যে দলের অন্ততঃ ১৭জন সংসদসদস্য ’৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছিলেন বলে জানা যায়। সে দলের দায়িত্বশীল কিছু মূখ থেকে যখন আবার রাজাকার নির্মূলের বাণী শোনা যায়, তখন কি আশ্চার্যান্বিত না হয়ে পারা যায়?
ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধা এবং আল্লাহ্র উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস যে দলের অঙ্গীকার, সে দলের শাসনামলে বাংলাদেশের তাওহীদী জনতার দাবী উপেক্ষা করে অপরাধী একজন উশৃংখল মহিলাকে আদালতের হাতে সোর্পদ না করে প্রধানমন্ত্রীর মতো সুরক্ষা ও প্রহরায় সরকারের লোকজন তাকে বিদেশে প্রেরণ করলো। এ সরকারের হাতেই বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনে ধ্বস নামছে। এ সরকারই লটারী ও জুয়াকে এ দেশের জাতীয় খেলার আসনে অধিষ্ঠিত করার প্রয়াস চালাচ্ছে। এ সবও কি কম বিস্ময়ের??
প্রফেসর গোলাম আযমের বাসায় গিয়ে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী আব্দুর রহমান বিশ্বাস দেখা করলেন। তিনি একজন পাকিস্তানপন্থী লোক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানের অখন্ডতা কামনা করতেন। এ জন্য তাকে আজো রাজাকার বলা হয়। আওয়ামীলীগ সংসদে এ রাষ্ট্রপতির ভাষণও বর্জন করে থাকে। আরো অনেক কিছু। কিন্তু বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরী যিনি বিরোধীদলের প্রার্থী। তিনি যখন গোলাম আযমের কাজী অফিস লেনের বাসায় গিয়ে তার হাত ধরে দয়া চাইলেন, তখন কোন দোষ হলোনা। আওয়ামীলীগ তবুও তাকে সমর্থন দিতে থাকলো। কি বলা যায় এ দেশের রাজনীতিকদের সম্পর্কে?
যে স্বৈরাচারের পতনের জন্য তিন জোট হলো। জামাত আন্দোলনে আন্দোলনে ক্লান্ত হয়ে উঠলো। ভারপ্রাপ্ত আমীর আব্বাস আলী খান বায়তুল মোকাররমে বললেন, কিছু সময়ের জন্য ইসলামী আন্দোলন স্থিমিত করে হলেও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দলনকে বেগবান করে তুলতে জামাত বদ্ধপরিকর। এ স্বৈরাচারীদের সাথে এখন তিনজোটের দুইজোট আর জামাতের কিছু মাত্র বিরোধ বা দূরত্বও বাকী নেই। এটাও কি কম বিস্ময়ের ব্যাপার?
যে সরকার নির্বাচনে তুমুল পর্যায়ের ডাকাতি, মিডিয়া কু, সন্ত্রাস এবং প্রিজাইডিং অফিসারদের দ্বারা বাধ্যতামূলক সীল মারানোর কাজ আদায় করেছে। যাদের সময় (বিশেষতঃ ’৮৮ সালে) দশ পার্সেন্ট ভোটার ভোটকেন্দ্রে না গেলেও শতকরা প্রায় ৯৯ দশমিক ৯ পার্সেন্ট ভোট কাষ্ট হয়ে যেতো। এদের মুখে এখন সুষ্ঠূ মনে হয়, এসব কি বাস্তব না কোন রঙ্গমঞ্চে অনুষ্ঠিত কোন নাটকের নট নটিদের অভিনয়?
সুধী পাঠক! আমি এখানে এমন একটি অপ্রিয় আলোচনা শুরু করেছি যা দীর্ঘায়িত হলে বিষয়টা কেবল আবর্জনার স্তুপ ঘাতাঘাটির মতোই হবে। আমি এ প্রসঙ্গ এখানেই ক্ষ্যান্ত করতে চাই। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা নির্বাচিত সরকার, কোনটাই জাগো মুজাহিদের মতামতের সাথে সামঞ্জস্যশীল নয়। কেননা, আমরা সবসময়ই এ সবকিছুর চেয়ে ভিন্ন ও ব্যতিক্রম। আমাদের সামনে একটি সুস্পষ্ট আদর্শ রয়েছে। আর তা হলো “ইসলাম”। আমাদের রাষ্ট্রব্যবস্থা, রাজনীতি, সংসদ, সংসদ, সংবিধান-সবকিছু যখন আল্লাহ্ পাকের নির্দেশ মত, তাঁর রাসূলের নীতিতে এবং খেলাফতে রাশেদার চিহ্নিত সীমারেখা অনুসরণ করে চলবে তখন হয়তঃ কোন বির্তকে জাগো মুজাহিদের একটা মতামত থাকতে পারে। ‘ই থেকে ছ’ পর্যন্ত আপাদমস্তক খোদাদ্রোহিতা, ইসলাম বিদ্বেষ আর নাপাকীতে ভরপূর একটি নীতিমালার পংকে নিমজ্জিত রাজনীতি আর এর চর্চাকারী দুনিয়াদার রাজনীতিকদের এহেন বালখিল্যতা প্রসঙ্গে আমাদের মন্তব্য করারও রুচি হয়না। আমরা কেবল এ বদনসীব জাতির সীমাহীন দুর্ভোগে ব্যথা অনুভব করেই চলেছি।
আর “আমূল পরিবর্তন” বা “সর্বাঙ্গীন একটি সফল বিপ্লব” এর জন্য জিহাদী আহবান জানাতে পারি। যে পরিবর্তনটির জন্য আমরা জীবন, যৌবন, চিন্তা, মেধা, অর্থ-সম্পদ, কর্মশক্তি ক্ষয় করে চলেছি। আমরা আমাদের সাথে কাতার বদ্ধ হয়ে চোখের পানি আর বুকের রক্ত প্রবাহিত করার মতো একদল মুজাহিদ চাই। আর গোটা জাতিকে তথা পৃথিবীর সকল মুসলমান মুজাহিদদের বলিঃ জাগো! জাগো মুজাহিদ!! অধপতিত দাসোচিত জীবন থেকে মুক্তিলাভ করে ঈমান, সম্মান আর সাহসের জীবনের জন্য একবার জেগে উঠো!